অপ্রিয় প্রিয়জন পর্ব-০৫

0
546

#অপ্রিয়_প্রিয়জন
#Fiza siddique
#পর্ব-5

ডঃ মেঘ নিজের কেবিনে গিয়ে পেশেন্টের ফাইল নিয়ে বেশ কিছুক্ষন ঘাটাঘাটি করার পর রুম থেকে ওটির দিকে যেতে থাকেন, কিন্তু করিডোর এর কাছে এসে তার পা থেমে যায়। তারপর একজন নার্সকে ডেকে ভিতরে কি হচ্ছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন,

স্যার আসলে উনি আমাদের কলেজের থার্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট, বৃষ্টি। এককথায় সবার প্রান উনি, বাচ্চা থেকে শুরু করে বয়স্ক সবাই ওনার ফ্যান, প্রতিদিন এই সময়টা উনি এই মানুষগুলোর সাথে কাটান। বৃষ্টিকে দেখলে সবাই যেন ভুলে যায় যে তারা অসুস্থ আর হসপিটালে এডমিটেড। আজ এই বয়স্ক দাদুটার জন্মদিন তাই উনি নিজে থেকে এসব আয়োজন করেছেন। নার্সের কথা শুনে মেঘের মুখে হাসি ফুটে ওঠে, তারপর নার্সকে উদ্দেশ্য করে বলে, আচ্ছা ধন্যবাদ, এখন আপনি আপনার কাজে যান। বলেই পা বাড়ায় বৃষ্টির দিকে-

কি ব্যাপার হসপিটালে এত আওয়াজ কিসের? আর এসব কেক, বেলুন দিয়ে সাজানো এগুলো কি? আমাকে কেউ আকটু বলবেন? মেঘের এমন করে বলা দেখে বৃষ্টির ভয় হতে শুরু করলো, তাও নিজেকে যথাযথ সামলে নিয়ে আসতে আসতে বললো আসলে স্যার আজকে দাদুর জন্মদিন, এমন দিনে এভাবে থাকায় সকাল থেকে দাদুর মনটা ভীষণ খারাপ ছিলো, তাই এই সামান্য আয়োজন করেছিলাম দাদুর মন ভালো করার জন্য।

মিস. বৃষ্টি! আমি কি আপনাদের সাথে শামিল হতে পারি?
বৃষ্টি যেনো একটা বড়সড় ধাক্কা খেল, ও তো ভাবছিল এই বুঝি কথার ঝুড়ি বর্ষন হবে তার উপর। বৃষ্টি এতটাই শক যে উত্তর দিতেই ভুলে গেছে সেটা দেখে মেঘ নিজে থেকেই দাদুর পাশে বসে দাদুকে বললো, দাদু তোমার নাতনি তো আমাকে মনেহয় থাকতে দিতে চায়না এখানে, তুমি অন্তত একটু রহম করো এই নাতিটার উপর। তারপর সবাই মিলে কেক কেটে দাদুকে খাইয়ে দিয়ে নিজেদের কাজে চলে গেলো, আর যাওয়ার সময় মেঘ ইচ্ছে করে বৃষ্টির গালে কেক লাগিয়ে দিয়ে চলে গেলো, এমন ভাব যেনো কিছুই করেনি।

পরেরদিন সকালে প্রথম ক্লাস মেঘ স্যারের আর এদিকে রাস্তায় জ্যামের কারনে বৃষ্টির কলেজে আস্তে বেশ কিছুটা লেট হয় তাই তাড়াহুড়ো করে সিড়ি দিয়ে ওঠার সময় শক্ত কিছুর সাথে ধাক্কা খায়, আর বলে আল্লাহ! সিড়ির মাঝখানে খাম্বা কোথা থেকে আসলো আবার, বলেই মাথা উচু করে তাকাতেই ভয়ে আ আ আ আ আ করে চিল্লিয়ে পড়ে যেতে নিলে হাত ধরে ফেলে মেঘ, তারপর টান দিয়ে নিজের বুকে নিয়ে এসে বেশ রেগে বলে, আমাকে দেখে তোমার খাম্বা মনে হয়? বৃষ্টি আমতা আমতা করে বলে সরি স্যার, আসল আমি বুঝতে পারিনি। তো এখনও কি বুঝতে পারছেন না মিস. বৃষ্টি যে আপনি কোথায় আছেন?

নিজেকে এভাবে স্যারের বুকে দেখে তাড়াতাড়ি করে ছেড়ে দিয়ে দূরে গিয়ে সরি স্যার বলেই ভো দৌড়, একেবারে সোজা ক্লাসরুমে। ওই পরিস্থিতির কথা ভেবেই বৃষ্টির লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে, ইশ কাল থেকে স্যারের সামনে কেনো যে এমন পরিস্থিতিতে পড়ছি, এখন স্যার আমার ব্যাপারে নাজানি কি ভাবছে। তারপর যথারীতি মেঘের ক্লাস শেষ হয়।

এভাবেই চলতে থাকে দিন, এমনিতেই মেঘকে আইডিয়াল হিসেবে মনে করতো বৃষ্টি, আর এখন মেঘের ক্লাস করে, সামনে থেকে মেঘকে দেখে ওনার প্রতি সম্মান আরো বেড়ে যায়। এসব ভাবতে ভাবতে ক্যান্টিনের দিকে যাচ্ছিল বৃষ্টি, হটাৎ দুটো হাত ওকে টেনে একটা রুমের মধ্যে নিয়ে আসে।

ভয়ে কেপে ওঠে বৃষ্টি, কারন রুমটা সম্পূর্ণ অন্ধকার আর এই অজানা মানুষটার উদ্দেশ্য কী সেটাও ঠাহর করতে পারছেনা, তাই অজানা ভয়ে মাঝে মাঝে কেপে উঠছে। আর ওই অজানা ব্যাক্তি গলার কাছে মুখ এনে জোরে জোরে শ্বাস টেনে নিচ্ছে, ঠিক যেমন ভাবে আমরা কোনো প্রিয় ফুলের ঘ্রান নিই। লোকটার এমন কাজে যেনো জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলার অবস্থা বৃষ্টির, তাও কোনরকমভাবে নিজেকে সামনে ধাক্কা দেয় লোকটাকে, আর বলে এসব কি ধরনের অসভ্যতামি করছেন আপনি? আর কে আপনি? এভাবে আমাকে টেনে আনার মানে কি?

বৃষ্টির এমন অবস্থা দেখে লোকটার যেনো ভীষণ আনন্দ হচ্ছে, তারপর আস্তে আস্তে কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে – আমাকে এভাবে পাগল করে দিলে কেনো তুমি? তোমার নেশায় পড়ে গেছি আমি প্রিয়তমা। এদিকে এতক্ষন বৃষ্টি হাত দিয়ে দরজার নব খোলার চেষ্টা করছিল, লোকটার কথায় কোনো খেয়ালই তার ছিলনা, তারপর হুট করে দরজা খুলে দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে যায়। বেরিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে, আরো কিছুক্ষন ওখানে থাকলে নিশ্চিত জ্ঞ্যান হারাতো, কিন্তু লোকটা কে ছিল? আপাতত এসব ভাবনা বাদ দিয়ে ক্লাসে চলে যায় কারন কিছুক্ষনের মধ্যেই মেঘের ক্লাস। আর যাই হয়ে যাক এই ক্লাসটা বৃষ্টি কখনও মিস করেনা, এমনকি বাকিরাও করেনা। যদিও বাকিরা স্যারের উপর ক্রাশ নামক বাঁশ খেয়ে ক্লাস করতে আসে, আর বৃষ্টির স্যারের প্রতি ভালোলাগাটা সম্মানের ভালোলাগা।

আজ মেঘ একটা মিষ্টি রংয়ের শার্ট পড়েছে সাথে ছাই রঙের প্যান্ট আর হতে একটা কালো ঘড়ি। সব মেয়েরাই যেনো চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে স্যারকে, ক্লাসের পড়া শোনার থেকে বেশি তারা মেঘকে দেখে যাচ্ছে। এদিকে বৃষ্টির তো এদিকে কোনো নজরই নেই, সে তো ব্যাস্ত মেঘের পড়াগুলো নোট করতে, এসব দেখে কোনরকমে ভেতরে ফুঁসে ফুঁসে ক্লাসটা শেষ করে বেরিয়ে যায়। তারপর নিজের কেবিনে গিয়ে, এই মেয়েটা এমন কেনো! আমি নিজেকে ওর জন্য তৈরি করি অথচ ওই ছাড়া বাকি ক্লাস আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে, মাঝে মাঝে নিজের উপর রাগ হয়। এতোগুলো বছর কখনও কোনো মেয়ের দিকে তাকাইনি, এত সুন্দরী সুন্দরী মেয়েদের প্রপোজাল ফিরিয়ে দিয়েছি তাই বোধ হয় ওদের বদ্দুয়া লেগেছে আমার, তাইতো আজ এমন একটা মেয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি যার কাছে আমার কোনো গুরুত্বই নেই। তারপর কিছু একটা ভেবে আপন মনেই হেসে ওঠে।

মিস. বৃষ্টি আমার কেবিনে আসুন তো একটু। এটুকু বলেই নিজের কেবিনের উদ্দেশ্যে চলে যান আর পিছন পিছন বৃষ্টিও যায়।

জ্বী স্যার! বলুন। আর স্যার আমি আপনার থেকে ছোটো তাই শুধু বৃষ্টি বলেই ডাকলে ভালো হয়।

আচ্ছা, আপনি বসুন। আসলে আপনাকে একটা দরকারে ডেকেছিলাম আরকি। মানে আপনার একটু সাহায্য লাগবে আরকি।

স্যার এভাবে কেনো বলছেন? আপনার কোনো কাজে সাহায্য করতে পারলে আমি নিজেও অনেক খুশি হবো।

আচ্ছা তাহলে আমার সাথে চলুন। বলেই বৃষ্টিকে নিয়ে পার্কিং এরিয়ার কাছে এসে, গাড়িতে বসতে বলে নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসে যায়। মিনমিন করে বৃষ্টি বলে, স্যার বলছিলাম যে আমরা কোথায় যাচ্ছি? ততক্ষনে গাড়ি চলতে শুরু করে। এবার মেঘ বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে, আপনার কি আমার সাথে যেতে কোথাও সমস্যা আছে? থাকলে বলতে পারেন, আমরা ফিরে যাচ্ছি। আরে নাহ নাহ স্যার আসলে কোথায় যাচ্ছি জিজ্ঞাসা করছিলাম স্যার। চলুন গেলেই দেখতে পাবেন, বলেই দুজনে চুপ হয়ে যায়। তারপর দুজনের মধ্যে আর কোনো কথা হয়না। গাড়ি থামে একটা শপিংমলের সামনে, তারপর মেঘ নামতে বললে বৃষ্টি গাড়ি থেকে নেমে যায়। তারপর বৃষ্টির হাত ধরে মেঘ এগিয়ে যায় শপিংমলের ভিতরে, এদিকে বৃষ্টিকে বারবার নিজের হাতের দিকে তাকাতে দেখে মেঘ বলে, এই ভিড়ে যাতে আপনি হারিয়ে না যান সেজন্য হাতটা ধরে রাখলাম, কিছুতেই হারাতে পারবোনা আপনাকে। কথাটা শুনে বৃষ্টির মুখের ভঙ্গি এমন ছিল যেনো মেঘের এমন কথা যেনো কিছুতেই বোধগম্য হলনা তার।

দুজন মিলে একটা শাড়ির দোকানে ঢুকলো। বৃষ্টি আপনাকে আমার আপুর জন্য একটা শাড়ি পছন্দ করে দিতে হবে, আমি এসব মেয়েদের কেনাকাটা তে অভ্যস্ত নই তাই আপনাকে নিয়ে এলাম, প্লীজ হেল্প করে দিন। এরপর দুজনে মিলে বেশ কিছু শাড়ি দেখে 2 টো পছন্দ করলো, এদিকে শাড়ি দেখতে দেখতে হটাৎ করে মেঘের চোখ পড়লো একটা সবুজ রংয়ের শাড়ির উপর, হালকার উপর শাড়িটা দেখেই খুব পছন্দ হলো মেঘের, তাই ওটাও প্যাক করে দিতে বললো। এরপর………

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে