অনুভবে (২য় খন্ড)
পর্ব ৫
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা
আইজা রাগে তার হাতের পত্রিকা মেঝেতে ছুঁড়ে মেরে বলল, “হোয়াট দ্যা হেল ইজ দিস? এই ছবি রিপোর্টারদের হাতে এলো কীভাবে? আর তোমাদের আমি কীজন্য রেখে বসে বসে আমার চেহেরা দেখে মাস শেষে বেতন খাওয়ার জন্য। এখন পর্যন্ত এসব সব জায়গা থেকে সরে যায় নি কেন?”
কথাগুলো আইজা তার পি/আর টিমকে বলে। তার সামনে কয়েকজন ব্যক্তি চুপ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সেখান থেকে কেবল একজন বলল, “মেডাম এটা ভাইরাল হয়ে গেছে। আমরা চাইলেও এখন কিছু করতে পারব না। নিউজ থেকে বাদ দিতে পারি কিন্তু সকলের কাছে তো খবর পৌঁছে গেছে।”
“তাহলে এটা শুরু হবার আগেই শেষ হয় নি কেন?”
“আপনি এত বড় সেলিব্রিটি আপনাদের ব্যাপারে যে কোন কিছু খুব তাড়াতাড়ি ছড়ায়।”
“হ্যাঁ, তোমাদের এসব বাহানার জন্যই তো টাকা দিয়ে রেখেছি। দূর হও আমার চোখের সামনের থেকে।” রাগে ফোঁপাতে ফোপাঁতে বলে আইজা।
পাশের চেয়ারে বসে আছে জোহানও। সে আয়েশে পা’য়ে পা তুলে বসে আছে। তার হাতে মোবাইল। তাকে দেখে মনে হচ্ছে না বিশেষ কিছু হয়েছে। আইজা জোহানের এমন বেখেয়ালি আচরণ রেখে আরও তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে, “আমি এখানে চিন্তায় মরছি আর তুমি ফোন দেখে মিটিমিটি হাসছ?”
“তাহলে এখানে আমার কি করার আছে? তোমার খেয়াল ছিলো না বলেই ছবিটা ভাইরাল হয়েছে?”
“এটা আমার দোষ?” হতবাক হয়ে বলল আইজা।”
“অফকোর্স। নাহলে তোমাদের ছবি ওরা পায় কোথা থেকে?”
আইজার চোখ দুটো স্বাভাবিক থেকে বড় হয়ে আসে, “ঠিক বলেছ তো। এ ছবি আসলো কোথা থেকে? আমি তো কোনো ছবিই রাখি নি।”
রুমে প্রবেশ করে সাইদ। তার হাতে কতগুলো কাগজপত্র। সে আইজার পাশে এসে বসে বলে, “আমি নিউজ চ্যানেলের সাথে কথা বলেছি। তারা আর এই সংবাদ রিপিট করবে না।”
আইজা শান্তির নিশ্বাস ফেলে। সাইদের হাত ধরে বলে, “তুমি না থাকলে কি হতো আমার?”
সাইদও তার হাত আরও শক্ত করে ধরে নেয়।
জোহান উঠে দাঁড়ায়, “আমার কাজ আছে আমি গেলাম।”
সে সাইদের দিকে তাকিয়ে আবার বলে, “ব্রো ও আমার গার্লফ্রেন্ড। হাত সামলে।” বলে সে চলে যায়।
অন্যদিকে কথাটা সাইদের বিশেষ একটা পছন্দ হয় না। তার অস্বস্তি লাগে। সে সাথে সাথে আইজার হাত ছেড়ে দেয়। আইজা বলে, “তুমি ওর কথায় ধ্যান দিও না তো। তুমি জানো আমরা কেবল পাবলিকের জন্য গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড। এটা আমাদের দুইজনের জন্য লাভজনক।”
“আইজা এখন তো তুমি ফেমাস হয়ে গেছ। এখনো কেন তোমার এসব মিথ্যার আশ্রয় নিতে হবে?”
“সাইদ বোঝার চেষ্টা করো। এতে জোহানের ফ্যানরা আমার সাপোর্ট করে, নাহয় আমি আমার দুই-তৃতীয়াংশ ফ্যান ফলোয়ার হারিয়ে ফেলব। আর তুমি চাও না একদিন দেশের সবচেয়ে বড় অভিনেত্রী হবার স্বন পূরণ হোক আমার?”
“অবশ্যই আমি চাই। কিন্তু… ”
“কোনো কিন্তু নয়। এই বিষয় এখানেই শেষ। এখন বলো এই ইনারার সাথে আমার নিউজ কীভাবে দাবানো যাবে?”
“আসলে…হয়েছে কি…” সাইদকে চিন্তিত দেখায়। সে আমতা-আমতা কিছু বলতে চেয়েও চুপ করে যায়।
আইজা জিজ্ঞেস করে, ” কি হয়েছে বলবে?”
“সোশ্যাল মিডিয়ায় এটা ছড়ানোর পর তোমাকে ট্রল করা হচ্ছে। যে তুমি ইনারার আসল ভিডিও বের হবারও পরেও ওর সাহায্য করো নি। অনেক নেগেটিভ কথা ছড়াচ্ছে তোমার নামে। তোমার ফ্যানগ্রুপেও এই ব্যাপার নিয়মিত আলোচনা হচ্ছে।”
“তো এখন?”
“আমি পরামর্শ দিব তুই কয়েকদিনের জন্য চুপ হয়ে যাও। কোনো সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করার প্রয়োজন নেই, পাবলিকে বের হবার প্রয়োজন নেই কয়দিন। আর যদি এরপরও সব ঠিক না হয় তাহলে… ”
“তাহলে?”
“তাহলে ইনারা যদি এসে তোমার পক্ষে কথা না বলে তাহলে তোমাকে ক্যান্সেলও করা হতে পারে। তবে এর পার্সেন্টেজ কম।”
তাচ্ছিল্য হাসে আইজা, “ইনারা আমার সাইডে কথা বলবে? যা হয়েছে এরপর ও আমার চেহেরাও দেখতে চাইবে না। এছাড়া আমি জানিও না ও কোথায় আছে!”
“তাহলে এখনই খোঁজ শুরু করতে হবে। যেন প্রয়োজন হলে ওকে বুঝিয়ে বা যেভাবেই হোক আনা যায়।”
আইজা এবার তাকায় সাইদের দিকে, “আচ্ছা তোমার মনে হয় এতে সুরভি থাকতে পারে।”
“সুরভিকে এসবের মাঝে আনবে না।” শান্ত কিন্তু গম্ভীর গলায় বলে সাইদ।
“না মানে ও ছাড়া আর কার কাছে আমার ও ইনারার ছবি থাকতে পারে?”
“আইজা,” উঁচু ও ক্রোধিত স্বরে বলে সাইদ, “আমি বলেছি সুরভিকে এসবের মাঝে আনবে না। ও আমার বোন। তোমার আগের সব কাজে আমি অনিচ্ছায় তোমাকে সাপোর্ট করেছি। কেবল তোমায় ভালোবাসি বলে। কিন্তু আমার বোনের বা পরিবারের উপর প্রশ্ন আসলে আমি ভুলে ভুলে যাব তুমি কে, বুঝেছ?”
আইজা মাথা নাড়ায়। সে সাইদের বাহু জড়িয়ে ধরে তার কাঁধে মাথা রেখে মৃদুস্বরে বলে, “সরি, আর হবে না। তুমি রাগ করো না।”
.
.
“স্যার একটা কথা জিজ্ঞেস করি?” রহমান প্রশ্ন করে।
সভ্যের ধ্যান ফাইল। সে ফাইল থেকে মুখ না তুলেই বলে, “করো।”
“আপনি ম্যাডামকে জানাচ্ছেন না কেন যে এই তিনবছর যা করেছেন তা আপনি করেছেন বড় স্যার না।”
“কারণ তোমার ম্যামের জেদ তার হাইট থেকেও বেশি। তিনবছর আগে যদি আমি ওকে হাস্পাতালে বলতাম যে আমি ওকে সাহায্য করব তাহলে ও জীবনেও রাজি হতো না। ওর ইগোতে হার্ট হতো।”
“আর আপনার এমন কেন মনে হয়েছে স্যার?”
“আমি আসার কয়েকমাস পর সামির সাথে ওর দেখা হয়েছিল। ও সামিকে জানিয়েছিল যে আমি যেন কখনো তার সামনে না যাই। আমার চেহেরাও দেখতে চায় না ও।”
“এর কোনো কারণ তো থাকতে পারে তাই না স্যার? একবার কথা বলেও দেখতে পারেন।”
“ওর সাথে শান্তিপূর্ণভাবে কথা বলতে গেলে ঝগড়া শুরু করে দেয়।”
রহমান হাসে, “তা যা বলেছেন স্যার। ম্যাম যেভাবে আপনাকে অসভ্য ডাকে আমার এত হাসি…. ” এতোটুকু তো চুপ হয়ে যায় রহমান। সভ্য আড়চোখে তাকায় তার দিকে। ভয়ে সে গলা পরিষ্কার করে গম্ভীর গলায় আবার বলে, “তাহলে স্যার ম্যামের সাথে বিয়ে করলেন কেন?”
“ও যেহেতু আমার কোনো সাহায্য নিবে না তাই এই রাস্তা অবলম্বন করতে হয়েছে। এক বাসায় থাকলে সারাক্ষণ ওর ব্যাপারে সব খবর রাখতে পারব। বাহিরে সুরক্ষার দেবার অধিকারও আমার থাকবে। আর যা হবে আমার আন্ডারে হবে। দুইবছরে যখন ও নিজেই অনেক বড় নাম হয়ে যাবে তখন ওকে মুক্ত করে দিব।”
“তুই শিওর বিয়েটা কেবল ওর জন্য করেছিস?” দরজায় কারও কণ্ঠস্বর শুনে সভ্য সেদিকে তাকাল। সামি দাঁড়ানো। সামিই একমাত্র মানুষ যার সাথে সভ্যের আজও যোগাযোগ আছে এবং সামিই কেবল তার আসল পরিচয় জানে। সামি হেঁটে এসে সভ্যের সামনের চেয়ারে বসে পড়ে। আবার বলে, “আমার তো অন্য কিছু মনে হয়।”
সভ্য কপাল কুঁচকায়, “আর কি মনে হয় তোর শুনি?”
“যে তুই ইনারাকে ভালোবাসা ছাড়তেই পারিস নি।”
স্বামীর কথা শুনে আঁতকে উঠল রহমান, “কি হইসে… কি হইসে… কি হইসে! সভ্য স্যার কাওকে ভালোবাসে? তাও ম্যামকে? জানেন সামি ভাই আমার মনে হয়েছিল স্যার যেভাবে তাকায় ম্যামের দিকে তাতে বুঝায় যায়…”
রহমানের পুরো কথা সম্পন্ন হবার পূর্বেই সভ্য তাকে ধমক দেয়, “সাট আপ রহমান।”
সভ্য আবার সামির দিকে তাকিয়ে বলে, “আমি ইনারাক ভালোবাসি বলে তাকে বিয়ে করিনি।”
“ব্রো বুকে হাত রেখে বলতো তুই অন্যভাবে ওকে প্রটেক্ট করতে পারতি না? আর ভালো না বাসলে ওর জন্য এতকিছু কেন করছিস? তোর তখন ক্ষমতা না থাকা সত্ত্বেও তুই ইনারার আসল ভিডিও জোগাড় করে ছাড়ালি। ইনারার সাথে বেয়াদবি করা লোকটাকে জেলে ভেতর পাঠালি। তার শাস্তির ব্যবস্থা করেছিস। এমনকি প্রিয়র জন্যও চেষ্টা করেছিলি। কিন্তু তার জন্য কেউ সামনে এসে লড়াই করতে চায় নি। তারপর তুই একারণে চুপ করে ছিলি যেন ইনারার লড়াই ও নিজে লড়তে পারে। ওকে আর্থিকভাবে সাহায্য করেছিস। ওকে সব দিকে থেকে শক্ত বানিয়েছিস। কিন্তু আজ পর্যন্ত ওকে এ কথা জানতে দিস নি। এতবছর পড়াশোনা করে, কোম্পানির কাজ সামলানোর ট্রেনিং নিয়ে দুই সাপ্তাহও হলো না কোম্পানিতে জয়েন করেছিস অথচ ইনারাকে নিজের কাছে নিয়ে এলি। এখনো বলবি ওকে ভালোবাসিস না?”
“তুই কি চাস বলতো?”
“আমি কিছু চাইনা। তুই স্বীকার করিস বা না করিস আমি জানি তুই ওকে ভালোবাসিস।”
“বিরক্ত করিস না। কি কারনে এসেছিস তা বল।” বিরক্ত হয়ে সভ্য তার কাজের দিকে ধ্যান দিও।
“একটা চিন্তা করছিলাম। উওর না পেয়ে ভাবলাম তোর কাছেই চাই।”
“বলতে থাক।”
“ইনারা জানে তোর দাদাজান তার জন্য এতকিছু করেছে। যদি তোর দাদাজান ইনারার কথা জেনে যায়?”
সাথে সাথে সভ্যের হাত থেকে ফাইলটা পড়ে গেল। সে গোল গোল চোখ করে সামির দিকে তাকালো। এক ঢোক গিলল, “দাদাজান আমাকে জীবিত কবর দিবে।”
“বলিস কি? মরার আগে একটা ট্রিট দিয়ে যাইস। ফাইভ স্টার হোটেলে কিন্তু।”
সভ্য চোখ রাঙাতেই সামি বলে উঠে, “ভাই মজা করছি।”
সে রহমানকে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে, “ওর দাদাজান কি অনেক ভয়ংকর না’কি?”
“বলেন না ভাই সবাই ভয় পায় তার থেকে। আমার তো প্রাণ আসে যায় তার সামনে গেলে।”
“বলো কি!”
সভ্য দুজনকে উদ্দেশ্য করে বলে, “দুইজনে ফিসফিস করে কি কথা বলছিস ?”
রহমান এ কথা তো সভ্যকে শুনাতে পারে না। তাই সে বাহানা বানায় সেখানে দাঁড়িয়েই, “সামি ভাইকে বলছিলাম যে আজ ম্যামের বান্ধবী আসবে বাসায়।”
“বান্ধবী!” সামি বলল, “মানে সুরভি?”
“জ্বি। তাকে নিতে কাওকে পাঠাতে বলেছিল ম্যাম।”
সভ্য উঠে দাঁড়ায়। তার কোর্টের বোতাম ঠিক করতে করতে বলে, “আমার শালী সাহেবার সাথে তাহলে একটু দেখা করে আসি।”
“কেন ভাই তুই তো ওকে ভালোইবাসিস না তাহলে নিশ্চয়ই বউও মানিস না। তাহলে সুরভি তোর শালী হলো কীভাবে?”
সভ্য বিড়বিড় করে বলে, “কেবল আমার মানলে হবে না’কি? ওর মানাটাও তো জরুরী। কথা বলতে গেলে পারলে তো সে ঝাঁসির রাণীর মতো তলোয়ার বের করে গলা কেটে দেয়।”
সে মুখে বলে,
“উফফ বিরক্ত করিস না তো। ঘরে ইনারা আর এখানে তুই। দুইদিন পর পাগলখানায় ভর্তি হতে হবে আমার। তোদের দুইটাকে একসাথে রাখলে যে কাওকে পাগলখানায় ভর্তি হতে হবে। আচ্ছা তুই আসবি?”
“নো ব্রো, আমার নতুন গানের রেকর্ডিং আছে। রাতে আসতে পারি আমার নতুন ভাবির সাথে দেখা করতে। আমাকে স্টুডিও পর্যন্ত ড্রপ করে দিবি।”
“এত জ্বালানোর পর? একদম না। রহমান তুমি সব কাজ দেখো, আমি আসছি।”
.
.
ইনারা দাঁড়িয়েছিল সভ্যের বারান্দায়। তার বারান্দাটা পিছনের পাশে। এখান থেকে সকল বাগানটা সুন্দরভাবে দেখা যায়। একত্রে বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। আসমানী আকাশে শুভ্র মেঘের সাথে বাতাসে দুলে বেড়াচ্ছে একগুচ্ছ কৃষ্ণচূড়া। আর ইনারা মুগ্ধ হয়ে দেখছে এই দৃশ্য। যেন সে ভেসে যেতে চায় এই মুগ্ধতায়। হারিয়ে যেতে চায় সে এই সৌন্দর্যের রাজ্যে। সে তার ধ্যান মগ্ন হয়েছিল। তার ঘোর ভাঙে কানের কাছে এক মনোহর কন্ঠে, “এমন মুগ্ধ নয়নে কী দেখছ শুনি?”
সে চমকে উঠে। খানিকটা পিছনে তাকাতেই দেখতে পায় সভ্যকে। বিস্মিত সুরে বলে, “আপনি এখানে!
সভ্য ঝুঁকে আসে তার দিকে। তার দুইপাশের বারান্দার বর্ডারে হাত রেখে মৃদুস্বরে বলে, ” আমার বাড়িতে আমার আসার অনুমতি নেই মহারাণী সাহেবা।”
ইনারা এক ঢোক গিলে। সে চোখ ফিরিয়ে নেয়। সভ্যের সাথে এমন মৃদুস্বরের কন্ঠ আকর্ষণীয়। আকর্ষণীয় শব্দটাও কম হয়ে যায়। সভ্যের এ সুরে কথা বললে কেন যেন এক মুহূর্তের জন্য তার হৃদয়ের স্পন্দন থেমে যায়। সে অস্থির হয়ে আশেপাশে তাকাতে থাকে।
তাকে এমন দেখায় সভ্য আবার বলে, “আমি কাছে আসায় তোমায় গাল দুটো ভারী হয়ে গেছে না’কি?”
ইনারা চকিতে তাকায় সভ্যের দিকে। আমতা-আমতা করে বলে, “না…না-তো। এমন… এমন হতে যাবে কেন? একমিনিট আপনি আমার এত কাছে কি করছেন?” ইনারা সভ্যকে ধাক্কা দিয়ে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে বলে, “লজ্জা নেই আপনার? গতকাল বললাম আমাকে স্পর্শ করবেন না আজ আবার ঢ্যাঙঢ্যাঙ করে এত কাছে চলে আসছেন।”
“এ ঢ্যাঙঢ্যাঙ আবার কোন জাতের শব্দ।”
“বাংলা শব্দই।”
“তুমি এতবছর বিদেশে থেকেও এসব পাও কোথায়?”
“টপিক চেঞ্জ করবেন না। গতকাল বলার পর আপনি আমার কাছে এলেন কেন?”
“গতকাল বলার পর তো ঠিকই গতকাল রাতে আর আজ সকালে আমার হাতে খাবার খেয়েছিলে।”
“হাত পুড়েছে কার দোষে?”
“তোমার।”
“উফফ!”
“আর বাই দ্যা ওয়ে এটা আমার রুম। আমার বারান্দা। আমি আমার রুমের যেখানে ইচ্ছা সেখানে দাঁড়াতে পারি, হাত রাখতে পারি, আমার ইচ্ছা। তুমি আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছ তোমার দোষ। আমার না।”
“ধ্যুর, ভাল্লাগে না।” ইনারা মুখ ফুলিয়ে সেখান থেকে রওনা দেয়।
সভ্য ফিক করে হেসে দেয় ইনারার এমন মুখ দেখে।
ইনারা যত দ্রুত রওনা দিয়েছিল তার থেকে দ্বিগুণ গতিতে দৌড়ে ফিরে এলো। সভ্যের হাত ধরে বলল, “আপনার এখন এখান থেকে যেতে হবে।”
“এক্সকিউজ মি, এটা আমার বাড়ি। তুমি আমাকে নিজের বাড়ি থেকে বের করে দিবে?”
“দেখুন সুরভি আসছে। ও আপনাকে আমার সাথে দেখতে পারে না।”
“কেন? আমারই তো আমার শালীসাহেবার সাথে দেখা করার জন্যই এসেছি।” সভ্য তার রুমের ভিতরে প্রবেশ করলো। ইনারাও গেল তার পিছু পিছু, “শালীসাহেবা? কে শালীসাহেবা?”
“আর কে? সুরভী। ও তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড মানে আমার শালীসাহেবা। বিয়ের পর প্রথম তোমার হয়ে কেউ আসছে। আমি না থাকলে মানায়?”
“আপনার মাথা নষ্ট হয়েছে। পাগল হয়ে গেছেন আপনি। প্লিজ পাগলের হাস্পাতালে যান, তাও বের হন এখান থেকে।” ইনারা অস্থির হয়ে বলল, “যাস্ট বের হন।”
সভ্য তার কথা শুনে না। মজা নেওয়ার জন্য উল্টো সে রুমে ঘুরতে থাকে। ইনারাও ঘুরতে থাকে তার পিছনে। একসময় বিছানায় ইনারার পা লেগে সে পড়ে যেতে নেয়। সভ্য তাকে ধরতে নেয়। কিন্তু সভ্য তাকে ধরার আগেই সে সভ্যের কলার ধরে নেয়। ফলে সে বিছানায় পড়ে যায়। ঠিক তার উপরে পড়ে যায় সভ্য।
পড়ে যাবার সময় চোখ চেপে বন্ধ করে নেয় ইনারা। মিটিমিটি করে চোখ খুলে দেখে তার উপর সভ্য। সে এক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়। চোখে চোখ মিলে। হয় দৃষ্টি বন্ধন। সভ্যও চোখ সরায় না। সে এক হাত দিয়ে তার কপালের চুল সরিয়ে চোখ টিপ মেরে বলে, “এই চলে তোমার মনে? বাহিরে আমাকে দূরে সরিয়ে দেবার নাটক করলেও ইচ্ছে করে ঠিকই কাছে টেনে নিচ্ছো। আমাকে কাছে পাওয়ার এত ইচ্ছা হলে সোজা বললেও পারো। আমি কিছু মনে করব না সুইটহার্ট।”
চলবে….
[দয়া করে ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।]