Sunday, August 3, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 9



Dark Mystery পর্ব-২১+২২

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_21
#Sabrina_Summa

সুপ্তি রেগে চলে গেলো। সেই রাগ ভাঙ্গাতে মাহিরের আরও একদিন লাগলো।

বর্তমান.,.
সুপ্তি : আমার পছন্দের গান ধরবো। মাইন্ড করবেন না।
মাহিরের ধ্যান ভাঙলো সুপ্তির কথায়। মাহির কিছু বলার আগেই সুপ্তি গান শুরু করলো,
পাল ভার ঠেহের যায়ে
দিল হে সামহাল যায়ে
কেছে তোমহে রোকা কারো…..
মেরে তারাফ আতা, হার গাম পিসাল যায়ে
আখো মে তুমকো ভারো…
বিন বলে বাতে তুমছে কারো…
আগার তোম সাথ হো…….(ii)
———————————— তেরে নাজরো মে হে তেরে সাপনে, তেরে সাপনো মে নারাজি….
মোজে লাগতাহে কে বাতে দিল কি হতি লাফজো কি ধোঁকেবাজি।
তোম সাথ হো ইয়া না হো কিয়া…… ফার্ক হে…বেদার্ত থি জিনদিগী বেদার্ত হে….
আগার তোম সাথ হো….
সুপ্তি খুব আবেগ দিয়ে গাচ্ছিল। যখনই আবার বলছিল ” আগার তোম সাথ… ” তখনই মাহির সুপ্তির কাধে মাথা রেখে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। থেমে গেলো সুপ্তি। মাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলো৷
মাহির সুপ্তির চাহনি দেখে বুঝতেই পারছে না সুপ্তি বিরক্ত হচ্ছে নাকি রাগ করছে। অদ্ভুত সেই চাহনি।
মাহির : কি হলো গান বন্ধ করলে কেন?
সুপ্তি উত্তর না দিয়ে সেভাবেই তাকিয়ে রইলো। মাহির এবার সুপ্তিকে ছেড়ে দিয়ে বললো, ” তোমার মতো তোমার গলার সুরও অনেক সুন্দর। তবে গানের একটা লাইন আমার পছন্দ হয় নি। ”
সুপ্তি চোখের ইশারায় বোঝালো কি?
মাহির : ওই যে ওই লাইনটা। ” তোম সাথ হো ইয়া না হো কিয়া ফার্ক হে। ” আচ্ছা, আমি না থাকলে তোমার যায় আসবে না?
সুপ্তি : তা একটু আসবে। ভালো ফ্রেন্ড বলে কথা।
মাহির : শুধু ফ্রেন্ড আমি! আর জাস্ট একটুই যায় আসবে!
সুপ্তি : না ভালোই যায় আসবে। আর আপনি তো ফ্রেন্ডই।
মাহির : আমি শুধুই ফ্রেন্ড?
সুপ্তি : তা না হলে কি ভাইয়া?
মাহির : ভাইয়া?
সুপ্তি : হ্যাঁ ভাইয়া।
মাহির : ভাইয়া মানেই ছাইয়া ছাইয়া। বিয়ে পর বুঝাবো ভাইয়া কি জিনিস!
বলা শেষ করে রেগে উঠে যেতে নিলো।
সুপ্তি : আরে আমাকে রেখে কোথায় যাচ্ছেন।
মাহির : জাহান্নামে।
সুপ্তি : নাউজুবিল্লাহ। রাগ করছেন? আমি কিন্তু রাগ ভাঙ্গাতে আসবো না।
মাহির : ভাঙ্গাতেও হবে না।
মাহিরের রাগ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। আর কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে উঠে পড়লো।।
সুপ্তিও নিজের এপার্টমেন্টের দিকে চলে গেলো। তাদের রাতে আর কথা হলো না।
মাহির রাগ করেই রইলো।।

সকাল এগারোটা বেজে চল্লিশ কি পঞ্চাশ.,.
সুপ্তি অনবরত মাহিরকে কল করছে । ৫ বার হবে হয়তো। কিন্তু মাহির রাগ করে থাকায় কল রিসিভ করছে না ।
সুপ্তি বিরক্তিতে বিড়বিড় করে বললো, ” এতক্ষণে ইরফানকে একবার কল করলেই চলে আসতো। শুধুমাত্র এই সিমে ওর নাম্বার নেই বলে। ”
মাহির কল না ধরায় সুপ্তি রাস্তায়ই শুয়ে পড়লো ক্লান্তিতে।
শেষবারের মতো কল করলো সুপ্তি। এবারও ধরলো না মাহির ৷ তবে কিছুক্ষণের মাঝেই কল বেক করলো।
সুপ্তি কল রিসিভ করতেই মাহির উত্তেজিত কন্ঠে বললো, ” কি হয়েছে তোমার? তুমি যে মেয়ে এতবার কল তো শুধু শুধু করবে না ! কোনো বিপদ হয়েছে? তাড়াতাড়ি বলো। ”
সুপ্তি : ভার্সিটি গেটের পূর্বসাইডে আছি।
বলা শেষ করে কল কেটে দিলো। হয় তো মাহিরের চিন্তা বাড়ানোর জন্য। নয় তো তার বলতে কষ্ট হচ্ছে।
কিছুক্ষণের মাঝেই মাহির গাড়ি নিয়ে চলে এলো।
সুপ্তিকে ফুটপাতে শুয়ে থাকতে দেখে অনেক মানুষ ভিড় করেছে। তা দেখে মাহির আরও বেশি ভয় পেয়ে গেলো। ভিড় সরিয়ে সুপ্তির কাছে গিয়ে বললো, ” কি হয়েছে তোমার? ”
সুপ্তি : আগে এদের সরান।
মাহিরের বডিগার্ড সবাইকে সরিয়ে দিলো।
মাহির ফুটপাতে বসে বললো, ” আরে বলছো না কেন, কি হয়েছে! তোমার মুখ লাল হয়ে আছে কেন? ” ( ভয়ে + রেগে )
সুপ্তি : একা একটা মেয়ে ১৫/১৬ জন ছেলের সাথে ফাইট করলে ক্লান্ত + একটু ব্যথা তো পাবেই।
( শুয়ে শুয়েই )
মাহির : তোমার পিছে সবসময় মানুষ লেগে থাকে কেন? কী করো তুমি?
সুপ্তি : আরে। কিছু মেয়েকে ডিস্টার্ব করছিল। তখন ঝামেলা বেঁধে গেছে। আমার আবার এসব সহ্য হয় না।
মাহির : তুমি কি গোয়েন্দা?
( সুপ্তির মুখের সামনে ঝুঁকে )
সুপ্তি : আমি আর গোয়েন্দা! হাও ফানি!
বলেই হাসতে শুরু করলো।
মাহির উঠে হাত ভাজ করে দাঁড়ালো।
সুপ্তি উঠার জন্য হাত বাড়িয়ে দিলো। মাহির ভ্রু কুচকে তাকালো। সুপ্তি তোলার ইশারা করতেই মাহির কোলে তুলে নিলো ৷ এরপর গাড়িতে বসিয়ে বললো, ” আজকে তোমার সাথে টেনিং করবো। ”

#চলবে.,.

#Dark_Mystery (কালো রহস্য)
#Part_22
#Sabrina_Summa

প্রায় জনশূন্য মাঠ। চারপাশে শুধু বাতাসের গুঞ্জন, আর মাঝেমধ্যে গাছের পাতার মৃদু কাঁপুনি।
গাছের নিচে বসে আছে সুপ্তি। এক হাতে শুকনো একটা পাতা নিয়ে খেলছে। তার চুল বারবার বাতাসে মুখে এসে পড়ছে, কিন্ত তাতে কোনো হেলদোল নেই তার৷

ঠিক তখনই একটা ছায়া এসে পড়ল গাছের গায়ে।

সুপ্তি না তাকিয়েও বুঝতে পারে সামনে কে দাঁড়িয়ে।
সামনে দাঁড়িয়ে মাহির—সাদা রঙের হালকা টি-শার্টে, চোখে নির্লিপ্ত কিন্তু গভীর কিছু।
কণ্ঠে হালকা গম্ভীরতা—“ক্লাইম্বিং করতে পারো?”

সুপ্তি — “হ্যাঁ, পারি।”

মাহির হালকা মাথা নাড়ল, যেন এই উত্তরটাই সে আগে থেকেই জানত।
“আমি জানতাম তুমি পারবে।”

সুপ্তি অন্য দিকে তাকিয়েই বললো, “আমি মোটামুটি সবই পারি।”

মাহির —চলো, আমরা ক্লাইম্বিং করি।

সুপ্তি অবাক হয়ে চারপাশে তাকাল, তারপর আঙুল তুলে দেখাল পাশের বিল্ডিংটা—
“এই বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে?”

“হুম।” মাহিরের ঠাণ্ডা উত্তর।

সুপ্তি : “আপনি করুন, আমি করবো না।”

“তাহলে কী আমি ভেবে নেবো তুমি পারো না?”—মাহিরের কণ্ঠে খোঁচা।

সুপ্তির গলায় তখন একরকম অভিমান মেশানো রাগ— “আমি পারি। কিন্তু এটা অনেক উঁচু। আমি সবসময় বিল্ডিংয়ের ভেতরে ক্লাইম্বিং করেছি। বাইরে থেকে কখনো না।”

মাহির এগিয়ে এলো একটু, বললো,
“সেইফটি তো আছেই। সাথে আমিও আছি। এরপরও যদি বাহানা দাও, তাহলে ভাবতেই হবে—তুমি আসলে পারো না।”

সুপ্তির চোখে আগুন জ্বলে উঠলো। ইগোতে লাগল ব্যাপারটা।
সে রাগী চোখে তাকিয়ে বললো—
“চলুন।”

মাহির নরম কন্ঠে বললো, “এই ড্রেস পড়ে পারবে না। চেঞ্জ করে এসো।”

সুপ্তি চুপচাপ উঠে চলে গেল চেঞ্জিং রুমে। কয়েক মিনিট পর ফিরে এলো সাদা একটা টি-শার্ট পড়ে । বাগানে এসে দেখে মাহির আগেই ছাদে চলে গেছে। সে এক দৌড়ে উঠে গেল উপরে।

ছাদের কিনারায় একজন মাহিরকে সেইফটি কিট লাগাচ্ছিল। সুপ্তির উপস্থিতি টের পেয়ে মাহির একবার তাকালো, চোখ মিলিয়ে আবার নিচে নামিয়ে নিলো।

সুপ্তি এগিয়ে গেলে মাহির নিজেই তার সেইফটি কিট লাগিয়ে দিল। নিঃশব্দে, খুব যত্নে।

তারপর নামা শুরু হলো। একটানা।

বিল্ডিংয়ের পাশে গভীর একটা পুকুর।
তাই রিস্ক নেই বললেই চলে।

মাহির : মানুষ আমাদের দেখে কাপল বলবে। সেইম টি-শার্ট।

সুপ্তি : চুপ থেকে নিজের কাজে মনোযোগ দিন।

মাহির আর কথা বললো না।
২ তলার দিকে নামতেই মাহির বলে উঠলো, ” সুপ্তি আমার খুব ভয় লাগছে। প্লিজ হাতটা ধরো। ”

সুপ্তি হাত ধরতেই সেইফটি রশি খুলে ফেললো মাহির।
সুপ্তি অনেক কষ্টে মাহিরকে নিজের বরাবর আনলো।

মাহির সুপ্তির দিকে তাকিয়ে আছে। সুপ্তিও আতঙ্কিত চোখে মাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।

এদিকে মাহির সুপ্তির সেইফটি রশিটা খুলছে।
সুপ্তি প্রথমে বুঝতে না পারলেও যখন বুঝতে পারলো তখন আতঙ্কিত স্বরে মানা করে বললো, ” প্লিজ মাহির এটা…”

কথা শেষ করার আগেই মাহির ও সুপ্তি উভয়ই পানির দিকে পড়া শুরু করলো।
কিছু সেকেন্ডের মাঝে পানিতে পড়ে গেলো তারা।

সুপ্তি মাহিরকে জড়িয়ে ধরে থাকায় অনেক কষ্টে পার সাইডে আনলো মাহির সুপ্তিকে ।
সুপ্তি তখনও মাহিরের ঘাড়ে দুইহাত পেঁচিয়ে ঝুলছে।

মাহির আশেপাশে তাকিয়ে বললো, ” মানুষ দেখলে কি বলবে! আমরা পার সাইডে আছি। সো তুমি দাঁড়াতে পারবে। ”

সুপ্তির কিছুক্ষণ লাগলো মাহিরের কথা বুঝতে।
এরপর পা রেখেও মাহিরকে জড়িয়ে ধরেই রইলো।

মাহির : আমাকে জড়িয়ে ধরে থাকতে তোমার অনেক ভালো লাগে!

সুপ্তি : কেন করলেন এমন? আমার ভয় লাগে হাইটে।

মাহির এবার কিছুটা রেগে গেলো। সুপ্তি ছাড়িয়ে বললো, ” কেন ভয় লাগে? এই যে তুমি উপর থেকে পড়লে এতে কি তুমি মরে গেছো! বা হাত-পা ভেঙ্গেছে বা কোথাও ব্যথা পেয়েছো? ”

সুপ্তি ভয়ে কান্না শুরু করলো ।
মাহির সুপ্তিকে জড়িয়ে ধরে তানিশাকে উদ্দেশ্য করে বললো, ” টাওয়াল নিয়ে এসো। ”

তানিশা টাওয়ালের জন্য চলে যেতেই মাহির সুপ্তিকে উদ্দেশ্য করে বললো, ” সরি। কান্না করো না প্লিজ। দেখো জন্ম থেকে হাইটের ভয়টা সবারই থাকে। তবে তোমার একটু বেশিই আছে। এভাবে তুমি ট্রমাট্রাইস্ট হয়ে যাবে তো! এরজন্য এমন করেছি। সরি। আর করবো না। ”

সুপ্তি : আমি কালকে রিইউনিয়ন পার্টিতে ঘাটাইল যাচ্ছি । ভেবেছিলাম আপনাকে পার্টিতে নিয়ে যাবো। কিন্তু এখন আর নিবো না।
( বাচ্চাদের মতো করে )

মাহির তানিশাকে উদ্দেশ্য করে বললো, ” এতক্ষণ লাগে টাওয়াল আনতে। তাড়াতাড়ি দেও। ”

তানিশা টাওয়াল দিলে মাহির সুপ্তিকে পেঁচিয়ে বললো, ” এখন এসব বাদ। আগে তুমি চেঞ্জ করে নেও। হেঁটে হেঁটে যাবা। আমি কোলে নিতে পারবো না। কেন পারবো না আশা করি তুমি বুঝেছো! ”

সুপ্তির কোনো হেলদোল নেই। তাই মাহির নরম স্বরে বললো, ” তুমি সম্পূর্ণ ভিজে গেছো সুপ্তি। খারাপ দেখাচ্ছে। প্লিজ সু…”

বাকি কথা আর বলতে হলো না মাহিরের । সুপ্তি হাঁটা শুরু করলো। পিছে পিছে মাহিরও। দুইজনেই চেঞ্জ করে নিলো। সুপ্তি বের হতেই মাহির তাকে তার সামনের একটা চেয়ারে বসিয়ে বললো, ” কি যেন বলছিলে? ”

সুপ্তি : আমি তিন দিনের জন্য ঘাটাইল যাচ্ছি ।

মাহির : তিন…..দিন….! ( টেনে ) একদিনই তোমাকে ছাড়া থাকতে পারি না সেখানে তিনদিন! ইম্পসিবল।

সুপ্তি : আমি আপনাকে নিয়ে যাবো না।

মাহির : বাবা আমাকে এমনিতেও যেতে দিবে না। সো তুমিও যাবে না।

সুপ্তি : এটা সম্ভবই না। আমি অনেক দিন হলো বাড়িতে যাই না। আমাকে যেতেই হবে।

মাহির : প্লিজ, ট্রাই টো আন্ডারস্ট্যান্ড।

সুপ্তি : আমি কালকে সকালে রওনা দিবো। আপনি গেলে বলতে পারেন। ( দাঁড়িয়ে )

মাহির : কিন্তু বাবা….

সুপ্তি : মিস সিক্রেটের সাথে যোগাযোগ করুন। বলেই চলে যাওয়ার জন্য হাঁটা শুরু করলো।

মাহির বিষয়টা নিয়ে ভাবতে লাগলো। রাত পেরিয়ে দিন হয়ে গেল। সুপ্তি ঘাটাইল চলে গেলো কিন্তু মাহির এখনও এটাই চিন্তা করছে মাহফুজ চৌধুরীকে মিস সিক্রেট রাজি করাতে পারবে কিনা!

#চলবে.,.

Dark Mystery পর্ব-১৯+২০

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_19
#Sabrina_Summa

বৃহস্পতিবার.,.
আগামীকাল মিস সিক্রেটের বিয়ে। আজ তার এবং রুদ্রের গায়ে হলুদ।
এখনও রুদ্র সকলেই সামনে আসেনি। তবে তার অবস্থান সম্পর্কে সবই জানা মিস সিক্রেটের।
মাহিরকে দিয়ে বিশ্বাস নেই। মিস সিক্রেটের বিয়ে হলেই তো মাহির বাঁচে।
তাই তো মাহির যদি বেঈমানী করেও তবুও একটা উল্টো চাল দিবে মিস সিক্রেট ।

হলুদ লেহেঙ্গা পড়ে বসে আছে মিস সিক্রেট। সাথে মেচিং হুডি এবং মাস্ক তো আছেই।
সবাই নাচ গান করছে আর সে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। তবে এগুলো তে মন নেই তার। সে তো নিজের ভাবনায় ডুবে। সে ভাবছে –
” যদি আজ বা কাল মাহির বেঈমানী করে তবে সে সত্যিই সুপ্তিকে হারাবে। আর মিস সিক্রেট রুদ্রকে খুন করবে। ”
হলুদের দিন চলে গেলো। তবে হলুদই লাগানো হলো না। কারণ মাহির লাগাতে দেয় নি।
এই কয়েকদিন ধরে মাহির আর সুপ্তির দেখা হয় নি। শুধু মেসেজে কথা হয়েছে। কারণ মাহির খুব বিজি থাকে ৷

শুক্রবার।
আজ মিস সিক্রেট আর রুদ্রর বিয়ে ৷ সবাই মজা করছে। সব জায়গায় মানুষ। কেউই সত্যিটা জানে না শুধু মাহির, মিস সিক্রেট ও তার টিম এবং কিছু ফোর্স ব্যতিত।
যারা জানে তারা সবাই তাদের পজিশন নিয়ে ছদ্মবেশে আছে।
একটা রুমের সোফায় কালো কালারের গর্জিয়াস লেহেঙ্গা পড়ে পা সোফায় তুলে আরামছে ফোন চালাচ্ছে মিস সিক্রেট। বাহিরে কি হচ্ছে তাতে তার কোনো মাথা ব্যথা নেই।
“বিয়েতে কালো লেহেঙ্গা ঠিক মানানসই না ” এই উক্তিটা মাহির মিস সিক্রেটকে বুঝাতে অক্ষম। তাই তো মাহিরকে কালো লেহেঙ্গা কিনতে হয়েছে। কারণ মিস সিক্রেট তো নাছোড়বান্দা। কালো তার পছন্দ তো সবকিছু কালো হওয়া চাই।
কারো রুমের শব্দ পেলো মিস সিক্রেট। তবে কোনো ভাবান্তর দেখালো না। পুরুষালী কন্ঠে বলে উঠলো, ” হাই বেবি।”
মিস সিক্রেট ফোনের দিকে তাকিয়েই বললো, ” আমাকে দেখে বাচ্চা মনে হয়? ”
সেই মানুষটি আবারও বললো, ” তুমি বাচ্চা হবে কেন! আমি আদর করে তোমাকে বেবি ডাকছি। ”
” তোর আদর তোর কাছেই রাখ বুইড়া। ৩৫ বছরের বুইড়া হইয়া ২৫ বছরের যুবতিকে বিয়ে করতে আসছিস। লজ্জা করে না? ” ( মনে মনে )
মিস সিক্রেট : তা এখানে কেন রুদ্র শেখ? এসেছো যখন বসে পড়ো।
রুদ্র : ছিঃ ছিঃ। জামাইয়ের নাম ধরে ডাকছো।
” তোকে তো মনে হচ্ছে এখানেই শুট করে মারি। কি ন্যাকা কথা! ওয়াক থু। “( মনে মনে )
রুদ্র : একটু পর তো আমাদের বিয়েই হবে। তো আমি আসতে পারি না!
মিস সিক্রেট : মেয়েদের কিন্তু এখনও ছাড়ো নি।
রুদ্র : এত ব্যস্ত হচ্ছো কেন? আগে বিয়েটা হোক।
মিস সিক্রেট নিজের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো, ” ২ মিনিট টাইম দিলাম। যদি মেয়েগুলো নিরাপদ স্থানে না পৌঁছায় তবে বিয়েটাই হবে না। আর যদি বিয়ে না হয়, তাহলে বুঝতেই পারছো তোমার কি হবে! ”
রুদ্র : ওকে, ছাড়ছি।
কাউকে কল করে মেয়েগুলোকে ছাড়ার আদেশ দিলো এবং মিস সিক্রেট ছাড়ার সিসি টিভি ফোটেজ দেখালো।
মিস সিক্রেটের ফোনে মেসেজ আসলো মেয়েগুলো নিরাপদে আছে ৷
সাথে সাথে সেও মেসেজ করলো ইরফানকে। তার কিছু মুহূর্ত পর রুদ্রকে ঘেড়াও করে ফেললো বিভিন্ন ফোর্স।
রুদ্র মিস সিক্রেটের দিকে গান তাক করলো। কিন্তু মিস সিক্রেটের কোনো ভাবান্তর হলো না। সে তার মতোই আরামছে সোফায় বসে রইলো।
মিস সিক্রেট : তোমার কি মনে হয়, আমার দিকে গান তাক করে তোমার ১% ও লাভ হবে!
রুদ্র : খুব বড় ভুল করছো। আমি মরে গেলেও আমার সকল কর্মের খবর তুমি পাবে না। আমার লোক তোমাকে ছাড়বে না।
মিস সিক্রেট : তোমার সকল গোডাউন, তোমার সকল লোক এখন আমার আন্ডারে।
এরই মাঝে রুদ্র মিস সিক্রেটের বুক বরাবর গুলি করে দিলো। সুযোগ বুঝে ইরফান গানটা ছিনিয়ে নিলো।
এই গুলিতে মিস সিক্রেটের কিছুই হলো না। উল্টো মিস সিক্রেট রুদ্রর পায়ে গুলি করে বললো, ” হয়তো তুমি নিশানা তাক করতে ভুলে গেছো। আমার মতো মানুষকে শুট করতে হলে বুকে না মাথায় করতে হবে। কারণ আমার মতো মানুষ সবসময় বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পড়ে থাকে। ”
রুদ্র পায়ে হাত দিয়ে বসে আছে।
তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো।

মিস সিক্রেট মাহিরের দিকে রাগী চোখে তাকালো। তারপরই হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেল।
মাহির মিস সিক্রেটকে ধরলো কিন্তু পরে ইরফানকে বললো, ” ওকে নিয়ে যাও। ”
কিছুক্ষণ পর ডক্টর এসে চেক করে বললো, ” লো প্রেশার। খুব স্ট্রেজে থাকে সবসময়। ”
ইরফান : হ্যাঁ, তা তো থাকতেই হয়।

#চলবে.,.

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_20
#Sabrina_Summa

কিছুক্ষণ পর ডক্টর এসে চেক করে বললো, ” লো প্রেশার। খুব স্ট্রেসে থাকে সবসময়। ”
ইরফান :হ্যাঁ, তা তো থাকতেই হয়।
ডক্টর : যদি কিছু মনে না করতেন। ম্যামের মাস্কটা কিন্তু খোলা প্রয়োজন।
মাহির : আপনার কি মরার খুব শখ হয়েছে?
ডক্টর : না, কিন্তু এটা প্রয়োজন ৷
ইরফান : এটা যদি করি তাহলে আপনি তো মরবেন মরবেনই। সাথে আমাকেও মরতে হবে।
মাহির : এমনিতেই যা করেছি! মাস্কটা খোলা ছাড়া অন্য কোনো আইডিয়া দেন।
ডক্টর : আমার আর কিছু বলার নেই। স্যালাইন দেওয়া আছে জ্ঞান ফিরে যাবে । ম্যামকে ভারি ড্রেস থেকে নরমাল ড্রেসে আনুন। আমি চললাম।
বলা শেষ করে বেরিয়ে গেলো।
ইরফান : মহিলাদের তো আগেই এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন চেঞ্জ করাবে কে!
মাহির : এই ডক্টরের সব মারার মতো আইডিয়া। যাইহোক ইরফান তুমি থাকো ৷ আমাকে বাকি বিষয়টা দেখতে হবে।
মাহিরও বেরিয়ে গেলো।
ইরফান ঘাড়ে হাত দিয়ে বললো, ” আমাকে রেখে সবাই পালাচ্ছে কেন? শেষে তো আমিই মরবো।”

আধা ঘণ্টার মাঝে জ্ঞান ফিরলো মিস সিক্রেটের।
এরপর ড্রেস আপ চেঞ্জ করে ইরফানকে বললো, ” মাহির কোথায়? ”
ইরফান : ম্যাম,ওই দিকটা সামলাতে গেছে।
মিস সিক্রেট : ওকে কল দেও।
১ সপ্তাহের মাঝে ভালো বন্ধুত্বই হয়ে গেছে তাদের ৷ মাহিরের চিন্তাভাবনা বদলেছে ৷ মিস সিক্রেটের ক্ষতি করার ইচ্ছাটা এখন আর তার নেই।
মাহির কল রিসিভ করতেই মিস সিক্রেট রেগে বললো, ” মাহিরের বাচ্চা, তোরে খালি পাই আমি। তোকে আমিই খুন করবো। ”
মাহির : সরি, সরি। আমি জানতাম না ও শুট করে দিবে। আর আমাকে একদম মাহির বলবে না। মাহির শুধু সুপ্তি বলবে। আর তুই তুকারিও করবে না। ফ্রেন্ড বলেই এমন করতে পারো না তুমি!
মিস সিক্রেট : তুমি শুধু আসো। আমি কি করতে পারি আর না করতে পারি দেখাবো নি।
মাহির : ওকে বাবা, আসছি।
মিস সিক্রেট : আমি বাবা নই। আর মরতে না চাইলে তাড়াতাড়ি আসো। বাই।
বলেই কল কেটে দিলো।

মাহির আসতেই মিস সিক্রেট রাগী চোখে তাকালো।।
মাহির : সারেন্ডার করছি। তবুও মেরো না। ( হাত উপরে তুলে )। তোমার জন্য ছোট একটা গিফট আছে।
মিস সিক্রেট : কি গিফট?
মাহির একটা ছোট ডাইরি এগিয়ে দিয়ে বললো, ” এতে তোমার ফেয়ারগুলো সম্পর্কে লেখা আছে এবই প্রতিকারও আছে। একদিনের জন্য ঘুষ দিচ্ছি। তারপর ফেরত দিবে। ওভারঅল, আমার প্রেমিকার বলে কথা। ”
” আমার জিনিস আমাকেই গিফট দিচ্ছে। তাই তো বলি আমার নাম্বার পাও কোথা থেকে! “( মিস সিক্রেট মনে মনে )
মিস সিক্রেট : আমি বাহিরে যাবো কি করে? সাংবাদিকরা তো অপেক্ষা করছে।
মাহির : এখানেই থেকে যাও।
মিস সিক্রেট : আমার কি খাইয়া দাইয়া আর কোনো কাম নাই? এমনিতেই এক সপ্তাহ ধরে তোমার কাজে পড়ে আছি। ( রেগে )
মাহির : একদিনই তো। না, হয় মাস্ক হুডি খুলে বেরিয়ে যাও। কেউ চিনতেও পারবে না।
মিস সিক্রেট : মাস্ক, হুডি খোলার থেকে এখানে থাকাও ভালো আছে।
মাহির: তাহলে থাকো।
বলেই চলে গেলো।

রাতে মিস সিক্রেট লাইভে এসে সব কিছু ক্লেয়ার করলো।।

কেটে গেলো আরও কয়েকটি দিন। সবাই আবারও নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেল। এখনও বিভিন্ন বাহানায় মাহির সুপ্তির ক্যাম্পাসে যায়। তবে কারোরই বুঝার বাকি নেই সে কেন আসে এখানে! সবাই জানলেও সুপ্তিকে এখনও কনফেস করে নি নিজের ফিলিংস সম্পর্কে।

সময় বিকেল পাঁচটা বেজে তিপ্পান্ন মিনিট।
বহু দিন পরে, বহু ক্রোশ দূরে ঘুরতে এসেছে মাহির ও সুপ্তি। বহু ক্রোশ দূরে বলতে ক্যাম্পাস থেকে দূরে একটা পার্কের লেকের এক কোনে বসে আছে তারা। কিছু বডিগার্ডও আছে। তবে তারা কিছুটা দূরে। মিডিয়া এড়াতে ক্যাপ পড়ে আছে মাহির। হাতে তার গিটার। তবে এখানে গান কম গল্প বেশি হচ্ছে। হঠাৎ করে সুপ্তি বলে উঠলো, ” গিটারটা আমাকে দিন। ”
মাহির অবাক হয়ে বললো, ” তুমি গিটারও বাজাতে পারো? ”
সুপ্তি : হ্যাঁ, আমি সবই পারি। শুধু ওই বাস্কেটবলেই যা সমস্যা।
মাহির বাস্কেটবল শব্দটা শুনতেই হেসে দিলো।
সুপ্তি : হাসছেন কেন?
মাহির : সেদিনের কথা মনে পড়লো।

দুদিন আগে.,.
মাহির চুপচাপ বসে ছিল। মাহিরকে দেখে সুপ্তিও চুপচাপ বসে ছিল।
হঠাৎ মাহির বলে উঠলো, ” চলো, তোমাকে বাস্কেটবল খেলা শিখায়। ”
সুপ্তি মুখ ভাঙ্গিয়ে বললো, ” আমি পারি। ”
মাহির : তাহলে চলো, এক ম্যাচ খেলা যাক।
সুপ্তিও উঠে দাঁড়িয়ে বললো, ” ওকে। ”
খেলা শুরু হলো। কিন্তু বাস্কেটবল হূকটা উপরে থাকায় মাহির সুপ্তি দুইজনেই বিরক্ত হলো। কারণ সুপ্তি গোল করতে পারছে না।
মাহির বিরক্ত হয়ে বললো, ” তুমি পারবে না। তুমি বেশি শর্ট। ”
সুপ্তি কিছুক্ষণ রাগী চোখে তাকিয়ে থেকে বললো, ” আমি শর্ট না। তুই বেশি লম্বা। ”
মাহির তো এ কথা শুনে হাসতে হাসতে রীতিমতো গড়াগড়ি খেল। আর সুপ্তি রাগ করেই রইলো।
মাহির নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো, ” আপনি থেকে সরাসরি তুই এ চলে গেলে? ”
সুপ্তি : তাছাড়া কি করবো। আমি ৫ ফুট ৪ হয়েও যদি শর্ট হই তবে যারা আসলেই শর্ট তারা কি? ( রেগে )
মাহির : আচ্ছা, সরি। সব দোষ ওই হূকের ৷
সুপ্তি রেগে চলে গেলো। সেই রাগ ভাঙ্গাতে আরও একদিন লাগলো মাহিরের।

#চলবে.,.

Dark Mystery পর্ব-১৭+১৮

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_17
#Sabrina_Summa

ঘড়ির কাঁটা থেমে নেই, তবে সময় মনে হয় মাহিরের জন্য থমকে রয়েছে । প্রতিটি মিনিট যেন ঘন্টা হয়ে দাঁড়িছে ।
মাহির তার গাড়ির ভেতরে বসে, ভার্সিটির মেইন গেটের ঠিক ভেতরের দিকে অপেক্ষা করছে । সময় তখন সকাল ৯ টা হবে । গাড়ির এয়ারকন্ডিশনের মৃদু বাতাসেও যেন তার হৃদয়ের উত্তেজনা কমছে না। কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে এতদিন পর একবার দেখার জন্য।

অবশেষে, মাহিরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ৯টা ৪৫-এ কাঙ্ক্ষিত মানুষটি গেট পেরিয়ে ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে এলো।
মাহির আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। মুহূর্তের মধ্যে গাড়ির দরজা ঠেলে নেমে এলো ।

সুপ্তির দিকে এগিয়ে গিয়ে কোনো কিছু বলার আগেই তাকে শক্ত করে নিজের বুকে জড়িয়ে নিল।
সমস্ত কোলাহল, চারপাশের ভিড়, কৌতূহলী চোখ কিছুই যেন তার গ্রাহ্য করার বিষয় না।
চারপাশে ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে গেল মাহিরের বডিগার্ডরা, দৃঢ় একটা বলয় তৈরি করে, যেন এই দুই প্রাণের মাঝখানে বাতাসও প্রবেশ করতে দিবে না তারা ।

সুপ্তি অবাক হয়ে একটু কেঁপে উঠলেও মুহূর্তের মধ্যে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে বললো, ” আরে মিয়া….”
কথা শেষ করতে না দিয়ে মাহির বললো, ” আমি তোমার কোনো মিয়া টিয়া নই। ”
মাহির এমনভাবে জড়িয়ে আছে যে সুপ্তি মাহিরকে সরাতেই পারছে না।
সুপ্তি : তাহলে কি? প্লে বয় অর ক্যারেক্টারলেস!
মাহির : না জামাই। জামাই বলবে আমাকে।
সুপ্তি : ঠ্যাকা গো আমার ৷
( আবারো মাহিরকে ধাক্কা দিয়ে )
সুপ্তি মাহিরকে যতই ধাক্কা দিয়ে সরাতে চেষ্টা করে মাহির ততই আরো শক্ত করে সুপ্তিকে জড়িয়ে ধরে।
মাহির : হ্যাঁ ঠ্যাকাই।
সুপ্তি : আরে ছাড়ুন তো । মিডিয়াতে চলে যাবে। ব্রেকিং নিউজ হয়ে যাবে। ( রেগে )
মাহির সুপ্তিকে ছেড়ে দিয়ে বললো, ” আচ্ছা। এখন বলো কোথায় ছিলে এতদিন ? ”
সুপ্তি : বাসায়।
মাহির : তাহলে কল কেন ধরো নি? ফোন কেন বন্ধ ছিল?
সুপ্তি : সিম হারিয়ে গেছিলো।
মাহির : অন্য সিম দিয়ে কল করতে পারতে বা ভার্সিটিতে আসতে।
সুপ্তি : সিম খুঁজতে খুঁজতে দুইদিন চলে গেছে।
মাহির : ফাজলামো পাইছো! সিম খুঁজতে কেউ দুইদিন বাসায় বইসা থাকে?
সুপ্তি : কেউ না থাকলেও আমি থাকি।
মাহির : কেন খেলছো আমার সাথে এভাবে?
সুপ্তি : আমি কি করলাম?
মাহির : কিছু না। গাড়িতে বসো।
( গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে )
সুপ্তি : আমি ভার্সিটিতে যাবো।
মাহির : না। তুমি আমার সাথে যাবে৷ দুদিন আমাকে সময় দেও নি। আজকে সারাদিন সময় দিবে।
সুপ্তির খুব বিরক্ত লাগছে। কি নেশা জড়ানো কথাগুলো।
সুপ্তি : আই’ম ইক্ট্রেইমলি সরি। আমার ক্লাস আছে।
মাহির : এই দুইদিন ছিল না?
সুপ্তি : এই দুইদিন করি নি দেখেই তো নোট নিতে হবে।
মাহির কিছুক্ষণ ভেবে বললো, ” আচ্ছা চলো ৷ আজকে তোমার সাথে আমিও ক্লাস করবো। ”
বলেই কোলে তুলে গাড়িতে বসালো। নিজেও বসলো।
” এই ছেলে আজকে একটু বেশিই করছে না?”( সুপ্তি মনে মনে )
সুপ্তি : প্লিজ। আমার ক্লাসে যাবেন না। আমার মান ইজ্জতের কথাটাও একটু ভাবুন।
মাহির সুপ্তির কথা আমলেই নিলো না।
এবকর সুপ্তি একটু রেগে বললো, ” যদি একটু আগেকার ঘটনাটা মিডিয়াতে যায়, আপনার খবর আছে তাহলে! ”
মাহির : আরে যাবে না। আমার বডিগার্ডরা ছিল তো।
সুপ্তি আর কথা বললো না। তাই মাহিরও বললো না।

ভার্সিটির ক্লাসে আজ যে স্যাররাই আসছে তারা মাহিরকে দেখে খুব অবাক হচ্ছে । ভালো মন্দ জিজ্ঞেসও করছে ৷
সবাই আজ ক্লাস বাদ দিয়ে মাহিরকেই দেখছে। আর সুপ্তি! তার তো মনে হচ্ছে সে যদি অদৃশ্য হতে পারতো! যতই চাচ্ছে মানুষ থেকে দূরে থাকতে ততই মানুষ তাকে চিনে ফেলছে । ফলে তার একাকী জীবনও নষ্ট হচ্ছে।।

আজ শুক্রবার। সময় ১১ টা কি ১২ টা হবে।
মাহিরের জন্য একটা স্পেশাল দিনও বলা চলে। কারণ এদিন মাহির সুপ্তির ঘুরতে যাওয়ার দিন।
আজকের ঘুরতে যাওয়া নিয়ে মাহির অনেক এক্সসাইটেড।
তবে হঠাৎই সুপ্তি রেগে রেগে মাহিরকে কল করলো। মাহির কল রিসিভ করতেই বললো, ” ব্রেকিং নিউজ দেখছেন? ”
মাহির : না দেখি নি। ওয়েট, এখান দেখি।
সুপ্তি : আপনার আর দেখতে হবে না।
শোনেন, যে পর্যন্ত এই ব্রেকিং নিউজ সকল চ্যানেল থেকে না যাবে সে পর্যন্ত আমি বাসার বাহিরে এক পাও দিবো না। ”
মাহিরের আর বোঝার বাকি নেই ব্রেকিং নিউজটা কি!
মাহির : আজকে তোমার আমার সাথে ঘুরার কথা ছিল। প্লিজ এমন করো না।
সুপ্তি : আমি বলেছি মানে বলেছি ৷ আমি এক পাও দিবো না।
বলা শেষ করে রেগে কল কেটে দিলো।

মাহিরের নিউজটা ডিলিট করতে করতে প্রায় রাত ৮ টা বেজে গেলো। যদিও সুপ্তি অরপে মিস সিক্রেট এটাকে ১ ঘন্টায়ই সরাতে পারতো কিন্তু এতে মাহিরের সন্দেহ করার চান্স ছিল। তাই তো সে কোনো হেল্পই করলো না।
সুপ্তিকে নিয়ে ১ ঘন্টা ঘুরলো মাহির। সুপ্তি অবশ্য বের হতে চাই নি। তবে তার শর্ত পূরণ হওয়ায় বের হতে বাধ্য হয়েছে।

#চলবে.,.

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_18
#Sabrina_Summa

শনিবার।
মিস সিক্রেট অনেকদিন পর মন্ত্রীর বাড়িতে এসেছে কিছু কাজে। কাজ শেষ করে চলে যাবে তখনই আটকালো মাহির।
মাহির : একটু সাইডে আসো কথা আছে।
মিস সিক্রেট ভাবছে আবারও সেই ভুলটাই করবে কিনা! তবুও মাহিরের সাথে চলে গেলো।
মাহির : তুমি হইতো জানো বাংলাদেশে সবথেকে কুকর্মে বিখ্যাত কে?
মিস সিক্রেট :হ্যাঁ। রুদ্র। রুদ্র শেখ তাই তো!
মাহির : হ্যাঁ। তাহলে এটাও জানো ও দেশ থেকে পালিয়েছে। আর বিভিন্ন ফোর্স ওকে ধরতে চাচ্ছে!
মিস সিক্রেট : হ্যাঁ সবই জানি আমি। এত ভঙ্গিতা না করে সোজাসাপ্টা কথা বলো।
” হ্যাঁ, তুমি সবজান্তা সমসেরের বউ। ” ( মাহির মনে মনে )
মাহির : কিছুদিন আগে ও বলেছে তোমাকে বিয়ে করলে আটকে রাখা ১০০০ জন নারীকে ছেড়ে দিবে।
মিস সিক্রেট কিছুক্ষণ হেসে বললো, ” আমাকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখা শুধুমাত্র একটা বিলাসিতা! ”
মাহির : একটা রিকোয়েস্ট করছি। প্লিজ ওকে তুমি বিয়ে করো।
মিস সিক্রেট : কিহ? বিয়ে! আর আমি! জীবনেও না।
মাহির : সিরিয়াসলি, তোমাকে বিয়ে করতে হবে না। শুধু নাটক করতে হবে।
মিস সিক্রেট : মানে তুমি আমার লাইফ নিয়ে খেলতে চাচ্ছো?
মাহির : হ্যাঁ। মানে তেমন কিছুই।
মিস সিক্রেট : সাহস কিভাবে হয়?
মাহির : তুমি তোমার লাইফ নিয়ে খেলো না?
মিস সিক্রেট : আমার অধিকার আছে । তবে তোমার নেই।
মাহির : ট্রাস্ট মি। আমি সুপ্তিকে সাক্ষী রেখে বলছি বিয়েটা হবে না। হয়তো তোমাকে বিয়ের কনে সাজতে হতে পারে তবে বিয়েটা হবে না।
মিস সিক্রেট : তুমি তো হাজারটা মেয়ের সাথে থাকো। বিশ্বাস করবো কিভাবে? আর তাছাড়াও ওই রুদ্রকে বের করতে আমার জাস্ট একটা দিন লাগবে। বড়জোড় দুইদিনই লাগবে ধরলাম। তাহলে আমি নাটকটা করবো কেন?
মাহির : তুমি খুব ভালো করে জানো বলেই আশা করছি মিস সিক্রেট। যে হাজারটা মেয়ে আর সুপ্তি আমার কাছে এক নই। আমি তোমার কাছেই প্রথম স্বীকার করছি আমি সুপ্তিকে ভালোবাসি। আর তাছাড়াও একটু খেলি না রুদ্রর সাথে প্লিজ। আমি প্রমিস করছি ওই রুদ্র তোমাকে টাচও করতে পারবে না।
মিস সিক্রেট মাহিরের কথা শুনে পুরোই হ্যাং হয়ে গেছে। এতটা দ্ধিধায় অনেক দিন পর পড়লো সে।
” ভুল মানুষের কাছে তুমি ভুল কথা বলে ফেলেছো মাহির। ” ( মনে মনে )
মাহির : লিসেন, তুমি রুদ্রকে বের করতে পারলেও মেয়েগুলোকে বের করতে পারবে না। রুদ্রও কিন্তু কাঁচা খেলোয়াড় না। আশা করি সেটাও তুমি বুঝতে পারছো।
মিস সিক্রেট : ওকে। যা ইচ্ছা করো।
“একটু না হয় খেলিই রুদ্রর সাথে। ” ( মনে মনে ) “বাট একটা কানা কড়িও আমি দিবো না। মাইন্ড ইট। আর বিয়ের লেহেঙ্গা যদি আমার পছন্দ না হয় তো আমি বিয়ের আগের দিনই বিয়ে ক্যান্সেল করবো। ”
বলা শেষ করে বেরিয়ে গেলো।
মাহির ভাবতে লাগলো, ” এই মেয়ে কী মজা করে গেল নাকি সিরিয়াসলি বলে গেল!”
মাহির : যাইহোক। বিয়ের কাজ শুরু করি। টাকা কারো না কারো কাছ থেকে ওশুল করেই নিবো। এত বড় ক্রিমিনাল ধরিয়ে দিবো বলে কথা।
মাহিরের ফোনে একটা মেসেজ আসলো মিস সিক্রেটের পক্ষ থেকে। মেসেজটা হলো –
” আমার যদি কিছু হয় মনে রেখো তুমি সুপ্তিকে হারাবে। খুব প্রস্তাবে। খুব বেশিই প্রস্তাবে। ”
মাহির মেসেজটা দেখে হেসে বললো, ” ডোন্ট ওয়ারি। আমি আর কোনো ক্ষতি করবো না তোমার৷ অন্তত সুপ্তির জন্য হলেও। ”
কিছু একটা টাইপ করেও সেন্ট করলো না মাহির।

পুরো দেশে ব্রেকিং নিউজ হয়ে গেল মিস সিক্রেট আর রুদ্রর বিয়ের কথা ।
অনেকেই খুশি হতে পারলো না। কারণ রুদ্র মিস সিক্রেটকে বিয়ে করলে শাস্তি থেকে বেঁচে যেতে পারে। ওয়ারঅল মিস সিক্রেট তো আর নিজের হাসবেন্ডের কিছু হতে দিবে না।
রুদ্রও ঠিক এটা ভেবেই মিস সিক্রেটকে বিয়ে করতে চেয়েছিল।

মাহফুজ চৌধুরী রীতিমতো মিস সিক্রেটকে জিজ্ঞাসার উপর রেখেছে। মিস সিক্রেট এ বিয়েতে রাজি কিনা। এটা নিয়ে।
মিস সিক্রেট বার বার বলছে সে রাজি না থাকলে তবে কেউ কি তার বিয়ে দিতে পারতো?
এক প্রকার বিরক্ত হয়েই মাহফুজ চৌধুরী চলে গেলো। সে চাই না এ বিয়ে হোক।

মাহিরই সব শপিং করলো। আর রুদ্রও প্রচুর শপিং করে পাঠিয়েছে।
শুক্রবার বিয়ে ধার্য করা হলো। তাদের বিয়েটা মাঝারি আয়োজনে হচ্ছে।
এগুলোতে মিস সিক্রেটের কোনো কিছুই যায় আসছে না। সে খাচ্ছে- দাচ্ছে, ঘুমাচ্ছে, কাজ করছে আর দিন গুনছে।।

#চলবে.,.

Dark Mystery পর্ব-১৫+১৬

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_15
#Sabrina_Summa

সোমবার।
দুপুর প্রায় ১২ টার কাছাকাছি। আজ প্রকৃতিতে কেমন যেন শুনশান নীরবতা। রোদ আছে, বাতাস আছে শুধু মনে শান্তি নেই। সবার না শুধুমাত্র মাহিরের মনে।
মাহিরের নিত্যদিনের অভ্যাস সকালে ঘুম থেকে উঠেই সুপ্তিকে কল করা। আজও তার ব্যতিক্রম হয় নি। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বহুবার কল করেছে মাহির। তবে পরিচিত নাম্বারে অপরিচিত কন্ঠ “কাঙ্ক্ষিত নাম্বারটি তে এই মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না!” একই কথা শুনতে শুনতে বিরক্ত মাহির। তাই তো ফোনটা এক কোনে ফেলে দিলো।।

সন্ধ্যে সাতটা। মাহির বাসায় বসে কিছুটা ছটপট করছে। কারণ আজ সারাটা দিন তার সুপ্তির সাথে দেখা বা কথা কোনোটিই হয় নি ৷
তানিশা অনেকক্ষণ ধরে মাহিরকে পর্যবেক্ষণ করে বললো, ” মনে হচ্ছে তুমি সুপ্তির প্রেমে পড়ে গেছো। ” ( শান্ত কণ্ঠে )
মাহির মানতে নারাজ। তাই বিরক্তি নিয়ে বললো, ” অসম্ভব।”
তানিশা : তাহলে এত ছটপট কেন করছো?
মাহির নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো, ” কোথায়! ”
তানিশা : তাশরিফ। ভুলে যেও না আমি তোমাকে তোমার ১৮ বছর থেকে দেখছি। এখন তোমার বয়স ২৬ অর্থাৎ ৮ বছর ধরে আমি তোমার এসিস্ট্যান্ট। আর তাছাড়াও তোমার বয়স আমিও পার করেছি ওয়ারঅল তোমার থেকে বড় আমি।
মাহির : বাদ দেও তো ৷ একটু ভালো ফ্রেন্ড হয়ে গেছে তাই একটু চিন্তা হচ্ছে।
তানিশা : ওকে ফাইন। মেনে নিলাম।
বলেই চলে গেলো।
” তানিশা তো ভুল কিছুই বলে নি। তার পছন্দ না কোনো মেয়ে তাকে পাত্তা দিবে না এই বিষয়টা। এরজন্যই তো সে সুপ্তির সাথে এমন করতো৷ কিন্তু আজ কেন তার এত চিন্তা হচ্ছে। কেন মনে হচ্ছে কিছু একটা হারিয়ে গেছে। যা তার দরকার ছিল। সত্যিই কি সে ভালোবেসে ফেলেছে! ”
মাহির নিজের ভাবনাকে ধমক দিয়ে বললো, ” ছিঃ মাহির। তুই কখনো কাউকে ভালোবাসতে পারিস না। ”
” এখন এগুলো থেকে বের হওয়ার জন্য খাবার খেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়। ”
তার ব্রেইন যা বললো সে তাই করলো। সাড়ে নয়টার মাঝে শুয়ে পড়লো। এতে হতভম্ব বাড়ির সবাই। যেই ছেলে দশটা এগারোটার আগে বাসায় ফিরে না সেই ছেলে আজ দশটার মধ্যে শুয়ে পড়েছে।
কিছুক্ষণের মাঝেই ঘুমিয়ে পড়লো মাহির।

১২ টার ঘর পেরিয়ে ঘড়ির ছোট কাটা এখন ৩ টায় গিয়ে পৌঁছেছে। বাতাসের সোঁ সোঁ শব্দ কেমন যেন আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। আর মাঝে মাঝে বিভিন্ন প্রাণীর শব্দ তো আছেই।
এমন সময় ঘুম ভেঙে যায় মাহিরের। আর ভালো লাগছে না তার। খুব চিন্তা হচ্ছে। তারমাঝে তার দুঃস্বপ্ন তার চিন্তাকে হাজার গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সে এক ক্লাস পানি খেল কিন্তু নিজেকে শান্ত করতে পারলো না।
আর না পেরে কয়েকবার সুপ্তিকে কল করলো। এখনো বন্ধই আছে।
এরপর তানিশাকে কল করলো।
তানিশা কল রিসিভ করে ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে বললো, ” আরে ভাই। এত রাতে জালাচ্ছিস কেন? ”
মাঝে মাঝেই তানিশা ফান করে মাহিরকে তুই বলে। সো এতে মাইন্ড করলো না মাহির। আর মাইন্ড করার পরিবেশেও নেই সে।
মাহির : তাড়াতাড়ি আমার রুমে এসো।
তানিশা আর দেরি করলো না। কল কেটেই রুমে চলে এলো।
তানিশা : কি হয়েছে! কেউ অ্যাটাক ট্যাটাক করেছে নাকি?
মাহির : আরে না। আমার ভালো লাগতাছে না।

তানিশা রাগী চোখে তাকিয়ে আছে ৷ মাহিরের ভালো লাগছে না তাতে সে কি করবে? তার মধ্যে সে কত আতঙ্কিত হয়ে গেয়েছিল!

মাহির : লোক পাঠিয়ে সুপ্তিকে খুঁজে আনো। ( করুণ কন্ঠে )
তানিশা : পাগল হয়ে গেছো?
মাহির চুপ করে রইলো।
তানিশা : আমি এখন লোক পাঠালে স্যার আমাকে জুতা মেরে বাসা থেকে বের করে দিবে।
মাহির এখনও চুপ রইলো। তার ভালো লাগছে না কিছুই।
তানিশা : ভাই এখন ঘুমা। সকালে দেখা যাবে ৷
বলেই তানিশা চলে গেলো।
মাহির আবারও ঘুমানোর চেষ্টা করছে কিন্তু তার ঘুম আজ মরে গেছে। তাই পায়চারি করা শুরু করলো।

সকাল ৯ টা।
প্রতিদিনের মতোই আজও মাহফুজ চৌধুরী চিৎকার করে ডাকছে, ” রাগী, এই রাগী। ”
রাগিনী বেগম এসে বললো, ” কি হয়েছে ডাকছো কেন? আর আমার নাম রাগিনী। রাগী না। ”
মাহফুজ চৌধুরী : তো কি হয়েছে। আমি কি বউকে আদর করে ছোট নামে ডাকতে পারি না!
রাগিনী বেগম : মানুষ শুনলে মনে করবে আমি সত্যিই রাগী।
মাহফুজ চৌধুরী : যা সত্যি তাই তো মনে করবে।
রাগিনী বেগম : কিহ! আমি রাগী? কে বলেছে তোমাকে?
মাহফুজ চৌধুরী : তোমার বাবা মানে আমার শশুর।
রাগিনী বেগম : বাবা মারা গেছে কিন্তু তার কথা এখনও রয়ে গেছে।
মাহফুজ চৌধুরী : হুম। এখন বলো তোমার ছেলে কোথায়? ৯ টার সময় আমরা একসাথে খেতে বসি। জানে না সে! সবসময় ডেকে আনতে হয়৷
( ড্রাইনিং এ বসতে বসতে )
রাগিনী : ও পরে খেয়ে নিবে।
মাহফুজ চৌধুরী : পরে খাবে কেন? বিভিন্ন অজুহাতে ভার্সিটিতে যাবে না আজ! এমনিতে তো ৯ টার দিকেই বের হয়ে যায়।
তানিশা : না স্যার। আজকে যাবে না।
( ড্রাইনিং এ বসতে বসতে )
মাহফুজ চৌধুরী : তুমি এসেছো তাহলে তাশরিফ কোথায়?
তানিশা : স্যার, তাশরিফকে রুমে খাবার দিয়ে আসবো ৷
মাহফুজ চৌধুরী : কেন অসুস্থ নাকি?
তানিশা : অসুস্থ না তবে কেমন জানি মনমরা হয়ে আছে।
মাহফুজ চৌধুরী আর কথা না বাড়িয়ে খাওয়া শুরু করলো ।

#চলবে.,.

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_16
#Sabrina_Summa

সূর্য আজ তার প্রখরতা একটু বেশিই দেখাচ্ছে । তাই তো সময় ধারণা করাটা একটু কঠিনই হয়ে পড়েছে।
মধ্যাহ্নের খাবার খাওয়া সবারই শেষ সেই ২ টার দিকে । তবে একজন বাদে। সে হলো মাহির। মধ্যাহ্নের খাবার তো দূর, সকালের খাবারই খাওয়া হয় নি তার।
মাহফুজ চৌধুরী অবশ্য এসেছিল ছেলেকে দেখতে। তবে ছেলের আপদারে বিরক্ত সে।
মাহির বারবার একটা কথায় বলছিল, ” বাবা, একটা মেয়েকে খুঁজে এনে দেও না প্লিজ। জীবনে যা বলবে সব মেনে নিবো। ”
এ কথা শুনে মাহফুজ চৌধুরী বের হয়ে গেছে। যেতে যেতে রাগিনী বেগমকে বললো, ” তোমার ছেলে পাগল হয়ে গেছে। ”
রাগিনী বেগম মাহিরের রুমে ঢুকলেন।
মাহির ফ্লোরে বসে আছে। সেভাবেই বললো, ” আম্মু প্লিজ বাবাকে বলো না সুপ্তিকে খুঁজে এনে দিতে। আমি প্রমিস করছি কখনো অন্য মেয়ের দিকে তাকাবো না। ”
রাগিনী বেগম কিছুক্ষণ মাহিরকে পর্যবেক্ষণ করে বললো, ” কেন খুঁজছিস মেয়েটাকে? ”
মাহির : আমি জানি না। আমি শুধু জানি, আই ওয়ান্ট হার। ( চিৎকার করে )
তানিশা : স্যারের পারমিশন ছাড়া আমি কিছুই করতে পারবো না। তবে তোমার বডিগার্ডদের ওকে খুঁজতে লাগিয়েছি।
মাহির : মিস সিক্রেটকে কল দেও।
তানিশা : মিস সিক্রেট কল ধরবে না।
মাহির : ধরবে ৷ দরকার হয় আমি পায়ে ধরে ক্ষমা চাবো ৷ তাও প্লিজ সুপ্তিকে খুঁজে দিতে বলো। ওর বেশি সময় লাগবে না খুঁজতে।
তানিশা : আরে তুমি জানো না মিস সিক্রেট কোনো মিশনে গেলে কল রিসিভ করে না! মিস সিক্রেট মিশনে দেশের বাহিরে গেছে দুইদিনের জন্য।
মাহির : এই মেয়ের এখনই যাইতে হইলো।

ছেলের পাগলামি দেখে আর সহ্য করতে পারছে না রাগিনী বেগম । তাই নিজের স্বামীকে বুঝাতে চলে গেলো।

বিকেল ৫ টা। সময় যেন কাটছে না মাহিরের। কারো জন্য মনটা বড্ড কষ্ট পাচ্ছে। তাই তো সে ব্যক্তির খোঁজ নেওয়ার জন্য সুশমিতাকে কল করলো মাহির ৷
সুশমিতা কল রিসিভ করতেই মাহির উত্তেজিত কন্ঠে বললো, ” সুশমিতা, সুপ্তির কোনো খোঁজ জানো? ”
সুশমিতার চিনতে সমস্যা হলো না কলদাতা ব্যক্তিকে। তাই তো স্বাভাবিক ভাবেই বললো, ” না ভাইয়া। আমিও এই প্রশ্নটা করার জন্যই আপনাকে খুঁজছিলাম। ”
মাহির : বাসা কোথায় জানো?
সুশমিতা : না ভাইয়া। কখনো বলে না কতবার জিজ্ঞেস করেছি।
আচ্ছা ভাইয়া চিন্তা করবেন না। সুপ্তি মাঝে মাঝেই এমন উধাও হয়ে যায় । কোনো খোঁজ পেলে বলবেন।
মাহির : তুমি পেলেও বলো।
কল কেটে দিলো মাহির। আবারো ব্যর্থ হলো তার কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে খুঁজতে।
” এই মেয়ে এত জেদি কেন? নিজের বাসার এড্রেস কেন দেয় না কাউকে? ”
বলা শেষ করে রাগে দুঃখে ফোনটাকে আছাড় মারলো মাহির। তবে ফোনের তেমন ক্ষতি হলো না।
তানিশা : আচ্ছা এত পাগলামির মানে টা কি? ( রেগে )
মাহির : আই ডোন্ট নো। আই ডোন্ট নো এনিথিং। আই অনলি নো দ্যাট আই নিড হার এট এনি কস্ট। গেট আউট ফম হেয়ার। আই কান্ট বেয়ার এনিওয়ান।
বলা শেষ করে পাশের টেবিলে থাকা পানির গ্লাস আছাড়রমেরে ভেঙে ফেললো ৷
তানিশা রুম থেকে চলে এলো। এখন সেখানে থাকা মানে নিজের সাথে সাথে মাহিরেরও ক্ষতি করা৷

সন্ধ্যার পর থেকে লোক লাগানো হলো সুপ্তিকে খোঁজার জন্য।
মাহফুজ চৌধুরী ছেলের পাগলামিতে বাধ্য হয়েছে লোক লাগাতে। তবে শর্ত দিয়েছে মাহিরকে খাবার খেতে হবে৷।

৭ টার দিকে মাহির খাবার খেল। তার কিছুক্ষণ পরই ঘুমিয়ে পড়লো। কারণ খাবারে ঘুমের ঔষধ মেশানো ছিল। এটাও মাহফুজ চৌধুরী বাধ্য হয়ে করেছে।
সারারাত খোঁজার পরও সুপ্তির কোনো খোঁজ পাওয়া গেল না। এমন কি সুপ্তি কোথায় থাকে সেটা পর্যন্ত জানা গেল না। শুধু পাওয়া গেল সুপ্তির বাবা-মার নাম্বার। সেখানে কল করেও জানা গেল সুপ্তি সেখানে নেই।
তাহলে কোথায় গেল সুপ্তি? এই প্রশ্নটায় সবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে ।

মিস সিক্রেট দেশে থাকুক বা বিদেশে। ছোট থেকে বড় সকল খবর তার কাছে থাকবেই। তাই বেশি সময় লাগলো না তার জানতে যে, মাহফুজ চৌধুরী সুপ্তিকে তন্ন তন্ন করে খুঁজছে।

মাহিরের ঘুম ভাঙলো সুশমিতার কলে।
গভীর ঘুম নিয়েই কলটা রিসিভ করলো।
সুশমিতা : ভাইয়া। সুপ্তি আমাকে কল করেছিল।
সাথে সাথে মস্তিষ্ক সচল হয়ে গেল মাহিরের। দ্রুত বেগে উঠে বসে বললো, ” কোথায় ও? কি হয়েছিল? ফোন কেন ধরে না? ”
সুশমিতা : এতকিছু তো বলে নি। শুধু বলেছে আজ ভার্সিটিতে আসবে।
মাহির : থ্যাংক ইউ সো মাচ ইনফরমেশনটা দেওয়ার জন্য। এখন রাখি।
বলেই কল কেটে দিলো। ধপাস করে আবারো শুয়ে পড়লো।
প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে তার। এমনিতেই সারাদিন টেনশনে ছিল। তারপর আবার কিছু খাই নি। তারমধ্যে ঘুমের ঔষধ আর এখন তাড়াহুড়ো করে উঠা।
তবে তার একটু হলেও মনে শান্তি লাগছে।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময়টা দেখে নিলো পুনে আটটা।

#চলবে.,.

Dark Mystery পর্ব-১২+১৩+১৪

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_12
#Sabrina_Summa

আজ আকাশটা ভালোই মেঘলা। সময় প্রায় ২ টার কাছাকাছি । তবে রোদের ছিটেফোঁটাও নেই।
সুপ্তি আর সুশমিতা ক্লাস থেকে বের হলো। দেখলো একটা মেয়েদের ঝটলা।
সুপ্তির বুঝতে দেরি হলো ভিড়ের কারণ। তবে সুশমিতা বুঝতে না পেরে বললো, ” চলতো দেখি কি হচ্ছে। ”
সুপ্তি এককোনায় দাঁড়িয়ে বললো, ” দরকার নেই। এখানে দাঁড়িয়ে থাক একটু পরেই বুঝবি। ”
প্রায় ১০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পরও যখন সুশমিতা কিছু বুঝতে পারলো না তখন আবারও বললো, ” কিছুই তো বুঝতেছি না। ”
সুপ্তিরও আর ভালো লাগছে না দাঁড়িয়ে থাকতে। তাই তারা ভিড়ের দিকে এগিয়ে গেলো।
এতে ভিড় জমিয়েছে যার জন্য সেই কাঙ্খিত ব্যক্তিটি দেখতে পেলো সুপ্তিকে।
ভিড় থেকে কোনোমতে বের হয়ে সুপ্তির হাত ধরে টেনে নিয়ে নিজের গাড়ির কাছে গেল ।
সুপ্তি হাতটা ঝাপটা মেরে সরিয়ে দিয়ে বললো, ” যখন তখন হাত ধরেন কেন ? প্লে….”
মাহির : চুপ। একদম প্লে বয় বলবে না।
সুপ্তি : ক্যারেক্টার লেস।
মাহির বিরক্ত হলো। সাথে সাথে রেগেও গেল। কিন্তু রাগটা খাটালো না।
সুপ্তি সুশমিতাকে বিদায় দিয়ে দিলো।
মাহির : কোথায় যাচ্ছি আমরা?
সুপ্তি : পুরো ঢাকা ঘুরবো। চলুন।
মাহির : গাড়িতে উঠো।
সুপ্তি : না। গাড়িতে নই হেঁটে হেঁটে। আর হ্যাঁ আপনার বডিগার্ড এসিস্ট্যান্টকে এখানেই রেখে যাবেন।
মাহির চিন্তিত হয়ে বললো, ” কিন্তু আমার সেইফটির বিষয়টাও তো দেখতে হবে।”
সুপ্তি : আমাকে বিশ্বাস করেন না?
মাহির : তা না। বাট…
সুপ্তি : আরে চলুন তো। আপনাকে কেউ চিনবেই না।
সুপ্তি নাছোড়বান্দা হওয়ায় অনেক কষ্টে তার এসিস্ট্যান্টকে বুঝিয়ে বের হলো তারা।
সুপ্তি দোকান থেকে একটা মাস্ক আরেকটা ক্যাপ নিয়ে এলো। সুপ্তি মাহিরকে পড়তে বললে মাহির বললো, ” তুমি পড়বে না? ”
সুপ্তি : আমি আপনার মতো এত ফেইমাস নই। তবে আপনার জন্য আমার ক্লাস আমাকে চিনে ফেলেছে। ( বিরক্ত হয়ে )
মাহির : জাস্ট ওয়েট । তোমার পিছেও সাংবাদিকরা ঘুরবে। দেখো৷
সুপ্তি : আমার পছন্দ না মিডিয়া।
কিছুক্ষণ হাঁটার পর ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে তারা রাস্তায় এসে পৌঁছেছে।
মাহির : সুপ্তি, দেখো মেয়েটা সুন্দর না?
” তোর কাছে তো দুনিয়ার সব মেয়েই সুন্দর ” (সুপ্তি মনে মনে)
সুপ্তি : কেন বলুন তো?
বলতে গিয়ে খেয়াল করলো মেয়ে দুইটাও মাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।
” এই বেডা মাস্ক পইড়া আছে তাও মাইয়াগুলা ড্যাব ড্যাব কইরা তাকাই আছে ৷ মানলাম সুন্দর। তাই বইলা মাস্ক পড়া থাকলেও তাকাইতে হবো ৷ নিশ্চিত সানগ্লাসের জন্য। তোর সানগ্লাস আমি খুলাইতাছি দাঁড়া! এই বেডারে সানগ্লাস পড়লে এত সুন্দর লাগে ক্যান? ” ( সুপ্তি মনে মনে নিজের সাথে রীতিমতো ঝগড়া করছে )
মাহির সুপ্তিকে জেলাস করানোর জন্য বললো,” আমার সাথে ভালো যাবে না? ”
সুপ্তি : ও আচ্ছা। আমি ডেকে আনছি দাঁড়ান।
বলেই হাঁটা লাগাতে নিলো। আর মাহির হাত ধরে আটকে দিলো।
সুপ্তি বিরক্ত নিয়ে বললো, ” আরে মিয়া সমস্যাটা কি! কথায় কথায় হাত ধরেন।”
মাহির : মেয়েটার চুলও কিন্তু সুন্দর। তবে তোমার বাটারফ্লাই হেয়ারটা বেশি সুন্দর।
সুপ্তির দিকে তাকিয়ে । সুপ্তিও রাগী চোখে তাকালো।
মাহির : প্রশংসা করলেও দোষ! আচ্ছা দেখো না মেয়েগুলো তাকিয়ে আছে। আমাকে কি এতই হ্যান্ডসাম লাগছে?
সুপ্তি : আপনার কি মনে হয়। ওরা আপনার রুপের জন্য তাকিয়ে আছে ! না। ওরা আপনাকে একটা চোর ভাবছে। যে কিনা মাস্ক আর সানগ্লাস পরে নিজের চেহারা ঢাকছে।
মাহির : কিহ!
সুপ্তি : কি না জ্বি।
মাহির : তাহলে আমি কি করবো?
সুপ্তি : সানগ্লাসটা খুলে পকেটে রাখুন।
মাহিরও তাই করলো। সুপ্তি দেখলো মেয়েগুলো আরো ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। মাহিরও খেয়াল করলো।
সুপ্তির রাগ হচ্ছে মাহিরের উপরে। আর মাহিরের মনে হচ্ছে তারা তাকে চিনে ফেলেছে।
তাই সুপ্তি আর মাহির দুইজনেই সেখান থেকে চলে এলো।
সারাদিন তারা অনেক ঘুরাঘুরি করলো।
সুপ্তি ইচ্ছে করেই মাহিরকে বস্তুিতে নিয়ে গিয়েছিল। কারণ মাহির যেন দরিদ্রদের কষ্টটা বুঝতে পারে।
মাহফুজ চৌধুরী দান খয়রাত করে এটা সত্য তবে মাহির তা পছন্দ করে না। তাই তাকে এখানে আনা। যদি কোনো উন্নতি হয়।
সুপ্তি খেয়াল করলো কিছু হলেও মাহির বুঝতে পারছে। কয়েক বছরের ধারণা তো আর একদিনে চলে যাবে না!

#চলবে.,.

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_13
#Sabrina_Summa

ধীরে ধীরে কেটে গেছে কয়েকটি মাস। সময়ের নীরব ধারায় সুপ্তি আর মাহিরের সম্পর্ক এখন এক গভীর, শান্ত বন্ধুত্বের রূপ নিয়েছে—যেখানে আবেগ আছে, অথচ দাবি নেই।।
আড্ডার মাঝে কাটে তাদের দিন। সুপ্তি এখন নিয়মিত ভার্সিটিতে আসে। আর মাহিরও সুপ্তিকে দেখার জন্য কোনো না কোনো বাহানাতে আসে।

আজ মাহির সুপ্তিকে একটা অফিশিয়াল অনুষ্ঠানে নিয়ে এসেছে। সুপ্তি আসতে চাই নি তবে মাহিরের জোরাজোরিতে আসতে বাধ্য হয়েছে। এখানে অবশ্য তার প্রবেশের অনুমতি ছিল না কিন্তু মাহিরের সাথে আসায় প্রবেশ করতে পেরেছে। মাহফুজ চৌধুরী ও মিস সিক্রেটকে আমন্ত্রণ করা হলেও তারা আসে নি।
সুপ্তি পিছনে বসে আছে । সকলের বক্তৃতা শুনছে মনোযোগ সহকারে। মাহির বক্তৃতার জন্য স্টেজে উঠলে সুপ্তি ছবি তোলার চেষ্টা করলো। কিন্তু পিছে বসায় ব্যর্থ হলো।
অনুষ্ঠান শেষ হতেই সবাই গেল মিটিং রুমে। সুপ্তিও গেল মাহিরের পিছে পিছে ।
সুপ্তি থাকায় কেউ মিটিং শুরু করছে না । বিষয়টা মাহির খুব ভালোই বুঝছে। তবে সে নাছোড়বান্দার মতো বললো, ” আমার ফ্রেন্ড ও। ও বের হয়ে যাওয়াই মানে আমি বের হওয়া। যদি বেশি সমস্যা হয় আমরা দুইজনেই বের হয়ে যাচ্ছি পরে দেখবো মিটিং কিভাবে হয়! ”
এরপর আর কারোই কিছু বলার থাকলো না।
” মিস সিক্রেটের জন্য ভালোই হলো। পরবর্তী কাজে লাগবে ৷ ” ( সুপ্তি মনে মনে )
সুপ্তি এমনভাবে ফোন চালাচ্ছে যে মনে হচ্ছে সে কিছুই খেয়াল করছে না । তবে সবার প্রতিই নজর রাখছে সে।
মিটিং শেষ হতেই সকলে বেড়িয়ে গেল। কয়েকজন যেতে যেতে বললো, ” তাশরিফ তুমি যাবে না?”
মাহির : আপনারা যান আমি একটু পর আসছি।
সকলে যেতেই মাহির সুপ্তির কাছে আসলো। চেয়ারটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো, ” তখন ছবি তুলছিলে না! এখন তুলো। ”
সুপ্তি : এখন কেন তুলবো?
মাহির : কেন তখন সুন্দর লাগছিল এখন লাগছে না?
সুপ্তি : আপনাকে কে বললো আমি সুন্দরের জন্যই তুলছিলাম!
” সুন্দরের জন্যই তো তুলছিলাম। ফর্মাল গ্রেটআপে খুবই হ্যান্ডসাম লাগছিল তখন। এখনও লাগছে। “( সুপ্তি মনে মনে )
মাহির : মেয়েদের সাথে মিশতে মিশতে তাদের এক্সপ্রেসন দেখেই বুঝতে পারি। স্প্রেশালি তোমাকে।
সুপ্তি : ওকে, দাঁড়ান তুলছি।
মাহির একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। সুপ্তি চেয়ারে বসে ক্যামেরা ধরে বললো, ” একটু কাছে আসুন। ”
এটাই যেন মাহির শুনতে চাচ্ছিল । একটু একটু করে এগিয়ে আসছে ।
সুপ্তি বিরক্ত নিয়ে তাকালো। মাহির এগিয়ে এসে সুপ্তির চেয়ার ধরে সুপ্তির সামনে ঝুঁকলো ৷ সুপ্তি পিছিয়ে যেতেই মাহির আরেকটু ঝুঁকে বললো, ” এখন ঠিক আছে? ”
সুপ্তির হাতের চাপে এভাবেই কিছু ছবি উঠে গেল।
সুপ্তি : না আরেকটু কাছে আসলে ভালো হতো। সরুন এখান থেকে।
মাহির সরে যেতেই সুপ্তি চেয়ার নিয়ে পড়ে গেলো। সুপ্তি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। সে বুঝতেই পারে নি মাহিরের ধরাতে চেয়ারটা ভারসাম্যহীন অবস্থায় ছিল। মাহির হাত এগিয়ে দিল।
সুপ্তি ধরতেই যাবে তার আগে মাহির বললো,” আরে ফোনটা চাচ্ছি। ”
আরেকটা ঝটকা খেল সুপ্তি।
সুপ্তি না দেওয়ায় মাহিরই ফোনটা নিয়ে বললো, ” কতদিন যাবত ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিয়ে রেখেছি এফবিতে। কিন্তু তুমি এক্সসেপ্টই করছো না। ”
সুপ্তি দাঁড়িয়ে বললো, ” আমাকে এফবি, ইনস্টা, ইমো এগুলোতে পাওয়া যায় না। ”
মাহির : এখন থেকে পাওয়া যাবে।
ফোনে কিছু একটা করার পর ফোনটা দিয়ে বললো, ” চলো তোমাকে ড্রপ করে আসি। ”
সুপ্তি : আপনার বিরক্ত লাগে না এ কথা বলতে! গত কয়েকমাস ধরে বলে আসছেন।
মাহির : কি করবো তুমি রাজিই হও না।
সুপ্তি : হবোও না।
মাহির : এত প্রাইভেট কি রাখো বলো তো?
সুপ্তি : কিছুই না। শুধু কেউ যাক তা পছন্দ করি না।
মাহির হতাশার হাসি দিলো।
” না “শব্দটা শুনতে কারোরই ভালো লাগে না। ভাগ্যিস তার ধৈর্যটা আছে।।
কথা শেষ করে নিজ নিজ গন্তব্যে চলে গেল দুজন।।।

#চলবে.,.

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_14
#Sabrina_Summa

সকাল প্রায় পুনে সাতটা।
জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে উকি দিচ্ছিল সকালের হালকা রোদ যা চোখে পড়ছিল সুপ্তির, কিন্তু চোখের পাতায় যেন সেঁটে ছিল ঘুমের ভার। ঠিক তখনই ফোনটা কাঁপতে কাঁপতে বেজে উঠল — বিরক্তিকর অথচ পরিচিত শব্দে।

“সুশমিতা”
স্ক্রিনে নামটা দেখে এক মুহূর্ত থমকে গেল। কপালের উপর পড়ে থাকা চুল সরিয়ে আলতোভাবে ফোনটা কানে ধরল সে।

“হ্যালো…” – আধো ঘুমে ঢুলে পড়া কণ্ঠ, যেন শব্দ নয়, নিঃশ্বাস বের হলো।
সুশমিতা বিরক্ত ঢেলে বললো, ” আরে রাখ তোর হ্যালো। এফবিতে ঢুক। তাশরিফ তোকে মেনশন দিছে।”
কল কেটে দিলো সুশমিতা। সুপ্তি বিরক্ত হলো তবুও এফবি লগ ইন করলো। কিন্তু তার মনেই পড়ছে না, তাশরিফটা কে? আর তাকে মেনশন দিছে তাতেই বা কি সমস্যা হয়েছে?
এফবিতে ঢুকেই দেখলো ৯৯৯+ নোটিফিকেশন। এটা তার জন্য অবাক করার কিছু নই। কারণ সে এফবিতে ঢুকে না।
নোটিফিকেশন লিস্টে প্রথমেই তাশরিফের মেনশন করাটা পেয়ে গেল।
সেটাতে ক্লিক করতেই দেখলো, @Rishita Khanom I LOVE YOU…
এতক্ষণে বুঝতে পারলো সুশমিতা কেন এত উত্তেজিত ছিল।
সুশমিতা সুপ্তির আইডিটা দেখাশোনা করে। খুব শখ করে আইডির পাসওয়ার্ড নিয়ে ছিল সে। কিন্তু যেদিন এফবিতে ঢুকলো হাজারটা মেসেজ, নোটিফিকেশন দেখে সেদিনই তার শখ মরে গেছে। মাঝে মাঝে লগ ইন করে। আজও তাই করেছিল। তাই তো মাহিরের মেনশন চোখে পড়েছে।
সুপ্তি তাশরিফের মেনশনে কমেন্ট করলো,” আরে মিয়া মজা পাইছেন! ”
কয়েক সেকেন্ডের মাঝে রিপ্লাই আসলো, ” হ্যাঁ।”
সুপ্তি লিখলো,” ধূর এসব পাগল ছাগল কোথা থেকে যে আসে! ”
সাথে সাথেই মাহির কল করলো।
মাহির : আসসালামু আলাইকুম।
সুপ্তি : ওয়ালাইকুম আসসালাম। আচ্ছা, সূর্য কি আজ পশ্চিম দিকে উঠেছে!
মাহির : কেন? তবে এটা আমারও মনে হচ্ছে।
সুপ্তি : না মানে আপনি সালাম দিচ্ছেন! কিন্তু আপনার কেন মনে হচ্ছে ?
মাহির : তুমি এত সকালে উঠেছো তাই।
সুপ্তি : আমাকে সুশমিতা উঠিয়েছে ।
মাহির : ও৷ আচ্ছা এটা বললো আমি কি পাগল নাকি ছাগল?
সুপ্তি : কেন?
মাহির : তুমিই তো বললে।
সুপ্তি : কখন!
মনে পড়ায় বললো, ” ও আচ্ছ। আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আপনার ডাকনাম তাশরিফ। ”
মাহির : কিহ! এটাও ভুলার জিনিস!
সুপ্তি : আচ্ছা আপনি এটা কেন করলেন? মানুষ কি মনে করবে!
মাহির : এখানে লেখায় আছে। @ দেওয়ার পর যার নাম আসবে তাকে মেনশন করে I LOVE YOU বলতে হবে। No cheating ও লেখা আছে।
সুপ্তি : এমন বাচ্চামি আপনার মানায় না। ডিলিট করুন।
মাহির : আগে বলো সত্যিই এটা বললে কি করতে?
সুপ্তি : আমার উত্তর শুনতে চাচ্ছেন?
মাহির : হুম।
সুপ্তি কিছুক্ষণ নিরব থেকে বললো, ” আপনি তো বলেন নি তাহলে উত্তর কেন দিবো! ”
মাহির : ধরো আমি বলছি।
সুপ্তি : আমি জীবনে “ধরো” এবং “যদি” এই দুইটা শব্দকে বিশ্বাস করি না।
মাহির : তাহলে আমি ডিলিটও করবো না।
সুপ্তি : মাহির… ( টেনে )
মাহির : এভাবে বলো না হার্টে গিয়ে লাগে তো!
বলেই ধপাস করে বেডে পড়ে গেলো।
সুপ্তি : আমার সাথে ফ্লাটিং করে লাভ হবে না।
মাহির : কি করবো বলো। অন্য মেয়েদের সাথে ফ্লাটিং করতেও তো আর ভালো লাগে না। তাি তোমার সাথেই করছি।
” যাইহোক তোমাকে ভালো বানানোর কাজে এক ধাপ এগিয়েছি তার মানে! “( সুপ্তি মনে মনে )
মাহির : কি হলো চুপ কেন! আমার কথা শুনে পটে গেলে নাকি?
সুপ্তি : ডিলিট করুন।
মাহির : ওকে, করছি।
সুপ্তি : গুড নাইট।
বলেই কল কেটে দিলো।
মাহির বলে উঠলো, ” সাড়ে সাতটায় গুড নাইট হয় কবে থেকে! এ মেয়ে পাগল হয়ে গেল নাকি! ”

আজও তারা আড্ডা দিলো। তারা যে শুধু আড্ডা দেয় তা নয়। মাহির সুপ্তিকে পড়াশোনাতেও হেল্প করে। মাহিরও তো সামাজিক বিজ্ঞান নিয়েই পড়েছে ।।

#চলবে.,.

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৪৯

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৪৯
মেহনুরের সারারাত ঘুম হয়নি৷ বেডে এপাশ ওপাশ করে রাতটা কাটিয়ে দিয়েছে। খুব ভোরে রুম থেকে বের হয়েছিলো বাগানে হাঁটতে যাওয়ার জন্য। তখন চোখে পড়লো জিয়ান নয়নাকে চাদরে পেঁচিয়ে কোলে করে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছে। মেহনুর নিজের চোখের জল উল্টো পিঠে মুছে নিলো৷ সহ্য হচ্ছে না তার নয়নাকে! একটা সতেরো বছরের বাচ্চা মেয়ে! সে-সব পেয়ে গেলো যা সে চব্বিশ বছরেও পেলো না! একজন আদর্শ হ্যাসবেন্ড,পরিপূর্ণ সংসার সব পেয়েছে৷ মেহনুর নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো৷ ইচ্ছে করছে নিজেকে শেষ করে দিতে নিজের হার সে মানতে পারছে না। কেনে হলো এমন! নয়না কেন জিয়ানের সাথে থাকবে? জিয়ানের মত ছেলে ওর মত মেয়ে ডিজার্ভ করে না৷ ওতো আমার মতো এডুকেডেট কাউকে ডিজার্ভ করে। তাহলে কেনো নয়না এই বাড়িতে আমার স্থানে!

🌿

দুপুরের ঝকঝকে রোদ জানালার পর্দার ফাঁকফোকর ভেদ করে নয়নার চোখে মুখে খেলা করছে৷ নয়না বারবার চোখ পিটপিট করছে। রোদের তীব্রতা আরো বাড়তে লাগলো। নয়না কপাল কুঁচকে চোখ মেললো। পর্দা সরিয়ে জানালার সামনে নগ্ন দেহে দাঁড়িয়ে আছে জিয়ান।
“নয়না ঘড়ির দিকে তাকালো বেলা একটা পনেরো বাজে! নয়নার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেলো৷ তারমানে এতোক্ষণে রেজাল্ট প্রকাশ হয়ে গেছে! নয়নার মুখ ফেকাসে হয়ে গেলো।

“জিয়ান নয়নার দিকে তাকিয়ে বলে,গুডমর্নিং ডিয়ার বাটার মাশরুম। হ্যাভ এ নাইস ডে মিসেস চৌধুরী।”
“নয়না নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। তার কোন হেলদোল নেই।”
“জিয়ান নয়নার পাশে এসে বসলো, নয়নাকে ধরে নিজের কোলে বসিয়ে বলে,পিচ্চি বৌ কি হয়েছে গো তোমার?এমন চাঁদের মত মুখশ্রীতে আমাবস্যা নেমে আসলো কেনো?”
“নয়না চুপ করে রইলো। জিয়ান নয়নাকে কোলে তুলে নিয়ে ঘুরতে লাগলো।
“কি হচ্ছে ছাড়ুন আমাকে। এসব একদম ভালো লাগছে না৷”
“আমার ভালো লাগছে আজ আমার খুশির দিন সবচেয়ে আনন্দের দিন। জান, জান, জান, তুমি ঢাকা বিভাগে টপ রেজাল্ট করেছো।ইশশ আজ পুরো এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করবো। লাভ ইউ জান৷ লাভ ইউ সো সো সো মাচ।”
“নয়না জিয়ানের গলা শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো৷ তার চোখ ভিজে উঠলো।”
“জিয়ান নয়নাকে চুমু দিতে লাগলো পুরো মুখ আদরে আদরে ভরিয়ে দিয়ে বলে,এখনো মন খারাপ করে থাকবে ডিয়ার পিচ্চি বৌ?”
“একদম বিচ্চি বৌ বলবেন আমার বয়স সতেরো বছর।”
” আহা টপার বৌ যা বলবে তাই তো শুনতে হবে৷ যাও রেডি হও৷ সবাই ভাবছে ছেলে আর বৌ পুরো রাত বাসর করেছে এখন অর্ধেক দিনও বাসর করছে!”
“নামান আমাকে৷”
“নয়না ওড়না খুঁজে জড়িয়ে নিলো গায়ে৷ চুপচাপ বেডের উপর বসে রইলো৷”
“জিয়ান ব্ল্যাক কালারের টিশার্ট পরলো। চুলগুলো ঠিক করে বলে,যাও হাত মুখ ধুয়ে আসো বড্ড খিদে পেয়েছে খেতে হবে তো। বৌ খেয়ে মন ভরে পেট তো ভরে না৷”
” আমার লজ্জা লাগছে। কি করে নিচে যাবো!সবাই কি ভাববে?”
“সবাই কি ভাববে মানে! সবাই ভাববে তাদের পিচ্চি বৌ স্বামী সোহাগি হয়ে গেছে।বোকা বোকা কথা না বলে উঠো তো৷”
” না আমি যাবো না আমার লজ্জা লাগছে।”
“হাঁটুর বয়সী নিব্বি বিয়ে করলে এই এক সমস্যা সব সময় বেশি বুঝে!”
“নয়না বেডের উপর দাঁড়িয়ে বলে, হাঁটুর বয়সী আবার কি! দেখুন তো কে লম্বা?”
“আপনি লম্বা ম্যাম দয়া করে, নিচে চলুন।”
“নয়না বলল,আপনি যান আমি আসছি।”
“জিয়ান নিচে এসে দেখে,মাহবুব তালুকদার, মিজান তালুকদার, জাহানারা বেগম, সূচনা সোফায় বসা৷
“সবাইকে সালাম দিয়ে বলে,আপনারা কখন আসলেন?”
“মেয়ের রেজাল্ট শুনে চলে আসলাম।”
“মিতা বেগম বললেন, খুব ভালো করেছেন৷ আজ দুপুর সবাই একসাথে খাবো। জিয়ানের বাবাও আসছে।”
“জিয়ান সুচনার পাশে বসে বলে,কিগো পাঁকা বুড়ি আজ এতো চুপচাপ কেনো!”
“সূচনা চুপ কোন কথার উত্তর দিচ্ছেনা।”
“জাহিন বাসায় ঢুকে এতো মানুষ দেখে সালাম দিলো৷”
“ওনারা সবাই অবাক! দুজন শুধু দেখতেই নয় কন্ঠও প্রায় সেম।”
“জিয়ান হেসে বলে,ও আমার ছোট ভাই জাহিন৷ জাহিন এনারা আমার শ্বশুর বাড়ির মানুষ। ইনি আমার চাচা শ্বশুর, আর ইনি আমার বাবা, ইনি আমার শ্বাশুড়ি আম্মা৷ আর এই যে সুইট গার্ল সে হচ্ছে আর্ধেক ঘরওয়ালী৷”
“জাহিন সবার সাথে কুলশ বিনিময় করলো।জিয়ানের পাশেই বসে আছে জাহিন।”
” নয়না নিচে এসে সবাইকে দেখে খুশি হয়ে গেলো তার আনন্দ দ্বিগুন হয়ে গেলো৷”
“জাহিন আড়চোখে নয়নার দিকে তাকালো৷ মনে মনে বলে,বিয়ে করলে এমন একটা কিউটের ডিব্বাকেই করবো।”

“সবাই একসাথে সুন্দর একটা দিন কাটালো৷ তালুকদার বাড়ির সবাই বাসায় চলে গেলো৷ নয়না জানালার পাশের সোফায় বসে আছে। রুমের লাইট অফ। জানালা দিয়ে চাঁদের আলো আসছে। এতোকিছুর পরেও নয়নার মনটা কেমন উদাস৷ সে যেনো সব পেয়েও অপূর্ণ! যে কিনা তার হ্যাসবেন্ডের স্পর্শ অনুভব করতে ব্যর্থ। চোখের কার্নিশ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরছে। মন কখন কি চায় মন হয়ত নিজেও তা জানেনা। নয়না মৃদু স্বরে আওড়াচ্ছে….

“নির্জনে বয়ে চলে বাতাস, চুপচাপ সুরে গান গায় বিরহের , আকাশের কোলে চাঁদ হাসে, নক্ষত্রেরা চুপচাপ ডাকে জোছনা বিলায়, তবুও লোকে চাঁদের প্রেমে পরে!
বনপথে পাতা ঝরে যায়, কিংবা নদী বহে দূর প্রবাহে, তারা কেউ জানেনা, হৃদয়ে কি এক অশান্তি, যা নেই কোথাও, তা অদৃশ্য, প্রগাঢ়।সে যেনো জেনেও জানেনা, বুঝেও বুঝে না মনের গহীন ক্ষত!
মনের গভীরে রয়ে যায় অপূর্ণ স্বপ্ন, যা আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছি, এ জীবনে তা যেনো পেয়েও হারিয়েছি৷ এ জীবন হোক কিংবা পরবর্তী, আমি তো শুধু খুঁজে বেড়াচ্ছি সে অসীম সুধা যা আমায় তৃষ্ণায় বিতৃষ্ণ করছে।”
“জিয়ান চুপিসারে নয়নার পায়ের উপর মাথা রেখে শুয়ে পরলো।
“নয়না দ্রুত চোখ মুছলো,আপনি কখন এলেন?”
“যখন কেউ তার হরিণের মত মায়াবী চোখ থেকে টুপটাপ বৃষ্টি ঝড়াচ্ছিল তখন। তুমি কি জানো তুমি কাঁদলে আমার মনের আকাশেও মেঘ জমে? কোন অজুহাত শুনবো না আমি জানতে চাই কেনো কান্না করছিলে?”
“নয়নার চোখ যেনো বাঁধ মানছে না। সে বর্ষণমুখর হয়ে গেলো।”
“জিয়ান উঠে বসলো। শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো নয়নাকে৷ বিচলিত কন্ঠ শুধালো, কি হয়েছে তোমার! আমি কি তবে আবারও তোমার হৃদয় গভীর কোন ক্ষত তৈরি করেছি? আমি জানি তোমার বয়স কম। কিন্তু আমি নিজেকে সামলাতে পারিনি৷ আমি ব্যর্থ হয়েছে আমার পুরুষত্বের কাছে! আমি এবার গেলে তোমার আঠারো বছর পূর্ন না হওয়া পর্যন্ত আসবো না৷ দূর থেকে তোমাকে ভালোবাসবো। তবুও তোমার কষ্টের কারন হতে চাই না। তোমাকে এতো কাছে পেয়েও দূরে সরিয়ে রাখা সম্ভব না।”
“নয়না শব্দ করে কান্না করছে। জিয়ানের টিশার্ট শক্ত করে খামচে ধরে বলে,আমি আপনাকে পরিপূর্ণ ভাবে পেতে চাই। আমার হৃদয় তৃষ্ণায় ছটফট করছে৷ সে তৃপ্ত হচ্ছে না৷ আমি আপনার স্পর্শ অনুভব করতে চাই।”
” জিয়ান থমকে গেলো! তবে কি কাল রাতে নয়না নিজের সাথে যুদ্ধ করে সবটা সহ্য করেছে! কিছুক্ষণ পর জিয়ান নয়নার থুতনিতে হাত রেখে বলে,কি হয়েছে আমাকে বলো,তোমার জন্য কষ্টকর হলে আমাকে বাঁধা দিলে না কেনো!”
“নয়না নিজের দৃষ্টি নত করে বলে,আমার নানুমনি বলেছে,নিজের পুরুষকে সব সময় নিজের আঁচলে বেঁধে রাখতে হলে নিজেকে পুরোপুরি শপে দিতে হয়৷ আমি আপনাকে সব সময় আমার করে রাখতে চাই৷ আমি এতোটাও অবুঝ না যে স্বামী স্ত্রীর এই মিলন সম্পর্কে অবগত না। কিন্তু আপনি আমার যত কাছে আসেন আমি না চাইতেও ওই রাত আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে। গতকাল রাত ছিলো আপনাকে পুরোপুরি আমার করার রাত৷ অথচ আমি আপনার স্পর্শের মাদকতা অনুভব করতে পারিনি!আমি সব ভাবে আপনাকে চাই।আপনাকে চাই আপনাকেই চাই৷”
“জিয়ান নয়নার চোখের কোনের জমে থাকা জলটুকু মুছে দিয়ে বলে,আমি শুধু তোমার, তোমার পাইলট মহাশয় শুধু তার বাটার মাশরুমের। এজন্মে আমি তোমাকে ছাড়বো না৷”

দু’জনে দু’জনের কপালে কপাল ঠেকিয়ে রাখলো দীর্ঘ সময়। জিয়ান নয়নার কপালে চুমু দিলো। জিয়ানের চুলগুলোতে আঙ্গুল ডুবিয়ে আলতে হাতে হাত বোলাতে লাগলো৷ নয়না জিয়ানের বুকে মাথা রেখে বসে আছে।
“জিয়ান বলল,আমার ছুটি তো শেষ আগামীকাল আমাকে চলে যেতে হবে। কি করে থাকবো আমার বাটার মাশরুমকে ছাড়া!”
“নয়না সামনে ঘুরে বলে,চলে যাবেন মানে?”
#চলবে

সবিতা পর্ব-১২ এবং শেষ পর্ব

0

সবিতা
শেষ পর্ব
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

নবআলো নারী শিক্ষা কেন্দ্র এখন স্থানীয় পর্যায়ে একটা পরিচিত নাম হয়ে উঠেছে।
এটা আর শুধু একটামাত্র স্কুল না, এটি একটি আন্দোলনে পরিণত হয়েছে, যেখানে প্রতিটি মেয়ের মধ্যে স্বাধীনতা ও আত্মবিশ্বাসের আলো জ্বলে উঠছে।
তবে এই সফলতার পথে নানা প্রতিবন্ধকতা অপেক্ষা করছে।

একদিন দুপুরের দিকে সবিতা স্কুলে পৌঁছানোর আগেই একজন পুরুষ শিক্ষার্থী এসে তাকে জানায়,

— “আপু, একদল লোক এসেছিল স্কুলের সামনে, তারা কিছু বলতে চাইছিল।”

সবিতার মন খারাপ হয়ে যায়, কিন্তু কিছু বলার আগেই তাওহীদ আসে।

— “সব ঠিক আছে।তবে তারা শুধু জানিয়ে গিয়েছে যে আমরা অগ্রহণযোগ্য।”

এটা ছিল তাদের জন্য প্রথম বড় প্রতিবাদ।
স্থানীয় কয়েকজন সমাজকর্মী এবং আত্মীয়স্বজন এই স্কুলের বিরোধিতা শুরু করেছে।
তারা বলতে শুরু করেছে, “এই স্কুল মেয়েদেরকে খারাপ পথে পরিচালিত করছে, এখান থেকে মেয়েরা স্বাধীন হয়ে যাবে, তাদের চরিত্র নষ্ট হবে।”

এই অভিযোগগুলো সবিতার মনের ভিতরে গুরতর ভাবে আঘাত হানে।
কিন্তু সে জানত, এসব বাধা শুধু তার পথকে শক্ত করবে।
যেহেতু সে নিজেই নিজের সংগ্রাম, নিজের সাহস, আর নিজের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে জেনেছে—অন্ধকারে একটু আলোই পুরো পৃথিবীকে আলোকিত করতে পারে।

রুমাইসা স্কুলে প্রথম এসেছিল শঙ্কিত মন নিয়ে, কিন্তু এখন সে পুরোপুরি বদলে গেছে।
প্রতিদিন নতুন কিছু শিখে, নিজের সাহস বাড়িয়ে, আজ সে নবআলোর সেরা শিক্ষার্থী।

একদিন সবিতা তাকে বসিয়ে বলল,

— “রুমাইসা, আজকে তোর যা অর্জন, সেটা আমি শুধু চেহারায় দেখলাম না, তোর চোখেও দেখলাম।
তুই এখন সাহসী, তুই এখন নিজের ভালোবাসার জন্য লড়াই করতে জানিস।”

রুমাইসা মাথা নিচু করে বলে,

— “আপু, আমি জানতাম না, আমাকে শিক্ষার আলো দিবে এমন কেউ কখনও আসবে। আজ আমি জানি—আমার কাছে আর কোনো বাধা নেই।”

এটা সবিতার চোখে অশ্রু এনে দেয়।
এটা সেই মুহূর্ত ছিল, যখন সে বুঝেছিল, তার সংগ্রাম একমাত্র নিজের জন্য নয়, বরং এই মেয়েদের জন্য।

একদিন স্কুলের শিক্ষিকা রুনা আপু এসে সবিতার কাছে জানান,

— “কিছু স্থানীয় নেতারা বলেছে, তারা নবআলোকে বন্ধ করতে চায়।
তাদের দাবি, এই স্কুলে পড়া মেয়েরা অনেক কিছু শিখছে যা সমাজের জন্য ক্ষতিকর।”

সবিতা অবাক হয়ে যায়,

— “এটা তো কখনোই ভাবিনি। কিন্তু আমি তাদের বলব—এখানে আমরা শুধু মেয়েদের শিক্ষা নয়, মানবিকতা ও স্বাধীনতা শেখাই।”

তাওহীদ আসে, এবং তাকে সমর্থন দেয়।

— “তুমি একা না সবিতা। আমরা সবাই তোমার পাশে আছি। এই সংগ্রাম আমরা একসঙ্গে করব।”

সবিতার মনে শান্তি ফিরে আসে।
এটা তার সংগ্রামের দ্বিতীয় বড় পর্ব।
কিন্তু সে জানে, এবার কোনোরকম ভয় বা সন্ত্রাস তাকে থামাতে পারবে না।

একদিন রাতে সবিতা বসে থাকে একা, নতুন কিছু পরিকল্পনা নিয়ে।
— “আমি আর থামব না। এখানে কিছু পাথর ফেলা হলে, আমি সেই পাথরগুলো নিয়ে নতুন রাস্তা তৈরি করব।
আমার মেয়েরা সব ধরণের বাধা টপকাতে পারবে।”

সে ঠিক করে, এই প্রতিবাদকেই শক্তি হিসেবে নিতে হবে।
যে সমাজ তাকে বাধা দিতে চায়, সেই সমাজকে দেখিয়ে দিতে হবে—মেয়েরা শুধু দাসত্বের জন্য জন্ম নেয় না,
তারা স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার রাখে।

তাওহীদ এসে দাঁড়িয়ে বলল,

— “তুমি একদিন পুরো সমাজের চোখ খুলে দিবে সবিতা, তোমার স্বপ্নগুলো রূপান্তরিত হবে বাস্তবে।
তোমার সংগ্রাম শুরুর দিকে ছিল একক, কিন্তু এখন সেটা সবার। আর আমরা সবাই তোমার পাশে আছি।”

নবআলো নারী শিক্ষা কেন্দ্রের পথ চলা ক্রমশ আরও জটিল হয়ে উঠছে। সবিতা জানে, এই যাত্রা সহজ হবে না। সমাজের পুরনো ধ্যানধারণা আর বদ্ধমূল বিশ্বাসগুলির বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য তাকে আরও শক্ত হতে হবে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে থাকা কেবল সমাজের মানুষই নয়, কিছু রাজনৈতিক শক্তিও। এখন এই পথটাই সবিতার জন্য সত্যিকারের পরীক্ষা।

একদিন দুপুরের পরে সবিতা স্কুলে পৌঁছানোর আগে, স্থানীয় এক নেতা এসে জানায়,

— “তোমার স্কুলের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ উঠেছে। যদি এসব বন্ধ না হয়, আমরা তোমাকে আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করব।”

সবিতা একটু থমকে দাঁড়িয়ে যায়।

— “অভিযোগ কি ধরনের?”

— “মেয়েদের মনে স্বাধীনতার ভাবনা, অশিক্ষার পরিবেশ। এমনকি, অনেকের মতে, এখানে এসে মেয়েরা সমাজের নৈতিকতার বিরুদ্ধে কাজ করছে।”

এই কথাগুলো সবিতার মনকে একেবারে শূন্য করে দেয়, তবে সে জানে, হাল ছাড়লে তো চলবে না। সে দৃঢ়তার সাথে জানায়,

— “আমরা শুধু মেয়েদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করছি। আর এই শিক্ষার মাধ্যমে সমাজের জন্য ভালো কিছু হতে পারে, এটাই আমার বিশ্বাস।”

নেতা কিছু না বলে চলে যায়, কিন্তু তার কথাগুলো সবিতার মাথায় ঘুরতে থাকে।
তার মনের ভিতরে একটা ঝড় চলছে, তবে সে জানে—কোনো ভয়েই তাকে থামানো যাবে না।

একদিকে সবিতা লড়াই করছে বাইরে, অন্যদিকে তার শিক্ষার্থীরা তাদের জীবনে নতুন সুযোগ ও পরিবর্তন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
রুমাইসা, যাকে একসময় অন্ধকারের পথে চলতে দেখেছিল, এখন অন্য মেয়েদের কাছে তার নিজস্ব অভিজ্ঞতা শেয়ার করে।
একদিন, সে সবিতার কাছে এসে বলে,

— “আপু, আমি জানি, আমি যদি এখানে না আসতাম, তাহলে হয়তো আমি আজও সেই পুরনো জীবনেই থাকতাম। এই স্কুলে এসে আমি শুধু পড়াশোনা শিখিনি, আমি শিখেছি কীভাবে নিজেকে সম্মান করতে হয়।”

সবিতা গর্বিত হয়ে বলে,
— “তুমি যেভাবে নিজেকে গড়ে তুলেছো, সেটা খুবই প্রশংসনীয়। তবে মনে রেখো, এখনও অনেক পথ চলা বাকি।”

আয়ন, রুমাইসার বন্ধু, এবার স্কুলে যোগ দিয়েছে। সে আসে, তার মুখে আত্মবিশ্বাস এবং চোখে নতুন স্বপ্নের আভা।
একদিন সবিতা আয়শাকে বলে,
— “তুমি কি জানো, তুমি যদি সাহসী না হতে, তাহলে এখানে আসা হতো না।”

আয়শা মাথা নিচু করে বলে,
— “আপু, আমার কাছে এই স্কুল শুধু শিক্ষা নয়, এটা আমার বেঁচে থাকার পথ।”

________

একদিন, সবিতা এক বিশেষ সভার আয়োজন করে, যেখানে তার শিক্ষার্থীরা নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবে।
সভায় উপস্থিত হয় স্থানীয় অনেক গুণী মানুষ এবং সাংবাদিকও।
রুমাইসা, আয়শা, সিমলা—এরা সবাই নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে, কিভাবে তারা নবআলোতে এসে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে।

তারপর সবিতা উঠে দাঁড়িয়ে বলে,

— “আজ আমি আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে জানাচ্ছি—আমরা শুধু মেয়ে শিক্ষার জন্য কাজ করছি না, আমরা তাদের জীবনের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করছি।
এই স্কুল শুধু শিক্ষার জায়গা নয়, এটা একটি আন্দোলন, যেখানে প্রতিটি মেয়ে তাদের সঠিক জায়গা খুঁজে পাবে।”

সকলের চোখে চোখে আবেগ দেখা যায়, কেউ বা কেঁদে ফেলে, কেউ আবার হাসে।
এই দিনটা সবিতার জীবনের সবচেয়ে বড় মুহূর্ত।
সে বুঝতে পারে, তার সংগ্রাম শুধু নিজের জন্য নয়, বরং পুরো সমাজের জন্য।

অল্প সময়ের মধ্যে নবআলো নারী শিক্ষা কেন্দ্র ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু জনপ্রিয়তার সঙ্গে বেড়ে ওঠে সমস্যাও।
একদিন সবিতা হঠাৎই খবর পায়, যে রাজনৈতিক দলের নেতারা আরেকবার তাদের স্কুলের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে চাইছে।
এবার তারা জানিয়েছে, “এই স্কুলের কর্মকাণ্ডের জন্য সমাজের স্বাভাবিক নিয়ম ভেঙে পড়ছে। যদি না বন্ধ করা হয়, তাহলে আরো বড় বিপদ আসবে।”

সবিতা কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়ে। সে জানে, এবার পরিস্থিতি আরো কঠিন হতে যাচ্ছে।
তবে তার মন দৃঢ়। সে জানে, সত্যের পথে চলতে থাকলে, একসময় আলোর দেখা পাওয়া যাবে।
সে সবার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,

— “আমরা আমাদের সংগ্রামে অবিচল। যখন মানুষ একসঙ্গে হয়, তখন তারা কোনকিছুই হারাতে পারে না।”

নবআলো নারী শিক্ষা কেন্দ্রের কক্ষগুলোতে এখন আর কেবল বইয়ের পাতা উল্টানোর শব্দ নয়, বরং প্রতিদিনই নতুন স্বপ্নের জন্ম হয় এখানে। মেয়েরা যে সমাজ তাদের ‘বোঝা’ ভেবে অবহেলা করেছে, সেই সমাজেই তারা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার যুদ্ধ শুরু করেছে। কিন্তু ঠিক তখনই শুরু হলো আরেকটি ঝড়।

এক দুপুরে স্কুলে ঢোকে এক অফিসার, সঙ্গে হাতে কাগজ।
— “আপনার নামে অভিযোগ এসেছে ম্যাডাম। আপনি নাকি মেয়েদের উসকে দিচ্ছেন, পরিবার আর সমাজের বিরুদ্ধে দাঁড় করাচ্ছেন। আপনার স্কুল বন্ধের নির্দেশ এসেছে।”

সবিতা অবাক হলেও ভেঙে পড়েনি। সে চুপচাপ কাগজটা পড়ে, তারপর মাথা উঁচু করে বলে,

— “যে সমাজ অন্যায় মেনে নেয়, সেখানে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে হলে কেউ একজন তো দাঁড়াবেই। আমি পিছিয়ে যাবো না। আমার মেয়েরা জানে কীভাবে লড়তে হয়।”

অফিসার কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
— “আপনার কথা ঠিক। কিন্তু প্রভাবশালীরা চায় না এই জায়গা টিকে থাকুক। সাবধান থাকবেন।”

সবিতা জানে, ঝড় এসে গেছে। এখন লড়াইটা শুধু একটা স্কুল টিকিয়ে রাখার নয়—এটা একটি আদর্শ বাঁচিয়ে রাখার লড়াই।

সেদিন সন্ধ্যায় সবিতা মেয়েদের ডেকে বলে,

— “আমাদের স্কুল হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে। তোমাদের যদি ভয় হয়, তাহলে চলে যেতে পারো। আমি কাউকে দোষ দেবো না।”

কিন্তু সিমলা বলে ওঠে,
— “আপু, যদি আপনি লড়েন, আমরা কেন পালাবো? আপনি আমাদের দাঁড়াতে শিখিয়েছেন। এবার আমরাও দাঁড়াবো আপনার পাশে।”

আয়শা বলে,
— “এই স্কুলটা আমার আত্মার মতো। কেউ যদি এটা কেড়ে নিতে চায়, তাকে আমার বুকের রক্তের ওপর দিয়ে যেতে হবে।”

সবার চোখে দৃঢ়তা।
সবিতা অনুভব করে, সে আর একা নেই।

আন্দোলনের শুরু,

মেয়েরা নিজেরাই একটি প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করে।
স্থানীয় গণমাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়ে—”একদল মেয়ে, তাদের শিক্ষিকার নেতৃত্বে, নারী শিক্ষার অধিকার বাঁচাতে পথে নেমেছে।”

সমাবেশে এক বুড়ি মা এসে বলেন,
— “আমার ছেলেও চায় না আমি স্কুলে পড়ি। কিন্তু সবিতা আপুর স্কুলে এসে আমি শিখছি কীভাবে নাম লিখতে হয়। আমার জীবনটা নতুনভাবে শুরু হচ্ছে।”

এই ধরনের বক্তব্যে চারপাশ নড়ে ওঠে।
যারা সবিতার বিরুদ্ধে ছিল, তারাও এবার একটু থেমে যায়,সবাই বুঝতে পারে সবিতাকে আর আটকানো যাবে না,সে তার আলো সকল অবহেলিত আর নির্যাতিত মেয়ের মধ্যে ছড়িয়ে দিবে।

শেষ দৃশ্য

সবিতা রাতে নবআলো’র ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। আকাশে চাঁদ, চারপাশে নীরবতা।
তার পাশে এসে এক এক করে সকল মেয়েরা দাঁড়ায়।
সিমলা বলে,
— “আপু, ভয় লাগছে?”

সবিতা হালকা হাসে,

— “ভয় লাগে, কিন্তু ভয় পেয়ে থেমে থাকলে তো আলো জ্বলবে না।”

সবিতা বুঝে যায়—এই মেয়েগুলোই তার শক্তি। এটাই তার সত্যিকারের পরিবার।

সমাপ্ত

সবিতা পর্ব-১১

0

সবিতা
পর্ব : ১১
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

সবিতার জীবনে এখন শান্ত একটা রুটিন।

স্কুল, শিক্ষার্থীদের গল্প, আয়শার ঘুরে দাঁড়ানো… সব মিলিয়ে সে এখন একজন সত্যিকারের পথপ্রদর্শক।
কিন্তু জীবনের বাঁকে বাঁকে যে টানাপোড়েন জমে থাকে, একদিন সেই পুরনো মুখ ঠিকই ফিরে আসে।

একদিন হঠাৎ…
স্কুল ছুটির পর গেটের সামনে একটা সাদা গাড়ি।
সবিতা প্রথমে পাত্তা দেয় না।
কিন্তু ভেতর থেকে যখন লোকটা নামে, তার চোখ আটকে যায়— সাইফ।

হাঁটুর ওপর একটা দামী পাঞ্জাবি, চোখে ক্লান্তি, আর মুখে একটা অনুশোচনাময় ভঙ্গি।

— সবিতা, তোমার সাথে একটু কথা বলতে পারি?”

সবিতার কণ্ঠ ঠান্ডা, কিন্তু দৃঢ়।

— “তুমি তো ভেবেছিলে আমাকে ঠকিয়ে তুমি ভালো থাকবে, ভালো আছো কি?

সাইফ চুপ। তারপর কান্না বিজড়িত কন্ঠে বলে,
— “ভুল করেছি। অনেক বড় ভুল। তুমি থাকতে বুঝিনি, কিন্তু এখন বুঝি আমি কী হারিয়েছি।”

সবিতা তাকিয়ে থাকে সাইফের চোখে।
এই মানুষটা একসময় তার সব ছিল।
আজ শুধু একটা পরিচিত ছায়া।

— “তুমি যেটা হারিয়েছ, সেটা আমি একটুও হারাইনি, সাইফ। বরং আমি নিজেরে খুঁজে পেয়েছি। নিজের একটা আলোকপথ বানিয়ে নিয়েছি।”

সাইফ কণ্ঠ নরম করে নির্লজ্জের মতো আজও বলে,
— “তুমি চাইলে… আবার শুরু করতে পারি?”

সবিতার উত্তর আসে ধীরে, কিন্তু অমোঘভাবে—
— “আমি শুরু করেছি, সাইফ। তবে সেটা তোমার সঙ্গে নয়, নিজের সঙ্গে। আর সেই শুরুতে তোমার কোনো জায়গা নেই।”

সাইফ আজ ও শূন্য হাতেই ফিরে যায়।

তবে রাতের ডায়েরিতে সবিতা লেখে

> “আজ আমি তাকে ক্ষমা করেছি।
কিন্তু ফিরে যাওয়া আমার জীবনের লক্ষ্য নয়।
সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্যই তো আমি সেই রাতে বেরিয়ে এসেছিলাম… অন্ধকার পেরিয়ে আলোর খোঁজে।”সেই আলো আমি খুঁজে পেয়েছি,তাহলে কেনো আবার অন্ধকারে যাবো?

সবিতার জীবনটা যেন সত্যিই একটা বইয়ের মতো—

প্রতিটি অধ্যায়ে নতুন কিছু, নতুন যুদ্ধ, আর নতুন আলো।
সাইফের ফিরে আসা তাকে কাঁপিয়ে দেয়নি, বরং নিজের অবস্থানটা আরও পরিষ্কার করে দিয়েছে।
এখন সে জানে—নিজের পথেই সে আলোর খোঁজ পেয়েছে।

আয়শা এখন শুধু আঁকেনা, কথা বলতেও শিখে গেছে।
সে অন্য মেয়েদের পাশে দাঁড়ায়, তাদের গল্প শোনে, সাহস দেয়।
একদিন সবিতাকে বলল,

— “আপু, আমি যদি নিজের একটা গ্রুপ বানাই?
যারা নিজেদের গল্প বলবে, আর একে অপরের পাশে দাঁড়াবে?”

সবিতার মুখে প্রশংসার হাসি।

— “এই পথটাই তো তোদের জন্য খুলে দিতে চেয়েছিলাম।
তুই নিজেই নিজের ‘আয়শা’ হয়ে উঠেছিস।”

আয়শা মাথা নেড়ে বলে,
— “আপু, আমি একদিন আপনার মতোই হবো।
মানুষকে বোঝাবো—আগুন দিয়ে নয়, আলো দিয়ে বাঁচতে হয়।”

এদিকে তাওহীদ নিজের উদ্যোগ নিয়ে ব্যস্ত।
সবিতার স্কুলকে আরও বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে।
একদিন দুজনে ছাদে বসে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলে—

তাওহীদ বলল,
— “স্কুলটাকে আরও বড় করতে চাই।
নিজের একটা জায়গা, যেখানে তুমি ইচ্ছামতো স্বপ্ন বুনবে।
আমিও পাশে থাকব—সহযোদ্ধা হয়ে।”

সবিতা তাকিয়ে থাকে তাওহীদের দিকে।
এই মানুষটা কখনোই তাকে দাবী করেনি, কিন্তু প্রতিটি স্বপ্ন পূরণের পথে এক শক্ত ভরসার দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তাওহীদ অনেক সাহস নিয়েই বলে,

— “একদিন একটা বাড়ি হবে আমাদের,
যেখানে থাকবে শুধু সম্মান, ভালোবাসা আর স্বপ্ন,”

সবিতা মুচকি হাসে।

এতো কিছুর মধ্যেও সমাজ থেমে থাকে না।
মেয়ে হয়ে এতদূর আসার পরও সবিতাকে কটাক্ষ করা হয়—
“নিজের সংসার না গড়েই নাকি এত নারী ক্ষমতায়নের কথা!”
“ভাঙা সংসার নিয়ে এসব নাটক!”

কিন্তু সবিতা জানে, এদের জবাব কথায় নয়—কাজে দিতে হয়।
প্রতিদিন আরও একজন মেয়ের জীবন বদলানোই তার সবচেয়ে বড় প্রতিশোধ এখন।

একদিন তাওহীদ সবিতাকে নিয়ে যায় একটা জমির সামনে—
খালি জায়গা, পাশে গাছপালা, আর দূরে ছোট্ট একটা নদী।

— “এখানেই হবে তোমার নতুন স্কুল—‘নবআলো’।”
— “নতুন ঠিকানা, নতুন শুরু।
তুমি মেয়েদের শেখাবে নিজের মতো করে বাঁচতে, আর আমি তোমার ছায়া হয়ে থাকব।”

সবিতার চোখ ঝাপসা হয়ে যায়।
নিজের স্বপ্নগুলোকে এতদিন কাগজে আঁকতো, আজ সে স্বপ্নগুলো মাটিতে গেঁথে যাবে।

সে মনে মনে বলে—
“আমি ফিরে যাচ্ছি না। আমি এগিয়ে যাচ্ছি—নিজের গল্প, নিজের মানুষ, আর নিজের আলো নিয়ে।”

দুই মাস পেরিয়ে গেছে। খালি জমিটা এখন আর খালি নেই। বাঁশের চটা ঘর, টিনের ছাউনি আর দেয়ালে রঙিন আঁকা—
লেখা আছে বড় করে:

“নবআলো নারী শিক্ষা কেন্দ্র”

এই ছোট্ট স্কুলঘর এখন যেন একটা বিপ্লবের কেন্দ্র।
প্রতিদিন সকাল হতেই আশেপাশের গ্রামের মেয়েরা ভিড় জমায়।
কারও চোখে ভয়, কারও মুখে কৌতূহল, আর কারও মধ্যে প্রচ্ছন্ন একটা আশা।

সবিতা দাঁড়িয়ে থাকে গেটের পাশে,
যেন এই আলো তার নয়, বরং তাদের জন্য—যারা পথ হারিয়ে খুঁজে ফিরছে নিজের নাম, নিজের সম্মান, নিজের স্বপ্ন।

একটা মেয়ে প্রথমদিন এসেই কোণায় বসে পড়ে। কারও সঙ্গে কথা বলে না।

নাম?
রুমাইসা।
বয়স ১৫। বাবা নেই, সৎমায়ের হাতে নির্যাতন। পড়াশোনা বলতে খুব সামান্য। মুখে একটা দগদগে দাগ।

সবিতা তার পাশে বসে।

— “আয়নার দিকে তাকাতে ভয় পাও?”

রুমাইসা চোখ ঘোরায়, কিছু বলে না।

সবিতা ধীরে বলে—

— “এই দাগটা তোমার না, সমাজের। তুমি ওটা নিয়েই সুন্দর। আমরা সবাই কিছু না কিছু নিয়ে এসেছি এখানে। নবআলোতে তুমি আর ‘অসুন্দর’ নও, তুমি শক্তি।”

রুমাইসা চোখ মুছে তাকায়।
একটা ভেতরের তোলপাড় যেন তাকে নাড়িয়ে দিচ্ছে।
সেদিন থেকে সে প্রতিদিন নিয়ম করে আসে।

স্কুলের প্রথম মাস শেষ হলে, তাওহীদ এক সন্ধ্যায় এসে সবিতাকে একটি ছোট বাক্স দেয়।

— “খুলে দেখো।”

সবিতা খুলে দেখে ভেতরে ছোট ছোট কার্ড।

প্রতিটি মেয়ের হাতে লেখা চিঠি।

“আপু, আপনি না থাকলে আমি এখনো রান্নাঘরের কাজ করতাম।”

“আপু, আপনি আমাকে নাম দিয়েছেন। ‘বেকার’ থেকে ‘শিক্ষার্থী’ বানিয়েছেন।”

“আপু, আপনি আমার মা, আপু, আলোর মানুষ।”

সবিতা বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।

তাওহীদ হেসে বলে—
— “শুধু শিক্ষা নয়, তুমি ভালোবাসাও শিখিয়েছো ওদের।”

এক সন্ধ্যায়

সবিতা ছাদে দাঁড়িয়ে থাকে। দূরে আকাশ লালচে।
হাতের চায়ের কাপটা ধরে ফিসফিস করে বলে—
“আমি হারাইনি, বরং পেয়েছি।
নিজেকে, আমার মানুষগুলোকে, আর এই আলোর পথটাকে।”

তাওহীদ এসে পাশে দাঁড়ায়।
— “তুমি একা নও সবিতা। তোমাকে দেখে আমরাও পথ খুঁজে পাই।”

সবিতা হেসে বলে—

— “আমার নাম হলো সবিতা, মানে সূর্য।
এজন্য আমি যত দিন বেঁচে থাকবো গরীব,অসহায় আর নির্যাতিত মেয়েদের আলো দিয়ে যাবো।

আজ আমি কেবল আলোর মাঝেই বাস করছি, আর চাই যেন এই আলো কারও চোখে আর নিভে না যায়।”

চলবে_____

সবিতা পর্ব-১০

0

সবিতা
পর্ব : ১০
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

নতুন পথের শুরুতে সবসময়ই কিছু প্রশ্ন থাকে।
তাওহীদের বিয়ের প্রস্তাবের পর সবিতা এখন রাতজাগে। একা একা পুরনো দিনের ডায়েরি পড়ে—সাইফের নির্লিপ্ততা, শ্বশুরবাড়ির চুপচাপ সহ্য করা অত্যাচার , নিজের কান্নাভেজা রাতগুলো।
সবকিছু মিলিয়ে সে একটাই সিদ্ধান্ত নেয়—সে আর কারো সংসারে নয়, নিজের পরিচয়ের ভেতরেই বাঁচতে চায়।

সবিতা এখন জানে, জীবন কখনো সোজা হয় না।
তবু তার গল্প থেমে নেই। সে লিখছে একেকটা মেয়ের মুক্তির গল্প।
আর তার পাশে একজন মানুষ—তাওহীদ—যে ভালোবাসা দাবি করতে চায় না, শুধু থাকতে চায় তার ছায়া হয়ে।আর সবিতাও তাকে বন্ধু হিসেবেই রেখে দিয়েছে।

বিকেলের আলো গা ছুঁয়ে যায়।
সবিতার স্কুলে আজ বিশেষ আয়োজন—নারী উদ্যোক্তা উৎসব।
সবিতার হাতে গড়া ছাত্রীরা আজ নিজেদের বানানো হ্যান্ডিক্রাফট, জামা-কাপড়, ঘর সাজানোর জিনিসপত্র নিয়ে এসেছে।
লোকজন মুগ্ধ। কেউ বিশ্বাসই করতে পারছে না—এই মেয়েগুলো একসময় নির্যাতিত, পরিত্যক্ত ছিল।

এই উৎসবের মাঝেই তাওহীদ পাশে এসে দাঁড়ায়।

– “তোমার মেয়েগুলো তোমার মতোই জেদি, জানো?”
সবিতা মুচকি হেসে বলে,
– “তাদের জেদটুকু দিয়েই ওরা বাঁচবে।”

সবকিছুর মাঝে একদিন অপ্রত্যাশিত একজন অতিথি আসে—সাইফের মা।

হঠাৎ তাকে দেখে সবিতা থমকে যায়।

– “তোমার সঙ্গে কথা আছে মা রে,” কাঁপা গলায় বলে।
সবার চোখের আড়ালে তারা একটু দূরে গিয়ে বসে।

– “আমি জানি, তোকে কোনোদিন আমরা তোর প্রাপ্য সম্মান টুকু দিতে পারিনি।অনেক অত্যাচার করেছি তোর সাথে,তুই মুখ বুঝে সব শুধু সহ্য করে গেছিস।এখন আমরা সবাই আমাদের ভুল বুঝতে পারি, ভুলটা আমাদের ই ছিল,তুই নিষ্পাপ, ফুলের মতো পবিত্র ছিলি।

সবিতা চুপচাপ, তার কোনো উত্তর নেই,আর কি উত্তর দেবে সে?
সাইফের মা এবার বললো,
তুই নিজের মতো করে উঠেছিস—আমি সবাই গর্বিত।”এটা ধরে রাখ।

এবার সবিতার চোখে জল আসে। সে কিছু বলে না। কিন্তু এই অনুতপ্ত স্বীকারোক্তি তার দীর্ঘ ক্লান্ত পথের প্রতি একধরনের স্বীকৃতি।

সবিতা মনে মনে বলে, সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছি,কারণ তোমরা সেদিন আমার উপর এই নির্যাতন না করলে আজ আমি সবিতা হতে পারতাম না।

দেখতে দেখতে আরও এক বছর কেটে যায়।

সবিতার স্কুল এখন রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত।
পাঁচজন ছাত্রী আজ চাকরি পেয়েছে এনজিওতে।
তিনজন নিজের দোকান খুলেছে।

সবিতা নিজেও একটা প্রজেক্ট হেড পদে যোগ দেয়—নারী অধিকার ও ক্ষমতায়ন নিয়ে বড় এক প্রোগ্রামে।

এক সন্ধ্যায় ছাদে বসে চা খাওয়ার সময়, তাওহীদ খুব সহজ করে বলে—

– “সবিতা, এবার যদি তুমি রাজি থাকো, তবে চল একটা ছোট্ট বাসা নিই।
তুমি স্কুল চালাবে, আমি অফিস করব, আর সন্ধ্যায় একসঙ্গে চা খাব।
ভালোবাসার চেয়ে সম্মানের জায়গাটা আগে থাকবে, এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।”

সবিতা শুধু হাসে,কিন্তু কিছু বলে না।

হেমন্তের হাওয়া বইছে।
নতুন একটা ভোর এসেছে—শান্ত, ধূসর, অথচ আশায় ভরা।
সবিতা আজ প্রথমবার নিজের নামে একটা চেক হাতে পেয়েছে।
নিজের প্রতিষ্ঠানের পক্ষে, নিজের স্বাক্ষরসহ।
চোখে জল চলে আসে—এ যেন কাগজের মধ্যে জীবনের ছাপ।

তাওহীদ এসে বলে,
— “আজ তোমাকে গাড়ি করে স্কুলে নিয়ে যাবো। সময় হয়ে গেছে ‘সাইকেলচালিত স্বপ্ন’ ছাড়ার।”

সবিতা হেসে ওঠে।
সেই হাসির ভিতর ছিল নতুন জীবনের দৃঢ়তা।

একদিন হঠাৎ কাকুলির ফোন আসে।
— “তুই এত দূর চলে গেছিস, আন্নি। আমি গর্বিত, জানিস?”

সবিতা তা শুনে বলে একদিন দেখতে আসিস আমাকে,আমাকে কি দেখতে ইচ্ছে করে না?

কাকুলি হেসে উত্তর দেয়,যাবো,যাবো।তুই রেডি থাকিস।

জানিস,কাকুলি মা-ও ফোন দেয় মাঝে মাঝে।
বলে,
— “তোর বাচ্চাগুলোকে একদিন আমাদের বাড়িতে আনিস।”
সেই কণ্ঠে অনুশোচনা নেই, আছে একধরনের শান্ত সমর্পণ।

আমার যে কত খুশি লাগে এখন।

কাকুলি কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে তুই সার্থক হয়েছিস আন্নি।তুই আমাদের সবার গর্ব।

__________

সবিতা বার বার সাইফ কে ফিরিয়ে দেওয়ায় আর যোগাযোগ করেনি সাইফ।
তবে শোনা যায়, অহনার সাথে তার আর কোনো সম্পর্ক নেই,সবিতা সাইফ কে ছেড়ে চলে আসার পর পরই সে অহনার থেকেও দূরে সরে যায়।সাইফ তার ভুল বুঝতে পারে,সে সবিতাকে ছাড়া ভালো নেই।

একসময় মানুষ যে ফাঁকা জায়গায় ভালোবাসা খোঁজে, সেখানে শুধু আজ ক্ষমা জেগে থাকে।

সবিতার স্কুলে এক চমকপ্রদ ঘটনা ঘটে।

একটা মেয়েকে স্কুলে নিয়ে আসে স্থানীয় ওসি সাহেব।
মেয়েটা নাকি আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল।

নাম—আয়শা।
চোখে ভয়ার্ত অন্ধকার।
মুখে একটাও শব্দ নেই।
কিন্তু সবিতা জানে, এই মেয়েটাই আগামী দিনের আগুন হবে—জ্বালিয়ে পুড়িয়ে নয়, আলো ছড়িয়ে।

সবিতা তার পাশে বসে বলে,

— “তোকে আর কিছু বলতে হবে না। আমি তোর মতই একদিন গুমরে কেঁদেছিলাম।”

আয়শা চুপ করে থাকে। কিন্তু তার ঠোঁটে একটুখানি কম্পন—
কোনো এক ভরসার ইশারা যেন।

সবিতা আর তাওহীদ একসাথে ছাদে দাঁড়িয়ে।
নিচে শহরের আলো, মাথার ওপর তারা।
তাওহীদ বলে,

— “তোমার প্রতিটি যুদ্ধের পাশে থাকার শপথ আজ আবার করছি।”

সবিতা তখন হঠাৎ কোনো কিছু না ভেবে বলে,

— “আমি আর কোনোদিন পালাতে চাই না। এবার আমি থাকবো—নিজের গল্পের কেন্দ্রে, নিজের মতো করে।”

তাওহীদ হেসে ওঠে শুধু,কিন্তু কিছু বলে না।সবিতা যে তাকে অগাধ বিশ্বাস করে তা তাওহীদ ভালো করেই জানে।হয় তো একটু আধটু পছন্দও করে।কিন্তু বলার সাহস পায় না।সবিতা সংসার জীবন টাকে আজকাল অনেক বেশি ভয় পায়।

সবিতা আর তাওহীদ একসাথে আকাশের দিকে তাকায়।
তারা আজ অনেক দূরে।ঠিক পথেই এগিয়ে যাচ্ছে দিন দিন।

সকালবেলা।
স্কুলের বারান্দায় সূর্যের আলো এসে পড়ে।
আয়শা এখনো চুপচাপ। কেউ কোনো প্রশ্ন করে না।
সবিতা জানে—প্রথমে কথা নয়, দরকার ভরসা।

তাই প্রতিদিন সবিতা নিজের হাতে তাকে নাস্তা দেয়, পাশে বসে গল্প করে।
একদিন হঠাৎ আয়শা বলে ওঠে,

– “আপু, আমি আসলে মরতে চাইনি। শুধু সবাইকে একটু বোঝাতে চেয়েছিলাম, আমি কতটা কষ্টে আছি।”

সবিতা থেমে থাকে। তারপর মাথায় হাত রেখে বলে,
– “তুই বেঁচে আছিস, সেটাই এখন আমাদের শক্তি।”

দুপুরের রোদ্দুরে আয়শা একদিন নিজের গল্প খুলে বলে—
তার চাচাতো ভাইয়ের হাতে নিপীড়িত হওয়া,
মা-বাবার চুপচাপ মুখ,
আর একদিন তার মায়ের বলা কথা—
“তোর মুখ বন্ধ রাখ, নয়তো তোর জন্যই আমাদের মান-ইজ্জত যাবে।”

সেই দিন থেকেই আয়শার ভিতরে আগুন জমে।
একদিন আগুন দিয়েই নিজের শরীর পোড়াতে চেয়েছিল।
কিন্তু ভাগ্যক্রমে রক্ষা পেয়েছে।

সবিতার চোখে জল আসে, তবু গলা শক্ত করে বলে,
– “তুই একটা যুদ্ধিনী, আয়শা। যুদ্ধ না করলে তো অন্যায়েরাই জয়ী হয়।”

পরবর্তী কিছুদিনে আয়শা আবার আঁকতে শুরু করে।
তার ছবিতে এক মেয়ের মুখে থাকে আগুন, চোখে অশ্রু আর পেছনে বিশাল এক ডানা।

স্কুলে আয়োজিত “আলোকিত বাঁচা” প্রতিযোগিতায় সে এই আঁকা জমা দেয়।
প্রথম পুরস্কার তার হয়ে যায়।
লোকজন ভীষণ মুগ্ধ হয়। সংবাদপত্রেও আসে এই খবর—
“আগুন থেকে আলোর পথে: আয়শার গল্প”

শেষে এক চিঠি

এক সন্ধ্যায় আয়শা সবিতাকে একটা চিঠি দেয়—

> “আপু, আপনি না থাকলে আমি সত্যিই থাকতাম না।
আমি এখন জানি, আমি কারও বোঝা না।
আমি নিজেই একটা স্বপ্ন।
আপনার কাছ থেকে আমি শুধু ভরসা না, একটা নতুন জীবন পেয়েছি।
আমি বড় হয়ে ঠিক আপনার মতো একটা স্কুল খুলব।
যেখানে আরেকটা আয়শা আসলে, তাকে কেউ মরতে না বলে—বাঁচতে বলবে।”

সবিতার চোখে জল আসে।
সে জানে, এই গল্পের শুরুটা কষ্টের হলেও শেষটা আলোর, সাহসের আর শক্তির।

চলবে______

সবিতা পর্ব-০৯

0

সবিতা
পর্ব: ০৯
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

সবিতা, যেটি ছিল তার জীবনের একক সংগ্রাম, এখন সেটি হয়ে উঠেছে একটি বৃহৎ উদ্যোগ—সমাজে পরিবর্তন আনা। তার বই, সেমিনার এবং লেখালেখি জীবনে সবার সাথে একযোগভাবে প্রভাব ফেলছিল। এবার সে একটি নতুন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করল, যার নাম ছিল “শক্তি সচেতনতা”। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সবিতা অনেক তরুণ-তরুণীকে জীবনে তাদের লক্ষ্য সম্পর্কে সচেতন করতে চেয়েছিল। সে বিশ্বাস করেছিল, যখন একজন মানুষ নিজের আত্মবিশ্বাস খুঁজে পায়, তখন সে পৃথিবীটাকে আরও সুন্দর করতে পারে।

সবিতা তাঁর এই উদ্যোগের মাধ্যমে আরও অনেক মানুষকে নিজেদের ভেতরের শক্তি এবং সম্ভাবনার প্রতি বিশ্বাসী করতে চাইছিল। তার এই প্রজেক্টে এমন হাজারো তরুণ-তরুণী একত্রিত হয়েছিল যারা নিজেদের জীবনের নতুন পথ খুঁজছিল।

____

সবিতার জীবন এখন এক নতুন মোড় নিতে চলেছে। তার শুরু করা উদ্যোগ “শক্তি সচেতনতা” এখন এক বৃহৎ আন্দোলনে পরিণত হতে চলেছে। মানুষ আরও বেশি করে তার গল্পের সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে এবং জীবনের উদ্দেশ্য খোঁজার জন্য একত্রিত হচ্ছে।সবিতা জানতো, এটি এক রাতের ব্যাপার নয়, তবে সে শুরু করেছে, এবং তার মনোবল সবার মাঝে আশার আলো জ্বালিয়েছে।

সবিতা তার উদ্যোগের মাধ্যমে তরুণদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলতে শুরু করেছিল। সে জানতো, সঠিক পথ চলতে পারলে একজন মানুষ কীভাবে তার জীবনে বিশাল পরিবর্তন আনতে পারে। সেমিনার, বই আলোচনা, এবং প্রাকটিক্যাল ক্লাসের মাধ্যমে সবিতা তরুণদের জীবন সম্পর্কে ধারণা দিতে চাইছিল। তার প্রতিটি বক্তৃতা যেন একটি অনুপ্রেরণার ঝরনা হয়ে পড়েছিল।

সেখানে, একদিন এক তরুণী সবিতার কাছে এসে বলল—

– “আপনার বই এবং সেমিনারের পর আমার জীবন পুরোপুরি বদলে গেছে। আমি এখন জানি, আমি কী চাই। আমি জানি, আমি শুধু স্বপ্ন দেখতে চাই না, স্বপ্ন বাস্তব করার জন্য কাজ করতে হবে।”

সবিতা তার চোখে এক উজ্জ্বল হাসি দিয়ে বলল—

– “আমরা কেউ কখনো একা নই। আমাদের মধ্যে যে শক্তি রয়েছে, সেটিই আমাদের একে অপরের দিকে টেনে আনে। তোমরা যদি বিশ্বাস রাখো, তুমি তোমার পথ খুঁজে পাবে।”

এভাবেই সবিতা তার কাজকে আরও গভীর করে চলছিল। তার প্রতিটি উদ্যোগ নতুন আলো ছড়িয়ে দিচ্ছিল। কিন্তু এখন, সবিতার সামনে নতুন এক চ্যালেঞ্জ এসে দাঁড়িয়েছে।

________

একদিন সবিতা একটি বড় সভার আয়োজন করেছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন পেশার মানুষ—কর্মী, উদ্যোক্তা, শিক্ষিকা, চাকরিজীবী, এমনকি ছাত্রছাত্রীরাও।সবিতা তাদের সামনে দাঁড়িয়ে বললো—

– “আমরা সবাই জানি, জীবনে চ্যালেঞ্জ আসে, সমস্যা আসে, তবে যদি আমরা একে অপরকে সহায়তা করি, একে অপরের জন্য দাঁড়িয়ে থাকি, তবে কোনো বাধাই আমাদের অতিক্রম করা অসম্ভব নয়। আমি চাই এই মঞ্চ থেকে আমরা সবাই মিলে একটি সংকল্প নি—নিজেকে বিশ্বাস করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।”

তার কথা শুনে উপস্থিত সবাই হর্ষধ্বনিতে মাতিয়ে তোলে। তাদের মধ্যে অনেকেই উঠে দাঁড়িয়ে সবিতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করল। সবিতা জানতো, তার কাজটা সঠিক পথে যাচ্ছে।

___

একদিন, সবিতা তার এক বন্ধু রিয়া’র সাথে বসে কথা বলছিল। রিয়া বলল—

– “তুমি জানো, সবিতা, তুমি একাই অনেক কিছু করতে পারো। কিন্তু এখন তুমি একে অপরকে সাহায্য করার মাধ্যমে সত্যিকারের পরিবর্তন আনতে পারছো। তোমার কাজের জন্য আমি গর্বিত।”

সবিতা হাসিমুখে বলল—

– “ধন্যবাদ, রিয়া। তবে আমি জানি, এই পথ কখনো শেষ হবে না। প্রতিটি নতুন দিন একটি নতুন সুযোগ এনে দেয়।”

এভাবেই সবিতা তার জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। এখন তার পথের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ ছিল, তবে সে জানতো, তার মাঝে যে শক্তি আছে, তা দিয়ে কোনো কিছুই অতিক্রম করা অসম্ভব নয়।
………

সন্ধ্যা নামে ঢাকার আকাশে। ক্লান্ত শহরের গা ঘেঁষে এক নিঃশব্দ বাসার জানালায় বসে সবিতা চুপচাপ চা খাচ্ছে। তাওহীদ আসেনি আজ। হঠাৎই একটা ফোন আসে—আমেনা আপার।

– “আন্নি মা খুব অসুস্থ। অনেকদিন ধরে তোকে দেখতে চাইছে। তুই যদি একটু…”

চুপ করে থাকে সবিতা। কিছু বলার মতো শব্দ পায় না। অনেক অভিমান, তবু মা তো মা-ই। পরদিনই সে ছুটে যায় মায়ের কাছে।

মায়ের চোখে জল

মা বিছানায় শুয়ে আছেন। শরীর শুকিয়ে গেছে, কণ্ঠ ক্ষীণ।

– “তুই ভালো আছিস তো মা?”

সবিতা চোখের জল আটকে রাখে। অনেকদিন পর এই মমতা-মাখানো কণ্ঠ শুনে বুকের ভেতরটা গলে যায়।

– “ভালো থাকার লড়াই করছি মা…”

– “তোর মতো মেয়ে… একদিন অনেক উঁচুতে যাবে। সাইফ বোঝে নাই, তাতে কী হয়েছে? তুই নিজের মতো করে আলো হবি…”

সবিতা মায়ের হাত ধরে রাখে। কাঁদে না, শুধু খুব নীরবে হাসে।

সবিতা আবার কাজ শুরু করে। “উত্তরণ”-এর ক্যাম্পেইন এবার গ্রামে, যেখানে নারীদের শিক্ষার অভাব এখনো প্রকট।
সে প্রতিদিন সকালে বের হয়, ছুটে বেড়ায় একেকটা ইউনিয়নে। তার চোখে নতুন স্বপ্ন—একটা প্রজন্ম বদলে দেওয়ার।

তাওহীদ প্রতিদিন পাশে থাকে, কখনো কিছু বলে না, শুধু বোঝে। আর সবিতা, ধীরে ধীরে তাওহীদ কে বিশ্বাস করতে শেখে।

এক সন্ধ্যায়, ক্যাম্প থেকে ফিরে চায়ের কাপ হাতে, তাওহীদ বলে,

– “সবিতা, আমি জানি তুমি ভেঙে পড়েছো,গড়েছো আবার ভেঙেছো… কিন্তু যদি তুমি চাও, তবে আমি তোমার পাশে থেকে এই যাত্রাটা ভাগ করে নিতে চাই।”

সবিতা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে।

– “তুমি জানো তাওহীদ , আমি প্রেমে না, জীবনে বিশ্বাস করতে চাই। যদি তুমি আমার জীবনকে সম্মান করতে পারো,তাহলে বন্ধু হিসেবে তোমাকে ভাবা যেতে পারে…”তবে সারাজীবন এর সঙ্গী হিসেবে আমি দ্বিতীয় কাউকে আর গ্রহণ করতে চাই না।

তাওহীদ মৃদু হাসে। সম্মান, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব—সব আছে তোমার প্রতি,জীবন তোমার সিদ্ধান্ত ও তোমার,যদি কখনো মনে হয় আমি তোমার পার্টনার হওয়ার যোগ্য তাহলে ভেবে দেখতে পারো, আমি অপেক্ষায় থাকবো আজীবন।

সবিতা চুপ হয়ে রইলো।

সবিতার গল্প এখানেই শেষ নয়। এই তো শুরু।

একজন নারীর একা পথ চলা, আত্মপরিচয় খোঁজা, সম্মান কুড়িয়ে পাওয়া আর নতুন করে বিশ্বাস করতে শেখার গল্প এটা।

একটা সম্পর্ক ভেঙে গেলে জীবন থেমে যায় না—নতুন কোনো গল্প সেখানে গাঁথা হতে থাকে…

“উত্তরণ”-এর কাজ এখন শহর পেরিয়ে বিভিন্ন জেলার নারীদের জীবনে আলো দিচ্ছে।
আন্নি একটি ছোট্ট স্কুল চালু করে, যেখানে নির্যাতিত, বঞ্চিত মেয়েরা শিক্ষা পায়, সেলাই শেখে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে শেখে।
তাকে এখন সকলে “আপা” বলে ডাকে, কেউ কেউ “ম্যাডাম”।

তাওহীদ পাশে থাকে, কিন্তু কোনো চাপ দেয় না। শুধু সবিতার সঙ্গে হেঁটে চলে, নিজের জায়গা থেকে।
এই বন্ধুতা একরকম নির্ভরতার মতো।তবে সে সবিতার হ্যাঁ উত্তর শোনার অপেক্ষায় আছে।

এক সন্ধ্যায়, সবিতার বড়বোন আমেনা তাকে খুঁজে বের করে। কান্নাভেজা চোখে বলে—

– “আমরা সবাই ভুল করেছিলাম, আন্নি। তুই সাহস দেখিয়েছিস, যা আমরা পারিনি। তুই আমাদের গর্ব।”

সেই দিন, বহুদিন পরে, সবিতা প্রথমবার কোনো আপনজনের বাহুডোরে নিজেকে সঁপে দিয়ে কান্না করতে পারে।

একদিন সবিতা যখন তার স্কুলে কাজ করছিল,

আমেনা আপা নিজে এসে জানালেন—মা আসছেন।
আজকাল আমেনা মাঝেমধ্যেই সবিতার সাথে দেখা করতে আসে।আগে সবাই ঘৃণা করলেও এখন সবিতাকে নিয়ে সবার গর্ব হয়।

মা এলেন। চোখ ভরা জল, মুখে একটাই কথা—

– “আমার মেয়ে শুধু এই সমাজে টিকে নেই, নিজেই একটা পাহাড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

বাবাও এসেছেন। মুখে আর বকুনি নেই। আজ তিনি শুধু বললেন—

– “তুই আমাদের গর্ব, মা।”

সবিতার চোখে জল আসে, কিন্তু এবার সেটা কান্না নয়—অভিমান গলে গিয়ে শান্তির জল।

সবিতা এখন নিজেকে অনেক বেশি শক্তিশালী ও স্বাধীন একজন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছে। কিন্তু শক্তির এই উত্থানের পেছনে যে গভীর একাকিত্ব ও মানসিক যুদ্ধ চলেছে, তা খুব কম মানুষ জানে। রাতের পর রাত সে নিঃশব্দে কেঁদেছে, নিজের সিদ্ধান্তগুলোর বিশ্লেষণ করেছে, ভুল স্বীকার করেছে, আবার উঠে দাঁড়িয়েছে।

একদিন, একটি সেমিনার শেষ করে ফেরার পথে সবিতা হঠাৎ রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে। স্থানীয় এক তরুণী ও তার মা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ডাক্তার জানায়, সবিতা দীর্ঘ সময় ধরে বিশ্রামহীন কাজ করে গেছে, খাওয়া-দাওয়ার ঠিক ছিল না, যার ফলে সে শারীরিকভাবে ভেঙে পড়েছে।

জ্ঞান ফিরে পেয়ে সবিতা প্রথমে কিছুটা ভয় পায়, কারণ তার পাশে কেউ পরিচিত ছিল না। কিন্তু সে চমকে যায় যখন দেখে যে অচেনা সেই মা-মেয়ে খুব যত্ন করে তার সেবা করছে।

তারা জানায়—

– “আপনার নাম আমরা জানি না, কিন্তু আপনার মুখে আত্মবিশ্বাস ছিল, আর আপনার ব্যাগে পাওয়া ফাইলগুলোতে লেখা কিছু কথায় আমরা খুব অনুপ্রাণিত হয়েছি।”

সবিতার চোখে পানি চলে আসে। এই প্রথমবার সে বুঝতে পারে, তার কাজ কতদূর ছড়িয়ে পড়েছে।

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে সবিতার মনে পড়ে তার ছোটবেলার কথা। বাবার কড়া শাসন, মায়ের গলা টিপে রাখা দুঃখ, বড় বোন আমেনার ঝাড়ি, আর সেই নিঃসঙ্গ আঙ্গিনায় বসে থাকাটা। সে বুঝতে পারে, শৈশব থেকে এখন পর্যন্ত সে শুধু ভালবাসার জন্য ছুটেছে। অথচ জীবন তাকে বারবার আত্মনির্ভরশীলতা শেখাতে চেয়েছে।

সবিতা এবার সিদ্ধান্ত নেয়, সে কেবল অন্যকে পরিবর্তনের কথা বলবে না, নিজের যত্নও নেবে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে সে কয়েক দিনের জন্য নিজেকে সময় দেয়।

সে এক নির্জন কফি শপে গিয়ে ডায়েরিতে লিখে—

– “আমি সবিতা, আমি একা হলেও অসম্পূর্ণ নই। আমার জীবন, আমার যুদ্ধ, আমার ভালোবাসা—সবটাই আমি নিজে গড়ে নিচ্ছি। যারা পাশে থাকবে তারা সম্মান নিয়ে থাকবে, আর যারা নয়—তাদের জায়গা জীবনে নেই।”

সবিতা এখন শুধু একটি নাম নয়, একটি আন্দোলন। নারীদের সম্মান, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং আত্মবিশ্বাসের প্রতীক হয়ে উঠেছে সে।

চলবে_______