বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1218



বাস্তবতা পর্ব- ০২(অন্তিম পর্ব)

0

বাস্তবতা
পর্ব- ০২(অন্তিম পর্ব)

লেখা- অনামিকা ইসলাম।

ও কল না দিলেও আমি কল দিতাম। খুঁজ খবর নিতাম। কি খেয়েছে? কি করতেছে? শরীর ভালো কি না? কখন ঘুমোবে? এসব, শুধু এসব বিষয়েই ওর সাথে আমার কথা হতো। মাঝে মাঝে একটু আধটু বেশী কথা হতো। যখন বেশী কথা হতো তখন কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে যেতাম এই ভেবে যদি চিরতরে হারিয়ে যায় আমাদের বন্ধুত্ব। মনের কথাগুলো তাই অব্যক্ত হয়েই রয়ে গেল আমার মনের গহীনে।
অতিবাহিত হয়ে যায় আরো ১টি বছর। আমি তখনো সোহেলকে আমার অব্যক্ত কথাটা জানাতে পারিনি। সোহেলও আমায় ভালোবাসার ব্যাপারে কিছু বলতো না। কিন্তু মুখে না বললেও সোহেল ওর কর্মকান্ড দ্বারা ও আমায় অনেক কিছুই বুঝিয়ে দিত।

সেবার প্রচন্ড জ্বরে সোহেল যখন শয্যাশায়ী, তখন আমি ছুটে গিয়েছিলাম ওর কাছে। কয়েকদিনের ব্যবধানে মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি জন্মায় ওর। চুপ করে বসে থাকতে পারলাম না। দোকান থেকে রেজার এনে সেভ করে দিলাম। নেইলকাটার দিয়ে নখ কেটে দিলাম। গরম পানি গোসল, পরনের ওড়না দিয়ে শরীর মুছে দেওয়া। সব, সব করে দিলাম। ওর অসুস্থতায় আমি যেন ওর কাছে চলে গেলাম। একেই বলে হয়তো ভালোবাসার গভীরতা। ও সুস্থ হয়ে উঠল।
কিন্তু আমি আমার মনের কথাটা ওকে জানাতে পারলাম না।

“হৃদয় যতই ব্যথিত হোক, কর্মচক্র আপন গতিতে চলিতে থাকে।”
আমাদেরও দিন চলতে থাকল। আমি বোধ হয় আর পারলাম’ই না ওকে মনের না বলা কথাটা বলতে! গুমড়ে কেঁদে উঠলাম।
দিনটি ছিল শুক্রবার। ২০১৪সালের উক্ত দিনে সকাল ১০টায় আমি তাকে ডাকলাম। ও আসলে আমি আমার কথাটা জানালাম সাদামাটা ভাবে। হয়তো তখন তার কাছে আমার হৃদয়ের সবটুকু অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারিনি। আমি চাইনি সে আমার না বলা ভালোবাসা হোক। জানি, যখন কেউ কাউকে বেশি ভালোবাসে তখন সে তাকে দুরে ঠেলে দেয়। যে দুরে ঠেলে দেয়, তাকে আরো বেশি ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। কারন মানুষ কষ্ট পেতে ভালোবাসে। মনে হয় আমিও এর ব্যতিক্রম নই।
সোহেল আমার যোগাযোগ করা বন্ধ করে দেয়। একটানা ৩মাস ওর সাথে আমার কথা হয়নি। ৩মাস পর একবিকেলে সোহেল আমায় কল করে। ও আমাকে একটা কথা বলতে চায়। তাই ওর বাসায় যেতে বলে। একটা বছর ধরে যে কথাটা শুনার জন্য চাতকের মতো অধির আগ্রহে বসে ছিলাম আজ তার’ই অবসান ঘটতে চলেছে। আজ আমার সোহেল নিজ থেকে আমায় ডেকেছে। এতদিনে সেই বহুল প্রত্যাশিত শব্দ ‘ভালোবাসি’ কথাটা শুনতে পারব।
এ যে কি আনন্দের ছিল তা বলে বুঝানো যাবে না। আমি ছুঁটে গেলাম সোহেলের কাছে। সোহেল তখন রুমে বসে ছিল। আমাকে দেখে ও কেমন যেন ঘামছিল। বুঝতে পারলাম জীবনের প্রথম ভালোবাসার অনুভূতি তো তাই ওর এরকম অবস্থা হচ্ছে। ওকে বললাম, বলো কি বলবে? ও দরজার দিকে এগিয়ে যায়। বন্ধ করে দেয় দরজাটা। আমার খুশিতে উজ্জল মুখটা অমাবস্যার কালো অন্ধকারের ন্যায় হয়ে যায়। ওর দৃষ্টি’টা কেমন যেন অন্যরকম লাগছিল। অন্যান্য দিনের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। আমার বুকের ভেতরটা আশঙ্কায় কেঁপে উঠে। সোহেল একটু একটু করে আমার দিকেই এগিয়ে আসছে। আমি ভয়ে চুপসে গেলাম কিন্তু থেমে গেলাম না। এক পা দু’পা করে আমিও পিছু হটতে লাগলাম। আচমকা সোহেল আমার সর্বাঙ্গের আঁচল ধরে টান মারে। বুকটা ধুরু ধুরু করে কাঁপছিল। কাপা গলায় সোহেলকে প্রশ্ন করলাম- কি করছ? সোহেল কোনো কথা না বলে আমার দিকে হিংস্র বাঘের মতো এগুতো থাকে। একটা সময় বিছানায় ফেলে ও আমার উপর ঝাপিয়ে পরে। আমি দু’হাত দিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করছি ওর মুঠু থেকে মুক্ত করতে। কান্না করে করে বলতেছি-
” না, সোহেল! তুমি এটা করতে পারো না। তুমি এটা কখনো করতে পারো না। তুমি আমাকে ভালোবাসো। তাই তুমি এটা করতে পারো না। সোহেল তবুও কোনো কথার জবাব দিচ্ছে না। এক পর্যায়ে বলে উঠলাম,
আমার পিরিয়ড হয়েছে। আমায় আজকের মত ছেড়ে দাও।”

সোহেল আচমকা আমায় ছেড়ে দিল। হাফ ছেড়ে বেঁচে গিয়েছিলাম আমি। আসবার কালে সোহেলকে শুধু এটুকু জিজ্ঞেস করেছিলাম তোমায় বিশ্বাস করাটা কি আমার অপরাধ ছিল? ও ভয়ার্ত হাসি দিয়ে বলেছিল সেদিন, বিশ্বাস নয়। স্বপ্ন। তোর স্বপ্ন দেখা অপরাধ ছিল। তোর মত কালো, কুৎসিত একটা মেয়ে যাকে নিয়ে কিনা বিছানায় শুইতে গেলেও রুচিতে বাঁধবে, সেই মেয়ে কি না স্বপ্ন দেখে আমায় নিয়ে। আরে তোর মত হাজারো মেয়ে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে শুধু আমার এক রাত্রের সঙ্গী হওয়ার জন্য, বেড পার্টনার হওয়ার জন্য। আর সেখানে কি না আমি তোকে ভালোবাসব???
ঐ তুই কি ভেবেছিস? তোকে আমি ভালোবাসার কথা বলব????
হা, হা, হা, হা, হা, হা….
হাসালি….
যা, এই মুহূর্তে আমার চোখের সামনে থেকে বের হয়ে যা।
সেদিন দু’চোখের নোনাজল সঙ্গী করে বের হয়ে এসেছিলাম সোহেলের ওখান থেকে। এরপর কতবার যে মরার জন্য পা বাড়িয়েছিলাম তার কোনো হিসেব নেই। আবার ফিরেও এসেছি অসহায় মায়ের কথা চিন্তা করে। যাকে কিনা রোজ রাত্রে কাঁদতে দেখেছি আমার জন্য। আমার মত একটা কালো মেয়ের জন্য। পৃথিবীর কারো কাছে আমার মূল্য না থাকলেও আমার মায়ের কাছে ছিল। তাইতো প্রচন্ড জ্বরে যখন আমি বিছানায় শুয়ে ছটফট করছিলাম তখন আমার জনমদুখিনী মা ছুটে আসে আমার কাছে, আমাকে দেখতে। এই কয়দিনে অনেক শুকিয়ে গিয়েছিলাম। আমার মা আমায় বুকে নিয়ে পরম আদরে জড়িয়ে ধরে। আমার নাকে, মুখে, কপালে চুমুর পর চুমু দিতে থাকে। মাঝরাত্রে ঘুম ভেঙে যায়। চোখ মেলে দেখি আমার মা আমার মাথার পাশে বসে ঝিমুচ্ছে। আমায় চোখ মেলতে দেখে ওনি আমার দিকে জল ছলছল চোখে তাকান। খাটে হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে মায়ের দিকে তাকালাম। প্রশ্ন করলাম মাকে,
” মা! আমি কালো বলেই কি তুমি আমার নাম শিমুল রেখেছিলে? সেই শিমুল যে শিমুলের কোনো মূল্য নেই। যে রাস্তায় পথিকের পদতলে পিষ্ট হয়।”

কথাগুলো বলে মায়ের দিকে তাঁকালাম। লক্ষ্য করলাম আমার মা আঁচলে মুখ ঢেকে কাঁদছে। কালো মেয়ের মায়েরা বুঝি এভাবেই কাঁদে, এভাবেই দুঃখগুলো ঢেকে রাখে আঁচলের অন্তঃরালে…..

সমাপ্ত…..

[লেখিকার কথা:- নাহ! গল্প ওখানেই শেষ হয়নি। শিমুলের জীবনে আসে আমার কাজিন রুবেল। রুবেল ভাইয়া শিমুলকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনে। রুবেল ভাইয়া কাতার থাকে। পরিবারের সম্মতিক্রমে আগামী শুক্রবার দিন ওদের বিয়ে হবে ফোনে। রুবেল ভাইয়া ৩মাস পর দেশে আসবে।
শিমুল জানে না এরপর কি হবে? রুবেলও শিমুলকে ব্যবহার করবে? নাকি স্বাভাবিক জীবন দিবে]

বাস্তবতা পর্ব- ০১

0

বাস্তবতা
পর্ব- ০১

লেখা- অনামিকা ইসলাম।

আমি শিমুল। তাসনুভা তাবাসসুম ‘শিমুল’। তাসনুভা নামটা যে খুব বেশী খারাপ তা কিন্তু নয়। অথচ আশ্চর্য জনক হলেও এটাই সত্যি, শেষ কখন এই নামে কে বা কারা আমায় ডেকেছে সেটা আমার মনে নেই। আর ক’জন মানুষ’ই বা আমার নামটা জানে সেটা বলাও দুষ্কর। জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি অসংখ্য ডাক। আমার বাবা-মা, ভাই-বোন, আমার রিলেটিভ, ফ্রেন্ডস সার্কেল সর্বোপরি দূর দূরান্তের অসংখ্য মানুষ আমায় বিভিন্ন নামে ডাকে।
আমার আপন জ্যাঠাতো বোন যার যাদের সাথে আমাদের একই বাড়িতে বসবাস তিনি আমাকে ‘কালি’ বলে ডাকেন। আমার এলাকার মানুষ আমায় ‘কাইল্লাবি’ বলে ডাকে। এলাকার মানুষজনের কাছে আমি এই নামেই পরিচিত। আমার ফ্রেন্ডসরা আমায় ‘কালিতারা’ বলে ডাকে। ওদের সাথে কোথাও গেলে কিংবা কেউ যদি আমায় নাম জিজ্ঞেস করে তাহলে আমার বলার আগেই ওদের ডাক-
“এই কালিতারা, এদিকে আয়!”
আমি যখন স্কুল থেকে কোনো সাফল্যের সংবাদ নিয়ে বাসায় আসতাম তখন রাস্তা থেকেই উৎফুল্লের স্বরে চেঁচিয়ে আসতাম,
মা, মা! আমি প্রথম হয়েছি….
এলাকাবাসী খবরটা শুনত। শুনে তাচ্ছিল্যের স্বরে হেসে বলত, কালির আবার লেখাপড়া….
আমি ওদের প্রতিবাদের স্বরে বলতাম,
দেখুন! আমার নাম কালি নয়। আপনারা আমায় এ নামে ডাকবেন না। আমার একটা নাম আছে, সেই নামে ডাকবেন আমাকে।
আমার কথা শুনে ওদের হাসি হাসি দ্বিগুন পরিমাণে বেড়ে যেত।
সে হাসি অবজ্ঞার,
সে হাসি অবহেলার,
সে হাসি আমার কালো হয়ে জন্মানোর….
প্রচন্ড কষ্ট বুকে চেপে বাসায় এসে যখন মুখ থুবড়ে পরে ছিলাম, তখন’ই আমার বাবার ডাক। ” কাইল্লা’মা! কইরে তুই?”
বাবার ডাক শুনে মন আকাশে জমে থাকা মেঘগুলো বাষ্প হয়ে ঝরে পরে। চোখের’ই জল মুছে নিতাম আঁচলে। মনকে শান্ত্বনা দিতাম এই বলে, যেখানে নিজের বাবা এমন নামে ডাকে সেখানে ওরা তো ডাকবেই।
এভাবে অসংখ্য মানুষের অসংখ্য ডাকের ভীড়ে চাপা পড়ে যায় আমার সত্যিকারের নামটি। অন্তরালে চলে যায় আমার তাসনুভা তাবাসসুম ‘শিমুল’ নামটি।

নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম আমার। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে আমি তৃতীয়। আমার বড় আরো দুই ভাই আছে। আমি সবেমাত্র সেভেনে উঠেছি। অথচ এখনি আমার পরিবার বিয়ের জন্য উঠে পরে লেগেছে। একে তো গরিব ঘরে জন্ম, তারউপর গাঁয়ের রং কালো। বয়স হয়ে গেলে কে করবে বিয়ে? এই মনোভাব সামনে রেখে’ই ওরা আমার জন্য পাত্র দেখতে শুরু করে। নির্দিষ্ট দিনে ওরা আমায় দেখতে হাজির হয় আমাদের বাড়িতে। উঠোনে চেয়ার টেবিল গোল করে পেতে দেওয়া হয়। আমার এক ভাবি আমায় এনে দাঁড় করায় ওদের সামনে। সবসময় ক্লাসের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করা এই আমার দু’চোখ ভরা অনেক স্বপ্ন ছিল। স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া করে অনেক বড় হওয়া। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। কিন্তু আমার সব স্বপ্ন, স্বপ্ন হয়েই রয়ে গেল। গায়ের রং কালো+ গরীব ঘরে জন্ম হওয়ায় আমি পারিনি কোনো প্রতিবাদ করতে। ওরা আমার মাথার ঘোমটা ফেলে, চুল খুলে, হেঁটে হাটিয়ে বিভিন্ন ভঙ্গিতে আমায় দেখতে লাগল। আমায় নামাজ সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করল, তারপর হেঁটে রুমে যেতে বলল। রুমে গিয়ে চৌকির উপর উঠে জানালার ছিদ্র দিয়ে আমি ওদের দেখছিলাম আর কথাবার্তা শুনছিলাম। কথা শুনে মনে হলো এবারে বিয়েটা হয়ে যাবে। কারণ, আমার বাবা ভাইয়ের তখন এরকম হাসি ছিল যে হাসি মানুষ তখন’ই দেয় যখন তাদের কাঁধ থেকে বোজা নামে। সেদিন পুরোটা বিকেল পুকুরপাড়ের টঙের উপর উদাসীন দৃষ্টিতে বসে কাঁটিয়েছি।
মনটা ভিষণ খারাপ;
আমার জন্য পংখীরাজ ঘোড়ায় চড়ে কোনো রাজপুত্র আসেনি,
পড়ন্ত বিকেলে কারো হাতে হাত ধরে হাঁটতে পারিনি,
বৃষ্টিস্নাৎ সন্ধ্যায় প্রিয় কারো সাথে ভিঁজতে পারিনি,
কিংবা কোনো জোৎস্না রাতে কাছের মানুষটির কাঁধে মাথা রেখে পাশাপাশি বসে জোৎস্নাবিলাসও করতে পারিনি;
নাহ, এসব কোনো কারনেই আমার মন খারাপ না। আমার মন খারাপ কারন আমি কালো। সৃষ্টিকর্তা আমায় কালো করে এ পৃথিবীতে পাঠিয়েছে।
সেদিন ঘটকের সাথে বাবা গিয়েছিল ঐ পাত্রের বাড়িতে। বাড়ি দেখে এসে খুশি খুশি ভাব নিয়ে জ্যাঠিমাকে বলতে লাগল_
” ভাবি! কইছিলাম যে বাড়ি তো দেইখ্যাইছি। বিরাট বড় বাড়ি। অনেক সম্পত্তি আছে। তয় ছেলে একটা বিয়ে করছিল, বউ গেছেগ্যা।”

ভ্রু কিঞ্চিৎ বাঁকা করে জ্যাঠিমার জবাব, ” পোলা মাইনষ্যের আবার খুইত আছে নাকি? বিয়া অইছে কি অইছে? দিয়া দেন বিয়া। এত ভালা ঘর আর পাইবেন না।”

আমার বাবা জেনেশুনে এক বিবাহিত পুরুষের সাথে তার অবিবাহিত, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের বিয়ে দেয়। বিয়ের কয়দিন যেতে না যেতে’ই আমার উপর নেমে আসে অবর্ণনীয় নির্যাতন। শ্বশুর বাড়ির সবাই বিভিন্ন কৌশলে আমার উপর নির্যাতন করত। কখনো শারীরিক, কখনো বা মানসিক। আমি প্রতিবাদ করতে পারতাম না। প্রতিবাদ করতে গেলেই আমায় বলত, বাপের বাড়ি থেকে তিন লাখ টাকা আনতে। যা কিনা আমার পরিবারের পক্ষে অসম্ভব। আমি নিরবে সয়ে যেতে লাগলাম। আমার স্বামী (মিলন) দিনদুপুরে মদ খেয়ে এসে মাতলামি করত। আমায় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করত। কখনো বা আমার বাবা মা তুলে গালি দিত। আমি সয়ে যেতাম। সেসব কিছু মুখ বোজে সহ্য করে যেতাম।
কারণ- আমি কালো। সৃষ্টিকর্তা আমায় কালো করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে। আর এটাই আমার সবচেয়ে বড় অপরাধ। কতদিন যে মেরে রক্তাক্ত করে টেনে হিঁচড়ে আমায় বাড়ির বাইরে ফেলে দিয়ে এসেছে তার কোনো হিসেব নেই। ঐ বাড়ির সবাই মনে প্রাণে চাইতো আমি যেন ঐ বাড়ি থেকে চিরবিদায় হয়ে যায়। কিন্তু আমি যেতাম না। আমার স্বামী আমায় বাড়ির পিছনে ফেলে আমায় অজস্র লাঠি, উষ্টা দিয়েছে। আমি চিৎকার করিনি। দাঁতে দাঁত চেঁপে কখনো গরুর খোয়ার, কখনো বা সামনে থাকা গাছকে জাপটে ধরে থাকতাম। ওরা আমায় মারতে মারতে ক্লান্ত হয়ে যখন বাড়িতে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিত, তখন আমি গরুর ঘরে গিয়ে আশ্রয় নিতাম। অজস্র রাত আমি আমার শ্বশুর বাড়ির গরুর ঘরে কাটিয়েছি।
চাইলেই পারতাম চলে যেতে। একেবারে বিদায় নিয়ে চলে যেতে। কিন্তু যায়নি। কারণ ছোট থেকে একটি কথা শুনেই বড় হয়েছি-
” বাঙ্গালি মেয়েদের বিয়ে নাকি জীবনে একবার’ই হয়…..”
তাই সবসময় মনকে এই বলে শান্ত্বনা দিতাম, দেখিনা আরেকটু সহ্য করে। সব ঠিকঠাক হয় কিনা….???
দিন অতিবাহিত হতে থাকে। কিন্তু ওরা কেউ আমাকে আমার অবস্থান থেকে নড়াতে পারিনি। তাই একদিন বাধ্য হয়ে আমার স্বামী আমায় নিয়ে আমার বাপের বাড়িতে যায়। বিয়ের পর প্রথম বাপের বাড়িতে যাওয়া। আমাকে দেখে খুশি হওয়ার পরিবর্তে সবার চোখে পানি ছিল সেদিন। জন্ম থেকে নাদুসনুদুস এই আমি মাত্র তিনমাসের ব্যবধানে শুকিয়ে কঙ্কাল প্রায়। সে রাত্রে কাউকে কিচ্ছু না বলে আমার স্বামী চুরের মত পালিয়ে যায়। তারপর একদিন, দু’দিন করে অতিবাহিত হয়ে যায় ১৫টি দিন। আমার স্বামী আর আমার খুঁজ নেয় না দেখে আমার বাবা কল করে। কল রিসিভ করে আমার শ্বশুর স্পষ্ট গলায় বলে-
” এমন কালো মেয়েকে নিয়ে আমরা চলতে পারব না।”

ওরা ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু তিনমাস অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরও ওরা ডিভোর্স লেটার পাঠায় না। আমার পরিবারের লোকজন আমায় নিয়ে কোর্টে যায়। মামলা দায়ের করে আমার শ্বশুর বাড়ির বিরুদ্ধে। নারী নির্যাতনের মামলা করে ওদের নামে।
বাংলায় একটা প্রচলিত বাক্য আছে-
” টাকা কথা বলে।”
আইন বিক্রি হয়ে যায় টাকার কাছে। আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন ওদেরকে মোটা অঙ্কের টাকা দেয়। বন্ধ হয়ে যায় আইনের মুখ। ওরা উল্টো আমাদের শাসাতো। বাধ্য করল ডিভোর্স লেটার পাঠাতে। শুধুমাত্র গরীবের ঘরে জন্ম নেওয়ার কারনে আমি আমরা পাইনি সুষ্ঠু বিচার।

একে তো কালো মেয়ে তারউপর ডিভোর্সি। গার্মেন্টস, মিল, ফ্যাক্টরিতে যাওয়া ছাড়া কোনো জায়গা ছিল না। বাড়িতে ভাবিদের জ্বালাময়ী কথা আর সহ্য করতে পারছিলাম না। খালার সহযোগীতায় প্রাণ কোম্পানিতে চাকরী নিলাম। ভাড়া বাসায় থেকে আসা করতাম ওখানে।

পরিচয় হয় সোহেলের সাথে। আমার বিষণ্নতার সাথী হয় সে। অতীতের সমস্ত কিছু ও শুনে। আমার কষ্ট ওকে ভিষণ যন্ত্রণা দিত। আমার মন খারাপ, আমার বিষণ্নতা ও সহ্য করতে পারত না। আমায় বিভিন্ন ভাবে হাসানোর চেষ্টা করত। ও আমার খুব ভালো একজন বন্ধু হয়ে যায়।
২বছরের ব্যবধানে সে বন্ধুত্ব ভালোবাসায় রূপ নেয়। ভালোবেসে ফেলি সোহেলকে। প্রচন্ড রকম ভালোবেসে ফেলি।

চলবে…..

স্যার যখন স্বামী সিজন২ শেষ_পার্ট

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
শেষ_পার্ট
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

ফারিদ- ছাদ থেকে এসে দেখি তমা ঘুমিয়ে গেছে।ওর কাছে আর ক্ষমা চাইতে পারালাম না।ভাবলাম কাল সকালে ঠিকইই ক্ষমা চেয়ে নিব।নাহলে আমার বউটা একরাশ রাগ আর অভিমান নিয়ে বসে থাকবে।

সকালে ঘুম থেকে উঠতেইই দেরি হয়ে গেল।তাড়াতাড়ি করে আমিসহ তমাকে খাইয়ে দিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।সারাদিনের ক্লাস শেষ করে বিকালে ঘামের শরীর নিয়ে বাসায় আসলাম।বাসায় এসে সোজা খাটে এসে শুয়ে গেলাম।সারাটাদিন এত পরিশ্রম করার সত্ত্বেও বাসায় এসে আমার বউটার মায়াবি মুখটা দেখলেই আমার সব ক্লান্তি নিমিষেই দূর হয়ে যায়।আশ্চর্য এতক্ষণ হল বাসায় এসেছি মেয়েটা কোথায়?এইসময় তো ওর রুমে থাকার কথা।পুরো বাড়ি খুঁজেও ওকে পেলাম না।এই অবস্থায় ও কোথায় গেল আমাকে কিছু না বলে।টেনশনে পড়ে গেলাম।হঠাৎ টেবিলের উপর একটা কাগজ দেখতে পেলাম।কাগজ খুলে দেখি তমা আমার জন্য একটা চিঠি লিখে গেছে।

প্রিয় ফারিদ,
আপনাকে না জানিয়ে আমি আপনার সংসার থেকে চলে যাচ্ছি। আমার পক্ষে এই সংসার করা সম্ভব না।এত টেনশন এত চিন্তা আর প্রিয়জনদের হারাতে হারাতে আমি বেঁচে থাকার আশাটা হারিয়ে ফেলেছি।কিন্তু আপনার কাছ থেকে যেদিন জানতে পারলাম আমি মা হতে যাচ্ছি বিশ্বাস করেন নিমিষেই আমার সব কষ্ট দূর হয়ে গেল।মা হওয়ার খুশিতে নিজেকে দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হচ্ছিল। কিন্তু তা শুধু ক্ষণিকের জন্য।এই মা হওয়া বিষয়টার সাথে আমার অতীতের ভয়ানক স্মৃতি লুকিয়ে আছে।যা আমি আপনাকে প্রথমে বলতে চাইলেও পরে তা লুকিয়ে রাখি।কেন জানেন শুধু আপনার জন্য।আপনার ভালোবাসা হারিয়ে ফেলার ভয়ে আমি এই কাজটা করতে বাধ্য হই।ভেবেছিলাম অতীত অতীতের মাঝে রেখে দিব তা কখনো আপনার সামনে আসতে দিব না।কিন্তু আমি মন থেকে এই কষ্টের বোঝার পাল্লা আর বয়ে বেড়াতে পারছি না। তাই আপনাকে আজকে সব খুলে বলব।আপনার সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলা উচিত ছিল কিন্তু আপনার সামনে এই ভয়ানক কথাগুলো বলার দুর্সাহস আমার কোনকালেই ছিল না আর আজো নেই।তাছাড়া আমার নিজের আত্মসম্মানের একটা ভয় আছে।যার কারণে আজকে এই চিঠির সাহায্য নিচ্ছি।সব জানার পর আমাকে আর মেনে নিতে পারবেন না তা আমি জানি।আর আপনার ভালো মানুষিকতার সুযোগ নিয়ে আপনাকে সারাজীবন কষ্টের মধ্যে রাখার কোন মানেই হয় না।তাই আমি নিজেই আপনার জীবন থেকে সরে যাচ্ছি। পারলে ভালো একটা মেয়ে দেখে বিয়ে করবেন যে ঘরের সব কাজ করতে পারবে, আপনার সংসার সামলাতে পারবে আর তার পবিত্র ভালোবাসা দিয়ে আপনার জীবনকে সুখের কানায় কানায় ভরিয়ে দিবে।ভালো থাকবেন আর নিজের যত্ন নিবেন।

ইতি
আপনার তিলোত্তমা
.
.

চিঠিতে তমার জীবনের অতীতের ঘটনা জানতে পেরে বুঝতে পারলাম মেয়েটা কেন এই সংসার আর ভালোবাসা থেকে নিজেকে সবসময় গুটিয়ে নিত।ওর কষ্টগুলো দূর করার সর্বাত্মক চেষ্টা করতাম ভাবতাম আমি ওর কষ্টগুলো দূর করতে সফল হয়েছি কিন্তু না আমি ভুল ছিলাম। আমি সত্যিই ওর কষ্টগুলো এখনো মুছে ফেলতে পারিনি
ব্যর্থ হয়েছি আমি।এতদিন আমার সাথে সংসার করেও ও এখনো বাকি সব পুরুষদের সাথে আমার তুলনা করছে।যেটা ওর মন থেকে আমাকে দূর করতেই হবে।

দেখি কতদিন ও আমার থেকে নিজেকে দূরে রাখে।আমিও বসে থাকার পাত্র নয় ওর মনের ভিতরে নিজের জায়গা আরো ভালোভাবে গড়ে তুলতে হবে। যাতে আর কখনো ও আমাকে ভুল বুঝে এই ফালতু কাজটা করার পদক্ষেপ আর দ্বিতীয়বার না তুলে।ওকে কিভাবে নিজের বশে আনতে হবে তা আমার বেশ ভালোভাবেই জানা আছে।এখন থেকে ওকে আগের থেকেও আরো অনেক বেশি বেশি ভালোবাসব যে ও আমার ভালোবাসার মায়াবন্ধন থেকে কিছুতেই ছুটে পালাতে না পারে।বাবুর আম্মু….. এত সহজে আমার থেকে তুমি পালাতে পারবে না।তোমার অতীত জানার আগে তোমার প্রতি আমার যে ভালোবাসাটা ছিল সেটা অতীত জানার পরেও থাকবে।এত সহজে তোমাকে আমি ছাড়ছি না বাবুর আম্মু।
.
.
তাড়াতাড়ি করে রেলস্টেশনের রওনা দিলাম।বাসে করে ও কোথাও যাবে না সেটা আমি ভালো করেই জানি।তাই রেল স্টেশনের দিকে রওনা দিলাম।আর আমার বোকা বউটাকেও অনেক খোঁজার পরে পেয়ে গেলাম।

ফারিদ- কি ব্যাপার এখানে কেন?আমাকে ছেড়ে আমার সংসারকে ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার এত শখ কেন?

ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার এমন কথা শুনে ও অনেক বড় একটা শকড খেল। বিষণ্ন চোখ দিয়ে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে আবার মাথাটা নিচু করল।

তমা- আপনি এমনভাবে কথা বলছেন মনে হয় যেন কিছু জানেন না।কেন এখানে আসলেন?প্লিজ চলে যান এখান থেকে।

ফারিদ- হ্যা যাবতো এখান থেকে।এখানে থাকার আমার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নাই।এখানে থেকে বউয়ের সাথে রোমান্স করা যায় নাকি?চল বাসায় চল।বাসায় গিয়ে রোমান্সের কাজটা শুরু করব।

ও আবারো বিস্ময় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।ভাবছে আমি ওর অতীতের কথা শুনে অতিরিক্ত শকড খেয়ে পাগল টাগল হয়ে গেলাম নাকি!

আরে….. আমার দিকে এইভাবে তাকিয়ে আছে কেন? এই আমি কিন্তু এখনো আমি সুস্থ আছি।পাগল হয়নি।কিন্তু মাই ডিয়ার বাবুর আম্মু তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে হয়ত সত্যিইই আমি পাগল হয়ে যাব। আমাকে ছেড়ে চলে যাবা এতবড় ডিসিশনটা তুমি একা নিতে পার না।আমি কি কখনো তোমাকে এই অনুমতি দিছি যে নিজের যখন ইচ্ছা হল তখন আমাকে ছেড়ে চলে যাবা।যেখানেই যাও আমাকেও সাথে করে নিয়ে যাবে নাহলে তুমি যেখানে যাবে আমিও ভূতের মতন তোমার পিছু পিছু যাব। কিছুতেই তোমার পিছু ছাড়ছি না।
.
.

ও মাথা নিচু করে কাঁদছে সেটা বেশ বুঝতে পারছি।

ফারিদ- এই কাঁদছ কেন বোকার মতন?

তমা- আপনি এখানে এসে আমার সাথে কি মশকরা করছেন?

ফারিদ- আজব এখানে মশকরা করার কি হল?

তমা- প্লিজ অবুঝের মতন কথা একদম বলবেন না।আমার সাথে যা হয়েছে সে পাপজনক কথাগুলো আমার মুখ দিয়ে আসবে না বলে আমি আমার অতীতের কথাগুলো চিঠিতে লিখে রেখে এসেছি।আমি জানি আপনি সবকিছু জেনে গেছেন তারপরও কেন আমার মুখ দিয়ে সে কথাগুলো খুলাতে চাচ্ছেন।আপনি আসলে কি চাচ্ছেন?

ফারিদ- আমার তোমাকে চাই আর বাবুকে চাই।কি সুন্দর করে চিঠি লিখে বলেছেন আপনি আমাকে ফেলে চলে যাচ্ছেন। যাচ্ছ তো যাচ্ছ সাথে আমার বাবুকে নিয়েও যাচ্ছ। এই বাবুটা কি শুধু তোমার একার আমার কিছু হয়না না?তুমি যেমন ওর মা তেমনি আমি ওর বাবাও। বাবার ভালোবাসা থেকে আমার বাবুকে কেন বঞ্চিত করছ?

তমা-………….

ফারিদ- তোমাদের দুইজনকে ছাড়া এই লাইফে একা চলা আমার জন্য অনেক কষ্টকর।আর হ্যা আমি চাচ্ছি তুমি মুখ দিয়ে তোমার অতীত বল।তাতে সমস্যাটা কি?

তমা- …………

ফারিদ- তোমার কাছে এই সমস্যা মনে হচ্ছে না তুমি খারাপ, অপবিত্র একটা মেয়ে।তুমি এমন ভাব করছ মনে হয় যেন তোমার নিজ ইচ্ছাতে সবকিছু হয়েছে।

তমা- …………

ফারিদ- তোমার সাথে খারাপ হয়েছে, দোষ ওরা করেছে আর তার মাশুল তুমি দিয়েছ। এখানে আমি তোমার কোন ভুল,দোষ দেখছি না।আমার নিজেরও দুই বোন আছে।সেটা থেকে আমি ভালো করেই বুঝি একটা মেয়ের সাথে এইসব হলে কতটা কষ্ট লাগে। আরেকটা কথা তুমি ভুলে যাচ্ছ তুমি অপবিত্র না।যেদিন আমার ভালোবাসা দিয়ে আমি তোমাকে স্পর্শ করেছি,পবিত্র ভালোবাসায় আমরা সিক্ত হয়েছি সেদিনি তুমি আমার কাছে পবিত্র হয়ে গিয়েছিলে।আমার ভালোবাসার স্পর্শ দিয়ে আমি তোমাকে অপবিত্র অপবাদ থেকে পবিত্র করেছি।আমার কাছে সবসময় তুমি যেমন ছিলে আজো ঠিক তেমনটাই আছ।

আর আমি কাউকে দয়া করছি না।ভালোবাসার মানুষকে দয়া, করুণা কোনটাই করা যায় না।ভালোবাসি বলেই তোমাকে আমার সাথে থাকতে হবে।তোমার মা বাবা আমার উপর ভরসা করে তোমাকে আমার হাতে দিয়ে গিয়েছে আর তুমি…….!তুমি আর বাবু এখন আমার দায়িত্ব।তোমাদের উপর আমার সব দায়িত্ব আমি ঠিকভাবে পালন করতে চাই।যাই হোক এখন চল বাসায় চল।

ওর হাত ধরাতে ও আমার মুখের দিকে দ্বিধানিত্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।কি করা উচিত এই মূহুর্তে ও ভেবে উঠতে পারছে না।

ফারিদ- বাবুর আম্মু তুমি একটাবার আমার উপর বিশ্বাস করে দেখ।শুধু একটাবার।আমাদের লাইফের সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। তোমার একটাই ভয় না যদি কখনো আমি ভুল করে এইসব অতীতের কথা তোমাকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে তোমাকে সেই আঘাতটা আবারো দিয়ে ফেলি।

বিশ্বাস কর এমন কিচ্ছু হবে না।এই মূহুর্তে আমি তোমার অতীত আমার মন থেকে মুছে ফেলছি সাথে তুমিও মুছে ফেল।এগুলো তোমার মন বা আমার মনে আজকে আর এখনের পর থেকে আসতে দিব না।এখন থেকে আমি তুমি আর আমাদের বাবু নিয়ে আমাদের পরিবার হবে।তুমি শুধু আমাদের নিয়ে আমাদের পরিবার নিয়ে ভাববে আমাদের ভালোবাসবে বাকি সব আলতুফালতু কথা বাদ।প্লিজ একটাবার বিশ্বাস করে আমার হাতে হাত রাখ।শুধু একটাবার।
.
.
তমা- আর কোনকিছু না ভেবেই ওর হাতে হাত রেখে দিলাম।

ফারিদ- থ্যাংকস বাবুর আম্মু।তোমার কাছে আমি এই আশাটাই করেছিলাম।

তমাকে সাথে সাথে কোলে তুলে নিলাম।

তমা- এই কি করছেন?এইভাবে পাব্লিক প্লেসে আমাকে কোলে তুলে নিলেন কেন?মানুষ কি ভাববে!

ফারিদ- হায়রে তুমি মানুষের টেনশনে আছ।আর আমি আমার বাবু আর বাবুর আম্মুর টেনশনে আছি।মানুষের কথা ভাবা তুমি বাদ দাও আর আমাকে নিয়ে ভাব।

তমা- ………..

ফারিদ- বাবুর আম্মু একটা কথা বলার ছিল……

তমা- হ্যা বলেন….

ফারিদ- আসলে কালকে তোমার সাথে বাজে ব্যবহারের জন্য আমি সত্যি দুঃখিত।তোমার মনখারাপ চেহেরাটা দেখে খুব কষ্ট হচ্ছিল তাই রাগের মাথায় তোমাকে অনেককিছু বলে ফেলেছি।প্লিজ এই বিষয় নিয়ে তুমি আর মন খারাপ কর না।

তমা- আমি মন খারাপ করেনি।

ফারিদ- সত্যি…..

তমা- হুম সত্যি……

ফারিদ- যাক বাবা বাঁচা গেল।আচ্ছা শোন কালকে ইউটিউব থেকে রান্নার একটা নতুন আইটেম শিখেছি আজকে নিজ হাতে আমি সেই মজার আইটেমটা রান্না করে তোমাকে খাওয়াব।ঘরের সব কাজ আমি আগের মতনই করব তোমাকে কিচ্ছু করতে হবেনা তুমি শুধু নিজের আর আমাদের বাবুর খেয়াল রাখবে।

তমা- হুম

ফারিদ- ইশ দেখ মুখটার কি হাল বানিয়েছে।দুপুরে কিছু খাওনি না?কেন খাওনি?এতক্ষণ ধরে না খেয়ে ছিলে?আগে তোমাকে বাসায় নিয়ে যাই তারপর তোমার খবর আছে।এতক্ষণ ধরে না খেয়ে থেকে নিজেও কষ্ট পেলে আমাদের বাবুটাকেও না খাইয়ে কষ্ট দিলে।

.
.

তমা- বেচারা রেল স্টেশন থেকে আমাকে কোলে নিয়ে হাঁটছে আর বকরবকর করে আমাকে আর আমাদের বাবুকে নিয়ে কথা বলছে আর একটুপর পর বকা দিচ্ছে,শাসন করছে, উপদেশ দিচ্ছে।আমার পাগল স্বামী আর পাগল স্যার।উনাকে নিয়ে বাকিটা জীবন সুন্দর করে পাড়ি দিতে চাই।বিশ্বাস করে উনার হাতে হাত রেখে সংসার জীবনে আবারো নতুন করে পা রাখলাম।দেখি না একবার বিশ্বাস করে।হয়ত সব দুঃখের পর আমার সাথে ভালো কিছু হবে। আমার বাবার ভুলের কারণে আমার মা বাবাকে যে কষ্ট পেতে হয়েছে সে একি ভুল ফারিদ করবে না এই বিশ্বাস রেখে ওর হাত ধরেছি।ফারিদ আমার এই বিশ্বাসটা যাতে সারাজীবন অটুট রাখে আল্লাহর কাছে সে প্রার্থনা করি।

মূলকথা- বিশ্বাসের উপর সবকিছু টিকে থাকে।একবার বিশ্বাস ভেঙ্গে গেলে হাজার চেষ্টা করেও ভালোবাসার মানুষের মন জয় করা যায় না।এক্ষেত্রে সম্পর্কে শুধু ফাটল ধরে।আর পর মানুষের থেকে ঘরের মানুষকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।তৃতীয় কোন ব্যক্তির কারণে যদি সম্পর্কে ফাটল ধরার সম্ভাবনা থাকে তাহলে তৃতীয় ব্যক্তিকে তার আসল জায়গা দেখিয়ে দেয়া উচিত।সে যেমন তার সাথে তেমন ব্যবহার করা উচিত।

বি.দ্র.- গল্পটা তোমাদের কাছে কেমন লাগল তা জানি না।কিন্তু সত্যি বলতে এই গল্পে কিছু বাস্তব দিক তুলে ধরে গল্প লিখতে পারায় আমি নিজের উপর অনেক সন্তুষ্ট। বাস্তবধর্মী গল্পগুলোই লিখতে আমার বেশি ভালো লাগে।তারপরও সিজন ২ তোমাদের কেমন লেগেছে অবশ্যই জানাবে।

তোমাদের কিছু কথা বলতে চাই।আগে আমার গল্প কপি করায় আমাকে কপিবাজ বলায় ভিষণ খারাপ লাগত সেকারণে আমি বারবার গ্রুপে পোস্ট দিতাম আমি আর গল্প লিখব না।আমি গল্প লিখায় একেবারে নতুন তাই এইরকম বিষয় যে প্রায় ঘটবে আর কপিবাজরা এইরকম কাজ প্রায় করে সেটা আমার জানা ছিল না।পরে বুঝতে পারলাম এইরকম কারণে গল্প লিখা ছেড়ে দেওয়াটা ঠিক হবে না।তাই গল্প লিখাটা পরে চালু করলাম। কিন্তু এই গল্পের সিজন ১ এ গল্প লিখার মাঝখানে আমি অনেক বড় একটা প্রবলেমে পড়ি।তাই আমাকে আইডিটা ডিএক্টিভ করতে হয়।আইডি ডিএক্টিভ করার কারণ আমার কাছের কয়েকটা ফ্রেন্ড জানে।কিছু ভাবতে না পেরে আমি আর গল্প লিখছি না এই পোস্ট আরেকজনকে দিয়ে দিয়েছিলাম।আমার এই গল্পের পাঠক অনেক ছিল তাই পরে অনেক কিছু ভেবে অনেক কষ্টে একজনকে ঠিক করলাম আর তার সাথে যোগাযোগ করে তাকে বলছি তিনি যাতে আমার গল্প পোস্ট করেন।কিন্তু আমি ঠিক টাইমে আমি তাকে গল্পের পার্টগুলো দিতে পারিনি।যেটা আমার আরেকটা ব্যর্থতা ছিল।গল্পের পার্টগুলো তাকে না দেওয়ার কারণ হচ্ছে আমার অসুখটা আগের থেকে আরো বেড়ে যায়।।আমার কাশির প্রবলেম ছিল। সেটা গল্প লিখার আগ থেকেই ছিল।হাই পাওয়ারি ঔষুধ খেয়েও অসুখ সারছিল না।পরে কাশির আওয়াজ আর ব্যথাটা আস্তে আস্তে অনেক বাড়তে থাকে। এই কাশিটা উঠলেই গলা বুক প্রচন্ড ব্যথা করত আর একনাগাড়ে কাশতে থাকতাম।খাওয়া দাওয়াও প্রায় অফ হয়ে যাওয়ার মতন অবস্থা।এইরকম কাশি যাদের হয় একমাত্র তারা জানে এইরকম অসুখ হলে কত কষ্ট হয়।পরে ফৌজদারহাট হসপিটালে গিয়ে ডাক্তার দেখালাম।বাসায় পুরা দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে ঔষুধের উপর ছিলাম।খাওয়া দাওয়ার কথাতো বাদ দিলাম।এর সাথে ঠাণ্ডা, জ্বর প্রায় উঠত।এই হল আমার গোপন অসুখের বিবরণ।ইভেন এখনো এই অসুখের কিছু কিছু লক্ষণ আমার এখনো আছে।আমার অসুখ ছিল সেটা সবাইকে বলছি কিন্তু অসুখটা কি ছিল সেটা না বলায় অনেকে বলছেন আমি নাটক করছি।যেটা শুনে সিরিয়াসলি খুব খারাপ লেগেছিল।অসুখটা কি ছিল তা কাউকে না বলায় এইরকম কথা আমাকে শুনতে হয়েছে।কাউকে এইরকম অসুখের কথা বলতে চাই নি তাই কথাটা চেপে গেছি সবসময়।যদি কারোর কাছে মনে হয় আমি অসুস্থতা নিয়ে নাটক করছি তাহলে আমার আর কিছু বলার নাই।সবাইকে আমার সরি বলা উচিত ছিল।যেটা আমি বলি নি।কিছুটা সঙ্কোচ ছিল তাই।আজকে যেহেতু সিজন ২ টা শেষ করে দিলাম তাই সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।আমার ব্যবহারে কেউ কষ্ট পেলে আমি সত্যিই আন্তরিকভাবে দুঃখিত।আর ধন্যবাদ সবাইকে আমার গল্পের সাথে থাকার জন্য।
ধন্যবাদ সবাইকে।

সমাপ্ত

স্যারযখনস্বামীসিজন২ পার্ট_২৫

0

স্যারযখনস্বামীসিজন২
পার্ট_২৫
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

তমা- তাড়াতাড়ি করে বাবার রুমে ঢুকে গেলাম।রুমে গিয়ে দেখি বাবাকে ঘিরে সবাই কান্না করছে।দরজার নিচে হেলান দিয়ে বসে গেলাম।কি হয়ে গেল এটা!

বাবাকে আমার মনের কথা বলতে পারলাম না।আমার মামণির কি হবে?বাবা যে আর আমাদের মাঝে এই খবর জানার পর আমার মামণির কি হবে?এইসব কথা ভাবতেই বুকটা কেঁপে উঠছিল।

.
.

ফারিদ- কয়েকঘন্টার জার্নিতে তমার বাবার বাসায় আসলাম।আর বাসায় আসা মাত্র কান্নাকাটির আওয়াজ শুনলাম।এখানে আসার আগে যে ভয়ের আশঙ্কা করছিলাম সেটাই শেষ পর্যন্ত সত্য হয়ে দাঁড়াল।যে রুম থেকে কান্নার আওয়াজ আসছিল সেখানে দৌড়িয়ে গেলাম।আর দেখালাম তমা দরজার নিচে হেলান দিয়ে বসে আছে আর নিরবে অশ্রু ফেলছে।মেয়েটার কি কষ্ট হচ্ছে তা বুঝতে পারছি। ওকে মনের দিক দিয়ে স্বান্তনা দেওয়ার জন্য ওর কাছে কাছে গেলাম।ওকে অনেক কিছু বুঝাচ্ছি আমি কিন্তু ও আমার কথা না শুনে ওর বাবার মৃত লাশটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ওর হুশ আনার জন্য ওকে কাঁধ ঝাকিয়ে কয়েকবার নাড়ালাম।এরপর ও আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গেল।

.
.
ফারিদ- এখন কেমন লাগছে তোমার?

তমা- বাবা……!

ফারিদ- তমা প্লিজ শান্ত হও। এই অবস্থায় তোমার উত্তেজিত হওয়া চলবে না।প্লিজ লক্ষ্মীটা বুঝার চেষ্টা কর।

তমা- আপনি কথা কেন ঘুরাচ্ছেন?আগে বলুন আমার বাবা কোথায়?

ফারিদ- তোমার বাবাকে মাটি দিয়ে আসছি।

তমা- ……..

ফারিদ- আমি জানি তোমাকে না জানিয়ে কাজটা করা মোটেও উচিত হয় নাই।কিন্তু এতক্ষণ ধরে একটা মৃত লাশকে এইভাবে রাখা সম্ভবও না।তাই তাড়াতাড়ি করে কাজটা শেষ করতে হল।সেই ৭ ঘন্টা ধরে তুমি অজ্ঞান অবস্থায় ছিল।এমনিতেই তোমার এই অবস্থা, তার উপর আবার সারাদিন না খেয়ে অনেক টেনশন আর কষ্টের মধ্যে ছিলে তাই তোমার শরীরটা দুর্বল হয়ে যায়।দেখো তোমার হাতে স্যালাইন। ডাক্তার এসে স্যালাইন লাগিয়ে গেছে।প্লিজ আর কোন কিছু ভেবে নিজেকে কষ্ট দিও না।নাহলে তোমার বাবাও যে সেখানে শান্তি পাবে না।
.
.

তমা- ফারিদের বুকে মাথা রেখে চোখের পানি ফেলা ছাড়া আমার আর কোন উপায় নেই।নিজের মনের কষ্টগুলো ফারিদকে বলতে পারছি না।বাকি সবাই যেমন কষ্ট পেলে নিজের ভিতরের অনুভূতিগুলো খোলা বইয়ের মত মেলে ধরে তার আপন মানুষকে বুঝায় যে তার কত কষ্ট হচ্ছে ঠিক তেমন ভাবে আমি নিজের মনের অনুভূতি, কথাগুলো বলতে পারছি না।মনের কথাগুলো মুখের মধ্যে আটকে আছে।এটাও আরেক কষ্ট আর জ্বালা।এই জীবনে হয়ত আর শান্তি নামক জিনিসটার আমার দেখা মিলবে না।হায়রে জীবন! এই ছোট জীবনে কত কি না দেখে আসলাম।আর এখনও হয়ত অনেক কিছু দেখার বাকি আছে।এখানেই কষ্ট দেখার শেষ হয়ত আমার কপালে নেই।না জানি আরো কত কি দেখে জীবনটা পাড়ি করতে হবে।

.
.
তমা- আপনি মামণিকে বাবার মৃত্যুর কথা জানিয়েছন?

ফারিদ- না এখনো জানায়নি।কিভাবে কথাটা বলব বুঝতে পারছি না।

তমা- ভালোই করেছন কিছু না বলে।আপনাকে কিছু বলতে হবে না।মামণিকে যা বলার আমি বলব।

ফারিদ- হুম।এটাই ঠিক হবে।



বাসায় এসে মামণিকে বাবার মৃত্যুর খবর জানালাম।কিন্ত এ খবর শুনার পর মামণিকে কাঁদতে দেখলাম না।

তমা- মামণি বাবা এই ডাইরিটা তোমাকে পড়তে বলেছে আর এইও বলেছে তুমি যাতে তাকে ক্ষমা করে দাও।

মেঘ- ……..

তমা- মামণি আমি বাবাকে তার ভুলের জন্য ক্ষমা করে দিয়েছি।তুমি কি পার না বাবার ভুলগুলো ক্ষমা করে দিতে?জানি তোমার খুব কষ্ট হবে কিন্তু তারপরও যে এখন এই দুনিয়ায় নেই তাকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

মেঘ- তোর বাবাকে আমি সেদিনি মাফ করে দিয়েছি যেদিন জানতে পেরেছি সে অসুস্থ।অসুস্থ শরীর নিয়ে সে আমার কাছে মাফ চেয়েছে তাই তাকে মাফ করে দিয়েছি।তমা জানিস,, তোর বাবা খুব ভালো মানুষ। তার কাছ থেকে আমি যে ভালোবাসা,যে শিক্ষা পেয়েছি তা আমার কাছে অনেক মূল্যবান।আমার জানামতে সে কখনো কোন ভুল কাজ করেনি।কিন্তু সংসার জীবনে চলমান অবস্থায় সে অনেক বড় একটা ভুল করে বসে।সেটা আসলে ভুল বললে ভুল হবে সে আমার সাথে অন্যায় আর অপরাধ করেছে। যার ক্ষমা কখনো হয় না।কিন্তু তার জন্য সে অনেকবছর ধরে কষ্ট পেয়েছে তার প্রায়শ্চিত্তও করেছে।আর এই প্রায়শ্চিত্তের আগুনে পুড়ে সে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।মন থেকে বাঁচার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলার কারণে সে অসুস্থতার দুহায় দিয়ে আমার আগেই এই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে।

তমা- ………

মেঘ- ওকে আমি মন থেকেই মাফ করে দিয়েছি।শুধু একটাই আফসোস আর কষ্ট রয়ে গেল ওকে শেষ দেখাটা দেখতে পারিনি।আজ কতটা বছর হয়ে গেল ওর মুখটা দেখি না।এতটাবছর পর এসে সেই প্রিয় মুখটা না দেখার যন্ত্রণাটা না আমি নিতে পারছি না।

তমা- মামণি প্লিজ তুমি কষ্ট পেয় না।জানই তো কেন বাবা তোমাকে দেখতে চাইনি।

মেঘ- হ্যা জানি।কিন্তু মনটা যে বড় অবুঝ।তমা সারাদিন তোর উপর দিয়ে অনেক ধখল গেছে যা রুমে গিয়ে বিশ্রাম নে।আর আমার এখন এই সময়ে একা থাকতে ইচ্ছা করছে কারো সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে না।

তমা- মামণিকে এখন একা ছেড়ে দেওয়া উচিত এই কথাটা মনে করে সেখান থেকে আমি চলে আসলাম।
.
.

বাবার মৃত্যুর পর মামণিকে খুশি রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করলাম।কিন্তু মামণির মনের দিক দিয়ে কোন শান্তি আর সুখ ছিল না তাই বাবার মৃত্যুর কয়েকদিন পরই মামণি আমাদের ফেলে চলে যায় আরেক দুনিয়ায়।

একটার পর একটা কষ্ট পাওয়ার পর আমি অনেক ডিপ্রেশনে পড়ে যায়। দিন দিন শরীরের অবস্থা আমার খারাপ হতে থাকে।আমাকে নিয়ে ফারিদ অনেক দুশিন্তায় থাকে।ওকে এই দুশ্চিন্তায় আর রাখতে ইচ্ছা করছিল না।কিন্তু এই অবস্থা থেকে আমি বেরিয়েও আসতে পারছিলাম না। সংসার করার ইচ্ছাটাও আস্তে আস্তে দমে যাচ্ছে। ঘরের বউ হিসেবে যে কাজগুলো আমার করার কথা সেগুলো ফারিদ করে যাচ্ছে।
.
.
ফারিদ- এই মেয়ে শরীরের কি অবস্থা করেছ একটাবার দেখেছ?কেন তুমি বারবার ভুলে যাও তোমার এই অবস্থায় টেনশন নেওয়া একদম চলবে না।তুমি এখন একা না তোমার সাথে আমাদের সন্তানও আছে।তুমি নিজে কষ্ট পাচ্ছ আর আমাদের বাবুটাকে কষ্ট দিচ্ছ।প্লিজ নিজেকে সামলাতে শিখ তিলোত্তমা।এই দুনিয়ায় কেউ অমর নয়।

তমা- ……….

ফারিদ- একদিন না একদিন এই দুনিয়া ছেড়ে আমাদের সবাইকে যেতে হবে।আমরা আমাদের প্রিয় মানুষদের যত ভালোবাসি না কেন তাদের আটকে রাখার শক্তি বা ক্ষমতা আমাদের কারোর নেই।আমাদের মর্জিতে কোন কিছুই হয় না।

তমা- ………

ফারিদ- প্রত্যেকটাদিন এইরকম মুখ ভার করা চেহেরা দেখতে আমার মোটেও ভালো লাগে না।ভার্সিটি থেকে এসে তোমার যত্ন নেওয়া,ছোটবাচ্চাদের মতন বুঝিয়ে শুনিয়ে তোমাকে খাওয়ানো, ঘর গুছগাছ রাখা এইসব করা কত কষ্ট লাগে সেটা কি তুমি বুঝ না।এক কথা তোমাকে বুঝাতে আমি ক্লান্ত।আর পারছি না আমি এই অসহ্য প্যারা নিতে।প্রত্যেকটাদিন তোমার এই খামখেয়ালিপনা,একই বিষয় বুঝাতে বুঝাতে আমি সত্যিই অতিষ্ট হয়ে যাচ্ছি। ধুত্তুরি আর ভালো লাগে না।এটা সংসার না ছাই……..।
.
.

ফারিদ- তমা ওর বাবাকে দেখার পর যেদিন ঢাকায় যায় সেদিনি আমি জানতে পারি আমার বউটা প্রেগন্যান্ট। একদিকে বাবা হওয়ার খুশি আর আরেকদিকে তমার বাবার অসুস্থতার কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল।আর এইও বুঝে গিয়েছিলাম তমার বাবার দিনটা আজকে শেষ দিন।আমার বউটা এই অবস্থায় নিজেকে কিভাবে সামলাবে তা ভাবতেই মাথায় চিন্তা ভর করছিল। তাই দেরি না করেই ঢাকায় রওনা দিই।এরপর তমার বাবার মৃত্যু, কয়েকদিন পর তমার মার মৃত্যুতে মেয়েটা পুরো ভেঙ্গে পড়ে।ওকে সামলানো খুব কষ্টকর হয়ে দাঁড়ালো আমার জন্য।এত কিছু হওয়ার কারণে ওকে আমাদের বাবু আসার খুশির খবরটা দিতে পারিনি।তাই সময় করে একদিন এই খবরটা ওকে জানাই যে ও মা আর আমি বাবা হতে যাচ্ছি। এই খবরটা শুনে প্রথমদিকে ও খুশিতে আমাকে জড়িয়ে ধরে এরপর হঠাৎ জানি না কি কারণে ওর মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে যায়। এরপর থেকে প্রতিদিন ওকে খুশি রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু প্রতিবারই আমি ব্যর্থ হচ্ছি।দিনদিন ওর শরীরটাও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ওর সাথে ও আমাদের বাবুটাকেও কষ্ট দিচ্ছে যেটা সহ্য করার মতন না।আর আজকে ভার্সিটি থেকে এসে ঘরের সব কাজ শেষ করে দেখি ও মুখভার করে বসে আছে।ওকে আজকেও এত বুঝানোর পরে যখন দেখি ও মনমরা হয়ে আছে রাগটা তখন মাথায় উঠে যায়। ওর এই কষ্টটা দেখতে পারছিলাম না সাথে আমার বাবুরও তাই রাগে ওকে অনেক কিছু বলে ফেলেছি।যেটা করা সত্যিই অন্যায় হয়ে গেছে।এই অবস্থায় ওকে খুশি রাখা আমার কর্তব্য।কিন্তু সেটা না করে ওকে অনেক কথা শুনিয়ে ফেলেছি।তাই ওর কাছে মাফ চেয়ে নিব।

স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_২৪

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_২৪
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

পুষ্প নামের মানুষিক রোগীটা আমার থেকে আমার মেঘকে বিচ্ছিন্ন করেছে।পুষ্পকে নিয়ে আমার মনের ভিতর যে রাগ ছিল ওর সাথে ঝগড়া করে তা এক এক করে বের করে দিলাম।রাগের মাথায় ওকে অনেক কথা শুনিয়েছি।ও একটা মানুষিক রোগী,ওর মতন মানুষিক রোগী আমার জীবনে এসে আমার সুন্দর গুছানো সংসারটা নষ্ট করে দিয়েছে।ওর কারণে আমি আমার মেঘকে হারিয়েছি।আর এখনো যে আমি মেঘকে ভালবাসি তা ওকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছি।আর এইও বলেছি আমি বাইরে থেকে আসার পর ওকে যাতে আমার বাসায় আর না দেখি।ওর এই বিষভরা মুখটা আমি আর দ্বিতীয়বার দেখতে চাই না।

এইরকম আরো অনেক কথা ওকে শুনিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসলাম।বাইরে আসার পরও রাগটা কিছুটা কমাতে পারিনি।পুষ্প মেঘকে হিংসা করে সেটা আমি আজ বুঝতে পারলাম।আর তাইতো ও আমার আর মেঘের জীবনকে এলোমেলো করে দিয়েছে।আমার সংসার থেকে মেঘ চলে যাওয়ার আগে ও আমার হাতে যে চিঠিটা দিয়েছিল সেটা পুষ্প চুরি করে পড়েছিল।আর সেই চিঠিটা পড়েই সে জানতে পেরেছে যে মেঘ প্রেগন্যান্ট। আর এই খবরটা যাতে আমি জানতে না পারি সেজন্য ও সেই চিঠি টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছিল।এত্ত বিষ এই মেয়েটার মধ্যে।আর আমিই কিনা এইরকম একটা শয়তান মেয়ের রুপের মোহে পড়ে ওর সাথে একটা অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলাম।আর তার ফল এখন ওর গর্ভে।এইসব ভাবতে ভাবতে পুরো পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। সেইদিন আর বাসায় যায় নি।রাস্তায় রাস্তায় হেঁটেছি আর মেঘের সাথে কাটানো দিনগুলো ভেবে কষ্টের আগুনে পুড়ছিলাম।

.
.

সকালে বাসায় এসে দেখি পুরো বাড়িতে মানুষ।এত মানুষ এত সাতসকালে এখানে কি করছে বুঝতে পারছিলাম না।কিন্তু এর কিছুক্ষণ পর যা দেখলাম তাতে আমার কাছে বিষয়টা পরিষ্কার হল।

কালকে আমাদের মাঝে ঝগড়া হওয়ার পর যখন আমি রাগ করে বাসা থেকে বাইরে চলে আসি ঠিক তার কিছুক্ষণ পর পুষ্প ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে।ওর এই আত্মহত্যা করার পিছনে শুধুমাত্র আমিই দায়ি ছিলাম।পুষ্পকে যে এত কথা শুনিয়েছিলাম তাতে ও বুঝে গিয়েছিল ওর জন্য আমার মনে কোন ভালোবাসা নেই।আর তা ও মেনে নিতে না পারায় এত বড় পাপ কাজটা করে ফেলেছিল।

আমি আবারো সেই একি ভুল করলাম।যে বাচ্চার জন্য আমি পুষ্পকে আমার জীবনে এনে মেঘকে সরিয়ে দিয়েছিলাম সেই বাচ্চাটাই দুনিয়ায় আসার আগে দুনিয়া ছেড়ে বিদায় নিল।আমি আবারো সব হারালাম।পুরো নিঃস্ব হয়ে গেলাম।মনের ডিপ্রেশনটা আগের থেকে আরো অনেকগুণ বেড়ে গেল।
.
.

এর কিছুদিন পর মেঘকে খুঁজার অনেক চেষ্টা করি।কিন্তু ওর কোন খোঁজ পাইনি।তারপরও ওকে খোঁজার আপ্রাণ চেষ্টা আমি দিনের পর দিন চালাতে লাগলাম।আর শেষ পর্যন্ত আমার লোকের দ্বারা ওর খোঁজ পেয়েও গেলাম। কয়েকটা বছর পর ওকে খোঁজে পাওয়ার খুশিতে আর আমার মেয়েটাকে দেখার জন্য চট্টগ্রামে রওনা দিলাম।আমার মেয়েটার বয়স তখন মাত্র ছয় বছরে পড়েছে।কিন্তু মেঘ আর আমার মেয়েটার কাছে যাওয়ার সাহসটুকুও আমি পেলাম না।কিভাবে আমি ওদের চোখের নজরে গিয়ে দাঁড়াব সেই দুশ্চিন্তা থেকে ওদের কাছে যেতে গিয়েও আর যেতে পারলাম না।ওদের কাছে যেতে না পারলেও আমি সবসময় ওদের খোঁজ রাখতাম।ভুল যেহেতু করেছি ভুলের মাশুলও আমাকে দিতে হবে।আর এতটা বছর ধরে আমি সেই ভুলের মাশুল দিয়ে আসছি।

.
.

বিয়ের আগে আর পরে মেঘের জন্য আমার অনুভূত ভালোবাসা,আমাদের ভালোবাসার কাহিনী এই ডাইরিতে লিখে তার স্মৃতিটুকু আমি টাটকা রেখেছি।এরপর জীবন সংসারের প্রতিকূলতায় পা রাখার পর অনুতপ্তের আগুনে পুড়ে আমার আর ডাইরি লিখার সময় হয়ে উঠে নি।কি লিখতাম ডাইরিতে!আমি মেঘের সাথে যে বাজে কাজগুলো করেছি সেগুলো লিখতাম!সেগুলো লিখার সাহসটা আমার মন থেকে আসেনি।

কেন জানি না বুঝতে পেরেছিলাম মেঘকে আর কখনো সামনে থেকে দেখতে পাব না, ওর কাছে আমি আমার ভুল করা কাজের জন্য ক্ষমাও চেতে পারব না।কিন্তু মনে মনে এই বিশ্বাস ছিল তোকে একদিন না একদিন আমি সামনে থেকে দেখতে পারব আর তোর সাথে আমি যে ভুল কাজগুলো করেছি তার জন্য ক্ষমাও চেয়ে নিতে পারব। আর তার জন্য আমাদের ব্যাপারে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা তোর জানা দরকার।তাই এই ডাইরিতে আবারো কলমের কালি দিয়ে লিখা শুরু করলাম।কিন্তু এইবারে ডাইরিতে আমাদের ভালোবাসার কাহিনী না বরং আমাদের জীবনের দুঃখ আর কষ্টের কাহিনী লিখলাম।আর এখন আমার জীবনে সব কাহিনী শুনে তুই এটা বুঝতে পেরেছিস সব দোষ আমারি ছিল। আমারি কারণে আজ এতকিছু ঘটেছে।আমি নিজের সব ভুল, দোষ স্বীকার করছি।আর এই ভুল স্বীকার করে আমি তোর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।পারলে এই বুড়ো বাপটাকে মাফ করে দিস।সাথে তোর মাকেও বলিস যাতে সে আমাকে ক্ষমা করে দেয়।

.
.

তমা- ডাইরিটা অফ করে নিজের এক হাতের আঙ্গুলের নখ দিয়ে আরেক হাতকে খামচি দিচ্ছি।খুব কষ্ট হচ্ছিল।বন্ধ রুমে চুপচাপ কান্না করছি।এই লোকটাকে আমি সবসময় খারাপ ভেবে এসেছি।কিন্তু এখন জানলাম আর বুঝলাম উনি মোটেও খারাপ নয়, অনেক ভালো মানুষ।কিন্তু উনার….. আমার বাবার এই একটা ভুল আমাদেরকে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে আসছে।এই ভুলটা না হলে হয়ত আজ এই পরিস্থিতিতে আমাদের কাউকে পড়তে হত না।বাবাকে মাফ করে দেওয়াটা এত সহজ না কিন্তু মাফ না করেও থাকতে পারছি না।বাবার এই অসুস্থতা দেখে উনাকে আর মাফ না করে পারলাম না।উনার সব অপরাধ মাফ করে দিলাম।
.
.
অনেকক্ষণ ধরেই কান্না করে চলেছি।কান্না থামার কোন নামই নেই।তারপরও অনেক কষ্টে নিজের কান্নাগুলোকে লুকিয়ে বাবার কাছে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম।একটাবার বাবাকে দেখে আসি।এই রুমে আসছি অনেকক্ষণ হয়।এতক্ষণে একবারের জন্য বাবাকে দেখা হয়ে উঠে নাই।বাবার কাছে গিয়ে বাবাকে বলব উনি যাতে আর চিন্তা না করে।বাবাকে আমি মন থেকে মাফ করে দিয়েছি এই কথাটা শুনলে বাবা মনে স্বস্থি ফিরে পাবে।যাই তাড়াতাড়ি বাবার কাছে গিয়ে কথাটা তাকে জানিয়ে আসি।

.
.

দরজা খুলে বাইরে আসলাম।হঠাৎ করে বাবার রুম থেকে অনেক জোরে চিল্লানোর আওয়াজ আসলো। কি এমন হল যে হঠাৎ করে এত জোরে চিল্লানোর আওয়াজ শুনলাম।চিল্লানোর সাথেসাথে কান্নার আওয়াজও শুনা যাচ্ছে।এইরকম কান্নার আওয়াজ শুনে মনে মনে এই দুয়া করতে লাগলাম সব যাতে ঠিক থাকে।আবার যাতে কোন খারাপ খবর আমাকে শুনতে না হয়।

স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_২৩

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_২৩
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

এরপরের দিন আমি আমার এই জঘন্যতম কাজের জন্য ওর কাছে গিয়ে একটাবারও সরি বলে নি।আসলে ওর কাছে কোন ভুল করলে আমি কখনোই ওকে সরি বলতাম না।আর সেদিনের এত বড় ভুলের পরও যদিউ সরি বলাটা আমার উচিত ছিল কিন্তু আমি তা পারিনি।

পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি মেঘের কাছে সরি বলে মাফ না চেয়ে পুষ্পের কাছে চলে যাই। কারণ আমি নিজেও বুঝতে পারছিলাম না এখন আমার কি করা উচিত।

পুষ্প- আচ্ছা তন্ময় আমি দেখতে কি বেশি খারাপ?

তন্ময়- না।

পুষ্প- আচ্ছা তুমি মেঘকে কেন বিয়ে করেছ বলতে পার?ওর গায়ের রঙয়ের সাথে আমার গায়ের রংয়ের তুলনা করলে দেখা যাবে আমিই ওর থেকে বেশি সুন্দর।শ্যামলা বর্ণের মেয়েকে পেলে শেষ পর্যন্ত বিয়ে করার জন্য।ইশ ওর আগে যদি তোমার সাথে আমার দেখা হত তাহলে ওর জায়গায় হয়ত আমিই তোমার বউ হতাম। তাছাড়া তোমাদের বিয়ের এতবছর হয়ে গেছে মেঘ এখনো কোন বাচ্চা তোমাকে দিতে পারেনি আর ভবিষ্যতে পারবেও না মনে হয়।বাচ্চা হলে অনেক আগেই হয়ে যেত।এর চেয়ে বরং আমাকে বিয়ে করে নিতে।সুন্দরী বউ সাথে বাচ্চা তুমি পেয়ে যেতে ।

.
.

পুষ্পের এই কথাগুলো কোন নতুন কথা নয়।সবসময় ঘুরিয়ে পেচিয়ে এই কথাগুলো বলে ও আমাকে বুঝাতে চাইত যে আমাকে ভালোবাসে।মেঘের চাইতে ও আমার জন্য বেশি উপযুক্ত।প্রথমদিকে ওর কথাগুলো সহ্য হত না কিন্তু অনেক কষ্টে সেগুলো সহ্য করে নিতাম।একদিন এই কথাগুলো শুনে অনেক রেগে ওকে অনেক কিছু বলি যার ফলে ও সুইসাইড করার চেষ্টা করে।তাই এরপর থেকে ভয়েও ওর সাথে আর রাগ করে কথা বলিনি।ওর প্রতি দুর্বলতাকে এড়ানোর জন্য ওর সাথে আমি চলাফেরা বন্ধ করে দিলেই ও আবার আগের মতন পাগলামি শুরু করে দেয়।এদিকে ওর মা বাবাও ওদের একমাত্র মেয়ে পুষ্পের পাগলামি দেখে আমার কাছে এসে কান্নাকাটি করে।কিন্তু ওদের মেয়ের কারণে পুষ্পের প্রতি আমার দুর্বলতা বাড়ার সাথেসাথে আমার সংসারটা ভাঙ্গুক তা আমি চাইনি।আবার পুষ্পের মা বাবাকেও না করতে পারছিলাম না তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই ওর সাথে আমাকে থাকতে হত ওকে সময় দিতে হত।

.
.

মেঘকে নিয়ে পুষ্পের প্রতিদিনের এই কথাগুলো শুনার পর এই বিষয় নিয়ে আমি অনেক টেনশনে পড়ে যাই। সত্যিইই কি মেঘ কোনদিন মা হতে পারবে না। তাহলে আমার বাবা হওয়ার ইচ্ছাটাও সারাজীবন অপূর্ণ থাকবে।পুষ্পের সাথে এতদিন চলাফেরা করাতে এতদিনে ও আমার মাথার ব্রেইন ভালোই ভাবে ওয়াশ করে ফেলেছে।আমি তন্ময় যে কিনা সবসময় কারো থেকে উপদেশ না নিয়ে বরং অন্যকে উপদেশ দিতাম আজ সে কিনাই অন্য কারোর উপদেশ মন দিয়ে শুনত।কারণ একটা বাচ্চার জন্য মেঘের সাথে সাথে আমিও অনেক ডিপ্রেশনে পড়ে যাই। আর ডিপ্রেশনের রোগীরা যাদের সাথে বেশি মিশে তাদের কথা অনুয়ায়ী চলে।কারণ তাদের কথা ডিপ্রেশন রোগীদের মগজে ভালোভাবে ঢুকে যায় যে এই কাজটা করলে তার জন্য ভালো হবে।
.
.

পুষ্পের সৌন্দর্য,ওর সাথে চলাফেরা করার কারণে আমার দুর্বলতা,আমার প্রতি ওর নির্ভরশীলতা আর ওর প্রতিদিনের একি রকম কথায় জানি না আমার কি হয়ে গিয়েছিল।আমি পাল্টে যেতে থাকি।আর এর ফলেই হঠাৎ করে পুষ্পের সাথে আমার অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠে।এর কয়েকমাস পর পুষ্পের মা বাবা বাস এক্সিডেন্টে মারা যায়।এই দুঃসংবাদের কিছুদিন পরেই আমি পুষ্পের কাছ থেকে ভালো খবর পাই।আমি জানতে পারি পুষ্প প্রেগন্যান্ট।এই অবস্থায় ওকে একা ফেলে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। একদিকে ও আমার বাচ্চার মা হতে যাচ্ছে সেই আনন্দের কথা আরেকদিকে আমাদের এই অবৈধ সম্পর্কের কথা মেঘকে কিভাবে বলব তা ভাবতে পারছিলাম না।পরে দিয়ে পুষ্পের জোরাজুরিতে মেঘকে সবকিছু বলতে আমি বাধ্য হই।আর এইও বলে দিই ও যাতে আমার আর পুষ্পের জীবন থেকে একেবারে চলে যায়।সেদিন শুধু নিজের সুখের কথা ভেবে আমি এই নির্দয় কথাগুলো মেঘকে কিভাবে বলেছিলাম আমি নিজেও জানি না।সেদিন মেঘের মনের ভিতর দিয়ে কি ঝড় যাচ্ছিল তা বুঝার বিন্দুমাত্র চেষ্টাও আমি করেনি। খুব স্বার্থপর হয়ে গিয়েছিলাম সেদিন।আমার এই কথা শুনার পর মেঘ শুধু শেষ একটাই কথা বলেছিল তন্ময় তুমি এখন কাকে ভালোবাস?সেদিনের উত্তরে আমি এটাই বলেছিলাম আমি আমার বাচ্চার মা পুষ্পকে ভালোবাসি।এই কথা শুনার পর ও নিজের রুমে চলে যায়।

.
.

এরকিছুক্ষণ পর ও আমার কাছে এসে বলে, পারলে সময় করে এই চিঠিটা পরে নিও।জানি না তুমি বর্তমান সুখের মোহে পড়ার কারণে আমার এই চিঠি পড়ার সময় তোমার হয়ে উঠবে কিনা কিন্তু তাও যদি কখনো সময় হয়ে উঠে পড়ে নিও। ভেবেছিলাম আজকে তোমাকে আমি অনেক বড় একটা সারপ্রাইজ দিব।কিন্তু আমি সারপ্রাইজ দেওয়ার আগেই তুমিই আমাকে জীবনের সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজ দিলে।সেদিনের সেই ঝগড়ার পর ভেবেছিলাম তোমার সাথে আর থাকব না।কিন্তু মেয়েরা বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়িতে একবার পা রাখলে সেই বাড়ি তার জন্য আসল ঠিকানা হয়ে দাঁড়ায়।অন্য কোথাও মেয়েদের যাওয়ার জায়গা থাকেনা।বলতে গেলে তাদের আশ্রিতের মতন জীবন কাটাতে হয়।তাই তোমার দেওয়া সব অপমান সহ্য করেও আমি এখানে পড়ে ছিলাম।কিন্তু আজ যখন শুনতে পারলাম তুমি আমার ভালোবাসাকে তুচ্ছ করে অন্য আরেকটা মেয়েকে আমার জায়গা দিয়ে দিয়েছ আর সেই মেয়েই তোমার বাচ্চার মা হতে চলেছে তখন তোমার সাথে একবাড়িতে থাকার কোন প্রশ্নই উঠে না।আমাকে যেতে না বললেও আমি নিজ থেকেই এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতাম। কারণ আজকের পর থেকে আমি জেনে গেছি আমার জন্য তোমার হৃদয়ে কিছুই নেই।এই মেয়ের মোহে পড়ে তুমি আমার ভালোবাসাকে আজকে যে পরিমাণ অপমান করেছে তার ফল তুমি পাবেই তন্ময় ।আর পুষ্প….. তোমার নজর অনেক আগে থেকেই খারাপ ছিল সেটা আমি পরে বুঝতে পেরেছি।আমার দামি জিনিসটার উপর তুমি বদনজর দিয়েছিলে।আমার প্রতি তন্ময়ের ভালোবাসা,কেয়ারিং আর আমাদের ভালোবাসার গল্প শুনে মনে মনে তুমি ঠিক করে নিয়েছিলে তন্ময় যদি তোমার হয়ে যায় তাহলে তুমিও ঠিক একিরকম ভালোবাসা আমার স্বামীর কাছ থেকে পাবে তাইতো জেনেশুনে সারাদিন নির্লজ্জের মতন আমার বাসায় এসে আমার স্বামীর সাথে বেশি সময় কাটাতে।আমার স্বামীর আজকের এই অবনতি হওয়ার পিছনে শুধু ওর একার হাত নেই তোমারও অনেক বড় হাত ছিল।কারণ এক হাতে কখনো তালি বাজে না সেটা তুমি ভালো করেই জানো।

.
.

তুমি তোমার রুপ,কথার ছলচাতুরী, আর আমার নামে অনেক নেগেটিভ কথা ওর মনে ঢুকিয়ে তুমি তন্ময়কে নিজের বশীভূত করেছ।তুমি একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের সংসার ভাঙ্গার জন্য এমনভাবে উঠে পড়ে লেগেছিলে যে তন্ময়কে আমি এত বুঝানোর পরেও আমার ভালো কথা আমার স্বামীর মগজে ঢুকত না কিন্তু তোমার কুবুদ্ধিগুলো ওর মন আর মগজে বেশ ভালো করেই তা ঢুকেছে।তুমি শুধু আমার ভালোবাসাকে কেড়ে নাও নি তুমি আমার সাজানো সংসারটাও কেড়ে নিয়েছ।তোমরা দুইজনেই আমার কষ্টের অপরাধী। শাস্তিতো তোমরা পাবেই সেটা আজ কিংবা কাল।আমিও দেখতে চাই এই মোহ,সৌন্দর্য আর অবৈধ সম্পর্কের বাচ্চাটাকে নিয়ে তোমরা কতদিন সুখে থাকতে পার।

.
.

আমার সংসার থেকে মেঘ চলে যাওয়ার পর আমি বুঝলাম ও আমার কি ছিল।আমার সবসময়ের সব প্রয়োজনে ওকে আমি কাছে পেয়েছি, আমি কিছু বলার আগেই ও আমার সব প্রয়োজনের অভাব মিটিয়েছে। ওর এই অধিক ভালোবাসাটা আমাকে কখনো কোন কিছুর অভাব বুঝতে দেয়নি।কিন্তু ও যাওয়ার পর সেটা আমি পাইপাই করে বুঝতে পারলাম যে ও আমার কি ছিল।আমার থেকে দূরে চলে যাওয়ার পর থেকে ওকে খুব মনে পড়ত।ওর রেখে যাওয়া চিঠিটার কথা মনে পড়ল।পুরো বাড়ির সব জিনিস ঘেটেও আমি সেই চিঠি পাইনি।পরে ময়লার ঝুড়িতে গিয়ে দেখি সেখানে কিছু কাগজের টুকরা পড়ে আছে।এক এক করে সব কাগজের টুকরা একত্র করে দেখি এটা মেঘের সেই চিঠি। আমার রুম থেকে চিঠিটা এখানে কিভাবে এল তা বুঝতে পারলাম না।কাগজের টুকরাগুলো অনেক কষ্টে এক এক করে জোড়া লাগিয়ে চিঠিটা পড়লাম।

.
.

চিঠিটা পড়ে জানতে পারলাম মেঘ সাড়ে তিন মাসের প্রেগন্যান্ট ছিল।নিজের হাত দিয়ে আমি এই পর্যন্ত কি কি করে ফেললাম সেটা ভাবতেই পুরো পাগল পাগল লাগছিল।একটা বাচ্চার ডিপ্রেশনে ওর থেকে আমার দূরত্ব বাড়লেও ওর প্রতি আমার ভালোবাসাটা কখনো কমেনি সেটা ও এখান থেকে যাওয়ার পর বুঝতে পেরেছিলাম।আসলে ওই সময় আমার শক্ত হাতে সবকিছু সামাল দেওয়ার দরকার ছিল।সব কিছু লিমিটের ভিতরে রাখা দরকার ছিল।পুষ্পের কারণে আমার সংসারটা যে ভাঙ্গবে সেটা মাথায় রেখে ওর অসুস্থতার চিন্তাটা বাদ দিয়ে আমাদের সংসারের ভালোটা সবার আগে আমার বুঝা উচিত ছিল ।যার কোনটাই আমি করতে পারিনি।পুষ্পকে অধিক প্রশয় দেয়াতে ও আমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সঠিক সময়ে সঠিক কোঁপটা মেরে আমাকে ওর ফাঁদে ফেলল।আর আমিও ওর রুপের মোহে পড়ে, একটা বাচ্চার জন্য ওর সব কথা মেনে চলার কারণে আজ এই অবস্থায় আমাকে আর মেঘকে এসে দাঁড়াতে হল।

.
.

মেঘের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কি না কি করেছিলাম আমি। ৫টা বছর অপেক্ষার পর ওকে আমি পেয়েছিলাম এরপর ওকে বিয়ে করে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ওকে আপন করে নিয়েছি। আর সেই আমি সংসারের কয়েকটা বছরে বাচ্চা না হওয়ার কারণে এতটাই অধৈর্য হয়ে পড়েছিলাম কোনটা ভুল কোনটা সঠিক তা বুঝার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি।এর সব কিছুর মূলে পুষ্প ছিল।ওর মতন মানুষিক রোগীর খারাপ সঙ্গে পড়ে আমি কোথা থেকে কি করে ফেললাম তা বুঝে উঠতে পারিনি।আমার প্রতিটা কাজই বলে দিচ্ছে পুষ্পের সাথে থেকে থেকে আমি নিজেও মানুষিক রোগী হয়ে পড়েছি।এরপর ওর প্রতি আমার প্রচন্ড রাগ হল।ওকে ঘুম থেকে উঠিয়ে ওর সাথে ঝগড়া শুরু করে দিই।

স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_২২

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_২২
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

জুয়েল- তমা!

তমা- আপনি আমাকে চিনেন?

জুয়েল- হ্যা, তোমাকে না চিনি কিভাবে?স্যারের মেয়ে তুমি

তমা- উনি কোথায়?আমাকে উনার কাছে নিয়ে চলুল।

জুয়েল- উনি কে?তন্ময় স্যার!

তমা- হ্যা

জুয়েল- দীর্ঘশ্বাস ফেলে,,আসো আমার সাথে।

রুমে গিয়ে দেখি একজন লোক বিছানায় শুয়ে আছে।শরীরটা পুরো কঙ্কাল হয়ে গেছে।মুখে ক্লান্তির ছাপ।বুঝতে পারলাম উনিই আমার বাবা।দেওয়ালে টাঙ্গানো বাবার অনেক আগের ছবিটার সাথে বর্তমান অসুস্থ চেহেরার কোন মিল নেই। নিজের বাবাকে এই অবস্থায় এতদিন পর দেখে কান্না করে দিলাম।

জুয়েল- স্যার আপনার মেয়ে তমা আসছে

তন্ময় চোখ খুলে দেখে সত্যি সত্যি ওর মেয়ে ওর কাছে এসেছে।মেয়েকে দেখে খুশিতে মনটা ভরে উঠল।হাতের ইশারা দিয়ে মেয়েকে ওর কাছে এসে বসতে বলল

তন্ময়- কেমন আছিস মা

তমা- কাঁপা গলায়,, ভালো।

তন্ময়- শুনলাম তোর নাকি বিয়ে হয়ে গেছে?

তমা- হ্যা

তন্ময় – নতুন সংসার জীবনে ভালো থাক সেই দুয়া করি।

তমা- …….

তন্ময়- আজকে তোকে সামনে থেকে দেখতে পেরে খুব শান্তি লাগছে।জানিস তোর মাকেও এখন খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু ওর চোখের সাথে চোখ মিলানোর সাহসটুকুও আমার নেই।তাই শুধু তোকে আসতে বলেছি।

মারে আমার ভুলের জন্য আমাকে মাফ করে দিস।আর তোর মাকেও বলিস আমাকে যাতে মাফ করে দেয়।নাহলে মরেও যে আমি শান্তি পাব না।অনেক কষ্টে জড় গলায় তন্ময় কথাগুলো বলল।

তমা- কি বলব বুঝতে পারছিলাম না।আজকে বাবাকে এই অবস্থায় দেখে শুধু মায়া হচ্ছে।

তন্ময়- জুয়েল তমাকে আমার সেই ডাইরিটা এখন দাও।

তমা- বাবার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম।কিসের ডাইরি!

তন্ময়- তোকে যে কথাগুলো বলতে চাই তা আমি ডাইরিতে লিখে রেখেছি। তোর সব কিছু জানার অধিকার আছে।তাই আজকে তোকে ডাইরিটা পড়ার জন্য দিয়ে দিলাম।এটা পড়ার পর যদি মনে হয় তুই আমাকে ক্ষমা করতে পারবি তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিস।

.
.
ফারিদ- তমাকে বাসায় না পেয়ে তমার মায়ের বাসায় আসলাম।আন্টিকে এতবার ডাকার পরও যখন উনি সাড়া দিচ্ছেলেন না তখন খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম।তমার রুমে ঢুকার সময় দেখি ফ্লোরে একটা কাগজ পড়ে আছে।কাগজটা উঠিয়ে দেখি কিছু লিখা আছে সেখানে।পড়তে গিয়েই মাথায় বাজ পড়ল।
তার মানে তমা ওর বাবার কাছে গেছে। ও এখান থেকে জার্নি করে ঢাকায় গেছে!তাও আবার এই অবস্থায়!আমি জানি এরপরে কি হবে।আর সেটা বুঝতেই পেরে আমার বউটার জন্য টেনশন হচ্ছে।ওর এই অবস্থায় এতবড় ধাক্কাটা ও সামলাবে কি করে!যে করেই হোক আমাকে সেখানে ঠিক সময়ে পৌঁছতে হবে।এই সময় ওর এখন আমাকে খুব প্রয়োজন।

তমার বাবার এড্রেস এখনি নিতে হবে।আন্টিকে এখন দরকার।হয়ত উনার কাছেই এড্রেসটা পাওয়া যাবে। আন্টির রুমে গিয়ে দেখি উনি জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছেন।

ফারিদ- আন্টি,, আমার এখনি আংকেলের এড্রেসটা প্রয়োজন।আমার বউকে এই অবস্থায় আমি এখন একা ছাড়তে পারবনা।

মেঘ – প্রথমে ফারিদের কথাগুলো মাথায় না ঢুকলেও পরে দিয়ে ঢুকল।ফারিদের কথা কিছু বুঝলাম আর বাকিটা বুঝার মতন অবস্থায় এখন নেই তাই ওর কথায় কোন আগ্রহ দেখালাম না।
পরে ড্র‍য়ার থেকে একটা কার্ড বের করে ফারিদকে দিল।

ফারিদ- থ্যাংকস আন্টি।আমি এখনি আমার বউয়ের কাছে যাচ্ছি। আন্টি প্লিজ নিজের খেয়াল রাখবেন।আল্লাহ সহায় আছেন।

এরপর তাড়াতাড়ি করে মাকে কল দিয়ে তমার মায়ের বাসায় আসতে বললাম।উনাকেও এখন একা ছাড়া যাবে না।উনাকে সার্পোট দেওয়ার জন্য এখন কাউকে খুব প্রয়োজন।

.
.

বাবার লোক জুয়েল আমাকে একটা রুমে নিয়ে গেল।সেখানের টেবিলে ডাইরিটা ছিল।ডাইরিটার পৃষ্ঠা তুলে পড়া শুরু করলাম।

বাবা আর মায়ের প্রেমের কাহিনী পড়ে বুঝতে পারলাম তাদের মধ্যে অনেক ভালোবাসা ছিল।তাহলে কিভাবে এই ভালোবাসায় দূরত্ব বাড়ল।তা জানার জন্য ডাইরিটা পড়তে লাগলাম।
বিয়ের ৩ বছরেও আমাদের ভালোবাসায় কোন ফাটল ধরেনি।ঠিক আগের মতই ভালোবাসাটা ছিল।কিন্তু এর পরে আমাদের অনেক চেষ্টার পরেও যখন বাচ্চা হচ্ছিল না তখন আমি আর মেঘ দুইজনে ডিপ্রেশনে পড়ে যাই। অনেক কষ্টে মেঘকে এই ডিপ্রেশন থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করলেও নিজের ডিপ্রেশনটা কিছুতেই দূর করতে পারছিলাম।একটা বাচ্চার জন্য মনে মনে খুব মরিয়া হয়ে উঠছিলাম।আর তার কারণেই হয়ত আমাদের আগের ভালোবাসাটা আগের থেকে অনেকখানি কমে যায়।এরসাথে ভালোবাসাটা কমার ক্ষেত্রে আরেকটা কারণ ছিল পুষ্পের প্রতি আমার দুর্বলতা।আমাদের ফ্ল্যাট এ নতুন ভাড়াটিয়া হিসেবে পুষ্পরা আসে।প্রথম প্রথম ওদের বাসা থেকে পুষ্পের চিৎকারের শব্দ আসত।প্রথম দিকে ব্যাপারটা না বুঝতে পারলেও পরে ওর বাবা মায়ের সাথে কথা বলে ব্যাপারটা বুঝতে পারি।পুষ্প একজন মানুষিক রোগী।জীবনের প্রথম প্রেমিকের ভালোবাসার কাছে ধোকা খাওয়ার পর ও অনেকটা মানুষিক রোগীর মতন আচরণ করতে থাকে।পুষ্পের এই চিৎকার, জিনিসপত্র ভাঙ্গচোরের আওয়াজ, ফ্ল্যাটের মানুষদের সাথে খারাপ আচরণ দেখে ওকে অনেকেই অনেক কটু কথা শুনাত।যেটা আমার খুব খারাপ লাগত।তাই এই ছোট মেয়েটাকে সাহায্য করার জন্য আমি নিজেই এগিয়ে আসি।প্রথমদিকে ও নিজেও আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করত এরপর ও আস্তে আস্তে অনেকটা উন্নতির পথে আসে।ধীরেধীরে আমাদের বাসায় পুষ্পের যাতায়াত চলতে থাকে।ও প্রায়ই মেঘের কাছ থেকে আমার আর মেঘের ভালোবাসার কাহিনী জানতে চাইত।স্বামী- স্ত্রীর ভালোবাসার প্রাইভেসির মধ্যে যতটুকু কথা বলা যায় ততটুকু গল্প মেঘ ওকে শুনাত।হয়ত এইসব শুনার পর পুষ্পের আমার প্রতি দুর্বলতা বাড়তে থাকে।এরপর প্রায়ি যে টাইমে আমি বাসায় থাকতাম ও সেই টাইমে আমার বাসায় এসে উপস্থিত হয়।মেঘের উপস্থিতেই ও মেঘকে ইগনোর করে আমার সাথে গল্প জুড়িয়ে দিত।প্রথম প্রথম তা লিমিটের মধ্যে থাকলেও এরপর তা লিমিট ক্রস করে।বিরক্ত হলেও কিছু বলতে পারতাম না।কারণ এই রকম টাইপের রোগীর কাছে অনেক হিসাবনিকাশ করে কথা বলতে হয়।ফলে নিজের স্ত্রীকেও তেমন সময় দিতে পারতাম না।এতে যে মেঘ মন খারাপ করত তা বুঝতে পারতাম তাই পুষ্পের অবস্থার ব্যাপারে মেঘকে বুঝাতাম।এ ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না।

.
.

ধীরে ধীরে ওর সাথে অধিক সময় কাটানোর ফলে আমি নিজেও ওর প্রতি অনেক দুর্বল হয়ে পড়ি।নিজের পরিবার, স্ত্রীকে গুরুত্ব না দিয়ে বাইরের একটা মেয়েকে বেশি গুরুত্ব দিলে, তার সাথে বেশি সময় কাটালে ওর প্রতি দুর্বল হয়ে যাব এটাই স্বাভাবিক।যেটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল কাজ ছিল।পুষ্পকে নিয়ে মেঘের সন্দেহ দিনদিন বাড়তে থাকে।একদিন এই বিষয় নিয়ে মেঘ অনেক রাতে আমার সাথে ঝগড়া করে।আমি পুষ্পের প্রতি দুর্বল ছিলাম সেটা আমি নিজে জানতাম, কিন্তু মেঘকে সেটা বুঝতে দিতাম না এইটা আমার কাছে অনেক বড় একটা অপরাধের মতন মনে হত।সেই অপরাধবোধটা কেমন করে জানি আমাকে হিংস্র বানিয়ে দিল।মেঘ আমাকে আর পুষ্পকে নিয়ে অনেক খারাপ কিছু বলছিল যেটা শুনে আমি অনেক রেগে যাই যদিউ ওর রাগটা স্বাভাবিক ছিল কিন্তু এরপর ও আমাকে ক্যারেক্টারলেস বলাতে আমার মনের সেই অপরাধবোধটা থেকে হঠাৎ করে তখন অনেক রাগ জন্মায়।নিজের অপরাধ ঢাকতে আর ও আমাকে ক্যারেকটারলেস বলাতে আমি একটা পশু হয়ে যাই।আর তাই সেদিন মেঘকে জানোয়ারের মতন মারতে থাকি।

স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_২১

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_২১
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

প্রিয় তমা মামণি,,
কেমন আছিস?আশা করি তোর মামণিকে নিয়ে ভালোই আছিস।হয়ত এই ভালো থাকাটা আরো ভালো হত যদি তোর মামণি,আমি আর তুই মিলে একটা সুন্দর ফ্যামিলির মতন থাকতাম।কিন্তু আমার একটা বড় ভুলের কারণে তা হয়ে ওঠেনি।সেজন্য তোরা দুইজন আজ আমার থেকে এত দূরে।এতক্ষণে হয়ত বুঝে গেছিস আমি কে?হুম ঠিকইই ধরেছিস আমি তোর সেই বাবা যার আদর,ভালোবাসা ছাড়াই তুই এতটা বছর কাটয়েছিস।বাবা হয়ে আমি তোর প্রতি কোন দায়িত্বই ঠিকমতন পালন করতে পারিনি।বাবা হিসেবে সত্যিই আমি ব্যর্থ।জানিস মা,,তোকে সামনে থেকে দেখার খুব ইচ্ছে ছিল।কিন্তু আমি জানি তুই আমাকে মনে মনে অনেক ঘৃণা করিস কিন্তু তোকে দেখার লোভটা কিছুতেই সরাতে পারিনা তাইতো বারবার ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে চলে আসি দূর থেকে শুধু তোকে একপলক দেখার জন্য।তোর আর তোর মামণির সামনে যেতে পারব না বলে দূর থেকেই তোদের খোঁজ নিতাম।কিন্তু ইদানীং নিজ থেকে তোদের কোন খোঁজখবর নিতে পারিনা আমার লোকের কাছ থেকে সব খবর নিই তোদের।কয়েকবছর ধরেই শরীরটা বড্ড অকেজো হয়ে গেছে।সারাদিন বিছানায় পড়ে থাকতে হয়।নিজ হাতে কিচ্ছু করতে পারিনা।অন্যের সেবার উপর এখন আমি সম্পূর্ণ নির্ভরশীল।এতটাই অসহায় অবস্থায় এখন আমি জীবন কাটাচ্ছি।
আজকের সকালটা কেন জানি আমার কাছে অন্যরকম লাগছে।মনে হচ্ছে আজকের দিনটাই আমার জন্য শেষ দিন।পুরো শরীর জুড়ে অসহ্য যন্ত্রণা লাগছে।খুব কষ্ট হচ্ছে।এই অবস্থায় তোকে আর তোর মামণিকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু তোর মামণির সামনে মুখ দেখানোর মতন সাহস আমার নেই।তাই খুব করে চাইছি তুই আমার কাছে আজকে চলে আয়।তোকে আমার অনেক কিছু বলার আছে।মামণি তোর কাছে এই মৃত্যু পথযাত্রীর এইটাই শেষ ইচ্ছা।আমার কাছে তাড়াতাড়ি চলে আয় মা।বেশি দেরি করিস না।কারণ বেশি করলে তোকে হয়ত আর সামনে থেকে দেখা হবে না আর আমি আমার অব্যক্ত কথাগুলোও তোকে বলতে পারব না।

ইতি
তোর বাবা

চিঠিটা হাত থেকে পড়ে গেল।যে ভয় পেয়েছিলাম সেটাই হচ্ছে।হয়ত আজকে আরেকটা মৃ…….।আর পারছি না নিজেকে সামলাতে।

.
.
তমার রুমে এসে,,

মেঘ- “তমা,,তোর বাবার লোক বাইরে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে।তাড়াতাড়ি ঢাকায় চলে যা”

তমা- “মামণি তুমি এই কথা বলছ!”( অবাক হয়ে)

মেঘ- “হ্যা,, একজন মৃত্যু পথযাত্রীর এই শেষ ইচ্ছাটা তোর পূরণ করা উচিত।”

তমা- “ঠিক আছে তাহলে তুমিও চল সেখানে।”

মেঘ- “না, আমি যেতে পারব না।কারণ তোর বাবা আমাকে যেতে বলেনি,শুধু তোকে যেতে বলেছে।সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি যা।”

মামণির চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।সেখানে অনেক ভয় আর হতাশার চিহ্ন দেখতে পারছি।বুঝতে পারছি কিসের মধ্যে দিয়ে আমার মামণিকে কাটাতে হচ্ছে।মামণিকে একা ছেড়ে যাওয়া ঠিক হবেনা তাই আমার শাশুড়িমাকে কল দিতে গেলেই মামণি বলল,,কাউকে কিছু জানানোর দরকার নেই।আমার এখন একা থাকতে ইচ্ছ করেছে।একটু একা থাকতে চাই আমি।

তমা- “কিন্তু এই অবস্থায় তুমি…..”

মেঘ- “আমি ঠিক আছি।”

তমা- “আচ্ছা যাচ্ছি তাহলে।মামণির হাত দুটো ধরে,, নিজের খেয়াল রেখ মামণি।”

এরপর তাড়াতাড়ি করে বাবার পাঠিয়ে দেওয়া গাড়িতে করে ঢাকায় রওনা দিলাম।
.
.
মেঘ- “মেয়েটা যাওয়ার সাথে সাথে অনেক কষ্টে আটকে রাখা চোখের পানিগুলো গাল গড়িয়ে পড়তে লাগল।

তন্ময় এতদিন আবির সেজে আমার সাথে কথা বলেছে অথচ আমি তা বুঝতেই পারিনি।ও এই কয়েক বছরে আমার সাথে যোগাযোগ রেখে আমার কষ্টগুলো দূর করার চেষ্টা করেছিল সেটাও আমি বুঝতে পারিনি।ও যে আমার সাথে ভুল করেছে সেটা ও মেনে নিয়েছে যে কিনা সামান্য কিংবা বড় ভুল করলেও তা সহজে মানতে চায় না।ওর ভুল কাজের জন্য সেদিন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আমার কাছেই ক্ষমা চাইছিল আর আমি!আমি সেটা বুঝতে পারিনি। কি কপাল আমার।আমার স্বামী আজ জীবনের শেষ মূহুর্তের কাটগড়ায় এসে পৌছে দাঁড়াল অথচ তাকে আমি একটাবারো সামনে থেকে দেখতে পাব না।ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ওর সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারব না কারণ আমি ওকে এই অবস্থায় লজ্জায় ফেলতে চাই না।আল্লাহ আর কত তুমি আমার কষ্টের পরীক্ষা নিবে।আর পারছি না আমি।এই কষ্ট থেকে আমাকে তাড়াতাড়ি মুক্তি দাও।”

স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_২০

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_২০
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

বাইরের প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে আছি।রাতের বেলায় এইরকম সুন্দর দৃশ্য দেখলে চোখ সেখানেই আটকে যায়।আর সেই সাথে উনার কথা ভাবছি।আমার রাগি বরটা আমাদের বিয়ের ২ মাসের মধ্যেই আমার হৃদয়ে ভালোবাসার ফুল ফুটিয়েছে।ও একটু না অনেকটাই রাগি আর জেদি হলেও ওর মনটা অনেক পরিষ্কার।ওর দেওয়া একটু একটু ভালোবাসা আর যত্ন আমাকে তা ক্ষণে ক্ষণে বুঝিয়েছি।ওর এই ভালোবাসা নিয়ে বাকিটা জীবন ভালোভাবে পাড়ি দিতে চাই।আর তাই এখন মনে মনে এইও ঠিক করে ফেলেছি ওকে আমার অতীতের কথা জানাবো না।আমার সংসারে আর নতুন করে আমি ঝামেলা চাই না।তাছাড়া ওর সামনে ওই কথা বলার পর হয়ত আমার প্রতি ওর ভালোবাসার অস্তিত্ব আর থাকবে না আর সেইসাথে ওর সামনে আর মাথা উঁচু করে আমি দাঁড়াতে পারব না।আর এটাই সবচেয়ে চরম সত্য কথা।তাই কষ্ট হলেও অতীতের কথা ওর কাছে গোপন রাখব।

আর এইদিকে ফারিদ যে আমার কাছে এসে আমাকে দেখছে সেদিকে আমার কোন খেয়াল ই ছিল না।

“বাহ ম্যাডামের তো কোন হুশই নেই দেখছি।” পিছনের দিক থেকে ও আমাকে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল।

“আপনি?”

আমার চুলেই মুখটা ডুবিয়ে ফারিদ জবাব দিল,, “হুম আমি। বুঝলে কি করে এইটা আমি?”
না বুঝার কি আছে।আপনার স্পর্শ আমি খুব ভালো করেই চিনি।তাছাড়া আপনি ছাড়া আমাকে এইভাবে ধরার সাহস আর কারোর আছে নাকি?”
“হুম ঠিক বলছ।আর যেই ব্যাটা এই সাহস করবে তার হাত পা ভেঙ্গে কুকুরদের কাছে দিয়ে আসব।আমি ছাড়া তোমাকে স্পর্শ করার অধিকার আর কারোর নেই।”
“তা এত রাতে এইখানে আসার কারণটা কি?”
“আমার বউ মনে হয় যেন কিছুই জানে না।বউ যে তার স্বামীকে না জানিয়েই শশুড় বাড়ি ছেড়ে নিজের মায়ের বাসায় একদিন থাকার জন্য চলে আসছে সেটা কি সে ঠিক করেছে?”
“আরে শুশুড় বাড়ি থেকে আমার মায়ের বাড়িতে আসতে জাস্ট ৫ মিনিট সময় লাগে। যখন আপনার মন চাইবে তখন এখানে চলে আসবেন।তা এই খবরটা কি আপনাকে জানিয়ে এরপর এখানে আসা লাগবে?”
“একশবার লাগবে।তোমাকে রুমে না পেয়ে খুব টেনশন হচ্ছিল।পরে মা বলল তুমি তোমার মায়ের কাছে আসছ।সেই যাই হোক আমাকে জানিয়েই তারপর এখানে আসবে।নাহলে কিন্তু পরে দিয়ে শাস্তি দিব।”
“আচ্ছা তাই?তা কি শাস্তি দিবেন শুনি?”
“হুম তাই।আর শাস্তিটা হবে…… আমার কানের কাছে কিছু বলল…..”

লজ্জায় মাথা নিচু করে,,”মনে মনে তাহলে এইগুলো ঘুরে না?”
“হুম এইগুলো ঘুরে” বলে দুষ্টুমি একটা হাসি দিল।
শুনো,,মায়ের বাসায় এসে থাকো সমস্যা নাই কিন্তু রাতের বেলায় এখানে থাকা চলবেনা।রাতের বেলায় তোমাকে জড়িয়ে না ধরলে আমার ঘুম আসে না।”

আমি এবার পিছন থেকে ফিরে ফারিদের সামনে আসলাম। ফারিদ অনেক লম্বা হওয়ায় ওর সাথে কথা বলার সময় আমার মাথাটা ফারিদের বুক পর্যন্ত আটকে থাকে।ফলে আমি ফারিদের চোখের দিকে তাকিয়ে মন ভরে কথা বলতে পারি না।আর বিষয়টাও ফারিদ বুঝতে পেরে আমাকে বলেছিল ওর পায়ের উপর পা রেখে যাতে কথা বলি।তাহলে আর কোন সমস্যা হবে না।এখন ফারিদ আমাকে চোখের ইশারা দিয়ে বুঝাচ্ছে আমি যাতে ওর পায়ের উপর পা রাখি।বিষয়টা বুঝতে পেরে আমি আর একটুও দেরি করলাম না।তাড়াতাড়ি করে ফারিদের পায়ের উপর পা রাখলাম।ওর এই ইশারার জন্য এতক্ষণ ধরে আমি অপেক্ষা করছিলাম।এরপর ফারিদের গলাটা দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে একটু দুষ্টুমি ভঙ্গিতে বললাম,,,

“আচ্ছা তাহলে বিয়ের আগে বউকে ছেড়ে কিভাবে ঘুমাতেন ?”
“তখনো খুব কষ্ট হত।কিন্তু এখন বিয়ে করে সে কষ্টটা আর সহ্য করতে পারি না।তুমি আমার অভ্যাস হয়ে গেছ।তোমাকে পেয়ে সে অভ্যাসটা ত্যাগ করা খুব কষ্ট জান।”

“এই ছিহ আমাকে জান বলবেন না। স্যার আপনি জানেন না এইভাবে কোন মানুষকে জান বলতে হয় না।জান মানে হচ্ছে জীবন।তার মানে আপনি কাউকে জান বলে ডাকলে তার অর্থ হবে তুমি আমার জীবন।কিন্তু এই জীবনটা আল্লাহ আপনাকে দান করেছেন।তাহলে অন্য কেউ আপনার জীবন কি করে হয়?আর এক্ষেত্রে আপনিও বা কেমন করে একজন মানুষকে জান বলে ডাকেন!এইভাবে কাউকে জান বলে ডাকলে আল্লাহ রাগ করবেন।আর কখনো এই ফালতু নামে আমাকে ডাকবেন না।আকীকা করে মামণি আমার এত সুন্দর একটা নাম রাখছে। আর সেই নামে আমাকে না ডেকে…….. ”

আমার কোমড়টা শক্ত করে ধরে,,, আমার নাকের সাথে ওর নাক ঘষে ফারিদ বলল,,,”আমার বউটা তো দেখি অনেক কিছু জানে।সরি আর কখনো এই কথা বলব না।আসলে সবাইকে দেখি ওরা ওদের ভালোবাসার মানুষকে আদর করে জান,বাবু বলে বেড়ায়।আমিও ভাবলাম তোমাকে আদর করে জান ডাকি।কিন্তু এইভাবে ভালোবাসার মানুষ বা অন্য কাউকে কে যে জান বলে ডাকতে হয় না সেটা আমার মাথায় আসেনি।সরি।”

“ইটস ওকে।আর এই ভুল করবেন না।”
“হুম,, বাবুর আম্মু।”

ফারিদের বুকে মাথা রেখে বললাম,,, “শুনেন,”
“জ্বী বলেন,,”
“আপনি শুধু আমাকেই ভালোবাসেন তাই না?”

আমার মাথাটা ওর বুক থেকে উঠিয়ে,, “ম্যাডাম আপনার কি মনে হয়?যদি মুখ দিয়ে মিথ্যা কথা বলি তাহলে তা বিশ্বাসও করে ফেলতে পারেন।সেজন্য আমার ভালোবাসার মধ্যে দিয়ে এটা আপনাকে অনুভব করতে হবে যে আমি শুধু আপনাকেই ভালোবাসি কিনা তাহলেই এর উত্তর পেয়ে যাবেন।”

মুচকি হেসে,,”হুম।শুনেন শুধু আমাকেই ভালোবাসবেন অন্য কাউকে না।আপনার অনুভূতিগুলো বুঝতে পেরে অনেক কষ্ট করে নিজের মনকে বুঝিয়েছি যে আপনি শুধু আমাকেই ভালোবাসেন অন্য কাউকে না।প্লিজ আমার এই বিশ্বাসটাকে ভেঙ্গে দিবেন না।”

“আমি কখনো এই জঘণ্য কাজটা করব না।”
“কিন্তু আপনি এই জঘন্য কাজটা কিন্তু আমার সাথে করেছেন?”
“কখন?”
“আমাকে কিডন্যাপ করে এরপর ব্ল্যাকমেইল করে আমাকে বিয়ে করে।”
“সেইদিনের সেই কাজটার জন্য আমি খুব দুঃখিত।আসলে সেইদিন নিজের রাগটাকে সামলাতে পারিনি।তুমি আমাদের বাসায় গিয়ে আমার সম্পর্কে আমার মাকে যা যা বলো এসেছ তাতে উনি খুব কষ্ট পেয়েছেন।বাসায় আসার পর মায়ের কাছে এইসব কথা শুনে নিজের রাগটা সামলাতে পারিনি। ।আবার তোমাকে হারানোর ভয়টাও ছিল তাই এইরকম একটা বাজে কাজ আমি তোমার সাথে করে ফেলছি।”
“আচ্ছা আমি যদি বিয়েতে রাজী না হতাম আপনি কি সত্যি সত্যি আমার ক্ষতি করতেন?!
“কি মনে হয় তোমার?”
“তখন মনে হয়েছিল আপনি যে পাগল সত্যি সত্যি এই কাজটা করে ফেলতেও পারেন।”
“আর এখন?”
“এখন মনে হয় আপনি আমাকে ভয় দেখানোর জন্যই এই কথাটা বলছিলেন।কিন্তু কখনো এই খারাপ কাজটা আর যাই হোক করতেন না।”

আমার কপালে চুমো দিয়ে,, “থ্যাংকস তিলোত্তমা আমাকে বুঝার জন্য।যা করেছিলাম দুইজনের ভালোর জন্যই করেছিলাম যদিউ তোমাকে বিয়ে করার পদ্ধতিটা ছিল অন্যায়।”
“অন্যায় আমিও করেছিলাম।আমারো দোষ ছিল।আপনার মায়ের সাথে খারাপ আচরণ করা আমার মোটেও ঠিক হয় নাই।যাই হোক আপনার আর আমার অন্যায়টা কাটাকাটি করে ফেলি।তাহলেই হল।এখন আর কারোর অন্যায় নেই।”
“হুম,,বাবুর আম্মু।”
.
.
এর কয়েকদিন পর,,,,

মামণির বাসায় গিয়ে দেখি মামণি পড়ার টেবিলে মাথা রেখে চুপচাপ বসে আছে।মামণিকে এইরকম শান্তভাবে বসে থাকতে দেখে খুব খারাপ লাগছিল।জীবনে কত কষ্টটাই না পেল আমার মামণিটা।

“মামণি,,,হঠাৎ করে বাসায় আসতে বললে যে?”
“তোর রুমে একটা চিঠি আছে।রুমে গিয়ে সেটা দেখ গিয়ে।”
“মামণি তুমি কি কাঁদছিলে? তোমার চোখ দুইটা ফুলা কেন?”
“ও কিছু না।”
“কিছুতো একটা হয়েছে?বলো কাঁদছিলে কেন?কে আমার মামণিকে কষ্ট দিয়েছে একটাবার তার নাম বল,দেখবা ওর অবস্থা আমি একদম খারাপ করে দিব।”
“আরে কিচ্ছু হয়নি।তুই একটু বেশি ভাবছিস।
যা রুমে যা।চিঠিটা পড়া শেষ হয়ে গেলে আমার কাছে আসিস।জরুরি কথা আছে।তাড়াতাড়ি যা।”

খুব অবাক হয়ে গেলাম। চিঠি! তাও আবার আমার রুমে! কে পাঠাল চিঠি?চিঠির কথা শুনে মনে ভয় লাগা শুরু হয়ে গেল।এইরকম চিঠি একবার আমার কাছে এসেছিল কিন্তু চিঠির কাগজটা পড়েই যখন জানতে পারলাম আমার ভালোবাসার মানুষটা আত্মহত্যা করেছে তখন খুব খুব কষ্ট হচ্ছিল।আর সেই কষ্টটা এখন আবার হচ্ছে।আবারো কিছু হারানোর ভয়ে।তখন একটা কথাই শুধু মনে হচ্ছিল আমার কাছে চিঠি আসা মানে আমার কাছের মানুষের মৃত্যুর খবর আসা।

স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_১৯

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_১৯
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

হঠাৎ করে মোবাইলের মেসেজে তমার ধ্যান ভাঙ্গল।এত রাতে আবার কে মেসেজ পাঠালো।
“আজকে আমার বাসায় গিয়ে মাকে যে কথাগুলো শুনিয়ে এসেছ সেজন্য তোমাকে অনেক পস্তাতে হবে তমা।Mind it.”

হুম কি করবে হাদারাম।যা করছি ভালো করছি।কালকে আমাদের বাসার ছাদে এসে আমার সাথে যে বাজে কাজটা করল তার বেলায় উনার মনে ছিল না যে একটা অবিবাহিত মেয়েকে তার সম্মতি ছাড়া কিস করা কতটা অন্যায়।উনি আমার বেলায় যা করেছেন তা মেনে নেওয়াটা আমার জন্য কষ্টসাধ্য ছিল।এইজন্য তখন আমার কাছে যা সঠিক মনে হয়েছে তাই করেছি।বেশ করেছি।দেখি উনিও কি করতে পারেন।Stupid একটা।উনি যদি আমার শিক্ষক না হতেন তাহলে না এতক্ষণে মেরে উনাকে আলুর ভর্তা বানিয়ে ফেলতাম।তমার সাথে ফাজলামিগিরি করলে কি অবস্থা হয় তা উনাকে প্রেক্টিক্যাল করিয়ে দেখিয়ে দিতাম।লুচু একটা।
.
.
যাই দেখি গিয়ে মামণি কি করছে। ঘরে গিয়ে দেখি সেখানে মামণি নেই।কোথায় গেল?ও বুঝতে পারছি।

“মামণি তুমি এতরাতে ছাদে কি কর?”
“কিছু নারে।”
“মামণি তুমি কি কাঁদছ?”
“কই না তো।”
“এমন কেন তুমি মামণি?কার জন্য কেঁদে চোখের জল ফেলছ?যার কাছে তোমার কোন মূল্য নেই,যে তোমাকে ছেড়ে অন্য আরেকটা মেয়েকে নিয়ে ফূর্তি করে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারে তাহলে কেন তুমি ওই অমানুষটার জন্য নিজেকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছ।”
“তমা….., চুপ কর।”
“কেন চুপ করব।তুমি ওই জানোয়ারের জন্য কেঁদে কেঁদে নিজেকে কষ্ট দিয়ে শেষ করে দিচ্ছ তা কি তুমি বুঝতে পারো না।আরে আমাকে যত বুঝাও তুমি ভালো আছো,দুনিয়াকে যত বুঝাও তুমি সুখে আছো কিন্তু আমি তোমার মেয়ে বুঝতে পারি এই মিথ্যা অভিনয় আমার সাথে করে লাভ নেই।মামণি আগে ছোট ছিলাম যা বুঝিয়েছ তাই বুঝেছি আমার চোখে যা দেখাতে চেয়েছ তাই দেখেছি কারণ আমি আমার মামণিকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করি। কিন্তু এখন আমি আর আগের সেই ছোট তমা নেই যা আমাকে দিয়ে বুঝাবে,দেখাবে আমি তাই বুঝব দেখব।মামণি আমার চোখের দৃষ্টি আগের সেই ছোট তমার মধ্যে নেই।এখন আমি ২২শে পা রেখেছি।এতটা বছর আমার চোখের দৃষ্টি অনেক ভালো খারাপ কিছু দেখেছে। অনেক অভিজ্ঞতা নিয়েছি এই চোখ দিয়ে।যতই ওই লোকটাকে আমার চোখে ভালো করার চেষ্টা কর না কেন আমার চোখে সে আজীবন খারাপি থাকবে।শালার পুরুষ জাতটাই এমন।এদের টেস্ট এক জায়গাতে থাকে না।এদের ভাললাগা, ভালবাসার টেস্ট বদলাতে বেশি সময় নেয় না।”

এরপর তমা কিছু বুঝার আগেই মেঘ ওর মেয়ের গালে একটা জোরে থাপ্পড় বসিয়ে দিল।

“আমার স্বামীকে নিয়ে আরেকটাও বাজে কথা বলবি না।ও কি করেছে না করেছে সেটা সম্পূর্ণ আমাদের স্বামী- স্ত্রীর ব্যাপার ছিল।আর এটাও তুই ভুলে যাস না ও তোর বাবা হয়।যাকে তুই এত অপমান করে কথা বলছিস আজ আমি তার জন্যই প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছি।ও আমাকে একটা সুন্দর জীবন দিয়েছে যার জন্য আমাকে অন্য কারোর কাছে হাত পাততে হয় না।নিজের হাতে টাকা ইনকাম করতে পারি।আর হ্যা ওর সাথে আমার ঝগড়া হয়েছিল। কেন হয়েছিল সেটা বলতে আমি তোকে বাধ্য নই।ওর সাথে সংসার করলে হয়ত তার খারাপ প্রভাব তোর উপর পড়ত তাই তোকে নিয়ে আমি সেখান থেকে চলে আসছি।আজ একটা কথা জেনে রাখ ও আমাকে যে ভালোবাসা আর সম্মান দিয়েছে তা অন্য কোন স্বামী তার স্ত্রীকে দেয় না।সংসারের চলন্ত পথে ও একটা ভুল কাজ করেছে আর তাই আমরা একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি।ওকে নিয়ে আর একটাও বাজে কথা যেন আমি কখনো তোর মুখ থেকে আর না শুনি।কথাটা মনে রাখিস।”
.
.
মেঘ- মেয়েটা আমার সাথে রাগ করে কাঁদতে কাঁদতে রুমে চলে যায়। আর সকাল হলেই আমার সাথে কোন কথা না বলে না খেয়ে ভার্সিটি চলে যায়।এরপর সকাল গড়িয়ে বিকেল, সন্ধ্যা নামতেই যখন দেখি ও বাসায় আসে নি তখনি মনের মধ্যে ভয়টা কাজ করে।

ও তো বিকেল হলেই বাসায় চলে আসে কিন্তু এখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে অথচ ওর আসার নাম কোন নাম নেই।এদিকে ফারিদও বাসায় নেই।নাহলে ও এতক্ষণে কিছু একটার ব্যবস্থা নিত।এরপর রাত হতে থাকলে আর নিজেকে স্থির রাখতে পারলাম না। ফারিদের মাকে ধরে কান্নাকাটি শুরু করে দিলাম।
.
.
রাত ১০:৩০ টায় তমা আসছে আর তার সাথেও ফারিদ।ওদের গায়ে বর বউয়ের পোশাক দেখে আমি সহ ফারিদের পরিবার অবাক হয়ে গেল।মাথায় কিছু আসছিল না তখন।পরে দিয়ে ফারিদ নিজেই সব ক্লিয়ার করে বলল যে,ওরা আজকে বিয়ে করে ফেলেছে।

ওর কথাটা শুনেই প্রথমে খুব রাগ হল।কোন অনুষ্ঠান ছাড়াই হুট করে বিয়ে করার কারণটা কি ছিল?আমরা কি ওদের বিয়েটা আটকে রেখে ছিলাম।নিজেরা নিজেই বিয়ে করে বাসায় চলে আসল।

আমাদের সবার রাগ দেখেই ফারিদ অনেকটা শান্তভাবে আমাকে বুঝাল।দেখো আন্টি তোমার যে মেয়ে ওকে আমি ভরসা করতে পারি না।যদি বিয়ের আগের দিন পাগলের মতন বলে উঠে ও বিয়ে করবে না তাহলে আমার কি হবে বুঝতে পারছ।তাই তাড়াতাড়ি করে ওকে কাজী অফিসে নিয়ে বিয়ের কাজটা শেষ করে আসলাম।এখন থেকে ও আমার বউ।এখন চাইলেও ও আর কোন ঝামেলা করতে পারবে না।তোমরা আর কয়েকদিন পর নাহয় বিয়ের অনুষ্ঠানটা কর।
.
.
তমা- ভার্সিটি থেকে বাসায় আসার সময় কয়েকজন লোক আমাকে জোর করে একটা গাড়িতে উঠায়।অনেক কান্নাকাটি করছিলাম তখন কিন্তু আমাকে কেউ ছাড়ে নি।বুঝতে পারলাম আমি কিডন্যাপ হয়েছি।আর পরে দিয়ে জানতে পারলাম এই কিডন্যাপটা ফারিদ স্যার লোকজন দিয়ে করিয়েছে।উনার কালকের হুমকিটা পড়ে মনে পড়ল।মনে মনে আল্লাহকে ডাকছিলাম যাতে উনি আমার কোন ক্ষতি না করে।

কিন্তু উনি আমাকে অনেক ভয় দেখান।বলেন আমি যদি এই মূহুর্তে উনাকে বিয়ে না করি তাহলে উনি সত্যিই আমার ক্ষতি করে বসবেন।ছাদের বাকি কাজটা আজকেই সেরে ফেলবেন।ভয়ে সেদিন উনাকে বিয়ে করতে বাধ্য হই।বিয়ের পর উনি আমাকে বাসায় নিয়ে আসেন।আর এমনভাবে আমার মামণিকে সহ ওর পরিবারকে আমাদের বিয়ের কাহিনী শুনাচ্ছেন যেন আমার ইচ্ছায় বিয়েটা হয়েছে।উনার প্রতি রাগ আর ঘৃণা আরো বেড়ে গেল।
.
.
এরপর অনুষ্ঠান করেই আমাদের বিয়েটা আবার হয়।আস্তে আস্তে উনি উনার নিজের গুণ আর ভালোবাসা দিয়ে আমার মনটা জয় করে নেয়।রাগ আর ঘৃণার বদলে এখন উনাকে ধীরে ধীরে ভালোবাসতে শুরু করি।কিন্তু কখনো এই কথাটা উনাকে বলতে পারিনি।মুখের মধ্যেই কথাটা আটকে রইল।আর আমার অতীতের কথাটা উনাকে জানিয়ে নিজের কষ্টটা মাঝেমাঝে হালকা করতে খুব ইচ্ছে করে।কিন্তু এইসব কথা মনে মনে ভাবলেও পরে দিয়ে তা করার আর সাহস পাই নি।কারণ উনাকে হারানোর ভয়টা কাজ করে।যদি উনি এইসব কথা শুনে আমাকে ফেলে চলে যান তাহলে আমি আবার কি নিয়ে বাঁচব তা জানি না।তাই অতীতের কষ্টটা মনের ভিতরে ধামাচাপা দিয়ে রাখলাম।

স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_১৮

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_১৮
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

তানভীর- “সরি,”

তমা- “সরি বলে তো আর কাজ হবে না।বৃষ্টির দিনে গাড়ি পাওয়া এমনেতেই অনেক মুশকিল।আজকেই কি এই গুরুত্বপূর্ণ কথা না বললে হত না।অন্য আরেকদিন বলতা।এখন কি হবে?”

তানভীর- “কিচ্ছু হবে না।আমি তোমাকে সেইফলি বাসায় পৌছায় দিবো।কি ব্যাপার মুড অফ নাকি।”

তমা- “তো কি করবো।তোমার জন্য পুরা ভিজে গেছি।তুমি বেশ ভালোইই করেই জানো আমি বৃষ্টি একদমই পছন্দ করি না।তার উপর বৃষ্টিতে ভেজা একেবারে অসহ্যকর।”

তানভীর – “এই তুমি আমার জ্যাকেটের ভিতরে আসো।”

তমা- “না, থাক লাগবে না।”

তানভীর- “আরে লাগবে,বেশ লাগবে।সরি সত্যিই আমার খেয়াল ছিল না যে তুমি বৃষ্টিতে ভিজে গেছ।সরি। ”

তমা- “সরি মাফ হবে না।”

তানভীর – “আচ্ছা সেটা পরে দেখা যাবে।আগে চল ওই গাছটার নিচে গিয়ে দাঁড়াই”

তমা- “ওকে। ”

তানভীর – “এই তুমি এখানে একটু দাঁড়াও।আমি এই যাচ্ছি আর আসছি।”

তমা- “আরে….কোথাই যাচ্ছ। আজিব একটা।”

অনেক্ষণ পর ও এল।হাতে কিছু কদম ফুল।

তমা- “কদম ফুল!!ইশ,তুমি কিভাবে জানো আমি কদম ফুল পছন্দ করি।যাই হোক ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে না থেকে আমাকে দাও ” এই বলে ওর হাত থেকে কদম ফুল নিতে গেলে…।

তানভীর -“আরে আরে করছটা কি।হাত থেকে এইভাবে ফুলগুলো কেন নিচ্ছ?আমি তোমাকে নিজ থেকে ফুল দিছি?”

তমা- “ও আচ্ছা।ঠিকাছে। লাগবে না।”

এরপর হাটুগেড়ে কদম ফুল দিয়ে ও আমাকে প্রপোজ করে।আমি রীতিমতন অবাক হয়ে যায়।এইরকম দিনে তাও আবার যদি কারোর প্রিয় ফুল নিয়ে এক আবেগময় কণ্ঠে কোন ছেলে প্রপোজ করে তাহলে একটা মেয়ের গলতে বেশি সময় লাগে না।তাছাড়া ও আমার অনেক ভালো বন্ধু।অনেক ভালোও লাগে ওকে।তাই কিছুক্ষণ চিন্তাভাবনা করার পর ওর প্রপোজাল একসেপ্ট করে ফেলি।
সাথে সাথে ও আমাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দেয়।জানি না কি ছিল এই পরশে।এক অদ্ভুত অজানা ভাললাগা তখন মনের গহীনে কাজ করছিলো।

তানভীর -“আমি জানতাম তিলোত্তমা তুমি আমাকে না করতেই পারবে না।I love u, I love u so much dear.”

মাঝেমাঝে ও আমাকে তিলোত্তমা বলেই ডাকত।জানি না কি মনে করে আমাকে এই নামে ডাকত।যদিউ মাঝেমাঝে জানতে ইচ্ছে করতো কিন্তু কিছু কিছু জিনিস না জানার মাঝেও এক ধরণের ভালালাগা কাজ করে। তাই আর এই নাম ধরে ডাকার কারণ ওকে আর আমি জিজ্ঞাস করে নি।ভালোই লাগত ওর কাছ থেকে এই তিলোত্তমা নামটা শুনে।ফারিদ স্যারও মাঝেমাঝে আমাকে তিলোত্তমা বলে ডাকে।কিন্তু এই তিলোত্তমা নামটা তানভীরের কাছ থেকে শুনতে আমার বেশ লাগত।

তানভীর -“এই তিলোত্তমা আমার সরি একসেপ্ট করছ।”

তমা- “কিসের?”

তানভীর – “এই যে আমার কারণে তোমাকে বৃষ্টিতে ভিজতে হল।”

তমা- “উম,না।এখনো করি নি।”

তানভীর – “এরজন্য কি করতে হবে শুনি।”

তমা- “বেশি কিছু করতে হবে না।আমাকে আরো অনেকগুলো কদম ফুল গাছ থেকে পেড়ে দিতে হবে।তাহলে তোমার সরি মাফ করে দিবো। ”

তানভীর – “ওরে আমার কদম ফুল পাগলী রে। আচ্ছা এনে দিবো।”

.
.
ফারিদ- “এই তমা, তমা এইভাবে ভিজছো কেন?ঠাণ্ডা লেগে যাবেতো।”

এই মেয়ে কতক্ষণ ধরে ডাকছি শুনতে পারছো না।হায় আল্লাহ কোন ভাবনার দেশে পড়ে আছে।এতক্ষণ পিছন থেকে ওকে ডাকলাম কিন্তু ওর কানে মনে হয় কোন আওয়াজ ঢুকছে না।তাই ওর সামনে আসলাম।সামনে এসে ওর ভিজা চুলগুলো দেখে মনে হল আমার সামনে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর আর মায়াবতী মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে।ভেজা চুলে কি রুপটায় না ওর ফুটে উঠেছে।

জানি না আমার কি হয়ে গেল।আমার মাঝে আমি ছিলাম না।একটা ঘোরের মধ্যে আটকা পড়ে গেলাম।এরপর আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না।ওর হাত ধরে একেবারে আমার কাছে এনে কপাল থেকে ওর চুলগুলো সরিয়ে কানের পিছনে নিয়ে গেলাম।এরপর একহাতে ওর কোমড় ধরে আরেকহাতটা ওর গালে ধরে অজান্তেই ওকে কিস করে ফেললাম।

কিস করার কিছুক্ষণ পর একটু হালকা হয়ে আসলেই তমা আমাকে এক ধাক্কা দিয়ে ওর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিল।ও যে এইরকমভাবে আমাকে ধাক্কা দিবে আমি জাস্ট কল্পনা করতে পারি নি।
.
.
“কি করছেনটা কি আপনি?পাগল হয়ে গেছেন নাকি?”
“তমা সরি আমি আসলে বুঝতে পারি নি। নিজেকে কন্ট্রোল করতে কষ্ট হচ্ছিল তাই কি করে ফেলেছি আমি নিজেও জানি না।প্লিজ কেঁদো না তুমি।এই মেয়ে তাকাও আমার দিকে।”

দুহাত দিয়ে মুখটা ঢেকে রাখছি।কিছুতেই কান্না থামাতে পারছি না।উনি এইটা কিভাবে করতে পারলেন।এতদিন উনার পাগলামি অনেক সহ্য করেছি আর না।আজকেই মামণিকে গিয়ে বলব উনার সাথে আমার বিয়ে যাতে না দেয়।কিন্তু মামণির শরীরের অবস্থা খুব খারাপ এই কথা কিভাবে বলব।

“এই মেয়ে মুখ থেকে হাতটা সরাও বলছি।আমি বললামতো,, ইচ্ছে করে আমি এই কাজটা করতে চাই নি।প্লিজ তিলোত্তমা আমাকে বুঝার ট্রাই কর।”

“আমাকে একদম ছুঁবেন না।আপনার মনে এতদিন এই ছিল।আর আজ তা প্রকাশ পেল।আপনি একটা নোংরা মনের মানুষ।”

এই কথা শুনে ফারিদের মাথায় রাগটা চটে উঠল।

“এই কি বললে তুমি?আমি নোংরা মনের মানুষ। তমার হাতটা শক্ত করে ধরে,,,আরে আমি যদি এতটাই নোংরা হই তাহলে এই ২ টা বছর বিয়ের জন্য অপেক্ষা করতাম না।যদি তোমার ক্ষতি করার ইচ্ছাই থাকত তাহলে আমি এতদিনে তা করে ফেলতাম। কি পারতাম না আমি ! সে সুযোগ আমার অনেক এসেছিল। কিন্তু আমি তা কাজে লাগাই নি।বলো আজ পর্যন্ত আমি তোমার সাথে কোন খারাপ আচরণ করেছি।”
“আগে করেন নি।কিন্তু আজ এইটা কি করলেন।এতদিনে আপনার প্রতি আমার যে শ্রদ্ধা ছিল আজকে এক সেকেন্ডই আপনি নিজে তা শেষ করে দিয়েছেন।”

নিজের চুলগুলো হাত দিয়ে টেনে ফারিদ রাগে কাঁপতে লাগল।এই মেয়েটা কি বলছে এইসব?এইটা জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট ছিল।ভুলে এই কাজটা ও করে ফেলেছে তাই বলে তমা ওকে এইভাবে কথা শুনাবে।

আরে ও কই?ছাদের চারিদিক চোখ বুলিয়ে দেখি ও নেই।বাসায় চলে গেছে তাহলে।এখন মনে খুব ভয় কাজ করছে এই মেয়েটা আবার কোন তালবাহানা করে না ওদের বিয়েটা বন্ধ করে ফেলে।

তমা- “তাড়াতাড়ি রুমে এসে দরজাটা আটকিয়ে কান্না করতে লাগলাম।আজকেই উনার মাকে গিয়ে বিচার লাগাবো। এরপর উনি নিজেই বিয়েটা ক্যান্সেল করে দিবেন। ”

.
.
জুয়েল- “স্যার এখন কেমন লাগছে?”

তন্ময়- “এখন ভালোই আছি।”

জুয়েল- “স্যার খুব ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন আমাকে।হঠাৎ করে আপনার শরীরটা আবারো খারাপ হতে দেখে মাথা কাজ করছিল না।”

তন্ময় – “আরে আর ভয় পেতে হবে না।আমি এখন অনেকটাই ভালো অনুভব করছি।জুয়েল একটা খাতা আর কলম নিয়ে আসো তো।!

জুয়েল- “জ্বী স্যার”

তন্ময়- “নাও এবার একটা চিঠি লিখ।”

জুয়েল- “স্যার নাম বলেন,,প্রিয় এরপর কি নাম দিবো”

তন্ময়- “আমার মেয়ের নামতো জানোই।”

জুয়েল- “তমাকে নিয়ে আপনি চিঠি লিখবেন।”

তন্ময়- “হ্যা। লিখ প্রিয় মামণি……

জুয়েল- “হঠাৎ চিঠি লিখার কারণটা ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না।”

তন্ময়-“কারণ আর কয়েকদিন পর হয়ত আমি ভালোভাবে কথা বলার মতন অবস্থায় থাকবো না।তাই এখনি চিঠিটা লিখছি।আমার শরীরটা খুব খারাপ হয়ে গেলে এই চিঠিটা ওর কাছ পাঠাবে।আর আরেকটা চিঠি লিখবে সেখানে আমি যা লিখতে বলব তাই লিখবে।সেই চিঠি তুমি আমার স্ত্রীর কাছে পাঠাবে। এখন যা যা লিখতে বলছি ঠিক তাই লিখ।”

জুয়েল- “ওকে স্যার”

অবশেষে দুইটা চিঠি লিখা শেষ হয়।

তন্ময়- “তোমার উপর আমি আরেকটা দায়িত্ব দিলাম।চিঠি সেখানে পৌছানোর পর আমার মেয়ে এখানে আসলে ওকে আমার এই ডাইরিটা পড়তে দিও।”

জুয়েল- “স্যার তমা কি এখানে আসতে চাইবে?যদি সে এইখানে না আসে তাহলে আমি কিভাবে ওকে এই ডাইরিটা দিব?”

তন্ময়- “আমি জানি আমার মেয়ে ঠিকই আসবে।আসতে ওকে হবেই। না হলে আমি ওকে যে কথাগুলো বলতে চাই সেগুলো আর বলা হয়ে উঠবে না।আমি যে কথাগুলো বলতে চাই সব এই ডাইরিতে আছে।এই ডাইরি ও পড়ার পর যখন ডাইরিটা ওর মামণিকে দেখাবে তখন হয়ত সে আমাকে মাফ করেও দিতে পারে।”

(Rj ফারিদ ভাইয়া আপনার পারমিশন ছাড়াই গল্পের নেক্সট পার্ট দিয়ে ফেলছি।কিছু মনে করিয়েন না।?????)

স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_১৭

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_১৭
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

২ বছর পর,,,

“উফ এভাবে কে বেল বাজাচ্ছে?আসছি…..।”

দরজা খুলার পর,,

“ম্যাডাম আপনার জন্য একটা চিঠি আসছে।”
“আমার জন্য।কে পাঠিয়েছে?”
“তা তো বলতে পারব না।ম্যাডাম এইখানে একটা সাইন করুন।”
“ও,,দেন।”

এরপর চিঠিটা হাতে নিলাম।আজব কে পাঠাল আমাকে চিঠি। দেখতেই হচ্ছে।প্রেরকের নাম দেখতে গিয়েও আর দেখা হল না। কারণ সেই মূহুর্তে নিপা কল দিয়ে বসল।
.
.

নিপা- “আপু তুমি এখনো আসছ না কেন?তানু খুব কাঁদছে।ওকে সামলাতে পারছি না।তাড়াতাড়ি বাসায় আস।”

তমা- “এইতো আসছি।ওয়েট কর একটু।”

নিপা- “হুম তাড়াতাড়ি আস।”

চিঠিটা রুমে রেখে এসে তাড়াতাড়ি ফারিদ স্যারের বাসায় চলে গেলাম।
.
.
নিপা- “আপু দেখো কেঁদে কি অবস্থা করেছে?মেয়েটাকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছি না।নাও এবার ওকে কোলে নাও।”

তমা- “দিপা আপু কই।মেয়েকে ফেলে উনি কোথায় গেলেন?”

নিপা- “আপু শাওয়ার নিতে গেল এখন?ওকে কোলে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই ও আপুর কাপড়ে ইয়ে করে বারোটা বাজিয়ে দিছে।পাজি মেয়ে একটা।”

তমা- “যা এইভাবে বলবি না।দেখি বাবু আসো তো আমার কোলে।”

কি কিউট বাবুটা।পৃথিবীর সব বাবুরাই হয়ত এইরকম কিউট হয়।দিপা আপুর ৫ মাসের মেয়ে তানু।ওকে নিয়ে এইখানে আসার পর ওকে সারাদিন কোলে নিয়ে রাখা আমার একটা দায়িত্ব হয়ে পড়েছে।ভালোই লাগে ওকে কোলে নিয়ে হাঁটতে,ওর সাথে গল্প করতে।ওকে দেখলে আমার নিজের বাবুটার কথা খুব মনে পড়ে।ও যদি এই দুনিয়ায় আসত তাহলে ওকেও আমি এইভাবে কোলে নিয়ে হাঁটতাম।

ফারিদ- “তমা কখন আসলে?”

তমা- “এইতো এখন।”

ফারিদ- “তানু তোমার কোলে আসলেই কেমন শান্ত হয়ে যায়। ভালোই চিনে তোমাকে। ”

তমা- “তাইতো মনে হয়।”(লজ্জামুখে)

ফারিদ- “আর তুমি যে তানুকে কত ভালোবাস তা দেখলেই বুঝা যায়।”

তমা- “ছোট বাবুদের খুব ভালো লাগে।ভালো না বেসে পারি কিভাবে?”

ফারিদ- “ইশ আগে বিয়েটা করে ফেললে তুমি এতদিনে আমার ২ বাবুর মা হয়ে যেতে। সমস্যা নাই,চল আজকেই বিয়েটা করে ফেলি।এরপর বছর গড়াতেই তোমাকে আমার বাবুর আম্মু বানাব।”

তমা- “লজ্জায় ইচ্ছে করছে আমি মাটির নিচে ঢুকে যায়।নিপার সামনেই উনি এইসব কি বলছেন।উনার লজ্জাশরম নেই বললেই চলে।কখন কার সামনে কি বলতে হয় এতটুকুও আক্কেলও উনার নেই।”

শাওয়ার শেষ করে দিপা আপু বাইরে আসলেই আমি তাড়াতাড়ি করে আপুর কোলে তানুকে দিয়ে দৌড়ে চলে আসলাম।

ক্লাস নেওয়ার সময় আমার মুখের দিকে উনি হা করে তাকিয়ে থেকে আমাকে লজ্জা দিবে আর বাসায় আসলে এইরকম উল্টাপাল্টা কথা বলে আমাকে আরো লজ্জায় উনি ফেলে দেন।বুড়োর বয়স যত বাড়ছে ততই নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছে।
.
.
কালকের থেকেই প্রচুর বৃষ্টি পড়ছে।বৃষ্টির পানিতে গাছের পাতা থেকে শুরু করে সবকিছু পরিষ্কার আর সতেজ মনে হচ্ছে।এইরকম মেঘলা ঘন বৃষ্টির দিনে প্রকৃতি দেখতেই বেশ ভালোই লাগে।অন্য কোন কাজে আর মন বসে না।গরম কফি নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখাটা আসলেই মনোমুগ্ধকর।

মেঘ- “তমা, এই তমা আমি যাচ্ছি।”

তমা- “যাও”

মেঘ- “কিরে মা,আজকে ভার্সিটি যাবি না।”

তমা- “না মামণি।আজকে বাসায় থাকবো। যেতে ভালো লাগছে না।”

মেঘ- “তোর না আজকে ম্যাথ ক্লাস আছে।তুই না গেলে ফারিদ অনেক রাগ করবে সেটাতো জানিস।”

তমা- “……”

মেঘ- “তমা ফারিদের রাগ সম্পর্কে তোর ভালোভাবে জানা আছে।কেন শুধু শুধু ওর রাগটা উঠাতে চাস তুই?যা তাড়াতাড়ি রেডি হ গিয়ে।”

তমা- “……..”

মেঘ- “তমা, এই তমা আমার কথা কি কানে যাচ্ছে না।আমার কথার উত্তর দিচ্ছিস না কেন?”

তমা- “তোমার কোন কথার উত্তর দিতে আমার ভালো লাগছে না মামণি।মামণি আমি উনার খাইও না পড়িও না।আমার পার্সোনাল বিষয় নিয়ে বাইরের কেউ ইন্টারফেয়ার করোক সেটা আমি মোটেও পছন্দ করি না।আমার যখন ভার্সিটি যেতে ইচ্ছে করবে আমি যাব নাহলে যাব না।ওই ব্যাটার ইচ্ছামত চলতে আমি বাধ্য নয়।”

মেঘ- “ছিহ তমা,ও তোর শিক্ষক হয়।শিক্ষকদের নিয়ে এইভাবে কথা বলতে নেই।ফারিদ যা করে বা করছে তোর ভালোর জন্যই করছে।”

তমা- “আর ভালো ভেবে কি হবে।সব শেষ। আমার আর কোনদিন আর ভালো হবে না।এইরকম নিঃস্ব,আর অসহায়ভাবে সারাজীবন কেটে দিতে হবে।”(মনে মনে)

মেঘ- “তমা, কি ভাবছিস।”

তমা- “কিছু না মামণি।আজকে ভালো লাগছে না।একটা দিন নিজের মত করে কাটাতে চাই প্লিজ।তোমার দেরি হচ্ছে না।”

মেঘ- “ও হ্যারে মা,খেয়াল ছিল না।আমি গেলাম।জোর করছি না তোর উপর।ফারিদ রাগ করবে তাই যেতে বলছিলাম।যেতে ভালো না লাগলে বাসায় থাক।”

তমা- “……”

মেঘ- “সাবধানে থাকিস, আসি”

এর ত্রিশ মিনিট পর বৃষ্টির বেগ আরো বৃদ্ধি পেল।বাইরের রাস্তায় এইসময় এক প্রেমিক প্রেমিকাকে দেখলাম।ছাতা হাতে নিয়ে তারা একে অপরের হাত ধরে গল্প করছে আর একটু পর পর লাজুক দৃষ্টিতে একে অপরকে দেখছে।মনে হচ্ছে কি অফুরন্ত প্রেম একে অপরের জন্য।কিন্তু এদেরকে দেখে আমার মনে হচ্ছে এদের মধ্যে আসলে কোন ভালবাসায় নেই যা দেখা যাচ্ছে শুধু এক মিথ্যা ভালবাসা দেখানো অভিনয় করার নাটক।আর যা দেখা যাচ্ছে না তা আমি দেখতে পারছি।আজকে যে ভালবাসায় তারা নিজেদের মাতিয়ে রেখেছে কালকে সে ভালবাসার জন্য তারা আফসোস করবে।বলবে কেন এত বড় ভুল করলাম তোমাকে ভালবেসে।আগের মতন তোমাকে আর ভালবাসতে ইচ্ছে করে না।তোমার থেকেও হাজারগুণ ভালো লাইফ পার্টনার আমি ডিজার্ভ করি।দিনশেষে এই সামান্য কথায় এতদিনের গড়ে তুলা একটু একটু করে জমে উঠা ভালবাসা এমনেতেই শেষ হয়ে যায়। আসলে দুনিয়াতে ভালবাসা বলতে কিচ্ছু নেই।ভালবাসা মানেই একরাশ কষ্ট, বেদনাকে আকড়ে ধরে জীবনটাকে পাড়ি দেওয়া।

উফ মাথা ব্যথা করছে এইসব কথা ভেবে।ইচ্ছে করছে একটু ঘুমাই গিয়ে।এইরকম দিনে বেটাইমে ঘুমাটানো আসলেই মজার।পুরোটা সকাল ইচ্ছেমতন ঘুমালাম।দুপুরে বাসার টুকিটাকি কাজ করতে করতে বিকেল গড়াল।এখনো অঝড় ধারায় বৃষ্টি পড়ছে।ইচ্ছে করছে এই বৃষ্টির পানিতে গিয়ে ভিজে আসি।হঠাৎ চোখটা গেল কদম গাছটার দিকে।এমন দিনে কদম গাছের ফুলগুলো কি পরিমাণ সুন্দর লাগে।গাছটার দিকে তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছে করে।

একটু পরেই আমার সেদিনের চিঠিটার কথা মনে হল।চিঠিটা তো পড়েই দেখলাম না।তাড়াতাড়ি করে বইয়ের পৃষ্ঠায় লুকানো চিঠিটা বের করে পড়তে লাগলাম।

প্রিয় তিলোত্তমা,,
কেমন আছ?আশা করি তুমি তোমার ফারিদ স্যারকে নিয়ে বেশ ভালোই আছ।আর কিছুদিনের মধ্যেই তোমরা বিয়ে করতে যাচ্ছ খবরটা জেনে খুব খুশি হলাম।ফারিদ স্যার তোমাকে অনেক সুখে রাখবে।তিলোত্তমা জানো তুমি সুখে থাকলেও আমি সুখে নেই।তোমার চোখের সেই ঘৃণা আজও আমার চোখে ভাসে।শান্তিতে ঠিকভাবে ঘুমাতে পারি না আজ কতটা বছর।আমার একটা ভুলের কারণে তোমার লাইফটা শেষ হয়ে গেছে আর তার সাথে আমি তোমাকে ভালোবাসার অধিকারটা হারিয়ে ফেলেছি।সত্যি বলতে শুধু ভালোবাসলেই হয় না ভালোবাসার মানুষটাকে শক্ত করে আগলে ধরে রাখতে হয়।বিপদের দিনেও তার হাত ছাড়তে হয় না।কিন্তু আমি সেটা পারিনি।বিপদের দিনে তোমার হাতটা ছেড়ে দিয়েছি শুধু নিজেকে বাঁচানোর জন্য।কিন্তু ওই ঘটনার পর আমি ডিপ্রেশনে চলে যায়। এরপর মা আমার এই অবস্থা দেখে সুমার সাথে আমার বিয়েটা করে দেয়।মা ভেবেছিল হয়ত আমি এবার আগের মতন হয়ে যাব।কিন্তু জানো সুমা মেয়েটা আমাকে বড্ড ভালোবাসে।অথচ আমি কারোর ভালোবাসায় ডিজার্ভ করি না।ভয় হয় তোমার সাথে যা হয়েছে সেই একি ঘটনা যদি আমার কারণে ওর সাথে হয় তাহলে আমি আর বাঁচতে পারব না।তাই আস্তে আস্তে সব কিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলাম।বিয়ের বাড়িতে তোমাকে দেখে খুব খুশি হয়েছিলাম।ভেবেছিলাম তোমার কাছে মাফ চাইলে তুমি আমাকে মাফ করে দিবে।কিন্তু তুমি আমাকে মাফ কর নি।হয়ত কোনদিনও তা পারবে না।আমার মতন পাপীকে আসলে মন থেকে মাফ করা যায় না তাই সেদিন হয়ত আমাকে তুমি ফিরিয়ে দিয়েছিলে।এরপর রাজশাহীতে আসার পর আমার অবস্থা আরো খারাপ হতে থাকে।তিলোত্তমা আর পারছিলাম না নিজেকে সামলাতে।তাই নিজেকে নিজে শেষ করে দিলাম।জানি ওইপারেও আমার জন্য শান্তিতে থাকা কষ্টকর হবে।কিন্তু কি করব বল খুব কষ্ট হচ্ছিল আমার।তাই শেষ পর্যন্ত আমাকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হল।পারলে এই পাপীকে মাফ করে দিও।

ইতি
তোমার কষ্টের পাপীদার
.
.
তানভীর এটা তুমি কি করলে?কেন করতে গেল এই পাপ কাজ।আল্লাহ…..বলে চিৎকার করে উঠলাম।ওকে আমি মাফ করতে পারি নি এটা সত্য কথা কিন্তু তাই বলে ও এইরকম পাপ কাজ করবে।ও আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা।আর ভালোবাসার মানুষ এইরকম কাজ করলে কি করে নিজেকে ঠিক রাখব।কেন আমি সেইদিন ওকে মাফ করে দিলাম না। ওইদিন যদি ওকে ফিরিয়ে না দিতাম তাহলে হয়ত আজ ও জীবিত থাকত।চিৎকার করে কাঁদতে থাকলাম।কি হয়ে গেল এইসব!
.
.
ছাদে এসে দুইহাত মিলে বৃষ্টির পানিতে ভিজতে থাকলাম।এমন বৃষ্টির দিনে তানভীর আমাকে প্রপোজ করেছিল।সেদিনটা খুব স্পষ্টভাবে আমার চোখে এখন ভেসে উঠছে।

তমা- “কি ব্যাপার আমাকে এইখানে নিয়ে এলে কেন?”

তানভীর – “আসলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিল।”

তমা- “তাহলে বলে ফেল এই বলে খোলা বিশাল মাঠটার দিকে একবার চোখ বুলালাম।”

তানভীর – “…….”

তমা-” কি ব্যাপার অনেক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি।তখন থেকেই শুনে আসছি কিছু বলবে।কি বলবে তাড়াতাড়ি বলে ফেল।আকাশটা মেঘলা লাগছে।মনে হয় এখনি বৃষ্টি নামবে।

তানভীর – “তমা, নার্ভাস লাগছে।”

তমা- “আমার সামনে কথা বলতে তোমার নার্ভাস লাগছে।আমি কি বাঘ নাকি ভাল্লুক।আজব।হেয়ালি না করে যা বলতে চাও বলে ফেল।”

তানভীর-“আসলে,আমি..আমি,আসলে..আসলে,আমি..

তমা -” মাথা ফাটিয়ে দিবো একেবারে।কথা আটকিয়ে যাচ্ছে কেন?এই যা বলতে না বলতে বৃষ্টি নেমে গেল।এখন বাসায় যাব কি করে

স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_১৬

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_১৬
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

“তার মানে আমার সাথে আপনার সম্পর্ক যাতে শেষ না হয় সেজন্যই আমার অতীত শুনতে চাচ্ছেন না।আপনি তা এড়িয়ে যেতে চাচ্ছেন?”

তমার দুই গাল টান দিয়ে ফারিদ বলল,,
“এই পিচ্চি আমি তা বলছি নাকি?তুমি যা ভাবছ আসলে তা নয়।তুমি ৩০ মিনিট ধরে বসে আছ সাথে আমাকেও বসিয়ে রাখছ তোমার অতীতের কাহিনী আমাকে শুনাবে বলে।কিন্তু তুমি নিজেই কিছু বলতে পারছ না।আর কেন পারছ না সেটা আমি ভালো করেই বুঝতে পারছি।এতটুকু আমি বুঝতে না পারলে কি আর বুঝলাম তোমাকে”

অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।কি বুঝতে পেরেছেন উনি।আজব!

“তুমি আসলে এখন আনইজি ফিল করছ কথাটা বলতে।বিবেক বলছে কথাটা বলতে কিন্তু মন সায় দিচ্ছে না এখন।তাই এইরকম পরিস্থিতিতে তোমাকে এইসব কথা বলতে আমি জোর করছি না।তোমার অতীতের সব ঘটনা আমি শুনব তবে এখন না আমাদের বিয়ের বাসর রাতে।তখন না হয় পুরোটা রাত তোমার কথা শুনে পাড় করব আর তোমার খারাপ অতীতকে সেদিন মুছে দিয়ে একটা নতুন সকালের সূচনা করব যেখানে তোমার খারাপ অতীতের কোন চিহ্ন থাকবে না।নইতবা যখন এই কষ্টের অতীত নিজের মধ্যে চেপে রাখতে তোমার খুব কষ্ট হবে তখন আমার কাধে মাথা রেখে সেই কষ্টের অতীতের কথাগুলো বলিও।সেইদিন আমিও তোমার কষ্টের ভাগীদার হবে।আমি সেদিনটার অপেক্ষায় থাকব।

আর আরেকটা তোমার মন যা বলবে তাই করিও। ইচ্ছা হলে বলিও নাহলে তা গোপন রেখে দিও।দুইটা করার অধিকার তোমার আছে।তবে তা এখন নয়।বিয়ের পরের দিনগুলোর জন্য জমা রাখিও।”
“………”

“আর এই এংগেজমেন্ট আংটিটা খুলে হাতে রাখছ কেন?মাইর দিব একটা।দাও আংটিটা দাও।এখনি পড়িয়ে দিই।”

অবাকের রেশ কিছুতেই কমছে না।উনি কি সত্যিই এত ভালো নাকি আমার সামনে ভালো হওয়ার অভিনয় করছেন। না, না উনাকে বিশ্বাস করা যাবে না।এত মিষ্টি মিষ্টি কথায় আমি গলব না।সব অভিনয়।সব পুরুষইই এক।হয়ত উনার কোন স্বার্থ লুকিয়ে আছে তাই আমাকে বিয়ে করার জন্য এত মিথ্যা কথা বলছেন।বুঝি বুঝি সব বুঝি।ফারিদ স্যার আপনার চালাকি আমি বুঝি না মনে করছেন।এই বিয়ে তো আমি হতেই দিব না।আপনি কি করতে পারেন সেটা আমিও দেখব।

“মনে মনে কি এত ভাবো। তমা তোমাকে আমি এতটা বছর ধরে চিনি। নিশ্চয় বিয়ে না করার সিদ্ধান্তে তুমি এখনো অটল আছ ।তা আমি ভালো করেই জানি।আর তুমি আমাকেও ভালো করে জানো ফারিদ যা বলে তাই করে।তোমাকে বিয়ে করে আমার ঘরের বউ বানাবো সেটাই ফাইনাল।

তমার একেবারে কানের কাছে এসে,,, যদি সোজা কথায় ঘি না উঠে তাহলে আঙ্গুলটা বাঁকিয়ে নিব।”

চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি,,

“সোনা,,এইভাবে তাকিও না।নাহলে নিজেকে সামলাতে পারি না।একটা কথাতো শুনেছ Everything is fair Love and War.”

এইরকম পরিস্থিতিতেও কেউ কাউকে ভয় দেখাতে পারে।আল্লাহ এর সাথে বিয়ে হলে আমার পুরো লাইফটা শেষ হয়ে যাবে।
.
.
বাসায় এসে ওয়ারড্রবের সব কাপড় নামিয়ে সেগুলো এলোমেলো করলাম।ঘরের সবকিছু এলোমেলো করে রাগটা কমালাম।আহ এবার শান্তি।এবার শান্তিমনে আবার এলোমেলো জিনিসগুলো গুছালাম।রাগ উঠলেই আমি এই কাজটা সবসময় করি।

“মামণি একটা কথা ছিল।”
“হুম বল?”
“আমি বিয়েতে রাজি আছি।তবে আমার একটা শর্ত আছে।”
“বিয়ে করবি আবার এতে শর্ত কিসের?”
“মামণি…..শর্ত মানবে কিনা বল?”
“আচ্ছা আচ্ছা বল কি শর্ত?”
“আমি বিয়েটা ২ বছর পর করব।এখন না।আমার এখন সময় দরকার। তুমি ওদেরকে এই কথা বলে দিও।”
“এত দেরিতে!তমা আমার শরীরটা বেশি ভালো যাচ্ছে না সেটাতো তুই নিজ চোখে দেখতে পাচ্ছিস।এখন তোকে বিয়েটা দিতে পারলেই খুব শান্তি লাগত।তাই আমি চাচ্ছিলাম তোর বিয়েটা তাড়াতাড়ি দিয়ে দিই।”
“……..”

মামণির মুখের উপর আর কিছু বলতে পারলাম না।মুডটাই খারাপ হয়ে গেল।ফারিদ স্যারকে মেসেজ দিয়ে বললাম,, ছাদে আসার জন্য।
.
.
“কি ব্যাপার হঠাৎ করে আমাকে ছাদে আসতে বললে যে?”
“কথা ছিল।”
“তাই!”
“কাছে আসো এত দূরে দাঁড়িয়ে কথা বললে আমার আনইজি লাগে।”

“উফ….লুচু একটা (মনে মনে)।
স্যার,,এতটুকু দূরত্বই ঠিক আছে।আরো বেশি কাছে আসার দরকার নাই।”

তমার কাছে এসে,, “কিন্তু আমার কাছে ঠিক নেই যে। তমার হাত ধরে টেনে একেবারে আমার কাছে এনে বললাম,,হুম এখন ঠিক আছে।আসলে কথা বলার সময় কারোর চেহেরা ঠিকভাবে না দেখতে পেলে আমার কাছে মনে হয় সে আমাকে ইগনোর করছে।এই তুমি আমাকে ইগনোর করতে চাইছ নাকি?”
“না,,না তেমন কিছু না।আপনাকে ইগনোর করব কেন?দেখেন আপনার কাছে এসে কথা বলছি।”(ভয় পেয়ে)
“হুম ঠিক আছে।”
“আসলে আপনাকে একটা কথা বলার জন্য এইখানে আমি ডেকেছি।প্লিজ কথাটা শুনে আপনি রেগে যাবেন না।আমার দিকটাও বুঝার চেষ্টা করবেন।”
“হুম বল,,”
“আসলে আমি চাচ্ছি আমাদের বিয়েটা ২ বছর পর হোক।”
“কিহ!হঠাৎ এই ডিসিশন।”
“দেখুন রাগবেন না।বিয়ে আপনাকেই করব।কিন্তু সেটা ২ বছর পর।আসলে হঠাৎ করে বিয়ের কথাটা শুনে আমি তা মন থেকে নিতে পারছি না।আমার কিছুটা সময় দরকার।”
“সময় নাও।তাতে আমার সমস্যা নাই।কিন্তু তাই বলে ২বছর!এই ২ টা বছর আমার পক্ষে অপেক্ষা করা সম্ভব না।”

এবার কেন জানি আমার খুব কান্না পাচ্ছে।সবাই যার যার স্বার্থে আমাকে শুধু ব্যবহার করছে।আমারো যে একটা মন আছে মন থেকে যে আমি এই বিয়েটা মেনে নিতে পারছি না সেই খবর কেউ নিতে চাই না।মেয়ে হয়ে জন্ম নেওয়া যে কত বড় অপরাধ তা আমি একের পর এক ধাক্কা আর কষ্ট পেয়ে বুঝেছি।
.
.
কিছুক্ষণ পর,,,,

“এই তমা,,তুমি কাদঁছ?”
“তাতে আপনার কি?আমার চোখ আমি যখন খুশি তখন কাঁদব।”
“প্লিজ কেঁদ না।দেখ বিয়েটা তাড়াতাড়ি করে ফেললে সেটা তোমার, আমার আমাদের দুইজনের জন্য ভালো হবে।”

উনি হাত দিয়ে আমার চোখের পানি মুছতে গেলে আমি হাতটা সরিয়ে দিই।এরকম কয়েকবার উনার হাতটা সরিয়ে দিতেই উনি রেগে যায়।

“এই মেয়ে সমস্যাটা কি?বারবার আমার হাত সরাচ্ছ কেন?আরেকবার আমার হাত সরালেই তোমার খবর আছে।”
“আর কিছু করলাম না।উনি আমার চোখের পানি মুছে দিয়েই নরম স্বরে বললেন,,আচ্ছা ২টা বছর কি খুব বেশি হয়ে যাচ্ছে না।আরেকটু কম সময় নেওয়া যায় না।”

চুপ করে থাকলাম। আর কি কথা বলব পাগলের সাথে।জানতাম এত সময় উনি আমাকে দিবেন না।

“আচ্ছা যাও ২বছর পরেই না হয় আমাদের বিয়েটা হল।তবে আমার একটা শর্ত মানতে হবে।”

এর ওর শর্তের কথা শুনতে শুনতে কানটা ঝালাপালা হয়ে গেল।তারপরও নিজেকে কন্ট্রোল করে বললাম,,”হুম বলেন কি শর্ত মানতে হবে?”

“ওইদিন তোমার হাতে ব্লেড দেখেই আমার আত্মাটা কেঁপে উঠেছিল।নিজের ক্ষতি করতে যাচ্ছিলে সেটা ভালো করে জানতাম।এইজন্য বিয়েটা তাড়াতাড়ি করে তোমাকে আমার কাছে রেখে দিতে চেয়েছিলাম।ভার্সিটি ক্লাসে তুমি আমার চোখের সামনে থাকলেও বাকিসময় তুমি আমার চোখের আড়ালে থাকবে।যেহেতু এই ২টা বছরে ভার্সিটির ক্লাসের পর বাকি সময়টা তুমি আমার চোখের আড়ালে থাকবে সেহেতু সে সময় তুমি কিছু একটা অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পার।”
“…….”
“বুঝতেই পারছ কি বলতে চাচ্ছি।তুমি এই ২ বছরে ভুলেও নিজের ক্ষতি করতে পারবে না।আর যদি করে ফেলও তাহলে দেখবে এই ফারিদের আসল চেহেরা।তোমাকে বাঁচিয়ে তারপর কোন কথা ছাড়াই ডাইরেক্ট বিয়ে করে ফেলব।”

“সরি।জানি না সেদিন কি হয়েছিল তাই এইরকম বাজে কাজটা করতে গিয়েছিলাম।দ্বিতীয়বার আর এই কাজটা করব না।”

“হুম বুঝলাম।কিন্তু তোমার মুখের কথায় আমি বিশ্বাস করি না।”
“কি করলে বিশ্বাস করবেন?”
“আমার দুইগালে দুইটা কিসি দাও। তাহলেই তোমার কথা বিশ্বাস করব।”
“জীবনেও আমি এই কাজ করব না।ব্ল্যাকমেইল না।”
“তাহলে যাও কালকেই বিয়েটা করে ফেলব।আর এর ২ বছর পর তোমাকে আমার দুই সন্তানের মা বানাব।এই আমি কিন্তু অলরেডি আমাদের মেয়ে বাবুদের নামও ঠিক করে ফেলছি।একজনের নাম হবে ফারিয়া আরেকজনের নাম…..”
“এই স্টপ স্টপ…… বলে হাত দিয়ে উনার মুখটা বন্ধ করে দিলাম।আর কিছু বলার দরকার নেই।যা বুঝার আমি বুঝে গেছি।”
“তাই!”
“হ্যা।চোখ অফ করেন।”
“কেন?”
“উফ চোখ অফ করতে বলছি।”
“আচ্ছা।”

উনার দুই গালে দুইটা হামি দিয়ে তাড়াতাড়ি ছাদ থেকে নেম আসলাম।
.
.
পাগলি তুই কিসের জন্য বিয়েটা করতে চাচ্ছিস না তা কিছুটা প্রায় ৫০% আমি আঁচ করতে পেরেছি বাকি ৫০% রহস্য আমার অজানা।তোর কষ্টের কথা শুনে হয়ত নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারব না কারণ আমার অনুপস্থিতে না জানি কত কষ্ট তুই সয়েছিস।ওই সময় হয়ত তুই খুব করে চাইতি তোর পাশে তোর আপন কেউ থাকুক।কিন্তু সেটা আমি পারিনি।তোকে একা রাজশাহীতে পাঠিয়ে আমরা অনেক বড় ভুল করেছি যার মাশুল তুই পাচ্ছিস।লক্ষ্মীটি এরপর থেকে আর কখনো আমি তোকে একা ছাড়ব না।তোর আশেপাশে সবসময় থাকব।আর তুইও নেগেটিভ টাইপের মানুষদের সাথে থাকতে থাকতে এই ভেবে নিয়েছিস তোর খারাপ অতীতের কথা শুনে আমি তোকে কষ্ট দিব তোকে অপমান করব।আর এই জিনিসটাই আমাকে সবচেয়ে বেশী কষ্ট দিয়েছে।এখনো আমাকে বুঝতে পারলি না।তোকে খুব ভালোবাসি তাই কারণে অকারণে তোর উপর রাগ করা,জোর করা,তোকে শাসন করা, তোর ভালোর জন্য সবকিছু করার অধিকার আমার কাছে।এই অধিকার আমি নিজে তৈরী করে নিয়েছি।আর তুই আমার রাগি ব্যবহার দেখে সবসময় এটাই ভেবে নিয়েছিস তোর অতীত শুনে আমি তোর উপর এবারও রাগ দেখাব,তোকে অনেক বাজেবাজে কথা শুনাব।

তমা আমার কাছে মনের পবিত্রতাটা আসল।আল্লাহ মানুষদের ভালোবাসার জন্য একটা মন দিয়েছেন যেটা বাকি প্রাণীদের দেয় নি।মনের পবিত্রতা থেকে আল্লাহর কাছে দুআ করে কিছু চাইলে উনি সাথেসাথে তা কবুল করেন।মনের পবিত্রতার এতটাই জোর, এতটাই খাঁটি আল্লাহর কাছে।এতেই বুঝা যায় মনের পবিত্রতার কাছে শরীরের পবিত্রতার কোন মূল্য নেই।আর তোমার মনটাও ঠিক ততটাই পবিত্র।যার কাছে অন্য কোন কিছুরই তুলনা নেই।তাই বাকি পুরুষদের মতন আমি তোমার খারাপ অতীতের কথা শুনে কখনো তোমার শরীরের পবিত্রতা খুঁজব না।এতটুকু ভরসা তোমার হবু স্বামীর উপর রাখতে পার।চোখের কোণা থেকে নেমে আসা পানিগুলো মুছে ফারিদ কথাগুলো মনে মনে বলল।

আর বিয়ের পর তোমাকে মানুষ করব যাতে এই আজেবাজে খেয়ালগুলো আর কখনো তোমার মাথায় না আসে।
.
.

বিয়ে হয় নাই উনি এখনিই আমাকে ব্রিবত অবস্থায় ফেলানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন আর বিয়ে হয়ে গেলে তো….আল্লাহ আমাকে বাঁচাও।

লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে উনাকে এরপর মেসেজ লিখে পাঠালাম,,২ বছর পর যে আমরা বিয়ে করব সেটা যাতে উনি আমার মামণিকে বলে দেন।

বাছাধন ২ বছর যথেষ্ট সময়।এরমধ্যে কিছু একটা করে বিয়েটা বন্ধ করে দিতে পারব। আর সবচেয়ে বড় কথা কাউকে বিয়ে করার জন্য আমি ডির্জাভ করি না।কারোর দয়া নিয়ে বেঁচে থাকাটা আমার জন্য কষ্টকর।

স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_১৫

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_১৫
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

পরেরদিন তমাদের বাসায় গেলাম।আন্টি আগে থেকেই জানত যে তমাকে আমি অনেক আগে থেকে ভালোবাসি।তাই আন্টিকে বিয়ের প্রপোজালটা দিলেই উনি আর অমত করেন নি।

ফারিদের মা – “ভাবী আমরা আজকেই এংগেজমেন্টের কাজটা সেরে ফেলতে চাইছি।যদি আপনার কোন আপত্তি না থাকে।”

মেঘ- “না না,, আপত্তি কিসের থাকবে?আমিও চাইছি তমার বিয়েটা তাড়াতাড়ি দিয়ে ফেলতে।আমার শরীরটাও বেশি ভালো যাচ্ছে না।আপনাদের মতন ভালো ফ্যামিলির ঘরে মেয়েকে বিয়ে দিতে পারলে মরেও শান্তি পাব।”

ফারিদ- “আন্টি এইটা কোন ধরণের কথা হল?আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি।”

মেঘ- “মৃত্যুর কথাতো কেউ বলতে পারে না।সত্য কথাতো মেনে নিতেই হবে।তবে মনের মধ্যে একটা খুশি কাজ করছে আমার মেয়েটাকে সুখে রাখার মতন কেউ আছে।একসাথে সে ভালো একটা পরিবার আর ভালো জীবনসঙ্গী পাবে।”

ফারিদ- “আন্টি আমি তমাকে সর্বোচ্চ সুখের রাখার চেষ্টা করব সেটা নিয়ে তুমি নির্ভাবনায় থাকতে পার।কিন্তু প্লিজ মরে যাব মরে যাব এই কথাটা বলবে না।খারাপ লাগে খুব।”

মেঘ- “আচ্ছা বাবা,,আর বলব না।আমি তমার সাথে কথা বলে ওকে নিয়ে আসছি।”
.
.
মামণির কাছে আমার বিয়ের কথা শুনে মাথাটা খারাপ হয়ে গেল।বিয়েটাই কি জীবনের সব কিছু নাকি?তাও আবার বিয়ের প্রপোজাল নিয়ে আসছে ফারিদ স্যার।এত ভালো মানুষকে আমি ঠকাতে পারব না।বিয়েটা বন্ধ করতে হবে।

তমা- “মামণি আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য এত উঠেপড়ে লাগলে কেন?আমি আর তুমি মিলে কত্ত হ্যাপী লাইফ কাটাচ্ছি সেটাই তো অনেক।আমাকে বিয়ে দিয়ে কি তুমি তোমার লাইফ থেকে আমাকে সরাতে চাইছ?”

মেঘ- “তমা এটা কেমন কথা হল?”

তমা- “তাহলে এইসব কি করছ?”

মেঘ- “কি করছি তুই কি তা বুঝতে পারছিস না।তোকে আমি সবসময় সুখী দেখতে চাই।তুই একটা পারফেক্ট ফ্যামিলি ,একটা ভালো হাসবেন্ড পা,একটা সুখের লাইফ কাটা আমি সেটা চাই।আর ফারিদের সাথে তোর বিয়ে হলে তুই তার সব পাবি।”

তমা- “তুমিও তো বিয়ে করেছ।কিন্তু কখনো কি সুখী হতে পেরেছ।মামণি বিয়ে করলেই যে মানুষ সুখী হবে তার গ্যারান্টি কেউ দিতে পারেনা।আর ফারিদ স্যারকে তোমার এখন ভালো লাগতেও পারে কিন্তু কয়েকদিন পর যদি দেখ তার ভালো মুখোশের আরেকটা খারাপ মুখোশ আছে তখন কি করবে?”

মেঘ- “……..”

তমা- “জানি কিছুই করতে পারবে না তখন।তাই শুধু শুধু আমাকে বিয়ে দিয়ে ঝামেলা বাড়ানোর দরকার নেই।আমরা যেমন আছি তেমন ভাবে লাইফটা কাটিয়ে দিই।”

মেঘ- “এত কথা শুনতে চাই না আমি।যা করছি তোর ভালোর জন্যই করছি।ফারিদ বর্তমানে তোমাকে সুখে রাখবে আর ভবিষ্যতেও।এই বিশ্বাসটা আমার ছেলের উপর আছে।তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে আসো।”

এত্ত রাগ উঠছিল বলার মতন না।যে করেই হোক এংগেজমেন্টটা বন্ধ করতেই হবে।উনার সাথে কথা বলতে হবে।

রেডি হয়ে নিচে গেলাম।
স্যার আমার হাতে আন্টি পড়ানোর আগেই উনাকে বললাম,,

“আপনার সাথে কিছু কথা ছিল।”
“হুম বল।”
“এইখানে!”
“তো কি হয়েছে।এখানে বলতে পার সমস্যা নাই।”
“মাথায় চিট আছে ব্যাটার।(মনে মনে)।এখানে না আমার রুমে আসুন”
“আচ্ছা আসছি।”
.
.
“হুম বল।কি বলার জন্য এইখানে নিয়ে আসছ?”
“আপনাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না।”
“কেন?”
“এত কেন এর উত্তর আমি দেব না।বিয়ে করব না আমি। শুধু এতটুকুই জেনে নিন।”
“কোন কারণ ছাড়াতো আমি শুধু শুধু বিয়ে বন্ধ করব না।যদি বিয়ের ভাঙ্গার কারণ আমার গায়ের রং হয় তাহলে তোমাকে একটা কথা বলে রাখি গায়ের রং দিয়ে আর যাই হোক ভালোবাসা আর সংসারটা হয় না।গায়ের রংয়ের সৌন্দর্য আজ আছে কাল নেই।তাহলে কাল যদি আমার গায়ের রংয়ের সৌন্দর্য না থাকে তাহলে তুমি আরেকজনকে ধরবে।এটাই স্বাভাবিক।যেখানে গায়ের রংয়ের সৌন্দর্য মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায় সেখানে ভালোবাসাটা থাকে না থাকে শুধু লালসা ।”
“দেখুন গায়ের রং আমার কাছে কোন মূল্য রাখে না।আর যাই হোক এই চিপ কারণটা আমি আপনাকে দেখাব না।আপনার আসল সৌন্দর্য গায়ের রঙে না বরং আপনার গুণ,বিবেক,আর বুদ্ধিমত্তায় নিমজ্জিত। অন্য কারণে বিয়েটা ভাঙ্গতে চাচ্ছি।”
“আচ্ছা। কারণটা বল।”
“আমি একটা ছেলেকে ভালোবাসি।”

এবার ফারিদ স্যার হো হো হো করে জোরে হেসে উঠল।

“তুমি একটা ছেলেকে ভালোবাস আর এটা আমাকে বিশ্বাস করতে বলছ।যে মেয়ে অন্য ছেলের দিকে এমনকি আমার দিকেও ঠিকভাবে তাকায় না সে কিনা অন্য আরেকজনকে ভালোবাসে।হাসালে বুঝেল বড্ড হাসালে আমাকে।”

“কি আপনার কি মনে হয় আমি আপনারর সাথে মজা করছি?”(রেগে)
“আচ্ছা আচ্ছা সরি সরি।এত রাগ করতে হবে না।যাও কয়েক মিনিটের জন্য আমি মেনেও নিলাম তুমি অন্য কাউকে ভালোবাস।কিন্তু তারপরওও আমি বিয়ে ভাঙ্গব না।”
“কেন?”
“কারণ এরকম একটা বাজে অযুহাতে আমি বিয়ে ভাঙ্গব সেটা তুমি কি করে ভাবলে।আর যদিউ কাউকে তুমি ভালোবাস সেটা হচ্ছে জাস্ট এট্রাকশন।আর অন্য কিছু না।তাছাড়া আমি ভালো করেই জানি তোমার মনে কেউ নেই।আর থাকলেও তাকে নিয়ে ভাবা এখন থেকেই বাদ দিয়ে দাও।কারণ এখন থেকে আমিই তোমার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ।”
“………”
“নিচে চল।নাহলে সবাই খারাপ কিছু ভেবে নিবে।”
“…….”

উনাকে কি বলব কিছুই বুঝতে পারলাম না।উনার এমন কথা শুনে কিছু বলার ভাষাও পাচ্ছিলাম না। শেষ পর্যন্ত এংগেজমেন্টটা হয়েই গেল।কিছুতেই আমি তা আটকাতে পারলাম না।না এইভাবে হবে না।উনাকে সত্য কথাটা বলেই দিতে হবে।আর উপায় নেই।হয়ত এতে আমার আত্নসম্মানটা চলে যাবে,যাক চলে তাও ভালো। কিন্তু কাউকে আমি ঠকাতে পারব না।
.
.
রাতে,,,
“হ্যালো,,”
“হুম বল।আমাকে মিস করছিলে বুঝি?”
“তেমন কিছু না।আপনার সাথে জরুরি কথা ছিল।”
“হুম বল”
“আপনি জানতে চাইছিলেন না আমি কেন বিয়েটা করতে চাইছি না।কালকে এর উত্তর দিব আমি।দেখা করতে পারবেন আমার সাথে।”
“তমা এবার এই ফাজলামি বন্ধ কর।তুমি কি বিয়ে বন্ধ করার জন্য একেবারে উঠেপড়ে লেগেছ।আর বিয়ে বন্ধের জন্য আমাকে আর মিথ্যা কথা শুনানোর দরকার নেই।”
“মিথ্যা কথা নয়,,আপনাকে আমি সত্য কথা বলব।হয়ত এই সত্য কথা শুনার পর আমাকে বিয়ে করার শখ আপনার চিরতরে মুছে যাবে।”
“তাই নাকি!তাহলে তো শুনতেই হচ্ছে তোমার সেই সত্য কথা যার জন্য আমি তোমাকে বিয়ে করব না।আচ্ছা দেখি তাহলে কালকে কি হয়।আমি রেডি তোমার কথা শুনার জন্য।কোথায় আসতে হবে।”
“নদীর পাড়ে।”
“আচ্ছা।সেখানেই কালকে কথা হবে।ঘুমিয়ে যাও পাখিটা।শুভ রাত্রি বউ।”
“হুম।”

কল কাটার পর,, আরে উনি আমাকে কি বললেন পাখি,বউ…।ধূরর……।
.
.
এরপরের দিন দুইজনে নদীর পাড়ে গেলাম,,
প্রায় ৩০ মিনিট পর,,
“কিছু বল,,”
“…….”
“যার কথা শুনার জন্য এখানে এলাম সেতো কিছুই বলছে না।৩০ মিনিট ধরে এক কথাতেই আটকে আছ যে তুমি কিছু বলতে চাও।আমিও তোমার কথা শুনতে চাই। তাই ভয় না পেয়ে সাহস করে
বলে ফেল।”
“আমার একটা খারাপ অতীত আছে।”
“হুম।তারপর।”
“এই অতীতের কথা শুনার পর আপনার আর আমাকে বিয়ে করতে ইচ্ছা হবে না।হয়ত এই কথা শুনার পর আপনার মনে আমার জন্য শুধু ঘৃণা জন্মাবে।”
“তাহলে আর সেই অতীতের কথা আমার শুনার দরকার নেই।”
“আছে।কারণ আমি আপনাকে ঠকাতে পারব না।”
“দেখ তোমার অতীত যেমনি হোক না কেন আমার তাতে কিছু যায় আসে না।আমার সিদ্ধান্ত বদলাবে না।তোমাকেই আমি বিয়ে করব।”

ব্যাঙ্গাত্মক ভাবে হেসে,,,”এইরকম কথা প্রায় ছেলেরাই বলে।একজন স্ত্রী সরল মনে যখন তার স্বামীকে তার খারাপ অতীতের কথা বলে তখন কিছু কিছু স্বামী বলে, “তোমার খারাপ অতীতে আমার কিছু যায় না।অতীতের সবকিছু ভুলে চল আমরা একটা নতুন জীবন শুরু করি “এইরকম সহানুভূতিমূলক কথা বলে তারা একটা মেয়ের মন জয় করে নেয়।হয়ত নিজের লালসাটা মিটানোর জন্য এইরকম উদারমূলক বাণী স্ত্রীকে শোনায়।কিন্তু অনেক মেয়েই হয়ত জানে না একটা ছেলের মুখের কথা,ওর মন ক্ষণে ক্ষণে বদলায়।নিজের চাহিদা পূরণ হওয়ার পর সেই মেয়েটা পুরাতন হয়ে গেলে তাকে আর কোন ছেলেরেই ভালো লাগবে না।হয়ত তখন তার চোখ অন্য কাউকে খুঁজতে পাগল থাকবে।নিজের চাহিদা মেটানোর জন্য হয়ত পেয়েও যাবে কাউকে।পুরাতন স্ত্রীকে ভালো না লাগার কারণে স্বামী ইচ্ছা করেই ঝগড়া শুরু করবে,,ছোট খাটো ভুলে তার স্ত্রীকে প্রায় খোটা দিবে আর সবশেষে তার স্ত্রীর অতীতটা টেনে তাকে দিনরাত কথা শুনাবে।হয়ত তখন সে ভুলে যায় একদিন সেই তার স্ত্রীর হাত ধরে বলেছিল তার খারাপ অতীত ভুলে যেতে। মেয়েটা তার স্বামীর সাথে নতুনভাবে বাঁচতে চাওয়ার জন্য যখন তার অতীত প্রায় ভুলতে বসল ঠিক তখনি সে তার স্ত্রীকে সেই খারাপ অতীত মনে করিয়ে দিয়ে তার কষ্টটাকে আরো দ্বিগুণ করে দেয়।

তো আপনার কি মনে হয় কোন ছেলেকে বিশ্বাস করে একটা মেয়ে তার খারাপ অতীতের কথা বললে সে তা মেনে নিবে।আর মেনে নিলেও সে যে তা নিয়ে পরবর্তীতে খোটা দিবে না তার কি গ্যারান্টি? আর আমি জেনে শুনে এই ভুল পথে পা ফেলব।কখনো না।কাউকে খারাপ অতীতের কথা জানানোই মানে সেখানে একটা সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়া।তাই আমার কথা শুনার পর আমার সাথে আপনার যে ভালো সম্পর্কটা ছিল সেটা আজকের পর থেকে শেষ হয়ে যাবে।আর আমাকে বিয়ে করার শখটাও আপনার পূরণ হয়ে যাবে।”

“পিচ্চি তমা তো দেখি অনেক বড় হয়ে গেছে।এখন তার মুখে শুধু বাস্তবতার কথা শুনতে পাচ্ছি।শোন মেয়ে,,,এইটা ঠিক যে একটা খারাপ অতীত একটা ভালো সম্পর্ক নষ্ট করে দিতেই যথেষ্ট।।তাই আমার থেকে তোমার কোন খারাপ অতীতের কথা জানার ইচ্ছে নেই।তাছাড়া বোকা মেয়েরাই অতীত নিয়ে ভাবে, কষ্ট পায় আর বোকা, খারাপ আর বিকৃত মন মানসিকতার পুরুষরাই পারে একটা মেয়ের খারাপ অতীত নিয়ে খোটা দিতে।অতীত নিয়ে ভাবার বা আমার স্ত্রীর অতীতে কি হয়েছে তা নিয়ে চিন্তা করার সময় আমার নেই।আমি বর্তমান আর ভবিষ্যতে বিশ্বাসী।

হয়ত তুমি ঠিকি বলছ আমাদের পুরুষ মানুষের মুখের কথা,মন ক্ষণে ক্ষণে বদলায়।তাই যদি তোমার মনে হয় কোন ছেলেকে তোমার অতীতের কথা বললেই একটা সম্পর্ক শেষ হয়ে যেতে পারে তখন সেই গোপন কথা কাউকে না জানানোই ভালো। সেটা নিজের কাছে চেপে রাখা উচিত।তবে একটা কথা তমা,, বাকি পুরুষদের কথা আমি জানি না আমি শুধু এটাই জানি তোমার অতীতে যা কিছু হয়েছিল তা আমার জানার দরকার নেই।কেন জানো? কারণ হয়ত তোমার সে অতীতে আমি ছিলাম না।যদি সে অতীতে আমি থাকতাম তাহলে তোমার সাথে আমি কোনদিনও খারাপ কিছু হতে দিতাম না এইটা আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি।কিন্তু যেহেতু এখন থেকে আমি তোমার বর্তমান আর ভবিষ্যত তাই অতীতের ছায়া তোমার জীবনে আমি আর দ্বিতীয়বার মাড়াতেও দিব না।কারণ আমি সবসময়ের জন্য এখন তোমার কাছে আছি।আর ভবিষ্যতেও থাকব।ফারিদের বুকের বাম পাশে তমার হাতটা রেখে সে বলতে লাগল,,,আর এই কথাগুলো আমি এইখান থেকে আমার মন থেকে বলছি।

আর আরেকটা কথা সবার জীবনেই ভুল হয় ভুল আছে।আমাদের দ্বারা অনেক ভুলই হয় সেটা ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃতভাবে।লাইফে কেউ পারফেক্ট না।আর এইটা আমি ভালোভাবে জানি আমার তিলোত্তমা ইচ্ছাকৃতভাবে কোন ভুল করতে পারে না।ভুল তোমার সাথে হয়েছ।ঠকেছ তুমি তাহলে তুমি আমাকে ঠকালে কি করে। আর তোমার শাস্তি পাওয়ার কোন প্রশ্নইই উঠে না।একটা সুন্দর জীবন,সংসার করার অধিকার তোমারও আছে।আর আমি তোমাকে সে সুন্দর জীবনটা দিতে চাই।সে অধিকারটা দিতে চাই।

সবশেষে একটা কথা বলব আমি এত সুন্দরও না যে মেয়েরা আমার পিছনে ঘুরবে।এইটা নিয়ে তুমি নিশ্চিত থাকতে পার।কালো ছেলে বিয়ে করার এইটাই ফ্যাসালিটি।কেউ তোমার স্বামীর দিকে বাজে চোখ দিবে না।আর মন যেহেতু একটাই তাহলে ভালোবাসার মানুষতো একজনি হবে।আর তাকে আমি পেয়ে গেছি।সে হচ্ছে তুমি।তুমি থাকতে অন্য কারোর দিকে চোখ দেওয়ারও আমার কোন ইচ্ছা নেই।সুতরাং ম্যাডাম, বিয়ে বন্ধ করার কোন প্রশ্নি উঠছে না।বিয়েটা হচ্ছে আর আলবৎ হবে।আর যদি আমি শুনেছি না তুমি বিয়ে বন্ধ করার কোন ফন্দি আটছ তাহলে জানোই তো আমি তোমার কি হাল করব।”

স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_১৪

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_১৪
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

ভেবে পাচ্ছিলাম না ওই মূহুর্তে করা উচিত।

তিথি- “তমা এখন কি করব?”

তমা- “বাচ্চাটাকে জন্ম দিব।”

তিথি- “তমা কি বলছিস তুই? কার না কার বাচ্চা তোর পেটে।এই বাচ্চা দুনিয়ায় আনলে তোর উপরে কি ঝড় আসবে বুঝতে পারছিস।”

তমা- “তিথি আমি কিছু জানি না।শুধু এতটুকুই জানি এই নিষ্পাপ বাচ্চা যে কোন পাপ করে নি তাকে মেরে আমি কিভাবে পাপ কাজটা করব?একটা নিষ্পাপ প্রাণকে আমি কিভাবে মারব?এই পাপ আমি করতে পারব না।”

তিথি- “আমি জানি তমা।বিয়ে ছাড়ায় একটা মেয়ের পেটে বাচ্চা আসার পরিণাম খুব ভয়াবহ। তোর মামণি এমনিতে জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছে। এই খবর শুনলে হয়ত সে মরে…..”

তমা- “তিথি চুপ কর।কি বলছিস তুই।আমি আমার মামণির সাথে এইরকম কিছু হতে দিব না।”

তিথি- “তাহলে এবরশনটা করে ফেল।”

তিথির হাত ধরে সেদিন বুকফাটা আর্তনাদভাবে কেঁদেছিলাম।যা কিছুই হোক বাচ্চাটাতো আমারি।সে আমার গর্ভের সন্তান।চাইলেও তো এই সত্যটাকে আমি মিথ্যা প্রমাণ করতে পারব না। কিন্তু এমনিভাবে বাচ্চাটা আমার পেটে আসল যে কেউ ওকে মেনে নিবে না,,ও সহ আমিও অনেক ধিক্কার পাব এই সমাজ থেকে যদিও আমাদের দুইজনের কারোরই কোন অপরাধ ছিল না। ওকে বাঁচানোর মতন কোন পথই পেলাম না।মা হওয়ার সাধটা সাথেসাথে মাটিতে চাপা দিয়ে মেরে ফেলতে হল।লাইফে কি করতে চাইলাম আর কি হয়ে গেল।কোনকিছুরই হিসাব মিলাতে পারছি না।সেদিন পেটের বাচ্চাটাকে আলতো করে হাত বুলিয়ে বলেছিলাম,,”তোর মাকে মাফ করে মা।তোকে আমি বাঁচাতে পারলাম না।”

তখন বারবার একটা কথায় মনে হচ্ছিল মার থেকে সন্তান দূরে গেলে মার কতটা কষ্ট লাগে।যেমন কষ্টটা আমি আমার মামণিকে দিয়েছি। মামণি অনেকবার বলেছিল তাকে ফেলে রাজশাহী যাতে না যায়।কিন্তু আমি মামণির কান্নায় সেদিন গলেনি।মামণিকে ফেলে এখানে চলে আসছি।আর আজকে আমার বাচ্চাটা পৃথিবীর মুখ দেখার আগেই বিদায় নিবে।আমার থেকে দূরে চলে যাবে।
.
.
তমা- “তিথি এবরশনের জন্যতো টাকা লাগবে।এত টাকা আমি পাব কোথায়?বাসার কারোর কাছেও আমি এখন টাকা চাইতে পারব না।এক্সট্রা টাকা চাইতে গেলে মামণি অনেক প্রশ্ন করব।মামণিকে আমি মিথ্যা কথা বলতে পারব না।”

তিথি- “চিন্তা করিস না।আমি কিছু একটা ব্যবস্থা করছি।একটা না একটা উপায় পেয়ে যাব। আমি থাকতে তোর টেনশন নিতে হবে না দোস্ত।”

ওর হাত দুটো ধরে কেঁদে দিলাম।কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে সেদিন ওর চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।মুখ দিয়ে কিছু বলতে পারলাম না।

এরপর এবরশনটা করেই ফেললাম।মেরে ফেললাম আমার বাচ্চাটাকে।একটা পবিত্র, নিষ্পাপ বাচ্চাকে মেরে ফেলার অপরাধবোধটা আমাকে দিনদিন কুঁড়ে খাচ্ছিল।এই বয়সে এসে এক সাথে দুইটা শোকের ধাক্কা সামলাতে খুব কষ্ট হচ্ছিল।তারপরও অনেক কষ্টে নিজেকে সামলিয়েছি।এই দুই মাসে তানভীর আমার সাথে একবারো যোগাযোগ করেনি।কি অবস্থায় ছিলাম,, বেঁচে আছি না মরে গেছি সেই খবরও রাখেনি।অবশ্য রাখবে কি করে ওতো একটা স্বার্থপর, পাষন্ড!

সেদিন যদি একটু সাহস করে তানভীর বিপদের সাথে মোকাবেলা করত তাহলে আমার এতবড় ক্ষতি হত না এই বিশ্বাসটা আমি তখনো মনে করতাম আর এখনো করি।কোনদিনও তোমাকে ক্ষমা করবো না,,কোনদিনও না।
.
.
অতীত থেকে যখন কল্পনায় আসলাম তখন আর থাকতে পারছিলাম না।বুকের ভিতরে খুব কষ্ট হচ্ছিল।কি করব না করব দিকদিশা পাচ্ছিলাম না।বিয়ে বাড়ির সবাই বাইরে আনন্দ করছে আর আমি ভিতরে ভিতের কষ্ট পাচ্ছি যেটা সহ্য করার মতন না।ভিতরের জ্বালাটা কমাতে হবে।নিজেকে কষ্ট দিতে হবে।কি করব,, কি করব?সামনেই ব্লেট একটা দেখলাম।ব্লেড দিয়ে হাতের রগটা কেটে দিলেই হয়ত আমার কষ্টের জ্বালাটা কমে যাবে। অনেকক্ষণ ধরে হাতে ব্লেট নিয়ে বসে আছি।কারণ তখন নিজের ভিতরের জ্বালা কমাতে চাইলেও মনের দিক থেকে নিজের ক্ষতি করার সাহসটুকুও আসছিল না।
.
.
অনেকক্ষণ ধরে বাইরে তমার জন্য অপেক্ষা করছিল ফারিদ।শেষে ওর মাথাটায় খারাপ হয়ে গেল।

ফারিদ- “আমাকে টেনশনে রাখতে তোমার খুব ভালো লাগে তাই না তমা?আজকে তুমি শেষ।আমার ধৈর্যের পরীক্ষা অনেক নিয়ে ফেলছ তুমি।এই আসব বলে আর আসলে না। দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা।”

সব জায়গা খুঁজেও যখন ফারিদ তমাকে পেল না তখন ওর বুকের ভিতরটা অজানা কারণে মোচড় দিয়ে উঠল। মনে মনে তখন একটা কথায় বারবার ওর মনে হচ্ছিল,, “আমার তিলোত্তমা ঠিক আছে তো।ওর কোন বিপদ হয় নিতো?”
.
.
ফারিদ তাড়াতাড়ি তমার রুমে চলে গেল।জানালা দিয়েই দেখতে পেল তমার হাতে ব্লেড।ব্লেডটার দিকে ও একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

যে বিপদের আশঙ্কা ও করেছিল তাই হচ্ছে।মেয়েটা কি করতে যাচ্ছে।মেয়েটাতো ওকে মেরেই তারপর দম নিবে।কিচ্ছু ভাবতে পারছিল না ফারিদ সে সময়।এখন কাউকে ডেকে ও বিপদ বাড়াতে চায় না। একনাগাড়ে দরজা ধাক্কাতে লাগল আর তমাকে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে ডাকতে লাগল।

ফারিদ- “তমা কি করছ তুমি?হাত থেকে ব্লেডটা ফেল?”

কিন্তু তমার কোন হুশই ছিল না।ফারিদের কথার আওয়াজ ওর কানে গেল না।

ফারিদ- “দেখ তমা ব্লেড ফেলতে বলছি।ব্লেডটা হাত থেকে ফেলে দাও।আমি যদি এখন ভিতরে ঢুকে যায় না তাহলে তোমাকে আমি মেরেই ফেলব।”
.
.
দরজা ধাক্কার কিছুক্ষণ পর,,

তমার দু কাধ ঝাকিয়ে,,,

ফারিদ- “এই মেয়ে কি করছিলে তুমি?”

ফারিদের তাকিয়ে ভাবলেশহীনভাবে তমা তাকিয়ে রইল।

ফারিদ- “আমার কথার জবাব দিচ্ছ না কেন?কেন এইরকম করতে চাইলে?মরার খুব শখ না তোমার!তুমি জানো না তোমার কিছু একটা হয়ে গেল তোমার মামণির কি হত?আমার কি হত?”

ফারিদ খেয়াল করল তমার চোখ থেকে পানি পড়ছে।কতটা শান্ত হয়ে গেছে ও।চোখ মুখ পুরো ফুলে গেছে।চুলের অবস্থা এলোমেলো।আর গলার লুকানো আচড়টা দেখা যাচ্ছে।

তমার এই অবস্থা দেখে ও আর কিছু বলতে পারল না।সাথে সাথে ওকে জড়িয়ে ধরল।

ফারিদ- “লক্ষ্মীটা কি হয়েছে তোমার?কেউ কিছু বলছে?কি জন্য এই বাজে কাজটা করতে যাচ্ছ।প্লিজ বল আমাকে?আমাকে কিছু না বললে আমি বুঝব কি করে?”

ফারিদের কোন কথাই ওর কানে যাচ্ছে না।এতক্ষণ পর ফারিদের বুকে আশ্রয় পেয়ে ওর মনের জ্বালাটা কমে আসছে।কিন্তু খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছ ওর।তাই ফারিদের পাঞ্জাবী পড়া পিঠে ও হাত দিয়ে অনেক শক্ত করে ধরে ওর পিঠে জোরে জোরে খামছি কাটছে।

এত জোরে খামচি কাটার কারণে ফারিদের পিঠে ছিলে যে জ্বালা করছে তাতে সে বুঝতে পারল এর থেকেও বেশি কষ্টের জ্বালা তমা পাচ্ছে।তাই ফারিদ তমার চুলে হাত বুলিয়ে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।

পুরোটা রাত ওর পাশেই ছিল ফারিদ।বারবার শুধু ভাবতে লাগল এইটুকু মেয়ে কি জন্য এইরকম কাজ করতে গেল?তমার সাথে এই কয়েকদিন মিশে ও অনেক আগেই আঁচ করতে পেরেছিল তমার সাথে খারাপ কিছু হয়েছে?ওর খারাপ অতীতটা জানলে হয়ত ওকে এই কষ্ট থেকে সে মুক্তি দিতে পারত?কিন্তু তমার অতীতের স্মৃতি
জানতে চেয়ে সে ওকে অতীতের ভাবনায় ডুবিয়ে রাখতে চায় না।তাই সব বুঝতে পেরেও ফারিদ তমাকে দিয়ে ওর অতীত ঘাটাতে চাই না।বরং সে চায় তমা অতীতের খারাপ স্মৃতি ভুলে গিয়ে সবকিছু নতুনভাবে শুরু করুক, ফারিদকে ভালোবাসোক।

আজকে যা হল এরপর থেকে তমাকে চোখের আড়ালে রাখা যাবে না।নাহলে এর থেকেও বড় অঘটন ওর আড়ালে হয়ে যেতে পারে।তাই ওকে সবসময় চোখে চোখে রাখতে হবে।একবার ভার্সিটিতে তমা ভর্তি হয়ে গেলে হয়।এরপরের ব্যবস্থা সে নিজে নিবে।যাতে আর তমাকে নিয়ে ভয়ে না থাকতে হয়।
.
.
দিপার বিয়ে হয়ে গেলেই ওরা সবাই আবার চট্টগ্রামে রওনা দেয়। চট্টগ্রাম ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার জন্য ফারিদের কাছে তমা কয়েকমাস পড়ে।আর ফারিদ ও তমাকে সবসময় চোখে চোখে রাখে।

অবশেষে ফারিদের ভার্সিটিতেই তমা টিকে যায়।ফারিদ যা চেয়েছিল ঠিক তাই হল।এখন আর তমাকে আপন করে পেতে ওর আর বাধা রইল না।কয়েকদিন পর ফারিদসহ ওর পরিবার তমার মামণির কাছে বিয়ের কথা বলতে যাবে।এরপর দেখবে সে,, কিভাবে তমা ওকে ইগনোর করে।ও যে তমাকে এত ভালোবাসে তা কেন জানি ও বুঝতে চাই না।নাকি বুঝেও না বুঝার ভান করে।
.
.
অনেক হয়েছে আমার লুকোচুরি ভালোবাসা।আর নয়।এবার আমার ভালোবাসার প্রকাশ করব।তবে সেটা বিয়ের পর।বিয়ের পর ওর সাথে জমিয়ে প্রেম করব।যাকে বলে বৈধতার প্রেম।বিয়ের পর প্রেম করলে সে প্রেমটা হয় খাঁটি আর কাউকে ধোকা দেওয়ারও সুযোগ থাকে না।তমাকে সেই কবে থেকে ভালোবাসি।ওকে ধোকা বা ওর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা আমার পক্ষে সম্ভব না।তাই বিয়ের আগে ওকে ভালোবাসার কথাটা বলতে পারিনি।কিন্তু একটাবার বিয়েটা হয়ে গেলেই ওকে আমার ভালোবাসার কথা জানাব।উহুম মুখে ভালোবাসি কথাটা বলব না।ওকে অনুভব করাব।ভালোবাসাটাতো অনুভব করার জিনিস।তাই ভালোবাসি কথাটা মুখে বলে আমি আমার ভালোবাসাকে সস্তা করব না।আমার প্রতিটি কাজে,আবেগ আর যত্ন দিয়ে তমা তোমাকে বুঝাব আমি কতটা তোমাকে ভালোবাসি।আমার ভালোবাসার ডাকে তো তোমাকে সাড়া দিতে হবেই পাখিটা।এত এত ভালোবাসব যে আমার ভালোবাসার ডাকে তুমি সাড়া না দিয়ে পাড় পাবে না।মুচকি হেসে ফারিদ মনে মনে কথাটা বলল।

স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_১৩

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_১৩
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

ও আল্লাহ! ভাবলাম একে অপমান করে আমি প্রতিশোধ নিব কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই বিপদ আমার ঘাড়ে এসে চেপে বসবে তা আমি ভাবতেই পারিনি।

ওর সাথে বাইকে করে মার্কেটে আসলাম।

“তমা এবার তুমি পছন্দ করে আমার কাপড় কিনে দাও।আর হ্যা,, আমারো পছন্দ হওয়া চাই কাপড়গুলো।নাহলে…..কিন্ত,,”
“নাহলে কি!!”
“ভার্সিটির সবার সামনে তোমাকে জড়িয়ে ধরে থাকব।তাও পাক্কা ১ ঘন্টা।তুমি যদি তা চাও তাহলে আমি তা করতে পারি।আমি কিছু মনে করব না।”
“এই না না।আমি ভালো কাপড়ই আপনার জন্য পছন্দ করব। আশা করি আপনার পছন্দ হবে।”
“হুম।তুমি এইদিকটায় শপিং কর আমি ওইদিকটায় যাচ্ছি।”
“আচ্ছা।”
.
.
কিছুক্ষণ পর,,,

“কি হল?”
“হ্যা হয়েছে।এই নিন”
“হুম গুড।আর এই নাও এই পেকেটগুলোতে তোমার কাপড় আছে।আর এই পেকেট টাতে একটা লেহেঙ্গা আছে।শুধু তোমার জন্য।”
“আচ্ছা তাহলেতো দেখতেই হয়।”
“এই এখন না।বাসায় গিয়ে পেকেটটা খুলবে।আর আজ থেকে এই পেকেটে রাখা কাপড়গুলো পড়েই ভার্সিটি আসবে।আর তোমার টপ জিন্স যেগুলো পড় সব কয়টা কাপড় এই কাচি দিয়ে কাটবে।নাও কাচিটা ধর।”
“কিহ!”
“জ্বী….। আর ম্যাডাম কাপড়গুলো কেটে তা আমার জন্য নিয়ে আসবেন।সেগুলো ঘর মুছার কাজে আমি লাগাব।আমার বাসায় ঘর মুছার কাপড়ের অভাব।তোমার টপ জিন্সগুলো ঘর মুছার কাজে লাগাব।”

রাগে ইচ্ছা করছে এর মুখে টেপ মেরে দেই।শালা আমার কাপড়গুলো দিয়ে এ ঘর মুছার কাজে লাগাবে।(মনে মনে)

“তা যে কথা রইল সেটা করে ফেলবেন কেমন।নাহলে তো জানেনই।”
“আচ্ছা আচ্ছা….আর ভয় দেখাতে হবে না।যা বলছেন তাই করব।”
“হুম গুড গার্ল। ”
.
.
এরপরে আর কি তানভীরের কথামত সেদিন সব কাজ করলাম।এরপর থেকেই ওর জন্যই সালোয়ার কামিজ পড়া শুরু করলাম।আসতে যেতে জোকের মতন সবসময় আমার পিছু লেগে থাকে।এইভাবে কোন মেয়ের পিছনে ঘুরলে তার টেককেয়ার করলে যেকোন মেয়েই ছেলেটার প্রেমে হাবুডুবু খাবে।আমিও শেষ পর্যন্ত তানভীরের প্রেমে হাবুডুবু খেতে বাধ্য হলাম।এর কয়েকদিন পর ও আমাকে প্রপোজ করে আর আমিও হ্যা বলে দেই।
ভালোইই যাচ্ছিল সবকিছু।

ওর প্রেমে পড়ে তখন মনে হত সব পুরুষ এক না।এখনো কিছু কিছু পুরুষ ভালো আছে।মামণি সবসময় আমার সামনে বাবার প্রশংসা করত।কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে বুঝতে পারলাম আমার মনে যাতে বাবার বিষয় নিয়ে খারাপ কোন প্রভাব কাজ না করে তাই মামণি বাবার প্রশংসা করত।কিন্তু মামণি হয়ত জানে না আমি সব বুঝতে পারি।বাবা কেন আমাদের সাথে থাকে না তাও বুঝতে পারি।বাবা যে অন্য নারীর প্রতি আসক্ত আর তাকেই বিয়ে করে সংসার করছে তা জানতাম।আমার চারপাশের মানুষের অভিজ্ঞতা থেকে আমি তা বুঝতে পেরেছি। তা নাহলে আমাদের সাথে বাবার না থাকার কোন প্রশ্নি উঠে না।এরপর থেকে পুরুষদের প্রতি একটা ঘৃণা জন্মাত।নিজেকে মেয়ে হিসেবে ভেবে কখন দুর্বল করতে চাইনি।তাই ছেলেদের মতন চলাফেরা করতাম।কিন্তু তানভীর আমার জীবনে আসার পর আমাকে পুরো চেঞ্জ করে দিয়েছে।আমি যে একটা মেয়ে,,আমারো যে একটা কোমল হৃদয় আছে, কোন পুরুষকে ভালোবাসার জন্য আমারো যে মন আছে তা তানভীরের সাথে থেকে বুঝেছি।ওর কাছেই ভালোবাসার মানে শিখেছি তাই ওর প্রেমে ডাক না দিয়ে পারিনি।
.
.
এরকিছুদিন পর,,ও আমাকে জানালো যে আর কয়েকদিন পরি ওর ফাইনাল পরিক্ষা।এরপরে ভার্সিটি থেকে বিদায় নিবে।তাই এখান থেকে যাওয়ার আগে ওরা কোন জায়গা থেকে ঘুরে আসতে চাই।ওর সব ফ্রেন্ডরা ঠিক করেছে যে ওরা সবাই মিলে কক্সবাজার যাবে। আমাকেও ও ওর সাথে সেখানে নিয়ে যেতে চায়।একা যাওয়াতো আমার পক্ষে সম্ভব না তাই তিথিকে সাথে করে নিয়ে গেলাম।তিথির বাবা মাকে বলে আসলাম পিকনিকে যাচ্ছি।

এরপরের দিন তানভীরের সাথে আমরা কক্সবাজারে রওনা দিলাম।

রাতে,,,

“তমা একটু বাইরে আস।”
“কেন?”
“প্লিজ একটু আস।কাজ আছে।”
“আচ্ছা।”
.
.
“হুম বল,,এত রাতে কেন আসতে বললে?”
“চল বীচ থেকে ঘুরে আসি।”
“কিহ! তানভীর তোমার মাথা খারাপ।এত রাতে বীচে যাব। এখন কোন কাক পক্ষীও পাবে না বীচে।আর তুমি আমাকে নিয়ে বীচ থেকে ঘুরে আসতে চাইছ।আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব না।”
“এই তিলোত্তমা,,এই সময়টাই বীচে ঘুরতে অনেক মজা।অনেক নিরিবিলি জায়গা।আর তোমার সাথে আমি ভালো করে রোমান্সও করতে পারি না।এই সুযোগটাকে আমি কাজে লাগাতে চাইছি।প্লিজ চল না।”
“না,,আমি পারব না।”
“এই তুমি কি আমার উপর ভরসা করতে পারছ না।দেখ আমরা জাস্ট বীচে হাঁটব, গল্প করব।প্লিজ ট্রাস্ট মি আমি আমার সীমা অতিক্রম করব না।”
“দেখো,,তানভীর আমি তোমাকে ট্রাস্ট করি।কিন্তু এত রাতে এই সময়ে বাইরে যাওয়াটা আমি ঠিক মনে করছি না।বিপদের তো আর কোন হাত পা নেই।যে কোন সময় যে কোন কিছু হয়ে যেতে পারে।আমি শুধু শুধু স্বেচ্ছায় বিপদে পড়তে চাই না।”
“এই তুমি আমাকে একবার ট্রাস্ট কর।কোন বিপদ হবে না।আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি।সব বিপদ থেকে তোমাকে রক্ষা করব।তোমার শরীরে বিপদের আচও লাগতে দিব না।”

ওর এই কথায় মনে একধরণের আত্নবিশ্বাস খুঁজে পেলাম।তাই ওর কথা মেনে নিয়েই এত রাতে ওর সাথে বীচে হাঁটতে বের হলাম।
.
.
এই নিরিবিলি পরিবেশে ওর সাথে হেঁটে গল্প করতে বেশ লাগছে।দুইজন দুইজনার হাত ধরে আমাদের বিয়ের গল্প,ভবিষ্যতের গল্প,, একটা সুন্দর সংসারের গল্প একমনে করেই যাচ্ছিলাম আমরা।

হঠাৎ,,,,
কিছু বখাটে ছেলের খবলে পড়লাম।ওরা একজায়গায় বসে মদ, গাজা খাচ্ছে।আমরা ওদের সামনে পড়তেই ওরা যেন খুব খুশি হল।ওদের পৈশাচিক হাসি দেখেই ভয়ে আমার আত্নাটা কেঁপে উঠল। তানভীরের হাতটা আরো শক্ত করে ধরলাম।বিশ্বাস ছিল ও থাকতে আমার কোন ক্ষতি হবে না।

কিন্তু বখাটেদের কাছ থেকে সেদিন অনেক হুমকি শুনে আর ওদের কাছে ধারালো জিনিস দেখে তানভীর অনেকটা ভয় পেয়ে গেল।শেষে আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বলল,,,

“আমি পরিবারের একমাত্র সন্তান।আমি মরে গেলে ওরা আর বাঁচবে না।তাই জেনেশুনে আমি নিজের ঘাড়ে নিশ্চিত মৃত্যু নিতে পারবো না।তাই তোমাকে ছেড়ে চলে যেতে আমি বাধ্য হচ্ছি।পারলে আমাকে ক্ষমা কর।”

এই কথা বলে সে আমাকে বখাটে ছেলেগুলোর কাছে ফেলে চলে গেল।প্রথম প্রথম আমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলেও যখন ও বুঝতে পারল এতজনের সাথে ও একলা পারবে না ওর বাঁচার সম্ভবনা খুবি কম তখনি আমার হাতটা ছেড়ে চলে গেল।ওকে বেশি বিশ্বাস করার মূল্য সেদিন পেলাম।

সেদিন সকাল হওয়ার আগ পর্যন্ত আমার শরীরের উপর অনেক টর্চার চলল।পুরো শরীর কেটে রক্ত বের হচ্ছিল। হিংস্র হয়ে ওরা সেদিন আমার শরীরটা ক্ষত-বিক্ষত করল।আর সেইসাথে তানভীরো আমার মনটা ক্ষত-বিক্ষত করল।
.
.
সকালে আমাকে না পেয়ে তিথি তাড়াতাড়ি বীচে বের হয়ে গেল।অনেক খুঁজার পর ও আমাকে একটা ঝোপের জায়গা থেকে উদ্ধার করল।ওর কান্না সেদিন কান দিয়ে শুনেছিলাম কিন্তু ওর কান্নায় রেসপন্স করার বা উঠার মতন শক্তি শরীরে ছিল না। তারপরো অনেক কষ্টে আমাকে নিয়ে সে রুমে এল।এই অবস্থায় ও কি করবে তা বুঝতে পারছিল না।কাউকে ডেকে যে হেল্প চাইবে সে সাহসটুকুও ওর ছিল না।হঠাৎ করে সে ওর ফুফিকে কল দিল। উনি পেশায় ডাক্তার।উনিও কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছিলেন।কালকে উনার সাথে বীচে দেখা হয়েছিল।তাই তিথি কালবিলম্ব না করে ওর ফুপিকে কল দিয়ে আমাদের হোটেলে আসতে বলল।

এরপর কয়েকঘন্টার চিকিৎসার পর আমার হুশ এল।সেদিন তিথির হাত দুটো ধরে অনেক কান্না করেছিলাম।অনেক কষ্টে ওকে বলেছিলাম,, এইখানে থেকে আমাকে নিয়ে যেতে।কেউ যাতে কিছু জানতে না পারে এমনভাবে লুকিয়ে নিয়ে যেতে।

ওর ফুপির বাসায় চিকিৎসার তত্ত্বাবধানে ছিলাম কয়েকদিন।ইচ্ছে করছিল নিজেকে নিজে শেষ করে দিই।কিন্তু তা পারেনি।যেদিন রেপ হয়েছিলাম সেদিন মামণি আর ফারিদ স্যারের অনবরত কল মোবাইলে আসতে লাগল।আর মামণির সে কি কান্না। আমাকে নিয়ে নাকি বাজে স্বপ্ন দেখেছে।তাই আমার সাথে কথা বলার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিল।আর ফারিদ স্যার বারবার বলছিল,,তিলোত্তমা তুমি ঠিক আছতো?অনেক কষ্টে সেদিন তাদের কথার জবাবে শুধু হ্যা না এই উত্তর দিয়ে ওদের সাথে কথা বলেছিলাম।

আমাকে যারা ভালোবাসে তাদের টানে আত্মহত্যার ডিসিশনটা পরে দিয়ে আর নিলাম না।কিন্তু মনের দিক দিয়ে পুরোই ভেঙ্গে পড়েছিলাম।আমার লাইফটা পুরো শেষ হয়ে গেল এই কথাটা ভাবে দিন দিন আমার শরীরটা খারাপের দিকে যাচ্ছিল।
.
.
এর দুইমাস পর,,,শরীরটা অনেক দুর্বল হয়ে গেল।কিছু মুখে দিতে পারতাম না।খুব খারাপ অবস্থা হয়ে গিয়েছিল তখন।পরে তিথির জোরাজোরিতে হাসপাতালে গেলাম।গিয়ে যা জানতে পারলাম তাতে মনে হচ্ছিল আমার পায়ের নিচের মাটি সরে যাচ্ছে।আমি ২ মাসের প্রেগন্যান্ট। আমি নিজেই এখনো ঠিকভাবে নিজেকে সামলাতে পারি না সেখানে আরেকটা বাচ্চা কিভাবে সামলাবো!এই সমাজে বাচ্চাটাকে নিয়ে কিভাবে বাঁচব।বিয়ে ছাড়াই যে মেয়ে প্রেগন্যান্ট সে মেয়েকে এই সমাজ যে কত ধিক্কার দেয় কত কথা শুনায় তা কিভাবে আমি হজম করব।তার থেকেও বড় কথা মামণির সামনে কিভাবে মুখ দেখাব!

স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_১২

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_১২
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

হঠাৎ করে কেউ পিছন থেকে আমার হাতটা ধরে টান দিল।

“কে…কে?”
“আমি,,”
“আরে আপনি!এইখানে কি করেন?”
“এইখানে একা একা দাঁড়িয়ে তুমি কি করছ ?আর বারবার ওইদিকে ফিরে কাকে দেখছ?”
“কিচ্ছু না।কাউকে দেখছি না।”
“ও আচ্ছা। এই খেয়েছ কিছু।”
“হুম”
“মিথ্যা বলিও না।বস এইখানে।”
“কেন?”
“উফ এত কেন কেন করবে না।বসতে বলছি বস।”
“হুম”
“নাও এই প্লেট থেকে এইবার খাইয়ে দাও আমাকে।”
“কিহ!”
“এত অবাক হওয়ার কি আছে।দেখতেই তো পাচ্ছ। আমার হাতে বেন্ডিজ। নিজ হাতে খেতে পারব না।তাই আমাকে খাইয়ে দাও আর নিজেও খাও।”

উফ কি মুসিবতে পরলাম। (মনে মনে)

“কি ব্যাপার!তাড়াতাড়ি খাইয়ে দাও।খুব ক্ষিদা লেগেছে।”
“দিচ্ছি।”
মুচকি হেসে,,”হুম”
.
.
খাওয়া তো শেষ হল এরপরও কেন আমার দিকে তাকিয়ে আছেন আল্লাহই জানে।

“কিছু বলবেন!”
“হুম।”

আমার হাত দুটো আলতো করে ছুঁইয়ে দিয়ে উনি বললেন,,”তোমাকে আজকে অনেক সুন্দর লাগছে।তোমার শ্যামলা চেহেরায় সাদা রংটা স্নিগ্ধ লাগছে।”

এরপর কথা ঘুরিয়ে বললেন,,,”আচ্ছা এখানে একা একা থেক না।আমার সাথে থাকবে। চল আমার সাথে।”

“আ…..আপনি যান আমি আসছি।”
“ঠিক তো।”
“হুম যান। আসছি।”
“ওকে।”(মুচকি হেসে)

একটু পর আবার আমার কাছে ফেরত এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,,
“তিলোত্তমা,তাড়াতাড়ি চলে আসবে। আমার চোখের সামনে তুমি না থাকলে খুব ভয় করে।এতটা ভয় নিয়ে থাকা আমার জন্য খুব কষ্টের।তোমাকে কখনো আমি আমার চোখের আড়াল করতে চাই না।”

অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।উনাকে বুঝতে খুব কষ্ট হয়।কি বলেন না বলেন কিছুই আমার মাথার মধ্যে ঢুকতে চায় না।

কপালে চুমো দিয়ে বললেন,,
“অপেক্ষায় থাকলাম।”
“………”

উনি যাওয়ার কিছুক্ষণ পর তানভীর আমার সামনে এল।তানভীরকে দেখেই আমি উল্টা দিকে হাঁটা শুরু করলাম।

তানভীর আমার হাত ধরে বলল,,

“তমা,,আমাকে কি মাফ করা যায় না।”
“হাত ছাড়ুন।”
“না, ছাড়ব না।আগে বল আমাকে মাফ করেছ।জানো,, আমার এই অপরাধটা আমাকে আজ কয়েকটা মাস ধরে খুব কষ্ট দিচ্ছে।রাতে এখন ঠিকভাবে ঘুমাতেও পারি না।বুকের ভিতরটায় খুব যন্ত্রণা হয়।আমি আর এই কষ্টের বোঝা বেয়ে চলতে পারছি না।প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও।নাহলে আমি মরেই যাব।”

এবার আমার সহ্যশক্তি পার হয়ে গেল।জোর করে হাতটা ওর কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিলাম।এরপর অনেকটা শান্ত কণ্ঠে ওকে বললাম,,
“ঠিক আছে মাফ করে দিতে পারি,, তবে একটা শর্ত আছে।”
“কি শর্ত!”
“আপনার ভুলের কারণে আমি আমার মূল্যবান যা কিছু হারিয়েছি তা ফেরত দিন।”
“এইসব কি বলছ?তা কিভাবে সম্ভব!”
“আপনার বেলায় যদি সম্ভব না হয় তাহলে আমার বেলায় কিভাবে সম্ভব বলেন।”(জোরে চিল্লিয়ে)
“………..”
“আপনি একটা কাপুরুষ। এই কাপুরুষতা নিয়ে আপনি রাজশাহী থেকে এতদূর আসছেন বিয়ে খেতে। তাও আবার আপনার স্ত্রীকে নিয়ে।যদি রাতের বেলায় কোন পুরুষ আপনার স্ত্রীকে নিয়ে টানাটানি করে,আপনার সামনেই আপনার স্ত্রীর গায়ে অন্য কোন পুরুষ হাত দেয়,তাকে একটা রাতের জন্য কাছে পাওয়ার জন্য হিংস্র হয়ে উঠে তাহলে আপনি শুধু চেয়েই থাকবেন কিছু বলবেন না।আর যদিউবা বিড়ালের বা**র মতন কিছু বলে আপনার স্ত্রীকে রক্ষা করতে চান তাহলে ওরা যদি আপনাকে মেরে ফেলার ভয় দেখায় তাহলে নিজেকে বাঁচাতে আপনি আপনার স্ত্রীকে ওদের কাছে ছেড়ে দিয়ে আসবেন!”
“তমা প্লিজ চুপ কর।”
“কেন চুপ করব। গায়ে লাগছে কথাগুলো।ব্যথা পাচ্ছেন আমার কথায়।আমারো সেদিন লেগেছিল এই যে এই মনটায়।আপনার সেইদিনের সেই কথা আর কাজে আমার মনটায় অনেক ব্যথা করেছিল ইভেন এখনো করছে।আপনার মতন একটা কাপুরুষকে ভালোবেসে আমাকে যে এত খেসারত দিতে হবে তা আমি ভাবতেই পারিনি।আমার সাথে যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে এখন আপনার স্ত্রীকেও যদি আপনার এই ভুলের জন্য মূল্য দেওয়া লাগে তাহলে ওর সামনে এই মুখ দেখাতে পারবেন তো!মরেই যাওয়া উচিত আপনার।আপনার মতন কাপুরুষদের বাঁচার কোন অধিকার নেই। আপনার মতন কাপুরুষকে আমি জীবনেও মাফ করতে পারব না।”
.
.
তাড়াতাড়ি সেখান থেকে চলে আসলাম।নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকিয়ে ড্রেসিং টেবিলের কাছে গেলাম।গলার দিকের ওড়নাটা খানিকটা সরিয়ে দিয়ে গলার দিকের আচড়গুলো দেখতে লাগলাম।কি ভয়ানক সেই আচড়গুলো!এই আচড়গুলোর দিকে যতবারই চোখ যায় ততবারি ভয়ে কেঁপে উঠি। অতীতের স্মৃতিগুলো তাজা করতে এই আচড়গুলোই যথেষ্ট।

তানভীরের বাসা থেকে সেদিন আসার পর মনের ভিতরে বারবার সেই খারাপ স্মৃতিগুলো ভাসছিল।বখাটে ছেলেগুলোর হাত থেকে হয়ত সেদিন ওই ২ টা মেয়ে বাঁচতে পারে নি।ভাবতেই কান্না চলে আসল।অনেক কষ্টে এই স্মৃতিটা ভুলে সেদিন ঘুমিয়ে গেলাম।

এরপরের দিন সকালে নিজেকে ভালো করে প্রিপেয়ার করে ভার্সিটি গেলাম।আর তখনি আমার হাতটাই কেউ শক্ত করে ধরল।

“এই কে রে?”
“আমি তানভীর।”

ওকে দেখে ভয়ে কাঁপতে লাগলাম।ও চোখ দুইটা বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

“এইভাবে আমার হাত ধরলেন কেন?”
“বেশ করেছি।তুমি কি মনে করেছ তুমি তলে তলে এত কিছু করবে আর আমি টের পাবো না।আজকে সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার সব কাপড় ইঁদুর কেটে রেখেছে।আমার রুমের একটা কাপড়ো ইঁদুরগুলো আস্ত রাখে নি।সব কাপড় ইঁদুর কুটিকুটি করে খেয়ে নিয়েছে।ভার্সিটিতে কাপড় ছাড়া কিভাবে আসব মাথায় আসছিল না।পরে বন্ধুর কাছ থেকে ১ দিনের জন্য কাপড় ধার নিয়ে ভার্সিটি আসলাম।সময়মত ভার্সিটির অনুষ্ঠানে আসতে না পারায়, আমি গানে পারফরমেন্স না করায় স্যার ম্যাডাম,বন্ধু বান্ধব ইচ্ছামত কথা শুনিয়েছে।আর এইসব কিছু তোমার জন্য হয়েছে।আর আজকে এই কি কাপড় পড়ে আসছ হ্যা।সালোয়ার কামিজ নাই বাসায়।আজকে তোমাকে ইচ্ছামতো টাইট দিব।এত কিছু করে ফেলবে আর আমি কিছু বুঝতে পারব না তা কিভাবে ভাবলে?বাইকে উঠ।কয়েকদিনের মধ্যে তোমাকে ঠিক করে ফেলব।কার সাথে পাঙ্গা নিয়েছ তা আজ থেকেই বুঝতে পারবে।”

স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_১১

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_১১
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

(দুঃখিত গল্পের নায়কের নামটা চেঞ্জ করে নায়কের নামটা ফারিদ রাখছি।)

রাতের বেলায় উনাদের বাড়িতে আসলাম।উনাদের বাড়ির আসার পর দেখি বাড়িতে ইতিমধ্যে মেহমানদের আনাগোনা পড়ে গেছে।উনাদের বাড়ির আশেপাশে উনার চাচাদের বাড়ি থাকায় তাদের পরিবারের সবাই এসে বাড়িটাকে বেশ জমজমাট বানিয়ে ফেলল।এতদিন পর এত মানুষদের সাথে মিশতে পেরে খুব ভালো লাগছে।বিশেষ করে বাড়ির ছোট বাচ্চাদের সাথে আমি ভালো করে মিশতে পারায় এরা সারাক্ষণ আমার আগে পিছে লেগে আছে।যেইখানে যাই সেইখানেই এসে ওরা উপস্থিত। বুঝতে পারলাম এরা আমাকে খুব পছন্দ করেছে তাই কিছুতেই আমার পিছু ছাড়তে চাইছে না।বিয়ের বাড়ির সব কাজ নিজ হাতে নেওয়ার সাথে সাথে এই এত্তগুলো পিচ্চিকে মেহেদি দেওয়া,এদের সাজিয়ে দেওয়ার দায়িত্বও আমার ঘাড়ে পড়েছে।পিচ্চিদের নিজ হাতে আমি সাজিয়ে না দিলে নাকি এরা আমার সাথে আড়ি করবে আর রাগ করে আমার সাথেও মিশবে না।শুরু হল এক্সট্রা প্যারা। এই এক্সট্রা প্যারা আমার ঘাড়ে পড়লেও এই ধরণের প্যারার মধ্যেও এক ধরণের আনন্দ আছে।আর এদের রাগানো আমার পক্ষে সম্ভব না।কারণ বাচ্চাদের প্রতি আমার একধরণেরর দুর্বলতা আছে।আর সেই দুর্বলতা আরো প্রবল হল যখন আমার গ….।

উফ এত আনন্দের মাঝেও আবার সেই কষ্টকর স্মৃতিটা মনে পড়ে গেল।নিজের জীবনটাতো শেষ হল সাথে আরেকটা জীবন আমি নিজ হাতে শেষ করলাম।খুব কান্না আসছে।কিন্তু এত মানুষের সামনে কান্না করা যাবে না তাই ঘুমানোর অজুহাত দেখিয়ে রুমে চলে গেলাম।
.
.
রাতে মেহেদির অনুষ্ঠানে একটা গোলাপি কালারের লেহেঙ্গা পড়ে হালকা সাজলাম।সাথে নিজ দায়িত্বে এক এক করে সব পিচ্চিদের সাজিয়ে দিতে হল।এরপর সব কয়টা পিচ্চিকে মেহেদিও দেওয়া লাগল।

দিপা আপু- “এই এত দৌড়াদৌড়ি কেন করছিস?আর কিছু করা লাগবে না।এইদিকে আয়।”

তমা- “আপু এখনো অনেক কাজ বাকি আছে।”

দিপা আপু- “রাখ তোর কাজ।আর কিছু করা লাগবে না।সবাই মেহেদি দিচ্ছে তুইও বসে মেহেদি দে।এই যে আপু এইখানে আসুন।আমার এই কিউট বোনটাকে একটু মেহেদি লাগিয়ে দেন তো।”

তমা- “আপু এইসবের কিছু লাগবে না।আমি মেহেদি দেওয়া পছন্দ করি না সেটা তো তুমি জানোই।প্লিজ…”

দিপা আপু- “চুপ কোন কথা হবে না।এই যে আপু আপনি মেহেদি দেন।ওর কোন কথা আপনার শুনা লাগবে না।”

তমা- “…..”

ফারিদ- “দিপা কাউকে দিয়ে ওর হাতে মেহেদি দিতে হবে না।তমা আস আমার সাথে।”

তমা- “কেন?”

ফারিদ- “কথা না বাড়িয়ে আস।”

তমা- “আচ্ছা।”( ভয় পেয়ে)
.
.
ছাদে আসার পর,,

ফারিদ- “এবার হাত দাও দেখি।”

তমা- “কেন?”

ফারিদ- “এত কেন কেন কর কেন বলত?আমি নিজ হাতে তোমার হাতে মেহেদি লাগিয়ে দিব তাই হাত দিতে বলেছি।”

তমা- “এখন আপনিও শুরু করেছেন!”

ফারিদ- “তুমি কাজের থেকে বেশি কথা বল।”

জোর করে আমার হাতটা নিজের কাছে নিয়ে উনি মেহেদি পড়িয়ে দিলেন।

ফারিদ- “দেখতো এখন মেহেদিভরা হাতদুটো কত সুন্দর লাগছে।সব মেয়েরা মেহেদি দেওয়ার জন্য পাগল আর তুমি……!”

তমা- “হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি আসলেই মেহেদিভরা হাতটা দেখতে বেশ ভালো লাগছে।কিন্তু মেহেদির রংয়ের মতন আমার জীবনটা তো আর রঙ্গিন না।তাই মেহেদি দেওয়াটা আমার মতন মেয়ের শোভা পায় না।”

নিপা- “ভাইয়া তুমি ওইখান থেকে তমা আপুকে এখানে ডেকে এনে মেহেদি দিয়ে দিচ্ছ!আর আমি তোমাদেরকে খুঁজতে খুঁজতে শেষ।

হঠাৎ তমার মেহেদি হাতের দিকে তাকিয়ে,,ওয়াও তমা আপু তোমার হাতের মেহেদির ডিজাইনটা অনেক সুন্দর হয়ছে।
উফ ভাইয়া ভুলে গেছি আম্মু ডাকছে তোমাকে।নিচে যাও।”

ফারিদ- “আচ্ছা যাচ্ছি। এই শোন,,”

নিপা- “বল,,”

ফারিদ- “ওর দিকে খেয়াল রাখিস একটু।ওকে একা ছেড়ে আবার যাস না কোথাও।”

নিপা- “টেনশন নট ভাইয়া।ভাবির কাছে আছি আমি।”

ফারিদ- “বেশি দুষ্টু হয়ে গেছিস তুই।যা করতে বলছি তাই করবি।”

নিপা- “ওকে ওকে।যাও এবার।”
.
.
তমা- “এইদিকে আয়।রেগে আছিস না এখনো আমার উপর।”

নিপা- “আরে না।কি যে বল।আমি সব ভুলে গেছি।”

তমা- “সেইদিনের খারাপ ব্যবহারের জন্য সরিরে।”

নিপা- “ইটস ওকে।”

তমা- “শোন তোর পছন্দের একটা কানের দুল আমাকে একবার দেখিয়ে ছিলি না। অনেক খুঁজার পর সেটা আমি মার্কেটে পেয়েছি।”

নিপা- “সত্যি!”

তমা- “হ্যা।সত্যি। খাটে রেখে এসেছি। যা রুমে গিয়ে দেখ গিয়ে।”

নিপা- “তমাকে জড়িয়ে,,থ্যাংক ইউ,,থ্যাংক ইউ,, সো মাচ আপু।”

তমা-” পাগলি একটা।যা এবার।”

নিপা- “যাচ্ছি। তবে এখানে আর একা থাকতে পারবে না।তোমাকে রুমে যেতে হবে।অনেক ধরণের মানুষ আছে এইখানে।তাই ভাইয়া বলছে তোমাকে একা একা ছাড়া যাবে না।”

তমা- “ও…..”

নিপা- “আর শোন আপু দিপা আপুর হাসবেন্ডের ফ্রেন্ডের ছোট ভাই আর তার বউ আসবে রাজশাহী থেকে।শুনেছি দুলাভাইয়ের ফ্রেন্ডের ছোট ভাইয়াটা তোমার ভার্সিটিতে পড়ত।নাম জানি কি…… মনে পড়ছে না।ও হ্যা মনে পড়েছে তানভীর। তানভীর ভাইয়া।তানভীর ভাইয়া আর তার ওয়াইফ কালকে আসছে এখানে।উনাদের ভালো করে যত্নআত্তি করতে হবে বুঝলে।স্পেশাল গেস্ট ওরা।আর ওদের দেখার ভার কিন্ত আমার সাথে তোমাকেও নিতে হবে।অনেক কাজ কালকে। লক্ষ্মী মেয়ের মতন এখন রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়বে কেমন।আমি আসি।”

তমা- “তানভীর নামটা শুনে প্রথমে একটু অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।ও এখানে আসবে কেমন করে।তানভীর নামের অনেকেই থাকতেই পারে।শুধু শুধু টেনশন নিয়ে লাভ নেই।যাই রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।”
.
.
আজকে দিপার আপুর বিয়ের দিনে সাদা রংয়ের লেহেঙ্গা পড়লাম।লেহেঙ্গাটা উনি দিয়েছেন।এটা পড়ার ইচ্ছা ছিল না।কিন্তু উনার রাগের ভয়ে শেষ পর্যন্ত পড়তেই হল।

আপুর শুশুড় বাড়ির লোকেরা ইতিমধ্যে এসে গেছে।আমি আর নিপা সেই স্পেশাল গেস্ট কখন আসবে তার জন্য অপেক্ষা করছি।

“এই নিপা ওরা কি এখনো আসে নি।”
“কি জানি আপু।”
“আচ্ছা তুই এখানে একটু দাঁড়া। আমি ওইদিকটা থেকে আসছি মেহমেনরা কি করছে।ওরা আসলে আমি ডাক দিস।আমি চলে আসব।”
“আচ্ছা।”

কিছুক্ষণ পর,,,

“এই কেরে? চোখ কোনখানে থাকে?দেখে চলতে পারেন না।”
“সরি সরি,,,”

গলার কণ্ঠটা পরিচিত মনে হল।তাড়াতাড়ি চোখ উপরে তুললাম।ওকে এখন এই বিয়ে বাড়িতে দেখব তা ভাবতে পারেনি।তানভীর!
.
.
তানভীর – “তমা তুমি এইখানে!”

তমা- “একি প্রশ্ন আমারো। আপনি এইখানে কি করছেন। শেষ পর্যন্ত এইখানেও চলে আসছেন।আমাকে আরো কষ্ট দেওয়ার বাকি আছে নাকি! যে কষ্টটা দিলেন তাতে কি আপনার মন ভরে নি।তাই রাজশাহী থেকে ডাইরেক্ট এইখানে চলে আসছেন।”

তানভীর- “তমা প্রথমত আমি অভি ভাইয়ার বিয়ের দাওয়াতে এসেছি।আমি জানতাম না তুমি এইখানে আছ।আর দ্বিতীয়ত প্লিজ পারলে আমাকে মাফ করে দাও।বিশ্বাস কর তোমাকে আজকে এইখানে দেখে অনেক খুশি হয়েছি।অনেক করে চাইছিলাম তোমার সামনে যেয়ে মাফ চেয়ে নিব কিন্তু সেই সাহস আমার হয়ে উঠেনি।আমার ভুলের জন্য প্লিজ প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও।”

নিপা- “আরে তমা আপু তুমি এইখানে।যাক তাহলে পেয়ে গেলাম তোমাকে।আরে তানভীর ভাইয়া তুমিও আছ দেখছি।আপু এই যে উনার কথা বলছিলাম।একটু আগে আসছে উনারা।আর আপু এই হচ্ছে তানভীর ভাইয়ার ওয়াইফ সোমা।উনাদের বিয়ের মাত্র ১ মাস হয়েছে।”

তানভীরের দিকে তাকিয়ে আছি।ও বিয়েও করে ফেলেছে তাহলে।ভালোই দিন কাটাচ্ছে তাহলে স্ত্রীর সাথে!

নিপা- “আচ্ছা তোমরা কথা বল।আমি আসছি।”

তমা- “নিপা আমিও যাব। তুই বরংচ ওদের ভিতরে নিয়ে যা। ওইদিকটা কি হচ্ছে তা আমাকে দেখে আসতে হবে।আর আপনারা নিপার সাথে যান। সবাই ওইখানে আছে।”

তাড়াতাড়ি করে ওদের কাটিয়ে চলে আসলাম।তানভীরকে দেখ কষ্ট আর রাগ দুটোই হচ্ছে।আমার জীবনটা শেষ করে এখন বিয়ে করে সুখে দিন কাটাচ্ছে।না জানি ওর স্ত্রীর কপালে কি আছে।বেচারি এখনো জানে না ও কি রকম মানুষের সাথে সংসার করছে।ওর স্ত্রী হয়ত তানভীরকে অনেক ভালো পুরুষ ভাবে।কিন্তু সেতো আর জানে না তানভীরেরর একটা কাপুরুষ।নিজেকে বাঁচাতে যেইদিন তানভীর আমার মত ওর স্ত্রীকে বিপদের মুখে ঠেলে দিবে সেইদিনি হয়ত ওর স্ত্রী তানভীরের আসল মুখোশটা দেখবে।

স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_১০

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_১০
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

এর কিছুক্ষণ পর,,

“তুমি এইখানে!”
“আপনি এখন কেমন আছেন তা দেখতে আসলাম।আপনি অসুস্থ শরীর নিয়ে এখন উঠতে গেলেন কেন?”
“না আমি এখন ঠিকাছে।তমা তুমি রাতে ঘুমাওনি?”
“কে বলল আপনাকে?”
“তোমার চোখ বলছে।চোখগুলো এমন লাল হয়ে আছে কেন?”
“…….”
“আপনি খাটে গিয়ে বসুন। আপনাকে দুর্বল লাগছে।আপনার জন্য কিছু বানিয়ে আনছি।”

“আমার হাত ধরে টেনে উনার কাছে নিয়ে গেলেন।

“দাঁড়াও আমার প্রশ্নের উত্তর কই?”
“…..”
“এই মেয়ে জবাব দাও না কেন?”
“কিছু না।”
“মিথ্যা কথা কেন বলছ?কোন কারণতো নিশ্চয় ছিল।তুমি কি কালকে রাতের কথা ভেবে ঘুমাওনি।আমি থাকতে তুমি এত ভয় পাও কেন?আমি থাকতে তোমার শরীরে এতটুকু আচ লাগতে দিব না এতটুকু বিশ্বাস তুমি কি আমার উপর করতে পার না ?”
.
.

এই কথাটায় আমার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা।এই কথায় বিশ্বাস করে আমি নিজের সর্বস্ব হারিয়েছি।তাই এই কথা শুনামাত্র কান্না এসে গেল।

” এই মেয়ে কাঁদছ কেন?আমি কি তোমাকে বকা দিয়েছি নাকি?”
“…….”
“কিছুতো বল?আমার লক্ষ্মীটা কাঁদছে কেন?”
“সরি ” বলে উনাকে জড়িয়ে ধরলাম।জীবনে প্রথম স্ব-ইচ্ছায় উনাকে জড়িয়ে ধরলাম।

“সরি কেন বলছ পাগলি।”
“আমি আজকের পর থেকে আর আপনার কথার অবাধ্য হব না।আসলে আমি……”ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করলাম।কান্নার কারণে কথাও বলতে পারছি না।
“প্লিজ কোন কারণ ছাড়া কাঁদবে না।আমাকে যা বলার পরে বলিও।এখন কিচ্ছু বলতে হবে না “এই বলে উনি আমার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছেন।এখন খুব শান্তি লাগছে।যে শান্তিটা আমি ৫টা মাস ধরে খুঁজছিলাম আজ কেন জানি তা উনার বুকের মধ্যে খুঁজে পেলাম।কিন্তু এই মূহুর্তে নিজেকে দুর্বল করা চলবে না।তাই তাড়াতাড়ি উনার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম।
“আমি আসছি।”

উনি আমার দিকে কিছুটা অবাক হয়ে তাকিয়ে বললেন,,”কোথা থেকে আসছ?”
“আপনার জন্য খাবার বানিয়ে আনছি।এতক্ষণে নিশ্চয় আপনার ক্ষুধা লেগে গেছে।”
“হুম।যাও,”

.
.
কিছুই করতে পারি না তেমন।নোডলসটা আমার প্রিয় খাবার তাই নোডলস কিভাবে বানাতে হয় তা শিখে নিয়েছিলাম।সেটা রেঁধেই উনার কাছে গেলাম।

“নিন এটা খেয়ে নিন।”

উনি উনার হাতের বেন্ডিজ দেখিয়ে আমাকে বুঝিয়ে দিলেন যে উনি হাত দিয়ে খেতে পারবেন না।তাই বাধ্য হয়েই আমি খাইয়ে দিলাম।মেডিসিন খাইয়ে দিয়ে বললাম,,

“শুয়ে থাকুন এখন।”
“এখন চাইলেও আর শুতে পারব না।আজকে যে আমাদের গ্রামের বাড়িতে যেতে হবে সেটা কি তুমি ভুলে গেছ?”
“আপনার এই অসুস্থ শরীর নিয়ে কিভাবে সেখানে যাবেন।”
“কালকে দিপার মেহেদি অনুষ্ঠান এরপর বিয়ে।অসুস্থ হলেও বিয়ে তো আর বন্ধ করা যাবে না।আমি চাইছি ওর বিয়েটা তাড়াতাড়ি হয়ে যাক।এরপর তাড়াতাড়ি নিজেও বিয়েটা করে ফেলব।”

উনার বিয়ের কথা শুনে কেন জানি একটু লজ্জা লাগল। মাথা নিচু করে বললাম,”কিন্তু এই অবস্থায় সেখানে গিয়ে আপনাকে অনেক কাজ করতে হবে। কিভাবে তা সামলাবেন!”
“ও আমি পারব।তুমিও তো সাথে থাকবে। আমার কাজের হেল্প করবে তাহলে কাজ কিছুটা কমে যাবে। তাই শুধু শুধু আমাকে নিয়ে টেনশন করতে হবে না।যাও বাসায় গিয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।”
“আচ্ছা।”
“আর শোন,,”
“জ্বী,”
“বাসায় গিয়ে আগে খাবার খেয়ে মেডিসিন খেয়ে নিও।”
“আচ্ছা,”
.
.
বাসায় আসার পর মামণিকে বলে দিলাম যে আজকে দিপা আপুর গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি। তাড়াতাড়ি যেন রেডি হয়ে নেই।

হঠাৎ মোবাইলে একটা মেসেজ আসল।
মেসেজটা দেখে একটু অবাক হলাম।

“মামণি আমাকে চিনবে কিনা জানি না।হয়ত আমাকে ভুলেও গেছ।কিন্তু তোমাকে আমি চাইলেও ভুলতে পারব না কারণ তোমার চেহেরার সাথে আমার মেয়ের চেহেরার অনেক মিল আছে।আমার একটা বড় ভুলের জন্য আমার স্ত্রী আর মেয়েটা আজকে আমার কাছে নেই।হয়ত আমার মেয়েটা আমাকে অনেক ঘৃণাও করে ।আমি যে ভুল করেছি তার জন্য আমার স্ত্রী আমাকে ক্ষমা করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। আমার মেয়েটা যেদিন আমার ভুলটা সম্পর্কে জানবে হয়ত সেদিনও সে তার মায়ের মতন আমাকেও ক্ষমা করতে পারবে না।নিজের ভুল বুঝতে পেরে যখন ওদের কাছে আমি যেতে চাইছি তখন সেখানে যাওয়ার সব রাস্তা আমার বন্ধ হয়ে গেছে।তাই দূর থেকে তাদের দেখে আমার চোখটা জোড়ায়।খুব ভালবাসি আমি ওদের।মেয়েটাকে কাছ ডেকে আমি প্রাণভরে দেখতে পারিনা কারণ সে তার বাবার থেকে অনেক দূরে।আমার মেয়ের সাথে তোমার চেহেরার অনেক মিল আছে।তাই তোমাকে নিজের মেয়ে মনে করে আমি তোমার জন্মদিনে আমার প্রিয় গিটারটা দিয়েছিলাম।

মামণি তোমাকে নিয়ে কালকে অনেক খারাপ স্বপ্ন দেখলাম।এরপর থেকে মনটা খারাপ হয়ে আছে।নিজের মেয়ের মতন তোমাকে ভাবি তাই একটা রিকোয়েস্ট করছি,,তুমি নিজেকে কখনো একা ভাববে না।তোমাকে তোমার আপনজনরা অনেক ভালবাসে।যারা তোমাকে ভালবাসে তাদের জন্য নিজেকে খুশি রাখার চেষ্টা করবে। আর আরেকটা কথা কখনো ভুলেও নিজের ক্ষতি করবে না।প্রমিস মি।যদি আমাকে তোমার বাবা ভেবে থাক তাহলে এই প্রমিসটা কর। প্লিজ মামণি।”

লোকটাকে চিনতে পারলাম।উনাকে এত সহজে চাইলেও আমি ভুলতে পারব না।নিজের প্রিয় গিটারটা আমার মতন অপরিচিত একটা মেয়েকে দিয়ে তিনি এইটা প্রমাণ করলেন উনার মেয়ের মতন উনি আমাকেও অনেক ভালবাসেন।আমাকে নিয়ে খারাপ স্বপ্ন দেখে উনি সত্যিইই অনেক টেনশনে আছেন।তাই তাড়াতাড়ি উনাকে মেসেজ পাঠালাম।

“আংকেল আপনার প্রিয় গিটারের কারণে আমি এখনো আপনাকে ভুলি নি।নিজের মেয়ের মতন আমাকে ভালবাসেন তাই হয়ত আমাকে নিয়ে খারাপ স্বপ্ন দেখার পর আপনি অনেক চিন্তিত।চিন্তা করবেন না আপনার এই মেয়ে নিজের কোন ক্ষতি করবে না।এই প্রমিস একজন মেয়ে তার বাবাকে করছে।”
.
.
মেসেজের আওয়াজ পেয়ে তন্ময় তাড়াতাড়ি মেসেজটা ওপেন করল।মেসেজটা পড়েই যেন তার সব চিন্তা দূর হয়ে গেল।তার মেয়ে যেহেতু তাকে প্রমিস করেছে তাহলে আর চিন্তার কিসের?
এরপর তন্ময় তার মেয়েকে আবার মেসেজ পাঠাল,,

“অনেক খুশি হলাম মামণি।আমাকে চিন্তামুক্ত করলে।অনেক অনেক দুয়া রইল আমার এই মেয়েটার জন্য।আমার মেয়েটা যেন তার জীবনের সকল সুখ খুঁজে পায়।”

মেসেজটা পাঠিয়ে তন্ময় সাথেসাথে নম্বরটা অফ করে দিল।কারণ মেয়ে যদি কল দিয়ে ওর সাথে কথা বলতে চায় তাহলে সে নিজের অনুভূতিগুলো লুকাতে পারবে না।
.
.
মেসেজটা পড়েই একচিলতে হাসি ফুটল আমার মুখে।খুব ইচ্ছে করছে এই লোকটার সাথে কথা বলতে।তাই কালবিলম্ব না করে উনার নম্বরে কল দিলাম।কিন্তু নম্বরটা অফ আসছে।মূহুর্তেই মনটা খারাপ হয়ে গেল।

মেঘ-“তমা কি করছিস রুমে?তাড়াতাড়ি রেডি হ।”

তমা-“হ্যা মামণি হচ্ছি।”

এরপর উনাদের সাথে গাড়িতে করে উনাদের গ্রামের বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।

স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_০৯

0

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_০৯
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

পরেরদিন,,,,
ভোরের আজান দেওয়ার সাথে সাথে আমি তাড়াতাড়ি করে আহদ স্যারের বাসায় গিয়ে বেল টিপলাম

কিছুক্ষণ পর,,

“তমা তুই এখন?সব ঠিকাছে তো?”
“হ্যা,ঠিকাছে।”
“আন্টি,,উনি কেমন আছেন?”
“এখন একটু ঘুমাচ্ছে।রাতে খুব জ্বর আসছিল।সারাটা রাত ঘুমাতে পারেনি জ্বর আর ব্যথার জন্য।”
“আন্টি আমি উনার রুমে যাচ্ছি।”
“আচ্ছা যা,,”

গিয়ে দেখি উনি শুয়ে আছেন।এই লোকটার জন্য আমার কোন কালেই মায়া কাজ করত না কিন্তু আজকে উনাকে এই অবস্থায় দেখে আমার মনে মায়া জিনিসটা কাজ করছে।কপালে হাত দিয়ে দেখি উনার জ্বরটা আবারো উঠছে।তাড়াতাড়ি করে কপালে কাপড়ের পট্টি দিয়ে দিলাম।অনেকক্ষণ পর কপালে হাত দিয়ে দেখি জ্বরটা কিছু কমেছে।অজান্তেই উনার মাথার চুলগুলোতে বিলি কেটে দিলাম।
.
.
উনার রুমের বারান্দায় একটা কেদেরা ছিল।সেখানে বসে ভাবতে থাকলাম মানুষের মধ্যে কত পার্থক্য।বিপদের দিনেই একটা মানুষকে পরিপূর্ণভাবে বুঝা যায়।যেমনটা উনাকে আর তানভীরকে দেখে বুঝেছি।উনি সবসময় কড়া শাসনের মধ্যে আমাকে রাখলেও আমার ভালোটা চেয়েছে।আমার উপর যখনি কোন বিপদ আসে তখনি তিনি কোন কিছুর পরোয়া না করে আমাকে বাঁচানোর জন্য ঝাপিয়ে পড়েন।যতদিন উনার সংস্পর্শে ছিলাম আমার উপর বিপদের কোন আঁচ লাগতে দেয়নি।
অন্যদিকে তানভীর যার ভালো ব্যবহার আর মিষ্টি মিষ্টি ভালোবাসার কথা শুনে ওর ভালোবাসায় পড়তে আমি বাধ্য হয়েছি।অনেকটা বিশ্বাস করতাম ওকে।কিন্তু সেদিন ও নিজেকে বাঁচাতে আমাকে বিপদের মুখে ফেলে চলে যায়।
চোখ বন্ধ করে কেদেরাতে মাথা রাখতেই ওর সাথে আমার প্রথম পরিচয়ের ঘটনা চোখে ভাসতে লাগল।

রাজশাহী ভার্সিটিতে টিকার পর সবাইকে মেনেজ করে সেখানে চলে যাই।আমার পক্ষে হোস্টলে থাকা সম্ভব না তাই আমার পরিচিত বান্ধবী তিথিদের বাসায় উঠি।

ভার্সিটির প্রথম দিনে আমি গেইট দিয়ে ভিতরে ঢুকে ভার্সিটির চারপাশটা দেখছিলাম।হঠাৎ একটা কন্ঠে আমার হুশ এল।

“এই মেয়ে এইখানে আয়।”
“বলুন”
“ওই তুই মেয়ে হয়ে ছেলেদের মতন পোশাক কেন পড়িস?”
“তাতে আপনার সমস্যা কি?”
“ওই মেয়ে বড় ভাইদের মুখের উপর তর্ক করস।খুব শখ না মেয়ে হয়ে ছেলের মতন চলা।দাঁড়া।ওই দোকান দেখছস ওইখান থেকে আমার সব ফ্রেন্ডদের পছন্দমতন এক এক খাবার নিয়ে আয়।যা ফুট।”
“এই যে শুনেন আপনি বড় ভাই বা ছোট ভাই হন না কেন তাতে আমার যায় আসেনা।আমি এইসব করতে বাধ্য না।”
“ওই সিফাত দেখ তো মাইয়াতো বেশি টেরং টেরং করে কথা কয়।কি করা যায় কতো?”
.
.
সিফাত-“তানভীর ভাই ওর ব্যাগ দেখতাছেন তো?”

তানভীর-“ভালা বুদ্ধি দিছস।”

জোর করে ব্যাগটা টেনে নিয়ে গেল।এরমধ্যে মোবাইলে কল বেজে উঠল।”

তমা-“দেখেন ব্যাগ রাখেন সমস্যা নাই।কিন্তু মোবাইলটা দেন।আমার মামণি কল দিয়েছে মন হয়।কল না উঠালে টেনশন করবে আমাকে নিয়ে।”

তানভীর -“মামণি কল দিয়েছে।কথা বলতে চাস?

তমা-“ভাইয়া প্লিজ মোবাইলটা দেন?এটা আমার মোবাইল।”

তানভীর-“এইটা তোর মোবাইল এর প্রমাণ এখন চাইলেও দিতে পারবি না।কারণ মোবাইল এখন আমার হাতে।যদি আমার থেকে মোবাইল নিয়ে কথা বলতে চাস তাহলে আমি যা করতে বলছি তা কর?নাহলে এখনি তোর সামনে এইটা ভেঙ্গে ফেলবো।”

তমা-“না, না আপনি যা বলবেন আমি তাই করব।প্লিজ মোবাইল ভাঙ্গবেন না।”

তানভীর-“তাহলে যা তাড়াতাড়ি করে খাবার কিনে নিয়ে আয়।আমার আবার খিদা সহ্য হয় না।”

তমা-“একসাথে সব খাবার পেকেট করে আনি।আপনারা নাম বলেন লিস্ট বানিয়ে নিয়ে আসছি।”

তানভীর-“ওই মাইয়া বেশি চোপড় চাপড় মারবি না।এক এক জনের খাবারের জন্য যাবি আর আসবি।”

তমা-“আমার সময় নষ্ট হবে ভাইয়া।মামণির সাথে কথা বলতে হবে এখনি।”

তানভীর-“যাবি এখন নাহলে কিন্তু আরো বেশি দেরি হয়ে যাবে।”

তমা-“না না যাচ্ছি যাচ্ছি।”

এক এক ফ্রেন্ডের জন্য খাবার আনা আর যাওয়ার জন্য প্রায় দুর্বল হয়ে গেছি।দোকানটাও অনেক দূরে।এই নিয়ে ১০ বার গেছি আর আসছি।

তানভীর-“হুম হয়ছে আর যাওয়া লাগবে না। এত কষ্ট করার জন্য এই নে বকশিস।

তমা-“….”

তানভীর-“আরে নে নে। কাজ করছস টাকা নিবি না।নে নে। এত বাহানা করিস না।আর শুনো মেয়ে হয়ে জন্মেছ মেয়ের মতন নম্রভদ্র হয়ে চলার চেষ্টা করবে।তখন তোমার পোষাকের ছিরি দেখে রাগ উঠে গিয়েছিল তাই ওইরকম আচরণ করতে বাধ্য হয়েছি।Next টাইম যাতে এইরকমভাবে চলতে না দেখি।এই নাও মোবাইল।তোমার মামণির সাথে কথা বলে নিও।”

তমা-“তোকে তো আমি উচিত শিক্ষা দিয়ে ছাড়বো। আমাকে জ্ঞান দেওয়ার মানে বুঝিয়ে দিবো।
.
.
ভার্সিটিতে নতুন ভর্তি হয়েছি।আর এর মধ্যেই বড়ভাইদের যার্গিং এর মুখে পড়লাম।আজ আমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ওরা যে কাজটা করল সেটা মোটেও ঠিক করেনি।এর প্রাপ্য শাস্তি তোমাকেই পেতে হবে মিস্টার সিনিয়র।তমার ভালো সাইড দেখেছ এতক্ষণ এবার খারাপ সাইডটাও দেখবে।

এরপরের দিনই সাদা রংয়ের একটা থ্রিপীস পড়ে ভার্সিটি গেলাম।এইরকম মেয়েলি পোশাক পড়ায় সেইদিনের সেই বজ্জাত সিনিয়র ছেলেটা মনে হয় খুব খুশি হল।ওর এই খুশি দেখে আমারো মনের ভিতরে লাড্ডু ফুটল।যাক কাজ হয়েছে।

সে নিজ থেকেই আমার সাথেই কথা বলতে আসল।এই শোন,
“জ্বী ভাইয়া বলেন,”
“হাই আমি তানভীর,”
“আমি তমা।”
এরপর টুকটাক সেদিন কিছু কথা হল।

এরপর থেকেই তানভীর প্রায়ি নিজ থেকে আমার সাথে কথা বলত।এই কয়েকদিনের মধ্যেই ওর সাথে আমার ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হয়ে গেল যেটা আমি চাচ্ছিলাম।তানভীর ওর মায়ের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল।ওর মায়ের সাথে পরিচিত হওয়ার বাহানায় ওর বাড়িটা চিলে নিলাম।

এতদিনে ওর সাথে আমি ভালো মেয়ে হয়ে থাকার অভিনয় করলেও মনে মনে ঠিকি সবসময় ভাবতাম সঠিক সময়ে আমি প্রতিশোধ নিব।কিন্তু কিভাবে নিব তা মাথায় আসছিল না।প্রথম প্রথম ভাবলাম ওর সাথে একটা গেম খেললে কেমন হয়।ওকে প্রথমে ভালবাসব এরপর ছেকা খাইয়ে ছেড়ে দিব।এই প্ল্যান করে আমি সামনের দিকে আগালেও গণ্ডগোলটা মাঝখান দিয়ে বাধে।আমার প্রতি তানভীরের আচরণে বেশ পরিবর্তন দেখতে পারলাম।শেষে আমার এমন অবস্থায় হল যে,, মনে হচ্ছে ওর প্রেমেই আমি নিজেই হাবুডুবু খাচ্ছি।

না এইভাবে আর চলতে দেওয়া যাবে না। কিছু একটা করতে হবে।অবশেষে ওকে ছেকা দেওয়ার পুরানো স্টাইল চেঞ্জ করলাম।আর নতুন প্ল্যান আটলাম।
.
.
কিছুদিন পর,,,ক্লাস শেষ করে সন্ধ্যায় আমি নিজেই তানভীরের বাসায় গেলাম।দেখলাম আন্টি চুপচাপ বসে টিভি দেখছে। বাসায় আমাকে দেখে মনে হল উনি খুব খুশি হলেন।

“তমা,, কিরে এতদিন পর কি মনে করে এলি ,,?”
“আসলে আন্টি তানভীর ভাইয়ার কাছে আমার একটা নোট খাতা ছিল সেটা নেওয়ার জন্য আসছি।”
“প্রয়োজন ছাড়া কি বাসায় আসা যায় না।মাঝেমাঝে তো আসতে পারিস।”
“আচ্ছা,আন্টি সময় পেলে আসব।”
“আন্টি আমার নোট খাতাটা,,”
“ও নোট খাতা মনে হয় তানভীরের রুমে। চল তোকে ওর রুমে দিয়ে আসি।”
“হুম।”
“আচ্ছা শোন এখন বাসায় যাওয়া যাবে না।রাতের ডিনার করে তবেই তোকে ছাড়ছি।তুই নোট খুঁজে নে আমি কিচেনে আছি।”
“আচ্ছা।”

এরপর আমার ব্যাগ থেকে পলিথিনটা বের করলাম।পলিথিনে কয়কটা ইদুঁর ছিল।সেগুলো তানভীরের ওয়ারড্রবে ঢুকিয়ে দিলাম।শয়তানটা এবার বুঝবে ঠেলা।কালকে ভার্সিটিতে অনুষ্ঠান আছে।ও গান গাওয়ায় নাম দিয়েছে।বেশ ভালোইই গান গায়।মূলত ওর গানই হল পুরো অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দু।আর সে গান গাওয়া মানুষটা যদি কালকে ঠিক সময়ে পোশাক না পেয়ে ভার্সিটি যেতে না পারে তাহলে ওর ফ্রেন্ড সার্কেল আর টিচারদের বকা খাবেই।হাহাহা…….
.
.
কাজটা শেষ করে পিছনে ফিরতেই দেখি তানভীর,,

“আরে এইটা কে?এই টাইমে আমার রুমে কি কর?!”(ভ্রু কুচকিয়ে)
“কিছু না।নোট খাতা নিতে আসছি।”
“তোমার নোট খাতা আমার কাছে কিভাবে এল?!
“ওইযে ভুলে খাতা এক্সচেঞ্জ হয়ে গিয়েছিল।আপনার নোটখাতা আমার কাছে আর আমারটা…..”
“দেখি….।আরে এই খাতাটা কতদিন ধরে খুঁজছিলাম।কিন্তু পায়নি।তোমার কাছেই এটা ছিল।যাক ভালোই হয়ছে শেষ পর্যন্ত তোমার কাছ থেকে পেয়ে গেলাম।এই খাতাটা না পেলে পরীক্ষায় নিশ্চিত ফেল করতাম।থ্যাংকস”
“হিহিহি…।ওয়েলকাম।”
“তমা…..”
“জ্বী।”
আজব এইভাবে তাকিয়ে আছে কেন?(ভ্রু কুচকিয়ে)

কিছু বুঝার আগেই তানভীর আমাকে জড়িয়ে ধরল।
“কি হচ্ছে?”
“একটু এইভাবে থাকি।ভালো লাগছে।”
“আরে….আরে….ছাড়েন।আপনার মাথা পুরা গেছে।এইভাবে কোন মেয়েকে জড়িয়ে ধরে নাকি?ছাড়ুন বলছি।”
“উফফ,,,বোরিং একটা।একটু জড়িয়ে ধরলে কি হয় শুনি।আচ্ছা শোন,,”
“জ্বী কান দুইটা খোলায় আছে।বলেন,,,”

আমার কপালে চুমো দিয়ে বলল,,”থ্যাংকস।”
“For what……!”

মুচকি হেসে,,,,নোট খাতাটা আমাকে দেখিয়ে,,এর জবাব দিল।

ব্যাটা সামান্য নোট খাতার জন্য একটা মেয়েকে চুমো দেয়।কতবড় লুচু একটা।সমস্যা নাই।কালকেই এর সব হিসেব হবে।জাস্ট কালকের দিনটায় অপেক্ষায় আছি আমি।
.
.
রাতের ডিনারটা সেদিন আন্টির জোরাজোরিতে করতেই হল।
“তানভীর তমাকে গাড়িতে করে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আয়।”
“আন্টি গাড়ি লাগবে না।এখান থেকে আমাদের বাসায় যেতে মাত্র ৫মিনিট লাগে।”
তানভীর – “ও…..তাহলে একসাথে হেঁটে যায়। কি বল?(মুচকি হেসে)

তমা-“লাগবে না।আমি একা যেতে পারব।”

তানভীর-রাতের বেলায় একা যাওয়া কিন্তু নিরাপদের হবে না।মেয়ে মানুষ তুমি। একা গেলে অনেক ঝামেলা হতে পারে।”

তমা-“উফ,,অসহ্য,,আচ্ছা চলেন তাহলে।”

এরপর দুইজন একসাথে হেঁটে বাসায় যাচ্ছি। হঠাৎ কিছু বুঝার আগেই তানভীর আমাকে নিয়ে এক জায়গায় লুকিয়ে গেল।

“কি হয়েছে?এইভাবে আমাকে নিয়ে লুকিয়ে গেলেন কেন?এই বলেনতো আপনার উদ্দেশ্য কি?”
“এই মেয়ে চুপ থাকতো।আমার কোন খারাপ উদ্দেশ্য নেই বুঝলে।এখন যদি সামনে হাঁটি না তাহলে আমাদের দুইজনের অবস্থায় খারাপ হবে।”
“মানে,”
“সামনে চেয়ে দেখ কয়েকটা গাজাখোর লোক।এদের সামনে দিয়ে এখন গেলে,,এরা আমাদের কিছু একটা করে ফেলতে পারে।ওই দেখ ওদের সামনে দিয়ে এখন যে দুইটা মেয়ে যাচ্ছে ওদের সাথে এই গাজাখোররা কি করছে।”

চোখ দিয়ে সামনে যা দেখলাম তা দেখে আমার আত্নাটায় কেঁপে উঠল।চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে।

“তানভীর আমাদের উচিত ওই দুইটা মেয়েকে এখন সাহায্য করা।”
“আরে পাগল নাকি,,ওরা কয়জন দেখছ?এদের হাতে ছুড়ি থেকে শুরু করে অনেক কিছু থাকে।এদের সাথে শক্তিতে আমি একা পেরে উঠব না।এত তাড়াতাড়ি আমার মরার ইচ্ছা নাই।”
“তাই বলে আপনি এইভাবে কাপুরুষের মতন চুপচাপ বসে থাকবেন”
“কিছু করার নেই।এই রাস্তা দিয়ে যাওয়া যাবে না।উল্টা রাস্তা দিয়ে যেতে হবে।চল…..হাত ধরে টেনে আমাকে সেখান থেকে ও নিয়ে গেল। ”

সেইদিন তানভীরের প্রতি মনে মনে খুব ঘৃণা জন্মাল।পরে দিয়ে আবার ভাবলাম,, সত্যিই তো ও এতজনের সাথে কিভাবে পেরে উঠবে।তারপরও মনটা বারবার বলছিল,,একজন পুরুষ হিসেবে ওর সেখানে গিয়ে ওই মেয়ে দুইটার সাহায্য করা উচিত ছিল।
.
.
“আচ্ছা,,তানভীর আজ ওদের জায়গায় যদি আমি হতাম তাহলে আমাকে কি আপনি এইভাবে বিপদের মুখে ফেলে চলে যেতেন?”
“হয়তবা,,জানের মায়া সবার আছে।”

এই কথা শুনে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।

“আরে রিলেক্স।মজা করছিলাম।তোমার সাথে এইরকম খারাপ কিছু হবে না।আর হলেও আমি কখনো তোমাকে ফেলে যাব না।”

ওর এই কথায় মনের মধ্যে এক ধরণের শান্তি কাজ করছিল।সেদিন কেন জানি না মনে হল হয়ত ও আমার জন্য সব কিছুর সাথে লড়াই করতে পারবে।ও কোন বিপদে আমাকে পড়তে দিবে না।