আশিকি Part-30 (Last part)

0
2116

❤#আশিকি❤
#Madness_Of_Love
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
#Part_30_Final

আই সি ইউ এর বাইরে দাঁড়িয়ে আছে সবাই। আমাল কেবিনের বাইরের সিটে দুই হাঁটু তে হাতের কনুই ঠেকিয়ে মাথা নিচু করে আছে। মনে অজানা একটা ভয় কাজ করছে ওর‌। ভয়ের কারনে হৃদ স্পন্দন দ্রুত হচ্ছে ওর।

ভিতরে অপারেশন চলছে সানার কিন্তু এখানে জান বেড়িয়ে যাচ্ছে ভয়ে আমালের। মনে শুধু একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে যে,,, ওর সানাহ কি ওদের মাঝে আবার ফিরে আসবে নাকি এই আশা টাও বৃথা যাবে ওর। যদি সানার জ্ঞান ফিরে আর ও আমালকে চিনতে না পারে,,, তখন কি করবে আমাল,,, কি পরিচয় নিয়ে সানার সামনে যাবে ও। আর সানাহ কি সত্যিই ওকে ভূলে যেতে পারে। এতোই ঠুনকো আমালের ভালোবাসা,,,

আকাশ কুসুম ভাবনার মাঝেই আমালের কাধে কেউ হাত রাখে। আমাল মাথা তুলেই দেখে পাশে আবিদ।

আবিদঃ নিজের উপর এবং নিজের ভালোবাসার উপর বিশ্বাস রাখ আমাল। দেখিস সব ঠিক হয়ে যাবে। তোর অপেক্ষা বৃথা যাবে না। সানাহ ফিরে আসবে আমাদের মাঝে।

আমালঃ যদি ও আমাকে ভূলে যায় তখন?? ( কাঁপা কাঁপা কন্ঠে) আমি কি করবো রে আবিদ। আমার খুব ভয় করছে জানিস,, ওকে হারানোর ভয়,,,,

আচ্ছা আমার সাথেই কেন এমনটা হয় বলতে পারবি,,, যত বারই আমরা দুজন এক হতে নেই ভাগ্য আমাদের আলাদা করে দেয়। আমাদের দুজনের মাঝে দেয়াল তুলে ধরে ভাগ্য। আমি যে আর লড়াই করতে পারছি না একা I need her… I need her love in life.

আবিদঃ একদিন তুই ই বলেছিলি আমালের ভালোবাসার ডোর এতো কমজোর না যে সামান্য ঝড়ে ছিড়ে যাবে। এখন তুই নিজে কেন ভয় পাচ্ছিস,,, আগের সাহসী আমালকে ফিরিয়ে আন দেখিস সব কিছু সহজ মনে হবে।

আবিদের কথায় আমাল কিছুটা আশ্বাস পায়। মনের ভয় কিছুটা হলেও কমছে ওর।

❤❤ After An Hour ❤❤

ডক্টর OT থেকে বেড়িয়ে আসলেন,, আমালের হৃদয় সহকারে কাঁপছে। কিছু জিজ্ঞেস করবে সেই সাহস টুকু হচ্ছে না ওর।

সবাই ডক্টরকে ঘিরে ধরেছে,,, সবার একটাই প্রশ্ন সানাহ কেমন আছে?

ডক্টরঃ অপরেশন সাক্সেসফুল হয়েছে কিনা সেটা আমরা এখন বলতে পারছি না। চার ঘন্টা সময় আছে এর মধ্যে যদি সানার জ্ঞান ফিরে তাহলে অপারেশন সাক্সেসফুল আর যদি না ফিরে….

ডক্টরের কথায় সবার যে আশা ছিল তা কিছুটা নরচর হয়ে যায়‌।

আমালঃ আপনি তো বলেছিলেন,,,

ডক্টরঃ হ্যাঁ আমি এখনো বলছি সানার ঠিক হ‌ওয়ার সম্ভাবনা বেশি কিন্তু আমাল অপেক্ষা তো করতেই হবে,,, আমরা ডাক্তার আমাদের কাজ চেষ্টা করা কিন্তু সেই চেষ্টা সফল করা না করা আল্লাহর হাতে,,, So pray for her.. এই মুহুর্তে আপনাদের দোয়া ওর জন্য সবচেয়ে বেশি কার্যকর।

আর এই মুহুর্তে সানার কাছে যদি আমাল থাকে তাহলে ওর রিকোভারি ভালো হবে বলে আমি মনে করি,,, ( আমালের কাধে হাত রেখে)

আমাল চুপ করে আছে। এই মুহুর্তে ওর কি বলা উচিৎ তা বুঝতে পারছে না ও।

আমাল চুপচাপ কেবিনে চলে আসে। সানার পাশে বসে ওর দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে আমাল। আমাল সানার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলতে শুরু করে,,,

আমালঃ অনেক তো হলো সানাহ আর কত চোখ বন্ধ করে থাকবে। আর কত এই চুপ্পি ধারন করে থাকবে বলো? আমি যে তোমার চোখে নিজের জন্য সে ভালোবাসা টা দেখার জন্য কাতর হয়ে পরেছি। তোমার মুখে নিজের নাম শোনার জন্য কাতর হয়ে পরেছি। আমার হৃদয় তৃষ্ণার্ত তোমার ভালবাসার জন্য। প্লিজ আর কষ্ট দিও না কাম ব্যাক টু মি সানাহ।

আমাল সানার হাত নিজের হাতের মুঠোয় এনে চুমু দিচ্ছে। আমালের চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে সানার হাতে।

হঠাৎ করেই সানার হাতের আঙ্গুল নরে উঠে। আমাল প্রথম বুঝতে পারে নি কিন্তু পরপর দুবার এমন হ‌ওয়ার ও ঘাবরে যায়।

আমাল চেঁচিয়ে ডক্টরকে ডাকা শুরু করে। ডক্টর এসে সানাহকে চেক করছে। ডক্টরের সাথে সবাই কেবিনে প্রবেশ করে। বুক কাঁপছে আমালের। ও শুধু দাঁড়িয়ে দেখছে সানাহকে। সানার চোখের পাঁপড়ি নরছে। আমালের ভয় দূর হয়ে সেখানে খুশির আভাস ছড়িয়ে যাচ্ছে। খুশির ঝলক দেখা দিচ্ছে আমালের মনে।

কিন্তু এই খুশি বেশিক্ষণ টিকলো না হঠাৎই মনে ভয় গেথে গেল ওর। ডাক্তারের কথা সত্য হয়ে যাবে না তো। ওর সানাহ আবার ওকে ভুলে যাবে তো। আমাল কথা গুলো ভাবতে ভাবতে পিছিয়ে একদম দরজার সাথে ঠেকে যায়।

চোখ দুটো ভারী লাগছে সানার কাছে। চোখ মেলে তাকাতে পারছে না ও। আলোটা কিছুতেই চোখে স‌ইছে না।

চোখ মেলে সব কিছু ঝাপসা দেখছে সানাহ। অনেকেই ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ওর আম্মু যার কান্না করতে করতে চোখ ফুলে গিয়েছে ওর পাশেই দিয়া।

খায়েরঃ কেমন অনুভব হচ্ছে সানাহ,,,

কথাটা শুনে সানাহ মাথা ঘুরিয়ে দেখলো একজন ডাক্তারের পোশাক পরা লোক ওকে বলছে,,, আরেকটু ভালো করে চোখ বুলিয়ে দেখলো ও হসপিটাল এর বেডে শুয়ে আছে এক হাতে ক্যানোলা লাগানো ওর।

সানাহ বুঝতে পারলো যে ইনি ডক্টর। সানাহকে চুপ থাকতে দেখে খায়ের আবারো বলল।

খায়েরঃ Are You Feeling Better Now Sanah? কেমন অনুভূতি হচ্ছে এখন?

সানাহঃ মাথাটা একটু ভারী লাগছে আর কথা বলতে সমস্যা হচ্ছে। ( অনেক কষ্ট করে বলল )

খায়েরঃ কিছুক্ষনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে ডোন্ট ওয়ারি।

সানাহ ওর আম্মুর এই অবস্থা দেখে ভাঙা গলায় বলল,,,

সানাহঃ আম্মিই এই কি অবস্থা করেছো নিজের হ্যাঁ। তোমাকে দেখলে যে কেউ বলবে হয়তো আমি মরে গেছি তাই এমন ভাবে কান্না করেছো।

রাহেলাঃ থাপ্পড় খাবি বলে দিলাম। আর এসব কথা মুখে আনবি না,,, ( চোখ মুছে)

রাহেলা সানার সামনে এসে ওর কপালে গালে হাত ছোঁয়াতে ছোঁয়াতে বলল,,,

রাহেলাঃ আল্লাহ রহমত করেছে আমাদের উপর। আমাদের সানাহকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আর কিছুই চাই না আমার কিছুই না।

দিয়াঃ Welcome back দি। এই দিনটার জন্য অনেক অপেক্ষা করিয়েছিস। অনেক কষ্ট দিয়েছিস আমাদের একবার সুস্থ হ তারপর সব সুদে আসলে উসুল করবো ( চোখ মুছতে মুছতে)

সানাহ মুচকি হাসলো ওর কথায়। ওর চোখ আশেপাশে কাউকে খুঁজছে। কিন্তু খায়ের দিয়া আর ওর আম্মি বাদে কাউকে দেখতে পারছে না ও।

ডক্টর খায়ের বুঝতে পারছেন যে সানার স্মৃতি হয়তো যায় নি তাও সিউর হ‌ওয়ার জন্য উনি একটু সরে দাঁড়ালেন। উনি সরে দাঁড়াতেই সানার চোখ আমালের উপর পরলো। খায়েরের আড়ালে ছিল আমাল তাই সানার চোখে পরে নি ও।

আমালের চোখে ভয় অসহায়ত্ব আর পানি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে,,, নিজের হাত শক্ত করে মুঠো করে নিজেকে প্রস্তুত করছে আমাল।

খায়েরঃ ওকে চিনতে পারছো সানাহ?

খায়েরের কথায় সানাহ অবাক চোখে তাকিয়ে বলে,,,

সানাহঃ আমার বরকে আমি চিনতে পারবো না এটা আবার কেমন কথা? আর ও কি কোন জায়গার চিফ মিনিস্টার যে আমি ওকে চিনতে পারবো না।

আমাল সানার কথায় দৌঁড়ে ওর সামনে ছুটে আসে। সানার বেডের সামনে হাটু গেড়ে বসে কান্না করতে করতে বলতে শুরু করল আমাল।

আমালঃ স সত্যি সানাহ ত তুমি আমাকে চিনতে পেরেছো ভুলো নি আমায় ( ঠোঁটে হাসি ফুঁটিয়ে)

সানাহঃ আজব তো আমি তোমাকে কেন ভুলবো আর কখন থেকে খুঁজছি তোমায় কোথায় ছিলে হ্যাঁ?? আ’ম সিউর ওই ক্লাবের চুরেল এর কাছে গিয়েছিলে। ভেবেছিলে সানাহ মরে গেলে ওই চুরেল কে বিয়ে করবে। আগেই বলেছিলাম আমি তোমাকে আমাল আমার থেকে পিছ ছাড়ানো এত সহজ না। মরে গেলেও তোমার পিছ ছাড়বো না আমি,,, তাই এসব কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দাও। ( মুখ ফুলিয়ে রেগে)

আমাল শুধু সানাহর কথা গুলো শুনছে। আজ দুই বছর পর ওর সানাহ ওর সাথে কথা বলছে হোক সেটা বকা তাও বলছে তো।

খায়েরঃ আমাল তুমি একটু আমার সাথে আসো মেডিসিন এর ব্যাপারে বুঝিয়ে দেয়।

আমালঃ জ্বি,,,, সানাহ আমি আসছি তুমি দিয়া আর আম্মুর সাথে কথা বলো।

আমাল আর খায়ের বেড়িয়ে গেল কেবিন থেকে।
ওরে যেতেই দিয়া সানার পাশে বসে ওকে বলে।

দিয়াঃ যদি ওই চুরেলকে বিয়ে করতেই হতো তাহলে দুই বছর জিজু তোর জন্য অপেক্ষা করতো না দি।

সানাহঃ দুই বছর মানে?

দিয়া সানাহকে সেদিন থেকে ধরে আজ অবদি সব খুলে বলে। সানাহ অবাক হয়ে শুধু শুনছে। ওদের জীবন থেকে দুইটা বছর হারিয়ে গেছে ভাবতেই অবাক লাগছে ওর কাছে।

আবিদ একটা ছানার বক্স হাতে কেবিনে আসে।

আবিদঃ ওয়েল কাম ব্যাক সানাহহহ,,,,

আবিদ এসে সানাহকে ছানা খাইয়ে দিলো।

সানাহঃ থ্যাংক ইউ আবিদ,,

আবিদঃ তোমার জন্য এগুলো আনতে গিয়েছিলাম তাই লেট হলো। ( বক্স টা পাশে রেখে)

আমাল খায়েরের সাথে কথা বলে কেবিনে ফিরে আসে।

আবিদঃ আই থিঙ্ক ওদের একটু প্রাইভেসি দেওয়া উচিৎ। ( দিয়ার কানে কানে)

দিয়াঃ রাইট। খালামনি তুমি কি এখানে কাবাব মে হাড্ডি হয়ে থাকতে চাও? ( রাহেলার কানে)

রাহেলা রাগি চোখে তাকিয়ে বেরিয়ে গেল কেবিন থেকে। দিয়া আবিদকে চোখ মেরে হেসে দিল তারপর ওরাও কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।

আমাল গিয়ে সানার পাশে বসে ওর হাতে নিজের হাতে নিয়ে হাতে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতে দিতে বলে,,,

আমালঃ আই লাভ ইউ সানাহ,,,

সানাহঃ আ’ম স্যরি আমাল?? ( কান্না ভরা কন্ঠে )

আমালঃ স্যরি কেন?

সানাহ একটু উঁচু হয়ে আমালের বুকে মাথা রেখে বলল।

সানাহঃ আমার কারনে অনেক কষ্ট পেয়েছো তুমি। তোমার জীবনের দুইটা বছর আমি নষ্ট করে দিয়েছি। তুমি আমাকে ভালোবেসে প্রতিদানে শুধু অপেক্ষা পেলে আমাল। I don’t deserve your love.

আমালঃ সেদিন যদি তুমি আমাকে ধাক্কা না দিতে তাহলে তোমার জায়গায় আমি থাকতাম সানাহ। তখন যদি আমি তোমাকে এই কথা গুলো বলতাম কেমন লাগতো তোমার কাছে। অবশ্যই কষ্ট হতো তাইনা?? তাই প্লিজ এ ধরনের কথা আর বলো না। (রাগি ভাবে)

সানাহ সোজা হয়ে নিজের কান ধরে বলে।

সানাহঃ আচ্ছা এখন আর রাগ করো না প্লিজ এই দেখো কান ধরেছি আর এ ধরনের কথা মুখে আনবো না। ( বাচ্চার মত করে)

আমাল ফিক করে হেসে দিল সানার কথায়। তিন দিন সানাহকে হসপিটাল রাখা হয় তারপর ডিস্টার্জ দিয়ে ওকে বাড়ি নিয়ে আসে আমাল।

সানার একটু হাটতে সমস্যা হচ্ছে বাকি সব ঠিক আছে। আমাল হসপিটাল থেকে গাড়ি অবদি সানাহকে কোলে নিয়ে এসেছে আবার গাড়ি থেকে রুম পর্যন্ত কোলে করেই এনেছে।

আমাল সানাহকে বেডে বসিয়ে দিয়ে আবিদের সাথে কথা বলতে যায়।

সানাহ ঘুরে ঘুরে রুমটাকে দেখছে। যেমন আগে ছিল এখনো তেমনি আছে। কেউ বলবে না যে দুই বছর পার হয়ে গেছে। সব আগের মত শুধু একটা জিনিস পরিবর্তন হয়েছে। বেডের সামনে ওদের ছবি। আগের ছবির যায়গায় সেখানে সানাহ আর আমালের বিয়ের ছবি টানানো। আমাল যেমনটা বলেছিল ঠিক সেটাই করেছে।

সানাহ উঠে ছবিটার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ওর চোখের কোন দিয়ে দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। সেদিন যদা সেই ঘটনা টা না হতো তাহলে হয়তো ওদের জীবন আজ অন্যরকম হতো।

আমাল রুমে এসে সানাহকে ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওকে পেছন থেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। আমাল সানার কাধে থুতনি রেখে ছবিটার দিকে তাকিয়ে বলে।

আমালঃ কি ভাবছো সানাহ,,

সানাহঃ অনেক কিছু। সেদিন যদি এক্সিডেন্ট টা না হতো তাহলে আমাদের লাইফ অন্যরকম হতো তাইনা।

আমালঃ হুমম এতোদিনে আমি আব্বি আর। আম্মি হয়ে যেতে।

আমালের কথায় সানাহ ফিক করে হেসে বলতে শুরু করে।

সানাহঃ তুমি কখনো সিরিয়াস হবে না আমাল?( ওর দিকে ঘুরে)

আমাল সানার কোমর জড়িয়ে নিজের কাছে এনে বলে,,,

আমালঃ I’m serious Sanah.

আমাল সানার দিকে এগিয়ে যেতেই সানাহর হার্ট বিট বিদ্যুৎ এর গতিতে চলতে শুরু করে। আমাল সানার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে ওর নাকে ঠোঁট ছোয়ালো তারপর আলতো করে ওর ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়। সানাহ চোখ খিঁচে বন্ধ করে আমালের হাত খামছে ধরে।

আমাল মুচকি হেসে সানার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দেয়।

ষোলো বছর পর,,,,,

আমালঃ সানাহহহহহহ

সানাহ টেবিলে খাবার রাখতে রাখতে বলে।

সানাহঃ আরেহহহ আসছি তো।

সানাহ দ্রুত উপরে আসে। আমাল হাতে টাই নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

সানাহঃ এভাবে চেঁচানো লাগে। এমন লাগছিল যেন রুমে ভুমিকম্প এসেছিল তাই এভাবে ডাকছো। ( টাই বাধতে বাধতে )

আমাল সানার কোমর জড়িয়ে কাছে এনে বলে।

আমালঃ তুমি যেমন জানো না আমি কেন ডেকেছি। আরেহ আমার লেট হচ্ছে স্টুডিও যেতে হবে না?

সানাহঃ প্রতিদিনের কমন ডায়ালগ।

হঠাৎ আমালের ফোন বেজে উঠে। ও সানাহকে ছেড়ে কল রিসিভ করে,,,

আমালঃ হ্যালো!


আমালঃ জ্বি জ্বি আসছি,,,

সানাহঃ কে কল করেছিল?

আমালঃ স্কুলে যেতে হবে,,, (? হাসার চেষ্টা করে)

❤❤ In Aribs High School ❤❤

প্রিন্সিপাল এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে আমাল সানাহ দিয়া আর আবিদ।

আর ওদের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে সানাম আর আয়রাভ।

সানাম আমাল আর সানার মেয়ে বয়স পনের। দেখতে একদম সানার মতো কিন্তু স্বভাবে আমালের মত শয়তানের নানি।

আয়রাভ দিয়া আর আবিদের ছেলে। সানামের থেকে পাঁচ মাসের বড়। ক্লাস টপার দেখতেও পারফেক্ট। অনেক শান্ত কিন্তু একটু রাগী স্বভাবের।

সানাম আর আয়রাভ ছোট থেকে এক সাথে বড় হয়েছে। ওদের ঝগড়া বন্ধুত্ব ভালোবাসা সব আবিদ আমালের মত।

ফিলহাল ওরা দুজন মিলে ওদের ক্লাসমেট কে পিটিয়েছে তাই প্রিন্সিপাল ওদের প্যারেন্টস অর্থাৎ আবিদ আমাল দের ডেকে পাঠিয়েছে।

প্রিন্সিপালঃ তো এখন বলো তোমরা দুজন ক্লাসে মারামারি কেন করছিলে?

আয়রাভঃ নাইম সানামের উপর প্লাস্টিকের বিচ্ছু ছুরে দিয়েছিল। সানাম ভয় পায় এটাকে তাই ওকে পিটিয়েছি।

আবিদঃ যেমন মা তেমন ছেলে বদের হাড্ডি ( আড়চোখে তাকিয়ে)

সানামঃ ইয়েস ম্যাম আর ওই উগান্ডার অধিবাসী আয়রাভকে হিট করেছে মারপিটের সময় তাই আমিও ওকে ইচ্ছে মত কেলিয়েছি। সানাম কি কম নাকি কোন ছেলের থেকে ( ভাব নিয়ে)

সানাহঃ যেমন বাপ তেমন মেয়ে ( আমালের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে)

প্রিন্সিঃ কথাটা কি ঠিক নাইম?

নাইমঃ স্যরি ম্যাডাম। ( মাথা নিচু করে)

ম্যামঃ নেক্সট টাইম এমন কিছু যেন না হয় তোমাদের তিন জনকেই ওয়ার্ন করছি।

তিনজনঃ ইয়েস মিস।

আমাল আবিদ সানাহ আর দিয়ার সাথে কথা বলে প্রিন্সিপাল ওদের বিদায়।

গাড়িতে,,,,

সানাহঃ তোমার মেয়ে একদম তোমার মত হয়েছে পাজি আর গুন্ডি।

আমালঃ আমার মেয়ে আমার মত হবে না তো কার মত হবে সান বেবি আফটার অল শি ইজ আওয়ার ডটার। ( চোখ মেরে )

আমাদের #আশিকি র চিহ্ন ও। একটু তো ডিফারেন্ট হবেই।

আবিদঃ তুমি যেমন জঙ্গলি বিল্লি ছেলেটাও তেমনি হয়েছে। কোথায় আমার মত ভদ্র হবে তানা মায়ের মত ঝগড়াটে হয়েছে।

দিয়াঃ বেশ হয়েছে। আ’ম প্রাউড অফ মাই সান্।

স্কুলে,,,,,

আয়রাভ হাটছে আর তার পিছনে সানাম।

সানাহঃ আয়রাভ আমি আবার কি করলাম তুই আমার উপর রেগে আছিস কেন?? ( হাটতে হাটতে)

আয়রাভঃ আমার পিছনে আসছিস কেন যা ওই নাইমের কাছে যা ওর সাথে তো সকালে ভালোই হাসাহাসি করছিলি।

সানাহঃ তার মানে তুই এজন্য নাইমকে পিটিয়েছিস ( অ‌বাক হয়ে) আমি ভাবলাম আমার উপর বিচ্ছু ফেলায়।

আয়রাভঃ বেশ করেছি।

সানামঃ আচ্ছা বাবা স্যরি আর কখনো কোন ছেলের সাথে কথা বলবো না তুই বাদে।

আয়রাভ থেমে গেল তারপর কপাল কুঁচকে বলল।

আয়রাভঃ সত্যি?

সানামঃ তিন সত্যি এবার তো কথা বল।

আয়রাভঃ তোর উপর কি রেগে থাকতে পারি ?( স্মাইল দিয়ে)

সানাম খুশি হয়ে আয়রাভকে জড়িয়ে ধরলো।

সানামঃ I love you Aayrav but as a friend ? you r the best person in my life….তুই থাকলে আমার আর কোন বন্ধুর প্রয়োজন নেই। you r enough for me.

আয়রাভঃ I love you too but as a friend okay ( নাক টেনে) তুই আমার হাফ গার্লফ্রেন্ড। বন্ধুর থেকে বেশি গার্লফ্রেন্ড থেকে কম বুঝলি।

সানামঃ আর তুই আমার হাফ বয়ফ্রেন্ড। ( হেসে)

আয়রাভঃ তাহলে ফুল বয়ফ্রেন্ড কাকে বানাবি ( রাগি ফেস করে)

সানামঃ উমমম কোন স্পেশাল কাউকে ( ভেবে)

আয়রাভঃ ওকে মেরে পুতে রাখবো মাটিতে। ( রেগে )

সানামঃ বাহ নিজের বেলায় ষোল আনা আর আমার বেলায় চার আনাও না স্বার্থপর কোথাকার।

আয়রাভঃ যা ভাবার ভাব আই ডোন্ট কেয়ার।

আয়রাভ রেগে চলে গেল ওখান থেকে আর ওর পেছনে সানাম। ওর এখন একটাই কাজ আয়রাভকে মানাতে হবেও রাগ ভাঙাতে হবে।

❤❤ The End ❤❤

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে