Sunday, August 3, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 8



মায়ের কথা পর্ব-০১

0

#মায়ের_কথা
সূচনা পর্ব
#সাবাব_খান

নানা বাড়িতে কো’রবানির মাংস চু’রি হলো। দায় এসে পড়লো আমার মায়ের উপর। আমাদের বাড়িটা নানা বাড়ির পাশেই। আসা-যাওয়াও খুব বেশি। কিন্তু বিত্ত,বৈভবে ব্যবধান আকাশ-পাতাল। মামারা অনেক বড়লোক। বিশাল ব্যবসা তাদের বাজারে। টাকা পয়সার তেমন কোনো কমতিই নেই। অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনও বড়লোক। গরিব বলতে আমরাই। তাই কোনো কিছু ঘটলেই দোষ হয় আমাদের।

আমরাও ভালোই অবস্থাপন্ন ছিলাম। আব্বা চাকরি করতেন থানার হেড পোস্টমাস্টার হিসেবে; সরকারি চাকরি। কিন্তু এক দুর্ঘটনায় আব্বা মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন। মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলেন। তখন চাকরির বয়স খুব বেশি দিন ছিল না। এককালীন যা টাকা পেয়েছে বেশিরভাগই খরচ হয়েছে আব্বার চিকিৎসার পেছনে। পেনশনও খুব কমই পাচ্ছে। অনেক জমি-জমা আছে আমাদের। কিন্তু চাচারা অনেক ঠকায়। জমি-জমা দেখাশোনা করেন চাচারা। খুব সামান্য টাকা তুলে দেন আমাদের হাতে। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর ধরে।

গতকাল কো’রবানির ঈদ ছিলো। বড় একটি গ’রু কো’রবানি দিয়েছিলেন তিন মামা মিলে। আজ আমরা এসেছি নানা বাড়িতে। আরও অতিথি এসেছে এখানে। আমার অন্যান্য খালারাও এসেছে। নানা বাড়িতে অন্যান্য মেহমানদের যেরকম দাম দেয়া হয় আমাদেরকে সেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। এটা তো সেই ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি।

আজ ঘটেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন ঘটনা। কিছুক্ষণ আগে দু’দুটো খা’সী কো’রবানি দিয়েছে মামারা। গরিবদেরকে ভা’গেরটা দিয়ে মাংস নিয়ে এসেছে বাড়িতে। কিন্তু এক পাতিল মাংস নাকি গায়েব হয়ে গেছে। এখন দায় এসেছে আমার মায়ের উপর। বড় মামি তো সবার মাঝে দাঁড়িয়েই আমার মায়ের কথা বললেন, ‘মনিরার স্বামী তো সবসময় ভালো-মন্দ খাইতে চায়। ওই চু’রি করছে খা’সীর মাংস।’

আমার মায়ের নাম মনিরা। ছল ছল চোখে মা জবাব দিলেন, ‘দেখেন বড় ভাবি, আমি গরিব হইতে পারি। কিন্তু আমিও কো’রবানি দেই। এইবারও দিছি। ফ্রিজে গ’রুর মাংস আছে আমার। আমি তো ঐ মাংসই খাওয়াইতে পারমু আমার স্বামীরে! চু’রি করতে যাইমু ক্যান?’

‘চুপ কর তো! সবসময়ই এই বাড়ির জিনিসের দিকে তোর নজর! তোরে না দিয়া কি আমি কিছু খাই? তারপরও চু’রি কইরা আমার বউর সামনে অপমান করোস ক্যান?’–মা’কে ধ’মকিয়ে বললেন বড় মামা। মেহমানসহ বাড়ির অন্যান্য লোকও তাদের সাথেই সায় দিচ্ছিল। কারণ তারা সবাই বড়লোক। গরীব শুধুই আমরাই। তাই সব দোষ আমাদেরই। আমি ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেছি। ভালো একটা ভার্সিটিতে চান্স পাবার জন্য কোচিং করছি। আমার সহ্য হলো না মায়ের উপরে দেয়া এই অপবাদ। বারবার মাকে অপবাদ দিয়েছে ওরা। কেউ চায় না আমরা এই বাড়িতে আসি। মা’কেই মানাতে পারি না। দৌড়ে দৌড়ে চলে আসে বাপের বাড়িতে। ওরাও দায় এড়াতে বিভিন্ন প্রোগ্রামে দাওয়াত দেয় ঠিকই। কিন্তু সব মেহমানের সাথে বসিয়ে খাওয়ায় না। সবার শেষে যা থাকে তাই খেতে দেয়। কত বড় যেন বোঝা আমরা!

জীবনে কোনো কিছুতেই আমরা কখনো সাহায্য নেই নি নানা বাড়ি থেকে। আজ ভরা বাড়িতে তাদের অন্যায় অপবাদে চুপ করে থাকবো কেন? আমিও সমান জোর গলায় জবাব দিলাম, ‘কি প্রমাণ আছে যে আমার মায় চু’রি করছে?’
‘তোর মা’র এই বাড়িরটা না খাইলে খাওন হজম হয় না।’–বড় মামী জবাব দিলেন।

‘আমি এসব জিজ্ঞেস করি নাই! আমি জানতে চাইছি কি প্রমাণ আছে যে আমার মায় আজকে খা’সীর মাংস চু’রি করছে?’

‘ তোগো বাড়ির ফ্রিজে যায়া চেক করলেই সব পাওয়া যাইবো!’–বড় মামা বললেন।

‘চলেন তাইলে আমাগো বাড়িতে! ফ্রিজ চেক করবেন!’–আমি চিৎকার করে জবাব দিলাম।

‘আমরা এত ছোট মন-মানসিকতার না! এক পাতিল মাংসের জইন্য ননদের বাড়ির ফ্রিজ চেক করমু! যা হইছে, হইছে! এইবার থাম!’–বড় মামি প্রসঙ্গ এড়াতে বললেন।

‘কত বড় মন-মানসিকতা আপনার! এতো সাধু সাধু কথা বলছেন এখন! আপনি নিজে প্রমাণ করবেন যে আমার মা চো’র! প্রমাণ করতে পারলে আমার মায়ের বিচার হবে! অন্যথায় আপনার বিচার হবে!’

‘কত বড় সাহস রে তোর? আমার বাড়িতে দাঁড়ায়া তোর বড় মামির বিচার করতে চাস! সব কথা ভুইল্যা গেছোস নাকি? এই বাড়িতে আসলে তোর বড় মামিই কিন্তু তোগোরে সবকিছু খাওয়ায়!’–বড় মামা চেঁচিয়ে ধ’মকের সুরে বললেন।

‘হ্যাঁ খুব খাওয়াইছে তো! তার চেয়ে বেশি চোরের অপবাদ দিছে আপনার বউ!’

মা এসে আমার গালে ক’ষিয়ে চ’ড় দিলেন, ‘তোর বড় মামার মুখে মুখে তর্ক করোস! শরম লাগে না?’

বুঝলাম মা চাচ্ছে না আমি তাদের সাথে তর্কে জড়াই। ভাই-বোনসহ মাকে নিয়ে আমি চলে এলাম নিজ বাড়িতে। আব্বা বাড়িতেই ছিলেন। বাড়ি এসে দেখি কিভাবে কিভাবে যেন আমার দাদা বাড়িতে খবর চলে এসেছে; আম্মা চু’রি করছে। এগুলো সব নানা বাড়ির লোকদেরই কান্ড। হয়তো কোন ভাবে জানিয়ে দিয়েছে। এখানে চাচা,চাচি,ফুফুসহ বাড়ির মানুষ সবাই আম্মাকে নিয়ে হাসছে। আম্মা কোনো কর্ণপাত করলো না। শুধু বললো, ‘চুপ কইরা থাক! সবকিছুরই একদিন বিচার হইবো!’

এরমধ্যে পেরিয়ে গেছে বেশ কয়েকটি মাস। কিছুদিন পরে আবার কোরবানির ঈদ। আমার মাকে চো’র সাব্যস্ত করেছিলেন বড় মামী। তার জীবনে ঘটেছে বিচিত্র ঘটনা।

চলবে

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৫২

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব-৫২
হলুদ গোলাপগুলো টকটকে লাল রক্তে রঞ্জিত হয়ে রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আনন্দিত সময়টা যেনো মুহূর্তেই অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে গেলো৷ নয়নার সাদা হাতটাও তাজ রক্তে মেখে আছে। দানবের মত গাড়িটা মূহুর্তেই জলজ্যান্ত মানুষটাকে রক্তাক্ত করে ছুটে চলে গেছে।
“নয়না চিৎকার করার শক্তি টুকুও পাচ্ছে না। হঠাৎ খেয়াল করলো রাস্তার অপর পাশে জিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। সামনে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে গেলো! তাহলে এটা কে? আমি কি ভ্রমে আছি!
” ততক্ষণে পথচারীদের ভীড় জমে গেলো৷ রাস্তায় ভীড় জামানো লোকগুলো আহত ব্যাক্তিকে ধরে গাড়িতে উঠিয়ে দিলো৷ নয়না গাড়িতে বসে বলে,কে আপনি?
“জিয়ান নয়নার হাত চেপে ধরে বলে,আমি তোমার হ্যাসবেন্ড।
” তাহলে উনি কে?
“নয়না। ও জাহিন। জানিনা হুট করে কোথা থেকে আসলো৷ ও না আসলে ওর জায়গায় আমি থাকতাম।
” জাহিন ভাইয়া এখানে কি করে আসলো!
“এসব এখন ভাবার সময় না। হসপিটালে যাই জাহিনের জ্ঞান ফিরুক তখন জেনে নেবো।
” হসপিটালের করিডোর পায়চারি করছে নাজিম চৌধুরী, জিয়ান, মিতা বেগম, মেহনুর, নয়না৷
“ডাক্তার ইমার্জেন্সি রুম থেকে বের হয়ে বলল,তেমন মেজর কোন সমস্যা হয়নি তবে বা’হাতে ফ্যাকচার হয়েছে আমরা প্লাস্টার করে দিয়েছি এক দেড়মাস লাগবে ঠিক হতে।
” নাজিম চৌধুরী বলল, জাহিন তোদের সাথে কি করে আসলো?
“বাবা আমি বুঝতে পারছিনা জাহিন ওই স্থানে কিভাবে উপস্থিত হলো! এক্সিডেন্ট হওয়ার কথা ছিলো আমার।
” তোমার মাথায় কোন কমন সেন্স নেই? মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে কি করছিলে?
“রাস্তা ফাঁকা ছিলো হুট করে কোথা থেকে বাসটা চলে আসলো বুঝতে পারছি না।
” মহাসড়ক ফাঁকা থাকে? মহাসড়কে সারারাত দূর পাল্লার বাস যাতায়াত করে৷ এতোটুকু ম্যাচিউরিটি নেই নাকি! যাও বৌমাকে নিয়ে বাসায় যাও। আগামীকাল তোমার ফ্লাইট বাসায় যেয়ে রেস্ট নাও।
“জিয়ান কিছু না বলে নয়নাকে নিয়ে বের হয়ে আসলো৷
” নয়না জিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে৷
“এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
” আপনি সত্যি পাইলট জিয়ান রেজা চৌধুরী? না মানে আমি কনফিউজড।
“মাথার স্ক্রু-ঢিলা। দেখো এসব বিরক্ত লাগছে। বাচ্চাদের মত বিহেভিয়ার পরিস্থিতি ও বুঝো না নাকি?
” নয়না মন খারাপ করে বলে,স্যরি আপনার মন খারাপের কারন হতে চাইনি৷ আমি সত্যিই কনফিউজড।
“জিয়ান নয়নার হাত ধরে গাড়িতে এসে বসলো৷ মনে মনে বললো আজ তোর রক্ষা নেই জিয়ান। এই অভিমান তুই কিভাবে সামলাবি।
” পুরো রাস্তা নয়না কোন কথা বললো না। আমাবস্যার রাতের মতই তার মনটা কালো হয়ে গেছে অভিমানের মেঘে। শাড়ীর বিভিন্ন জায়গায় রক্তের ছিটা লেগে আছে।
গাড়ি চৌধুরী ম্যানশনে থামতেই নয়না গাড়ি থেকে বের হয়ে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো। কাভার্ড থেকে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে৷ জিয়ান মাথায় আঙুল ঘষে বলে,নিব্বি বৌ পরিস্থিতি ও বুঝে না।এখন আমি এই অভিমানের মেঘ কিভাবে কাটাবো?জিয়ান রুমে এসে দেখে নয়না নেই। এদিক সেদিক উঁকি দিয়ে ডেকে উঠলো,সুনয়না, সুনয়না৷ কোন উত্তর না পেয়ে বারান্দায় খুঁজতে লাগলো। হুট করে মনে হলো ওয়াশরুমের কথা। জিয়ান ওয়াশরুমের সামনে এসে বলে, জান শুনছো… স্যরি জান।
” নয়না ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সোজা বেডে এসে বসলো। ড্রেসিং টেবিল থেকে চিরুনি নিয়ে মাথা আঁচড়াতে লাগলো।
“জিয়ান নয়নার পাশে এসে বসলো৷
“নয়না সরে বসলো৷ জিয়ান আরেকটু পাশ ঘেঁষে বসলো,নয়না আরেকটু সরে বসলো। এভাবে সরতে সরতে খাট থেকে পরে যাওয়ার উপক্রম হলো৷ জিয়ান নয়নার হাত ধরে টান দিলো৷ নয়না সোজা এসে জিয়ানের বুকে পরলো৷
” নয়না সরে আসার জন্য মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলো।
“জিয়ান নয়নাকে শক্ত করে নিজের সাথে চেপে ধরে রাখলো। শান্ত কন্ঠে বলল,আমার ওভাবে রিয়েক্ট করা উচিৎ হয়নি৷ আমার বোঝা উচিৎ ছিলো তোমার ভুল হতেই পারে। আমরা দুজন দেখতে পুরো সেম। বাবা,মা ছাড়া আমাদের মধ্যে কেউ পার্থক্য করতে পারে না। স্যরি জান। প্লিজ রাগ করে থেকো না।তোমার মন খারাপ থাকলে আমার ভালো লাগে না৷
” নয়না ঠুকরে কেঁদে উঠলো।
“জিয়ান নয়নার থুতনি ধরে নয়নার চোখের পানি মুছিয়া দিয়ে বলে,এতো কান্না কিভাবে আসে? না মানে মেয়ে মানুষ এতো কান্না কি করে করতে পারে৷ উপসসস স্যরি সব দোষ আমার কান ধরে স্যরি বলবো?
” নয়না কিছু বললো না।
“কিছু তো বলো। বৌ কথা কও।
” নয়না মুখ খুললো আপনি আমাকে বাসায় দিয়ে আসুন। থাকবো না এখানে আমি।
“জিয়ান নয়নাকে কোলে তুলে নিলো।
” নামান আমাকে যাবো না আপনার সাথে।
“জিয়ান বারান্দায় এসে বসলো। নয়নার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,ঝগড়া, রাগ অভিমান যত যাহোক বাপের বাড়ি যাবো এসব চলবে না। তুমি আমার আমার কাছেই থাকতে হবে।
” নয়না বলল,আমি বসবো।
“গলা জড়িয়ে ধরে চুমু দিয়ে বলো জাান আমি বসবো।
” বলবো না৷
“বুঝেছি কোল ছেড়ে নামতে ইচ্ছে করছে না৷
” নয়না অভিমানী সুরে বলল,আমি তো বাচ্চা আমি তো পরিস্থিতি বুঝি না৷ আমি তো পাগল। আপনার মত পাইলট আমার মত পাগলের সাথে মানায় না৷ আপনি আমার চেয়ে বেটার কাউকে ডিজার্ভ করেন৷
“ইশশ আমার রাগী বৌটাকে দারুন কিউট লাগছে। রাগলেেও কাউকে এতো মায়াবী লাগে জানা ছিলো নাতো। শুনো বৌ ভুল আমি করেছি এবার শাস্তি হিসেবে হয়ত ফ্যানের সাথে ঝুলে পরবো৷ নয়ত এই বারান্দা থেকে লাফ দিবো। আমি পৃথিবী ছেড়ে দেবো প্রিয়া তুমি যদি রাগ না ভাঙ্গো। জিয়ান নয়নাকে চেয়ারে বসিয়ে বলে,বৌয়ের অভিমান ভাঙ্গাতে পারি না আমি আবার কিসের হ্যাসবেন্ড। রাখবো না এ জীবন দিয়ে দিলাম কিন্তু বিদায় পৃথিবী। বিদায় বৌ। জিয়ান নিজের এক পা তুলে দিলে রেলিংয়ে।
” নয়না জিয়ানের হাত ধরে বলে,আমিও ঝাপ দিবো আপনার সাথে।
“ভাঙবা তবুও মচকাবা না? বললাম তো জান আর কখনো এমন হবে না। স্যরি। এই কান ধরছি।
” নয়না জিয়ানকে জড়িয়ে ধরে বলে,আমার সাথে একদম রাগ চলবে না৷
“আচ্চা স্যরি আর কখনো হবে না।
” মনে থাকবে তো?
“হু মনে থাকবে। এবার তো হাসো।
” আমি বুঝলাম না জাহিন ভাইয়া ওই সময় ওই স্থানে কি করে আসলো!
“হয়ত ঘুরতে বের হয়েছিলো। বাদ দাও জান৷ শুনো তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
” সারপ্রাইজ!কিসের সারপ্রাইজ বলো।
“এখন বলা যাবে না৷ সারপ্রাইজ বলে দিলে সারপ্রাইজ থাকে নাকি।
” নয়না মনের মধ্যে তবুও ঘুরে ফিরে একি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। জাহিন কি করে আসলো! কেনোই বা আসলো।
“কি ভাবছো?
” প্রচুর ঘুম পাচ্ছে?
“এভাবে ঘুমিয়ে যাবে আমাকে ছেড়ে?
” বেডে আসো তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো৷
“আমাকে জড়িয়ে ধরলে তো তোমাকে ঘুমাতে দিবো না৷ কাল চলে যাবো বুঝতেই পারছো কুচকুচ হোতাহ্যা ইয়ার৷
” উঁহু এখন একদম এসব চলবে না। ঘুমাবো মানে ঘুমাবো।
“নিষ্টুর বৌ বরের মন বোঝে না।
“তোমার মন বুঝলে আর ঘুম হবে না।
” একটু সেক্রিফাইস করো না বৌ।
“নয়না হাই তুলতে তুলতে বলে,নো সেক্রিফাইস অনলি ঘুমফাইস। টাটা ডার্লিং বলেই রুমের দিকে আগ্রসর হলো৷
” জিয়ান নয়নার হাত ধরে বলে,আর কিছু না দাও একটা কিসমিস দাও বেব।
“নো কিসমিস ডিয়ার হাবি।
” জিয়ার নয়নার হাত ধরে ডান দিয়ে নিজের কাছে এনে অধরে অধর মিলিয়ে দিলো।
“নয়না জিয়ানের ঠোঁটে দাঁত বসিয়ে দিলো। জিয়ান নয়নার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে বলে এটা কি হলো? জংলি বিল্লি।
” নয়না রুমে ঢুকে বলো ডু নট ডিস্টার্ব।
🌿 জাহিন আবার পিছু করলো জিয়ান আর নয়নার। বাইক একপাশে রেখে ধীরে ধীরে ফলো করে এগোচ্ছে জাহিন। হঠাৎ গাড়ি দেখে দৌঁড়ে যেয়ে জিয়ানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। গাড়িটা জাহিনের বা’পাশ ঘেঁষে চলে গেলো। মাথা ফেটে রক্ত গলগল করে পরতে লাগলো।পা’ও খানিটা কেটে রক্ত বের হচ্ছে। জাহিন মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। চোখ বন্ধ হওয়ার আগে জাহিনের কানে আসলো নয়নার কন্ঠ। জিয়ান বলে চিৎকার করছে নয়না।
#চলবে

সন্ধ্যাবাতি পর্ব-০৪ এবং শেষ পর্ব

0

#সন্ধ্যাবাতি

#পর্বঃ০৪/অন্তিম

#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ

অয়ন সম্পূর্ণ কথাটা বলার আগেই আচমকা অধরা চলে আসলো অয়নের রুমে। অধরাকে নিজের রুমে দেখে অয়নের খানেক অবাক লাগলো। এতো তারাতাড়ি অধরা কি করে এখানে উপস্থিত হলো? সেটাই অয়নের বোধগম্য হচ্ছে না। অয়ন অধরার দিকে দৃষ্টিপাত করতেই ফারিয়া অধরাকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। অধরা ফারিয়াকে নিজের বুকের উপর থেকে সরিয়ে অয়নের সামনে এগিয়ে এসে সজোরে অয়নের গালে একটা থাপ্পড় মারলো। অয়ন থাপ্পড় খেয়ে অধরার দিকে তাকাতেই অধরা রাগে গজগজ করতে করতে অয়ন কে বলল

— ছিঃ এতোটা নিচে নেমে গেছো তুমি! আরে এতোই প্রয়োজন পড়লে বিয়ে করে নিতে। তবুও এটা করলে কেনো?

অধরার কথাটা শুনে অয়ন শব্দ করে হেসে ফেলল। অয়ন হেসে হেসে অধরাকে বলল

— পাগল হয়ে গেছো তুমি? অয়ন কে চিনতে পারোনি এখনো। এই মেয়ের সাথে কিছু করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নেই।

— যদি ইচ্ছে না থাকে তবে এসব কি? এই ছবি গুলো কি করে আসলো?

অধরার ফোনের দিকে তাকিয়ে অয়ন দেখতে পেলো ফারিয়ার সাথে অয়নের বেশ ক্লোজ ছবি আছে এখানে। অয়ন ছবি গুলো দেখার পর মোটেও অবাক হলো না। কারন অয়ন এতোক্ষণে ঠিক বুঝতে পেরে গেছে যে এই সব কিছু ফারিয়ার চাল। ফারিয়া অয়নকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। তবে অয়ন কে ফাঁসানো এতোটাই সহজ নাকি? অয়ন তার রুমের দেয়ালে লাগানো নিজের ছবির পেছন থেকে একটা স্পাই ক্যাম বের করলো। আর সেটার ফুটেজ অধরাকে দেখালো। অধরা স্পাই ক্যামের ফুটেজ দেখার পর একদম থ হয়ে গেলো। অয়ন ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল

— আমি তো তোমাকে নিজের বন্ধু ভেবে ছিলাম। অধরাকে কষ্ট দেয়ার জন্য আমি তোমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব ও দিয়ে ছিলাম। কিন্তু তুমি আসলে এতোটা নিচ! সেটা আমি কখনো ভাবতে ও পারিনি।

অয়নের কথাটা শেষ হবার সাথে সাথে ফারিয়া অয়নের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে অয়নের পা ধরে কান্না করতে লাগলো। আর অয়ন কে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— সরি অয়ন। আমি আসলে তোমাকে আপন করার জন্য এসব কাজ করেছি। আমাকে ক্ষমা করে দাও তুমি। আমার দ্বারা আর কখনো এমন….!

ফারিয়াকে সম্পূর্ণ কথাটা বলতে দিলো না অয়ন। অয়ন ফারিয়াকে থামিয়ে দিয়ে একটা ঝাড়ি দিয়ে বলল

— শার্ট আপ। একটাও কথা বলবে না তুমি। অয়ন চৌধুরীর কাছে প্রতারণার কোনো ক্ষমা নেই। আজকের পর থেকে আর কখনো আমার চোখের সামনে আসবে না। বেরিয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে।

অয়নের ঝাড়ি খেয়ে ফারিয়া আর কোনো কথা বলল না। আজ ফারিয়ার সব প্লান ফাঁস হয়ে গেছে অয়নের সামনে। অয়নকে আর সে বোকা বানাতে পারবে না। ফারিয়া অয়নের কথা মতো অয়নের রুমে থেকে বেরিয়ে গেলো। ফারিয়া অয়নের রুমে থেকে বেরিয়ে যেতেই অধরা অয়নের দিকে এগিয়ে আসলো। অয়ন অধরাকে তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে খানেক চিৎকার করে বলে উঠলো

— এই ওখানেই দাঁড়াও। একদম আমার কাছে আসার চেষ্টা করবে না।

অয়নের কথা মতো অধরা ঠাঁই দাঁড়িয়ে পড়লো। অধরা ঠাঁই দাঁড়িয়ে অয়ন কে উদ্দেশ্য করে মলিন কন্ঠে বলল

— অয়ন সরি। আমি আসলে বুঝতে পারিনি। ভেবেছি ফারিয়া একজন মেয়ে হয়ে নিজের চরিত্র নিয়ে মিথ্যাচার তো করবে না। তাই আমি ওর কথা বিশ্বাস করে….!

— হয়েছে তো বিশ্বাস! ভাগ্য ভালো স্পাই ক্যাম ছিলো। তা না হলে আজ তো আমার লেগে যেতো।

— হুম লাগবেই তো। নিজের স্ত্রীকে নিজের কাছ থেকে দূরে রাখলে নানা ধরনের বিপদ ঠিক চলে আসবেই। এটাই স্বাভাবিক।

অধরার কথাটা শুনে অয়নের টনক নড়ে উঠে। অয়ন অধরার দিকে তাকিয়ে বলে

— কি বললে তুমি? আমি ঠিক শুনতে পাইনি। আবার একটু বলো তো!

— কি আবার যা বলেছি সেটাই। আমি তোমাকে ছেড়ে গেছি কারন আমি জানি তোমাকে কমফোর্ট জোনে রাখলে তুমি কখনো কিছু করতে পারবে না। তাই আমি তোমার মনের আগুন জ্বালাতে তোমাকে ছেড়ে গেছি। আমি চাই তোমাকে সফল দেখতে। তোমার ব্যর্থতা গুলো আমাকে লোকের সামনে ছোট হতে বাধ্য করে। তাই আমি এমনটা করেছি অয়ন।

অধরার কথা শোনার পর অয়ন কি বলবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। অধরা অয়নের দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। অয়ন মিনিট খানেক সময় নিরব থাকার পর অধরাকে উদ্দেশ্য করে খানেক শক্ত গলায় বলল

— হয়ে গেছে তোমার? এবার আসতে পারো।

— অয়ন আমি ভূল করেছি। আমার উচিত ছিলো তোমার পাশে থাকা। কিন্তু তোমাকে সফল করার জন্য আমি এমনটা করেছি। আমি তোমাকে ঠকাইনি। আমার গর্ভে তোমার সন্তান অয়ন। আমি তোমার কাছে হাত জোর….!

অধরা কথা গুলো বলতে বলতে কান্না করতে লাগলো। অধরা কান্না করার এক পর্যায়ে আর নিজের জ্ঞানে থাকতে পারলো না। অধরা সেন্সলেস হয়ে মাটিতে পড়ে যেতে নিলো। অধরা মাটিতে পড়ে যেতে নিতেই অয়ন পেছন ফিরে তাকায় আর দৌড়ে অধরার দিকে এগিয়ে যায়। অয়ন অধরার দিকে এগিয়ে গিয়ে অধরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। অধরাকে নিজের কোলে রেখে অয়ন অধরাকে ডাকতে লাগলো। এমনিতেই অধরা প্রেগন্যান্ট। তার উপর এতো প্রেশার! সব কিছু মিলিয়ে অধরা আর সামলাতে পারেনি নিজেকে। অয়ন অধরাকে নিজের কোলে তুলে নিয়ে সোজা হসপিটালে চলে গেলো। অয়ন অধরাকে নিয়ে হসপিটালে পৌঁছে অধরাকে সোজা নিয়ে গেলো ডক্টর দেখাতে। ডক্টর অধরার অবস্থা দেখে বেশ খানেক সময় অধরাকে পর্যবেক্ষণ করার পর অয়নকে জানালো অধরা এখন আউট অফ ডেঞ্জার আছে। কোনো সমস্যা নেই। অধরার জ্ঞান ফিরতেই অধরা দেখতে পেলো অয়ন তার পাশে বসে তার হাত শক্ত করে ধরে বসে আছে। নিজের স্বামীকে নিজের পাশে দেখার পর অধরা মুচকি হেসে অয়ন কে উদ্দেশ্য করে বলল

— অভিমান কি শেষ হয়েছে? নাকি এই অভিমানটা সারাটা জীবন বুকে পুষতে থাকবে?

অধরার কথাটা কানে এসে লাগতেই অয়নের ঘোর কাটে। অয়ন অধরার মুখের দিকে তাকিয়ে কোনো কথা না বলে অধরাকে জড়িয়ে ধরলো। অয়ন অধরাকে জড়িয়ে ধরতেই অধরা ও অয়ন কে জড়িয়ে ধরলো ভালোবাসা সত্যি অদ্ভুত। ছোট ছোট অভিমান মানুষের মনের মাঝে ভালোবাসাকে একটা চাদরের মতো ডেকে রাখে। অভিমান করা ভালো। তবে অতিরিক্ত নয়। কারন অতিরিক্ত অভিমান প্রতিটা সুন্দর সম্পর্ক কে নষ্ট করে ফেলে। অতঃপর আর কি! অয়ন অধরাকে ক্ষমা করে দিয়ে সারা জীবনের জন্য অধরার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিলো। অভিমানের চাদর সরে যেতেই অয়ন আর অধরা এক হয়ে গেলো তাদের ভালোবাসায়।

————————— সমাপ্ত———–

সন্ধ্যাবাতি পর্ব-০৩

0

#সন্ধ্যাবাতি

#পর্বঃ০৩

#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ

কেউ একজন অয়নের রুমে চলে আসে আর অয়ন কে টেবিলের উপর এমন ভাবে বসে থাকতে দেখে চিৎকার করে উঠে। অয়ন যদিও নিজের হুসে আছে। তবে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছন ফিরে তাকানোর মতো শক্তি অয়নের নেই। অয়ন তাই ঠাই মাথা নিচু করে বসে আছে। এই দিকে ফারিয়া অয়নের এমন অবস্থা দেখতে পেয়ে দ্রুত অয়নের কাছে এগিয়ে আসলো। আর নিজের বুকের উপর থাকা ওড়না টা টেনে নিয়ে অয়নের হাত শক্ত করে বেধে নিলো। ফারিয়া অয়নের হাত ওড়না দিয়ে বেঁধে অয়ন কে উদ্দেশ্য করে ভিশন রকম বিচলিত কন্ঠে বলে উঠলো

— অয়ন এসব কি করে হলো? তোমার হাত কি করে কেটে গেছে? সত্যি করে বলো আমায়!

ফারিয়ার কথা গুলো অয়নের কান অব্দি হয়তো পৌঁছে গেছে কিন্তু অয়নের ব্রেন অব্দি যায়নি। অয়ন অতিরিক্ত নেশা করে আছে। তাই অয়নের কোনো কথাই কানে যাচ্ছে না। অয়ন নিশ্চুপ হয়ে নিজের জায়গায় বসে থাকলো। ফারিয়া অয়নকে কোনো কথা বলতে না দেখে অয়ন কে কোনো মতে নিজের বাহুর সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে অয়ন কে ধরে তার বিছানার দিকে নিয়ে যেতে চেষ্টা করলো। অয়ন ফারিয়ার থেকে তুলনামূলক ভারী। তাই অয়নকে বিছানায় নিয়ে যেতে বেশ বেগ পেতে হলো ফারিয়াকে। ফারিয়া অয়নকে তার বিছানায় কোনো মতে শুইয়ে দিয়ে ডক্টরকে কল করলো। ফারিয়া ডক্টর কল করার প্রায় মিনিট দশেক সময় অতিবাহিত হতেই ডক্টর অয়নের রুমে চলে আসলো। ডক্টর অয়নের রুমে এসে অয়নের চিকিৎসা শুরু করলো। অয়নের হাতে ভালো করে ব্যান্ডেজ করে দিতেই ফারিয়া ডক্টরকে জিজ্ঞেস করলো

— ডক্টর অয়নের হাতের কোনো সমস্যা হবে না তো? অনেকটা কেটে গেছে। সব ঠিক থাকবে তো?

ডক্টর ফারিয়ার প্রশ্নের জবাবে বলল

— আপনি দয়া করে শান্ত হয়ে যান। আমাকে আগে বলুন এতো বড় আঘাত ওনার হাতে কি করে লাগলো? মানে ইচ্ছে করে এমনটা করেছে সেটা তো মনে হচ্ছে না আমার!

— ডক্টর আমি জানি না কি করে হয়েছে! আপনি প্লিজ কিছু একটা করুন।

ডক্টর ফারিয়ার কথা শুনে খানেক সময় ফারিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে কিছু একটা আপন মনে চিন্তা করলো। অতঃপর ফারিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল

— কেমন স্ত্রী হয়েছেন নিজের স্বামীর খেয়াল রাখতে পারেন না! শুনুন আপনার স্বামী অতিরিক্ত মদ্যপান করেছে। এমনটা যেনো আর কখনো না করে সেই দিকে খেয়াল রাখুন। তা না হলে আপনার স্বামীর পাগলামি আরো বেড়ে যেতে পারে। তারপর আপনাদেরই বিপদ বাড়বে।

— জ্বি আমি খেয়াল রাখবো।

ডক্টর কিছু মেডিসিন লিখে দিয়ে অয়নের রুমে থেকে বেরিয়ে গেলো। ডক্টর অয়নের রুমে থেকে বেরিয়ে যেতেই ফারিয়া অয়নের পাশে গিয়ে বসলো। ফারিয়া অয়নের পাশে গিয়ে বসে আলতো করে অয়নের চুলের উপর নিজের হাত রেখে অয়ন কে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— কেনো এমন করে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো অয়ন? যেই মেয়েটা তোমার ব্যর্থতার দিনে তোমাকে ছেড়ে গেছে। তার কথা ভেবে নিজেকে একটু একটু করে শেষ করে দেয়ার কোনো মানে হয় বলো? আমিও তো তোমাকে ভালোবাসি। তোমার সাথে সারাটা জীবন থাকতে চাই। আমাকে কি একবার আপন করে নিতে পারো না তুমি?

ফারিয়া কথা গুলো বলতে বলতে অয়নের কপালের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। ফারিয়া অয়নের কপালের দিকে এগিয়ে এসে আলতো করে নিজের ঠোঁটের উষ্ণ পরশ অয়নের কপালের এঁকে দিলো। ফারিয়া অয়নের কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে অয়নের বুকের উপর নিজের মাথাটা রেখে চোখ বন্ধ করে ডক্টরের বলে যাওয়া কথাটা চিন্তা করতে লাগলো। ডক্টর যখন ফারিয়াকে অয়নের স্ত্রী মনে করেছে। তখন ফারিয়ার মনের মাঝে এক অদ্ভুত প্রশান্তি হয়ে গিয়ে ছিলো। এই প্রশান্তিটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ফারিয়া কিছুক্ষণের জন্য একটাই বিশ্বাস করতে শুরু করে ছিলো যে সে নিজেই অয়নের স্ত্রী। ফারিয়া আপন মনে এসব ছাই পাশ কথা চিন্তা করতেই আচমকা ফারিয়ার পিঠের উপর অয়নের হাত চলে আসলো। অয়নের হাত ফারিয়ার পিঠের উপর চলে আসতেই ফারিয়া খানেক চমকে উঠলো। এই সময়ে অয়নের এই স্পর্শ ফারিয়ার সারা শরীরে শিহরণ জাগিয়ে তুলল। ফারিয়া অয়নের মুখের দিকে দৃষ্টিপাত করতেই অয়ন ফিসফিস করে বলতে লাগলো

— অধরা আমি তোমাকে পাবার জন্য নিজের সব কিছু ত্যাগ করতে পারি। আমার এই সফলতা চাই না। আমার তোমার ভালোবাসা চাই। আমি তোমার ভালোবাসায় আসক্ত হয়ে গেছি অধরা। আমি কখনো তোমাকে ভূলতে পারবো না।

অয়নের মুখে এমন কথা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না ফারিয়া। এতোক্ষণ আপন মনে অয়ন কে নিয়ে কত সব স্বপ্ন বোনা শুরু করে দিয়ে ছিলো নিজের মনের মাঝে। সেই সব স্বপ্ন যেনো অয়নের একটা কথায় ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেলো। অয়নের মুখে অধরার নাম একদমই সহ্য হয় না ফারিয়ার। ফারিয়া অয়নের বুকের উপর থেকে নিজের মাথাটা তুলে নিতে চেষ্টা করতেই অয়ন আরো শক্ত ভাবে ফারিয়াকে জড়িয়ে ধরলো। ফারিয়া অয়নের এমন আচরণে ভিশন রকম বিচলিত হয়ে পড়েছে। ফারিয়া বুঝতে পারছে না যে তার এখন কি করা উচিত। অয়ন তো মদের নেশায় ফারিয়াকে অধরা ভাবতে শুরু করেছে। এই সুযোগ অয়ন কে নিজের ভালোবাসার জালে ফাঁসিয়ে দিয়ে অয়ন কে নিজের আপন করে নেয়া। তা না হলে কখনোই ফারিয়া অয়নকে নিজের আপন করতে পারবে না। ঐ অধরা এসে তার কাছ থেকে তার ভালোবাসার প্রিয় মানুষকে ঠিক কেড়ে নিয়ে যাবে। ফারিয়া আপন মনে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো

— না সেটা আমি কখনো হতে দিবো না। আমি অয়ন কে কখনোই ছাড়বো না। আমি সারাটা জীবন অয়নের হয়ে থাকবো। আর অয়ন শুধু মাত্র আমার হয়ে থাকবে। আমি অধরাকে কোনো ভাবেই আমার থেকে অয়ন কে কেড়ে নিতে দিবো না।

ফারিয়া বিড়বিড় করে কথা গুলো বলতেই অয়ন ফারিয়াকে জড়িয়ে ধরলো। অয়ন ফারিয়াকে জড়িয়ে ধরতেই ফারিয়া দুষ্টু একটা হাসির রেখা নিজের ঠোঁটের উপর একে নিলো। ফারিয়ার মুখে থাকা এক দুষ্টু হাসির পেছনে এক ভয়ংকর প্লান আছে। যেটা অয়ন জানে না। প্রায় মিনিট পাঁচ সময় অয়নের মাথায় মদের নেশা থাকলো। অতঃপর সকল নেশা কেটে গেলো অয়নের। পাঁচ মিনিট পর অয়ন নিজের সকল ঘোর কাটিয়ে ফেলল। আর দুম করে নিজের চোখের পাতা মেলে তাকালো সে। অয়ন নিজের চোখের পাতা মেলে তাকাতেই ফারিয়াকে নিজের বুকের উপর অনুভব করছে পেরে হকচকিয়ে উঠলো আর ফারিয়াকে এক ঝটকায় নিজের বুকের উপর থেকে সরিয়ে দিলো সে। অয়ন ফারিয়াকে নিজের বুক থেকে সরিয়ে দিয়ে প্রশ্ন সূচক কন্ঠে ফারিয়াকে জিজ্ঞেস করলো

— কি ব্যাপার ফারিয়া! তুমি আমার রুমে কেনো? আর এসব নিজের কি অবস্থা করে রেখেছো তুমি?

অয়নের কথাটা শুনে ফারিয়া এক মুহুর্তেই নিজের মুখটা মলিন করে ফেলল। আর অয়ন কে উদ্দেশ্য করে বলল

— আমি কি করেছি? আমার এই অবস্থা তো তুমি নিজেই নিজে হাতে করেছো।

— ওয়াট? পাগল হয়ে গেলো? কি সব কথা বলছো তুমি? আমি তোমাকে…! আচ্ছা এসব বিষয়ে পরে কথা হবে। আগে নিজের জামা কাপড় ঠিক করে নাও।

অয়নের কথা মতো ফারিয়া বিছানা থেকে উঠে পড়ে নিজের জামা ঠিক করে নিলো। ফারিয়া নিজের জামা ঠিক করে নিয়ে মাথা নিচু করে অয়নের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলো। এমন ভাব করছে ফারিয়া যেনো সে কিছুই জানে না। অয়ন ফারিয়াকে নিশ্চুপ দেখে বলল

— ফারিয়া আমি জানি আমাদের মাঝে…..!

অয়ন সম্পূর্ণ কথাটা বলার আগেই আচমকা……..!

চলবে।

সন্ধ্যাবাতি পর্ব-০২

0

#সন্ধ্যাবাতি

#পর্বঃ০২

#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ

অয়ন পেছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পেলো অধরা তার নিজের গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর ফারিয়া অধরার সামনে দাঁড়িয়ে অগ্নি দৃষ্টিতে অধরার দিকে তাকিয়ে আছে। এই দৃশ্যটা দেখার পর অয়নের আর হজম হলো না। অয়ন দৌড়ে ছুটে ফারিয়ার সামনে এসে দাড়িয়ে এতো গুলো লোকের সামনে অয়ন ফারিয়ার গালের উপর পরপর দুটো থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। ফারিয়া নিজেও হয়তো এমন কিছু আশা করেনি। ফারিয়া অয়নের দিকে ছলছল চোখে তাকাতেই অয়ন ফারিয়াকে উদ্দেশ্য করে ভিশন শক্ত গলায় বলল

— তোমার সাহস হলো কি করে অধরার গায়ে হাত তোলার? তুমি জানো না অধরা প্রেগন্যান্ট? ওর গায়ে হাত তোলার অধিকার কে দিয়েছে তোমায়?

অয়নের প্রশ্ন শুনে ফারিয়া কোনো উত্তর দিতে পারলো না। ফারিয়া মাথাটা নিচু করে ফেলল। ফারিয়া মাথা নিচু করে ফেলতেই অধরা হেসে ফেলে অয়ন কে বলল

— এটাই তো আমার প্রাপ্তি। আমি তো এটাই প্রমান করতে চাই অয়ন।

অধরার কথাটা কানে আসতেই অয়নের টনক নড়ে। অয়ন অধরার দিকে দৃষ্টিপাত করে প্রশ্ন সূচক কন্ঠে অধরাকে জিজ্ঞেস করলো

— কি প্রমান করতে চাও? সরি আমি তোমার কথার মানেটা ঠিক বুঝতে পারলাম না। কি প্রমান করার জন্য এখানে এসেছো তুমি?

— আমি এখানে এসেছি এটাই প্রমান করতে যে, তোমার মনের মাঝে এখনো আমার জন্য অনুভূতি বেঁচে আছে। তুমি এখনো আমাকে ভালোবাসো। আমার প্রতি তুমি এখনো দূর্বল।

অধরার কথাটা শুনে অয়ন ভিশন শব্দ করে হেসে ফেলল। অয়নের হাসির শব্দে আশেপাশে থাকা সকল লোকজন অয়নের মুখের দিকে কৌতুহলী চোখে তাকিয়ে আছে। অয়ন হাসতে হাসতে আচমকাই নিজের হাসি বন্ধ করে ফেলল। অয়ন হাসি বন্ধ করে ফেলে অধরার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে দুম করে অধরার হাত ধরে ফেলল সে। অয়ন অধরার হাত ধরে একটা হেঁচকা টান দিয়ে অধরাকে নিজের কাছে টেনে নিলো। অয়ন অধরাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে অধরার মুখের কাছে নিজের মুখটা নিয়ে গেলো। অয়ন অধরার মুখের কাছে নিজের মুখ নিয়ে গিয়ে অধরাকে উদ্দেশ্য করে ফিসফিস করে বলল

— তুমি কি ভেবেছো? এতো বড় প্রতারণা করার পর ও আমার মনের মাঝে তোমার জন্য জায়গা থাকবে? আমার বুকে যেই আঘাত তুমি করেছো! তারপর ও আমি তোমাকে ভালোবাসবো? কি করে ভাবলে তুমি?

— অয়ন আমি যেটাই করেছি তোমার ভালোর জন্য। আমি চেয়েছি…..!

অধরা নিজের কথাটা সম্পূর্ণ বলার আগেই অয়ন একটা ঝাড়ি দিয়ে উঠলো। অয়নের ঝাড়ি খেয়ে অধরা চুপসে গেলো। অয়ন অধরাকে আবার ও বলতে লাগলো

— কথা দিয়ে ছিলে আমায়! সারা জীবন এক সাথে থাকবে। কখনো ছেড়ে যাবে না। সেই কথা তুমি রাখতে পারোনি। আমি কোনো অযুহাত চাই না। তুমি এখুনি আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবে। এটাই আমার ফাইনাল কথা।

— অয়ন আজ তুমি আমাকে বের করে দিতেই পারো। আমি তোমাকে আটকাতে ও আসিনি। তবে একটা কথা বলতে চাই। ভূল মানুষের দ্বারা হয়। আমার ও হয়েছে। একটিবার আমাকে ক্ষমা করে দাও তুমি। প্লিজ! আমি সত্যি….!

— তুমি যাবে নাকি আমি সিকিউরিটি ডাকবো?

— হুম।

* অধরা আর কোনো কথা বলার সুযোগ পেলো না। কারন অয়ন তাকে সেই সুযোগটাই দেয়নি। অয়নের বুকের বাম পাশে যেই আঘাত অধরা দিয়েছে। সেই আঘাতের ক্ষত এতোটা সহজে মুছবে না। অধরা মাথা নিচু করে অয়নের বাড়ি থেকে বেরিয়ে চলে গেলো নিজের বাবার বাড়িতে। অধরা অয়নের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ভেবেছে এই বুঝি অয়ন তাকে ক্ষমা করে দিয়ে আবার তাকে ডেকে নিবে নিজের কাছে। কিন্তু এমন কিছুই হলো না। অধরা চলে যাওয়ার পর অয়ন ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল

— তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? তুমিও চলে যাও।

অয়নের কথাটা কানে এসে পৌচ্ছাতেই ফারিয়া অয়নের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে বলল

— অয়ন সরি। আসলে আমার রাগ উঠে গেছিলো অধরার উপর। তাই আরকি আমি ওর গায়ে হাত তুলে ফেলেছি। সরি। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও।

— বিষয়টা ক্ষমা করার নয়। আমার সাথে এমন কিছু করোনি তুমি যে আমাকে ক্ষমা করতে হবে। যার সাথে করেছো তার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাও।

— কিন্তু অয়ন আজ আমাদের বিয়ে। তুমি আমাকে যদি এই মুহূর্তে চলে যেতে বলো! তবে কেমন করে বিয়ে হবে?

— বিয়ে করার জন্য আমার এখন আর কোনো মুড নেই। আমাকে প্লিজ এই বিষয়টা নিয়ে আর ফোর্স করো না।

— অয়ন এসব কি বলছো তুমি? এতো আয়োজন! সব কিছু এমন ভাবে নষ্ট করে দিবে?

— আমার কথা পরিষ্কার। এসব আমার কাছে কোনো প্রকার গুরুত্ব রাখে না। আসছি আমি।

অয়ন নিজের কথাটা শেষ করতেই হনহন করে হেঁটে চলে গেলো নিজের ঘরের দিকে। ফারিয়া অয়নের চলে যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ফারিয়া বুঝতে পারছে না যে অয়ন তার সাথে এমনটা করলো কেনো? অয়ন নিজেই তো ফারিয়ার সাথে বিয়ের কথা পাকা করেছে। আর এখন সে নিজেই বিয়ে ভেঙ্গে দিলো। তাও আবার এতো আয়োজনের পর! ফারিয়া আশেপাশের লোকজনের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলো সবাই চলে যাচ্ছে নিজেদের মতো। ফারিয়ার দিকে সবাই তাকিয়ে আছে। ফারিয়া খানেক সময় ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকার পর চলে গেলো অয়নের বাড়ির সামনে থেকে। ঐ দিকে অয়ন নিজের রুমে ফিরে এসে একের পর এক সিগারেট ধরিয়ে চলেছে আর ড্রিংক করছে। কোনো ভাবেই নিজের মনকে শান্ত করতে পারছে না অয়ন। যেই অয়ন অধরাকে আঘাত দিতে ফারিয়াকে বিয়ে করতে চেয়েছে। সেই অয়ন কি না নিজেই বিয়ে ভেঙ্গে দিয়ে নিজের রুমে ফিরে আসলো! অয়নের নিজের উপর নিজের রাগ হচ্ছে। অয়ন নিজের রাগ সামলাতে না পেরে কাঁচের গ্লাসটা শক্ত হাতে চেপে ধরলো। অয়ন এতোটা শক্ত ভাবে গ্লাস ধরেছে যে গ্লাসটা ভেঙ্গে অয়নের হাতের বেশ কিছু অংশ ছিঁড়ে গেছে। অয়নের হাতে কাঁচের গ্লাস ভালো ভাবে বিঁধে গিয়ে রক্ত বেরিয়ে পড়ছে। অয়নের চোখ থেকে ও কয়েক ফোঁটা নোনাজল গড়িয়ে পড়ছে। যদিও আজ অয়নের নিজের দিকে বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই। অয়নের মাথায় একটাই বিষয় ঘুরছে। আর সেটা হলো নিজের এক্স ওয়াইফ অধরার কথা। পাগলের মতো ভালোবাসতো অয়ন অধরাকে। আর সেই অধরা অয়নের বুকের বাম পাশে আঘাত করে অয়নকে ছেড়ে চলে গেছে। তাও আবার নিজের বাবার কথায়। অর্থ একটা মানুষকে নিজের প্রিয়জন গুলোর সামনে হয় বড় করে, নয়তো ছোট। অয়ন কাছে যখন নেইম, ফেইম, অর্থ ছিলো না। তখন এই অধরা অয়ন কে ছেড়ে গেছে। আজ অয়নের কাছে সব আছে। আর অধরা ও ফিরতে চায় অয়নের লাইফে। তবে সেটা আর সম্ভব নয়। অয়ন আর অধরাকে চায় না। অয়ন নিজের অতীতের কথা গুলো ভাবতেই ডুকরে কেঁদে উঠলো। অয়ন না পারছে অধরাকে ক্ষমা করতে আর না পারছে অধরাকে ভূলে যেতে। অয়ন নিজের কেটে যাওয়া হাতটা টেবিলের উপর থেকে নিচের দিকে ঝুলিয়ে রেখে টেবিলের উপর মাথা রেখে নিজের চোখ বন্ধ করে ফেলে। অয়ন নিজের চোখ বন্ধ করেই ফেলেতেই আচমকা কেউ একজন অয়নের রুমে চলে আসে আর অয়ন কে………..!

#চলবে…………..!

সন্ধ্যাবাতি পর্ব-০১

0

#সন্ধ্যাবাতি
#পর্বঃসূচনা_পর্ব
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ

৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় আমি হাজির হয়েছে আমি নিজের স্বামীর বিয়ের অনুষ্ঠানে। কথাটা শুনে হয়তো আপনারা একটু অবাক হয়ে গেছেন। কিন্তু এটাই সত্যি। আমার স্বামী আজ বর বেসে অন্য এক নারীর সাথে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে। আর আমি সেই বিয়েতে একজন দর্শকের ন্যায় বিয়ের প্যান্ডেলের এক কোনে দাঁড়িয়ে থেকে নিজের চোখের জল ফেলছি। নিজের চোখের সামনে নিজের ভালোবাসাকে অন্য কারোর হয়ে যেতে দেখতে কেমন লাগে? সেটা শুধু মাত্র তারাই বুঝতে পারবে! যারা এমন পরিস্থিতিকে কাছ থেকে অনুধাবন করেছে। গল্প ফেরার আগে চলুন পরিচয় দিয়ে নেই। আমি অধরা চৌধুরী। আমি আমার পরিবারের একমাত্র মেয়ে। আমার বাবা এই শহরের বিশিষ্ট একজন বিজনেস ম্যান ছিলেন। আমার পরিচয় বলতে এই টুকুই। আর আজ যার বিয়ে হচ্ছে! তিনি আমার স্বামী অয়ন চৌধুরী। অয়ন বর্তমান সময়ের একজন তরুণ বিশিষ্ট বিজনেস ম্যান।‌ অয়ন আজ যেই পজিশনে আছে! সেই পজিশনে আসা সকলের স্বপ্ন। আর অয়ন সেই স্বপ্নকে সত্যি করে দেখিয়েছে। তবে আজকের এই অয়ন আগেকার অয়ন এক মানুষ নয়। সম্পূর্ণ ভিন্ন এক মানুষ এই অয়ন। আজকের অয়নের কাছে নিজের জীবনের সফলতা ছাড়া আর কিছুই জরুরী নয়। আর আগেকার অয়নের কাছে নিজের ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই গুরুত্বপূর্ণ ছিলো না। আর তাই তো আজ অয়ন আমার থেকে এতোটা দূরে! আমি চাইলে হয়তো সিনক্রিয়েট করতে পারি। তবে আমার সেই‌ ক্ষমতা নেই। আমি প্রায় আধ ঘন্টা সময়ের মতো ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছি। একদম সকলের দৃষ্টির আড়ালে। বেশ কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকার পর আচমকা কেউ একজন আমার পেছনে দাঁড়িয়ে ভিশন কর্কশ কন্ঠে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো

— এই মেয়ে এখানে কি চাই?

কন্ঠস্বরটা কানে ভেসে আসতেই অধরা নিজের ঘাড় ঘুরিয়ে পেছন ফিরে তাকালো। অধরা পেছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পেলো তার সেই চিরচেনা পরিচিত মুখ। অয়ন দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন কে নিজের সামনে দেখার পর অধরার মুখ থেকে একটাও কথা ফুটছে না। শুধু মাত্র চোখ থেকে টপটপ করে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু জল। অয়ন অধরার চোখের কোনে নোনাজল দেখে তাচ্ছিল্য পূর্ণ হাসি দিয়ে বলল

— ভালো লাগছে আজ। সত্যি খুব ভালো লাগছে। তোমার চোখের এই মিথ্যা জল টুকু আবার দেখতে পেয়ে অনেক শান্তি লাগছে আমার।

অয়নের কথাটা শেষ হতেই অধরা অনেক কষ্টে অয়ন কে বলল

— অয়ন আমার চোখের জল মিথ্যা নয়। আমি সত্যি আজ…!

অধরা সম্পূর্ণ কথাটা বলার আগেই অয়ন একটা ধমক দিয়ে অধরাকে ঠাঁই থামিয়ে দিলো। অয়নের ধমকের শব্দটা এতোটাই বিকট ছিলো যে বিয়েতে আসা সকলের কানে পৌঁছে গেলো সেই শব্দ। সকলে অতি আগ্রহের অয়ন আর অধরার দিকে তাকিয়ে আছে। এখানে উপস্থিত অনেকেই জানে না অধরার আসল পরিচয়। অয়ন অধরার দিকে খানেক এগিয়ে এসে অধরার মুখের কাছে নিজের মুখ নিয়ে গিয়ে ভিশন শক্ত গলায় অধরাকে বলল

— এসব ছলনা দিয়ে অয়ন চৌধুরীকে আর কাবু করতে পারবে না তুমি। আমার মন থেকে তুমি সম্পূর্ণ ভাবে মুছে গেছো।

অয়নের কথাটা শেষ হতেই অধরা হেসে ফেলল। অধরার ঠোঁটের মাঝে হাসির রেখা দেখে অয়নের সারা শরীর যেনো জ্বালা করে উঠলো। অয়নের চোখ মুখ রক্ত বর্ণ ধারণ করে আছে। অয়ন নিজের রাগকে আর চাপিয়ে রাখতে পারছে না। অয়ন অধরাকে অবাক করে দিয়ে দুম করে অধরার বাহু জোড়া শক্ত হাতে চেপে ধরলো। অয়ন অধরার বাহু জোড়া শক্ত হাতে চেপে ধরে অধরাকে জিজ্ঞেস করলো

— পাগল হয়ে গেছো তুমি? তোমার এই হাসি আমার সহ্য হয় না। আমার সামনে দাঁড়িয়ে কান্না তো করতে পারবে। কিন্তু হাসতে নয়।

অয়নের কথাটা শেষ হতেই অধরা নিজের হাসি থামিয়ে বলল

— কেনো মিস্টার অয়ন চৌধুরী। আমার হাসি দেখলে বুঝি আপনার ভয় হয়! ভয় পান আপনি?

— নো। অয়ন চৌধুরী কখনো ভয় পেতে পারে না। অয়ন কে দেখে অন্য সবাই ভয় পায়। অয়ন কখনো ভয় পায় না।

অয়নের কথাটা শেষ হতেই অধরা বলল

— অবশ্যই তুমি ভয় পাও আমাকে। এই যে বলো না আমাকে তোমার মন থেকে মুছে ফেলেছো! এটা মিথ্যা কথা। যদি তাই হতো! তবে আমাকে এড়িয়ে চলতে। আমাকে দেখার পর বিয়ের পিঁড়ি থেকে উঠে আমার সামনে এসে দাড়াতে না। অয়ন তুমি বিশ্বাস করো বা না করো! আমি তোমার মনের মাঝে আজ ও বেঁচে আছি। আর সারা জীবন বেঁচে থাকবো।

অধরার কথাটা শেষ হতেই অয়ন অধরার বাহু জোড়া থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিলো। অধরা তো সত্যি কথাই বলেছে। আজ অয়নের সাথে ফারিয়ার বিয়ে হবে। অয়ন অধরাকে দেখার পর এখানে চলে আসাটা উচিত হয়নি অয়নের। অয়ন অধরার দিক থেকে নিজের চোখ নামিয়ে নিলো। অয়ন এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে পেলো একটা ওয়েটারকে। অয়ন ওয়েটারের দিকে এগিয়ে গিয়ে একটা ড্রিংকের গ্লাস হাতে তুলে নিয়ে মদ্যপান করতে লাগলো। দুই প্যাগ ড্রিংক করে নিয়ে অয়ন অধরার দিকে এগিয়ে আসতে নিতেই অয়নের সামনে এসে দাঁড়ায় ফারিয়া। ফারিয়া অয়নের সামনে এসে দাড়িয়ে অয়ন কে উদ্দেশ্য করে ফিসফিস করে বলল

— অয়ন কি করছো কি তুমি? আজ‌ আমাদের বিয়ে। এখানে এই মেয়েটার সাথে সিনক্রিয়েট করছো কেনো?

— আমি কারোর সাথে সিনক্রিয়েট করছি না। আমি এই মেয়েটাকে ওর যোগ্যতা বুঝিয়ে দিচ্ছি।

— সরি অয়ন তুমি সেটা করছো না। এখন তোমার থাকার কথা বিয়ের আসরে। আর তুমি কি না নিজের এক্স….!

ফারিয়া নিজের কথাটা সম্পূর্ণ করলো না। অয়ন ফারিয়ার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অয়ন নিজের সাথে অধরার নাম কোনো ভাবে আর জড়াতে চায় না। অধরার সাথে তার অতীতের সম্পর্কের কথা কেউ বললে অয়ন সহ্য করতে পারে না। অয়ন ভিশন রেগে যায়। ফারিয়া নিজেও সেই বিষয়টা জানে। তবে ভূল করে ফারিয়া আজ সেই কথাটা বলে ফেলেছে। অয়ন ফারিয়ার দিকে খানেক সময় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার পর ফারিয়ার সামনে থেকে সরে চলে গেলো অধরার সামনে। অয়ন অধরার সামনে এসে দাড়িয়ে অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— আমি জানি না তুমি এখানে কেনো এসেছো? যদি বিয়ে দেখতে এসে থাকো তবে এখানেই বসো। আর যদি কোনো ঝামেলা করতে এসে থাকো। তবে এখুনি বেরিয়ে যাও।

অয়নের কথাটা শেষ হতেই ফারিয়া অয়নের পেছন থেকে এগিয়ে এসে অধরার হাত ধরে ভিশন রাগী কন্ঠে বলতে লাগলো

— কেনো অয়ন এই মেয়েটা এখানে থাকলে আমাদের সুন্দর জীবন কখনোই সুন্দর থাকবে না। ওকে এখুনি এখান থেকে বের করে দিতে হবে। এসব ছোট লোকের ঠাই এখানে কখনো হবে না। চল বেরিয়ে যা এই বাড়ি থেকে।

ফারিয়া কথাটা বলতেই অধরার হাত ধরে টানতে লাগলো। অধরা কোনো কথা বলছে না। শুধু মাত্র অয়নের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অধরা। অয়ন ও খানেক নিরব হয়ে আছে। ফারিয়া অধরাকে অয়নের সামনে থেকে নিয়ে যেতেই আচমকা একটা বিকট শব্দ ভেসে আসলো অয়নের কানে। অয়ন নিজের ঘার ঘুরিয়ে পেছন ফিরে তাকাতেই যা দেখতে পেলো। তা দেখার জন্য অয়ন মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। অয়ন পেছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পেলো অধরা……………!

#চলবে…………..!

তুমি আমার মা পর্ব-০২ এবং শেষ পর্ব

0

তুমি_আমার_মা
ফারহানা_কবীর_মানাল
শেষ পার্ট

আমি কিছু বলার আগে মা আমাকে ইশারায় চুপ থাকতে বললেন। আমি মা’কে উদ্দেশ্য করে বললাম, ” আচ্ছা মা তোমার নামে যে এসব বলছে একটা কথারও কি প্রতিবাদ করতে পারো না তুমি? চুপ করে থেকে এসব সত্যি কেন প্রমাণ করছো? ”

দাদি হুংকার দিয়ে বললেন, ” সত্যি সত্যি বলছে তাই চুপ করে আছে। যদি সত্যিই এসব না বলবে তাহলে মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকবে কেন? ”

আব্বু দাদিকে বললো, ” আচ্ছা মা, তুমি একটু চুপ করো। কি হয়েছে আমি দেখছি। ”

হঠাৎ করে রহিমা কাকি বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে লাগলেন। অন্যের ঘরে আগুন লাগতে গিয়ে নিজে এমন ফেঁসে যাবে বুঝতে পারেনি হয়তো। আমি উনাকে ডাকতে গেলে আব্বু ইশারায় ডাকতে নিষেধ করলেন। আমি আর কিছু না বলে চুপচাপ নিজের ঘরের দিকে চলে গেলাম। আমি রহিমা কাকিকে কোনো প্রকার গালাগালি করিনি। একটা বাজে কথাও বলিনি। শুধু বলেছিলাম যে, ” মায়ের ব্যাপারে দাদিকে কি বলেছেন?’ এই সামান্য একটা কথা নিয়ে কতকিছু করলেন উনি। আব্বু আমাকে মারেনি এইটা আমার কপাল ভালো। সেদিন রাতে বাড়ির পরিবেশ একদম শান্ত। মনে হচ্ছে ভুতের বাড়ি এটা। একটা পিন পড়লেও হয়তো বোমা পড়ার মতো আওয়াজ হবে! অথবা বাতাস হলেই নিরবতার চাদর ছিঁড়ে যাবে৷ এসব শুধুই আমার কল্পনা। নির্ঘুম চোখে সারা রাত শুয়ে রইলাম। বাড়ির দক্ষিণ কোণের মসজিদ থেকে ফজরের আজানের শব্দে মনে হলো সকাল হয়ে গিয়েছে। রাতের সকল অন্ধকার কেটে গিয়ে আশার আলো ফুটে উঠেছে সারা পৃথিবীতে। বিছানা থেকে উঠে নামাজ পড়ে নিলাম। তারপর রাস্তায় হাঁটতে বের হলাম। সকালে আবহাওয়া বড্ড মধুর লাগে আমার কাছে।
সকালবেলা থেকে বাড়ির পরিবেশ একদম স্বাভাবিক। মা চুলার পাশে বসে বসে সবজি কাটছে আর ফুফু মায়ের কাজে সাহায্য করছে। কারো মুখে কোনো কথা নেই। কাল রাতে এতো কান্ড ঘটছে এখন কেউ বুঝতেই পারবে না।

বাড়ির শান্ত পরিবেশটা হঠাৎ অশান্ত হয়ে উঠলো রহিমা কাকি বাড়িতে আসার কারণে। তিনি সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করার সময় চিৎকার করে বলতে লাগলো ” ভাইজান দেখেন, ফাতেমা আপাকে নিয়ে এসেছি। উনার কাছ থেকেই শোনেন কি হয়েছে!”

কাকির চিৎকার শুনে আব্বু ঘর থেকে বেরিয়ে আসলেন। সাথে আমরা সকলেও গেলাম। আব্বু অন্যদিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন, ” কি হয়েছে? আপনি কি বলবেন?”

রহিমা কাকি ফাতেমা কাকিকে উদ্দেশ্য করে বললো, ” এ বল কাল ফয়সালের মা কি বলেছিল!”

ফাতেমা কাকি একবার সকলের দিকে তাকালেন। তারপর সকলকে অবাক করে দিয়ে বললেন, ” কাল ফয়সালের মা শাড়ির কথা কিছুই বলেনি। রহিমা আপাই শুরু করেছিলো যে তোমার ননদকে দেখলাম নতুন শাড়ি পরা। তা তোমার শাড়ি কোথায়? নাকি তোমাকে শাড়ি কিনে দেয়নি? তখন ফয়সালের মা বলেছিলো যে, ভাই বোনকে কি কিনে দিলো না দিলো তা নিয়ে মাথা ঘামিয়ে আমার কি কোনো লাভ আছে! আমাকে সুখে রাখে এটাই অনেক। ”

রহিমা কাকি ফাতেমা কাকিকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। হয়তো ভাবতেও পারেনি কাকি তার বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবে। রহিমা কাকি কর্কশ গলায় বললো, ” কি রে ভাবি আমি আপনাকে নিয়ে এলাম সব খুলে বলতে আর আপনি আমার বিপক্ষে কথা বলছেন?”

ফাতেমা কাকি মুচকি হেসে বললেন, ” তোমার মন রাখতে গিয়ে আজ মিথ্যা বললে কাল কেয়ামতের দিন আমি আল্লাহর কাছে কি জবাব দিবো? আমি যা শুনেছি তাই বলেছি। আজ কারো মন রাখতে গিয়ে মিথ্যা বলে নিজেকে মিথ্যাবাদী প্রমাণ করতে চাই না আমি।

ফাতেমা কাকির কথা শুনে দাদির মুখটা শুকিয়ে গেছে। রহিমা কাকি রীতিমতো ঘামছে। এলাকার সকলেই আব্বুকে রাগী বলে জানে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে আব্বু রহিমা কাকিকে বললেন, ” আপনি যা করেছেন ভালোই করেছেন। আর প্রয়োজন নেই। আপনি এখন আসতে পারেন।

আব্বুর মুখে এমন কথা শুনে রহিমা কাকি তড়িঘড়ি করে আমাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলেন। উনি চলে গেলে আব্বু মা’কে বললো, ” এতোটা সহজসরল হওয়াটাও ভালো না। ”

মা কিছু না বলে নিজের কাজ করতে গেলেন। সকলে চলে যাওয়ার পর আব্বু দাদির কাছে গিয়ে বসলেন। তারপর দাদির কি অবস্থা সব জানতে চাইলেন। মা ছেলে খুব ভালো ভাবে কথা বলছে। আমিও সেখান থেকে চলে গেলাম। আর ভাবতে লাগলাম আমি আমার মা’কে ঠিক শাড়ি কিনে দিবো। কিন্তু এখন যদি টিউশন পড়াতে যাই তাহলে টাকা পেতে মাস পেরিয়ে যাবে। অল্প কয়েকদিনের ভিতর টাকা রোজকার হবে এমন কোনো কাজ করতে হবে। কলেজে গিয়ে বন্ধুদের সাথে কথা বলে দেখতে হবে। আল্লাহকে বারবার বলতে লাগলাম যেন একটা রাস্তা বের করে দেয়। কিন্তু কি করবো কিছুতেই মাথায় আসছে না। কলেজে গিয়ে আমার কয়েকটা বন্ধুকে বললাম যে, ” দোস্ত শোন। আমার অনেক ইচ্ছে করছে মা’কে একটা শাড়ি কিনে দিবো নিজের টাকায় কিন্তু কি করে দিবো বল তো। হাতে কোনো টাকাই নেই।

আমার কথা শোনার পর আমার একটা বন্ধু বললো, দোস্ত আমরা সবাই মিলে যদি কোনো কাজ করি তাহলে কেমন হয়? কাজের পরে সকলে টাকা ভাগ করে নিলাম। এ ছাড়া কোনো কাজই ছোট নয়। মজার ছলেই না হয় কোনো কাজ করলাম।

ও-র কথা শুনে অন্য বন্ধু বলে উঠলো, ” হ্যা চল আমরা সবাই মিলে কোনো কাজ করবো তারপর সকলে মায়ের জন্য উপহার কিনে নিয়ে যাবো। জানিস তো গতমাসে মা’কে একটা চকলেট কিনে দিয়েছিলাম। গতকাল মায়ের ডাইরির ভিতরে সেই খোসাটা পেয়েছি। আসলে সন্তানরা মা’কে কোনো উপহার দিলে মায়েদের কাছে তা হিরার থেকে বেশি মূল্যবান হয়।

বাকিরাও ওদের কথায় সম্মতি দিলো। আমরা একসাথে ছয়জন বন্ধু থাকি। একটা গ্রুপের মতো আর কি! কেউ কাউকে ছাড়া কোনো কাজের সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। সকলে রাজি হলেও কি কাজ করবো তা ঠিক করতে পারলাম না। আসলে আমরা কোনো কাজ করতে অভ্যস্ত নই। সকলেই বাবা মা’র আদরের সন্তান। সকলেই যখন চিন্তার সাগরে ডুবে আছি। তখন আশার আলো খুঁজে পেলাম আামদের এক স্যারের কথায়! স্যার ক্লাসের পরে আমাদের ডেকে নিয়ে বললেন, ” বাবারা তোরা ক্লাসের ভিতর খুব ভালো ছেলে। তোদের একটা কাজের দায়িত্ব দিতে চাই। কলেজের সামনের ফাঁকা জায়গাটায় একটু ফুল বাগানের মতো করতে চাইছিলাম। তোমরা যদি দায়িত্ব নিয়ে কাজটা করে দিতে তাহলে খুব ভালো হতো। ”

স্যারের কথা শুনে আমার এক বন্ধু বললো, ” স্যার আমরাই বাগান করে দিবো আপনার শুধু আমাদের মিষ্টি খাওয়ালেই হবে। ”

স্যার মুচকি হেসে বললো, ” তাহলে তো খুব ভালো হয়। তোমরাই কাজটা করো। ”

স্যারের সাথে কথা বলার পর কুরআন শরীফের একটা একটা আয়াত মনে চলে আসলো। আল্লাহ কুরআন শরীফে বলেছেন, –” বলো, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেন। নিশ্চয় তিনি অতি ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।’ (সুরা ৩৯ জুমার, আয়াত: ৫৩)।

এবং আরো বলেন, আল্লাহর সাহায্যে অতিনিকটে।
নিমেষেই মনটা খুশিতে ভরে গেলো। চারপাঁচ দিনের মধ্যে কলেজের সামনের ফাঁকা জমিটা পরিষ্কার করে তাতে গাছ লাগিয়ে দিলাম। ফাঁকা হলেও জমিতে প্রচুর আগাছা ছিলো। কাজ শেষ হওয়ার পর স্যার আামদের পাঁচ হাজার টাকা দিলেন। আমরা স্যারকে অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম, ” স্যার এতো টাকা কেন দিলেন?”

স্যার মুচকি হেসে বললো, ” তোমরা ছোট বলে তোমাদের ঠকাবো কেন? জায়গাটা তো আমি দেখেছি, ওখানে বাগান করতে তোমাদের বেশ খাটতে হয়েছে। জানো তো বাবারা জেনে বুঝে কাউকে ঠকানো উচিত নয়। আজ তুমি একজন ঠকিয়ে যদি মনে করো তুমি জিতে গেছো তাহলে ভুল ভাবছো। কারো হক নষ্ট করা কোনো মানুষের কাজ নয়। ”

আমরা সকলেই স্যারের কাজে বেশ অবাক হলাম। এখনো পৃথিবীতে ভালো মানুষ আছে তা এসব লোকদের দেখলে বোঝা যায়। টাকগুলো নিয়ে সকলে মার্কেটে চলে গেলাম। ছয় মিলে অনেক দামাদামি করে পাঁচ হাজার টাকায় ছয়টা শাড়ি কিনলাম। তারপর ছয়জনে ভাগ করে নিলাম। এখন আমার হাতে খুব সুন্দর একটা শাড়ি। শাড়িটা নিয়ে মা’কে দিতে পারলে মা অনেক খুশি হবে। মায়ের হাসি মুখটা বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। রাস্তায় কোথাও সময় নষ্ট না করে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। আজ কেন জানি রাস্তাটা শেষ হচ্ছে না। বাড়ির প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছি আর মাত্র পাঁচ মিনিট লাগবে বাড়ি পৌঁছাতে, সীমাহীন উত্তেজনা কাজ করছে আমার মধ্যে। হঠাৎ করে প্রচন্ড জোরে কেঁপে উঠলাম। এতো সময় দুইহাতে শক্ত করে ধরে রাখা শাড়িটা আমার থেকে কয়েক হাত দূরে ছিটকে পড়লো। একটা বড় ট্রাকের চাকাগুলো আমার শরীরের উপর দিয়ে চলে গেলো। মনে হলো আমার সব হাড় গু’ড়ো হয়ে গেছে। অনুভব করলাম মৃ’ত্যু য’ন্ত্র’ণা! র’ক্তা’ক্ত শরীর থেকে আ’ত্মা এই বুঝি চলে যায়। শেষবারের মতো তাকিয়ে দেখলাম মায়ের জন্য শখ করে কেনা শাড়িটা মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। খুব ইচ্ছে করলো শাড়িটা তুলে ধূলোগুলো ঝেড়ে ফেলতে কিন্তু তার আগেই আঁখিদ্বয় চিরতরে বন্ধ হয়ে গেলো। কখনো কখনো সামান্য দূরত্ব হয়ে উঠে সীমাহীন। যা পার করার সাধ্য আমাদের কারো হয়ে ওঠে না। জানি না মায়ের জন্য কেনা সবুজ শাড়িটা মা পেয়েছিলো কিনা! শাড়িটা বুকে জড়িয়ে চিৎকার করে আমার নাম ধরে ডেকেছিলো কিনা। যেখানে আমি মা’কে সবুজ শাড়িটা উপহার দিতে চাইলাম সেখানে অন্য লোকেরা আমার রক্তাক্ত ক্ষ’ত’বি’ক্ষ’ত শরীরটা মা’কে উপহার দিলো। জানি না মা কেঁদে ছিলো নাকি স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলো। শুধু জানি তুমি আমার মা! আমাকে হারানোর কষ্ট সবাই ভুলে গেলেও তুমি কখনো ভুলতে পারবে না। তুমি যে মা। মা তোমার সন্তান তোমার কোল খালি করে চলে যাচ্ছে, তুমি দোয়া করো আল্লাহ যেন জান্নাতে আমাদের দেখা করিয়ে দেয়। তখন তোমার হাতে একটা সবুজ রঙের শাড়ি তুলে দিয়ে বলতে পারি, তুমি আমার মা। আমি থাকতে তোমার কোনো ইচ্ছে কি অপূর্ণ থাকতে পারে নাকি! আব্বু তোমাকে শাড়ি দেয়নি তো কি হয়েছে, তোমারও তো সন্তান আছে। সে তোমার ইচ্ছেগুলো পূরণ করবে।

সমাপ্ত

তুমি আমার মা পর্ব-০১

0

সূচনা পর্ব
তুমি_আমার_মা
ফারহানা_কবীর_মানাল

গতমাসে আব্বু যখন মা’কে বাদ দিয়ে শুধু দাদি আর ফুফুকে শাড়ি কিনে দিয়েছিলো মা তখন শাড়ি দুইটার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। মায়েরও শাড়ি নিতে ইচ্ছে করেছিল কিনা ঠিক বলতে পারবো না। তবে শাড়ির রঙটা মায়ের মনকে বারবার আকর্ষণ করছিলো এটা আমি শতভাগ নিশ্চিত । মা বরাবর অন্যদের থেকে আলাদা জিনিস পছন্দ করে। সে সুবাদে মায়ের সবুজ রং বড্ড পছন্দের। আর আব্বু দাদি আর ফুফুকে যে শাড়ি দুইটা কিনে দিয়েছিলো তার দুইটাই সবুজ রঙের। একটা নীড় পাড়ে সবুজ শাড়ি অন্যটা মাঝে হলুদ ছোপ ছোপ রং লাগানো। খুব দামী না হলেও শাড়ি দুইটা দেখতে বড্ড নজরকাড়া। দাদি আর ফুফু শাড়ি পেয়ে বা নিজের বোন আর মা’কে শাড়ি দিতে পেরে বাবা, দাদি আর ফুফুর হাসি মুখের মাঝে মা’য়ের মুখটা কেন যেন আমার মনে বড্ড বিঁধে গেলো। আব্বু চাইলেই মা’কেও শাড়ি কিনে দিতে পারতো কিন্তু তা না করে নিজের মা বোনকে কিনে দিয়েছে। মা অবশ্য এই ব্যাপারটা নিয়ে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না বা মায়ের মুখটাও বিন্দু মাত্র মলিন হলো না। তবে আমার চোখের সামনে মায়ের শাড়ির দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকাটা বারবার ভেসে উঠছিলো। নিজের টাকায় মা’কে শাড়ি কিনে দেওয়ার সামর্থ্য আমার এখনও হয়নি। সবে মাত্র এইচএসসি পরীক্ষা দিবো। বাড়ি থেকে কলেজে যাওয়ার টাকাটাও প্রতিদিন মা বাবর কাছ থেকে হাত পেতে নিতে হয়। কখনো কখনো কিছু টাকা জমালেও এখন আমার হাত একদম ফাঁকা।

এমন সাতপাঁচ চিন্তার মাঝে মায়ের গলা শুনতে পেলাম। মা আমাকেই ডাকছে। আমার নাম ধরে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলছে, ” কি রে কত রাত হয়ে গেলো খেয়াল আছে তোর। ফয়সাল খেতে আয় তাড়াতাড়ি। ”

আমাদের বাড়িতে সকলেই একসাথে বসে খাবার খায়। বিশেষ করে রাতের বেলা। কারণ এইসময়ে আব্বু বাড়িতে থাকে। খুব উচ্চবিত্ত পরিবার না হলেও আমাদের অভাব বলতে তেমন কিছু নেই। আর অভাব থাকলেও হয়তো সকলের চাহিদা সীমিত বলে অভাবটা তেমন চোখে পড়ে না। আমরা দুইভাই বোন। বোনটা বড়, তাই ও-কে বিয়ে দিয়ে বাড়ি থেকে বিদায় করেছি অনেক আগে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত ভালো ভালো খাবারে নিজের ভাগটা ছাড়েনি। ভালোকিছু রান্না হলেই মা টিফিনবাক্স ভরে মেয়ের জন্য পাঠিয়ে দেয়। মাঝে মাঝে কলেজের ফাঁকে আমিও ও-কে চানাচুর মুড়ি মাখা, বাদাম এসব কিনে দিয়ে আসি। আপুও আমার পছন্দের খাবার রান্না করলে আমার জন্য পাঠিয়ে দেয়। মাঝে মাঝে হাতের ভিতর দশ পাঁচ টাকার নোট গুঁজে দিয়ে বলে কলেজে যাওয়ার সময় কিছু কিনে খাস। আপুর বিয়ে হওয়ার পর থেকে বাড়িতে আমরা চারজন সদস্য। আমি আব্বু, মা, দাদি আর ফুফু। ফুফুর স্বামী মারা গেছে পাঁচ বছর হলো। ছেলেমেয়ে কেউ না থাকায় আমাদের বাড়িতেই থাকে। মা বাবা কখনো ফুফুর থাকা নিয়ে কোনো অভিযোগ করেনি। সংসারে ইনকাম করার লোক বলতে শুধু আব্বু। একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। মাস গেলে পঁচিশ হাজার টাকা বেতন পায়। আজকালকার বাজারে এই টাকা দিয়েও আমাদের দিব্যি ভালোভাবে মাস পার হয়ে যায়।

রাতের খাওয়া শেষ করে সকলে ঘুমাতে যাবো। এমন সময় দেখলাম টেবিলের উপর আব্বুর মোবাইলটা পড়ে আছে। রাতে কারো প্রয়োজনীয় কল আসতে পারে ভেবে ফোনটা নিয়ে আব্বুর ঘরের দিকে হাঁটা দিলাম। আব্বু আম্মুর রুমটা বারান্দার পাশে একদম। রুমের সামনে যেতেই আব্বু গলা কাবে আসলো। হয়তো মা’কে কিছু বলছে। ঘরের দরজার সাথে আমার দূরত্ব কমতেই আবৃবু কথা স্পষ্ট শুনতে পেলাম। আব্বুকে মা’কে বলছে যে, ” তাহেরা তুমি তো জানো জিনিসপত্রের দাম যে ভাবে বাড়ছে তাতে মাস শেষ সংসারে টানাটানি পড়ে যায়। তোমাকে শাড়ি কিনে দিতে পারিনি বলে তুমি মন খারাপ করো না। সামনের মাসে বেতন পেলে আমি তোমাকে শাড়ি কিনে দিবো। ”

মা’য়ের উত্তরটা শোনার জন্য আর দরজার কড়া নাড়লাম না। চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। যদিও কারো কথা লুকিয়ে শোনা উচিত নয়৷ তবুও ওদের কথার মাঝে বাঁধা হতে ইচ্ছে করলো না।

ওপাশ থেকে শুনতে পেলাম মা শান্ত গলায় বলছে, ” আমার অনেক শাড়ি আছে। তোমাকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না। অনেক শাড়িই তো কিনে দেও তুমি আমাকে। মা’য়ের বয়স হয়েছে এখন একটু সাজগোছ করলে মন ভালো থাকবে। আর আপার তো সবসময়ই মন খারাপ থাকে। এতো অল্প বয়সে স্বামী হারিয়ে গেছে। এসব পেলে যদি মনটা একটু ভালো হয়। অনেক রাত হয়েছে তুমি ঘুমিয়ে পড়ো। সকালে আবার কাজে দৌড়াতে হবে। ”

একজন প্রকৃত জীবনসঙ্গী হতে গেলে কতটা আত্মত্যাগ করতে হয় তা আজ মায়ের কথায় স্পষ্ট বুঝতে পারলাম। কিছুসময় দাঁড়িয়ে থেকে আব্বুকে ডাক দিলাম। যদিও দরজা খোলা। আমি চাইলেই ভিতরে গিয়ে ফোনটা দিয়ে আসতে পারি কিন্তু রুমের ভিতরে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করা উচিত নয়।
আব্বু আমার ডাকে সাড়া দিয়ে বাইরে আসলো। আমি আব্বুর হাতে ফোনটা দিয়ে নিজের ঘরে চলে এলাম। আব্বু নয় আমিই এবার মা’কে শাড়ি কিনে দিবো। কিন্তু কি করে! কাছে তো কোনো টাকা নেই। কলেজের নাম করে টাকা চাইলে হয়তো ওরা টাকা দিয়ে দিবে কিন্তু চুরি করে যেমন দান করা উচিত নয় তেমনি মিথ্যা বলে টাকা নিয়ে উপহার কিনে দেওয়াটাও বাঞ্ছনীয় নয়।

সারারাত চিন্তা করেও কোনো উপায় বের করতে পারলাম না। কোথা থেকে টাকার জোগাড় করবো। খুব দামী শাড়ি না হলেও সাত আটশো টাকার নিচে কোনো ভালো শাড়ি পাওয়া যাবে না।
সকালে খাওয়ার সময় লক্ষ্য করলাম মা বারবার ফুফুর শাড়ির দিকে দেখছে। হয়তো অনেক পছন্দ হয়েছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষদের জীবনের ইচ্ছেগুলো একটা কথাই আটকে যায় তা হলো থাক লাগবে না। মায়ের ক্ষেত্রেও হয়তো তাই। সকালের খাওয়া শেষ করে নিজের কাজে চলে গেলাম। কিন্তু কিছুতেই কিছু ভালো লাগছে না। কি করে টাকা জোগাড় করবো! আব্বু কি মাসে পঁচিশ হাজার টাকা বেতন পেয়ে তিনটা শাড়ি কিনতে পারতো না? মা’কে বলদ পেয়ে হয়তো যা খুশি বুঝিয়ে দিয়েছে হয়তো। সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফিরে দেখলাম মা মন খারাপ করে বসে আছে। আমি কাছে গিয়ে প্রশ্ন করলাম, ” মা কি হয়েছে তোমার? মন খারাপ করে বসে আছো কেন? ”

মা কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইলেন। আমার গলার আওয়াজ পেয়ে দাদি ঘর থেকে বের হয়ে আসলো। দাদির মুখটাও ভার ভার৷ আমি শান্ত গলায় দাদিকে প্রশ্ন করলাম, ” কিছু হয়েছে নাকি? ”

দাদি বিলাপ করে বলে উঠলো, ” আমার সবহারা মেয়েটাকে একটা শাড়ি কিনে দিয়েছে ছেলেটা, তাই তোর মার চোখে সহ্য হয়নি। ওই বাড়ির রহিমাকে বলেছে, তার স্বামী নাকি সব মা বোনকে দিয়ে দেয়। তোর মা’কে নাকি কিছুই পায় না। ”

আমি দাদির কথা শুনে মায়ের মুখের দিকে তাকালাম। মা চুপ করে বসে আছে। একদম স্তব্ধ হয়ে গেছে যেন। আমি শান্ত গলায় দাদিকে উদ্দেশ্য করে বললাম, ” তুমি কি নিজপর কানে মা’কে এই কথা বলতে শুনেছো?”

দাদি মাথা নাড়িয়ে না সূচক জবাব দিলো। তারপর বলে উঠলো, ” রহিমা মেয়েটা বড্ড ভালো। মাঝে মাঝে আমার খোঁজ নিতে আসে। ও কি আমাকে মিথ্যা বলবে নাকি?”

ঘরের লোকের থেকে বাইরের লোককে বেশি ভরসা করাটা আমার কোনো কালেই পছন্দ না৷ দাদির এমন কথা আমার মেজাজটাকে বিগড়ে দিতে যথেষ্ট হলো। আমি কর্কশ গলায় বললাম, ” তোমার রহিমা যদি সত্যি তোমার ভালো চাইতো তাহলে তোমার সংসারে কুট কাঁচালি লাগাতো না। রহিমা খোঁজ নেয় বলে মেয়েটা অনেক ভালো, তিনবেলা যে আমার মায়ের রান্না গাণ্ডেপিণ্ডে গিলছো তাতে কিছু না? মা তো তোমাদের কখনোই কিছু বলে না। তোমার রহিমা তো শশুর শাশুড়ির সাথে দুইমাসও থাকতে পারেনি। ”

মা এতো সময় চুপ করে থাকলেও এবার আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো। তারপর কড়া গলায় বললো, ” আমি কি তোমাকে এই শিক্ষা দিয়েছি যে বড়দের মুখে মুখে তর্ক করো?”

আমি মা’য়ের দিকে তাকিয়ে বললাম, ” তোমার এই ভালোমানুষির সুযোগ নিয়ে সকলে তোমাকে নানান কথা শোনায়। তুমি এতোটা ভালো না হলেও পারো মা। ”

মা আর কিছু বললো না। রাতের বেলা আব্বু বাড়িতে আসলে রহিমা কাকি দৌড়ে আব্বুর কাছে আসলেন। তারপর কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন,” ভাইজান আপনার পোলাডা আমাকে কিসব বিশ্রী ভাষায় গালাগাল দিয়েছে। ফাতেমা আপাও তখন সেখানে ছিলো। ”

সারাদিন কাজের পরে আব্বুর মেজাজ বরাবর চড়া থাকে। রহিমা কাকির কথায় আব্বু যেন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। আমাকে উদ্দেশ্য করে রাগী গলায় বললেন, ” এইসব কি বলছে উনি,?”

আমি শান্ত গলায় বললাম, ” আমি উনাকে কথা শুনিয়েছি কারণ উনি দাদিকে মায়ের নামে মিথ্যা বলেছে। আর তাই নিয়ে দাদি মা’কে অনেক কথা শুনিয়েছেন। ”

আব্বু অগ্নি দৃষ্টিতে মা’য়ের দিকে তাকালেন। তারপর শান্ত গলায় রহিমা কাকিকে বললেন, ” আমার ছেলের হয়ে আমি আপনার কাছে মাফ চাচ্ছি। ”

দাদি আফসোস করে বলে উঠলো, ” ছেলেটাকে মানুষ করতে পারলাম না। আজ আমাদের এইদিন দেখতে হচ্ছে! ”

আমি কিছু বলার আগে মা আমাকে ইশারায় চুপ থাকতে বললেন।

চলবে

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৫১

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৫১

হাতে হাত রেখে রাতের শহর উপভোগ করছে জিয়ান নয়না৷ নয়নার হাতে একগুচ্ছ হলুদ গোলাপ, হলুদ গোলাপের মাঝখানে একটা টকটকে লাল গোলাপ।
“জিয়ান বলল,তোমার হৃদয়ে ওই লাল গোলাপের মত আমার জায়গা। সবার মাঝে থেকেও আমি ভিন্ন৷ তোমার হৃদয়ের চাঁদ আমি।”
“আপনি কি জানেননা হৃদয়ে সবাই থাকে না। হৃদয়ের মানুষ ছাড়া হৃদয়ে কারো জায়গা হয়না৷ বড্ড বোকা আপনি৷”
“তুমি আমাকে আপনি করে বলবা না। আমি তোমার একান্ত ব্যাক্তিগত তুমি।”
“পুরুষ মানুষ প্রেমে পরলে বোকা হয়ে যায়। কথাটা কি সত্য?”
“তা তো জানি। তবে তুমি তাকালেই আমি হয়ে যাই বোকা।আমার পৃথিবী যেনো থমকে যায় তোমার চাহনিতে। কি আছে তোমার এই আঁখি দুটিতে?”
“আফিম আছে। তাই আমার সাথে দৃষ্টি মেলানোর আগে সাবধান।”
“তোমার চাহনিতে যদি আফিম থাকে আমি সে নেশায় নেশাগ্রস্ত হতে রাজি৷ একবার না বহুবার শতবার।”
নয়না শাড়ীর কুচি ঠিক করছে। জিয়ান হাঁটু মুড়ে বসে পরলো,নয়নার হাত সরিয়ে দিয়ে নিজের হাতে ঠিক করতে লাগলো নয়নার কুঁচি। রাস্তায় কত মানুষ চলাচল করছে তারা বাঁকা চোখে তাকিয়ে দেখছে।
“কি করছেন সবাই দেখছে তো?”
“লোকে দেখলে দেখুক আমার। আমার বৌ আমার দ্বায়িত্ব, আমার ভালোবাসা৷ তার এতোটুকু কাজ করবো না! লোকে পাগল বলুক তবুও আমি তোমায় ভালোবাসবো।”
“ইশশ ভালোবাসার জন্য বাসায় আমাদের রুম আছে তো।”
“রুমের মধ্যে ভালোবাসায় চাহিদা থাকে৷ এই ভালোবাসায় যত্ন আছে। আমি শুধু রুমের মধ্যে ভালোবাসবো আর বাহিরে বৌকে পাত্তা দেবো না এমন মোটেই হবে না। দরকার পরলো তোমাকে কোলে তুলি নিয়ে হাঁটবো৷”
“হয়েছে চলুন ফুচকা খাবো।”
“এভাবে বললে নড়বো না।”
“চলো ফুচকা খাবো।”
“যো হুকুম মেরি রানী।”

এক প্লেট ফুচকা নিয়ে নয়না খাচ্ছে। জিয়ান নয়নার দিকে তাকিয়ে আছে। আচ্ছা ভালোবাসার মানুষের প্রতিটি কাজ এতো মনোমুগ্ধকর কেন? মনে হয় আমি ফুচকা খাওয়া না, পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য দেখছি। ভালোবাসা মানুষকে এক অন্য রকম অনূভুতির জগতে নিয়ে যায়। নয়না জিয়ানের মুখের সামনে একটা ফুচকা ধরে বলে, “এভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন?”
“দেখছি আমার বৌ ফুচকা খাচ্ছে এরচেয়ে সুন্দর দৃশ্য কি আছে!”
“আপনি বড্ড বেশি কথা বলেন৷ নিন হা করুন তো৷”
জিয়ান হা করে ফুচকা মুখে নিলো।

দূর থেকে দাঁড়িয়ে জাহিন এই দৃশ্য দেখলো। একটা কেসের ইনভেস্টিগেশন করতে বের হয়ে ছিলো জাহিন। এমন দৃশ্য দেখে থমকে দাঁড়ালো। তার মনে হচ্ছে সামনের মানুষ জিয়ান কেনো হলো। সে কেনো হলো না। হঠাৎ নিজের মধ্যে ফিরে এসে বলে, ছিহহহ জাহিন সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রমনী সম্পর্কে তোর ভাবি৷ তোর চিন্তা ভাবনা এতো জঘন্য হতে পারে না। জাহিন কিছুটা সামনে এগিয়ে গেলো নিজের গন্তব্যের দিকে তবে কিছু একটা ভেবে আবার ফিরে আসলো৷ এসে দেখে জিয়ান আর নয়না নেই। জাহিন বাইক রেখে সামনে হাঁটা শুরু করলো। দেখতে না পেয়ে ফিরে এসে আবার বাইক স্টার্ট দিলো।

নয়না ফুচকার প্লেট টুলের উপরে রেখে নিজে উঠে দাঁড়ালো টুলের উপর। ঝুঁকে জিয়ানের শার্টের বাটন লাগিয়ে দিলো।
জিয়ান নয়নার দিকে তাকিয়ে বলে,”ভালোবাসি প্রিয়তমা অর্ধাঙ্গিনী।”
নয়না টুল থেকে নেমে বলে, “বিল পরিশোধ করে চলুন, এক জায়গায় কতক্ষণ থাকবো?”
জিয়ান বিল পরিশোধ করে নয়নার হাত ধরে বলে, “এই রাত যদি না শেষ হয়,তবে কেমন হতো বলো তো?”
নয়না হেসে বলে, “সব কিছুর শেষ আছে তাই নিয়ম অনুসারে তা সমাপ্ত হবেই। সো মিস্টার প্লেন ড্রাইভার আকাশ কুসুম ভেবে লাভ নেই।”
“দূর ভাল্লাগে না। তোমার জন্য একটু রোমান্টিক হতে পারি না৷”
“আহা মিস্টার প্লেন ড্রাইভার আবার নাকি রোমান্টিকও হতে পারে!”
“তো তোমার আমাকে আনরোমান্টিক মনে হয়!”
“তো তুমি তো আনরোমান্টিকই। তোমার তো হুমায়ুন আহমেদের বই পড়ে রোমান্টিকতা শেখা উচিৎ।”
“ওসব শিখতে হয় নাকি? রাস্তা ফাঁকা থাকলে এখন কয়েকটা চুমু খেয়ে বুঝিয়ে দিতাম। আমি কতটা রোমান্টিক!”
“সুন্দরী মেয়ে দেখলে পুরুষ মানুষের হুস থাকে না৷”
“বৌ তুমি আমাকে উস্কে দিচ্ছো কিন্তু। এরপর এর দায় কিন্তু তোমার।”
নয়না হুট করে তার আঁচল নিয়ে জিয়ানের হাতের কব্জিতে বেঁধে দিলো। নরম স্বরে বলল, “মনের সুতোয় মন বেঁধেছে, দেহ বাঁধলাম আঁচলে।”
জিয়ান গেয়ে উঠলো, “এতো ভালোবাসা গো জান রাখিও অন্তরে, দোলাও তুমি দুলি আমি জগত বাড়ি দোলে৷”
“তুমি তো খুব ভালো গাইতে পারো৷”
“বেশি না তবে পারি। আমাদের দু-জনের কন্ঠই মোটামুটি ভালো। তবে জাহিন বেশি পছন্দ করে গানটান৷”
“হ্যা শুনেছি ভাইয়া খুব ভালো গায়। তবে তোমার মত না।”
“নিজের মানুষের সব কিছু সব সময় বেস্ট তারপর বাকি সব।”
জিয়ান নয়নার আঙুলের ভাঁজে আঙুল ডুবিয়ে বলে, “এ বাঁধন কখনো ছিড়ে যাবে নাতো?”

নয়না স্থির হয়ে দাঁড়ালো রাস্তা এখন বেশ ফাঁকা মাঝে মাঝে দূরপাল্লার বাস শা শা করে চলে যাচ্ছে। ল্যাম্পপোস্টের মৃদু আলোতে জিয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, “তুমি আমার প্রথম অনুভূতি, প্রথম ভালোবাসা। আমি কোনদিন তোমাকে ভুলতে পারবো না৷ সম্ভব না আমার জন্য তোমাকে ভুলে থাকা৷ তবে আমার কি মনে হয় জানো? আমাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হলে তা তোমার জন্য হবে৷ তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে হয়ত কোন মাঝপথে অথবা অজানা গন্তব্যে।”

জিয়ানের দৃষ্টি এখনো নয়নার দৃষ্টিতে স্থীর৷ জিয়ান বলল, “আমি বলবো না আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি কারন ভালোবাসা অনুভব করার জিনিস মাপার জিনিস না। তবে এতোটুকু জেনে রেখো তুমি আমার জীবন থেকে কখনো হারিয়ে গেলে হয়ত আমি পাগল হয়ে যাবো৷ নয়ত আমি মরে যাবো। তোমাকে ছাড়া হয়ত এ জীবনে আর বেঁচে থাকা সম্ভব না।”

কথার মধ্য দু” জনে এতোটাই মগ্ন আশেপাশের অবস্থা তারা যেনো ভুলে বসেছে। হঠাৎ দূরপাল্লার বাসটা তাদের দিকে এগিয়ে আসলো। নয়না জিয়ান বলে, জোড়ে চিৎকার করলো৷ রাতের শহরে তার চিৎকার মিলিয়ে যেতে লাগলো ইটপাথরের কংক্রিটে।
****

অনিকেত বেডে বসে আছে। তার খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তার মায়ের চেহারাটা। জানতে ইচ্ছে করছে কতটা অসহায় হলে মা তার সন্তানকে এতিম খানায় ফেলে যায়! কেনো সে আর খোঁজ নিলো না আর? আমাকে কি একবার দেখতে ইচ্ছে করেনি! জানতে ইচ্ছে হয়না আমি কেমন আছি! কোন মা কিভাবে সন্তানকে এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে ছেড়ে দেয় একা একা! আমি শুধু একবার মা ডাকতে চাই। অনিকেতের ফোনটা সেই কখন থেকে বেজেই চলেছে৷ বিরক্ত হয়ে রিসিভ করে বলে, “কি সমস্যা আপনার! ছেলে দেখলেই গলায় ঝুলে পড়তে ইচ্ছে করে? আমি কোনদিন আপনাকে নিজের করবো না। কোনদিন না।”

সায়না মোটেই রাগ করলো না অনিকেতের কথা শুনে, শান্ত স্বরে বলল, “ভালোবাসি।”
অনিকেত থমকে গেলো তার রাগ যেনো মিশে গেলো অজানায়।
সায়না বলল,”আপনাকে ভালোবাসি মানে আপনার, রাগ অভিমান, খারাপ, ভালো সব কিছুই আমি ভালোবাসি। আপনাকে না বেসে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না তাই আপনাকে ভালোবাসি।”
অনিকেত ফোনটা কেটে দিতে চাইলো।

সায়না বলল, “আপনার কথা বলতে হবে না, আপনি শুধু কানের কাছে ফোনটা ধরে রাখুন৷ আমি চাই আমি একাকীত্ব না আমাকে অনুভব করুন। শুনছেন ভালোবাসি আপনাকে৷ ভালোবাসি ডাক্তার অনিকেত মাহমুদ কে৷”

হটাৎ করে অনিকেত ফোনটা বুকে চেপে ধরলো। এতোক্ষণ ধরে শূন্যতায় হাহাকার করতে থাকা বক্ষপিঞ্জর যেনো মূহুর্তেই শান্ত হয়ে গেলো। মনে হচ্ছে কেউ একজন আছে এই পৃথিবীতে যে তাকে ভালোবাসে। টাকার অভাবের চেয়ে ভালোবাসার অভাব মানুষকে বেশী পোড়ায়।
#চলবে

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৫০

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৫০
জিয়ান নয়নার থুতনিতে হাত রেখে বলে, চলে যাবো মানে আমার ছুটিতো শেষ। যেতে হবে না?
“নয়নার মুডঅফ হয়ে গেলো! এটা কেমন কথা এতো তাড়াতাড়ি ছুটি শেষ?
” আমাদের ছুটিতো কম বেবি তবে তোমার সব কাগজ পত্র ঠিক করে তোমাকে পার্মানেন্ট ভাবে আমার সাথে নিয়ে যাবো।
“আপনি তো ককপিটে থকবেন আমি যেয়ে কি করবো!
” নয়নার গাল টেনে বলে, একদিন ফ্লাইট পরেরদিন রেস্ট এভাবেই আমাদের ডিউটি৷ যেদিন রেস্ট সেদিন তোমার আমার দিন।
“কিন্তু।
” কি গো খু্ব মিস করবে বুঝি আমাকে?
“নয়না উঠে দাঁড়ালো মিস করবো তবে একটু। এই চলুন তো ফুচকা খেয়ে আসি।
” আমি তো ফুচকা খাইনা বৌ।
“না খেলে খাবেননা আমি খাবো আপনি দেখবেন।
” আচ্ছা যাবো শর্ত হলো তোমাকে শাড়ি পরে বের হতে হবে।
“আচ্ছা এক্ষুনি চেঞ্জ করে আসি।
” জিয়ান নয়নার হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসলো,নয়নার এলোমেলো চুলগুলো কানের কাছে গুঁজে দিয়ে বলে,হটাৎ করে এসে একদম হৃদয় জুড়ে বসে আছো৷ নয়নার কপালে চুমু খেয়ে বলে,ভালোবাসি আমার পিচ্চি বৌটাকে।
“নয়না সরে এসে বলে,আমি মোটেও পিচ্চি না। কয়েকদিন পরে কলেজে ভর্তি হবো। সো পিচ্চি পিচ্চি করবেন না।
” জিয়ান নয়নার ঠোঁটের উপর আঙুল রেখে বলে,বড্ড বেশি কখা বলো তুমি। তুমি হলে আমার বাটার মাশরুম।
“দেরি হচ্ছে তো ছাড়ুন আমাকে।
” ইশশ রে নিব্বি বৌ আমার ধরায় আগেই ছোটার জন্য মোচড়ামুচড়ি করবে মাছের মত।
“নয়না একটু দূরে সরে যেয়ে বলে যাবোই না আপনার সাথে।
” আচ্ছা জান স্যরি এই কানে ধরছি আর বলবো না নিব্বি৷
“নয়না সোফায় বসলো কপট রাগ দেখিয়ে বলল আর একবার বললে,সোজা বাপের বাড়িতে চলে যাবো৷
“আমি থাকতে বাপের বাড়ি! তা হবে না। ঝগড়া হোক মারামারি কা’টাকা’ঠি যাহোক তবুও আমার কাছেই থকতে হবে। এতো কথা না বলে দ্রুত রেডি হও সময় নষ্ট হচ্ছে জান৷
” নয়না উঠে পেটিকোট আর ব্লাউজ নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
পেটিকোট আর ব্লাউজ পরে ওয়াশরুম থেকে বের হলো। আলমারি থেকে কলাপাতা রঙের একটা শাড়ি বের করে পরলো। চুলগুলো বিনুনি করে নিলো এরপর খোপা করলো। ম্যাচিং হিজাব পরলো, হাতে রেশমি কাচের চুড়ি৷ পরে বলে চলুন আমি রেডি। একি আপনি ভিডিও করছেন কেনো?
“আমি তোমাকে বড্ড মিস করবো বাটার মাশরুম। তখন একাএকা কি করবো?এসব থেকে মনটাকে শান্ত রাখবো।
” আহাগো ডিয়ার হ্যাসবেন্ড। আপনার যখনই আমার কথা মনে পরবে সোজা কল করবেন মনপ্রাণ ভরে কথা বলবো৷
“জিয়ান উঠে এসে নিজের চুল ঠিক করে নিয়ে বলে,তোমার সাথে কথা বলে এজন্মে মন প্রাণ ভরবে বলে তো আমার মনে হয় না। উল্টো তখন আরো তৃষ্ণা বাড়বে।জিয়ান হুট করে বলল,তোমার হাইট কত?
” পাঁচ ফিট দুই ইঞ্চি।
“জিয়ান নয়নাকে উঁচু করে ধরে বলে,অথচ বর পেয়েছো ছ’ফুটের। কপালে পাপ্পি দাও ডিয়ার ওয়াইফি।
” নয়না বলল,এখন দেয়া যাবেনা৷ এখন পাপ্পি দিলে আপনার কপালে লিপস্টিকের স্ট্যাম্প লেগে যাবে।সো ঝাপ্পি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন বাকিটা পরে হবে৷ নয়না জিয়ানে শার্টের বাটন ঠিক করে দিয়ে বলে,ব্ল্যাক আর কলাপাতা কালার দারুণ মানিয়েছে কিন্তু
“শাড়ী পরলেই মেয়েদের অদ্ভুত রকমের মায়াবতী লাগে! মনে হয় শাড়ী যেনো তোমাদের শোভা বর্ধন করার হাতিয়ার।শাড়ী এমন এক হাতিয়ার যা দিয়ে তোমরা আমাদের মত অবলা ছেলেদের হৃদয় কেড়ে নিতে পারো।
” অনেক বকবক করেছেন মিস্টার প্লেন ড্রাইভার। এখন চলুন তো তাড়াতাড়ি।
“তবে হাত ধরো। হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাই দু’জনে৷ তুমি আমি আর আমাদের এই পথচলা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হোক।
🌿জাহিন একটা সিগারেট ধরিয়ে দুই আঙুলের ফাঁকে ধরে,মুখ দিয়ে টেনে নিচ্ছে সিগারেটের ধোঁয়া।
“অন্তর জাহিনের হাত থেকে সিগারেটা নিয়ে নিজেও দু’টো টান দিলো।
” জাহিন সিগারেটে শেষ টান দিয়ে বলে,সিগারেটের মত বৌ ভাগ করা যায় না?
“শা’লা মুখ সামলে কথা বল সিগারেট আর বৌ কি এক!
” আরেহহ এক না আবার একই। দু’টোই নেশার মত কাজ করে।
“তোর কাছে এক মনে হলে তুই আরেকজনের সাথে ভাগাভাগি করিস। আমার বৌ আমার পার্সোনাল প্রপারটি আমি তাকে ভাগ তো দূরে থাক তার দিকে তাকালেও চোখ তুলে ফেলবো।
” হাইপার হচ্ছিস কেনো কথার কথা বললাস ইয়ার৷ আচ্ছা তোর বোনের কি অবস্থা? সুইসাইড করলো কেন?
“ওর অবস্থা বেশি ভালো না জানিনা কি হবে। হটাৎ করে কি এমন হলো সুইসাইড কেন করলো?
” চিন্তা করিস না সুস্থ হয়ে যাবে। সুস্থ হলে জেনে নিস৷
“জানিনা বেঁচে ফিরবে কিনা। আইসিইউ তে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে আমার চঞ্চল বোনটা। মৃত্যু আর জীবনের মাঝখানে।আচ্ছা মান্নাতের কেসের তদন্ত কতদূর এগোলো? তোকে দেখলাম মন্ত্রীর সাথে কথা বলতে?
” এই তো আগাচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি সব দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার ব্যবস্থা করবো।কথা বলতে বলতে জাহিন আরেকটা সিগারেট ধরালো।
“কি হয়েছে তোর? তুই তো কোন কিছু নিয়ে টেনশনে না থাকলে এতো সিগারেট খাস না।
” সিগারেটের পাওয়ার হলো ধোঁয়ার সাথে সব কষ্ট উড়িয়ে দিতে পারে৷ তবে জানিস ভালোবাসাও কিন্তু সিগারেটের চেয়ে কম না৷ আমরা জানি তাতে ক্ষতি তবুও ভালোবেসে ভুল করি৷ ঠিক সিগারেট যারা খায় সবাই জানে এর ক্ষতিকারক দিক।
“তোর কি হলো হঠাৎ? তুই ভালোবাসার কথা বলছিস? প্রেমে ট্রেমে পরিস নি তো?
” উঁহু জাহিন চৌধুরীর লাইফে প্রেম নিষিদ্ধ। তুই কেনো ডাকলি আমাকে?
“জাহিন আমি রিতুর সুইসাইডের মত ডিসিশন নেয়ার কারন জানতে চাই। আমার বোন মাত্র কলেজে পড়ে সে কেনো এতো বড় একটা পদক্ষেপ নিবে? এরজন্য তোর সাহায্য চাই।
” আচ্ছা টেনশন করিস না রিতু ঠিক হয়ে যাবে। আমি দেখছি বিষয়টা কিভাবে হ্যান্ডেল করা যায়। চল হসপিটালে যাই রিতুকে একবার দেখে আসি৷
“জাহিন আর অন্তর বাইক নিয়ে বের হয়ে গেলো হসপিটালের উদ্দেশ্যে
🌿অনিকেত চেম্বার থেকে বের হয়ে এতিমখানায় আসলো।
জামাল সাহেবের সাথে দেখা করে বলল,আচ্ছা আঙ্কেল আমাকে এখানে কে রেখে গিয়েছিলো?
” জামাল সাহেব অনিকেতের দিকে তাকিয়ে বলে,এতোদিন পর হঠাৎ এই কথা কেনো বাবা?
“আঙ্কেল আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে৷ কে আমার বাবা, মা তারা কেনই বা আমাকে ফেলে রেখে গেলো? আমার দোষটা কোথায়?
” জামাল সাহেব লাঠি ভর দিয়ে উঠে গেলেন৷ এরপর ফিরে এসে বললো,এক ভদ্র মহিলা তোমার বয়স যখন দু’দিন বা এক সপ্তাহ তখন এখানে রেখে যায়। আমি আর তোমার চাচি দু”জনেই তখন এখানে নতুন। চেহারা ঠিকমতো মনে নেই তবে দেখে মনে হয়েছিলো বড়লোক বাড়ির মেয়ে হবে৷ জিজ্ঞেস করলাম এতো ফুটফুটে বাচ্চাটাকে ফেলে রেখে যাচ্ছেন!
“মেয়েটা কান্না করতে করতে বলল,আমি অভাগা। জানিনা বড় হয়ে এই সন্তান কোনদিন আমাকে ক্ষমা করবে কি না। তবে তাকে বলে দিয়েন তার মা অসহায়। তার মা’কে যেনো ক্ষমা করে দেয়।
” তারপর কোনোদিন আর আমার খোঁজ করতে আসেনি?
“এসেছিলো ছয়মাস পর্যন্ত আসতো। সে তখন ভার্সিটিতে পড়ালেখা করে। এসে এমে তোমাকে খাইয়ে যেতো। মুখ ঢাকা থাকতো শুধু চোখ দুটো দেখতাম। শরিফ স্যারের কাছে টাকাও দিয়েছিলো অনেক৷ তোমারে রাখার জন্য।
” তারপর আর কোনদিন আসেনি?
“নাহহ বাবা আর কোনদিন দেখিনি তাকে এই আঙিনায়। তয় আমার কি মনে হয় জানো?
” কি মনে হয় আঙ্কেল?
“মনে হয় প্রেম ঘটিত জটিলতা আছিলো তোমার মায়ের। বুঝোই তো উঠতি বয়সি মাইয়া আবিয়াইত্তা সমাজ কি হেরে মাইনা নিবো? সবাই কইবো না এই সন্তান কার? মনে হয় হের প্রেমিক হেরে ধোঁকা দিছে এরজন্য তোমারে রাইখা গেছে নিরুপায় হইয়া।
” আমি কি তার নাম জানতে পারি?
“শামসুন্নাহার নাম কইছিলো তোমার চাচির কাছে।আমারেও তিনলাখ টাকা দিয়া কইছিলো তোমার যেনো আদর যত্নে রাখি।
” অনিকেতের পা অবশ হয়ে আসছে। ইচ্ছে করছে একবার তার মা”কে জড়িয়ে ধরতে একবার তার কোলে মাথা রাখতে আচ্ছা মায়ের শরীরে গন্ধ কেমন হয়? মায়ের শরীরে নাকি মা মা গন্ধ থাকে আঁচলে থাকে সন্তানের জন্য ভালোবাসা। আমি একবার সেই অনুভূতি পেতে চাই মা৷
#চলবে
ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন৷ আজকে রিচেক করা হয়নি৷