আকাশ জুড়ে তারার মেলা পর্ব-০৬

0
1044

#আকাশ_জুড়ে_তারার_মেলা
#পর্ব_৬
#লেখিকা_N_K_Orni

ইফাদ ওখানে এসে তানিশাকে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। এভাবে হঠাৎ করে জড়িয়ে ধরায় তানিশা কিছুটা কেঁপে উঠলো। তারপরও সে নিজেকে সামলে বলে উঠল,

— আপনি এভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন কেন?

তানিশার কথার প্রতি উত্তরে ইফাদ ওই একি অবস্থায় দাঁড়িয়ে বলে উঠল,

— আমার বউ আমি জড়িয়ে ধরেছি। তোমাকে কেন বলব?

তানিশা তখন না চাইতেও বলে উঠল,

— তা আপনার বউ কে ?

— কি জানি, হবে কেউ একজন।

এবার আর তানিশা কিছু বলল না। তারা দুজন ওভাবে দাঁড়িয়েই আকাশ দেখতে লাগল। কিছুক্ষণ পর ইফাদ তাকে ছেড়ে দিয়ে ধীরে ধীরে সামনে ঘোরালো। তারপর ওর দুই গালে হাত রেখে বলে উঠল,

— বিয়েটা যেভাবেই হোক আমি কিন্তু তোমার স্বামী। কিন্তু তুমি কেন আমাকে পছন্দ করো না? এর একটা না একটা কারণ তো অবশ্যই থাকবে? প্লিজ বলো। কেন তুমি আমাকে পছন্দ করো না?

তানিশা ওভাবেই দাঁড়িয়ে থাকল। মুখে কিছু বলল না। কারণ এর উত্তর যে সে নিজেও জানে না। তানিশাকে চুপ করে থাকতে দেখে ইফাদ আবারও বলে উঠল,

— তোমার বাবার জন্য তাই না?

তানিশা এবার ইফাদের চোখ থেকে চোখ সরিয়ে নিল। ইফাদ হালকা হেসে তার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিল। হঠাৎ এমন হওয়ায় তানিশা চোখ বড়ো বড়ো করে ফেলল। কিছুক্ষণ পর ইফাদ তাকে ছেড়ে দিল। তানিশা মাথা নিচু করে ফেলল। সে ইফাদের দিকে তাকাতে পারছে না। সে ওই অবস্থাতেই এক দৌড়ে বারান্দায় থেকে রুমে চলে গেল। যেটা দেখে ইফাদ ঠোঁট চেপে হাসল। তারপর সে আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিল। একটু পর ইফাদ রুমে চলে এলো। সে এসে দেখল তানিশা ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইফাদ তখন ওর কাছে গিয়ে বলে উঠল,

— তুমি আমাকে ছাড়াই ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছ?

ইফাদের কথা শুনে তানিশা ভ্রু কুচকে বলে উঠল,

— কেন? আপনি কি বালিশ নাকি যে আপনাকে ছাড়া ঘুমানো যাবে না? তবে শুনে রাখুন ঘুমানোর জন্য বালিশ, বিছানা এসবের দরকার হয় না। শুধু দুই চোখে ঘুম থাকলেই ঘুমানো যায়।

ইফাদ এবার অবাক হয়ে বলে উঠল,

— তাহলে তুমি মনে করো জঙ্গলে হারিয়ে গেলে। ঘুম পেলে কি তুমি ওই জঙ্গলের নিচেই শুয়ে পড়বে?

তানিশা এবার বেশ বিরক্ত হয়ে বলল,

— আমার জঙ্গলে যাওয়ার ইচ্ছা নেই। তাই ওখানে ঘুমানোরও প্রশ্নই ওঠে না।

— আমি তোমাকে ভাবতে বলেছিলাম।

— কিন্তু আমি এখন ভাবতে চাই না। আমি এখন ঘুমাতে চাই।

তানিশার কথা শুনে ইফাদ মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। এরপর তানিশা শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পর ইফাদ এসে তার পাশে শুয়ে পড়ল। তানিশা একবার সেদিকে তাকিয়ে একটু সরে গেল। সেটা দেখে ইফাদ তার একদম কাছে চলে গেল। তারপর তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওর কানে ফিসফিস করে বলল,

— এবার ঠিক আছে।

তানিশা ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে উঠল,

— কেউ আমাকে জড়িয়ে ধরলে আমি ঘুমাতে পারিনা।

— কিন্তু তুমি তো একটু আগেই বলললে যে তোমার ঘুমানোর জন্য নাকি কিছুই দরকার হয় না। শুধু দুই চোখে ঘুম থাকাই যথেষ্ট। তাহলে আমি জড়িয়ে ধরলে সমস্যা কই? তাই চুপচাপ ঘুমাও।

তানিশা এবার নিজেই জালেই ফেঁসে গেল। সে আর কিছু বলতে না পেরে ওভাবেই ঘুমিয়ে গেল। ইফাদ সকালে উঠতেই দেখল তানিশা বাচ্চাদের মতো করে তার বুকের সাথে মিশে আছে। যেটা দেখে সে হালকা হাসল। তারপর হাত দিয়ে তানিশা মাথায় বুলিয়ে দিল। হঠাৎ কি মনে করে সে টুপ করে তানিশার মুখে একটা চুমু দিল। তারপর উঠে চলে গেল। এদিকে তানিশা তো এখনো ঘুমিয়েই আছে। বেশ কিছুক্ষণ পর তানিশা উঠল। সে উঠে দেখল ইফাদ তৈরি হচ্ছে। সে ভাবল হয়তো অফিস যাবে বলে তৈরি হচ্ছে। তানিশা উঠে ইফাদের সামনে দাঁড়াল। তারপর বলল,

— শুনেন! বাবা যতদিন না সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরছেন ততদিন আমি প্রত্যেকদিন বাবার সাথে দেখা করার জন্য হসপিটালে যাব। আপনি কিন্তু না করতে পারবেন না।

— আচ্ছা। তোমার বাবা জানেন যে তুমি আমাকে বিয়ে করেছ?

— না এখনো বলা হয়নি। উনি বাসায় ফিরলেই তারপর বলব। তার আগে না। অসুস্থ অবস্থায় এসব শুনতে বাবা আরও অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন।

— ওহ। মনে করে বলে দিও। পরে যেন আবার কথা ঘুরিয়ে না। তোমার বাবা যাই বলুক তুমি কিন্তু আমার স্ত্রী আর সেটাই থাকবে। এখন উনি না মানলে কিছু করার নেই। আর তুমিও এখন আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভুলেও ভাববে না।

বলেই ইফাদ তৈরি হওয়ায় মনোযোগ দিল। তানিশা কিছুক্ষণ ওভাবেই দাঁড়িয়ে রইল। তারপর সে একটা ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর তানিশা ফিরে এলো। সে এসে দেখল রুমে ইফাদ নেই। তানিশা ভাবল যে সে হয়তো অফিসে চলে গেছে। সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুল মুছতে লাগল। একটু পর কালকে রাতের সেই মেয়েটা রুমের সামনে এলো। যেহেতু দরজা খোলা ছিল, তাই তানিশা আয়নাতে তাকে দেখতে পেল। সে তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে উঠল,

— ভেতরে এসো।

মেয়েটা ভেতরে এসে বলল,

— ম্যাম স্যার আপনাকে ব্রেকফাস্ট করার জন্য ডাকছেন। উনি আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন। আর আপনাকে তাড়াতাড়ি যেতে বলেছেন।

মেয়েটার কথা শুনে তানিশা মনে মনে বলল,

— তার মানে ইফাদ এখনো যাননি।

— আচ্ছা তুমি যাও। আমি আসছি।

মেয়েটা চলে গেল। কিছুক্ষণ পর তানিশা ডাইনিং রুমে গেল। সে চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলল,

— আপনি এখনো যাননি? আমি তো ভেবেছি আপনি অফিসের জন্য বেরিয়ে গেছেন।

— অন্য দিন হলে বেরিয়ে যেতাম। কিন্তু তোমার সাথে ব্রেকফাস্ট করার জন্য থেকে গেছি।

— ওহ।

তানিশা ব্রেকফাস্ট শেষে রুমে চলে এলো। তখন ফাহিম দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলে উঠল,

— ভাবি আসব?

তানিশা পেছনে ঘুরে বলল,

— হ্যাঁ ভাইয়া আসেন।

ফাহিম ভেতরে এসে বলল,

— আপনি আমার ফোন নাম্বার নিয়ে রাখেন। আপনি হসপিটালে যাওয়ার আগে আমাকে কল দিয়েন। আমি চলে আসব আপনাকে নিতে। স্যার বলেছেন আপনি কোথাও বের হলে আপনার সাথে যেতে।

— আচ্ছা।

তানিশা ফাহিমের নাম্বার নিয়ে রাখল। বিকালের দিকে সে বের হলো হসপিটালে যাবে বলে। ফাহিম গিয়ে তানিশা পৌঁছে দিয়ে এলো। তানিশা ওখানে কিছুক্ষণ কাটিয়ে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে এলো। এভাবে আরও দুই দিন কেটে গেল। এই দুই দিনে তানিশা আর ইফাদের সম্পর্ক আগের মতোই আছে। কোনো পরিবর্তন হয়নি। আজকে তানিশা তানিশা সকাল সকাল তৈরি হচ্ছে হসপিটালে যাবে বলে। কারণ আজকে তার বাবাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হবে। তাই তার বেশ আনন্দ হচ্ছে। তবে একদিকে ভয়ও হচ্ছে। তার বাবা এই বিয়েটা কীভাবে নেবেন সেটা নিয়েই ওর চিন্তা। তিনি যদি জানতে পারেন তার বিয়ে ইফাদের সাথে হয়েছে তাহলে তিনি অনেক রেগে যাবেন এটা তানিশা নিশ্চিত। কিন্তু পরবর্তী প্রতিক্রিয়া কেমন হবে সেটা নিয়ে সে চিন্তায় আছে। একটু পরে তানিশা হসপিটালে চলে গেল। ওখানে গিয়ে দেখল তিনা, তিহান, ওর মা সবাই আছে। একটু পর সব নিয়ম পালন করে আজাদ সাহেবকে বাসায় নিয়ে আসা হলো। তানিশা তার মায়ের কাছে গিয়ে বলল,

— মা বাবা বিয়ের বিষয়ে কি বলবে? বাবা জানলে তো অনেক রেগে যাবেন।

— আচ্ছা আমি বলে দেখব। তারপর দেখা যাবে উনি কি করেন?

চলবে,,,

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে