Tuesday, July 1, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2374



প্রেমের_পরশ পার্ট_20

0

প্রেমের_পরশ
পার্ট_20
#জামিয়া_পারভীন

শুভ হটাৎ করে নিরুর সাথে এমন করে বসবে নিরু ভাবতেই পারেনি। তখন নিরু শান্ত গলায় শুভ কে বলে,

• “ আমার অপরাধ টা কি জানতে পারি। ”

শুভ আর কথা না বাড়িয়ে নিরুকে হাত ধরে টেনে এনে গাড়িতে বসায়, অন্য মানুষের সামনে নিরু আর একটাও কথা বলেনি শুভর সাথে। এমনকি কাঁদেও নি, কারণ শুভর অফিসের স্টাফ গাড়ি চালাচ্ছে। অন্য মানুষের সামনে নিজের ফ্যামিলি স্ট্যাটাস কমানোর কোন মানেই হয়না নিরুর কাছে। প্রায়ই দুপুরের একটু আগে ওরা বাসায় ফিরে আসে। বাসায় এসেই শুভ রিমি কে চিৎকার করে ডাকতে থাকে, এতে রিমি সহ ওদের বাবা মা ও বের হয়ে আসে। শুভর বাবা জিজ্ঞেস করে,

• “ কি হয়েছে ! বেড়াতে গিয়েছিলে হাসি মুখে, আর ফিরে এসে রিমির উপর চটলি কেনো? ”
• “ তোমার মেয়ে নিচে নামতে নামতে এতই নিচে নেমে গেছে যা বলার বাইরে।” শুভ চিল্লিয়ে বলে।
• রিমি তখন বলে, “ ভাইয়া আমি কিছুইই করিনি! বিশ্বাস করো প্লিজ।”
• “ তো কে করেছে? ” শুভ রিমি কে আস্ক করে।

তখন নিরু জিজ্ঞেস করে,
• “ কি হয়েছে সেটা প্লিজ বলবে কি? ”
এতে শুভ আরোও রেগে যায়, বলে,
• “ তোমার নষ্টামি গুলো ফাঁস হয়েছে আর কি। ”
• “ তুমি আমাকে বিনা দোষে দোষী করতে পারো না। ”

শুভ কিছু ছবি দেখায় নিজের ফোন থেকে, ছবি গুলো দেখে নিরু নিজেই মাথা ঘুরে পড়ে যায়। শুভর বাবা বাসাতেই ডক্টর ডাকেন। ডক্টর যা বললেন সেটাতে শুভর রাগ আরোও বেড়ে যায়, নিরুকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পুরো দিন টা তেই কেউ কারো সাথে আর কথা বলেনি। রাতে নিরুর জ্ঞান ফিরে আসে, সে কিছুক্ষণ পর পুরো পুরি বাস্তবে ফিরে আসে। মনে পড়ে যায় দুপুরের ঘটনা, নিরু শুভ কে ডাকে, শুভ কাছে এগিয়ে না গেলে নিরু চিল্লিয়ে বলে,
• “ তুমি কি আমাকে অবিশ্বাস করছো নাকি? যদি তাই ভেবে থাকো তাহলে আমাকে হত্যা করতে পারো। আর যদি একটু হলেও বিশ্বাস করো! তো কাছে এসে যা বলতে চাই সেটা শুনো। ”
শুভ কাছে এসে জিজ্ঞেস করে,
• “ কি বলতে চাও সেটা বলো, চিৎকার করো না আর।”
নিরু তখন বলে,
• “ ওই ছবি গুলো দেখে আমাকে কষ্ট দিচ্ছো, আমি এমন কিছুই করিনি। ছবি গুলো সব ইডিট করা এটা বুঝলে না। যাই হোক! আমি বাসা থেকে বাইরে যায় না। শুধু রিমির সাথে কলেজে যায়, আর রিমির সাথে ফিরে আসি। ”
এরপর রিমির উদ্দেশ্যে বলে নিরু,

• “ সত্যিই করে বলোতো রিমি, আমি কি এক মুহুর্ত তোমাকে হাতছাড়া করেছি। সব সময় তোমার কাছে থাকিনি। ”
রিমি তখন সায় দেয় নিরুর কথায়। শুভ জানে, জেনেও মানতে পারছিলো না। নিরুর কথা শুনে শান্ত গলায় বলে শুভ,
• “ তাহলে ছবিগুলো কবেকার? ”
• “ ছবি গুলো এই বাসারই ছাদের তোলা, তাও রিমির ফোনে। এখন যা জিজ্ঞেস করার রিমিকেই বলো, সেইই সব বলবে।

শুভ তখন রিমিকে কিছু বলার আগেই রিমি বলতে শুরু করে,
• “ ভাইয়া বিশ্বাস করি আমি ভাবী নির্দোষ। আসলে ছবিগুলো আমাদের বাসার ছাদেই তোলা। ”

শুভ তখন হুংকার ছেড়ে বলে,
• “ কাকে দিয়েছিলিস এই ছবি তুই?”
• “ আসলে সেদিন আমরা দুইজন সেজেগুজে ছবি তুলছিলাম, এরপর রাকিবকে আমার কয়েকটা ছবি দিই। আর তখন নিরুর অর্ধেক ছবি চলে যায়। তখন রাকিব বলে, নিরু তার বোন হয়, বোনকে কখনো ভালো ভাবে সে দেখেও নি। বোনের ছবি দেখবে বলে বায়না ধরে, তাইই দিয়েছিলাম তিন টা ছবি। ”

শুভর রাগের জন্য পুরো ফরসা গাল লাল হয়ে আছে, নিরু কাছে গিয়ে বলে,
• “ শান্ত হও, রিমি তো আর জানতো না রাকিব কতো খারাপ। ”

রিমি কে নিরু বলে,
• “ দেখো রিমি, এই বাড়ির কেউ জানতো না যেসকল কথা তা আজ বলছি। ”
সবার উদ্দেশ্যে ই নিরু বলে,
• “ আমি আমার বোনের বিয়ের দিন বাসায় গিয়ে আম্মাকে বিরক্ত করে ফেলি। আম্মাকে জানিয়ে আমি ছাদে যায়, যেন রুবি আপার বিয়ের ব্যাঘাত না ঘটে। তখন সন্ধ্যার পর ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে ছিলাম, তখন রাকিব এসে আমার শ্লীলতাহানি করতে চেয়েছিলো। আমি নিজেকে বাঁচাতেই পিছনের দিকে সরতেই ছাদ থেকে পড়ে যায়। এই সব কথা শুভ জানে, তাও আজ আমায় অবিশ্বাস করলো। বড়ই আফসোস হয়, কিন্তু কিছুই করার নেই। ”

সবাই অবাক হয়ে যায়, এমন একটা ছেলের পিছনে রিমি পড়েছে। তখন শুভ বলে,
• “ আমি জানি, রাকিব রিমি কে ট্রাপে ফেলে নিরুকে চায়। কারণ নিরু……. . ” এটুকু বলেই থেমে যায়।
রিমি কে আস্ক করে শুভ,
• “ রিমি তোর ফেসবুকের পাসওয়ার্ড কি রাকিব জানতো? ”

রিমি বলে,
“ না ভাইয়া, রাকিব আমার ফেসবুক একাউন্ট কাল রাতে হ্যাক করেই তোমার মেসেঞ্জারে এসব ছবি পাঠিয়েছে। ” রিমি আরোও বলে, “ ভাইয়া, আমি বুঝে গেছি, রাকিব আসলে ভাবীর ক্ষতি চাই। আমাকে মাফ করে দিও। ”

এতক্ষণ রুবি আর সাগর সব কথা শুনছিলো, তখন সাগর জিজ্ঞেস করে শুভকে,
• “ হ্যাঁ রে শুভ! নিরু মানে তোর বউ কার কি ক্ষতি করেছে, কেনো সবাই ওর ক্ষতি চাই রে? ”
একথা শুনে রুবির মুখ শুকিয়ে যায়।
শুভ বলে,
• “ এ কথা তোমার বউ ও খুব ভালো করে জানে। সব কিছু জানি! কেনো নিরুর ক্ষতি চায় সবাই। নিরুর কিছু যেন না হয় সেজন্য পুরো বাড়ি সিসিটিভি আওতায় এনেছি। সব সময় ফুটেজ চেক করি। আর ওর বয়স ১৮ হতে আরোও দুইমাস বাকি। সেদিন সব কিছু জানতে পারবে সবাই। ”

নিরুর গা গুলিয়ে যাচ্ছে, শুভ জোর করে নিরুকে খাওয়ায়, নিজেও খায়। সারাদিন কেউ মুখে কিছু তুলেনি। নিরু ডিনারের পরপর ই বমি করে দেয়,

শুভর মা বলে,
• “ বউমা কে কালই হসপিটাল নিয়ে যাস, ডক্টর যা বলে গেলো সেটা যদি সত্য হয়। আমাদের সবার জন্যই মঙ্গল। ”
শুভ মাথা নেড়ে সায় দিলো।

…….

এদিকে রুবি ওর মা কে ফোন দিয়ে সব জানালো,
এতে ওর মা ওকে বলে,
• “ দুধ কলা দিয়ে এতোদিন কালসাপ পুষেছি। আমাদের খেয়ে পড়ে, আমাদের বাড়িতে আশ্রিত থেকে এখন আমাদের পায়েই কুড়াল মারতে চাচ্ছে। ”
• রুবি তখন বলে, “ সম্পত্তির লোভ ছেড়ে দাও মা। ফুপু আর রাকিব কে ঘর ছাড়া করো, নইলে তোমরা ও ফেঁসে যাবে। আমি চাই না আমার মা জেলে যাক। অন্ততঃ একটু সুখ চায় আম্মু।”

লুতফা বেগমের মন বেজার হলেও মেয়ের কাছে আর কিছুই বলে না। সবার খোঁজ খবর নিয়ে ফোন রেখে দেয় রুবি।

……

নিরুকে ঘরে এনে শুইয়ে দেয় শুভ, নিরু বেডে আধশোয়া হয়ে শুয়ে আছে। তখন শুভ হটাৎ করে নিরুর পা ধরে ফেলে,

• “ আরে করছো কি! পায়ে হাত দিচ্ছো কেনো? ” নিরু চমকিয়ে উঠে এগুলো বলে।
• “ আমি আমার নিষ্পাপ বউ টা কে ভুল বুঝেছিলাম, ক্ষমার যোগ্য নয় আমি! পারলে ক্ষমা করে দিও। ”
• “ পা না ছাড়লে ক্ষমা করবোনা। এখন পা ছেড়ে আমায় আদর করে দাও। সকালে মেরেছো, আদর না পেলে ভুলবোনা। ”

শুভ গিয়ে নিরুকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে, শুভর চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে নিরুর গালে। নিরু শুভর চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলে, “ বাচ্চারা কাঁদে, তুমি তো বাচ্চা নও।। ভুল তো মানুষ মাত্রই হয়। চলোনা নতুন করে সব কিছু শুরু করি। ”

শুভ নিরুকে আরোও শক্ত করে জড়িয়ে নেয়। মনে মনে বলে, সত্যিই তোমার মতো মেয়ে পাওয়া ভাগ্যের ব্যপার। ”
নিরু তখন বলে, “ তোমার মতো হাজবেন্ড পাওয়া ও তো ভাগ্যের ব্যাপার। ”

শুভ মুচকি হাসে, “ তুমি কি আমার মনের কথা পড়তে পারো নাকি!!! ”

• “ তোমার আত্মার অংশ বলে কথা। ” নিরুর কথাতে শুভ নিরুর কপালে চুমু এঁকে দেয়।

চলবে……………

প্রেমের_পরশ পার্ট_19

0

প্রেমের_পরশ
পার্ট_19
জামিয়া_পারভীন

এতো মানুষের আহাজারি তে আর দোয়া প্রার্থনা তে হয়তো ঝড়ের গতি একটু কমে আসলো, তাই লঞ্চ টা কোন ভাবে কিনারে নিয়ে এসে নোঙর ফেলতেই সবাই জীবনের ভয়ে লঞ্চ থেকে নামতে শুরু করে। বৃষ্টি তখনও হচ্ছিলো, তাও শুভ নিরুকে কোলে নিয়ে নেমে পড়ে। নিরুর জ্ঞান ফিরে আসে বৃষ্টির পানি গায়ে পড়াতে। বেশ কিছুটা এগিয়ে গিয়ে একটা হোটেল দেখতে পায় শুভ। নিরুর জ্ঞান ফিরলেও কোল থেকে না নামিয়ে ওভাবেই হোটেলে গিয়ে ঢুকে। একটা রুম বুকিং দিয়ে নিরুকে ভিতরে যেতে বলে, বাইরে চলে আসে শুভ । হোটেল ম্যানেজার এর কাছে গিয়ে বলে,
• “ একটা ফোন হবে, বাসায় ফোন করা লাগতো। আমার মোবাইল ফোন টা ভিজে গেছে, যদি এটা শুকানোর ব্যবস্থা আর ঠিক করার ব্যবস্থা করা যেতো। ”
• তখনি ম্যানেজার ফোন এগিয়ে দেয়, আর শুভর ফোন টা নেয় “ জ্বী স্যার অবশ্যই, আমরা এখনি চেক করে দেখছি। ”

শুভ প্রথমে বাসায় ফোন করে যাকে গাড়ি দিয়েছিলো তার নাম্বার নেয়। এরপর ওই ব্যক্তি কে ফোন দিয়ে শুভ নিজেদের অবস্থান জানায়, তখন অপরপাশ থেকে বলে,
• “ জ্বী স্যার হটাৎ ঝড় শুরু হওয়াতে আমিও আটকিয়ে গিয়েছিলাম , বেশি দূরে যেতে পারিনি। ” অতঃপর শুভদের অবস্থান জেনে নিয়ে বলে, “ ঝড় বৃষ্টি থামলে আসছি স্যার। ”

শুভ রুমে চলে আসে, নিরু ঠাণ্ডাতে জমে গেছে।
• “ সরি পাখি, আমার জন্যই তোমাকে এতো কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে, প্লিজ মাফ করে দিও। ”
• “ তোমার দেয়া সুখ যদি হাসিমুখে নিতে পারি তাহলে কষ্ট কেনো নিতে পারবোনা বলো । বিপদ তো বলে কয়ে আসেনা। আল্লাহ আমাদের পরীক্ষা করছিলেন বুঝলে । ”

শুভ অবাক হয়! নিরুর এতো সহ্য ক্ষমতা দেখে। ভীত হয়ে যে মেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলো সেই মেয়ে বিপদে ধৈর্য ধরছে। তখন নিরু আবার বলে,
• “ আমার সাথে তুমিও বিপদে পড়েছিলে, আমার কিছুটা মনে আছে, তুমি আমাকে তোমার সাথে কিভাবে বেঁধে রেখেছিলে। আমি ভয় পেলেও, আমার পূর্ণ আস্থা আছে তোমার উপর। আল্লাহ তো আছেন ই, তোমার মতো স্বামী যার থাকে তার ভয় পাবার আসলেই কোন মানে হয়না। ”
• তখন শুভ বলে, “ তোমার তো ঠান্ডা লাগছে, কাপড় তো সব গাড়িতে আছে। ”

শুভ হোটেলের ওয়াশরুমে গিয়ে একটা টাওয়েল এনে দিয়ে মাথা মুছিয়ে দেয়। এরপর নিরুর ড্রেস গুলো একে একে কমাতে থাকে। টাওয়েল টা নিরুর গায়ে জড়িয়ে সব ড্রেস খুলে নেয়। যদিও শুভ কাছে সে নতুন না, তবুও নিরু লজ্জা পেতে শুরু করে। নিরু বিছানায় রাখা কাঁথা টা গায়ে জড়িয়ে নেয়।

শুভ নিরুর কাপড় গুলো ধুয়ে বারান্দায় শুকাতে দিয়ে আসে। শুভ নিজেও ভিজে আছে, তাই আরেকটা টাওয়েল নিয়ে নিজের ড্রেস গুলো ও চেঞ্জ করে নেয়। বেডের দিকে তাকালো শুভ, নিরু শুয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়েছে। মৃদু হাসে শুভ, এরপর নিরুর পাশে গিয়ে শুয়ে নিরুকে জড়িয়ে ধরে। দুজনেই খুব ক্লান্ত ছিলো, ঘুম টা খুব সহজেই চলে আসে।

দরজা তে কেউ ডাকছে, শুভ ঘুম থেকে উঠে দরজা টা খুলে দেয়। অবশ্য নিরুকে পুরোপুরি ঢেকে দিয়েছিলো শুভ।
দরজা খুলতেই,
• “ স্যার, আমি চলে এসেছি। ” শুভর অফিসের কর্মচারী, যাকে গাড়ি দিয়েছিলো।
• “ তুমি আসাতে ভালোই হলো দীপ্ত, আমি তো বড়ই বিপদে পড়ে গেছিলাম। ”
• “ জ্বী স্যার! ঝড় যে কিভাবে আসলো টেরই পেলাম না। একেবারে যেন কালবৈশাখী ঝড়, রাস্তার অবস্থাও খুব একটা ভালো না। গাছপালা ভেঙে পড়েছে, আজ না যাওয়াই বেটার। তাই রুম বুক দিয়েই এসেছি। ”
• “ ভালো করেছো দীপ্ত, এখন প্লিজ গাড়ি থেকে কিছু ড্রেস আমার আর ম্যাডামের এনে দাও প্লিজ। সাথে নিরুর ফোন টাও নিয়ে আসিও। ”

উনি ড্রেস আর ফোন দিয়ে উনার রুমে চলে যায়। শুভ নিজের ড্রেস চেঞ্জ করে নিরুকে উঠায় দেয়, নিরু ড্রেস চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে আসে। এসেই শুভ কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয় নিরু।

• “ কি হলো সোনামণি, কাঁদছো কেনো? ”
• “ ভয়ে, খুব ভয় পেয়েছি আজ। তোমার মতো হাজবেন্ড পেয়ে নিজেকে খুব ধন্য মনে হচ্ছে শুভ । ”

শুভ নিরুকে খুব জোরে চেপে ধরে। এরপর বলে,
• “ আমি তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে না করলেও এখন অনেক ভালোবাসি। তুমি আমার জীবন, তুমি ছাড়া নিজেকে লাগে অস্তিত্ব হীন। এতো ভালোবাসি বলে বুঝাতে পারবোনা।
• “ আমিও তোমায় অনেক ভালোবাসি শুভ। ”

নিরু শুভর সাথে ডিনার করে আসে, রুমে এসে বসতেই শুভ কে বলে,

• “ একটা গান শুনাবে, প্লিজ না করো না । ”
• “ ট্রাই করতে পারি, তবে শর্ত আছে। ”
• “ কি গো!! ”
• “ দিতে হবে। ”
• “ বুঝতে পেরেছি, ন্যাকামি করতে চাচ্ছো, মাইর খাবে। ”
• “ সোহাগ খাবো ” নিরুর ঠোঁটে ঠোঁট দিয়ে অনেক্ষণ চুমু খায়।

নিরুকে ছেড়ে দিয়ে শুভ কবিতা বলে,

তোমার লাল ঠোঁট জ্বালাচ্ছে দারুণ
লাল ঠোঁটের ছোঁয়ায় নিবারণ করবে কি আমার শরীরের আগুন!
তোমার লাল ঠোঁট ডাকছে
তোমার কাছে যাওয়ার আহ্বান করছে?
.
যাব কি পরী তোমার কাছে
দিবে কি লাল ঠোঁটের উষ্ণ চুম,
কষ্ট পাচ্ছি বড্ড
তোমার ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়ায়
ফুটাতে চাই এ মনে ভালবাসার পদ্ম।
.
তোমার লাল ঠোঁট ভয়াবহ
শরীরের সৃষ্টি করেছে তাপদাহ,
হে পরী তোমার লাল ঠোঁট ভীষণ দিচ্ছে যাতনা
তোমার লাল ঠোঁট ছুঁইতে চাই একটু ভালবাস না?

[ কবিতার টা ফাইয়াজ ইসলাম ফাহিমের কাছ থেকে নেয়া ]

নিরু তখন বলে,
• “ বলতে বললাম গান, বলতে কবিতা। তাও আমার ঠোঁট নিয়ে। মন চাচ্ছে ঠোঁট দুটি কেটে রেখে দিই। ”
• শুভ নিরুর কথা শুনে শুধু হাসতে থাকে।

……..

রাকিবের আম্মা সাবিহা খাতুন ভাইয়ের বাসাতেই থাকে। বিয়ের কিছুদিন পর রাকিব যখন গর্ভে আসে, তখন স্বামীর ঘর ত্যাগ করে ভাইয়ের কাছে উঠে। ভাইয়ের অবস্থা তখন ভালো ছিলো না। সাধারণ চাকুরী করেন উনার ভাই মানে নিরুর বাবা। পরবর্তীতে রাকিব ওদের আগের বাসা তেই ভুমিষ্ট হয়। ভাইয়ের হটাৎ বড়লোক হয়ে যাবার পিছনে দায়ী নিরুকেই ভাবে। সেইজন্যেই নিজ ছেলে রাকিব কে নিরুর পিছনে লেলিয়ে দিয়েছেন উনিই।

রাকিব রেগে গেছে প্রচন্ড ভাবে, না পাচ্ছে নিরুকে না পাচ্ছে রিমিকে। বাসায় এসেই বলা শুরু করে ওর মাকে,
• “ কতো সুন্দর প্লান করেছিলাম নিরুকে নষ্ট করে এরপর বিয়ে করে ফেলবো। কিন্তু সব কিছুই ভেস্তে দিলো ছাদ থেকে লাফ দিয়ে। সেদিন কতো কষ্টে বেঁচে গেছিলাম, আর একটুর জন্য ধরা পড়ে যেতাম। কতো কষ্টে বাসার পিছনের দেয়াল টপকিয়ে নিচে নেমে আসলাম। অবশেষে নিরুকে জিন্দা দেখে একটু হলেও শান্তি পেলাম। এরপর যখন বাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছিলো! সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু পাখি গিয়ে শুভর ডালে বসে পড়লো। নিরুকে যেন হাতছাড়া করতে না হয় সেজন্য ওর ননদ কে ব্যবহার করতে চাইলাম। কিন্তু ওর দুই ভাইয়ের অত্যাচার এ সেটাও হচ্ছেনা। ”
• “ মাথা ঠান্ডা করো বাবা, এক রাস্তায় হয়নি তো কি হয়েছে। সেকেন্ড অপশন ট্রাই করো। ” রাকিবের মায়ের শিখিয়ে দেয়া ভাষ্য অনুযায়ী রাকিব এবার কাজ করবে।

……

নিরু শুভর নাক চেপে ধরে, তখন শুভ নাকের স্বরে কথা বলে,
• “ এমন করে ধরলে তো শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে পাখি!”
• “ কেনো ! আমি না তোমার আত্মা, আমার নাক দিয়ে তো শ্বাস নিচ্ছিই!!! ওটাই তুমি পেয়ে যাবে। ” নিরু নাক ছেড়ে দেয়।
• শুভ বলে, “ একদিক দিয়ে ঠিক বলেছো!!! নাক চেপে রাখো, আর মুখ টা তোমার মুখে দিয়ে দিই। তোমার নিঃশ্বাস প্রশ্বাস গুলি তাহলে আমিও পেয়ে যাবো। ” এই কথা বলেই নিজের নাক নিজেই চেপে ধরে নিরু ঠোঁটে লিপ কিস করে।
বেশ কিছুক্ষণ পর শুভ নিরুকে ছেড়ে দেয়, নিরুও বেশ আকর্ষিত হয়ে যায় শুভর প্রতি। নিজেকে আর আটকিয়ে না রেখে শুভর সাথে মিশে যায়।
পরদিন সকালে নিরু ঘুম থেকে উঠে শুভকে খুব বিষন্ন দেখতে পায়, নিরু ফ্রেশ হয়ে শাওয়ার সেরে একেবারে রেডি হয়ে বের হয়। শুভকে গলা জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে ,
• “ কি হয়েছে!! এমন লাগছে কেনো তোমাকে? ”

শুভ কিছুই না বলে নিরুকে চড় মেরে বসে,
• “ তোমাকে ভালোবেসে বড় ভুল হয়ে গেছে, আসলে তোমার মতো চরিত্রহীনার মুখ দেখতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে। ”

চলবে…….

প্রেমের_পরশ পার্ট_18

0

প্রেমের_পরশ
পার্ট_18
জামিয়া_পারভীন

শুভর ঘুম ভাঙতে আজ একটু দেরি হয়ে গেলো, ঘুম থেকে উঠে আগে ফ্রেশ হয়ে আসে। নিরু তখন ও ঘুমাচ্ছে। জানালার পর্দা সরিয়ে দেয় শুভ , বাইরের সূর্যের আলো নিরুর মুখে এসে পড়ছে! এতে নিরুর সৌন্দর্য আরো অনেক বেড়ে যায়। ফর্সা গালে হালকা হ্লুদ ছটা পড়ে নিরুর চেহেরা আরোও মায়াবী করে তুলেছে। শুভ নিরুর পাশে গিয়ে বসে! কানের পিছনে আলতো ছোঁয়া দেয়। নিরুর সুড়সুড়ি লাগাতে উঠে যায়,
• “ এমন করো কেনো, একটু ঘুমাই প্লিজ! ” ঘুমে জড়ানো কণ্ঠে বলে।
• “ বাসায় গিয়ে ঘুমাবে, আজ দুইটা জায়গা ঘুরবো, এরপর আজই ফিরে যেতে হবে। ”
• “ হুমম উঠছি! ”

ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে দুজনেই রেডি হয়ে নেয়। প্রথমে ওরা কাছের বৌদ্ধ মন্দির দেখে, আসলে কিভাবে বানিয়েছে এটাই দেখার উদ্দেশ্য দুজনের। সেখানে তিন তলা সমপরিমাণ উঁচু মুর্তি আছে। ওরা ওখানে বেশিক্ষণ না থেকে পাশের রাখাইন মার্কেট এ যায়। সেখানে থেকে পছন্দ মতো তাঁতের কাপড় কিনে সবার জন্য। গরমকালের সময়! তাঁতের কাপড় পড়ে অনেক আরাম। কেনাকাটা করে হোটেলে ফিরে আসতে প্রায়ই ১২ টা বেজে গেলো। ওরা লাঞ্চ সেরেই অল্প কিছুক্ষণের জন্য মিউজিয়াম “ ফার্মস এন্ড ফার্মস ” যায়। এটা ব্যক্তিগত ভাবে তৈরি হয়েছে। এখানে অনেকগুলো পিকনিক স্পট ও আছে। অনেক নারিকেল গাছ আর ফুলের বাগানের মাঝে নির্মল পরিবেশ এ দুজনে বেশ কিছুক্ষণ ঘুরে আবার গাড়িতে গিয়ে উঠে।

গাড়িতে করে পটুয়াখালী পর্যন্ত এসে শুভ নিরুকে নেমে যেতে বলে। গাড়িতে ব্যাগ রেখে দেয়,
• “ গাড়িতে ব্যাগ রেখে আমরা কোথায় যাচ্ছি? ” নিরু জিজ্ঞেস করে শুভকে।
• “ আমরা এখান থেকে লঞ্চে করে ঢাকা যাবো। ” কেমন হবে বলোতো ?
• “ আমার ও না পানি পথে জার্নির খুব ইচ্ছে ছিলো। ”
• “ চলো! বেশি দেরি করলে লঞ্চ ছেড়ে দিবে। ”
• “ আর গাড়ির কি হবে? ”

তখন এক ব্যক্তি এসে শুভকে সালাম দেয়, শুভ সেই ব্যক্তির কাছে গাড়ির চাবি হস্তান্তর করে। লোকটা গাড়িতে বসলে শুভ নিরুকে বলে,
• “ আমার অফিসের একজন ব্যক্তি, চিনবে না! এখন চলো যাওয়া যাক। ”

ওরা তাড়াতাড়ি করে লঞ্চ ঘাটে গিয়ে লঞ্চে উঠে, আর অল্প দেরি হলেই লঞ্চ মিস করতো। ওরা ডবল কেবিনে গিয়ে উঠে! লঞ্চ ছেড়ে যায়। দুজনে বেশ কিছুক্ষণ উপভোগ করে, লঞ্চ চলছে আপন গতিতে।
…….

এদিকে রিমি সুযোগ বুঝে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়, তিনদিন অনেক চেষ্টা করে আজ সফল হয়েছে বাসা থেকে বের হতে। বাইরে বের হয়ে রিকশা নেয়! রাকিব কে ফোন করে জানায়, সে আসছে।
কিছুদূর যেতেই কয়েকজন যুবক রিমির পথ আগলিয়ে ধরে,

• “ গাড়িতে উঠে বসুন ম্যাম। ”
• “ আপনারা কে? কি চান আমার কাছে?”
• “ আমরা আপনার বডি গার্ড ! বাসায় ফিরে চলুন। সবাই চিন্তা করছে। ”
• “ আপনারা মিথ্যে বলছেন, আমার কোন বডি গার্ড নেই। ”
লোকগুলো রিকশা আটকিয়ে রেখে কাকে যেন ফোন করে, এরপর ও রিমি চিল্লাচিল্লি করে লোক জড় করে ফেলেছে। কিছুক্ষণ পর একটা গাড়ি এসে থামে, গাড়ি থেকে যিনি নামে তার ধমকে এলাকার পরিবেশ শান্ত হয়ে যায়।। লোকটাকে দেখে রিমি বাধ্য মেয়ের মতো লোকটার সামনে গিয়ে বলে,
• “ সরি ভাইয়া! আমি একটু কাজে বাইরে এসেছিলাম। কিন্তু এরা পথ আগলিয়ে ধরে। ভয় পেয়ে চিল্লাচিল্লি করেছি। ”

সাগর রিমির হাত ধরে টেনে নিজের গাড়িতে বসায়, এরপর বলে,

• “ তুই আমার একমাত্র বোন, তুই জীবন ঝুঁকি নিয়ে বাইরে যেন না বের হোস তাই বডি গার্ড ফিক্সড করে রেখেছি আমরা দুই ভাই মিলে। ভালো করে ওদের চিনে রাখ, কাজে দিবে। নেক্সট টাইম এই ভুল আর করবি না আশা করি। ”

রিমি আর কথা না বলে ফিচফিচ করে কাঁদা শুরু করে। তখন সাগর আবার বলে,

• “ তুই যাকে পছন্দ করেছিস সে তোকে ভালোবাসে না , তোর বয়স কম বলেই ভুল পথে পা বাড়িয়েছিস। আজ যদি আমরা না পেতাম, তোর ক্ষতি যদি করতো তাহলে তুই কিভাবে সোসাইটি তে মুখ দেখাবি, আর আমাদের ই বা কি হবে? কখনো চিন্তা করে দেখেছিস এইসব। আমি তোর রাকিবের মুখোশ সবার সামনে টেনে খুলে দিবো। তখন বুঝবি, তোর ভাই তোর আপন নাকি পর। কখনো তোর খারাপ চাইওনি, চাইবোও না। আর শুন ঘরে গিয়ে কিছু উল্টো পালটা কাজ করবি না। কারণ তোর ঘর কেনো? পুরো বাড়িটাই সিসি টিভির আওতাভুক্ত করা আছে। আর সব সময় ফুটেজ খেয়াল করার জন্য ফিমেল স্টাফ নিয়োগ করা আছে। ”

সাগরের কথায় রিমি অবাক হয়ে যায়, মনে মনে ভাবে, “ এইজন্য বুঝি ওরা সব টের পেয়ে যায়। ” কিন্তু রাকিব যদি খারাপ ও হয়! প্রথম প্রেম কিভাবে ভুলবে সে! মন খারাপ হয় সেইজন্য।
……..

শুভ ডেকে বসে ছিলো, নিরু গিয়ে তার পাশে বসে!
• “ আচ্ছা শুভ! এখন কয়টা বাজে? ”
• শুভ ফোন দেখে বলে, বিকাল ৪:১৫ বাজছে। ”
• “ সেই তুলনায় কি বেশি অন্ধকার লাগছেনা ?”
• “ হুমম সেটাই মনে হচ্ছে, মনে হচ্ছে ঝড়ের পূর্বাভাস। ”
• “ কি বলো! যদি ঝড় শুরু হয়! লঞ্চ যদি ডুবে যায়! ”

একের পর এক কু ডাক মনের মাঝে সৃষ্টি হয় নিরুর।
• “ আচ্ছা নিরু এতো চিন্তা করো না। ” বলে শুভ ফোন দেয় যাকে গাড়ি দিয়েছে তাকে। ফোনের নেটওয়ার্ক নেই। বলে ফোন টা রেখে দেয়।
• নিরু বলে উঠে, “ এখন কি হবে? যদি ঝড় শুরু হয় তাহলে। ”

কিছুক্ষণের মাঝে ই আকাশ বেশি মেঘলা হয়ে যায়। দুজনে কেবিনে চলে আসে। প্রচন্ড বাতাশ ও শুরু হয়, ঢেউ গুলো খুব উঁচু উঁচু হয়ে যায়। লঞ্চ দুলছে। কেবিনের জিনিস পত্র গুলো এলোমেলো হয়ে পড়ে যাচ্ছে। নিরু ভয়ে শুভ কে জড়িয়ে ধরে মনে মনে দোয়া করতে থাকে। বৃষ্টি ও শুরু হয় সাথে ঝড়, লঞ্চের সবাই ভীত হয়ে চিল্লাচিল্লি শুরু করে। লঞ্চ তখন মাঝনদী তে আছে । ক্যাপ্টেন হয়তো লঞ্চ তীরে নেওয়ার চেষ্টা করছে। কোনরকম তীরে ভিড়তে পারলেই যেন বেঁচে যায় সবাই। বৃষ্টি আর নদীর পানি অনেকটা লঞ্চে প্রবেশ করা শুরু করেছে । নিরু এসব দেখে ভয়েই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। শুভ নিরুকে পিঠের সাথে শক্ত করে বেঁধে নেয়। যেন খারাপ কিছু হলে দুজনেই সেফ থাকতে পারে। শুভ মনে মনে বলে,

• “ লঞ্চে চড়ার শখ টা যদি আজ না কর‍তাম! যদি তোমায় নিয়ে গাড়িতেই রওনা দিতাম তাহলে হয়তো এমন সিচুয়েশান এ পড়তে হতো না। আজ যদি কিছু হয়ে যায়, তাহলে তোমার কাছে পরকালে অপরাধী হয়ে থেকে যাবো । ক্ষমা করে দিও আমায় নিরু। ”

লঞ্চের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে, ক্যাপ্টেন লঞ্চ কে যতো দ্রুত সম্ভব তীরে নেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু ঝড়ের কারণে লঞ্চের দিক বারবার পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছিলো। বিপদে সবার মুখেই দোয়া উচ্চারিত হচ্ছিলো, এদিকে শুভর টেনশন নিরুকে নিয়ে, ভয়েই যে মেয়েটার জ্ঞান নেই। চলার পথে হটাৎ যে বিপদ এভাবে আসতে পারে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ বলতে পারে না। লঞ্চে অনেকটা পানি উঠে যাচ্ছে, সবাই পানি ছাঁকতেই ব্যস্ত হয়ে যায়। শুভ কেবিনের বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, যদি সত্যিই লঞ্চ ডুবে যায়, তাহলে যেন ওরা নদীতে ঝাঁপ দিতে পারে।

চলবে……… .

প্রেমের_পরশ পার্ট_17

0

প্রেমের_পরশ
পার্ট_17
জামিয়া_পারভীন

নিরু শুভর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলো , স্লিপ করে বাথ টাবের পানিতে পড়ে যায় শুভ কে সহ ই। নিরুর মাথায় একটু ব্যথা পায়,
• “ উঁহু ! লাগলো তো মাথায়। ”

• “ বেশি না কম, কোথায় লেগেছে দেখি? ” শুভ নিরুর মাথাতে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে।
• “ ইচ্ছে করে মেরে আবার ঢং! ”
• “ আদর করে দিলে সব রাগ উড়ে যাবে, বুঝলে পাখি।”
• “ ৮০ কেজির বস্তার চাপে আমি তো ডুবেই মরে যাবো। ”
নিরুর কথায় শুভ হাসতে শুরু করে, আর বলে,
• “ আমি ৮০ কেজির বস্তা, সো ফানি।”
• “ তা নয়তো কি ? তুমি কি একবার ও ভেবে দেখেছো তোমার মত ৮০ কেজি মাত্র ৪৩ কেজির বাচ্চা টার উপরে পড়লে বাচ্চাটার কি হয়। ”
• “ তুমি বাচ্চা ছিলে, এখন বড় হয়ে গেছো। আমার আদরে আদরে বাঁদর হয়ে গেছো। ”
• “ কি বললে তুমি!! আমি বাঁদর ” এ্যঁ এ্যঁ চোখে হাত দিয়ে কান্নার ভান ধরে নিরু।
• “ চোখে নাই পানি, কাঁদছে আমার নানী। ” শুভ মজা করে এই কথা টা বলতেই বুকের উপর কিল দিতে শুরু করে নিরু। তখন শুভ আবার বলে,
• “ বুকেই যখন মারবা! ডান দিকে মেরো, বাম দিকে মেরোনা, ওখানে হার্ট থাকে। যদি হার্ট এটাক করে মরে যায়, তখন কে তোমায় আদর দিবে শুনি। ”
নিরু শুভর মুখ চেপে ধরে বলে,
• “ খবরদার আর বাজে কথা বলবেনা, তোমার যেন আমি মরে যায়। ”
• “ বাজে কথা বাদ দাও তো, আমরা একে অপরের জন্য বেঁচে থাকবো। ” শুভ নিরুকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে থাকে।

দুপুর হয়ে এসেছে, ওরা লাঞ্চ শেষ করে রেডি হয়ে সমুদ্রের ধারে যায়,
• “ চলো পানিতে ভাসবো দুজনে। ”
• “ এতক্ষণ ভিজেও স্বাদ মিটলো না আবার ভিজবে?”
• “ আমি ভিজবো বলেছি মানে ভিজবোই। ” বলে নিরু সমুদ্রে নেমে পড়ে।
শুভ বাধ্য হয়ে নিরুর সাথে পানিতে নামে। তখন নিরু চিৎকার করে উঠে,
• “ কি হয়েছে?”
• “ আমার পা আ আ আ আ”
• “ কি হয়েছে!!!! বলবে তো? ”
নিরু কিছু না বলে চিল্লিয়েই যাচ্ছে, তখন শুভ গিয়ে পা তুলে দেখে একটা কাকড়া কামড় ধরিয়ে বসে আছে। শুভ আস্তে করে কাকড়া কে সরিয়ে দেয়। কয়েক ফোঁটা রক্ত বের হচ্ছিলো, শুভ কোলে করে এনে আশেপাশের ফার্মেসি তে নিয়ে গিয়ে এন্টিসেপ্টিক লাগিয়ে দেয়, ব্যান্ডেজ করে দেয়। তখন নিরু বাইনা ধরে ট্রলার এ চড়বে। কিন্তু শুভ নিরুকে নিয়ে রুমে ফিরে এসে চেঞ্জ হয়ে নিতে বলে। নিরুর এতে খুব রাগ হয়, মুখ ভার করে বসে থাকে।

রাগ করে বসে থাকলেও শুভর কিছুই করার নেই। কারণ নিরু যখন সারপ্রাইজ পাবে তখন নিজে থেকেই কাছে আসবে। পরদিন সূর্য ওঠার আগে নিরুকে ঘুম থেকে উঠিয়ে রেডি করিয়ে বাইরে নিয়ে আসে। শুভ আগে থেকেই ট্রলার ভাড়া করে রেখেছে, নিরু দেখে অবাক হয়ে যায়।
ট্রলারে চড়েই নিরু বলে,
• “ যদি উঠবেই, তাহলে এতো ভাব নেয়ার কি ছিলো শুনি?”
• “ বলে দিতে তো তুমি সারপ্রাইজ পেতে না।”
• “ এই সারপ্রাইজ এর জন্য সারারাত কষ্ট পেয়েছি তা জানোনা?”
• “ জানি তো মহারানী।”

ট্রলার চলছে আপন গতিতে, নিরু উপভোগ করছে কি সুন্দর ঢেউ গুলো ট্রলার বরাবর কেটে যাচ্ছে। পানির শব্দে বাচ্চাদের মতো হাসছে নিরু। প্রথমে গঙ্গামতির চরে আসে, এখান থেকে সুর্যদয় দেখা যায়। কুয়াকাটার এই জায়গার নাম ই কুয়া। ওরা একেবারে পূর্ব দিকে চলে আসে। সুর্য আস্তে আস্তে লাল রঙের হয়ে ওঠে। এইখান থেকে সুর্যদয় দেখতে সব চেয়ে ভালো লাগে নিরুর। বেশ কিছু সময় শুভর উপর সমস্ত ভর ছেড়ে দেয়। এতো ভালো লাগছে নিরুর, মুখে প্রকাশ করতে পারছেনা। এখানে কমলা গাছ আছে, সেখান থেকে দুজনে কমলা নিয়ে খায়। কামরাঙা নিয়ে ব্যাগে রেখে দেয়, পরে খাবে সেই জন্য। নিরু শুভকে বলে,
• “ এই যায়গা টা মায়াময়, গঙ্গামতি না হয়ে মায়ামতি হলে ভালো হতো। ”
শুভ একটু হাসলো এরপর বললো,
• “ তুমি নাম বিশেষজ্ঞ হলে ভালো হতো। ”
• “ সব সময় কি মজা নেবে নাকি? ”
• “ বউ টার রাগ মুখ টা দেখছি।”

এরপর ওরা ট্রলার এ করে সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ডে যায়। এখানে আসলে নোঙর ফেলা যায়না তাই।
নিরু জিজ্ঞেস করে,
• “ এখানে যদি নামি তাহলে কেমন হবে? ”
• “ এখানে নামা যাবেনা। কারণ এখানে ট্রলার নোঙর করা যায় না। ”
• “ কেনো?”
• “ কারণ এই যায়গার কোন তল নেই, তাই এই যায়গা কে সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড বলা হয়। যদিও স্থানীয় লোকজন এটাকে নাই বাম বলে, মানে এর কোন তল নেই। ”

নিরু মুগ্ধ হয়ে শুভর কথা শুনছে, বেশ ভালো লাগছে নিরুর। চারিদিকে পানি আর পানি আর ওরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। দুজনে গল্প করতে করতে ট্রলার ফাতরার চরে গিয়ে থামে।

নিরু বলে উঠে,
• “ ওয়াও!!!! এতো সুন্দর জায়গা? দেখো এখান কার গাছপালা গুলো হলুদ রঙের। ”
• “ বেশি ভিতরে যেও না, বিপদ হতে পারে।”
• “ আর একটু যায় না, দেখো গাছগুলো কতো সুন্দর লাগছে। ”

শুভ বিপদ হতে পারে ভেবে নিরুকে কোলে করে টেনে নিয়ে আসে। এরপর ওরা লাল কাঁকড়ার দ্বীপে যায়, বেলা প্রায়ই হয়ে এসেছে।

• “ কাকড়া গুলো তো দেখতে খুবই সুন্দর। ”
• “ হুমম, সুন্দর বটে! কিন্তু কালকের মতো কামড় খেয়োনা। ”
• “ ওকে জান্টুস!!!! হিহিহি”
• “ জানো!! সকালে এখানে আসলে আমরা কাঁকড়া দেখতে পেতাম না। ”
• “ কেনো?”
• “ কারণ দুপুরে রৌদ্র তাপে বালু যখন গরম হয়, তখন এরা উঠে আসে। ”
• “ বেশ তো, কি সুন্দর জীবনধারা। ”

ওখানে ওরা বেশ কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করার পর ট্রলার এ উঠে ওরা লেবুর বনে যায়। প্রথমে গিয়ে স্পেশাল মাছ দিয়ে ভাত খেয়ে নেয়। পরে ওরা লেবুর বন এর তিন নদীর মোহনায় যায়। এখান থেকে অপরপাশে বনাঞ্চল দেখা যাচ্ছে।
• “ মন চাচ্ছে এখানেই থেকে যেতে। ”
• “ কাল দুপুরের দিকে আমরা বাসায় ফিরে যাচ্ছি। ”
• “ দিলে তো মন টা খারাপ করিয়ে। ”
• “ কিছুই ভালো লাগেনা আর। শুভ খুব খারাপ ” নিরুকে হাসাতে শুভ বলে।

নিরু ফিক করে হেসে দেয়,
• “ পারোও বটে!!!”

ফিরার পথে সুর্যাস্ত দেখে ট্রলার এ করে বিচে ফিরে আসে। সেখান থেকে হোটেলে চলে আসে দুজনে,

• “ সত্যিই খুব অসাধারণ ছিল আজকের ঘুরাঘুরি টা ” নিরু বলে শুভকে।

• “ তোমার খুশির জন্যই তো এতো কিছু করছি। কাল আরোও কিছু দর্শনীয় স্থান আছে, সেগুলো দেখাবো। দেখবে খুব ভালো লাগবে তোমার। ”

• “ আমার না খুব টেনশন হচ্ছে!!! বাসায় কথা বলো তো, রিমির খোঁজ নাও। ”

• “ বেড়াতে এসেও আমার বোনের জন্য টেনশন। কতো পেয়ারি ভাবি পেয়েছিস রে রিমি। বউ টা শুধু আমাকেই বুঝলোনা। হায় কপাল হায় কপাল। ”

• “ কি এমন খারাপ করেছি!!! মনে হচ্ছে আমি ই একমাত্র খারাপ বউ।”

• “ আমি তো মজা করে বললাম!!! ”

শুভ বাসায় কথা বলে, রাতের ডিনারের অর্ডার করে।

চলবে…….

প্রেমের_পরশ পার্ট_16

0

প্রেমের_পরশ
পার্ট_16
জামিয়া_পারভীন

• শুভ নিরুর গালে হাত দিয়ে আলতো ছোঁয়া দিয়ে বলে, “আচ্ছা নিরু আমরা যদি সারাজীবন এভাবেই ভ্রমণ করতে পারতাম তোমার কেমন লাগতো? ”
• নিরু একটু হেসে বললো, “ গাড়ির তেল ফুরিয়ে যেতো, তখন রাস্তায় বাটি নিয়ে বসে পড়তে। ”
• শুভ একটু রেগে বললো, “ তোমার রোমান্টিকতা বলে কিছুই নেই, মুড টাই নষ্ট করে দিলে। ”
• “ আহারে, আমার রোমান্টিক বর টার বউ টা কিনা এতো পাজি, একটুও রোমান্স বুঝে না। সো স্যাড। হি হি হি ”
• “ হাসো হাসো প্রাণ খুলে হাসো। যেদিন তোমার সতীন নিয়ে আসবো সেদিন বুঝবে আর হিংসায় জ্বলবে। ”
• “ সতীন নিয়ে আসলে আমার ভালোই হবে, আমার সব কাজ ওকে দিয়ে করিয়ে নিবো। হিহি ” হটাৎ নিজের মায়ের কথা মনে পড়তেই মন খারাপ হয়ে যায় নিরুর।
• “ হাসি অফ হয়ে গেলো যে, শুধু তো আমায় জ্বালাও।”
• “ আমার বাবার ও দুইটা বউ ছিলো বলেই আমি আজ অসহায়। আর তুমিও আমায় নিয়ে মজা করার টপিক্স পেলে না। আমি তোমায় হারাতে চাইনা শুভ। প্লিজ আমাকে ভুলে অন্য কাউকে ভেবোনা। আমি তোমার কাছে যে সুখ পেয়েছি তা হারাতে চাইনা। ”
• “ মন খারাপ করোনা তো, তোমার হাসিমাখা মুখ টাই আমার সব চেয়ে বেশি ভালো লাগে। ”

নিরু বেশ স্বাভাবিক হয়ে যায়, বিয়ের অনুষ্ঠান এর পর এই প্রথম শুভর সাথে কোথাও ঘুরতে যাচ্ছে। ওরা দুপুর হতে হতেই পৌঁছে যায়। ওখানে আগে থেকে রুম বুকিং দেয়া ছিলো, সরাসরি সেখানেই চলে যায়। জার্নি করে দুজনেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। নিরু বললো,
• “ খুব মাথা টা যন্ত্রণা হচ্ছে। ”
• “ কখনো জার্নি করোনি তাই, শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো। একসাথে লাঞ্চ করবো, দেখবে ভালো লাগবে। ”

নিরু আর কথা না বাড়িয়ে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে এসে বেডে শুয়ে পড়ে নিরু।
• “ তুমি তাড়াতাড়ি যাও, ফ্রেশ হয়ে আসো। ”
• “ হুমম যাবো তো! তুমি এতো ক্লান্ত হয়ে গেলে ঘুরবো কিভাবে?”
• “ যাও তো কুইক, আমার ক্ষুধা লেগেছে। ”

শুভ খাবার অর্ডার করে শাওয়ার নিতে ঢুকে যায়। বেরিয়ে আসতেই খাবার চলে আসে। খাবারে ছিলো গরম ভাত, লাক্ষা মাছ, কোরাল মাছ, কাকড়া, মিষ্টি। শুভ নিরুকে কাকড়া খোসা ছাড়িয়ে খাইয়ে দেয়। নিরু খেয়ে বলে,
• “ এতো সুন্দর খাবার আমি কখনো খায়নি, এতো টেস্টি বলার বাইরে। ”
• “ আরোও সারপ্রাইজ আছে সোনা। ”
• “ কি কি? ”
• “ সময় হলেই বুঝতে পারবে, কিছুক্ষণ রেস্ট করো। এরপর রেডি হয়ে নিও আমরা সুর্যাস্ত দেখতে যাবো। ”
• “ সুর্যাস্ত দেখার কি এমন মজা শুনি?”
• “ নিজ চোখে দেখলেই বুঝবে, নইলে বুঝবেনা। ”

ওরা রেডি হয়ে বিকেলে সমুদ্রের ধারে ঘুরতে যায়। তখন নিরু জিজ্ঞেস করে,
• “ আচ্ছা শুভ! এটাকে কুয়াকাটা কেনো বলা হয়? ”
• “ এর অনেক ইতিহাস আছে। কথিত আছে, আঠারো শতকে মুঘল সম্রাট দের কাছে তাড়া খেয়ে বার্মা থেকে অনেকে এখানে এসে বসতি গড়ে। সুপেয় পানির উদ্দেশ্যে অনেক গুলো কুয়া বা কূপ তৈরি করে ওরা, তখন থেকেই কুয়াকাটা নাম হয়েছে। ”
• “ খুব সুন্দর ইতিহাস তো , বেশ লাগলো শুনে। ”

সামনে ডাব ওয়ালা কে দেখতে পেয়ে শুভ নিরুকে বলে,
• “ ডাব খাবে? ”
• “ ইচ্ছে করছেনা এখন। ”
• “ খেলে বুঝবে!!! কেমন লাগে? ”
• “ ওকে এনে দাও। ”

দুজনে দুইটা ডাব নিয়ে কে আগে ডাবের পানি শেষ করতে পারে তার প্রতিযোগিতা লাগায়।
শেষ পর্যন্ত শুভই জিতে যায়।
• “ তুমি চিটিং করেছো আমার সাথে, এটা খেলা হয়নি। ”
• “ আর যদি তুমি জিততে তাহলে রেজাল্ট কি দিতে। ”
• “ যাই হোক না কেনো!!! আমাকে বড় ডাব দিয়েছো আর তুমি ছোট ডাব নিয়েছো। ”
• “ এহহহহ, এখন সব দোষ আমার তাইনা। ”
• “ দোষ বলো আর গুণ বলো সবই তো তোমার। অনেক মিষ্টি ছিলো পানি টা। ”
• “ তোমার ঠোঁট এর তুলনায় কম। ”
• “ যাহহ!!! ফাজিল ছেলে। ” বলে শুভকে মারতে থাকে নিরু।

দুজনে বেশ মজা করে পানিতে ছুটাছুটি করে, একে অপরকে পানি ছিটিয়ে দেয়, সুর্যাস্ত যাওয়া উপভোগ করে। সন্ধ্যার পর নিরুকে নিয়ে রেষ্টুরেন্ট এ যায় শুভ,

ভাতের সাথে রুপবান মাছ, কোরাল মাছ আর চিংড়ি অর্ডার করে। খাবার শেষ এ নিরু খুব খুশি হয় বলার বাইরে।
• “ কি বলবো তোমায় শুভ, সব খাবার ই এতো ভালো যে বলার বাইরে। ”
• “ তোমার ভালো লাগার জন্যই তো এতোকিছু। ”
• “ আমার এতো ভালো চান কেনো? যদি হারিয়ে যায় তাহলে? ”
• “ হারাতে দিবোনা। ”
• “ যদি মরে যায় মায়ের মতো। ”
• “ খবরদার কুলক্ষনে কথা বলবে না।”

ডিনার শেষ করে ওরা রুমে ফিরে আসে, ক্লান্ত হয়ে নিরু ঘুমিয়ে পড়ে। শুভ মন খারাপ করে মনে মনে বলে,
“ সারাদিন তোমায় এতো আনন্দ দিলাম, আর তুমি আমার আনন্দের কথা না ভেবেই ঘুমিয়ে গেলে। শুভ ও চুপচাপ নিরুর পাশে ঘুমিয়ে পড়ে। খুব ভোরে নিরুকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেয়,

• “ কি হয়েছে, এতো সকাল সকাল ডাকছো কেনো? ”
• “ নিরু উঠো, সুর্যদয় দেখতে যাবো। খুব ভালো লাগবে তোমার। ”
• “ পরে দেখবো, একটু ঘুমাই। ”

শুভর মনে মনে রাগ হচ্ছে, ওভাবেই নিরুকে কোলে নিয়ে সমুদ্রের ধারে চলে যায়। সব লোক ওদের কে হা হয়ে দেখতে থাকে। নিরু যতই বলে কোল থেকে নামাও, শুভ কিছুতেই নামাই না। একেবারে সমুদ্রের ধারে গিয়ে নামায়। সুর্যদয় দেখে নিরু শুভ কে জড়িয়ে ধরে বলে,
• “ এই মুহুর্ত গুলো সব চেয়ে বেষ্ট, কখনো ভুলবোনা। ”
• “ তাই বুঝি ”
• “ খুব খুব ভাল লাগলো জনাব।”
• “ উপহার চাই। ”
• “ কি উপহার শুনি। ”
• “ আজ আমার সাথে শাওয়ার নিতে হবে। ”
• “ অসভ্য, সব সময় বাজে কথা। ”
• “ কই বাযে কথা বললাম শুনি? ”

দুজনে ঝগড়া করতে করতে রুমে ফিরে আসে। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুভর অর্ডার করা কফি চলে আসে, কফিতে লাভ শেপ আঁকানো।
• “ ওয়াও!!! এতো সুন্দর সারপ্রাইজ। জাস্ট বলার বাইরে। ” নিরু শুভর গলা জড়িয়ে ধরে বলে।”
• “ আমার গিফট চাই কিন্তু!!!!! “
• “ বয়েই গেছে। ”

দুজনে কফি শেষ করে বেলকনিতে যায়, ওখানে একটা দোলনা ছিলো।
নিরুকে বসিয়ে শুভ দোল দিতে থাকে, দুজনের গল্প আর খিলখিলিয়ে হাসির রোল চলতে থাকে।

রিমি কলেজ বের হওয়ার সময় ওর মা ওকে বলে,
• “ আজ আর কলেজ যেতে হবেনা। ”
• “ কেনো আম্মু!!!! কি হয়েছে?”
• “ শুভ নিষেধ করে গিয়েছে। ”

রিমি মন খারাপ করে উপরে চলে যায়। “ নাহ আজও রাকিবের সাথে দেখা হলো না। ”
মনে মনে শুভর উপর খুব রাগ উঠে রিমির। “ বড় ভাই হয়েছে তো কি হয়েছে? মাথা কিনে নিয়েছে নাকি। নাহ এভাবে আর পারছিনা। কাল যাবোই যাবো রাকিবের সাথে দেখা করতে। ”

নিরু কিছুতেই শুভর সামনে শাওয়ার নিতে চাইনা, শুভ রাগ করে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।
কিছুক্ষণ পর শুভ নিরুকে বলে,

• “ নিরু, একটু টাওয়েল টা দিবে?”
• “ জ্বী আনছি। ”

নিরু টাওয়েল দিতে গেলে নিরুর হাত ধরে টেনে নেয় ওয়াশরুমের ভিতর, কিছুক্ষণের মধ্যেই নিরু ভিজে গেছে। নিরু মাথ বেয়ে ঠোঁট বেয়ে পানি পড়ছে। শুভ নিরুকে ভেজা অবস্থায় দেখে আর কন্ট্রোল করতে পারেনা নিজেকে। নিরুর ঠোঁট টা নিজের দখলে নিয়ে নেয় ।

চলবে……….

প্রেমের_পরশ পার্ট_15

0

প্রেমের_পরশ
পার্ট_15
জামিয়া_পারভীন

• “ কি ব্যপার ঘরে বসে বসে কি করছো? ” ঘরে ঢুকেই সামিহা নিরুকে প্রশ্ন করে।
• “ কি আবার করবো ননদিনী, দেখতেই পাচ্ছেন বিশ্রাম নিচ্ছি। ” আসলে সামিহা কে দেখে নিরুর মেজাজ টাই খারাপ হয়ে গেছে।
• “ তা তো দেখতেই পাচ্ছি, তা কেমন কাটছে নিউ লাইফ? ”
• “ শুভ তো আমাকে অনেক হ্যাপি রেখেছে, বলতে গেলে আমার চাইতেও আমাকে বেশি ভালোবাসে।”
• “ হুম বুঝলাম! তা তোমার লজ্জা লাগেনা শুভকে নাম ধরে ডাকতে?”
• “ আজব তো, আমি আমার হাজবেন্ড কে নাম ধরে ডাকতেই পারি। ”
• “ তুমি কি জানো? শুভ তোমার চেয়ে গুনে গুনে ৯ বছরের বড়। এইটুকু সম্মান তো দিতেই পারতে। ”
• “ আমি আমার স্বামীকে সম্মান দিবো কিনা সেইটা আমার ব্যপার। ”
• “ খুব ই সুন্দর ছবিটা। ” ঘরের মধ্যে শুভ আর নিরুর ছবির দিকে ইঙ্গিত করে বলে সামিহা।
• “ পৃথিবীর বেষ্ট কাপল বলে কথা সুন্দর তো হবেই। ”
• “ তুমি কি নিজেকে বেষ্ট ভাবো নাকি? ”
• “ অযথা এই রুমে কারো আগমন শুভ পছন্দ করেনা। ”
• “ তুমি আমায় অপমান করছো তাইনা। ”
• “ কারো যদি মান থাকে তাহলে অপমান হবার প্রশ্ন আসে। আপনার তো সেটাও নেই। যদি মান থাকতো তাহলে আমার হাজবেন্ড কে জড়িয়ে ধরে কিস করার চেষ্টা করতে পারতেন না। ”
• “ মুখ সামলিয়ে কথা বলো নিরু। ”
• “ আমি নিজের চোখে দেখেছি মিস সামিহা আপু। সো প্লিজ, লিভ মি এলোন। ”

সামিহা অনেক টা রাগী গলায় নিরুর রুম থেকে বের হবার সময় শুভর সাথে ধাক্কা লাগে।
• “ সরি শুভ, আসলে দেখতে পাইনি। ” শুভ কিছু বলার আগেই সামিহা বলে।
• “ তা চোখ মাথায় নিয়ে হাটলে ধাক্কা লাগা স্বাভাবিক, যদি কেউ ইচ্ছে করে পরপুরুষের ছোঁয়া চায় তার ক্ষেত্রে আলাদা ব্যপার। ” নিরু খুব সুন্দর করে কথা গুলো বলে।
• “ নিরু, তুমি আমায় অপমান করছো কিন্তু।”
• “ এতক্ষণ নিরু অপমান করেছে এখন আমি করবো, যা রুম থেকে, এই রুমে আসা সবার জন্য নিষেধ। ”
সামিহা রাগ দেখিয়ে চলে যায় রুম থেকে। মনে মনে ভাবে, “ যাওয়ার আগে অশান্তি করেই যাবো নিরু। এতো তেজ আমি দেখে নিবো। ”
……
রিমি কে রাকিব বেশ ভালো ভাবেই দুর্বল করে ফেলেছে। এতদিন শুধু ফোনে কথা আর ফেসবুকে চ্যাট এর মধ্যেই সম্পর্ক টা সীমাবদ্ধ ছিলো কিন্তু এখন রাকিব রিমির সাথে দেখা করার সুযোগ চাচ্ছে। রাকিব নিজের চাওয়া টা পূরন করাএ জন্য আবারো রিমি কে ফোন দেয়,
• “ এই রিমি বাবু, কি করছে আমার জান টা? ”
• “ এইতো বাবু, আমিতো পড়ছিলাম, জানোই তো কিছুদিন পর ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষা হবে। তুমি কি করছো? ”
• “ আমার বাবু টা কে মিস করছি খুব। ”
• “ ওওওও তাই বুঝি। ”
• “ রিমি কোন এক ভাবে ম্যানেজ করো প্লিজ। ”
• “ দেখো রাকিব, আমি তোমায় ভালোবাসি কিন্তু দেখা করতে পারবোনা, জানোই তো নিরু ভাবী এখন আমার কলেজেই পড়ে। প্রতিদিন আমার সাথে একই গাড়িতে যাওয়া আসা করে। আমি ভাবীকে লুকিয়ে কিছুই করতে পারবোনা। ”
• “ এইভাবে বলোনা, আমি তোমায় একটা বুদ্ধি দিই, কাজে দিবে। ”
• “ কি বলো। ”
রাকিব রিমিকে বুঝিয়ে দেয় কিভাবে রিমির সাথে দেখা করতে চায়। রিমিও রাজি হয়ে যায় রাকিবের সাথে দেখা করার জন্য।
……
শুভ সারাদিন ক্লান্ত হয়ে ফিরে নিরুর দুঃখ ভারাক্রান্ত মুখ দেখে নিজেও কষ্ট পেয়ে গেলো।
• “ মন খারাপ কেনো নিরু? ”
• “ বুঝই তো, জিজ্ঞেস কেনো করো বলো? ”
• “ সামিহা তোমাকে হিংসে করে বুঝই তো পাখি। ”
• “ হুম বুঝি, কিন্তু ওকে দেখলে সহ্য করতে পারিনা আমি। মনে হয় ও তোমায় কেড়ে নিবে আমার থেকে। আমি আবার অসহায় হয়ে যাবো। ”
• “ আমি শুধুই তোমার পাখি। একটা গুড নিউজ আছে। ”
• “ কি? ”
• “ বিয়ের দুই মাস পার, হানিমুনে যেতেই পারলাম না। ”
• “ হানিমুন তো প্রায়ই হয় , হিহিহি”
• “ আরে পাগলী, আমি ঘুরতে যাওয়ার কথা বলছি। ”
• “ সত্যিই নিয়ে যাবেন? ” খুব খুশি হয়ে শুভর গলা জড়িয়ে ধরে নিরু।
• “ হুমম সত্যি মহারানী, তোমায় নিয়ে মুক্ত বাতাসে প্রাণখুলে হাসতে চাই। এই বোরিং লাইফে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। ”
• “ আমরা কবে যাচ্ছি? ”
• “ সামনের সপ্তাহে ই। ”
• “ আর রিমির কি হবে? ”
• “ আমি ওর ব্যবস্থা করে রেখেছি। ”

নিরু এতো পরিমাণ খুশি হয় যে শুভর পিঠে লাফিয়ে চড়ে গলা জড়িয়ে ধরে। শুভ এমন পাগলী বউ পেয়ে যতটা খুশি তার চেয়ে বেশি ভাগ্যবান মনে করে নিজেকে। শুভর রাগ, অল্প কয়েকদিনের মাঝেই ভালোবাসায় রুপান্তরিত করে নিয়েছে নিরু।
ডিনারের টেবিলে শুভ ওদের বেড়াতে যাবার কথা সবাইকে জানায়,
• “ ঘুরতে যাওয়া মানেই টাকা নষ্ট ছাড়া কিছুই না। ” শুভর খালা বলেন।
• “ মনে হচ্ছে তোমার কাছে টাকা গুলি চেয়েছি আমি? ”
• “ না তা চাসনি, দুলাভাই এর অফিস থেকেই তো যাচ্ছে। ”
• “ আমার ছেলে, ছেলের বউ কি করবে তা তোমাকে ঠিক করে দিতে হবেনা শ্যালিকা। ” হাহাহা
• “ আহহ দুলাভাই, আমি তো মজা করছি। এতো সিরিয়াসলি নিচ্ছো কেনো? ”
• “ আমি জানিরে, সামিহার জন্য তুই শুভকে চয়েস করতিস। কিন্তু বিয়েটা ভাগ্যের ব্যপার। ভুল বুঝিস না বোন আমার। ” শুভর মা বোন কে কথা গুলি বলে।
• “ নাহ দিদি, ভুল বুঝবো কেনো বলো। আসলেই আমার মেয়েটার ভাগ্য টাই খারাপ। ” মন খারাপ করে কথাটা বলে।
• শুভ প্রতিউত্তরে বলে “ তোমার মেয়ের ভাগ্য খারাপ না, স্বভাব খারাপ। তাই এমন হয়েছে ওর সাথে। ”
নিরু মনে মনে বেশ খুশি হয় শুভর এমন ব্যবহারের জন্য।

শুভ সব কিছু প্লান করে, কুয়াকাটা যাবে ঠিক করে। শুভ নিজে ড্রাইভ করে নিয়ে যাওয়ার প্লান করে। এতে পুরো টা সময় দুজন দুজনের কাছাকাছি থাকতে পারবে। ওরা শুক্রবার সকাল সকাল রেডি হয় বেড়াতে যাবার উদ্দেশ্যে। নিরুকে আজ শুভ ইচ্ছে মতো সাজিয়েছে। সাদা রঙ এর লং সিল্কের গাউন এর সাথে পিংক কালারের ওড়না। চুলগুলো ক্লিপ দিয়ে ফুলিয়ে আটকিয়ে দিয়েছে। কানের পাশের চুলগুলো ছেড়ে রেখেছে। সিলভার আর পিংক কালারের মিশ্রণের ম্যাচিং গয়না পড়িয়েছে। হাত ভর্তি ম্যাচিং চুড়ি, স্বর্নের আংটি তে সিলভার স্টোন বসানো ডিজাইন করা। উঁচু হিল পড়িয়েছে নিরুকে আজ। চোখে কাজল আঁকিয়ে দিয়েছে শুভ। ঠোঁট এমনিতেই পিংক তাও পিংক কালারের লিপস্টিক লাগিয়ে দিয়েছে। নিরু এমনিতেই অনেক ফরসা, মেকআপ লাগেনা। সব মিলিয়ে অপ্সরীর মতো লাগছে নিরুকে।

আর শুভ ব্লু শার্টের সাথে ব্লু জিন্স, ব্লাক সু, রিস্ট ওয়াচ, সানগ্লাস পড়েছে আর চুলগুলো জেল দিয়ে স্টাইল করে সাজিয়েছে।
দুজনকে একসাথে দেখে শুভর মা বলে,
• “ দেখে তো রাজকুমার আর রানীর মতো লাগছে, নজর যেন না লাগে। দেখেশুনে ভালোভাবে যাস। ”
• “ ভাবী ঘুরতে যাচ্ছো যাও আশার সময় আমার গিফট চাই। ” মনে মনে খুব খুশি হয় রিমি। কারণ রিমিকে সব সময় নিরু গাইড দেয় । এখন রিমি ইচ্ছেমত রাকিবের সাথে ডেট করতে পারবে।
• “ ভালোভাবে ফিরে আসিস বোন। ” রুবি নিরুকে জড়িয়ে ধরে কথাটা বলে।
• “ দোয়া করি, সব সময় হাসিখুশি থাকবে তোমরা দুজন। ” শুভর বাবা বলেন।
শুভ সবাইকে সালাম দিয়ে বিদায় নেয়।
শুভ ড্রাইভিং করছে আর নিরু ওর পাশের সিটে বসে আছে। রাতের বেলা বিপদ হতে পারে রাস্তায় তাই দিনের যাত্রা শুভর কাছে শুভ মনে হয়েছে।
• “ কি ব্যপার, চুপচাপ আছো যে? ”
• “ আসলে এক্সাইটমেন্ট এতো বেশি, মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। সকালে যখন আপনি আমায় সাজাচ্ছিলেন, মনে হচ্ছিলো আমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখী মানুষ। আর এখন এতো ভালো লাগছে, চারিদিকের সৌন্দর্য আমাকে উতলা করে দিচ্ছে। এমন অনুভূতি আগে হয়নি আমার। ”
• “ এর জন্য নিশ্চয়ই আমার উপহার আছে। ”
• “ কি উপহার স্যার। ”
• “ তোমার ঠোঁটের অধিকার। ”
নিরু লজ্জায় মুখ নিচু করে নেয়।

শুভ একটা গান প্লে করে,
মোর প্রিয়া হবে এসো রানী দেব খোঁপায় তারার ফুল
কর্ণে দোলাব তৃতীয়া তিথির চৈতী চাঁদের দুল।।
কণ্ঠে তোমার পরাবো বালিকা
হংস –সারির দুলানো মালিকা
বিজলী জরীণ ফিতায় বাঁধিব মেঘ রঙ এলো চুল।।
জোছনার সাথে চন্দন দিয়ে মাখাব তোমার গায়
রামধনু হতে লাল রঙ ছানি’ আলতা পরাবো পায়।
আমার গানের সাত সুর দিয়া
তোমার বাসর রচিব প্রিয়া।
তোমারে ঘিরিয়া গাহিবে আমার কবিতার বুলবুল।।

গানের সুরে, চারিদিকের পরিবেশ এ নিরু আর শুভ বেশ উপভোগ করছে, গাড়ি ছুটে চলেছে গন্তব্য স্থলের দিকে।

চলবে………

প্রেমের_পরশ পার্ট_14

0

প্রেমের_পরশ
পার্ট_14
জামিয়া_পারভীন

শুভ পারসোনাল ল্যাপটপ ওপেন করে শুভর রুমের সিসিটিভি ফুটেজ অন করে, ঘরে কি হচ্ছে না হচ্ছে সব চেক করার জন্য, নিরুর রুমে রুবি কে দেখে শুভর বুক টা কেঁপে ওঠে, সাথে সাথে নিরু কে ফোন দেয়। রিংটোন এর শব্দে নিরু জেগে উঠে, পাশে রুবি কে দেখে চমকিয়ে যায়।
তাও রুবির সাথে কথা না বলে ফোন রিসিভ করে, আধোঘুম কণ্ঠে শুভকে বলে,

__ “ আপনি কোথায় থেকে ফোন দিলেন? এতো সকাল সকাল কোথায় গিয়েছেন? ”

__ “ এতো প্রশ্ন করোনা, রুবি ভাবীর থেকে সাবধানে থাকবে। সকাল সকাল তোমার কাছে কি চাচ্ছে? ”

__ “ আপনি কিভাবে জানলেন? ”

__ “ যেভাবেই হোক জেনেছি, সব সময় তোমায় ফলো করছি বুঝেছো? ”

__ “ উম্মম্মম্মম্মম, একটু ঘুমাই। ”

__ “ ওকে ঘুমাও, ভাবীকে বের করে তারপর। ”

__ “হু”

শুভর ফোন কেটে দিয়ে রুবির সাথে কথা বলে নিরু,

__ “ আপু, এতো সকালে ঘুম ভেঙে গেলো তোমার? ”

__ “ সাগর নেই, সকালেই বেরিয়ে গিয়েছে। অফিসে নাকি জরুরী মিটিং আছে আজ দুপুরে সেটার প্রস্তুতি নিতে হবে মনে হয়। ”

__ “ ওহহহ, উনিও কি একসাথে গিয়েছে?”

__ “ কে? শুভর কথা বলছিস? ”

__ “ হুমম”

__ “ আরে শুভ তো অন্য কম্পানি তে বসে, তোর শ্বশুর এর তো অনেক বড় বিজনেস, দুই ছেলে কে আলাদা আলাদা অফিসের দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন। তবে শুভ একটু বেশিই সামলায়, মানে অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছে। ”

__ “ তুমি তো অনেক কিছু জানো, ভালো কথা মনে পড়েছে, সাগর ভাইয়ের অফিসে তুমি জয়েন করলেও তো পারো, এতে দুটো সুবিধা,
• ১. অফিসের একটা স্টাফের বেতন বাঁচবে।
• ২. সাগর ভাইয়া কে সব সময় চোখের সামনে দেখতে পারবে। হিহি, অন্য কাউকে নিয়ে সময় কাটায় কিনা জানতে পারবে।
বুদ্ধি গুলো ভালো না বলো? ”

__ “ তোর বুদ্ধি কি খারাপ হয় বল? ”

__ “ যতটুকু জানি তুমি সাগর ভাইয়ার সাথেই পড়েছো, উনি যা পারে তুমিও তাই পারবে। হিহিহি ”

__ “ এটা কখনো কি সম্ভব নাকি? ”

__ “ যদি সম্ভব হয় তাহলে তো তুমি রাজি তাইনা। ”

__ “ এই বাড়িতে তো কিছুই করতে হয়না, সব সময় ফোন টিপতে টিপতে আমি বোরিং ফিল করি। আগে সাগর প্রতি সপ্তাহে ঘুরতে নিয়ে যেতো, আর এখন, আমি যেন অন্য গ্রহের বাসিন্দা। কিছু বললেই বলবে আগে ব্যাচেলর ছিলাম, এখন বউ হয়েছে, দায়িত্ব বেড়েছে, ঘুরার সময় কোথায় বলো। ”

__ “ আমি তো কখনো কোথাও ঘুরতেই যায়নি। ”

__ “ যাবি আমার সাথে শপিং এ। ”

__ “ না হ হ হ, উনি চান না। ”

__ “ কেনো, আমার সাথে মিশতে নিষেধ করে নিশ্চয়ই। ”

__ “ বুঝোই তো, জিজ্ঞেস করো কেনো? ”

__ “ আচ্ছা, আমি আজ যাই। ”

শুভ এতক্ষণ সব কিছু দেখছিলো রুবি কিছু উল্টো পালটা করছে কি না। রুবি চলে যাওয়া তে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। সাথে সাথে নিরুকে ফোন দেয়,

__ “ কেমন আছো পাখি? ”

__ “ কি ব্যপার বলুন তো, আপু আসতেও বুঝে গেলেন, যেতেও বুঝে গেলেন? ”

__ “ বললাম যে, আমি যাদু জানি। ”

__ “ একটু শান্তি মতো ঘুমুতেই পারিনা। ”

__ “ আর ঘুমাতে হবেনা, ফ্রেশ হয়ে নাও, পারলে শাওয়ার নিও। ”

__ “ আমি জানি, নোংরা করে রেখেছেন, পরিস্কার তো হতেই হবে। ”

__ “ বাহ বাহ চমৎকার, দোষ চাপিয়ে দিলে। ”

__ “ কিছুই করিনি, করলে তো আপনি এতক্ষণে মুখ দেখাতে পারতেন না। ”

__ “ যাও, উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও, নাস্তা শেষ এ ঔষধ খেতে হবে। নইলে অসুস্থতা বাড়বে, আমি চাই তুমি খুব শীঘ্রই সুস্থ হয়ে ওঠো। ”

__ “ ওকে গেলাম, বা বায়, হি হি” বলে ফোন কেটে ফ্রেশ হতে যায়।

দুপুরের আগে নিরু শ্বশুর এর রুমে আসে,

__ “ আব্বু কি করছেন? ”

__ “ এইতো বুড়ো হয়ে গেছি, সারাদিন একা একা বসে থাকি। কিছু বলবি? ”

__ “ বলছিলাম যে রিমিও এখন সুস্থ, কলেজ যাওয়া আসা করছে, বাসাতেও অনেকজন কাজের মানুষ কাজ করছে। আম্মা আপনি বই পড়েন, নামাজ পড়েন, কোরআন শরীফ পড়েন। কোন এক ভাবে দিন কেটে যায়। আমি মাঝে মাঝে আপনাদের সাথে কথা বলি আমার ও দিন কেটে যায়। কিন্তু রুবি আপা সারাদিন ঘরে একা একা থাকে, উনার মন খারাপ লাগে একা থাকতে। ”

__ “ তো কি করতে বলছিস সেটা বল, ও কি ওর বাপের বাসায় যাবে নাকি? গেলে চলে যেতে বল একেবারের জন্য। ”

__ “ নাহ আব্বু, আপু সাগর ভাইয়া কে খুব ভালোবাসে, সারাদিন খুব মিস করে, তাই আমি ভেবেছি, আপু যদি অফিসে ও ভাইয়ের সাথে জব করে, না মানে আপু তো পড়াশোনায় ভালো ছিলো। ”

__ “ হুমম বুঝলাম, সে তোকে বলতে বলেছে তাইনা। ”

__ “ আমি নিজে থেকেই বললাম আব্বু, ভুল হয়ে গেলে ক্ষমা করে দেবেন। ”

__ “ আচ্ছা পরে ভেবে দেখবো, আর তুমিও তো পড়াশোনা শুরু করতে পারো? ”

__ “ উনি আমাকে বাইরে যেতে নিষেধ করেছেন। ”

__ “ ওকে আমি আজ রাতে শুভর সাথে কথা বলবো, এখন ঘরে যাও। ”

সারাদিন নিরুর বেশ ভালোই কাটলো, রাতে সবাই ডিনার করতে বসলে শুভর বাবা কথা বলেন,

__ “ সাগর ”

__ “ জ্বী আব্বু, বলো।”

__ “ রুবির ব্যপারে কিছু কথা ছিলো। ” এই কথা শুনে রুবি ভয়ে চুপসে যায়। যদি ওকে তাড়িয়ে দেয় সেই ভয় ঢুকে গেছে।

__ “ হ্যাঁ আব্বু বলো, তুমি যা চাইবে সেটাই হবে। ” সাগর প্রতিউত্তরে বলে।

__ “ তোর পি এ এর চাকুরী কাল থেকে রুবি করবে। আমি জানতাম এই চেয়ার টা অনেক দিন থেকেই খালি। ভেবেছিলাম আগেই, এই চেয়ারের মালিক তোর বউকেই দিবো। কিন্তু এতো ঝামেলা হওয়াতে বিষয় টা ভুলেই গিয়েছিলাম। যাই হোক দায়িত্ব টা ওকে বুঝিয়ে দিবি। ”

__ “ আচ্ছা আব্বু, তাই হবে। ”

রুবি এমন প্রস্তাব পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে শ্বশুর এর পা ধরে সালাম দেয়, তখন শুভর বাবা বলেন,

__ “ এসব আদিক্ষেতা ভালো লাগে না, সালাম দিতে হলে তোমার বোন কে দিও। ওই মেয়েটার আবদার আমি ফেলতে পারিনা, তাই তোমাকে এতো সম্মান দিয়ে রেখেছি। নইলে তোমার যায়গা এই বাড়িতে হতো না। ”

__ “ ক্ষমা করবেন আব্বু, আমি আপনার ভালো পুত্রবধুর মতো থাকবো এখন থেকে। আমি অনেক বড় ভুল করেছিলাম, আমার বোন টা কে এখন আমি খুব ভালোবাসি। আমি আর কখনো ওর সাথে খারাপ বিহেভ করবোনা। ”

__ “ এখন ডিনার করে যে যার মতো ঘরে যাও। ”

রাত্রে নিরু ঘরে ঢুকে দেখে শুভ একটা বিশাল বড় প্যাকেট হাতে দাঁড়িয়ে আছে ।

__ “ কি আছে এর মধ্যে? ”

__ “ খুলেই দেখো কি আছে? ”

নিরু মোড়ক খুব সাবধান এ খোলে, নিজেই অবাক হয়ে যায়।

__ “ সারপ্রাইজ কেমন লাগলো? ”

__ “You are such a good husband, a great gift, the best gift of my life.”

শুভ বিয়ের দিনের একটা ছবি কে বড় করে বাধায় করেছে। ছবিতে শুভ নিরুর পিছনে দাঁড়িয়ে বাম হাত নিরুর পেটের উপর দিয়ে রেখেছে আর ডান হাত নিরুর গলার কাছে দিয়ে মুখ টা নিরুর কাঁধে রেখে ছবিটা তুলেছিল সেদিন। নিরুর লাজুক চেহেরা টাই ফুটে উঠেছে ছবিতে , আর সেই জন্যই শুভ এই ছবিটা বাধায় করেছে।

__ “ এটা কোথায় রাখবেন? ”

__ “ কেনো এই ঘরের দেয়ালে। ”

__ “ সবাই দেখবে তো, আমার লজ্জা করেনা বুঝি। রিমি, আপু, আম্মা সবাই রাগাবে, আমি মরেই যাবো লজ্জায়। ”

__ “ তুমি কি অন্য কারো সাথে আছো নাকি? আমার বউয়ের সাথে আমি ছবি তুলেছি। কার কি প্রব্লেম শুনি। ”

__ “ হ্যাঁ তাই তো, ওকে ওকে, টাঙিয়ে দিন। ”

__ “ সব সময় এমন করলে কিন্তু কথা বলবো না। ”

__ “ কি করলাম শুনি। ”

__ “ তুমি বলে ডাকবে এরপর থেকে। ”

__ “ পারবো না, লজ্জা লাগে। ”

শুভ নিরুর ঠোঁট দুটি নিজের ঠোঁটে নিয়ে নেয়। কিছুক্ষণ পর ছাড়ে,

__ “ আপনি খুব খারাপ। ”

__ “ তুমি করে না বললে এরপর থেকে সবার সামনে কিস দিবো।”

__ “ আ আ আ প নি ” শুভ নিরুর ঠোঁট এ হাত দিয়ে বলে “ তুমি বলো ”

__ “ তু তু তু মি ই ই খুব খারাপ। ” তোতলিয়ে বলে।

সারারাত দুষ্টামী করে ঘুমানো, আর সারাদিন শ্বশুর শাশুড়ির সাথে থাকা যেন রুটিন হয়ে যায়। এই রুটিনে চলতে চলতে এক মাস হয়ে যায়। শুভ নিরুও বেশ হ্যাপি আছে। আর শুভ বাইরে গেলে নিরুকে সব সময় দেখে রাখে সিসিটিভি ফুটেজ এ। নিরুকে শুভ অনেক ভালোবেসে ফেলেছে, যে কোন মুল্যে নিরুকে হারাতে চায় না শুভ। সেই জন্যই এতো ব্যবস্থা শুভর।

শুভর সাথে নিরুর বিয়ের আড়াই মাস কেটে যায়, বিকালে নিরু রিমি আর শুভর মা বাবা মিলে গল্প আর নাস্তা করছিলো তখন শুভর ছোট খালামনি আর সামিহা বেড়াতে আসে। নিরুর ওদেরকে দেখে খুব রাগ উঠে যায়, তাও মিষ্টি করে সালাম দেয় সবাইকে। কুশল বিনিময় করে নিরু বলে,

__ “ আমার একটু কাজ আছে আম্মা, ঘরে গেলাম। ” সামিহার সামনে মোটেও বসে থাকা যায়না। এটা ভেবেই ঘরে চলে আসে নিরু।

বিছানে এসে বসতেই সামিহা নিরুর রুমে ঢুকে।

চলবে………..

প্রেমের_পরশ  পার্ট_13

0

প্রেমের_পরশ
পার্ট_13

জামিয়া_পারভীন

শুভ নিরুকে সোফায় বসিয়ে নিজ হাতে তুলে খাওয়ায়। দুজনে এই প্রথম বারান্দায় পাশাপাশি বসে কফি পান করে। কফি শেষ করে শুভ নিরুর সাথে দুষ্টুমি করতে গেলে নিরু লজ্জায় মাথা নামিয়ে ফেলে।
__ “ কি ব্যপারে এভয়েড করছো নিরু? ”

__ “ আসলে কিছুনা। ” বলে শুভর বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে থাকে নিরু।

__ “ তুমি বললেই তো নয়, মুখ দেখে বুঝতে পারছি কিছু একটা হয়েছে।”

__ নিরু তাও মাথা নীচু করে আছে। সন্ধ্যা হয়েছে কিছুক্ষণ আগে, বেলকনিতে রাখা সোফায় বসে আছে নিরু আর শুভ। নিরুর মুখে চাঁদের আলো পড়ে নিরুর সৌন্দর্য আরোও বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। শুভ অপলক তাকিয়ে থেকে নিরুর ডান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে শুভর বাম হাত দিয়ে, আর ডান হাত নিরুর গলায় দেয়। শুভর স্পর্শে নিরু শিহরিত হচ্ছে, আজ পালিয়ে যাচ্ছেনা। শুভর নিঃশ্বাস নিরুর বুকে পড়ছে, নিরুর হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে। শুভ নিরুর গলায় অসংখ্য আদরের ছোঁয়া দিতে থাকে। নিরু বাম হাত দিয়ে শুভর গলা চেপে ধরে। অস্থিরতা বাড়ছে নিরুর ভিতরে, শুভর হাত নিরুর বুক পর্যন্ত নেমে গেছে। নিরু ছুটে পালাতে গিয়ে শুভ আটকে ফেলে। আরোও বেশি ঠোঁটের স্পর্শ দিতে থাকে। হটাৎ করে শুভ নিরুকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে এসে বেডে ফেলে দিয়ে নিজেও সমস্ত ভর নিরুর উপর দিয়ে দেয়। শাড়ির আঁচল সরিয়ে দিয়ে পেটে চুমু দিতে থাকে। হটাৎ করে শুভ খেয়াল করে নিরু কাঁদছে।
__ “ আমি কি অন্যায় কিছু করে ফেলেছি? ”

__ নিরু চুপ করে থাকে আর ফুঁপিয়ে কান্না করতে থাকে।

__ “ কি ব্যপার এখনো চুপ থাকবে?”

__ “ ভ ভ ভ ভ ভ ভয়ে ”

__ “ আমি কি বাঘ না ভাল্লুক, যে ভয় পাচ্ছো বারবার? ”

__ “ আপনি আমায় ছেড়ে চলে যাবেন না তো? ”

__ “ কি আশ্চর্য, ছেড়ে যাবো কেনো? খুব ভালোবাসি তোমায় নিরু। ”

__ “ তবুও ভয় করে যদি আপনিও আমায় ছেড়ে দেন, আমি থাকতে পারবো না কিছুতেই। ”

__ “ না কখনো ছেড়ে যাবো না, তোমার বাবার মতো না যে ছেড়ে যাওয়া শিখবো। বরং আপন করে নিবো, যতটা কাছে আসলে ছেড়ে যাবার প্রশ্নই আসবেনা। ”

নিরু শক্ত করে শুভকে জড়িয়ে ধরে, যেন শুভর কাছে ভরসা পাচ্ছে। ওরা দুজনে হারিয়ে যায় ওদের ভালোবাসার সমুদ্রে। নিরু খুব কষ্ট পেয়ে কান্না করে উঠে, শুভকে খামচিয়ে ধরে। শুভ খেয়াল করে নিরুর ব্লিডিং হচ্ছে, সরে আসে নিরুর কাছ থেকে। নিরুর পোশাক ঠিক করে দেয় শুভ।
শুভর নিজের কাছে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে, “ কিভাবে পারলাম এটা করতে? কি করবো এখন আমি? ” চিন্তিত হয়ে যাচ্ছে শুভ। কিছু একটা পড়িয়ে দেয় নিরুকে, এরপর শুভ নিজ হাতে ভালো শাড়ি গয়না পড়িয়ে নিরুকে কোলে করে সিড়ি পর্যন্ত নামায়, ডায়নিং এ কেউ নাই দেখে দরজা খুলে নিরুকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।

__ “ এভাবে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? ”

__ “ সরি পাখি টা, তোমাকে খুব কষ্ট দিয়ে ফেললাম। ”

__ নিরু শুভর বুকে মাথা রাখে কষ্টে।
শুভ নিরুকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে নিজে ড্রাইভ করে হসপিটাল এ নিয়ে যায় গাইনোকোলজিস্ট এর কাছে। ট্রিটমেন্ট নিয়ে বাসায় ফিরতে রাত ১২ টা বেজে যায়। বাসায় সবাই টেনশন শুরু করে দিয়েছিলো ওরা কোথায় গেছে সেটার জন্য। ফোন টাও শুভ ঘরে ফেলে গিয়েছিলো।

ঘরে ঢুকতেই শুভর মা জিজ্ঞেস করে,

__ “ কিরে হুট করে কাউকে কিছু না বলে কোথায় উধাও হয়ে গিয়েছিলি। ”

__ এর উত্তর শুভ দিতে পারবেনা তাই নিরু বলে, “ আম্মা, আজ দুপুরে বেশি স্নান করেছি, তাই খুব জ্বর চলে এসেছিলো, তাই উনি কাউকে কিছু না বলে ডাক্তার এএ কাছে নিয়ে গিয়েছিল। ”

__ শুভ মনে মনে উত্তর খুঁজে পাচ্ছিলো না, তখন নিরুর এমন উত্তর শুনে ভাবে “ মেয়েটা ছোট হলে কি হবে চালাক আছে অনেক। ”

শুভর মা আর কথা বাড়ায় না, শুভরা ঘরে গেলে ওদের ঘরে খাবার পাঠিয়ে দেয়। রাতে ডিনার শেষ এ নিরু ঔষধ খেয়ে আগে আগে শুয়ে পড়ে। খুব ক্লান্ত আর ব্যথায় অস্থির আছে নিরু। শুভ সব গুছিয়ে রেখে নিরুর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়,

__ “ কি হলো? ঘুমাবেন না? ”

__ “ তোমায় কষ্ট দিতে চাইনি পাখি, বাধ্য হয়ে তোমার সাথে আজ এমন করেছি, মাফ করে দাওনা প্লিজ। ”

__ “ আপনি আমার স্বামী, আপনি আপনার অধিকার থেকে যা খুশি করতে পারেন, আমি আপনার ডাকে সাড়া দিতে বাধ্য। ”

__ “ আমি কখনো চাইনি আমার বাচ্চা বউটার উপর এমন স্বামীর অধিকার ফলাতে। ”

__ “ আমি তো কখনোই আপনাকে বাধা দিতাম না।”

__ “ আমায় বিশ্বাস করু নিরু পাখি, তোমার সাথে এমন করতে চাইনি, শুধুমাত্র তোমাকে বাঁচাতে এমন করেছি। তোমার মায়ের খুনের প্রতিশোধ ও নিতে হবে। ”

__ “ কি বলছেন? আমার মা খুন হয়েছিলো? ”

__ “ তুমি জন্মের সময় মারা যায়নি তোমার মা, তাকে হত্যা করা হয়েছিলো। আর এখন তোমাকে সরিয়ে দিতে চাচ্ছে খুনীরা। আর তুমি রুবি ভাবীর সাথে বেশি মিশবে না। আমি বাসায় না থাকলে একা থাকবেনা। ”

__ “ কে আমায় মারতে চাই, মা কে কেনো মেরেছে? বলুন না প্লিজ। ” নিরুর চোখে পানি চলে আসে।

__ “ সময় হলে সব বলবো। এখন ঘুমাও, আগে সুস্থ হয়ে উঠো এরপর সব জানতে পারবে। ”

__ “ কি ক্ষতি করেছি আমি বলুন তো? ”

__ “ তুমি ক্ষতি করোনি, তুমি নিষ্পাপ, পাপী তো তারা যারা তোমার মা কে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়ে সুবিধা ভোগ করছে, আর খুনী তার সব প্রমাণ লুকিয়ে দিয়েছে। আমি এবার আসল খুনী কে ধরবো যেভাবেই হোক। তারজন্য তোমাকে প্রেগন্যান্ট হওয়া লাগবে। আসল খুনী ধরা তখনি সম্ভব, যখন তুমি প্রসব বেদনায় ছটফট করবে। ”

__ “ এসব কি বলছেন আপনি, আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। ”

__ “ পরে বুঝিয়ে বলবো, এখন ঘুমাও। ”

__ “ একটা প্রব্লেম হয়েছে। ”

__ “ রিমি খুব বড় ভুল করতে যাচ্ছে। ”

__ “ তুমি তার ভাবী, তাকে বুঝিয়ে বলবে, তাহলে দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। ”

__ “ সিরিয়াসলি নেন বিষয় টা কে, প্লিজ হেয়ালি করেন না। ”

__ “ কি হয়েছে বলো, রাগ করছো কেনো এতো? ”

__ “ রিমি একজনের সাথে রিলেশন এ জড়িয়ে পড়েছে, প্লিজ ডু সামথিং।

__ “ কি বলছো তুমি, ও এসব করেনা। ”

__ “ কার প্রেমের জালে ফেঁসেছে রিমি সেটা জানেন? ”

__ “ কে?”

__ “ রাকিব ”

__ “ এটাই হবার ছিলো, তোমার ফুপির চাল সব বুঝেছি। ” রাগ করে পাশের টি টেবিলে আঘাত করে বসে শুভ। এতে নিরু একটু ভয় পেয়ে যায়।

__ “ আজ রাকিবের ছবি দেখিয়েছে রিমি, ওকে বুঝিয়ে বলার পর ও বলেছে রাকিব কে ছাড়া মরে যাবে রিমি, এখন আমরা কি করতে পারি সেটা বলুন প্লিজ। আমি চাইনা ওর মতো বাজে ছেলের ফাঁদে পড়ে রিমির জীবন টা নষ্ট হোক। ”

__ “ ওদের ট্রাপ রিমি না, তুমি ”

__ “ মানে? ”

__ “ ভাবতে দাও, পরে বুঝিয়ে বলবো। এখন মাথা ঠান্ডা করে ঘুমাও। ”
শুভ পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে, নিরু কিছুক্ষণ জেগে থেকে সেও ঘুমিয়ে পড়ে।

সকাল সকাল সাগর জরুরী কাজ আছে বলে বেরিয়ে যায় অফিসে, তখন রুবির ফোনে কল আসে লুতফা বেগমের, সাগর রুমে থাকে তাই মায়ের ফোন রিসিভ করেনা। সাগর নেই বলে ফোন টা রিসিভ করে নেয়, ওপাশ থেকে বলে,

__ “ কেমন আছিস রুবি মামনি?”

__ “ তা জেনে তুমি কি করবে আম্মু। আর আমাকে ফোন না দিলে খুশি হবো। ”

__ “ কি বলছিস তুই মা, যার জন্য এতো দিন যাবত এতো কিছু করলাম, আর আজ সেই মেয়ে আমাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। ”

__ “ হ্যাঁ দিচ্ছে, আমার জন্য তুমি সৎ পথে কিছুই আর্ন করোনি, যা করেছো সব অসৎ পথে। কিভাবে তোমার অসৎ পথের অর্জন আমি নিবো বলো। তোমার না হয় পরকালের ভয় নেই আমার আছে। যে বোন কে হত্যা করতে বলেছিলে, সেই বোন আমাকে বাঁচানোর জন্য প্রাণপন চেষ্টা করেছে, আমার ভালোবাসা আমাকে রাস্তায় ছুড়ে ফেলতে চেয়েছিলো, আমার স্বামী কেও ফিরিয়ে দিয়েছে। আর তুমি সেই বোন কে খুন করতে বলছো? আমি পারবোনা আম্মু, নো তুমি আমার আম্মু না, একজন খুনী কখনো মা হয় না। ”

__ “ এভাবে বলতে পারলি রুবি? আমি তোকে ৯ মাস ১০ দিন পেটে ধরেছি, তোর জন্মের পর থেকে কতো কিছু সহ্য করেছি। আর তুই কিনা সেইই মা’কে অস্বীকার করছিস । ”

__ “ তোমার মতো মহিলার সাথে কথা বাড়াতে চাইনা। ” বলে রুবি ফোন কেটে দেয়।

নিরুর ঘুম ভাঙেনি দেখে শুভ আর না ডেকে নিজে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে অফিসে চলে যায়। তখন রুবি নিরুর ঘরে ঢুকে নিরুর পাশে গিয়ে বসে।

চলবে….

প্রেমের_পরশ  পার্ট_12

0

প্রেমের_পরশ
পার্ট_12
#জামিয়া_পারভীন

নিরু এই প্রথম সাহস করে শুভর দিকে এগিয়ে যায়, চোখ থেকে কাজল হাত দিয়ে ঘষে তুলে শুভর গলার পিছনে লাগিয়ে দেয়। শুভ শিহরিত হয়ে ওঠে। তখন নিরু শুভ কে বলে,
__ “ আমি ছাড়া আর কারোও নজর লাগবেনা আপনার উপর। ”

__ “ কি ব্যপার, আজ মেঘ না চাইতেই জল, যে বউ কাছে আসে না, আজ তার তার আগমন, একি আমার সৌভাগ্য নাকি দুর্ভাগ্য।”

__ “ এমন করে বলছেন, মনে হচ্ছে আমি খারাপ বউ। ”

__ “ হতেও তো পারো? ”

__ “ কিহহহহহহ? ”

__ “ নাহ, কিছুই না।” বলে নিরুকে বাহুডোরে আঁকড়ে ধরে শুভ। নিরু ও শুভ কে শক্ত করে ধরে, তখন শুভ একটা গান কে কবিতার মতো করে বলে শোনায় নিরু কে,
তোমার চোখের কাজলে আমার ভালবাসার কথা লেখা থাকবে,
আমায় ভালবাসবে আর মনে রাখবে।
তোমার স্মৃতির আঁচলে আমার প্রেমের প্রদীপখানি জানি ঢাকবে।
আমায় ভালবাসবে আর মনে রাখবে।
তোমার চোখের কাজলে আমার ভালবাসার কথা লেখা থাকবে,
আমায় ভালবাসবে আর মনে রাখবে।
জীবনের একদিকে ভাঙন আবার আর একদিকে সৃষ্টি।
পাহাড়ের একদিকে রোদ্দুর আবার আর একদিকে বৃষ্টি।
এই বৃষ্টি রোদে ভিজে তুমি আমায় পিছু ডাকবে।
ভালবাসবে আর মনে রাখবে।
তোমার চোখের কাজলে আমার ভালবাসার কথা লেখা থাকবে,
আমায় ভালবাসবে আর মনে রাখবে।
তোমার স্মৃতির আঁচলে আমার প্রেমের প্রদীপখানি জানি ঢাকবে।
আমায় ভালবাসবে আর মনে রাখবে।
তোমার চোখের কাজলে আমার ভালবাসার কথা লেখা থাকবে,
আমায় ভালবাসবে আর মনে রাখবে।
প্রেমেরই একটি নাম হাসি, আবার আর একটি নাম দুঃখ।
চলারই পথ কোথাও সহজ আবার কোথাও বা সে রুক্ষ।
সেই কান্না হাসির আলো ছায়ায় আমার ছবি আঁকবে।
ভালবাসবে আর মনে রাখবে।
তোমার চোখের কাজলে আমার ভালবাসার কথা লেখা থাকবে,
আমায় ভালবাসবে আর মনে রাখবে।
তোমার স্মৃতির আঁচলে আমার প্রেমের প্রদীপখানি জানি ঢাকবে।
আমায় ভালবাসবে আর মনে রাখবে।
তোমার চোখের কাজলে আমার ভালবাসার কথা লেখা থাকবে,
আমায় ভালবাসবে আর মনে রাখবে।

__ “ জানেন, কেউ কখনো এমন করে কবিতা শুনায় নি, এতো ভালো লাগলো আমি মুখে প্রকাশ করতে পারবোনা। ”

__ “ এখন তো ছাড়ো, পরে আদর করে পুষিয়ে দিবো, এখন কতো কাজ আছে জানো? দুপুর হয়ে এসেছে, বাসায় থাকলে জানোই তো ঠিক টাইম মতো ডাইনিং টেবিলে যেতে হয়। ”

__ “ দূরে সরিয়ে দিচ্ছেন বুঝি তো সব।”

__ “ আরে পাগলী, এতে রাগ করার কি আছে? ”

__ “ মোটেও রাগ করিনি, হুহহহহ। ”

শুভকে ছেড়ে দিয়ে পিছনের দিকে পা বাড়াতে যাচ্ছিলো, নিরু খেয়াল করেনি ওর ভেজা চুল থেকে পানি পড়েছে মেঝেতে, সেই পানিতে পা স্লিপ করে পড়ার সময় শুভকে ধরতে গিয়ে শুভর টাওয়েল এর উপর হাত পড়ে, টাওয়েল তো খুলে যায় , শুভ নিরুকে ধরতে গিয়ে শুভ নিরুর উপর পড়ে যায়।

__ দুজন কিছুক্ষণ একে অপরের দিকে তাকিয়ে থেকে নিরু বলে, “ উঠুন, আর ড্যাবড্যাব করে তাকাতে হবেনা, আমাকে নজর লেগে যাবে। ”

__ “ লাগেনি তোমার? ”

__ “ না লাগেনি, এখন লাগছে, আপনার হাতির মতো শরীরের ভার নিতে পারছিনা, আমি একটা বাচ্চা মেয়ে, আপনার মতো হাতির ভর সহ্য করতে পারি বলুন?”

__ “ কি বললে তুমি? আমি হাতি? ”
__ “ হুমম, এখন আমাকে উদ্ধার করুন প্লিজ। ”

শুভ নিরুকে ছেড়ে দিয়ে উঠে যায় , নিজের দিকে আর খেয়াল করেনি, নিরু চোখের সামনে শুভকে ওমন অবস্থায় দেখে,

__ “ আ আ আ আ আ আ আ আ ” বলে চিল্লিয়ে কোন রকম উঠে দৌড় দেয় নিরু।
শুভ মনে মনে বলে “ এতো পুরো ই পাগলী ” বলে নিচের দিকে খেয়াল হয়, শুভ এবার নিজেই লজ্জায় পড়ে যায়।

….
__ “ কিরে কি হয়েছে? ওমন করে চিৎকার দিয়ে নিচে নেমে এলি যে? ”

__ “ আম্মা আ আ, ও ও ও মানে ধেড়ে ইঁদুর। ”

__ “ এই বাড়িতে ইঁদুর আসলো কোথেকে? তাও এতো তোতলাচ্ছিস কেনো? ”

__ “ না মানে আম্মা আ আ আ, বলছিলাম কি দুপুর দুইটা বাজে, এখন তো লাঞ্চ টাইম তাইনা?”

_ “ এইই কথা ঘোরাচ্ছিস কেনো রে? থাম শুভকে জিজ্ঞেস করে আসি?”

__ “ না আ আ আ, আম্মা খুব খিদে পেয়েছে। ”

ক্ষুদা পেয়েছে শুনে শাশুড়ি আম্মা তাড়াতাড়ি সবাইকে খেতে ডাকলেন । রিমি আর রুবি কে রুমে খাবার পাঠিয়ে দেন বুয়ার মাধ্যমে। শুভ ডাইনিং এ আসলে নিরু লজ্জা পেয়ে অন্য দিকে মাথা ঘুরিয়ে নেয়। তখন খেয়াল করে শুভর বাবা আসছে।

নিরু উঠে গিয়ে চেয়ার টেনে দিয়ে বসতে দেয়,

__ “ আহহ বৌমা, তুমি কেনো এসব করছো? ”

__ “ ভালো আছেন আব্বু? ”

__ “ হ্যাঁ রে মা ভালো ই আছি। আজকাল নিজের ছেলেরাও খোঁজ খবর নেয় না , তোর খোঁজ নিয়ে কি হবে? ”

__ “ কি বলেন আব্বু, আমরা আপনার খোঁজ খবর নিই না, এটা তো অপবাদ হয়ে যাচ্ছে। ” শুভ বলে ফেলে
__ “ আর নেকা সাজতে হবেনা বাবা, একটা বার কি ঘরে গিয়ে দেখেছো আমি বুড়ো মানুষ সারাদিন কি করি। ” শুভর বাবা বলেন।

__ “ আচ্ছা আব্বু এইযে আমরা সবাই মিলে একসাথে খাওয়া দাওয়া করি, খেতে বসে কথা বলি। এইগুলি তো আমার ই বানানো নিয়ম তাইনা বলো? যেন আমরা ফুল ফ্যামিলি একসাথে থাকতে পারি। ”

__ “ হ্যাঁ রে বাবা, তুই আমার খুব্বি ভালো ছেলে, একটু অভিমান ও করতে পারবোনা, বউ পেয়ে আমায় ভুলে গেলে তাই। ”

__ “ এসব কি বলেন আব্বু, বউ পেয়ে ভুলে গেছি মানে? ” নিরুও লজ্জায় পড়ে যায়, আর শুভর বাবা মা ছেলে আর ছেলের বউয়ের সাথে মজা করছে, তাই উনারা দুইজন মুখ টিপে হাসছিলেন।

__ “ ছোট বেলায় আমার কোলে করে গোটা বাড়ি ঘুরেছিস, আজ আমায় একটু কোলে নিবি তা না। বউ কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিস। ”

__ “ হয়েছে হয়েছে থামো, ছেলে মেয়ে দুটো কে আর লজ্জা দিও না। ”
শুভর মা বলে।

__ “ কি যা তা বলছো আব্বু, নিরুকে কোলে নিলাম কখন আজ?”

__ “ ওই যে বাসর রাতে কোলে নিয়ে ঘরে ঢুকলে, ভুলে গেছো বাছা। ”

নিরু এবার লজ্জা পেয়ে পালিয়ে যায়।

__ “ দেখেছো আম্মা, আব্বু দিন দিন বাচ্চা হচ্ছে। একটু আব্বুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেও তো পারো। ”

__ “ উফফফ থামবে এবার, চুপচাপ সবাই খেয়ে নাও। ” শুভর মা রেগে গিয়ে বলে।

সবাই লাঞ্চ শেষ করে যে যার মতো ঘরে যায়, শুভ নিজের ঘরে গিয়ে দেখে নিরু নেই। এদিকে নিরু রিমির রুমে এসে রিমির পাশে শুয়ে আছে কম্বলের নিচে। বিকালের দিকে রিমির রুমে রুবি আসে, নিরু কম্বলের নিচে থাকায় খেয়াল করেনি।

__ “ কেমন আছো রিমি? ”

__ “ তুমি জেনে কি করবে ভাবী? ”

__ “ মাফ করে কি দেয়া যায়না রিমি তোমার এই ভাবী টাকে? ”

__ “ যদি আমি মরে যেতাম কার কাছে ক্ষমা চাইতে? ” নেহাত ভাইয়া তোমায় ভালোবাসে, নইলে? ”

__ “ আমি জানি রিমি, নিরুর এতো ক্ষতি করতে গিয়ে তোমার ক্ষতি হয়ে গেলো। আর নিরুই কিনা আমায় বাঁচানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলো। যাকে কখনো বোন বলে মর্যাদা দিইনি। সেইই আমার জন্য কতো কিছু করছে? ”

__ “ তুমি এতো ই অকৃতজ্ঞ যে বোনের কাছে ক্ষমা ও চাওনি। আসলে সব তোমার ইগো।”

__ “ ছাদে যাবে একটু, খোলা বাতাসে অনেকদিন যায়নি। ”

__ “ আমি এখন যেতে পারবোনা, ভাবী পাশে ঘুমিয়ে আছে। ”

রুবি তখন খেয়াল করে রিমির পাশে কেউ শুয়ে আছে।

__ “ ওহহ, সরিই, এখন আসি তাহলে।”

নিরু কম্বলের ভিতর থেকে মাথা বের করে বলে,
__ “ যাও রিমি, ঘুরে আসো। ”

__ “ কি ব্যপার, তুমি ঘুমাওনি? ”রিমি জিজ্ঞেস করে।

__ “ আরে না, শীত করছে, তাই ভিতরে ঢুকে আছি। ”

__ “ তুই ও চল না নিরু, বোনের সাথে। ” রুবি নিরুকে বলে।

__ “ ইমোশনাল ব্লাকমেইল করছো নাকি মন থেকে বলছো আপু। ”

__ “ আমি জানি তুই আমায় বিশ্বাস করতে পারছিস না, মন থেকে চাচ্ছি ভালো হয়ে যেতে। দুজনে ক্ষমা করে দাও না। ” বলে হাত জোড় করে ধরে রুবি।

__ “ আরে আরে, করছো কি? চলো ছাদে যাই, রিমি চলো তো। ”

আজ অনেকদিন পর রুবির কাছে জীবন টা মুক্ত পাখির মতো লাগছে। মিষ্টি ছোট বোন, ননদের সাথে মন খুলে গল্প করে রুবি। অনেক হাসাহাসি করে সন্ধ্যার আগে আগে নেমে আসে তিনজন ই।
নিচে এসে নিরু নাস্তা বানায় সবার জন্য, সন্ধ্যায় সবাইকে নাস্তা দিয়ে শুভর রুমে যায় নিরু।

__ “ কি ব্যাপার ম্যাম? সেই যে গেলেন, একেবারে নিখোঁজ হয়ে আছেন আপনি যে।”

__ “ আপনার নাস্তা, খেয়ে নিন আগে, কফি আনছি একটুপর। ”
উত্তরের অপেক্ষা না করে নিরু বেরিয়ে আসে। জানেই তো পাশে থাকলে লজ্জা দিবে।
কিছুক্ষণ পর নিরু আবার আসে কফি নিয়ে,

__ “ এই মেয়ে তুমি খেয়েছো তো? ”

__ “ জ্বী খাচ্ছি। ”

__ “ বসো আমার পাশে।”

__ “ কেনো? ”
শুভ নিরুর হাত ধরে টেনে নিজের পাশে বসিয়ে দেয়।

চলবে……………

প্রেমের_পরশ পার্ট_11

0

প্রেমের_পরশ
পার্ট_11
#জামিয়া_পারভীন

শুভ সব কিছু শুনে কি করবে, কি বলবে কিছুই না বুঝতে পেরে বাইরে বের হয়ে আসে। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে, কোন কিছুর সমাধান না পেয়ে পাশের চায়ের দোকানে এক কাপ চা খায় শুভ, অন্য কোন নেশা নেই শুধু চা ছাড়া। বাসায় এসে নিরু কে ডাকতে থাকে,
__ “ জ্বী বলুন কিছু হয়েছে কি?” বেশ চিন্তিত স্বরে নিরু জিজ্ঞেস করে।

__ “ ভালো লাগছেনা কিছুই, এক কাপ কফি হবে? ”

__ “ জ্বী, এখুনি নিয়ে আসছি। আপনি ঘরে যান, ফ্রেশ হন। ”

__ “ ওকে ডার্লিং। ”

__ “ পাগল হলেন। ”

__ “ হুমম, তাড়াতাড়ি এসো। ”

শুভ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে সোফায় বসতেই নিরু কফি ট্রে তে নিয়ে রুমে আসে। সাথে গাজরের হালুয়া আর পানি।
__ “ এসব তো চায়নি আমি, এগুলো তুমি খেয়ে নাও।”

__ “ সারাদিন কি খেয়েছেন না খেয়েছেন কোন ঠিক আছে কি? খালি পেট এ কফি খেলে এসিডিটি বাড়বে। অল্প একটু হালুয়া খেয়ে পানি পান করবেন। আর কোন কথা শুনতে চাচ্ছিনা। ”

__ “ পিচ্চি বউ দেখি আমায় শাসন শুরু করেছে। ”

__ “ যদি শাসন মনে হয় তাহলে শাসন, কেয়ার মনে করেন তো কেয়ার করছি। ”
শুভ নিরুর কথা মতো হালুয়া খেয়ে পানি পান করে কফির মগে চুমুক দেয়। শুভ জিজ্ঞেস করে,

__ “ হালুয়া টা কে বানিয়েছে? ”

__ “ ভালো হয়নি বুঝি? ”

__ “ মোটেও ভালো হয়নি। ”

__ “ কি বলছেন? এতো যত্ন করে বানালাম, আপনি কিন্তু বদনাম করছেন। ”

__ “ সত্যিই ভালো হয়নি, মিষ্টি কম হয়েছে। ”

__ “ না মিষ্টি ঠিকই আছে, আপনার যত মিথ্যে কথা। ”

__ “ সিরিয়াসলি মিষ্টি কম হয়েছে। ” কফির মগ টা টেবিলে রেখে দিয়ে বলে।
নিরু কান্নার স্বরে বলে,

__ “ আমি আর কখনো আপনার জন্য কিছুই বানাবোনা। ”
ততক্ষণে শুভ নিরুকে হাত ধরে টেনে নেয় কাছে, পিঠের দিকে হাত দিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে, নিরুর হার্টবিট বেড়ে গেছে, বুকের ধকধক শব্দ শুভ অনুভব করতে পারছে। নিরুর মুখের কথা যেন হারিয়ে গেছে ঘনঘন নিঃশ্বাস ছাড়ছে নিরু, শুভর ঠোঁটে নিঃশ্বাস পড়ছে নিরুর। নিরু ভয়ে, লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নিয়েছে। শুভ নিরুর ঠোঁট নিজের ঠোঁট দিয়ে আলতো স্পর্শ করে, নিরু শুভর গলার কাছে খামচিয়ে ধরে।
শুভর যেন এতটুকু ও লাগেনি। ঠোঁট দিয়ে গভীর ভাবে নিরুকে চুমু দিয়ে ধরে রাখে। বেশ কিছুক্ষণ পর শুভ নিরুর ঠোঁট ছেড়ে গলায় কিস দেয়। নিরুর শিহরণ আরও বেড়ে যায়, নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলে শুভ আরোও বেশি করে চেপে ধরে। নিরু কে কোলে উঠিয়ে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে শুভ বিছানায় নিরুকে চেপে ধরে, কিস দিয়ে ভরিয়ে দেয় নিরুর গলা, ঠোঁট, গাল, কপাল। শুভ নিরুর শাড়ির আঁচল সরাতে গেলে একটু হালকা হতেই নিরু শুভকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। কোনরকম বিছানার একপাশে জড়োসরো হয়ে বসে কাঁপতে থাকে।

__ “ এমন কি করেছি যে বার বার সরিয়ে দাও। ” রাগী গলায় শুভ বলে।
নিরু ভয়েই কেঁদে দেয়। শুভ আবার ধমকিয়ে বলে,

__ “ কি হলো কথা বলছনা কেনো? ”

__ তাও চুপচাপ ফুঁপিয়ে কাঁদছে।

শুভ নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে বিছানায় উঠে নিরুকে টেনে নিয়ে আসে। নিরু চোখ বন্ধ করে মাথা নিচের দিকে নামিয়ে নেয়।

__ “ ভয় পেয়ো না, তোমার অনিচ্ছায় তোমাকে আর স্পর্শ করবোনা। নিশ্চিন্তে থাকতে পারো, ভুল হয়ে গিয়েছে অনেক, এর আগেও বলেছিলাম, তাও স্পর্শ করে ফেলেছি। আর যদি তোমার কোন পছন্দের ছেলে থাকে, তাহলে বলতে পারো। তোমায় তার হাতে তুলে দিয়ে আসবো।

__ “ নাহহহ, পছন্দের কেউ নাই। ” বলে নিরু শুভর বুকে মাথা দিয়ে জড়িয়ে ধরতে যায়। তখন শুভ সরিয়ে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।

রাতে ডিনার সেরে শুভ বালিশ নিয়ে সোফায় শুয়ে পড়ে। নিরু নিজের ভুলের জন্য নিজেকে কিছুক্ষণ বকাঝকা করে বসেই বিছানে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। হালকা শীত ছিলো, কাঁপতে শুরু করেছে।

সকালে নিরুর ঘুম ভেঙে শুভকে রুমে দেখতে পায়না। কম্বল তো গায়ে দিয়ে এতো সুন্দর হয়ে শয়নি রাত্রে,
“ এখন এতো সুন্দর করে শুয়ে আছি কিভাবে? ” মনে মনে ভাবে। যাই হোক ঘড়ির দিকে তাকাতেই চোখ কপালে উঠে। “ হায় আল্লাহ! ১১ টা বাজে, আমি এতো বেলা করে ঘুমালাম। ” তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে সব গুছিয়ে নিচে নামে।

__ “ এখন কেমন আছো বউমা। ” শুভর মা জিজ্ঞেস করে।

__ “ জ্বী আলহামদুলিল্লাহ, দুঃখিত আম্মা, ক্ষমা করবেন। আজ সময় মতো উঠতে পারিনি। ”

__ “ কিছু কি বলেছি তোমায়? অসুস্থ হলে ঘুমাতেই পারো। এখন নাস্তা করে ওষুধ খেয়ে নাও। ”
আম্মার কথা শুনে অবাক হয়ে নিজের কপালে হাত দিয়ে দেখে সত্যিই জ্বর এসেছে। একটু দুর্বল লাগছিলো বটে কিন্তু চিন্তায় আর খেয়াল করা হয়নি। “নিশ্চিত রাত্রে শুভর সেবা যত্ন পেয়েছি, ইসস ভুলে গেলাম কেনো? ” নিরু বেশি কথা না বাড়িয়ে নাস্তা করে ওষুধ খেয়ে নেয়। বুয়া এক মগ কফি দিয়ে যায়। কফি খেয়ে এখন বেশ ফুরফুরা মেজাজে আছে নিরু। আম্মার সাথে গল্প করে রিমির ঘরে যায়।

__ “ এই রিমি, এখন কেমন আছো? ”

__ “ এইতো ভাবী, তুমি এখন কেমন আছো?”

__ “ কি ব্যাপার, এতো বিষন্ন মুখে বসে আছো কেনো? ঝগড়া হয়েছে নাকি? ”

__ “ কি যে বলোনা তুমি? ”

__ “ কাকে পছন্দ করেছে আমার ননদিনী, দেখি তার ছবি? ”

__ “ ভাবীইইইই, এমন কেনো করো? ”

__ “ না ছবি দেখালে তোমার ভাইকে বলে দিবো তো। ”

রিমি বাধ্য মেয়ের মতো নিরুকে ওর পছন্দের ছেলের ছবি দেখায়। নিরু ছবি দেখে কিছুক্ষণ হতবিহ্বল হয়ে বসে থেকে বলে,
__ “ তুমি কি ওকে খুবই ভালোবাসো?”

__ “ আমি ওকে ছাড়া বাঁচবোনা ভাবী।”

__ “ আমরা বুঝি কেউ না, আমাদের কোন দামই নেই তাহলে। ”

__ “ এভাবে বলিও না ভাবী, আমি ওকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি। ”

__ “ আমি যদি বলি অই ছেলেকে ভুলে যেতে, তুমি কি শুনবে? ”

__ “ এসব কিভাবে বলতে পারলে, আমি কিছুতেই ভুলতে পারবোনা। ”

নিরু আর কথা না বাড়িয়ে নিজের ঘরে চলে আসে। “ নাহহ, এ হতে পারেনা, রিমি কে কিভাবে বলবো, ওই ছেলে ভালো না? ” মনে মনে চিন্তা করছে নিরু।
চারিদিকে সব কিছু আজ আধার মনে হচ্ছে, কিছুই ভালো লাগছেনা, অস্থিরতা বাড়ছে নিরুর ভিতর। ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে বসে পড়ে নিরু।

শুভ আজ তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফিরেছে, মায়ের কাছে শুনে নিরু খেয়েছে। মনে মনে ভাবে, তাহলে মেয়েটা এখন সুস্থ আছে তাহলে। ঘরে এসে দেখে দরজা খোলা, ওয়াশরুমে এর দরজা খোলা। ভিতরে কেউ নেই ভেবে ঢুকে দেখে নিরু ঝর্ণা ছেড়ে বসে আছে। পুরো শরীরের কাপড় ভিজে আছে, পিঠের দিক ফাঁকা, কাপড় সরে গিয়েছে। নিরু কে এমন দেখলে শুভর মাথা ঠিক থাকেনা তাই রুমে এসে অপেক্ষা করতে থাকে। ড্রেস খুলে নিরুর জন্য ওয়েট করে, কখন নিরু বের হবে, শুভ নিজেও ঢুকবে তাই।
আধা ঘণ্টা হয়ে গেলো দেখে শুভ আবার ওয়াশরুমে গিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে নিরু সেম ভাবেই বসে আছে। শুভর এইবার মাথা টা খারাপ হয়ে যায়, “ অসুস্থ শরীরে, শীতের দিন এইভাবে পানিতে ভিজার মানে কি?” জোরে করে চিল্লিয়ে বলে শুভ।

নিরু চমকিয়ে যায় শুভর গলায়, তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ায় নিরু। শুভ ভিতরে গিয়ে নিরুকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। নিরুর সামনের দিকেও শাড়ি ঠিক নেই, ভিজে গিয়ে বেশি আকর্ষণীয় লাগছে শুভর কাছে। শুভ নিজেকে কন্ট্রোল করে শাড়ি খুলে ফেলে নিরুর। শাওয়ার অফ করে টাওয়েল দিয়ে নিজ হাতে মাথা মুছিয়ে দেয়। শরীর মুছিয়ে দিয়ে বাকি কাপড় খুলতে গেলে নিরু বাধা দেয়।

__ “ তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করো, নইলে জানে মেরে ফেলবো বলে দিলাম।”

__ “ জ্বী, ভুল হয়ে গেছে। ”
নিরু রুমে গিয়ে শাড়ি পড়তে শুরু করে , শুভ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে নিরুর চেঞ্জ করা দেখে ফেলে।
নিরু পিছন ঘুরে শুভকে দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। শুভর আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করতে থাকে নিরু।

ভেজা চুল, ফরসা গাল, ১৬ দিন দাঁড়ি সেভ না করায় অল্প সল্প দাঁড়ি বের হয়েছে, খালি গা য়ে বুকের লোম গুলোর দিকে চোখ আটকিয়ে যায় নিরুর। ছোট ছোট লোম, প্রসস্থ বুক, মনে হচ্ছে নিরুকে শুভর বুক কাছে টানছে। নিরুর খুব ইচ্ছে করছে শুভর বুকের লোমগুলো টেনে দিতে। একটা টাওয়েল পড়ে দাঁড়িয়ে আছে শুভ, লোমশ পা দুটো ও দেখতে পাচ্ছে নিরু। এভাবে তো এতোদিন দেখা হয়নি। “ ইসস না পারছি চোখ সরাতে না তাকিয়ে থাকতে পারছি, লজ্জাও লাগছে। শুভ যে কি ভাবছে কে জানে? সেও তো আমার দিকে তাকিয়ে আছে।” মনে মনে নিরু ভাবে।
এমন সময় শুভ নিরুকে বলে,

__ “ কি ম্যাম, এমন ভাবে তাকালে তো নজর লেগে যাবে। ”

নিরু এই প্রথম সাহস করে শুভর দিকে এগিয়ে যায়, চোখ থেকে কাজল হাত দিয়ে ঘষে তুলে শুভর গলার পিছনে লাগিয়ে দেয়। শুভ শিহরিত হয়ে ওঠে। তখন নিরু শুভ কে বলে,

__ “ আমি ছাড়া আর কারোও নজর লাগবেনা আপনার উপর। ”

চলবে….

https://golpopoka-4ad355.ingress-bonde.easywp.com/boro-golpo/%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%b0%e0%a6%aa%e0%a6%b0%e0%a6%b6-part_1/https://golpopoka-4ad355.ingress-bonde.easywp.com/boro-golpo/%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%b0_%e0%a6%aa%e0%a6%b0%e0%a6%b6-part_2/https://golpopoka-4ad355.ingress-bonde.easywp.com/boro-golpo/%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%b0_%e0%a6%aa%e0%a6%b0%e0%a6%b6-%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%9f_3/https://golpopoka-4ad355.ingress-bonde.easywp.com/boro-golpo/%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%b0_%e0%a6%aa%e0%a6%b0%e0%a6%b6-%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%9f_4/https://golpopoka-4ad355.ingress-bonde.easywp.com/boro-golpo/প্রেমের_পরশ-পার্ট_5/https://golpopoka-4ad355.ingress-bonde.easywp.com/boro-golpo/প্রেমের_পরশ-পার্ট_6/https://golpopoka-4ad355.ingress-bonde.easywp.com/boro-golpo/প্রেমের_পরশ-পার্ট_7/https://golpopoka-4ad355.ingress-bonde.easywp.com/boro-golpo/প্রেমের_পরশ-পার্ট_8/https://golpopoka-4ad355.ingress-bonde.easywp.com/boro-golpo/প্রেমের_পরশ-পার্ট_9/https://golpopoka-4ad355.ingress-bonde.easywp.com/boro-golpo/প্রেমের_পরশ-পার্ট_10/https://golpopoka-4ad355.ingress-bonde.easywp.com/boro-golpo/প্রেমের_পরশ-পার্ট_11/