What a হাসবেন্ড পর্ব-৪+৫

0
761

#What_a_হাসবেন্ড
#Tamanna_Tabassum(লেখনীতে)
#পর্ব-৪
খাম্বার মতো আয়নার সামনে দাঁড়ায় আছি আর সেদিন কীভাবে বে জ্জ তি হইলো আমার ভাবতেছি, আমার ভাবনায় এক বালতি পানি ঢাইলা জামাইমশাই বলল, ‘এখানে বে ক্কে লের মতো দাঁড়ায় না থেকে ঘুমাও যাও, সকালে উঠে মাকে সাহায্য করবা’

-‘পারবো না ‘

-‘ তুমি পারবে তোমার ঘাড় ও পারবে, চুপচাপ ঘুমাও নাইলে তোমার আম্মুকে ফোন দিবো ‘

-‘ দেন ফোন আমি কী আম্মুকে ভ য় পাই নাকি? ‘(ভাব নিয়ে)

-‘ আচ্ছা দিচ্ছি তোমার আম্মুর নাম্বারের শেষে ৩৪ তাই না? আমাকে সকালে কল দিয়েছিলো ‘

তার উপর বিশ্বাস নাই যদি আম্মুকে কল করে দেয় তো আম্মু আমাকে ফোনের ওইপাশ থেকেই কি লা বে, তাই শুয়ে পড়লাম। আপাতত আর কোনো ঝামেলা করার শখ আমার নাই। চাদর গায়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করলাম, গন্তব্য ঘুমের দেশ!
.
ঘুম চোখে প্রচুর! অথচ ঘুমাতে পারছিই না। ওদিকে রা ক্ষ স টা লাইট বন্ধ করে নাই, চোখ খুলতেই ভ য় পাইলাম। দেখলাম চশমা পড়া আমার ব্রিলিয়ান্ট জামাই ঝা ড়ু হাতে নিয়া আমার দিকে তাকায় আছে। তার এই রুপ দেখে কেন যেন আমার ভয় হলো। এখন কী সে আমাকে মা র বে?
মানে কী? আজ রাতে কী একবার সে আর একবার আমি, এমন করে আমরা দুজন দুজনকে মা র তে ই থাকবো? ভাগ্যে কী মা ই র লিখা ছিলো আমাদের?
মনে একটু সাহস নিয়ে তাকে ভদ্র ভাষায় জিজ্ঞেস করলাম,’ আপনি কী এইদিকে ঘুমাবেন? না মানে আমি কী ভুল সাইডে ঘুমিয়েছিলাম? ‘
আমার এতো ভদ্রতা দেখে সে মনে একটু ভড়কে গিয়েছে🌚। দেখলাম ঝা ড়ু টা খাটের পেছনে রাখলো৷ আমি নিষ্পাপ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালাম, যেন আমিই পৃথিবীর একমাত্র নিষ্পাপ মানুষ 🥹।
ঝা ড়ু রেখে আমার সামনে দাড়ালো, আমি আগের ন্যায় তার দিকে তাকিয়ে আছি।

-‘ এভাবে আমার দিকে তাকাবা না, একদম তাকাবা না। তুমি আমার সাথে কী করছো সেটা কিন্তু ভুলি নাই ‘

-‘ কী করেছি? একটু মে রে ছি, পাল্টা আপনিও মে রে ছে ন। সমান সমান ‘

আমার এমন কথায় সে কনফিউজড হয়ে গেছে চেহারা দেখেই বুঝতেছি, কিন্তু তার মাথায় কী চলতেছে তা সেইটা বুঝতে পারতেছি না। ঘরে ঢুকতেই আমি যখন হা ম লা করি তখন কী লা ত্থি টাই না দিয়েছিলো সে কথা মনে পড়লে এখনও আমার ব্যাথা লাগে 😐।
আমার শত-শত ভাবনার মাঝখানে সে বাম হাত ঢুকায় দিলো। বলল,’সরো আমি ঘুমাবো ‘
আশ্চর্য! আমি কী ওনাকে ধরে রাখছি নাকি? ঘুমাক নাইলে মূলা খাক বসে বসে আমার কী? এটা এতো ঘটা করে বলার কী আছে?

সে আবার বলল, ‘ কথা কী শুনতে পাও না? সরো। আমি ঘুমাবো ‘

মেজাজটা মিনিটেই বিগড়ে গেলো। ধাম করে উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম। বললাম, ‘কী হয়েছে হ্যাঁ?’
সে কিছু না বলে ধ পা স করে শুয়ে পড়লো পুরো খাটে। দুই হাত পা দু’দিকে ছড়িয়ে।

-‘ এটা কী হলো?’
-‘ কী হলো’
-‘ আপনি এভাবে শুয়েছেন কেন?’
-‘ ঘুমাবো তাই। ‘
-‘ দেখেন আমি কিন্তু সিরিয়াস আমাকে ঘুমাতে দেন, সরে যান’
-‘ যদি পারো তো এইটুকু জায়গাতেই ঘুমাও ‘

আমি আর কিছু বললাম না, এর সাথে কথা বলার বিন্দুমাত্র আগ্রহ আমার নাই। তুই ঘুমা, মূলা খা, তোর খাট নিয়া বসে থাক আমার কী?

বালিশ নিয়ে নিচে শুয়ে পড়লাম। হঠাৎ মনে পড়লো আম্মু এই মূলার জন্য একটা কাঁথা সেলাই করেছিলো। সেটা দিতে বলেছিলো এই মূলাকে কিন্তু আমি দিবো না। খাটেই জায়গা দেয় না আবার কাঁথা নিবে শখ কতো!😏
লাগেজ থেকে কাঁথা বের করে ভালো মতো গায়ে জড়িয়ে নিলাম, আহ!এখন ভালো লাগছে একটু। দিনটা আজকের খারাপ কা টে নি। চারিদিকে তাকিয়ে ওনার রুমটা ভালো মতো পর্যবেক্ষণ করতে লাগলাম, সে যে কী পরিমান ব্রিলিয়ান্ট সেটা রুম দেখলেই বোঝা যায়৷ এইসব দেখেই মনে হয় আব্বু রাজি হয়ে গিয়েছে। ঘর সাজানো তো কী হয়েছে? খাটের তলা, আলমারির তলা এইগুলো একটু দেখবে না? এই জায়গা গুলো তো সবসময় পরিষ্কার থাকে না। উঁকিঝুঁকি দিয়ে ময়লা বের করছি হঠাৎ করে শরীরে উপর কিছুর অস্তিত্ব অনুভব করলাম। তাকিয়ে দেখি তেলাপোকা!

-‘ আয়ায়ায়ায়ায়ায়া ‘
-‘ এই মেয়ে চিৎকার কেন করছো?’
-‘ তে লা পো কা ‘
সে কাঁথার দিকে একবার তাকালো। তেলাপোকা ওইটার উপরেই দৌড়াদৌড়ি করতেছে। আমি বললাম,’ পিলিস এইটা সরান ‘
সে খাট থেকে নেমে তেলাপোকা টাকে ধরলো। আমার পুরো শরীর কেমন যেন শিরশির করে উঠলো৷ খালি হাতে কী করে উনি তেলাপোকা ধরলো? ছিঃ
-‘ আরে আজব! দাঁড়িয়ে আছেন কেন? ফেলে দিন। ‘

সে একবার আমার দিকে তাকালো। আমি অবাক হলাম তেলাপোকা না ফেলে এভাবে তাকিয়ে থাকার মানে কী?
সে তেলাপোকাটার দিকে একবার তাকালো। আমার দিকে আরেকবার তাকালো। আবার আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। তেলাপোকাটার দিকে তাকিয়েও হাসলো। এরপর আমার দিকে আবার তাকালো। গোমড়া মুখে হঠাৎ বত্রিশপাটি দাঁত দেখে ভয় পেলাম। উনি এইভাবে আমার দিকে আর তেলাপোকার দিকে তাকাচ্ছে কেন? ওনার মাথায় কী চলছে? উনি শেষ আরেকবার আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন এরপর হঠাৎ আমার মতো ‘ইয়া’ চিৎকার দিয়ে তেলাপোকাওয়ালা হাতটা আমার দিকে ধরলেন। আমি সরে গেলাম। সে আরেকটু এগিয়ে আসলো। পরিস্থিতি খুবই ভয়া’নক হয়ে উঠলো আমি দৌড়াতে লাগলাম পুরো রুমে, আর উনি আমার পেছনে। উনি দৌড়াতে দৌড়াতে বললেন, ‘ আমাকে শ্যাম্পুর বোতল দিয়ে মা’র’ছিলা নাহ? এইবার তোমার শরীরে আমি তেলাপোকা দিবো। ‘
আমি দৌড়াতে দৌড়াতে বললাম, ‘ না না, আমাকে ছেড়ে দিন। আমি আর কোনো দিনও আপনাকে মা র বো না। ‘
-‘ না না শা’স্তি তো তোমাকে পেতেই হবে। ‘
-‘ পিলিস! ছেড়ে দিন’
-‘ শা’স্তি পেতেই হবে তোমাকে ‘
-‘সরি, আমাকে ক্ষমা কইরে দেন ‘
-‘ না। আমি তোমার গায়ে এটা দিয়েই ছাড়বো’
-‘ আমি আর জীবনেও আপনাকে মা’র’বো না’
-‘ সত্যিই তো?’
-‘ হ্যাঁ ‘
-‘ আমার সব কথা শুনবা? ‘
-‘ হ্যাঁ ‘
-‘ আমার সাথে বেয়া’দ’বি করবা?’
-‘ না’
-‘ ঝ’গ’ড়া করবা?’
-‘ না ‘

অবশেষে উনি থামলো। আমিও থামলাম। তেলাপোকা টা জানালা দিয়ে ফেলে দিলো৷ আমার দিকে ঘুরে বলল, ‘ মনে থাকে যেনো’
এরপর গিয়ে শুয়ে পড়লো। আমিও শুয়ে পড়লাম।
.
.
.
.
এলার্মের শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি পাচঁটা বাজে। এলার্ম বন্ধ করে আমি আবার ঘুমিয়ে পড়লাম, কেননা ১০ মিনিট পর এলার্ম আবারও বেজে উঠবে। আমি চোখ বন্ধ করতেই উনি বলে উঠলো, ‘ কী ধরনের এলার্ম দিসো তুমি হ্যাঁ? সেই চার থেকে বাজতেই আছে, আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো তাও তোমার ঘুম ভাঙ্গলো না। এইসব কী ঘুম? ‘
-‘ আপনি আমার ঘুমকে এভাবে অপ’মান করতে পারেন না, সেই অধিকার আপনার নেই। বুঝলেন! চারটা থেকে বাজে তো কী হইছে? আমার ঘুম ফুলফিল ভাঙ্গতে আরো সময় লাগবে। এলার্ম চারটা থেকে দিসিলাম শেষ হবে ছয়টায়। তখনই আমার ঘুম ভাঙ্গবে ‘
-‘ মানে কী? এখন কী তোমার ঘুম ভাঙ্গে নাই?’
-‘ না তো’
-‘ তাইলে কথা বলতেছো কীভাবে?’
-‘ আরেএএ এইটা কোনো ব্যাপার না, ভুল করে ঘুমটা ভেঙ্গে গেছে এখন আবার ঘুমাবো ‘

সামনের ব্রিলিয়ান্ট মানুষটা আমার কথার অর্থ হতো বুঝে নি। তাতে কী? আমার এখন ঘুম প্রয়োজন, আমি ঘুমাবো।

সকাল ৭ টা,,,

আমি ব্রাশ করতেছি আর উনি বকবক করতেছে।
-‘ আর কোনোদিন যদি তুমি এলার্ম দাও তাইলে কিন্তু খবর আছে। ছয়টায় উঠবা বলছিলা এখন বাজে সাতটা এইসবের মানে কী? আমি একটুও ঘুমাতে পারি নাই রাতে। ‘
আমি ব্রাশ করে মুখ ধুয়ে রুমে এসে আয়না দেখতেছি। কেন যেন আমাকে একটু কালা কালা লাগতেছে। এইঘরের লাইট ফাইট একদমই ভালো না, আমার মতো চকচকে একটা মানুষকে কেমন কালা দেখা যাচ্ছে। ঘুরেফিরে আমি আয়না হঠাৎ উনি,
-‘ এই যাও নাস্তা নিয়ে আসো আমার জন্য’
-‘ কীহ’
-‘ নাস্তা বানাতে বলছি। যাও। এমন ভাব করলা যেন জীবনে নাস্তা খাও নাই ‘
-‘😒’

আমি রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। এনার সাথে থাকার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আমার নাই। রান্নাঘরে গিয়ে দেখি কেউ নাই। বাসায় থাকলে চিল্লায় আম্মুর অবস্থা খা’রাপ বানায় দিতাম। এটা শ্বশুরবাড়ি দেখে কিছু করতে পারতেছি না। আমার প্রচুর ক্ষুধা লাগছে এখন কী করি?
ঘাটাঘাটি করে একটা কড়াইয়ে দেখলাম মুরগী তরকারি রাখা। আম্মু মুরগী রান্না করলে আমি তরকারির আলু সব খেয়ে ফেলতাম, তাই আলু দেখে নিজেকে আর আটকিয়ে রাখতে পারলাম না। আঙুল দিয়ে একটা আলু উঠিয়ে খেয়ে নিলাম। আহ! কী মজা। আরেকটা উঠিয়ে খেলাম। এরপর আরেকটা। এরপর আরেকটা। হঠাৎ আমার মধ্যে মনে হয় প্রে’তা’ত্মা ভর করলো। পাগলের মতো আলু খাওয়া শুরু করলাম। মুখভর্তি আলু। আজকের মতো আলু আর জীবনে আমি খাই নাই। চিবাতে চিবাতে ঢাকনা দিয়ে দিলাম। বেসিনে হাত ধোওয়ার জন্য কল ছাড়তেই পেছন থেকে শোনা গেলো,
-‘ আরে ভাবি! ঘুম কখন ভাঙ্গলো?’

তারাতাড়ি হাত ধুয়ে পাগলের মতো চিবাতে লাগলাম। মুখে আমার তখনও অনেক আলু। ওর কথার উত্তর যে দিবো তার কোনো উপায় নেই। এরমধ্যে ও আমার কাছাকাছি এসে জিজ্ঞেস করলো,’ভাবি কী করো? ‘

আমি এক হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলাম, আরেক হাতে ওকে কাছে আসতে মানা করলাম। কোনোরকমে সবটা গাপুসগুপুস গিলে ওর দিকে ফিরে বোকা হাসলাম। ও আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। আমি হাসার চেষ্টা করছি ওদিকে গলায় আলু আটকে আছে, কথাও বলতে পারতেছি না। একটু পানি খুব দরকার। পেছন ফিরে চমকে গেলাম। দেখলাম উনি আমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে। তার অনামিক দৃষ্টি আমাকে ভড়কে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিলো। কিন্তু আমার ভয় তো অন্য কারণে লাগছে, উনি আমাকে গাপুসগুপুস করে চাবাতে দেখেন নি তো? যদি দেখে ফেলেন তাহলে কী হবে?ক্লাস নাইনে থাকতে আম-আটির -ভেপু পড়েছিলাম। বান্ধুবিরা মিলে কতো মজাই না নিয়েছিলাম। নিজেরা নিজেদের লুকিয়ে খাওয়ার গল্প বলেছিলাম। আজ হয়তো ওইরকম আরেকটা গল্প লিখা হয়েছে 🙂।

_________________

ঘরের সবাই খুবই চিন্তিত! কেননা তরকারির আলু কে যেন এসে খেয়ে ফেলেছে। সবাই বিড়ালকে সন্দেহ করতেছে। সবাই খুব সিরিয়াস হয়ে তরকারির ব্যপারে আলোচনা করতেছে, আমিও খুব সিরিয়াস। তরকারির মাংস না খেয়ে শুধুমাত্র আলু কে খেয়ে ফেলতে পারে এ নিয়ে সবার চিন্তা৷ শ্বাশুড়ি তো আমার ননদ কে দোষারোপ করতেছে যে সে নাকি খেয়েছে। আর আমার ননদ এই নিয়ে বড় গলায় বলতেছে ‘ আমি আলু খাই নাই ‘ আমার শ্বাশুড়ি বারবার ওর দিকেই আঙুল তুলতেছে। রান্নাটা আমার শ্বাশুড়ি নিজ হাতে করেছিলেন। আমার আম্মু-আব্বু আসবে তাই সব রান্না তিনি একাই করেছেন। শ্বাশুড়ির কথা হচ্ছে ‘গরুর মাংস, খাসির মাংস,এতো সব থাকতে মুরগীই কেন খাইলো? আর মাংস না খেয়ে আলুই বা কেন খাইলো?’
ওনাদের চিন্তার কোনো শেষ নেই। আর এদিকে আম্মু আমার দিকে কেমন করে যেন তাকায় আছে। আমি দোয়া-দরুদ পড়তেছি। আম্মু যদি সবার সামনে বলে উঠে, ‘ মুন, আলু তুই খেয়ে ফেলিস নাই তো?’তাহলে তো আমি ম রে ই যাবো। আমি বুঝতে পারতেছি আমার আজকে আলু খাওয়া উচিৎ হয়নাই। আমি শিকার করতেছি। আল্লাহ! এইবারের মতো আমাকে বাচায় দাও। বিরবির করে দোয়া পড়তেছি আর সবার চেহারা একবার একবার দেখে নিতেছি। সবাইকে দেখতে দেখতে হঠাৎ আমার চোখ ওনার দিকে পড়লো। আমি সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিলাম। উনিও আম্মুর মতো করে আমার দিকে তাকায় আছে, তারমানে কী উনি তখন আমাকে দেখে ফেলেছিলো? হায় হায়! আমার মানসম্মান সব শেষ 😑,,,,,,,,,,

চলবে

#What_a_হাসবেন্ড
#Tamanna_Tabassum(লেখনীতে)
#পর্ব-৫
দেখতে দেখতে কে’টে গেলো তিন সপ্তাহ। এই কয়েকদিনে ওই মূলা আমার উপর কী যে অ’ত্যা’চা’র তা বলার বাহিরে। সব দোষ ওই হতচ্ছাড়া তেলাপোকার ওইটা না আমার কাছে আসতো আর না সে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করতে পারতো। আমাকে যদি কেউ এসে বলতো,”তোমার যাকে ইচ্ছা তাকে মা’রো” তাহলে আমি এই তেলাপোকার চোদ্দগুষ্টিকে ধ্বং’স করে দিতাম। রুমে এসে দেখলাম জানালার কাছে কী যেন করতেছে সে।

-‘ কী করেন?’
-‘ তোমাকে সায়েস্তা করার প্ল্যান’
-‘😒’

এর সাথে কথা বলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আমার নাই। আমি শুয়ে পড়লাম। চাদর গায়ে ভালোমতো জড়িয়ে নিলাম, যেন কেউ চাদরে ভাগ বসাতে না পারে 😒। প্যাকেট হয়ে শুয়ে আছি,আর ফ্যানের দিকে তাকায় আছি। ভাবতেছি জীবনটা আমার কী হইয়া গেলো; এমন একটা নিরামিষ, গুরুগম্ভীর, ঝগড়াইট্টা জামাই পাইলাম। এর মধ্যে রস কষ, সিঙ্গারা, বুলবুলি, মস্তক কিছুই নাই। কিছুর থেকে কিছু হলেই তেলাপোকার হুম’কি দেয়। তবে হ্যাঁ, ইদানীং তার মধ্যে আমি অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করছি। কেমন কেমন যেন কেয়ার করে। আবার দেখি ওইদিন আমার জন্য শাড়ি কিনে নিয়ে আসছে। প্রথমে তো ভ’য় পেয়ে গেছিলাম যে ওই শাড়ি দেওয়ার পেছনে কী রহস্য লুকিয়ে আছে? ওনার মাথায় কী চলছে? অনেকক্ষণ ভাবার পরও কিছু বুঝলাম না। শেষে গুগলের সহায়তা নিলাম। সার্চ দিলাম,” নিরামিষ, ঝগড়া’ইট্টা, গম্ভীরমুখো জামাইরা হঠাৎ করে শাড়ি আনার পেছনে কী সত্য লুকিয়ে আছে?”
দেখলাম কতোগুলা আবল-তাবল কীসব যেন আইসা পড়ছে 😒। প্রথমে আসছে, ” আপনার প্রিয়তমাকে খুশি করার জন্য শাড়ি উপহার দিন, এতে তার রাগ ভেঙ্গে যাবে ” মনে তো চাইছে গুগলের মাথা ভেঙ্গে দিই। লিখলাম একটা আর দিলো আরেকটা। আবার অনলাইন থেকে শাড়ি কেমন অর্ডার দিতে হয় এইসব দেখি আইসা পড়ছে। মানে এরা নিজেদের মতো সবাইকে পা’গল মনে করে নাকি? আমি বললাম কী আর দেখাইলো কী! শেষে হতাশ হয়ে সার্চ দেওয়া বাদ দিলাম। এখন তার মনে কী চলতেছে সেটা জানতে হবে। সাহস করে জিজ্ঞেস করে ফেললাম, ” আপনি শাড়ি কেন এনেছেন? ”
-” আমি পরবো তাই”
-” আমার সাথে ত্যাড়া কথা না বললে কী আপনার পেটের ভাত হজম হয় না?”
সে কিছু বলল না। প্যাকেট থেকে শাড়ি বের করে বলল, ” নাও পরে আসো”
আমি বললাম পারি না। সে বলল পারবে। শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি যে কিছুতেই শাড়ি পরবো না। সে আমাকে ধাক্কাচ্ছে। আমিও তাকে ঠেলতেছি, সেও আমাকে ঠেলতেছে। আমাদের ঠেলাঠেলির মধ্যে হঠাৎ কোথা থেকে যেন আমার ননদ এসে হাজির হলো। রুমে এসে দেখলো। ও বড় বড় চোখ করে তাকায় আছে৷ আমি তখন ওনার চেহারায় হাত দিয়ে রাখছি উনি সরানোর চেষ্টা করছে,আর আরেক হাত দিয়ে আমার চুল ধরে টানতেছে। ও অবাক হয়ে বলল, ” ভাইয়া ভাবি তোমরা কী করতেছো? ”
-” দেখিস না আমার শার্ট খা’মচা’য় না’ন্দিবি’নাস করে ফেলছে ”
-” তুমিও তো ভাবির চুল ধরে টানতেছো,ছাড়ো ছিড়ে যাবে তো। ”

তখনই আমার শ্বাশুড়ির কণ্ঠ শোনা গেলো, উনি বোধহয় এইদিকেই আসছে। আমাদের এভাবে দেখে উনি একগাল হেঁসে বললেন, “কিরে তোদের একেকটার এই অবস্থা কেন? ”

আমি ল জ্জায় কিছু বলতে পারলাম না। হঠাৎ উনি বলে উঠলো, ” আম্মু মুন খিচুড়ি খেতে চাচ্ছে, আমি বললাম তুমি বানিয়ে দিবে কিন্তু ও বায়না করছে, বলছে আজ বৃষ্টি হয়েছে তাই ও নিজের হাতে সবার জন্য খিচুড়ি রাঁধবে, আমি এতো মানা করলাম ও শুনলোই না।”

বাট’পারি কাকে বলে? কতোবড় ব জ্জা ত, মিথ্যা’বাদী। আমার শ্বাশুড়ি অবাক হয়ে বলল, ” বউমা বায়না করেছে আর তুই ওকে মানা করছিস, আমাকে আগে বলবি না? মুন তুমি আসো আমি তোমাকে সাহায্য করবো। ” আমার শ্বাশুড়িকে থামিয়ে উনি বলল, ” আরেএ তুমি সাহায্য কেন করবে? ও তো বললই নিজে একা রান্না করবে আজ। শুধু লোক লজ্জায় বলতে পারে নি ”
আমার শ্বাশুড়ি মুখটা ছোট করে বলল, ” ল জ্জা কীসের? আচ্ছা, তাহলে আসো, আমি তো ভাবলাম আজ আলু দিয়ে মুরগী রান্না করবো, সেদিন তোমার মা বলে গিয়েছিল তুমি নাকি তরকারির আলু খুব পছন্দ করো, তাই ভেবেছিলাম মুরগী তরকারির সাথে আলির দম ও করবো। আচ্ছা থাক তাহলে তুমি বরং খিচুড়ি রান্না করো, আমি গরুর মাংস ভিজিয়ে রাখছি। ”
যেতে যেতে বলল,” এখনি রান্না বসিয়ে দাও ১১ টা বেজে গেছে তো ”
আমি কেবলই আহাম্মকের দাঁড়িয়ে রইলাম। ওনার দিকে তাকাতেই উনি বাঁকা হাসলো। আমার রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। ওনার জন্য আমার আলু খাওয়া হবে না আজ। খিচুড়ি খাবি সরাসরি বললেই হতো৷ এতো রঙ ঢং করার কী আছে? আমি বানিয়ে দিতাম। কিন্তু তুই! তুই আমার আলু খাওয়া ক্যান্সেল করে দিলি। আজ তোর একদিন তো আমার একদিন। এমন খিচুড়ি খাওয়াবো যে আর জীবনে খিচুড়ির নাম মুখে আনবি না। খিচুড়ি রান্না শেষে টেবিলে সবাইকে খাবার বেড়ে দিলাম। উনি নিতে গেলেই থামিয়ে দিলাম। ওনার জন্য স্পেশাল আইটেম আছে বলে রান্না ঘরে আসলাম। আসার সময় দেখলাম আমার শ্বশুর, শ্বাশুড়ি, ননদ মিটিমিটি হাসছে। একটা প্লেটে আগে থেকেই আমি ওনার জন্য রেখে দিসিলাম, কেননা আমার আলুর প্রতিশোধ নিতে হবে৷ প্লেটের খিচুড়িগুলো একটা বাটিতে নিয়ে সেটাতে ইচ্ছামতো, লবন, মরিচ, মেথির গুড়া দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে নিলাম। প্লেট টা নিয়ে ওনার কাছে গেলাম। উনি আমার দিকে ভ্রুঁ কুঁচকে তাকিয়ে আছে। আমি হাসি মুখে প্লেটটা ওনার সামনে রেখে বললাম,” নিন এটা শুধু আপনার জন্য ”
উনি সন্দেহজনক দৃষ্টিতে আমাকে একবার খাবারটাকে একবার দেখলো। এরপর একচামচ মুখে নিলো। আমি ওনার দিকে তাকিয়ে আছি। উনি মুখটা মূলার মতো করে রেখেছে। আমি আমার বত্রিশপাটি দাঁত বের করে হাসলাম। হঠাৎ মুখো ভঙ্গি পালটে গেলো। আমি আশ্চর্য হয়ে ওনাকে দেখছি। উনি খেয়েই চলেছে। এক চামচ, দুই চামচ, তিন চামচ……
খেতে খেতে হঠাৎ বলল, ” আমার জন্য এতো সুন্দর করে রান্না করেছো আমি কী একা একা খেতে পারি? ”

ওনার কথা শুনে আমি আঁতকে উঠলাম। বোকা হেসে বললাম, “একা কোথায়? এইতো আমি একটুপরই খাবো”
-” একটু পর কেন? এখনি খাবে। আমরা খাচ্ছি আর তুমি দাঁড়িয়ে আছো ব্যাপার টা কেমন না? আসো আমার সাথে খাও”
-” না, আপনিই খান😬 ”
-” প্লিজ আসো ”
-” না 😬”
-” আরে আসো ” বলেই উনি চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালো। আমি একটু দূরে দাড়ালাম। উনি কাছে আসছেন। আমার পুরো শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগলো। পরিস্থিতি খুবই ভয়ং’কর রুপ নিলো, আমি দৌড় দিলাম। সেও আমার পেছন পেছন দৌড়ে আসছে আর বলছে, ” প্লিজ মুন খাও, তোমাকে ছাড়া আমি খাবো না। প্লিজ খেয়ে নাও ”
আমি দৌড়াচ্ছি আর বলছি, ” আমাকে ছেড়ে দেন। আমি খাবো না। আর জীবনেও এমন করবো না। ছেড়ে দেন আমাকে প্লিজজজজজজ”
ওদিকে আমার শ্বশুর লজ্জায় টেবিল ছেড়ে চলে গেছে, আমার শ্বাশুড়ি তারাহুরো করে খেয়ে উঠে গেছে, আমার ননদ হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আর আমি উনি এখনো দৌড়াদৌড়ি করছি। উনি বলছে খাও৷ আমি বলছি খাবো না।
প্রায় অনেকক্ষণ পর উনি থামলেন। আমি হাপাচ্ছি। উনিও হাপাচ্ছেন। চামচ রেখে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন, ” ঠিকাছে খেতে হবে না, কিন্তু এর বদলে আমার কেনা শাড়িটা পরতে হবে। রাজি?”
আমি মাথা নাড়ালাম যার অর্থ রাজি।
.
.
সন্ধ্যারবেলা,,
শাড়ি পরে আয়নার সামনে তিড়িংবিড়িং করতেছি তখনই উনি রুমে ঢুকলেন। আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো। এরপর আলমারি থেকে একটা ছোট প্যাকেট বের করে আনলেন। প্যাকেট খুলে একজোড়া কানের দুল বের করলেন। আমাকে সেগুলো পরিয়ে দিয়ে বললেন, ” শুনেছি সাগরকে দেখানোর জন্য প্রায়ই ভার্সিটিতে শাড়ি পরে যেতে, তাহলে আমাকে দেখানোর জন্য কী একটু পরবে না?”
আমি ওনার দিকে অবাক হয়ে তাকালাম। উনি আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চলে গেলেন।

_________________

রাতে সবাই বাড়িতে আসলো, কিন্তু উনি আসলো না। আমার শ্বাশুড়ি জিজ্ঞেস করলো, ” হৃদয়, কোথায় মুন?”
মুখ ছোট করে বলেছি শুধু জানি না।

এরপর অনেক রাত করে বাসায় ফিরলেন। শ্বাশুড়ির সাথে কথা বললেন কিন্তু আমার দিকে একটিবারের জন্য ফিরেও তাকালেন না, এরপর রুমে এসে লাইট বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়লেন।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে