Wednesday, August 13, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 77



হৃদয়ে রক্তক্ষরণ পর্ব-৪৭+৪৮

0

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৪৭
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ❌
[প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত]

“তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো,ছেড়ে দেবো না,
তোমায় বক্ষ মাঝে রাখবো,ছেড়ে দেবো না।”

“নির্জনের নিধিকে এভাবে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গান গাওয়াতে,হকচকিয়ে গেলো নিধি।
কতদিন পর প্রিয় মানুষটির স্পর্শ পেলো।’
ভাবতেই চোখের কোণে নোনাজল দেখা গেলো।”

“নিধি নির্জনের বুকে মাথা রেখে,নিচু স্বরে বললো,

‘নির্জন,ছাড়ুন প্লিজ..আশেপাশের মানুষগুলো দেখছে।আমার অস্বস্তি অনুভব হচ্ছে।’
এদিকে কিছুটা দূর থেকে সিকিউরিটি গার্ড রা নিধির ফ্যাকাশে চোখ-মুখ খেয়াল করে,ইশারা করলো,সবকিছু ঠিক আছে কিনা?

“নিধি তাদের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে ‘না’ বোধক ইশারা করতেই,গার্ডগুলো দ্রুত পায়ে ছুটে এসে পেছন থেকে নির্জনের দুই হাত ধরে বেঁধে ফেললো।
আচানক এহেন কাহিনীতে কিছুটা ভড়কে গেলো নির্জন।গার্ডগুলোর দিকে র**ক্তিম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলতে থাকল,

‘আমাকে আবার ধরেছো কেনো?দেখছো না,আমি আমার আমার নিরুর সাথে কথা বলছি?তোমাদের দেখি নূন্যতম বোঝার ক্ষমতা নেই।হাজবেন্ড-ওয়াইফের মাঝখানে এভাবে কেউ আসে?’

“নির্জন এভাবে অনর্গল কথা বলে যাচ্ছে,অপরদিকে নিধি নিষ্প্রাণ দৃষ্টিতে নিজের স্বামীর দিকে তাকিয়ে আছে।সে যেন আজ ভাষাহীন।যেটুকু আশার আলো দেখেছিলো,সেটাও হয়তো নিভে গেছে।গার্ডদের সামনেই নির্জনের কাছে এসে তার কাঁধের দুই পাশে শার্ট খামচে ধরে কান্নারত গলায় বললো,

‘কবে সুস্থ হবেন আপনি?আর কত কষ্ট দিবেন আমায়?আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয় আপনি ইচ্ছে করে এগুলো করছেন।আপনার সাথে মনে হয় আমিও পা**গল হয়ে যাচ্ছি।আর কত কাঁদালে আপনি শান্তি পাবেন,বলুন তো?’

বলেই নির্জনের কাছ থেকে কয়েক কদম দূরে সরে গিয়ে,কন্ঠে তেজ নিয়ে গার্ডদের বললো,

‘নিয়ে যান তাকে,প্লিজ।’

“নিধির মুখনিঃসৃত কথা,
‘নিয়ে যান তাকে,প্লিজ।’
কথাটি শুনে নির্জন আকস্মিক আরও রাগান্বিত হয়ে উঠল।তার চোখে এক অস্বাভাবিক আগ্রাসন ফুটে উঠল,যেন তার ভেতরের পা**গলামোকে কেউ আরও প্ররোচিত করছে।নিধির দিকে র**ক্তিম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে উঠলো,

‘আমি যাচ্ছি না,আমার নিরুর সঙ্গে আমার কথা শেষ হয়নি।আপনারা আমাকে ছাড়ুন,বলছি।’
বলেই গ**র্জে উঠল নির্জন।আর গার্ডদের পেছনে সরিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগল।”

“গার্ডরা প্রথমে কিছুটা পিছু হটল,কিন্তু দ্রুত আবার নিয়ন্ত্রণে আনল পরিস্থিতি।তাদের একজন ইনজেকশনের জন্য প্রস্তুত হতে থাকল।অন্য একজন নির্জনকে শক্ত করে ধরে রেখেছে,যেন পালানোর কোনো ফাঁক না পায়।”

“নিধি চুপচাপ দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখছে।তার চোখ থেকে অনবরত অশ্রু ঝরছে,কিন্তু মুখে কোনো অভিব্যক্তি নেই।একটা শূন্যতায় যেন সব আশা হারিয়ে গেছে।”

“নির্জন এইবার নিধির দিকে তাকিয়ে মৃদুস্বরে বলতে থাকল,

‘ডার্ক কুইন,তুমি এটা করতে পারো না।আমি তোমাকে ভালোবাসি জানপাখি।’

“নির্জনের কণ্ঠে এহেন আকুলতা বুঝতে পেরে ভীষন কষ্ট হলো নিধির।কিন্তু তার পা**গলামোর কাছে বারবার হার মানতে হচ্ছে নিধির।’
ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে,আবারও কঠোর স্বরে গার্ডদের উদ্দেশ্য করে বললো,

‘তাকে নিয়ে যান,প্লিজ।’

“নিধির কথা শুনে,গার্ডরা নির্জনের হাতে ইনজেকশন পুশ করল।মুহূর্তের মধ্যে,তার শরীর ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে এলো,এক ভ**য়ার্ত নিস্তব্ধতা নেমে এলো চারপাশে।নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা আশেপাশের কিছু মানুষ এই দৃশ্য দেখে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকল।”

“নির্জনের অচেতন শরীর গার্ডরা তুলে নিয়ে যেতে লাগল।নিধি কোনো শব্দ না করে নির্জনের ঘুমন্ত মুখস্রির পানে তাকিয়ে থাকল।তার হৃদয় ভে**ঙে যাচ্ছে,কিন্তু মুখের তীব্রতা যেন তাকে শক্ত করে রেখেছে।”

“গার্ডদের চলে যাওয়ার পরে নিধি ধীরে ধীরে মাটিতে বসে পড়ল।তার ঠোঁট কাঁপছে,কিন্তু কথা বলতে পারছে না।সে শুধু নীরবে নিজেকেই প্রশ্ন করলো,

‘কবে শেষ হবে এই যুদ্ধ?’

————
“সময় চিরবহমান,তার স্রোতে আমরা সবাই ভেসে যাই।থেমে যাওয়ার কোনো উপায় নেই,শুধু কিছু স্মৃতি আর অভিজ্ঞতা জমা হয় পথে।প্রতিটি ক্ষণ নতুন,আবার প্রতিটি মুহূর্ত অতীতের সঙ্গে জুড়ে থাকে।”

“নিধি ড.মায়ার কেবিনে বসে আছে,তার চোখে একরাশ আশার ঝিলিক।আরও ৩ মাস কে**টে গেছে এবং এই সময়টা যেন অনন্তকাল বলে মনে হয়েছে তার কাছে।প্রতিদিনের যন্ত্রণা,অনিশ্চয়তা,আর নির্জনের অনুপস্থিতি তাকে নিঃশেষ করে ফেলেছিলো।আজ দীর্ঘদিন পর ড.মায়া তাকে ডেকেছেন,কারণ নির্জনের অবস্থা অনেকটাই ভালো।”

“ড.মায়া বললেন,

‘তোমার স্বামী এখন বেশ সুস্থ। তবে…’

“ড.মায়ার কথা শুনে,নিধির হৃদয় যেন এক মুহূর্ত থেমে গেলো।উত্তেজিত স্বরে বললো,

‘তবে?তবে কি,আন্টি?’

“মায়া এক গ্লাস পানি নিধির দিকে এগিয়ে দিয়ে ধীর কণ্ঠে বললেন,

‘তুমি ওকে বাসায় নিয়ে যেতে পারো,কিন্তু কিছু শর্ত মানতে হবে।নির্জনের জন্য নিয়মিত মেডিসিন চালিয়ে যেতে হবে।ওর নিয়মিত থেরাপি আর মনিটরিং দরকার।আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো,ওর আশেপাশের পরিবেশ যেন একদম শান্ত থাকে।কোনো চাপ,উত্তেজনা বা মানসিক আ**ঘাত যেন না পায়।’

“নিধি ধীরে ধীরে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।তার মনের মধ্যে খুশির স্রোত বইছে,আবার অজানা ভয়ের শীতল ছোঁয়া তাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে।নির্জন আবার বাসায় ফিরবে,তার পাশে থাকবে,তার জীবনের অংশ হয়ে ফিরবে,কিন্তু সেই নির্জন কি আগের মতো হবে?”

“মায়া নিধির ভাবনায় ছেদ টেনে বললেন,

‘আরেকটা ব্যাপার মনে রাখতে হবে,নিধি।এই সময়টাতে তুমি তার জন্য সবচেয়ে বড় সাপোর্ট।তুমি যদি একটু অসাবধান হও,তার সুস্থতা আবারও পিছিয়ে যেতে পারে।তোমার কাছে আমি এটা বলতে চাইনি,কিন্তু ওর অবস্থা খুব ভ**ঙ্গুর।তোমাকে শক্ত থাকতে হবে নিধি।’

“নিধি নিজের ভিতরে এক গভীর শ্বাস নিয়ে ড.মায়ার কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করল।সবকিছু ঠিকমত মানলে নির্জন সুস্থ থাকবে।এই বিশ্বাস নিধিকে অদ্ভুত রকমের সাহস দিলো।মনের খুশি যেন এইবার মুখে প্রকাশ পেলো।”

“নিধি মুচকি হেসে বললো,

‘আমি সব করবো,আন্টি।নির্জনকে আমি আর হারাতে পারব না।’

“ড.মায়া একবার নিধির দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে হাসলেন।অতঃপর বললেন,

”তাহলে যাও,তাকে নিয়ে যাও।আমার মনে হয় সে তোমার যত্ন ও ভালোবাসায় সেরে উঠবে।’

“নিধি ড.মায়ার কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো,কিন্তু তার মনে একটা প্রশ্ন বারবার ঘুরপাক খেলো,

‘এই নির্জন কি সত্যিই সেই নির্জন,যাকে আমি একদিন ভালোবেসেছিলোম?আচ্ছা,আমাদের সম্পর্ক কি আগের মতো করে আবার জোড়া লাগবে?’
নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে ইউনিটের দিকে গেলো নিধি।
নিধি হসপিটালের করিডোরে ধীরে ধীরে হাটছিলো,আর ভাবছিলো,

‘নির্জন আমাকে দেখে আবারও সেই নদীর পাড়ের মতো ঘটনা ঘটাবে না তো?নাকি সুস্থ-স্বাভাবিক আচরণ করবে?’

ভেবে ইউনিটের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো,

‘মাহির,দিগন্ত এবং নির্জন কিছুক্ষণ আগে থেকে ইউনিটের বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।”

“নিধি দূর থেকে নির্জন কে হাসিমুখে কথা বলতে দেখে,স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে এগিয়ে যেতে লাগল।তখনই ওর মনে হলো,ওর পাশ দিয়ে কোনো এক পরিচিত মানুষ হেঁটে গেলো।’

ভেবে,নিধি পেছনে তাকিয়ে লোকটি কে উদ্দেশ্য করে বললো,

‘এই যে,শুনছেন?’

“নিধির কন্ঠস্বর শুনে লোকটি পেছনে তাকাতেই,তার চোখ জোড়া যেন থমকে গেলো।লোকটির ফর্সা মুখস্রিতে যেন মন ভোলোনো হাসি খেলে গেলো।বিস্ময়ের স্বরে বলে উঠলো,

‘আরে নিধি,তুৃমি এখানে?কত বছর পর দেখা হলো।’
বলেই ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ফেললো মেহরাব।”

“নিধি আবারও মুচকি হেসে বললো,

‘মায়া আন্টি তো একবারও আমাকে বলে নি,যে আপনি এখানে কাজ করেন?’

“মেহরাব মুচকি হেসে বললো,

‘আমি মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করি আরেকটি হসপিটালে।’

“নিধি কিছুটা অবাক হলেও সৌজন্যমূলক ভাবে মাথা নেড়ে বলল,
‘ও আচ্ছা।আপনি কি এখানেও কাজ করেন?’

“ড.মেহরাব হাসল।বললো,

‘না,আমি এখানে কাজ করি না।কিন্তু মাঝে মাঝে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে এখানে আসি।আজ কিছু কাজের জন্য এসেছি,আর তোমার সাথে দেখা হয়ে গেলো।তুমি আগের মতোই আছো।তবে কিছুটা লম্বা হয়েছো।’
বলেই ফিক করে হেসে দিলো মেহরাব।”

“নিধি তার উত্তেজনাময় মুহূর্তের মধ্যে ড.মেহরাবের পরিচয় শুনে একটু থমকে গেলো।ভাবলো,

‘ড. মায়া আন্টির ছেলেও একজন সাইকিয়াট্রিস্ট?এর মানে মা-ছেলে দু’জনেই এই পেশায় যুক্ত!’

ভেবে মেহরাব কে বললো,

‘তাহলে..আপনাকে সংক্ষেপে কিছু কথা বলি।’
বলেই মেহরাব কে নির্জনের অতীতের কিছু ঘটনা,এবং বর্তমানের ঘটনাগুলো খুব সংক্ষেপে বললো।”

“নিধির দুঃখের কথাগুলো শুনে মুহুর্তেই মুখ-মন্ডল মলিন হয়ে গেলো মেহরাবের।সে ভাবতে পারেনি,নিধির বিয়ে হয়ে গেছে।আর সে এতগুলো দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে।’

ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

“নিধি,আমি চাই নির্জনের চিকিৎসায় কোনো খুঁত না থাকে।তোমার স্বামীকে আরও উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য আমার একজন সিনিয়র স্যার আছেন,ড.আজাদ।তিনি মানসিক রোগের চিকিৎসায় একজন বিশেষজ্ঞ এবং আমার প্রশিক্ষণ তার কাছেই।”

“নিধি কিছুটা অবাক হয়ে তাকালো মেহরাবের দিকে।জিজ্ঞেস করলো,

‘ড.আজাদ?’

“মেহরাব মাথা নেড়ে বললো,

‘হ্যা,তিনি আমার শিক্ষক।অনেক কঠিন কেসে তার অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা আছে।আমার মনে হয়,যদি তিনি নির্জনকে দেখেন,তাহলে আরও ভালোভাবে তার চিকিৎসা করা সম্ভব হবে।আমি চাই,তুমি তার সাথে একবার যোগাযোগ করো।’

“মেহরাবের এহেন কথা শুনে,নিধির চোখে যেন এক নতুন আশার আলো ফুটে উঠল।খুশি হয়ে বললো,

‘তাহলে…তিনি কি আমাদের সাহায্য করবেন?’

“মেহরাব মৃদু হাসি দিয়ে বললো,

‘আমি তার সাথে কথা বলব।তুমি চিন্তা করো না।নির্জনের জন্য আমরা যা করা দরকার,সব করব।তবে,তোমাকেও ধৈর্য ধরতে হবে,কারণ এ ধরনের মানসিক চিকিৎসা ধীরে ধীরে কাজ করে।আর মা যেই মেডিসিন গুলো লিখে দিয়েছে,আপাতত সেগুলো চালিয়ে যাও।তোমার স্বামী কে নিয়ে বাসায় গিয়ে,তাকে সময় দাও।তারপর না হয় তোমাকে ড.আজাদ স্যারের সাথে দেখা করাবো।’

“নিধি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো।মেহরাবের প্রস্তাবে তার মনে কিছুটা শান্তি ফিরলো।মুচকি হেসে বললো,

‘ধন্যবাদ,ড.মেহরাব।আপনার সহায়তায় হয়তো নির্জনকে আবার আগের মতো ফিরে পাবো।’

“মেহরাব একবার মাথা ঝুঁকিয়ে বললো,

‘তুমি শক্ত থাকো,নিধি।আমি তোমার পাশে আছি।’

বলেই নিজেদের মধ্যে ফোন নাম্বার আদান-প্রদান করে,মেহরাব সেখান থেকে প্রস্থান করলো।’

“এদিকে নিধি পেছনে ঘুরতেই দেখলো,হাতে একটি ব্যাগ নিয়ে নির্জন হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে।তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে মাহির এবং দিগন্ত।’

“নির্জনকে দেখে ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো নিধি।ও বুঝে ফেলেছে,যে নির্জন ওকে মেহরাবের সাথে কথা বলতে দেখে ফেলেছে।এখন কি হবে?”

“নিধির ভাবনায় পানি ঢেলে দিয়ে,নির্জন এগিয়ে এসে নিধির ডান হাত মুঠোবন্দি করে বললো,

‘এখনও কি আমাকে ভয় পাও?ডোন্ট ওয়ারি,আমি এখন ভালো আছি।আর এই জায়গার কয়েকজন মানসিক রোগীর সাথেও আমার বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিলো।আর তখনই ডক্টর আমাকে মুক্তি দিলো।’

বলেই হো হো করে হেসে উঠলো নির্জন।অতঃপর স্বাভাবিক স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
‘আচ্ছা,একটু আগে কার সাথে কথা বলছিলে?উনি কে?’

“নির্জনের এহেন কথা শুনে নিধি ভয় নিয়ে বললো,

‘ড.মেহরাব,মায়া আন্টির ছেলে।উনি অন্য হসপিটালে জব করেন।উনি আপনাকে আরও ভালো ডক্টর দেখানোর জন্য সাজেস্ট করলেন।’
বলেই নির্জনের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।”

“নিধিকে অবাক করে দিয়ে,নির্জন মুচকি হেসে বললো,

‘ওহ,এই কথা?ঠিক আছে,তুমি যেমন বলবে,তেমনই হবে।তবে তার আগে আমি বাসায় যেতে চাই।কতদিন হয়ে গেলো তোমার সাথে এক ছাদের নিচে থাকা হয় না।’

“মাহির এবং দিগন্তের সামনে নির্জনের এহেন কথা শুনে,লাজুক হাসল নিধি।
এদিকে দু’জনের কাহিনী বুঝতে পেরে,দিগন্ত দুষ্টু হেসে বললো,

‘এহেম!এহেম!আমাদের মনে হয় এখানে থাকা ঠিক হচ্ছে না।আমিও আমার বউয়ের কাছে যাই।তোমাদের প্রেম দেখে আমার জমানো ভালোবাসা গুলো বেরিয়ে আসতে চাইছে।’

“দিগন্তের সাথে তাল মিলিয়ে মাহির বললো,

‘ঠিক বলেছেন ভাইয়া,আমার স্বপ্নচারিনী ইদানীং বেশ অসুস্থ থাকে।আজ ফোন করে বললো,
ওর শরীর কিছুটা ভালো।ভাবছি,এই সুযোগ টা হাত ছাড়া করা যাবে না।আজ ডিউটি করে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরবো।’
বলেই মুচকি হাসল মাহির।”

“এভাবে ৪জন আরও কিছুক্ষণ দুষ্টু-মিষ্টি কথা বলে,নিজ নিজ গন্তব্যে চলে গেলো।এদের কথপোকথনের মধ্যে নিধি বিস্ময়ের দৃষ্টিতে বারংবার নির্জনের দিকে তাকিয়েছে।নাহ!আজ নির্জনের চেহারা এবং আচার-আচরণ আর ৫জন স্বাভাবিক মানুষের মতো।নইলে,মেহরাবের কথা শুনে এতক্ষণে তো সিনক্রিয়েট করার কথা।অথচ বিষয়টি সে কতটা স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিলো।’
ভেবে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলো নিধি।”

———
“এদিকে আজ সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরে তোহার সাথে লেপ্টে রয়েছে মাহির।”

“তোহা পেয়ারায় কা**মড় বসিয়ে বললো,

‘আপনার জন্য শান্তি মতো পেয়ারাটাও খেতে পারছি না।একটু সরে বসুন।’

“মাহির মুচকি হেসে বললো,

‘আমি তো এই পেয়ারা শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছি।এটা শেষ হলেই শুরু হবে।’

‘তোহা চোখ পাকিয়ে বললো,
‘কি শুরু হবে?’

‘মাহির চোখ টিপে বললো,

‘সাড়ে ৩মাস যাবৎ আমাকে ঘুরিয়েছো।আর নয়।শুধু আমার অনাগত প্রিন্সেসের জন্য সব সহ্য করেছি।এই অবজ্ঞা আমি আর মানব না।’

“এদিকে মাহিরের কথা শুনে,তোহা শুকনো ঢোক গিলে আগের থেকে আরও ধীরে ধীরে পেয়ারা খেতে লাগল।বিষয়টি মাহির বুঝতে পেরে,ঠোঁট টিপে হেসে তোহার হাত থেকে খপ করে পেয়ারা টি নিয়ে,মুহূর্তেই বাকি পেয়ারাটি নিজের মুখে নিয়ে খেয়ে ফেললো।অতঃপর তোহার কাঁধে হাত রেখে ওকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে,ওর গালে হাত বুলিয়ে মৃদুস্বরে বলতে থাকল,

“তোমার চোখের হাসিতে মিশে আছে চাঁদের আলো,
স্বপ্নচারিনী,তোমায় দেখে হৃদয়ে যেন বাজে মৃদু গান।
তোমার নামের প্রতিটি অক্ষর যেন মধুর স্পর্শ,
তুমি ছাড়া জীবন আমার এক মুহূর্তও যে নীরব হর্ষ।

তোমার কথা ভেবে আমার দিন শুরু হয় মিষ্টিমাখা,
তোমার সাথেই জীবনটা হবে সুরে সুরে গাঁথা।
স্বপ্নচারিনী,তুমি আমার জীবনের একমাত্র প্রেরণা,
তোমার প্রেমেই খুঁজে পাই আমার বেঁচে থাকার মানা।”

~মেহের~

“কবিতা আবৃত্তি করেই তোহার গলায় ঠোঁট ছোঁয়ালো মাহির।দীর্ঘ দিন পর মাহিরের গভীর স্পর্শ পেয়ে তোহার হৃদয়টা স্পন্দিত হলো।সে অনুভব করলো,এই মুহূর্ত তাদের জীবনের সবচেয়ে সেরা মুহূর্ত।নাহ!তাকেও তো তার প্রিয়তমকে ভালোবাসা উচিত।’
ভেবে তোহা আলতো করে মাহিরের ঠোঁটের দিকে নজর দিলো।মাহিরও ধীরে ধীরে তোহার দিকে ঝুঁকে পড়ল। দু’জনের ঠোঁটের মাঝে ফাঁকা জায়গা কমে এলো,আর তাদের হৃদয় যেন একসাথে মিলিত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলো।অবশেষে,দু’জন একে-অপরের সাথে মিশে গেলো এক মিষ্টি,প্রগাঢ় চুম্বনে।তাদের মধুর মিলনের রাতটি যেন এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করলো।”

——–
“রাত সাড়ে ১০টায় বেলকনিতে বসে,ফোনে বাচ্চাদের ভিডিও দেখে খিলখিলিয়ে হাসছে নাদিয়া।ওর হাসির শব্দ শুনে,ল্যাপটপ বন্ধ করে দিগন্ত ধীর পায়ে নাদিয়ার পেছনে গিয়ে,ওকে জড়িয়ে ধরে ওর ঘাড়ে চুমু দিয়ে মৃদুস্বরে বললো,

‘শুধু ওই বাচ্চা গুলোকেই দেখে যাবে?এই বাচ্চাটার দিকেও তো একটু নজর দেওয়া উচিত,তাই না?’

“দিগন্তের এহেন কথা শুনে নাদিয়া ঠোঁট কামড়ে বললো,

‘ওলে লে..বুইড়া ব্যাটা নিজেকে বাচ্চা দাবি করে।ঢং দেখে আর বাঁচি না।সরো,আমার গরম লাগছে।’

“নাদিয়া আরও কিছু বলার আগেই দিগন্ত ওকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে,নিজেও ওর পাশে শুয়ে হাস্কি ভয়েসে বললো,

‘হানি,একটু পর আমার সাথে শাওয়ার নিলেই ঠান্ডা হয়ে যাবে।কতদিন হয়ে গেলো আমরা একসাথে শাওয়ার নেই না।’
বলেই দুষ্টু হাসলো দিগন্ত।”

“দিগন্তের ঠোঁট কা**টা কথা শুনে,যা বোঝার বুঝে গেলো নাদিয়া।দিগন্তের হাত ছাড়িয়ে,উঠে যেতে চাইলো নাদিয়া।কিন্তু দিগন্তের পুরুষালি শক্তির কাছে হার মেনে আবারও শুয়ে বললো,

‘ইয়ে মানে,বেবি মনে হয় পেটে কিক মা**রছে।আমি এখন ঘুমাবো,নইলে ও শান্ত হবে না।’

“দিগন্ত হো হো করে হেসে,নাদিয়ার ঠোঁট জোড়ায় চুমু দিয়ে বললো,

‘এখন তুমি ঘুমিয়ে গেলে,আমিও তো শান্ত হবো না।এক কাজ করো,আমার ভালোবাসা উপভোগ করে তারপর না হয়,তিন জনে শান্ত হয়ে ঘুমাই,কি বলো?’

“নাদিয়া পিটপিট করে তাকিয়ে বললো,

‘তুমি কি জীবনেও লাগামহীন কথা ছাড়তে পারবে না?’

“দিগন্ত চোখ টিপ মে**রে বললো,

‘তোমার জন্য তো অসম্ভব।ওকে,হাতে সময় কম।’
বলেই নাদিয়ার ওষ্ঠযুগল আঁকড়ে ধরলো দিগন্ত।প্রিয়তমর এহেন ছোঁয়া পেয়ে,নাদিয়াও সে জোয়ারে উ**ন্মাদ হলো।দু’টি শরীর মিলে-মিশে একাকার হয়ে গেলো।অবশেষে পরিতৃপ্ত হলো দু’টি প্রাণ।’

——–
“রাত ১১টায় সবেমাত্র শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে নিধি।নির্জন কে নিয়ে বাসায় আসার পর ধুলোমাখা ঘর পরিষ্কার করে,রান্না করে নির্জনের সাথে ডিনার করে মাত্রই শাওয়ার নিয়ে বের হলো।”

“নিধি বের হতেই ওকে দেখে চোখজোড়া আটকে গেলো নির্জনের।ব্লু কালার নাইটি পড়েছে নিধি।ভেজা চুল থেকে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে।চেহারায়ও বিন্দু বিন্দু পানি লেপ্টে আছে।”

“নির্জনের দৃষ্টি উপেক্ষা করে,নিধি আয়নার সামনে গিয়ে চুল মুছতে থাকল।”

“এদিকে এতদিন পর প্রেয়সীকে আবেদনময়ী রূপে দেখে,মনে জমে থাকা আবেগ গুলো যেন উপচে পড়তে চাইছে নির্জনের।চশমা খুলে,বালিশের পাশে রেখে,বিছানা থেকে নেমে ধীর পায়ে নিধির কাছে গিয়ে ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে,গভীর চুম্বনে মত্ত হলো।
আকস্মিক নির্জনের এহেন স্পর্শে ভড়কে গেলো নিধি।কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে নির্জনের কাছ থেকে ছাড়াতে চাইল নিজেকে।কিন্তু নিজের সবচেয়ে প্রিয় মানবীকে এতদিন পর কাছে পেয়ে,কিছুতেই ছাড়লো না নির্জন।এক পর্যায়ে নিধি কে সামনে ঘুরিয়ে,ওর ঠোঁট জোড়া সন্তর্পণে আকড়ে ধরলো নির্জন।
অতঃপর নিধিকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে,আলতো করে নিধির চুলের ভাঁজে হাত বুলিয়ে দিলো।নেশালো স্বরে বললো,

‘খুব সুন্দর লাগছে তোমায়,ডার্ক কুইন।’

“নির্জনের মুখনিঃসৃত ‘ডার্ক কুইন’ নামটি শুনে,ভীষন ভালো লাগল নিধির।ক্ষণিকের স্পর্শে আবেগাপ্লুত হয়ে,পুরনো ঘটনাগুলো স্বেচ্ছায় ভুলে গেলো নিধি।নির্জনের দিকে তাকিয়ে দেখলো,তার চোখে গভীর ভালোবাসা,যেন সে নিধির প্রতিটি স্পর্শ অনুভব করতে চাইছে।”

“নির্জন নিধির গালে আলতো করে চুমু দিয়ে বললো,

‘তুমি পাশে না থাকলে,আমি হয়তো আজ এখানে থাকতাম না।তুমি আমার জন্য কি করেছো,সেটা ভাষায় বোঝানো সম্ভব না।’

“নিধি একটু হাসলো,নির্জনের চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বললো,

‘আপনার ভালোবাসাই আমাকে শক্তি দিয়েছে,নির্জন।’

“নির্জন ধীরে ধীরে নিধির কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো,তার নরম শ্বাস নিধির ত্বকের ওপর এক শীতল শিহরণ বইয়ে দিলো।নিধি নির্জনের দিকে আরও একটু ঝুঁকে পড়লো,তার বুকে মাথা রেখে মৃদু কণ্ঠে বললো,

‘আপনি জানেন,আমি আপনাকে কতটা ভালোবাসি?’

“নির্জন মুচকি হেসে বললো,

‘জানি,আমার থেকে একটু কম…হাহাহা।জাস্ট কিডিং।’

বলেই নিধির কোমরে নিজের হাত বিচরণ করতে থাকল।
নির্জন ধীরে ধীরে নিধিকে আরও গভীর ভাবে স্পর্শ করতে থাকল।এক পর্যায়ে দু’জনের হৃদয়ের স্পন্দন বেড়ে চলল।নির্জনের হাত নিধির কোমরের চারপাশে জড়িয়ে ধরল,আর নিধি নির্জনের বুকে নিজেকে সমর্পণ করল।এক মুহূর্তে দুজনের শরীর আর হৃদয় একসঙ্গে মিশে গেলো।নিধির নরম অধরে নির্জনের অধর আবদ্ধ হলো,আর সেই স্পর্শে তারা যেন নিজেদের সব অনুভূতি বিনিময় করলো।মধুর মিলন শেষে,নির্জন নিধির কানে কানে ফিসফিস করে বলে
উঠলো,

“তোমার স্পর্শে যেন জেগে উঠল মন,
নির্জন রাতে মিলল স্বপ্নের অনুপ্রেরণ।
শরীরের প্রতিটি ভাঁজে খুঁজে পেলাম সুখ,
তুমি ছিলে পাশে,আমি ভুলে গেছি দুঃখ।

তোমার ঠোঁটে মিশে আমার নিশ্বাস,
চুপচাপ রাতে যেন নীরবতার বাস।
তোমার চোখের গভীরে ডুবে যাই আমি,
তুমি আর আমি,এ পৃথিবী শুধু আমাদের নামি।

মেঘের ছায়ায় ঢাকা সেই আকাশটা,
তোমার ভালোবাসায় পেলাম শান্তির ঠিকানা।
তোমার হৃদয়ে যেন পেয়েছি মুক্তি,
তোমার পাশে জীবনটাই লাগছে অমৃতি।

প্রতি ক্ষণে,প্রতি ছোঁয়ায় নতুন এক গান,
তুমি-আমি আজ যেন একে-অপরের প্রাণ।
মিলনের পর এই রাত্রি অবিরাম,
ভালোবাসার গল্পে রচিত হবে এক নতুন ভোরের নাম।”

~মেহের~

“দীর্ঘদিন পর নির্জনের এহেন মধুর কবিতা শুনে,নিধি যেন আবারও নতুন স্বপ্নের বীজ বুনতে থাকল।কিন্তু আদৌ কি সেই স্বপ্ন সত্যি হবে?”

#চলবে…

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৪৮ (বিশেষ পর্ব)
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ❌
[প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত]

“দীর্ঘদিন পর নির্জনের এহেন মধুর কবিতা শুনে,নিধি যেন আবারও নতুন স্বপ্নের বীজ বুনতে থাকল।কিন্তু,আদৌ কি সেই স্বপ্ন সত্যি হবে?”

“কিছু স্বপ্ন তো নিঃশব্দেই নিঃশেষ হয়ে যায়,তবু মানুষ তার অন্তর্গত শূন্যতায় আশার প্রদীপ জ্বালায়।
নিধির চোখে আজও সেই আলো জ্বলছে,কিন্তু সে জানে না,এ আলোয় কতটা ছায়া মিশে আছে।স্বপ্নের ভেতর যে তৃষ্ণা লুকিয়ে থাকে,তা একদিন মরুভূমির মতো বিবর্ণ হয়ে যায়।”

“স্বপ্নের বীজ যে মাটিতে পড়ে,সেখানে কখনো কখনো বি**ষাক্ত ফল ধরে,যে ফলের স্বাদ নেওয়ার আগেই নেশা কে**টে যায়।আর বাস্তবতা তার নিষ্ঠুরতার মুখোমুখি দাঁড় করায়।”

“কে**টে গেলো ২মাস ১৩দিন।নিধি এবং নির্জন আরও কয়েকদিন সুখী জীবন-যাপন করলো।নিধি যেন তার দুঃস্বপ্নের মত অতীত গুলো কে প্রায় ভুলে যেতে লাগল।কারণ,এই কয়েকদিন নিধির কথা মত নির্জন ওষুধ খেয়েছে।মাহিরের পুরো পরিবার এবং দিগন্ত আর নাদিয়া নির্জনের বাসায় এসে সময় কা**টিয়ে গেছে।তাছাড়া নির্জন,নিধির প্রতিটি ভালো কাজের সঙ্গ দিয়েছে।নিধির কথা মত মেহরাবের ঠিকানা দেওয়া ডক্টরের চেম্বারে গিয়ে,ড.আজাদ কে দেখিয়েছে।ডক্টর আজাদ নির্জনের রিপোর্ট গুলো দেখে,নতুন ওষুধ প্রেসক্রিপশন করে দেন এবং আগের ওষুধ গুলো বাদ দিয়ে,নতুন ওষুধ গুলো সেবন করতে বলেন।”

“ড.আজাদের কথা মত,নিধি নির্জন কে প্রতিটি ওষুধ নিয়ম করে খেতে দেয়।তবে,প্রায় এক সপ্তাহ পর নিধি,নির্জনের মধ্যে অদ্ভুত পরিবর্তন দেখতে পেলো।”

“বিকালে নিধি যখন কিচেনে দাঁড়িয়ে তোহার সাথে কথা বলছিলো,সেই মুহূর্তে নির্জন এসে ফোন টা ওর হাত থেকে কেড়ে নিয়ে,কল কে**টে রুঢ় স্বরে বলে উঠলো,

‘বোনের সাথে এত কথা কিসের,হ্যা?’
বলেই ফোনের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘৩৩মিনিট যাবৎ তুমি ওর সাথে কথা বলছো,এর মানে এতক্ষণ তোমার আমার কথা মনে ছিলো না,তাই না?মিস করো নি আমায়,তাই না?কি হলো,চুপ করে আছো কেনো?আনসার মি!’

“আকস্মিক নির্জনের এহেন আচরণে হতভম্ব হয়ে গেলো নিধি।কপাল কুঁচকে বললো,

‘নির্জন,আপনি আমার সাথে এমন ব্যবহার করছেন কেনো?কি হয়েছে আপনার?’

“নির্জন ভ্রুকু**টি করে নিধির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললো,

‘কই?আমি তো একই রকম আছি।আমার তো কিছুই হয়নি।হয়েছে তো তোমার।মাঝে মাঝেই দেখি ওই মেহরাবের সাথে কথা বলো।কি ভেবেছো?আমি কিছুই দেখি না?ওকে তো আমি…

“নির্জনের কথা শেষ হওয়ার আগেই,নিধি পাশ কা**টিয়ে দ্রুত পায়ে কিচেন থেকে চলে গেলো।ওষুধের বক্স থেকে পাতাগুলো চেক করে দেখলো,নির্জন ওষুধ গুলো ঠিকমত খেয়েছে।তাছাড়া,ওষুধ খাওয়ার সময় নিধি নির্জনের পাশেই ছিলো।”

ভেবে আনমনে কিছু একটা ভাবতে থাকল নিধি।এরই মধ্যে পেছনে এসে হাজির হলো নির্জন।ঘাড় কাত করে বললো,

‘এগুলোর দিকে তাকিয়ে কি দেখছো?ওষুধগুলো খেয়েছি কিনা?
হাহাহা…এই শোনো,তোমাকে নিয়ে অন্য কিছুর প্রতি ঈর্ষা আমার কখনোই শেষ হবে না,জানপাখি।সেটা তুমি যত ধরনের ওষুধ খাওয়াও না কেনো।এনিওয়ে,অনেক দিন তোমায় স্বাধীনতা দিয়ে দেখলাম,তুমি এত মানুষের সাথে কথা বলে,আমাকে ইগনোর করছো।আমি বুঝতে পারি,ওদের সাথে কথা বলার সময় তোমার ভাবনাগুলো সেখানেই সীমাবদ্ধ থাকে।তখন তুমি আমায় মিস করো না।অথচ দেখো,আমি আমার কাজের মধ্যেও কতবার তোমাকে মিস করি,কতবার তোমায় ‘ডার্ক কুইন’ বলে ডাকি,কাছে টেনে নেই।আমি চাইলে,আরেকটা জব করতে পারতাম।কিন্তু আমার মনে হয়,তোমার সাথে সময় কা**টানোর জন্য ফ্রিল্যান্সিং পেশা পারফেক্ট।এর মাধ্যমে আমার কোনো অফিসে যেতে হয় না।ঘরে বসে কাজ করি,সেই সাথে তোমার সঙ্গেও থাকা হয়।একদিন তুমি বলেছিলে,

‘বিয়ের পর একা ঘরে থাকতে তোমার খুব কষ্ট হবে।আমি সবসময় পাশে থাকলে,তুমি খুশি হবে।
কিন্তু..কিন্তুু,এখন তো আর সেই খুশি টা তোমার মধ্যে দেখছি না!এখন আর ভালো লাগছে না বুঝি?’
সমস্যা নেই,কিভাবে ভালো লাগাতে হয়,সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি।’

বলেই বাঁকা হাসি দিয়ে,হাতে থাকা নিধির ফোন টি সজোরে ফ্লোরে ছুঁড়ে মা**রলো নির্জন।ফোনটি ফ্লোরে পড়তেই,কাচের স্ক্রিনটি ধীরে ধীরে চিড় ধরে ফাটতে শুরু করল।স্ক্রিনে একাধিক ফাটল ছড়িয়ে পড়লো।এই মুহুর্তে ফোনটি দেখতে ঠিক যেন মাকড়সার জালের মতো লাগছে।একবারে ভে**ঙে না গেলেও,ফোনের ডিসপ্লেটি নিস্তেজ হয়ে অন্ধকার হয়ে গেলো।যেন সেটির ভেতরের সব আলো নিভে গিয়ে অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে গেছে।”

“নিধি স্তব্ধ হয়ে সেই দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে থাকল।অতঃপর বিস্ময়ের দৃষ্টিতে নির্জনের উজ্জ্বল শ্যামরঙা মুখস্রির দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকল,

‘নির্জন,হঠাৎ কিভাবে এত নিষ্ঠুর আচরণ করছে?তাহলে কি আবারও সেই আগের রূপে ফিরে গেলো নির্জন?’
কথাগুলো ভাবতেই,নিধির মস্তিষ্কের আরও ভাবনাগুলো যেন এলোমেলো হয়ে গেলো।ফ্লোরে পড়ে থাকা ফোনটির কাছে গিয়ে,যখনই ফোনে হাত দিতে যাবে,তখনই খপ করে নিধির হাত টেনে ধরলো নির্জন।উত্তেজিত স্বরে বলে উঠলো,

‘ওহ বুঝেছি,এখন আমার থেকে এই ফোনের জন্য বেশি মায়া অনুভব হচ্ছে,তাই না?এর মানে তুমি এই ফোন কে মিস করছো,তাই তো?’

“নির্জনের অদ্ভুত সব কথাবার্তা শুনে,নিধি যেন কিংকর্তব্য বিমুঢ় হয়ে গেলো।নির্জনের গালে আলতো করে হাত রেখে করুণ স্বরে বলে উঠলো,

‘কি হয়েছে নির্জন?এমন করছেন কেনো আপনি?এই কয়েকদিন ভালোই তো ছিলেন।হঠাৎ করে আবার কি হলো?আমি তো আপনাকে নিয়মিত ওষুধ দিয়েছি।তবুও আপনার আচরণে এত পরিবর্তন হলো কেনো?আপনার কি মাথায় ব্যথা করছে,নির্জন?’

‘নির্জন র**ক্তিম দৃষ্টিতে নিধির চোখে চোখ রেখে মুচকি হেসে বললো,

‘উহুম,এই হৃদয়ে ব্যথা করছে নিরু।কারণ,তুমি আমায় মিস করো না,যেটা আমি তোমার কাছে থেকেও উপলব্ধি করছি।আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে।আমি এই অবহেলা কিছুতেই মেনে নিতে পারবো না।তাই একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

“নিধি নির্জনের দিকে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

‘কি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?’

“নিধি বলতেই,নির্জন তাকে কোলে তুলে নিলো।অতঃপর ওর কপালে আলতো করে চুৃমু দিয়ে গেস্ট রুমে নিয়ে গেলো।নিধিকে কোল থেকে নামিয়ে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে,হাত দিয়ে ইশারা করে বললো,

‘ওই দেখো,ফ্যানের সাথে রশি টানিয়েছি।প্রথমে ওটাতে তোমাকে ঝুলাবো।তুমি ম**রে যাওয়ার পর,তোমাকে নামিয়ে আমি ঝুলে যাবো।দারুণ হবে,তাই না?তুমি-আমি একসাথে এই নিষ্ঠুর বেড়াজালে আবদ্ধ পৃথিবী থেকে চিরতরে বিদায় নেবো।’
আইডিয়া টা কেমন,জানপাখি?”

“নির্জনের এহেন পা**গলামো কথা শুনে,যা বোঝার বুঝে গেলো নিধি।এতটুকু খুব ভালো করে বুঝতে পারলো,যে নির্জনের অসুস্থতা আবারও নিষ্ঠুর রূপে তার জীবনে হানা দিয়েছে।কিন্তু নির্জন কে দেখে মনে হচ্ছে,সে যা বলেছে,সেটা সে করেই ছাড়বে।তার দৃষ্টিতে সেই প্রতিজ্ঞার ছাপ যেন স্পষ্ট ভেসে উঠছে।”

ভেবে নির্জনের দিকে অশ্রুভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে,শুকনো ঢোক গিললো নিধি।কি করা যায়,কি করা যায়..
ভাবতেই নিধির মস্তিষ্কে কয়েক সেকেন্ড পর উপস্থিত বুদ্ধির উদয় হলো।হঠাৎ নিধি ফ্লোরে বসে,দুই হাত দিয়ে নির্জনের পা ধরে মলিন স্বরে বললো,

“নির্জন,প্লিজ..আ**ত্মহ**ত্যার মত ভ**য়ানক জিনিস বেছে নিবেন না।আ**ত্মহ**ত্যা মহাপাপ।ইহকাল এবং পরকাল উভয়েই কঠোর শাস্তুি ভোগ করতে হবে।প্লিজ,আপনার মাথা ঠান্ডা করুন।আচ্ছা..আচ্ছা,আপনি যা বলবেন,আমি সব অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলবো।কারো সাথে যোগাযোগ করবো না,সবসময় আপনার পাশে থাকব,আপনাকে নিয়েই ভাববো।প্লিজ এমন ভ**য়ং*কর কাজ করবেন না।”

‘বলেই নিধি হেঁচকি তুলে কান্না করতে থাকল।নিধির কান্নার শব্দে নির্জনের নিষ্ঠুরতম হৃদয় কিছুটা বিগলিত হলো।তবুও নিজ মনে বি**কৃত পরিকল্পনা করলো নির্জন।অতঃপর ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে,নিজেও ফ্লোরে বসে দুই হাত দিয়ে নিধির চোখের পানি মুছিয়ে বললো,

‘উমম,ওকে..তোমার কথা মানতে পারি।তার আগে তোমাকে শাস্তি পেতে হবে।এই যে আমাকে এতদিন মিস করোনি।মেহরাবের সাথে ফোনে কথা বলেছো।তোমার বোন,বান্ধবীর সাথে এত এত কথা বলেছো,আমি কাছে গেলেও,আমাকে উপেক্ষা করে,তাদের কে সময় দিয়েছো।তোমার এই অবহেলা গুলো তোমার কাছে তুচ্ছ মনে হলেও,আমার কাছে বৃহৎ…।তাই তুৃমি একটু শাস্তি পাবে।বেশি না,একটু…’

‘বলেই নিধি কিছু বলার আগেই,ওকে কোলে তুলে নিজের রুমে নিয়ে গেলো নির্জন।তারপর নিধিকে বিছানায় বসিয়ে,ডেভিল হেসে,নিধির কানের কাছে এসে হাস্কি ভয়েসে আওড়ালো…

“ভয়**ঙ্কর মিলনের তা**ন্ডব”

দুটি সত্তার সংঘর্ষে,যেখানে প্রেমের অগ্নি দগ্ধ করে,
মিলনের অন্ধকারে,যে শক্তি সমস্ত বাঁধা পেরিয়ে যায়।
প্রেমের নামে এই ভ**য়ঙ্কর তা**ন্ডব,
অন্তরের গভীরে ছড়িয়ে যায় এক অব্যক্ত তীব্রতা।

শরীরের প্রতিটি অঙ্গ,প্রান্তিকতায় এক র**ক্তাক্ত ছোঁয়া,
মিলনের এই গভীর রাতে,দ্যুতি হয়ে ওঠে অন্ধকারের।
অবিনাশী প্রেমের যুদ্ধে,আত্মার ভিতর সঞ্চালিত ভয়,
ভ**য়ঙ্কর মিলনের সুরে,প্রতিটি স্পর্শে উন্মোচিত হয় এক অদ্ভুত রহস্য।

প্রেমের তা**ণ্ডবে,যেখানে সীমা অতিক্রম করা হয়,
দুটি হৃদয়ের মধ্যে,গড়ে ওঠে এক ভ**য়াবহ সংযোগ।
মিলনের এই গভীরে,ছড়িয়ে পড়ে অব্যক্ত,ভ**য়ঙ্কর শক্তি,
যা প্রমাণ করে,প্রেমের সত্যিকার শক্তি কতটা বেদনার ও নিষ্ঠুর হতে পারে।” ~মেহের~

“অবশেষে দুঃস্বপ্নের মত একটি বিকাল কা**টালো নিধি,যেটা নির্জনের কাছে ছিলো পৈ**শাচিক তৃপ্তির।”

“ঘুটঘুটে অন্ধকারে অর্ধ-নগ্ন অবস্থায় দুই হাঁটু এক করে,তার ওপর ঘাড় কাত করে,মুখমন্ডল রেখে বসে আছে নিধি।পরনের কালো শাড়িটি অনেক আগেই শরীর থেকে খুলে,পু*ড়ে ফেলা হয়েছে।তার সামনেই দাউ-দাউ করে আগুনের লেলিহান শিখা জ্বলে উঠছে।আগুনের র**ক্তিম আভা এবং তীব্র তাপের দহনে নিধির অর্ধ-নগ্ন শরীর যেনো অগ্নি লাভায় জ্বলজ্বল করে জ্বলে উঠছে।নাসারন্ধ্র থেকে ভারী নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসছে।কপাল থেকে শুরু করে,দরদর করে ঘাম গুলো গলা বেয়ে পড়ছে।”

এ যেন নিধির ভোরের দিকে নির্জন কে নিয়ে দেখা সেই দ্বিতীয় স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি।’
ভেবে ডুকরে কেঁদে উঠলো নিধি।”

“সেদিনের স্বপ্নে দেখা পুরুষটির চোখ এবং মুখমন্ডল ঢাকা থাকলেও,সামনে থাকা পুরুষটিকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।সে যেন এক হিং**স্র মানব।”

“নিধির দিকে হিং**স্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,নির্জন হো হো করে তৃপ্তির হাসি হেসে উঠলো।অতঃপর কুচকুচে কালো রুমালটি দিয়ে প্রেয়সীর গলার নিচে গড়িয়ে পড়া ঘাম মুছে দিয়ে,হাস্কি ভয়েসে বললো,

‘উহুম..নো,নো,নো..এই ঘাম কখনোই তোমার বক্ষে পৌঁছাতে পারবে না।আমি বেঁচে থাকতে সেটা অসম্ভব।ওই পবিত্র জায়গাটা শুধু আমার জন্য বরাদ্দ থাকবে।আমার ভালোবাসার বিস্তার ঘটবে তোমার সাম্রাজ্যে।
এই দেখো.. দেখো..তোমার ঘামগুলো কে এই কালো রুমাল টা কেমন ভাবে ছুঁয়ে দিলো।কত বড় সাহস দেখেছো?না না..এটাকেও শাস্তি পেতে হবে।ভয়ং**কর শাস্তি পেতে হবে।আমার জানপাখি কে কেনো ছুঁয়ে দিবে ওওও..?’
বলেই রুমালটি হাত দিয়ে ইচ্ছেমতো কঁচলে,দলা পাকিয়ে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করে,উচ্চশব্দে হো হো করে হেসে উঠলো।”

“নির্জনের এহেন কান্ডে নিধির প্রাণ যায় যায় অবস্থা।কারণ,কিছুক্ষণ আগেই তার শরীরের ইঞ্চি ইঞ্চি জায়গায় পুরুষালি স্পর্শের ধা***রালো ছাপ ফেলেছে সে।বলিষ্ঠ মানবের হিং**স্র আ**ক্রমণের তুৃমুল বর্ষণে কিয়ৎক্ষণ আগে জ্ঞান হারিয়েছিলো চঞ্চলা,সুহাসিনী নারীটি।”

“কিয়ৎক্ষণ পূর্বের কথা ভেবে,আতং**কে ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো নিধি।বারবার যেন সেই স্বপ্নের সাথে আজকের ঘটনা গুলো মেলাতে লাগল।”

“অতঃপর চোখের নোনা জল ছেড়ে দিয়ে,করুণ স্বরে,মৃদু আর্তনাদ করে,হাত জোর করে বললো,

‘আমাকে ছেড়ে দিন,নির্জন।আমি আর আপনার কাছে থাকব না।দরকার হলে আপনি আমায় কোনো গুপ্ত গুহায় রেখে আসুন।সেখানে না হয়,বন্য পশুদের সাথে জীবন-যাপন করবো।তবুও আপনার সাথে থাকব না..প্লিজ।’

“নিধির এহেন কথা শুনে,হিং**স্র থেকে হিং**স্র হয়ে উঠলো নির্জন।তার শক্ত হাতের ছোঁয়া দিয়ে নিধির কোমর চেপে ধরে কাছে টেনে,কোমরে ৫আঙ্গুলের ৫টি ধা**রালো নখের আঁচড় বসিয়ে দিয়ে বললো,

‘হিসসস..চুপ…একদম চুপ।একটুও চেঁচামেচি করবি না।ওহ! স্যরি..চেঁচামেচি করবে না।তাহলে একটু আগে যা হয়েছিলো,সেটা আবারও রিপিট হবে।ইউ নো ডার্লিং..অনেক দিন পর আমি কিন্তুু বেশ মজা পেয়েছি।তোমার উত্তেজনাপূর্ন তীব্র চি**ৎকার,আমার পিঠে তোমার সূচালো নখের আঁচড়,তোমার সর্বাঙ্গে আমার ধা**রালো দন্তগুলোর ডার্ক বা**ইট,সব মিলিয়ে এক রহস্যময়,ভয়ং**কর,রোমাঞ্চকর অনুভূতি ছিলো,তাই না?
আ’ম সো লাকি জানপাখি,উম্মা..”
বলেই গভীর চুম্বন এঁকে দিলো নিধির কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে।এ চুম্বন যেনো স্বেচ্ছায় বিষপান করার মত অনুভূত হলো রমনীর নিকট।কারন,কিছুক্ষণ আগে তার ওষ্ঠদ্বয়ের ওপর বয়ে গেছে হিং**স্র ব্যক্তিটির দন্তগুলোর পৈ**শাচিক তান্ডব-লীলা।’

“নির্জনের এহেন কান্ডে নিধি কিঞ্চিৎ আর্তনাদ করতেই সরে গেলো সে। বিভৎ**স হাসি দিয়ে কিছুক্ষণ আগে সন্তর্পণে করে রাখা তপ্ত লোহার শিক টি নিধির ক্লান্ত,মায়াবী মুখস্রির সামনে ধরে বললো,

‘দেখো জানপাখি,এটা হলো তোমার মৃ**ত্যুর অস্ত্র।আর আমি হলাম তোমার মৃ**ত্যু দূত।দারুণ,তাই না?’

বলেই নিধির কোমল চিবুক বৃদ্ধাঙ্গুল এবং তর্জনী দিয়ে জোরে চেপে ধরে আবার আওড়ালো,

‘তোমার মুখে যদি আবারও চলে যাওয়ার কথা শুনি,তাহলে এই গরম শিক তোমার বক্ষ বিভাজন ভেদ করে বের হবে।অতঃপর তোমার #হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ হবে।সেই র**ক্তের একেকটি ফোঁটা আমার আঁধার রাজ্যের চার দেয়ালে যত্ন করে লেপ্টে দিবো এবং সেগুলোতে প্রতিদিন অসংখ্য চুমুর বর্ষণ বইবে।যেমনটা একটু আগে তোমার সাথে করেছি জানপাখি।”

“আকস্মিক নিধি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে,নিমিষেই প্রতিবাদী রূপ ধারণ করে বললো,

‘আমি তোর এই অন্ধকার নৃ**শংস কারাগারে কখনোও বন্দিনী হয়ে থাকব না।এক্ষুনি চলে যাবো আমি।মে**রে দিবি তো?দেহ!মে**রে দে।তোর এই নরকমুখী যন্ত্রণা থেকে মৃ**ত্যু শ্রেয়।”

“নিধি বলতেই,তার ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরলো নির্জন।পরিপূর্ণ ভাবে নিজের তৃষ্ণা মিটিয়ে ফিসফিস করে বললো,

‘তবে তাই হোক,মাই ডার্ক কুইন..ইউ আর অনলি,অনলি এ্যান্ড অনলি মাইন..জানপাখি।’

বলেই সদ্য উত্তপ্ত আগুনে গরম করা লোহার শিকটি নিধির বক্ষ বিভাজনে তাক করতেই,শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো নিধির।চিৎ**কার করে বলে উঠলো,

‘মা**রবেন না আমায়,দয়া করে মা**রবেন না..।’

“নির্জন জানত,নিধির নিজের জীবনের প্রতি মায়া আছে।’

ভেবে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে,নিধির ডান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বললো,

‘আমি তো তোমাকে মা**রতে চাই না,নিরু।তুমিই তো ইচ্ছে করে আমার ক্রোধের শিকার হও।ভালোবাসার মানুষ কে কি কেউ এমনি এমনি আ**ঘাত করে,বলো?তুমিই তো আমাকে অবহেলা করে,আমার ভেতরটাকে দুমড়ে-মুষড়ে দিয়ে,নিজেও আমার আ**ঘাতে জর্জরিত হও।’

বলেই হাতে থাকা শিকটি ফেলে দিয়ে,রুমের কর্ণার থেকে পানির বোতলের ছিপি খুলে,আগুনের ওপর পানি ঢেলে দিলো।ধীরে ধীরে আগুন নিভে গিয়ে পুরো রুম জুড়ে ধোঁয়াটে হয়ে গেলো।”

“নির্জন,নিধির হাত ধরে উঠিয়ে টানতে টানতে রুম ত্যাগ করে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে,বিছানায় বসিয়ে আদুরে স্বরে বললো,

‘জানি,খুব ক্লান্ত তুমি।এখন থেকে আমি যা বলবো,তাই শুনবে কেমন?এখন ফ্রেশ হয়ে,একটু ঘুমিয়ে নাও।রাতে আবার দেখা হবে।আমার একটু বাইরে যেতে হবে।বিশেষ একটি কাজ আছে।’

বলেই মুচকি হেসে নিধির কপালে চুমু দিয়ে,নিধিকে রুমে রেখে বাইরে থেকে দরজায় তালা ঝুলিয়ে,চলে গেলো নির্জন।”

“বদ্ধ রুমের বিছানায় বসে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইলো নিধি।সে বুঝতে পারলো না,পরবর্তীতে তার সাথে আরও কি কি ঘটতে চলেছে।অনবরত ক্রন্দনের ফলে,একসময় ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো নিধি।”

———-
“এদিকে তোহা বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েও নিধিকে না পেয়ে,কিছুটা চিন্তিত হয়ে নির্জন কে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করতেই,নির্জন স্বাভাবিক স্বরে উত্তর দিলো,

‘রান্নার সময় তোমার সাথে কথা বলতে গিয়ে,অসচেতন থাকায়,তোমার বোনের ফোন বাটিতে থাকা পানিতে পড়ে গিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।সেটাই ঠিক করতে এসেছি মার্কেটে।’

“নির্জনের গোছানো কথা শুনে,তোহাও সরল মনে বিশ্বাস করে ফোন রেখে দিলো।”

“তোহা ফোন রাখতেই,নির্জন পৈ**শাচিক হাসি দিয়ে,তার চেনা-পরিচিত জঙ্গলের দিকে পা বাড়ালো।অনেক টা পথ জার্নি করে এখানে এসেছে সে।অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষার পর,তার শিকার যেন তার কাছে ধরা দিলো।প্রথম দিকে শিকারের সাথে তাকে অনেক খেলতে হয়েছে।পরবর্তীতে তার ফাঁদেই সবাই কে পা দিতে হয়েছে।”

———–
“রাত ৩টায় নিধির ঘুম ভা**ঙতেই,পাশে তাকিয়ে দেখলো, নির্জন হাতে একটি পোশাক নিয়ে ওর পাশে বসে আছে।”

‘নির্জন কে এভাবে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে, তড়িঘড়ি করে শোয়া থেকে উঠে,বসে পড়লো নিধি।’

“নির্জন মুচকি হেসে বললো,

‘ঘুম হয়েছে?আমি কিছুক্ষণ আগেই আসলাম।তোমার জেগে ওঠার অপেক্ষায় ছিলাম।আজ তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দিবো,নিরু।তার আগে এই পোশাক টি পড়ে নাও।’

“নিধি নির্জনের হাতে থাকা কালো পোশাকটির দিকে তাকিয়ে বিস্ময়ের স্বরে বললো,

‘এটাতো সেফটি স্যুট!’

“নির্জন মৃদু হেসে বললো,

‘হুম,আমার টা আমি পড়ে নিচ্ছি।আর তোমার টা তুমি পড়ে নাও।আর এটা না পড়তে চাইলে,কিভাবে পড়াতে হয় সেটা কিন্তু আমার জানা আছে।তাই আর প্রশ্ন না করে ঝটপট পড়ে নাও।আজ দীর্ঘসময় জার্নি করে,রাত জেগে স্পেশাল অপারেশন করে আমি ক্লান্ত।তোমার জন্য এগুলোর আয়োজন করেছি,ডার্ক কুইন।আশা করি,এগুলো দেখে তুমিও আমার মত আত্মতৃপ্তি পাবে।’

বলেই বাঁকা হেসে,বিছানা থেকে নেমে বিশেষ পোশাক টি পরিধান করে নিলো।যেটা নির্জন তার দুটি প্রিয় রুমে যাওয়ার আগে পরিধান করে।”

“নিধি আর কথা না বাড়িয়ে,শুকনো ঢোক গিলে নির্জনের পরবর্তী কাহিনী দেখার আগ্রহে,দুর্বল শরীরে পোশাকটি পরিধান করলো।”

“নিধি পোশাক পরার পর,নির্জন বললো,

‘ডার্ক কুইন,আজ আমি তোমাকে আমার সেই প্রিয় দু’টি রুমে নিয়ে যাবো,যেখানে আমার অনেক স্মৃতি রাখা আছে।তুমি তো একদিন যেতে চেয়েছিলে,তাই না?
তবে,আমার সুইট ওয়াইফ কে সেখানে নিতে হলে,অবশ্যই রুমটিকে আরও ভালোভাবে সাজাতে হবে।তাই আজ অনেক পরিশ্রম করে রুমটি সাজিয়েছি।আশা করি,তোমার মনের মত হবে।তবে সেখানকার ক্ষ**তিকর রাসায়নিক পদার্থ তোমার শরীরে প্রভাব ফেলতে পারে।এজন্য আমি তোমার জন্য বিশেষ সেফটি স্যুটের ব্যবস্থা করেছি।আর
এই পোশাকটি বিশেষভাবে তৈরি করা,যাতে এসিড এবং বিষাক্ত পদার্থ কোনোভাবেই ত্বক বা শরীরে প্রভাব ফেলতে না পারে।স্যুটটির সঙ্গে যে স্বচ্ছ হেলমেট পড়েছো,এটা তোমার মুখমণ্ডল সম্পূর্ণভাবে ঢেকে রাখবে এবং ভেতরে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য ছোট ছোট টিউব আছে।যার ফলে,তোমার নিশ্বাস গ্রহণ করতে কষ্ট হবে না।’

কথাগুলো বলতেই দেখলো,নিধি একটু কৌতূহলী এবং চিন্তিত চোখে নির্জনের দিকে তাকিয়ে আছে।”

“নির্জন বাঁকা হেসে,নিধির হাত ধরে সেই রুমের সামনে নিয়ে গেলো।
নির্জন তার ১নাম্বার ল্যাবরেটরি রুমে ঢুকে,উচ্চস্বরে হেসে বললো,

‘Welcome to my shadow Darkness’
“আমার ছায়ার অন্ধকারে স্বাগতম,ডার্ক কুইন।”

“নির্জন কথাটি বলতেই,নিধির চোখজোড়া আটকে গেলো দরজার ওপরে কালো ধাতব নেইমপ্লেটে সোনালি হরফে খোদাই করা নামটির দিকে,”Shadow of Darkness”

“নিধি বিস্ময়ের দৃষ্টিতে রুমের চারিদিকে তাকিয়ে ভাবলো,

‘এই রুমটি বাইরে থেকে দেখলে বোঝাই যায় না,যে এখানে এত কিছু আছে।কিন্তু,এগুলো দিয়ে কি করে নির্জন?’

“নিধির ভাবনা গুলো আঁচ করতে পেরে নির্জন বললো,

“এটা আমার প্রিয় দু’টি রুমের ১নাম্বার কক্ষ।রুমের দেয়ালগুলো কালো ধাতব প্লেট দ্বারা আবৃত,এবং ঘরটি সূক্ষ্মভাবে লাল আলোতে আলোকিত করেছি।যেন এখানে প্রবেশ করলে,রুমটি দেখে তীব্র শান্তি অনুভব করি।
আর এখানে একটি বড়,শক্ত কাঠের টেবিল রেখেছি।এতে বিভিন্ন ধরনের কাঁচের বেকার,নলকূপ এবং এসিডের বোতলে ভর্তি।প্রতিটি বেকার স্বচ্ছ তরল দ্বারা পূর্ণ,কিছু উজ্জ্বল এবং অন্যগুলো অন্ধকার।”

“তাছাড়া আরও কয়েকটি সেফটি স্যুট,গ্লাভস,এবং মাস্ক রুমের ওই কোণায় রেখেছি।যেন কোনো বিপদের সম্মুখীন হলে তা ব্যবহার করতে পারি।
আরেক কোণায় সাজিয়েছি বিভিন্ন বিজ্ঞানগ্রন্থ,যেখানে লা**শ সংরক্ষণ এবং এসিডের ব্যবহারের উপর গবেষণা করতে পারি।”

“নির্জনের মুখে লা**শের সংরক্ষণের কথা শুনে,ভয়ে আঁতকে উঠল নিধি।
রুমটির দিকে তাকিয়ে দেখলো,রুমের মধ্যে একটি ভ**য়াবহ নীরবতা বিরাজমান।কেবলমাত্র রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তৈরি হালকা শিস বা ফিসফিস শব্দ শোনা যাচ্ছে।
নির্জনের এই ল্যাবরেটরি রুমকে ভ**য়ংকর জায়গা ছাড়া কিছুই মনে হলো না নিধির।
নিধি শুকনো ঢোক গিলে কাঁপা কাঁপা স্বরে কিছু বলতে যাবে,তার আগেই নির্জন নিধির হাত ধরে রুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে,দরজায় তালা ঝুলিয়ে দিয়ে ২য় কক্ষে নিয়ে গেলো।”

“অতঃপর রুমে প্রবেশ করে পুনরায় উচ্চস্বরে হেসে বলে উঠলো,

“আমার আঁধারের সাম্রাজ্যে তোমায় স্বাগতম ডার্ক কুইন।

“Welcome to my realm of darkness.”
এটা আমার সবচেয়ে প্রিয় রুম,ডার্ক কুইন।”

“নির্জন কথাটি বলতেই,নিধির চোখজোড়া আটকে গেলো দরজার ওপরে কালো ধাতব নেইমপ্লেটে সোনালি হরফে খোদাই করা নামটির দিকে,”Realm of Darkness”

অতঃপর রুমের চারিদিকে কফিন দেখে চোখজোড়া বড় বড় হয়ে গেলো নিধির।”

“নির্জন মুচকি হেসে,নিধির হাত ধরে কফিনগুলোর সামনে নিয়ে এসে স্বাভাবিক স্বরে বললো,

‘এসো,পরিচয় করিয়ে দেই।

বলেই প্রথম কফিন টির দিকে ইশারা করে বললো,
এটার নাম হলো,

“কালো বিষ(Black Venom)।
এটা আমার ক্রয় করা স্পেশাল কফিন।”

“নির্জনের কথা শুনে,নিধির গলা শুকিয়ে আসল।হৃদস্পন্দন যেন দ্বিগুণ হারে বেড়ে গেলো।”

তারপর নির্জন আরেকটি কফিনের সামনে নিয়ে গিয়ে,হাসিমুখে বললো,

“এই কফিনের নাম হলো,
‘বি**ষাক্ত হাসি(Poisoned Smile)’

আর পাশের কফিনটির নাম হলো,
‘মৃ**ত্যুর ছায়া(Shadow of death)’

আর ওই যে কর্নারে দেখছো…
ওই কফিনটার নাম হলো,

‘র**ক্তের ফোয়ারা(Fountain of Blood)’

বলেই আবারও মুচকি হাসল নির্জন।কফিন গুলো দেখে নিধির হাত-পা যেন কাঁপতে থাকল।অথচ নির্জন কফিনগুলোর সাথে এমন ভাবে পরিচয় করালো,যেন কোনো পরিচিত মানুষগুলোর সাথে এই প্রথম তার স্ত্রীকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।’
ভেবে শুকনো ঢোক গিলে চেহারায় একরাশ আ**তংক নিয়ে নির্জনের দিকে তাকাতেই,নির্জন বাঁকা হেসে বললো,

‘ওহ,ওহ,ওহ..মাই সুইটহার্ট,আরও ২টা স্পেশাল জিনিসের সাথে তোমায় পরিচয় করাবো।আশা করি,আমার মতো তোমারও ভালো লাগবে।”

#চলবে…

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ পর্ব-৪৫+৪৬

0

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৪৫
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ❌
[প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত]
[পর্বটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।লাইনগুলো স্কিপ না করে,একটু মনযোগ দিয়ে পড়বেন।]

“নিধির আকস্মিক আ**ক্রমণে হতভম্ব হয়ে গেলো নির্জন।”

“প্রচন্ড যন্ত্রণা নিয়ে নিজের হাত চেপে ধরে, তীব্র কৌতূহল এবং অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে প্রেয়সীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

‘ডার্ক কুইন,তুমি আমাকে এভাবে আ**ঘা*ত করলে কেনো?’

“নিধি নির্জনের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে, তড়িৎ গতিতে ছু**রি দিয়ে নির্জনের বাম হাতে আ**ঘাত করতেই, দূরে সরে গেলো নির্জন।কা**টা হাতের যন্ত্রণায় চোখজোড়া বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।এই প্রথম সবচেয়ে প্রিয় মানুষ টিকে এতটা আ**ঘাত করলো নিধি,যেটা সে কখনোও কল্পনাও করতে পারেনি।”

“নির্জন কা**টাযুক্ত হাত নিয়ে নিধির দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই, নিধি নির্জনের ডান পায়ে আ**ঘাত করে।অতঃপর নির্জনের বুকে ধা**ক্কা দিতেই,নির্জন তার দুর্বল শরীর নিয়ে ফ্লোরে বসে পড়ে।সেই সুযোগে নিধি ওর পায়ের বাঁধন খুলে, নির্জনের দিকে একবার অশ্রুভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে টেবিলে থাকা নিজের এবং নির্জনের ফোন নিয়ে দরজা খুলে বাহির থেকে লক করে,ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলে বলতে থাকে,

‘আপনি অসুস্থ,নির্জন।আপনি নিজেও জানেন না যে আপনি অসুস্থ।অতীত কে কেন্দ্র করে আপনি আমাকে দিনের পর দিন আ**ঘাত করেছেন।আমি কিছুই বলতে পারিনি,অথচ আজ যখন আপনাকে আ**ঘাত করলাম,তখন খুব কষ্ট পেলেন, তাই না?হাহ!আমিও এমনই কষ্ট পেয়েছি নির্জন।আমি চলে যাচ্ছি,চিন্তা করবেন না;খুব দ্রুতই ফিরে আসব।’
বলেই হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে,সদর দরজা খুলে এলোমেলো পা ফেলে রাস্তার দিকে হাঁটতে থাকল।”

“রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে নিধির মাহিরের কথা মনে পড়তেই,ও নিজের ফোন বের করে মাহিরের ফোনে কল করতেই,কয়েকবার রিং হওয়ার পর মাহির ফোন রিসিভ করলো।
মাহির নিজের বরাদ্দকৃত কক্ষে রোগীর জন্য প্রেসক্রিপশন করছিলো।নিধির ফোন পেয়ে,কিছুটা অবাক হয়ে ‘হ্যালো’ বলতেই,নিধি মাহির কে নির্জনের সাথে ঘটে যাওয়া সকালের ঘটনাগুলো সংক্ষেপে বলে এবং ওর বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে জানালো।আর ওকে সেখান থেকে নিয়ে যেতে বললো।”

“নিধির মুখনিঃসৃত এহেন ঘটনা শুনে, মাহির যেন বোকা বনে গেলো।নির্জন কে মাহিরের কাছে গম্ভীর স্বভাবের মনে হলেও, কখনোই অস্বাভাবিক লাগে নি।’
ভেবে নিধির কথায় সায় জানিয়ে ওকে ২০মিনিট অপেক্ষা করতে বলে,আরও ২জন পেশেন্ট দেখে,হসপিটাল থেকে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো।”

“এদিকে রাস্তার এক সাইডে দাঁড়িয়ে,এলোমেলো দৃষ্টি নিক্ষেপ করে পথচারীদের দেখছে নিধি।মনে মনে ভাবতে থাকল,

‘যদি কোনোক্রমে নির্জন এসে পড়ে,তখন তো আমাকে আবারও বদ্ধ খাঁচায় আটক করবে।না, না, নাহ,আমি কিছুতেই তার বন্দিনী হয়ে থাকব না।তার হিং**স্র ভালোবাসার থেকে সারাজীবন একা থাকাও ভালো।লাগবে না ওই পৈ**শাচিক ভালোবাসা।’
এক মনে কথাগুলো ভাবতেই,চোখজোড়া বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো নিধির।আশপাশে তাকিয়ে,সন্তর্পণে নিজের অশ্রুসজল চোখ মুছে, আবারও পথচারীদের দিকে মনোনিবেশ করলো।ওর মস্তিষ্কশূন্য প্রায়,বারবার শুধু একটা কথাই মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে,

‘এতদিন একজন হিং**স্র মানসিক রোগীর সাথে একই ছাদের নিচে কিভাবে বসবাস করলাম?’

ভাবতেই গায়ে কিছুটা কাঁপন দিয়ে উঠলো নিধির।”

“প্রায় ৩০মিনিট পর,মাহির গাড়ি নিয়ে নিধির বলা জায়গায় পৌঁছাতেই,মাহির কে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো নিধি।মাহির গাড়ির দরজা খুলে দিতেই,নিধি দ্রত পায়ে গাড়িতে উঠে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলে বললো,

‘এখান থেকে দ্রুত চলুন,প্লিজ।তাকে দিয়ে বিশ্বাস নেই।উনি যেকোনো সময় চলে আসতে পারে,আর..
বাকিটা বলতে বলতে গলা শুকিয়ে আসলো নিধির।কারণ, সকাল থেকে কোনো খাবার খায় নি নিধি।”

“নিধির অসহায় মুখস্রির দিকে তাকিয়ে, খুব মন খারাপ হলো মাহিরের।নিধির দিকে এক বোতল পানি এগিয়ে দিয়ে,ভরসার সহিত বললো,

‘চিন্তা করবেন না আপু,আপনার এই ভাইটি আছে তো।সে আসলেও,এই পাবলিক প্লেসে আপনার সাথে কিছুই করতে পারবে না।মনে হয় আপনি খুব তৃষ্ণার্ত, আগে পানিটুকু খেয়ে নিন,তারপর গাড়ি স্টার্ট দেই।’

“মাহির বলতেই নিধি বোতলের ছিপি খুলে ঢকঢক করে খানিকটা পানি খেয়ে, গলা ভিজিয়ে নিলো।’
তারপর মাহির গাড়ি স্টার্ট দিলো।যাত্রাপথে নিধিকে কিছুই জিজ্ঞেস করে নি মাহির।কারণ,নিধির কাছ থেকে নির্জনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ শুনে বুঝেছে,এতদিন এই মেয়েটার ওপর কতটা শারীরিক এবং মানসিক ধকল গিয়েছে।মাথা ঠান্ডা করে সবকিছু জানতে হবে।”

“যাত্রাপথে মাহিরকে তোহাও ফোন দিয়েছিলো।মাহির তোহার সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলেছে।কারণ,এই মুহুর্তে তোহা কে এইসব কথা বললে,মেয়েটা কান্নাকা**টি শুরু করবে,যেটা মাহির একদমই চায় না।কারণ,তোহা ওর শ্বশুর,শাশুড়ি সহ ওর মাকে প্রচুর সময় দেয়,এই মুহুর্তে এগুলো বললে হয়তো বারবার ফোন দিয়ে পা**গল করে ফেলবে।এর থেকে বাসায় গিয়ে ঠান্ডা মাথায় সবকিছু বুঝিয়ে বলবে।’
ভেবে তোহার সাথে নিধির কোনো বিষয়ে কথা বলে নি মাহির।”

“মাহির হসপিটালের পার্কিং এরিয়ায় গাড়ি পার্ক করে, নিধিকে নিয়ে হসপিটালের ভেতরে প্রবেশ করে তার পরিচিত ড. মায়া চৌধুরীর কেবিনে নিয়ে গেলো।ড. মায়া চৌধুরী একজন সাইকিয়াট্রিস্ট। তিনি মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা যেমন, উদ্বেগ, অবসাদ, ও মানসিক রোগের চিকিৎসা এবং পরামর্শ প্রদান করেন।”

” ড.মায়া কয়েকজন রোগী দেখে,মাত্রই চায়ের কাপে ঠোঁট জোড়া লাগাতেই,মাহির নিধিকে নিয়ে তার কেবিনে প্রবেশ করে সালাম দেয়।”

“মাহিরের সালামের জবাব দিয়ে,তিনি নিধির দিকে তাকাতেই বিস্ময় ভরা কন্ঠে জিজ্ঞেস করেন,

‘নিধি, তুমি এখানে?’

“কেবিনে ঢোকার পর নিধি ফ্লোরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রেখেছিলো।কর্ণকুহরে পরিচিত একটি নারী কন্ঠস্বর ভেসে আসতেই,নিধি ড.মায়ার দিকে তাকিয়ে চমকে গেলো।অতঃপর বিস্ময়ের সুরে বললো,

‘আন্টি,আপনি এই হসপিটালে জব করেন?কিন্তুু আপনি তো বলেছিলেন,আংকেল আপনাকে জব করতে দিবে না।’

“নিধির মুখনিঃসৃত ‘আংকেল’ শব্দটি শুনতেই,মায়াবী মুখস্রি চুপসে গেলো ড. মায়ার।তিনি ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ফেলে বললেন,

‘সে অনেক কথা।আগে চেয়ারে বসো।আগের বাসাটা ছেড়ে দেওয়ার পর,প্রায় ৭বছর পর তোমার সাথে দেখা হলো।কেমন আছো?আর ড.মাহির কি তোমার পরিচিত?’

“ড.মায়া এবং নিধির কথপোকথন শুনে মাহির বুঝতে পারলো,যে তারা পূর্ব পরিচিত।তাই সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে, মাহির নিধির সাথে তার সম্পর্কের কথা বুঝিয়ে বললো।”

“ড.মায়া নিধির শুষ্ক ঠোঁটজোড়া, ক্লান্ত চাহনী এবং অসহায় মুখস্রি দেখে বুঝে ফেললেন,কিছু একটা হয়েছে।নইলে,মাহির তো ওকে এখানে নিয়ে আসতো না।’
ভেবে,তর্জনী দিয়ে চশমা ঠিক করে নিধিকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

‘চা বা কফি খাবে?’

“মাহির ম্লান হেসে বললো,

‘ম্যাম,নিধি আপু সকাল থেকে কিছু খায় নি।হসপিটালের ক্যান্টিন থেকে দুপুরের খাবার অর্ডার দিলে ভালো হতো।’

“ড.মায়া নিধির নিচু করে রাখা মুখস্রির দিকে তাকিয়ে এসিস্ট্যান্ট কে ডাক দিয়ে ক্যান্টিন থেকে খাবার আনতে বললেন।
তার কথা মতো কিছুক্ষণের মধ্যে খাবার চলে এলো।ড.মায়া নিধির হাতে হাত রেখে আশ্বস্ত করে বললেন,

‘আগে খাবার গুলো খেয়ে নাও।তারপর সবকিছু শুনবো।’

“মায়ার কথা মতো, নিধি প্লেটে থাকা খাবার দেখে হাত ধুয়ে খাবার খেতে লাগল।প্লেটের অর্ধেক খাবার খাওয়ার পরমুহূর্তে নিধির নির্জনের কথা মনে পড়লো।ভাবলো,

‘নির্জন কে তো রুমে তালাবদ্ধ করে রেখেছি।সেও তো না খেয়ে আছে।এদিকে দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতে চললো।’

কথাগুলো ভাবতেই চোখের কোণে নোনাজল চলে এলো নিধির।
নিধির মুখস্রির এহেন দৃশ্য নজর এড়ালো না ড.মায়া এবং মাহিরের।”

“নিধি হাত ধুয়ে বললো,সে বাকিটুকু খাবার আর খেতে পারবে না।”

“ড.মায়া আর কথা বাড়ালেন না।এসিস্ট্যান্ট এসে টেবিল পরিষ্কার করে খাবারগুলো নিয়ে যেতেই,মায়া নিধির পানে চেয়ে কোমল কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,

‘এইবার বলো তো,এই মিষ্টি চেহারার মেয়েটা এত বিষন্ন কেনো?তোমার এই হাল হলো কিভাবে?’

“মাহির নিধিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,

‘নিধি আপু, আপনি ম্যাম কে সবকিছু খুলে বলুন।আশা করি, তিনি সঠিক সমাধান দিতে পারবেন।’

“নিধি দীর্ঘশ্বাস ফেলে টেবিলের ওপর দৃষ্টি রেখে, মলিন স্বরে ড.মায়াকে নির্জনের অতীত কাহিনী থেকে শুরু করে, এই পর্যন্ত ওর সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা বুঝিয়ে বললো।
অতঃপর হেঁচকি তুলে কান্না করে উঠলো।”

“নির্জনের অতীত কাহিনীগুলো শুনে ড.মায়ার চোখেও অশ্রু জমা হলো।প্রতিনিয়ত এমন কতশত পেশেন্টের জীবনের বাস্তব ঘটনাগুলো শুনে, সে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।সত্যি, একটা মানুষের জীবন পরিবর্তন হওয়ার জন্য,তার অতীতের কিছু তিক্ত ঘটনাই যথেষ্ট।’
‘ভেবে ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ফেলে নিধির দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘হুম,তোমার বর্ণনা শুনে আমার এতদিনের অভিজ্ঞতায় মনে হলো,
তোমার হাজবেন্ড নির্জন Borderline Personality Disorder (BPD),
Obsessive-Compulsive Personality Disorder (OCPD)
এবং
Obsessive Love Disorder(OLD)
এই ৩টি রোগে ভুগছে।”

“কারণ,নির্জন ছোটবেলায় তার মায়ের রে**পের সাক্ষী ছিলো। সেই ভ**য়াবহ দৃশ্য তার কচি মনে গভীর ক্ষ**ত তৈরি করে।এরপর, তার সৎ মা তাকে দিনের পর দিন নি**র্যাতন করেছে, তাকে অন্ধকার রুমে আটকে রেখেছে এবং শারীরিক, মানসিক অ**ত্যাচার করেছে। এ ধরনের ট্রমা একজন শিশুর মনের গভীরে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। সেই অতীতের ভ**য়াবহতার সঙ্গে বড় হতে হতে নির্জন ধীরে ধীরে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে এবং অবচেতনভাবে নিজের মনকে এই কষ্টের সাথে মানিয়ে নেয়। কিন্তু তার মধ্যে জন্ম নেয় ৩টি মানসিক রোগ-

“১.Borderline Personality Disorder (BPD) এবং ২.Obsessive-Compulsive Personality Disorder (OCPD)।
এবং
৩.Obsessive Love Disorder(OLD)”

“ড.মায়ার এহেন কথা শুনে মাহিরের মুখস্রি স্বাভাবিক থাকলেও, নিধি বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

‘মানে?’

“ড.মায়া বললেন,
‘রিল্যাক্স,বলছি।’

“১|BPD (Borderline Personality Disorder)এর লক্ষণঃ
এই রোগে আক্রান্ত মানুষরা গভীরভাবে ভীত থাকে, তারা ভয় পায় যে তাদের কাছের মানুষরা তাদের ছেড়ে চলে যাবে বা তাদের ভালোবাসবে না। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অনেক সময় তাদের জীবন সঙ্গীকে নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা অনুভব করে এবং সেই কারণেই অতিমাত্রায় পজেসিভ হয়। তাই তারা প্রতিটি পরিস্থিতিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে চায় এবং অন্যদের থেকে আশ্রয় নিতে চায়।”

নির্জনের BPD-এর লক্ষণগুলো হলোঃ

১. ইমোশনাল ইন্সট্যাবিলিটি: নির্জনের আবেগের মধ্যে স্থিতিশীলতা নেই। সে কখনো তোমাকে চরম ভালোবাসে, আবার কখনো অযথা সন্দেহ করে এবং রেগে গিয়ে তোমাকে আ**ঘাত করে।

২. আবেগের বিপুল ওঠাপড়া: BPD রোগীরা অল্প সময়ের মধ্যেই উন্মত্ত ভালোবাসা এবং চরম ক্ষো**ভের মধ্যে দুলতে থাকে। নির্জনের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। সে কখনো তোমাকে জীবনের সবকিছু মনে করে, আবার কখনো মনে করে তুমি তাকে ধোঁকা দিচ্ছো।

৩. শূন্যতার অনুভূতি: নির্জনের মন প্রায়ই শূন্যতায় ভরে থাকে। সে সবসময় তোমাকে নিজের জীবনের কেন্দ্র মনে করে, কিন্তু তাও তার মনে হয় কিছু একটা হারিয়ে গেছে।

৪. আত্মপরিচয়ের সমস্যায় ভোগা: BPD রোগীরা প্রায়ই নিজেদের ব্যক্তিত্ব বা পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্ত থাকে। নির্জন কখনো নিজেকে তোমার প্রতিরক্ষক মনে করে, আবার কখনো তোমার প্রতি হিং**স্র হয়ে ওঠে।

৫. পারস্পরিক সম্পর্কের জটিলতা: BPD আক্রান্তদের সম্পর্কের জটিলতা তাদের জীবনের প্রতিটি অংশে ছড়িয়ে পড়ে। তারা কারো কাছ থেকে একটু দূরত্ব অনুভব করলেই, মনোবেদনায় ভুগতে থাকে।

২|OCPD (Obsessive-Compulsive Personality Disorder) এর লক্ষণ হলোঃ

“নির্জনের OCPD-এর কারণে সে সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে চায়।তোমার প্রতি তার ভালোবাসাও এই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে বন্দী হয়ে যায়। ড. মায়া বলেন,

‘OCPD-এর কারণে নির্জন সম্পর্কের ক্ষেত্রে চরম রকমের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।তুমি কোনোভাবেই তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে সে প্রচণ্ডভাবে রেগে যায় এবং হিং**স্র আচরণ করে। এই নিয়ন্ত্রণের ইচ্ছা থেকেই সে তোমাকে বন্দী করে রাখতে চায় এবং এমনকি তুমি কারো সঙ্গে মিশলে বা কোনো কিছুকে বেশি গুরুত্ব দিলে তার ভ**য়ং*কর হিংসা হয়।”

নির্জনের OCPD লক্ষণগুলোঃ

১.পারফেকশনিজম: নির্জন তার সবকিছুকে পারফেক্ট রাখতে চায় এবং সে একই নিয়মে তোমাকেও চলতে বাধ্য করে। এটি তার ব্যক্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

২. কঠোর নিয়ন্ত্রণ: সে সবসময় মনে করে, তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে কিছু হলে জীবন বিশৃঙ্খল হয়ে যাবে। সম্পর্কেও সে চায় তুমি তার নির্দেশ মেনে চলো, নাহলে তার হিংসা জন্মায়।

৩. শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা: OCPD আক্রান্তরা সম্পর্কেও অযথা নিয়মকানুন চাপিয়ে দেয়, যা নির্জনের ক্ষেত্রে তোমার জীবনে হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি।

৩|OLD (Obsessive Love Disorder) নির্জনের মধ্যে লক্ষণসমূহঃ
১. অতিরিক্ত পজেসিভনেস: নির্জন তোমাকে নিয়ে পা**গলের মতো পজেসিভ।সে তোমাকে এমনভাবে ভালোবাসে যে,তোমার উপর পুরোপুরি অধিকার করতে চায়। তার মতে, তোমার উপর শুধু তারই অধিকার থাকতে হবে, এবং তুমি অন্য কারো সাথে মিশলে সে সেটিকে সহ্য করতে পারে না।

২. নজরদারি: নির্জন সবসময় তোমার উপর নজর রাখে। সে তোমার ফোন কল, মেসেজ, যোগাযোগ সবকিছুতেই নিজের নিয়ন্ত্রণ রাখতে চায়।

৩. সম্পত্তি মনে করা: তার ভালোবাসা তোমার প্রতি নয়, বরং তোমাকে নিজের মতো করে নিয়ন্ত্রণে রাখার চরম আকাঙ্ক্ষা থেকে আসে। তোমার স্বাধীনতা সে সহ্য করতে পারে না।

৪.প্রতিক্রিয়াশীল হিংসা: যখনই মনে হয় যে তুমি তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছো, নির্জন প্রচণ্ড রেগে গিয়ে হিংস্র হয়ে ওঠে।যার ফলে আজ পর্যন্ত তুমি তার এতগুলো আ**ঘাত এবং হিং**স্রতার সম্মুখীন হয়েছো।”

“এটাকে বলা হয় ম্যানিপুলেট (Manipulate)।এই শব্দের অর্থ হলো,কাউকে বা কোনো পরিস্থিতিকে নিজের সুবিধামতো পরিচালনা বা প্রভাবিত করা। ম্যানিপুলেশন সাধারণত গোপনভাবে করা হয়, যাতে অন্য ব্যক্তি বুঝতে না পারে যে তাকে প্রভাবিত করা হচ্ছে। এটি ইতিবাচক বা নেতিবাচক উভয়ভাবেই হতে পারে, তবে নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয় বেশি, যেমন কোনো ব্যক্তিকে ঠকিয়ে বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিজের উদ্দেশ্য পূরণ করা।
ধরতে পারো, এটা কিছুটা ‘ডার্ক রোমান্সের’ ক্ষুদ্র একটি অংশ,যেটা আমরা সাধারণত ইংরেজি উপন্যাস গুলোতে পড়ে থাকি।তবে বাস্তবিক জীবনে এই ঘটনাগুলো এতটাও ব্যাপক নয়।ডার্ক রোমান্স হলো, যেখানে ভালোবাসার সঙ্গে অন্ধকার, বিপদ, এবং মানসিক বা শারীরিক যন্ত্রণা মিশে থাকে। এতে সম্পর্কগুলো সাধারণত জটিল, গভীর এবং মানসিকভাবে অসুস্থ হতে পারে।এই মানুষগুলো চরিত্রগুলোর মধ্যে পজেসিভনেস, ম্যানিপুলেশন, ট্রমা, কিংবা কখনো কখনো সহিংসতাও থাকতে পারে।তাছাড়া নৈতিক দ্বন্দ্ব এবং অন্ধকার দিক থাকে। তবে, এই অন্ধকারের মধ্যেও তাদের সম্পর্কের মধ্যে কিছু গভীরতা এবং আকর্ষণ থাকে।ডার্ক রোমান্সের সৌন্দর্য তার অস্বাভাবিক ও বিপজ্জনক প্রেমের মধ্যে লুকানো থাকে, কিন্তু সেটি কখনো কখনো ভ**য়াবহ এবং অস্বস্তিকর অনুভূতি তৈরি করতে পারে।তবে এগুলো ফিকশনাল জেনার।বাস্তব জীবনে এই ধরণের মানুষগুলো আমাদের জন্য বিপজ্জনক।
আশা করি, বুঝতে পেরেছো।”

“ড.মায়ার একাধারে বলা কথাগুলো শুনে,নিধি শুকনো ঢোক গিলে বললো,

‘এই রোগের কি কোনো চিকিৎসা নেই, আন্টি?নির্জন কি সবসময় এমনই থাকবে?আমি কি কখনো তাকে সুস্থ অবস্থায় পাবো না?’

“নিধির করুণ কন্ঠস্বর শুনে, ম্লান হাসলেন ড. মায়া।তার জীবনেও তো কত কষ্ট!অথচ,তিনি সবসময় অন্যের কষ্ট লাঘব করার চিন্তায় মগ্ন থাকেন।কারণ,এটাই তার পেশা।এই পেশা টা কে খুব সম্মান করেন মায়া।যখন মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীদের পরিবার তার কাছে তাদের কষ্টের কথাগুলো বলে,তখন তিনি তাদের সঠিক পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেন।পরমুহূর্তে, সেই রোগীগুলো যখন সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যায়,তখন যেই আনন্দ টা তিনি পান,সেটাই তো তার কাছে সবচেয়ে তৃপ্তির জায়গা মনে হয়।’

ভেবে নিজের চেয়ার থেকে উঠে এসে নিধির কাঁধে হাত রেখে বললেন,

‘তুমি এত বোকা হলে কবে থেকে, বলো তো?তুমি তো খুব চঞ্চল স্বভাবের ছিলে।অথচ, সেই দুষ্টু স্বভাবের মেয়েটা কত শান্ত হয়ে গেছে,ভাবা যায়?ডোন্ট ওয়ারি,নিধি।সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।আচ্ছা শোনো,

নির্জনের এই রোগগুলো ধীরে ধীরে তার জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।তাই তাকে Cognitive Behavioral Therapy (CBT) এবং Dialectical Behavioral Therapy (DBT), উভয় থেরাপি একসাথে প্রয়োগ করতে হবে। BPD রোগীদের জন্য DBT খুবই কার্যকর।কারণ,এটি আবেগ নিয়ন্ত্রণ এবং সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে সহায়তা করে। OCPD-এর জন্য CBT প্রয়োগ করে তার নিয়ন্ত্রণের আকাঙ্ক্ষা কমিয়ে স্বাভাবিক জীবনধারা ফিরিয়ে আনা হবে।”

BPD-এর চিকিৎসায় DBT:

১. আবেগ নিয়ন্ত্রণের শিক্ষা: DBT নির্জনকে শেখাবে কীভাবে তার অতিমাত্রায় আবেগের ওঠাপড়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং কীভাবে তার আবেগকে ভারসাম্যপূর্ণ করতে হবে।

২. পরিপূর্ণতা এবং মিথ্যাবোধ: এই থেরাপি নির্জনকে শেখাবে যে তার মধ্যে যে শূন্যতার অনুভূতি এবং সম্পর্কের ভীতিটা আছে, তা তার নিজস্ব আবেগের বি**কৃতি এবং বাস্তবতার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।

৩. সম্পর্কের দক্ষতা উন্নয়ন: DBT নির্জনকে শেখাবে কীভাবে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে হয়, যেখানে পজেসিভনেস বা নিয়ন্ত্রণের কোনো স্থান নেই, বরং পরস্পরকে সমানভাবে সম্মান এবং স্বাধীনতা দিতে হয়।

OCPD-এর চিকিৎসায় CBT:

১. নিয়ন্ত্রণের আকাঙ্ক্ষা কমানো: CBT নির্জনকে শেখাবে যে, সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নয় এবং জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা মানুষকে আরো অস্থির করে তোলে।

২. কগনিটিভ পুনর্গঠন: নির্জনকে শেখানো হবে তার পারফেকশনিস্টিক চিন্তাভাবনাগুলো কিভাবে নেগেটিভ প্রভাব ফেলছে এবং এগুলোকে ধীরে ধীরে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে রূপান্তরিত করা হবে।

OLD এর চিকিৎসাঃ
১. সাইকোথেরাপি (থেরাপি):
কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (CBT): এটি নির্জন কে তার অস্বাভাবিক চিন্তাধারা ও আচরণ চিহ্নিত করে,সেগুলো পরিবর্তন করতে সহায়তা করবে।

২.সাইকোডাইনামিক থেরাপি: এই থেরাপির মাধ্যমে নির্জনের পুরনো অভিজ্ঞতা এবং অবদমিত অনুভূতির কারণে সৃষ্ট মানসিক সমস্যাগুলোর গভীর বিশ্লেষণ করা হবে।”

৪|সব শেষে সাপোর্টিভ থেরাপি এবং পরিবারঃ
তোমারও এখানে একটি বিশাল ভূমিকা থাকবে। ড.মায়া নিধিকে বুঝিয়ে বলেন,

‘তোমার ভালোবাসা এবং ধৈর্য নির্জনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সে ধীরে ধীরে এই মানসিক অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসবে।কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন থাকবে তোমার পাশে থাকা এবং তাকে বুঝতে চেষ্টা করা।কারণ,এই পৃথিবীতে এখন তুমি ছাড়া তার আপন বলতে কেউ নেই।তোমার প্রতি তার এহেন নিষ্ঠুর আচরণ গুলো গড়ে উঠেছে, তার ভেতরে থাকা মানসিক রোগগুলোর কারণে।যেটা সে নিজেও জানে না।এই অবস্থায় তাকে সারিয়ে তুলতে তোমাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে হবে।”

“নিধি করুণ স্বরে শুধালো,

‘কিন্তু, এখানে আসার আগে আমি তো তাকে রুমে আটকে রেখে এসেছি।তার চিকিৎসা কিভাবে করাবো?সে তো নিজেকে সম্পূর্ণ সুস্থ দাবি করছে।’

“ড.মায়া ফোন উঠিয়ে কাউকে কল করে কিছু কথা বললেন।অতঃপর ফোন রেখে নিধির দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘নিধি, নির্জনকে আটকানোর জন্য আমি বিশেষ একটি টিমকে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি।তুমি এবং মাহির তাদের কে নিয়ে যাবে। তারা খুব দক্ষ, কিন্তু তুমি জানো, এটা সহজ হবে না। নির্জন এখন এমন এক মানসিক অবস্থায় আছে, যেখানে সে খুবই বিপ*জ্জনক হয়ে উঠেছে। কিন্তু তুমি ভে**ঙে পড়ো না। আমি জানি, তোমার জন্য এটা কতটা কষ্টের।’

“নিধি মাথা নিচু করে বসে আছে।তার চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রু ঝরছে। এই মুহূর্তে সে অনুভব করছিলো কেমন যেন এক দ্বন্দ্ব এবং বি**ষাদের মধ্যে আছে। একদিকে নির্জনের প্রতি তার ভালোবাসা, আর অন্যদিকে তার ভ*য়ং**কর আচরণ থেকে মুক্তির তৃষ্ণা।তার হৃদয় দোটানায় ভুগছে।নির্জন, যাকে সে একসময় ভালোবেসেছিলো, সেই আজ তার জন্য বিপদের কারণ হয়ে উঠেছে। কিন্তু তবুও, তাকে এভাবে আটকে রাখা, তাকে নিজের হাতে বন্দী করা,নিধি নিজেকে প্রবল অপরাধবোধে আচ্ছন্ন মনে করছিলো।”

“ড.মায়া বুঝতে পারছিলেন,নিধির মনের অবস্থা। তিনি কোমলভাবে নিধির হাতে হাত রেখে বললেন,

‘তুমি যদি নির্জনের ভালো চাও, তাহলে এই কঠিন সিদ্ধান্তগুলো নেওয়াটা অপরিহার্য। সে নিজেকে ধ্বং**সের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, আর সেই সঙ্গে তোমাকেও। এই পরিস্থিতি থেকে বের হতে গেলে, তার চিকিৎসার প্রয়োজন আছে।’

“নিধি কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললো,

‘কিন্তু,আন্টি ও তো আমাকে ভালোবাসে। কেনো এমন হলো?কেনো তার ভালোবাসা এত অন্ধকার,নিষ্ঠুর আর নিয়ন্ত্রণময় হয়ে উঠল?’

“ড.মায়া একটু সময় নিয়ে উত্তর দিলেন,

‘ভালোবাসা যখন সীমাহীন হয়ে যায় এবং সেই সঙ্গে মানসিক অসুস্থতার মিশ্রণ থাকে, তখন তা ভ**য়ং*কর হয়ে ওঠে। ভালোবাসা আর নিয়ন্ত্রণ যখন একসঙ্গে মিশে যায়, তখনই সম্পর্কটি এক ধরনের বিপদে পরিণত হয়। নির্জন তোমাকে ভালোবাসে, কিন্তু তার ভালোবাসার মধ্যে পজেসিভনেস এবং হিংসার মিশ্রণ আছে, যা তাকে মানসিকভাবে বি*পজ্জনক করে তুলেছে।’

“এই কথা শুনে, নিধির হৃদয় ভারী হয়ে উঠল। সে জানত, নির্জন তাকে পা**গলের মতো ভালোবাসে, কিন্তু সেই ভালোবাসা এখন তাকে কষ্টের জালে বন্দী করেছে। নিধি অনুভব করছিলো যে, তার এই কঠিন অবস্থান থেকে বের হতে হবে। তবুও, নির্জনের জন্য তার মনের গভীরে থাকা ভালোবাসা তাকে আরও দুর্বল করে তুলছিলো।
অবশেষে আরও কিছুক্ষণ কথা বলার পর,নিধি নাদিয়াকে ফোন করে সংক্ষেপে কিছু ঘটনা বললো।নাদিয়ার শরীর খারাপ থাকায়,দিগন্ত ওর মন ভালো করার জন্য বিভিন্ন ধরনের মজার কথা বলছিলো।নিধি ফোন দেওয়ার পর নাদিয়া ফোন লাউডস্পিকারে রেখে কথা বলে।আর পাশ থেকে দিগন্ত সবকিছু শুনে হতভম্ব হয়ে যায়।তার প্রিয় বন্ধু কিনা এতদিন,এতটা মানসিক অবসাদে ভুগছিলো?অথচ,সে তার এতটা কাছে থেকেও,ছিটেফোঁটাও জানত না।’
ভেবে মন বিষন্ন হয় দিগন্তের।তৎক্ষনাৎ বিছানা থেকে উঠে নাদিয়াকে বলে,রেডি হয়ে নির্জনের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।”

“এদিকে নিধি এবং মাহির নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে নির্জনের বাসায় পৌছে যায়।”

“সদর দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই সবাই শুনতে পেলো, ভেতর থেকে নির্জনের ভ**য়ানক চি**ৎকার ভেসে আসছে। তার কণ্ঠে আ**তঙ্ক, রাগ, আর নিধির জন্য অদম্য তৃষ্ণা।বারবার একই কথা ভেসে আসছে,

‘নিরু! তুমি কোথায় গেলে? আমাকে ফেলে যেতে পারবে না, তুমি আমার, শুধু আমার।আমার সাথে বিশ্বাসঘা*তকতা করলে,এর শাস্তি তুমি পাবে।’

“নিধি মুখ চেপে ধরে কান্না আটকে দরজা খুলে দিতেই দেখলো, নির্জন দরজায় ধা**ক্কা দিতে দিতে তার হাত র**ক্তাক্ত হয়ে গেছে।দুই হাত এবং পায়ের কা**টা জায়গায় নিজেই ব্যান্ডেজ করেছে।
নির্জনের শরীর থেকে ঘাম ঝরছিলো, এবং চোখগুলো আ**গুনের মতো জ্বলছিলো।”

“নিধিকে দেখে পা**গলের মতো ঝাঁপিয়ে পড়লো নির্জন।কপালে চুমু দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,

‘তুমি জানো,তুমি ছাড়া আমার পৃথিবী অর্থহীন মনে হচ্ছিলো।কোথায় ছিলে তুমি,হ্যা?তোমার সাহস তো কম নয়!মায়ের মতো তুমিও কি আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাও,হ্যা?’

কথাগুলো বলতে বলতেই নিরাপত্তা বাহিনী,মাহির এবং দিগন্ত রুমে চলে আসলো।
নির্জন তাদের দিকে তাকিয়ে প্রথমে থমকে গেলো।”

“নিধিকে ছেড়ে দিয়ে,ওর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

‘১,২,৩,৪,৫…উফফ!বিরক্ত লাগছে।এতগুলো পুরুষ এখানে কেনো?আর তুৃমি বোরকা ছাড়া কেনো?এরা যে তোমাকে দেখছে,সেদিকে কি তোমার খেয়াল নেই,হুম?’

বলেই দিগন্তের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘এই, তুই আমার বাড়িতে এসেছিস কেনো?যাহ,বেরিয়ে যা।আজ থেকে তোদের সবার এই বাড়িতে আসা নিষেধ।কেউ আসতে পারবে না।এখানে শুধু আমি আর আমার ডার্ক কুইন থাকব।’

“নির্জনের কথা শুনে, দিগন্ত যা বোঝার বুঝে গেলো।ওর সন্দেহ গুলো সব সত্যি ছিলো।
ভেবে ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ফেলে বললো,

“আমরা তোর ভালোর জন্য এসেছি নির্জন।তুই অসুস্থ,তোকে হসপিটালে নিয়ে সঠিক চিকিৎসা দেওয়া হবে।তাহলেই তুই সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসবি।’

বলেই নির্জনের হাত ধরতে নিলে,নির্জন দিগন্তের বুকে খুব জোরে ধা**ক্কা দিয়ে কর্কশ স্বরে বলে উঠলো,

‘তোকে না বলেছিলাম,আমাকে স্পর্শ করবি না।তবুও এত দুঃসাহস দেখালি কেনো?আজ তো তোকে…

কথাগুলো শেষ হওয়ার আগেই নিরাপত্তা বাহিনী,দ্রুত নির্জন কে ধরে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার চেষ্টা করলো। তারা জানত, নির্জন ভ**য়ঙ্কর হতে পারে।”

“নির্জন কে এভাবে সবাই স্পর্শ করায়,নির্জন নিজেকে ছটফট করতে করতে মাটিতে আছড়ে ফেলছিলো, কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনী তাকে ধরে রেখেছিলো। তার চোখে এক ধরণের পা**গলামি দেখা যাচ্ছিলো, যেখানে নিধির প্রতি তার আবেগ যেন পুরোপুরি তাকে গ্রাস করে নিয়েছে।”

“এদিকে,নির্জনের কাছ থেকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা নিধি এই দৃশ্য দেখে আর সহ্য করতে পারছিলো না। তার কান্না থামছিলো না, আর মন যেন ভে**ঙে যাচ্ছিলো। একসময় সে তার মুখ ঢেকে কান্নায় ভে**ঙে পড়লো। তার চোখে জল নিয়ে সে নিজের ভেতরকার যন্ত্রণাকে ধরে রাখতে পারছিলো না।”

“নির্জনের এই অবস্থা দেখে নিধির হৃদয় কেঁপে উঠলো।সে ভালোবাসতো নির্জনকে, কিন্তু এই ভালোবাসা তাকে কতটা বিপদে ফেলেছে, সেটা আজ সে পুরোপুরি বুঝতে পারলো।সেই মুহূর্তে সে জানত, নির্জনের এই ভ**য়াবহ মানসিক অবস্থার জন্য তারা দুজনেই ক্ষ**তিগ্রস্ত হয়েছে।তাই তো আজ সে এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

কথাগুলো ভেবে,নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সবার সামনে হেঁচকি তুলে কেঁদে উঠলো নিধি।”

“এদিকে নির্জন নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে,তাদের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।কিন্তু এইবার আর পারলো না।তারা নির্জনের হাত জোড়া খুব শক্ত করে বেঁধে দিলো এবং মেডিকেল টিমের একজন সদস্য এসে তার বাহুতে সতর্কতার সহিত ইনজেকশন পুশ করতেই,ধীরে ধীরে নির্জনের উগ্র মস্তিষ্ক এবং পুরো শরীর অসংলগ্ন হয়ে পড়লো।”

#চলবে..

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৪৬
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ❌

“তারা নির্জনের হাত জোড়া খুব শক্ত করে বেঁধে দিলো এবং মেডিকেল টিমের একজন সদস্য এসে তার বাহুতে সতর্কতার সহিত ইনজেকশন পুশ করতেই,ধীরে ধীরে নির্জনের উগ্র মস্তিষ্ক অসংলগ্ন হয়ে পড়লো।”

“নির্জনকে যখন নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো,নিধি যেন কিছুই করতে পারছিলো না।শুধু প্রিয় মানুষটির দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকল।তার সারা শরীর শীতল হয়ে এলো,বুকের ভেতরটা ভা**ঙতে শুরু করলো।নির্জনের হাত দুটি শক্ত করে বাঁধা,আর চোখে-মুখে ধীরে ধীরে নেমে আসা অসংলগ্নতার ছায়া দেখেই নিধির বুকটা হাহাকার করে উঠল।সেই নির্জন,যাকে সে এত ভালোবাসে,এখন তাকে কেমন নিস্তেজ,কতটা অচেনা লাগছে।”

“নিধির চোখের কোনে অশ্রু জ্বলজ্বল করছে,কিন্তু সে জানে,এই কান্নার কোনো অর্থ নেই।নিধি এগিয়ে যেতে চেয়েও আটকে থাকল,যেন কেউ তার পা দুটো শক্ত করে ধরে রেখেছে।নির্জনের কষ্ট,তার এই অবস্থাটা তাকে ভেতর থেকে ছিঁড়ে ফেলছিলো।
নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো,
“তবে এটাই কি শেষ…?”

ভেবে,নির্জনের নিস্তব্ধ চোখের দিকে এক ঝলক তাকালো,যেন ভেতরে কোথাও সেই আগের নির্জনকে খুঁজতে চায়।কিন্তু সমস্ত কিছুই যেন ফিকে হয়ে গেছে।”

“নির্জন কে নিয়ে যাওয়ার পর নিধির কাছে এসে দিগন্ত মলিন স্বরে বললো,

‘নিধি,তুমি চিন্তা করো না;নির্জন আবার সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসবে।ততদিন তোমাকে একটু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে।’

“নিধির দৃষ্টি সদর দরজার দিকে আবদ্ধ।দিগন্তের কথায় কোনো সাড়া দিলো না সে।দিগন্ত বুঝতে পারলো,নির্জনের আচরণগুলো নিধির ওপর কতটা প্রভাব ফেলেছে।এই মুহূর্তে এই বাসায় নিধিকে একা রেখে গেলে,সেও হয়তো অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।’
ভেবে দিগন্ত,মাহির কে ইশারা করে নিধির সাথে কথা বলতে বললো।”

“মাহির চোখের পলক ফেলে দিগন্তের ইশারায় সায় জানিয়ে,নিধির কাছে এসে ভরসার সহিত বললো,

‘আপু,দিগন্ত ভাইয়া ঠিকই বলেছে।নির্জন ভাইয়া সুস্থ হয়ে যাবে।জানি,এতদিন আপনার ওপর দিয়ে কতটা মানসিক প্রেশার গিয়েছে।কিন্তু দেখবেন,সঠিক চিকিৎসা পেলে ভাইয়া ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠবে।আর এখন আপনার এই বাসায় একা থাকাটা উচিত হবে না।আপনি আমার সাথে আমাদের বাসায় চলুন।সেখানে আপনার বোন,মা আছে।তাদের সাথে কথা বললে,আপনার মন কিছুটা হালকা হবে।প্লিজ চলুন,আপু।’

“মাহিরের মায়া ভরা কন্ঠে কথা শুনে,নিধি ভারী নিঃশ্বাস ফেলে বলে উঠলো,

‘নাহ!আমি এখানেই থাকব।এখান থেকেই আমার স্বামীকে প্রতিদিন দেখতে যাবো।আমাকে জোর করবেন না,ভাইয়া।’

“মাহির বুঝতে পেরেছে,নিধির মন-মস্তিষ্ক জুড়ে এখন শুধু নির্জনের কাহিনী গুলো ঘুরছে।কিন্তু এখানে থাকলে প্রতিটি পদে পদে সে নির্জনের ঘটনাগুলো মনে করবে,যেটা মানসিক ভাবে অসুস্থ হওয়ার অন্যতম কারণ হবে।’
ভেবে নিধির দিকে তাকিয়ে বললো,

‘আপু,আপনি তো আর দীর্ঘদিনের জন্য আমাদের বাসায় যাচ্ছেন না।নির্জন ভাইয়া যতদিন হসপিটালে ভর্তি থাকবে,ততদিন থাকবেন।তাছাড়া আপনার বোন,আর মায়ের সাথেও তো আপনার অনেক দিন যাবৎ দেখা হয়নি।যেহেতু আপনার মা এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি,এমতাবস্থায় আপনি তার পাশে থাকলে,তার কাছেও ভালো লাগবে।’

“মাহিরের যুক্তিযুক্ত কথা শুনে,নিধি আর কিছু বলতে পারলো না।কোনো কথা না বাড়িয়ে কাভার্ড থেকে কিছু জামা-কাপড় বের করে,ব্যাগে ভরে নিলো।অতঃপর দিগন্তের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মাহিরের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।”

“মাহিরের বাসায় যাওয়ার পর নিধির মলিন মুখস্রি দেখে, তোহা এবং তাহমিনা বেগমের মন খারাপ হয়ে যায়।তারা কিছু জিজ্ঞেস করতে নিলে,মাহির তাদের ইশারা করে থামিয়ে দেয়।অতঃপর রাতে খাওয়া-দাওয়া করার পর,নিধি নিজে থেকেই তাহমিনা বেগম কে জড়িয়ে ধরে পুরো ঘটনা খুলে বলে।সবকিছু শুনে স্তব্ধ হয়ে যান তাহমিনা বেগম,সেই সাথে তোহাও।
নিজের বড় মেয়েকে কি বলে স্বান্তনা দিবেন,সে ভাষাগুলোও যেন সে হারিয়ে ফেলেন।এদিকে নির্জনের অতীতের কষ্টের কাহিনী এবং পা**গলামি ঘটনা গুলো শুনে,তোহা যেন বিস্ময়ের শীর্ষে চলে গেলো।ও ভাবতে লাগল,

‘আপু তো একসময় এমন একজন সাইকো প্রেমিক চাইতো,কিন্তু নির্জন ভাইয়া কে দেখে তো একদমই সেরকম মনে হয় নি।শেষ পর্যন্ত আপুর সাথেই এগুলো হওয়ার ছিলো?’
আর কিছু ভাবতে পারলো না তোহা।ইদানীং কোনো কিছু নিয়ে টেনশন করলে,নিজের কাছে বিরক্ত লাগে তোহার।মাথা খুব ভারী অনুভব হয়,খাবারেও অরুচি,সেই সাথে মুড সুয়িং তো আছেই।”

“রাতে মাহির তোহা কে নির্জনের মানসিক রোগ সম্পর্কেও বুঝিয়ে বললো।সবকিছু শুনে তোহা মাহির কে আশ্বস্ত করলো,
‘নিধি কে সবসময় মানসিক ভাবে ভালো রাখার চেষ্টা করবে।ছোট বোন হিসাবে এতটুকু দায়িত্ব তাকে পালন করতেই হবে।’

‘তোহার কথা শুনে মাহির তার স্বপ্ন-চারিনীর কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো।’

‘মাহিরের স্নিগ্ধ পরশ পেয়ে,মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলো তোহা।ভাবতে থাকল,

‘আমি কত সৌভাগ্যবতী,যে মাহিরের মতো একজন আদর্শ স্বামী পেয়েছি।যে কিনা সব দিক থেকে পারফেক্ট।’

———
“রাত সাড়ে ১১টা।এখনও চোখজোড়া বন্ধ নির্জনের।একজন নার্স কিছুক্ষণ পর পর এসে দেখে যাচ্ছে,নির্জনের জ্ঞান ফিরলো কি না।”

“নির্জন কে যখন মানসিক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়,তখন তার সেন্সলেস অবস্থায় মেডিকেল টিম তাকে দ্রুতই পরীক্ষার জন্য নিয়ে যায়,যেন তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা দ্রুত মূল্যায়ন করা যায়।”

“নির্জনের নিস্তেজ শরীর নিয়ে ডাক্তারেরা তাকে প্রথমে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা করেন।প্রথমে ব্লাড টেস্ট করেন।শরীরে কোনো বি**ষাক্ত উপাদান আছে কি না,তা যাচাই করার জন্য এবং ওষুধের মাত্রা পরীক্ষা করার জন্য।
তারপর ব্রেইন স্ক্যান (CT/MRI) করা হয়।মস্তিষ্কের কার্যকলাপ স্বাভাবিক আছে কি না এবং সেখানে কোনো ক্ষতি বা অস্বাভাবিকতা আছে কি না তা দেখার জন্য।
তারপর ইলেকট্রো এনসেফালোগ্রাম (EEG) অর্থাৎ মস্তিষ্কের ইলেকট্রিক্যাল কার্যকলাপ পরীক্ষা করা,যাতে কোনো ধরনের খিঁচুনি বা সাইকোটিক ব্রেকডাউনের কারণ বোঝা যায়।
তারপর হার্ট মনিটরিং করা হয়।নির্জনের হৃৎপিণ্ডের কার্যকলাপ পরীক্ষা করা হয়,যাতে তার শারীরিকভাবে কোনো ঝুঁকি আছে কি না বোঝা যায়।”

“ডাক্তারদের মনোযোগ ছিলো নির্জনের মানসিক ও শারীরিক স্থিতিশীলতার দিকে।তারা জানত,এ ধরনের মানসিক ব্রেকডাউনের ক্ষেত্রে ওষুধের পাশাপাশি মস্তিষ্কে সরাসরি থেরাপি প্রয়োজন।”

“রাত ১২টার দিকে,নির্জন চোখজোড়া ধীরে ধীরে খোলা শুরু করে।প্রথমে তার চারপাশে অন্ধকারাচ্ছন্ন অচেনা জগৎ মনে হচ্ছিলো।ধীরে ধীরে,সে চোখ মেলে চারপাশের পরিবেশ দেখে,যেখানে শীতল সাদা আলো,হাসপাতালের যন্ত্রপাতি এবং ডাক্তারদের মুখ দেখা যাচ্ছিলো।”

“এভাবে অচেনা জায়গায় নিজেকে আবিষ্কার করে,অবচেতন মনে তার মাথায় ভর করলো এক অস্থিরতা।
ভাবতে থাকল,

‘কোথায় আমি?কেনো এখানে?আমার নিরু,আমার ডার্ক কুইন কোথায়?আমার তো বাসায় থাকার কথা!’
কথাগুলো ভেবে নির্জন পুরনো কাহিনী গুলো মনে করার চেষ্টা করলো।কিন্তু ইনজেকশনের প্রভাবে মুহূর্তেই মস্তিষ্ক অসংলগ্ন হয়ে উঠল,আর সে হঠাৎ তীব্র পা**গলামি শুরু করলো।সে ছটফট করতে লাগল,ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে রুঢ় স্বরে বললো,

‘আমি এখানে কিভাবে এসেছি?আমার ওয়াইফ কোথায়?আর আমার পুরো শরীরে এত ব্যথা কেনো?আমার জানা মতে,আমার কোনো এক্সিডেন্ট হয় নি।আমি সম্পূর্ণ সুস্থ।তাহলে আমি এখানে কেনো?ওহ!বুঝেছি,নিরু আপনাদের কাছে আমার সম্পর্কে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা কথা বলেছে,যে আমি অসুস্থ,তাই না?উফফ!ওকে তো আজ আমি…’

বলেই বিছানা থেকে উঠে পালানোর চেষ্টা করলো।”

“ডাক্তাররা দ্রুততার সঙ্গে নির্জনকে আটকে ফেললো।একজন ডাক্তার চি**ৎকার করে বললেন,

“শান্ত হও নির্জন।আমরা তোমার উপকারের জন্য এখানে আছি।”

“কিন্তু নির্জনের ভেতরের অশান্তি আরও বাড়ছিলো।সে বাইরে যাওয়ার জন্য চি**ৎকার করতে থাকল।অতঃপর ডাক্তারের শরীরে আ**ঘাত করতে নিলেই,৩ জন পুরুষ এসে তাকে বেডে শক্ত করে বাঁধল,যেন সে নিজেকে এবং অন্য কাউকে আ**ঘাত করতে না পারে।”

“ডাক্তাররা দ্রুতই নির্জনকে সেডেটিভ ইনজেকশন পুশ করে দিলো,যাতে সে শান্ত হতে পারে।কিন্তু ইনজেকশন দেওয়ার সময়েও তার চোখে ছিলো অবর্ণনীয় ভয় এবং আ**তংক,যেন সে বুঝতে পারছে না,কি হচ্ছে তার সাথে।তার শরীর অল্প অল্প করে শান্ত হলেও,মনের ভেতর সেই কষ্টটা তখনও প্রজ্বলিত ছিলো।”

“কিছুক্ষণ পরে ডাক্তাররা সিদ্ধান্ত নেন যে,নির্জনের মানসিক অসুস্থতা এতটাই গুরুতর যে তাকে ইলেক্ট্রোকনভালসিভ থেরাপি (ECT) দেওয়া হবে।এটি তার মস্তিষ্কের রসায়নে সাময়িক পরিবর্তন এনে,তাকে স্থিতিশীল করতে পারে।তাকে অ্যানেস্থেশিয়া দেওয়া হয়,যাতে সে অচেতন অবস্থায় থাকে।এরপর হালকা ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়।নির্জনের শরীর হালকা খিঁচুনি দিতে শুরু করে,ডাক্তাররা মনোযোগ সহকারে তার প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে থাকে।”

“এছাড়া,ডাক্তাররা তাকে অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ যেমন হ্যালোপেরিডল বা রিসপেরিডন দিতে শুরু করে,যা তার মানসিক বিভ্রান্তি কমিয়ে স্থিতিশীল রাখবে।ওষুধগুলো তার মস্তিষ্কের চিন্তা এবং অনুভূতির অতি সক্রিয়তাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করবে।”

“যদিও নির্জন ইলেকট্রিক শকের সময় সরাসরি কোনো ব্যথা অনুভব করেনি।তবে অচেতন থাকার পর,যখন সে ধীরে ধীরে জ্ঞান ফিরে পেতে শুরু করলো,তখন তার মাথা ভারী আর অস্থির ছিলো।মনে হচ্ছিলো,পুরো শরীর যেন অন্য কারো হয়ে গেছে।কিছুই তার নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই।ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় তার শরীর নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছিলো,আর স্মৃতিগুলো ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিলো।নির্জন বুঝতে পারছিলো না সে কে,কোথায় আছে বা কেনো এতটা কষ্ট হচ্ছে।এই মানসিক অসহায়ত্ব আর বিভ্রান্তি ছিলো তার সবচেয়ে বড় কষ্ট।”

“জ্ঞান ফেরার পর নির্জন আ**র্তনাদ করে উঠল,

‘আমার মাথায় কিছু হচ্ছে।আমাকে বাঁচাও!প্লিজ,আমাকে মুক্তি দাও।’

“ডাক্তাররা তখনও তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলো,কিন্তু তার কষ্টের গভীরতা এতটাই তীব্র ছিলো,যে কেউই তা পুরোপুরি বুঝতে পারছিলো না।”

“ইলেকট্রিক শক এবং ওষুধের পরেও,নির্জনকে কিছুদিন হাসপাতালে থাকতে হবে।তাই ডাক্তাররা তাকে পর্যবেক্ষণের জন্য মেন্টাল হেলথ ইউনিটে নিয়ে গেলো,যেখানে অন্যান্য মানসিক রোগীরাও থাকে।সেখানে তার চারপাশে বিভিন্ন মানসিক রোগে আক্রান্ত মানুষ থাকবে।”

“সেই ইউনিটের বেডে শুয়ে বিভিন্ন মানসিক রোগীদের চেঁচামেচি কানে ভেসে আসতেই,নির্জন চোখ জোড়া মেলে দেখলো,কেউ কাঁদছে,কেউ চুপ করে বসে আছে,কেউ হাতে স্টিলের প্লেট আর স্টিলের চামচ নিয়ে ঘন্টা বাজাচ্ছে,আর মুখ দিয়ে অদ্ভুত সব আওয়াজ করছে।আবার কেউ কেউ নিজের অজান্তে দেয়ালে মাথা ঠুকছে।”

“মানসিক রোগীদের এমন কার্যকলাপ দেখে,ফিক করে হেসে উঠলো নির্জন।মনে হয়,সে অনেক দিন পর হাসলো।বেড থেকে দুর্বল শরীর নিয়ে নেমে,তাদের কাছে গিয়ে বললো,

‘আপনারা পা**গল নাকি?হসপিটালের মধ্যে এভাবে কেউ চি**ৎকার করে?এতে রোগীদের অসুবিধা হয়।দেখছেন না,ওই বেডে একজন ঘুমাচ্ছে?অথচ আপনারা এখানে অযথা চি**ৎকার করছেন।’
বলেই দেয়ালে যেই লোকটি মাথা ঠুকছিলো,তার কাছে গিয়ে বুকের ওপর দুই হাত ভাজ করে বললো,

‘এভাবে নিজের ক্ষ*তি করছেন কেনো?নিজেকে কষ্ট দেওয়াতো বোকামি।আমার দিকে দেখুন,গতকাল থেকে কিছু পৈ**শাচিক মস্তিষ্কের মানুষ আমাকে অকারণে আটকে রেখেছে,অথচ আমি আমার ওয়াইফ কে ভীষণ মিস করছি।কিন্তু তারা কোনোভাবেই সেটা বুঝতে চাইছে না।অবশ্য এর পেছনে আমার ওয়াইফেরও অনেক ভুল আছে,তার শাস্তি সে অবশ্যই পাবে।যাইহোক,আমি এতটা কষ্টে থাকার পরেও নিজের ক্ষ*তি করিনি।আমার তো মনে হয় আপনি পা**গল,তাই নিজের ক্ষ*তি করছেন।’
বলেই তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো নির্জন।”

“নির্জনের কথা শুনে লোকটি বড় নখযুক্ত আঙ্গুল দিয়ে নির্জনের হাতে খুব জোরে খা**মচে দিয়ে বলতে থাকল,

“তুই পা**গল,তোর বংশ পা**গল,আমাকে তুই পা**গল বললি কেনো?তুই জানিস,আমি প্রবাসী;ইতালিতে টাকার পাহাড় গড়েছি,সেই পাহাড়ের নিচে একটা ঘর করেছি।আমার ঘরটি সোনা দিয়ে মোড়ানো।কিন্তু কিছু ব**দমাশ লোক আমার অর্থ সম্পদ দেখে,হিংসা করে এই পা**গলাগারদে আমাকে নিয়ে এসেছে,যত্তসব।”

“লোকটি নির্জন কে খা**মচে দেওয়ায়,নির্জন চোখ-মুখ কুঁচকে দুর্বল শরীর নিয়ে বসে পড়লো।অন্য সময় হলে
এই লোকটির হয়তো এখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে হতো।”

“এদিকে লোকটির অদ্ভুত সব কথা শুনে,প্লেট এবং চামচ হাতে নিয়ে থাকা লোকটি হো হো করে হেসে বলতে থাকল,

‘তোর তো দেখছি চাপার অনেক জোর।আরে তুই তো এখন ভিখারি,তোর জামা-কাপড় ও তো ছেড়া,ছ্যাহ!দেখ দেখ,এটা হলো সোনার প্লেট,আর হীরার চামচ।আমি তো এটাতে ছাড়া কোনো খাবার খেতেই পারি না।এখানে সবাই ভিখারি,আসল বড়লোক তো আমি;হাহাহাহা।’

‘লোকটির কথা শুনে, এইবার পা**গল গুলোর মধ্যে দুটি ভাগ হয়ে গেলো।একদল আরেক দলের সাথে অদ্ভুত রকমের কথা বলে তর্ক করতে থাকল।যখন কেউ কারো কথায় ছাড় দিলো না,তখনই লেগে গেলো পা**গলে পা**গলে যুদ্ধ।একদল আরেক দলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো।
এদিকে নির্জন বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাদের কান্ড-কারখানা দেখতে থাকল।’
কিছুক্ষণ পর কয়েকজন ওয়ার্ডবয় এসে সবগুলোকে একেক করে বিছানায় বেঁধে রাখলো।তবুও তাদের হট্টগোল ও বি**শৃঙ্খলাপূর্ণ পরিবেশ শান্ত হয়নি।ওয়ার্ডবয়রা তাদের কে বেঁধে দেওয়ার পর,কেউ চি**ৎকার করলো,কেউ হঠাৎ শান্ত হয়ে গেলো,আবার কেউ রাগে কাঁপতে থাকল।”

“পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ওয়ার্ডবয়রা ডাক্তারদের নির্দেশে পা**গলদের ঘুমের ইনজেকশন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।ইনজেকশনগুলো ছিলো শক্তিশালী সেডেটিভ,যা দ্রুত কাজ করে।প্রতিটি রোগীকে আলাদাভাবে ইনজেকশন পুশ করা হলো।”

“যতক্ষণে সেডেটিভ কাজ করা শুরু করলো,তাদের চোখ ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে এলো।একের পর এক রোগী নিস্তেজ হয়ে গেলো,সেই সাথে যেন অদম্য পা**গলামির সেই আ*গুন নিভে গেলো।পুরো ওয়ার্ডটা হঠাৎ নিস্তব্ধ হয়ে গেলো,কিছুক্ষণ আগের সেই চি**ৎকার,হইচই,রাগের সব আওয়াজ পুরোপুরি থেমে গেলো।”

“নির্জন দূর থেকে এই অদ্ভুত দৃশ্য দেখছিলো।মানসিক রোগীদের এই পা**গলামি,এই উ**ন্মাদনা এবং এর পরবর্তী নীরবতা,সবকিছুই যেন তাকে আরও অদ্ভুতভাবে তার নিজের ভেতরের যুদ্ধের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিলো।সে চুপচাপ তাদের দিকে তাকিয়ে থাকল।তার চোখে বিস্ময়,বেদনা আর এক ধরনের অদ্ভুত অস্বস্তি দেখা দিলো।”

“ওয়ার্ডবয়রা সবাইকে সোজা করে বিছানায় শুইয়ে রাখার পর,নির্জনের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘তুমি তোমার জায়গায় থাকো,নির্জন।এদের মতো আচরণ করলে,তোমাকেও এমনভাবে ঘুম পাড়িয়ে দিবো।’
বলেই তারা ইউনিট থেকে চলে গেলো।’

“নির্জন কিছু বললো না,কিন্তু তার মনে হলো,এটাই যেন সেই দুঃস্বপ্নের শুরু,যা থেকে বেরোনোর কোনো উপায় নেই।তবুও মনে মনে এখান থেকে পালানোর জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা করতে থাকল।”

“মাহির এবং দিগন্ত নির্জনের সব খোঁজ-খবর ড.মায়ার কাছ থেকে নিয়েছে।এদিকে নিধি চুপি চুপি এসে নির্জন কে দেখে গিয়েছে,ড.মায়ার কাছ থেকে তার খবর জেনেছে।এই দুই দিন নিধিও নির্ঘুম রাত কা**টিয়েছিলো।চোখের সামনে যেন বিষাদময় পুরনো স্মৃতিগুলো বারবার হানা দিচ্ছিলো।যদিও নিধি কে তোহার শ্বশুর,শাশুড়ি,তাহমিনা বেগম এবং তোহা যথেষ্ট পরিমাণে মানসিক সাপোর্ট দিয়েছে,তবুও মন কে তো সে কোনো ভাবেই মানাতে পারবে না।কারণ,তার মন এবং মস্তিষ্ক জুড়ে কেবল একটাই নাম,’নির্জন।”

————
“কে**টে গেলো ৭দিন।রুমের এক কোণে দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে বসে,হাতে স্টিলের বড় একটি চামচ নিয়ে গিটার বাজানোর মত আঙ্গুল নাড়িয়ে,নির্জন গেয়ে উঠল,

“আমি জানি কোনো একদিন,
কোনো এক নতুন ভোরে..
দেখা হবে আমাদের আবার,
এক স্বপ্নের শহরে..”

“নির্জনের গান শুনে,একজন এসে হাতে তালি দিয়ে বললো,

‘বাহ!তুই তো খুব ভালো গান গাইতে পারিস,আমিও পারি,শোন,

“ওই চাইয়া থাকোস কেন,কি কবি ক..
তুই কইলেই তো আমি কমু হ…”

“পা**গলের গান শুনে,বাকি পা**গল গুলো হো হো করে হেসে,নাচানাচি করলো।
সেটা দেখে বিরক্তিতে নাক-মুখ কুঁচকে ফেললো নির্জন।’
রেগেমেগে বললো,

‘এই তোর সমস্যা কি রে?আমার গানের প্রশংসা শুধু আমার নিরু করবে।তুই করলি কেনো, হ্যা?তোর সাহস হলো কি করে আমার গান শোনার?আজ তো তোর কানের ১২টা বাজাবো।’

বলেই ওই লোকটির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো নির্জন।লোকটির কানে বারংবার আ**ঘাত করতে থাকল।এক পর্যায়ে লোকটির কান থেকে র**ক্ত পড়া শুরু করলো।এদিকে নির্জনের এহেন কান্ড দেখে,বাকি পা**গল গুলোও নির্জনের ওপর হা**মলে পড়লো।লেগে গেলো আবার যুদ্ধ।”

“ইউনিটে বি**শৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়াতে ওয়ার্ডবয়রা এসে আবারও সবাইকে বেঁধে দিলো।এগুলো যেনো তাদের নিত্যদিনের কাজ।অতঃপর নির্জন সহ সবাইকে ঘুমের ইনজেকশন পুশ করতেই,ধীরে ধীরে সবাই ঘুমিয়ে পড়লো।”

——–
“সময় যেন স্রোতের ন্যায় চলতে থাকে।কে**টে গেলো দেড় মাস।নিধি ড.মায়ার কেবিনে বসে আছে।ড. মায়া নিধির দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘এই দেড় মাসে নির্জনের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তার আগের মতো পা**গলামি আর নেই।ইলেকট্রিক শক থেরাপি এবং সঠিক ওষুধের প্রয়োগে সে এখন কিছুটা শিথিল হয়েছে।মাঝে মাঝে তার আচরণ স্বাভাবিক মনে হয়, তবে তার ভেতরে এক ধরনের গভীর হতাশা রয়ে গেছে।’

“নিধি সবকিছু আশ্চর্য হয়ে শুনছিলো।ড.মায়াকে প্রশ্ন করলো,

‘তাহলে সে কি এখন আর আ**ক্র*মণাত্মক নয়?’

“ড. মায়া মৃদু হাসলেন।বললেন,

‘না,আগের মতো আ**ক্র*মণাত্মক নয়।তবে মাঝে মাঝে সে গভীর চিন্তায় ডুবে থাকে,চুপচাপ তাকিয়ে থাকে শূন্যের দিকে।আমরা তার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছি,সে কিছুটা স্থির হয়েছে,কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ বলা যাবে না।’

“নিধির মুখে কিছুটা আশা ফুটে উঠল।ম্লান হেসে বললো,

‘তাহলে আমি কি তার সঙ্গে দেখা করতে পারি?’

“ড. মায়া মাথা নেড়ে বললেন,

‘তুমি চাইলে দেখা করতে পারো।তবে মনে রেখো,তার মানসিক অবস্থা এখনও নাজুক।ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে হবে।তোমার উপস্থিতি তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।’

“নিধির চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।এতদিন আড়ালে থেকে নির্জন কে দেখেছে,কিন্তু সামনে থেকে দেখা হয়নি।এবার তার সাহস হচ্ছিলো না।ভাবতে থাকল,

‘দেখা হওয়ার পর নির্জন কি বলবে?কেমন রিয়্যাকশন করবে?রেগেমেগে কথা শোনাবে না তো?’
ভেবে অদ্ভুত মনোভাব হচ্ছিলো নিধির।

“অবশেষে মনে সাহস যুগিয়ে ইউনিটের জানালার বাইরে দাঁড়িয়ে,দীর্ঘদিন পর নির্জন কে দেখে ডাক দিলো নিধি।”

“নির্জন রুমের এক কোণে বসে স্থির দৃষ্টিতে পা**গলদের কর্মকাণ্ড দেখছিলো।কর্ণকুহরে প্রিয়তমার কন্ঠস্বর ভেসে আসতেই,বিস্ময়ের দৃষ্টিতে জানালার দিকে তাকালো নির্জন।সেই পরিচিত মুখ,সেই চেনা স্বর।আকস্মিক মুখের মধ্যে মুচকি হাসির রেখা ফুটে উঠলো নির্জনের।মনে মনে আওড়ালো,

‘ওই যে আমার ভালোবাসা..’

ভেবে বসা থেকে উঠে দ্রুত পায়ে জানালার কাছে এসে,গ্রিল ভেদ করে হাত বাড়িয়ে,নিধির ডান হাত ধরে বলতে থাকল,

‘কোথায় ছিলে নিরু?আমার ডার্ক কুইন,আমার জানপাখি।জানো,মনে মনে কত খুঁজেছি তোমায়?তুমি তো বলেছিলে,আমি অসুস্থ।তাই তোমার কথা মেনে নিয়ে এতদিন আমি ডাক্তারের কথা মত সব মেডিসিন খেয়েছি।দেখো,এখন আমি পুরোপুরি সুস্থ।চলো না,আমরা আমাদের বাসায় ফিরে যাই।জানো,আমার এখানে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।ওই পা**গল গুলোর চি**ৎকারের কারণে আমার কানে প্রচুর ব্যথা হয়।আমার কষ্ট কেউ বোঝে না,তুমি তো সব জানো,তাই না?প্লিজ,ডক্টর কে বলো,আমি এখন সুস্থ হয়ে গেছি।আমি বাহিরের পরিবেশে তোমাকে নিয়ে ঘুরতে চাই।”

“এতদিন পর প্রিয় মানুষটির স্পর্শ পেয়ে,নিধির শরীরে যেন অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেলো।নির্জনের বাচ্চাদের মত বায়নাগুলো শুনে,নিধিও আবেগী হয়ে গেলো।তাছাড়া নির্জনের চোখেও আগের মত সেই হিং**স্রতা দেখতে পেলো না।ভাবলো,

‘নির্জন অসুস্থ থাকলে তো এতদিন পর আমাকে দেখার পর, আরও খারাপ আচরণ করতো।কিন্তু এই মুহূর্তে নির্জন কে দেখে একটুও ভয় লাগছে না।কারণ, নির্জনের চেহারায় কোনো উগ্র ভাব নেই,যেমন টা দেড়মাস আগে দেখেছিলো।যদিও আগের থেকে কিছুটা শুকিয়ে গেছে নির্জন।’

“নিধি,নির্জনের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে,শুকনো ঢোক গিলে বললো,

‘আ’ম স্যরি নির্জন,আপনাকে এখানে ভর্তি করা ছাড়া আমার কোনো উপায় ছিলো না।আপনাকে ছাড়া এতদিন আমিও খুব কষ্ট পেয়েছি।প্রতিটি রাত যেন আমার কাছে মাত্রাতিরিক্ত যন্ত্রণার ছিলো।আচ্ছা,আমি ডক্টরের সাথে কথা বলে আপনাকে ঘুরতে নিয়ে যাবো।হাত টা ছাড়ুন।’

“নিধির কথাগুলো শুনে নির্জন মুচকি হেসে বললো,

‘উহুম,ছাড়বো না।আগে প্রমিজ করো,তারপর ছাড়বো।’

“নিধি মুচকি হেসে বললো,

‘ওকে,প্রমিজ করলাম,আপনাকে ঘুরতে নিয়ে যাবো।এইবার তো ছাড়ুন।”

“নিধি বলতেই নির্জন হাত ছেড়ে দিলো।নিধি ড. মায়ার কেবিনে গিয়ে বললো,

“আন্টি, নির্জন আমাকে অনেকবার রিকোয়েস্ট করেছে,যে এখানে তার অনেক কষ্ট হয়,চারপাশের পরিবেশ যেন তার শ্বাস বন্ধ করে দেয়।আমি যদি তাকে কিছু সময়ের জন্য বাইরে,নদীর পাড়ে নিয়ে যেতে পারতাম… তার মন কিছুটা ভালো হতো।দরকার হলে আমরা কিছু গার্ড সঙ্গে নেবো।”

“ড. মায়া নিধির কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপচাপ ভাবলেন।তিনি জানতেন,মানসিক রোগীদের ক্ষেত্রে এমন পরিবেশগত পরিবর্তন কখনও কখনও বিপজ্জনক হতে পারে,আবার তা উপকারীও হতে পারে।কিন্তু নির্জনের বর্তমান মানসিক অবস্থায় তাকে বাইরে নিয়ে যাওয়া কতটা নিরাপদ,তা নিয়ে তিনি চিন্তিত ছিলেন।”
ভেবে বললেন,

“নিধি,আমি বুঝতে পারছি তোমার কথা।নির্জন কে বাইরে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাবটা সহজ না হলেও,তার মানসিক উন্নতির জন্য ভালো হতে পারে।তবে এটি অনেক ঝুঁকিপূর্ণও।আমি অনুমতি দিতে পারি,তবে তোমাদের সঙ্গে অবশ্যই কিছু সিকিউরিটি গার্ড থাকবে এবং আমরা নির্জনের ওষুধ ঠিকঠাক চালিয়ে যাবো,যাতে তার আচরণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।”

“নিধি আশা নিয়ে বললো,

“আমি জানি,সে আমার কথা শুনবে।আমি তাকে শান্ত রাখতে পারব।”

“ড. মায়া একটু চিন্তিত গলায় বললেন,

‘ঠিক আছে।তবে খেয়াল রেখো,যদি কিছু অস্বাভাবিক মনে হয়,সঙ্গে সঙ্গে গার্ডদের জানাবে।তোমার জন্যও এটি কঠিন হতে পারে।নির্জন এখনও পুরোপুরি স্থিতিশীল নয়,তবে তার ভালো লাগা দরকার।আমি চাই সে মানসিকভাবে কিছুটা মুক্তির স্বাদ পাক।’

“ড.মায়ার কথা শুনে,নিধির মুখে স্বস্তির ছাপ ফুটে উঠল।এতদিনে হয়তো সে নির্জন কে সেই শান্ত নদীর ধারে নিয়ে যেতে পারবে।কিন্তু এই সফর কতটা শান্তিময় হবে,তা সময়ই বলে দেবে।”

“অবশেষে নিধি,ড.মায়ার অনুমতি নিয়ে,নির্জনকে নিয়ে হসপিটাল থেকে কিছুটা দূরে একটি নদীর পাড়ে ঘুরতে গেলো।”

“নাম না জানা একটি নদী।সে নদীর পানিতে দুই হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেয় এক চঞ্চলা মনের রমনী।নদীর পানির শীতল স্পর্শে মৃদু কম্পন বয়ে যায় রমনীর শরীরে,কিছুটা তার ভগ্ন হৃদয়ে।সে কম্পনে তার ভগ্ন হৃদয়টি আরও মজবুত হয়, আরও দৃঢ় হয়।যেমন দৃঢ় কোনো সুউচ্চ অট্টালিকার পিলার কিংবা দৃঢ় ভালোবাসার দেয়াল!”

“রমনীর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা হিং**স্র যুবকটির মনের আনাচে-কানাচে হিংসা রা উঁকি দিয়ে বলছে,

‘দেখ,দেখ,দেখ… তোর ব্যক্তিগত প্রেয়সী নদীর ঢেউ খেলানো স্বচ্ছ পানির সৌন্দর্যে গা ভাসিয়ে দিয়েছে।তাড়াতাড়ি আটকে রাখ তাকে।নইলে আবারও তোকে প্রত্যাখ্যান করবে।তুই কি পারবি,তার হৃদয়হীনা প্রত্যাখ্যান সহ্য করতে?”

“যুবকটি নিজের মনকে বিদ্রুপের সাথে উত্তর দিলো,

‘সে আমার,শুধুই আমার।তার অনুপস্থিতিতে প্রতিটি মুহূর্তে আমার #হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ হয়।’
উত্তর টি দিয়ে যুবকটি আগে থেকে কুড়িয়ে আনা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইটের টুকরো গুলো কে নিজের শরীরে থাকা সর্বশক্তি দিয়ে নদীর বুকে ছুঁড়ে মারলো।”

“বিশালাকার সেই স্বচ্ছ পানির নদীটি যুবকটির দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে,মুহূর্তেই ইটের ক্ষুদ্র কণাগুলো গ্রাস করে নিলো।সেটা দেখে যুবকটি মনে মনে ‘চ’ কারান্ত শব্দ উচ্চারণ করে বললো,

‘বেইমান নদী।আমার প্রেয়সীর দিকে বাঁকা নজর দেওয়ার সাহস তোর হলো কি করে?নাহ!এই রমনী শুধু আমার।আমি কিছুতেই তাকে তোর বুকে গা ভাসাতে দেবো না।’

কথা গুলো তার দিব্যশক্তি দিয়ে বলেই,পাশে থাকা রমনীর হাত ধরে টেনে বুকের সাথে শক্ত করে মিশিয়ে নিলো।বহুদিনের তৃষ্ণার্ত বুকে মনে হয় শীতল স্রোতধারা বয়ে গেলো।যুবকটি তার ধূসর রঙা চোখ জোড়া বন্ধ করে তৃপ্তির সহিত গেয়ে উঠলো,

“তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো,ছেড়ে দেবো না,
তোমায় বক্ষ মাঝে রাখবো,ছেড়ে দেবো না।”

#চলবে…

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ পর্ব-৪৩+৪৪

0

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৪৩
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ❌
[প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত]

“এই চার দেয়ালের বাইরে কর্মস্থল ব্যতীত,না আমি কোথাও যাবো,আর না তুমি কোথাও যাবে ডার্ক কুইন।”

“নির্জনের এহেন কথায় ভড়কে গেলো নিধি।কন্ঠে তেজ নিয়ে বললো,

‘পা**গল নাকি আপনি?আমি আমার মায়ের কাছে যাবো না?এই বাসা তো আমারই,মাকে শুধু দেখতে যাবো।তারপর তো ফিরেই আসবো।সরুন,আমি এখন রেডি হবো।আর আপনিও রেডি হয়ে নিন।’
বলেই নির্জনের হাত ছাড়িয়ে নিধি চলে যেতে নিলে,নির্জন আবারও ওর হাত মুঠোবন্দী করে শক্ত করে চেপে ধরে,পৈ**শা*চিক হাসি দিয়ে বললো,

‘হুম..আমি তো পা**গল।তোমার জন্য পা**গল।এটা কি নতুন নাকি?কেনো,তুৃমি জানো না?তোমার প্রতি আমার গভীর ভালোবাসার ছোঁয়া তো আগেই এঁকে দিয়েছি,এখনও কি কিছু বোঝার বাকি আছে,হুম?’

“নির্জনের প্রথমে বলা কথাগুলো নিধি ততটা গুরুত্ব না দিলেও,এইবার ঠিকই গুরুত্ব দিলো।তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নির্জনের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘হাত ছাড়ুন।সকাল,সকাল কি হলো আপনার?আপনি তো আগে এমন ছিলেন না?হঠাৎ আপনার আচরণ এভাবে পরিবর্তন হয়ে গেলো কেনো?’

“নিধির এহেন কথা শুনে,অট্টহাসি দিলো নির্জন।মনে হয় কোনো মজার জোকস শুনলো।নির্জনের হাসিমাখা মুখ ভীষণ পছন্দ করে নিধি।কিন্তু এই মুহূর্তে প্রিয় মানুষটির এই হাসি যেন গায়ে কাঁটার মতো বিঁধলো।নির্জনের মুঠোবন্দী হাত আরও শক্ত হলো।”

“এতটা শক্ত করে ধরায় ‘উহ’ আ**র্তনাদ করে উঠলো নিধি।চোখ-মুখে বিরক্তিকর ছাপ এঁটে বললো,

‘নির্জন,এইসব কি ধরনের পা**গলামে হচ্ছে?আপনার এইসব আচরণের মানে কি,বলুন তো?আর হাত ছাড়ুন,ব্যথা পাচ্ছি।’

“নিধির কথায় এইবার হো হো করে হেসে উঠলো নির্জন।মুঠোবন্দী হাত টা হালকা করে ধরে, ওর কাছে এসে হাস্কি ভয়েসে বললো,

‘নিরুপমা,তুমিই তো ওয়াদা করেছিলে,আমাকে ছেড়ে কখনো যাবে না।এখন আমি তোমার বোনের শ্বশুর বাড়ি না গেলে,তুমি একা যাবে।এর মানে, সারাদিন আমি এই বাসায় একা সময় কা**টাবো।অর্থাৎ, তুমি আমাকে ছেড়ে ওই বাসায় গিয়ে, সময় কা**টিয়ে ওয়াদা ভঙ্গ করবে।এটা তো আমি হতে দিতে পারি না।আমিও কোথাও যাবো না,আর তুমিও কোথাও যাবে না।আজ থেকে তোমার বাইরে বের হওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ।ওহ,হ্যা,তোমার ফোন ব্যবহার করাও নিষেধ।তোমার মা,বোন কে ফোন দিয়ে এইসব খবর নেওয়া,এগুলো আমার কাছে আদিক্ষেতা লাগে।আজ থেকে এগুলো সব বন্ধ।এই বাসায় কারো আসাও নিষেধ।আমার বন্ধু এবং তোমার আত্মীয়-স্বজন কেউ নয়।বিয়ের পর থেকে এই পর্যন্ত অনেক স্বাধীনতা দিয়েছি,আর নয়।আমি যতক্ষণ বাসায় থাকব,ততক্ষণ তুমি আমার সাথে সময় কা**টাবে।আর যতক্ষণ অফিসে থাকব,ততক্ষণ আমার কথা ভাববে।”

“নির্জনের এহেন আচরণে ফের হতভম্ব হয়ে গেলো নিধি।অবিশ্বাস্য চাহনি নিক্ষেপ করে বললো,

‘আপনি এগুলো কি বলছেন নির্জন?মজা করছেন না তো!না মানে,আপনি তো এমন ছিলেন না;তাহলে?’

“নির্জন নিধির কানের কাছে আসা চুলগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বললো,

‘উমম,কে বলেছে, আমি আগে এমন ছিলাম না?আমি তো আগে থেকেই এমন।বিয়ের আগে তোমাকে শপিং মলে চলন্ত সিঁড়ি থেকে ফেলে দেওয়া,চলনবিলের নদীর ধারে ধা’ক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া,তোমার চিঠি পড়ার সময় একটা আরশোলা খুব বিরক্ত করেছিলো,সেটাকেও কে**টে কু**টিকু**টি করেছি।বোটানিক্যাল গার্ডেনে যে ছেলেগুলো তোমাকে বা**জে দৃষ্টি দিয়ে বিরক্ত করেছিলো,সেগুলো কে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া,তারপর তোমার সো কলড বান্ধবী নাদিয়ার দেওয়া আংটি টাকে পুকুরে ফেলে দেওয়া,আমার মোবাইল ফোনের স্ক্রিন তোমার জন্য বরাদ্দকৃত চুমু গ্রহণ করেছিলো,তাই সেটাকে ধ্বং**স করা, বিয়ের পরের দিন সকালে তোমার পায়ে গরম তেল পড়ে যাওয়া,তোমার ফোনের ইউটিউব চ্যানেল,আর ফেইসবুক আইডি নষ্ট করে দেওয়া,কোয়েল পাখি গুলো কে কে**টে,ঝাল মশলা দিয়ে রান্না করে,সেগুলো তোমাকে জোর করে খাওয়ানো,তোমাকে ছাদে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজিয়ে জ্বর বাঁধানো,মেইড কে বিদায় করা..সবকিছুই তো আমি করেছি।বিয়ের আগের কিছু কাহিনী যদিও তোমার জানা ছিলো।কিন্তু বিয়ের পরবর্তী ঘটনাগুলো তো জানতে না, জানপাখি।হাহাহা..এগুলো সব খুব যত্ন সহকারে তোমার জন্য করেছি।এখন প্রশ্ন হলো কেনো করেছি?’

“হাহাহাহা..জানো, আমি না বড্ড হিংসুটে।সেটা শুধু তোমার জন্য।এইসব কিছু হিংসায় জ্বলে-পু*ড়ে করেছি।ওহ,তোমার এই চুলগুলো যখন তোমার কপালে আদুরে ভাবে লেপ্টে থাকে,তখনও আমার খুব হিংসা হয়।ভেবেছিলাম,চুলগুলো কে কে**টে দিবো।পরক্ষণে,আমার বেস্ট ফ্রেন্ড- মিষ্টি ‘মন’ বুদ্ধি দিলো,কিছুদিন পর তুমি বুড়ো হয়ে যাবে।তখন এগুলো এমনিতেই ঝরে পড়বে,ততদিন যেন একটু ধৈর্য ধারণ করি।দেখেছো,আমি এবং আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কতটা দয়ালু!
আচ্ছা, পরিচয় করিয়ে দেই,

বলেই নির্জন নিজের বুকের বাম পাশে ডান হাত রেখে বললো,

‘এই দেখো,এটা হলো আমার ‘হৃদয়’
আর আরেকটা হলো আমার ‘মন’।যার কথায় আমি সব ধরনের কাজ করি।বাহিরের জগতে দিগন্ত আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হলেও,অন্তর্জগতে এরাই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড,বুঝলে ডার্ক কুইন?’

“নির্জনের এতক্ষণ পর্যন্ত বলা কথাগুলো,সব মনে হয় নিধির মাথার ওপর দিয়ে গেলো।বিস্ময়কর চাহনি নিক্ষেপ করে নিচু স্বরে আওড়ালো,

‘নির্জন,আমার মনে হয় আপনি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত।হতে পারে,আপনি আপনার মায়ের আকস্মিক মৃ**ত্যু সহ্য করতে পারেন নি,তাই…’

“নির্জন আর এক মুহূর্ত কথা বলতে দিলো না নিধিকে।তড়িৎ গতিতে ওর মুখ চেপে ধরে বললো,

‘চুপ,চুপ..একদম চুপ।ওই ডাইনী,নোং**রা মহিলার কথা আমার সামনেও উচ্চারণ করবে না।সে তো মা হওয়ার যোগ্যই না।আর সে আমার মা নয়,সে আমার সৎ মা।
আমার জন্মসনদে বাবা আমার নিজের মায়ের পরিবর্তে তার নাম টা দিয়েছিলো।তাই সবাই এটাই জেনে এসেছে।বুড়ি টাকে তো আগেই মে**রে ফেলতাম।শুধু তার কষ্ট গুলো কাছ থেকে দেখে মজা নেওয়ার জন্য, এতদিন হাত দু’টো কন্ট্রোল করেছি।’
বলেই ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ফেললো নির্জন।”

“নির্জনের প্রতিটি কথা যেনো নিধিকে বিস্ময়ের শেষ চূড়ায় নিয়ে যাচ্ছে।আজকের সকাল টি যে তার জীবন টাকে বি**ষাক্তময় করে দিবে,সেটা ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি নিধি।”

“নিধি মুখ দিয়ে ‘উমম’ শব্দ করতেই,নির্জন ওর মুখ থেকে হাত সরিয়ে,নিধির হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে গেলো।নির্জন এত জোরে হাত ধরাতে আবারও ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলো নিধি।কন্ঠে তেজ নিয়ে বললো,

‘নির্জন,ভালো হচ্ছে না কিন্তু।আপনি কিন্তু সবকিছুর লিমিট ক্রস করছেন।”

“নির্জন ঘাড় ঘুরিয়ে মুখমণ্ডলে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে বললো,

‘হুঁশশ..আমি নয়,তুমি লিমিট ক্রস করছো।
সকাল থেকে মনের ভালোবাসা উজাড় করে ওইসব খাবার তোমার মায়ের জন্য রান্না করেছো?দাঁড়াও, ওগুলোর এখনই ব্যবস্থা করছি।তার আগে তোমার ব্যবস্থা করবো।বিয়ের আগে রেস্টুরেন্টে ওয়েটারের সাথে হেসে হেসে কথা বলা,বোটানিক্যাল গার্ডেনে আমার কথার অমান্য করে বোরকা ছাড়া এসে অন্য ছেলেদের নজরে পড়া,গার্ডেনের ঘাসগুলো কে গভীর ভাবে ছুঁয়ে দেওয়া,দিগন্ত কে বিয়ের পোশাকে দেখে ওর সৌন্দর্যের প্রশংসা করা,কোয়েল পাখি গুলো কে আদর করা,ওই ডাইনীর মৃ**ত্যুর আগমুহূর্তে তার নোং**রা হাত ধরে তার সাথে স্নেহ মাখা কথা বলা,ইউটিউব,ফেইসবুকে নিজের চেহারা দেখিয়ে হাজার হাজার মানুষের প্রশংসা পাওয়া,সবকিছুর জন্য শাস্তি পাবে।’

বলেই পৈ**শা*চিক হাসি দিয়ে এক হাত দিয়ে নিধির হাত শক্ত করে ধরে,টেবিলের কাছে এনে,আরেক হাত দিয়ে টেবিলের ড্রয়ার খুলে মোটা দড়ি বের করলো।”

“নির্জনের এহেন কান্ড দেখে চোখ দিয়ে অনবরত পানি গড়িয়ে পড়লো নিধির।এই নির্জন কে সে চেনে না।ওর পুরো পৃথিবী যেন ওলট-পালট হয়ে গেলো।প্রিয়তম মানুষটির কাছ থেকে এমন আচরণ সে কখনোই আশা করেনি।এ যেন অতীতের স্বপ্নে দেখা সেই হিং**স্র নির্জন কে,বাস্তবে চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে।”

“ব্যথায় জর্জরিত হাত এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিতে চাইলো নিধি।কিন্তু সেই শক্তিটুকুও যেনো বিস্ময় এবং কান্নার ফলে কমে এসেছে।তবুও উচ্চস্বরে বলে উঠলো,

‘অ**সভ্য, নিষ্ঠুর,নির্দয়,কা**পুরুষ..এই তাহলে আপনার আসল রূপ?যেটা এতদিন মুখোশের আড়ালে ছিলো।আমি আপনার সাথে থাকব না।আমি এখনই মায়ের কাছে চলে যাবো।’
বলেই হেঁচকি তুলে কেঁদে উঠলো নিধি।”

“নিধিকে এভাবে নাক টেনে কান্না করতে দেখে,ভীষণ রেগে গেলো নির্জন।ওর হাত শক্ত করে চেপে ধরে দাঁত কিড়মিড় করে বলে উঠলো,

‘যাওয়াচ্ছি তোমায়।’

বলেই টেবিলের সামনে থাকা চেয়ার টেনে জোর করে চেয়ারে বসিয়ে দিলো নিধিকে।অতঃপর মুহূর্তেই মোটা দড়ি দিয়ে নিধিকে চেয়ারের সাথে শক্ত করে বেঁধে ফেললো।”

“এদিকে নির্জনের শক্তির কাছে অনেক আগেই হার মেনেছে নিধি।সে তো নির্জনের হাব-ভাব দেখতে ব্যস্ত।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ক্লান্ত ভঙ্গিমায় বললো,

‘নির্জন আপনি কি করছেন,বুঝতে পারছেন?আমি আপনার স্ত্রী।ভালোবাসি আপনাকে।আপনি যেই কথাগুলো বললেন,সবকিছু ভিত্তিহীন।এগুলো অপ্রয়োজনীয় যুক্তি।প্লিজ,আমার বাঁধন খুলে দিন।আমরা দু’জন ঠান্ডা মাথায় আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত নিবো।আমার মনে হয় আপনি মানসিক ভাবে অসুস্থ,সেটা হয়তো আপনি জানেন না।আমি আপনাকে সুস্থ হতে সাহায্য করবো।’

“নিধির করুণ চাহনি দেখে কিছুটা মায়া হয়েছিলো নির্জনের।কিন্তু যখনই শুনলো,নির্জন কে নিধি মানসিক ভাবে অসুস্থ বলেছে,তখনই চোখ-মুখ শক্ত করে ঘাড় কাত করে,র**ক্তিম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,

‘আমাকে তোমার মানসিক রোগী বলার সাহস হলো কি করে?আমাকে আজ পর্যন্ত কেউ এই ধরণের কথা বলে নি।অথচ তুমি সহসাই বলে দিলে?বুঝেছি, এখন আর আমাকে ভালো লাগছে না,তাই না?পুরনো হয়ে গেছি?এত তাড়াতাড়ি?কই..তুমি তো আমার কাছে আগের মতই আছো।এই দেখো,কতটা ভালোবেসে তোমাকে আমার শক্ত বাহুডোরে বেঁধে রেখেছি।তুৃমি চাইলেও যেতে দিচ্ছি না।এমন জীবন সঙ্গী পাওয়া তো তোমার সৌভাগ্য।সেখানে তোমার মধ্যে কোনো কৃতজ্ঞতা বোধ নেই।ওয়েট,ওয়েট.. এর জন্য তোমাকে ইউনিক স্টাইলে শাস্তি পেতে হবে।’
বলেই হন হন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো নির্জন।”

“এদিকে নির্জনের একের পর এক কান্ড দেখে, নিধি যেন বিস্ময়ের শীর্ষে গিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো।মোটা দড়ি দিয়ে চেয়ারের সাথে নিধির হাত-পা খুব শক্ত করে বেঁধেছে নির্জন।নিধি অনেক চেষ্টা করলো দড়ি হালকা করার,কিন্তু ব্যর্থ হলো।ভাবলো,খুব জোরে চিৎকার করবে।কিন্তু সেটা করলেও কেউ শুনবে না।কারণ,আশেপাশের প্রতিবেশীদের বাড়িগুলো কিছুটা দূরে।এই মুহুর্তে সবচেয়ে অসহায় মনে হলো নিজেকে।চোখের অশ্রু যেন বারিধারার ন্যায় গড়িয়ে পড়লো।আবারও বৃথা চেষ্টা করলো ছোটার জন্য।কিন্তু পারলো না,এক পর্যায়ে চেয়ার সহ ফ্লোরে পড়ে গিয়ে মাথায় ব্যথা পেলো নিধি।”

“এদিকে কিচেন থেকে চেয়ার পড়ার শব্দ পেয়ে নির্জনের আর বুঝতে বাকি রইলো না,নিধি কি করেছে।’
প্রিয়তমার বোকা,বোকা কান্ড দেখে মুচকি হাসলো নির্জন।ভেতর থেকে ‘মন’ বলে উঠলো,

‘সে তোমাকে এখনও পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেনি।সমস্যা নেই,খুব তাড়াতাড়ি চিনে যাবে।’

‘মনের কথা শুনে পৈ**শাচিক হাসি দিয়ে কিচেনের দুই চুলায় রাখা বিরিয়ানি এবং পায়েসের পাত্র দু’টি সন্তর্পণে ধরে, বেসিনে ফেলে পানি ছেড়ে দিলো।সেই সাথে পাত্র দু’টি কে ফ্লোরে খুব জোরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে, রাগে ফুঁসে উঠে ঘাড় কাত করে বলতে থাকল,

‘অন্যকে ভালোবেসে এই খাবার এই পাত্রের মধ্যে রান্না করেছিলো আমার নিরুপমা,তাই তোদের কে এভাবে আ**ঘা*ত করলাম।চিন্তা করিস না,একটু পর তোদের কে ভ**য়াবহ শাস্তি দিবো।’

বলেই সেখান থেকে বড় বড় পা ফেলে চলে গেলো নির্জন।”

“অপরদিকে,কিচেন থেকে থালাবাসন ফ্লোরে পড়ার শব্দ শুনে,আকস্মিক কেঁপে ওঠে নিধি।শুকনো ঢোক গিলে ফ্লোরে শুয়ে অস্ফুটস্বরে কান্না করতে থাকল।এই মুহূর্তে এই বদ্ধ খাঁচা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ছটফট করছে সে।আদৌ কি এই ভ**য়ং*কর,বি**কৃত মস্তিষ্কের মানুষটির কাছ থেকে মুক্তি পাবে নিধি?
প্রশ্ন টা নিজের মনে আওড়ালো নিধি।কিন্তু কোনো উত্তর পেলো না।”

“রুমে এসে নিধিকে এভাবে চেয়ার সহ ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখে,উচ্চস্বরে হেসে উঠলো নির্জন।ধীর পায়ে নিধির সামনে গিয়ে বললো,

‘ইশশ!খুব ব্যথা পেয়েছো তাই না?খামোখা নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করলে।আমার মুখে মুখে তর্ক না করলে এমন দিন দেখতে হতো না,জানপাখি।’

বলেই নিধিকে চেয়ার সহ উঠিয়ে মুচকি হেসে,রুমের এক কোণ থেকে আরেকটি চেয়ার এনে নিধির সামনা-সামনি পায়ের ওপর পা তুলে বসে বললো,

‘এই ব্ল্যাক টি-শার্টে কেমন লাগছে আমাকে?’

“নির্জনের দিকে তাকিয়ে নিধি ঘৃণা ভরা মন নিয়ে বললো,

‘বি**শ্রী।’

“নিধির জবাব পেয়ে নির্জন স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

‘হুম জানি,এখন তোমাকে বেঁধে রেখেছি তো,তাই অভিমান করে বলছো,আমার অভিমানী বউ।তবে তোমাকে কিন্তু পিংক কালার থ্রি পিসে দারুণ লাগছে।যদিও ঘামে ভিজে গিয়েছো।নো প্রবলেম, একটু পর দু’জনেই শাওয়ার নিবো।’
বলেই বাঁকা হাসলো নির্জন।”

“নির্জনের ইঙ্গিত বুঝতে দেরি হলো না নিধির।এতক্ষণে ও পুরোপুরি বুঝে গেলো,যে এতদিন নিজের অজান্তে ও একজন বি**কৃত মস্তিষ্কের মানুষের সাথে সংসার
করেছে।যার বাহ্যিক দিক থেকে ঠান্ডা মস্তিষ্কের আচরণ ছিলো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
এই মুহূর্তে এই লোকটির সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না নিধির।তবুও ঘৃণা ভরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে উচ্চস্বরে বলে উঠলো,

‘আপনি পশুর চেয়েও অধম।’

“ব্যাস,নির্জনের উগ্র মস্তিষ্ক নাড়িয়ে দেওয়ার জন্য নিধির এই একটি বাক্যই যথেষ্ট ছিলো।
নির্জন নিধির গালে আলতো করে চুমু দিয়ে মুচকি হেসে বললো,

‘আমি যাবো আর আসবো।’

বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।নিধি চাতক পাখির ন্যায় তাকিয়ে রইলো দরজার দিকে।ওর মস্তিষ্ক যেন ধীরে ধীরে অচল হয়ে আসছে।”

“কিছুক্ষণ পর হাতে খাতা এবং কলম নিয়ে, ফিরে এসে নির্জন মুচকি হেসে নিধির মুখোমুখি বসে বললো,

“আজ একটা পরীক্ষা হবে।এটাকে বলা হয়,’রোমান্টিক সারপ্রাইজ টেস্ট’।মানে ‘সারপ্রাইজ এক্সাম’।যেটা এখন তুমি দিবে।হাহাহা..এমন পরীক্ষার নাম এই প্রথম শুনলে,তাই না?আমি জানি,আসলে আমার সবকিছুই তোমার কাছে সারপ্রাইজ,অ্যাম আই রাইট জানপাখি?”

“নিধি নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে নির্জনের দিকে।মনে হয় সে পণ করেছে,সে আর কথা বলবে না।
কিন্তু, নির্জন কে অবহেলা করা অসম্ভব।নিধির অসহায় মুখ-ভঙ্গিমা দেখে,নির্জন তৃপ্তির হাসি দিয়ে বললো,

‘অনেক টাইম ওয়েস্ট করেছি।এখন পরীক্ষা শুরু হবে।’

বলেই চশমাটি তর্জনী দিয়ে ঠিকঠাক করে,আদর্শ শিক্ষকের ন্যায় শুরু করলো,

“এখানে মোট ৬টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।একটি রোমান্টিক বড় প্রশ্ন,বাগধারা,শূন্যস্থান পূরণ,এক কথায় প্রকাশ,সমার্থক
শব্দ এবং পত্র লিখন=৩০নম্বর
এর মৌখিক পরীক্ষা হবে।
২৫নম্বর পেলে, A+ পাবে।আর এর চেয়ে বেশি নম্বর পেলে, গোল্ডেন A+ পাবে।আর মার্ক অনুযায়ী রোমান্স হবে। A+ অথবা, গোল্ডেন A+পেলে, রোমান্সে খুব বেশি গভীরতা থাকবে না।তুমিও স্বাধীনতা পাবে।আর যদি নম্বর কম পাও,তাহলে গভীর রোমান্সের জন্য প্রস্তুত হও।’
বলে ডেভিল হাসলো নির্জন।”

“অতঃপর,নির্জন নিধির ঠোঁট জোড়ায় গভীর ভাবে চুম্বন করলো।কয়েক সেকেন্ড পর একটু জোরে বা**ইট করতেই কেঁপে উঠলো নিধি।নির্জন নিধি কে ছেড়ে দিয়ে নিধির ঠোঁট জোড়ায় তর্জনী দিয়ে বললো,

‘ইশশ! কিছুটা কে**টে গিয়ে র**ক্ত বের হচ্ছে।এই মুহূর্তে তোমার কোমল ওষ্ঠদ্বয়ে মিশে থাকা র**ক্তকণিকা গুলো কেও আমার খুব হিংসা হচ্ছে..উফফ!’

বলেই নিধির ঠোঁট জোড়া আবার আকড়ে ধরলো।ন্যানো সেকেন্ড পর নিধি কে ছেড়ে বাঁকা হেসে বললো,

‘র**ক্তকণিকা গুলো কে আমি গ্রাস করে নিয়েছি।এইবার শুধু আমার ছোঁয়া তোমার ঠোঁটে মিশে আছে ডার্ক কুইন।’

বলে নিধির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো নির্জন। এমন ভাবে হাসলো,মনে হলো সে যেন নিষ্পাপ শিশু।”

“নিধি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে নির্জনের কর্মকান্ড দেখতে থাকলো।এই মুহূর্তে ও চাইলেও কিছু করতে পারবে না।কারণ,সামনে বসে থাকা সুদর্শন অথচ হিং**স্র মানব টি ওকে চেয়ারের সাথে মোটা রশির শক্ত বাঁধনে জড়িয়ে রেখেছে।”

“নির্জন চেয়ারে বসে দুই উরুর ওপর খাতা রেখে,কালো রঙের কলমটি ঠোঁটের কোণায় স্পর্শ করে কিছু একটা ভাবলো।তারপর খুব নিচু স্বরে বিড়বিড় করে কিছু বললো।অতঃপর নিধির দিকে তাকিয়ে,চোখ টিপে, বাঁকা হেসে সাদা পৃষ্ঠায় কিছু লিখতে থাকল।আর নিধি সেদিকে নিষ্প্রাণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল।ওর মনে এখন কোনো প্রশ্ন জাগছে না।নিধি যেনো একটা মূর্তির ন্যায় মেরুদন্ড সোজা করে বসে আছে।”

“প্রায় ২০মিনিট পর নির্জন নিধির দিকে খাতাটি এগিয়ে দিয়ে বললো,

‘এখানে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর লিখে দিয়েছি।৩০ মিনিটের মধ্যে এগুলো মুখস্থ করে আমার কাছে মৌখিক উত্তর দিবে।আমি জানি,তোমার মুখস্থ বিদ্যা খুব ভালো।যেহেতু দীর্ঘসময় পড়াশোনা থেকে দূরে থাকার কারণে তোমার মস্তিষ্কে মরিচীকা পড়ে গেছে,তাই মুখস্থ করতে ৩০মিনিট সময় দিলাম।নইলে, ১৫মিনিট সময় দিতাম।নাও এইবার ঝটপট মুখস্থ করে আমাকে পড়া দাও।মনে করবে, এই মুহূর্তে আমি তোমার ‘লাভ অফ টিচার’।আর আমার কথা না শুনলে কি করবো বুঝতেই পারছো।’

বলেই নির্জন নিধির সামনে খাতা ধরলো।নিধি খাতার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন এবং উত্তর দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো।মলিন দৃষ্টিতে একবার নির্জনের দিকে তাকিয়ে,খাতার দিকে নজর দিয়ে মনে মনে কিছুক্ষণ পড়তে থাকল।
এই মুহূর্তে নির্জনের কথা শোনা ছাড়া কোনো উপায় নেই।নইলে সে আবারও ঝাঁপিয়ে পড়বে।এটা নিধি কোনোভাবে চায় না।’

“এদিকে নিধির দিকে স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে নির্জন।মনে হয় কোনো ছোট বাচ্চা কে সে লাঠি সামনে নিয়ে পড়তে বসিয়েছে। আজ যেভাবে হোক পড়া তাকে দিতেই হবে।’
ঠিক ৩০ মিনিট পর খাতা টা সরিয়ে ফেললো নির্জন।আদেশের স্বরে প্রশ্ন করলো,

১|’ডার্ক কুইনের প্রতি নির্জনের ভালোবাসা মোট কত প্রকার?ও কি কি?

“নিধি ভয়ার্ত স্বরে বললো,’চ..চা..চার প্রকার।”

“নির্জন নিধির ঠোঁট যুগলে তর্জনী দিয়ে বললো,

‘হুঁশশ.. একদম তোতলাবে না।আমি যেভাবে স্পষ্ট ভাষায় প্রশ্ন করেছি,সেভাবে স্পষ্ট ভাষায় উত্তর দিবে।নইলে আবারও রোমান্টিক ট**র্চার শুরু হবে।যেখানে আগে-পরে থাকবে বিভিন্ন ভ**য়ং**কর,থ্রিলিং কাহিনী..হাহাহা।হুম, এইবার স্পষ্ট ভাষায় উত্তর দাও।’

“নিধি শুকনো ঢোক গিলে কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো,

‘ডার্ক কুইনের প্রতি নির্জনের ভালোবাসা মোট ৪প্রকার।যথাঃ
১.নিঃস্বার্থ ভালোবাসা,
২.হিং**স্র ভালোবাসা,
৩.অতিরিক্ত রোমান্টিক ভালোবাসা’
বলেই থেমে গেলো নিধি।

“নির্জন নিজের চিবুকে আঙ্গুল রেখে নিধির দিকে একটু ঝুঁকে হাস্কি ভয়েসে বললো,

‘আরেক টা বলো নি ডার্ক কুইন।আবার শুরু করবো নাকি?”

“নির্জনের সাইলেন্ট কিলার টাইপ কথায় আঁতকে উঠলো নিধি।কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো,

‘নাম্বার ৪.ভ**য়ং*কর ভালোবাসা।”

“নির্জন এইবার গাঢ় স্বরে বললো,
‘এইবার বাগধারা গুলো বলে ফেলো এবং সেগুলো দিয়ে বাক্য গঠন করো।”

“নিধি করুণ স্বরে বলতে থাকল,

২|রোমান্টিক বাগধারা-

১.অরণ্যে রোদনঃনিষ্ফল আবেদন/বৃথা চেষ্টা=আমি নির্জনের কাছ থেকে পালানোর জন্য ‘বৃথা চেষ্টা’ কখনোই করব না।

২.অন্ধিসন্ধিঃফাঁকফোকর/গোপন তথ্য=আজ আমি এই রহস্যময় বাড়িটি তে যেসব ‘গোপন তথ্য’ পাবো,সেগুলো আমি এবং সৃষ্টিকর্তা ব্যতীত কেউ জানবে না।

৩.অন্ধের যষ্ঠি/অন্ধের নড়িঃএকমাত্র অবলম্বন=এই পৃথিবীতে আমার বেঁচে থাকার ‘একমাত্র অবলম্বন’ হলো,আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি নির্জন।

৪.অগড়ম-বগড়মঃপা**গলের প্রলাপ=আমার ভালোবাসার মানুষ নির্জন কে নিয়ে যারা নেতিবাচক সমালোচনা করবে,ধরে নেবো সেটা ‘পা**গলের প্রলাপ।’

৫.আকাশ কুসুমঃঅবাস্তব=আমার সাথে যেসব রহস্যময় ঘটনা ঘটেছে,সেগুলো স্বপ্ন অথবা ‘অবাস্তব’ মনে হলেও,নিঃসন্দেহে সত্যি ঘটনা।”

৬.ঠোঁট কা**টাঃবেহায়া=নির্জনের ভালোবাসার ধূম্রজালে আটকে থাকার জন্য আমি বারবার ‘বেহায়া’ হতে চাই।

৭.ইলশে গুঁড়িঃগুড়ি গুড়ি বৃষ্টি=আমি কখনোই চাই না,আকাশ ভেদ করে আসা ‘গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি’ আমাকে স্পর্শ করুক।

৮.খাল কে**টে কুমির আনাঃবিপদ ডেকে আনা=নির্জনের ভালোবাসার দিকে নজর দেওয়া, আর ‘বিপদ ডেকে আনা’ একই ব্যাপার।

৯.জিলাপির প্যাঁচঃকুটিলতা=নির্জন হলো সুস্থ-স্বাভাবিক একজন প্রেমিক পুরুষ।তার মধ্যে কোনো ‘কুটিলতা’ নেই।

১০.টুপ ভুজঙ্গঃনেশায় বিভোর=ডার্ক কুইন তার সবচেয়ে প্রিয়তম স্বামী নির্জনের মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসার ‘নেশায় বিভোর’ হয়ে থাকতে চায়।”

“নিধির কাছ থেকে ঠিকঠাক উত্তর পেয়ে খুশি হলো নির্জন।মুচকি হেসে বললো,

‘ব্রিলিয়ান্ট গার্ল।’হুম,এইবার পরের প্রশ্নের উত্তর দাও।’

“নিধি নির্জনের দিকে ক্লান্ত চাহনি নিক্ষেপ করে বলে উঠলো,

৩|রোমান্টিক শূন্যস্থান পূরন-

১.আমি নির্জনের সবচেয়ে প্রিয় মানবী____বলছি।
=ডার্ক কুইন
২.সে আমার শরীরের____মিশে আছে।
=রন্ধ্রে রন্ধ্রে
৩.তাকে ছাড়া আমার জীবন____।
=অকল্পনীয়
৪.তার বুকে মাথা রেখে আমি_____
শায়িত হতে চাই।
=চিরনিদ্রায়
৫.নির্জনের অনুপস্থিতিতে প্রতি ন্যানো সেকেন্ডে আমার______হয়।
=হৃদয়ে র**ক্তক্ষরণ

” নির্জন মুচকি হেসে বললো,

‘বাহ!এইবার ৪নাম্বার প্রশ্নের উত্তর দাও সোনা।’

“নিধি বাধ্য মেয়ের মত বলতে শুরু করলো,

৪|রোমান্টিক এক কথায় প্রকাশ-

১.নিধিকে ভালোবাসে যে জন=নিধির্জন।
২.যে নারী অন্য কারো প্রতি আসক্ত হয় না=অনন্যা
৩.যে নারী ভালোবাসা কম বোঝে=পাষাণী
৪.যে প্রেম কথাটা বোঝে না=পা**গল
৫.যে নারী আঁধার রাতে আলো ছড়ায়=ডার্ক কুইন।

“নির্জন এইবার নিধির গালে চুৃুমু দিয়ে বললো,

‘গুড,এইবার ৫ নাম্বার প্রশ্নের উত্তর বলো নিরুপমা।’

“নিধি আবারও বাধ্য মেয়ের মতো বলতে শুরু করলো,

৫|রোমান্টিক সমার্থক শব্দ
প্রদত্ত শব্দ —– সমার্থক শব্দ
১.ভালোবাসা—-প্রণয়,মমতা,প্রীতি
২.নির্জন —– নিভৃত,জনশূন্য
৩.নিরুপমা —–অতুলনীয়া
৪.অতিশয়—–অতিমাত্রা,পরম,খুব
৫.হৃদয়ে র**ক্তক্ষরণ—–অন্তঃকরণে র**ক্তহ্রাস”

“নির্জন এইবার হাতে তালি বাজিয়ে বললো,

‘গুড,এক্সিলেন্ট।এইবার একটা রোমান্টিক পত্র শোনাও ডার্ক কুইন।’

“নিধি নির্জনের দিকে ঘৃণার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাঁত কিড়মিড় করে বলতে থাকল,

৬|রোমান্টিক পত্র লিখন।
মনে করো,তোমার স্বামী তোমার অহেতুক অবহেলায় কষ্ট পেয়ে,তোমার সাথে অভিমান করেছে।তার অভিমান ভা**ঙানোর জন্য, তার উদ্দেশ্যে তুমি একখানা রোমান্টিক পত্র লিখো।(ঠিকানা লিখতে হবে না।)

বলেই নিধি নির্জনের দিকে ক্লান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তৃষ্ণার্ত গলায় বলে উঠলো,

‘প্রাণের চেয়ে প্রিয় স্বামী,
আপনি কেমন আছেন?মন বলছে, আপনি বিষন্নতায় ভুগছেন।আমি আপনাকে জেনে-বুঝে অনেক অবহেলা করেছি এবং নিজের অজান্তেই অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।অনুগ্রহ করে আপনি আমায় ক্ষমা করে দিন।এমন ভুল আমি আর কখনো করব না।আমি আপনার নিকট ওয়াদা করছি।আপনি আমার প্রাণের চেয়েও প্রিয় স্বামী।আমি আপনার অপরিসীম ভালোবাসায় বারংবার সিক্ত হতে চাই।আপনার হাত আমি কখনোও ছাড়বো না।আপনার মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসা ত্যাগ করার থেকে,মৃ**ত্যু শ্রেয়।দিবসে,রজনীতে,ইহকালে,পরকালে সব জায়গায় আপনাকে চাই।আপনিই তো আমার সকল সুখের মূল।ওগো আমার ‘হৃদস্পন্দন’ দয়া করে আপনি আর আমার সাথে রাগ করে থাকবেন না।আপনার হৃদয়ে ক্ষ**ত করে আমি সুখে থাকতে পারব না।আপনার বক্ষগহ্বরে যন্ত্রণা দেওয়ার জন্য,প্রতিমুহূর্তে আমার হৃদয়ে র**ক্তক্ষরণ হচ্ছে।আসুন, আমরা সকল মান-অভিমান ভুলে আবারও মিলিত হয়ে যাই।
আশা করি,আপনি আমার হৃদয় নিংরানো পত্রের উত্তর খুব তাড়াতাড়ি দিবেন।পরিশেষে সর্বদা আপনার সুস্থতা এবং আমার প্রতি মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসা কামনা করছি।

ইতি আপনার অতিশয় প্রিয়
ডার্ক কুইন।”

“নিধির চিঠি পড়া শেষ হতেই নির্জন বাঁকা হেসে,মুহূর্তেই নিধির ওষ্ঠদ্বয় নিজের ওষ্ঠদ্বয়ে আবদ্ধ করলো।কয়েক সেকেন্ড পর নিধি কে ছেড়ে দিয়ে নেশালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাস্কি ভয়েসে বললো,

‘ক্ষমা করে দিয়েছি ডার্ক কুইন।আশা করি, গভীর চুম্বনের মাধ্যমে উত্তর টা পেয়ে গেছো।তোমার ভ**য়ার্ত র**ক্তিম চেহারা দেখে,এতক্ষণ নিজেকে কন্ট্রোল রাখা দায় হয়ে পড়েছে।তাই তোমার বাকি চিঠির উত্তর প্র্যাক্টিক্যালি দিবো।তুমি কি প্রস্তুত ডার্ক কুইন?’

“ওহ..জানপাখি কংগ্রাচুলেশন,তুমি সাড়ে ২৯ নম্বর পেয়েছো এবং গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছো।হাফ নম্বর কম পেয়েছো,কারণ তুমি প্রথম প্রশ্নে চার নম্বর উত্তর দিতে দেরি করেছো+তোতলামো করেছো।যাইহোক, এখন আমি আমার কথা রাখবো।এখন আমাদের মধ্যে দুষ্টু-মিষ্টি আদুরে রোমান্স হবে,যেমন টা ফুলসজ্জা রাতে তুমি আমায় আর আমি তোমায় করেছিলাম।তবে, তার আগে আমি তোমার উদ্দেশ্যে একটি কবিতা বলতে চাই।’
বলেই নির্জন শুরু করলো,

“অন্ধকারের প্রেম”

প্রেমের অন্ধকার পথে, যেখানে রাতের ছায়া গভীর,
দুটি হৃদয় মিশে যায়, একটি ভয়**ঙ্কর মর্মমূলে।
ভালোবাসার এই গভীর রাতে, যেখানে আলো নেই,
দুটি আত্মার মিলন, ভয়**ঙ্কর এক অগ্নির সৃজন।

প্রেমের শিকল পরানো, অন্ধকারের বন্ধনে,
একে অপরের মাঝে গাঢ়, অব্যক্ত আকর্ষণ।
শরীরের ছোঁয়ায়, চিরন্তন অসীমের ভয়,
মিলনের এই ক্ষণে, হৃদয় ফেটে যায় ভয়ের তাণ্ডবে।

চোখের গভীরে লুকানো, এক অন্ধকার কাহিনী,
মিলনের এই র**ক্তাক্ত পথে, প্রেমের শক্তি তীব্র ও নিষ্ঠুর।
প্রেমের এই অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ, যেখানে শান্তি নেই,
অন্ধকারে মিলিত হয় দুই হৃদয়, এক অমর ও ভ**য়ঙ্কর সত্যের উন্মোচনে।” ~মেহের~

#চলবে…

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৪৪
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ❌
[প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত]

“অন্ধকারে মিলিত হয় দুই হৃদয়,এক
অমর ও ভয়**ঙ্কর সত্যের উন্মোচনে।”

“নির্জনের এহেন কবিতা শুনে ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো নিধি।ভীতু দৃষ্টিতে নির্জনের দিকে তাকালো।”

“নিধির ভ**য়ার্ত চাহনি লক্ষ্য করে ভীষণ খুশি হলো নির্জন।এটাই তো সে চেয়েছিলো।নিধি তাকে ভয় পাবে,তার কথা মতো চলবে।যাক,অবশেষে সে সফলতার একটি ধাপ অতিক্রম করতে পেরেছে।”

কথাগুলো ভেবে নিধির হাতের বাঁধন খুলতে খুলতে বললো,

‘উমম,এখন ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসবে।তারপর আমরা ভালোবাসার সুন্দর একটি মুহূর্ত কা**টাবো ডার্ক কুইন।আজ থেকে আমরা নতুন জীবন শুরু করবো।যে জীবনে কোনো তৃতীয় ব্যক্তির পদার্পণ ঘটবে না,হোক সে তোমার আপন বা পর।আমি যদি সবকিছু মেনে চলতে পারি,আশা করি তুমিও পারবে।’
বলতে বলতে হাতের বাঁধন খুলে দিতেই,নিধি হিং**স্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে, নির্জনের বুক বরাবর দুই হাত দিয়ে ধা**ক্কা দিয়ে,দাঁড়াতে চাইলো।কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, ওর পা তখনও চেয়ারের সাথে বাঁধা ছিলো।
নিধির ধা**ক্কাতে কিছুটা সরে গিয়ে হো হো করে হেসে উঠলো নির্জন।
হাত দিয়ে চুলগুলো উল্টিয়ে বললো,

‘বাহ!আমার বউয়ের দেখি খুব তেজ!হুম,এমনই তো আমি চেয়েছিলাম।’
বলেই বাঁকা হাসল নির্জন।অতঃপর নিধির কাছে এসে দুই হাত ওর কাঁধের ওপর রেখে আবারও বসিয়ে দিয়ে,তড়িৎ গতিতে বেঁধে দিতে দিতে বললো,

‘নিজেকে খুব চালাক ভাবো তুমি?কি ভেবেছিলে,তোমার ওই নরম হাত দিয়ে আমাকে ধা**ক্কা দিবে,আর আমি পড়ে যাবো,সেই সুযোগে তুমি পালিয়ে যাবে?হাহাহা..শেইম অন ইউ নিরুপমা।ওপস..সরি,নিরুপমা নাম টা তো তোমার বাবার পছন্দের ছিলো, তাই না?নো, নো, নো..এই নামে তোমাকে আমি ডাকব না।অন্যের ইউজ করা নামে তোমাকে ডাকব কেনো?তোমাকে আমি ‘নিরু’ বলে ডাকব।আমার নিরু,আমার জানপাখি,আমার ডার্ক কুইন।
আর হ্যা,আমি কিন্তু বুকে একটু ব্যথা পেয়েছি।কিছুক্ষণ পর আদর করে দিবে, ওকে?এখন তোমাকে আমার অতীতের কিছু ঘটনা শোনাবো।তারপর আমরা ভালোবাসার সুন্দর একটি মুহূর্ত কা**টাবো।তখন তোমার এই ধা**ক্কা দেওয়াতে কোনো কাজ হবে না,ডার্ক কুইন।’

বলেই চেয়ার টেনে নিধির মুখোমুখি বসলো নির্জন।”

“নিধি উচ্চস্বরে বলে উঠলো,

‘আপনার কোনো অতীত ইতিহাস আমি শুনবো না।আপনি একজন বি**কৃত মস্তিষ্কের লোক।আমারই ভুল হয়েছে আপনাকে ভালোবাসা।বাবার পছন্দ করা পাত্রকে বিয়ে করলে,আজ আমার এই দিন দেখতে হতো না।’
বলেই নির্জনের তীক্ষ্ণ দৃষ্টির উপেক্ষা করে মুখ ঘুরিয়ে নিলো নিধি।”

“নিধির এহেন কথা শুনে, চোখজোড়া বন্ধ করে কয়েক সেকেন্ড একা একা বিড়বিড় করলো নির্জন।কয়েক সেকেন্ড পর টেবিলের ড্রয়ারে থাকা একটা মাঝারি সাইজের ধা**রালো ছু**রি বের করে নিধির হাতের তালুতে আলতো করে দিলো এক টান।নির্জনের আকস্মিক আ**ক্রমণে চি**ৎকার করে উঠলো নিধি।
নিধির চি**ৎকার শুনে, দুই কান চেপে ধরলো নির্জন।র**ক্তিম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলতে থাকল,

‘চুপ..চুপ একদম চুপ.. উচ্চস্বরে কথা বলবে না।আমার কানে সমস্যা হয়।’

“নির্জন বলার পরেও নিধি থামল না।বরং আরও জোরে চি**ৎকার করে উঠলো।এদিকে নিধির হাত থেকে ফিনকি দিয়ে র**ক্ত বেরিয়ে টপ টপ করে ফ্লোরে পড়ছে।সেটা দেখে নির্জন টেবিলে থাকা সেলোটেপ দিয়ে নিধির মুখে পেঁচিয়ে দিলো,যেন চি**ৎকার করতে না পারে।
তারপর নিধির গালে হাত রেখে উত্তেজিত স্বরে বললো,

‘খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না?আমার সাথে এমন ব্যবহার না করলেই তো পারো।একটু অপেক্ষা করো, এখনই তোমার হাতে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছি।’
বলেই কাভার্ড খুলে ফাস্ট এইড বক্স এনে,সন্তর্পণে নিধির বাঁধা হাতে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে মুচকি হেসে বললো,

‘উহুম,এখন আর চাইলেও কথা বলতে পারবে না নিরু।আমার অতীত ইতিহাস শুনবে,তারপর তুমি আর আমি নতুনভাবে ভালোবাসার প্রহর কা**টাবো।ভেবেছিলাম,তোমার সাথে সুন্দর সময় কা**টিয়ে তারপর আমার অতীত জীবনের কথা বলবো,কিন্তু তুমি দেখি বন্দী পাখির মতো ছটফট করছো।তাই তোমাকে একটু শান্ত করে দিলাম।’
বলেই নির্জন মাথা নিচু করে শুরু করলো,

[অতীত]
“তখন আমার বয়স ছিলো ৮বছর।আমার বাবার নাম সাজিদ খান,আর মায়ের নয়না।বাবা মাকে ভালোবেসে ‘সুনয়না’ বলে ডাকত।আমার জন্ম হওয়ার পর,মা তার নামের সাথে মিলিয়ে আমার নাম রেখেছিলো ‘নির্জন’। মা-বাবা আর আমি,মিলে খুব সুখী পরিবার ছিলাম।আর্থিক দিক থেকেও ভালোই ছিলাম।কারণ,আমার দাদা আমার বাবার নামে তার সম্পত্তি দলিল করে দিয়েছিলো,যেহেতু বাবা তার একমাত্র সন্তান ছিলো।ছোটবেলা থেকে আমি ছিলাম প্রানবন্ত এবং খুব দুষ্টু স্বভাবের।আমাদের জয়েন ফ্যামিলি ছিলো।যতদিন দাদি বেঁচে ছিলো,আমি বেশিরভাগ সময় দাদির সাথেই কা**টাতাম।এক সময় আমরা পুরো পরিবার মিলে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গেলাম।সেখানে আমরা প্রতিবছর গিয়ে সুন্দর সময় কা**টাতাম।হঠাৎ দাদি সেখানে গিয়ে বায়না ধরে,যে সে মৃ**ত্যুর আগ পর্যন্ত এখানেই থাকতে চায়।সে আর ঢাকা-শহর যেতে চায় না।বৃদ্ধ মায়ের কথা শুনে,আমার বাবা এবং মা উভয়ে রাজি হয়ে যায়।পরবর্তীতে আমরা ঢাকার বাড়িটি ভাড়া দিয়ে গ্রামের বাড়িতে জীবন-যাপন শুরু করি।”

“আমাকে গ্রামের একটি স্কুলে ভর্তি করা হয়।সেখানে আমার কিছু বন্ধু হয়েছিলো।পড়াশোনা এবং ওদের সাথে হৈ-হুল্লোড় করে আমার সময় কে**টে যেতো।একদিন স্কুল ছুটি হওয়ার পর, আমরা বন্ধুরা মিলে স্কুলের মাঠে ক্রিকেট খেলি।খেলতে খেলতে এক সময় বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায়।আমি আর আমার বন্ধুরা কিছুটা পথ একসাথে যাই,তারপর ওরা যে যার বাসায় চলে যায়।আমার বাসা কিছুটা দূরে ছিলো।তাই সেই সন্ধ্যাবেলা আমি হাতে ব্যাট নিয়ে একাই বাড়ি ফিরছিলাম। বাবা তার কিছু কাজের জন্য শহরে গিয়েছিলো।আমার এত দেরি দেখে, মা আমায় খুঁজতে বেরিয়েছিলো।আমাদের বাসার একটু সামনে এগিয়ে রাস্তার পাশে একটি জঙ্গল ছিলো।সেখানে তেমন কেউ যেতো না।আর সন্ধ্যার দিকে সেদিক দিয়ে তেমন কারো যাতায়াত থাকত না।আমি যখন সেই জায়গা দিয়ে যাচ্ছিলাম,
তখন সন্ধ্যার অন্ধকার গাঢ় হয়ে আসছিলো, আর রাস্তার পাশে জঙ্গলের শুনশান পরিবেশে শুধু পাতার মৃদু খসখসানির শব্দ শোনা যাচ্ছিলো।আমি ধীরে ধীরে হাঁটছিলাম, ক্লান্ত শরীরে আর ক্রিকেট খেলার উত্তেজনা মিশ্রিত মনের মধ্যে একটু বিশ্রামের আশায়।কিন্তু,হঠাৎ করেই সেই ভ**য়ং**কর মুহূর্তের সম্মুখীন হলাম।”

“একজন নারী কন্ঠস্বর জঙ্গলের ভেতর থেকে ভেসে আসল।অসহায় আর আত**ঙ্কে ভরা এক চি**ৎকার, যেন কারো বাঁচার আকুতি। আমার মনে একটা ধা**ক্কা লাগল। এই কন্ঠটা তো চেনা! মায়ের কন্ঠ!আমি ব্যাটটা ফেলে ছুটে গেলাম সেই দিকে, ভ*য় আর সন্দেহের মাঝে দৌড়ে দৌড়ে জঙ্গলের গভীরে পৌঁছালাম।”

“সেখানে গিয়ে চোখের সামনে যে দৃশ্য ফুটে উঠল, তা আমাকে হতবাক করে দিলো।আমার মা মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছে। আর তার ওপর কিছু অ**মানুষ, অসহায় মায়ের শরীরকে টেনে নিচ্ছে নিষ্ঠুরভাবে, প্রতিটি আ**ঘাতে যেন মায়ের আত্মা ভে**ঙে চুরমা**র হয়ে যাচ্ছে। মা বারবার তাদের হাত থেকে পালানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু সেই পি**শাচেরা তাকে শক্ত করে ধরে রেখেছে। মাকে নিঃশব্দে আ**র্তনাদ করতে দেখে আমার মনে হলো, যেন সে জ্বলে পু**ড়ে যাচ্ছিলো।”

“আমার পায়ের তলায় মাটি যেন সরে যাচ্ছিলো,আমি চি**ৎকার করে উঠলাম,

“মা! মা! তুমি কি আছো?”
আমার গলার স্বর ভে**ঙে গিয়েছিলো ভয় আর দুঃখে। কিন্তু সেই চি**ৎকার কোনো ফলাফল আনল না।কারণ, আমার চি**ৎকার মিশে গেলো সেই পি**শাচদের হিং**স্র হাসির মধ্যে।”

“আমার চি**ৎকার এতটা তীব্র ছিলো যে,সেই শব্দ আমার নিজের কানে বাজতে লাগল। হঠাৎ করেই যেন পুরো পৃথিবী থেমে গেলো। মায়ের অসহায় চি**ৎকার আর সেই পি**শাচদের নিস্তব্ধতার মাঝে,আমার কান ধরে এলো। কানে যেন এক ভীষণ শূন্যতা ঘিরে ধরলো। উচ্চ শব্দ আমার মনের ভেতর প্রতিধ্বনি তুলছিলো, যেন কানের ভেতর দিয়ে হঠাৎ এক অজানা বিস্ফোরণ ঘটল।”

“আমি তখনও চি**ৎকার করছিলাম, কিন্তু আমি নিজেই শুনতে পাচ্ছিলাম না।আমার কান থেকে র**ক্ত পড়তে শুরু করলো,অন্ধকারের মধ্যে সেটা আমি অনুভব করতে পারলাম।কিন্তু,মা তখনও নিঃশব্দে কাঁদছে।”

“আমার চি**ৎকারে পুরো জঙ্গলের পরিবেশ যেন স্তব্ধ হয়ে গেলো, কিন্তু সেই ভ**য়ানক ঘটনার কোনো পরিবর্তন হলো না।আমার মা তখনও দা**নবদের নিষ্ঠুরতার শিকার হচ্ছিলো, শরীরের প্রতিটি আ**ঘাতে তার নিঃশ্বাস ধীরে ধীরে কমে আসছিলো।পি**শাচের দলগুলো টর্চ লাইটের আলোতে সেগুলো তৃপ্তির সাথে উপভোগ করছিলো।আমার মাথা ঘুরে যাচ্ছিলো, চোখের সামনে সবকিছু ধোঁয়াটে হয়ে উঠছিলো। কানের অসহ্য য**ন্ত্রণায় বুঝতে পারছিলাম না কি ঘটছে, কিন্তু মাকে বাঁচানোর আকুতি আমার সমস্ত শক্তি নিংড়ে নিচ্ছিলো।”

“আমি এগিয়ে যেতে চেয়েছিলাম, দৌড়ে গিয়ে মাকে টেনে নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমার পা যেন জমে গিয়েছিলো মাটিতে। ভ*য়, হতাশা, আর কান থেকে র**ক্তের ধারা আমাকে আটকে দিলো। সেই না**রকীয় দৃশ্যের প্রত্যক্ষদর্শী হয়ে আমি কেবল চি**ৎকার করতে থাকলাম, কিন্তু কণ্ঠরোধ হয়ে আসছিলো। আমার চারপাশের সবকিছু নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো, শুধু মায়ের নিস্তেজ কান্না আর আমার নিজের কানের মধ্যে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল সেই য**ন্ত্রণাময় শব্দ।”

“মায়ের শরীর এক সময় নিথর হয়ে গেলো। পি**শাচেরা তখন নিজেদের কাজ শেষ করে,মায়ের নিস্তেজ শরীরটাকে ছেড়ে চলে যেতে শুরু করলো।আমি তখনও অবশ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম
আমার মায়ের দিকে, বিশ্বাস করতে পারছিলাম না কি হলো। চারপাশটা যেন হঠাৎ করেই পুরোপুরি অন্ধকারে ঢেকে গেলো, আর আমার মায়ের শরীরটা জঙ্গলের মাটিতে পড়ে রইল, নিস্তেজ, নিথর।”

“আমি ধীরে ধীরে হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে পড়লাম। মায়ের নিথর হাতটা ধরলাম, কিন্তু কোনো সাড়া নেই। তার গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছিলো না। চোখের সামনে আমার মায়ের মৃ**ত্যু, আমার নিজের চি**ৎকার আর কান থেকে বয়ে যাওয়া র**ক্তের ধারা, সবকিছু মিলিয়ে আমার ভিতরের সব অনুভূতি যেন স্থির হয়ে গেলো।
সেই রাতের পর থেকে আমি আর উচ্চশব্দ সহ্য করতে পারি না।আমার কান স্থায়ীভাবে ক্ষ*তিগ্রস্ত হয়েছিলো।
শুধু শারীরিক ভাবে নয়,বরং আমার ভেতরটাও গভীরভাবে ক্ষ**ত হয়েছিলো,যা কখনোও সেরে ওঠেনি।”

“জানো,যখন আমি মায়ের নিথর দেহটার দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে মায়ের মুখটা নিজের কোলে তুলে নিলাম, কিন্তু মায়ের চোখ দুটো বন্ধ ছিলো, তার ঠোঁটগুলো আর কাঁপছিলো না, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো,তখন আমার বুক ফেটে কান্না আসতে চাইলো, কিন্তু কান থেকে বয়ে যাওয়া র**ক্তের যন্ত্রণায় আমি নিস্তব্ধ হয়ে ছিলাম। মায়ের প্রাণহীন শরীরটা তখনও আমার কোলে, কিন্তু সেই উষ্ণতা আর নেই। মায়ের শরীরটা তখন কিছুটা শীতল, একেবারে নিথর।”

“সেই মুহূর্তে আমার জীবনও যেন থেমে গিয়েছিলো।কারণ,আমার মা আর এই পৃথিবীতে নেই…

“আমি যখন মায়ের নিথর দেহটা নিয়ে অনড় হয়ে বসেছিলাম,কিছুক্ষণ পর জঙ্গলের সেই নীরব অন্ধকারে আশপাশের লোকেরা এক এক করে সেখানে আসে। সবার মুখে অবিশ্বাস আর দুঃখের ছাপ। মায়ের মৃ**ত্যু সংবাদটা যেন মুহূর্তের মধ্যেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।আচ্ছা,আরেকটু আগে আসলে তো মনে হয় আমার মা বেঁচে যেতো, তাই না?”

বলতে বলতে নির্জনের চোখজোড়া নোনাজলে পরিপূর্ণ হয়ে গেলো।দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বলতে শুরু করলো,

“ধীরে ধীরে আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী সবাই জড়ো হতে শুরু করলো। কেউ চি**ৎকার করে কাঁদছে, কেউ অবাক হয়ে সেই ম**র্মান্তিক ঘটনাটা বিশ্বাস করতে পারছিলো না। মায়ের প্রিয় মুখটা যখন সবাই দেখলো, সবাই শোকে হতবাক হয়ে গেলো। তার একটিমাত্র সন্তান, যার জন্য সে সবকিছু করেছিলো, সে সন্তান আজ তার মাকে চিরতরে হারিয়ে ফেলেছে।”

“আমার বাবা শহর থেকে ফেরার পর এই খবর শুনে ভে**ঙে পড়লেন। তিনি ছুটে এসে মায়ের নিথর দেহটা দেখে থমকে গেলেন। বিশ্বাস করতে পারছিলেন না,যে তার সুনয়না আর নেই। তিনি কেঁদে উঠলেন, যেন তার হৃদয়ের গভীর থেকে কান্না বেরিয়ে আসছিলো।বাবা বারবার মাকে ‘সুনয়না’ নাম ধরে ডাকার চেষ্টা করলেন, কিন্তু মা আর কোনো সাড়া দিলো না। সন্তান আর স্বামীকে রেখে সুনয়না চিরতরে চলে গেছে। বাবা আর কথা বলতে পারলেন না, শুধু নির্বাক হয়ে বসে রইলেন স্ত্রীর পাশে।”

“মায়ের দাফনের জন্য আত্মীয়রা সব ব্যবস্থা করতে শুরু করল। গ্রামের সবাই মিলে শোকাহত পরিবেশে মায়ের জন্য দোয়া করল।আমি মায়ের পাশে বসে, এক দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলাম, যেন সবকিছু স্বপ্নের মতো লাগছিলো।কিন্তু সেই দুঃস্বপ্ন থেকে বেরোনোর কোনো পথ নেই। মাকে চিরতরে হারানোর শোক আমাকে ভেতরে ভেতরে পু**ড়িয়ে ফেলছিলো।”

“যখন মায়ের নিথর দেহটা কবরে নামানো হলো,আমার চোখ দিয়ে আর এক ফোঁটা কান্না আসেনি।কারণ, আমার ভিতরের সবকিছু যেন শূন্য হয়ে গিয়েছিলো।আমি শুধু নির্বাকভাবে তাকিয়েছিলাম।আমার মা মাটির নিচে হারিয়ে যাচ্ছিলো, সেই মাটিতে যেখানে তাকে চিরদিনের জন্য ঘুম পাড়ানো হলো। মায়ের কবরের ওপর মাটি চাপা দেওয়া হলো, আর সেই মাটির স্তূপের নিচে মায়ের স্মৃতি, ভালোবাসা, আর এক অসীম শূন্যতা রেখে গেলো।”

“আমার জীবন থেকে মায়ের হাসি, তার যত্ন, আর তার উষ্ণ উপস্থিতি চিরতরে চলে গেলো, আর সেই শূন্যতার ভার নিয়ে আমাকে বাকি জীবন কা**টাতে হলো।”

একাধারে কথাগুলো বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিধির দিকে তাকাতেই দেখলো,নিধির চোখজোড়া বেয়ে পানি পড়ছে।প্রথম দিকে নিধি মুখ বাঁধা অবস্থায় ‘উমম’ শব্দ করলেও,নির্জনের মায়ের ভ*য়ং**কর মৃ**ত্যুর কথা শুনে নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। নির্জন সযত্নে সেই পানি মুছে দিয়ে,তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে আবার বলতে শুরু করলো,

“মায়ের মৃ**ত্যুর ৭মাস পর,দাদিও পরলোকগমন করলো।সেদিনও আমি কাঁদিনি,হয়তো পাথর হয়ে গিয়েছিলাম।দাদির মৃ**ত্যুর পর,আমার জীবনের আরেকটা বড় ধা**ক্কা আসে। দাদির বিদায়ও আমাকে শোকের সমুদ্রে ভাসিয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু শোকের মাঝেই আত্মীয়-স্বজনরা আমার বাবাকে আবার বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। তারা বলতো,

‘সাজিদ একা থাকবে কীভাবে? সংসার চালানো, নির্জনের দেখাশোনা করা,সবকিছু সামলানোর জন্য একজন নারী দরকার।’
প্রথমে বাবা দ্বিধায় ছিলেন, কিন্তু ক্রমাগত চাপ এবং একাকীত্বের কারণে তিনি শেষমেশ রাজি হয়ে গেলেন।”

“কিছুদিনের মধ্যেই আমার বাবার দ্বিতীয় বিয়ে হলো। নতুন মা প্রথম দিকে আমার প্রতি বেশ ভালো ব্যবহার করতো। সে হাসিমুখে কথা বলতো,আমার যত্ন নিতো। কিন্তু দিন যেতে না যেতেই সেই আচরণ বদলে যেতে শুরু করল। বিশেষ করে তখন, যখন আমরা ঢাকায় ফিরে গেলাম। শহরে ফেরার পর থেকে আমার নতুন মা ধীরে ধীরে তার আসল রূপ প্রকাশ করতে শুরু করে।”

“আমি একদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে একটু দেরি করে ফেলি।আমি জানতাম যে মা রেগে যাবে, কিন্তু যা অপেক্ষা করছিলো, তা আমার কল্পনাতীত ছিলো। ঘরে ঢুকতেই মা এক বাক্যে আমাকে তিরস্কার করে রুমে আটকে দিলো।আমি কয়েক ঘণ্টা অন্ধকার রুমে বন্দী ছিলাম, বাইরে থেকে দরজা বন্ধ ছিলো। কোনো খাবার নেই, পানিও নেই।আমি ভয়ে শিউরে উঠেছিলাম।অন্ধকার ঘর আমি খুব ভয় পেতাম।সেদিন আমি কাঁপা কাঁপা হাতে দরজার দিকে তাকিয়ে ছিলাম, মাকে ডাকছিলাম, কিন্তু কোনো সাড়া মিলল না।”

“পরের দিন সকালে,আমার বাবা বাড়ি ফিরে এলে,আমি বাবাকে সবকিছু জানাই। মনে করেছিলাম, বাবা আমাকে রক্ষা করবে। কিন্তু বাবা আবার ব্যবসার কাজে বাইরে যাওয়ার পর মা সেই শাস্তি দ্বিগুণ করে দেয়। এবার আমার ওপর ‘স্পেশাল শাস্তি’ আসে।আমাকে মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসিয়ে দীর্ঘক্ষণ থাকতে হয়, কোনো কথা বলার অনুমতি নেই। শাস্তির শেষে আমি ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়ি, কিন্তু মায়ের চোখে কোনো মায়া ছিলো না,ছিলো শুধু হিং**স্রতা।”

“মা সবসময়ই বলত,

‘আমার জিনিসে তোর নোং**রা হাত স্পর্শ করতে পারবে না। নিজের জিনিস নিজেকেই যত্ন করে রাখতে হবে।
আমার কোনো খেলনা বা প্রিয় জিনিস ধরলেই,মা সেটা নিয়ে চলে যেতো।আমি কষ্ট নিয়ে চেয়ে থাকতাম, আর কিছু বলতে পারতাম না। প্রতিবার মায়ের চোখে সেই কঠোর দৃষ্টি, সেই অবজ্ঞা আমার হৃদয় ভে**ঙে দিতো।সেই থেকে ‘অবহেলা’ নামক জিনিস টাকে আমি ভীষণ ঘৃণা করি।”

“আমার জীবনটা তখন একটা নিষ্ঠুর নিয়মের মাঝে বন্দী হয়ে পড়েছিলো। সময় মতো স্কুল থেকে না ফিরলে শাস্তি, বাবার কাছে বিচার দিলেও আরও বড় শাস্তি।মায়ের কোনো জিনিসে স্পর্শ করলেও শাস্তি।শুধু শাস্তি,শাস্তি আর শাস্তি..।তার কারণে আমার ছোট ছোট আনন্দগুলো ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকল।”

“জানো,একদিন টিভিতে দেখছিলাম,সৎ মা তার সন্তানের কান মলে দেয়।আমার মাও সেটা দেখে বললো,

“দেখ,দেখ,আমি তোর সৎ মা হই।সারাদিন এত ‘মা, মা’ করিস কেনো?আমি তোর মা নই।যখন আমার সন্তান হবে,সে আমাকে মা বলে ডাকবে।যখন তোর বাবা সামনে থাকবে,তখন আমাকে ‘মা’ বলে ডাকবি।নইলে তোর বাবা আবার কষ্ট পাবে।তোদের বাপ-বেটার ঢং দেখে বাঁচি না বাপু।বলি কি,তোর মায়ের সাথে সেদিন ওই ধ**র্ষক গুলো তোকে মে**রে ফেললেও ভালো হতো।যত্তসব, বোঝা হয়ে আছে আমার ঘাড়ে।’

বলেই কান টা এত জোরে মলে দিলো,খুব ব্যথা পেয়েছিলাম!
জানো,সেদিন ভেবেছিলাম,সৎ মায়েরাও এতটা খারাপ হয়?কই,আমার বন্ধু পরশের সৎ মা তো খুব ভালো ছিলো।পরশ কে কতটা আদর করে খাইয়ে দিতো,ওর যত্ন করতো।আসলে সব সৎ মায়েরা খারাপ হয় না।ওই মহিলার মতো ডাইনীরা খারাপ হয়।”

“ওহ আরেকটা কথা তো তোমাকে বলাই হয়নি,
‘আমাকে যখন দিনের পর দিন অন্ধকার রুমে বন্দী করে রাখা হতো,তখন আমার খুব একা লাগত।খুব কথা বলতে মন চাইতো।তখনই আমি আবিষ্কার করি,আমার ভেতরে ‘মন’ আর ‘হৃদয়’ কথা বলতে পারে।হ্যা,আমার অন্ধকার জগতে ওরাই আমার সঙ্গী হয়।আমি কোনো প্রশ্ন করলেই সাথে সাথে উত্তর পেয়ে যেতাম।আমার সুখ-দুঃখের সাথী ছিলো ওরা।এই পর্যন্ত আমি যতগুলো ভালো কাজ করেছি,সবকিছুতে ‘মন’ আর ‘হৃদয়’ সাহায্য করেছে।”

“আমার যখন ১০বছর বয়স,তখন আমার বাবা হার্ট অ্যা**টাক করে মা**রা যায়।বাবা মা**রা যাওয়ার পর,জানতে পারি,আমার ১০ বছর বয়সে সে আমার জন্য এই বাড়িটি দলিল করে রেখে যান। কিন্তু ওই সম্পত্তি আমার ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে পাওয়া যাবে না।আমার সৎ মা জানত, যে সম্পত্তি পেতে হলে তাকে অপেক্ষা করতে হবে, তবে তার পরিকল্পনা ছিলো অন্যরকম।যদি সে আমাকে পড়াশোনায় মনোযোগী করে তোলে, তবে সে সেই সম্পত্তি পাবে।আমার প্রতি হঠাৎ করেই তার ভালোবাসা উপচে পড়ছিলো।সে আমাকে প্রতিশ্রুতি দেয়, যে সে আমার পড়ালেখায় সাহায্য করবে, আর আমি যদি ভাল ফলাফল করি, তাহলে সেই সম্পত্তি যেন পরবর্তীতে তার নামে লিখে দেই।কারণ,তখন তো আমি নিজেও প্রতিষ্ঠিত হবো।”

“আমি সৎ মায়ের প্রস্তাব মেনে নেই, কিন্তু অজান্তে সে জানে না যে তার উপর এক অন্ধকার চক্রান্ত চলছিলো,হাহাহা।আমার মন এমন কিছু ভেবেছিলো, যা তিনি কখনো কল্পনাও করতে পারেননি।”

“স্কুল জীবনে দিগন্ত আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হলেও, ওকে আমি সব কথা শেয়ার করতাম না।কিছু কথা নিজের মাঝে জমিয়ে রাখতে পছন্দ করতাম।”

“আমি যখন দশম শ্রেণীতে পড়ি, একদিন ২টা ক্লাস মিস দিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে,আমার মনে এক ধরনের চাপ অনুভব হয়। বাসায় প্রবেশ করে,আমি অনুভব করি কিছুটা অস্বাভাবিক পরিবেশ।আমার মায়ের রুমের দরজা খোলা এবং ঘরের ভেতর থেকে কিছু অদ্ভুত আওয়াজ আসছে।আমি কিছুটা অবাক হয়ে, এক পা সামনে বাড়িয়ে শুনতে পাই, মায়ের অচেনা কন্ঠের সঙ্গে কারো কথা বলার শব্দ। চুপচাপ পা বাড়িয়ে, সে রুমের দিকেই এগিয়ে যাই।

পরে,যে দৃশ্যটি আমার সামনে ধরা দেয়,তার জন্য আমি অপ্রস্তুত ছিলাম।মা এক অজ্ঞাত পুরুষের সঙ্গে নিষিদ্ধ কাজ করছে।আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে, মায়ের এই অবস্থা দেখে স্তম্ভিত হয়ে যাই। হঠাৎ, লোকটি আমার দিকে তাকিয়ে দেখে,হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে নেয় এবং তাড়াহুড়ো করে শার্ট হাতে নিয়ে আমাকে ধা**ক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়।আর মা লজ্জায় ফেটে পড়েন এবং দ্রুত চাদর মুড়িয়ে নেন,আমার চোখে চোখ পড়ার ভয়ে।
অথচ তার এহেন দশা দেখে,আমি মনে হয় সেদিন সবচেয়ে বেশি লজ্জা পেয়েছিলাম,ছিহঃ!

“এই দৃশ্যের পর আমার মনে তার জন্য দ্বিগুণ ক্ষোভ ও ঘৃণা জন্ম নেয়। দীর্ঘদিনের দুঃখ, অবহেলা আর অশান্তির পর আমার মনের মধ্যে এক ধরনের প্রতিশোধের ইচ্ছে তৈরি হয়।আমি ভাবতে থাকি,
‘মা, তুমি আমাকে শুধু কষ্টই দিয়েছো।এর বিনিময়ে তোমাকে কঠোর শাস্তি দেবো।’

“আমি কিচেনের দিকে চলে যাই, যেখানে রান্নার তেল রাখা ছিলো। তেলটি হাতে নিয়ে, কিছুক্ষণ ভেবে,চুপি চুপি মায়ের রুমে গিয়ে, তেলটি ফ্লোরে ছড়িয়ে দেই। অন্ধকারের ভেতর,সৎ মায়ের অবজ্ঞা আর সেই ভয়**ঙ্কর মুহূর্তের প্রতিশোধ নিতে আমার চোখে এক নিষ্ঠুর পরিকল্পনার ঝিলিক দেখা দেয়। তেল পুরো ফ্লোরে ছড়িয়ে দিয়ে,আমি নিজের রুমে ফিরে আসি।

আর মা তেল মাখা মেঝে না দেখে,বিছানা থেকে নিচে নামতেই,তার পা পিছলে যায়, এবং সে ফ্লোরে পড়ে যায়। আমি রুম থেকে বেরিয়ে মায়ের দিকে ঠাণ্ডা চোখে তাকিয়ে থাকি।আমি দেখেছিলাম, মা ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু তার গতি খুবই ধীর।আমি মনে মনে বলেছিলাম,
“এটাই তোমার জন্য উপযুক্ত শাস্তি, মা।”

“মায়ের আহাজারি এবং লজ্জার মধ্যে আমি মনে মনে হাসছিলাম। তার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে, আমার মাঝে এক অদ্ভুত আনন্দ সৃষ্টি হয়, কারণ মা শেষ পর্যন্ত তার শাস্তি পাচ্ছে,যে শাস্তি আমার মন এবং আত্মাকে শান্তি দিয়েছিলো।সেদিন বুঝেছিলাম,কেউ অন্যায় করলে,তাকে যথাযথ শাস্তি দেওয়ার মত আত্মতৃপ্তি এই পৃথিবীতে নেই।”

“মাকে এতটা ছটফট করতে দেখে, আমি আশেপাশের প্রতিবেশীদের ডেকে এনে,তাদের সাহায্যে মা কে হসপিটালে নিয়ে গেলে,ডাক্তার ঘোষণা দেয়,মায়ের কোমর এবং পায়ের হাড়ে প্রচন্ড আ**ঘাত লেগেছে।সুস্থ হতে সময় লাগবে।
ডাক্তারের এহেন কথায় সেদিন আমার খুব মন খারাপ হয়েছিলো।আমি সেদিন শয্যাশায়ী মহিলাটির দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম,

‘তুমি আমার জীবনে এসেছিলে কেবল আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য, মা হওয়ার তোমার কোনো অধিকারই ছিলো না!’

“আমি মাকে চূড়ান্ত শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।তার জন্য একটি নিখুঁত পরিকল্পনা তৈরি করি।আমি ফার্মেসি থেকে একটি ইনজেকশন কিনে এনে মায়ের শরীরে পুশ করি।সেটার নাম হলো,
“ক্লোরোপ্রোমাজিন”, যা স্নায়ু সিস্টেমকে ধীরে ধীরে প্যারালাইজড করে ফেলে। প্রথমে,তিনি কোনো লক্ষণই বুঝতে পারে না। তবে কিছুদিনের মধ্যে, তার হাত-পা অবশ হয়ে যেতে শুরু করে, এবং তার চলাফেরা একেবারে অক্ষম হয়ে পড়ে।

প্রতিদিন আমি তার শরীরে এই ইনজেকশনটি প্রয়োগ করি,এবং ধীরে ধীরে সে অনুভব করে, তার শরীরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাচ্ছে। তার শরীরের প্যারালাইসিসের লক্ষণ বেড়ে যায়,আর এক সময় সে পুরোপুরি প্যারালাইজড হয়ে যায়।সেই সাথে তার বাকশক্তিও লোপ পায়।
তার করুণ দশা দেখে আমি খুব স্বস্তি খুঁজে পেয়েছিলাম।এরপর থেকে আমি সৎ মাকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছিলাম।এবং আমার ক্ষোভ মেটানোর জন্য তাকে এক জীবন্ত দুঃস্বপ্নে পরিণত করেছিলাম।
তারপর আরও অনেক ঘটনা ঘটে গিয়েছে।আমি নিজের এক আলাদা জগৎ তৈরি করেছি।
তারপর তুমি এলে আমার অন্ধকার জীবনে।এখন নিজেকে পরিপূর্ণ মনে হয়।
ডার্ক কুইন,আমি সম্পূর্ণ সুস্থ একজন মানুষ।অথচ তুমি আমাকে বারবার অসুস্থ,মানসিক রোগী বলে অপমান করছো।তাই তো নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারিনি,যার ফলে তুমি শাস্তি পেলে।তবে মায়ের থেকে একটা জিনিস শিখেছি,

‘যেটা আমার,সেটা আমারই,তাতে অন্য কারো স্পর্শ করা উচিত নয়।’
বলেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রু মুছে হো হো করে হেসে উঠলো নির্জন।
তারপর নিধির চোখে-চোখ রেখে বললো,

‘আচ্ছা অতীত কাহিনী তো শুনলে,আরও আছে,তবে ধীরে ধীরে শোনাবো।এখন নিশ্চয়ই তোমার মাথাটা ঠান্ডা হয়েছে।সকাল থেকে যেহেতু খাওয়া হয়নি।তাই এখন বাঁধন খুলে দিচ্ছি।ফ্রেশ হয়ে আমার সাথে খাওয়া-দাওয়া করে, তারপর সবকিছু হবে।’

বলেই বাঁকা হাসল নির্জন।
অতঃপর নিধির হাতের বাঁধন খুলে দিতেই,নিধি তৎক্ষণাৎ টেবিলে থাকা ছু**রি দিয়ে নির্জনের হাতে আ**ঘাত করলো।
নিধির আকস্মিক আ**ক্রমণে হতভম্ব হয়ে গেলো নির্জন।”

#চলবে…

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ পর্ব-৪১+৪২

0

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৪১
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ❌
[প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত]

“নির্জনের এই প্রতিশোধের আগুনে যেন লোকটির জীবন ও সব ক্ষমতা ধ্বং**স হয়ে গেলো।”

“নির্জনের অন্ধকার মনের ভেতর উঁকি দেওয়া পি**শাচটা তখন বেরিয়ে এসেছে। পোড়াবাড়ির জানালা থেকে ভা**ঙা কাঁচের প্রতিফলনে চাঁদের আলো ম্লান হয়ে যায়, আর নে**শাখোর লোকটা নিথর হয়ে পড়ে থাকে র***ক্তের স্রোতে। নির্জনের ঠোঁটে মুচকি হাসি ফুটে উঠেছে,যেন মৃ**ত্যু তার সবচেয়ে কাছের সঙ্গী।”

“পোড়াবাড়ির চারপাশে কেউ নেই, শুধু বাতাসে মাটি আর পঁচা গন্ধ মিশে আছে। নির্জন জানে, এই জায়গাটা সব রহস্য গিলে ফেলে। লোকটার শরীর ভারী হলেও নির্জনের জন্য তা কোনো বাঁধা নয়।লোকটার হাতের কব্জি,এবং জিহ্বা তার প্যান্টের পকেটে ভরে,ধীর পায়ে সে লোকটাকে টেনে নিয়ে যায় পোড়াবাড়ির পেছনের বাগানে। জায়গাটা অন্ধকারে ডুবে আছে, সেখানে সব সময়েই ধোঁয়াটে পরিবেশ।”

“নির্জন ব্যাগে করে আনা টর্চ লাইট জ্বালিয়ে দেখলো,পোড়াবাড়ির আশেপাশে কিছু পুরনো গাছের শিকড় বেরিয়ে এসেছে। নির্জন সেই শিকড়ের ফাঁক গুলো দেখে একটা নিখুঁত পরিকল্পনা সাজালো। পুরনো গাছগুলো অনেক দিন ধরে মানুষ দেখেনি, তাই তার আড়ালে কবর দেওয়া হবে নিঃশব্দে।”

“কিন্তু এখানে শেষ নয়। নির্জন জানে,কেবল মাটিচাপা দিলেই হবে না, রহস্যটা আরও গভীর করতে হবে। তাই সে লোকটাকে সেখানে শুইয়ে দিয়ে, মাটি খোঁড়ার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস খুঁজতে পোড়াবাড়িতে যায়।সেখানে গিয়ে অনেক খুঁজে রান্নাঘরের ভা**ঙা দরজার পাশে ফ্লোরে পড়ে থাকা একটি পুরনো, ভা**ঙা কুড়াল দেখতে পায়। বাড়িটা বহুদিন ধরে পরিত্যক্ত, তাই রান্নাঘরের শিক কেবিনেটের নিচে ধুলোর স্তূপে পড়ে থাকা কুড়ালটা কারও নজরে পড়েনি। নির্জনের হাতের মধ্যে সেটাই নিখুঁত অ**স্ত্র হয়ে ওঠে।”

“কুড়ালের ভা**ঙা ধার হলেও তার জন্য যথেষ্ট। নির্জন বাঁকা হেসে বাগানে চলে যায়।অতঃপর প্রথম আ**ঘাতে মাটি ভেদ করে, যেন কুড়ালটা বহুদিন পরে তার সত্যিকার কাজ করতে শুরু করেছে। প্রতিটা আ**ঘাতের সঙ্গে মাটির স্তর সরতে থাকে, আর নির্জন ঠাণ্ডা মাথায় কুড়াল চালাতে থাকে।ধীরে ধীরে চারদিকে মাটির গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।”

“মাটি খোঁড়ার সময় নির্জনের চোখে তখন অদ্ভুত এক পৈ**শাচিক আগুন জ্বলছে। কুড়ালের প্রতিটা আ**ঘাতের সঙ্গে সঙ্গে সে বিড়বিড় করে চরিত্রহীন লোকটাকে বলছে,

‘তুই ভেবেছিলি, তোর মতো একটা নোং**রা নে**শাখোর আমার বউয়ের দিকে নজর দিবি, আবার জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নোং**রামি করবি?আর আমি কিছু করবো না? আমার ডার্ক কুইনের দিকে তাকানোর সাহস তোকে কে দিলো? তোর মতো কুকুরদের জন্যই এই পৃথিবীটা নোং**রা। তুই জানতিস না, আমি যাকে ভালোবাসি, তার জন্য সবকিছু করতে পারি। আজ তোর কু**কর্মের শেষ দিন।’
বলেই আরেকটা আ**ঘাত করে মাটিতে; যেন লোকটার প্রতিটা অপরাধ তার মনে ভাসছে।অতঃপর আবারও বিড়বিড় করে বলতে থাকল,

‘তুই আমার নিরুপমার চোখের দিকে তাকিয়েছিলি, তোর বি**শ্রী চাহনি দিয়ে তার পবিত্রতা নষ্ট করার চেষ্টা করেছিলি। আজ তোর শরীর এই পোড়াবাড়ির নিচে সারা জীবনের জন্য চাপা পড়ে থাকবে, আর কেউ জানবেও না তোর নোং**রা অস্তিত্বের কথা।”

“কথাগুলো বলে, নির্জন কুড়াল চালিয়ে যায়।আর তার ঠোঁটে মুচকি হাসির ঝলক ফুটে ওঠে।সে আবারও বিড়বিড় করে বলে ওঠে,

‘মনে রাখিস,ডার্ক কুইন আমার ছিলো, আমার আছে, আর আমারই থাকবে। তোর মতো নোং**রাদের জন্য ওর জীবনে কোনো জায়গা নেই। তুই মাটিতে মিশে যা, তোর মতো মানুষদের জায়গা কেবল এই মাটির নিচেই।’

“বলেই নির্জন গাছের নিচের মাটি খুঁড়ে, লোকটির শরীরটা সেখানেই রেখে দেয়।তারপর মাটিগুলো দিয়ে সন্তর্পণে লোকটির দেহ ঢেকে দেয়।আর গাছের শিকড়গুলোকে এমনভাবে সাজিয়ে দেয়, যেন কেউ খেয়াল করলে মনে হবে গাছের শিকড়ের ফাঁকে কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই।তারপর চারদিকে কিছু শুকনো পাতা ছড়িয়ে দেয়, আর কয়েকটা শিকড় টেনে এনে মাটি ঢেকে দেয়।”

“সব কাজ নিখুঁত ভাবে সম্পন্ন করে প্যান্টের পকেট থেকে শুভ্র রঙা রুমাল বের করে, কপাল ভেদ করে বের হওয়া ঘাম মুছে তৃপ্তির হাসি দিয়ে, ব্যাগ গুছিয়ে শিষ বাজিয়ে গাড়ির নিকট চলে যায়।গাড়িতে উঠে সামনের আয়নায় নিজের মুখমণ্ডল ভালো করে দেখে,চুলগুলো হাত দিয়ে ব্যাক ব্রাশ করার মতো উল্টিয়ে,চশমাটা ঠিকঠাক করে পড়ে,মুচকি হেসে শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।”

————-
“এদিকে কিছুক্ষণ আগে তোহার সাথে কথা বলে,মন খারাপ করে বসে আছে নিধি।রফিক মির্জা এবং তাহমিনা বেগমকে ফোন করার পর তারা যখন রিসিভ করলো না,তারপর যখন তোহা কে ফোন করার পর,ও ফোন রিসিভ না করায় মন খারাপ করে বসেছিলো নিধি।প্রায় আধাঘন্টা পর তোহা নিধিকে ফোন করে।অবশেষে রফিক মির্জার ডায়াবেটিস বেড়ে গিয়ে অসুস্থ হওয়ার কাহিনী জানতে পেরে মন খারাপ করে ফেলে।আজ ২দিন যাবৎ তার শরীর খারাপের কথা শুনে নিধির মন সংকীর্ণ হয়ে গেলো।নিধি যখন তোহা কে বললো,মা তাকে ফোন করে কেনো জানায়নি,আর তোহাও কেনো জানালো না?’
তখন তোহা উত্তরে বললো,
‘মা এবং আমি তোমাকে কয়েকবার ফোন করেছি,কিন্তু তুমি ফোন রিসিভ করোনি।তাই হয়তো মা রাগ করেছে।”

“তোহার মুখে এহেন কথা শুনে বিস্ময়ের শীর্ষে চলে গেলো নিধি।তোহা কে লাইনে রেখেই ফোনের কন্টাক্ট লিস্টে চেক করে দেখলো,কোনো কল আসেনি।
নিধি তৎক্ষণাৎ তোহাকে বিষয়টি জানালে,তোহাও অবাক হলো।তারপর তোহা ডায়াল লিস্টে গিয়ে স্ক্রিনশট দিয়ে নিধির হোয়াটসঅ্যাপে পাঠালো।কিন্তুু দুঃখের বিষয় হলো,নিধি সেটাও দেখতে পেলো না।কারণ, তার ফোনে ডাটা নেই।নিধি কে বিয়ে করে এই বাড়িতে নিয়ে আসার আগেই,নির্জন ওয়াইফাই এর লাইন কে**টে দিয়েছে।তারপর নিধিকে সীমিত মেয়াদে ডাটা কিনে দিয়েছে।আর গতকাল রাতে নিধি ঘুমানোর পর ফোনের ভলিউম সাইলেন্ট রেখে ইউটিউবে ভিডিও চালু করে এম বি গুলো শেষ করেছে।যেনো নিধি কিছু জানতে না পারে।”

“নির্জনের পরিকল্পনা অনুযায়ী নিধি কিছু জানতে পারলো না।কিন্তু একসময় না একসময় সত্যিটা সামনে আসবেই।”

“নিধির সাথে আরও কিছুক্ষণ কথা বলে তোহা ফোন রাখতেই দেখলো,মাহির এসেছে।মাহির রুমে প্রবেশ করতেই তোহা মাহিরের কাছে গিয়ে মলিন স্বরে বললো,
ও সকালে বাবার বাড়ি যাবে,যেহেতু ওর বাবা অসুস্থ।”

“তোহার মলিন মুখস্রি দেখে মনে মনে ভীষণ কষ্ট পেলো মাহির।এই মুহূর্তে প্রিয়তমা স্ত্রীকে স্বান্তনা দেওয়ার ভাষা মাহিরের জানা নেই।তবুও প্রিয় স্বপ্নচারীনির মন টা কিঞ্চিৎ ভালো করার জন্য, তোহার কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে,ভরসার সহিত বললো,

‘আগামীকাল সকালে নয়,বিকালে তুমি আর আমি একসাথে যাবো।আমিও তো তার ছেলের মতো,তাই না?’

“মাহিরের দায়িত্ববোধ এবং ভালোবাসা মিশ্রিত কথা শুনে, ভীষণ খুশি হলো তোহা।মাহির কে জড়িয়ে ধরে নিচু স্বরে বললো,

‘থ্যাংকস মাহির,আপনি সত্যি খুব ভালো
মানুষ।আশা করি,সারাজীবন এমনই থাকবেন।’

“মাহির মুখে মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে তোহার চোখের কার্ণিশে জমে থাকা পানি মুছিয়ে, ওকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হাস্কি ভয়েসে আওড়ালো,

“প্রিয়তমা, আলোর পথ”

স্বপ্নচারিনী, দুঃখের ছায়া তবু ভয় কি?
তোমার চোখে এখনো জ্বলে আলোর দ্যুতি।
তোমার হাসিতে মিশে আছে আশার গান,
আমার হাতে হাত রাখো, কা**টবে সব বিরহের টান।

তুমি তো আমার শক্তি, আমার প্রাণ,
তোমার জন্যই তো এ পৃথিবীটা এমন অপার।
দুঃখের মেঘ যতই ঢাকে আকাশ,
তোমার স্পর্শে ঝরে পড়বে শান্তির আশ্বাস।

যে দিন থেমে যায়, তার শেষে তো রাত,
কিন্তু রাতের পরে আসে নতুন প্রভাত।
তোমার বাবার জন্য এই হৃদয় ভরা প্রার্থনা,
সব কিছু হবে ঠিক, দিও তুমি সান্ত্বনা।

প্রিয়তমা, আমার আকাশে তুমি আলোর তারা,
তোমার সাথেই পার করবো যত দিনের ধারা।
তুমি শুধু পাশে থেকো, মুছবে সব বিষাদ,
আমার ভালোবাসায় থাকবে তোমার আশ্রয়, অবসাদ।

তুমি আমায় আলোর পথ দেখাও,
তোমার সঙ্গে থাকলেই পার করবো যা পাও।
স্বপ্নচারিনী, শুধু হাসো, জানি সব হবে ঠিক,
তোমার হাসিতে মিশে আছে আমাদের মুক্তির দিক।”
~মেহের~

“মাহিরের মুখনিঃসৃত কবিতার প্রতিটি শব্দ,প্রতিটি লাইন মুগ্ধ হয়ে শুনলো তোহা।সেও যেনো তার স্বপ্ন পুরুষের সাথে এক অপার অনুভূতির নীল সাগরে তলিয়ে গেলো।”

————
“এদিকে দিগন্তকে গভীর ভাবনায় মগ্ন থাকতে দেখে,বিছানায় বসে পিটপিট করে তাকিয়ে থাকল নাদিয়া।ও ভাবতে থাকল,

‘প্রায় ১ঘন্টা হতে চললো,দিগন্ত ল্যাপটপে কাজ করছে আবার কিছুক্ষণ পর পর কাজ রেখে গালে হাত দিয়ে থম মে**রে বসে আছে।ব্যাপারটা কি?এই লোক তো সুযোগ পেলে আমাকে জ্বালাতে ছাড়ে না।আজ হঠাৎ কি হলো?’

ভেবে বিছানা থেকে নেমে দিগন্তের কাছে গিয়ে,তার কাঁধে হাত রেখে বললো,

‘কি ব্যাপার জানু?তুমি এতো চুপচাপ কেনো?গালে হাত দিয়ে,এতো কি ভাবছো?অফিসের কাজে কোনো প্রবলেম হয়েছে?’

“দিগন্ত ল্যাপটপ বন্ধ করে,ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকিয়ে বললো,

‘তেমন কিছুনা।নির্জন কে নিয়ে ভাবছিলাম।’

“‘নাদিয়া অবাক হয়ে বললো,

‘হঠাৎ, তাকে নিয়ে কি ভাবছিলে?’

” দিগন্ত মলিন স্বরে বললো,

‘নির্জনের মায়ের দাফন কার্য শেষ করার পর,ওকে আমি স্বান্তনা দেওয়ার জন্য জড়িয়ে ধরতেই, ও আমায় ধা**ক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে র**ক্তিম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেছিলো,

‘Don’t touch me.’
তোকে বলেছিলাম,আমাকে ভুলেও স্পর্শ করবি না।আমাকে স্পর্শ করার অধিকার শুধু আমার নিরুপমার।নেক্সট টাইম এমন করলে ভালো হবে না কিন্তু!”

‘কথাগুলো বলেই চলে গিয়েছিলো।জানো,সেদিন ওর সেই বাক্যগুলো আমার হৃদয়ে গিয়ে তীব্র আ**ঘাত করেছিলো।আমি জানি,ও ওর ওয়াইফের প্রতি পজেসিভ।তাই বলে এতটা?ও আমার স্কুল লাইফের ফ্রেন্ড।সব সময় নীরব থাকলেও,কখনোও আমার সাথে এমন ব্যবহার করে নি।খুব কষ্ট পেয়েছি।নিজেকে বুঝিয়েছি,হয়তো ওর মায়ের আকস্মিক মৃ**ত্যুতে, অতি শোকে খিটখিটে হয়ে গেছে।পরক্ষণেই বারবার আমার মনে একটা প্রশ্ন ঘোরপাক খাচ্ছে,একটা মানুষ ওই পরিস্থিতিতে এই ধরণের আচরণ কিভাবে করতে পারে?তাও আবার সামান্য স্পর্শ করা নিয়ে?”

“দিগন্তের ভাবনায় নিজেও বিভোর হলো নাদিয়া।ওর মনেও অদ্ভুত সব প্রশ্ন হানা দিলো।নির্জন কে আগে থেকেই অন্যরকম লাগে নাদিয়ার কাছে।কিন্তু কখনোও মুখ ফুটে কিছু বলতে পারেনি।হয়তো, নাদিয়ার অবচেতন মন নির্জন কে নিয়ে অনেক কথা ভাবলেও, পরক্ষণেই ভুলে গিয়েছে।’
ভেবে ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ফেলে বললো,

‘তুমি কিছু মনে করো না,আমার মনে হয় নির্জন ভাইয়া মানসিক ভাবে অসুস্থ।আমি শিউর না।মাঝে মাঝে মনে হয়,নিধির বিষয়ে সে অতিরিক্ত পজেসিভ।নিধি ফোনের মধ্যে সেগুলো হেসে হেসে বললেও,আমার কেমন যেনো লাগে।ওর মতো চঞ্চল স্বভাবের মেয়ে একজনের বাধ্যগত স্ত্রী হয়ে উঠছে,এটা ভেবে যেমন ভালো লাগছে;তেমনি এই কাহিনী গুলোও কেমন যেন অদ্ভুত লাগছে।হতে পারে এটা আমার মনের ভুল,আবার নাও হতে পারে।”

“নাদিয়ার চিন্তিত মুখস্রি দেখে দিগন্তের কিছুটা খারাপ লাগল।মনে মনে ভাবলো,

‘এই সময় দুশ্চিন্তা করা উচিত নয়।একজন গর্ভবতী মা কে সবসময় চিন্তামুক্ত থাকতে হয়।এতে তার মন এবং শরীর দু’টোই ভালো থাকে।’

ভেবে দিগন্ত মুচকি হেসে নাদিয়া কে বললো,

‘ধুরো..আমিও না..রোমান্টিক মোমেন্টে কিসব বলি।কতদিন তোমায় কাছে পাই না হানি।এখনও কি জায়গা হবে না?’

“দিগন্তের এহেন কথা শুনে মন পরিবর্তন হয়ে গেলো নাদিয়ার।মুচকি হেসে ‘হ্যা’ সূচক মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো।
ব্যাস, দিগন্ত কে আর কে পায়।প্রিয়তমা স্ত্রীর সম্মতি পেতেই তড়িৎ গতিতে গালে টুপ করে চুমু দিয়ে বললো,

‘ইশশ,বৈদ্যুতিক শক লাগল মনে হয়।’

“দিগন্তের কথা শুনে,নাদিয়া লজ্জায় লাল টুকটুকে হওয়ার আগেই নাদিয়ার ওষ্ঠদ্বয় আবদ্ধ করে নেয় দিগন্ত।অবশেষে দু’জনের শরীরেই বয়ে যায় এক রোমাঞ্চকর উ**ন্মা*দনার
তীব্র ঝড়।”

——–
“২দিন যাবৎ নিধিকে ফোনে না পেয়ে,তাহমিনা বেগম নির্জনের ফোনে কল করে রফিক মির্জার অসুস্থতার কথা জানালে,নির্জন তার শাশুড়িকে মোটেভেশনাল বাণী শুনিয়ে আস্বস্ত করে যে, সে নিধি কে নিয়ে আসবে।কিন্তুু মনে মনে নির্জন অন্য পরিকল্পনা করে।”

“নির্জন নিধির বাসার সামনে গাড়ি রেখে, বাজারে যায়।ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য যেসব খাবার দরকার, সেগুলো সব কেনে। ফলমূল, সবুজ শাকসবজি, ডায়াবেটিকস ফ্রেন্ডলি খাবার, ওষুধ সবকিছু খুব যত্নের সঙ্গে নেয়। নিধির বাবার জন্য তার প্রিয় কিছু খাবারও নেয়, তবে এমনভাবে যেন সেটা তার স্বাস্থ্যের ক্ষতি না করে। নির্জন তার প্রতিটা পদক্ষেপে খুব মনোযোগী, যেন কোনো কিছুই বাদ না যায়।”

“বাজার শেষে নির্জন শ্বশুর বাড়িতে ঢুকতেই, তাহমিনা বেগম দরজার সামনে দাঁড়িয়ে নিধির কথা জিজ্ঞেস করলে,
‘নির্জন স্বাভাবিক স্বরে উত্তর দেয়,

‘গতকাল রাত থেকে নিরুপমা জ্বরে ভুগছে।আমি কিছুক্ষণ পর চলে যাবো।বাসায় গিয়ে ওর সেবা-যত্ন করতে হবে।’

“নিধি ফোন না ধরাতে তাহমিনা বেগম ওর ওপর রেগেছিলো।কিন্তু, যখনই নিধির অসুস্থতার কথা শুনলো,তখনই তার সব রাগ যেনো নিমিষে চলে গেলো।একদিকে মেয়ের অসুস্থতার কথা শুনে মন বিষন্ন হয়ে গেলো;আরেকদিকে স্বামীর অসুস্থতা,তার সেবা-যত্ন করা, সবকিছু মিলিয়ে তাহমিনা বেগম যেন হিমশিম খাচ্ছে।এই মুহূর্তে তার দুই মেয়ে পাশে থাকলে এতটা কষ্ট হতো না।’
ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো তাহমিনা বেগম।”

“নির্জন নিধির বাবার সামনে গিয়ে ভরসার সহিত বললো,

‘বাবা, চিন্তা করবেন না। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি আপনার জন্য ভীষণ চিন্তিত ছিলাম।তাই তো নিরুপমা কে অসুস্থ অবস্থায় রেখে, এখানে ছুটে এলাম।’

‘নিজের বড় মেয়ের অসুস্থতার কথা শুনে খুব মন খারাপ হলো রফিক মির্জার।তিনি নিধির খোঁজখবর নিলেন।নির্জনও সাজিয়ে গুছিয়ে শ্বশুর কে সবকিছু বললো।যেন রফিক মির্জা নিশ্চিন্তে থাকে।
সেই রাতে নির্জন একজন আদর্শ জামাইয়ের মতো দায়িত্ব পালন করে,শ্বশুর-শাশুড়ির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিজ গন্তব্যে রওনা হলো।’

———-
“নির্জন বাসায় ঢুকে নিজের রুমে যেতেই দেখলো,নিধি রুমে নেই।নিধি কে দেখতে না পেয়ে নির্জন ওয়াশরুম,বেলকনি তে গিয়ে খুঁজলো।কিন্তুু পেলো না।ভাবলো,হয়তো ছাদে গিয়েছে।তাই নির্জন রুম থেকে বেরিয়ে ছাদের দিকে যেতেই দেখতে পেলো, নিধি ওর প্রিয় দুটি রুমের বাইরে মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তালাবদ্ধ দরজা দেখছে।”

“নিধিকে এভাবে তালাবদ্ধ দুটি দরজার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে, নির্জন বড় বড় পা ফেলে নিধির কাছে গিয়ে বললো,

‘এখানে কি করছো তুমি?’

“নিধি অনেকক্ষণ আগেই এখানে এসেছে।এর আগেও কয়েকবার এখানে এসেছিলো।কিন্তুু নির্জন কে এই বিষয়ে কিছু বলেনি।কিছুক্ষণ আগে এই দু’টো রুমের তালা খোলার জন্য, রুমে গিয়ে টেবিলের ড্রয়ার থেকে শুরু করে ম্যাট্রেসের নিচে চাবি খুঁজেছে।কিন্তুু পায়নি।আর পাবেই বা কিভাবে,কারণ চাবিতো নির্জনের কাছে।”

“এতক্ষণ দু’টো রুমের দিকে তাকিয়ে আনমনে কিছু ভাবছিলো নিধি।আকস্মিক নির্জনের কন্ঠস্বর কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই ঈষৎ কেঁপে উঠলো নিধি।নির্জনের দিকে তাকিয়ে
ম্লান হেসে বললো,

‘ওহ!আপনি এসে গেছেন,আসলে আমি এই দুটো রুমের তালার চাবি খুঁজছিলাম।এই বাড়িতে আসার পর থেকে দেখছি,এই দু’টো রুম সবসময় তালাবদ্ধ থাকে।তাই ভেতরে কি আছে,সেটা দেখার আগ্রহ জাগল।অবশ্য মেইড কে জিজ্ঞেস করার পর সে বলেছিলো,
আপনি নাকি দু’টো রুমে কাউকে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন।আর আপনি নাকি রুম দু’টো পরিষ্কার করেন।তাই ভাবলাম,এখন আমি যেহেতু এসে পড়েছি,তাই কষ্ট করে আপনার আর কোনো রুম পরিষ্কার করতে হবে না।আমি সবকিছু করবো।এতে আমার সময়ও কে**টে যাবে।”

“নিধির এহেন কথায় নির্জনের মাথার উগ্র পোকাগুলো কিলবিল করে উঠলো।নিধির দিকে শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ভাবলো,

‘মেইড কে কঠোর স্বরে নিষেধ করেছিলাম,আমার স্ত্রীর সাথে যেন কথা না বলে।অথচ সে কিনা আমার কথা অগ্রাহ্য করে এতগুলো কথা বলেছে?উহুম,আর নয়,আগামীকাল তার ছুটি হবে।’
ভেবে মুচকি হেসে নিধির কাছে এসে নিজের বাম হাত দিয়ে ওর বাম হাত ধরে কাছে টেনে, নিধির গালে ডান হাত দিয়ে স্লাইড করে বললো,

‘উফফ..এইসব কাজ করে সময় কা**টাতে হবে না ডার্ক কুইন;তোমার সময় কা**টানোর জন্য আমাকে নিয়ে ভাবনাই যথেষ্ট।’
বলেই নিধির দিকে নেশালো দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ওর গাল থেকে হাত নামিয়ে, ওর কোমরে হাত রাখলো নির্জন।’

“নির্জনের এহেন চাহনি ভীষণ পরিচিত নিধির।কিয়ৎক্ষণের জন্য খুশি হলেও পরক্ষণেই ভাবলো,

‘মায়ের মৃ**ত্যু সবে ৪দিন হবে।এখনোও ভালোভাবে শোক কা**টিয়ে উঠতে পারলাম না,আর এখনই?’

“নিধির ভাবনার মাঝে,নির্জনের স্পর্শ আরও গাঢ় হতে থাকল।নিধি নির্জনের শীতল দৃষ্টির পানে তাকিয়ে ভাবলো,শাশুড়ি মায়ের কথা বলবে।অতঃপর ভাবলো,

‘নাহ!এই মুহূর্তে আমার সঙ্গ তার সবচেয়ে জরুরি।তার এই ভালোবাসার ডাকে সাড়া দিলে যদি তার মন কিছুটা হলেও ভালো হয়,সেটা তো আমার জন্যই আনন্দের।’
ভেবে আর কথা বাড়ালো না নিধি।নির্জনের প্রতিটি গভীর স্পর্শে ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেললো নিধি।আবেশে চোখজোড়া বন্ধ করে ফেলতেই নির্জন বাঁকা হেসে নিধিকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে চলে গেলো।”

“নিঃশব্দ রাত। চাঁদের আলো মেঘের আড়ালে লুকিয়ে আছে, যেন কোনো মিলনের সাক্ষী হতে চায় না। নিধি নির্জনের চোখের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।এক অদ্ভুত শূন্যতায় ভরা সেই চোখজোড়া। আজকের রাতটা যেন ভিন্ন;আলাদা এক শিহরণ, এক অজানা শঙ্কা বুকে নিয়ে নিধি তাকে কাছে টানছে। হয়তো সে জানে, হয়তো জানে না…এই মিলনই হবে দুটি শরীর এবং মনের গভীর ভালোবাসার শেষ মিলন।”

“নির্জনের স্পর্শে নিধির শরীর শীতল হয়ে ওঠে, ঠোঁটের মধ্যে মিশে থাকে তীব্র আকাঙ্ক্ষা আর যন্ত্রণার ছায়া। তাদের প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাস যেন বাতাসে হারিয়ে যাচ্ছে। চুপচাপ, নিঃশব্দ কিন্তু গভীর। চামড়ার ওপর ছোঁয়ার তীব্রতা বাড়ছে, আর সেই সাথে নিধির হৃদয়ের স্পন্দনও।”

“নির্জন নিধির ঘাড়ে আলতো করে ঠোঁট রাখে। নিধি কেঁপে ওঠে, কিন্তু সে কিছু বলে না। সে জানে না এই স্পর্শের পেছনে লুকিয়ে আছে কি? ভালোবাসা, না কি এক ভ**য়ানক শিকারি খেলা। নির্জনের বাহু শক্তভাবে নিধি আঁকড়ে ধরে, যেন তাকে আর কখনও ছেড়ে দেবে না। কিন্তু সেই বাহুর মধ্যে লুকিয়ে আছে এক ভ**য়ং*কর প্রতিশ্রুতি। আজকের রাতের পর কিছুই আর আগের মতো থাকবে না।”

“তাদের শারীরিক মিলন ছিলো এক মহাকাব্যিক যুদ্ধে পরিণত—তৃষ্ণা, যন্ত্রণা, এবং তীব্র বাসনার মাঝে আটকে থাকা দুটি প্রাণ। এই মুহূর্ত যেন একে-অপরের আত্মার মধ্যে ঢুকে যাওয়ার চেষ্টা, কিন্তু সেই আত্মাগুলো ছিল ভা**ঙা, ধ্বং*সপ্রাপ্ত।”

“মধুর মিলনের শেষে নিধি নির্জনের বুকে মাথা রেখে নিঃশব্দে শুয়ে রইল। তার ভেতরে এক অদ্ভুত শূন্যতা, আর নির্জনের চোখে সেই ভ**য়ং*কর সাইকো রূপের আভাস। এই চোখই তাকে শেষবারের মতো ভালোবাসলো, আবার এই চোখই তাকে ধ্বং**সের পথে নিয়ে যাবে।”

“আকস্মিক নিধিকে অবাক করে দিয়ে, নির্জন আবারও প্রেয়সীর ওষ্ঠযুগল আবদ্ধ করলো।কয়েক সেকেন্ড পর ছেড়ে দিয়ে,প্রিয়তমার অধরে আলতো করে আঙুল স্পর্শ করে হাস্কি ভয়েসে বললো,

“শেষের আগে ছিলো ছোঁয়া,
একটি গল্পে ভরা ভালোবাসার ছায়া।
নিঃশব্দে মিলল দুটি প্রাণ,
তবুও হারিয়ে গেলো কোথায় স্নেহের টান।

আমার চোখে ছিলো অন্যরকম আভা,
তুমি দেখলে, তবুও চুপ রইলো শূন্যতা।
প্রতিটি আলিঙ্গনে লুকিয়ে ছিলো ব্যথা,
একটি শেষ রাত, তারপর আক্ষেপের গাঁথা।

তৃষ্ণায় মিশে গেলো দেহ ও মন,
তবুও আড়ালে ছিলো অন্ধকারের পণ।
শেষের আগে সেই শীতল ঠোঁটের আলতো ছোঁয়া,
তোমার হৃদয়ে রেখে গেলো মৃ**ত্যুর চাওয়া।

এখন রাত পেরিয়ে আসবে ভোর,
তবুও থাকবে না আর কোনো সেতু, না কোনো ভর।
এই মিলন ছিলো এক মিথ্যে স্বপ্নের ছায়া,
শেষের পর আসবে নীরবতার মায়া।”

~মেহের~

#চলবে..

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৪২
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ❌

“এই মিলন ছিলো এক মিথ্যে স্বপ্নের ছায়া,
শেষের পর আসবে নীরবতার মায়া।”

——–
“কে**টে গেলো একটি নিস্তব্ধ রাত্রি।ভোরের আলো ফোঁটার আগেই ঘুম ভে**ঙে গেলো নিধির।আড়মোড়া ভে**ঙে ঘড়িতে সময় দেখলো,এখনও ফজর নামাজের ওয়াক্ত শেষ হয়নি।নিধি ঝটপট বিছানা থেকে নেমে, ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে নামাজ পড়ে নিলো।মোনাজাতে দুই হাত তুলে বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করলো।কয়েক মিনিট পর নির্জন কেও জাগালো নামাজ পড়ার জন্য।নিধির কথা মতো নির্জনও ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিলো।মোনাজাতে মন খুুলে দোয়া করলো তার প্রেয়শীর জন্য।কারণ,এই পৃথিবীতে নিধি ছাড়া তার আপন বলতে কেউ নেই।”

“সকালে নিধি যখন ওর মাকে ফোন দেওয়ার কথা বললো,নির্জন তখন হাসি মুখে ওকে কথা বলতে বলে রুমের বাইরে চলে গেলো।
কিচেনে মেইড সকালের নাস্তা রেডি করছিলো।সেই মুহূর্তে নির্জন সেখানে গিয়ে হাজির হলো।নির্জনের উপস্থিতি টের পেয়ে,মেইড পেছনে তাকিয়ে বললো,

‘কিছু বলবেন স্যার?’

“নির্জন বুকের ওপর দুই হাত ভাজ করে গম্ভীর স্বরে বললো,

‘আপনাকে বলেছিলাম,আমার স্ত্রীর সাথে কথা বলার চেষ্টা করবেন না,সে বলতে চাইলেও নয়।কিন্তু আপনি আমার কথা অমান্য করেছেন।এনিওয়ে,আগামীকাল এই মাস শেষ হয়ে যাবে,তার আগেই আপনার বেতন টা নিন।’
বলেই নির্জন পকেট থেকে টাকা বের করে মেইডের সামনে এগিয়ে দিলো।”

“নির্জনের এহেন আচরণে হতভম্ব হয়ে গেলো মেইড।নিচু স্বরে শুধালো,

‘আমি আপনার স্ত্রীর সাথে কখনোই আগ বাড়িয়ে কথা বলিনি।সে নিজে থেকে কয়েকবার কথা বলেছে।তাই আমি বাধ্য হয়ে কথা বলেছি।আমার দায়িত্ব হলো,মানুষের বাসায় কাজ করে পরিবারের জন্য দু মুঠো অন্ন জোগানো।আর আপনার স্ত্রীর সাথে কথা বলাতে কি এমন অপরাধ হয়ে গেলো, বুঝলাম না।’

“মেইডের এহেন আচরণে মেজাজ কিছুটা বিগড়ে গেলো নির্জনের।চোখ-মুখ শক্ত করে বললো,

‘আমার স্ত্রীর সাথে কথা বলার অধিকার একমাত্র তার ব্যক্তিগত মানুষের;আর কারো নয়।আর আপনাকে আমি কোনো কথার কৈফিয়ত দিবো না।অসহায় মানুষের ক্ষ**তি করার ইচ্ছে আমার নেই।তাই ভালো ভাবে বলছি,আজকের পর থেকে আপনাকে আর প্রয়োজন নেই।আপনি আসতে পারেন।’

“‘নির্জনের রুক্ষ আচরণে ভীষণ কষ্ট পেলো মেইড।তার স্বামী পরলোকগমন করার পর থেকে কয়েকটি বাড়িতে কাজ করে সে বাসার ভাড়া সহ,২বাচ্চা নিয়ে সংসার খরচ বহন করে।একটা কাজ ছুটে গেলে আরেকটি কাজ খুঁজতেও তো সময় লাগবে।তাছাড়া চাইলেই তো কেউ তাকে ভরসা করে কাজ দিবে না।এই বাসায় ২বছর যাবৎ সে কাজ করে।আজ কিনা তুচ্ছ বিষয় নিয়ে নির্জন এমন আচরণ করলো?’
ভেবে চোখ জোড়া পানিতে চিকচিক করে উঠলো।”

“মেইডের অসহায় মুখ ভঙ্গিমা দেখে মনে মনে পৈ**শা*চিক হাসি দিলো নির্জন।খুব ভালো লাগছে তার কাছে।কিছু একটা ভেবে প্যান্টের পকেট থেকে আরও কিছু টাকা বের করে মেইডের সামনে এগিয়ে দিয়ে বললো,

‘হয়তো আপনার অন্য বাসায় কাজ পেতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।তাই, টাকা টা রাখুন।তবুও এই বাড়ির ত্রিসীমানায় যেন আপনাকে না দেখি।’

“মেইড বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলো নির্জনের দিকে।”

“নির্জন কিছুটা উচ্চস্বরে বলে উঠলো,

‘কি হলো, রাখুন।’

“মেইড হাত বাড়িয়ে টাকা টা নিতেই, হন হন করে সেখান থেকে চলে গেলো নির্জন।”

“আকস্মিক নির্জনের এহেন আচরণে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো মেইড।তার চোখের পানিগুলোও যেনো মুহূর্তেই শুকিয়ে গেলো।অতঃপর নিজের বাকি রাখা কাজগুলো সম্পূর্ণ করে,বাড়িটির দিকে একবার করুণ দৃষ্টিতে চোখ বুলিয়ে নিঃশব্দে প্রস্থান করলো সে।”

“এদিকে রুমে গিয়ে নিধির অশ্রুভেজা চোখজোড়া দেখে অবাক হয়ে গেলো নির্জন।নিধির কাছে গিয়ে কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করতেই,ও বললো,

‘আজ ভোরে বাবাকে হসপিটালে ভর্তি করেছে।মাঝ রাতে বাবার বুকে খুব ব্যথা করছিলো।দিশেহারা হয়ে মা নাকি আপনাকে ফোন করেছিলো।কিন্তু আপনি ফোন রিসিভ করেন নি।তাই মা মাহির কে ফোন করেছে।তারপর মাহির এসে বাবা কে হসপিটালে নিয়ে গিয়েছে।’
বলেই আবারও হেঁচকি তুলে কান্না করে উঠলো নিধি।”

“নির্জন ভ্রুকু**টি করে বিছানায় বালিশের পাশ থেকে ফোন উঠিয়ে দেখলো, ১৬বার ফোন করেছে তাহমিনা বেগম।কিন্তু ফোন সাইলেন্ট করে রাখার কারণে,রিসিভ করতে পারেনি।’
ভেবে কিছুটা মন ক্ষুন্ন হলো নির্জনের।”

“নির্জন তৎক্ষনাৎ মাহিরের নাম্বারে কল দিলো।কয়েকবার রিং হতেই মাহির ফোন রিসিভ করলো।নির্জন মাহিরের সাথে কথা বলে হসপিটালের ঠিকানা জেনে,কিছুক্ষণ পর নিধি কে নিয়ে রওনা হলো।”

“গাড়িতে ওঠার পর থেকে নিধির কান্নার শুব্দে ভীষণ বিরক্ত হচ্ছিলো নির্জন।তবুও কিছু বলছিলো না।কারণ,তার বাবার অসুস্থতার সময়ও সে এভাবেই কেঁদেছিলো।যদিও তখন তার কাঁধে হাত দিয়ে স্বান্তনা দেওয়ার মতো কেউ ছিলো না।’
ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো নির্জন।”

“হসপিটালের অপারেশন থিয়েটারের বাইরে অবস্থান করছে তাহমিনা বেগম,নির্জন,নিধি,মাহির,তোহা,দিগন্ত এবং নাদিয়া।তাহমিনা বেগম,মাহির এবং তোহা আগেই এসেছে।মাহির তার শ্বশুরকে হসপিটালে নিয়ে আসা থেকে শুরু করে, চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ যাবতীয় কার্য খুব দায়িত্বের সাথে সম্পন্ন করেছে।তোহা এতক্ষণ তাহমিনা বেগমের মাথা বুকের সাথে মিশিয়ে স্বান্তনা দিচ্ছিলো,

‘তুমি চিন্তা করো না মা।বাবার কিছু হবে না।সে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে।’

“কিন্তু তাহমিনা বেগমের ভীত-সন্ত্রস্ত মনে বারবার যেন দুশ্চিন্তা গুলো হানা দিচ্ছিলো।
আজ রাতটা যেন তাহমিনা বেগমের জীবনের সবচেয়ে ভ**য়ং**কর রাত ছিলো। রফিক মির্জা হৃদযন্ত্রের অসুখে ভুগছিলেন। হঠাৎ তার বুকের ব্যথা এত তীব্র হয়ে উঠল যে তিনি কাতরাতে শুরু করলেন। নিধির মা আতঙ্কিত হয়ে কী করবেন বুঝতে পারলেন না, শুধু বারবার বলছিলেন,

“তুমি, একটু সহ্য করো!”

“তিনি নির্জনকে ফোনে না পেয়ে মাহির কে ফোন করেন।মাহির ফোন রিসিভ করতেই,শ্বশুরের এহেন অবস্থা শুনে,তোহা কে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে এসে রফিক মির্জা কে হসপিটালে নিয়ে যায়।”

“গাড়ির ভেতরে তাহমিনা বেগম এবং তোহার কান্নার শব্দ, রফিক মির্জার ব্যথাভরা নিঃশ্বাসের শব্দ, আর মাহিরের কঠোর মনোযোগ, সবকিছু মিলিয়ে যেন পরিবেশটা ভারী হয়ে উঠেছিলো।মাহির বারবার তাদের স্বান্তনা দিচ্ছিলো,

‘অসুস্থ রোগীর সামনে এত শব্দে কান্না করলে তার মনোবল ভে**ঙে যায়।’

“হসপিটালে পৌঁছানোর পর, ডাক্তাররা তড়িঘড়ি করে রফিক মির্জাকে ইমার্জেন্সি রুমে নিয়ে গেলেন।তাহমিনা বেগম এবং তোহার চোখে অশ্রু, আর বুকের ভেতর যেন ঢেউয়ের মতো আবেগ ফেটে পড়ছে। ডা. আয়েশা রহমান, একদল চিকিৎসক নিয়ে রফিক মির্জার অপারেশনের প্রস্তুতি নিলেন। তারা তাঁর জীবন বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেন।অক্সিজেন মাস্ক লাগানো হলো, ইসিজি মেশিনের তারগুলো তাঁর শরীরের সঙ্গে যুক্ত করা হলো, নি:শব্দে তাঁকে ইনজেকশন দেওয়া হলো।”

“ডাক্তাররা একে অপরের দিকে তাকিয়ে হালকা মাথা নাড়ালেন।
ডা. আয়েশা তাদের ভরসা দিয়ে বলেছিলেন,
“আমরা সব চেষ্টা করবো, কিন্তু…”
বাক্যটা অসমাপ্ত রয়ে গেলো।আল্লাহর এই বান্দার হায়াত এতটুকুই ছিলো।রফিক মির্জা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন।”

“অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে,ডাক্তাররা আনুষ্ঠানিকভাবে রফিক মির্জার মৃ**ত্যুর ঘোষণা দিলেন।
“ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।”
নির্জন,মাহির এবং দিগন্তের মৃদু স্বরে উচ্চারিত বাক্যগুলো নিধির কানে যেতে মনে হলো,কথাগুলো ওকে আ**ঘাত করলো।”

“দিগন্ত মন খারাপ করে দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।নাদিয়া তাহমিনা বেগম কে জড়িয়ে ধরে তাকে স্বান্তনার বাণী শোনাতে লাগল।ইতোমধ্যে হসপিটালে আত্মীয়-স্বজনে ভরপুর হয়ে গেলো।’

“শ্বশুরের এমন চলে যাওয়া মেনে নেওয়া যে কতটা কষ্টের, সেটা মাহিরের চোখেও ফুটে উঠল।
মাহির তোহা কে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।এই নরম মনের মেয়েটিকে তো এই মুহূর্তে সর্বোচ্চ দিয়ে আগলে রাখতে হবে।”

“এদিকে রফিক মির্জার মৃ**ত্যুর সংবাদ শুনে নির্জনের পৈ**শাচিক মন টাও কিছুটা দুঃখ অনুভব করলো।যতই হোক,তিনি নির্জনকে এতিম বলে কখনোও হেয় করেন নি।বরং ভরসা করে নিজের আদরের মেয়েকে তার হাতে তুলে দিয়েছে এবং নিজের ছেলের মতো ভালোবেসেছেন।”

“এদিকে স্বামীর মৃ**ত্যুর কথা কর্ণপাত হতেই,তাহমিনা বেগমের বাকশক্তি যেন লোপ পেয়ে গেলো।তার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ছিলো রফিক মির্জা।শত নীরবতার মাঝেও দিন শেষে এই লোকটির কাছে নিজের মনের কথাগুলো মন খুলে বলতেন।প্রিয় রমনীর গায়ে কখনোও হাত তোলেন নি রফিক মির্জা।কত সততা এবং ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছিলো পুরো পরিবার কে।অথচ আজ সেই মানুষ টি তাকে ছেড়ে পরপারে চলে গেলো!”

“নির্জন নিধির পাশে এসে দাঁড়ালো,নিঃশব্দে নিধির কাঁধে হাত রাখল।নির্জন জানে, এই মুহূর্তে কোনো কথাই নিধির কষ্ট কমাতে পারবে না।তবুও নিধির কাঁধে হাত রেখে বললো,

‘নিরুপমা, তোমার বাবার প্রতিটি স্মৃতি, তার ভালোবাসা, তার প্রতিটি আদর এখন তোমার মধ্যে বেঁচে আছে। তিনি হয়তো আমাদের মাঝে শারীরিকভাবে নেই, কিন্তু তার স্মৃতি, তার স্নেহ সবসময় তোমার পাশে থাকবে। তিনি তোমার মাঝেই বেঁচে থাকবেন।”

“নিধি কিছু বলতে পারছে না, কেবল তার চোখের জল ঝরছে। নির্জন আবারও করুণ স্বরে বললো,

‘তুমি একা নও। আমি আছি তোমার পাশে। আমরা একসঙ্গে এই শোক সামলাবো। তুমি শক্ত হও, নিরুপমা। তোমার বাবার স্মৃতিগুলোকে আঁকড়ে ধরে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি চাইতেন তুমি সুখী থাকো, শান্তিতে থাকো। তোমাকে হাসতে দেখতে চাইতেন।’

“নির্জন নিধির চোখের পানি মুছে দিয়ে আবারও বললো,

‘তুমি যতবার বাবার কথা ভাববে,ততবার তার সেই হাসিমাখা মুখটাই মনে করো। তিনি চাইতেন তুমি নিজের জীবনে সুখ খুঁজে পাও, কষ্ট নয়। আমি তোমার পাশে আছি সবসময়, তুমি একা নও নিরুপমা।”

“নির্জনে মুখনিঃসৃত ৩বার ‘নিরুপমা’ ডাকটি, নিধির মনের আবেগ যেন দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিলো।এই নামে তো তাকে একটি লোকই ডাকতো,সে হলো ওর বাবা।এখন এত আদুরে গলায় কেউ তাকে এই নামে ডাকবে না।একবারও বলবে না,
‘নিরুপমা,মা তুই কেমন আছিস?’

“ভেবে নিধি নির্জনের দিকে তাকিয়ে চোখ মুছে নিলো। এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো, এই শোকের মধ্যে কেউ একজন তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে, তাকে শক্ত করে ধরে রেখেছে। সে একটু হলেও শক্তি ফিরে পেলো।কিন্তুু স্ট্রেচারে যখন রফিক মির্জার নিথর দেহটি দেখলো,এক মুহূর্তে তার জীবনের সবকিছু থমকে গেলো। বাবার সেই মুখ, সেই শীতল নিথর শরীর, যা আগে কখনও সে দেখেনি, আজ তার সামনে পড়ল। তার শ্বাস আটকে আসছে, সে চি**ৎকার করে উঠল, “বাবা!”

“নিধির মনে ভেসে উঠলো ছোটবেলার সেই সময়গুলো।বাবার সঙ্গে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, তাঁর কাঁধে চড়ে মেলার মাঠে ঘোরা, সেই পরিচিত ডাক,

“নিরুপমা..মা, আয়, বাবার কাছে আয়।”

“বাবার স্নেহমাখা গলা এখন আর শোনা যাবে না। নিধির বুকের ভেতর কষ্টের ঢেউ আছড়ে পড়ল। তার চোখের পানি থামছে না,ও রফিক মির্জার হাতটা ধরে ফিসফিস করে বলতে লাগল,
“বাবা, তুমি এভাবে চলে গেলে কেনো?”

————–
“রফিক মির্জাকে গোসল করানো হলো, ইসলামিক নিয়মে দাফনের জন্য কাফনের কাপড়ে মুড়িয়ে দেওয়া হলো। নিধি এবং তোহা যেন কোনো রকমে নিজেদের ধরে রেখেছে। কবরস্থানে নিয়ে যাওয়ার সময়, যখন নিধি এবং তোহা শেষবারের মতো ওদের বাবার দিকে তাকালো, ওদের বুকটা ফেটে গেলো। বাবার সেই অমায়িক মুখ, যে মুখ ওদের সারাজীবন আগলে রেখেছিলো,সেই শরীর আজ শীতল মাটির নিচে হারিয়ে যাচ্ছে।”

“মাটি দেওয়া শেষ হলে, সবাই মোনাজাত করল। নিধি এবং তোহা ওদের রুমে নামাজ শেষে মনে মনে বাবার জন্য প্রার্থনা করল,
“আল্লাহ, আমার বাবাকে তুমি জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করো,আমিন।”
ওদের চোখের পানি আবারো ঝরে পড়ল। বাবার মৃ**ত্যুর শোক যেন কোনো ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়, সেই কষ্ট ওদের তাড়া করতেই থাকবে।”

“রফিক মির্জার মৃ**ত দেহ হসপিটাল থেকে নিয়ে যাওয়ার সময়, তাহমিনা বেগম জ্ঞান হারিয়েছিলেন।রফিক মির্জাকে মাটি দেওয়ার পর বিকালের দিকে তার জ্ঞান ফিরলে,তিনি নীরব পথিকের ন্যায় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন।কারো সাথে কথা বলেন না।নিধি এবং তোহার মনের অবস্থা খারাপ,তাই ওদের আত্মীয়-স্বজন তাহমিনা বেগম কে খাওয়ানোর চেষ্টা করে।কিন্তুু শত চেষ্টার পরেও কেউ তাকে এক লোকমাও মুখে তুলে দিতে সক্ষম হয় নি।”

“অবশেষে দীর্ঘ একটি রাত পেরিয়ে সকাল হলো।রাতে নির্জন,নিধি,তোহা,মাহির এবং ওদের কিছু আত্মীয়-স্বজন নিধিদের বাড়িতে অবস্থান করেছে।নির্জন নিধিকে এবং মাহির তোহাকে অনেক বুঝিয়ে খাইয়ে দিয়েছে।এদিকে সকাল থেকে তাহমিনা বেগম একা একা বিড়বিড় করে উল্টাপাল্টা কথা বলছেন।কখনোও একা একাই কেঁদে উঠছেন,আবার সামনে তাকিয়ে হেসে হেসে কথা বলছেন।”

“তাহমিনা বেগমের এহেন আচরণে সবাই যেন চিন্তিত হয়ে পড়লো।নিধি এবং তোহা ওর মায়ের কাছে গিয়ে বোঝাতে থাকল।কিন্তু তার কোনো পরিবর্তন হলো না।কিছুক্ষণ এভাবে কথা বলে, আবারও তিনি জ্ঞান হারালেন।
তাহমিনা বেগমের আচরণগুলো লক্ষ্য করে মাহির নির্জন কে বললো,
‘মা কে দ্রুত হসপিটালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’

“মাহিরের কথা শুনে নির্জনও সায় জানালো।অবশেষে তাহমিনা বেগম কে হসপিটালে নেওয়া হলো।”

“তাহমিনা বেগম কে চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন, যে তাহমিনা বেগম পিটি-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD) এ ভুগছেন, যা সাধারণত একটি ট্রমাটিক ঘটনার পর দেখা দেয়।”

“চিকিৎসক মাহির কে বলেন,

‘পেশেন্টের অবস্থা গুরুতর। তিনি শোকজনিত কারণে মানসিক চাপের মধ্যে আছেন। আমরা কিছু মনোরোগ চিকিৎসা এবং থেরাপি শুরু করব। তাকে কিছুদিন হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।”

“চিকিৎসকের কথা মত তাহমিনা বেগম কে হসপিটালে ভর্তি করানো হয়।
হসপিটালে ভর্তি হওয়ার পর, তাহমিনা বেগমের জন্য সাপোর্ট গ্রুপ এবং কাউন্সেলিং সেশন শুরু হয়। প্রথমে তিনি খুব অস্বস্তিতে ছিলেন, কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি তাঁর অনুভূতিগুলি প্রকাশ করতে শুরু করেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলার জন্য নিয়মিতভাবে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আসতেন।”

“এই অবস্থার মধ্যে নিধি তাঁর মায়ের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করে।প্রতিদিন নিয়ম করে তাহমিনা বেগম কে দেখতে আসে।”

“সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তাহমিনা বেগম ধীরে ধীরে তাঁর অবস্থার উন্নতি করতে শুরু করেন। চিকিৎসকরা নিধি কে বলেন,

“আপনার মাকে সঠিক সাপোর্ট ও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, সে এখন ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠবে।”

“তাহমিনা বেগমের এই কঠিন সময়টাতে তার দুই মেয়ের সাথে তার সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়, এবং তিনি অনুভব করেন, যে শোক এবং ক্ষ**তির মধ্যেও ভালোবাসা ও সমর্থনের শক্তি অন্যতম।”

“হসপিটাল থেকে রিলিজ দেওয়ার পর তাহমিনা বেগম কে নিধি ওর বাসায় নিয়ে যেতে চায়।কিন্তু নিধি একা বাসায় তাহমিনা বেগমের কোনো বিপদ হলে তৎক্ষনাৎ কিছু করতে পারবে না,তাছাড়া নির্জন ও তো অফিস করে।তাহমিনা বেগম কে একা সামলানো ওর জন্য কষ্ট হয়ে যাবে।তাই মাহিরের মা,মাহির এবং তোহা অনেক বুঝিয়ে তাহমিনা বেগম কে মাহিরের বাসায় নিয়ে যায়।কারণ,সেখানে বেশি মানুষের মধ্যে তাহমিনা বেগম নিজেকে একা মনে করবে না।তোহার শ্বাশুড়ি এবং তোহা তাকে সঙ্গ দিবে।”

———-
“সুখ-দুঃখ মিলিয়ে কে**টে গেলো ৮ দিন।এই কয়েকদিনে নির্জন নিধিকে মানসিক ভাবে সাপোর্ট দিয়েছে।অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বাসায় এসে নিধি কে সময় দিয়েছে।যেমন টা নিধি নির্জন কে দিয়েছিলো।নিধি নির্জন কে মেইডের কথা জিজ্ঞেস করলে,নির্জন অকপটে উত্তর দেয়,

‘মেইড শারীরিক অসুস্থতার কারণে কিছুদিন ছুটি নিয়েছে।সুস্থ হলে আবার আসবে।’

“সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে,নিধি সকালের খাবার তৈরি করলো।সেই সাথে ওর মা’য়ের জন্য বিরিয়ানি এবং পায়েস রান্না করলো।কিচেন থেকে বিরিয়ানি এবং পায়েসের সুঘ্রাণ পেয়ে নির্জন কিচেনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

‘ওয়াও,আজ কে হঠাৎ এগুলো রান্না করলে যে?’

“নিধি ম্লান হেসে বললো,

‘মায়ের সাথে দেখা করতে যাবো।যদিও তোহা আর ওর শাশুড়ি, মায়ের যত্নের ত্রুটি রাখে না;তবুও, মেয়ে হিসাবে আমারও তো একটা দায়িত্ব আছে।’

“মাহিরের বাসায় যাওয়ার কথা শুনে,নির্জনের মাথার উগ্র পোকাগুলো কিলবিল করে উঠলো।নির্জন চোখ-মুখ শক্ত করে বললো,

‘মা তো সুস্থ হয়ে গেছে।এখন তাকে দেখতে যাওয়ার কি দরকার?এতদিন হসপিটালে দেখতে গিয়েছো,কিছু বলিনি।এখন আবার বোনের শ্বশুর বাড়ি গিয়েও দেখতে হবে?এটা কি বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না?’

“নির্জনের এহেন কথায় হকচকিয়ে গেলো নিধি।বড় বড় চোখ করে বললো,

‘অদ্ভুত তো!আমি আমার মা কে দেখতে যাবো না?এটা কেমন ধরনের কথা বললেন?তাছাড়া আমি একা যাবো নাকি?আজ তো শুক্রবার, আপনিও আমার সাথে যাবেন।’

“নিধির এহেন কথায় উচ্চস্বরে হেসে উঠলো নির্জন।
নিধির কাছাকাছি এসে শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,ওর ডান হাত মুঠোবন্দী করে বললো,

‘এই চার দেয়ালের বাইরে কর্মস্থল ব্যতীত, না আমি কোথাও যাবো,আর না তুমি কোথাও যাবে ডার্ক কুইন।’

#চলবে…

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ পর্ব-৩৯+৪০

0

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৩৯
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ❌
[প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত]

“কিন্তুু আমার মনে ছিলো বি**ষ,
যখন করলে তুমি ছলনা,ভেবে নিলাম
তুমি শুধু প্রতারণার কারিগর,
আর আমি হলাম মৃগয়াকামী নির্জন।”

“কবিতা আবৃত্তি করে নির্জন দাঁড়িয়ে গেলো,আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো, ইতির বিছানার পাশে একটি ফুলদানি।নির্জন এগিয়ে গিয়ে ফুলদানি টি হাতে নিয়ে,বাঁকা হাসি দিয়ে খুব জোরে ফ্লোরে ছুঁ*ড়ে মা**রলো,যেনো ইতির বাবা-মা সেই শব্দ শুনে তাড়াতাড়ি ছুটে আসে।কারণ, নির্জন চায় না যে ইতি এখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করুক।ফুলদানি ভে**ঙে ইতির দিকে একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে,সবকিছু গুছিয়ে দ্রুত পায়ে সেখান থেকে প্রস্থান করলো।”

“এদিকে পাশের রুম থেকে কিছু ভা**ঙার শব্দ পেয়ে,ইতির বাবা-মায়ের ঘুম ভে**ঙে গেলো।তারা বুঝতে পারলেন,আওয়াজ টি ইতির রুম থেকে এসেছে।
তৎক্ষনাৎ দু’জনে সতর্ক পায়ে ধীরগতিতে মেয়ের রুমে দরজা ঠেলে প্রবেশ করতেই, ইতিকে চোখে কালো কাপড় বাঁধা অবস্থায় বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে আঁতকে উঠলেন।তারা ইতির কাছে গিয়ে দেখলেন,ওর হাত-পায়ে ব্যান্ডেজ করা,আঙ্গুল গুলো ফ্লোরে পড়ে আছে।নিজের সন্তানের এহেন ভ**য়ং**কর অবস্থা দেখে, ইতির মায়ের যেনো মাথা ঘুরে উঠলো।তিনি কোনো রকমে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে, ইতিকে জড়িয়ে ধরলেন।ইতির এহেন দশা দেখে ইতির বাবারও একই অবস্থা হলো।তিনি ইতিকে কাছে টেনে নিয়ে ওর নাসারন্ধ্রে আঙ্গুল নিতেই,দেখলেন শ্বাস পড়ছে।মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে,ইতির নিস্তেজ শরীর কোলে তুলে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন।”

“ইতির হাত-পায়ের আঙ্গুলগুলো কে**টে ফেলেছে নির্জন।এমন এক ভ**য়ং**কর দৃশ্যের মাঝে তাকে অর্ধমৃ**ত অবস্থায় হসপিটালে আনা হলো। পুরো ঘটনাটি যেনো এক দুঃস্বপ্নের মতো। ইতির শরীরে র**ক্ত**ক্ষ*রণ হচ্ছে। হসপিটালের ইমার্জেন্সিতে ঢোকার সাথে সাথে ডাক্তার ও নার্সরা ইতিকে দেখেই শিউরে উঠলো।”

“ডাক্তার প্রথমেই ইতির জীবন রক্ষায় ব্যস্ত হয়ে ওঠেন।ইতির র**ক্তের চাপ দ্রুত কমে যাচ্ছে, তাই সঙ্গে সঙ্গেই তারা তাকে একটি স্ট্রেচারে শুইয়ে জরুরি চিকিৎসা শুরু করেন। একজন নার্স ইতির র**ক্তচাপ মাপছে, আর একজন দ্রুত তার শিরায় স্যালাইন ওষুধ দিয়ে ইন্ট্রাভেনাস (IV) লাইন স্থাপন করছে।”

“একজন সিনিয়র সার্জন এসে দ্রুত বললেন,

‘র**ক্তক্ষরণ বন্ধ করতে হবে, নাহলে তার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাবে।’
তৎক্ষণাৎ ইতির হাত-পায়ের ক্ষ**তস্থানগুলোতে প্রাথমিকভাবে ট্যুর্নিকেট বেঁধে র**ক্ত*ক্ষরণ বন্ধ করা হয়। তারপর তার ক্ষ**তস্থানগুলো পরিষ্কার করা হয়, যাতে কোনো ইনফেকশন ছড়িয়ে না পড়ে।”

“কিছুক্ষণ পর ইতিকে দ্রুত অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। সার্জনরা ইতির হাত-পায়ের কা**টা আঙ্গুলগুলোর ক্ষ**তস্থানে প্লাস্টিক সার্জারি এবং শল্যচিকিৎসা শুরু করেন। তারা ক্ষ**তস্থানের চারপাশে মৃ**ত টিস্যু সরিয়ে সংক্রমণের ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা করেন। এরপর, প্রয়োজনীয় সেলাই দিয়ে ক্ষ**তস্থানে সাময়িকভাবে র**ক্ত*ক্ষরণ বন্ধ করা হয়।”

“ডাক্তাররা চেষ্টা করে আঙ্গুলগুলো পুনঃস্থাপন করতে,যদি তা না হয়,তাহলে কৃত্রিম আঙ্গুলের পরিকল্পনা শুরু করতে হবে।”

“অপারেশন শেষ হবার পর ইতিকে আইসিইউ-তে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। তার শরীরে ইনফেকশন ঠেকানোর জন্য শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়।”

“ডাক্তারেরা ইতির বাবা-মাকে ডেকে বলেন,

‘ইতির আঙ্গুলগুলো স্থায়ীভাবে হারানোর আশঙ্কা আছে, তবে আমরা তার জীবন রক্ষা করতে পেরেছি। তাকে লম্বা সময় ধরে মানসিক ও শারীরিক পুনর্বাসন করতে হবে।”

“মেয়ের জীবন টা যে ফিরে পেয়েছে,তাতেই ইতির বাবা-মা খুশি হয়ে গেলেন।তারপর ইতির বাবা পুলিশ কে ফোন করে বিষয়টি জানালেন।”

——-
“ভোর সাড়ে ৫টা।গভীর নিদ্রায় মগ্ন নিধি।প্রেয়সীকে দেখার অদ্ভুত আকুলতা যেনো তীব্র গতিতে বেড়ে চলেছে নির্জনের মাঝে।রিমলেস চশমার ফাঁক গলিয়ে সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছে প্রিয়তমার মুখস্রি।নিধির কপালে লেপ্টে থাকা ছোট ছোট চুলগুলো কে বড্ড হিং*সা হচ্ছে নির্জনের।ইচ্ছে করছে চুলগুলো কে কু**চি কু**চি করে কে**টে ফেলতে।কিন্তুু প্রেয়সীর সিল্কি চুলগুলো কে**টে ফেললে, সে তার প্রকৃত সৌন্দর্য হারাবে।উমম..এতটুকু স্যাক্রিফাইস নির্জন করতেই পারে।”

“হঠাৎ ভেতর থেকে ‘মন’ দুষ্টু হেসে বললো,

‘বাহ!নির্জন, তোমার খুব দয়া হয়েছে দেখছি।চিন্তা করো না,তোমার ডার্ক কুইন যখন বুড়ো হয়ে যাবে,তখন তার চুলগুলো ধীরে ধীরে পড়ে যাবে।তখন আর এগুলো তাকে বিরক্ত করবে না।আপাতত কয়েক বছর ধৈর্য ধারণ করো।’

“মনের কথা শুনে মুচকি হাসল নির্জন।”

“নির্জন আরও কিছুক্ষণ নিধির দিকে তাকিয়ে থাকল।প্রেয়সীকে একান্তে পেতে মন চাইলো।কিন্তুু ঘুমন্ত অবস্থায় তো অসম্ভব।তাই নিধির মাথায় আলতো করে হাত বুলাতে লাগল।নির্জন এভাবে হাত বুলিয়ে দেওয়াতে নিধির ঘুম ভে**ঙে গেলো।ঘুম ঘুম চোখে নির্জনের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘এই সময় হঠাৎ মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন যে?আপনার চোখ দেখে মনে হচ্ছে আপনি ঘুমাননি।কোনো সমস্যা হয়েছে?কিছু লাগবে?’

“নিধির ঘুমের ঘোরে বলা কথাগুলো শুনে ফের মুগ্ধ হলো নির্জন।প্রেয়সীর এহেন নেশালো কন্ঠে অদ্ভুত এক আকর্ষণ কাজ করছে।নির্জন মুচকি হেসে নিধির কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে,কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো,

‘তোমাকে বড্ড কাছে পেতে মন চাইছে ডার্ক কুইন।তুমি কি রাজি?’

“নির্জনের হাস্কি ভয়েস কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই ঘুমন্ত অবস্থায়ও লাজুক হাসলো নিধি।রাতে তো নিধিও এটাই চেয়েছিলো।কিন্তুু নির্জনের পক্ষ থেকে তেমন সাড়া পায় নি,তাই কিছু বলেনি।’
ভেবে অস্ফুটস্বরে ‘হুম’
বলে নির্জনের বুকে মুখ লুকালো।”

“প্রেয়সীর লজ্জা পাওয়া বরাবরই অপছন্দ করে নির্জন। কিন্তু এই মুহূর্তে কিছু বলে,বিশেষ মুহূর্ত নষ্ট করার কোনো মানে হয় না।তাই রহস্যময় হাসি দিয়ে, সন্তর্পণে নিধির ওষ্ঠযুগল আবদ্ধ করে নিলো নির্জন।প্রগাঢ় ভাবে নিধির শরীরের প্রতিটি অঙ্গে ছুয়ে দিতে লাগল।প্রিয়তমর স্পর্শে সাড়া দিলো নিধি।নিজেও বন্দী হলো নির্জনের তীব্র ভালোবাসার বন্ধনে।”

“দু’টি হৃদয়ের ভালোবাসা যখন পূর্ণতা পেলো,তখনই নির্জন নিধির কানের কাছে এসে ফিসফিস করে আওড়ালো,

“ঠোঁটের চুম্বনে রহস্যময় আতঙ্ক,
প্রেমের আড়ালে এক ভ**য়ং**কর শিকার।
র**ক্তের স্বাদে চুম্বনের বি**ষ,
অন্ধকারে কষ্টের সুমধুর আবেশ।

মৃ**ত্যুর ছায়ায় শ্বাসের খেলায়,
স্পর্শের মধ্যে লুকানো হিং*সা।
তীব্র আকাঙ্ক্ষা, বি**ষাক্ত প্রেম,
চুম্বনে বোনা এক ভালোবাসার স্নেহ।

দৃষ্টি ছিন্ন হৃদয়ে অতৃপ্তি,
ভ**য়ং**কর নেশার তীব্র শিহরণ।
প্রেমের নামে ভয়, অন্ধকারের খেলা,
ঠোঁটের উষ্ণতায় বি**ষাক্ত প্রেমের প্রহেলা।” ~মেহের~

———
“রাত পেরিয়ে সকাল হলো।তোহা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কিচেনে গিয়ে শাশুড়ি মায়ের সাথে হাতে হাতে সাহায্য করতে চাইলে,
তোহার শাশুড়ি তোহাকে রাগ করলেন,আর এটাও বললেন,
কোমর ব্যথা পুরোপুরি ভালো না হওয়া পর্যন্ত কোনো কাজ করতে হবে না।সে আর মেইড মিলে সব কাজ করে নিবে।”

“শাশুড়ির এহেন কথা শুনে তোহা তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

‘আমার মনেই হয় না,আপনি আমার শাশুড়ি।মনে হয় আপনি আমার নিজের মা।’

“তোহার শাশুড়িও মিষ্টি করে হেসে বললেন,

‘তুমি তো আমার মিষ্টি মেয়ে,তোমাকে আমার বৌমা কম,মেয়ে মনে হয় বেশি।’
এভাবে বৌমা আর শাশুড়ি কিছুক্ষণ কথা বললো।”

“অতঃপর তোহা রুমে প্রবেশ করতেই দেখলো ওয়াশরুম থেকে মাহির বেরিয়েছে।তার লোমশ বুকে পানির বিন্দু বিন্দু ফোঁটা স্পষ্ট।তোহা সেদিকে একবার দৃষ্টি দিয়ে,নজর ফিরিয়ে নিলো।মাহির তোহার কাছে এসে ওর হাত ধরে হ্যাঁচকা টানে কাছে নিয়ে বললো,

‘আমার অবস্থা দেখেছো?চোখের নিচে কেমন কালো দাগ পড়ে গেছে?এই কয়েকদিন তোমার চিন্তায় আমি ঘুমাতে পারিনি।’

“তোহা মুখ ভেং**চি কে**টে বললো,

‘আপনার তো দেখছি চাপার অনেক জোর।নাইট ডিউটি করে এমন হয়েছে, সেটা বলতে পারেন না?আচ্ছা,শুনুন আমার খুব কাশবনে যেতে ইচ্ছে করছে।নিধি আপুকে ফোন করেছিলাম,ওর ফোন নির্জন ভাইয়া রিসিভ করে বললো,
সে আজ আপুকে নিয়ে বাসায় ফিরবে।ছুটির দিনে আপুকে নিয়ে ঘুরতে যাবে।’
এটা শুনে আমি নাদিয়া আপুকে ফোন দিয়েছিলাম।আমার প্রস্তাবে নাদিয়া আপু আর দিগন্ত ভাইয়া রাজি হয়েছে।এখন আপনার কাছে আজ বিকাল টুকু সময় চাই প্লিইইজ।”

“তোহার এতো অনুরোধ ফেলতে পারলো না মাহির।তোহার ঠোঁট জোড়ায় আলতো করে চুমু দিয়ে বললো,

‘ওকে স্বপ্নচারিনী,আজ বিকালে নিয়ে যাবো।তবে সেখানে গিয়ে যেকোনো এক জায়গায় বসে থাকবে।কোনো হাঁটাহাঁটি করতে পারবে না।তুমি কিন্তুু এখনও পুরোপুরি সুস্থ হও নি।আমি আর কোনো রিস্ক নিতে চাই না।”

“মাহিরের যত্নশীল কথায় মুগ্ধ হলো তোহা।মুচকি হেসে, মাহিরের কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে সায় জানালো।”

——–
“এদিকে কিছুক্ষণ যাবৎ একসাথে শাওয়ার নেওয়ার জন্য, নাদিয়ার হাত ধরে টানাটানি করছে দিগন্ত।নাদিয়া সবেমাত্র রান্না করে রুমে এসেছে।তখনই দিগন্ত বিছানা থেকে উঠে রুমের দরজা আটকে, নাদিয়ার হাত ধরে টানতে লাগল।আজ সে পণ করেছে, নাদিয়া কে নিয়ে একসাথে শাওয়ার নিবে।”

“এদিকে দিগন্তের মতিগতি বুঝতে পেরে নাদিয়া বললো,

‘এই দেখো,এখন আমার ভালো লাগছে না।তোমার কাহিনী আমি বুঝিনা ভেবেছো?সব বুঝি।আমি তোমার সাথে ওয়াশরুমে শাওয়ার নিতে যাবো না।”

“দিগন্ত এইবার নাদিয়ার হাতে আস্তে করে চি**মটি দিয়ে বললো,

‘তোমার তো কয়েকটি কমন ডায়লগ সবসময় মুখের কাছে লেগে থাকে,
‘যাবো না,করবো না,খাবো না,না না না..’
অথচ আমার মতো অসহায় মানুষটির কথা একবারও ভাবো না।’
বলেই ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ফেললো দিগন্ত।”

“দিগন্তের চেহারা দেখে নাদিয়া ঠোঁট টিপে হেসে বললো,

‘হুম,আমরা কাশবন থেকে ঘুরে এসে তারপর একসাথে শাওয়ার নিবো, ওকে জানু?’

“দিগন্ত আহ্লাদী স্বরে বললো,
‘সত্যি তো?’

‘নাদিয়া মুচকি হেসে বললো,
‘হুম,১০০সত্যি।’

‘বলেই দিগন্তের গালে চুমু দিয়ে দ্রুত পায়ে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো।’

“নাদিয়ার যাওয়ার পানে তাকিয়ে দিগন্ত মুচকি হেসে মনে মনে আওড়ালো,
‘ইয়েএএএ.. আজকে আমার খুশির দিন।কবে যে রাত টা আসবে!”

———–
“কাশবনের সৌন্দর্য যেন এক মায়াবী জগৎ তৈরি করে। চারপাশে সাদা কাশফুলের স্নিগ্ধতা, দিগন্ত পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে আছে। কাশফুলের নরম সাদা রং মনে হয় যেন মেঘ নেমে এসেছে জমিনে। বাতাসে দোল খাওয়া ফুলগুলো একে অপরের সাথে মৃদু হাসিতে মেতে উঠেছে, যেন প্রকৃতি তাদের নিয়ে কাব্য লিখছে।”

“নরম হাওয়া কাশফুলের পাতাগুলোকে আলতোভাবে ছুঁয়ে দিয়ে, মৃদু সুরে বাজিয়ে তুলছে এক অপূর্ব গান। দিগন্তে মিশে যাওয়া নীল আকাশের নিচে এই কাশবন যেন প্রেমের প্রাঙ্গণ হয়ে উঠেছে। সাদা ফুলের মেলা যেখানে, সেই কাশবনে দাঁড়িয়ে থাকলে মনে হয় যেন পৃথিবীর সকল ব্যস্ততা এখানে এসে থেমে গেছে।”

“সূর্যের নরম আলো কাশফুলের ওপর পড়ে,কাশবনের এই শান্ত ও মায়াময় পরিবেশে যেন প্রেমের এক বিশুদ্ধ সুর ধ্বনিত হয়, যেখানে মন হারিয়ে যেতে চায় অনন্ত ভালোবাসার সাগরে।”

“কাশবনের মাঝখানে তোহা এবং মাহির, দিগন্ত এবং নাদিয়ার গল্প যেন এক রোমান্টিক কবিতার মতো শুরু হয়। সূর্যের সোনালি আভা কাশফুলের ওপর পড়ে এক মায়াবী দৃশ্য সৃষ্টি করেছে, যা প্রত্যেক কাপলকে একে অপরের কাছে টেনে নেয়।”

“মাহির তোহার হাত ধরে মৃদু হাসি দিয়ে বললো,

‘স্বপ্নচারিনী,তোমাকে এই কাশফুলের মত কোমল আর স্নিগ্ধ লাগছে আজ।’

“তোহা তার চোখে একরাশ ভালোবাসা নিয়ে বললো,

‘আপনি না, সবসময় একটু বেশি বলেন।আপনাকেও শুভ্র রঙা পাঞ্জাবিতে দারুণ লাগছে স্বপ্ন পুরুষ।’

“মাহিরের চোখে যেন গভীর এক প্রেম, সে তার বুকে তোহাকে টেনে নিয়ে কাশফুলের একটি গোছা হাতে তুলে দিয়ে কবিতা শুরু করলো,

“কাশফুলের মায়ায় তোমার চুলে জড়াই,
তোমার চোখের আলোয় দিন শেষ হয়ে যাই।
তুমি যে আমার কাশবনের রাণী,
তোমার প্রেমে আমি হারাই যতটুকু জানি।”

“তোহা মুগ্ধ হয়ে মাহিরের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে, সেই সাথে লাজুক হাসি দিয়ে কাশফুল দিয়ে মাহিরের বাহুতে আলতো করে চাপড় মা**রে।”

“এদিকে নাদিয়া কাশফুলের মাঝে দৌড়ে বেড়াচ্ছে, আর দিগন্ত তার পেছন পেছন ছুটছে এবং বার বার উত্তেজিত স্বরে বলছে,

‘হানি হানি..এখন দৌড়াদৌড়ি করলে বেবির প্রবলেম হবে।বেবি হয়ে গেলে ওকে কোলে নিয়ে দৌড় প্রতিযোগিতা দিয়ো।কিন্তুু এখন নয়।’

“দিগন্তের এহেন কথায় থেমে গেলো নাদিয়া।মুচকি হেসে বললো,
‘তুমি যদি আমায় ধরতে পারো, তবে তোমায় কবিতা শুনাবো।’

“দিগন্ত মৃদু হেসে বললো,
‘আমি ধরতে চাই না, শুধু তোমার কাছে থাকতে চাই।’
কাশফুলের একটি ডাল তুলে সে নাদিয়ার হাতে দিয়ে বললো,

“তুমি আমার বনের ফুল,
তোমার হাসিতে পৃথিবী ভুল।
কাশের মাঝে তোমার ছোঁয়া,
আমার হৃদয়ে তোমারই ধোঁয়া।”

“নাদিয়া দিগন্তের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়। দিগন্ত ওকে কোমলভাবে জড়িয়ে ধরলো। দু’জনের মাঝে যেন কাশফুলের মতো স্নিগ্ধ ভালোবাসার অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ে।”

“এদিকে ইহান ও আফরিন শান্ত ভাবে কাশবনের প্রান্তে বসে আছে।
আফরিন গতকাল রাত থেকেই ইহানের কাছে বায়না ধরেছে কাশবনে আসার জন্য।প্রিয়তমার মিষ্টি বায়না ফেলতে পারেনি ইহান।তাছাড়া তারও তো বাংলাদেশে সেভাবে ঘোরা হয়নি।তাই আজ দু’জনে একসাথে কাশবনে ঘুরতে এসেছে।সেই সাথে দু’জনের মিষ্টি,রোমান্টিক মুহূর্ত গুলোও ক্যামেরা বন্দী করতে এসেছে।”

“ইহান হঠাৎ কাশফুল হাতে তুলে আফরিনের দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বললো,
‘এই কাশফুলের মতো তুমি সবসময় আমার জীবনে রঙ এনে দাও সুমাইয়া।’

“আফরিন কিছু বলতে যাচ্ছিলো, কিন্তু তখনই ইহান কবিতা বলতে শুরু করে দিলো,

“কাশফুলের মতো তুমি সাদা,
তোমার প্রেমে হৃদয় বাঁধা।
তুমি ছাড়া জীবন মরুভূমি,
তোমার প্রেমে ভিজে যাই আমি।” ~মেহের~

“আফরিন একটুখানি হাসি দিয়ে বললো,

‘তুমি সবসময় এমন মিষ্টি কথা বলো,যেন প্রতিক্ষণে আমি মুগ্ধ হয়ে যাই।’

“ইহান আফরিন কে জড়িয়ে ধরে বললো,

‘কারণ, তুমি আমার কাছে সবচেয়ে সেরা উপহার।’
এই মুহূর্তে দু’জনের চোখে চোখ, যেন কাশবনের মাঝে তারা হারিয়ে গেছে একে-অপরের ভালোবাসায়।”

“এভাবেই তিনজন কাপল কাশবনের নরম হাওয়ায় নিজেদের ভালোবাসা খুঁজে নিলো। কাশফুলের মতন তাদের ভালোবাসা মধুর ও কোমল হয়ে ছড়িয়ে পড়ে এই সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে।”

——–
“এদিকে বিকাল বেলা নিধি নির্জনের কাছে বাবার বাড়িতে থাকার বায়না ধরলে,নির্জন কৌশলে অফিসের ব্যস্ততার কথা বলে, নিধিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজি করিয়ে নেয়।সেই সাথে মেইড কে ফোন করে ৩দিনের ছুটি দিয়ে দেয়।আর নিধিকে জানায়,যে মেইড অসুস্থ, তাই আসতে পারবে না।তাছাড়া নির্জন তেমন ভাবে রান্না করতে পারে না।তাই নিধি কে তার সাথে যেতে হবে।
প্রিয় স্বামীর কথা চিন্তা করে, নিধিও আর না করতে পারেনি।”

“নিধি যখন বেলকনির দোলনায় বসে প্রকৃতির স্নিগ্ধ বাতাস গায়ে মাখছে,সেই সুযোগে নির্জন কিচেনে চলে গেলো।
তাহমিনা বেগম বিকালে হালকা নাস্তা তৈরি করছিলো।
এমন সময় নির্জনের উপস্থিতি টের পেয়ে মুচকি হেসে বললেন,

‘এসো বাবা।কিছু বলবে?’

“নির্জনও মুচকি হেসে বললো,

‘নাহ!এমনি, দেখতে এলাম কি কি তৈরী করছেন।বাই দ্যা ওয়ে,আপনার হাতের চিজ পাস্তা খেতে কিন্তুু অসাধারণ। কিন্তুু,নিরুপমা সেদিন বলেছিলো..

“তাহমিনা বেগম জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
‘কি বলেছিলো?’

“নির্জন ম্লান হেসে বললো,
‘না,থাক কিছু না।’

“তাহমিনা বেগম উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
‘আরে বাবা বলো না,আমার পা**গলী মেয়েটা কি বলেছে?’

“নির্জন মলিন স্বরে বললো,

‘বলেছে,আপনার হাতের ফাস্ট ফুডগুলো ওর কাছে তেমন ভালো লাগে না।এর থেকে আমাদের বাসার মেইডের বানানো খাবার বেশি ভালো লাগে।
আসলে মা, আপনি কিছু মনে করবেন না,আমার বাসার মেইড ও খুব ভালো ফাস্ট ফুড আইটেম বানাতে পারে।তাছাড়া এই কয়েকদিনে নিরুপমা আমার বাসার সদস্যগুলো কে এতটা আপন করে নিয়েছে,যে আপনার কথা একবারও বলে না হাহাহা।তবে আমি প্রতিদিন নিয়ম করে আপনার আর বাবার কথা ওকে মনে করিয়ে দিয়েছি।আপনাদের জন্যই তো ওকে আমি অর্ধাঙ্গিনী হিসাবে পেয়েছি,তাই না মা?’

“নির্জনের এহেন কথায় মুহূর্তেই মুখমণ্ডল মলিন হয়ে গেলো তাহমিনা বেগমের।মনের মধ্যে কষ্ট অনুভব করে ভাবলেন,

‘নিধি তো সত্যি বলেছে,ছোটবেলা থেকে নিধির অতিরিক্ত দুষ্টুমি স্বভাবের জন্য মেয়েটা কে কতটা বকাঝকা করেছি,মে**রেছি।ওর সাথে মা হিসেবে তেমন ভাবে আমার সখ্যতা গড়ে ওঠেনি।হয়তো, এটা আমার নীরব স্বভাবের জন্য।একজন মা হিসাবে সত্যি আমি ব্যর্থ!
তাই তো মেয়েটা দূরে গিয়ে সবার আদর-যত্ন পেয়ে আমাকে ভুলে গেছে।’

‘ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো তাহমিনা বেগম।”

“নির্জন সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাহমিনা বেগমের মুখমণ্ডল পর্যবেক্ষণ করে ভাবলো,

‘যাক,তার নীরব মস্তিষ্কে কথা গুলো ঢুকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি।উনি আর আমাদের মাঝে কাবাব মে হাড্ডি হবে না।আমার ডার্ক কুইন শুধু আমারই থাকবে।’

‘ভেবে বাঁকা হাসলো নির্জন।”

“অবশেষে নির্জন এবং নিধি ওর বাবা-মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিলো।নিধির মন ভীষণ খারাপ।কারণ,বিদায়ের মুহূর্তে তাহমিনা বেগম ওর সাথে ভালোভাবে কথা বলেনি।নিধি ওর মাকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে,তিনি জবাবে বলেন,

‘আমি নীরব স্বভাবের হলেও,তোদের দুই বোন কে সমান ভাবে ভালোবেসেছি।দোয়া করি,তোর জীবন যেনো খুব সুখের হয়।’

“মায়ের এহেন কথার ভাবার্থ বুঝতে পারেনি নিধি।এদিকে নির্জন ও যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করছিলো,তাই নিধি আর কথা না বাড়িয়ে বিদায় নেয়।”

“গাড়িতে উঠে নিধিকে মুখ ভার করে বসে থাকতে দেখে,মনে মনে তৃপ্তির হাসি দিয়ে গাড়ির স্পিড আরেকটু বাড়িয়ে দিলো নির্জন।কিছুদূর যাওয়ার পর হঠাৎ করে গাড়ির স্পিড আপনা-আপনি কমে এলো।নির্জন তৎক্ষণাৎ গাড়ি থামিয়ে,বাইরে গিয়ে চেক করে দেখলো গাড়ির ইলেকট্রিক সিস্টেমে কিছু ত্রুটি হয়েছে।নির্জন মনে মনে সেগুলো কে ইচ্ছে মত বকা ঝকা করে গাড়িতে বসে,স্লো স্পিডে টেনে একটি গ্যারেজে নিয়ে যায়।গাড়ির মেকানিক সবকিছু দেখে বললো,
‘আগামীকাল বিকালে এসে নিয়ে যেতে।’
নির্জন সায় জানিয়ে চলে গেলো।”

“মাঝ রাস্তায় রিকশা,সি এন জি গুলো ভরপুর হয়ে আসছিলো।তাই ওরা বাধ্য হয়ে বাসে উঠলো।
বাসে ওঠার কিছুক্ষণ পর, নিধি নির্জনের কাছে পানির বোতল চাইলো।”

“নির্জন ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে দিতেই,নিধি নিকাব খুলে বোতল উঁচিয়ে খাওয়া শুরু করলো।
তখনই একজন লোক নির্জনের সাইড ঘেঁষে দাঁড়িয়ে, নিধির পানি পান করা দেখছিলো।আর বারবার জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিচ্ছিলো।”

“নির্জন লোকটা কে কিছুক্ষণ যাবৎ খেয়াল করেছে,সে বাসে ওঠা অন্য মেয়ে গুলোর দিকেও কেমন নোং**রা দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলো।কিছু মেয়ের কোমরে ভিড়ের দোহাই দিয়ে বা**জে ভাবে ছুঁয়েও দিয়েছে।কেউ বোঝেনি,কেউ আবার বুঝেও লজ্জায় কিছু বলেনি।বাসগুলো তে প্রতিনিয়ত মহিলাদের সাথে এমন ঘটনা অহরহ ঘটে থাকে।কেউ প্রতিবাদ করে।কেউ আবার মান-সম্মানের ভয়ে চুপসে যায়।মাঝখান থেকে পৈ**শা**চিক আনন্দ উপভোগ করে মানুষ রূপী হা**য়েনা গুলো।”

“নির্জনের মস্তিষ্কের উগ্র পোকাগুলো মুহূর্তেই কিলবিল করে উঠলো। মনে মনে আওড়ালো,

‘ও কেনো আমার জানপাখির দিকে এমন করে তাকিয়ে আছে?তাও আবার এভাবে জিহ্বা টা বারবার ভিজিয়ে?এটাই তো নোং**রামো।মেয়েগুলো কেও কেমন করে ছুঁয়ে দিলো।না না..ওকে তো শাস্তি পেতেই হবে।তাও আবার ভ**য়নাক শাস্তি।ওর জিহ্বা,হাত আর চোখ দু’টোকে বেশি শাস্তি পেতে হবে।কিন্তুু, এত মানুষের ভীড়ে কিভাবে দেবো?’

“কথাগুলো ভাবতেই নির্জনের নজর গেলো লোকটির প্যান্টের পেছনের পকেট থেকে কিঞ্চিৎ বের হয়ে থাকা ওয়ালেটের দিকে।নির্জন ডেভিল হেসে ভাবলো,

‘দিগন্ত একটা কথা সত্যি বলে,আমার বুদ্ধির জুরি নেই।’

#চলবে…

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৪০
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ❌
[প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত]

“নির্জন ডেভিল হেসে ভাবলো,

‘দিগন্ত একটা কথা সত্যি বলে,আমার বুদ্ধির জুরি নেই।’

ভেবে লোকটির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।নিধি পানি খেয়ে নিকাব দিয়ে মুখ ঢেকে জানালার বাইরে তাকালো।এদিকে নিধি মুখ ঢেকে ফেলতেই,লোকটির নজর অন্য মেয়েগুলোর ওপর স্থির হলো।
সেদিকে সূক্ষ্ম দৃষ্টিপাত করে,নির্জন আশেপাশে সতর্ক দৃষ্টিতে তাকালো।দেখলো,যে যার মতো একে-অপরের সাথে কথপোকথন করছে,কেউ জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে,কেউ আবার ক্লান্ত শরীর নিয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় ঝিমাচ্ছে।এই সুযোগে নির্জন লোকটির প্যান্টের পকেট থেকে আলগোছে ওয়ালেট টি বের করে নিলো।অতঃপর বিজয়ের হাসি দিয়ে মনে মনে আওড়ালো,

‘আমি কিন্তুু চোর নই,এখান থেকে জাস্ট তোর জাতীয় পরিচয়পত্র(NID) নিবো।তারপর তোর বাসার ঠিকানায় যাবো,তারপর তুই আমার হাতে শেষ হবি,সিম্পল।’
ভেবে ওয়ালেট টি নিজের পকেটে ঢুকিয়ে নিলো নির্জন।”

“লোকটি বাসের ভাড়া আগেই মিটিয়ে দিয়েছিলো,তাই সে তার গন্তব্যে নেমে গেলো।কিছুক্ষণ পর নির্জনও নিধিকে নিয়ে নিজ গন্তব্যে নেমে গেলো।
দরজার লক খুলে বাসায় ঢুকতেই, সায়রা বেগমের রুম থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসতেই, একে-অপরের দিকে তাকালো নির্জন এবং নিধি।নিধি উত্তেজিত স্বরে জিজ্ঞেস করলো,

‘কি হয়েছে?ওই ঘর থেকে কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে কেনো?মায়ের কিছু হয়নি তো?’

“নির্জন নিধির দিকে আড়চোখে তাকিয়ে,ফ্লোরে ব্যাগ রেখে দ্রুত পায়ে সায়রা বেগমের রুমের কাছে গিয়ে দরজা নক করতেই,দরজা খুলে গেলো।নির্জন বুঝতে পারলো,দরজা আগে থেকেই খোলা ছিলো।নির্জন কে দেখে দ্রুত মাস্ক পড়লো সেবিকা।নির্জনের পেছনে নিধি এসে তাকিয়ে রইলো সায়রা বেগমের দিকে।তার চোখজোড়া ঘোলাটে হয়ে আসছে।এক দৃষ্টিতে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে আছে।ঠোঁট জোড়া অনবরত কাঁপছে, হয়তো কিছু বলতে চেয়েও পারছে না।”

“নির্জন স্থির দৃষ্টিতে সায়রা বেগমের দিকে তাকিয়ে রইলো।অতঃপর সেবিকাকে জিজ্ঞেস করলো,

‘এই অবস্থা কখন থেকে?আর আমাকে ফোন করেন নি কেনো?’

“সেবিকা কান্নারত গলায় নিচু স্বরে বললো,

‘প্রায় আধা ঘন্টা যাবৎ তার এই অবস্থা।প্রথমে মুখ দিয়ে কেমন আওয়াজ করছিলো।কয়েক মিনিটের মধ্যে দেখলাম, ঘেমে একাকার হয়ে গেলো।হয়তো তার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো।তার এই অবস্থা দেখে আমি আপনাকে ফোন করেছিলাম,কিন্তুু আপনার ফোন বন্ধ ছিলো।’

“সেবিকার কথা শুনে নির্জন পকেট থেকে ফোন বের করে দেখলো,সত্যি ফোন বন্ধ হয়ে গেছে।তৎক্ষনাৎ নির্জনের মনে পড়লো,ফোনে চার্জ ১%ছিলো।তাই বন্ধ হয়ে গেছে।”
ভেবে বললো,

‘তারপর আপনি কি করেছেন?’

“সেবিকা শুকনো ঢোক গিলে বললো,

‘আমি উপায়ান্তর না পেয়ে, তার শরীর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুছিয়ে দিয়েছি।স্যার, আপনার মা কে হসপিটালে নেওয়া আবশ্যক।তার প্রেশার হয়তো বেড়ে গিয়েছে।’

“সেবিকার কথা শুনে মনে মনে ভীষণ খুশি হলো নির্জন।ভাবলো,

‘আর কতো বেঁচে থাকবে এই মহিলা?এর তো দেখছি কই মাছের প্রাণ!’
ভেবে ক্ষুদ্র শ্বাস ফেলে তৎক্ষনাৎ নিজের রুমে চলে গেলো।”

“এদিকে নিধি মলিন চেহারা নিয়ে সায়রা বেগমের পাশে বসে,তার হাত ধরে স্বান্তনার বাণী শোনালো,

‘চিন্তা করবেন না মা,সব ঠিক হয়ে যাবে।কিছুক্ষণ পর আপনাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হবে।ডক্টর সঠিকভাবে চিকিৎসা দিলেই, আপনি সুস্থ হয়ে যাবেন।’

“এদিকে নির্জন ফোনে চার্জ দিয়ে তার পরিচিত ডক্টর কে ফোন দিয়ে, সায়রা বেগমের বর্তমান অবস্থা জানালো।ডক্টর এই মুহূর্তে সায়রা বেগম কে হসপিটালে নিয়ে যেতে বললো।”

“নির্জন সায়রা বেগমের রুমে এসে, নিধিকে সায়রা বেগমের হাত ধরে বসে থাকতে দেখে ভীষণ রেগে গেলো।তবুও এই মুহূর্তে খুব কষ্টে নিজেকে কন্ট্রোল করে,ধীর পায়ে এগিয়ে এসে নিধির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,

‘জার্নি করে এসেছো।রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।আমি মায়ের পাশে আছি।আমি সবকিছু সামলে নেবো।’

“নিধির সত্যি খুব ক্লান্ত লাগছে।তাই সায়রা বেগমের দিকে আবারও মলিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে,সেখান থেকে চলে গেলো।নিধি যেতেই,নির্জন সেবিকা কে রুম থেকে প্রস্থান করতে বললো।”

“নির্জন বলতেই, সেবিকা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।নির্জন তৎক্ষণাৎ রুমের দরজা আটকে দিয়ে,সায়রা বেগমের দিকে তাকিয়ে ডেভিল হেসে তার পাশে বসে,তার ডান হাত ধরে বললো,

‘উহুম,আমি জানি,এই হাতে আপনার বোধ নেই।কিন্তুু কিছুক্ষণ আগে আমার নিরুপমা আপনার মতো নোং**রা মানুষের হাত টি ধরে অনেক বড় অপরাধ করেছে,যদিও ও জানে না আপনি কেমন।তবুও ওকে শাস্তি পেতে হবে।তবে এখন নয়,আগে আপনি পরপারে চলে যান,তারপর।”

“সায়রা বেগমের হাতে পায়ে বোধ না থাকলেও,তার শ্রবণশক্তি এখনও প্রখর।নির্জনের এহেন কথায় তার চোখজোড়া বেয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে।সেটা দেখে পৈ**শা*চিক হাসি দিলো নির্জন।বোঝালো,তার একটুও কষ্ট হচ্ছে না।”

“সায়রা বেগমের এই মুহূর্তে নিঃশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে,সেটা বেশ বুঝতে পারছে নির্জন।এমতাবস্থায় তার কানের কাছে ঝুঁকে ফিসফিস করে আওড়ালো,

“শ্বাসের শেষে, অন্ধকারে, তোমার মুখোশ খসে পড়বে,
চরিত্রের পাপে ডুবে, তোমার আত্মা দুঃখের বি**ষে ম**রবে।
তোমার প্রতিটি নিঃশ্বাস, কাঁটার মতো হবে গলা চিরে,
যেমন তুমি ফাঁকি দিয়েছিলে, সেভাবেই মৃ**ত্যুও আজ আসে ঘিরে।

এই পৃথিবী তোমার জন্য নয়, এই আলো তোমায় পোড়াবে,
তোমারই পাপের বোঝা, শূন্যতার গভীরে নিয়ে যাবে।
তোমার অজুহাতের কথারা ম**রে গেছে বহু আগে,
এখন শুধু অপেক্ষা, চিরস্থায়ী অন্ধকারে ডুবে যাওয়ার আগে।” ~মেহের~

“নির্জনের এহেন হিং**স্র কবিতা আবৃত্তি শুনে, সায়রা বেগমের নিঃশ্বাস যেনো আরও আটকে যেতে লাগল।তার মন চাইছে বুক ফাটা আ**র্তনাদ করে বলতে,

‘আমি পৃথিবীর বুকে আরও কিছুদিন বাঁচতে চাই।’
কিন্তুু মুখ মন্ডল সেটা সায় দিচ্ছে না।”

“সায়রা বেগমের বুক ফাটা আ**র্তনাদ শুনতে না পেলেও, তার চোখ থেকে ঝরে যাওয়া পানি দেখে ভীষণ তৃপ্তি পেলো নির্জন।”

“নির্জন দুঃখী দুঃখী মুখ করে বললো,

‘ইশশ!আপনি এখনও ম**রছেন না কেনো?আর কতদিন আমার ঘাড়ের ওপর বসে থাকবেন?স্বাধীন দেশে থেকেও আজ আপনি পরাধীন।কিছুদিন পর পর আপনার এমন উচ্চ র**ক্তচাপ হয়।অথচ ডাক্তার চিকিৎসা দেওয়ার পর,আবার আগের মত সুস্থ হয়ে যান।এটা কিন্তু খুব বোরিং লাগে।তাই আজ একটু শাস্তি দিয়ে,আপনাকে হসপিটালে নেবো।এত অভিনয় আমার সহ্য হয় না।
আপনি অনেক মেলোড্রামা করেছেন।এখন তাড়াতাড়ি ম**রে, আমাকে উদ্ধার করুন।নইলে,আমার বউ এসে আবারও আপনার হাতে হাত রেখে ন্যাকা কান্না শুরু করবে।’

বলেই দাঁড়িয়ে গেলো নির্জন।অতঃপর সায়রা বেগম কে কোলে তুলে নিয়ে,দরজা খুলে আগে থেকে ফোন করে রাখা উবারে উঠে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।”

“নির্জনের সাথে নিধিও যেতে চেয়েছিলো।কিন্তুু নির্জন বলেছে,সে একাই সামলাতে পারবে।নিধি যেনো নিশ্চিন্তে থাকে।’
নির্জনের কথা শুনে,নিধিও আর জোর করলো না।নির্জনের যাওয়ার পানে তাকিয়ে, শাশুড়ির জন্য মনে মনে অনেক দোয়া করলো।”

“গাড়ির পেছনের সিটে নির্জনের কাঁধে মাথা রেখে বসিয়ে রাখা হয়েছে সায়রা বেগমকে।এই যে নির্জনের কাঁধে তার মায়ের মাথা ঠেকে আছে।এতে ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে নির্জনের।মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো,পড়নের শার্ট টি পু**ড়িয়ে ফেলবে।কারণ, এতে এক চরিত্রহীনা নারীর ছোঁয়া লেগে আছে।’
ভেবে সায়রা বেগমের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

‘একি!আপনার নিঃশ্বাস এখনও ফুরায় নি?আমি তো ভাবলাম,এখানেই ফুরিয়ে যাবে।আচ্ছা চিন্তা করবেন না,ঢাকা শহরে অনেক জ্যাম;৩০মিনিটের পথ মাঝে মাঝে ১ঘন্টায় পাড়ি দিতে হয়।ততক্ষণে আপনি টাটা, বাই বাই।’

বলে ডেভিল হাসলো নির্জন।এদিকে সায়রা বেগমের নিঃশ্বাস যেন ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে আসছে।এই মুহূর্তে নির্জনের বলা কথাগুলো যেন বি**ষের মতো লাগছে।
আজ নির্জনের এহেন অবস্থার জন্য তিনি শতভাগ দায়ী।”

“সায়রা বেগমকে হসপিটালে নেওয়ার পর তার শারীরিক অবস্থা খুবই সংকটজনক দেখে, নির্জন তার
মুখমন্ডলে দুঃখী ভাব নিয়ে,তাকে তাড়াহুড়ো করে হসপিটালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা তৎক্ষণাৎ তাকে ICU-তে ভর্তি করলো। সেখানে কয়েকজন ডাক্তার এবং নার্স দ্রুত তার শ্বাসপ্রশ্বাস, হার্টবিট, ও র**ক্তচাপ পরীক্ষা করতে থাকল। সায়রা বেগমের শ্বাস খুবই ভারী হয়ে এলো এবং তার শরীরে হালকা খিঁচুনি দেখা দিলো।”

“ডাক্তাররা প্রথমে অক্সিজেন মাস্ক দিয়ে তার শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করল। এরপরে ইসিজি মেশিন দিয়ে হৃদস্পন্দনের অবস্থা মনিটর করল। সায়রা বেগমের হৃদস্পন্দন অসমান এবং ধীরে ধীরে কমতে থাকল। নার্সরা তাকে ইনজেকশন দিয়ে, স্যালাইন লাগিয়ে শরীরে তরল ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করল। ডাক্তাররা CPR (কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন) করার প্রস্তুতি নিলো।কারণ তার হৃদপিণ্ড পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।”

“নির্জন দাঁড়িয়ে নির্লিপ্ত চোখে সবকিছু দেখতে থাকল। তার মুখে দুঃখের ভাব স্পষ্ট হলেও,মনে কোনো অনুভূতির ছাপ নেই, যেন সে তার মায়ের মৃ**ত্যু নিয়ে এক ধরনের শীতল প্রতিশোধের স্বাদ নিচ্ছে।”

“সায়রা বেগমের শ্বাস ধীরে ধীরে কমে আসলো। ডাক্তাররা চেষ্টার পরেও, কিছুক্ষণ পরই ঘোষণা করলো
‘শি ইজ গন।’
ডাক্তারের মুখে এহেন কথা শুনে,নির্জন মনে মনে ভীষণ খুশি হলেও,চেহারায় প্রিয় স্বজন হারানোর বেদনার ছাপ ফুটিয়ে তুলে,সায়রা বেগমের কাছে গেলো। সায়রা বেগমের চোখজোড়া বন্ধ।তার মুখটা যেন মৃ**ত্যু যন্ত্রণায় আর আতঙ্কে বি**কৃত হয়ে গিয়েছে ,ঠিক যেন কোনো অদৃশ্য দুঃস্বপ্ন তাকে তাড়া করছে।”

“নির্জনের চোখজোড়ায় আনন্দের অশ্রু ছলছল করে উঠলো।মনে মনে আওড়ালো,

‘শেষটা তো এমনই হওয়ার ছিলো, মা।’

“শেষ..পৃথিবী থেকে আরেকজন বিশ্বাসঘা**তক, চরিত্রহীনা নারী বিদায় নিলো।যাকে নির্জন এতদিন তিলে তিলে য**ন্ত্রণা দিয়েছে। ”

“রাত ১টা বেজে ৩২মিনিট।অ্যাম্বুলেন্সের জোরালো শব্দ কানে ভেসে আসতেই, সোফায় হেলান দিয়ে বসে থাকা নিধি এবং সেবিকা ধরফরিয়ে উঠে বসলো।নির্জন এবং শাশুড়ি মায়ের জন্য অপেক্ষা করতে করতে, একসময় সোফায় হেলান দিয়ে চোখ লেগে এসেছিলো নিধির এবং সেবিকার।
অ্যাম্বুলেন্সের শব্দ কর্ণপাত হতেই মনে আ*তং**ক সৃষ্টি হলো নিধির।দৌড়ে গিয়ে সদর দরজা খুলতেই দেখতে পেলো, অ্যাম্বুলেন্সের দরজা খুলে একজন সহকারী ধীরে ধীরে স্ট্রেচার বের করলো।তার সাথে নেমে এলো নির্জন। স্ট্রেচারের ওপর সায়রা বেগমের নিথর দেহ শায়িত আছে। তার শরীরটি সাদা চাদরে আচ্ছাদিত।”

“দু’জন লোক স্ট্রেচারের দু’পাশ ধরে ধীরে ধীরে নামলো।মাথার দিকের লোকটি যত্নসহকারে তাকে সামনের দিকে সামান্য উঁচু করে ধরলো।যাতে তার মাথায় কোনো আ**ঘাত না লাগে। স্ট্রেচার থেকে নিচে নামানোর পর, সায়রা বেগম কে ঘরের ভেতরে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলো।
ঘরের বাইরের দৃশ্যটি দেখে মুহূর্তেই থমকে গেলো নিধি এবং সেবিকা।এতক্ষণে তারা যা বোঝা বুঝে গেছে।নিধি এবং সেবিকা দু’জনেই দরজার কাছ থেকে সরে দাঁড়ালো।”

“সহকারী দু’জন খুব সাবধানে এবং নীরবে স্ট্রেচার ধরে দরজা দিয়ে ঢুকলো, যেন কোনো শব্দ না হয়। পুরো পরিবেশে এক ধরনের নিস্তব্ধতা আর ভারী বাতাস ভর করলো।”

“নিধি এবং সেবিকা দু’জনেই যেনো বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো।নিধির চোখজোড়া বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।নির্জন নীরবে, নিভৃতে তাকিয়ে রইলো ফ্লোরে শুয়ে থাকা নিস্তেজ রমনীর দিকে;যার জন্য তার আজ এমন অবস্থা হয়েছে।”

“আকস্মিক নিধি হুঁশে ফিরলো।ভাবলো,

‘আমি যদি ভে**ঙে পড়ি,তাহলে নির্জন কে সামলাবে কে?এই পৃথিবীতে তার একমাত্র আপন বলতে শুধু মা ছিলো।এখন তো সেও চলে গেলো।এই মুহূর্তে নির্জন কে স্বান্তনা দেওয়া এবং তার পাশে থাকা সবচেয়ে বেশি জরুরি।নইলে মানুষ টা যে আরও ভে**ঙে পড়বে।’
ভেবে নির্জনের কাছে গিয়ে,তার কাঁধে হাত রেখে মলিন স্বরে বললো,

‘নির্জন, একদিন এই পৃথিবীতে সব প্রাণীকেই মৃ**ত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।এটা আপনি এবং আমি,আমরা সবাই জানি।যতদিন বেঁচে থাকব,আমি আপনার পাশে ছায়ার মতো থাকব।প্লিজ, মন কে শান্ত করুন।আমি আপনার কষ্ট বুঝতে পারছি।’
বলেই নির্জনের পাশে নিজেও বসে পড়লো।”

“নিধির দিকে একবার স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, আবারও সায়রা বেগমের দিকে তাকালো নির্জন।চোখে-মুখে তার দুঃখী ভাব স্পষ্ট।চোখ জোড়া লাল বর্ণ ধারন করেছে।”

“নির্জনের দিকে আবারও করুণ দৃষ্টিতে তাকালো নিধি।বুঝতে পারলো,সবচেয়ে প্রিয় মানুষ টিকে হারিয়ে, নির্জন পাথর হয়ে গেছে।”

“তমসাচ্ছন্ন রাত পেরিয়ে সকাল হলো।যেহেতু নির্জনের সাথে তার আত্মীয়দের সম্পর্ক পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন, তাই সে কাউকে সায়রা বেগমের মৃ**ত্যুর খবরটি জানায় নি।নিধি ওর বাবা-মা,নাদিয়া, দিগন্ত, তোহা,মাহির কে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে।
সবাই খবর পেয়ে সকালেই নির্জনের বাসায় চলে এসেছে।জোহরের নামাজের পর সায়রা বেগমের দাফন কার্য সম্পন্ন করা হয়েছে।
নির্জন কে তার শ্বশুর-শাশুড়ি,দিগন্ত, মাহির সহ আশে-পাশের প্রতিবেশীরাও স্বান্তনার বাণী শুনিয়ে মাগরিবের নামাজ পড়ে,সবাই চলে গিয়েছে।
নিস্তব্ধ বাড়িটিতে থেকে গেলো শুধু নির্জন এবং নিধি।সেবিকাও নির্জনের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছে,কারণ আজ থেকে এখানে তার কোনো কাজ নেই।”

“রাতে নির্জনকে নিজ হাতে খাইয়ে দিলো নিধি।নির্জন না খাওয়ার জন্য অনেক অভিনয় করেছে,কিন্তুু নিধি বেচারি খাওয়ার জন্য অনেক অনুরোধ করেছে।অবশেষে নিধি নির্জন কে কয়েক লোকমা খাইয়ে দিয়েছে।
খাওয়া-দাওয়া শেষ করে নিধি বিছানায় শোয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলে,নির্জন হুট করে নিধির হাত ধরে কাছে টেনে নিয়ে, মলিন স্বরে বললো,

‘আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না তো ডার্ক কুইন?’

“সারাদিন পর কতগুলো অক্ষর মিলিয়ে কথা বললো নির্জন।শুনে, কিছুটা স্বস্তি পেলো নিধি।নির্জনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,

‘কোথাও যাবো না নির্জন।আমি সবসময় আপনার সাথে থাকব।আপনিই তো আমার সব।’

” নির্জনের মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো,কিন্তুু সেটা দেখতে দিলো না নিধিকে।নিধির পিঠে হাত বুলিয়ে বললো,

‘প্রমিজ করো,সবসময় আমার সাথে থাকবে।’

“নিধি ম্লান হেসে বললো,
‘প্রমিজ, প্রমিজ, প্রমিজ।’

“নির্জন নিধির মাথায় ঠোঁট জোড়া ছুঁইয়ে বললো,
‘ওয়াদা টা মনে থাকে যেনো।’

“নিধি ভরসার সহিত বললো,
‘অবশ্যই মনে থাকবে।’

“আজ অর্ধেক রাতটুকু নির্ঘুম কা**টিয়েছে নিধি।নির্জনের মাথায় হাত বুলিয়ে বিভিন্ন স্বান্তনামূলক বাণী শুনিয়েছে।নির্জনও মনযোগী শ্রোতার ন্যায় নিধির প্রতিটি কথায় ‘হ্যা,হুম’ শব্দ করে তাল মিলিয়েছে।এক সময় নির্জন ঘুমিয়ে গেলেও,ঘুম ছিলো না নিধির চোখে।এই বদ্ধ বাড়িতে মানুষ থেকেও যেনো না থাকার মতো ছিলো।কেউ ওর সাথে কথা বলতো না।তবুও শাশুড়ির রুমে গিয়ে মাঝে মাঝে একাই কথা বলে চলে আসতো।কিন্তুু, এখন তো আরও একা হয়ে গেলো।নির্জন অফিসে যাওয়ার পর কিভাবে সময় কা**টবে ওর?ও তো একা থাকতে ভীষণ অপছন্দ করে।’

ভেবে খুব মন খারাপ হলো নিধির।ভোরের দিকে নিধিও ঘুমিয়ে গেলো।”

———-
“সুখ-দুঃখ মিলিয়ে কে**টে গেলো ৩দিন।এই ৩ দিন নির্জন অফিস থেকে ছুটি নিয়ে,বাসায় সময় কা**টিয়েছে।নিধি যথাসম্ভব তাকে মানসিক ভাবে সাপোর্ট করেছে।কিন্তুু আশ্চর্যের বিষয় হলো,এই ৩দিনে নিধি তার পরিবারের সাথে একবারও যোগাযোগ করে নি।এমন কি নিধির বাসা থেকেও কোনো ফোন আসে নি।কথাগুলো ভেবে খুব অবাক হলো নিধি।
ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসে, খাবারের লোকমা মুখে দিয়ে নির্জন কে বললো,

‘আমি না হয় শাশুড়ি মায়ের মৃ**ত্যুর পর আপনাকে নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিলাম;তাই বলে মা-বাবা,তোহা কেউ আমাদের খবর নিলো না?’

“নিধির কথা শুনে মনে মনে হেসে কু**টিকু**টি হলো নির্জন।ভাবলো,

‘খবর নিবে কিভাবে?তারা যখনই ফোন দিয়েছে,তখনই তুমি কোনো কাজে ব্যস্ত ছিলে।কখনো কিচেনে,কখনো ওয়াশরুমে, কখনও অন্য কাজ করেছো।আর এই সুযোগে তোমার ফোন আমি সাইলেন্ট করে রেখেছি।কল শেষ হওয়ার পর মিসড কল অপশনে গিয়ে নাম্বার ডিলিট করে দিয়েছি।তারপর আবারও ফোনে রিংটোন দিয়ে রেখেছি।এইজন্যই তো ৩দিন ছুটি নিলাম।আশা করি, তোমার বাবা-মা তোমার ওপর ভীষণ অভিমান করবে।এভাবেই তো ধীরে ধীরে তোমাদের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি হবে।আর তুমি পুরোপুরি আমার হয়ে যাবে।
তাছাড়াও কানের কাছে ফোনের উচ্চশব্দ শুনতে আমার একদমই ভালো লাগে না।’

ভেবে ম্লান হেসে বললো,

‘হয়তো তারা ব্যস্ততার কারণে তোমাকে ফোন দিতে পারে নি।মন খারাপ করো না জানপাখি।এক কাজ করো,তুমি মা আর বাবা কে ফোন করে খোঁজ-খবর নাও।আমি একটু বাইরে গেলাম।আমার কিছু কাজ আছে।’
বলেই নির্জন রুমে গিয়ে রেডি হলো।”

“নিধিও রুমে গিয়ে ওর মাকে ফোন করলো।কিন্তু কয়েকবার ফোন করার পরেও তিনি রিসিভ করলেন না।তাই নিধি রফিক মির্জা কে ও ফোন করলো,
কিন্তুু তিনিও রিসিভ করলেন না।অবশেষে নিধি তোহা কেও ফোন করলো।দুঃখের বিষয় হলো তোহাও ফোন রিসিভ করলো না।’
নিধির এমন চিন্তিত মুখমণ্ডল দেখে মনে মনে ভীষণ মজা পেলো নির্জন।এই সুযোগে সে রুমের বাইরে গিয়ে খুব প্রিয় রুমটিতে ঢুকে,প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি নিয়ে নেক্সট অপারেশন সাকসেস করতে চলে গেলো।”

———–
“বাউন্ডারি দিয়ে ঘেরাও করা একটি বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে আছে নির্জন।সেই বিকাল থেকে সেখানে কিছুক্ষণ হাঁটাচলা করেছে সে।কিন্তুু বাড়িটি তালাবদ্ধ।তাই গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢোকার প্রয়োজন মনে করেনি।বাড়িটির আশেপাশে তেমন মানুষজনের আনাগোনা নেই।আশে-পাশের বাড়িগুলোও বেশ দূরে।শুনশান জায়গাটি বেশ ভালো লাগছে নির্জনের।অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষার পর রাত সাড়ে ৮টায় দেখা পেলো ব্যক্তিটির।লোকটি গেটের কাছে আসতেই,নির্জনের চোখে মুখে হিং**স্র হাসি ফুটে উঠলো।লোকটি আবছা-অন্ধকারে নির্জন কে দেখে বললো,

‘আপনাকে তো চিনলাম না?’

“নির্জন এগিয়ে গিয়ে বললো,

‘আপনি আমাকে না চিনলেও, আপনাকে আমি চিনি।আমি আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী।৩ দিন আগে বাসে আমার পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়েছিলেন,বাস থেকে নামার সময় আপনার পকেট থেকে ওয়ালেট টা পড়ে যায়।আর সেটা আমার সিটের পাশে পড়ে।আমি আপনাকে ডাকতে যাবো, ততক্ষণে আপনি চলে গিয়েছিলেন।আর বাসও ছেড়ে দিয়েছিলো।আমি ওয়ালেট টি হাতে পেয়ে বুঝেছিলাম,এটা আপনার সবচেয়ে জরুরি জিনিস।কারণ, আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে শুরু করে, প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো তো এখানেই স্থান পায়।আমি পেরের দিন আপনার কাছে আসতাম।কিন্তু ৩দিন আগে আমার মা মা**রা যাওয়াতে আর আসা হয় নি।”

“নির্জনের কাছে ওয়ালেট টি আছে শুনে, লোকটির মুখমন্ডল খুশিতে চকচক করে উঠেছিলো।ওয়ালেটে জাতীয় পরিচয়পত্রের পাশাপাশি আরও কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস ছিলো।সে তো ভেবেছিলো,আগামীকাল নিকটবর্তী থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি(জিডি) করবে।কিন্তুু তার আগেই সে প্রয়োজনীয় জিনিস টি পেয়ে গেলো।’

কথাগুলো ভেবে লোকটি খুশি হওয়ার পরমুহূর্তেই আবার মন খারাপ হয়ে গেলো,নির্জনের মায়ের কথা চিন্তা করে।”

“লোকটি নির্জনের দিকে মলিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

‘জানেন ভাই,আমার মা-বাবা অনেক আগেই গত হয়েছে।একটা বউ ছিলো,সেটাকেও কিছুদিন আগে ডিভোর্স দিয়েছি।আমার একটু-আধটু নে**শাদ্রব্য খাওয়ার স্বভাব আছে।সেগুলো নিয়ে নিত্যদিন ঝামেলা করতো।তাই একেবারে মুক্তি দিয়েছি।যাইহোক,ভাই সুখ-দুঃখ মিলিয়ে জীবন।এখন একা আছি বিন্দাস আছি।’
বলেই ম্লান হাসলো লোকটি।”

“নির্জন মুচকি হেসে বললো,

‘হুম,আপনি ঠিকই বলেছেন।একা থাকার মতো শান্তি এই পৃথিবীতে নেই।ওহ!আপনার ওয়ালেট টা তো গাড়িতে রেখে এসেছি।এখানে একটু দাঁড়ান,আমি যাবো,আর আসবো।’

“লোকটি মুচকি হেসে বললো,
‘কি যে বলেন না ভাই!আপনি আমার কত বড় উপকার করলেন,এর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেও শেষ হবে না।চলুন,আমিও আপনার সাথে যাই।’

বলেই লোকটি নির্জনের সাথে হাঁটতে থাকল।”

“নির্জন একজন চরিত্রহীন, নে**শাখোর লোকের উপর তার প্রতিশোধ নিতে চায়। লোকটি নির্জনের বউয়ের দিকে বা**জে দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলো, আর এই অপরাধের জন্য নির্জন তাকে নি**র্মম শাস্তি দেবে।”

“নির্জন লোকটিকে গাড়ির কাছে আসতে দেখে ডেভিল হাসি দিয়ে পকেট থেকে ক্লোরোফর্ম বের করে, এক টুকরো কাপড়ে ক্লোরোফর্ম ঢেলে,পেছনে ফিরে লোকটির মুখের উপর চেপে ধরলো।খুব দ্রুতই লোকটির নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে, তার মস্তিষ্ক শিথিল হয়ে আসে, আর সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।”

“অজ্ঞান লোকটিকে গাড়িতে তুলে, নির্জন বাঁকা হেসে বললো,

‘তুই তো আজ শেষ..।’

বলেই হাতে হ্যান্ড গ্লাভস পড়ে,লোকটির পকেট থেকে ফোন বের করে, তার বাড়ির গেটের সামনে ছুঁড়ে মা**রলো।তারপর গাড়ি স্টার্ট দিলো।কিছুক্ষণ পর নির্জনের চেনা একটি পুরনো পোড়াবাড়িতে লোকটিকে নিয়ে গেলো। সেখানে চারদিকে নীরবতা, ভা**ঙা কাঠামো আর ছড়িয়ে থাকা পোড়ার দাগগুলো জায়গাটির ভ**য়াবহতা বাড়িয়ে তুলেছে। নির্জন লোকটিকে গাড়ি থেকে বের করে টেনে নিয়ে
স্যাঁতস্যাঁতে ফ্লোরে শুইয়ে দিলো।
অতঃপর লোকটির দিকে হিং**স্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,

‘উহুম,উচ্চশব্দ আমি একদম পছন্দ করি না।আমি তোকে মা**রতে থাকব,আর তুই বিভৎ**স আওয়াজ করবি,এইসব আমার নিঁখুত কা**টাকা**টির মনযোগে ব্যা**ঘাত ঘটাবে।সেটা তো আমি কিছুতেই হতে দেবো না।তাই তো তোকে অজ্ঞান করেছি।ঘুমন্ত অবস্থায় তোকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার সুযোগ দেবো, এটাই তো অনেক।তুই কিন্তুু খুব লাকি!আমি তোর বেশি কিছু কা**টবো না।জাস্ট ডান হাত,জিহ্বা আর চোখ দু’টো কা**টব।পুরো শরীর কা**টাছেঁড়া করতে গেলে আমার অনেক দেরি হয়ে যাবে।কিছুক্ষণ পর আমাকে আবার শ্বশুর বাড়ি যেতে হবে।আমার শ্বশুর খুব অসুস্থ।যদিও আমার বউটা জানে না।তাই বড় জামাই হিসেবে আমার অনেক দায়িত্ব,বুঝেছিস?আচ্ছা, ঝটপট কাজ টা শুরু করে দেই।’

বলেই নির্জন তার হাতে ধা**রালো স্ক্যালপেল নিয়ে এগিয়ে গেলো। লোকটির চোখের পাশে স্ক্যালপেল চালিয়ে, ধীরে ধীরে তার দৃষ্টিশক্তিকে অন্ধকারে ডুবিয়ে দিলো। চোখের মণিগুলো বের হয়ে র**ক্তের ফোঁটা মাটিতে ঝরে পড়লো।এতে পৈ**শাচিক আনন্দ পেলো নির্জন।”

“লোকটির জিহ্বা ছিলো সেই বি**ষাক্ত অ**স্ত্র, যা দিয়ে সে নির্জনের বউকে অসম্মান করেছিলো। নির্জন লোকটির মুখের মধ্যে গ্লাভস পড়া হাত ঢুকিয়ে জিহ্বাটি ধরে, ছু**রি দিয়ে জিহ্বাটি কে**টে ফেললো।র**ক্তের স্রোত মুখ থেকে বেয়ে পড়লো।লোকটি তার শব্দ সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেললো।”

“সর্বশেষে, নির্জন লোকটির ডান হাত কে**টে ফেলার সিদ্ধান্ত নিলো। সে ব্যাগ থেকে ছোট একটি ক**রাত বের করলো।লোকটির কব্জির কাছে সেটিকে স্থাপন করে কা**টা শুরু করলো। র**ক্তের স্রোত বইতে থাকল, আর লোকটি চিৎ**কার করার ক্ষমতাও চিরতরে হারিয়ে ফেললো।”

“নিখুঁত ভাবে নিজের কার্য সম্পন্ন করে নির্জন তার ‘মন’ কে জিজ্ঞেস করলো,

‘দেখেছো,লোকটি কতো তাড়াতাড়ি মা**রা গেলো!আচ্ছা,মা**র্ডার টা কেমন হলো?”

“ভেতর থেকে ‘মন’ বলে উঠলো,

‘নির্জন, এভাবে তোমাকে ছু**রি দিয়ে আ**ঘাত করলে, তুমিও মা**রা যেতে।তবে মা**র্ডার টা দারুণ হয়েছে।তোমাকে তো সেই আগের রূপেই দেখতে চেয়েছিলাম।যাক, অবশেষে তুমি নিজের জগতে ফিরে এসেছো,তার জন্য তোমায় স্বাগতম।”

“মনের সাথে সাথে হৃদয়ও তাল মেলালো।
ভেতর থেকে ‘হৃদয়’ বলে উঠলো,

‘নির্জন,এই চরিত্রহীন,দুষ্টু লোকটির জন্য আমি একটা কবিতা বানিয়েছি।এটা তুমি আবৃত্তি করো।’
বলেই ‘হৃদয়’ কবিতাটি নির্জন কে বললো।”

“নির্জন মুচকি হেসে লোকটির ছি**ন্ন-ভিন্ন শরীরের দিকে একবার তাকিয়ে, প্রতিশোধের তীব্রতা প্রকাশ করতে বিড়বিড় করে কবিতা আওড়ালো,

“র**ক্তের ঢেউয়ে ডুবে যায় রাত,
তোমার চোখের আঁধারে হারালো আকাশের চাঁদ।
তাকিয়ে ছিলে নিষ্ঠুর চোখে,
সেই চোখ আজ অন্ধকারে বাঁধা পরেছে।

তোমার জিহ্বা ছিলো বি**ষের ফুল,
কে**টে ফেলেছি সেই শব্দের কূল।
তোমার হাত ছিলো হিং**স্রতার বাঁধ,
আজ সেই হাত কে**টে, মিলিয়ে দিলাম শূন্যতার ফাঁদ।

এখন তুমি বোবা, তুমি পঙ্গু,
তোমার জীবনের আ**গুন নিভেছে, নেই কোনো রং।
তুমি যা হারিয়েছো, তা ফিরবে না আর,
আমার প্রতিশোধের আ**গুন,
তোমার র**ক্তে আজ থমকে দিচ্ছে তার।” ~মেহের~

“নির্জনের এই প্রতিশোধের আ**গুনে যেন লোকটির জীবন ও সব ক্ষমতা ধ্বংস হয়ে গেলো।”

#চলবে…

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ পর্ব-৩৭+৩৮

0

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৩৭
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ❌
[প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত]

“অন্ধকারে র**ক্তের খেলা কেমন নিষ্ঠুর,
মৃ**ত্যু হয়ে,তোমরা একাকার;
তোমাদের মৃ**ত্যুর স্বরে,শুনি হিংসার গান,
এটাই নির্জনের,চিরন্তন প্রতিশোধের মান।”

“নির্জন পাখি দু’টোকে নৃ**শং*স ভাবে শেষ করার পর একটি বাটিতে মাংস গুলো উঠিয়ে, বেসিনে পানি ছেড়ে দিয়ে সুন্দর করে ধুয়ে নেয়।ধোয়ার সময়ও মাংসগুলো কে ধা**রালো নখ দিয়ে আ**ঘাত দিতে ভোলেনি নির্জন।সেই সাথে পৈ**শা*চিক হাসি যেনো ঠোঁটের কোণায় লেপ্টে ছিলো।
অতঃপর চুলায় কড়াই বসিয়ে সরিষার তেল দিয়ে মাংসগুলো রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় মশলাগুলো দিয়ে, মাংসগুলো ভালো ভাবে কসিয়ে নেয়।তবে মাংসের মধ্যে লাল মরিচের গুঁড়ো প্রয়োজনের তুলনায় বেশি দিয়েছে।কারণ, নিধিকে শাস্তি দেওয়া এখনও শেষ হয়নি।
নিধির প্রতি নির্জনের ভালোবাসাগুলো হিং**স্র*তায় তীব্র ভাবে মিশ্রিত।সেটা আরও একবার প্রমাণ করলো নির্জন।”

“রান্না শেষ করে,কিচেন পরিষ্কার করে প্লেটে ভাত আর মাংস বেড়ে, রুমে গিয়ে নিধিকে আদুরে স্বরে ডাকলো,

‘ডার্ক কুইন..উঠে পড়ো জানপাখি।দেখো, তোমার জন্য স্পেশাল আইটেম বানিয়েছি।উঠে পড়ো সোনা।তোমার প্রিয় জিনিসটি প্রিয় খাবারে রূপান্তরিত হয়েছে।ওঠো.. ওঠো খেয়ে নাও।’
বলেই নির্জন নিধির গালে আলতো করে স্লাইড করতে থাকল।”

“কিন্তুু নিধির ঘুম ভা**ঙা*র নাম নেই।সেটা দেখে মেজাজ বিগড়ে গেলো নির্জনের।
রেগেমেগে নিধির গালে জোরে একটা চি**মটি দিলো।নরম গালে এভাবে চি**মটি দেওয়াতে চোখজোড়া খুলে,ধরফরিয়ে উঠে বসলো নিধি।চোখজোড়া কঁচলে বললো,
‘আপনি কি আমার গালে চি**মটি দিয়েছেন?”

“নির্জন ইনোসেন্ট ফেইস করে বললো,
‘উহুম,আমি তো তোমায় আদর করছিলাম।তারপর তোমার নরম গাল টা একটু টেনে দিচ্ছিলাম।তখনই একটু জোরে লেগে গেছে নিরুপমা।”

“নিধি চোখজোড়া কুঁচকে বললো,
‘একটু জোরে?আমি তো অনেকটা ব্যথা পেলাম।মনে হলো ইচ্ছে করে দিয়েছেন।’

” নিধির এহেন কথায় নির্জন ভ্রুকু**টি করে বললো,

‘তোমার যদি মনে হয় আমি ইচ্ছে করে দিয়েছি,তাহলে তুমিও আমার গালে চি**মটি দিতে পারো।ব্যাস,শোধবোধ।’
বলেই নির্জন নিধির দিকে গাল এগিয়ে দিলো।”

“নির্জন এভাবে গাল এগিয়ে দেওয়াতে নিধি ম্লান হেসে বললো,
‘নাহ।আমি আপনাকে চি**মটি দিবো না।হতে পারে আমার জ্বরের কারণে শরীর প্রচন্ড ব্যথা; তাই আপনি আস্তে করে টাচ করার পরেও বেশি ব্যথা পেয়েছি।আচ্ছা বাদ দিন,আমার এতো ঠান্ডা লাগার পরেও,এই রুমে মাংসের তরকারির কেমন ঝাঁজালো গন্ধ পাচ্ছি!”

” নিধির এহেন কথা শুনে নির্জন মুচকি হেসে টেবিল থেকে খাবারের প্লেট সামনে এনে বললো,

‘হুমম, তোমার জন্য স্পেশাল রেসিপি করেছি জানপাখি।এখন কোনো প্রশ্ন করবে না।আগে খাবে, তারপর বলবে কেমন হয়েছে,ওকে?”

“নিধির এমনিতেও খুব ক্ষুধা লেগেছিলো।তাই কথা না বাড়িয়ে হাসি মুখে বললো,
‘ওকে.. ওকে দিন।’

” নির্জন বাঁকা হেসে ভাতের সাথে মাংসের টুকরো মিশিয়ে, নিধির মুখের সামনে এক লোকমা তুলে ধরতেই নিধি সেটা মুখে পুরে নিলো।”

“নির্জনের দেওয়া প্রথম লোকমাটি মুখে নিয়ে নিধির চোখজোড়া ছানাবড়া হয়ে গেলো।মুহূর্তেই চক্ষুদ্বয় লাল বর্ণ ধারন করলো।সেই সাথে নেত্রকোণায় নোনাজল দেখা দিলো।তৎক্ষণাৎ লোকমার কিছু অংশ ফেলে দিয়ে ঝালে হু হা করতে করতে বললো,

‘এটা কি ছিলো?এটা কিসের মাংস?আর এতো ঝাল দিয়েছেন কেনো?’

“নিধি কে এভাবে তড়পাতে দেখে মনে মনে ভীষণ আনন্দ পেলো নির্জন।ভেতর থেকে ‘মন’ বলে উঠলো,

‘উচিত শিক্ষা হয়েছে।পুরো তরকারি টা খাওয়াতে পারলে আরও ভালো হতো, হিহিহি।”

“মনের এহেন কথায় বাঁকা হাসলো নির্জন।নিধির দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে বললো,
‘সেকি! অনেক ঝাল?কই, আমি ট্রাই করি তো।’
বলেই নির্জন নিজের মুখে এক লোকমা দিয়ে গোগ্রাসে গিলে স্বাভাবিক স্বরে বললো,

‘কোথায় ঝাল?একটুও ঝাল হয়নি।তাছাড়া আমি তো এমন ঝাল খুব পছন্দ করি।এটা আমার কাছে স্বাভাবিক।ছোটবেলায় এর থেকেও বেশি ঝাল খেয়েছি।কথা না বাড়িয়ে পুরো খাবার খেয়ে নাও ডার্ক কুইন।এটা খেলে তোমার সর্দি-কাশি বেরিয়ে যাবে।বুঝেছো?’

‘কি আজগুবি কথ!ঝাল খেয়ে সর্দি কাশি কমাবো?এ কেমন কথা বললো সে?’
ভেবে নিধি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকল নির্জনের দিকে।
ততক্ষণে নির্জন নিধির মুখের সামনে আরেক লোকমা তুলে ধরেছে।’

“নিধি বড় বড় চোখ করে বললো,
‘একদম না।আমি এটা খাবো না।আর এটা কিসের মাংস?মুরগির মাংস তো মনে হয় না।”

“নিধির এত প্রশ্নে রেগে গেলো নির্জন।কর্কশ স্বরে বললো,

‘তোমার কি মনে হয়?এটা সাপের মাংস?খেতে বলেছি,চুপচাপ খেয়ে নাও।আমার মুখে মুখে তর্ক করা আমি পছন্দ করিনা।তোমাকে সুস্থ হতে হবে।এভাবে অসুস্থতার দোহাই দিয়ে, আমার থেকে তোমার দূরে থাকা আমার একদম পছন্দ নয়।”

“নির্জনের এহেন আচরণে বিস্ময়ের শেষ পর্যায়ে পৌঁছালো নিধি।এ কেমন আচরণ?আমি তো স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন করেছি।এতে এতটা হাইপার হওয়ার কি আছে?’
ভেবে নির্জনের দিকে তাকিয়ে কটমটিয়ে বললো,

‘নির্জন আমি কি একবারও বলেছি,আপনি আমায় সাপের মাংস খাওয়াচ্ছেন?এটা কেমন কথা?আর আপনি হঠাৎ এভাবে কথা বলছেন কেনো?’

“নিধির এইসব বকবক বিরক্ত লাগছে নির্জনের কাছে।তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নিধির দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বললো,

‘খাবার টা খাবে,নাকি জোর করে খাওয়াবো?”

“নিধি বিস্মিত দৃষ্টিতে নির্জনের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘আপনি এমন করছেন কেনো?আপনার মধ্যে আমি অন্য কাউকে দেখতে পাচ্ছি।আপনি তো এমন ছিলেন না!’

“নির্জন মুচকি হেসে বললো,
‘আমি আগে থেকেই এমন।শুধু তোমার দৃষ্টি ভুল ছিলো।এনিওয়ে, হা করো।পুরো খাবার শেষ করো।তারপর মেডিসিন খাবে।”

” নিধি কঠোর স্বরে বললো,
‘আমার মনে হয় আপনি পা**গল হয়ে গেছেন।নইলে এই ঝাঁজালো জিনিস আমাকে খেতে বলতেন না।আমি খাবো না।’

“ব্যাস,নির্জনের রাগ যেনো এইবার চূড়ায় উঠে গেলো।এক হাত দিয়ে নিধির মাথা নিজের বুকের কাছে চেপে ধরে, প্লেট থেকে এক লোকমা ওর মুখের সামনে ধরে বললো,

‘তোমাকে খেতে বলেছি।অনেক কষ্ট করে রান্না করেছি।খাও,নইলে কিন্তুু পুরো খাবার মুখে মাখিয়ে দিবো।খেতে বলেছি কিন্তুু।”

‘নিধি চোখ-মুখ বন্ধ করে তেজি স্বরে বললো,
‘খাবো না।’

“নিধির এহেন কথায় হো হো করে হেসে উঠলো নির্জন।অবশেষে নিধির দুই গালে শক্ত করে ধরে, জোর করে হা করিয়ে মুখে খাবার দিতে থাকল।সেই সাথে পাশে থাকা গ্লাস থেকে একটু একটু করে পানি দিতে থাকল।এই মুহূর্তে নির্জন কে দেখলে মনে হবে, সে কোনো ছোট বাচ্চাকে খাওয়াচ্ছে।আর বাচ্চা টি বারবার না খাওয়ার জন্য কান্না করছে।
এভাবে নির্জন আরও তিন-চার লোকমা দেওয়ার পর, নিধি তার দুর্বল শরীর নিয়ে গড়গড় করে বমি করে নির্জনের জামা-কাপড় মাখিয়ে দিলো।”

“নিধি এভাবে বমি করাতে একটুও বিরক্ত হলো না নির্জন।শীতল স্বরে বললো,

‘যাক ভালোই হয়েছে,বমির সাথে বুকে কফ থাকলে সেটাও বেরিয়ে যাবে।দেখেছো, আমার কত বুদ্ধি?তারিফ করো..আমার বুদ্ধির তারিফ করো।’

“নিধি পিটপিট করে নির্জনের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
এই নির্জন তার কাছে অচেনা।নির্জন কেনো এমন অদ্ভুত আচরণ করছে, সবকিছুই যেনো তার কাছে অচেনা লাগছে।”

“নিধির ভাবনার মাঝে নির্জন বিছানা থেকে নেমে, সরাসরি ওয়াশরুমে চলে গেলো।এদিকে নিধি দুর্বল শরীর নিয়ে কোনো রকমে উঠে বেসিনে গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে নিলো।অতঃপর নিজেকে একবার আয়নায় পরখ করলো।২ দিনের জ্বরে চেহারা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।কিন্তুু চোখ এবং ঠোঁট জোড়া লাল টকটকে হয়ে আছে।নিধি মুখে কয়েকবার পানি দিয়ে গড়গড়া করলো।তবুও ঝাল যেন কমছে না; বরং বাড়ছে।
এভাবে আরও কয়েকবার মুখে পানি দেওয়ার পর ঝাল কিছুটা কমলো।ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলে টাওয়াল দিয়ে মুখমন্ডল মুছতে মুছতে বেলকনিতে যেতেই, আরও একবার শক খেলো।মনে মনে আওড়ালো,

‘পাখিগুলো কোথায়?আর খাঁচা কোথায়?’
ভেবে পেছনে ঘুরতেই দেখলো, নির্জন হাতে শুভ্র রঙা টাওয়াল নিয়ে শরীর মুছতে মুছতে নিধির কাছে এগিয়ে এলো।”

“নিধি কিছুটা পেছনে সরে গিয়ে কর্কশ স্বরে বললো,
‘পাখি গুলো কোথায়?’

“নির্জন ফের মুচকি হেসে নিধির দিকে মুখমন্ডল এগিয়ে বললো,
‘তোমার পেটে.. ডার্ক কুইন।’

“নির্জনের এহেন কথায় হতভম্ব হয়ে গেলো নিধি।অকপটে বলে উঠলো,
‘মানে?’

“নির্জন তার মাথার চুলগুলো হাত দিয়ে ব্যাক ব্রাশ করার মতো উল্টিয়ে,একটু রসিকতা করে বললো,

‘সেকি!পাখি দু’টোর মাংস খেয়ে,এখন বলছো পাখি কোথায়?হাহাহা..এটা দিয়ে কিন্তুু দারুণ জোকস বানানো যাবে।আচ্ছা শোনো,তোমার শরীর টা প্রচন্ড দুর্বল ছিলো;তাই ভাবলাম, কোয়েল পাখির যেহেতু পুষ্টিগুণ অনেক, তাই সেটাই রান্না করি।
তাছাড়া এটা শুধু স্বাদের দিক থেকে নয়, স্বাস্থ্যের দিক থেকেও অনেক ভালো।”

“নির্জন এইবার কোয়েল পাখির মাংসের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানালো,
‘কোয়েল পাখির মাংস প্রোটিনের ভালো উৎস, যা পেশী গঠন ও মেরামতে সাহায্য করে। এছাড়া এতে রয়েছে ভিটামিন বি১২, আয়রন, জিংক, এবং ফসফরাস, যা র**ক্ত উৎপাদন, শক্তি বৃদ্ধি এবং স্নায়ুতন্ত্রের সুস্থতা রক্ষা করে।
তবে সবচেয়ে ভালো দিক হলো, এতে থাকা সঠিক চর্বি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া, এমিনো অ্যাসিড শরীরের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তাই আমি তোমায় এই পুষ্টিগুণে ভরপুর সুস্বাদু খাবার টা খাওয়ালাম।আমি চাই, তুমি সবসময় সুস্থ ও সুখী থাকো।”

“নির্জন যেভাবে কোয়েল পাখির সম্পর্কে লেকচার দিচ্ছিলো,যে কেউ দেখলে ভাববে,টিচার তার স্টুডেন্ট কে পড়াচ্ছে।এদিকে নির্জনের এই লেকচার শুনে মাথায় মনে হয় আকাশ ভে**ঙে পড়লো নিধির।নির্জনের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে উচ্চস্বরে বললো,

‘আপনার সাহস হলো কি করে,আমার কাছে জিজ্ঞেস না করে, এই পাখিগুলোকে হ**ত্যা করার?”

“নির্জন এইবার নিধির আরও কাছে এসে ওর চোয়াল চেপে ধরে বললো,
” হিসস..Don’t talk to me with rubbish, speak in a lower tone.’

“নিধি নির্জনের হাত ঝটকা দিয়ে সরিয়ে, আরও কিছুটা উচ্চস্বরে বললো,

‘একশো বার বলবো,হাজার বার বলবো।আপনি পাখি গুলোর সাথে এমন কেনো করলেন?আপনি জানেন না,পাখিগুলোকে আমি তোহার কাছ থেকে কত শখ করে নিয়েছি?”

“নির্জন চোখ-মুখ কুঁচকে নিজের দুই কান চেপে ধরে বললো,
‘চুপ..একদম চুপ। গাড়ির হর্ণ,মোবাইলের উচ্চ আওয়াজে রিংটোন,ভয়েসের উচ্চশব্দ শুনলে আমার কানে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হয়।নিচু স্বরে কথা বলো।তাছাড়া আমি তোমার স্বামী হই।স্বামীর সাথে এভাবে কথা বলতে হয় না সোনা।”

“তাছাড়া তুমি খাবে বলে খুব যত্ন করে কোয়েল দু’টোকে কে**টে, মনের মাধুরী মিশিয়ে রান্না করেছি।আর সেই কখন থেকে পাখি..পাখি করে পা**গল হয়ে যাচ্ছো;এদিকে আমি যে গতকাল রাত থেকে তোমার কত সেবা করলাম; সেটাতো একবারও বললে না?তুমি তো দেখছি অকৃতজ্ঞ মানবী!যাইহোক, আমি এতে কিছু মনে করিনি।আমার সবকিছু তোমার; আর তোমার সবকিছু আমার।তুমি রেগে থাকো,খুশি থাকো,বা কষ্টে থাকো সবকিছু আমার জন্য করবে, ওকে সোনা?আর ডোন্ট ওয়ারি,আমি তোমাকে কিছুদিন পর আরও ভালো একটা প্রাণী কিনে এনে দেবো;যার সাথে তুমি নির্দ্বিধায় চমৎকার সময় কা**টাতে পারবে।এখন ঘুমাতে চলো নিরুপমা।’
বলেই হাই তুলে বেলকনি থেকে চলে গেলো নির্জন।”

“নির্জনের কাছ থেকে এমন অপ্রত্যাশিত আচরণ পেয়ে,নিধির মুখমন্ডলে যেন বিস্ময়ের ছাপ এখনও কা**টিয়ে উঠতে পারেনি।নিধি অগত্যা আর কথা বাড়ালো না।চুপচাপ গিয়ে বিছানার এক কোণে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে পড়লো।এদিকে নির্জনও নিধির অপরপাশে শুয়ে মুচকি হাসলো।ভেতর থেকে ‘মন’ অভ্যর্থনার সুরে বলে উঠলো,

‘এই তো.. এভাবে ধীরে ধীরে সে তোমার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।কিপ ইট আপ নির্জন।’

“মনের সাথে ‘হৃদয়’ ও তাল মেলালো।তারপর নির্জন কে বললো,
‘তোমার ডার্ক কুইনের জন্য একটা হিংসুটে কবিতে আবৃত্তি করে ফেলো নির্জন।’

‘নির্জন কয়েক মিনিট ভেবে,মুচকি হেসে মনে মনে কবিতা আওড়ালো,

“হৃদয়ে র**ক্ত*ক্ষরণ”

প্রেমের অন্ধকারে,
হৃদয়ে র**ক্ত*ক্ষরণ হয়,
প্রতি চুম্বনে এক নতুন ক্ষ*ত,
বেদনাময় র**ক্তস্রোত ঝরে যায়।

প্রতি অনুভূতিতে,
র**ক্তের মতো চিহ্ন গাঢ় হয়,
প্রেমের এই অমলিন য*ন্ত্রণায়,
হৃদয়ের গভীরে ক্ষ*ত রয়ে যায়।

তোমার প্রতিটি স্পর্শ,
যেন একটি অদৃশ্য অস্ত্র,
হৃদয়ে একটানা র**ক্ত*ক্ষরণ,
ভালোবাসার প্রতিটি দাগ পেড়ে যায়।” ~মেহের~

“দুই বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে এভাবে তাল মিলিয়ে, নির্জন ধীরে ধীরে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো।কিন্তুু ঘুম নেই নিধির চোখে।মাত্র কয়েকদিনে নির্জনের এহেন রূপ ওকে বারবার ভাবিয়ে তুলছে।কিভাবে কি হয়ে গেলো, কিছুই বুঝতে পারছেনা সে।মনে মনে অনেক কথা বলে, অবশেষে নিধিও ঘুমিয়ে গেলো।”

——–
“এদিকে রাত ৪টায় কোমর ব্যথায় ঘুম ভে**ঙে গেলো তোহার।মাহির তোহাকে নিয়ে হসপিটালে গিয়ে এক্স-রে করে দেখেছে, কোমরে কিছুটা ফ্র্যাকচার হয়েছে।কিছুদিন রেস্ট করলে এবং নিয়মিত ঔষুধ খেলে ঠিক হয়ে যাবে।রাত সাড়ে ৮টার দিকে মাহির আর তোহা বাসায় ফিরলে, তোহার শাশুড়ি তোহার এই অবস্থা দেখে মন খারাপ করেন। সেই সাথে তোহার আদর-যত্ন যেনো দ্বিগুণ বেড়ে যায়।তোহার শ্বশুর এবং শাশুড়ি উভয়ে তোহাকে ভীষণ ভালোবাসেন।তোহা যেন তাদের চোখের মনি।নিজের শ্বশুর-শাশুড়ির কাছ থেকে এত ভালোবাসা পেয়ে, তোহা সবসময় আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে।এমন শ্বশুর-শাশুড়ি যদি প্রতিটি ঘরে ঘরে হতো, তাহলে হয়তো প্রতিটি মেয়ে নির্দ্বিধায় তাদের কে নিজের মা-বাবার আসনে বসাতো।এক্ষেত্রে বউ এবং শ্বশুর-শাশুড়ি উভয়কেই ভালো হতে হয়।”

“কোমরে প্রচন্ড ব্যথা নিয়েও তোহা কথাগুলো ভেবে অস্ফুটস্বরে ‘মা’ ডেকে উঠলো।”

“তোহার মুখনিঃসৃত বানী শুনে মাহির তড়িৎ গতিতে উঠে লাইট জ্বালিয়ে,তোহার গালে আলতো করে হাত বুলিয়ে বললো,

‘কোমরে খুব কষ্ট হচ্ছে স্বপ্নচারিনী?চিন্তা করো না, নিয়মিত মেডিসিন খেলে ধীরে ধীরে তুমি সুস্থ হয়ে উঠবে,আর সেই সাথে আমিও।’

“মাহিরের এহেন কথা শুনে তোহা কটমটিয়ে বললো,

‘আমি সুস্থ হলে, আপনি কিভাবে সুস্থ হবেন?আপনি তো অসুস্থ নয়।’

“মাহির দুষ্ট হেসে বললো,
‘ধুর..তুমিও না..।আমি নিজেকে এতটা কন্ট্রোল করতে চাই, তবুও মুখ ফস্কে বের করতে বাধ্য করো।আচ্ছা বলছি।’
বলেই মাহির তোহার গালে চুমু দিয়ে শুরু করলো,

“তোহা রানী ফ্র্যাকচারের কষ্টে কেমন আছো?
তোমার মাহির এখন শুধু তোমার খোঁজে, রোজই আসে।

মিলন না হলে তার হৃদয় হবে ভা**ঙা,
তোমার কোমর ঠিক হলেই,জল থেকে ডুব দিয়ে উঠবো ডাঙায়।

বিনা মিলনে সে তো কেমন যেন পা**গল,
তোমার সুস্থতার অপেক্ষায়, দেখে সে থেমে যায় অচল।

কবিতার মাধ্যমে হাসির ছোঁয়া নিয়ে,
তুমি সুস্থ হলে, আনন্দে লাফাবে,
মজা করবে আরও মধুচন্দ্রিমায় গিয়ে।” ~মেহের~

“হায়, কি লজ্জা! কি লজ্জা!এটা কি ধরণের লাগাম ছাড়া কবিতা?তাও আবার এই কোমর ব্যথার মধ্যে উচ্চস্বরে হাসতেও পারছে না তোহা।
মুহূর্তেই লজ্জায় মুখ মিইয়ে গেলো তোহার।”

“তোহা কে এমন লজ্জা পেতে দেখে মাহির মুচকি হেসে বললো,
‘হায়, হায়! এতো লজ্জা পেয়ো না স্বপ্নচারিনী।আমি কিন্তুু তাহলে তোমার কোমর ব্যথার কথা ভুলে যাবো।তারপর..

“তোহা মাহির কে আর কিছু বলতে না দিয়ে তার মুখ চেপে ধরে বললো,

‘এই ভোর রাতে কি শুরু করেছেন বলুন তো?না নিজে ঘুমাচ্ছেন, আর না আমাকে ঘুমাতে দিচ্ছেন।সব সময় মাথার মধ্যে উল্টাপাল্টা চিন্তা ঘোরে।আপনার কবিতা শুনে আমার কোমর ব্যথা আরও বেড়ে গেছে।এখন না ঘুমালে,আর ঘুম আসবে না।’
বলেই তোহা অপরপাশে ফিরে শুয়ে পড়লো।”

“এদিকে মাহির দুই হাত তুলে মোনাজাত ধরে বললো,

‘হে আল্লাহ আমার তোহা রানী কে তাড়াতাড়ি সুস্থ করে দাও।এইবার আর আমি কোনো রিস্ক নিবো না।আমি খুব তাড়াতাড়ি বাবা হতে চাই। আমিন।’
বলেই তোহার দিকে ফিরে ওর গালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে, তোহা কে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো মাহির।”

———-
“কে**টে গেলো ৪ দিন।সকাল থেকে নাদিয়ার শরীর খুব খারাপ লাগছে।মাথা ব্যথা,খাবারে অরুচি থেকে শুরু করে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিয়েছে।নাদিয়ার শাশুড়ি বিষয়টি লক্ষ্য করে নাদিয়াকে কিছু প্রশ্ন করেন।নাদিয়া সেগুলোর উত্তর দেওয়াতে, ওর শাশুড়ি যা বোঝার বুঝে গেছে।তার মুখমন্ডলে মুহূর্তেই খুশির ঝলক দেখা দিলো।”

“দুপুরে দিগন্ত অফিস থেকে ফিরতেই,নাদিয়ার শুকনো মুখমন্ডল দেখে জিজ্ঞেস করলে, নাদিয়া সবকিছু বলে দেয়।সবকিছু শুনে দিগন্ত হাসবে না কাঁদবে ভেবে পেলো না।তার আদুরীনি বউ ‘মা’ হতে চলেছে!’
ভেবেই কেমন অন্যরকম অনুভূতি হলো দিগন্তের মাঝে।সেই সাথে চেহারায় চিন্তার ছাপও দেখা দিলো।
দিগন্ত নাদিয়ার সামনে সেটা প্রকাশ না করে, ওকে জড়িয়ে ধরে বললো,

‘হানি গো..আমার বেবিটা হানিমুনে যাওয়ার আগেই এসে পড়লো।দেখেছো,সে আমার থেকেও অ্যাডভান্স।
যাইহোক, আমি আজ লাঞ্চ করে অফিসে যাবো না।তোমাকে নিয়ে হসপিটালে যাবো।বেবি হওয়ার আগ পর্যন্ত তোমাকে একজন গাইনোকোলজিস্টের আন্ডারে থাকতে হবে।’

“দিগন্তের এহেন নির্লজ্জ টাইপ কথায়, লজ্জায় লাজুকলতা হয়ে গেলো নাদিয়া।নিজের লাজে রাঙা মুখ লুকাতে দিগন্তের বুকে মাথা রেখে বললো,
‘তোমার মতো এমন ঠোঁট কা**টা পুরুষ মনে হয় এক পিস আছে,আর সে হলো তুমি।’

“বিকালে গাইনী ডক্টরের চেম্বারের বাইরে পাশাপাশি দু’টি চেয়ারে বসে আছে দিগন্ত এবং নাদিয়া।
৮জন রোগীর পরে সিরিয়াল অনুযায়ী নাদিয়া কে ডাকা হলে,ও ডক্টরের রুমে ঢুকে পড়ে।এদিকে দিগন্ত ফেইসবুকে নিউজফিড দেখতে থাকে।
কিছুক্ষণ পর দিগন্তের কানে একটি নাম ভেসে ওঠে..
‘এই ১০ নাম্বার সিরিয়ালে আছে, মিসেস সুমাইয়া আফরিন।মিসেস নাদিয়া বের হলে, আপনি প্রবেশ করবেন।”

“মহিলার কন্ঠ শুনে আশে পাশে তাকালো দিগন্ত।অতঃপর ডান সাইডে কিছুটা দূরত্বে আফরিন কে বসা দেখে,১২০ভোল্টেজের শক খেলো দিগন্ত।বসা থেকে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে আফরিন কে উদ্দেশ্য করে বললো,

‘আফরিন.. তুমি এখানে?’

‘এদিকে দীর্ঘদিন পর সেই পরিচিত কন্ঠস্বর পেয়ে,আফরিন ভীষণ অবাক হয়ে দিগন্তের দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে গেলো।’

“সেও বসা থেকে দাঁড়িয়ে গিয়ে বললো,

‘আমি এখানে গাইনী ডক্টর দেখাতে এসেছি।বাই দ্যা ওয়ে, তুমি এখানে কি করছো?’

“দিগন্ত শুকনো ঢোক গিলে বললো,

‘আমার ওয়াইফ নাদিয়া কে নিয়ে এসেছি।ও প্রেগন্যান্ট।কিন্তুু তুমি এখানে কেনো?’

“এক্স বয়ফ্রেন্ডের মুখে অন্য নারীর নাম শুনে কিঞ্চিৎ কষ্ট পেলো আফরিন,যদিও সে সবকিছু জানে।তবুও মুখে ম্লান হেসে দিগন্ত কে একটু জ্বালানোর জন্য বললো,

‘ওহ।আমার শারীরিক কিছু প্রবলেম আছে,তাই গাইনী ডক্টর দেখাতে এসেছি।যাইহোক, আমার বিয়ে হয়েছে কিছুদিন হলো।আমি কানাডা থেকে ২দিন আগে এসেছি।আর তুমি আমার হাসবেন্ডের নাম শুনলেও চিনবে।”

“দিগন্ত হা করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘কি নাম তার?’

“আফরিন বাঁকা হেসে বললো,
‘ইহান।’

“আফরিনের এহেন কথা শুনে চোখ বড় বড় হয়ে গেলো দিগন্তের।রিয়েল লাইফের পুরো অংকটাই কেমন গোলমাল লাগছে।তবুও মন কে প্রশান্ত করে একটু ভাব নিয়ে বললো,

‘ওহ।ওকে..ওকে বুঝতে পেরেছি।আচ্ছা শোনো,একটু পর আমার ওয়াইফ চলে আসবে।আমি আমার জায়গায় বসি,আর তুমি তোমার জায়গায় বসো।আমার ওয়াইফ তোমার পরিচয় জানলে,লাল মরিচের গুঁড়ো দিয়ে আমার তরকারি বানাবে।তোমার আর আমার কথা এখানেই ডিসমিস।’

বলেই দিগন্ত রোবটের ন্যায় অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিজের বরাদ্দকৃত চেয়ারে বসে পড়লো।”

“দিগন্তের এহেন কান্ড দেখে আফরিন বাঁকা হেসে মনে মনে আওড়ালো,
‘অদ্ভুত নাটকবাজ পুরুষ.. হুহ।’

———-
“আজ ৪দিন যাবৎ নির্জনের সাথে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না নিধি।নির্জন রাতের গভীরে নিজের অর্ধাঙ্গিনী কে অনেক বার কাছে পেতে চেয়েছে।কিন্তুু,নিধি তার জেদ বজায় রাখতে বরাবরই নির্জন কে ইগনোর করেছে।
যদিও এই ৪দিন নির্জন নিধিকে তেমন কিছু বলেনি।সে তো ভেতরে ভেতরে ছক কষছে, কিভাবে তাকে এই ৪দিন অবহেলা করার জন্য শাস্তি দিবে।তবে এখন নয়;আরও পরে।’
ভেবে বাঁকা হাসলো নির্জন।”

“বিকালের দিকে নির্জন বাসায় ফিরে এসে দেখলো,নিধি বিছানার একপাশে বসে ফোনে ওর মায়ের সাথে কথা বলছে।”

“নির্জন মনে মনে ভাবলো,
‘যাক এই সুযোগ টাকে কাজে লাগাতে হবে।’
ভেবে নিধির পাশে গিয়ে বসলো।নিধি আরও কিছুক্ষণ ওর মায়ের সাথে কথা বলে, ফোন রেখে নির্জনকে দেখে মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলো।সেদিনের ব্যবহার কিছুতেই ভুলতে পারছে না নিধি।”

“নির্জন এইবার বিছানায় উঠে নিধির পাশ ঘেঁষে বসে, নিধির হাত জোড়া নিজের মুঠোবন্দি করে বললো,

‘আর কতো অভিমান করে থাকবে ডার্ক কুইন?সামান্য পাখির জন্য এতো অভিমান?সামনে তো আরও অনেক পথ চলা বাকি আছে।”

“নিধি নির্জনের দিকে না তাকিয়ে বললো,
‘মানে?’

“নির্জন মুচকি হেসে বললো,
‘মানে, দু’টো পাখি কা**টাতে তোমার এই অবস্থা,সামনে যদি আমার দ্বারা আরও ভুল হয়,তাহলে তো তুমি মনে হয় আমার থেকে চিরতরে হারিয়ে যেতে চাইবে।যদিও আমি সেটা হতে দিবো না।কারণ, আমি তোমায় ভীষণ ভালোবাসি নিরুপমা।তোমার এই ৪দিনের অবহেলা আমাকে ভীষণ কষ্ট দিয়েছে।
প্লিজ এইবার একটু ভালো করে কথা বলো।”

“নির্জন এতটা নত স্বরে কথা বলায় নিধির ভারিক্কি মন কিছুটা গলে গেলো।কিন্তুু নির্জনের সেই অদ্ভুত আচরণ এখনও সে ভুলতে পারছে না।
তবুও মলিন স্বরে বললো,

‘আমাকে না জিজ্ঞেস করে এভাবে পাখিগুলোকে কা**টা আপনার উচিত হয় নি।তার ওপর আপনি আমার সাথে যে ধরণের ব্যবহার করেছেন,সেটা এখনও ভুলতে পারছিনা।’

“নির্জন এইবার আরেকটু সুযোগ পেলো।বুঝতে পারলো, মম গলতে শুরু করেছে।তাই নিধির আরেকটু কাছে গিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বললো,
‘আমি তোমায় আরেক জোড়া পাখি কিনে দেবো।আর আজ তোমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবো।বলো কোথায় যেতে চাও?’

‘ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনে খুশিতে নিধির মুখমন্ডল ঝলমল করে উঠলো।মুচকি হেসে বললো,
‘আমি মা-বাবার সাথে দেখা করতে চাই নির্জন।এই বদ্ধ ঘরে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।’

“নির্জন কিছু একটা ভেবে মুচকি হেসে বললো,
‘ওকে সোনা,রেডি হয়ে নাও।আর অবশ্যই বোরকা পড়বে।’

“নির্জনের দিকে তাকিয়ে আজ ৪দিন পর মন খুলে হাসলো নিধি।খুশি হয়ে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলো।”

“দু’জনে রেডি হয়ে নিধিদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো।’
নিধিদের বাসার নিচে এসে নির্জন বললো,

‘তুমি বাসায় যাও।আমি কিছু কেনাকা**টা করে আসছি।’

” নির্জনের কথা মতো নিধি বাসার ভেতরে প্রবেশ করলো।এদিকে নির্জন দোকানে গিয়ে কিছু ফলমূল কিনছিলো,এমন সময় মাথার ওপর একটা হাতের ছোঁয়া পেতেই পেছনে ফিরে তাকালো নির্জন।”

“নির্জন পেছনে ফিরে তাকাতেই, জিন্স-টপ পরা যুবতী খিলখিল করে হেসে বললো,
‘নির্জন, কেমন আছিস?কতদিন পর দেখা হলো।’

“চোখের সামনে বিশ্বাসঘা**তক নারীটিকে দেখে, নির্জনের চোখজোড়া নিমিষেই বড় বড় হয়ে গেলো।ভ্রু জোড়া কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,

‘ইতি,তুই এখানে?৩বছর আগে কত খুঁজেছি তোকে।আজ হঠাৎ এখানে?আর তুই আমার চুলে হাত দিলি কেনো?”

“ইতি মুচকি হেসে বললো,
‘বাব্বাহ!চুলে হাত দিয়ে কি কোনো অপরাধ করে ফেলেছি?তাছাড়া আমরা তো ইউনিভার্সিটির ফ্রেন্ড।আর আমি এখানে আমার হাসবেন্ডের খোঁজে এসেছি।”

“নির্জন ফের ভ্রুকু**টি করে জিজ্ঞেস করলো,

‘ওহ রিয়েলি, তুই বিয়েও করে নিয়েছিস?’

“ইতি আশেপাশে তাকিয়ে কন্ঠস্বর খাদে নামিয়ে বললো,

‘হুম।ইউনিভার্সিটি চেঞ্জ করার ৬মাস পর আমরা বিয়ে করেছি।আ’ম সরি নির্জন;সেদিন তোকে এভাবে প্রেমপত্র দিয়ে,কিছু না জানিয়ে চলে যাওয়া উচিত হয় নি।
আমি জানি,তুই আমায় অনেক খুঁজেছিস।কিন্তুু আমি লজ্জায় তোকে মুখ দেখাতে পারিনি।”

“নির্জন বাঁকা হেসে বললো,
‘তাহলে এখন দেখালি কেনো?তোর শেষ নিঃশ্বাসের ইতি ঘটাতে?’

#চলবে…

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৩৮ (ধামাকা পর্ব)
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ❌
[প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত]

“নির্জন বাঁকা হেসে বললো,
‘তাহলে এখন দেখালি কেনো?তোর শেষ নিঃশ্বাসের ইতি ঘটাতে?”

“নির্জনের এহেন কথায় কিছুটা বোকা বনে গেলো ইতি।ম্লান হেসে বললো,

‘মজা করছিস, তাই না?তুই তো ভার্সিটিতে খুব নীরব থাকতি।সবসময় বইয়ে মুখ গুঁজে রাখতি,কখনোও তোকে এমন রসিকতা করতে দেখি নি।যাক সময়ের সাথে পরিবর্তন হয়েছিস,দেখে ভালো লাগল।”

“নির্জন মুচকি হেসে বললো,

‘হুম,ঠিক বলেছিস,সময়ের সাথে সাথে আমি অনেক পরিবর্তন হয়েছি।আর আজ তুই আমার আরও পরিবর্তন দেখবি।’

“ইতি মুচকি হেসে বললো,

‘আরে বাহ!তুই দেখি আবার রহস্য করে কথা বলিস, হিহিহি।সে যাইহোক,অনেক দিন পর তোর সাথে দেখা হয়ে ভালো লাগল।আর অতীতের ঘটনার জন্য আ’ম এক্সট্রিমলি সরি নির্জন।”

“নির্জন মৃদু হেসে বললো,

‘আরে ধুর..Past is past,present is gold.’
পুরনো কথা বাদ দে।এখন এটা বল,তোর হাজবেন্ড কে কেনো খুঁজতে এসেছিস?আর, এখন তোর বাসা কোথায়?”

“নির্জনের কৌশলে করা প্রশ্নটি বুঝতে পারলো না ইতি।দীর্ঘশ্বাস ফেলে গড়গড় করে বলতে শুরু করলো,

‘তোকে প্রপোজ করার পরেও,তোর থেকে কোনো উত্তর পাচ্ছিলাম না।ভেবেছিলাম,হয়তো এক্সেপ্ট করবি না।১৫দিন অপেক্ষা করার পর, একদিন নিলয় আমায় ম্যাসেজ করে বলে, সে আমাকে ভালোবাসে।প্রথম দিকে তাকে আমি ইগনোর করলেও,আমার পেছনে ঘোরা,প্রতিনিয়ত ম্যাসেজ দেওয়া,চিঠি দেওয়া এই বিষয়গুলোতে আমার মন গলে যায়।তারপর ধীরে ধীরে আমাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়।এর মধ্যে তোকেও ভার্সিটিতে আসতে দেখিনি।
হঠাৎ আমার বাবার ট্রান্সফার হওয়ার কারণে আমরা ঢাকা থেকে অদূরে একটা কোয়ার্টারে শিফট হই।আর সেখানের একটি ভার্সিটিতে ভর্তি হই।পরবর্তীতে আমার এক বান্ধবীর মাধ্যমে জানতে পারি যে, তুই ভার্সিটিতে এসে আমায় খুঁজেছিলি।কিন্তুু ততদিনে আমি আর নিলয় লুকিয়ে বিয়ে করে ফেলি।কারণ, আমার পরিবার নিলয় কে বেকার বলে মেনে নিচ্ছিলো না।তারা আমাকে অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার জন্য জোর করেছিলো।কিন্তুু, দুঃখের বিষয় কি জানিস?যাকে ভালোবেসে ঘর ছেড়েছিলাম,সেই ব্যক্তিটি ভালো চাকরি পাওয়ার পর ধীরে ধীরে কেমন বদলে গেলো।বিয়ের ২বছর পর জানতে পারলাম, সে পরনারীতে আসক্ত।আজ ১০দিন হলো তার খোঁজে আমি পা**গল প্রায়।আজ ২মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা হয়েও তাকে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াই।আমার এক কাজিন বলেছিলো, তাকে নাকি এখানে কয়েকবার দেখেছে।হতে পারে আশেপাশে তার নতুন সঙ্গীকে নিয়ে নতুন বাসায় উঠেছে।তাই তাকে খুঁজতে এসেছি।’
একাধারে কথাগুলো বলে আবারও দীর্ঘশ্বাস ফেললো ইতি।”

“নির্জন মুখস্রিতে একটু দুঃখী দুঃখী ভাব করে বললো,

‘সেকি!তুই বোকা নাকি রে?এত বড় এলাকায় একটা মানুষ কে তুই কিভাবে খুঁজবি?কি বলতো,’রিভেঞ্জ অফ ন্যাচার’ বলে একটা প্রবাদ আছে।তোর সাথেও সেটাই হয়েছে।আমি ১৫দিন জ্বর থেকে শুরু করে বিভিন্ন অসুস্থতায় ভোগার কারণে ভার্সিটিতে আসতে পারিনি।তুই প্রপোজ করার পর, আমি অনেক ভেবে-চিন্তে তোর জন্য আমার অতীতের স্মৃতি নিয়ে একটি চিঠি লিখেছিলাম।তখনও তোকে আমি ভালোবাসিনি,শুধু ভালো লেগেছিলো।ভেবেছিলাম,তোকে সবকিছু জানিয়ে, তারপর না হয় নতুন করে পথ চলবো।কিন্তুুু দেখ,তুই ১৫দিন অপেক্ষা করেই হাঁপিয়ে গেলি।অন্য পুরুষের প্রেমে গা ভাসিয়ে দিলি।ভাগ্যিস,তখন তোর প্রেমে পড়িনি,নইলে হয়তো আরও ভ**য়ং**কর কিছু ঘটে যেতো।তবে তোকে আমি ক্ষমা করে দিয়েছি।আচ্ছা,যেহেতু আমরা ফ্রেন্ড,তাই তোকে আমি তোর হাজবেন্ড কে খুঁজতে হেল্প করবো।তার আগে তোর বাসার ঠিকানা টা দে।”

“নির্জনের মুখে সাহায্য করার কথা শুনে ভীষণ খুশি হলো ইতি।খুশি হয়ে বললো,

‘থ্যাংকস নির্জন।আমার মাথা থেকে মনে হয় এতদিনের ভারী বোঝাটা নেমে গেলো।আমি ভাবতে পারিনি,তুই আমার মনোভাব বুঝতে পারবি।’
বলেই ইতি নির্জনকে ওর বর্তমান বাসস্থানের ঠিকানা বললো,এমনকি কয়টা রুম,কোথায় সে থাকে সবকিছু বলে দিলো।’
সবকিছু শুনে নির্জন ডেভিল হেসে মনে মনে আওড়ালো,

‘বোকা মেয়ে।’

———–
“ইতির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নির্জন আরও কিছু কেনাকা**টা করলো।তারপর বেশ কিছু সময় পার হওয়ার পর শ্বশুর বাড়িতে পদার্পণ করলো সে।”

“নির্জন সদর দরজা পেরিয়ে ঢুকতেই, রফিক মির্জা এবং তাহমিনা বেগম কে দেখে সালাম দিলো।নিধি এবং ওর বাবা-মা ডাইনিং টেবিলে সামনে হরেক রকম খাবার নিয়ে নির্জনের জন্য অপেক্ষা করছিলো, আর গল্প করছিলো।”

“নির্জন কে দেখে নিধি এগিয়ে গিয়ে বললো,

‘আপনি আসতে এতো লেট করলেন কেনো?সেই কখন থেকে আপনার জন্য অপেক্ষা করছি।আর আপনার চুলের এই অবস্থা কেনো?মনে হয় অর্ধেক টাই কে**টে ফেলেছেন?’

“নিধির কথা শুনে নির্জন মুচকি হেসে বললো,

‘ইদানীং মাত্রাতিরিক্ত গরমে আমার মাথাটাও গরম হয়ে গেছে।তাই চুলগুলো কিছুটা ছাটকা**ট করলাম।কেনো ভালো লাগছে না?’

“নিধি মুচকি হেসে বললো,
‘নাহ ভালো লাগছে।কিন্তুু, আপনি এতো…

“নিধিকে কিছু বলতে না দিয়ে,নির্জন ওর হাত ধরে বললো,

‘খুব ক্ষুধা লেগেছে।এভাবে কি দাঁড় করিয়ে শুধু প্রশ্ন করবে?নাকি কিছু খেতে দিবে?’

“নিধি মাথা নিচু করে বললো,

‘সরি,আসলে আমরা আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।আসুন।’

“নিধি বলতেই নির্জন ডাইনিং টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ারে বসে রফিক মির্জার সাথে কুশলাদি বিনিময় করলো।
অনেক দিন পর বড় মেয়ে আর তার জামাই কে পেয়ে খুশি গুলো যেন উপচে পড়ছে রফিক মির্জা এবং তাহমিনা বেগমের মনে।যদিও তাহমিনা বেগমের তোহার অসুস্থতার জন্য কিছুটা মন খারাপ।তবে তিনি ভেবে রেখেছেন,তোহা পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পর দুই মেয়ে জামাইকে একসাথে নিমন্ত্রণ করবেন।”

“রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে রফিক মির্জা এবং তাহমিনা বেগম তাদের রুমে ঘুমাতে গেলেন।
নিধিও ফ্রেশ হয়ে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিলো।বিছানায় বসতেই খেয়াল করলো,নির্জন বেলকনির গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে দূর আকাশের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে।”

“নিধি বিছানা থেকে নেমে, বেলকনিতে গিয়ে নির্জনের পিঠে আলতো করে হাত রেখে বললো,
‘রাত সাড়ে ১১টা বাজে।ঘুমাবেন না?’

“নির্জন নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললো,

‘নাহ!ঘুম আসছে না।আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেই।তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।’
বলেই নিধির হাত ধরে বিছানায় নিয়ে গেলো।
নিধির পাশে শুয়ে ওর মাথায় হাত বুলাতে লাগল।”

“নিধি ভাবলো,
‘নির্জন কতটা কেয়ারিং।কিন্তুু সেদিন কেনো এমন আচরণ করেছিলো?’
ভেবে ক্ষুদ্র শ্বাস ছেড়ে বললো,

‘নির্জন আপনার সেদিনের আচরণ আমি এখনও ভুলতে পারছি না।আসলে আমি অনেক বার চেয়েছি ভুলে যেতে,কিন্তুু আমার মস্তিষ্ক চাইছে না।’

“নিধির কথায় ভীষণ বিরক্ত বোধ করলো নির্জন।ইচ্ছে করছে এখনই কিছু করে ফেলতে।কিন্তুু যতই হোক নিধি তার প্রিয়তমা,তাই নিজেকে সর্বোচ্চ দিয়ে দমিয়ে রাখল নির্জন।অতঃপর চশমা খুলে বালিশের পাশে রেখে নিধির মাথা বুকের ওপর নিয়ে,শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,

‘বলেছি তো সরি।পুরনো কথা পুনরায় তুললে কিন্তু ভালো হবে না।চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ো সোনা।’

“নির্জনের কথায় হয়তো কিছু একটা ছিলো।সেটা কিছুটা আঁচ করতে পারলেও, পুরোপুরি আঁচ করতে পারেনি নিধি।তাই কথা না বাড়িয়ে নির্জনের বুকের ওপর চুপটি করে শুয়ে রইলো।একসময় ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো।”

“নিধি ঘুমিয়ে যাওয়ার পর নির্জন আলতো হাতে ওকে বালিশে শুইয়ে দিয়ে,ওর দিকে স্থির দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বিড়বিড় করে বললো,

‘অনেক দিন পর একজন বিশ্বাসঘা**তক নারীকে একটু শাস্তি দিবো।উহুম,বেশি না,একটু..।তুমি ঘুমাও,আমি আমার শুভ কাজ সম্পন্ন করতে গেলাম।তারপর ফিরে এসে তোমায় অনেক আদর করবো ডার্ক কুইন।’
বলেই ডেভিল হেসে নিধির গালে আলতো করে চুমু দিয়ে,নিঃশব্দে দরজা খুলে,আশেপাশে সতর্ক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তড়িৎ গতিতে হেঁটে সদর দরজা খুলে চলে গেলো।”

“নির্জনের নিজের বাসায় ফিরতে প্রায় ৩০মিনিট সময় লাগল।বাসায় ফিরে সরাসরি নিজের অতি প্রিয় ২নাম্বার রুমে গিয়ে একটি ব্যাগের মধ্যে প্রয়োজনীয় ধাতব অ**স্ত্র ভরে,রুমের চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে,রুম থেকে বেরিয়ে বড় একটি তালা ঝুলিয়ে, ইতির বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো।”

——–
“রাত ১২টায় একে-অপরের পিঠে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছে মাহির এবং তোহা।
তোহার কোমর ব্যথা কিছুটা কমেছে।মাহির তোহার দিকে ফিরে বললো,

‘আর কতদিন লাগবে সুস্থ হতে?আমি এক অবলা পুরুষ,সেটা কি তোমার চোখে পড়ে না?সবেমাত্র বিয়ে করেছি,তার মধ্যেই কোমরের কি হাল করেছো।ভবিষ্যতে বেবি হলে আরও প্রবলেম হবে।’

“তোহা মুচকি হেসে বললো,

‘আপনি আছেন তো।আপনি বেবিকে সামলাবেন।তবে আপুর বাসায় গিয়ে আমার মন ভরে নি।ভাবছি, একটু ভালো হলে আবার যাবো।’

“তোহা বলতেই মাহির ওর ঠোঁট জোড়ায় আঙ্গুল রেখে বললো,
‘একদম নয়।ওই বাসার ফ্লোরে ধ**পাস করে পড়ে গিয়ে তুমি ব্যথা পেয়েছো।আর সেই বাসায় তোমাকে আমি আবার যেতে দেবো?ইম্পসিবল।”

“তোহা বড় বড় চোখ করে বললো,

‘আপনিতো অদ্ভুত মানুষ!এই বিপদ তো আপনার বাসায় ও হতে পারতো।যাই বলুন না কেনো,আমি আপুর বাসায় আবার যাবো।আমি আপুর কাছে গিয়ে এক রাত থাকব।নির্জন ভাইয়া আর আপনি একসাথে ঘুমাবেন,আর আমরা দুই বোন একসাথে ঘুমাবো।তারপর…

” আর বলতে পারলো না তোহা।তার আগেই মাহির তোহার ওষ্ঠদ্বয় সন্তর্পণে নিজ ওষ্ঠে আবদ্ধ করে নিলো।কয়েক সেকেন্ড পর ছেড়ে দিয়ে মুচকি হেসে বললো,

“তোমার ঠোঁটে এক চুমুর ছোঁয়া,
মনে হয় যেন সারা দুনিয়া থেমে গিয়েছে এক সেকেন্ডে,
তোমার স্পর্শে হারিয়ে যায় সব অন্ধকার,
তোমার ঠোঁটে ঝরে পড়ে প্রেমের অমৃতধারা।

যেন এক নরম বাতাস বয়ে চলে হৃদয়ের মাঝখান দিয়ে,
তোমার স্পর্শে মিশে থাকে আমার সমস্ত আকাঙ্ক্ষা,
প্রেমে মেতে ওঠে পৃথিবী, আকাশ ঝুঁকে আসে কাছে,
তোমার ঠোঁটে চুমু দিয়ে খুঁজে পাই স্বপ্নের সীমানা।

তুমি আমার প্রাণের জ্যোতি, মধুর কণ্ঠের সুর,
তোমার স্পর্শে মিশে যায় সমস্ত প্রেমের দুর্দমনীয় দাহ,
চিরকাল তোমার মনে খুঁজে যাবো আমি আমার শান্তি,
তোমার চুম্বন যেন হৃদয়ে লেখা এক মধুর প্রশান্তি।”

~মেহের~

“হায় কি রোমান্টিক কবিতা।মাহিরের – হাস্কি ভয়েসে রোমান্টিক কবিতা শুনে তোহা তো লজ্জায় ম**রি ম**রি।”

“তোহার লজ্জা মাখা মুখস্রি দেখে মাহির মনে মনে বললো,

‘যাক অবশেষে মাইন্ড কন্ট্রোল করতে পেরেছি।’
ভেবে বিজয়ের হাসি দিয়ে তোহার গালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে বললো,

‘হবে নাকি আরেকবার?’

‘তোহা পিট পিট করে তাকিয়ে বললো,

‘মানে?’

“মাহির এইবার তোহার কপালে গাঢ় চুম্বন দিয়ে বললো,

‘এই দুষ্টু মেয়ে,তোমার চিন্তা ভাবনা এতো নেগেটিভ কেনো?আমি তো চুমুর কথা বলেছি।’

‘মাহিরের এহেন কথায় তোহা হাসবে না কাঁদবে ভেবে পেলো না।মাহিরের হাতে চিমটি কে**টে বললো,
‘যাহ, দুষ্টু কোথাকার!”

———
“রাত ১টা বেজে ৫মিনিট।ঘুম নেই নাদিয়ার চোখে।প্রতিটি মেয়ের মাতৃত্বের শুরুর কয়েকটি মাস মুড সুয়িং,শরীরের বিভিন্ন দিক পরিবর্তন হওয়া থেকে শুরু করে হরেক রকম লক্ষণ দেখা দেয়।নাদিয়ার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।ঘন ঘন বমি,মাথা ঘুরানো,খাবারে অরুচি থেকে শুরু করে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিয়েছে।এই যে এখন ঘুমানোর জন্য কত চেষ্টা করেও পারছে না।ঘুম কাতুর নাদিয়ার ঘুম গুলো সব যেন পাখা মেলে উড়ে গিয়েছে।বারংবার বিছানায় এপাশ-ওপাশ করছে নাদিয়া।নাদিয়ার এহেন কাজে ঘুম ভে**ঙে গেলো দিগন্তের।নাদিয়ার অস্বস্তি মনোভাব বুঝতে পেরে, শোয়া থেকে উঠে বসে নাদিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

‘খারাপ লাগছে, তাই না হানি?রাতেও তো কিছু খেলে না।তাই হয়তো বেশি দুর্বল লাগছে।চিন্তা করো না,আমি এখনই তোমার মুখে রুচি ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করছি।’
বলেই তড়িৎ গতিতে বিছানা থেকে নেমে, একটি ব্যাগ থেকে একটি মাঝারি সাইজের বক্স বের করে নাদিয়ার পাশে বসে বললো,

‘এটা খেলে তোমার সব রুচি ফিরে আসবে।’

“নাদিয়া পিটপিট করে তাকিয়ে বললো,
‘এটা কি?’

“দিগন্ত ভ্রু কু**টি করে বললো,

‘সেকি!রুচির সাথে সাথে চোখ টাও গেলো নাকি?এটা হানি নাটস।এটা খেলে তোমার রুচি ফিরে আসবে,সেই সাথে এনার্জিও।কত দিন হলো তুৃমি আমাকে পাত্তা দাও না।”.

“দিগন্তের শেষ বাক্যটি বুঝতে কিছুটা বেগ পেতে হলো নাদিয়ার।কটমটিয়ে বললো,

‘ওওও বুঝেছি,এই জন্য আমার জন্য এতো দরদ?আমি আরও ভাবলাম, তুমি বেবির জন্য চিন্তা করে বলছো।অথচ তুমি কিনা?’

“দিগন্ত নাদিয়ার হাত ধরে উত্তেজিত স্বরে বললো,

‘ওই না না না.. আমি এতসব ভেবে বলিনি হানি।আমি ৯৫% বেবির কথা আর তোমার কথা ভেবেছি,বাকি ৫%আমার কথা।আমার দিকেও তো একটু তাকাতে হবে।দেখো আমার মুখটা কেমন শুকনো শুকনো হয়ে গেছে।’

“নাদিয়া মুচকি হেসে বললো,

‘আমি তো ভেবেছি, তোমাকে শুঁটকি বানিয়ে ছাদের ওপর রোদ দিবো।হুহ.. আসছে আমাকে হানি নাটস খাওয়াতে।জীবনেও খাবো না।তোমার টা তুমি খাও।”

“দিগন্ত নাদিয়ার দিকে ঝুঁকে এসে চোখ-মুখ কুঁচকে বললো,

‘আমি এটা খেলে তো, তোমার রাতের ঘুম উড়াল দিবে হানি।’

“দিগন্তের হাব-ভাব দেখে নাদিয়া বিছানা থেকে তড়িঘড়ি করে নেমে কটমটিয়ে বললো,

‘অসভ্য,ঠোঁট কা**টা পুরুষ।রাত-বিরেতেও লাগাম ছাড়া কথা-বার্তা শুরু করেছে।বলি কি, তুমি কি আর ভালো হবে না?’

“দিগন্ত নাদিয়ার আপাদমস্তক চোখ বুলিয়ে দুষ্টু হেসে বললো,
‘তোমার জন্য এর থেকেও বেশি ঠোঁট কা**টা হতে রাজি আছি হানি।এইবার কাছে এসো, আদর করে দেই।”

“দিগন্তের এহেন কথা শুনে নাদিয়ার মাথা আকস্মিক ঘুরে উঠলো।
বেচারি না চাইতেও বিছানায় বসে থাকা দিগন্তের ওপর ঢলে পড়লো।”

———
“রাত ১টা বেজে ৩৪মিনিট।ইতির রুমের কাউচে বসে,ওর ঘুমন্ত মুখটির দিকে তাকিয়ে আছে নির্জন।
দুই হাত দুই হাঁটুর ওপর রেখে, চিবুকের সাথে ঠেকিয়ে কিছুক্ষণ যাবৎ দেখে চলেছে ইতি কে।
কিছুক্ষণ পর ঘাড় কাত করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,

‘এই বাবা-মায়েরা যে কেনো এত অসচেতন হয়,বুঝিনা।যুবতী মেয়ের রুমে কেউ এমন করে খোলা বেলকনি রাখে?যাক, বড়লোকের কারবার।আমার জন্য ভালোই হয়েছে,কোনো কিছু কা**টাকা**টি করে ঢুকতে হলো না।যদিও আমি চু**রি করতে আসিনি।সামান্য কা**টাকা**টি করতে এসেছি।’
বলেই নিঃশব্দে পৈ**শা**চিক হাসি দিলো নির্জন।”

“এর মধ্যেই দেখতে পেলো ইতি কিছুটা নড়ে উঠেছে।নির্জন ভ্রুকু**টি করে বিড়বিড় করে আওড়ালো,

‘ না না..আমার চেহারা ওকে কিছুতেই দেখতে দেবো না।ওর যন্ত্রণা হবে অভিনব পদ্ধতিতে।কষ্ট পাবে,তবে এখন নয়।আর সময় নষ্ট নয়।কিছুক্ষণ পর আমার ডার্ক কুইন কে গিয়ে সময় দিতে হবে।তাই ঝটপট কাজ গুলো সেরে ফেলি।’

বলেই ইতির কাছে গিয়ে ব্যাগ থেকে একটি অচেতন করার মেডিসিন বের করলো,যার নাম হলো-প্রোপাফল।”

“নির্জনের চোখে অন্ধকারের ছায়া।ইতি আরেকটু নড়েচড়ে উঠতেই, নির্জন হাতে গ্লাভস পরিধান করে,খুব দ্রুত গতিতে প্রোপাফল ইনজেকশন টি ইতির ঘাড়ে পুশ করে দিলো।
এই ওষুধটি খুব দ্রুত কাজ করে।কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে শরীর কে অবশ করতে সক্ষম।তবে সমস্যা হলো,মস্তিষ্ক সবকিছু অনুভব করে এবং বুঝতে পারে।কিন্তুু কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে না।”

“প্রোপাফল ইনজেকশনের কাজ শেষ হয়ে গেছে। ইতির শরীর এখন পুরোপুরি অবশ, কিন্তু মস্তিষ্কে এখনো প্রতিটা ব্যথার তরঙ্গ পৌঁছাচ্ছে। নির্জন তৎক্ষনাৎ ইতির চোখ জোড়া কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে দিলো।আস্তে করে প্রথমে ইতির হাত তুলে নিলো।ওর হাত হালকা ঠান্ডা, নড়াচড়া নেই, কিন্তুু পুরোপুরি জীবন্ত।”

“প্রথমে নির্জন একটি চিকন ক্ষু**র হাতে নিয়ে ইতির আঙুলের নখের দিকে তাকালো। আঙুলটা ধরে সে হাসলো, যেন কোনো মজার খেলায় নেমেছে। এরপর ক্ষু**রের ধা**রালো ফলাটা প্রথম আঙুলের গোড়ায় স্পর্শ করল। এক মুহূর্তেই সে ক্ষু**রটা চালিয়ে দিলো, আঙুলের চামড়ার নিচের শিরা আর পেশিগুলো নিখুঁতভাবে কে**টে গেলো। র**ক্তের ফোঁটা এক ফোঁটায় জমা হয়ে মেঝেতে পড়তে শুরু করল। তার পরপরই সে প্রথম আঙুলটি হাত থেকে আলাদা করে ফেললো।”

“ইতির মুখে কোনো আওয়াজ নেই, কিন্তুু চোখ জোড়ায় হয়তো এক ধরনের নীরব আতং**ক ভেসে উঠেছে।কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে দেওয়ার কারণে সেই আতং**ক দেখা যাচ্ছে না।
নির্জন ইতির মুখের কাছে এসে বললো,

‘ব্যথা হচ্ছে, তাই না? কিন্তুু, তুই চি**ৎকার করতে পারছিস না, একটুও!”

বলেই নির্জন ইতির দ্বিতীয় আঙুলের দিকে মনোযোগ দিলো। এবার ধীর গতিতে, যেন প্রতিটি স্নায়ু কে**টে দিয়ে ছিন্ন করা হচ্ছে, এভাবে ক্ষু**রটা চালাতে লাগল। আঙুল কে**টে যাওয়ার ফলে হাড়ের উপর ছোট ছোট টুকরোগুলো ফুটে উঠতে লাগল।আর নির্জন তৃপ্তির সঙ্গে তার কাজ চালিয়ে গেলো। একটার পর একটা আঙুল আলাদা হয়ে পড়ে থাকছে মেঝেতে, র**ক্তের পিচ্ছিল গন্ধ ঘর জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।”

“তারপর নির্জন ইতির ডান পায়ের দিকে মনোযোগ দিলো। এবার সে তার পায়ের আঙুলগুলো কে**টে ফেলবে।কিন্তু প্রথমে সে একটি মোটা সুই বের করে বললো,

‘আগে একটু মজা করি।’

বলেই সুই টি নিয়ে ইতির পায়ের পাতা ফুটো করে দিলো।প্রতিটা ছিদ্র তার অনুভূতির মধ্যে দিয়ে বিদ্ধ হয়ে যাচ্ছিলো, অথচ মেয়েটি কিছুই করতে পারছিলো না।
এরপর সে প্রথম পায়ের আঙুলটি ধরলো। একটুখানি হাসি দিয়ে ধীরে ধীরে আঙুলের চারপাশে ক্ষু**র চালিয়ে প্রথমে পেশিগুলো কে**টে দিলো, তারপর হাড় টা দড়ির মতো করে পাকিয়ে ছিন্ন করে ফেললো। র**ক্তের ফোয়ারা উঠলো, আর সেই র**ক্ত মেঝেতে ধা*ক্কা খেয়ে ছি*টকে ছড়িয়ে পড়লো। ইতি বুঝতে পারছিলো তার দেহে কী হচ্ছে, কিন্তু সে পাথরের মতো নিশ্চল ছিলো, যেন জীবিত একটি মৃ**তদেহ।”

“প্রতিটা আঙুলই একইভাবে কা**টা হলো, প্রতিটি ক্ষ*তই এক নতুন ব্যথার জন্ম দিচ্ছিলো।কিন্তু সেই ব্যথা প্রকাশের কোনো উপায় ছিলো না।তারপর নির্জন ইতির হাত পা থেকে অতিরিক্ত ব্লিডিং হওয়াতে, খুব দ্রুত ব্যান্ডেজ দিয়ে বেঁধে দিলো।তবুও র**ক্ত যেনো উপচে পড়ছে।
নির্জন তার প্রতিটা কাজ সূক্ষ্মভাবে সম্পন্ন করে ঘাড় কাত করে বিড়বিড় করে আওড়ালো,

‘তোকে তো ভেবেছিলাম কু**চি কু**চি করে কা**টবো।কিন্তুু যখনই তোর পেটে বাচ্চার কথা শুনলাম,জানিস..তখন একটু মায়া হলো।আহারে.. নিরুপমা কে বিয়ে করার পর থেকে আমার মায়া টা একটু বেড়েছে, বুঝেছিস?চিন্তা করিস না,একটু পর তোর বোধ-শক্তি ফিরে এলে, তুই চি**ৎকার করলেই তোর বাবা-মা এসে তোকে হসপিটালে শিফট করবে।হসপিটালের ডক্টর তোকে বুঝে-শুনে ওষুধ দিবে,যেহেতু তোর বেবি পেটে।আমি চাই, তোর বেবি এই পৃথিবীতে এসে তোর এহেন দশা দেখুক।যদিও তুই এবং সে কখনো জানবে না, কেনো তোর সাথে এমন হয়েছে।কিন্তুু তোর মনে সারাজীবন একটা ভয় কাজ করবে।আর সেটাই হলো তোর সবচেয়ে বড় শাস্তি, হাহাহা..।তাছাড়া তুই আমার চুলে হাত দিয়ে অনেক বড় অপরাধ করেছিস।যেখানে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড দিগন্ত আমাকে স্পর্শ করতে পারে না,সেখানে তোর মতো বিশ্বাসঘা**তক নারীর হাত পড়েছে।এই জন্যই তো কিছুটা চুল কে**টে ফেলেছি।
আচ্ছা,এই টপিক চেঞ্জ।
এই শোন,আমার না অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে।এখনই চলে যেতে হবে রে।আমার নিরুপমা আবার আমার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ওয়েট করছে।আমি জানি,একটু আগে সে আমার আদর পেতে চেয়েছিলো।কিন্তুু মস্তিষ্কে এতো প্রেশার নিয়ে রোমান্স টা ঠিক জমবে না,বুঝলি?তাই আগে তোর কাছে ছুটে এসেছি।আচ্ছা, যাওয়ার আগে তোকে একটা কবিতা শোনাই।’

‘বলেই পৈ**শাচিক হাসি দিয়ে বিড়বিড় করে আওড়ালো,

“প্রেম নয়, প্রতিশোধ”

তুমি ভাবলে আমি প্রেমে পড়েছি,
তোমার মায়াবী চোখের মণিতে,
আসলে আমি দেখেছি প্রতারণার ছাপ,
তোমার নীলাভ হৃদয়ে অন্ধকারে।

প্রেম ছিলো না কোনো, শুধু ছিলো এক খেলা,
তোমার প্রতিটি হাসিতে ছিলো ছদ্মবেশ,
আমি বুঝেছিলাম, তুমি শুধু শিকারী,
তাই প্রস্তুত করেছিলাম আমার প্রতিশোধের বেশ।

তোমার বিশ্বাসঘা**তকতা ছিলো পূর্বাভাস,
আমার অন্তরে জন্মেছিলো অগ্নিশিখা,
তুমি ছিলে আমার শত্রু,
প্রেমের মোহে জড়ানো সেই ভ্রান্তিকা।

তোমাকে আমি ভালোবাসিনি,
শুধু দেখেছিলাম, কীভাবে তুমি পু**ড়বে,
আমার চোখে নেই কোনো আবেগ,
তুমি ছিলে শুধু আমার প্রতিশোধের খেলা।

তোমার শেষ এখন হাতের নাগালে,
আমি জানি, তুমি প্রতিটি ক্ষণে ভেবেছো প্রেম,
কিন্তু আমার মনে ছিলো বি**ষ,
যখন করলে তুমি ছলনা,ভেবে নিলাম তুমি শুধু প্রতারণার কারিগর,
আর আমি সেই মৃগয়াকামী নির্জন।” ~মেহের~

#চলবে…

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ পর্ব-৩৫+৩৬

0

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৩৫
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ❌

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য]

“নিধির এহেন কথায় পৈ**শাচিক আনন্দ পেলো নির্জন।তবুও চোখজোড়া বন্ধ করে নিধির হাত বুকের মধ্যে আগলে ধরে বিরক্তি স্বরে বললো,
‘উফফ! গতকাল রাতে অফিসের ইম্পর্ট্যান্ট ফাইল রেডি করে,রাত ৪টার দিকে ঘুমিয়েছি।প্লিজ ডার্ক কুইন ঘুমাতে দাও।”

“নিধি থামল না।বার কয়েক নির্জন কে ধা*ক্কা দিলো।”

“এইবার নির্জন সত্যি রেগে গেলো।সারারাত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার পরে, নিধির আতং**কিত চেহারা দেখার জন্য মুখিয়ে ছিলো।অবশেষে সেই সময় এলো।মনে মনে ভাবলো,

‘আমার থেকে ফোন বেশি ইম্পর্ট্যান্ট?এদিকে রাতে আমাকে ইগনোর করে ফোনের দিকে মনযোগ দেওয়াতে যে আমি কষ্ট পেলাম,তার বেলায়?উহুম,ইট’স নট ফেয়ার।এখনই একটা বিহিত করতে হবে।মাইন্ড গেম খেলতে হবে।তার শরীর,মন,হৃদয় জুড়ে শুধু আমার অস্তিত্ব থাকবে;আর কারো নয়।’
ভেবে চোখজোড়া খুলে উঠে বসলো।”

“নিধি মলিন স্বরে বললো,
‘দেখুন না..কি হলো?আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।’

“নির্জন চিন্তিত ভঙ্গিমা করে নিধির কাছ থেকে ফোন নিয়ে ফেইসবুক,ইউটিউবে গিয়ে সবকিছু চেক করে বললো,

‘আমার মনে হয় তোমার আইডি এবং জি মেইল একাউন্ট কেউ হ্যাক করেছে।তুমি কি কাউকে পাসওয়ার্ড দিয়েছিলে?”

“নিধি একটু ভেবে বললো,
‘না তো।কাউকে দেই নি।’

“নির্জন আরেকটু রহস্য করে বললো,
‘ তাহলে এটা তো অসম্ভব।নিশ্চয়ই কাজ টা তোমার পরিচিত কেউ করেছে।হয়তো তুমি তাকে কাছে থেকেও চিনতে পারছো না।’
বলেই নিধির দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।”

“নিধি কয়েক মিনিট ভাবনায় বিভোর হলো।কিন্তুু কোনো উত্তর খুঁজে পেলো না।”

“নিধির করুণ দশা দেখে মনে মনে ভীষণ তৃপ্তি পেলো নির্জন।এটাকেই তো বলে নীরব ঘা**তক।সত্যি ‘মনের’ প্রশংসা না করলেই নয়।’
ভেবে নিধি কে বললো,

‘ওকে,এতো চিন্তা করো না জানপাখি,আমি এইসব বিষয়ে বেশ অভিজ্ঞ।আমাকে আজকের দিনটা সময় দাও,আজকেই তোমার আইডি
ফিরিয়ে আনব।কিন্তুু তার জন্য এখন যা বলবো, তা শুনতে হবে।”

“নির্জনের এহেন কথায় নিধির মুখমন্ডলে হাসির রেখা ফুটে উঠলো।খুশি হয়ে বললো,
‘হুম, অবশ্যই শুনবো।’

” ওকে,তাহলে বলি?”

“হুম,হুম বলুন।”

” নির্জন মুচকি হেসে নিধির হাত মুঠোবন্দি করে বললো,
‘অফিস থেকে ৪দিন ছুটি নিয়েছি।এই ৪দিন ভুলেও কোথাও যাওয়ার চিন্তা ভাবনা করবে না।শুধু আমার সাথে সময় কা**টাবে।বেডরুম,কিচেন,ওয়াশরুম সব জায়গায়;ওকে?”

“নির্জনের এহেন কথা শুনে উচ্চস্বরে হেসে উঠলো নিধি।কয়েক সেকেন্ড পর হাসি থামিয়ে বললো,
‘বেডরুম আর কিচেন না হয় বুঝলাম।কিন্তুু ওয়াশরুম কিভাবে সম্ভব?”

‘নির্জন যেটা বোঝাতে চেয়েছে সেটা বুঝতে পারেনি নিধি।বরং উল্টোটা বুঝেছে।’
ভেবে মন ক্ষুন্ন হলো নির্জনের।নিধি কিছু বুঝে ওঠার আগেই তড়িৎ গতিতে বিছানা থেকে নেমে, নিধিকে কোলে তুলে নিলো।অতঃপর ওয়াশরুমে নিয়ে দরজা আটকে দিলো।”

“আকস্মিক ঘটনায় হতভম্ব হয়ে গেলো নিধি।পিটপিট করে তাকিয়ে বললো,
‘এটা কি হলো?এখানে নিয়ে এলেন কেনো?’

‘নিধির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে ঝরনা ছেড়ে দিলো নির্জন।মুহুর্তেই দু’জনে ভিজে গেলো।’

“নির্জনের এহেন কান্ডে নিধি কিছু বলতে যাবে,তৎক্ষনাৎ নিধির ওষ্ঠদ্বয় সন্তর্পণে আবদ্ধ করে নিলো স্বীয় ওষ্ঠদ্বয়ে।নিধির কোমর আবদ্ধ করে নিলো নিজ বাহুডোরে।ঝরনা থেকে ঝরে পরা পানির গতিবেগের সাথে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকল নির্জনের তীব্র ভালোবাসার গতিবেগ।এক পর্যায়ে নিধিও মগ্ন হলো প্রিয় মানুষের সম্মোহনী আহ্বানে।কিছুক্ষণ পর নির্জন নিধিকে ছেড়ে দিলো।ঠোঁট জোড়া তর্জনী দিয়ে মুছে মুচকি হেসে বললো,

‘এভাবে সময় কা**টাবে ডার্ক কুইন।’

‘নির্জনের মোহনীয় স্পর্শে নিধি যেনো ঘায়েল হয়েছিলো।আকস্মিক এভাবে ছেড়ে দিয়ে,কথাগুলো বলায় আরও একবার লজ্জায় মিইয়ে গেলো নিধি।’

“নিধির লজ্জা সহ্য হলো না নির্জনের।মনে মনে আওড়ালো,
‘এখনও লজ্জা?’
প্রিয়তমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে বললো,

‘তুমি কি এখনও লজ্জা পাচ্ছো?’

” প্রবল অনুভূতিতে ঠোঁট জোড়া কাঁপতে থাকল নিধির।লাজুক হেসে অস্ফুটস্বরে বললো,
‘হুম।’

“নিধি বলতে না বলতেই আবারও নির্জন ওর ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরলো।ক্ষণ মুহূর্ত সময় কা**টানোর পর আবারও জিজ্ঞেস করলো,
‘এখনও লজ্জা পাচ্ছো?’

‘নির্জনের এহেন আচরণে নিধি এইবার লজ্জা পাওয়া কম,অবাক হলো বেশি।জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

‘লজ্জা পেলে আপনার সমস্যা কি?কতবার
বোঝাবো,লজ্জাই নারীর ভূষণ।’

“নিধির দিকে ঘাড় কাত করে তাকালো নির্জন।চোখজোড়া তার প্রিয়তমার ভেজা শরীরে লেপ্টে থাকা সিল্কের কাপড়ে নিবদ্ধ।অর্ধাঙ্গিনী কে আপাদমস্তক সূক্ষ্মদৃষ্টিতে দেখে,তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে উঠলো,

“তোমার লজ্জা কেনো?
তাও কি আমার অধিকারহীন?
শরীরে ঢেকে তুমি রাখো যত্নে সেই রহস্যের ঢেউ,
আমি তা ভা**ঙবো, টেনে আনবো লুকিয়ে রাখা প্রতিদিন।

তোমার লজ্জা, তোমার ভয়—
সব কিছুই আমার চাই,
নীরবতার গোপন স্রোতেও আমার প্রতাপ ফুটে রয়…

তোমার লজ্জা, তোমার ভয়,
কেনো আমার চোখের ধাঁধা হয়?
লুকিয়ে রাখো যত্ন করে,
আমি চাই তা খুলে ফেলে দিতে
দেখতে তোমার অনাবৃত ভয়।

তোমার চোখের সেই সঙ্কোচ,
আমার কাছে তা এক নীরব শপথ,
তোমার শরীরে ঢেকে রাখা সমস্ত,
আমার অধিকার, বুঝলে না তা?

“তোমার লজ্জা আমার প্রতিদ্বন্দ্বী,
কেনো তা আমি সহ্য করি?
তুমি কি ভেবেছো, ওই পর্দার আড়ালেই থাকবে?
না, আজ সব খুলে যাবে।

আমি জ্বলে উঠেছি তোমার প্রতিটা সঙ্কোচে,
তোমার লজ্জার রূপে হিং**সার বীজ বুনেছি,
আমার থেকে কিছুই লুকাবে না তুমি,
তোমার লজ্জাও আমার হাতে বন্দী!” ~মেহের~

“নির্জন কবিতা আবৃত্তি করে নিধিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘খুব হিংসা হয় আমার।তুমি যখন লজ্জা পাও,তখন ওই লজ্জাকেও আমার ভীষণ হিংসা হয়।আশা করি এক কথা চতুর্থবার রিপিট করতে হবে না।আর হ্যা,আমি তোমার ড্রেস দিচ্ছি,চেঞ্জ করে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসো।আমাকে ছাড়া তুমি ওয়াশরুমে এতটা সময় কা**টাবে,সেটা আমার অপছন্দ।’
বলেই টাওয়াল জড়িয়ে বেরিয়ে গেলো নির্জন।”

“নির্জনের যাওয়ার পানে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকল নিধি।নির্জনের সব কথাগুলো যেন ওর মাথার ওপর দিয়ে গেলো।লজ্জাকে মানুষ কিভাবে হিংসা করে,সেটা ওর মাথায় এলো না।”

“সকালে খাওয়ার আগে নিধি কিচেনে গিয়ে মেইডের সাথে সাহায্য করতে চাইলো।কিন্তুু মেইড নিধির দিকে এক পলক তাকিয়ে, তেমন কোনো কথা বললো না।নিধি নিজে থেকে কয়েকবার কথা বলতে চেয়েছে,কিন্তুু অপরপক্ষ থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে,মেইড কে ‘একঘেয়ে’ উপাধি দিয়ে ডাইনিং টেবিলে এসে নির্জনের পাশের চেয়ারে বসলো।”

“নির্জনের দৃষ্টি তখন ইউটিউবের ভিডিওতে নিবদ্ধ।রিমন হ**ত্যার সন্দেহে পুলিশ তার দুইজন কাছের বন্ধু কে ধরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।কারণ,পুলিশ অনেক তদন্ত করার পর,তাদের ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করে দেখেছে,সেদিন রাতে তারা সেই কমিউনিটি সেন্টারের থার্ড ফ্লোরে ছিলো।হতে পারে নিজেদের মধ্যে কলহের জের ধরে রিমন কে তারা প্ল্যান করে মা**র্ডার করেছে।”

“পুলিশের লাঠির উত্তম-মধ্যম খেয়েও রিমনের দুই বন্ধু নিজেদের কথায় অটল থাকল।
তাদের একটাই মুখস্থ বাণী,

‘আমরা খু**ন করিনি।ওইদিন আমরা সেখানে একটা মেয়ের সাথে মিট করতে গিয়েছিলাম।কিন্তুু মেয়েটা না আসাতে ঘুরে-ফিরে চলে এসেছি।রিমনের মৃ**ত্যুর সময় আমরা এটাও জানতাম না যে,রিমন ওই থার্ড ফ্লোরে ছিলো।ওর সাথে আমাদের কোনো যোগাযোগ হয়নি।তাহলে কিভাবে আমরা পূর্ব পরিকল্পিত মা**র্ডার করবো?”

“এস আই রেগে গিয়ে দু’জন কে আরও কয়েকবার প্রহার করে বললেন,
‘এইসব লেইম এক্সকিউজ অন্য কোথাও গিয়ে দিবি।আমরা জেনেছি,তোরা ৩জন খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড ছিলি।আর সেই রাতে ৩জনের লোকেশন একই জায়গায় দেখিয়েছে।পুলিশ কে কি বোকা পেয়েছিস,হ্যা?”

“পুলিশের হাতের শক্ত-পোক্ত আ**ঘাতে ছেলে দু’টি ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লো।তবুও বিড়বিড় করে একই বুলি আওড়ালো,

‘আমরা খু**ন করিনি।’

“নিজেদের করা কাজগুলো খুব সুন্দর করে গুছিয়ে বললো এস আই রিয়াদ।প্রেস মিডিয়া এখনও সেই হ**ত্যা কান্ড নিয়ে মেতে আছে।যতক্ষণ না আসল অপরাধী ধরা পড়বে,ততক্ষণ প্রেস মিডিয়া পিছু হটবে না।নিত্য নতুন মা**র্ডার,ক্রা**ইম নিয়ে নিউজ তৈরি করা তাদের গুরুদায়িত্ব।’
ভেবে মুচকি হাসলো নির্জন।নিজেকে এই মুহূর্তে বিশ্ব চতুরতার অ্যাওয়ার্ড দিতে পারলে বেস্ট হতো।”

“আকস্মিক নিধি নির্জনের হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে রেখে বিরক্তি স্বরে বললো,

‘আপনার বাসার মানুষগুলো এমন একরোখা স্বভাবের কেনো?কিছুক্ষণ আগে মায়ের রুমে গিয়ে ওই সেবিকা আন্টির সাথে কথা বলতে চাইলাম,অথচ উনি আমাকে পাত্তাও দিলো না।উল্টো ব্যস্ততা দেখিয়ে মায়ের জামা-কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
আবার কিছুক্ষণ আগে ওই মেইডের সাথে কথা বলতে চাইলাম,সেও কোনো কথা বললো না।এদিকে শাশুড়ি মা ও কথা বলে না।তাহলে আমি কার সাথে কথা বলবো?”

“নিধির একাধারে বলা কথাগুলো চশমার ফাঁক গলিয়ে তাকিয়ে, খুব মনযোগ দিয়ে শুনলো নির্জন।এই মুহুর্তে তাকে দেখলে মনে হবে,সে বায়োলজির বংশগতির অধ্যায় সম্পর্কে ক্লাস করছে।”
এটা তার খুব প্রিয় অধ্যায় ছিলো।”

“নির্জন কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে,নিধি নির্জনের হাত ধরে বললো,
‘কি হলো?এমন রোবটের মতো তাকিয়ে কি দেখছেন?”

“নির্জন মুচকি হেসে বললো,
‘তোমাকে দেখছি।মিষ্টি রঙের সালোয়ার-কামিজে তোমায় দারুণ লাগছে ডার্ক কুইন।”

“নির্জনের এহেন মন্তব্যে বোকা বনে গেলো নিধি।কপট রাগ দেখিয়ে বললো,
‘এই আমি কি বলেছি, আপনি শুনেছেন তো?’

” নির্জন ফের মুচকি হেসে নিধির কোমল হস্ত মুঠোবন্দি করে বললো,
‘হুম,শুনেছি।আসলে এটা যার যার অন্তর্গত স্বভাব।তুমি চাইলেও পরিবর্তন করতে পারবে না।আমার মতে, তুমিও তাদের সাথে ইচ্ছে করে কথা বলতে যেও না।আর মা তো কথা বলতে পারে না।তাই তোমার যখন কথা বলতে মন চাইবে,তখন শুধু আমার সাথে কথা বলবে।তোমার বোরিংনেস কা**টানোর জন্য আমিই এনাফ ডার্ক কুইন।”.

“নিধি মুচকি হেসে বললো,

‘হুম,সেটা ঠিক।তবে আমি ভেবেছি,আপনার অফিস শুরু হলে মায়ের সাথে এবং তোহার সাথে ফোন করে কথা বলবো।এভাবে একা একা বদ্ধ খাঁচায় হুতুম পেঁচার মতো বসে থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব।”

“নিধির কথায় নির্জনের চোখ-মুখ নিমিষেই শক্ত হয়ে গেলো।মনে মনে আওড়ালো,

‘খুব ভালো করে তোমায় কথা বলাবো।আমাকে ছেড়ে অন্য ব্যক্তিকে কেনো তুমি মিস করবে?আই হেট ইট,আই অলসো হেট ইট।’
ভেবে ভীষণ কষ্টে মুখমন্ডলে কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে বললো,
‘ওকে,যেমনটা তুমি চাও।”

————
“কে**টে গেলো ৪দিন।সুখের দিনগুলো হয়তো অচিরেই ফুরিয়ে যায়।নির্জন,নিধি,তোহা,মাহিরের হাসি-খুশির সময়গুলো মনে হয় খুব দ্রুত বেগে ছুটছে।যদিও তোহা বেশ সুখেই দিন কা**টাচ্ছে।কিচেনে দাঁড়িয়ে তোহা মুচকি হেসে সকালের কথা ভাবতে থাকল।”

“সকালে ঘুম থেকে উঠে মাহির তোহার পায়ে সুড়সুড়ি দিয়ে পা**গল করে দিচ্ছিলো।তার একটাই আবদার,তাকে ৪০-৫০বার ‘আই লাভ ইউ’ বলতে হবে।
মাহিরের এই বাচ্চাসুলভ বায়নায় বোকা বনে গেলো তোহা।
এদিকে শাশুড়ি মা ডাকাডাকি শুরু করেছে।তোহা কে দেখতে তার দুঃসম্পর্কের আত্মীয়-স্বজন এসেছে।”

“কিন্তুু মাহির ওকে কিছুতেই ছাড়বে না।একদিকে শাশুড়ির ডাকাডাকি, অপরদিকে স্বামীর অদ্ভুত আবদার।কোনটা রেখে কোনটা শুনবে তোহা?
অবশেষে ৮-১০বার ‘আই লাভ ইউ’ বলে মাহিরের কপালে চুমু দিয়ে যেতে চাইলে,মাহির তোহাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওর ঘাড়ে চুমু দিয়ে হাস্কি ভয়েসে বলে উঠলো,

‘সেদিন চেম্বারে টাইটানিক মুভির জ্যাক আর রোজের লিপ কিস সিন শেষ করতে পারিনি,এখন বলি?’

‘হায়!সকাল সকাল আবার কি ড্রামা শুরু করলো।’
ভেবে লজ্জায় মূর্ছা গেলো তোহা।শুকনো ঢোক গিলে বললো,
‘এই মুভি আমি দেখেছি।নতুন করে আর শুনতে হবে না।’

“কে শোনে কার কথা,মাহির তোহাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘আজ আর পালাতে পারবে না।আজ তোমাকে সবকিছু শোনাবো স্বপ্নচারিনী।এই কাহিনী শুনে তুমি যদি একটু রোমান্টিক হও,তাহলে তো আমারই লাভ।’
বলেই দুষ্টু হেসে গড়গড় করে ইংরেজি এবং বাংলা শব্দ মিলিয়ে টাইটানিক মুভির রোমান্টিক সিন গুলো শোনালো।
আর মাঝে মাঝে চুমুর বর্ষন তো আছেই।’
মুভির কাহিনী শেষ করে যখনই মাহির তোহার ঠোঁট জোড়ায় চুমু দিতে যাবে,তখনই দরজায় ঠকঠক শব্দ হলো।ব্যাস,রোমান্সের ১২টা বেজে গেলো।
মাহির ছেড়ে দিলো তোহা কে।দুষ্টু হেসে বললো,

‘রাতে আরেকটা মুভির কাহিনী শোনাবো।এখন যাও তোহা রানী।’

“তোহা মুখ ভেং**চি কে**টে তড়িৎ গতিতে দরজা খুলে দেখলো, ওর শাশুড়ি দাঁড়িয়ে আছে।শাশুড়ি কে দেখে মাথায় ঘোমটা টেনে তার পাশ কা**টিয়ে তড়িৎ গতিতে নিচে চলে গেলো।এখানে বেশিক্ষণ থাকলে নিশ্চিত লজ্জা নামক অক্সিজেনের অভাব হবে।”

———-
“এদিকে সকাল সকাল অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে দিগন্ত।পেছনে দাঁড়িয়ে নাদিয়া বললো,
‘ইদানীং আমার কেমন বমি বমি পায়,মাথা ঘুরায়,কি হলো কে জানে!’

“নাদিয়ার এহেন কথা শুনে দিগন্ত ভ্যাবলার মতো নাদিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘আমি তো তেমন কিছু করিনি।এটা কিভাবে সম্ভব?আমি আরও ভাবলাম,তোমাকে নিয়ে হানিমুনে গিয়ে, একটু হানি টাইপ রাত কা**টিয়ে তারপর না হয়..

“দিগন্তের কথা শুনে নাদিয়া তার মুখ চেপে ধরে বললো,

‘একদম রাবিশ কথা বলবে না।তোমার মনের মধ্যে কি পজিটিভ কথা ঘুরপাক খায় না?মাথা ঘুরালে,আর বমি পেলেই কি সব হয়ে যায়?’

” দিগন্ত নাদিয়ার হাত ঝামটা দিয়ে সরিয়ে বললো,
‘হানি,তুমি কিন্তুু আমাকে উত্তেজিত করছো!’

‘নাদিয়া ঝগড়ুটে সুরে বললো,

‘আমার সামনে থাকলে তো তুমি সবসময় উত্তেজিত হয়ে থাকো।নতুন করে আর কি উত্তেজিত করবো শুনি?’

“নাদিয়ার এহেন বাক্যে দিগন্তের ব্যক্তিত্বে আ**ঘাত লাগল।দুষ্টু হেসে বললো,
‘ঠিকই বলেছো,তুমি খুব নাইস এন্ড অ্যাট্রাক্টিভ।তাই, না চাইতেও উত্তেজিত হয়ে যাই।’
বলেই টাই খুলে বিছানায় ছুড়ে দিয়ে শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করলো।’

“আকস্মিক ঘটনায় নাদিয়ার চোখজোড়া ছানাবড়া হয়ে গেলো।ও বুঝে গেছে, দিগন্তকে এখন আটকানো যাবে না।আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো,এই মুহুর্তে দিগন্তের কাছ থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান হলো ওয়াশরুম।”

“দিগন্ত শার্ট খুলে যখনই নাদিয়ার নিকট এগিয়ে যাবে,তখনই নাদিয়া মুখ ভেং**চি কে**টে,তড়িৎ গতিতে এক দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো।অতঃপর বিজয়ের হাসি দিয়ে বললো,

‘আজ খুব বেশি গরম লাগছে না।তাই এখানে আমি অধিক সময় নিমিষেই পার করতে পারবো।হাহ!তুমি চাইলেও কিছু করতে পারবে না।’

“দিগন্ত দরজার কাছে এসে আলতো করে ধা**ক্কা দিয়ে বললো,
‘হুহ..এখন না হয় ওয়াশরুমে লুকালে,রাতে কোথায় লুকাবে সুন্দরী?তোমাকে সেই দিগন্তের নির্লজ্জ বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে হবে।হুহ,আমি গেলাম।’
বলেই দুষ্টু হেসে আবারও শার্ট আর টাই পড়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।”

——-
“বিকালের দিকে তোহা মাহিরের অনুমতি নিয়ে ওর বান্ধবী তানিয়া কে নিয়ে কা**টা বনে গিয়ে ২জোড়া কোয়েল পাখি কিনে এনেছে।”

“শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার পথে তোহা নিধিকে ফোন দিয়ে কোয়েল পাখি কেনার কথা বললে,নিধি আহ্লাদে গদগদ হয়ে তোহা কে এক জোড়া কোয়েল পাখি দিয়ে যেতে বলে।”

“নিধির কথা মতো তোহা নিধির বাসার সামনে এসে ওকে খাঁচা সহ একজোড়া কোয়েল পাখি দিয়ে যায়।ছোট বোন কে এতদিন পর সামনা-সামনি দেখে,নিধি আবেগে তোহাকে জড়িয়ে ধরে।তারপর তোহা কে বাসায় ঢুকতে বললে,তোহা মুচকি হেসে বললো,

” আপু দেরি হয়ে যাবে,আরেকদিন মাহিরকে নিয়ে আসবো।তখন আমরা জমিয়ে আড্ডা দিবো।’
বলেই বিদায় নিয়ে চলে যায়।”

“এদিকে নিধি তো ১জোড়া পাখি পেয়ে ভীষণ খুশি হলো।পাখি নিধির ভীষণ পছন্দ।ছোটবেলায় ছাদের রেলিঙে পাখি বসতে দেখলেই দূর থেকে হাতে তালি দিয়ে,ওদের সাথে কথা বলতে চাইতো।কিন্তুু নিধিকে এভাবে নাচানাচি করতে দেখে পাখি ভয় পেয়ে ফুড়ুৎ করে উড়ে যেতো।’
ছোটবেলার কাহিনী গুলো ভেবে মুচকি হাসলো নিধি।রুমে গিয়ে পাখির খাঁচা খুলে ভেতরে হাত ঢুকিয়ে আলতো করে আদর করতে থাকলো।

” সন্ধ্যায় নির্জন কে ফোন দিয়ে বললো,
‘আপনার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।বাসায় এলে দেখতে পাবেন।”

“নির্জন ভাবলো,
নিধি হয়তো তাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য রোমাঞ্চকর কিছু ভেবে রেখেছে।তাই খুশি মনে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে এলো।
কিন্তুু রুমে ঢুকে যখন অনাকাঙ্ক্ষিত সারপ্রাইজ টি দেখতে পেলো,তখন নির্জনের মস্তিষ্কের উগ্র পোকাগুলো ফের কিলবিল করতে শুরু করলো।”

“চোখের সামনে দেখতে পেলো,তার ব্যক্তিগত প্রেয়সী ফ্লোরে বসে খাঁচার ভেতর হাত ঢুকিয়ে পাখিগুলো কে কত সুন্দর করে আদর করছে,আবার ঢং করে কথাও বলছে।সবকিছু দেখে নির্জন ভ্রু জোড়া কুঁচকে বললো,

‘কি করছো তুমি?এভাবে এই পাখি দু’টোকে আদর করছো কেনো?’

“পেছন থেকে নির্জনের কন্ঠস্বর শুনে খুশি হয়ে গেলো নিধি।হাসি মুখে বললো,
‘ওহ, আপনি এসে গেছেন!হিহিহি..সারপ্রাইজ।এটাই হলো সারপ্রাইজ।বিকালে তোহা এসে পাখি দু’টো দিয়ে গেছে।কিউট না?বিকাল থেকে এতক্ষণ পর্যন্ত ওদের সাথেই সময় কা**টিয়েছি।”

“বিকাল থেকে এতক্ষণ পর্যন্ত ওদের সাথেই সময় কা**টিয়েছি।’
শেষ বাক্যটি কর্ণগোচর হতেই,নির্জনের ভেতর থেকে হিং**স্র স্বরে ‘মন’ বলে উঠলো,

‘বিকাল থেকে এই ক্ষুদ্র পাখিগুলো কে তোমার প্রিয়তমা তোমার বরাদ্দকৃত মূল্যবান সময় দিয়েছে।বুঝতে পেরেছো,এতক্ষণ সে পাখিগুলোর মাঝে নিজের মন কে আবদ্ধ রেখেছে?সে তোমাকে মিস করেনি।এটাও এক প্রকার অবহেলা।এখনই কিছু করো।পাখি দু’টোকে তোমার ল্যাবরেটরি রুমে নিয়ে গিয়ে কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি দাও।ওরা তোমার প্রেয়সীর কোমল হাতের আদর লুটে নিয়েছে।”

“মনের কথার বিপরীতে ‘হৃদয়’ বলে উঠলো,

‘ল্যাবরেটরি রুমে নয়।পাখি দু’টোর সাথে তোমার অর্ধাঙ্গিনীকেও শাস্তি দিতে হবে।কারণ, সে তোমার বরাদ্দকৃত আদরগুলো ওদের মাঝে বলিয়ে দিয়েছে।তোমাকে একটা বুদ্ধি শিখিয়ে দিচ্ছি।এসো..
বলেই ‘হৃদয়’ নির্জন কে তার দুষ্টু বুদ্ধি বুঝিয়ে দিলো।”

“হৃদয়ের বুদ্ধি গুলো নির্জনের বেশ মনে ধরলো।কু**টিল হেসে নিধির দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ডার্ক কুইন পাখি দু’টো এনে ভালোই করেছো।কোয়েল পাখি আমার ভীষণ পছন্দ।”

“নির্জনের এহেন বাক্য শুনে ভীষণ খুশি হলো নিধি।”

#চলবে…

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৩৬
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ❌
[পর্বটি রোমান্টিক এবং ভা**য়ো*লেন্স হবে,চাইলে স্কিপ করতে পারেন।]

“হৃদয়ের বুদ্ধিগুলো নির্জনের বেশ মনে ধরলো।কু**টিল হেসে নিধির দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ডার্ক কুইন,পাখি দু’টো এনে ভালোই করেছো।কোয়েল পাখি আমার ভীষণ পছন্দ।’

“নির্জনের এহেন বাক্য শুনে ভীষণ খুশি হলো নিধি।”

“খিলখিল করে হেসে বললো,
‘হুম,আমারও ভীষণ পছন্দ।সব ধরণের পাখি আমার বেশ পছন্দ।যাক আপনার পছন্দের সাথে আমার পছন্দের বেশ মিল আছে।”

“নির্জন মুচকি হেসে নিধির গালে আলতো করে স্লাইড করে বললো,

‘মিল থাকাটাই তো স্বাভাবিক।আমরা তো একে-অপরের জন্যই তৈরি হয়েছি, তাই না ডার্ক কুইন?’

“নিধি নির্জনকে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘হুম, ঠিক বলেছেন.. হিহিহি।”

“নির্জন নিধির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
‘এখন কি শুধু পাখির দিকে খেয়াল রাখবে?আমার দিকে রাখবে না?আমার শরীর টা খুব ক্লান্ত লাগছে।’

“নির্জনের মুখে এহেন কথা শুনে,নিধি বললো,
‘ওহ সরি,আপনি বসুন।আমি আপনার জন্য ঠান্ডা পানি আনছি।’
বলেই নিধি দ্রুত পায়ে রুম থেকে চলে গেলো।”

“নিধির যাওয়ার পানে তাকিয়ে পৈ**শা*চিক হাসি দিলো নির্জন।
অতঃপর খাঁচায় আবদ্ধ পাখি দু’টোর কাছে গিয়ে,খাঁচার দরজা খুলে, দু’টো পাখির গলা একসাথে চেপে ধরে ঘাড় কাত করে হিং**স্র স্বরে বললো,

‘তোরা তো শেষ।আমার প্রিয়তমার হাতের আদর খাওয়ার শখ চিরতরে মিটিয়ে দিবো।’
বলেই পাখি দু’টোকে ছেড়ে দিয়ে, চশমাটা খুলে টেবিলে রেখে বিছানায় টানটান হয়ে শুয়ে পড়লো নির্জন।”

“পাখি দু’টো কি বুঝলো কে জানে,নির্জন চলে যাওয়ার পর ক্ষুদ্র একজোড়া প্রাণী খাঁচার একপাশে সন্তর্পণে মিশে রইলো।”

“রাতে নির্জন এবং নিধি একসাথে খাওয়া-দাওয়া করলো।নিধি ওর শাশুড়ির রুমে গিয়ে, সায়রা বেগমের পাশে বসে একা একাই অনেক কথা বলেছে।কিন্তুু সায়রা বেগম নিস্তব্ধ,নিশ্চুপ হয়ে শুধু শ্রবণ করেছেন।প্রিয় বৌমার সাথে কিঞ্চিৎ শব্দ করে মনের কথাটুকু বলার সাধ্য তার নেই।”

“রাত সাড়ে ১০টায় বেলকনিতে দাঁড়িয়ে রিমঝিম বৃষ্টির তালে তাল মিলিয়ে হাত দু’টো মেলে দিয়েছে নিধি।প্রেয়সীর অর্ধভেজা হাতে বিন্দু বিন্দু পানির কণা লেপ্টে আছে।সেদিকে হিং**স্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নির্জন।
আকাশের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মনে মনে আওড়ালো,

‘তোমাকে তো বলেছিলাম,আমার প্রেয়সী যখন সম্পূর্ণ আমার হয়ে যাবে,তখন তাকে তুমি ছুঁতে পারবে না।কিন্তুু, তুমি কথা শুনলে না কেনো?এর জন্য তো তোমার শাস্তি পাওয়া উচিত।কিন্তুু কিভাবে দেবো?”

“নির্জনের ভাবনার মধ্যে ‘হৃদয়’ বলে উঠলো,
‘তাকে শাস্তি দেওয়া তোমার সাধ্যের বাইরে।তুমি কি কিছুক্ষণ আগের কথা ভুলে গিয়েছো?তোমার প্রিয় রমনী ওই ক্ষুদ্র পাখি যুগলকে আদর করেছে।তুমি তোমার প্রেয়সীকে শাস্তি না দিয়ে ওই মহাকাশের বৃষ্টি কণাগুলো কে শাস্তি দেওয়ার ভাবনায় বিভোর হয়ে আছো?রিয়েলি, শেইম অন ইউ নির্জন।”

“হৃদয়ের কথায় নির্জনের ভাবনা পরিবর্তিত হলো।কু**টিল হেসে ‘হৃদয়’ কে বললো,
‘মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য থ্যাংকস।এখনই তাকে শাস্তি দেওয়া হবে,ডোন্ট ওয়ারি।’
বলেই নিধির হাত ধরে মুচকি হেসে বললো,

‘ডার্ক কুইন জানো,আমার বৃষ্টিতে ভিজতে খুব ভালো লাগে। চলো না,ছাদে গিয়ে দু’জনে আজ বৃষ্টিতে ভিজি।সেই সাথে রোমান্টিক কিছু মুহূর্ত উপভোগ করি।”

“নিধি মুচকি হেসে বললো,
‘হুম, সেটাতো ভিজতেই পারি।বৃষ্টিতে ভিজতে আমিও খুব পছন্দ করি।কিন্তুু ঠান্ডা-জ্বরের সমস্যার কারণে মা কখনোও ভিজতে দেয়নি।তবে আপনার সাথে একটু ভিজতেই পারি।”

“নিধির সম্মতি পেতেই,নির্জন বাঁকা হেসে তৎক্ষনাৎ ওকে কোলে তুলে নিয়ে, ঠোঁট জোড়ায় আলতো কা**মড় দিয়ে বললো,
‘আজ শুধু আকাশের বৃষ্টিতে নয়,আমার বর্ষনেও ভেজাবো তোমার সর্বাঙ্গ।’

বলেই রুম থেকে বেরিয়ে সিড়ি বেয়ে ছাদে উঠে নিধিকে নামিয়ে দিলো।”

” দু’জনেই দেখলো,ছাদে বৃষ্টি পড়ছে, আর প্রতিটি ফোঁটা ছাদের ফ্লোরে যেনো টুপটাপ শব্দ করে আ**ঘাত করছে। যেন আকাশের বিশাল হৃদয় থেকে ঝরে পড়ছে এই নরম ফোঁটাগুলো, যা ছাদে এসে এক মৃদু ছন্দের সৃষ্টি করছে। ফোঁটাগুলো একে-অপরের সাথে মিলেমিশে ছাদ বেয়ে নিচে গড়িয়ে পড়ছে। বাতাসে ভেসে আসছে সেই বৃষ্টির ঠান্ডা সুবাস, আর চারপাশে যেন এক শান্ত, নির্মল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির স্পর্শে ছাদের গা ভিজে চকচক করছে, আর প্রতিটি ফোঁটা যেন নীরবে নিজের গল্প বলে যাচ্ছে, মনের এক অদৃশ্য সুরে।”

“কালো রঙের সালোয়ার-কামিজ পরিহিত নিধির শরীর যেন ধীরে ধীরে ভিজে চুপচুপে হয়ে গেলো।
সেদিকে তাকিয়ে নির্জন তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে, বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা কে হিং**সা করে কবিতা আওড়ালো,

“তোমার গায়ে লাগে যে ফোঁটা,
তার কী ভাগ্য!
সে তোমায় ছুঁয়ে যায় অবিরাম,
আমার চেয়ে কাছে আসে প্রতিক্ষণ।
তোমার চুলের মধ্যে হারিয়ে যায় সে,
তোমার ত্বকে মিশে যায় নীরবে,
আর আমি কেবল দূর থেকে দেখি,
কীভাবে সে তোমার সান্নিধ্য পায়।

বৃষ্টির ফোঁটা হয়ে যদি একবার
তোমায় ছুঁতে পারতাম,
তোমার ঠোঁটের ওপর নিঃশব্দে ঝরে যেতাম,
তোমার স্পর্শে হারিয়ে যেতে চাই,
তোমার পৃথিবীর একটুখানি হতে চাই।” ~মেহের~

“নির্জনের কবিতা আবৃত্তি নিধি এতক্ষণ শুধু মুগ্ধ হয়ে শুনছিলো।নিধির মনে হলো বৃষ্টির সাথে যেন পুরো পৃথিবী নিস্তব্ধ হয়ে গেলো নির্জনের সেই কথাগুলোর মাঝে।মুচকি হেসে নির্জনের শার্টের ৩টি বোতাম একেক করে খুলে,লোমশ বুকে ঠোঁট জোড়া ছুঁইয়ে মৃদুস্বরে বললো,

‘বৃষ্টির ফোঁটা হয়ে ছুঁয়ে দিতে হবে কেনো?আমি তো আপনার ব্যক্তিগত প্রেয়সী।আমাকে সবদিক থেকে ছোঁয়ার অধিকার আপনার আছে।”

“নিধির সরলতায় আরও একবার দুষ্টু হাসি ফুটে ওঠে নির্জনের উজ্জ্বল শ্যামরঙা মুখস্রিতে।সেতো আকাশ কে বলেছিলো,তার প্রেয়সী তার হয়ে গেলে এই বৃষ্টির পানি তাকেও ছুঁতে পারবে না।অথচ নির্জনের শরীরেও বৃষ্টির বিন্দু বিন্দু ফোঁটা বিদ্যমান।কেউ কথা রাখেনি।সবাই ছলনাময়ী।’
ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো নির্জন।”

“নির্জনের সেই তপ্ত শ্বাস আঁছড়ে পড়লো নিধির ভেজা কপালে।বৃষ্টির স্নিগ্ধ পরশ এবং প্রিয়তমর তপ্ত নিঃশ্বাস, সবকিছু মিলিয়ে নিধির অনুভূতি গুলো যেনো বেশামাল হতে লাগল।”

“নিজের অবাধ্য অনুভূতিগুলো কে বার কয়েক ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলে, নির্জনের মনের ভেতর দৃঢ়ভাবে গেঁথে দিতে চাইলো নিধি।”

“প্রেয়সীর তীব্র আকাঙ্ক্ষা বুঝতে ন্যানো সেকেন্ড বেগ পেতে হলো না নির্জনের।এই মুহূর্তে তার চোখেও গভীর আকাঙ্ক্ষা, আর নিধি সেই চাহনিতে নিজেকে পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছে। বৃষ্টির ফোঁটাগুলো তাদের গায়ে ঝরে পড়ছে, কিন্তুু তাদের মন যেন একে-অপরের মাঝে ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে।”

“নির্জন এবার আরও কাছে এগিয়ে এসে, নিধির কোমরে নিজের হাত রাখে, বৃষ্টিতে ভেজা কাপড়ের ওপর দিয়ে তার ত্বকের উষ্ণতা অনুভব করে। নিধি কিছুটা কাঁপে, কিন্তুু সেই কাঁপুনিটা বৃষ্টির ঠান্ডা থেকে নয়, বরং নির্জনের স্পর্শে জেগে ওঠা আবেগের কারণে।”

“নির্জনের হাত ধীরে ধীরে নিধির পিঠ বেয়ে নিচে নামে, তার দুটি হাত সালোয়ার-কামিজের ভেজা কাপড়ের উপর দিয়ে নিধির কোমরটা আলতোভাবে জড়িয়ে ধরে। নিধির নিশ্বাস ভারী হয়ে আসে, সে নির্জনের আরও কাছে চলে আসে, যেনো তাদের মধ্যে কোনো দূরত্ব আর নেই।”

“নির্জন এবার নিধির কপালে আলতো চুমু খায়, তারপর তার নাকের ডগায় ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। নিধি তার চোখ বন্ধ করে ফেলেছে, যেন পুরো পৃথিবী এই মুহূর্তে তাদের জন্য থেমে আছে। নির্জন এবার নিধির ঠোঁটের খুব কাছাকাছি এসে ফিসফিস করে বলে,

“তোমার ছোঁয়া ছাড়া আমি যেন অসম্পূর্ণ, তোমার গায়ের এই ফোঁটাগুলো আমার থেকে বেশি সৌভাগ্যবান।এই মুহূর্তে এই ফোঁটাগুলো কে আমার ভীষণ হিংসা হচ্ছে।’
বলেই, নির্জন ধীরে ধীরে নিধির ঠোঁটের ওপর বৃষ্টির ফোঁটা গুলো দুই আঙ্গুল দিয়ে মুছে দিয়ে চুমু খায়,তাদের মাঝে থাকা সমস্ত বৃষ্টি যেন সেই মুহূর্তে এক হয়ে যায়, তাদের প্রেমকে আরও গভীর করে তোলে।”

“নির্জন নিধিকে আবারও কোলে তুলে নেয়।অতঃপর প্রেয়সীকে সন্তর্পণে নিচে নিয়ে যায়।ততক্ষণে লজ্জায় কয়েক দফা মিইয়ে গেছে নিধি।প্রেয়সীকে বিছানায় বসিয়ে টাওয়াল দিয়ে আপাদমস্তক মুছে দেয় নির্জন,সেই সাথে দু’জনে নিজেদের ড্রেস ও চেঞ্জ করে নেয়।অতঃপর নিধিকে আবারও জড়িয়ে নেয় নিজের বক্ষগহ্বরে।ধীরে ধীরে একে-অপরের অনুভূতি মিশ্রিত তপ্ত শ্বাস অনুভব করতে থাকে।দু’টি শরীর,দু’টি হৃদয় মিলে মিশে যায় অন্ধকার ভালোবাসার এক তীব্র দহনে।”

——-
“নিস্তব্ধ রাত পেরিয়ে যখন ধরনীতে কিছুটা আলোর রেখা ফুটে উঠবে,তখনই নির্জনের মুখে এক পৈ**শা**চিক আনন্দের ছাপ দেখা গেলো।নির্জনের লোমশ বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে নিধি।ওর শরীর স্বাভাবিক তাপমাত্রার তুলনায় অধিক তপ্ত হয়ে আছে।নিধির নাসারন্ধ্র থেকে বেরিয়ে আসা মাত্রাতিরিক্ত উষ্ণ নিঃশ্বাসে নির্জনের বক্ষগহ্বর আগ্নেয়গিরির লাভার ন্যায় যেন উত্তপ্ত হতে লাগল।তবুও নির্জন তার প্রেয়সীকে কিঞ্চিৎ পরিমাণ সরালো না।বরং বুকের সাথে প্রগাঢ় ভাবে মিশিয়ে নিলো।বার কয়েক মনে মনে আওড়ালো,

‘ইয়েস, আ’ম সাকসেস।’
ভেবেই নিধির তপ্ত কপালে গভীর ভাবে চুমু দিয়ে, ওকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে তড়িৎ গতিতে বিছানা থেকে নেমে টেবিলের ড্রয়ার থেকে থার্মোমিটার নিয়ে এলো।অতঃপর চেক করে দেখলো, নিধির শরীরের তাপমাত্রা ১০৪° ডিগ্রি ফারেনহাইট।
প্রিয় রমনীর এহেন অসুস্থতায় ভীষণ খুশি হলো নির্জন।তার মনের মধ্যে অদ্ভুত এক আনন্দের জলরাশি বয়ে গেলো।এই আনন্দানুভূতি শুধু তার ‘মন’ আর ‘হৃদয়’ অনুভব করতে পারবে।”

“নিধির চোখের কোণে নোনা জল এবং লালচে মুখস্রি দেখে নির্জনের চোখে-মুখে যখনই খুশির ঝিলিক দেখা গেলো, তখনই ভেতর থেকে ‘মন’ হিং**স্র স্বরে বলে উঠলো,

‘নির্জন তুমি হাসছো?এদিকে তোমার নিরুপমাকে শাস্তি দিতে গিয়ে তুমি নিজেই বোকামি করে ফেলেছো।’

‘নির্জন উত্তেজিত স্বরে বললো,
‘কি বোকামি?’

“মন তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো,
‘তোমার প্রিয় মানবীর পুরো শরীরে জ্বরের মতো উষ্ণ তাপমাত্রা ওতপ্রোতভাবে লেপ্টে রয়েছে,যা তার শরীরের প্রতিটি কোণায় তীব্র অনুভূতির মিশ্রণ সৃষ্টি করেছে।যেটা সৃষ্টি করা শুধু তোমার অধিকার।আমার কথা কি তুমি বুঝতে পেরেছো?”

“মনের কথা বুঝতে পেরেছে নির্জন।মুহূর্তেই চোখ-মুখ কুঁচকে বললো,
‘হুম।ঠিকই তো,এটা তো ভেবে দেখিনি।জ্বরের মতো উষ্ণ তাপমাত্রার সাহস হলো কি করে,আমার ডার্ক কুইন কে স্পর্শ করার?জ্বর কে এখনই শাস্তুি পেতে হবে।’

‘বলেই নিধির কপালে হাতের উল্টো পিঠ ঠেকিয়ে দেখলো,নিধির কপাল অতিরিক্ত তপ্ত হয়ে আছে।নির্জন তৎক্ষণাৎ কিচেনে গিয়ে একটি মাঝারি সাইজের পাত্রে পানি নিয়ে সফট কাপড় দিয়ে নিধির পরিধানরত কাপড় খুলে একে একে প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মুছতে শুরু করলো।”

“এদিকে নিধি তো বেহুশ প্রায়।যেখানে ঠান্ডা-জ্বরের ভয়ে বৃষ্টি থেকে সে সবসময় দূরে থাকে,আজ সেই বৃষ্টি যেনো তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো।আর এটাই ছিলো নির্জনের পক্ষ থেকে নিধির প্রাপ্য শাস্তি।যখন নিধি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি বিলাশ করছিলো,তখনই নির্জন ডেভিল হেসে এই পৈ**শা*চিক পরিকল্পনা করে এবং সফলও হয়।”

“এদিকে নির্জন যতই পানি দিয়ে নিধির শরীর মুছিয়ে দিচ্ছে, ততই যেনো শরীরের তাপমাত্রা ক্রমাগত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছিয়ে দেওয়ার পরে কিছুক্ষণ ঠান্ডা হয়ে,আবারও নিধির শরীর পূর্বের ন্যায় তপ্ত হয়ে উঠছে।নির্জন ২-৩বার থার্মোমিটার দিয়ে চেক করে দেখলো, জ্বরের তাপমাত্রা এখনও ১০৪°ডিগ্রি ফারেনহাইট।এইবার মেজাজ বিগড়ে গেলো নির্জনের।”

“ভেতর থেকে ‘মন’ হিং**স্র স্বরে বলে উঠলো,
‘দ্রুত গতিতে ফ্রিজ থেকে বরফ খন্ড এনে তার শরীরে ঘঁষতে থাকো।এটাই জ্বরের জন্য উত্তম শাস্তি হবে।সেই সাথে তোমার প্রেয়সীরও চিরতরে শিক্ষা হয়ে যাবে।”

“মন বলতে না বলতে নির্জন দ্রুত পায়ে ফ্রিজ থেকে বরফ খন্ড এনে নিধির হাত-পায়ে এবং পুুরো শরীরে ঘঁষতে থাকল।আর জ্বরকে বিড়বিড় করে ইচ্ছেমতো বকতে থাকল।এদিকে জ্বরে টালমাটাল নিধির তো কাঁপতে কাঁপতে বেহাল দশা।”

“কিয়ৎক্ষণ পর নির্জন আবিষ্কার করলো নিধির শরীর কিছুটা শীতল হয়েছে।কু**টিল হেসে ‘মন’ কে থ্যাংকস জানিয়ে,ঘুমের ঘোরে নিধিকে কোনোরকমে মেডিসিন খাইয়ে দিলো।কিছুক্ষণ পর কিচেনে গিয়ে রেডিমেট থাই স্যুপ রান্না করে, নিধির মাথা আলতো করে উঁচিয়ে চামচ দিয়ে একটু একটু করে খাইয়ে দিলো।নিধি কিছুটা খাবার বমি করে ফেলে দিলো।সেগুলো খুব সুন্দর করে পরিষ্কার করে, নিধির কপালে হাত দিতেই,আবারও মেজাজ বিগড়ে গেলো নির্জনের।নিধির জ্বর আবারও বেড়েছে।
নির্জন রেগেমেগে মন কে বললো,

‘দেখেছো,বরফ দিয়ে ঘষা-মাজার পরেও সে আমার ডার্ক কুইনের সাথে মিশে আছে?”

“মন কিছু বলতে যাবে,তার আগেই ‘হৃদয়’ বলে উঠলো,

‘রিল্যাক্স নির্জন।এতটা উত্তেজিত হয়ো না।যেহেতু তাকে
মেডিসিন এবং খাবার খাইয়ে দিয়েছো,সেহেতু কিছুক্ষণ পর ধীরে ধীরে তার শরীরের তাপমাত্রা কমে আসবে।তবে বরফ দিয়ে তার শরীরে মাসাজ করার বিষয়টি সবচেয়ে ইউনিক হয়েছে।সত্যি, তুমি একজন ইউনিক পারসন।আ’ম প্রাউড অফ ইউ নির্জন।
আর এখন তাকে কম্ফোর্টার দিয়ে ঢেকে দিয়ে,খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরো।তোমার শরীরের উষ্ণতায় ধীরে ধীরে তার শরীরের কম্পন কমে আসবে।আর মেডিসিনের প্রভাবে তার শরীর থেকে ঘাম নির্গত হয়ে,তাপমাত্রা কমে আসবে।”

“হৃদয়ের কথা মতো নির্জন নিধিকে কম্ফোর্টারে ঢেকে দিয়ে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।যেন দুটি শরীরের হাড় এক হওয়া বাকি ছিলো।প্রায় আধা ঘন্টা পর নিধির কম্পন ক্রমাগত হ্রাস পেলো।ধীরে ধীরে বিন্দু বিন্দু ঘাম সৃষ্টি হলো।
নিধির ঘর্মাক্ত কপাল দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো নির্জন।খুশি হয়ে আলতো করে প্রেয়সীর কপাল এবং অধরে চুম্বন করলো।কিছুক্ষণ পর নিধির মাথা বুকের সাথে মিশিয়ে নিজেও ঘুমের রাজ্যে পারি জমালো।”

———–
“কারো মাঝে দুঃখ,কারো মাঝে সুখ।
নিধির জীবন টা দুর্বিষহ হলেও,খুব সুখে আছে তারই ছোট বোন তোহা।তোহার কাছে মাহির একজন আদর্শবান পুরুষ এবং স্বামী।তোহাকে স্বাধীনতা দেওয়া থেকে শুরু করে ওর ছোট ছোট পছন্দ গুলোর গুরুত্ব দেয় মাহির।শত ব্যস্ততার মাঝেও এখনও প্রতিদিন বিকাল বেলা নিয়ম করে এক ঘন্টা কথা বলে তোহার সাথে।তাদের কথপোকথন দেখলে মনে হবে,তারা এখনও প্রেম করছে।অথচ রাতের বেলা প্রিয়তম অর্ধাঙ্গের সাথে দেখা হবে তোহার।’

‘কথাগুলো ভেবে জানালার পর্দা ভেদ করে আসা সকালে পূর্বাকাশে ওঠা সূর্যরশ্মির দিকে তাকিয়ে, মুচকি হাসলো তোহা।আকস্মিক পেছন থেকে মাহির জড়িয়ে ধরে তোহার ঘাড়ে নাক ঘষে বললো,
‘এমন মিটিমিটি হাসছো কেনো স্বপ্নচারিনী?গতকাল রাতের কথা ভেবে?’

“ব্যাস, শুরু হয়ে গেলো রোমান্স।
তোহা মাহির কে একটু দূরে সরিয়ে দিয়ে বললো,
‘গতকাল রাতে কি এমন করেছেন, যে সেগুলো ভাবতে হবে?’

“মাহির তোহার গালে আলতো করে চুমু দিয়ে বললো,

‘বুঝেছি, আবার রিপিট করতে হবে।’
বলেই তোহার গলার কাছে আসতে নিলে তোহা মাহিরের মুখ সরিয়ে উত্তেজিত স্বরে বললো,

‘এই না না না..।আমি এমনি অন্য কথা ভাবছিলাম।যাইহোক,অনেক বেলা হয়ে গেছে,আমি এখন উঠে ফ্রেশ হবো।আমার অনেক কাজ আছে।আপনিও ফ্রেশ হয়ে নিন।’
বলেই তোহা উঠতে নিলে,মাহির ওর হাত টান দিয়ে কাছে টেনে বললো,
‘আগে ২২বার চুমু দাও তারপর যেতে দিবো।’

“মাহিরের এহেন আবদারে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো তোহা।কপট রাগ দেখিয়ে বললো,
‘একবার বলেন ২০-৩০বার আই লাভ ইউ বলতে,আবার বলেন ২২বার চুৃমু দিতে; এগুলো কেমন স্বভাব?’

“মাহির ভ্রু জোড়া কুঁচকে বললো,
‘তুমি যতগুলো ওয়ার্ড বলবে,চুমুর সংখ্যা তত বাড়বে।’

” মাহিরের কথা শুনে শুকনো ঢোক গিললো তোহা।এই কয়েকদিনে এই ঘাড় ত্যাড়া লোককে ও বেশ চিনে ফেলেছে।সে দমে যাওয়ার পাত্র নয়।তাই হার মানলো তোহা।
অবশেষে তোহা যখনই মাহিরের কপালে চুৃুৃুমু দিতে যাবে,তখনই মাহির তোহার ঠোঁট জোড়ায় আঙ্গুল দিয়ে বললো,
‘এত তাড়াহুড়ো করছো কেনো?আমি
কি এতো ফাস্ট দিতে বলেছি?আগে তোমার জন্য একটা কবিতা শোনাই,তারপর দিও।’
বলেই দুষ্টু হেসে মাহির শুরু করলো,

“স্বপ্নচারিনীর জন্মদিন”

তোমার জন্মদিনে, প্রিয় স্বপ্নচারিনী,
আনন্দে ভরুক দিন, সুখের সুরে বেঁধে;
আমার হৃদয়, শুধুই তোমার প্রেমে,
তোমার হাসির আলোয়, জ্বলুক নতুন চমক।

তোমার চোখের দীপ্তি, প্রেমের দীপের মতো,
প্রতি মুহূর্তে, তোমার সাথে কা**টানো স্বপ্ন;
তোমার সান্নিধ্যে, বাজুক সুখের সুর,
আমার ভালোবাসায়, থাকুক তোমার পুঁজি।

জন্মদিনের এই দিনে, তোমার জন্য প্রার্থনা,
আমার প্রণয়, সজীব করুক চিরকাল;
তোমার দিন হোক রঙিন, সুখের আলোয় ভরা,
তোমার মুখে থাকুক হাসির প্রতিটি রেখা।

এই জন্মদিনে, তুমি চিরকাল সুখী থাকো,
আমার ভালোবাসায়, জীবন রঙিন করে চলো;
স্বপ্নচারিনী, আজকের দিনে, আনন্দের প্রীতি,
তোমার জীবনে আসুক সুখের নিখুঁত স্মৃতি।” ~মেহের~

বলেই মাহির তোহার গালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে বললো,
‘হুম, এইবার তুমি শুরু করো।”

“তোহা কয়েক সেকেন্ড মাহিরের দিকে হা করে তাকিয়ে থেকে বললো,
‘আমি তো নিজেই আমার জন্মদিনের কথা ভুলে গিয়েছিলাম,অথচ আপনি মনে রেখেছেন?এটা সত্যি সারপ্রাইজ ছিলো।আচ্ছা, আমার গিফট কোথায়?”

“মাহির মুচকি হেসে বললো,
‘আগে চুমু দাও, তারপর গিফট দিবো।’

‘তোহা মুচকি হেসে যখনই মাহির কে চুমু দিতে যাবে,ঠিক তখনই তোহার ফোন বেজে উঠলো।’

“মাহির মন খারাপ করে বললো,
‘ধুর. আমার রোমান্টিক সিন এই ফোনটাও সহ্য করতে পারে না।অসহ্য।’

“তোহা সেদিকে কর্ণপাত না করে, ফোনে হাত দিয়ে দেখলো নিধি ফোন করেছে।তোহা হাসি মুখে ফোন রিসিভ করতেই,নিধির দুর্বল কন্ঠস্বর শুনতে পেলো।অপরপাশ থেকে নিধি অসুস্থ স্বরে তার জ্বরের বিষয়টি জানালো।”

“বোনের অসুস্থতার কথা শুনে নিমিষেই মন খারাপ হয়ে গেলো তোহার।নিধিকে কয়েকটি স্বান্তনার বানী শুনিয়ে ফোন রেখে দিয়ে, মাহির কে সবকিছু বললো।”

“সবকিছু শুনে মাহির বললো,
‘এক কাজ করা যায়,তুমি আর আমি গিয়ে আপুকে দেখে আসি।তাছাড়া তুমিও তো যেতে চেয়েছিলে।এই সুযোগে না হয় ঘুরে আসা হবে।সেই সাথে নির্জন ভাইয়ার সাথেও ভালোভাবে পরিচিত হবো।”

“মাহিরের সাথে তোহাও তাল মেলালো।”

“নিধি তোহাকে ওর জ্বরের বিষয়টি বাবা-মাকে জানাতে নিষেধ করেছে।তাহলে তারা শুধু,শুধু টেনশন করবে।তোহাও নিধির কথা মতো ওর বাবা-মাকে বিষয়টি জানায়নি।বিকালের দিকে মাহির এবং তোহা নিধিকে দেখতে এলো।”

“নিধির অসুস্থতার কারণে নির্জন অফিস থেকে ছুটি নিয়ে নিধিকে যথাযথ সময় দিয়েছে।সেই সাথে নিধির কষ্ট গুলোও উপভোগ করেছে।আর বেলকনিতে ঝুলিয়ে রাখা পাখিগুলোর কাছে গিয়ে ওদের কয়েকবার ওয়ার্নিং দিয়েছে,যেন কিচিরমিচির না করে।কিন্তুু অবুঝ পাখিগুলোর কিচিরমিচির যেনো আরও দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছিলো।”

“বিকালে হালকা নাস্তা করার পর,তোহা নিধির মাথার কাছে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বিভিন্ন কথপোকথন করছিলো।এদিকে মাহিরও নির্জনের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো।মাহির বকবক করলেও, নির্জন বেশিরভাগ সময় নীরব থেকেছে।এতে মাহির কিছু মনে করেনি।”

“এদিকে তোহাকে নিধির মাথায় বারবার হাত বুলিয়ে দেওয়া দেখে গায়ে কাঁটা দিচ্ছে নির্জনের।মনে মনে আওড়ালো,

‘একে তো আমার ডার্ক কুইন কে পাখিগুলো দিয়ে অন্যায় করেছো, আর এখন তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ঘোর অন্যায় করলে।এর শাস্তি তুৃৃমি এখনই পাবে।’
ভেবে ডেভিল হাসি দিয়ে,তোহা কে বললো,

‘শালিকা, আপনি এই নুডলস খেয়ে নিন।ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো।আমি আপনাদের জন্য কিচেন থেকে চা নিয়ে আসছি।’
বলেই সেখান থেকে চলে গেলো নির্জন।”

“এদিকে তোহা হাসি মুখে নিধির সাথে কথা বলে নুডলস খেয়ে,হাত ধোঁয়ার জন্য বেসিনের সামনে যেতেই স্লিপ কে**টে টাইলসকৃত ফ্লোরে পড়ে গিয়ে চি**ৎকার করে উঠলো,
‘ও মা গো….’

‘তোহার চিৎ**কার শুনে মাহির তাড়াহুড়ো করে ডাইনিং রুমে গিয়ে তোহাকে ফ্লোরে পড়া অবস্থায় দেখে দ্রুত পায়ে ওর কাছে গিয়ে কোমরে হাত বুলিয়ে উত্তেজিত স্বরে বললো,
‘কোথায় ব্যথা পেয়েছো তুৃমি? কিভাবে পড়ে গেলে?’

“কোমরে প্রচন্ড ব্যথা পাওয়াতে তোহা ‘উহঃ’ শব্দ ছাড়া আর কিছুই করতে পারলো না।”

“এদিকে নির্জন কিচেন থেকে চা এর ট্রে হাতে নিয়ে এসে বিস্ময়ের স্বরে বললো,
‘একি!এইসব কিভাবে হলো?’

“মাহির মলিন স্বরে বললো,
‘ভাইয়া,তোহা মনে হয় খুব ব্যথা পেয়েছে।আমি ওকে হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি।প্লিজ কিছু মনে করবেন না,আমরা আরেকদিন আসবো।’
বলেই তোহা কে কোলে তুলে নিয়ে, সদর দরজা দিয়ে তড়িৎ গতিতে বেরিয়ে গেলো মাহির।”

“এদিকে মাহিরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে নির্জন তো হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে।তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বললো,

‘ আবার এখানে আসলে এর থেকেও ভ**য়া*বহ শাস্তি দেওয়া হবে।এখন তো সয়াবিন তেল দিয়ে ফ্লোরে ফেলেছি,এরপর পে**ট্রোল দিয়ে আ**গুন ধরিয়ে দিবো।যত্তসব মেলোড্রামা।”

——–
“তোহার এমন চিৎ**কার শুনে, নিধি দুর্বল পায়ে বিছানা থেকে নামতেই,ওর আবার মাথা ঘুরে উঠলো।ও আবারও বিছানায় বসে পড়লো।নির্জন নিধির কাছে এসে ওর এমন অবস্থা দেখে, ওকে শুইয়ে দিয়ে ইনোসেন্ট ফেইস করে তোহার পড়ে যাওয়ার ঘটনা বললো।তোহার এহেন দশার কথা শুনে নিধির মন ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো।মুখে এবং মনে মনে অনেক দোয়া করলো তোহার জন্য।”

“রাত ৯টায় নিধির জ্বর কিছুটা কমলে,নিধি ঘুমিয়ে পড়ে।নিধি ঘুমিয়ে পড়তেই, নির্জন প্রচুর খুশি হয়ে বেলকনিতে খাঁচায় আবদ্ধ থাকা পাখি দু’টো কে নিয়ে কিচেনে চলে যায়।”

“নির্জন একটি পাখি কে খাঁচা থেকে বের করে,টেবিলে রেখে এক হাতে শক্ত করে সেটার ডানা চেপে ধরে।আগে থেকে যাচাই করে নেওয়া ছু**রিটা যেন তার হাতের সাথে মিশে যায়, ঠান্ডা, ধা**রালো, আর নির্মম।
নির্জন প্রথমে পাখিটার দিকে ঘাড় কাত করে তাকিয়ে, ঠোঁটের কোণে অদ্ভুত এক বি**কৃত হাসি ফুটিয়ে তোলে। পাখিটার শরীর ছটফট করতে থাকে, কিন্তুু নির্জনের শক্ত হাত থেকে পালানোর কোনো উপায় নেই।”

“প্রথম কো**পটা সে সরাসরি পাখির গলায় বসায়, কিন্তুু একবারে পুরোপুরি কা**টে না। ছু**রিটা গলার মাঝখানে আটকে যায়, এবং সেই মুহূর্তে পাখিটার আ**র্তনাদ চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। পাখিটা জোরে ফিসফিস করে চিৎ**কার করে ওঠে, র**ক্তের ধারা ফি**নকি দিয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে, নির্জনের মুখেও লাগে সেই উষ্ণ র**ক্তের স্পর্শ। তবে সে থামে না—ছু**রিটাকে আরও জোরে চেপে গলা পুরোপুরি কা**টতে শুরু করে। পাখিটার ছোট শরীর ঝাঁকুনি দেয়, কিন্তুু নির্জন তখনও ঠান্ডা, স্থির। গলা কা**টার পরেও পাখিটার শরীর ছটফট করে, যেন মৃ**ত্যু তাকে ছিনিয়ে নিচ্ছে, কিন্তুু নির্জনের সেই পৈ**শা*চিক শান্তি ভা**ঙে না।”

“এরপর সে পাখিটার ডানা দু’টোকে ধরে হ্যাঁচকা টানে আলাদা করতে শুরু করে। প্রথমে একটা ডানার হাড় ভে**ঙে যায়, পাখিটার হাড়ের ফাঁটল শোনা যায়। তারপর মাংস ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে হাড়ের শ্বেত রঙা কাঠামো। আরেকটা ডানাও একইভাবে ছিঁড়ে ফেলে নির্জন, প্রতিটা টানে যেন সে আরও র**ক্তা*ক্ত করতে চায় পাখিটার দেহ। মেঝেতে পড়ে থাকা র**ক্তের ছিঁটা ধীরে ধীরে ঘন হয়ে মিশে যায়, গা শিরশির করা ধাতব গন্ধে কিচেন ভরে ওঠে।”

“এরপর সে পাখিটার পা দুটো ধরে ছু**রি চালাতে শুরু করে, কিন্তুু এবার সে কা**টে না, বরং ছু**রিটা নিয়ে ত্বকের নিচে আলতো করে কে**টে র**ক্ত বের করে দেয়। পাখিটার শরীর তখনও ঝাঁকুনি দিয়ে উঠছে, যেন জীবনের শেষ মুহূর্তেও বাঁচার চেষ্টা করছে। নির্জন এই য**ন্ত্রণা উপভোগ করতে করতে পাখিটার পা দু’টো আস্তে আস্তে মাংস থেকে আলাদা করে। ছু**রি দিয়ে টু*করো টু*করো করে পা কে**টে ফেলে, মাংস,হাড় সব একত্র হয়ে যায়।”

“অতঃপর দ্বিতীয় পাখি টাকে খাঁচা থেকে বের করে প্রথমে সেটার ডানা দু’টোকে এক টানে ছিঁড়ে ফেলে,তারপর পা দু’টোকে মাঝখান থেকে টান মে**রে আলাদা করে ফেলে।অতঃপর ধা**রালো ছু**রি দিয়ে গলাটা ভাগ করে ফেলে।মৃ**ত্যু য**ন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে পাখিটি অনেক আগেই প্রাণ হারায়।নিজের কার্য নিখুঁত ভাবে সম্পন্ন করে পৈ**শা*চিক হাসি দিয়ে নির্জন হিং**স্র স্বরে কবিতা আওড়ালো,

“র**ক্তমাখা অভিশাপ”

যে পাখি দু’টো, প্রাণের চেয়ে প্রিয় ছিলো,
আজ তোমরা আমার হাতে, র**ক্তে চুবানো;
প্রেমের নামে ম**রেছে, আজকের এই রাত,
ম**রেছো তোমরা, আর র**ক্তের চিহ্ন রেখে গেছো।

তোমাদের শিহরণ, আমার ঘুম ভা**ঙালো,
প্রিয়তমার জন্য, আজ তোমরা জীবন বিলালে;
হিং**স্রতা আমার, তোমাদের কপালে,
মৃ**ত্যু তোমাদের, অভিশাপের য**ন্ত্রণা পায়।

অভিশাপ এখন, তোমাদের ভোরের আলো,
আমি কা**টছি তোমাদের, হিং*সার কলঙ্কে;
প্রেমের নীলে, আজ আমি নিক্ষেপ করেছি,
তোমাদের র**ক্তে, ভরিয়ে দিয়েছি হিং*সা।

অন্ধকারে, র**ক্তের খেলা কেমন নিষ্ঠুর,
মৃ**ত্যু হয়ে, তোমরা একাকার;
তোমাদের মৃ**ত্যুর স্বরে, শুনি হিং*সার গান,
এটাই নির্জনের, চিরন্তন প্রতিশোধের মান। ~মেহের~

#চলবে..

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ পর্ব-৩৩+৩৪

0

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৩৩
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য]

“ডার্ক কুইন,আমার সামনে এইমুহূর্তে লজ্জা পাওয়া তোমার শোভা পায় না।”

“I am your husband,so from now on,don’t even think about feeling shy.”

“নির্জনের বলা ইংরেজি বাক্যটি নিধি এক কান দিয়ে শুনে, আরেক কান দিয়ে বের করে দিলো।কারণ, সে এখন অন্যদিকে ফিরে লজ্জা নিবারণ করার চেষ্টা করছে।নির্জন যতই লজ্জা পেতে না বলুক,সেতো নারী।আর লজ্জাই তো নারীর একমাত্র ভূষণ।”

“রিমলেস চশমার আড়ালে থাকা এক জোড়া চোখ যেন শকুনের ন্যায় দৃষ্টি ফেলে রেখেছে,লাজুকলতায় লেপ্টে থাকা রমনীর দিকে।”

“নির্জন আনমনে নিজেকেই প্রশ্ন করলো,
‘কেনো সে লজ্জা পাবে?এখন তো আমরা স্বামী-স্ত্রী।এতদিন তার এইসব ড্রামা সহ্য করেছি।কিন্তুু এখন?ইম্পসিবল।’
ভেবেই বাঁকা হাসি দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো।তবে এইবার ধীর গতিতে নয়,খুব দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে নিজ বাসস্থানের সামনে এসে থামল।”

“গাড়ি থেকে নেমে নিধির পাশের গেট খুলে দিলো।অতঃপর মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,

‘কোলে করে নিবো?নাকি আমার হাতে হাত রেখে হেঁটে যাবে?”

“নিধি মনে মনে ভাবলো,
‘কিছুক্ষণ আগে যেভাবে চুমু দিয়েছে,এখন আবার কোলে?অসম্ভব,এর থেকে হাত ধরে যাবো,সেটাই ভালো হবে।পরে না হয় ফ্রী হয়ে গেলে অগণিত বার কোলে চড়তে পারবো।’
ভেবে আনমনে হাসলো নিধি।’

‘প্রেয়সীর সেই মিষ্টি হাসি নজর এড়ালো না নির্জনের।’

“নিধি নিচুস্বরে বললো,
‘হাত ধরে যাবো।’

“বাঁকা হাসলো নির্জন।সে যেনো এই উত্তর টি জানতো।ভণিতা না করে নিধির হাত ধরলো।বোরকায় আবৃত ভারী ল্যাহেঙ্গাটি এক হাত দিয়ে উঁচিয়ে গাড়ি থেকে নেমে এলো নিধি।তারপর নির্জনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে তার বাহু শক্ত করে ধরলো।আচানক প্রিয়তমার এহেন স্পর্শে ঘুমন্ত অনুভূতি গুলো যেন ধীরে ধীরে জাগ্রত হতে শুরু করলো।এক অমীয় ভালো লাগায় রিনরিনিয়ে উঠলো নির্জনের সর্বাঙ্গ।যার প্রতিটি বাঁকে সুমধুর শিহরণের ছাপ স্পষ্ট।
প্রিয়তমার হাত আরও শক্ত করে বাহুর সাথে মিশিয়ে সদর দরজায় পা রাখলো।
মুচকি হেসে ভাবলো,
‘আজ থেকে এখানেই তোমাকে থাকতে হবে নিরুপমা;আমার ডার্ক কুইন।এই চার দেয়ালে তোমার এবং আমার সুখের বসতি গড়বো।আমাকে খুশি রাখলে, আমার সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে তোমায় পূর্ণ করার চেষ্টা করবো।আর যদি কখনো আমার ভালোবাসাকে বিন্দুমাত্র অবহেলা করো,তবে তার পরিণতি হবে অতি ভ**য়ানক।”

“দরজায় লাগিয়ে রাখা তালা খুলে প্রবেশ করলো একজোড়া মানব-মানবী।এই ছন্নছাড়া জীবনে নতুন করে সুখের সন্ধান পেলো নির্জন।যেটা ছিলো তার কাছে অকল্পনীয়।সে সর্বোচ্চ দিয়ে ধরে রাখবে এই রমনীকে,নিজের কাছে নিজে দৃঢ় সংকল্প করলো সে।”

“বাড়িটিতে ঢুকেই অদ্ভুত অনুভূতি হলো নিধির।আলোকিত হল রুমটি কেমন খাঁ খাঁ করছে।মনে হয় কোনো জনমানবহীন আস্তানায় ঢুকে পড়েছে নিধি।নির্জনের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
‘আপনার বাসার মেইড এবং সেবিকা কোথায়?’

“নির্জন নিধির বাহু আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘মেইড রান্না করে দুপুরে চলে যায়।আর সেবিকা মায়ের রুমে থাকে।আচ্ছা, তুমি খুব টায়ার্ড হয়ে গেছো জানপাখি।চলো, আগে ফ্রেশ হয়ে নিবে।তারপর সারারাত না হয় আমরা একে-অপরের মনের কথা আদান-প্রদান করবো।’
বলেই নিধির হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকলো।তৎক্ষনাৎ বাঁধা দিলো নিধি।মুচকি হেসে বললো,
‘সেকি!শাশুড়ি মায়ের সাথে দেখা করবেন না?সেতো এখানে আসতে পারবে না।চলুন, দু’জনে গিয়ে তার সাথে দেখা করে আসি।নতুন জীবন টা মায়ের দোয়া নিয়ে শুরু করতে চাই।সে হয়তো কথা বলতে পারেনা।মনে মনে দোয়া তো করতেই পারবে।”

“নিধির এহেন কথায় ন্যানো সেকেন্ডের মধ্যে মেজাজ বিগড়ে গেলো নির্জনের।পরক্ষণেই ‘হৃদয়’ ভেতর থেকে বলে উঠলো,
‘উহুম,এখন নয়।এখনও পুরোপুরি মিশে যাওয়া বাকি আছে।কন্ট্রোল ইউরসেল্ফ।’

” নির্জন তার চোখজোড়া একবার বন্ধ করে, ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলো নিজের রাগকে।কিছুটা সফল হয়ে,নিধির দিকে তাকিয়ে মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে শীতল স্বরে বললো,

‘মা রাত ৮টার পর ঘুমিয়ে থাকে।তার মেডিসিনের মধ্যে ঘুমের ঔষুধ অন্যতম।আর একবার তার ঘুম ভে**ঙে গেলে, সারা রাতেও ঘুমাতে পারে না।তাই আজ তার সাথে দেখা বা কথা বলার দরকার নেই।আগামীকাল দেখা করবে।এখন চলো।’

“নিধি নাছোড়বান্দা।সে আবারও বলে উঠলো,
‘ঠিকাছে,তার সাথে কথা বলবো না।দূর থেকে তো দেখতেই পারি,তাই না?’

“নির্জন ভ্রুকুটি করে কিছু একটা ভেবে বললো,
‘ওকে,অ্যাজ ইউর উইশ।’

“সায়রা বেগমের রুমের দরজায় কড়া নাড়তেই,বুকের মধ্যে ধক করে উঠলো সেবিকার।সে জানে,আজ নির্জনের বিয়ে।কিন্তুু এতো রাতে নির্জন কখনো এই রুমে আসে না।পরক্ষণেই তার ইন্দ্রীয়গুলো সজাগ হলো।ভাবলো,

‘হয়তো নতুন বউকে দেখা করাতে নিয়ে এসেছে।’

“হ্যা,তার ভাবনাই সঠিক হলো।বাইরে থেকে নিধির কন্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে।সেবিকার মুখে কিঞ্চিৎ হাসির রেখা ফুটে উঠলো।মনে মনে ভাবলো,
‘যাক,এতদিনে এই বাড়িতে একজন কথা বলার সঙ্গী পেয়েছি।’
ভেবে তড়িৎ গতিতে বিছানা থেকে নেমে ধীর শব্দে দরজা খুলে নিধি কে দেখে খুশির ঝলক ফুটিয়ে বললো,
‘মাশাআল্লাহ।কতো মায়াবী তুমি।মানতে হবে,স্যারের পছন্দ আছে।’

“হায়!সেবিকা হয়তো জানে না,কি কথা বলেছে সে।’

“নির্জন কপাল কুঁচকে বললো,
‘আমি আমার স্ত্রীকে মায়ের সাথে দেখা করানোর জন্য এসেছি।’

“নির্জনের গম্ভীর স্বরে কথা শুনে,মুখমণ্ডল মলিন হয়ে গেলো সেবিকার।সে রুমের ভেতরে গিয়ে এক কোণে দাঁড়িয়ে রইলো।এই মানুষটা কে সে অকারণেই ভয় পায়।”

“নির্জন নিধির হাত ধরে তার মায়ের বিছানার কাছে নিয়ে গিয়ে মৃদুস্বরে বললো,
‘মা কে দেখো।তবে এতটা গভীর ভাবে নয়।’

“নির্জনের এহেন কথায় কর্নপাত করলো না নিধি।সে শয্যাশায়ী অর্ধবয়স্ক রমনীকে দেখলো।চুলগুলোর মধ্যে বেশির ভাগ পাক ধরেছে।শুষ্ক ঠোঁট জোড়া।তবে চেহারায় এক মায়াবী ছাপ।কিন্তুু ঘুমিয়ে থাকার কারণে পুরোপুরি সৌন্দর্য যেন ফুটে উঠছে না।”

“নিধির এই মুহূর্তে তার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে।কিন্তুু কিভাবে কথা বলবে সে?শয্যাশায়ী রমনী যে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।”
মনে মনে ভাবলো,
‘আগামীকাল সকালে অনেক কথা বলবে তার শাশুড়ির সাথে।শাশুড়ি মা চোখের ইশারায় কথা বলবে।আর সে মুখ দিয়ে বকবক করবে।’
ভেবে নিঃশব্দে মুচকি হাসলো নিধি।সেই মন ভুলানো হাসির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো এক হিং**স্র মানব।যার মস্তিষ্কে এই মুহূর্তে দুষ্টু পোকাগুলো কিলবিল করছে।তারা বারবার করে বলছে,

‘এভাবে চুপ করে থেকো না।নইলে, খুব তাড়াতাড়ি তাকে হারিয়ে ফেলবে।’

“বি**ষাক্ত পোকা গুলোর সাথে দিব্যশক্তি দিয়ে কথা বললো নির্জন।
মনে মনে বললো,
‘She is only mine.’

———-
“রাত ১টা বেজে ৩মিনিট।
ফুলে সজ্জিত বিছানায় খয়েরী রঙা শাড়ি পড়ে,মাথায় ঘোমটা দিয়ে গুটিশুটি হয়ে বসে আছে তোহা।শরীরে তার অদ্ভুত কাঁপুনি,মুখে তার লাজুকতার ছাপ বিদ্যমান।গাড়ি থেকে নেমে মাহির সবার সামনে তাকে হাত ধরে নিয়ে এলেও,ফুলসজ্জিত রুমের সামনে এসে তাকে পাঁজা কোলে নিয়ে প্রবেশ করেছে।ঐ সময়টাতে মাহিরের কাজিনরা হৈ-হুল্লোড় করে উঠেছে।সবার মুখে একটাই কথা,
‘আমাদের ডাক্তার ভাই যে এতটা রোমান্টিক আগে তো জানতাম না।বাহ!বাহ!”

“মাহির মুচকি হেসে রসিকতা করে বলেছে,

”এখন তো সবে শুরু।ধীরে ধীরে আরও ভালো ভাবে জানতে পারবে।যদিও তোমাদের সামনে কিছুটা হাইড করে রাখবো, হিহিহি।”

“মাহিরের এহেন কথায় সবার থেকে দ্বিগুণ লজ্জায় মিইয়ে গেলো তোহা।মনে মনে ভাবলো,
‘হায় আল্লাহ!শেষ পর্যন্ত কাজিনদের সামনেও আমায় লজ্জায় ফেললো?এ কার চক্করে পড়লাম আমি!”

“বাসর ঘরে ঢোকার সময় কাজিনরা টাকা নেওয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়লো।কিন্তুু মাহিরও কম নয়,সে কিছুতেই টাকা দিবে না।অকপটে বলে দিলো,

‘ওগুলো আগের যুগে ছিলো,এখন ডিজিটাল যুগে ডিজিটাল বাসর হবে।এইসব ভ**ন্ডামি ছেড়ে এখান থেকে তোমরা চলে যাও।’

“মাহিরের এহেন কথায় ভড়কে গেলো সবাই।একজন মেয়ে কাজিন কটমটিয়ে বললো,

‘ওল্ড অর ডিজিটাল’ কাহিনী তো একই।অতশত বুঝি না,আমাদের টাকা চাই।নইলে ভাবির সাথে আজ আমি ঘুমাবো।’

“মেয়েটির সাথে তাল মিলিয়ে সবাই একই কথা বললো।
বেচারা মাহির টাকার জন্য কিছুতেই এই মধুচন্দ্রিমা হাত ছাড়া করবে না।তাছাড়া অনেক রাত হয়ে গেছে।যত সময় বাড়বে তত লস প্রজেক্ট।অগত্যা আর কাজিনদের সাথে ঝামেলা না করে মাহিরের পকেটে যা ছিলো তাই দিয়ে দিলো।যদিও এতে সবার মন ভরেনি।তবুও যা দিয়েছে,এটা দিয়ে তারা ড্রিংকু পার্টি করবে।’
বলেই হৈ হৈ করে স্থান ত্যাগ করলো।ওরা যেতেই হাফ ছেড়ে বাঁচল মাহির।ঐ মুহুর্তে তোহার লাজুক চেহারাটা দেখার মতো ছিলো।’
কথাগুলো ভেবে মুচকি হাসলো তোহা।কিছুক্ষণ আগে ফ্রেশ হয়েছে সে।মাহির বলেছে,সেও ফ্রেশ হবে,তারপর নামাজ পড়ে নতুন জীবন শুরু করবে।”

“তোহার ভাবনার জগতে কড়া নাড়লো ওর হাতে মাহিরের আলতো স্পর্শ।পুরুষালি শক্ত হাতের আলতো স্পর্শ পেতেই,অচেনা অনুভূতি ঘিরে ধরলো তোহা কে।মাহিরের স্পর্শের সূচনায় কিঞ্চিৎ কম্পন হলো তোহার শরীরে।নিচু স্বরে কিছু বলতে যাবে,তখনই মাহির ঘোমটা সরিয়ে তোহার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে বললো,

‘এতো নিয়মকানুন মেনে ঘোমটা দেওয়া লাগবে না।আমি তোমায় আগেও অনেকবার দেখেছি।তোমার আপাদমস্তক আমার মুখস্থ হয়ে গেছে।আজ আরও ভালো করে মুখস্থ করবো স্বপ্নচারিনী।’
বলেই ঠোঁট টিপে হাসলো মাহির।”

“মাহিরের এহেন কথায় হকচকিয়ে গেলো তোহা।কোথায় ভেবেছিলো,ওয়াশরুম থেকে এসে নামাজ পড়ার কথা বলবে।কিন্তুু সেটা না বলে,প্রথম দর্শনেই ঠোঁট কা**টা কথা!’
ভেবে হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারলো না তোহা।”

“হঠাৎ মাহির তোহার হাতে আলতো করে চুমু দিয়ে বললো,
‘একটু পরে অনেক কিছু ভাবার সময় পাবে,আমিও অনেক কিছু করার সময় পাবো।তার আগে নামাজ টা পড়ে নেই।’
বলেই তোহার হাত ধরে মুচকি হাসলো।”

“বেচারি তোহা ভ্যাবলার মতো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মাথা ঝাঁকিয়ে মাহিরের সাথে নামাজ পড়লো।নামাজ শেষে মাহির মোনাজাতে আল্লাহর নিকট দু’জনের কল্যাণকর জীবনের জন্য অনেক বাক্যে প্রার্থনা করলো।
সবকিছু শেষ করে মাহির তোহার হাত ধরে বেলকনিতে নিয়ে গেলো।”

“আজ আকাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন।মেঘের আড়ালে কয়েকটা তারা দেখা যাচ্ছে।আবার মেঘগুলো তারাগুলো কে কালো ধোঁয়ায় ঢেকে দিচ্ছে।”

“খোলা বেলকনির গ্রীলে ডান হাতের কনুই ভর দিয়ে, চিবুকে হাত রেখে মাহির শীতল স্বরে বললো,
‘জানো স্বপ্নচারিনী,প্রথমবার তোমায় কোথায় দেখেছিলাম?”

“তোহা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘কোথায়?’

“হাহাহা..চলনবিলের নদীতে।তুৃমি সাঁতার কাঁটতে পারছিলে না।আমি ওইদিক দিয়ে আরেকটি নৌকায় যাচ্ছিলাম।তখনই তোমাকে এভাবে দেখতে পেয়ে নৌকা থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলাম।তারপর দেখি সেখানে পা রাখার মতো জায়গা থাকা শর্তেও তুমি চি**ৎকার করছিলে, হাহাহা..।বিশ্বাস করো, ওই ফানি ব্যাপারটা এখনও ভুলতে পারি না।নিয়নের হালকা আলোয় তোমার চেহারা টা পুরোপুরি দেখতে পারিনি।তবে সেদিনও আমি তোমায় স্পর্শ করেছিলাম।ভেবেছিলাম, হয়তো আর কোনোদিন আমাদের দেখা হবে না।কিন্তুু ভাগ্য আমাদের আবার এক করে দিয়েছে।আমি আবার তোমার দেখা পেলাম,আমার মায়ের মাধ্যমে।তোমাকে দেখতে গিয়ে আমার কিছুটা সন্দেহ হয়েছিলো।যখন তোমায় জিজ্ঞেস করলাম,তখন তোমার উত্তর পেয়ে ভীষণ খুশি হয়েছিলাম।ভেবেছিলাম, আজকের রাতটি জীবনে এলে তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো।আমি তোমার সেই স্বপ্ন পুরুষ.. স্বপ্নচারিনী।সারপ্রাইজ টা কেমন হলো?”

“মাহিরের কথার মাঝে এতক্ষণ গভীর ভাবে ডুবেছিলো তোহা।হা.. করে তাকিয়ে আছে মাহিরের দিকে।ওর ভাবনাগুলো যেনো শূন্যে ভাসছে।বারবার একটা কথা মনে দামামার মতো বেজে চলছে,
‘কিভাবে সম্ভব?’

“প্রিয় নারীটির ভাবনাগুলো কিছুটা আঁচ করে মুচকি হাসলো মাহির।তোহার মুখের সামনে তর্জনী আর বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে চুটকি বাজিয়ে বললো,
‘কোথায় হারিয়ে গেলে তোহা রানী?চলনবিলের সেই নদীতে?হাহাহা।’

“মাহিরের প্রাণোচ্ছল হাসিতে ধ্যান ভা**ঙলো তোহার।মুখে হাসির ঝলক ফুটিয়ে বললো,
‘ভীষণ খুশি হয়েছি।এটা সত্যি সারপ্রাইজ ছিলো।আমিতো সেদিনের কথা ভুলে গিয়েছিলাম।সেই অচেনা মানুষটি আপনি ছিলেন,আর আজ আমি আপনার স্ত্রী?ভাবতেই যেন গা ছমছম করছে।”

“তোহার কথা শুনে দুষ্টু হেসে মাহির হঠাৎ করে তোহা কে কোলে তুলে নিয়ে, কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,

‘একটু পর আরও ছমছম করবে স্বপ্নচারিনী।সবে তো শুরু।’
বলেই রুমে প্রবেশ করলো।এদিকে তোহা লজ্জায় সাতরঙা। মাহির তোহার ঠোঁটে আলতো করে চুমু দিলো,অতঃপর মৃদুস্বরে বললো,

“চুম্বনের রেশ”

চুম্বনের ছোঁয়ায় মেলে,
অন্তরঙ্গ সুরের অনুভূতি,
যেন প্রতিটি স্পর্শে উন্মোচিত হয়,
এক নতুন প্রেমের বিশালতা।

তোমার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলে,
মধুরতার লহর বয়ে যায়,
যেন প্রতিটি চুম্বন দিয়ে,
রচিত হয় এক নতুন সুরের কাব্য।

প্রেমের এই অমৃত সঙ্গমে,
আমরা হারিয়ে যাই একে অপরের মধ্যে,
চুম্বনের সেই জাদুকরী স্পর্শে,
তোমার ভালোবাসার উজ্জ্বল দ্যুতিতে।”

~মেহের~

“মাহির পুরো ঘরটাকে স্বপ্নের মতো সাজিয়ে তুলেছে তোহার জন্য। সারা ঘর জুড়ে সাদা রজনীগন্ধার মালাগুলো এমনভাবে টাঙানো, যেন প্রতিটি কোণ থেকে সুবাস ভেসে আসছে। সিলিং থেকে ঝুলছে সূক্ষ্ম কৃত্রিম ফুলের তোড়া, যা ঘরের মৃদু আলোয় রঙিন ছটায় ঝিলমিল করছে। বিছানার চারপাশে সিল্কের পাতলা পর্দা নেমে এসে সৃষ্টি করেছে এক স্বর্গীয় আভা, যার উপরে রজনীগন্ধা আর লাল গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে আছে ভালোবাসার নীরব সাক্ষী হয়ে। ছোট্ট টেবিলের উপর কয়েকটি সুগন্ধি মোমবাতি জ্বলছে, তাদের মৃদু আলো আর ঘ্রাণে ঘরের পরিবেশকে আরো মোহনীয় করে তুলেছে।”

“মাহির জানে, এই সাজসজ্জা তোহার মনে এক স্বপ্নিল আবেশ এনে দেবে, রজনীগন্ধার সুবাসে মিশে যাবে তাদের ভালবাসার মিষ্টি সুর।”

“কিছুক্ষণ আগে মাহিরের ঠোঁটের মৃদু স্পর্শ এবং ঠোঁট কা**টা কবিতা শুনে, লজ্জায় চোখ বন্ধ করে রেখেছে তোহা।প্রিয়জনের প্রথম স্পর্শ,প্রথম কাছাকাছি এসে কথপোকথন সবকিছুই যেন এক অন্যরকম অনুভূতির জন্ম দেয়।তোহার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।”

“মাহির তোহা কে বিছানায় বসিয়ে ওর মাথা বুকের সাথে মিশিয়ে বললো,
‘সেদিন আমার ইংরেজি কবিতাটা অসম্পূর্ণ থেকে গিয়েছিলো।তুমি হয়তো ভুলে গেছো,কিন্তুু আমার সবকিছু মনে আছে।আমি এখন সেটার বাকি অংশটুকু আবৃত্তি করে শোনাবো,তারপর..

বলেই মাহির মুচকি হেসে আবৃত্তি করলো,

“Hug me
But don’t let go,,
I want you to stay
I want you to know

I need you with me
You make me feel bright,
So just hug me
Right through the night

It’s what I want
Maybe even a kiss,
You make me feel special
I can’t turn away.”

“মাহিরের মুখনিঃসৃত রোমান্টিক কবিতা শুনে, লজ্জায় তার বুকে আরও মিশে গেলো তোহা।”

“তোহা বুকের সাথে এতটা মিশে যাওয়ায় শেষ..মাহির শেষ…
অবাধ্য অনুভূতি গুলোকে হারিয়ে, প্রেয়সীর ঠোঁট জোড়া আবদ্ধ করে নিলো।উ**ন্মাদের ন্যায় ভরিয়ে দিতে থাকলো আদরে।সন্তর্পণে পোষ মানিয়ে রাখা অনুভূতি গুলো খাঁচা ছেড়ে যেনো উড়াল দিলো।নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না তোহা।অবশেষে সেও হার মানল সেই পা**গল করা স্পর্শে।দু’জন যেন দু’জনের হৃদস্পন্দন গভীরভাবে অনুভব করতে থাকল।অবশেষে সীমাহীন ভালোবাসার অমীয় সুধা পান করলো দু’জনে।ডুব দিলো প্রেম সায়রে,হারিয়ে গেলো এক অন্ধকারাচ্ছন্ন মোহে।”

—————
“এদিকে বিয়ে বাড়ি থেকে এসে দিগন্ত নাদিয়া কে রুমে ঢুকতে দেয় নি।বাসায় এসে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।বলেছে,
‘সে একটা চমলক্ক সারপ্রাইজ দিবে,অথচ নাদিয়া বেচারি ঘুমে টালমাটাল।কিছুক্ষণ দরজা ধা”ক্কা”ধা””ক্কি করে সাড়াশব্দ না পেয়ে,ড্রয়িং রুমে গিয়ে সোফায় কাত হয়ে ঘুমিয়ে গেছে নাদিয়া।”

“এদিকে পরিকল্পনা অনুযায়ী সব কিছু ঠিকঠাক করে পুরো রুমে সূক্ষ্মভাবে চোখ বুলালো দিগন্ত।
দিগন্ত আগেই পরিকল্পনা করেছিলো,তার বন্ধুর মতো সেও আজ বাসর করবে,তবে অন্যভাবে।তাই সে নাদিয়ার আড়ালে আগে থেকে সব জিনিস পত্র খাটের নিচে লুকিয়ে রেখেছিলো।অবশেষে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে।সে পুরো রুম সুন্দর করে সাজিয়েছে।
তবে দিগন্তের সাজানোর ধরণই আলাদা।ঘরের প্রতিটি কোণ রঙিন বেলুনে ভরপুর, যেখানে বেলুনগুলো নানা মজার আকারে বাঁধা। কিছু বেলুনে হাসির মুখ আঁকা, কিছুতে আবার কিউট কার্টুন চরিত্রের চেহারা। সিলিং থেকে ঝুলছে বেলুনের ঝালর, যা হাওয়ায় দুলছে। ফুলের জায়গায় দিগন্ত ব্যবহার করেছে কৃত্রিম ফুল, যেগুলো থেকে হঠাৎ হঠাৎ কনফেটি বের হচ্ছে, সব দেখে মনে হয় যেন কোনো কার্টুনি পার্টির মধ্যে ঢুকে পড়েছে। বিছানার চারপাশে জড়িয়ে রাখা আছে রঙিন স্ট্রিং লাইট, যা ঘরের মধ্যে এক হাসির আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। বালিশের উপর রাখা ছোট্ট একটি টেডি বিয়ার, তার হাতে একটি লাল হৃদয়, যেটার গায়ে লেখা,

‘তোমার হাসিই আমার সুখ।’

“পুরো রুম ভালো ভাবে দেখে মুচকি হেসে দিগন্ত দরজা খুলে ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখলো নাদিয়া ঘুমিয়ে পড়েছে।কিন্তুু এই আরামের ঘুম সে কিছুতেই হতে দিবেনা।খুব কষ্ট করেছে সে।তার কষ্টের উশুল তো করেই ছাড়বে।দ্রুত গতিতে নাদিয়ার কাছে গিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে কোলে তুলে নিয়ে, নিজের রুমের দিকে নিয়ে গেলো।
আকস্মিক ঘটনায় ঘুম ভে**ঙে গেলো নাদিয়ার।নিজেকে দিগন্তের কোলে দেখে ঘুম ঘুম স্বরে বললো,

‘একি?হচ্ছে টা কি?রাত-বিরেতে কি শুরু করেছো?নামাও আমায়।’

“দিগন্ত নাদিয়ার গালে চুমু দিয়ে বললো,
‘এত পরিশ্রম কিছুতেই বৃথা যেতে দেবো না।তাড়াতাড়ি চোখ খোলো।’
বলতে বলতে রুমে নিয়ে নাদিয়া কে কোল থেকে নামালো।”

“পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে দিগন্তের এই ফানি সাজসজ্জা দেখে, বিস্ময়ে মাথা ঘোরার উপক্রম হলো নাদিয়ার।বিস্ময়ের স্বরে বললো,
‘এটা কি করেছো তুমি?
আমাদের রুম টাকে এভাবে কার্টুনের মতো সাজিয়েছো কেনো?”

“নাদিয়ার এহেন কথায় তেঁতে উঠলো দিগন্ত।ওর হাত ধরে বললো,
‘কোথায় একটু প্রশংসা করবে,সেটা না করে অদ্ভুত প্রশ্ন করছো।এই জন্যই তো তোমাকে নিরামিষভোজী বলি।আচ্ছা শোনো,কিছুদিন পর এমনিতেও আমাদের ঘরে কার্টুন বেবি আসবে।তাই আগেই একটু প্রস্তুুতি নিলাম।কেমন হয়েছে হানি?”

‘নাদিয়া পুরো রুমে সূক্ষ্মভাবে চোখ বুলিয়ে ফিক করে হেসে দিয়ে বললো,
‘দারুণ হয়েছে,একদম ইউনিক, হাহাহা।’

“দিগন্ত নাদিয়ার হাত আরেকটু জোরে চেপে ধরে বললো,
‘হয়েছে, হাসাহাসি পরে হবে।অনেক রাত হয়ে গেছে,এখন তোমাকে কিছু কথা বলবো,মনোযোগ দিয়ে শুনবে।”

‘হুম বলো।’

“দিগন্ত নাদিয়ার দুই কাঁধে হাত রেখে মিষ্টি স্বরে বললো,

‘চলো, কল্পনা করি, আমরা দু’জনে মিলে একান্তে কোথাও বসে আছি—একটি সুন্দর চাঁদনী রাত, চারপাশে মৃদু বাতাস বইছে, আর দূরে নদীর কলকল ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। আমরা হাত ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি, যেখানে অসংখ্য তারা আমাদের জন্য ঝিলমিল করছে। কিছু সুমিষ্ট কথা আর ভালোবাসায় ভরা হাসির আদান-প্রদান চলছে… কেমন লাগছে?”

” নাদিয়া হা করে তাকিয়ে দিগন্তের কপালে হাত দিয়ে বললো,
‘হ্যা ভালো,কিন্তুু তোমার তো জ্বর আসেনি,হঠাৎ এগুলো বলছো কেনো?’

‘তেঁতে উঠলো দিগন্ত।কটমটিয়ে বললো,
‘মানে?তোমার কি আমার মুখে রোমান্টিক কথা শুনে অবাক লাগছে?”

‘না, ঠিক তা নয়।কিন্তুু তুমি তো সবসময় অন্য কথা বলো।’

‘কি কথা বলি?’

‘ওই যে..অন্য কথা।আচ্ছা, তুমি হঠাৎ এতো সুন্দর করে রুম সাজালে,তো এখন কি করবে?’

‘নতুন করে বাসর করবো।’

‘অ্যা?নতুন করে বাসর মানে?আগে কি করেছো?’

“দিগন্তের কা**টকা**ট জবাব,
‘আগের টা মনের মতো হয় নি।আজ মনের মতো হবে।তাছাড়া ইদানীং দেখছি তুমি আমাকে পাত্তাই দাও না।”

“দিগন্তের এহেন কথায় বিস্ময়ের শেষ সীমানায় পৌঁছালো নাদিয়া।বড় বড় করে তাকিয়ে বললো,

‘তুমি কি আমার সাথে মজা করছো?আমি তোমাকে পাত্তা দেই না?নাকি তুৃমি আমার কথা কে পাত্তা দাও না?ব্যাপারটা কেমন ফানি হয়ে গেলো না?’

‘কি?আমার তোমাকে জোকার মনে হয়?ওকে দেখাচ্ছি তোমাকে জোকারের জোকারগিরি।’
বলেই নাদিয়ার হাত ধরে টেনে বিছানায় বসিয়ে ওর শরীরে সুড়সুড়ি দিতে থাকল।’

” দিগন্তের আকস্মিক এহেন কান্ডে নাদিয়া হাসতে হাসতে শেষ।এক পর্যায়ে বললো,
‘প্লিজ জানু,আমায় ছাড়ো।আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে।’

“দিগন্তের সুড়সুড়ি চলমান।দুষ্টু হেসে বললো,
‘আগে বলো,’আমি তোমার রোমান্টিক স্বামী,আর তুমি আমার নিরামিষ হানি।আমরা এখন কিউট কার্টুন আনার প্রস্তুুতি নিবো।’বললে ছাড়বো।”

“নাদিয়া দিশেহারা হয়ে দিগন্তের বলা কথা গুলো গড়গড় করে বলে দিলো।অবশেষে দিগন্ত নাদিয়াকে ছাড়তেই হাফ ছেড়ে বাঁচল নাদিয়া।তবে সেটা কয়েক সেকেন্ডের জন্য।পরক্ষণেই নাদিয়ার অধরে অধর মিশিয়ে দিলো দিগন্ত।ব্যাস,এতো কষ্ট তো উশুল করতেই হবে।
বেচারি নাদিয়া বরাবরের মতো এবারেও দিগন্তের গভীর স্পর্শে হার মানলো।
নাদিয়া ধীরে ধীরে দিগন্তের শরীরে আলিঙ্গন করে, তার উষ্ণতা আর নিরাপত্তা খুঁজে পায়। দিগন্ত তার চুলে আলতো করে হাত বুলিয়ে দেয়, তার গালের ওপর আলতো চুম্বন করে। তারা একে অপরের বাহুডোরে হারিয়ে যায়, সময় যেন থেমে থাকে তাদের জন্য।”

“মিলনের এই মুহূর্তে তাদের মধ্যে কোন শব্দ নেই, শুধু হৃদয়ের গভীর থেকে বেরিয়ে আসা নিঃশ্বাস আর মৃদু গুঞ্জন। এই রাত্রি, এই ঘর, এই মুহূর্ত—সব কিছু যেন তাদের প্রেমের সাক্ষী হয়ে থাকে, এক চিরন্তন প্রেমের কাহিনী রচনা করে।”

————
“প্রায় ১ঘন্টা যাবৎ নিধির সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে নির্জন।ঘড়িতে বাজে রাত ২টা ৬মিনিট।”

“নির্জন নিধির জন্য একটি অত্যন্ত আভিজাত্যমণ্ডিত রাতের আয়োজন করেছে। পুরো বাসরটি সাজানো হয়েছে কালো রঙের কৃত্রিম গোলাপ দিয়ে, যা একটি গাঢ় ও রহস্যময় পরিবেশ তৈরি করেছে। গোলাপগুলোর উপরে নরম সোনালী আলো ফেলে থাকা হালকা মোমবাতির আলো চারপাশে এক ধরণের স্নিগ্ধতা এনে দিয়েছে।”

“বাসরের কেন্দ্রস্থলে কালো গোলাপের পাপড়ি দিয়ে বিছানা সাজানো, যা সিল্কের কালো চাদরে মোড়া। বিছানার চারপাশে সুগন্ধি ফুল ও পাতার অঙ্গসজ্জা দেওয়া হয়েছে। নির্জন নিজ হাতে নিধির মাথায় সোনালী ক্রাউন পরিয়ে দিয়েছে, যা স্টোন ও রূপার এক অনবদ্য সম্মিলন। ক্রাউনের নকশা আভিজাত্যপূর্ণ, যে তা নিধির সৌন্দর্যকে আরো প্রাত্যহিক ও রাজকীয় করে তুলেছে।”

“এই এক ঘন্টায় নিধি অনর্গল কথা বললেও,রিমলেস চশমার আড়ালে নির্জন একমনে তাকিয়ে থেকেছে নিধির দিকে।বারংবার বলে ফেলেছে,
‘কালো পোশাক,সোনালী ক্রাউন পরিহিত তোমাকে এখন আঁধার রাতের রানীর মতো লাগছে।তুমি আমার ডার্ক কুইন।”

“নির্জনের প্রশংসায় বারকয়েক মুচকি হেসেছে নিধি।এ সুখ যেন তার স্বপ্নের চেয়েও সুন্দর।আহ!কত সুখ,কত শান্তি।নিজের ওপর নিজেরই কিঞ্চিৎ ঈর্ষা হলো নিধির।”

‘নির্জনের এই নিখুঁত আয়োজন তার প্রেমের গভীরতা এবং নিধির প্রতি তার শ্রদ্ধার নিদর্শন। এই মুহূর্তটি যেন একটি চিরকালীন প্রেমের প্রতীক, যেখানে কালো রঙের গোলাপ এবং সোনালী ক্রাউন এক অমোঘ রোমান্সের চিত্র তুলে ধরে।’

‘নিধিকে মনের দিক থেকে কিছুটা ফ্রী করে,মাইন্ড কন্ট্রোল করে এক পর্যারে নিধির সর্বাঙ্গে ছুঁয়ে দিতে থাকল নির্জন।’

“নির্জনের এহেন গভীর স্পর্শে ঈষৎ কেঁপে উঠলো নিধি।অতিরিক্ত লজ্জায় কোনোরকমে নিজেকে সংযত করে বললো,
‘আচ্ছা,আপনি সবকিছু কালো রঙের জিনিস দিয়ে সাজিয়েছেন কেনো?
আমার তো লাল গোলাপ পছন্দ।”

“নির্জনের গভীর অনুভূতিতে ব্যাঘাত ঘটালো নিধি।নিধির ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট স্পর্শ করে বললো,
‘কিন্তুু আমার তো কালো গোলাপ আর লাল র**ক্ত পছন্দ।’

” মানে?”

“হো হো করে হেসে উঠলো নির্জন।নিধির গালে ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়া দিয়ে বললো,
‘আমার লাল র**ক্তজবা পছন্দ।’

“নিধি স্বাভাবিক স্বরে বললো,
‘ওহ।’

“নির্জনের স্পর্শ আরও গভীর হতে থাকলো।এইবার নিধি তো লজ্জায় পুরোপুরি শেষ।
নিধি কে এভাবে লজ্জা পেতে দেখে, বিরক্ত হলো নির্জন।চশমা খুলে বালিশের একপাশে রেখে নিধিকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে হাস্কি স্বরে বললো,

“তুমি কি মৃদু কাঁপছ?
পৃথিবীও কি কিছুটা টলছে নাকি?
পোষ মানা নিঃশ্বাস গুলো?
খুব বেশি বেপরোয়া, অবাধ্য, চঞ্চল!
আর আধবোজা চোখের পাতারা?
তির তির করে কাঁপছে!
সে পাতার মর্মরধ্বনি আবার হৃদয়েও বাজছে!
তবে নিশ্চিত কেউ তোমার ঠোঁটের তৃষ্ণা মেটাতে ব্যস্ত
সে তোমায় লুট করে নিবে, সে তোমায় শেষ করে দিবে…”

“নির্জনের কবিতা শুনে নিধির শরীরের কম্পন যেনো দ্বিগুণ হারে বেড়ে গেলো।
নির্জন এইবার নিজের রাগ কে তীব্র হতে দিলো না।বিশাল ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে বললো,

‘ওকে, ওকে তুমি আরেকটু স্বাভাবিক হও,তারপর..আচ্ছা আজ তো আমাদের বাসর রাত।আমি তো তোমাকে বেশ কয়েকবার গান শুনিয়েছি।এইবার তুমি শোনাও।হুম,শুরু করো।এখন এটা বলো না যে,গান গাইতেও লজ্জা লাগছে।’

“নির্জনের এহেন কথায় নিধি কিছুটা স্বাভাবিক হলো।ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলে মুচকি হেসে, নির্জনের বুকে মাথা রেখে গেয়ে উঠলো,

🎶বাতাসে গুনগুন, এসেছে ফাগুন
বুঝিনি তোমার শুধু ছোঁয়ায় এত যে আগুন..(২)

ও এলোমেলো হয়ে যায় মন, কেন আজ বুঝি না
দাবানল যেন ছড়ালো পার করে সীমানা
শ্বাপদের মতো হানা দেয় এ মনের কামনা
নিজেকেই দেখে লাগে আজ
অচেনা, অচেনা, অচেনা
বাতাসে গুনগুন-🎶

“হায়!কি গান…গান গেয়ে লজ্জায় নিজেই শেষ হতে থাকলো নিধি। নির্জন তার ঠোঁট দিয়ে প্রথমে নিধির কাঁধে আদর করতে শুরু করলো।
তার ঠোঁটের স্পর্শ নিধির গলায় চলে আসে,তার ঘ্রাণে মনোমুগ্ধকর স্নিগ্ধতা তৈরি হয়।যেন প্রতিটি স্পর্শের মাধ্যমে তার অন্তরঙ্গ অনুভূতি প্রকাশ করছে।নির্জনের সাথে নিধিও যেন একই স্পর্শে মত্ত হতে থাকল।নির্জন নিধির কোমরে মৃদু করে জড়িয়ে ধরলো।
দুটি আত্মার সঙ্গমে, যেখানে গহীন সত্তা একে অপরকে অন্তরঙ্গভাবে স্পর্শ করে,
প্রেমের অগ্নিতে ভাসমান এই গভীর মিলনে, সীমাহীন সমর্পণ ঘটলো।
শরীরের গভীরে প্রতিটি সঞ্চালন, একে অপরের অন্তরের অন্ধকারকে আলোকিত করে তুললো।
মিলনের এই গভীর চাহনিতে, সৃষ্টি হয় এক অমর, অদেখা,অন্ধকার বন্ধন।”

———-
“সুমধুর একটি রাত পেরিয়ে ভোর হলো।
নির্জনের আগেই নিধি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়।অতঃপর নির্জনের কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে,সরাসরি শাশুড়ি মায়ের রুমের সামনে গেলো।কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে বুঝলো,হয়তো ঘুমিয়ে আছে।তাই নিধি কিচেনে গেলো।রাতে নির্জন নিধি কে সবকিছু দেখিয়ে দিয়েছে।নিধি নির্জন আর ওর জন্য চা বানালো,নুডলস রান্না করলো।আপাতত আর কিছু খুঁজে পেলো না সে।
হঠাৎ, নির্জন নিধি কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে চুমু দিয়ে ঘুমঘুম স্বরে বললো,

‘তুমি কিচেনে এসেছো কেনো ডার্ক কুইন?একটু পর তো মেইড আসবে।’

“নিধি নির্জনের দিকে ফিরে মুচকি হেসে বললো,
‘হ্যা,জানি।কিন্তুু আমার খুব ক্ষুধা লেগেছিলো।তাই সামনে যা পেয়েছি তাই বানিয়ে নিলাম।তাছাড়া এই বাসায় যেহেতু কোনো আয়োজন হবে না,তাই ভাবছি আজ তোহার বৌভাতে আমরা দু’জনে যাবো।ওকে গিয়ে সারপ্রাইজ দিবো।দারুণ হবে তাই না?”

“নিধির মুখে এহেন কথা শুনে নির্জনের ঘুম উবে গেলো।
বাঁকা হেসে বললো,
‘ওকে জানপাখি,তুমি যেমনটা চাও।’
বলেই নিধি কে ছেড়ে দিয়ে দ্রুত রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।”

“নির্জনের চোখে এক অদ্ভুত উন্মাদনার ঝিলিক।বিয়ের পরদিনই নিধি তার বোনের বাড়ি বৌভাতের অনুষ্ঠানে যেতে চায়, কিন্তুু নির্জন তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।তার মনে ভ**য়ানক সন্দেহ, অন্যরকম এক অধিকারবোধ দেখা দিয়েছে।সে কিছুতেই নিধিকে ছাড়বে না।”

“সকালের খাবারের পর নির্জন নীরবে বসে রইল, চোখেমুখে ক্রোধের ছাপ স্পষ্ট।নিধি যখন ঘরে ঢুকলো,নির্জন মৃদুস্বরে বিড়বিড় করলো,
‘তুৃমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারবে না ডার্ক কুইন।তুমি এখানেই থাকবে।’
বলেই বাঁকা হাসি দিলো।”

“নির্জনের বিড়বিড় করে বলা কথাগুলো নিধির কর্ণকুহরে পৌঁছালো না।”

“নির্জন কিচেনে গিয়ে সরিষার তেলের বোতল খুললো। কিছু পাঁচফোড়ন আর লংকার গুঁড়ো বের করলো। একটি মাঝারি সাইজের পাত্রে এক কাপ সরিষার তেল ঢেলে গরম করতে দিলো।তার মধ্যে একেক করে দিলো ১চামচ পাঁচফোড়ন,৩চামচ লংকার গুঁড়ো,১চামচ লবণের মিশ্রণে তীব্র গন্ধে পুরো কিচেন ভরে উঠলো।”

“নিধি হেঁটে কিচেনের দরজায় এসে দাঁড়ালো। নির্জনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলো,
‘আপনি কি করছেন নির্জন?’

“নির্জন পেছন ফিরে তাকালো, চোখে তার নিষ্ঠুরতার ছাপ স্পষ্ট।অথচ মুখে মুচকি হাসি ফুটিয়ে অতি স্বাভাবিক স্বরে বললো,
‘তোমার জন্য বিশেষ কিছু বানাচ্ছি, ডার্ক কুইন।গেস করোতো,এটা কি?’

“নিধি একটু এগিয়ে গিয়ে বললো,
‘সরিষার তেল আর পাঁচফোড়নের সুঘ্রাণ বেরিয়ে এলো।কিন্তুু আমার চোখ কেমন জ্বলছে।এর মধ্যে কি শুঁকনো মরিচের গুঁড়ো দিয়েছেন?”

“নির্জনের গম্ভীর উত্তর,
‘হুম।’

“নিধি চোখ জোড়া কঁচলে বললো,
‘আচারে দেওয়ার জন্য গরম করছেন তাই না?জানেন,আচার আমার ভীষণ প্রিয়।কোন আচারে দিবেন?আমের আচারে নাকি অন্য কোনো….

“নিধি কে আর কথা বলতে দিলো না নির্জন।রহস্যময় হাসি দিয়ে হাস্কি ভয়েসে বললো,

‘হিসস..এত কথা বলো কেনো জানপাখি?এই তেলের মিশ্রণ টা আমার সবচেয়ে প্রিয় স্পেশাল আচারে দেওয়া হবে,মাই ডার্ক কুইন।”

বলেই চুলা থেকে পাত্রটি নিয়ে তড়িঘড়ি করে নিধির দিকে ফিরতেই, ঝালমিশ্রিত তপ্ত তেল নিধির হাত এবং পায়ের ওপর পড়ে গেলো।”

“আকস্মিক ঘটনায় কয়েক সেকেন্ডের জন্য নিধির মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিলো।”

#চলবে…

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৩৪
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য]

“আকস্মিক ঘটনায় কয়েক সেকেন্ডের জন্য নিধির মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিলো।”

“ন্যানো সেকেন্ডের মধ্যে নিধির মস্তিষ্ক সচল হতেই, নিধির আর্তনাদ ছড়িয়ে পরে ঘরের চারিদিকে।কিন্তুু নির্জনের চোখে তখনও ভয়ং**কর উ**ন্মাদনা খেলা করছে।নির্জন একজন নীরব সাইকোপ্যাথ,তার প্রেম ভয়ের চাইতেও শক্তিশালী।
কিন্তুু নিধি নির্জনের ভেতরের দা**নবীয় অস্তিত্ব এখনও টের পায়নি।সে তো চোখ জোড়া বন্ধ করে তীব্র আর্তনাদে ব্যস্ত।”

“নিধির হাত-পা তেলে জ্বালিয়ে দেওয়ার পর, নির্জন হঠাৎ ঠান্ডা মাথায় কাজ করা শুরু করলো।ডেভিল হেসে নিধির গালে হাত দিয়ে ভ্রুকুটি করে উত্তেজিত স্বরে বললো,

‘নিরুপমা..নিরুপমা কি হয়েছে তোমার?একি করলাম আমি?খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না?ডোন্ট ওয়ারি জানপাখি,এখনই সব ঠিক হয়ে যাবে।’
বলেই নিধিকে পাঁজা কোলে তুলে রুমে নিয়ে গেলো।”

“তপ্ত তেল ডান হাত এবং দুই পায়ের কিছু অংশে ছিঁটকে পড়াতে,প্রবল জ্বালাপোড়ায় বারংবার আর্তনাদ করে উঠছে নিধি।”

“নিধির এই আর্তচি**ৎকারে নির্জনের কিঞ্চিৎ কষ্ট হলেও, ‘মন’ তাকে বুঝ দিলো,
‘সে তোমার।এভাবেই তাকে আগলে রাখতে হবে।তোমাকে আরও শক্ত হতে হবে।মনে রেখো,তুমি যাকে ভালোবাসো,তার শরীর এবং মনের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে তোমার ক্ষমতার মোহর এঁকে দিতে হবে।এখন থেকে এটাই তোমার মূল কাজ হবে।তাকে ক্ষত করার অধিকার যেমন তোমার, তার সেই ক্ষত ঢেকে দেওয়ার অধিকারও তোমার।””

“মনের সাথে শ**য়তানি পরামর্শ করে বাঁকা হাসলো নির্জন।নিধিকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে,সে প্রথমে ঠান্ডা পানি দিয়ে নিধির হাত-পায়ের পুড়ে যাওয়া জায়গাগুলো ধুয়ে দিলো। নিধি যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকল, কিন্তু নির্জন তখনো নীরব।সে শুধুমাত্র তার নিজস্ব উপায়ে নিধির যত্ন নিচ্ছে। সে পুড়ে যাওয়া অংশ পরিষ্কার করে, জীবাণুনাশক মলম লাগিয়ে গজ দিয়ে ঢেকে দিলো।”

“নির্জন যতই নিধির সেবা করছে, ততই নিধির ওপর নির্জনের মানসিক নিয়ন্ত্রণ বেড়ে যাচ্ছে। সে একক ভাবে বুঝিয়ে দেয় যে নিধি তাকে ছাড়া বাঁচতে পারবে না, আর এই ঘটনার মধ্য দিয়ে তাদের সম্পর্ক আরও অদ্ভুত এবং তীব্রভাবে বাঁধা পড়ে গেলো আরেকটিবার।”

“নির্জনের প্রাথমিক চিকিৎসায় নিধি কিছুটা স্বস্তি অনুভব করলো।নির্জনের দিকে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
‘থ্যাংক’স নির্জন।’

“নির্জনের মন পুলকিত হলো।নিধির গালে আলতো করে চুমু দিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,

‘উহুম,আমি তোমার থেকে থ্যাংকস পাওয়ার যোগ্য নই।আমার কারণে তোমার হাত আর পায়ের এই অবস্থা হয়েছে।এর জন্য আমি শতভাগ দায়ী।আ’ম সরি ডার্ক কুইন।’

‘নির্জনের এহেন কথায় দ্বিগুণ আবেগী হয়ে গেলো নিধি।চোখজোড়া চিক চিক করে উঠলো সহসা।আনমনে ভাবলো,
‘কিভাবে এতো আবেগী হলাম আমি?’

‘ভেবে ম্লান হেসে নির্জনের মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বললো,
‘এই টপিক বাদ দিন প্লিজ।আপনি তো আর ইচ্ছে করে করেন নি।যদি ইচ্ছে করে করতেন,তাহলে অন্য ব্যাপার ছিলো।’

“নির্জন ভ্রুকুটি করে জিজ্ঞেস করলো,
‘তাহলে কি করতে?’

“নিধি মুচকি হেসে বললো,
‘তাহলে ওই একই তেলে আপনাকেও পোড়াতাম।’

” নিধির কথায় রহস্যময় হাসি দিলো নির্জন।কিভাবে বলবে সে,যে তার প্রিয়তমাকে নিজের কাছে রাখার জন্য ইচ্ছে করেই ক্ষতি টা করেছে।তবে এখন নয়,সব কিছু ধীরে ধীরে বলবে।”

“এভাবেই কে**টে গেলো একটি সকাল।নিধির অগোচরে নির্জন তার মায়ের রুমে গিয়ে সেবিকাকে কড়া সুরে বলেছে,
নিধির ধারে কাছেও যেনো সে না ঘেঁষে।’

‘সেবিকা এমনিতেই নির্জন কে ভয় পায়,তার ওপর নির্জনের এহেন আচরণে ভীষণ কষ্ট পেয়েছে।তার অন্য কোনো পন্থা থাকলে হয়তো চলে যেতো।কিন্তুু সায়রা বেগমের কাজকর্ম করতে তার ততটা পরিশ্রম হয়না।তাছাড়া চাইলেই সব জায়গায় মনের মতো কাজ খুঁজে পাওয়া যায় না।’

“এদিকে নিধি তার মা-বাবা কে ফোন করে ওর হাতে-পায়ে তেল ছিঁটকে পড়ার কথা বলেছে।তবে নির্জনের বিষয়টি বলেনি।যদি তারা অন্যকিছু ভাবে,তাই বুদ্ধি করে বলেছে,নিজেই রান্না করতে গিয়ে অসাবধানতা বসত
হাতে-পায়ে তেল ছিঁটকে গেছে।
নিজের মেয়ের অসুস্থতার কথা শুনে খুব কষ্ট পেলেন রফিক মির্জা এবং তাহমিনা বেগম।তারা নিধি কে মানসিক ভাবে স্বান্তনা দেওয়ার পাশাপাশি এটাও বললেন,তারা আজ নিধিকে দেখতে আসবেন।”

“নিধির সাথে কথপোকথন শেষ করে,তারা তৎক্ষণাৎ তোহার শ্বশুর বাড়িতে বিষয়টি জানিয়ে দিলো।আর এটাও জানিয়ে দিলো,তোহার বৌভাতে তাদের আত্মীয়-স্বজন ঠিক সময় চলে যাবে।”

“সবকিছু শুনে মাহির স্তব্ধ হয়ে গেলো।তবে তোহাকে কিছুই বললো না।
প্রিয় বোনের এতটা অসুস্থতার কথা শুনলে, এই বিশেষ দিনে নিশ্চিত সে মন খারাপ করবে।তার অর্ধাঙ্গিনীর দিকেও তো তাকে খেয়াল রাখতে হবে।”

——–
“দুপুরে মেইড এসে রান্না করে গিয়েছে।নতুন বউ এসেছে জেনে,নিধিকে দেখতে চাইলে,নির্জন তাকেও বলে দিয়েছে,নিধি চাইলেও যেনো তার সাথে কথা না বলে।তার ওয়াইফ অন্য কারো সাথে কথা বলুক এটা তার অপছন্দ।”

“নির্জনের এহেন আচরণে,মেইড মনে মনে নির্জনকে রগচটা, বেয়াদব,অ**সভ্য বলে, আবারও তার কাজে মনযোগ দিয়েছে ।একটু পর তাকে আরও ২ বাসায় একেক করে কাজে যেতে হবে।নির্জন কে মনে মনে খারাপ জানলেও,প্রতিমাসে যখন ঠিক সময়ে বেতন পায়,তখন মনে মনে ভীষণ খুশি হয়।”

“নিধিকে নিজে হাতে খাইয়ে দিয়েছে নির্জন।নির্জনের কাছ থেকে এতটা যত্ন পেয়ে নিধিতো আহ্লাদে আটখানা।তার স্বামীকে কিভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে, সেই ভাষাটিও সে হারাতে বসেছে।”

“বিকালের দিকে নিধি কে দেখতে তার বাবা-মা এসেছে।নিধি আগেই নির্জন কে এই বিষয়ে বলে দিয়েছিলো।তাই নির্জনও তার শ্বশুর শাশুড়ির আপ্যায়নের ব্যবস্থা করে রেখেছিলো।”

“নির্জনের শুনশান বাড়িটি দেখে কিছুটা অস্বস্তি অনুভব হলো তাহমিনা বেগমের।প্রথমে তিনি সায়রা বেগমের সাথে দেখা করলেন।সায়রা বেগম কে দেখে তার ভীষণ মায়া হলো।
তারপর তিনি এবং রফিক মির্জা নিধির সাথে দেখা করলেন।রফিক মির্জার তার মেয়ের পায়ের এহেন দশা দেখে নিমিষেই মুখ চুপসে গিয়েছে।তাহমিনা বেগম নিধির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
‘তোর পা তো অনেকখানি পুড়ে গিয়েছে।অথচ তুই বলছিস কিছুটা পুড়েছে?’

“মায়ের স্নেহপূর্ণ কথায় মুচকি হাসলো নিধি।অতঃপর বললো,
‘সত্যি বলছি, খুব বেশি পুড়ে যায় নি।নির্জন ইচ্ছে করে পুরো পা ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে।ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে।তুমি একদম চিন্তা করো না মা।”

“স্ত্রী,শ্বশুর এবং শাশুড়ির কথপোকথনের মাঝে নাস্তা নিয়ে এলো নির্জন।এই মুহূর্তে নিধির পাশ ঘেঁষে তাহমিনা বেগম এবং রফিক মির্জার মেলোড্রামা দেখে ভীষণ বিরক্ত লাগছে নির্জনের।কিন্তুু এমতাবস্থায় কিছুই করার নেই,কিছুটা সময়ের জন্য তাকে সহ্য করতে হবে।’
ভেবে মুচকি হেসে তাদের কে খাবার খেতে বললো।”

“নির্জনের এহেন আতিথেয়তায় ভীষণ খুশি হলো রফিক মির্জা এবং তাহমিনা বেগম।তাদের মনের অন্তরালে জানান দিলো,তাদের মেয়ে স্বামী হিসাবে পারফেক্ট মানুষ কে পেয়েছে।অবশেষে আরও কিছুক্ষণ কথা বলে তারা নির্জনের বাসা থেকে প্রস্থান করলেন।শ্বশুর-শাশুড়ি চলে যেতেই নির্জন তার চশমাটি তর্জনী দিয়ে ঠিকঠাক করে বললো,
‘উফফ! বিরক্তিকর।যেখানে আমার ডার্ক কুইনের সেবা করার জন্য আমি আছি,সেখানে আপনাদের আসার কি দরকার?যত্তসব আদিক্ষেতা!”

———
“বৌভাতর অনুষ্ঠান কার্য শেষ হওয়ার পর তোহার কিছুটা অস্বস্তি অনুভব হয়।হঠাৎ করে মাথা ঘুরে ওঠে।মাহির রেডি হচ্ছিলো শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার জন্য,সেই সাথে তোহাও রেডি হচ্ছিলো।কিন্তুু হঠাৎ এমন হওয়াতে কিছুটা ঘাবড়ে যায় মাহির।তোহার কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে চিন্তিত স্বরে বলে উঠলো,

‘কি হলো স্বপ্নচারিনী?তোমাকে এমন লাগছে কেনো?অস্বস্তি অনুভব হচ্ছে?’

“তোহা চোখজোড়া বন্ধ করে নিজের মাথায় আলতো করে হাত দিয়ে বললো,
‘মাথাটা কেমন ঘুরে উঠলো।আসলে আমি বেশি রাত জাগতে পারি না।গতকাল সারা রাত জেগেছি,আজ আবার এই ভারী পোশাকে সারাদিন থেকেছি,সব মিলিয়ে শরীর খারাপ লাগছে।সমস্যা নেই,এমনি তে আমি ঠিক আছি।”

“তোহার কথা শুনে মাহিরের মুখে দুষ্টু হাসির রেখা ফুটে উঠলো।চোখ পাকিয়ে বললো,
‘ওকে এখন থেকে বেশি রাত জাগতে হবে না।এইতো ২-৩টা পর্যন্ত জেগে থাকলে এনাফ।’

‘মাহিরের এহেন কথা বুঝতে কিছুটা বেগ পেতে হলো তোহার।অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো,
‘আমার অসুস্থতার মধ্যেও এইসব কথা?’

” হাহাহা তোমার সাথে বলবো না,তো কার সাথে বলবো?এনিওয়ে,আমি কিন্তুু আমাদের হানিমুন প্ল্যান রেডি করে ফেলেছি।
বলো,বাইরের কোথাও যাবে?নাকি বাংলাদেশে?তবে বাইরে কোথাও যেতে চাইলে কিছুটা সময় লাগবে।”

“তোহা মাথা এদিক-ওদিক নাড়িয়ে বললো,
‘উহুম,বাইরে নয়।বাংলাদেশের ভেতরে যাবো।এই ধরুন,রাঙামাটি, জাফলং,সিলেটের চা-বাগান।”

“মাহির দুষ্টু হেসে বললো,
‘ওকে, তবে আমার একটা শর্ত আছে।’

‘কি শর্ত?’

“বেশি বয়স করে বাবা হওয়ার ইচ্ছে আমার নেই।তাই হানিমুনে গিয়ে বেবি প্ল্যান করলে কেমন হবে?”

“হায়!মাহিরের এহেন কথা শুনে লজ্জায় মিইয়ে গেলো তোহা।সবে মাত্র এক রাত পেরিয়েছে।আর এখনই বেবি প্ল্যান?’
লাজুক হেসে বললো,
‘এইসব পরে ভাবা যাবে,আগে আমি রেডি হই।তারপর আপনার সাথে ঠান্ডা মাথায় কথা বলবো?’

“মাহির তোহার ঠোঁট জোড়ায় আলতো করে চুমু দিয়ে বললো,
‘সেকি!সারা রাত এতকিছু করেও তোমার মাথা ঠান্ডা হয়নি?এখন আবার নতুন করে ঠান্ডা করতে চাও?বেশি পানি ব্যবহার করলে যেকোনো সময় নিউমোনিয়া হয়ে যাবে।এমনিতেই সবসময় পেশেন্টের ভীরে অস্থির হয়ে থাকি,তার ওপর তোমার এমন হলে আমার অ””ক্কা যেতে বেশি সময় লাগবে না।”

“তোহা কটমটিয়ে বললো,
‘আপনি থামবেন?সবসময় নেগেটিভ চিন্তা ভাবনা মাথায় নিয়ে ঘোরে।আমি ওয়াশরুমে গেলাম।আপনি একা একাই ঠোঁট কা**টা কথা বলতে থাকুন।’
বলেই তোহা কোনোরকমে ধীরে ধীরে উঠে মুখ ভেং**চি কে**টে চলে গেলো।”

“মাহির সেদিকে তাকিয়ে উচ্চস্বরে বললো,
‘হায়!এই ডাক্তার সাহেব তার বউয়ের লজ্জা ভা**ঙাতে ব্যর্থ হলো।ধুর..এরপর থেকে আরও ভালোভাবে ট্রাই করতে হবে।’ বলেই হো হো করে হেসে উঠলো মাহির।”

———-
“বাংলাদেশে যখন সন্ধ্যা ৬টা,কানাডার টরেন্টো শহরে তখন সকাল ৮টা।
শুভ্র বিছানায় শুয়ে আছে ইহান এবং আফরিন। স্নিগ্ধ শীতের বাতাস জানালা দিয়ে এসে হালকা পর্দাগুলোকে দুলিয়ে দিচ্ছে। বিছানার শুভ্র কম্ফোর্টারের নিচে ইহান আর আফরিন দুষ্টু মিষ্টি কথপোকথনে মগ্ন।”

“ইহানের দুষ্টু চোখে মায়াবী ঝিলিক, আফরিনকে ইশারায় কিছু বলতে চায়। আফরিন জানে, ওর প্রতিটি হাসির আড়ালে কিছু না কিছু শ**য়তানি লুকিয়ে আছে। ইহান হঠাৎ করেই আফরিনের দিকে ঝুঁকে এসে বলে,

“আচ্ছা, যদি আমি এখন তোমার গায়ে হিম শীতল হাত রাখি?কেমন হবে?”

“আফরিন মুচকি হেসে বললো,
‘ইশ!তোমার কি মনে হয়,তুমি ঠান্ডা হাত রাখবে,আর তোমাকে আমি এত সহজে ছেড়ে দেবো?ফ্রিজের বরফ গুলো সব তোমার মাথায় ঢেলে দিবো।এনিওয়ে,সকাল থেকে অনেক রোমান্স করেছি;এখন মূল টপিকে আসি।”

“হুম বলো।”

“আফরিন ইহানের গালে হাত রেখে বললো,

‘আমরা যেহেতু বিয়ে করেছি,তাই আমাদের হানিমুন করা আবশ্যক।কানাডায় তো অনেক জায়গায় ঘুরেছি।তবে বাংলাদেশী মেয়ে হয়েও বাংলাদেশের অনেক জায়গায় ঘোরা হয়নি।তাই ভাবছিলাম, আমাদের হানিমুন প্ল্যানিং বাংলাদেশে করলে কেমন হয়?’

“আফরিনের কথা শুনে মুহূর্তেই মুখে অন্ধকারের ছায়া দেখা গেলো ইহানের মুখস্রিতে।প্রেমের টানে কতগুলো বছর পর বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেছিলো সে।অবশেষে ব্যর্থ হয়ে তাকে ফিরে আসতে হয়েছে।আবারও সে তার মাতৃভূমিতে যাবে?অসম্ভব।’
ভেবে মলিন স্বরে বললো,

‘কানাডায় আরও অনেক দর্শনীয় স্থান আছে,যেখানে তোমার যাওয়া হয় নি।আমরা না হয়..

” আফরিন ইহানের ঠোঁট জোড়ায় আঙ্গুল ঠেকিয়ে বললো,
‘আমি জানি,তুমি কেনো সেখানে যেতে চাও না।আসল কথা হলো আমরা দু’জনেই একই পথের পথিক।তুমি প্রেমের টানে বাংলাদেশে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছো।আর আমি বাংলাদেশে থেকে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে, কানাডায় আমার ফুফুর বাসায় চলে এসেছি।কিন্তুু এখন তো আমরা স্বামী-স্ত্রী।আমাদের মধ্যে কোনো অপূর্ণতা নেই।তবুও কেনো যাবে না?আমি তো ভেবে রেখেছি, ওখানে আমাদের বেবি হবে।তারপর বেবিকে একটু বড় করে আবার কানাডা পাড়ি জমাবো।”

“আফরিনের কথা শুনে কেশে উঠলো ইহান।মুখে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে বললো,
‘তাহলে তো আগে থেকেই এইসবের জন্য প্রস্তুুতি নিতে হয়,তাই না?’

“নিজের কথায় নিজেই ফেসে গেলো আফরিন।কটমটিয়ে বললো,
‘এই একদম না।আর না..পরে হবে..কাল রাতে অনেক জ্বালিয়েছো।’

“ইহান হো হো করে হেসে বললো,
‘ওকে,ওকে সুমাইয়া..জাস্ট কিডিং।আমি খুব ভালো ছেলে,এখন কিচ্ছু করবো না।’
বলেই ইহান নরম করে আফরিনের চুলে হাত বুলাতে থাকল আর বললো,
‘জানো, তোমার হাসি আমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস।যখন আমি পথহারা পথিকের ন্যায় ঘুরছিলাম।তখন তুমিই ছিলে আমার অজানা পথের পাথেয়।এভাবে সবসময় পাশে থাকবে তো?’

“আফরিন লাজুক হেসে বললো,
‘অবশ্যই থাকব।এই হাত তো ছেড়ে দেওয়ার জন্য ধরিনি জান।’
বলেই ইহানের গালে আলতো করে চুমু দিয়ে,প্রাণ প্রিয় অর্ধাঙ্গের বুকে চোখজোড়া বন্ধ করে মাথা রাখলো।”

———
“অফিস থেকে বাসায় এসে দিগন্ত তার মায়ের সাথে দেখা করে নিজের রুমে এসে দেখলো,নাদিয়া মোবাইলে ভিডিও দেখে হাসাহাসি করছে।দিগন্ত মুচকি হেসে এগিয়ে গেলো নাদিয়ার দিকে।নাদিয়া কে ভয় দেখানোর জন্য ভাউ..করে উঠতেই, নাদিয়াও চি**ৎকার করে উঠলো।
বুকে বারকয়েক থুথু দিয়ে বললো,
‘এটা কি হলো?একটু হলেই হার্ট অ্যা**টাক করতাম।’

‘হেহেহে বউয়ের সাথে একটু মজা করতে ইচ্ছে হলো,তাই করলাম।আচ্ছা, তোমার থেকে এমন পাঁচফোড়নের সুগন্ধি আসছে কেনো?”

“নাদিয়া মুচকি হেসে বললো,
‘একটু আগে তোমার জন্য নিরামিষ রান্না করেছি তাই।এখন ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হবো।’
বলেই নাদিয়া ওয়াশরুমের দিকে যেতে নিলে দিগন্ত নাদিয়ার হাত ধরে কাছে টেনে বললো,

‘তুমি নিরামিষ,আর আমি আমিষ।এখন দু’জনে মিলে এক হয়ে গিয়ে না হয় ফ্রেশ হবো।’

” ছিহ!কি কথা!এই তুমি না মাত্র অফিস থেকে এলে?এতটা পথ জার্নি করে এসেও দেখছি তোমার মুখের তেজ কমেনি।”

“দিগন্ত নাদিয়ার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বললো,
‘ওই হানি,একদম আমার মুখের তেজ নিয়ে কথা বলবে না।আমার আরও অনেক দিক থেকে তেজ আছে,সেটা তুমি খুব ভালোভাবে জানো,আবার দেখাবো?’

“নাদিয়া জানে,দিগন্তের এই লাগাম ছাড়া কথা চলতেই থাকবে,তাই বুদ্ধি খাটিয়ে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে উচ্চস্বরে বললো,
‘ওই যে..ওই যে টিকটিকি টিকটিকি..

“নাদিয়ার কথা শুনে দিগন্ত ওর হাত ছেড়ে দিয়ে সিলিং এর দিকে তাকাতেই,নাদিয়া দুষ্টু হেসে দিগন্তের বুকে ধা**ক্কা দিয়ে দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।”

‘নাদিয়ার এহেন কান্ড দেখে দিগন্ত পুরো বোকা বনে গেলো।’

———-
“রাত সাড়ে ৯টা।নির্জনের বুকে মাথা দিয়ে কতশত গল্প জুড়ে দিয়েছে নিধি।ছোটবেলা থেকে কিভাবে দস্যিপনা করেছে,কিভাবে স্কুলের দেয়াল টপকে পালিয়েছে,এইসব বিষয়ে খুব ঘটা করে বর্ণনা দিচ্ছে সে।নিধির এইসব কাহিনী খুব বোরিং লাগছে নির্জনের কাছে।কথা ঘুরানোর জন্য নির্জন বললো,

‘জানপাখি,গতকাল রাত টা কেমন কাটালে,সেই সম্পর্কে তো কিছু বললে না?নাকি হাতে-পায়ে তেল পড়াতে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে আগের দিনে চলে গিয়েছো?”

“নির্জনের এহেন কথায় লজ্জায় মিইয়ে গেলো নিধি।নির্জনের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে বললো,
‘প্লিজ আর লজ্জা দিবেন না।আমার আনইজি লাগছে।’

“নিধির এহেন কথায় মুহূর্তেই ক্ষেপে গেলো নির্জন।নিজের রাগ কোনোরকমে নিয়ন্ত্রণ করে মুচকি হাসি দিয়ে বললো,

‘আমি তোমাকে আবারও বলছি,আমার সামনে কোনো লজ্জা পাওয়া চলবে না।আমরা স্বামী-স্ত্রী;
আমাদের মধ্যে সবকিছু হয়েছে।এখনও এতো লজ্জা কিসের,হুম?’

“নির্জনের আকস্মিক রুঢ় স্বরে ভড়কে গেলো নিধি।চোখ পাকিয়ে বললো,

‘অদ্ভুত মানুষ আপনি!যতই আমরা মিলিত হই না কেনো,তাই বলে আমি লজ্জা পাবো না?’

“নিধির এহেন আচরণ সহ্য হলো না নির্জনের।ভ্রুকুটি করে বললো,
‘নাহ!পাবে না।এটা আমার অপছন্দ।আগে যা পেয়েছো,সেটা না হয় ক্ষমা করে দিয়েছি।কিন্তুু এখন সেটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।”

“নির্জনের কথায় ফের অবাক হলো নিধি।কিন্তুু প্রিয়জনের এহেন মানসিক রোগ ধরতে ব্যর্থ হলো সে।উল্টো করে ভাবলো,
‘বাহ!কত অল্প সময়ে আমাকে আপন করে নিয়েছে সে।আমার লজ্জাকেও সে অপছন্দ করে।এমন একজন ইন্ট্রোভার্ট,পজেসিভ ছেলেকেই তো চেয়েছিলাম।’ভেবে নিধি মুচকি হেসে বললো,

‘আচ্ছা আপনিতো একজন ইন্ট্রোভার্ট পার্সন।আমি যতটুকু জানি,এরা খুব নিরামিষ টাইপের হয়।তবে কিছু ক্ষেত্রে তারা খুব পজেসিভ হয়,যেমন আপনি।আই লাইক ইট।’

“নিধির কথায় বাঁকা হাসলো নির্জন।
নিধির কপাল থেকে চুল সরিয়ে আলতো করে চুমু দিয়ে বললো,
‘ইন্ট্রোভার্ট ছেলেদের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে,যা হয়তো অনেকেই জানে না।তোমায় বলছি,

“১.ইন্ট্রোভার্ট মানুষ শ্রোতা হিসেবে প্রথম শ্রেণীর হয়ে থাকে।

২.এক সঙ্গে অনেক মানুষের সান্নিধ্য তাদের কাছে ভালো লাগে না।

৩. কাউকে ভালো লাগলে সহসা প্রকাশ করে না।

৪. সহজে কারো সাথে মেশে না। কিন্তু যার সাথে মেশে খুব ভালো ভাবেই মেশে।

৫. ইন্ট্রোভার্টরা আনন্দ করে থাকে এবং তা প্রকাশও করে। মাঝে মাঝে পা**গলামিও করতে পারে। তবে তা শুধু বিশেষ মানুষদের কাছে, বিশেষ সময়। সবার সঙ্গে একদমই নয়।

৬. পছন্দের মানুষকে প্রথম অবস্থায় মনের কথা বলতে রাজ্যের অসঙ্কোচ দেখা দেয়।

৭. কোন কিছু বুঝতে একটু বেশি সময় নেয়।

৮. ভরা মজলিসে বক্তৃতা দেয়া মানে সাঁতরে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেয়া।

৯. অতিরিক্ত মানুষের মনযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে অপছন্দ করে।

১০.তাদের কাছে বই পড়ার চেয়ে আনন্দের আর কিছুই হতে পারে না।

১১. নিজেকে অন্যের জায়গায় রেখে ভাবতে অন্তর্মুখীদের জুড়ি নেই।

১২. ঝগড়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে সরি বলে মিটিয়ে ফেলতে চায়।

১৩. রাগের চেয়ে অভিমানের পরিমাণটা বেশিই হয়।যদিও আমি কিছুটা অন্যরকম।

১৪.ভালোবাসলে মন উজাড় করে ভালোবাসে। বন্ধুত্বে জড়ালে টিকিয়ে রাখবার আপ্রাণ চেষ্টা করে।তবে যেকোনো কিছুর নির্দিষ্ট বেড়াজালে পুরোপুরি আবদ্ধ থাকতে বেশি পছন্দ করে।

সবশেষে বলতে চাই- অন্তর্মুখীরা একাকী সময় কা**টাতে ভালোবাসে, তার মানে এই নয় যে তারা অসামাজিক। তারা কথা কম বলে, কিন্তুু ভাবে বেশি। অবশ্য কথা কম বলার জন্য মানুষ বেশির ভাগ সময়েই তাদের লাজুক হিসেবে আখ্যা দেয়। অন্তর্মুখীদের মুখ বন্ধ থাকে কারণ, তাদের ভাবনার ডালপালা ছড়াতে থাকে। সেখানে নতুন নতুন ধারণা তৈরি হয়। মস্তিষ্কের কোষগুলোর মধ্যে সে ধারণাগুলো যেন রেসের ঘোড়ার মতো ছুটতে থাকে।”

“এইবার বুঝতে পেরেছো ডার্ক কুইন?”

“নির্জনের বিশাল বিবরণ শুনে নিধি তো পুরো হা হয়ে গেলো।ওর ইন্ট্রোভার্ট দের সম্পর্কে এতটা ধারণা ছিলো না।নিধি নিচু স্বরে বললো,
‘আমি তো পুরো এক্সট্রোভার্ট।একদম আপনার বিপরীত।তেলে-জলে কিভাবে মিলে গেলো?’

” নিধির কথা শুনে নির্জন ওর মাথা বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললো,
‘ডোন্ট ওয়ারি,আমার সাথে থাকতে থাকতে তুমিও আমার মতো হয়ে যাবে জানিপাখি।তবে তার জন্য আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে।তুমি তো জানো,তেলের মধ্যে পানি থাকলে,আগুনের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিলে,চারিদিকে পানিগুলো ছিঁটে গিয়ে অবশেষে শুধু আসল তেল থেকে যায়।তোমাকেও আমি তেমন ভাবে গড়ে নেবো নিরুপমা।তুমি কি রাজি?”

“নিধি মুচকি হেসে বললো,
‘উহুম,একটুও না।আমি এইরকমই থাকতে চাই।
এতো কম কথা,এতো ভাবনা আমার ভালো লাগেনা।আপনি আপনার মতো থাকবেন,আর আমি আমার মতো।শুধু আমাদের মধ্যে ভালোবাসার গভীরতা অটুট থাকলেই যথেষ্ট।”

বলেই নিধি নির্জনের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে বালিশের পাশ থেকে মোবাইল নিয়ে ফেইসবুক স্ক্রল করতে থাকল।”

“নির্জন পাশে থাকা শর্তেও নিধির এহেন আচরণ মানতে পারলো না সে।এটাকেই তো বলে চরম অবহেলা।তবে কি এক দিন আর এক রাতেই পুরনো হয়ে গেলো সে?অসম্ভব!এটা হতে পারে না।এর জন্য তো তাকে দুষ্টু-মিষ্টি শাস্তি পেতেই হবে।’
ভেবে বাঁকা হাসলো নির্জন।”

———–
“দীর্ঘ একটি রাতের পর ঘুম ভে**ঙেছে নিধির।রাতে নিধি ঔষুধ খাওয়ার পর নির্জন তাকে ঘুমিয়ে যেতে বলে।নিধিও সভ্য মেয়ের মতো ঘুমিয়ে পরে।”

“সকাল ৮টায় ঘুম ভা**ঙে নিধির।আগের থেকে বেশ ভালো লাগছে তার।আড়মোড়া ভে**ঙে মোবাইল হাতে নিয়ে ৮টার এলার্ম বন্ধ করে,সোশ্যাল মিডিয়ায় যখনই ঢুকতে যাবে,তখনই দেখলো আইডি তে লগ ইন হচ্ছে না।নিধি তো বেশ অবাক হয়ে গেলো।বারবার নিজের আইডি লগ ইন করার চেষ্টা করেও পারলো না।অতঃপর সে তার ইউটিউব চ্যানেলে ঢুকে ফের অবাক হলো।সে যতগুলো ভিডিও বানিয়েছিলো,কিছুই নেই।বিস্ময়ে মুখ হা হয়ে গেলো নিধির।ভ্রুকুটি করে একবার নির্জনের দিকে চোখ বুলিয়ে দেখলো,সে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।”

“নিধি আবারও ইউটিউব চ্যানেলে গেলো।কিন্তুু কিছুই নেই।এমনকি ফটোর নিচে ক্যাপশনে লেখা,
‘এখানে আর কোনো ভিডিও আপলোড করা হবে না।’

“লেখাগুলো পড়ে কপালে হাত রাখলো নিধি।কত কষ্টের ফলে ১০হাজার সাবস্ক্রাইবার হয়েছে তার।ভিডিও গুলোতে কত শত ভিউ;সব শেষ।তার ওপর ফেইসবুকেও লগ ইন করতে পারছে না।সবকিছু দেখে মাথায় হাত রাখলো নিধি।
না চাইতেও নির্জনের বাহুতে হাত দিয়ে আলতো করে ধা””ক্কা দিয়ে বললো,

‘এই উঠুন,দেখুন না আমার ফোনে কি হয়েছে?ফেইসবুক,ইউটিউব চ্যানেল সব শেষ।”

“নিধির এহেন কথায় পৈ**শাচিক আনন্দ পেলো নির্জন।তবুও চোখজোড়া বন্ধ করে নিধির হাত বুকের মধ্যে আগলে ধরে বিরক্তি স্বরে বললো,
‘উফফ! গতকাল রাতে অফিসের ইম্পর্ট্যান্ট ফাইল রেডি করে,রাত ৪টার দিকে ঘুমিয়েছি।প্লিজ ডার্ক কুইন ঘুমাতে দাও।”

#চলবে…

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ পর্ব-৩২

0

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৩২ ১ম অংশ
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য।]

“নির্জন মুচকি হেসে বললো,

‘I love you excessively my Dark Queen.’

“নির্জনের মায়া মিশ্রিত কথায় গলে গেলো নিধি।এমন একজন কেই তো সে জীবন সঙ্গী হিসাবে চেয়েছিলো।যে শুধু তার প্রতি গভীরভাবে আসক্ত থাকবে।আর তাকেই সর্বোচ্চ দিয়ে গুরুত্ব দিবে।যার ভালোবাসায় কিছুটা পা**গলামিও থাকবে।সেই সবকিছু নির্জনের মধ্যে রয়েছে।’
কথা গুলো ভাবতেই নিধির মুখে হাসি ফুটে উঠলো।”

“নির্জনের দিকে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
‘আমি সত্যি খুব সৌভাগ্যবতী নির্জন।আমি চাই আপনার মতো ভালো মানুষগুলো যেনো সব মেয়ের ভাগ্যে জোটে।আমার বান্ধবীগুলো যদি এমন ব্যক্তিত্ববান পুরুষ জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতো,তাহলে হয়তো তাদের অত্যাচার-নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হতো না।”

“নিধির কথায় নির্জন মুচকি হেসে বললো,
‘তুমি চিন্তা করো না ডার্ক কুইন;আমি তোমার ভীষণ খেয়াল রাখবো।আমার মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসার চাদরে তোমায় সর্বদা মুড়িয়ে রাখবো।তোমাকে আমার আঁধার রাতের রানী করে রাখবো।”

“এভাবে দু’জন আরও কিছুক্ষণ কথা বললো।অতঃপর নির্জন,মাহির এবং তার পরিবার রফিক মির্জা এবং তার আত্মীয়-স্বজনের সাথে বিয়ে সম্পর্কিত আরও আলোচনা করে চলে গেলো।”

————–
“অতঃপর কে**টে গেলো একটি নিদ্রাহীন রাত।কিছু মানুষ সংসারের টানা-পোড়েনে রাত্রি জাগরণ করে,কিছু মানুষ সুখের ভেলায় ভেসে রাত্রি জাগরণ করে।কিছু রোমান্টিক যুগল তাদের ভালোবাসাকে সাক্ষী রাখতে রাত্রি জাগরণ ঘটায়।এভাবেই কে**টে যায় এই নশ্বর দুনিয়ার দিন-রাত।”

“প্রভাতের সূর্য উদিত হতেই নিধি এবং তোহার ডাক পড়লো,

তাহমিনা বেগম রুমে এসে গম্ভীর স্বরে বললেন,
‘এই যে দুই মহারানী, আর কতো ঘুমাবি?তাড়াতাড়ি ওঠ,ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হবি।একটু পর আত্মীয়-স্বজনে ঘর ভরে যাবে।আর নাদিয়া কে ফোন করে বল,ও যেনো আজ রাতে আমাদের বাসায় চলে আসে।বিয়ের পর তো চাইলেই দুই বান্ধবী একসাথে থাকতে পারবি না।তাই কিছু সময় একসাথে কা**টা,ভালো লাগবে।’
বলেই হনহন করে চলে গেলেন তাহমিনা বেগম।আজ বাদে কাল তার দু’টো মেয়ের বিয়ে।তার মাথার ওপর অনেক দায়ভার রয়েছে।”

“এদিকে মায়ের চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে তোহা বললো,
‘আজ আমার কোনো বেস্ট ফ্রেন্ড নেই বলে বাসায় ডাকতে পারলাম না।সমস্যা নেই,, কিছু ক্লোজ ক্লাসমেটদের ইনভাইট করবো।আর আমার একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড তো হবে মাহির।তার মতো এমন একজন ফ্রী ফায়ার টাইপ মানুষ থাকলে আর কি লাগে?’
ভেবে মুচকি হাসলো তোহা।”

“অতঃপর দুই বোন মিলে একে একে ফ্রেশ হয়ে নিলো।
তারপর দু’জনে তাহমিনা বেগমের সাথে কিচেনে গিয়ে হাতে হাতে সাহায্য করলো।দুই মেয়েকে একসাথে দেখে চোখ জোড়া নিমিষেই ছলছল করে উঠলো তাহমিনা বেগমের।একজন নয়, দু’জন মেয়ে এই বাড়িটা খালি করে চলে যাবে।ভাবতেই বুকটা ভারি হয়ে আসছে।হয়তো রফিক মির্জারও একই অবস্থা।’
কথাগুলো ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাজে মনোনিবেশ করলেন তাহমিনা বেগম।তাকে এভাবে কাঁদতে দেখলে নিধি এবং তোহাও কেঁদে ভাসাবে।এই মুহূর্তে কোনো রকম আবেগঘন পরিবেশ তৈরি করতে চাইছেন না তিনি।তাই দুই মেয়ের সাথে আজ খুব হেসে হেসে কথা বলছেন তিনি।শ্বশুর বাড়ি গিয়ে প্রথম অবস্থায় একটু কষ্ট হলেও কিভাবে মানিয়ে নিতে হবে,কিভাবে তাদের মন জয় করতে হবে,কিভাবে স্বামীর প্রতি সম্মান দেখাতে হবে,সবকিছু বুঝিয়ে বললেন।”

“বিশেষ করে নিধির থেকে তোহা কে বেশি বোঝালেন।কারণ তোহার শ্বশুর, শাশুড়ি উভয়েই আছে।আর নিধি কে উপদেশ দিলেন, ঐ বাড়িতে গিয়ে শাশুড়ির যেনো ভালোভাবে যত্ন নেয়।”

“এই নীরব নারীটির মুখে এতো জ্ঞানের বাণী শুনে, নিধি এবং তোহা দু’জনেই চমকে গেলো।তাদের মা তো সবসময় খুব কম কথা বলে।অথচ আজ মুখ ফুটে কতো কথা বললো।
মনে হলো,মা নয় বেস্টফ্রেন্ড বোঝাচ্ছে।’
কথাগুলো ভেবে ভীষণ খুশি হলো নিধি এবং তোহা।”

“মেয়েদের মুখে প্রাণোচ্ছল হাসি দেখে, চোখের অশ্রু সন্তর্পণে আড়াল করে তাহমিনা বেগম ও হেসে দিলেন।
ধীরে ধীরে পুরো বাড়ি আত্মীয়-স্বজনে ভরপুর হয়ে গেলো।”

“নিধি রুমে গিয়ে নাদিয়া কে ফোন করে রাতে থাকার প্রস্তুতি নিয়ে ওদের বাসায় আসতে বললো।
নাদিয়া দিগন্ত কে বলতেই,ইলেকট্রিক শকড খাওয়ার মতো কেঁপে উঠলো দিগন্ত।কিছুতেই সে নাদিয়া কে অন্য বাসায় রাত্রি যাপন করতে দিবে না।বউ ছাড়া এক রাত্রিও সে থাকবে না।কত সাধনার পর প্রিয়তমাকে নিজের করে পেয়েছে।তাকে ছাড়া এক রাত থাকা মানে কনকনে শীতের রাতে কম্বল ছাড়া থাকা সমান ব্যাপার।”

“নাদিয়া বেচারি হাজার বুঝিয়েও লাভ হলো না।তাই দিগন্ত কে বুঝিয়ে, শুধু পুরো দিন থাকার পারমিশন নিলো।
অবশেষে দিগন্ত রাজি হয়েছে,আর বলেছে,
‘অফিস থেকে ফেরার সময় নিধির বাসার সামনে থেকে নাদিয়াকে নিয়ে যাবে।”

“নাদিয়াও হাসি মুখে সায় জানিয়েছে।সেই সাথে দিগন্ত কে একটা চুমু উপহার দিয়েছে।
দিগন্ত তো চুমু পেয়ে তার চিরাচরিত অভ্যাস ঠোঁট কা**টা কথা না বলে থাকতে পারলো না।
তার প্রচলিত টেপ রেকর্ড ছেড়ে দিলো।
নাদিয়ার কানে কানে ফিসফিস করে বললো,
‘আমার বেস্টফ্রেন্ড বাসর করবে, আর আমি বসে বসে মাছি মা**রতে পারবো না।আমি ও কিন্তুু সবকিছু চাই,এইবার আর বাড়াবাড়ি করতে পারবে না।”

“নাদিয়া বড় বড় চোখ করে বললো,
‘এগুলো ছাড়া কি তোমার আর কোনো কথা নেই?”

“দিগন্ত মুচকি হেসে বললো,
‘দোষ তোমার চুমুর।তোমার শীতল ঠোঁটের উষ্ণ চুমুর কারণেই তো বোবার মুখে কথা ফুটেছে।”

“দিগন্তের কথা শুনে নাদিয়ার আকাশ থেকে পাতালে ধপাশ করে পড়তে মন চাইলো।কটাক্ষ করে বললো,
‘হাহ..তুমি বোবা?তাহলে বিশ্ব সেরা বাঁচাল কে?”

“দিগন্ত নাদিয়ার ডান গালে চুমু দিয়ে বললো,
‘খামোখা আমাকে রাগিয়ে এইমুহূর্তে নিজের ঠান্ডা বাঁধিও না।এমনিতেই অফিসে যেতে লেট হয়ে যাচ্ছে।এখন এইসব করলে আরও লেট হবে হানি।সো প্লিজ, আমি এখন বের হলাম।’
বলেই গা জ্বালানো হাসি দিয়ে নাদিয়ার বাম গালে টুপ করে চুমু দিয়ে চলে গেলো দিগন্ত।”

“নাদিয়া বেচারির চোখজোড়া কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো।কি বলবে সে?এতো নির্লজ্জ পুরুষও হয়?নিজেই ঠোঁট কা**টা কথা বলে,সেটাকে আবার আমার ওপর ধামাচাপা দেয়।হায় আল্লাহ! রক্ষা করো।”

————
“সন্ধ্যার একটু পরে নিধি এবং তোহার রুমে কাজিনদের মহরা বসেছে।যে যার মতো মেহেদী দেওয়াতে ব্যস্ত।পার্লার থেকে কিছু মেয়ে এসে তোহা এবং ওর কাজিনদের হাতে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে।আর নিধির হাতে খুব যত্ন করে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে নাদিয়া।”

“নাদিয়া দুষ্টু হেসে বললো,
‘কি লিখবো?N+N?’

“নিধি মুচকি হেসে বললো,
‘উহুম…’Nirjon+Dark Queen ‘ লিখে দে।”

“বাব্বাহ! কতো প্রেম।দোয়া করি,তোদের এই প্রেম যেনো সারাজীবন অটুট থাকে।’
বলেই ফিক করে হেসে দিলো নাদিয়া।
নিধিও মুচকি হেসে বললো, ‘আমিন।”

“এই মুহূর্তে নিধি যদি জানত, তার হবু বরটি কেমন; তাহলে নিশ্চিত এই হাতে নির্জনের নামের জায়গায়
‘সাইকো+ডার্ক কুইন’ লেখা হতো,অথবা হতো না।”

“এদিকে তোহাকেও পার্লার থেকে আসা মেয়েটি জিজ্ঞেস করছিলো, যে কি লিখে দিবে?’

তোহা লাজুক হেসে বলেছে,
‘স্বপ্ন পুরুষ+স্বপ্নচারিনী’ লিখে দিতে।
মেয়েটি মুচকি হেসে তাই লিখে দিলো।”

“এদিকে মেহেদী দেওয়ার পর তোহার শরীরে চুলকানি শুরু হলো।বেচারি মেহেদী দিলেই এই সমস্যা হয়।তোহা ওর কাজিনদের ঘাড়ের কাছে হাত দিয়ে চুলগুলো সরিয়ে দিতে বললে,ওরা মজা করে তোহার পুরো চুলগুলো খুলে দেয়।একে তো গরম,তার ওপর চুল গুলো খুলে দেওয়াতে আরও অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে।বেচারি তোহা লজ্জায় কিছু বলতে পারলো না।”

“নিধিদের বাড়িতে তেমন ভাবে হলুদের আয়োজন করা হয়নি।তবে ওরা কাজিন রা মিলে হলুদ দিয়ে নিধি এবং তোহার মুখমণ্ডলের ১২টা বাজিয়েছে।
সন্ধ্যার একটু পর মাহিরের এক আত্মীয় এসে তোহার সাজ – সজ্জার জিনিস দিয়ে গেছে।”

“নির্জন যেহেতু আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে সবকিছু থেকে দূরে, তাই সে নিধির জন্য শপিং করে একাই এসেছে।সেই সাথে নিধিকে বলার জন্য অনেক কথা গুছিয়ে এনেছে।”

——-
“সবাই নিধির রুমে তোহা এবং নিধির বিয়ের জিনিসপত্র দেখছে।সবাই নির্জন এবং মাহিরের চয়েজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।”

“এদিকে নির্জন সোফায় বসে রফিক মির্জার সাথে কথা-বার্তায় ব্যস্ত।
রফিক মির্জা দুই মেয়ের বিয়ের জন্য একটি কমিউনিটি সেন্টার বুক করেছেন।মাহিরের পরিবারের সাথে এই বিষয়ে আগেই কথা বলেছেন।নির্জনের সাথে এখন এই ব্যাপারে কথা বললেন।যেহেতু নির্জন এই বাড়ির বড় জামাই হবে,তাই নির্জনের গুরুত্ব টাও সেভাবেই দিতে হবে।
বর্তমানে রফিক মির্জা নির্জনের সাথে খাবারের মেনু নিয়ে আলোচনা করছেন।তিনি ঠিক করেছেন অনুষ্ঠানে,

‘চিকেন টিক্কা,চিকেন ফ্রাই,মাটন বিরিয়ানি,সাদা ভাত,সাথে ডিমের কোরমা,চিংড়ি ভুনা,ডাল মাখনি,গরুর মাংসের ভুনা,টক এবং মিষ্টি দই,ফ্রুট কাস্টার্ড,বোরহানি,
সপানহিয়াঃ তাজা পুদিনা,লেবু,আর সোডা দিয়ে তৈরি ঠান্ডা ড্রিংক।সেই সাথে কিছু বৃদ্ধ মানুষদের জন্য মিষ্টি পান।
আয়োজন টা কমিউনিটি সেন্টারে করা হলেও,খাবার গুলো ঘরোয়া আইটেমের মতো হবে।”

“দীর্ঘ সময় নিয়ে রফিক মির্জার মুখে বাহারি খাবারের চার্ট শুনে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো নির্জন।’
ভাবলো,
‘আমার ডার্ক কুইন কে তো আমি এমনিতেই তুলে নিয়ে বিয়ে করতাম।ভাগ্যিস,সে সহজে রাজি হয়েছে।নইলে এইসব মেলোড্রামা করার কোনো প্রয়োজন ছিলো না।’
কথা গুলো ভেবে গলা খাঁকারি দিয়ে নিজের বরাদ্দকৃত স্থান থেকে উঠে, রফিক মির্জার পাশের সোফায় বসে ভদ্রতার সহিত বললো,

‘বাবা আমি আপনাকে কিছু কথা বলতাম।আই মিন নিজের কিছু মতামত জানাতাম, যদি আপনি অনুমতি দিন।’

“নির্জনের মুখে ‘বাবা’ ডাকটি শুনে, রফিক মির্জার কলিজা যেনো শীতলতায় ছুঁয়ে গেলো।যদিও তার কোনো ছেলের শখ ছিলো না।কিন্তুু নির্জন এবং মাহির কে না চাইতেই সে ছেলে রূপে পেয়ে গেছে।কত ভাগ্যাবান সে।মুখে অনাবিল হাসির ঝলক ফুটিয়ে বললো,
‘হ্যা, বলো বাবা।’

“নির্জন মুচকি হেসে বললো,
‘বাবা আপনাকে তো সবই বলেছি।আমার যেহেতু কোনো আত্মীয়-স্বজনের সাথে যোগাযোগ নেই,তো আমি মনে করি, আমার আর নিরুপমার জন্য এতো খাবার থেকে শুরু করে, এত আয়োজন করা বেমানান।এর থেকে ভালো হয় যে টাকাটা আপনি আমাদের বিয়েতে খরচ করবেন,সেটা আপনি বর্তমানে ভুক্তভোগী বন্যার্তদের দান করুন;এতে সৃষ্টিকর্তাও খুশি হবেন।আমি বিয়েটা সাদামাটা ভাবে করতে চাই।তাছাড়া আমি চাই,নিরুপমা যেনো বিয়ের দিন কালো বোরকায় আবৃত থাকে।
আর আমি চাই,আমাদের বিয়ের আয়োজন টা আপনার বাসার খোলা বাগানে আয়োজন করা হোক।কমিউনিটি সেন্টারের বুকিং ক্যান্সেল করে দিন।যেহেতু আপনার বাড়িতে এত সুন্দর একটি খোলামেলা মনরোম পরিবেশ আছে।তো কমিউনিটি সেন্টার বুকিং করে অযথা সময় এবং অর্থ নষ্ট করার কোনো মানে হয় না।সেই অর্থগুলোও না হয় আপনি গরীব-দুঃখীদের মাঝে বিতরণ করবেন।আমাদের সমাজে যেই অহেতুক অর্থ গুলো মানুষ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শখ করে খরচ করে,সেগুলো একটি গরিব পরিবারে দান করলে,তাদের ১মাসের সংসারও চলে যায়।
যাইহোক,আমি আমার মতামত জানালাম;বাকি কথা আপনি আপনার ছোট মেয়ের হবু স্বামীকে এবং তার পরিবার কে বলতে পারেন।এটাই আমার মতামত।”

“বাহ!এমন ছেলে লাখে একজন মেলে।কোনো বিলাসিতা নেই,কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই।এ যেনো ধূসর আকাশের বুকে ভেসে ওঠা এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।’
কিচেন থেকে একমনে তাকিয়ে কথাগুলো ভাবলেন তাহমিনা বেগম।মনে মনে বললেন,
‘এই ছেলে তো হিরার টুকরো।আমার দু’টো মেয়ের জামাই হিরার টুকরো।সত্যি,আমার নিধির মতো মেয়ের জীবনে যে এমন একজন বুঝদার ছেলে জুটবে,এ যেনো কল্পনারও বাইরে।’
ভাবতেই তাহমিনা বেগমের চোখজোড়া পুনরায় ছলছল করে উঠলো।”

“অপরদিকে নির্জনের বুদ্ধিদীপ্ত কথা শুনে খুশিতে ঝলমল করে উঠলো রফিক মির্জার মুখমন্ডল।মনে মনে গর্বের সহিত বললেন,
‘আমার নিরুপমা যোগ্য ছেলেকেই বাছাই করেছে।এই ছেলে আমার মেয়েকে সবচেয়ে সুখে রাখতে পারবে।’
ভেবে তিনি নির্জনের কথার সাথে সায় জানিয়ে,মাহিরের বাবা কে ফোন দিয়ে নির্জনের বলা কথা গুলো নিজের মতো করে ব্যক্ত করলেন।
সবকিছু শুনে মাহিরের বাবাও রফিক মির্জার সাথে একমত পোষণ করলেন।”

“অতঃপর বিজয়ের হাসি দিয়ে নির্জন রফিক মির্জার বাসা থেকে বিদায় নিলো।আজ সে তার ডার্ক কুইনের সাথে দেখা করলো না।কারণ, যেই মূল কথাটা বলার ছিলো, সেটা রফিক মির্জার কর্ণকুহরে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছে।”

#চলবে…

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৩২ ২য় অংশ
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য]

“অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ চলেই এলো।আজ নিধি এবং তোহার বিয়ে।সকাল থেকে কিচেনে দাঁড়িয়ে তাহমিনা বেগম কেঁদে ভাসিয়েছেন, তবে সবার চোখের আড়ালে।গতকাল রাতে প্রিয় অর্ধাঙ্গিনীকে জড়িয়ে ধরে রফিক মির্জার চোখ বেয়েও কিঞ্চিৎ অশ্রু কণা গড়িয়ে পড়েছে।তার দু’টো মেয়েতো তার কাছে দু’টো পরী ছিলো।আজ দু’টো দুষ্টু-মিষ্টি পরী শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে,তাদের ঘরটাকে পুরো শান্ত করে দিবে।ভাবতেই বুক ভার হয়ে এলো রফিক মির্জার।কিন্তুু কিছুই করার নেই।এটাই তো সুন্দর অথচ নিষ্ঠুর নিয়তি।”

“গতকাল রাত সাড়ে ১১টায় নির্জন নিধির সাথে ১৪মিনিট কথা বলেছে।তার মধ্যে মূল টপিক ছিলো, নিধিকে বিয়েতে সাজ-সজ্জার ওপর কালো বোরকা এবং হিজাব পরিধান করতে হবে।শুধু নিধির চোখজোড়া দেখা যাবে।তবে চোখ এতটা সাজানো যাবে না।”

“নির্জনের এহেন কথায় মন খারাপ হয়ে গিয়েছে নিধির।পরক্ষণেই মনে পড়লো, তাহমিনা বেগমের কথা।তিনি বলেছেন,
‘স্বামীর মন জয় করার জন্য নিজের কিছু কিছু বিলাসিতা বর্জন করা উচিত।তবেই প্রকৃত সুখ মিলবে।সব সময় নারীবাদী ভাব ফুটিয়ে তোলার মধ্যেই বিজয় পরিলক্ষিত হয় না।’
কথাগুলো ভেবে মুচকি হেসে, নিধি রাজি হয়ে যায়।তাছাড়া এই সাজ তো সে শুধু নির্জনের জন্যই সাজবে।এটাই তো তার মূল লক্ষ্য।”

“এদিকে রাত ১২টা থেকে ৩টা ১৬মিনিট..মাহিরের সাথে কথা বলতে বলতে তোহার কান যেনো গরম হয়ে যায়।কিন্তুু মাহিরের বাসর রাতের প্ল্যান এখনও শেষ হয় নি।এর মধ্যে তোহা অনেক বার মাহিরের নির্লজ্জ টাইপ কথা শুনে ফোন কে**টে দিয়েছে।কিন্তুু মাহিরও কম নয়,রোমান্টিক টর্চারের ভয় দেখিয়ে, তোহাকে কথা বলতে বাধ্য করেছে।
বেচারি তোহা ঘুম ঘুম চোখে কথা বলতে বলতে একসময় ফোন কানে রেখেই ঘুমিয়ে যায়।
অপরপাশ থেকে তোহার সাড়াশব্দ না পেয়ে একসময় মাহির ফোন কে**টে দিয়ে,ফোনের ওয়ালপেপারে তোহার মিষ্টি হাসিমাখা ছবিতে আলতো করে চুমু দিয়ে ঘুমিয়ে যায়।”

————
“গোধূলির লগ্ন পেরিয়েছে অনেক আগে।
রফিক মির্জার বাগানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্যান্ডেল সাজিয়ে হৈ-হুল্লোড় করছে সব আত্মীয়-স্বজন।
নির্জন,নিধি,মাহির এবং তোহা ওদের দুই জুটির জন্য আলাদা স্টেজ সাজানো হয়েছে।
ইতোমধ্যে নিধি এবং তোহা সাজ-সজ্জা পরিপূর্ণ করে স্টেজে নিজেদের বরাদ্দকৃত স্থানে বসেছে।দুই বোন অধীর আগ্রহে নিজেদের প্রিয়তমর জন্য চাতক পাখির ন্যায় তাকিয়ে আছে।কবে দু’জন সুদর্শন পুরুষ এসে দুই বোনের চক্ষু শীতল করবে;সেই অপেক্ষার প্রহর গুণছে নিধি এবং তোহা।”

“অবশেষে ওদের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে শুভ্র রাঙা ফিতা বাঁধা জায়গায়, দুই জোড়া পা রাখলো দুইজন বর।তাদের সাথে রয়েছে এক ঝাঁক পাখির মতো আত্মীয়-স্বজন।যদিও নির্জনের পক্ষ শূন্য।”

“স্টেজ থেকে নির্জন কে দেখে,বসা থেকে মুখমন্ডল হা করে দাঁড়িয়ে গেলো নিধি।”

“নিধি আজ পরিধান করেছে একটি কালো রঙের ল্যাহেঙ্গা, যেটিতে সোনালি জরির কাজ করা,কালো আর সোনালি জরির মিশ্রণে ল্যাহেঙ্গাটি একদম রাজকীয় দেখাচ্ছে।এর ডিজাইনে আছে সূক্ষ্ম পেইসলি প্যাটার্ন আর ফ্লোরাল এমব্রয়ডারি।
কালো ল্যাহেঙ্গার সাথে নিধির ব্লাউজটি সোনালি জরির কাজ করা, যাতে হালকা পাথরের কাজও রয়েছে। ব্লাউজের হাতা ট্রেডিশনাল লম্বা, কিন্তুু গলার ডিজাইনটি ভি শেপ, যাতে নিধিকে স্টাইলিশ দেখাচ্ছে।তবে সেটা বোরকার আড়ালে।
নিধির ওড়নাটি কালো রঙের, সোনালি জরির বর্ডার এবং ছিটকিনি পাথরের এমবেলিশমেন্ট দিয়ে সাজানো। ওড়নাটি মাথায় ফেলে রাখার কথা হলেও সেটা বোরকার নিচে কাঁধের সাইডে ঝুলানো।
নিধির গয়নাগুলো ভারী, সোনালি এবং রুবি পাথরের কাজ করা। পাথরের কাজের ছোঁয়ায় নিধি যেনো উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। নিধির মেকআপ ডার্ক এবং গ্ল্যামারাস। তার চোখে সিম্পল ড্রামাটিক স্মোকি আই মেকআপ, সোনালি আর কালো আইশ্যাডোর মিশ্রণ। গালে হালকা ব্রোঞ্জ এবং ঠোঁটে গাঢ় মেরুন রঙের লিপস্টিক।
নিধির চুলগুলো খোপা করে সেখানে কয়েকটি ছোট ছোট গোল্ডেন স্টোন বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

“নিধির এই রাজকীয় সাজসজ্জা কুচকুচে কালো বোরকা এবং কালো হিজাবে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।এতো শুধু নির্জনের ব্যক্তিগত সম্পদ।এই সম্পদ সবাই দেখবে কেনো?”

“এদিকে নির্জনের শেরওয়ানির রং কালো। নিধির ল্যাহেঙ্গার সাথে ম্যাচ করে শেরওয়ানিটি কিনেছে।শেরওয়ানিটি সিল্ক ফ্যাব্রিকে তৈরি করা, যা দেখতে এবং পরতে রাজকীয় অনুভূতি হচ্ছে । এর উপরে রয়েছে সোনালি জরির সূক্ষ্ম এমব্রয়ডারি কাজ, যাতে নিধির ল্যাহেঙ্গার সোনালি কাজের সঙ্গে সুন্দরভাবে মিলিয়ে গিয়েছে।
শেরওয়ানির ডিজাইন ট্র্যাডিশনাল কিন্তুু একটু আধুনিক ছোঁয়া রয়েছে। সোনালি জরির কাজ করা কলার এবং কাঁধে হালকা এমব্রয়ডারি , যা শেরওয়ানির সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে। সামনের সোনালি বোতাম, যা তার রুচি এবং স্টাইলের পরিচয় বহন করছে।”

“নির্জন শেরওয়ানির সাথে পরিধান করেছে কালো রঙের চূড়িদার পাজামা, যা তার পুরো লুককে সম্পূর্ণ করেছে।”

“নির্জন মাথায় পাগড়িও পড়েছে। পাগড়িটি কালো এবং , সোনালি এমব্রয়ডারি বর্ডারের কাজ দিয়ে সাজানো, যা নির্জনের সাজের সাথে সুন্দরভাবে মিলিয়ে গিয়েছে।
নিধির কালো ল্যাহেঙ্গার সাথে নির্জনের এই কালো-সোনালি শেরওয়ানি সত্যিই দুর্দান্ত মানিয়েছে।”

“নির্জন শেরওয়ানির সাথে মানানসই ঘড়ি পড়েছে।যা একটি ক্লাসিক, এলিগ্যান্ট ডিজাইনের। একটি সোনালি স্টেইনলেস স্টীল ব্রেসলেট ঘড়ি, যাতে একটি কালো ডায়াল আছে। কালো ডায়ালে সোনালি হাত এবং মার্কার আছে, যা ঘড়িটিকে নিধির ল্যাহেঙ্গার সোনালি জরির কাজের সাথে সুন্দরভাবে মিলিয়ে দিয়েছে।এবং চোখে পড়েছে চিরাচরিত চকচকে রিমলেস চশমা।”

“নির্জনের বর বেশে সাজ-সজ্জা দেখে, নিধির মাথা ক্রাশের বস্তা খেয়ে চক্কর দেওয়ার উপক্রম হলো।হায়.. কতো সুদর্শন একজন পুরুষ তার প্রেমিক এবং আজ তাকে স্বামী রূপে গ্রহণ করবে।’
ভাবতেই নিধির শরীর হিম হয়ে গেলো।”

————
“এদিকে মাহির কে দেখে তোহার বারকয়েক টাস্কি খাওয়া শেষ।মনে মনে আঞ্চলিক ভাষায় বুলি আওড়ালো,
‘উইমা..কিতা সুন্দর আমার জামাইডা।”

“আজ তোহা পড়েছে একটি রাজকীয় নীল (রয়্যাল ব্লু) রঙের ল্যাহেঙ্গা। ল্যাহেঙ্গাটির উপরে রয়েছে সোনালি জরির সূক্ষ্ম কাজ এবং পাথরের এমবেলিশমেন্ট। এই রঙ এবং কাজের সংমিশ্রণ তোহার লুককে একদম উজ্জ্বল এবং মাধুর্যপূর্ণ করে তুলেছে।”

” ল্যাহেঙ্গার সাথে মিলিয়ে তোহার ব্লাউজ নীল রঙের, সোনালি জরির কাজের সঙ্গে ব্লাউজের হাতায় সোনালি জরির ফ্লোরাল এমব্রয়ডারি রয়েছে, এবং গলার ডিজাইন স্লিটেড, যাতে তার গলার গয়নাটি স্পষ্ট দেখা যায়।”

“তোহার ওড়না হালকা নীল রঙের, সোনালি জরির পাড় এবং ছোট ছোট পাথরের কাজ দিয়ে সাজানো। ওড়নাটি তার কাঁধে অনায়াসে ঝুলে আছে, যেনো তোহার লুককে আরও ক্লাসি দেখাচ্ছে।”

“তোহার গয়নাতে রয়েছে সোনালি এবং পোলকি কাজের গ্ল্যামার। সে পড়েছে বড় সোনালি ঝুমকা, হালকা বালা, নথ, এবং মাথায় ছোট একটি টিকলি। গয়নাগুলো তোহার রাজকীয় সাজের সঙ্গে মানানসই হয়েছে।”

“তোহার মেকআপ ক্লাসিক এবং ব্রাইট। তার চোখে রয়েছে সোনালি এবং ব্রাউন আইশ্যাডোর সংমিশ্রণে একটি সফট স্মোকি লুক, কাজলে চোখের সৌন্দর্য আরও ফুটে উঠেছে। গালে হালকা পিঙ্ক ব্লাশ আর ঠোঁটে লেপ্টে রয়েছে গাঢ় গোলাপি রঙের লিপস্টিক, যা তাকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে। তোহার চুল গুলো এলিগ্যান্ট হেয়ার বান, সামনের দিকে কিছু লুজ টেন্ড্রিলস রাখা হয়েছে। চুলের এই স্টাইল তার গর্জিয়াস গয়নাগুলোকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে। বান-এর মাঝে রয়েছে সোনালি হেয়ার অ্যাক্সেসরিজ।”

“এই বিশেষ সাজে তোহাকে একদম রাজকীয় এবং মোহময়ী দেখাচ্ছে।”

“ওদের দুই বোনের উপস্থিতি যেনো পুরো অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।”

“মাহিরের শেরওয়ানির রং রাজকীয় নীল (রয়্যাল ব্লু) রঙের, যা তোহার ল্যাহেঙ্গার সাথে মিলিয়ে কিনেছে সে। শেরওয়ানিটি সিল্ক বা র-সিল্ক ফ্যাব্রিকে তৈরি করা, যাতে একদিকে সোনালি জরির এমব্রয়ডারি কাজ এবং অন্যদিকে মেটালিক সোনালি থ্রেডের ডিটেইলিং।”

“মাহিরের শেরওয়ানির ডিজাইন একটু হাই কলার, যার উপরে সোনালি জরির কাজ করা রয়েছে। শেরওয়ানির সামনের অংশে সোনালি বোতাম এবং কিছু ডিটেইলড এমব্রয়ডারি, যা মাহিরের স্টাইলকে আরও ক্লাসি করে তুলেছে।”

“মাহির তার শেরওয়ানির সাথে একটি অফ-হোয়াইট শাল ব্যবহার করেছে, যেটিতে সোনালি জরির বর্ডার আছে। শালটি সে তার এক কাঁধে ফেলে রেখেছে।যা তার পুরো লুককে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।”

“শেরওয়ানির সাথে পরিধান করেছে নীল রঙের চূড়িদার পাজামা, যা তার পুরো সাজের সাথে সুন্দরভাবে মানানসই হয়েছে।”

“মাহির মাথায় গাঢ় নীল রঙের পাগড়ি পড়েছে, যাতে সোনালি জরির কাজ করা । পাগড়িতে একটি ছোট ব্রোচ যুক্ত করেছে, যা তার সাজকে আরও গ্ল্যামারাস করেছে।”

“মাহির হাতে একটি ক্লাসি রিস্টওয়াচ পড়েছে। যাতে সোনালি নীল ডায়াল আছে। ডায়ালে ছোট ক্রিস্টাল স্টোন আছে। যা তোহার ল্যাহেঙ্গার পাথরের কাজের সাথে সুন্দরভাবে মানিয়ে গিয়েছে।”

“তোহা যেমন মাহিরের বেশভূষা দেখে কুপোকাত; এদিকে মাহিরেরও তোহা কে দেখে চক্ষু চড়কগাছ।মাহির আনমনে বলেই ফেললো,
‘এতো আমার স্বপ্ন পরী।আজ তো আর কোনো বিধিনিষেধ মানা যাবে না স্বপ্নচারিনী।’
ভেবে মুচকি হাসলো মাহির।”

———–
“দিগন্ত বরপক্ষ হয়ে এসেছে।যেহেতু সে নির্জনের বেস্ট ফ্রেন্ড।আর নাদিয়া কনেপক্ষ।যেহেতু সে নিধির বেস্ট ফ্রেন্ড।নাদিয়া কোমরে আঁচল গুঁজে গেটে টাকা তোলা নিয়ে দিগন্তের সাথে ঝগড়া করলো।দিগন্ত চোখের ইশারায় হু*মকি দিয়ে বোঝালো,
‘বাসায় গিয়ে সব ঝাল উঠাবে।”

“কনে পক্ষ মিলে গেটে বিশাল অংকের টাকা ধরেছে।কিন্তুু বরপক্ষ সেটা কিছুতেই মানবে না।অনেক ঝুট-ঝামেলার পর বরপক্ষের কাছে কনেপক্ষ হার মানলো।যদিও নির্জন এখানে একটা কথাও বলেনি।তার দৃষ্টি পুরোপুরি স্থির হয়েছিলো স্টেজে দাঁড়ানো প্রিয় মানবীর চোখ জোড়ায়,যে একটু পর পুরোপুরি তার হবে।’
কথাগুলো ভাবতেই, বাঁকা হাসলো নির্জন।”

———-
“অবশেষে সব নিয়ম-কানুন মেনে বিয়ের কার্য সম্পন্ন হলো।
স্টেজে ওঠার পর থেকে বিয়ে পর্যন্ত, খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে নির্জন শুধু নিধিতেই আবদ্ধ ছিলো।এমনকি ক্যামেরাম্যান ফটোশুট করতে এলে সেটাও বারণ করে দিয়েছে।বিষয়টি নিধির অদ্ভুত লাগলেও,বিয়ের খুশিতে হেসে উড়িয়ে দিয়েছে।”

“এদিকে মাহির আর তোহা কাপল ডান্স থেকে শুরু করে,সবার মুঠোফোনে যুগলবন্দী হলো।কাপল ডান্স করার সময় মাহির ফিসফিস করে তোহা কে উল্টাপাল্টা কথা বলতে মিস করেনি।তোহা চুপ করে সবকিছু গিলেছে।কারণ এইমুহূর্তে তার কিছুই করার নেই।”

“সবাই নির্জনের থেকে মাহির কে অনেক বেশি পছন্দ করেছে।কিছু কিছু আত্মীয়-স্বজন নির্জন কে ‘অসামাজিক’ উপাধি দিয়েছে।সেটা অবশ্য কর্ণে পৌঁছে গেছে নির্জনের।তবে এতে তার কিছু যায় আসে না।সে এখানে আসল কার্য সম্পাদন করতে এসেছে।এইসব মেলোড্রামা দেখতে নয়।”

——-
“এইবার কনে বিদায়ের পালা।শুরু হলো এক আবেগঘন পরিবেশ।আজ যেনো কান্নার ঝড় উঠে গেলো মির্জা বাড়িতে।আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে সবার চোখ থেকে ভারী নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে।রফিক মির্জা যেনো অতি শোকে পাথর হয়ে গেছেন।তাহমিনা বেগম দুই মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কেঁদে চলেছেন।”

“মাহিরের কাছে বিষয়টি খারাপ লাগলেও,নির্জনের কাছে ভীষণ বিরক্তিকর লাগছে।মনে মনে বলছে,
‘যত্তসব অদ্ভুত কাহিনী।সব অভিনয়।’
তবে সে মুখভঙ্গিতে দুঃখী ছাপ ঝুলিয়ে রেখেছে।”

“যখনই নিধি ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরলো,তখনই তেঁতে উঠলো নির্জন।নিধির এক হাত নির্জনের মুঠোয় আবদ্ধ।আরেক হাত দিয়ে বাবা কে জড়িয়ে ধরে সেকি কান্না!
এইবার রফিক মির্জারও চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো।মেয়েকে স্বান্তনার বানী শোনাতে লাগলেন,
‘বিয়ে হলেই মেয়েরা পর হয়ে যায় না।তার দুই মেয়ের জন্য তার হৃদয়ের দরজা সবসময় খোলা থাকবে।’
তোহাও ওর বাবা কে জড়িয়ে ধরে নাকের পানি-চোখের পানি এক করলো।তোহা যা সেজেছিলো; সব শেষ।”

“নির্জন এইবার সব সহ্যের অতিক্রম করে নিধির হাতে খুব জোরে চেপে ধরলো।
আকস্মিক ঘটনায় ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলো নিধি।এক ঝটকায় বাবার বুক থেকে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।আশে-পাশে কেউ কিছু বুঝতে পারলো না।যা বোঝার নিধি বুঝেছে।কিন্তুু উল্টো বুঝেছে।ভেবেছে,

‘ নির্জন হয়তো তার কান্না সহ্য করতে না পেরে, এভাবে হাত চেপে ধরেছে।’

“আত্মীয়-স্বজনের সামনেই নিধির চোখের পানি মুছিয়ে, নির্জন রফিক মির্জা কে ভরসার সহিত বললো,
‘আপনি একদম চিন্তা করবেন না বাবা।আজ থেকে আপনার নিরুপমা শুধুই আমার।ওকে আমি খুব যত্ন করে সাজিয়ে রাখবো,যেনো কারো কু”নজর ওর ওপর না লাগে।কথা দিলাম।”

“নির্জনের এহেন কথা শুনে, আত্মীয়-স্বজন গুলো ফিসফিস করে বললো,
‘ছেলেটা গম্ভীর হলেও নিধিকে খুব সুখে রাখবে।আমাদের নিধির কপাল টা সত্যি ভালো।’

‘নির্জনের সাথে তাল মিলিয়ে, মাহিরও রফিক মির্জাকে একই কথা বললো।’

‘অবশেষে দীর্ঘসময় কান্নাকাটির হিসাব চুকিয়ে, শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো দুই বোন।’

———
“গাড়িতে বসে তোহা হেঁচকি তুলে কাঁদছে।এদিকে তোহা কে কাঁদতে দেখে মাহিরের খুব মন খারাপ হলো।তাই মাহির তোহার কাঁধে হাত দিয়ে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরে বললো,

‘কেঁদো না স্বপ্নচারীনি।পুরো সাজ নষ্ট করে ফেলেছো,সমস্যা নেই আমারই ভালো হয়েছে।একটু পর আমার স্বপ্নচারিনীকে আমি নিজের মতো করে সাজাবো।আসো তোমাকে একটা কবিতা শুনাই।’
বলেই দুষ্টু হেসে শুরু করলো,

“মধুময় রাত”

“এই যে প্রিয়া, তুমি বসে আছো এভাবে চুপচাপ,
এই রাতে শুধু আমি আর তুমি, কারো নেই আমাদের খোঁজখবর!
সবাই বলে, বাসর রাত মানেই লজ্জার খেলা,
কিন্তু তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে, আমার লজ্জা তো হয় না ঢেলা!

তুমি যখন এভাবে তাকাও, মিষ্টি মিষ্টি চোখে,
মনে হয় যেনো এই রাতটাই থেকে যায় এখানে, একেবারে ঠেকে।
আমি বলি, আর দেরি কেনো, কাছে এসে বসো,
এই রাতের গন্ধে, যেনো মধুরতার ঢেউয়ে ভাসো।

আলোটা নিভিয়ে, ছায়ার খেলা করবো,
তোমার কানে কানে বলবো, মধুর কথাগুলো আরও।
লাজুক লাজুক মুখের ওই হাসি, মুছে দাও এখন,
এই রাতে আমরা একসাথে, হারাবো সারা বিশ্বভুবন।”

~মেহের~

“বলেই তোহার নোনা গালে টুপ করে চুমু দিয়ে দুষ্টু হেসে বললো,
‘ইশশ!নিজেকে সামলাতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো।তাই আপাতত টেস্ট করে নিলাম।তবে খারাপ না; টেস্টিং সল্টের মতো লাগল।”

“মাহিরের কথায় কান্না থেমে গিয়ে লজ্জায় মিইয়ে গেলো তোহা।লজ্জা ঢাকতে মাহিরের বুকেই মুখ গুঁজলো।”

———–
“বাংলাদেশে যখন রাত ১২টা,তখন কানাডার টরেন্টো শহরে দুপুর ২টা।
সুইমিং পুলে দুই হাত বাড়িয়ে সাঁতার কাঁটছে পাতলা গড়নের ২৪বছর বয়সী এক রমনী।পরনে তার সুতির সালোয়ার-কামিজ।চাইলেই সে বিদেশিনীদের সাথে তাল মিলিয়ে শরীরে বিকিনি জড়াতে পারতো,কিন্তুু এই ধরণের পোশাক তার বরাবরই অপছন্দ।”

“রমনীটির সাঁতার কাঁটা মুগ্ধ হয়ে দেখছে ইহান।পরনে তার থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট।লোমশ বুক থেকে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে।কিছুক্ষণ আগেই রমনীর সাথে তাল মিলিয়ে সাঁতার কেঁটেছে সে।”

“রমনীটি লক্ষ্য করলো, তার শখের পুরুষ প্রিয়তম স্বামী সূক্ষ দৃষ্টিতে তাকে নজর বন্দী করছে।এই তো এক বছর আগের কথা।কতো ঘুরেছিলো তার পেছনে।অফিসের কলিগ হওয়ার সুবাদে তার সাথে পরিচিত হয়েছে।তারপর কথপোকথন।যখন লোকটির প্রেমে পড়ে তাকে প্রপোজ করলো।তখনই জানতে পারলো,সে নাকি নাদিয়া নামে কাউকে ভালোবাসে।
ব্যাস,সরে গিয়েছিলো সে।কারণ, তার প্রেমিক পুরুষের ভালোবাসা জোর করে আদায় করার সাধ্য তার নেই।”

“কিন্তুু দেড় মাস আগে যখন পুরো ঘটনা জানতে পারলো,সেদিন মনে মনে খুব খুশি হয়ে আবারও প্রণয়ের সুযোগে গা ভাসালো।দীর্ঘসময় অতিবাহিত হওয়ার পর সফল ও হলো।অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে ইহান কে সে নিজের অর্ধাঙ্গ করেছে,যেখানে বিয়ের ব্যাপারে ইহান পুরোপুরি নাকচ করে দিয়েছিলো।
কিন্তুু এই লাবণ্যময়ী,সুহাসিনীর কাছে হার মানতে হয়েছে তাকে।”

“৪দিন হলো তারা বিয়ে করেছে।ইহানের মা পুত্রবধূকে এখনও ভালো ভাবে মেনে নেয়নি।তাতে কোনো সমস্যা নেই রমনীর।সেতো এক ইহানে আসক্ত।’
ভেবে মুচকি হেসে সাঁতার কেঁটে ইহানের কাছে এসে গলা জড়িয়ে ধরে বললো,

‘কি হয়েছে আমার কিউট স্বামীর?একটু আগেই তো আমাকে আদরে ভরিয়ে দিলে,এখন কি আবার?’
বলেই দুষ্টু হাসলো রমনী।”

“ইহান তার অর্ধাঙ্গিনীর কপালে আলতো করে ঠোঁট মিশিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘উহুম,তোমাকে কোটিবার আদর করলেও আমার শখ মিটবে না। কারণ, তুমি আমার আদুরী পাখি।আচ্ছা তোমায় কি নামে ডাকবো বলোতো?
তোমার তো দু’টো নাম,’সুমাইয়া আফরিন।’
সুমাইয়া মানে ‘উচ্চ মর্যাদাপূর্ণ’ আর আফরিন মানে
‘শ্রেষ্ঠত্ব/প্রশংসা’।দু’টো নাম দারুণ।”

“আফরিন হেসে বললো,
“তুমি তো জানো,আমার একজন এক্স ছিলো।সে আমাকে ‘আফরিন’ বলে ডাকত।তুমি বরং আমায় ‘সুমাইয়া’ বলেই ডাকো।আমি এতেই পরিপূর্ণতা পাবো।’
বলেই প্রিয় পুরুষ টিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আফরিন।”

“অবশেষে সে একজন সত্যিকারের প্রেমিক পুরুষের সন্ধান পেয়েছে,যাকে নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করা যায়।”

———-
“বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১২টা।ধীরে ধীরে গাড়ি চালাচ্ছে নির্জন।তার পাশে বসা বোরকা পরিহিত নারীটি কিছুক্ষণ পর পর গুণ গুণ করে কেঁদে উঠছে।গাড়িতে ওঠার পর থেকে এতক্ষণ যাবৎ এই টেপ রেকর্ড শুনতে শুনতে কান তব্দা খেয়ে গেছে নির্জনের।গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে একটি জনশূন্য ফাঁকা রাস্তায় গাড়ি থামালো সে।”

“অতঃপর নিয়নের আলোয় বোরকা পরিহিত রমনীর হাত ধরে, কাছে টেনে তার নিকাব খুলে দিলো।সাজ-সজ্জা নষ্ট হয়ে গেছে নিধির।মুখে বিরক্তিকর ভাব লেপ্টে পকেট থেকে কুচকুচে কালো রুমাল বের করে নিধির ঠোঁট জোড়ার গাঢ় মেরুন কালার লিপস্টিক মুছে দিলো।”

“নির্জনের আকস্মিক এহেন কান্ডে নিধি কিছু বলতে যাবে,তার আগেই নির্জন নিধির ঘাড়ের পেছনে হাত দিয়ে ওকে কাছে টেনে অধরজোড়া এমনভাবে আকড়ে ধরলো,যেনো সে বহুদিনের প্রতীক্ষার তৃষ্ণা মেটাচ্ছে।”

“নির্জনের আকস্মিক আ**ক্রমণে নিধির দম ফেটে যাওয়ার উপক্রম হলো।সহ্য করতে না পেরে,সজোরে ধা””ক্কা দিলো নির্জনের বুকে।ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলে ভয়ে এবং লজ্জায় অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বললো,
‘এটা কি করলেন আপনি?উফফ!একটু হলেই নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যেতো।’

“নিধির মুখে ফের লজ্জার কথা শুনে রেগে গেলো নির্জন।রুঢ় কন্ঠে বলে উঠলো,
‘ডার্ক কুইন,আমার সামনে এইমুহূর্তে লজ্জা পাওয়া তোমার শোভা পায় না।’

“I am your husband, so from now on, don’t even think about feeling shy.”

#চলবে..

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ পর্ব-৩১

0

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৩১
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য]

“নিধির এহেন কথায় নির্জনের মাথার উগ্র পোকা গুলো নিমিষেই কিলবিল করে উঠলো।”

“নিধির অনামিকা আঙ্গুলে গোল্ডেন স্টোনের আংটি টি এমন ভাবে জ্বলজ্বল করছে,এ যেনো নির্জনের অস্তিত্বকেই চ্যালেঞ্জ করছে।নির্জনের মনের ভেতর রাগের আ””গুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো।অপরদিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে, ক্রোধ কে দমন করার বৃথা চেষ্টা করলো নির্জন।’
ভাবলো,
‘ইচ্ছে করছে,আংটি টা কে ছিনিয়ে এনে এসিড দিয়ে গলিয়ে ফেলি।কিন্তুু এই মুহূর্তে কিভাবে করবো?”

“হঠাৎ ভেতর থেকে ‘মন’ বললো,
‘অন্যের উপহার দেওয়া আংটি তোমার প্রেয়সীর কোমল চামড়ায় লেপ্টে আছে।এটা কিন্তুু খুবই অশোভনীয় ব্যাপার।দ্রুত আংটি টা কে ধ্বংস করার ব্যবস্থা করো।”

“অপরপাশ থেকে ‘হৃদয়’ বুদ্ধিদীপ্ত স্বরে বলে উঠলো,
‘নির্জন,কিছু ধ্বংস তীব্র ক্রোধে নয়,বরং মৃদু উপেক্ষায় করা হয়,যা হৃদয়ে গভীর ক্ষত রেখে যায়।’
ঠান্ডা মাথায় ভাবো,মনের কথা শুনে এখন তুমি যদি নিধির কাছ থেকে আংটি ছিনিয়ে আনো,তাহলে নিধি কিন্তুু তোমার প্রকৃত সত্তার পরিচয় পেয়ে যাবে।তারপর কি হবে ভেবে দেখেছো?আমি কি বলতে চেয়েছি,আশা করি বুঝতে পেরেছো।তাই ঠান্ডা মাথায় সহজ কিছু পরিকল্পনা করো,যেনো একটি পাথর দিয়ে দু’টি পাখি মা**রা হয়।এতে ওই আংটি এবং নিধি কষ্ট পাবে।কিন্তুু তোমার পাথর অক্ষত থাকবে।”

“ভেতর থেকে ‘মন’ শ**য়তানি হাসি দিয়ে আবার বলে উঠলো,
‘নির্জন তোমাকে একটা দারুণ আইডিয়া দিচ্ছি।আশা করি এতে তোমার প্রেয়সী কে নিশ্চিন্তে বোকা বানাতে পারবে।সেই সাথে কষ্ট নামক শাস্তি টাও দিতে পারবে।’
বলেই ‘মন’ নির্জন কে পুরো প্ল্যান টা বললো।”

“মনের প্ল্যান শুনে আকস্মিক হো হো করে হেসে উঠলো নির্জন।”

“নির্জন কে এভাবে হাসতে দেখে নিধিও মুচকি হেসে বললো,
‘হঠাৎ এভাবে হাসছেন কেনো?বাই দ্যা ওয়ে, আপনি যেভাবে হাসেন সেভাবেই সুন্দর লাগে।’
বলেই নির্জনের চোখ থেকে হেলে পড়া চশমাটা তর্জনী দিয়ে উপরে উঠিয়ে দিলো নিধি।”

“নির্জন এইবার মুচকি হেসে ‘থ্যাংকস’ দিয়ে ভ্রুকুটি করে বললো,
‘তোমার আংটি টা বেশ সুন্দর।তোমার ফ্রেন্ডের চয়েজ আছে মানতে হবে।দেখি আংটি টা খুলে দাও তো।”

‘হুম, ওর চয়েজ বরাবরই বেশ সুন্দর।কিন্তুু,আপনি আংটি দিয়ে কি করবেন?’

“খেলবো।উফফ!আগে দাও তো।তারপর আমার খেলা দেখাই।’বলেই হাত বাড়িয়ে দিলো।”

“নিধি কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে মুচকি হেসে, অনামিকা আঙ্গুল থেকে আংটি খুলে নির্জন কে দিলো।”

“আংটি টা হাতে পেতেই মুচকি হেসে মুঠোবন্দি করে নিলো নির্জন।অতঃপর বসা থেকে দাঁড়িয়ে, আংটি টি শূন্যে উড়িয়ে আবারও মুঠোবন্দি করে নিলো।কয়েকবার এভাবেই নির্জন বল খেলার মতো রিংটি নিয়ে খেলতে থাকল।সেটা দেখে হেসে কু**টিকু**টি হলো নিধি।
হাসতে হাসতে বললো,
‘নির্জন আপনি তো দেখছি একদম বাচ্চাদের মতো খেলছেন।’

“হুম,কানামাছি,চোর-পুলিশ খেলার পাশাপাশি এই খেলাটাও আমার ভীষণ প্রিয়।’
বলেই মন ভুলানো হাসি দিয়ে ধীরে ধীরে পুকুরের কাছে চলে গেলো নির্জন।আর সেভাবেই আংটি টি শূন্যে উড়িয়ে আবার ধরলো।”

“নিধি নির্জনের কাছাকাছি গিয়ে বললো,
‘একি! পুকুরের এতো কাছে যাবেন না।পড়ে যাবেন তো।”

“খেলতে খেলতে উচ্চস্বরে হেসে উঠলো নির্জন।বিজয়ের হাসি দিয়ে বললো,
‘উহুম,আমার কিচ্ছু হবে না ডার্ক কুইন।তুমি শুধু মজাটা উপভোগ করো,এখনই ধামাকা হবে।’
বলতে না বলতেই নির্জন আংটি টি শূন্যে উড়িয়ে ধরতে যাবে,তখনই আংটি টা পুকুরের ঘোলাটে জলরাশিতে পড়ে গেলো।তৎক্ষণাৎ দ্রুত গতিতে একটি মাছ সেই আংটি টা মুখে তুলে নিলো।”

“আকস্মিক ঘটনাটি ঘটে যাওয়ায় হতভম্ব হয়ে গেলো নিধি।অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো,
‘নির্জন..আমার আংটি।’

“নিধির কষ্টে ভরা মুখস্রি দেখে পৈ**শাচিক আনন্দ পেলো নির্জন।মন কে অনেক গুলো ধন্যবাদ জানিয়ে তৃপ্তির হাসি দিয়ে ভাবলো,
‘প্ল্যান পারফেক্টলি সাকসেস।’
তৎক্ষণাৎ মনে মনে কবিতা আওড়ালো,

“হিং**স্র প্রেমের আংটি”

নিদ্রাহীন চোখে দেখি, আংটি সে হাতের বাহার,
জ্বলে ওঠে র**ক্তলাল আগুন, জেগে ওঠে মন অন্ধকার।
পুকুরের জলই তার ঠিকানা, ছুঁড়ে দিলাম নিঃশব্দে,
ডুবলে ডুবুক আংটি, প্রেয়সী আমার কেউ স্পর্শ করবে না সশব্দে।

মাছের পেটে লুকালো আংটি,
ঠোঁটে ফুটলো পৈ***শাচিক হাসি,
কেবল আমিই চাই স্পর্শ করতে, সে হাতে অন্য কেউ নয়,
আমার ভালোবাসায়,অন্য কারো ছাপ যেনো কোনোদিন না হয়।

হিং**স্র এ প্রেমের দাবি, শুধু আমার জন্যই থাকবে আশায়,
অন্য কারো অধিকার নেই, তার হাতের ভালোবাসায়।
যে আংটি বোঝে না প্রেমের সীমা,
পুকুরের তলানিতেই তার হবে শেষ ঠিকানা।”

~মেহের~

“কবিতা আবৃত্তি করে চশমাটা ঠিকঠাক করে ইনোসেন্ট মুখ করে, দ্রুত পায়ে নিধির কাছে এসে বললো,
‘সরি,সরি..আসলে আমি বুঝতে পারিনি এমন কিছু একটা ঘটে যাবে।আচ্ছা, প্লিজ মন খারাপ করো না ডার্ক কুইন।আমি এখনই পুকুরে নেমে, আংটি টা উদ্ধার করে আনব।দরকার হলে পুকুরের সবগুলো মাছের পেট কে**টে হলেও তোমার আংটি তোমাকে ফিরিয়ে দিবো।ডোন্ট আপসেট মাই ডার্ক কুইন।আমি যাবো আর আসবো।’
বলেই পুকুরের পানিতে যেই পা ডুবাতে যাবে,তখনই নিধি খপ করে নির্জনের হাত ধরে হতাশা মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠলো,

‘পা**গল হয়েছেন আপনি?এতগুলো মাছের পেট কে**টে আংটি বের করবেন?থাক লাগবে না ঐ আংটি।
যদিও আংটি টা নাদিয়া আমার জন্য টাকা জমিয়ে বেশ শখ করে কিনেছিলো।ও শুনলে হয়তো খুব কষ্ট পাবে।আমি ওকে কিছুই বলবো না;বাদ দিন।আপনিতো আর ইচ্ছা করে ফেলেন নি।আচ্ছা,এখানে আর থাকতে ইচ্ছে করছেনা।চলুন যাই।”

“ইশ! কি আনন্দ।হৃদয় ঠিকই বলেছিলো,
‘কিছু ধ্বংস ক্রোধ দিয়ে নয়,নীরবতা দিয়েও করা যায়।’
ভেবে মনে মনে মুচকি হাসলো নির্জন।কিন্তুু ওপরে ইনোসেন্ট মুখ করে অপরাধীর স্বরে বললো,
‘আসলে ভুলটা আমারই ছিলো।আমি যদি খেলতে খেলতে পুকুর পাড়ে না যেতাম,তাহলে হয়তো এই অঘটন ঘটতো না।ওকে, আমি তোমায় এর থেকেও সুন্দর একটি আংটি কিনে দেবো ডার্ক কুইন।আমার সাথে চলো।”

“বলেই নিধির হাত ধরে হাঁটতে থাকল।প্রতিত্তোরে কিছুই বললো না নিধি।প্রিয় বান্ধবীর দেওয়া সবচেয়ে প্রিয় উপহারটি আঙ্গুলে পড়ে এসেছিলো সে।এই তো, গতবছর নাদিয়া ফ্রেন্ডশিপ ডে তে কত ভঙ্গিমা করে আংটি দিয়ে সারপ্রাইজ দিয়েছিলো।নিধিও ওকে ব্রেসলাইট গিফট দিয়ে সারপ্রাইজ দিয়েছিলো।কিন্তুু নিধির উপহার টি নাদিয়া যত্ন করে রাখলেও,নিধি পারলো না।’
কথাগুলো ভাবতেই নিজের কাছেই লজ্জিত হলো নিধি।”

“নির্জন নিধিকে একটি দোকানে নিয়ে গিয়ে কয়েকটি গোল্ডের আংটি দেখিয়ে বললো,
‘দেখোতো কোনটা তোমার পছন্দ?’

“নিধি কি বলবে ভেবে পেলো না।মনম**রা স্বরে বললো,
‘এখন এগুলো আমি চাই না, নির্জন।বিয়ের পর নেবো।আমি বাসায় যাবো,বেশি দেরি হলে মা রাগ করবে।”

“নির্জনের মন ক্ষুন্ন হলো।ভেতর থেকে ‘মন’ হিং**স্র স্বরে বলে উঠলো,
‘দেখেছো,সে তার সো কলড ফ্রেন্ডের
গিফটের কথা কিছুতেই ভুলতে পারছে না।এর মানে তোমার কথা তার কাছে মূল্যহীন।সে অবহেলা করেছে তোমায়।এই মুহূর্তে তাকে কি শাস্তি দেওয়া উচিত ছিলো?”

“অপরপাশ থেকে ‘হৃদয়’ বলে উঠলো,
‘অবশ্যই তার অনামিকা আঙ্গুলের চামড়া কে**টে মরিচের গুঁড়ো, লবণ এবং সরিষার তেল দিয়ে মেখে দেওয়া উচিত ছিলো।কিন্তুু, এই মুহূর্তে তো এটা অসম্ভব।আপাতত তার প্রতি বেশি বেশি ভালোবাসা প্রদর্শন করতে হবে।নইলে বাঘিনী হাত ছাড়া হয়ে যাবে।”

“দিব্যশক্তি দিয়ে ‘মন’ আর ‘হৃদয়ের’ কথপোকথন শুনে বাঁকা হাসলো নির্জন।নিধির হাত ধরে দোকান থেকে রাস্তার এক সাইডে নিয়ে গিয়ে বললো,
‘ওকে জানপাখি,তোমাকে বিয়ের পর মন-প্রাণ উজাড় করে সবকিছু দিবো।তখন কিন্তুু আমায় একদম ইগনোর করতে পারবে না,বলে দিলাম।”

“নির্জনের এহেন কথায়, না চাইতেও মৃদু হাসলো নিধি।নির্জনের সাথে আরও কয়েক মিনিট কথা বলে,সেখান থেকে বিদায় নিলো।আজ আর নিধির গুরুত্বপূর্ণ কথাটি বলা হলো না।”

————
“রাত ১১টা বেজে ৩৪মিনিট।দিগন্ত চেয়ারে বসে পা ঝুলিয়ে, ল্যাপটপে মনযোগ দিয়ে অফিসের কিছু ফাইল রেডি করছিলো।এমন সময় পেছনে দরজা খোলার আওয়াজ পেতেই,ফিরে তাকালো দিগন্ত।
পেছনে তাকাতেই নাদিয়ার সাজ-সজ্জা দেখে বিস্ময়ে চোখ জোড়া বড় বড় হয়ে গেলো দিগন্তের।
অবাক হয়ে বললো,

‘একি,হানি!তুমি দেখি ওপেন লাভ শেপ নাইটি টা পড়ে নিয়েছো?’
বলেই নাদিয়ার আপাদমস্তক চোখ বুলিয়ে শুকনো ঢোক গিলে, সামনে তাকিয়ে দ্রুত গতিতে ল্যাপটপ বন্ধ করে মুচকি হেসে বললো,
‘আজ আর অফিসের ফাইল রেডি করা হবে না।আজ রুমের ফাইল রেডি করা হবে।’
বলেই আবারও দুষ্টু হেসে এগিয়ে গেলো নাদিয়ার পানে।”

“এদিকে মাত্রই ওয়াশরুম থেকে দিগন্তের শখ করে কিনে আনা অদ্ভুত নাইটি পরে বের হয়েছে নাদিয়া।চোখে-মুখে তার লাজুক হাসির ঝলক।সামনে আসা এলোমেলো চুলগুলো থেকে ফোটা ফোটা পানিগুলো টপটপ করে নিচে পড়ছে।
কিছু ফোটা নাইটিতে পরে,নির্দিষ্ট জায়গার কিছু অংশ ভিজে গেছে।সেদিকে তাকিয়ে আবারও শুকনো ঢোক গিলে,দিগন্ত নাদিয়ার হাত আলতো করে টেনে কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো,
‘দিলেতো আমার ঘুমন্ত অনুভূতি গুলো জাগ্রত করে।এখন আমার কি হবে?”

“দিগন্তের কথা শুনে, নাদিয়া কোনোরকমে হাসি আটকে ঠোঁট কা**মড়ে বললো,

‘ইশশ!তোমার মুখে কি কিচ্ছু আটকায় না?ঠোঁট কা**টা কোথাকার!আর গতকাল রাতে বাবার বাসা থেকে তুমি আমাকে এভাবে নিয়ে আসায়,আমার মন টা খুব খারাপ ছিলো।তাই আর এটা পড়িনি।কিন্তুু তোমার অনুরোধ ফেলতে পারলাম না।তবে, তুমি কিন্তুু প্রতিনিয়ত আরও বেশি নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছো।”

“উফফ!তুমি আমার ১৫টা না,২০টা না, ১টা মাত্র বউ।তোমার সামনে আবার কিসের লজ্জা?চলো, এইবার মেইন ফাইল টা রেডি করে ফেলি।’
বলেই দিগন্ত নাদিয়া কে কোলে তুলে নিলো।”

“এদিকে দিগন্ত নাদিয়াকে কোলে তুলে নিতেই, নাদিয়া জোরে জোরে পা দুলিয়ে বললো,
‘এই..এই আমাকে নামাও প্লিজ।’

“কে শোনে কার কথা।দিগন্ত নাদিয়াকে বিছানায় নিয়ে, নাদিয়া যে পাশে ঘুমায় সেই পাশে ওকে শুইয়ে দিয়ে,নিজেও ওর ওপর ভর ছেড়ে দিলো।”

“এইবার নাদিয়ার দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো।অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো,
‘প্লিজ জানু, তোমার এই চালের বস্তার মতো শরীর নিয়ে নিচে নামো।নইলে আমি দম ফেটে ম**রে যাবো।তখন রোমান্সের ১০০টা বেজে যাবে।”

“দিগন্ত বুঝতে পারলো,নাদিয়ার কষ্ট হচ্ছে।তাই নিচে নেমে নিজের বরাদ্দকৃত জায়গায় যেতেই,পিঠে সূচালো কিছুর আ**ঘাত ফুটতেই তীব্র স্বরে চেঁচিয়ে উঠলো,

“আহ!গেলো রে… সব শেষ হয়ে গেলো।”

“এদিকে দিগন্ত কে এভাবে চেঁচাতে দেখে, নাদিয়া তড়িঘড়ি করে উঠে মুখ চেপে ধরে বললো,
‘একদম চেঁচাবে না।আমি জানি, তুমি খুব বেশি ব্যথা পাওনি।আমি সেভাবেই সুই টা তোমার সাইডে সেটআপ করেছি।বিছানায় গেঁথে জাস্ট সুঁইয়ের মাথাটা বের করে রেখেছি।
গতকাল মায়ের সামনে আমায় নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছো।মনে আছে?বলেছিলাম, বাসায় গিয়ে মজা দেখাবো।
গতকাল রাতে খুব টায়ার্ড ছিলাম।তাই আজ দেখিয়েছি।মজাটা কেমন ছিলো জানু?”

“নাদিয়ার এহেন কথা শুনে দিগন্তের চোখ জোড়া আরও বড় বড় হয়ে গেলো।মুখ থেকে নাদিয়ার হাত ঝটকা দিয়ে সরিয়ে উত্তেজিত স্বরে বললো,
‘তুমি জানো,তুমি আমার কতো বড় ক্ষতি করতে যাচ্ছিলে?এই সুঁইয়ের আ**ঘাত যদি অন্য কোথাও লাগত,তাহলে আমি বেঁচে থাকতেও তোমাকে কুমারীর মতো জীবন কা**টাতে হতো।”

“দিগন্তের এহেন কথা বুঝতে নাদিয়ার প্রায় ১মিনিট সময় লাগল।
যখন বুঝলো,ততক্ষণে দিগন্ত নাদিয়ার ঠোঁট জোড়া আবদ্ধ করে নিয়েছে।গভীর চুমু দিয়ে বললো,

‘যেহেতু তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি, তাই ফাইল টা রেডি করা যাক।’
বলেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো নাদিয়াকে।
নাদিয়া বেচারি দিগন্ত কে শাস্তি দিতে গিয়ে, নিজেই রোমান্টিক শাস্তি পেয়ে গেলো।হায় কপাল!”

———
“সময় চির বহমান, যেমন নদীর জল কখনও থেমে থাকে না। অতীতের স্মৃতি তার স্রোতে ভেসে যায়, ভবিষ্যতের প্রতীক্ষায় নতুন অধ্যায় আসে।
এই স্রোতে গাঁথা থাকে মানুষের হাসি-কান্না, জয়-পরাজয়।
সময় সবকিছু বদলায়, আবার কিছুই বদলায় না—মনের গভীরে থেকে যায় চিরন্তন সেই অনুভূতি। ”

“দেখতে দেখতে কে**টে গেলো দেড় মাস।তোহার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে।তোহার মন কিছুটা খারাপ।কারণ দিন-রাত মাহিরের প্রেমে হাবুডুবু খাওয়াতে, পড়াশোনায় তেমন মন বসাতে পারেনি।যার কারণে পরীক্ষা আশানুরূপ হয়নি।এখন শুধু রেজাল্টের জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষা।
তবে মাহির তোহা কে স্বান্তনা দিয়ে বলেছে,
পরীক্ষা খারাপ হলে,এই নিয়ে তার কোনো মাথা ব্যথা নেই।তার স্বপ্নচারিনী ফেইল করলে,তাকে নিয়ে
সাজেক ঘুরতে যাবে।সাজেকের মনরোম পরিবেশ দেখে মন চাঙ্গা হয়ে যাবে।”

“মাহিরের এমন স্বান্তনার বাণী শুনে, তোহা হাসবে না কাঁদবে ভেবে পেলো না।”

“দেখতে দেখতে নিধি এবং তোহার বিয়ের আলোচনা শুরু হয়ে গেলো।”

“রফিক মির্জা একই সাথে নির্জন এবং মাহির কে তার বাসায় নিমন্ত্রণ করেন।মাহির তার পরিবার সহ এলেও,নির্জন একাই এসেছে।অবশ্য সেটা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই রফিক মির্জার।কারণ, তিনি নির্জনের এলাকায় খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পেরেছেন,
‘এই যুগে নির্জনের মতো চরিত্রবান, মহৎ,ভদ্র ছেলে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
তাই সে নির্জনের ওপর সম্পূর্ণ ভরসা করে, নির্জনের সাথে তার বড় মেয়ে নিরুপমার বিয়ে দিবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”

“আজ মির্জা বাড়িতে রফিক মির্জার কিছু ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন এসেছে।তাদেরকে রফিক মির্জা নির্জন এবং মাহিরের সম্পর্কে সবকিছু বলেছে।
ডাইনিং টেবিলে নির্জন চুপচাপ খেয়ে গেলেও,বিষদ আলোচনা জুড়ে দিয়েছে মাহির।রফিক মির্জাও জমিয়ে মাহিরের সাথে আলোচনা করছেন,আর কিছুক্ষণ পর পর মুখে লোকমা তুলছেন।”

“আত্মীয়-স্বজনরা নির্জনের বাহ্যিক চেহারা এবং ভদ্রতা পছন্দ করলেও,তাদের বেশি মনে ধরেছে মাহির কে।নিধি এবং তোহার কাজিনরা সবাই মাহিরের সাথে বেশ ভাব জমিয়েছে।মাহিরও সবার সাথে ‘হাই,হ্যালো’ করছে।”

“এদিকে নির্জন এদিক-সেদিক চোখ বুলিয়ে নিধিকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।তাহমিনা বেগম বিষয়টি বুঝতে পেরে মুচকি হেসে,নিধি কে ডাকতে গেলেন।প্রথম দিনের মতো আজ নির্জন এত কথা না বললেও, তাহমিনা বেগম নির্জন কে মেয়ের জামাই হিসাবে বেশ পছন্দ করেছেন।তার মতে, ‘ছেলেটা মাত্রাতিরিক্ত ভদ্র।’

“তাহমিনা বেগম নিধির রুমে যেতেই দেখলেন, নিধি ধূসর রঙা লং গাউন পড়ে চুলগুলো এপাশ-ওপাশ করে ঢং করছে।’
তাহমিনা বেগম গম্ভীর স্বরে বললেন,
‘অনেক সেজেছিস,এখন নিচে যা।তোর হবু স্বামী তোর জন্য অপেক্ষা করছে।’

“তাহমিনা বেগমের মুখে আকস্মিক এহেন বাক্য শুনে ভড়কে গেলো নিধি।ভাবলো,
‘এটা কি সত্যি শুনলাম?ভূতের মুখে দেখি জ্বিন জ্বিন।হায় আল্লাহ!মা দেখি, আমার মতো রোমান্টিক হয়ে গেছে।অবশ্য বুঝতে হবে,ডিজিটাল যুগের মা।’
ভেবে ফিচেল হেসে পেছনে তাকাতেই দেখলো, তাহমিনা বেগম চলে গেছে।
বিস্ময়কর চাহনি নিক্ষেপ করে ভাবলো,
‘ যাহ!মা মনে হয় লজ্জা পেয়েছে, হিহিহি।’
বলেই আবারও আয়নার সামনে কিছুক্ষণ ঢং করে, নিচে চলে গেলো।”

———-
“এদিকে সবার আড়ালে মাহির তোহা কে চোখ এবং হাতের ইশারা করে ছাদে যেতে বলেছে।”

“মাহিরের কথা অনুযায়ী তোহা চারিদিকে সতর্ক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,ছাদে গিয়ে মাহিরের জন্য অপেক্ষা করতে থাকল।প্রায়
৫-৬মিনিট পর মাহির ছাদে যেতেই,তোহার মনে প্রজাপতিরা উড়তে থাকল।কতদিন পর দু’জনে আবার একসাথে দেখা করলো।সর্বশেষ মাহিরের সাথে চেম্বারে দেখা হয়েছিলো।অতঃপর আজ।’
ভেবে গাঢ় নিঃশ্বাস ফেললো তোহা।”

“মাহির তোহার কিছুটা কাছাকাছি এসে,তোহাকে আপাদমস্তক দেখে মুচকি হেসে বললো,
‘স্বপ্নচারিনী গাঢ় সবুজ রঙের শাড়িতে ভীষণ সুন্দর লাগছে তোমায়।আমার তো এক্ষুনি কত কিছু করে ফেলতে ইচ্ছে করছে।ভাগ্যিস, এখনও বিয়ে হয়নি।”

“শুরু হয়ে গেলো আবার নির্লজ্জ টাইপ কথা।তোহা লজ্জা পেয়ে যখনই চলে যেতে নিবে,তখনই মাহির খপ করে হাত ধরে বললো,
‘তোমার বোন আর তোমার বিয়ের কথা কিন্তুু পাকাপাকি হয়ে গেছে।নিশ্চয়ই শুনেছো।তোমাদের দুই বোনের বিয়ে একই দিনে হবে।
বিষয়টি আমার এবং নির্জন ভাইয়ার কাছে সুখের হলেও,তোমার বাবা-মায়ের কাছে খুব কষ্টের।কিন্তুু কিছু কিছু কষ্ট মানুষের মনে হাসি ফুটিয়ে তোলে।এটাই দুনিয়ার জটিল বাস্তবতা।”

“তোহা মাথা নাড়িয়ে সায় জানিয়ে মৃদুস্বরে বললো,
‘হাত টা ছাড়ুন, প্লিজ।”

“তোহা বলতেই মাহির হাত টা ছেড়ে দিলো।তোহার কিছুটা কাছাকাছি এসে বললো,
‘আগামী রাত টুকু শুধু দূরে থাকার সময় পাবে,তারপর আর তোমার হাত ছাড়ছি না তোহা রানী।তুমি বললেও না।’
বলেই মুচকি হেসে একটি কবিতা আওড়ালো,

“লজ্জা ভা””ঙার চুম্বন”

উড়ে যাবে লজ্জা, মুছে দেবো সাজ-সজ্জা,
এসো কাছে, প্রিয়া, ভা””ঙো মনের ব্যাকুলতা।
মধুর কথার সুরে, হৃদয়ে বাঁধা প্রেমের গান,
তোমার ঠোঁটে হাসি ফুটুক, চুম্বনে মিটুক অভিমান।

চোখের পলকে ভাসে, স্বপ্নের রঙিন ছোঁয়া,
লাজুক হাসির আভায়, কাটুক সময়ের প্রহর রোয়া।
চুম্বনেতে মিশে থাকুক, হৃদয়ের গভীর প্রেম,
লজ্জা নয়, ভালোবাসায় ভাসবো মোরা,
খেলবো সুখের গেম।”

~মেহের~

“ছিঃ ছিঃ! কি নির্লজ্জ কবিতা।শুনেই গা গুলিয়ে আসলো।’
ভেবে, তোহা মাহিরের দিকে একবার কটমটিয়ে তাকিয়ে,দুই হাত দিয়ে শাড়ি উঁচিয়ে,এক দৌড়ে নিচে চলে গেলো।’
সেদিকে তাকিয়ে দুষ্টু হাসলো মাহির…হাহাহা।”

———-
“এই প্রথম নিধির রুমের বেলকনিতে সরাসরি প্রবেশ করলো নির্জন।নিধি নির্জন কে দোলনা দেখিয়ে বললো,এখানে বসে সে তার প্রিয়তমর চিঠির জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতো।মাঝে মাঝে দু’চোখ বেয়ে অঝোরে আবেগের অশ্রু ঝরতো।আরও অনেক অনুভূতি শেয়ার করলো।”

“নিধির কথা শুনে মুচকি হাসলো নির্জন।”

“আগামীকাল শুধু এই বাড়িতে স্থায়ী ভাবে থাকতে পারবে।তারপর সবচেয়ে প্রিয় মানুষদের ছেড়ে শ্বশুর বাড়িতে পা রাখতে হবে।’
আকস্মিক কথাগুলো ভেবে,নিধির মন টা বিষন্নতায় ছেয়ে গেলো।”

“নির্জন ভ্রুকুটি করে বললো,
‘এইমাত্র হাসছিলে,এখন আবার মন খারাপ কেনো ডার্ক কুইন?’

“নিধির নেত্রকোণায় কিছুটা পানি জমা হয়েছে।সেগুলো কে গাল বেয়ে পড়তে না দিয়ে,চোখজোড়া বন্ধ করে আবার খুললো।অতঃপর করুণ স্বরে বললো,

‘নির্জন, সেদিন রমনার বটমূলে আপনাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার জন্য গিয়েছিলাম।আমার মনে হয়েছিলো ফোনের থেকে কথাগুলো সরাসরি বললে বেশি ভালো হবে।কিন্তুু, কিছু অযাচিত কারণে কথাগুলো আর বলা হয়ে ওঠেনি।”

“নির্জন গম্ভীর স্বরে শুধালো,
‘কি কথা বলবে ডার্ক কুইন?এখন বলো।’

” ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে নিধি বলতে শুরু করলো,
‘একটা মেয়ে যখন তার প্রিয় বাসস্থান,প্রিয়জনদের ছেড়ে শ্বশুর বাড়িতে যায়,তখন মেয়েটি মনে অনেক আশা নিয়ে বাড়িটিতে পদার্পণ করে।সে চায়,নিজের বাড়ির মতো,শ্বশুর বাড়িতেও শান্তিপূর্ণ ভাবে নিঃশ্বাস নিতে।
আমার বাবার প্রিয় একটি গল্প আছে,’দেনা-পাওনা’
সেই গল্পের আসল চরিত্র ছিলো ‘নিরুপমা’।গল্পটি নিশ্চয়ই পড়ে থাকবেন।”

“ভারী নিঃশ্বাস ফেললো নির্জন।বুকের ওপর হস্তদ্বয় ভাজ করে বললো,
‘হুম,তারপর?’

“নিধি আবার বলতে শুরু করলো,
‘সেই গল্পে নিরুপমা শ্বশুর বাড়ি নামক যৌতুক লোভী রাক্ষসপুরীর জন্য,স্বামীর কাছে যাওয়ার আগেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।’
আমার বাবার নাকি এই গল্প পড়ে সর্ব প্রথম চোখজোড়া ভিজেছিলো।তার প্রতিটি পাতায় যৌতুক লোভীদের সম্পর্কে বিষদ বর্ণনা থাকত এবং যেখানেই এই ধরণের কাহিনী হতো,তিনি সেখানে গিয়ে তীব্র প্রতিবাদের সুর তুলতেন।আমার বাবা তার সাংবাদিক জীবনে অনেক সংগ্রাম করে এই পর্যন্ত এসেছেন।আজ তিনি রিটায়ার্ড করার পরেও তাকে সবাই সম্মানের চোখে দেখে।”

“তো সেই গল্পের নামটি থেকেই আমার জন্ম হওয়ার পর,বাবা শখ করে আমার নাম রেখেছেন ‘নিরুপমা’।তার কাছে আমি ‘অতুলনীয়া’।ছোটবেলা থেকে আমাকে এবং তোহাকে খুব আদর এবং যথাযথ স্বাধীনতা দিয়ে বড় করেছেন তিনি।”

“আমি আমার কিছু বান্ধবীর জীবন কাহিনী শুনেছি,তাদের কাছে শ্বশুর বাড়ি মানে রাক্ষসপুরী।যেখানে শুধু অকৃতজ্ঞতা এবং অত্যাচারের বন্যা বয়ে যায়।তাদের স্বামীরাও নাকি সেই অত্যাচারে হাতে-হাত মিলিয়ে সামিল হয়।”

“এখন আমি আপনাকে শুধু এটাই অনুরোধ করবো,
আমি আপনার বাসায় গিয়ে আপনার এবং আমার শাশুড়ির সেবায় নিমগ্ন হবো,আমি একজন ভালো বৌমা এবং ভালো বউ হতে চাই।পেছনের সকল খারাপ অভ্যাস গুলো ত্যাগ করতে চাই।তার পরিবর্তে আপনার কাছে শুধু স্বাধীনতা চাই।আমি জানি,আপনি আমায় ভীষণ ভালোবাসেন।আমি যা চাইবো,তাই আপনি করবেন।তবুও বিয়ের আগে কথাগুলো বলা অতি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি।”

“এতক্ষণ যাবৎ নিধির আবেগী কথাগুলো নির্জনের কাছে অহেতুক টেপ রেকর্ডের মতে লাগছিলো।তবুও
এই মুহূর্তে এগুলো কে ইগনোর করা মানে চরম বোকামি হবে।তাই চেহারায় আবেগী ভাব লেপ্টে নির্জন নিধির হাত ধরে মুঠোবন্দি করে বললো,

‘আমি তোমাকে কথা দিলাম ডার্ক কুইন,আমার থেকে এই ধরণের কষ্ট তুমি কখনোই পাবে না।আমাকে
ভালোবাসার সর্বোচ্চ স্বাধীনতা তুমি পাবে।এতো ভালোবাসবো তোমায়,যে তুমি নিজেই অবাক হয়ে বলবে,
‘একজন পুরুষ একজন নারীকে এতটাও ভালোবাসতে পারে?’
আমার তীব্র ভালোবাসার বাহুডোরে শক্ত করে বেঁধে রাখবো তোমায়।এতটা শক্ত করে বাঁধবো, যেনো কখনো ছুটে যাওয়ার মতো কল্পনাও না করতে পারো।’
বলেই,হাস্কি ভয়েসে আওড়ালো,

“আমার বক্ষপিঞ্জরে চলবে তোমার স্বাধীন বিচরণ।
অনুভূতির সাগরে ভাসাবো তোমায়
বলবে তুমি,এখানেই হয় যেনো
আমার সুখের শেষ মরণ।”

নির্জনের কথার ভাবার্থ ইতিবাচক ভাবে নিয়েছে নিধি।মুখে অনাবিল হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো,
‘আমাকে এতটা বোঝার জন্য থ্যাংক ইউ সো মাচ নির্জন; এন্ড আই লাভ ইউ।”

“নির্জন মুচকি হেসে বললো,

“I love you excessively my Dark Queen.”

#চলবে…