Saturday, August 9, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 18



অনির পর্ব-০২

0

দ্বিতীয় পর্ব

আমি তীব্র অপরাধবোধে দগ্ধ হতে লাগলাম। ওকে আর চিঠি পাঠাবো না বলে নিজের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলাম। নাসিমকে সত্যিকারভাবে জেনে, ও যদি সম্পর্কে জড়াতে চায় তাহলে আমার তো কোন অসুবিধা নেই। আমি ওদের দুজনের মাঝখানে আসতে চাই না; যদিও ওকে একবার দেখার তীব্র আকাঙ্ক্ষা আমি কোনোভাবেই এড়িয়ে যেতে পারছিলাম না। এই চিন্তাটা জোর করে মাথা থেকে সরিয়ে নাসিমকে যখন চিঠি না লেখার কথাটা জানালাম তখন ওর চোয়াল ঝুলে পড়ল। ও কাতর গলায় বলল
– দোস্ত, এইভাবে গাছে ওঠাইয়া মই টাইনা নেওয়াটা কি ঠিক।? আর কয়টা মাসের মামলা একটু কোঅপারেট কর
– আর কয় মাস পর কি হবে?
– আমি ওর লগে দেখা করতে যামু। তখন সব বইলা দিমু। তর লগেও আলাপ করায়া দিমু। দেখবি তখন কত হাসবো আমরা সবাই। এইতো আর কয়টা দিন দোস্ত, একটু ওয়েট কর।

আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার সেই অজানা পথে হাঁটার জন্য পা বাড়ালাম, যার কোন গন্তব্য নেই।
আবার শুরু হলো আমাদের পত্র বিনিময়। আমি ধীরে ধীরে লক্ষ্য করছিলাম মেয়েটা নাসিমের মানে আমার প্রতি কেমন যেন মানসিকভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়ছিল। ছোট ছোট সমস্যার কথা চিঠিতে লিখত, কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে সেটাও জানাত। এরমধ্যে একদিন চিঠির একটা কথা আমাকে খুব নাড়া দিয়ে গেল। ও লিখেছে “আমার যখন খুব মন খারাপ হয় তখন তোমাকে চিঠি লিখতে ইচ্ছা করে, খুব জা্নাতে ইচ্ছা করে তোমার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছা করে কিন্তু আমি ফোন করি না। ফোনে তোমাকে কেমন অচেনা লাগে”।

তখন প্রকৃতি হেমন্ত শেষে শীতের আগমনী বার্তা জানান দিয়ে যাচ্ছে। চারিদিক কুয়াশাচ্ছন্ন, তার থেকেও বেশি কুয়াশায় ছেয়ে আছে আমার মন। আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি আর এসবের মধ্যে থাকবো না। ফোনে নাসিমের সঙ্গে ওর সম্পর্কের গভীরতা কতখানি আমি জানিনা, নাসিম ওকে কতটা বুঝিয়ে বলতে পারবে সেটাও জানি না, তবে একটা ব্যাপার আমি বুঝতে পারছিলাম ও যতটা না জড়িয়ে যাচ্ছে তার থেকে অনেক বেশি জড়িয়ে যাচ্ছি আমি নিজে। আমার জীবনে অন্য কেউ নেই। যদি থাকত তাহলে হয়তো বিষয়টা অন্যরকম হতো।
আমার ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা চলে এসেছে। এই অজুহাতে এসব থেকে বেরিয়ে আসবো বলে ঠিক করলাম। আমি ভেবেছিলাম নাসিম এটা জানালে হয়তো ঝামেলা করবে কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে ও বলল
– সমস্যা নাই আর কয়দিনের তো ব্যাপার।
আমি জোর করে অনিমাকে আমার মাথা থেকে সরিয়ে পরীক্ষায় মন দিলাম। পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই ঢাকার ট্রেনের টিকেট কাটলাম; কেন যেন এখানে আর ভালো লাগছিল না। মনে হল একবার বাবা মার সঙ্গে দেখা করে আসি।

ঢাকার উদ্দেশ্যে যেদিন রওনা দেব সেদিন অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম নাসিমও তৈরি হয়ে আমার সঙ্গে যাচ্ছে। আমি আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলাম
– তুই কোথায় যাচ্ছিস?
– ঢাকায়
– ঢাকায়। কেন? তোর বাড়ি তো এখানে
– যাই, একটু ডার্লিং এর সঙ্গে সময় কাটাইয়া আসি
– ঢাকায় কোথায় উঠবি? তোর না কেউ নেই ওখানে
– হোটেলে উঠুম। ডার্লিংরেও ডাইকা লমু
আমি কিছু বললাম না ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে রইলাম। নাসিম হাসতে হাসতে বলল
– আরে ফাইজলামি করতাছি দোস্ত। ফাইনাল কিছু তো আর করতে দিব না, এই হালকার উপর ঝাপসা যা পারি আরকি

আমি আর কিছু বললাম না। সত্যি কথা বলতে কি, আমার খুব খারাপ লাগছিল। কেন এত খারাপ লাগছিল নিজেই বুঝতে পারছিলাম না। ঢাকা যাচ্ছি প্রায় বছরখানেক পর, এর মধ্যে দুবার বাবা-মা এসে দেখা করে গেছে। বাড়িতে এসে ভীষণ ভালো লাগছিল। আমার পুরনো ঘর, বইয়ের আলমারি, পড়ার টেবিল বারান্দায় রাখা আমার ছোট ছোট গাছগুলো এখনো সেরকমই আছে। আমার ছোট বোন নাজমা এই গাছগুলোর ভীষণ যত্ন নেয়।

আসার পরপরই ওর সঙ্গে খানিকক্ষণ ঝগড়া হলো। আগে প্রতিদিন ওর সঙ্গে ঝগড়া না করলে আমাদের রাতে ঘুম হতো না। ভেবেছিলাম এতদিন পর দেখা হচ্ছে হয়তো জড়িয়ে ধরে কাঁদবে কিন্তু তা না, আসতে না আসতেই ঝগড়া শুরু করে দিল।
সবাইকে পেয়ে আমার নিভে যাওয়া মনটা ভালো হয়ে গেল। জোর করে নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম যে ওদের দুজনের দেখা হবে, নিশ্চই ওরাও ভালো থাকবে।

ডিসেম্বর মাস শেষ হয়ে এসেছে। নিউ ইয়ার চলে এসেছে। সনটা ১৯৯৯। পুরো একটা মেলিনিয়াম পার হয়ে যাচ্ছে, তাই নিউ ইয়ার নিয়ে সবার উত্তেজনা অন্যরকম এই বছর। আমি বরাবরই একটু লাজুক অন্তরমুখী মানুষ। এসব হৈ হুল্লোড় আমার ভালো লাগেনা, তাই নিউ ইয়ার নিয়ে আমার মধ্যে কোন,বাড়তি উত্তেজনা নেই। এদিকে নাজমা লাফিয়ে আছে থার্টিফার্স্ট নাইটে বাইরে যাবে বলে, বাবার কাছ থেকে অনুমতি পায়নি বলে আমাকে এসে ধরেছে। আমি পরিষ্কার জানিয়ে দিলাম এই বিষয়ে আমি কিছু করতে পারবো না। এক তারিখে কোন বন্ধুর বাসায় যেতে চাইলে তার জন্য সাহায্য করতে পারি কিন্তু থার্টি ফার্স্টে বাইরে থাকার ব্যাপারে আমি কোন সাহায্য করতে পারব না। নাজমা মন খারাপ করে চলে গেল। আমার একটু খারাপই লেগেছিল তখন কিন্তু এক তারিখ সকাল বেলা উঠে মনে হল ওকে বাইরে যেতে না দিয়ে বেশ ভালো হয়েছে।

ঢাকার টিএসসিতে থার্টিফার্স্ট নাইটে ভাল রকমের ঝামেলা হয়েছে। বাধন নামের এক মেয়েকে নিয়ে নানান কেলেঙ্কারি কথা পত্রিকায় উঠে এসেছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে নানান রকমের ঘটনা ঘটেছে বলেও পত্রপত্রিকায় এসেছে। এক তারিখ সকালে নাজমা আবার এসে আমাকে ধরল। বিকেলবেলা ওর এক বান্ধবীর বাসায় গেট টুগেদার আছে সেখানে পৌছে দিতে হবে।

কিন্তু দুপুরের পর ঘটলো অন্য ঘটনা। ভাত খেয়ে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলাম সেই সময় নাসিমের ফোন এলো। জানাল আজ বিকেলে ওরা ধানমন্ডি লেকে দেখা করবে। আমি একটু নিশ্চিন্ত বোধ করলাম। যাক, তার মানে হোটেলে দেখা করার ব্যাপারটা রসিকতা ছিল কিংবা অনিমা রাজি হয়নি।

আমি এসবের মধ্যে আর জড়াতে চাইছিলাম না। এখন তো ওদের মধ্যে সব ঠিকই হয়ে যাবে। সামনাসামনি একজন মানুষের আবেদনই অন্যরকম, এই কটা চিঠি লিখে আর কি এমন সম্পর্ক তৈরি হয়। তাছাড়া নাসিম দেখতে অসম্ভব সুদর্শন ওকে একবার দেখার পর যে কোন মেয়ে ওর প্রেমে পড়তে বাধ্য। কিন্তু নাসিম কোন রকম ঝুঁকি নিতে চাইল না, বলল আমাকে ওর সঙ্গে যেতে হবে। আজই পুরো ব্যাপারটা এসপার ওসপার করে ফেলতে চায় ও। চিঠি লিখতে আমি ওকে একটু সাহায্য করেছি এই ব্যাপারটা বলা পর্যন্তই আমার পার্ট, তারপর আমার যবনিকা পাত। আমারও মনে হল এটাই তো হওয়া উচিত। একটা সম্পর্ক শুরু হলে তার মধ্যে স্বচ্ছতা থাকাটা জরুরি,তাই আমি রাজি হয়ে গেলাম।

এত বছর পর আসলে আর লুকানোর কিছু নেই, সত্যি কথাটা আপনাদের বলি। ওকে একবার দেখার একটা প্রবল ইচ্ছা আমার মধ্যে ছিল। আমার কল্পনায় ওর একটা রূপ ছিল। আমি মিলিয়ে দেখতে চাইছিলাম আমার কল্পনার সঙ্গে সেটা কতটুকু মেলে। তাই যথাসময়ে আমি নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে গেলাম।

চলবে………

অনির পর্ব-০১

0

অনির
পর্ব-০১

আমাদের যখন বিয়ে হল তখন আমি অনার্স থার্ড ইয়ারের ছাত্র, অবশ্য থার্ড ইয়ার করলে ভুল হবে, কেবল থার্ড ইয়ার থেকে ফাইনাল ইয়ারে উঠেছি। বাবা-মা কেউ আমার বিয়েতে খুশি ছিল না। তাদের খুব স্বপ্ন ছিল আমি অনার্স পাশ করে মাস্টার্স করব, তারপর থিসিস শেষ করে পিএইচডি করতে দেশের বাইরে যাব, সেই সময় তারা দেখে শুনে তাদের পছন্দমত একটা মেয়ের সঙ্গে আমার বিয়ে দেবেন।
ছোটবেলা থেকেই আমি কখনো বাবা-মায়ের অবাধ্য হইনি, কখনো কোনো কিছুতে নিজের মতামত জাহির করিনি। হঠাৎ করেই বিয়ের বেলায় ছাত্র অবস্থানেই তাদের কাছে এসে হুট করে বললাম যে আমি একজনকে বিয়ে করতে চাই, ব্যাপারটা তাদের কাছে রীতিমতো শকিং ছিল। আমি নিজেও কি কোনদিন ভেবেছিলাম যে আমার সঙ্গে এরকম হবে; কিন্তু ওকে দেখার পর সব ওলটপালট হয়ে গেল, অবশ্য দেখার পর বলছি কেন, আমি তো না দেখেই ওর প্রেমে পড়েছিলাম। দেখে প্রেমে পড়েছিল আমার বন্ধু নাসিম। ভিন্ন শহরে থাকার কারণে ওদের প্রেমটা তেমন জমেনি। পরিচিত একজনের বাসায় দেখে ওকে ভালো লেগেছিল নাসিমের তারপর ও ফিরে গেছে ঢাকায় আমি আর নাসিম রয়ে গেছি চট্টগ্রামে। একই হলে একই রুমে থাকতাম।

সময়টা নব্বইয়ের দশক, এখনকার মতন তখন হাতে হাতে মোবাইল ফোন থাকত না। তাই কথা বলার কোনো সুযোগ ছিল না। চিঠি লেখাটাই ছিল একমাত্র ভরসা কিন্তু চিঠি লিখতে গেলেই ওর কলম ভেঙ্গে যেত। সে সময়েই চিঠি লেখার জন্য নাসিম আমার শরণাপন্ন হয়েছিল। আমি ওর হয়ে চিঠি লিখে দিতাম নাসিম সেটা কপি করে পাঠাত, আর সেই চিঠি লিখতে লিখতেই কবে যে আমি ওর মধ্যে ডুবে গেলাম নিজেও বুঝতে পারিনি।

ওই দিনটার কথা আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে, তখন কেবল শীতের শুরু একদিন রাতে আমি কম্বল গায়ে জড়িয়ে বসে পড়াশোনা করছিলাম এবং অবাক হয়ে লক্ষ্য করছিলাম নাসিম নিজেও টেবিলে বসে কিছু লেখার চেষ্টা করছে। রাত প্রায় দেড়টার দিকে ও আমার কাছে এসে অনুনয় করে বলল
– দোস্ত একটা হেল্প করবি?
আমি অবাক হয়ে বললাম
– কি?
– একটা প্রেম পত্র লেখসি, একটু চেক কইরা দিবি?
– প্রেমপত্র তো খুব পার্সোনাল জিনিস, এটা তুই আমাকে দিয়ে চেক করাবি? তাছাড়া তোর প্রেমপত্র লেখার দরকার কি? একটু আগেই তো সোহানার সঙ্গে দেখা হলো।
– এইটা সোহানার জন্য না, এইটা অন্য পার্টি
সোহানা নাসিমের গার্ল ফ্রেন্ড। ফার্স্ট ইয়ার থেকেই ওদের প্রেম। যেমন তেমন প্রেম নয় একেবেরে জমজমাট প্রেম। দুজন একই ডিপার্টমেন্টে পড়ে। আমার মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। আমি বললাম

– নিজের প্রেম পত্র নিজে চেক কর, আমাকে দেখাতে আসিস না।
এরপর কয়েকদিন নাসিমের সঙ্গে আর কথা হলো না। সপ্তাহখানেক পর নাসিম আমার কাছে এসে কাঁদো কাঁদো হয়ে জানাল ওর ব্রেকআপ হয়ে গেছে। আরো কয়েকদিন পর নাসিম আবার আমার কাছে এলো প্রেমপত্রের কারেকশন নিয়ে। এবারে আমি আর কিছু বললাম না, মনে হল এমনিতেই বেচারার ব্রেকআপ হয়ে গেছে। এখন কিছু একটা নিয়ে ব্যস্ত থাক, কিন্তু সেই প্রেমপত্র পড়ে আমার কান গরম হয়ে গেল। কানের চেয়েও বেশি গরম হলো মেজাজ। আমি ওকে বললাম
– এই প্রেমপত্র তুই ওই মেয়েকে পাঠাবি?
– হ্যাঁ কেন, কি হইসে? একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে?
– একটু না অনেক বাড়াবাড়ি হয়েছে। আমি ওই মেয়ের জায়গায় হলে ট্রেন ভাড়া করে এসে তোকে জুতা দিয়ে পিটাতাম
– এমন তো কিছু লিখিনি। শুধু ব্রে/সি/য়ারের সাইজ জানতে চেয়েছি. এটা কি খুব বেশি বাড়াবাড়ি ?
– শুধু বাড়াবাড়ি নয়, শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এইসব ফালতু বিষয় নিয়ে আমার কাছে আর আসবি না। নিজে যা পারিস কর
এরপর নাসিম দুইদিন আমার পেছনে পড়ে রইল ওর হয়ে চিঠিটা লিখে দেয়ার জন্য। প্রথমে আমি রাজী হলাম না। সময়টা ১৯৯৯ সন, মোবাইলের যুগ তখনো আসেনি তাই চিঠি ছাড়া উপায় নেই। অনেকক্ষণ ঝোলা ঝুলির পর আমি নাসিমের প্রস্তাবে রাজি হলাম।

এভাবে কারো সম্পর্কে কিছু না জেনে তো আর চিঠি লেখা যায় না তাই আমি সেই মেয়ের সম্পর্কে জানতে চাইলাম। নাসিম জানাল ওর নাম অনিমা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়ে। ওখানেই হলে থাকে। নাসিম আরো জানালো অনিমা ওর এক বন্ধুর খালাতো বোন। বন্ধুর বাড়িতেই দাওয়াতে দেখা হয়েছিল, দেখে ভীষণ ভালো লেগেছে তারপর একদিন ফোনে কথা হয়েছে। তখনই বলেছে চিঠি লেখার কথা। নাসিম চিঠি না লিখে নিউ ইয়ারে ওকে একটা ভিষন দামি কার্ড গিফট করেছে। তারই জবাবস্বরূপ অনিমা ওকে এক বিশাল চিঠি লিখে পাঠিয়েছে। সেই চিঠির জবাব এ নাসিমা একটা চিঠি লেখার চেষ্টা করেছে কিন্তু আমার মতে চিঠিটা অত্যন্ত অশ্লীল।

আমি এই জীবনে কোনদিন প্রেম পত্র লিখিনি। প্রেমপত্র তো দূরে থাক কাউকে কোনদিন চিঠিই লিখিনি। আমার বাবা-মা আর ছোট বোন থাকে ঢাকায়। সপ্তাহে দুদিন ফোনে তাদের সঙ্গে কথা হয়। চিঠি লিখে সময় নষ্ট করতে ওনারাই আমাকে মানা করেছেন। তবে চিঠি না লিখলেও আমি প্রচুর বই পড়েছি। বই পড়া ছাড়া আমার অন্য আর কোন শখ নেই। সাহিত্য বিজ্ঞান, ফিকশন, নন-ফিকশন এমন কোন টপিক নেই যেটা আমি পড়িনি। কাজেই চিঠি লিখতে গিয়ে তেমন কোন সমস্যা হলো না। কলম কামড়ে বসে থাকতে হলো না। একবার লেখা শুরু করার পর কি করে যেন লেখাটা চলতেই থাকলো। প্রথম চিঠিতে আমি খুব বেশি কিছু লিখলাম না। ওর কুশল জানতে চাইলাম। এখানকার জীবনের দু একটা গল্প করলাম, কেমন করে আমরা ট্রেনে করে ইউনিভার্সিটিতে যাই, খানিকটা প্রকৃতির বর্ণনা দিলাম। সবমিলিয়ে খারাপ হলো না। শেষ করে আমি নাসিমকে বললাম, এটা যেন কপি করে পাঠিয়ে দেয়।
একটা মজার ব্যাপার হল চিঠিতে কিন্তু প্রেমের কোন আভাস ছিল না, খানিকটা বন্ধুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার ছিল; সম্ভবত এই বিষয়টি ওর খুব ভালো লেগেছিল। এটা বুঝতে পারলাম যখন চিঠির জবাব এলো তিন দিনের মাথায়। এবারেও নাসিম আমার শরণাপন্ন হল। আমার লেখা প্রথম চিঠির জবাবে কি লিখেছে সেই কৌতূহলেই চিঠিটা পড়া হলো এবং পড়ার পর জবাব না লেখা পর্যন্ত নাসিম আমাকে ছাড়লো না।

বেশ কিছুদিন এভাবে চলার পর আমি একদিন নাসিমকে জিজ্ঞেস করলাম এতে কোন ওর কি লাভ হচ্ছে। চিঠি আমি লিখে দিচ্ছি জবাব ও পাঠাচ্ছে। নাসিম জানাল ও প্রতি সপ্তাহে দুইবার ওকে ফোন করে। যদিও বেশিরভাগ সময়ই কথা হয় চিঠি সংক্রান্ত, বেশিরভাগ সময়েই কানেকশন ভাল থাকেনা। অনিমা হলের কয়েন ফোন দিয়ে ফোন করে। ওকে বলেছিল দোকান থেকে ফোন করতে কিন্তু ও বলেছে ওর অসুবিধা হয়। দোকানদার হা করে তাকিয়ে থাকে।

শীত গড়িয়ে গ্রীষ্ম চলে এলো। আমার মিড টার্ম পরীক্ষা শুরু হয়েছে।। আমি পড়াশোনা নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।এ সময় চিঠি লিখে সময় নষ্ট করার মতন সময় আমার নেই। কিন্তু আমি খুব আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম আমার কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। পড়ায় মন বসাতে পারছি না। লজ্জার মাথা খেয়ে একদিন নাসিমকে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম যে ওর আর চিঠি এসেছে কিনা। নাসিম জানালো ফোনে কথা হয়েছে ওর শরীর খারাপ। জ্বর এসেছে কদিন ধরে তাই চিঠি লিখতে পারছে না। আমার মনটাই খারাপ হয়ে গেল। বেচারি জ্বরে পড়ে আছে, এ সময় নাসিমের উচিত একটা বড় করে চিঠি লেখা অথচ ও কিছুই করছে না। তখনই মনে পড়লো, ও তো কিছু করতে পারবে না, যা করার করতে হবে আমাকে। আমি নাসিমকে বললাম
– তুই সুন্দর করে একটা চিঠি লেখ। জ্বরের মধ্যে চিঠি পেলে ওর মন ভালো হয়ে যাবে।
আমি জানতাম নাসিম আবারো আমাকে চেপে ধরবে। এবারে আমি মনে মনে প্রস্তুতই ছিলাম। আমি লিখলাম

অনিমা অনিমা
গত চিঠিতে লিখেছো তোমার শরীর খারাপ কিন্তু আমার কেন যেন মনে হচ্ছে তোমার শুধু শরীর খারাপ নয়, তোমার মনও খারাপ। আমার ধারনা যদি সত্যি হয় তাহলে এখন তুমি চাদর মুড়ি দিয়ে অন্ধকারে টর্চা লাইট জ্বেলে আমার লেখা পড়ছো। বেশি রাত জেগো না, আর অন্ধকারে পড়তে নেই, মাথা ব্যথা করবে, এমনিতেই তোমার মাইগ্রেনের সমস্যা। বাইরের দেশগুলোতে অডিও বুক নামে একটা জিনিস এখন ভীষণ চলছে। বইগুলো কেউ পড়ে শোনায় তোমার কষ্ট করে পড়তে হবে না। তুমি শুধু অডিও চালু করে গল্পটা শুনবে। মজার না?

আমাদের এখানে ভীষণ গরম পড়েছে ঢাকাতেও নিশ্চয়ই তাই, আবার মাঝে মাঝে বৃষ্টিও হয়। খুব মেঘ করে যখন বৃষ্টি নামে, আমার তখন তোমার কথা খুব মনে পড়ে। তুমি লিখেছিলে আকাশ যখন মেঘ করে ঘন অন্ধকারে ছেয়ে যায় তখন তোমার আমার কথা মনে পড়ে। আরো লিখেছিলে ঝকঝকে নীল আকাশে অনেক মেঘের মধ্যে যখন আমরা আমাদের প্রিয়জনের মুখ খুঁজি তুমি সে সময় আমাকে দেখতে পাও। সত্যি করে বলতো তুমি কি সত্যিই আমাকে দেখতে পাও? আমি তো সব সময় মেঘের মধ্যে বিশাল বিশাল সব হাতি আর জলহস্তী দেখি, মাঝে মাঝে অবশ্য হাঙরও দেখতে পাই। তুমি নিশ্চয়ই আমাকে সেই হোঁতকা পেটুক হাঙরের মতন দেখ না। তবে তোমাকে একটা মজার কথা বলি। আমাদের এখানে একটা পুকুর আছে, সেই স্বচ্ছ পুকুরের জলে আমি যখন তাকাই আমি তোমার মুখ দেখতে পাই। আমি তো কখনো তোমাকে দেখিনি তাই কল্পনায় তোমার মুখ দেখি।

পাশে থেকে নাসিম বলল “এটা কি লিখেছিস? আমি তো ওকে দেখেছি”। আমি লিখতে লিখতে কেমন একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিলাম, হঠাৎ করে সম্বিত ফিরে পেয়ে ধাতস্থ হয়ে আবার লিখলাম। তোমাকে অবশ্য অনেক আগে দেখেছি। মাঝে মাঝে মনে হয় “তোমাকে দেখেছি সেই কবে কোন বৃহস্পতিবার তারপর এক কোটি বছর তোমাকে দেখি না”।

এলেবেলে কথা বলে আর তোমার মাথা ধরিয়ে দেব না। তোমার জন্য একটা বই পাঠাচ্ছি। এই বইটা পড়ো। আমার ভীষণ প্রিয় একটা বই।
আর একটা কথা বলে শেষ করব। আমি জানি বৃষ্টি তোমার ভীষণ প্রিয় তবে এখন বৃষ্টিতে ভিজে আবার ঠান্ডা বাধিও না।। ভালো থেকো, আর দ্রুত সুস্থ হয়ে আমাকে আবার চিঠি লিখা শুরু করো। তোমার চিঠি না পেলে নিজেকে খুব অসম্পূর্ণ লাগে।

ইতি তোমার নাসিম

লেখা শেষ করে চিঠিটা নাসিমের হাতে দিয়ে বললাম
– একটু বড় হয়ে গেল দোস্ত। কষ্ট করে কপি করে নিস। নাসিম আমার পিঠ চাপড়ে বলল
– দোস্ত তুই যা লেখস না, একদম সুরসুরি উঠায়ে দেওয়ার মতন।
– মানে?
মানে, এই যে দুইবার নামটা লেখস, আরে দোস! কি কমু একদম অ/র্গা/জম হয়ে যাওয়ার মতন
আমার মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। এত চমৎকার একটা মেয়ে অথচ কিসের পাল্লায় পড়েছে। এর জন্য কি আমি দায়ী?

চলবে……

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৪০

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৪০
জিয়ান নয়নার ঠোঁটের দিকে নিজের ঠোঁট এগিয়ে নিচ্ছে। তার পরিটা ঘুমিয়ে আছে একদম তার বক্ষপিঞ্জরে। হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলে এমন দৃশ্য দেখে হৃদয় জুড়িয়ে গেলো জিয়ানের৷ ইচ্ছে হলো প্রিয়তমার ওষ্ঠদ্বয়ে আলতো করে আদর মেখে দিতে৷ এমন সময় দরজায় কেউ কড়া নাড়লো। জিয়ান বিরক্ত নিয়ে উঠে এসে দরজা খুলে দেখে পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে৷

জিয়ান শান্ত স্বরে বলল,”দেখুন আমার ওয়াইফ ঘুমাচ্ছে সো ডু নট ডিস্টার্ব। আপনাদের কিছু বলার থাকলে রিসিপশনে ওয়েট করুন আমি আসছি৷”
“এই তুই কাকে এটিটিউট দেখাস! তোর বাপেরা দাঁড়িয়ে আছে। ওটা তোর বৌ নাকি ভাড়া করা মা***গী আমাদের জানা আছে।”

জিয়ান নিজের রাগ সংযাত করতে না পেরে নাক বরাবর ঘুষি বসিয়ে দেয় মূহুর্তেই লোকটার নাক দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। জিয়ান দরজা বন্ধ করে বাহিরে এসে বলে,”আমার ওয়াইফের ব্যাপারে একটা বাজে ওয়ার্ড বের করলে আমি সব আইন কানুন ভুলে যাবো৷ আমার ওয়াইফের সম্মান রক্ষা করার জন্য দুই চারটা লা’শ ফেলে দিতেও পিছপা হবো না৷”
“তিনজন পুলিশ জিয়ানের দিকে তেড়ে আসে।”
“পেছন থেকে একজন বলে,স্টপ।”
“পুলিশগুলো পেছনে তাকিয়ে দেখে এসপি স্যার৷সবাই একত্রে সালাম দেয়৷”
“তোমরা নিজেদের ডিউটি না করে ওনাদের ডিস্টার্ব করছো কেনো?”
“স্যার এই লোকটা একটা মেয়ে নিয়ে হোটেলে উঠেছে আবার নিরাপত্তারক্ষীর সাথে মিস বিহেভিয়ার করেছে। এই দেখুন ওর নাক ফাটিয়ে দিয়েছে৷”

জিয়ান বলল,”স্যার আমি ওনাকে বারবার বলেছি আমরা হ্যাসবেন্ড-ওয়াইফ তবুও ওনারা আমার ওয়াইফকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছে৷ কোন পুরুষ যার শরীরে রক্ত মাংস আছে সে নিজের ওয়াইফ সম্পর্কে এমন বাজে কথা সহ্য করতে পারে না। আমিও পরিনি। তাই আমি এরজন্য স্যরি বলতে পারবো না৷ কারন কবুল বলার পর থেকে আমার ওয়াইফের জান,মাল, ইজ্জতের হেফাজতের দায়িত্ব আমার৷ যতদিন আমি বেঁচে আছি ততদিন এই দুঃসাহস যে করবে সে যেহোক তাকে আমি ছাড়বো না৷”

এসপি সাহেব বললেন,”দুঃখিত আপনাকে ডিস্টার্ব করার জন্য। হ্যাসবেন্ড এমন প্রটেক্টটিভ হওয়া উচিৎ। মিস্টার চৌধুরী ইন্জয় ইউওর ট্রিপ।”

জিয়ান দরজা বন্ধ করে রুমে আসলো৷ঘুমন্ত নয়নার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,”তুমি বড় হবে কবে? সব ভুলে আমাদের দু’জনের একটা স্বপ্নের সংসার হবে। কিউট কিউট কয়েকটা বাচ্চা হবে। এই দেখো তুমি নিজেই বাচ্চা আবার আমি তোমার থেকে বাচ্চার বাবা হওয়ার আশায় আছি!”
নয়নার লম্বা চুলগুলো একপাশ থেকে ছড়িয়ে ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে। ঘুমন্ত সিন্ড্রেলা মনে হচ্ছে নয়নাকে। জিয়ান নয়নার রেশমি চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে বলে, “আমি তোমার হৃদয়ে পৌঁছাতে চাই আমি তোমার হৃদমহলের রাজা হয়ে তোমার হৃদয়ে রাজত্ব করতে চাই। সুখ,দুঃখ, হাসি, আনন্দ জীবনের প্রতিটা মূহুর্তে তোমার সঙ্গ চাই প্রিয়তমা অর্ধাঙ্গিনী। নয়নাকে দেখতে দেখতে আবারও ঘুমে তলিয়ে গেলো জিয়ান৷”

সকালের মিষ্টি রোদ জানালার পর্দা গলিয়ে জিয়ানের চোখেমুখে খেলা করছে। মৃদু বাতাসে দোলখাচ্ছে পর্দাগুলো সাথে রোদের ঝলক খেলা করছে চোখেমুখে৷ জিয়ান চোখ খুলে,নিজের পাশ ঘেঁষে শুয়ে থাকা রমনীকে দেখতেই তার ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠলো মুচকি হাসি৷ জিয়ান ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল আটটা বাজে। জিয়ান দ্রুত উঠে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে অফহোয়াইট রংয়ের পাঞ্জাবি সাথে সাদা পাজামা পরলো৷ নিজের পছন্দের পারফিউম লাকসত, দু লাকসত এল এল বারো, ফ্রেশ স্পাইসি স্প্রে করছে। নয়নার এতো কড়া পারফিউমের ঘ্রানে ঘুম ভেঙে গেলো৷ মিটিমিটি করে চোখ খুলে জিয়ানকে পারফিউম স্প্রে করতে দেখে বলে,”পারফিউমের পুকুরে সাতার কেটে এসেছেন!”

জিয়ান নয়নার দিকে এগিয়ে এসে বলে,”সারারাত পারফিউমের গোডাউনকে বুকের মধ্যে রেখেছি তো তাই স্মেল ছড়িয়ে পড়ছে।”
“তা আপনি এতো ফিটফাট হয়ে নায়ক সেজে যাচ্ছেন কই!”
“সোফার উপর দেখো শাড়ি, আর দুই তিনটা ড্রেস আছে যেটা ভালো লাগে পরো। দ্রুত ফ্রেশ হও শ্বশুর বাড়ি যেতে হবে তো৷”

নয়না ভ্রু কুঁচকে তাকালো, তারপর মিনমিন করে বলল,”এমন সেজেগুজে বিয়ে বাড়িতে যাচ্ছে নিশ্চিত মেয়ে পটানোর ধান্দা।”
“আর মেয়ে পটানোর ধান্দা-টান্দা নেই বেব, তুমি পটে গেলেই হবে। যাও ফ্রেশ হয়ে আসো। একটাই পটছে না আবার অন্য মেয়ে পটাবো! এতো ধৈর্য আর সময় কোনটাই নেই তোমার মানুষটার।”
“জিয়ানের শেষের কথাটুকু নয়নার হৃদয়ে বাড়ি খাচ্ছে,তার মস্তিষ্ক আর হৃদয় জুড়ে বারবার প্রতিধ্বনি হচ্ছে নিজের মানুষ শব্দটা! এই শব্দের ভার এতো কেনো?যেনো হৃদয় দখল করে নিলো!

🌿

জাহানারা বেগম তার ভাইকে বলল, “জামাই প্রথমবার তোমাদের বাসায় আসবে ভাই আমার জামাইয়ের কদরে যেনো কোন কমতি না থাকে৷”

“চিন্তা করিস না দশটা না পাঁচটা না আমার একটা মাত্র বোনঝি-জামাই তার আপ্যায়ন হবে রাজকীয়। তা ওরা এখনো আসছে না কেন?”

বিয়ে বাড়িতে গেট আগেই সাজানো ছিলো সেখানে মেয়েরা ফুলের ঝুড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ আতিফ সাহেবের বৌয়ের হাতে মিষ্টিজাতীয় খাবারের ট্রে।

জিয়ান গাড়ি থেকে বের হয়ে নয়নাকে বের করে আনলো,নয়নার পরনে রেড মেরুন রঙের একটা ড্রেস। দুজনকে নব বিবাহিতা কাপল লাগছে। মনে হচ্ছে আজ এদের বিয়ের রিসিপশন।
“জিয়ান নয়নার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। নয়না জিয়ানের হাতে হাত রাখলো। ছ’ফুট লম্বা একটা মানুষের পাশে নিজেকে ছানাপোনা লাগছে নয়নার। নয়নার চেহারায় অস্বস্তি ফুটে উঠেছে।

জিয়ান ফিসফিস করে বলল,”লম্বা ছেলেরা বাটার মাশরুম বৌ পায় সো ডিয়ার বাটার মাশরুম বি কম্ফোর্টেবল।ঠোঁটের কোনের হাসিটা ফেরত আনেন মিসেস চৌধুরী। ওটা ছাড়া বাটার মাশরুমের রুপ ফুটবে না ঠিকঠাক।”

গেটের সামনে আসতেই জিয়ান নয়নার উপর ফুলের বর্ষণ হতে লাগলো৷ মিষ্টিমুখ করিয়ে জামাইকে ঘরে এনে বসানো হলো। আদনান এসে বলে, “দুলাভাই ইট’স নট ফেয়ার। বিয়ে আমার ফুল এটেনশন পাচ্ছেন আপনি।”

“শালাবাবু কিছুক্ষণ অপেক্ষা করো, তুমিও পাবা এমন রাজকীয় ট্রিটমেন্ট আর তো মাত্র কিছু সময়।” বাড়ি ভর্তি মানুষ সবার চোখ কপালে এতো সুন্দর জামাই! তো মানুষ ভাগ্য গুণেই পায়! যেমন দেখতে তেমন ব্যবহার।
জিয়ান নয়না একটা রুমের মধ্যে পাশাপাশি বসে আছে৷ বাকি সবাই রেডি হচ্ছে বরযাত্রী যাওয়ার জন্য। জিয়ান হুট করে নয়নার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো৷
“কি হচ্ছে!”
“চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে দাও তো খুব ক্লান্ত লাগছে। আসার পরে একটা দিনও রেস্ট করা হয়নি। তোমার পিছু ছুটতে ছুটতে হয়রান হয়ে গেছি বয়স তো কম হয়নি৷”

নয়না বলে,”টেনে সব চুল ছিড়ে ফেলি? আপনার বয়স কত হলো! এই বয়সে আমার মত বৌ পেয়েছেন মাথায় করে রাখা উচিৎ আমাকে আপনার৷”
“তোমার যদি টাকলু জামাই পছন্দ হয়ে থাকে তাহলে ঠিকাছে। মাথায় না বেব তোমাকে হৃদয়ে রাখবো সুইটু।”
“হোয়াট?”
“শুনো এইজন্মে তোমাকে আর ছড়ছি না। সো মুখ বন্ধ করে কাজে লেগে পড়ো৷ আর হ্যা আজ বিকেলে আমাদের ফ্লাইট আমরা দুজন ঢাকা ব্যাক করবো। এতো কষ্ট করে ছুটি নিয়ে বৌয়ের সাথে প্রাইভেট টাইম স্পেন্ড করার জন্য এসেছি। এই এতো মানুষের মধ্যে বৌকে ঠিকঠাক ভালোবাসাও দিতে পারছিনা৷ সো চুপচাপ আমার সাথে ফিরবে৷ বিয়ে করেছি বৌয়ের সাথে সোহাগ করা হলো না এখনো স্যাড লাইফ!”
“আমি আম্মুকে রেখে যাবো না।”
“ওরেহহহ আমার আম্মু ভক্ত বৌতাহহহ। তোমার আম্মু তিনদিন পর ব্যাক করবে।আমি চলে যাওয়ার পর আম্মুর আঁচলের তলে আবার ঢুকে যেও।”
“সরেন আমি রেডি হবো।বৌ আনতে যেতে হবে না?”
“তুমি তো রেডিই আছো আর কি রেডি হবে?”
“নয়না হুট করে উঠে পরলো জিয়ানের মাথা বেডের উপর পরলো,বৌ তুমি পূর্ন বৌ হবা কবে? এভাবে কেউ বরকে ফেলে উঠে!”

নয়না লাগেজ থেকে লেহেঙ্গা বের করতে করতে বলে,”আমার নাম সুনয়না। সো এতো সুন্দর নাম থাকতে মৌ মাছির মত ভন ভন করবেন না বৌ বৌ করে।” নয়না ওয়াশরুমে দিকে যাচ্ছে।
“ডিয়ার ওয়াইফি তুমি চাইলে এখানেও চেঞ্জ করতে পারো মাইন্ড করবো না।”
“নয়না চোখ রাঙিয়ে বলে অসভ্য লোক।”
“অসভ্য হয়েছি আমি তোমারি প্রেমে।” বলেই চোখ মারলো৷

🌿

মান্নাত এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে আছে। চোখভর্তি অশ্রু বুকভর্তি কষ্ট।
“মিস মান্নাত আপনার আয়ারল্যান্ডে কোন সমস্যা হবে না৷ আমার ক্লাস ফ্রেন্ড ফাইজু ওর ফ্যামিলি নিয়ে ওখানে থাকে। আপনি আপাতত ওর বাসায় উঠবেন৷ ও আপনাকে সব রকম সাহায্য করবে৷ আর হ্যা অতিতের কথা ভেবে নিজেকে ছোট ভাববেন না৷ আপনার সাথে যা হয়েছে সে-সব অন্যায় তাই সেখানে আপনার কোন দোষ নেই৷ টেক কেয়ার।”

“মান্নাত মুখ দিয়ে কোন কথা বের করছে না। তার চোখ যেনো শত কথা প্রকাশ করছে।

“রিতু ছুটে এসে মান্নাতকে জড়িয়ে ধরে বলে, তোর সাথে এতোকিছু হয়ে গেলো আমি কিছুই জানতে পারলাম না! তুই না চাইলে তোকে দেশ ছেড়ে যেতে হবে না। তুই আমার বাসায় আমার সাথে থাকবি।”
“মান্নাত জানে এই দুনিয়া তার জন্য এতো সহজ নয়। একজন মেয়ে যাকে ক্লাস টেইনে থাকতে তিনজন পুরুষ ধ’র্ষ’ণ করেছে সেই মেয়েকে কোন পরিবার ভালো চোখে দেখবে না৷”
“মান্নাত একবার পিছনে ফিরে জাহিনের দিকে তাকালো৷ তার বলতে ইচ্ছে করছে আমাকে একবার জড়িয়ে ধরবেন! কিন্তু সে জানে এই অন্যায় আবদার করা যাবে না৷ চোখের জলটুকু মুছে সামনে এগিয়ে গেলো।”

“অন্তর বলল,তুই মেয়েটাকে ইনসাফ না দিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছিস কেনো!”

“এই সমাজ এসব জানার পর মেয়েটাকে বেঁচে থাকতে দিবে না। ওই তিন জা’নোয়ারের ডিটেইলস বের কর৷ ওদের আ’সল জায়গা কে’টে লবন মরিচ লা’গিয়ে কুকুরকে খা’ওয়াবো যাতে ভবিষ্যতে কোন মেয়ের সাথে এই ঘৃণ্য কাজ না করতে পারে৷”
#চলবে

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৩৯

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৩৯
নয়না ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দেয়াল ঘেঁষে। জিয়ান একটা সিগারেট ধরিয়েছে। সিগারেটের স্মেলে নয়না কাশি শুরু করে দিলো।
জিয়ান নয়নার দিকে ফিরে নিকোটিনের ধোঁয়া ছেড়ে বলে,”বেবি কি সমস্যা তোমার?”
“নয়নার কাশির মাত্রা বেড়ে গেলো। জিয়ান নিজের হাতে থাকা সিগারেট ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলে, সুনয়না অনেক হয়েছে রাগ অভিমান এখন দশ মিনিট মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শুনবে তুমি।”

‘নয়না চুপ করে রইলো। জিয়ান নয়নার হাত ধরে নিজের কোলে বসলো৷ নয়না উঠে যেতে চাইলে বলে,”একদম নড়বে না। চুপচাপ লক্ষী মেয়ের মত বসে আমার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শোন।”
“আপনার কোন কথা আমি শুনবো না৷ যে পুরুষের একাধিক নারীর সাথে সম্পর্ক থাকে সে কখনো ভালো পুরুষ হতে পারে না। আপনি বলবেন আমি ছোট তাই কম বুঝি? সতেরো বছর হতে আর দু’মাস বাকি। কোনটা ভালো কোনটা খারাপ সে জ্ঞান আমার আছে। আমার বয়সী অনেক মেয়ে যারা সংসার করছে স্বামী সন্তান নিয়ে৷ ভালো খারাপ বোঝার বোধবুদ্ধি আমার আছে।”

জিয়ান নয়নাকে বেডে বসিয়ে নিজে নয়নার সামনে এসে ফ্লোরে বসে নয়নার হাতে হাত রেখে বলে,”আমি জিয়ান রেজা চৌধুরী স্বজ্ঞানে কোনদিন কোন মেয়ের সংস্পর্শে যাইনি৷ তোমার বোনের সাথে আমার রিলেশন ছিলো তবে তাকে আমি হালাল ভাবে পেতে চেয়েছি। কোনদিন কিস আদান প্রদানও হয়নি আমাদের মধ্যে। মাঝে মাঝে তোমার বোন শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে। আমি সেটাকেও প্রশ্রয় দেইনি। কারন আমি তাকে পবিত্র ভাবে সারাজীবনের জন্য নিজের অর্ধাঙ্গিনী রুপে চেয়েছিলাম। আমার ছোট বেলা থেকে ইচ্ছে ছিলো পাইলট হবো। বড় হওয়ার সাথে সাথে আমার ইচ্ছেও প্রবল হতে থাকে৷ পড়ালেখা ছাড়া আর ধ্যান কোনদিন অন্যদিকে যায়নি৷ নীলাঞ্জনাকে আমি ভালোবাসতাম কিন্তু সেটা স্থায়ী করার জন্য টাইমপাস করার ছেলে রেজা না।”

‘নয়নার চোখে অশ্রু টলমল করছে যে কোন সময় টুপ করে ঝরে পড়বে। জিয়ান নিজের হাত দিয়ে নয়নার অশ্রু গড়িয়ে পড়ার আগেই মুছে নিলো৷
“কাঁদবে না তুমি কাঁদলে আমার হৃদয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। আমি বেঁচে থাকতে তোমার চোখে পানি দেখতে চাইনা৷”
“নয়না কিছু বলতে চাইছে কিন্তু তার ভেতরে শত শত কথা থাকলেও শব্দ হয়ে তা বের হচ্ছে না।

জিয়ান নয়নার কাঁপতে থাকা ঠোঁটের উপর আঙ্গুল রেখে বলে,”তোমাকে কিছু বলতে হবে না তুমি শোন৷ আমি পাইলট জিয়ান রেজা চৌধুরী। ফার্স্ট ক্যাপ্টেন আমি৷ বাসা থেকে বের হলে আমি কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকি। তেরো ঘন্টা জার্নি করার পর আমি রেস্ট করি আর নিজেকে ফিট রাখি৷ পাইলটদের নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হতে হয়৷নিজেকে সুস্থ রাখতে হয় এটাও কাজের মধ্যে পড়ে। এই কয়দিন তুমি কাকতালীয় ভাবে যাকে দেখেছো সে আমি না।”
“নয়না এবার শব্দ করে কেঁদে ফেললো৷”

জিয়ান নয়নাকে জড়িয়ে ধরলো নিজের বাহুতে আগলে নিয়ে বলে,”এই পাগলি এভাবে কাঁদছো কেনো! আমি সত্যি বলছি আমি তোমাকে ঠকাই’নি ওটা তোমার ছোট দেবর আর আমার জমজ ভাই জাহিন ছিলো। যার সাথে তুমি আমাকে গুলিয়ে ফেলে মোবাইলে দিনরাত্রি আমার ক্লাস নিয়েছো৷”
“নয়না কাঁদছে তার কান্না বন্ধ হওয়ার কোন নাম নেই।”

জিয়ান নয়নার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,”এভাবে কান্না করতে থাকলে কিন্তু খুব আদর করবো বৌ।পরে কিন্তু এখানেই বাসর সেরে ফেলবো। তখন কিন্তু আফসোস করবে সারাজীবন, ফুলছাড়া ফুলসজ্জা করার জন্য। মনে রেখো ফুলসজ্জা জীবনে একবারই হয় এরপর সজ্জা হলেও ফুল কিন্তু মিসিং থাকে৷”

নয়নার ঠোঁটের কোনে কিঞ্চিৎ হাসির রেখে, নয়না বলল,”বাসর ছাড়া কি আপনার আর কোন কথা নেই?” চোখে পানি ঠোঁটে হাসি অদ্ভুত কম্বিনেশন।
“জিয়ান নয়নার দিকে তাকালো,অদ্ভুত মোহনীয় লাগছে নয়নাকে। জিয়ান বললো,”আটাশ বছর ধরে অপেক্ষা করছি বাসর করার জন্য। তো সারাদিন বাসর বাসর করবো না! জন্মের পর থেকে এখনো বাসর করিনি৷”

‘নয়না জিয়ানের বক্ষে লেপ্টে আছে শান্ত ছানার মত৷ জিয়ান নয়নাকে আগলে নিয়েছে। সেভাবে শুয়ে আছে দুজন৷
“নয়না এখন কিছুটা স্বাভাবিক, জিয়ানকে বলল,আপনার সত্যি জমজ ভাই আছে তো নাকি আমাকে টুপি পরাচ্ছেন?”

“ওরেহহহ বাপরেহহহ দ্যা গ্রেট সুনয়না তালুকদার থুরি মিসেস চৌধুরীকে কেউ টুপি পরাতে পারে! এ সাধ্য কারো আছে?” জিয়ান নিজের মোবাইল বের করে অনেকগুলো পিক দেখালো তার আর জাহিনের।

জিয়ান ঘুরে,নয়নাকে বেডে শুয়ে নয়নার উপরে ঝুঁকে বলে,”তুমি আমাকে আরেকটাবার সুযোগ দিবে? আমি তোমাকে আমার সারাজীবনের জন্য পাশে চাই প্রিয়তমা অর্ধাঙ্গিনী।”

“নয়নার অনূভুতিরা জাগ্রত হচ্ছে এলোমেলো লাগছে নয়নার৷ শ্বাসের উর্ধ্বগতি জিয়ানের কানে আসছে৷ জিয়ান দ্রুত সরে আসলো নয়নার উপর থেকে। গ্লাসে পানি ঢেলে নয়নাকে বসিয়ে বলে,রিলাক্স হও জান কিছু হয়নি সব ঠিক হয়ে যাবে। এই নাও পানি খাও। নয়না জিয়ানকে আঁকড়ে ধরলো জিয়ানের হাতে নখ বসে রক্ত বের হয়ে আসছে৷

“জিয়ান নয়নাকে পানি খাওয়ালো৷ ধীরে ধীরে শ্বাস নাও জান। কিছু হয়নি কিছু হবে না। আমি আছি তোমার পাশে৷”

‘অনেকটা সময় পর নয়না স্বাভাবিক হলো।

“জিয়ান নয়নার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে৷ এই শোন তুমি ঘুমানোর চেষ্টা করো চোখ বন্ধ করো৷”

“আম্মু, মামা সবাই আমাকে খুঁজবে পেরেশান হবে আমাকে না পেয়ে।”

“টেনশন করতে হবে না তোমার৷ শ্বাশুড়ি আম্মাকে কল করে বলেছি। কাল সকালে তোমাকে নিয়ে বিয়ে বাড়িতে যাবো সোজা।”
“আপনিও যাবেন?”
“তুমি চাওনা আমি যাই?”
“আপনি এমন পাগলামি কাজ করেছেন সবাই ক্ষ্যাপাবে আমাকে।”
“তো পাগলামি করবো না! দশটা না পাঁচটা না আমার একটা মাত্র বৌ তাকে নিয়ে পাগলামি না করলে কাকে নিয়ে করবো? পাশের বাসার ছকিনাকে নিয়ে?”
জিয়ান কথা বলতে বলতে হঠাৎ খেয়াল করলো নয়না চোখ লেগে আসছে৷ আলতো করে নয়নার কপালো ঠোঁট ছুঁয়ে বলে,”তুমি শুধু আমার শুধুই আমার। আমার সবটুকু ভালোবাসা তোমাকে উজাড় করে দিয়ে তোমার এই ভয় আমি জয় করে নেবো।”

জিয়ানের খুব গান গাইতে ইচ্ছে করছে,বহু বছর হয়েছে জিয়ান গান গায় না৷ নয়নার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে সুর তুলল..

“ঘুমাও তুমি ঘুমাও গো জান,
ঘুমাও আমার কোলে…..
ভালবাসার নাও ভাসাবো,
ভালবাসি বলে….

তোমার চুলে হাত বুলাবো,
পূর্ণ চাঁদের তলে …..
কৃষ্ণচূড়া মুখে তোমার,
জোসনা পড়ুক কোলে…..

ঘুমাও তুমি ঘুমাও গো জান,
ঘুমাও আমার কোলে…..
ভালবাসার নাও ভাসাবো,
ভালবাসি বলে….

আজকে জড়ায় ধরবে,তোমার
মনকে আমার মন….
গাইবে পাখি, গাইবে জোনাক
গাছ গাছালি বন…

এত ভালবাসা গো জান,
রাখিও আঁচলে….
দোলাও তুমি, দুলি আমি
জগত বাড়ি দোলে

ঘুমাও তুমি ঘুমাও গো জান,
ঘুমাও আমার কোলে…..
ভালবাসার নাও ভাসাবো,
ভালবাসি বলে….

তোমার চুলে হাত বুলাবো,
পূর্ণ চাঁদের তলে …..
কৃষ্ণচূড়া মুখে তোমার,
জোসনা পড়ুক কোলে…..
ঘুমাও তুমি ঘুমাও গো জান,
ঘুমাও আমার কোলে…..
ভালবাসার নাও ভাসাবো,
ভালবাসি বলে….”

গান শেষ হতে হতে নয়না গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পরলো৷ জিয়ান নিজের বক্ষে তার পিচ্চি বৌটাকে সযত্নে আগলে নিয়ে নিজেও তলিয়ে গেলো গভীর নিদ্রায়৷ যেনো বহুকাল পর তার হৃদয় প্রশান্ত হলো!

🌿

সায়না অনিকেতের সামনে দু হাত মেলে দাঁড়িয়ে আছে৷
“এসব কি হচ্ছে মিস সায়না? রাস্তা ছাড়ুন আমার কাজ আছে৷”
“আমি তো রাস্তা ছাড়ার জন্য রাস্তা আগলে দাঁড়াইনি ডাক্তার মশাই। আপনি আমার নাম্বার ব্লক করেছেন কেনো?”
“দেখো আমি বহুবার বলেছি তোমার আমার মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক সম্ভব নয়৷ কখনো আকাশের চাঁদকে জমিনে আসতে দেখেছো?”

“বহুবার দেখেছি আপনি দেখেন নি! শুনুন রসকষহীন ডাক্তার শুধু জানেন কাটাছেঁড়া করতে ভালোবাসা টাসাতো জানেননা, পূর্নিমা রাতে সচ্ছ জলধারায় দৃষ্টি দিয়ে দেখবেন পূর্নিমার চাঁদ কেমন জমিনে নেমে আসে।”

“এসব ফিল্মি ডায়লগে জীবন চলে না।”

“সায়না অনিকেতের হাতের মধ্যে হাত রেখে বলে,ভালোবাস মানুষ পাশে থাকলে জীবনটা ফিল্মের চেয়েও বহুগুণ ভালো কাটে।”

“হাত ছাড়ুন।”

“কবে তুমি নাম ধরে ডাকবে আমায়?কবে তুমি বলবে?”

“কেনো করছো এমন! আমি মানুষটা বড্ড ভালোবাসার কাঙাল কেনো আরো বিধ্বস্ত করতে চাইছো? কেনো চাঁদ হয়ে বামনের ঘরে উঁকি দিয়ে লোভ বাড়াচ্ছো? আমি জানি আমার লিমিট তাই আমাকে আমার মত থাকতে দাও।” অনিকেত দ্রুত গতিতে স্থান পরিবর্তন করলো৷

“পালিয়ে আর কতদিন থাকবেন ডাক্তার সাহেব? ফিরে কিন্তু এই আমার আঁচলের তলায় আসতেই হবে। ভালোবাসি আপনাকে ভালোবাসা না নিয়ে ফিরবো না খালি হাতে৷হয় আপনার হবো, না হয় আপনার বাচ্চার মা হবো তবুও আপনার পিছু ছাড়বো না৷”

🌿

মিজান তালুকদার তার ওয়াইফের পাশে বসে আছে৷ দু’জনেই চুপচাপ। মিজান তালুকদার নিরবতা ভেঙে বলল,দেখো মেয়ে ভুল করছে তাই বলে তো মেয়েটাকে মরার জন্য ছেড়ে দেয়া যাবে না। তুমি ওর সাথে রাগ করে না থেকে মেয়েটাকে স্বাভাবিক হতে সাহায্য করো।

“তুমি জানো কাল রাতে নীলাঞ্জনাকে বাসায় কে দিয়ে গেছে?”
“অন্তর নামের একটি ছেলে আমাদের এলাকার পরের এলাকায় ওদের বাসা৷”
“রেজা চৌধুরী দিয়ে গেছে৷ কিন্তু বাসায় পাঠিয়েছে ওই ছেলেকে।
“এসব তুমি কি বলছো নাহার! রেজা কোথা থেকে আসবে এখানে?”
“আমি জানি তুমি আমার কথা বিশ্বাস করবে না৷ আমি কোনদিন তোমার কাছে বিশ্বস্ততা অর্জন করতে পারিনি৷ তুমি বরং দারোয়ান কে জিজ্ঞেস করো। জানো আমার মেয়েটার জীবন ওই ছেলেটাই নষ্ট করেছে।”

#চলবে

প্রেমময় নিবৃত (ছোট গল্প)

0

#প্রেমময়_নিবৃত
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী

‘গেটের সামনে আসেন তো!’

ফোনের এপাশ থেকে কথাটা শুনে খানিকটা চমকালাম। দৃষ্টি এদিক ওদিক করে কাচুমাচু কন্ঠে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এসময় গেটের বাইরে আসবো কেনো?’

‘কোনো সমস্যা আছে? ক্লাস তো মনে হয় না আছে! ক্লাস থাকলে তো এসময় কল তুলতেন না। তাহলে?’

আমি কিছু না বলে নিশ্চুপ রইলাম। সত্যিই এখন আমার ক্লাস নেই। ক্লাস নেই বললে ভুলই হবে। মূলত ক্লাস থাকলেও আমি ক্লাসটা করছি নাহ৷ এই ক্লাসটা এতো বিরক্ত লাগে তা বলার মতো নাহ তাই ক্লাস ফাঁকি দিয়ে এসে বান্ধবীদের সাথে লাইব্রেরিতে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। কিন্তু এই সময় উনি হঠাৎ গেটের বাইরে কেনো যেতে বললেন তা বুঝে আসলো নাহ। আমার ভাবনার মাঝেই নিবৃত ফের বললো,

‘কথা বলেন না কেন?’

আমি ছোট্ট করে বললাম, ‘আপনি কি এসেছেন?’

উনি মনে হয় বিরক্ত হলো। মুখ দিয়ে বিরক্তিসূচক শব্দ করে একটু তেতে উঠেই বললেন, ‘আমার আসা না আসা দিয়ে আপনার কি! কয়বার বললাম গেটের বাইরে আসতে!’

উনার কথা শুনে আপনাআপনি মুখটা কুঁচকে গেলো। মনে মনে কয়েকটা বকা দিয়ে বললাম, ‘আসছি!’ নিবৃত খট করেই কল কেটে দিলেন। আমি ফোনের দিকে তাকিয়ে পরপর আরো কয়েকটা বকা দিয়ে বান্ধবীকে বললাম, ‘তোরা বস! আমি একটু আসি!’

‘কিরে কই যাস!’

‘আসতেছি! বস।’

ব্যাগ আর ফোন নিয়ে দৌড় লাগালাম। মনের মাঝে কেমন একটা অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করছিলো। উনি কি সত্যি এসেছে নাকি! ২০৫ কিলোমিটার রাস্তার দূরত্ব আমাদের মাঝে। গুটি গুটি পায়ে গেইটের বাহিরে এসে উনাকে নজরে পড়লো নাহ। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলাম। অনেক মানুষের আনাগোনা থাকলেও নির্দিষ্ট লোকটার দেখা নেই৷ যদিও আমি সিউর ছিলাম না তবুও উনাকে না দেখতে পেয়ে ভীষণ মনঃক্ষুণ্ন হলাম। মাথা নিচু করে ফোনের দিকে তাকাতেই ফোনটা ভাইব্রেট হতে শুরু করে। নিবৃতের কল দেখে মন খারাপ রেখেই কল রিসিভ করে কানে তুললাম। আমার কোনো শব্দ করার আগেই নিবৃত নিজেই বললেন,

‘ডান পাশে তাকান!’

আমি সাথে সাথেই তাকালাম। সামনেই দুইটা বাইক নিয়ে চারজনের মতো দাঁড়িয়ে আছে। নিবৃত্ত ঠান্ডা কণ্ঠে বললেন, ‘এদিকে আসেন!’

আমি ফট করেই বললাম, ‘আপনি কি আমাকে এই বাইকওয়ালাদের কাছে পা’চার করে দিবেন নাকি!’

নিবৃত কটমটিয়ে উঠলেন। দাঁতে দাঁত চেপে বললেন, ‘থা’প্রিয়ে আপনার কান গরম করে দেবো। জলদি আসেন!’

এরপরই আবার কল কেটে গেলো। আমি গাল ফুলিয়ে রাস্তার পাশ ঘেঁষে একদমই আস্তে হাটতে শুরু করলাম। এতোটাই আস্তে হাঁটছি যে ২ মিনিটের রাস্তা অন্তত আমার ১০ মিনিট তো লাগবেই। টুং করে ফোনো শব্দ হতেই দেখলাম নিবৃতের টেক্সট। ছোট্ট করে লিখছে,

‘পিঁপড়াও এর থেকে জোড়ে হাঁটে। আমি যদি এগিয়ে যাই তবে কিন্তু মাথায় তুলে আছাড় মা’রবো!’

সাথে সাথেই আমার হাঁটার গতি বেড়ে গেলো অটোমেটিক। এই লোকটাকে যে পরিমাণে ভয় পাই এই ভয়টা যদি নিজের আব্বুকেও পেতাম তবুও বোধহয় জীবনে ভালো কিছু হতো! ২ মিনিটের মাথায় অডিটোরিয়ামের সামনে দাঁড়াতেই উনি বাইক থেকে নেমে এলেন। আমার সামনে এসেই হেলমেট খুলে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে চমৎকার একটা হাসি দিলেন। আমি তো শেষ! ড্যাবড্যাব করে উনার হাসির দিকে তাকাতেই উনার হাসি মিলিয়ে গেলো। গম্ভীর সুরে বললো,

‘এভাবে দেখার কি আছে?’

মনে মনে ভীষণ করে বকা দিলাম। কোনো উত্তর না দিয়েই মাথা নিচু করে থাকলাম। আমি অন্যসময় প্রচুর কথা বলতে পারলেও এই লোকটার বেলায় চুপচাপ হয়ে যায়। উহু সবসময় না। যখন টেক্সট করি তখন নিজের মতো যতো আজাইরা প্যাচাল আছে সব বলি কিন্তু কলে মেপে মেপে কথা বলি। সেখানে লোকটা আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ভাবতেই আমার ভয়ে গায়ের লোমকূপ দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। কোনোরকমে কাচুমাচু করে একপাশে দাঁড়াতেই উনি গলা ছেড়ে পেছনের ছেলে গুলোকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

‘দোস্ত তোরা ঘুরে আয়!’

উনার ফ্রেন্ডরা মাথা নাড়িয়ে বাইক নিয়ে ছুটে গেলো। উনি আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিচু স্বরে বললেন, ‘চলেন!’

আমি চমকে উঠে গড়গড় করে বললাম, ‘কোথায় যাবো? আমি কোথাও যাবো নাহ। ক্লাস আছে আমার। গেলাম!’

উল্টো ঘুরে চলে আসতে নিলে উনি তড়িঘড়ি করে ব্যাগ টেনে ধরলেন। আমার মুখটা নিমিষেই কাঁদো কাঁদো হয়ে গেলো৷ ঘাড় ফিরিয়ে তাকাতেই বললেন, ‘ক্লাস করে উদ্ধার করেছেন আমাকে! এখন আমার সাথে চলুন। এটা কিন্তু ইনবক্স না যে আমার হাত এসে আপনাকে থা’প্পড় দিতে পারবে নাহ!’

আমার মুখে পুরোপুরি আঠা লাগিয়ে বন্ধ করে দিলাম। উনি আমার থেকে একটু খানি দূরত্ব রেখে পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটতে শুরু করলেন। আমাদের কলেজের পাশের ছোট্ট একটা রাস্তা আছে। ওখানে শুধু রিক্সা, সিএনজির চলাচল। উনি আমার সাথে পা মিলিয়ে সেই ছোট্ট রাস্তাতেই হাঁটা লাগালেন। আমি আড়চোখে একবার, দুবার করে কয়েকবার তাকালাম। লোকটা আমার প্রিয় রঙের শার্ট পড়েই এসেছে। আচ্ছা লোকটা একটু বেশিই সুন্দর নাকি! কথাটা মনে হতেই ফট করে আশে পাশে তাকালাম। কয়েকটা মেয়ে সরাসরিই আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। বিশেষ করে আমার পাশে হাঁটতে থাকা নিবৃতের দিকে। হুট করেই আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম। উনি ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকাতেই দিন দুনিয়া ভুলে ছ্যাত করে উঠে বললাম,

‘আপনাকে আসতে কে বলেছে হ্যাঁ? আর এসেছেন ভালো কথা! এতো সাজগোজ করে কে আসতে বলছে? মাস্ক পড়েননি কেনো?’

এটুকু বলতেই উনি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘মাথার তা’র কি আবার খুলে গেছে? এমনিই বলি আপনার মাথায় সমস্যা আছে!’

আমি ফোঁস করে উঠলাম। উনি আমার ব্যাগ টেনে ধরে হাঁটতে লাগলেন। আমি ফুঁসতে ফুঁসতেই হাঁটতে থাকলাম। উনি বুকপকেট থেকে কৃষ্ণচূড়া নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,

‘আপনার প্রিয় কৃষ্ণচূড়া!’

আমি হাত বাড়িয়ে ফুল নিলাম। প্রসন্ন চিত্তে হেঁসে উনার দিকে তাকালাম। লোকটা বুঝি আমার পছন্দ-অপছন্দও এতো মনে রাখে! কই কখনো তো বুঝতে দেয় না! আমি উনার শার্টের এক কোণা চেপে ধরতেই উনি তাকালেন আমার দিকে। আমি বায়না করার স্বরে বললাম, ‘এটা হিজাবের ওপর সুন্দর করে গুঁজে দেন!’

‘আমি! আমি এসব পারি না। এনে দিয়েছি নিজে গুঁজে নেন!’

‘দেন না!’

উনি আর কথা বাড়ালেন না। নিঃশব্দে হিজাবের পিন দিয়ে সুন্দর করে গুঁজে দিলেন। আমি ঠোঁট কামড়ে হাসলাম। আশে পাশে অনেক বাগানবিলাসের গাছ আছে। আমি নিঃশব্দেই হাঁটছিলাম আর চারপাশ দেখছিলাম। ছোট রাস্তা পেড়িয়েই বড় রাস্তার মোড়। ভীষণ ভীড়ভাট্টা পেরিয়ে তবেই এখান থেকে যেতে হবে। আমি একবার শুধু নিবৃতের মুখের দিকে তাকালাম। উনি নিজের ফোনটা পকেটে পুড়ে নিয়ে আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরলেন। ভীড় ঠেলে সুন্দর করেই আমাকে নিয়ে বেড়িয়ে আসলেন। খেয়াল করলাম এতো ভীড়ের মাঝেও কারোর সাথে মোটেও ধাক্কা লাগেনি আমার। সবার থেকে আগলে নিয়েই খুব সন্তর্পণে এগিয়ে চলেছে নিবৃত। রোদের ঝাপ্টায় বেশ গরম লাগছিলো। গলাটাও বেশ শুকিয়ে গেছে। উনি হুট করেই আমাকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে কোথায় যেনো গেলেন। গরমের তাপে আমার ভীষণ মেজাজ খারাপ হয়। মিনিট খানেক ঘুরতেই উনি ছুটে এলেন। হাতে পানির বোতল ধরিয়ে দিয়ে নিজের ফোনে মন দিলেন। মুখে কিছুই বললেন নাহ। আমি নিঃশব্দে হেঁসে পানি পান করলাম৷ দুজনে চুপচাপ হেঁটে ফুলের দোকানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেলাম। বরাবরই ফুলের ওপর আমার অগাধ দুর্বলতা। সেই দুর্বলতা থেকেই পা দুটো আর বাড়াতে মন চাইলো নাহ। নিবৃত নিজেও এগোলেন নাহ। ফুলের দোকান থেকে কতগুলো গোলাপ, জারবেরা, রজনীগন্ধা নিয়ে হাতে ধরিয়ে দিলেন। কোলাহল পেড়িয়ে দুজনেই লেকের পাড়ে বসলাম। আইসক্রিম নিয়ে ধরিয়ে দিলেন হাতে। জোরেই বললেন,

‘বাচ্চা মেয়ের প্রেমে পড়েই বিপদে পড়েছি। আইসক্রিম, চকলেট, হাওয়াই মিঠাই দিয়েই আমার জীবন শেষ হয়ে যাবে।’

আমি চোখ বড় বড় করে তাকাতেই উনি হিজাবের ওপর এলোমেলো হয়ে যাওয়া কৃষ্ণচূড়া ঠিক করে দিয়ে ফিসফিস করে বললেন, ‘তবুও আমার এই বাচ্চা মেয়ের প্রেমই ভালো। কথায় কথায় ধমক দেওয়া যায়। বাচ্চা মেয়েটা ভয়ে কাচুমাচু করে যখন কথা বলে তখন আমার ভীষণ মজা লাগে। এই যে এখন কৃষ্ণচূড়া গুঁজে বসে আছে! বাচ্চা মেয়েটা কি জানে তাকে কি পরিমাণ স্নিগ্ধ লাগছে!’

আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকালাম। উনি শব্দ করে হেঁসে উঠলেন। এই প্রথম তাকে এভাবে হাসতে দেখে আমি মুগ্ধতা নিয়ে তাকালাম। উনি এক হাত বুকের বাম পাশে রেখে ঠোঁট কামড়ে বললেন,

‘এভাবে তাকাবেন না কৃষ্ণচূড়া। আমার এখানে লাগে! আপনার এই দৃষ্টিতে আমার ভেতর যে তোলপাড় করে দেয় এটা কি বোঝেন? বুঝবেন কেমন করে? আপনি তো বাচ্চা মেয়ে। আমার হৃদয়ের ব্যাথা আপনি আর বুঝবেন কেমন করে! এই যে মিস কৃষ্ণচূড়া আপনি এতো মায়ায় বাঁধেন কেমন করে?’

প্রথম বারের মতো উনার মুখে প্রেমময় বাক্য শুনে আমি স্তব্ধ। আমি বুঝি লোকটা কি ভীষণ ভালোবাসে আমাকে কিন্তু আজ অব্দি কখনোই ভালোবাসি বলেনি আমাকে। তবে হাজার বার হাজার ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে তার ভালোবাসার গভীরতা। আজকের এই প্রেমময় নিবৃত আমার কাছে ভীষণ নতুন। একদমই ভীষণ! আমি কোনো কথা ছাড়াই হুট করেই উনাকে জড়িয়ে ধরলাম। উনার বুকে মাথা রেখে শুনতে থাকলাম একেকটা বিট! আহা শান্তি।

সমাপ্ত..

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৩৬

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব-৩৬

“নয়না চোখ বন্ধ রেখেই জিয়ানের শার্ট খামচে ধরলো।
“জিয়ান দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে চলে আসলো৷
” নয়না এখনো চোখ খুলেনি। হৃদযন্ত্রে ধুকপুক আওয়াজ হচ্ছে ।
“এই যে ম্যাডাম চোখ খুলে একবার দৃষ্টি স্থীর করুন৷ সুনয়না তোমার মনকর্ষণ করা আঁখি পল্লব মেলে দাও।
” নয়না পিটপিট করে চোখ খুললো,পূর্ণ চাঁদের আলোতে জিয়ানের চেহারা স্পষ্ট হলো নয়নার দৃষ্টিতে৷ নয়না জোড়ে চিৎকার করলো।
জিয়ান নয়নার মুখের উপর হাত রেখে ফিসফিস করে, বলে কেস খাওয়াতো চাচ্ছো কেনো বৌ!কই তোমার জন্য সাত সমুদ্র তেরো নদী পারি দিয়ে আসলাম কিসমিস খাওয়াবা তা’না সোজা কেস খাওয়ানোর ধান্দা?
“নয়না কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু জিয়ান নয়নার মুখ চেপে ধরার কারনে কথা বের হচ্ছে না।
” শোনো বৌ ঝগড়া হ্যাসবেন্ড ওয়াইফের পার্সোনাল ইস্যু সো সেটা পার্সোনালি মিটমাট করে নেই। যদি রাজি থাকো আলতো করে আমার হাতে কামড়ে দাও তোমার মুখ খুলে দিচ্ছি। আর রাজি না থাকলে এভাবে তুলি নিয়ে যাবো তোমাকে।
“নয়না জিয়ানের হাতে দাঁত বসিয়ে বেশ জোড়ে কামড় বসালো কিন্তু কাজ কিছুই হলো না৷ কারন রেজা চৌধুরী কি এতোই বোকা নাকি! হাতের তালুতে কেউ জোড়ে কামড় বসাতে পারে নাকি।
” জিয়ান নয়নাকে কোল থেকে নামি দিলো৷
“নয়নার শরীরে ওড়না নেই সেদিকে তার খেয়াল নেই। কোমড়ে হাত রেখে বলে,আপনার সাহস কি করে হলো আমাকে কোলে তোলার?
” স্যরি। তোমাকে কোলে তুলে ভুল করেছি তোমাকে তো মাথায় তোলা দরকার ছিলো জানেমান৷
“চুপ একদম চুপ স্যরি! আপনার স্যরির আচার বানিয়ে খিচুড়ির সাথে খেয়ে ফেলুন৷ সুনয়না তালুকদারের কারো সস্তা স্যরি চাইনা৷
” তুমি চাইলে আমি তোমাকে পৃথিবীর সবচেয়ে দামী স্যরি দিতে পারি।
“ওহহহ আচ্ছা তো কোথায় আপনার দামি স্যরি?
” তারজন্য তোমাকে আমার কাছাকাছি আসতে হবে, চোখে চোখ রেখে একে অপরের বাহুতে অবস্থান করতে হবে,এরপর ঠোঁটে ঠোঁট রেখে স্যরি বলবো। ব্যাস পৃথিবীর সবচেয়ে দামী স্যরি হয়ে যাবে৷
“ছিহহহহ লুচু লোক, অসভ্য লোক মেয়েদের ইজ্জত লুট করার ভালোই ট্রেনিং জানেন দেখি! তা আজ পর্যন্ত কতজনকে এরকম দামী স্যরি দিয়েছেন?
” তোমার কসম বৌ এই স্যরি এই মূহুর্তে আবিস্কার হয়েছে শুধুমাত্র তোমার জন্য। এখনো এই অধম এই স্যরি আর কাউকে নিবেদন করেনি।
“প্লেন ড্রাইভারের বাচ্চা,ধোঁকা বাজ, ইতর,লুচ্চা, লাফাঙ্গা। একদম কথায় কথায় বৌ বৌ করবেন না। আমি পিউর সিঙ্গেল।তবে আগামীকাল বিবাহিতা হয়ে যাবো৷ সো দশ হাত দূরত্ব রেখে দাঁড়ান। আপনার মত ধোঁকাবাজ প্লেন ড্রাইভার আমার দরকার নেই৷
” জিয়ান নয়নার হাতে টান দিয়ে একদম নিজের বুকের কাছে নিয়ে আসলো,নয়নার ঠোঁটের উপর আঙ্গুল রেখে বলে,তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী, আমার জীবনসঙ্গিনী, আমার সুখ, দুঃখের চিরসাথী। আমাকে তুমি এজন্মে তোমার থেকে আর আলাদা করতে পারবে না। আমি মানেই তুমি তোমার অস্তিত্ব জুড়ে শুধুই আমি। আমি শুধুমাত্র তোমার প্লেন ড্রাইভার। ক্যাপ্টেন রেজা চৌধুরী তা স্বীকার করছে।
“জিয়ান নয়নার এতোটা কাছে যে,নয়নার মুখে জিয়ানের গরম নিশ্বাস আছড়ে পরছে,এলোমেলো লাগছে নয়নার, হৃদয়ে কেমন তুফান বইছে! গলা শুকিয়ে আসছে। হার্টবিট ফাস্ট হচ্ছে। নয়না দু’কদম সরে এসে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিলো।নিজেকে কিছুটা সহজ করার চেষ্টা করছে। মনে মনে বলে,একদম গলে যাস না নয়ন৷ ভুলে যাস না এ’কদিন সে কি কি করেছে। নয়না নিজের বুকের বামপাশে হাত রেখে নিজের হৃদয়ের উথাল-পাথাল থামানোর চেষ্টা করছে। মনে হচ্ছে এক্ষুনি হৃদপিণ্ড বাহিরে চলে আসবে!
” জিয়ান নয়নার পেছনে দাঁড়িয়ে মৃদু স্বরে বলল,আমি তোমাকে ঠকাইনি নয়না তুমি ভুল বুঝেছো আমাকে। যাস্ট একটা কনফিউশান ক্লিয়ার করলেই তুমি বুঝে যাবে।
“নয়নার অবচেতন মন মাত্র আন্দাজ করলো তার সাথে ওড়না নেই। মূহুর্তেই নিজের হাত দুটো জড়িয়ে নিলো। ইতস্তত বোধ করতে লাগলো।
“জিয়ান নয়নার আরো খানিকটা কাছে এসে নয়নার হাত ধরে বলে,তোমার সব লজ্জার মালিক এখন আমি। আমার আর তোমার মাঝে কোন লাজ নেই। তুমি কি জানোনা আমরা আমাদের পোষাক! তোমার সব রুপ আমার জন্য উন্মুক্ত।বলেই নয়নাকে জড়িয়ে ধরলো, নয়নার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।জিয়ান নয়নার অতিরক্তি কাছে আসলেই নয়নার এই সমস্যা দেখা দেয়। জিয়ান নয়নাকে নিজের বক্ষ থেকে সরিয়ে বলে,কি হয়েছে তোমার?এমন করছো কেন পাখি? আমাকে বলো কোথায় কষ্ট হচ্ছে। নয়না কিছুই বলতে পারছে না। নয়নার প্যানিক এট্যাক হয়েছে৷ তার চোখের সামনে ভাসতে লাগলো সেই রাতের দৃশ্যগুলো। ঝাপসা হয়ে আসছে নয়নার চারপাশ।
” জিয়ান বেকুল হয়ে পরলো প্রেয়সী এই অবস্থা দেখে।রাত তখন সারে তিনটা। জিয়ান অনিকেতকে কল করলো,রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না৷ কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে নয়নাকে নিয়ে দেয়ালের পেছনে লুকিয়ে পরলো৷ততক্ষণে নয়না বেহুশ। বিয়ে বাড়ি অনেক আত্মীয় স্বজনরা এসেছে তাই বাড়ি ভর্তি মানুষ। জিয়ান নয়নাকে নিজের মধ্যে জড়িয়ে নিলো।লোকটা চলে যেতেই নয়নাকে কোলে তুলে আবার জাহানারা বেগমের পাশে শুয়ে দিলো,খানিকক্ষ তাকিয়ে রইলো নয়নার দিকে,আবছা আলোতে মেয়াটাকে আরো স্নিগ্ধ লাগছে! নয়নার কপালে চুমু দিয়ে বের হয়ে আসার সময় দরজা আলতো হাতে চাপিয়ে দিয়ে আসলো৷ নিচে আসতেই ঘটলো এক বিপত্তি। হঠাৎ করে পেছন থেকে একজন জিয়ানকে ডেকে বলে,এই ছেলে কে তুমি? তোমাকে তো এর আগে দেখিনি কখনো?
“জিয়ান শুকনো ঢোক গিলে পকেট থেকে মাক্স বের করে পরে নিলো,এরপর সামনে ফিরে দেখে মধ্য বয়স্ক একজন পুরুষ। জিয়ান নিজেকে ধাতস্ত করে বলে,আমি ডেকোরেশনের লোক।
“লোকটা মেবাইলের আলো জ্বালাচ্ছে এই সুযোগ জিয়ান ফুড়ুৎ।
” আতিফ সাহেব সামনে টচ ধরতেই দেখে সামনে কেউ নেই! সে ভীত হলো! মনে মনে ভাবলাম হয়ত জ্বিন ভুত তাই দ্রুত প্রস্থান করলো৷
🌿মেহনুর খেতে বসেছে
“মিতা বেগম মেহনূরের পাশে বসে যত্ন করে খাবার তুলে দিচ্ছে। জানিস তুই একদম তোর মায়ের মত হয়েছিস৷ সেই চোখ সেই নাক।
” মেহনূরের হাতের লোকমটা আর মুখে উঠলো না৷ ঠুকরে কেঁদে উঠলো মেহনূর।
“মিতা বেগম উঠে এসে নয়নার মাথা তার বুকে চেপে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,চিরজীবন কেউ বেঁচে থাকে না মা৷ তোর এক মা চলে গেছে তাতে কি আমি তো আছি। জানিস সবচেয়ে বড় কষ্ট হলো এতোকিছু হয়ে গেছে আমার বোনের মত ফ্রেন্ডের সাথে আমি তা জানতেও পারলাম না। তার শেষ সময় তাকে একবার দেখতে পারলাম না৷
” আম্মি আম্মু বারবার তোমাদের কথা বলছিলো কিন্তু আমরা কোনভাবে তোমাদের কন্টাক্ট করতে পারিনি৷
“লাস্ট পাঁচটা বছর তোর মায়ের সাথে আমার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। তোর বাবা পছন্দ করতেন না আমাদের দু’জনের সখ্যতা৷
” বাবা ‘ এই শব্দটা এখন হৃদয়ে কাটার মত বিঁধে। আম্মু যখন মৃত্যুর মুখে তখন সে তার নতুন জীবন সাজাতে ব্যস্ত৷ আমি নিজের ছোট বিজনেস আর চাকরির বেতন দিয়ে লড়ে গেছি আম্মুর জন্য। একসপ্তাহ আগে আম্মুর একটা পুরোনো ডায়েরি খুঁজে পাই সেখানেই তোমার ডিটেইলস পেয়েছি আম্মি।অশান্ত মনটাকে শান্ত করার জন্য ছুটে এসেছি তোমার কাছে৷
“মিতা বেগম মেহনূরে কপালে চুমু দিয়ে বলে,একদম মন খারাপ করবি আমি আছি তোর জন্য। জানিস রেজার বিয়ের ইনভিটেশন দেয়ার জন্য অনেক বার ট্রাই করেও কন্টাক্ট করতে পারিনি৷
” রেজার বিয়ে!
“হ্যা রেজার বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। মেয়েটা দারুণ দেখতে তবে বয়স একটু কম। মানিয়ে নিতে পারলেই হয়।
” মেহনুরের গলা যেনো কেউ চেপে ধরেছে সেতো এই আশা নিয়ে এসেছিলো তার মায়ের শেষ ইচ্ছে পূরণ করবে রেজাকে বিয়ে করে। কিন্তু এটা কি হলো!
#চলবে

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৩৫

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৩৫
প্রতিবার দেশে ফেরার সময় জিয়ান এক্সাইটেড থাকে তবে এবার যেনো তার চেহারায় আলাদা রকমের আনন্দ দোল খাচ্ছে। সিটে বসে মনে মনে বলে,সুইটহার্ট এবার ফেরার সময় আমি একা ফিরবো না তোমাকে নিয়ে ফিরবো। আর কয়েকঘন্টা তারপর তোমার সব অভিমান মুছে দেবো রাঙাবৌ। জিয়ানের ভাবনার ছেদ ঘটে পাশের সিটের কারো কান্নার আওয়াজে। জিয়ান একবার ভাবলো জিজ্ঞেস করবে আবার কিছু একটা ভেবে জিজ্ঞেস করলো না৷
“পাশের সিটে বসে থাকা মেয়েটা মাথা তুলে তাকাতেই,জিয়ান বলে,আবার আপনি!”
“ইরার কোন হেলদোল নেই সে নিষ্প্রাণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিচের দিকে চোখ থেকে অঝোর ধারায় বর্ষণ হচ্ছে।”
“এভরিথিং ইজ অলরাইট মিস?”
“ইরা নিচের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলো যার মা দুনিয়ায় ছেড়ে চলে গেছে তার সবকিছু অলরাইট কি করে হয়?”
“সো স্যাড। কিন্তু মানুষের জীবন তো চিরস্থায়ী নয়, তাই না? আমরা জন্মের পরেই জানি আমাদের মৃত্যু নিশ্চিত।”
“আপনি জানেন আমার মম লাইফে কিছু পায়নি। না ঘর,না সংসার, না ওই লোকটার পরিচয়। ধ্বংস করে দেবো তাকে আমি। আমি এখানে আর আমার মা কফিনে৷”
“কোন লোকটা? আর আপনার বাবা কোথায়?”
” বাবা শব্দটাকে ঘৃণা করি আমি। আমার মম সারাজীবন তাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবেসে গেছে সে আমার মমকে জাস্ট টিস্যু পেপারের মত ইউজ করেছে।”
“আপনার বাবার সাথে কথা হয়েছে মনে হয়নি ভদ্রলোক এমন হতে পারে।”
” ওটা আমার বাবা না। আমার আঙ্কেল। ছোট খালামনির হ্যাসবেন্ড। বাবা নামক মানুষটাতো আমার মমকে সারাটা জীবন ঠকিয়ে এসেছে। আচ্ছা স্ত্রীর পরিচয় যদি নাই দিতে পারবে তাহলে সেই স্ত্রীর সাথে রাত কাটাতে লজ্জা লাগলো না! তার শরীরে যদি এতোই কারেন্ট পতিতালয়ে না যেয়ে আমার মমকে কেনো ব্যবহার করলো? জবাব চাই আমার, আমি ওই লোকটাকে খু’ন করে তবেই শান্ত হবো।”
“জিয়ান পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বলে, আপনাকে শান্তনা দেবার মত ভাষা আমার জানা নেই। তবুও বলবো একটু শান্ত হোন, ঠান্ডা মাথায় কাজ করুন৷ আল্লাহ তায়ালা আপনার মমকে জান্নাতবাসী করুক।”

পুরো জার্নিতে আর তেমন কোন কথা হলোনা। পুরোটা পথ মেয়েটা শুধু কেঁদেছে। জিয়ান আগ বাড়িয়ে আর কথা বাড়ায়নি কারন সব মানুষ সিমপ্যাথি পছন্দ করে না৷

🌿

নয়না রাগে গজগজ করতে করতে গাড়িতে এসে বসেছে৷ তার মোটেও যাওয়ার ইচ্ছে নেই। তার মা জোর করে নিয়ে যাচ্ছে।
“জাহানারা বেগম নয়নাকে উদ্দেশ্য করে বললেন চেহারার নকশা ঠিক করো। বাপ বেটি এক রকম হয়েছো। কোথাও যাওয়ার নাম শুনলেই কপালে বজ্রপাত পড়ে! তা আত্মীয় স্বজনদের সাথে সম্পর্ক রাখতে হয় না?”
“তো তোমার ভাতিজার বিয়ে তুমি যাও না, আমাকে কেন টানছো?”
“তোমাকে বড় মামি কত আদর করে আর তুমি এভাবে বলছো!”
“আম্মু, আম্মি ছাড়া আর কিছুই আমার মনমত না ওই বাড়িতে। তাছাড়া আলিফ ভাইয়াও তো আসবে। বাবা জানলে কি হবে?”
” আলিফ যথেষ্ট ভদ্র ছেলে আমার তো ভয় তোমাকে নিয়ে। কি উল্টোপাল্টা কান্ড ঘটিয়ে বসো কে জানে!”
“তো আমাকে নিচ্ছো কেনো? নামিয়ে দিয়ে যাও।”
“শোন জামাইয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে কোন উল্টোপাল্টা কথা বলবে না৷ ভালো ভালো কথা বলবে৷ জামাইকে নিয়ে একদম ভুলভাল কিছু বলে,আমার নাক কাটাবে না৷”
“তোমার জামাইকে নিয়ে আমি কোন দুঃখে কথা বলবো৷ ওই ব্যাডা চিটার।”
” চুপ একদম বেশি কথা বললে,মুখে স্ট্র্যাপ লাগিয়ে দিবো।”
“নয়নার ইচ্ছে করছে জিয়ানের চুলগুলো ধরে ইচ্ছেমত টানতে। গোছানো চুলগুলো টেনেটুনে ছিড়ে নষ্ট ভষ্ট করে দিতে। ইচ্ছেমত কামড় দিয়ে রক্ত বের করে আনতে। শা”লা আমার সাথে বাটপারি করে!বিয়ে করেছে আমাকে ঘরে তুলে এনেছে আরেক মেয়েকে!এই বেডা মানুষ, কবরে গেলেও আরেকটা বিয়ে করার সুযোগ পেলে হাতছাড়া করবে না৷ শা”লা একবার আসি শুধু চট্টগ্রাম থেকে তোকে বোঝাবো সুনয়না তালুকদার কি চিজ!
“জাহানারা বেগম একটা কোণ আইসক্রিম নয়নার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,অন্যের ছেলের গুষ্টি উদ্ধার না করে,আইসক্রিম খেয়ে বংশগত বদ মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করো৷”
“আমাদের বংশ নিয়ে এতোই যখন সমস্যা কে বলেছিলো এই বংশে আসতে?”
“আমি আসিনি আমাকে নিয়ে এসেছে।”
“এবার এসে বলবো ফেরত দিয়ে আসতে।”
“চুপ করো একদম। সবাই জানে তুমি ভদ্র সো নিজের ইমেজ নষ্ট করবে না। আর হ্যা চুলের দিকে খেয়াল রাখবে এই চুল তো আমার যত্নে গড়া।”
” নয়না গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালো, মনে মনে ভাবলো ইশশ লেখকের লেখা চরিত্রের মত কেউ আমার জীবনে আসলে কত ভালো হতো! সে আমার চুল দেখে কবিতা আবিষ্কার করে ফেলতো। চোখ দেখে বলতো,”শোন কাজল চোখের মেয়ে আমার দিবস কাটে বিবশ হয়ে তোমার চোখে চেয়ে, (সাদাত হোসাইন) তা’না কপালে জুটেছে এক চিটার, বাটপার শা’লা হনুমান।”

🌿

জাহিন এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে আছে মেহনুরের জন্য। বেশ কিছুক্ষণ পর একজন বলল,হ্যালো?
“জাহিন সামনে তাকিয়ে দেখে কালো স্যুট পরা এক নারী। ফর্সা মুখশ্রীতে কালো চশমাটা যেনো ফুটে উঠেছে। মেয়েটি হাত ঘড়ির দিকে টাইম দেখে বলে,এই ড্রাইভার আমার ব্যাগগুলো গাড়িতে নিয়ে রাখো৷ আর হ্যা গাড়ি স্লো চালাবে।

” জাহিন দাঁতে দাঁত চেপে বলে,আমাকে দেখে আপনার ড্রাইভার মনে হচ্ছে! চোখ আছে তো চশমার আড়ালে?”
“মেহনুর কথার উত্তর না দিয়ে বলে,আমার হাতে সময় নেই আপনাকে জাজ করার দ্রুত যেতে হবে আমাকে।”
” অন্তর হেসে বলে,বাহহহ ভাই এতো মেয়েদের ক্রাশ থেকে সোজা গাড়ির ড্রাইভার বানিয়ে দিলো!বিদেশি ম্যাম তো, তাই হয়তো।”
“চুপ কর বেশি কথা না বলে,ব্যাগ তুলতে সাহায্য কর।বাসায় যেয়ে একে দেখে নিচ্ছি৷ ছোট বেলায় ম্যা ম্যা করতে করতে পিছু পিছু ঘুরতো এখন ভাব নিচ্ছে! দুই দিনের বৈরাগী ভাত কে বলে রাইস!”
” মেহনুর গাড়ির পেছনের সিটে বসলো।তার এমন এক ভাব যেনো আশেপাশে কেউ নেই৷ মোবাইল স্ক্রল করতে ব্যস্ত সে।”
“গাড়ি এসে থামলো চৌধুরি ম্যানশন। মেহনুর ছুটে বাড়ির ভেতরে ঢুকেই আম্মি বলে জড়িয়ে ধরলো মিতা বেগম কে৷”
” মিতা বেগম মেহনুরকে জড়িয়ে ধরে বলে,কেমন আছিস? আমার বাঁদরটা তোকে বিরক্ত করেনিতো?”
“তোমার বাঁদর মানে আম্মি?”
” জাহিনকে পাঠিয়েছিলাম তোকে আনতে।”
“আমি তো ভেবেছি রেজা! তাই একটু মজাও নিয়েছি।”
“রেজা তো দেশে নেই। আচ্ছা এখন রুমে যা ফ্রেশ হয়ে আয়, আজ সব তোর পছন্দের খাবার রান্না হয়েছে। আর হ্যা এখন থেকে কিন্তু সেলোয়ার-কামিজ পরতে হবে। আমি তোর জন্য কিছু সেলোয়ার-কামিজ বানিয়ে আলমারিতে রেখে দিয়েছি৷”
“বাবা কেমন আছে?”
“সে আছে ভালো। সে ভালো আছে বলেই তো আমরা ভালো আছি।”
“মেহনুর সার্ভেন্টকে সাথে নিয়ে নিজের রুমে আসলো।দীর্ঘ চব্বিশ বছর পর নিজের দেশে পার্মানেন্ট ভাবে ফিরে এসেছে মেহনুর। রুমে এসে বেডে বসে বলে,রেজা এবার তুই আমাকে ভালোবাসবি তো?আমি তোর অর্ধাঙ্গিনী হয়ে বাকিটা জীবন কাটিয়ে দিতে চাই।

” জাহিন রেগে মেগে আগুন, বাসায় ঢুকে সোজা কিচেনে আসলো,আম্মু তোমার বান্ধবীর মেয়ের কত বড় সাহস আমাকে ড্রাইভার বলে!দ্যা মোস্ট হ্যান্ডসাম জাহিন চৌধুরিকে! ওরে একবার পাই তারপর বোঝাবো ড্রাইভার কিয়া চিজ।
“আসছে আমার মোস্ট হ্যান্ডসাম! হ্যান্ডসাম হলে এই বয়সেও তুই একা থাকতি?এতো দিনে দুই চারটা বাচ্চার বাপ থাকতি। নিজেকে আয়নায় দেখ।”
” আম্মু তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো।”
“বিয়ে করতে রাজি হলে সম্মান করবো।”
” এই অহংকারী মেয়েকে কিছুতেই বিয়ে করবো না৷ জাহিন চৌধুরীর সাথে ভাব নেয়!”

🌿

জিয়ান দেশে ফিরে নয়নাকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য সোজা তালুকদার বাড়িতে গেলো,সেখানে যেতেই সূচনা বলে,তুই এই বাসায় কি করিস? তোকে না সেদিন দেখলাম মেয়েদের গান শোনাতে?
“ওরে দাদিআম্মা আমার। তা তোমার সাগরেদ কই?”
” তুই কি টয়নার কথা বলছিস.?
“টয়না তো আম্মুর সাথে বিয়ে করতে গেছে চট্রগ্রাম।”
জিয়ান দ্রুত উঠে এসে দারোয়ানেে কাছ থেকে ফুল ঠিকানা নিয়ে সোজা চলে গেলো এয়ারপোর্টে। সেখান থেকে চাটার্ড বিমানে সোজা চট্টগ্রাম চলে আসলো।
“নয়নাদের আসতে আসতে অনেক রাত হয়েছে৷ দো’তলা বাসা তবে সিঁড়ি হচ্ছে বাহিরের সাইডে। নয়না তার মায়ের সাথে দোতলায় ঘুমিয়ে আছে।
নয়না তার মায়ের পাশে ঘুমিয়ে আছে,এমন সময় অনুভব করলো কেউ তার মুখ চেপে ধরেছে৷ ভয়ে চিৎকার করতে চাইছে কিন্তু আওয়াজ বের হচ্ছে না মুখ থেকে। কেউ সেভাবেই নয়নাকে কোলে তুলে নিলো৷ অন্ধকার রুমে আবছায়ার মত একটা ছায়ামূর্তি নয়না ভয়ে কাঁপতে লাগলো,কেউ কানে কানে ফিসফিস করে বলল,এক পুরুষের স্পর্শেই কাঁপা-কাঁপি অবস্থা আবার নাকি বিয়ে করবে শখ কত ম্যাডামের!
“এই কন্ঠ নয়নার চেনা৷ যেনো,যুগ যুগ ধরে পরিচিত কোন কন্ঠস্বর।”

#চলবে।

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৩৪

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৩৪

নয়নার আজকে শেষ এক্সাম ছিলো। হল থেকে বের হয়েছে ঘন্টা খানেক আগে, সবার সাথে শেষবারের মত দেখা করতে গিয়ে কান্না করে দিয়েছে নয়না।সবার চোখেই অশ্রু স্কুল লাইফের দশটা বছর একসাথে কাটানোর পর এই হল থেকে বের হয়ে এরপর কার গন্তব্য কোথায় হবে কারোর জানা নেই। জীবনের স্রোতে চেনা মুখগুলোর সাথে আর কখনো কোন বাঁকে দেখা হবে কিনা তাও জানা নেই! স্কুল লাইফ হয়তো জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অধ্যায়৷ এরপরের জীবন কি এতো মধুর হয়!
নয়না তুষির হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে।
“তুষি কাঁদছে।
“এই তুষি তুই কাঁদছিস কেনো?তুই কিন্তু হারিয়ে যেতে পারবি না।শোন আমরা একি কলেজে ভর্তি হবো৷ তোর বাসা তো আমার বাসা থেকে মাত্র আধঘন্টার দূরত্ব। তুই কাঁদছিস কেন?”
“তুষি নয়নাকে জড়িয়ে ধরলো। তুষির মনে কিছু একটা চলছে। কিছু কথা বলতে যেয়েও তুষি তা শব্দ রুপে মুখ থেকে বের করতে ব্যর্থ হলো৷”
“তুষির বাচ্চা ভুষি বেশি ঢং করলে তোকে কিন্তু ময়না ফুপির ছেলের বৌ করে ফেলবো৷”
“তুষি মেকি হেসে বলে,নয়না একটা কথা বলবো?”
“একটা? এক হাজারটা বল ভুষি।”
“বিয়ে একটা পবিত্র বন্ধন, তুই হেলায় খেলায় সেটা নষ্ট করিস না। চেষ্টা কর ভাইয়ার সাথে সবকিছু স্বাভাবিক করে নিতে৷ তোর আমাদের ক্লাসের নিতুর কথা মনে আছে?”
“কোন নিতু?”
“ওই যে ওর বাবা ভ্যান চালাতো? অসচ্ছলতার কারনে ওর বাবা ওকে ক্লাস এইটে থাকতে বিয়ে দিয়ে দেয়৷ ওই নিতুর দুইটা ছেলে,মেয়ে। তুই তো ওর চেয়ে বড়। দেখ নয়ন জীবন এতো সহজ না৷ মেয়েদের জীবন তো আরো বেশি কঠিন।”
” তুই এতো গভীর কথা কবে শিখলি! আগে তো আমাকে বলতি উপন্যাস পড়ে পড়ে আমি দাদিআম্মাদের মত জ্ঞান দেই। হঠাৎ তোর কি হলো তুষি?”
“নয়না তুই জানিস বয়স আমাদের কোনদিন বড় করতে পারে না। আমরা তো বড় হই বাস্তব জীবনে হোঁচট খেলে। তখন দেখা যায় ষোল বছর বয়সের ভারও অনেক বেশি মনে হয়।”
“চুপ কর আর আউল ফাউল কথা শুনবো না৷ চোখ বন্ধ কর।”
“তুষি চোখ বন্ধ করতেই নয়না তুষির হাতে একটা ব্রেসলেট পরিয়ে দিলো৷”
” তুষি নয়নাকে জড়িয়ে ধরে বলে,তোকে খুব মিস করবো রে নয়ন৷ নয়ন মনে রাখিস চিরজীবন কেউ পাশে থাকে না। কেউ চলে গেলে ভেঙে পরবি না৷ জীবনে মানুষ আসবে যাবে। আপন মানুষ ও হারাতে হয় আমাদের। ভালো থাকিস নয়ন।”
“নয়নার মনটা কেমন বিষিয়ে উঠলো৷ তুষির কথাগুলো এতো ভারি ছিলো যে নয়নার হৃদয়কে নাড়িয়ে দিয়েছে। নয়না তুষি বলে ডাকলো৷
” তুষি পিছু না ফিরে দ্রুত চলে গেলো। নয়না গাড়িতে উঠে বসলো তার মন খারাপ ভিষণ মন খারাপ। তুষিরও কি মন খারাপ ছিলো? আচ্ছা আজ তুষার ভাইয়া তুষির সাথে দেখা করতে কেনো আসলো না! তুষির কি তুষার ভাইয়ার সাথে কোন ঝামেলা হয়েছে! কিন্তু তুষি তো কিছু হলেই আমাকে সবটা বলে৷ আজ এমন অন্য রকম তুষি হলো কি করে? বাসায় এসে ফাইল রেখে সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে চিৎকার বলে, আম্মু পানি। মোবাইলটা টেবিলে রেখে গিয়েছিলো অলসতা কাটিয়ে উঠে মোবাইল আনলো নিজের রুম থেকে ।
ডাটা অন করে তুষিকে কল করলো৷ ওপাশ থেকে বলছে নাম্বার সুইচড অফ। এরমধ্যেই জিয়ানের কল আসলো, নয়নার এমনিতেই মুড অফ তারওপর জিয়ানের কল দেখে আরো রেগে বোম হয়ে গেলো৷ রিসিভ করে বলে,মেয়েদের লাইনে দেখলেই বুঝি কল করতে ইচ্ছে করে? সারাক্ষণ কি এসবই করেন?
“জিয়ান হেসে বলে,তা মেজাজ এতো হট কেন? এক্সাম ভালো হয়েছে তো রাঙাবৌ?”
“ডোন্ট কল মি বৌ। অনলি সুনয়না৷”
“আরেহহহ বাহহহহ বৌ দেখি ইংরেজিও পারে! আসো বৌ আইসা পরো আমার মনের ঠিকানায়। ধুর কানাডায়।”
“দেখুন আমি একদম মজা করার মুডে নেই। ফোনটা রাখুন আর কখনো কল করবেন না। কলেজে ভর্তি হয়ে কোন নামকরা ভার্সিটির সিনিয়র ছেলেকে বিয়ে করে নেবো।”
“আরেহহহহ বাহহহ শখ তো কম না বাবুটার। তা ম্যাডাম আপনার কয়বার বিয়ে করতে মনচায়?”
“একদম বাজে বকবেন না। আপনার সাথে আমি কোন সম্পর্ক রাখবো না আমি আরেকটা বিয়ে করবো।”
“ছিহহহ ছিহহহ ছিরে ননী ছিহহহ ছিহ রে ছিহহ।এসব বলাও পাপ সুইটু। তুমি জিয়ান রেজা চৌধুরী ওয়াইফ। যতদিন জীবিত আছো তুমি মিসেস চৌধুরী হয়েই বাঁচবা বেব।”
” চুপ একদম চুপ আমার জীবন আমি ডিসাইড করবো আমি কিভাবে বাঁচবো। আমি আরেকটা বিয়ে করবো মানে করবোই।”
“বুঝছি ময়নার মা ভদ্র ভাষায় কইলে তুমি শুনবা না৷”
“ভদ্র অভদ্র আপনার কোন ভাষাই আমি শুনবো না, বিয়ে আমি আরেকটা করবোই।”
“এহনো নাক টিপলে শ্লেষ্মা পড়বে আইছে আবার বিয়ে করবো! ছেমড়ির শখ তো কম না!”
“জিয়ানের কথা শুনে নয়না দাঁতে দাঁত চেপে বলে,একদম উল্টোপাল্টা কথা বলবেন না।আমি ষোল বছরের হট গার্ল!”
“ছেমড়ি কয় কি! মাথায় ঘীলু আছে নাকি খালি খোলস?এহনো দুধের দাঁত পরে নাই আইছে হটগার্ল!”
“ছেমড়ি আবার কি শব্দ!”
” আমগো দেশের জাতীয় শব্দ বেবি। আমাগো দেশের বুলি তোমগো দেশের গালি।”
“নয়না রাগে ফোন কেটে দিলো। চিৎকার করে বাড়ি মাথায় তুলে ফেলছে।
জাহানারা বেগম এসে বলে,”কে মরছে? গরুর মত হাম্মা হাম্মা করছিস কেন?”
“আম্মু আমি বিয়ে করবো আম্মু। আমাকে ভালো একটা সুদর্শন ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দাও। তুমি না দিলে আমি নিজেই খুঁজে নিবো।”
“এক চড় মেরে চাপার দাঁত সব ফেলে দেবো৷ যাহহ রুমে গিয়ে ব্যাগ গোছা,সন্ধ্যায় বের হবো চট্রগ্রামের উদ্দেশ্যে। একটা কথাও মুখ থেকে বের করবি সাথে সাথে মাইর পরবে৷”
“নয়না ধুপধাপ পা ফেলে রুমে চলে আসলো, কত্তবড় সাহস আমারে ছেমড়ি কয়, শ্বশুরের ছেলের বাচ্চা তোরে খালি সামনে পাই তোর কিমা বানিয়ে স্বামী কাবাব যদি না বানিয়েছি তাহলে আমার নাম। বলেই চুপ হয়ে গেলো। ধুর ভাল্লাগে না মায়েরা সব সময় খালি বাহাদুরি দেখায়!”
” জিয়ান আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাসছে। কতবছর পর কারো সাথে এইভাবে কথা বলল!বৌটা নিজে আধপাগল আমাকে পুরো পাগল করে ছাড়বে। যত রাগ করার করে নাও রাঙা বৌ খুব তাড়াতাড়ি দেখা হচ্ছে তোমার সাথে। সব অভিমান ভেঙে দেবো ভালোবাসা দিয়ে৷ পিচ্চি একটা সুইট কিউট বৌ আমার। আজ রাতের ফ্লাইটে ফিরছি আমি সুইটহার্ট। সি ইউ সুন।

🌿

নীলাঞ্জনার পুরো শরীর জুড়ে কালসিটে দাগ। চুলগুলো কেটে ফেলেছে নিজেই৷
“লাবিবের বাাবা এসে বসলো,নীলাঞ্জনার পাশে, মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,জানোই তো ছেলেটা আমার বদমেজাজি ওর কথা শুনে চলবে তো৷
” নীলাঞ্জনা কিছু বলতে যেয়েও চুপ করে রইলো৷ সে এখানে ফিরে এসেছিলো তার অনাগত সন্তানের জন্য। সে চায়নি সন্তানকে বাবা হারা করতে৷
“লাবিব বারান্দায় দাঁড়িয়ে একটার পর একটা সিগারেট শেষ করছে। ইচ্ছে করছে নীলাঞ্জনাকে শেষ করে ফেলতে। এতো নাটক সাজিয়ে ফাঁদে ফেললো। কিন্তু কোন টোপ গিলছে না! সোনার ডিম পারা হাঁস যদি ডিম’ই না দেয় তাহলে তাকে রেখে কি করবো!

🌿

জাহিন তার ফেভারিট খাবার হাঁসের মাংশ আর ভুনা খিচুড়ি খাচ্ছে মনযোগ দিয়ে।
মিতা বেগম জাহিনের পাশে বসে বলে,”তুই কি আমাদের একটা কথাও শুনবি না?”
“আম্মু পছন্দের খাবার খাচ্ছি খেতে দাও তো মনমত।”
“আজ মেহনুর দেশে ফিরবে। তুই ওকে এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করবি।”
“জাহিন মনে মনে বলে,এক আপদ বিদায় করতে পারিনি এখনো আরেক আপদ এসে হাজির হচ্ছে!”
“কিরে কিছু বল?”
“মেহনুর আমাদের বাসায় কেন আসবে আম্মু!ওর দাদা বাড়িতে যেতে বলো।”
” জাহিন!”
“ওকে পিক করবো। কিন্তু বিয়ে টিয়ে করতে পারবো না কিন্তু।”
” তুই বিয়ে করবি কি? তোর মত বাউণ্ডুলে ছেলেকে মেহনুরের মত বিয়ে করতে রাজি হবে নাকি? তোর বাবা চায় কারন যেমন দেখতে তেমন তার শিক্ষা।বিজনেস নিয়ে পড়ালেখা করেছে ওদের ব্যবসা এখন ও একা চালায়। তোর মত গুন্ডাগীরি করে এমন ছেলে ও মেয়ে বিয়ে করবে কোন দুঃখে!”
“জাহিন ধীরে ধীরে খাচ্ছে। কারন মিতা বেগম সরলেই প্লেট ফুল করে মান্নাতের জন্য খাবার নিয়ে যাবে৷
” মান্নাত কিছুতেই বলতে চাইছে না তার কালো অতীত। কিন্তু অতীত তো তার পিছু ছাড়ছে না! সেই জঘন্য অতীত কিভাবে রিভিল করবো আমি!
#চলবে

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৩৩

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৩৩
জিয়ান মোবাইলের স্কিনে এক ষোড়শী কন্যার হাসোজ্জল মুখশ্রীর পানে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ মনে মনে আওড়ালো মেয়েটার চোখদুটো আসলেই সুন্দর। এতো সুন্দর দুটি চোখের অধিকারীনির জন্য সুনয়না নামটা হয়ত পৃথিবীতে এসেছিলো। মায়াবী চোখের অধিকার তুমি,আমার প্রিয়তমা অর্ধাঙ্গিনী। হঠাৎ কিছু একটা ভেবে হেসে ফেললো। প্রেমে পরলে ম্যাচিউর পুরুষ ও বোকা বোকা কর্মকাণ্ড করে বসে!আর সেখানে তো বাচ্চা একটা মেয়ে! সে তো করবেই নিব্বিগিরি। কিছুক্ষণ পূর্বের কথা….. জিয়ান ফ্লাইট ক্যানসেল হওয়ায় সে মিটিং বোর্ড থেকে বের হয়ে চেয়ারে বসতেই তার ফোনে জাহিনের হোয়াটসঅ্যাপ একাউন্ট থেকে কল আসে৷ জিয়ান রিসিভ করে বলে,কি ব্রো হঠাৎ স্বরণ করার কারন?
“জাহিন বলল,তোমাকে কল দিতে কি আমার কারন লাগবে!
“তা লাগবেনা কিন্তু তুই তো দরকার ছাড়া কল করিস না৷
” আমি প্লাস্টিক সার্জারি করিয়ে চেহারা পরিবর্তন করে ফেলবো।
“কি বলছিস এসব! মাথা ঠিক আছে? নাকি ছাইপাস খেয়েছিস?
” আমার মাথা একদম ঠিক আছে। আমি ওসব খাই না। মাঝে মাঝে সুখটান দেই এই যা বদঅভ্যেস।
“বাবার হাতে ঝাড় খেয়েছিস? এবার কাহিনি কি?
” ওসব বাদ দাও ওতো পুরনো কথা নতুন কাহিনি শোন।
“আচ্ছা শুনছি বল।
” তোমার বৌয়ের নাম কি?
“সুনয়না তালুকদার। কেন?
” বৌ তোমারে ঝাড়ে নাই?
“আর বলিস না বাচ্চা মানুষ মুড কখন কি হয় বোঝা মুশকিল। কিন্তু এসব কথা কেনো?
” তোমার বৌ আমাকে তুমি ভেবে সেই ঝাড়া ঝেড়েছে৷ আর গতকাল তো। যা হয়েছে এরপর তোমার কাছে ডিভোর্স চায়নি?
“জিয়ান কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,তোর সাথে ওর দেখা হয়েছে? এরপর কি হলো?
” জাহিন সবটা খুলে বলল,
“জিয়ান হেসে বলে,তুই তাড়াতাড়ি চেহারা বদল কর৷ নয়ত দেখা যাবে বৌ বদল হয়ে যাবে৷
” জাহিন বলে,তুমি এই বাচ্চা মাইয়া বিয়া করবা আমি তো আমার কল্পনায় এ কল্পনা করি নাই।
“চুপ থাক ওই বাচ্চা মেয়ে তোর ভাবি। সম্মান দিয়া কথা বলবি।
” সম্মানিত বাচ্চা মেয়ে সুনয়না তালুকদার আমার ভাবি।
“জিয়ান হেসে বলে,আচ্ছা এখন রাখি। আগুনে একটু পানি ঢেলে আসি। নয়ত সে আগুনে আরেকজন আমাকে পুড়িয়ে ছাই করে ফেলবে। জাহিনের কল কেটে নয়নাকে কল করে, যদিও পুরো কথা বলার সময় হয়নি। তবে অভিমানী নয়নাকে জিয়ানের কেনো যেনো খুব ভালো লাগছে।
” জিয়ান নয়নার হোয়াটসঅ্যাপে টেক্সট পাঠালো… ” ভালোবাসকে ততক্ষণ ভালোবেসো না
যতক্ষণ ভালোবাসা তোমাকে ভালো না বাসে।
যখন ভালোবাসা তোমাকে ভালোবাসবে
তখন ভালোবাসাকে এতো ভালোবাসো,
তোমার ভালোবাসা যেনো অন্য কাউকে ভালোবাসতে না পারে। এরপর আরেকটা টেক্সট পাঠালো,ভালোবাসা ভালো থাকে ভালোবাসার যত্নে, ভালোবাসাকে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখতে হয়।
“নয়না প্রায় চারঘন্টা একটানা পড়লো৷
” জাহানারা বেগম নয়নার সামনে এক গ্লাস দুধ একটা সেদ্ধ ডিম চার পাঁচটা খেজুর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷
“আম্মু আমি কিছুতেই খাবো না৷ এখন আমার একদম খাওয়ার মুড নেই।
” কেউ মুডের জন্য খায় না৷ খাবার খেতে হয় স্বাস্থ্যের জন্য।
“নয়না জাহানারা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে,আম্মু আমি খাবো তবে আমার একটা কথা রাখবে?
” আগে খেয়ে নাও তারপর বলো,
“নয়না খাবারটা শেষ করে বলে,আমি কিন্তু আবার বিয়ে করবো। এটা তোমাকে মানতেই হবে। কে একজন আসলো বিয়ে করলো এমন বিয়ে মানি না৷
” এসব কথা ভাবতে বলেছে কে?এসব কথা বাদ দিয়ে পড়ালেখা করো। আর একটা এক্সাম আছে এটা শেষ হলেই আমরা চট্রগ্রাম যাবো।
“আম্মু বিয়ে কিন্তু আরেকটা করবোই আমি। ওই ব্যাডার সাথে যাবে না কিছুতেই না।
” তোমার বিয়ে হয়ে গেছে আর তাছাড়া তুমি নিজেই শ্বশুড় বাড়ি যাওয়ার জন্য পাগল তোমাকে দ্রুত পাঠিয়ে দেবো তোমার বাসায়।
“এটাই আমার বাসা আমি এখানেই থাকবো।
” দেখা যাবে। এবার একটু ঘুমাও মাথা ঠান্ডা থাকবে৷ জাহানারা বেগম চলে যেতেই নয়না নিজের ফোন সুইচ অন করলো। ডাটা কানেক্টেড হতেই দ্যা হিটলার ড্রাইভার দিয়ে সেভ করা নাম্বার থেকে টেক্সট। নয়না মনোযোগ দিয়ে লেখাটা পড়লো। তারপর হাসির রিয়াকশন দিলো। এরপর লিখলো,ভালোবাসা দিয়ে ভালোবাসার খিচুড়ি রান্না করে ভালোবাসা দিয়ে ভালোবেসে খেয়ে নিন৷
“জিয়ান তখন এক্টিভ ছিলো,নয়নার রিপ্লাই দেখে বলে,ছেমড়ি আস্তা বিটলা। চারআনা মাথায় ষোলআনা দুষ্টমিতে ভর্তি। জিয়ান রিপ্লাই করলো,ও আমার ভালোবাসা, আসো তোমাকে ভালোবেসে খিচুড়ি রান্না করে ভালোবাসায় সিক্ত করে ভালোবেসে খেয়ে নেই।
” নয়না রাগী ইমোজি দিয়ে বলে,আজ নয়না গতকাল নীলাঞ্জনা এরপর কে হবে আপনার ভালোবাসা খিচুড়ি?
“জিয়ান হা হা রিয়েক্ট দিয়ে বলে,একবার আসি তোমাকে ভালোবেসে চাটনি বানিয়ে খেয়ে বুঝিয়ে দেবো এরপর মরন পর্যন্ত আমার ভালোবাসা তুমি।
” আইছে আমার রসের কথা নিয়ে! ওসব শুকনো কথায় নয়না গলে না৷
“তো নয়নার জন্য কি ভেজা কথা লাগবে?লিটল বেবি ওসব ভেজা কথা নিতে পারবে তো তুমি?
” আপনার শুকনো কথা ভেজা কথা সব একটা গ্লাসে ঢেলে খেয়ে নিন৷ কোনটাতেই নয়না গলবে না।
“আমি ছুঁয়ে দিলে পরে অকালেই যাবে ঝড়ে, গলে যাবে যে বরফ গলে না৷
” নয়না লিখলো,কারো একদিন হবেন কারো এক রাত হবেন এর বেশি কারো রুচি হবে না৷
“জিয়ান সেন্টি ইমোজি দিয়ে বলে,বুঝেছি বৌটাকে ছুঁয়ে দিয়ে বোঝাতে হবে একবার তার হলে আমি আর কারো হবো না।
“নয়না রিপ্লাই করলো,বেডা মানুষ এক্সও চায় নেক্সট ও চায় আবার প্রেজেন্ট ও ঠিক রাখে!এরপর সাথে সাথে ডাটা অফ করে দিলো। নয়না উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তার লম্মা চুলগুলো চিরুনি করতে করতে বলে,হেই সুনয়না তুমি সিন্ড্রেলা। তোমার রাজকুমার অবশ্যই আসবে আর তোমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে। শা’লার ড্রাইভার তুই সারাজীবন গলা বেচেই খাবি। তোর কপালে তো সিন্ড্রেলা জুটবে না৷
” জিয়ান নয়নার টেক্সটের দিকে তাকিয়ে হাসলো,মনে মনে কিছুটা ক্ষুব্ধ হলো,সে চাইছিলো,নয়না তাকে রেগে একবার বলুক মিস্টার প্লেন ড্রাইভার,আপনি একটুও ভালো না৷ শতশত রাগ অভিমান করুক তবুও কেনো যেনো নয়নার এই প্লেন ড্রাইভার ডাকটা ভিষণ মিস করছে জিয়ান। অথচ এই ডাকটা এক সময় সবচেয়ে বিরক্ত কর ছিলো! ভালোবাসলে প্রেমিকার বিরক্তিকর কথাও কত মধুর মনে হয়!
🌿লাবিব নীলাঞ্জনার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে,নীলাঞ্জনা ভেবেছিলো এবার সবকিছু নরলাম হয়ে গেছে। লাবিব নিজেকর শুধরে নিয়েছে,এই কয়েকদিন এ বাড়ির সবাই তার সাথে ভালো ব্যবহার করেছে।
“লাবীব নীলাঞ্জনার হাত আঁকড়ে ধরে বল,নীলু আমাদের ব্যবসায় বিশাল বড় এক লস হয়েছে। মনে হচ্ছে আমাদের এ বাসাটা বিক্রি করে দিতে হবে।
” নীলাঞ্জনা বলল,ব্যবসায় ভালো খারাপ উভয় সময় আসে৷ এসব কোন ব্যাপার না। আমরা সবাই মিলেমিশে ঠিক করে নেবো আবার।
“লাবিব মনে মনে রাগ হলো,সে ভেবেছিলো নীলাঞ্জনা বলবে,আমার বাসা থেকে সাহায্য আনবো। লাবীব আবার ডাকলো নীলু, তুমি চাইলে কিন্তু আমাদের সমস্যার সমাধান করতে পারে এক তুড়িতে।
” কি বলো? কিভাবে?
“মাত্র পঁচিশ লাখ টাকা৷ তোমার বাবা চাচাদের হাতের ময়লা তুমি একবার তাদের সাথে কথা বলে দেখো।
“নীলাঞ্জনা নিজের হাত সরিয়ে আনলো,রাগ দেখিয়ে বলল,দরকার পরলে তোমার সাথে রাস্তায় থাকবো তবুও ওই বাড়ি থেকে কোন সাহায্য আনবো না।
” লাবিব উঠে বসলো,তার চেহারার রাগ স্পষ্ট, নিজের রাগ সংযাত করে বলল,দেখো তুমি ওই বাড়ির মেয়ে তুমি আমাদের বিপদে এতোটুকুও হেল্প করতে পারবে না৷
“নীলাঞ্জনা উঠে দাঁড়ালো,লাবিবের দিকে তাকিয়ে বলে,আমার দ্বারা এসব সম্ভব না। তুমি আর যা বলো আমি করবো কিন্তু কিছুতেই ওই বাসায় টাকার কথা বলতে পারবো না।
” তোর ওই বাসায় টাকার কথা বলতে হবে না,চল হোটেলে তোর শরীর বেচে টাকা কামাবো।।
🌿জাহিন মান্নাতের সামনে বসে আছে, মান্নাত মাথা নিচু করে বসে আছে৷
“জাহিন স্বান্ত স্বরে বলল,সত্যিটা তোমাকেই বলতে হবে? তাই চুপ করে না থেকে সত্য বলো।আর আমি চাইছি না তোমাকে এদেশে রাখতে, তোমার সব কাগজ পত্র ঠিক করতে দিয়েছি তোমাকে বাহিরে দেশে সেটেল্ড করে দিবো৷ সেখানে নিরাপদ থকতে পারবে৷ তার আগে বলে,আজান ছেলেটার সাথে তোমাদের পরিবারের কি সম্পর্ক? দেখো তুমি আমাদের সঠিক তথ্য না দিলে আমরা তোমাতে কোন রকম সাহায্য করতে পারবো না৷
” অন্তর বলল,দেখ জাহিন আমার মনে হচ্ছে এই মেয়েটা আমাদের কাছ থেকে বড় কোন সত্যি কথা গোপন করছে। তুই আমাকে অনুমতি দিলে,ওকে আমি পুলিশের হেফাজতে দিয়ে আসবো। অন্তর কথা শেষ করার আগেই জাহিন বলল,এদিকে কেউ আসছে মনে হচ্ছে, এই মেয়ে দ্রুত ওয়াশরুমে লুকিয়ে পরো।
“মান্নাত ওয়াশরুমে লুকিয়ে পরলো, সে এখন এই প্রশ্নের কি উত্তর দেবে! তার যে এই জঘন্য সত্যি প্রকাশ করার সাহস নেই!আচ্ছা এমন ভয়াবহ কালো অতীত কেনো আবার ফিরে আসছে! কেনো এই অধ্যায় জীবন থেকে মুছে যাচ্ছে না!
#চলবে

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৩২

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৩২
নয়না পড়ার টেবিলে বইখুলে বসে আছে কিন্তু একটা শব্দ ও পড়তে পাড়ছে না!তার মস্তিষ্ক জুড়ে জিয়ানের কথাগুলো বাসা বেঁধেছে। নয়না ফোন নিয়ে তুষিকে কল করলো।
“ব্রিলিয়ান্ট ছাত্রী পড়ার সময় আমাকে কল করলো!এটা তো পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য!
” চুপ থাক আমার ভালো লাগছে না৷ পড়ায় মন বসছে না। সব কিছু অসহ্য লাগছে তুষি।
“তুষি হেসে বলে,বান্ধবী আমার প্রেমে মজেছে। ওহো পিরিতি কাঁঠালের আঠা লাগলে পরে ছাড়েনা।
” তুষি র বাচ্চা ভুষি তোরে আমি..
“আরেহহ ইয়ার মজা করছি রেগে যাচ্ছিস কেনো?এটা বলো দুলাব্রোর সাথে সব কিছু ঠিকঠাক আছে?
” তুই কি এই বা’লের কথা ছাড়া অন্য কথা বলবি! নাহলে কল কেটে দিবো।
“বুঝলাম তোর মুড এহন গরম তেলের মত আমি যে কথাই বলবো পানির ছিটার মত তুই ছ্যাত করে উঠবি।
” আমাকে পড়তে হবে বল পড়ায় মনোযোগ কি করে আনবো?
“তুই মনে করো এই মূহুর্তে পড়ালেখা ছাড়া দুনিয়া কোন কিছু তোর জন্য ইম্পর্ট্যান্ট না। পৃথিবীতে শুধু তুই আর তোর পড়ালেখা ছাড়া কিছু নেই৷ এটা মাইন্ডে সেট কর আর মনের দরজায় তালা দিয়ে মেধা খাটিয়ে পড়।
” তুষী।
“নয়নার কন্ঠে কাতরতা, তুই ঠিক আছিস নয়না৷ কি হয়েছে আমাকে বল। এতো বিধ্বস্ত কেন শোনাচ্ছে তোর কন্ঠ?
” নয়না বলল,আমার জীবনটা এমন হলো কেন? মনে হচ্ছে সাজানো গোছানো জীবনা হঠাৎ সুনামি এসে ধ্বংস করে দিয়েছি।
“তুই একটু বেশিই ভাবছিস। দেখ বিয়ে ভাগ্যের ব্যাপার। তুই তো নিজেও জানতি না তোর এভাবে বিয়ে হবে বা এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে হবে। কিন্তু যা হয়ছে সেটা ধরে বসে থাকলে তো হবে না। বর্তমানে প্রাক্তন থাকাটা স্বাভাবিক। বেশিরভাগ ছেলে মেয়ে বিয়ের আগে রিলেশন করে। কারোটা সফল হয় কারোটা হয় না। দুলাব্রোর প্রাক্তন তোর আপন চাচাতো বোন।এটা তোন জন্য মেনে নেয়া সহজ না। তবে তুই আর দুলাব্রো ঠিক থাকলে অতীত তোদের সামনের জীবনে কোন বাঁধা হবে না।
” নয়না নিজের মনের কথা বলতে চেয়ে বলতে পারছে না। মানুষ নিজের দুঃখ, কষ্টের কথা কখনো প্রকাশ করতে পারে না। চাইলেও তা শব্দ হয়ে বের হয়না ভেতর থেকে৷ দুঃখগুলোকে চাপিয়ে রাখে হৃদয়ে। হৃদয় দুঃখের ভার না সইতে পেরে মনে মেঘ জমাই চোখে বর্ষণ হয়৷ এই দুঃখের কোন সঙ্গী নেই। নয়না ফোন কেটে আবার চেষ্টা করছে পড়ার। ফোনটা আবার সশব্দে বেজে উঠলো নয়না ফোনটা কানে ধরলে, ওপাশ থেকে আওয়াজ আসলো আই লাভ ইউ ডিয়ার রাঙা বৌ। এইটুকু মাথাতে এতো এতো টেনশন না নিয়ে পড়ালেখা করো। তোমার প্লেন ড্রাইভার শুধু তোমার।
জিয়ানের কথা শুনে নয়না অবাক হলো! একটা মানুষ এতো রুপ কিভাবে দেখায়!”আপনি আমার সাথে নাটক করছেন কেনো!নয়নার কথায় স্পষ্ট রাগ ফুটে উঠেছে।
” জিয়ান মুচকি হেসে বলে, এসব কি বলো বেব!তোমার সাথে নাটক করবো কেন? তোমার সাথে তো সিনেমা করবো।
” একদম ফাউল কথা বলে মগজ খাবেন না৷
“ধুর বাবু আমি মগজ কেন খাবো! খেলে তো পুরো তুমিটাকে
খাবো।
” অসভ্য লোক।
“অনলি সুনয়নার জন্য আমি অসভ্য থাকতে চাই।
” এসব করে কি পান আপনি?
“আমি তো পান খাইনি বেবি।
” মেজাজ খারাপ করবেন না।
“কি যে বলো,পিচ্চি একটা ফুলের মত বৌ আমার তার মেজাজ খারাপ করার দুঃসাহস আমার আছে?
” মিস্টার চৌধুরী প্লিজ এমন দুমুখো আচরণ বন্ধ করুন৷ কেন আমাকে এভাবে ধোঁকা দিচ্ছেন?
“মিসেস চৌধুরী আজ এই মূহুর্তে থেকে ক্যাপ্টেন জিয়ান রেজা চৌধুরী শুধু আপনার ব্যাক্তিগত প্রপার্টি। আপনার হৃদয়ের দামে আমি নিজেকে বিক্রি করতে চাই আপনার কাছে৷
” নয়না খট করে কল কেটে দিয়ে মোবাইল সুইচড অফ করে পড়ায় মনোযোগ দিলো। বিরক্ত লাগছে এসব তার৷ বাসায় আরেক মেয়ে আর ফোনে প্রেম!
“জিয়ান মুচকি হেসে বলে,আগে কখনো ফ্লাইট ক্যানসেল হলে বিরক্ত লাগতো। আজ শান্তি লাগছে! ডিয়ার ওয়াইফি তুমি শুধু ক্যাপ্টেন জিয়ান রেজা চৌধুরীর। তোমার রাগকে ভালোবাসার ছোঁয়ায় গলিয়ে দেবো৷ যাস্ট ওয়েট এন্ড সি।
🌿নাজিম চৌধুরী জাহিনের হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে ছুড়ে মারলো।
” বাবা কি হচ্ছে এসব!
“তোমাকে আমি কতবার বলেছি আমাদের ব্যবসায় জয়েন করো? এখন আবার পক্ষে চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রি একা সামলানো সম্ভব হচ্ছে না। এরপরেও তুমি কোন সাহস সিক্রেট গোয়েন্দা সংস্থায় যোগ দিয়েছো? প্রথমে র‍্যাপ হতে চাইলে আমি মানা করলাম আর এখন এসব?
” বাবা আমার কি কোন চয়েস থাকতে পারে না! রেজা তো পাইল ওকে কিছু বলছো না কেনো!
“রেজা আর তোমার জন্ম একদিন তবে গ্রহ নক্ষত্র সব ভিন্ন। নিজেকে রেজার সাথে তুলনা করো?
” আমি শুধু আমার প্যাশন বেছে নিয়েছে কোন ক্রাইম করিনি৷
“তোমার জন্য আমার ছেলের উপর বিন্দু পরিমাণ আঁচ আসলে আমি ভুলে যাবো তুমিও আমার সন্তান।
” এতে আমার কি দোষ বলো?আমরা জমজ এটা আমার অন্যায়! তাহলে লন্ডন যেয়ে প্লাস্টিক সার্জারি করিয়ে চেহারা বদল করে ফেলবো নিজের।
“তোমার এসব ফাউল কথা আমার সামনে চলবে না। সামনের সপ্তাহে মেহনুর আসবে ওর সাথে তোমার বিয়ে ফিক্সড করেছি। আমি আর কোন কথা শুনতে চাইনা।
” ভাইয়া যা করে তোমরা সব সময় সাপোর্ট করো তো আমার বেলায় কি সমস্যা!
“জিয়ান আজ পর্যন্ত একটা ভুল করেছে সেটা হলো প্রেম।এছাড়া ও কোন ভুল করে না৷ ভদ্রতা, সভ্যতা সব আছে ওর মধ্যে। আর তোমার মধ্যে কি আছে? রাস্তার ছেলেদের মত মারামারি, বুকখোলা শার্ট, মাঝে মাঝে হাতে সিগারেট ও দেখা যায়। তুমি তো এটাও ভুলে যাও তুমি চৌধুরী পরিবারের সন্তান!ছোট বেলা থেকে তোমার আর রেজার সেম চেহারার অনেক এডভান্টেজ নিয়েছো। এখন তুমি ছোট না৷ এসব গোয়েন্দাগিরি ছেড়ে অফিস জয়েন করো৷ নাজিম সাথে নিজের রুমে চলে গেলেন।
” জাহিন মিতা বেগমের কাছে এসে বলে,এসবের মানে কি আম্মু!আমি কি ছোট বাচ্চা আমাকে যা বলবে তাই করতে হবে!
“ছোট বাচ্চা না তাইতো বিয়ে ঠিক করেছি৷ মেহনুর ভালো মেয়ে। তাই না বলার কোন অপশন নেই তোমার কাছে৷ আর যদি ভাবো বাহিরের দেশে যাবে৷ তোমার বাবা তোমার ভিসা সহ যাবতীয় সব কার্ড সিস করে দিয়েছে। বড় হয়েছো ম্যাচিউর হও৷
” ভাইয়া একটা টুনি মেয়েকে বিয়ে করলো সেটা ভুল না?
“তোমার ভাইয়া কি করলো সেটা না দেখে আজ পর্যন্ত তুমি কি কি অঘটন ঘটিয়েছো সে-সব দেখো।
” রাগে জাহিনের ইচ্ছে করছে, সব কিছু ভেঙে চুরমার করে ফেলতে৷ কিন্তু সে সাহস তার নেই আর সে শিক্ষা ও নেই৷ বাবা,মায়ের সাথে বেয়াদবি করার দুঃসাহস তার নেই৷ তাই নিজের রাগ সংবরণ করে রুমে চলে আসলো। এসেই বক্সিং ব্যাগে পাঞ্চ মারতে লাগলো।
🌿অনিকেত সায়না সামনাসামনি বসে আছে, সায়না অনিকেতের হাতের উপর হাত রেখে বলে,আমার কি মনে হয় জানেন৷ আমি শুধু আপনার।
“অনিকেত দ্রুত হাস সরিয়ে নিয়ে বলে,দেখো তুমি আমার বন্ধুর বোন নয়ত ঠাটিয়ে দুটো চর মারতাম।তুমি আমার চেয়ে বেটার কাউকে ডিজার্ভ করো। আমি সাধারণ একজন মানুষ অতি সাধারণ। যার নিজের পিতৃ পরিচয় নেই। আমি আমার টাইট কাউকে বিয়ে করবো। যাকে বিয়ে করার জন্য আমার নিজেকে ছোট মনে হবে না৷
“আমাকে বিয়ে করলে আপনাকে ছোট কেন হতে হবে!
” কারন আমি অনাথ। তোমার বাসায় গেলে সবার আগে আমার বংশ পরিচয় জিজ্ঞেস করবে। আমি কোথায় পাবো বংশ পরিচয়?
“আমি বলবো, আমি আপনাকে ভালোবাসি এটাই আপনার পরিচয়।
” পাগলামো করো না। জীবন এতো সহজ না৷ সমাজে তোমাদের অনেক নাম ডাক নিজের সম্মান আমার জন্য নষ্ট করবে না।
“আপনি আমাকে বিয়ে করবেন এটাই শেষ কথা করবেন মানে করতেই হবে৷ ভুলে গেছেন আপনার ঠোঁট কিন্তু আমি স্পর্শ করে ফেলেছি তাই আপনি আর কোন মেয়ের হতে পারবেন না। আর একবার না না করলে,পুরো শরীরে টাচ করে দেবো কিন্তু তখন বৌ পাবেন আর এজন্মে!
” অনিকেত অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সায়নার দিকে,মেয়েটা দেখতে ভারি মিষ্টি কিন্তু আমার মত ছেলের কাছে ওর বাবা মা কিছুতেই দিবে না৷ সমাজে বংশ পরিচয় না লাগলেও পিতৃ পরিচয় লাগে। আমার কাছে তো কোনটাই নেই! সেবর যখন মেয়ে দেখতে গিয়েছিলাম কত ছোট করেছিল তারা আমাকে। আচ্ছা অনাথ হওয়াটা কি দোষের? আমি জানিনা কে আমাকে জন্ম দিয়েছে! সেখানে আমার দোষটা কোথায়?
“সায়না তুরি বাজিয়ে বলে,এই যে মিস্টার কোন ভাবনার সাগরে ডুবে গেলেন? কোন মেয়ে হলে কিন্তু তাকে আমি মে’রেই ফেলবো৷
#চলবে।