অতঃপর গল্পটা তোমার আমার পর্ব-১৫

0
315

#অতঃপর_গল্পটা_তোমার_আমার
#পর্ব-১৫
#হুমায়রা_আঞ্জুম (লেখনীতে)

বাবাকে রেখে এলাম
চির ঘুমের বাড়িতে।
সেই থেকে
একটা কাঁচা কবরের ঘ্রাণ
আমাকে একফোঁটা ঘুমোতে দিচ্ছেনা।
সমাধিসুরভী থেকে থেকে বলছে শুধু
‘বেঁচে থাকতে বাবা একটা মানুষ ছিলো
মরে গিয়ে মহাপৃথিবীর অংশ হয়ে গেলো’।

বাবা,
তোমার মহাপৃথিবী হওয়ার দামে
আমার পৃথিবী বড্ডো ছোটো হয়ে এলো।

এইটুকু লিখেই ডাইরিতে চলমান কলমটা থামালো সানাত। তারপর ডাইরিটা বন্ধ করে উঠে দাঁড়ালো। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে প্রায়। ছাদে থাকতে ঠান্ডা লাগছে। ওপাশে ফিরে তাকালো। দেখলো ছাদের এক পাশে দাঁড়িয়ে ওহী বাদাম খাচ্ছে আর বেশ রেগে রেগে কথা বলছে তার প্রেমিক মানুষের সাথে। সানাতরা চলে এসেছে এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। এখন সে যথেষ্ট স্বাভাবিক। এর প্রধান কারণ এই পরিবারটা, এই পরিবারের মানুষ গুলো। অন্তিম, অন্তিমের মা অর্পিতা আঞ্জুম, অন্তিমের বাবা ওয়ালিদ আহসান, ওহী সকলে ঘিরে রেখেছে সানাতকে। তাই শূন্যতা কাছে ঘেঁষতে পারছেনা সানাতের। সানাত ওহীর পাশে এসে দাঁড়ালো। ওহী কল কেটে দিয়েছে। সানাত বললো,

ওভাবে ফায়ার হয়ে কথা বলছিলি কেনো? কি ভাবলো?

চুপ থাক তুই। ওর ভাগ্য ভালো যে ও আমার সামনে ছিলোনা নাহলে আজ খুন করে ফেলতাম।

কি এমন করেছে যে এত ক্ষেপছিস?

তুই জানিসনা কি করেছে? তাও বলছিস আমি বেশি করেছি!

জানি কি করেছে। আরেহ বাবা তুই যেমন ভাবছিস তেমন না। ওর কলিগ হয়। আর মেয়ে কলিগ কি থাকতে পারেনা? ও তো আর যেচে যায়নি। হঠাৎ একটা প্রয়োজনে ওর হেল্প চেয়েছে আর তুই এতো রিয়েক্ট করছিস।

বেশ করেছি। শোন পুরুষ মানুষদের একটু চোটপাটের উপরেই রাখতে হয় নাহলে এদের বিশ্বাস নেই। আর তুই জানিস নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্য কোনো মেয়ের সাথে দেখলে ঠিক কতোটা জ্বলে? ছারখার করে দিতে ইচ্ছে করে সব। আমাকে যে বলছিস ধর এখন যদি ছোঁয়া আবার ফিরে আসে তখন সহ্য করতে পারবি ভাইয়ার পাশে ওকে?

মুহূর্তেই যেনো সানাত থমকে গেলো। সত্যিই তো ছোঁয়া যদি কখনো ফিরে আসে? তখন কি হবে? অন্তিম কি তাকে ছেড়ে দেবে? তাকে ফেলে ছোঁয়ার কাছে চলে যাবে? নাহ ভাবতে পারছেনা সানাত। তার খুব ভয় হয়। সে কিছুতেই নিজের জায়গায় ছোঁয়ার কথা ভাবতে পারেনা।

কিরে ভয় পেয়ে গেছিস না? তাহলে বোঝ আমার কেমন লেগেছে! কিরে সানাত কথা বলছিস না কেন?

সানাত কোনো মতে ঠিক হয়ে ভয়ার্ত কন্ঠে বললো,

ওহী সত্যিই যদি কখনো ছোঁয়া ফিরে আসে! তখন কি অন্তিম আবারও ফিরে যাবে ছোঁয়ার কাছে?

কিসব বলছিস তুই? আমি তো জাস্ট এমনিই বলেছি। তুই সিরিয়াস কেনো হচ্ছিস? আর ছোঁয়া আসবে কি করে ওর নিশ্চই বিয়ে হয়ে গেছে এতো দিনে।

জানিনা ওহী আমার খুব ভয় করে। আমি সত্যিই সহ্য করতে পারবোনা যদি এমন কিছু হয়।

আরেহ গাধা এমন কিছুই হবেনা। আর ভাইয়া ওকে একসেপ্ট করবে নাকি মাথা খারাপ?এসব না ভেবে নিচে চল ঠান্ডা লাগছে।

ওহীর কথাও সানাতকে শান্ত করতে পারলো না। কোথাও যেনো ভয়টা থেকেই গেলো।
.
.
সন্ধ্যা বেলা,
সানাত নিজের ঘরে বসে একটা উপন্যাসের বই পড়ছে। এর মধ্যেই পাশে পরে থাকা ফোন নোটিফিকেশন বেজে উঠলো। সানাত হাতে নিতেই দেখলো অন্তিমের ম্যাসেজ । ম্যাসেজে অন্তিম লিখে পাঠিয়েছে,

“সানাত আলমারির থার্ড তাকে দেখো একটা শপিং ব্যাগ রাখা। ব্যাগের মধ্যে তিনটে শাড়ি আছে। ওখান থেকে হালকা গোলাপি রঙের শাড়িটা পড়ে তৈরি হয়ে গলির মোড়ে আসো। আমি বাইক নিয়ে অপেক্ষা করছি। আর হ্যাঁ কোনো রকম জুয়েলারি পড়বেনা। সময় ২০ মিনিট।”

সানাত পুরো ম্যাসেজ পড়ে হা হয়ে তাকিয়ে আছে। আর ভাবছে অন্তিম শাড়ি কবে কিনলো? হঠাৎ কি ভূত চাপলো মাথায় যে এই সময় শাড়ি পরে আসতে বললো? বেশি কিছু না ভেবে তৈরি হতে চলে গেলো সানাত।
.
.

অন্তিম বাইক থামিয়ে পাশের টঙের দোকানে বসে চা খাচ্ছে। সানাতকে বিশ মিনিট সময় দিয়েছিল অথচ আধা ঘণ্টার বেশি হয়ে গেছে কিন্তু সানাতের কোনো পাত্তা নেই। অন্তিম বিরক্ত হয়ে সানাতকে কল করতে নেবে এমন মুহুর্তেই চোখ গেলো সামনে গলির দিকে। কিছু সময়ের জন্য থেমে গেলো অন্তিমের পুরো পৃথিবী। সানাত অন্তিমের অমন দৃষ্টি দেখে বেশ লজ্জায় পড়ে গেলো। শ্যাম বর্ণের গায়ে হালকা গোলাপি রঙের হ্যান্ড পেইন্টেড শাড়িটি খুব সুন্দর মানিয়েছে। যেনো মনে হচ্ছে এই শাড়িটি এই শ্যাম বর্ণের রমণীর জন্যই বানানো হয়েছে। সানাত কাচুমাচু করে বললো,

আপনি এই সময় হঠাৎ ডাকলেন যে?

অন্তিম দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে বললো,

হ্যাঁ কাজ আছে তাই। বলেই চা ওয়ালা মামার উদ্দেশ্যে বললো,

মামা টাকাটা নেন। বলেই সানাতের হাত ধরে বাইকের কাছে গিয়ে নিজে উঠে সানাতের হাতেও হেলমেট ধরিয়ে দিয়ে উঠে বসতে বললো। এরপর বাইক স্টার্ট দিতে দিতে বাইকের ভিউ মিররে একবার তাকালো। সানাত বাইকে বসেছে ঠিক আছে কিন্তু অন্তিমের কাধে হাত রাখবে কিনা এই নিয়ে দোটানায় আছে। অন্তিম নিজেই বলে উঠলো,

সানাত!

হুঁ।

একটা টাইট হাগ করো তো। কাম ফার্স্ট।

সানাত নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। একি শুনলো সে! বোধয় ভুলভাল শুনেছে। তাই বোকার মতো বলে উঠলো,

কি?

বলেছি শক্ত করে জড়িয়ে ধরো। একদম টাইট ভাবে ধরবে যেনো ছুটে না পরো। তাড়াতাড়ি।

সানাত বহু সাহস নিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। বুকের ভেতর উত্তেজনার উথাল-পাতাল ঢেউ উঠেছে। সামনে থেকে অন্তিম বলে উঠলো,

ভাত খাওনি অজকে? কি জড়িয়ে ধরেছো এটা? জোরে ধরো।

সানাত বোকা বনে গেলো। তারপর আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। অন্তিম বলে উঠলো,

এবারও অত একটা জোরে হয়নি।

সানাত এবার লাজ লজ্জা ভেঙ্গে ক্ষেপে গেলো। তারপর তেতে উঠে বলে উঠলো,

তো আপনি কি বলতে চাইছেন আপনাকে বুকের ভিতরে ঢুকে যাবো?

গেলে মন্দ হয়না।

সানাত বড়ো বড়ো চোখ করে তাকিয়ে আছে। অন্তিম ভিউ মিররে সানাতের দিকে তাকিয়ে বললো,

নাহ্ সানাত তোমাকে একটা হাগ করার ক্লাস নিতে হবে। যতো যাই হোক এখন আমি তোমার টিচার বলে কথা। বলেই এক চোখ টিপ দিয়ে হেসে বাইক স্টার্ট করলো।

সানাত বলে উঠলো,

আপনি তো ভারী অসভ্য দেখছি।

অসভ্যতামী না করার আগেই বলছো অসভ্য তাহলে করলে কি বলবে?

চুপ করুন। চুপচাপ বাইক চালানোতে মনোযোগ দিন।

পেছনে এতো সুন্দর আকর্ষণীয় রমণী বসে আছে মনযোগ কি করে সামনে দেই বলো? মাথা নস্ট হয়ে যাচ্ছে।

ছিঃ আকষর্ণীয় আবার কি?

তুমি।

এই আপনি কি আমার সাথে ফ্লার্ট করছেন?

ফ্লার্ট? সেটা আবার কি?

ঢং কম করুন। আপনি বোঝেন না ফ্লার্ট কি?

তুমি একটু বুঝিয়ে দেওনা সানাত। আমি সত্যিই বুঝিনা।

তাহলে এতক্ষণ ধরে কি করছিলেন?

আমি তো শুধু বাস্তবটা বললাম। তোমাকে আজ যা মারাত্মক….

চুপপপ করুননন আপনিইইই!!

সঙ্গে সঙ্গে অন্তিম হো হো করে হেসে উঠলো। সানাত রাগ দেখিয়ে বললো,

হাসবেন না আপনি। ঠোঁটকাটা লোক কোথাকার!

অন্তিম আবারও হাসলো। তারপর হাসি থামিয়ে বললো,

একটা গান ধরো তো সানাত।

আমি?

হ্যাঁ তুমি।

আমি গান পারিনা।

মিথ্যে কথা বলবেনা। তুমি খুব ভালো গান করো। গাও বলছি।

বেশ। তারপর সংকোচ ভেঙ্গে সানাত গান ধরলো,

এই পথ যদি না শেষ হয়
তবে কেমন হতো তুমি বলোতো?
যদি পৃথিবীটা স্বপ্নের দেশ হয়
তবে কেমন হতো তুমি বলোতো?

সামনে থেকে অন্তিম সুর মিলিয়ে গেয়ে উঠলো,

তুমিই বলো

এরপর সানাত গেয়ে উঠলো,

এই পথ যদি না শেষ হয়
তবে কেমন হতো তুমি বলোতো?

সামনে থেকে অন্তিম বলে উঠলো,

পথ শেষ হবে কিনা জানিনা তবে আমার বাইকের পেট্রোল খরচটা তুমি দিলে ভালো হতো।

সানাত হেসে উঠলো। তারপর বললো,

এবার আপনি একটা গান ধরুন।

এই না সানাত আমার গান শুনলে তুমি বাইক ছেড়ে পালাবে।

না না অত কিছু শুনছিনা আপনি গান।

বলছো গাইবো?

হ্যাঁ গান।

হাসবে না কিন্তু!

আচ্ছা হাসবো না।

ওকে। বলেই অন্তিম গান ধরলো,

যেতে যেতে পথে পূর্ণিমারাতে চাঁদ উঠেছিলো গগনে,
দেখা হয়েছিলো তোমাতে আমাতে, কি জানি কি মহা লগনে চাঁদ উঠেছিলো গগনে… গাইতে গাইতেই বাইক থামালো অন্তিম। পেছন থেকে সানাত বলে উঠলো,

একি থামলেন কেনো?

কারণ আমরা এসে গেছি।
#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে