অন্যরকম অনুভূতি পর্ব -১২

0
1959

#অন্যরকম অনুভূতি
#লেখিকা_Amaya Nafshiyat
#পর্ব_১২

ওয়াশরুমে ঢুকে অনেকক্ষণ কান্নাকাটি করে তারপর বেরোলো মাহা।পরিবারের সবার কথা ভীষণ মনে পড়ছে তার।বেশি মনখারাপ হতেই সে নিজের ফোন বের করে ডিরেক্ট কল লাগালো ভাইয়ের নাম্বারে।তারপর অনেকক্ষণ ভিডিও কলে কথা বললো সবার সাথে।কথা বলা শেষে খেয়াল করে দেখলো মনখারাপ ভাবটা আর নেই,কেটে গেছে।ফুরফুরে মন নিয়ে লিসা নিসার সাথে আলাপ জমালো সে।

রাত সাড়ে ৯ টায় মিসেস মুমতাহিনা মাহার জন্য খাবার নিয়ে এলেন রুমে।মাহা ওনার সাথে খাবার খেতে খেতে টুকটাক গল্প করলো।আরাফাত এখন সজাগ আছে।তাকে মিসেস মুমতাহিনা গালে তুলে খাইয়ে দিয়ে চলে গেলেন।যাবার আগে মাহার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললেন;

-‘মা রে!আমার ছেলে ওই মেয়েটাকে ভালোবেসে খুব বাজে ভাবে ঠকে গেছে!সুস্থ হয়ে গেলেও তার ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাসটা হয়তো আর আগের মতো থাকবে না।তবে একমাত্র তুই চাইলেই তার এই বিশ্বাসে কখনো ভাটা পড়বে না।একজন মা হয়ে তোর কাছে মিনতি করছি আমি,আমার ছেলেটাকে আগলে রাখিস সবসময়।কখনো তাকে ভুল বুঝে ছেড়ে যাস না।আমার ছেলেটা খুবই ভালোবাসার কাঙাল রে!তাকে শুধু একটু ভালোবাসলেই হবে,সে সারাজীবন আগলে রাখবে তোকে!কখনো কষ্ট দিস না মা আমার এই ছেলেটাকে।দ্বিতীয়বার আর হয়তো সহ্য করতে পারবে না,মরে যাবে।’

কথাগুলো বলে ফুপিয়ে কেঁদে ফেললেন তিনি।মাহা তার চোখ জোড়া ভালো করে মুছিয়ে দিয়ে বললো,,”কথায় কথায় মূর্ছা যাওয়া বন্ধ করো তো মামণি।আমি জীবন থাকতে তোমার ছেলেকে কখনো ছেড়ে যাবো না।এমনি এমনি বিয়ে করি নি।তাকে মৃত্যুর আগপর্যন্ত আগলে রাখবো আমি কথা দিলাম।তুমি নিশ্চিত থাকতে পারো।এখন যাও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো,বেশি রাত জেগো না,নয়তো শরীর খারাপ করবে।আর হ্যা এই মাহার ওপর চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস রাখতে পারো।কখনো ঠকবে না।”

মিসেস মুমতাহিনার ঠোঁটের কোণে একচিলতে অমায়িক হাসি ফুটে ওঠলো।মাহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে গেলেন রুম থেকে।মাহার ওপর তার ভরসা আছে অনেক।তিনি জানেন,মাহা কখনো তার নিজের কথার খেলাপ করে না।

মাহার কথামতো নার্স ছেলেটাকে বিদায় দিয়েছেন মি.এরশাদ।কারণ এখন থেকে আরাফাতের দেখাশোনার জন্য মাহা আছে।আর মেয়েরা
সবকাজেই পারদর্শী থাকে এটা মাহার বিশ্বাস।চেষ্টা করলে এভারেস্টও জয় করা যায়।আর মেয়েরা তো একেকজন যোদ্ধা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে সংসার জীবনে।একাহাতে সংসার সামলানো চাট্টিখানি কথা নয়।

রাত বাজে এগারোটা।আরাফাত ঘুমাচ্ছে।এতক্ষণ মাহার সাথে লিসা নিসা ও ইশানী ছিলো।সাথে ছিলো রাফির স্ত্রী।এতক্ষণ ধরে চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলো ওরা আরাফাতের রুমের বারান্দায় বসে বসে।রাত গভীর হতেই যে যার রুমে চলে গেছে।মাহা দরজা জানালা সব লক করে আরাফাতের পাশে এসে শুয়ে পড়লো।

দোয়া দুরুদ পড়ে ফুঁ দিলো নিজের শরীরে ও আরাফাতের শরীরে।তারপর আরাফাতের ক্লোজ হয়ে আলতো ভাবে তাকে জড়িয়ে ধরে চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেললো।বেশ ক্লান্ত লাগছে শরীরটা,তাই চোখে তন্দ্রা নেমে আসতে দেরী হলো না।রাতে আরাফাতও যেন একটু নিশ্চিত হয়ে ঘুমালো।এতদিন তার কেমন জানি একা একা লাগতো,অবচেতন মন ভয় পেত কিন্তু কাউকে বলতে পারতো না।কিন্তু আজ আর তার মনে সেরকম কোনো ভয় কাজ করছে না,মনে হচ্ছে কেউ একজন তার সাথে ছায়ার মতো লেপ্টে আছে।

⛓️

পরদিন সকালে ঘুম ভেঙে গেল মাহার।সে প্রতিদিনই সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে।এটা তার মধ্যে বিদ্যমান খুবই ভালো একটা অভ্যাস।আরাফাত নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে।রাতে অবশ্য মাহার ঘুম ভেঙে গেছিলো আরাফাতের জন্য।আরাফাতের বেগ পেয়েছিলো তাই।অতঃপর মাহা তাকে ধরে ধরে ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়েছিল।ভাগ্যিস আরাফাত জিম করে না,তার ওজনও লিমিটেড।নয়তো এমন জিম করা হাতির মতো শরীরের ভার মাহা নিতে পারতো না।কাজ শেষে ওয়াশরুম থেকে আবার ধরে ধরে বেডে নিয়ে এসেছে তখন মাহা।তারপর তাকে পানি খাইয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে।

মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং রুমে এলো মাহা।বুয়া ফ্লোর পরিষ্কার করছে।মিসেস মুমতাহিনা ইশানীর সাথে বসে বসে চা নাস্তা খাচ্ছেন।এই বাসায় এত সকাল শুধু তারা দুজনেই ওঠে আর সবাই সাড়ে আটটার পর।মিসেস মুমতাহিনার ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে মাহাকে দেখে।বললেন,”কী রে মা!এত সকাল উঠলি কেন ঘুম থেকে?আরও ঘুমাতি কিছুক্ষণ!”

-‘আরে না,জানোই তো আমি সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে যাই!একদিনের জন্য অভ্যাস চেঞ্জ করতে যাবো কোন দুঃখে?’

ইশানী হাসিমুখে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললো;
-‘বাহ,ভালোই তো,আমাদের সঙ্গী একজন বাড়লো।তাহলে আসো আমাদের সাথে নাশতা করো এসে!’

-‘অবশ্যই!’

মাহাও খুশিমনে সায় জানিয়ে চেয়ার টেনে বসে পড়লো।ইশানী কাপে চা ঢেলে মাহার দিকে এগিয়ে দিলো।সাথে ব্রেড,জেলি,রুটি,পরোটা,ডিম ভাজা সব এগিয়ে দিলো।মাহা পরোটা ভিজিয়ে চা খেতে খেতে তাদের সাথে খোশগল্পে মেতে উঠলো।

বেলা ৯ টা বেজে গেছে প্রায়।ওরা গল্পে এতটাই মশগুল ছিলো যে কখন এত বেজে গেছে বলতেই পারবে না।সাইফ ঘুম থেকে ওঠে ডাইনিং রুমে আসার পর তাদের ধ্যান ভাঙ্গে।মাহা তৎক্ষনাৎ বসা থেকে ওঠে তড়িৎ গতিতে রুমে চলে গেল।কারণ এতক্ষণে হয়তো আরাফাত ঘুম থেকে ওঠে গেছে।ওর প্রয়োজন পড়তে পারে কোনোকিছুর এজন্যই এত তড়িঘড়ি করা।

রুমে এসে দেখতে পেল আরাফাতের ঘুম ভেঙে গেছে।সে আশেপাশে তাকাচ্ছে চঞ্চল চোখে।ভালো হাত দিয়ে বিছানায় শব্দ করছে।মাহা দ্রুত আরাফাতকে ধরে শোয়া থেকে তুললো।তারপর ধরে ধরে নিয়ে গেল তাকে বাথরুমে।বাথরুমের কাজ সারার পর আরাফাতের দাঁত ব্রাশ করিয়ে মুখ যত্নসহকারে ধুয়ে পরিষ্কার করে দিয়ে তারপর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে রুমে এসে বিছানার ওপর আধশোয়া করে তাকে বসিয়ে দিলো মাহা।এমন সেবা করায় উস্তাদ সে।তার আপন দাদী যখন মৃত্যুপথযাত্রী অবস্থায় শয্যাশায়ী ছিলেন তখন ওনার সব সেবা মিসেস মিনারার সাথে সেও করেছিলো।টানা ২ বছর সেবাযত্নের পরও তার দাদী বাঁচতে পারেন নি ডায়বেটিস এবং কিডনির রোগের কারণে।

আরাফাতের মুখ আলতো ভাবে তোয়ালে দিয়ে মুছে দিলো মাহা।আরাফাত নির্বাক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে তার পানে।মাহা মুচকি হেসে আরাফাতের ন্যাড়া মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।খোঁচা খোঁচা চুল ওঠেছে তার মাথায়।এই নিয়ে দুইবার মাথা ন্যাড়া করা হয়েছে আরাফাতের।তাকে দেখতে কিছুটা গাজনি মুভির আমির খানের মতো লাগে।যদিও আরাফাত অনেক ফর্সা ও সুদর্শন।

মাহা কোমল গলায় আরাফাতের সাথে কথা বলছে।আরাফাত শুধু শুনছে,কিন্তু কিছু বলার মতো ক্ষমতা তার নেই।মাহা আরাফাতকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে দিয়ে লিভিং রুমের দিকে ঠেলে নিয়ে চললো।লিভিং রুমে মি.এরশাদ বসে বসে পত্রিকা পড়ছিলেন।আজকে আর কেউ কাজে যায় নি।দুপুরের দিকে মাহার পরিবার আসবে তাই।সাইফ তার ছেলেকে কোলে নিয়ে বসে ফোনে কীসের ভিডিও দেখছে একমনে।লিসা নিসা তাদের রুমেই আছে।

মাহা হুইলচেয়ার ঠেলে মি.এরশাদের পাশে নিয়ে দাঁড় করালো।তিনি পত্রিকা থেকে মনযোগ সরিয়ে আরাফাত ও মাহার দিকে তাকালেন।তার ঠোঁটে ফুটে ওঠে সস্নেহের হাসি।আরাফাতর মাথায় হাত বুলিয়ে মাহাকে জিজ্ঞেস করলেন,”শুভ সকাল!কিছু খেয়েছিস তুই মামণি?”

-‘হ্যা বাবাই,সকালেই নাশতা করে ফেলেছি মামণী ও ভাবীর সাথে।তুমি নাশতা করো নি?’

-‘হ্যা,একটু আগেই নাশতার পালা চুকিয়ে এলাম।’

একমুহূর্ত চুপ থেকে বললেন,”তোকে বেশি কষ্টে ফেলে দিছি আমরা তাই না রে মা?”

মাহা আরাফাতের পা ঠিক করে সঠিক স্থানে রাখছিলো হঠাৎ মি.এরশাদের এমন কথা শুনে মুখ তুলে তাকিয়ে কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,”হঠাৎ এমন কথা বললে কেন বাবাই?কীসের কষ্ট?”

মি.এরশাদ চোখ থেকে চশমা সরিয়ে পত্রিকা ভাঁজ করে বললেন,”এই যে আরাফাতের সমস্ত দায়িত্ব তোর ওপর চাপিয়ে দিলাম,বিয়ে হতে না হতেই তার সেবাযত্নে নিয়োজিত হতে হলো তোকে!তোর খারাপ লাগছে তাই না?তুই হয়তো মনে মনে ভাবছিস আমরা খারাপ লোক,আমাদের বিবেক নেই!”

মাহা মুখ দিয়ে ‘চ’ টাইপ শব্দ উচ্চারণ করে বিরক্তি প্রকাশ করলো।প্রতুত্তরে বললো,”ওফ্ফ বাবাই এসব কেমন কথা?আমি তোমাদের পর কেউ হই নাকি?আমি তোমার ভাই সমতুল্য বন্ধুর মেয়ে আর এখন তোমার পুত্রবধূ হই!নিজের লোকজনদের ক্ষেত্রে এমন কথা উচ্চারণ করাও ঠিক না।আমাকে কী আপন মনে হয় না তোমার?”

-‘ছি,ছি!এমন কথা বলছিস কেন?তুই তো আমাদের আপনজনই।রক্তের সম্পর্কের চাইতেও বড় সম্পর্ক তোর সাথে আমাদের।”

-‘তবে এমনসব আজগুবি কথা বলে আমাকে আর অপমান করো না।বিয়ের আগে যদি সেবাযত্ন করতাম তবে সেটা নিজের ভাই মনে করে করতাম।যেহেতু বিয়ে হয়ে গেছে তারমানে আমি আমার স্বামীর সেবাযত্ন করছি।সিম্পল!এসব বলে আমার চিল মুড বিগড়ে দিও না তো বাবাই।আরেকবার এমন অহেতুক ইমোশনাল কথা বললে আমি আমার বাপের কাছে চলে যাবো বলে রাখলাম!’

মাহার এমন হুমকি দেয়া কথা শুনে মি.এরশাদ ভয় পাওয়ার ভান করে বললেন,”ও মাগো ভয় পাইছি!আর এসব বলবো না প্রমিজ!”

মাহা ফিক করে হেসে দিলো ওনার মুখভঙ্গি দেখে।সাথে তিনিও হাসলেন।সাইফ আরাফাতের সাথে কথা বলছে।আরাফাত তাকিয়ে আছে তার বড় ভাইয়ের মুখের দিকে।রাহাত তার উন্নতি দেখে সবাইকে বলে দিয়েছে যে, কারণে অকারণ তার সাথে অনর্গল কথা বলতে।যতক্ষণ সজাগ থাকবে ততক্ষণ।আর ঘুমিয়ে গেলে তাকে কোনোমতেই জাগানো যাবে না,সাথে কোনোপ্রকার সাউন্ড যেন তার রুমে না হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে।নয়তো তার মস্তিষ্কে আরও বাজে প্রভাব পড়বে!

মিসেস মুমতাহিনা ছেলের জন্য আবারও খিচুড়ি নিয়ে হাজির।পাতলা খিচুড়ি দেখেই মাহার মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে গেছে।রাগান্বিত হয়ে বললো,”তুমি চোখে খালি খিচুড়ি কেন দেখো মামণি?খিচুড়ি ছাড়া কী আর কোনো খাবার নেই দুনিয়ায়?জানোই তো তোমার ছেলে খিচুড়ি পছন্দ করে না,তারপরও জোর করে কেন খাওয়াতে চাও?ডক্টরদের কথা যে সবসময় অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে তা কে বলেছে তোমায়?”

মিসেস মুমতাহিনা অসহায় কন্ঠে বললেন,”রেগে যাচ্ছিস কেন মা?তোর ভাইই তো বলেছে তাকে খিচুড়ি খাওয়াতে!আমার কী দোষ?”

মাহা জবাব দিলো,”ভাইয়া খাওয়াতে বলেছে ঠিকই তারমানে এটা বলে নি যে,প্রত্যেক ওয়াক্তে এই জঘন্য জিনিসটাই খাওয়াতে হবে।রোগীর মুখের রুচি নষ্ট করে ফেলছো এই পাতলা খিচুড়ি খাওয়াতে খাওয়াতে।আজ খিচুড়ির চ্যাপ্টার এখানেই ক্লোজ!এখন ভিন্ন কিছু থাকলে নিয়ে আসো।এসব আর খাওয়াবো না।”

মি.এরশাদ এবার মাহার কথায় সুর মিলিয়ে বললেন,”তাই তো!আমি তো একদমই খেয়াল করি নি।তুমি শুধু আমার ছেলেটাকে খিচুড়িই কেন খাইয়ে যাচ্ছো?এটা কেমন কথা হলো?তোমার মাথার বুদ্ধি সুদ্ধি লোপ পেয়েছে নাকি মুম?রাহাত বলেছে শাকসবজি দিয়ে খিচুড়ি রেধে খাওয়াতে,তুমি তো দেখছি শুধু ডাল দিয়ে পাতলা খিচুড়ি রেঁধেছো!এমন খাবার তো বাচ্চারাও খেতে পছন্দ করে না।”

মিসেস মুমতাহিনা তড়িঘড়ি করে বলে উঠলেন,”হয়েছে আর বকতে হবে না।আমি অন্যকিছু নিয়ে আসছি বরং।”

তিনি দ্রুতপদে রান্নাঘরে চলে গেলেন বাটি হাতে নিয়ে।মি.এরশাদ ইশারা দিয়ে মাহাকে বোঝালেন,”তোর মামণির মাথার স্ক্রু ঢিলা!”
মাহা হাসতে হাসতে সোফায় বসে পড়লো।সাইফও হাসছে তাদের কীর্তিকলাপ দেখে।পিচ্চি রিহাদটাও হাসতে হাসতে কুটিকুটি।তার দাদী প্রায়ই এমন তার ছিঁড়া মার্কা কাজ করেন।

মিসেস মুমতাহিনা ডিম দিয়ে নরম পাউরুটির স্যান্ডউইচ বানিয়ে নিয়ে আসলেন।কারণ আরাফাত তা খেতে অনেক পছন্দ করে।তিনি একটু একটু করে ছিঁড়ে আরাফাতের মুখে পুরে দিতে লাগলেন।খাওয়ানো শেষে মাহা সাইফকে বললো রিহাদ ও আরাফাতকে নিয়ে বাইরে থেকে হেঁটে আসতে।এতে আরাফাতের মন ফ্রেশ হবে।রাফিও ততক্ষণে তাদের সাথে এসে এটেন্ড করেছে।রাফির বউ বাচ্চা রয়েছে এখানে ঠিকই,তবে রাফির মা অর্থাৎ সাইফের ফুপি বিয়ে শেষ হতেই বাসায় চলে গেছেন।ওনার ঔষধ সব বাসায় রয়েছে,একদিন না খেলে প্রেশার হাই হয়ে যাবে তাই।

সাইফরা আরাফাতকে নিয়ে বাইরে চলে গেল।মাহাও নিজের রুমে চলে আসে।পুরো রুম ভালো করে গুছিয়ে তারপর গোসল করতে চলে গেল সে।গোসল শেষে রুমে আসতেই শুনলো ফোন বাজছে তার।স্ক্রিনে আনুবেবি লেখা।অর্থাৎ আনিশা কল দিয়েছে তাকে।সে খুশিমনে কল রিসিভ করে কথা বলতে লাগলো।জানতে পারলো আজকে দুপুরের দিকেই ওরা সবাই এখানে আসছে।মাহা খুশিখুশি মনে শাড়ি টারি সব বের করে বিছানার ওপর রাখলো।দুপুরের একটু আগে পড়বে।নতুন বউ শাড়ি না পড়লে কী হয়!

⛓️

দুপুরের দিকেই মাহার পরিবারের সবাই এসে হাজির।তাদের সাথে আনিশাও এসেছে।রাহাত আর মি.আতিক অনেক মিষ্টি নিমকি কিনে নিয়ে এসেছেন আসার সময়।রিয়াজ নওশিনের খেয়াল রাখতে ব্যস্ত।মাহার বোন হিসেবে নওশিনও কম টইটই করে না।রিয়াজের মাঝেমধ্যে ভয় হয় তাকে নিয়ে প্রচুর।

আনিশা এসেই মাহাকে টাইট করে জড়িয়ে ধরলো।মাহা আজকে সোনালি পাড়ের কালো সুতির শাড়ি পড়েছে।গলায় সোনার চেন,কানে ছোট একটা ঝুমকো,নাকে ডায়মন্ডের নোজপিন,হাতে সোনার চুড়ি,আঙ্গুলে আকদের আংটি।ব্যস একদম নরমাল লুক!এতেই তাকে অনেক সুন্দর লাগছে।শুধু মাহা কেন, প্রত্যেকটা মেয়েকেই শাড়িতে অসাধারণ লাগে।তাদের সৌন্দর্য্য ফুটে ওঠে শাড়িতে।

মিসেস মুমতাহিনা ওরা আসার আগে ইশানীকে সাথে নিয়ে তাদের জন্য হরেক পদের নাশতা ও তরকারি রান্না করেছেন।বিয়ের মতো বৌভাতও আপাতত পেন্ডিংয়ে রাখা হয়েছে,আরাফাত সুস্থ হওয়ার পর সবকিছুর অনুষ্ঠান সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করা হবে।

সবাই জমিয়ে আড্ডার আসর বসালো ড্রয়িং রুম জুড়ে।এসব শুধু আজ নয়,যখনই ওরা এখানে আসে ততদিনই ফুর্তির মেলা বসে সারা বাসায়।একসাথে বেড়াতে যাওয়া,পিকনিকে যাওয়া,শপিংয়ে যাওয়া সবকিছু একসাথে করা চাই-ই চাই।একমাস পর পর ফ্যামিলি গেট টুগেদার হয় তাদের।যদিও এ মাসে এমন কিছু করা হয় নি আরাফাতের অসুস্থতার জন্য।

একসাথে সবাই দুপুরের খাবার খেলো আজ,সাথে খোশগল্প তো আছেই।মাহা যত্নসহকারে মুরগির মাংস দিয়ে ভাত খাইয়ে দিয়েছে আরাফাতকে।আরাফাতও বেশ তৃপ্তি নিয়ে খেয়েছে।মাহা একটা জিনিস খেয়াল করে দেখেছে যে সে যতোসময়ই আরাফাতের সামনে থাকে ততোসময়ই আরাফাত সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।যেন কিছু একটা জানতে চায় সে!কিন্তু কী জানতে চায় তা জানে না মাহা।

রাহাত আরাফাতের হাতে পায়ের ব্যান্ডেজ খুলে,আগের ঔষধ পাল্টে নতুন ঔষধ দিলো আজকে।তবে বারবার বলে সতর্ক করে দিয়েছে যেন তার হাতেপায়ে কোনো প্রকার আলতো ভাবেও কোনো চোট যেন না লাগে।নয়তো পরে ক্ষতি হবে!

রাহাত এতদিন এই বিয়েটা মন থেকে মেনে না নিলেও এখন মেনে নিয়েছে।কারণ মাহার চোখে আরাফাতের প্রতি ভালোবাসাময় সহানুভূতি দেখতে পেয়েছে সে।আর এই বিয়ে নিয়ে মাহাও খুব বেশি খুশি।তাই আর মন কালাকালি করে কোনো লাভ নেই,বোনের খুশি যেখানে সেখানে বাঁধা দিয়ে বোনের হাসিমুখ মলিন করতে চায় না সে।ভালো থাকুক তার বোন এটাই রাহাতের একমাত্র চাওয়া!

আনিশা আর মাহা দুজন একসাথে বসে অনেক অনেক গল্প করলো।যেন কতদিন দুজনের দেখা হয় নি।অথচ কালও দুজন একসাথে ছিলো।জিমি আর জাওয়াদকে কোলে নিয়ে প্রচুর আদর করলো সে।জাওয়াদ তো অভিমানে মুখ ফুলিয়ে রেখেছিলো তার পুঁপির প্রতি।কারণ জাওয়াদকে না নিয়ে সে এখানে চলে এসেছে।তারপর আর কী পিচ্চিকে চকোলেট দিতে হয়েছে কতগুলো।তারপর তার রাগ পানি হয়েছে।

মায়ের সাথে,বোনের সাথে,ভাবীর সাথেও চললো আনলিমিটেড কথাবার্তা।সবার মুখেই আনন্দের ছটা।কেউ অখুশি নয়।মাহা তো আরাফাতকে একদম চোখে চোখে রাখছে।মিসেস মিনারার মন ভরে গেল মেয়ের তার স্বামীর প্রতি যত্ন দেখে।তাকে অনেক গুলো উপদেশ দিলেন তিনি।মাহাও মনযোগ সহকারে সব শুনলো।

রাতের খাবার খেয়ে রাহাতরা বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো।আজকে নিয়মানুসারে মাহার ফিরাযাত্রা ছিলো।অর্থাৎ বাপের বাড়ি যাওয়ার কথা ছিলো।কিন্তু মাহাই সেটা নাকচ করে দিয়েছে।বলেছে,আরাফাত আরেকটু সুস্থ হলে তখন তাকে সাথে নিয়েই যাবে একেবারে।এখন এত জার্নি তার জন্য ঠিক হবে না।মি.আতিক আর রাহাতও তা সাদরে মেনে নিয়েছে।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে