Wednesday, June 18, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2398



অজানা_অনুভূতি পার্ট:১৪

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট:১৪

#Rabeya Sultana Nipa

 

ফারহানদের সবাই এসে গেছে।প্রাপ্তিদের মতোই ফারহানদের ফ্যামিলি ও বড়।প্রাপ্তিদের সবাই অনেক খুশি নিজেদের মতো মেয়েক বড় ফ্যামিলিতে বিয়ে দিচ্ছে।আর ফারহান ছেলেটাও ভালো। প্রাপ্তির সেজো কাকী তো বলেই পেললেন নীরাকে, তুই যদি ওই রকম কাজটা না করতি প্রাপ্তির মতো আজ তোর ও বড় ঘরে বিয়ে দিতো।
কাকীর কথাটা শুনেই নীরার মন খারাপ হয়ে গেলো।

সেজো কাকী -নীরা আমি কিন্তু কথাটা সে ভাবে বলতে চাইনি।প্লিজ তুই রাগ করিস না।

নীরা -কাকী রাগ করার কি আছে।মৃদুল হয়তো বড়লোকের ছেলে না। আর সব দিক তো ঠিক আছে।

প্রাপ্তি মা এসে দেখে নীরার মন খারাপ হয়ে আছে।
প্রাপ্তির মা-তোরা এইখানে? ফারহানদের সবাই এসেছে। নীরা প্রাপ্তিকে রেডি করেছিস তো?

নীরা-বড় মা প্রাপ্তিকে অনেক বার বলেছি রেডি হতে।কিন্তু ওই কোনো কথায় শুনছে না।তাই আমি এইদিকে চলে আসছি।দেখেছি ফারহান ভাইয়ার ছোটো বোন আরো কয়েকটা মেয়ে ওর রুমে ঢুকে ওর সাথে কথা বলছে।

প্রাপ্তির মা-তুই যা ওর রুমে।ও এমনি এমনি রেডি হবে না।তুই গিয়ে রেডি করিয়েদে।ও রেডি না হলে তোর আব্বু আর বড় আব্বু সবার উপর রাগ দেখাবে।
ঠিক আছে বলে নীরা উঠে প্রাপ্তির রুমে গেলো।ফারহানের বড় ভাবী প্রাপ্তির সাথে বসে কথা বলছে।

নীরা -ভাবী পরে কথা বলেন।আমি আগে ওরে রেডি করে দিয়ে যাই।

বড় ভাবী -কি আর রেডি করাবে প্রাপ্তিকে এতেই অনেক ভালোলাগছে।

নীরা -না বড় মা বলছে শাড়ী পরাতে।

বড় ভাবী -আচ্ছা ঠিক আছে।
তুমি রেডি করাও আমি আসতেছি।

নীরা -ভাবী ফারহান ভাইয়া এখনো আসে নাই?

বড় ভাবী -আসতেছে।আমাকে বলেছে ওর একটা কাজ আছে, কাজ শেষ করেই চলে আসবে।
কথাটা শেষ করেই ফারহানের বড় ভাবী রুম থেকে চলে গেলো।

নীরা -বসে থাকিস না উঠ।

প্রাপ্তি-সকাল থেকে আয়ান কে অনেক বার ফোন করেছি।ফোন অফ করে রেখেছে।

নীরা- এখনো তুই আয়ানের কথা মাথায় নিয়ে বসে আছিস।আয়ান কে ভুলার চেষ্টা কর।শুধু শুধু এতে অনেক গুলো মানুষ কষ্ট পাবে।
কথা গুলো বলছে আর প্রাপ্তিকে শাড়ী পরাচ্ছে।

প্রাপ্তি কিছু বলছে না।চুপচাপ পুতুলে মতো দাঁড়িয়ে আছে আর ভাবছে কয়েদিন আগেও শুনলাম ফারহান একটা মেয়েকে ভালোবাসে তাহলে ওকে বিয়ে না করে আমাকে কেন করছে?নীরাকে আবার জিজ্ঞাস করবো? না থাক।

নীরা -কিরে চুপ হয়ে আছিস কেন?

প্রাপ্তি -কিছুনা ভাবছি আমি যদি চলে যাই তোর মন খারাপ হবে না?

নীরা -হলে কি তুই কখনো বিয়ে করবি না?

প্রাপ্তি -তুইও না!

প্রাপ্তিকে সুন্দর করে সাজিয়ে নীরা অনেকক্ষণ তাকিয়ে আজ তো ফারহান ভাইয়া চোখ ফিরাতেই পারবেনা।

নীরা কথাটা শেষ করতেই ফারহান এসে বললো কাকে দেখে আমি চোখ ফেরাতে পারবোনা নীরা?

প্রাপ্তি কই নীরা?ওইদিকে ফিরে কে তাকিয়ে আছে?

নীরা চোখে ইশারা দিয়ে ফারহানকে রেখে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

ফারহান নীরা যাওয়ার সাথে সাথে দরজাটা বন্ধ করে দিলো।
দরজা বন্ধের আওয়াজ শুনে প্রাপ্তি সামনের দিকে ফিরে তুমি দরজা আটকাচ্ছো কেন?
ফারহান প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে নীরাতো সত্যি বলেছে বুড়িটাকে যে এতো সুন্দর লাগছে চোখ ফিরাইতে পারছিনা।

প্রাপ্তি-তোমার এইসব ফাজলামি ভালো লাগেনা। দরজা বন্ধ করলা কেন?

ফারহান- তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো। কথা গুলো শেষ করে চলে যাবো।

প্রাপ্তি- এখন কিসের কথা তোমার?

ফারহান- তুমি সত্যি কি এই বিয়ে মন থেকে করতে চাইছো।নাকি সবার কথা রাখতেছো? আমি চাই তুমি পুরোপুরি সব ভুলে আমার কাছে আসো। যদি তোমার সময় লাগে নিতে পারো।

প্রাপ্তি কিছু বলছেনা দেখে ফারহান বললো
ভয় পেয়েও না যদিও এখন বিয়েটা হয় যতদিন তুমি না চাইবে আমি কখনো তোমার কাছ থেকে স্বামীর অধিকার চাইবোনা।

প্রাপ্তি- চাইবে কেন? তোমার তো ভালোবাসার মানুষ আছেই।আমি একা আয়ান কে ভালোবেসে দোষ করিনি।তুমিও অন্য কাউকে ভালোবাসো।তুমি তারপর ও কেন এই বিয়েটা করছো আমি বুজতেছিনা।

প্রাপ্তির কথা শুনে ফারহান হাঁসি দিয়ে বললো এক সাথে বিয়ের পরে বুজিয়ে বলবো।

দরজা ধাক্কানো শব্দ শুনে ফারহান মুখে বিরক্তির চাপ নিয়ে দরজা খুলতে খুলতে বললো মন খুলে যে ২ মিনিট কথা বলবো তারও সময় দিবেনা এরা।

সেজো কাকী আর ফারহানের বড় ভাবী ফারহান কে দেখে অবাক হয়ে তুমি এতোক্ষণ এই রুমে ছিলে?

ফারহান-না আসলে ওর সাথে আমার কিছু কথা ছিলো সবার সামনে বলতে পারছিলাম না তাই রুমে চলে আসলাম।
তারা রুমে ঢুকে দেখে প্রাপ্তি বসে আছে।

বড় ভাবী-কি ব্যাপার প্রাপ্তি! কি এতো কথা যা এতো দিনে বলেও শেষ করতে পারচ্ছোনা।?

প্রাপ্তি-(রাগী চোখ নিয়ে ফারহানের দিকে তাকিয়ে)আমি কিছু বলিনি।যা বলেছে ওই বলেছে।

সেজো কাকী -নীরা এইজন্যই আমাদের এইদিকে আসতে দিচ্ছিলোনা।
যাই হোক প্রাপ্তিকে সবাই ড্রইংরুমে ডাকছে।

বড় ভাবী ফারানের পাশে দাঁড়িয়ে আস্তে করে আর বেশী দিন নেই সামনের সাপ্তাহে
বিয়ের দিন ঠিক করেছে বাবা।

ফারহান-বেশী দিন না মানে।তারপরেও তো অনেক দেরি।একটা দিন মানে একটা বছর।

বড় ভাবী -ঠিক আছে বাবাকে গিয়ে তাহলে বলি।ফারহান বলেছে এক সাপ্তাহ নাকি অনেক দেরি।

ফারহান -ধুতঃ তুমিও না।

সেজো কাকী -আচ্ছা অনেক হয়েছে দেবর আর ভাবী বাসায় গিয়ে কথা বলবেন।এখন চলেন।
সবাই খাওয়াদাওয়া শেষ করে ড্রইংরুমে বসে আছে।
প্রাপ্তিকে নিয়ে ড্রইংরুমে বসানো হলো।ফারহানের বাবা বললো
বড় বউ ফারহানকে ডাকো তো আংটি টা পরিয়ে দিক।আমার কাজ আছে যেতে হবে।
ফারহান লজ্জা লজ্জা একটা ভাব নিয়ে তার বাবার পাশে দাঁড়ালো।

ফারহান-বাবা ডেকেছো?

ফারহানের বাবা-বাবা এতো লজ্জা পেতে হবে না।বিয়েটা আজি দিয়ে দিচ্ছিনা।এখন প্রাপ্তির পাশে বসো আর আংটি টা পরিয়ে দাও।

ফারহানের বাবার কথা শুনে সবাই হাঁসছে।
সবার হাঁসি মধ্যে দিয়ে ফারহান আংটি পরাচ্ছে আর প্রাপ্তির কানে কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলছে
কি! মহারাণী বিয়েটা তাহলে শেষমেশ আমাকেই করছেন।আর আমাকে দেখেছো একটা বুড়ী কপালে জুটেছে।

প্রাপ্তি ফারহানের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।
ফারহান- ওই ভাবে তাকালে সবাই বলবে এখনি আমাকে না দেখে থাকতে পাচ্ছোনা।বিয়ের পরে কি হবে আল্লাহ ভালো জানে।
কথা গুলো বলছে আর মনে মনে হাঁসছে।এখন যতো কিছু বলিনা কেন কিছু করতে পারবেনা সবার সামনে।এই সুযোগ তো আর ছাড়া করতে পারিনা।

ফারহানের বাবা বললো আমি এখন তাহলে আসি। আমার কিছু কাজ আছে। ফারহান! সবাইকে নিয়ে বাসায় চলে আশিস।

প্রাপ্তির মেজো কাকী প্রাপ্তির পাশে গিয়ে বললো ফারহানের বাবা চলে যাচ্ছে ওনাকে সালাম করো।

প্রাপ্তি ভাবছে কিভাবে সালাম করবো? মুখে বলবো নাকি পা ছুঁয়ে।
ফারহান কে পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে

প্রাপ্তি -ফারহান একটা কথা বলি হাঁসবা না তো?

ফারহান-না বলো কি?

প্রাপ্তি -মেজো মা বলেছে তোমার বাবাকে সালাম করতে।বলেই ওনি চলে গেছে।কিন্তু কিভাবে সালাম করবো মুখে না পা ছুঁয়ে।

ফারহান -(ফারহান হাঁসিটা চেপে রেখে)তোমার যেই ভাবে ইচ্ছা করতে পারো।এতে বাবা কিছু মনে করবে না।

ফারহান মনে মনে ভাবছে সব মেয়েরাই মনে হয় এই সময় সব গুলিয়ে পেলে ভয়ে।তখন নিজের জানা কথা গুলোও অজানা হয়ে যায়।

চলবে,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ১৩

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ১৩

#Rabeya Sultana Nipa

 

আয়ানের কথা গুলো শুনে প্রাপ্তির অনেক কষ্ট লাগছে। যেই সম্পর্কের মাঝে কোনো বিশ্বাস নেই সেই সম্পর্ক রেখেই বা লাভ কি।সারাজীবন কষ্ট ছাড়া কিছু থাকবেনা।

কথা গুলো ভাবতে ভাবতে প্রাপ্তি ফারহানের রুমে গেলো।

ফারহান ঘুমাচ্ছে। মনে হচ্ছে কতো দিন সেই ঘুমায়নি।সত্যিই তো সেই দুইদিন থেকে ঘুমায়নি।আমিও বোকার মতো কি ভাবছি।
ফারহান কে ঘুমে দেখে প্রাপ্তি চলে আসার সময় প্রাপ্তির মেজো কাকা দেখে প্রাপ্তি ফারহানের রুম থেকেই আসতেছে।

মেজো কাকা-কি ব্যাপার প্রাপ্তি! তুমি ফারহানের রুমে কেন গিয়েছিলে? তুমি জানোনা ও ঘুমাচ্ছে?

প্রাপ্তি-কাকাই ওর সাথে আমার কিছু কথা ছিলো তাই এসেছি।

মেজো কাকা-আচ্ছা!তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে। আমার রুমে আয়।

কথাটা বলার সাথে সাথেই প্রাপ্তির গলাটা শুকিয়ে গেলো।কাকাই কি বলবে আমাকে।কাকাই কি কিছু জানে নাকি? আল্লাহ ভালো জানে।

মেজো কাকা-কি হলো আসো।

প্রাপ্তি-জ্বী!
প্রাপ্তি তার কাকার পিছন পিছন রুমে গেলো।
মেজো কাকা-বসো এইখানে।এমন ভাব করছো মনে হয় কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করছো।

প্রাপ্তি-না কাকাই।আমি কিছু নিয়ে চিন্তা করছিনা আপনি কি বলবেন বলেন।

নিচের দিকে তাকিয়ে প্রাপ্তি কথা গুলো বললো।

মেজো কাকা-আমি চাই না ভাইয়ার কানে কোনো কিছু যাক।তুমি মানুষকে যতোটা বোকা ভাবো কেউ এতোটা বোকা নয়।সেইদিন তোমার মা তোমার বিষয় এমন কিছু জেনেছে যা শুনে অজ্ঞান হয়ে গেছে।এইটা আমি নিশ্চিত। তবে আমি তোমাকে এই নিয়ে কিছু বলতে চাইনা।তোমার ফারহানের সাথে যে বিয়েটা হচ্ছে এইটা তো নিশ্চয় শুনেছো? ফারহান কিছু দিনের সময় নিয়েছে।তোমার কি এই ব্যাপারে কিছু বলার আছে?

প্রাপ্তি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে, অনেকক্ষণ পরে মাথা নাড়িয়ে না বললো।

মেজো কাকা-প্রাপ্তি! এই কথাটা ভাবতে তোমার তো এতো সময় নেওয়ার কথা না।
কোনো সমস্যা থাকলে বলতে পারো।

প্রাপ্তি-না কাকাই আমার কোনো সমস্যা নেই।তোমরা যা ভালো মনে করো তাই করো।তোমরা তো আর আমার খারাপ চাইবে না।
প্রাপ্তি তার কাকাইয়ের সামনে কথাটা বলেছে ঠিকে কিন্তু তার খুব কষ্ট হচ্ছে।

মেজো কাকা-তুই তো আমাদের মেয়ে। আরমাদের মেয়ের কখনোই খারাপ চাই না।আচ্ছা আবারও আমি ফারহানের সাথে কথা বলি।দেখি ও কি বলে।

প্রাপ্তি আর কিছু না বলে নিজের রুমে চলে এলো।অনেক কষ্ট হচ্ছে তার। অনেক কান্ন করছে সে।আয়ানকেও অনেক বার ফোন দিয়েছে।সে রিসিভ করছেনা।হয়তো সে আর কখনোই করবে না।না দেখার ভালোবাসা টা যে এতো কষ্টদায়ক এইটা আমি কাউকে বুজাতে পারবোনা।
কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই কখন প্রাপ্তি ঘুমিয়ে পড়লো তার মনে নেই।

সকাল বেলা বাচ্চাদের চেঁচামিচিতে প্রাপ্তির ঘুম ভেঙে গেলো।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ১১ টা বেজে গেছে।তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ড্রইংরুমে গিয়ে দেখে সবাই আড্ডা দিচ্ছে।প্রাপ্তিকে দেখে নীরা বললো
তোকে অনেক বার ডাকতে গিয়েছি তোর রুমের দরজা বন্ধ দেখে বড় মা বললো না ডাকতে তাই আর ডাকিনি।

প্রাপ্তি-ওওও! কখন সকলা হলো বলতে পারিনি।
আচ্ছা এইখানে কিসের আড্ডা হচ্ছে?

নীরা -কেন! তুই জানিস না?সব কিছুতো তুই কাল রাত ঘটিয়ে দিলি এখন বলছিস কিছুই জানিস না।

সেজো কাকী -নীরা তুইও না! ও এখন জেনেও না জানার ভান করবে।দেখিস না নিজে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে আর আমাদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে।

প্রাপ্তি-কাকী বিশ্বাস করো আমি কিছু বুজতেছিনা।

প্রাপ্তির মা রান্নাঘর থেকে এসে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে তোকে আমি বুজিয়ে বলছি।তুই আম্মুর কথা রেখেছিস আম্মু এইটাতে অনেক খুশি। সকালে ঘুম থেকে উঠে যখন তোর কাকাই বললো তুই এই বিয়েতে রাজি সাথে সাথেই মনে হলো আমি একদম সুস্থ হয়ে গেছি।
প্রাপ্তি আর কিছু না বলে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে একটা হাঁসি দিলো।এই হাঁসির মাঝে অনেক কষ্ট লুকিয়ে আছে তা কখনো কাউকে দেখনো সম্ভব না।
নীরাও কাছে এসে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে সত্যি বলছি প্রাপ্তি আমিও চেয়েছিলাম তুই ফারহান কে বিয়ে কর।তোকে কখনো বলিনি তুই হয়তো আমার উপর রাগ করবি তাই।

মেজো কাকী -আচ্ছা তোমরা ৩ জনে মিলে কি ফিসফিস করছো আমাদেরকে রেখে।

নীরা-মা! ফিসফিস তো সবে মাএ শুরু।
আচ্ছা সবাইকি একটা বিষয় খেয়াল করেছো। প্রাপ্তি বিয়েতে হ্যাঁ বলার সাথে সাথেই এই বাড়ীর আনন্দ গুলো আবার ফিরে এসেছে।
ফারহান ভাইয়া যে ৩/৪ মাসের সময় নিয়েছিলো সেটাও আর হচ্ছেনা।তার ফ্যামিলিকে নিয়ে কালকেই নাকি আসবে।
নীরার কথা শুনে প্রাপ্তি অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। এতো কিছু হয়ে গেছে শুধু কি একটা হ্যাঁ জন্য সব আটকে ছিলো।

সেজো কাকী -প্রাপ্তি ওই ভাবে নীরার দিকে তাকিও না।আরো ও আছে। বড় ভাইয়া, মেজো ভাইয়া তোমার কাকাই এক সাথে বাজারে গেছে কেনাকাটা করতে।
প্রাপ্তির মা -আচ্ছা তোরা কি বলতো? ঘুম থেকে উঠে এসে মেয়েটা কিছু খায়নি।আর তোরা কি শুরু করেছিস এইগুলো।এইসব নিয়ে পরে আলোচনা করা যাবে।আগে নাস্তাটা খেয়েনে।
প্রাপ্তি নাস্তা মুখে নিবে,নাজিফা হাতে ফোন নিয়ে এসে বললো
নাজিফা-অনেকক্ষন থেকে তোমার ফোন বাজতেছে তাই আসার সময় নিয়ে এলাম।
প্রাপ্তি ফোন হাতে নিয়ে দেখে ফারহান।
সেজো কাকী প্রাপ্তির মুখের দিকে তাকিয়ে ফারহান ফোন করেছে তাইনা।আজ দুইজনে কি বলবে আমরা শুনবো এখানেই কথা বলো উঠতে পারবেনা।কি বলিস নীরা এইটা কি মিস করা যাই।প্রাপ্তি আর ফারহান এই ফাস্ট সব ঠিক হওয়ার পর কথা বলছে।
কি হলো রিসিভ করো!

প্রাপ্তি -পরে কথা বলবো। এখন কি বলবো?

সেজো কাকী -আচ্ছা বুজেছি,লাউড স্পিকার দিতে হবেনা,দেখি তুমি কি বলো সেটাই শুনবো।

এইদিকে সবাই হাঁসাহাঁসি করছে।
কোনো উপায় না পেয়ে প্রাপ্তি ফোন রিসিভ করলো।

প্রাপ্তি- হ্যাঁ বলো?

ফারহান-ঘুম থেকে কখন উঠছো? সকালে ঘুমে ছিলা তাই বলে আসতে পারিনি।

প্রাপ্তি-হুম।

ফারহান-তুমি নাকি এই বিয়েতে রাজি হইছো?

প্রাপ্তি-হুম

ফারহান- তখন কিন্তু ৩/৪ মাসের সময় আমি আমার জন্য নি নাই।নিয়েছি তোমার জন্য। আয়ান কে ভুলার জন্য তোমার একটা সময়ের দরকার ছিলো।কিন্তু দেখছি তুমি অনেক ফাস্ট। সময়ের দরকার নেই।তাই কাকাই যখন আমাকে বলেছে তুমি এই বিয়েতে রাজি তাই আমিও আর সময় দিলাম না।

কথা গুলো শুনে প্রাপ্তির অনেক রাগ হচ্ছে কিছু বলতে পারছে না হুম ছাড়া।

প্রাপ্তি-হুম।

ফারহান -তোমার কি কোনো কথা নেই।হুম হুম ছাড়া।হুম করো আর যাই করো প্লিজ কাল এই ভাবে আমার ফ্যামিলির সামনে এমন কিছু করো না যাতে সবার খারাপ লাগবে।
সব কিছু মিটে গেলে আমার উপর সব রাগ দেখাইও। শুধু সবার সামনে নিজের রাগটা একটু কন্ট্রোল করো।

প্রাপ্তি এইবার আর চুপ থাকতে না পেরে, ওই! আমাকে তোর কি মনে হয় আমি কি রিমোট যে নিজের রাগ কন্ট্রোল করবো।যখন খুশি বাড়াবো যখন খুশি কমাবো।তোর এই সব ফালতু জ্ঞান নিয়ে তুই থাক আমি তোর এইসব ফালতু জ্ঞান শুনতে পারবো না।
প্রাপ্তির খেয়ালি নেই সবাই তার কথা গুলো শুনছে।ফারহানের কথা গুলো শুনে নিজের রাগটা আর ধরে রাখতে পারেনি।

মেজো কাকী -ওই থাম।এখুনি এই অবস্থা বিয়ের পর কি করবি।

ফারহান -সবাই কি তোমার সাথে?

প্রাপ্তি-(একটু শান্ত হয়ে)হুম।

ফারহান- এতোক্ষন বলোনি কেন? তুমি ওদের সামনে আমাকে তুইতোকারি করছিলে?

প্রাপ্তি-আমি এখন রাখছি।

প্রাপ্তি মনে মনে ভাবছে ওরা থাকাতে আজ বেচে গেলি।না হলে আজ তোর খবর ছিলো।

নীরা-রাগ থামিয়ে খেয়েনে।

নাজিফা- মেজো আপু! একটা জিনিস খেয়াল করেছিস?

নীরা-কী?

নাজিফা-বড় আপু কেমন জানি চুপচাপ থাকে।সবকিছুতে রাগ দেখায়।

নীরা -(নাজিফাকে বুজানোর জন্য)এই বাড়ী ছেড়ে চলে যাবেতো তাই।তোরও যখন বিয়ে ঠিক হবে দেখবি তুইও এই রকম করবি।

নাজিফা- আমি কখনো এইরকম করবো না। উল্টো নাচতে নাচতে এই বাড়ী থেকে যাবো।

নীরা -(হাঁসি দিয়ে)ঠিকি বলেছিস তোকে বিশ্বাস নেই।

চলবে,,,,,

অজান_অনুভূতি পার্ট: ১২

0

অজান_অনুভূতি

পার্ট: ১২

#Rabeya Sultana Nipa

 

আজ দুই দিন প্রাপ্তির মা হাসপাতালে ভর্তি আছে।ডাক্তার বলেছে তিনি এমন কোনোshock পেয়েছেন যার কারনে স্ট্রোক করেছে।ডাক্তার কথাটা বলে যাওয়ার পরথেকে সবার মনে একটাই ভাবনা সেইদিন কি এমন হয়েছিলো প্রাপ্তির রুমে যার কারণে তার মা স্ট্রোক করেছে।
বড় মার কথা শুনে নীরা, মৃদুল,ফারহান সবাই এই বাড়ীতে। প্রাপ্তির মাকে হাসপাতাল থেকে আজ সন্ধ্যায় বাসায় আনা হবে।সবার মনে প্রশ্ন থাকলেই প্রাপ্তিকে কেউ কিছু জিজ্ঞাস করলোনা।
প্রাপ্তি নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়।কিভাবে যাবে তার মায়ের সামনে।তার কারনেই তো তার মার আজ এই অবস্থা। একদিকে আয়ান আর অন্য দিকে মা।সে বুজে গেছে যে কোনো একটা তাকে বেঁচে নিতে হবে।প্রাপ্তি বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথা গুলো ভাবছে।নীরা সারা বাড়ী খুঁজে প্রাপ্তিকে না পেয়ে বারান্দায় এসে দেখে প্রাপ্তি আকাশের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে।

নীরা -তুই এইখানে আর আমি সারা বাড়ী তোকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। আকাশের দিকে তাকিয়ে কি ভাবচ্ছিস।সব দোষ তোর?

নীরার কথা শুনে প্রাপ্তি নীরার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।আজ কিছু বলার সাহস নেই তার।নিজেকে সত্যি অনেক দোষী মনে হয়।

নীরা-নিজেকে দোষ দিয়ে কি লাভ বল? সবার মনে হয়তো একটাই প্রশ্ন সেই দিন তোর রুমে কি এমন ঘটে ছিলো যার কারনে বড় মা ইষ্টক করেছে। আমি কিছুটা বুজতে পারছি,যে কি হয়েছিলো।আয়ানের কথা বলেছিলি বড় মাকে তাই না?

নীরার কথা শুনে প্রাপ্তি বড় একটা দীর্ঘ নিশ্বাস পেলে আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো ঠিক বলেছিস তুই।তবে বিশ্বাস কর আমি ইচ্ছা করে কিছুই বলতে চাইনি।তারপর সেই দিন কি হয়েছিলো প্রাপ্তি সব নীরাকে বললো।
নীরা সব শুনে কি বলবে বুজতে পারছেনা।
মৃদুল নীরাকে ডাকতে এসে দেখে দুজনে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।

মৃদুল -তোমরা এইখানে? বড় মাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে এসেছে। চলো দেখতে যাবেনা।

নীরা -তুমি যাও আমরা আসছি।প্রাপ্তি! চল বড় মাকে দেখবি না?

প্রাপ্তি -তুই যা। কিভাবে আমি আম্মুর সামনে গিয়ে দাঁড়াবো?আমি পারবোনা। কতো বিশ্বাস করেছিলো আমাকে। আর আমি!!!

নীরা-তুই এখন না গেলে সবার সন্দেহ আরো বেড়ে যাবে।আর সবচেয়ে বড় কথা বড় মা কষ্ট পাবে।প্লিজ চল।

প্রাপ্তি ভাবলো নীরা ঠিকি বলেছে।আচ্ছা চল!

নীরা আর প্রাপ্তি রুমে গিয়ে দেখে সবাই প্রাপ্তির আম্মুর সেবা করছে।

মেজো কাকী -কিরে প্রাপ্তি তুই এতোক্ষন কই ছিলি।তোর মা এসেছে সবার আগে তুই আসার কথা তা না তুই শেষে আসলি।আসলি যখন মায়ের পাশে না গিয়ে দরজা দাঁড়িয়ে আছিস?
ফারহান মেজো কাকীর কথা শুনে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে দেখে প্রাপ্তি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
ফারহান কথা ঘুরানোর জন্য বললো
ফারহান -কাকী ও আসার দরকার নেই।আন্টির পাশে এসে কান্নাকাটি করবে পরে আন্টির শরীর আরো খারাপ করবে।ওর চোখমুখের অবস্থা দেখছেন? হয়তো আন্টির জন্য কান্নাকাটি করে চেহারার কি অবস্থা করেছে দেখছেন?

ফারহানের কথা শুনে প্রাপ্তির বাবা বললো।ফারহান ঠিকি বলেছে।মেজো বউ এই দুইদিন ফারহান হাসপাতালে কিভাবে সবকিছু সামলিয়েছে তুমিতো নিজের চোখেই দেখেলে।ছেলেটা এই দুইদিন একটুও ঘুমায়নি।ওর রুমটা ঠিক করে দিয়ে আসো।ফারহান তুমিও যাও এখন একটু ঘুমাও।নাহলে তোমার নিজের শরীরই খারাপ করবে। প্রাপ্তি বাবার কথা শুনে ফারহানের দিকে তাকালো।ফারহান এতো কিছু করেছে আম্মুর জন্য।এখন আবার মেজো মায়ের কথা শুনানোর হাত থেকেও আমাকে বাঁচালো।ও এতো কিছু কেন করছে আমাদের জন্য।প্রাপ্তির এইভাবে তাকানো দেখে ফারহান কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।প্রাপ্তি এগিয়ে এসে তার মায়ের কাছে এসে বসলো।প্রাপ্তির মেজো কাকা চোখ দিয়ে সবাইকে ইশারা করলো রুম থেকে বেরিয়ে যেতে।তাই সবাই আস্তে আস্তে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
প্রাপ্তি চুপ করে তার মায়ের পাশে বসে আছে।অনেকক্ষন পর তার মাকে জড়িয়ে ধরে
প্রাপ্তি -আম্মু আমি জানি তুমি আমার উপর এখনো রেগে আছো।প্লিজ আম্মু আমাকে মাপ করে দাও। আমি সেই দিন তোমাকে এই ভাবে কষ্ট দিতে চাইনি।

প্রাপ্তির মা-রাগ করবো কেন? কয়েক দিন পর আমার মেয়ের বিয়ে।এখন কি রাগ করার সময়।মানুষ তো ভুল করতেই পারে হয়তো তুইও একটা ভুল করেছিস। আর আমি তোকে ক্ষমা করেও দিয়েছি।সেই দিনের কথা গুলো আমি চাইনা আর কেউ জানোক।

প্রাপ্তি -আম্মু আমি বেশী কিছু বলবোনা শুধু এইটুকু জানতে চাই ছেলেটা কে?

প্রাপ্তির মা-ফারহান! আমি চাই ফারহান কেই তুই বিয়ে করবি।আমি বুজেছি ফারহান তোর ভালো ফ্রেন্ড মনে করিস।কিন্তু প্রাপ্তি একজন ভালো ফ্রেন্ডই পারে একজন ভালো স্বামী হতে।আর যাকে তুই কখনোই দেখেসনি শুধু তার কথা মাথায় রেখে লাভ কি বল?আমাদের এতো দিনের ভালোবাসার ছেয়ে দুইদিনের ভালোবাসা তোর কাছে বেশী হতে পারেনা।

প্রাপ্তি কথা গুলো চুপ করেই শুনতে হচ্ছে কিছু বলতে পারছে না।কারণ এখন কিছু বললে হয়তো তার মা আবার অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।

প্রাপ্তির মা-বিয়েটা হয়ে যাক দেখবে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।আমি অসুস্থ হওয়ার পর থেকে মনে হয় ঘুমাওনি খাওয়াও খাচ্ছো না।এখন যাও আমি সুস্থ আছি চিন্তা করার কোনো কারণ নাই।
মীনু! মীনু! (সেজো কাকী) কই তুমি?এইদিকে আসো।

সেজো কাকী -ভাবী আমাকে ডেকেছেন?

প্রাপ্তির মা -হ্যাঁ!আমি যাওয়ার পর থেকে প্রাপ্তি কিছু খায়নি তাই না? ওকে নিয়ে গিয়ে নিজের হাতে খাইয়ে দাও না হলে এখনো খাবেনা।

সেজো কাকী -আমি অনেক বার বলেছি আমার কথাতো শুনেই না।এখন চলো আমার সাথে।

প্রাপ্তিও কিছু না বলে উঠে গেলো তার কাকীর সাথে।
প্রাপ্তি খাওয়া শেষ করে রুমে গিয়ে আয়ানকে ফোন দিলো।

আয়ান -কে বলেছে আপনাকে ফোন দিতে।এই কয়েক দিন আমি আপনাকে ফোন দিয়ে যাচ্ছি আপনি রিসিভ করছেন না।এখন কেন ফোন করেছেন? বড় লোকের মেয়েরা এই রকম মন চাইলে প্রেম করবে আবার যখন মন চাইবে তখন দূরে ছুড়ে পেলে দিবে।তুমিও এখন তাদের মতো হয়ে গেছো।ভেবেছিলাম তুমি সবার থেকে আলাদা কিন্তু না তুমিও একি রকম।

চুপ করে কথা গুলো শুনছে প্রাপ্তি,কিছুই বলছে না।
প্রাপ্তি -আয়ান আমি একটু বলি?

আয়ান -কি বলবে তুমি? এখন অনেক অজুহাত দেখাবে।এই হয়েছে সেই হয়েছে।কিন্তু আমি তো জানি তুমি কি নিয়ে ব্যাস্ত ছিলে।

প্রাপ্তি -কি নিয়ে ছিলাম?

আয়ান-তোমার ফারহান কে নিয়ে।যার সাথে তোমার বিয়ে হবে। যে তোমায় অনেক ভালোবাসে।আরো কতো কি।

প্রাপ্তি-(অবাক হয়ে)কে বলেছে তোমাকে এইসব?

আয়ান -ফারহানই আমাকে ফোন দেয়েছিলো, তখন আমি বিশ্বাস করেনি।কিন্তু এখন বিশ্বাস করছি।

প্রাপ্তি-আয়ান আমি এর কিছুই জানতামনা।বিশ্বাস করো।আমি তো তোমাকেই ভালোবাসি। তুমি বলেছিলে না আমি এই কয়দিন তোমার সাথে কেন কথা বলিনি?

তারপর প্রাপ্তি আয়ান কে সব বললো তার মায়ের কথা।

আয়ান-প্রাপ্তি আমার কাছ থেকে সরার জন্য এই ভাবে মিথ্যা বলছো।আসলে কি বলোতো তুমি আমাকে ভালোবাসোনি।এতো দিন অভিনয় করেছো।

প্রাপ্তি -তুমি আমায় অবিশ্বাস করছো? আমি তোমাকে মিথ্যা বলেছি? আমি এতো দিন অভিনয় করেছি? আয়ান তুমি এইভাবে আমাকে বলবে আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা।

আয়ান -যা সত্যি তাই বলেছি।তুমি আমাকে আর ফোন দিবেনা।
কথাটা বলেই আয়ান ফোন কেটে দিলো।কথাটা বলতে আয়ানের অনেক কষ্ট হচ্ছিলো তবুও কেন যানি প্রাপ্তির মুখের কথা গুলো ভালো লাগছেনা। প্রাপ্তিকে এইভাবে আটকিয়ে রাখার কোনো মানে হয়না।হতো আমার থেকে ফারহান ওকে ভালো রাখতে পারবে।

চলবে,,,,,

অজনা_অনুভূতি পার্ট: ১১

0

অজনা_অনুভূতি

পার্ট: ১১

#Rabeya Sultana Nipa

 

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে প্রাপ্তি ড্রইংরুমে এসে চমকে গেলো। নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছে না।ফারহান তার আব্বুর সাথে বসে চা খাচ্ছে।এই দৃশ্য দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।প্রাপ্তির বাবা প্রাপ্তিকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে

প্রাপ্তির বাবা -কিরে ওইখানে এইভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? এইদিকে আয়, দেখেছিস ফারহান সব কাজ পেলে আমার কথা শুনে চলে এসেছে।

প্রাপ্তি কিছু না বলে চুপ করে আছে।প্রাপ্তিকে এইভাবে চুপ থাকতে দেখে ফারহান প্রাপ্তির বাবার দিকে তাকিয়ে।

ফারহান -আংকেল! প্রাপ্তি আমার উপর রাগ করে আছে তাই ওইভাবে চুপ করে আছে।

প্রাপ্তির বাবা-তাই নাকি? প্রাপ্তি রাগ করতে যানে আমি জানতাম না তো।(প্রাপ্তিকে আরো রাগানোর জন্য)তো রাগ করেছে কেন?

প্রাপ্তি -আব্বু তুমি কিন্তু ফারহানের সাথে তাল মিলিয়ে ভালো করছোনা।(ফারহানের দিকে তাকিয়ে)আচ্ছা তোমার সব কাজ ফেলে তোমাকে আসতে কে বলেছে? সবসময় সবার কাছে নিজেকে ভালো রাখার চেষ্টা।

প্রাপ্তির মা এসে প্রাপ্তিকে চুপ থাকতে বলছে। প্রাপ্তি তার মায়ের কথায় কান না দিয়ে ফারহানের উপর রাগ গুলো ঝাড়ছে।
ফারহান কিছু না বলে শুধু প্রাপ্তিকেই দেখছে।ফারহান জানে প্রাপ্তি কেন এই রকম রাগ দেখাচ্ছে।যাকে ফারহান ভালোবাসে তার নাম না বলা, সকালে তাকে কিছু না বলে চলে যাওয়া।ফারহান ভাবছে প্রাপ্তিকে কিভাবে বুজাই মেয়েটা আর কেউ না, সে নিজেই।সকালে তাকে না বলে চলে গেলাম কারণ আমি তোমাকে কিভাবে বলবো মেয়েটা তুমিই আর কেউ আমার জীবনে নেই আর আসবেও না।

প্রাপ্তির বাবা -ফারহান তুমি কিছু মনে করোনা।

ফারহান -আংকেল আমি কিছু মনে করিনি।আমি জানি ও এইরকমই।আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।

প্রাপ্তির মেজো কাকা এসে বললো কি ব্যাপার প্রাপ্তি এইভাবে রেগে রুমে চলে গেলো কেন? ফারহান তুমি আবার রাগানোর জন্য কিছু বলছো নাকি?

প্রাপ্তির বাবা -না তেমন কিছু বলে নাই। ও ফারহানের ওপর নাকি আগে থেকেই রেগে আছে।

মেজো কাকা-ওওও,,, ফারহান! ভাইয়া তো আসছে ভাবছি তোমার মা, বাবাকে বলবো সময় করে একদিন আসতে।নীরার বিয়েটা যখন হয়ে গেছে প্রাপ্তিকে ধরে রাখা ঠিক হবে না।আশেপাশের লোকে তো নানানরকম কথা বলে বড় মেয়েকে বিয়ে না দিয়ে মেজো মেয়েকে বিয়ে।তাই ভাবলাম তোমাদের বিয়েটা যখন হবেই দেরী করে লাভ কি।(প্রাপ্তির বাবার দিকে তাকিয়ে)কি বলো ভাইয়া,আমি কি ঠিক বলছি?

প্রাপ্তির বাবা -আমাদের দিক থেকে তো কোনো সমস্যা নাই।ওর বাবা,মা কি বলে সেটা আগে দেখো।

ফারহান-আংকেল! আমার বাবা, মা হ্যা বলবেন।তবে আমার কিছু সময়ের দরকার, বেশী না ৩/৪ মাস। এরপর আমি নিজেই বাবা,মা কে নিয়ে আসবো।আপনার যদি এখন আমার ফ্যামিলিকে ফোন করে জানান তারা আমার কথা না শুনেই বিয়ে ঠিক করে যাবে।তাই আমি আপনাদেরকেই বলছি আমকে কিছু সময় দিন।

মেজো কাকা-আচ্ছা ঠিক আছে। যদি তোমার বেশী সমস্যা হয় আমাদেরকে জানিও আমরা সবাই তোমার পাশে আছি।

ফারহান মনে মনে ভাবছে আমি নিজের জন্য সময় চাইনি।চেয়েছি আপনাদের মেয়ের জন্য।কারণ আমি ওকে বিয়ে করলে ও কখনোই আমাকে মেনে নিবে না।

দুপুরে সবাই এক সাথে খেয়েদেয়ে বিকালের দিকে ফারহান আবার ঢাকায় চলে গেলো।যতোক্ষন ছিলো প্রাপ্তির সাথে একটা কথাও বলিনি।নীরাও আজ চলে গেলো।নীরাকে কাছে পেয়ে এইকয়দিন ভালোই কেটেছিলো। এখন আবার সবার মাঝেও নিজেকে একা লাগে প্রাপ্তির।তবে মাঝে মাঝে আয়ানের সাথে কথা হয়।প্রাপ্তির বাবা আসাতে তেমন কথা হয় না আয়নের সাথে।বাবা আসার আগে সারারাত জেগে আয়ানের সাথে কথা বলতো।এখন রাতে বাবা বার বার দেখে যায় ঘুম আসছে কিনা,রাত জেগে বসে আছে কিনা।তাই আর বেশী কথা হয় না।

আয়ানের ফোন টা বেজেই যাচ্ছে।অচেনা নাম্বার দেখে ফোন রিসিভ করছে না।কিন্তু না করেও উপায় নেই।বার বার ফোন দিয়ে যাচ্ছে।আয়ান ফোনটা রিসিভ করতেই
আপনি কি আয়ান বলছে?

আয়ান -(একটু চুপ করে থেকে)হ্যা আমি আয়ান বলছি।কিন্তু আপনি কে?

ফারহান -আমি ফারহান! আপনি নিশ্চয় আমার কথা এর আগেও শুনেছেন।

আয়ান -কোথায় শুনবো আপনার নাম।আমি তো আপনাকে ছিনিনা।

ফারহান -আমাকে না ছিনলেও আমার হবু বউয়ের সাথে প্রেম করতে তো ভালোই পারেন।আর বলছেন আমাকেই ছিনেন না।

আয়ান -আমি সত্যি আপনার কিছুই বুজতেছি না।আপনি মনে হয় আমার সাথে ফান করছেন।

ফারহান -আমি আপনার সাথে ফান করতে যাবো কেন? আমি শুধু এইটুকুই বলবো প্রাপ্তির সাথে আর যোগাযোগ করবেন না।ওর সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে অনেক আগে থেকেই।

আয়ান -আমি আপনার কথা বিশ্বাস করবো কেন? প্রাপ্তি তো আমায় বিয়ের ব্যাপারে কিছু বিলেনি।আমি যতোটুকু শুনেছি আপনি প্রাপ্তির ফ্রেন্ড, এইছাড়া আর বেশী কিছু না।আর আপনার কথা তো আমি প্রাপ্তিকে ভুলে যেতে পারবোনা। প্রাপ্তিকে আমি অনেক ভালোবাসি।

ফারহান-দেখেন আমি আপনার ভালোর জন্যই বলছি।আপনি ভাবে দেখেন আপনি কি করবেন।আর এইটাই আপনার সাথে আমার শেষ কথা।ফারহান ফোন রেখে দিলো।
আয়ান কি করবে বুজতে পারছেনা।প্রাপ্তি কি তাকে ঠাকালো।না প্রাপ্তি আমাকে এইভাবে কখনো মিথ্যা বলতে পারেনা।
আয়ান প্রাপ্তিকে ফোন দিবে নাকি দিবে না।পরে মনে হলো প্রাপ্তিকে এখন কিছু বলবে না।দেখি প্রাপ্তি কিছু বলে কিনা।

প্রাপ্তি! প্রাপ্তি! মেয়েকে ডাকতে ডাকতে প্রাপ্তির মা রুমে এসে দেখে মেয়ে ঘুমাচ্ছে।প্রাপ্তি তুই এখনো কি ঘুমাচ্ছিস বলতো এই সন্ধ্যায় কেউ ঘুমায়।
মায়ের কথা শুনে আড়মোড়ো ভেঙে প্রাপ্তি উঠে বসলো।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে, আমায় ডাকোনি কেন?
মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে তোর কি শরীর খারাপ?
প্রাপ্তি-কই না তো।তোমার এমন মনে হলো কেন?

প্রাপ্তির মা-তুই তো এই সময় কখনো ঘুমাস না তাই বললাম।

প্রাপ্তি-সবসময় কি দিন এক যায়? মাঝে মাঝে পরিবর্তন হতে হয়।

প্রাপ্তির মা-(প্রাপ্তির কাছে গিয়ে বসে)এইভাবে কথা বলছিস কেন মন খারাপ?তোর কি হয়েছে একটু বলতো কয়েদিন থেকেই তুই উল্টাপাল্টা কথা বলছিস।
প্রাপ্তির তার মায়ের কথা শুনেই টপটপ করে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
প্রাপ্তির চোখের পানি দেখে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে কি হয়েছে তোর কান্না করছিস কেন?
প্রাপ্তি কিছু বলছে না কান্নার শব্দ আরো বেড়ে গেলো।
প্রাপ্তির -কি হয়েছে তোর? কেউ কিছু বলছে? বলনা কি হয়েছে তোর? আমি তোর মা, আমাকে না বললে তুই কাকে বলবি।

প্রাপ্তি-(কান্না করতে করতে)আম্মু আমি যদি কোনো ভুল করে পেলি আমাকে ক্ষমা করে দিবেনা?

প্রাপ্তির মা -আমি জানি আমার মেয়ে কোনো ভুল করতে পারেনা।যেটা করবে সবার কথা ভাবেও কোনো ভুল করবে না।এখন তুই কান্না থামিয়ে বল কি হয়েছে? যদি ভুল কিছু হয়েও থাকে কেউ জানার আগে আমি তোর ভুল গুলো শুধরে দিবো।

প্রাপ্তি -আম্মু আমি ভুল করেছি নীরার মতো একজনকে ভালোবেসে।আম্মু জানো? ছেলেটা অনেক ভালো।
মেয়ের কথা একটুও অবাক না হয়ে
প্রাপ্তির মা -আমি জানি তুই কাকে ভালোবাসিস সেই জন্যই তো তোর আব্বু আর মেজো কাকা সব ব্যাবস্থা করতেছে।

প্রাপ্তি-(অবাক হয়ে) তোমরা কার কথা বলছো? আর তোমরা কি করে জানলে যে আমি কাকে ভালোবাসি।

প্রাপ্তির মা -ফারহান কে তুই ভালোবাসিস এইটা তো সবাই জানে।

প্রাপ্তি -আম্মু তুমি এইসব কি বলছো? আমি ফারহানকে ভালোবাসি না।ওকে আমি ফ্রেন্ড ছাড়া কখনো কিছু ভাবিনি।আমি অন্য এক জনকে ভালোবাসি।

মেয়ের কথা শুনে হাসি মুখটা নিমিষেই অন্ধকার হয়ে গেলো।
প্রাপ্তি কি বলছে এইসব?
প্রাপ্তি ফোনটা এনে আয়ানের একটা ছবি দেখিয়ে
আম্মু! আমি এই ছেলেটাকে ভালোবাসি।
মেয়ের কথা শুনে কি বলবে বুজতে পারছে না।মনে হচ্ছে এই রুমটা তার মাথার উপর ঘুরতেছে চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসছে।
প্রাপ্তি কি বলছে তার কানে কিছুই আসছে না।পুরো শরীর ঘেমে যাচ্ছে।কিছুক্ষন পরেই প্রাপ্তির মা অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো।
প্রাপ্তি মায়ের এই অবস্থা দেখে সবাইকে চিৎকার দিয়ে ডাকতে শুরু করলো।
প্রাপ্তির চিৎকার শুনে সবাই দৌঁড়ে এসে দেখে প্রাপ্তির মা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।

চলবে,,,,,,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ১০

0

অজানা_অনুভূতি
পার্ট: ১০

#Rabeya Sultana Nipa

 

নীরার ঘটনার পর থেকে প্রাপ্তিকে প্রতিদিন কলেজে যেতে দেয় না।শুধু পরীক্ষা গুলো দিতে দেওয়া হয়।প্রাপ্তি বাসায় নিজেকে খুব একা একাই লাগে।নিজাফাও পড়া লেখা নিয়ে ব্যাস্ত থাকতে হয়।প্রাপ্তি বই পড়তে খুব ভালোবাসে বেশীর ভাগ সময় বই পড়েই কেটে যায় তার।
প্রাপ্তি! প্রাপ্তি! মেজো কাকার ডাকে ভাবনার জগত থেকে ফিরে এলো প্রাপ্তি।শব্দ টা মনে হলো ড্রইং রুম থেকেই আসছে।কাকার কাছে ড্রইং রুমে যেতেই বসো এই খানে।
প্রাপ্তিও কিছু না বলে বসে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

মেজো কাকা -কি হলো নিচের দিকে না তাকিয়ে আমার দিকে তাকাও।

প্রাপ্তি বাধ্য মেয়ের মতো কাকাইয়ের দিকে তাকালো।

মেজো কাকা -তোমার কি মন খারাপ?

প্রাপ্তি -না।কেন ডেকেছো?

মেজো কাকা-ভাইয়া তো আজ আসতেছে।তুমি আনতে যাবেনা?

প্রাপ্তি -কাকাই আব্বু নতুন করে দেশে আসছে না।আব্বু যখনি আসে তুমি নয়তো ছোটো কাকাই যাও। আজ কেন আমি যাবো?

মেজো কাকা-তুই সাথে গেলে ভাইয়ার হয়তো ভালো লাগতো।

(প্রাপ্তি মনে মনে বলতে লাগলো, কেন নিতে চাইছো আমি কি বুজি না।আমাকে চোখে চোখে রাখার জন্য কতো যে কি বলবা আল্লাই ভালো জানে।)
প্রাপ্তির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে কিরে কি ভাবছিস?

প্রাপ্তি -কিছুই ভাবছি না।আমার ভালো লাগছে না।আমি যাবোনা তোমরাই যাও।।

মেজো কাকা-ঠিক আছে।বাসা থেকে বের হওয়ার দরকার নাই।সাবধানে থাকিস।নীরার মতো এমন কিছু করিস না যাতে সাবার মনে কষ্ট হয়।তবে তোর প্রতি সবার সেই বিশ্বাস আছে তুই এমন কিছু করবি না যাতে এই পরিবারের সবার কষ্ট হয়।আচ্ছ এখন তাহলে আসি।

প্রাপ্তির মা,নীরার মা দাঁড়িয়ে এতোক্ষন কথা গুলো শুনছিলো।নীরাও পাশের রুম থেকে শুনছিলো।কথা গুলো শুনে নীরার একটু ও কষ্ট লাগেনাই।কষ্ট লেগেছে কথায় কথায় নীরার কথা বলে প্রাপ্তিকে বুজানো।
প্রাপ্তি এখনো সেই জাগায় বসে আছে আর ভাবছে সবাই তার প্রতি এতো বিশ্বাস এতো ভরসা। সেই এক নিমেষে ভাঙবে কি করে?
আয়ানের কথা সবাইকে বলবেই বা কি করে? একবার কাকাই মরতে মরতে বেঁচে গেলো।এখন আবার একটা ধাক্কা সামলাতে পারবেনা।কি করবো আমি?

প্রাপ্তির মা মেয়েকে চুপ থাকতে দেখে,
কিরে কিভাবছিস?
প্রাপ্তি,,,,
(এইবার জোরে ডাক দিয়ে)এই প্রাপ্তি কি চিন্তা করছিস তুই এতো মন দিয়ে?

প্রাপ্তি -(চমকে উঠে) এতো চেঁচাচ্ছ কেনো?কি বলবে আস্তে বলতে পারো না?

প্রাপ্তির মা -(অবাক হয়ে)কি হয়েছে তোর এইভাবে কথা বলছিস কেন?

প্রাপ্তি -কিছু হয়নি বলে উঠে রুমে চলে গেলো।

কি করবে সে, এই লোক গুলোকে আবার ঠকানো হচ্ছে।আর সে লোকটাই আমি। কিন্তু আমি তো আয়ানকেও ছাড়তে পারবো না।আমি ছেলেটাকে এতোটাই ভালোবাসি ওকে ছেড়ে যাবো কি করে।কাকে বলবো আয়ানের কথা গুলো।যাকেই বলিনা কেন কেউই আমার কথা শুনবে না।আর আমি বলবোই বা কি করে।কতো বিশ্বাস করে এই মানুষ গুলো আমাকে।প্রাপ্তি কথা গুলো ভাবছে আর কান্না করছে।একটু পর নীরা এসে প্রাপ্তির সামনে বসে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে
নীরা -কান্না করছিস? কষ্ট লাগছে তাইনা?এইবার ভাবে দেখ আমার কতোটা কষ্ট সেই দিন হয়ে ছিলো যেই দিন আব্বু আমায় ৭ দিনের সময় দিয়ে ছিলো।প্রাপ্তি কান্না করে কোনো লাভ নাই। এরা কেউ বুজবেনা।এরা কেউ বুজবেনা তোর এই কান্নার মাঝে কতোটা কষ্ট লুকিয়ে আছে।

প্রাপ্তি -বাধ দে। কষ্ট হবে কেন আমার। আমি ঠিকি আছি।

নীরা -কার কাছথেকে আড়াল করছিস, আমার কাছথেকে?তুই ভালো করেই জানিস তুই কিছু আমাকে বলা লাগেনা আমি বুজি আমার এই বোনটার কি হয় না হয়।আচ্ছা তোকে কিছু বলতে হবে না।এখন চল বাহিরে থেকে ঘুরে আসি।

প্রাপ্তি-আমি যেতে পারবোনা। কাকাই যাওয়ার সময় বলে গেছে আমি যেন কোথাও না যাই।এখন এসে যদি শুনে আমি বাহিরে গেছি তাহলে রেগে যাবে তোর উপর।বলবে তুই আমাকে নিয়ে গেছিস।

নীরা -হুম ঠিক বলেছিস। আচ্ছা প্রাপ্তি! ফারহান কে তোর কেমন লাগে?

প্রাপ্তি -হঠাৎ এইকথা?

নীরা -আমি বলতে চাইছি ফারহান বর হিসেবে কেমন হবে?

প্রাপ্তি -নীরা কি থেকে কি বলছিস নিজে জানিস।ও বিয়ে করার পর ওর বউকে গিয়ে জিজ্ঞাস করিস আপনার বরটা কেমন?আমাকে কেন জিজ্ঞাস করছিস?

নীরা -ঠিক আছে বিয়ের পর না হয় জিজ্ঞাস করবো।একটা কথা বলবো?

প্রাপ্তি -কি বল?

নীরা-কয়েক টা ছবি ছাড়া তুই তো আয়ানকে দেখিস নি তাই না?

প্রাপ্তি -তাতে কি হয়েছে? ভালোবাসা তাতে কমে যায়না।বরং দূরথেকে ভালোবাসা গাঢ় হয়,পবিত্র থাকে।এখন এইগুলো বাধ দিয়ে কি বলতে চাইছিস সেটা বল?

নীরা -না কিছু না এমনি বললাম আরকি।

নীরা কিছু বলতে গিয়েও বললোনা।প্রাপ্তি মন খারাপ হবে ভেবে।
সন্ধ্যায় প্রাপ্তি বাবা বাসায় এসে পৌঁছে গেছে। সবাই অনেক খুশী।

প্রাপ্তির বাবা-এইবার অনেক দিন পরে সবাইকে দেখলান।সবাই অনেক বড় হয়ে গেছে।

মেজো কাকী -ভাইয়া! ১ বছরে কেউ অনেক বড় হয়ে যায় না।

প্রাপ্তির বাবা -কি বলছো হয়নি।এক মেয়ের বিয়ে দেওয়া হয়েছে আরেক মেয়ের বিয়ে দিবো। কিন্তু নীরা কোথায় সবাই এইখানে আছে নীরা নেই কেন?

প্রাপ্তি-আব্বু নীরা মনে হয় লজ্জা পাচ্ছে তাই আসছেনা।

নীরা আসতে আসতে প্রাপ্তি আমি একটু লজ্জা পাচ্ছিনা।আমি বড় আব্বু সামনে আসবো লজ্জা পাওয়ার কি আছে।মৃদুল এসেও সালাম করলো।

প্রাপ্তির বাবা -আজ আমার সত্যি অনেক ভালোলাগছে।সবাইকে একসাথে দেখে।তবে একজন নাই এইখানে।

সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে কথাটা শুনে।প্রাপ্তির মেজো কাকা বললো আমি বুজতে পেরেছি কি বলতে চাইছে।
ইমারান! ফারহান কে ফোন দাও কাল সকালে যেন চলে আসে।

প্রাপ্তি -কাকাই ও আমাদের ফ্যামিলির একজন হলো কিভাবে? আমরা সবাইতো এইখানেই আছি।

মেজো কাকা-এখনো পুরোপুরি ভাবে হয়নি।তবে কিছু দিনের মধ্য হবে।ভাইয়া তুই ফ্রেশ হয়ে আয় আজ অনেক দিন পর সবাই এক সাথে আড্ডা দিবো।
সেজো বউ! নাস্তা রেডি করো ভাইয়াও ফ্রেশ হয়ে আসুক।

প্রাপ্তি নীরা কাছে গিয়ে, কিছুই বুজলাম না আমি ফারহান আমাদের ফ্যামিলির একজন হলো কিভাবে বলতো?

চলবে,,,,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ৯

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ৯

#Rabeya Sultana Nipa

 

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই প্রাপ্তি ফারহানের রুমে গিয়ে দেখে ফারহান নাই।
ফারহান কে না দেখে প্রাপ্তি ভাবতে লাগলো ও কি আমায় না বলেই চলে গেলো।

ফারহানের রুম থেকে বের হয়ে
সেজো কাকী! সেজো কাকী! কোথায় তুমি?

সেজো কাকী -(রান্না ঘর থেকে দৌঁড়ে এসে)
কি হয়েছে তোর এইভাবে ডাকছিস কেন?

প্রাপ্তি -ফারহান কোথায় কাকী? ও কি চলে গেছে?

সেজো কাকী -হ্যা ভোরে চলে গেছে।তুই ঘুমাচ্ছিলি তাই তোকে ডাকেনি।ব্যাপার কি প্রাপ্তি? মিস করছিস নাকি?

প্রাপ্তি -কাকী তুমিও না। আমি ওকে মিস করতে যাবো কেন?জানো ফারহান নাকি একটা মেয়েকে ভালোবাসে তাই জানতে আসলাম মেয়েটা কে? তুমি জানো কিছু?

সেজো কাকী -জানিতো এইটা তো সবাই জানে মেয়েটা কে।

প্রাপ্তি -কিহ,,,সবাই জানে আর আমি জানিনা।ঠিক আছে আমি আর জানতে চাইনা।ও আমার সাথে সব শেয়ার করে আর তার জিবনের important জিনিসটাই আমার কাছে শেয়ার করলো না।আজ থেকে ওর সাথে আমার কোনো কথা নাই।থাকুক সে তার মতো করে।এতো দিন আমি ভাবেছিলাম ফারহান যা কিছু হক আমার কাছে আগে বলে। এখন দেখি তার উল্টো।

বাসায় এতো বড় একটা মাছি আছে এতো দিন জানতাম নাতো।প্রাপ্তি তার মেজো কাকার কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

সেজো কাকী -ভাইয়া! মাছি কোথায় দেখলেন?

মেজো কাকা -সেজো বউ! তুমিও না যাও চা নিয়ে আসো।আর শুনো প্রাপ্তি যেই ভাবে ঘন ঘন করছিলো তাই বলছিলাম।

সেজো কাকী হাসতে হাসতে চলে গেলো।

প্রাপ্তি -কাকাই আমি মাছির মতো ঘন ঘন করি?তুমি আমাকে মাছি বলতে পারলে?

মেজো কাকা -এই যাহ্‌ তোকে মাছি বললাম কখন?আমি মাছি বলছি যে ঘন ঘন করে তাকে।আমাদের প্রাপ্তি কখনোই ঘন ঘন করেনা।

একে একে সবাই এসে নাস্তা খেতে বসেছে।
প্রাপ্তিকে তার মা সকাল সকাল দেখে

প্রাপ্তির মা -ব্যাপার কি?সূর্য আজ কোণ দিকে উঠলো?

নীরা -বড় মা কি হয়েছে? এই কথা কেন বলছো?

প্রাপ্তির মা-প্রাপ্তিকে আজ না ডাকতেই ডাইনিং টেবিলে তাই।

সেজো কাকী -ভাবী! ফারহানকে খুঁজতে এসেছিলো।তাই সকাল সকাল না ডাকতেই এইখানে।

মেজো কাকা -আচ্ছা সবাই শুনো।কাল বড় ভাইয়া আসছে।আমাকে রাতে ফোন দিয়ে বলেছে। তাই আমি তোমাদের জানাতে পারিনি।নীরাদের তো আজকে যাওয়ার কথা।কিন্তু আজ আর যাওয়া হবে না।

প্রাপ্তি -আব্বু আসছে। কই আমাকে তো কিছু বলে নাই।

মেজো কাকা -কাল রাতে ঠিক করেছে তাই হয়তো তোদের জানাতে পারেনি।

প্রাপ্তি -মা! তুমিও জানো না?ও এখন তো সবাই অনেক কিছু জানে শুধু আমি ছাড়া।

প্রাপ্তির মা-আমি সত্যিই জানিনা।জানলে আমি সবাই আগেই বলতাম।হতো তোর আব্বু তোদের সারপ্রাইজ দিতে চাইছে তাই বলেনি।

মৃদুল -(নীরার বাবার দিকে তাকিয়ে)কিন্তু বাবা আমাদের তো আজকে যেতে হবে।মা সকাল বেলাও ফোন করেছে আজকে যেন চলে যাই।

মেজো কাকা-চিন্তা করোনা আমি তোমার মাকে ফোন দিয়ে বলে দিবো।

প্রাপ্তি মন খারাপ করে উঠে চলে গেলো।
রুমে গিয়ে আয়ান কে ফোন দিলো। আয়ানের ফোনে রিং হচ্ছে। কিন্তু আয়ান্নম? রিসিভ করছেনা।কাল রাতে সকালে ফোন দিবে বলে আর কথা বলেনি।তাই হয়তো রাগ করেছে ভেবে প্রাপ্তি আবার ফোন দিলো।এইবার আয়ান ফোন ধরেই

আয়ান -নিজেকে কি মনে করো তুমি?ফোন দিচ্ছো কেন আমাকে? তোমার ফারহান আছে না তার সাথে কথা বলো।

প্রাপ্তি -আয়ান তুমি কি বলছো এইসব? ফারহান সাথে কথা বলবো মানে?

আয়ান -কাল রাতে আমার সাথে তুমি কথা না বলে ফারহান কে সময় দিচ্ছো। তাহলে আমি কি বলবো বলো?

প্রাপ্তি-তুমি আর ফারহান কি এক।ও আমার ফ্রেন্ড। আর তোমাকে আমি ভালোবাসি। তুমিতো আমার সব বলো।
আর ওর সামনে তো তোমার সাথে কথা বলতে পারতামও না।তাই কাল রাতে ফোন রেখে দিয়েছি।

আয়ান -আচ্ছা ঠিক আছে।তুমি ভালো করে জানো তোমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারিনা।তুমি আমায় ছেড়ে কখনো যেও না প্লিজ। তোমাকে অনেক ভালোবাসি অনেক।যা আমি তোমাকে বলে বুজাতে পারবোনা।প্রাপ্তি আমায় ছেড়ে কখনো যাবে না তো?

প্রাপ্তি-,,,,,

আয়ান-আমি জানি তুমি আমার কথা গুলো শুনছো।প্রাপ্তি বিশ্বাস করো আমি সারাটা দিন শুধু তোমার কথা ভাবি। তুমি আমার প্রতিটা নিশ্বাসের সাথে মিশে আছো।কি হলো প্রাপ্তি কথা বলছো না কেন?ওওও,,, আমার প্রেত্নি কথা বলতে পারে না।এইটা তো আমার মনে নেই।

প্রাপ্তি -কিহ,,, আমি প্রেত্নি? ঠিক আছে তাহলে তুমি জীন।

আয়ান -এতোক্ষন তো কিছুই বলছিলেনা তাই কথা বলানোর জন্য বলেছিলাম।তুমি তো আমার পরী,প্রেত্নি হতে যাবে কেন?

প্রাপ্তি-আমি তো তোমার কথা গুলো শুনছিলাম।কিন্তু তুমি প্রেত্নি যখন বলেছো এখন আর প্রেত্নির সাথে কথা বলতে হবে না।

আয়ান -তাহলে তো আমি মরেই যাবো। তুমি তো আমার পরী। এই পরীটার সাথে কথা না বললে আয়ানের কোনো অস্তিত্ব নেই।কারণ আয়ান পরীটার কয়েকটা ছবি।হাসির শব্দ,কথা গুলো শুনেই পরীকে ভালোবেসে পেলেছে।

প্রাপ্তি -জানিতো,জানো আয়ান কাল নাকি আব্বু দেশে আসছে।

আয়ান -তাহলে তো ভালোই।

প্রাপ্তি -ভালো মানে? তুমি জানো আব্বু আসলে আমি তোমার সাথে কথা বলতে পারবো নাকি?নীরার বিয়ের আগে মেজো কাকাইকে বলতে শুনেছি আব্বু আসলে নাকি আমার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলবে।

আয়ান -ধুর পাগলী, বিয়ের কথা বললে কি বিয়ে হয়ে যায় নাকি।এর মধ্য কিছু একটা হয়ে যাবে।

প্রাপ্তি -তুমি যা ভালো মনে করো।

চলবে,,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ৮

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ৮

#Rabeya Sultana Nipa

 

সবাই নীরার শশুর বাড়ী থেকে চলে এসেছে।সাথে নীরাও এসেছে।সন্ধ্যায় সবাই চা খাচ্ছে আর আড্ডা দিচ্ছে।কিন্তু নীরার মন ফারহানের দিকে।কিভাবে সম্ভব ফারহানের সাথে প্রাপ্তির বিয়ে।প্রাপ্তি শুনলে কখনোই মেনে নিবেনা।প্রাপ্তি আয়ান নামের ওই ছেলেটাকেই ভালোবাসে। আর ফারহান! সে প্রাপ্তিকে নিয়েই আছে।
এইদিকে প্রাপ্তি নীরার বিয়ের এই কয়টা দিন আয়ানের সাথে তেমন কথা বলতে পারিনি।তাই প্রাপ্তি আড্ডায় মন না দিয়ে উঠে গিয়ে আয়ানকে ফোন করলো।

আয়ান -কেমন আছো? নীরার বিয়ে ঠিকঠাক মতো সব কিছু শেষ হয়েছে?

প্রাপ্তি – আমি তো ভেবেছিলাম তোমার সাথে কথা বলতে পারিনি বলে তুমি রাগ করেছো।

আয়ান -রাগ করবো কেন? তবে তোমায় অনেক মিস করছি।যাইহোক নীরা কেমন আছে?

প্রাপ্তি -হ্যা ভালোই আছে।ও এখন আমাদের বাসায়।
কথাটা বলা শেষ করতেই ফারহান এসে বললো কার সাথে কথা বলছো প্রাপ্তি?

প্রাপ্তি -আয়ানের সাথে।

ফারহান -আয়ানের সাথে মানে? কে এই আয়ান?

প্রাপ্তি -কথা শেষ করি তারপর তোমাকে বলবো।

ফারহান -আমি সকালেই চলে যাবো আর তুমি এখন অন্য কারো সাথে কথা বলবে?

ফারহান মনে মনে ভাবছে আমি চাই না তুমি অন্য কারো সাথে কথা বলো।কারণ প্রাপ্তিকে শুধু ফারহানই ভালোবাসবে।

প্রাপ্তি -আয়ান” তোমার সাথে সকালে কথা বলবো।
আয়ান কিছু বলার আগেই প্রাপ্তি ফোন কেটে দিলো।

প্রাপ্তি ফোন কেটে দিলো দেখে আয়ান ভাবছে আমার থেকে ফারহান বড় হয়ে গেলো।না আমি এইসব কি ভাবছি।

ফারহান -প্রাপ্তি! তুমি কি কিছু বুজতে চাও না নাকি বুজেও না বুজার ভাণ করো।

প্রাপ্তি -কি বলছো? আমি সত্যিই কিছু বুজতেছিনা।

ফারহান প্রাপ্তির দিকে অনেকক্ষন তাকিয়ে কথা কাটানোর জন্য বললো।
এক কাফ কফি দিবে?

প্রাপ্তি -এই কথা! ঠিক আছে তুমি বসো আমি নিয়ে আসছি।

প্রাপ্তি ফোন টা রেখে কফি আনতে চলে গেলো।ফারহান প্রাপ্তি যাওয়ার পরেই প্রাপ্তির ফোন থেকে আয়ানের নাম্বার টা নিয়ে বসে আছে।

কিছুক্ষণ পর প্রাপ্তি এসে,

প্রাপ্তি- এই নাও কফি।

ফারহান -তুমি আমার জন্য কফি বানিয়েছো?ভাবতেই অবাক লাগছে তোমার হাতের কফি খাবো।

প্রাপ্তি -এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই আমি বানাইনি।সেজো কাকী বানিয়ে দিয়েছে।

ফারহান -তুমি ও কাকীর থেকে শিখে নাও কাজে লাগতে পারে।যেন সারাজীবন তোমার হাতের বানানো কফি খেতে পারি।

প্রাপ্তি -আমি কেন সারাজীবন তোমার জন্য কফি বানাতে যাবো? তুমি কখন কি বলো আমি কিছুই বুজিনা।

তুই কিছুই বুজবিনা কারণ তোকে কেউ কখনো বুজতে দেয়নি। আস্তে আস্তে সব বুজে যাবি চিন্তা করিছ না। কথা গুলো শুনেই প্রাপ্তি পিছনে তাকিয়ে দেখে নীরা।

প্রাপ্তি -তুই! এখনো ঘুমাস নাই।আমি ভেবে ছিলাম তুই আর মৃদুল ঘুমে তাই আর তোকে ডাকিনি।আয় বস এইখানে,

নীরা এসে বসতেই ফারহান নীরার কানের কাছে গিয়ে
ফারহান -আরেকটু পরে আসলে কি এমন ক্ষতি হতো তোমার?আর কেউ নতুন বর কে একা রেখে বোন কে ডিস্টার্ব করতে আসে।উল্টো আমরা তোমায় গিয়ে ডিস্টার্ব করবো তা না। তুমি নিজেই চলে আসছো আমাদের ডিস্টার্ব করতে।

নীরা -আপনি কি মনে করেছে আমি কিছু জানিনা।সকালে আমি সব শুনেছি।বড় মা আমায় সব বলেছে।এখন যদি আমি প্রাপ্তিকে সব বলেদি এখন তো কফি এনে দিয়েছে।এইটা শুনলে বিষ এনে দিবে।

প্রাপ্তি ফারহান আর নীরার কথা দেখে

প্রাপ্তি -তোরা কি এতো ফিসফিস করছিস।

নীরা -প্রাপ্তি জানিস ফারহান ভাইয়া একটা মেয়েকে ভালোবাসে কিন্তু ভয়ে বলতে পারছেনা।এইগুলোই বলছিলাম আরকি।

ফারহান -এইভাবে বাঁশটা না দিলে হতো না?
এখন ও যদি সত্যি ভাবে আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি তখন? আমার এতোদিনের সব কিছুতে তুমি এক মিনিটে পানি ঢেলে দিলে।এইটা কিন্তু ঠিক করোনি

নীরা -আরে আমি তো ফান করছি।আপনি এতো সিরিয়াস ভাবে নিচ্ছেন কেন?

প্রাপ্তি-ওই তোদের ফিসফিস বন্ধ কর।(ফারহানের দিকে তাকিয়ে)তুমি কাউ কে ভালোবাসো আর আমাকেই বলো নাই।

ফারহান -প্রাপ্তি! সত্যি আমি অন্য কোনো মেয়েকেই ভালোবাসি না।তবে হ্যা আমি একজনকে ভালোবাসি। ও সবার থেকে আলাদা।কিন্তু আমি যতোই ওর কাছে যেতে চাই মনে হয় ও আমার থেকে ততো দূরে চলে যায়।তাই ভাবছি এই বছরি তাকে আমার কাছে নিয়ে আসবো।না হলে পাখী উড়ে যাবে।কথা গুলো একদমে বলে ফারহান চলে গেলো।

প্রাপ্তি -এইটা কি হলো।একটু আগেতো ভালোই ছিলো।নীরা! তুই কি কিছু বলেছিস? না হলে এইভাবে চলে গেলো কেন?

নীরা -মৃদুল একা আছে আমি যাই।অনেক রাত হয়েছে তুই ঘুমিয়ে পড়।আর হ্যা আয়ানের সাথে কথা হয়েছে?কেমন আছে ও?

প্রাপ্তি -ভালোই আছে।

নীরা -আচ্ছা ঠিক আছে ঘুমা।

নীরার চলে গেলো।কিন্তু প্রাপ্তি ফারহানের কথা গুলো ভাবছে।নীরা নিশ্চয় কিছু বলেছে।না হলে ফারহান কখনো এইরকম রাগ দেখিয়ে চলে যেতো না।আচ্ছা ফারহান কোন মেয়েকে এতো ভালোবাসে যে সবার থেকে আলাদা।

চলবে,,,,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট:৭

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট:৭

#Rabeya Sultana Nipa

 

আজ নীরার বিয়ে। সেই মৃদুলের সাথেই। অনেক ঝড়ঝাপটা ফিরিয়ে আজ তাদের বিয়ে।মেয়ের জেদের কাছে তার বাবাকে হারতেই হলো।কারণ নীরা সবাইকে বলেছে এই বিয়ে না হলে পালিয়ে যাবে নয়তো মরে যাবে।৭ দিন সময় দেওয়ার পর ও যখন মেয়ের মুখে মৃদুলকে ভুলতে না পারার কথা তখন বিয়ে ছাড়াতো আর কোনো উপায় নেই।
এইদিকে প্রাপ্তি ২ দিন ধরে কারো সাথে তেমন কথা বলছে না।ভালো করে খাচ্ছেও না।মনে হচ্ছে নীরাকে সে সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলছে।নীরা আর সে বসে বসে কান্না করছে। সবাই বুজানোর চেষ্টা করছে তাদেরকে। নীরাকে বিদায় দিয়ে সবার মন খারাপ।প্রাপ্তি দরজা আটকিয়ে বসে আছে।নিজেকে নিজেই বুজানোর চেষ্টা করছে।তাকেও একদিন এই বাড়ী ছেড়ে যেতে হবে।কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই কখন প্রাপ্তি ঘুমিয়ে পড়লো তার মনে নাই।

নীরার বাবা চুপ করে বসে আছে ড্রইংরুমে। এমন ভাবে বসে আছে মনে হচ্ছে দুনিয়ার সব চিন্তা তার মাথার উপর।প্রাপ্তি মা এসে বললো

প্রাপ্তির মা -কি এতো চিন্তা করছেন? ভাইয়া!

নীরার বাবা -নীরা বিয়েটা শেষমেশ হয়েই গেলো।ভেবে ছিলাম আগে প্রাপ্তি বিয়ে দিবো তারপর নীরাকে।কিন্তু নীরা এমন কাজ করবে আমি ভাবতেই পারি নাই।

প্রাপ্তির মা -এইসব নিয়ে একদম চিন্তা করার দরকার নাই।প্রাপ্তির বিয়ে তো ঠিক করাই আছে শুধু ওর বাবা আসুক বিয়েটা সবাই মিলে তারিখ টা ঠিক করলেই হবে।

নীরার বাবা -তা ঠিক বলছেন।আচ্ছা নীরার বিয়েতে ফারহানের ফ্যামিলি আসেনাই কেন?এতো করে বলেছি ফারহানকে,বললো কি যেন কাজ পড়ে গেছে তাই আসতে পারবেনা।

প্রাপ্তির মা -হ্যা আমিও বলেছিলাম ওর মাকে, বলেছে প্রাপ্তির বাবা এলে নাকি একসাথে আসবে।এখন ফারহানের কাজ আছে তাই আসতে পারবেনা।

নীরার বাবা -প্রাপ্তির কি অবস্থা? এইভাবে থাকলে তো শরীর খারাপ করবে।

প্রাপ্তির মা -ঘুমিয়েছে মনে হয়।একটু আগে ডেকেছি উঠে নাই।২ দিন থেকে তো ঘুমায়নি তাই হয়তো তাড়াতাড়ি ঘুমিয়েছে।

পরেরদিন নীরার শশুর বাড়ীতে সবাই যাবার জন্য রেডি হচ্ছে।প্রাপ্তিও রেডি হয়ে নিচে নেমে এসে দেখে ফারহান দাঁড়িয়ে তার
সেজো কাকার সাথে কথা বলছে।প্রাপ্তি ফারহান কে দেখেই দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো।ফারহান অবাক হয়ে সেজো কাকার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কি করবে সে বুজতে পারছেনা।সবাই ও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।অনেকক্ষণ পর ফারহান নিজেকে ছাড়িয়ে

ফারহান -কি হয়েছে প্রাপ্তি তোমার?এইভাবে জড়িয়ে ধরলে কেন?

প্রাপ্তি কি বলবে বুজতে পারছেনা।সত্যি তো সেই ফারহানকে এইভাবে জড়িয়ে ধরাটা ঠিক হয়নি।

প্রাপ্তি চুপ করে আছে দেখে প্রাপ্তির ছোটা কাকা ইমরান বললো আসলে ফারহান নীরা কাল চলে যাওয়ার পর থেকে আমার মনে হচ্ছে প্রাপ্তি কেমন যেন হয়ে গেছে।তুই আর নীরাই তো ওর ভালো ফ্রেন্ড। কাল আবার তুই নীরার বিয়েতেও আসলিনা।হয়তো ও ভেবেছে তুই ওকে ভালোবুজিস।

প্রাপ্তি -কাকা তুমি চুপ করো।আসলে ফারহান তুমি কিছু মনে করো না।নীরার কথা ভাবতে ভাবতে হয়তো আমি নিজেই পাগল হয়েগেছি।তোহ,,, তুমি কখন এলে?

ফারহান -(মনে মনে,,, আমি তো চাই সারাজীবন তুমি আমায় এইভাবেই জড়িয়ে ধরবে)একটু আগেই।সবাই এতো করে বলছে তাই না এসে পারলামনা।নীরাতো বলেছে আজ আমাকে ওই বাড়ীতে না দেখলে নাকি আমার খবর আছে।তাই চলে আসলাম।তবে আমাকে কাল আবার চলে যেতে হবে।

এমন সময় প্রাপ্তির মেজো কাকা বাহিরে থেকে এসে বললো গাড়ী এসে গেছে সবাই চলো।

ফারহান -প্রাপ্তি! আমি গাড়ী নিয়ে আসছি তুমি আমার সাথে চলো।

সেজো কাকী -(ফারহানের কানে কানে এসে বললো)ফারহান! তুমি কি ভেবেছো আমরা কিছুই বুজিনা।

ফারহান -কাকী আমি জানি আপনারা সবাই বুজেন।কিন্তু যাকে বুজাতে চাচ্ছি সেই তো বুজেনা।কাকী জানেন আমার জীবনে প্রাপ্তির মতো মেয়ে কমে দেখেছি।অন্য সবার থেকে কেন যেন তাকে আলাদা লাগে।তার দিকে তাকালেই মনে হচ্ছে এক অদ্ভুত মায়া কাজ করে।মনে হয়ে সারাজীবন ওকেই ভালোবেসে কাটিয়ে দিতে পারবো।

প্রাপ্তি -ফারহান! চলো দেরি হয়ে যাচ্ছেতো।আর কাকীর সাথে এতো ফিসফিস করার কি আছে।এখন চলো বাসায় এসে না হয় ফিসফিস করবা।

ফারহান প্রাপ্তির কথা শুনে হাসি দিয়ে বললো আমি ফিসফিস করছিনা।জাস্ট কাকীকে বুজাচ্ছি আমি কি রকম মেয়েকে ভালোবাসি।
প্রাপ্তি আর কিছু না বলে গাড়ীতে গিয়ে বসে আছে।ফারহানও ফাঁসে গিয়ে বসেছে।

ফারহান -রাগ করেছো?

প্রাপ্তি -রাগ করবো কেন?আর তোমার সাথে তো রাগ করার প্রশ্নই আসে না।রাগ আমি তার সাথেই করি যাকে আমি ভালোবাসি।

প্রাপ্তির কথা শুনে ফারহান মন খারাপ করে বসে আছে।

প্রাপ্তি -তোমার আবার কি হলো? কথা বলছোনা কেন?

ফারহান প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে তুমি সত্যি অদ্ভুত একটা মেয়ে।কখন কি করো নিজেও জানো না।
দুজনেই কথা বলতে বলতে নীরার বাড়ীতে চলে এসেছে।

প্রাপ্তিতো গাড়ী থেকে নেমেই নীরাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো।তাদেরকে দেখে মনে হচ্ছে কতো বছর পর দেখা।সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। সবার এইভাবে তাকানো দেখে ফারহান তাদের কাছে এসে বললো এইভার তো ছাড়ো। নীরা! এখানে শুধু প্রাপ্তি আসে নাই সবাই এসেছে।কিন্তু তোমাদের দেখে মনে হচ্ছে এই পৃথিবীতে তোমরাই আছো।আর আমরা সবাই এলিয়েন।
ফারহানের কথা শুনে

প্রাপ্তি -আবার শুরু করছো?

নীরা -তোরা এখানে ঝগড়া করার কনো দরকার নাই।ভাইয়া চলেন আপনাকে মৃদুলের সাথে পরিচয় করিয়েদি।
এইদিকে সবাই সবার সাথে পরিচয় করানো হচ্ছে।নীরার শাশুড়ি ফারহান কে দেখে প্রাপ্তির মাকে বললো

নীরার শাশুড়ি -বেয়ান! এই ছেলেটা আপনাদের কি হয়? এতোদিন আপনাদের আর আমাদের মধ্য এতো কিছু হলো ওকে তো দেখলাম না।

প্রাপ্তির মা-ওর সাথে আমার মেয়ের প্রাপ্তির বিয়ে ঠিক করেছি।আমাদের বড় জামাই।প্রাপ্তির বাবা আসলেই বিয়েটা হবে।

পাশে থেকে নীরা কথাটা শুনে অবেক হয়ে তার বড় মাকে দেখছে।নীরা বড় মায়ের কাছে এসে বললো
নীরা -বড় মা এইদিকে আসো তোমার সাথে আমার কথা আছে।

প্রাপ্তির মা -আচ্ছা চল।

একটু ধুরে গিয়ে

নীরা -প্রাপ্তির বিয়ে কথা বলছিলে তখন।আমি যা শুনেছি তা কি সত্যি?

প্রাপ্তির মা -হ্যা।এইটা তো সবাই জানে শুধু তোরা ছোটোরা ছাড়া।

নীরা -বড় মা! প্রাপ্তি কি এই বিয়ে মেনে নিবে?সে তো,,,,,,,,,

প্রাপ্তির মা -সে তো কি নীরা?

নীরা কিছু বলার আগেই নীরাকে তার শাশুড়ি ডেকে নিয়ে গেলো নতুন গেস্ট আসছে তার সাথে দেখা করানোর জন্য।

চলবে,,,,,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ৬

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ৬

#Rabeya Sultana Nipa

 

নীরার বাবা বাড়ীতে এসে চুপচাপ শুয়ে আছে।নীরার মা এসে শুয়ে থাকতে দেখে

নীরার মা -হঠাৎ অসময় শুয়ে আছো?কিছু হয়েছে?

নীরার বাবা -কিছু হয়নি।নীরা কোথায়?

নীরার মা -ও তো বাহিরে গেছে।একটু আগে বাসায় চলে এসেছে।ডাকবো?

নীরার বাবা -না এইখানে ডাকার দরকার নাই।সবাইকে ড্রইং রুমে আসতে বলো সাবার সাথে কথা আছে।
নীরার মা উঠে গিয়ে সবাইকে ডেকে আনলো।

সবাই ড্রইং রুমে চুপচাপ বসে আছে।সবার মুখে চিন্তার ছাপ কি এমন হলো সবাইকে এইভাবে ডেকে আনলো।

প্রাপ্তির মা -ভাইয়া কিছু কি হয়েছে।সবাইকে ডাকলেন।

প্রাপ্তি নীরাকে চোখে ইশারা দিয়ে জিজ্ঞাস করলো কি হয়েছে।নীরা মাথা নাড়িয়ে বললো সেও কিছু জানেনা।

নীরার বাবা -(নীরার দিকে তাকিয়ে)নীরা তুমি আজ কোথায় গিয়েছিলে?

নীরা -আব্বু আমি তো,,,,, শপিং এ গিয়েছিলাম।প্রাপ্তিকে বলেছি আমার সাথে যেতে ও যায়নি তাই আমি একা গিয়েছি।

নীরার বাবা -প্রাপ্তি তুমি যাও নাই কেন?আর ও কেনো গেছে তুমি জানো?

প্রাপ্তি -(প্রাপ্তি কি বলবে বুজতে পারছে না)আমি জানিনা। কাকাই আমার মাথা ব্যাথা ছিলো তাই যায়নি।

নীরার বাবা -(সবার দিকে তাকিয়ে)এই দুজনের মধ্যে কেউ একজন মিথ্যা বলছে তোমরা কি জানো?

সাবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে প্রাপ্তি আর নীরার দিকে।নীরাও কথাটা শুনে ভয় পেয়ে গেলো। বাবা কি কিছু জেনে গেছে।নীরার মাথা কাজ করছেনা। বাবা হয়তো সব জেনে গেছে। না হলে এইভাবে সবার সামনে ডেকে আনতো না।

প্রাপ্তির মা -কি হয়েছে আমি কিছুই বুজতে পারছি না।আপনি সব খুলে বলুনতো।

নীরার বাবা -আমি কিছু বলবো না। আজ শুধু নীরা কথা বলবে।নীরা বলো? কে ওই ছেলে?
নীরা চুপ করে নিছের দিকে তাকিয়ে আছে।কি থেকে কি বলবে বুজতে পারছেনা।

নীরার বাবা -নীরা চুপ করে থেকোনা বলো?
নাকি তুমি বলতে চাও না?

নীরা -আ,,,ব্বু আ,,,,,মি ওকে চি,,,,,,নি।

নীরার বাবা -তোতলাচ্ছো কেনো? শুধুই চিনো?নাকি কোনো সম্পর্ক আছে ওই ছেলের সাথে?

নীরা -,,,,,,,,,

নীরার বাবা -তার মানে নীরবতা সম্মতির লক্ষণ।

প্রাপ্তির মা -নীরা তোমার বাবা যা বলছে তা কি সত্যি? তুমি বড় মাকে বলো আমি কিছু বলবো না।তুমি আমার কাছে সব খুলে বলো।

নীরা -,,,,,,,,

নীরার বাবা -ভাবী ও কিছুই বলবে না।কারণ তারা এখন আমাদের থেকে বড় হয়ে গেছে।
আমরা বুজতে পারি নাই।
(নীরার দিকে তাকিয়ে) ৭ দিন তোমাকে সময় দিলাম।তুমি ভেবে বলবে তুমি কি করতে চাও।তুমি কি সত্যি ওই ছেলে কে বিয়ে করবে নাকি অন্য ছেলে দেখবো?যাও রুমে যাও। ভেবে দেখো।

নীরা আর কিছু না বলে তার রুমে চলে গেলো।
নীরার বাবা-আমি সবাইকে বলছি নীরাকে বুজাও।প্রাপ্তি! আমার মনে হয় তুমি অনেক কিছুই জানো।তবুও তোমাকে বলছি ওকে ভালো করে বুজাও।

প্রাপ্তির মা -ভাইয়া ছেলে ভালো হলে না হয় বিয়ের ব্যাপারটা ভেবে দেখো।মেয়ে তো বড় হয়েছে, আজ না হয় কাল তো বিয়ে দিতেই হবে।

নীরার বাবা -ভাবী আমি ছেলেটাকে চিনি।ছেলেটা মোটামুটি ভালো।তবে এখনো বেকার। এখন তুমি বলো বেকার ছেলের কাছে মেয়ে বিয়েদি কি করে?আরেক টা কথা বাড়ির বড় মেয়ে রেখে মেজো মেয়ে বিয়ে দিলে মানুষে কি বলবে?

প্রাপ্তির মা -তা ঠিক বলছো। আচ্ছা ৭ দিন তো সময় দিয়েছো এর ভিতরে যদি ঠিক হয় আরকি।

নীরার বাবা -ঠিক না হলে বিয়ে এইছাড়া আর কিছু ভাবা যাবে না।

নীরার মা -ভাবা যাবে না কেন? আমার মেয়ে ওতোটা খারাপ কাজ করেনি।

নীরার বাবা -তোমাকে এইখানে কে কথা বলতে বলেছে? একটা মেয়ে সামলাতে পারো না।আর কি পারো তুমি আমাকে একটু বলবে?
নীরার মা কিছু না বলে উঠেই চলে গেলো।
সত্যিই কিছুই বলার নাই। যে মেয়েকে এতো বিশ্বাস করতো সেই মেয়ে এমন কাজ করবে এইটা তো ভাবাই যায় না।

নীরা একা একা বসে কান্নাকাটি করছে।প্রাপ্তি এসে বুজানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না।

প্রাপ্তি -তুই কি এইভাবে কান্না করে যাবি?কিছু বলবি না?

নীরা -নীরা কান্না থামিয়ে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে বললো আচ্ছা আয়ানের সাথে তো তোর ২ মাসের সম্পর্ক। পারবি ওই ছেলেটাকে ভুলে যেতে?

প্রাপ্তি কিছু না বলে নীরার দিকে তাকিয়ে আছে কি বলবে সে? কিছুই বলতে পারবে না সে। চুপ করে থাকা ছাড়া।

নীরা -জানি এখন চুপ করেই থাকবি।আর আমার ১ বছরের রিলেশন আমি কিভাবে ভুলি বল?

প্রাপ্তি -আমি তো তোকে ভুলতে বলি নাই।
একটা কাজ কর মৃদুলকে একটা ফোন দিয়ে বল ওর বাসা থেকে লোক পাঠাতে। বিয়ের ব্যাপারে কথা বলার জন্য।

নীরা -মৃদুল এখনো কিছুই করে না।আব্বু কখনোই রাজি হবে না।আর তুই বাড়ির বড় মেয়ে সবাই কি বলবে।তোকে রেখে আমাকে বিয়ে দিলে।

প্রাপ্তি -হা হা হা নীরার কথা শুনে প্রাপ্তি হাসতেই থাকলো।তুই এই জন্য বিয়ে করবি না?

নীরা -এইখানে হাসার কি হলো বুজলাম না।আচ্ছা ঠিক আছে আমি মৃদুলকে সব বলছি।

আচ্ছা কথা বল আমি ওই দিকে দেখে আসছি কি হচ্ছে।

সবাই যে যার মতো চুপচাপ কাজ করছে।
প্রাপ্তি সেজো কাকীর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো।

প্রাপ্তি -সেজো কাকী! আজ রাতে কি রান্না করছো?

সেজো কাকী -তুই রান্না ঘরে কি করছিস সেটা বল? মেজো ভাইয়া এসে দেখলে আমাকেই বকা দিবে।তুই তাড়াতাড়ি তোর রুমে যা।তোর কিছু লাগলে আমি দিপাকে (কাজের মেয়ে) পাঠিয়ে দিচ্ছি।এইবার তো যা।

প্রাপ্তি -ওহহহ আমার কিচ্ছু লাগবে না।শুনোনা! কাকা আর কিছু বলছে পরে?

এমন সময় প্রাপ্তির মায়ের ডাক শুনে দৌড়ে প্রাপ্তি রান্নাঘর থেকে চলে গেলো তার মায়ের রুমে।
প্রাপ্তি -আম্মু আমায় ডেকেছো?

প্রাপ্তির মা-বস এইখানে।(অনেকক্ষণ প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে)তুই সত্যি কিছুই জানিস না।আমি জানি আমার মেয়ে আমার কাছে কখনো মিথ্যা কথা বলেনা।আর আমি চাই আজও সেটা প্রমান হক।

প্রাপ্তি -আ,,,,, ম্মু আমি বেশি কিছু জানি না।
শুধু এইটাই জানি ওই ছেলেটা কে নীরা ভালোবাসে।তবে আম্মু জানো ছেলেটা অনেক ভালো।তুমি কাকাই কে বলে ওদের বিয়ে দিয়ে দাও না।কাকাই তোমার কথা শুনবে।

প্রাপ্তির মা-আমি এইটা বলতে পারবো না।কারণ মেয়েটা ওর। ওর মেয়ের ভালো খারাপ ওই ভালো জানে।এইখানে আমি কিছু বলতে পারবো না।আর তুমিও প্রাপ্তির মতো এমন কিছু করোনা সবার মনে কষ্ট যায়।

প্রাপ্তি কথা না বাড়িয়ে তার মায়ের সামনে থেকে উঠে গেলো।প্রাপ্তি মনে মনে ভাবছে সেও তো একি কাজ করছে আয়ান কে ভালোবেসে।কি হয়েছে সে আয়ান কে দেখে নাই।তাতে তো ভালোবাসা কমে যায়নি।শুধু কিছু সময়ের জন্য দেখা ভালোবাসা হয়না। ধুর থেকেও ভালোবাসা যায়।কই তাতে তো কিছু কম পড়ে যায়নি।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে রুমে এসে দেখে আয়ান ফোন করেছে।ফোনটা রিসিভ করতেই ওই পাশ থেকে
কই ছিলে তুমি?তোমার সাথে কথা বলে আমি থাকতে পারি না তুমি জানো না?

প্রাপ্তি -আয়ান দুপুরেও তো কথা বললাম।তুমি এমন ভাব করছো মনে হয় ১ বছর পর কথা বলছি।

আয়ান -তার চেয়ে বেশি হয়ে গেছে।তুমি আমার সাথে প্রতি ঘন্টায় কথা বলবে।তুমি জানো? তোমার সাথে কথা না বললে আমি যেন কি হারিয়ে ফেলেছি।but তোমাকে তো বুজাইতে পারবোনা।

প্রাপ্তি-জানি আমি।আর শুনানো লাগবে না।আজ কি হয়েছে জানো?

আয়ান -না বললে জানবো কি করে?

প্রাপ্তি -সেই দিন তোমায় বলেছিলাম না।নীরা আর মৃদুলের কথা।আজ বাসায় সবাই জেনে গেছে।

আয়ান -তারপর? সবাই কি বলছে এখন?

প্রাপ্তি – কাকাই নীরাকে ৭ দিনের সময় দিয়েছে।নীরা কি করতে চায় ভাবে নিতে।

চলবে,,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ৫

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ৫

#Rabeya Sultana Nipa

 

নীরার কথা শুনে প্রাপ্তি অবাক হয়ে বললো
তুই প্রেম কিরছিস আর আমি জানি না
দেখছিস তুই কখনোই আমায় আপন ভাবতে পারিস না।আমি যাই হোক না কেন সবকিছু তোকেই বলি।আর তুই আমাকে কিছুই বললি না?

নীরা -আমি তোকে সত্যিই বলতে চেয়েছিলাম।কিন্তু মৃদুল আমায় বলতে নিষেধ করেছে।ও বলেছে ওই তোকে বলবে।

প্রাপ্তি -মৃদুল ছেলেটা কে? কিভাবে যোগাযোগ হয়েছে তোদের?

নীরা -১ বছর হয়ে গেছে।ওর সাথে তেমন কথা হয়না।কলেজে গেলে শুধু দেখা করি।আমাদের ক্লাসের আরশি আছে না ওর ভাই।

প্রাপ্তি -(অবাক হয়ে)১ বছর হয়ে গেলো আর আমি কিছুই জানিনা।ভালোই তো।আরশির ভাইকে দেখলি কেমনে?

নীরা -ওর বোনের সাথে দেখা করতে এসেছিল সেইদিন ও আমাকে আরশির সাথে দেখেছে।তার পর একটু একটু করে এগিয়েছে সব কিছু।

প্রাপ্তি -ঠিক আছে চিন্তা করসিনা আমি আছি তোর সাথে।এখন কাউকে কিছু বলার দরকার নাই।পড়াটা শেষ কর।তারপর সবাইকে সবকিছু বলা যাবে।

প্রাপ্তি, নীরা কই তোরা বড় মায়ের ডাকে দুজনেই দৌঁড়ে ড্রইং রুমে আসলো।

মেজো কাকী -কিরে নাস্তা করবিনা।তাড়াতাড়ি নাস্তা করে কলেজে যাও।

আজ দুজনেই কোনো কথা না বলে নাস্তা করতে বসেছে।

সেজো কাকা-ভাইয়া তুমি কি আজ কোনো কিছু মিস করছো?
(প্রাপ্তি আর নীরাকে চোখ দিয়ে ইশারায় দেখিয়ে)

মেজো কাকা -হ্যা ঠিকি বলছিস।কিন্তু দুইটা বকবক মানুষ হঠাৎ এই ভাবে চুপ হয়ে গেলো কেন?

তারপরেও প্রাপ্তি আর নীরাকে কিছু না বলেতে দেখে

সেজো কাকা -কি হয়েছে তোদের? এইভাবে চুপচাপ হয়ে গেলি কেনো?কেউ কিছু বলেছে? না কিছু লাগবে?

প্রাপ্তি -কেউ কিছু বলেনি আর কিছু লাগবেও না।

সেজো কাকা -তাহলে ঠিক আছে।আর কিছু হলে বলতে পারিস।

প্রাপ্তি আর নীরা কিছু না বলে কলেজে চলে গেলো।

নীরা -প্রাপ্তি চল আজকে তোকে মৃদুলের সাথে দেখা করিয়েদি।

প্রাপ্তি -না আজ না,, অন্য একদিন।এখন এমন কিছু করিস না কেউ দেখে বাসায় গিয়ে বলে।একটু সাবধানে চলার চেষ্টা কর।আচ্ছা তোর ওই মৃদুল কি করে?

নীরা -ও এখনো কিছু করে না। তবে চাকরী জন্য চেষ্টা করতেছে।বলেছে চাকরী ফেলে বাসায় আমাদের কথা জানাবে।

প্রাপ্তি -ওও ভালো।

কলেজ শেষ করেই দুজনে বাসায় এসে দেখে ফারহান। সাথে তার ছোটো কাকাও এসেছে।

প্রাপ্তি -কাকাই তুমি আসলে কখন? তুমি তো মিলির বিয়েতেও আসলেনা।

ছোটো কাকা- একটু আগেই এসেছি।আচ্ছা তোরা আগে ফ্রেশ হয়েনে তারপর আজ সবাই মিলে আড্ডা দিবো।

প্রাপ্তি -(ছোটো কাকার কানের কাছে গিয়ে)এই ছাগলের ৩ নাম্বার বাচ্চাটাকে কেনো নিয়ে এসেছো?

ফারহান -আমি ছাগলের ৩ নাম্বার বাচ্চা!প্রাপ্তি! তুমি কিন্তু এই ভাবে বলতে পারো না।আমি আসতেই চাইনি ইমরান (ছোটো কাকা)আমায় জোর করে নিয়ে এসেছে।

প্রাপ্তি -কই আমি তো কিছু বলিনি। তুমি এইগুলো শুনলে কি করে?

ফারহান -তোমার চুপেচুপে বলতে হবেনা যে মাইক তোমার গলায় মানুষ এমনিতেই শুনবে।

প্রাপ্তি -মা দেখেছো? বলেছিনা এই শুধু এইখানে আসে আমার পিছু লাগার জন্য।ধুরঃ বলেই প্রাপ্তি তার রুমে চলে গেলো।

সবাই প্রাপ্তির কান্ড দেখে সবাই হাসলেও ফারহানের মুখে কোনো হাসি নাই।

প্রাপ্তির মা -(হাসতে হাসতে)বাবা ফারহান কিছু মনে করোনা। আমার মেয়েটা একটু পাগল ধরনের।এমনিতে অনেক ভালো।

ফারহান -না আন্টি আমি কিছু মনে করেনি।বরং আমার ওর সবকিছুই ভালোলাগে।আমি ঢাকায় গেলে ওর এইসব পাগলামি খুব মিস করি।

ফারহানের কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে।

সেজো কাকী -ফারহা,,,,,ন!ব্যাপার কি?

ফারহান -কোনো ব্যাপার নাই।
কথাটা বলেই চলে গেলো।

১ মাস পর

প্রাপ্তি আর আয়ান এখন একজন আরেকজন কে ছাড়া থাকতেই পারে না।প্রাপ্তি এই ১ মাস একটা রাতেও ঠিক করে ঘুমায়নি।প্রতিটি রাত আয়ানের সাথে কথা বলে কাটিয়েছ। আয়ান আর প্রাপ্তির সম্পর্ক এখন শুধু বিশ্বাসের উপরেই টিকে আছে।কারন তারা একজন আরেকজনের ছবি ছাড়া সরাসরি এখনো কেউ কাউকে দেখিনি।তারা একে উপরকে না দেখেও নিজেদের সুখ দুঃখ গুলোকে ভাগ করে নেয়।ঘন্টার পর ঘন্টা শুধু দুজন দুজনের কথাই ভাবে।যতো দিন যায় তাদের ভালোভাসাও তোতো গাঢ় হয়।এই ভাবে চলতে থাকে তাদের দিন গুলো।প্রাপ্তি মাঝে মাঝে দেখা করতে চাইলেও আয়ান বলে আমি এখনো কিছু করি না।তোমার ফ্যামিলির সামনে আমি এইভাবে কখনোই দাঁড়াতে পারবোনা।আগে কিছু করি তারপর।আমি তোমাকে তোমার ফ্যামেলির কাছে ছোটো হতে দিতে পারি না।আরানে কথা শুনে প্রাপ্তি আয়ানের উপর ভালোবাসা আরো দিগুণ বেড়ে গেলো।

প্রাপ্তি -জানো আয়ান আমি কখনো ভাবিনি তোমার মতো কাউকে আমার জীবনে পাবো।

আয়ান -প্রাপ্তি আমি চাই না আমার ভালোবাসার কোনো অমর্যদা হক।জানো আমি তোমাকেই প্রথম ভালোবেসেছি।তাও আবার না দেখে।আমার আশেপাশে অনেক মেয়ে আছে কিন্তু তাদের প্রতি আমার কোনো ভালোলাগায় কাজ করে না।

প্রাপ্তি আয়ানের বলা কথা গুলো চুপ করে শুনছে।প্রাপ্তি ভাবছে তুমিও আমার প্রথম ভালোবাসা।তোমাকে আমার মনে হয় তুমি আমার সারাজীবনের আপন কেউ।

প্রাপ্তি! প্রাপ্তি! নীরা ডাকে প্রাপ্তি ফোন রেখে নীরার রুমে এলো।

প্রাপ্তি -কিরে ডাকছিস কেন?

নীরা -আমি বাহিরে যাচ্ছি যাবি?

প্রাপ্তি -এই বিকেলে তুই এখন কোথায় যাবি? আর তোকে একা যেতে দিবে?

নীরা -তোর ওই সব নিয়ে ভাবেতে হবে। মাকে বলেছি আমার কিছু কিনাকাটা আছে। যাবো আর আসবো।তুই গেলো আরো ভালো হতো চলনা।

প্রাপ্তি -একটা কথা বলি।আমার মনে হয় তুই মৃদুলের সাথে দেখা করতে যাচ্ছিস।

নীরা -হুম, তুই কি করে বুজলি?

প্রাপ্তি -তোর সাজ দেখেই বুজেছি। নীরা আজ তুই না গেলে হয় না। আমার মন জানি কেমন করছে।

নীরা -তুই এই কথা বলছিস(হাসি দিয়ে)কিচ্ছু হবেনা দেখা করেই চলে আসবো।আমি তাহলে যাই তুই আয়ান ভাইয়ার সাথে কথা বল।তোর তো এইছাড়া কোনো কাজ নেই।

নীরা কথা গুলো বাহিরে চলে গেলো।

নীরা আর মৃদুল রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলছে।এমন সময় তার বাবা ওই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় নীরা কে দেখে ফেলে। কপাল খারাপ থাকলে যা হয় আরকি।নীরার বাবা সেখানে নীরাকে কিছু না বলে বাড়ী চলে আসে।।

চলবে,,,,,,,