Wednesday, June 18, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 7



তুমি আমার মা পর্ব-০২ এবং শেষ পর্ব

0

তুমি_আমার_মা
ফারহানা_কবীর_মানাল
শেষ পার্ট

আমি কিছু বলার আগে মা আমাকে ইশারায় চুপ থাকতে বললেন। আমি মা’কে উদ্দেশ্য করে বললাম, ” আচ্ছা মা তোমার নামে যে এসব বলছে একটা কথারও কি প্রতিবাদ করতে পারো না তুমি? চুপ করে থেকে এসব সত্যি কেন প্রমাণ করছো? ”

দাদি হুংকার দিয়ে বললেন, ” সত্যি সত্যি বলছে তাই চুপ করে আছে। যদি সত্যিই এসব না বলবে তাহলে মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকবে কেন? ”

আব্বু দাদিকে বললো, ” আচ্ছা মা, তুমি একটু চুপ করো। কি হয়েছে আমি দেখছি। ”

হঠাৎ করে রহিমা কাকি বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে লাগলেন। অন্যের ঘরে আগুন লাগতে গিয়ে নিজে এমন ফেঁসে যাবে বুঝতে পারেনি হয়তো। আমি উনাকে ডাকতে গেলে আব্বু ইশারায় ডাকতে নিষেধ করলেন। আমি আর কিছু না বলে চুপচাপ নিজের ঘরের দিকে চলে গেলাম। আমি রহিমা কাকিকে কোনো প্রকার গালাগালি করিনি। একটা বাজে কথাও বলিনি। শুধু বলেছিলাম যে, ” মায়ের ব্যাপারে দাদিকে কি বলেছেন?’ এই সামান্য একটা কথা নিয়ে কতকিছু করলেন উনি। আব্বু আমাকে মারেনি এইটা আমার কপাল ভালো। সেদিন রাতে বাড়ির পরিবেশ একদম শান্ত। মনে হচ্ছে ভুতের বাড়ি এটা। একটা পিন পড়লেও হয়তো বোমা পড়ার মতো আওয়াজ হবে! অথবা বাতাস হলেই নিরবতার চাদর ছিঁড়ে যাবে৷ এসব শুধুই আমার কল্পনা। নির্ঘুম চোখে সারা রাত শুয়ে রইলাম। বাড়ির দক্ষিণ কোণের মসজিদ থেকে ফজরের আজানের শব্দে মনে হলো সকাল হয়ে গিয়েছে। রাতের সকল অন্ধকার কেটে গিয়ে আশার আলো ফুটে উঠেছে সারা পৃথিবীতে। বিছানা থেকে উঠে নামাজ পড়ে নিলাম। তারপর রাস্তায় হাঁটতে বের হলাম। সকালে আবহাওয়া বড্ড মধুর লাগে আমার কাছে।
সকালবেলা থেকে বাড়ির পরিবেশ একদম স্বাভাবিক। মা চুলার পাশে বসে বসে সবজি কাটছে আর ফুফু মায়ের কাজে সাহায্য করছে। কারো মুখে কোনো কথা নেই। কাল রাতে এতো কান্ড ঘটছে এখন কেউ বুঝতেই পারবে না।

বাড়ির শান্ত পরিবেশটা হঠাৎ অশান্ত হয়ে উঠলো রহিমা কাকি বাড়িতে আসার কারণে। তিনি সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করার সময় চিৎকার করে বলতে লাগলো ” ভাইজান দেখেন, ফাতেমা আপাকে নিয়ে এসেছি। উনার কাছ থেকেই শোনেন কি হয়েছে!”

কাকির চিৎকার শুনে আব্বু ঘর থেকে বেরিয়ে আসলেন। সাথে আমরা সকলেও গেলাম। আব্বু অন্যদিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন, ” কি হয়েছে? আপনি কি বলবেন?”

রহিমা কাকি ফাতেমা কাকিকে উদ্দেশ্য করে বললো, ” এ বল কাল ফয়সালের মা কি বলেছিল!”

ফাতেমা কাকি একবার সকলের দিকে তাকালেন। তারপর সকলকে অবাক করে দিয়ে বললেন, ” কাল ফয়সালের মা শাড়ির কথা কিছুই বলেনি। রহিমা আপাই শুরু করেছিলো যে তোমার ননদকে দেখলাম নতুন শাড়ি পরা। তা তোমার শাড়ি কোথায়? নাকি তোমাকে শাড়ি কিনে দেয়নি? তখন ফয়সালের মা বলেছিলো যে, ভাই বোনকে কি কিনে দিলো না দিলো তা নিয়ে মাথা ঘামিয়ে আমার কি কোনো লাভ আছে! আমাকে সুখে রাখে এটাই অনেক। ”

রহিমা কাকি ফাতেমা কাকিকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। হয়তো ভাবতেও পারেনি কাকি তার বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবে। রহিমা কাকি কর্কশ গলায় বললো, ” কি রে ভাবি আমি আপনাকে নিয়ে এলাম সব খুলে বলতে আর আপনি আমার বিপক্ষে কথা বলছেন?”

ফাতেমা কাকি মুচকি হেসে বললেন, ” তোমার মন রাখতে গিয়ে আজ মিথ্যা বললে কাল কেয়ামতের দিন আমি আল্লাহর কাছে কি জবাব দিবো? আমি যা শুনেছি তাই বলেছি। আজ কারো মন রাখতে গিয়ে মিথ্যা বলে নিজেকে মিথ্যাবাদী প্রমাণ করতে চাই না আমি।

ফাতেমা কাকির কথা শুনে দাদির মুখটা শুকিয়ে গেছে। রহিমা কাকি রীতিমতো ঘামছে। এলাকার সকলেই আব্বুকে রাগী বলে জানে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে আব্বু রহিমা কাকিকে বললেন, ” আপনি যা করেছেন ভালোই করেছেন। আর প্রয়োজন নেই। আপনি এখন আসতে পারেন।

আব্বুর মুখে এমন কথা শুনে রহিমা কাকি তড়িঘড়ি করে আমাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলেন। উনি চলে গেলে আব্বু মা’কে বললো, ” এতোটা সহজসরল হওয়াটাও ভালো না। ”

মা কিছু না বলে নিজের কাজ করতে গেলেন। সকলে চলে যাওয়ার পর আব্বু দাদির কাছে গিয়ে বসলেন। তারপর দাদির কি অবস্থা সব জানতে চাইলেন। মা ছেলে খুব ভালো ভাবে কথা বলছে। আমিও সেখান থেকে চলে গেলাম। আর ভাবতে লাগলাম আমি আমার মা’কে ঠিক শাড়ি কিনে দিবো। কিন্তু এখন যদি টিউশন পড়াতে যাই তাহলে টাকা পেতে মাস পেরিয়ে যাবে। অল্প কয়েকদিনের ভিতর টাকা রোজকার হবে এমন কোনো কাজ করতে হবে। কলেজে গিয়ে বন্ধুদের সাথে কথা বলে দেখতে হবে। আল্লাহকে বারবার বলতে লাগলাম যেন একটা রাস্তা বের করে দেয়। কিন্তু কি করবো কিছুতেই মাথায় আসছে না। কলেজে গিয়ে আমার কয়েকটা বন্ধুকে বললাম যে, ” দোস্ত শোন। আমার অনেক ইচ্ছে করছে মা’কে একটা শাড়ি কিনে দিবো নিজের টাকায় কিন্তু কি করে দিবো বল তো। হাতে কোনো টাকাই নেই।

আমার কথা শোনার পর আমার একটা বন্ধু বললো, দোস্ত আমরা সবাই মিলে যদি কোনো কাজ করি তাহলে কেমন হয়? কাজের পরে সকলে টাকা ভাগ করে নিলাম। এ ছাড়া কোনো কাজই ছোট নয়। মজার ছলেই না হয় কোনো কাজ করলাম।

ও-র কথা শুনে অন্য বন্ধু বলে উঠলো, ” হ্যা চল আমরা সবাই মিলে কোনো কাজ করবো তারপর সকলে মায়ের জন্য উপহার কিনে নিয়ে যাবো। জানিস তো গতমাসে মা’কে একটা চকলেট কিনে দিয়েছিলাম। গতকাল মায়ের ডাইরির ভিতরে সেই খোসাটা পেয়েছি। আসলে সন্তানরা মা’কে কোনো উপহার দিলে মায়েদের কাছে তা হিরার থেকে বেশি মূল্যবান হয়।

বাকিরাও ওদের কথায় সম্মতি দিলো। আমরা একসাথে ছয়জন বন্ধু থাকি। একটা গ্রুপের মতো আর কি! কেউ কাউকে ছাড়া কোনো কাজের সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। সকলে রাজি হলেও কি কাজ করবো তা ঠিক করতে পারলাম না। আসলে আমরা কোনো কাজ করতে অভ্যস্ত নই। সকলেই বাবা মা’র আদরের সন্তান। সকলেই যখন চিন্তার সাগরে ডুবে আছি। তখন আশার আলো খুঁজে পেলাম আামদের এক স্যারের কথায়! স্যার ক্লাসের পরে আমাদের ডেকে নিয়ে বললেন, ” বাবারা তোরা ক্লাসের ভিতর খুব ভালো ছেলে। তোদের একটা কাজের দায়িত্ব দিতে চাই। কলেজের সামনের ফাঁকা জায়গাটায় একটু ফুল বাগানের মতো করতে চাইছিলাম। তোমরা যদি দায়িত্ব নিয়ে কাজটা করে দিতে তাহলে খুব ভালো হতো। ”

স্যারের কথা শুনে আমার এক বন্ধু বললো, ” স্যার আমরাই বাগান করে দিবো আপনার শুধু আমাদের মিষ্টি খাওয়ালেই হবে। ”

স্যার মুচকি হেসে বললো, ” তাহলে তো খুব ভালো হয়। তোমরাই কাজটা করো। ”

স্যারের সাথে কথা বলার পর কুরআন শরীফের একটা একটা আয়াত মনে চলে আসলো। আল্লাহ কুরআন শরীফে বলেছেন, –” বলো, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেন। নিশ্চয় তিনি অতি ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।’ (সুরা ৩৯ জুমার, আয়াত: ৫৩)।

এবং আরো বলেন, আল্লাহর সাহায্যে অতিনিকটে।
নিমেষেই মনটা খুশিতে ভরে গেলো। চারপাঁচ দিনের মধ্যে কলেজের সামনের ফাঁকা জমিটা পরিষ্কার করে তাতে গাছ লাগিয়ে দিলাম। ফাঁকা হলেও জমিতে প্রচুর আগাছা ছিলো। কাজ শেষ হওয়ার পর স্যার আামদের পাঁচ হাজার টাকা দিলেন। আমরা স্যারকে অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম, ” স্যার এতো টাকা কেন দিলেন?”

স্যার মুচকি হেসে বললো, ” তোমরা ছোট বলে তোমাদের ঠকাবো কেন? জায়গাটা তো আমি দেখেছি, ওখানে বাগান করতে তোমাদের বেশ খাটতে হয়েছে। জানো তো বাবারা জেনে বুঝে কাউকে ঠকানো উচিত নয়। আজ তুমি একজন ঠকিয়ে যদি মনে করো তুমি জিতে গেছো তাহলে ভুল ভাবছো। কারো হক নষ্ট করা কোনো মানুষের কাজ নয়। ”

আমরা সকলেই স্যারের কাজে বেশ অবাক হলাম। এখনো পৃথিবীতে ভালো মানুষ আছে তা এসব লোকদের দেখলে বোঝা যায়। টাকগুলো নিয়ে সকলে মার্কেটে চলে গেলাম। ছয় মিলে অনেক দামাদামি করে পাঁচ হাজার টাকায় ছয়টা শাড়ি কিনলাম। তারপর ছয়জনে ভাগ করে নিলাম। এখন আমার হাতে খুব সুন্দর একটা শাড়ি। শাড়িটা নিয়ে মা’কে দিতে পারলে মা অনেক খুশি হবে। মায়ের হাসি মুখটা বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। রাস্তায় কোথাও সময় নষ্ট না করে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। আজ কেন জানি রাস্তাটা শেষ হচ্ছে না। বাড়ির প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছি আর মাত্র পাঁচ মিনিট লাগবে বাড়ি পৌঁছাতে, সীমাহীন উত্তেজনা কাজ করছে আমার মধ্যে। হঠাৎ করে প্রচন্ড জোরে কেঁপে উঠলাম। এতো সময় দুইহাতে শক্ত করে ধরে রাখা শাড়িটা আমার থেকে কয়েক হাত দূরে ছিটকে পড়লো। একটা বড় ট্রাকের চাকাগুলো আমার শরীরের উপর দিয়ে চলে গেলো। মনে হলো আমার সব হাড় গু’ড়ো হয়ে গেছে। অনুভব করলাম মৃ’ত্যু য’ন্ত্র’ণা! র’ক্তা’ক্ত শরীর থেকে আ’ত্মা এই বুঝি চলে যায়। শেষবারের মতো তাকিয়ে দেখলাম মায়ের জন্য শখ করে কেনা শাড়িটা মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। খুব ইচ্ছে করলো শাড়িটা তুলে ধূলোগুলো ঝেড়ে ফেলতে কিন্তু তার আগেই আঁখিদ্বয় চিরতরে বন্ধ হয়ে গেলো। কখনো কখনো সামান্য দূরত্ব হয়ে উঠে সীমাহীন। যা পার করার সাধ্য আমাদের কারো হয়ে ওঠে না। জানি না মায়ের জন্য কেনা সবুজ শাড়িটা মা পেয়েছিলো কিনা! শাড়িটা বুকে জড়িয়ে চিৎকার করে আমার নাম ধরে ডেকেছিলো কিনা। যেখানে আমি মা’কে সবুজ শাড়িটা উপহার দিতে চাইলাম সেখানে অন্য লোকেরা আমার রক্তাক্ত ক্ষ’ত’বি’ক্ষ’ত শরীরটা মা’কে উপহার দিলো। জানি না মা কেঁদে ছিলো নাকি স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলো। শুধু জানি তুমি আমার মা! আমাকে হারানোর কষ্ট সবাই ভুলে গেলেও তুমি কখনো ভুলতে পারবে না। তুমি যে মা। মা তোমার সন্তান তোমার কোল খালি করে চলে যাচ্ছে, তুমি দোয়া করো আল্লাহ যেন জান্নাতে আমাদের দেখা করিয়ে দেয়। তখন তোমার হাতে একটা সবুজ রঙের শাড়ি তুলে দিয়ে বলতে পারি, তুমি আমার মা। আমি থাকতে তোমার কোনো ইচ্ছে কি অপূর্ণ থাকতে পারে নাকি! আব্বু তোমাকে শাড়ি দেয়নি তো কি হয়েছে, তোমারও তো সন্তান আছে। সে তোমার ইচ্ছেগুলো পূরণ করবে।

সমাপ্ত

তুমি আমার মা পর্ব-০১

0

সূচনা পর্ব
তুমি_আমার_মা
ফারহানা_কবীর_মানাল

গতমাসে আব্বু যখন মা’কে বাদ দিয়ে শুধু দাদি আর ফুফুকে শাড়ি কিনে দিয়েছিলো মা তখন শাড়ি দুইটার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। মায়েরও শাড়ি নিতে ইচ্ছে করেছিল কিনা ঠিক বলতে পারবো না। তবে শাড়ির রঙটা মায়ের মনকে বারবার আকর্ষণ করছিলো এটা আমি শতভাগ নিশ্চিত । মা বরাবর অন্যদের থেকে আলাদা জিনিস পছন্দ করে। সে সুবাদে মায়ের সবুজ রং বড্ড পছন্দের। আর আব্বু দাদি আর ফুফুকে যে শাড়ি দুইটা কিনে দিয়েছিলো তার দুইটাই সবুজ রঙের। একটা নীড় পাড়ে সবুজ শাড়ি অন্যটা মাঝে হলুদ ছোপ ছোপ রং লাগানো। খুব দামী না হলেও শাড়ি দুইটা দেখতে বড্ড নজরকাড়া। দাদি আর ফুফু শাড়ি পেয়ে বা নিজের বোন আর মা’কে শাড়ি দিতে পেরে বাবা, দাদি আর ফুফুর হাসি মুখের মাঝে মা’য়ের মুখটা কেন যেন আমার মনে বড্ড বিঁধে গেলো। আব্বু চাইলেই মা’কেও শাড়ি কিনে দিতে পারতো কিন্তু তা না করে নিজের মা বোনকে কিনে দিয়েছে। মা অবশ্য এই ব্যাপারটা নিয়ে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না বা মায়ের মুখটাও বিন্দু মাত্র মলিন হলো না। তবে আমার চোখের সামনে মায়ের শাড়ির দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকাটা বারবার ভেসে উঠছিলো। নিজের টাকায় মা’কে শাড়ি কিনে দেওয়ার সামর্থ্য আমার এখনও হয়নি। সবে মাত্র এইচএসসি পরীক্ষা দিবো। বাড়ি থেকে কলেজে যাওয়ার টাকাটাও প্রতিদিন মা বাবর কাছ থেকে হাত পেতে নিতে হয়। কখনো কখনো কিছু টাকা জমালেও এখন আমার হাত একদম ফাঁকা।

এমন সাতপাঁচ চিন্তার মাঝে মায়ের গলা শুনতে পেলাম। মা আমাকেই ডাকছে। আমার নাম ধরে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলছে, ” কি রে কত রাত হয়ে গেলো খেয়াল আছে তোর। ফয়সাল খেতে আয় তাড়াতাড়ি। ”

আমাদের বাড়িতে সকলেই একসাথে বসে খাবার খায়। বিশেষ করে রাতের বেলা। কারণ এইসময়ে আব্বু বাড়িতে থাকে। খুব উচ্চবিত্ত পরিবার না হলেও আমাদের অভাব বলতে তেমন কিছু নেই। আর অভাব থাকলেও হয়তো সকলের চাহিদা সীমিত বলে অভাবটা তেমন চোখে পড়ে না। আমরা দুইভাই বোন। বোনটা বড়, তাই ও-কে বিয়ে দিয়ে বাড়ি থেকে বিদায় করেছি অনেক আগে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত ভালো ভালো খাবারে নিজের ভাগটা ছাড়েনি। ভালোকিছু রান্না হলেই মা টিফিনবাক্স ভরে মেয়ের জন্য পাঠিয়ে দেয়। মাঝে মাঝে কলেজের ফাঁকে আমিও ও-কে চানাচুর মুড়ি মাখা, বাদাম এসব কিনে দিয়ে আসি। আপুও আমার পছন্দের খাবার রান্না করলে আমার জন্য পাঠিয়ে দেয়। মাঝে মাঝে হাতের ভিতর দশ পাঁচ টাকার নোট গুঁজে দিয়ে বলে কলেজে যাওয়ার সময় কিছু কিনে খাস। আপুর বিয়ে হওয়ার পর থেকে বাড়িতে আমরা চারজন সদস্য। আমি আব্বু, মা, দাদি আর ফুফু। ফুফুর স্বামী মারা গেছে পাঁচ বছর হলো। ছেলেমেয়ে কেউ না থাকায় আমাদের বাড়িতেই থাকে। মা বাবা কখনো ফুফুর থাকা নিয়ে কোনো অভিযোগ করেনি। সংসারে ইনকাম করার লোক বলতে শুধু আব্বু। একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। মাস গেলে পঁচিশ হাজার টাকা বেতন পায়। আজকালকার বাজারে এই টাকা দিয়েও আমাদের দিব্যি ভালোভাবে মাস পার হয়ে যায়।

রাতের খাওয়া শেষ করে সকলে ঘুমাতে যাবো। এমন সময় দেখলাম টেবিলের উপর আব্বুর মোবাইলটা পড়ে আছে। রাতে কারো প্রয়োজনীয় কল আসতে পারে ভেবে ফোনটা নিয়ে আব্বুর ঘরের দিকে হাঁটা দিলাম। আব্বু আম্মুর রুমটা বারান্দার পাশে একদম। রুমের সামনে যেতেই আব্বু গলা কাবে আসলো। হয়তো মা’কে কিছু বলছে। ঘরের দরজার সাথে আমার দূরত্ব কমতেই আবৃবু কথা স্পষ্ট শুনতে পেলাম। আব্বুকে মা’কে বলছে যে, ” তাহেরা তুমি তো জানো জিনিসপত্রের দাম যে ভাবে বাড়ছে তাতে মাস শেষ সংসারে টানাটানি পড়ে যায়। তোমাকে শাড়ি কিনে দিতে পারিনি বলে তুমি মন খারাপ করো না। সামনের মাসে বেতন পেলে আমি তোমাকে শাড়ি কিনে দিবো। ”

মা’য়ের উত্তরটা শোনার জন্য আর দরজার কড়া নাড়লাম না। চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। যদিও কারো কথা লুকিয়ে শোনা উচিত নয়৷ তবুও ওদের কথার মাঝে বাঁধা হতে ইচ্ছে করলো না।

ওপাশ থেকে শুনতে পেলাম মা শান্ত গলায় বলছে, ” আমার অনেক শাড়ি আছে। তোমাকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না। অনেক শাড়িই তো কিনে দেও তুমি আমাকে। মা’য়ের বয়স হয়েছে এখন একটু সাজগোছ করলে মন ভালো থাকবে। আর আপার তো সবসময়ই মন খারাপ থাকে। এতো অল্প বয়সে স্বামী হারিয়ে গেছে। এসব পেলে যদি মনটা একটু ভালো হয়। অনেক রাত হয়েছে তুমি ঘুমিয়ে পড়ো। সকালে আবার কাজে দৌড়াতে হবে। ”

একজন প্রকৃত জীবনসঙ্গী হতে গেলে কতটা আত্মত্যাগ করতে হয় তা আজ মায়ের কথায় স্পষ্ট বুঝতে পারলাম। কিছুসময় দাঁড়িয়ে থেকে আব্বুকে ডাক দিলাম। যদিও দরজা খোলা। আমি চাইলেই ভিতরে গিয়ে ফোনটা দিয়ে আসতে পারি কিন্তু রুমের ভিতরে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করা উচিত নয়।
আব্বু আমার ডাকে সাড়া দিয়ে বাইরে আসলো। আমি আব্বুর হাতে ফোনটা দিয়ে নিজের ঘরে চলে এলাম। আব্বু নয় আমিই এবার মা’কে শাড়ি কিনে দিবো। কিন্তু কি করে! কাছে তো কোনো টাকা নেই। কলেজের নাম করে টাকা চাইলে হয়তো ওরা টাকা দিয়ে দিবে কিন্তু চুরি করে যেমন দান করা উচিত নয় তেমনি মিথ্যা বলে টাকা নিয়ে উপহার কিনে দেওয়াটাও বাঞ্ছনীয় নয়।

সারারাত চিন্তা করেও কোনো উপায় বের করতে পারলাম না। কোথা থেকে টাকার জোগাড় করবো। খুব দামী শাড়ি না হলেও সাত আটশো টাকার নিচে কোনো ভালো শাড়ি পাওয়া যাবে না।
সকালে খাওয়ার সময় লক্ষ্য করলাম মা বারবার ফুফুর শাড়ির দিকে দেখছে। হয়তো অনেক পছন্দ হয়েছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষদের জীবনের ইচ্ছেগুলো একটা কথাই আটকে যায় তা হলো থাক লাগবে না। মায়ের ক্ষেত্রেও হয়তো তাই। সকালের খাওয়া শেষ করে নিজের কাজে চলে গেলাম। কিন্তু কিছুতেই কিছু ভালো লাগছে না। কি করে টাকা জোগাড় করবো! আব্বু কি মাসে পঁচিশ হাজার টাকা বেতন পেয়ে তিনটা শাড়ি কিনতে পারতো না? মা’কে বলদ পেয়ে হয়তো যা খুশি বুঝিয়ে দিয়েছে হয়তো। সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফিরে দেখলাম মা মন খারাপ করে বসে আছে। আমি কাছে গিয়ে প্রশ্ন করলাম, ” মা কি হয়েছে তোমার? মন খারাপ করে বসে আছো কেন? ”

মা কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইলেন। আমার গলার আওয়াজ পেয়ে দাদি ঘর থেকে বের হয়ে আসলো। দাদির মুখটাও ভার ভার৷ আমি শান্ত গলায় দাদিকে প্রশ্ন করলাম, ” কিছু হয়েছে নাকি? ”

দাদি বিলাপ করে বলে উঠলো, ” আমার সবহারা মেয়েটাকে একটা শাড়ি কিনে দিয়েছে ছেলেটা, তাই তোর মার চোখে সহ্য হয়নি। ওই বাড়ির রহিমাকে বলেছে, তার স্বামী নাকি সব মা বোনকে দিয়ে দেয়। তোর মা’কে নাকি কিছুই পায় না। ”

আমি দাদির কথা শুনে মায়ের মুখের দিকে তাকালাম। মা চুপ করে বসে আছে। একদম স্তব্ধ হয়ে গেছে যেন। আমি শান্ত গলায় দাদিকে উদ্দেশ্য করে বললাম, ” তুমি কি নিজপর কানে মা’কে এই কথা বলতে শুনেছো?”

দাদি মাথা নাড়িয়ে না সূচক জবাব দিলো। তারপর বলে উঠলো, ” রহিমা মেয়েটা বড্ড ভালো। মাঝে মাঝে আমার খোঁজ নিতে আসে। ও কি আমাকে মিথ্যা বলবে নাকি?”

ঘরের লোকের থেকে বাইরের লোককে বেশি ভরসা করাটা আমার কোনো কালেই পছন্দ না৷ দাদির এমন কথা আমার মেজাজটাকে বিগড়ে দিতে যথেষ্ট হলো। আমি কর্কশ গলায় বললাম, ” তোমার রহিমা যদি সত্যি তোমার ভালো চাইতো তাহলে তোমার সংসারে কুট কাঁচালি লাগাতো না। রহিমা খোঁজ নেয় বলে মেয়েটা অনেক ভালো, তিনবেলা যে আমার মায়ের রান্না গাণ্ডেপিণ্ডে গিলছো তাতে কিছু না? মা তো তোমাদের কখনোই কিছু বলে না। তোমার রহিমা তো শশুর শাশুড়ির সাথে দুইমাসও থাকতে পারেনি। ”

মা এতো সময় চুপ করে থাকলেও এবার আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো। তারপর কড়া গলায় বললো, ” আমি কি তোমাকে এই শিক্ষা দিয়েছি যে বড়দের মুখে মুখে তর্ক করো?”

আমি মা’য়ের দিকে তাকিয়ে বললাম, ” তোমার এই ভালোমানুষির সুযোগ নিয়ে সকলে তোমাকে নানান কথা শোনায়। তুমি এতোটা ভালো না হলেও পারো মা। ”

মা আর কিছু বললো না। রাতের বেলা আব্বু বাড়িতে আসলে রহিমা কাকি দৌড়ে আব্বুর কাছে আসলেন। তারপর কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন,” ভাইজান আপনার পোলাডা আমাকে কিসব বিশ্রী ভাষায় গালাগাল দিয়েছে। ফাতেমা আপাও তখন সেখানে ছিলো। ”

সারাদিন কাজের পরে আব্বুর মেজাজ বরাবর চড়া থাকে। রহিমা কাকির কথায় আব্বু যেন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। আমাকে উদ্দেশ্য করে রাগী গলায় বললেন, ” এইসব কি বলছে উনি,?”

আমি শান্ত গলায় বললাম, ” আমি উনাকে কথা শুনিয়েছি কারণ উনি দাদিকে মায়ের নামে মিথ্যা বলেছে। আর তাই নিয়ে দাদি মা’কে অনেক কথা শুনিয়েছেন। ”

আব্বু অগ্নি দৃষ্টিতে মা’য়ের দিকে তাকালেন। তারপর শান্ত গলায় রহিমা কাকিকে বললেন, ” আমার ছেলের হয়ে আমি আপনার কাছে মাফ চাচ্ছি। ”

দাদি আফসোস করে বলে উঠলো, ” ছেলেটাকে মানুষ করতে পারলাম না। আজ আমাদের এইদিন দেখতে হচ্ছে! ”

আমি কিছু বলার আগে মা আমাকে ইশারায় চুপ থাকতে বললেন।

চলবে

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৫১

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৫১

হাতে হাত রেখে রাতের শহর উপভোগ করছে জিয়ান নয়না৷ নয়নার হাতে একগুচ্ছ হলুদ গোলাপ, হলুদ গোলাপের মাঝখানে একটা টকটকে লাল গোলাপ।
“জিয়ান বলল,তোমার হৃদয়ে ওই লাল গোলাপের মত আমার জায়গা। সবার মাঝে থেকেও আমি ভিন্ন৷ তোমার হৃদয়ের চাঁদ আমি।”
“আপনি কি জানেননা হৃদয়ে সবাই থাকে না। হৃদয়ের মানুষ ছাড়া হৃদয়ে কারো জায়গা হয়না৷ বড্ড বোকা আপনি৷”
“তুমি আমাকে আপনি করে বলবা না। আমি তোমার একান্ত ব্যাক্তিগত তুমি।”
“পুরুষ মানুষ প্রেমে পরলে বোকা হয়ে যায়। কথাটা কি সত্য?”
“তা তো জানি। তবে তুমি তাকালেই আমি হয়ে যাই বোকা।আমার পৃথিবী যেনো থমকে যায় তোমার চাহনিতে। কি আছে তোমার এই আঁখি দুটিতে?”
“আফিম আছে। তাই আমার সাথে দৃষ্টি মেলানোর আগে সাবধান।”
“তোমার চাহনিতে যদি আফিম থাকে আমি সে নেশায় নেশাগ্রস্ত হতে রাজি৷ একবার না বহুবার শতবার।”
নয়না শাড়ীর কুচি ঠিক করছে। জিয়ান হাঁটু মুড়ে বসে পরলো,নয়নার হাত সরিয়ে দিয়ে নিজের হাতে ঠিক করতে লাগলো নয়নার কুঁচি। রাস্তায় কত মানুষ চলাচল করছে তারা বাঁকা চোখে তাকিয়ে দেখছে।
“কি করছেন সবাই দেখছে তো?”
“লোকে দেখলে দেখুক আমার। আমার বৌ আমার দ্বায়িত্ব, আমার ভালোবাসা৷ তার এতোটুকু কাজ করবো না! লোকে পাগল বলুক তবুও আমি তোমায় ভালোবাসবো।”
“ইশশ ভালোবাসার জন্য বাসায় আমাদের রুম আছে তো।”
“রুমের মধ্যে ভালোবাসায় চাহিদা থাকে৷ এই ভালোবাসায় যত্ন আছে। আমি শুধু রুমের মধ্যে ভালোবাসবো আর বাহিরে বৌকে পাত্তা দেবো না এমন মোটেই হবে না। দরকার পরলো তোমাকে কোলে তুলি নিয়ে হাঁটবো৷”
“হয়েছে চলুন ফুচকা খাবো।”
“এভাবে বললে নড়বো না।”
“চলো ফুচকা খাবো।”
“যো হুকুম মেরি রানী।”

এক প্লেট ফুচকা নিয়ে নয়না খাচ্ছে। জিয়ান নয়নার দিকে তাকিয়ে আছে। আচ্ছা ভালোবাসার মানুষের প্রতিটি কাজ এতো মনোমুগ্ধকর কেন? মনে হয় আমি ফুচকা খাওয়া না, পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য দেখছি। ভালোবাসা মানুষকে এক অন্য রকম অনূভুতির জগতে নিয়ে যায়। নয়না জিয়ানের মুখের সামনে একটা ফুচকা ধরে বলে, “এভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন?”
“দেখছি আমার বৌ ফুচকা খাচ্ছে এরচেয়ে সুন্দর দৃশ্য কি আছে!”
“আপনি বড্ড বেশি কথা বলেন৷ নিন হা করুন তো৷”
জিয়ান হা করে ফুচকা মুখে নিলো।

দূর থেকে দাঁড়িয়ে জাহিন এই দৃশ্য দেখলো। একটা কেসের ইনভেস্টিগেশন করতে বের হয়ে ছিলো জাহিন। এমন দৃশ্য দেখে থমকে দাঁড়ালো। তার মনে হচ্ছে সামনের মানুষ জিয়ান কেনো হলো। সে কেনো হলো না। হঠাৎ নিজের মধ্যে ফিরে এসে বলে, ছিহহহ জাহিন সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রমনী সম্পর্কে তোর ভাবি৷ তোর চিন্তা ভাবনা এতো জঘন্য হতে পারে না। জাহিন কিছুটা সামনে এগিয়ে গেলো নিজের গন্তব্যের দিকে তবে কিছু একটা ভেবে আবার ফিরে আসলো৷ এসে দেখে জিয়ান আর নয়না নেই। জাহিন বাইক রেখে সামনে হাঁটা শুরু করলো। দেখতে না পেয়ে ফিরে এসে আবার বাইক স্টার্ট দিলো।

নয়না ফুচকার প্লেট টুলের উপরে রেখে নিজে উঠে দাঁড়ালো টুলের উপর। ঝুঁকে জিয়ানের শার্টের বাটন লাগিয়ে দিলো।
জিয়ান নয়নার দিকে তাকিয়ে বলে,”ভালোবাসি প্রিয়তমা অর্ধাঙ্গিনী।”
নয়না টুল থেকে নেমে বলে, “বিল পরিশোধ করে চলুন, এক জায়গায় কতক্ষণ থাকবো?”
জিয়ান বিল পরিশোধ করে নয়নার হাত ধরে বলে, “এই রাত যদি না শেষ হয়,তবে কেমন হতো বলো তো?”
নয়না হেসে বলে, “সব কিছুর শেষ আছে তাই নিয়ম অনুসারে তা সমাপ্ত হবেই। সো মিস্টার প্লেন ড্রাইভার আকাশ কুসুম ভেবে লাভ নেই।”
“দূর ভাল্লাগে না। তোমার জন্য একটু রোমান্টিক হতে পারি না৷”
“আহা মিস্টার প্লেন ড্রাইভার আবার নাকি রোমান্টিকও হতে পারে!”
“তো তোমার আমাকে আনরোমান্টিক মনে হয়!”
“তো তুমি তো আনরোমান্টিকই। তোমার তো হুমায়ুন আহমেদের বই পড়ে রোমান্টিকতা শেখা উচিৎ।”
“ওসব শিখতে হয় নাকি? রাস্তা ফাঁকা থাকলে এখন কয়েকটা চুমু খেয়ে বুঝিয়ে দিতাম। আমি কতটা রোমান্টিক!”
“সুন্দরী মেয়ে দেখলে পুরুষ মানুষের হুস থাকে না৷”
“বৌ তুমি আমাকে উস্কে দিচ্ছো কিন্তু। এরপর এর দায় কিন্তু তোমার।”
নয়না হুট করে তার আঁচল নিয়ে জিয়ানের হাতের কব্জিতে বেঁধে দিলো। নরম স্বরে বলল, “মনের সুতোয় মন বেঁধেছে, দেহ বাঁধলাম আঁচলে।”
জিয়ান গেয়ে উঠলো, “এতো ভালোবাসা গো জান রাখিও অন্তরে, দোলাও তুমি দুলি আমি জগত বাড়ি দোলে৷”
“তুমি তো খুব ভালো গাইতে পারো৷”
“বেশি না তবে পারি। আমাদের দু-জনের কন্ঠই মোটামুটি ভালো। তবে জাহিন বেশি পছন্দ করে গানটান৷”
“হ্যা শুনেছি ভাইয়া খুব ভালো গায়। তবে তোমার মত না।”
“নিজের মানুষের সব কিছু সব সময় বেস্ট তারপর বাকি সব।”
জিয়ান নয়নার আঙুলের ভাঁজে আঙুল ডুবিয়ে বলে, “এ বাঁধন কখনো ছিড়ে যাবে নাতো?”

নয়না স্থির হয়ে দাঁড়ালো রাস্তা এখন বেশ ফাঁকা মাঝে মাঝে দূরপাল্লার বাস শা শা করে চলে যাচ্ছে। ল্যাম্পপোস্টের মৃদু আলোতে জিয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, “তুমি আমার প্রথম অনুভূতি, প্রথম ভালোবাসা। আমি কোনদিন তোমাকে ভুলতে পারবো না৷ সম্ভব না আমার জন্য তোমাকে ভুলে থাকা৷ তবে আমার কি মনে হয় জানো? আমাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হলে তা তোমার জন্য হবে৷ তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে হয়ত কোন মাঝপথে অথবা অজানা গন্তব্যে।”

জিয়ানের দৃষ্টি এখনো নয়নার দৃষ্টিতে স্থীর৷ জিয়ান বলল, “আমি বলবো না আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি কারন ভালোবাসা অনুভব করার জিনিস মাপার জিনিস না। তবে এতোটুকু জেনে রেখো তুমি আমার জীবন থেকে কখনো হারিয়ে গেলে হয়ত আমি পাগল হয়ে যাবো৷ নয়ত আমি মরে যাবো। তোমাকে ছাড়া হয়ত এ জীবনে আর বেঁচে থাকা সম্ভব না।”

কথার মধ্য দু” জনে এতোটাই মগ্ন আশেপাশের অবস্থা তারা যেনো ভুলে বসেছে। হঠাৎ দূরপাল্লার বাসটা তাদের দিকে এগিয়ে আসলো। নয়না জিয়ান বলে, জোড়ে চিৎকার করলো৷ রাতের শহরে তার চিৎকার মিলিয়ে যেতে লাগলো ইটপাথরের কংক্রিটে।
****

অনিকেত বেডে বসে আছে। তার খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তার মায়ের চেহারাটা। জানতে ইচ্ছে করছে কতটা অসহায় হলে মা তার সন্তানকে এতিম খানায় ফেলে যায়! কেনো সে আর খোঁজ নিলো না আর? আমাকে কি একবার দেখতে ইচ্ছে করেনি! জানতে ইচ্ছে হয়না আমি কেমন আছি! কোন মা কিভাবে সন্তানকে এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে ছেড়ে দেয় একা একা! আমি শুধু একবার মা ডাকতে চাই। অনিকেতের ফোনটা সেই কখন থেকে বেজেই চলেছে৷ বিরক্ত হয়ে রিসিভ করে বলে, “কি সমস্যা আপনার! ছেলে দেখলেই গলায় ঝুলে পড়তে ইচ্ছে করে? আমি কোনদিন আপনাকে নিজের করবো না। কোনদিন না।”

সায়না মোটেই রাগ করলো না অনিকেতের কথা শুনে, শান্ত স্বরে বলল, “ভালোবাসি।”
অনিকেত থমকে গেলো তার রাগ যেনো মিশে গেলো অজানায়।
সায়না বলল,”আপনাকে ভালোবাসি মানে আপনার, রাগ অভিমান, খারাপ, ভালো সব কিছুই আমি ভালোবাসি। আপনাকে না বেসে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না তাই আপনাকে ভালোবাসি।”
অনিকেত ফোনটা কেটে দিতে চাইলো।

সায়না বলল, “আপনার কথা বলতে হবে না, আপনি শুধু কানের কাছে ফোনটা ধরে রাখুন৷ আমি চাই আমি একাকীত্ব না আমাকে অনুভব করুন। শুনছেন ভালোবাসি আপনাকে৷ ভালোবাসি ডাক্তার অনিকেত মাহমুদ কে৷”

হটাৎ করে অনিকেত ফোনটা বুকে চেপে ধরলো। এতোক্ষণ ধরে শূন্যতায় হাহাকার করতে থাকা বক্ষপিঞ্জর যেনো মূহুর্তেই শান্ত হয়ে গেলো। মনে হচ্ছে কেউ একজন আছে এই পৃথিবীতে যে তাকে ভালোবাসে। টাকার অভাবের চেয়ে ভালোবাসার অভাব মানুষকে বেশী পোড়ায়।
#চলবে

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৫০

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৫০
জিয়ান নয়নার থুতনিতে হাত রেখে বলে, চলে যাবো মানে আমার ছুটিতো শেষ। যেতে হবে না?
“নয়নার মুডঅফ হয়ে গেলো! এটা কেমন কথা এতো তাড়াতাড়ি ছুটি শেষ?
” আমাদের ছুটিতো কম বেবি তবে তোমার সব কাগজ পত্র ঠিক করে তোমাকে পার্মানেন্ট ভাবে আমার সাথে নিয়ে যাবো।
“আপনি তো ককপিটে থকবেন আমি যেয়ে কি করবো!
” নয়নার গাল টেনে বলে, একদিন ফ্লাইট পরেরদিন রেস্ট এভাবেই আমাদের ডিউটি৷ যেদিন রেস্ট সেদিন তোমার আমার দিন।
“কিন্তু।
” কি গো খু্ব মিস করবে বুঝি আমাকে?
“নয়না উঠে দাঁড়ালো মিস করবো তবে একটু। এই চলুন তো ফুচকা খেয়ে আসি।
” আমি তো ফুচকা খাইনা বৌ।
“না খেলে খাবেননা আমি খাবো আপনি দেখবেন।
” আচ্ছা যাবো শর্ত হলো তোমাকে শাড়ি পরে বের হতে হবে।
“আচ্ছা এক্ষুনি চেঞ্জ করে আসি।
” জিয়ান নয়নার হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসলো,নয়নার এলোমেলো চুলগুলো কানের কাছে গুঁজে দিয়ে বলে,হটাৎ করে এসে একদম হৃদয় জুড়ে বসে আছো৷ নয়নার কপালে চুমু খেয়ে বলে,ভালোবাসি আমার পিচ্চি বৌটাকে।
“নয়না সরে এসে বলে,আমি মোটেও পিচ্চি না। কয়েকদিন পরে কলেজে ভর্তি হবো। সো পিচ্চি পিচ্চি করবেন না।
” জিয়ান নয়নার ঠোঁটের উপর আঙুল রেখে বলে,বড্ড বেশি কখা বলো তুমি। তুমি হলে আমার বাটার মাশরুম।
“দেরি হচ্ছে তো ছাড়ুন আমাকে।
” ইশশ রে নিব্বি বৌ আমার ধরায় আগেই ছোটার জন্য মোচড়ামুচড়ি করবে মাছের মত।
“নয়না একটু দূরে সরে যেয়ে বলে যাবোই না আপনার সাথে।
” আচ্ছা জান স্যরি এই কানে ধরছি আর বলবো না নিব্বি৷
“নয়না সোফায় বসলো কপট রাগ দেখিয়ে বলল আর একবার বললে,সোজা বাপের বাড়িতে চলে যাবো৷
“আমি থাকতে বাপের বাড়ি! তা হবে না। ঝগড়া হোক মারামারি কা’টাকা’ঠি যাহোক তবুও আমার কাছেই থকতে হবে। এতো কথা না বলে দ্রুত রেডি হও সময় নষ্ট হচ্ছে জান৷
” নয়না উঠে পেটিকোট আর ব্লাউজ নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
পেটিকোট আর ব্লাউজ পরে ওয়াশরুম থেকে বের হলো। আলমারি থেকে কলাপাতা রঙের একটা শাড়ি বের করে পরলো। চুলগুলো বিনুনি করে নিলো এরপর খোপা করলো। ম্যাচিং হিজাব পরলো, হাতে রেশমি কাচের চুড়ি৷ পরে বলে চলুন আমি রেডি। একি আপনি ভিডিও করছেন কেনো?
“আমি তোমাকে বড্ড মিস করবো বাটার মাশরুম। তখন একাএকা কি করবো?এসব থেকে মনটাকে শান্ত রাখবো।
” আহাগো ডিয়ার হ্যাসবেন্ড। আপনার যখনই আমার কথা মনে পরবে সোজা কল করবেন মনপ্রাণ ভরে কথা বলবো৷
“জিয়ান উঠে এসে নিজের চুল ঠিক করে নিয়ে বলে,তোমার সাথে কথা বলে এজন্মে মন প্রাণ ভরবে বলে তো আমার মনে হয় না। উল্টো তখন আরো তৃষ্ণা বাড়বে।জিয়ান হুট করে বলল,তোমার হাইট কত?
” পাঁচ ফিট দুই ইঞ্চি।
“জিয়ান নয়নাকে উঁচু করে ধরে বলে,অথচ বর পেয়েছো ছ’ফুটের। কপালে পাপ্পি দাও ডিয়ার ওয়াইফি।
” নয়না বলল,এখন দেয়া যাবেনা৷ এখন পাপ্পি দিলে আপনার কপালে লিপস্টিকের স্ট্যাম্প লেগে যাবে।সো ঝাপ্পি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন বাকিটা পরে হবে৷ নয়না জিয়ানে শার্টের বাটন ঠিক করে দিয়ে বলে,ব্ল্যাক আর কলাপাতা কালার দারুণ মানিয়েছে কিন্তু
“শাড়ী পরলেই মেয়েদের অদ্ভুত রকমের মায়াবতী লাগে! মনে হয় শাড়ী যেনো তোমাদের শোভা বর্ধন করার হাতিয়ার।শাড়ী এমন এক হাতিয়ার যা দিয়ে তোমরা আমাদের মত অবলা ছেলেদের হৃদয় কেড়ে নিতে পারো।
” অনেক বকবক করেছেন মিস্টার প্লেন ড্রাইভার। এখন চলুন তো তাড়াতাড়ি।
“তবে হাত ধরো। হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাই দু’জনে৷ তুমি আমি আর আমাদের এই পথচলা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হোক।
🌿জাহিন একটা সিগারেট ধরিয়ে দুই আঙুলের ফাঁকে ধরে,মুখ দিয়ে টেনে নিচ্ছে সিগারেটের ধোঁয়া।
“অন্তর জাহিনের হাত থেকে সিগারেটা নিয়ে নিজেও দু’টো টান দিলো।
” জাহিন সিগারেটে শেষ টান দিয়ে বলে,সিগারেটের মত বৌ ভাগ করা যায় না?
“শা’লা মুখ সামলে কথা বল সিগারেট আর বৌ কি এক!
” আরেহহ এক না আবার একই। দু’টোই নেশার মত কাজ করে।
“তোর কাছে এক মনে হলে তুই আরেকজনের সাথে ভাগাভাগি করিস। আমার বৌ আমার পার্সোনাল প্রপারটি আমি তাকে ভাগ তো দূরে থাক তার দিকে তাকালেও চোখ তুলে ফেলবো।
” হাইপার হচ্ছিস কেনো কথার কথা বললাস ইয়ার৷ আচ্ছা তোর বোনের কি অবস্থা? সুইসাইড করলো কেন?
“ওর অবস্থা বেশি ভালো না জানিনা কি হবে। হটাৎ করে কি এমন হলো সুইসাইড কেন করলো?
” চিন্তা করিস না সুস্থ হয়ে যাবে। সুস্থ হলে জেনে নিস৷
“জানিনা বেঁচে ফিরবে কিনা। আইসিইউ তে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে আমার চঞ্চল বোনটা। মৃত্যু আর জীবনের মাঝখানে।আচ্ছা মান্নাতের কেসের তদন্ত কতদূর এগোলো? তোকে দেখলাম মন্ত্রীর সাথে কথা বলতে?
” এই তো আগাচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি সব দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার ব্যবস্থা করবো।কথা বলতে বলতে জাহিন আরেকটা সিগারেট ধরালো।
“কি হয়েছে তোর? তুই তো কোন কিছু নিয়ে টেনশনে না থাকলে এতো সিগারেট খাস না।
” সিগারেটের পাওয়ার হলো ধোঁয়ার সাথে সব কষ্ট উড়িয়ে দিতে পারে৷ তবে জানিস ভালোবাসাও কিন্তু সিগারেটের চেয়ে কম না৷ আমরা জানি তাতে ক্ষতি তবুও ভালোবেসে ভুল করি৷ ঠিক সিগারেট যারা খায় সবাই জানে এর ক্ষতিকারক দিক।
“তোর কি হলো হঠাৎ? তুই ভালোবাসার কথা বলছিস? প্রেমে ট্রেমে পরিস নি তো?
” উঁহু জাহিন চৌধুরীর লাইফে প্রেম নিষিদ্ধ। তুই কেনো ডাকলি আমাকে?
“জাহিন আমি রিতুর সুইসাইডের মত ডিসিশন নেয়ার কারন জানতে চাই। আমার বোন মাত্র কলেজে পড়ে সে কেনো এতো বড় একটা পদক্ষেপ নিবে? এরজন্য তোর সাহায্য চাই।
” আচ্ছা টেনশন করিস না রিতু ঠিক হয়ে যাবে। আমি দেখছি বিষয়টা কিভাবে হ্যান্ডেল করা যায়। চল হসপিটালে যাই রিতুকে একবার দেখে আসি৷
“জাহিন আর অন্তর বাইক নিয়ে বের হয়ে গেলো হসপিটালের উদ্দেশ্যে
🌿অনিকেত চেম্বার থেকে বের হয়ে এতিমখানায় আসলো।
জামাল সাহেবের সাথে দেখা করে বলল,আচ্ছা আঙ্কেল আমাকে এখানে কে রেখে গিয়েছিলো?
” জামাল সাহেব অনিকেতের দিকে তাকিয়ে বলে,এতোদিন পর হঠাৎ এই কথা কেনো বাবা?
“আঙ্কেল আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে৷ কে আমার বাবা, মা তারা কেনই বা আমাকে ফেলে রেখে গেলো? আমার দোষটা কোথায়?
” জামাল সাহেব লাঠি ভর দিয়ে উঠে গেলেন৷ এরপর ফিরে এসে বললো,এক ভদ্র মহিলা তোমার বয়স যখন দু’দিন বা এক সপ্তাহ তখন এখানে রেখে যায়। আমি আর তোমার চাচি দু”জনেই তখন এখানে নতুন। চেহারা ঠিকমতো মনে নেই তবে দেখে মনে হয়েছিলো বড়লোক বাড়ির মেয়ে হবে৷ জিজ্ঞেস করলাম এতো ফুটফুটে বাচ্চাটাকে ফেলে রেখে যাচ্ছেন!
“মেয়েটা কান্না করতে করতে বলল,আমি অভাগা। জানিনা বড় হয়ে এই সন্তান কোনদিন আমাকে ক্ষমা করবে কি না। তবে তাকে বলে দিয়েন তার মা অসহায়। তার মা’কে যেনো ক্ষমা করে দেয়।
” তারপর কোনোদিন আর আমার খোঁজ করতে আসেনি?
“এসেছিলো ছয়মাস পর্যন্ত আসতো। সে তখন ভার্সিটিতে পড়ালেখা করে। এসে এমে তোমাকে খাইয়ে যেতো। মুখ ঢাকা থাকতো শুধু চোখ দুটো দেখতাম। শরিফ স্যারের কাছে টাকাও দিয়েছিলো অনেক৷ তোমারে রাখার জন্য।
” তারপর আর কোনদিন আসেনি?
“নাহহ বাবা আর কোনদিন দেখিনি তাকে এই আঙিনায়। তয় আমার কি মনে হয় জানো?
” কি মনে হয় আঙ্কেল?
“মনে হয় প্রেম ঘটিত জটিলতা আছিলো তোমার মায়ের। বুঝোই তো উঠতি বয়সি মাইয়া আবিয়াইত্তা সমাজ কি হেরে মাইনা নিবো? সবাই কইবো না এই সন্তান কার? মনে হয় হের প্রেমিক হেরে ধোঁকা দিছে এরজন্য তোমারে রাইখা গেছে নিরুপায় হইয়া।
” আমি কি তার নাম জানতে পারি?
“শামসুন্নাহার নাম কইছিলো তোমার চাচির কাছে।আমারেও তিনলাখ টাকা দিয়া কইছিলো তোমার যেনো আদর যত্নে রাখি।
” অনিকেতের পা অবশ হয়ে আসছে। ইচ্ছে করছে একবার তার মা”কে জড়িয়ে ধরতে একবার তার কোলে মাথা রাখতে আচ্ছা মায়ের শরীরে গন্ধ কেমন হয়? মায়ের শরীরে নাকি মা মা গন্ধ থাকে আঁচলে থাকে সন্তানের জন্য ভালোবাসা। আমি একবার সেই অনুভূতি পেতে চাই মা৷
#চলবে
ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন৷ আজকে রিচেক করা হয়নি৷

Dark Mystery পর্ব-২১+২২

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_21
#Sabrina_Summa

সুপ্তি রেগে চলে গেলো। সেই রাগ ভাঙ্গাতে মাহিরের আরও একদিন লাগলো।

বর্তমান.,.
সুপ্তি : আমার পছন্দের গান ধরবো। মাইন্ড করবেন না।
মাহিরের ধ্যান ভাঙলো সুপ্তির কথায়। মাহির কিছু বলার আগেই সুপ্তি গান শুরু করলো,
পাল ভার ঠেহের যায়ে
দিল হে সামহাল যায়ে
কেছে তোমহে রোকা কারো…..
মেরে তারাফ আতা, হার গাম পিসাল যায়ে
আখো মে তুমকো ভারো…
বিন বলে বাতে তুমছে কারো…
আগার তোম সাথ হো…….(ii)
———————————— তেরে নাজরো মে হে তেরে সাপনে, তেরে সাপনো মে নারাজি….
মোজে লাগতাহে কে বাতে দিল কি হতি লাফজো কি ধোঁকেবাজি।
তোম সাথ হো ইয়া না হো কিয়া…… ফার্ক হে…বেদার্ত থি জিনদিগী বেদার্ত হে….
আগার তোম সাথ হো….
সুপ্তি খুব আবেগ দিয়ে গাচ্ছিল। যখনই আবার বলছিল ” আগার তোম সাথ… ” তখনই মাহির সুপ্তির কাধে মাথা রেখে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। থেমে গেলো সুপ্তি। মাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলো৷
মাহির সুপ্তির চাহনি দেখে বুঝতেই পারছে না সুপ্তি বিরক্ত হচ্ছে নাকি রাগ করছে। অদ্ভুত সেই চাহনি।
মাহির : কি হলো গান বন্ধ করলে কেন?
সুপ্তি উত্তর না দিয়ে সেভাবেই তাকিয়ে রইলো। মাহির এবার সুপ্তিকে ছেড়ে দিয়ে বললো, ” তোমার মতো তোমার গলার সুরও অনেক সুন্দর। তবে গানের একটা লাইন আমার পছন্দ হয় নি। ”
সুপ্তি চোখের ইশারায় বোঝালো কি?
মাহির : ওই যে ওই লাইনটা। ” তোম সাথ হো ইয়া না হো কিয়া ফার্ক হে। ” আচ্ছা, আমি না থাকলে তোমার যায় আসবে না?
সুপ্তি : তা একটু আসবে। ভালো ফ্রেন্ড বলে কথা।
মাহির : শুধু ফ্রেন্ড আমি! আর জাস্ট একটুই যায় আসবে!
সুপ্তি : না ভালোই যায় আসবে। আর আপনি তো ফ্রেন্ডই।
মাহির : আমি শুধুই ফ্রেন্ড?
সুপ্তি : তা না হলে কি ভাইয়া?
মাহির : ভাইয়া?
সুপ্তি : হ্যাঁ ভাইয়া।
মাহির : ভাইয়া মানেই ছাইয়া ছাইয়া। বিয়ে পর বুঝাবো ভাইয়া কি জিনিস!
বলা শেষ করে রেগে উঠে যেতে নিলো।
সুপ্তি : আরে আমাকে রেখে কোথায় যাচ্ছেন।
মাহির : জাহান্নামে।
সুপ্তি : নাউজুবিল্লাহ। রাগ করছেন? আমি কিন্তু রাগ ভাঙ্গাতে আসবো না।
মাহির : ভাঙ্গাতেও হবে না।
মাহিরের রাগ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। আর কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে উঠে পড়লো।।
সুপ্তিও নিজের এপার্টমেন্টের দিকে চলে গেলো। তাদের রাতে আর কথা হলো না।
মাহির রাগ করেই রইলো।।

সকাল এগারোটা বেজে চল্লিশ কি পঞ্চাশ.,.
সুপ্তি অনবরত মাহিরকে কল করছে । ৫ বার হবে হয়তো। কিন্তু মাহির রাগ করে থাকায় কল রিসিভ করছে না ।
সুপ্তি বিরক্তিতে বিড়বিড় করে বললো, ” এতক্ষণে ইরফানকে একবার কল করলেই চলে আসতো। শুধুমাত্র এই সিমে ওর নাম্বার নেই বলে। ”
মাহির কল না ধরায় সুপ্তি রাস্তায়ই শুয়ে পড়লো ক্লান্তিতে।
শেষবারের মতো কল করলো সুপ্তি। এবারও ধরলো না মাহির ৷ তবে কিছুক্ষণের মাঝেই কল বেক করলো।
সুপ্তি কল রিসিভ করতেই মাহির উত্তেজিত কন্ঠে বললো, ” কি হয়েছে তোমার? তুমি যে মেয়ে এতবার কল তো শুধু শুধু করবে না ! কোনো বিপদ হয়েছে? তাড়াতাড়ি বলো। ”
সুপ্তি : ভার্সিটি গেটের পূর্বসাইডে আছি।
বলা শেষ করে কল কেটে দিলো। হয় তো মাহিরের চিন্তা বাড়ানোর জন্য। নয় তো তার বলতে কষ্ট হচ্ছে।
কিছুক্ষণের মাঝেই মাহির গাড়ি নিয়ে চলে এলো।
সুপ্তিকে ফুটপাতে শুয়ে থাকতে দেখে অনেক মানুষ ভিড় করেছে। তা দেখে মাহির আরও বেশি ভয় পেয়ে গেলো। ভিড় সরিয়ে সুপ্তির কাছে গিয়ে বললো, ” কি হয়েছে তোমার? ”
সুপ্তি : আগে এদের সরান।
মাহিরের বডিগার্ড সবাইকে সরিয়ে দিলো।
মাহির ফুটপাতে বসে বললো, ” আরে বলছো না কেন, কি হয়েছে! তোমার মুখ লাল হয়ে আছে কেন? ” ( ভয়ে + রেগে )
সুপ্তি : একা একটা মেয়ে ১৫/১৬ জন ছেলের সাথে ফাইট করলে ক্লান্ত + একটু ব্যথা তো পাবেই।
( শুয়ে শুয়েই )
মাহির : তোমার পিছে সবসময় মানুষ লেগে থাকে কেন? কী করো তুমি?
সুপ্তি : আরে। কিছু মেয়েকে ডিস্টার্ব করছিল। তখন ঝামেলা বেঁধে গেছে। আমার আবার এসব সহ্য হয় না।
মাহির : তুমি কি গোয়েন্দা?
( সুপ্তির মুখের সামনে ঝুঁকে )
সুপ্তি : আমি আর গোয়েন্দা! হাও ফানি!
বলেই হাসতে শুরু করলো।
মাহির উঠে হাত ভাজ করে দাঁড়ালো।
সুপ্তি উঠার জন্য হাত বাড়িয়ে দিলো। মাহির ভ্রু কুচকে তাকালো। সুপ্তি তোলার ইশারা করতেই মাহির কোলে তুলে নিলো ৷ এরপর গাড়িতে বসিয়ে বললো, ” আজকে তোমার সাথে টেনিং করবো। ”

#চলবে.,.

#Dark_Mystery (কালো রহস্য)
#Part_22
#Sabrina_Summa

প্রায় জনশূন্য মাঠ। চারপাশে শুধু বাতাসের গুঞ্জন, আর মাঝেমধ্যে গাছের পাতার মৃদু কাঁপুনি।
গাছের নিচে বসে আছে সুপ্তি। এক হাতে শুকনো একটা পাতা নিয়ে খেলছে। তার চুল বারবার বাতাসে মুখে এসে পড়ছে, কিন্ত তাতে কোনো হেলদোল নেই তার৷

ঠিক তখনই একটা ছায়া এসে পড়ল গাছের গায়ে।

সুপ্তি না তাকিয়েও বুঝতে পারে সামনে কে দাঁড়িয়ে।
সামনে দাঁড়িয়ে মাহির—সাদা রঙের হালকা টি-শার্টে, চোখে নির্লিপ্ত কিন্তু গভীর কিছু।
কণ্ঠে হালকা গম্ভীরতা—“ক্লাইম্বিং করতে পারো?”

সুপ্তি — “হ্যাঁ, পারি।”

মাহির হালকা মাথা নাড়ল, যেন এই উত্তরটাই সে আগে থেকেই জানত।
“আমি জানতাম তুমি পারবে।”

সুপ্তি অন্য দিকে তাকিয়েই বললো, “আমি মোটামুটি সবই পারি।”

মাহির —চলো, আমরা ক্লাইম্বিং করি।

সুপ্তি অবাক হয়ে চারপাশে তাকাল, তারপর আঙুল তুলে দেখাল পাশের বিল্ডিংটা—
“এই বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে?”

“হুম।” মাহিরের ঠাণ্ডা উত্তর।

সুপ্তি : “আপনি করুন, আমি করবো না।”

“তাহলে কী আমি ভেবে নেবো তুমি পারো না?”—মাহিরের কণ্ঠে খোঁচা।

সুপ্তির গলায় তখন একরকম অভিমান মেশানো রাগ— “আমি পারি। কিন্তু এটা অনেক উঁচু। আমি সবসময় বিল্ডিংয়ের ভেতরে ক্লাইম্বিং করেছি। বাইরে থেকে কখনো না।”

মাহির এগিয়ে এলো একটু, বললো,
“সেইফটি তো আছেই। সাথে আমিও আছি। এরপরও যদি বাহানা দাও, তাহলে ভাবতেই হবে—তুমি আসলে পারো না।”

সুপ্তির চোখে আগুন জ্বলে উঠলো। ইগোতে লাগল ব্যাপারটা।
সে রাগী চোখে তাকিয়ে বললো—
“চলুন।”

মাহির নরম কন্ঠে বললো, “এই ড্রেস পড়ে পারবে না। চেঞ্জ করে এসো।”

সুপ্তি চুপচাপ উঠে চলে গেল চেঞ্জিং রুমে। কয়েক মিনিট পর ফিরে এলো সাদা একটা টি-শার্ট পড়ে । বাগানে এসে দেখে মাহির আগেই ছাদে চলে গেছে। সে এক দৌড়ে উঠে গেল উপরে।

ছাদের কিনারায় একজন মাহিরকে সেইফটি কিট লাগাচ্ছিল। সুপ্তির উপস্থিতি টের পেয়ে মাহির একবার তাকালো, চোখ মিলিয়ে আবার নিচে নামিয়ে নিলো।

সুপ্তি এগিয়ে গেলে মাহির নিজেই তার সেইফটি কিট লাগিয়ে দিল। নিঃশব্দে, খুব যত্নে।

তারপর নামা শুরু হলো। একটানা।

বিল্ডিংয়ের পাশে গভীর একটা পুকুর।
তাই রিস্ক নেই বললেই চলে।

মাহির : মানুষ আমাদের দেখে কাপল বলবে। সেইম টি-শার্ট।

সুপ্তি : চুপ থেকে নিজের কাজে মনোযোগ দিন।

মাহির আর কথা বললো না।
২ তলার দিকে নামতেই মাহির বলে উঠলো, ” সুপ্তি আমার খুব ভয় লাগছে। প্লিজ হাতটা ধরো। ”

সুপ্তি হাত ধরতেই সেইফটি রশি খুলে ফেললো মাহির।
সুপ্তি অনেক কষ্টে মাহিরকে নিজের বরাবর আনলো।

মাহির সুপ্তির দিকে তাকিয়ে আছে। সুপ্তিও আতঙ্কিত চোখে মাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।

এদিকে মাহির সুপ্তির সেইফটি রশিটা খুলছে।
সুপ্তি প্রথমে বুঝতে না পারলেও যখন বুঝতে পারলো তখন আতঙ্কিত স্বরে মানা করে বললো, ” প্লিজ মাহির এটা…”

কথা শেষ করার আগেই মাহির ও সুপ্তি উভয়ই পানির দিকে পড়া শুরু করলো।
কিছু সেকেন্ডের মাঝে পানিতে পড়ে গেলো তারা।

সুপ্তি মাহিরকে জড়িয়ে ধরে থাকায় অনেক কষ্টে পার সাইডে আনলো মাহির সুপ্তিকে ।
সুপ্তি তখনও মাহিরের ঘাড়ে দুইহাত পেঁচিয়ে ঝুলছে।

মাহির আশেপাশে তাকিয়ে বললো, ” মানুষ দেখলে কি বলবে! আমরা পার সাইডে আছি। সো তুমি দাঁড়াতে পারবে। ”

সুপ্তির কিছুক্ষণ লাগলো মাহিরের কথা বুঝতে।
এরপর পা রেখেও মাহিরকে জড়িয়ে ধরেই রইলো।

মাহির : আমাকে জড়িয়ে ধরে থাকতে তোমার অনেক ভালো লাগে!

সুপ্তি : কেন করলেন এমন? আমার ভয় লাগে হাইটে।

মাহির এবার কিছুটা রেগে গেলো। সুপ্তি ছাড়িয়ে বললো, ” কেন ভয় লাগে? এই যে তুমি উপর থেকে পড়লে এতে কি তুমি মরে গেছো! বা হাত-পা ভেঙ্গেছে বা কোথাও ব্যথা পেয়েছো? ”

সুপ্তি ভয়ে কান্না শুরু করলো ।
মাহির সুপ্তিকে জড়িয়ে ধরে তানিশাকে উদ্দেশ্য করে বললো, ” টাওয়াল নিয়ে এসো। ”

তানিশা টাওয়ালের জন্য চলে যেতেই মাহির সুপ্তিকে উদ্দেশ্য করে বললো, ” সরি। কান্না করো না প্লিজ। দেখো জন্ম থেকে হাইটের ভয়টা সবারই থাকে। তবে তোমার একটু বেশিই আছে। এভাবে তুমি ট্রমাট্রাইস্ট হয়ে যাবে তো! এরজন্য এমন করেছি। সরি। আর করবো না। ”

সুপ্তি : আমি কালকে রিইউনিয়ন পার্টিতে ঘাটাইল যাচ্ছি । ভেবেছিলাম আপনাকে পার্টিতে নিয়ে যাবো। কিন্তু এখন আর নিবো না।
( বাচ্চাদের মতো করে )

মাহির তানিশাকে উদ্দেশ্য করে বললো, ” এতক্ষণ লাগে টাওয়াল আনতে। তাড়াতাড়ি দেও। ”

তানিশা টাওয়াল দিলে মাহির সুপ্তিকে পেঁচিয়ে বললো, ” এখন এসব বাদ। আগে তুমি চেঞ্জ করে নেও। হেঁটে হেঁটে যাবা। আমি কোলে নিতে পারবো না। কেন পারবো না আশা করি তুমি বুঝেছো! ”

সুপ্তির কোনো হেলদোল নেই। তাই মাহির নরম স্বরে বললো, ” তুমি সম্পূর্ণ ভিজে গেছো সুপ্তি। খারাপ দেখাচ্ছে। প্লিজ সু…”

বাকি কথা আর বলতে হলো না মাহিরের । সুপ্তি হাঁটা শুরু করলো। পিছে পিছে মাহিরও। দুইজনেই চেঞ্জ করে নিলো। সুপ্তি বের হতেই মাহির তাকে তার সামনের একটা চেয়ারে বসিয়ে বললো, ” কি যেন বলছিলে? ”

সুপ্তি : আমি তিন দিনের জন্য ঘাটাইল যাচ্ছি ।

মাহির : তিন…..দিন….! ( টেনে ) একদিনই তোমাকে ছাড়া থাকতে পারি না সেখানে তিনদিন! ইম্পসিবল।

সুপ্তি : আমি আপনাকে নিয়ে যাবো না।

মাহির : বাবা আমাকে এমনিতেও যেতে দিবে না। সো তুমিও যাবে না।

সুপ্তি : এটা সম্ভবই না। আমি অনেক দিন হলো বাড়িতে যাই না। আমাকে যেতেই হবে।

মাহির : প্লিজ, ট্রাই টো আন্ডারস্ট্যান্ড।

সুপ্তি : আমি কালকে সকালে রওনা দিবো। আপনি গেলে বলতে পারেন। ( দাঁড়িয়ে )

মাহির : কিন্তু বাবা….

সুপ্তি : মিস সিক্রেটের সাথে যোগাযোগ করুন। বলেই চলে যাওয়ার জন্য হাঁটা শুরু করলো।

মাহির বিষয়টা নিয়ে ভাবতে লাগলো। রাত পেরিয়ে দিন হয়ে গেল। সুপ্তি ঘাটাইল চলে গেলো কিন্তু মাহির এখনও এটাই চিন্তা করছে মাহফুজ চৌধুরীকে মিস সিক্রেট রাজি করাতে পারবে কিনা!

#চলবে.,.

Dark Mystery পর্ব-১৯+২০

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_19
#Sabrina_Summa

বৃহস্পতিবার.,.
আগামীকাল মিস সিক্রেটের বিয়ে। আজ তার এবং রুদ্রের গায়ে হলুদ।
এখনও রুদ্র সকলেই সামনে আসেনি। তবে তার অবস্থান সম্পর্কে সবই জানা মিস সিক্রেটের।
মাহিরকে দিয়ে বিশ্বাস নেই। মিস সিক্রেটের বিয়ে হলেই তো মাহির বাঁচে।
তাই তো মাহির যদি বেঈমানী করেও তবুও একটা উল্টো চাল দিবে মিস সিক্রেট ।

হলুদ লেহেঙ্গা পড়ে বসে আছে মিস সিক্রেট। সাথে মেচিং হুডি এবং মাস্ক তো আছেই।
সবাই নাচ গান করছে আর সে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। তবে এগুলো তে মন নেই তার। সে তো নিজের ভাবনায় ডুবে। সে ভাবছে –
” যদি আজ বা কাল মাহির বেঈমানী করে তবে সে সত্যিই সুপ্তিকে হারাবে। আর মিস সিক্রেট রুদ্রকে খুন করবে। ”
হলুদের দিন চলে গেলো। তবে হলুদই লাগানো হলো না। কারণ মাহির লাগাতে দেয় নি।
এই কয়েকদিন ধরে মাহির আর সুপ্তির দেখা হয় নি। শুধু মেসেজে কথা হয়েছে। কারণ মাহির খুব বিজি থাকে ৷

শুক্রবার।
আজ মিস সিক্রেট আর রুদ্রর বিয়ে ৷ সবাই মজা করছে। সব জায়গায় মানুষ। কেউই সত্যিটা জানে না শুধু মাহির, মিস সিক্রেট ও তার টিম এবং কিছু ফোর্স ব্যতিত।
যারা জানে তারা সবাই তাদের পজিশন নিয়ে ছদ্মবেশে আছে।
একটা রুমের সোফায় কালো কালারের গর্জিয়াস লেহেঙ্গা পড়ে পা সোফায় তুলে আরামছে ফোন চালাচ্ছে মিস সিক্রেট। বাহিরে কি হচ্ছে তাতে তার কোনো মাথা ব্যথা নেই।
“বিয়েতে কালো লেহেঙ্গা ঠিক মানানসই না ” এই উক্তিটা মাহির মিস সিক্রেটকে বুঝাতে অক্ষম। তাই তো মাহিরকে কালো লেহেঙ্গা কিনতে হয়েছে। কারণ মিস সিক্রেট তো নাছোড়বান্দা। কালো তার পছন্দ তো সবকিছু কালো হওয়া চাই।
কারো রুমের শব্দ পেলো মিস সিক্রেট। তবে কোনো ভাবান্তর দেখালো না। পুরুষালী কন্ঠে বলে উঠলো, ” হাই বেবি।”
মিস সিক্রেট ফোনের দিকে তাকিয়েই বললো, ” আমাকে দেখে বাচ্চা মনে হয়? ”
সেই মানুষটি আবারও বললো, ” তুমি বাচ্চা হবে কেন! আমি আদর করে তোমাকে বেবি ডাকছি। ”
” তোর আদর তোর কাছেই রাখ বুইড়া। ৩৫ বছরের বুইড়া হইয়া ২৫ বছরের যুবতিকে বিয়ে করতে আসছিস। লজ্জা করে না? ” ( মনে মনে )
মিস সিক্রেট : তা এখানে কেন রুদ্র শেখ? এসেছো যখন বসে পড়ো।
রুদ্র : ছিঃ ছিঃ। জামাইয়ের নাম ধরে ডাকছো।
” তোকে তো মনে হচ্ছে এখানেই শুট করে মারি। কি ন্যাকা কথা! ওয়াক থু। “( মনে মনে )
রুদ্র : একটু পর তো আমাদের বিয়েই হবে। তো আমি আসতে পারি না!
মিস সিক্রেট : মেয়েদের কিন্তু এখনও ছাড়ো নি।
রুদ্র : এত ব্যস্ত হচ্ছো কেন? আগে বিয়েটা হোক।
মিস সিক্রেট নিজের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো, ” ২ মিনিট টাইম দিলাম। যদি মেয়েগুলো নিরাপদ স্থানে না পৌঁছায় তবে বিয়েটাই হবে না। আর যদি বিয়ে না হয়, তাহলে বুঝতেই পারছো তোমার কি হবে! ”
রুদ্র : ওকে, ছাড়ছি।
কাউকে কল করে মেয়েগুলোকে ছাড়ার আদেশ দিলো এবং মিস সিক্রেট ছাড়ার সিসি টিভি ফোটেজ দেখালো।
মিস সিক্রেটের ফোনে মেসেজ আসলো মেয়েগুলো নিরাপদে আছে ৷
সাথে সাথে সেও মেসেজ করলো ইরফানকে। তার কিছু মুহূর্ত পর রুদ্রকে ঘেড়াও করে ফেললো বিভিন্ন ফোর্স।
রুদ্র মিস সিক্রেটের দিকে গান তাক করলো। কিন্তু মিস সিক্রেটের কোনো ভাবান্তর হলো না। সে তার মতোই আরামছে সোফায় বসে রইলো।
মিস সিক্রেট : তোমার কি মনে হয়, আমার দিকে গান তাক করে তোমার ১% ও লাভ হবে!
রুদ্র : খুব বড় ভুল করছো। আমি মরে গেলেও আমার সকল কর্মের খবর তুমি পাবে না। আমার লোক তোমাকে ছাড়বে না।
মিস সিক্রেট : তোমার সকল গোডাউন, তোমার সকল লোক এখন আমার আন্ডারে।
এরই মাঝে রুদ্র মিস সিক্রেটের বুক বরাবর গুলি করে দিলো। সুযোগ বুঝে ইরফান গানটা ছিনিয়ে নিলো।
এই গুলিতে মিস সিক্রেটের কিছুই হলো না। উল্টো মিস সিক্রেট রুদ্রর পায়ে গুলি করে বললো, ” হয়তো তুমি নিশানা তাক করতে ভুলে গেছো। আমার মতো মানুষকে শুট করতে হলে বুকে না মাথায় করতে হবে। কারণ আমার মতো মানুষ সবসময় বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পড়ে থাকে। ”
রুদ্র পায়ে হাত দিয়ে বসে আছে।
তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো।

মিস সিক্রেট মাহিরের দিকে রাগী চোখে তাকালো। তারপরই হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেল।
মাহির মিস সিক্রেটকে ধরলো কিন্তু পরে ইরফানকে বললো, ” ওকে নিয়ে যাও। ”
কিছুক্ষণ পর ডক্টর এসে চেক করে বললো, ” লো প্রেশার। খুব স্ট্রেজে থাকে সবসময়। ”
ইরফান : হ্যাঁ, তা তো থাকতেই হয়।

#চলবে.,.

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_20
#Sabrina_Summa

কিছুক্ষণ পর ডক্টর এসে চেক করে বললো, ” লো প্রেশার। খুব স্ট্রেসে থাকে সবসময়। ”
ইরফান :হ্যাঁ, তা তো থাকতেই হয়।
ডক্টর : যদি কিছু মনে না করতেন। ম্যামের মাস্কটা কিন্তু খোলা প্রয়োজন।
মাহির : আপনার কি মরার খুব শখ হয়েছে?
ডক্টর : না, কিন্তু এটা প্রয়োজন ৷
ইরফান : এটা যদি করি তাহলে আপনি তো মরবেন মরবেনই। সাথে আমাকেও মরতে হবে।
মাহির : এমনিতেই যা করেছি! মাস্কটা খোলা ছাড়া অন্য কোনো আইডিয়া দেন।
ডক্টর : আমার আর কিছু বলার নেই। স্যালাইন দেওয়া আছে জ্ঞান ফিরে যাবে । ম্যামকে ভারি ড্রেস থেকে নরমাল ড্রেসে আনুন। আমি চললাম।
বলা শেষ করে বেরিয়ে গেলো।
ইরফান : মহিলাদের তো আগেই এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন চেঞ্জ করাবে কে!
মাহির : এই ডক্টরের সব মারার মতো আইডিয়া। যাইহোক ইরফান তুমি থাকো ৷ আমাকে বাকি বিষয়টা দেখতে হবে।
মাহিরও বেরিয়ে গেলো।
ইরফান ঘাড়ে হাত দিয়ে বললো, ” আমাকে রেখে সবাই পালাচ্ছে কেন? শেষে তো আমিই মরবো।”

আধা ঘণ্টার মাঝে জ্ঞান ফিরলো মিস সিক্রেটের।
এরপর ড্রেস আপ চেঞ্জ করে ইরফানকে বললো, ” মাহির কোথায়? ”
ইরফান : ম্যাম,ওই দিকটা সামলাতে গেছে।
মিস সিক্রেট : ওকে কল দেও।
১ সপ্তাহের মাঝে ভালো বন্ধুত্বই হয়ে গেছে তাদের ৷ মাহিরের চিন্তাভাবনা বদলেছে ৷ মিস সিক্রেটের ক্ষতি করার ইচ্ছাটা এখন আর তার নেই।
মাহির কল রিসিভ করতেই মিস সিক্রেট রেগে বললো, ” মাহিরের বাচ্চা, তোরে খালি পাই আমি। তোকে আমিই খুন করবো। ”
মাহির : সরি, সরি। আমি জানতাম না ও শুট করে দিবে। আর আমাকে একদম মাহির বলবে না। মাহির শুধু সুপ্তি বলবে। আর তুই তুকারিও করবে না। ফ্রেন্ড বলেই এমন করতে পারো না তুমি!
মিস সিক্রেট : তুমি শুধু আসো। আমি কি করতে পারি আর না করতে পারি দেখাবো নি।
মাহির : ওকে বাবা, আসছি।
মিস সিক্রেট : আমি বাবা নই। আর মরতে না চাইলে তাড়াতাড়ি আসো। বাই।
বলেই কল কেটে দিলো।

মাহির আসতেই মিস সিক্রেট রাগী চোখে তাকালো।।
মাহির : সারেন্ডার করছি। তবুও মেরো না। ( হাত উপরে তুলে )। তোমার জন্য ছোট একটা গিফট আছে।
মিস সিক্রেট : কি গিফট?
মাহির একটা ছোট ডাইরি এগিয়ে দিয়ে বললো, ” এতে তোমার ফেয়ারগুলো সম্পর্কে লেখা আছে এবই প্রতিকারও আছে। একদিনের জন্য ঘুষ দিচ্ছি। তারপর ফেরত দিবে। ওভারঅল, আমার প্রেমিকার বলে কথা। ”
” আমার জিনিস আমাকেই গিফট দিচ্ছে। তাই তো বলি আমার নাম্বার পাও কোথা থেকে! “( মিস সিক্রেট মনে মনে )
মিস সিক্রেট : আমি বাহিরে যাবো কি করে? সাংবাদিকরা তো অপেক্ষা করছে।
মাহির : এখানেই থেকে যাও।
মিস সিক্রেট : আমার কি খাইয়া দাইয়া আর কোনো কাম নাই? এমনিতেই এক সপ্তাহ ধরে তোমার কাজে পড়ে আছি। ( রেগে )
মাহির : একদিনই তো। না, হয় মাস্ক হুডি খুলে বেরিয়ে যাও। কেউ চিনতেও পারবে না।
মিস সিক্রেট : মাস্ক, হুডি খোলার থেকে এখানে থাকাও ভালো আছে।
মাহির: তাহলে থাকো।
বলেই চলে গেলো।

রাতে মিস সিক্রেট লাইভে এসে সব কিছু ক্লেয়ার করলো।।

কেটে গেলো আরও কয়েকটি দিন। সবাই আবারও নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেল। এখনও বিভিন্ন বাহানায় মাহির সুপ্তির ক্যাম্পাসে যায়। তবে কারোরই বুঝার বাকি নেই সে কেন আসে এখানে! সবাই জানলেও সুপ্তিকে এখনও কনফেস করে নি নিজের ফিলিংস সম্পর্কে।

সময় বিকেল পাঁচটা বেজে তিপ্পান্ন মিনিট।
বহু দিন পরে, বহু ক্রোশ দূরে ঘুরতে এসেছে মাহির ও সুপ্তি। বহু ক্রোশ দূরে বলতে ক্যাম্পাস থেকে দূরে একটা পার্কের লেকের এক কোনে বসে আছে তারা। কিছু বডিগার্ডও আছে। তবে তারা কিছুটা দূরে। মিডিয়া এড়াতে ক্যাপ পড়ে আছে মাহির। হাতে তার গিটার। তবে এখানে গান কম গল্প বেশি হচ্ছে। হঠাৎ করে সুপ্তি বলে উঠলো, ” গিটারটা আমাকে দিন। ”
মাহির অবাক হয়ে বললো, ” তুমি গিটারও বাজাতে পারো? ”
সুপ্তি : হ্যাঁ, আমি সবই পারি। শুধু ওই বাস্কেটবলেই যা সমস্যা।
মাহির বাস্কেটবল শব্দটা শুনতেই হেসে দিলো।
সুপ্তি : হাসছেন কেন?
মাহির : সেদিনের কথা মনে পড়লো।

দুদিন আগে.,.
মাহির চুপচাপ বসে ছিল। মাহিরকে দেখে সুপ্তিও চুপচাপ বসে ছিল।
হঠাৎ মাহির বলে উঠলো, ” চলো, তোমাকে বাস্কেটবল খেলা শিখায়। ”
সুপ্তি মুখ ভাঙ্গিয়ে বললো, ” আমি পারি। ”
মাহির : তাহলে চলো, এক ম্যাচ খেলা যাক।
সুপ্তিও উঠে দাঁড়িয়ে বললো, ” ওকে। ”
খেলা শুরু হলো। কিন্তু বাস্কেটবল হূকটা উপরে থাকায় মাহির সুপ্তি দুইজনেই বিরক্ত হলো। কারণ সুপ্তি গোল করতে পারছে না।
মাহির বিরক্ত হয়ে বললো, ” তুমি পারবে না। তুমি বেশি শর্ট। ”
সুপ্তি কিছুক্ষণ রাগী চোখে তাকিয়ে থেকে বললো, ” আমি শর্ট না। তুই বেশি লম্বা। ”
মাহির তো এ কথা শুনে হাসতে হাসতে রীতিমতো গড়াগড়ি খেল। আর সুপ্তি রাগ করেই রইলো।
মাহির নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো, ” আপনি থেকে সরাসরি তুই এ চলে গেলে? ”
সুপ্তি : তাছাড়া কি করবো। আমি ৫ ফুট ৪ হয়েও যদি শর্ট হই তবে যারা আসলেই শর্ট তারা কি? ( রেগে )
মাহির : আচ্ছা, সরি। সব দোষ ওই হূকের ৷
সুপ্তি রেগে চলে গেলো। সেই রাগ ভাঙ্গাতে আরও একদিন লাগলো মাহিরের।

#চলবে.,.

Dark Mystery পর্ব-১৭+১৮

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_17
#Sabrina_Summa

ঘড়ির কাঁটা থেমে নেই, তবে সময় মনে হয় মাহিরের জন্য থমকে রয়েছে । প্রতিটি মিনিট যেন ঘন্টা হয়ে দাঁড়িছে ।
মাহির তার গাড়ির ভেতরে বসে, ভার্সিটির মেইন গেটের ঠিক ভেতরের দিকে অপেক্ষা করছে । সময় তখন সকাল ৯ টা হবে । গাড়ির এয়ারকন্ডিশনের মৃদু বাতাসেও যেন তার হৃদয়ের উত্তেজনা কমছে না। কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে এতদিন পর একবার দেখার জন্য।

অবশেষে, মাহিরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ৯টা ৪৫-এ কাঙ্ক্ষিত মানুষটি গেট পেরিয়ে ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে এলো।
মাহির আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। মুহূর্তের মধ্যে গাড়ির দরজা ঠেলে নেমে এলো ।

সুপ্তির দিকে এগিয়ে গিয়ে কোনো কিছু বলার আগেই তাকে শক্ত করে নিজের বুকে জড়িয়ে নিল।
সমস্ত কোলাহল, চারপাশের ভিড়, কৌতূহলী চোখ কিছুই যেন তার গ্রাহ্য করার বিষয় না।
চারপাশে ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে গেল মাহিরের বডিগার্ডরা, দৃঢ় একটা বলয় তৈরি করে, যেন এই দুই প্রাণের মাঝখানে বাতাসও প্রবেশ করতে দিবে না তারা ।

সুপ্তি অবাক হয়ে একটু কেঁপে উঠলেও মুহূর্তের মধ্যে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে বললো, ” আরে মিয়া….”
কথা শেষ করতে না দিয়ে মাহির বললো, ” আমি তোমার কোনো মিয়া টিয়া নই। ”
মাহির এমনভাবে জড়িয়ে আছে যে সুপ্তি মাহিরকে সরাতেই পারছে না।
সুপ্তি : তাহলে কি? প্লে বয় অর ক্যারেক্টারলেস!
মাহির : না জামাই। জামাই বলবে আমাকে।
সুপ্তি : ঠ্যাকা গো আমার ৷
( আবারো মাহিরকে ধাক্কা দিয়ে )
সুপ্তি মাহিরকে যতই ধাক্কা দিয়ে সরাতে চেষ্টা করে মাহির ততই আরো শক্ত করে সুপ্তিকে জড়িয়ে ধরে।
মাহির : হ্যাঁ ঠ্যাকাই।
সুপ্তি : আরে ছাড়ুন তো । মিডিয়াতে চলে যাবে। ব্রেকিং নিউজ হয়ে যাবে। ( রেগে )
মাহির সুপ্তিকে ছেড়ে দিয়ে বললো, ” আচ্ছা। এখন বলো কোথায় ছিলে এতদিন ? ”
সুপ্তি : বাসায়।
মাহির : তাহলে কল কেন ধরো নি? ফোন কেন বন্ধ ছিল?
সুপ্তি : সিম হারিয়ে গেছিলো।
মাহির : অন্য সিম দিয়ে কল করতে পারতে বা ভার্সিটিতে আসতে।
সুপ্তি : সিম খুঁজতে খুঁজতে দুইদিন চলে গেছে।
মাহির : ফাজলামো পাইছো! সিম খুঁজতে কেউ দুইদিন বাসায় বইসা থাকে?
সুপ্তি : কেউ না থাকলেও আমি থাকি।
মাহির : কেন খেলছো আমার সাথে এভাবে?
সুপ্তি : আমি কি করলাম?
মাহির : কিছু না। গাড়িতে বসো।
( গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে )
সুপ্তি : আমি ভার্সিটিতে যাবো।
মাহির : না। তুমি আমার সাথে যাবে৷ দুদিন আমাকে সময় দেও নি। আজকে সারাদিন সময় দিবে।
সুপ্তির খুব বিরক্ত লাগছে। কি নেশা জড়ানো কথাগুলো।
সুপ্তি : আই’ম ইক্ট্রেইমলি সরি। আমার ক্লাস আছে।
মাহির : এই দুইদিন ছিল না?
সুপ্তি : এই দুইদিন করি নি দেখেই তো নোট নিতে হবে।
মাহির কিছুক্ষণ ভেবে বললো, ” আচ্ছা চলো ৷ আজকে তোমার সাথে আমিও ক্লাস করবো। ”
বলেই কোলে তুলে গাড়িতে বসালো। নিজেও বসলো।
” এই ছেলে আজকে একটু বেশিই করছে না?”( সুপ্তি মনে মনে )
সুপ্তি : প্লিজ। আমার ক্লাসে যাবেন না। আমার মান ইজ্জতের কথাটাও একটু ভাবুন।
মাহির সুপ্তির কথা আমলেই নিলো না।
এবকর সুপ্তি একটু রেগে বললো, ” যদি একটু আগেকার ঘটনাটা মিডিয়াতে যায়, আপনার খবর আছে তাহলে! ”
মাহির : আরে যাবে না। আমার বডিগার্ডরা ছিল তো।
সুপ্তি আর কথা বললো না। তাই মাহিরও বললো না।

ভার্সিটির ক্লাসে আজ যে স্যাররাই আসছে তারা মাহিরকে দেখে খুব অবাক হচ্ছে । ভালো মন্দ জিজ্ঞেসও করছে ৷
সবাই আজ ক্লাস বাদ দিয়ে মাহিরকেই দেখছে। আর সুপ্তি! তার তো মনে হচ্ছে সে যদি অদৃশ্য হতে পারতো! যতই চাচ্ছে মানুষ থেকে দূরে থাকতে ততই মানুষ তাকে চিনে ফেলছে । ফলে তার একাকী জীবনও নষ্ট হচ্ছে।।

আজ শুক্রবার। সময় ১১ টা কি ১২ টা হবে।
মাহিরের জন্য একটা স্পেশাল দিনও বলা চলে। কারণ এদিন মাহির সুপ্তির ঘুরতে যাওয়ার দিন।
আজকের ঘুরতে যাওয়া নিয়ে মাহির অনেক এক্সসাইটেড।
তবে হঠাৎই সুপ্তি রেগে রেগে মাহিরকে কল করলো। মাহির কল রিসিভ করতেই বললো, ” ব্রেকিং নিউজ দেখছেন? ”
মাহির : না দেখি নি। ওয়েট, এখান দেখি।
সুপ্তি : আপনার আর দেখতে হবে না।
শোনেন, যে পর্যন্ত এই ব্রেকিং নিউজ সকল চ্যানেল থেকে না যাবে সে পর্যন্ত আমি বাসার বাহিরে এক পাও দিবো না। ”
মাহিরের আর বোঝার বাকি নেই ব্রেকিং নিউজটা কি!
মাহির : আজকে তোমার আমার সাথে ঘুরার কথা ছিল। প্লিজ এমন করো না।
সুপ্তি : আমি বলেছি মানে বলেছি ৷ আমি এক পাও দিবো না।
বলা শেষ করে রেগে কল কেটে দিলো।

মাহিরের নিউজটা ডিলিট করতে করতে প্রায় রাত ৮ টা বেজে গেলো। যদিও সুপ্তি অরপে মিস সিক্রেট এটাকে ১ ঘন্টায়ই সরাতে পারতো কিন্তু এতে মাহিরের সন্দেহ করার চান্স ছিল। তাই তো সে কোনো হেল্পই করলো না।
সুপ্তিকে নিয়ে ১ ঘন্টা ঘুরলো মাহির। সুপ্তি অবশ্য বের হতে চাই নি। তবে তার শর্ত পূরণ হওয়ায় বের হতে বাধ্য হয়েছে।

#চলবে.,.

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_18
#Sabrina_Summa

শনিবার।
মিস সিক্রেট অনেকদিন পর মন্ত্রীর বাড়িতে এসেছে কিছু কাজে। কাজ শেষ করে চলে যাবে তখনই আটকালো মাহির।
মাহির : একটু সাইডে আসো কথা আছে।
মিস সিক্রেট ভাবছে আবারও সেই ভুলটাই করবে কিনা! তবুও মাহিরের সাথে চলে গেলো।
মাহির : তুমি হইতো জানো বাংলাদেশে সবথেকে কুকর্মে বিখ্যাত কে?
মিস সিক্রেট :হ্যাঁ। রুদ্র। রুদ্র শেখ তাই তো!
মাহির : হ্যাঁ। তাহলে এটাও জানো ও দেশ থেকে পালিয়েছে। আর বিভিন্ন ফোর্স ওকে ধরতে চাচ্ছে!
মিস সিক্রেট : হ্যাঁ সবই জানি আমি। এত ভঙ্গিতা না করে সোজাসাপ্টা কথা বলো।
” হ্যাঁ, তুমি সবজান্তা সমসেরের বউ। ” ( মাহির মনে মনে )
মাহির : কিছুদিন আগে ও বলেছে তোমাকে বিয়ে করলে আটকে রাখা ১০০০ জন নারীকে ছেড়ে দিবে।
মিস সিক্রেট কিছুক্ষণ হেসে বললো, ” আমাকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখা শুধুমাত্র একটা বিলাসিতা! ”
মাহির : একটা রিকোয়েস্ট করছি। প্লিজ ওকে তুমি বিয়ে করো।
মিস সিক্রেট : কিহ? বিয়ে! আর আমি! জীবনেও না।
মাহির : সিরিয়াসলি, তোমাকে বিয়ে করতে হবে না। শুধু নাটক করতে হবে।
মিস সিক্রেট : মানে তুমি আমার লাইফ নিয়ে খেলতে চাচ্ছো?
মাহির : হ্যাঁ। মানে তেমন কিছুই।
মিস সিক্রেট : সাহস কিভাবে হয়?
মাহির : তুমি তোমার লাইফ নিয়ে খেলো না?
মিস সিক্রেট : আমার অধিকার আছে । তবে তোমার নেই।
মাহির : ট্রাস্ট মি। আমি সুপ্তিকে সাক্ষী রেখে বলছি বিয়েটা হবে না। হয়তো তোমাকে বিয়ের কনে সাজতে হতে পারে তবে বিয়েটা হবে না।
মিস সিক্রেট : তুমি তো হাজারটা মেয়ের সাথে থাকো। বিশ্বাস করবো কিভাবে? আর তাছাড়াও ওই রুদ্রকে বের করতে আমার জাস্ট একটা দিন লাগবে। বড়জোড় দুইদিনই লাগবে ধরলাম। তাহলে আমি নাটকটা করবো কেন?
মাহির : তুমি খুব ভালো করে জানো বলেই আশা করছি মিস সিক্রেট। যে হাজারটা মেয়ে আর সুপ্তি আমার কাছে এক নই। আমি তোমার কাছেই প্রথম স্বীকার করছি আমি সুপ্তিকে ভালোবাসি। আর তাছাড়াও একটু খেলি না রুদ্রর সাথে প্লিজ। আমি প্রমিস করছি ওই রুদ্র তোমাকে টাচও করতে পারবে না।
মিস সিক্রেট মাহিরের কথা শুনে পুরোই হ্যাং হয়ে গেছে। এতটা দ্ধিধায় অনেক দিন পর পড়লো সে।
” ভুল মানুষের কাছে তুমি ভুল কথা বলে ফেলেছো মাহির। ” ( মনে মনে )
মাহির : লিসেন, তুমি রুদ্রকে বের করতে পারলেও মেয়েগুলোকে বের করতে পারবে না। রুদ্রও কিন্তু কাঁচা খেলোয়াড় না। আশা করি সেটাও তুমি বুঝতে পারছো।
মিস সিক্রেট : ওকে। যা ইচ্ছা করো।
“একটু না হয় খেলিই রুদ্রর সাথে। ” ( মনে মনে ) “বাট একটা কানা কড়িও আমি দিবো না। মাইন্ড ইট। আর বিয়ের লেহেঙ্গা যদি আমার পছন্দ না হয় তো আমি বিয়ের আগের দিনই বিয়ে ক্যান্সেল করবো। ”
বলা শেষ করে বেরিয়ে গেলো।
মাহির ভাবতে লাগলো, ” এই মেয়ে কী মজা করে গেল নাকি সিরিয়াসলি বলে গেল!”
মাহির : যাইহোক। বিয়ের কাজ শুরু করি। টাকা কারো না কারো কাছ থেকে ওশুল করেই নিবো। এত বড় ক্রিমিনাল ধরিয়ে দিবো বলে কথা।
মাহিরের ফোনে একটা মেসেজ আসলো মিস সিক্রেটের পক্ষ থেকে। মেসেজটা হলো –
” আমার যদি কিছু হয় মনে রেখো তুমি সুপ্তিকে হারাবে। খুব প্রস্তাবে। খুব বেশিই প্রস্তাবে। ”
মাহির মেসেজটা দেখে হেসে বললো, ” ডোন্ট ওয়ারি। আমি আর কোনো ক্ষতি করবো না তোমার৷ অন্তত সুপ্তির জন্য হলেও। ”
কিছু একটা টাইপ করেও সেন্ট করলো না মাহির।

পুরো দেশে ব্রেকিং নিউজ হয়ে গেল মিস সিক্রেট আর রুদ্রর বিয়ের কথা ।
অনেকেই খুশি হতে পারলো না। কারণ রুদ্র মিস সিক্রেটকে বিয়ে করলে শাস্তি থেকে বেঁচে যেতে পারে। ওয়ারঅল মিস সিক্রেট তো আর নিজের হাসবেন্ডের কিছু হতে দিবে না।
রুদ্রও ঠিক এটা ভেবেই মিস সিক্রেটকে বিয়ে করতে চেয়েছিল।

মাহফুজ চৌধুরী রীতিমতো মিস সিক্রেটকে জিজ্ঞাসার উপর রেখেছে। মিস সিক্রেট এ বিয়েতে রাজি কিনা। এটা নিয়ে।
মিস সিক্রেট বার বার বলছে সে রাজি না থাকলে তবে কেউ কি তার বিয়ে দিতে পারতো?
এক প্রকার বিরক্ত হয়েই মাহফুজ চৌধুরী চলে গেলো। সে চাই না এ বিয়ে হোক।

মাহিরই সব শপিং করলো। আর রুদ্রও প্রচুর শপিং করে পাঠিয়েছে।
শুক্রবার বিয়ে ধার্য করা হলো। তাদের বিয়েটা মাঝারি আয়োজনে হচ্ছে।
এগুলোতে মিস সিক্রেটের কোনো কিছুই যায় আসছে না। সে খাচ্ছে- দাচ্ছে, ঘুমাচ্ছে, কাজ করছে আর দিন গুনছে।।

#চলবে.,.

Dark Mystery পর্ব-১৫+১৬

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_15
#Sabrina_Summa

সোমবার।
দুপুর প্রায় ১২ টার কাছাকাছি। আজ প্রকৃতিতে কেমন যেন শুনশান নীরবতা। রোদ আছে, বাতাস আছে শুধু মনে শান্তি নেই। সবার না শুধুমাত্র মাহিরের মনে।
মাহিরের নিত্যদিনের অভ্যাস সকালে ঘুম থেকে উঠেই সুপ্তিকে কল করা। আজও তার ব্যতিক্রম হয় নি। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বহুবার কল করেছে মাহির। তবে পরিচিত নাম্বারে অপরিচিত কন্ঠ “কাঙ্ক্ষিত নাম্বারটি তে এই মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না!” একই কথা শুনতে শুনতে বিরক্ত মাহির। তাই তো ফোনটা এক কোনে ফেলে দিলো।।

সন্ধ্যে সাতটা। মাহির বাসায় বসে কিছুটা ছটপট করছে। কারণ আজ সারাটা দিন তার সুপ্তির সাথে দেখা বা কথা কোনোটিই হয় নি ৷
তানিশা অনেকক্ষণ ধরে মাহিরকে পর্যবেক্ষণ করে বললো, ” মনে হচ্ছে তুমি সুপ্তির প্রেমে পড়ে গেছো। ” ( শান্ত কণ্ঠে )
মাহির মানতে নারাজ। তাই বিরক্তি নিয়ে বললো, ” অসম্ভব।”
তানিশা : তাহলে এত ছটপট কেন করছো?
মাহির নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো, ” কোথায়! ”
তানিশা : তাশরিফ। ভুলে যেও না আমি তোমাকে তোমার ১৮ বছর থেকে দেখছি। এখন তোমার বয়স ২৬ অর্থাৎ ৮ বছর ধরে আমি তোমার এসিস্ট্যান্ট। আর তাছাড়াও তোমার বয়স আমিও পার করেছি ওয়ারঅল তোমার থেকে বড় আমি।
মাহির : বাদ দেও তো ৷ একটু ভালো ফ্রেন্ড হয়ে গেছে তাই একটু চিন্তা হচ্ছে।
তানিশা : ওকে ফাইন। মেনে নিলাম।
বলেই চলে গেলো।
” তানিশা তো ভুল কিছুই বলে নি। তার পছন্দ না কোনো মেয়ে তাকে পাত্তা দিবে না এই বিষয়টা। এরজন্যই তো সে সুপ্তির সাথে এমন করতো৷ কিন্তু আজ কেন তার এত চিন্তা হচ্ছে। কেন মনে হচ্ছে কিছু একটা হারিয়ে গেছে। যা তার দরকার ছিল। সত্যিই কি সে ভালোবেসে ফেলেছে! ”
মাহির নিজের ভাবনাকে ধমক দিয়ে বললো, ” ছিঃ মাহির। তুই কখনো কাউকে ভালোবাসতে পারিস না। ”
” এখন এগুলো থেকে বের হওয়ার জন্য খাবার খেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়। ”
তার ব্রেইন যা বললো সে তাই করলো। সাড়ে নয়টার মাঝে শুয়ে পড়লো। এতে হতভম্ব বাড়ির সবাই। যেই ছেলে দশটা এগারোটার আগে বাসায় ফিরে না সেই ছেলে আজ দশটার মধ্যে শুয়ে পড়েছে।
কিছুক্ষণের মাঝেই ঘুমিয়ে পড়লো মাহির।

১২ টার ঘর পেরিয়ে ঘড়ির ছোট কাটা এখন ৩ টায় গিয়ে পৌঁছেছে। বাতাসের সোঁ সোঁ শব্দ কেমন যেন আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। আর মাঝে মাঝে বিভিন্ন প্রাণীর শব্দ তো আছেই।
এমন সময় ঘুম ভেঙে যায় মাহিরের। আর ভালো লাগছে না তার। খুব চিন্তা হচ্ছে। তারমাঝে তার দুঃস্বপ্ন তার চিন্তাকে হাজার গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সে এক ক্লাস পানি খেল কিন্তু নিজেকে শান্ত করতে পারলো না।
আর না পেরে কয়েকবার সুপ্তিকে কল করলো। এখনো বন্ধই আছে।
এরপর তানিশাকে কল করলো।
তানিশা কল রিসিভ করে ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে বললো, ” আরে ভাই। এত রাতে জালাচ্ছিস কেন? ”
মাঝে মাঝেই তানিশা ফান করে মাহিরকে তুই বলে। সো এতে মাইন্ড করলো না মাহির। আর মাইন্ড করার পরিবেশেও নেই সে।
মাহির : তাড়াতাড়ি আমার রুমে এসো।
তানিশা আর দেরি করলো না। কল কেটেই রুমে চলে এলো।
তানিশা : কি হয়েছে! কেউ অ্যাটাক ট্যাটাক করেছে নাকি?
মাহির : আরে না। আমার ভালো লাগতাছে না।

তানিশা রাগী চোখে তাকিয়ে আছে ৷ মাহিরের ভালো লাগছে না তাতে সে কি করবে? তার মধ্যে সে কত আতঙ্কিত হয়ে গেয়েছিল!

মাহির : লোক পাঠিয়ে সুপ্তিকে খুঁজে আনো। ( করুণ কন্ঠে )
তানিশা : পাগল হয়ে গেছো?
মাহির চুপ করে রইলো।
তানিশা : আমি এখন লোক পাঠালে স্যার আমাকে জুতা মেরে বাসা থেকে বের করে দিবে।
মাহির এখনও চুপ রইলো। তার ভালো লাগছে না কিছুই।
তানিশা : ভাই এখন ঘুমা। সকালে দেখা যাবে ৷
বলেই তানিশা চলে গেলো।
মাহির আবারও ঘুমানোর চেষ্টা করছে কিন্তু তার ঘুম আজ মরে গেছে। তাই পায়চারি করা শুরু করলো।

সকাল ৯ টা।
প্রতিদিনের মতোই আজও মাহফুজ চৌধুরী চিৎকার করে ডাকছে, ” রাগী, এই রাগী। ”
রাগিনী বেগম এসে বললো, ” কি হয়েছে ডাকছো কেন? আর আমার নাম রাগিনী। রাগী না। ”
মাহফুজ চৌধুরী : তো কি হয়েছে। আমি কি বউকে আদর করে ছোট নামে ডাকতে পারি না!
রাগিনী বেগম : মানুষ শুনলে মনে করবে আমি সত্যিই রাগী।
মাহফুজ চৌধুরী : যা সত্যি তাই তো মনে করবে।
রাগিনী বেগম : কিহ! আমি রাগী? কে বলেছে তোমাকে?
মাহফুজ চৌধুরী : তোমার বাবা মানে আমার শশুর।
রাগিনী বেগম : বাবা মারা গেছে কিন্তু তার কথা এখনও রয়ে গেছে।
মাহফুজ চৌধুরী : হুম। এখন বলো তোমার ছেলে কোথায়? ৯ টার সময় আমরা একসাথে খেতে বসি। জানে না সে! সবসময় ডেকে আনতে হয়৷
( ড্রাইনিং এ বসতে বসতে )
রাগিনী : ও পরে খেয়ে নিবে।
মাহফুজ চৌধুরী : পরে খাবে কেন? বিভিন্ন অজুহাতে ভার্সিটিতে যাবে না আজ! এমনিতে তো ৯ টার দিকেই বের হয়ে যায়।
তানিশা : না স্যার। আজকে যাবে না।
( ড্রাইনিং এ বসতে বসতে )
মাহফুজ চৌধুরী : তুমি এসেছো তাহলে তাশরিফ কোথায়?
তানিশা : স্যার, তাশরিফকে রুমে খাবার দিয়ে আসবো ৷
মাহফুজ চৌধুরী : কেন অসুস্থ নাকি?
তানিশা : অসুস্থ না তবে কেমন জানি মনমরা হয়ে আছে।
মাহফুজ চৌধুরী আর কথা না বাড়িয়ে খাওয়া শুরু করলো ।

#চলবে.,.

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_16
#Sabrina_Summa

সূর্য আজ তার প্রখরতা একটু বেশিই দেখাচ্ছে । তাই তো সময় ধারণা করাটা একটু কঠিনই হয়ে পড়েছে।
মধ্যাহ্নের খাবার খাওয়া সবারই শেষ সেই ২ টার দিকে । তবে একজন বাদে। সে হলো মাহির। মধ্যাহ্নের খাবার তো দূর, সকালের খাবারই খাওয়া হয় নি তার।
মাহফুজ চৌধুরী অবশ্য এসেছিল ছেলেকে দেখতে। তবে ছেলের আপদারে বিরক্ত সে।
মাহির বারবার একটা কথায় বলছিল, ” বাবা, একটা মেয়েকে খুঁজে এনে দেও না প্লিজ। জীবনে যা বলবে সব মেনে নিবো। ”
এ কথা শুনে মাহফুজ চৌধুরী বের হয়ে গেছে। যেতে যেতে রাগিনী বেগমকে বললো, ” তোমার ছেলে পাগল হয়ে গেছে। ”
রাগিনী বেগম মাহিরের রুমে ঢুকলেন।
মাহির ফ্লোরে বসে আছে। সেভাবেই বললো, ” আম্মু প্লিজ বাবাকে বলো না সুপ্তিকে খুঁজে এনে দিতে। আমি প্রমিস করছি কখনো অন্য মেয়ের দিকে তাকাবো না। ”
রাগিনী বেগম কিছুক্ষণ মাহিরকে পর্যবেক্ষণ করে বললো, ” কেন খুঁজছিস মেয়েটাকে? ”
মাহির : আমি জানি না। আমি শুধু জানি, আই ওয়ান্ট হার। ( চিৎকার করে )
তানিশা : স্যারের পারমিশন ছাড়া আমি কিছুই করতে পারবো না। তবে তোমার বডিগার্ডদের ওকে খুঁজতে লাগিয়েছি।
মাহির : মিস সিক্রেটকে কল দেও।
তানিশা : মিস সিক্রেট কল ধরবে না।
মাহির : ধরবে ৷ দরকার হয় আমি পায়ে ধরে ক্ষমা চাবো ৷ তাও প্লিজ সুপ্তিকে খুঁজে দিতে বলো। ওর বেশি সময় লাগবে না খুঁজতে।
তানিশা : আরে তুমি জানো না মিস সিক্রেট কোনো মিশনে গেলে কল রিসিভ করে না! মিস সিক্রেট মিশনে দেশের বাহিরে গেছে দুইদিনের জন্য।
মাহির : এই মেয়ের এখনই যাইতে হইলো।

ছেলের পাগলামি দেখে আর সহ্য করতে পারছে না রাগিনী বেগম । তাই নিজের স্বামীকে বুঝাতে চলে গেলো।

বিকেল ৫ টা। সময় যেন কাটছে না মাহিরের। কারো জন্য মনটা বড্ড কষ্ট পাচ্ছে। তাই তো সে ব্যক্তির খোঁজ নেওয়ার জন্য সুশমিতাকে কল করলো মাহির ৷
সুশমিতা কল রিসিভ করতেই মাহির উত্তেজিত কন্ঠে বললো, ” সুশমিতা, সুপ্তির কোনো খোঁজ জানো? ”
সুশমিতার চিনতে সমস্যা হলো না কলদাতা ব্যক্তিকে। তাই তো স্বাভাবিক ভাবেই বললো, ” না ভাইয়া। আমিও এই প্রশ্নটা করার জন্যই আপনাকে খুঁজছিলাম। ”
মাহির : বাসা কোথায় জানো?
সুশমিতা : না ভাইয়া। কখনো বলে না কতবার জিজ্ঞেস করেছি।
আচ্ছা ভাইয়া চিন্তা করবেন না। সুপ্তি মাঝে মাঝেই এমন উধাও হয়ে যায় । কোনো খোঁজ পেলে বলবেন।
মাহির : তুমি পেলেও বলো।
কল কেটে দিলো মাহির। আবারো ব্যর্থ হলো তার কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে খুঁজতে।
” এই মেয়ে এত জেদি কেন? নিজের বাসার এড্রেস কেন দেয় না কাউকে? ”
বলা শেষ করে রাগে দুঃখে ফোনটাকে আছাড় মারলো মাহির। তবে ফোনের তেমন ক্ষতি হলো না।
তানিশা : আচ্ছা এত পাগলামির মানে টা কি? ( রেগে )
মাহির : আই ডোন্ট নো। আই ডোন্ট নো এনিথিং। আই অনলি নো দ্যাট আই নিড হার এট এনি কস্ট। গেট আউট ফম হেয়ার। আই কান্ট বেয়ার এনিওয়ান।
বলা শেষ করে পাশের টেবিলে থাকা পানির গ্লাস আছাড়রমেরে ভেঙে ফেললো ৷
তানিশা রুম থেকে চলে এলো। এখন সেখানে থাকা মানে নিজের সাথে সাথে মাহিরেরও ক্ষতি করা৷

সন্ধ্যার পর থেকে লোক লাগানো হলো সুপ্তিকে খোঁজার জন্য।
মাহফুজ চৌধুরী ছেলের পাগলামিতে বাধ্য হয়েছে লোক লাগাতে। তবে শর্ত দিয়েছে মাহিরকে খাবার খেতে হবে৷।

৭ টার দিকে মাহির খাবার খেল। তার কিছুক্ষণ পরই ঘুমিয়ে পড়লো। কারণ খাবারে ঘুমের ঔষধ মেশানো ছিল। এটাও মাহফুজ চৌধুরী বাধ্য হয়ে করেছে।
সারারাত খোঁজার পরও সুপ্তির কোনো খোঁজ পাওয়া গেল না। এমন কি সুপ্তি কোথায় থাকে সেটা পর্যন্ত জানা গেল না। শুধু পাওয়া গেল সুপ্তির বাবা-মার নাম্বার। সেখানে কল করেও জানা গেল সুপ্তি সেখানে নেই।
তাহলে কোথায় গেল সুপ্তি? এই প্রশ্নটায় সবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে ।

মিস সিক্রেট দেশে থাকুক বা বিদেশে। ছোট থেকে বড় সকল খবর তার কাছে থাকবেই। তাই বেশি সময় লাগলো না তার জানতে যে, মাহফুজ চৌধুরী সুপ্তিকে তন্ন তন্ন করে খুঁজছে।

মাহিরের ঘুম ভাঙলো সুশমিতার কলে।
গভীর ঘুম নিয়েই কলটা রিসিভ করলো।
সুশমিতা : ভাইয়া। সুপ্তি আমাকে কল করেছিল।
সাথে সাথে মস্তিষ্ক সচল হয়ে গেল মাহিরের। দ্রুত বেগে উঠে বসে বললো, ” কোথায় ও? কি হয়েছিল? ফোন কেন ধরে না? ”
সুশমিতা : এতকিছু তো বলে নি। শুধু বলেছে আজ ভার্সিটিতে আসবে।
মাহির : থ্যাংক ইউ সো মাচ ইনফরমেশনটা দেওয়ার জন্য। এখন রাখি।
বলেই কল কেটে দিলো। ধপাস করে আবারো শুয়ে পড়লো।
প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে তার। এমনিতেই সারাদিন টেনশনে ছিল। তারপর আবার কিছু খাই নি। তারমধ্যে ঘুমের ঔষধ আর এখন তাড়াহুড়ো করে উঠা।
তবে তার একটু হলেও মনে শান্তি লাগছে।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময়টা দেখে নিলো পুনে আটটা।

#চলবে.,.

Dark Mystery পর্ব-১২+১৩+১৪

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_12
#Sabrina_Summa

আজ আকাশটা ভালোই মেঘলা। সময় প্রায় ২ টার কাছাকাছি । তবে রোদের ছিটেফোঁটাও নেই।
সুপ্তি আর সুশমিতা ক্লাস থেকে বের হলো। দেখলো একটা মেয়েদের ঝটলা।
সুপ্তির বুঝতে দেরি হলো ভিড়ের কারণ। তবে সুশমিতা বুঝতে না পেরে বললো, ” চলতো দেখি কি হচ্ছে। ”
সুপ্তি এককোনায় দাঁড়িয়ে বললো, ” দরকার নেই। এখানে দাঁড়িয়ে থাক একটু পরেই বুঝবি। ”
প্রায় ১০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পরও যখন সুশমিতা কিছু বুঝতে পারলো না তখন আবারও বললো, ” কিছুই তো বুঝতেছি না। ”
সুপ্তিরও আর ভালো লাগছে না দাঁড়িয়ে থাকতে। তাই তারা ভিড়ের দিকে এগিয়ে গেলো।
এতে ভিড় জমিয়েছে যার জন্য সেই কাঙ্খিত ব্যক্তিটি দেখতে পেলো সুপ্তিকে।
ভিড় থেকে কোনোমতে বের হয়ে সুপ্তির হাত ধরে টেনে নিয়ে নিজের গাড়ির কাছে গেল ।
সুপ্তি হাতটা ঝাপটা মেরে সরিয়ে দিয়ে বললো, ” যখন তখন হাত ধরেন কেন ? প্লে….”
মাহির : চুপ। একদম প্লে বয় বলবে না।
সুপ্তি : ক্যারেক্টার লেস।
মাহির বিরক্ত হলো। সাথে সাথে রেগেও গেল। কিন্তু রাগটা খাটালো না।
সুপ্তি সুশমিতাকে বিদায় দিয়ে দিলো।
মাহির : কোথায় যাচ্ছি আমরা?
সুপ্তি : পুরো ঢাকা ঘুরবো। চলুন।
মাহির : গাড়িতে উঠো।
সুপ্তি : না। গাড়িতে নই হেঁটে হেঁটে। আর হ্যাঁ আপনার বডিগার্ড এসিস্ট্যান্টকে এখানেই রেখে যাবেন।
মাহির চিন্তিত হয়ে বললো, ” কিন্তু আমার সেইফটির বিষয়টাও তো দেখতে হবে।”
সুপ্তি : আমাকে বিশ্বাস করেন না?
মাহির : তা না। বাট…
সুপ্তি : আরে চলুন তো। আপনাকে কেউ চিনবেই না।
সুপ্তি নাছোড়বান্দা হওয়ায় অনেক কষ্টে তার এসিস্ট্যান্টকে বুঝিয়ে বের হলো তারা।
সুপ্তি দোকান থেকে একটা মাস্ক আরেকটা ক্যাপ নিয়ে এলো। সুপ্তি মাহিরকে পড়তে বললে মাহির বললো, ” তুমি পড়বে না? ”
সুপ্তি : আমি আপনার মতো এত ফেইমাস নই। তবে আপনার জন্য আমার ক্লাস আমাকে চিনে ফেলেছে। ( বিরক্ত হয়ে )
মাহির : জাস্ট ওয়েট । তোমার পিছেও সাংবাদিকরা ঘুরবে। দেখো৷
সুপ্তি : আমার পছন্দ না মিডিয়া।
কিছুক্ষণ হাঁটার পর ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে তারা রাস্তায় এসে পৌঁছেছে।
মাহির : সুপ্তি, দেখো মেয়েটা সুন্দর না?
” তোর কাছে তো দুনিয়ার সব মেয়েই সুন্দর ” (সুপ্তি মনে মনে)
সুপ্তি : কেন বলুন তো?
বলতে গিয়ে খেয়াল করলো মেয়ে দুইটাও মাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।
” এই বেডা মাস্ক পইড়া আছে তাও মাইয়াগুলা ড্যাব ড্যাব কইরা তাকাই আছে ৷ মানলাম সুন্দর। তাই বইলা মাস্ক পড়া থাকলেও তাকাইতে হবো ৷ নিশ্চিত সানগ্লাসের জন্য। তোর সানগ্লাস আমি খুলাইতাছি দাঁড়া! এই বেডারে সানগ্লাস পড়লে এত সুন্দর লাগে ক্যান? ” ( সুপ্তি মনে মনে নিজের সাথে রীতিমতো ঝগড়া করছে )
মাহির সুপ্তিকে জেলাস করানোর জন্য বললো,” আমার সাথে ভালো যাবে না? ”
সুপ্তি : ও আচ্ছা। আমি ডেকে আনছি দাঁড়ান।
বলেই হাঁটা লাগাতে নিলো। আর মাহির হাত ধরে আটকে দিলো।
সুপ্তি বিরক্ত নিয়ে বললো, ” আরে মিয়া সমস্যাটা কি! কথায় কথায় হাত ধরেন।”
মাহির : মেয়েটার চুলও কিন্তু সুন্দর। তবে তোমার বাটারফ্লাই হেয়ারটা বেশি সুন্দর।
সুপ্তির দিকে তাকিয়ে । সুপ্তিও রাগী চোখে তাকালো।
মাহির : প্রশংসা করলেও দোষ! আচ্ছা দেখো না মেয়েগুলো তাকিয়ে আছে। আমাকে কি এতই হ্যান্ডসাম লাগছে?
সুপ্তি : আপনার কি মনে হয়। ওরা আপনার রুপের জন্য তাকিয়ে আছে ! না। ওরা আপনাকে একটা চোর ভাবছে। যে কিনা মাস্ক আর সানগ্লাস পরে নিজের চেহারা ঢাকছে।
মাহির : কিহ!
সুপ্তি : কি না জ্বি।
মাহির : তাহলে আমি কি করবো?
সুপ্তি : সানগ্লাসটা খুলে পকেটে রাখুন।
মাহিরও তাই করলো। সুপ্তি দেখলো মেয়েগুলো আরো ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। মাহিরও খেয়াল করলো।
সুপ্তির রাগ হচ্ছে মাহিরের উপরে। আর মাহিরের মনে হচ্ছে তারা তাকে চিনে ফেলেছে।
তাই সুপ্তি আর মাহির দুইজনেই সেখান থেকে চলে এলো।
সারাদিন তারা অনেক ঘুরাঘুরি করলো।
সুপ্তি ইচ্ছে করেই মাহিরকে বস্তুিতে নিয়ে গিয়েছিল। কারণ মাহির যেন দরিদ্রদের কষ্টটা বুঝতে পারে।
মাহফুজ চৌধুরী দান খয়রাত করে এটা সত্য তবে মাহির তা পছন্দ করে না। তাই তাকে এখানে আনা। যদি কোনো উন্নতি হয়।
সুপ্তি খেয়াল করলো কিছু হলেও মাহির বুঝতে পারছে। কয়েক বছরের ধারণা তো আর একদিনে চলে যাবে না!

#চলবে.,.

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_13
#Sabrina_Summa

ধীরে ধীরে কেটে গেছে কয়েকটি মাস। সময়ের নীরব ধারায় সুপ্তি আর মাহিরের সম্পর্ক এখন এক গভীর, শান্ত বন্ধুত্বের রূপ নিয়েছে—যেখানে আবেগ আছে, অথচ দাবি নেই।।
আড্ডার মাঝে কাটে তাদের দিন। সুপ্তি এখন নিয়মিত ভার্সিটিতে আসে। আর মাহিরও সুপ্তিকে দেখার জন্য কোনো না কোনো বাহানাতে আসে।

আজ মাহির সুপ্তিকে একটা অফিশিয়াল অনুষ্ঠানে নিয়ে এসেছে। সুপ্তি আসতে চাই নি তবে মাহিরের জোরাজোরিতে আসতে বাধ্য হয়েছে। এখানে অবশ্য তার প্রবেশের অনুমতি ছিল না কিন্তু মাহিরের সাথে আসায় প্রবেশ করতে পেরেছে। মাহফুজ চৌধুরী ও মিস সিক্রেটকে আমন্ত্রণ করা হলেও তারা আসে নি।
সুপ্তি পিছনে বসে আছে । সকলের বক্তৃতা শুনছে মনোযোগ সহকারে। মাহির বক্তৃতার জন্য স্টেজে উঠলে সুপ্তি ছবি তোলার চেষ্টা করলো। কিন্তু পিছে বসায় ব্যর্থ হলো।
অনুষ্ঠান শেষ হতেই সবাই গেল মিটিং রুমে। সুপ্তিও গেল মাহিরের পিছে পিছে ।
সুপ্তি থাকায় কেউ মিটিং শুরু করছে না । বিষয়টা মাহির খুব ভালোই বুঝছে। তবে সে নাছোড়বান্দার মতো বললো, ” আমার ফ্রেন্ড ও। ও বের হয়ে যাওয়াই মানে আমি বের হওয়া। যদি বেশি সমস্যা হয় আমরা দুইজনেই বের হয়ে যাচ্ছি পরে দেখবো মিটিং কিভাবে হয়! ”
এরপর আর কারোই কিছু বলার থাকলো না।
” মিস সিক্রেটের জন্য ভালোই হলো। পরবর্তী কাজে লাগবে ৷ ” ( সুপ্তি মনে মনে )
সুপ্তি এমনভাবে ফোন চালাচ্ছে যে মনে হচ্ছে সে কিছুই খেয়াল করছে না । তবে সবার প্রতিই নজর রাখছে সে।
মিটিং শেষ হতেই সকলে বেড়িয়ে গেল। কয়েকজন যেতে যেতে বললো, ” তাশরিফ তুমি যাবে না?”
মাহির : আপনারা যান আমি একটু পর আসছি।
সকলে যেতেই মাহির সুপ্তির কাছে আসলো। চেয়ারটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো, ” তখন ছবি তুলছিলে না! এখন তুলো। ”
সুপ্তি : এখন কেন তুলবো?
মাহির : কেন তখন সুন্দর লাগছিল এখন লাগছে না?
সুপ্তি : আপনাকে কে বললো আমি সুন্দরের জন্যই তুলছিলাম!
” সুন্দরের জন্যই তো তুলছিলাম। ফর্মাল গ্রেটআপে খুবই হ্যান্ডসাম লাগছিল তখন। এখনও লাগছে। “( সুপ্তি মনে মনে )
মাহির : মেয়েদের সাথে মিশতে মিশতে তাদের এক্সপ্রেসন দেখেই বুঝতে পারি। স্প্রেশালি তোমাকে।
সুপ্তি : ওকে, দাঁড়ান তুলছি।
মাহির একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। সুপ্তি চেয়ারে বসে ক্যামেরা ধরে বললো, ” একটু কাছে আসুন। ”
এটাই যেন মাহির শুনতে চাচ্ছিল । একটু একটু করে এগিয়ে আসছে ।
সুপ্তি বিরক্ত নিয়ে তাকালো। মাহির এগিয়ে এসে সুপ্তির চেয়ার ধরে সুপ্তির সামনে ঝুঁকলো ৷ সুপ্তি পিছিয়ে যেতেই মাহির আরেকটু ঝুঁকে বললো, ” এখন ঠিক আছে? ”
সুপ্তির হাতের চাপে এভাবেই কিছু ছবি উঠে গেল।
সুপ্তি : না আরেকটু কাছে আসলে ভালো হতো। সরুন এখান থেকে।
মাহির সরে যেতেই সুপ্তি চেয়ার নিয়ে পড়ে গেলো। সুপ্তি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। সে বুঝতেই পারে নি মাহিরের ধরাতে চেয়ারটা ভারসাম্যহীন অবস্থায় ছিল। মাহির হাত এগিয়ে দিল।
সুপ্তি ধরতেই যাবে তার আগে মাহির বললো,” আরে ফোনটা চাচ্ছি। ”
আরেকটা ঝটকা খেল সুপ্তি।
সুপ্তি না দেওয়ায় মাহিরই ফোনটা নিয়ে বললো, ” কতদিন যাবত ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিয়ে রেখেছি এফবিতে। কিন্তু তুমি এক্সসেপ্টই করছো না। ”
সুপ্তি দাঁড়িয়ে বললো, ” আমাকে এফবি, ইনস্টা, ইমো এগুলোতে পাওয়া যায় না। ”
মাহির : এখন থেকে পাওয়া যাবে।
ফোনে কিছু একটা করার পর ফোনটা দিয়ে বললো, ” চলো তোমাকে ড্রপ করে আসি। ”
সুপ্তি : আপনার বিরক্ত লাগে না এ কথা বলতে! গত কয়েকমাস ধরে বলে আসছেন।
মাহির : কি করবো তুমি রাজিই হও না।
সুপ্তি : হবোও না।
মাহির : এত প্রাইভেট কি রাখো বলো তো?
সুপ্তি : কিছুই না। শুধু কেউ যাক তা পছন্দ করি না।
মাহির হতাশার হাসি দিলো।
” না “শব্দটা শুনতে কারোরই ভালো লাগে না। ভাগ্যিস তার ধৈর্যটা আছে।।
কথা শেষ করে নিজ নিজ গন্তব্যে চলে গেল দুজন।।।

#চলবে.,.

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_14
#Sabrina_Summa

সকাল প্রায় পুনে সাতটা।
জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে উকি দিচ্ছিল সকালের হালকা রোদ যা চোখে পড়ছিল সুপ্তির, কিন্তু চোখের পাতায় যেন সেঁটে ছিল ঘুমের ভার। ঠিক তখনই ফোনটা কাঁপতে কাঁপতে বেজে উঠল — বিরক্তিকর অথচ পরিচিত শব্দে।

“সুশমিতা”
স্ক্রিনে নামটা দেখে এক মুহূর্ত থমকে গেল। কপালের উপর পড়ে থাকা চুল সরিয়ে আলতোভাবে ফোনটা কানে ধরল সে।

“হ্যালো…” – আধো ঘুমে ঢুলে পড়া কণ্ঠ, যেন শব্দ নয়, নিঃশ্বাস বের হলো।
সুশমিতা বিরক্ত ঢেলে বললো, ” আরে রাখ তোর হ্যালো। এফবিতে ঢুক। তাশরিফ তোকে মেনশন দিছে।”
কল কেটে দিলো সুশমিতা। সুপ্তি বিরক্ত হলো তবুও এফবি লগ ইন করলো। কিন্তু তার মনেই পড়ছে না, তাশরিফটা কে? আর তাকে মেনশন দিছে তাতেই বা কি সমস্যা হয়েছে?
এফবিতে ঢুকেই দেখলো ৯৯৯+ নোটিফিকেশন। এটা তার জন্য অবাক করার কিছু নই। কারণ সে এফবিতে ঢুকে না।
নোটিফিকেশন লিস্টে প্রথমেই তাশরিফের মেনশন করাটা পেয়ে গেল।
সেটাতে ক্লিক করতেই দেখলো, @Rishita Khanom I LOVE YOU…
এতক্ষণে বুঝতে পারলো সুশমিতা কেন এত উত্তেজিত ছিল।
সুশমিতা সুপ্তির আইডিটা দেখাশোনা করে। খুব শখ করে আইডির পাসওয়ার্ড নিয়ে ছিল সে। কিন্তু যেদিন এফবিতে ঢুকলো হাজারটা মেসেজ, নোটিফিকেশন দেখে সেদিনই তার শখ মরে গেছে। মাঝে মাঝে লগ ইন করে। আজও তাই করেছিল। তাই তো মাহিরের মেনশন চোখে পড়েছে।
সুপ্তি তাশরিফের মেনশনে কমেন্ট করলো,” আরে মিয়া মজা পাইছেন! ”
কয়েক সেকেন্ডের মাঝে রিপ্লাই আসলো, ” হ্যাঁ।”
সুপ্তি লিখলো,” ধূর এসব পাগল ছাগল কোথা থেকে যে আসে! ”
সাথে সাথেই মাহির কল করলো।
মাহির : আসসালামু আলাইকুম।
সুপ্তি : ওয়ালাইকুম আসসালাম। আচ্ছা, সূর্য কি আজ পশ্চিম দিকে উঠেছে!
মাহির : কেন? তবে এটা আমারও মনে হচ্ছে।
সুপ্তি : না মানে আপনি সালাম দিচ্ছেন! কিন্তু আপনার কেন মনে হচ্ছে ?
মাহির : তুমি এত সকালে উঠেছো তাই।
সুপ্তি : আমাকে সুশমিতা উঠিয়েছে ।
মাহির : ও৷ আচ্ছা এটা বললো আমি কি পাগল নাকি ছাগল?
সুপ্তি : কেন?
মাহির : তুমিই তো বললে।
সুপ্তি : কখন!
মনে পড়ায় বললো, ” ও আচ্ছ। আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আপনার ডাকনাম তাশরিফ। ”
মাহির : কিহ! এটাও ভুলার জিনিস!
সুপ্তি : আচ্ছা আপনি এটা কেন করলেন? মানুষ কি মনে করবে!
মাহির : এখানে লেখায় আছে। @ দেওয়ার পর যার নাম আসবে তাকে মেনশন করে I LOVE YOU বলতে হবে। No cheating ও লেখা আছে।
সুপ্তি : এমন বাচ্চামি আপনার মানায় না। ডিলিট করুন।
মাহির : আগে বলো সত্যিই এটা বললে কি করতে?
সুপ্তি : আমার উত্তর শুনতে চাচ্ছেন?
মাহির : হুম।
সুপ্তি কিছুক্ষণ নিরব থেকে বললো, ” আপনি তো বলেন নি তাহলে উত্তর কেন দিবো! ”
মাহির : ধরো আমি বলছি।
সুপ্তি : আমি জীবনে “ধরো” এবং “যদি” এই দুইটা শব্দকে বিশ্বাস করি না।
মাহির : তাহলে আমি ডিলিটও করবো না।
সুপ্তি : মাহির… ( টেনে )
মাহির : এভাবে বলো না হার্টে গিয়ে লাগে তো!
বলেই ধপাস করে বেডে পড়ে গেলো।
সুপ্তি : আমার সাথে ফ্লাটিং করে লাভ হবে না।
মাহির : কি করবো বলো। অন্য মেয়েদের সাথে ফ্লাটিং করতেও তো আর ভালো লাগে না। তাি তোমার সাথেই করছি।
” যাইহোক তোমাকে ভালো বানানোর কাজে এক ধাপ এগিয়েছি তার মানে! “( সুপ্তি মনে মনে )
মাহির : কি হলো চুপ কেন! আমার কথা শুনে পটে গেলে নাকি?
সুপ্তি : ডিলিট করুন।
মাহির : ওকে, করছি।
সুপ্তি : গুড নাইট।
বলেই কল কেটে দিলো।
মাহির বলে উঠলো, ” সাড়ে সাতটায় গুড নাইট হয় কবে থেকে! এ মেয়ে পাগল হয়ে গেল নাকি! ”

আজও তারা আড্ডা দিলো। তারা যে শুধু আড্ডা দেয় তা নয়। মাহির সুপ্তিকে পড়াশোনাতেও হেল্প করে। মাহিরও তো সামাজিক বিজ্ঞান নিয়েই পড়েছে ।।

#চলবে.,.

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৪৯

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৪৯
মেহনুরের সারারাত ঘুম হয়নি৷ বেডে এপাশ ওপাশ করে রাতটা কাটিয়ে দিয়েছে। খুব ভোরে রুম থেকে বের হয়েছিলো বাগানে হাঁটতে যাওয়ার জন্য। তখন চোখে পড়লো জিয়ান নয়নাকে চাদরে পেঁচিয়ে কোলে করে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছে। মেহনুর নিজের চোখের জল উল্টো পিঠে মুছে নিলো৷ সহ্য হচ্ছে না তার নয়নাকে! একটা সতেরো বছরের বাচ্চা মেয়ে! সে-সব পেয়ে গেলো যা সে চব্বিশ বছরেও পেলো না! একজন আদর্শ হ্যাসবেন্ড,পরিপূর্ণ সংসার সব পেয়েছে৷ মেহনুর নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো৷ ইচ্ছে করছে নিজেকে শেষ করে দিতে নিজের হার সে মানতে পারছে না। কেনে হলো এমন! নয়না কেন জিয়ানের সাথে থাকবে? জিয়ানের মত ছেলে ওর মত মেয়ে ডিজার্ভ করে না৷ ওতো আমার মতো এডুকেডেট কাউকে ডিজার্ভ করে। তাহলে কেনো নয়না এই বাড়িতে আমার স্থানে!

🌿

দুপুরের ঝকঝকে রোদ জানালার পর্দার ফাঁকফোকর ভেদ করে নয়নার চোখে মুখে খেলা করছে৷ নয়না বারবার চোখ পিটপিট করছে। রোদের তীব্রতা আরো বাড়তে লাগলো। নয়না কপাল কুঁচকে চোখ মেললো। পর্দা সরিয়ে জানালার সামনে নগ্ন দেহে দাঁড়িয়ে আছে জিয়ান।
“নয়না ঘড়ির দিকে তাকালো বেলা একটা পনেরো বাজে! নয়নার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেলো৷ তারমানে এতোক্ষণে রেজাল্ট প্রকাশ হয়ে গেছে! নয়নার মুখ ফেকাসে হয়ে গেলো।

“জিয়ান নয়নার দিকে তাকিয়ে বলে,গুডমর্নিং ডিয়ার বাটার মাশরুম। হ্যাভ এ নাইস ডে মিসেস চৌধুরী।”
“নয়না নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। তার কোন হেলদোল নেই।”
“জিয়ান নয়নার পাশে এসে বসলো, নয়নাকে ধরে নিজের কোলে বসিয়ে বলে,পিচ্চি বৌ কি হয়েছে গো তোমার?এমন চাঁদের মত মুখশ্রীতে আমাবস্যা নেমে আসলো কেনো?”
“নয়না চুপ করে রইলো। জিয়ান নয়নাকে কোলে তুলে নিয়ে ঘুরতে লাগলো।
“কি হচ্ছে ছাড়ুন আমাকে। এসব একদম ভালো লাগছে না৷”
“আমার ভালো লাগছে আজ আমার খুশির দিন সবচেয়ে আনন্দের দিন। জান, জান, জান, তুমি ঢাকা বিভাগে টপ রেজাল্ট করেছো।ইশশ আজ পুরো এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করবো। লাভ ইউ জান৷ লাভ ইউ সো সো সো মাচ।”
“নয়না জিয়ানের গলা শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো৷ তার চোখ ভিজে উঠলো।”
“জিয়ান নয়নাকে চুমু দিতে লাগলো পুরো মুখ আদরে আদরে ভরিয়ে দিয়ে বলে,এখনো মন খারাপ করে থাকবে ডিয়ার পিচ্চি বৌ?”
“একদম বিচ্চি বৌ বলবেন আমার বয়স সতেরো বছর।”
” আহা টপার বৌ যা বলবে তাই তো শুনতে হবে৷ যাও রেডি হও৷ সবাই ভাবছে ছেলে আর বৌ পুরো রাত বাসর করেছে এখন অর্ধেক দিনও বাসর করছে!”
“নামান আমাকে৷”
“নয়না ওড়না খুঁজে জড়িয়ে নিলো গায়ে৷ চুপচাপ বেডের উপর বসে রইলো৷”
“জিয়ান ব্ল্যাক কালারের টিশার্ট পরলো। চুলগুলো ঠিক করে বলে,যাও হাত মুখ ধুয়ে আসো বড্ড খিদে পেয়েছে খেতে হবে তো। বৌ খেয়ে মন ভরে পেট তো ভরে না৷”
” আমার লজ্জা লাগছে। কি করে নিচে যাবো!সবাই কি ভাববে?”
“সবাই কি ভাববে মানে! সবাই ভাববে তাদের পিচ্চি বৌ স্বামী সোহাগি হয়ে গেছে।বোকা বোকা কথা না বলে উঠো তো৷”
” না আমি যাবো না আমার লজ্জা লাগছে।”
“হাঁটুর বয়সী নিব্বি বিয়ে করলে এই এক সমস্যা সব সময় বেশি বুঝে!”
“নয়না বেডের উপর দাঁড়িয়ে বলে, হাঁটুর বয়সী আবার কি! দেখুন তো কে লম্বা?”
“আপনি লম্বা ম্যাম দয়া করে, নিচে চলুন।”
“নয়না বলল,আপনি যান আমি আসছি।”
“জিয়ান নিচে এসে দেখে,মাহবুব তালুকদার, মিজান তালুকদার, জাহানারা বেগম, সূচনা সোফায় বসা৷
“সবাইকে সালাম দিয়ে বলে,আপনারা কখন আসলেন?”
“মেয়ের রেজাল্ট শুনে চলে আসলাম।”
“মিতা বেগম বললেন, খুব ভালো করেছেন৷ আজ দুপুর সবাই একসাথে খাবো। জিয়ানের বাবাও আসছে।”
“জিয়ান সুচনার পাশে বসে বলে,কিগো পাঁকা বুড়ি আজ এতো চুপচাপ কেনো!”
“সূচনা চুপ কোন কথার উত্তর দিচ্ছেনা।”
“জাহিন বাসায় ঢুকে এতো মানুষ দেখে সালাম দিলো৷”
“ওনারা সবাই অবাক! দুজন শুধু দেখতেই নয় কন্ঠও প্রায় সেম।”
“জিয়ান হেসে বলে,ও আমার ছোট ভাই জাহিন৷ জাহিন এনারা আমার শ্বশুর বাড়ির মানুষ। ইনি আমার চাচা শ্বশুর, আর ইনি আমার বাবা, ইনি আমার শ্বাশুড়ি আম্মা৷ আর এই যে সুইট গার্ল সে হচ্ছে আর্ধেক ঘরওয়ালী৷”
“জাহিন সবার সাথে কুলশ বিনিময় করলো।জিয়ানের পাশেই বসে আছে জাহিন।”
” নয়না নিচে এসে সবাইকে দেখে খুশি হয়ে গেলো তার আনন্দ দ্বিগুন হয়ে গেলো৷”
“জাহিন আড়চোখে নয়নার দিকে তাকালো৷ মনে মনে বলে,বিয়ে করলে এমন একটা কিউটের ডিব্বাকেই করবো।”

“সবাই একসাথে সুন্দর একটা দিন কাটালো৷ তালুকদার বাড়ির সবাই বাসায় চলে গেলো৷ নয়না জানালার পাশের সোফায় বসে আছে। রুমের লাইট অফ। জানালা দিয়ে চাঁদের আলো আসছে। এতোকিছুর পরেও নয়নার মনটা কেমন উদাস৷ সে যেনো সব পেয়েও অপূর্ণ! যে কিনা তার হ্যাসবেন্ডের স্পর্শ অনুভব করতে ব্যর্থ। চোখের কার্নিশ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরছে। মন কখন কি চায় মন হয়ত নিজেও তা জানেনা। নয়না মৃদু স্বরে আওড়াচ্ছে….

“নির্জনে বয়ে চলে বাতাস, চুপচাপ সুরে গান গায় বিরহের , আকাশের কোলে চাঁদ হাসে, নক্ষত্রেরা চুপচাপ ডাকে জোছনা বিলায়, তবুও লোকে চাঁদের প্রেমে পরে!
বনপথে পাতা ঝরে যায়, কিংবা নদী বহে দূর প্রবাহে, তারা কেউ জানেনা, হৃদয়ে কি এক অশান্তি, যা নেই কোথাও, তা অদৃশ্য, প্রগাঢ়।সে যেনো জেনেও জানেনা, বুঝেও বুঝে না মনের গহীন ক্ষত!
মনের গভীরে রয়ে যায় অপূর্ণ স্বপ্ন, যা আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছি, এ জীবনে তা যেনো পেয়েও হারিয়েছি৷ এ জীবন হোক কিংবা পরবর্তী, আমি তো শুধু খুঁজে বেড়াচ্ছি সে অসীম সুধা যা আমায় তৃষ্ণায় বিতৃষ্ণ করছে।”
“জিয়ান চুপিসারে নয়নার পায়ের উপর মাথা রেখে শুয়ে পরলো।
“নয়না দ্রুত চোখ মুছলো,আপনি কখন এলেন?”
“যখন কেউ তার হরিণের মত মায়াবী চোখ থেকে টুপটাপ বৃষ্টি ঝড়াচ্ছিল তখন। তুমি কি জানো তুমি কাঁদলে আমার মনের আকাশেও মেঘ জমে? কোন অজুহাত শুনবো না আমি জানতে চাই কেনো কান্না করছিলে?”
“নয়নার চোখ যেনো বাঁধ মানছে না। সে বর্ষণমুখর হয়ে গেলো।”
“জিয়ান উঠে বসলো। শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো নয়নাকে৷ বিচলিত কন্ঠ শুধালো, কি হয়েছে তোমার! আমি কি তবে আবারও তোমার হৃদয় গভীর কোন ক্ষত তৈরি করেছি? আমি জানি তোমার বয়স কম। কিন্তু আমি নিজেকে সামলাতে পারিনি৷ আমি ব্যর্থ হয়েছে আমার পুরুষত্বের কাছে! আমি এবার গেলে তোমার আঠারো বছর পূর্ন না হওয়া পর্যন্ত আসবো না৷ দূর থেকে তোমাকে ভালোবাসবো। তবুও তোমার কষ্টের কারন হতে চাই না। তোমাকে এতো কাছে পেয়েও দূরে সরিয়ে রাখা সম্ভব না।”
“নয়না শব্দ করে কান্না করছে। জিয়ানের টিশার্ট শক্ত করে খামচে ধরে বলে,আমি আপনাকে পরিপূর্ণ ভাবে পেতে চাই। আমার হৃদয় তৃষ্ণায় ছটফট করছে৷ সে তৃপ্ত হচ্ছে না৷ আমি আপনার স্পর্শ অনুভব করতে চাই।”
” জিয়ান থমকে গেলো! তবে কি কাল রাতে নয়না নিজের সাথে যুদ্ধ করে সবটা সহ্য করেছে! কিছুক্ষণ পর জিয়ান নয়নার থুতনিতে হাত রেখে বলে,কি হয়েছে আমাকে বলো,তোমার জন্য কষ্টকর হলে আমাকে বাঁধা দিলে না কেনো!”
“নয়না নিজের দৃষ্টি নত করে বলে,আমার নানুমনি বলেছে,নিজের পুরুষকে সব সময় নিজের আঁচলে বেঁধে রাখতে হলে নিজেকে পুরোপুরি শপে দিতে হয়৷ আমি আপনাকে সব সময় আমার করে রাখতে চাই৷ আমি এতোটাও অবুঝ না যে স্বামী স্ত্রীর এই মিলন সম্পর্কে অবগত না। কিন্তু আপনি আমার যত কাছে আসেন আমি না চাইতেও ওই রাত আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে। গতকাল রাত ছিলো আপনাকে পুরোপুরি আমার করার রাত৷ অথচ আমি আপনার স্পর্শের মাদকতা অনুভব করতে পারিনি!আমি সব ভাবে আপনাকে চাই।আপনাকে চাই আপনাকেই চাই৷”
“জিয়ান নয়নার চোখের কোনের জমে থাকা জলটুকু মুছে দিয়ে বলে,আমি শুধু তোমার, তোমার পাইলট মহাশয় শুধু তার বাটার মাশরুমের। এজন্মে আমি তোমাকে ছাড়বো না৷”

দু’জনে দু’জনের কপালে কপাল ঠেকিয়ে রাখলো দীর্ঘ সময়। জিয়ান নয়নার কপালে চুমু দিলো। জিয়ানের চুলগুলোতে আঙ্গুল ডুবিয়ে আলতে হাতে হাত বোলাতে লাগলো৷ নয়না জিয়ানের বুকে মাথা রেখে বসে আছে।
“জিয়ান বলল,আমার ছুটি তো শেষ আগামীকাল আমাকে চলে যেতে হবে। কি করে থাকবো আমার বাটার মাশরুমকে ছাড়া!”
“নয়না সামনে ঘুরে বলে,চলে যাবেন মানে?”
#চলবে