অপূর্ণতা পর্ব-৪+৫

0
1952

#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৪_৫

গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে কিন্তু আমি কান্না করেই যাচ্ছি। কোন ভাবেই নিজেকে শান্ত করতে পারছি না।আমার কান্না করা দেখে ওনি হয়তো বিরক্ত বোধ করছেন।

আরিয়ানঃ এত কান্না করার কি আছে বুঝছি না। এতই যখন খারাপ লাগছে তবে বিয়েটা কেন করতে গেলে না করলেই তো পারতে।যতসব ন্যাকামি আমার সামনে করতে এসো না।

ওনার কথা শুনে আমার আরও বেশি খারাপ লাগলো।তবুও কান্না থামিয়ে নিজেকে শান্ত করলাম।সারা রাস্তা দুইজনে আর কোনো কথা বললাম না।বাড়িতে পৌঁছাতেই ওনি গাড়ি থেকে নেমে গেলেন আমার জন্য একটু ওয়েট করলেন না।আমি একটু পরে গাড়ি থেকে নামলাম।এখানে আসতে আসতে প্রায় রাত হয়ে গেছে কিন্তু বিভিন্ন রকমের লাইটের আলোয় পুরো বাড়ি আলোকিত হয়ে আছে।খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে পুরো বাড়ি। বাহিরের থেকে বাড়িটি দেখতে অসাধারণ সুন্দর লাগছে।আমাকে বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমার শ্বাশুড়ি মা আমাকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেলেন।বাড়ির ভেতরটা দেখে তো আমি আরও বেশি অবাক হলাম।বাড়ির ভেতরটা অনেক সুন্দর তাছাড়া বাড়ির প্রত্যেকটি জিনিস যেমন সুন্দর তেমনি পারফেক্ট ভাবে প্রত্যেকটি জিনিস সাজানো।

আমাকে কয়েক জনমেয়ে একটি রুমে নিয়ে আসে। রুমটি অনেক সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো। রুমে ওনার অনেক ছবি দেখেই বুঝলাম এইটা ওনার রুম।রুমের প্রত্যেকটি জিনিস অসাধারন সুন্দর যে কেউ দেখলেই পছন্দ করবে।মেয়েগুলো আমার সাথে কথা বলতে লাগলো।একে একে তাদের পরিচয় দিল।বুঝাই যাচ্ছে তারা অনেক মিশুক।আমার সাথে রসিকতা করতে লাগলো আর আমি তাদের কথা শুনে মুশকি মুশকি হাসছি।কতক্ষন পরে আমার শাশুড়ী মা এসে সবাইকে চলে যাওয়া জন্য বলে কিন্তু তারা যখন না যায় ওনী এক ধমক দেন আর সাথে সাথে সবাই চলে যায়………..

সবাই চলে গেছে অনেকক্ষন হয়ে গেছে আমি একা খাটের উপর বসে আছি তবুও ওনী রুমে ডুকছেন না।বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। এদিকে আমি যে ওনার জন্য অপেক্ষা করছি তার কোন খেয়ালই নি। অনেক টায়ার্ড লাগছে কিন্তু ঘুমাতে পারছি না।

অন্যদিকে আরিয়ান ভাবছে আজ তার বাসর রাত।ঘরের ভিতর তার নতুন বউ তার জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু সে ইচ্ছে করেই তার কাছে যাচ্ছে না।এই রাতটা নিয়ে সে অনেক স্বপ্ন দেখত কিন্তু আজকে তার কাছে এই রাতটা বিষাদময় লাগছে। কোন ভাবেই সে অদ্রিতাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারছে না।কারন তার স্ত্রী তার কল্পনার মতো কোনো সুন্দরী মেয়ে নয় সে কালো।বিয়েতে তার কোন বন্ধুই বাদ যায়নি তাকে এই নিয়ে কথা শুনানোর। তার মন চাচ্ছে ঘরে ঢুকে মেয়েটাকে মেরে ফেলতে। কিন্তু তা তো সম্ভব নয়।রাগে তার মুখ লাল হয়ে আছে।না পারছে কিছু করতে না পারছে সে অদ্রিতাকে মেনে নিতে……

নিজের মনে মনেই ভাবছে,,,,আমার মতো এত হ্যান্ডসাম,দেখতে সুন্দর এত ভালো চাকরি করা একটা ছেলের সাথে কি একটা কালো মেয়েকে মানায়। না মানায় না।আমারও তো স্বপ্ন ছিল একটা সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করবো কিন্তু তা আর হলো কই।বিয়েটা তো করেছি শুধু আমার মা বাবার জন্য। বুঝলাম না তারা এই মেয়ের মাঝে কি এমন দেখল যে আমার না বলা সত্ত্বেও তাকে আমার বিয়ে করতে হলো।তাদের কথা রাখতে বাধ্য হয়েই এই বিয়েটা করা।

ইচ্ছে ছিল একটা সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করার যাকে যেই দেখবে সেই বলবে দেখ আরিয়ানের বউটা কত সুন্দর। তাকে নীল সাড়ি পড়িয়ে নিজেও একই রঙের ম্যাচিং ড্রেস পড়ে হাতে হাত রেখে ঘুরতে যাবো।কিন্তু তা আর হলো কই, বিয়ে করতে হলো এমন একজনকে যাকে হয়তো সে জীবনে কোন দিন স্ত্রীর অধিকারটাও দিতে পারবে না।

এইদিকে অদ্রিতা একা একা খাটের উপর বসে আছে আর মন খারাপ করে ভাবছে,,, নিশ্চয়ই ওনার আমাকে পছন্দ হয়নি আর হবেই বা কি করে ওনী কতো সুন্দর আর আমি কতো কালো।সত্যিই তো ওনার সাথে আমাকে মানায় না।কেন যে ওনী আমাকে বিয়েটা করতে গেলেন……..
এই সব ভাবতে ভাবতেই আরিয়ান রুমে ঢুকলো……….
.
..

চলবে………
#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৫

আমার চোখ-মুখ লাল হয়ে গেছে।রাগ হলে সব সময় যা হয়।অদ্রিতাকে আমি মাত্র দুইবার দেখেছি তবু ভালো করে নয়। এক যখন দেখতে গিয়েছি আর আজ বিয়েতে একনজর। গাড়িতে একসাথে এসেছি তবুও একবারের জন্য তার দিকে তাকাই নি।তার দিকে তাকালেই আমার রাগ আরও বেড়ে যায়।বিয়েটা তো করলাম মা- বাবার কথায় বাধ্য হয়ে কিন্তু এখন এই মেয়ের সাথে একঘরে কি করে থাকবো?
মা-বাবা অবশ্য বলেছিল বিয়ের আগে তার সাথে দেখা করতে কিন্তু আমিই রাজি হয়নি। কি করে রাজি হবো যাকে সহ্যই করতে পারি না তার সাথে ঘুরা যাই নাকি!

রুমে ঢুকছি অনেক আগেই। এতক্ষন বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ছিলাম আর ভালো লাগছিলো না দাঁড়িয়ে থাকতে তাই রুমের ভিতরে ঢুকলাম আর রুমে ঢুকেই সাথে সাথে ওয়াশরুমে চলে গেলাম ফ্রেশ হতে।অদ্রিতার দিকে একনজরও তাকাই নি হয়তো আমার জন্য বসে আছে, এতক্ষন ধরে ওয়েট করছে আমার জন্য তাতে আমার কি? আমি কি বলছি নাকি আমার জন্য ওয়েট করতে ঘুমিয়ে পড়লেই তো পারতো। যতসব ন্যাকামি। মনে মনেই এই কথা গুলো ভাবলো আরিয়ান।

আরিয়ানের এই আচরণে অদ্রিতা অনেক কষ্ট পেল। কালো হওয়াকি সত্যিই এতটা খারাপ যে আমাকে একনজর তাকিয়েও দেখা যায় না।কালো আর সুন্দর হওয়া তো নিজের হাতে নেই। সবাইকে তো মহান আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন তবে আমরা এত ভেদাভেদ কেন করি?অদ্রিতার ভাবনার মাঝেই আরিয়ান ফ্রেশ হয়ে চলে আসে।

আরিয়ানের মন তো চাচ্ছে ইচ্ছে মত অদ্রিতাকে কথা শুনাতে তাহলে হয়তো তার রাগটা একটু কমতো কিন্তু হঠাৎ কিছু না হতেই কিছু তো বলাও যায় না।তাই অন্যদিক ফিরে শুয়ে পরে।

অদ্রিতা এখন কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। সেও ঘুমিয়ে পরবে না কি আরিয়ানকে ডাক দিবে।আরিয়ানকে ডাক দিলে তিনি যদি আবার কিছু মনে করেন।এইসব ভেবে কিছুক্ষন ওই ভাবেই বসে থাকে। কিন্তু এখন তার এইভাবে এই ভারি কাপড়গুলো পরে থাকতে অসহ্য লাগছে তার উপর আবার এত ভারি ভারি গয়না এইসব পরে থাকা যায় নাকি?তাই কিছু না ভেবেই সে আরিয়ানকে ডাক দেয়।

এই যে শুনছেন,,,আপনি কি ঘুমিয়ে পরেছেন নাকি? এই ভাবে দুই- তিন বার ডাক দেয়।আরিয়ান ঘুমায়নি কিন্তু কোনো কথা বলছে না।এখন অদ্রিতার সাথে কথা বলতে তার একদম ইচ্ছে করছে না।তাই ওই ভাবেই শুয়ে থাকে। অদ্রিতা আর কোন উপায় না পেয়ে আরিয়ানে শরীরে হাত দিয়ে তাকে ডাক দেয়।

এখন আরিয়ানের রাগ আরও বেড়ে গেছে তার এই কাজে। তাই উঠেই বলা শুরু করে,”তোমার সাহস কি করে হয় আমাকে স্পর্শ করার।এই তোমার পবলেম তা কি শান্তিতে একটু ঘুমাতেও দিবে না নাকি।এমনেই তো তোমার জন্য আমার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে এখন তো দেখছি তোমার জন্য রাতের ঘুমও হারাম হয়ে যাবে।তা কি পবলেম ডাকছো কেন?”

অদ্রিতা অনেক কষ্ট পেল তার কথা শুনে তবুও নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো আমি এখন কি করবো।

আরিয়ান রাগে গম্ভীর স্বরে বলে,”তুমি কি করবে তা আমি কি করে বলবো। যা খুশি করো গিয়ে। আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছো।আজব তো।”

অদ্রিতা ভয়ে আস্তে করে বলে, “না মানে আপনি তো আমার সাথে একটু কথা বললেন না একবারের জন্যও আমার দিকে একটু তাকালেন না।”

অদ্রিতার কন্ঠ অনেক মিষ্টি হয়তো আরিয়ানের জায়গায় অন্য কেউ থাকলে আর তার উপর আর রাগ করে থাকতে পারতো না।কিন্তু আরিয়ানের রাগটা তো কমছে না উল্টো বেড়ে গেছে।তাই অদ্রিতার দিকে তাকিয়ে রাগে বলতে থাকে, “তোমাকে আমি দেখবো না আর তোমার সাথে আমি গল্প করবো এই কথা স্বপ্নেও ভেবোনা।তোমার কোনো যোগ্যতা আছে নাকি আমার মতো কারো স্ত্রী হওয়ার। ”

তবে আমাকে বিয়েটা কেন করতে গেলেন? না করলেই তো পারতেন। আমি তো আর আপনাকে বাধ্য করি নি আমাকে বিয়ে করার জন্য। তবে কেন আমাকে বিয়ে করে আমার সাথে এমন করছেন?আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে আপনার এই আচরণে।আমি যে পারছি না সহ্য করতে।

তোমাকে বিয়ে করার আমার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে ছিল না।বাধ্য হয়ে তোমাকে আমার বিয়ে করতে হয়েছে বুঝতে পারছো।তুমি কি এমন বলছো আমার বাবাকে। তুমি ও তোমার পরিবার মিলে কিভাবে যাদু করেছো আমার বাবাকে যে, তুমি এত কালো হওয়া সত্ত্বেও বাবা তোমাকে পছন্দ করেছে। আমি যখন বলেছি মেয়ে আমার পছন্দ হয়নি তখন বাবার এক কথা আমি কথা দিয়ে দিয়েছি বিয়ে করলে তুই ওই মেয়েকেই করবি। আমি আর কিছু শুনতে চাই না। প্রথমে তো মাও রাজি ছিল না এই বিয়েতে কিন্তু বাবা কি যেন বললো তখন মাও রাজি হয়ে গেল।এইবার বলো তুমি ও তোমার পরিবার এইসব কি করে করলে।বলো ডেমইট,,,
তোমার তো অনেক সখ আমার সাথে কথা বলার। তো এখন চুপ করে আছো কেন? আন্সার মি….. কথা গুলো অনেকটা চিল্লিয়ে বললো আরিয়ান।

আরিয়ানের ধমক শুনে অদ্রিতা ভয় পেয়ে যায়।তার প্রত্যেকটা কথায় তার মন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।এখন খুব কষ্ট লাগছে তার কোনো ভাবেই নিজেকে শান্ত করতে পারছে না সে।এখন তার চিৎকার করে কান্না করতে মন চাচ্ছে কিন্তু তাও করতে পারছে না।সে যেন কথা বলার ভাষাই হারিয়ে ফেলেছে।কি করবে এখন সে তাই বুঝতে পারছে না?

অদ্রিতার চুপ করে থাকা আরিয়ানের রাগকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে,,, তাই আবারও চিৎকার করে বলে আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি তো।আন্সার মি…..
.
..

চলবে……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে