অনুভূতি পর্ব ৫০

0
1983

অনুভূতি
পর্ব ৫০
মিশু মনি
.
৮১.
মিশু মেঘালয়ের বিছানায় শুয়ে ওর বালিশ চেপে ধরে অঝোর ধারায় কেঁদে চলেছে। এই চাদর আর বালিশে মেঘালয়ের স্পর্শ মিশে আছে, ওর শরীরের গন্ধ মিশে আছে। খুব করে অনুভব করছে মেঘালয়কে। ও কোথায় আছে কিছুই জানেনা কেউ। ওর সব বন্ধুদেরকে কল দিয়েছিলো কেউই মেঘালয়ের কোনো খোজ জানেনা। মিশু ক্রমশই অনুশোচনায় দগ্ধ হতে লাগলো। একটা মাস ধরে মেঘালয়কে এভোয়েড করেছে ও,সেটা ভেবে নিজের চুল নিজেরই টেনে টেনে ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।

মিশুর ফোনে প্রয়াস কল দিয়েছে। ও দুবার কল কেটে দেয়ার পরও কল দিচ্ছে। মিশু কান্না থামাতে পারছে না কিছুতেই। বাধ্য হয়েই ফোন বন্ধ করে রেখে দিলো। মেঘালয়কে একবার দেখার জন্য ছটফট করছে ও। এখন সামনে পেলে দুই পা ধরে ক্ষমা চাইতো মেঘালয়ের কাছে। তবুও ওকে চাই,খুব করে চাই।

মেঘালয়ের মা এসে মিশুকে খাবার তুলে খাওয়ালেন। বললেন, “মেঘালয় এমন করার ছেলে না। কি হয়েছিলো বলবি?”
-“আমি ওকে অনেকদিন যাবত এভোয়েড করছিলাম। ইচ্ছে করেই করিনি,আমি ব্যস্ত ছিলাম। কিন্তু এই ব্যস্ততা আর ক্যারিয়ারের অজুহাতে অনেকবার খারাপ আচরণ করেছি ওর সাথে।”
-“আমার ছেলেটা অবহেলা সহ্য করতে পারেনা।”
-“সেটা কেউই পারেনা। আর আমিতো বারবার ওকে আমার কাছ থেকে…”

কথাটা বলতে গিয়ে মিশু থেমে গেলো। ওকে জানোয়ারের সাথে তুলনা করার কথাটা মনে পড়ে গেলো ওর। যে ছেলেটার বুকে লাথি দেয়ার পরও মেঘালয় ওর পায়ে চুমু দিয়ে এসে বুকে জড়িয়ে নিয়েছিলো। টানা এক ঘন্টা পা টিপে দিয়েছিলো, মাথায় জলপটি দিয়েছিলো সারা রাত জেগে থেকে। এই ছেলেটাকে কিভাবে এত কষ্ট দিতে পারলো ও? নিজের ইচ্ছে করছে নিজেকে আঘাত করতে।

মা বললেন, “টেনশন করিস না। ও যেখানেই থাকুক, কতদিন এভাবে থাকবে? এক সপ্তাহ, দুই সপ্তাহ? তারপর ঠিকই ফিরে আসবে। আমাকে ছেড়ে ও থাকতে পারেনা, আর তোকেও ও অনেক ভালোবাসে। আমার বিশ্বাস তোকে ছেড়েও থাকতে পারবে না। সম্পর্কে এরকম হয়।”

মিশু একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। মনেমনে বললো, এটা শুধুই সম্পর্ক ছিলোনা। মেঘালয়ের পুরো পৃথিবী জুড়ে শুধু আমিই ছিলাম। আর আমরা তো তথাকথিত প্রেমিক প্রেমিকা নই,আমরা স্বামী স্ত্রী। এই বাঁধন তুচ্ছ করার সাধ্য আমাদের নেই।
মিশু বললো, “আম্মু আমার একটা কথা রাখবে?”
-“কি কথা?”
-“আপনারা বিয়ের সব আয়োজন করে ফেলবেন প্লিজ? সব জায়গায় ছড়িয়ে দিন মেঘালয়ের বিয়ের কথা। ও যেখানে থাকুক ছুটে চলে আসবে।”
-“ওকে ছাড়াই বিয়ের আয়োজন করবো?”
-“হুম। ও তো অভিমান করে দূরে ডুব মেরে আছে,যখন দেখবে সব জায়গায় প্রচার হয়ে গেছে বিয়ে হচ্ছে। ও কিভাবে দূরে লুকিয়ে বসে থাকবে? আমাকে ছেড়ে কয়দিন ই বা থাকতে পারবে মেঘ? আর বিয়ের এরেঞ্জমেন্ট হয়েছে শুনলে দূরে থাকতেই পারবে না।”

মা হেসে বললেন, “ভালো আইডিয়া তো। মেঘালয় কতদিন অভিমান করে থাকবে? আমরা এদিকে বিয়ের সব আয়োজন করে ফেলি,দেখা যাবে বিয়ের আগেই হুট করে এসে হাজির। এত বিশাল আয়োজন হবে যে,মেঘ নিজেই মুগ্ধ হয়ে যাবে।”

মিশু শ্বাশুরিমাকে জড়িয়ে ধরে বললো, “আমাকে ভূল বুঝোনা প্লিজ আম্মু। আমি নাহয় একটু ভূল করেছি। শুধরানোর সুযোগ দাও আমায়।”
-“পাগলী মেয়েটা। চিন্তা করিস না। বিয়ের ব্যবস্থা করছি দ্রুত। তুই এখানেই থাক,সবার সাথে এনজয় কর।”
-“সবার সাথে এনজয়? অথচ যার বিয়ে তার খবর নাই।”
মা হেসে উঠলেন। মিশুর ও হাসি পেয়ে গেলো।

৮২.
বিয়ের আয়োজন দ্রুত গতিতে শুরু হয়ে গেলো। আকাশ আহমেদ নিজে গিয়ে সায়ান, আরাফ ও পূর্ব সবাইকে নিয়ে এসেছে বাসায়। যেহেতু আর নিজস্ব কোনো লোক নেই। এখন সমস্ত আয়োজন এদের সবাই মিলে করতে হবে।দুদিন কেটে গেছে। মেঘালয় কোথায় আছে কেউ বলতে পারছে না। সে যেখানেই থাকুক, পত্রিকায় ইতিমধ্যেই খবর প্রকাশিত হয়ে গেছে, “জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মেঘালয় আহমেদের সাথে জুটি বাঁধতে চলেছেন আর.জে মিশু।”

এই শিরোনামে খবর ছড়িয়ে পড়েছে। এদিকে পাত্রের কোনো খোঁজ নেই। মিশু নিজের ওয়ালেও স্ট্যাটাস দিয়ে দিয়েছে, “মেঘালয়ের সাথে সম্পর্কটা প্রায় বছর খানেকের। ভেবেছিলাম আরো দেরিতে বিয়ের পিড়িতে বসবো, কিন্তু বাবা মায়ের কথা ভেবে তাড়াতাড়ি করতে হচ্ছে। আকাশ আহমেদের মতন বাবা আর বর্ষা আহমেদের মতন মাকে দূরে রাখা অসম্ভব ব্যাপার। আর মেঘালয় আহমেদ? সে কথা আর নাইবা বললাম। একটু না দেখলেই যেন দম বন্ধ হয়ে আসে আমার।”

সবখানে ভাইরাল হয়ে গেলো কথাগুলি। মেঘালয় নিউজ দেখে হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারলো না। তার অনুপস্থিতিতে এসব কি ছড়িয়েছে? ওকে ছাড়াই বিয়ের আয়োজন করে ফেলেছে এটা কেমন কথা! পাত্রই নাই তাহলে বিয়ে হবে কার সাথে? হাসিও পাচ্ছে,কষ্টও হচ্ছে। কি অদ্ভুত ব্যাপার। মা বাবাও মিশুর সাথে পাগলামি শুরু করে দিয়েছেন।

তিনদিনের মাথায় মেঘালয় বাসায় এসে হাজির।

৮৩.
মিশু মেঘালয়ের রুমে শুয়ে শুয়ে কি যেন ভাবছে। এমন সময় দরজায় একটা মানবছায়া দেখে চমকে উঠলো। মেঘালয়!

মিশু লাফিয়ে উঠে বিছানা থেকে নেমে এসে জাপটে ধরলো মেঘালয়কে। জড়িয়ে ধরেই কেঁদে ফেললো। কান্নার জন্য কথাও বলতে পারলো না। অনেক্ষণ ধরে কাঁদতে কাঁদতে কাঁপছে রীতিমত। মেঘালয় স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মিশুকে ধরলো ও না একবার। উচিৎ শিক্ষা হয়েছে মেয়েটার। অনুশোচনায় দগ্ধ হোক,তারপর…

মিশু বললো, “কোথায় চলে গিয়েছিলে তুমি আমায় ফেলে? আমি তো মরেই যেতাম তোমায় ছাড়া। তুমি জানোনা এই মেয়েটা তোমাকে ছাড়া কতটা অসহায়? এভাবে কেউ ডুব দেয়?”

মেঘালয় মনেমনে হাসলো। এমন টাই হওয়া স্বাভাবিক। প্রিয় মানুষ কাছে থাকলে তার গুরুত্ব বোঝা যায়না। আর বেশি ভালোবাসা পেলে সবাই হজম করতে পারেনা,বদহজম হয়ে যায়। মিশুর গায়ে নতুন বাতাস লেগেছে, মেঘালয়ের গুরুত্ব বোঝার মত অবস্থা ওর ছিলোনা। সেজন্যই কিছুদিনের জন্য ডুব মারতে বাধ্য হয়েছিলো মেঘ।

মিশু বললো, “আমাকে যা খুশি শাস্তি দাও মেঘ। তবুও আমাকে ছেড়ে যেওনা কোথাও।”
মেঘালয় মিশুকে ওর বুক থেকে তুলে দাড় করিয়ে দিয়ে নিজে এসে বিছানায় বসলো। এসি টা বাড়িয়ে দিয়ে বললো, “উফফ কি গরম আজকে! যা দেখছি তাই হট লাগছে!”

মিশুর কান্না এখনো থামেনি। মেঘালয়ের মুখে এমন কথা শুনে ও কান্নারত অবস্থায়ই ফিক করে হেসে ফেললো। মেঘালয় গায়ের শার্ট টা খুলে সোফার উপর ছুড়ে মারলো। তারপর দুহাতে মাথার চুলগুলো ঠিক করতে লাগলো। মিশু ওর উন্মুক্ত বুকের দিকে তাকিয়ে শিউরে উঠলো একেবারে। কতদিন এই রোমশ বুকটা দেখেনি ও! মেঘালয় আগের চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর হয়ে গেছে দেখতে। চুলগুলো বড় হয়ে গেছে,দাড়িও বড় হয়েছে। তবুও কি বিপজ্জনক রকমের হ্যান্ডসাম লাগছে ছেলেটাকে।

মিশু উন্মাদের মতন ছুটে এসে আচমকাই মেঘালয়ের কোলের উপর বসে ওর বুকে মুখ ডুবিয়ে শরীরের ঘ্রাণ নিতে লাগলো। মেঘালয় থতমত খেয়ে গেলো এমন আচরণে। বাহ! মাত্র কয়েকদিন যোগাযোগ বন্ধ রাখাতেই একেবারে হোমিওপ্যাথি ওষুধের মতন কাজ করেছে। ওর হাসি পেয়ে গেলো কিন্তু হাসলো না। মিশুকে দূর্বল করে দেয়ার জন্যই ও যোগাযোগ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিলো। ওর বিশ্বাস ছিলো, মেঘালয়ের শূন্যতা মিশুকে দহনে দগ্ধ করবে ঠিকই। সেই বিশ্বাসই সত্যি হলো।

মিশু মেঘালয়ের বুকের লোমে নাক ঘষতে লাগলো। মেঘালয় অস্থির হয়ে উঠতে শুরু করেছে। এভাবে পাগলামি করলে অস্থির না হয়ে উপায় আছে? মিশু একটা হাত মেঘালয়ের গালে রেখে আরেকহাতে মাথাটা ধরে আছে আর নাকটা ঘষছে ওর বুকের সাথে। মেঘালয় বললো, “উফফ খুব উশখুশ লাগছে। শাওয়ার নিতে হবে।”

কথাটা বলেই মিশুকে ছাড়িয়ে রেখে উঠে পড়লো বিছানা থেকে। মিশুকে সরিয়ে দেয়ায় মনটা খারাপ হয়ে গেলো মিশুর। রাগ উঠে গেলো। একইসাথে মনে পড়ে গেলো সেইদিনের কথা। যেদিন মেঘালয়কে সরিয়ে দিয়ে ও বলেছিলো খুব উশখুশ লাগছে গোসল করতে হবে। মেঘালয় বিছানায় ছটফট করছিলো আর ও গোসল করে এসে ওকে ফেলে বাইরে চলে গিয়েছিলো। কথাটা মনে করে অনুশোচনা হচ্ছে মিশুর। ইস! কেন যে সেদিন অমন করেছিলো। এই ছেলেটার থেকে কিভাবে দূরে থাকা যায়? যায়না যায়না।

মেঘালয় বাথরুমে ঢুকে গেলো। একবার দরজাটা একটু ফাঁক করে মিশুর মুখটা দেখে নিয়ে আবার দরজা লাগিয়ে দিলো। শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে হেসে উঠলো শব্দ করে। এতক্ষণ অনেক কষ্টে হাসি চেপে রেখেছিলো। বুদ্ধিতে কাজ হয়েছে তাহলে। ও জানতো একটু দূরে গেলেই মিশু ঠিকই বুঝবে। এবার দ্যাখ কেমন লাগে? এবার ঠ্যালা বুঝো, কতধানে কত চাল আর কত চালে কত ময়দা?

মিশুর চোখে পানি এসে গেছে। বিছানায় শুয়ে শুয়ে চোখ মুছতে লাগলো ও। মেঘালয় এসে একবার কথাও বলছে না ওর সাথে। কি রাগ রে বাবাহ! কতক্ষণ এভাবে রেগে থাকবে কে জানে? খুব কষ্ট হচ্ছে তো।

মেঘালয় গোসল করে বের হলো। টাওয়েল পড়ে খালি গায়ে এসে দাঁড়ালো আয়নার সামনে। বডি স্প্রে নিয়ে গায়ে স্প্রে করলো কয়েকবার। মিশু ওর দিকে তাকিয়ে আবারো শিহরিত হয়ে উঠলো। পাগল করা সুন্দর লাগছে মেঘালয়কে। টাওয়েলটা হাঁটু অব্দি। আর হাঁটুর নিচ থেকে পায়ের গোড়ালি অব্দি ঘন লোমে ঢাকা। মেঘালয় জানে মিশুর অন্যরকম দূর্বলতা এই পায়ের লোমের প্রতি। তাই ও পা মোছেনি। ভেজা পায়ে ভেজা লোমগুলো লেপ্টে আছে একেবারে। কি যে সুন্দর লাগছে! মিশু দেখছে আর কেঁপে কেঁপে উঠছে। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে মেঘালয়ের পায়ের দিকে। মেঘালয় আয়নায় দেখছে মিশুর মুখটা। ও বুঝতে পারছে মিশুর দৃষ্টি এখন ওর পায়ের প্রতি। পায়ের দিকে তাকিয়ে চোখ পিটপিট করছে মেয়েটা। মেঘালয় মুখ টিপে হাসছে, হাসি চেপে রাখতে খুবই কষ্ট হচ্ছে ওর।

মেঘালয় আয়নার পাশের সোফায় বসে ফোনটা হাতে নিয়ে চাপতে লাগলো। প্যান্ট পড়া ছেড়ে ফোনে কিসের এত কাজ? মিশু রেগে যাচ্ছে ক্রমাগত। আর পিটপিট করে তাকাচ্ছে। মিশু রুমে আছে এটা যেন মেঘালয়ের খেয়ালেই নেই। মেঘ এমন ভাব করে ফোন চাপছে। বাব্বাহ! নতুন ফোন কিনেছে? ফোন কিনেছে তবুও মিশুকে একবার কল দেয়নি? এত বড় সাহস!

মেঘালয় ওয়াইফাই কানেক্ট করামাত্রই টুংটুং করে মেসেঞ্জারে মেসেজ আসতে লাগলো। মিশু জ্বলে পুরে ছাই হওয়ার মত অবস্থা। মেঘালয় আড়চোখে দু একবার তাকায় মিশুর দিকে। আর মনেমনে হাসে, দ্যাখ কেমন লাগে?

মেঘালয় কাকে যেন কল দিয়ে বললো, “এত কেন মেসেজ দিতে হবে? মেসেজ দেয়া বন্ধ করো প্লিজ। কি বললা? নাহ,আমি মাত্র শাওয়ার নিয়ে আসলাম। কিহ! ভেজা স্নিগ্ধ চেহারাটা দেখতে ইচ্ছে করছে? আর ইউ ক্রেজি রিমিকা? আমার স্নিগ্ধ চেহারা আমি কাউকে দেখাই না। আর তোমাকে তো নয়ই। কেন বুঝছো না আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আমিতো জানিনা, বাবা মা ঠিক করে ফেলেছে আর কিইবা করতে পারি? আমি আবার ওদের বাধ্যগত সন্তান। হা হা হা, আচ্ছা হোয়াটস এপে আসো। না না, ভিডিও কল দিতে পারবো না। দুটো ছবি দিচ্ছি,জাস্ট দুটো। আর হ্যা, এটাই লাস্ট। দুদিন বাদে আমার বিয়ে, নেক্সট টাইম আর কিচ্ছু চাইবে না।”

মেঘালয় কল কেটে দিয়ে কয়েকটা ছবি তুললো ফোনে। মিশুর কান্না পেয়ে যাচ্ছে আর রাগে ফুঁসছে ও। রিমিকা টা আবার কে? আর কিসের এত প্রেম তার সাথে? গোসল করে খালি গায়ের স্নিগ্ধ চেহারা তাকে দেখাতে হবে? এত বড় সাহস? মিশু রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে এসে মেঘালয়ের হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে দেখলো রিমিকা’র সাথে কনভারসেশন। অনেক গুলা মেসেজ। মেসেজ দেখে মনেহচ্ছে মেয়েটা মেঘালয়কে খুবই ভালোবাসে। আর মেঘালয় ওকে পাত্তা দেয়না বলে কান্নাকাটিও করে। মেঘালয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে শুনে সে হাত কেটে সেই ছবি আবার সেন্ড করেছে। মিশু হিংসায় জ্বলে যাচ্ছে।

মেঘালয় কিছু বললো না। মুখ টিপে হেসে অন্যদিকে তাকালো। রিমিকা মেঘালয়ের ই ফেক আইডি। এক বান্ধবীর ছবি নিয়ে প্রোফাইলে দিয়েছে। মেঘালয় নিজেই রিমিকার আইডি থেকে মেসেজ গুলো পাঠিয়েছে। শুধুমাত্র মিশুকে ক্ষেপানোর জন্য। তাই হাসি চেপে রাখতে পারছে না। ওর হাসি দেখলে মিশু ক্ষেপে যাবে তাই দেখাতে চায়না। অন্যদিকে তাকিয়ে অনেক কষ্টে হাসি চেপে গেলো। মিশু ফোনটা রেখে বললো, “এই মেয়ে কে? আমার স্বামীর সাথে তার কিসের এত লটরপটর? রিমিকা না টিমিকা, খুন করে ফেলবো একদম। তোমার সাহস তো কম না,তুমি ওকে পিক পাঠাতে যাচ্ছো?”

মেঘালয় হাত দিয়ে চুল ঠিক করতে করতে বললো, “যা করছি সব ওপেনে। কারো আড়ালে গিয়ে তো করিনি। আমিতো আর অন্যের মত কাউকে না জানিয়ে বার্থডে পার্টিতে গিয়ে কেক খাওয়াইনি,নাচিনি। সেই ছবি পাবলিক ও করিনি।”

মিশুর বুক ফেটে যেতে চাইলো কথাটা শুনে। ভেতর থেকে ঠেলে কান্না বেড়িয়ে আসতে চাইছে। ও যখন এসব করেছে তখন বুঝতে পারেনি কাজটা অন্যায় হয়ে যাচ্ছে। আর মেঘালয় কিনা প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ইচ্ছেকৃত ভাবে এমন করবে?

মিশু মেঘালয়ের কোলের উপর এসে বসলো। তারপর মেঘালয়ের মুখটা দুহাতে ধরতে যাবে এমন সময় মেঘালয় বললো, “কোলের উপর বসার কোনো মানে হয়? এত ভারি ওজনের মানুষটাকে কোলে নেয়ার মত এনার্জি নাই গায়ে। খিদা লাগছে।”

মিশু রেগে বললো, “কি বললা? আমি ভারী মানুষ? আমার এতই ওজন?”
-“ছোটখাটো আলুর বস্তা,আবার বলে কিনা এতই ওজন? হাও ফানি।”
-“কি বললা? আমাকে সবসময় কোলে নিয়ে থাকতে,যেখানে যেতে সেখানেই কোলে নিয়ে যেতে আর বলছো আমার ওজন আলুর বস্তার মতন?”
– “আলুর বস্তা তো কম হয়ে গেলো। ছোটখাটো হাতির বাচ্চা বলা উচিৎ ছিলো।”
-“আমি হাতির বাচ্চা? আমায় কেন বিয়ে করেছিলে তুমি?”
-“একটা চুমু খেয়েছিলাম বলে। বাবারে সেকি কান্না! আমার মতন ইনোসেন্ট ছেলেদের মাথা এভাবেই নষ্ট করো তোমরা।”

মিশুর চোখে পানি এসে গেলো। কাঁদো কাঁদো গলায় কিছু একটা বলতে গিয়েও বলতে পারলো না। মেঘালয়ের গলা টিপে ধরে বললো, “মেরে ফেলবো।”

মেঘালয় হাসি চেপে বললো, “আই এম সো হাংরি। আই নিড ফুডস”
-“ইংরেজি মারাচ্ছো? আমার সাথে ইংলিশ কপচাপা না।”
– “চুল কাটাকে আপনার সামনে হেয়ার কাটিং বলতে হয়। তাহলে খাবারকে ফুডস না বললে অন্যায় হয়ে যাবেনা?”

মিশুর আবারো কান্না পেয়ে গেলো। ও মেঘালয়ের মুখটা দুহাতে ধরে বললো, “মেঘ, এমন বিহ্যাভ কেন করছো?”

মেঘালয় অন্যদিকে তাকালো। কারণ চোখাচোখি হলেই মেঘ শেষ। তাই মিশুকে ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো। মিশু বললো, “না,আমি উঠতে দিবো না। আমি তোমার কোলেই বসে থাকবো। যেখানে যাবা আমাকে কোলেই নিয়ে যাবা।”

তারপর মেঘালয়ের বুকে একটা আলতো চুমু একে দিলো মিশু।

মেঘালয় মনেমনে হাসলো। এইতো বাচ্চাটার বাচ্চামি ভাব ফিরে এসেছে। ঠেলায় পড়লে বিলাই গাছে উঠে। মেঘালয় জোরে জোরে মাকে ডাকলো, “এই আম্মু একটু আসবা এই রুমে?”

মিশু লাফ দিয়ে কোল থেকে নেমে বললো, “আম্মুকে ডাকছো কেন?”
-“কোল থেকে নামানোর আর কোনো উপায় পাচ্ছিলাম না তাই।”

কথাটা বলেই মেঘালয় রুম থেকে বেড়িয়ে খাবার টেবিলে চলে গেলো। মিশু মেঝেতে বসে কান্না করে ফেললো। মেঘালয় বদলে গেছে। প্রিয় মানুষ বদলে গেলে এতটা কষ্ট হয়! সত্যিই তাহলে মেঘ ও অনেক কষ্ট পেয়েছে! সহ্য হচ্ছেনা মিশুর। এদিকে মেঘ খাবার টেবিলে বসে মায়ের হাতে খাবার খাচ্ছে আর মনেমনে বলছে,এবার বুঝুক কেমন লাগে? একেই বলে ঠেলার নাম বাবাজি!

চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে