Tuesday, June 17, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 6



মায়ের কথা পর্ব-০৫

0

#মায়ের_কথা
পর্বঃ৫
#সাবাব_খান

পরদিন রাতে দেশে আসিফ ভাই খবর পাঠালো আমি ভয়াবহ এ’ক্সিডেন্ট করেছি। আমার মাথাটাই মেইনলি আ’ঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। একদম সিরিয়াসলি আ’ঘাতপ্রাপ্ত। মগজ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। এ জীবনে আর আমি মানসিকভাবে সুস্থ হবো না। আমার আব্বার মতই মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে থাকবো। আম্ম তো পা’গল হয়ে গেলেন। দেশে কান্নাকাটি পড়ে গেল। আসিফ ভাই আম্মাকে জানিয়েছে আমি শারীরিকভাবে একটু সুস্থ হলে আমাকে কোনোভাবে প্লেনে করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেবে। আমি কখনোই মানসিক ভারসাম্য ফিরে পাবো না।

এ খবর দেশে পৌঁছানোর সাত দিনের মধ্যে পাল্টে গেল সব সমীকরণ। মামা,চাচা সবাই আম্মাকে বিভিন্ন কু’টূক্তি করতে লাগলো। ওরা এখন আর আমার কাছে মেয়ে বিয়ে দেবে না। আগে যেরকম আম্মার সাথে খা’রাপ ব্যবহার করত তার থেকে আরো বেশি খা’রাপ ব্যবহার করতে শুরু করে। যেখানে দেশে খবর গেছে আমি অসুস্থ। আম্মার ছেলে অসুস্থ, কোথায় সবাই একটু ভালো ব্যবহার করবে! সেটা কেউ করে নি। উল্টো আম্মাকে বলেছে, ‘পুতেরে আমেরিকা পাঠায়া কয়েকদিন একদম দাঁত জ্বালায়া গেছিল। আল্লায় বিচার করছে!’

আরো কত কি! এমনও বলেছে, ‘ পা’গল-ছা’গলের সাথে যে মাইয়া বিয়া দিতে হয় না এইটাই অনেক। আল্লায় বাঁ’চাইছে।’

এমনকি যেদিন আমার অ্যা’ক্সিডেন্টের খবর দেশে গেছে সেদিন আম্মার শোকে আমাদের চুলোয় আ’গুন জ্বলেনি। কেউ আমাদের ঘরে একটু খাবারও দেয়নি। অথচ নানা বাড়ি,দাদা বাড়ি দুইটাই আমাদের পাশে।

ঘটনার ঠিক দশ দিন পরে আমি ফোন দিলাম আম্মাকে,’হ্যালো আম্মা!’

‘কিরে বাপ, তুই কথা কইতে পারোস?’

‘হ আম্মা, আমি কথা কইতে পারি।’
‘আমি তো মনে করছিলাম এ’ক্সিডেন্টে তুই একদম পা’গল হয়া গেছোস!’

আমি শান্ত কণ্ঠে বললাম, ‘আসলে আম্মা আমি কোনো এ’ক্সিডেন্টই করি নাই।’

‘কি কস তুই এইসব?’

‘আমি নাটক সাজাইছিলাম। আমার মামা,চাচাকে তোমার সাথে আবার পরিচয় করায়া দিতে চাইছিলাম। চোখে আঙ্গুল দিয়া দেখাইতে চাইছিলাম ওরা কত খা’রাপ। কতটা স্বা’র্থপর!’

আম্মা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘ঠিকই কইছস বাপ! অরা অনেক স্বা’র্থপর।

‘তাইলে তুমি কেমনে এই স্বা’র্থপরের মাইয়া আমার জন্য আনতে চাইছো?’

আম্মা চুপ হয়ে গেলেন। আমি বললাম, ‘আল্লাহ আমাদেরকে বাঁচাইছে! ওরা নিজেরাই সরে গেছে। মামা নাকি বলছে আমার কাছে আর মেয়ে বিয়ে দেবে না। এবার আর ওরা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসতেই পারবে না।’

‘আমি আর আনমু না অগো কারো মাইয়া। তোর যারে পছন্দ হয় তারেই বিয়া করিস। তয় আমার একখান…

আম্মা কথা কমপ্লিট করতে পারেন নি। আমাদের এক প্রতিবেশী নাকি চলে এসেছে ঘরে। তবে আমি আম্মাকে ঠিকই বলে রেখেছিলাম, ‘তোমার বড় ভাইয়ের কাছে যাও। গিয়ে তোমার সম্পত্তি আদায় করে নিয়ে আসো। আমি এইটাই চাইছি বে’ঈমানদেরকে আমাদের কোনোকিছু খেতে দেবো না।’

সেদিন আমি ফোন রেখে দেই। আম্মা তার ভাইয়ের কাছে সম্পত্তির জন্য যায়। তখন আমার বড় মামা আমাকে জানায়, ‘তোর ছেলে সাবাব তো পুকুর বিক্রি কইরা এমেরিকা গেছে। তোরে সম্পত্তি দিলে ওইগুলাও সাবাব বিক্রি কইরা খাইবো। তোর পোলা তো কু’লাঙ্গার। এক্সিডেন্টেরও মিথ্যা নাটক সাজায়। এমন নাটক কইরা তোর কাজ থিকাও টাকা নিতে পারবো। তোর জমিনডা আমার কাছে আছে, আমার কাছেই থাউক। জমিনডা ভালো আছে। তোর জিনিস তোরই থাকবো। কিন্তু দলিল কইরা দিলে তোর নাটকবাজ পোলা কোন সময় কি কইরা বসে, কে জানে!’

আম্মা ভীষণভাবে থ্রেট দেয় বড় মামাকে, ‘ভাই, আপনে সম্পত্তি বুঝায় দিবেন কিনা কন! যদি না দেন, তাইলে আমি মামলা দিমু।’

আম্মা তার সম্পত্তি আদায়ে বদ্ধপরিকর। বড় মামা এখন আর আম্মার কাছে এসে কোনো বুদ্ধি দেয়ার সাহস পায় না। আমার চাচারাও না। আম্মা সবাইকে সমান প্রতিবাদ করে। আমি কিন্তু এটাই চেয়েছিলাম। আম্মা বুঝুক বাস্তবতা। আগেও বুঝেছে। এখন আরেকটু ভালো করে বুঝুক। একটু শক্ত হোক। আম্মাকে শক্ত করার জন্যই আমি রাফাকে বিয়ে করার কথা দিয়েছিলাম। আর এ’ক্সিডেন্টের নাটক সাজিয়ে ওদের আসল চেহারাটা আবার বের করে এনেছিলাম। আম্মা এখন সবই বোঝে। বড় মামাও শীঘ্রই আম্মার জমি বুঝিয়ে দিচ্ছে।

আজ সকালে আম্মা আবার ফোন দিল। খুব নরম সুরে আমাকে বলল, ‘সাবাব, তুই কি এহনই বিয়া করতে চাস?’

‘না মা! এখনই বিয়া করমু না। আগে এস্টাবলিশড হই, তারপরে বিয়া করমু।’

‘আমার অন্য একটা কতা ছিল। অনেক গোপন একটা কতা। একটা স্বপ্ন। ল এই কারণেই আমি রাফারে তোর বউ কইরা আনতে চাইছিলাম।’

আমি ধ’মক দিয়ে বললাম,’ আবার রাফারে বউ বানাইতে চাইতাছো?’

‘না বাপ। রাফারে আমি বউ বানাইমু না। কিন্তু তোর বিয়ার আগে আমার গোপন কথাটা শুইনা একটা পদক্ষেপ নিস। আমি মনে করছিলাম রাফা আমার ভাইজি। আমার ঘরে আনলে তোর বিয়ার পরও আমার কথা শুনবো। আমার মনের গোপন স্বপ্ন পূরণ করতে পারমু। আপন ভাইজি বেশি গ’ন্ডগোল করব না আমার সাথে। এখন তো দেখি ওরা বে’ঈমান। তুই বিয়া করার আগেই আমার স্বপ্নের কথাটা শুনিস। আর আমার স্বপ্নডাও পূরণ কইরা দিস, যদি পারোস। কারণ তোর বউ আসলে আমার আর তোর মাঝখানে বউ থাকবো। বউ যদি আমার স্বপ্নটা পূরণ করতে না দেয়! অনেক কঠিন স্বপ্ন তো! আমি অনিশ্চয়তার মধ্যে পইড়া যাইমু। আমার জীবনে যদিও এই একটাই স্বপ্ন। তুই আমার স্বপ্নের কথাটা শুইনা একটু কাজ করিস। তারপরে যারে খুশি তারে বিয়া করিস।’

‘তোমার কি এমন স্বপ্ন আম্মা?’

চলবে

মায়ের কথা পর্ব-০৪

0

#মায়ের_কথা
পর্বঃ৪
#সাবাব_খান

আমি আর কথা বাড়ালাম না আম্মার সাথে। এমনিতেই ব্যস্ত জীবন। আম্মাও কত দূরে থাকে! তাই অপছন্দের ব্যাপার আর টানলাম না। এমেরিকার সাথে বাংলাদেশের সময় ব্যবধান অনেক। আমার এখানে যখন সকাল বাংলাদেশে তখন রাত। সাতদিন পর এক আম্মা আবার প্রসঙ্গ উঠালেন, ‘কিরে কিছু জানালি না যে?’

‘কোন ব্যাপারে আম্মা?’

‘তোর বিয়ার ব্যাপারে।’
‘সেদিনই তো বইলা দিছি। রাফারে বিয়া করমু না।’

‘আরেহ্ আহাম্মক, তোর পিছনে শ’ত্রু লাগছে,শত্রু!’
‘কে? এমেরিকায় তো আমার তেমন কোনো শ’ত্রু নাই।’
‘আরে দ্যাশে শত্রু লাগছে!’
‘দ্যাশে তো সবসময়ই আমাগো শত্রু আছে।’

‘এহন নতুন কাহিনী শুরু হইছে।’
‘কি কাহিনী আম্মা?’

‘তোর মেজো চাচায়ও তোর কাছে মাইয়া বিয়া দিতে চায়।’
‘কি কও তুমি আম্মা? মেজো চাচী আর বড় মামি তো আপন দুই বোন। দুই বোনই মেয়ে নিয়া লাগছে আমার পিছনে?’
‘আরেহ্ হ! তোর চাচাতো বইনডা তো এক নম্বরের ব’দমাইশ। আমার ভাইঝিডা কিন্তু খুব ভালো। তোর জন্য একটা ব্রেকআপও দিছে।’

‘আমার জন্য না। গত সপ্তাহে তুমি যখন বলছিলা রাফা আমার জন্য ব্রেকআপ করছে। তারপরও আমি খোঁজ লাগাইছি। আমাগো সারা নিজেই সব খোঁজ নিয়া আমারে জানাইছে। সারা তোমারে কিছু কয় নাই এই ব্যাপারে?’
‘আরেহ্ ধুর! আমার বড় মাইয়াডা নানা বাড়ির মানুষ দেখতেই পারে না, রাফারেও না। তুই তোর বইনের বুদ্ধি লইস না। ওরে এতো কইলাম সাবাবরে কিছু জানাবি না। অয় তোরে জানাইছেই জানাইছে।’
‘জানাইবো না ক্যান? রাফা ভুং-ভাং বুঝাইছিলো তোমারে। এক ছেলের সাথে সম্পর্ক করছে। ঐ ছেলে রাফারে ছ্যাকা দিছে আমি আমেরিকায় আসার মাস খানেক আগে। তোমার ভাইজি কেমনে কইতে পারল; যে আমার জন্য ব্রেকআপ দিছে?’

‘আরেহ্ সারার একটা কতা! অর কতা বিশ্বাস করিস না!’

‘বুঝছি মা! তুমি তোমার ভাইয়ের মেয়েরে বউ কইরা আনার জন্য নিজের মেয়েরেও অবিশ্বাস করতেছো। শোনো মা, কোন কিছুতেই কইরাই লাভ নাই। আমি তোমার ভাইজিরে বিয়া করমু না।’

‘তাইলে তো তোর চাচায় তোর কাছে মাইয়া বিয়া দিবো। সমস্যাডা বোঝোস না?’

‘কেন,বাংলাদেশে কি আর মাইয়া নাই? মামা,চাচার মাইয়া ছাড়া তোমার মাথায় কিছু ঢোকে না?’

‘শোন, তোর চাচায় ভালো না! চাচাতো বইনেও ভালো না। তোগো গুষ্টির কেউ ভালো না
পুরা গুষ্টিডাই খা’রাপ। এই গুষ্টির মাইয়ার লগে আমার ভাইঝির তুলনা! হুহ্!’

‘হুম, তোমার ভাইঝি তো খুব ভালো! তুমি কি ভুইলা গেছো সবসময় অরা আমারে কইতো পা’গলের পুত! তোমার ভাইঝিও কিন্তু পা’গলের বইন। সারাজীবন আমারে পা’গলের পুত কইছে।কত অপমান করছে! আমিও এহন পা’গলের বইনে রাফারে বিয়া করমু না।’

‘তুই জানোস দেশের খবর! তোর মামায় প্রত্যেকদিন আইসা আমারে দেইখা যায়। আমার সব ভালো-মন্দে আগায়া আসে!’

‘এখন তো আসবোই! প্রতিদিন কেন! দিনে চাইর-পাঁচ বারও আসবো। মাইয়া বিয়া দেওনের ধান্দা না! তোমার তো খোঁজখবর নিবোই? আর তুমি ভাইয়ের দুই দিনের ভালো ব্যবহারেই সব ভুইলা গেলা!’

‘আমার ভাইয়ের মতো ভাই অয় না।’

‘আচ্ছা শোনো, সারা আমারে কইল। মেজো চাচায়ও নাকি মাইয়া বিয়া দেয়ার জইন্য খুব খোঁজখবর নেয় তোমাগো!’

‘তোর চাচা হইছে স্বা’র্থপর! অয় খোঁজ নেয় স্বার্থের জইন্য।’

‘মামা-চাচা দুইটাই স্বার্থপর। সবাই এখন স্বা’র্থের জন্য খোঁজ নেই। মাইয়া বিয়া দেয়ার জন্য। আমি কারো মাইয়াই বিয়া করমু। আমি আমার পছন্দ মত বিয়া করমু।’

‘এই শোন হা’রা’মজাদা, আমার ভাইজিডার মনডা খা’রাপ। মনটা একদম নষ্ট হয়া যাইতেছে। মনের কষ্টে আছে। তুই বিয়া করলে আমার ভাইডা খুশি হইতো!’

‘এমেরিকা আসছি কি তোমার ভাইরে খুশি করতে? আর একটা কথাও বলবা না। আমি কারো মেয়েই বিয়া করমু না। আমার পছন্দ মত বিয়া করমু। এইটাই শেষ কথা।’

…………
এদিকে মেজো চাচাও আমাকে বেশ কয়েকবার কল দিয়েছিলেন তার মেয়ের কথা বলতে। আমি ভদ্রতার খাতিরে একবার কল রিসিভ করে আর রিসিভই করিনি। দুনিয়াতে যে কত রঙের মানুষ আছে! সবাই কোনো না কোনোভাবে স্বার্থপর! আপনি যদি ভি’কটিম না হন তাহলে আপনি বুঝবেন না। আমিও বুঝতাম না ভাগ্য পরিবর্তন করতে না এলে। আমার মনে হল, চাচা-মামা কারোরই অতীতের কথা মনে নেই। সেইসব দুর্ব্যবহারের কথাও মনে নেই। কতো যে ভালো মানুষ তারা!

এমেরিকায় আসার দু’মাস না পেরোতেই আম্মা বড় রকমের ঝামেলা শুরু করেন। অনেক কান্নাকাটি করে যাচ্ছেন। বড় মামার মেয়ে রাফাকে বিয়ে করতেই হবে। নয়তো মামার সাথে নাকি সম্পর্ক থাকবে না। আমি আম্মাকে বোঝালাম আমার যে মেজো চাচীটা সারাজীবন জ্বালিয়েছে সে হচ্ছে বড় মামীর আপন বোন। আমি যদি রাফাকে বিয়ে করি তাহলে বড় মামী আর তার বোন মিলে আম্মাকেই বের করে দিবে আমার জীবন থেকে। আম্মা বুঝতে চাইলেন না। জোর করলেন আমার সাথে। আমি শেষ পর্যন্ত আমার গার্লফ্রেন্ডের কথা বললাম। তারপরও আম্মার মন গলাতে পারলাম না। আম্মা অনেক কান্নাকাটি করলেন। শেষ পর্যন্ত সু’ই’সাইডের ভয় দেখালেন। রাফাও নাকি সু’ই’সাইড করবে। এগুলো সবই বড় মামার শেখানো বুদ্ধি। ভাইয়ের দুই দিনের ভালো ব্যবহারে আম্মা অতীতের সব ভুলে গেছেন। আগের অপমানের কোন কিছু মনে নেই তার। রাফা নাকি খুশি হবে আমি বিয়ে করলে! কান্নাকাটি করে আমার জন্য! রাফার মন খা’রাপ! ওর ভবিষ্যতের কি হবে? এসবই আম্মার অজুহাত। তার ভাইঝির যদি কিছু হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত আম্মাকে ওয়াদা দিলাম রাফা কেই বিয়ে করবো।

বিয়ের ওয়াদা দিলেও আমার প্ল্যান কিন্তু আমার মনেই আছে।

চলবে

মায়ের কথা পর্ব-০৩

0

#মায়ের_কথা
পর্বঃ৩
#সাবাব_খান

আমি গোপন প্ল্যান করলাম। আমার আত্মীয়-স্বজনদের সমানে থাকতে হলে জীবনে বড় কিছু করতে হবে। নয়তো সারাজীবন ওদের হাতে শো’ষিত হতে হবে। বড় মাপের সরকারি চাকরি করলে ওদের সমানে থাকতে পারবো। কিন্তু সরকারি চাকরি পাওয়া এত সোজা নয়। দীর্ঘমেয়াদি পড়ালেখা করা লাগে। এই ধরুন বিসিএস পরীক্ষা দিতে গেলে প্রিলি,রিটেন,ভাইবা সব মিলিয়ে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। এত বছর সময় তো আর আমার নেই। এত ধৈর্যও নেই। মনটাও স্থির নয়। ছোটবেলা থেকেই সংসারের চিন্তা মাথায় ঢুকে গেলে তখন আর দীর্ঘমেয়াদি পড়ালেখা হয় না। আম্মার স্বপ্ন ছিল আমি বিসিএস অফিসার হই। কিন্তু মাকে বোঝালাম অতোটা সময় আমি পাবো না। তাছাড়া বোন দুটোও বড় হচ্ছে। সারা অনার্সে,স্নিগ্ধা ইন্টারমিডিয়েটেড পড়ে। ওদেরও তো ভবিষ্যৎ আছে। আমি ভালো কিছু না করলে ওদেরকেও যোগ্য করে তুলতে পারবো না।

আম্মাকে আমার গোপন প্ল্যানের কথা বললাম। আমাদের ভা’গের পুকুরটাকে বিক্রি করে দিতে চাই। কারণ এই পুকুরে ব্যবসা করা হয়তো আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। যখনই মাছ চাষ করতে যাবো তখনই হয় বি’ষ মিশিয়ে দেবে। না হয় মাছ চু’রি করবে। অথবা অন্য কোনো ঝামেলাও করতে পারে। তাই মা’কে বললাম মা পুকুরটা বিক্রি করে দিয়ে আমি ভবিষ্যত দাঁড় করাতে চাই। আম্মা বলল, ‘ তোর চাচারা শুনলে কখনোই বিক্রি করতে দেবে না।’

আমি বুঝিয়ে বললাম, ‘পুকুরটা তো আমাদের। চাচারা বিক্রি করতে দেবে না কেন?’

আম্মা বলল, ‘তারপর ওরা বাধা দেবে!’

আমি চিন্তা করলাম চাচাদেরকে না জানিয়েই পুকুরটাকে বিক্রি করব। যদি চাচারা কিছু টের পেয়ে যায় সেক্ষেত্রে বলবো পুকুরটা লিজ দিচ্ছি। মিথ্যেই বলব।

এদিকে আমি পড়াশোনা শুরু করলাম। সম্পূর্ণ ভিন্ন এক পড়াশোনা। আইএলটস্ কোচিং অনলাইনে। পুকুর ক্রয়ের কাস্টমারও খুঁজছিলাম। আইএলটস কেন বেছে নিয়েছি জানেন? সময় কম লাগে পাশ করতে। স্বল্পমেয়াদি প্রসেস। সরকারি চাকরি পাওয়া তো দীর্ঘমেয়াদি প্রসেস। আবার সরকারি চাকরিতে ইদানিং ঘু’ষেরও প্রয়োজন হয়। ঘু’ষ দিয়ে চাকরি নিয়ে সেই টাকা উঠানোর জন্য চাকরিতে ঢুকে ঘু’ষও খেতে হয়। পুরো জীবনটাই বরবাদ। মেধায় কয়জনের চাকরি হয় বলুন! বছরের পর বছর পড়াশোনা করে যদি চাকরি না পাই সেই চিন্তাও মাথায় ছিল। তাই আইএলটস পড়া শুরু করেছি। বন্ধুরা বলেছিল তুই ইংরেজিতে অনার্স করেছিস। তোর বিদেশ যেতে আইএলটস লাগবে না। আমি চিন্তা করলাম আইএলটস করেই বিদেশ যাবো। তাহলে বিদেশ গিয়ে আমি মাস্টার্স করবো। বিদেশ মাস্টার্সের সাটিফিকেট থাকলে পরবর্তীতে ভালো একটা চাকরি পাবো। আইএলটস না করে গেলে ভালো চাকরি পাওয়া যাবে না। এসব চিন্তা করেই সব শুরু করলাম।

কয়েক মাসের মধ্যে পুকুরে ক্রয় করার লোকও পেয়ে যাই। এদিকে আমার আইএলটস পরীক্ষার রেজাল্ট হয়। মেধা তো আর খা’রাপ না। ভালো পয়েন্ট পেয়েছি। বিশাল পুকুর আমাদের। মোটা অংকে পুকুরটাকে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। এরমধ্যে চাচারা কিভাবে যেন কিছুটা টের পেয়ে যায়। আমিও জানিয়ে দেই পুকুরটাকে লিজ দিচ্ছি। চাচারা লিজের কথা শুনেও বিরোধিতা করে, ‘ আমাদের বাপ,দাদার জমির মধ্যে পুকুরটাকে লিজ দিবি কেন? জমির মধ্যে অন্য মানুষ আসা যাওয়া করবে! বাড়ির মধ্যে অন্য মানুষ আসা ভালো না!’

আমি জানিয়ে দিলাম এছাড়া উপায় নেই। চাচারাও আগের মতোই বিরোধিতা করে। উনাদেরকে না জানিয়েই পুকুরটাকে বিক্রি করে ফেলি। এরপরে শুরু হয় বিদেশ যাওয়ার প্রসেস। বেশিদিন লাগেনি। অন্যের টাকারও প্রয়োজন হয়নি। পুকুর বিক্রির টাকাতেই হয়ে গেছে। আত্মীয়-স্বজন কারো কাছেই বলিনি আমি এমেরিকায় আসবো। ভিসা হয়েছে, প্লেনের টিকেট হয়েছে। তখনও বলি নি। কারণ যেকোনো ক্ষতি করতে পারতো আত্মীয়-স্বজন। ওদেরকে এখন আর বিশ্বাস করি না। দুর্বলকে সবাই আরো চেপে চেপে মারতে চায়। ফ্লাইটে ওঠার আগের দিন ঢাকায় বসে সবাইকে ফোন দিয়ে জানিয়েছিলাম।

যথাসময়ে আমি চলে আসি এমেরিকায়।
দুই সপ্তাহ হলো এসেছি। নিউইয়র্কে আছি। এখনো ভার্সিটির ক্লাস শুরু হয়নি। আমার এক বন্ধুর বড় ভাইয়ের বাসায় আশ্রয় নিয়েছি কয়েকদিনের জন্য। দেশ থেকেই বন্ধুর সাথে কথা বলে সব ঠিক করে এসেছিলাম। ওদের সাথে আমার আরেকটা সম্পর্কও আছে। বন্ধু কিন্তু ছেলে নয়, মেয়ে বন্ধু। ওর নাম রিম্পা। রিম্পাই ওর ভাইকে বুঝিয়েছে আমাকে আশ্রয় দেয়ার জন্য। এখানে প্রবাসী জীবনটা খুব সহজ নয়। সেটেলড হতে হলে প্রথমে খুব কষ্ট করতে হয়। এখনো চাকরি খুঁজতে হচ্ছে আমায়। চাকরি না পেলে কি করব, না করব! রিম্পার বড় ভাইও কাজ খুঁজছেন আমার জন্য।

আজ হঠাৎ করে ফেসবুকে টেক্সট আসে, রাফার টেক্সট। জানেন তো, রাফা আমার বড় মামার মেয়ে। আমায় টেক্সট পাঠিয়েছে, ‘কেমন আছো সাবাব ভাইয়া?

আমি রিপ্লাই দিলাম, ‘ভালো! তুই কেমন আছোস?’

‘মনটা ভালো না সাবাব ভাইয়া?’

‘কি হইছে তোর মনের?’

‘আমার কথা বাদ দাও। তুমি এত তাড়াতাড়ি এমেরিকা গেলা কেমনে?’

‘আইএলটস করে এসেছি।’

‘আমারও না এমেরিকা যাবার খুব স্বপ্ন!’

‘তাহলে তুইও আইএলটস করে চলে আয়!’

‘পড়ালেখা আমার মাথায় ঢুকে না!’

‘তাহলে অনার্স করছিস কিভাবে?’
‘এইতো কোন ভাবে পাশ করছি। ভালো কোনো রেজাল্ট তো আর করছি না। আচ্ছা সাবাব ভাইয়া, অন্য কোন উপায়ে এমেরিকা যেতে পারবো না?’

‘পারবি! এমেরিকা প্রবাসী ছেলেকে বিয়ে করে চলে আসবি!’
‘এমন ছেলে কই পাবো!’

‘খোঁজ, খুঁজলে পেয়ে যাবি! আশেপাশে কতো এমেরিকা প্রবাসী ছেলে আছে!’

‘সত্যি কইতাছো তো?’

‘হুম!’

‘পরে কিন্তু অস্বীকার করতে পারবা না।’

‘এইখানে অস্বীকার করার কি আছে? আচ্ছা, তোর সাথে পরে একদিন চ্যাটিং করব। আমার একটু বের হতে হবে। সময়-অসময়ে নক দিস না তো। অনেক ব্যস্ত আমি!’

এরপরে আর কথা হয়নি রাফার সাথে। ইদানিং নাকি মামা-চাচা সবাই আম্মার খুব যত্ন করে। আসলে কি জানেন? তাদের ছেলেমেয়েকে যদি এমেরিকায় পাঠাতে পারে! আমি নিজেই তো আসলাম মাত্র কিছুদিন। নিজের সেট হতে হয়তো কয়েক বছর লাগবে। রিম্পার বড় ভাই আমাকে একটা কাজ খুঁজে দিয়েছে। আসলে বলা হয়নি আপনাদেরকে। রিম্পার সাথে আমার ভাব ছয় মাস ধরে। আমি কথা দিয়েছি ওকে বিয়ে করবো। এজন্যই ওর ভাইও আমাকে হেল্প করেছে। বিনা প্রয়োজনে কেউ কাউকে সাহায্য করে না।

রিম্পার সাথে প্রতিদিনই কথা হয়, ভার্সিটি আর কাজের ফাঁকে। আমি এখন অন্য জায়গায় শিফট হয়েছি। রিম্পার ভাইয়ের বাসায় আর থাকি না। ওনার নাম রিমন। সেই রিমন ভাইয়াই আমাকে অন্য জায়গায় উঠিয়ে দিয়েছে। আজ সকালে আম্মা ফোন করলেন। আমি রিসিভ করতেই আম্মা বললেন, ‘তোর সাথে দরকারি কথা আছে সাবাব!’
‘কি কথা আম্মা?’
‘তুই নাকি রাফারে পছন্দ করোস?’
‘এসব তুমি কি কইতাছো আম্মা?’

‘রাফা কইলো অরে ইনডাইরেক্টলি বিয়ার প্রস্তাব দিছোস!’

‘তুমি পা’গল হয়া গেলা আম্মা?’

‘শোন, চালাকি করিস না। তোর বড় মামা আজকে আসছে বিয়ার প্রস্তাব নিয়া! রাফায় আমারে মেসেজ দেখাইছে। তুই কইছোস আশেপাশে অনেক এমেরিকা প্রবাসী ছেলে আছে। খুঁজলেই নাকি পাওয়া যাইবো! এই কথার অর্থ কি?’

‘আর একটা কথাও বলবা না মা তুমি! আমি কি আমার কথা বলছি নাকি?’

‘দেখ, তুই বা’টপারি করলে আমার ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক থাকবো না!’

‘তুমি কোনোদিন ঠিক হইবা না মা। বাপের বাড়ির মানুষের পেছনেই দৌড়াইবা।’

‘আর একটা কথাও কবি না সাবাব। তোর কথায় রাফা অর বয়ফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকআপ দিছে।’
‘ইয়ার্কি শুরু করছে অরা? ঐ বা’টপারের গুষ্ঠি তোমারে মিত্যা কইছে সব!’

চলবে

মায়ের কথা পর্ব-০২

0

#মায়ের_কথা
পর্বঃ ২
#সাবাব_খান

একদা আমার মাকে চো’র সাব্যস্ত করেছিলেন বড় মামী। তার জীবনে ঘটেছে বিচিত্র ঘটনা। আমার মামাতো ভাই অনার্সে পড়ে স্থানীয় একটি কলেজে। রকি নাম ভাইয়ের। কোনো ভার্সিটিতে চান্স পায় নি। কিছু খা’রাপ স্বভাবের কারণে ভাইটাকে কোনো প্রাইভেট ভার্সিটিতেও ভর্তি করায় নি। দূরে গিয়ে কখন কি করে বসে ঠিক আছে? খা’রাপ স্বভাব বলতে ইন্টারমিডিয়েট থেকেই নেশা করে ; ম’দ গাঁ’জা খায় আর কি! লাস্ট শীতের এক রাতে নে’শা করে পথ হারিয়ে ফেলে রকি ভাই। ভুলক্রমে ঢুকে পড়ে রাস্তার পাশের এক বাড়িতে। সেই বাড়ির পেছনে মাতাল অবস্থায় বসে ছিলো কিছুক্ষণ। একা একাই আবোল-তাবোল বকছিলো। পাশেই ছিল ঐ বাড়ির ছাগলের খোপ। তাদের শখের দুটো খা’সী ছিলো খোপে। রকি ভাইয়ের কথা শুনে খা’সী দুটোও ব্যা ব্যা,ম্যা ম্যা করে ডাকছিল। মা’তাল ভাইটা ভীষণ বিরক্ত হয়ে পড়েন খা’সী দুটোর বিরতিহীন ডাকে। রাগে জোরে জোরে লা’থি দিতে শুরু করেন ওদের খোপে। লা’থির শব্দে খা’সির ব্যা ব্যা,ম্যা ম্যা আরও বেড়ে যায়। তৎক্ষণাৎ ঘর থেকে লোকজন বেরিয়ে আসে। চেহারা না দেখেই চোর ভেবে বাঁশ দিয়ে জোরে বারি মা’রে রকি ভাইয়ের মাথায়। সেখানেই জ্ঞান হারান ভাই। চেহারা দেখে বাড়ির লোকদেরও হুশ হয় এটা বড় মার্কেটের মালিকের ছেলে রকি। তবে মা’তাল ছেলে, নে’শাখোর ছেলে। নে’শার ঘোরে খা’সী চুরি করতে আসতেই পারে। তারা পুরোপুরি ধরেই নিয়েছে রকি ভাই খা’সি চুরি করতেই গেছে। রকি ভাইও এ ব্যাপারে আজ পর্যন্ত সঠিকভাবে কিছু বলতে পারে নি। প্রথমত মা’তাল ছিল। দ্বিতীয়ত সেই রাতে মা’তাল অবস্থায় মাথায় আ’ঘাত পেয়ে ব্রেনে সমস্যা হয়েছে। এখনো মা’তালের মতোই আবোল-তাবোল বকে। অনেক চিকিৎসা হচ্ছে রকি ভাইয়ের। হয়তো ঠিক হবে কোনো একদিন। আমি চাই ঠিক হোক। কিন্তু এখন আমার আব্বার মতই কথা-বার্তায় এলোমেলো,অগোছালো।

বড় মামার ছেলে রকি ভাইয়ের জন্য আমার খা’রাপ লাগে। ভাইটা চোর ছিল না। চুরি করতেও যায় নি। অথচ খা’সী চুরি করতে যাবার দায় কাঁধে নিয়ে বেড়াচ্ছে। ঠিক যেমনটা ওর মা আমার মাকে চুরির দায় দিয়েছিল। খা’সির মাংস চুরির দায়। এই কয়েক মাসে রকি ভাইয়ের পিছনে অনেক খরচ হয়েছে। টাকা পয়সার কমতি নেই এখনও। রকি ভাইয়েরা দুই ভাই-বোন শুধু। বোন রাফা ইন্টারমিডিয়েটে পড়ে। একমাত্র ছেলের পেছনে টাকা খরচ করতে কি দোষ! তবে আমার কেন যেন মনে হয় এই খা’সি চুরি করতে যাবার অপবাদ আল্লাহর বিচার। আমার আম্মাকে অনেক মানুষের মধ্যে খা’সির মাংস চোর সাব্যস্ত করেছিলো বড় মামী। আরেক কো’রবানির ঈদ আসার আগেই হয়তো আল্লাহ বিচার করেছে। জানি না, আমার ধারণা সত্যি কিনা! আল্লাহই ভালো জানেন।

আপনারা কি ভাবছেন? আমার দাদা বাড়ির লোকজন আমাদেরকে খুব ভালোবাসে? দাদা বাড়ির হিসেবটাও একটু বলি। আমার বাপ-চাচারা চার ভাই। আব্বা সবার বড়। আমাদের বাড়িটা পৌরসভার মধ্যেই তবে এক প্রান্তে। থানা শহরে পায়ে হেঁটে যেতে দশ মিনিটের মতো লাগে। সিএনজি কিংবা বাইকে আরও অনেক কম সময় লাগে। দুটো কারখানাও আছে বাড়ির অদূরে। এখানে কয়েক বছর ধরেই বাড়ি ভাড়া দেয়া যাচ্ছে। রাস্তার পাশে দোকান ভাড়াও দেয়া যাচ্ছে। আমার তিন চাচা ঘর করার জন্য জমি নিয়েছে বাড়ির সামনের দিকে,রাস্তার পাশের উঁচু অংশে। আমার আব্বাকে ঘর করার জমি দিয়েছে বাড়ির পেছনের দিকের বাগান এবং নালার ভেতরে, নিচু অংশে। আমরা ঘর করতে গেলেও বালি অথবা মাটি কিনে এনে বাগানের সেই নিচু জমি প্রথমে ভরাট করতে হবে। তারপরে ঘর নির্মাণ করতে হবে। তারা উচু জমিতে ঘর করে অলরেডি ভাড়াও দিচ্ছে। আমাদের কি সাধ্য আছে নিচু জমি ভরাট করে ঘর নির্মাণ করার? যেখানে পেট চালাতেই দায় সেখানে জমি ভরাট করে ঘর করবো কিভাবে? চাচারা রাস্তার পাশে জমি নেয়ায় ওনারা দোকানঘর উঠিয়ে ভাড়া দিচ্ছে। আমাদের জমি তো বাগানে। দোকান তৈরি করারও সুযোগ নেই। দাদার অনেকগুলো পুকুর ছিল। আমাদের ভা’গে পুরো একটা পুকুর পড়েছে। বাড়িতে অনেক বড় ফলের বাগান। সবকিছু এখনো চাচাদেরই হাতে। আব্বার এক্সিডেন্ট হবার আগে আমাদের জয়েন্ট ফ্যামিলি ছিলো। মেজো চাচা দেখতেন বাড়ির জমি-জমা। ঘর তৈরির জমি দেখিয়ে দিলেও আমাদের জমি-জমা এখনো মেজো চাচাই দ্যাখেন। সব সময় একটা কথাই বলে, ‘তোগো এখনো সবকিছু বুইঝা খাওয়ার বয়স হয়নাই।’

আর সবকিছুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে আসে আমার আব্বার কাছে। আব্বা তো অসুস্থ। মানসিক ভারসাম্যহীন। সে তো ভালো-মন্দ কিছু বোঝেনা। আমার দাদী আর মেজো চাচা যা বুঝায় আব্বাকে; সেটা বুঝেই দায়িত্ব মেজো চাচাকেই দিয়ে দেয়। আব্বা অসুস্থ হবার পরে আমরা যৌথ পরিবার থেকে বের হয়ে যাই। আব্বার ইনকাম ছিলো না বলে তিন চাচী তখন আম্মাকে কাজের লোকের মতো খাটাতো। আব্বার যত্ন করারও সময় পেতেন না আম্মা। তারপর আমরা হাড়ি আলাদা করি। চেয়ারম্যান,মেম্বার আর আমার নানা বাড়ির লোকদের ডেকে আনেন আম্মা। চাচাদেরকে অনুরোধ করেন আব্বার ভা’গের জমিটুকু বুঝিয়ে দেবার জন্য যেন আমরা নিজেদের মতো করে চলতে পারি। তখন মেজো চাচা ব’দনাম ছড়িয়ে দেন আম্মার চরিত্রের নামে। আম্মার নাকি চরিত্র খা’রাপ। জমি ভা’গ করে দিলেই আব্বাকে বোকা বানিয়ে সব নিয়ে চলে যাবে। মামারা এই আম্মার নামে দেয়া এই অপবাদের প্রতিবাদ করেছিলেন প্রথমে। কিন্তু বড় মামা হুট করেই মেজো চাচার কথা বিশ্বাস করেন। আসলে আমার বড় মামী বুদ্ধি দিয়েছিলেন। বড় মামী আর মেজো চাচী আপন দুই বোন। বউ, শা’লী আর ভায়রার বুদ্ধিতে বড় মামাও আম্মার বিরুদ্ধে চলে যান। আমার দাদীও ওদের কথাই বিশ্বাস করেন। তখন আর আব্বার ভা’গের জমি বুঝিয়ে দেয়া হয় নি। একজন নারী যখন বিপদে পড়ে তখন তাকে শোষণ করার জন্য প্রথমেই চরিত্রের ব’দনাম দেয়া হয়। আমার মায়ের বেলায়ও সেটাই ঘটেছে। তাছাড়া আপনি যখন বিপদে পড়বেন তখন বাপের বাড়ি,শ্বশুর বাড়ি দুটোই একরকম থাকবে। পারলে দুই গ্রুপ এক হয়ে যাবে আপনাকে শাসানোর জন্য। এখনো আমাদের সম্পত্তি মেজো চাচার হাতে। উনি যা হাতে দেন তাই মাথা পেতে নিতে হয়।

আমি ভাবছি আমার আম্মার কথা। একটা মহিলার স্বামী যখন অসুস্থ থাকে তখন তার পাশে কেউ থাকেনা। আপনার মনে হবে বাপের বাড়ির মানুষগুলো এত অপমান করে, তারপরেও আম্মা কেন তাদের কাছে ছুটে যায়? আসলে কি আমার দাদা বাড়ি থেকে আমাদেরকে পুরোপুরি বের করে দিতো। তাই আম্মা অনেক অ’পমান,লা’ঞ্চনার পরেও ভাইদের সাথে একটু সম্পর্ক রাখে। হয়তো মেজো চাচা আব্বার সম্পত্তি নিজ দায়িত্বে রেখেছেন কিন্তু আমরা তো দাদাবাড়িতেই আছি। নানা বাড়ির সাপোর্ট না থাকলে আমাদেরকে দাদাবাড়ি থেকে বের করে দেয়া হতো। আমার মামাদের কথা কি বলবো? জানিনা কতদূর ভালবাসে আম্মাকে? নানা বাড়িতে যখন কোনো প্রোগ্রাম হয় তখন সবাইকে দাওয়াত দেয়া হয়। দায় এড়াতে আমাদেরকেও দাওয়াত দেয়। আমরা যাই না প্রথমে। আম্মা দৌড়ে দৌড়ে যান। সকল কাজ করেন। অনুষ্ঠান শেষের দিকে অথবা খাওয়ার আগে বিশাল একটা ত্রুটি বের হয় অনুষ্ঠানের। সব দায় এসে পড়ে আমার আম্মার মাথায়। বহুবার ঘটেছে এমন। সারাদিন নানা বাড়িতে বসে খেটে-খুটে বাপের বাড়ির প্রোগ্রাম তুলে দেন আম্মা। সে আম্মারই দোষ হয় সব। কেন যেন মনে হয় যেসব মহিলাদের শ্বশুরবাড়ি আর বাপেরবড়ি পাশাপাশি তাদের দোষ একটু বেশি। দোষ না করলেও দোষ। মাঝে মাঝে মনে হয় আম্মার লজ্জা কম। কিন্তু পরে আবার মনে হয় আপনজনের মুখ দেখে আম্মা সব ভুলে যান। আসতে-যেতে দেখা হয় তো বাপের ফ্যামিলির লোকের সাথে! র’ক্তের লোকদের চেহারা দেখে হয়তো সব ভুলে যান আম্মা। আমার মা,খালাদের মধ্যে আম্মাই বড়। বড় মামা সবার বড়, ভাই-বোন সবার মধ্যে। তারপরেই এই আম্মা। ছোট ভাই-বোনদের প্রতি আম্মার কি টান! একটু ঊনিশ-বিশ হলেই দৌড়ে যান। কখনো কখনো এমনও মনে হয় ; আম্মা মাফ করে দেন ছোট ভাই-বোনকে। আমার নানা,নানী জীবিত নেই। নানাবাড়িতে আম্মাকে সবচেয়ে বেশি জ্বালায় বড় মামি। আম্মার বড় ভাইয়ের বউ। আর অন্যরা তার সাথে সায় দেয়, তালি বাজায়। অনেক অনুরোধ করেও আম্মাকে ফেরাতে পারি না নানা বাড়ির দিক থেকে।

আমার পরিচয়টাই তো দেয়া হয়নি। আমার নাম সাবাব খান। গত কো’রবানির ঈদের সময় বলেছিলাম না ভার্সিটি কোচিং করছি! আমি একটা ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছি অলরেডি। ভালো কোন ভার্সিটি নয়। দেশের অনেক জেলাতেই ভার্সিটি হয়েছে। আমাদের জেলায়ও একটা ভার্সিটি আছে। ওখানেই চান্স পেয়েছি। তবে সাবজেক্টটা ভালো, ইংরেজি। টিউশনি করেই নিজের পড়ার খরচ জোগাড় করি। আমার ছোট দুই বোন; সারা আর স্নিগ্ধা। আমরা তিন ভাই-বোন আর বাবা-মা নিয়ে আমাদের পরিবার। চাচাদের কয়েকটি বিল্ডিংয়ের পেছনে একটি কাঠের ঘরে আমাদের বসবাস।
…………

দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেছে পাঁচ বছর। আমার অনার্সও শেষ। এর মধ্যে ঘটে গেছে অনেক ঘটনা। আমি মেজো চাচার কাছ থেকে আমাদের ভা’গের জমি আদায় করে নিয়েছি। বলেছি আমাদের জমি আমাদেরকে বুঝিয়ে না দিলে মা’মলা দেবো। অতঃপর মা’মলার ভয়ে ভা’গের জমি বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। অনার্সের প্রথম বছর টিউশনি করে পড়েছিলাম। বুঝলাম এভাবে জীবনযু’দ্ধ করার কোন মানে হয় না। তখনই মেজো চাচার উপর চড়াও হয়েছি। দ্বিতীয় বর্ষে থাকাকালীন সব জমি বুঝে নিয়েছি। ইদানিং তিন চাচা নিত্য এসে ঝ’গড়া করেন। এদিক দিয়ে কম হয়ে গেছে, ঐদিক দিয়ে বেশি হয়ে গেছে। আমি বাড়ি থেকেই ভার্সিটিতে আসা-যাওয়া করেছি। বছর দু্য়েক আগে আমি আর মা বুদ্ধি করে আমাদের ভা’গের পুকুরটায় মাছ চাষ শুরু করি। রাত-দিন কাজ করি আমরা। ছোট বোন দুইটাও আমাদের সাথে খেটেছে ভাগ্য পরিবর্তনের তাগিদে। মায়ের সোনার চেইন বিক্রি করে সেই টাকায় মাছের খাবার যোগাড় করেছিলাম। আস্তে আস্তে মাছগুলো বড় হয়। এবার আসে বিক্রির পালা। মাছের আড়তদারদের সাথে কথা হয়, সকালে মাছ বিক্রি করব। আগের রাতে জেলে খবর দিয়ে রাখি পুকুর থেকে মাছ ধরার জন্য। কিন্তু দুর্ভাগ্য, সকালে উঠে দেখি পুকুরের সব মাছ ম’রে ভেসে উঠেছে। আসলে রাতের আঁধারে কেউ বি’ষ দিয়েছে আমাদের পুকুরে। এসব কে করেছে বোঝেন? আমার মেজো চাচার পরিবার। এতদিন ভো’গ করেছে তো পুকুরটা! যখন আমরা আমাদের হাতে নিয়ে এলাম তখন তাদের দুঃখ লেগেছে! ক্ষতি করে দিল আমাদের। অথচ রাত-দিন কষ্ট করেছি আমরা। কত আশা ছিল, কত স্বপ্ন ছিল! সব এক নিমিষে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে।

আমি কারো ক্ষতি করলাম না। কারণ আমার বোন দুইটাও বড় হয়েছে। কে আবার ওদের ক্ষতি করে দেয়! আমি এক নতুন সিদ্ধান্ত নিলাম! সবার সাথে তাল মিলিয়ে চলেই ভিতর থেকে নতুন কাজ করব। শুরু হলো আমার নতুন চিন্তা। এখন তো অনার্সও পাশ করেছি।

চলবে

মায়ের কথা পর্ব-০১

0

#মায়ের_কথা
সূচনা পর্ব
#সাবাব_খান

নানা বাড়িতে কো’রবানির মাংস চু’রি হলো। দায় এসে পড়লো আমার মায়ের উপর। আমাদের বাড়িটা নানা বাড়ির পাশেই। আসা-যাওয়াও খুব বেশি। কিন্তু বিত্ত,বৈভবে ব্যবধান আকাশ-পাতাল। মামারা অনেক বড়লোক। বিশাল ব্যবসা তাদের বাজারে। টাকা পয়সার তেমন কোনো কমতিই নেই। অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনও বড়লোক। গরিব বলতে আমরাই। তাই কোনো কিছু ঘটলেই দোষ হয় আমাদের।

আমরাও ভালোই অবস্থাপন্ন ছিলাম। আব্বা চাকরি করতেন থানার হেড পোস্টমাস্টার হিসেবে; সরকারি চাকরি। কিন্তু এক দুর্ঘটনায় আব্বা মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন। মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলেন। তখন চাকরির বয়স খুব বেশি দিন ছিল না। এককালীন যা টাকা পেয়েছে বেশিরভাগই খরচ হয়েছে আব্বার চিকিৎসার পেছনে। পেনশনও খুব কমই পাচ্ছে। অনেক জমি-জমা আছে আমাদের। কিন্তু চাচারা অনেক ঠকায়। জমি-জমা দেখাশোনা করেন চাচারা। খুব সামান্য টাকা তুলে দেন আমাদের হাতে। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর ধরে।

গতকাল কো’রবানির ঈদ ছিলো। বড় একটি গ’রু কো’রবানি দিয়েছিলেন তিন মামা মিলে। আজ আমরা এসেছি নানা বাড়িতে। আরও অতিথি এসেছে এখানে। আমার অন্যান্য খালারাও এসেছে। নানা বাড়িতে অন্যান্য মেহমানদের যেরকম দাম দেয়া হয় আমাদেরকে সেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। এটা তো সেই ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি।

আজ ঘটেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন ঘটনা। কিছুক্ষণ আগে দু’দুটো খা’সী কো’রবানি দিয়েছে মামারা। গরিবদেরকে ভা’গেরটা দিয়ে মাংস নিয়ে এসেছে বাড়িতে। কিন্তু এক পাতিল মাংস নাকি গায়েব হয়ে গেছে। এখন দায় এসেছে আমার মায়ের উপর। বড় মামি তো সবার মাঝে দাঁড়িয়েই আমার মায়ের কথা বললেন, ‘মনিরার স্বামী তো সবসময় ভালো-মন্দ খাইতে চায়। ওই চু’রি করছে খা’সীর মাংস।’

আমার মায়ের নাম মনিরা। ছল ছল চোখে মা জবাব দিলেন, ‘দেখেন বড় ভাবি, আমি গরিব হইতে পারি। কিন্তু আমিও কো’রবানি দেই। এইবারও দিছি। ফ্রিজে গ’রুর মাংস আছে আমার। আমি তো ঐ মাংসই খাওয়াইতে পারমু আমার স্বামীরে! চু’রি করতে যাইমু ক্যান?’

‘চুপ কর তো! সবসময়ই এই বাড়ির জিনিসের দিকে তোর নজর! তোরে না দিয়া কি আমি কিছু খাই? তারপরও চু’রি কইরা আমার বউর সামনে অপমান করোস ক্যান?’–মা’কে ধ’মকিয়ে বললেন বড় মামা। মেহমানসহ বাড়ির অন্যান্য লোকও তাদের সাথেই সায় দিচ্ছিল। কারণ তারা সবাই বড়লোক। গরীব শুধুই আমরাই। তাই সব দোষ আমাদেরই। আমি ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেছি। ভালো একটা ভার্সিটিতে চান্স পাবার জন্য কোচিং করছি। আমার সহ্য হলো না মায়ের উপরে দেয়া এই অপবাদ। বারবার মাকে অপবাদ দিয়েছে ওরা। কেউ চায় না আমরা এই বাড়িতে আসি। মা’কেই মানাতে পারি না। দৌড়ে দৌড়ে চলে আসে বাপের বাড়িতে। ওরাও দায় এড়াতে বিভিন্ন প্রোগ্রামে দাওয়াত দেয় ঠিকই। কিন্তু সব মেহমানের সাথে বসিয়ে খাওয়ায় না। সবার শেষে যা থাকে তাই খেতে দেয়। কত বড় যেন বোঝা আমরা!

জীবনে কোনো কিছুতেই আমরা কখনো সাহায্য নেই নি নানা বাড়ি থেকে। আজ ভরা বাড়িতে তাদের অন্যায় অপবাদে চুপ করে থাকবো কেন? আমিও সমান জোর গলায় জবাব দিলাম, ‘কি প্রমাণ আছে যে আমার মায় চু’রি করছে?’
‘তোর মা’র এই বাড়িরটা না খাইলে খাওন হজম হয় না।’–বড় মামী জবাব দিলেন।

‘আমি এসব জিজ্ঞেস করি নাই! আমি জানতে চাইছি কি প্রমাণ আছে যে আমার মায় আজকে খা’সীর মাংস চু’রি করছে?’

‘ তোগো বাড়ির ফ্রিজে যায়া চেক করলেই সব পাওয়া যাইবো!’–বড় মামা বললেন।

‘চলেন তাইলে আমাগো বাড়িতে! ফ্রিজ চেক করবেন!’–আমি চিৎকার করে জবাব দিলাম।

‘আমরা এত ছোট মন-মানসিকতার না! এক পাতিল মাংসের জইন্য ননদের বাড়ির ফ্রিজ চেক করমু! যা হইছে, হইছে! এইবার থাম!’–বড় মামি প্রসঙ্গ এড়াতে বললেন।

‘কত বড় মন-মানসিকতা আপনার! এতো সাধু সাধু কথা বলছেন এখন! আপনি নিজে প্রমাণ করবেন যে আমার মা চো’র! প্রমাণ করতে পারলে আমার মায়ের বিচার হবে! অন্যথায় আপনার বিচার হবে!’

‘কত বড় সাহস রে তোর? আমার বাড়িতে দাঁড়ায়া তোর বড় মামির বিচার করতে চাস! সব কথা ভুইল্যা গেছোস নাকি? এই বাড়িতে আসলে তোর বড় মামিই কিন্তু তোগোরে সবকিছু খাওয়ায়!’–বড় মামা চেঁচিয়ে ধ’মকের সুরে বললেন।

‘হ্যাঁ খুব খাওয়াইছে তো! তার চেয়ে বেশি চোরের অপবাদ দিছে আপনার বউ!’

মা এসে আমার গালে ক’ষিয়ে চ’ড় দিলেন, ‘তোর বড় মামার মুখে মুখে তর্ক করোস! শরম লাগে না?’

বুঝলাম মা চাচ্ছে না আমি তাদের সাথে তর্কে জড়াই। ভাই-বোনসহ মাকে নিয়ে আমি চলে এলাম নিজ বাড়িতে। আব্বা বাড়িতেই ছিলেন। বাড়ি এসে দেখি কিভাবে কিভাবে যেন আমার দাদা বাড়িতে খবর চলে এসেছে; আম্মা চু’রি করছে। এগুলো সব নানা বাড়ির লোকদেরই কান্ড। হয়তো কোন ভাবে জানিয়ে দিয়েছে। এখানে চাচা,চাচি,ফুফুসহ বাড়ির মানুষ সবাই আম্মাকে নিয়ে হাসছে। আম্মা কোনো কর্ণপাত করলো না। শুধু বললো, ‘চুপ কইরা থাক! সবকিছুরই একদিন বিচার হইবো!’

এরমধ্যে পেরিয়ে গেছে বেশ কয়েকটি মাস। কিছুদিন পরে আবার কোরবানির ঈদ। আমার মাকে চো’র সাব্যস্ত করেছিলেন বড় মামী। তার জীবনে ঘটেছে বিচিত্র ঘটনা।

চলবে

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৫২

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব-৫২
হলুদ গোলাপগুলো টকটকে লাল রক্তে রঞ্জিত হয়ে রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আনন্দিত সময়টা যেনো মুহূর্তেই অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে গেলো৷ নয়নার সাদা হাতটাও তাজ রক্তে মেখে আছে। দানবের মত গাড়িটা মূহুর্তেই জলজ্যান্ত মানুষটাকে রক্তাক্ত করে ছুটে চলে গেছে।
“নয়না চিৎকার করার শক্তি টুকুও পাচ্ছে না। হঠাৎ খেয়াল করলো রাস্তার অপর পাশে জিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। সামনে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে গেলো! তাহলে এটা কে? আমি কি ভ্রমে আছি!
” ততক্ষণে পথচারীদের ভীড় জমে গেলো৷ রাস্তায় ভীড় জামানো লোকগুলো আহত ব্যাক্তিকে ধরে গাড়িতে উঠিয়ে দিলো৷ নয়না গাড়িতে বসে বলে,কে আপনি?
“জিয়ান নয়নার হাত চেপে ধরে বলে,আমি তোমার হ্যাসবেন্ড।
” তাহলে উনি কে?
“নয়না। ও জাহিন। জানিনা হুট করে কোথা থেকে আসলো৷ ও না আসলে ওর জায়গায় আমি থাকতাম।
” জাহিন ভাইয়া এখানে কি করে আসলো!
“এসব এখন ভাবার সময় না। হসপিটালে যাই জাহিনের জ্ঞান ফিরুক তখন জেনে নেবো।
” হসপিটালের করিডোর পায়চারি করছে নাজিম চৌধুরী, জিয়ান, মিতা বেগম, মেহনুর, নয়না৷
“ডাক্তার ইমার্জেন্সি রুম থেকে বের হয়ে বলল,তেমন মেজর কোন সমস্যা হয়নি তবে বা’হাতে ফ্যাকচার হয়েছে আমরা প্লাস্টার করে দিয়েছি এক দেড়মাস লাগবে ঠিক হতে।
” নাজিম চৌধুরী বলল, জাহিন তোদের সাথে কি করে আসলো?
“বাবা আমি বুঝতে পারছিনা জাহিন ওই স্থানে কিভাবে উপস্থিত হলো! এক্সিডেন্ট হওয়ার কথা ছিলো আমার।
” তোমার মাথায় কোন কমন সেন্স নেই? মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে কি করছিলে?
“রাস্তা ফাঁকা ছিলো হুট করে কোথা থেকে বাসটা চলে আসলো বুঝতে পারছি না।
” মহাসড়ক ফাঁকা থাকে? মহাসড়কে সারারাত দূর পাল্লার বাস যাতায়াত করে৷ এতোটুকু ম্যাচিউরিটি নেই নাকি! যাও বৌমাকে নিয়ে বাসায় যাও। আগামীকাল তোমার ফ্লাইট বাসায় যেয়ে রেস্ট নাও।
“জিয়ান কিছু না বলে নয়নাকে নিয়ে বের হয়ে আসলো৷
” নয়না জিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে৷
“এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
” আপনি সত্যি পাইলট জিয়ান রেজা চৌধুরী? না মানে আমি কনফিউজড।
“মাথার স্ক্রু-ঢিলা। দেখো এসব বিরক্ত লাগছে। বাচ্চাদের মত বিহেভিয়ার পরিস্থিতি ও বুঝো না নাকি?
” নয়না মন খারাপ করে বলে,স্যরি আপনার মন খারাপের কারন হতে চাইনি৷ আমি সত্যিই কনফিউজড।
“জিয়ান নয়নার হাত ধরে গাড়িতে এসে বসলো৷ মনে মনে বললো আজ তোর রক্ষা নেই জিয়ান। এই অভিমান তুই কিভাবে সামলাবি।
” পুরো রাস্তা নয়না কোন কথা বললো না। আমাবস্যার রাতের মতই তার মনটা কালো হয়ে গেছে অভিমানের মেঘে। শাড়ীর বিভিন্ন জায়গায় রক্তের ছিটা লেগে আছে।
গাড়ি চৌধুরী ম্যানশনে থামতেই নয়না গাড়ি থেকে বের হয়ে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো। কাভার্ড থেকে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে৷ জিয়ান মাথায় আঙুল ঘষে বলে,নিব্বি বৌ পরিস্থিতি ও বুঝে না।এখন আমি এই অভিমানের মেঘ কিভাবে কাটাবো?জিয়ান রুমে এসে দেখে নয়না নেই। এদিক সেদিক উঁকি দিয়ে ডেকে উঠলো,সুনয়না, সুনয়না৷ কোন উত্তর না পেয়ে বারান্দায় খুঁজতে লাগলো। হুট করে মনে হলো ওয়াশরুমের কথা। জিয়ান ওয়াশরুমের সামনে এসে বলে, জান শুনছো… স্যরি জান।
” নয়না ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সোজা বেডে এসে বসলো। ড্রেসিং টেবিল থেকে চিরুনি নিয়ে মাথা আঁচড়াতে লাগলো।
“জিয়ান নয়নার পাশে এসে বসলো৷
“নয়না সরে বসলো৷ জিয়ান আরেকটু পাশ ঘেঁষে বসলো,নয়না আরেকটু সরে বসলো। এভাবে সরতে সরতে খাট থেকে পরে যাওয়ার উপক্রম হলো৷ জিয়ান নয়নার হাত ধরে টান দিলো৷ নয়না সোজা এসে জিয়ানের বুকে পরলো৷
” নয়না সরে আসার জন্য মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলো।
“জিয়ান নয়নাকে শক্ত করে নিজের সাথে চেপে ধরে রাখলো। শান্ত কন্ঠে বলল,আমার ওভাবে রিয়েক্ট করা উচিৎ হয়নি৷ আমার বোঝা উচিৎ ছিলো তোমার ভুল হতেই পারে। আমরা দুজন দেখতে পুরো সেম। বাবা,মা ছাড়া আমাদের মধ্যে কেউ পার্থক্য করতে পারে না। স্যরি জান। প্লিজ রাগ করে থেকো না।তোমার মন খারাপ থাকলে আমার ভালো লাগে না৷
” নয়না ঠুকরে কেঁদে উঠলো।
“জিয়ান নয়নার থুতনি ধরে নয়নার চোখের পানি মুছিয়া দিয়ে বলে,এতো কান্না কিভাবে আসে? না মানে মেয়ে মানুষ এতো কান্না কি করে করতে পারে৷ উপসসস স্যরি সব দোষ আমার কান ধরে স্যরি বলবো?
” নয়না কিছু বললো না।
“কিছু তো বলো। বৌ কথা কও।
” নয়না মুখ খুললো আপনি আমাকে বাসায় দিয়ে আসুন। থাকবো না এখানে আমি।
“জিয়ান নয়নাকে কোলে তুলে নিলো।
” নামান আমাকে যাবো না আপনার সাথে।
“জিয়ান বারান্দায় এসে বসলো। নয়নার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,ঝগড়া, রাগ অভিমান যত যাহোক বাপের বাড়ি যাবো এসব চলবে না। তুমি আমার আমার কাছেই থাকতে হবে।
” নয়না বলল,আমি বসবো।
“গলা জড়িয়ে ধরে চুমু দিয়ে বলো জাান আমি বসবো।
” বলবো না৷
“বুঝেছি কোল ছেড়ে নামতে ইচ্ছে করছে না৷
” নয়না অভিমানী সুরে বলল,আমি তো বাচ্চা আমি তো পরিস্থিতি বুঝি না৷ আমি তো পাগল। আপনার মত পাইলট আমার মত পাগলের সাথে মানায় না৷ আপনি আমার চেয়ে বেটার কাউকে ডিজার্ভ করেন৷
“ইশশ আমার রাগী বৌটাকে দারুন কিউট লাগছে। রাগলেেও কাউকে এতো মায়াবী লাগে জানা ছিলো নাতো। শুনো বৌ ভুল আমি করেছি এবার শাস্তি হিসেবে হয়ত ফ্যানের সাথে ঝুলে পরবো৷ নয়ত এই বারান্দা থেকে লাফ দিবো। আমি পৃথিবী ছেড়ে দেবো প্রিয়া তুমি যদি রাগ না ভাঙ্গো। জিয়ান নয়নাকে চেয়ারে বসিয়ে বলে,বৌয়ের অভিমান ভাঙ্গাতে পারি না আমি আবার কিসের হ্যাসবেন্ড। রাখবো না এ জীবন দিয়ে দিলাম কিন্তু বিদায় পৃথিবী। বিদায় বৌ। জিয়ান নিজের এক পা তুলে দিলে রেলিংয়ে।
” নয়না জিয়ানের হাত ধরে বলে,আমিও ঝাপ দিবো আপনার সাথে।
“ভাঙবা তবুও মচকাবা না? বললাম তো জান আর কখনো এমন হবে না। স্যরি। এই কান ধরছি।
” নয়না জিয়ানকে জড়িয়ে ধরে বলে,আমার সাথে একদম রাগ চলবে না৷
“আচ্চা স্যরি আর কখনো হবে না।
” মনে থাকবে তো?
“হু মনে থাকবে। এবার তো হাসো।
” আমি বুঝলাম না জাহিন ভাইয়া ওই সময় ওই স্থানে কি করে আসলো!
“হয়ত ঘুরতে বের হয়েছিলো। বাদ দাও জান৷ শুনো তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
” সারপ্রাইজ!কিসের সারপ্রাইজ বলো।
“এখন বলা যাবে না৷ সারপ্রাইজ বলে দিলে সারপ্রাইজ থাকে নাকি।
” নয়না মনের মধ্যে তবুও ঘুরে ফিরে একি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। জাহিন কি করে আসলো! কেনোই বা আসলো।
“কি ভাবছো?
” প্রচুর ঘুম পাচ্ছে?
“এভাবে ঘুমিয়ে যাবে আমাকে ছেড়ে?
” বেডে আসো তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো৷
“আমাকে জড়িয়ে ধরলে তো তোমাকে ঘুমাতে দিবো না৷ কাল চলে যাবো বুঝতেই পারছো কুচকুচ হোতাহ্যা ইয়ার৷
” উঁহু এখন একদম এসব চলবে না। ঘুমাবো মানে ঘুমাবো।
“নিষ্টুর বৌ বরের মন বোঝে না।
“তোমার মন বুঝলে আর ঘুম হবে না।
” একটু সেক্রিফাইস করো না বৌ।
“নয়না হাই তুলতে তুলতে বলে,নো সেক্রিফাইস অনলি ঘুমফাইস। টাটা ডার্লিং বলেই রুমের দিকে আগ্রসর হলো৷
” জিয়ান নয়নার হাত ধরে বলে,আর কিছু না দাও একটা কিসমিস দাও বেব।
“নো কিসমিস ডিয়ার হাবি।
” জিয়ার নয়নার হাত ধরে ডান দিয়ে নিজের কাছে এনে অধরে অধর মিলিয়ে দিলো।
“নয়না জিয়ানের ঠোঁটে দাঁত বসিয়ে দিলো। জিয়ান নয়নার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে বলে এটা কি হলো? জংলি বিল্লি।
” নয়না রুমে ঢুকে বলো ডু নট ডিস্টার্ব।
🌿 জাহিন আবার পিছু করলো জিয়ান আর নয়নার। বাইক একপাশে রেখে ধীরে ধীরে ফলো করে এগোচ্ছে জাহিন। হঠাৎ গাড়ি দেখে দৌঁড়ে যেয়ে জিয়ানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। গাড়িটা জাহিনের বা’পাশ ঘেঁষে চলে গেলো। মাথা ফেটে রক্ত গলগল করে পরতে লাগলো।পা’ও খানিটা কেটে রক্ত বের হচ্ছে। জাহিন মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। চোখ বন্ধ হওয়ার আগে জাহিনের কানে আসলো নয়নার কন্ঠ। জিয়ান বলে চিৎকার করছে নয়না।
#চলবে

সন্ধ্যাবাতি পর্ব-০৪ এবং শেষ পর্ব

0

#সন্ধ্যাবাতি

#পর্বঃ০৪/অন্তিম

#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ

অয়ন সম্পূর্ণ কথাটা বলার আগেই আচমকা অধরা চলে আসলো অয়নের রুমে। অধরাকে নিজের রুমে দেখে অয়নের খানেক অবাক লাগলো। এতো তারাতাড়ি অধরা কি করে এখানে উপস্থিত হলো? সেটাই অয়নের বোধগম্য হচ্ছে না। অয়ন অধরার দিকে দৃষ্টিপাত করতেই ফারিয়া অধরাকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। অধরা ফারিয়াকে নিজের বুকের উপর থেকে সরিয়ে অয়নের সামনে এগিয়ে এসে সজোরে অয়নের গালে একটা থাপ্পড় মারলো। অয়ন থাপ্পড় খেয়ে অধরার দিকে তাকাতেই অধরা রাগে গজগজ করতে করতে অয়ন কে বলল

— ছিঃ এতোটা নিচে নেমে গেছো তুমি! আরে এতোই প্রয়োজন পড়লে বিয়ে করে নিতে। তবুও এটা করলে কেনো?

অধরার কথাটা শুনে অয়ন শব্দ করে হেসে ফেলল। অয়ন হেসে হেসে অধরাকে বলল

— পাগল হয়ে গেছো তুমি? অয়ন কে চিনতে পারোনি এখনো। এই মেয়ের সাথে কিছু করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নেই।

— যদি ইচ্ছে না থাকে তবে এসব কি? এই ছবি গুলো কি করে আসলো?

অধরার ফোনের দিকে তাকিয়ে অয়ন দেখতে পেলো ফারিয়ার সাথে অয়নের বেশ ক্লোজ ছবি আছে এখানে। অয়ন ছবি গুলো দেখার পর মোটেও অবাক হলো না। কারন অয়ন এতোক্ষণে ঠিক বুঝতে পেরে গেছে যে এই সব কিছু ফারিয়ার চাল। ফারিয়া অয়নকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। তবে অয়ন কে ফাঁসানো এতোটাই সহজ নাকি? অয়ন তার রুমের দেয়ালে লাগানো নিজের ছবির পেছন থেকে একটা স্পাই ক্যাম বের করলো। আর সেটার ফুটেজ অধরাকে দেখালো। অধরা স্পাই ক্যামের ফুটেজ দেখার পর একদম থ হয়ে গেলো। অয়ন ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল

— আমি তো তোমাকে নিজের বন্ধু ভেবে ছিলাম। অধরাকে কষ্ট দেয়ার জন্য আমি তোমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব ও দিয়ে ছিলাম। কিন্তু তুমি আসলে এতোটা নিচ! সেটা আমি কখনো ভাবতে ও পারিনি।

অয়নের কথাটা শেষ হবার সাথে সাথে ফারিয়া অয়নের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে অয়নের পা ধরে কান্না করতে লাগলো। আর অয়ন কে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— সরি অয়ন। আমি আসলে তোমাকে আপন করার জন্য এসব কাজ করেছি। আমাকে ক্ষমা করে দাও তুমি। আমার দ্বারা আর কখনো এমন….!

ফারিয়াকে সম্পূর্ণ কথাটা বলতে দিলো না অয়ন। অয়ন ফারিয়াকে থামিয়ে দিয়ে একটা ঝাড়ি দিয়ে বলল

— শার্ট আপ। একটাও কথা বলবে না তুমি। অয়ন চৌধুরীর কাছে প্রতারণার কোনো ক্ষমা নেই। আজকের পর থেকে আর কখনো আমার চোখের সামনে আসবে না। বেরিয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে।

অয়নের ঝাড়ি খেয়ে ফারিয়া আর কোনো কথা বলল না। আজ ফারিয়ার সব প্লান ফাঁস হয়ে গেছে অয়নের সামনে। অয়নকে আর সে বোকা বানাতে পারবে না। ফারিয়া অয়নের কথা মতো অয়নের রুমে থেকে বেরিয়ে গেলো। ফারিয়া অয়নের রুমে থেকে বেরিয়ে যেতেই অধরা অয়নের দিকে এগিয়ে আসলো। অয়ন অধরাকে তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে খানেক চিৎকার করে বলে উঠলো

— এই ওখানেই দাঁড়াও। একদম আমার কাছে আসার চেষ্টা করবে না।

অয়নের কথা মতো অধরা ঠাঁই দাঁড়িয়ে পড়লো। অধরা ঠাঁই দাঁড়িয়ে অয়ন কে উদ্দেশ্য করে মলিন কন্ঠে বলল

— অয়ন সরি। আমি আসলে বুঝতে পারিনি। ভেবেছি ফারিয়া একজন মেয়ে হয়ে নিজের চরিত্র নিয়ে মিথ্যাচার তো করবে না। তাই আমি ওর কথা বিশ্বাস করে….!

— হয়েছে তো বিশ্বাস! ভাগ্য ভালো স্পাই ক্যাম ছিলো। তা না হলে আজ তো আমার লেগে যেতো।

— হুম লাগবেই তো। নিজের স্ত্রীকে নিজের কাছ থেকে দূরে রাখলে নানা ধরনের বিপদ ঠিক চলে আসবেই। এটাই স্বাভাবিক।

অধরার কথাটা শুনে অয়নের টনক নড়ে উঠে। অয়ন অধরার দিকে তাকিয়ে বলে

— কি বললে তুমি? আমি ঠিক শুনতে পাইনি। আবার একটু বলো তো!

— কি আবার যা বলেছি সেটাই। আমি তোমাকে ছেড়ে গেছি কারন আমি জানি তোমাকে কমফোর্ট জোনে রাখলে তুমি কখনো কিছু করতে পারবে না। তাই আমি তোমার মনের আগুন জ্বালাতে তোমাকে ছেড়ে গেছি। আমি চাই তোমাকে সফল দেখতে। তোমার ব্যর্থতা গুলো আমাকে লোকের সামনে ছোট হতে বাধ্য করে। তাই আমি এমনটা করেছি অয়ন।

অধরার কথা শোনার পর অয়ন কি বলবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। অধরা অয়নের দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। অয়ন মিনিট খানেক সময় নিরব থাকার পর অধরাকে উদ্দেশ্য করে খানেক শক্ত গলায় বলল

— হয়ে গেছে তোমার? এবার আসতে পারো।

— অয়ন আমি ভূল করেছি। আমার উচিত ছিলো তোমার পাশে থাকা। কিন্তু তোমাকে সফল করার জন্য আমি এমনটা করেছি। আমি তোমাকে ঠকাইনি। আমার গর্ভে তোমার সন্তান অয়ন। আমি তোমার কাছে হাত জোর….!

অধরা কথা গুলো বলতে বলতে কান্না করতে লাগলো। অধরা কান্না করার এক পর্যায়ে আর নিজের জ্ঞানে থাকতে পারলো না। অধরা সেন্সলেস হয়ে মাটিতে পড়ে যেতে নিলো। অধরা মাটিতে পড়ে যেতে নিতেই অয়ন পেছন ফিরে তাকায় আর দৌড়ে অধরার দিকে এগিয়ে যায়। অয়ন অধরার দিকে এগিয়ে গিয়ে অধরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। অধরাকে নিজের কোলে রেখে অয়ন অধরাকে ডাকতে লাগলো। এমনিতেই অধরা প্রেগন্যান্ট। তার উপর এতো প্রেশার! সব কিছু মিলিয়ে অধরা আর সামলাতে পারেনি নিজেকে। অয়ন অধরাকে নিজের কোলে তুলে নিয়ে সোজা হসপিটালে চলে গেলো। অয়ন অধরাকে নিয়ে হসপিটালে পৌঁছে অধরাকে সোজা নিয়ে গেলো ডক্টর দেখাতে। ডক্টর অধরার অবস্থা দেখে বেশ খানেক সময় অধরাকে পর্যবেক্ষণ করার পর অয়নকে জানালো অধরা এখন আউট অফ ডেঞ্জার আছে। কোনো সমস্যা নেই। অধরার জ্ঞান ফিরতেই অধরা দেখতে পেলো অয়ন তার পাশে বসে তার হাত শক্ত করে ধরে বসে আছে। নিজের স্বামীকে নিজের পাশে দেখার পর অধরা মুচকি হেসে অয়ন কে উদ্দেশ্য করে বলল

— অভিমান কি শেষ হয়েছে? নাকি এই অভিমানটা সারাটা জীবন বুকে পুষতে থাকবে?

অধরার কথাটা কানে এসে লাগতেই অয়নের ঘোর কাটে। অয়ন অধরার মুখের দিকে তাকিয়ে কোনো কথা না বলে অধরাকে জড়িয়ে ধরলো। অয়ন অধরাকে জড়িয়ে ধরতেই অধরা ও অয়ন কে জড়িয়ে ধরলো ভালোবাসা সত্যি অদ্ভুত। ছোট ছোট অভিমান মানুষের মনের মাঝে ভালোবাসাকে একটা চাদরের মতো ডেকে রাখে। অভিমান করা ভালো। তবে অতিরিক্ত নয়। কারন অতিরিক্ত অভিমান প্রতিটা সুন্দর সম্পর্ক কে নষ্ট করে ফেলে। অতঃপর আর কি! অয়ন অধরাকে ক্ষমা করে দিয়ে সারা জীবনের জন্য অধরার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিলো। অভিমানের চাদর সরে যেতেই অয়ন আর অধরা এক হয়ে গেলো তাদের ভালোবাসায়।

————————— সমাপ্ত———–

সন্ধ্যাবাতি পর্ব-০৩

0

#সন্ধ্যাবাতি

#পর্বঃ০৩

#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ

কেউ একজন অয়নের রুমে চলে আসে আর অয়ন কে টেবিলের উপর এমন ভাবে বসে থাকতে দেখে চিৎকার করে উঠে। অয়ন যদিও নিজের হুসে আছে। তবে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছন ফিরে তাকানোর মতো শক্তি অয়নের নেই। অয়ন তাই ঠাই মাথা নিচু করে বসে আছে। এই দিকে ফারিয়া অয়নের এমন অবস্থা দেখতে পেয়ে দ্রুত অয়নের কাছে এগিয়ে আসলো। আর নিজের বুকের উপর থাকা ওড়না টা টেনে নিয়ে অয়নের হাত শক্ত করে বেধে নিলো। ফারিয়া অয়নের হাত ওড়না দিয়ে বেঁধে অয়ন কে উদ্দেশ্য করে ভিশন রকম বিচলিত কন্ঠে বলে উঠলো

— অয়ন এসব কি করে হলো? তোমার হাত কি করে কেটে গেছে? সত্যি করে বলো আমায়!

ফারিয়ার কথা গুলো অয়নের কান অব্দি হয়তো পৌঁছে গেছে কিন্তু অয়নের ব্রেন অব্দি যায়নি। অয়ন অতিরিক্ত নেশা করে আছে। তাই অয়নের কোনো কথাই কানে যাচ্ছে না। অয়ন নিশ্চুপ হয়ে নিজের জায়গায় বসে থাকলো। ফারিয়া অয়নকে কোনো কথা বলতে না দেখে অয়ন কে কোনো মতে নিজের বাহুর সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে অয়ন কে ধরে তার বিছানার দিকে নিয়ে যেতে চেষ্টা করলো। অয়ন ফারিয়ার থেকে তুলনামূলক ভারী। তাই অয়নকে বিছানায় নিয়ে যেতে বেশ বেগ পেতে হলো ফারিয়াকে। ফারিয়া অয়নকে তার বিছানায় কোনো মতে শুইয়ে দিয়ে ডক্টরকে কল করলো। ফারিয়া ডক্টর কল করার প্রায় মিনিট দশেক সময় অতিবাহিত হতেই ডক্টর অয়নের রুমে চলে আসলো। ডক্টর অয়নের রুমে এসে অয়নের চিকিৎসা শুরু করলো। অয়নের হাতে ভালো করে ব্যান্ডেজ করে দিতেই ফারিয়া ডক্টরকে জিজ্ঞেস করলো

— ডক্টর অয়নের হাতের কোনো সমস্যা হবে না তো? অনেকটা কেটে গেছে। সব ঠিক থাকবে তো?

ডক্টর ফারিয়ার প্রশ্নের জবাবে বলল

— আপনি দয়া করে শান্ত হয়ে যান। আমাকে আগে বলুন এতো বড় আঘাত ওনার হাতে কি করে লাগলো? মানে ইচ্ছে করে এমনটা করেছে সেটা তো মনে হচ্ছে না আমার!

— ডক্টর আমি জানি না কি করে হয়েছে! আপনি প্লিজ কিছু একটা করুন।

ডক্টর ফারিয়ার কথা শুনে খানেক সময় ফারিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে কিছু একটা আপন মনে চিন্তা করলো। অতঃপর ফারিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল

— কেমন স্ত্রী হয়েছেন নিজের স্বামীর খেয়াল রাখতে পারেন না! শুনুন আপনার স্বামী অতিরিক্ত মদ্যপান করেছে। এমনটা যেনো আর কখনো না করে সেই দিকে খেয়াল রাখুন। তা না হলে আপনার স্বামীর পাগলামি আরো বেড়ে যেতে পারে। তারপর আপনাদেরই বিপদ বাড়বে।

— জ্বি আমি খেয়াল রাখবো।

ডক্টর কিছু মেডিসিন লিখে দিয়ে অয়নের রুমে থেকে বেরিয়ে গেলো। ডক্টর অয়নের রুমে থেকে বেরিয়ে যেতেই ফারিয়া অয়নের পাশে গিয়ে বসলো। ফারিয়া অয়নের পাশে গিয়ে বসে আলতো করে অয়নের চুলের উপর নিজের হাত রেখে অয়ন কে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— কেনো এমন করে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো অয়ন? যেই মেয়েটা তোমার ব্যর্থতার দিনে তোমাকে ছেড়ে গেছে। তার কথা ভেবে নিজেকে একটু একটু করে শেষ করে দেয়ার কোনো মানে হয় বলো? আমিও তো তোমাকে ভালোবাসি। তোমার সাথে সারাটা জীবন থাকতে চাই। আমাকে কি একবার আপন করে নিতে পারো না তুমি?

ফারিয়া কথা গুলো বলতে বলতে অয়নের কপালের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। ফারিয়া অয়নের কপালের দিকে এগিয়ে এসে আলতো করে নিজের ঠোঁটের উষ্ণ পরশ অয়নের কপালের এঁকে দিলো। ফারিয়া অয়নের কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে অয়নের বুকের উপর নিজের মাথাটা রেখে চোখ বন্ধ করে ডক্টরের বলে যাওয়া কথাটা চিন্তা করতে লাগলো। ডক্টর যখন ফারিয়াকে অয়নের স্ত্রী মনে করেছে। তখন ফারিয়ার মনের মাঝে এক অদ্ভুত প্রশান্তি হয়ে গিয়ে ছিলো। এই প্রশান্তিটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ফারিয়া কিছুক্ষণের জন্য একটাই বিশ্বাস করতে শুরু করে ছিলো যে সে নিজেই অয়নের স্ত্রী। ফারিয়া আপন মনে এসব ছাই পাশ কথা চিন্তা করতেই আচমকা ফারিয়ার পিঠের উপর অয়নের হাত চলে আসলো। অয়নের হাত ফারিয়ার পিঠের উপর চলে আসতেই ফারিয়া খানেক চমকে উঠলো। এই সময়ে অয়নের এই স্পর্শ ফারিয়ার সারা শরীরে শিহরণ জাগিয়ে তুলল। ফারিয়া অয়নের মুখের দিকে দৃষ্টিপাত করতেই অয়ন ফিসফিস করে বলতে লাগলো

— অধরা আমি তোমাকে পাবার জন্য নিজের সব কিছু ত্যাগ করতে পারি। আমার এই সফলতা চাই না। আমার তোমার ভালোবাসা চাই। আমি তোমার ভালোবাসায় আসক্ত হয়ে গেছি অধরা। আমি কখনো তোমাকে ভূলতে পারবো না।

অয়নের মুখে এমন কথা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না ফারিয়া। এতোক্ষণ আপন মনে অয়ন কে নিয়ে কত সব স্বপ্ন বোনা শুরু করে দিয়ে ছিলো নিজের মনের মাঝে। সেই সব স্বপ্ন যেনো অয়নের একটা কথায় ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেলো। অয়নের মুখে অধরার নাম একদমই সহ্য হয় না ফারিয়ার। ফারিয়া অয়নের বুকের উপর থেকে নিজের মাথাটা তুলে নিতে চেষ্টা করতেই অয়ন আরো শক্ত ভাবে ফারিয়াকে জড়িয়ে ধরলো। ফারিয়া অয়নের এমন আচরণে ভিশন রকম বিচলিত হয়ে পড়েছে। ফারিয়া বুঝতে পারছে না যে তার এখন কি করা উচিত। অয়ন তো মদের নেশায় ফারিয়াকে অধরা ভাবতে শুরু করেছে। এই সুযোগ অয়ন কে নিজের ভালোবাসার জালে ফাঁসিয়ে দিয়ে অয়ন কে নিজের আপন করে নেয়া। তা না হলে কখনোই ফারিয়া অয়নকে নিজের আপন করতে পারবে না। ঐ অধরা এসে তার কাছ থেকে তার ভালোবাসার প্রিয় মানুষকে ঠিক কেড়ে নিয়ে যাবে। ফারিয়া আপন মনে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো

— না সেটা আমি কখনো হতে দিবো না। আমি অয়ন কে কখনোই ছাড়বো না। আমি সারাটা জীবন অয়নের হয়ে থাকবো। আর অয়ন শুধু মাত্র আমার হয়ে থাকবে। আমি অধরাকে কোনো ভাবেই আমার থেকে অয়ন কে কেড়ে নিতে দিবো না।

ফারিয়া বিড়বিড় করে কথা গুলো বলতেই অয়ন ফারিয়াকে জড়িয়ে ধরলো। অয়ন ফারিয়াকে জড়িয়ে ধরতেই ফারিয়া দুষ্টু একটা হাসির রেখা নিজের ঠোঁটের উপর একে নিলো। ফারিয়ার মুখে থাকা এক দুষ্টু হাসির পেছনে এক ভয়ংকর প্লান আছে। যেটা অয়ন জানে না। প্রায় মিনিট পাঁচ সময় অয়নের মাথায় মদের নেশা থাকলো। অতঃপর সকল নেশা কেটে গেলো অয়নের। পাঁচ মিনিট পর অয়ন নিজের সকল ঘোর কাটিয়ে ফেলল। আর দুম করে নিজের চোখের পাতা মেলে তাকালো সে। অয়ন নিজের চোখের পাতা মেলে তাকাতেই ফারিয়াকে নিজের বুকের উপর অনুভব করছে পেরে হকচকিয়ে উঠলো আর ফারিয়াকে এক ঝটকায় নিজের বুকের উপর থেকে সরিয়ে দিলো সে। অয়ন ফারিয়াকে নিজের বুক থেকে সরিয়ে দিয়ে প্রশ্ন সূচক কন্ঠে ফারিয়াকে জিজ্ঞেস করলো

— কি ব্যাপার ফারিয়া! তুমি আমার রুমে কেনো? আর এসব নিজের কি অবস্থা করে রেখেছো তুমি?

অয়নের কথাটা শুনে ফারিয়া এক মুহুর্তেই নিজের মুখটা মলিন করে ফেলল। আর অয়ন কে উদ্দেশ্য করে বলল

— আমি কি করেছি? আমার এই অবস্থা তো তুমি নিজেই নিজে হাতে করেছো।

— ওয়াট? পাগল হয়ে গেলো? কি সব কথা বলছো তুমি? আমি তোমাকে…! আচ্ছা এসব বিষয়ে পরে কথা হবে। আগে নিজের জামা কাপড় ঠিক করে নাও।

অয়নের কথা মতো ফারিয়া বিছানা থেকে উঠে পড়ে নিজের জামা ঠিক করে নিলো। ফারিয়া নিজের জামা ঠিক করে নিয়ে মাথা নিচু করে অয়নের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলো। এমন ভাব করছে ফারিয়া যেনো সে কিছুই জানে না। অয়ন ফারিয়াকে নিশ্চুপ দেখে বলল

— ফারিয়া আমি জানি আমাদের মাঝে…..!

অয়ন সম্পূর্ণ কথাটা বলার আগেই আচমকা……..!

চলবে।

সন্ধ্যাবাতি পর্ব-০২

0

#সন্ধ্যাবাতি

#পর্বঃ০২

#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ

অয়ন পেছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পেলো অধরা তার নিজের গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর ফারিয়া অধরার সামনে দাঁড়িয়ে অগ্নি দৃষ্টিতে অধরার দিকে তাকিয়ে আছে। এই দৃশ্যটা দেখার পর অয়নের আর হজম হলো না। অয়ন দৌড়ে ছুটে ফারিয়ার সামনে এসে দাড়িয়ে এতো গুলো লোকের সামনে অয়ন ফারিয়ার গালের উপর পরপর দুটো থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। ফারিয়া নিজেও হয়তো এমন কিছু আশা করেনি। ফারিয়া অয়নের দিকে ছলছল চোখে তাকাতেই অয়ন ফারিয়াকে উদ্দেশ্য করে ভিশন শক্ত গলায় বলল

— তোমার সাহস হলো কি করে অধরার গায়ে হাত তোলার? তুমি জানো না অধরা প্রেগন্যান্ট? ওর গায়ে হাত তোলার অধিকার কে দিয়েছে তোমায়?

অয়নের প্রশ্ন শুনে ফারিয়া কোনো উত্তর দিতে পারলো না। ফারিয়া মাথাটা নিচু করে ফেলল। ফারিয়া মাথা নিচু করে ফেলতেই অধরা হেসে ফেলে অয়ন কে বলল

— এটাই তো আমার প্রাপ্তি। আমি তো এটাই প্রমান করতে চাই অয়ন।

অধরার কথাটা কানে আসতেই অয়নের টনক নড়ে। অয়ন অধরার দিকে দৃষ্টিপাত করে প্রশ্ন সূচক কন্ঠে অধরাকে জিজ্ঞেস করলো

— কি প্রমান করতে চাও? সরি আমি তোমার কথার মানেটা ঠিক বুঝতে পারলাম না। কি প্রমান করার জন্য এখানে এসেছো তুমি?

— আমি এখানে এসেছি এটাই প্রমান করতে যে, তোমার মনের মাঝে এখনো আমার জন্য অনুভূতি বেঁচে আছে। তুমি এখনো আমাকে ভালোবাসো। আমার প্রতি তুমি এখনো দূর্বল।

অধরার কথাটা শুনে অয়ন ভিশন শব্দ করে হেসে ফেলল। অয়নের হাসির শব্দে আশেপাশে থাকা সকল লোকজন অয়নের মুখের দিকে কৌতুহলী চোখে তাকিয়ে আছে। অয়ন হাসতে হাসতে আচমকাই নিজের হাসি বন্ধ করে ফেলল। অয়ন হাসি বন্ধ করে ফেলে অধরার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে দুম করে অধরার হাত ধরে ফেলল সে। অয়ন অধরার হাত ধরে একটা হেঁচকা টান দিয়ে অধরাকে নিজের কাছে টেনে নিলো। অয়ন অধরাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে অধরার মুখের কাছে নিজের মুখটা নিয়ে গেলো। অয়ন অধরার মুখের কাছে নিজের মুখ নিয়ে গিয়ে অধরাকে উদ্দেশ্য করে ফিসফিস করে বলল

— তুমি কি ভেবেছো? এতো বড় প্রতারণা করার পর ও আমার মনের মাঝে তোমার জন্য জায়গা থাকবে? আমার বুকে যেই আঘাত তুমি করেছো! তারপর ও আমি তোমাকে ভালোবাসবো? কি করে ভাবলে তুমি?

— অয়ন আমি যেটাই করেছি তোমার ভালোর জন্য। আমি চেয়েছি…..!

অধরা নিজের কথাটা সম্পূর্ণ বলার আগেই অয়ন একটা ঝাড়ি দিয়ে উঠলো। অয়নের ঝাড়ি খেয়ে অধরা চুপসে গেলো। অয়ন অধরাকে আবার ও বলতে লাগলো

— কথা দিয়ে ছিলে আমায়! সারা জীবন এক সাথে থাকবে। কখনো ছেড়ে যাবে না। সেই কথা তুমি রাখতে পারোনি। আমি কোনো অযুহাত চাই না। তুমি এখুনি আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবে। এটাই আমার ফাইনাল কথা।

— অয়ন আজ তুমি আমাকে বের করে দিতেই পারো। আমি তোমাকে আটকাতে ও আসিনি। তবে একটা কথা বলতে চাই। ভূল মানুষের দ্বারা হয়। আমার ও হয়েছে। একটিবার আমাকে ক্ষমা করে দাও তুমি। প্লিজ! আমি সত্যি….!

— তুমি যাবে নাকি আমি সিকিউরিটি ডাকবো?

— হুম।

* অধরা আর কোনো কথা বলার সুযোগ পেলো না। কারন অয়ন তাকে সেই সুযোগটাই দেয়নি। অয়নের বুকের বাম পাশে যেই আঘাত অধরা দিয়েছে। সেই আঘাতের ক্ষত এতোটা সহজে মুছবে না। অধরা মাথা নিচু করে অয়নের বাড়ি থেকে বেরিয়ে চলে গেলো নিজের বাবার বাড়িতে। অধরা অয়নের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ভেবেছে এই বুঝি অয়ন তাকে ক্ষমা করে দিয়ে আবার তাকে ডেকে নিবে নিজের কাছে। কিন্তু এমন কিছুই হলো না। অধরা চলে যাওয়ার পর অয়ন ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল

— তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? তুমিও চলে যাও।

অয়নের কথাটা কানে এসে পৌচ্ছাতেই ফারিয়া অয়নের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে বলল

— অয়ন সরি। আসলে আমার রাগ উঠে গেছিলো অধরার উপর। তাই আরকি আমি ওর গায়ে হাত তুলে ফেলেছি। সরি। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও।

— বিষয়টা ক্ষমা করার নয়। আমার সাথে এমন কিছু করোনি তুমি যে আমাকে ক্ষমা করতে হবে। যার সাথে করেছো তার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাও।

— কিন্তু অয়ন আজ আমাদের বিয়ে। তুমি আমাকে যদি এই মুহূর্তে চলে যেতে বলো! তবে কেমন করে বিয়ে হবে?

— বিয়ে করার জন্য আমার এখন আর কোনো মুড নেই। আমাকে প্লিজ এই বিষয়টা নিয়ে আর ফোর্স করো না।

— অয়ন এসব কি বলছো তুমি? এতো আয়োজন! সব কিছু এমন ভাবে নষ্ট করে দিবে?

— আমার কথা পরিষ্কার। এসব আমার কাছে কোনো প্রকার গুরুত্ব রাখে না। আসছি আমি।

অয়ন নিজের কথাটা শেষ করতেই হনহন করে হেঁটে চলে গেলো নিজের ঘরের দিকে। ফারিয়া অয়নের চলে যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ফারিয়া বুঝতে পারছে না যে অয়ন তার সাথে এমনটা করলো কেনো? অয়ন নিজেই তো ফারিয়ার সাথে বিয়ের কথা পাকা করেছে। আর এখন সে নিজেই বিয়ে ভেঙ্গে দিলো। তাও আবার এতো আয়োজনের পর! ফারিয়া আশেপাশের লোকজনের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলো সবাই চলে যাচ্ছে নিজেদের মতো। ফারিয়ার দিকে সবাই তাকিয়ে আছে। ফারিয়া খানেক সময় ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকার পর চলে গেলো অয়নের বাড়ির সামনে থেকে। ঐ দিকে অয়ন নিজের রুমে ফিরে এসে একের পর এক সিগারেট ধরিয়ে চলেছে আর ড্রিংক করছে। কোনো ভাবেই নিজের মনকে শান্ত করতে পারছে না অয়ন। যেই অয়ন অধরাকে আঘাত দিতে ফারিয়াকে বিয়ে করতে চেয়েছে। সেই অয়ন কি না নিজেই বিয়ে ভেঙ্গে দিয়ে নিজের রুমে ফিরে আসলো! অয়নের নিজের উপর নিজের রাগ হচ্ছে। অয়ন নিজের রাগ সামলাতে না পেরে কাঁচের গ্লাসটা শক্ত হাতে চেপে ধরলো। অয়ন এতোটা শক্ত ভাবে গ্লাস ধরেছে যে গ্লাসটা ভেঙ্গে অয়নের হাতের বেশ কিছু অংশ ছিঁড়ে গেছে। অয়নের হাতে কাঁচের গ্লাস ভালো ভাবে বিঁধে গিয়ে রক্ত বেরিয়ে পড়ছে। অয়নের চোখ থেকে ও কয়েক ফোঁটা নোনাজল গড়িয়ে পড়ছে। যদিও আজ অয়নের নিজের দিকে বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই। অয়নের মাথায় একটাই বিষয় ঘুরছে। আর সেটা হলো নিজের এক্স ওয়াইফ অধরার কথা। পাগলের মতো ভালোবাসতো অয়ন অধরাকে। আর সেই অধরা অয়নের বুকের বাম পাশে আঘাত করে অয়নকে ছেড়ে চলে গেছে। তাও আবার নিজের বাবার কথায়। অর্থ একটা মানুষকে নিজের প্রিয়জন গুলোর সামনে হয় বড় করে, নয়তো ছোট। অয়ন কাছে যখন নেইম, ফেইম, অর্থ ছিলো না। তখন এই অধরা অয়ন কে ছেড়ে গেছে। আজ অয়নের কাছে সব আছে। আর অধরা ও ফিরতে চায় অয়নের লাইফে। তবে সেটা আর সম্ভব নয়। অয়ন আর অধরাকে চায় না। অয়ন নিজের অতীতের কথা গুলো ভাবতেই ডুকরে কেঁদে উঠলো। অয়ন না পারছে অধরাকে ক্ষমা করতে আর না পারছে অধরাকে ভূলে যেতে। অয়ন নিজের কেটে যাওয়া হাতটা টেবিলের উপর থেকে নিচের দিকে ঝুলিয়ে রেখে টেবিলের উপর মাথা রেখে নিজের চোখ বন্ধ করে ফেলে। অয়ন নিজের চোখ বন্ধ করেই ফেলেতেই আচমকা কেউ একজন অয়নের রুমে চলে আসে আর অয়ন কে………..!

#চলবে…………..!

সন্ধ্যাবাতি পর্ব-০১

0

#সন্ধ্যাবাতি
#পর্বঃসূচনা_পর্ব
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ

৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় আমি হাজির হয়েছে আমি নিজের স্বামীর বিয়ের অনুষ্ঠানে। কথাটা শুনে হয়তো আপনারা একটু অবাক হয়ে গেছেন। কিন্তু এটাই সত্যি। আমার স্বামী আজ বর বেসে অন্য এক নারীর সাথে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে। আর আমি সেই বিয়েতে একজন দর্শকের ন্যায় বিয়ের প্যান্ডেলের এক কোনে দাঁড়িয়ে থেকে নিজের চোখের জল ফেলছি। নিজের চোখের সামনে নিজের ভালোবাসাকে অন্য কারোর হয়ে যেতে দেখতে কেমন লাগে? সেটা শুধু মাত্র তারাই বুঝতে পারবে! যারা এমন পরিস্থিতিকে কাছ থেকে অনুধাবন করেছে। গল্প ফেরার আগে চলুন পরিচয় দিয়ে নেই। আমি অধরা চৌধুরী। আমি আমার পরিবারের একমাত্র মেয়ে। আমার বাবা এই শহরের বিশিষ্ট একজন বিজনেস ম্যান ছিলেন। আমার পরিচয় বলতে এই টুকুই। আর আজ যার বিয়ে হচ্ছে! তিনি আমার স্বামী অয়ন চৌধুরী। অয়ন বর্তমান সময়ের একজন তরুণ বিশিষ্ট বিজনেস ম্যান।‌ অয়ন আজ যেই পজিশনে আছে! সেই পজিশনে আসা সকলের স্বপ্ন। আর অয়ন সেই স্বপ্নকে সত্যি করে দেখিয়েছে। তবে আজকের এই অয়ন আগেকার অয়ন এক মানুষ নয়। সম্পূর্ণ ভিন্ন এক মানুষ এই অয়ন। আজকের অয়নের কাছে নিজের জীবনের সফলতা ছাড়া আর কিছুই জরুরী নয়। আর আগেকার অয়নের কাছে নিজের ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই গুরুত্বপূর্ণ ছিলো না। আর তাই তো আজ অয়ন আমার থেকে এতোটা দূরে! আমি চাইলে হয়তো সিনক্রিয়েট করতে পারি। তবে আমার সেই‌ ক্ষমতা নেই। আমি প্রায় আধ ঘন্টা সময়ের মতো ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছি। একদম সকলের দৃষ্টির আড়ালে। বেশ কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকার পর আচমকা কেউ একজন আমার পেছনে দাঁড়িয়ে ভিশন কর্কশ কন্ঠে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো

— এই মেয়ে এখানে কি চাই?

কন্ঠস্বরটা কানে ভেসে আসতেই অধরা নিজের ঘাড় ঘুরিয়ে পেছন ফিরে তাকালো। অধরা পেছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পেলো তার সেই চিরচেনা পরিচিত মুখ। অয়ন দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন কে নিজের সামনে দেখার পর অধরার মুখ থেকে একটাও কথা ফুটছে না। শুধু মাত্র চোখ থেকে টপটপ করে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু জল। অয়ন অধরার চোখের কোনে নোনাজল দেখে তাচ্ছিল্য পূর্ণ হাসি দিয়ে বলল

— ভালো লাগছে আজ। সত্যি খুব ভালো লাগছে। তোমার চোখের এই মিথ্যা জল টুকু আবার দেখতে পেয়ে অনেক শান্তি লাগছে আমার।

অয়নের কথাটা শেষ হতেই অধরা অনেক কষ্টে অয়ন কে বলল

— অয়ন আমার চোখের জল মিথ্যা নয়। আমি সত্যি আজ…!

অধরা সম্পূর্ণ কথাটা বলার আগেই অয়ন একটা ধমক দিয়ে অধরাকে ঠাঁই থামিয়ে দিলো। অয়নের ধমকের শব্দটা এতোটাই বিকট ছিলো যে বিয়েতে আসা সকলের কানে পৌঁছে গেলো সেই শব্দ। সকলে অতি আগ্রহের অয়ন আর অধরার দিকে তাকিয়ে আছে। এখানে উপস্থিত অনেকেই জানে না অধরার আসল পরিচয়। অয়ন অধরার দিকে খানেক এগিয়ে এসে অধরার মুখের কাছে নিজের মুখ নিয়ে গিয়ে ভিশন শক্ত গলায় অধরাকে বলল

— এসব ছলনা দিয়ে অয়ন চৌধুরীকে আর কাবু করতে পারবে না তুমি। আমার মন থেকে তুমি সম্পূর্ণ ভাবে মুছে গেছো।

অয়নের কথাটা শেষ হতেই অধরা হেসে ফেলল। অধরার ঠোঁটের মাঝে হাসির রেখা দেখে অয়নের সারা শরীর যেনো জ্বালা করে উঠলো। অয়নের চোখ মুখ রক্ত বর্ণ ধারণ করে আছে। অয়ন নিজের রাগকে আর চাপিয়ে রাখতে পারছে না। অয়ন অধরাকে অবাক করে দিয়ে দুম করে অধরার বাহু জোড়া শক্ত হাতে চেপে ধরলো। অয়ন অধরার বাহু জোড়া শক্ত হাতে চেপে ধরে অধরাকে জিজ্ঞেস করলো

— পাগল হয়ে গেছো তুমি? তোমার এই হাসি আমার সহ্য হয় না। আমার সামনে দাঁড়িয়ে কান্না তো করতে পারবে। কিন্তু হাসতে নয়।

অয়নের কথাটা শেষ হতেই অধরা নিজের হাসি থামিয়ে বলল

— কেনো মিস্টার অয়ন চৌধুরী। আমার হাসি দেখলে বুঝি আপনার ভয় হয়! ভয় পান আপনি?

— নো। অয়ন চৌধুরী কখনো ভয় পেতে পারে না। অয়ন কে দেখে অন্য সবাই ভয় পায়। অয়ন কখনো ভয় পায় না।

অয়নের কথাটা শেষ হতেই অধরা বলল

— অবশ্যই তুমি ভয় পাও আমাকে। এই যে বলো না আমাকে তোমার মন থেকে মুছে ফেলেছো! এটা মিথ্যা কথা। যদি তাই হতো! তবে আমাকে এড়িয়ে চলতে। আমাকে দেখার পর বিয়ের পিঁড়ি থেকে উঠে আমার সামনে এসে দাড়াতে না। অয়ন তুমি বিশ্বাস করো বা না করো! আমি তোমার মনের মাঝে আজ ও বেঁচে আছি। আর সারা জীবন বেঁচে থাকবো।

অধরার কথাটা শেষ হতেই অয়ন অধরার বাহু জোড়া থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিলো। অধরা তো সত্যি কথাই বলেছে। আজ অয়নের সাথে ফারিয়ার বিয়ে হবে। অয়ন অধরাকে দেখার পর এখানে চলে আসাটা উচিত হয়নি অয়নের। অয়ন অধরার দিক থেকে নিজের চোখ নামিয়ে নিলো। অয়ন এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে পেলো একটা ওয়েটারকে। অয়ন ওয়েটারের দিকে এগিয়ে গিয়ে একটা ড্রিংকের গ্লাস হাতে তুলে নিয়ে মদ্যপান করতে লাগলো। দুই প্যাগ ড্রিংক করে নিয়ে অয়ন অধরার দিকে এগিয়ে আসতে নিতেই অয়নের সামনে এসে দাঁড়ায় ফারিয়া। ফারিয়া অয়নের সামনে এসে দাড়িয়ে অয়ন কে উদ্দেশ্য করে ফিসফিস করে বলল

— অয়ন কি করছো কি তুমি? আজ‌ আমাদের বিয়ে। এখানে এই মেয়েটার সাথে সিনক্রিয়েট করছো কেনো?

— আমি কারোর সাথে সিনক্রিয়েট করছি না। আমি এই মেয়েটাকে ওর যোগ্যতা বুঝিয়ে দিচ্ছি।

— সরি অয়ন তুমি সেটা করছো না। এখন তোমার থাকার কথা বিয়ের আসরে। আর তুমি কি না নিজের এক্স….!

ফারিয়া নিজের কথাটা সম্পূর্ণ করলো না। অয়ন ফারিয়ার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অয়ন নিজের সাথে অধরার নাম কোনো ভাবে আর জড়াতে চায় না। অধরার সাথে তার অতীতের সম্পর্কের কথা কেউ বললে অয়ন সহ্য করতে পারে না। অয়ন ভিশন রেগে যায়। ফারিয়া নিজেও সেই বিষয়টা জানে। তবে ভূল করে ফারিয়া আজ সেই কথাটা বলে ফেলেছে। অয়ন ফারিয়ার দিকে খানেক সময় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার পর ফারিয়ার সামনে থেকে সরে চলে গেলো অধরার সামনে। অয়ন অধরার সামনে এসে দাড়িয়ে অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— আমি জানি না তুমি এখানে কেনো এসেছো? যদি বিয়ে দেখতে এসে থাকো তবে এখানেই বসো। আর যদি কোনো ঝামেলা করতে এসে থাকো। তবে এখুনি বেরিয়ে যাও।

অয়নের কথাটা শেষ হতেই ফারিয়া অয়নের পেছন থেকে এগিয়ে এসে অধরার হাত ধরে ভিশন রাগী কন্ঠে বলতে লাগলো

— কেনো অয়ন এই মেয়েটা এখানে থাকলে আমাদের সুন্দর জীবন কখনোই সুন্দর থাকবে না। ওকে এখুনি এখান থেকে বের করে দিতে হবে। এসব ছোট লোকের ঠাই এখানে কখনো হবে না। চল বেরিয়ে যা এই বাড়ি থেকে।

ফারিয়া কথাটা বলতেই অধরার হাত ধরে টানতে লাগলো। অধরা কোনো কথা বলছে না। শুধু মাত্র অয়নের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অধরা। অয়ন ও খানেক নিরব হয়ে আছে। ফারিয়া অধরাকে অয়নের সামনে থেকে নিয়ে যেতেই আচমকা একটা বিকট শব্দ ভেসে আসলো অয়নের কানে। অয়ন নিজের ঘার ঘুরিয়ে পেছন ফিরে তাকাতেই যা দেখতে পেলো। তা দেখার জন্য অয়ন মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। অয়ন পেছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পেলো অধরা……………!

#চলবে…………..!