“বখাটে বউ”(পর্ব-৯)

0
2126

“বখাটে বউ”(পর্ব-৯)

লাইট ভেঙে শুতেই পারলাম না, বাবু চিৎকার করে বললো-
__”ফাজিল বখাটে, পাক্কা একটা গুন্ডী মেয়ে। সিনেমা নাটকেও এমন ভিলেনি মেয়ে আমি কখনো দেখিনি।”
আমি মুচকি হেসে বললাম-
__”যা কিছু বললেন তার সব আপনি।”
সে চিৎকার করে বললো-
__”কিহ?”
আমি খুব জোরে হেসে ফেললাম। সে বোধ হয় আরো রেগে গেলো। আর আমারো ঈদ ঈদ শুরু হলো। বর্ণর সাথে ফাঙ্গা নেয়ার মজা নেও বাবুতা। বললাম-
__”যে বলে সেই হয়।”
__”এই সব থিওরি কে দিয়েছে আপনাকে?”
আমি বেশ ভাব নিয়ে বললাম-
__”বর্ণকে কে থিওরি দেবে? সে তো একাই এক’শ।”
কি সুন্দর অন্ধকারে দু’জন ঝগড়া করছি। হাউ রোমান্টিক! আসলে ঝগড়া করতে আমার খুব ভাল্লাগে। সেই কখন থেকেই লাইট ভাঙার শান্তি চলছে তো চলছেই, কিছুতেই যেনো সেটা কমছে না। সে বললো-
__”ভেবেছেন আমাকে জ্বালিয়ে আপনি শান্তিতে ঘুমাবেন? নেভার।”
__”ঘুমাই আর না ঘুমাই, লাইট ভেঙে আমি শান্তিতে আছি।”
হঠাৎ সে তার ফোনের লাইট জ্বালিয়ে বললো-
__”সকাল হোক আম্মুকে সব বলে দেবো। কোথায় থেকে এই বখাটে মেয়েকে এনে আমার কাঁধে চাপিয়েছে সেটার হেস্তনেস্ত করবো।”
__”হ্যালো মিস্টার, আমি আপনার কাঁধে চাপিনি, বরং আপনার মতো একটা বান্দর আমার মতো একটা মুক্তার গলায় ঝুলছে।”
__”কিহ?”
__”জ্বী।”
__”আপনি মুক্তা আর আমি বান্দর?”
__”জ্বী বাবু।”
__”এখনই আম্মুকে সব বলে দেবো। আমাকে বান্দর বলছে কত বড় সাহস!”
__”উহু, খালি বান্দর না, আপনি বুইড়া বাবু বান্দর।”
__”কিহ?”
আমি হাহা করে হেসে বললাম-
__”আমার ঘুম পাচ্ছে। আপনি দয়া করে বকবক থামিয়ে আমাকে ঘুমাতে দিন। বউকে ঘুমাতে না দেয়াটা কিন্তু নারী নির্যাতনের মধ্যে পড়ে। আর জানেনই তো যে, আইন এখন নারীদের পক্ষে। এই অপরাধে আপনার একাধিক বার ফাঁসিও হয়ে যেতে পারে। সো বি কেয়ারফুল। গুড নাইট বুইড়া বাবু বান্দর।”

ওর ফোনের লাইটের আলোতে দেখলাম সে সোফায় বসে রাগে ব্যাঙের মতো ফুলছে। দেখে ভীষণ খুশি হলাম। মনে মনে বললাম, ফুলো বাবু ফুলো। তারপর বেলুন হয়ে আকাশে উড়ো। আমি সবাইকে দেখিয়ে বলবো, ঐ বেলুনটা হলো আমার বাবু বর, যে বর্ণর সাথে ফাঙ্গা নিতে গিয়ে বেলুনাকৃতি ধারণ করেছে।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


সকালে ঘুম ভেঙে দেখলাম বাবু সোফায় ঘুমিয়ে আছে। আহারে বেচারার কি দুঃখ! আমি না হয় কোণ ঠাসা হয়ে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি, সে কেনো করলো? সে তো পুরুষ মানুষ, প্রতিবাদ করতেই পারতো! প্রতিবাদ না করে বিয়ে যখন করেছে তখন ঠ্যালা তো সইতেই হবে তোমার খোকাবাবু। আমি জ্বালিয়ে তাকে ভষ্ম করবো। যেনো সে নিজেই আমাকে ফেরত পাঠায়। আমি নিজে থেকেই চলে যেতে পারি, এতে আমার আম্মু অশান্তি সৃষ্টি করবে। তাই সব দোষ তার কাঁধে দিয়ে তবেই আমি যাবো। আপাতত তার শান্তির ঘুমটা বিনষ্ট করে শান্তি তো নিই। আমি খাট থেকে নেমে সোফার সামনে গিয়ে দাড়ালাম তারপর ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে চিৎকার করে বললাম-
__”এই যে ধেড়ে বাবু আর কত ঘুমাবেন? এবার উঠুন।”
সে ঘুমের ঘোরে লাফ দিয়ে উঠে বসে আতঙ্কিত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি বললাম-
__”এবার উঠুন খোকাবাবু।”
__”আমি উঠে কি করবো? আর সাত সকালে চেচাচ্ছেন কেনো?”
__”কি করবেন না করবেন সেটা আপনার ব্যাপার, কিন্তু ঘুমানো আর যাবে না। আর চেচামেচি করাটা হলো আমার স্বভাব।”
__”আর ঘুমানো যাবে না কেনো?”
__”ইহা এক প্রকার অত্যাচার।”
সে রেগে গিয়ে বললো-
__”দেখুন আপনি কিন্তু খুব বাড়াবাড়ি করছেন! এর ফলাফল কিন্তু খুব খারাপ হবে বলে দিলাম।”
আমি ডোন্ট কেয়ার মুখভঙ্গি করে বললাম-
__”সব খারাপ আমি দেখে নেবো, ইহা নিয়ে আপনার টেনশন করতে হবে না।”

রাগ করে সে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো। আমি কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে ভাবলাম এরপর আর কি কি করে তাকে জব্দ করা যায়। ধ্যাত্তেরি কিছুই তো মাথায় আসছে না। আব্বুর সাথে এটা নিয়ে একটু আলোচনা করতে হবে। পাশের বাড়িটা বাপের বাড়ি হবার এই একটা বিশেষ সুবিধা। আমি রুম থেকে বেরিয়ে ওবাড়িতে যাচ্ছিলাম আব্বুর সাথে দেখা করার জন্য হঠাৎ আন্টির সাথে মুখোমুখি দেখা। আন্টি আমাকে দেখে বললেন-
__”ও তুই উঠেছিস? আয় নাস্তা করবি।”
__”আচ্ছা।”
__”বাবু কোথায়?”
হুট করেই আমার মাথায় একটা আইডিয়া ভর করলো। আমি করুণ মুখ করে বললাম-
__”আসলে আন্টি আপনার ছেলের তো ডায়রিয়া হয়েছে। সারা রাত ধরে সে শুধু ওয়াশরুমে যাচ্ছে আর আসছে। এখনো সে ওয়াশরুমেই।”
__”বলিস কি? এখন তো তাকে এসব খাবার দেয়া যাবে না তাহলে। তাকে তো কাঁচকলার তরকারী খাওয়াতে হবে।”
মনে মনে খুব খুশি হলাম। ভাবতেই পারিনি তার জন্য এমন শাস্তি অপেক্ষা করছে। বললাম-
__”হ্যাঁ আন্টি, আর সাথে স্যালাইনও খাওয়াতে হবে।”
__”আচ্ছা আমি সব ব্যবস্থা করছি তুই নাস্তা করে নে।”
__”ওর খাবার তৈরি হোক তারপর দুজন এক সাথে খাবো।”
একসাথে না খেলে দেখবো কি করে যে কাঁচকলার তরকারী সে কতটা আনন্দ নিয়ে খায়। আর আমার অন্য খাবার দেখে তার জ্বলনিটাও তো দেখতে হবে।
__”বাব্বাহ এত দরদ এক রাতেই সৃষ্টি হয়ে গেছে?”
আমি লাজুক মুখ করে দাড়িয়ে রইলাম।

টেবিলে বাবুর জন্য কাঁচকলার ঝোল, কাঁচকলার বড়া, কাঁচকলার ভর্তা আর ভাত। আর আমার জন্য পরোটা ডিম মাংস সবজিসহ আরো অনেক কিছু। ধেড়ে খোকা এবার টের পাবে বর্ণর সাথে ফাঙ্গা নেয়ার ঠ্যালা।
আন্টি বাবুর প্লেটে ভাত আর কাঁচকলার রকমারি আইটেম তুলে দিলো। বাবু তো চোখ কপালে তুলে আন্টির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। তারপর বললো-
__”এসব কি?”
আন্টি বললেন-
__”বাবু এসময় এসব খাবারই খেতে হয়। দু’দিন পর থেকে আবার স্বাভাবিক খাবার খাবি।”
__”এ সময় মানে? বিয়ে করলে এসব খেতে হয় নাকি?”
__”আরে বিয়ে না, এসময়ে খেতে হয়।”
__”কোন্ সময়ের কথা বলছো?”
__”এ সময় মানে হলো ডায়রিয়া হলে।”
__”কার ডায়রিয়া হয়েছে?”
__”কেনো, তোর হয়েছে।”
সে চোখ বড় বড় করে বললো-
__”কিহ?”
__”হ্যাঁ।”
__”তোমাকে কে বলেছে যে আমার ডায়রিয়া হয়েছে?”
আন্টি কিছু বলার আগেই আমি বললাম-
__”এমা এসব খাবে না বলে দেখো সব অস্বীকার করছে! কি পেটুক ছেলে রে বাবাহ!”
সে আমার দিকে তাকিয়ে চোখ লাল করে বললো-
__”ওহ, তাহলে ইনিই এসব বলেছেন। আম্মু জানো তুমি যে এই মেয়টা কতটা ভয়ানক? কাল রাতে সে কি কি করেছে জানো?”
তার কথা শুনে হুট করেই আন্টির মুখ লাজুক লাজুক হয়ে গেলো। আন্টি লাজুক স্বরে বললেন-
__”কাল রাতের কথা বলতে হবে না বাবু। এসব বলতে নেই। বাড়ি ভরা লোকজন কেউ শুনলে কি ভাববে বল! চুপচাপ খেয়ে নে।”
আন্টির কথা শুনে আমার খুব হাসি পেলো। অনেক কষ্টে আমি হাসি চেপে রাখলাম। বাবু আন্টির কথাতে অবাক হয়ে বললো-
__”বলতে কেনো হবে না? ঐ বখাটে মেয়ে কি কি করেছে সব বলবো আমি। সে আমার গায়ে….”
সে সবটুকু কথা বলার আগেই আন্টি তাকে ধমকে থামিয়ে দিয়ে বললো-
__”চুপ একদম। সবার সামনে কেউ এসব বলে নাকি? কবে যে তোর হুশ বুদ্ধি হবে! তোকে নিয়ে আর পারি না!”
__”আমি আবার কি করলাম? সব দোষ তো ঐ বখাটে মেয়ের। সে কেনো এসব করবে? সে করবে তাতে দোষ নেই আর আমি বললেই দোষ?”
__”ওরও দোষ নেই। আসলে এসব হলো বউদের অধিকার তাই।”
বাবু চোখ কপালে তুলে বললো-
__”কিহ? এসব বউদের অধিকার? আগে জানলে ছোট বেলাতেই বাড়ি থেকে পালাতাম।”
আন্টি রেগে গিয়ে বললেন-
__”এসব কথা রেখে খেয়ে নে চুপচাপ।”
__”খাবো তবে কাঁচকলা নয়।”
__”ডায়রিয়া নিয়ে অন্য খাবার খেলে ডায়রিয়া আরো বাড়বে।”
আমি বললাম-
__”আন্টি আপনি উনাকে অন্য খাবার খেতে দেবেন না একদম।”
আমার কথা শুনে খোকাবাবু রেগে গিয়ে বললো-
__”একদম চুপ। ফাজিল বদ বজ্জাত বখাটে মেয়ে একটা।”
আন্টি ওর কথা শুনে বললেন-
__”বাবু তুই ওর সাথে এ ভাবে কথা কেনো বলছিস? আর সে তো এখন মেয়ে নেই, সে এখন তোর বউ। নতুন বউয়ের সাথে কেউ এমন ভাবে কথা বলে?”
খোকাবাবু রাগে গমগম করতে করতে বললো-
__”নিকুচি করেছি বউয়ের। পাক্কা একটা মিথ্যাবাদী মেয়ে সে। সখ করে বউমা বানিয়েছো তুমি আর সব ঝাল যাচ্ছে আমার উপর দিয়ে।”
আমি কাঁদো কাঁদো স্বরে জোরে জোরে বললাম-
__”আব্বু আমি আর এ বাড়িতে থাকবো না গো। এত অপমান আমি আর নিতে পারছি না।”
আন্টি আমার দিকে সমবেদনার চোখে তাকিয়ে বললেন-
__”শান্ত হ মা। আমি সব দেখছি।”
তারপর তিনি তার খোকাবাবুর দিকে তাকিয়ে বললেন-
__”বাবু তুই থামবি? তোর ডায়রিয়া হোক বা না হোক তুই কাঁচকলাই খাবি ব্যাস।”
বাবু করুণ দুখী মুখভঙ্গি করে বললো-
__”আম্মু তুমি ঐ মিথ্যাবাদী মেয়ের জন্য আমাকে কেনো শাস্তি দিচ্ছো? বিশ্বাস করো আম্মু আমার ডায়রিয়া হয়নি।”
__”বাবু আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না। চুপচাপ খেয়ে নে।”

সে কাঁচকলা মুখে দিয়ে বড় বড় চোখে আমার দিকে তাকালো। আমি তার দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে মুচকি হেসে খেতে শুরু করলাম। আর মনে মনে বললাম, কেমন লাগছে তোমার খোকাবাবুতা? জাতি আজ তোমার অনুভূতি জানতে চায়!

বিঃদ্রঃ গল্পের কাহিনী এবং চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে গল্প কখনোই মিলবে না। জীবন কখনও গল্পের মতো সাজানো গোছানো হয় না। গল্পটা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য লেখা হয়েছে তাই বিতর্কিত মন্তব্য প্রত্যাশিত নয়।

পরের পর্ব আগামীকাল…….
Written by- Sazia Afrin Sapna

পর্ব-৮
https://m.facebook.com/groups/884724498624937?view=permalink&id=915357292228324

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে