Sunday, August 17, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2398



অজানা_অনুভূতি পার্ট: 30

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: 30

#Rabeya Sultana Nipa

 

__সকালে নাস্তা করে বাড়ীর ছেলেরা সবাই অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।সবার আগে মৃদুলকেই যেতে হচ্ছে কারণ বিয়ে পর মৃদুল বেসরকারি একটা অফিসে কাজ করছে।আর সবাই নিজেদের ব্যবসা তাই একটু দেরী হলে সমস্যা নেই।ফারহান রুমে এসে রেডি হয়ে প্রাপ্তিকে ডাকছে।প্রাপ্তি সবার সাথে বসে গল্প করছে। ফারহানের ডাক শুনে উঠে গিয়ে, আমার বরটার কি হয়েছে বলোতো ?

ফারহান -তুমি জানো আমার এখন অফিসে যেতে হবে।এমনিতে সকালে উঠতে দেরী হয়ে গেলো। কোথায় আমার সব কিছু গুছিয়ে দিয়ে অফিসে পাঠাবে তা না উল্টো বসে বসে আড্ডা দিচ্ছো।

প্রাপ্তি- তাই বাবু সোনা? তোহ্ তোমাকে সকালে উঠতে কে মানা করেছে?

দুষ্টমার্কা একটা হাঁসি দিয়ে ফারহান একহাতে দিয়ে গলার টাই ঠিক করছে অন্য হাতে প্রাপ্তিকে কাছে টেনে এনে জড়িয়ে ধরে,
ফারহান – বাবু,এতো সুন্দর একটা চাঁদ পাশে থাকলে রাতে কি ঘুম হয়? তাই রাতে শুধু সেই চাঁদের আলোতে হারাতে ইচ্ছে করে।নিজেকে যতোই বলি ফারহান, সকালে অফিস আছে মিটিং আছে চাঁদের আলোতে নিজেকে এতো হারিয়ে ফেলিস না।তবুও মন কিছুতেই মানতে চায় না।

প্রাপ্তি ফারহানের শার্টের কলার ঠিক করে দিতে দিতে
প্রাপ্তি -হুম,,,এখন অফিসের দেরী হচ্ছে না? এতো কিছু করতে পারো টাই ও বাধতে পারো, শার্টের কলারটা আজ পর্যন্ত ঠিক করতে পারনা।

ফারহান -কি করবো বলো তুমি নিজ হাতে শার্টের কলার ঠিক করে দিলে সারাদিন মনে হয় ভালোই কাঁটে।

প্রাপ্তি -এইবার ছাড়ো তো আর পাম্প দিতে হবেনা।প্রাপ্তি কোনো বেলুন নয় পাম্প পেয়ে সব ভুলে যাবে।

এমন সময় নাজিফা এসে বললো, ভাইয়া আপুকে এইবার ছাড়ো। আমার আজ ক্লাস নেই তবে একটা ফ্রাইবেট আছে। তুমি যদি যাওয়ার সময় আমাকে সেইখানে নামিয়ে দাও একটু ভালো হয়।

ফারহান প্রাপ্তিকে ছেড়ে দিয়ে, এদের জন্য বউটাকে একটু আদরও করতে পারিনা।যাইহোক প্রাপ্তি,তোমার তো কপাল এইবার পুড়লো দেখছি ।তোমার সতিন নিজে এসেই ধরা দিচ্ছে।দেখনা তোমাকে একটু আদর করবো তাও সহ্য হচ্ছে না।

প্রাপ্তি মুখটা গোমড়া করে ফারহানের দিকে তাকিয়ে, ফারহান! সবসময় ইয়ার্কি ভালোলাগে না।ওকে কিছু বললে ও তোমার সাথে যেতে চাইবে না।
নাজিফা, তুই ড্রইংরুমে বস তোর ভাইয়া আসছে।

প্রাপ্তি বলার সাথে সাথেই নাজিফা কিছু না বলে চলে গেলো।

ফারহান -এই প্রাপ্তি! তুমি কি রাগ করছো?
সরি বাবু আর বলবো না।

প্রাপ্তি -আমি একটুও রাগ করিনি।তাড়াতাড়ি যাও নাজিফার আবার দেরী হয়ে যাবে।

ফারহান -যাবো কি করে? যাবার মেডিসিন এখনো পড়েনি পড়লেই চলে যাবো।
প্রাপ্তি বুজেছে ফারহান কিসের কথা বলছে।ফারহানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফারহানের কাছে গিয়ে অনেক গুলো চুমু দিয়ে এইবার যাও।

ফারহান অবাক হয়ে, বাবু এইটা কি ঝড় উঠছে?

প্রাপ্তি -আর একটা কথাও না যাও বলছি।

ফারহান ড্রইংরুমে আসতে প্রাপ্তির হাত ধরে এসে নাজিফাকে বললো ম্যাডাম এইবার আসুন।আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে।

নাজিফা -এতোক্ষণ আপুকে আদর করতে দেরী হয়নি।মনে হচ্ছে তোমার বউটাকে কেউ নিয়ে যাবে তাই এখনো হাত টেনে ধরে রাখছো।

ফারহানের একটুও খেয়াল ছিলো না প্রাপ্তির হাত ধরে রেখেছে সে।নাজিফার কথা শুনেই প্রাপ্তির হাত ছেড়ে দিয়ে ওহ্ সরি এই বার আসো।
ফারহান আর নাজিফা চলে গেলো।
প্রাপ্তি ছোটো একটা নিশ্বাস ছেড়ে নিজের রুমেই আসলো।মনে মনে এইটাই অপেক্ষা করছিলো ফারহান কখন অফিসে যাবে।
ফোনটা হাতে নিয়ে খাটের এককোণায় গুটিসুটি হয়ে বসে আয়ানকে ফোন দিলো।অনেক বার রিং হওয়ার পরে আয়ান ফোন রিসিভ করলো।

আয়ান -শুভ সকাল, মিসেস ফারহান! আপনার রাত গুলো এখন অনেক সুখের কাটতেছে অনেক মধুময় তাইনা?

প্রাপ্তি -আয়ান আমি তোমার কাছে এইসব কিছুই শুনতে ফোন দিই নি।

আয়ান -ব্যাপার কি, ফারহান সাহেব বাসায় নেই মনে হচ্ছে।না হলে আপনি থেকে তুমিতে আসতেনা।তারপর বলো?কি মনে করে ফোন করেছো।

প্রাপ্তি -তুমি আর কখনো আমার ফোনে কল দিওনা।তুমি ফোন দিলে হয়তো ফারহান কিছু বলেনা,কিন্তু আমি বুজি ও ভিতরে ভিতরে ঠিকি কষ্ট পায়।সেইদিন তোমার ভুলের কারণে আজ এই অবস্থা। সেইদিনের জন্য কখনওই আমাকে দায়ী করতে পারবেনা।তুমি আমাকে শুধু সন্দেহ করেছিলে।কিন্তু ভালোবাসাটা একবার দেখনি।

আয়ান -ভুল মানুষেই করে তাইনা?তাই বলে শাস্তিটা অনেক কঠিন হয়ে গেলো না?প্রাপ্তি আমি মেনে নিলাম সব ভুল আমার। সব আমার দোষ। এইবার তুমি ফিরে আসো।আমি কথা দিচ্ছি আমার ফ্যামিলির লোক কিছুই জানবেনা।তোমাকে নিয়ে ওদের কোনো অভিযোগ করতে দিবোনা।প্লিজ ফিরে আসো।

প্রাপ্তি -এইটা সম্ভব না।আমি ফারহানকে ছেড়ে তোমার কাছে যেতে পারবোনা। প্লিজ আমাকে আর ফোন দিওনা।ফারহানকে শুধু ভালোবাসাই যায় ছেড়ে যাওয়া যায় না।

আয়ান -তুমি সত্যিই ফারহান কে ভালোবাসো?বড়লোকের ছেলে ভালোতোবাসবাই।

প্রাপ্তি -হ্যাঁ সত্যি আমি ওকে অনেক ভালোবাসি। তবে বড়লোকের ছেলে হিসেবে নয়।ভালোবেসেছি আমার প্রতি তার ভালোবাসা, বিশ্বাস এইগুলো দেখে।

আয়ান- ঠিক আছে আমি তোমাকে আর জ্বালাবো না।তবে এক শর্তে।

প্রাপ্তি-কিসের শর্ত আয়ান?তুমি এমন কিছু বলোনা যা আমি করতে পারবোনা।

আয়ান -বেশী কিছু না শুধু মাঝে মাঝে তোমার খবর নিতে চাই।তোমাকে বেশী ডিস্টার্ব করবোনা। বিশ্বাস করো।

প্রাপ্তি মনে মনে ভাবলো এইতো আর বেশী কিছুনা।মেনে নি, না হলে প্রাতিদিন ও ফোন দিবে।এতে ফারহানের কষ্টটা আরো বাড়বে।

প্রাপ্তি -ঠিক আছে তোমার শর্তে আমি রাজি।তাহলে এখন রাখছি।

কথাটা বলেই প্রাপ্তি ফোন কান থেকে নামিয়ে খাট থেকে নিছে পা দিতেই দেখে ফারহান দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।
ফারহান!!!তুমি কখন এলে? অফিসে যাওনি?

ফারহান চুপচাপ রুমে ঢুকেই আলমারি থেকে ফাইল টা নিয়ে আবার চলে যাচ্ছে দেখে প্রাপ্তি পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো ফারহানকে।,তোমার কি হয়েছে বলতো?
কথা বলছো না কেন?

ফারহান প্রাপ্তিকে ছাড়িয়ে হাত ধরে টেনে সামনে এনে দাঁড় করিয়ে, কাঁদোকাঁদো গলায় বললো, দেখেছো আমি কতটা হতোভাগা। নাজিফাকে নামিয়ে দিয়ে হঠাৎ ফাইলটার কথা মনে পড়ে গেলো। এসে শুনি আমার বউ শর্ত মেনে নিচ্ছে।কিসের শর্ত মেনে নিলে প্রাপ্তি? আমাকে ছেড়ে যাওয়ার?বেঁচে থাকতে তো তুমি কারো কাছে গেলে আমি সহ্য করতে পারবোনা।আমার মরণে পরে না হয় যেও।কথাটা বলার সাথে সাথে প্রাপ্তি ফারহানকে জড়িয়ে ধরে তার বুকে মাথা রেখে ফারহান বিশ্বাস করো আমি এমন কিছু করবোনা যাতে তোমার কষ্ট হবে।তারপর প্রাপ্তি আয়ানের বলা কথা গুলো সব বললো।ফারহান সব শুনে প্রাপ্তির মাথাটা উঠিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে, বাকী কথা অফিস থেকে এসে বলবো।আমার একটা মিটিং আছে তাড়াতাড়ি যেতে হবে।

প্রাপ্তি -ঠিক আছে যাও।তাড়াতাড়ি ফিরে এসো।

ফারহান- এবার সুন্দর করে একটা হাঁসি দাওতো। এই হাঁসিটা না দেখে গেলে কোনো কাজেই মন বসবে না।
প্রাপ্তি হাঁসতে হাঁসতে আচ্ছা ওকে এইবার যাও।তাড়াতাড়ি এসো কিন্তু।
ফারহান যাওয়ার সময় প্রাপ্তির চুল গুলোকে এলোমেলো করে দিলো।

এইভাবে রাগ, অভিমান, হাঁসি কান্নার মাঝেই চলিতেছিল তাদের সংসার দেখতে দেখতে অনেকটা দিনও কেটে গেলো

চলবে,,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ২৯

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ২৯

#Rabeya Sultana Nipa

 

_ঘড়ীর কাটায় টিকটিক করে রাত দুইটা বেজে গেছে।প্রাপ্তি ফারহানের বুকে মাথা রেখে বেঘোর হয়ে ঘুমাচ্ছে।এইদিকে প্রাপ্তির ফোনের রিং বেজেই যাচ্ছে।ফারহান ফোনের শব্দ পেয়ে ঘুম ঘুম চোখে ফোনটা খুঁজে নিয়ে দেখে প্রাপ্তি ফোন বেজে যাচ্ছে।
ফোনের আলো প্রাপ্তির মুখে পড়তেই ঘুম ঘুম চোখে, ওহ্! ফারহান কি করছো তুমি?

ফারহান -(আস্তে করে) অনেকক্ষণ থেকে তোমার ফোন বাজতেছে।

প্রাপ্তি – ধ্যাত! ফোন অফ করে রাখো তো।

ফারহান -দেখো না হয়তো জরুরী হবে।

তুমি ছাড়া এই মুহূর্তে জরুরী কিছু নেই, কথাটা বলতে বলতে প্রাপ্তি উঠে বসলো। ফারহানের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে ফোনের স্কিনের উপর নাম্বারটা দেখে প্রাপ্তির হাঁসি মুখটা মলিন হয়ে গেলো।

ফারহান নিজেও উঠে বসতে বসতে হ্যাঁ আয়ানই ফোন করেছে তাই তোমাকে উঠাতে হলো।অন্য কেউ হলে তো আমি নিজেই কথা বলতাম।
কথাটা শুনে প্রাপ্তি ফারহানের মুখের দিকে ছেয়ে আছে।একটা মানুষের কিভাবে এতোটা সহ্য করার ক্ষমতা থাকে?

ফারহান -আমার দিকে তাকিয়ে না থেকে ফোন রিসিভ করো। বেচারা একটার পর একটা কল দিয়েই যাচ্ছে।

প্রাপ্তি ফারহানের কথায় ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই, আমি জানতাম তুমি আমার ফোন রিসিভ না করে পারবেনা। কারণ তুমি আমায় ভালোবাসো।

প্রাপ্তি -আপনার ভুল ধারণা। আপনার ফোনই আমি রিসিভ করতাম না।কিন্তু আমার হ্যাজবেন্ডের কারণেই রিসিভ করলাম।যাইহোক এতো রাতে ফোন দিলেন কেন?

আয়ান- প্লিজ এইরকম করোনা। আমি মানছি আমি সেইদিন ভুল করেছি।তোমার কোনো কথা বিশ্বাস না করে।চলোনা আমরা সবকিছু মিটিয়েনি।
কথাটা শুনে প্রাপ্তি ফারহানের দিকে তাকালো।ফারহান বসে বসে ফোন টিপতেছে।মনে হচ্ছে এইদিকে তার কোনো মনই নেই।

প্রাপ্তি -আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে? কি বলছেন এইসব? কি মিটাতে চান? কোনো কিছুই আমি মিটাতে চাই না।প্রাপ্তি কথার স্বর জরে হয়ে যাচ্ছে দেখে ফারহান নিজের ফোন রেখে, প্রাপ্তি আস্তে কথা বলো,সবাই শুনতে পাবে।

আয়ান -তার মানে সত্যি তুমি বিয়ে করেছো। সকাল থেকে ভাবলাম রাগ করেই এসব বলতেছ। কিন্তু এতো রাতে যখন তোমার পাশে ছেলের কন্ঠ শুনছি তারমানে তুমি সত্যিই বিয়ে করেছ।কিন্তু আমার তাতে কোনো সমস্যা নেই। বিয়ে করেছো তাতে কি হয়েছে? তবুও আমি তোমাকেই ভালোবাসি।তুমি ঠিক থাকলে আমার সব ঠিক।কথা গুলো শুনে প্রাপ্তি ভালো করেই বুজে গেলো আয়ানকে এইভাবে সারারাত বুজালেও বুজবেনা।এর ছেয়ে ভালো সকালে ফারহান যখন থাকবেনা তখন সব কিছু বুজিয়ে বলে ঠিক করে নিবো।ফারহান হয়তো মুখে কিছু বলছেনা।কিন্তু ভিতরে ভিতরে ঠিকি কষ্ট পাচ্ছে।ও তো রক্তেমাংস গড়া একটা মানুষ। হয়তো আমায় বেশী ভালোবাসে দেখেই সবকিছু চুপচাপ সহ্য করে নিচ্ছে।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে আয়ানকে আর কিছু না বলে ফোন রেখে অফ করে দিলো।

প্রাপ্তি ফোন রেখে দিয়েছে দেখে ফারহান বললো,কি ব্যাপার কিছু না বলেই রেখে দিলে।
প্রাপ্তি একটা হাঁসি দিয়ে ফারহানকে জড়িয়ে ধরে আমার এখন ইচ্ছে করছে না কথা বলতে।এতো রাতে কেউ ফোনে কথা বলে? আমার ইচ্ছে করছে বরে আদর খেতে।
ফারহান প্রাপ্তিকে নিজে দুই হাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, তাই বুজি?

প্রাপ্তি -হুম।।

ফারহান – তাহলে ফোনটা এসে ভালোই হলো।না হলে তো ঘুমিয়েই থাকতে।

প্রাপ্তি -হুম,,,

ফারহান প্রাপ্তিকে ছেড়ে দিয়ে সামনে বসিয়ে হাত দুটো শক্ত করে ধরে অনেকক্ষণ প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে থেকে,একটা কথা বলি?

প্রাপ্তি -আমি মানা করেছি তোমাকে? যা বলার বলতে পারো কিন্তু এইভাবে নয়।
তুমি শুয়ে পড়ো আমি তোমার বুকে মাথা রেখে যা বলবে শুনবো।
ফারহান কিছু না বলে প্রাপ্তিকে বুকে শুয়ে বললো, এই ফোনটা আর না ব্যাবহার করলে হয়না? আমি তোমাকে এর ছেয়ে ভালো ফোন এনে দিবো।ফারহানের কথাটা শুনে প্রাপ্তি ভালো করেই বুজেছে কেন বলছে এই কথা।তাই প্রাপ্তি মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে,

প্রাপ্তি -তুমি যা বলবে তাই হবে।

(কথাটা শুনে ফারহান বুজে নিলো আয়ানের উপর প্রাপ্তির এখন আর সেই দুর্বলতা কাজ করেনা)
আচ্ছা সারাজীবন আমাকে এইভাবে ভালোবাসবে তো?

ফারহান -যেইদিন তোমাকে ভালোবাসবো না তোমার মনে হচ্ছে, মনে করবে সেইদিনি ফারহান আর পৃথিবীতে নেই।

প্রাপ্তি -ওহ্ কি বলছো এইসব?যেইখানে যাবা আমাকে নিয়ে যাবে না হলে তোমার খবর আছে।

ফারহান -মুখে একটু হাঁসির ঝলক ফুটিয়ে আচ্ছা ঠিক আছে বলেই প্রাপ্তির কপালে আস্তে করে একটা চুমু খেলো।
সারারাত ফারহানের ভালবাসা পেয়েই প্রাপ্তির রাত কেটে গেলো।সকাল বেলা উঠে ফ্রেশ হয়ে ফারহানের জন্য চা আনতে গেলো।ফারহান চায়ের জন্য রুমে অপেক্ষা না করে ড্রইংরুমে সবার সাথে বসে আড্ডা দিতে লাগলো।মেজো মা প্রাপ্তিকে রান্নাঘরে ঢুকতে দেখে, কিরে তুই রান্নাঘরে?

প্রাপ্তি -ফারহানের জন্য চা নিতে আসলাম।

মেজো মা -তুই আসতে গেলি কেন? বললেই তো পাঠিয়ে দিতাম।

প্রাপ্তি- কোনো সমস্যা নেই। আমি নিজেই পারবো।
কথাটা শুনে মেজো মা বললো,তাহলেতো ভালোই।আচ্ছা এই নে,চা টা দিয়ে আয়।
প্রাপ্তি এসে ফারহানের হাতে চা দিতেই ইমরান বললো এইটা কি দেখলাম,

মেজো কাকা নিজের চায়ে চুমুক দিয়ে,কেন কি হয়েছে তোর?

আরে ভাইয়া কি হয়নি সেটা বলেন।(প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে)এই প্রাপ্তি, কখনো তো আমাকে এক কাপ চা এনে খাওয়ালিনা।আর যার সাথে তোর সবসময় ঝগড়া লেগেই থাকতো তাকে এনে ঠিকি খাওয়ালি।
ইমরানে কথাটা শুনে সবাই হাঁসতে লাগলো। ফারহান ইমরানের কানের কাছে গিয়ে, শুন তুই ওর কাকাই আর আমি ওর হ্যাজবেন্ড তাহলে আমাকে এনেতো দিবেই তাই না?তোর হিংসে কেন লাগছে আমি বুজলাম না।তুইও বিয়ে করে ফেল দেখবি বউয়ের হাতের চা কখনোই মিস করতে চাইবিনা।

চলবে,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট ২৮

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট ২৮

#Rabeya Sultana Nipa 

 

__প্রাপ্তি- আম্মু ডাকছে? আচ্ছা শুনো তুমি আবার সবার সামনে কিছু বলোনা প্লিজ।

প্রাপ্তি উঠে তার মায়ের কাছে গিয়ে দেখে ওইখানে সবাই আছে।

প্রাপ্তিকে দেখে তার মা বললো,কিরে তুই ওই খানে একা একা কি করছিস।আমরা সবাই এইখানে তুই আমাদের সাথে কথা বলবি তা না।আচ্ছা শুন ফারহান আর তুই আজ আমাদের বাসায় চলে আয়।নীরার শাশুড়িকে বলেছি নীরাকে নিয়ে যাওয়ার কথা।তিনিও রাজী হলেন।

প্রাপ্তি -আম্মু ফারহান কি বলবে বলো? ওর বাসায় ফোন দিয়ে আব্বুকে জিজ্ঞাস করতে হবে থাকবো কিনা?

মেজো মা -নাজিফা যাতো ফারহান কে ডেকে নিয়ে আয়। ফারহানকেই বলবো তার বাবাকে বলতে।

ফারহান এসে, মেজো মা! আমাকে ডেকেছেন?

মেজো মা- হ্যাঁ, আসলে মেয়েটা তো অনেক দিন হলো তোমাদের বাড়ীতেই আছে।আমরা চাই প্রাপ্তি এইখান থেকে আমাদের বাসায় যাবে।অবশ্য নীরাও যাবে।প্রাপ্তিকে বলছি সে বলতেছে তোমার বাবাকে বলা ছাড়া কিছু বলতে পারবেনা। এখন তুমি কি বলো?
কথাটা শুনেই ফারহান প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে থেকে বললো ঠিক আছে মেজো মা।আমি বাবাকে ফোন করে দেখি কি বলে।
কথাটা শেষ করে প্রাপ্তিকে চোখ দিয়ে ইশারা করলো বাহিরে আসতে।
প্রাপ্তি ফারহানের পিছন পিছন পাশের রুমে আসলো।ফারহান কে দেখে মনে হচ্ছে কথাটা শুনে ওর ভালো লাগেনি। আচ্ছা ও না গেলে নাই তাই বলে রাগটা আমার উপর মিটাবে নাকি।মনে মনে কথা গুলো ভাবতে ভাবতে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।ফারহান প্যান্টের পকেটে দুই হাতে ডুকিয়ে দাঁড়িয়ে প্রাপ্তির দিকে এক দৃষ্টিতে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে ওইখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
ফারহান আর কিছু বলার আগেই প্রাপ্তি কাছে আসতে আসতে, ফারহান বিশ্বাস করো আমি আম্মুদের যাওয়ার ব্যাপারে কিছু বলিনি।ওনারাই ব,,,,,,,,প্রাপ্তিকে আর কোনো কথার সুযোগ না দিয়ে ডান হাত দিয়ে টেনে এনে নিজের সামনে এনে দাঁড় করালো।

ফারহান -ওনারাই বলছে,,,, তোমার একটুও ইচ্ছে করেনি?

প্রাপ্তি -তুমি রাজী হলেই যাবো।যদি তুমি যাও তাহলে।

ফারহান – যেতে পারি এক শর্তে।

প্রাপ্তি -আবার কি শর্ত বলো তো?

ফারহান- তুমি তো ওই বাড়ীতে গেলে সবাইকে পেয়ে আমাকেই ভুলে যাবে।কিন্তু আমি এইটা চাইনা।আমি চাই তুমি শুধু আমাকেই সময় দিবে।এইকথায় যদি তুমি রাজী থাকো তাহলে আমিও যেতে রাজী। আর বাবাকেও বুজিয়ে বলবো।

প্রাপ্তি ভালো করেই জানে ফারহানকে যখনি ওই বাড়ীতে যেতে বলবে তখনি এই শর্তই দিবে।এরচেয়ে ভালো এখনি হ্যাঁ বলেদি।
প্রাপ্তির মুখে হ্যাঁ শুনে ফারহান মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটা বের করে তার বাবাকে ফোন দিলো।

ফারহান- আসসালামু আলাইকুম,

ফারহানের বাবা- ওয়ালাইকুম সালাম।কি ব্যাপার ফারহান,কোনো সমস্যা?

ফারহান -বাবা, আসলে প্রাপ্তির মায়েরা সবাই বলছে নীরাদের বাসা থেকে ওদের বাসায় যেতে।আর প্রাপ্তিও তো আমাদের বাড়ীতে এসেছে অনেক দিন হলো। এখন না হয় কয়েকদিন গিয়ে ওই বাড়ীতে থেকে আসুক।প্রাপ্তি বলছে তুমি না বললে ও যাবেনা।

ফারহানের বাবা -ফারহান, এতে আমার কোনো অসুবিধা নেই।প্রাপ্তিকে বলো কয়দিন গিয়ে থেকে আসতে।আর প্রাপ্তিকে বলে দিও ওর হাতের চা টা আমি খুব মিস করবো এই কয়দিন।

ফারহান একটা হাঁসি দিয়ে ঠিক আছে বলে ফোন রেখে দিলো।
প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে বাবা তোমাকে একটা কথা বলতে বলেছে।

প্রাপ্তি -কি কথা?

ফারহান- তোমার হাতের চা নাকি অনেক মিস করবে।
কথাটা শুনে প্রাপ্তি খুশি হবে নাকি মন খারাপ করবে বুজতে পারছে না।
কারণ সে তার শুশুরের জন্য চা বানিয়ে আনে ঠিকি কিন্তু তিনি কখনো খারাপ ভালো কিছু বলেননি।কিন্তু আজ কেন বললেন এইটা প্রাপ্তির অজানা।

এই প্রাপ্তি কি ভাবছো বলোতো? ফারহানের কথাটা শুনে প্রাপ্তি ভাবনার জগত থেকে ফিরে এলো।
কিছুনা ফারহান আমি আম্মুকে বলে আসি আমরা যাচ্ছি।
সব ঝামেলা শেষ করে সবাই সন্ধ্যায় বাড়ী ফিরে এলো।প্রাপ্তি নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে ফারহান বসে বসে প্রাপ্তির ফোন টিপতেছে।
প্রাপ্তি -ফোন দিয়ে কি করছো?

ফারহান -তোমার আর আয়ানের আগের এসএমএস গুলো দেখছি।চিন্তা করোনা দুই একটাই পড়ছি বেশী পড়িনি।

ফারহানের কথা শুনে প্রাপ্তি মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে আচ্ছা ঠিক আছে সব গুলোই দেখো তবে আগে ফ্রেশ হয়ে আসো এই ফাঁকে আমি নীরার রুম থেকে আসছি।

ফারহান -ঠিক আছে যাও আমি ফ্রেশ হয়ে এসে যেন তোমাকে এইরুমেই দেখি।

প্রাপ্তি আর কথা না বাড়িয়ে নীরার রুমের দিকে গেলো।
মৃদুল শুয়ে শুয়ে ফোনে কথা বলছে।নীরা ফ্রেশ হয়ে মাত্র দাড়িয়েছে।

প্রাপ্তি দরজায় দাঁড়িয়ে আমি কি আসবো?
নীরা হেঁসে উঠে তুই এই কথা বলছিস।তোর আর আমার মাঝে তো কোনো ফর্মালিটি নেই। তাহলে আজ কেন দেখাচ্ছিস।ওওও আমি তো ভুলেই গেছিলাম আপনি বড়লোক বাড়ীর বউ।এখন তো ফর্মালিটি দেখাবেনই।

প্রাপ্তি -(রুমে ঢুকতে ঢুকতে)দেখেছো ভাইয়া নীরা আমায় এই কথা বলছে।তো নীরা! তোরাই তো সবাই মিলে আমাকে বড়লোক বাড়ীতে বিয়ে দিলি।এখন আবার এই কথা কেন বলছিস?

নীরা প্রাপ্তির কাছে এসে হাত ধরে টেনে নিয়ে নিজের পাশে বসিয়ে প্রাপ্তি আমি মজা করছি।তুই কি রাগ করছিস? ঠিক আছে আর কখনো বলবো না।

মৃদুল শোয়া থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তোমাদের মাঝে আমি নেই। আমি বাহিরে যাচ্ছি তোমরা কথা বলো।
প্রাপ্তি এতোক্ষণ মনে মনে এইটাই চেয়েছিলো কখন মৃদুল যাবে আর ও নীরার সাথে কথা বলবে।মৃদুল চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে প্রাপ্তি।

নীরা -তুই ওই দিকে তাকিয়ে না থেকে কিছু বলবি? মনে হচ্ছে কিছু বলতেই এসেছিস।

প্রাপ্তি কথাটা ঘুরিয়ে পেছিয়ে না বলে সোজাই বললো আজ তোদের বাসায় যাবার আগে আয়ান ফোন করেছিলো।

প্রাপ্তির মুখে কথাটা শুনে নীরার নিস্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে প্রাপ্তির দিকে।কি বলবে বুজতে পারছেনা।প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছে এই আবার নতুন কোনো ঝামেলা শুরু করবে নাতো?

নীরার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাঁসি দিয়ে তুই কি ভাবছিস আমি ভালো করেই জানি।তবে তুই যা ভাবছিস ওইটা ভুল।আমি এমন কিছুই করবোনা যেতে ফারহান কষ্ট পায়। কি ভাবে মানুষকে ভালোবাসতে হয় সেটা আমি ফারহানের কাছ থেকেই শিখেছি।আমি এইটাও শিখেছি ভালোবাসাতে কোনো মিথ্যা ছলনা থাকতে নেই।হয়তো তুই এইটাও ভাবছিস আয়ানের কথা আমি ভুলে গেলাম কি করে আমার কি একটুও কষ্ট হচ্ছেনা? এইটার ও আনসার আমি জানি।আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে তোকে বলে বুজাতে পারবোনা। কিন্তু ফারহানের ভালোবাসার কাছে কিছুই না।যে মানুষ সামান্য একটা ফোনে আমায় এতোটা সন্দেহ করতে পারে তাকে ভালোবাসা বলা যায়না। আর যে সব কিছু জেনেও বিশ্বাস রাখে তাকেই ভালোবাসা বলে।
প্রাপ্তির কথা শুনে নীরা নিজেকে সামলাতে না পেরে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে, সত্যি বলছি তোর মধ্যে এতোটাই গভীরতা আছে যা আমাদের কারো কাছেই নেই।

প্রাপ্তি, প্তাপ্তি, সেজো কাকী ডাকতে ডাকতে নীরার রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে, তুই এইখানে, ফারহান তো তোকে ডাকছে।

হঠাৎ প্রাপ্তির মনে পড়ে গেলো ফারহান আসার সময় বলে দিয়েছিলো ও ফ্রেশ হয়ে এসে যেন আমাকে রুমে দেখে।নীরাকে আর কিছু না বলে প্রাপ্তি দৌঁড়ে রুমে গেলো।

প্রাপ্তিকে এইভাবে যেতে দেখে নীরা সেজো কাকীর দিকে তাকিয়ে বললো কি হয়েছে কাকী? কিছুই তো বুজলাম না।

সেজো কাকী আমি ও তো কিছু বুজিনি।ফারহান আমাকে বললো,কাকী প্রাপ্তিকে একটু ডেকে দিন তাই আমি ডাকতে এলাম।

নীরা -ওহ্,,আচ্ছা ঠিক আছে।

প্রাপ্তি রুমে ঢুকে ফারহান রেডি হচ্ছে দেখে।

কোথায় যাচ্ছো?

ফারহান -তোমার সাথে আমার এই কথা ছিলো?তুমি আমাকে রেখে আড্ডা দিবা আর আমি একা একা বসে থাকবো ইম্পসিবল এর থেকে আমার বাড়ীই ভালো।

প্রাপ্তি ফারহান কে আর কোনো কিছু বলতে সুযোগ না দিয়ে ফারহানকে জড়িয়ে ধরে চোখ দুটো বন্ধ করে আছে।কিছুক্ষণ পর ফারহানের মনে হলো তার পরার শার্টটা বুকের পাশে ভিজা লাগছে।তাড়াতাড়ি করে বুকের থেকে প্রাপ্তির মাথা উঠিয়ে দেখে চোখ দুটো দিয়ে অঝোরে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
ফারহান এতোক্ষণ প্রাপ্তিকে খেপানোর জন্যই কথাটা বলেছিলো।প্রাপ্তির চোখে পানি দেখে,এই পাগলি বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবোনা।তোমাকে ছাড়ে গেলে তো আমি নিজেই থাকতে পারবোনা। প্রাপ্তি কিছু বলছেনা দেখে ফারহান নিজের কাছে আরো টেনে এনে প্রাপ্তির কপালের সাথে নিজের কপালটা লাগিয়ে আস্তে করে, কি হয়েছে বলা যাবে?

প্রাপ্তি -ওহ্

ফারহান -বুজেছি কি হয়েছে।

প্রাপ্তি -কি বুজেছ?

ফারহান -আমার বউয়ের তার বরে ভালোবাসা পেতে ইচ্ছে করছে।

প্রাপ্তি -হুমমম

ফারহান আর কিছু না বলে প্রাপ্তির ঠোঁটের কাছে নিজের ঠোঁট গুলো নিয়ে প্রাপ্তির ঠোঁট গুলো নিজের করে নিলো। প্রাপ্তিও কোনো বাধা না দিয়ে ফারহানকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।ফারহানের ভালোবাসার কাছে নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছে।

চলবে,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ২৭

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ২৭

#Rabeya Sultana Nipa

 

_ সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রাপ্তি ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে গেলো।

বড় ভাবী প্রাপ্তিকে দেখে মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে, কিরে,, ফারহান উঠে নাই? আজ তো তোরা নীরাদের বাসায় যাবি।তোরা নাস্তা খেয়ে রেডি হয়েনে।

সুমি এসে বললো কোথায় যাবে ভাবী?

প্রাপ্তি -নীরার শশুর বাড়ীতে।তুমিও চলো না আমাদের সাথে দেখবে ভালো লাগবে।

ফারহান ফোন টিপতে টিপতে রুম থেকে এসে সোফায় বসলো।

সুমি -আজ না ভাবী অন্য কোনো সময়।

প্রাপ্তি -আরে চলো না। সবাই একসাথে গেলে ভালোই লাগবে।

ফারহান তাদের কথাগুলি শুনে সুমিকে ডেকে বললো,
কিরে তোর আজ এতো দাম বেড়ে গেলো কেন? কোনো না শুনতে চাইনা।গিয়ে রেডি হয়েনে।
সুমি আর কিছু বললোনা।প্রাপ্তি টুকিটাকি কাজ সেরে রুমে এসে রেডি হচ্ছে।ফারহান এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে নিজের মুখটা প্রাপ্তির কাঁধে রেখলো

প্রাপ্তি -ওহ্ ফারহান, শাড়ীটা তো পরতে দিবা।এইভাবে জড়িয়ে ধরলে শাড়ী পরা যায়।
ফারহান- তুমি যখন পারবেনা আজকে আমি শাড়ী পরিয়েদি।
প্রাপ্তি -আমি নিজেই পারি।তুমি এইভাবে থাকলে পরবোই বা কি করে।কথাটা শেষ করতেই প্রাপ্তির ফোন টা বেজে উঠলো।
এইবার তো দেখতে দিবে কে ফোন করেছে?

ফারহান -(প্রাপ্তিকে ছেড়ে দিয়ে)তোমার ফোন সকাল থেকে বাজতেছে।নাম্বারটা ছিনি না তাই রিসিভ করিনি।রং নাম্বার হতে পারে।
প্রাপ্তি ফোন হাতে নিয়ে নাম্বার দেখে ফারহানের দিকে তাকিয়ে, ৪২ বার কল করেছে কিন্তু আমিও নাম্বার টা চিনিনা।প্রাপ্তি রিসিভ করার আগেই কল টা কেটে গেলো।ফারহান প্রাপ্তির কাছে এসে নিজের বুকের সাথে টনে এনে , এইজন্যই ফোন ভালো লাগেনা।বউকে একটু আদর করবো তারও সময় দিবেনা।যখন তখন ডিস্টার্ব করে।প্রাপ্তি ফোনটা খাঁটের উপরে রেখে দিয়ে ফারহানের শার্টের কলার ঠিক করতে করতে বললো তুমি কি ওই বাড়ীতে গিয়েও এইরকম করবে?
ফারহান আনসার দিতে যাবে তখনি আবার ফোন টা বেজে উঠলো। প্রাপ্তি এইবার দেরী না করেই রিসিভ করে কানে ধরতেই,,

হ্যালো! হ্যালো,,,, প্রাপ্তি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো আমি আয়ান।

কথাটা শুনার সাথে সাথেই প্রাপ্তি নিজের অজান্তেই মুখ ফুটে বেরিয়ে এলো আয়ান,,,,,!বলেই নিস্তব্ধ হয়ে আছে।
প্রাপ্তি মুখে আয়ান নাম শুনার পরেই ফারহান প্রাপ্তিকে নিজের কাছ থেকে ছেড়ে দিয়ে একটু সরে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মনে হচ্ছে একনিমিষেই তার সব শেষ হয়ে গেছে।প্রাপ্তিকে যখন নিজের করে পেলাম তখনি ওকে আমাদের জীবনে আবার ফিরে আসতে হলো?প্রাপ্তি কি আবার আমার থেকে দূরে সরে যাবে?

আয়ান-প্রাপ্তি তুমি কি কিছু বলবেনা।এইভাবে চুপ করেই থাকবে?

প্রাপ্তি ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে কিছু বলার ভাষা নেই তার কাছে।এই সহ্য মানুষ টাই তার সবকিছু।এই কয়দিনে তাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে সে।

প্রাপ্তি -জ্বি আমি শুনতে পারছি।কিন্তু আপনি কেন ফোন দিয়েছেন এতো দিন পর?

আয়ান- প্রাপ্তি! তোমাকে সরি বলার ভাষা আমার নাই।আসলে এতো দিন তোমার কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিজেকে নিজে পরিক্ষা করে দেখলাম আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো কিনা।কিন্তু এখন বুজলাম আমি তোমাকে ছাড়া কিছুতেই থাকতে পারবোনা।

ফারহান- মিস্টার আয়ান আপনি অনেক দেরী করে ফেলেছেন।আপনি কথা গুলো বুজেছেন ভালো কথা,নিজেকে নিজে পরিক্ষা করেছেন ভালো কথা।তবে অনেক দেরীতে।

আয়ান- আমি তোমার কথা কিছুই বুজতেছিনা।তুমি আমার সাথে এইভাবে কথা বলছো কেন? কি হয়েছে একটু বলবে?

প্রাপ্তি- সেই দিন আমিও আপনার কিছু বুজিনি।যেদিন আপনি আমায় ভুল বুজে ছিলেন।জানেন আপনি সেইদিন ভুল বুজে ভালোই করেছেন।না হলে সত্যিকারের ভালোবাসা আমি ফিরেই ফেতাম না।(কথাটা বলতে বলতে ফারহানের কাছে গিয়ে ওর বুকে মাথা রেখে)আপনার কারণে আমি একজনকে অনেক কষ্ট দিয়েছিলাম।আজ সেই মানুষটাই আমার সব।

আয়ান -প্রাপ্তি আমি কিছু বুজতেছি না।প্রাপ্তি চলো আমরা দেখা করি? প্রাপ্তি আমি তোমার সামনে দাঁড়াতে চাই।তোমার সামনে দাঁড়িয়ে বলতে চাই আমি তোমাকে ভালোবাসি।

প্রাপ্তি -সেইদিন এইকথাটা বললে হয়তো রাখতাম।তবেঁ এখন আর না।
প্রাপ্তি কথাটা শেষ করতেই ফারহান প্রাপ্তির কপালে ছোট্রো একটা চুমু দিয়ে তুমি কথা শেষ করে সুমি কে নিয়ে আসো আমি গাড়ী বের করছি।প্রাপ্তিকে এখন ফারহান নিজের থেকেও বেশী বিশ্বাস করে ফেলেছে।তাই কিছু না বলেই চালে যাচ্ছে।

আয়ান -প্রাপ্তি তোমার সাথে কি কেউ আছে?

প্রাপ্তি -জ্বী মিস্টার আয়ান, আমার হ্যাজবেন্ড।

আয়ান- প্রাপ্তি তুমি এইসব কি বলছো।তুমি এইভাবে আমাকে কষ্ট দিতে পারো না।(একটু হেঁসে) তুমি আমাকে খেপাইতেছো তাইনা?

প্রাপ্তি- আমি আপনাকে খেপাতে যাবো কেন? ও,,,,হে আপনাকে তো বলাই হয়নি।আমি মিস প্রাপ্তি থেকে মিসেস ফারহান হয়ে গেছি।
প্রাপ্তির কথা গুলো বলতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আয়ানের সামনে সে কোনো দুর্বলতা দেখাতে চায় না।সেই এখন চাইলেও ফারহান ছাড়া কাউকে ভাবা সম্ভব নয়।

আয়ান- বাহ্ ভালোই।এই কি সেই ফারহান যার সাথে আমার কথা হয়েছিলো?
প্রাপ্তি কিছু বলার আগেই প্রাপ্তির দেরী দেখে ফারহান এসে দরজায় দাঁড়িয়ে প্রাপ্তি তোমার এখনো হয়নি? নীরা দেরী দেখে ফোন দিয়ে পাগল করে দিচ্ছে।

প্রাপ্তি -আয়ান আপনার কিছু বলার থাকলে পরে ফোন দিবেন।আমার হ্যাজবেন্ড আমার জন্য অপেক্ষা করছে কথাটা বলেই প্রাপ্তি আয়ানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কল কেটে দিলো।

ফারহান প্রাপ্তির কাছে এসে প্রাপ্তিকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেওনা।তোমার কিছু হলে আমি নিজেই মরে যাবো।প্রাপ্তি! আমার ভালোবাসার কথা গুলো হয়তো আমি তোমাকে গুছিয়ে বলতে পারিনা।কিন্তু বিশ্বাস করো তোমাকে আমি অনেক ভালোবাসি।

প্রাপ্তি ফারহানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে আমি জানি তুমি আমায় কতো টুকু ভালোবাসো।এখন সারাক্ষণ যদি এইভাবে জড়িয়ে ধরে রাখো তাহলে যাবেটা কখন?

ফারহান -কেন যে নীরার কথায় আজ যেতে রাজী হলাম? আরো দুইদিন পর গেলেই ভালো হতো।ওইখানে গেলে তো তুমি আমার কাছেই আসতে ছাইবেনা।ওহ্ বউটাকে এতো দিন পর কাছে পেলাম তাও কারো সহ্য হচ্ছে না।

প্রাপ্তি -ফারহান,,,,,, তুমি যেই ভাব করছো মনে হচ্ছে আমি কোথাও হারিয়ে যাচ্ছি।কয়েকটা ঘন্টারই তো ব্যাপার।

সুমি রেডি হয়ে এসে কিরে তোদের হলো?

প্রাপ্তি -হুম,,,আমারও হয়ে গেছে।কিন্তু ফারহান তোমার সাথে কথা বলতে বলতে রেডি হতে গিয়ে মনে হচ্ছে কি যেন মিসিং।

ফারহান- আর কিচ্ছু করতে হবে না।আমার বউকে এমনিতেই অনেক সুন্দর লাগছে।
এইবার চলো!

নীরার শশুর বাড়ীতে সবাই এসেছে।প্রাপ্তির পরিবারের সবার সাথে অনেক দিন পর দেখা হয়েছে।সবাইকে পেয়ে প্রাপ্তির ফারহানের দিকে খেয়ালি নেই।ফারহান সবার সাথে আড্ডা দিচ্ছে ঠিকি চোখ গুলো প্রাপ্তিকে খুঁজছে। নীরা আর মৃদুল সবাইকে নাস্তা দিচ্ছে। ফারহানের কাছে নীরা আসতেই, এই নীরা তোমার বোন তো এইখানে এসে আমাকেই ভুলে গেছে।একটু ডেকে দিবে এইখানে এসে অনেকক্ষণ হলো দেখছিনা।মনে হচ্ছে বছর হয়ে গেলো।

নীরা -ভাইয়া! আমাদের ভালোবেসে বিয়ে হয়েছে ঠিকি, কিন্তু আপনার ভালোবাসার কাছে এইটা কিছুই না।যাইহোক প্রাপ্তি আমার রুমে আছে ওইখানে নাজিফা আর সুমি আছে ইচ্ছে হলে গিয়ে দেখে আসেন।

ফারহান -(উঠে দাঁড়িয়ে) ওরা থাকলে সমস্যা নেই আমি আগে আমার বউকে দেখে আসি।কথাটা বলে ফারহান আর এক মুহূর্তের জন্যও দাড়ালোনা।

ফারহান নীরার রুমে গিয়ে দেখে ওরা বসে আড্ডা দিচ্ছে।

আরে নাজিফা! তুমি আসার পর থেকেতো একবারো দেখা করোনি।দেখেছো প্রাপ্তি? নাজিফা আমার পিছু ছাড়তেইইইইইই চায়না।প্রাপ্তি সাবধানে থাকো ও কখন তোমার সতিন হয়ে যায় বলা যায়না।

নাজিফা -এই শুনো একদম বাজে কথা বলবে না।আমার কি ঠেকা পড়ছে যে তোমাকেই বিয়ে করবো।এইইই,,, আপু দেখছিস ভাইয়া তোকে একটুও ভালোবাসেনা।

প্রাপ্তি -(নাজিফাকে আরো রাগানোর জন্য)ফারহান কিন্তু ঠিকি বলেছে, ভেবে দেখ আমি আর তুই এক বাড়ীতেই থাকবো।

নাজিফা- আপু তুইও ধুত আমি আর এই রুমে থাকবোই না।সুমি, এখান থেকে চলো আমরা অন্য রুমে যাই।
সুমি নাজিফার সাথে উঠে চলে গেলো।

ফারহান প্রাপ্তির পাশে এসে বসে হাঁসতে হাঁসতে দেখেছো তোমার বোনকে কিভাবে সরালাম।

প্রাপ্তি – জ্বী সাহেব, আমিও বুজেছি আপনি ওকে সরানোর জন্যই এইগুলো বলছেন।

ফারহান প্রাপ্তির গাল দুটোকে দুই হাত দিয়ে ধরে কাছে টেনে এনে একটা চুমু দিয়ে এই না হলে আমার বউ।
সেজো কাকী ফোন কানে নিয়ে কথা বলতে বলতে এসে দেখেই লজ্জা পেয়ে এই সত্যি বলছি আমি কিছু দেখিনি।

ফারহান কথাটা শুনে তাকিয়ে দেখে সেজো কাকী। তড়িঘড়ি করে প্রাপ্তির গাল থেকে হাত সরিয়ে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো ওনাকে নিয়ে আর পারা গেলোনা বলে রুম থেকে চলে গেলো।
প্রাপ্তি এতোক্ষণ অনেক কষ্টে হাঁসি ছেপে রেখেছিল ফারহান চলে যাওয়ার পর দুজনেই এক সাথে হাঁসতে শুরু করলো।

সেজো কাকী -বেচারা লজ্জা পাইছে।আসলে আমিও আসতাম না।বড় ভাবী তোকে ডাকছে।

প্রাপ্তি- আম্মু ডাকছে? আচ্ছা শুনো তুমি আবার সবার সামনে কিছু বলোনা প্লিজ।

চলবে,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট:২৬

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট:২৬

#Rabeya Sultana Nipa

 

___ভালোবাসার কাছে পৃথিবীর সব কিছুই অসহায় এইটা প্রাপ্তি আজ ঠিকি বুজেছে।যাকে একদিন সহ্য করতে পারতো না।আজ সেই মানুষটিকেই সে ভালোবেসে ফেলেছে।
ফোনের রিং কখন থেকে বেজে যাচ্ছে দেখে
ফারহান উঠে গিয়ে ফোন রিসিভ করে কথা বলছে।
প্রাপ্তি ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে ফারহান খাঁটের এক কোণায় বসে কথা বলছে,আর নিজের চুল গুলো ঠিক করছে।প্রাপ্তির ফারহানের চোখে চোখ পড়তেই লজ্জা পেয়ে রুম থেকে বের হওয়ার জন্য দরজার দিকে এগুচ্ছে।প্রাপ্তি চলে যাচ্ছে দেখে ফারহান ফোন রেখে,
ফারহান -এই প্রাপ্তি কথায় যাচ্চো? জিজ্ঞাস করলেনা তো কার সাথে কথা বলছি!

ফারহানের ভাব দেখে মনে হচ্ছে একটু আগে যাকিছু হয়েছে সে সব ভুলেই গেছে।খুব সাভাবিক ভাবেই কথা বলছে।ফারহান ইচ্ছা করেই এইভাবে কথা বলছে সেই ভালো করেই জানে প্রাপ্তিকে কিছু বললেই সে আরো লজ্জা পেয়ে যাবে।

প্রাপ্তি- ( অন্য দিকে ফিরে)আমি কি করে জানবো?

ফারহান -ওই দিকে কে আছে যে ওই দিকে ফিরে কথা বলছো?
(কথাটা বলতে বলতে প্রাপ্তির সামনে গিয়ে প্রাপ্তি দুই কাঁধে হাত রেখে নিজের দিকে মুখ ফিরিয়ে ) এতোদিন অনেক অবহেলা সহ্য করছি এখন থেকে আর না।এখন থেকে আমি যা বলবো তাই হবে।

প্রাপ্তি -ছাড়ো তো আবার কি শুরু করছো বলতো?(কথাটা বলতে বলতে সন্ধ্যায় যে ফারহানের জন্য নাস্তা এনেছে তার দিকে চোখ পড়লো তার।)এই ফারহান! তুমি তো নাস্তাই খাওনি।চা তো ঠাণ্ডাই হয়ে গেছে।

ফারহান- (মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে)নাস্তার ছেয়ে বেশী কিছু খেলে নাস্তার কি প্রয়োজন।

প্রাপ্তি- ঠিক আছে আজ থেকে সব কিছু খাওয়া বন্ধ।,,,,,,,,কথা টা শেষ করতেই দরজা ধাক্কানো শব্দ পেয়ে প্রাপ্তি গিয়ে দরজা খুলে দেখে মেজো ভাবী।

মেজো ভাবী রুমে ঢুকে ফারহানের দিকে তাকিয়ে, এই জন্যই তো বলি প্রাপ্তি সেই সন্ধ্যায় রুমে ঢুকলো এখনো আসছে না কেন? যাইহোক এখন আর কিছু বলবো না।ড্রইংরুমে চলো বাবা খেতে ডাকছে। ওনি তোমাদের অপেক্ষায় বসে আছে।

ফারহান -তুমি যাও আমি আসছি।

ফারহানের বাবা, মা, সুমি পরিবারের সবাই বসে আছে। বড় ভাবী আর মেজো ভাবী খাবার গুলো রান্নাঘর থেকে ডাইনিং টেবিলে এনে রাখছে।
ফারহান এসে একটা চেয়ার টেনে তার বাবার পাশে বসলো।প্রাপ্তি রান্নাঘরে গিয়ে বড় ভাবী সাথে সাহায্য করছে।সুমি অনেকক্ষণ ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে।ফারহান ভাতের লোকমা মুখে দিয়েছে মাত্র তখনি সুমি বলে উঠলো, হে,,রে ভাইয়া! তুই তো এই সময় কখনো গোসল করিসনা।আজ এই বৃষ্টির মধ্যে ও গোসল করেছিস তোর ঠাণ্ডা লাগবেনা? কথাটা শুনেই ফারহান গলায় ভাত আটকে ঢেকুর দিতে শুরু করলো।
ফারহানের বাবা ছেলের দিকে একবার আড় চোখে তাকিয়ে খেয়েই যাচ্ছে কোনো কথা বলছেনা।ফারহানের মাও চুপচাপ কিছু না শুনার মতোই ছেলের দিকে পানির গ্লাস টা এগিয়ে দিয়ে, পানি খেয়েনে ঢেকুর কমে যাবে।প্রাপ্তি লজ্জায় ইচ্ছে করছে মাটি ফেঁটে নিছেই চলে যেতে।বড় ভাবী সুমিকে চিমটি কেঁটে,কানের কাছে গিয়ে তুই কি এখনো ছোটো আছিস নাকি।কোথায় কি বলতে হয় মাঝে মাঝে কি সব কথা খেয়ে বসে থাকিস নাকি?
প্রাপ্তি কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেলো।ফারহান চুপচাপ খেয়ে উঠতে যাবে তখন ফারহানের বাবা বললো, একটু বস আমি খাওয়াটা শেষ করি তোর সাথে কথা আছে।
ফারহান মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুজিয়ে হাত ধুয়ে সোফায় গিয়ে বসলো।

প্রাপ্তির কথা ভেবে ফারহানের খারাপ লাগছে।বেচারি না খেয়ে লজ্জা পেয়েই রুমে চলে গেলো।হয়তো আমার উপরে রাগ করে বসে থাকবে।সুমিকেও বা কি বলা যায় সেও হয়তো না বুজেই বলে ফেলেছে।

ফারহানের বাবা খাওয়া শেষ করে এসে তিনি ও সোফায় বসলেন।অনেকক্ষণ পরে বললেন তোমার মেজো শশুর ফোন কেরেছিলেন।কাল নাকি ওনারা সবাই নীরার শশুর বাড়ীতে যাবে। এখন তোমদেরকে যাওয়ার জন্য বলছে।আর তুমিও নাকি তাদের বলেছো কাল যেতে পারবে।এখন কি তোমরা যাচ্ছো?

ফারহান -হ্যাঁ একটু আগে নীরার শাশুড়ি আমার সাথে কথা বলেছিলো, আমি তাদের কথা দিয়েছি কাল যাবো।

ফারহানের বাবা- আচ্ছা তাহলে ভালো কথা।তোমরা ঘুরে আসো।আর তুমি তো এই মাসে তোমার ব্যবসার কি কাজে বাহিরে যাওয়ার কথা ছিলো এখন কি যাবে?

ফারহান -বাবা ওইটা আমি কেন্সেল করে দিয়েছি।

ফারহানের বাবা বুজতে পেরেছে ছেলের না যাওয়ার কারণ। একটা মুচকি হাঁসি দিয়ে বললেন আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যেই ভাবে ভালো মনে করো।কথাটা বলে উঠে চলে গেলেন ফারহানের বাবা।

ফারহান রুমে যাওয়ার সময় বড় ভাবীর দিকে তাকিয়ে, ভাবী প্রাপ্তির খাবার গুলো রেহানা (তাদের কাজের মেয়ে)কে দিয়ে পাঠিয়ে দিও।ফারহান রুমে গিয়ে দেখে প্রাপ্তি ফোনে নীরার সাথে কথা বলছে।
প্রাপ্তিকে দেখে বুজা যাচ্ছে মনটা মোটামুটি ভালোই আছে।ফারহান পাশে গিয়ে বসে প্রাপ্তিকে এক হাত দিয়ে টেনে নিজের আরো কাছে এনে বসিয়েছে।প্রাপ্তি কিছু বলতেও পারছেনা নীরার সাথে কথা বলছে বলে।বার বার ইশারা দিয়ে বুজাচ্ছে এই রকম করছো কেন?
এইদিকে নীরা বলেই যাচ্ছে, প্রাপ্তি জানিস তোকে আজ তো কনগ্রুয়েন্স জানানো উচিত।
প্রাপ্তি -কেন? কি করলাম আমি?

নীরা -তুই কি মনে করেছিস আমি কিছু জানি না? একটু আগে ভাইয়ার সাথে কথা হলো আমাকে বলেছে।
(প্রাপ্তি এই কথা শুনেই চোখ বড় বড় করে ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে।ফারহান বুজতে পেরেছে নীরা বলে দিয়েছে তাকে যে কথা গুলো বলছি।)আচ্ছা যাইহোক কাল সকালে তোদের একসাথে হাঁসি মুখ গুলো দেখার অপেক্ষায় আছি।।

প্রাপ্তি হুম ঠিক আছে বলে ফোন রেখে দিলো।
ফারহানের দিকে তাকিয়ে তুমি এইটা কি করলে সব কিছু ওকে বলে দিলে?

ফারহান -তুমি যখন ফ্রেশ হয়ে আসছিলে তখন ওর সাথেই কথা বলছিলাম।ও বার বার জিজ্ঞাস করছিলো কেন ফোন ধরতে দেরী করছি।তখন না বলে আর উপায় আছে তাও আবার যদি শালী জিজ্ঞাস করে?
এমন সময় রেহানা প্রাপ্তির জন্য খাবার নিয়ে এসে দরজায় দাঁড়িয়ে,ভাইয়া আসবো?
ফারহান -হুম আসো।

প্রাপ্তি- রেহানা কার জন্য খাবার এনেছো তোমার ভাইয়া ওইখানে খায়নি?

রেহানা -ভাবী ভাইয়া তো,,,,,,
রেহানাকে ফারহান থামিয়ে দিয়ে, বাকী গুলো আমি বলে দিবো তুই যা।রেহানাও আর কিছু না বলে চলে গেলো।

ফারহান -তুমি না খেলে আমিও আজ খাবোনা।তাই দুজনের জন্য একসাথেই আনতে বলেছি।(ফারহান প্রাপ্তিকে এই মিথ্যা কথাটা না বললে হয়তো প্রাপ্তি খাবেও না।ফারহান না খেয়ে আছে শুনলে না খেয়েতো উপায় নেই।)

প্রাপ্তি -ওহ্। তুমিও না।আমার এখন খেতে ইচ্ছে করছে না।

ফারহান -আচ্ছা আমি খাইয়ে দিচ্ছি।এইবার তো খাবে।
ফারহানের কথাটা শুনে প্রাপ্তি আর না করতে পারলোনা।
প্রাপ্তিকে খাইয়ে দিচ্ছে আর ফারহান খাচ্ছেনা দেখে প্রাপ্তি বললো, আমাকে খাওয়াচ্ছো তুমি খাচ্ছো না কেন?

ফারহান মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে, সরি প্রাপ্তি! মিথ্যা কথাটা বলার জন্য।কিন্তু মিথ্যেটা না বললেতো খেতেনা।তাই বললছি।
প্রাপ্তি আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খেয়ে নিলো।

ফারহান -আমি হাত ধুয়ে আসি, তুমি শুয়ে পড়ো।
প্রাপ্তির মাথায় একটায় চিন্তা সকাল হবে কখন কতো দিন পর সবার সাথে দেখা হবে।অবশ্য বেশিদিন হয়নি তবুও প্রাপ্তির কাছে অনেক দিন মনে হচ্ছে।
ফারহান এসে দেখে প্রাপ্তি অন্যমনস্ক হয়ে শুয়ে শুয়ে কিছু ভাবছে।

ফারহান- (প্রাপ্তিকে নিজের কাছে টেনে এনে) এতো দূরে শুয়ে আছো কেন?আর তোমার বালিশ টা এই খাটে যেন আর না দেখি।

প্রাপ্তি -ফারহান, বেশী বাড়াবাড়ি করছো।তাহলে আমি ঘুমাবো কি করে?

ফারহান- কোথায় আবার ফারহানের এই বুক থাকতে বালিশের কি প্রয়োজন। হিটলারের জন্য ফারহানের বুকেই যথেষ্ট।

প্রাপ্তি মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে তাইতো এতোক্ষন তো এইকথা ভাবিনী। ফারহান কে শুইয়ে সত্যি সত্যিই প্রাপ্তি ফারহানের বুকে শুয়ে পড়লো।

চলবে,,,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ২৫

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ২৫

#Rabeya Sultana Nipa

 

_প্রাপ্তি কলেজ থেকে এসে দেখে ফারহান ড্রইংরুমে তার আব্বু আর কাকাইদের সাথে কথা বলছে।ফারহানের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাঁসি দিয়ে রুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।ফারহানের ইচ্ছা করছে রুমে যেতে কিন্তু এখন রুমে গেলে সবাই কিভাববে তাই না ছাইলেও সবার কথা বসে বসে শুনতে হচ্ছে। প্রাপ্তি ফ্রেশ হয়ে এসে ফারহানের দিকে তাকিয়ে বললো,ফারহান কখন এলে?

মেজো কাকা -ও কি বলবে? ওকে তো ইমরান ফোন করে নিয়ে আসছে। ও নাকি বিকেলে তোকে নিতে আসবে বলেছিলো তারপর আমি ইমরান কে বলে ফোন দিয়েই নিয়ে এসেছি।

প্রাপ্তিরর মা প্রাপ্তির জন্য খাবার নিয়ে এসে, প্রাপ্তি! তুই আগে খেয়েনে পরে কথা বলিস।

ফারহান -মা ঠিকি বলেছে আগে খেয়ে নাও।খেয়ে একটু পরে রেডি হয়ে নিও।

প্রাপ্তির আব্বু -ফারহান, আজ কি সত্যিই চলে যাবে?

ফারহান-জ্বী, সমস্যা নেই পরে এসে প্রাপ্তি কয়েকদিন থেকে যেতে পারবে।

কেউ আর কিছু বললো।প্রাপ্তিও খেয়ে রুমে চলে গেলো।একটু পর ফারহানও প্রাপ্তির রুমে গিয়ে দেখে প্রাপ্তি সব কিছু গুছিয়ে নিচ্ছে।
ফারহান দরজাটা বন্ধ করে খাঁটের এক কোনায় বসে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে আছে।

প্রাপ্তির ফারহানের দিকে চোখ পড়তেই একটা হাঁসি দিয়ে, ওই ভাবে তাকিয়ে কি দেখছো?

ফারহান -দেখছি আমার হিটলার বউকে। আচ্ছা কাল রাতে তোমার আমার কথা একবারো মনে পড়েনি? আমাকে মিস করোনি?তুমি রাতে আমাকে একবারো ফোন দাওনি।আমি ভাবেছিলাম কি আর হলো কি।

প্রাপ্তি -(ফারহানের কাছে একটু এগিয়ে)তাইইইইইইইইই? কিন্তু আমি তো তোমাকে নিয়ে একটুও ভাবি নাই।(কাথাটা বলে প্রাপ্তি আবার হাঁসা শুরু করলো।)

ফারহান-হাঁসো! হাঁসো! যতো খুশি হেঁসে নাও।

প্রাপ্তি -হুম ঠিক আছে,তোমাদের বাড়ীতে গিয়ে যদি হাঁসতে না পারি তাই এখনি হেঁসে নিচ্ছি।কারণ বউ তো এখন সাবধানেই চলতে হবে।

প্রাপ্তির কথা শুনে যতো বেশী না অবাক হচ্ছে তার ছেয়ে বেশী খুশি হচ্ছে এই ভেবে, প্রাপ্তি সবার সাথে মানিয়ে নিতে চাইছে।

ফারহান! ফারহান! একটু এইদিকে আসোতো।
প্রাপ্তির বাবার ডাক শুনে ফারহান উঠে দাঁড়িয়ে, প্রাপ্তি তুমি রেডি হয়ে ড্রইংরুমে আসো আমি ওইখানেই আছি।

ফারহান ড্রইংরুমে গিয়ে, আব্বু ডেকেছেন?

প্রাপ্তির বাবা -নীরা আর মৃদুল তো সকালেই চলে গেছে জানো। একটু আগে নীরার শাশুড়ি ফোন করলো তাদের বাসায় সবাইকে যাওয়ার জন্য।এখন তোমরা তো চলে যাচ্ছো আমার মনে হয় তুমি আর প্রাপ্তি যে দিন যেতে পারবে সেইদিনের কথাই বলবো তাদের।এখন কি বলো তুমি?

ফারহান -আব্বু আমি আগে বাসায় যাই।তারপর না হয় আপনাকে ফোন করে জানাবো কখন যেতে পারবো।

প্রাপ্তির বাবা -আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যা ভালো মনে করো।

প্রাপ্তিও রেডি হয়ে চলে আসছে দেখে প্রাপ্তির কাকা বললো, কিরে একদম রেডি হয়ে চলে আসছিস? (প্রাপ্তির বাবার দিকে তাকিয়ে)দেখছস ভাইয়া, প্রাপ্তি আমাদের এক নিমিষেই পর করে দিলো। ফারহানের বাড়ী যাবে বলে তাড়াতাড়ি রেডি হয়েই চলে আসছে।
প্রাপ্তিকে যেই যাই বলুক না কেন , কেন জানি ওর একটুও খারাপ লাগছেনা।সবাই তো ভাবে ছিলো প্রাপ্তি আজ যেতে চাইবেনা।সবাইকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে হাঁসি খুশি ভাবেই বাড়ী থেকে বিদায় নিলো। প্রাপ্তির মা ও মেয়েকে আজ আর কিছু বললো না।

ওই বাড়ীতে পৌঁছে প্রাপ্তি হাঁসি মুখে সবার সাথে ভালো ভাবেই মিশে গেছে। আজ প্রাপ্তির কাছে মনে হচ্ছে এইটাই তার পরিবার। ফারহানের পরিবারের সবাইও অনেক ভালোবাসে প্রাপ্তিকে।
এইভাবেই কয়েকটা দিন কেটে গেলো। এখন আর আগের মতো আয়ান নামের কাউকে মনে পড়ে না।ফারহানের সাথে আগের থেকে ভালোই সময় কাটছে।ফারহানও প্রাপ্তি সব কাজেই সাহায্য করে।ফারহানকেও প্রাপ্তি আস্তে আস্তে ভালোবেসে ফেলেছে।কিন্তু ফারহানকে এখনো বুজতে দেয়না।

আজ সন্ধ্যা থেকেই অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে।
বড় ভাবী নাস্তা বানিয়ে প্রাপ্তিকে ডেকে বললো সবাইকে রুমে গিয়ে নাস্তা দিয়ে আসতে।প্রাপ্তিও সবাইকে নাস্তা দিয়ে এসে ফারহানের জন্য নাস্তা নিয়ে রুমে গেলো।ফারহান এতোক্ষণ শুয়েই ছিলো।
প্রাপ্তিকে দেখে ফারহান উঠে দাঁড়ালো

ফারহানকে দাঁড়াতে দেখে প্রাপ্তি নাস্তাটা রাখতে রাখতে বললো।কি হলো দাঁড়িয়ে পড়লে কেন?
প্রাপ্তি নাস্তাটা রেখেই পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখে ফারহান আস্তে আস্তে তার দিকে এগিয়ে আসছে।ফারহান যতো এগিয়ে আসছে প্রাপ্তি ততো পিছাতে থাকলো আর তোতলাতে তোতলাতে বলতে লাগলো ফা ফা ফার হা ন,,,এইইইইইইভা বে, আ আ আ স ছো,,কে কে ন?
আমি প প প ড়ে,,,,, যা যা বো,,,,তো

ফারহান কিছু বলছে না আর প্রাপ্তি পিছনে যেতে যেতে দেওয়ালের সাথে পিঠ লেগে গেলো।ফারহান আস্তে আস্তে এসে প্রাপ্তির দুপাশে দেওয়ালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রাপ্তি ভয়ে ভয়ে ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে। ফারহান নিজে মুখটা প্রাপ্তির মুখে কাছে নিতেই প্রাপ্তি চোখ বন্ধ করে ফেলেছে।ফারহান এতোটাই কাছে এসেছে যে প্রাপ্তির বুকের ভেতরের শব্দটা ফারহান শুনতে পাচ্ছে।প্রাপ্তির চোখ বন্ধ করে রেখেছে দেখে ফারহান মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে কানের কাছে আস্তে করে বললো।বৃষ্টিতে ভিজবে?
কথাটা শুনেই প্রাপ্তি চোখ মেলে দেখে ফারহান তাকিয়ে হাঁসছে।

ফারহানের হাঁসি দেখে প্রাপ্তি নিস্তব্ধ হয়ে তারদিকে তাকিয়ে আছে।

ফারহান -কি ভেবে ছিলে? তোমায় কিস করবো?
ফারহানের কথাটা শুনে প্রাপ্তি লজ্জা পেয়ে
নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

ফারহান -তুমি জানো? যখন তুমি চোখ বন্ধ করে ছিলে তখন তোমায় অনেক সুন্দর লেগেছে যা তোমাকে বলে বুজাতে পারবোনা।তবে তুমি চিন্তা করোনা তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছুই করবোনা।
প্রাপ্তি নিজেকে ছাড়িয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে সে।প্রাপ্তির এমনিতে বৃষ্টি অনেক ভালো লাগে।ফারহানও বারান্দায় গিয়ে প্রাপ্তির পাশে দাড়ালো।

ফারহান -রাগ করছো? আসলে তখন তোমাকে এইভাবে ধরাটা ঠিক হয়নি আমি ও বুজতে পারছি।আচ্ছা সরি আর কখনো এমন করবো না।এইবার আমার দিকে তাকাও। (প্রাপ্তি এখনো বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।ইচ্ছে করছে ফারহানকে জড়িয়ে ধরে বলতে ফারহান আমি একটুও রাগ করিনি তোমার উপর।)

প্রাপ্তি,কানে ধরবো? আমার দিকে তাকাও এই দেখো কানে ধরছি কিন্তু!
প্রাপ্তি আর চুপ থাকতে না পেরে ফারহানকে জড়িয়ে ধরলো।
প্রাপ্তির এইভাবে জড়িয়ে ধরা দেখে ফারহান চমকে উঠলো।
প্রাপ্তি ফারহানের বুকে মাথা রাখে, আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরো না হলে আবার হারিয়ে যাবো।
ফারহান কথাটা শুনে নিজেকে আর আটকাতে পারলোনা।ফারহান প্রাপ্তিকে এমন ভাবেই জড়িয়ে ধরে আছে প্রাপ্তি এখন যেতে চাইলেও যেতে দিতে পারবেনা।

বাহিরে জোরে বাতাস বইছে দেখে ফারহান প্রাপ্তিকে কোলে উঠিয়ে রুমে নিয়ে এসে খাটে শুয়ে দিলো।ফারহানকে উঠে যেতে দেখে প্রাপ্তি বললো কথায় যাচ্ছো?

ফারহান -তুমি আসার সময় দরজাতো দিয়ে আসো নাই।ওটাই দিতে যাচ্ছি।এখন কেউ এসে ডিস্টার্ব করুক এইটা আমি চাইনা।

ফারহানের কথা শুনে প্রাপ্তি লজ্জা পেয়ে অন্য দিকে ফিরে আছে।

মেজো ভাবী -প্রাপ্তিকে কখন নাস্তা দিতে পাঠিয়েছো এখনো তো এলোনা।

বড় ভাবী -ফারহান মনে হয় রুমে আছে।হয়তো বসে কথা বলছে।

মেজো ভাবী -তুমি যাই বলো প্রাপ্তি অন্য রকম।ফারহানের প্রতি মনে হচ্ছে তার কোনো দায় নেই।কেমন জানি ওর থেকে দূরে শরে থাকে।

বড় ভাবী -বাদদে ওইসব ওদের ব্যাপার।যদি কিছু হয়ে থাকে নিজেরাই মিটিয়ে নিবে।

ফারহান দরজাটা আটকে এসে প্রাপ্তিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।প্রাপ্তিকে এতোটাই শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে যে প্রাপ্তির নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু প্রাপ্তিও বাঁধা দেয়নি। প্রাপ্তিও আজ ফারহানের ভালোবাসায় নিজেকে হারাতে চায়।

চলবে,,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ২৪

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ২৪

#Rabeya Sultana Nipa

 

_নীরা -আসলে আব্বু ওরা সবাই প্লান এইটাই ছিলো কিভাবে ভাইয়ার টাকা বেশী খরচ করা যায় এই আর কি।

মেজো কাকা -আচ্ছা ঠিক আছে সবাই রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।

প্রাপ্তি আর ফারহান কিছু না বলে রুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।

ফারহান ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে আর ভাবছে প্রাপ্তি মনে হয় আয়ানের ব্যাপার টা নিয়ে আস্তে আস্তে ভুলতেছে।আগের থেকে এখন ভালোই হাঁসি খুশি থাকে।হয়তো আরো কয়েক দিন গেলে পুরোই ঠিক হয়ে যাবে।
কথা গুলো ভাবতে ভাবতে মনে হচ্ছে কেউ পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।ফারহান পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখে প্রাপ্তি গোসল করে এসে চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ফারহানের
ইচ্ছে করছে ওর এই হাঁসির মাঝেই নিজেকে হারিয়ে ফেলতে।বাহিরে অনেক বাতাস বইছে, সেই বাতাসে অনেক গুলো চুল প্রাপ্তির মুখের সামনে এসে পড়াতেই ফারহান নিজের অজান্তেই নিজের হাতটা চুলো গুলো সরানোর জন্য প্রাপ্তির মুখের সামনে নিয়ে যাওয়ার আগেই ফারহানের হাত ধরে পেললো প্রাপ্তি।
প্রাপ্তি হাত ধরাতেই ফারহানের হুশ ফিরে এলো।
ফারহান -সরি! আসলে তোমার চুল গুলো মুখের সামনে এসে পড়ে আছে তাই সরিয়ে দিচ্ছিলাম।

প্রাপ্তি -(ফারহানের হাত ছেড়ে দিয়ে) হুম বুজতে পারছি।(বলতে বলতে পাশে এসে দাঁড়িয়ে) ফারহান! তোমাকে অনেক অনেক thanks। অবশ্য এইটা বললে তোমাকে কম বলা হবে।

ফারহান-কিসের জন্য? আমি আবার কি করছি?

প্রাপ্তি -আজকের ব্যাপারটা নিয়ে।তুমি আমার সব ফ্রেন্ডের সাথে এমন ভাবে কথা বলেছো,ওদেরকে রেস্টুরেন্টে নিয়ে খাওয়াইছো।তুমি ওদের বুজতেই দাও নাই আমাদের সম্পর্কটা কি।সবাই যা জানে আসলে তো আমাদের মাঝে কিছুই নেই।তাই সব মিলেয়ে তোমাকে অনেক অনেক thanks।
কথাটা শুনেই ফারহানের মনে অনেক কষ্ট লেগেছে। মনে হচ্ছে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।চোখে পানি টলমল করছে।কি বলবে বুজতে পারছেনা।

প্রাপ্তি -ফারহান! কি হয়েছে তুমি কিছু বলছোনা কেন?
ফারহান প্রাপ্তিকে কিছু না বলে রুমে চলে গেলো।
ফারহান চলে গেলো দেখে প্রাপ্তি ভাবছে এর আবার কি হলো একটু আগেও তো ভালো ছিলো।
রুমে এসে দেখে ফারহান রেডি হচ্ছে।

প্রাপ্তি -আরে এখন আবার কোথায় যাচ্ছো?

ফারহান- আমাদের বাসায়।আমি আজ আর আসবো না কাল তুমি রেডি হয়ে ফোন দিও আমি এসে নিয়ে যাবো।

প্রাপ- হঠাৎ কি হয়েছে তোমার? বাসায় যাবে মানে টা কি? তুমি এইভাবে চলে গেলে সবাই কি ভাববে?
ফারহান প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাঁসি দিয়ে ভাবছে তুমি এখনো সবাইকে নিয়েই পড়ে আছো। সবাই কিভাববে সেইটাই ভাবছো।আর আমি তোমার মনে ভাবনাহীন মাত্র।

প্রাপ্তি -ফারহান কি হলো কিছু বলবে না?

ফারহান -এইটুকুই বলবো কাল রেডি হয়ে থেকো আমি এসে নিয়ে যাবো।আর সবার কথা ভাবছোতো, সমস্যা নেই আমি বুজিয়ে নিবো।
কথাটা বলেই ফারহান রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

ড্রইংরুমে এসে সবাইকে বললো তার জরুরী কাজ আছে তাকে যেতে হবে।

মেজো কাকা- হঠাৎ কি এমন জরুরী কাজ পড়েছে যে তোমাকে এখনি যেতে হবে।

ফারহান -জ্বী হঠাৎ করেই ফোন আসলো।কাকাই সমস্যা নেই কাল এসে আমি প্রাপ্তিকে নিয়ে যাবো।

সবার কাছ থেকে বলে ফারহান চলে গেলো। প্রাপ্তি রুমেই বসে আছে। ওর খুব খারাপ লাগছে, ফারহান হয়তো তার কথায় কষ্ট পেয়েছে। ও চলে গেছে তাতে কি হয়েছে আমার কাছে এই রকম লাগছে কেন? ফারহানের প্রতি আমি দুর্বল হয়ে পড়ছি না তো? আচ্ছা আমি কার জন্য ফারহানকে এইভাবে কষ্ট দিচ্ছি? নাহ ওকে আমি আর কষ্ট দিবোনা।কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই ফারহানকে ফোন করলো।

কয়েকবার বেজে যাওয়ার পর ফারহান ফোন রিসিভ করলো।

ফারহান -হুম,বলো?

প্রাপ্তি-বাতাসে বড় হয়েছো? কেউ এই শিক্ষা দেয়নি বউ ফোন করলে সালাম দিতে হয়।(কথাটা বলে প্রাপ্তি নিজে নিজেই হাঁসছে। ফারহানকে বুজতে দিচ্ছেনা।)

প্রাপ্তির কথা শুনে ফারহানের নিমিষেই রাগ উধাও হয়ে গেলো। (প্রাপ্তিকে বুজতে না দিয়ে)
ফারহান- কোথায় পাইছো এই কথা?
আর ফোন করছো কেন?

প্রাপ্তি -আমি আমার হ্যাজবেন্ডের কাছে ফোন দিছি তাতে আপনার কি? আপনার জ্বলতেছে কেন?
যাই হোক আমার হ্যাজবেন্ড কোথায় আছে সেটা বলুন?

ফারহান -কেন ওনার কাছে কি?

প্রাপ্তি -আর কি বলবো বলেন ও তো আমার সাথে রাগ করেছে। কিন্তু আমার যতোটুকো জানা ও আমার সাথে রাগ করতেই পারেনা।

ফারহান -মাঝে মঝে করতে হয়। না হলে বউয়ে ভালোবাসা পাওয়া যায়না।

প্রাপ্তি -(আস্তে করে)প্লি,,,,,,জ তাহলে বাসায় আসো।সত্যি বলছি তোমাকে আর রাগাবো না।

ফারহান ভাবছে হঠাৎ করে কি হলো?এতো ভালোবাসা দেখাচ্ছে কেন?

ফারহান- আচ্ছা হিটলারে মনে এতো ভালোবাসা আসলো কোথায় থেকে?

প্রাপ্তি- আবার হিটলার বললে? আচ্ছা আজ এই নিয়ে কিছু বলবোনা।এখন বাসায় এসো।

ফারহান -না প্রাপ্তি এখন আর যাবোনা। আমি অলরেডি বাসায় চলে আসছি। তুমি রাগ করোনা আমি কাল গিয়েই তোমায় নিয়ে আসবো।

প্রাপ্তি -আচ্ছা তাহলে এখন রাখছি।

ফারহান প্রাপ্তির সাথে কথা শেষ করে বাসায় ঢুকলো।ফারহানকে দেখে সবাই অবাক হয়ে আছে।

বড় ভাবী -কি ব্যাপার ফারহান তোমাদের না কাল আসার কথা।তুমি আসলে প্রাপ্তিকে তো দেখছিনা।

ফারহান -ভাবী, ওকে কাল নিয়ে আসবো। আমার এইখানে একটা কাজ আছে তাই চলে আসলাম।

মেজো ভাবী -তাই ফারহান! বউ ছাড়া থাকতে পারবা?

ফারহান -আসতে না আসতেই শুরু করে দিছো?তোমাকে নিয়ে আর পারলামনা।কথাটা বলতে বলতে ফারহান তার মায়ের রুমে গেলো।

ফারহানের বাবা চায়ের কাপ টা তুলে হাতে নিতেই দেখে ফারহান এসে তার মায়ের পাশে বসেছে।
ফারহানের বাবা -ফারহান তুমি কখন এলে? প্রাপ্তিও কি চলে আসছে নাকি?

ফারহান -না বাবা প্রাপ্তিকে নিয়ে আসিনি।তবে কাল নিয়ে আসবো।

ফারহানের মা- প্রাপ্তিকে রেখে তুই চলে এলি কেন?

ফারহান -মা! কাজ আছে তাই চলে এলাম।
সবাইকে বার বার একি কথা বলতে ফারহানের অসহ্য লেগেগেছে। বউ থাকলেও জ্বালা না থাকলেও জ্বালা।

বাবা,মাকে আর কিছু না বলে রুমে চলে আসলো। রুমে এসে আজ নিজেকে খুব একা লাগছে।এই কয়দিনে প্রাপ্তি যে তার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে এইটা সে ভালো করেই বুজেছে।বার বার প্রাপ্তির ফোনে বলা কথা গুলো মনে পড়ছে।
এইদিকে ফারহান চলে যাওয়াই প্রাপ্তিরও ভালো লাগছেনা।একা একা রুমে শুয়ে আছে।নীরা প্রাপ্তিকে ড্রইংরুমে না দেখে রুমে এসে দেখে শুয়ে আছে।

নীরা- কিরে প্রাপ্তি, ভাইয়ার জন্য মন খারাপ লাগছে?

প্রাপ্তি নীরার কথা শুনে উঠে বসতে বসতে বললো মনে হয় তাই।কেন জানি ওকে খুব মিস করছি।কিছুই ভালো লাগছে না।

নীরা -তার মানে তুই ভাইয়াকে ভালোবেসে ফেলেছিস। আচ্ছা ভাইয়া কি এইকথা জানে?

প্রাপ্তি -তুইও না।

নীরা -যাইহোক শুন,কাল আমি চলে যাচ্ছি।এইবার সহজে আসা হবে না।অবশ্য কলেজে তোর সাথে তো দেখা হবে।কিন্তু তখন তো সব কথা বলা যাবেনা। নীরা প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে প্লিজ ভাইয়াকে কষ্ট দিস না।ভাইয়া তোকে অনেক ভালোবাসে।

প্রাপ্তি -(প্রাপ্তি ভেজা গলায়)হুম। আমি ও কাল চলে যাবো। আমি তোদেরকে অনেক মিস করবো।তবে ওই বাড়ীতে গেলে তোকে ফোন করবো।

প্রাপ্তির মা আর মেজো মা এসে দেখে একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে।

মেজো মা- ভাবী জানেন আমরা মনে হয় বড় ভুল করছি।এঁদের দুজনকে এক ঘরে বিয়ে দেওয়া উচিত ছিলো।

প্রাপ্তি -হ্যাঁ,ঠিক বলছিস। কাল দুজনে চলে যাবে, কিন্তু আমাদের জন্য মন খারাপ না করে ওরা একজন আরেকজনকে নিয়ে পড়ে আছে।
মা দের কথা শুনে নীরা বললো আচ্ছা তোমাদের কি হিংসে হচ্ছে?

মেজো মা -হবেনা!!! তোরা কাল চলে যাবি ভালো কথা।আমাদেরকে সময় না দিয়ে তোরা দুজন একরুমে বসে আছিস।

প্রাপ্তি -মেজো মা, এখনি উঠে তোমাদের কাছে যেতাম।

প্রাপ্তির মা -তাহলে আমরাই ভুল বুজেছি।আচ্ছা তাহলে ড্রইংরুমে চল।ওইখানেই বসে আড্ডা দিই।

সবাই উঠে গিয়ে ড্রইংরুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে।প্রাপ্তিকে সবাই বুজাচ্ছে ফারহানদের সবার সাথে ভালো ভাবে মিশবার জন্য।

প্রাপ্তির মা- প্রাপ্তি তুই যেই ফ্যামিলিতে গেছিস ওই ফ্যামিলি ও আমাদের মতো বড় ফ্যামিলি তাই সবাইকে নিজের করেই ভাববি। যখন একসাথে সবাই থাকে তখন সবাইকে ভালোবাসতে হয়।এইটা কখনো ভাবিস না শুধু ফারহান তোর জীবনে থাকলেই হবে।যদি এইটা ভেবে বসে থাকিস জীবনে বড় ভুল করবি।জীবনে সবাইকেই একি ভাবে ভালোবাসতে হবে।ওদের ফ্যামিলিকে কখনো পর ভাববি না সব সময় তোর নিজের করে ভাববি। তুই যেই ভাবে তোর বাবা,মা, মেজো কাকাই, নীরা সবাইকে ভালোবাসিস সেইভাবে ফারহানের বাবা, মাকেও ভালোবাসবি।সুমিকে সবসময় নিজের বোনের মতোই দেখবি।
অবশ্য ফারহান থাকতে আমাদের এতো চিন্তা নেই ওই তোকে ওর ফ্যামিলির মতো করে তুলতে পারবে।ও আছে বলেই আমরা নিচিন্তায় থাকতে পারি।

চলবে,,,,,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ২৩

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ২৩

#Rabeya Sultana Nipa

 

_রাতে সবাই খাওয়াদাওয়া শেষ করে যেই যার মতো করে ঘুমাতে গেলো। প্রাপ্তি আর নীরা তার মায়ের রুমে বসে গল্প করছে।প্রাপ্তির বাবা ফোনে কথা বলতেছে ওনার এক ফ্রেন্ডএর সাথে।ফারহান, মৃদুল রুমে বসে কথা বলছে।
প্রাপ্তির মা ঘড়ী দিকে তাকিয়ে দেখে অনেক রাত হয়ে গেছে তারপরও নীরা আর প্রাপ্তি বকবক করেই যাচ্ছে।

প্রাপ্তির মা -কিরে দুই বোন মিলে আর কতোক্ষণ গল্প করবি।রাত তো অনেক হয়েছে। এখন যে যার রুমে যা ফারহান মৃদুল একা বসে আছে।

প্রাপ্তি -আম্মু আরেকটু থাকিনা! ওই বাড়ীতে এইবার গেলে আবার কখন আসতে দিবে তার কি ঠিক আছে।হয়তো আমি আসতে পারলে নীরা আসতে পারবে না। আবার নীরা আসলে আমি আসতে পারবোনা।

নীরা -বড় মা, প্রাপ্তি ঠিকি বলেছে।প্রাপ্তি এখন গেলে কি আর ফারহান ভাইয়ার মা এতো তাড়াতাড়ি আসতে দিবে?
এমন সময় ফারহানের ডাকাডাকি তে প্রাপ্তি উঠতে উঠতে বললো, এর আবার কি হলো, আচ্ছা গিয়ে দেখে আসি।নীরা চল!আম্মু তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।

প্রাপ্তি রুমে গিয়ে দেখে ফারহান আর মৃদুল কথা বলছে।
প্রাপ্তি -কি ব্যাপার আমাকে ডেকেছো কেন?

ফারহান- এতো দিন তো পড়া লেখায় ফাঁকি বাজি বহুত করছো।কাল থাকে আবার কলেজে যাবে। মৃদুল কাল নীরা কে নিয়ে যাবে, তুমিও তাদের সাথে যেও।আমিই যেতাম এখন কাল সকালে আমার একটা জরুরি মিটিং আছে।

প্রাপ্তি মৃদুলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাঁসি দিয়ে হ্যাঁ বুজালো।
মৃদুলও একটা হাঁসি দিয়ে নীরার সাথে উঠে চলে গেলো।
মৃদুল চলে যাওয়ার পর প্রাপ্তি বসতে বসতে বললো আমি কলেজে যাবো না।তুমি মৃদুল ভাইয়ার সামনে বললে বলে আমি হ্যাঁ বললাম।

ফারহান-কলেজে যাবা না মানে?প্রাপ্তি দেখো তোমার সবকিছুই আমি মেনে নিই বলে এইটা ভেবো না এই অন্যায় আবদার টা ও মেনে নিবো।

প্রাপ্তি ফারহান কে কিছু না বলে বিড়বিড় করতে করতে শুয়ে পড়লো।

প্রাপ্তির কান্ড দেখে ফারহান বললো,
আমি কোনো মাছিকে বিয়ে করেনি রাতের বেলায় কানের কাছে এসে বিড়বিড় করবে।তবে তুমি যখন বিড়বিড় করে কথা বলো তখন তোমায় খুব সুন্দর দেখায়।

প্রাপ্তি -হাওয়া দিতেছো? ভালো খুব ভালো।
(একটু নরম সুরে) ফারহান কাল কলেজে না গেলে হয়না? নতুন বউ কলেজে যায়? লোকে কি বলবে?

ফারহান -যে যাই বলুক তাতে তোমার কি।আর এইভাবে কথা বলে ফারহানকে পটানো যায়না।যাই হোক কাল কলেজে যাবা এইটাই ফাইনাল। এই বার ঘুমাও।
সকালে তুমি ঘুম থেকে উঠার আগেই হয়তো আমি বের হয়ে যাবো। এসে যেন শুনি তুমি কলেজে গেছো।কাল কোনো অজুহাত দেখাবে না।

প্রাপ্তি -(মুখ গোমরা করে)ঠিক আছে।(মনে মনে ভাবছে তোমার কথা আমি কখনি শুনতাম না।শুধু সবার কাছ থেকে বাঁচার জন্য।যদি একবার মুখ খুলো তাহলে আমি শেষ)কথা গুলো ভাবতে ভাবতে প্রাপ্তি কখন ঘুমিয়ে পড়লো তার মনে নেই।

প্রাপ্তি সকালে উঠে দেখে ফারহান নেই।কখন উঠে গেছে তাও টের পায়নি।
প্রাপ্তি ফ্রেশ হয়ে ড্রইংরুমে গিয়ে দেখে সবাই বসে নাস্তা করছে।
প্রাপ্তিকে আসতে দেখে মেজো কাকা বললো,কিরে তোর ঘুম ভাঙলো? আয় বস নাস্তা করেনে।

মৃদুল -হ্যাঁ,প্রাপ্তি তাড়াতাড়ি নাস্তা করে নীরা আর তুমি রেডি হয়ে নাও।না হলে কলেজের দেরী হয়ে যাবে।

প্রাপ্তির বাবা- মৃদুল ওরা কি কলেজে যাবে নাকি? নীরা যাবে বুজলাম ফারহান প্রাপ্তিকে আজ যেতে বলেছে?

মৃদুল -বড় আব্বু আমি নীরাকে আজ কলেজে নিয়ে যাবো শুনে ফারহান কাল রাতে বললো প্রাপ্তিকেও যেন সাথে নিয়ে যাই। ওই নাকি যেতো ওর জরুরী মিটিং থাকার কারনে যেতে পারবেনা।

মেজো কাকা -তাহলে তো ভালো কথা কি বলিস ভাইয়া? প্রাপ্তি উঠে রান্নাঘরের দিকে গিয়ে সেজো কাকীকে বললো, কাকী ফারহান কি খেয়ে বের হইছে?

সেজো কাকী -না রে অনেক বার বলেছি।ফারহান বললো ওর নাকি এমনিতেই দেরী হয়ে গেছে।সময় পেলে বাহিরে খেয়ে নিবে।

প্রাপ্তি আর কিছু বললো না।রুমে এসে রেডি হয়ে নীরা আর মৃদুলের সাথে বেরিয়ে গেল।

অনেক দিন পর কলেজে গেছে। প্রাপ্তিকে পেয়ে তার ফ্রেন্ডরা খুব খুশি।অনেক দিন পর সবাই আজ এক সাথে হলো।
প্রাপ্তির ফ্রেন্ড রিয়া এর মাঝে বললো কিরে প্রাপ্তি নীরা মৃদুলকে নিয়ে আসতে পারছে তুই কেন ফারহান ভাইয়া কে নিয়ে এলিনা।

বিথী -আরে তুই বুজোস নাই কেন আনে নাই।যদি আমাদেরকে ট্রিট দিতে হয়।প্রাপ্তি , কয়দিন এইভাবে নিজের বর কে বাঁচাবি? একদিন না একদিন ঠিক আদায় করে নিবো। কি বলিস তোরা?

প্রাপ্তি চুপ করে থাকলেও নীরা বলে পেললো,তোরা যা ভাবছিস ভুল।ভাইয়াই আসতো কিন্তু ভাইয়ার আজ একটা মিটিং ছিলো তাই আসে নাই।আমার মনে হয় কাল ঠিকি আসবে।
রিয়া-ঠিক আছে তাহলে আমাদের সবাইকে কালকের জন্য অপেক্ষা করতে সবে।

প্রাপ্তি -অনেক কথা বলেছিস এইবার সবাই চল ক্লাসের দেরী হয়ে যাচ্ছে।

ক্লাস শেষ করেই প্রাপ্তিরা সবাই কথা বলতে বলতে কলেজ থেকে বের হতে যাবে তখনি দেখে ফারহান গাড়ী নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

প্রাপ্তি- যাহঃ আজ সেরেছে।

প্রাপ্তির কথাটা শুনে সবাই সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে ফারহান হাঁসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে।

নীরা প্রাপ্তির কানের কাছে এসে, প্রাপ্তিইইইইই ফারহান ভাইয়া এইখানে আসবে যে তুই জানিস না? এখন এরা আজ কেউই ছাড় দিবে না।
প্রাপ্তি কিছু না বলে শুধু হে হে হে করে হেঁসেই যাচ্ছে।

রিয়া -এই দুই বোন মিলে কি এতো ফুসুরফাসুর করছিস? যতোই বর কে বাঁচানো চেষ্টা করো কোনো লাভ নেই।

ফারহান তাদের কাছে এগিয়ে এসে কি ব্যাপার কখন থেকে আমি দাঁড়িয়ে আছি। যাইহোক আপুরা সবাই কেমন আছো?

সবাই এক সাথে বলে উঠলো, জ্বী ভালো।

রিয়া -ভাইয়া, বিয়ের পর প্রাপ্তি এই ফাস্ট কলেজে আসছে এখন তো আমাদের সবাইকে আপনি ট্রিট দিতে হবে।

ফারহান -আজকেই?

বিথী -হুম, আজকেই।

ফারহান -তাহলে আর কি সবাই রেস্টুরেন্টে চলো।আমি প্রাপ্তিকে নিয়ে আসছি তোমরা সবাই আগে যাও।
কথাটা শুনে প্রাপ্তি মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ফারহান -কি হলো দাঁড়িয়ে আছো কেন? সবাই যাচ্ছে তো।
প্রাপ্তি-(সবাই চলে যাওয়ার পর)তুমি ওদের এক কথাতেই রাজি হয়ে গেলে? আজ তোমাকে ওরা সবাই মিলে ডুবিয়ে ছাড়বে।

ফারহান -তাতে কি হয়েছে।আমার বউকে তো আর ছোটো হতে দিতে পারিনা!
আর একটাও কথা না গাড়ীতে উঠো।
মৃদুলকেও একটা ফোন দিয়ে বলি আসার জন্য।

রেস্টুরেন্টে এসে সবাই খাবার অর্ডার করছে যেই যার পছন্দ মতো।প্রাপ্তির ফ্রেন্ড ৮ টা।সবাই কিভাবে ফারহানের খরচ বাড়ানো যায় সেই চিন্তায় আছে। মৃদুলও এসে বসতে বসতে বললো,ফারহান!ওই দিন আমাকে সবাই মিলে ১২ টা বাজাইছে আর আজ তোমাকে, বলেই হাঁসা শুরু করলো মৃদুল আর নীরা।

ফারহান -মৃদুল! কিছু করার নেই বউ খুশি মানে সব খুশি।এর ছেয়ে ভালো আমরাও একসাথে খাওয়া খেয়ে বাড়ী ফিরি।

সবাই খাওয়াদাওয়া শেষ করে প্রাপ্তির ফ্রেন্ডরা চলে গেলো। প্রাপ্তিরাও তাদেরকে বিদায় দিয়ে বাসায় আসার জন্য গাড়ীতে উঠলো।

প্রাপ্তি আর নীরার আসার দেরী দেখে সবাই দুপুরে খেয়ে প্রাপ্তির বাবা আর মেজো কাকা ড্রইংরুমে বসে কথা বলছে ব্যবসা নিয়ে

কথার ফাঁকে প্রাপ্তির মার এসে বললো, মেয়েদের কে ফোন দিয়েছো এখনো তো এলো না।এইদিকে ফারহান এসেই তো প্রাপ্তির খুঁজ করবে।

প্রাপ্তির বাবা -আচ্ছা আবার ফোন দিয়ে দেখি। কথা টা বলে ফোন হাতে নিতেই কলিংবেল বেজে উঠলো।
ওই যে গিয়ে দেখো হতো তোমার মেয়েরাই হবে।
প্রাপ্তির মা গিয়ে দরজা খুলে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সবাইকে এক সাথে দেখে।

প্রাপ্তি -কি আম্মু এইভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন?

প্রাপ্তির মা -তোদের জন্য সবাই চিন্তা করছে।আর তোরা সবাই এক সাথেই আছোস।

নীরা বাসায় ঢুকতে ঢুকতে সব বললো আজ কি কি হয়েছে।

সবাই শুনে মেজো কাকা বললো ফারহান ১২ টা তো ভালোই বাজাইছে।তো কতো খরচ হয়েছে?

ফারহান -বেশী না কাকাই ২৫ হাজার টাকা।

নীরা -আসলে আব্বু ওরা সবাই প্লান এইটাই ছিলো কিভাবে ভাইয়ার টাকা বেশী খরচ করা যায় এই আর কি।

চলবে,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট:২২

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট:২২

#Rabeya Sultana Nipa

 

__প্রাপ্তি ফারহানের কথায় কিছু বলছে না।মনে মনে ভাবছে সত্যিই কি আমি ফারহান কে ভালোবাসে ফেলেছি। আচ্ছা যার কারনে আমি ফারহান কে দূরে সরিয়ে রাখতেছি সে তো একবারো আমার খবর নিলো না।

ফারহান -প্রাপ্তি, তুমি কি ভাবছো? এইভাবে চুপ করে আছো কেন?আমার আনসার কিন্তু তুমি দিলেনা।

প্রাপ্তি -আচ্ছা তুমি যে মেয়েকে ভালোবাসো ওই মেয়েটার সাথে কথা বলো কখন? সারাক্ষণ তো আমার সাথেই থাকো।মেয়েটা কি জানে তুমি বিয়ে করেছো? ও তোমাকে ভুল বুজেনি?

প্রাপ্তির কথা শুনে ফারহান হাঁসতে শুরু করলো।
ফারহানে হাঁসি দেখেই প্রাপ্তির প্রচুর রাগ হচ্ছে।
প্রাপ্তি-আমাকে কি জোকার মনে হয় তোমার কাছে? এই কথাটা বললেই তুমি হাঁসতে থাকো,ব্যাপার টা কি একটু বলবে?
(ফারহান হাঁসি থামিয়ে)
ফারহান-আসলে কি বলোতো আমি সারাক্ষণ কিন্তু ওকেই সময়দি। কিন্তু সেটা তুমি বুজতেই পারোনা নাকি বুজতে চাও না সেটা আমার জানা নেই।(অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে)
প্রাপ্তি! তুমি কি সত্যি কোনো দিন বুঝবেনা? আমাদের সম্পর্কটা কি সারাজীবন এইভাবেই থেকে যাবে?

প্রাপ্তি -ফারহান,,,,

ফারহান-(প্রাপ্তির মুখে আঙুল দিয়ে)চুপ আজ আমাকে বলতে দাও।আমার বলা শেষ হলেই তুমি বলবে।(প্রাপ্তি তখন মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুজালো,ফারহান আবার শুরু করেছে।)আমি জানি তুমি একজনকে ভালোবাসতে।আচ্ছা কোনো ছেলেকি কোনো মেয়ের এইসব কিছু জেনেও ওই মেয়েকে বিয়ে করে? কেউই করেনা।তাহলে তোমার মাথায় এইটা আসেনা আমি তোমার সব কিছু জেনেও তোমায় বিয়ে করলাম কেন?কারণ আনসারটা তুমি আমার থেকেও ভালো জানো। কিন্তু বুজতে চাও না।মানলাম তুমি আয়ান নামের ছেলেটাকে এতোটাই ভালোবাসো যে কিছু এখন মেনে নিতে পারছোনা।কিন্তু এইটা ভেবে দেখেছো তুমি তাকে না দেখে তার সম্পর্কে ভালো করে না জেনে তাকে তুমি এতো ভালোবেসেছো।তা হলে আমার দিকটা একবার ভাবো তুমি আমার সামনে সারাক্ষণ ঘুরো,কথা বলো,হাঁসো,আমি কি করে ঠিক থাকতে পারি।আমি কিন্তু তোমার শর্ত গুলো মেনে বিয়ে করার পর শর্ত গুলো নাও মানতে পারতাম।কেন মিনেছি জানো? তোমার শরীরের প্রতি আমার কোনো লোভ নেই আছে শুধু তোমার জন্য ভালোবাসা।আমি চাইনা জোর করে কিছু পেতে যেই দিন তুমি মন থেকে আমার কাছে আসবে সেইদিনও আনাকে একিভাবে পাবে।আমি তোমার ছিলাম, আছি,থাকবো।(ফারহান কথা গুলো বলে যাচ্ছে আর প্রাপ্তির চোখের পানি গুলো টপটপ করে নিছে পড়ছে।প্রাপ্তি কান্না দেখে) প্রাপ্তি,জানো আমি চাইনা তোমার চোখের কাজল মুছে যাক।আর কখনো চাইবোও না। আমি যতো দিন বেঁচে থাকবো কখনো যেন না দেখি তোমার চোখে পানি।হয়তো আমার কথা গুলো তোমার কাছে কোনো দামই নেই। তবুও বলছি ওই মেয়ে আর কেউ নয় শুধু তুমি।যেইদিন আমি ফাস্ট তোমাদের বাসায় এসেছি সেই দিন তোমাকে একটা বার দেখেই ভালোবেসে ফেলেছি।আর তোমার ফ্যামিলির সাথে ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হলো।আমার বাবা,মাকে বলে তোমার ফ্যামিলিতে প্রস্তাব পাঠালাম।কিন্তু তারা বললো তারা রাজি কিন্তু তোমার পড়া লেখা শেষ করেই বিয়েটা হবে।তখন আমিই বললাম বিয়েটা যখন পরেই হবে তোমাকেও পরে বলা হোক।সবাই ও আমার কথা মেনে নিলো সেইদিন। এখন আমি বুজি সেইদিন তোমাকে না জানিয়ে কতো বড় ভুল হয়েছে।প্রাপ্তি, আমি অন্য ছেলেদের মতো না, তোমাকে বলিনি,বলেছি তোমার ফ্যামিলি কে কারণ তোমার একা ভালোবাসা পেলে তো হবে না।আমাকে সবার ভালোবাসাই পেতে হবে।

কথা গুলো বলেই ফারহান একটা সুস্থির নিশ্বাস পেললো। মনে হচ্ছে এতো দিন যে কষ্টগুলো তার বুকে চেপে রেখে ছিলো আজ প্রাপ্তিকে এইগুলো বলে কিছুটা হলেও হালকা লাগছে নিজেকে।
প্রাপ্তি কিছুই বলতে পারছেনা চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরতেছে।ফারহানের কথা গুলো শুনে নিজের কাছেই নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।ফারহান প্রাপ্তির চোখ গুলো মুছতে মুছতে কান্নাকাটি করার কোনো দরকার নেই।কথা গুলো তোমাকে বলতে চাইনি।তবু নিজের অজান্তেই বলে পেললাম।প্রাপ্তি কাঁদতে কাঁদতে ফারহানকে জড়িয়ে ধরলো।হঠাৎ করে প্রাপ্তির এইভাবে জড়িয়ে ধরা দেখে ফারহান অবাক হয়েই আছে।বিশ্বাসই করতে পারছেনা প্রাপ্তি তাকে জড়িয়ে ধরেছে।অবশ্য এর আগেও নীরার বিয়ের পরে একবার জড়িয়ে ধরেছিলো। আচ্ছা আমি নিজেও কি তাকে জড়িয়ে ধরবো? না থাক!প্রাপ্তি যেইদিন মন থেকে এসে বলবে আমি তোমাকে ভালবাসি সেইদিন তাকে জড়িয়ে ধরবো।এর আগ পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করে যাবো।

ফারহান -প্রাপ্তি আমি তোমাকে কান্না করার জন্য এইগুলো বলিনি।বলেছি ভেবে দেখতে।(প্রাপ্তিকে হাঁসানো জন্য)প্রাপ্তি তুমি যাদি সারাক্ষণ এইভাবে রুমেই থাকো তাহলে সবাই ভাববে প্রাপ্তি তার বর কে কতো ভালোবাসে তাই চোখের আড়াল করতে চায়না বলেই সারাক্ষণ রুমে থাকে।
প্রাপ্তি ফারহানকে ছেড়ে দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে ফারহান,ভালো হবেনা বলে দিলাম।

ফারহান- খারাপই বা কি হবে।আমি এইটুকু বুজেছি প্রাপ্তি এখন ফারহানকে চোখে হারায়।ঠিক বলছি?

প্রাপ্তি -মোটেও ঠিক বলোনি।তোমাকে চোখে হারাতে যাবো কেন?

প্রাপ্তির কথা শুনতে শুনতে ফারহান ঘড়ীর দিকে তাকিয়ে দেখে ৫.৩০ বেজে গেছে।
ফারহান -ওহ কখন সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে টেরি পেলামনা। বউয়ের কান্নাকাটি দেখলেকি আর কোনোদিকে মন থাকে।একটু পরতো মাগরিবের আজান দিবে।তুমি নামাজ পড়ে নিও আমি আর ইমরান একটু বাহিরে যাবো।কথাটা বলতে বলতে ফারহান দরজা খুলে দেখে সেজো কাকী আর নীরা দাঁড়িয়ে আছে।
ফারহান -আপনারা?

সেজো কাকী -তোমরা তো ঘুমাচ্ছিলে তাই বড় ভাবী বলেছে তোমাদের ডেকে দিতে।এখন এসে দরজা নক করতে যাবো তার আগেই তুমি দরজা খুললে।

নীরা -কাকী , ভাইয়াকে দেখেতো মনে হয়না ঘুমিয়েছে।তুমি কি বলো।

নীরা কথাটা বলতে বলতে তারা রুমে ঢুকে দেখে প্রাপ্তি অন্য দিকে ফিরে শুয়ে আছে।
ফারহান তাদের সাথে কথা না বাড়িয়ে মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে ইমরানের রুমে চলে গেলো।প্রাপ্তিও তাদেরকে দেখে উঠে বসলো।
সেজো কাকী -কিরে ঘুমাস নাই? আর বড় ভাবী পাঠিয়েছে তোদেরকে জেগে তুলতে।এখন এসে দেখি ঘুমাসই নাই।আচ্ছা নীরা তোরা কথা বল আমি আসছি।ওই দিকে অনেক কাজ পড়ে আছে।
কাকী চলে যাওয়ার পরে নীরা প্রাপ্তির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে, মনে হচ্ছে তুই কান্না করেছিস।

প্রাপ্তি -(একটু চুপ করে থাকে)কান্না করিনি নিজের ভুল গুলোকে শুধরানোর চেষ্টা করছি।আচ্ছা তুইও তো জানতি ফারহান কাকে ভালোবাসতো।কিন্তু তুই ও আমাকে বলিসনি। যদি তখন বলতি আজ তাহলে এতো গুলো মানুষকে কষ্ট পেতে হতো না।

নীরা- প্রাপ্তি তুই আমাকে ভুল বুজছিস সত্যিই আমি আগে কিছু জানতাম না।যখন জানতে পারলাম তখন অনেক দেরী হয়ে গেছিলো। তবে কি জানিস হয়তো তোর কাছে এখন খারাপ লাগছে কোনো একদিক তুই নিজেই বলবি ফারহান ভাইয়াকে বিয়ে করে তুই ঠিকে করেছিস।

প্রাপ্তি -হয়তো তাই।
(কথাটা বলতে বলতে প্রাপ্তি উঠে দাঁড়ালো
আচ্ছা চল দেখি ওরা সবাই কি করছে।

সন্ধ্যা থেকে সবাই ড্রইংরুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে। ইমরান আর ফারহান বাহিয়ে গেছে।প্রাপ্তিকে সবাই নানানরকম কথা জিজ্ঞাস করছে।
মেজো মা – হে রে প্রাপ্তি, ওই বাড়ীর সবাই তোকে অনেক আদর করে তাই না?

নাজিফা -মা তুমিও না। আমি একদিন থেকে যা বুজলাম সবার থেকে ভাইয়া আপুকে চোখে হারায়,কতো কেয়ার করে।অবশ্য সবাইও আপুকে অনেক আদর করে।

প্রাপ্তি- ওই তুই কিন্তু বেশী কথা বলছিস।তোকে মেজো মা জিজ্ঞাস করেছে?

নাজিফা -তুই তো কিছু বলছিস না তাই আমি তোর হয়ে বলে দিলাম।ভাইয়াই তো বললো তোর সাথে আমি ফ্রি তাই বলে দিলাম।

নীরা-তোর মুখেতো ভালোই খই ফুটতেছে।এই সবাই কিন্তু শুনে রাখো, প্রাপ্তি আজ বড় মায়ের সাথে ঘুমাবে আর নাজিফা ফারহান ভাইয়ার সাথে।ও যখন নিজের মুখে শিকার করেছে ও প্রাপ্তির সাথে ফ্রি তাহলে ফারহান ভাইয়া দুটো বউ পেয়ে গেলো।

নাজিফা- ধুত্তুরি আর থাকবোই না এখানে।তোরা সবসময় আমার পিছনে লেগে থাকিস।কথাটা বলেই নাজিফা রাগ দেখিয়ে চলে গেলো।

প্রাপ্তির মা- নীরা বেশী বাড়াবাড়ি করে পেলেছিস।আচ্ছা প্রাপ্তি,ফারহান আর ইমরান আবার কোথায় গেলো,জানিস কিছু?

প্রাপ্তি -না কিছু বলে যায়নি, ওরা দুজন এক সাথে থাকলে কখন কি করে সেটার কি ঠিক আছে।

সেজো কাকী নাস্তা আর কফি নিয়ে এসে, এই আমি কিন্তু এসে গেছি এতোক্ষণ অনেক কিছু মিস করে ফেলেছি।
আবার নতুন করে শুরু করো।

নীরা -হায় হায় কাকী তুমি সব কিছু মিস করে ফেলেছো।(খেপানোর জন্য)প্রাপ্তি তুই যে এতোক্ষণ আমাদের গল্পগুলো শুনাইছোস কাকী তো সব মিস করে ফেলেছে। এখন কি করা যায়?

নীরার কথা শুনে সবাই হাঁসছে।

সেজো কাকী -নীরা, আমাকে খেপানো হচ্ছে তাই না।আমি সব বুজি।কফি ঠাণ্ডা হয়ে যাছে আগে খেয়েনে।প্রাপ্তি,তুই ফারহান কে ফোন দে আসার জন্য। ওর জন্য বড় ভাবী, আর মেজো ভাবী স্পেশাল পিঠা বানিয়েছে।

প্রাপ্তি -কাকী, তুমি তো ভালো করেই জানো ও এই সময় কফি খায়না, চা বানাও নি।

সেজো কাকী -বড় ভাবী দেখেছো আমাদের মেয়ে এখন আর আমাদের নেই। পুরোপুরিভাবেই ফারহানের হয়ে গেছে।

(সেজো কাকীর কথা শুনে প্রাপ্তির মা ভাবছে আমি তো এটাই ছেয়েছিলাম।ও ফারহানের হয়েই থাকুক।)
প্রাপ্তি -কাকী তুমিও না।একটা কথা পেলেই হলো আর কিছু লাগেনা।এইটা আবার আম্মুকে শুনানো লাগে।কথাটা বাড়ীর সবাই জানে ফারহান সন্ধ্যায় কফি খায়না।তার পরেও বলতে হলো তোমার।

প্রাপ্তি কথাটা বলেই চুপচাপ বসে ফারহানকে ফোন দিচ্ছে। ফারহান বার বার ফোন কেটে দিচ্ছে।আবার ফোন দিতে যাবে দেখে ফারহান আর ইমরান দরজা দিয়ে ঢুকতেছে।
ফারহান প্রাপ্তির কাছে এসে
ফারহান -তুমি এমন সময় ফোন দিচ্ছো তখন বাসার সামনে তাই ফোন কেটে দিছি।

মেজো মা-ফারহান, ইমরান নাস্তা করতে বসো।যা বলার পরে বলবে।

চলবে,,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ২১

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ২১

#Rabeya Sultana Nipa

 

সকাল বেলা নিশ্বাসের গরম হাওয়া মুখে পড়তেই প্রাপ্তির ঘুম ভেঙে চোখ মেলে তাকালো।এই প্রথম সেই ফারহানের এতো কাছাকাছি। ঘুমালে ওকে এতো মায়া লাগে এইটা আগে দেখেনি।ইচ্ছে করছে তাকে একবার ছুঁয়ে দেখতে।আমি তো ওকে ভালোবাসিনা।তারপরও ওর সবকিছুই ভালোলাগে।হয়তো বিয়ে নামে এই সম্পর্কে জড়ানোর কারনেই কি তার প্রতি আমার মায়া কাজ করছে।ধুত আমি এইসব কি ভাবছি কথাটা বলে প্রাপ্তি উঠে যাবে এমন সময় ফারহান হাত ধরে ফেললো।

প্রাপ্তি-কি ব্যাপার ফারহান হাত ধরলে কেন? তোমার শর্ত ভুলে গেলে চলবে না।

ফারহান -আমি কিছু ভুলিনি।যাচ্ছো কোথায় সেটা বলো।?

প্রাপ্তি -ফ্রেশ হয়ে ভাবীদের কাছে যাবো।

ফারহান -ওরা এখন রান্না ঘরে আছে এখন ওদের কাছে গেলে ওরা তোমাকে ইচ্ছে করেই নাস্তা বানাতে দিবে আর আমিতো জানি আমার বউ কিছুই পারে না।

প্রাপ্তি -ছাড়োতো! বেশী ভালোবাসা দেখাইতে আইসো না।যাকে দেখানোর কথা তাকে গিয়ে দেখাও।

কথাটা বলেই প্রাপ্তি উঠে চলে গেলো।
এমন একটা হিটলার নিজের কপালে নিজেই টেনে আনছি বুজালে ও বুজেনা।কথাটা বলতে বলতে ফারহানও উঠে গেলো।
প্রাপ্তি ফ্রেশ হয়ে ভাবীদের কাছে যেতেই

বড় ভাবী -কি ব্যাপার প্রাপ্তি এতো তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে গেলো?

মেজো ভাবী -উঠেছো ভালোই হয়েছে আজ নতুন বউয়ের হাতে নাস্তা খাবো।কি বলিস সুমি?

প্রাপ্তি কথাটা শুনেই গলাটা শুখিয়ে আসছে।মনে মনে ভাবছে আমি তো কোনো নাস্তাই বানাতে পারিনা।এখন কি করি? ফারহান ঠিকি বলেছিলো তার কথাটা শুনাই ভালো ছিলো।প্রাপ্তি নিজের বিপদ নিজেই টেনে আনলি।

বড় ভাবী -লামিয়া তুই কি যে বলিস না প্রাপ্তি নাস্তা বানাবে কি করে? আজকে থাক ওদের বাড়ী থেকে ঘুরে আসুক তারপর না হয় আমিই শিখিয়ে দিবো।

মেজো ভাবী -আমি তো কোনো কথা শুনবো না।প্রাপ্তি তুমি আসো তো।

ফারহান তাড়াহুড়ো করে ফ্রেশ হয়ে ড্রইংরুমে এসে দেখে তার বাবা বসে পেপার পড়ছে আর বার বার রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে হাঁসছে।কারণ তিনিও জানেন প্রাপ্তি কোনো রান্নাই পারেনা।কিন্তু কিছু বলছে না কারণ তিনি ভালো করেই জানে প্রাপ্তিকে মেজো বউ দুষ্টামি করেই এই গুলো বলছে।

সুমি -ভাবী যাও যাও তোমার হাতের নাস্তা আজ তো মিস করা যাবেনা।

প্রাপ্তি এগিয়ে গিয়ে আচ্ছা কি করতে হবে বলো।

মেজো ভাবী -হুম,মামনি সকাল বেলা রুটি ছাড়া অন্য কিছু খায়না তুই রুটি বানিয়ে পেল।
কথাটা শুনেই প্রাপ্তির মাথা ঘুরতেছে।কি করবে বুজতে পারছে না সবার জোরাজোরিতে আসলাম।কিন্তু রুটি বানাবে কি করে?

ফারহান তাকিয়ে আছে কি করে দেখার জন্য।
মেজো ভাবী- ফারহান তুমি এইখানে কি করছো? যাও এইখান থেকে।নাকি বউয়ের জন্য কষ্ট লাগছে।

ফারহান -ভাবী তুমি কিন্তু ভালো করেই জানো ও এইগুলো পারেনা।আর একটা মানুষ কে সময় দেওয়া উচিত।হঠাৎ করে কেউই কোনো কাজ পারেনা।

মেজো ভাবী -এতোক্ষন এইটাই জানতে চাইছি তোমার বউয়ের প্রতি ভালোবাসা কতোটুকু।যাইহোক প্রাপ্তি এইবার দেখছো ফারহান তোমায় কতোটা ভালোবাসে।তোমাকে কোনো কাজ করতে দিতে চায়না।আজকে কিন্তু ছেড়ে দিলাম।ওই বাড়ীথেকে আসো তারপর ফারহান বললেও শুনবো না।

প্রাপ্তি-ফারহান তুমি এইখান থেকে যাও।ভাবী, আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন আমি পারবো।

ফারহান আর কিছু না বলে তার বাবার সাথে বসে কথা বলছে।

ফারহানের বাবা-ফারহান! প্রাপ্তির বাবা আর মেজো কাকা ফোন করেছে তোরা কখন যাবি?
ওরা যখন এতো বার ফোন দিচ্ছে তোরা রেডি হয়েনে।

ফারহান -ঠিক আছে, প্রাপ্তি ও মনে হয়না আজ থাকবে।
নাজিফা ও এসে ফারহানের সাথে বসেছে।
ফারহানের বাবার দিকে তাকিয়ে আংকেল আপুকি আজকেও যাবেনা?

ফারহানের বাবা- তোমার কি আমাদের বাড়ী ভালো লাগেনা?

নাজিফা- সেই জন্য বলছিনা। কিন্তু আজ তো যাওয়ার কথা।

ফারহানের বাবা-হ্যাঁ,তোমরা নাস্তা করে রেডি হয়ে নাও।

সবাই নাস্তা করে বসে আড্ডা দিচ্ছে। প্রাপ্তি গিয়ে রেডি হচ্ছে।মনে হচ্ছে কতো বছর সে ওই বাড়ীতে যায়নি। ফারহান রুমে ঢুকতে যাবে দেখে প্রাপ্তি শাড়ী পরছে।
ফারহান -সরি আমি ইচ্ছে করে আসিনি।

প্রাপ্তি -তোমাকে এইটা ভাবতে হবে এই রুমে তুমি একা নয়। আরো একজন থাকে। রুমে আসার আগে দরজায় নক করে আসতো পারোনা?

ফারহান -সরি বললাম তো(মনে মনে কি হিটলারি নিজের বউকে দেখবো এইটাও পারমিশন নিতে হবে?আমি ও দেখতে চাই কয়দিন এই হিটলারি দেখাও)

নাজিফা -কিরে আপু আসার সময় দেখলাম ফারহান ভাইয়া মন খারাপ করে চলে যাচ্ছে কি হয়েছে?

প্রাপ্তি -কিছুনা,এমনি।
প্রাপ্তি শাড়ী পরা শেষ করে নাজিফাকে বললো ফারহান কে ডাকতে।
নাজিফা গিয়ে ফারহান কে ডেকে আনলো।

ফারহান-সমস্যা কি একবার তাড়িয়ে দিলে এখন আবার ডাকতেছো।

প্রাপ্তি- তোমাকে রেডি হওয়ার জন্য ডেকেছি। অন্য কিছুর জন্য না।

ফারহান- (হাঁসি দিয়ে)অন্য কিছু কি প্রাপ্তি?

প্রাপ্তি- ধুত যাও তো। কথা বাড়িও না।

প্রাপ্তির ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে সাজতেছে। ফোন বাজতেছে শুনে উঠে এসে দেখে নীরা ফোন করেছে।ফোন রিসিভ করেই।

নীরা -কিরে আর কতোক্ষন।দুপুর হয়ে যাচ্ছে এখনো তোদের খবর নেই।আসবি টা কখন?
প্রাপ্তি- এইতো একটু পরে বাসা থেকে বের হবো।তোরা কি করছিস?

নীরা- কি আর করবো সবাই তোদের জন্য অপেক্ষা করছে।আচ্ছা তাহলে রাখি তাড়াতাড়ি আয়।

প্রাপ্তি ফোন রেখে দেখে ফারহান ও রেডি হয়ে আসছে।

ফারহান -তোমার হইছে নাকি আরো দুইদিন লাগাবা?

প্রাপ্তি -আমার হয়ে গেছে।

প্রাপ্তি ড্রইংরুমে এসে দেখে সবাই বসে আছে।প্রাপ্তি তার শাশুড়ি আর শশুরকে সালাম করে ভাবীদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বের হলো।

এইদিকে প্রাপ্তিদের বাসার সবাই অপেক্ষা করছে।
মেজো কাকা -ইমরান একটু ফোন দিয়ে দেখতো প্রাপ্তি কতো দূর এলো?সেই কোন সময় বললো বাসা থেকে বের হয়েছে এখনো এসে পৌঁছালো না তারা।
কথা টা বলতে না বলতেই কলিংবেলের শব্দ পেয়ে প্রাপ্তির মা বললো মনে হয় প্রাপ্তিরা এসে গেছে আমি গিয়ে দেখছি।
প্রাপ্তির মা দরজা খুলেতেই প্রাপ্তি জড়িয়ে ধরলো তার মাকে।
মেজো মা -সবাই দেখোছো প্রাপ্তি আমাদের কথা কিন্তু ভুলেই গেছে।

প্রাপ্তি -(তার মাকে ছেড়ে দিয়ে) মেজো মা আমি কিন্তু সবাইকেই মনে রেখেছি।কাউকেই ভুলিনি।

মেজো কাকা -সেইটা ভালোকরেই জানি।কিন্তু তোদের এতো দেরী হলো কেন? ফারহান, আগে তোমরা রুমে যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।এমনিতে তো দুপুর করে এসেছো। এতো দেরী করলে কেন?

ফারহান -কাকাই প্রাপ্তি সেই সকাল থেকেই সাজতে সাজতে দেরী করেছে।

প্রাপ্তি -কি মিথ্যাবাদীরে,এই আমি সাজতে সাজতে দেরী করেছি?

মেজো মা- আসতে না আসতেই ঝগড়া? আচ্ছা এই দুইদিনও কি এইভাবে ঝগড়া করেছিস?
প্রাপ্তি আর কিছু না বলে রুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।ফারহান ও পিছুপিছু গেলো।

রুমে গিয়ে প্রাপ্তি ফারহানের দিকে রাগি মুখ নিয়ে তাকিয়ে আছে।
ফারহান -(আস্তে করে) এইভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আমি আবার কি করলাম?

প্রাপ্তি -তখন বললে কেন, আমি সাজতে সাজতে দেরী করেছি?

ফারহান -আচ্ছা সরি আর বলবো না।

নীরা রুমে দরজায় দাঁড়িয়ে ভাইয়া আসবো।

ফারহান -আরে নীরা যে! এতোক্ষণ কই ছিলে?

নীরা -আমার রুমেই ছিলাম।মৃদুল কাল রাত থেকে একটু অসুস্থ তাই ওর পাশেই বসে ছিলাম।

ফারহান -(প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে)নিজের ছোটো বোনের কাছ থেকেই তো একটু শিখতে পারো কিভাবে বর কে ভালোবাসতে হয়।তা না করে সারাক্ষণ মাথায় উল্টাপাল্টা চিন্তা নিয়ে ঘুরো।

প্রাপ্তি -নীরা, তুই আর মানুষ খুঁজে পেলিনা।কার কাছে কি বলছিস।

প্রাপ্তি! প্রাপ্তি! কই তোরা তাড়াতাড়ি আয়।
সবাই না খেয়ে তোদের জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে।
নীরা -ওই যে বড় মায়ের ডাক পড়েছে।তাড়াতাড়ি চলো।

ফারহান -হুম,চলো।
সবাই এক সাথে খেতে বসেছে।
প্রাপ্তির বাবা-আজ অনেক দিন পর মনে হলো এই বাড়ীতে আনন্দ ফিরে এসেছে।মেয়ে গুলো না থাকলে কেমন জানি লাগে।তখন কিছু ভালো লাগে না।

মেজো কাকা -ভাইয়া ঠিকি বলছিস।যাই হোক ফারহান তোমার ব্যবসার অবস্থা কি?
সব ঠিকঠাক চলছেতো?

ফারহান -হ্যাঁ কাকাই, সব ঠিকঠাক।সামনের মাসে ব্যবসার কিছু কাজে দেশের বাহিরে যেতে হতে পারে।
কথাটা শুনেই প্রাপ্তি অবাক হয়ে ফারহানের দিকে তাকালো। কারণ ফারহান যতোবারই ব্যবসার কাজে বাহিরে যেতো ততোবার প্রাপ্তির সাথে দেখা করে যেতো।কিন্তু এইবার তো আমি ওর সাথেই ছিলাম কই আমাকে একটা বারও বললো না?
ফারহান কথাটা বলেছে ঠিকি কিন্তু প্রাপ্তির দিকে বার বার তাকাচ্ছে। প্রাপ্তি কিছু বলছে নিছের দিকে তাকিয়ে খেয়েই চলেছে।

ফারহান নীরাকে চোখ দিয়ে ইশারা করে প্রাপ্তির দিকে তাকাতে বললো।

নীরা -আরে প্রাপ্তি আস্তে খাঁ গলায় আটকে যাবে তো।কি হয়েছে তোর আবার?

প্রাপ্তি -কিছু হয়নি। আমার খাওয়া শেষ আমি উঠছি।কথাটা বলেই প্রাপ্তি চলে গেলো

মেজো কাকা -প্রাপ্তির কি হলো আবার এর মাঝে।একটু আগেই তো ভালো ছিলো।
এইভাবে চলে গেলো কেন?

প্রাপ্তির বাবা -সেইটাই তো ভাবছি কি হলো এর।
খাওয়াদাওয়া শেষ করে সবাই ড্রইংরুমে আড্ডা দিচ্ছে।ফারহান আড্ডা থেকে উঠে গিয়ে দেখে প্রাপ্তি শুয়ে আছে।

ফারহান -কি হলো তখন এইভাবে মন খারাপ করে উঠে এলে কেন?

প্রাপ্তি- তুমি বাহিরে যাচ্ছো আমাকে বললে না তো?

ফারহান -যাবো না তো কি করবো? বিয়ে করেছি কোথায় বউকে ভালোবাসবো।বউকে আদর করবো,বউকে নিয়ে ঘুরবো কিন্তু তানা বিয়ের পর থেকে বউয়ের ঝাড়ি খেয়েই যাচ্ছি।তাই ভাবলাম বাহিরে গিয়ে থাকবো।

প্রাপ্তি- যাও যাও এখন আমার কাছে কি?

ফারহান-প্রাপ্তি তুমি কি আমাকে ভালোবেসে ফেলেছো? যদি হ্যাঁ বলো তাহলে ভেবে দেখবো।

চলবে,,,,,,,,