গল্প: ছোঁয়ার শিহরণ পর্ব-২১

0
1858

গল্প: ছোঁয়ার শিহরণ পর্ব-২১
লেখনীতে: ফাতিমা আক্তার অদ্রি

রাতের আকাশে চাঁদ আলো ছড়িয়েছে । মিষ্টি নরম আলো যেন ঠিকরে পড়ছে। জানলার ফাঁক গেলে তা প্রবেশ করেছে শিহরণের বিছানায় । শিহরণের বারান্দা জুড়ে লতানো সবুজ গাছগুলোর সতেজ সবুজ পাতা যেন সেই মিষ্টি নরম রুপালি আলো শোষণ করে নিচ্ছে। শিহরণ তার বিছানায় গা এলিয়ে আধশোয়া হয়ে আছে। তার দৃষ্টি নিবদ্ধ আকাশের ওই থালার মতো চাঁদের উপর। পলক পড়ছে না। শুধু বুকটা ওঠানামা করছে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে । ডান হাতের মুঠোয় লকেটটি। খুব শক্ত করে আঁকড়ে ধরেছে সে সেই লকেটটা। তার মনের বিষণ্ণতার এমন এক মুহূর্তে সে কেন লকেটটা হাতের কাছে ধরে রেখেছে কে জানে! হয়তো হৃদয়ের কোনো এক অংশের টানে! হয়তো বেশ কিছু সময় ধরে নিজের সাথে বয়ে বেরিয়েছে বলে! কে জানে! কি তার কারণ! কিছুক্ষণ পর সে চাঁদের দিক থেকে দৃষ্টি ফেরাল। তারপর তার ডান হাতের মুঠোয় থাকা লকেটটি চোখের সামনে ধরে সেই লকেটের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে রইল।

দৃষ্টি লকেটের দিকে নিবদ্ধ রেখেই সে ভাবলো তাকে যে কোনো ভাবেই হোক তার মনটা ডাইভার্ট করতে হবে। এট এনি কস্ট! তাকে পারতেই হবে। তৎক্ষনাৎ তার মনে পড়লো বহ্নির দেয়া প্রস্তাব। নিজেকে ব্যস্ত রাখার এটাই মোক্ষম সুযোগ। সাথে সাথেই সে তার মোবাইলটা বেডসাইড টেবিলের উপর থেকে
নিয়ে কল করল মোহনাকে। প্রথম কলটাই রিসিভ করলো মোহনা।

ফোনের ওপাস থেকে ভেসে আসলো মোহনার হতাশ গলায় বলা,’হ্যালো।’

শিহরণ মলিন কণ্ঠে বলল,’মোহনা আই এম থ্রোয়িং অ্যা পার্টি নেক্সট ফ্রাইডে।’

‘পার্টি! সিরিয়াসলি?’ মুহূর্তেই মোহনার কণ্ঠে উচ্ছ্বাস।

‘অ্যাকচুয়ালি ইটস্ জাস্ট অ্যা সিম্পল গেট টুগেদার। নট অ্যা বিগ পার্টি হুয়াট ইউ আর থিঙ্কিং!’ শিহরণ দায়সাড়া গোছের উত্তর দিল।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


‘ওকে। এখন আমার কী করতে হবে?’ মোহনার কণ্ঠে অভিমান।

‘মোহনা! তুই তো খুব ভালো করেই জানিস তোকে কী করতে হবে! এভাবে জিজ্ঞেস করার কী মানে?’ শিহরণ বিরক্তি নিয়ে বলল।

‘আচ্ছা, তোর কী হয়েছে বলতো?’ মোহনার কণ্ঠে উৎকন্ঠা ।

‘কেন ? আমার আবার কী হবে? আই এম অ্যাবসোলিউটলি ফাইন।’ এটুকু বলেই শিহরণ আবার ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল,’যাক এসব কথা বাদ দে। রাদিদ, অতল, ফাহমি আর প্রিয়কে ইনফর্ম করে দিস।’

মোহনা রাগ মিশ্রিত কণ্ঠে বলল,’বলছিস কিছুই হয়নি তোর! আর আমি দেখছি তুই এখন আমাদের বন্ধুদের প্রতিনিয়ত এভয়েড করছিস। আমাদের সাথে আর কোথাও ঘুরতে যাস না। কথা বলিস না। একটা কল পর্যন্ত দিস না। আমরা কল দিলে কেটে দিস।’ মোহনা একটু দম নিয়ে আবার বলল,’আর তুই যে এতদিন পর আমাকে কল করলি, তুই কি একটা বার আমাকে জিজ্ঞেস করেছিস? আমি কেমন আছি?’

শিহরণ মোহনার প্রশ্নে বেশ বিব্রত বোধ করল। আসলেই সে তার বন্ধুদের একদম ভুলে গেছে সামান্য কিছু সময়ের ব্যবধানে। তাদের অভিযোগ একদম সত্য। সে এবার বলল,’আচ্ছা, সরি রে। তুই কি আমার সাথে ঝগড়া করার পণ করেছিস?’

মোহনা চেঁচিয়ে বলল,’ঝগড়া করার মতোই তো কাজ করছিস। বন্ধুদের মধ্যে কতই ফান হয়ে থাকে, কত দুষ্টামি হয়ে থাকে। তাই বলে কি তুই এভাবে দূরে সরে যাবি?’ পরমুহূর্তেই মোহনা গলার স্বর খানিক নিচু করে কষ্ট পাওয়ার ভঙ্গিতে বলল,’ তোর এমন আচরণে আমরা খুব কষ্ট পেয়েছি।’

‘সরি বললাম তো! এবার কী করতে হবে বল?’

‘কিছুই করতে হবে না। আমরা শুধু আমাদের বন্ধুকে কাছে পেতে চাই। আর বেশি কিছু না।’ মোহনা প্রগাঢ় কণ্ঠে বলল।

‘ওকে, ঠিক আছে। তাই হবে। তবে এবার থেকে কাউকে কটাক্ষ করে কথা বলা আমি মোটেই টলারেট করব না।’ শিহরণ যেন সতর্ক করলো।

মোহনাকে একটু বিভ্রান্ত দেখাল। তারপরেও সে বলল,’ঠিক আছে। এখন থেকে আমরা এসব বর্জন করার যথাসাধ্য চেষ্টা করব।’

‘মনে রাখবি কিন্তু। আর হ্যাঁ, নেক্সট ফ্রাইডে। মাইন্ড ইট।’ শিহরণ সাথেই সাথেই কল কেটে দিল।

_______________________

বহ্নি তার রুম জুড়ে পায়চারি করছিল। তার কাছে তার ভাইয়ের আচরণ একদম অন্যরকম ঠেকছে। কেমন যেন উদভ্রান্তের মতন আচরণ করছে ইদানিং। আচমকা তার মনে হলো তার ভাই কি কোনোভাবে প্রেমে পড়েছে না কি! চিন্তাটা মাথায় আসতেই তার মনটা আনন্দে ফুরফুরে হয়ে উঠল। আবার সাথে সাথেই মনটা খারাপ ও হয়ে গেল। অতলের কথা মনে পড়ে গেলো তার। অতলের কী অবস্থা কে জানে! চিঠি দেবার পর থেকে তার সাথে আর দেখা হয়নি।

তার খুব কথা বলতে ইচ্ছে করছে অতলকে। একটু দেখতে ইচ্ছে করছে শান্ত, গভীর চোখের ছেলেটাকে। ইচ্ছে করছে তার মুখ থেকে আগুনমণি নামের ডাক শুনতে। কিন্তু কখনো কখনো মানুষের চাওয়া জিনিসটা অতি ক্ষুদ্র হওয়া স্বত্ত্বেও তা পূরণ হয় না! মুহূর্তেই বহ্নির মনে প্রশ্ন খেলল,’আচ্ছা মানুষের চাওয়া পাওয়ার এত বিস্তর ফারাক কেন!’বহ্নির মনে বিস্ময়েরা দল বেঁধে ছুটোছুটি করছে। কিশোরী মন বড্ড আবেগী । তাই এতটা স্ট্রং চরিত্রের হওয়া সত্ত্বেও বহ্নির মন কখনো কখনো আবেগী হয়ে উঠে। আর আবেগী মন তখন সমস্ত নিষেধ অমান্য করে মনের আরাধ্য ইচ্ছে পূরণের নিমিত্তে ডানা মেলে উড়ে যেতে চায় নিষিদ্ধ কোনো রাজ্যে। যে রাজ্যে সবাই রাজা!
___________________

সমস্ত ঘর জুড়ে তমসার রাজত্ব। ঘুটঘুটে অন্ধকারে অনেক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখ সয়ে আসলে যেমন আবছা দেখা যায় ঠিক তেমনি আবছা আলোয় আবছা ভাবে দেখা যাচ্ছে অতলকে। একদম গুটিয়ে বসে আছে সে। শান্ত শিষ্ট মানুষগুলো এমনই হয়। তাদের কষ্টগুলো তারা প্রথম ঝাপটায় একদম মেনে নিতে পারে না, পারে না সহ্য করতে। তার হাতের মুঠোয় দলা পাকানো একটা কাগজ। আর মনের মধ্যে একটা প্রশ্নের আনাগোনা করছে অহরহ। ছোঁয়া কাকে ভালোবাসে? কে সেই ভুল মানুষ? কেনই বা ছোঁয়া তাকে ভুল মানুষ বলছে? কেন?

অতল ওই চিঠিটা আবার মেলে ধরল চোখের সামনে। অন্ধকারে চিঠি পড়ার এক ব্যর্থ প্রচেষ্টা করছে সে। নাহ্! চিঠির একটা শব্দ ও পড়া যাচ্ছে না। তারপরেও অতল উঠে লাইটের সুইচ অন করলো না। একটু নড়ে শুধু বেড সাইড টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা ছোট টর্চ বের করে নিলো। টর্চের আলো জ্বালিয়ে সেটা বিছানার উপর রাখল। তারপর হাতের দলা পাকানো চিঠিটা প্লেইন করার ব্যর্থ চেষ্টা করতে লাগল। মোটামুটি সোজা করেই সে আবারো চিঠিটা পড়তে শুরু করলো। টর্চের আলো চিঠির উপর তাক করা।

প্রিয় বন্ধু অতল,

কিছু কিছু মানুষের জীবনে কেউ না থাকাই বোধহয় উত্তম! আমি সেই কিছু মানুষগুলোর মধ্যে পড়ি। তোমার কাছে আমি ঋণী তুমি আমার দুঃখ ঘুচানোর সঙ্গী হতে চেয়েছ বলে। তোমাকে আজ আমি সেই অধিকার দিতে পারছি না। তবে জেনে রাখো, তোমাকে একজন খুব ভালো বন্ধু হিসেবে মনে রাখব আজীবন। তোমাকে আজ চলার পথের সঙ্গী বানাতে পারছি না আমি। তবে এটা শুধুই আমার অপারগতা। তোমার নয়, অতল! তুমি জানো তুমি আকাশের ওই চাঁদের মতো। যে চাঁদ কোনো স্বার্থ ব্যতিরেকেই রাতের আঁধারে পথ ভোলা মানুষদের পথ দেখায়। আমি অপারগ সেই চাঁদের আলোতেও আমি পথ দেখতে পারছি না বলে। তোমার জীবনে আমার মতো পথভোলা মানুষ শোভনীয় নয়। তুমি যেমন উজ্জ্বল ও সুন্দর একটি মনের অধিকারী ঠিক তেমনি তোমার জীবনে কোনো এক উজ্জ্বল ও সুন্দর মনের অধিকারী মানুষ আসবে। যে শুধু তোমার হবে। অতল! বিশ্বাস করো সেই মানুষটি আমি নই। আমার সেই যোগ্যতা নেই। এটা কেবলই আমার ব্যর্থতা, তোমার নয়। আমি পথভোলা কারণ আমি এমনই একজনকে পছন্দ করি যার পথের সাথে আমার পথ কখনো এক হবার নয়। তবুও মন মানে না। তাই আমার জন্য ভুল মানুষটিকেই আমি ভালোবাসি।
আর তাই আমি অপারগ । তোমার এই অপারগ বন্ধুকে পারলে ক্ষমা করো।

ইতি
অপারগ ছোঁয়া

অতল আবারো দুমড়ে মুচড়ে ফেলল চিঠিটা। তার চোখের কোণে হয়তো জমেছে অশ্রুর দু একটি কণা। কিন্তু অন্ধকারে তা বোঝবার জো নেই। অতলের ভাবনায় আবারো উঁকি দিলো কিছু প্রশ্নের সমাহার, ‘কে সেই ভাগ্যবান ছেলে যাকে ছোঁয়া ভালোবাসে? কে সে? কে সেই ভুল মানুষটা?’

চলবে…..ইন শা আল্লাহ্

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে