আমি দূর হতে তোমারে দেখেছি পর্ব-০১

0
1210

#আমি_দূর_হতে_তোমারে_দেখেছি
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#সূচনা_পর্ব

(১৮+ এলার্ট। প্রাপ্তবয়স্ক মনস্কদের জন্য)

বাসরঘরে বসে রাগে দুঃখে অনবরত কান্না করে যাচ্ছে রায়া। হাতের পাশে থাকা টিস্যুবক্সের থেকে টিস্যু নিয়ে ছিড়েই যাচ্ছে সে। নিজের বড় ভাই সমতুল্য চাচাতো ভাইকে বিয়ে করতে হবে এটা সে কোনদিন কল্পনাও করতে পারে নি। একবাড়িতে ছোট থেকে বড় হয়ে ওঠা, এখন পাশাপাশি আলাদা বাসা, যার কাছে নিয়ম করে সন্ধ্যা হলেই পড়তে বসা তাকে কি না বিয়ে করতে হলো! ইহানকে সে কোনদিনই প্রিয় মানুষ হিসেবে কল্পনা করতে পারে নি।
দরজা খুলে ইহানকে ভেতরে আসতে দেখে যেন রাগ মাথায় উঠে যায় রায়ার। গর্জে ওঠে সে। বিছানা থেকে তাড়াতাড়ি করে নেমে এসে ইহানের সামনে দাঁড়ায় । পাঞ্জাবির কলার ধরে কান্না করতে করতে ঝাঁকাতে থাকে।

‘ তুই কি করে পারলি আমার জীবনটা এভাবে নষ্ট করে দিতে? আমি তোকে কোনদিন ক্ষমা করব না, তোকে আমি শেষ করে ফেলব।’

‘ কলার ছাড় রায়া আমার গলায় লাগছে। আমার সাথে একদম বাড়াবাড়ি করবি না ইহান শেখ এগুলো একদম বরদাস্ত করবে না। আর তুই আমার সাথে কোন সাহসে তুই করে কথা বলছিস?

‘ লাগুক, মরে যা তুই। জানতি না তুই যে আমি শাওনকে ঠিক কতটা ভালোবাসি? তারপরও তুই কীভাবে আমার সাথে এতটা খারাপ করতে পারলি? কি ক্ষ*তি করেছিলাম আমি তোর?’

‘ শাওন দুদিন ধরে এসেই তোকে পেয়ে যাবে, আমার সাথে তোর দূরত্ব তৈরি করবে আর আমি তা এত সহজে হতে দেব তাই না? এত সহজ না সবকিছু বুঝেছিস? ছোটবেলা থেকে আমি যা চেয়ে এসেছি সবকিছু পেয়েছি বাবা আমার হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে সবকিছু আর তুই তো একটা সাধারণ মেয়ে।’

‘ আমাকে চাইতে বলেছে কে তোকে? আমাকে না চাইলেই পারতি, তোর এত এত দামি জিনিস চাওয়া আর পাওয়ার মাঝে এই সস্তা সাধারণ মেয়েকে না চাইলেও তো পারতি।’

‘ ইহান শেখ যা চায় সেটাই পায় হোক সেটা আপসে বা ঝামেলা করে হোক সেটা দামি বা সাধারণ কিছু।’

‘ ইহান আমি তোকে আমি খু°*ন করে ফেলব জাস্ট।’

কথাটা বলেই রায়া রুমের এপাশে ওপাশে কিছু খুঁজতে থাকে। তেমন কিছু না পেয়ে মিষ্টির সাথে রাখা কাটা চামচ দেখলে সেটা নিয়েই ইহানের কাছে ফিরে এসে চামচটা ইহানের গলায় ধরে।

‘ এটা দেখেছিস? একদম তোর গলা ফুটো করে দেব। না থাকবে বাঁশি আর না বাজবে বাঁশরি।’

‘ পারলে করে দেখা, যদি না পারছিস এটা করতে তাহলে তুই আজকে শেষ। এসব করে তোর অভ্যাস না থাকলেও এটা আমার অনেকদিনের অভ্যাস। আর আমাকে তোর থেকে ভালো আর কে চেনে বল? তোকে নিজের খারাপ রূপটা দেখাই নি জন্য ভাবিস না কোনদিন দেখাবো না।’

‘ আমাকে ভয় দেখাচ্ছিস তুই? এতদিন তুই ও আমার ভালো রূপ দেখেছিস এবার আমার বাজে রূপটাও দেখে নে। ‘

‘ কথা না কাজ কর। কোনভাবে বেঁচে গেলে তোকে আমি শেষ করে ফেলব রায়া। শেষ বলতে শুধু একেবারে সমাপ্তিকেই বোঝায় না কিছুর সমাপ্তি ঘটিয়ে নতুন কিছু শুরু করাকেও বোঝায়। আর তোকে তো আমি কোন না কোনভাবে শেষ করবই।’

‘ শেষই যেহেতু করবি তাহলে বিয়ে করেছিস কেন?’

‘ তোকে…..

ইহান কিছু বলবে তখনই দরজায় নক করার শব্দ পায়। ইহান দরজার দিকে তাকিয়ে আবার রায়ার দিকে রেগে তাকায়।

‘ তোর তো টাইম শেষ মামা, মে°রে দিতে তো পারলি এবার এই ইহান শেখ এর খেল দেখবি।’

ইহান গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলে দিতেই রায়ার মা রুমে প্রবেশ করে। রায়া তার মাকে দেখে আরও ক্ষি°প্ত হয়ে যায় তেড়ে মায়ের আসে দিকে।

‘ কেন এসেছো তুমি? রায়া ম°রে গেছে নাকি সেটা দেখতে এসেছো? ওর মতো গু°ন্ডার সাথে বিয়ে দিয়ে শান্তি হয় নি তোমার আর তোমার স্বামীর? ম°রেছি কি না সেটা আবার দেখতে এসেছো?’

‘ মুখ সামলে কথা বল রায়া উনি তোর বাবা হন। আর ম°রে যাওয়ার কথা বলছিস তুই? সেটা আগে ম°রতে পারতি না? বেচারার এতদিনের সম্মান তুই নষ্ট করেছিস আর এখন বড় বড় কথা বলছিস? লজ্জা করছে না রে তোর এসব বলতে?

‘ কে বলেছিল তোমাদের আমাকে ফিরিয়ে আনতে? চিল শকুনে নিয়ে যেত তাতে তোমাদের কি?’

‘ রায়া এবার চুপ কর, এতক্ষণ বাজে ব্যবহারের জন্য কিছু বলি নি এবার কিন্তু বড় আম্মুর সাথে খারাপ ব্যবহার করার জন্য মা°র খাবি আমার হাতে। তোকে তাদের মান-সম্মান নিয়ে খেলা করার অধিকার কে দিয়েছে?’ ( ইহান)

‘ তুই আমাদের মাঝে কথা বলার কে? সবসময় অন্যদের কথার মাঝে ঢুকে পড়ার স্বভাব বাদ দে।’

‘ রায়া ইহানের সাথে একদম বাজে ব্যবহার করবি না
আমি যদি শুনেছি যে তুই ইহানের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিস তাহলে খুব খারাপ হবে। তুই আমার বাসার চৌকাঠের ভেতরেও আসবি না কোনদিন। এই যে তোর লাগেজ এখানে তোর জামাকাপড় রাখা আছে। কোন কারণ দেখিয়ে যেন আমার বাড়ি যাবি না তুই।'(রাবেয়া, রায়ার মা)

কথাগুলো বলেই রায়ার মা হনহন করে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। রায়া কি করবে বুঝতে পারে না। ও বাড়িতে যেতে পারবে না মানে সে কি এখানে থাকবে নাকি! কোনদিনই তা সম্ভব না তার পক্ষে যে করেই হোক এখান থেকে বের হতে হবে। এখনে ফেলা প্রতিটা নিঃশ্বাস যেন আবার বিষা°ক্ত হয়ে আবার তার কাছে ফিরে আসছে।
রায়ার মা চলে যাওয়ার পরপরই রায়া বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। যেই ভাবা সেই কাজ রাগ করে বাহিরে যেতে উদ্যোত হয় ইহান সাথে সাথে রায়ার হাতটা খপ করে ধরে ফেলে।

‘ তুই কি ভেবেছিস রাহাব শেখের মান সম্মান নষ্ট করেছিস তার মেয়ে হয়ে এখন কি আমি আমার মান সম্মান ডোবাতে দেব নাকি?’

‘ মানে? আমাকে ছাড় তুই ইহান। আমি তোর সাথে এক ছাদের নিচে এক রুমে রাত কাটাতে পারব না। আজকে থেকে আমার কেউ নেই, আমি একা।’

‘ শুধু এক রুমে কেন রাত কাটাবি? এক বিছানায় আমার পাশে শুয়ে স্বামীর অধিকার দিয়ে তারপর আজ তোর রেহাই।’

‘ ম মা মানে?’

‘ মানে? চল তোকে বুঝিয়ে দিচ্ছি।’

‘ ইহান একদম আমাকে স্পর্শ করার সাহস দেখাবি না তোর হাত আমি ভেঙে গুড়িয়ে দেব বলে দিলাম।’

‘ খু°ন যেহেতু করতে পারিস নি সেহেতু হাত ভেঙে গুড়িয়ে দিতেও পারবি না। ইহান শেখ এর গায়ে হাত তোলা এত সহজ হয় মিসেস ইহান।’

‘ তোর পদবির আর তোর নামের আমি কাথায় আগু°ন দেই৷ আমি আগেও রায়া শেখ ছিলাম আর এখনও আছি ভবিষ্যতেও থাকব।’

‘ আগে ছিলি, এখন তুই আমার পরিচয়ে পরিচিত আর ভবিষ্যতেও তাই শেখ তো শেখই থেকে যাবি তাই না!।’

‘ আমার হাত ছাড় ইহান।’

‘ এখন তো হাত ধরেছি, আরও অনেককিছু বাকি।’

কথাটা বলেও ইহান রায়ার হাত ছেড়ে কোমর চেপে ধরে। ইহানের এহেন আচরণে রায়া চমকে যায়। বারবার ইহানকে ছাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু ইহান ছাড়ার পাত্র না।

‘ তোমার কি মনে হয় জান আমি তোমাকে আজ রাতে এমনি এমনি ছেড়ে দেব? সবার সামনে তিনবার কবুল বলে তোমার সব দায়িত্ব আমি নিয়েছি। আমাকে খুশি করার দায়িত্ব তো তোমাকে নিতেই হবে।’

‘ ইহান ছেড়ে দে আমাকে নইলে কিন্তু আমি চেঁচামেচি করব বলে দিলাম।’

ইহান এবার রায়াকে নিজের এক সাইডে চেপে ধরে টেনে সাউন্ডবক্সের কাছে নিয়ে যেয়ে গান চালিয়ে দেয়। উচ্চস্বরে হেসে বলে চিৎকার দাও জান জোরে চিৎকার দাও আজ তোমাকে কেউ শুনবে না।

ইহান এবার রায়াকে কোলে তুলে নেয়। রায়া ইহানের বুকে আঘা°ত করেই যাচ্ছে। ইহানের সেদিকে নজর নেই, রায়ার আঘা°ত যেন কোনভাবেই তাকে স্পর্শ করছে না। ইহান রায়াকে কোলে থেকে বিছানায় ফেলে দেয়।
রায়া এবার ভয় পেয়ে যায়, তার মতো সাধারণ নারীর এত ক্ষমতা নেই যে কি না ইহানের মতো জিম করা ছেলের ছেলের সাথে শক্তিতে কুলিয়ে উঠতে পারবে।

‘ না ইহান তুই আমার সাথে এমনটা করতে পারিস না। আমি তোকে আমার স্বামী হিসেবে মানি না আর জীবনেও তোকে আমি মানবো না।’

‘ তুই আমি দুজনেই কবুল বলে একে অপরকে স্বীকার করে নিয়েছি। অনেকে সাক্ষী আছে, আর তুই কি না বলছিস মানিস না? মামার বাড়ির আবদার নাকি! বিয়ে করেছি কি শুধু তোর এই রূপ দেখার জন্য নাকি? আর কোন কথা না, কোন কথা না ডার্লিং। আর এতক্ষণ আমার নাম ধরে ডাকা, তুই করে কথা বলার শা*স্তি তো তোকে পেতেই হবে।

ইহান এক টানে রায়ার শাড়ির আঁচল বুকের ওপর থেকে সরিয়ে দেয়। রায়াকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। রায়া আর নিজেকে রক্ষা করতে পেরে ওঠে না ইহানের হাত থেকে। রায়া ইহানের কাছে থেকে কিছুতেই ছাড়াতে পারে না। তবুও রায়া নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেই যাচ্ছে, বারবার চিৎকার করছে কিন্তু কিছুতেই কাজ হয় না।

চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে