Thursday, August 21, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2374



হারিয়ে যাওয়া,পথ খুঁজে পাওয়া। পর্ব-1

0

হারিয়ে যাওয়া,পথ খুঁজে পাওয়া।

পর্ব-1
লেখা –সুলতানা ইতি

আজ আমার বাসর রাত আর অন্য সব মেয়েদের মতো আমার ও এই রাত টা নিয়ে অনেক সপ্ন হুম একটু পরেই আমার সপ্নটা সত্যি হতে চলছে।, বিয়ে টা আমার পারিবারিক ভাবেই হয়েছে ছেলেকে আমি এখন ও দেখিনি মাকে বলেছি তার পছন্দ ই আমার পছন্দ, উফফ উনি এখন ও আসছে না কেনো আর কতোক্ষন অপেক্ষা করবো,

আচ্ছা যাই হোক উনি আসার আগে আপনাদের কে আমার পরিছয় টা দিয়ে নি,আমি আনুশা রহমান, মায়ের ছোট মেয়ে আমার বড় দুবোন আছে অদের বিয়ে হয়ে গেছে, মা আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসে তাই আমি মায়ের কথার বিরুদ্ধে যাইনি কেউ মনে হয় আসছে, পায়ের শব্দ শুনা যাচ্ছে।
নিহাল আসছে হুম আমার বরের নাম নিহাল, দরজা খুলে ভিতরে আসলো নিহাল
আমার মধ্যে অজানা ভয় কাজ করতে লাগলো আসার আগে মুরুব্বিরা বলেছে বাসর রাতে স্বামিকে পায়ে ধরে সালাম করতে হয়, আমি তাই উঠে গিয়ে নিহাল কে সালাম করে উঠে দাড়ালাম অমনি

ঠাসসসসসসসসস

নিহাল আমাকে থাপ্পড় মারলো বাসর রাতে এই প্রথম কোন মেয়ে তার স্বামির হাতে থাপ্পড় খেয়েছে, এই রকম কোন ইতিহাস আমি আগে শুনিনি
আমি থাপ্পড় খেয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে কান্না করতে ভুলে গেছি

আনুশা: তুমিইইইইইই????

নিহাল: হুম আমি মনে পড়ে তোমার কলেজের সেই দিনের কথা

আনুশা: আমি সত্যি টা জানার পর তোমার কাছে বার বার ক্ষমা ছেয়েছি নিহাল

নিহাল: ক্ষমা, আমার ওতো বড় একটা ক্ষতি করলে তুমি কলেজে সবার সামনে আমাকে বদনাম করেছো প্রিন্সিপাল স্যার আমাকে কলেজ থেকে বের করে দিয়েছে তোমার জন্য আমার পুরো লাইফ বরবাদ হয়েছিলো,আর তোমাকে আমি এতো সহজে ক্ষমা করে দিবো এই টা তুমি ভাবলে কি করে

আনুশা: তাই বলে তুমি এই ভাবে প্রতিশোধ নিবে

নিহাল: তুমি আমাকে কলেজে সবার সামনে অপমান করেছো আর আমি তোমাকে সমাজের সামনে অপমান করবো তুমি জানতে না ইট ছুড়লে পাটকেল খেতে হয়,
কাল যখন সবাই জানবে যে বাসর রাতে স্বামি তার স্ত্রী কে ডির্বস দিয়েছে সবাই তোখন তোমাকেই আঙুল তুলবে।

আনুশা: নিহালের পায়ে পড়ে প্লিজ নিহাল এমন করো না, দেখো স্ত্রী মর্যাদা না দাও কিন্তু তুমি আমাকে ডির্বস দিয়ো না, আমি তোমাদের বাড়ির কাজের মেয়ের মতো থাকবো??????

উফফফ পা ছাড়, এই মেয়ে তুই পা ছাড় বলছি ????
এতো অহংকার এখন কোথায় গেলো তোর,,
আনুশা: আমার এই কষ্ট দেখে আমার মা মরে যাবে উনি সইতে পারবে না প্লিজ নিহাল

নিহাল,উফফ ছাড়

নিহাল আমাকে ধাক্কা মেরে চলে যায়,এক নিমিষে আমার সব সপ্ন ভেঙে গেলো আমি ভাবতে ও পারিনি নিহাল আমার থেকে এই ভাবে প্রতিশোধ নিবে
হুম সে দিন কলেজ এ যেতেই দেখি সবাই আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে আমি কিছু বুঝতে পারিনি
অন্নি আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড সে এসে বল্লো আনুশা চল একবার নোটিশ বোর্ড দেখবি
আমি,কি আছে সেখানে
অন্নি আগে চল, গেলেই বুঝতে পারবি নোটিশ বোর্ড এর দিকে তাকিয়ে আমার চোখ তো চড়ক গাছে
মাথায় আমার রক্ত উঠে গেছিলো নোটিশ বোর্ড এ আমার আর নিহাল এর একটা ছবি ছিল তাতে লিখা ছিলো I love you আনুশা,,, নিহাল তোখন সবার সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো ক্যাম্পাসে বসে আমি সবার সামনে নিহাল কে থাপ্পড় মারি

নিহাল কিছু বুঝতে না পেরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমি আর ওখানে দাড়ালাম না সোজা বাসায় চলে আসি,পরে ৭দিন আর আমি কলেজে যাইনি,
যখন গেলাম কলেজ এ তখন জানতে পারলাম প্রিন্সিপাল নিহাল কে কলেজ থেকে বের করে দিয়েছে

নিহাল এর চিৎকার এ আমি ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে আসি
নিহাল এর হাতে কিছু পেপারস আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না অই গুলা কি
নিহাল প্লিজ আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না

নিহাল: তোকে ক্ষমা করবো নো য়ে, এই নে ডির্বস পেপারস এ সাইন করে দিলাম এই বার তুই বেরিয়ে যা তুই জানিস তোর সেদিন কার ভুলের জন্য আমার কতটা সাফার করতে হয়েছিলো আজ ও আমি সাফার করছি তুই বের হো আমার বাড়ি থেকে

আনুশা; নিহাল আমি এতো রাতে কোথায় যাবো প্লিজ আমাকে আজকে রাত টা থাকতে দাও আমি কাল ভোর না হতেই উঠে চলে যাবো,
নিহাল তুই এখন যাবি, নইলে আমি তোকে বাইরে ফেলে আসবো কথা বলেই নিহাল আমাকে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে গেলো,
যাওয়ার পথে নিহাল এর মাকে সামনে পেয়ে আমি কান্না করে বললাম মা আমি এতো রাতে কই যাবো,নিহাল এর মা কিছু না বলে আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো, নিহাল আমাকে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো,
আমি অন্ধকার রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভাবছি এখন কোথায় যাবো আমি
আমার তো বাবার বাড়ি নেই বাবা ও নেই মা মামার বাড়ি থাকে মামার দয়ায় আমাদের তিন বোনের পড়া লিখা আর বিয়ে হয় এখন যদি আমি মামার বাড়ি যাই তা হলে কি ওরা আমায় মেনে নিবে?
ভাবতেই কান্না পাচ্ছে কি ছেয়েছি আর কি হলো উফফ আমি এখন কোথায় যাবো, কি করবো, কিচ্ছু মাথায় আসছে না, মা তো আমায় এখন এভাবে দেখলে উনাকে আর বাঁচাতে পারবো না আর কাল সকালে সবাই যখন জানতে পারবে তখন কি হবে
উফফ নিজের চুল নিজেই টেনে চিড়তে ইচ্ছে করছে এই সব কথা ভাবছি আর অগোছালো পা পেলে হাটছি
আসলে সেই দিন কলেজে আমার এতো টা রাগ না দেখালে ও হতো আজকে আর এই দিনটা দেখতে হতো না অনেক পরে জানতে পারি আসলে সেদিন নিহাল অই কাজ টা করেনি আমাদের ফ্রেন্ড চারকেল এর একজন মজা করে এমন করেছে পরে অনেক খুঁজে নিহাল কে পেয়ে ক্ষমা ও ছেয়ে নিয়েছি,কিন্তু নিহাল যে আমাকে এতো বড় একটা প্রতিদান দিবে আমি বুঝতেই পারিনি
হাটতে হাটতে অনেক দূর চলে এলাম আর বেশি দূর নেই মামার বাড়ি না আর হাটতে পারছি না বসে পড়লাম রাস্তার পাশে
অনেক্ষন বসে থাকলাম তার পর আবার হাটতে লাগলাম,, অবশেষ এ পৌছে গেলাম মামার বাড়িতে না এতো রাতে আর কাউকে ডাকবো না ভোর হতে চলল প্রায় এখন দরজার পাশে বসেই এই টুকু সময় কাটিয়ে দিতে পারবো ভাবছি সকাল হলে যখন সবাই আমাকে দেখবে তখন কি ভাব্বে তারা কেমন হবে তাদের মনের অবস্থা, ভাবতেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো ভাবতে ভাবতে দরজার পাসে হেলান দিয়ে বসলাম, চোখ টা লেগে এসেছিলো মনে হয়
ভোরে মামির চেঁচা মেছিতে লাফিয়ে উঠলাম
মামি:এইইইই তুই এখানে কি করছিসস

to be continue,

প্রেমেরপরশ  পার্ট_31 ( লাস্ট পার্ট)

3

প্রেমেরপরশ 

পার্ট_31 ( লাস্ট পার্ট)

জামিয়া_পারভীন

__ “ নাহহ!  হটাৎ করে লোকটা হারিয়ে গেলো ই বা কোথায়।  ” রিমি ওর ভাইকে বলে।

শুভ তখন বলে,

__ “ চিন্তা করিস না,  কালপিট কে একদিন না একদিন খুঁজে পাবোই। যারা কিনা আমার নিরুকে এতিম করেছিলো,  যারা নিরুর বোন কে নষ্ট করেছে,  যে কিনা আমার একমাত্র বোনকে নিয়ে গেমস খেলেছে।  তাকে আমি সহজে ছেড়ে দিবো না।  একদিন সময় আসবেই।  আর সেদিন সব শত্রু কে জীবন থেকে সরিয়ে দিবো।  ”

__ “ চলো ভাইয়া,  ভাবী বাসায় একাই আছে।  ”

শুভরা চলে আসে বাসাতে।  দেখতে দেখতে এক মাস কেটে যায়।  শুভর একার পক্ষে এতো বড় বিজনেস সামলানো খুব কঠিন হয়ে গিয়েছে।  সারাক্ষণ অফিসে,  একেক সময় একেক অফিসে যাওয়া,  আর বাসায় বসে ল্যাপটপ এ অফিসের কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে শুভ।  আজকাল নিরুকে বা শায়ান কেও তেমন সময় দিতে পারেনা শুভ।

সেদিন রাতে ঘরে গিয়ে শায়ানের পাশে বসে,

__ “ পাপ্পা টা কেমন আছে,  আই এম সো সরি পাপ্পা,  তোমার আব্বু টা খুব পঁচা।  তোমাকে একদম ই সময় দিতে পারে না। ”

শায়ান বাবার গলা পেয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে হাসে আর শব্দ করে।  নিরু পিছন থেকে শুভ কে জড়িয়ে ধরে,  অনেক দিন পর নিরুর স্পর্শে শুভ কেঁপে ওঠে।  নিরুর দিকে তাকিয়ে দেখে,  নিরু কালো শাড়ির সাথে পিংক কালারের পাড়ের  সিল্কের শাড়ি পড়েছে।  চোখে কাজল দিয়েছে গাড় করে।  চুল গুলো বুকের বাঁ পাশে ছেড়ে রেখেছে।  গলায় কিছুই দেয়নি কিন্তু কানে পিংক কালারের দুল দিয়েছে।  পায়ে নুপুর পড়েছে নিরু এই প্রথম।

নিরুর দিকে তাকিয়ে অপলক দৃষ্টিতে দেখে কিছুক্ষণ।  এরপর নিরু বলে,

__ “ বেবি হবার পর তুমি তো আমায় ভুলেই গেছো।  নাকি আগের মতো ভালোবাসোনা আমায় আর।  ”

__ “ বউটা মনে হচ্ছে অনেক অভিমান করেছে আমার উপর।  ” নিরুর কোমরে হাত দিয়ে নিজের কাছে টেনে নেয় শুভ।  এরপর আবার বলে,

__ “ সামনে তুমি এইচএসসি পরীক্ষা দিবে, রিমিও পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত।  তাই তোমাকে ও সুযোগ দিয়েছি।  এতোদিন তো এতো মানসিক টেনশন এ পড়াশোনা কিছুই করোনি।  তাছাড়া সাগর ভাই নেই।  এতো বড় বিজনেস আমাদের সাথে তোমার পারিবারিক বিজনেস সব একা সামলাতে হচ্ছে।  এতো কিছু মেইনটেইন করে সত্যিই আমি আমার পরিবার কে সময় দিতে পারিনি।  আমি জানি তুমি মনে মনে খুব কষ্ট পাচ্ছো।  মাফ করে দেয়া যায়না তোমার হাজবেন্ড টা কে। ” শুভ নিরুকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে।।

__ “ জানো!  খুব একা লাগে নিজেকে।  তুমি সব সময় ব্যস্ত থাকো। আচ্ছা একটা কাজ করলে কেমন হয়? ”

__ “ কি কাজ বলো? ”

__ “ এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হলে রিমির জন্য একটা পাত্র দেখলে কেমন হয়। ”

__ “ আগে তো শেষ হোক,  এরপর না হয় দেখা যাবে।  ”

নিরুকে জড়িয়ে ধরে আরোও শক্ত করে।  এরপর শুভ বলে,

__ “ এখন না হয় তোমার সাথে একটু রোমান্স করি। ” বলেই নিরুর গলাতে মুখ গুঁজে দেয় শুভ।  ওরা ভাসুক ওদের ভালোবাসার রাজ্যে।

৫ মাস পর,

শুভদের বাসার ভিতর  সাজানো হয়েছে ফুলে ফুলে।  বাইরে দিকে রঙ বেরঙের লাইটিং।   অনেক মেহমান কে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে।  আজ রিমির গায়ে হলুদ।  রিমি কে হলুদ শাড়ি আর ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।  নিরু রিমিকে কানে কানে বলে,

__ “ একেবারে হলুদ পরী লাগছে তোমাকে ননদিনী।  ” বলে নিরুর চোখ থেকে একটু কাজল নিয়ে রিমির গলাতে দিয়ে দেয়।

__ “ ভাবী এই বিয়েটা করতে ইচ্ছে করছে না।  কোন ভাবে কি নিষেধ করা যায় না। ”

__ “ তোমার কি অন্য কোন পছন্দ আছে রিমি! ”

__ “ তুমি তো জানোই যাকে একবার ভালোবেসে ফেলা যায়,  সে যতই খারাপ হোক না কেনো ভুলে থাকা খুব কষ্টের।  আমি কেনো জানি অন্য কাউকেই মেনে নিতে পারছিনা।  ”

__ “ যাই করো,  ভুল বুঝোনা আমায়,  কষ্ট হলেও বিয়েটা করেই নাও।  কারণ জীবনে সুখী হতে হবে রিমি।  একা একা শুধুই কষ্ট ই পাবে।  কাউকে জীবন সাথী হিসেবে পেলে আরোও ভালো লাগবে দেখিও।  অতীত ভুলিয়ে দিবে তোমার বর। ”

__ “ হুমম”

সবার হৈচৈ শুরু হয়ে যায়,  একে একে সবাই রিমির গায়ে হলুদ দেয়,  মিষ্টি খাওয়ায় রিমিকে।  সবার খাওয়ানো হয়ে গেলে সাগর শুভকে ভিডিও কল দেয়।  সেখানে রিমি আর সাগর দুজনেই কান্নাকাটি শুরু করে দেয়।  নিরুর কাঁধে মাথা দিয়ে রিমি বসে আছে।  রাতে রিমির হাতে মেহেদী দিয়ে দেওয়া হয়।  রাত দুটো তে সবাই কফি পান করে।

মজার ছলে রিমি শুভ কে বলে,

__ “ ভাইয়া আমার বিয়ের গিফট চাই এখুনি।  ”

__ “ কি বল! ”

__ “ ভাবীর সাথে ডান্স করবে তুমি আজ।  ”

সবাই হাত তালি দিতে থাকে,  নিরুও রিমির মন রক্ষার্থে রাজি হয়ে যায়,  কিন্তু বলে,

__ “ আমি নাচবো ঠিক আছে,  যদি আমার সাথে এখানে যতো  কাপল আছে সবাই নাচে। এমনকি আব্বু আম্মু কেও নাচতে হবে ।  ”

সবার মাঝে হাসির রোল পড়ে যায়,  মেয়েকে সুখী দেখতে সবাই রাজী হয়ে যায়।

শুভ একটা গান প্লে করে, আর গানের তালে যে যেমন পারে ডান্স দেয়।

এখন তো সময় ভালোবাসার

এ দুটি হৃদয় কাছে আসার

তুমি যে একা আমিও যে একা

লাগে যে ভালো ও প্রিয় ও প্রিয়।।

পেয়েছি তোমাকে এতদিনে

যেও না সরে গো আভিমানে।

আমি তোমারই ও বুকের **।।

কী ছোয়া আমাকে দিলে তুমি

রাত দিন তোমাকে ভাবি আমি।

কেন বোঝ না প্রেমেরও পাগলামি।।

পরদিন বিয়েতে বরযাত্রী আসে, কেউ গেট আটকায় নি।  বর‍যাত্রী বেশ অবাক হয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। অন্যরা আপ্যায়ন করলো বরযাত্রী দের কে।  বরের বোন বলে,

__ “ বর তো এলো,  বউ কোথায়।  একটু দেখি তাকে।  “

রিমির ফুপাতো বোন বলে,

__ “ বউ দেখা মুখের কথা না,  দেখতে হলে শর্ত আছে।  ”

__ “ ওকে ডান,  চলো নিয়ে যাও বউয়ের কাছে।  ”

পাশের রুমে সবাই কে নিয়ে যাওয়া হয়।  সবার চক্ষু চড়কগাছ হবার দশা।  একই পোশাক একই সাজসজ্জার দুইটা মেয়ে বউ সেজে বসে আছে।

__ “আসল বউ কোনটা!” বরের ভাই জিজ্ঞেস করে।

__ “ আসল বউ কোনটা সেটা বলবেন আপনারা!  যদি আসল বউ চিনতে না পারেন তাহলে কিন্তু ১ লক্ষ টাকা আমাদের গচ্চা দিয়ে বিয়ে বসতে হবে। ” রিমির ফুপাতো বোন রোজী বলে।

__ “ আমার বউ আমি খেয়াল করলেই চিনতে পারবো। ” একটু ওভার কনফিডেন্সের সাথে বলে রিমির হবু বর।  ”

চয়ন খেয়াল করে ভালো ভাবে,

দুই টা মেয়েই লাল লেহেঙ্গা পড়ে বসে আছে,  গলা ভর্তি সেম গয়না দুজনের ই।  হাত ভর্তি সেম চুরি,  আংটি।  মেহেদীর ডিজাইন টা একটু আলাদা মনে হচ্ছে চয়নের।  কিন্তু বুঝতে পারছেনা, কারণ দুজনের মাথার উপর শাড়ি দিয়ে ঢেকে দিয়েছে এমন ভাবে শুধু থুতনি দেখা যাচ্ছে।

__ “ আর পর্যবেক্ষণ করার টাইম নেই,  এখুনি বলে দিন কোনটা আপনার বউ! ” রোজী বলে,

ডান পাশের বউ টা একটা আঙুল তুলে,  এতে চয়ন ভাবে যে বউ মনে হয় তাকে চিনিয়ে দেওয়ার জন্য ইশারা করছে।  হুট করেই বলে দেয়,

__ “ ডান পাশের টা আমার বউ।  ”

সবাই হো হো করে হেসে উঠে,  মাথার উপর থেকে ঘোমটা সরিয়ে ফেলা হয়।  চয়ন এবার নিজেই লজ্জা পাচ্ছে।  শুভ পাশ থেকে এসে বলে,

__ “ ভায়া ডান পাশের টা আমার বউ,  বাম দিকের টা তোমার। হাহাহা ”

নিরু আর রিমি দুজনে ই মুচকি হাসে,  অতঃপর চয়নের কাছে এক লক্ষ টাকা আদায় করে ছাড়ে রিমির ভাই বোনেরা।

ভালো ভাবেই বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে,  রিমি কে নিয়ে যাওয়া হয় শ্বশুর বাড়ি।

দুইদিন পর রিমির শ্বশুর বাড়ি তে অনুষ্ঠান এর আয়োজন করা হয়। নিরু শুভ সহ অনেক আত্মীয় আসে রিমি আর চয়ন কে নিয়ে যেতে।

রিমি চেয়ারে বসে আছে,  নীল রঙ এর বেনারসি পড়ে। চয়ন নীল শেরওয়ানি পড়েছে।  দুজন কে বেশ মানিয়েছে।  ফটোগ্রাফার ডাকা হয়েছে,  ছবি তুলার জন্য।  রিমি কিছুক্ষণ পর উঠে গিয়ে একজনের কলার চেপে ধরে।

নতুন বউয়ের এমন কীর্তি দেখে সবাই অবাক হয়ে যায়।  রিমি চিৎকার দিয়ে উঠে,

__ “ ভাইয়ায়ায়ায়ায়ায়া! ”

সবাই দৌড়ে আসে,  নিরুও অবাক হয়ে যায়।  শুভ গিয়ে লোকটা কে এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করে।

চয়ন শুভ কে সরিয়ে ধরলেও রাকিবের অবস্থা মার খেয়ে কাহিল হয়ে যায়।  নাক,  মুখে রক্ত ফুটে উঠেছে।

__ “ ভাইয়া,  আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন নাকি!  ফটোগ্রাফার কে মারছেন কেনো? ”

__ “ এই লোক একটা ক্রিমিনাল,  এতোদিন গা ঢাকা দিয়ে ছিলো।  আজ পেয়েছি ওকে,  আমরা কি ছেড়ে দিবো নাকি?”

বিয়ে বাড়ির সব লোকে জটলা পাকিয়ে ফেলে।

শুভ পুলিশ কে ফোন দেয়,  সবাইকে সব ঘটনা খুলে বলে।  রাকিবের মাধ্যমে ওর মা কেও ধরে ফেলে।

রাকিবের স্বীকারোক্তি  নেওয়ার সময় শুভ উপস্থিত থাকে। প্রচুর টর্চার করার পর রাকিব স্বীকার করে সব।

রাকিব বলে,

__ “ রুবিকে ভালোবেসেছিলাম সত্যিই সম্পত্তির মালিক ভেবে  কিন্তু যখন আম্মা বলে রুবির নামে কোন সম্পত্তি নেই তখন রুবিকে ত্যাগ করি। এরপর জানতে পারি সব কিছু নিরুর নামে।  ওকে ইউজ করার চেষ্টা করেও পারিনি।  কোনভাবে বেঁচে যায়।  পরে বড়লোক মেয়ে দেখে রিমির বান্ধবী কে পটিয়ে ওর নাম্বার নিয়ে ওর সাথে প্রেম করি।  পরে জানতে পারি নিরুর ননদ রিমি।  এক সাথে বড়লোক হবার স্বপ্নে আমি বিভোর হয়ে পাপের পর পাপ করতে থাকি।  ”

রাকিব এর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কোর্ট এ ওর ফাঁসির আদেশ হয়ে যায়,  ওর মা খুনের অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এতো কিছু জানার পর চয়ন একটু রাগ করলেও চয়ন কে নিরু বোঝানোর পর চয়ন ভুল বুঝতে পারে।  রিমি কে মেনে নেয় চয়ন।

সাগর তুরস্কের কোন মেয়েকে যদি পছন্দ হয় তাহলে বিয়ে করবে না ইচ্ছে হলে বিয়ে করবেনা এটা সম্পুর্ণ সাগরের ইচ্ছের উপর নির্ভর করছে।

শুভ কাজের চাপ সামলাতে না পেরে রিমির অংশ টুকু রিমির নামে করিয়ে দেয়,  এতে চয়ন দেখবে বিজনেস।

শুভ এবার একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারলো।

নিরু শায়ান কে খাওয়াচ্ছে,  এমন সময় শুভ পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে নিরুকে,

__ “ আরে করছো টা কি?  বাবুর ক্ষিদে পেয়েছে তো। ”

__ “আমার ও খুদা পেয়েছে!  আমি কখন খাবো।  ”

__ “ হিংসুটে! ”

শায়ান কে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয় নিরু,  উল্টো দিকে ঘুরে শুতেই শুভ হ্যাচকা টানে নিরু কে শুভর উপর নিয়ে নেয়।

__ “ কি মহাশয়,  এতো দিন পর কি রোমান্স উথলে উঠেছে নাকি!”

__ “ হুমম ”

শুভ নিরুর কপালে চুমু দিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়।

( সমাপ্ত)

#বিঃদ্রঃ জানিনা কেমন হলো ,  এটা আমার লিখা তৃতীয় উপন্যাস। আসলে আমি লিখালিখি শুরু করেছি শখের বসে। কেমন করে লিখতে হয় নিজেও জানিনা। এই লিখা শুরুর পর অনেকের কটু কথা শুনেছি।  সেগুলো উহ্য করে আপনাদের ভালোবাসা নিয়ে লিখায় মন দিতাম।  লিখালিখি শুরুর পর আপনাদের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি।  খুব ভালো লাগতো তখন।  কিন্তু কাজের চাপে নিয়মিত ভাবে পর্ব গুলো দিতে পারিনি। তাই খুব খুব দুঃখিত।  তাছাড়া এগুলো প্রথম প্রথম লিখা তাই ভুল ত্রুটি থাকতেই পারে।  সেইজন্য ক্ষমা করে দিবেন।  আর এই উপন্যাস টা কেমন হলো অবশ্যই জানাবেন।

প্রেমেরপরশ  পার্ট_30

0

প্রেমেরপরশ 

পার্ট_30

জামিয়া_পারভীন

ডক্টর এর কথা শুনে শুভর মাথা খারাপ হয়ে যায়,  মাথায় হাত দিয়ে কিছুক্ষণ বসে পড়ে।  এতো কেয়ার করার পরও কিভাবে বেবির ঠান্ডা লাগতে পারে শুভর মাথায় আসে না।  হটাৎ করে শুভর মাথা কাজ করে,  কাছে থাকা ল্যাপটপ অন করে।  যা দেখে শুভর রাগ আরোও বেড়ে যায়।  মানুষ খারাপ হলে যে এতো খারাপ হতে পারে শুভর তা জানা ছিলো না।

বেবির ঠান্ডা লেগে নিউমোনিয়া হয়েছে শুনে নিরু ফুঁপিয়ে কাঁদছে।  শুভ নিরুর  মাথায়  হাত দিয়ে বলে,

__ “ যা হয়েছে হয়েছে,  এখন আল্লাহর কাছে দোয়া করো যেনো আমাদের বাচ্চা সুস্থ হয়ে উঠে।  ”

__ “ এমন পরিস্থিতি তে তুমি কিভাবে এতো শান্ত আছো শুভ।  ”

__ “ কারণ সন্তান আল্লাহ দিয়েছে,  বাবুর যদি কিছু হয় সেটাও হবে উনার ইচ্ছে।  আমাদের ভেঙে পড়লে চলবে না নিরু।  ”

শুভ ভিডিও ফুটেজ সবার সামনে ওপেন করে,  ভিডিও তে দেখা যাচ্ছে,

গভীর রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে আছে,  সামিহা ওয়াশরুমে যায়।  তাও পা টিপে টিপে।  সামিহার বুক ধক করে উঠে।  সামিহা ভাবতেও পারেনি এই ঘরে সিসিটিভি ক্যামেরা আছে।  হার্টবিট বেড়ে গেছে সামিহার।  এরপর দেখা যাচ্ছে,  সামিহা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে কেবিনে এসে বেবির বুকের উপর পানি দিয়ে দেয়।  শুভ ঘুমিয়ে থাকা তে কিছুই বুঝতে পারেনি।  এরপর খুব আস্তে আস্তে সামিহা বেবির উপর বাতাস করতে থাকে।  বাতাস যেনো শুভ বা নিরুর কাছে না যায় সেভাবেই করছে।

আর এই জন্যই সদ্যোজাত শিশুর এক রাতে বুকে ঠান্ডা জমে নিউমোনিয়া হয়ে গেল।  সাগর আর ওর বাবা মা বোন এই দৃশ্য দেখার পর সাগর সাথে সাথেই সামিহা কে মুখে ডিভোর্স দিয়ে দেয়।  হসপিটালে দায়িত্ব রত মহিলা পুলিশের কাছে দিয়ে দেয় সামিহা কে।  সদ্যোজাত বাচ্চা কে মারতে চাওয়ার অপরাধে সামিহার শাস্তি হয়ে যাবে।

এদিকে শায়ান কে ডক্টর রা NICU তে দিয়ে দেয়।  সেখানে হিট দিয়ে রাখা হয়েছে বাচ্চা কে।  আর বাসার সবাই বাচ্চার জন্য পেরেশানি হয়ে হাটাহাটি করছে,  দোয়া করছে।

দুইদিন পর শায়ানের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। সুখবর শুনার পর নিরুর বাবা আসে মেয়ের কাছে,

__ “ আজ আমি খুব খুশি হয়েছি রে মা,  হোক তোর সৎ মা তবুও তার জ্ঞান ফিরেছে।  তোকে দেখতে চেয়েছে,  প্লিজ না করিস না আর।  ”

__ “ হ্যাঁ বাবা,  আমি যাবো,  আপুর মৃত্যুর পর আমিই তো তোমাদের সন্তান।  মা তো মা ই হয়।  আমি অবশ্যই যাবো।  ”

শুভর দিকে তাকিয়ে নিরু বলে,

__ “ আমাকে একটু উনার কাছে নিয়ে যাবে প্লিজ,  উনার কাছে অনেক কিছুই জানার আছে।  ”

__ “ হুম,  আমারও মনে অনেক প্রশ্ন আছে। ”

খুব সাবধানে নিরুকে বেড থেকে উঠিয়ে লুতফা বেগমের কেবিনে নিয়ে গেলো শুভ।  নিরু গিয়ে দেখে লুতফা বেগম ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে নিরুর দিকে।  হয়তো তার চোখ দুটো নিরুকেই খুঁজছিলো এতক্ষণ।  এখন যেনো নিরুকে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছে লুতফা বেগম।

নিরু পাশে গিয়ে বসতেই লুতফা বেগম বলেন,

__ “ তোর বাবা বলেছে,  আমার মেয়েটা আর বেঁচে নেই রে। তখন থেকেই তোর সাথে কথা বলার জন্য খুব ছটফট করেছি। তোকে অনেক কিছু বলার আছে।  মন দিয়ে শুনবি আর কিছুই বলবি না।  ”

__ “ হ্যাঁ আম্মু বলো,  তোমার কাছে এই কথা শুনার জন্যই এসেছি।  ”

লুতফা চোখ বন্ধ করে দুই মিনিট থাকলেন এরপর বলতে লাগলেন,

__ “ জানিস মা,  প্রত্যেক মেয়েই চাই তার হাজবেন্ড তাকে ভালোবাসুক।  স্বভাবতই আমিও চেয়েছিলাম আমার হাজবেন্ড এর কাছে ভালোবাসা।  বুঝতে পারিনি কখনো যে উনি আমার না।  উনি অন্য কাউকে ভালোবাসেন কিন্তু আমাকে ঠকিয়েছেন উনি।  ”

লুতফা বেগম কাঁদছেন,  নিরু তখন বলে

__ “ হ্যাঁ আম্মু আমি জানি,  এরপর কি বলবেন বলেন। ”

লুতফা বেগম আবার বলতে লাগলেন,

__ “ যখন তোর মা কে নিয়ে উনি খুব সুখে থাকতে শুরু করেন,  আমি খুব জ্বলতাম। উনি আমাকে স্ত্রীর মর্যাদা যদি নাই দিতে পারবে কেনো বিয়ে করেছিলো,  কেনোই বা আমার কাছে এসেছিলো।  এসব ভাবতাম আর কান্না করতাম সব সময়।  যখন শুনলাম তুই পৃথিবী তে আসতে চলেছিস,  আমার মনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।  আর ক্ষোভে বাতাস দিতে থাকে আমার ননদ।  সে সব সময় উল্টো পাল্টা বুঝাতো আমাকে।  আমিও ওর কথাতে রাজি হয়ে যায়।  ও আমাকে বুঝায়,  তোকে আর তোর মাকে মেরে ফেলতে পারলে সব সম্পত্তি হবে আমাদের। আর তোর বাবা তো আমাকে ভালোই বাসে না।  তাই উনার জন্য কোন আক্ষেপ হতো না। ”

লুতফা বেগম একটু থামলেন,  তখন নিরু বললো,

__ “ আচ্ছা আম্মু,  বুঝলাম আব্বু তোমায় ভালোবাসে না। কিন্তু এটা কি ভেবে দেখেছিলে,  সে তোমার প্রতি দায়িত্ব বোধ করেই কিন্তু তোমাকে আমাদের বাসায় নিয়ে গিয়েছিলো।  আব্বু চাইলে তোমাকে ডিভোর্স দিতেও পারতো।  তা করেনি,  তোমাকে পরিচয় হয়তো দিতে পারেনি আমার মায়ের সামনে।  কিন্তু তোমার থাকা খাওয়া সব ব্যবস্থা ই কিন্তু করে দিয়েছিলো।  এগুলো তুমি ভাবোই নি,  শুধুমাত্র লোভে পড়ে আজ…. ”

নিরু থেমে যেতেই লুতফা বেগম বলেন,

__ “ ভুল করেছি রে মা, লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু।  এই কথা টা ভুলেই গিয়েছিলাম।  তাই আজ এই অবস্থা।  সেদিন তোর মায়ের কেবিনে আপা ঢুকে বালিশ চাপা দেয় তোর মাকে।  তোকেও হয়তো মেরে ফেলতো।  কিন্তু তোর বাবা চলে আসে,  যখন তোর মায়ের মুখ থেকে বালিশ সরাতে যায় তখন আমি ছবি তুলে নিই। পুরো কাজ দুজন মিলে করেছিলাম।  এর শাস্তি আমি পেয়েছি,  আমার মেয়েটা কে হারিয়ে। আমি জানতাম রাকিব ওর ক্ষতি করেছে,  কিন্তু কিছুই বলতে পারিনি।  নিজ মেয়ের এতো বড় ক্ষতির পরও আমি রাকিব বা ওর মায়ের সাথে মিশেছি।  কারণ লোভ ছিলো নিরু কে যেখান থেকে পারি খুঁজে বের করা।  আর হত্যা করা। এতে সব সম্পত্তি আসবে আমাদের হাতে।  লোভে লোভে এতো নিচে নেমে গিয়েছিলাম।  আমার মেয়েটাকে তোর বিরুদ্ধে নিয়ে গিয়েছিলাম।  দেখ মা আমি যতো অন্যায় করেছি তার শাস্তি পৃথিবী তে পেয়ে গেছি৷   রাকিব আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলো।  জানিনা কতদিন এখানে শুয়ে আছি।  ”

খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছে লুতফা বেগমের।  জ্ঞান ফিরে এই কথা গুলো বলে এক ঘন্টার মধ্যে আবার ও জ্ঞান হারান। নিরু সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছে ।এখন শুধু রাকিব কে পেয়ে গেলেই হয়।  নিরু উঠে যায়,  শুভ ধরে ধরে নিয়ে আসে নিরুর কেবিনে।

কয়েকদিন হসপিটাল এ থেকে শায়ান কে পুরো পুরি সুস্থ করে বাসায় ফিরে আসে নিরু আর শুভ। বাসায় এসেই দেখে সাগর বের হচ্ছে লাগেজ নিয়ে। সাগর কে শুভ জিজ্ঞেস করে,

__ “ আমরা বাসায় আসতেই কোথায় চলে যাচ্ছিস! ”

__ “ তোরা ভালো থাকিস,  আমি তুরস্ক চলে যাচ্ছি।  সেখানে নতুন যে বিজনেস টা ওপেন করেছি সেটা হ্যান্ডেল করতে চাই।  তাছাড়া লাইফ নতুন করে আবারো শুরু করতে চাই। ”

শুভ কে জড়িয়ে ধরে সাগর কাঁদে অনেক্ষণ।  এরপর শায়ান কে কোলে নেয় সাগর।  কপালে চুমু দিয়ে নিরুর থেকে বিদায় নেয়।  রিমি  এসে সাগর কে জড়িয়ে ধরে,

__ “ ভাইয়া,  আবার কবে আসবে!  খুব মিস করবো তোমায়।  ”

__ “ পাগলী বোন আমার,  আমি ওখানে সেটেল হয়ে যাবো।  চিন্তা করিস না,  ভিডিও কলে প্রায়ই কথা বলবো।  ”

বোনের কাছে বিদায় নিয়ে বাবা মা সবাইকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে অনেক্ষণ।  এরপর বাসা থেকে বেরিয়ে যায়।  শুভ আর রিমি এয়ারপোর্টে গিয়ে বিদায় দিতে আসে সাগর কে।

সাগর চলে যাবার পর রিমির মনে হয় রাকিবের মতো কাউকে দেখলো।  রিমি শুভ কে আস্তে করে বলে,  ফলো করতে থাকে দুজনে।

প্রেমের_পরশ পার্ট_29

0

প্রেমের_পরশ
পার্ট_29
জামিয়া_পারভীন

নিরুর প্রেগন্যান্সির ৯ মাস চলছে, সে শারীরিক ভাবে সুস্থ হলেও মানসিক ভাবে খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। নিরুকে নিয়ে শুভ বড়ই দুশ্চিন্তায় আছে। পরিবারের এই রকম অবস্থা, এর উপর নিরুর মানসিক ভেঙে পড়া শুভর মনে প্রচুর আঘাত আনছে। সিড়ি বেয়ে বারবার উঠানামা করা নিরুর জন্য কষ্ট সাধ্য বলে নিচতলায় থাকছে নিরু আর শুভ। সেইদিন সকালে নিরু মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নিলে শুভ ধরে নেয়।
শুভ নিরু কে জিজ্ঞেস করে,

__ “ কি হয়েছে, খারাপ লাগছে নাকি? ”
__ “ নাহহ মাথা টা এমনিতেই কেনো জানি চক্কর দিয়ে উঠলো, বেডে শুইয়ে দাও, ভালো লাগবে হয়তো। ”

নিরুকে শুইয়ে দিয়ে শুভ নিরুর জন্য স্যুপ নিয়ে আসে। মানসিক দুর্বলতা কাটতে শুভ নিরুর সাথে গল্প করে বেশি। রাজা রাণীর রুপকথার গল্প শুনায় নিরুকে। নিরু এগুলো আগে কখনো শুনেছি, এতিমখানা তে কেই বা গল্প শুনাবে। শুভর কাছে গল্প শুনে আর রুপকথার রাজ্যে ভাসে নিরু। একদিন গল্প শেষ করতেই নিরু শুভকে জিজ্ঞেস করে,

__ “ আচ্ছা শুভ আমাদের রাজকুমার এর নাম কি হবে শুনি? ”
__ “ রাজকুমার চাই না রাজকুমারী হবে, চাঁদের মতো সুন্দরী রাজকুমারী। অবশ্য তোমার থেকে অল্প কম সুন্দরী হলেও হবে। ”
__ “ কেনো, আমার রাজকুমারী হবে আমার চেয়েও সুন্দরী। আমার মেয়ে বলে কথা। ”
__ “ তোমার চেয়ে বেশি সুন্দরী হলে আবার তোমার আদর কমে যাবে। হাহা,, ”

নিরু রেগে কয়েকটা আস্তে করে কিল দেয় শুভর হাতে। শুভ নিরুকে জড়িয়ে নেয় আলতো করে।
,,,

বাইরে সাগর বসে ছিলো, ওর সাথে ওর বাবা মা কি নিয়ে যেনো তর্ক করছে। শুভ যেতেই থেমে যায় সবাই। শুভ গিয়ে জিজ্ঞেস করে,

__ “ আমি কি আজকাল বাড়িতে নগন্য নাকি , যে আমায় দেখলে কথা বলা থেমে যায়। ”

শুভর মা আমতা আমতা করে বলে,

__ “ ন মানে! তেমন কিছুই না বাবা, ভুল বুঝিস না দয়া করে। ”
__ “ তো কি এমন কথা যে আমায় দেখে থেমে যাওয়া লাগে। ”
__ “ আসলে, বলছিলাম যে, রুবি মারা যাওয়া একমাস পার হয়ে গেলো। বাসায় আসলেই একা একা বসে থাকে, ও যদি আবার বিয়ে করে সংসার করে। মায়ের মন বলে কথা, তোরা ছেলেরা কেনো যে বুঝিস না। ”

তখন সাগর মায়ের কথার প্রতিউত্তরে বলে,

__ “ আম্মু, বিয়ে যদি করার ই হতো, আগেই করে নিতাম। আমি রুবির স্মৃতি ভুলতে চাইনা। ”
__ “ রুবি তোকে বিয়ের জন্য বলতো, কারণ ও চাইছিলো তুই বাবা হতে পারিস। এখন যদি তুই বিয়ে না করিস রুবির আত্মা শান্তি পাবেনা। ”
__ “ ওকে ফাইন, আমি বিয়ে করবো। কিন্তু রুবির সাথে স্মৃতি ঘেরা শহরে আমি থাকতে পারবোনা। বিয়ের পর বিদেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিও তাহলে। কিন্তু বাইরে যাওয়ার নিউজ যেনো ফাঁস না হয়। ”

শুভ জিজ্ঞেস করে,

__ “ মেয়েটা কে? যার সাথে বিয়ে দিতে চাচ্ছো! ”

শুভর আম্মু চাই সাগর সামিহা কে বিয়ে করুক, কারণ ছোট বোন আবদার করেছে বোনের ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিবে। শুভ এই কথা শুনে রাগ করে চলে যায় নিজের ঘরে।

দুইদিন এর মাঝেই সাগরের সাথে সামিহার বিয়ে দিয়ে দেয় ঘরোয়া ভাবেই, আর বিয়ের দিন রাতেই নিরুর পেইন উঠে। নিরুর চিৎকারে বিয়ে বাড়ির সবাই নিরুকে নিয়ে হসপিটালে পৌঁছে। চার ঘন্টা পর নিরুর নরমাল ডেলিভারী তে ছেলে হয়। শুভ পুরো সময় টা নিরুকে পাহারা দিচ্ছে, যেনো ভুলেও কেউ নিরুর বা বেবির ক্ষতি করতে না পারে। একজন নার্স বেবি কে এনে প্রথমে শুভর কোলে দেয়, শুভ প্রথমে বেবি কে কোলে নিয়ে জোরে করে আযান দেয়। এরপর বাচ্চাকে মায়ের হাতে দিয়ে কেয়ার করতে বলে। নিরু অজ্ঞান ছিলো, তাও শুভ নিরুর পাশে গিয়ে বসে। নিরুর পেটে হাত বুলিয়ে দেয় আলতো করে । কপালে চুমু দিয়ে কেবিনের বাইরে আসে। বেবি কে শুভর আম্মু কোলে নিয়ে বসে ছিলো।

শুভ মায়ের কাঁধে মাথা রেখে বলে,
__ “ আম্মু দোয়া করো, মা আর ছেলে দুজনেই যেনো ভালো থাকে। আমি যেনো আমার সন্তান কে তোমাদের মতো করে যত্ন নিয়ে বড় করতে পারি। ”
__ “ সব সময় দোয়া করি বাবা। ” শুভর মা শুভর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

সাগর সামিহা কে নিয়ে শুভর সামনে আসে। খুব নরমাল ভাবেই সাগর শুভর ছেলে কে কোলে নিয়ে কাঁদতে থাকে। এটা যদিও খুশির কান্না কিন্তু সাগরের খুব মনে পড়ছিলো রুবির কথা। সাগর শুভ কে বলেই ফেলে,

__ “ জানিস শুভ, আজ যদি রুবির এক্সিডেন্ট না হতো, তাহলে আমারও সংসার টা হয়তো ভেঙে যেতো না। ”
__ “ মন খারাপ করিস না ভাই, অতীত ভুলে গিয়ে বর্তমান নিয়ে নতুন ভাবে শুরু কর। দেখ খুব সুখে থাকবি, আর তোর ও আবার সুখের সংসার হবে দেখিস। সামিহা আছে তো, ওকে নিয়ে সুখেই থাকবি তুই। ”

বেবি কে শুভর বাবা কোলে নেয়। সবার মুখেই আনন্দর ছোঁয়া কিন্তু একজন এর মুখে ভার, সেটা সামিহা!। খুব শখ ছিলো শুভর স্ত্রী হবে কিন্তু কিনা ওর মা ওকে সাগরের সাথে বিয়েতে বাধ্য করে। সামিহা ওর মায়ের কথায় বাধ্য মেয়ের মতো বিয়ে করে নেয়। শুভর ছেলেকে দেখে হিংসা হচ্ছে খুব ওর। তারপরও সবার সাথে ভালো বিহেভ করতে হচ্ছে তার।

শুভ নিরুর জ্ঞান ফেরার পর নিরুর পাশে গিয়ে বসে, নিরু বলে,
__ “ দেখেছো আমার ছেলেকে। ”

__ “ হুমম ”

__ “ তোমার মতো হয়েছে তাইনা! ”

__ “ আব্বু তো বলছে আমার মতো আর আম্মু বলছে তোমার মতো। আমি তো ভাবি আমাদের ছেলে দুজনের মতই হয়েছে। ”

নিরু তখন বলে,
__ “ এই! শোনোনা! আমাদের ছেলের নাম কি রাখবে গো? ”

__ “ চাঁদের মত সুন্দর ছেলের নাম ঠিক করবে আমার বউ, কারণ এই অধিকার তার আছে। ”
__ “ তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো তাইনা! আমি জানি! আমরা দুজনে ওর নাম ঠিক করবো। কারণ ও আমাদের দুজনের সন্তান। ”

__ “ শুভর শ আর নিরুর ন দিয়ে আমাদের ছেলের নাম হবে শায়ানুজ্জামান শায়ন। কেমন হবে! ”

__ “ খুব ভালো হবে, আমি শায়ান বলেই ডাকবো আজ থেকে।”

শায়ান, শায়ান আর শায়ান! নাম শুনতে শুনতে সামিহার মনে বিষ উঠে গেছে। সবাইকে শুভ মিষ্টি খাওয়াচ্ছে আর ফোন দিয়ে শায়ান নাম বলছে শুভ। সে মনে মনে ঠিক করেছিলো শুভর সাথে সংসার হবে, ছেলের নাম রাখবে স্নিগ্ধ। সব গুড়েবালি, শুভর ছেলের নাম নাকি শায়ান। এইটা আবার নাম হলো নাকি। একা একাই বিড়বিড় করতে থাকে সামিহা।

রাতে বেবিকে নার্স দের দায়িত্বে নিতে দেয়না শুভ।

বাচ্চা তার মায়ের পাশেই থাকবে, শুভ নিজেই থাকবে নিরুর কাছে। শুভর মায়ের বয়স অনেক হয়ে গিয়েছে বলে সাগর সামিহা কে থাকতে বলে। শুভ সামিহা কে পছন্দ না করলেও আর নিষেধ করতে পারেনা সবার সামনে। আর রিমি তো থাকবেই নিরুর পাশে।

শুভ নিরুর পাশে শায়ান কে শুইয়ে পাশে বসে থাকে। আর সামিহা আর রিমি পাশের বেডে শুয়ে পড়ে। রিমি ঘুমিয়ে গেলেও সামিহা জেগেই থাকে।

গভীর রাতে শুভ ও নিরু পাশে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ে। পরদিন বাচ্চার কান্না তে শুভর ঘুম ভাঙে। বেবি খুব কান্নাকাটি করতে থাকে। শুভ থামানোর অনেক চেষ্টা করেও পারেনা। নার্স দের ডেকে বাচ্চা কে দিয়ে দেয়। নার্স রা বলে,

__ “ বাচ্চার ঠান্ডা লেগেছে, নিউমোনিয়া হয়ে গেছে। ”

চলবে……….

প্রেমের_পরশ পার্ট_28

0

প্রেমের_পরশ
পার্ট_28
জামিয়া_পারভীন

সাগর নিরুর হাতে একটা ডায়েরি দেয়। কালো মলাটে বাধানো একটা ডায়েরি। নিরু কে ডায়েরি টা দিয়ে বলে,
__ “ এতে যা লিখা আছে সেটা শুধু পড়বে, এরপর যা মনে হবে আগে আমার সাথে শেয়ার করবে। তারপর তোমার ডিশিসন নিবে। এখন নিজের ঘরে যাও। ”

নিরু চুপচাপ কথা গুলো শুনে নিজের ঘরে চলে আসে। ডায়েরি টা খোলে নিরু, প্রথম পেজে লিখা আছে,

__ “ আমার কৈশোর শুরু ই হয় অন্ধকার দিয়ে, তাই কালো মলাটেই বেঁধে দিলাম ডায়েরি টা। ”

নিরু হোস্টেলে বা এতিমখানা তে থাকার জন্য কিছুই জানতে পারেনি। লিখাটা পড়ে বেশ হতাশ হয়ে মনে মনে বলে, “ কি এমন হয়েছিলো আপুর! এসব কি চিন্তা করছি! ডায়েরি টা পড়েই জেনে নিই। ”

পরের পেজ উল্টায় নিরু, সেখানে লিখা আছে,
“ ছোট বেলা থেকেই আমার একমাত্র খেলার সাথী ছিলো রাকিব, সব সময় দুজনে মিলে দুষ্টুমি তে মাতিয়ে রাখতাম পুরো বাড়ি। তখন কেবল ১৫ তে পা দিয়েছি, আর রাকিব এর ২০। একদিন রাকিব এসে বলে, সে নাকি আমার ভালোবেসে ফেলেছে। আমি বলি, ভালোবাসা আবার কি জিনিস!। এরপর একেক দিন একেক রকম করে বুঝাতো। একদিন একটা গোলাপ দেয়, আমি নিয়ে নিই। তখন সে বলে, অবশেষে আমার প্রপোজাল গ্রহণ করলে। আমি তখন ও বুঝিনি, এসবের মানে কি? তারপরও বেশ ভালোই কথা বলতাম ওর সাথে। জানিনা এটা প্রেম কিনা ওর সাথে রাগ করে থাকতে পারতাম না। সে যেনো আমার নেশার মতো হয়ে গিয়েছিলো। আম্মু ওকে খুব একটা পছন্দ করতো না, কেনো জানিনা। ”

নিরু খুব অবাক হয়ে যায়, পরের পেজে আবার লিখা আছে,

“ একদিন সন্ধ্যেবেলা টিভি দেখছিলাম পাশাপাশি বসে, মাঝে কিছুটা গ্যাপ ছিলো। আমার সিরিয়াল খুব ভালো লাগতো, সিরিয়ালে একটা সিন এ নায়ক হটাৎ করে নায়িকা কে কিস করে। এই সিন দেখে আমার যেনো একটু লজ্জা লাগে। পরে রাকিব হটাৎ করে আমার ঠোঁট যুগল তার আয়ত্ত্বে হয়ে নেয়। আমি প্রথমে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেও পরে আর করিনি। অসম্ভব ভালোলাগা কাজ করছিলো আমার ভিতর। ”

ডায়েরি তে এমন কিছু লিখা থাকবে নিরু সত্যিই আশা করে নি। নিরুর দুই চোখ দিয়ে পানি পড়ছে । তাও পরে পেজ উল্টায় নিরু,

“ একই বাসায় থাকতাম বিধায় ওর সাথে প্রায়ই দেখা হতো, সে যখনই সুযোগ পেতো আমার শরীর স্পর্শ করতো। ধীরে ধীরে সে আমার কাছে অনেক কিছু চাইতে থাকে ।আমি তাকে দিতে নারাজ হই। আমি বুঝে গিয়েছিলাম সে আমার শরীর টা কেই চায় শুধু। সেদিন থেকে একটু দুরত্ব বজায় রেখে চলতাম। সে হয়তো বুঝে গিয়েছিলো আমি তাকে এভয়েড করছি। একদিন আমি আমার রুমে বসে ছিলাম, এস এস সি সামনে। খুব পড়াশোনা ছিলো। পড়ার মাঝে ব্রেক নিচ্ছিলাম। দরজায় নক করে কেও, বাসায় সবাই আছে তাই খুলে দিই৷ দরজা খুলেই রাকিব কে দেখে বলি, সে যেনো চলে যায়। কিন্তু না সে আমাকে জোর করে ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়। দরজা লাগিয়ে দেয়! এরপর বলে, তোমাকে একটা জিনিস দেখিয়েই আমি চলে যাবো। আমি ওর সাথে আর ঝামেলা না করে ওর কাছে যা দেখাতে চাচ্ছে তা দেখতে চাই। ও ওর ল্যাপটপ অন করে, একটা ভিডিও প্লে করে। সেখানে আমার নগ্ন দেহ দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি। চিৎকার করতে গেলে সে আমার মুখ চেপে ধরে। এরপর বলে, যদি চিল্লাই তাহলে এগুলো ছবি সবাইকে দেখিয়ে দিবে। এরপর বলে, আমি যখন স্কুলে গিয়েছিলাম তখন সে আমার ওয়াশরুমে আর রুমে গোপন ক্যামেরা সেট করে এইসব ভিডিও করেছে। ওর গালে একটা চড় বসিয়ে দিই। ”

নিরুর চোখের পানি তে ডায়েরি অনেকটা ভিজে গেছে, কোনরকম চোখের পানি মুছে ফেলে।
পরের পেজে যায়,

__ “ রাকিব আমায় বলে, যদি চিললাই বা কাউকে বলি তাহলে এই সব ভিডিও ওর ফ্রেন্ড ফাঁস করে দিবে। এরপর আমি কুকড়িয়ে যায় ভয়ে, সে আমার সাথে ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করে। আমার জীবনের সব চেয়ে অন্ধকার ময় রাত ছিলো সেদিন। ওর অত্যাচার এ আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। এরপর থেকে প্রায়ই প্রতিদিন রাতে আমার উপর তার চাহিদা পূরন করতো । ২ মাস এভাবে চলার পর আমি প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমি এই যন্ত্রনা থেকে না পারছিলাম বাঁচতে না পারছিলাম মরতে। আমার অসুস্থতা নিয়ে আম্মু ডক্টর এর কাছে নিয়ে যায় ।অনেক গুলো পরীক্ষায় জানতে পারে আমি প্রেগন্যান্ট। সেদিন আম্মু আমায় অনেক মারে। আমার কাছে জানতেও চায়নি কি হয়েছিলো। ”

নিরু মনে মনে বলে, “এতো অন্যায় হয়েছে তোমার সাথে আপু। এই সব কিছুর বদলা আমি নিবো। ”
ডায়েরির কয়েক পেজ ফাঁকা, এরপর আবার লিখা,

“ আমি মার খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলাম, পরে আম্মু আমায় জড়িয়ে ধরে কাঁদে অনেক। আমি রেপ এর কথা বলতে পারলেও রাকিবের ভয়ে ওর নাম নিতে পারিনি। পরের দিন সুযোগ পেয়ে রাকিবের কাছে ওর সন্তানের স্বীকৃতি চাই, তখন সে বলে, এই সন্তান তার হতেই পারেনা। আমি বাজে মেয়ে তাই এই সন্তান এসেছে। এই দুই মাসে কম পক্ষে ২০ টা ভিডিও সে করেছে, সব গুলো সব আত্মীয় স্বজনের কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার ভয় দেখায়। আমি চুপসে যায়, খুব ইচ্ছে করছিলো আত্মহত্যা করতে। আম্মু এসে বাঁচিয়ে দেয়। একটা হসপিটাল এ নিয়ে যায়, শহরের বাইরের হসপিটাল। কারণ শহরের ভিতর আমাদের পরিচিতি আছে অনেক। এবোরশন করানোর সময় ডক্টর ভুল করে ফেলে। খোঁচা লাগে ইউটেরাস ওয়ালে । প্রচুর ব্লিডিং শুরু হয়, তখন আম্মুর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে ডক্টর আমার ইউটেরাস কেটে ফেলে। পরে ঘটনা আব্বু ও জেনে যায়। আমি পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলি। দীর্ঘ ৬ মাস চিকিৎসার পর আমি সুস্থ হই। এরপর এক বছর ইয়ার লস দিয়ে এস এস সি দিই। আম্মুর অনুপ্রেরণা তে আমি আবারও হয়তো আরো সুস্থ হয়েছিলাম কিন্তু ইউটেরাস কেটে ফেলার ঘটনা জানতে পারিনি। ”

বোনের জীবনে এতো ঘটনা দেখে নিরু হতবাক হয়ে গেছে এক প্রকার, ডায়েরি অফ করে দিয়ে সাগরের ঘরে ছুটে আসে। মেঝেতে বসে পড়ে,

“ ভাইয়া,,,,,,,,” বলে সাউন্ড করে কাঁদতে শুরু করে। সাগর বলে নিরু কে,

__ “ তুমি প্লিজ শান্ত হও, ডায়েরি তে কতো টুকু পড়েছো আমি জানিনা, কিন্তু এখন তুমি বেশি কান্নাকাটি করলে নতুন অতিথি এর ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। ”

নিরু নিজেকে শান্ত করে প্রথমে, এরপর বলে,

__ “ তাহলে আপনি ওই খুনী কে শাস্তি দিবেন কথা দিন, তাহলেই শান্ত হতে পারবো আমি। ”

__ “ হুমম দিবো শাস্তি, ওর ঘটনা আমি কিছুদিন আগেই জেনেছি। কিন্তু কিছু করার আগেই মেয়েটা অভিমান করে আমায় ছেড়ে চলে গেল। আর চুপ করে থাকতে পারিনা আমি। সব কিছুর শাস্তি পাবে তোমার ফুপু আর তার ছেলে। ”

__ “ মানে, ফুপিও এর সাথে জড়িত! ”

__ “ হুমম”

এরপর সাগর বলে,

__ “ রুবি কে আমি কলেজে প্রথম দেখি, আমি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার আর সে ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়। খুব সুন্দরী, মায়াবতী ছিলো। কিন্তু সব সময় বিষন্ন থাকতো। এই বিষন্নতার কারণ জানার আগ্রহ আমার মাঝে চেপে বসেছিলো। সাহস পাইনি কিছু বলার, প্রতিদিন ওকে দেখার জন্যই শুধুমাত্র কলেজে যেতাম। এভাবে একটা বছর পেরিয়ে যায়, আমি এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে অই কলেজে অনার্স ভর্তি হয়ে যায় শুধুমাত্র রুবির টানে। লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম আর বাসায় এসে ওকে কল্পনা করে সুখের রাজ্যে ভাসতাম। একদিন কলেজে রুবি আমার সামনে এসে দাঁড়ায়,

এরপর বলে,

“ আপনি যা করছেন সেটা ভুলেও আর করবেন না, আমি জানি আপনি আমাকে অনেক পছন্দ করেন কিন্তু আমার অতীত খুব ভয়ংকর, তাই প্লিজ আমার পিছু ছেড়ে দিন। ” কথাটা বলেই চলে যায়।

মেয়েদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় তুখোড় হয় সেদিন বুঝেছিলাম, এরপরও রুবির পিছন আমি ছাড়িনি। সে খুব বিরক্ত হয়ে গেছিলো আমার প্রতি। একদিন একটা খাম আমার হাতে ধরিয়ে দেয়, এরপর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে যায় আবারও। বাসায় এসে ওর চিঠি দেখি। ওর জীবনের করুণ কাহিনী বর্ননা করা। শুধুমাত্র ছেলেটার নাম উল্লেখ ছিলো না। আর ওর মা না হতে পারার কথা ও লিখা ছিলো না । সে অবশ্য তখন জানতো না । তার অতীত মেনে নিতে খুব কষ্ট হয়েছিলো, তাও আমার মনে তার জন্য ভালোবাসা কমে যায়নি। সে শতভাবে বুঝাতো আর আমি তার বিপরীতে যুক্তি দিতাম। পরে বুঝতাম আমার উপস্থিতি ওর জন্য বিরক্তিকর নয়। বুঝলাম সেও হয়তো ভালোবেসে ফেলেছে। ”

দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে সাগর, নিরু তখন বলে,

__ “ এরপর কি হয়েছিলো! ”

__ “ সেও ওই কলেজে ই অনার্স ভর্তি হয়ে যায়। দীর্ঘ তিন বছর পর সে আমার প্রেমে পড়ে। এরপর এক বছর চুটিয়ে প্রেম করে ওর বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দিই। প্রথমে ওর মা রাজি না হলেও পরে রাজি হয়ে যায়। এরপর তো সব কিছুই জানো। ওর মা অসুস্থ হবার পর ওর মায়ের ঘরে ওর পুরনো রিপোর্ট গুলো দেখে, ওর সন্তান হবে না। এরপর যখন তোমার সুসংবাদ পায়। ও খুব ভেঙে পড়ে। এরপর রোজ কান্নাকাটি করতে থাকে। ওকে বুঝাতে বুঝাতে আমি ক্লান্ত হয়ে যায়, মাস খানেক আগে আবদার করে আরেকটি বিয়ে করার জন্য। আমি নারাজ হই। এরপর এই নিয়ে প্রতিদিন ঝগড়া করতো আমার সাথে। আর সেদিন ঝগড়া করে কথা বলিনি। পরে দেখি ও আর নেই।

খুব ভালোবাসতাম ওকে আমি, বাচ্চা হবেনা তো কি হয়েছে, তোমার তো আছে নিরু। তোমার সন্তান কেই না হয় আদর করতাম। পারিনি ওকে বুঝাতে আমি। নিজেকে শেষ করে দিলো। আমাকে একা কষ্টের সাগরে ডুবিয়ে দিয়ে চলে গেলো৷ ”

__ “ আসলে মেয়েদের জীবনের সুখ টা ই হয়তো মাতৃত্ব তে, আপু যখন জেনেছে তার অতীত তখন মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু যা করেছে খুব ভুল করে ফেলেছে। আমি অই ভন্ড টাকে শাস্তি দিবোই। নইলে শান্তি পাবোনা কখনো। ”

চলবে……..

প্রেমের_পরশ পার্ট_27

0

প্রেমের_পরশ
পার্ট_27
জামিয়া_পারভীন

নিরু বেডে শুয়ে আছে , তখন শুভ নিরুর পেটে কান পাতে, বেবির হাত পা ছোড়া গুলো অনুভব করে। এরপর নিরুকে বলে,
__ “ দেখিও মেয়ে বেবি হবে! হাত পা বেশি ছুড়ছে না , মেয়েরা খুব শান্ত হয় তো তাই। ”

__ “ দেখিও ছেলে বাবু হবে, আমার বেবি আমার মতোই শান্ত হবে। তাই জ্বালাচ্ছে কম, বুঝলে বুদ্ধু!! ”

__ “ মনে হচ্ছে আমি খুব জ্বালিয়েছি, আমি কি শান্ত নই!!”

__ “ তুমি তো রাগী, বদমেজাজি, দুষ্টু, ” এরপর খিলখিলিয়ে হাসে নিরু।

শুভ শুধু নিরুর মাথায় একটা টোকা দেয়, এরপর বলে,

__ “ পাজি মেয়ে, লক্ষ্মী বউ। ”
দুজনেই হেসে ঘুমিয়ে পড়ে।

সকালে ঘুম থেকে দেরি করে উঠে নিরু, ফ্রেশ হয়ে বাইরে যাবার সময় রুবির ঘর থেকে কান্নার আওয়াজ পায় নিরু। ঘরে উঁকি দিয়ে দেখে রুবি বেডে উল্টো দিকে শুয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে । শুভর ডাকে নিরু নিচে নেমে আসে, কারণ শুভ ব্রেকফাস্ট এর টেবিলে, নিরুকে ছাড়া খাবে না সেই জন্য। নিরু নিচে এসে নাস্তা করে নেয়, ঔষধ ঠিক মতো খাইয়ে শুভ অফিসে যায়। খুব যত্ন করে নিরুকে, যেনো নিরুর বা বেবির কোনরকম ক্ষতি না হয়।

শুভ অফিসে বেরিয়ে গেলে নিরু আবারও রুবির রুমের সামনে যায়, রুবি এখনও আগের মত করে কাঁদছে। নিরুর অবুঝমন রুবির জন্য কেঁদে উঠে। রুমে গিয়ে রুবির মাথায় হাত রাখতে রুবি চমকে উঠে। উঠে বসে বলে,

__ “ তুই কখন এলি হটাৎ!”
__ “ কাঁদছো কেনো? সাগর ভাই কিছু বলেছে নাকি? ”

__ “ তোকে বলতে পারবোনা এর কারণ, আমি কিছুতেই বলতে পারবোনা। তুই দয়া করে এখন যা, আমাকে একা থাকতে দে প্লিজ। ”

নিরু বুঝতে পারেনা কি হয়েছে, রুবি কে দেখতে কেমন যেনো লাগে ইদানিং। আগের মতো নেই, শুকিয়ে যাচ্ছে। ফেস খারাপ হয়ে যাচ্ছে, চোখের নিচে কালি পড়েছে। নিরু ঠিক করে এই ব্যাপারে সাগরের সাথে কথা বলবে।

নিরু সন্ধ্যা থেকেই সাগর কখন আসবে তার অপেক্ষা করছিলো, শুভ কয়েকবার জিজ্ঞেস করার পরও নিরু কিছুই বলেনি শুভ কে। নিরু প্রায়ই কয়েক মাস থেকে খেয়াল করেছে রুবির একা একা ফুঁপিয়ে কাঁদা কিন্তু কখনো কাউকে কিছুই বলেনি। আজ সাগর রাত প্রায়ই ১০ টাই বাসায় আসে। ইদানিং সাগর বেশ দেরি করে বাসায় আসে। কারণ নিরু জানে না, কেউই জানে না। সাগর রুমে আসতেই নিরু বলে,

__ “ ভাইয়া, যদি আপনার একটু সময় হতো! তাহলে কিছু কথা বলতাম। ”

__ “ হ্যাঁ বলো, তাড়াতাড়ি। ”

__ “ আসলে রুবি আপা…”

সাগর নিরুকে থামিয়ে দিয়ে বলে,

__ “ এই ব্যাপারে আমি তোমায় কিছুই বলতে চাচ্ছিনা, এখন তুমি আসতে পারো। ”

বলেই সাগর চলে যায় নিজের ঘরে। সাগর নিজের ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে ডিনার সেরে নেয় প্রথমে। এরপর আবারও ঘরে যায়, গিয়ে দেখে রুবি শুয়ে আছে। বালিশ নিয়ে সোফায় গিয়ে শোয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে রুবির একইভাবে শোয়া দেখে সন্দেহ হয়। গিয়ে ধাক্কা দিতেই রুবি গড়িয়ে পড়ে যায়। হাত শীতল হয়ে গেছে। সাগর কিছুক্ষণ রুবির দিকে তাকিয়ে থাকে, এরপর রুবির পাশে গিয়ে বসে শক্ত করে ধরে। বিকট চিৎকার দেয় সাগর।

সবাই হটাৎ চিৎকারে সাগরের ঘরে গিয়ে দেখে সাগর রুবি কে জড়িয়ে থ হয়ে বসে আছে। রুবির মুখ থেকে ফেনা বেরিয়ে এসেছে। নিরু কিছুক্ষণ রুবির দিকে তাকিয়ে থেকে রুবির পাশে গিয়ে বসে আপু বলে ডুকরে কেঁদে উঠে। বাসার সবাই এমন ঘটনায় হতবাক হয়ে গেছে।

শুভর মা সাগরের মাথায় হাত রেখে বলেন,
__ “ জানিনা বাবা কেনো এমন হলো, এবার উঠে আয়! ওভাবে ধরে রাখলে যে লাশ কষ্ট পাবে। ”

সাগর কোন কথা বলেনা আর, সবাইকে খবর দেয়া হয়। আত্মীয় স্বজনের উপস্থিতি তে বাসা ভরে যায়। আত্মহত্যা পুলিশ কেশ হলেও রুবির বাবা লাশ পুলিশের হাতে দেয় না। কোন কেশ না করেই দাফন করে দেয়া হয় রুবিকে সেদিন সন্ধ্যায়।

সাগর অনেকটা পাথর হয়ে যায়, রুবির সব কিছু জেনেই বিয়ে করেছিলো রুবি কে। তাও কেনো রুবি এমন করলো। রুবির ভয়ানক অতীত জেনেও রুবির সাথে খারাপ বিহেভ করা উচিৎ হয়নি সাগরের। অনুশোচনার দহনে সাগর জ্বলছে অনেক।
হারিয়ে বুঝেছি আমি কতো ভালোবাসি,
বুকের বাঁ পাশে বাজে বিশের বাঁশি।
প্রেমের দাবানলে জ্বলছি দিবারাতি,
কেনো চলে গেলে তুমি ওগো প্রিয় সাথী।

জামিয়া

সাগর ঘরের কোণে বসে বিড়বিড় করছিলো এগুলো বলে, ওর মা স্পষ্ট শুনতে পায়। সাগর হটাৎ মা কে দেখে থতমত খেয়ে পড়ে। মা কে জিজ্ঞেস করে,

__ “ ও কেনো এমন করলো আম্মু, আমাকে কি ক্ষমা করা যেতো না। আমি না হয় ভুল করেই ফেলেছি , তাই বলে এভাবে শাস্তি কেনো দিলো ও আমাকে বলোনা!”

সাগরের মা সাবিহা ছেলের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে ছেলের কাঁধে মাথা রেখে কেঁদেই ফেললেন।

__ “ আর কতো কষ্ট পাবি বাবা, তোর মানষিক অশান্তি যে আর সহ্য হয়না রে। অনেক হয়েছে, তুই আরেকটা বিয়ে কর। নিজের জীবন টা নতুন করে শুরু কর। ”

__ “ এমন মুহুর্তে এসব কথা কেমন করে বলছো আম্মু, প্লিজ এসব বলবে না। যদি বিয়ে করতে রাজি হতাম তাহলে রুবি সুইসাইড করতোনা। তাহলে তো বিয়েটা আগে করে নিলেই পারতাম, রুবিও বেঁচে থাকতো, আর আমিও। ”

__ “ কি বলতে চাস তুই? রুবি বেঁচে থাকতে তুই বিয়ে করতিস কেমন করে। ”

__ “ এসব থাক আম্মু, এখন প্লিজ একা ছেড়ে দাও। ”

ওর মা ঘরে থেকে বেরিয়ে যায়।

নিরু ঘরে বসে আছে, ওর বাবার কাঁধে মাথা রেখে। শুভও পাশে আছে, শুভ একটু বাইরে যেতেই নিরু ওর বাবা কে জিজ্ঞেস করে,

__ “ আব্বু, আপু কেনো এমন করলো, বলোনা প্লিজ। ”

__ “ আ আ আ মি কিছু জানি ই ই না আ আ। ” খানিকট তোতলিয়ে বলে নিরুর বাবা।

__ “ তুমি সব জানো, শুধু আমাকে লুকাতে চাচ্ছো এটাই। জানো, আপু আমাকে মেনে নেওয়ার পর থেকে আমরা তিনজন কতো আনন্দ করেছি। রিমি আমি আপু তিনজন এ এই বাসা টা কে মাতিয়ে রাখতাম সব সময়। অনাথ হয়ে বড় হলেও, আমি সবাই কে পেয়ে খুব আনন্দিত ছিলাম। কিন্তু আপুর এভাবে সুইসাইড করাটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিনা। ”

__ “ ভুলে যা মা, অতীত মনে করে কষ্ট পেতে হয়না। ভবিষ্যৎ যেনো তোর সুন্দর হয় এই কামনা করি সব সময়। ” নিরুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে নিরুর বাবা।

হটাৎ নিরুর মাথায় প্লান আসে, বলতে গেলে কোন রকম দৌড়ে সাগরের ঘরে যায় নিরু। এরপর সাগর তাকালেই নিরু বলে ওঠে,

__ “ ভাইয়া, আপনি না আপুকে ভালোবাসেন। কেমন ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন যে আপু মরে গেলো। মরেই যদি গেলো তার মৃত্যুর জন্য যে দায়ী তাকে শাস্তি দিবেন না। ”

সাগর একটু রেগে গেলো, রাগের বশে বললো

__ “ রুবির মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী, যাও গিয়ে থানায় ডায়েরি করে আসো। আমি শাস্তি পেতে চাই। ”

__ “ কি বলছেন এসব, বিশ্বাস করিনা আমি। আমি চাই আপনি আসল খুনী কে শাস্তি দিবেন। আপু কষ্ট পেয়ে মরে গেলো, আপনি কষ্ট পাচ্ছেন আর আসল খুনী মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াবে। তার কি বিচার হবে না। ”

চলবে……..

প্রেমের_পরশ পার্ট_26

0

প্রেমের_পরশ
পার্ট_26
#জামিয়া_পারভীন

নিরু শুভ কে ছেড়ে দিয়ে পুলিশ অফিসার এর সামনে গিয়ে বলে,
• “ এক্সকিউজ মি অফিসার।”
অফিসার অবাক হয়ে তাকাতেই নিরু বলে,
• “ আমার হাজবেন্ড সম্পূর্ণ নির্দোষ, ওকে কেনো ধরে এনেছেন। ”
• “ আপনি আপনার হাজবেন্ড এর পক্ষ নিবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু উনি খুন করেছেন, আর মেয়েটা উনার অনাগত সন্তানের মা হতে চলেছিলো। ”
• “ কি প্রমাণ আছে যে ওই মেয়েটার গর্ভের সন্তান আমার হাজবেন্ড এর। ”
• “ একটা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে,,, ”

নিরু অফিসার কে থামিয়ে দিয়ে বলে,

• “ সামান্য ধস্তাধস্তি, এতেই কি প্রমাণ হয়ে যায় শুভ খারাপ কাজ করেছে। ”
• “ দেখুন ম্যাডাম, আপনি যাই বলুন না কেনো! উনাকে লাশের সাথে পাওয়া গিয়েছে। আমরা কি করতে পারি বলুন। ”
• “ আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে, মানবিকতা এখনো বেঁচে আছে। দয়া করে বিষয় টার সঠিক তদন্ত করুন। নইলে একজন নির্দোষ ব্যক্তির ফাঁসির আদেশ হয়ে যাবে। আমার অনাগত সন্তানের জন্য বলছি, প্লিজ আমার সন্তান কে এতিম করবেন না। ”
নিরুর খুব কষ্ট হচ্ছে, চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছে। তখন পুলিশ অফিসার বলেন,

• “ আপনি শান্ত হন প্লিজ, আমরা সব কিছু তদন্ত করে দেখছি। ”

নিরু বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছে, রুবি নিরুকে ধরে বেঞ্চে বসিয়ে দেয় । নিরু রুবির কাঁধে মাথা রেখে বলে,

• “ আমি জন্ম থেকে কি এমন পাপ করেছিলাম আপু, সারাজীবন কি আমাকে কাঁদতেই হবে। আমি কি কখনো সুখ পাবোনা!
• “ শুভ এমন ছেলেই না! বিয়ের আগে থেকে চিনতাম। দেখিস সব ঠিক হয়ে যাবে, কাঁদিস না বোন আমার। ”

নিরুর পাশে সবাই এসে বসে। থানায় বেশিক্ষণ থাকার নিয়ম নেই, তাই শুভর বাবা মা কে পাঠিয়ে দেয় । রুবি সাগর আর নিরু থাকে শুধু।

নিরু আবারো শুভর কাছে গিয়ে প্রশ্ন করে,

• “ শুভ সত্যি করে বলো, তুবা কে কেমন করে চিনতে?”
• “ তুমি কি আমায় আবারোও সন্দেহ করছো!”
• “ নাহহহহ! জানলে তোমাকে মুক্ত করা সুবিধা হতো। ”

শুভ সবার উদ্দেশ্যে বলে,

• “ তুবা একজন অনাথ মেয়ে, জন্ম কোথায় জানেনা সে নিজেও। তিন মাস আগে, তুবার সাথে পরিচয় হয়। ”
কিছুটা দম নিয়ে আবার বলতে শুরু করে,
• “ তুবা আমাকে জানায়, সে একজন পতিতা! কোনভাবে খারাপ কাজ করতে চায় না সেইজন্যেই পালিয়ে আসে সুযোগ পেয়েই। নিরাশ্রয় মেয়ে আশ্রয় চাচ্ছিলো, তখন আমিও একজন মেয়ে খুঁজছিলাম জবের জন্য। অফিসে নিয়োগ দিই, কাজ টা খুব সাধারণ ছিলো। আমার নিরুকে বারবার হত্যা প্লান করা হতো, তাই ঘরে সিসি টিভি ফুটেজ দেখার জন্য কাউকে খুব প্রয়োজন ছিলো। তুবা এতো খারাপ মেয়ে ছিলো না। আর নিরু কে বলাই ছিলো, ঘরে ক্যামেরা আছে। সাবধানে চলতে। তারপরও আমি চাইনি আমার স্ত্রী কে পরপুরুষ দেখুক। তাই মেয়ে কেই কাজে লাগিয়েছিলাম। তার সুবাধার জন্য তাকে এক রুমের বাসা ভাড়া করে দিই। আর একটা ল্যাপটপ দিই। যেনো ঘরে বসেও দেখতে পারে। ”

অফিসার তখন জিজ্ঞেস করেন ,
• “ সবিই তো বুঝলাম, কিন্তু তুবা মারা গেলো কিভাবে? ”

নিরুর বাবা তখন আসেন, আর অফিসারের উদ্দেশ্যে বলেন,

• “ কিছু মনে করবেন না অফিসার, কথার মাঝে কথা বলছি! আসলে তুবা মেয়েটাকে আমিও চিনতাম। আমার মেয়ের নিরাপত্তার জন্যই আমি আর আমার জামাই সব কিছু করতে রাজি ছিলাম। কিন্তু বুঝতে পারিনি তুবা আমার জামাই কে ফাঁসিয়ে দিবে। ”

অফিসার তখন জিজ্ঞেস করেন,
• “ যা বলার স্পষ্ট করে বলুন! ”

নিরুর বাবা বলেন,

• “ আমার সন্দেহ হয় একজন কে, তাকে দয়া করে আটক করুন। ৷ সব কিছুই সে বলে দিতে পারবে। ”
• কাকে?
• “ আমার একমাত্র বোন আর তার ছেলে এই সব কিছুর পিছনে দায়ী। ”

এরপর নিরু বাবা, তার স্ত্রীর উপর হামলা সহ সব ঘটনা খুলে বলে।

সন্ধ্যার পর রিপোর্ট আসে মর্গ থেকে, তুবার হত্যার আগে তাকে রেপ করা হয়। আর স্যাম্পল এ অনেকজনের স্পার্ম পাওয়া গেছে। আর গর্ভের সন্তানের সাথে শুভর DNA টেস্ট নেগেটিভ। পুলিশ অফিসার শুভ কে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। সঠিক তদন্ত করবেন বলে আশা দেখান।

নিরুর বাবার কথা অনুযায়ী রাকিব কে খুঁজতে গিয়ে পেরেশান হয়ে যাচ্ছে পুলিশ। রাকিব গাঁ ঢাকা দিয়েছে।

রাত্রে শুভ বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে ডিনার করে নেয়। খুব ক্লান্ত থাকায় খুব সহজেই ঘুমিয়ে পড়ে, নিরু শুভর বুকে মাথা দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছে। হটাৎ শুভ স্বপ্ন দেখে চিৎকার করে। নিরু দেখে শুভর চোখে পানি, তখন জিজ্ঞেস করে,

• “ কিসে এতো ভয় পেলে, আমি আছি তো। ভয় পেয়ো না! ”

শুভ নিরুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে। পুরুষ মানুষ সহজে কাঁদে না, যখন সহ্য ক্ষমতা পার হয়ে যায়। তখন নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা। নিরুর শান্তনা দেয়ার ভাষা যেনো হারিয়ে গেছে। শুভর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় নিরু, আর বলে,
• “ প্লিজ শান্তু হও! আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, আমি খুব বড় অন্যায় করে ফেলেছি। ”

শুভ তখন বলে,
• “ তুবার সাথে গত পরশুদিন আমার ঝামেলা হয়েছিলো, কেনো জানি মনে হচ্ছিলো তুবা আমার সাথে শত্রুতা করতে চাচ্ছে। সন্দেহ লাগাতে ওকে ফলো করি, সে সামিহার সাথে মিট করে। পরে সেখানে রাকিব ও আসে। আমি ওদের কাছে গিয়ে ওদের ধরতে চেয়েছিলাম কিন্তু তার আগেই তিনজন তিন দিকে আড়াল হয়ে পড়ে। চোখের পলকে আড়াল হয়ে যায়, সন্দেহ আরোও বেড়ে যায়। পরে তুবাকে দেয়া রুমের সামনে গিয়ে ওয়েট করছিলাম। তুবা এসেই যেনো ঘাবড়ে যায়। তুবা কে স্বাভাবিক করি, আমি তাকে বিশ্বাস করায় যেনো আমি কিছুই জানিনা। ”

শুভ থেমে যাওয়া তে নিরু বলে,

• “ এরপর…… ”
• “ তুবা রুমের দরজা খুলে ভিতরে যায়, আর তখন আমি ওর মুখ থেকে স্বীকারক্তি নেওয়ার জন্য ওর সাথে ধস্তাধস্তি হয়। তখনই হয়তো কেউ ভিডিও করে রাখে আমার অজান্তে। তুবা কিছুই স্বীকার করেনি, তাই বাধ্য হয়ে বাসায় ফিরে আসি। এসেই রিমি জানায় তোমার জন্মদিন এর সারপ্রাইজ প্লানের কথা। তুবার কথা বেমালুম ভুলে যাই। পরের দিন ব্যস্ততার মাঝে কিছুই মনে ছিলো না। আর ভিডিও টা তখনই দিলো কিন্তু তোমরা কিছুই শুনলে না, আমায় অবিশ্বাস করলে নিরু। জানো আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম তোমার ব্যবহার এ। কিন্তু পরোক্ষণে মনে হয় তুমি ঠিক ই করেছো। আমি প্রমাণ এর জন্য তুবার বাসায় যায়, আর গিয়েই ফেঁসে যায় তুবা হত্যার দায়ে। ”

নিরু শুভকে জড়িয়ে বলে,
• “ অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে আমার শুভ, মাফ করে দিও। ”

দু’জন দুজনকে শান্তনা দেয়, একে অপরের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।

নিরুর প্রেগন্যান্সির আট মাস চলছে, কেটে গেছে অনেক গুলি মাস। না সুস্থ হয়েছে রুবির মা, না খুঁজে পাওয়া গেছে রাকিব কে। নিরু আর রিমির ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষাও হয়েছে এরমাঝে। শুভ দুজন কে নিজে সব সময় গাইড করে। সব অফিসের দেখাশোনা করার পাশাপাশি বউ আর বোনের নিরাপত্তার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে শুভ।

নিরুর পেট বেশ মোটা হয়েছে, নিরুর মাজা বাঁকা করে হাটা দেখে রিমি বলে,
• “ ভাবী তুমি এতো মটু হয়ে গেছো যে হাটতেই পারছো না ঠিক মতো। ”

নিরু খিলখিলিয়ে হাসে, তখন শুভ বলে,

• “ তোর যখন আসবে তখন নিরু ও তোকে নিয়ে মজা করবে। ”

রিমি লজ্জা পেয়ে পালিয়ে যায়, নিরু তখন আরোও জোরে হেসে উঠে। রাতে নিরু রেষ্ট নিচ্ছিলো তখন শুভ অফিস শেষে ফিরে ফ্রেশ হয়েই নিরু পেটে কান লাগিয়ে বলে,
• “ কি করছে আমার পিচ্চি বাবুটা? ”

নিরুর পেটের ভিতর থেকে জোরে করে পা নড়াচ্ছে, শুভ তখন নিরুকে বলছে,

• “ দেখেছো নিরু, জন্মের আগেই বাবা কে লাথি দিচ্ছে। ”

নিরু হাসছে, এরপর বললো,
• “ সহ্য করতে পারছো না এখুনি! ”
• “ আমার আদরে ভাগ নিয়ে নিচ্ছে যে। ”

নিরু আবারোও হেসে উঠে।
• “ শুভ! তুমি নিজ সন্তান কে হিংসা করছো দেখেছো। ”

চলবে…….

প্রেমের_পরশ পার্ট_25

0

প্রেমের_পরশ
পার্ট_25
জামিয়া_পারভীন

শুভ নিরুর মুখ তুলে কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে বলে,

“ আজ জন্মদিন তোমার, আর কখনো কাঁদবে না। আজ থেকে শুধু তোমার সুখের দিন। ”

শুভর ঠোঁট এ হাত দিয়ে নিরু বলে,
“ মজা করছো! এখনো আমাদের পরিবারের উপর শনির নজর আছে। আমি কিছুতেই খুশি থাকতে পারিনা সেই জন্য। ”

শুভ একটু হতাশ হয়, আসলেই ঝড় বয়ে যাচ্ছে পরিবারের উপর দিয়ে। শুভ রুম থেকে বেরিয়ে বেলকনি তে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যা হয়ে আসে, নিরু নিচে নামে। কিচেন এ গিয়ে কড়া করে কফি বানিয়ে নিয়ে আসে রুমে । শুভর ঘাড়ে হাত দিয়ে বলে,

“ তোমার কফি খেয়ে নাও। ”

নিরুর হাত থেকে কফি নেয় শুভ , সোফায় এসে বলে,

“ প্রেগন্যান্ট অবস্থায় কফি খাওয়া নিষেধ, কিন্তু অল্প করে চা পান তো করতে পারো। ”

“ হুমম, আজ ভালো লাগছেনা তাই করিনি, একটু রেষ্ট নিতে চাই । ”

নিরু বেডে গিয়ে শুয়ে আছে, শুভ কফি শেষ করে ড্রইংরুমে সবার সাথে গিয়ে বসে। শুভর ফোনে টোন বেজে ওঠে। আঁধশোয়া হয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখছে নিরু, একটা মেসেজ আসে শুভর ফোনে। নিরু মেসেজ ওপেন করে চোখ দিয়ে পানি ঝরতে থাকে। সাথে একটা ভিডিও ও এসেছে, সেটা ওপেন করে দেখে। এরপর ফোন টা আছাড় দিয়ে খুব কাঁদতে থাকে।

শুভ কিছুক্ষণ পর রুমে এসে নিরু কে কাঁদতে দেখে মনে করে সকালের ঘটনায় মন খারাপ নিরুর। নিরুর কাঁধে হাত রেখে শুভ কিছু বলার আগেই নিরু শুভর হাত এক ঝটকায় সরিয়ে দেয়। এরপর বলে,
“ আর কক্ষনো ছোবে না আমাকে, যেইই হাত দিয়ে তুবা কে স্পর্শ করেছো, সেই হাত দিয়ে আর কখনো আমার শরীর স্পর্শ করবেনা। ”

শুভ অবাক হয়ে যায়,
“ কি বলছো এসব, তুবা কে তুমি চিনলে কিভাবে? ”

নিরু প্রচন্ড রাগে বলে,
“ পাপ কখনো চাপা থাকে না, একদিন প্রকাশ পেয়ে যায়। তোমার পাপ ও আজ আমার সামনে চলে এসেছে। ছিঃ লজ্জা করেনা ঘরে বউ রেখে অন্য মেয়ের সাথে। ”

শুভ কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে, এরপর বলে,
“ আমার উপর মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছো নিরু, আমি এমন কিছুই করিনি। ”

নিরু অনেক জোরে করে বলে,
“ তাহলে বলতে চাচ্ছো তুবা কে তুমি রেপ করোনি। তাহলে তুবার গর্ভের সন্তান কেও তুমি অস্বীকার করছো তাইনা। ”

ততক্ষণে বাসার সবাই চলে এসেছে, লাস্ট এর কথায় সবার মাথায় বাজ পড়ে। শুভ কিছু বলার আগেই শুভর মা বলে,

“ শুভ! এসব কি শুনছি? তুই এতো নিচে নেমে গিয়েছিস। ”

শুভ কিছু বলার আগেই নিরু শাশুড়ি মায়ের কোলে মাথা রেখে বলে,

“ আম্মা, উনি তুবা নামের এক মেয়ের সাথে বাজে কাজে লিপ্ত হয়েছে। ওই মেয়েটা এখন প্রেগন্যান্ট। ওনার ফোনে ওই মেয়েটা ভিডিও পাঠিয়েছে। আপনি দেখলে বুঝতেন, এগুলো ফেইক না। ”

শুভ নিজের ফোন হাতে নিয়ে ভিডিও ওপেন করে যা দেখে নিজেই লজ্জা পেয়ে যায়। ফোন টা এক আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলে। এরপর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

“ আম্মু! বিশ্বাস করো আমি এমন নই। ”
শুভর মা বলেন,
“ তাহলে ফোন ভাঙ্গলি কেনো? ”

“ ওগুলো দেখে সহ্য করতে পারিনি। তাই …….”

“ ওগুলো রিয়েল তাইনা! ”

“ ভিডিও সত্যিই, কিন্তু…… ”

“ আর কৈফিয়ত দিতে হবে না। নিরু চলে এসো আমার ঘরে, আর শুভ! তুই পারলে তোর মুখ আমাকে দেখাস না। ”

“ আম্মু শোন, ,,,, ”

কিছু শোনার আগেই নিরুর হাত ধরে শুভর মা বেরিয়ে যায়, শুভর বাবা ছিঃ বলে বের হবার সময় শুভ জিজ্ঞেস করে,

“ আব্বু তুমিও অবিশ্বাস করলে, আমাকে কিছুই বলার সুযোগ দিলে না তাহলে। ঠিক আছে, নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ না করে ফিরছি না। পারলে নিরুর খেয়াল রেখো তোমরা। ”

শুভ বাইরে চলে আসে, উদ্দেশ্য তুবা কে খুঁজে বের করা।

পরেরদিন সকালে টিভি ওপেন করলে শুভর বাবা ব্রেকিং নিউজ দেখে ঘাবড়ে যায়।
অনেক জোরে করে বলে,

“ হায় আল্লাহ! একি সর্বনাশ হয়ে গেলো আমার। ”

সবাই ছুটে আসে, নিরু প্রথমে নিউজ দেখে মাথা ঘুরে পড়ে যেতে লাগে। শুভর মা ধরে সোফায় বসিয়ে দেয়। রুবি তখন নিরুর পাশে বসে বলে,

“ শুভর প্রতি আমার বিশ্বাস আছে, সে এমন করতে পারেনা। এটা সত্যিই অনেক বড় চক্রান্তে আমরা ফেঁসে গেছি। তুই ধৈর্য ধর , আর এখন পারলে শুভর সাথে দেখা কর। ”

নিরুর চোখ দিয়ে পানি ঝরছে, নিরুর মন বলছে শুভ এমন করতে পারে না। সে রুবি কে বলে,

“ আপু, আমাকে নিয়ে যাবে ওর কাছে। আমার ভুল হয়ে গেছে ওকে অবিশ্বাস করা। নইলে ওর এতো বড় ক্ষতি হতো না। আমার মন বলছে আমি ওকে অবিশ্বাস করে ভুল করেছি।”

টিভির ব্রেকিং নিউজে একবার তাকালো নিরু,

“ বিশিষ্ট বিজনেসম্যান আসাদুজ্জামান শুভ তুবা হত্যা মামলায় গ্রেফতার। ”

শুভর ফ্যামিলি থানায় যায়, শুভর বাবা ও সি র সাথে কথা বলে। প্রথমে তারা শুভর সাথে দেখা করতে দিতে নারাজ হয়। কিন্তু পরে কথা বলতে দেয় প্রায়ই এক ঘন্টা পর।

শুভকে কয়েজন পুলিশের সামনে হাতকড়া পরিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে, সবাই গিয়ে শুভর আসেপাশে ভিড় জমায়। শুভ তখন বলে,

“ তোমরা কেনো এসেছো? বিশ্বাস যখন করতে পারোনি, তার শাস্তি তো আমায় পেতেই! হবে। ”

“ আমাকে মাফ করে দাও, আমি জানি! তুমি অন্যায় করো নি। আমরা সবাই তোমাকে নির্দোষ প্রমাণ করবো। ” নিরু কেঁদে উঠে কথা গুলো বলার পরে।

“ কাল যদি অবিশ্বাস না করতে তাহলে আজ এই দশা হতো না আমার। আর কারোও উপকার চাইনা। সবাই চলে যাও। ”

শুভর মা বলে,

“ ভুল হয়ে গেছে বাবা, মাফ করে দে। কি ঘটনা ঘটেছে খুলে বল, তাহলে আমাদের সুবিধা হবে কেশ সলভ করতে। ”

“ কি দরকার আম্মু, আমার ছাড়া পেয়ে লাভ নেই, আমি তো খারাপ। ”

শুভর বাবা বলেন,
“ আহহ শুভ! এতো রেগে যেও না। বিপদের সময় মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়। ”

নিরু সবার সামনেই শুভ কে জড়িয়ে ধরে,

“ প্লিজ মাফ করে দাও, আমার জন্য না হলেও অনাগত সন্তানের জন্য। ”

শুভর মাথা কিছুটা ঠান্ডা হয় সন্তানের কথা শুনে। এরপর বলে,

“ আমি বড্ডো ফেঁসে গেছি নিরু, বুঝতে পারছিনা কিভাবে এই জাল ছিঁড়ে বের হবো।”

চলবে………

প্রেমের_পরশ পার্ট_24

0

প্রেমের_পরশ
পার্ট_24
জামিয়া_পারভীন

আফজাল হোসেন এতোটুকু বলেই থেমে যান, দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। নিরু তখন জিজ্ঞেস করে,
• “ এরপর কি হলো নানুর, বলো বাবা। ”
আফজাল হোসেন বলেন,
“ হুম বলছি, সেদিন থেকেই দুর্যোগ শুরু হয়। লুতফার কথাতে নিরুর নানু আসমত চৌধুরী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখনও বুঝতে পারিনি উনি কেনো অসুস্থ হয়েছেন। যখন হসপিটাল এ নেয়া হলো, তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।
ডক্টর বললেন,
“ হার্ট এটাক হয়েছে।”
উনি কিছু বলার চেষ্টা করছিলেন। নিলাশা কাছে যেতেই উনি জানিয়ে দেন লুতফা আমার স্ত্রী আর রুবি আমার মেয়ে। নীলাশা চিৎকার করে বলে ওঠে,
“ এসব মিথ্যা অপবাদ, আমি বিশ্বাস করিনা। ”
লুতফা এমন কঠিন পরিস্থিতি তেও বলে দেয়,

“ বিশ্বাস করো আর নাই করো, আমি তোমার ননদ না, তোমার সতীন। রুবির মাথায় হাত রেখে উনাকে প্রতিজ্ঞা করতে বলো উনি পারবেনা। কারণ নিজ মেয়ের মাথায় হাত রেখে মিথ্যে বলা যায়না। ”

আমি আর চুপ থাকতে পারিনি। লুতফা কে চড় মেরে বলি, “ হ্যাঁ রুবি আমারই সন্তান। ”

নীলাশা এই ধকল সহ্য করতে পারেনি, অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাচ্ছিলো, কোন রকম ধরে বেডে শুইয়ে দিই। আসমত চৌধুরীর প্রাণ কখন বের হয়ে গিয়েছে আমরা কেউ বুঝতে পারিনি। নীলাশার জ্ঞান ফিরে আসতেই ওর বাবার কাছে গিয়ে কান্নাকাটি শুরু করে, কিন্তু আসমত চৌধুরী আর উঠেনি কখনো। নীলাশাও আর কখনো কথা বলেনি।

বাবার মৃত্যুর পর মেয়েটা নির্বাক হয়ে যায়, খুব যত্ন নিতাম ওর। প্রেগন্যান্সির সময় এতো দুর্যোগ ওর জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। আমি বাসায় নার্স রেখে দিই, ওর দেখাশোনা করার জন্য। এরপর আসে সেইই দিন, ওর ব্যথা উঠে। আমি ওকে হসপিটালে নিয়ে যায়, বেবির অবস্থা ভালো ছিলো না বিধায় সিজারের ব্যবস্থা করা হয়। তিন ঘন্টা পর আমার ঘর আলো করে নিরুর জন্ম হয়। নীলাশা অজ্ঞান ছিলো, জ্ঞান ফিরছিলো না। খুব টেনশন এ ছিলাম।

এরপর, পুরো একদিন পর নিলাশার জ্ঞান ফিরে, একটু সুস্থ হলে কেবিনে ট্রান্সফার করা হয়। আমি ওর পাশে গিয়ে সেদিন অনেক কেঁদেছিলাম। সে শুধুই তাকিয়ে ছিলো, কোন কথা বলেনি আমার সাথে। শুধু ওর হাত দুটো আমার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়েছিলো। আমি আমাদের বেবি কে তার সামনে দিতেই, সে বেবির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। ও খুব আস্তে করে বলে,

“ বেবির নাম রাখবে নিরুফার জাহান ”
আমি বলি,
“ তোমার ইচ্ছেই শেষ ইচ্ছে। ”

ও আর কথা বলেনি, নিরুকে বুকে জড়িয়ে নেয়। কিছুক্ষণ পর নিরু কে আমার হাতে দিয়ে দেয় । ও ঘুমিয়ে গেছে, অসুস্থতার জন্য ঘুমের ইঞ্জেকশন দেয়া থাকতো ওকে। আমি নিরুকে নিয়ে বাইরে যায়, আমার বোন কে ডেকে নিরু কে দিই। বোন সেদিন আবদার করে বসে,

“ ভাই তোর মেয়েটা তো অনেক সুন্দরী হবে রে, দিবি ওকে বড় হয়ে আমার ছেলের বউ হতে। ”

আমি বুঝি নি, ও এমন আবদার কেনো করেছে। আমি হেসে বলি,
“ আগে বড় হোক। ”

ফার্মেসির দিকে গিয়ে প্রয়োজনীয় ঔষধ নিয়ে এসে নিলাশার রুমে যায়, গিয়ে দেখি নিলাশার মাথার উপরে বালিশ চাপা দেয়া আছে।
বালিশ সরিয়ে নিলাশার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠি। চোখ দুটো বিস্ফোরিত হয়ে আছে , তাড়াতাড়ি করে ওর হাত ধরতেই দেখি ওর হাত ঠান্ডা হয়ে গেছে।

চিৎকারের সাথে সাথে লুতফা ঘরে ঢোকে, আমি অবাক হয়ে বলি,
“ তুমি এখানে কি করছো? ”
সে হেসে বলে,
“ তুমি বিয়ে করে বউ নিয়ে মজা করবে, আর আমি সারাজীবন দেখে দেখে ফুলবো। এটা হবার নয়, তোমার নিলাশা মরে গেছে আর ওকে হত্যা করেছো তুমি। ”

আমি রেগে গিয়ে ওকে চড় মারি, এরপর বলি,

“ কি যা তা বলিস অসভ্য মেয়ে, আমি কেনো ওকে হত্যা করবো? ”

লুতফা খুব জোরে হাসে, এরপর একজন কে আসতে বলে। ফিল্মে কয়েকটা ছবি দেখায়, আমি নিলাশার মাথা থেকে বালিশ সরানোর সময়। ছবিটা এমন মুহুর্তে তোলা দেখে মনে হচ্ছিলো, আমি নিলাশা কে হত্যা করছি বালিশ চাপা দিয়ে।

আমি কান্নায় ভেঙে পড়ি, এই ছিলো আমার কপালে। আমি জানিনা কেনো এই শত্রুতা, হয়তো স্ত্রীর অধিকার আদায় করতে চেয়েছিলো, তাও নিজ স্বামী কে ফাঁসিয়ে।

লুতফা তখন বলে, “ ছবি কেউ দেখবে না, কেউ জানবে না তুমি ওর হত্যাকারী। শুধু ওর মেয়েটা কে হত্যা করে ফেলো। আর না হয় ওই মেয়ে কে এতিমখানা তে দিয়ে এসো। ”

বাধ্য হয়ে আমার কলিজার টুকরো নিরু কে এতিমখানা তে দিয়ে আসি। ওর সব খরচ আমি দিতাম, লুকিয়ে রাখতাম নিরুকে। কেউ যেনো নিরুকে হত্যা করতে না পারে। এরপর থেকে লুতফার সাথে এক ঘরে শুধুই থাকতাম কিন্তু আর কখনো ওর দিকে ফিরেও তাকায়নি। আর রুবি তো সন্তান, চেষ্টা করেছি ভালোবাসার। জানিনা কতোটুকু ভালোবাসতে পেরেছি।

আফজাল হোসেন কাঁদতে থাকে খুব, নিরু শুভর পাশ থেকে উঠে গিয়ে আফজাল হোসেন কে জড়িয়ে ধরে, আর রুবি মাথা নিচু করে কাঁদতে থাকে ।

শুভ কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছেনা। এমন পরিস্থিতিতে কি করা উচিৎ তার জানা নাই। মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর বলে,

“ আগেও নিরুকে হত্যা প্লান করা হতো নিরুর এই সম্পত্তির জন্য । আর এখনও হত্যা করার চেষ্টা করা হয়। যদিও আশা করি রুবি ভাবী আর এই কাজ করবে না। কিন্তু রাকিব এই চেষ্টা করতেই থাকবে। কিন্তু প্রমাণ ছাড়া ওর শাস্তি হবে কিভাবে। ”

নিরু তখন বলে ওঠে,
“ আমার মৃত্যু যদি এখনি লিখা থাক্ব এখনই হবে, কিন্তু যদি না লিখা থাকে তাহলে কেউ আমার কোন ক্ষতি করতে পারবেনা। প্লিজ এই নিয়ে কেউ টেনশন করবেন না। ”

নিরু ঘরে চলে যায়, একটু কাঁদা দরকার মেয়েটার। এতো গুলো সত্য জানার পর কাঁদলে মন হালকা হবে ভেবে শুভ নিরুকে একাই ছেড়ে দেয়।

রুবি তখন সবার উদ্দেশ্যে বলে,
“ আমার ভুলের জন্য আমি খুব অনুতপ্ত, মাফ করে দিবেন সবাই। আমার মা যে অন্যায় করেছে, তার শাস্তি সে পাচ্ছে। আমার সৎ মা কে তো একেবারেই হত্যা করে ফেলেছে আর নিজেও এখন আই সি ইউ তে মৃত্যুর সাথে লড়ছে। আমি খুব চাইতাম আমার মা যেনো সুস্থ হয়ে ওঠে কিন্তু এখন আর চাইনা। ”

রুবিকে কান্না থামাতে বলে শুভ,

“ আহহহহ! ভাবী, কারোও মৃত্যু কামনা করতে নেই, যাই হোক উনি আমাদের সাক্ষী। উনি বেঁচে থাকলেই রাকিব আর ওর মা কে ধরা সহজ হবে। ”

শুভ সবার সাথে কথা শেষ করে রুমে যায়, নিরু ফুঁপিয়ে কাঁদছে। শুভ গিয়ে বলে,

“ আর কেঁদো না প্লিজ, কাঁদলে যে আমাদের অনাগত বেবি কষ্ট পাবে। তুমি কি তা চাও? ”

নিরু তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে শুভ কে জড়িয়ে ধরে বলে,
“ আমি চাই আমার অনাগত বেবি যেন অনাথ হয়ে বড় না হয়। ওর সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনা করি। ”

চলবে……..

প্রেমের_পরশ পার্ট_23

0

প্রেমের_পরশ
পার্ট_23
জামিয়া_পারভীন

নিরু ড্রইং রুমের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই দেখে ক্যান্ডেল জ্বালানো আছে ঘরের মেঝেতে, লাভ শেপ আকৃতি তে। লাভ শেপ এর মাঝে শুভ দাঁড়িয়ে আছে, সামনে টেবিল, মাঝে একটা চকলেট কেক। নিরু ক্যান্ডেল পার করে শুভর কাছে যায়, তখন শুভ মুখে আবৃত্তি করে শোনায় নিরুকে,

“ জন্মদিন, শুভ জন্মদিন ।
ফুলেরা ফুটেছে হাসি মুখে
বাড়ছে ভ্রমরের গুঞ্জন,
পাখিরাও গাইছে নতুন সুরে
জানাতে তোমায় অভিনন্দন ।
নদীতে বইছে খুশীর জোয়ার
বাতাসে সুভাশিত কলরব,
তোমাকে নিয়েই মাতামাতি আজ
তোমার জন্যই সব ।
জীবনে হও অনেক বড়
পৃথিবীকে করো ঋণী,
গাইবে সবাই তোমার জয়গান
রাখবে মনে চিরদিনি ।
জীবন হোক ছন্দময়
সপ্নগুলো রঙিন,
ভালোবাসায় ভরে উঠুক
তোমার জন্মদিন ।।
জন্মদিন শুভ জন্মদিন !! ”

নিরু নিজের বার্থডের কথা নিজেও ভুলে গিয়েছিলো। শুভর কাছে সারপ্রাইজ পেয়েছে। এছাড়া নিরু এর আগে কখনো জন্মদিন পালন করেনি, সেই জন্য এই আবেগ টা অনেক বেশি নিরুর কাছে। নিরু শুভ কে হালকা করে জড়িয়ে ধরে বলে,
• “ আমার জন্য এমন সারপ্রাইজ রাখবে! আমি কল্পনা ও করিনি। ”

শুভ নিরুর কপালে কিস দিয়ে, পকেট থেকে একটা ছোট্ট বক্স বের করে। বক্স থেকে ডায়মন্ডের রিং, ডায়মন্ডের রঙ ছিলো নীল । রিং বের করে নিরুর হাতে পড়িয়ে দেয় শুভ। নিরু এবারো অবাক হয়ে যায়, হাসি প্রকাশ করতে না পেরে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।

• “ কি হলো পাগলী, কাঁদছো কেনো? ”
• “ এতো সুখ কপালে সইবে তো শুভ, তোমার মতো এতো ভালো হাজবেন্ড, মা বাবার মতো শ্বশুর শাশুড়ি। বোনের মতো ননদ। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার তোমরা। এই রিং, কেক, মোমবাতি, এসব কিছুই না। তোমরা থাকলেই আমার জীবন স্বার্থক। ”
• “ এভাবে বলোনা, তোমার জন্য আমি পুরোপুরি চেঞ্জ হয়ে গিয়েছি নিরু। আমি আগে এতো টাও ভালো ছিলাম না। আমার রাগের জন্য বাসার কেউ কোন কথা বলার সাহস পেতো না। খুব ভয় পেতো আমাকে, রিমি বাদে। রিমি আমার কলিজার টুকরো বোন। কিন্তু তোমাকে যতই দেখেছি, তোমার রূপের সৌন্দর্যে আমি বিমোহিত হয়েছি। যতই দেখেছি তোমার চোখের দিকে, তোমার চোখের মায়া আমায় খুব কাছে টেনেছে। ওই চোখ এ যাদু আছে, তোমার চোখের পানি সহ্য করতে পারিনা আমি । তোমার জন্যই আমি চেঞ্জ হয়ে গিয়েছি। ”
• “ তুমি আমার চোখের প্রেমে পড়েছিলে আর আমি তোমার খালি বুকের উপর লোমের প্রেমে পড়েছিলাম। ” বলেই নিরু ভেঙচি কাটে, কি বলতে কি বলে ফেলেছে।
• নিরুর কথায় শুভ হেসে ফেলে, “ সব বাদ দিয়ে খালি বুক টাই ভালো লাগলো ম্যাম! ”
• “ উঁহু! তোমার লোমশ বুকের উপর মাথা রাখতে আমার খুব ভালো লাগে । এছাড়া ওখানে তোমার হার্টবিট শুনতে পাই। তোমার প্রতিটি হার্টবিট যেন নিরু বলে ডাকে। খুব ভালো লাগে আমার এটা। ”

শুভ নিরুর হাতে চুমু দিয়ে বলে,
• “ চলো কেক কাটবে!”

কেক কাটার সময় শুভ উইস করে,
নিরু কেক কেটে শুভকে খাইয়ে দেয়, শুভ নিরুকে খাইয়ে দেয়। দুজনে আরো ও গল্প করার পর নিরু বায়না ধরে ছাদে যাবে, তখন শুভ বলে,

• “ তুমি প্রেগন্যান্ট না হলে সব এরেঞ্জমেন্ট ছাদেই করতাম। নেক্সট টাইম তোমার সব আবদার পূরন করবো৷ বুঝেছো পাখি। ”

এবার নিরু শান্ত হয়ে রুমে আসে, শুভ সব পরিষ্কার করে রুমে আসে। দেরি করে ঘুমানোর জন্য দুজনেরই ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে যায়।

বেলা ১১ টাই নিরুর ঘুম ভাঙে, নিচে মনে হলো খুব কথার শোরগোল শুনা যাচ্ছে। নিরু শুভকে উঠিয়ে দেয়, দুজনেই ফ্রেশ হয়ে নিচে যায়। নিরুর বাবা এসেছেন।

বাবার কাছে নিরু এগিয়ে যেতেই নিরুর বাবা নিরুকে কিছু কাগজ ধরিয়ে দেয়,

• “ এগুলো কি বাবা! ”
• “ তোমার আমানত এতোদিন আমার কাছে গচ্ছিত ছিলো, আজ তোমার জিনিস তোমাকে ফিরিয়ে দিলাম। ”
• “ আমার জিনিস মানে? কিসের কথা বলছো তুমি? আর আমাকে তুমি করেই বা বলছো কেনো! ”
• “ বলবো সব ” একটা জায়গা দেখিয়ে দিয়ে বলেন, “ এখানে সাইন করে দাও। ”

নিরু সাইন করেই দেয়, এরপর নিরুর বাবা সবার উপস্থিতি তেই বলে,
• “ আজ থেকে আমার মেয়ের যতো সম্পত্তি ছিলো সব তার কাছে হস্তান্তর করে দিলাম। নিয়ম এটাই ছিলো, ওর ১৮ বছর বয়স হলে ও সব সম্পত্তির মালিক হবে। আসলে আমার নিজের বলতে কিছুই ছিলো না। সব আমার নিলাশার বাবার ছিলো, সেই সূত্রে ই নিলাশার হয়, এখন নিরুর। ”

নিরু অবাক হয়ে শুনছে, হটাৎ করে জিজ্ঞেস করে,
• “ আমার মা সম্পর্কে একটু বলবে বাবা! রিকুয়েস্ট রাখলাম। ”
• “ হ্যাঁ মা, আজ বলতেই এসেছি। ”

বাসায় সবাই আছে, শুভ, সাগর, নিরু, রুবি, রিমি, শুভর বাবা আর মা। সবাই সোফাতে গোল হয়ে বসে তখন আফজাল হোসেন নিজের না বলা গল্প বলতে শুরু করেন।

আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে ছিলাম, কোনরকম সংসার চলে যেতো আমার। একটু বড় হবার পর যখন খরচ বেড়ে যায়, তখন টিউশনি করেই চলতাম। এরপর ভার্সিটিতে ভর্তি হই, সেখানেই প্রথম দিন নিলাশার সাথে পরিচয় হয় আমার। নিলাশা অনেক ধনী বাবার সন্তান হলেও কখনো বুঝিনি সে ধনী ঘরের মেয়ে। খুব সিম্পল ভাবে নিজেকে সব সময় প্রেজেন্ট করতো। প্রেম টা কিভাবে যেনো হয়েই গিয়েছিলো, কেউ বুঝিনি। কেউ কাউকে কখনো ভালোবাসি কথা টা বলিনি। গ্রাজুয়েশন কম্পলিট করি, জব খুঁজতে থাকি। ঘুষের বাজারে দিবে কে চাকুরী? নিলাশা একটা কম্পানির নাম বলে, সেখানে ইন্টারভিউ দিতেই জব টা হয়ে যায়, বাসায় গিয়ে সুখবর দিতেই, মা বলেন,
• “ বাবা আফজাল, অনেক পড়াশোনা করলে, অনেক তো হলো, এবার আমার সৈ কে রাখার কথা পূরণ করো। ”
• “ কি কথা আম্মা ”
• “ আমার সৈ কে কথা দিয়েছিলাম, ওর মেয়ে কে বউ করে ঘরে তুলবো। এখন তো চাকুরী পেয়েই গেলি, বিয়েটা এবার করেই নে। ”
• “ কিন্তু!”
• “ তুই যদি আমার কথা না শুনিস তাহলে আমার মরা মুখ দেখবি। ”

আমি বাধ্য হয়ে বিয়ে করে নিই, নিলাশা কে লুকিয়ে। বয়সের দোষ এ নিলাশার মন ভুলে গিয়ে লুতফা কে কাছে টেনে নিয়েছিলাম একদিন, সেই সন্তান রুবি। এরপর নিজের ভুল ভাঙলে খুব অনুতপ্ত হই। নিলাশা কে তাও কিছুই বলতে পারিনি।

একদিন জব করার সময় নিলাশা অফিসে আসে, আমার কাছে এসে খুব কান্নাকাটি করে। কেনো তাকে কষ্ট দিচ্ছি, কেনো অবহেলা করছি, অনেক অভিযোগ ছিলো তার। খুব খুব রাগ হয়ে যায় আমার, নিলাশা কে চড় মেরে বলেছিলাম,

• “ কখনো তোকে বলিনি, ভালোবাসি। কিসের অধিকার দেখাচ্ছিস তুই। তুই আমার অফিসে আর আসবি না। আমি তোর সাথে আর সম্পর্ক রাখতে চাইনা। ”
• নিলাশা খুব অবাক হয়ে বলে, “ আমার বাবার অফিসে আমি আসবো না তো কি তুমি থাকবে? কখনো অহংকার করিনি তুমি কষ্ট পাবে বলে, সব সময় তোমার মন যুগিয়ে চলতে চেয়েছি। আর তুমি আমার সাথে আজ এমন করলে। ”

বস বের হয়ে আসেন, নিলাশা বসের বুকে বাবা বলে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে থাকে। আমি কি করতে পারতাম আমার জানা ছিলো না। নিলাশার বাবা খুব ভালো মানুষ ছিলেন, আমি চাকুরী হারানোর ভয়ে নিলাশার পায়ে ধরে বলি,
• “ প্লিজ নিলাশা, ক্ষমা করে দাও, আমি কখনো বুঝিনি তোমায়। ”

নিলাশা ছিলো সরল মনের মেয়ে, সে আমার বুকে অনেক কাঁদে। অফিসেই বস আমাদের বিয়ের ডেট ঘোষণা করে দেন। তখন নিলাশা কে বলি,

• “ নিলাশা, প্লিজ এক বছর প্রেম করি, এরপর যদি বিয়ে করি। ”

নিলাশা ভাবে আমি রোমান্স করতে চাচ্ছি। হ্যাঁ আমি নিলাশা কে ভালোবাসতাম, কিন্তু লুতফার জন্য সব এলোমেলো হয়ে যাচছিলো। নিলাশার সাথে এক বছর প্রেম করে ওকে বিয়ে করে ওদের বাসা তেই শিফট হয়ে যায়। এর কিছুদিন পর আমার মা মারা যান, আর আমার বোন ওর স্বামী কে তালাক দিয়ে চলে আসে।

লুতফা কে তখন সব কিছু বলি, আমার প্রেম, বিয়ে সব কিছুই। ওকে শর্ত দিইই, ওদের বাসায় নিয়ে গিয়ে রাখবো কিন্তু বোন পরিচয় এ থাকতে হবে। তখন রুবির বয়স এক বছর ছিলো।

এছাড়া সবাইকে কাছে রাখার আর কোন অপশন ছিলো না। লুতফা কে ডিভোর্স দিলেও পারতাম কিন্তু রুবির জন্য দিতে পারিনি।

আমার আর নিলাশার বিয়ের চার বছর হতে চললেও নিলাশা মা হতে চাইতো না। প্রেগ্ন্যাসি কে খুব ভয় করতো সে। অনেক বুঝিয়ে ও রাজি হয়েছিলো, নিরু তখন পেটে আসে। একদিন লুতফা নিলাশার বাবা কে সব বলে দেয়, এত্ব উনি খুব উত্তেজিত হয়ে পড়েন।

চলবে…………