আমার ভীনদেশী৷ এক তারা পর্ব-০২

0
676

#আমার_ভীনদেশী_এক_তারা
#পর্ব২
#Raiha_Zubair_Ripte

এনা জানালা টা দিয়ে বারবার উঁকি দিয়ে দেখছে ক্ষনে ক্ষনে। মানুষ কেনো এমন করছে নাহ এভাবে আর কতক্ষণ!লোকটার তো জ্বর আসবে এতো ভিজলে। এনা চোখ মুখ মুছে দরজা খুলে আরাভের রুমের ভেতর ঢুকে এক নিঃশ্বাসে বলে,,

” ভাইয়া উনাকে এভাবে নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে মানা করো। অসুস্থ হয়ে পড়বে তো।

আরাভ জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে ছিলো। দৃষ্টি তার পিটারের দিকে নিবন্ধ। তপ্ত শ্বাস ছাড়লো। ছাতা টা হাতে নিয়ে যেতে যেতে এনার উদ্দেশ্যে বলল,,

” এখন ও ভাবছো তাকে নিয়ে তুমি বাহ !

এনা আরাভের যাওয়ার দিকে একবার তাকিয়ে জানালা দিয়ে পিটারের দিকে তাকায়। পিটার এক ধ্যানে এনার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটাকে ভালোমতো দেখে তৃষ্ণা মেটাতে পারে নি তখন তাই তো আরেকবার দেখে তৃষ্ণা মেটানোর জন্য এই ঝড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে।

আরাভ ছাতা টা মাথায় নিয়ে পিটারের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,,

” তুই কি আসলেই পা’গল পিটার এই ঝড়ের মধ্যে কেউ দাঁড়িয়ে থাকে? তোর মা জানতে পারলে কি হবে ভেবে দেখেছিস?

পিটার আরাভের কথার প্রতিত্তোরে মুচকি হাসে। আরাভের দিকে তাকিয়ে বলে,,

” কখনো কাউকে ভালোবেসেছিস আরাভ? ভালোবাসলে বুঝতে পারতি তাকে পেয়েও হারানোর যন্ত্রণা টা।

আরাভ মুচকি হাসে। মনে মনে বলে,, তুই তো তবুও ভালোবাসার মানুষটাকে খনিকের জন্য পেয়েছিলি আর আমি একতরফা শুধু ভালোবেসেই গেলাম তাকে,কেউ জানলো না সে কথা। না পারলাম তাকে বলতে আর না পারবো তাকে নিজের করে রাখতে। ভাগ্য বড়ই নিষ্ঠুর । ভাগ্যের উপর এক আকাশ সমান অভিযোগ আমার।

পিটার আরাভের দিকে তাকিয়ে বলে,,

” বাসার ভেতরে যা তুই তোর মা দেখলে রাগারাগি করবে।

কথাটা বলে পিটার আরাভদের বাড়ির উল্টোপাশে থাকা বাড়িটাতে ঢুকে পড়ে। আরাভ সেদিকে চেয়ে নিজের বাড়ি চলে আসে।

পিটার ভেজা শরীর নিয়ে নিজের বাসার ড্রয়িং রুমে ঢুকতেই পিটারের মা অ্যাডেলা এগিয়ে এসে পিটারের সামনাসামনি দাঁড়ায়। কপাট রাগ দেখিয়ে ছেলের উদ্দেশ্যে বলে,,

” তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে পিটার?শুনলাম মেয়েটা আবার এ দেশে এসেছে। তাকে দেখে কি তোমার পুরোনো প্রেম জাগ্রত হচ্ছে? তাহলে বলবো আমাকে দেওয়া ওয়াদা টা যেনো মনে থাকে তোমার।

( তাদের কথপোকথন ইংলিশে)

পিটার একবার তার মায়ের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে কিছু না বলেই সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়। পেছন থেকে অ্যাডেলা বলে উঠে,,

” তাড়াতাড়ি কাপড় পাল্টে নিয়ো। জ্বর আসবে তা না হলে।

পিটার পেছনে না চেয়ে বলে উঠে,,

” আমাকে নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না।

কথাটা শুনে অ্যাডেলা ফুসতে থাকে মেয়েটা দেশে পা রাখতে না রাখতেই আবার তার ছেলেটাকে বশ করে ফেলছে।

পিটার রুমে এসে ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে আলমারি থেকে একটা অ্যালবাম বের করে । অ্যালবাম টা খুলতেই এনার একটা হাস্যজ্বল ছবি দেখতে পায়। দিনটি ছিল শুক্রবার। এনা সেদিন শুভ্র রংয়ের স্কার্ট পড়েছিলো। রাদারফোর্ড লাইব্রেরি তে বসে এনা পিটার কে বাংলা ভাষা শেখাচ্ছিল। বাংলা ভাষা টা মূলত এনার জন্যই শেখা। এ বাড়ির একমাত্র পিটারই বাংলায় কথা বলতে পারে। আগে বাংলা ভাষায় কথা বলতে গেলে ভুলভাল বলে ফেলতো, আটকে যেতো প্রায় সময়ই। তখন এনা পিটারের বাংলা বলা দেখে হেসে কুটিকুটি হয়ে যেতো। একজন জন্মগত ইংরেজের মুখে প্রথম বাংলা শুনলে তাদের বলার স্টাইল দেখে যে কেউই হেঁসে দিবে। এনাও হেঁসে ফেলছিলো। এনার হাসি দেখে সেদিন কপাট রাগ করেছিল পিটার তবে সেই রাগ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়ে থাকতে পারে নি। এনা যখন পিটারের রাগ দেখে পিটারে কোলে বসে গালে ভালোবাসার ছোট্ট পরশ এঁকে দিয়েছিলো সব রাগ যেনো উধাও হয়ে গিয়েছিল। কথটা মনে পড়তেই পিটারের মুখে হাসি ফুটে উঠে। অ্যালবামলর পরের পৃষ্ঠা টা উল্টাতেই এনার আরেক টা ছবি দেখতে পায়। ছবিটা দেখে বুকটা মোচড় দিয়ে উঠে পিটারের। ছবিটা প্রায় আজ থেকে ছয় বছর আগের ছবি।

আজ ও চোখের সামনে ভেসে উঠে সেই দিনে মেয়েটার আর্তনাদ। দেশে ফিরে যাওয়ার আগের দিন। পিটার অ্যালভাম টা বুকে জড়িয়ে ধরে। সে বড্ড নিরুপায় নিজের ভাগ্যের কাছে। মাঝে মাঝে তার মনে হয় কেনো সে ভিন্ন ধর্মের হয়ে জন্ম নিলো। তার ভালোবাসার কাছে তো সেদিন এই ধর্মই বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো আজ ও তাই আছে।

অ্যালবাম টা বিছানায় রেখে ড্রয়ার থেকে সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট নিয়ে বেলকনিতে চলে আসে। নিকোটিনের কালো ধোঁয়া টান দিয়ে নাক, মুখ দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে পিটার। সেই সাথে মনের ভেতর থাকা লুকায়িত কষ্ট গুলো।

” এভাবে আর কতোদিন চলবে পিটার? আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি আপনায় এভাবে দেখতে দেখতে। বিশ্বাস করুন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে আমার।

পিটার সিগারেট টা হাতে নিয়ে আড় চোখে হেলেনের দিকে তাকায় ভ্রুকুটি করে বলে,,“তোমাকে কে বলছে অহ তুমি তো আবার বাংলা বুঝো না” পিটার নিজেকে ধীরস্থির করে বলে,,

” কে বলেছে তোমায় আমাকে দেখতে? আমি কি বলেছি? শুধু টাইম নষ্ট হচ্ছে তোমার।

হেলেন তপ্ত শ্বাস ছাড়লো। পিটারের দিকে না তাকিয়ে দূর আকাশের কালো মেঘগুলোর দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,,

” আপনার মা আমাকে উঠে বসতে বলে এত দিনেও কেন আমি আপনাকে আমার ভালোবাসায় বাঁধতে পারিনি? আপনি কি জানেন আমি অ্যাঞ্জেলিকাকে নিয়ে খুব চিন্তিত। অ্যাঞ্জেলিকার ভবিষ্যত কি?

পিটার হাতে থাকা সিগারেট টা বাহিরে ফেলে দিয়ে চোখমুখ শক্ত করে বলে,,

” অ্যাঞ্জেলিকার বাবা আছে। অ্যাঞ্জেলিকার ভবিষ্যত নিয়ে তোমার না ভাবলেও চলবে। আর তুমি আমার ঘরে নক না করে ঢুকবে না।

হেলেন টলমল চোখে একবার পিটারের দিকে তাকায় গলা ধরে আসছে তার।

” আজ শুনলাম আপনার সেই ভালোবাসার মানুষটা এদেশে এসেছে। মেয়েটা নিশ্চয়ই খুব রূপবতী তাই না? আচ্ছা এখনো কি মেয়েটাকে ভালোবাসেন আপনি? এর জন্যই কি আমায় আজও মেনে নিতে পারেন নি?

পিটার হেলেনের দিকে রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

এদিকে আরাভ ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টি থেমে গেছে ঘন্টা খানেক হবে। আরাভের মন আজ বিষন্নতায় ভরা। ভালোবাসার মানুষটাকে কেনো এতো ভালোবেসে চেয়েও পাওয়া যায় না? আরাভ পকেট থেকে ফোনটা বের করে গ্যালারিতে ঢুকে একটা ছবি ওপেন করে। মেয়েটার হাস্যজ্বল ছবিটা দেখে আরাভ মুচকি হাসে। মেয়েটার ছবিটাতে হাত বুলিয়ে আকাশের কালো মেঘগুলোর দিকে তাকিয়ে বলে,,

” হে বিধাতা এমন ভালোবাসা আর কারো মনে সৃষ্টি হতে দিয়ো না যেই ভালোবাসার প্রাপ্তির কোনো স্থান নেই। ভালোবাসলে যে এতো দহনে পুড়তে হয়! সে দহন কুলানোর সাহস হয় না।

” আরাভ ভাই তুমি এতো রাতে ছাঁদে?

হঠাৎ পেছন থেকে বলা কথাটা আরাভের কর্ণকুহর হতেই আরাভ তড়িঘড়ি করে ফোনটা পকেটে ঢুকাতে নিবে এমন সময় আরাভের হাত ফসকে ফোনটা নিচে পড়ে যায়। আরাভ এনার দিকে তাকিয়ে মেকি হাসি দিয়ে ফোনটা তুলে আর মনে মনে বলে,,“ ম’রার উপর খাঁড়ার ঘা এসে হাজির।

#চলবে?

( ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দিবেন। গল্পটা কেমন লাগছে কমেন্ট করে জানাবেন হ্যাপি রিডিং)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে