Wednesday, August 20, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2380



Love At 1st Sight Season 3 Part – 47

0

Love At 1st Sight
~~~Season 3~~~

Part – 47

writer-Jubaida Sobti

স্নেহা : আমি সপ্ন দেখছি? নাকি সত্যি সত্যিই দেখছি ?

মার্জান : স্নেহা সপ্ন না সত্যিই দেখছিস! [ বলেই স্নেহাকে সামনেরদিক ধাক্ষা দিলো, স্নেহা তাতে ও শক্ত হয়ে হা করে তাকিয়ে আছে ]

স্নেহার মা : [ পিছিয়ে এসে মার্জানের দিক তাকিয়ে ধীরো ভাবেই বলতে লাগলো ] এরা কারা?

জারিফা : আরে আন্টি এরা আপনার মেয়ের হবু শ্বশুর আর শ্বাশুরী! আই মিন রাহুলের বাবা-মা!

স্নেহার মা : কিন্তু আমিতো শুনলাম ওরা একসাথে থাকে না তাহলে…

মার্জান : ব্যাস! আন্টি আপনি ও এখনো ঐ সামিরের কথায় পড়ে আছেন! আগে বাড়ুন, আর ওদের আপ্যায়ন করুন! যান যান! [ বলেই এগিয়ে দিলো ]

স্নেহার মা : হ্যাঁ! হ্যাঁ! [ বলেই সোফা ঠিক করে দিয়ে ] আরে আসুন আসুন ভেতরে..এইখানে বসুন! [ রাহুলের বাবা-মা দুজনই ভেতরে এগিয়ে এসে দাড়ালো ]

রাহুলের মা : কেমন আছো স্নেহা ?

স্নেহা : আ..আন্টি..আং..আংকেল! আ..আপনারা একসাথে…মা..মানে…

রাহুলের বাবা : স্নেহা! শকড হয়ে আছো কেনো?

রাহুলের মা : [ চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে ] নিশ্চয় স্নেহার কারো একজনের চেহেরা মোটেও পছন্দ হয়নি!

– [ মুচকি হেসে ] তুমি আমার সাথে এসো [ বলেই স্নেহার হাত ধরে নিয়ে এগুচ্ছিলো, হঠাৎ আবার পেছন ফিরে এসিস্ট্যান্ট এর দিক তাকিয়ে ] জিনিষপত্রগুলো এইখানে একপাশ করে রেখে দাও [ বলেই স্নেহাকে নিয়ে সোফায় বসে পড়লো ]
_______________________________________

জারিফা : [ ফিসফিসিয়ে ] আরে গাইস্ কি স্টাইল ছিলো সানগ্লাস খোলার, আমি ছেলে হলে তো এতোক্ষণে লাইন মারা শুরু করে দিতাম,

শায়লা : তুই চুপ করবি! সিরিয়াসলি ম্যাটার চলছে আর তুই আছিস তোর নাটক নিয়ে!
_______________________________________
রাহুলের মা : তোমার ফ্রেন্ডসদের দেখছিনা? ওরা কোথায়?

জারিফা : [ পর্দার আড়াল থেকে চেচিয়ে ] হ্যালো আন্টি! উই আর হেয়ার!

রাহুলের মা : ঐখানে কি করছো এইখানে এসে বসো!

মার্জান : নো নো আন্টি! ইটস্ ওকে, আমরা এইখানেই ঠিক আছি! [ হঠাৎ স্নেহার বাবা ও এসে ঢুকলো, স্নেহার মা ইশারায় বুঝিয়ে দিলো এরা রাহুলের বাবা-মা, সাথেসাথেই কোলাকুলি আর হ্যান্ডশেক করে রাহুলের বাবার পাশেই বসলো স্নেহার বাবা ]

রাহুলের মা : হঠাৎ করে আপনাদের না জানিয়ে এভাবে চলে আসার জন্য ক্ষমা চাচ্ছি!

স্নেহার মা : না না এতে কোনো সমস্যা নেই!

রাহুলের মা : আসলে আপনারা ও হয়তো জানেন ব্যাপারটা যে রাহুল আর স্নেহা,দুজন দুজনকে পছন্দ করে,এবং তারা চাইছে তাদের বাকি জীবনটা একসাথেই কাটিয়ে দিবে, সো্ আমিও তাদের সাথে একমত হয়ে বলতে চাচ্ছি যে ওদের ভালোবাসার রাস্তায় যেনো আমাদের মাঝ থেকে কেউ কাটা হয়ে না দাড়ায়,

– স্নেহাকে পাওয়ার পর আমার রাহুলের লাইফটাই বদলে গেছে, সে তার গম্ভীর দুনিয়া থেকে বেড়িয়ে এসেছে, আবার নতুন করে হাসতে শিখেছে, রাহুল অনেক খুশি স্নেহাকে পেয়ে, আর আমার মনে হয় না ওর জন্য স্নেহার চেয়ে বেটার লাইফ পার্টনার আর কেউ হতে পারে বলে,

– ছেলে তো আমার আছে, তবে একটা মেয়েরই কমতি ছিলো, আশা করি আপনারা চাইলে আমার সেই কমতিটাও স্নেহাকে দিয়ে পূরণ হয়ে যাবে,

রাহুলের বাবা : [ স্নেহার বাবার দিক তাকিয়ে ] কি বলেন ব্রাদার? শুনলাম আপনি নাকি রাহুলের জন্য একদমই রাজি না?

স্নেহার বাবা : [ মুচকি হেসে ] রাজি তো ছিলাম না, তবে গতকাল সন্ধ্যায় আমাকে যে ঠ্রেড দিয়ে গিয়েছিলো তখনি আমি বুঝে গিয়েছিলাম কিছু তো আছে এই ছেলের মধ্যে,

– হয়তো যেমনটা খুজছিলাম স্নেহার জন্য তেমনটা ও নিজেই খুজে নিয়েছে,

– তাই ডিশিসন নিয়েছিলাম আমার মেয়ে যেহেতু ওকেই চাইছে তাই কথাবার্তা বলে রাজি হয়েই যাবো,

– রাতে যখন বাসায় এসেছে রাহুল, ঐসময় ওর ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছিলো আমি যদি এখন কিছু বলি তাহলে ও আমাকেই রিপিট জবাব দিবে আমার চেয়েও বেশি ভালোবাসে ও স্নেহাকে, আর আমি চাইছিলাম ও এমন একজন যে আমার চেয়ে বেশি আমার মেয়েকে ভালোবাসবে,

– আর তারপর কি করেছে? স্নেহাকে বিয়ে করলে আমি ওর শ্বশুর হবো তো তাই না?

– আমার সামনেই সে কি কান্ড, হ্যা আমি জানি ও স্নেহাকে অনেক ভালোবাসে তাই বলে আমার সামনেই…[ সবাই মিটিমিটি হাসতে লাগলো ]

– আচ্ছা রেসপেক্ট নামের একটা জিনিস আছে তো তাই না? আমাকে দেখলেই এমনভাব করে যেনো আমাকে ও চিনেই না, আমি স্নেহার কিছুই হই না, না কোনো সালাম, না হাই-হ্যালো কিছুই করে না খালি বলে সাইড প্লিজ, [ হঠাৎ কিটকিটিয়ে হেসে দিলো জারিফা, সবাই পাশফিরে তাকানোর আগেই জারিফার মুখ চেপে ধরে ভেতরে ঢুকিয়ে নিলো মার্জান ]

রাহুলের বাবা : ভাই! আপনার সাথে হাই-হ্যালো কি করবে? আমি তো ওর বাবা তাই না? আমার সাথেই কখনো হাই-হ্যালো করেনি! কথা বলতে হলে আমার এসিস্ট্যান্ট মুরাদের দিক তাকিয়ে বলবে, মুরাদ ভাই বলে দাও এমন করতে হবে, বলে দাও ওমন করতে হবে, [ হেসে উঠলো স্নেহার বাবা, সাথে বাকিরাও ]

স্নেহার বাবা : রাহুলের প্রতি আমার সব ধারণাই ভুল ছিলো ওকে দেখার পর বুঝলাম ওর চেয়ে বেশি খুশি স্নেহাকে আর কেউই রাখতে পারবে না, হ্যা তবে একটু চঞ্চলতা বেশি,

রাহুলের মা : [ হেসে ] একটু না অনেক বেশি!তবে যাকে একবার ভালোবাসবে তারজন্য মনপ্রাণ উজাড় করে দিবে,

স্নেহার বাবা : হ্যা! তাতো দেখলামই গতকাল রাতে, আরো কতো কি উজাড় করতে পারে, [ স্নেহার মা ও হাসতে লাগলো ] আসলে আপনাদের দু-জনের প্রতি ও আমাদের অনেক ভুল ধারণা ছিলো, [ চুপ করে রইলো রাহুলের বাবা-মা ] কিন্তু এখন সব ক্লিয়ার হয়ে গেছে,

রাহুলের বাবা : আচ্ছা এসব বাদ দেন, এবার বলুন স্নেহা আমাদের মেয়ে হচ্ছে তো?

স্নেহার বাবা : কথাটা তো আমারই বলার দরকার! আপনাদের মতো এতোবড় পরিবারে আমার স্নেহাকে নিতে চাইবেন এটা আমাদের ভাগ্যের ব্যাপার!

রাহুলের বাবা : আরে এসব কি বলছেন! স্নেহার মতো কাউকে নিজের মেয়ে হিসেবে পাওয়া এটা আমাদের সৌভাগ্য!

স্নেহার বাবা : [ হেসে ] রাহুল! কাল বলে গেলো আজই নাকি বিয়ে করছে, আমাদের তো দাওয়াত ও দিলো না, তাই আমিও আর কিছু বললাম না ভেবে রাখলাম বিনা দাওয়াতেই চলে যাবো!

রাহুলের মা : [ হেসে ] ভেবে রাখার আর দরকার নেই, এখন তো আমরা সবাই রাজি, সো্ তাই এখন আর ওদের কথায় চলবে না, আমরা যা বলি তাই হবে,

– বিয়ে আজ হচ্ছে না, [ অবাক হয়ে তাকালো স্নেহা, জারিফা, মার্জান, শায়লা ]

রাহুলের মা : [ মুচকি হেসে ] কাল হবে বরং আরো ধুমধাম করে, [ স্নেহার ফ্রেন্ডসরা এক্সাইটেড হয়ে তালি দিয়ে উঠলো ]

রাহুলের মা : [ মুখ গোমড়া করে ] আমার একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা, কতো তৈরী সৈরী বাকি, আজকের মধ্যেই যদি বিয়ে হয় এতো কিছু আ্যরেঞ্জ করবো কিভাবে?

জারিফা : আরে আন্টি কতোদিন ধরে অপেক্ষা করছি এই বিয়ের, তারমানে আজ ও কেন্সেল, আমিতো ভেবেছি আজ রাতে সেজেগুজে রাহুল আর স্নেহার জন্য একটা ডান্স দিবো,

রাহুলের মা : আরে মন খারাপ করছো কেনো ডান্স ও হবে অবশ্যই, তাও আজ রাতেই!

জারিফা : [ কনফিউজড হয়ে ] কিক..কিভাবে?

রাহুলের মা : বিয়ের আগেরদিন কি হয়?

মার্জান : [এক্সাইটেড হয়ে ] গায়ে হলুদ!

রাহুলের মা : হ্যা! গায়ে হলুদ! আমি আসার সময় এসিস্ট্যান্টকে বলে কার্বন-হল বুক করে ফেলেছি, রাতে আপনারা আপনাদের রিলেটিভসদের সবাইকে সাথে নিয়ে চলে আসবেন, লেইট করবেন না কিন্তু বাকিদের ও এক্ষুণি বলেদেন নাহয় লেইট হয়েই যাবে,

রাহুলের বাবা : আর হ্যা! এসব অনেক তাড়াতাড়ি হচ্ছে বলে সব অ্যারেঞ্জমেন্ট কিভাবে করবেন এটা নিয়ে মোটেও চিন্তা করবেন না,স্নেহা যেহেতু এখন আমাদের তাই ওর সব কিছুর দায়িত্ব ও আমাদের!

জারিফা : [ এক্সাইটেড হয়ে ] ওয়াও! আন্টি তারমানে রাহুল আর স্নেহার বিয়ের সব প্রোগ্রাম হবে! ইয়েসস্!

[ রাহুলের মা হেসে ব্যাগ থেকে বক্স বের করে, একটি গোল্ড নেকলেস পড়িয়ে দেই স্নেহার গলায় ]

মার্জান : [ ফিসফিসিয়ে ] মাশাল্লাহ! কি না লাগছে আমাদের স্নেহাকে,

রাহুলের মা : [ স্নেহার দিক তাকিয়ে ] এদিকে এসো, [ বলেই শপিং করে আনা জিনিষপত্রগুলোর পাশে নিয়ে গিয়ে দাড় করিয়ে ] এগুলো আমিই পছন্দ করে কিনেছি, সো্ সব কিছু পড়ে তৈরী হয়ে থাকবা! আমি গাড়ী পাঠিয়ে দিবো চলে আসবা, [ স্নেহার ফ্রেন্ডসদের দিক তাকিয়ে ] আর তোমরা শুনো ওর সাজে যেনো কোনো কমতি না হয়, নাহলে রাহুলকে বলে তোমাদের গেইট ধরার টাকা কমিয়ে দিবো,

মার্জান : [ এগিয়ে এসে ] আরে না না আন্টি! এমন ভাবে সাজাবো ওকে, হলে পা রাখতেই দেখবেন সবাই পাচমিনিটের জন্য সেন্সলেস হয়ে গেছে, আর এই রঙের ড্রেসে তো ওকে পুরো টিয়াপাখি লাগবে!

শায়লা : আরে সবাইকে সেন্সলেস করতে হবে না শুধু রাহুলকে করতে পারলেই হবে,

রাহুলের মা : [ হেসে ] আচ্ছা! হ্যা তোমাদের ড্রেস গুলো ও দেখেনিও, আর সাথে তোমরা ও এমনভাবে সেজে এসো যাতে বাকি ছেলেদের তোমরাই সেন্সলেস করে দিতে পারো!

মার্জান : [ অবাক হয়ে ] আমাদের জন্য ও শপিং?

রাহুলের মা : হুমম! আরে রাহুলের শালী বলে কথা! তাই না স্নেহা? [ মুচকি হাসলো স্নেহা, বিশ্বাসই হচ্ছে না এসব তার ]

জারিফা : বাই দ্যা ওয়ে আন্টি, বাকিদের সেন্সলেস আমাদের করা লাগবে না আপনার এন্ট্রিতেই অর্ধেক ছেলে ফিদা হয়ে যাবে, একটু আগেই না কিভাবে সো্য়েগ দিয়ে চশমা খুললেন! আমি তো অলরেডিই ফিদা! ব্যাস আরেকবার সো্য়েগটা যদি দেখিয়ে দিতেন আন্টি! [ রাহুলের মা হেসে চশমায় ফু মেরে চোখে পড়ে নিলো ]

জারিফা : ওয়াহহ আন্টি ওয়াহহ!

রাহুলের মা : [ হেসে ] আচ্ছা এখন আসি! রাতে দেখা হচ্ছে!

স্নেহার মা : আরে এভাবে খালি মুখে?

রাহুলের মা : খুশিতেই পেট ভরে গেছে আর কি লাগে! আজ আসি অন্য একদিন নিশ্চয় খাবো!

[ তাকিয়ে রইলো স্নেহা, রাহুলের বাবা-মা সবাই হাসিখুশি ভাবে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে গেলো, স্নেহা দৌড়ে গেলো বারান্দায়, স্নেহার ফ্রেন্ডসরা ও পেছন পেছন এগিয়ে এলো ]

স্নেহা : [ এক্সাইটেড হয়ে ] গাইস্ আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না রাহুলের বাবা-মা একসাথেই..ইটস্ আন-বিলিভেবল!

শায়লা : আরে তোর চোখে পানি কেনো? তোর তো খুশি হওয়ার কথা!

স্নেহা : খুশি আমি অনেক অনেক খুশি! [ বলে নিচে তাকাতেই দেখে তিনটি গাড়ীর মধ্যে একটাই রাহুলের মা উঠেছে, আরেকটাই আলাদাভাবে রাহুলের বাবা, আরেকটা গাড়ী খালিই যাচ্ছে, অবাক হলো স্নেহা! এরাতো মিল হয়ে গেলো তাহলে আলাদা আলাদা যাচ্ছে কেনো, মার্জান বুঝতে পেরে স্নেহাকে টেনে ভেতরের রুমে নিয়ে চলে গেলো, হঠাৎ স্নেহার বাবা ও রুমে ঢুকলো ]

স্নেহার বাবা : [ স্নেহার চোখে পানি দেখে ] আরে স্নেহা! আবার কাদছিস কেনো? এখন তো সব ঠিক হয়েগেছে,

জারিফা : খুশিতে কান্না করছে আংকেল!

স্নেহার বাবা : [ মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ] না জেনে অনেক কষ্ট দিয়েছি তোকে, অনেক কঠোর কথা ও বলে ফেলেছি, যদি সম্ভব হয় মাফ করেদিস!

স্নেহা : আরে বাবা,তুমি কেনো মাফ চাইছো? আমি রাগ করিনি, ব্যাস একটু অভিমান করেছিলাম, কিন্তু এখন সেটাও চলে গেছে,
– [ মুচকি হেসে ] আর তুমি অন্তত অভিনয় না করলে পারতে,

স্নেহার বাবা : আরে তুই ওতো বললি না যে বাবা আমরা আজ বিয়ে করতে যাচ্ছি, তুমিও এসো দোয়া দিতে, তাই আমি ও ভাবলাম তোদের না বলে আমিও গিয়ে সারপ্রাইজ দিবো, [ জড়িয়ে ধরলো স্নেহা তার বাবাকে ]

জারিফা : আরে আংকেল, স্নেহাকে আজই সব কান্না করিয়ে নিবেন নাকি? কালকের জন্য ওতো কিছুটা বাচিয়ে রাখতে দিন!

শায়লা : আংকেল! সবাইকে ইনভাইট করা ওতো বাকি রয়েগেছে তাই না?

স্নেহার বাবা : আরে হ্যা! আমিতো ভুলেই গেলাম!

শায়লা : আপনিই যদি ভুলে যান তাহলে কিভাবে হবে আংকেল?

স্নেহার বাবা : আচ্ছা আমি আসি তোরা কথা বল! [ চলে গেলো স্নেহার বাবা ]

মার্জান : [ স্নেহাকে টেনে খাটে বসিয়ে ] আরে স্নেহা, আবার কি ভাবছিস?

স্নেহা : তোরা আগে থেকেই জানতি রাহুলের বাবা-মা আসবে তাই না? কিন্তু কিভাবে?

মার্জান : সব বলছি স্নেহা! রিলেক্স!

জারিফা : [ হেসে ] ফ্লাশবেক!

মার্জান : তুই আর রাহুল বেরুনোর পরপর আমরাও বেড়িয়ে পড়েছিলাম..

স্নেহা : কোথায়?

মার্জান : আ..আমি, শায়লা, আর ঐ যে ইডিয়ট একটা আছেনা,

শায়লা : আসিফ!

মার্জান : হ্যা! হ্যা যেটাই ওর নাম, [ জারিফা আর শায়লা হাসতে লাগলো ] তোরা আবার হাসছিস কেনো? শয়তানদের নাম মুখে না আনায় ভালো, আর আজকের এই শুভ দিনে তো মোটেও না,

শায়লা : আচ্ছা? তাহলে আজ তো ওর গাড়ী করেই ঘুরে এলি,

মার্জান : এক্সকিউজ মি! তোর জন্য! তোর জন্যই আমার ওর গাড়ীতে উঠতে হয়েছে, আমিতো চেয়েছিলাম, জারিফা আর রিদোয়ানের সাথে উঠতে কিন্তু তুই…

শায়লা : আরে লাভ আছে দেখেই তো [ আড়চোখে তাকালো মার্জান ] না না..মানে তুই,জারিফা, তোরা দুজনই একসাথে চলে গেলে আমি অতো কিছু বুঝতাম নাকি?তখন উল্টোপালটা কিছু যদি বলে ফেলতাম

মার্জান : [ একলাফেই ঝাপিয়ে ধরলো শায়লাকে ] কথা ঘুরাবিনা, বল কি লাভ আছে? নাহলে তো জানিষ আমি ক্লাস ফাইভে ক্যারাটিতে মেডেল পেয়েছি,

শায়লা : আরে ছাড়, ব্যাথা পাচ্ছি!

মার্জান : না বললে ছাড়ছি না,

শায়লা : আচ্ছা ছাড় বলছি, [ ছেড়ে দিলো মার্জান ] আস..আসলে..ও বলেছে যদি তোকে ওর গাড়ীতে বসাতে পারি, [ এক্সাইটেড হয়ে ] তাহলে রাহুলের গেইট ধরার সময় তোদের দিবে পঁচিশ পার্সেন্ট করে, আর বাকি পঞ্চাশ পার্সেন্ট ফুল আমাকে ওয়াও!

মার্জান : তুই আমার ফ্রেন্ড নাকি ওর, ঐ শয়তানটার ঘুষ খাচ্ছিস?

শায়লা : আরে তাতে প্রবলেম কি, যাই হোক ও বললো আমার ফিউচার জিজ…

মার্জান : থামলি কেনো বল? বলনা!

শায়লা : [ একলাফে খাট থেকে নেমে ] আমার ফিউচার জিজু হবে,

জারিফা : [ অবাক হয়ে ] ওয়াআওও!

মার্জান : দাড়া তুই! পালাচ্ছিস কোথায় [ বলেই দৌড়াতে লাগলো ]

স্নেহা : তোদের মারামারি হলে এবার বলবি ঘটনা কি?

মার্জান : [ দীর্ঘ একটি নিশ্বাস ছেড়ে খাটে এসে বসে ] বলছি ওয়েট! [ শায়লার দিক তাকিয়ে ] কিন্তু তোকে পড়ে দেখে নিবো,

স্নেহা : হ্যাঁ বাবা পরে সব দেখেনিস এবার তো বল,

মার্জান : আমি, শায়লা, আর ঐ শয়তানটা, আমরা গিয়েছিলাম রাহুলের মায়ের কাছে, শয়তানটাকে নিতামই না, নিতে হয়েছে কারণ আমরা তো আর রাহুলের মায়ের বাসা চিনি না তাই! তারপর ওখানে গিয়ে বসলাম, [ হেসে ] আন্টি সামনে আসার পর হাই-হ্যালো বলে বসে রইলাম, কারণ আমি ওনাকে ভেবেছি, নিশ্চয় রাহুলের বড় কোনো কাজিন টাজিন হবে,পরে ঐ শয়তানটা যখন আন্টি বললো তখনিই বুঝলাম যে নাহ এটাই রাহুলের মা, ওনার সামনে তো আমাদের নিজেকে খালাম্মাই মনে হচ্ছিলো, ভেবেছি রাগি-টাগি হবে, কিন্তু কথা বলে বুঝলাম না একদম রসমালাইয়ের মতো মিষ্টি,

স্নেহা : কি কথা বললি, যে ওনারা একসাথে আসার জন্য রাজি হয়ে গেছে,

মার্জান : আরে আমরা তো প্লান করেছি আলাদায় আসুক সমস্যা নেই, কিন্তু এইখানে আসলেই হলো, একত্রে আনার ক্রেডিট টা আরেকজনের,

স্নেহা : কার ক্রেডিট?

মার্জান : আরে বলছি বলছি, এতো অস্থির হচ্ছিস কেনো? সিরিয়ালি বলি,

স্নেহা : আচ্ছা!

মার্জান : তারপর রাহুলের মাকে বললাম, আন্টি আপনি কি রাহুলকে হারিয়ে ফেলতে চান? ওনি বলবে কখনোই না এটা আমার জানাই ছিলো,

– তারপর আমি বললাম রাহুল তো দেবদাস হয়ে গেছে আন্টি, ও কাল রাত থেকে ড্রিংক্স করছে তো করছে থামছেই না, আমাদের এটাও বলেদিয়েছে [ কাদোভাবে ] যদি ও স্নেহাকে না পায়, তাহলে সুইসাইড করবে, তখন আন্টির চোখগুলো রসগোল্লার মতোই হয়ে গেছে, ঐ চান্সে আমিও বললাম আপনি কি চান এটা ও করুক?

– আর ওনি বললো কখনোই না, কিন্তু স্নেহা আর ওর মাঝে তো সব ঠিকই চলছিলো হঠাৎ আবার কি হলো?

– তারপর আমি বললাম, না আন্টি নাহ, কিছুই ঠিক নেই, সব শেষ হয়ে যাচ্ছে, স্নেহার বাবা রাহুলকে বললো যেখানে তোমার বাবা-মা একসাথে সংসার করতে পারেনি সেইখানে তুমি আর আমার মেয়ের সাথে কি সংসার করবে, আমি তোমার সাথে স্নেহাকে বিয়ে দেবো না,

– তারপর আমি বললাম, আন্টি! রাহুল অনেক রিকোয়েষ্ট করলো কিন্তু স্নেহার বাবা মানলোই না, বরং স্নেহাকে আরো এটাও বলেদিয়েছে যদি ও রাহুলকে বিয়ে করে তাহলে চিরজীবনের জন্য ওর ঐ ঘরের দরজা বন্ধ থাকবে,

– তারপর আন্টি বললো এটা কেমন কথা ওরা দুজন-দুজনকে ভালোবাসে,

– তারপর আমি বললাম, কি করার আন্টি স্নেহা ও বাধ্য হয়ে তার বাবার কথা মেনে নিয়েছে, কিন্তু রাহুল বলছে সে স্নেহাকে ছাড়া…

স্নেহা : তারপর কি বলেছে বলনা?

মার্জান : তারপর আন্টি বলেছে, আমার রাহুল যা চাইনি তা সবকিছুই পেয়েছে, কিন্তু যেটা চাই সেটা থেকেই বঞ্চিত হয়েযায়, কিন্তু আমি বেচে থাকতে ওকে আর ওর চাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে দেবো না, আমিই বলবো স্নেহার বাবার সাথে কথা,

স্নেহা : কিন্তু রাহুলের বাবা?

মার্জান : সেটা জারিফা থেকেই শোন ও গিয়েছে,

জারিফা : আমিও আর কি তুই যেভাবে শিখিয়ে দিয়েছিস ঐভাবেই বললাম, রাহুল দেবদাস হয়ে গেছে, স্নেহাকে ছাড়া নাকি ও থাকতে পারবে না ব্লাহ ব্লাহ ব্লাহ, তারপর দাদী আর রিদোয়ান মিলেই কয়েকটা লাইন আরো বাড়িয়ে বলে দিয়েছে,

স্নেহা : [ অবাক হয়ে ] দাদী ও?

মার্জান : হ্যা! দাদী ও! দাদীকে রিদোয়ান আর ঐ শয়তান কি যেনো নাম ওর, যেটাই হবে, ওরা দুজন মিলে বুঝিয়ে দিয়েছে, তারপর দেখলাম দাদী তো আমাদের চেয়ে ডেরিং বেশী,

স্নেহা : মানে?

মার্জান : মানে রাহুলের মা যখন রাজি হয়ে আমাদের সাথে রাহুলের বাসায় আসলো, দাদী বললো একসাথে বিয়ের জন্য শপিং করে রাখা জিনিষ গুলো ও নিয়ে যেতে,

– তারপর রাহুলের মা কি বললো জানিস?

শায়লা : আরে! ও কেমনি জানবে?

মার্জান : বললো এগুলো একটাও যাবে না স্নেহার বাসায়, আমার একমাত্র ছেলে, ওর বিয়ের শপিং আমি নিজ হাতেই নিজ চয়েসে করবো,

শায়লা : কিন্তু স্নেহা! সবচেয়ে মজার ব্যাপার তো তখনি হয়েছে যখন রাহুলের বাবা আর মা সামনাসামনি হয়েছে,

স্নেহা : [ এক্সাইটেড হয়ে ] কি হয়েছে বলনা!

মার্জান : আরে আংকেল তো ফিরে তাকালো হলেও আন্টির দিক, কিন্তু আন্টি কি না এটিটিউড, আড়চোখে ও তাকালো না, চোখে সানগ্লাস পড়ে মডার্ণ ওয়াক দিয়ে গাড়িতে চলে যাচ্ছিলো,

– কিন্তু তখনিই দাদী বলে উঠলো, আরে তোমরা আলাদা আলাদা গেলে তো স্নেহার বাবা-মা এমনিতেও বুঝে যাবে,একসাথে গেলে হয়তো ওরা বুঝবে যে ওদের ধারণাটা ভুল! তখন আবার রিজেক্ট করে দিলে কি হবে আমার রাহুলটার? কিছুই তো করতে পারলা না জীবনে ওর জন্য! আজ না হয় তোমরা এইটুকুটা করো!

শায়লা : বাহ! কি অভিনয় ছিলো দাদীর! মাশাল্লাহ, মাশাল্লাহ!

মার্জান : ইয়েস্! তখনি আন্টি থেমে গিয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললো,স্নেহার বাসায় একত্রে ঢুকলেই হলো, কিন্তু গাড়ী! আমি আমারটাই উঠবো, কারো হেল্প এর প্রয়োজন নেই!

– তারপর আমি দাদীকে বললাম, দাদী এইটুকুতেই চলবে! কিন্তু তাড়াতাড়ি করুন রাহুল আসার আগে,

স্নেহা : তারপর বল, কি হলো?

মার্জান : তারপর দাদী বললো, আচ্ছা ঠিকাছে কিন্তু বিয়ের জিনিষপত্র গুলো তো নিয়ে যাও,

– তারপর আন্টি বললো, যাওয়ার পথে আমিই শপিং করে নিবো,

– তারপর আর কি আন্টি শপিং করে আসতে আসতে, এর আগে আমরা বাসায় এসে হাজির!

স্নেহা : রাত থেকে মাথায় এসব পাকাচ্ছিলি? কিন্তু তোরা আমাকে এসব কিছুই জানাসনি কেনো?

জারিফা : তোকে জানালে কি হতো! তুই এটাই বলতি,

– না,নাহ এসব করা ঠিক হবে না, যদি উল্টোপালটা কিছু হয়ে যায়, আরো ব্লাহ ব্লাহ কতো কি, হুহ!

মার্জান : হ্যা! তারপর আমরা তোর গায়েহলুদ, বিয়ে, আলাদা আলাদা প্রোগ্রাম খাওয়াটাও মিস করে দিতাম, [ হেসে ] সাথে তোর চিকনিচ্যামেলি শ্বাশুরীটাকে ও!

জারিফা : ওমা আমারতো তো ফাষ্টে দেখে বিলিভই হচ্ছিলো না, সিল্কি কুচি শাড়ী, চোখে কালো সানগ্লাস, কুড়ানো-কাড়ানো লম্বা ফিগার, সব মিলিয়ে পুরা কাট্রিনা কাইফই মনে হচ্ছিলো!

– [ উঠে দাঁড়িয়ে ] স্নেহা তুই আর তোর শ্বাশুরি মিলে না বিয়ের পর এই গানটায় ডান্স করতে পারবি ♪ মাই নেইম ইজ, শিলা~শিলা কি জাওয়ানি, আম টু সেক্সি ফর ইউ, মে তেরে হাতে না আনি ♪ [ হাসতে লাগলো সবাই ]

স্নেহা : থেংক ইউ! গাইস্ এসব আমি কখনো এক্সপেক্ট করিনি!

জারিফা : [ জড়িয়ে ধরে ] আরে স্নেহা! আমরা এসব করেছি যাতে, তোর বিয়েতে মন খারাপ না থাকে, হাসিখুশিতেই সব হয়, আর তুই কিনা কাদছিস!

স্নেহা : তোদের সাথে থেকে আমার বোন নেই এটা কখনোই ফিল হয়নি! আর আজ প্রুভ ও করেদিয়েছিস তোদের চেয়ে বেটার বোন, বেটার ফ্রেন্ড,আর কেউ হতেই পারবে না!

মার্জান : আরে আরে,দুলহান এখন থেকেই আমাদের ইমোশনাল করে দিচ্ছে,

শায়লা : বাই দ্যা! ওয়ে স্নেহা! এখন কাদলে রাতে ফেইস ফেকাসে দেখাবে, আর তোর চিকনিচ্যামেলি শ্বাশুরিই তো দেখলি কি বলে গেলো, সাজে যাতে কোনো কমতি না হয়, [ স্নেহা হেসে তিনজনকেই জড়িয়ে ধরলো ]

মার্জান : ব্যাস! স্নেহা! আমাদের শুধু এখন তোর মিষ্টার তেডি স্মাইলকেই নিয়ে ভয়, আমরা যে এসব মিথ্যে বলেছি…

স্নেহা : [ হেসে ] ওকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না, ঐ ওতো চাইছিলো যে ওর বাবা-মা একসাথে হয়ে যাক,

শায়লা : কিন্তু একসাথে হলো কই?

স্নেহা : আচ্ছা আমি আসছি! রাহুলকে কল দিয়ে [ বলেই ফোন হাতে নিয়ে রাহুলকে কল দিয় বারান্দায় চলে গেলো ]

রাহুল : [ রিসিভ করে ] কি ব্যাপার! সুইটহার্ট মিস্ করছিলে আমায়! আমি জানতাম তুমি আমার সাথে রেগে থাকতে পারবে না!

স্নেহা : মোটেও মিস্ করছিলাম না আপনাকে!

রাহুল : আচ্ছা! তুমি তো এতোদিন শান্ত,নরম মনের তুলতুলে ছিলা,আজ হঠাৎ এতো কুড়কুড়ে স্পাইসি্ হয়ে গেলা কিভাবে বলো তো?

স্নেহা : আচ্ছা! শুনেন আমি না আপনার সাথে দেখা করবো! তাও এক্ষুণি! আপনি যেখানেই হোন আমি অতো কিছু বুঝি না কোনো বাহানাও চলবে না, ব্যাস এক্ষুণিই আসবেন!

রাহুল : হোয়াট? কিক..কিন্তু মাত্রই তো তোমাদের ঐখান থেকে এলাম!

– আচ্ছা বুঝেছি! ঐ যে কিস্ দাওনি ওটা দেওয়ার জন্য? [ হেসে ] রিলেক্স স্নেহা! আজ রাতে না হয় দিয়ে দিবা!

স্নেহা : আপনার কাছে নিগেটিভ কথাগুলো ছাড়া আর কিছু মাথায় আসে না?

রাহুল : কামঅন স্নেহা! এটা রোমান্টিক মোমেন্টের রোমান্টিক কথা ছিলো,

– আর এমনিতেও নিগেটিভ এর আমি এখনো কিছু বলিনি, [ হেসে ] আচ্ছা বলবো নাকি? তুমি চাইলেই আমি বলতে পারি, আমার কোনো প্রবলেম নেই!

স্নেহা : আমি মজা করছি না!

রাহুল : আরে! তো আমি কবে বললাম আমি মজা করছি!

স্নেহা : আপনি আসবেন কি আসবেন না?

রাহুল : সিরিয়াসলি?

স্নেহা : আরে হ্যা! তো বাবা, সিরিয়াসলি!

রাহুল : আম নট ইউর বাবা! ইউ কেন কল মি সুইটহার্ট!

স্নেহা : রাখছি আমি ফোন!

রাহুল : [ হেসে ] আরে আরে! রেগে যাচ্ছো কেনো! আসছি! আমি,

– আজ আমাকে তুমি তোমার বাসায় যাওয়ার রাস্তাগুলোর মধ্যে গাড়ী দিয়ে জগিং করিয়ে নিচ্ছো!

স্নেহা : হ্যা! এগুলো যাতে আপনার বিয়ের পরেও মনে থাকে,

রাহুল : হ্যা তাতো থাকবেই! আচ্ছা শুনো আমি তো আসছিই, আমার কিসটা ও কিন্তু দিতে হবে বলেদিলাম!

স্নেহা : বাইই! [ হাসতে লাগলো রাহুল, স্নেহা ও মুচকি হেসে কেটে দিলো ফোন ]

চলবে…

Love At 1st Sight Season 3 Part – 46

0

Love At 1st Sight
~~~Season 3~~~

Part – 46

writer-Jubaida Sobti

মার্জান, শায়লা, জারিফা তিনজনই বেড়িয়ে পড়লো..
_________ এইদিকে,

রাহুল ড্রাইভ করছে, স্নেহা কোলের উপর লেপটপ রেখে কাপড় এর ডিজাইন দেখছে, গালে হাত দিয়ে হুটহাট একটার পর একটা খালি চেঞ্জ করতেই চলছে, মাথায় কনফিউজড এ ভরপুর হয়ে যাচ্ছে স্নেহার,ঠাস করেই লেপটপটা বন্ধ করে রেখেদিলো!

রাহুল : আরে কি হলো?

স্নেহা : দেখেন রাহুল! এসব আমার দ্বারা হবে না, আপনিই যে কোনো একটা চয়েস করে নিয়ে নিন ব্যাস!

রাহুল : কনফিউজড হওয়ার কি আছে? তুমি যেটাই পড়বে সেটাতেই তোমাকে এঞ্জেল লাগবে, [ চুপ করে জানালার পাশ ফিরে রইলো স্নেহা ]

রাহুল : কি হলো স্নেহা? তোমার মন খারাপ মনে হচ্ছে! একটু আগেই তো মেসেজে অনেক হুমকিটুমকি দিলা, আমি তো ভয়ে আমার ইম্পর্টেন্ট কাজটাজ সব ফেলে তাড়াহুড়ো করে চলে এলাম,

স্নেহা : মেসেজ গুলো আমি দিইনি!

রাহুল : [ অবাক হয়ে ] তাহলে?

স্নেহা : ওরা তিনজন মিলে দিয়েছে!

রাহুল : আচ্ছা ইউ মিন ঐ নটি কোম্পানির দল?

স্নেহা : হুমম!

রাহুল : হোয়াটট? হোয়াট, হোয়াট? আমাকে বোকা বানিয়েছে? [ হঠাৎ স্নেহার হাসি চলে এলো রাহুলের কথা শুনে ]

– হাসো তুমি ওরা আমার ইমোশন নিয়ে খেলেছে, আমি ভাবলাম তুমি নিজেই আমার সাথে টাইম স্পেন্ড করতে চাচ্ছিলে, হয়তো আমাকে খুব মিস্ করছিলে তাই আদর করে বললে সুইটহার্ট তুমি কোথায়? এক্ষুনি আসো..[ কাদো ভাবে ] তার মানে সব বানানো ছিলো! ইডিয়ট কোথাকার ওদের তো আমি আজ রাতেই দেখে নিবো!

স্নেহা : [ হেসে ] নিজেকে অতিচালাক মনে করলে এমনই হয়! [ রাহুল ও আর কিছু বললো না, শার্ট থেকে সানগ্লাসটা ছুটিয়ে নিয়ে চোখে পড়ে নিলো, বুঝতে পারছে পাশ থেকে স্নেহা তাকিয়ে আছে হাসি পাচ্ছিলো রাহুলের, তাও হাসি চেপে রেখে শিস বাজিয়ে গান করতে করতে গাড়ী চালাতে লাগলো, হঠাৎ খেয়াল করলো কেউ টান মেরে সানগ্লাসটা খুলে নিয়ে নিলো, পাশ ফিরে তাকাতেই দেখে সানগ্লাসটা স্নেহাই পড়ে নিচ্ছে, মনে মনে হারিয়ে যাচ্ছে রাহুল, স্নেহার সানগ্লাস পড়া রকিং স্টাইল দেখে, কিনা লাগছে উফফ! ইচ্ছে করছে গালটা টেনে একটা টাইট করে কিস দিবে, কিন্তু সবই ভাগ্যের খেলা এই সময় স্নেহা তার থেকে কমপক্ষে একহাত দূরে, তারউপর ড্রাইভিং ও করছে ]

হঠাৎ,

স্নেহা : [ চেচিয়ে ] রাহুলল! সামনে থাকান! [ রাহুল মাথাঘুরিয়ে সামনে তাকাতেই সাথেসাথে গাড়ী জোড়ে একটা ব্রেক নিয়ে থেমে গেলো, ভয়ের সাথে দীর্ঘ একটি শ্বাস ও বেড়িয়ে এলো দু-জনের, আর একটুর জন্য এক্সিডেন্ট হতে হতে বেচে গেলো, স্নেহার দিক আর তাকালো না রাহুল, কারণ সে জানে এখন স্নেহা তাকে বড় একটা কম্পোজিশন শুনিয়ে দিবে, তাই ধীরেধীরে গাড়ীটা সাইড করে একপাশ করে দাড় করালো, এর আগেও অনেকবার এক্সিডেন্ট এর মুখোমুখি হয়েছে রাহুল, কিন্তু মনে ভয় ছিলো না বরং আরও ফ্রিডম কাজ করতো, কিন্তু আজ হঠাৎ কেনো যেনো বুকটাও কাপছে, কারণ তার সাথে আজ স্নেহা ও আছে, যদি কিছু হয়ে যেতো? ]

স্নেহা : আজিব! ধ্যান কোথায় ছিলো আপনার?

রাহুল : তোমার কাছে!

স্নেহা : [ মাথা নাড়িয়ে, সানগ্লাসটা খুলে রাহুলের কাছে ছুড়ে মেরে ] ঠিকাছে! [ বলেই হুটহাট গাড়ীর দরজা খুলে পেছনের সি্টে গিয়ে বসে পড়লো, অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রাহুল ]

রাহুল : আরে স্নেহা রাগ করছো কেনো?

স্নেহা : এখন থেকে আমি পেছনেই বসবো, তারপর আপনার ধ্যান শুধু ড্রাইভিং এ ফোকাস্ হবে,

রাহুল : [ গাড়ী থেকে নেমে, পেছনের সিটে এগিয়ে এসে বসে ] ওকে তো বাবা সরি আর হবে না,

– আচ্ছা নাও কান ধরলাম! [ চুপ করে রইলো স্নেহা ]

রাহুল : তুমি সানগ্লাস পড়েছিলে, কিনা লাগছিলো তোমায়,আমিতো পুরো… [ আড়চোখে তাকালো স্নেহা, চুপ হয়ে গেলো রাহুল, ধীরেধীরে স্নেহার হাতের উপর হাত রাখতেই হুট করে হাত সরিয়ে নিলো স্নেহা ]

রাহুল : [ ইমোশনাল হয়ে ] আ..আজকে আমার বিয়ে, কিছুটাতো রহোম করো স্নেহা! আর কখনো হবে না, ফোকাস্ অলোয়েজ ড্রাইভিং এ থাকবে, প্রমিস! [ জানালার পাশফিরে গেলো স্নেহা, হঠাৎ শুরশুরি লেগে উঠলো, কানের ধারে চুল সরিয়ে ফিসফিস করে কেউ বলতে লাগলো, আই লাভ ইউ! চোখ বন্ধ করে জোড়ে একটি শ্বাস ফেলে ভাবতে লাগলো স্নেহা কেনো যেনো রাহুলের মুখ থেকে আই লাভ ইউ! কথাটি শুনতেই নিজেকে স্বর্গে আবিস্কার করছে এমনই মনে হয়, হালকা করে কানে একটি কিস্ করলো রাহুল, শিউরে উঠে মাথা সরিয়ে ধীরেধীরে রাহুলের পাশ ফিরে তাকালো স্নেহা, তেডি স্মাইল দিয়ে তাকিয়ে আছে রাহুল, হঠাৎ লজ্জা লেগে উঠলো স্নেহার, ব্লাশিং হয়ে সেও হেসে উঠলো ]

রাহুল : [ স্নেহার গাল টেনে দিয়ে ] কামঅন স্নেহা! স্ট্রোভেরি ফ্লেভার হয়ে যাচ্ছো [ বলেই স্নেহার গালে কিস্ করতেই যাচ্ছিলো, হুট করেই স্নেহা পিছিয়ে গিয়ে,হেসে রাহুলের গালটাও টেনে দিলো ]

রাহুল : আও! স্নেহা! আগেই বলেছি আমি বাচ্চা না!

স্নেহা : তাহলে কি আমি বাচ্চা আমাকেও টানলেন কেনো?

রাহুল : তুমি বাচ্চা না তো কি? কথা নেই বার্তা নেই বাচ্চাদের মতো গালফুলিয়ে অপ করে পেছনে এসে বসে গেছো!

স্নেহা : [ আড়চোখে তাকিয়ে ] কথা নেই বার্তা নেই তাই না? একটু আগে এতোবড় ভূলটা কে করতে ছিলো শুনি? [ বলেই রাহুলের নাকটা টেনে চেপে ধরে রাখলো ]

রাহুল : [ হেসে নাক থেকে স্নেহার হাত ছুটিয়ে দিয়ে ] আচ্ছা ওকে সরি,এটা আর বারবার মনে করিয়ে দিতে হবে না! [ বলেই স্নেহার মাথা টেনে কপালে একটি চুমু খেলো, মুচকি হেসে রাহুলের হাত জড়িয়ে কাধে মাথা রাখলো স্নেহা, এভাবেই গল্প করতে করতে এক ঘন্টা কাটিয়ে দিলো তারা ]

রাহুল : এখন তো অন্তত সামনে এসে বসবা! হুম?[ স্নেহা মাথা নাড়িয়ে একবার না করে দিলো, রাহুলের মুখটা গোমড়া করে ফেলায় আবার মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ করে ফেললো স্নেহা, দু-জনেই একসাথে হেসে উঠলো, বরাবরের মতোই স্নেহা সামনে এসে বসে পড়লো আর রাহুল ড্রাইভিং সি্টে বসে ড্রাইভ করছে, কিছুক্ষণ পরই রাহুল স্নেহার দিক তাকিয়ে দেখলো, স্নেহা অনেক চিন্তিত ভাবে বসে আছে ]

রাহুল : স্নেহা!

স্নেহা : হুম?

রাহুল : কি চিন্তা করছো?

স্নেহা : কিছুই না! [ রাহুল বুঝতে পারলো স্নেহা মিথ্যে বলছে, তাই গাড়ী তাড়াতাড়ি মোড় ঘুড়িয়ে নিলো, গাড়ী এসে থামলো সেই জায়গায় যেখানে তারা রাতের শীতে দাঁড়িয়ে আইস্ক্রীম খেয়েছিলো ]

রাহুল : চলো আইস্ক্রীম খাবা!

স্নেহা : [ কনফিউজড হয়ে ] আমি কি বলেছি আইসক্রীম খাবো?

রাহুল : এমনিতে তো আইস্ক্রীমের গাড়ীটা দেখলেই লাফাতে থাকো আজ এতো কনফিউজড হচ্ছো কেনো? চলো নামো! [ রাহুলের কথা মতো স্নেহা ও নেমে দাড়ালো,আগের মতোই স্নেহার পছন্দের ম্যাংগো ফ্লেভার এর কুলফিটা নিলো, তাকিয়ে আছে রাহুল স্নেহার দিক, আইস্ক্রীম গলে পড়ে যাচ্ছে আর স্নেহার খবরই নেই! অন্যমনস্ক হয়ে আছে স্নেহা ]

রাহুল : [ স্নেহাকে নাড়িয়ে দিয়ে ] স্নেহা! কোথায় হারিয়ে গেলা?

স্নেহা : [ চমকে উঠে ] হ্যাঁ?.. নাহ কিছুনা [ বলেই অল্প একটু আইস্ক্রীম খেলো ]

রাহুল : স্নেহা তুমি ঠিকাছো তো? আজ তো তোমার সবচেয়ে বেশী খুশি হওয়ার কথা,আমি তো ভাবলাম খুশিতে তুমি চারপাচটা আইস্ক্রীম একসাথেই খেয়ে নিবা, কিন্তু তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি অনেক চিন্তিত!

স্নেহা : [ আইস্ক্রীমটা গ্লাসে ভরে রেখে ] আমার ইচ্ছে করছে না আইস্ক্রীম খেতে [ বলেই হুরহুর করে গাড়ীর পেছনের সিটে গিয়ে বসে পড়লো, রাহুল অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, কি হলো স্নেহার এমন বিহেভ করছে কেনো,আইস্ক্রীমের টাকা পে করে স্নেহার দিক এসে দরজা খুলতে গেলো, কিন্তু দরজা খুলছে না,বুঝতে পারলো রাহুল স্নেহা ভেতর থেকে লক করে রেখেছে, কিন্তু হঠাৎ এমন করার মানে কি? ]

রাহুল : স্নেহা! হোয়াট হ্যাপেন টেল মি! [ চুপ করেই বসে রইলো স্নেহা ]

রাহুল : [ গ্লাসে টোকা মেরে ] লক খুলো! [ কোনো জবাবই দিচ্ছে না স্নেহা ]

রাহুল : কি সমস্যা এমন কেনো করছো? আমি কিছু ভুল করেছি? [ মাথা নাড়ালো স্নেহা ]
– তাহলে?

স্নেহা : [ আরো একটু গ্লাস নামিয়ে ] রাহুল! আমি বাসায় যাবো!

রাহুল : লক খুলো!

স্নেহা : দেখেন আমার মন এমনিতেই খারাপ,আপনি গিয়ে গাড়ী চালান,আমাকে একটু একা থাকতে দিন,

রাহুল : আচ্ছা! এককাজ করি আমি রোডের মাঝে গিয়েই দাঁড়ায়,গাড়ী সবাই আমার উপরই চালিয়ে দিক! [ বলেই হেটে চলে যাচ্ছে ]

স্নেহা : [ দরজা খুলে চেচিয়ে ] আরে আরে! কই যাচ্ছেন! [ পেছন ফিরে তাকালো রাহুল ]

স্নেহা : [ মুখ গোমড়া করে ] খু..খুলেছি!

রাহুল : [ এগিয়ে এসে ] আরেকটু ভেতরে ঢুকো! [ পিছিয়ে গেলো স্নেহা,রাহুল ও স্নেহার পাশে বসে দরজা লাগিয়ে দিলো ]

– এইবার বলো মন কেনো খারাপ? আর যদি চুপ করে থাকো তাহলে দেখবা কি করি!

স্নেহা : ব..বললে আপনার মন ও খারাপ হয়ে যাবে তাই আপনি না জানাটাই ব্যাটার!

রাহুল : লিসেন্ট আমি না জানলে তোমার মন ভালো করবো কিভাবে?

স্নেহা : বললাম তো! তখন আপনার নিজের মনই খারাপ হয়ে যাবে!

রাহুল : আচ্ছা সমস্যা নেই আমার মন খারাপ হোক! তোমার মন ভালো করতে পারলেই হলো!

স্নেহা : বলবো?

রাহুল : হ্যা বলো!

স্নেহা : রাগবেন না কিন্তু বলেদিলাম!

রাহুল : ওকেই ওকে, রাগবো না!

স্নেহা : ব..বলছিলাম যে বিয়েতে যদি আপনার বা..বাবাকেও.. [ স্নেহার মুখে হাত দিয়ে থামিয়ে দিলো রাহুল, স্নেহা আবারো কিছু বলতে যাবে তখনি ]

রাহুল : শিসসস! আজকে আমি তোমাকে বিয়ে করছি, আমি আজ অনেক অনেক খুশি! সো্ আজ এসব কথা বলে মুডটা নষ্ট করতে চাই না! হ্যাপি থাকো, যে চিন্তাটা করতে ছিলা ওটা মাথা থেকে ফেলে দাও!

স্নেহা : [ নাকফুলিয়ে রাহুল হাতটা ঝাড়ি মেরে সরিয়ে ] আপনি আসলেই একটা..

রাহুল : হ্যা! আমি অনেক কিছু! তাও হ্যাপি থাকো! কিন্তু যেটা বলতে ছিলা ওটা আর মাথায়ও আনবা না! চলো সামনে এসে বসো

স্নেহা : কখনোই না!

রাহুল : [ মাথা নাড়িয়ে ] ওকে! [ বলেই স্নেহার হাত টেনে ধরে বের করে আনলো ]

স্নেহা : দেখেন আপনি জবরদস্তি করছেন!

রাহুল : জবরদস্তির এখনো কি দেখেছো! হেটে গিয়ে বসবা নাকি কোলে তুলে বসাবো? [ মুখ ভেংগিয়ে হনহন করে সামনে গিয়ে বসে ধুপ করেই দরজা লাগিয়ে দিলো স্নেহা, হাসতে লাগলো রাহুল স্নেহার কান্ডে, আর না ভেবে গাড়ীতে গিয়ে উঠে বসলো, স্নেহা জানালার পাশ ফিরে রইলো ]

রাহুল : মন এখন খারাপ থাকলে সমস্যা নেই! রাতে ঠিক করে দিবো! [ with tedi smile ] [ স্নেহা বিরবির করে কি কি যেনো বলে নাক ফুলিয়ে রাখলো ]

রাহুল : ওহ গড স্নেহা! আর কতো লাল হবা রেড স্পাইসি্ ডিশ হয়ে যাচ্ছো! [ চুপ করেই রইলো স্নেহা ]

রাহুল : মনে মনে ভাবছো বিয়েই করবে না আমাকে তাই তো! [ হেসে ] কিন্তু এখন আর আমি তোমার পার্মিশন এর অপেক্ষায় থাকছি না, বাচ্চা মেয়ে থেকে আবার কিসের পার্মিশন? [ স্নেহা আড়চোখে একবার তাকিয়ে আবারো জানালার পাশ ফিরে গেলো ]

রাহুল : কাধে তুলে উঠিয়ে নিয়ে আসবো, [ অভিমান করে চুপচাপই রয়ে গেলো স্নেহা,রাহুল বকবক করে স্নেহাকে আরো রাগ তুলে দিতে দিতে এসে পৌছালো স্নেহার বাসার সামনে, তাড়াহুড়ো করে দরজা খুলে নামতে গেলো স্নেহা, কিন্তু দরজা খোলা যাচ্ছিলো না পাশ ফিরে রাহুলের দিক তাকাতেই দেখে তেডি স্মাইল দিয়ে তাকিয়ে আছে ]

রাহুল : রিলেক্স স্নেহা! এতো তাড়া কিসের?একটা কিস্ দাও লক খুলে যাবে [ জোড়ে একটি শ্বাস ফেললো স্নেহা ] আচ্ছা শুনো! সন্ধায় তোমার জন্য কাপড় পাঠিয়ে দিবো, তৈরী থাকবা, [ মুখ ভেংগিয়ে অন্যপাশ ফিরে গেলো স্নেহা ]

রাহুল : [ হেসে ] আচ্ছা ঠিকাছে না পড়লে সমস্যা নেই! আমি এসে নিজ হাতেই পড়িয়ে দিবো! [ স্নেহা তাকাতেই রাহুল চোখ টিপ মারলো, হঠাৎ খেয়াল করলো স্নেহা রাহুলের দিক এগুচ্ছে, একদম কাছে এগিয়ে আসতেই অবাক হয়ে স্নেহার চুলের স্মেল নিতে লাগলো রাহুল, হাতটা এগিয়ে সুইচড চেপে ডোর লক ওপেন করলো স্নেহা ]

রাহুল : অও! আমাকে বললেই পারতে! [ with tedi smile ]
নাকফুলিয়ে হনহন করে নেমে চলে যাচ্ছে স্নেহা,

রাহুল : [ হেসে চিৎকার করে ] আরে স্নেহা! একটা বাই তো বলো! [ উপরে উঠে গেলো স্নেহা, বাসায় গিয়ে বেল বাজাতেই দেখে জারিফা,মার্জান,শায়লা তিনজনই একত্রে মিলে তাড়াহুড়া করে দরজা খুললো ]

জারিফা : তুই?

মার্জান : দু-ঘন্টাতেই শেষ! আরেকটু লেইট করে আসলেই পারতি! [ স্নেহা কিছু বলতে যাবে তখনিই জারিফা স্নেহাকে সরিয়ে আশেপাশে উকি দিয়ে দিয়ে দেখতে লাগলো ]

স্নেহা : আরে কাকে খুজছিস?

জারিফা : [ কনফিউজড হয়ে ] আব..রার..রাহুল রাহুলকে! ও আসেনি!

স্নেহা : নাহ! কিক..কিন্তু তোদের ভাবসাব দেখে তো মনে হচ্ছে তোরা আর কারো অপেক্ষা করছিলি!

শায়লা : মোটেও না, আ..আমরা তো রাহুলের অপেক্ষা করছিলাম! রাহুলের!

মার্জান : আরে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি? আয় ভেতরে আয়! [ বলেই স্নেহাকে টেনে নিয়ে রুমে চলে যায় ]

স্নেহা : এ..এক মিনিট, তোরা তখন আমার মোবাইল থেকে রাহুলকে ঐ মেসেজ গুলো কেনো দিলি?

জারিফা : আরে স্নেহা! আমরা চাচ্ছিলাম যে তোরা কিছুক্ষণ একসাথে টাইম স্পেন্ড কর তাইই!

স্নেহা : [ তিনজনের দিক কিচ্ছুক্ষণ ঘুরঘুর করে তাকিয়ে ] মাথায় কি চলছে তোদের বলতো?

মার্জান : আব..দে..দেখ স্নেহা! [ আলমারি খুলে ] এই কাপড়টা আজ পড়বো ভাবছি! দারুণ না? হুমম?

জারিফা : আর আমি এটা! দেখ দেখ!

শায়লা : আরে এই জুয়েলারি গুলি দেখ! উফফ আমার তো ওয়েটই হচ্ছে না কখন রাত হবে!

স্নেহা : বাহানা বানিয়ে বারবার কথা ঘুরিয়ে দিচ্ছিস! আর এসব তো আমাকে গতকাল রাতেও দেখিয়েছিস!

জারিফা : [ হেসে ] আরে তখন তো রাত ছিলো তাই না? তাই এখন আবার দিনে দেখাচ্ছি! কেমন দেখতে বল? হুম হুম? [ হঠাৎ বেল বেজে উঠলো দরজায়, স্নেহা খেয়াল করলো বেল এর সাথে সাথে এই তিনজনের চোখ দু-টো ও বড় বড় হয়ে গেছে, দৌড়ে দরজা খুলতে যাচ্ছিলো তিনজন ঐ সময় স্নেহা রুমের দরজায় হাত রেখে পথ আটকিয়ে ধরলো ]

মার্জান : আরে স্নেহা সর বেল বাজছে!

স্নেহা : তাতো আমিও শুনতে পাচ্ছি! কিন্তু সকাল থেকে দেখছি, দরজা খুলতে তোদের অনেক তাড়া?

মার্জান : আরে সকালে তো রাহুলকে মেসেজ করেছিলাম তাই ওর জন্য তাড়াহুড়ো করে দরজা খুলতে যেতেছিলাম!

স্নেহা : [ মাথা নাড়িয়ে ] হুমম! তো এখন কিসের তাড়া?

জারিফা : আরে স্নেহা সর! [ বলেই স্নেহাকে সরিয়ে দরজা খুলতে যাবে তখনিই স্নেহার মা চেচিয়ে চেচিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো, বাকিরা উকি দিয়ে তাকাতেই স্নেহা ও উকি দিয়ে দেখলো কে, সাথে সাথেই স্নেহা থমকে গেলো, চোখ দু-টো রসগোল্লার মতো বড় বড় হয়ে গেলো স্নেহার, নড়াচড়া বন্ধ একদম স্টেচিউ! ]

মার্জান : [ স্নেহার কাধে হাত রেখে এক্সাইটেড হয়ে ] আরে এসে গেছে! ওয়াও!

জারিফা : [ স্নেহাকে ধাক্ষা দিয়ে ফিসফিসিয়ে ] আরে স্নেহা দাঁড়িয়ে আছিস কেনো যা না!

স্নেহা : আমি সপ্ন দেখছি? নাকি সত্যি সত্যিই দেখছি ?

চলবে….

Love At 1st Sight Season 3 Part – 45

0

Love At 1st Sight
~~~Season 3~~~

Part – 45

writer-Jubaida Sobti

স্নেহা : [ উঠে বারান্দায় গিয়ে ] হ্যালো!

রাহুল : আহহ! মন যেনো শান্তি খুজে পেলো?

স্নেহা : তা এতোক্ষণ অশান্তিতে ছিলেন বুঝি?

রাহুল : তা তো বটে, কারণ! তোমার পাশে থাকলে শান্তি লাগে, তোমাকে বুকে জড়িয়ে রাখলে শান্তি লাগে, তোমার কন্ঠ শুনতে শান্তি লাগে,সো্ তাই এখন শান্তি লাগছে! [ মুচকি হাসলো স্নেহা ]

– আচ্ছা! আমার ফাদার-ইন-লো কোথায়? আছে নাকি চলে গেছে? [ বলেই হাসতে লাগলো ]

স্নেহা : আম শিয়র! জারিফা,মার্জান আর আপনার তিনজনেরই মাথার একটা করে তার ছিড়া!

রাহুল : [ হেসে ] আচ্ছা? তা কেনো?

স্নেহা : আপনি তো করে গেলেন বাবার সামনে কান্ড সব, আর আপনি যাওয়ার পর শুরু করলো ওরা দু-জন!

রাহুল : কি করলো ওরা? [ স্নেহা হেসে হেসে সব বলতে লাগলো আর রাহুল ঐ দিকে হাসতে হাসতে শেষ হয়ে যাচ্ছে ]

স্নেহা : এমনভাবে বানিয়ে সাজিয়ে বাবার মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে, বাবা কোনো জবাবই দিলো না, চুপচাপ চিন্তা করতে করতে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে,

রাহুল : [ হেসে ] ইহাদের বলে আমার কিউট শালী, বাই দ্যা ওয়ে, ওরা কিন্তু সব সত্যিটাই বললো এইখানে বানানো কিছুই তো দেখলাম না,

স্নেহা : আচ্ছা? তো শুনি আপনার সানগ্লাস খোলা দেখে ক-জন মেয়ে বেহুশ হয়েছে?

রাহুল : [ হেসে ] কামঅন স্নেহা এসব কাউন্ট করে রাখার টাইম আছে নাকি?

স্নেহা : আচ্ছা! তাহলে আমি হলাম না কেনো বেহুশ?

রাহুল : হতেই তো ছিলা প্রথমদিনই স্টেশনে আমার প্রেমে পড়ে বেহুঁশ হয়ে যেতে ছিলা, বাট আমি ধরে ফেলেছিলাম,

– [ হেসে ] এনিওয়ে বলেও লাভ নেই তুমি এমনিতেও শিকার করবে না,

স্নেহা : নেভার! আমি কখনোই ঐ দিন বেহুশ হতে ছিলাম না! ওটাতো..

রাহুল : হ্যা! হাফ বেহুঁশ হয়েছিলা,কজ আমি সানগ্লাস খুলিনি পড়েইছিলাম! তাই..

স্নেহা : এক্সকিউজ মি! আপনি নিজের মুখে বলেছেন ঐদিন আপনি আমাকে ইচ্ছে করেই ধাক্ষা দিয়ে ফেলেছেন!

রাহুল : কি করার বলো ঐদিন তো আমি নিজেই বেহুঁশ গিয়েছিলাম, তোমাকে দেখে মনের মধ্যে গিটার বাজা শুরু করে দিয়েছিলো,

– হালকা বাতাসে উড়ছিলো তোমার কালো কালো চুল, লাল লাল গাল, গায়ে পেছানো কালো শাল, হলুদ রঙের জামা পড়ে যখন দৌড়ে যাচ্ছিলে পুরো মনে হচ্ছিলো বাদামে ভরা রসালো ভ্যানিলা আইস্ক্রীম,ধরার আগেই যেনো গলে পড়ে যাবে,

– সো্ আমি জাষ্ট সামনে পা এগিয়ে দিলাম তুমি হোচোট খেলে আমি ধরে ফেললাম, হিহি এত্তো সহজে গলতে দেই কিভাবে এই ভ্যানিলা আইস্ক্রীমকে বলো?[ স্নেহা একটু লজ্জা পেয়ে হেসে উঠে ]

রাহুল : আচ্ছা স্নেহা! একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিলো!

স্নেহা : হুমম! বলেন?

রাহুল : সামির তোমার বাবাকে কতো টাকা দিয়েছিলো?

স্নেহা : হ..হঠাৎ এটা জিজ্ঞেস করছেন?

রাহুল : স্নেহা! তুমি এখনো আমাকে ফাইনেন্সিয়াল ব্যাপারগুলো শেয়ার করতে আনইজি ফিল করো!

– কেনো? [ চুপ করে রইলো স্নেহা ]

রাহুল : লিসেন্ট! আমি চাইনা ঐ সামিরের ছায়া ও আর তোমার ফ্যামিলির উপর পরুক! সো্ বলো কতো টাকা দিয়েছিলো ?

স্নেহা : থা..থার্টি লাকস্!

রাহুল : ওকে![ স্নেহা কিছু বলতে যাবে হঠাৎ তখনি ]

মার্জান : [ ফোন কেড়ে নিয়ে ] আজ এতো কথা বলে ফেললে কাল কি বলবেন শুনি? কিছু কথা তো অন্তত জমা রাখেন জিজু!

রাহুল : আরে লিসেন্ট!

মার্জান : কিসের লিসেন্ট! কাল থেকে তো আপনার বকবক শুনতে শুনতে বেচারির কান জ্বালাপালা হয়ে যাবে, সো্ আজ আপনার ছুট্টি বাইইই! গুড নাইটটট! [ বলেই কেটে দিলো ফোন, রাহুলের ও কি আর করার হাসতে লাগলো সে, আর স্নেহাকে নিয়ে তার ফ্রেন্ডসরা আড্ডা দিতে দিতে রাত ঘনিয়ে ফেললো ]

পরদিন সকালে,

আজ তাড়াতাড়িই ঘুম ভাংলো রাহুলের,উঠেই দেখে লিভিং সোফায় ব্যাঙের মতো চিৎ হয়ে শুয়ে আছে আসিফ, আর দরজার দিক তাকাতেই দূর থেকে দেখা যাচ্ছে ড্রইং রুমের সোফায় চিৎ হয়ে শুয়ে আছে রিদোয়ান,

মনে মনে হাসতে লাগলো রাহুল,দুনোটা রাতে ড্রিংক্স খেতে খেতে ওতোটুকুতেই ঘুমিয়ে পড়েছে, আলসেমি কেটে উঠে পাশ থেকে পানির জাগটা নিয়ে আসিফের দিক এগিয়ে গেলো, বেখবর হয়েই ঘুমুচ্ছে একদম, রাহুল ও আর দেরী কিসের ঝরঝর করে ঢেলে দিলো পানি সব আসিফের মুখের উপর,

মুখে হাত রেখে চমকে উঠে বসলো আসিফ, মাথা নেড়ে পানি ঝেড়ে উপরের দিক তাকাতেই দেখে রাহুল হেসে হেসে দাঁড়িয়ে আছে, আসিফ ও আর এক সেকেন্ড লেইট করলো না পাশ থেকে ছোট একটি কশুন নিয়ে ছুড়ে মারলো রাহুলের গায়ে, রাহুল কেচ নিয়ে আবার রিটার্ন আসিফের দিক ছুড়ে মেরে হাসতে হাসতে ওয়াসরুমে চলে গেলো,ফ্রেশ হয়ে কাপড় চোপড় চেঞ্জ করে রুম থেকে বেড়িয়ে দেখে আসিফ দাঁড়িয়ে আছে ড্রইং রুমের বারান্দায়,আর রিদোয়ান এখনো ঘুমুচ্ছে চিৎ হয়ে,

রাহুল : [ রিদোয়ানের পাশে গিয়ে বসে কের্চ পড়তে পড়তে ] হেইই রিদ! উঠনা, আমাদের ওর আগে পৌছাতে হবে তো তাই না!

রিদোয়ান : [ ঘুমন্ত অবস্থায় ] ইয়াহ বেবী! আ লাভ ইউ টু

রাহুল : [ অবাক হয়ে ] হোয়াটট?

আসিফ : [ হেসে হেসে এগিয়ে এসে ] এই তো দিনের মধ্যে সপ্ন দেখছে এখনো!

রাহুল : [ রিদোয়ানকে নাড়িয়ে দিয়ে ] ও হ্যালো! আম নট জারিফা! আই এম রাহুল!

রিদোয়ান : রাহুল! আজকে, হ্যা! আজকেই ওর বিয়ে!

রাহুল : [ কিটকিটিয়ে হেসে ] ওহ মাই গড! এই তো এখনো ড্রাংকে!

আসিফ : হ্যা! তো পানি গুলো ওকেই মারা উচিৎ ছিলো না? ইডিয়ট [ বলেই ডাইনিং টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি ঢেলে নিয়ে ছুড়ে মারলো রিদোয়ানের মুখের উপর ]

রিদোয়ান : [ চমকে গিয়ে মাথা ঝেড়ে উঠে বসে ] হোয়াট দ্যা হেল?

আসিফ : [ চোখ টিপ মেরে ] গুড মর্নিং!

রিদোয়ান : উইন্টারে ঠান্ডা পানি মেরে ঘুম থেকে উঠিয়ে আবার বলিস গুড মর্নিং, [ চেচিয়ে ] এটাতো বেড মর্নিং এর চেয়ে ও খারাপ!

আসিফ : এক্সুলি তোর মাথায় চেপে থাকা ভুতটা ঝাড়ছিলাম!

রিদোয়ান : ভুত আমাকে না! তোদের চেপেছে, আর এসব কি পড়ে ঘুরছিস? জামা কাপড় না পড়ে, হাফ-প্যান পড়ে হট সেজে বসে আছিস!

আসিফ : আচ্ছা? আর তুই জামাকাপড় পড়ে অনেক কুল সেজে বসে আছিস তাই না! [ বলতেই রিদোয়ান নিজের দিক তাকিয়ে দেখে অলরেডি সে নিজেও থ্রি-কুয়াটার প্যান্ট পড়ে খালি গায়ে বসে আছে ]

রিদোয়ান : [ রাহুলের দিক তাকিয়ে ] ওওও আবার আপনি কোথায় যাচ্ছেন এভাবে ক্রেজুয়েল সেজেগুজে, সেক্সি সেক্সি পার্ফিউম লাগিয়ে? বিয়ে তো রাতে তাই না?

রাহুল : তো আমি কি ক্রেজুয়েল পড়ে বিয়ে করতে যাবো? তোর দিমাগ গেছে আজ! [ দাঁড়িয়ে গিয়ে ] আমি যাচ্ছি দাদীর কাছে, তোরা ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করতে আয়,

রিদোয়ান : ওকে, দাদীকে আমার পক্ষ থেকে গুড মর্নিং বলেদিস! [ বলেই আবার শুয়ে যায় ]

রাহুল : ওকে [ বলেই এগিয়ে গিয়ে টেবিল থেকে জাগটা হাতে নিতেই, রিদোয়ান একলাফে উঠে দৌড় মারে ওয়াসরুমে,রাহুল আর আসিফ হাসতে থাকে ]

রাহুল দাদীর কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্যে গেষ্ট হাউজ থেকে বেড়িয়ে বাড়ীতে ঢুকলো, ড্রইং রুমে আসতেই দেখে দাদী বসে আছে ডাইনিং টেবিলে নাশতা নিয়ে,

রাহুল : গুড মর্নিং দাদী! [ বলেই চেয়ার টেনে দাদীর পাশে গিয়ে বসলো ]

দাদী : আরে! তোর সারভেন্ট বললো আসিফ আর রিদোয়ান ও এসেছে ওরা কই?

রাহুল : আসছে! ফ্রেশ হচ্ছে!

দাদী : আচ্ছা! এই নে, তাহলে তুই শুরু কর! [ বলেই বাটার লাগিয়ে একটি ব্রেড এগিয়ে দিলো রাহুলের প্লেটে ]

রাহুল : দাদী! আমার একটা চেক লাগবে! থার্টি লাকস্ এর!

দাদী : এবার আবার কোন গাড়ীর উপর ক্রাশ খেয়েছিস? গাড়ী কিনতে কিনতে তো গ্যারেজটাকে শো-রুম বানিয়ে ফেললি!

রাহুল : উফফো দাদী গাড়ীর জন্য না! ব্যাস লাগছে!

দাদী : তা আমি দিতে যাবো কেনো? তোর একাউন্ট থেকেই নে!

রাহুল : ফিনিশ!

দাদী : তোর একাউন্ট ফিনিশ করে আমার একাউন্ট ফিনিশ করার ধান্ধায় থাকিস সবসময়!

রাহুল : আহা এতো কিপ্টামি করছো কেনো? তোমার তো বড়লোক ছেলে আছে, ওয়ান-টু তেই একাউন্ট ভরিয়ে দিবে!

দাদী : এর চেয়ে বড়লোক তো নাতি আছে, বিনা মেহনতে যার একাউন্ট ভরে যায়, নিজেরটা শেষ হলে ও কোনো চিন্তা নেই দাদীরটার পেছনে পড়ে থাকে, আজেবাজে কাজে টাকা অপচয় করতে থাকে সারাক্ষণ!

রাহুল : দেখো দাদী, দাদা তো নেই! তুমি সিংগেল মানুষ, এতো টাকা একাউন্টে ফেলে রাখলে মরিচা ধরে যাবে, সো্ কিছু টাকা আমাদের শেয়ার করলে প্রবলেমটা কই বলো তো?

দাদী : ব্যাস! রাহুল শুধু তোকে এটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য যে এভাবেই জীবনটা চলে যাবে না, তোর বাবার ও বয়স হচ্ছে, একজন মানুষ একা এতোকিছু সামলাতে কতো কষ্ট হচ্ছে জানিস?

– এখন তো তুই ও বিয়ে করতে যাচ্ছিস তোর ও এসব দায়িত্ব নেওয়া দরকার, বিজনেসে হাত বাটা, তারপর যা নিজের ইচ্ছা মতো কর তাতে আমার কোনো প্রবলেম নেই!

– এমনিতে ঠিকই তো করছে স্নেহার বাবা! এমন বেকার ছেলেকে নিজের মেয়ে কেই বা দিতে চাইবে!

রাহুল : তুমি আর স্নেহার বাবা, আই মিন আমার ফাদার-ইন-লো সেইম ব্লাডের তৈরী এবার বুঝলাম,

দাদী : আর তুই তো স্পেশাল ব্লাডের তৈরী তাই না?

রাহুল : তা নয়তো কি? যদি তোমার ব্লাড আমার ব্লাডের মতো স্পেশাল হতো তাহলে আমার বিরুদ্ধে কথা বলতে না,

– আচ্ছা আচ্ছা প্লিজ এসব বাদ দাও, এবার বলো দিচ্ছো কি দিচ্ছো না?

দাদী : কি করবি শুনি এতো টাকায়?

রাহুল : [ দাত দেখানো একটা হাসি দিয়ে ] আমার কাফনের কাপড় কিনবো!

দাদী : থার্টি লাকস্ টাকার?

রাহুল : জী! মিসেস ওয়াহিদ তাওয়াবের নাতি বলে কথা!

দাদী : [ হেসে ] শয়তান কোথাকার! [ বলেই উঠে রুম থেকে চেক আনতে চলে যায় ]
_______________________________________
এইদিকে স্নেহা ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরুতেই দেখে মার্জান,জারিফা,শায়লা তিনজনই কাপড়-চোপড় পড়ে রেডি হচ্ছে,

স্নেহা : আরে! তোরা ভার্সেটি যাচ্ছিস?

মার্জান : না..নাহ তো! আ..আমরা একটু শপিং এ যাচ্ছি!

স্নেহা : এই সময়?

[ কনফিউজড এ পড়ে গেলো মার্জান, পড়লো তো ধরা, কি বলবে মাথায় কিছুই আসছে না ]

শায়লা : [ হেসে ] মজা করছিলো মজা! কোথাও তো যাচ্ছিলাম না! তাই না!

জারিফা : হ্যা! হ্যা!

স্নেহা : কিছু লুকাচ্ছিস তোরা আমার কাছ থেকে?

মার্জান : আ..আন্টি ডাকছে ব্রেকফাস্ট করতে! হ্যা! [ বলেই চলে গেলো পাশের রুমে ]

জারিফা : খিধেই পেটে ডিজে চলছে, ব্রেকফাস্ট করে আসি! তুই ও আয়! কেমন [ বলেই চলে গেলো মার্জানের পিছু পিছু শায়লা ও একটু হেসে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে ]

স্নেহা : [ কনফিউজড হয়ে ] আজিব! সকাল সকাল সবাই এমন বিহেভ করছে কেনো?

– এনিওয়ে, এদের মাথায় তো ভুত চড়তে দু-মিনিটই লাগে না,

[ বলেই মাথা আঁচড়ে চোখে চশমা লাগিয়ে টেবিলে চলে যায় ব্রেকফাস্ট করতে, ব্রেকফাস্ট শেষে সবাই আবারো রুমে এসে বসে থাকে, স্নেহা সবার দিক ঘুরঘুর করে তাকাচ্ছে, কেমন যেনো মনে হচ্ছে ওদের মাথায় কিছু পাকিয়েছে ]

স্নেহা : গাইস্ তোরা ঠিকাছিস তো?

জারিফা : হ্যা! ঠিকই তো আছি! একদম ফাটাফাটি! তুই বল? তোর কি অবস্থা?

স্নেহা : আমার কি অবস্থা মানে?

মার্জান : [ জারিফাকে চিমটিয়ে ] না নাহ! এক্সুলি ও এটা বুঝাতে চাইছে যে রাহুল আর তোর রাতে কথা হয়েছে, যা যা কথা হয়েছে সব ঠিকাছে তো?

স্নেহা : কিসব পাগলের মতো কথা বলছিস তোরা? সবই তো ঠিকাছে!

মার্জান : আচ্ছা?

স্নেহা : হুমম!

মার্জান : রাতে তো ভালো করে কথা বলতে পারিস নি, ফোন নিয়ে ফেলেছিলাম এখন ফোন দিয়ে কথা বল,

স্নেহা : এখন হয়তো ঘুমাচ্ছে! আর এমনিতেই লাগলে ও নিজেই দিবে, কিন্তু তোরা হঠাৎ..

জারিফা : [ চেচিয়ে ] না নাহ আসলে ও ভাবছিলো তুই এখন রাহুলের সাথে কথা বলবি, আর যদি না বলিস তোর মোবাইল ফ্রি থাকলে একটু গেইমস খেলবে! তাই..

স্নেহা : [ অবাক হয়ে ] সিরিয়াসলি?

মার্জান : [ একটা তালি দিয়ে ] আরে ওয়াহ! মাইন্ডব্লোয়িং আইডিয়া!

[ স্নেহা হা করে তাকিয়ে আছে তাদের দিক কিছুই বুঝতে পারছে না ]

মার্জান : আই মিন..বোরিং হচ্ছিলাম এতোক্ষণ তাই গেইমস খেলাটা কি মাইন্ডব্লোয়িং আইডিয়া তাই না?

জারিফা : হ্যা হ্যা! মোবাইলটা দে এইবার!

স্নেহা : [ মাথা নাড়িয়ে ] টে..টেবিলেই আছে!

মার্জান : [ মোবাইল এগিয়ে নিয়ে ] আরে হ্যা! টেবিলেই তো ছিলো! [ দাতকিলিয়ে জারিফার দিক তাকিয়ে ] দেখিস নি এতোক্ষণ!

[ স্নেহা আর কিছু বললো না তাদের বিহেইভিয়ার দেখে সে নিজেই পাগল হয়ে যাচ্ছিলো ]

আধঘন্টা হয়ে গেলো, হঠাৎ দরজায় বেল বেজে উঠলো,জারিফা, মার্জান, শায়লা তিনজনই একলাফে উঠে এগিয়ে যেতে লাগলো দরজা খুলতে, তাদের কান্ড দেখে অবাক হয়ে স্নেহা ও এগিয়ে গেলো তাদের পেছন পেছন, স্নেহার বাবাই আগে গিয়ে দরজা খুললো,

স্নেহা : [ মনে মনে অবাক হয়ে ] রাহুল?

রাহুল : [ হাত নাড়িয়ে ] হ্যালো স্যার! আ..স্নেহা আছে বাসায়?

– [ একটু চিন্তা করে ] ওহ সরি! স্নেহা তো এইখানেই থাকবে তাই না? একটু সাইড প্লিজ! [ স্নেহার বাবা সাইড দিয়ে পেপার হাতে নিয়ে সোফায় বসে পড়লো ]

রাহুল : [ ভেতরের দিক এগিয়ে গিয়ে চিৎকার করে ] হেইই সুইটহার্ট, অওওও কিনা লাগছে তোমায়, আজ বিয়ে বলে একদম গোলাপের পাপড়ির মতো ফুটে উঠেছো! [ স্নেহা তার বাবার দিক একবার তাকিয়ে সাথে সাথে আবার মাথা নিচু করে ফেললো ]

রাহুল : [ হালকা করে স্নেহার ঘাড়ের চুল সরিয়ে দিয়ে, আলতো করে স্লাইড করে করে ] কি যেনো একটা এইখানে? [ বাকিরা মিটমিট করে হেসে মুখ লুকাতে ব্যস্ত ]

স্নেহা : [ রাহুলের হাত তাড়াতাড়ি সরিয়ে দিয়ে ] কি করছেন আপনি?

রাহুল : [ আবারো স্নেহার চুলের দিক ঝেড়ে দিয়ে ] নাহ কিছু না! [ বলেই তেডি স্মাইল দিয়ে স্নেহার ফ্রেন্ডসদের দিক তাকিয়ে চোখ টিপ মারলো ]

রাহুল : [ ফিসফিসিয়ে ] স্নেহা! সব ঠিকাছে তো? আই মিন তুমি ঠিকাছো তো? যেভাবে মেসেজ দিয়ে বললা, সুইটহার্ট এক্ষুনি দেখা করো আমার সাথে লেইট করলে কিন্তু দেখবা বিয়ে ক্যান্সেল! যেভাবে হুমকিটুমকি দিলা আমিতো ভয়ে তাড়াহুড়ো করে চলেএসেছি,

– বাই দ্যা ওয়ে! আই লাইক ইট! সরাসরি বলতে না পারলে ও মেসেজে তুমি করেই বললা!

স্নেহা : [ শকড হয়ে ] এক্সকিউজ মি? আমি আপনাকে এসব মেসেজ কবে দিলাম?

– সুইটহার্ট তারউপর তুমি করে ? দেখেন আপনার হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে,

রাহুল : ওকে, [ বলেই পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে মেসেজ গুলো এনে স্নেহার হাতে ধরিয়ে দেই ]

স্নেহা : [ কনফিউজড হয়ে ] আরে এসব আমি.. [ বলতেই হঠাৎ মাথায় এলো মোবাইল নিয়ে তো এতোক্ষণ ঐ তিনজনই ঘাটাঘাটি করছিলো, পাশফিরে আড়চোখে তাকালো তিনজনের দিক, সাথে সাথে তিনজন চেহেরায় এমনভাব নিয়ে এলো যেনো কিছুই জানেনা ]

রাহুল : কি হলো?

স্নেহা : কিছুনা! [ মার্জান, জারিফা, শায়লা তিনজনই মাথা এগিয়ে কান পেতে রইলো কি বলাবলি করছে ]

রাহুল : আচ্ছা আমার সাথে চলো একটু গাড়ীতে, লেপটপে তোমার ড্রেসের ডিজাইন দেখাবো!

মার্জান : [ এগিয়ে এসে ] আরে জিজু! শুধু ডিজাইন কেনো? ডিজাইন চয়েজ করার পর দুজন একসাথে গিয়ে ড্রেসটাও নিয়ে আসুন,একসাথে ঘুরাঘুরি ও হয়ে যাবে!

রাহুল : বাট! আমাদের গিয়ে আনতে হবে না! সিলেক্ট করে দিলে ওরাই পাঠিয়ে দিবে সন্ধ্যার আগে!

মার্জান : আচ্ছা! তাহলে এমনিই ঘুরে আসুন কোথাও,

– আ..আই মিন আর কিছু ঘন্টার জন্যই তো ব্যাচেলর থাকবেন এরপর তো আপনারা ম্যারেড হয়ে যাবেন তাই না?

রাহুল : ওহ ইউ মিন! ব্যাচেলর পার্টি!

মার্জান : ইয়া ইয়াহ!

রাহুল : ওওও..নট বেড আইডিয়া! থেংক ইউউ! বাট তোমরাও সাথে চলো আরো মজা হবে!

মার্জান : না নাহ! [ হেসে ] আমরা আপনাদের মাঝে কাবাব মে হাড্ডি হয়ে যাবো! আপনারাই যান শুধু! আর আমাদের এমনিতেও রাতের জন্য অনেক কিছু তৈরী করা বাকি!

রাহুল : নো দ্যাটস্ ওকে চলো কিছু হবে না, তৈরী সৈরী এগুলো এসেও করা যাবে,জাষ্ট দু-তিন ঘন্টায় তো!

মার্জান : আরে জিজু বললাম তো, আপনারাই যান শুধু, আমার তো সকাল সকাল কোথাও বেড়াতে গেলে প্রেশার বেড়ে যায়, আর জারিফার?

– ওর মাথা ঘুরায়, শায়লার কথা তো বাদই দিলাম ও বমি করতে থাকে,ইয়াককক! [ জারিফা আর শায়লা ও মাথা নাড়ালো, রাহুল আর স্নেহা হা করে তাকিয়ে আছে ]

মার্জান : আরে এ..এতো অবাক হচ্ছেন কেনো? যান! লেইট হয়ে যাচ্ছে তো, ঐদিকে আবার তাড়াতাড়ি ও তো ফিরতে হবে তাই না?

রাহুল : [ মাথা নাড়িয়ে ] হুমম! ওকে চলো স্নেহা!

স্নেহা : আমি এখন কোথাও যাচ্ছিনা! আর অতো ডিজাইন-টিজাইন ও লাগবে না আমার ড্রেসে, আপনি যে কোনো একটা নিলেই হবে!

জারিফা : ইয়াকক, কতো নিরামিষ এই স্নেহা!

শায়লা : চুপ কর!

রাহুল : [ হুট করেই স্নেহাকে কোলে তুলে নিয়ে ] তুমি না গেলে তোমায় উঠিয়ে তো নিয়ে যেতে পারি! [ স্নেহা কিছু বলতে যাবে তখনিই ]

রাহুল : শিসসস! চেচাবা না, তোমার বাবা হয়তো পেছন থেকে দেখছে, তুমি চেচালে উনি ভাববে হয়তো আমি তোমাকে জোড় করে নিয়ে যাচ্ছি!

স্নেহা : ঠিকিতো জোড় করেই তো নিচ্ছেন!

রাহুল : কথা বেশি বলো!

স্নেহা : নামান আমাকে, আপনার লজ্জাশরম কিছু নেই! বাবার সামনে এসব..

রাহুল : [ চেচিয়ে ] স্নেহা! তোমার বাবা-মা তোমাকে ঠিক মতো খাওয়াতো তো?

– না আসলে তোমাকে কোলে তুলে ওজন দেখে মনে হচ্ছে ঠিকমতো খাবারটাও দিতো না,

স্নেহা : আপনি আবার..

রাহুল : শাট-আপ! [ বলেই স্নেহাকে নিয়ে হেটে চলে যাচ্ছে, হঠাৎ স্নেহার মাকে দেখে ]

– হ্যালো আন্টি! গুড মর্নিং! ব্রেকফাস্ট করেছেন?

স্নেহার মা : [ মুচকি হেসে ] হুমম! তুমি করেছো?

রাহুল : না এক্সুলি,আমি না স্নেহার সাথে দেখা হোওয়ার পর থেকে ওর হাত ছাড়া ব্রেকফাস্ট করতে পারিনা,তাইই…

স্নেহা : মিথ্যুক!

রাহুল : [ ফিসফিসিয়ে ] শাট-আপ স্নেহা! কথার মাঝে কথা বলে আটকিয়ে দিও না,[ বলতেই স্নেহা দিলো একটা চিমটি ]

রাহুল : [ ব্যাথা কন্ট্রোল করে স্নেহার মায়ের দিক তাকিয়ে ] ওকে আন্টি আসি! [ বলেই তেডি স্মাইল দিয়ে স্নেহার দিক একবার তাকিয়ে সোজা হেটে বেড়িয়ে যায় ]
_______________________________________

মার্জান : [ এক্সাইটেড হয়ে ] বাহহ! প্লেন তো বরাবর কাজে লেগেছে! কিন্তু এখন আমাদের বেরুতে হবে তাড়াতাড়ি,তুই বলেছিস রিদোয়ানকে?

জারিফা : হ্যা হ্যা! চল এইবার তাড়াতাড়ি!

শায়লা : আমাদের কিন্তু রাহুল স্নেহাকে নিয়ে বিজি থাকা অবস্থায় তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে,নাহলে একবার রাহুলের চোখে পড়লে পুরাই সর্বনাশ!

মার্জান : দেখ টেনশন দিশ না! এমনিতেই টেনশনে আছি যেটা করতে যাচ্ছি ওটা হয় কিনা কি জানি, [ জারিফা আর শায়লা বেড়িয়ে যাচ্ছে ব্যাগ কাধে নিয়ে ]

মার্জান : [ চেচিয়ে ] আরে আরে কোথায় যাচ্ছিস?

জারিফা : কেনো?

মার্জান : [ বারান্দায় উকি দিয়ে ] রাহুলের গাড়ী এখনো বেরুইনি, ওর গাড়ী বের না হওয়া পর্যন্ত আমরা বের হতে পারবো না,

– তখন আমাদের বেরুতে দেখলে সন্দেহ করবে!

শায়লা : হ্যা সেটাও ঠিক! [ বলেই কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো সবাই ]

জারিফা : আরে দেখ বেড়িয়ে যাচ্ছে রাহুলের গাড়ী!

মার্জান : ওকে ব্যাস! চল এইবার!

চলবে…

Love At 1st Sight Season 3 Part – 44

0

Love At 1st Sight
~~~Season 3~~~

Part – 44

writer-Jubaida Sobti

রাহুল : এইবার শিয়র করবাতো বিয়ে? নাকি আবারো কথা না শুনে কিছু একটা করে বসবা [ মুচকি হেসে রাহুলের হাত জড়িয়ে কাধে মাথা রাখলো স্নেহা ]

জারিফা : আরে জিজু! কই যাবে ও, আপনাকে বিয়ে না করে [ স্নেহা ব্লাশিং হয়ে হেসে মাথা তুলে তাকালো রাহুলের দিক ]

রাহুল : যাবে কই? যেতে দিলেই তো যাবে! তাই না?..

জারিফা : [ স্নেহার দিক তাকিয়ে ] ♪♪ মেহেদী লাগাকে রাখনা, ডোলি সাজাকে রাখনা, লেনে তুজে ও গড়ি আইয়েংগে তেরে সাজনা ♪♪ [ লজ্জায় হেসে মাথা নিচু করে ফেললো স্নেহা ]

আসিফ : সবই অ্যারেঞ্জ করে ফেলেছিলাম! এই সামিরের বাচ্চা বাম হাত ঢুকিয়ে, আমার মেহনতে পানি ফেলে দিলো,

মার্জান : [ কিটকিটিয়ে হেসে ] আপনি করেছেন অ্যারেঞ্জ?

আসিফ : হ্যা! আমিই করেছি! এতে হাসার কি আছে?..

মার্জান : না আসলে বিয়েশাদী এগুলো অনেক সেনসিটিভ জিনিষ, যাকে তাকে দিয়ে এসব অ্যারেঞ্জ করালে তো কূনজর লাগারই ছিলো, [ হেসে উঠলো সবাই খিলখিল করে ]

আসিফ : হ্যা! তোমার দিয়েই করানো উচিৎ ছিলো তুমি তো অনেক ভাগ্যশালি তাই না?..

মার্জান : অফকোর্স! এখনি তো দেখলেন আমি আসার পরই সব সলভ হলো!

আসিফ : ওহো, মরিচের গুড়া মেরে নিজেকে দুম ফ্লিমের হিরোইন মনে করছো তাই না?..

মার্জান : [ নাক ফুলিয়ে ] এক্সকিউজ মি! আর আপনি কি দুম ফ্লিমের আমির খান মনে করছেন নিজেকে, আমি মরিচের গুড়া মেরে হলেও তো বাচিয়েছি! তখন যা মারার রাহুলই তো মারছিলো, আর আপনি কি করছিলেন হাতে হাত বটে দাঁড়িয়ে শুধু দেখছিলেন,

– হুহহহ! নিজেকে এতো রোমিও মনে করলে, মারলেন না কেনো সবকটাকে,

আসিফ : তোমার সাথে কথা বলায় বেকার!

মার্জান : [ হেসে আসিফের গালে টুকা মেরে ] ইয়াহহ! এখন তো বেকারই মনে হবে, কারণ আপনার কাছে তো আমার কথার জবাবি নেই! তাই না! [ সবাই আবারো হেসে উঠলো মার্জানের কথায়, আসিফ ও মুচকি একটু হেসে জানালার পাশ ফিরে গেলো ]

গাড়ী চলছে নিস্থব্দ চারদিক, বাতাসের শা-শা আওয়াজটাই আসছে শুধু, রাহুলের কাধে মাথা রেখে চুপটি হয়ে আছে স্নেহা, গাড়ীর গ্লাসটা একদমি নামিয়ে দিলো রাহুল,বসে থাকা স্নেহার চুল গুলো মুহূর্তেই বিলিয়ে পড়লো

রাহুল : [ ফিসফিসিয়ে ] স্নেহা!

স্নেহা : হুম!

রাহুল : তুমি বলেছিলে জিকির করার মতো আমার নাম মনে করছিলে, উমম..আই মিন তোমার কনফিডেন্স ছিলো আমি আসবো?

স্নেহা : [ মাথা তুলে রাহুলের দিক তাকিয়ে ] কিছু হয়েও যদি যেতো,তাও আমার মন বলছিলো আপনি আসবেন,

রাহুল : [ মুচকি হেসে ] এমনিতেও আসার তো ছিলোই!

স্নেহা : আম সরি রাহুল! [ বলতেই চোখে পানি এসে জমে যায় ] আমার মোটেও উচিৎ হয়নি যাওয়া, [ কাদো ভাবে ] আমি তো ব্যাস ওদের একবার…

রাহুল : শিসসস! দ্যাটস্ ওকে স্নেহা! আই আন্ডারস্ট্যান্ড, তোমার জায়গায় আমি হলেও হয়তো আমিও এমন করতাম!

স্নেহা : বাট আই প্রমিস রাহুল! আজকের পর থেকে আপনি যেখানে নিষেধ করবেন ঐখানে আর কখনোই যাবো না! [ রাহুল হেসে স্নেহার কাধে হাত রেখে বুকে টেনে নিলো ]

রাহুল : এই বাবা গুলো না স্নেহা! আমাদের ফিলিংসটাই কখনো বুঝবে না, বাট…তুমি দেখিও আমি যখন বাবা হবো না? তখন আমার চাইল্ডরা বলবে ইউ আর দ্যা বেষ্ট বেষ্ট বেষ্ট ফাদার ইন দি ওয়ার্ড! [ হেসে উঠলো স্নেহা ]

রাহুল : [ হেসে ] হোয়াই আর ইউ লাফিং?..আই এম সিরিয়াস!

স্নেহা : আপনিও তো হাসছেন!

রাহুল : হ্যাঁ! আমিও হাসছি…বিকজ নাও আই এম সো্ হ্যাপি! [ স্নেহাকে নাড়িয়ে দিয়ে ] আর তুমি?..

স্নেহা : [ মুচকি হেসে ] আমিও! [ বলতেই রাহুল আরো টাইট করে আগলে ধরলো ]

হঠাৎ পাশ ফিরে তাকাতেই দেখে, মার্জান জানালার গ্লাস নামাচ্ছে, আর আসিফ উঠাচ্ছে, এভাবেই কন্টিনিউ করছে দু-জন!

রাহুল : তোরা এভাবে টম এন্ড জেরীর মতো ঝগড়া করতে থাকবি?..

মার্জান : দেখেছেন ওনি?..আমি জানালা খুলছি আর ওনি বাধতেই চলছে,

আসিফ : আরে বাতাস আসছে, ঠান্ডা লাগছে তো!

মার্জান : সো্ হোয়াট?..আমার কি?.. আমার গরম লাগছে [ বলেই আবার নামিয়ে দিলো, রাহুল হেসে স্নেহার পাশ ফিরে গেলো, স্নেহা ও হাসতে লাগলো তাদের কান্ডে ]

আসিফ : দেখো তোমার চুল গুলো উড়ে আমার মুখে পড়ছে,

মার্জান : তাহলে কি, ওদের নিষেধ করবো?.. ওকে, [ কিছু চুল হাতে তুলে ] এই চুল, চুল শুনছো! তোমরা উড়োনা কারণ কেউ একজন এতে ডিষ্টার্ব ফিল করছে, [ বলেই হেসে আসিফের দিক তাকিয়ে ] হয়েছে?.. আমি কিন্তু ওদের নিষেধ করে দিয়েছি এরপরও উড়লে এটা ওদের ব্যাপার,ওদের ও একটা ফ্রিডম আছে তো তাই না! হুহহ! [ বলেই সোজা তাকিয়ে থাকে, মুচকি হেসে এখনো তাকিয়ে রইলো আসিফ, চুলগুলো আবারো উড়ে এসে মুখে বারি খেয়ে যাচ্ছে, এতো কিউট করে চুলের সাথে কথা বলাটা যেনো তার মন ছুয়ে গেছে, আর কিছু বললো না চুপ করেই তাকিয়ে রইলো ]

রিদোয়ান : জারিফা!

জারিফা : হুমম?..

রিদোয়ান : আমার মনে হয় আমাদের ও এবার বিয়ে করে ফেলা উচিৎ, আর কতোদিন এভাবে একা একা থাকবা বলোতো, একা থাকার একটা লিমিট আছে তো তাই না? [ হেসে উঠলো বাকিরা ]

জারিফা : কথাটা কি আমার দিক থেকে বলছেন নাকি নিজের ফিলিংসটা আমার দিক করে চাপিয়ে দিচ্ছেন!

রাহুল : [ হেসে ] ইয়াহ! শি ইজ রাইট রিদ! তুই নিজের ফিলিংস বলনা! ওর বলে চাপিয়ে দিচ্ছিস কেনো?..

রিদোয়ান : আহা! আমার ফিলিংস বোঝার মানুষ কই আছে! [ আড়চোখে তাকালো জারিফা ]

রিদোয়াস : [ হেসে ] হোয়াই আর ইউ সো্ সিরিয়াস? আই জাষ্ট কিডিং বেবী!

[ এভাবেই হাসি মজা করে সবাই এসে পৌছালো, রাহুল দরজা খুলে দিলো স্নেহাকে, স্নেহা নেমে দাড়ালো, রাহুল ও পেছন পেছন নেমে আসে, বাকিরা ও বেড়িয়ে এলো ]

রাহুল : স্নেহা! [ বলতেই স্নেহা ফিরে তাকালো, মুচকি হেসে হাটু গেড়ে মাটিতে বসলো রাহুল, সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে হা করে ]

রাহুল : তোমার পা, টা দাও!

স্নেহা : [ অবাক হয়ে ] পা? আ..আপনি কি করছেন রাহুল?..উঠে দাড়ান!

জারিফা : [ মার্জানের কানে ] প্রপোজ করতে তো হাত চাইতে দেখলাম মার্জান, কিন্তু পা?..আমি তো এই ফাষ্ট দেখছি!

মার্জান : চুপ কর! বেশি কথা বলিস!

[ রাহুল স্নেহাকে আর কোনো জবাব না দিয়ে স্নেহার বাম পা টি তার হাটুর উপর তুলে নিলো, স্নেহা আনকমফোর্টেবল ফিল করাই সরিয়ে নিতে চাইলো কিন্তু রাহুল হেসে শক্ত করে ধরেই রইলো স্নেহার পা ]

স্নেহা : কি করছেন রাহুল! ছাড়ুন প্লিজ! লোকজন দেখছে!

রাহুল : দেখুক! [ বলেই স্নেহার পায়ের দিক তাকাতেই রাহুল শকড হয়ে যায়, স্নেহা এখনো টানাটানি করছে পা নিয়ে ]

রাহুল : [ চেচিয়ে ] স্নেহা এটা কেমনি হলো?

মার্জান : ওহ মাই গড স্নেহা! তোর পা কিভাবে কাটলো?..

স্নেহা : ও..ওটা তেত..তেমন কিছুই না! ব্যাস কাচের টুকরো তে সামান্য একটু কেটে গেছে!

রাহুল : সামান্য একটু তাই না?..ব্লিডিং হচ্ছে তাও বলছো সামান্য একটু!

স্নেহা : হ্যা! সা..সামান্যই তো! আচ্ছা আপনি পা ছাড়ুন! আমি বাসায় গিয়ে মেডিসিন লাগিয়ে নিবো! [ বলেই পা টেনে নিচ্ছিলো ]

রাহুল : [ স্নেহার পা ধরে রেখে ] ওয়েট! আমার কাজ এখনো শেষ হয়নি! [ বলেই জ্যাকেটের পকেট থেকে স্নেহার পায়েলটি বের করে নিলো ]

জারিফা : অওও! এবার বুঝলাম! [ স্নেহাও এবার বুঝতে পেরে ব্লাশিং হয়ে হাসলো ]

রাহুল : তোমার পায়েলটা রয়েগিয়েছিলো! [ বলেই ধীরেধীরে পড়িয়ে দিতে লাগলো, মুচকি হেসে, সুবিধার্থে স্কার্টটা হালকা একটু উঠিয়ে দিলো স্নেহা, জারিফা আর মার্জান হাত তালিয়ে দিয়ে উঠলো, রিদোয়ান শিস বাজালো ]

আসিফ : [ হেসে ] দোস্ত! তুই অলোয়েজ বিনাটিকিটে লোকজনকে রোমান্স দেখাতে থাকবি নাকি এভাবে?..

রাহুল : [ হেসে উঠে দাঁড়িয়ে ] রোমান্সের নির্ধারিত কোনো সময় থাকে না, জাষ্ট মন কি বলে শুনো তারপর শুরু হয়ে যাও, আর লোকজনের কাজই তো পিঠপিছে কথা বলা! [ বলেই হুট করে কোলে তুলে নিলো স্নেহাকে ]

স্নেহা : [ চেচিয়ে ] আরে?..

রাহুল : হোয়াট আরে?..আরে আবার কি? ফাষ্ট টাইম নিচ্ছি নাকি? [ বলেই হাটা শুরু করলো ]

জারিফা : আরে আপনারা আবার হা করে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো! চলেন একটু ফ্রেশ হয়ে নিলে রিলেক্স লাগবে! [ বলেই আসিফ আর রিদোয়ান দুজনেরই হাত ধরে টেনে নিতে লাগলো ]
_______________________________________

স্নেহা : আপনার লজ্জাশরম বলতেই কিচ্ছু নেই! একদিকে রাস্তায় কয়েকজন লোক তাকিয়েছিলো, তারউপর আপনার ফ্রেন্ডসরা, আর আপনি সবার সামনেই….

রাহুল : হ্যা হ্যা! সবার সামনেই! এমোনি করবো! কে কি ভাবছে আই ডোন্ট কেয়ার! এক্সুলি লজ্জা তুমি পেলেই চলবে, [ চোখ মেরে ] ও হ্যা! উইথ ব্লাশিং! [ বলতেই স্নেহা মুচকি হাসলো ]

রাহুল : ব্যাস স্নেহা! ব্যাস! এক্ষুণিই এতো ব্লাশ না হোও প্লিজ! ফ্রিজে সাজিয়ে রাখা স্ট্রোভেরি আইস্ক্রিমের মতো লাগে, কোন সময় কামড়িয়ে খেতে বসি আই ডোন্ট নো! [ স্নেহা হেসে রাহুলের নাক টেনে দিয়ে কাধে মাথা রাখে ]

[ উপরে উঠে বেল বাজিয়ে দাড়ালো সবাই, একটু পর দরজা খুলতেই, রাহুল স্নেহা দু-জনই শকড হয়ে যায়, পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা মার্জান, জারিফা, আসিফ, রিদোয়ান, তারাও অবাক হলো ]

স্নেহা : [ ভীতু হয়ে রাহুলের দিক তাকিয়ে ] রাহুল! না..নামান..

রাহুল : [ নাক ফুলিয়ে ] কেনো? কাকে ভয় পাচ্ছো?..

স্নেহা : [ ধীরো কন্ঠে ] বা..বাবা!

রাহুল : [ স্নেহাকে আরো টাইট করে ধরে ] সো্ হোয়াট?..চুপচাপ যেভাবে আছো ঐভাবেই থাকো! [ কোণা চোখে তাকালো স্নেহা তার বাবার দিক, ভয়ে আবার উল্টো ফিরে রাহুলের কাধের উপর মাথা রেখে মুখ লুকিয়ে রাখলো ]

রাহুল : [ স্নেহার বাবার দিক তাকিয়ে ] এক্সকিউজ মি! একটু সাইড প্লিজ! [ স্নেহার বাবা সরে দাড়ালো, রাহুল হুড়হুড়িয়ে হেটে ভেতরের রুমে চলে গেলো, বাকিদের অধিক জোড়ে পেট ফেটে হাসি আসছিলো তাও হাসি চেপে রাহুলের পেছন পেছন ভেতরের রুমে এগিয়ে গেলো,রাহুল স্নেহাকে খাটে বসিয়ে দিলেও স্নেহা রাহুলের ঘাড় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখে ]

রাহুল : রিলেক্স স্নেহা!

স্নেহা : [ কাদো কন্ঠে ] রাহুল! আমার অনেক ভয় করছে, আপনি এইদিকেই থাকুন!

রাহুল : [ স্নেহার পাশে বসে, স্নেহার মুখে হাত বুলিয়ে দিয়ে ] আরে এভাবে ভয় পাচ্ছো কেনো তুমি! রিলেক্স থাকো স্নেহা! কিচ্ছু হবে না! [ বলেই পাশফিরে শায়লার দিক তাকিয়ে ] ফাষ্ট এইড বক্সটা দাও!

[ শায়লা ফাষ্ট এইড বক্স আনতে যাচ্ছিলো, তখনিই দেখে স্নেহার বাবা এবং মা ও রুমে এগিয়ে আসে, রাহুল তারা ঢুকেছে বুঝতে পেরে, স্নেহার সামনের চুল গুলি নিজ হাতে কানে গুজে দিলো, স্নেহা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রাহুলের দিক ]

রাহুল : [ চেচিয়ে ] আর কে আছেই বা তোমার আমি ছাড়া, ভয় পেলে আমায় পেয়ো, একদম আর কাউকে ভয় পাওয়ার দরকার নেই! বুঝেছো! [ চুপ করে আছে স্নেহা ]

– লিসেন্ট! কেউ কিছু বললে আমায় বলো, গলা কেটে হাতে ধরিয়ে দিবো, [ নাক ফুলিয়ে অন্যপাশ ফিরে গেলো স্নেহার বাবা, বাকিদের মারাত্মক হাসি পাচ্ছিলো তারা মুখ লুকাতে ব্যস্ত, স্নেহার মা ও হেসে উঠলো মুখে হাত দিয়ে,
আসিফ আউট অফ কন্ট্রোল, হাসি মোটেও আটকাতে পাচ্ছিলো না স্নেহার বাবার ফেইস দেখে, সামনে ড্রেসিং এর উপর একটা পানির বোতোল পেলো ঐটা নিয়েই গডগড করে গিলে পানি খেতে লাগলো ]

রাহুল : আর তুমি তো জানোই আমি তোমাকে কতো ভালোবাসি, ইউ আর মাই হার্ট, ইউ আর মাই ব্রেথ, ইউ আর মাই হার্টবিট, ইউ আর মাই সফটেড মিউজিক, ইউ আর মাই এব্রিথিং স্নেহা! [ বলেই স্নেহার মাথা কাছে টেনে কপালে একটি চুমু খেলো, কাঠ হয়ে গেলো স্নেহা! রাহুলের কান্ডে, বাকিদের চোখ কপালে উঠে গেলো, মুখ থেকে ফুস করে পানি বেড়িয়ে এলো আসিফের,হাসি কন্ট্রোল করে তাড়াহুড়ো ভাবে বোতোল রেখে বেড়িয়ে নিচে চলে গেলো আসিফ, কোণা চোকে তাকালো রাহুল স্নেহার বাবার দিক, চেয়ে আছে কিনা, হ্যা চেয়েই তো আছে, মনে মনে ভাবছে আরেকটু মজা নেওয়া যাক বলেই ধীরেধীরে হালকা করে স্নেহার গালে আরেকটি চুমু খেলো, জোড়ে একটি শ্বাস ফেলে পাশের রুমে চলে গেলো স্নেহার বাবা, বাকিরাও মজা নিয়ে হাসতেই রইলো, শায়লা ফাষ্ট এইড বক্স এগিয়ে দিলো, রাহুল মুচকি হেসে স্নেহার পায়ে মেডিসিন লাগিয়ে দেই, বাকিরা তাকিয়ে থাকে তাদের কিছুক্ষণ পর করা চোখাচোখি রোমেন্স ]

রাহুল : পায়ে ব্যাথা পেয়েছো, বলা দরকার ছিলো আমাকে!

– এখন বলবা সামান্য একটুই তো! তাই না?..লিসেন্ট এখন থেকে মশা কামড়ালেও আমাকে বলবা, মশাটাকে ও ছাড়বো না! [ এবার আর স্নেহা ও না হেসে পারলো না ]

রাহুল : [ তেডি স্মাইল দিয়ে ] ব্যাস! এই স্মাইলটারই কমতি ছিলো!

– [ দীর্ঘ একটি শ্বাস ফেলে ] তুমি রিলেক্স করো! আমি যাচ্ছি! [ বলেই উঠে দাঁড়িয়ে যায়, আড়চোখে মার্জানের দিক তাকিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করলো স্নেহার বাবা কোথায়, মার্জান ও ইশারা করে বললো পাশের রুমে আছে ]

রাহুল : [ দরজার দিক তাকিয়ে চেচিয়ে ] স্নেহা! আগামীকাল লাল শাড়ী পড়ে একদম লাল টুকটুকে বউ সেজে তৈরী থাকবে, আমি আসবো তোমাকে নিতে, আরে আরে স্নেহা! কি এতো ভাবছো বিয়ে করবো আমরা! কাকে ভয় পাচ্ছো আবার?..সবার সামনে থেকেই উঠিয়ে নিয়ে যাবো তোমাকে! [ সবাই হাসতে লাগলো রাহুলের কথায় ]

রাহুল : [ মুচকি হেসে স্নেহার দিক তাকিয়ে ] বাই স্নেহা! টেক কেয়ার! [ বলতেই রিদোয়ান পেছন থেকে হাসতে হাসতে এগিয়ে এসে রাহুলকে জড়িয়ে ঠেলে নিয়ে বেড়িয়ে যায়, দুজনেই কিটকিটিয়ে হাসতে হাসতে শিরি দিয়ে নামতে থাকে, গেইট দিয়ে বেরুতেই দেখে আসিফ গাড়ীর সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ]

রাহুল : আরে তুই চলে এলি কেনো?..

আসিফ : [ হেসে ] থাকার মতো অবস্থায় রাখলি! রোমান্স করছিস তুই তাও আবার আংকেল আন্টির সামনে, লজ্জায় মরে যাচ্ছিলাম আমি,

রিদোয়ান : দোস্ত! শশুর-শাশুরীর সামনেও রোমান্স বাদ দিলি না তুই!

রাহুল : আরে একটু আগেই তো বললাম রোমান্স করতে সময় লাগে না জাষ্ট তোর মন কি বলে শোন!

রিদোয়ান : [ হেসে ] রোমান্স কিং হয়ে গেলি, তাহলে, রোমান্সের তাজটা তোকেই পড়িয়ে দেওয়া হোক!

রাহুল : উমম! নট বেড! [ বলেই গাড়ীতে উঠতে যাচ্ছিলো তখনি আবার ] আচ্ছা গাইস্! ভাবছি সামিরের কাছে আবার যাওয়া উচিৎ!

রিদোয়ান : তা কি জন্য শুনি?..

আসিফ : [ হেসে ] কাল তোর বিয়ে এটার ইনভাইট করতে!

রাহুল : আরে না! এগুলো কোনো মার হলো? ওকে আরো দিতে মন চাচ্ছে! প্লাস! ও স্নেহার বাবাকে যে টাকাগুলো দিয়েছে ঐগুলো ও ওকে রিটার্ন করবো!

আসিফ : দোস্ত এক্ষুনিই যাওয়াটা ঠিক হবে না! কাল সকালে ভার্সেটিতে পার্ফেক্ট প্লেস হবে!

রিদোয়ান : ইয়াহ! দ্যাটস রাইট!

রাহুল : [ কিছুক্ষণ চিন্তা করে ] ওকেই!

রিদোয়ান : [ গাড়ীর চাবি ছুড়ে মেরে ] ড্রাইভটাও কর দোস্ত! শুধু ভাবীর সাথে রোমান্স করলে চলবে না [ আলসেমি কেটে ] আই এম সো্ টায়ার্ড, এখন জাষ্ট পেছনে শুয়ে রিলেক্স করবো!

রাহুল : [ চাবি আসিফের দিক ছুড়ে মেরে ] কাল তোর দাওয়াত, আমার বিয়েতে চলে আসিস, দাওয়াত পাওয়ার খুশিতে ড্রাইভটাও তুই করে ফেল!

আসিফ : আমি জানতাম! চাবিটা গুড়ে ফিরে আমার কাছেই আসবে! [ রাহুল আর রিদোয়ান হেসে উঠে বসলো গাড়ীতে ]

আসিফ : তিনজন এক গাড়ীতে থাকলে কোনদিন তোরা দু-জন ড্রাইভ করেছিস বলতো?..

রিদোয়ান : ও হ্যালো! আসার সময় কে করলো?..

আসিফ : আজ! তাও আবার বিপদে পড়ে বাচার জন্যে!

রাহুল : দিজ ইস নট ফেয়ার রিদ! কখনো কখনো তুই ও কর! বেচারাকে অলোয়েজ..

আসিফ : আচ্ছা?..এমন ভাবে এডভাইস দিচ্ছিস যেনো নিজে কতোবার করে তরিয়ে ফেলেছিস!

রাহুল : [ হেসে গান ছাড়তে ছাড়তে ] আরে তোদের মতো দোস্ত থাকলে, আমার আবার কষ্ট করতে হয়?..

আসিফ : আমার বাসায় আগে যাচ্ছি! তারপর তুই ড্রাইভ করে তোর বাসায় যাবি! তারপর রিদ! ড্রাইভ করে ওর বাসায় চলে যাবে ব্যাস! [ চোখ মেরে ] ফিফটি ফিফটি ডান!

রাহুল : আরে আসিফ! আই এম অলসো্ টায়ার্ড! ইয়ার!

আসিফ : হোয়াটএভার!

রাহুল : আচ্ছা আমার বাসায় চল আজ!

আসিফ : এলকোহল চললে আসতে পারি!

রাহুল : প্রমিস করেছি স্নেহাকে!

আসিফ : তোকে কে খেতে বলছে?..আমরা খাবো! আরে সেলেব্রেটিং মুহূর্তে তো একটু চলতেই পারে,

রাহুল : তোরা খাবি আর আমি তাকিয়ে থাকবো?..

রিদোয়ান : [ কিটকিটিয়ে হেসে ] তুই চোখ বন্ধ করে স্মেল নিস দোস্ত!

রাহুল : [ মুখ ভেংগিয়ে ] স্মেলে আর কি! আচ্ছা চল!

আসিফ : [ হেসে ] তুই মুখ লাগালেই কিন্তু স্নেহার কাছে ফোন!

রাহুল : একবার তোর গার্লফ্রেন্ড হতে দে, খুব বিপদে পড়বি দেখেনিস!
– বাই দ্যা ওয়ে! এসব আমি আর এমনিতেও খায় না! যা তোরা খেয়েনিস এবার আল্লাহর ওয়াস্তে আমার বাসায়ই চল!

আসিফ : ইয়াহহ!
_______________________________________
এইদিকে, স্নেহার আশেপাশে গোল হয়ে বসে রইলো তার ফ্রেন্ডসরা!

শায়লা : ওহ মাই গড! রাহুলের কান্ডে তো আজ আমি ক্রাশই খেয়ে ফেলেছি! [ মার্জান আর জারিফা ঘুরে তাকালো ] আ..আই মিন ভাইওয়ালা ক্রাশ স্নেহা! ভাইওয়ালা! [ হেসে উঠলো স্নেহা ]

মার্জান : [ হেসে ] তোর বাবার ফেইস রিয়েকশনটাই মনে পড়ছে আমার! কি না বানিয়েছিলো ফেইস টা!

জারিফা : রাহুল যখন কিস্ দিচ্ছিলো স্নেহাকে! আয়হায়! আমার কি লজ্জা লাগছিলো!

হঠাৎ, স্নেহার মা এগিয়ে আসে রুমে,

শায়লা : আরে আন্টি বসেন না এইদিকে!

স্নেহার মা : না না..তোমরা বসো আরাম করো আমি তোমাদের জন্য রাতের খাবার রেডি করছি!

মার্জান : উম্মাহ আন্টি! থেংক ইউ থেংক ইউউউ! আহহ..কতোদিন পর আন্টির হাতের রান্না খাবো! [ স্নেহার মা মাথা নাড়িয়ে হেসে চলে যায়, জারিফা আর মার্জান মিলে হেসে হেসে মারামারিতে হয়ে যাওয়া সব ঘটনায় বলতে লাগলো শায়লাকে, হঠাৎ খেয়াল করলো স্নেহার বাবা রুমে ঢুকে হাজির! সবাই ঢোগ গিলতে লাগলো ]

শায়লা : [ চেয়ার এগিয়ে দিয়ে ] বব..বসেন আংকেল! [ চেয়ার টেনে বসলো স্নেহার বাবা, ভয়ে মাথা নিচু করে আছে স্নেহা ]

স্নেহার বাবা : কি হয়েছে?..স্নেহা কোথায় ছিলো?..

জারিফা : এ..এক্সুলি আংকেল! ঐ যে সামির আছে না! ও স্নেহাকে জোড় করে উঠিয়ে নিয়ে চলে গিয়েছিলো!

– আ..আর ওর উদ্দেশ্যটা মোটেও ঠিক ছিলো না!

মার্জান : আংকেল ও মোটেও ডিজার্ব করে না স্নেহাকে! [ নাকফুলিয়ে ] শালাকে তো দেখলেই মন চাই দু-চারটা বসিয়ে দেই! [ অবাক হয়ে তাকালো স্নেহার বাবা ] আ..আই মিন..আজ কতো বড় বিপদ এসেছিলো স্নেহার উপর, সস..সব ওরই কান্ড ছিলো আংকেল!

– যদি ঠিক মতো রাহুল না পৌছাতো, কি হতো আজ আমাদের স্নেহার!

জারিফা : [ কাদো ভাবে ] কি হতো এই ভোলাভালা মাসুম চেহেরাটার, কই থাকতো এই হাসির মুখখানি!

মার্জান : আপনি মোটেও চিন্তা করবেন না আংকেল, রাহুল আছে এখন স্নেহার সাথে, স্নেহার কিছু হতেই দিবে না ও, একটু আগেই তো দেখলেন কিভাবে ঝাটকি দিয়ে গেলো আপনাকে! [ শকড হয়ে তাকালো স্নেহার বাবা ]

শায়লা : [ চিমটি দিয়ে ফিসফিসিয়ে ] আরে! কি বলছিস এসব! তারিফ কর তারিফ!

মার্জান : [ হেসে ] মা..মানে কিভাবে সবাইকে বলে গেলো, স্নেহাকে ও কতোটা…হুমম!

জারিফা : আরে আংকেল ঐ সামিরটা দেখতে ও তো কাচকলার মতো! গাছে লটকে থাকা কালো বাদুড়ের মতো, নাকটা একদম হাতির শূরের মতো,কান দুটো খরগোশের মতো, চুল গুলো… আ..চুল গুলো..

মার্জান : [ চেচিয়ে ] শকুনের কাটার মতো,

জারিফা : হ্যা! আর পেটটা জলহস্তির মতো, ইয়া বড়, মনে হয় দশ প্লেট ভাত একসঙ্গেই খায়,আর ঘাড়টা গন্ডারের ঘাড়ের মতো,

মার্জান : আর রাহুলকে দেখেন আংকেল, পুরোই হিরার টুকরা আংকেল হিরা হিরা! যে জায়গায় পা রাখে যেনো মনে হয় ঐ জায়গায় চমকে উঠেছে, চারদিক আলোয় ভরে যায় যেমন! ও যখন চোখের পলক তুলে মেয়েদের দিক তাকায় না, সব মেয়েরায় ওর প্রেমে হাবুডুবু খেতে থাকে, আর যখন সানগ্লাস খুলে, তখন তো অনেক মেয়ে বেহুঁশই হয়ে যায় আংকেল [ জারিফার দিক তাকিয়ে ] তাই না?..

জারিফা : হ্যা! আংকেল আমাদের তো কয়েকবার অনেক মেয়েকে হসপিটাল ও নিয়ে যেতে হয়েছে

মার্জান : [ মাথা নাড়িয়ে ] হুম আংকেল! আর ও যখন গান করে না! [ হাত নাড়িয়ে ] গাছের পাতারা ও হেলেদুলে নাচতে থাকে, কি মিষ্টি সূর আংকেল, পাখিরাও তাল মেলাতে থাকে তার সাথে কিচিরমিচির কিচিরমিচির,

জারিফা : কিচিরমিচির!

মার্জান : [ চেচিয়ে ] আরে আংকেল! [ চমকে উঠলো স্নেহার বাবা ]

– আপনি জানেন না! ভার্সেটিতে হাজার মেয়ে লাইন ধরে আছে রাহুলের জন্য! তার মধ্যে ঐ বাদুড়ের বাচ্চা সামির এর বোন নেহাটাও আছে, একদম ফেভিকলের মতোই রাহুলের পেছনে লেগে পড়েছে [ চেচিয়ে ] আংকেল!

স্নেহার বাবা : [ চমকে উঠে ] হ্যা!

মার্জান : [ মুচকি হেসে ] কিন্তু রাহুল! কাউকেই কেয়ার করেনি! তার তো শুধু স্নেহাকেই চাই! স্নেহা! স্নেহা! স্নেহা! আংকেল স্নেহা ছাড়া ও কিছু বুঝেই না! [ হা করে তাকিয়ে আছে স্নেহা মার্জানের দিক ]

জারিফা : একমিনিট আংকেল আমি বলছি এবার ঐ নেহাটা দেখতে কেমন! আফ্রিকান হনুমান দেখেছেন কখনো, দেখেননি তাই তো, ঠিকাছে আপনি রুটি বেলার আগে, খামিটা ময়দায় লাগিয়ে হাতে চাপ দিয়ে চেপ্টা করতে দেখেছেন কখনো?.. [ স্নেহার বাবা মাথা নাড়ালো ]

জারিফা : হ্যা! ঐ নেহার নাকটাও একদম তেমন চেপ্টা! [ হাসি আসছিলো বাকিদের তাও কন্ট্রোল করে রাখলো ]

জারিফা : গাছে লটকে থাকা তেড়াবেকা কাঠাল দেখেছেন আংকেল, ওর ফেইসকাটিংটাও পুরো এমনিই! আর ঢং এর কথা তো বললামই না [ চেচিয়ে ] আংকেল! এত্তো এত্তো ঢং করে, মিস ওয়াল্ডের মেয়েরাও মনে হয় অতো ঢং করে না

স্নেহার বাবা : [ কনফিউজড হয়ে ] সামিরের একটা বোন ও আছে! কিন্তু আমাদের তো বললোই না!

মার্জান : আরে আংকেল! কি করে বলবে, ওর ঐ লুচ্চা বোনটা রাহুলের পাশে শুয়ে ফোটো তুলে আপনাদের আমাদের মতো ওর ভাই বাদুড়ের বাচ্চাটাকে ও বোকা বানিয়ে রেখেছে! ফটো দিয়ে ব্লাকমেইল করে রাহুলকে পেতে চাইছে এই তেড়াবেকা কাঠালের মুখখানা!

– [ চেচিয়ে ] আংকেল আপনি সিটি গোল্ড আর রিয়েল গোল্ডের ডিফারেন্টায় বুঝেননি!

– ঐ বাদুড়ের বাচ্চা সিটি গোল্ডটাকে আপনি রিয়েল গোল্ড মনে করে স্নেহাকে তার হাতে তুলে দিতে ছিলেন আংকেল, আর রাহুল! রিয়েল গোল্ড দূর থেকেই চকচক করছিলো, কিন্তু আপনার চোখের ধুলোই আপনি অন্ধ হয়ে আছেন, [ চেচিয়ে ] চোখ খুলুন আংকেল, রিয়েল গোল্ড আর সিটি গোল্ডের পার্থক্য বুঝুন!

[ জোড়ে একটি শ্বাস ফেলে উঠে পাশের রুমে চলে গেলো স্নেহার বাবা, বাকিরা হা করে তাকিয়ে আছে স্নেহার বাবার চলে যাওয়া, তিনি বেরুতে না বেরুতেই কিটকিটিয়ে হেসেই জারিফা আর মার্জানকে জড়িয়ে ধরলো স্নেহা, হাসতে হাসতে চারজনই একে অপরের গায়ে উঠে জড়িয়ে হাসতে লাগলো ]

স্নেহা : [ হেসে ] কি বলছিলি এসব তোরা হ্যা?..

শায়লা : হাসি আটকানো আর শ্বাস আটকানো একই মনে হচ্ছিলো আমার! জানটায় না বেড়িয়ে যাচ্ছিলো!

মার্জান : তোর বাবার মাথা গেছে আজ! সারারাতই চিন্তা করবে! [ বলেই হাসতে লাগলো ]

[ রাতে সবাই খাবারদাবার খেয়ে নিলো, স্নেহার বাবা আর মা চলে যেতে চাইলো, কিন্তু স্নেহার ফ্রেন্ডসরা তাদের জোড় করেই আজ রাত এইখানে থাকতে হবে বলে রেখে দিলো ]

ফ্রেশ হয়ে এসে শায়লা রুমে ঢুকতে যাবে তখনিই দেখলো স্নেহা আলমারির পাশে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে রাহুলের জ্যাকেটটা জড়িয়ে ধরে স্মেল নিচ্ছে, শায়লা ও আর কি এক সেকেন্ড ও দাড়ালো না, তাড়াহুড়ো করে জারিফা আর মার্জানকে ও ডেকে এনে দেখালো, চুপি চুপি দেখে তিনজনই কুটকুট করে হাসছে, হঠাৎ স্নেহা ঠের পেয়ে আড়চোখে তাকিয়ে তাড়াহুড়ো করে জ্যাকেটটা বটে আলমিরায় ঢুকিয়ে রাখতে যাবে তখনি মার্জান এসে ধুম করে আলমিরার দরজাটা লাগিয়ে দেই! চমকে উঠলো স্নেহা!

শায়লা : আরে মার্জান! আস্তে! পাশের রুমে আংকেল আন্টি আছে!

মার্জান : ওহ সরি সরি! [ স্নেহার দিক তাকিয়ে ] বাই দ্যা ওয়ে! স্নেহা মাই ডিয়ার! জ্যাকেটের পারফিউমটা কোন ব্রান্ডের ছিলো! হুম হুম!

স্নেহা : [ লজ্জা পেয়ে ] সর এটা রাখতে হব!

মার্জান : আরে আরে! রাখবি কেনো! নিতে থাক স্মেল! কি কিউটই তো লাগছিলো!

জারিফা : [ স্নেহার কাধে হাত রেখে ] ডোন্ট ওয়ারি! মেরি জান, জ্যাকেট থেকে আর স্মেল নিতে হবে না, [ চোখ মেরে ] কাল থেকে সরাসরিই নিবি হুমম!

স্নেহা : আরে তোরা এমনভাবে বলছিস যেনো এই প্রথমিই দেখছিস আমাকে এই জ্যাকেটটার স্মেল নিতে,

মার্জান : [ স্নেহাকে টেনে নিয়ে খাটে বসে ] আরে স্নেহা তোকে না আজ ইচ্ছে মতো জালিয়ে নিচ্ছি, কাল থেকে আর আমাদের পাবি কই?..[ মুখ গোমড়া করে ফেললো স্নেহা ]

মার্জান : [ বুঝতে পেরে ] আ..আই মিন,কাল থেকে আমরা প্রতিদিন রাতেই ফোনে গুডনাইট বলে ঘুমাবো কেমন! নতুন করেই… [ বলতেই হঠাৎ চোখ থেকে গড়িয়ে পড়লো পানি, স্নেহা ও কেদে জড়িয়ে ধরলো, বাকি দুজন ও বাদ গেলো কই, তারাও জড়িয়ে ধরে রাখলো ]

মার্জান : আরে এখন এভাবে কাদিস না কেউ! প্লিজ তখন স্নেহার বিদায়ের সময় চোখের পানি শর্ট পড়বে! [ হেসে উঠলো সবাই,রাতে চারজনই একসাথে এক খাটে শুয়ে আড্ডা দিচ্ছিলো, হঠাৎ বেজে উঠলো স্নেহার ফোন, স্নেহা রিসিভ করতেই যাবে তখনিই ]

জারিফা : [ কেড়ে নিয়ে ] ওহো মিষ্টার তেডি স্মাইল! রিয়েলি?..এই নামে সে্ইভ করেছিস! [ সবাই কিটকিটিয়ে হাসতে লাগলো ]

স্নেহা : এইদিকে দে ফোন!

জারিফা : ওয়েট ওয়েট! বাবা এতোটাও জলদি কিসের! [ বলেই রিসিভ করলো ]

রাহুল : হ্যালো!

জারিফা : হ্যা! কে বলছেন?..

রাহুল : এক্সকিউজ মি! কে বলছি মানে?..

জারিফা : হ্যা! আপনি আগে ফোন করেছেন তাই আপনিই আগে বলেন কে আপনি কাকে চাই?..

রাহুল : [ হেসে ] অও! নটি কোম্পানির দল তোমরা? আমার স্নেহা কোথায়?..

জারিফা : আপনার স্নেহা?..স্নেহাটা আবার কে.. এই নামের কাউকে তো চিনিনা!

রাহুল : চেনা লাগবেও না! কাল থেকে মিসেস রাহুল নামেই চিনবা!

জারিফা : ওহো! [ বলেই মার্জান আর শায়লাকে কাছে ডেকে নিলো এবং সবাই একসাথেই বলে উঠলো ] স্নেহা! ইউ আর মাই হার্ট, ইউ আর মাই ব্রেথ, ইউ মাই হার্টবিট, ইউ মাই সফটেড মিউজিক, ইউ আর মাই এব্রথিং

রাহুল : [ হেসে ] শাট-আপ এব্রিওয়ান!

জারিফা : বাই দ্যা ওয়ে জিজু! আপনার নাম্বার কি নামে সেভ করেছে বলেন তো?..

রাহুল : ডোন্ট নো!

জারিফা : উফফো জিজু ডোন্ট নো না! মিষ্টার তেডি স্মাইল!

রাহুল : রিয়েলি?..

জারিফা : ইয়েস্

রাহুল : তাহলে আমিও মিসেস তেডি স্মাইল দিয়ে সেভ করে ফেলি!

জারিফা : হাউ কিউট!

রাহুল : আচ্ছা এবার দাও ওকে!

জারিফা : উমহুম নেভার!

রাহুল : আরে একটু দয়া করো প্লিজ!

জারিফা : ওয়ান কন্ডিশন!

রাহুল : ডান! ডান!

জারিফা : আরেহ না শুনেই ডান? আগে শুনুন তো!

রাহুল : আচ্ছা আমার মা বলো!

জারিফা : কাল! আপনার বিয়েতে বিগ বাজেট রাখবেন! নাহলে আপনাকে স্নেহার সামনে এন্ট্রি করতে দেবো না!

রাহুল : [ হেসে ] অও ওখেই!

জারিফা : ডান?..

রাহুল : হান্ড্রেট পার্সেন্ট!

জারিফা : হাউ সুইট মাই জিজু! ওকে নিন! [ বলেই স্নেহাকে দিয়ে দিলো ফোন ]

স্নেহা : [ উঠে বারান্দায় গিয়ে ] হ্যালো!

চলবে…

Love At 1st Sight Season 3 Part – 43

0

Love At 1st Sight
~~~ Season 3~~~

Part – 43

writer-Jubaida Sobti

রাহুল : হ্যালো!

মার্জান : হ্যালো! পেয়েছেন স্নেহাকে?..

রাহুল : না এখনো পাইনি আই ডোন্ট নো হয়ার ইজ শি! বারবার বলেছিলাম একা বের হবা না বাট আমার কথা কেয়ারই করলো না!

মার্জান : আ..আচ্ছা!

রাহুল : পেলে জানাবো!

মার্জান : ওকে! [ ফোন কেটে রাগান্বিত ভাবে পাশের সিটে ছুড়ে মারলো রাহুল, ফাষ্ট ড্রাইভিং করছে, তাও যেনো পথ ফুরাচ্ছেই না ]
_______________________________________
শায়লা : কি বললো রাহুল?..

মার্জান : [ চিন্তিত ভাবে ] এখনো পাইনি! রাহুল ও অনেক রেগে আছে,

শায়লা : রাগারই তো কথা, তখন আসলে ওকে আমাদের যেতে দেওয়া উচিৎ ছিলো না! রাহুল যখন নিষেধ করেছিলো নিশ্চয় কোনো কারণ ছিলো তাই হয়তো নিষেধ করেছে!

মার্জান : আমিও তাই ভাবছি! এ..এক সেকেন্ড [ বলেই ফোনটিপে আবার জারিফাকে কল দিলো ]

জারিফা : হ্যা মার্জান বল?..

মার্জান : জারিফা! স্নেহাকি তোর সাথে আছে?..

জারিফা : স্নেহা? ওকে তো অনেক আগেই পৌছেদিলাম!

মার্জান : আচ্ছা?..

জারিফা : কেনো কি হয়েছে? সব ঠিকাছে তো?..

মার্জান : কিছুই ঠিক নেই! রাহুল ওকে রিসিভ করতে গেলো, কিন্তু গিয়ে দেখে ও নেই,

জারিফা : নেই মানে?..

মার্জান : হুমম! ভাবলাম তুই কিছু জানিস নাকি একটু চেক করে দেখি! কিন্তু তুই ও তো দেখছি কিছু জানিস না,তাহলে গেলো কই!

জারিফা : আরে এমনি কেমনি নেই! গেলো কই ও?..

মার্জান : আই ডোন্ট নো! [ কাদো ভাবে ] আমারই দোষ ছিলো কেনো যে তখন ওকে পাঠালাম!
– আচ্ছা আমি এখন রাখছি পরে কথা হবে! [ বলেই কেটে দিলো ]

শায়লা : [ অবাক হয়ে ] কোথায় যাচ্ছিস?..

মার্জান : [ ব্যাগ কাধে নিয়ে ] তাহলে কি বসে থাকবো?ওকে আমরা পাঠিয়েছি দোষ আমাদের!

শায়লা : কিন্তু কোথায় খুজবি?..

মার্জান : ওর মামার বাসায় গিয়ে আরেকবার চেক করে আসি, উফফ আর যেখানেই খুজতে হয়না কেনো! খুজতে তো হবেই!

শায়লা : আচ্ছা চল আমিও যাবো!

মার্জান : নাহ তুই থাক, জারিফা এক্সট্রা চাবি নিয়ে যায়নি! যদি বাসায় আসে দরজা কে খুলবে! তুই থাক,

শায়লা : আচ্ছা সাবধানে যাস! [ বেড়িয়ে গেলো মার্জান ]
_______________________________________
এইদিকে, গাড়ী চলছে,জারিফাও টেনশনে পড়ে গেলো,
– [ মনে মনে ] কোথায় হবে স্নেহা! উফফ কেনো যে একা রেখে এলাম ওকে! আমার ও সাথে থাকা উচিৎ ছিলো,

রিদোয়ান : কি হয়েছে? অনেক টেনশনে মনে হচ্ছে?

জারিফা : স্নেহাকে পাওয়া যাচ্ছে না! রাহুল ওকে খুজে বেড়াচ্ছে, না জানি কই আছে,

রিদোয়ান : হোয়াট?.. পাওয়া যাচ্ছে না মানে কি?..

জারিফা : [ চেচিয়ে ] সেটাই তো!

রিদোয়ান : আচ্ছা ওয়েট আমি দেখছি! [ বলেই মোবাইলটা এগিয়ে নিয়ে রাহুলকে ফোন দিলো ]
_______________________________________
ফোন বেজে উঠলো রাহুলের,

রাহুল : [ বিরক্তি হয়ে ] ডেম ইট! আবার কে! [ হাত বাড়িয়ে পাশের সি্ট থেকে এগিয়ে নিলো ফোনটা ]

আসিফ : রাহুল! কোথায় তুই দোস্ত ? কখন থেকে বসে আছি সব আ্যরেঞ্জ করে, [ হেসে ] এবার বল আমাদের ভাবিকে নিয়ে কবে আসছিস [ চুপ করে রইলো রাহুল, কথাটা শুনতেই বুকটা মোচোড় দিয়ে উঠলো ]

আসিফ : কি হলো? কিছু বলছিস না কেনো?

রাহুল : [ কাদো ভাবে ] আরে ওকেই তো পাচ্ছি না!

আসিফ : [ শকড হয়ে ] এটা কি বলছিস?..

রাহুল : [ রাগান্বিত ভাবে দাতকিলিয়ে ] সামির!

আসিফ : ওহ নো! কই আছিস এখন?..

রাহুল : নেহার বাসায় যাচ্ছি!

আসিফ : ওকে আমি আসছি!

রাহুল : লিসেন্ট! গাড়ীর পেট্রোল ও বোতোলে ভরে আনিস! ইজিলি মুখ খুলবে না, মাথার রাগ সব ওকে জালিয়ে ঠান্ডা করবো,

আসিফ : ওকে ডোন্ট ওয়ারি! রিলেক্স থাক, [ রাহুল ফোন রাখবে ঐটাইমেই রিদোয়ানের কল এসে হাজির ]

রিদোয়ান : কার সাথে কথা বলছিলি ?

রাহুল : আসিফ!

রিদোয়ান : পেয়েছিস! স্নেহাকে?

রাহুল : নো! ব্যাস যাচ্ছিই..

রিদোয়ান : কোথায়?

রাহুল : ঐ শেমলেস্ লেডির কাছে!

রিদোয়ান : [ অবাক হয়ে ] নেহার বাসায়?.. কিন্তু ওর বাসায় কেনো?..

রাহুল : এখন কিছু আস্ক করিস না দোস্ত!

রিদোয়ান : আচ্ছা চিন্তা করিসনা! বাট আমার মনে হয়, নেহার কাছে না গিয়ে ডিরেক্ট সামিরের কাছে যাওয়া উচিৎ নিশ্চয় ওই স্নেহাকে,আই মিন বুঝতে পারছিস তো!

রাহুল : আই ডোন্ট নো হয়ার ইজ সামির! এন্ড আই এম ডেম শিয়র! স্নেহা সামিরের সাথেই আছে, সো্ সামির কোথায় এটা জানার একমাত্র ওয়ে হচ্ছে নেহা!

রিদোয়ান : দ্যাটস্ দ্যা পয়েন্ট! আচ্ছা ওকে তুই ফোন রাখ! [ বলেই কেটে দিলো ]

জারিফা : কি হলো?ঐ সামিরই নিয়ে গেছে স্নেহাকে তাই না!

রিদোয়ান : হুম!

জারিফা : [ কাদো ভাবে ] যেটা ভাবিওনি সেটাই হয়ে গেলো! নাজানি স্নেহা কোন অবস্থায় আছে, [ চেচিয়ে ] আর আপনি করছেনটা কি?চলেন তাড়াতাড়ি সামিরের কাছে,

রিদোয়ান : আরে টেনশন নিচ্ছো কেনো! কিছু হবে না স্নেহার! [ বলেই গাড়ী ফাষ্ট ড্রাইভ করে নেহার বাসায় এসে পৌছালো ]

জারিফা : এটা কার বাড়ি!

রিদোয়ান : তুমি গাড়ীতে থাকো বের হবা না! আমি আসছি!

জারিফা : বাট আপনি কোথায় যাচ্ছেন?

রিদোয়ান : জারিফা! এটা নেহার বাসা!

জারিফা : [ চেচিয়ে ] আপনি এই পেত্নীর বাসায় কেনো আনলেন এইখানে কাজ কি?..

রিদোয়ান : দেখো! এখন এতোকিছু বলার টাইম নেই! আমি তোমাকে সব পরে বুঝিয়ে দিবো! ব্যাস দয়া করে গাড়ী থেকে নেমো না!

জারিফা : কিন্তু আপনাদের যদি আমার প্রয়োজন হয়? [ আড়চোখে তাকালো রিদোয়ান ]

জারিফা : আচ্ছা আচ্ছা! ঠিকাছে! [ রিদোয়ান বেড়িয়ে এলো গাড়ী থেকে, তাড়াহুড়ো করে এগিয়ে গিয়ে নেহার বাসার বেল বাজালো, সারভেন্ট এসেই দরজা খুললো, রিদোয়ান ভেতরের দিক তাকালো কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলো না, তাহলে গেলো কই বাকিরা]

রিদোয়ান : নে..নেহা কোথায়?

সারভেন্ট : মেম রুফটফে আছে, এক্সারসাইজ করছে!

রিদোয়ান : আ..আর কেউ আছে সাথে?..

সারভেন্ট : দু-জন ফ্রেন্ড এসেছে! রুফটপেই আছে!

রিদোয়ান : ওকে থেংক্স [ বলেই হুটহাট করে শিরি বেয়ে রুফটপে উঠে পড়লো, সামনে এগুতেই থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে, রাহুল বসে আছে চেয়ারে দু-হাত একসাথেই মুচরামুচড়ি করছে, আসিফ দাঁড়িয়ে আছে পকেটে হাত রেখে, নেহা হেসে হেসে দাঁড়িয়ে জুস খাচ্ছে ]

নেহা : [ চেচিয়ে ] ওয়াওও হোয়াট এ সারপ্রাইজ রিদ! কাম কাম,ব্যাস তোরই কমতি ছিলো,বল কি নিবি?..চা,কফি,জুস?.. [ রিদোয়ান অবাক হয়ে রাহুলের দিক তাকালো ]

নেহা : আরে ওদের দিক তাকিয়ে কি দেখছিস?ওদের অনেক্ষণ ধরেই আস্ক করে যাচ্ছি কি নিবে কিন্তু ওদের মুখে সেই একই কথা!

রাহুল : [ রাগান্বিত ভাবে দাঁড়িয়ে ] দেখ নেহা! তুই মেয়ে! সো আমি চাই না তোর গায়ে হাত তুলতে!

নেহা : [ রাহুলের কাছে এসে ] বাট আমি চাই রাহুল! তুই আমার গায়ে হাত তুল [ নিজের গলায় নিজে স্লাইড করে ] এভাবে আদর করে!

রাহুল : [ নেহার হাতে বাড়ি মেরে জুসের গ্লাসটা ফেলে দিয়ে ] লিসেন্ট লাষ্ট ওয়ার্নিং

নেহা : বাট রাহুল! আই লাভ ইউ..[ চেচিয়ে কেদে কেদে ] আমিতো ওর আগে থেকেই তোকেই ভালোবেসেছি! এখনো বাসি, কই আমার জন্য তো কখনো এভাবে অস্থিরতা বোধ করিসনি…

রাহুল : [ দাতকিলিয়ে ] বিকজ আই ডোন্ট লাভ ইউ! ইনফ্যাক্ট আই হেট ইউ!

নেহা : [ মাথা নাড়িয়ে ] ইয়াহ! আই নো ওর জন্য! তাই না? [ চেচিয়ে ] ওর জন্যই এখন আমাকে হেট করছিস!

রাহুল : [ নেহার হাত চেপে ধরে ] লিসেন্ট আমি তোর সাথে এসব ফালতু কথা বলে টাইমওয়েষ্ট করতে আসিনি বল সামির কোথায়?..

নেহা : বলবো না! যদি তুই আমার না হস! তাহলে আর কারো হতে পারবি না সেটার জন্য কারো জানই যদি নিতে হয় তাও আমি রাজি [ প্রচন্ড রাগ উঠছে রাহুলের নেহার কথা শুনে,ইচ্ছে করছিলো এই মুহুর্তেই মেরে লাশ বানিয়ে দেবে, কিন্তু মেয়েদের গায়ে হাত তোলার অভ্যাস নেই রাহুলের, তাই বেচে গেলো, নাহলে এতোক্ষণে ওর ফেইস আয়নার সামনে ও নিজেই চিনতে পারতো না, রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে আশেপাশে যতোসব চেয়ার, টেবিল,আম্ব্রেলা ছিলো সবই টেনে লাত্তি মেরে মেরে ভাংগতে শুরু করলো ]

আসিফ : রাহুল! কন্ট্রোল! [ মুখে হাত রেখে মাটিতে বসেই ফুফিয়ে কেদে উঠলো রাহুল, চোখ-নাক-মুখ সবই লাল হয়ে গেছে, সকালে স্নেহার সাথে কাটানো মুহুর্তগুলোই মনে পড়ছে বারবার, স্নেহার ব্লাশিং করা চেহেরাটা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই ভেতরের কলিজাটা মুচড়ে যাচ্ছে, বাচ্চা ছেলেদের মতো হাত দিয়ে ঘষে চোখ মুছে উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে এলো নেহার দিক ]

রাহুল : প্লিজ! নেহা! দেখ..জোড় করে ভালোবাসা হয়না! সেটা মন থেকে আসতে হয়, তোকে দেখে আমার ঐ ফিলিংসটাই কখনো আসেনি যেটা স্নেহার জন্য আসে প্লিজ বল কোথায় নিয়ে গেছে সামির স্নেহাকে?[ মুচকি হাসলো নেহা ]

নেহা : বাট আমার তো তোকে দেখে ঐ ফিলিংসটা আসে রাহুল! [ চেচিয়ে ] তাহলে আমার কি হবে? [ বিরক্তি হয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো রাহুল ]

রাহুল : [ চিৎকার করে ] দ্যাটস! নট মাই ম্যাটার নেহা! তোর কি হবে তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না, বাট স্নেহার যদি কিছু হয় তাহলে তখন..

– [ জোড়ে একটি শ্বাস ফেলে ] তাহলে তখন কেনো এক্ষুনি দেখ কি করি… [ রাহুল ইশারা করলো আসিফকে, আসিফ ফোন কানে দিয়ে ওপাশ সরে গেলো ]

নেহা : [ রাহুলের জ্যাকেট ধরে ] লিসেন্ট রাহুল! আই রিয়েলি লাভ ইউ! দেখ! আমি সত্যিই তোকে অনেক ভালোবাসি! আ..আমি তোকে স্নেহার চেয়েও অনেক ভালোবাসি…

রাহুল : [ চেচিয়ে ] গেট লষ্ট! [ বলেই ধাক্ষা দিলো নেহাকে ]

রিদোয়ান : দেখ নেহা! তুই বাচ্চা নাকি?..সবই তো বুঝিস! তাহলে এমন কেনো করছিস?.

রাহুল : [ রাগান্বিত ভাবে আসিফের দিক এগিয়ে গিয়ে ] হোয়ার ইজ ইট?..হ্যা?..

আসিফ : ড্রাইভার আনছে!

রাহুল : ড্রাইভার এর দরকার নেই আমিই আনছি [ বলেই দৌড়ে অর্ধেক শিরি নামতেই দেখে ড্রাইভার পেট্রোল এর বোতোল নিয়ে উঠছে, রাহুল দৌড়ে গিয়ে বোতোল কেড়ে নিয়ে উপরে উঠলো, রিদোয়ান আর আসিফ তাকিয়ে আছে চুপ করে, রাগে ফুফাতে লাগলো রাহুল, এদিকওদিক না তাকিয়ে সোজা গিয়ে বোতোল খুলে পেট্রোল সব নেহার গায়ে ঢালতে লাগলো শকড হয়ে তাকিয়ে আছে নেহা ]

নেহা : [ চেচিয়ে ] হোয়াট দ্যা হেল রাহুল! কি করছিস এসব!

রাহুল : তোকে জ্বালাবো এখন! আর আমার রাগ মেঠাবো!

নেহা : দেখ এসব নিয়ে মজা করিস না!

রাহুল : [ চিৎকার করে ] তখন থেকে এটাই তো বলে যাচ্ছি! এসব নিয়ে মজা করিস না না..আমি সিরিয়াসলি আস্ক করছি সিরিয়াসলি জবাব দে![ ভয়ে চমকে উঠলো নেহা ] লিসেন্ট আই এম নট কিডিং! [ বলেই পকেট থেকে লাইটার বের করলো ]

নেহা : দেখ আমি কিন্তু পুলিশকে ফোন দিবো!

রাহুল : তো দে! পুলিশের ট্রেড দিচ্ছিস আমায়?

নেহা : মা..মাই ফোন! [ বলেই পাশফিরে তাকিয়ে মুখ গোমড়া করে ফেললো, অলরেডিই রাহুল তখন টেবিল লাত্তি মারতে গিয়ে নেহার ফোন ভেংগে ফেলেছে ]

রাহুল : লাষ্ট বার বলছি নেহা! সামির স্নেহাকে কোথায় নিয়ে গেছে? [ চুপ করে থমকে দাঁড়িয়ে রইলো নেহা, রাহুল ও অপেক্ষা করছে নেহার জবাবের, দুই থেকে তিন মিনিট পেড়িয়ে গেলো, কিন্তু নেহা সাইলেন্টই রয়ে গেলো কোনো জবাবই এলো না ]

রাহুল : ওখে আই আন্ডারস্ট্যান্ড! [ বলেই লাইটার এর সুইচ চাপ দিলো, সাথে সাথেই ফায়ার জ্বলে উঠলো লাইটারের, বুক ধরে উঠলো নেহার, চোখ বড় করে শকিং হয়ে তাকিয়ে রইলো রাহুলের হাতের দিক ]

রিদোয়ান : আরে রাহুল! অতো কি ভাবছিস ছুড়ে ফেল! [ রাহুল হাত নড়াচড়া করতেই ]

নেহা : [ হুট করে রাহুলের হাত ধরে ফেলে ] নো রাহুল! আ..আ..আমি ব..বলছি!

রাহুল : থিংক নেহা আমার তোকে মারতে হাত কাপছে না আর ভালোবাসা তো অনেক দূরের কথা! সো্ ওভার এক্টিং কম কর! আমার কাছে এসব দেখার টাইম নেই!

নেহা : সি..স্লিভিং স্টেডিয়ামের পাশে!

আসিফ : [ চেচিয়ে ] সানফ্লাওয়ার গার্ডেন? [ নেহা মাথা নাড়ালো,দৌড়ে নেমে পড়লো রাহুল,পেছন পেছন আসিফ আর রিদোয়ান ও নামলো, আসিফ ড্রাইভার কে পাঠিয়ে দিয়ে রাহুলের গাড়িতেই উঠে বসলো, রিদোয়ান গিয়ে তার গাড়িতে উঠলো ]

জারিফা : কোথায় ছিলেন এতোক্ষণ?..

রিদোয়ান : জারিফা বললাম না সব পড়ে বলবো! ব্যাস এটা জেনে নাও স্নেহাকে কোথায় নিয়ে গেছে এটা জেনে গেছি এখন জাষ্ট ওখান থেকেই ওকে আনতে যাচ্ছি!

জারিফা : কিন্তু আপনারা ডিরেক্ট সামিরকেই ফোন দিলে তো পারেন!

রিদোয়ান : আসিফ থেকে শুনলাম ফোন অফ! ট্রেস করার ভয়ে শালা বন্ধ করে রেখেছে! [ আর কিছু বললো না, জারিফা চুপ করে আছে, হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো ]

জারিফা : হ্যালো!

মার্জান : এতোবার কল দিচ্ছিলি কেনো ?..

জারিফা : আর তুই রিসিভ করছিলি না কেনো?

মার্জান : আরে আমি স্নেহার মামার বাসায় ছিলাম কথা বলছিলাম তাদের সাথে তাই রিসিভ করতে পারিনি!

জারিফা : বাট স্নেহাকে তো ঐ সামির শয়তানটা নিয়ে গেছে!

মার্জান : [ শকড হয়ে ] হোয়াটটট?…

জারিফা : হুম কিন্তু চিন্তা করিসনা আমি যাচ্ছি ওকে আনতে..

মার্জান : তুই যাচ্ছিস ওকে আনতে হ্যা?..এটা ভিডিও গেমস চলছে?..

জারিফা : নাহ..মানে রাহুল,রিদোয়ান, আসিফ ওরা ও..আছে!

মার্জান : আচ্ছা কোথায় যাচ্ছিস এড্রেস বল?..

জারিফা : [ রিদোয়ানের দিক তাকিয়ে ] আ..আমরা কোন জায়গায় যাচ্ছি?..

রিদোয়ান : সানফ্লাওয়ার গার্ডেন!

জারিফা : [ ফিসফিসিয়ে ] সানফ্লাওয়ার গার্ডেন!

মার্জান : ডেটিং করতে নিয়ে গেছে নাকি শালা! সানফ্লাওয়ার গার্ডেন কেনো নিয়ে গেছে! ওকে তো আজ আমি…[ বলেই ফোন কেটে দিলো, জারিফা কনফিউজড হয়ে ফোনের দিক একবার তাকিয়ে আবার ব্যাগে ভরে নিলো ]
_______________________________________
একঘন্টা হয়ে গেলো,সন্ধ্যা গভীর হতে চলছে,
এইদিকে টেবিল সাজানো রয়েছে হরেকরকমের ক্যান্ডেলাইট,স্নেহা চেয়ারে বসে আছে,আর ফুফিয়ে কেদে কেদে চোখ থেকে পানি ফেলছে,

সামির : ওহ কামঅন স্নেহা! আমি তোমাকে কিডন্যাপ করেছি নাকি? জাষ্ট তোমার সাথে কিছু টাইম স্পেন্ড করতে এলাম! কতো কিছুই অর্ডার করলাম কিছুই খেলে না,আর তুমি কিনা সেই কখন থেকে কেদে চলছো [ বলেই স্নেহার সামনে চলে আসা চুলগুলো সরিয়ে দিতে চাইলো, সাথেসাথেই স্নেহা হাত ঝাড়ি দিয়ে সরিয়ে দিলো ] দেখো, তুমি কেদো না,আমি তোমাকে বিয়ে করবো না, বাট এক রাত তোমার সাথে স্পেন্ড করবো!

স্নেহা : [ দাঁড়িয়ে গিয়ে ] আপনি খারাপ জানতাম কিন্তু এতোটা খারাপ ভাবিওনি!

সামির : [ হেসে ] আরে খারাপের কি হলো?

স্নেহা : দেখেন আমার ফোন দেন প্লিজ! [ বলতেই সামির স্নেহার ফোনটা জোড়ে ছুড়ে ফেললো সাথে সাথেই ফোন ভেংগে দু-খন্ড হয়ে গেলো ]

স্নেহা : আরে আপনি কি করছেন এসব?..

সামির : [ রাগান্বিতভাবে স্নেহার কাছে এসে ] এখনো কিছু করিনি, আর কি বললে আমি খারাপ? তাই না? কেনো আমার সাথে রাত কাটালে তোমার আশিক তোমাকে মেনে নেবে না? বিয়ে করবে না তোমায়?..

স্নেহা : দে..দেখেন প্লিজ! এসব বাজে ক..কথাবার্তা আমার সাথে বলবেননা!

সামির : বাজে তাই না? তাহলে দেখিয়েই দেবো আজ বাজে কি জিনিষ! যতোটুকু না কষ্ট আমার বোন পেয়েছে তোমার অবস্থা দেখে তারচেয়ে দিগুণ কষ্ট তোমার আশিককে পেতে হবে!

স্নেহা : [ কাদোভাবে ] দেখেন আপনি কি বলছেন আমি কিছুই বুঝছি না প্লিজ আমাকে যেতেদিন!

সামির : [ স্নেহার হাত ধরে ] এসব আমার জন্য নতুন কিছুই না! স্নেহা! তবে জোড় করে কখনো কোনো মেয়েকে নেওয়া হয়নি! আজ এটার এক্সপেরিয়েন্স ও হয়ে যাবে সাথে তোমার রাহুলের করা ভুলের রিভেঞ্জ!

স্নেহা : রা..রাহুল কি ক্ষতি করেছে আপনাকে? কখন থেকেই একই কথা বলে যাচ্ছেন, কি করেছে ওটাতো বলেন!

সামির : কি করেছে ওটা মুখে বললে তো মজা নেই! ও যেমন হাল করেছে আমার বোনের আমিও তেমন হাল করবো তোমার, তারপর ও বুঝবে কষ্ট কি জিনিষ!

স্নেহা : কেক..কে..আপনার বোন? কিক..কি করেছে? [ সামির আর কোনো জবাবই দিলো না স্নেহাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো তার গাড়ির দিক ]

স্নেহা : [ হাত ঝাড়ি মেরে ছুটিয়ে ] কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আপনি?

সামির : [ চেচিয়ে ] চুপপ! একদম আওয়াজ করবা না [ শান্ত গলায় ] কামঅন স্নেহা সবাই ভাবছে আমরা কাপল এসেছি! আর তুমি এমন করলে ওরা কি ভাববে বলোতো? [ মুচকি হেসে ] আর তুমি চেচালেও তোমাকে কেউ বাচাতে আসবে না, সবাই সবার পার্টনার নিয়ে ব্যস্ত! সো্ কাম উইথ মি!

স্নেহা : প্লিজ দেখেন আপনি [ বলতেই হঠাৎ কাচের একটি বোতোল এসে পড়লো সামিরের মাথায় ভয়ে চমকে উঠলো স্নেহা, সামির শকড হয়ে মাথায় হাত রেখে পেছনে ফিরে তাকালো ]

রাহুল : উপসস্ সরি সামির! আই থট অন্য কেউ ছিলো! [ স্নেহা ফুফিয়ে কেদে দৌড়ে ঝাপিয়ে জড়িয়ে ধরলো রাহুলকে, রাহুল ও আগলে নিলো ]

স্নেহা : [ কাদো কন্ঠে ] এতো লেইট করেছেন কেনো আসতে হ্যা! জিকির করার মতো আপনার নাম মনে করছিলাম, [ বলে বলেই কাদতে লাগলো, রিদোয়ান আর আসিফ হেসে উঠলো স্নেহার কান্ডে, আশেপাশের কয়েকজন তাকিয়ে আছে, সামিরের দিক তাকিয়ে চোখ টিপ মারলো আসিফ, নাক ফুলিয়ে তাকিয়ে আছে সামির ]

রাহুল : [ স্নেহার মাথায় হাত বুলিয়ে ] ওকে ডোন্ট ক্রাই!

স্নেহা : [ কেদে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ] আম সরি রাহুল! আমার একদমি বের হওয়া উচিৎ ছিলো না,আর কখনো হবে না এমন প্রমিস!

রাহুল : [ দু-হাত দিয়ে স্নেহার মাথা তুলে ধরে ] রিলেক্স স্নেহা! ইটস ওকে! যাও ওদিকে গাড়ী আছে ওখানে গিয়ে বসে পড়ো!

স্নেহা : কিন্তু আপনি?

রাহুল : আসছি! ওর চেহেরার পেন্টিং করে!

রিদোয়ান : আরে সামির তুই আর জায়গা পেলিনা, ড্রাইভ করতে করতে আমার হাত ব্যাথা হয়ে গেলো,কাছাকাছি কোথাও বুকিং করতি,

রাহুল : গো্ স্নেহা! [ স্নেহা আর কিছু বললো না কিছুটা দূর হেটে এগিয়ে যাওয়ার পর আবারো কাচ ভাংগার শব্দ এলো,তাড়াতাড়ি ফিরে তাকিয়ে দেখে, রাহুল সামিরের মাথায় আবারো কাচের বোতোল ভাংগলো সামির রাহুলের জ্যাকেট মুচড়ে ধরে ছিলো, রক্ত বেয়ে পড়ায় মাথায় হাত দিয়ে চেয়ারে বসে পড়লো সামির, থমকে চেয়ে আছে স্নেহা ]
_______________________________________
এইদিকে, ১০মিনিট হয়ে গেলো, গাড়ীতে বসে অপেক্ষা করছে জারিফা, টেনশনে মাথাটা ছায় হয়ে যাচ্ছে তার, এখনো তারা আসেনি স্নেহাকে নিয়ে, হঠাৎ গাড়ীর সামনে দিয়ে চেনা কেউ হেটে চলে যাচ্ছে এমন কাউকে দেখতে পেলো, উকি মেরে নামবে কি নামবে না আবার ভাবতে লাগলো, সাথেসাথে ফোনটা বেজে উঠলো,

জারিফা : হ্যালো!

মার্জান : ইডিয়ট জারিফা! কোথায় মরেগেছিস তোরা কাউকেই দেখতে পাচ্ছিনা!

জারিফা : তুই এইখানেই?

মার্জান : হ্যা! এক্ষুনি এসে পৌছেছি কিন্তু তোরা কই? পেয়েছিস স্নেহাকে? আমার তো জানই বেড়িয়ে যাচ্ছে!

জারিফা : এ..একমিনিট দাড়া [ বলেই গাড়ি থেকে নেমে দাড়িয়ে ] ডানদিকে দেখ, [ মার্জান ডানদিক ফিরে তাকাতেই দেখে জারিফা হাত নাড়াচ্ছে, দৌড়ে এগিয়ে গেলো মার্জান ]

মার্জান : ওরা কই? স্নেহা কোথায় পেয়েছে?..

জারিফা : আমাকে সাথে নিয়ে গেলেই তো জানবো!

মার্জান : আচ্ছা বল কোনদিকে গেছে [ জারিফা আংগুল দিয়ে দেখাতেই মার্জান আর এক সেকেন্ড ও ভাবলো না দৌড়ে চলে গেলো ঐদিকটা, জারিফার ও আর মন মনছিলো না কি আর করার সেও পেছন পেছন এগিয়ে গেলো মার্জানের ]
_______________________________________
[ স্নেহা পিছিয়ে যাচ্ছিলো এসব মারামারি দেখতে না পেরে হঠাৎ জোড়ে কারো সাথে ধাক্ষা খেয়ে চমকে উঠলো ]

মার্জান : [ অবাক হয়ে ] স্নেহা! তুই! থেংক গড ঠিকাছিস!

স্নেহা : মার্জান! [ বলেই জড়িয়ে ধরলো ]

জারিফা : সরি স্নেহা! আমাদের আসলে তোকে পাঠানো উচিৎ হয়নি!

মার্জান : হ্যা তোকে না পাঠালে হয়তো আজ এসব হতো না!

স্নেহা : আরে তোরা নিজেকে কেনো দোষ দিচ্ছিস! ভুলটা আমারই ছিলো!

মার্জান : [ রাগান্বিত ভাবে ] ভুল তোর না ভুল তো ঐ শয়তানটা করেছে ওকে তো আমি আজ [ বলেই দৌড়ে এগিয়ে গেলো ]

স্নেহা : আরে মার্জান শোন! [ মার্জান দৌড়ে সামিরের দিক এগিয়ে যাচ্ছিলো ঐ টাইমেই ]

আসিফ : [ মার্জানের হাত টেনে ধরে আটকিয়ে ] আরে তুমি?তোমরা এইখানে কি করছো!

মার্জান : [ চেচিয়ে ] ছাড়েন! আমাকে ওকে তো আজ আমিই মেরেই শান্তি পাবো! শয়তান একটা তোর এতোবড় সাহস! আমার ফ্রেন্ডকে তুলে এনেছিস তুই! কে দিলো তোকে এই সাহস [ আসিফের হাত ছুটাতে ছুটাতে ] আরে ছাড়েন বলছি,

আসিফ : [ মার্জানকে আলগে ধরে টেনে একপাশে নিয়ে গিয়ে ] আরে পাগল হয়ে গেছো তুমি শান্ত হও! আমরা দেখছি!

মার্জান : দেখছেন মানে? এমনি এমনি যদি আজ ওকে ছেড়ে দেওয়া হয় না! আমিই আপনার ব্যান্ড বাজিয়ে দিবো বলেদিলাম!

আসিফ : ওকে! এইদিকেই থাকো! সলভ করছি আমরা! [ নাকফুলিয়ে দাড়িয়ে আছে মার্জান, পাশে জারিফা আর স্নেহা ও এসে দাড়ালো, কি কি যেনো কথা হচ্ছে রাহুল আর সামিরের মধ্যে কিছুই শোনা যাচ্ছিলো না জাষ্ট একটু একটু শোনা যাচ্ছে, মার্জান কৌতুহলি ভাবে একপা একপা এগিয়ে কান পেতে রইলো ]

স্নেহা : দেখ মার্জান ওরা করছে যা করার! এতো সামনে যাস না বলা যায় না কি হয়! একটু আগেই দেখছিলাম রাহুল ডিম ভাংগার মতো, সামিরের মাথায় কাচের বোতোল ভাংছিলো [ বলতেই সাথেসাথে আবারও কাচভাংগার শব্দ এলো, চমকে উঠে তাকালো স্নেহা ]

মার্জান : [ শিস বাজিয়ে ] ওহো গ্রেট গ্রেট রাহুল! আরো কয়েকটা ভাংগো ওর মাথায়! কেমন নির্লজ্য ছেলে দেখ মার খেয়ে ও হাসছে!

জারিফা : আরে কি যেনো বলছে শুনতে দে না! [ বলেই কান পেতে রইলো সবাই ]
_______________________________________
রাহুল : [ দাতকিলিয়ে ] হ্যা! আমি মানছি আমি ডেট করেছি ওর সাথে তবে কন্ডিশন অনুযায়ী, কিন্তু ঐদিন রাতে তেমন কিছুই হয়নি যেমনটা তোকে বলেছে [ চেচিয়ে ] আমি নেহার সাথে চিট করিনি!

সামির : আচ্ছা! তো দিয়ে দে স্নেহাকে! আমিও এক-দু-মাস ডেট করে একরাত কাটিয়ে, বলবো ঐদিন রাতে তেমন কিছুই হয়নি রাহুল যেমনটা তোর স্নেহা বলছে!
[ রাহুল সামিরের গলা চেপে কাচ ভাংগা বোতোলটা গলায় ধরতেই রিদোয়ান রাহুলকে টেনে ধরে হাত থেকে কেড়ে নেই ভাংগা কাচটি ]

রাহুল : [ চেচিয়ে ] উলটাপালটা বলবি স্নেহার ব্যপারে! তাহলে ঐ দিকেই পুতে রাখবো!

সামির : আরে বলবো কেনো, আমিতো করবো যেমনটা তুই করেছিস আমার বোনের সাথে, [ রাহুল রিদোয়ানকে পেছনে ধাক্ষা দিয়ে দৌড়ে গিয়ে আবার ধরলো সামিরের গলা, দুজনেই বেজে গেলো মারামারি, আসিফ আর রিদোয়ান মিলে টেনেটুনে ছুটিয়ে নিলো ]

আসিফ : [ ফিসফিসিয়ে ] কন্ট্রোল রাহুল! প্লিজ কন্ট্রোল, এক্কেবারে মেরেফেলবি নাকি! নয়তো আবার পুলিশ-কোর্ট এসব নিয়ে পড়ে থাকতে হবে,

রাহুল : ওকে মেরে জেলে থাকাটা ও শান্তি লাগবে আমার,

আসিফ : লিসেন্ট রাহুল উল্টোপালটা কথা বলিস না, স্নেহার দিক তাকা একবার, এখন সিংগেল না তুই! [ চেচিয়ে ] দেখ সামির! তুই অলরেডি জানিস তোর বোন কেমন! ও রাহুলকে চাই, কিন্তু একজনের চাওয়াই তো সব হয় না, আর ও যা বললো তুই ও তা বিশ্বাস করে ফেললি!

সামির : একমাত্র বোন আমার! ছোট থেকে গায়ে একটা আচ ও আসতে দেইনি আমি! [ হঠাৎ টুকটাক আওয়াজে সবাই পাশ ফিরে তাকালো ]

জারিফা : ওহ মাই গড! মার্জান এরা কারা?..

[ স্নেহা দৌড়ে রাহুলের কাছে যেতে চাইলো, জারিফা আটকে ধরলো স্নেহাকে, আসিফ পেছনের দিক তাকিয়ে ইশারা করলো মার্জানদের যাতে গাড়ীতে চলে যায় ]

মার্জান : আরে বাপরে এই সৈন্যদলের হাতে তো লাঠিসোটা আছে! এখন কি হবে? ওরা তিনজন আর ওরা দশজন, আর এ..এই নেহা পেত্নীটা এই শয়তানের বোন আগে তো জানতাম না,

রাহুল : [ হেসে ] আই থট! সামির, তুই অনেক সাহসী, বাট মুখে তো অনেক গালবাজি করিস, তবে এই বাচ্চাদের ভাড়া করে এনে!

সামির : আমিও ভেবেছি তুই অনেক সাহসী, কিন্তু তাহলে তো একা আসতি, ফ্রেন্ডসদের সাথে নিয়ে না,

রাহুল : আমার ফ্রেন্ডসরা তোর গায়ে হাত তুলেনি!

সামির : বাধ্য হয়ে সবকিছুই করতে হয় রাহুল!তাই আমিও করেছি,

রাহুল : ওকে উই আর রেডি! গাইস্! চোরের দশদিন তো গেরস্তের একদিন, আজ না হয় মার খেলাম, কিন্তু কোনো না কোনো একদিন তো ভার্সেটি আসতেই হবে বাচ্চারা, তোমরা সেকেন্ড ইয়ারের মেবি! রাইট! [ চুপ করে রইলো ছেলেগুলো ]

রিদোয়ান : পুরুষ বলা যায় না তোকে সামির, এসব বাচ্চাদের সাহারা নিয়ে আসলি!

মার্জান : [ দৌড়ে এগিয়ে এসে ] একমিনিট একমিনিট [ হাত টেনে ধরলো আবার আসিফ ]

মার্জান : [ রেগে রিদোয়ানের হাত থেকে কাচের বোতোলটা আসিফের গলায় ধরে ] কথা ক্লিয়ার করতে দিন আটকাবেন তো সবার আগে আপনাকে টপকাবো,

রাহুল : [ অবাক হলো মার্জানকে দেখে তাও এইসময় এতো প্রশ্ন করা ঠিক হবে না ভেবে জাষ্ট এটাই বললো ] আরে মার্জান! তুমি কার টিমে?..

মার্জান : উফফো আমি তো আপনাদের টিমেই! [ চেচিয়ে ] ওকে গাইস্ কেউ পুরুষ কাপুরুষ এটা মুখে ডিসাইড করলে চলবে না! কাজে ও তো করে দেখাতে হবে তাই না, তারপর ডিসাইড হবে কারা পুরুষ, কারা কাপুরুষ! আপনারা যেহেতু দশ-এগারো জন, তাহলে আমি বর্ডার করছি আপনারা টিম করে একপাশ দাড়ান আমরাও দাড়াচ্ছি! তারপর আপনাদের থেকে দু-জন আসবে বর্ডারের মাঝে আর আমাদের থেকে একজনই যাবে,

জারিফা : [ স্নেহার কানে ] আরে স্নেহা! তুই মারপিট পারিস আমার তো এখন থেকেই বুক কাপছে, আমি একা কেমনি যাবো, এই মার্জানটাও না কেমন কেমন রুলস্ করে বসে,

সামির : দেখ এসব হাবিজাবি করার টাইম নেই আমার, বলেই রেগে লাঠি উঠাচ্ছিলো!

রিদোয়ান : [ চেচিয়ে ] আরে বাদ দাও মার্জান! ও কাপুরুষ না ডারপোক ও, টিম নিয়ে এসে ও ভয় পাচ্ছে চ্যালেঞ্জ নিতে,

সামির : [ নাক ফুলিয়ে ] ওকে চ্যালেঞ্জ এক্সেপ্টেড! [ বলেই একটিম হয়ে দাড়ালো, বড় করে পাশ কেটে একটি বর্ডার বানিয়ে মার্জানরা ও একটিম হয়ে দাড়ালো ]

মার্জান : ও..ওকে! এট ফার্ষ্ট আমি!

সামির : [ হেসে ] ওহহ লেডিস ফাষ্ট! [ সামিরের পুরো টিমই হেসে উঠলো ]

রাহুল : লিসেন্ট মার্জান এটা রিস্ক!

স্নেহা : হ্যা! মার্জান প্লিজ ডোন্ট গো! আমরা ওদের বুঝিয়ে বলি,

মার্জান : ভরসা রাখেন আমার উপর জাষ্ট স্নেহার হাত ধরেন শক্ত করে,আর আপনার হোপলেস্ ফ্রেন্ডটাকে ও ধরেন! [ বলেই এগিয়ে বর্ডার এর পাশে দাড়ালো, মন মানছিলো না রাহুলের তাও ভরসা রাখলো সে তো আছেই পাশে, সবাই তাকিয়ে আছে মার্জান এর দিক, হেসে হেসে দু-জন লাঠি নিয়ে এগিয়ে এলো, মেয়ে মানুষ বলে হেসে লাঠি গুলো ও ফেলে দিলো, যেই না মার্জান এর পাশে এলো দু-জন, হাতে থেকে ছুড়ে মাড়লো মরিচের গুড়ি, চোখ কচলে চেচিয়ে বসে পড়লো দু-জন ]

মার্জান : [ চিৎকার করে ] ভাআআগোওও!

রাহুল, আসিফ, রিদোয়ান হাসবে নাকি দৌড়াবে কিছুই বুঝতে পারছিলো না, তাও হাসতে হাসতে দৌড়ে গাড়ীর দিক এগুতে লাগলো,

জারিফা : [ হেসে ] আরে তাড়াতাড়ি দৌড়ান ওরা আসছে, [ আসিফ আর রাহুল দুজনেই একটু থেমে পেছন তাকালো, রাহুল ধাক্ষা দিলো আসিফকে ]

আসিফ : [ চেচিয়ে ] তোকে দোস্ত বললে দুনিয়ায় ভুল হবে,

রাহুল : আরে মার্জানের হাত ধর, ও পিছিয়ে পড়ছে, [ আসিফ হাত বাড়ালো, মার্জান ও বেখেয়ালি হয়ে হাসতে হাসতে হাত এগিয়ে দিলো, সবাই মিলেই তাড়াহুড়া করে একগাড়ীতে উঠে পড়লো, রিদোয়ান তাড়াহুড়ো করে গাড়ী স্টার্ট দিয়ে টান দিলো,বাকিরা জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে আর কিটকিটিয়ে হাসছে ]

রিদোয়ান : [ চেচিয়ে ] ওহোওও উই আর সাক্সেস্

জারিফা : [ হেসে ] ভাই আমার তো অনেক মজা লাগছে বলেদিলাম! [ বলছে আর হাসছে ]

আসিফ : কিন্তু কাপুরুষ তো এবার আমরাই হয়ে গেলাম পালিয়ে এসে তাই না?..

মার্জান : মার খাওয়ার চেয়ে পালিয়ে আসা অনেক বেটার বুঝেছেন! ওদের হাতের হকিস্টিক গুলো দেখেছেন?

রাহুল : [ হেসে ] দোস্ত আমাদের বউ জানলে হলো আমরা পুরুষ নাকি কাপুরুষ! [ সবাই হেসে উঠলো খিলখিল করে ]

রাহুল : [ স্নেহার দিক তাকাতেই দেখে সে গাড়ীর গ্লাস দিয়ে পেছন তাকিয়ে আছে ]আরে স্নেহা! ওদিক কি দেখছো ওরা আর আমাদের ধরতে পারবে না,

স্নেহা : আপনার গাড়ি [ বলতেই সবাই মাথা গুড়িয়ে পেছন তাকালো, এবং দেখতে পেলো রেগে গিয়ে সবাই ধুমধাম করে রাহুলের গাড়ীটাই ভাংচুর করছে ]

রাহুল : [ মুচকি হেসে ] ফরগেট ইট!

রিদোয়ান : আরে নিজে বাচলে,কতো গাড়ীই আসবে আর যাবে, বাই দ্যা ওয়ে মার্জান ইউ আর গ্রেট!

রাহুল : আরে আমিতো অবাক হচ্ছিলাম টোটালি মাথায় আসছিলো না মার্জান কি করতে যাচ্ছে! [ কিটকিটিয়ে হেসে ] তারপর দেখলাম মরিচের গুড়া!

আসিফ : বাই দ্যা ওয়ে! তুমি মরিচের গুড়া পেলে কোথায়!

জারিফা : আরে ওর ব্যাগে তো মরিচের গুড়া বাধে ছুড়ি ও থাকে!

মার্জান : [ আসিফের দিক তাকিয়ে ] ইয়াহ কোন সময় কোন কাজে লাগে কে জানে!

রাহুল : [ মার্জানকে জড়িয়ে আগলে ধরে ] ওয়েল ডান! ডেরিং বেবি!

মার্জান : [ ঝাড়ি দিয়ে রাহুলকে সরিয়ে ] ছুড়িটাও বের করবো নাকি বলবেন, বিয়েটা কবে করছেন? [ রাহুল স্নেহার দিক তাকালো, স্নেহা ও হেসে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ]

রাহুল : এইবার শিয়র করবাতো বিয়ে? নাকি আবারো কথা না শুনে কিছু একটা করে বসবা [ মুচকি হেসে রাহুলের হাত জড়িয়ে কাধে মাথা রাখলো স্নেহা ]

চলবে..

Love At 1st Sight Season 3 Part – 42

0

Love At 1st Sight
~~~Season 3~~~

Part – 42

writer-Jubaida Sobti

স্নেহা : [ হেসে মাথা নাড়িয়ে ] রিয়েলি! আই কান্ট লিভ উইদাউট ইউ রাহুল! ব্যাস যেখানেই নিয়ে যাবেন যান আমার এসব আর সজ্য হচ্ছে না!

– আ..আই লাভ ইউ রাহুল

রাহুল : [ মুচকি হেসে স্নেহার কপালে চুমু খেয়ে ] আই লাভ ইউ টু! [ চোখ বন্ধ করে নিলো স্নেহা গড়িয়ে পানি পড়ছে গাল বেয়ে ]

রাহুল : স্নেহা! বিয়ে করবে আমায়?..[ স্নেহা চোখ বন্ধ অবস্থায় হেসে মাথা নাড়ালো, রাহুলের খুশির উত্তেজনা শেষ হচ্ছে না স্নেহার মাথা নাড়ানো দেখে, সে হাসবে নাকি কাদবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না, তার এই ইন্নোসেন্ট বার্ড সব কিছু ছেড়ে তার হাত ধরে যেতে রাজি হয়ে গেছে, এর চেয়ে খুশির মুহুর্ত জীবনে আর কি হতে পারে, সাত-পাচ না ভেবে মাথা আগলে নিয়ে বুকে টেনে নিলো স্নেহাকে, স্নেহা ও রাহুলের বুকে মাথা লুকিয়ে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখে ]

রাহুল : ইউ নো স্নেহা…মাঝে মাঝে এমন মনে হয়, আমার জন্মটাই হয়েছে তোমাকে ভালোবাসার জন্য! [ মুচকি হেসে ] আর তোমার জন্ম হয়েছে একদিন পুরোপুরি আমার হয়ে যাওয়ার জন্য! [ স্নেহা ও মুচকি হেসে মাথা তুলে তাকালো ]

রাহুল : বুকের বা পাশের স্পন্দন এর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর স্পন্দনটাই তুমি… ইচ্ছে করে বার বার স্পন্দন করুক…

স্নেহা : [ রাহুলের গালটেনে দিয়ে ] বারবার করলে তো হার্ট এট্যাক চলে আসবে,

রাহুল : তাহলে ঐ হার্ট এট্যাকটাই বারবার করতে চাই! [ With tedi smile ]

[ স্নেহা ব্লাশিং হয়ে মুচকি হেসে আবারো শক্ত করে চেপে জড়িয়ে ধরলো ]

রাহুল : ডো ইউ নো স্নেহা! হাও ডেঞ্জারাস ইওর স্মাইল?…

স্নেহা : [ হেসে ] ব্যাস রাহুল!

রাহুল : সিরিয়াসলি স্নেহা!

স্নেহা : যদি এমন হয়, তাহলে ঐ ডেঞ্জারাস স্মাইল এর পাসওয়ার্ডটাই আপনি! [ হেসে উঠলো রাহুল ও ]

রাহুল : সো্ স্নেহা! তাহলে তুমি এক্ষুণি আমার সাথে চলছো তো?

স্নেহা : [ অবাক হয়ে ] এক্ষুনি?…কোথায় যাবো?..কোক..কোথায় থাকবো?

রাহুল : আমার বাসায়?..

স্নেহা : [ মাথা তুলে ] উইদাউট ম্যারেজ?..

রাহুল : নো! আজই বানাবো তোমাকে মিসেস রাহুল!

– কি? হবে তো মিসেস্ রাহুল?

[ লজ্জা পেয়ে জড়িয়ে ধরলো স্নেহা, রাহুল ও মুচকি হেসে স্নেহার মাথায় চুমু খেয়ে পিঠে হাত বুলিয়ে জড়িয়ে ধরে রাখলো, স্নেহা ও রাহুলের বুকের মাঝে চোখ বটে মুখ লুকিয়ে চুপটি করে আছে..টেনে নেওয়া প্রতিটা শাসই রাহুলের বুকের স্মেল এর সাথে গ্রহণ করছে…যেনো ইচ্ছে হচ্ছে এক শ্বাসেই সব স্মেল আটকে নিবে, টেনে নেওয়া শ্বাসগুলো আর ছুড়ে ফেলতে মন চাইছে না স্নেহার, চোখ বটে দু-জনেই জড়িয়ে ধরে আছে ]

এভাবেই কিছু সময় পেড়িয়ে যাওয়ার পর, হঠাৎ টুকটাক আওয়াজ ভেসে এলো কানে…
চোখ খুললো রাহুল,স্নেহার তো খবরই নেই…হারিয়ে গেছে রাহুলের বুকের মাঝে..

রাহুল : স্নেহা! [ বলেই ছুটিয়ে আনতে চাইলো কিন্তু স্নেহা তাও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে ]

হঠাৎ,

জারিফা : [ চেচিয়ে ] ওহ গড! [ চোখে হাত দিয়ে ] সরি সরি..আমি কিছু দেখিনি! [ মার্জান আর শায়লা ও এগিয়ে এলো, জারিফার কান্ডে হেসে উঠলো রাহুল, তাড়াহুড়ো করে ছুটে দাড়ালো স্নেহা! ]

মার্জান : স্নেহা তুই?..এইখানে?..তোর না মামার বাসায় যাওয়ার কথা ছিলো… আমরা তো আরো তুই বাসায় নেই ভেবে চাবি দিয়ে দরজা খুলে এলাম!

স্নেহা : হ্যা! যাওয়ার কথা ছিলো..কিক..কিন্তু যাওয়া হয়নি!

জারিফা : [ একটু কেশে ] হুমমম! বুঝতে পেরেছি কেনো যাওয়া হয়নি [ চোখ মেড়ে রাহুলের দিক ইশারা করে ] হুম হুম..রাইট?..

স্নেহা : নট রাইট!

রাহুল : [ হেসে স্নেহাকে কাছে টেনে নিয়ে ] সো্ গাইস্ একটা গুড নিউজ! [ সবাই কৌতুহলি ভাবে তাকালো রাহুলের দিক ]

– আমরা বিয়ে করছি! [ জারিফা, মার্জান, শায়লা তিনজনই অবাক হয়ে থমকে, হা করে চেয়ে আছে ]

রাহুল : [ হাত নাড়িয়ে ] হ্যালো, গাইস্! আর ইউ দেয়ার?..

জারিফা : [ চেচিয়ে ] কিহহহহহ?…বিয়ে?…[ রাহুল চমকে উঠলো জারিফার চেচানিতে ]

মার্জান : [ জারিফাকে ধাক্ষা দিয়ে ] হায় আল্লাহ, কানের পর্দা ফাটিয়ে দিবি নাকি?..

রাহুল : [ মুখ গোমড়া করে ] হোয়াট গাইস্ তোমরাও খুশি না আমাদের বিয়েতে?..

জারিফা : নো নো..জিজু তেমন কিছুই না আমরা তো খুশি অনেক খুশি..ইনফ্যাক্ট আমরা এতো খুশি, যে খুশি হজম করাই যাবে না… [ কাদো ভাবে ] কিন্তু জিজু আমাদের শপিংই তো করা হয়নি! [ মার্জানের দিক তাকিয়ে ] আরে ডান্স?..ডান্সই তো রিহর্সল করিনি.. [ রাহুল মুখ লুকিয়ে মাথায় হাত দিয়ে হেসে উঠে, স্নেহা ও মুচকি হাসলো ]

শায়লা : [ জারিফাকে চিমটিয়ে ] আরে ওসবের চিন্তা বাদ দে..বিয়ে হচ্ছে এটাই বেশ.. [ রাহুলের দিক তাকিয়ে ] আপনারা এক কাজ করেন তাড়াতাড়ি বিয়েটা সেরেনেন! বাকিসব তারপর নাহয় দেখা যাবে!

মার্জান : ক্যারেক্ট আগে বিয়েটা সেরেনিন..বাকি সব পরে দেখা যাবে…

জারিফা : [ চেচিয়ে ] গাইস্! ইউ মিন..রাহুল এবং স্নেহা! পালিয়ে বিয়ে করছে?..

রাহুল : নো নো আমি পালিয়ে না, স্নেহা পালিয়ে করছে [ স্নেহা আড়চোখে তাকালো রাহুলের দিক, বাকিরা হেসে উঠে ]

জারিফা : ওয়াও আই এম সো্ এক্সাইটেড এই প্রথম পালিয়ে বিয়ে দেখবো.. ইয়েস্!

মার্জান : [ দৌড়ে এসে স্নেহাকে জড়িয়ে ] স্নেহা মাই ডিয়ার! কনগ্রেচুলেশন ইন এডভান্স!

রাহুল : আরে বিয়ে আমিও তো করবো, আর কনগ্রেচুলেশন শুধু ও কে?..

মার্জান : [ হেসে ] ওকে মাই জিজাজি! আপনাকে ও কনগ্রেচুলেশন!

রাহুল : দিস্ ইজ নট ফেয়ার! ওকে জড়িয়ে ধরে আর আমাকে এমনিতে [ সবাই আবারো হেসে উঠলো ]

মার্জান : হ্যা ওটাও মিলবে! বাট আগে বিয়েটা করেনিন তারপর!

জারিফা : বাই দ্যা ওয়ে! জিজু এতোক্ষণ তো তাই করছিলেন! পাশেরটাকে যতো ইচ্ছে ততো জড়িয়ে রাখেন আমরা কবে নিষেধ করলাম? [ চোখ টিপ মেরে ]

রাহুল তেডি স্মাইল দিয়ে তাকালো স্নেহার দিক স্নেহা ও হেসে একটু তাকিয়ে লজ্জায় আবার মাথা নিচু করে ফেললো,

মার্জান : আচ্ছা আপনারা বসেন একসাথে, আমরা ফ্রেশ হয়ে আসি [ সবাই হেসে হুরহুর করে পাশের রুমে চলে গেলো, স্নেহা আর রাহুল ঐ রুমেই দাঁড়িয়ে আছে ]

রাহুল : [ স্নেহার কোমোড়ে হাত রেখে কাছে টেনে নিয়ে ] সো্ স্নেহা! আপনার পার্মিশন পেলে এবার আমি যেতে পারি! আর…সন্ধ্যায় রেডি থাকবেন মিসেস্ রাহুল হওয়ার জন্য!

স্নেহা : কেমন যেনো সব সপ্নই মনে হচ্ছে!

রাহুল : সপ্ন না স্নেহা! সপ্নটা সত্যিতে পূরণ হতে যাচ্ছে! [ মাথা নাড়ালো স্নেহা ]

– [ স্নেহার ঘাড়ের চুল গুলো স্লাইড করে সরিয়ে দিয়ে ] যেতে তো ইচ্ছে হচ্ছে না তোমাকে ছেড়ে… [ বুকেটেনে শক্ত করে জড়িয়ে ] ইচ্ছে হচ্ছে এইভাবে জড়িয়ে ধরে রাখি, [ হেসে উঠলো স্নেহা ]

রাহুল : [ দু-হাত দিয়ে স্নেহার মুখ তুলে ধরে ] কিন্তু যেতে হচ্ছে, [ তেডি স্মাইল দিয়ে ] সব ঠিকঠাক করা ও তো বাকি! [ কিছু বলছে না স্নেহা কেমন যেনো লজ্জা লেগেই চলছে হঠাৎ ]

রাহুল : তাহলে আসি এবার আমি!.. আর হ্যা! কোথাও একা বেরুবা না..যেতে হলে আমাকে ফোন দিবা! এমনিতেও তোমার আজ আর কোথাও বেরুনোর দরকার নেই!

– এন্ড তোমার মামার বাড়িতে তো মোটেও দরকার নেই!

– জাষ্ট ওয়েট ফর ইভিনিং! [ চোখ টিপ মেড়ে ]

স্নেহা : [ ব্লাশিং হয়ে হেসে ] হুমম!

রাহুল চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো হঠাৎ তখনি আবার থেমে গিয়ে স্নেহার দিক তাকালো, স্নেহা ও অবাক হয়ে তাকাতে তাকাতে ততোক্ষণে রাহুল আড়চোখে আশেপাশে তাকিয়ে, একহাত স্নেহার কোমোড়ে রেখে কাছে টেনে আরেকহাত স্নেহার থুথনিতে রেখে মাথা তুলে ধরলো, আলতো করেই ঠোটে চুমু খেলো স্নেহার, চোখ কুচকে জোড়ে জোড়ে শ্বাস ফেলতে লাগলো স্নেহা! রাহুল তেডি স্মাইল দিয়ে তাকিয়ে রইলো স্নেহার ব্লাশিং হয়ে যাওয়া চেহেরার দিক,

রাহুল : বাহহ! স্নেহা! সেকেন্ডেই লাল হয়ে যাও! [ লজ্জায় চোখ নামিয়ে রাখলো স্নেহা ]

কপাল টেনে আরেকটি চুমু খেয়ে হেসে চেয়ারের উপর থেকে জ্যাকেটটা এগিয়ে নিয়ে পড়তে পড়তে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে রাহুল,

থমকে দাঁড়িয়ে আছে স্নেহা! মনে মনে ভাবছে, রাহুলটাও মাঝেমাঝে এমনভাবে আদর করে যায় না, ইচ্ছে করে ঐ আদরে ডুবে মরেই যাবে!
পাশের রুম থেকে রাহুল আর তার ফ্রেন্ডসদের কথা বলার আওয়াজ আসছে.. কিন্তু না স্নেহা যাবে না লজ্জা লাগছে, সাথে ব্লাশিং ও হচ্ছে, হ্যা! অবাকটাই বেশি লাগছে, তবে অনেক খুশি ও ফিল হচ্ছে, কারণ আজ তো সে চিরজীবনের জন্যই রাহুলের হয়ে যাবে, আজ তার বিয়ে,

– [ চমকে গিয়ে ] হোয়াট আজ আমার বিয়ে? [ ধীরেধীরে টেনশন চেহেরা নিয়ে খাটে বসে পড়লো ]

এগিয়ে এলো জারিফা, হেসে স্নেহার দিক তাকাতেই কনফিউজড হয়ে গেলো, ধীরেধীরে কাছে এসে পাশে বসলো, স্নেহা ও অবাক হয়ে আড়চোখে তাকালো,

জারিফা : স্নেহা! জানেমান! ইউ ওকে! [ স্নেহা মাথা নাড়ালো, মার্জান আর শায়লা ও এগিয়ে এলো, শায়লা আপেল কেটে কেটে প্লেটে রাখছে ]

জারিফা : স্নেহা তুই আর রাহুল আজ বিয়ে করবি! [ একটু কেশে ] আ..আই মিন..[ ফিসফিসিয়ে ] তোদের বাসর রাত আজ রাতেই হবে?..

স্নেহা : ছিঃ জারিফা! তোরা কোন কথা থেকে কোথায় চলে যাস বলতো?..

মার্জান : [ আপেল খেতে খেতে ] বাট স্নেহা! শি ইজ রাইট! তুই রেডি থাকিস!

জারিফা : [ চোখ মেরে ] স্নেহা! নেক্সট মানথসে্ই আমাদের গুড নিউজ শুনিয়ে দিশ কেমন!

মার্জান : [ স্নেহার পাশে এসে বসে ধীরেধীরে স্নেহার মুখ থেকে গলা পর্যন্ত স্লাইড করে ] ভাবছি স্নেহা! রাহুল কোনদিক থেকে শুরু করবে,

জারিফা : [ স্নেহার কোমোড়ে স্লাইড করে ] আই থিংক এইখান থেকে, না নাহ…[ স্নেহার ঠোটে স্লাইড করে ] আই থিংক এইখান থেকেই, [ শায়লা মিটিমিটি হাসতে লাগলো তাদের কান্ডে ]

স্নেহা : [ হাত সরিয়ে দিয়ে ] কিসব আজেবাজে ছি! [ বলেই উঠে চলে যাচ্ছিলো, মার্জান হেসে পেছন থেকে টেনে আটকিয়ে আবার খাটে বসিয়ে দিলো ]

মার্জান : ওহো স্নেহা! এতো লজ্জা পেলে চলবে, [ হেসে ] আচ্ছা বল তুই তোর মামার বাড়িতে গেলিনা কেনো?..

[ স্নেহা দীর্ঘ একটি শ্বাস ফেলে সকাল থেকে হয়ে যাওয়া সব ঘটনায় খুলে বললো তাদের ]

মার্জান : [ রাগান্বিত ভাবে ] হমুমানের বাচ্চা, গন্ডারের বাচ্চা, বানরের বাচ্চা, শকুনের বাচ্চা সব জানোয়ারের চেয়েও নিকৃষ্ট এই সামির! কতোবড় সাহস ওর!

জারিফা : কতোকিছুই না হয়ে গেলো এর মাঝে! আমার তো শুনেই বুকটা এখনো কাপছে!

শায়লা : কিন্তু স্নেহা! তুই একটা কাজ ভালো করেছিস, রাহুলের বাবার কাছে গিয়ে, রাহুল মুখে শিখার না করলেও অন্তত মনে মনে তো বুঝতে পেরেছে ওর বাবা ওর জন্য কেয়ার করে!

মার্জান : হ্যা! যদি রাহুলের বাবা-মা ও এক হয়ে যেতো তাহলে আর তোর বাবা ও রাহুলের প্যারেন্টসকে নিয়ে কিছুই বলতে পারতো না!

[ চোখে পানি টলমল করছে স্নেহার ]

জারিফা : আরে স্নেহা! কাদছিস কেনো?..

স্নেহা : আমরা চাইলেই ওর বাবা-মা কে নিয়ে কতো কিছুই বলছি! একমাত্র ওই জানে ওর মাঝে ওর প্যারেন্টসদের নিয়ে কি চলছে!

– এখন বুঝছি প্যারেন্টস সাথে না থাকলে কতো কষ্ট হয়! আজ তাদের না জানিয়েই রাহুলকে বিয়ে করবো এটা কখনোই ভাবিনি! কিন্তু আমি বাধ্য! রাহুলেরওতো কোনো দোষ নেই! ওর শুধু এটাই দোষ ও আমাকে ভালোবেসেছে!

মার্জান : [ স্নেহার কাধে মাথা রেখে ] ডোন্ট ক্রাই ডিয়ার, সব ঠিক হয়ে যাবে!

শায়লা : [ স্নেহার চোখ মুছে দিয়ে ] আরে স্নেহা! আজ খুশির দিন এভাবে কাদছিস কেনো, আজ তো তুই যেটা চাইছিস সেটাই পূরণ হতে যাচ্ছে!

স্নেহা : [ কাদো কন্ঠে ] বাট শায়লা! একবার বিয়ে হয়ে গেলে এরপর বাবা আমার সামনে আসা তো দূরের কথা চেহেরাও দেখবে না আমার!

– ওদের একবার দেখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে! মা, রাশু ওদের…[ বলেই কাদতে লাগলো ]

মার্জান : [ স্নেহার চোখ মুছে দিয়ে ] আরে তো কান্নার কি আছে, এমনিতেও ঠিক বলছিস এরপর আর ওরা দেখা করেকি না করে কে জানে! তাই আজ গিয়েই দেখে আয়!

স্নেহা : কিক..কিন্তু! রাহুল করতে দেবে না! ও নিষেধ করে গিয়েছে কোথাও একা না বেরুতে,আর মামার বাড়িতে তো মোটেও না,

জারিফা : এক সেকেন্ড! তোর একা বেরুতে হবে না! আমরা কি মরে গিয়েছি নাকি?..আমি যাবো তোর সাথে ডোন্ট ওয়ারি! আ..আই মিন এমনিতেও আমার বের হওয়ার ছিলো, আমার ব্লাড টেষ্ট ডেট আজকে!

মার্জান : একা যাচ্ছিস নাকি তোর ওনিও!

শায়লা : [ হেসে ] হুম হুম ওনি ও বুঝি?..

জারিফা : [ মাথা নাড়িয়ে ] ইয়েস্! ওনিও!

মার্জান : তাহলে তো প্রবলেম সলভ! তুই ওর সাথেই বেড়িয়ে যা!

স্নেহা : কিন্তু…

মার্জান : আরে এতো কিন্তু কিন্তু করছিস কেনো?.. তুই বল তোর ইচ্ছা আছে তো?.. [ স্নেহা মাথা নাড়ালো ] একবার ওখানে গিয়ে পৌছা, তারপর আসার সময় রাহুলকে বুঝিয়ে বলে দিবি যেনো ও তুকে ঐখান থেকেই পিক করে নেই!

শায়লা : হ্যা! আসার সময় রাহুলকে ফোন করে বলেদিস তারপর ও আর নিষেধ করতে পারবে না, এমনিতেও আজ ও তোর সাথে রাগ দেখাবে না কেনো বলতো?..

জারিফা : [ কিটকিটিয়ে হেসে ] কারণ আজ রাগলে রাহুলের কপালে শনি আছে! বিয়ে করবে কাকে?.. [ সবাই খিলখিল করে হেসে উঠে, স্নেহা ও আর হাসি থামিয়ে রাখতে পারলো না, হেসে উঠলো ]
_______________________________________

দুপুরের লাঞ্চ করে, কাপড় চোপড় পড়ে তৈরী হয়ে বেরুতে বেরুতেই ৪টা বেজে গেলো, জারিফা স্নেহাকে তার মামার বাসায় নামিয়ে দিয়ে সে চলে যায়!
স্নেহা বেল দিতেই তার মা এসে দরজা খুললো, জড়িয়ে ধরেই কেদে উঠলো দু-জন!

মা : আমি জানতাম তুই আসবি! আয় ভেতরে আয়!

[ স্নেহা ভেতরে ঢুকতেই দেখে তার বাবা বসে আছে ড্রইং রুমে, রাশু পাশে পড়ছিলো, স্নেহাকে দেখে খুশি হয়ে এগিয়ে এলো, স্নেহা ও হেসে গাল টেনে দিলো রাশুর, ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো বাবার কাছে ]

স্নেহা : বাবা!

বাবা : সকালে আসতে বলেছিলাম!

স্নেহা : [ কিছুক্ষণ চুপ থেকে ] স..সকালেই আসতাম বাবা, তোমাদের কিছু বলার ছিলো, কিন্তু কিছু ঘটনা ঘটে যাওয়ার কারণে আর আসা হয়নি! তবে এখন এসেছি সেগুলো বলতে, [ স্নেহার বাবা স্নেহার দিকই ফিরে তাকালো ]

– আ..আমি বলেছিলাম…রার..রাহুলকে ভুলে যাবো, কিক..কিন্তু আমি করিনি..আমি গিয়েছিলাম বাবা রাহুলের কাছে! আমি পারিনি ভুলতে রাহুলকে [ কাদো কন্ঠে ] আমি পারবো না, হহ..হয়তো কখনোই না,

– বাবা রাহুলকে ছেড়ে থাকা ছাড়া তুমি আর যাই বলবে আমি তাই করতে রাজি!

– আ..আমি জানি আমি তোমাদের অবাধ্য হচ্ছি, কিন্তু বাবা.. রাহুলকে ছেড়ে থাকাও সম্ভব নয় আমার পক্ষে,

বাবা : [ রাগান্বিত ভাবে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ] তাহলে কোন মুখ নিয়ে এসেছিস আমার সামনে নিজের চেহেরা দেখাতে? [ আংগুল দিয়ে ইশারা করে ] দরজা ঐদিকে, বেরুতে পারিস, এইখানে আসার আর দরকার নেই! আমাদের কোনো মেয়েই নেই! [ অবাক হয়ে তাকালো স্নেহা ]

স্নেহার মা : আরে কিসব বলছো?..

স্নেহার বাবা : যা বলছি তাই! ওকে বলো বেড়িয়ে যেতে ওর এই চেহেরা দেখতেই আমার ঘৃণা লাগছে! এতো বছর মেয়েভেবে কিই বা হয়েছে, ধোকাটাই পেয়েছি!

স্নেহা : [ কাদো কন্ঠে ] ধোকা তো তোমরাও দিচ্ছিলে বাবা আমায়, না বলে আজই সামিরের সাথে এনগেজমেন্ট ঠিক করে রেখেছো!

স্নেহার বাবা : তোর ভালোর জন্যই করছিলাম! সামিরের চেয়ে অন্য কোনো ছেলে তোর জন্য ভালো হবে বলে আমি মনে করি না,

স্নেহা : বাবা আমি রাহুলকে ভালোবাসি ওর জায়গায় অন্য কাউকে এটা ভাবতেও আমার কষ্ট হয়, আমি জানি তোমরা আমার ভালো চাইছো, কিন্তু…

বাবা : [ চেচিয়ে ] ব্যাস! চিনি না আমরা তোকে আজ থেকে! [ বলেই ভেতরে চলে গেলো, চেয়ে আছে স্নেহা, চোখ থেকে গড়গড় করে পানি ছুটে পড়ছে, মায়ের দিক তাকাতেই মা এগিয়ে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দেই, ধীরেধীরে পাশ ফিরে হেটে বেড়িয়ে গেলো স্নেহা ]

স্নেহা : [ কেদে কেদেই শিরি দিয়ে নিচে নামছে আর ভাবছে ] বাবা এভাবে নিষ্ঠুর কিভাবে হতে পারলো? মহান কিছুই তো চাইনি, শুধু রাহুলকে চেয়েছি , সামিরের সাথে এভাবে জোড় করে বিয়ে দেওয়াটা এমনি মনে হচ্ছে বাবা তুমি তোমার জমির টাকা আমাকে দিয়েই শোধ করছো! [ চোখ মুছে ] তবে যাই হোক আমি আর পিছে হাটবো না, এখন থেকে রাহুলই আমার সব! ওকে তো আমার কিছু বলারই প্রয়োজন হয় না, দূর থেকেই আমার মন কি চাই সব বুঝে নেই! ওকে তো যতোই ভালোবাসবো ততটাই কম পড়বে! [ গেইটের ধারে এসে চোখ-মুখ ভালোভাবে মুছে ব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করে রাহুকে ফোন দিলো ]

রাহুল : [ ফোন রিসিভ করে ] হেইই! তোমার কথায় বলছিলাম এখন দাদীকে! দাদী বলছে তোমাকে এক্ষুনি নিয়ে আসতে, [ হেসে ] কে কি বলবে এতে কিছু যায় আসে না নাকি দাদীর, এখানে এনেই নাকি ধুমধাম করে বিয়ে দিবে, আমিও বললাম স্নেহা এই ঘরে নেক্সট পা রাখবে তো এক্কেবারে মিসেস্ রাহুল হয়েই পা রাখবে, তারপর ধুমধাম বাকিসব তোমাদের যা করার করো, এরআগে স্নেহাকে এক্কেবারের জন্য আমার করা চাই! [ রাহুলের কন্ঠ শুনতেই স্নেহার বুক ফেটে আরো কান্না আসছিলো, কথা বের হচ্ছিলো না মুখ দিয়ে চুপ করেই রাহুলের কথা গুলো শুনে রইলো ]

রাহুল : স্নেহা! ইউ ওকে?..

স্নেহা : [ ফুফিয়ে উঠে ] হুমম! ঠিঠ..ঠিকাছি!

রাহুল : স্নেহা তুমি কাদছো?.. [ মুখ চেপে ধরে রাখলো স্নেহা ]

– স্নেহা! কি হয়েছে?..কিছু তো বলো?..আমি জানি তুমি কাদছো!

স্নেহা : [ হিচকিয়ে কেদে কেদে ] রাহুল! আ..আমি মামার বাসায় এসেছি! ওদের দেখবো বলে, বাব..বাবাকে আরেকবার বলে দেখলাম… [ ফুফিয়ে কেদে ] ওনি বললো ওনার নাকি কোনো মেয়ে নেই! [ বলেই কাদতে লাগলো ]

রাহুল : [ জোড়ে শ্বাস ফেলে ] ও..ওহ..ওকে! প্লিজ ডোন্ট ক্রাই!

– স্নেহা! আমি নিষেধ করেছিলাম কোথাও না বেরুতে! [ কেদেই চলছে স্নেহা ]

– আচ্ছা ওকে ওকে! প্লিজ! কান্না করতে হবে না, এখন কোথায় আছো বলো?

স্নেহা : গেগ..গেইটের দিকই আছি!

রাহুল : ঠিকাছে! ওখানেই থাকো, ওখান থেকে কোথাও যাবা না, আমি আসছি!

স্নেহা : আচ্ছা!

রাহুল : স্নেহা!

স্নেহা : হুম!

রাহুল : ডোন্ট ক্রাই! ওকে?..

স্নেহা : [ মাথা নাড়িয়ে ] হুম! ওকে!
_______________________________________

[ রাহুল ফোন রেখে পকেটে ঢুকিয়ে টেবিল থেকে তাড়াহুড়ো করে গাড়ীর চাবিটা এগিয়ে নিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে ]

দাদী : আরে রাহুল! কই যাচ্ছিস?..সব ঠিকাছে তো?..

রাহুল : [ চেচিয়ে ] হ্যা দাদী! আসছি পরে কথা হবে!

[ বেড়িয়ে গেলো রাহুল গাড়ী নিয়ে, যতো তাড়াতাড়ি পারছে ততো তাড়াতাড়িই ড্রাইভ করছে, আধঘণ্টা পরই গেইটের সামনে এসে পৌছালো, গাড়ী থেকে নেমে চারদিক চোখ বুলালো কিন্তু স্নেহাকে কোথাও দেখা যাচ্ছিলো না, মোবাইল বের করে ফোন দিতেই রাহুল অবাক হলো স্নেহার ফোন সুইচড অফ আসছে, কিন্তু এই সময় হঠাৎ স্নেহা ফোন কেনো সুইচড অফ করলো, গেইটের ভেতর ঢুকে দেখলো ওখানেও নেই, ফোন দিলো আবার মার্জানের কাছে ]

মার্জান : হ্যালো!

রাহুল : স্নেহা! বাসায় আছে?..

মার্জান : [ জিহবায় কামড় মেরে ] আ..এক্সুলি স্নেহা তো বাসায় নেই! ও ওর মামার বাড়ি গিয়েছে! কিন্তু আসার সময় আপনাকে জানাবে বলেছে!

রাহুল : আমি ওর মামার বাসার নিচেই আছি! ও গেইটের দিকই দাঁড়িয়ে আছে বললো, এসে দেখি নেই! ফোন দিচ্ছি সুইচড অফ আসছে!

মার্জান : [ অবাক হয়ে ] আচ্ছা?..আশেপাশে আরেকটু খুজে দেখুন! হয়তো ঐদিকটা কোথাও হবে!

রাহুল : আচ্ছা! আমি দেখছি!

মার্জান : পেলে জানাবেন কিন্তু!

রাহুল : হুম ওকে!

[ বলেই রাহুল ফোন পকেটে ঢুকিয়ে তাড়াহুড়ো করে উপরে উঠলো, বেল বাজাতেই স্নেহার মা এসে দরজা খুললো,
রাহুল জানে না তিনি কে হবে স্নেহার,বা হঠাৎ রাহুলকে দেখে কি ভাববে তারা…একমাত্র এখন রাহুলের মাথায় স্নেহা কোথায় এটাই ঘুরছে, স্নেহার মা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো, বেল এর আওয়াজ শুনে স্নেহার বাবা ও এগিয়ে এলো ভেতর থেকে ]

রাহুল : স্নেহা কোথায়?..

স্নেহার মা : স্নেহা?..ও তো বেড়িয়েছে অনেক্ষণ হলো! তুমি কে?..

রাহুল : বেরুবার পরে আর আসেনি?..

স্নেহার মা : নাহ! আ..আসেনি!

রাহুল : তার মানে আপনারাও জানেননা স্নেহা কোথায়?..

স্নেহার মা : ওর ফ্রেন্ডসদের সাথেই তো থাকে হয়তো ওখানেই গিয়েছে!

রাহুল : হয়তো? ওয়াও গ্রেট!

– আই থট শুধু আমার প্যারেন্টসরাই এমন! বাট না আমি ভুল…এখন দেখছি শালার সব প্যারেন্টসরাই এমন!

– আর হ্যা! আমি কে জানতে চেয়েছিলেন তাই না? তো শুনুন আমি সেই যার জন্য স্নেহাকে তার প্যারেন্টস তাদের মেয়ে বলে অস্বীকার করছে!

[ বলেই রাগান্বিতভাবে নিচে নেমে চলে এলো রাহুল,গেইট থেকে বেড়িয়ে আশেপাশে তাকাচ্ছে বারবার ফোন দিচ্ছে স্নেহাকে কিন্তু সুইচড অফই আসছে! বন্ধ অবস্থায় ফোন ট্রেস করা ও পসিবল হচ্ছে না, মাথায় নানাধরনের চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে, হঠাৎ চোখ পড়লো অপোজিটের একটি দোকানের উপর, দৌড়ে এগিয়ে গেলো দোকানের দিক! ]

রাহুল : এক্সকিউজ মি ভাইয়া! এইদিকে গেইটের দিক কোনো মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন?..

দোকানদার : কতো মেয়েই তো দাড়াই ভাই! কোন মেয়ের কথা বলবো?..

রাহুল : হাইট আমার কাধ পর্যন্তই হবে, ফর্সা করে, কিছুক্ষণ আগেই ছিলো! ঐদিকে গেইটের দিক, একটু মনে করেন! [ ভাবতে লাগলো দোকানদার ]

রাহুল : হয়তো ফেইসে কান্নারভাব ও ছিলো!

দোকানদার : কান্নার ভাব না কাদতেই দেখছি একটা মেয়েকে! কিন্তু ওনি তো অনেক আগেই চলে গেছে!

রাহুল : চলে গেছে?..

দোকানদার : একটা ছেলে আসছিলো ওনার সাথেই চলে গেছে!

রাহুল : [ অবাক হয়ে ] ছেলের সাথে ?

দোকানদার : হ্যা! একটা ছেলে আসলো গাড়ী নিয়ে, ওনার সাথে কি কি বললো এতো ধ্যান দেইনি! যেতে চাচ্ছিলো না মেয়েটা, হাত ধরে টেনেই নিয়ে গেছে! [ হেসে ] হয়তো বয়ফ্রেন্ডই হবে! রাগ করেছে তাই মানাইতে নিয়ে যাচ্চে!

রাহুল : [ রাগান্বিত ভাবে ] শিট!

– শিট! শিট! শিট! উফফফ [ বলেই রেগে মাথায় হাত দিয়ে চুল টেনে ধরে রাখলো, তাড়াহুড়ো করে দৌড়ে গিয়ে গাড়ীতে উঠলো,

মাথায় ও কিছু আসছিলো না সে কোথায় কোন জায়গায় গিয়ে খুজবে স্নেহাকে? রাগে চোখ-মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে রাহুলের, এই মুহূর্তে প্রত্যেক জায়গায় গিয়ে গিয়ে খোজবে ওই টাইমটাও নেই,

না জানি স্নেহা কোন হালে কি অবস্থায় আছে, ভাবতেই রাগে মাথার রগ সহ ভেসে উঠছে রাহুলের,

চিন্তা করতে লাগলো কি করা যায় কোন জায়গায় গিয়ে খুজবে,

হঠাৎ, কিছুক্ষণ পরই মাথায় আসলো আজ সকালে স্নেহার সাথে ঘটা ঘটনাটি, এবার ধীরেধীরে ক্লিয়ারলি বুঝতে পারছে রাহুল,কি হতে চলছে,

হুমম তবে এটাও ভেবে নিয়েছে রাহুল, আজ হয়তো সামিরের লাশ পড়বে আর নয়তো ওর লাশ, [ স্টার্ট দিয়ে টান দিলো গাড়ী, মোবাইলটাও বেজে উঠলো ]

চলবে…

Love At 1st Sight ♥ Season 3 Part – 41

0

Love At 1st Sight
~~~Season 3~~~

Part – 41

writer-Jubaida Sobti

মনে মনে ভাবতে লাগলো রাহুল, কি বলে ফেললো সে স্নেহাকে,

স্নেহা ও আর কিছু বললো না রাহুলের চেপে ধরা হাতটি পেছনে সরিয়ে নিলো, আরেক হাতে চোখ মুছে নিয়ে পাশ কেটে চলে যাচ্ছে, হঠাৎ পেছন থেকে, রাহুল স্নেহার হাত ধরে আটকে ফেললো, স্নেহা থেমে গিয়ে পেছন ফিরে তাকালো,

রাহুল : স্নেহা! আম সরি! আ..আমি আসলে..

স্নেহা : [ রাহুলের কাছে এসে দাঁড়িয়ে ] সরি বলতে হবে না রাহুল! আমি জানি, আমি কিছু মনে করিনি,
– [ মুচকি হেসে ] এমনিতেও আপনার বকাগুলো অনেক মিস্ করছিলাম!

রাহুল : [ স্নেহার হাত এগিয়ে নিয়ে ] তোমার হাত…

স্নেহা : আরে ওটা কিছুনা!

রাহুল : [ গোমড়া মুখে ] ব্যথা?..

স্নেহা : সে..সেরে যাবে! [ বলেই হাত টেনে সরিয়ে নিলো ]

রাহুল : এক কাজ করো তুমিও আমায় ব্যথা দাও..[ মাথা চুলকিয়ে একটু চিন্তা করে ] আচ্ছা শুনো আমাকে জোড়ে একটা থাপ্পড় দাও!

স্নেহা : কিহ বলছেন এসব?..পাগল হয়েগিয়েছেন?..

রাহুল : হ্যা! যেটাই মনে করো স্নেহা! ব্যাস থাপ্পড় দাও!

স্নেহা : রাহুল! আমি আপনাকে থাপ্পড় দিবো? এটা কিভাবে সম্ভব হবে না আমার দ্বারা!
– আ..আর আমি কখনো কারো গায়ে হাত তুলিনি…সো্ এটাতো ইম্পসিবল!

রাহুল : [ এক্সাইটেড হয়ে ] তার মানে আমিই ফার্ষ্ট হবো! ওয়াও স্নেহা.. কামঅন স্লেপ মি!

স্নেহা : আপনি আসলেই কি বলবো [ বলেই বিরক্তি হয়ে চলে যাচ্ছে ]

রাহুল : [ চেচিয়ে ] স্নেহা তুমি কেদেছো! তার মানে ব্যথা পেয়েছো! [ স্নেহা থেমে গেলো ]

– আই সয়ার স্নেহা! তুমি থাপ্পড় না মাড়লে আমি…আ..আমি নিজেকে ক্ষতি করবো!

স্নেহা : [ এগিয়ে এসে ] এটা কোনো কথা রাহুল, আমি সত্যিই ব্যথা পাইনি,

রাহুল : আমি বলেছি আমি নিজেকে ক্ষতি করবো, ঠিকাছে! [ বলেই চলে যাচ্ছিলো ]

স্নেহা : [ রাহুলের হাত ধরে ] আচ্ছা ঠিকাছে!

রাহুল : [ হেসে ] ওকে! [ স্নেহা রাহুলের মুখের সামনে হাত এগুলো কিন্তু গালে লাগানোর আগেই স্নেহার হাত কাপতে লাগলো ]

স্নেহা : [ হাত নামিয়ে নিয়ে ] হবে না রাহুল!

রাহুল : কামঅন স্নেহা! রাগ তুলো নিজের মধ্যে, আমি তোমার হাত চেপে ধরেছি, বকেছি, মনে করো এসব বারবার, [ হেসে উঠলো স্নেহা ]

রাহুল : আমি হাসতে বলিনি, রাগ উঠাতে বলেছি,

স্নেহা : বাট রাহুল!

রাহুল : ঠিকাছে [ বলেই জোড়ে হেটে এগিয়ে চলে যাচ্ছে তখনিই স্নেহা রাহুলকে আবার টেনে ধরে, রাহুল থামতেই ]

স্নেহা : ওকেওকে! দিচ্ছি!

রাহুল : [ নাকফুলিয়ে ] তাড়াতাড়ি!

[ স্নেহা মাথা নাড়িয়ে ধীরে ধীরে হাত এগিয়ে রাহুলের গালে হালকা একটু টাচ করেই দু-হাত দিয়ে নিজের মুখ নিজে চেপে শকড হয়ে গেলো, রাহুল অবাক হয়ে তাকালো স্নেহার দিক, ]

স্নেহা : হোহ! সস..সরি! ব্যা..ব্যাথা পেয়েছেন?..

রাহুল : এটা থাপ্পড় ছিলো?.. [ স্নেহা চুপ হয়ে চোখ বড় করে তাকিয়ে রইলো, রাহুল কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো, আর স্নেহা অবাক হয়েই হা করে তাকিয়ে আছে ]

রাহুল : রিয়েলি স্নেহা! আসলেই তোমার দ্বারা হবে না!

হঠাৎ,

স্নেহা : [ পাশ ফিরে তাকিয়ে ] রাহুল! আপনি দু-মিনিট দাড়ান আমি এক্ষুনি আসছি, [ বলেই হাটা শুরু করলো ]

রাহুল : আরে কিন্তু কই যাও [ বলে পাশ ফিরে তাকাতেই দেখে তার বাবা বেরুচ্ছে পুলিশ স্টেশন থেকে, স্নেহা ও কোথায় যাচ্ছে এটা বুঝার আর বাকি ছিলো না রাহুলের, জোড়ে একটি শ্বাস ফেলে মুখ ফিরিয়ে নিলো ]

স্নেহা : [ দৌড়ে রাহুলের বাবার দিক এগিয়ে গিয়ে হাপিয়ে উঠে ] থেংক ইউ আংকেল!

রাহুলের বাবা : [ হেসে ] মাই প্লেজার!

স্নেহা : এক্সুলি রা..রাহুল ও আপনাকে থেংক্স বলেছে! [ মুচকি হাসলো রাহুলের বাবা স্নেহার কথা শুনে ]

স্নেহা : ও আসেনি কাক..কারণ [ একটু চিন্তা করে ] ল..লজ্জা পাচ্ছিলো হ্যা! [ হেসে ] লজ্জা পাচ্ছিলো তাই! আমি বললাম ঠিকাছে আমিই জানিয়ে আসি!

রাহুলের বাবা : অনেক ভালো লাগলো, তোমার সাথে দেখা করে,

স্নেহা : আ..আংকেল ও চাই আপনাকে, কিক..কিন্তু মনের মধ্যেই দাবিয়ে রেখেছে, ঠিক আপনার মতোই!

রাহুলের বাবা : ওর জেদ এর আগে কিছুই করেনা! যেটাই জেদ ধরবে ওটাই করে ছাড়বে! আসলে ওর জেদ দেখানো আমার উপর স্বাভাবিক!

– [ মুচকি হেসে স্নেহার মাথায় উপর হাত বুলিয়ে ] আগে ওকে দেখতে খুব গোমড়া লাগতো, তুমি ওর লাইফে আসার পর আবারও হাসতে শিখেছে! আর আমি দূর থেকে ওর হাসি দেখেই খুশি!

– আমিতো পেরেও পারলাম না, ব্যাস! তুমি ওকে এভাবেই রেখো, কখনো ছেড়ে যেও না!

[ স্নেহা মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো ]

– বি হ্যাপি অলোয়েজ! মাই চাইল্ড!

স্নেহা : থেংক ইউ আংকেল! [ রাহুল আড়চোখে তাকালো চলে যাচ্ছে তার বাবা, স্নেহাটা এখনো ঐদিকে দাঁড়িয়ে আছে, তার বাবার গাড়ী বেরুবার পড়েই স্নেহা মুচকি হেসে এগিয়ে আসছে ]

রাহুল : আর না আসলেই পারতে!

স্নেহা : আরে আমার ফাদার-ইন-লো এর সাথে কথা বলছি সময় তো লাগবেই!

[ রাহুল মুখ ভেংগিয়ে অন্যপাশ ফিরে গেলো, স্নেহা বুঝতে পেরে হেসে রাহুলের হাত জড়িয়ে টেনে হাটা শুরু করলো ]

স্নেহা : আপনার পুরা নাম এটা আগে বলেননি যে!

রাহুল : হুম! বলে কি হতো! রাহলই ইনাফ!

স্নেহা : [ আড়চোখে তাকিয়ে ] বললে কি একদম হয়ে যেতো?..

রাহুল : [ হেসে ] আমার আইডি কার্ডে দেওয়া ছিলো স্নেহা!

স্নেহা : আইডি কার্ডে দেখা এক কথা,আর আপনি বলা এক কথা! [ রাহুল হাসলো আর কিছু বললো না ]

স্নেহা : হার্শ নামটা আগে প্লেসের নাম শুনেছিলাম, ঐ যে আমাদের ভার্সেটির ঐদিকে..

রাহুল : হুমম!

স্নেহা : হার্শ এড়িয়া, হার্শ হস্পিটাল, হার্শ রেষ্টুরেন্ট, হার্শ শপিং মল! সবটাই শুনেছি, এবার হার্শ মানুষের নাম ও হয় এটাও শুনলাম!

রাহুল : [ মুচকি হেসে ] হার্শ কোনো গুন্ডার নাম শুনেছো?..

স্নেহা : আরে হ্যা! শুনেছিলাম, বড়োরা বলাবলি করতো কিন্তু তখন অনেক ছোট ছিলাম,

রাহুল : হার্শ ইন্ডাস্ট্রির, এড়িয়া, রেষ্টুরেন্ট, শপিংমল, হস্পিটাল, সবই ঐ গুন্ডার!

স্নেহা : আচ্ছা?.

রাহুল : [ থেমে গিয়ে ] আর ঐ গুন্ডাটা তোমার ফাদার-ইন-লো!

স্নেহা : গুগ..গু..গুন্ডা!

রাহুল : ভয় পাচ্ছো?..

স্নেহা : আপনি মজা করছেন তাই না?..

রাহুল : একটু চিন্তা করে দেখো মিলছে কিনা! তারপর আমি মজা করছি কিনা তা আপনাআপনি জবাব পেয়ে যাবে, [ বলেই তেডি স্মাইল দিতে লাগলো, আর স্নেহা সত্যি সত্যিই চিন্তা করতে ব্যস্ত হয়ে গেলো ]

স্নেহা : কিন্তু রাহুল ওনাকে দেখে মোটেও মনে হয়নি ওনি এমন! কতোই ভালো ভালো কথা বললো গুন্ডা হলেতো আগে পিছে ছোট খাটো আরো গুন্ডা থাকতো, হাতে বন্ধুক-টন্ধুক থাকতো তাই না!

রাহুল : [ হেসে ] আমার ফোন গাড়ীতে ফেলে এসেছি! তোমার ফোনটা দাও! একটা কল করবো!

স্নেহা : [ ফোন এগিয়ে দিয়ে ] কাকে করবেন?..

রাহুল : ড্রাইভারকে! গাড়ী আনতে!

স্নেহা : আরে ড্রাইভারকে আবার গাড়ী আনতে বলার কি প্রয়োজন, আমরা টেক্সি করেই যায়!

– মাঝে মাঝে এসবে চড়তে ও শিখুন! এমনিতেও কবে এসবে চড়েছেন এটাও হয়তো মনে নেই আপনার! তাই না?..বড়লোক মানুষ আমাদের মতো কি আর টেক্সি-রিকশায় সয় নাকি!

রাহুল : [ হেসে ] ওহো, শাটআপ স্নেহা!

স্নেহা : তাহলে ডান?..

রাহুল : ইয়াহ! [ বলেই একটা টেক্সি ডেকে ঠিক করে নিলো, দুজনেই উঠে বসলো, চুপচাপ, টেক্সি চলছে ]

রাহুল : [ স্নেহার দিক ফিরে ] কি হলো? কি ভাবছো?.. [ হেসে ] তোমার ফাদার-ইন-লো কে?.. [ স্নেহা আড়চোখে রাহুলের দিক তাকিয়ে আবার চুপচাপ সোজা হয়ে তাকিয়ে রইলো ]

রাহুল : [ জোড়ে একটি শ্বাস ফেলে ] আগে ছিলো, এখন আর না!

– আমার দাদা ওয়াহিদ তাওয়াব, দাদা থেকেই শোনা ঘটনা, ওনার বিজনেস এর সব ডিল হতো স্কটল্যান্ডের ক্লাইন্টদের সাথে, একদিন দাদার এক ফ্রেন্ড তুরস্কতে থাকতো অনি, ওনার সাথে হটাৎ বিজনেস ডিল হয়, দাদা তুরস্কতে যায় ঐ ডিলের ব্যপারে, এবং তুরস্কের সৌন্দর্যতা ওখানের মানুষের আচরণ, ওখানের বাসস্থান দাদাকে মুগ্ধ করে দেই, দাদা স্কটল্যান্ডের সব ডিল আস্তে আস্তে ছুটিয়ে নিয়ে তুরস্কের ক্লাইন্টদের সাথে করা শুরু করে দিলো, এতে দাদার ঐ ফ্রেন্ডের সাথে দাদার আরো গভীর বন্ধুত্ব হয়ে গেলো, এমনটাই যে একজন আরেকজনের জন্য জান সহ দিয়ে দিবে ঠিক এমনি, দাদা তো বাংলাদেশের সবকিছু ছেড়ে তুরস্কে সেটেল হয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা শুরু করে দিলো, কিন্তু দাদী এতে মোটেও রাজি ছিলো না, তাই দাদীকে এইখানে রেখেই দাদাকে মাঝে মাঝে বিজনেস এর ব্যপারে তুরস্কে যেতে হতো,

– তখনকারই একদিন, দাদী তখন প্রেগন্যান্ট ছিলো, ডেলিভারির সময় ও একদম নিকটে, কিন্তু দাদার ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং তুরস্কে যেতে হবে, তবে দাদীকে এই অবস্থায় রেখে দাদা কিভাবে যাবে ? তখনি দাদার ঐ ফ্রেন্ডই দাদার মিটিং সামলিয়ে নিবে বলে ডিসাইড করে,

– পরদিন সকালে গুডনিউজ আসে, আই মিন আমার বাবা জন্ম নিয়েছিলো! দু-ঘন্টা পরই আবার বেড নিউজ আসে, ঐ মিটিংয়ে বাড়াবাড়ি হয়েছে ডিল নিয়ে, এতে দাদার ফ্রেন্ড চলে গিয়েছে!

স্নেহা : অন্য কান্ট্রিতে?..

রাহুল : [ হেসে চোখ দিয়ে ইশারা করে ] উপরে!

স্নেহা : হোহ!

রাহুল : অনি মারা যাওয়ার পর দাদা আর তুরস্কের কোনো ক্লাইন্টের সাথে ডিল করেনি, এবং ওনার নামেই বাবার নামকরণ করে হার্শ রাখা হয়!

স্নেহা : মানে আপনার দাদার ঐ ফ্রেন্ডের নাম হার্শ ছিলো?..

রাহুল : হুমম!

স্নেহা : এই নামের পেছনে এত্তো কাহিনী!

রাহুল : ঐ নামের মানুষটার মতোই বাবা হয়েছে! অনি তুরস্কের মাফিয়া ছিলো, আর বাবা বাংলাদেশের! [ স্নেহা শকড হয়ে তাকিয়ে রইলো ]

রাহুল : [ হেসে ] স্নেহা! সব মাফিয়ায় যে খারাপ কাজ করে তা না,
– আগে বাবার সাথে বড়বড় মাফিয়াদের হাত ছিলো, ইনফ্যাক্ট এখনো আছে তবে বাবা ওসব ছেড়ে দিয়েছে!

– নাইট-ক্লাব, লেইট নাইট পার্টি, ড্রিংকস করা এসব বাবার জন্য এভেইলেবল ছিলো, তারপর একদিন আমার মায়ের সাথে দেখা, মা অষ্ট্রেলিয়া থেকে পি.এইচডি কমপ্লিট করে এসেছিলো, বাবার স্কুল ফ্রেন্ড ছিলো মা,

– মায়ের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলো বাবা,কিন্তু মাকে বলতে বলতে টু-ইয়ারস্ লাগলো, মা ও রাজি হলো, বিয়ে ও হলো, বাবা ফুল চেঞ্জ সব ছেড়ে দিয়েছে, সব ঠিকঠাক চলছিলো, এর মাঝেই হঠাৎ কি হয়েগিয়েছিলো বাবার কে জানে?.. আবারও আগের মতো হয়ে যায়, লেইট নাইটে বাসায় ফিরতো, উলটাপালটা কথা বলে মাকে বকতো, মা-রাগ করে চলে যায় বাসা ছেড়ে,

বাবা আবার মাকে মানিয়ে নিয়ে আসে, এর মাঝে কিছু ভালোবাসা কিছু রোমান্স ছিলো নিশ্চয়, যার কারণে আমি জন্ম নেই, তিন-চারবছর ভালো ভালোই কাটছিলো,

কিন্তু তিনি আর ঠিক হতে পারলো না,

মাকে আবারও সন্দেহ, নতুন নতুন দোষ খুজে বেড়ানো মায়ের এসবই চলছিলো, এরপর আর কি? মা আর না পেরে এক্কেবারে চলে যায়,

আর উনি ওনার মতো দিন কাটাচ্ছিলো, মা চলে যাওয়ার কয়েকবছর পর বাবা আবার সব ছেড়ে দেই, বিজনেস এ ধ্যান দিতে থাকে,সবাই ভেবেছিলো উনি আবারো ওসবে জড়াবে, কিন্তু এরপর আর করেনি, কি হয়েছিলো কি জানি, তাতে আমার কি? আমি আমার মতো চলছিলাম,

স্নেহা : হুমম! তারমানে আপনার বাবা-মায়ের ও লাভ ম্যারেজ ছিলো!

রাহুল : হুমম!

স্নেহা : আপনার নামের সাথে আপনার বাবার নাম হাফ জুড়ানো, তাই কিছুটা ওনার ক্যারেক্টার এর সাথে আপনার ক্যারেক্টার ও মিল আছে!

রাহুল : এক্সকিউজ মি ?..

স্নেহা : এই যে যেখানে সেখানে হুটহাট রেগে মারামারি করতে বসেন, তারপর পার্টি-শার্টি, ডিংক্স এসব তো বাদই দিলাম,আমার সাথে মিট হওয়ার আগে আপনিও এসব কম করেছেন নাকি?..[ রাহুল হেসে উঠলো ]

– আর রোমান্টিক আপনার বাবা ও নিশ্চয় ছিলো তাই তো লাভ ম্যারেজ করেছে তাই না! আর আপনিও এমনটা হয়েছেন!

রাহুল : [ স্নেহার কাছে মাথা এনে ফিসফিসিয়ে ] লিসেন্ট বাবার বলতে দু-বছর লেগেছে! আমার বলতে ওয়ান উইক ও লাগেনি!

– আর বাবা যদি অতোটাও রোমান্টিক হতো এতোদিনে আমার আরো দু-তিনটা ভাই-বোন থাকতো! সো্ রোমান্স কাকে বলে তা আমি…

স্নেহা : [ রাহুলকে সরিয়ে দিয়ে ] ছিঃ রাহুল! স্টপ ইট! কথাটা কোথার থেকে কোথায় নিয়ে চলে যান! [ রাহুল হাসতে থাকে ]

স্নেহা : [ রাহুলের হাত ধরে ] রাহুল, অনি লাষ্টে যখন এসবে আর জড়ায়নি নিশ্চয় অনি ওনার ভুল বুঝতে পেরেছে! ভুল তো সবাই করে থাকে শুধরানোর জন্য আমাদের উচিত মাফ করে দেওয়া!

– অন্ধকারকে তো অন্ধকার দিয়ে আলোকিতো করা যায় না! তাতে আলো দিতে হবে! [ রাহুল ঠিক হয়ে বসে অন্যপাশ ফিরে থাকে ]

স্নেহা : রাহুল! ওনি আপনাদের এখনো ভালোবাসে, ওনার চোখের দিক একবার তাকিয়ে দেখেন সব বুঝতে পারবেন আপনি! অনি চাইলেই তো আরেকটা বিয়ে করতে পারতো…

রাহুল : [ বিরক্ত হয়ে ] অন্য টপিকে কথা বলি স্নেহা!

স্নেহা : আপনি কি বোঝাতে চাচ্ছেন আপনি আপনার বাবাকে ভালোবাসেন না?…এখনো বাসেন আপনার চেহেরায় বলছে!

রাহুল : স্নেহা! প্লিজ!

স্নেহা : তাহলে আপনি যে বলেছেন একটু আগে আপনার আইডিকার্ডে আপনার নামের সাথে আপনার বাবার নামে টিটল দেওয়া আছে! ওটা দিয়ে রেখেছেন কেনো?..এতোই যখন ঘৃণা করেন ওটাও সরিয়ে ফেলতেন!

রাহুল : ওটা আমি দেইনি! স্কুল থেকেই সার্টিফিকেটে দেওয়া ছিলো তাই বাধ্য হয়ে দিতে হয়েছে!

স্নেহা : আচ্ছা?.. তাহলে আপনার বাবার বাড়ির পাশের গেষ্ট হাউজে কেনো থাকেন এক্কেবারে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেতেন!

– আপনি ওখানে এই কারণেই থাকেন যাতে আপনার বাবাকে আপনি প্রতিদিন দেখতে পারেন!

রাহুল : তুমি কি চাও আমি নেমে যায়?..

স্নেহা : [ আড়চোখে তাকিয়ে রাহুলের হাত আরো শক্ত করে জড়িয়ে চেপে ধরে ] দরকার নেই!

রাহুল : তাহলে অন্য টপিকে কথা বলো আর নয়তো চুপ করে থাকো!

স্নেহা : [ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ] আপনার বাবা…

রাহুল : আবার?..

স্নেহা : আরে পুরো কথাটাতো শুনেন!

– আপনার বাবা বলেছিলো আপনি অলোয়েজ পুলিশের সাথে পাংগা নেড়ে আসেন আজ লকাপে বন্ধি হলেন কিভাবে!

– আ..আই মিন এর আগেও আপনি পুলিশের কাছে আরেষ্ট হয়েছিলেন?..

রাহুল : কয়েকবার ধরেছিলো লেইট নাইটে বাড়ি ফেরার সময়, ড্রাংক অবস্থায় গাড়ী চালানোর জন্য, গাড়ীতে ব্লাক মিরর লাগিয়েছিলাম তার জন্য! ব্যাস কয়েকমিনিটের জন্যই, টাকা দিতেই ছেড়ে দিয়েছে!

স্নেহা : টাকা দেওয়ার কি দরকার ছিলো আপনার বাবার নাম বললেই তো ছেড়ে দিতো! নয়তো আপনার পুরো নাম বলতেন! [ রাহুল আড়চোখে তাকাতেই ]

স্নেহা : [ হেসে ] ওকে সরি সরি! [ কিছুক্ষণ পরই স্নেহার বাড়ির সামনে এসে পৌছালো, দু-জনেই টেক্সির দু-দিক থেকে নেমে দাড়ালো, স্নেহা খেয়াল করলো রাহুল পকেটে হাত দিয়ে টেনশন ভাব নিয়ে হাত দিয়ে চেক করছে ]

স্নেহা : [ মনে মনে ] নিশ্চয় টাকা সব ঐপুলিশই নিয়ে নিয়েছে! [ চেচিয়ে ] শুনেন! আ..আমি আনছি উপর থেকে একটু ওয়েট করেন!

রাহুল : নো নো ওয়েট! গাড়ীতেই আছে মানিব্যাগ! [ বলেই রাহুল গাড়ীর দিক এগিয়ে গিয়ে মানিব্যাগটা নিয়ে আবার এগিয়ে এসে টেক্সির ড্রাইভারকে ভারা দিয়ে দেই, টেক্সি সামনেরদিক কিছুটা এগিয়ে চলে যেতেই হঠাৎ রাহুল হুট করে একটানে স্নেহাকে কাছে টেনে নিলো,
আনব্যালেন্স থাকায় দুজনেই একসাথে মাটিতে পড়ে গেলো যেখানে ছিলো ছোট ছোট পাথরের কণা, যা রাহুলের পিঠে চুপকে ধরলো, খানিকটা ব্যথা অনুভব করলেও রাহুল তাড়াতাড়ি পাশ মুড়ে তাকালো, রাগান্বিত ভাবে উঠে দাড়াতে যাবে কিন্তু খেয়াল করলো স্নেহা রাহুলের গায়ের উপর ভয়ে কুকরে আছে ]

রাহুল : [ চেচিয়ে ] স্নেহা সরো! [ বলেই উঠতে যাচ্ছিলো! ]

স্নেহা : [ রাহুলকে চেপে ধরে ] না রাহুল প্লিজ! যাবেননা!

রাহুল : [ রাগান্বিত ভাবে ] স্নেহা প্লিজ! [ পাশফিরে তাকিয়ে চেচিয়ে ] শিট!

রাহুল : হোয়াট দ্যা হেল স্নেহা?.. তোমার সেন্স কই থাকে?..

স্নেহা : [ তাড়াহুড়ো করেই উঠে বসে ] আমার কি দোষ?.. আপনিই তো হঠাৎ টান দিলেন!

রাহুল : [ দাতকিলিয়ে ] আমি এটার কথা বলছিনা, [ পাশফিরে তাকিয়ে ] ঐ গাড়ীটা তোমার দিকই আসছিলো আর তোমার খবরই নেই!

স্নেহা : কিন্তু কোনো আওয়াজই তো হলো না! তাই…

[ রাহুল আর কিছু না বলে উঠে দাঁড়িয়ে, স্নেহাকে ও হাত ধরে টেনে উঠে দাড় করালো, রাগান্বিত ভাবে ফুফিয়ে ফুফিয়েই শ্বাস ফেলছে রাহুল ]

স্নেহা : আ..আপনি ঠিকাছেন?..

রাহুল : গাড়ীর নাম্বারটা খেয়াল করতে পারলাম না! [ চেচিয়ে ] তোমার জন্য!

স্নেহা : আরে এমন ওতো হতে পারে ঐ দিকটা রাস্তা ছোট তাই ভুলে আমার দিক এগিয়ে দিলো,

রাহুল : [ রাগান্বিত ভাবে ] ড্রাইভ আমিও জানি, কোন রাস্তায় কতো বড় গাড়ী যাওয়া যাবে এটাও ভালো জানি! আচ্ছা বাদ দিলাম এসব, গাড়ীর হর্ণ তো ছিলো!

স্নেহা : হ..হয়তো নষ্ট হয়ে গেছে!

রাহুল : তোমার মাথায় বুদ্ধি বলতে কিছু নেই! ঐদিকে এতো বড় জায়গা খালি..ও এইদিকটাই কেনো এগিয়ে এলো, তারমধ্যে তোমাকে সরিয়ে নেওয়ার পর গাড়ীটা কিছুদূর গিয়েই থেমে গেলো, আমি উঠতে উঠতেই পালালো!

স্নেহা : ভালোই হয়েছে পালিয়েছে! হয়তো সামিরই ছিলো! আর আপনি আবার মারামারি করার জন্য যেতেছিলেন তাই না?..

রাহুল : সামির না সামির হলে আমার দিকই আসতো গাড়ী তোমার দিক না!

[ স্নেহা রাহুলের গলার দিক তাকিয়ে, মুখে হাত রেখে হোহ বলেই চেচিয়ে উঠলো ]

রাহুল : কি হলো?..

স্নেহা : [ রাহুলের গলায় হাত রেখে ] ব্লাড?.. কেমনি হলো ?..

রাহুল : [ স্নেহার হাতের নখের দিক তাকিয়ে বুঝতে পেরে ] বাদ দাও…

[ স্নেহা কিছুক্ষণ চিন্তা করে মনে পড়লো সে তো ভয়ে রাহুলকে খামছে ধরেছিলো ]

স্নেহা : সরি রাহুল..আ..আমি আসলে..তখন..

রাহুল : ডোন্ট-ওয়ারি! তুমি বাসায় যাও এখন! আমি আসছি পরে দেখা করবো… [ বলেই তাড়াহুড়া করে গাড়ীর দিক এগুচ্ছিলো ]

স্নেহা : [ রাহুলের হাত ধরে ] কোথায় যাচ্ছেন আপনি আমি ভালো করেই জানি!
– আমার সাথে চলেন বাসায়, আমি ঔষধ লাগিয়ে দিচ্ছি!

রাহুল : স্নেহা জাষ্ট সামান্য একটুই সেড়ে যাবে!

স্নেহা : একটু হোক আর বেশি আপনি এখন আমার সাথে বাসায় যাবেন ব্যাস আমি আর কিছু শুনবো না…

রাহুল : লিসেন্ট!

স্নেহা : [ কান চেপে ধরে ] নো লিসেন্ট!

রাহুল : [ জোড়ে একটি শাস ফেলে ] ওকে চলো! [ স্নেহা একটু হেসে রাহুলের হাত ধরলো, রাহুল ও হাত ধরে উপরে নিয়ে গেলো, দুজনেই রুমে গিয়ে ঢুকলো, স্নেহা টেবিলের ড্রয়ার থেকে কটোন আর ঔষধ নিয়ে পাশ ফিরতেই দেখে রাহুল তার জ্যাকেট খুলে চেয়ারের উপর রাখছে, অমনিই রাহুল বলে চেচিয়ে উঠলো স্নেহা! ]

রাহুল : [ অবাক হয়ে ] কি হলো?..

স্নেহা : [ দৌড়ে এগিয়ে এসে ] দেখি আপনার পেছনে?…

রাহুল : অও! ওটা তেমন কিছুনা সামান্য একটু ব্যথা পেয়েছি! হয়তো ছোট ছোট পাথর ছিলো!

স্নেহা : কিন্তু রাহুল ব্লিডিং হচ্ছে! আপনার শার্টের উপরই ভেসে উঠছে…

রাহুল : আচ্ছা?..

স্নেহা : আপনি এইদিকে বসেন আমি মেডিসিন লাগিয়ে দিচ্ছি, [ বলেই স্নেহা কটোন আর ঔষধ নিয়ে খাটে বসলো, রাহুল শার্ট খুলে চেয়ারে বিলিয়ে রেখে স্নেহার পাশে এসে বসলো, স্নেহা কটোনে মেডিসিন লাগিয়ে রাহুলের দিক তাকাতেই চমকে যায় ]

[ রাহুল কিছুক্ষণ নিজের চুলগুলো এপাশ-ওপাশ করে ঠিক করতে থাকে.. দীর্ঘ একটি শ্বাস ফেলে হাত পেছনে রেখে ভর দিয়ে বসলো, স্নেহার দিক তাকাতেই দেখে সে চমকে চেয়ে আছে ]

রাহুল : [ ভোর তুলে ইশারা করে ] কি হলো?..

স্নেহা : নাহ.. কিক…কিছুনা..আ..আপনি পেছনে ফিরেন!

রাহুল বুঝতে পেরে তেডি স্মাইল দিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবার ধীরে ধীরে পেছন ফিরে বসলো, স্নেহাও ধীরে ধীরে মেডিসিন লাগিয়ে দিচ্ছে.. ব্যাথা অনুভব হচ্ছিলো রাহুলের তবে স্নেহার হাতের স্পর্শে ব্যথাটাও ভুলে যেতে বাধ্য হচ্ছে,

স্নেহা : [ পিঠে মেডিসিন লাগিয়ে দেওয়ার পর ] এ..এবার সামনে ফিরতে পারবেন..

রাহুল ধীরে ধীরে স্নেহার পাশ ফিরে ঘুরে বসলো.. স্নেহা নিচের দিক তাকিয়ে কটোনে মেডিসিন লাগাচ্ছে, চোখ তুলে মেডিসিন লাগাতেই যাবে তখনি থমকে গিয়ে আবার আড়চোখে রাহুলের দিক তাকালো, রাহুল তেডি স্মাইল দিয়ে তাকিয়েই আছে স্নেহার দিক..স্নেহা কাপা হাতে রাহুলের গলার দিক কটোন দিয়ে মেডিসিন লাগাতে লাগলো, আর রাহুল ধীরে ধীরে স্নেহার ঘাড়ের কাছে মাথা আনলো, হাত দিয়ে চুল গুলি সরিয়ে একপাশ করে রাখলো, স্নেহা ঢোগ গিলতে লাগলো, তাও মেডিসিন লাগাতে নিজেকে ব্যস্ত রাখার অপারগ চেষ্টা, হঠাৎ ঘাড়ে কারো ঠোটের স্পর্ষ পেতেই স্নেহা চোখ বন্ধ করে শিউরে উঠলো, নিজের অজান্তে রাহুলের ক্ষত জায়গায় মেডিসিন লাগানো কটোনটি জোড়ে চেপে ধরলো, রাহুল ব্যথা অনুভব করায় স্নেহার কোমোড়ে হাত রেখে চেপে ধরলো, সাথে স্নেহার ঘাড়ে আরো গভীরভাবে চুমু দিলো

চোখ খুললো স্নেহা, রাহুল তার দাড়ি দিয়ে স্নেহার গাল ঘষে দিলো স্নেহা আবারো কেপে উঠলো..
ধীরেধীরে স্নেহার ঠোটের দিক তাকিয়ে এগুতেই স্নেহা কটোনটি ক্ষতো জায়গায় আবার ও জোড়ে চেপে ধরলো,

রাহুল : আহহ! স্নেহা! [ কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো স্নেহা ] হোয়াট আর ইউ ডুয়িং? হ্যা!

স্নেহা : [ হেসে ] আর আপনি কি করছিলেন?..

রাহুল : আ.. আমি তো [ বলেই তেডি স্মাইল দিয়ে নটি মাইন্ডে তাকিয়ে থাকলো, একটু হেসে চলে যাচ্ছিলো স্নেহা হুট করেই রাহুল স্নেহার হাত ধরে টান দিয়ে আবার বসিয়ে দিলো ]

রাহুল : আহা..মেডিসিন কমপ্লিট করে যাও..

স্নেহা : কিক..কিন্তু লাগালামই তো…

[ রাহুল হাত দিয়ে গলার মেডিসিন সব মুছে ফেলে খাটের মাঝে শুয়ে পড়ে, স্নেহা অবাক হয়ে হা করে তাকিয়ে রইলো ]

রাহুল : চলে গেছে সব! এবার লাগাও…

স্নেহা : কিন্তু আপনি তো ইচ্ছে করেই…

[ বলতেই রাহুল একটানে স্নেহাকে কাছে টেনে নেই, স্নেহার মুখ দিয়ে কিছুই বেরুচ্ছেনা রাহুলের খালি বুকের মাঝেই সে পড়ে আছে… রাহুল স্নেহার সামনে নুয়ে যাওয়া চুল গুলো কানের ধারে গুজে দিলো,স্নেহা চোখ বন্ধ করেই জোড়ে জোড়ে শ্বাস ফেলতে লাগলো ধীরে ধীরে স্নেহাকে কাত করে পাশে শুয়ে দিয়ে রাহুল স্নেহার উপুর হয়ে শুলো ]

রাহুল : কামঅন স্নেহা ভয় পাচ্ছো কেনো ঐদিনই তো বলেছো আমার উপর ভরসা আছে, [ স্নেহা চোখ নামিয়ে রাখলো ]

রাহুল হাতে ভর করে মাথা রেখে তেডি স্নাইল দিয়ে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ,

ধীরে ধীরে হাত এগিয়ে স্নেহার ওড়না সরাতে লাগলো ঐ সময়ই হুট করে স্নেহা লাফিয়ে উঠে বসলো, আর কিছু না ভেবে খাট থেকে উঠে দৌড়ে চলে যাচ্ছিলো হঠাৎ ওড়না কারো হাতে টান পড়তেই স্নেহা আবার থেমে যায়, কোমোড়ে স্পর্শ পেলো কারো, বুকটাও কেপে চলছে এবার.. রাহুল তার দিকই ফেরালো স্নেহাকে,

রাহুল : কই যাও…

স্নেহা : আ..আমি..

রাহুল : ইয়েস ইউ…

পিছিয়ে গেলো স্নেহা..আর রাহুল পা বাড়িয়ে এগিয়ে এলো স্নেহার নিকটে, লেগেপড়লো স্নেহা আলমারির সাথে! পেছানোর আর জায়গা নেই, পাশ কেটে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই রাহুলের হাত আলমারিতে রেখে বাধা দিলো… অন্যহাতে স্নেহার কোমোড়ে স্লাইড করে ধরলো, চোখ তুলে রাহুলের দিক তাকাতেই দেখে রাহুল এমনভাবে তাকিয়ে আছে, যে চাহনিতে সে বারবার মরতে চাইবে, চোখ বন্ধ করে ফেললো স্নেহা! ঠোটে রাহুলের ঠোটের আলতো স্পর্শ পেলো..

রাহুল : [ ধীরে ধীরে স্নেহার হাত স্লাইড করে ধরে স্নেহার দিক তাকিয়ে ] ব্যথা পেয়েছিলে তখন স্নেহা?.. [ স্নেহা মাথা নাড়াতেই, হাতটি মুখের কাছে তুলে চুমু খেলো রাহুল, শিউরে উঠলো স্নেহা যেনো শরীরের সব লোমই দাঁড়িয়ে পড়েছে ]

ধীরেধীরে গলায় হাত রেখে ওড়নাটা টেনে ফেলে দিলো রাহুল! চুল সরিয়ে আলতো করেই চুমু খেলো গলায়,
চোখ বন্ধ করে রাহুলের খালি কাধেই খামছে ধরলো স্নেহা! রাহুল স্নেহার কপালে চুমু খেয়ে ধীরেধীরে সরে পিছিয়ে দাড়ালো,স্নেহা চোখ নামিয়ে ঐ দিকটাই দাঁড়িয়ে আছে…চেয়ার থেকে শার্টটা এগিয়ে নিয়ে পড়ে নিলো রাহুল! কলার ঠিক করে পকেটে হাত রেখে হেসে স্নেহার দিক তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ, ব্লাশিং হয়ে চোখ নামিয়ে মুচকি হাসছে স্নেহা ও,

ধীরে ধীরে স্নেহার কাছে এগিয়ে এসে দাড়ালো রাহুল,গলায় হাত দিয়ে স্লাইড করে দিলো,স্নেহা চেয়ে আছে রাহুলের দিক,

রাহুল : স্নেহা আমার কিছু বলার ছিলো তোমাকে! [ স্নেহা কৌতুহল চোখে তাকালো ]

– আই নো স্নেহা ইউ লাভ মি! এন্ড ইউ অলসো্ লাভ ইউর প্যারেন্টস!
– তোমার বাবার মাথায় আমার ব্যপারে যা ঢুকেছে হয়তো ওনার জায়গায় আমি হলে ও এটা মেনে নিতাম না!
– সো্ আমি কি বোঝাতে চাচ্ছি বুঝতে পারছো?…

স্নেহা : [ কাদো ভাবে ] রাহুল! বাবা আমার এংগেজমেন্ড ঠিক করেছে আজ সামিরের সাথে! তাও আবার আমাকে না জানিয়ে! ঐ সামিরই বলে গেলো যাওয়ার সময়! [ রাহুল রাগান্বিতভাবে হাত মুঠি বেধে অন্যপাশ ফিরে গেলো স্নেহা বুঝতে পারলো রাহুলের রাগ উঠছে ]

স্নেহা : [ রাহুলের কাছে এগিয়ে গিয়ে ] রাহুল আপনি…

রাহুল : তো কি ভেবেছো স্নেহা ? করে নিবে এনগেজমেন্ট সামিরের সাথে?..

স্নেহা : কি বলছেন আপনি আমি ওর সাথে কেনো এনগেজমেন্ট করবো!

রাহুল : [ স্নেহার দিক তাকিয়ে ] তাহলে চলো আমার সাথে! [ স্নেহা চুপ করে চেয়ে রইলো ] কি হলো স্নেহা?..এতো কি ভাবছো?.. পারবানা আমার হাত ধরে যেতে! [ চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়লো স্নেহার, কষ্টমাখা একটি দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো রাহুলের, স্নেহার চোখ মুছে দিয়ে অন্যপাশ ফিরে গেলো ]

রাহুল : আমি আমার রাগ মেঠানোর জন্য সামিরকে মারবো ঠিকই স্নেহা! কিন্তু তাও তোমার বাবা আমাকে মেনে নিবে না! আর সামির ও থেমে থাকবে না ও এসবের জন্য অনেক নিচুই নামতে পারে,
– আর ওকে মারার পর তোমার একা চলাটাও মোটেও সেফটি না! ইনফ্যাক্ট তোমাকে বাসায় একা রাখাটাও আমার সেফটি মনে হচ্ছে না!
– আর এইদিকে তুমিও আমার সাথে যেতে রাজি নও! আমি আর কি করতে পারি স্নেহা! তুমিই বলো কি করবো?..

স্নেহা : [ রাহুলের শার্ট মুচড়ে ধরে তারদিক ফিরিয়ে ] তাহলে নিয়েই চলুন আপনার সাথে! [ কাদো ভাবে ] আমি না কবে বললাম?..

রাহুল : [ অবাক হয়ে তাকিয়ে ] রি…রিয়েলি স্নেহা!

স্নেহা : [ হেসে মাথা নাড়িয়ে ] রিয়েলি! আই কান্ট লিভ উইদাউট ইউ রাহুল! ব্যাস যেখানেই নিয়ে যাবেন যান আমার এসব আর সজ্য হচ্ছে না!

– আ..আই লাভ ইউ রাহুল!

চলবে….

Love At 1st Sight Season 3 Part : 40

0

Love At 1st Sight
~~~Season 3~~~

Part : 40

writer-Jubaida Sobti

স্নেহা : কেনো করছেন আপনি এমন প্লিজ!

– [ কাদো কন্ঠে ] আপনি বলুন পুলিশকে ওর কোনো দোষ নেই!

সামির : আহা! নির্দোষ একজন ব্যাক্তির উপর হাত তোলা এটা দোষ না স্নেহা?..এটা আইনের বিরোধী!

স্নেহা : [ চেচিয়ে ] প্লিজ! বন্ধ করুন আপনার এসব অভিনয়! কোনো আইনের ধারায় পুলিশ আসেনি! আপনিই এসব প্লান করে টাকা খাইয়ে এনেছেন!

– আপনি ইচ্ছে করেই রাহুলের রাগ তুলেছেন যাতে রাহুল আপনার গায়ে হাত তুলে, সুযোগ পেয়েও আপনি ওর গায়ে হাত তুলেননি যাতে আপনি আপনার করা প্লান কাজে লাগাতে পারেন!

সামির : ওয়াও স্নেহা! তুমিতো দেখছি মারাত্মক ইন্টেলিজেন্ট!

স্নেহা : [ কেদে হাত জোড় করে ] প্লিজ!

সামির : সইছে না তো রাহুলের কষ্ট?..ঠিকাছে! সন্ধায় তৈরী থেকো,তুমিই পারবে রাহুলের কষ্ট কমাতে, আমাদের এক একটা প্রোগ্রাম শেষ হবে,ধীরেধীরে রাহুলের কষ্ট কমতে থাকবে,

[ বলেই চোখ মেরে গাড়ী টান দিয়ে চলে যায় নিস্থব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্নেহা, সামিরের বলা কথাটা কানে বেজে উঠছে বারবার চোখ দিয়ে পানি ছুটে চলছে, গাড়ীর লুকিং গ্লাস দিয়ে স্নেহার কাদো চেহেরা দেখে হেসে হেসে ড্রাইভ করে চলে যাচ্ছে সামির ]

মনে মনে ভাবছে আর হাটছে স্নেহা!

– সামিরের আশায় থাকলে রাহুলকে এতো সহজে পুলিশ স্টেশন থেকে নিয়ে আসা সম্ভব না! কিছু একটা তো করতেই হবে, [ কাদো ভাবে ] কিন্তু কি করবে কিছুই তো মাথায় আসছে না, কিছুদূর হেটে গিয়ে একটা টেক্সি ঠিক করে নিয়ে উঠে পড়লো! টেক্সি চলছে, স্নেহার মনটা ছটফট করছে রাহুলের জন্য! পথটাও যেনো আজ শেষ হচ্ছে না,
_______________________________________

In Police Station,

রাহুল বসে আছে একটি টুলের মধ্যে, আশেপাশে আরো অনেক আসামীই রয়েছে, কাউকে চুরি করতে গিয়ে ধরে চুল কামিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিলো তো কাউকে ইপটিজিং এর কারণে ধরে আনা হলো, আবার কারো বাইকের লাইসেন্স না পাওয়ায়, আবার কিছু ড্রাগ এডিক্টেডদের,

রাহুল বসে বসে তাদেরই ক্লাস নিচ্ছিলো, তারাও কেউ গোমড়া মুখে জবাব দিচ্ছে তো কেউ হাসি মুখে,

সবার ক্লাস নেওয়া শেষে রাহুল হেসে, হাত ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে হ্যান্ডকাফটি দেখছিলো, ঐ সময়ই জানালা দিয়ে অফিসারের দিক চোখ পড়লো, অফিসার আর কাউন্সটেবল এর মধ্যে কথোপকথোন হচ্ছে,

কাউন্সটেবল : [ ফিসফিসিয়ে ] স্যার, ঐ হিরোর লাভারটা এসেছে!

অফিসার : হুমম!… কোথায়?..

কাউন্সটেবল : স্যার, বাহিরে অপেক্ষা করছে, আসতে বলবো কি ভেতরে?…

অফিসার : হ্যা! বলো আসতে!

স্পষ্ট কিছু বুঝতে পাচ্ছিলো না রাহুল, তবে তাও আড় চোখে কান পেতে, জানালার দিক চেয়ে রইলো, কাউন্সটেবল বেড়িয়ে পড়লো, বাকি কাউন্সটেবল গুলো যার যার কাজে ব্যস্ত, আর অফিসার! তার তো কোনো কাজ নেই চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে আর চা খাচ্ছে, অফিসারের পেট দেখে রাহুল ভাবতে লাগলো, যেনো কোনো হাতির বাচ্চাই জন্মই নিবে এটা থেকে, শালা ঘুষ খেতে খেতে পেট টা গন্ডারের মতো করেছে, ভেবেই রাহুল আবার মুখ ফিরিয়ে ফেললো,

হঠাৎ, কিছুক্ষণ পরই কানের কাছে সেই চেনা মিষ্টি সুরটি ভেসে আসলো, পাশ মুড়ে আবার জানালা দিয়ে তাকাতেই রাহুল অবাক হয়ে গেলো!

স্নেহা : স্যার সত্যিই ওর কোনো দোষ নেই!

অফিসার : দোষ আছে কি না আছে সেটা! আমরাই ভালো বুঝবো তাই না?..

রাহুল : [ দাঁড়িয়ে গিয়ে মনে মনে ] ওহ গড! ডেম ইট! স্নেহা এইখানে কেনো এলো!

স্নেহা : আচ্ছা! আ..আমি একটু দেখা করতে পারি ওর সাথে?

অফিসার : কি হবে দেখা করে?…

স্নেহা : জাষ্ট একটু কথা বলবো! প্লিজ!

কাউন্সটেবল : আমার মনে হয় আপনি পুলিশ স্টেশনের রুলস জানেন না!

স্নেহা : জি! বুঝেছি.. কিক..কিন্তু আমার কাছে অতো টাকা নেই! যা আছে আমি তাই দিচ্ছি! [ বলেই ব্যাগে দু-তিনশ টাকার মতো ছিলো এবং তাই তাড়াতাড়ি বের করে দিয়ে দিলো ]

কাউন্সটেবল : আরে আস্তেআস্তে ম্যাডাম!

– [ হেসে ধীরে কন্ঠে ] আপনাকে আপনার ইয়ের সাথে দেখা করতে দিবো, আর আপনি এতো কম বকশিস!

[ স্নেহা টেনশনে পড়ে গেলো আর তো টাকা নেই তার কাছে, তবে রাহুলের সাথে দেখা করাটাও খুব জরুরী! ]

অফিসার : ঠিকাছে যাও কিন্তু সময় ঘড়িধরা দু-মিনিট! শুধু, এর চেয়ে একসেকেন্ড ও বেশি হবে না!

[ স্নেহা মাথা নাড়ালো অফিসারের কথায় ]

কাউন্সটেবল : আসেন ম্যাডাম! [ হাত দিয়ে ইশারা করে ] ঐ যে!

[ রাহুলের দিক চোখ পড়তেই চোখে আবার পানি এসে জমে গেলো স্নেহার, তাড়াহুড়ো করে এগিয়ে গিয়ে দাড়ালো জানালার ধারে, ফুফিয়ে ফুফিয়ে কেদে চলছে, মুখ দিয়ে কিছু বলতেই পারছে না স্নেহা! ]

রাহুল : রিলেক্স! স্নেহা! এভাবে কাদছো কেনো?… আমি একদম ঠিকাছি!

স্নেহা : [ কাদো কন্ঠে ] আপনি এইখানে এই অবস্থায়.. কিভাবে ঠিকাছেন!

রাহুল : শুধুশুধু চিন্তা করছো! তুমি, আমি সত্যিই ঠিকাছি!

– আর তুমি এইখানে আসলে কেনো স্নেহা ?..

স্নেহা : আপনি এইখানে আর আমি আসবো না?..[ কাদো ভাবে ] শুধুশুধু এসব বাড়িয়েছেন.. কি দরকার ছিলো ওর সাথে মারামারি করার…

রাহুল : [ দাতকিলিয়ে ] স্নেহা! ও তোমার হাত ধরেছে! পুলিশ না আসলে তো ওকে ঐদিকেই পুতে রাখতাম

স্নেহা : [ মাথা নুয়ে ] সব আমার জন্যই হচ্ছে তাই না!

রাহুল : শাট-আপ স্নেহা!

[ স্নেহা কিছু বলতে যাবে তখনিই আশেপাশের দিক চোখ পড়তে স্নেহা চুপ হয়ে যায় ]

স্নেহা : এ..এরা কাক..কারা?..

রাহুল : [ একটু হেসে ] এরা! পুলিশ স্টেশন এর গেষ্ট! আমার মতো! [ সবাই হেসে উঠে ]

রাহুল : [ পেছন ফিরে ] গাইস্ তোমাদের ভাবি! [ বাকিরা হাত নাড়ালো ]

স্নেহা : ইনার চুচ..চুলে কি হয়েছে?..[ বলতেই চোরটা মাথায় হাত দিয়ে ঢেকে নিলো, বাকিরা আবারো হেসে উঠলো ]

রাহুল : অও ওর চুলে?.. [ হেসে ] আসলে ও নাকি ইয়ো ইয়ো হানি সিং এর বিগ ফ্যান তাই এভাবে কেটেছে!

স্নেহা : আচ্ছা!

হঠাৎ পাশ থেকে,

কাউন্সটেবল : [ এগিয়ে এসে ] ওহ! ম্যাডাম টাইম ওভার! এখন আসতে পারেন!

স্নেহা : [ অবাক হয়ে ] আরে?..এখনো তো পুরোপুরি একমিনিট ও হয়নি!

কাউন্সটেবল : [ মুখে পান ঢুকিয়ে ] ম্যাডাম আপনি হয়তো পুলিশ স্টেশন এর রুলস জানেন না! [ বুঝতে পারলো স্নেহা! কি চাই তার, কিন্তু কি করবে স্নেহা! টাকাও তো শেষ তার, হঠাৎ মাথায় এলো আইডিয়া, উপুর হয়ে বসে পা থেকে পায়েলটি খুলে নিলো ]

স্নেহা : এটা চান্দীর, বিক্রি করলে প্রথমে যা দিয়েছি তার চেয়েও কিছুটা বেশি পেতে পারেন! [ বলেই এগিয়ে দিলো ]

রাহুল : [ রাগান্বিত ভাবে ] স্নেহা তুমি পাগল হয়ে গেছো?..

কাউন্সটেবল : [ এগিয়ে নিয়ে ] ঠিকাছে! আরো একমিনিট দিলাম যাও! [ বলেই সরে গেলো ]

রাহুল : কি করছো স্নেহা তুমি এসব?.. ওরা এভাবেই করতে থাকবে, যাও বাসায় যাও!

[ স্নেহা জল চোখে রাহুলের দিক তাকালো, রাহুল ও তাকিয়ে রইলো, চেয়ে ও হাত বাড়িয়ে স্নেহার চোখের জল মুছে দিতে পারছিলো না ]

রাহুল : স্নেহা! প্লিজ ডোন্ট ক্রাই! এইধরনের পুলিশদের নজর খারাপ হতে ও দু-সেকেন্ডের বিশ্বাস নেই!

– প্লিজ বাসায় যাও!

স্নেহা : [ কাদো কন্ঠে ] রাহুল! ওরা তো টাকার ডিমান্ড করবে! কিক..কিন্তু আমার কাছে তো অতো টাকা নেই!

– আ..আপনি তো সব বুঝেন, আর অন্য কোনো তো ওয়ে হবে আপনাকে বেড়িয়ে আনার!

রাহুল : আরে তুমি ওসব নিয়ে টেনশন করছো কেনো?..ওরা আমায় কালই ছেড়ে দিবে!

– ওদের সামির টাকা খাইয়েছে যাতে আমাকে একদিনের জন্য রিমান্ডে দেই! জাষ্ট! একটা দিনই তো স্নেহা! কালই চলে আসছি আমি!

স্নেহা : [ চমকে গিয়ে ] কিহহ! রিমান্ডে?.. আপনি কি কারো খুন করে দোষ শিকার করছেন না নাকি?..আপনাকে কেনো রিমান্ডে দিবে?.. [ কাদো কন্ঠে ] আপনি পাগল হয়েগেছেন! এটাকে জাষ্ট একটা দিন বলছেন?..

রাহুল : [ হেসে ] রিলেক্স স্নেহা! আমি চাচ্ছি এই অফিসার এর চাকরি খাবো, জাষ্ট একবার রিমান্ডে দিক! এরপরদিন বেড়িয়ে ও ওর চাকরি কই রাখে আমি দেখবো!

স্নেহা : দেখেন! রাহুল আপনার মাথা ঠিকাছে?..আপনি রিমান্ডে দিবে এটাকে কি ইজিলি নিচ্ছেন! আমি শুনেছি রিমান্ডে নাকি অনেক অত্যাচার করে [ কাদো কন্ঠে ] খুব মারে!

রাহুল : [ মুচকি হেসে ] তো কি হয়েছে?.. মার খাবো! এটাতো সামান্য ব্যাপার স্নেহা, তোমার জন্য জানটাও হাজির!

স্নেহা : [ বিরক্তি হয়ে ] আপনি!.. [ বলতেই হঠাৎ পাশ থেকে কাউন্সটেবল এসে কাশি দিলো ]

কাউন্সটেবল : ম্যাডাম! টাইম ওভার!

স্নেহা : দেখেন প্লিজ! আর বেশিক্ষণ না জাষ্ট একটু!

কাউন্সটেবল : রুলস হিসেবে টাইম কিন্তু ওভার!

রাহুল : হয়েছে স্নেহা! এবার বাসায় যাও চুপচাপ, রিলেক্স থাকো, আমি প্রমিস করছি, কাল এসেই তোমার সাথে আগে দেখা করবো!

স্নেহা : কিন্তু! রাহুল..কাল পর্যন্ত…তো

কাউন্সটেবল : দেখেন ম্যাডাম! সময় শেষ! এবার বেড়িয়ে যান! নয়তো রুলস অনুযায়ী কাজ করেন তারপর আমি আরো এক মিনিট বাড়িয়ে দিতে পারি!

রাহুল : [ রাগান্বিত ভাবে ] শাট-আপ! কমপক্ষে গায়ে পড়া ইউনিফর্মটাকে তো রেসপেক্ট করতে শিখো! লজ্জা করেনা এসব করতে,

কাউন্সটেবল : সয়ে গেছে! লজ্জা কিসের, আর তুই ভেতরে বসে চিড়িয়াখানার সাপের মতো টুকাটুকরি করিস না! চুপচাপ বইসা থাক! [ রাগ উঠছিলো রাহুলের তাও কন্ট্রোল করে নিলো ]

রাহুল : লিসেন্ট স্নেহা! বাসায় যাও!

[ স্নেহা চিন্তা করতে লাগলো আর তো কিছু নেই তার কাছে, তবে রাহুল ও তো বললো না কিছু কিভাবে ছুটিয়ে আনা যাবে ]

কাউন্সটেবল : ম্যাডাম এতো কি ভাবছেন! সময় নাই ভাবার! চিকচিক করছে,

দু-হাত মুঠি বেধে একসাথে মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলো, হাতের দিক তাকিয়ে ভাবতে লাগলো, এটা রাহুলের পড়িয়ে দেওয়া রিং, তাদের ভালোবাসার নিশানা, এটা কিভাবে দেওয়া সম্ভব!

[ রাহুল ও কিছু বললো না, স্নেহার কান্ড দেখে যাচ্ছে চুপ করে, জলভরা চোখে একপলক তাকিয়ে আবার কাউন্সটেবল এর দিক তাকালো স্নেহা! আর কিছু বললো না পাশ মুড়ে কিছুদূর হেটে গিয়ে আবার পেছন ফিরে তাকালো রাহুলের দিক, মুচকি হাসলো রাহুল, মুখের দিক হাত উঠিয়ে স্নেহাকে ও হাসার জন্য ইশারা করলো, কষ্ট চাপা হাসি দিয়ে বেড়িয়ে গেলো স্নেহা! ]

ধীরেধীরে হাটতে লাগলো, খুব অসহায় ফিল করছে নিজেকে, তবে কি রাহুলের বলা কথায় চুপ করে বাসায় গিয়ে বসে থাকবে নাকি? এটা কিভাবে সম্ভব! রাহুলকে তার জন্যই পুলিশ স্টেশন যেতে হলো, তবে রাহুলকে ফিরিয়ে আনতে হলে যা করা লাগবে সে করবে..এভাবে চুপ হয়ে বসে থাকলে চলবে না! রাহুল তার জন্য এতোকিছু করতে পারলে এইটুকুতো রাহুলের জন্য সে করতেই পারে,

টেক্সি ঠিক করে তাড়াহুড়ো করে বাসায় গিয়ে উঠলো, আলমিরা খুলে বাকি কিছু টুকটাক টাকা ছিলো সেগুলো গুছিয়ে ব্যাগে ভরে নিয়ে আবার টেক্সি করে বেড়িয়ে পড়লো,

রাহুলের বাড়ির গেইটের কিছুটা দূর দাঁড়িয়ে চুপ করে রইলো, বুকটা কেপে চলছে স্নেহার, ভেতরে গিয়ে কি বলবে, উফফ! বলতে তো হবেই! সে জানে রাহুল জানলে তার উপর রাগ করবে! কিন্তু কি করার এটাই একটা রাস্তা!

ধীরেধীরে গেইটের দরজা খুলতেই সিকিউরিটির সালাম শুনে চমকে উঠলো স্নেহা!

সিকিউরিটি : মেম! রাহুল ভাইয়া তো বাসায় নেই! বেড়িয়ে গেছে, আপনি দাদীর কাছে যেতে পারেন!

স্নেহা : হ্যা! জানি..আ..আমি রাহুলের সাথে দেখা করতে আসিনি!
– আচ্ছা আপনি বলতে পারবেন দাদী এখন কি করছে হবে ?

সিকিউরিটি : [ কিছুক্ষণ চিন্তা করে ] সেটাতো বুঝতে পারছিনা! তবে আপনি ভেতরে আসুন..

স্নেহা : না না..ঠিকাছে,
– আচ্ছা রা..রাহুলের বাবা আছে বাসায়?..

সিকিউরিটি : পাচঁমিনিট হলো অফিসের জন্য বেড়িয়েছে!

স্নেহা : [ মনে মনে ] দাদীকে বললে খামাখা টেনশন করে অসুস্থ হয়ে পড়বে, রাহুলের বাবাকেই বলি,

সিকিউরিটি : মেম! আ..আসুন ভেতরে!

স্নেহা : আচ্ছা আপনি আমাকে একটু বলতে পারবেন রাহুলের বাবার অফিস কোথায়?..

সিকিউরিটি : ক্রসিং রোড, হারশ ইন্ডাস্ট্রি!

স্নেহা : থেংক ইউ ভাইয়া! [ বলেই স্নেহা তাড়াহুড়ো করে বেড়িয়ে পড়লো, টেক্সি যতো অফিসের দিক এগুতে চলছে ততো স্নেহার শরীর কাপতে লাগলো, অবশেষে পৌছাতেই স্নেহা নেমে এসে টেক্সি বিদায় করলো, মাথা তুলে অফিসে বিল্ডিং এর দিক তাকিয়ে রইলো ]

– [ মনে মনে ] মুখ উঠিয়ে তো চলে এলি স্নেহা কিন্তু বলবি কি?..বাহির থেকে কাপতে লাগছিস ভেতরে গিয়ে তো মরেই যাবি! [ কাদো কন্ঠে ] না না..থাক অন্যকিছু ভেবে দেখি কি করা যায়, রাহুলের বাবার সামনে যাওয়া পসিবল না, [ বলেই পাশ মুড়ে যাচ্ছিলো, হঠাৎ আবার থেমে গিয়ে ] অন্যকিছু কি আর ভাববি?..অনেক তো ভেবেছিস আন্সার জিরোই এসেছে, হাতে সময় ও বেশি নেই! নাজানি রাহুল কি অবস্থায় আছে, থাক [ বলেই ধীরে ধীরে এগিয়ে শিরি দিয়ে উঠে মেইন ডোরের সামনে আসতেই সিকিউরিটি দরজা খুলে দিলো, স্নেহা একটু হেসে ভেতরে ঢুকে থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো, আশেপাশে তাকিয়ে স্নেহা হতভম্ব হয়ে পড়েছে, এতো বড় হলের কোন দিকটাই যাবে কিছুই বুঝতে পারছে না, হঠাৎ একজন মহিলা এগিয়ে এলো স্নেহাকে দেখে,]

মহিলা : হ্যালো আই এম আনিতা, কেন আই হেল্প ইউ মেম!

স্নেহা : .হ্যালো! [ মনে মনে ভাবতে লাগলো স্নেহা সে তো রাহুলের বাবার নামই জানে না কার সাথে দেখা করতে এসেছে বলবে ]

আনিতা : এক্সকিউজ মি মেম! কেন আই হেল্প ইউ?..

স্নেহা : আব..হ্যা! হ্যা..এক্সুলি আমি বব..বস্ আপনাদের বসের সাথে দেখা করতে এসেছি!

আনিতা : ওয়েল! আপনার পরিচয়?..

স্নেহা : আ..আমি স্নেহা! রার..রাহুলের ফ্রেন্ড!

আনিতা : ওকে মেম! কাম এন্ড সিট হেয়ার! প্লিজ! ওয়েট ফর ফিউ আওয়ারস্!

স্নেহা : [ শকড হয়ে ] ফিফ..ফিউ আওয়ারস্! অনেক লেইট হয়ে যাচ্ছে না?..

আনিতা : সরি মেম! একটু পরেই স্যার কনফ্যারেন্স রুমে ঢুকবে! কনফ্যারেন্স এর আগে কারো সাথে দেখা করবে না!

স্নেহা : দেখেন প্লিজ! আমার হাতে বেশি সময় নেই! খুবই ইম্পর্টেন্ট!

আনিতা : ওকে আমি স্যারকে আপনার ব্যাপারে ইনফর্ম করে দিচ্ছি! কনফারেন্স শেষ হতেই আপনার সাথে আগে দেখা করিয়ে দিবো!

[ স্নেহা কিছু বললো না দম আটকে যাচ্ছিলো, বুক ফেটে একটি ক্লান্তিকর দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো, ধীরেধীরে এগিয়ে গিয়ে পাশের সোফায় বসে পড়লো, মুখ গোমড়া করে আনিতার চলে যাওয়া চেয়ে আছে ]

– [ মনে মনে ] কপালটাই খারাপ,কোনো কাজই ঠিক মতো হয়না আমার! কিন্তু রাহুলকে আজ পুলিশ থেকে ছুটিয়ে আনতে না পারলে আমি নিজেকে নিজে কখনোই ক্ষমা করতে পারবো না!.. আর এই রাহুলটাও কম না একদম তার স্মাইল এর মতো তেডা, আমাকেই বলতে পারতো কি করতে হবে, কোনো না কোনো ওয়ে তো ছিলোই, কিন্তু তিনি আগে রিমান্ডে যাবে সাথে অফিসারের চাকরি ও খাবে, এসব কোনো কথা, [ মুখ গোমড়া করেই বসে আছে স্নেহা, কিছুক্ষণ আশেপাশে তাকাচ্ছে তো কিছুক্ষণ রাহুলকে ভাবছে, হঠাৎ খেয়াল করলো আনিতা মেয়েটি তার দিকই এগিয়ে আসছে ]

আনিতা : এক্সকিউজ মি মেম! আপনি আসুন! স্যার আপনার সাথে এক্ষুনি দেখা করবে!

[ স্নেহা খুশি হবে নাকি ভয়ে কাদবে কিছুই বুঝতে পারছে না, তবে এইটুকু এসে হার মানলে ও চলবে না, মাথা নাড়িয়ে আনিতার পেছন পেছন এগিয়ে গিয়ে লিফটে উঠে পড়লো ]

আনিতা : [ রুম দেখিয়ে দিয়ে ] এটাই স্যারের রুম!

স্নেহা : থেংক ইউ! [ বলেই দরজার নক ধরে কাপতে লাগলো, আনিতা তাকিয়ে আছে দেখে চোখ-মুখ বটে খুলেই ফেললো দরজা ]

রাহুলের বাবা : [ মাথা তুলে তাকিয়ে ] স্নেহা! রাইট?..

স্নেহা : জিজ..জি!

রাহুলের বাবা : কাম! কাম! [ স্নেহা ধীরে ধীরে দরজা বন্ধ করে এগিয়ে এলো ]

– দাঁড়িয়ে আছো কেনো?..সিট ডাওন প্লিজ!

[ চেয়ার এগিয়ে ধীরেধীরে বসে পড়লো স্নেহা ]

রাহুলের বাবা : আমার বিশ্বাসই হচ্ছিলো না তুমি এসেছো, তোমাকে দেখার অনেক ইচ্ছে ছিলো, ভেবেছিলাম রাহুল ওর মতো তোমাকে ও…[ বলেই চুপ হয়ে গেলো ]

– [ একটু হেসে ] টেন ইয়ারস্ হয়ে গেলো, এর মধ্যে রাহুলের কোনো ফ্রেন্ডসই কখনো আমার সাথে অফিসে মিট করতে আসেনি! এমনিতে কোনো প্রোগ্রামে দেখা হলে হাই হ্যালো হয়!

– তবে তোমার আর রাহুলের কথা আমার মায়ের কাছ থেকে শুনেছি! হ্যাঁ মাশাল্লা বলতেই হবে, মা যতোটুকু তোমার সৌন্দর্যের এক্সপ্লেইন করেছে, এর চেয়েও দিগুণ মিষ্টি দেখতে তুমি!

[ স্নেহা চোখ নামিয়ে রাখলো, মাথায় আসছে না কি বলবে, এখন অনেকটা ভয় কম লজ্জায় বেশি লাগছে তার ]

রাহুলের বাবা : আচ্ছা আমিতো জিজ্ঞেসই করলাম না কি খাবে তুমি?.. [ স্নেহা কিছু বলতে যাবে তখনি ] নো নো নো..না করা একদমই চলবে না!

[ স্নেহা খেয়াল করলো রাহুলের বাবা অনেকটাই খুশি, রাহুল ও যেভাবে কষ্ট চেপে আছে তেমনি রেখেছে তিনি, তাই আজ খুশি গুলো তার কথার মধ্যেই ভেসে উঠছে, ]

স্নেহা : এক্সুলি আংকেল! আ..আমি অন্যসময় খাবো,

রাহুলের বাবা : এমনটা সবাই বলে!

স্নেহা : না নাহ! সত্যি! অবশ্যই আসবো খেতে, কিন্তু আংকেল আমার খুব ইম্পর্টেন্ট কথা বলার ছিলো আপনাকে!

রাহুলের বাবা : আচ্ছা হ্যা! বলো?..

স্নেহা : এক্সুলি রার..রাহুল পুলিশ স্টেশনে!

রাহুলের বাবা : [ শকড হয়ে ] হোয়াট?..কিন্তু কেনো?..

স্নেহা : ও ওর ক্লাসমেট, সামির ওর সাথে মারামারি করছিলো ওদের মাঝে বন্ধুত্ব কম দুশমনিই বেশি! তখনি হঠাৎ পুলিশ চলে আসে…আসলে পুলিশকে ঐ সামিরই ইনফর্ম করেছে!

– [ মুখ গোমড়া করে ] আ..আর মারামারিটা আমার জন্যই হয়েছে আংকেল..কিন্তু রাহুলের কোনো দোষ নেই! ঐ সামির শুধুশুধু রাহুলকে ফাসানোর চেষ্টা করছে!

রাহুলের বাবা : [ দাঁড়িয়ে গিয়ে ] গড! ডেম ইট! সবসময়ই তো পুলিশের সাথে পাংগা নেড়ে আসে..এবার ডিরেক্ট স্টেশনে বন্ধি হয়ে রইলো কেনো? [ নিজ জায়গা থেকে বেড়িয়ে এসে ]

– নিশ্চয় এর মাঝে ও কোনো প্লান আছে, আসলে ওকে আমি কখনো বুঝতেই পারিনা ও কি চাই! আর পুলিশ ও বা এমন করলো কেনো ও কি জানে না কার ছেলে? আরে আমার ছেলে বলার ও কি প্রয়োজন নিজের নামটা বললেই তো হতো!

স্নেহা : [ দাঁড়িয়ে গিয়ে ] ওকে বকবেন না আংকেল, ওর কোনো দোষ নেই!

রাহুলের বাবা : [ মুচকি হেসে ] ওকে বকবো?.. আমি?.. [ স্নেহা কিছু বললো না চুপ হয়ে গেলো ]

রাহুলের বাবা : [ স্নেহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ] টেনশন করোনা এসো আমার সাথে! [ বলেই দরজা খুলে বেড়িয়ে পড়লো,স্নেহা ও পিছু পিছু বেড়ুলো ]

এসিস্ট্যান্ট : স্যার! কনফ্যারেন্স রেডি! ক্লাইন্ট ও চলে এসেছে!

রাহুলের বাবা : অল ক্যান্সেল! [ বলেই হাটা শুরু করলো,স্নেহা ও অবাক হয়ে পিছু পিছু হাটতে লাগলো, হঠাৎ রাহুলের বাবা থেমে গিয়ে স্নেহাকে পেছন থেকে পাশে এগিয়ে নিলো, স্নেহা অবাক হলো সাথে মনে মনে খুশিও হতে লাগলো, আশেপাশের সব এমপ্লয়িরা তাকিয়ে আছে, নিচে নেমে বাহিরে বেড়িয়ে রাহুলের বাবাই গাড়ীর দরজা খুলে দিলো স্নেহাকে, হা করে তাকিয়ে আছে স্নেহা! ]

রাহুলের বাবা : কাম ডিয়ার! হারিয়াপ! [ স্নেহা মাথা নাড়িয়ে উঠে বসলো, তারপর রাহুলের বাবা ও উঠে বসলো ]

[ গাড়ী চলছে এইদিকে স্নেহা মনে মনে রাহুলের জন্য টেনশন করছে আবার খুব খুশি খুশি ও ফিল করছে, ভাবতেই অবাক লাগছে স্নেহার, এসব তার কাছে সপ্নই মনে হচ্ছে ]

পুলিশ স্টেশন পৌছাতেই এবার আর স্নেহাকে কারো দরজা খুলে দিতে হয়নি, নিজেই হুট করে দরজা খুলে সবার আগে নেমে পড়লো! রাহুলের বাবার এসিস্ট্যান্ট নেমে দরজা খুলে দিলে রাহুলের বাবাও নেমে দাড়ালো, স্নেহার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে মুচকি হাসলো রাহুলের বাবা,পুলিশ স্টেশনের দিক এগুতেই স্নেহা ও পিছু পিছু এগিয়ে গেলো!

স্নেহা তাকিয়ে আছে, রাহুলের বাবাকে না কোনো কাউন্সটেবল আটকাচ্ছে না কোনো অফিসার এর পার্মিশন লাগছে, স্নেহা ও ঘুরঘুর করে পেছন পেছন এগিয়ে গেলো,

অফিসার এর রুমে ঢুকতেই,

অফিসার : [ হুট করে দাঁড়িয়ে গিয়ে ] আরে হারশ স্যার! আপনি..হঠাৎ? কোনো সমস্যা হয়েছে?..[ বলতেই স্নেহার দিক চোখ পড়াই একটু অবাক হলো ]

– আ..আপনি আসলেন কেনো আমাদের ইনফর্ম করতেন! [ কাউন্সটেবলকে ইশারা করে ] আরে যাও চা আনো! [ জানালা দিয়ে রাহুল মাথা ফিরিয়ে তাকালো, স্নেহা ও তাকালো রাহুলের দিক ]

রাহুলের বাবা : আমি চা খেতে আসিনি অফিসার!

– কি কারণে আ্যরেষ্ট করা হয়েছে জানতে পারি?..

অফিসার : [ অবাক হয়ে ] কা..কাকে স্যার?..[ স্নেহার দিক তাকিয়ে বুঝতে পেরে ] ওহ আচ্ছা! ঐ ছেলেটা মারামারি করছিলো রাস্তায়! একটা ছেলের সাথে?..

রাহুলের বাবা : কেনো করছিলো মারামারি? রিজনটা কি ছিলো জেনেছেন?.. [ অফিসার চুপ করে রইলো ]

– এফায়ার কে লিখেছে?.. [ অফিসার কাউন্সটেবলের দিক তাকালো, কাউন্সটেবল মাথা নাড়ালো কোনো এফায়ার লিখা হয়নি ]

অফিসার : এক্সুলি অনেক কাজ পড়েছিলো তাই এফায়ার লিখা হয়নি! মানে লিখতেই ছিলাম!

রাহুলের বাবার এসিস্ট্যান্ট : আ্যরেষ্ট কাকে করেছেন জানেন?…

অফিসার : আব..নাম নেওয়া হয়েছে, কি যেনো বললো নাম..

কাউন্সটেবল : স্যার! রাহুল!

এসিস্ট্যান্ট : রাহুল হারশ!

রাহুল মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নাক ফুলিয়ে মনে মনেই বলে উঠলো

– আমার কারো দয়া চাইনা মিষ্টার হারশ! শুধুশুধু এসেছে দয়া দেখাতে, ডিস্কাষ্টিং!

অফিসার : রাহুল হাহ..হারশ! [ একটু হেসে ] আগে বললেই হতো! আমাদের শুধু রাহুলই বলেছে!

রাহুলের বাবা : কেনো? যে আ্যরেষ্ট করতে বললো সে বলেনি?..

অফিসার লজ্জা পেয়ে কাউন্সটেবলকে ইশারা করলো যাতে রাহুলকে বেড়িয়ে আসতে দেই, কাউন্সটেবল তাড়াহুড়ো করে এগিয়ে গিয়ে রাহুলের হ্যান্ডকাফস্ খুলে দেই, স্নেহা ও ধীরেধীরে এগিয়ে গেলো জানালার দিক,রাহুল হ্যান্ডকাফাস খুলেও ঐদিকটা বসে রইলো,

স্নেহা : রাহুল!

রাহুল : [ দাঁড়িয়ে গিয়ে রাগান্বিত ভাবে] কি দরকার ছিলো স্নেহা! ওনার কাছে যাওয়ার!

স্নেহা : আমি জানি আপনি রাগবেন! হ্যা! রাগ দেখান সমস্যা নেই! কিন্তু তাও বেড়িয়ে আসেন!

রাহুল : ইডিয়ট! [ স্নেহা মুখ গোমড়া করে চুপ হয়ে রইলো ]

কাউন্সটেবল : স্যার রাগ দেখাবেন না আসলে এটা মিষ্টেক! [ রাহুল আড় চোখে তাকালে ] বব..বলছিলাম যে.. আ..আপনার ছুটি!

রাহুল : তুই থেকে ডিরেক্ট আপনি তাই না?..ছুটি আমার নাকি কার এটা বেড়ুনোর পরই দেখবি! [ বলেই রাহুল ধীরেধীরে বেড়িয়ে এলো, অফিসারের টেবিলের দিক এগিয়ে যেতেই ]

অফিসার : [ হ্যান্ডশেকের জন্য হাত বাড়িয়ে ] এক্সট্রেমলি সরি মিষ্টার রাহুল! ইট ওয়াজ মিষ্টেক!

রাহুল : [ পেকেটে হাত রেখে ] অফিসার! আপনার কাউন্সটেবলকে একটু ডাকবেন?..

[ অফিসার হাত বটে নিয়ে কাউন্সটেবল এর দিক তাকালো ]

কাউন্সটেবল : [ পাশথেকে ] জি! আমি এইখানেই!

রাহুল : [ তার বাবার এসিস্ট্যান্ট এর দিক তাকিয়ে ] মুরাদ ভাই একটা ওয়ান কে নোট দেন তো!

[ এসিস্ট্যান্ট রাহুলকে একহাজার টাকার একটা নোট বের করে দিলো ]

রাহুল : [ নোট টা কাউন্সটেবল এর দিক এগিয়ে দিয়ে ] টেক ইট! পায়েলটা বেক করো!
[ রাহুলের কান্ডে স্নেহা বিরক্ত হলো মনে মনে ভাবছে এটা কোনো কথা! চিন্তায় আছি কখন এইখান থেকে বের হবো আর ও কিনা পায়েলটা নিয়ে পড়ে আছে ]

কাউন্সটেবল : [ লজ্জা পেয়ে পায়েলটা এগিয়ে দিয়ে ] না স্যার এটার দরকার নেই পা..পায়েলটায় নিয়ে নিন!

রাহুল : আরে?..রুলস মনে করিয়ে দিতে হবে নাকি?.. [ বলেই হাত টেনে টাকাটা ঢুকিয়ে দিয়ে পায়েলটা নিয়ে নিলো ]

রাহুল : [ এসিস্ট্যান্ট এর দিক ফিসফিসিয়ে ] বলে দিও ওনাকে আমার ওনার হেল্প এর দরকার ছিলো না! [ এসিস্ট্যান্ট মাথা নিচু করে রইলো রাহুলের বাবা ও বুঝতে পেরে চুপ করে রইলো ]

[ রাহুল স্নেহার হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে যাচ্ছিলো ]

স্নেহা : [ রাহুলকে আটকিয়ে ধীরো কন্ঠে ] রাহুল! একটা থেংক্স তো বলেন আপনার বাবাকে,

[ রাহুল স্নেহাকে কোনো জবাব না দিয়ে হাত ধরে টেনে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো ]

স্নেহা : আরে রাহুল! এতো রাগ করছেন কেনো?.. একটা থেংক্সই তো ওনার কতো ভালো লাগবে জানেন?..

রাহুল : [ পুলিশ স্টেশনের বাহিরে এসে স্নেহার হাত চেপে ধরে ] স্টপ ইট! স্নেহা! জাষ্ট স্টপ ইট! প্লিজ.. আমার ওনার সাথে কোনো কথা নেই! থেংক্স বলা তো অনেক দূরের কথা!

– আর তোমাকে কে বলেছে ওনার কাছে যেতে?..আমি বলেছিলাম না কালই চলে আসছি! কথা বললে কানে যায় না?..

স্নেহা : আপনাকে ওখানে দেখে আমার জানই বেড়িয়ে যাচ্ছিলো! কি করবো কিছুই মাথায় আসছিলো না, তাই গিয়েছি..আর ওনি ততোটাও খারাপনা রাহুল! ভুল জীবনে সবাই করে থাকে,

রাহুল : [ রাগান্বিত ভাবে ] ভুল করলে ওটা শুধরাতে জানতে হয়! আমি চাইলেই আমার পুরো নাম আর পরিচয় দিলে পুলিশ আমাকে এইখানে আনা তো দূরের কথা টাচ ও করতে পারতো না!

– আমি চাইলেই তোমাকে বলতে পারতাম তখনি, কেনো বলিনি সেটাও তুমি ভালো করে জানো কিন্তু তাও অবাধ্য হয়ে আমার জন্য হেল্প চাইতে চলে গিয়েছো স্নেহা! আমার ওনার দয়ার দরকার ছিলো না!

স্নেহা : রা..রাহুল ওনি আপনার বাবা! ওটা দয়া কেনো হবে?..ওটা ওনার দায়িত্ব!

রাহুল : [ রাগ উঠায় স্নেহার হাত আরো জোড়ে চেপে ধরে ] স্টপ ইট! স্নেহা! ওনার দায়িত্ব তো ঐদিনই আমার উপর থেকে উঠে গেছে! আর আমি মনে করছিনা উনি আমার দায়িত্ব পালন করাটা ডিজার্ব করে,

স্নেহা : কিন্তু রাহুল…

রাহুল : [ রাগান্বিত ভাবে ] মোটেও উচিত হয়নি স্নেহা! তোমার ওনার কাছে যাওয়া,

স্নেহা : [ চোখের পানি ফেলে ] রাহুল! আমিতো..

রাহুল : প্লিজ স্নেহা তোমার মাথা ঘামাতে হবে না এসব নিয়ে, দ্যাটস মাই পার্সোনাল ম্যাটার!

স্নেহা : [ চোখের পানি ফেলে কাদো কন্ঠে ] রাহুল! আমার চিন্তা হচ্ছিলো আপনার জন্য! আ..আমি মিস করছিলাম আপনাকে!

[ মায়া লেগে উঠলো রাহুলের, স্নেহার চোখের পানি দেখে আড়চোখে হাতের দিক তাকালো,
রাহুলের হাত স্নেহার হাতে চেপে ধরা এখনো, তাড়াতাড়ি হাত ছুটিয়ে নিলো রাহুল, শরীরে ও ঘাম ছুটছে, কপালে হাত দিয়ে মুছে নিলো, স্নেহার সাথে চোখ মেলাতে পারছিলো না, মনে মনে ভাবতে লাগলো, কি হয়েছে তার? কি বলে ফেললো সে স্নেহাকে, ]

চলবে….

Love At 1st Sight Season 3 Part – 39

0

Love At 1st Sight
~~~Season 3~~~

Part – 39

writer-Jubaida Sobti

দরজা খোলার টুকটাক শব্দ হলো, চোখ মুছে ধীরেধীরে পেছন ফিরে তাকাতেই দেখে রাহুল,
চোখ-নাক-মুখ সবই লাল হয়ে আছে রাহুলের, নিশ্চয় কেদেছে,

রাহুল : সরি! [ কাদো ভাবে ] আ..আমি চাইনি.. এসব আবার খেতে! তো..তোমাকে মনে পড়ছিলো অনেক, আ..আমি স্নেহা! চেষ্টা ও করিনি তোমাকে ভুলতে…এ..এটা ভাবলেও মনে হয় যেন এটাই জীবনের শেষ মুহূর্ত!

[ ধীরেধীরে হেটে ফার্ষ্ট এইড বক্সটা কুড়িয়ে নিয়ে স্নেহার কাছে এসে বসলো, আহ্লাদী চোখে তাকিয়ে আছে স্নেহা,দুজনের চোখ দিয়ে ঝড়ে যাচ্ছে অজস্র অশ্রু! ]

রাহুল : [ কাদো কন্ঠে ] ব্যাব..ব্যান্ডেজ!

স্নেহা চোখ মুছে মাথা নাড়িয়ে রাহুলের হাত এগিয়ে নিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিতে লাগলো, হঠাৎ রাহুল ব্যাথায় আহহ বলে চেচিয়ে উঠলো,

স্নেহা : ওহ! সরি সরি,

রাহুল : [ বুকে হাত রেখে ] ব্যাথা তো এইখানে আরো বেশি করছে, এইদিকের ব্যান্ডেজটাও করে দাওনা স্নেহা! [ স্নেহা রাহুলের বুকের দিক তাকিয়ে আবার মাথা নুয়ে হাতে ব্যান্ডেজ করতে ব্যস্ত ]

রাহুল : [ কাদো কন্ঠে ] করে দিবা তো স্নেহা?..

স্নেহা : ভেব…ভেবেনিন আমাদের কখনো দেখায় হয়নি! ওখানের বেন্ডেজ ও হয়ে যাবে,

রাহুল : তুমি পেরেছো এটা ভেবেনিতে?…

স্নেহা : চেষ্টা করলে নাকি সবই পারা যায়!

রাহুল : তাহলে কাদছো কেনো?..

স্নেহা : [ চোখ মুছে ] হয়তো চোখে কিছু পড়েছে,

রাহুল : [ হেসে ] লোকে বলে, যখন কোনো সুন্দরী মেয়ে নাকি মিথ্যে বলে তখন ওকে আরো বেশি সুন্দর দেখায়!

– ফেটে যাওয়া ভয়েসটাও আরো মিষ্টি লাগছে তোমার!

স্নেহা কিছু বলতে যাবে তখনি,

রাহুল : [ স্নেহার মুখে হাত দিয়ে ] শিসস! স্নেহা! মিথ্যে বলার ট্রাই করো সবসময়, কিন্তু তোমার মিথ্যে হার মেনে যায় এই দু-চোখের কাছে, কিছু বলার প্রয়োজন নেই তোমার চোখই সব বলে দিচ্ছে,

স্নেহা : [ কাদো কন্ঠে ] তো আ..আজ কি বলছে আমার চোখ?…

রাহুল : [ তেডি স্মাইল দিয়ে ] এ..এটাই যে তুমি এখন আমার বুকে ঠাই নিতে চাচ্ছো! [ চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে কিন্তু তাও হেসে উঠলো স্নেহা ]

[ রাহুল তাকিয়ে আছে স্নেহার দিক স্নেহা ও তাকিয়ে আছে চুপটি করে, কেউই কিছু বলছে না দুজনের চোখই কথা বলে যাচ্ছে, ধীরেধীরে উঠে দাড়ালো রাহুল ]

রাহুল : [ পকেটে হাত রেখে দু-কদম পিছিয়ে গিয়ে দাড়ালো ] তুমি আমাকে এখনো অনেক ভালোবাসো স্নেহা! কিন্তু বলছো না, কষ্ট পাচ্ছো কিন্তু দেখাচ্ছো না, আ..আমার কাছে আসতে চাইছো, আমার বুকে মাথা রেখে কাদতে চাইছো, কিক..কিন্তু করছো না

– [ চেচিয়ে ] বাট আই এম নট লাইক ইউ স্নেহা! আই কান্ট লিভ উইদাউট সেয়িং দ্যাট, আই লাভ ইউ! [ বলেই বাচ্চা ছেলের মতো কেদে উঠলো ]

– ইউ নোও না স্নেহা?..হাউ মাচ..আই লাভ ইউ…!

– য..যখনি চোখ বন্ধ করি তোমাকে কাছে ফিল করি..আ..আর চোখ খুললেই তোমার কাছে ছুটে যেতে মন চাই…

– মন শুধু তোমাকেই খুজে, প্রত্যেক ঘন্টা, প্রত্যেক মিনিট, প্রত্যেক সেকেন্ড, আর প্রত্যেক নিশ্বাসে,

– এ..এটাকে তুমি বেকার বলো, পাগলামো বলো, অ..অথবা আমার ভালোবাসা,.. [ একটু হেসে ] আমার জন্য সব একই!

– ভালো তো অনেকজন বাসে স্নেহা! কিন্তু আমার মতো ভালো আর কেউ বাসতে পারবে না কারণ [ কাদো কণ্ঠে ] কারণ কারো কাছে তুমি যে নেই!

– আ..আমি তোমাকে ভুলতে পারবো না স্নেহা, আমি তোমাকে ভু..ভুলতেই চাই না.. তুত..তুমি আমার স্নেহা! শুধু আ..আমার… আমি তোমাকে সারাজীবন ভালোবাসবো, মৃত্যুর শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত.. এবং… এ..এর পরেও!

স্নেহা : [ কাদো কন্ঠে ] আজ অনেক খেয়ে ফেলেছেন…

রাহুল : অ..অনেক খেয়ে ও কি হলো, তোমার নেশাকে তো হার মানাতে পারেনি! [ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ]

– স্নেহা!

– আ..আমি তোমার ভালোবাসার বদলে ভালোবাসা দিতে চাই, তোমার কষ্টে হাসির কারণ হতে চাই, তোত..তোমার বলা কথার প্রতিটা শব্দ হতে চাই,

– বলো দিবে তো হতে?… [ কাদো ভাবে ] নেক্সট টাইম তোমাকে ভুলতে বলার আগে আমার জানটাই চেয়ে নিও কিক…কিন্তু তোমাকে ভুলতে বলো না স্নেহা!

[ আর সইছিলো না স্নেহার রাহুলের এভাবে বাচ্চা ছেলেদের মতো কেদে যাওয়া, বুকটা দুমড়ে যাচ্ছিলো, দৌড়ে উঠে এসে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো স্নেহা, রাহুল ও ফুফিয়ে কেদে শক্ত করে আগলে ধরলো ]

স্নেহা : আই লাভ ইউ রাহুল! [ মাথা তুলে তাকিয়ে, কেদে কেদে] আই কেন লিভ এ ফিউ মোমেন্ট উইদাউট ব্রেথিং, বাট নট উইদাউট ইউ!

রাহুল : [ হেসে ] আই লাভ ইউ টু, [ বলেই আলতো করে স্নেহার ঠোটে চুমু খেলো, স্নেহা ও একটু হেসে আবার জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে, দুজনেই নিস্থব্ধ হয়ে আছে, রাহুল এই মুহূর্তেই তার বুকের মাঝে ক্ষত দূর করার বেন্ডেজ খুজে পেলো, চোখ দিয়ে এখনো সেই বন্যা বয়ে যাচ্ছে, তবে তা আর দুঃখ্যের নয়, মাঝে মাঝে হেসে ও চলছে,স্নেহার ঘাড়ের সেই ঘ্রাণটাও ভেসে আসছে নাকে, চোখ বুজে স্নেহার পিঠে স্লাইড করে চলছে,]

হঠাৎ কিছুক্ষণ পরই লক্ষ্য করলো রাহুল, স্নেহার শরীরটা অনেক গরম হয়ে আছে, হাত দুটো এতোক্ষণ রাহুলের ঘাড়ে শক্ত করে চেপে ধরা ছিলো কিন্তু এখন হাত গুলো ও ঢলে আছে, নিজের কাছ থেকে সরিয়ে স্নেহার দিক তাকাতেই দেখে স্নেহার মাথাটাও ঢলে পড়ে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি বুকে টেনে নিলো আবার, কপালে হাত দিয়ে বুঝতে পারলো স্নেহার জ্বর এসেছে,মনে মনে অবাক হতে লাগলো কিন্তু স্নেহা বেহুশ কেনো হলো!

আর না ভেবে,আস্তে করে কোলে তুলে নিয়ে নিজের বেডরুমেই শুয়ে দিলো, কম্বলটা গায়ে টেনে দিয়ে স্নেহার পাশে এসে বসলো, তাকিয়ে আছে স্নেহার চেহেরার দিক, মুখের উপর চলে আসা চুল গুলো নিজ হাতে সরিয়ে দিলো, স্নেহার কান্ড ভেবে কাদছে আর হাসছে,

– [ মনেমনে ] পারছিলো না নিজে থাকতে আবার আমাকে বলছিলো ভুলে যেতে,

এতো সহজ?.. আমার ভালোবাসা এতোটাও লুজার না স্নেহা!

– আই ফরগেটিং ইউ ইস্ নেভার গোয়িং টু হ্যাপেন স্নেহা! এ..এন্ড ইউ ফরগেটিং মি আ..আই ওন্ট লেট দ্যাট হ্যাপেন!
_______________________________________

সন্ধ্যা ৭টা বেজে ২০ মিনিট, তাকিয়ে আছে এখনো রাহুল সেই অপলক দৃষ্টিতে, ধীরেধীরে চোখ খুলছে স্নেহা! কিছুটা ঝাপসা দেখছে, পুরো খুলতেই চোখের সামনে রাহুলকে দেখে একটু অবাক হলো,

রাহুল : [ স্নেহার মুখে স্লাইড করে দিয়ে ] গুড ইভিনিং! [ স্নেহা কিছু বললো না মাথা ঘুড়িয়ে চারদিক একবার দেখে আবার রাহুলের দিক তাকালো ]

– জানো স্নেহা! আজ বুঝতে পারলাম আকাশের চাঁদনী থেকে আমার চাঁদনী কতোটা বেশী সুন্দর, [ বলেই স্নেহার কাছে এসে কপালে একটি চুমু খেলো ]

– এখন কেমন লাগছে?…

স্নেহা : কে..কেমন লাগছে মানে! আ..আমার আবার কি হয়েছে?…

রাহুল : [ উঠে বসে ] ফেভার, প্লাস সেন্সলেস্ হয়ে গিয়েছিলে,

স্নেহা : আচ্ছা? [ বলেই উঠে বসার চেষ্টা করে হঠাৎ হাতে ব্যাথা অনুভব করায় আবার শুয়ে পড়লো ]

রাহুল : কামঅন স্নেহা! কি করছো?..শুয়ে থাকো!

স্নেহা : [ তার হাতের দিক তাকিয়ে অবাক হয়ে ] আমার হাতে…?

রাহুল : ডক্টর এসেছে, তখন ইনজেকশন মেরেছিলো!

স্নেহা : ড..ডক্টর এসেছিলো, ইনজেকশন! কিক..কিন্তু এসব কেনো!

রাহুল : তোমার জ্বর উঠেছিলো স্নেহা, [ দাত কিলিয়ে ] তার মাঝে এতোটাই স্ট্রেস নিচ্ছিলে যে…তোমার শরীর.. [ স্নেহা ভীতু হয়ে তাকিয়ে রইলো রাহুলের দিক ]

রাহুল : এখন কেমন লাগছে?…

স্নেহা : [ মাথা নাড়িয়ে ] হুম ভা..ভালো!

রাহুল : তুমি শুয়ে থাকো আমি খাবার আনছি! মেডিসিন নিতে হবে!

[ স্নেহা কিছু বললো না শুয়েই রইলো, রাহুল রুম থেকে বেড়িয়ে পড়লো, এবার ধীরেধীরে উঠে বসলো স্নেহা, মনে মনে ভাবছে, ডক্টর এসেছে, ইনজেকশন ও মেরেছে অথচ সে একটু ও ঠের পাইনি, ঘড়ির দিক তাকাতেই শকড হয়ে গেছে, ৭টা বাজতে চলছে তারমানে সে এতোক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলো, মাথাটা এখনো প্রচন্ডরকম ভারী হয়ে আছে, উঠে ধীরেধীরে ওয়াসরুমে এগিয়ে গিয়ে মুখটা ঝাপটে ধুয়ে নিলো, রুমে এসে পর্দা সরিয়ে জানালার ধারে এসে দাড়ালো, গ্লাসটা হালকা একটু খুলতেই শীতল বাতাস বেগে আসছে, গা ছুয়ে যাচ্ছে স্নেহার, হঠাৎ কিছুক্ষণ পর, কোমোড়ে কারো স্পর্শ পেতেই শরীরটা শিউরে উঠলো, পেছনে আর তাকালো না বুঝতেই পারলো রাহুলই এসেছে ]

রাহুল : [ স্নেহাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ঘাড়ে মাথা রেখে ] ডক্টর বলেছে তোমাকে বেশী স্ট্রেস না নিতে, আর আমি যাওয়ার সময় বলেগিয়েছিলাম শুয়ে থাকতে, তোমার ফেভার ও এখনো পুরোপুরি কমেনি আর তুমি কিনা এইখানে দাঁড়িয়ে বাতাস উপভোগ করছো!

স্নেহা : চারদিক বেধে রেখেছেন তাই ভাবলাম…

রাহুল : কিভাবে না রাখতাম বেধে, নাহলে ঐ আকাশের চাঁদ যদি হিংসে করে আমার চাঁদনীকে নজর দিয়ে দেই!

স্নেহা : [ হেসে ] আরে! চাঁদ আমাকে হিংসে করবে কেনো, চাঁদের সৌন্দর্য তো আনমোল!

রাহুল : কেনো করবেনা হিংসে, ওর আনমোল সৌন্দর্যে যে দাগ আছে, কিন্তু আমার চাঁদের তো কোনো দাগ নেই!

স্নেহা : [ ব্লাশিং হয়ে হেসে ] আপনি বোরিং হননি এতোক্ষণ একা একা ?..

রাহুল : কেউ বলেছিলো আমাদের এতো সুন্দর সুন্দর মোমেন্ট থাকতে বোরিং কিভাবে হই!

স্নেহা : [ রাহুলের দিক ফিরে ঘাড়ে হাত রেখে দাঁড়িয়ে ] তাই?…

রাহুল কিছু বলতে যাবে তখনি স্নেহার ভেজা ঠোটের দিক চোখ পড়লো, কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটু হেসে আংগুল দিয়ে ঠোটের উপর স্লাইড করে দিলো, চোখ বন্ধ করে কেপে উঠলো স্নেহা! তবে ভালোই লাগছিলো রাহুলের স্পর্শে, চোখ খুলে চোখাচোখি হতেই স্নেহা লজ্জা পেয়ে রাহুলের বুকে মাথা রাখলো,

রাহুল : ইউ নোও স্নেহা এতোদিন বেচে ছিলাম ঠিকই! কিন্তু লাইফে তুমি আসার পরেই উপভোগ করতে শিখেছি!

স্নেহা : [ মাথা তুলে ] রাহুল! আমি বাবাকে কথা দিয়েছি! [ বলতেই চোখের কোণে পানি এসে জমে গেলো ]

রাহুল : ভালোবাসায় কোনো কন্ডিশন থাকে না স্নেহা! হেন্স দেয়ার শুড বি নো রিপেন্টিং!

– [ দু-হাত দিয়ে স্নেহার মুখ তুলে ধরে ] স্নেহা! আমার উপর ভরসা আছে?…

স্নেহা : নিজের চেয়েও বেশি!

রাহুল : [ স্নেহার কপালে চুমু খেয়ে ] সো্ নো টেনশন! শুধু তোমার ভালোবাসা সাথে থাকলে হবে সব ঠিক হয়ে যাবে! [ স্নেহা ও চোখ বন্ধ করে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখলো ]

রাহুল : আচ্ছা হ্যা! চলো নাশতা করতে! তোমার মেডিসিন নিতে হবে, [ বলেই হাত টেনে ধরে নিতে স্নেহা আহহ বলে চেচিয়ে উঠলো ]

রাহুল : ওহ! শিট! সরি সরি! ইউ ওকে!

স্নেহা : [ হেসে মাথা নাড়িয়ে ] হুম ওকে!

রাহুল : হোয়াই আর ইউ লাফিং?..

স্নেহা : আপনার চেহেরা দেখে! সামান্য একটুতেই এতো…সিরিয়াস হয়ে যান!

রাহুল : লাইফে পাওয়া সবচেয়ে দামী জিনিষটায় যদি একটু ও আচঁ লাগে না [ বুকে হাত রেখে ] তাহলে সোজা এইখানে লাগে! [ স্নেহা চুপ হয়ে গেলো ]

[ রাহুল একটু হেসে স্নেহাকে কোলে তুলে নিয়ে সোফার দিক এগুতে লাগলো ]

স্নেহা : নাশতা আপনি বানিয়েছেন?..

রাহুল : [ হেসে ] আরে না! আমি বানালে আর খাওয়া লাগবে না!

স্নেহা : তাহলে?..

রাহুল : [ স্নেহাকে সোফায় বসিয়ে ] দাদী নিজ হাতে বানিয়ে পাঠিয়েছে!

স্নেহা : দাদী..কিভাবে জানলো আমি..

রাহুল : এসেছিলো! একসাথে তোমাকে দেখে গেছে! আর আমাকে বকছিলো আমিই নাকি তোমাকে স্ট্রেস দিচ্ছিলাম!

স্নেহা : কিক…কিন্তু রাহুল আপনি আমাকে ডেকেদিলেন না কেনো?..

রাহুল : [ জোড়ে একটি শাস ফেলে ] তুমি সেন্সলেস্ ছিলে স্নেহা!

স্নেহা : [ মুখ গোমড়া করে ] ওহ!

রাহুল : [ তেডি স্মাইল দিয়ে ] সো্ এবার চুপচাপ এগুলো খেয়ে নাও! [ বলেই চামচ কেটে সুপ তুলে স্নেহার মুখের দিক এগিয়ে দিলো ]

স্নেহা : আপনি খাবেন না?..

রাহুল : তুমি খেলেই পেট ভরে যাবে!

স্নেহা : কিন্তু রাহুল…

রাহুল : কিছুক্ষণ এর জন্য সাইলেন্ট থাকবে?.. প্লিজজ! [ বলেই চোখ দিয়ে ইশারা করলো খেতে স্নেহার ও কি আর করার বাধ্য মেয়ের মতো খেতে লাগলো আর ব্লাশিং হতে লাগলো, খাওয়া শেষে স্নেহা অবাক হলো রাহুল সব গুছিয়ে একাপাশ করে সরিয়ে রেখে দিলো ]

স্নেহা : আরে! আপনি খাবেন না?…

রাহুল : আগে বলো তোমার পেট ভরেছে?…

স্নেহা : হ্যা!

রাহুল : তাহলে ভেবে নাও আমার ও ভরে গিয়েছে! [ বলেই স্নেহার মেডিসিন ঠিক করতে লাগলো ]

স্নেহা : আরে এটা কেমন কথা!

রাহুল : [ মেডিসিন এগিয়ে দিয়ে ] কিছুটা এমনই দুটো হার্টের একই স্পন্দন! [ স্নেহা হা করে তাকিয়ে আছে ]

[ রাহুল স্নেহার মুখে উপর ফু দিতেই স্নেহা চমকে উঠলো ]

রাহুল : মেডিসিন! [ স্নেহা এগিয়ে নিয়ে খেয়ে নিলো, রাহুলের দিক আবার তাকাতেই দেখে তেডি স্মাইল দিয়ে তাকিয়ে আছে, লজ্জা লেগে উঠায় স্নেহা দাঁড়িয়ে যেতে চাইলো হঠাৎ মাথাটা ঘুড়িয়ে উঠায় মাথা চেপে ধরে আবার বসে পড়লো ]

রাহুল : স্নেহা কি হয়েছে মাথায়?..ব্যথা করছে?..

স্নেহা : না..নাহ এমনিতেই!

রাহুল : ডক্টর বলেছিলো তোমার বেড রেষ্ট দরকার! আর আমিও কিনা তোমার বোকামিতে রেস্পন্স দিচ্ছিলাম! [ বলেই স্নেহাকে দাড় করিয়ে কোলে তুলে খাটের দিক এগুতে লাগলো ]

স্নেহা : রাহুল আমি ঠিকাছি! জাষ্ট একটু মাথা ঘুড়িয়ে উঠলো ব্যাস!

– আর এমনিতেও কতোক্ষণ শুয়ে থাকতে পারবো এইখানে, আমার তো যেতে হবে তাই না!

রাহুল : [ স্নেহাকে খাটে শুয়ে দিয়ে ] তো না যাও! [ স্নেহা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ]

– এইখানেই থেকে যাও আমার কাছে!

স্নেহা : এমনটা সম্ভব না রাহুল!

রাহুল : [ উঠে বসে ] হুমম! এটাই রিজন তাই না লোকে কি বলবে, সমাজ কি বলবে!

– স্নেহা! ওরা কি বলবে কি ভাববে ওটাও যদি আমরা ভাবি! তাহলে আমাদের আর ওদের মাঝে তফাৎ কি?…

স্নেহা : [ ধীরেধীরে উঠে বসে রাহুলের মুখে হাত বুলিয়ে দিয়ে ] তো এতো টেনশন করছেন কেনো?.. এক্কেবারে বিয়ে করেই নিয়ে আসুন, তাহলে লোক সমাজ কি বলবে এসবে কিছু যায় আসবে না!

রাহুল : [ স্নেহার কপালে কপাল লাগিয়ে ] সত্যি বলছো? করবা তো আমাকে বিয়ে?..

স্নেহা : [ মুচকি হেসে ] এনি ডাউট?…

রাহুল : [ ধীরেধীরে স্নেহার কাছে এসে আলতো করে ঠোটে চুমু খেয়ে ] নেভার! [ বলেই সরে যাচ্ছিলো তখনি স্নেহা রাহুলের শার্ট মুচড়ে ধরে আটকে ফেললো ]

দুজনেই তাদের ভালোবাসার চাহনীতে চেয়ে আছে একে অপরের দিক, যেনো চোখে চোখেই কথা বলে যাচ্ছে, কিছুক্ষণ পর, ধীরে ধীরে রাহুল মুখ কাছে এনে নিজের ঠোট মিশিয়ে দিলো স্নেহার ঠোটে, স্নেহা বাধা দিলো না রাহুলকে, সে চাইছিলো রাহুল তাকে ভালোবাসুক, সে তো চাইছিলো রাহুলের ভালোবাসায় হারিয়ে যেতে, রাহুলের গালে স্লাইড করতে করতে স্নেহা ও তাল মিলিয়ে যাচ্ছে আজ, ভুলিয়ে দিতে চাইছে রাহুলের কষ্ট সব, বিলিয়ে দিতে চাইছে আজ তার ভালোবাসাগুলো ও সব,

জানালা দিয়ে বয়ে আসছে শীতল বাতাস, সাদা পর্দা গুলো ও উড়ে চলছে,

কিছুক্ষণ পরই রাহুল ছুটে এসে স্নেহার চোখের দিক তাকালো, স্নেহা ও পলক তুলে তাকিয়ে ধীরে ধীরে পিছিয়ে, গা হেলিয়ে বালিশে মাথা রাখলো, রাহুল তাকিয়ে আছে অবাক দৃষ্টিতে, হাত বাড়িয়ে রাহুলের শার্ট মুচড়ে ধরে ধীরেধীরে টেনে নিলো নিজের উপর,

স্নেহা রাহুলের ঘাড়ে স্লাইড করে হাত রেখে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো,
ভালোবাসার নেশায় জমে যাচ্ছে দু-জন, চেয়ে আছে একে-অপরকে তাদের মায়াবী চাহনিতে,

রাহুল ও স্নেহার কোমোড়ে স্লাইড করে ধরে ধীরেধীরে আবার স্নেহার ঠোট নিজের ঠোটের দখলে নিয়ে নিলো! গলার চুল গুলো আলতো করে সরিয়ে গভীরভাবে চুমু দিতে লাগলো রাহুল,নিজের ভালোবাসায় ভরিয়ে দিচ্ছিলো স্নেহাকে,

শিউরে উঠছে স্নেহা, একহাতে রাহুলের চুল মুচড়ে ধরে আছে, রাহুলের কপালে চুমু দিতেই, অন্যহাতে রাহুলের হাতের স্পর্শ পেলো…
ধীরেধীরে দু-জনের হাত এক করে মুঠো বেধে ধরলো,

স্নেহার কপালে চুমু খেলো রাহুল,চোখের কোণ বেয়ে পানি পড়ছিলো স্নেহার, নিজের ঠোট দিয়ে মুছে দিলো পানিগুলো, চুমু খেলো স্নেহার চোখে, গালে, ঠোটে, গলায় চুমু দিয়ে ধীরেধীরে বুকের ধারে আসতেই রাহুল থেমে মাথা উঠিয়ে স্নেহার চোখের দিক তাকালো,

চুপ করে চেয়ে আছে স্নেহা, রাহুলের মুখ কাছে টেনে নিজের গালের সাথে আলতো করে ঘষে স্লাইড করে নিলো,

জোড়ে একটি শাস ফেলে হুট করেই উঠে বসলো রাহুল! কলার টেনে শার্ট ঠিক করে কি কি যেনো চিন্তা করতে লাগলো,

স্নেহা ও অবাক হয়ে উঠে বসে রাহুলের হাত জড়িয়ে কাধে মাথা রেখে মুচকি হেসে রাহুলের দিক তাকিয়ে রইলো,রাহুল ও সোজা তাকিয়ে চুপ করেই আছে কিছু বলছে না,

স্নেহা : রাহুল! কি হয়েছে?

রাহুল : সরি স্নেহা!

স্নেহা : সরি কেনো!

রাহুল : যেটা করছিলাম আমি! জানিনা মাথায় কি হয়েছে,

স্নেহা : কি হয়েছে মাথায়?..

রাহুল : ভুল করছিলাম আমি, তুমি ও বাধা দিচ্ছিলে না…

স্নেহা : [ রাহুলের হাত সরিয়ে তার বুকে মাথা রেখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে রাখে ] ভালোই তো লাগছিলো বাধা কেনো দেবো!

রাহুল : এখন বলছো, পরে কাদতে চলতে, [ স্নেহা অবাক হয়ে মাথা তুলে রাহুলের দিক তাকালো, রাহুল স্নেহার হাত ছুটিয়ে উঠে জানালার ধারে গিয়ে দাড়ালো, স্নেহা ও মুচকি হেসে ধীরেধীরে এগিয়ে রাহুলের পেছনে গিয়ে জড়িয়ে ধরে দাড়ালো ]

রাহুল : স্নেহা! এসব এখন…

স্নেহা : শিসস! আমার পুরো ভরসা আছে রাহুল! আপনার উপর,

রাহুল : [ স্নেহাকে ছুটিয়ে হাত ধরে তার সামনে এনে দাড় করিয়ে ] এতোটা ভরসা ঠিক নয় স্নেহা!

স্নেহা : তো আপনি কি ভেবেছেন?.. আমায় ছেড়ে চলে যাবেন!

রাহুল : [ হেসে স্নেহাকে বুকে টেনে জড়িয়ে ] যেদিন চলে গেছি শুনবে, ভেবেনিবে আমি আর এই দুনিয়াতেই নেই! [ কেদে দিলো স্নেহা ]

রাহুল : [ দু-হাত দিয়ে স্নেহার মাথা তুলে ধরে চোখ মুছে দিলো ] আবার কাদছো কেনো?..

স্নেহা : [ মাথা নাড়িয়ে একটু হেসে ] কিছুনা!

– [ জোড়ে একটি শ্বাস ফেলে ] রাহুল!

রাহুল : হুমম!

স্নেহা : এখন আমার যাওয়া উচিৎ!

রাহুল : কিন্তু তোমার…

স্নেহা : আমি ঠিকাছি! একদম ঠিক! [ মুচকি হেসে ] ব্যাস প্রমিস করেন আমাকে উঠিয়ে নিয়ে যাবেন!

রাহুল : আজ সিকিউরিটিকে লজ্জা লাগবে না?..[ With tedi smile ]

স্নেহা : [ রাহুলের কাধে জড়িয়ে ] ডোন্ট কেয়ার!

[ রাহুল হেসে স্নেহার কপালে একটি চুমু খেয়ে, কোলে তুলে নিলো স্নেহাকে, স্নেহা রাহুলের ঘাড় জড়িয়ে ধরে কাধে মাথা হেলিয়ে দিলো, বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গাড়ীতে বসিয়ে দিয়ে সেও গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লো, গাড়ী চলছে রাহুল ড্রাইভ করছে, স্নেহা পা তুলে গুটি মেরে পাশ মুড়ে সিটে হেলান দিয়ে বসে আছে, আর এক পলকে রাহুলের দিক চেয়ে আছে, রাহুল বুঝতে পেরে ও তাকালো না স্নেহার দিক, নাহয় আবারো সেই চোখের মায়ায় পড়ে যাবে, মোটে ও ইচ্ছে হচ্ছিলো না স্নেহাকে দিয়ে আসতে, ইচ্ছে হচ্ছিলো বুকের মাঝে জড়িয়ে রেখে দিতে, কিন্তু কি আর করার অপেক্ষার প্রহর গুনতে হচ্ছে ]

বাড়ী এসে পৌছালো, রাহুল স্নেহার দিক তাকাতেই দেখে স্নেহা এখনো ঐভাবেই তাকিয়ে আছে!

রাহুল : কি দেখছো এভাবে?..

স্নেহা : [ মুচকি হেসে ] এটাই! যে আপনি অনেক..হ্যান্ডসাম!

রাহুল : কিডিং?..

স্নেহা : নো! আই এম সো্ সিরিয়াস!

– কতো মেয়েরই আশা আপনাকে পাওয়ার! আর আমি কতোটা লাকি দেখেছেন,

রাহুল : আই থিং আই এম লাকি! বিকজ! আমি তো চাইলেই যে কোনো মেয়ে পেয়ে যেতাম! কিন্তু তোমার মতো মেয়ে তো অনলি লাকি পার্সনরাই পাই! [ চোখ টিপ মেরে ]

স্নেহা : রাহুল!

রাহুল : হ্যা বলো?..

স্নেহা : আমি কিন্তু হেটে নামছিনা!

রাহুল : তারমানে আজকে, আশেপাশের লোকজন কি বলবে এতে ও তোমার কিছু আসে যায় না!

স্নেহা : ইয়েস! আই ডোন্ট কেয়ার!

রাহুল : ওকেই! [ With tedi smile ]

[ রাহুল গাড়ী থেকে নেমে স্নেহার কাছে এসে দরজা খুলে স্নেহাকে কোলে তুলে নিলো ]

রাহুল : [ হেসে ] তাকিয়ে আছে কিন্তু অনেকজন!

স্নেহা : থাকুক!

রাহুল : থাকুক! হু কেয়ার!.. [ বলেই হেসে গেইট দিয়ে ঢুকে পড়লো, স্নেহা রাহুলের কাধে মাথা নুয়ে রাখলো ]

উপরে উঠে বেল বাজাতেই, মার্জান এসে দরজা খুললো, অবাক হলো মার্জান! তাও মনে শান্তি আসলো স্নেহাকে রাহুলের সাথে দেখে!

জারিফা : [ এক্সাইটেড হয়ে চেচিয়ে ] আরে ওয়াহ কি রোমান্টিক সি্ন চলছে! এ..এক মিনিট ওয়েট ওয়েট! [ বলেই মোবাইলের ভিডিও অন করে ] ওকে নাও কাম কাম!

রাহুল হেসে উঠলো জারিফার কান্ডে, স্নেহা ও মুচকি হাসলো, ভেতরে ঢুকে রাহুল স্নেহাকে খাটে বসিয়ে দিলো, মার্জান, জারিফা,শায়লা সবাই এগিয়ে এলো তাদের দিক,

মার্জান : সবাই স্টপ প্লিজ! আমার মন মানছে না এটা না জেনে, রাহুল! সব ঠিকঠাক?. আ..আই মিন আপনার আর স্নেহার! কানেকশন.. আহা..মানে বুঝতে পারছেন তো কি বলছি?…

রাহুল : [ হেসে ] অলরাইট!

জারিফা : [ এক্সাইটেড হয়ে ] আলহামদুলিল্লাহ! জিজু এখন শুধু একটা বিয়ের তারিখ ফিক্সড করে তাড়াতাড়ি বিয়েটা করে নিন…উফফফ আমার তো সইছে না কখন যে হবে বিয়েটা!

শায়লা : বিয়ে তোর না স্নেহার হবে! তুই এতো লাফাচ্ছিস কেনো?..

জারিফা : আরে ফার্ষ্ট টাইম স্নেহার বিয়ে খাচ্ছি তাই অনেক এক্সাইটেড! [ সবাই শকড হয়ে তাকালো জারিফার দিক ]

জারিফা : [ নিজের মাথায় নিজে বাড়ি মেরে ] উফফ! আই মিন ফার্ষ্ট টাইম কোনো ফ্রেন্ড এর বিয়ে খাবো তাই!

– আচ্ছা জিজু! স্নেহা ঠিকাছে তো?.. না মানে আপনি হঠাৎ কোলে তুলে আনলেন তাই বললাম!

রাহুল : ব্যাস! কখনো, কখনো বাচ্চা হয়ে যায়! [ With tedi smile ] তখন এভাবে নিতে হয়!

জারিফা : [ হেসে ] আচ্ছা?..[ স্নেহা ব্লাশিং হয়ে চুপ করে রইলো ]

রাহুল : ওকে গাইস্ নাও বাই! কাল দেখা হচ্ছে! [ স্নেহার দিক তাকিয়ে একটু হেসে স্নেহার মাথা টেনে কপালে চুমু খেয়ে ] বাই! গুড নাইট!

স্নেহা : [ ব্লাশিং হয়ে ] গুড নাইট!

জারিফা : [ চেচিয়ে ] ওয়াও জিজু! ওয়ান্স মোর প্লিজ! আমি কাপচার করবো! [ বাকিরা হেসে উঠে ]

রাহুল : সিরিয়াসলি?..

জারিফা : ইয়াহহ!

রাহুল : ওকে! ফরহেড ইয়া লিপ্স্ [ স্নেহা শকড হয়ে তাকালো রাহুলের দিক ]

জারিফা : [ কিটকিটিয়ে হেসে ] যেকোনো একটাই চলবে জিজু! বাট সেকেন্ডটা হলে তো আরো জোস্ হবে! [ বাকিরা ও হেসে উঠে জারিফার কথায় ]

রাহুল : ওকেই! [ বলে স্নেহার ঠোটের দিক এগুতে গেলেই স্নেহা হুট করে পিছিয়ে যায়, রাহুল হেসে স্নেহার মাথা কাছে টেনে নিয়ে কপালে চুমু দিয়ে রাখে, আর জারিফা হুটহাট ছবি কাপচার করতে থাকে ]

রাহুল : [ পিছিয়ে গিয়ে ] টেক কেয়ার! [ উঠে দাঁড়িয়ে ] থেংক ইউ গাইস!

জারিফা : ইয়া..ইয়াহ! এন্ড থেংক্স টু ইউ জিজাজি! আমাদের এতো সুন্দর একটা রোমান্টিক এন্টারটেইমেন্ট দেখানোর জন্য!

রাহুল : [ জারিফার মাথায় বাড়ি দিয়ে ] দিস ইজ নট এন্টারটেইনমেন্ট ওকে! ইটস রিয়েলিটি!

জারিফা : [ চিন্তিত হয়ে ] আচ্ছা?.. [ রাহুল আর কিছু বললো না তেডি স্মাইল দিয়ে বেড়িয়ে গেলো ]

মার্জান : [ একলাফে উঠে স্নেহার পাশে বাসে ] স্নেহা! আমার মুখ দিয়ে কোনো শব্দই আসছে না খুশিতে! মানে তুই আর রাহুল আবার.. ওয়াও!

শায়লা : [ হেসে ] ভালোবাসা যদি সত্যিকারের হয় তাহলে, যতো বাধাই আসুক না কেনো এক তো হওয়ারি ছিলো!

মার্জান : [ স্নেহাকে জড়িয়ে ] ইয়াহহ! দ্যাটস রাইট!
_______________________________________

পরদিন সকালে,

সবাই তৈরী হচ্ছে ভার্সেটি যাওয়ার জন্য, হঠাৎ স্নেহার ফোনটা বেজে উঠলো, স্নেহা ফোন হাতে নিতেই দেখলো তার মায়ের ফোন!

স্নেহা : বলো মা…

মা : কোথায় তুই স্নেহা?…

স্নেহা : রেডি হচ্ছি ভার্সেটির জন্য!

মা : আজ ভার্সেটি না গেলে হয় না?..

স্নেহা : কেনো কি হয়েছে?..

মা : নাহ যদি একটু আসতি বাসায় ?…তোর বাবা বলছিলো!

স্নেহা : [ কিছুক্ষণ চিন্তা করে ] ঠিকাছে আমি আসছি! এমনিতেও তোমাদের আমার কিছু বলার ছিলো!

মা : আচ্ছা ঠিকাছে আয়! [ ফোন কেটে টেবিলে রেখে স্নেহা খাটে বসে রইলো ]

মার্জান : কি হয়েছে স্নেহা?..সব ঠিকাছে তো!

স্নেহা : হ্যা ঠিকাছে! ব্যাস আমি ভার্সেটি যাচ্ছি না!

জারিফা : [ অবাক হয়ে ] তা কেনো?..

স্নেহা : মা ডেকেছে! আর এমনিতেও ওদের সব সত্যি বলে দেওয়া উচিৎ! সব জানার পরও যদি বাবা আমাকে শাস্তি দেই তাহলে আমি মাথা পেতে নিবো, কিন্তু তাও রাহুলকে ছেড়ে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না!

[ বাকিরাও আর কিছু বললো না, চলে গেলো যে যার মতো ভার্সেটিতে, স্নেহা ও সেই কখন থেক থমকে বসে আছে খাটে, সামির আসার পর থেকে সব কিছু কেমন যেনো উলটে পালটে যাচ্ছে তার লাইফে এসব নিয়েই ভেবে চলছে, হঠাৎ ফোনটা আবার বেজে উঠলো স্নেহার ]

স্নেহা : [ রিসিভ করে ] হ্যালো!

রাহুল : গুড মর্নিং!

স্নেহা : গুড মর্নিং!

রাহুল : তোমার শরীর ঠিকাছে?..

স্নেহা : হ্যা ঠিকাছে!

রাহুল : মার্জান বললো তোমার মামার বাসায় যাচ্ছো!

স্নেহা : হ্যা! এক্সুলি মা যেতে বললো তাই আর ভার্সেটি যাওয়া হয়নি!

রাহুল : একা যেতে হবে না আমি পৌছে দিবো!

স্নেহা : আপনি আবার কষ্ট করে কেনো আসবেন?..

রাহুল : তো কি একা যাবা?..

স্নেহা : না! যয..যদি বাবা দেখে আপনাকে.. না জানি কি কি বলে বসে থাকে..

রাহুল : সেটাই তো চাইছিলাম! যে তোমার বাবা আর আমার সামনাসামনি হোক!

স্নেহা : তা কেনো?..

রাহুল : তোমার বাবার সামনে থেকে তোমাকে উঠিয়ে নিয়ে যাবো বলে! [ হেসে উঠলো স্নেহা ]

– আচ্ছা শুনো আমি আসছি! তুমি তৈরী থাকো!

স্নেহা : আচ্ছা! [ বলেই রেডি হয়ে কিছুক্ষণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে রইলো, এদিক ওদিক হাটছে, আর সইছিলো না রাহুলের জন্য অপেক্ষা, আজকাল রাহুলকে দেখার জন্য ওয়েট করা ও মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে স্নেহার! হঠাৎ গাড়ীর হর্ণ বাজতেই একপলক নিচের দিক তাকিয়ে দৌড়ে ভেতরে ঢুকে ব্যাগ কাধে নিয়ে নিচে নেমে গেলো, গেইটের সামনে পা রাখতেই স্নেহা থেমে গেলো ]

– [ মনে মনে ] আরে! এটা তো রাহুলের গাড়ী না! [ বলতেই দেখে গাড়ী থেকে সামির নেমে আসছে, চোখ গুলো বড় করে ফেললো স্নেহা! শকড হয়ে তাকিয়ে আছে ]

সামির : [ স্নেহার কাছে এসে ] হাই!

স্নেহা : আপনি?..

সামির : হ্যা! আমিই! কেনো অন্য কারো অপেক্ষা করছিলে নাকি! [ স্নেহা নাক ফুলিয়ে অন্যপাশ ফিরে গেলো ]

সামির : তোমার আশিকের অপেক্ষা করছিলে!

স্নেহা : আপনাকে প্রথম দেখে মোটেও মনে হয়নি আপনি এমন! কি না অভিনয় করেন আপনি!

সামির : অভিনয়ের এখনো কি দেখেছো স্নেহা! [ চোখ মেরে ]

স্নেহা : দেখেন! আমার আপনার এসব ফালতুমি দেখার আর শোনার টাইম নেই! প্লিজ চলে যান এইখান থেকে!

সামির : ভাবছি! এসেছি যখন,তোমার আশিখের সাথেও একটু দেখা করে যাবো!

স্নেহা : হ্যা! আপনার হাড় গুলো ও মজবুত করে রাখেন নাহলে ও আসলে কোন সময় গুড়ো করে ছাড়ে!

সামির : আমি ও সেটাই চাইছিলাম! আসলে, আমি হাত দিয়ে কাজ করিনা দিমাগ দিয়ে করি!

স্নেহা : আপনি আসলেই একটা..চ্যাছড়া! [ বলেই অন্যপাশ ফিরে গেলো, কিছুক্ষণ পর আড়চোখে তাকাতেই দেখে সামির তার দিকেই এখনো তাকিয়ে আছে, বিরক্তি হয়ে স্নেহা ভেতরে ঢুকে যাচ্ছিলো ঠিক ঐ সময়ই সামির স্নেহার হাত ধরে ফেলে ]

স্নেহা : [ রাগান্বিত ভাবে চেচিয়ে ] হাত ছাড়েন! [ বলতেই হঠাৎ চোখ পড়লো রাহুলের গাড়ীর দিক ]

স্নেহা : দেখেন হাত ছাড়েন বলছি! রার..রাহুল আসছে! [ সামির কোনো জবাব দিলো না, হাসছে আর স্নেহার বিরক্তিকর কান্ড দেখছে ]

– লাগছে আমার! ছাড়েন প্লিজ!

সামির : হাত আমি ছাড়ছি না! এমন মোমেন্ট বার বার আসেনা স্নেহা!

স্নেহা : বারাবারি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু প্লিজ হাত ছাড়ুন!

সামির : বারাবারিটা আজ নাহয় করেই ফেলি! [ বলতেই হঠাৎ খেয়াল করলো কেউ তার কলার ধরে পেছন ধাক্ষা দিলো ]

সামির : [ হেসে ] আরে রাহুল! তুই! তোরই অপেক্ষা করছিলাম [ বলতেই রাহুল দু-তিনটা ঘুষি দিয়ে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরলো সামিরকে ]

রাহুল : ভেবেছিলাম ঐদিনের মারে তোর শিক্ষা হয়ে যাবে! কিন্তু তোর কপালে আমার আরো মার খাওয়া বাকি ছিলো [ বলে বলেই মারতে লাগলো সামিরকে, কিন্তু সামির কিছুই করছে না শুধু হেসে চলছে ]

স্নেহা : [ ঘাবড়ে গিয়ে ] রাহুল! ব্যাস চলেন আমাদের এবার যাওয়া উচিৎ!

সামির : [ হেসে রাহুলকে ফিসফিসিয়ে ] এতো সফট হাত! তাই তো বলি তুই ছাড়ছিস না কেনো! ভাবছি পুরো বডি জুড়ে আরো কতো সফট… [ বলতেই রাহুলের শরীরে আরো যতো জোড় ছিলো তা দিয়েই সামিরকে মারতে লাগলো, হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে স্নেহা! আশেপাশে অনেকটাই ভীর জমে গেছে, কয়েকজন এগিয়ে এসে রাহুলকে ছুটাতে চাইলেও রাহুলের রাগের কাছে সবাই হার মেনে পিছিয়ে যায় ]

হঠাৎ, শব্দ এলো পুলিশের গাড়ীর, স্নেহার মাথায় যেনো বাজ ভেংগে পড়লো, রাহুলের দিক তাকিয়ে দেখলে দেখে রাহুল থেমে নেই! মারতেই চলছে সামিরকে, আর সামির অনেকটা সুযোগ পেয়ে ও রাহুলের গায়ে একটা টোকা ও লাগালো না, এবার স্নেহা বুঝতে পারলো এসব সবই সামিরের করা প্লান ছিলো,

পুলিশের গাড়ী এসে থামতেই, চারজন পুলিশ নেমে এলো, তিনজন পুলিশ মিলেই রাহুল থেকে সামিরকে ছুটিয়ে আলাদা করে নিলো!

আরেকজন পুলিশ অফিসার এসে রাহুলের কলার টেনে হাত রাখতেই রাহুল রাগান্বিতভাবে তাকালো!

পুলিশ : কি দেখছিস এভাবে ?…তোর রাজত্ব শেষ এবার থানায় চল!

রাহুল : লিভ মাই কলার!

পুলিশ : [ হেসে ] তুই বললেই ছেড়ে দিবো?..হ্যা?..

রাহুল : অফিসার, পুলিশের গাড়ী এসেছে! আমি গাড়ীর আওয়াজ শুনেছি! কিন্তু পালানোর চেষ্টা করেছি?…

– করিনি তাই তো?.. তাহলে কেনো যে তোমরা নিজেই নিজের প্লেটের খাবার খালি করার ধান্ধায় থাকো বুঝি না!

পুলিশ : ভুলে যাচ্ছিস কার সাথে কথা বলছিস!

রাহুল : বাংলাদেশ পুলিশ [ With tedi smile ]

অফিসার রাহুলের কলার ছেড়ে, কাউন্সটেবলকে ইশারা করলো যাতে রাহুলকে হ্যান্ডকাফস্ পড়িয়ে দেই!

রাহুল : [ হেসে ] ওয়েট! আমিই উঠছি এটা পড়ানোর প্রয়োজন নেই! গাড়ী এটাই তো, তাই না?… [ বলেই রাহুল হেসে পুলিশের গাড়ীতে উঠে বসে ]

স্নেহা : [ দৌড়ে এসে কাদো কন্ঠে ] রাহুল! আপনি সত্যি সত্যিই!… কি দরকার ছিলো ওকে মারার..বলেন তো!

রাহুল : ডোন্ট ওয়ারি! স্নেহা! টেনশন করো না আমি চলে আসবো!

স্নেহা : কিন্তু রাহুল… [ বলতেই একজন পুলিশ কাউন্সটেবল এগিয়ে এসে ]

– লাভ-সাব পরে ঘরে দেখাবে আগে থানায় চলুক! এখন সরে দাঁড়াও!

রাহুল : তোমাদের ট্রেনিং সো্র্স কে ছিলো বলো তো?.. মেয়েদের কিভাবে সম্মান দিয়ে কথা বলতে হয় সেটা হয়তো সে শিখেনি!

কাউন্সটেবল : এসব এটিটউড নিজের ঘরে দেখাইও.. পুলিশের সামনে না!

রাহুল : [ হেসে ] ভাবছি ব্যপারটা কেমন যেনো বাংলা সিনেমার কাহানী হয়ে গেছে তাই না?..আমি যে ওকে মারছি পুলিশকে ইনফর্ম করলো কে?..পুলিশ তো বরাবর টিম নিয়েই হাজির!

কাউন্সটেবল : [ রাহুলের হাত টেনে নিয়ে ] চুপচাপ হ্যান্ডকাফস্ পড়ে নে!

রাহুল : [ হেসে ] ভয় পাচ্ছো? কোনো তোমাদের ফাকি দিয়ে না পালিয়ে যায়!

– আরে এতো টানাটানি করছো কেনো দাও আমিই লাগিয়ে দিচ্ছি [ বলেই রাহুল লাগাতে চাইলো, কাউন্সটেবল তাও টেনে নিজ হাতে লাগিয়ে দিলো ]

[ রাহুল পাশ মুড়ে তাকাতেই দেখে স্নেহা কেদেই চলছে! চোখের দিক আংগুল দেখিয়ে ইশারা করলো স্নেহাকে যাতে কান্না না করে, এক এক করে বাকি পুলিশ গুলো ও গাড়ীতে উঠে বসলো ]

অফিসার : ও হিরো এমন বিহেভ করছিস যেনো তোর বিয়ের বরাত যাচ্ছি!

রাহুল : [ হেসে ] ক্যারেক্ট অফিসার! আমার ও তাই মনে হচ্ছে! কিন্তু আইডিয়া করে পাচ্ছি না ও আমার বরাতির জন্য তোমাদের কতো দিয়েছে হবে!

অফিসার : একবার ইনকাউন্টার হোক তারপর আইডিয়া হয়ে যাবে!
_______________________________________

তাকিয়ে আছে স্নেহা, চলে গেলো পুলিশের গাড়ী, পাশ থেকে গাড়ীর হর্ণ বেজে উঠলো, তাকাতেই দেখে সামির!

সামির : স্নেহা! তুমি তোমার মামার বাসায় যাচ্ছিলে মনে হয় ?.. [ স্নেহা অবাক হলো ও কি করে জানলো ]

– আ..এক্সুলি আমরা আজই আসছিলাম এংগেজমেন্ট করতে, প্লাস বিয়ের তারিখ তোমার পেরেন্টসকে জানাতে! তাই হয়তো তোমাকে আগে থেকেই তৈরী হয়ে থাকার জন্য তোমার মা ইনফর্ম করেছে!

– চলো আমিই পৌছেদি তোমাকে আবার সন্ধ্যার জন্য তৈরী হতে হবে তো!

স্নেহা : লজ্জা হচ্ছে আমার আপনার উপর! আপনি এতোটাই নিচে নামবেন ভাবতেই পারছিনা!

সামির : কেউ ভাববে এমন কাজ আমি করিনা! স্নেহা!

– আচ্ছা এসব বাদ দাও! চলো গাড়ীতে উঠো!

স্নেহা : কেনো করছেন আপনি এমন প্লিজ!

– [ কাদো কন্ঠে ] আপনি বলুন পুলিশকে ওর কোনো দোষ নেই!

সামির : আহা! নির্দোষ একজন ব্যাক্তির উপর হাত তোলা এটা দোষ না স্নেহা?..এটা আইনের বিরোধী!

স্নেহা : [ চেচিয়ে ] প্লিজ! বন্ধ করুন আপনার এসব অভিনয়! কোনো আইনের ধারায় পুলিশ আসেনি! আপনিই এসব প্লান করে টাকা খাইয়ে এনেছেন!

– আপনি ইচ্ছে করেই রাহুলের রাগ তুলেছেন যাতে রাহুল আপনার গায়ে হাত তুলে, সুযোগ পেয়েও আপনি ওর গায়ে হাত তুলেননি যাতে আপনি আপনার করা প্লান কাজে লাগাতে পারেন!

সামির : ওয়াও স্নেহা! তুমিতো দেখছি মারাত্মক ইন্টেলিজেন্ট!

স্নেহা : [ কেদে হাত জোড় করে ] প্লিজ!

সামির : সইছে না তো রাহুলের কষ্ট?..ঠিকাছে! সন্ধায় তৈরী থেকো,তুমিই পারবে রাহুলের কষ্ট কমাতে, আমাদের এক একটা প্রোগ্রাম শেষ হবে

– ধীরেধীরে রাহুলের কষ্ট কমতে থাকবে, [ বলেই চোখ মেরে গাড়ী টান দিয়ে চলে যায় নিস্থব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্নেহা ]

চলবে…

Love At 1St Sight Season 3 Part : 38

0

Love At 1St Sight
~~~Season 3~~~

Part : 38

writer-Jubaida Sobti

স্নেহার বাবা : এটাই আশা করেছিলাম [ স্নেহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ] দেখ স্নেহা! আমি তোর বাবা, তোর ভালোটাই তো চাইবো, সামির অনেক ভালো ছেলে স্নেহা!

– সে নিজেই আমাকে বলে গেছে ও তোকে বিয়ে করবে না, [ সবাই অবাক হলো স্নেহার বাবার কথায় ]

– কারণ ও তোর আর ঐ ছেলেটার ব্যাপারে সব জেনে গেছে, ও নিজেই বলেছে ও তোর অমতে কখনো তোকে বিয়ে করবে না,

– সামির তোকে অনেক খুশি রাখবে স্নেহা! ও তোর খুশির জন্যই আমার সামনে এই ছেলের চরিত্র তুলে ধরেছে, যাতে তুই যেনো পরে কষ্ট না পাশ, ও এটাও বললো যে স্নেহার আমাকে বিয়ে করার দরকার নেই, তবে সে যাকেই বিয়ে করুক আমি চাই ও যেনো সুখী থাকুক,

– আরে এমন ছেলে তো আজকাল পাওয়াই মুশকিল!

– [ আংগুল তুলে রাহুলের ছবি গুলোর দিক ইশারা করে ] আর এমন ছেলেগুলোই তোদের মতো মেয়েদের ফাঁসানোর চেষ্টা করে,

– আর তুই কি ভেবেছিস আমি শুধু সামিরের কথায় এসব বলছি?
নাহ স্নেহা! যখন জানলাম এসব তখন তোর খুশির দিক দেখে নিজেই সব কিছুর খবরাখবর নিলাম,

[ স্নেহা চোখ বন্ধ করে চেপে পানি ফেললো, মাথায় প্রচন্ড রাগ উঠছে আজ, রাহুল এমন না তা সত্ত্বে ও আজ তার নামের সাথে বাজে মন্তব্য জড়ানো হচ্ছে, তার জন্যই রাহুলের বাবা-মায়ের নামে ইনসাল্ট করানো হচ্ছে, মনে মনে আফসোস করছে স্নেহা! রাহুল নির্দোষ এটা প্রমাণ করার জন্য হয়তো তার কাছে কিছু নেই, কিন্তু রাহুলের নামে এসব বলানো তো বন্ধ করতে পারবে ]

স্নেহার বাবা : খবর নিয়ে জানলাম, না আছে ছেলেটার ফ্যামিলি, না আছে ছেলেটার ক্যারেকটার,শুধু বাড়ী-গাড়ী থাকলে কি হবে!

স্নেহা : [ কান চেপে ধরে ] ব্যাস! বাবা! তোমার কথায় তো রাখছি! [ কাদো কন্ঠে ] আমি রাহুলকে ভুলে যাবো বললাম!

স্নেহার বাবা : স্নেহা! এমন ছেলের জন্য কাঁদছিস যে কিনা এমন কতো মেয়ের সাথে… [ জোড়ে একটি শাস ফেলে ]

– সামির তোকে অনেক খুশি রাখবে স্নেহা! [ বলেই স্নেহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ভেতরে চলে গেলো,স্নেহা ঐদিকটায় থমকে দাঁড়িয়ে আছে, মার্জান ধীরেধীরে এগিয়ে এলো স্নেহার পাশে, স্নেহার দিক তাকাতেই অনেক মায়া লাগছে তার, কিন্তু এই অবস্থায় কি করবে স্নেহার জন্য কিছুই মাথায় আসছে না, স্নেহা ও আহ্লাদী চোখে তাকালো মার্জানের দিক, মার্জান মাথা নাড়িয়ে ইশারা করলো স্নেহাকে কান্না না করার জন্য! দু-তিন সেকেন্ড চেপেই রাখলো ভেতরের আবেগ গুলো, আর না পেরে মুখ চেপে ফুফিয়ে কেঁদে দৌড়ে মেইন ডোর খুলে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায় স্নেহা!

মার্জান, জারিফা, শায়লা ও পেছন পেছন দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো, স্নেহা খালি পায়েই দৌড়ে শিরি দিয়ে নেমে যাচ্ছে, স্নেহা বলে বলে চেঁচিয়ে উঠলে ও স্নেহা থেমে নয় ]

মার্জান : শায়লা, যা তুই গিয়ে ব্যাগ গুলো নিয়ে আয়, [ বলেই জুতা পায়ে দিয়ে স্নেহার জুতা গুলো ও হাতে উঠিয়ে নিয়ে তাড়াহুড়ো করে নিচে এগিয়ে গেলো ]

নিচে নেমে আসতেই দেখে, স্নেহা ফুফিয়ে কেঁদে কেঁদেই হাটতে চলছে, মার্জান আর জারিফা দৌড়ে গিয়ে আটকালো স্নেহাকে!

মার্জান : স্নেহা! কি করছিস তুই! এভাবে করলে অসুস্থ হয়ে পড়বি!
– [ জুতা এগিয়ে দিয়ে ] নে জুতাগুলো পড়েনে!

স্নেহা : [ কাদো কণ্ঠে ] রাহুল এমন না মার্জান!

জারিফা : [ স্নেহার চোখ মুছে দিয়ে ] রিলেক্স স্নেহা! আশেপাশের লোকজন দেখছে! কান্না করিস না!

মার্জান : যেটা আংকেলকে বলেছিস ওটা পারবিতো?.. [ আবারো কেঁদে উঠলো স্নেহা ]

মার্জান : যখন পারবিনা স্নেহা! তাহলে বললি কেনো?…

স্নেহা : [ রাগান্বিত ভাবে ] তো এটাই বলতাম যে ঠিকাছে আমি চলে যাচ্ছি রাহুলের কাছে, তোমাদের আমি আমার বাবা-মা মানিনা, আর আমার এই চেহেরা ও তোমাদের কখনো দেখাবো না!

– হ্যা?..বল?..এটাই বলতাম?…

[ শায়লা ও এগিয়ে এলো, মার্জান জারিফা দুজনেই চুপ হয়ে আছে ]

স্নেহা : এতোটাও সেল্ফিস কিভাবে হবো মার্জান?.. ওরা না থাকতো তো তাহলে..আজ আমি এই পৃথিবীতেই না হতাম!

– [ চোখ মুছে ] আমি জানি এটা আমার জন্য অনেক কঠিন! কিন্তু আমাকে পারতে হবে, [ বলেই আবার কেঁদে উঠলো ]

শায়লা : উফফ! ঐও কোনদিকটা যাবে তোরা বল?..একদিক প্যারেন্টস্ তো আরেকদিক রাহুল! একবার এই সিচুয়েশনে নিজেদের ভেবে দেখ! তোরা কি আ্যন্সার দিতি!

[ সকলেই নিস্থব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, হঠাৎ ]

মার্জান : [ স্নেহাকে টেনে নিরিবিলি একজায়গায় দাড় করিয়ে ] স্নেহা! তুই আগে জানতি! রাহুলের ফটোগুলোর ব্যাপারে… তাহলে আমাদের বলিসনি কেনো?..

স্নেহা : [ কাদো কন্ঠে ] ফটো গুলো আমাকে নেহাই দেখিয়েছিলো যখন ও আমাকে কিডন্যাপ করেছিলো, আমি ও বাবার মতোই ভেবেছিলাম রাহুলকে!
[ বলেই ঐদিন রাতে ঘটে যাওয়া নেহা আর রাহুলের কথা সবই খুলে বললো ]

জারিফা : [ মাথায় হাত দিয়ে ] ইয়া আল্লাহ! একটা মেয়ে এতোটা নিচে কিভাবে নামতে পারে?…

শায়লা : আচ্ছা! নাহলে আমরা এক কাজ করি ঐ নেহাকে গিয়ে বলি যাতে আংকেলকে এসে সত্যিটাই বলেদে! যা আংকেল ভাবছে তেমন কিছুই না!

মার্জান : পাগল হয়েছিস! ঐ নেহাকে তুই চিনিস না?..ও আমাদের কথা মানবে তাই না?..আমার তো মনে হয় এসবে নেহার ও হাত আছে! নাহলে সামির ছবি গুলো পেলো কিভাবে!

জারিফা : আরে হ্যা! তাই তো!
– নাজানি রাহুল জানলে এই সামিরের কি হয়!

স্নেহা : [ চোখ মুছে ] রাহুলকে জানিয়ে কি হবে?..ও সামিরের সাথে মারপিট করবে! এটাইতো! বাবা অলরেডিই রাহুলকে অনেক খারাপ ভেবে বসে আছে! যখন জানবে রাহুল সামিরকে মেরেছে, বাবার চোখে ও আরো খারাপ হতে চলবে, আর আমি ও চাই না এমন হোক!

– রাহুলকে ভালো রাখার জন্য যদি ওর চোখে আমাকে খারাপ হতে হয় তাহলেও আমি রাজি,

মার্জান : আমার ও তাই মনে হয়! রাহুল মারামারি করে এটা জানলেও হয়তো আংকেলের রাহুলের প্রতি আরো ঘৃণা জমবে,

– উফফ! এমন কিছুই মাথায় আসছে না যে ছবি গুলোর কাহানী সব সাজানো এটা প্রুফ করবো!

জারিফা : আইডিয়া!

– রাহুল স্নেহাকে যেমন বুঝিয়ে বলেছে তেমন আংকেলকে ও বললে…

মার্জান : তোর বেকার আইডিয়া তোর কাছেই রাখ! আংকেল এখনো ললিপপ খায় মনে হয়?..রাহুল ঐদিন কিছুই করেনি এটা আংকেলকে রাহুল যেভাবেই বলবে আংকেল ওটাই বিশাস করে নিবে! তাই না?

জারিফা : উফফ তাহলে!

– আচ্ছা শোন আমরা সবাই মিলে বললে!

মার্জান : আল্লাহর ওয়াস্তে তুই চুপ করবি?..

স্নেহা : [ চোখ মুছে ] হয়তো সাথে থাকা ভালোবাসা না! হয়তো ভালোবাসা ঐটাই,

– যা সবকিছু শেষ হয়ে গিয়েও সাথে থেকে যায়, [ বলেই একটু হেসে এক খেয়ালি হয়ে হাটতে থাকে, রাহুলের সাথে কাটানো সব মোমেন্টগুলোই একনাগাড়ে চোখের সামনে ভেসে যাচ্ছে স্নেহার, বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে এসব মনে পড়তেই! ]

স্নেহার ফ্রেন্ডসরা ও পেছন পেছন এগিয়ে আসছে, এই মুহূর্তে স্নেহার জন্য তারাও কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না!
তাই সব ডিসিশন স্নেহাই নিক…এই মনে করে তারউপরই ছেড়ে দিলো!

বাসায় এসে পৌছালো, বিকেল প্রায় শেষের দিকে, বারান্দার রিলিং এ মাথা ঠেকিয়ে স্নেহা বসে আছে, চোখ দিয়ে অজস্র অশ্রু ঝড়ে যাচ্ছে সেই তখন থেকেই, ভেবেও নিয়েছে স্নেহা! যদি পরিবারের সুখের জন্য তার ভালোবাসা ত্যাগ দিতে হয় তাহলে সে দিবে, তবে এই বুকের মাঝে গেথে থাকা রাহুলের ভালোবাসার জায়গা সে আর কাউকেই দিতে পারবে না!
এসব ভাবতে ভাবতে এক খেয়ালিই হয়েগেছে স্নেহা! এর মাঝে কখন থেকে যে ফোনটা বেজে চলছে ধ্যানীই দিলো না!

জারিফা : [ স্নেহাকে নেড়ে দিয়ে ] স্নেহা! ফোন বাজছে!

স্নেহা : [ চমকে উঠে ] অহ! ..কে করেছে?…

জারিফা : রাহুল! [ বলতেই স্নেহা রুমের দিক তাকালো, দাঁড়িয়ে আছে মার্জান দেওয়ালের সাথে গা হেলিয়ে, শায়লা বসে আছে, খাটের উপর..তারাও স্নেহার দিক তাকিয়ে আছে, হয়তো এটাই ভাবছে সবাইকে যে বললো রাহুলকে ভুলে যাবে, আদৌ কি স্নেহা রাহুলকে ভুলতে পারবে! কিন্তু না স্নেহা উইক হয়ে পড়বে না, সবার সামনে তাকে স্ট্রং দেখাতে হবে, এই ভেবেই ফোনটা রিসিভ করলো ]

স্নেহা : হ্যালো!

রাহুল : কোথায় ছিলা স্নেহা?..কখন থেকেই ফোন দিচ্ছিলাম!

স্নেহা : বাসায়ই আছি!

রাহুল : তোমার ভয়েসে্র কি হলো!

স্নেহা : তে…তেমন কিছুই না..হয়তো ঠান্ডায় হয়েছে!

রাহুল : হোওয়ারি তো কথা! নিজের সময় অলোয়েজ কেয়ারলেস্ থাকো!

স্নেহা : রাহুল! আমার আপনাকে কিছু দেওয়ার ছিলো!

রাহুল : হুম তা কি?..

স্নেহা : আসলেই দেখবেন!

রাহুল : আচ্ছা ঠিকাছে!

স্নেহা : আপনি আসছেন?..

রাহুল : ইয়াহ..আই এম কামিং!

স্নেহা : আমি অপেক্ষা করছি! [ বলেই ফোনটা রেখে দিলো ]

মার্জান : [ দূর থেকে চেঁচিয়ে ] স্নেহা রেগে কাজ করিস না! ব্যাপারটা আরো বেড়ে যাবে!

– এক কাজ কর, আংকেল নেক্সট যে অপশনটা দিয়েছে ঐটাই বেছে নে, তারপর পরে দেখবি আংকেল এমনি এমনিতেই মেনে নিয়েছে,

জারিফা : [ স্নেহার পাশ বসে ] আমিও এটা ভাবছিলাম স্নেহা! রাহুলের সাথেই পালিয়ে যা, পড়ে বিয়ে হয়ে গেলে দেখবি আংকেল এমনিতেই মেনে নিয়েছে!

স্নেহা : চুরি করিনি আমি! না কারো খুন করেছি, আমিতো ভালোবেসেছি! পালাবো কেনো?…

মার্জান : [ এগিয়ে এসে ] স্নেহা! বারবার বলছি রেগে কাজ করিস না, এতে দু-জনেই কষ্ট পাবি!

স্নেহা : রেগে যে কাজ করবো ওটা সবসময় ভুলই হবে, জানিস কেনো?..

– কারণ রাগ সবসময় দিমাগের কথা নয় মনের কথা শুনে,আর মন কখনো নিজের জন্য ভাবে না..ও তো সবসময় ওর জন্যই ভাবে, যার হেফাজতে ওকে রাখা হয়েছে!

– হয়তো রাহুল আমার কপালে নেই, নাহ এটা হবে কেনো?.. ইনফ্যাক্ট আমিই রাহুলের কপালে নেই, [ কাদো ভাবে ] ওর কপালে হয়তো আমার চেয়ে বেশী ভালোবাসবে এমন কেউ আছে!

– আজ যদি আমি বাবার দেওয়া নেক্সট অপশনটাই নিতাম, তাহলে আমার ভালোবাসার অসম্মান হতো! ভালোবাসা আমার কাছে খেলনার পুতুল হয়ে যেতো, রাহুলের জন্য যদি বাবা-মাকে ছেড়ে দিতাম, তাহলে অন্য কারো ভালোবাসার জন্য রাহুলকে ছাড়তে তো আমার দু-সেকেন্ডই লাগবে না!

– [ মুচকি হেসে ] বলা অনেক সহজ মার্জান, যখন কাউকে মনেপ্রাণে চাইবি তখন বুঝবি! ব্যাপারটা করতে কতো কঠিন!

[ মার্জান আর কিছু বললো না, ভেতরে গিয়েই বসে ভাবতে লাগলো, ঠিকই তো বললো স্নেহা, হয়তো সে কাউকে এখনো ভালোবাসেনি তাই হয়তো সেকেন্ড অপশনটাই বেচে নিতে বললো, একদিকে বাবা-মা আরেকদিক যাকে ভালোবাসে সে, দুটো অপশন থেকে একটা, উফফ কি কঠিন বেচে নেওয়া, কিন্তু স্নেহা যেটা নিলো সেটা ওর ক্যারেকটারের সাথে যায়, নিজে কষ্ট চেপে রেখে অন্যকে সুখ দেওয়া এটা ওরই কাজ, ছোট থেকেই তো এমনি স্নেহা, আমরা হলে হয়তো নিজের ভালোবাসার পেছনেই দৌড়াতাম, একবার ও ভাবতাম না যে এই পৃথিবীতে ভালোবাসতেই তো সবার আগে বাবা-মা শিখিয়েছে ]

সময় পেড়িয়ে গেছে, বেলা ও ঘনিয়ে এলো, সবাই সবার মতো মগ্ন হয়ে বসে আছে,
হর্ণের আওয়াজ ভেসে এলো, নিচের দিক তাকাতেই বুকটা ধুক করে উঠলো, হাত দিয়ে ইশারা করছে রাহুল নিচে নেমে আসতে, উঠে ভেতরে এগিয়ে গিয়ে চুল গুলো মুচড়ে খোপা করে নিলো টেবিল থেকে নিয়ে চশমাটাও পড়ে নিলো, যাতে রাহুল আজ স্নেহার চোখ পড়তে না পারে, গায়ে শাল মুড়িয়ে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো, বাকিরা তাকিয়ে আছে স্নেহার চলে যাওয়া!

গেইটের দিক পৌছাতেই হার্টবিট বেড়ে চলছে স্নেহার, কেনো হচ্ছে আজ এমন?..হয়তো ভালোবাসার উপভোগটা আজ আরো বেশী করেই মায়া ছড়িয়ে দিচ্ছে, ধীরেধীরে রাস্তা পাড় হয়ে রাহুলের কাছে গিয়েই দাঁড়ালো স্নেহা!

রাহুল : ওহ নো স্নেহা! আমার সামনে এভাবে চুল বেধে এসো না, তোমাকে তখন এত্তো কিউট লাগে!

– এক সেকেন্ড [ স্নেহার কপালে হাত দিয়ে ] তুমি কি সি্ক?..

স্নেহা : [ রাহুলের হাত সরিয়ে দিয়ে ] নাহ!

রাহুল : [ স্নেহার নাক টেনে দিয়ে ] কেঁদেছো মনে হচ্ছে!

স্নেহা : ঠা..ঠান্ডায়!

[ রাহুল আর কিছু বললো না চেয়ে আছে স্নেহার দিক, স্নেহা ও চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, শীতের সন্ধ্যাবাতাস গায়ের সাথে মিশে যাচ্ছে, স্নেহার মুখের সামনে পড়ে থাকা ছোট ছোট চুল গুলো ও বাতাসের সাথে খেলছে, দু-হাত একসাথে মোচড়ামোচড়ি করছে স্নেহা! নাক,ঠোট, গাল সবই লালচে হয়ে আছে, সবশেষে রাহুলই নিরবতা ভাঙলো ]

রাহুল : স্নেহা! তুমি ঠিকাছো?..

স্নেহা : হ্যা! ঠিকাছি, [ চোখ পানিতে ঝাপসা হয়ে আসছে স্নেহার ] আপ..আপনি প্লিজ আপনার গাড়ীর লাইটটা বন্ধ করবেন?..

রাহুল : লাইট?..ওখেই [ লাইট বন্ধ করে স্নেহার কাছে এগিয়ে দাঁড়ালো ]

স্নেহা : [ একটু পিছিয়ে দাঁড়িয়ে ] আ..আমি বলেছিলাম আপনাকে কিছু দেওয়ার ছিলো!

রাহুল : ও হ্যা!

স্নেহা : আমি এটা দেওয়ার পর প্লিজ আমার থেকে আর কিছুই জিজ্ঞেস করবেন না! [ রাহুল অবাক হলো স্নেহার কথায় তাও আর কোনো প্রশ্ন করলো না, চুপ করে তাকিয়েই রইলো স্নেহার দিক, কিছুক্ষণের মধ্যেই রাহুল যা দেখতে পাচ্ছিলো তা রাহুল নিজেকে বিশাস করাতে পারছে না, সে কি সপ্ন দেখছে নাকি বাস্তবেই এটা ঘটছে ]

[ রাহুল পড়িয়ে দেওয়া স্নেহার আংগুলের রিংটি খুলে স্নেহা গাড়ীর বনাটের উপর রেখে দিলো ]

স্নেহা : আমাদের এইখানেই থেমে যাওয়া উচিৎ রাহুল!

রাহুল : অও! এতোটা সহজ তোমার জন্য স্নেহা?…

[ স্নেহা কিছু বললো না,রাহুল চমকেই আছে, স্নেহার চেহেরার দিক তাকিয়ে দেখলো স্নেহা মাথা নিচু করে আছে, গাল বেয়ে চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে তাড়াহুড়ো করে মুছেই ফেললো জল গুলো, এবার বুঝতেই পারলো রাহুল গাড়ীর লাইট কেনো বন্ধ করতে বললো, যাতে রাহুল তার চোখের পানি দেখতে না পাই! স্নেহার নিস্থব্দতাই রাহুলের বুকের পাঁজরটা আরো দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে, যেনো কেউ ছুড়ি মেরে বের করে ঐ ক্ষতের উপর আবারো আঘাত করতে লাগলো ]

রাহুল : [ মনের কষ্ট মনেই চেপে রেখে রিংটি নিজের হাতে তুলে ধরে বলে উঠলো ] আমি জানি সামির তোমার বাবাকে আমার আর নেহার ছবি গুলো পাঠিয়েছে, [ স্নেহা শকড হয়ে তাকালো ]

রাহুল : উমহুম! অবাক হবানা.. আমি তোমার সাথেই আছি, আমি সবদিকই আছি, যে দিকটা তুমি কল্পণা ও করতে পারবা না আমি সেইদিকটা ও আছি!

– সামিরের কথা পরে আসছে, তবে তোমার কাছ থেকে এটা আশা করিনি! [ স্নেহা ওড়নার আচলের কোণা ধরে মুচড়ামুচড়ি করছে ]

রাহুল : হ্যা! এটা আশা করেছিলাম ছবি গুলো দেখে তোমার বাবার ধারণা আমার জন্য এই রুপটাই হবে, তবে স্নেহা তুমি?..তুমিতো জানোই সব! [ স্নেহা আর কিছু বললো না তাড়াহুড়ো করে রাস্তা পাড় হতে লাগলো, রাহুল চেয়ে আছে, ]

হঠাৎ, গেইটের দিক পৌছাতেই বিকটভাবে কাচ ভাংগার শব্দ ভেসে এলো কানে, পেছন ফিরে তাকাতেই দেখে রাহুলের হাত বেয়ে টপ-টপ করে রক্ত ঝড়ছে

স্নেহা : [ দৌড়ে এগিয়ে এসে, চেঁচিয়ে উঠে ] আজিব? পাগল নাকি আপনি?..বাচ্চাদের মতো কান্ড করছেন! [ বলেই ওড়না দিয়ে রাহুলের হাতটি পেছিয়ে দিতে লাগলো ]

রাহুল : স্নেহা আমার দিক তাকাও! তুমি পারবা আমাকে ভুলে থাকতে?..[ স্নেহা কোনো জবাব দিচ্ছে না ওড়না পেছাতেই ব্যস্ত ]

রাহুল : স্নেহা! আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি!

স্নেহা : কাচ হাতে ঢুকেছে কিনা কে জানে! কিসব করেন না আপনি!

রাহুল : [ নাক ফুলিয়ে ঝাড়া মেরে স্নেহা থেকে তার হাতটি ছুটিয়ে নিয়ে ] আমাকে জবাব দাও স্নেহা!

[ স্নেহা মাথা নিচু করে রাহুলের হাতটা আবার এগিয়ে নিয়ে ওড়নাটা ভালো করেই পেছিয়ে দিতে লাগলো, রাহুল রেগে হাতটা আবার টেনে নিয়ে স্নেহার দিক এগুতেই স্নেহা পিছিয়ে যায় ]

রাহুল : [ দাতকিলিয়ে ] কামঅন স্নেহা স্টপ দিস্ ননসেন্স! আমার প্রশ্নের জবাব দাও!

স্নেহা : দিলামই তো জবাব! [ রাহুলের হাত তুলে ধরে রিংটির দিক দেখিয়ে ] আমার জবাব!

রাহুল : [ মাথা নাড়িয়ে ] ওখে! [ বলেই স্নেহার হাত টেনে নিয়ে রিংটি আবার পড়িয়ে দিলো ]

স্নেহা : [ কাদো কন্ঠে ] রাহুল কি করছেন আপনি!

রাহুল : রিংটির জায়গা যেখানে ঐখানেই বসিয়ে দিলাম!

স্নেহা : কিন্তু এটা সম্ভব না রাহুল!

রাহুল : [ টান দিয়ে স্নেহার চোখ থেকে চশমাটা খুলে, চোখের নিচ থেকে পানি গুলো আঙুল দিয়ে কুড়িয়ে নিয়ে ] তাহলে এসব?.

স্নেহা : [ মাথা নিচু করে ] হয়তো চোখে কিছু পড়েছে!

রাহুল : তাই?..তাহলে আমার চোখের দিক তাকিয়ে জবাব দাও!

স্নেহা : আপনার চোখের দিক কেনো তাকাবো, আপনি এমনিতেই রেগে আছেন আমার আরো ভয় লাগবে!

রাহুল : বাহানা বানানো বন্ধ করো স্নেহা!

স্নেহা : আমি বাহানা বানাচ্ছি না!

[ রাহুল হাত মুঠি করে চেপে স্নেহা থেকে সরে দাঁড়ালো, ফুফাতে লাগলো এদিকওদিক তাকিয়ে, স্নেহা মাথা নিচু করে ঐদিকটাই ভীতু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, রাগ কন্ট্রোল করে স্নেহার কাছে আবার এগিয়ে এসে দাঁড়ালো! ]

রাহুল : যখন ভালোবাসার সাহস চোখ উঠিয়ে দেখে, তখন ভয় ও মাথা ঝুকিয়ে নেই স্নেহা!

– [ স্নেহার হাত ধরে ] চলো স্নেহা! আমার হাত ধরে, আমার সাথেই!

স্নেহা : রাহুল! আপনার হাতে ব্লিডিং হচ্ছে!

রাহুল : বলো স্নেহা! যাবা?.. আ..আমার সাথে!

স্নেহা : [ রাহুলের হাতের দিক চেয়ে থেকে কাদো কন্ঠে ] ব্যান্ডেজ করে নিবেন!

রাহুল : [ কাদো ভাবে ] কেনো করছো এমন স্নেহা! আমি পারবো না তোমাকে ছাড়া থাকতে!

স্নেহা : কা..কাচ ঢুকেছে কিনা চে..চেক করে নিবেন!

রাহুল : কিছুতো বলো স্নেহা! প্লিজ!

স্নেহা : চে..চেক না করলে! পড়ে ইনফেকশন হয়ে যাবে! [ বলেই মুখ চেপে ফুফিয়ে কেঁদে দৌড়ে চলে যায়, রাহুল আহ্লাদী চোখে তাকিয়ে থাকে স্নেহার নিশ্চুপ হয়ে চলে যাওয়া, চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে রাহুলের, ধীরেধীরে গাড়ীতে উঠে বসলো, কিছুক্ষণ থমকে বসে রইলো, হাতের দিক তাকাতেই স্নেহার মুড়িয়ে দেওয়া ওড়নাটা চোখে পড়লো, নাকের কাছে এনে স্মেল নিলো কিছুক্ষণ, হঠাৎ ফুফিয়ে কেঁদে মুখের মধ্যে চেপে ধরলো ওড়নাটা ]

রাহুল : [ কান্না কন্ট্রোল করে মনে মনে ] আমার তাকদীর বলেছে আমি থুফান থেকে বাচতে পারবো না, বাট স্নেহা! আমি ও তাকদীরকে দেখিয়ে দিবো

– থুফান তো আমি নিজেই! [ বলেই গাড়ী স্টার্ট দিয়ে বেড়িয়ে পড়লো ]
________________________________

[ স্নেহা চোখ-নাক মুছে, ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করতে লাগলো, পেছন মুড়তেই দেখে, তার ফ্রেন্ডসরা তাকিয়ে আছে, শালটা টেবিলে ছুড়ে ফেলে ওয়াসরুমে ঢুকে পড়লো, দরজা আটকে ফুফিয়ে কেঁদে উঠলো, দু-হাত মেলে তাকিয়ে দেখলো, রাহুলের রক্ত গুলো হাতে শুকিয়ে মিশে গেছে, রিংটিও আজ অতিরিক্ত ঝলমলে দেখাচ্ছে ]

নিস্থব্ধতা আর বেখেয়ালি মনোভাব,নির্ঘুম এবং নিস্ব হয়ে দুজনের দু-ভাংগা দুটি মন, বেইমান রাতটি পার করিয়েই দিলো…

পরদিন ভার্সেটিতে গেলো, মনমরা হয়েই ঢুকছিলো সবাই, পার্কিং এর দিক তাকাতেই দেখে রিদোয়ান আর আসিফ বসে আছে গাড়ীর দরজা খোলা রেখে, আর রাহুল গাড়ীর বনাটের উপর এক পা বটে শুয়ে আছে, মুখের উপর কেপ দিয়ে ঢেকে রেখেছে, স্নেহা এসেছে ঠের পেয়ে আড়চোখে তাকিয়ে রইলো, কিন্তু কোনো রিয়েক্ট করলো না,

রিদোয়ান এগিয়ে আসছে, স্নেহা, মার্জান, শায়লা তিনজনই ক্লাসের দিক চলে গেলো,

জারিফা : আপনারা মারামারি কেনো করলেন?.. আর এসব কি হয়েছে আপনার কপালে?..মার দিতে গিয়েছিলেন নাকি উল্টা খেয়ে এসেছেন!

রিদোয়ান : আরে কপালের এটা রাহুলের মার খেয়েছি!

জারিফা : [ অবাক হয়ে ] আপনি কার দলে ছিলেন!

রিদোয়ান : [ হেসে ] রাহুলকে থামাতে গিয়ে বাড়ি খেয়েছিলাম!

জারিফা : [ হেসে ] ওহ!

রিদোয়ান : হ্যা! হাসো!

জারিফা : [ মুখ গোমড়া করে ] জানেন!স্নেহা এসব জানলে আবার কষ্ট পাবে?…

রিদোয়ান : আরে জারিফা কষ্ট পাওয়ার কি আছে?..ঐ সামিরের কারণেই ওদের দুজনের আলাদা হতে হচ্ছে! আর তুমি না বললে স্নেহা জানবে না! ব্যাস!

– আজও ভার্সেটি এসেছে স্নেহার প্রটেক্ট এর জন্য! বললাম আমরা আছি, তাও মনকে শান্তি দিতে পারছে না চলে এলো,

জারিফা : স্নেহার টেনশন এটাই মারামারি করতে গিয়ে রাহুলের না কিছু হয়ে যায়,

রিদোয়ান : আচ্ছা! ট্রু লাভার কাকে বলে জানো?..

জারিফা : হয়েছে হয়েছে! ব্যাস! আব.. রাহুল ঠিকাছে! এখন?..

রিদোয়ান : ওর আর কি? কাল রাত থেকেই তো বললাম দেবদাস হয়ে আছে!
– দেখো তুমিও আবার আমাকে দেবদাস বানিয়ে দিয়ো না কিন্তু!

জারিফা : কিসব আজেবাজে কথা বলেন! যাচ্ছি আমি ক্লাসে!

রিদোয়ান : [ হেসে ] ওকে যাও!
________________________________

ভার্সেটি ছুটির পর,

মার্জান : আচ্ছা স্নেহা! চল আমরা আজ কোথাও ঘুরে আসি!

স্নেহা : তোরা যা আমার ভালো লাগছে না! [ সবাই বুঝতে পারলো কেনো ভালো লাগছে না, তাই আর কি করার বেড়িয়েই যাচ্ছে স্নেহার সাথে সাথে, পার্কিং এর দিক এসেই স্নেহা থেমে গেলো, পাশ মুড়ে তাকাতেই দেখে রাহুলকে যেমনটা দেখে গেছে এখনো তেমনিভাবে শুয়ে আছে, মুখের উপর কেপটাও ঐপজিশনে দিয়ে রেখেছে এখনো, হাতের দিক তাকিয়ে লক্ষ্য করলো, যা ভাবলো তাই হলো, ব্যান্ডেজ করেনি, চোখ থেকে পানি পড়ছে স্নেহার, বুঝতে পারলো রাহুল রেগে নিজেকেই কষ্ট দিচ্ছে ]

মার্জান স্নেহার কাধে হাত রাখলে, স্নেহা চোখ মুছে হনহনিয়ে গেইট দিয়ে বেড়িয়ে পড়ে,

বাসায় এসে ব্যাগ কাধ থেকে রেখে বারান্দায় এগিয়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদতে লাগলো, মার্জান ও স্নেহার পাশে এসে দাঁড়ায়!

মার্জান : ফিরিয়েই তো দিয়েছিস তাহলে আবার কাঁদছিস কেনো?.. [ স্নেহা নিস্থব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ]

মার্জান : আমি জানি ভুলতে পারবিনা! কিন্তু ভোলার অভিনয় করে যাচ্ছিস!

স্নেহা : আমাকে একটু একা থাকতে দে…[ বলেই ভেতরের দিক চলে যায়, মার্জান ও কি আর করার জোড়ে একটি শাস ফেলে আশেপাশে তাকাতে লাগলো, ভাবছে, থাক কিছুক্ষণ একা থাকলে মনটা ফ্রেশ হয়ে যাবে, হঠাৎ ভেতর থেকে জারিফা আর শায়লা স্নেহা! বলে চেঁচিয়ে উঠার শব্দ এলো, তাড়াহুড়ো করে ভেতরে এগিয়ে গেলেই দেখে, স্নেহা মাঠিতে পড়ে আছে ]

মার্জান : [ শকড হয়ে ] আরে! কি হয়েছে!

শায়লা : হয়তো মাথা ঘুড়িয়ে পড়ে গেছে, স্নেহা! তুই ঠিকাছিস?..

স্নেহা : [ মাথা চেপে ধরে উঠে বসলো ] হ্যা! আমি ঠিকাছি! [ বলেই উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো, বাকিরা ও ধরে হেল্প করলো উঠে দাড়াতে ]

মার্জান : এতো স্ট্রেস নিলে এমন হবেই স্নেহা!.. চল শুয়ে রেষ্ট কর!

স্নেহা : আ..আমি আসছি..একটু বেরুবো!

শায়লা : আরে এই অবস্থায়?..

স্নেহা : [ কাদো কন্ঠে ] ও আমার উপর রেগে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছে শায়লা! ওকে বলেছি কাল রাতে যেনো ব্যান্ডেজ করে নেই! নয়তো ইনফেকশন হয়ে যাবে,

মার্জান : [ স্নেহাকে নাড়িয়ে দিয়ে ] রিলেক্স স্নেহা! শান্ত হো!

স্নেহা : [ চোখ মুছে ] আমি ঠিকাছি! [ বলেই ব্যাগটা কাধে নিয়ে দরজা খুলে বেড়িয়ে যাচ্ছে ]

মার্জান : স্নেহা! তুই একা এই অবস্থায় কোথায় যাচ্ছিস?..

স্নেহা : বললাম তো ঠিকাছি! তোরা টেনশন করছিস কেনো?..

মার্জান : কিন্তু স্নেহা!

স্নেহা : প্লিজ মার্জান! [ বলেই বেড়িয়ে গেলো ]

শায়লা : টেনশন করিসনা! হয়তো রাহুলের কাছেই যাচ্ছে!

মার্জান : কিন্তু শায়লা ওর শরীরের অবস্থা দেখলি?..

শায়লা : আমাদের ওকে বাধা দেওয়া উচিৎ না এখন! ও যেহেতু রাহুলের কাছেই যাচ্ছে!

মার্জান : হুম!
________________________________

রাহুলের বাসার উদ্দেশ্যই স্নেহা বেড়িয়ে পড়লো, বাড়ীর সামনে এসে পৌছাতেই চোখ মুছে নিজেকে স্ট্রং করে নিলো, ধীরেধীরে গেইট দিয়ে ঢুকতেই রাহুলের গাড়ী দেখতে পেলো মনে শান্তি এলো তারমানে রাহুল বাড়ীতেই আছে! ঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়াতেই মনটা ছটফট করছে! বেল দিতে সাহস হচ্ছে না স্নেহার! বুকটাও কাঁপছে! কিন্তু কেনোই বা পারছে না রাহুল থেকে দূরে থাকতে, রাহুল কষ্ট পাবে সেটাও তো সে চাইনি!

[ দিয়েই দিলো বেল, পাচ-ছয়বার বাজালেও দরজা খুললো না, হঠাৎ স্নেহা লক মোচোড় দিতেই দেখে দরজাটা খুলে গেলো, ভেতরে ঢুকতেই দেখে সব জিনিষ ভেংগে চুরমার হয়ে এলোমেলো ভাবে চারদিক ছিটে আছে ]

হেটে ভেতরে এগিয়ে গিয়ে চারদিক চোখ বুলিয়ে সোফার দিক তাকাতেই দেখে রাহুল সোফায় শুয়ে আছে,

স্নেহা : [ রাহুলের দিক এগিয়ে গিয়ে ] রাহুল! কি হয়েছে আপনার?.. আপনি ঠিকাছেন?…

রাহুল : [ মাতাল অবস্থায় স্নেহার মুখে স্লাইড করে ] কেনো এসেছো স্নেহা! আমার তো সব শেষ হয়ে গেছে!

স্নেহা : [ কাদো কন্ঠে ] আপনি আবার ড্রিংক্স করেছেন?…

রাহুল : [ হেসে ] সবাই ছে..ছেড়ে চলে গেছে! ও যায়নি! [ বলেই বোতোলটা আবার এগিয়ে নিতে লাগলো ]

স্নেহা : [ বোতোল সরিয়ে দিয়ে ] ব্যাস! রাহুল, অনেক খেয়েছেন আর না! আর আপনি হাতে ব্যান্ডেজ করেননি কেনো?..বললাম না ইনফেকশন হয়ে যাবে! [ বলেই উঠে ভেতরে গিয়ে ফার্ষ্ট এইড বক্সটা এগিয়ে আনলো, রাহুল উঠে বসলো, স্নেহা মাঠিতে বসে হাত এগিয়ে নিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে, সাথে চোখ বেয়েও গড়িয়ে গড়িয়ে পানি পড়ছে, রাহুল তাকিয়ে রইলো একপলকে, হঠাৎ কিছুক্ষণ পরে স্নেহা থেকে হাতটা টেনে নিয়ে ফার্ষ্ট এইড বক্সটা লাত্তি দিয়ে সরিয়ে স্নেহাকে তুলে দাড় করিয়ে নেই ]

স্নেহা : [ অবাক হয়ে ] রাহুল! কি হলো?

রাহুল : [ চেঁচিয়ে ] কি ফাইদা এসবের স্নেহা?..কি হবে এই শরীর সুস্থ রেখে যখন ভেতরের আত্মাটাই জলে যাচ্ছে!

[ স্নেহা মাথা নুয়ে চুপ করে রইলো ]

রাহুল : যখন তুমি চুপ থাকো স্নেহা! তখন তোমার নিশ্চুপ চেহেরায় সব বলেদে! [ বলেই বোতোলটা এগিয়ে নিয়ে কয়েকঢোগ খেয়ে রাগান্বিত ভাবে পাশে ছুড়ে ফেলে হনহনিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো, গাড়ীর দিক এগিয়ে গিয়ে দরজাটা খুললো, হঠাৎ আবার স্নেহার কথা মনে পড়তেই দরজা লাগিয়ে ফুফিয়ে কেঁদে উঠে ]

[ এইদিকে স্নেহা ও কান্নায় ভেঙে মাঠিতে বসে পড়লো! আশেপাশে তাকাতেই সব সৃথি ভেসে উঠছে চোখের সামনে, মনে মনে ভাবছে স্নেহা, যদি রাহুলই তার একটা অপশন হতো! ]

চলবে…