বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1200



ধষিতা_বউ পার্ট: ৬

0

ধষিতা_বউ

পার্ট: ৬

#Rabeya Sultana Nipa

 

দীর্ঘ এক বছর পর প্রাপ্তিদের বাড়ীতে আনন্দের ঝলক। অনেক ঝড়ঝাপটা দিয়েই কাটিয়েছে দিন গুলো।প্রাপ্তিদের বাড়ীটা সুন্দর করে সাজিয়েছে আসিফ।সব কাজ গুলো নিজের হাতেই করছে আসিফ।কারণ আজ তার আদরের বোন প্রাপ্তিকে দেখতে আসছে।কিন্তু প্রাপ্তির মন ভালো নেই।তারা কি তার ব্যাপারে সব জেনেই তাকে দেখতে আসছে? এই ব্যাপারে ভাইয়ার সাথে কথা বলতে হবে। কথা বলবোই বা কিভাবে সকাল থেকে একটা বারের জন্য ভাইয়ার দেখা পেলাম না।কাজ নিয়ে পড়ে আছে।মনে হচ্ছে আজকেই বিয়ে।আসিফ অরণীর রুমে গিয়ে, এই অরণী প্রাপ্তিকে একটু সাজিয়ে দিস তোর হাতে।ও তো সাজগোছ করতে একদম পছন্দ করেনা।

অরণী -ভাইয়া তুই চিন্তা করিস না আমি আছি না।তুই অন্য দিক সামলিয়ে নে।
প্রাপ্তির মা এসে বললো, আসিফ এইদিকের আয়োজনটা কেমন চলছে?

আসিফ -আম্মু আমি সব সামলিয়ে নিয়েছি।তোমরা চিন্তা করোনা।

নিলিমা বেগম -আসিফ! প্রাপ্তি তো সকাল থেকে রুমেই বসে আছে তুই ছাড়া তো কারো সাথে কথা ও বলে না।একটু গিয়ে দেখনা।

আসিফ -হেঁ ঠিকি বলেছো দেখি কি করে।
আসিফ প্রাপ্তির রুমে গিয়ে দেখে গান ছেড়ে দিয়ে খাটের এক কোণায় চোখ বন্ধ করে মাথার উপর হাত রেখে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে।আসিফ একটা চেয়ার টেনে সামনে বসলো। গালের মধ্যে হাত রেখে,আমার বোনের কি মন খারাপ আজকের দিনে?

প্রাপ্তি চমকে উঠে ভাইয়া তুই? কখন এলি?

আসিফ -এখনি। এইভাবে মনমরা হয়ে আছিস কেন?

প্রাপ্তি -ভাইয়া! ছেলেরা কি সব জেনেই আসছে নাকি না জেনে?
আসিফ কথা কাটানোর জন্য তুই যা ফ্রেশ হয়ে নে একটু পর ওনারা এসে যাবে।

প্রাপ্তি -ভাইয়া এইটা আমার আনসার নয়।
আমি চাইনা আমার কোনো বিষয় গোপন থাকুক।ওনারা যদি সব জেনে এগুতে চান তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই।

আসিফ -এই নিয়ে তুই চিন্তা করিসনা,আমি আছিতো।কথাটা বলেই আসিফ উঠে গেলো।
অরণী প্রাপ্তির রুমে এসেছে প্রাপ্তিকে রেডি করাবে বলে।অরণী কে দেখে প্রাপ্তি মুছকি একটা হাঁসি দিয়ে আমাকে তোর সাজাতে হবেনা।আমি নিজেই হালকা সেজে নিচ্ছি।

অরণী -ওকে আপু।আমি তাহলে আসি।ছেলেরা নাকি এসে গেছে আমি দেখে আসি।
নিলিমা বেগম অরণীকে ডেকে তুই এখন ওদের সামনে যাওয়ার দরকার নেই।প্রাপ্তিকে নিয়েই একসাথে যাস।

অরণী -ঠিক আছে আম্মু।(নাস্তার প্লেট হাতে নিতে নিতে)আচ্ছা আম্মু আপুকে যে দেখতে আসছে ওই ছেলের নাম কি? কি করে?

নিলিমা বেগম -ওমাঃ তুই জানিসনা?
ছেলের নাম সিয়াম,বিজনেস করে।
কথাটা শুনেই অরণীর হাত থেকে প্লেট গুলো পড়ে গেলো।

নিলিমা বেগম -তুই এইটা কি করলি আজকের এই শুভ দিনে ভাঙাভাঙি শুরো করলি।
নিলিমা বেগমের মুখে সিয়ামের নামটা শুনে অরণী অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো সিয়াম পারলো আমাকে এইভাবে ঠকাতে? আমরা দুজন দুজনকে এতো ভালোভাসি আর সে কিনা,,,,,,,, এইটা কিভাবে পারলো সিয়াম।ঠিক আছে ও যখন ভেবে নিয়েছে আপুকে বিয়ে করবে তাহলে আমি এর মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবো না।আমার আপু অনেক কষ্ট পেয়েছে আমি আর ওকে কোনো কষ্ট পেতে দিবোনা।সিয়ামকে নিয়ে আপু যেন সুখে থাকে তার ব্যবস্থাই করবো। আসিফ এসে আম্মু তোমাদের হলো ওদেরকে নাস্তা দিতে হবেতো।

অরণী আস্তে করে আসিফকে জিজ্ঞাস করলো,ভাইয়া ছেলে আসছে?

আসিফ -নারে,,,,,ছেলের মা,বাবা,চাচা,আর বোন আসছে,ছেলে নাকি বিজনেসের কাজে ব্যস্ত থাকায় আসতে পারেনি।যাইহোক তুই প্রাপ্তিকে নিয়ে আয়।আমি এইদিকটা দেখছি।

প্রাপ্তির ইচ্ছে করছিলোনা ছেলে পক্ষের সামনে যেতে কিন্তু কি করবে সবার মুখের দিকে তাকিয়ে যেতে হবে।অরণী প্রাপ্তিকে এনে তাদের সামনে বসালো। সিয়ামের মা উঠে এসে প্রাপ্তি সাথেই বসলো।অনেক মিষ্টি একটা মেয়ে,কি নাম তোমার?

প্রাপ্তি -জ্বী,,, মিফতাহুল জান্নাত প্রাপ্তি।

সিয়ামের মা -মানুষ টা যেমন সুন্দরী নামটাও রেখেছে সেই রকম।

সিয়ামের মা -আমার আর কিছু জিজ্ঞাস করার নেই তোমাদের আছে?

সিয়ামের বাবা- না আমাদেরও নেই।প্রাপ্তির বাবার দিকে তাকিয়ে,আজাদ সাহেব! মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়েছে।

আজাদ সাহেব -আলহামদুলিল্লাহ্‌। অরণী প্রাপ্তিকে নিয়ে যাও।

সিয়ামের বাবা -আজ তো আমার ছেলে আসতে পারিনি।আগে আপনারা সিয়ামকে দেখুন। দেখে পছন্দ হলে না হয় দিন তারিখ ফেলা যাবে।

আজাদ সাহেব -আমাদের কিন্তু দুটো বিয়ে একসাথেই হবে।

আজাদ সাহেবের কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।আসিফের মনে প্রশ্ন জাগলেও সবার সামনে করা ঠিক হবেনা ভেবেই আর কিছু বলেনি।

সিয়ামের বাবা -এতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।তো বেয়াই সাহেব আজ তাহলে উঠি।মেয়ে কিন্তু আমার ঘরের লক্ষ্মী হয়েই থাকবে।

ছেলের বাড়ীর সবাইকে বিদায় দিয়েই আসিফ আজাদ সাহেব কে বললো,আব্বু! দুটো বিয়ে মানে? কার কার বিয়ে?

আজাদ সাহেব মুছকি একটা হাঁসি দিয়ে আসিফের কাঁধে হাত রেখে, অরণীর বিয়ে।
ভাবছি দুই বোনের বিয়ে একসাথেই দিবো।

আসিফ -অরণীর জন্য ছেলে দেখেছো নাকি?
আজাদ সাহেব-আচ্ছা পরে বলবো।এখন আমার কাজ আছে।
আসিফ -আব্বু তোমার যা ভালো মনে হয়।

প্রাপ্তি বারান্দায় বসে বই পড়ছে।পাশে অরণী গিয়ে দাঁড়িয়ে আপু জানিস আজকে তোকে পরীর মতো লাগছে।

প্রাপ্তি বইয়ের দিকে তাকিয়েই ওইটা তোর মনের ধারনা।

অরণী -আচ্ছা আপু তুই এই বিয়েতে খুশী?

প্রাপ্তি -সবাই খুশী মানে আমিও খুশী। আমি সবার মতের বাহিরে নয়।
আচ্ছা তুই,,,,, এইসব কেন বলছিস।তোর ভালো লাগেনি?

অরণী নিজের চোখে পানি লুকাতে চেষ্টা করছে আর বলছে, আরে নাহ্ আমি অনেক খুশী তবে তোকে অনেক মিস করবো।

প্রাপ্তি -আমি কি বরাবরের জন্য যাচ্ছি নাকি?

অরণী -তুই দেখিস সিয়াম তোকে এতো ভালোবাসবে তোকে আসতেই দিবেনা।
কথাটা শুনেই প্রাপ্তি বইয়ের থেকে মুখ উঠিয়ে অরণীর দিকে তাকিয়ে, তুই এমন ভাবে বলছি মনে হচ্ছে তোর আগে থেকেই ওই ছেলেকে চেনা।

অরণী -না আপু এমনিই বললাম।

প্রাপ্তি -আব্বু কি বলেছে শুনেছিস?তোকে নাকি কাল দেখতে আসবে।

অরণী -হুম শুনেছি।ভাইয়াকে বলবো আব্বুকে বুজিয়ে এই বিয়ে বাদ দিতে।

প্রাপ্তি -কেন? তোর কি পছন্দের কোনো ছেলে আছে নাকি?

অরণী -আরে নাহ্ এমনি বললাম।আসলে আমার এখন বিয়ে করার কোনো ইচ্ছে নেই।কথাটা বলেই অরণী চলে গেলো।
প্রাপ্তির কাছে অরণী কথা গুলো একটুও ভালো লাগেনি। মনে হচ্ছে কথার মধ্যে কিছু একটা লুকাচ্ছে।প্রাপ্তি ছোট্র একটা নিশ্বাস ফেলে আবার বইয়ের দিকে মন দিলো। আজাদ সাহেব মাগরিবের নামাজ পড়ে বাহিরে থেকে এসে নিলিমা বেগম কে চা দিতে বললেন।আসিফ নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এসে, আব্বু তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো।

আজাদ সাহেব -হ্যাঁ কি বলবি বল?

আসিফ তার মাকে ডেকে বললো তাকেও চা দিতে,আচ্ছা আব্বু অরণীর হঠাৎ করে বিয়ে দিতে চাইছো? ছেলেটা কি তোমার জানা শুনা কেউ?
আজাদ সাহেব -আরে নাহ্ তেমন চিনিনা।আমার এক কলিং এর ভাগ্নে। শুনেছি প্রখ্যাত ব্যবসায়ী আবিদ চৌধুরীর ছোটো ছেলে ইকবাল মাহমুদ আয়ান। যদি অরণীকে দেখে ভালো লাগে তাহলে নাকি একসাথে আংটি পরিয়ে যাবে।

আসিফ -তাহলে তো ভালো কথা।
নিলিমা বেগম রান্নাঘর থেকে আসতে আসতে বললেন এতো বড় ঘরের ছেলে আমাদের মেয়েকে কি পছন্দ হবে?

আসিফ -আম্মু এখনকার ছেলেরা টাকাপয়সা দেখে বিয়ে করেনা।মেয়ে সুন্দরী দেখে বিয়ে করে।
নিলিমা বেগম মুচকি হাঁসি দিয়ে আজাদ সাহেবের দিকে তাকিয়ে তুমি কিছু বুজেছো? তোমার ছেলে বোন কে দিয়ে আগেই বুজিয়ে দিচ্ছে ঘরে কেমন মেয়ে আনতে হবে।
আজাদ সাহেব -হুম ভাবছি মেয়ে দুটোকে পরের ঘরে দিয়ে নতুন আরেক টা মেয়ে নিয়ে আসবো।কি বলো আসিফের আম্মু?

নিলিমা বেগম -কথাটা ফেলে দেওয়ার মতো না বলে হেঁসে দিলেন।

আসিফ লজ্জা পেয়ে আম্মু তুমিও না বলেই নিজের রুমে চলে গেলো।

নিলিমা বেগম পিছন থেকে ডেকে বললো মেয়েদের মতো লজ্জা পাচ্ছিস কেনো? বিয়ে তো একদিন করতেই হবে।

চলবে,,,,,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:৫

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:৫

#Rabeya Sultana Nipa

 

প্রাপ্তিদের বাড়ীতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিলিমা বেগম খাওয়াদাওয়া সব ছেড়ে দিয়েছে।এক নাগাড়ে কান্না করেই যাচ্ছে।আসিফ আর আজাদ সাহেব থানায় ডায়রি করেছে।অরণী তার মায়ের পাশে বসে আছে।নিজের বোনের এই অবস্থার জন্য কি ও নিজেই দায়ী? ভাইয়াকে কি সব বলবো? আচ্ছা ভাইয়া কি জানে সায়মন ছাড়া পেয়েছ?

আসিফ ড্রইরুমে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে।অরণী মাথা নিচু করে আসিফের সামনে এসে দাড়িয়েছে দেখে আসিফ কান থেকে ফোন নামিয়ে, কিরে কিছু বলবি?

অরণী আমতা আমতা করে বললো,ভাইয়া সায়মন আপুকে নিয়ে যায়নিতো?

আসিফ অরণীরর কথা শুনে অবাক হয়ে সায়মন তো জেলে আছে।

অরণী -সায়মন কে তার বাবা ছেড়ে নিয়ে এসেছে।ও হয়তো আমাদের পরিবারের উপর প্রতিশোধ নিতেই হয়তো আপুকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে।

আজাদ সাহেব এসে অরণী কে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন তুই এতো কিছু জেনেও চুপ করে ছিলি।তুই কি করে তোর বোন কে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে চুপ করে ছিলি।আমার মেয়েটা এখন কি অবস্থায় আছে আল্লাহ্‌ ভালো জানে।কথা গুলো বলতে বলতে আজাদ সাহেব কান্না ভেঙে পড়লেন।(আসিফের দিকে তাকিয়ে)আসিফ আমাদের তো সব শেষ হয়ে গেলো। এখন কি হবে? প্রাপ্তিকে কোথায় খুঁজবো?

আসিফ -আব্বু তুমি শান্ত হও আমি দেখছি।
অরণী তুই আম্মুর দেখে খেয়াল রাখিস আমি আরেক বার থানা থেকে আসছি।কথা বলেই আসিফ বেরিয়ে পড়ল।
কাটতে থাকে দিন।বাহিরের মানুষের আনাগোনায় কেটে যায় প্রাপ্তিদের বাড়ী। নিলিমা বেগম জ্ঞান হারায় আবার ঠিক হয়।এইভাবেই কেটে যায় তিনদিন। এইতিন দিনও মেয়েটার খুঁজ মিলেনি। বিকেল বেলা
ড্রইংরুমে বসে চা খাচ্ছে আসিফ।প্রাপ্তি হারিয়ে যাওয়ার পর তাদের চাচা,চাচী মামা,মামী সবাই এই বাড়ীতেই আছে।আসিফের ফোন বেজে উঠতেই ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে আননোনাম্বার থেকে কল আসছে।

আসিফের মামা ফোন বাজতেছে দেখে, কি রে আসিফ ফোন রিসিভ করছিস না কেন? ফোনের দিকে তাকিয়ে কি দেখছিস?

আসিফ -আসলে মামা, নাম্বারটা ছিনিনা।

মামা- রিসিভ করে দেখ প্রাপ্তির কোনো যদি খবর পাওয়া যায়।

আসিফ ফোন রিসিভ করতেই একজন মহিলা, আসসালামু আলাইকুম

আসিফ -ওয়ালাইকুম সালাম,

মহিলা -নাম্বারটা কি আপনার?

আসিফ -জ্বী আমার আপনি কে বলছেন?

মহিলা -আপনি আমাকে ছিনবেন না।আমি একজন টিচার, আজ সকালে ভোর ৫.০০ টায় একটা মেয়েকে আমার বাড়ীর সামনে একটা গাড়ী এসে ফেলে দিয়ে গেছে।মেয়েটার অবস্থা খুবি খারাপ।মেয়েটা জ্ঞান হারাবার আগেই আমাকে এই নাম্বারটা দিয়েছিলো।

আসিফ বসা থেকে দাঁড়িয়ে পাগলের মতো হয়ে আপনি কোথায় আছেন আমাকে বলুন।আপনি যাকে পেয়েছেন ও আমার বোন কোথায় আছে ও। আমি এখনি আসছি।

মহিলা -জ্বী আমি ওকে হাসপাতালে নিয়ে আসছি।আমি আপনাকে এসএমএস এ ঠিকানা দিয়ে দিচ্ছি আপনারা আসুন।
প্রাপ্তির কথা শুনে সবাই পগলের মতো হয়ে গেছে নিলিমা বেগম দৌঁড়ে এসে, আসিফ! প্রাপ্তি কোথায় আছে আমিও যাবো তোদের সাথে।

আসিফ -আচ্ছা চলো।আব্বু,মামা তাড়াতাড়ি চলো।

ওই মহিলা আসিফকে ঠিকানা দেওয়াতে সবাই হাসপাতালে চলে আসছে।

আসিফ মহিলার সামনে গিয়ে আপনি আমাদের ফোন দিয়েছিলেন?

মহিলা -জ্বী। ও কেবিনেই আছে।সকাল থেকে এখনো জ্ঞান ফিরেনি ডাক্তার আবার দেখছে আপনারা বসুন।
নিলিমা,অরণী বসে কান্নাকাটি করছে,মেয়েটাকে এতো কাছে পেয়েও দেখতে পারছিনা।আমার মেয়েটার সাথে না জানি কি কি ঘটেছে আল্লাহ্‌ ভালো জানে।

ডাক্তার প্রাপ্তির কেবিন থেকে বের হতেই আসিফ আর আজাদ সাহেব দৌঁড়ে কাছে গিয়ে জিজ্ঞাস করেতে লাগলো,

আসিফ-ডাক্তার আমি ওর ভাই,ওর কি হয়েছে?

ডাক্তার -দেখুন আমরা পুলিশকে খবর দিয়েছি ওনারা আসছে।আর আমারা মেয়েটাকে দেখে যা বুজেছি মেয়েটাকে Rape করা হয়েছে।ওর জ্ঞান এখনো ফিরেনি আশা করি কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে আসবে।আপনার অপেক্ষা করুন।

কথা গুলো যখন ডাক্তার বলছিলো মনে হচ্ছে সবাই একটা ঘোরের মধ্যে ছিলো।
প্রাপ্তির বাবা নিস্তব্ধ হয়ে পাশের চেয়ারটায় বসে পড়লো।মনে হচ্ছে কলিজাটা ছিড়ে কেউ নিয়ে গেছে।আসিফ দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে অরণীর দিকে একদৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে।আসিফের মামা আসিফের কাঁধে হাত দিয়ে বললো আসিফ তুই যদি এইভাবে ভেঙে পড়িস তাহলে এই মানুষ গুলোকে কে দেখবে।কথাটা বলতেই আসিফ তার মামাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো,মামা আমি কখনো নিজের কথা ভাবিনি শুধু এই বোনদের জন্য,নিজের সপ্ন গুলকে মাটি ছাপা দিয়ে নিজের বোনদের সপ্ন গুলোকে দেখতে শিখেছি।মামা! মামা! আপনিই বলেন আমার বোনের এখন কি হবে?আমার বোন তো কারো ক্ষতি করে নাই তাহলে ওর কেন এই অবস্থা হলো।

মামা -আসিফ তুই এইভাবে ভেঙে পড়িস না।তোকে শক্ত থাকতে হবে।প্রাপ্তির সামনে গিয়ে এইভাবে কান্নাকাটি করলে মেয়েটা কি করবে বল?
কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এসে বললো আপনাদের রুগীর জ্ঞান ফিরেছে।তবে সাবধান ওকে বেশি কথা বলাবেন না।কান্নাকাটি করবেননা একটু পর পুলিশ এসে জিজ্ঞাসা করবে।সবাই প্রাপ্তির কেবিনে ঢুকলো।নিলিমা বেগম আর অরণী দৌঁড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো।প্রাপ্তি কিছু বলছেনা চুপচাপ হাত পা গুলোকে গুটিয়ে বসে আছে।কারো দিকে তাকাচ্ছে না।নিছের দিকে তাকিয়ে আছে আর চোখের পানি গুলো অঝরে ঝরছে ।
নিলিমা বেগম -মা রে,,,, তুই কথা বল! তুই এইভাবে চুপ করে থাকিস না।প্রাপ্তি কথা বলছে না দেখে আসিফ অরণীকে সরিয়ে দিয়ে নিজে প্রাপ্তির পাশে বসলো।প্রাপ্তি আসিফ কে জড়িয়ে ধরে ডুকরে ডুকরে কাঁদতে শুরু করলো।

আসিফ -প্রাপ্তি! তুই এইভাবে কাঁদিস না।ভাইয়া সব ঠিক করে ফেলবো।প্রাপ্তি তোর কিচ্ছু হয়নি।মনের ভেতর খারাপ কোনো চিন্তা আনবিনা।দেখ আমরা সবাই তোর পাশে আছি।
কথা গুলো শুনে প্রাপ্তি আরো জোরে কাঁদতে লাগলো।
প্রাপ্তি কারো সাথে কথা বলেনা।সারাক্ষণ শুধু কাঁদতেই থাকে।এক দুইটা বললেও তাও আসিফের সাথে।দুইদিন পর হাসপাতাল থেকে বাড়ীতে নিয়ে এসেছে প্রাপ্তিকে।প্রাপ্তিকে সময় দেওয়ার জন্য আসিফ অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে।বাসায় এসে নিজের রুমের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজের ভাবনার জগত টাকে ভাবছে।একনিমিষেই মানুষের জীবনটা কিভাবে পাল্টে যেতে পারে।এইতো কয়দিন আগেও তাদের ঘরটায় কতো হৈ চৈ ছিলো। কতো হাঁসি খুশি ছিলো আর আজ ইচ্ছে করছে নিজের জীবন টাই শেষ করে ফেলি।
পিছন থেকে আসিফ এসে বললো আরে তুই এইখানে? আমি ভাবলাম ড্রইংরুমে সবাই মিলে আড্ডা দিবো তা না তুই এইখানে দাঁড়িয়ে আছিস।আসিফের কথা শুনে চোখের পানি গুলোকে আড়াল করে ভাইয়া তুই যা আমার ইচ্ছে করছে না।

আসিফ -সব কিছু থেকে নিজেকে সরাতে ছাইছিস?প্রাপ্তি! মানুষে জীবনে কতো কিছুইতো ঘটে সবকিছু মনে রাখতে নেই।দেখবি একদিন তোর জীবনে এমন কেউ আসবে তোর পিছনে ফেলা দিন গুলো মনে করতেই দিবেনা।

কথাটা শুনে প্রাপ্তি আসিফকে জড়িয়ে ধরে এমন কেউ আর আসবেনারে ভাইয়া। কেউ তোর বোন কে বিয়ে করবে না।ধর্ষিতা মেয়েকে কেউ বিয়ে করবে না।

আসিফ প্রাপ্তির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো, পুলিশের সামনে সেদিন মিথ্যা বললি কেন যে তুই কাউকেই ছিনিস নাই?
আমি জানি ওই ছেলেটা সায়মন ছিলো।তুই না বললেও আমি জানি।

প্রাপ্তি -আমার জীবনটা তো শেষ হয়ে গেছে।সমাজের লোক গুলো আমার জন্য তোমাদের কথা শুনায়।কেউ এখন আর আমায় ভালো চোখে দেখেনা।আমি চাই না অরণীর জীবন ও সেই রকম হোক। সায়মন বলেছিলো আমি যদি কিছু বলি অরণী অবস্থাও নাকি আমার মতো হবে।জানিস ভাইয়া সেইদিন আমি তোকে অনেক বার ডেকেছিলাম কিন্তু তুই শুনিসনি।অবশ্য এতে তোর কোনো দোষ নেই। জানিস একেকটা দিন আমি যে কিভাবে কাঁটিয়েছি তা শুধু আমি জানি।
প্রাপ্তির কথা গুলো শুনে আসিফের বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে।চোখ গুলো লাল হয়ে গেছে।ইচ্ছে করছে সায়মন নামের কীট টাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিতে।সায়মন কে আমি কখনোই ছাড়বো না।আজ প্রাপ্তিকে শান্তনা দেওয়ার ভাষা আমার নেই।প্রাপ্তি! জীবনে কখনো নিজেকে ছোটো করে দেখবিনা।তুই কয়েকটা দিন সময়নে দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।

চলবে,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট: ৪

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট: ৪

#Rabeya Sultana Nipa

 

আয়ান- প্রাপ্তি এই বুকে যে মাথা রাখলে কিছু শুনতে পাচ্ছো?

প্রাপ্তি- হুম,, তোমার,,,,,,, ধ্যাত, লজ্জা পেয়ে আর কিছু না বলে প্রাপ্তি রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। প্রাপ্তি আজ আয়ানের কাছাকাছি এই প্রথম গিয়েছে।এক অজানা ভালোলাগা কাজ করছে তার মনে।বার বার লুকিয়ে লুকিয়ে এসে আয়ান কে দেখছে।আয়ান সেই জায়গা এখনো থমকে দাঁড়িয়ে আছে।মনে হচ্ছে কিছুক্ষণের জন্য সে সপ্ন দেখছিলো।প্রাপ্তি তার সপ্নে এসে তার কাছে ধরা দিয়েছে।মেয়েটার মধ্যে এক মায়া ভরা নেশা কাজ করে।যেই নেশা আমি ছাড়তে চাই না।আয়ান কথা গুলো ভাবতে ভাবতে রুম থেকে বেরিয়ে এসে ড্রইংরুমে বসলো।

আজাদ সাহেব -কি হয়েছে আয়ান এইভাবে নিস্তব্ধ হয়ে আছো কেন? কিছু হয়েছে?

আয়ান -চমকে উঠে,, কই না তো কিছু হয়নি।আসলে আমি কাল সকালে চলে যাবো।প্রাপ্তি আর রেশী দুইদিন থাকবে বলছে।তাই নিয়ে ভাবছি।
আজাদ সাহেব -কিছু না হলেই ভালো।তবে তুমি বাসায় একা থাকবে নাকি? তুমি এই দুই দিন এখান থেকে অফিসে গেলেই তো পারো।
আয়ান -আব্বু,এখান থেকে আসা যাওয়াটা আমার জন্য লং জার্নি। সমস্যা নেই দুই দিনেরি তো ব্যাপার। কথাটা বলে আয়ান নিজেই ভাবছে প্রাপ্তি ছাড়া থাকতে পারবো আমি? কিন্তু কি করবো বিয়ে পর পাগলী টা এই ফাস্ট আমার কাছে কিছু ছেয়েছে এই বাড়ীতে সেই দুইটা দিন থাকতে চায়।আমার সময় হয়ে উঠে না তাই ওর এই বাড়ীতে আসা হয়না।

পরের দিন সকাল বেলা আয়ান অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।প্রাপ্তি কোর্টটা এগিয়ে দিতে দিতে সত্যিই কি আপনি এই দুইদিন আসবেননা?

আয়ান -(কোর্ট পরতে পরতে)না আসলে কি তোমার মন খারাপ হবে?

প্রাপ্তি- (মন খারাপ করে নিছের দিকে তাকিয়ে)জানিনা!

আয়ান -মন কে জিজ্ঞাস করে ফোন দিও।ভেবে দেখবো।

প্রাপ্তি -আপনি বাসায় একা একা থাকবেন?

আয়ান -(প্রাপ্তির দিকে ফিরে মুছকি হেঁসে)বিশ্বাস নেই আমার প্রতি?

প্রাপ্তি -ওমা,,,,, ছিঃ ছিঃ কি বলেন? আমি বলতে চাইছি একা একা আপনার খারাপ লাগবে না?

আয়ান -(গলাটা নরম করে)তোমার গালে হাত দিই?

প্রাপ্তি মাথাটা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক বুজিয়ে নিছের দিকে তাকিয়ে আছে।

আয়ান দুই হাত দিয়ে গাল দুটো ধরে, আই লাভ ইউ।তোমাকে অনেক মিস করবো।
প্রাপ্তি আয়ানের হাত দুটো গাল থেকে নামিয়ে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে, আপনি আমায় কখনো ছেড়ে যাবেননা তো?

আয়ান -যদি যাওয়ার হতো আরো আগেই যেতাম।এই প্রাপ্তির মায়া ছেড়ে কোথাও গিয়ে এই ইকবাল মাহমুদ আয়ান শান্তি পাবেনা।

প্রাপ্তি -(আয়ানকে ছেড়ে দিয়ে) হয়েছে হয়েছে এইবার যান অফিসের দেরী হয়ে যাবে কিন্তু।

আয়ান অফিসে যাওয়া পর থেকেই প্রাপ্তির মন খারাপ হয়ে আছে।এইখান থেকে আয়ানকে অফিসে একঘণ্টা আগেই যেতে হয়েছে।আয়ানের অফিস এইখান থেকে দূরে। প্রাপ্তির আম্মু রান্নাঘরে রান্না করছে অরণী বসে বসে পেপার পড়ছে।প্রাপ্তি এসে তার আম্মুর কাছে রান্নাঘরে ঢুকতে যাবে তখনি অরণী বলে উঠলো, আপু এইদিকে দেখে যা আজকের পেপারে কি আসছে।অজ্ঞাত একটা মেয়েকে কেউ ধর্ষন করে মেরে ডোবায় ফেলে রেখেছে।অরণীর মুখের কথাটা শুনেই প্রাপ্তি মাথা ঘুরে পড়ে গেলো।প্রাপ্তির আম্মু রান্নাঘর থেকে দৌঁড়ে এসে চিৎকার দিয়ে, অরণী তুই এইটা কি করলি?রেশীও দৌঁড়ে এসে ভাবীর কি হয়েছে? জ্ঞান হারালো কি ভাবে?

নিলিমা বেগম-অরনী আগে পানি নিয়ে আয়।রেশী একটু ধরোতো আপাদত সোপায় নিয়ে বসাই।

রেশী প্রাপ্তিকে ধরে সোপায় বসাতে বসাতে আমি কিছু বুজতেছি না ভাবীর কি হলো একটু আগেও তো ঠিকি ছিলো।

অরণী দৌঁড়ে এসে প্রাপ্তির চোখে মুখে পানি দাওয়াতে আস্তে আস্তে প্রাপ্তি চোখ খুললো।
নিলিমা বেগম আর রেশী পাশে তাকে ধরে বসে আছে।অরণী পানির গ্লাস নিয়ে তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।এইখানে কিছু না বলে নিজেকে নিলিমা বেগম আর রেশীর কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিস্তব্ধ হয়ে নিজের রুমের দিকে হাঁটতে শুরু করলো।দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলো প্রাপ্তি।অরণী কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো।নিলিমা বেগম আর রেশী চুপ করেই বসেই আছে। রেশী মনে মনে ভাবছে ভাইয়া কে কি ফোন দিয়ে কথাটা বলবো?না শুনালে তো আবার আমাকেই রাগ দেখাবে।
আচ্ছা ভাবীর কি হয়েছে হঠাৎ?হয়তো সবাই জানে আমাকেই বলছেনা।
আকাশটা আজ কালো হয়ে আসছে।প্রাপ্তি মতো হয়তো তারও মন খারপ হয়েছে।আকাশ তো মন খুলে কাঁদতে পারে কিন্তু আমি তো পারিনা।আমার কেন লুকিয়ে কাঁদতে হয়।নাহ্ আজ আকাশের সাথে আমিও মন খুলে কাঁদতে চাই।কথাটা ভাবতেই প্রাপ্তি দৌঁড়ে ছাদে চলে গেলো।প্রাপ্তিকে এইভাবে ছাদে যেতে দেখে রেশী উঠে গিয়ে আয়ান কে ফোন দিয়ে সব বললো, অভ্রকে সব সামলাতে বলে আয়ান গাড়ী নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
ছাদে গিয়ে দোলনায় বসে আছে প্রাপ্তি বৃষ্টিতে ভেজার আশায়।আকাশে বিদ্যুৎচমকাচ্ছে,ঝিরঝির বৃষ্টিও পড়ছে চোখের পানি গুলোকে বৃষ্টির পানির সাথে মিশাইতে চাইছে।নিজের কষ্ট গুলোকে হয়তো বৃষ্টির সাথে ভাগ করতে চাইছে।মনে হচ্ছে এইতো সেইদিনের ঘটনা, কিন্তু না ওই ঘটানার পর ৩ টা বছর কেটে গেছে।এই ৩ টা বছরের একেক টা দিন কিভাবে কাটিয়েছে এইটা শুধু নিজেই জানে।কাউকে বুজতে দেয়নি কখনো বুজাতে চায়ও নি,কিন্তু মাঝ খানে আয়ান জীবনে চলে আসে।ছেলেটা আমার কাছ থেকে কিছুই পায়নি।উল্টো আমার কারণেই তাকে ঘর ছাড়তে হয়েছে। হারাতে হয়েছে সবার ভালোবাসা।সেইদিনের তারিখটা প্রাপ্তি কখনো ভুলতে পারবেনা এপ্রিলের ১০ তারিখ সকাল বেলা,ভার্সিটিতে যাবে বলে রেডি হচ্ছে প্রাপ্তি।প্রাপ্তি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে আর অরণী এইসএসচি ফাস্ট ইয়ার।সবকিছু ভালোই চলছিলো।প্রাপ্তির সব বন্ধুরা বলতো তোদের পরিবারের মতো আরেকটা পরিবার দেখিনি।একজনের প্রতি একজনে কি ভালোবাসা।সবাই বলে বোনে বোনে নাকি অনেক ঝগড়া হয় কিন্তু আমার আর অরণীর মাঝে কখনোই ছিলো না।অবশ্য অরণী একটু চঞ্চল প্রকৃতির।ওর একটা বাজে অভ্যাস আছে,সেটা হলো ছেলেদের নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরানো, ওর যে বাজে অভ্যাস আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে সেটা কখনোই ভাবিনি।

অরণী পিছন দিক থেকে এসে বললো, আপু তুই ভার্সিটিতে যাচ্ছিস?

প্রাপ্তি -হুম ক্লাস আছে,,কেন? তুই যাবিনা?

অরণী -না আপু আমার ভালো লাগছে না।তুই যা। আর শুন সাবধানে যাস।

প্রাপ্তি -কেন? কি হয়েছে? হঠাৎ এই কথা বলছিস?

অরণী -তোর মনে আছে সায়মনের কথা?

প্রাপ্তি -হুম মনে থাকবে না কেন? ওই ছেলে তো তোকে অনেক ডিস্টার্ব করতো একদিন তো তুই ভেবে আমাকেই ডিস্টার্ব করছিলো আমি বাসায় এসে বলাতে আব্বু থানায় ওর নামে ডায়রি করেছিলো। এখন তো জেলেই আছে।

অরণী -আরে সেই জন্যই তো বলছি,ওর বাবার টাকার খমতায় নাকি ছাড়া পেয়ে গেছে।তাই বলছি সাবধানে যাস।

প্রাপ্তি ওই নিয়ে তুই চিন্তা করিস না।ভাইয়া যাবে আমার সাথে।
আসিফ শার্টের হাতা ভাজ করতে করতে প্রাপ্তির রুমে এসে কিরে প্রাপ্তি তোর হলো?

প্রাপ্তি -হ্যাঁ আমার হয়ে গেছে চলো।অরণী, আম্মু, আব্বু আমি আসি।

আজাদ সাহেব -আসিফ সাধানে যাস,আর অফিস থেকে একটু তাড়াতাড়ি বাসায় আসিস।
আসিফ -চেষ্টা করবো।(প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে) তুই আবার দাঁড়িয়ে পড়লি কেন? চল!

আসিফ প্রাপ্তিকে ভার্সিটির সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো।কেন জানি প্রাপ্তিকে রেখে আজ যেতে ইচ্ছে করছেনা।মনটা কেমন জানি খচখচ করছে।প্রাপ্তিকে বললে ও সব ঠাট্টা ভেবে উড়িয়ে দিবে।আসিফ মোটর সাইকেলটা নিয়ে একটু দূরে গিয়ে আবার দাঁড়িয়ে পড়লো পিছন ফিরে প্রাপ্তিকে দেখতে যাবে তখন দেখে প্রাপ্তি নেই একটা মাইক্রো চলে যাচ্ছে।আসিফ ভাবলো প্রাপ্তি হয়তো ভার্সিটির ভিতরে ঢুকে গেছে ভেবে আসিফ অফিসের দিকে রওনা হলো।গাড়ীটা আসিফের পাশ দিয়ে যেতেই প্রাপ্তি বার বার হাত দিয়ে ইশারা করছে।প্রাপ্তির মুখটা বাঁধা তাই ডাকতে পারছিলোনা।আসিফ অফিসে গিয়ে পৌঁছানোর ২০ মিনিট পরেই প্রাপ্তির ফ্রেন্ড মেঘলা ফোন দিলো।
আসিফ প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে মেঘলার ফোন।ফোন রিসিভ করে কানে ধরে অফিসের ফাইলটা খুললো।

আসিফ -কি ব্যাপার মেঘলা হঠাৎ ফোন?

মেঘলা -ভাইয়া! প্রাপ্তি আজ ভার্সিটিতে আসবে না?

আসিফ -কি বলছো প্রাপ্তি ক্লাসে যায়নি।আমি ওকে নিজে নিমিয়ে দিয়ে আসলাম।ভালো করে খুঁজে আমাকে ফোন দাও।

মেঘলা আসিফের কথা মত ভার্সিটির সব জায়গায় খুঁজে আসিফ কে ফোন দিলো।

মেঘলা -ভাইয়া প্রাপ্তি তো কোথাও নেই।

আসিফ -(চিন্তিত হয়ে)কি বলছো আমি নিজে ওকে নামিয়ে দিয়ে আসলাম।আচ্ছা তুমি রাখো আমি দেখছি।প্রাপ্তির ফোনে অনেক বার কল দিয়েছে আসিফ।ফোন বেজেই যাচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছেনা।আসিফ বাসায় ফোন দিয়ে আজাদ সাহেবকে বললো থানায় যেতে।অরণী আসিফের ফোনে বলা কথা গুলো শুনে বুজার আর বাকী নেই সায়মন কিছু একটা করেছে।কথাটা ভাবতে অরণী চোখ বন্ধ করে সোপায় বসে পড়লো।ওরা যদি আপু কোনো ক্ষতি করে তাহলে আমি নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবোনা। সায়মের দলের ছেলে গুলোও ভালোনা।ওহ্ঃ আমি এখন কি করি।আচ্ছা আব্বু কি জানে সায়মন জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে।
নিলিমা বেগম মেয়ের কথা শুনে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। কি করবে বুজতে পারছেনা আমার মেয়েটা এইভাবে না বলে কোথাও যাবার মেয়ে ও না।ওর কোনো বিপদ হলো নাতো?নিলিমা বেগম উঠে গিয়ে অরণী কাছে এসে,অরণী! তুই কিছু জানিস প্রাপ্তি কোথায় যেতে পারে?

অরণী -আম্মু আপু তো এইভাবে কোথাও না বলে যায় না।আব্বু আর ভাইয়া আসুক দেখো তারা কোনো খোঁজ পায় কিনা।
এইভাবেই সকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে এলো প্রাপ্তিকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।আসিফ আর আজাদ সাহেব সব জায়গায় খুঁজেছে প্রাপ্তির ফ্রেন্ডদের বাসায়ও খোঁজ করা হয়েছে।এলাকাজুড়ে সবাই জেনে গেছে আজাদ সাহেবের মেয়ে প্রাপ্তিকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।পাশের বাড়ীর মানুষ তো এসে নানান কথা বলাও শুরু করেছে।প্রাপ্তির মা! দেখো মেয়ে হয়তো কারো সাথে ভেগে গেছে।
অন্য একজন বলছে ঠিকি বলেছেন এখনকার মেয়ে কোথাও গেছে পষ্টিনষ্টি কারার জন্য দুইদিন গেলেই চলে আসবে।
আরেকজন বলছে কতোবার বলেছি আসিফের মা! মেয়ে বড় হয়ে বিয়ে দিয়ে দাও এতো পড়িয়ে লাভ কি।এখন দেখেছো মেয়ে চুনকালি মাখিয়ে চলে গেলো।এইভাবে একেকজন একেকভাবে বলেই যাচ্ছে। নিলিমা বেগম ড্রইংরুমের ফ্লোরে পাগলের মতো নিস্তব্ধ হয়ে চোখের পানি ঝরছে আর মানুষের কথা গুলো শুনছে।অরণী আর সহ্য করতে না পেরে সবার উদ্দেশ্য করে বলে ফেললো আপনার কি মানুষ? আমাদের এমন একটা সময় আপনারা এইসব কি বলছেন? হয়তো আমার আপুর অন্য কোনো বিপদআপদ ও তো হতে পারে।আপনারা সবাই এইখানে এসেছেন আমাদের মজা দেখতে? প্লিজ আপনার এখন এইখান থেকে যান।অনেক মজা দেখেছেন আর না।

চলবে,,,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট: ৩

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট: ৩

#Rabeya Sultana Nipa

 

_ দরজা খুলার সাথে সাথেই প্রাপ্তি তার মাকে জড়িয়ে ধরলো।নিলিমা বেগম মেয়েকে কপালে অনেক গুলো চুমু দিয়ে কাঁদোকাঁদো হয়ে বললো কতো দিন হয়েছে তোকে দেখিনা।

মা মেয়ের এমন দৃশ দেখে আয়ানের মুখে হাঁসির ঝলক ফুটে উঠলো।

আসিফ ভিতরের রুম থেকে এসে আম্মু! এইবার তো প্রাপ্তিকে ভিতরে আসতে দাও।সব কিছু কি দরজায় দাঁড়িয়েই শেষ করে ফেলবে?
(আয়ান এগিয়ে এসে আসিফের সাথে কোলাকোলি করলো।)কেমন আছো আয়ান?
আয়ান -জ্বী ভালো।

এমন সময় অরণী আর তার হ্যাজবেন্ড সিয়াম দরজায় দাঁড়িয়ে,

অরনী -আসতে পারি?
কথাটা শুনে সবাই দরজার দিকে তাকিয়ে,

প্রাপ্তি -অরণী!!!!!! আম্মু অরণী আসবে আমায় বলোনি তো?

নিলিমা বেগম -আমার কি দোষ, অরণী আমায় মানা করেছে তোকে সারপ্রাইজ দিবে বলে।

অরণী ভিতরে এসে, কেমন আছিস আপু?

প্রাপ্তি আয়ানের দিকে তাকিয়ে অনেক ভালো আছিরে।সিয়াম তুমি কেমন আছো?

সিয়াম- এইতো ভালো।আপনি তো আয়ান ভাইয়াকে পেয়ে আমাদের সবাইকে ভুলেই গেছেন।

কথাটা শুনে আয়ান মনে মনে তাচ্ছিল্য একটা হাঁসি দিয়ে, ও যদি আমাকে পেয়ে ওর অতীত ভুলে যেতো তাহলে আমার মতো ভাগ্যেবাণ কেউ ছিলো না।যাইহোক
তবে আজকের মতো খুশী আমি প্রাপ্তিকে কখনোই দেখিনি।সবার সাথে কতো সুন্দর করে কথা বলছে।আর আমার কাছে আসলে মনে হয় বোবা একটা মেয়ে সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

নিলিমা বেগম -বাবা তোমরা ফ্রেশ হয়ে এসে বসো আমি নাস্তা নিয়ে আসছি।

আয়ান -আম্মু আপনি আমার জন্য এতো ব্যস্ত হবেন না।আমাকে এই বাড়ীর একজন ভেবেই ভালোবাসবেন।আপনি যদি বাড়তি আপ্যায়ন করেন এতে আমার অনেক খারাপ লাগবে এইভেবে আপনি আমাকে নিজের ছেলে মনে করেন না।

আয়ানের কথা গুলো শুনে নিলিমা বেগম আয়ানের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো, তোমার মতো ছেলের মা হওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।যাও বাবা ফ্রেশ হয়ে আসো।পরে কথা বলবো। এই প্রাপ্তি, যা আয়ানকে রুমে নিয়ে যা।অরণী তোরা দাঁড়িয়ে আছিস কেন? তাড়াতাড়ি যা।রেশী! তুমি (একটা রুম দেখিয়ে)ওই রুমে যাও।ওইখানে তুমি থাকবে।

আয়ান প্রাপ্তির রুমে এসে অবাক হয়ে সব কিছু দেখছে।রুমটা অনেক সুন্দর করে সাজানো। সব কিছু প্রাপ্তির পছন্দমতই।এর আগেও আয়ান এই বাড়ীতে দুইবার এসেছিলো তখন সবকিছু ঝামেলার মাঝেই কাটিয়েছিলো।

প্রাপ্তি ব্যাগ থেকে জামা কাপড় গুলো বের করে ড্রয়ারে রাখতে রাখতে বললো আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন।আম্মু একটু পর আবার ডাকাডাকি শুরু করবে।

আয়ান -এতো জামা কাড়প নিয়ে আসলে থাকবে কতো দিন এইখানে?

প্রাপ্তি -আপনি যেইদিন বলবেন সেইদিনি চলে যাবো।

আয়ান -আমি তো কালই চলে যাবো। তুমি দুইদিন থাকো তারপর না হয় আমি এসে নিয়ে যাবো।

কথাটা শুনে প্রাপ্তি কিছু বললোনা।মনে কেন জানি ধাক্কা লাগলো।ওনাকে ছাড়া আমি এইখানে থাকবো কি করে? এইখানে এমনেতেই দম বন্ধ হয়ে আসে।আমি এসেছি শুনলে পাড়ার চাচী, জেঠী সবাই চলে আসবে আমাদের কথা শুনানোর জন্য।জানি এইগুলো শুনলে আয়ানের খারাপ লাগবে।কিন্তু মানুষের মুখতো আর বন্ধ করা যায়না।আমাদের সমাজের মানুষ গুলোই এই রকম।নিজের ঘরে কি হয়েছে সে নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথা নেই।কিন্তু অন্যের ঘরের দোষ কিভাবে বের করা যায় সেই নিয়েই বেশী চিন্তায় থাকে।

এই প্রাপ্তি ভাবছো টা কি? তোয়ালেটা দাওতো।

প্রাপ্তি -(চমকে উঠে)ওওওওও হ্যাঁ।

আয়ান -কি ওওও হ্যাঁ করছো? যেটা ভাবতেছো সেটা মাথা থেকে ঝেড়ে পেলো।জানি আমি, তোমার ভাবনাতে কি থাকতে পারে।

অরণী প্রাপ্তির রুমে এসে তাদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে,কিরে আপু এখনো দাঁড়িয়ে আছিস। আম্মু নাস্তা নিয়ে বসে আছে,চল!
ভাইয়া আপনিও চলেন।
অরণী কে দেখে আয়ান অন্য দিকে ফিরে আছে।প্রাপ্তি ব্যাপারটা বুজে অরণীকে বললো তুই যা আমরা আসছি।অরণী ও আয়ানের ব্যাপারটা বুজতে পেরে চলে গেল।

প্রাপ্তি -ওর সাথে এইভাব না করলেও পারতেন।

আয়ান -কেন করবো না।ওর জন্যই তো এতো কিছু।কথা টা বলেই আয়ান ফ্রেশ হতে চলে গেলো।প্রাপ্তি আয়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবছে হয়তো তাই।

প্রাপ্তি এসে তার মাকে কাজে হেল্প করছে।অরণী পাশ থেকে বলে উঠলো,আচ্ছা আপু! আয়ান ভাইয়া আমার উপর এখনো রাগ তাই না?সেই দিনের সবকিছুর জন্য আমি দায়ী তাইনা?

প্রাপ্তি মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে,দূর পাগলি,ও তো এইরকমভাবেই চুপচাপ থাকে।
অরণী কিছু বলতে যাবে তখনি দেখে,
আয়ান ফ্রেশ হয়ে সোপায় এসে বসেছে।সাথে সিয়াম ও।দুজনে এইখানে এসে ভালোভাবে মিশে গেছে।অবশ্য এর আগে সিয়াম আর আয়ান একসাথে হয়নি।সেইদিনে ঘটানার পর সিয়ামও এই বাড়ীতে আসেনি।প্রাপ্তির বাবা এসে প্রাপ্তির মাকে বলতে লাগলো তোমার মেয়েকে এগিয়ে আনতে গেছি আর তারা আমার আগেই চলে এসেছে।

নিলিমা বেগম -তুমি হয়তো আড্ডা দিতে বসে গেছো তাই আমার মেয়েকে খুঁজে পাওনি।কথাটা শুনে সবাই হাঁসতে শুরু করলো।আয়ান এগিয়ে এসে প্রাপ্তির বাবাকে সালাম করে জড়িয়ে ধরলো।আজাদ সাহেব আয়ান জড়িয়ে ধরতেই কেমন আছো বাবা?

আয়ান -জ্বী ভালো।

সিয়ামের দিকে তাকিয়ে, তুমি কেমন আছো?

সিয়াম -জ্বী আমিও ভালো আছি।

আজাদ -নিলিমা! আজ আমার ঘরটা অনেক দিন পর পরিপূর্ণ হলো।আমার মেয়েরা দেখছি আল্লাহ্‌ রহমতে ভালোই আছে।
আয়ান -আব্বু আপনি বসেন।বসে কথা বলা যাবে।আসিফও এসে তাদের সাথে যোগ দিলো।
সবাই খাওয়াদাওয়া শেষ করে বসে আড্ডা দিচ্ছে।আয়ানের ফোনে কল আসাতে আয়ানের মন ভারী হয়ে উঠলো।ফোন দিয়েছে তার বড় ভাই আকাশ। ফোন হাতে নিয়ে তাকিয়ে আছে আয়ান।প্রাপ্তি কিছুটা বুজতে পেরে, আপনার অফিসের কল আসছে মনে হয়।সমস্যা নেই আপনি রুমে গিয়ে কথা বলে আসুন।

আসিফ -হ্যাঁ আয়ান! জরুরী ফোন হবে কথা বলে আসো।আয়ান বুজেছে প্রাপ্তি ওকে এখান থেকে সরাতে চাইছে।মেয়েটা আমাকে কিভাবে যেন বুজে যায়।কিন্তু ভালোবাসতে চায় না। কথাটা ভাবতে ভাবতে আয়ান রুমে এসে ফোন রিসিভ করলো,

আকাশ -কিরে তোকে এতোক্ষণ ফোন দিচ্ছি ধরছিস না কেন?

আয়ান- একটু ব্যস্ত ছিলাম, কি বলবে বলো?

আকাশ -প্রাপ্তি কেমন আছে? প্রাপ্তিকে অনেক মিস করছি।তোর ভাবী বার বার বলছে তোদের বাসায় গিয়ে প্রাপ্তির সাথে কিছুটা সময় কাটাতে,অবশ্য এটা ওর একার ইচ্ছা নয়,আমারো বলতে পারিস।মেয়েটা সহজে সবাইকে আপন করে নেয়।

আয়ান- হুম ঠিক বলছিস।ভাইয়া তাহলে তুই কবে আসছিস বল? জানিস প্রাপ্তি শুনলে কতো খুশী হবে তুই জানিস?

আকাশ -একদিন সময় করে চলে আসবো।তোরা বাড়ীতে এসে একবার মাকে দেখে যা।মা সারা দিন তোর কথা বলে।তোকে অনেক মিস করে, তোর কথা বলতে গেলেই ফেল ফেল করে কেঁদে পেলে।তুই বাড়ীর ছোটো ছেলে,সবার অনেক আদরের।

আয়ান -ভাইয়া আমিও তোদের অনেক মিস করি।সবচেয়ে বেশী মিস করি তোর আর মায়ের ভালোবাসাটা।আমি কোনো অন্যায় করলেও তুই বাবার কাছে সব দোষ নিজের কাঁধে নিয়ে নিতি।কথা গুলো বলতে বলতে আয়ানের গলাটা ভারী হয়ে আসছে।মনে হচ্ছে এখুনি কেঁধে ফেলবে।

আয়ান আকাশের সাথে কথা শেষ করেই চোখ গুলো মুছতে মুছতে পিছনে ফিরে দেখে প্রাপ্তি দাঁড়িয়ে আছে।

প্রাপ্তি -কেন দিচ্ছেন নিজেকে এতো কষ্ট? নিজের পরিবারে কাছ থেকে আমাকে নিয়ে আলাদা থেকে কি বুজাতে চাইছেন আপনি? আপনি আমাকে অনেক ভালোবাসেন? কেনো করছেন আমার জন্য এতো কিছু? এই সমাজ আমাকে ভালো চোখে দেখে না।আর কখনো দেখবেও না।কারণ আমি ধর্ষিতা মেয়ে,না না ভুল হয়েছে #ধর্ষিতা_বউ।আমার জন্য আপনাকে সবাই অন্য চোখে দেখে।যতো দিন আমি বাঁচবো এই পাপের বোঝা নিয়ে বাঁচতে হবে।কথা গুলো বলে কান্না করতে করতে ফ্লোরে বসে পড়লো প্রাপ্তি।

আয়ানও প্রাপ্তির সামনে বসে পড়লো,আস্তে আস্তে হাত দুটো নিয়ে প্রাপ্তির দুগাল ধরে, পাগলি কথাকার।এতো গুলো প্রশ্ন কেউ একসাথে করে?নিজেকে এতো ছোটো ভাবো কেনো? ধর্ষিতারা কখনো পাপি হয় না।পাপী তো তারা যারা তোমাকে জোর করে ধর্ষন করেছে।এই সমাজের কোনো দোষ নেই, দোষ এই সমাজের মানুষ গুলোর।তারাই সমাজকে প্রতি নিয়তো নষ্ট করছে।তোমার মতো হাজারো প্রাপ্তি আছে যারো কারো সার্পোট পায় না।তোমার সাথে আমরা সবাই আছি। কেউ থাকুক আর না থাকুক আমি তোমার পাশে থাকবো।কেনো জানো তোমাকে ভালোবাসি বলে।তোমার মতোই একটা মেয়ে আমার জীবনে খুব প্রয়োজন। জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো না।কিন্তু একদিন না একদিন তো ভালোবাসবেই।আয়ানের কথা গুলো শুনে প্রাপ্তির ইচ্ছে করছে তাকে একবার জড়িয়ে ধরে বলতে আমিও আপনাকে ভালোবাসি।কিন্তু কেন জানি ভয় কাজ করে।

আয়ান প্রাপ্তিকে দাড় করিয়ে, আমি জানি তোমার মন এখন কি বলছে।

প্রাপ্তি -(কাঁদো কাঁদো গলায়)কি বলছে?

আয়ান -কাজে করে দেখাই, প্রাপ্তি কিছু বলার আগেই প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরলো।আয়ানের বুকে মাথা রেখে প্রাপ্তি যেনো নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে।এই প্রথম আয়ানের বুকে সে মাথা রেখেছে।এই বুকে এতোটা শান্তি আছে তার জানা ছিলো না।মনে হচ্ছে পৃথিবীর কথাও গেলে সে এতো সুখ খুঁজে পাবেনা।মনে হচ্ছে আয়ানের বুকের হৃদয়েরস্পন্দন গুলো শুধু আমায় ডাকছে।

অনেকক্ষণ এইভাবে থাকার পরে আয়ান আস্তে করে প্রাপ্তিকে ডাক দিলো।এই প্রাপ্তি! কোথায় হারিয়ে গেলে তুমি? কিছু বলছো না কেনো?

প্রাপ্তি-(আয়ানকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,) ওহ্ঃ কথা বলবেন না।কথা বললে ডিস্টার্ব হবে আমার।

আয়ান- এতো দিন কাছে না এসে আমাকে কষ্ট দিয়েছো কেন?

প্রাপ্তি -আমি কি জানতাম এইবুকে এতো শান্তি লুকিয়ে আছে?আর আপনার কাছে গেলেই আমার ভয় লাগতো।আপনি তো সবি জানেন।নতুন করে আমি কি বলবো বলেন?
আয়ান -আমি জানতাম দেখেই তো তোমাকে কাছে টানতাম না।ভাবতাম যেইদিন তুমি নিজের ইচ্ছায় কাছে আসবে সেইদিন তোমাকে কাছে টেনে নিবো।যাইহোক ওইসব কিছু ভুলে যাও।শুধু ভাববে আমি তোমার সব।

চলবে,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:২

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:২

#Rabeya Sultana Nipa

 

_আয়েশা বেগম – ওয়ালাইকুম সালাম।আমি ভালোই আছি।তবে তোর বাবা অসুস্থ।

আয়ান -মা! বাবার কি হয়েছে?

আয়েশা বেগম – বুকের ব্যাথাটা বেড়েছে,তোর কি ইচ্ছে করেনা আমাদের কে দেখার? তোর বাবা, আমি, তোর বড় ভাই,ভাবী, তোর বোনেরা সবাই তোকে কতো ভালোবাসে।তোর কি ইচ্ছে করেনা সবার কাছে থাকার?
কথা গুলো শুনে আয়ান দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বললো, মা! আমারো ইচ্ছে করে সবার সাথে থাকতে।আমিও সবাইকে ভালোবাসি। তোমাদের ছেড়ে থাকতে আমারো কষ্ট হয় মা।কিন্তু কি করবো বলো ওই মেয়েটা কে ছেড়ে আমি কোথাও যেতে পারবোনা।ভালোবাসি আমি ওকে। আমি যদি ওকে ছেড়েদি ও নিশ্চিত সুইসাইড করবে।বাবাও ওকে নিবে না আর আমার বাড়ীতেও যাওয়া হবেনা।

আয়েশা বেগম – তোরা বাপ ছেলে যা ভালো বুঝিস কর। কিন্তু এর মাঝে তোর এই মায়ের ভালোবাসা টা কবর দিয়ে দিস না।যদি পারিস একবার এসে এই মায়ের সাথে দেখা করে যাস।আজ তাহলে রাখী।

আয়ান ফোন রেখেই দেখে প্রাপ্তি ডাইনিং টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে আছে।চোখ দুটো টলমটল করছে।আজ তার কারনেই আয়ান তার পরিবারের থেকে আলাদা।

আয়ান এগিয়ে এসে বললো, কি? কান্না করবা নাকি?

প্রাপ্তি ছোট্র একটা নিশ্বাস ছেড়ে,
প্রাপ্তি -রেশী! খাবার গুলো নিয়ে আসো।আর তুমিও খেয়ে পেলো রাত অনেক হয়েছে।

আয়ান আর কোনো কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খেতে বসলো।প্রাপ্তিও বসতে বসতে বললো,
একটা কথা বলবো যদি কিছু মনে না করেন?

আয়ান -(প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে)তুমি কথা বলবে এইটা আমার জন্য ভাগ্যের ব্যাপার। কি বলবে বলো?

প্রাপ্তি -আপনি কাল গিয়ে আপনার বাবা মা কে দেখে আসুন।আমার জন্য শুধু শুধু ওনাদের কষ্ট দেন কেন? আমি আর পারছি না।কথা গুলো বলেই প্রাপ্তি কান্নায় ভেঙে পড়লো।
প্রাপ্তির কান্না দেখে আয়ান বললো এইখানে নিজেকে দোষ দিচ্ছো কেন।তুমি তো কিছু করোনি।ওনাদের যদি আমার প্রতি ভালোবাসায় থাকতো তাহলে আর তোমাকে নিয়ে আমার বাড়ী ছাড়তে হতোনা।(প্রাপ্তির চোখের পানি মুছে দিতে দিতে) প্লিজ কান্না করোনা।আমি তো তোমাকে প্রেম করে বিয়ে করিনি। বিয়েটা তো ওনারাই করিয়ে ছিলো তাহলে এখন মেনে নিতে পারচ্ছেনা কেন?

প্রাপ্তি -ওনারা মেনে নিবে কি করে আমি যে,,,,,,,,,,
আয়ান প্রাপ্তিকে থামিয়ে একদম চুপ আর কোনো কথা নয়।চুপচাপ খেয়ে রুমে আসো।
প্রাপ্তি আয়ানের সাথে কথা না বললেও মাঝে মাঝে বাড়ী যাওয়া নিয়ে কথা বলেই।

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আয়ান ড্রইংরুমে গিয়ে দেখে প্রাপ্তি টেবিলের উপর নাস্তা দিয়ে রেখেছে।রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখে প্রাপ্তি চুলায় রান্না বসিয়েছে।

আয়ান – প্রাপ্তি! তুমি নাস্তা করেছো? আর এতো সকাল রান্না করছো কেন?

রেশী -প্রাপ্তি কিছু বলছেনা দেখে,ভাইয়া ভাবী তো এখনো কিছু খায় নাই।

আয়ান -না খেয়ে রান্না করার কারণ কি?

রেশী -ভাবী বলছিলো রান্না করে বাহিরে যাবে।আপনি খেয়ে নিন।

আয়ান রান্না ঘরে ঢুকে প্রাপ্তির হাত ধরে টেনে ডাইনিং টেবিলের সামনে এনে চেয়ারে বসিয়ে বাহিরে যাবে আমাকে বললেইতো হতো।রান্না করার দরকার নেই বাহিরেই খেয়ে নিবো।সাথে রেশীকেও নিয়ে নাও।আর এখন নাস্তাটা করে নাও।

প্রাপ্তি -আপনি অফিসে যাবেননা?

আয়ান -সমস্যা নেই অভ্রকে ফোন করে বলে দিলেই হবে।

প্রাপ্তি -চলুন না আমাদের বাসায় যাই।অনেক দিন হলো মাকে দেখিনা।আপনি যদি বলেন তাহলে মাকে ফোন দিয়ে বলবো আমরা যাচ্ছি।

আয়ান ভাবলো সারাদিন মনমরা হয়ে বাসায় বসে থাকার চেয়ে ঘুরে আসুক সেটাই ভালো হবে।

আয়ান -ঠিক আছে রেডি হয়ে নাও।আমি অভ্র কে ফোন দিয়ে বলছি।

প্রাপ্তি নাস্তা টা খেয়েই রেশীকে ডেকে চুলার আগুন নিভিয়ে রেডি হতে বললো। তাদের সাথে যাওয়ার জন্য।

আয়ান অভ্রকে ফোন দিয়ে সব বুজিয়ে দিলো।

কতো দিন পর প্রাপ্তি আয়ানের সাথে কোথাও বেরাতে যাচ্ছে।অবশ্য আয়ান প্রায়ই বলে,কিন্তু প্রাপ্তির যেতে ইচ্ছে করেনা।প্রাপ্তি চায় না তার জন্য আয়ান কে কেউ অন্য নজরে দেখুক।আয়ান অভ্রর সাথে কথা শেষ করে রুমে ঢুকে দেখে প্রাপ্তি রেডি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আয়ানের ইচ্ছে করছে না চোখ সরাতে। তার বউ এতো সুন্দর এতো মায়াবী কিন্তু বিয়ে হয়েছে ২ বছর, আজও পর্যন্ত প্রাপ্তিকে ছুঁয়েও দেখনি।দেখবেই বা কি করে প্রাপ্তি কখনোই তার কাছে আসেনা।যা বলে দূর থেকেই বলে।

প্রাপ্তি আয়ানকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে, আপনি আমার দিকে এইভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?

আয়ান প্রাপ্তির কথায় চমকে উঠে, কিছু বলেছো আমাকে?

প্রাপ্তি -বলেছি আপনি এইভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন?

আয়ান একটু লজ্জা পেয়ে কিছুনা।আমি গাড়ী বের করছি তুমি আর রেশী আসো।

—কতো দিন পর মেয়েটা আসতেছে।তোমাদের তো উচিত মেয়েটা কে এগিয়ে নিয়ে আসার।আয়ান তো এখনো নতুন জামাই। যাওনা ওদের এগিয়ে গিয়ে নিয়ে আসো।কথা গুলো রান্নাঘর থেকে প্রাপ্তির মা নিলিমা বেগম প্রাপ্তির বাবাকে আর ভাইকে বলছে।

মায়ের বকা দেখে আসিফ(প্রাপ্তির বড় ভাই) বললো দেখেছো আব্বু? আম্মুর মেয়ে আসছে এখন আর আমাদের দিকে কোনো খেয়াল থাকবে না।পান থেকে চুন ঘষলেই বকা খেতে হবে।
ছেলের কথা শুনে প্রাপ্তির বাবা আজাদ চৌধুরী বললেন, তোর আম্মুকে এখন কিছু বলিস না।পরে আরো খেপে যাবে।তুই তোর মায়েকে একটু হেল্প কর আমি এগিয়ে গিয়ে দেখি প্রাপ্তিরা এসেছে কিনা।
আসিফ আজাদ সাহেব চলে যাওয়ার পর সামনের দরজাটা আটকিয়ে রান্নাঘরে মায়ের পাশে এসে বললো,আম্মু! অরণী (প্রাপ্তির ছোটো বোন)আসবে না?

নিলিমা বেগম -আসবে না!!! বড় বোন আসছে, না এসে পারে?যাইহোক ওরা আসার আগেই সব কাজ করে ফেলতে হবে। অনেক দিন পর আমার মেয়েরা আসতেছে জমিয়ে আড্ডা দিবো।তুই এককাজ কর প্রাপ্তির রুমটা ঠিক করে দিয়ে আয়।অবশ্য আমি ঠিক করেছি তুই দেখে আয় কিছু কমতি আছে কিনা।

আসিফ -ওহ্ঃ মা! তুমিও না, একটু শান্তিতে থাকতে দিবে না।

নিলিমা বেগম রান্নাবান্না শেষ করে ড্রইংরুমের ফ্যান চালিয়ে সোপায় গিয়ে হেলান দিয়ে বসে পড়লো।আর ভাবতে লাগলো বিয়ের পর এই নিয়ে আয়ান দুই বার আসছে এই বাড়ীতে।আসবেই বা কি করে, প্রথম বার এসে কতো নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে তাকে। বাসা থেকে বের হলেই গ্রামের লোকেরা প্রাপ্তিকে নিয়ে নানা কথা বলতো।ছেলেটা ভালো দেখেই সব কিছু মেনে নিয়েছে।অন্য কোনো ছেলে হলে মেয়েটা কে আমাদের বাড়ী রেখে কবেই চলে যেতো।কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই কলিংবেলের শব্দ শুনে তাড়াহুড়ো করে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলো।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট: ১

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট: ১

#Rabeya Sultana Nipa

 

__আজ আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। তবে একটুও খারাপ লাগছে না।হালকা হালকা বাতাস বইছে, চারদিকে পাখীরা কিচিরমিচির করে ডাকছে,মনে হচ্ছে এই সন্ধ্যা নেমে এলো বুজি।কিন্তু না এখন মাত্র বিকাল হয়েছে।
সত্যি ভালো লাগার মতো বিকাল।আমি মাঝে মাঝে অপেক্ষা করে থাকি এইসময়টার জন্য।কেন জানেন? আমার একটা পাগলি আছে ও এইরকম সময় তার খুব পছন্দের।ওহ্ঃ অফিস কখন শেষ হবে আর কখন পাগলীর মুখ খানা দেখতে পাবো।কারণ এই মেঘাচ্ছন্ন বিকেলবেলা পাগলী বারান্দায় ইজিচেয়ারটায় হাতে একমগ কফি নিয়ে বসে। যতোক্ষণ না কফি শেষ হবে ততোক্ষণ বসে বসে দুলবে। তবে আমি পাশে থাকলে অন্য ব্যাপার। পাগলীর কথা গুলো ভাবছি আর অফিসে ফাইল গুলো দেখে শেষ করছি।

পিছন দিক থেকে অভ্র এসে বললো কিরে বাড়ী যাবিনা অফিস তো ছুটি।
অভ্রর কথা শুনে উঠে দাঁড়িয়ে ব্যাগ গুছাতে গুছাতে আর বলিস না আমার পাগলীর কথা ভাবতে ভাবতেই খেয়াল করিনি।আচ্ছা এইবার চল।দেখেছিস আমার পাগলীর কথা ভাবতে ভাবতেই পাঠকদের পরিচয়টাই দেওয়া হলোনা।যাইহোক বাড়ীতে যেতে যেতে আমার পরিচয়টা দিয়েই পেলি।
_আমি ইকাবাল মাহমুদ আয়ান, বাবা মায়ের ৪ নাম্বার সন্তান, দুই বোন দুই ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোটো আমি।পড়া লেখা শেষ করে একটা কম্পানির এমডি তে জয়েন করেছি।আর যাকে পাগলী পাগলী বলছি সেই সত্যিকারের পাগলি নয়,সেই আমার মনের রাজ্যের পাগলী,মানে আমার বউ মিফতাহুল জান্নাত প্রাপ্তি।চাকরী সূত্রে আমি প্রাপ্তিকে নিয়ে ঢাকায় থাকি অবশ্য অরো অনেক কারণও আছে সেই গুলো আস্তে আস্তেই জানতে পারবেন।আর অভ্র তার কথা না বললেই নয়,কারণ এই অচেনা শহরে যখন আমি এসেছিলাম তখন এই অভ্রই আমার সব ছিলো আর কাউকেই তেমন আপন ভাবে পাইনাই।যাইহোক আপনাদের সাথে কথা বলতে বলতে বাসায় চলে আসলাম। সামনের দরজায় দাঁড়িয়ে ভাবলাম কলিংবেল বাজিয়ে পাগলীটাকে ডিস্টার্ব করবোনা। আমার কাছে যে বাড়তি চাবিটা আছে ওইটা দিয়েই দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলাম।আরেকটা কথা না বললেই নয়।আমার পাগলীকে আমি যতোই ভালোবাসি না কেন ও আমার সাথে কথা বলেনা, তারও একটা কারন আছে আস্তে আস্তে এটাও জানবেন।বাসার ভেতরে ঢুকেই আস্তে করে দরজাটা লাগিয়ে দিতেই আমাদের কাজের মেয়ে রেশি এসে বললো, ভাইয়া, আপনি কলিংবেল না বাজিয়ে এইভাবে আসলেন কেন?ওর কথা শুনে দরজাটা আটকিয়ে পিছনে ফিরে বললাম আমি আসেছি জানলে তোর ভাবী এসে দরজা খুলতো তাই ওকে ডিস্টার্ব করতে চাইনি।তোর ভাবী তো এখন বারান্দায় তাইনা?

রেশী -হুম ভাইয়া, ভাবী এই সময় তো বারান্দায় বসে থাকে।
রেশীর কথাটা শুনে না দাঁড়িয়ে রুমে গেলাম।হাতের ব্যাগটা রেখে বারান্দার দরজায় গিয়ে দাঁড়ালাম মেঘাচ্ছন্ন আকাশ মৃদু হাওয়া তার চুল গুলো বার বার চোখের উপরে এসে পড়ছে আর ও সরিয়ে দিচ্ছে। সত্যি আমার বউটাকে কতোটা মায়াবী লাগছে বলে বুজানো যাবেনা।ইচ্ছে করছে বউ টাকে জড়িয়ে ধরে একটু আদর করি।কিন্তু না ওকে তো ছোঁয়া আমার নিষেধ, ও নিজেই সে নিষেধটা করেছিলো।
অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর বউটার নজর পড়লো আমার দিকে।আমাকে দেখে তড়িঘড়ি করে আমাকে সরিয়ে রুমে এসে তোয়ালে টা ধরিয়ে দিয়ে ইশারায় ওয়াশরুম দেখিয়ে দিলো।আমিও ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।প্রাপ্তিও রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

রেশী! রেশী! প্রাপ্তির ডাকে রান্নাঘর থেকে দৌঁড়ে এলো রেশী।

রেশী -ভাবী আপনি কিছু বলবেন?

প্রাপ্তি -তোমার ভাইয়া যখন আসছে আমায় ডাকোনি কেন?

রেশী -ভাবী আমিও তো দেখেনি, যখন ভাইয়া ভেতরে ঢুকে দরজা আটকাচ্ছিলো তখন দেখেছি।আমি বলেও ছিলাম কলিং বেল বাজায়নি কেন? ভাইয়া বলেছে আপনাকে ডিস্টার্ব করতে চায়নি তাই।

প্রাপ্তি -আচ্ছা ঠিক আছে, ওর জন্য কফি বানিয়েছ?
রেশী- জ্বী ভাবী, আমি নিয়ে আসছি।

আয়ান ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে চুল গুলো মুছচ্ছে।
প্রাপ্তি কফিটা নিয়ে এসে পাশে দাঁড়িয়ে আয়ানকে এক অপলক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে।প্রাপ্তির ইচ্ছে করছে আয়ানের চুল গুলো এলোমেলো করে দিতে।ইচ্ছে করছে আয়ানের চোখ রেখে বলতে আয়ান! আমিও তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি।কিন্তু না! আমার মতো মেয়ের তো কোনো ইচ্ছে থাকতে নেই।আমি তো,,,,,,,আমি তো,,,,,,,কথাটা ভাবনার জগতে বলার আগেই আয়ান বললো কি হলো কফিটা কি ঠাণ্ডা করে ফেলবা? আমাকে দিবেনা? আয়ানের কথা শুনে প্রাপ্তি ভাবনার জগত থেকে ফিরে এসে, আয়ানের হাতে কফিটা দিলো।আয়ান মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে একটা কথা বলবো রাগ করবে নাতো?
প্রাপ্তি মাথা নাড়িয়ে বুজালো না।

আয়ান -আজ তোমায় অনেক সুন্দর লাগছে।জানি এর কোনো আনসার আমি পাবোনা।তবে মাঝে মাঝে মনে হয় একটা বোবা মেয়ে বিয়ে করা ভালো ছিলো।কথাটা বলেই আয়ান একগাল অট্র হাঁসিতে ঢোলে পড়লো।
প্রাপ্তি কিছু না বলে রুমে চলে আসলো। প্রাপ্তির অনেক কান্না করতে ইচ্ছে করছে কিন্তু না ভালোবাসার মানুষের কথায় কাঁদতে নেই।রাগ করতে নেই, তবে হ্যাঁ শুধু অভিমান করা যায়।
সন্ধ্যা নেমে এসেছে বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে।আয়ানের মনের কষ্টটা কাউকে দেখানোর মতো না। সবার বিরুদ্ধে গিয়ে প্রাপ্তি সাথে সংসার করে ঠিকে কিন্তু আজও মেয়েটার কাছ থেকে কোনো ভালোবাসায় পায়নি।প্রাপ্তি জোরেশোরে বৃষ্টি হচ্ছে দেখে বারান্দায় দরজা আটকাতে গিয়ে দেখে আয়ান এখনো দাঁড়িয়ে আছে।প্রবল বাতাসের কারণে বৃষ্টি বারান্দায় পর্যন্ত এসে গেছে।আয়ানও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজচ্ছে।
প্রাপ্তি পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই আয়ান বললো, ভিজতেছো কেন ঠাণ্ডা লেগে যাবে তো।যাও রুমে যাও।

প্রাপ্তি -অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে আপনার ঠাণ্ডা লাগে যাবে।অনেকক্ষণ থেকেই তো ভিজেই চলেছেন।এইবার রুমে আসুন।

আয়ান প্রাপ্তির দিকে মুখ ফিরিয়ে বৃষ্টিতে ভেজাটাই দেখলা মনের যে ঝড় বইছে সেটা দেখতে পাচ্ছ?

প্রাপ্তি- (অসহায়র মতো করে)প্লিজ রুমে চলুন।

আয়ান -জানো বৃষ্টিতে ভিজাতে তোমার মুখের কয়েকটা শব্দ শুনতে ফেলাম এইটাই আমার জন্য অনেক।

আয়ান রুমে এসে চেঞ্জ করে ড্রইংরুমে সোপায় গিয়ে বসলো।পাশে থাকা ফোন বেজে উঠতেই ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে দেখে মা আয়েশা বেগম ফোন করেছে।আয়ান দেরী না করে ফোন রিসিভ করেই

আয়ান- আসসালামু আলাইকুম। মা কেমন আছো তুমি?

আয়েশা বেগম – ওয়ালাইকুম সালাম।আমি ভালোই আছি।তবে তোর বাবা অসুস্থ।

চলবে,,,,,,,,

অজানা_অনুভূতি শেষ তথা ৩৬ পর্ব

0

অজানা_অনুভূতি
শেষ তথা ৩৬ পর্ব

#Rabeya Sultana Nipa

_সবকিছুই ঠিকঠাক ভাবেই চলছে।ফারহানের ভালোবাসার কাছে হার মেনে নিয়েছে প্রাপ্তি।প্রাপ্তি প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর থেকেই বাবার বাড়ীতেই বেশী থাকা হয়।এই নিয়ে ফারহানও কিছু বলেনা।প্রাপ্তি যেইখানে ভালোলাগবে সে সেখানেই থাকবে।অফিস থেকে এসেই ফারহানের মনটা আজ ভালো নেই। ফ্রেশ না হয়ে হাত পা ছেড়ে দিয়ে খাটের উপর শুয়ে আছে।প্রাপ্তি নীরার রুমেই বসে গল্প করছে।একা একা রুমে থাকতে ভালো লাগছেনা। তাই নীরার সাথে গল্প করছে।কাজের মেয়ে রিতা এসে দরজায় দাঁড়িয়ে বললো, আপু! আপু! প্রাপ্তি পিছনে ফিরে তেকিয়ে, রিতা তুমি আমায় ডাকছো?

রিতা -হ্যাঁ,আপু ভাইয়া অফিস থেকে আসছে। আমি যখন কফি দিতে গিয়েছিলাম হাত পা গুলো ছেড়ে দিয়ে শুয়ে আছে।মনে হচ্ছে ওনার কিছু হয়েছে।
রিতার কথা শুনে প্রাপ্তি বসে না থেকে উঠে নিজের রুমের দিকে গেলো।ফারহান সত্যিই চোখ দুটো বন্ধ করে হাত পা ছেড়ে দিয়ে শুয়ে আছে।রিতা দিয়ে যাওয়া পাশের কফিটা ও ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে।প্রাপ্তি ফারহানের মাথার পাশে বসে মাথায় হাত দিয়ে বুলাইতে বুলাইতে বললো,কি হয়েছে তোমার? এইভাবে শুয়ে আছো কেন?
আমার মনে হচ্ছে আমি নতুন কোনো ফারহানকে দেখছি, আমার ফারহান তো যতো ঝড়ই আসুক না কেন এইভাবে ভেঙে পড়েনা।উল্টো আমাকেই বুঝায় কিন্তু আজ কি হলো তুমি এই রকম করছো কেন?
ফারহান কিছু না বলে প্রাপ্তির কোলে মাথা রেখে শুয়েছে।ফারহান কিছু বলছেনা দেখে প্রাপ্তি আবার বললো কি হয়েছে তোমার বলবেতো।

ফারহান -কিছু হয়নি।ভালো লাগছিলো না অফিসে তোমাকে ছাড়া তাই চলে আসলাম।
ফারহানের কথা শুনে প্রাপ্তি অট্ট হাঁসি দিয়ে,ফারহান তুমিও না,,,,,এক কাজ করো অফিসে যাওয়ার সময় আমাকে নিয়ে যেও তুমি কাজ করবে আমি তোমার সামনে বসে থাকবো।

ফারহান -ধুর পাগলি সবসময় উল্টাপাল্টা কথা বলবে।যাইহোক খাওয়াদাওয়া করে ঔষধ খাইছো?

প্রাপ্তি -হুম,,,এইবার যাও ফ্রেশ হয়ে আসো,এই কফিটা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে আমি আরেকটা নিয়ে আসি।
কথাটা বলেই প্রাপ্তি উঠতে যাবে তখনি ফারহান হাত ধরে টেনে বসিয়ে কফি আনতে হবে না তুমি আমার পাশেই বসো,আচ্ছা তুমি বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।তোয়ালে টা হাতে নিয়ে একটু হেঁটে গিয়ে আবার দাঁড়িয়ে পড়লো ফারহান।

প্রাপ্তি -আবার কি মনে পড়লো? দাঁড়িয়ে পড়লে কেন?

ফারহান প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে,তুমিও রেডি হয়ে নাও।

প্রাপ্তি- কেন, এখন এইসময় কথায় যাবো?

ফারহান -নাদিয়া বলছে তোমাকে নিয়ে যেতে।দেখতে দেখতে ৭ মাস কাটিয়ে দিলে।নাদিয়া সকালে ফোন দিয়ে বলেছে আজ চেকাপ করানোর জন্য।আমি ছেলে বাবু না মেয়ে বাবুর বাবা হচ্ছি দেখতে হবেনা?
কথাটা শুনে প্রাপ্তি মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে বললো আজ না গেলে হয় না?
ফারহান প্রাপ্তির পাশে এসে বসে, না হয় না।আজকে তো আজকেই।আমার মন পাগল হয়ে আছে জানার জন্য। যদি আমাদের একটা পরী আসে তাহলে তুমি যা চাইবে তাই দিবো আর যদি ছেলে হয় তাহলে ভেবে তারপর বলবো।এখন যাও রেডি হও।আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।

হাসপাতালে গিয়ে নাদিয়া চেকাপ করিয়ে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে বললো, প্রাপ্তি! তুমি কি হলে খুশী হবে?

প্রাপ্তি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে নাদিয়াকে বললো আল্লাহ্‌ খুশী মনে যাই দেয় তাই।

নাদিয়া -ভেরি গুড, তোমাদের ছেলে বাবু আসছে।কথাটা শুনেই প্রাপ্তি চুপ হয়ে গেলো।

নাদিয়া প্রাপ্তির মুখের দিকে তাকিয়ে, প্রাপ্তি! মন খারাপ করলে নাকি?
প্রাপ্তি মাথা নাড়িয়ে না বলে চেকাপ শেষে ফারহানের পাশে এসে বসেছে।প্রাপ্তির মন খারাপ দেখে ফারহান বললো মন খারাপ করে আছো কেন? কি হয়েছে বলবে তো।

প্রাপ্তি মন খারাপ করে,!ফারহান! তোমার পরী আমি এনে দিতে পারবোনা আমাদের ছেলে বেবি হবে।প্রাপ্তির মুখে কথাটা শুনে ফারহান আলহামদুলিল্লাহ্‌ বলে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে বললো তুমি মন খারাপ করে আসছো কেন?

প্রাপ্তি -তোমাকে পরী দিতে পারলাম না তাই।
ফারহান ধুর বকা আল্লাহ্‌ যা খুশী হয়ে দিয়েছেন তাতেই আলহামদুলিল্লাহ্‌।
কথাটা শুনার পর প্রাপ্তির ঠোঁটের কোনে হাঁসির ঝিলিক ফুঠেছে দেখে বললো এতো অল্প হাঁসলে হবে আরো জোরে হাঁসোতো।
প্রাপ্তি সত্যি সত্যিই না হেঁসে পারলোনা।

বাড়িতে এসে কলিংবেল চাপ দিতেই প্রাপ্তির মা দরজা খুলে দিলো। প্রাপ্তি ভিতরে এসে ড্রইংরুমে বসলো। সবাই একি কথা জিজ্ঞাস করছে নতুন সদস্য কি আসতে চলেছে?
ফারহানকে তো নীরা আর নাজিফা ভালো করে ছেপে বসেছে।তারপর প্রাপ্তি বললো আমি বলছি, এইদিকে আয় তোরা।নীরা আর নাজিফা এগিয়ে আসতেই প্রাপ্তি বললো তোরা ছেলে বাবুর খালামনি হচ্ছিস।কথাটা শুনে সবাই খুশীতে আত্যহারা।মেজো মা,মাজো কাকাইকে ফোন দিয়ে আসার সময় মিষ্ট নিয়ে আসবা। তুমি তো নাতিনের নানা হয়ে যাচ্ছো।
আজ এই বাড়ীতে সবাই খুশী, আবার আগের মতো সব কিছু ফিরে এসেছে।দিন মাস কখন যে চলে যায় কেউ টেরি পায়না।তেমনি প্রাপ্তির ও আজ ডেলিভারি সময় হয়ে আসছে।সবাই হাসপাতালে অপেক্ষা করছে।ফারহান তো বাচ্চাদের মতো কেঁদে কেঁদে চোখ গুলোকে ফুলিয়ে ফেলেছে।একটু পর বাবুকে নিয়ে দুইজন সিস্টার এসে বললো বাচ্চাকে কে কোলে নিবেন আসেন।সবার আগে মেজো কাকা আর নীরা গেলো।মেজো কাকা হাত পেতে কোলে নিতে যাবে তখনি সিস্টার বললো এইভাবে তো কোলে নাওয়া যাবেনা।

মাজো কাকা -তাহলে কি করতে হবে আগে বলে পেলুন আমার আর সহ্য হচ্ছে না।

সিস্টার -(মুচকি হাঁসি দিয়ে)দশ হাজার টাকা ছাড়ুন তারপর।আর না হলে আমাদের কাছেই থাকুক।

মেজো কাকা -আরে আপানারা কোথায় যাচ্ছেন।(পকেট থেকে পাঁচ হাজার টাকা বের করে)টাকাটা সিস্টারদের হাতে দিয়ে আপাদত আমার কাছে এটাই আছে। এইবার আমার কোলে দিন।

মেজো কাকার কাণ্ড দেখে সবাই না হেঁসে পারলোনা।কিন্তু বিষণ চিন্তাও হচ্ছে প্রাপ্তির জন্য।সবাই বাবুকে পেয়ে অনেক খুশী এই বলে আমার কাছে দাও, ওই আমার কাছে দাও।এইদিকে ফারহানতো বাবুর দিকে কোনো খেয়ালি নেই।বার বার অপারেশন রুমের দরজার দিকে তাকিয়ে আছে কখন প্রাপ্তিকে বের করবে।আচ্ছা প্রাপ্তি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে নাতো ।প্রাপ্তি এখন কি করছে।অনেক কষ্ট পেয়েছে মেয়েটা এতো অল্পবয়সেই সব কিছুর জন্য আমি দায়ী। ফারহানের মনের মধ্যে হাজারটা প্রশ্ন উকি মারছে।বড় ভাবী ফারহানকে নিছের দিকে তাকিয়ে বসে থাকতে দেখে বাবু কে কোলে নিয়ে ফারহানের সামনে এসে,

বড় ভাবী -ফারহান! দেখ তোর ছেলে ঠিক তোর আর প্রাপ্তির দুজনের চেহারাই পেয়েছে।
কথাটা বলা শেষ করতেই ফারহান নিছের দিক থেকে মাথাটা উঠিয়ে বড় ভাবীর দিকে চোখ গুলোকে বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।এইভাবে তাকাতে দেখে বড় ভাবী একটু ভয় পেয়ে কিরে এইভাবে তাকিয়ে আছিস কেন আমার দিকে?তোর বাবু কোলে নিবিনা? তোর বাবুকে দেখ ঠিক তোদের মতোই হয়েছে।
ফারহান আর চুপ থাকতে না পেরে চিৎকার দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে তুমি কি আমার সাথে ফাইজলামি করতেছো।প্রাপ্তি ওইখানে একা একা অনেক কষ্ট করতেছে আর আমি বাচ্চা পেয়ে সব ভুলে যাবো? সবার দিকে তাকিয়ে আপনারা সবাই একটা কথা মনে রাখবেন আমার প্রাপ্তির যদি কিছু হয় না আমি এই বাচ্চার মুখ কখনোই দেখবোনা।
ফারহানকে কেউ এর আগে এতো রাগী ভাবে দেখেনি।ইমারান দৌঁড়ে এসে ফারহানকে জড়িয়ে ধরে প্লিজ তুই ঠাণ্ডা হও এতো উত্তেজিত হয়ে পড়িসনা সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।

৪ বছর পর

বাবাই! বাবাই! তুমি এখনো ছাদে দাঁড়িয়ে আছো? জানো? তোমাকে আমি পুরো বাড়ী খুঁজেছি। ফারাবীর কথা শুনে ফারহান পিছনে ফিরে তাকালো।ফারাবীর কাছে এগিয়ে এসে তাকে আদর করে কোলে নিয়ে ফারহান বললো,
বাবা আমিতো প্রতিদিন বিকালেই ছাদে আসি তুমি জানো না?তুমি আমাকে পুরো বাড়ী না খুঁজে ছাদে চলে আসতে তাহলেই তো তোমার বাবাই কে পেয়ে যেতে।

ফারাবী -কুটকুটে হাঁসি দিয়ে আচ্ছা বাবাই তুমি প্রতিইইইইইই দিন ছাদে এসে ওই আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকো কেন? ওইখানে কি আমার আম্মু আছে?

ছেলের কথা শুনে ফারহান ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো।কি বলবে খুঁজে পাচ্ছিলোনা।
তাই ছেলেকে বললো নিছে চলো তারপর তোমাকে বলবো আমি কেন তাকিয়ে আকাশ দেখি।
ফারাবীকে কোলে করে এসে ড্রইংরুমে সোফায় ফারাবীকে বসিয়ে প্রজেক্টের কাগজ পত্র গুলো গুছিয়ে ফারাবীর পাশে বসে কাজ করছে।
বাবাকে কাজ করতে দেখে ফারাবী বললো কি হলো বাবাই বলো না কেন?
এমন সময় প্রাপ্তি দুই কাপ কফি নিয়ে আসতে আসতে বললো কী হয়েছে আমার লক্ষ্মী সোনাটার? ফারহান! ও কি জানতে চাইছে বলোনা কেন?

ফারহান হাতের কাজটা রেখে প্রাপ্তির থেকে কফি নিতে নিতে বললো, তোমার ছেলে জানতে চাইছে আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি কেন? ওই আকাশে কি ওর আম্মু আছে?কথাটা শুনে প্রাপ্তি একগাল অট্র হাঁসি দিয়ে ফারাবীকে কোলে নিয়ে বললো বাবা তোমার কেন এমন মনে হয়েছে আমি ওই আকাশেই থাকি?

ফারাবী -আম্মু তুমি বলো বাবাই যতোক্ষণ বাসায় থাকে তোমার দিকেই তো বেশীর ভাগ তাকিয়ে থাকে তাই আমি ভাবলাম তুমি ওই আকাশে আছো তাই বাবাই ওই আকাশ দেখে।ছেলের কথা শুনে এইবার প্রাপ্তিও ভ্যাবাচেকা খেয়ে বসে আছে।

(সারাজীবন সবার ভালোবাসায় কাটুক গভীর সুখের ও শান্তিতে।ছোট্র ছোট্র ভালোবাসা দিয়ে সুন্দর একটা সংসার গড়া যায়।সব ভুল গুলোকে শুধরে নিয়ে বেঁচে থাকুক সবার জীবনের ভালোবাসা।)

সমাপ্ত

অজানা_অনুভূতি পার্ট:৩৫

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট:৩৫

#Rabeya Sultana Nipa

 

দুই দিন হাসপাতাল থাকার পর প্রাপ্তি আজ বাড়ীতে আসবে।সবাই অনেক খুশী। এই দুইদিন প্রতিনিয়ত ফারহান প্রাপ্তির খেয়াল রেখেছে।প্রাপ্তির কাছে কাউকেই বলতে দেয়নি ও যে প্রেগন্যান্ট। সকাল ১১.০০ টা বেজে গেছে,নীরার প্রাপ্তির সব কিছু গুছিয়ে নিচ্ছে।প্রাপ্তি ফারহানকে না দেখতে পেয়ে,

প্রাপ্তি -নীরা, ফারহান কোথায়? ওকে সকাল থেকে দেখছিনা কেন?

নীরা -তোকে বাসায় নেওয়ার জন্য হয়তো সব রেডি করছে।টেনশন করিসনা চলে আসবে।

প্রাপ্তি- তাই হয়তো হবে। জানিস? নাদিয়া আপুকে আমার কেমন জানি লাগে। সবকিছুতেই রহস্য নিয়ে কথা বলে।

নীরা -কেন তোর এইরকম মনে হলো? কই আমিতো এমন কিছু দেখিনি যেটাকে রহস্য বলা যেতে পারে।

প্রাপ্তি- জানিস কাল রাতে ফারহান যখন আমায় খাইয়ে দিচ্ছিলো,কিন্তু আমি খাচ্ছিলাম না দেখে ফারহান বললো তুমি না খেলে তোমায় একটুও ভালোবাসবোনা।তখন নাদিয়া আপু এইখানেই ছিলো। কথাটা শুনার পর ওনি অন্য দিকে তাকিয়ে চোখের পানি গুলো মুচতে মুচতে এখান থেকে চলে গেলেন।

নীরা -হয়তো তোদের ভালোবাসা দেখে ওনারও পুরোনো কোনো স্মৃতি মনে পড়ে গেলো।

এমন সময় ফারহান এসে বললো, নীরা সব কিছু ঠিকঠাক ভাবে নিয়েছোতো?

নীরা -হ্যাঁ।

প্রাপ্তি ফারহানের দিকে তাকিয়ে, কোথায় ছিলে তুমি এতোক্ষণ?

ফারহান -বাসায় যাবা এইখনের বিল পরিশোধ করতে হবে না?হাসপাতালে আরো অনেক কিছু ফর্মালিটি আছে সেইগুলো শেষ করে আসলাম।

প্রাপ্তি -তাহলে আর দেরী করছো কেন? আমার এইখানে একটুও ভালো লাগছেনা।
আচ্ছা ফারহান নাদিয়া আপু কোথায়? সকাল থেকে একবারো আমায় দেখতে এলোনা।

ফারহান -কাজে ব্যস্ত আছে। তুমি হঠাৎ ওকে নিয়ে পড়লে কেন?

নীরা -ভাইয়া আর বলবা না।প্রাপ্তি এতোক্ষণ কি বলে জানো? নাদিয়া আপু নাকি কেমন রহস্য নিয়ে কথা বলে।

ফারহান -প্রাপ্তির কাছে এসে আরে পাগলি ওই এইভাবেই বলে।এইটা নিয়ে ভাবার কি আছে।নীরা এইবার চলো বাসায় সবাই অপেক্ষা করছে।
কথাটা বলেই ফারহান প্রাপ্তিকে কোলে তুলে নিলো,

প্রাপ্তি অবাক হয়ে, এই কি করছো তুমি? আমাকে ছাড়ো।
ফারহান -গাড়ীতে বসিয়ে তারপর ছাড়বো।

প্রাপ্তি -কিহ্ঃ মানুষে কি বলবে বলোতো? নীরা! নামাতে বলনা।
নীরা কিছু না বলে একগাল হাঁসি দিয়ে মাথা নাড়তে নাড়তে চলে গেলো।

ফারহান -চুপ করে থাকোনা, এইভাবে চেঁচাচ্ছ কেন?লোকে এখন এইটাই ভাববে আমি তোমাকে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
প্রাপ্তি আর কথা বাড়ালো না,পাগলটাকে বলেও কোনো লাব নাই এর ছেয়ে ভালো চুপ করেই থাকি।
প্রাপ্তিকে নিয়ে গাড়ীতে বসিয়ে ফারহান পিছনের দিকে ফিরে তাকাতেই নাদিয়া চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ফারহান এগিয়ে গিয়ে নাদিয়া আমরা চলে যাচ্ছি।প্রাপ্তিকে নিয়ে মাঝে মাঝে তোর কাছে আসবো,চিন্তা করিস না।
নাদিয়া-এই দুইদিন তোকে অনেক কাছ থেকেই দেখেছি তুই সত্যিই প্রাপ্তিকে পেয়ে অন্য রকম হয়ে গেছিস। সেই আগের ফারহান আর নেই।

ফারহান -ভালোবাসার জন্য মানুষ কিনা করতে পারে বল?তাই আমি করছি প্রাপ্তির জন্য। কোনো কিছুর কমতি রাখতে চাইনা।
ভালোবাসি অনেক তাকে আমি, কতোটা সেটা বলে বুজাতে পারবোনা।

নাদিয়া -তোকেও তো কেউ একজন পাগলের মতো ভালোবাসতো তাহলে তারটা অবহেলা করলি কেন?

ফারহান -প্লিজ নাদিয়া পুরোনো কিছুই আমি মনে করতে চাইনা।আর তুই যেটা বলছিস আমি তোকে আগেও বলেছি তোকে আমি কখনো ভালো একটা বন্ধু ছাড়া আর কিছুই ভাবিনি।প্রাপ্তি বসে আমাদের দেখছে, সকাল থেকে তোকে নিয়ে ওর মনে অনেক প্রশ্ন জেগে বসেছে।আমি চাইনা ও কোনো কিছুতে কষ্ট পাক।আমি জানি তুই আমাদের বিয়েতেও এই কারনেই আসিস নাই।কিন্তু আমার কিছু করার ছিলো না, কারণ আমি প্রাপ্তিকেই ভালোবাসি।আচ্ছা আজ তাহলে আসি।
নাদিয়া চোখ গুলো টলমল করছে মনে হচ্ছে এইযানি চোখের পানি গুলো নিচেই পড়ে গেলো।প্রাপ্তি গাড়ীতে বসে থেকে নাদিয়ার দিকেই তাকিয়ে আছে।হয়তো বুজার চেষ্টা করছে ফারহান ওকে কি এমন কথা বলছে যে চোখের পানি টলমটল করছে।নীরা প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে কিরে কি ভাবছিস ওই দিকে ফিরে।

প্রাপ্তি -নারে কিছু না।

ফারহানকে এসে ড্রাইভিং সিটে বসতে দেখে প্রাপ্তি বললো,তুমি ড্রাইভ করবে?আজ ড্রাইভার আসেনি?

ফারহান -না আমি মানা করেছি,কিচ্ছু হবেনা আমি আছিতো।

প্রাপ্তি -আচ্ছা ঠিক আছে চলো।

বাসার সবাই বসে আছে প্রাপ্তির অপেক্ষায়।বাড়ীর সবাই অনেক খুশী বাড়ীতে কিছুদিন পর নতুন কেউ আসবে।প্রাপ্তির মা, মেজো মা বিভিন্ন রকমের মিষ্টি নিয়ে ড্রইংরুমে বসে আছে।
কলিংবেলের আওয়াজ শুনে ইমরান একগাল হাঁসি নিয়ে দরজা খুলে দিলো।

প্রাপ্তি বাসায় ঢুকতে ঢুকতে বললো কাকাই তুমি আমাকে আনতে যাওনি কেন? শুধু নীরাই গিয়েছিলো।আর তোমরা কেউ যাওনি।

ইমরান -আরে আমি তো যেতে ছেয়েছিলাম কিন্তু ফারহান বললো ওই তোকে নিয়ে আসবে।কথাটা শেষ করতেই নাজিফা দৌঁড়ে এসে আপু,,,,,উউউউউউউউ,,,,,,, কনগ্রুয়েন্স।কথাটা শুনার পর অনেক অনেক খুশী আমি খালামনি হবো।আমার সব ফ্রেন্ডকে আমি ফাস্ট টাইম খালামনি হবো তাই সবাইকে ট্রিট দিয়ে এলাম।নাজিফার মুখে কথাটা শুনেই প্রাপ্তি অবাক চোখে ফারহানের দিকে তাকালো।
ফারহান প্রাপ্তির তাকানো দেখে অন্য দিকে ফিরে আছে।মেজো মা এসে বললো এইদিকে আসো একসাথে দুজনেই দাঁড়াও।লজ্জা পাওয়ার কি আছে।নীরা মিষ্টির প্লেট এই দিকে দে।আমাদের মেয়ে আর জামাইকে মিষ্টিমুখ করাতে হবেনা।
এমন ভাবে শুনবো কখনো ভাবিনি।এখন যখন প্রাপ্তি সুস্থ হয়ে এসেছে তাহলে সবাই মিলে একটু মিষ্টিমুখ হয়ে যাক।

প্রাপ্তি কিছু বলছেনা নিস্তব্ধ হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
ফারহান বার বার আড় চোখে প্রাপ্তিকে দেখছে।আল্লাহ আমার কপালে আজ কি আছে।হয়তো সবার সামনে কিছু বলছেনা।রুমে নিয়ে গিয়ে যদি রাম ধোলাই করে তাহলে আমি শেষ।

প্রাপ্তি অনেকক্ষণ পর নিস্তব্ধতা ভেঙে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে, আম্মু আমি রুমে যাই
পরে এসে কথা বলবো।
কথাটা বলেই প্রাপ্তি চলে গেলো। পিছন পিছন ফারহানও রুমে গেলো।গিয়ে দেখে প্রাপ্তি বারান্দায় গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ফারহান পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে একটু চুপ করে থেকে, সরি প্রাপ্তি। প্লিজ তুমি এইভাবে রাগকরে থেকোনা।

প্রাপ্তি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে ফারহানের দিকে।
ফারহান আবার বলতে শুরু করলো বিশ্বাস করো আমিও চাইনি এতো সকাল বেবি আসুক।আল্লাহ্‌ যখন খুশী হয়ে দিয়েছে তখন তো মেনে নিতেই হবে তাই না।আর যদি তুমি না চাও তাহলে,,,,,,,,,,ফারহান বলার আগেই প্রাপ্তি ফারহানের মুখে হাত দিয়ে চেপে ধরে , আমি অনেক খুশী অনেক,যা আমি তোমাকে বলে বুজাতে পারবোনা, আসলে এইখুশীটা কিভাবে প্রকাশ করবো বুজতে পারছিনা।তাই চুপ হয়ে আছি।
কথাটা শুনে ফারহান প্রাপ্তিকে কাছেটেনে এনে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে I love u.I love u, I love u.

প্রাপ্তি -মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে উমমমম,,,,,,ছাড়োতো।হয়েছে হয়েছে এতো ভালোবাসা দেখাতে হবেনা।আমি ফ্রেশ হয়ে আসি তারপর তোমার সাথে অনেক আড্ডা দিবো।

ফারহান -চলো আমিও যাবো।

প্রাপ্তি -কোথায় যাবা তুমি?

ফারহান -তোমায় হেল্প করবো।

প্রাপ্তি-একদম আসবেনা।না হলে আমি ফ্রেশ হতে যাবো না।

ফারহান -আচ্ছা ঠিক আছে সাবধানে যেও।
আমি ড্রইংরুমে আছি।

ফারহানকে আসতে দেখে ইমরান বললো কিরে আমিতো নানা ভাই হয়ে যাচ্ছি।তোর কি হিংসে হচ্ছে?কথাটা বলে ইমরান হাসঁতে শুরু করলো।

ফারহান -তুই একা কিছু হচ্ছিস না আমিও বাবা হচ্ছি।এখন তো তোর আরো বেশী হিংসে হচ্ছে।

নীরা -তোমরা ঝগড়াঝাঁটি বাদ দাও। সবছেয়ে বেশী আমি খুশী কারণ আমি (চিৎকার দিয়ে)খালামনি হচ্ছি।

চলবে,,,,,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট:৩৪

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট:৩৪

#Rabeya Sultana Nipa

 

__রাত অনেক হয়েছে ফারহান এখনো প্রাপ্তির হাত ধরে বসে আছে।সকাল থেকে এখনো কিছু খায়নি সে।সবাই অনেক চেষ্টা করেছিলো কিন্তু তার এক কথা প্রাপ্তির যতোক্ষণ জ্ঞান না ফিরছে সে কিছুই খাবেনা।প্রাপ্তির কেবিনের সামনে, মেজো কাকা, প্রাপ্তির বাবা,মা,ইমরান,মৃদুল,নীরা বসে আছে। আর সবাইকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে প্রাপ্তির মেজো কাকা।
নাদিয়া প্রাপ্তির কেবিনে ঢুকে দেখে ফারহান প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে এখনো চোখের পানি ফেলছে।

নাদিয়া -ফারহান! প্লিজ সকাল থেকে তুই অনবরত কান্না করছিস।মেয়েরাও তো এইরকম কান্নাকাটি করেনা।তোর জন্য আমিও বাসায় যায়নি।এইখানে কি হয় না হয় মন পড়ে থাকবে তোদের কাছে।আচ্ছা, তুই তো আজ কিছুই খাসনি।যার জন্য এইরকম না খেয়ে আছিস সে জ্ঞান ফিরার পর যদি শুনে তুই আজ কিছুই খাসনি তাহলে তো ওর আরো খারাপ লাগবে।

ফারহান -আমার খেতে ইচ্ছে করছেনা।জানিস! প্রাপ্তি আমায় অনেক ভালোবাসে। ওর মতো করে কেউ কখনো আমায় ভালোবাসতে পারবেনা।কথাটা বলেই ফারহান প্রাপ্তির কপালে একটা চুমু এঁকে দিলো।
নাদিয়া দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ফেলে, হয়তো তুই কারো ভালোবাসা বুঝতে চাইতিস না।ভালোবাসাই তুই কখনো বিশ্বাস করতিনা।তোর কাছে ভালোবাসা মানি ছিলো প্যারা, অসহ্য। তাহলে বল কেউ মনের কথা তোকে বলবে কি করে?

ফারহান -ঠিক বলছিস, কিন্তু প্রাপ্তিকে যেইদিন প্রথম দেখেছিলাম সেইদিন থেকে অসহ্য লাগেনি প্যারা মনে হয়নি।শুধু ভেবেছি ওকেই আমার পেতে হবে যেই করে হোক।ভালোবেসে ফেলেছিলাম আমার জীবনের থেকেও বেশী। জানিস ওর ভালোবাসা পেতে কিনা করেছি আমি।আমি কখনো কোনো মেয়ের কাছে ছোটো হয়নি।কিন্তু ওর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য হয়েছি।
কথাটা বলেই ফারহান আবার কান্না করতে শুরু করলো।

নাদিয়া -প্লিজ তুই এইভাবে ভেঙে পড়িসনা।ওহ্ তোকে তো একটা কথা বলা হয়নি।তুই ঠিক বলেছিস প্রাপ্তি কখনো প্রেগন্যান্ট হতে পারবেনা।ওই রির্পোট গুলোতে তাই আছে।
তবে এইটা মীরাক্কেল একটা ব্যাপার তোর ওয়াইফ এখন ২ মাসের প্রেগন্যান্ট।

ফারহান -এইটা কেমন খুশীর খবর বলতো? যেটাতে কোনো আনন্দ নেই, হাঁসি নেই।আছে শুধু কষ্ট।
এমন সময় নাদিয়ার ফোনটা বেজে উঠতেই,
নাদিয়া -মা ফোন করেছে,হয়তো বাসায় যানি বলে টেনশন করছে, আমি কথা বলেই আসছি।

ফারহান তার ফোনটা খুঁজতে গিয়ে দেখে প্রাপ্তির হাতের আঙুল গুলো নড়ছে।

তাড়াতাড়ি করে প্রাপ্তি হাত শক্ত করে ধরে, প্রাপ্তি! এই প্রাপ্তি! তুমি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো? প্রাপ্তি দেখো আমি তোমার সাথেই আছি।ফারহানের এইভাবে চিৎকার শুনে প্রাপ্তির মা,বাবা,কাকাই সবাই এসে ফারহানের পাশে দাঁড়িয়েছে।

প্রাপ্তি চোখ খুলে এইভাবে সবাইকে দেখতে পেয়ে অবাক হয়ে আছে।শোয়া থেকে উঠার চেষ্টা করতেই ফারহান বললো উঠছো কেন? কিছু বলবে?
কথাটা বলেই ফারহান প্রাপ্তিকে আবার শুইয়ে দিলো।

প্রাপ্তি-ফারহান কি হয়েছে আমার? (চারদিকে তাকিয়ে) ফারহান আমি হাসপালে কেন?
কথা গুলো শুনে ফারহান প্রাপ্তির একটা হাত নিজের গালে ধরে চোখের পানি গাল বেয়ে বেয়ে পড়ছে।
প্রাপ্তির মা ফারহানকে চুপ থাকতে দেখে বলতে লাগলো, প্রাপ্তি তুই জানিস তোর কি হয়েছে? তুই তো,,,,,,,,
ফারহান প্রাপ্তির মাকে থামিয়ে,, আম্মু কথাটা আমি পরে বুজিয়ে বলবো। প্লিজ এখন কিছু বলবেন না।
প্রাপ্তির মা কথাটা শুনে চুপ করে গেলেন।

তখন নীরা বললো বড় মা আমরা সবাই বাহিরে বসে অপেক্ষা করি।ওদেরকে একটু একা থাকতে দাও।

মেজো কাকা -হ্যাঁ নীরা ঠিকি বলছে।আমরা সবাই বাহিরে বসি।আমি বাড়ীতে ফোন দিয়ে জানিয়েদি প্রাপ্তির জ্ঞান ফিরেছে না হলে সবাই টেনশন করবে।

সবাই বাহিরে গিয়ে বসেছে।প্রাপ্তি ফারহানের দিকে তাকিয়ে,কি হয়েছে আমার? তুমি আম্মুকে কিছু বলতে দাওনি কেনো?

ফারহান -হুম সব বলবো আগে তুমি সুস্থ হও তারপর।

প্রাপ্তি -আমাকে একটু উঠিয়ে বসাবে? আমার শুয়ে থাকতে ভালো লাগছেনা।

ফারহান প্রাপ্তিকে উঠিয়ে হেলান দিয়ে বসালো।এখন কেমন লাগছে?

প্রাপ্তি -বুজতে পারছিনা।চেহারাটা এই রকম করছো কেন? কান্নাকাটি করে চোখমুখ তো সব ফুলিয়ে ফেলছো। প্রাপ্তি এক হাত উঠিয়ে ফারহানের চুল গুলো ঠিক করতে করতে বললো এতো কান্নার কি আছে পাগল একটা, আমি কি মরে গেছিনাকি?

প্রাপ্তির কথা শুনে ফারহান বললো যদি কখনো যেতে হয় দুজন একসাথেই যাবো।আজকে এইকথাটার জন্য তোমাকে মাফ করে দিলাম।আর যদি কখনো বলো তাহলে দেইখো আমি কি করি।

প্রাপ্তি -আচ্ছা ঠিক আছে আর কখনো বলবোনা।এইবার আমাকে একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরোতো।এইসব কিছু আমার ভালো লাগছেনা।

ফারহান মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরতে ধরতে বললো একজনকে জড়িয়ে ধরলে তো হবে না সাথে যে এখন আরেকজন ভাগ ধরেছে।প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে কানের উপর থেকে চুল গুলো সরিয়ে, I Love U আমার পরীর আম্মু।কথাটা শুনে ফারহানকে প্রাপ্তি ছেড়ে দিয়ে একটু সরিয়ে কি বলছো এইসব? দুইজন, পরীর আম্মু আমি তো কিছুই বুজতেছিনা।

এমন সময় নাদিয়া দরজায় দাঁড়িয়ে এইবার কি আসবো অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে আছি।

ফারহান এক গাল হাঁসি দিয়ে আয় অপেক্ষা করার কি আছে?

নাদিয়া ভিতরে আসতে আসতে বললো এখন কেমন লাগছে প্রাপ্তি?নাদিয়া প্রাপ্তির দিকে হাতটা বাড়িয়ে congratulation প্রাপ্তি।

প্রাপ্তিও হাতটা বাড়িয়ে বললো কিসের জন্য?

নাদিয়া ফারহানের দিকে তাকিয়ে ও কিছু বলেনি তোমাকে? কিরে অপদার্থ ওকে কিছু বলিসনি?

ফারহান -ওর কি অবস্থা সেটা দেখ।এইগুলো পরে বলা যাবে।

নাদিয়া- এইখানে আরেক দিন থাকুক।আর সম্পূর্ণ বেড রেস্ট।ওর দিকে খেয়াল রাখবি।আজ যা দেখলাম আশা করি তোকে কিছু বলা লাগবেনা।

প্রাপ্তি -ফারহান কি হয়েছে বলোনা?

ফারহান-আচ্ছা সব বাসায় গিয়ে বলবো।এখন কোনো কথা নয়।

নাদিয়া -প্রাপ্তি! তোমার বর আজ সারাদিন না খেয়ে আছে।দুজনে একসাথে খেয়ে নিও।ফারহান! আম্মু বাসায় একা আছে,প্রাপ্তির যখন জ্ঞান ফিরেছে তখন আর কোনো টেনশন নেই।এখন আমি যাচ্ছি আর শুন আমি সকালে আবার আসবো।

চলবে,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ৩৩

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ৩৩

#Rabeya Sultana Nipa

 

__সকালের সূর্যের মৃদু আলো জানালা বিধ করে প্রাপ্তির মুখে এসে পড়তেই আস্তে আস্তে ঘুমটা ভেঙে গেল প্রাপ্তির।উঠে শরীরের আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে দেখে ফারহানের সব কিছু গুছিয়ে রেখেছে, প্রাপ্তির উঠে গিয়ে ফ্রেশ হতে ইচ্ছে করছে না।মনে হচ্ছে আরেকটু ঘুমালে ভালো হতো।আচ্ছা ফারহানকেও তো রুমে দেখছিনা কোথায় গেলো? অবশ্য ও মাঝেমাঝে আমার আগেই উঠে। প্রাপ্তি খাট থেকে নামতে যাবে তখনি ফারহান ২ কাপ কফি নিয়ে এসে,প্রাপ্তি তুমি এখনো উঠে ফ্রেশ হওনি।আর আমি ভাবলাম তুমি ফ্রেশ হয়ে বসে আছো তাই আমি কফি নিয়ে আসলাম।

প্রাপ্তি ওয়াসরুমে যেতে যেতে বললো, আমি গিয়েই তো নিয়ে আসতে পারতাম।তুমি কষ্ট করতে গেলে কেন?আচ্ছা তুমি বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।

প্রাপ্তি ওয়াস রুমে যাওয়ার পরেই নীরা এসে বললো।শুভ সকাল ভাইয়া!

ফারহান পিছনে ফিরে দেখে নীরা দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।

ফারহান -(মুচকি হাঁসি দিয়ে)শুভ সকাল! ভিতরে এসে বসো।প্রাপ্তি ওয়াস রুমে ফ্রেশ হতে গেছে।ওহ্ হ্যাঁ নীরা, তোমার জন্য একটা গিফট আছে।আমি দুপুরেই বাসা থেকে বেরিয়ে যাবো। এখন দিয়েদি পরে মনে থাকবেনা।

নীরা-কিসের গিফট ভাইয়া?

ফারহান- কাল রাতের জন্য।তুমি না থাকলে আমি একা এতো কিছু করতে পারতাম না।আর তোমাকে স্পেশাল ভাবে থেনক্স আমার বউটাকে এতো সুন্দর করে সাজিয়ে দেওয়ার জন্য।

নীরা -ভাইয়া কিযে বলো না তুমি? সব ক্রেডিট তো তোমারি।

ফারহান গিফটের প্যাকেট টা নীরার হাতে দিয়ে, তুমি এইটা না নিলে ভাইয়া সত্যি অনেক কষ্ট পাবো।আমি অনেক শখ করেই এইটা কিনেছি।

নীরা -ওকে তোমাকেও থেনক্স।আচ্ছা আমি একটু পর এসে কথা বলছি।মৃদুলের অফিসের টাইম হয়ে গেছে।

নীরা যাওয়ার পরে ফারহান প্রাপ্তিকে ডেকে বললো, প্রাপ্তি! তোমার এখনো হয়নি?

প্রাপ্তি -এইতো আসছি।
কথাটা বলেই ওয়াস রুমের দরজা খুলে বাহিরে পা দিতেই মাথা ঘুরে পড়ে গেলো প্রাপ্তি। প্রাপ্তির পড়ার শব্দ শুনে ফারহান দৌঁড়ে গিয়ে দেখে প্রাপ্তি অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে।প্রাপ্তির মাথাটা উঠিয়ে কোলে নিয়ে, প্রাপ্তি!এই প্রাপ্তি! কি হয়েছে তোমার? ফারহানের চিৎকার শুনে বাড়ীর সবাই দৌঁড়ে এসে দেখে ফারহানের কোলে প্রাপ্তি অজ্ঞান হয়ে আছে ফারহান তাকে ডাকছে আর পাগলের মতো করছে।

মেজো কাকা- হঠাৎ করে কি হয়েছে ওর? ফারহান তুমি পাগলামো না করে ওকে উঠিয়ে খাটে নিয়ে শুয়ে দাও।আর তাড়াতাড়ি ডাক্তারকে ফোন দাও।
সাবার কথা শুনে খাটে নিয়ে শুয়ে ফারহানের মনে হলো তার ফ্রেন্ড নাদিয়াকে ফোন দিবে, সে অনেক বড় ডাক্তার।
ফারহান ফোন দিতেই নাদিয়া ফোন রিসিভ করে ফেললো।মনে হলো সেই এই ফোনের অপেক্ষায় বসে ছিলো।

ফারহান-হ্যালো, হ্যালো নাদিয়া।তুই কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছিস?

নাদিয়া -হ্যালো হ্যাঁ ফারহান কি হয়েছে তোর? এইভাবে কথা বলছিস কেন? কোনো প্রব্লেম?

ফারহান -তুই কোথায় আছিস সেটা বল?

নাদিয়া -আমি এইমাত্র হাসপাতালে আসলাম।কিছু বলবি?

ফারহান -তুই ওইখানেই থাক আমি আমার ওয়াইফ কে নিয়ে আসছি।কথা টা বলেই ফারহান ফোন কেটে দিয়ে, কাকাই, আব্বু, আমি গাড়ী বের করছি,আপনারা প্রাপ্তিকে নিয়ে আসুন।

হাসপাতালে সবাই বসে অপেক্ষা করছে।
প্রাপ্তিকে ইমাজেন্সি রুমে নাদিয়া নিয়ে গিয়ে দেখছে।
ফারহান বাহিরে দাঁড়িয়ে ছটফট করছে। খুব অসহায় মনে হচ্ছে নিজেকে।মনে হচ্ছে সেই পৃথিবী সব কিছুই এক নিমিষেই হারিয়ে ফেলছে।ফারহানের অবস্থা দেখে কেউ কিছু জিজ্ঞাস ও করতে পারছে না।হঠাৎ কেন প্রাপ্তির এমন হলো।ইমরান আর মৃদুল এসে ফারহানকে বুজাচ্ছে কিন্তু ফারহানের চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়তেছে।নিজের আপন মানুষের কিছু হলে অপেক্ষা করাটা যে কতোটা কষ্টের প্রাপ্তি এই অবস্থা না হলে ফারহান হয়তো কখনোই বুজতোনা।অবশ্য ফারহান প্রাপ্তির সাথে ইমাজেন্সি রুমে যেতে চেয়েছিল কিন্তু নাদিয়া যেতে দেয়নি।

একটু পর নাদিয়াকে আসতে দেখেই ফারহান দৌঁড়ে তার কাছে গিয়ে,নাদিয়া! প্রাপ্তির জ্ঞান ফিরেছে?ওর কি হয়েছে? প্লিজ চুপ করে থাকিস না।ওর কিছু হলে আমি মরেই যাবো।
ফারহানের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে, বউয়ের প্রতি দেখছি তোর অনেক ভালোবাসা,কিন্তু তুই এইটা কি ভাবে করতে পারলি।নাদিয়ার মুখে কথাটা শুনে সবাই অবাক হয়ে ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে।হয়তো একটা প্রশ্ন সবার মনে জেগে বসেছে।ফারহান হাত দিয়ে চোখ গুলো মুছতে মুছতে বললো কি বলছিস আমি তোর কথার কিছুই বুজতে পারছিনা।প্লিজ আমাকে বুজিয়ে বল।

নাদিয়া-আমি এতো দিন যেনে এসেছি তুই একটা কেয়ারফুল ছেলে,কিন্তু না তুই পুরোই কেয়ারলেস একটা ছেলে।আচ্ছা তুই কি জেনে বুজে করেছিস নাকি না জেনেই বুজতেছিনা।তবে এইটা বলতে পারি। মেয়েটার অনেক অল্পবয়সী তাই হয়তো তার শরীরের এই অবস্থা।

ফারহান-(চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে)প্লিজ নাদিয়া এতো হেয়ালি করিসনা।কি হয়েছে প্রাপ্তির সেটা বল?

নাদিয়া- কেন তুই জানিস না? তোর ওয়াইফ ২ মাসের প্রেগন্যান্ট।ওর শরীর পুরোই দুর্বল।আমি অনেক গুলো টেস্ট করতে দিয়েছি সেই গুলোর রির্পোট না আসা পর্যন্ত আমি কিছু বলতে পারছিনা।তোর ওয়াইফের এখনো জ্ঞান ফিরেনি আর ফিরতে অনেক সময়ও লাগবে।
নাদিয়ার কথা গুলো শুনে ফারহান চিৎকার দিয়ে বললো তুই একটু চুপ করবি? ও প্রেগন্যান্ট মানেটা কি?তুই কি এইখানে আমার সাথে ইয়ার্কি মারছিস।নাদিয়া শুন আমি এখন কোনো ইয়ার্কির মুডে নাই।

নাদিয়া- সত্যি ফারহান তোর ওয়াইফ ২ মাসের প্রেগন্যান্ট।তুই এইটা মানতে পারছিস না কেন?কেন তুই এইটা জানিসনা?

ফারহান -এইটা কোনো ভাবেই সম্ভব না।কারন ও কখনোই মা হতে পারবেনা।ওকে আমি ডাক্তার দেখিয়েছি।ওর সব রির্পোট নিয়ে ওকে না জানিয়ে আমি অনেক ডাক্তারকে দেখিয়েছি। সবাই একি কথা বলছে ও কখনোই মা হতে পারবেনা।ফারহানের কথা শুনে সবাই নিস্তব্ধ হয়ে গেছে।প্রাপ্তির মা পাশে থাকা সোপার উপর হেলান দিয়ে বসেছে।
ফারহান প্রাপ্তির মায়ের দিকে তাকিয়ে,আম্মু আপনারা সবাই আমাকে ক্ষমা করবেন।আমি চাইনি প্রাপ্তি কখনো এইকথা গুলো জানুক তাই আমি কাউওকেই বলিনি ওর সমস্যার কথা।ও শুনলে অনেক কষ্ট পাবে তাই।

নাদিয়া -এখন যা হওয়ার হয়ে গেছে । এককাজ কর কাউকে দিয়ে আগের রির্পোট গুলো নিয়ে আয় আমিও একবার দেখি।

প্রাপ্তির মেজো কাকা সবার দিকে একবার তাকিয়ে দীর্ঘ একটা নিশ্বাস পেলে, এতোবড় একটা খুশীর খবর এইভাবে পেতে হবে ভাবতেই পারিনি।
প্রাপ্তির মা -আমি এইটুকুই জানতাম প্রাপ্তি মা হতে পারবেনা।তোমাদেরকে বলিনি ফারহান নিষেধ করছে।কিন্তু ফারহান এতো কিছু করেছে এইটা জানতাম না।

নীরা- বড় মা, ভাইয়া প্রাপ্তিকে অনেক ভালোবাসে।মা হওয়া না হওয়ায় কিছুই যায় আসতোনা।

ফারহান এইখান থেকে নাদিয়ার কেবিনে গেলো।একটা চেয়ার টেনে বসে নাদিয়া, ও সত্যিই কি প্রেগন্যান্ট?

নাদিয়া -আমি মিথ্যা কেন বলবো বল? রির্পোট গুলা আনিয়েছিস?

ফারহান -না ইমরান গেছে আনতে।

নাদিয়া -তোর বউ অনেক ভাগ্যেবতী। তোর মতো একজন হ্যাজবেন্ড সে পেয়েছে।কথাটা বলেই নাদিয়া বললো তুই চিন্তা করিস না।প্রাপ্তি ঠিক হয়ে যাবে। জ্ঞান ফিরলেই আর কোনো চিন্তা নেই।

ফারহান কিছু বলছে না।চুপ হয়ে অনবরত চোখের পানি গুলো টপটপ করে নিচে পড়ছে।
ফারহানের বাবা মা সবাই আসছে। ফারহানের বাবা ছেলেকে এখন শুধু শান্তনা দেওয়া ছাড়া কিছু নেই।

ফারহান সবার কাছ থেকে উঠে প্রাপ্তির কেবিনে গিয়ে ওর মাথার পাশেই বসে একনাগাড়ে প্রাপ্তির দিকেই তাকিয়ে আছে।

নাদিয়া আড় চোখে বার বার ফারহানকে দেখছে।ফারহানকে যতো দেখছে তার কষ্ট তোতোই বাড়ছে।

ফারহান! ফারহান! নাদিয়ার ডাক শুনে অনেকক্ষণ পর ফারহান নাদিয়ার দিকে তাকালো।

ফারহান- (গম্ভীরভাব নিয়ে) কিছু বলবি?

নাদিয়া -তেমন কিছু না।কাছের মানুষ হারানো যে কতো কষ্টের এইবার বুজতে পারছিস?

ফারহান কিছু বলছেনা।ফারহান ভালো করেই জানে নাদিয়া কথাটা কেন তাকে বলছে। নাদিয়ার কোনো আনসারই ফারহানের কাছে নেই।

মেজো কাকা রুমে ঢুকেই দেখে ফারহান প্রাপ্তির একটা হাত তার বুকে নিয়ে বসে আছে।
মেজো কাকা-(ফারহানের কানের কাছে গিয়ে বললো)তোমার তো মালয়েশিয়া যাওয়ার প্লাইট রাত ১০.০০ টায়।এখন কি করবে?

ফারহান অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে বললো,কাকাই আমি যাবো না।আমি এইভাবে ওকে রেখে যেতে পারবোনা।

মেজো কাকা -তুমি যাও আমরাতো সবাই আছি।তুমি না গেলে অনেক বড় লোকসান হয়ে যাবে।

ফারহান- কাকাই প্রাপ্তির থেকে কোনো কিছুই আমার কাছে বড় নয়।টাকা গেলে আবার আসবে কিন্তু আমি প্রাপ্তিকে হারিয়ে ফেললে কখনওই ফিরে পাবোনা।

মেজো কাকা নিজের চোখ গুলো মুছতে মুছতে বললো ঠিক আছে ফারহান।

মেজো কাকা বাহিরে এসে নিস্তব্ধ হয়ে বসে আছে।প্রাপ্তির বাবা এসে পাশে বসে বললো কিরে এইভাবে আছিস কেন ফারহান কি বললো।
মেজো কাকা প্রাপ্তির বাবাকে বললো ভাইয়া প্রাপ্তির কপাল টা অনেক ভালো। জীবনে এইরকম একজন পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।

প্রাপ্তির বাবা -সত্যি ছেলেটা অন্য রকম।দেখনা এতো কিছু হয়ে গেলো আমরা কেউই জানতেই পারলাম না।এবং তার ফ্যামিলির লোকও না

চলবে,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ৩২

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ৩২

#Rabeya Sultana Nipa

 

_প্রাপ্তি এইবাড়ীতে এসে দেখে সব কেমন নিরিবিলি হয়ে আছে।কাকাই আব্বু সবাই ড্রইংরুমে বসে প্রাপ্তিকে দেখে চুপ হয়ে আছে।প্রাপ্তি সবাইকে এইভাবে দেখে বলতে লাগলো, তোমরা কেমন মানুষ আমি বুজিনা আম্মু অসুস্থ আমাকে একবার জানালেনা?

মেজো কাকা-তুই এইখানে মাথা ঠাণ্ডা করে বস।ফারহানের ফ্যামিলিরর দিকে তাকিয়ে তোমরাও বসো।

প্রাপ্তি -তোমরা বসো আমি আম্মুকে দেখে আসছি।নিশ্চয় আম্মু রুমে আছে।

প্রাপ্তি রুমে যাবে বলে পা এগুতেই প্রাপ্তির মা রান্নাঘর থেকে নাস্তা নিয়ে আসতে আসতে কোথাও যেতে হবে না।আমি দিব্বি সুস্থ আছি।তুই এই বাড়ীতে আসিসনা তাই আমি নীরাকে বললাম তোকে এইভাবেই আনতে। নীরা এই নে নাস্তাটা সবাইকে দিয়েদে।এইফাঁকে আমি আমার মেয়েকে একটু আদর করি।প্রাপ্তির মা প্রাপ্তির কাছে গিয়ে ধরে Happy Marriage Anniversary………..প্রাপ্তি।

প্রাপ্তি -দেখছো শুধু তোমারই মনে আছে।আর ওই গাধাটা এখনো মনে থাকার তো দূরের কথা আমার সামনেই আসলোনা।

(প্রাপ্তির কথাটা শুনে সবাই হাঁসতে যাবে তখনি নীরা সবাইকে ইশারা দিলো না হাঁসার জন্য।)জানো সন্ধ্যা থেকে তাকে আমি ফোন দিয়েই যাচ্ছি একবারো রিসিভ করে নাই।

প্রাপ্তির আব্বু -আচ্ছা ঠিক আছে ওর এতো বড় সাহস হয় কি করে আমার মেয়ের সাথে এইরকম করার।এখুনি বলছি বাসায় আসতে।

কথাটা শুনে নীরা প্রাপ্তির আব্বুর পাশে গিয়ে বিড়বিড় করে বললো,বড় আব্বু! ভাইয়া তো ছাদে। ফোন দিলে চলে আসবে না?

প্রাপ্তির আব্বু -চিন্তা করিসনা ওইভাবেই কথা বলবো।
(ফারহান কে ফোন দিয়ে)ফারহান, তোমার সাহস কি করে হয় আমার মেয়ের ফোন রিসিভ না করার।যাইহোক যেখানে থাকো তাড়াতাড়ি বাসায় আসো।(একটু চুপ থেকে) কিহ আজ বাসায় আসবা না? ওহ দেরী হবে।আচ্ছা ঠিক আছে।
ফারহানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সব কিছু নিজে নিজে বলে ফোন রেখে দিলো।ফারহান ঠিকি বুজেছে আব্বু কেন এইভেবে কথা বলছে।নিশ্চয় প্রাপ্তি সামনে আছে।
প্রাপ্তি আর কথা না বাড়িয়ে নিজেও নীরার সাথে কাজে লেগে গেলো। একটু পর ইমরান এসে বললো কিরে প্রাপ্তি, তুই কখন এলি?

প্রাপ্তি-এইতো কাকাই একটু আগে।তোমার সাথে ফারহানের দেখা হয়েছে আজ?

ইমরান -নিজের হাঁসিটা চেপে রেখে কই নাতো।আচ্ছা যাইহোক এই (নীরাকে ডেকে)নীরা ছাদে যাবি? চল আমরা ছাদে গিয়ে আড্ডা দিই।

নীরা -হ্যাঁ যেতেই পারি।প্রাপ্তি চল আমরা ছাদে বসে আড্ডা দিই।

প্রাপ্তি-এতো রাতে ছাদে? আচ্ছা চল।

প্রাপ্তি আর নীরা ছাদের দিকে এগুতে লাগলো।ইমরান সবাইকে ইশারা দিয়েছে ছাদে যাওয়ার জন্য।প্রাপ্তি ছাদে যেতেই ফারহান আর মৃদুল বাঁজি ফাটাতে শুরু করলো।প্রাপ্তি সবকিছু অবাক হয়ে দেখছে।কি বলবে কিছুই বুজতে পারছে না।মনে হচ্ছে তার সব ভাষা যেন সে হারিয়ে ফেলছে।ফারহানের উপর সন্ধ্যা থেকে যতো রাগ হয়েছিল সব এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেছে।
সবার এক সাথে বলে উঠলো Happy Marriage Anniversary…….. প্রাপ্তি এন্ড ফারহান।প্রাপ্তি অবাক হয়ে ইমরান কে বললো তারমানে সবাই আগে থেকেই প্লান করে রেখেছো আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য?

নীরা -সবাই বললে ভুল হবে, হ্যাঁ আমরা সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম এতো বড় করে নয়।একজন মানুষেরি এই সব ক্রেডিট।
প্রাপ্তি হাঁসি দিয়ে বললো আমি জানি ছোটো কাকাই ছাড়া আর কেউ হতেই পারেনা।কাকাই, তোমাকে অনেক গুলা thanks। কিন্তু এতো কিছু কেন করতে গেলে শুধু শুধু?
প্রাপ্তির কথা শুনে ফারহান প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে হাঁসছে।যাইহোক প্রাপ্তি খুশী হয়েছে এটাই বেশী।

ইমরান -প্রাপ্তি এইসব কিছুই আমি করিনি।সব ফারহানই করেছে আমি আর মৃদুল শুধু হেল্পই করেছি।

প্রাপ্তি ফারহানের দিকে তাকিয়ে এই জন্য তুমি ফোন রিসিভ করছিলেনা তাইনা?

ফারহান কিছু বলার আগেই মৃদুল বললো সব কথা বাসায় গিয়ে হবে। আগে দুইজন মিলে কেকটা কেটে ফেলো দেখি।

মেজো কাকা -হুম মৃদুল ঠিকি বলেছে যা করার তাড়াতাড়ি করো।
সব ফর্মালিটি শেষ করে সবাই নিচে নেমে এলো।ফারহান নীরার কাছে গিয়ে বললো, নীরা তুমি আর আমি গিয়ে যে শাড়ী গহনা গুলো নিয়ে এলাম ওই গুলো এইদিকে দাও।ফারহান এইগুলো হাতে নিয়ে রুমে গিয়ে দেখে প্রাপ্তি খাটের এক কোণায় হেলান দিয়ে শুয়ে আছে।ফারহান যেতেই উঠে বসতে বসতে বললো কি দরকার ছিলো এইগুলো কারার বলোতো।আচ্ছা! হাতে ওই গুলো কিসের প্যাকেট?

ফারহান -পরে বলছি এইগুলো কি।(আস্তে করে)প্রাপ্তি! আজ আমি কিছু চাইলে দিবে তো?

প্রাপ্তি -ঠোঁটের কোণে একটা হাঁসি এনে কি চাও শুধু একবার বলো তাতেই চলবে।শুধু দেখো তোমার প্রাপ্তি কি করে।

ফারহান-হুম,,,নীরাকে ফোন দিয়ে কই তুমি রুমে আসো।পারমিশন পেয়ে গেছি।

প্রাপ্তি -এই তুমি কি করছো আমি তো কিছু বুজতেছিনা।

ফারহান- চুপ করে বস কিছু বুজতে হবেনা।এইতো নীরা এসে গেছে।নীরা আমি মৃদুলের কাছেই যাচ্ছি তুমি সাজিয়ে পেলো।
কথাটা বলে প্যাকেট গুলো খাটের উপরে রেখে ফারহান চলে গেলো।

প্রাপ্তি -নীরা! ও কি বলে গেলো এইগুলো।

নীরা- তোকে বউ সাজাতে বলে গেছে। ভাইয়া চায় সব কিছু ভুলে নতুন করে শুরু করবে।তোদের দিয়ের দিন তো তুই ভাইয়াকে ভালোবাসিস নাই তাই আজ তোর থেকে ভালোবাসা আদায় করবে।

প্রাপ্তি ফারহানের কথা রাখতে গিয়ে সত্যি সত্যি বউ সাজলো।

নীরা- তুই বস আমি ভাইয়াকে পাঠিয়ে দিচ্ছি কথাটা বলেই নীরা চলে গেলো।
প্রাপ্তি বসে আছে ফারহানের অপেক্ষায়,কিন্তু শরীরটা ভালো লাগছেনা তবে আজ ফারহানকে বুজতে দেওয়া যাবেনা।ও অনেক আশা নিয়ে অপেক্ষা করেছে আমার জন্য।
আজ আমার লক্ষ্মী কে অনেক অনেক সুন্দর লাগছে, ফারহানের কথা শুনেই ভাবনার জগত থেকে ফিরে এলো সে। ফারহান প্রাপ্তির পাশে বসতে বসতে বললো, কি ভাবছো বসে বসে?

প্রাপ্তি -শাড়ী গহনা এইগুলো কখন এনেছো?শুধু শুধু এতো অপচয় এর কোনো মানে আছে?

ফারহান-একদম চুপ! আজ আমি তোমার কাছ থেকে কোনো নীতি কথা শুনতে চাইনা। সেইদিন অনেক কথা শুনিয়েছ আজ আর না।সেই দিন তোমার প্রতি আমার কোনো অধিকার ছিলোনা।আজ এক সাথে সব উসুল করে নিবো কথাটা বলেই প্রাপ্তিকে নিজের কাছে টেনে এনে ভালোবাসি, ভালোবাসি,ভালোবাসি, শুধু আমার এই লক্ষ্মী বউটাকে।

প্রাপ্তি-(মুচকি হাঁসি দিয়ে,) 2 2 2।

ফারহান -( ইয়ার্কি মেরে)2, মানে কি?এইটা কি ফোন নাম্বার? নাকি ভালোবাসার নাম্বার?

প্রাপ্তি -ধ্যাত, আমি বলতে চাইছি সেইম টু ইউ।

ফারহান-ওওওও বুজিয়ে বলবা তো।

প্রাপ্তি -(ফারহানের বুকে মাথা রাখে)ফারহান!তুমি আমায় এতো ভালোবাসো কেন বলতো?

ফারহান -এখন যদি একটু কষ্ট দি মেনে নিবে?

প্রাপ্তি -আমি জানি তুমি আমায় কোনো কষ্ট দিতে পারোনা।আচ্ছা তারপরে শুনি কি করছো তুমি?

ফারহান -সরি প্রাপ্তি আমিও চাইনি কষ্ট দিতে।কিন্তু কোনো উপায় নেই।কাল আমাকে মালয়েশিয়া যেতে হবে।তবে বেশী না মাত্র ৭ দিন।ওইখান থেকে ফিরে এসে তোমাকে নিয়ে বেড়াতে যাবো দূরে কোথাও।শুধু আমি আর তুমি, ওইখানে আমাদের কেউ ডিস্টার্ব করার মতো থাকবেনা।

প্রাপ্তি -আমাকে আগে বললে না কেন? আচ্ছা ৭ দিন কিন্তু এর বেশী না বলে দিলাম।

ফারহান প্রাপ্তির কপালে একটা চুমু দিয়ে এইনা হলে আমার লক্ষ্মী বউ।
প্রাপ্তি ফারহানের কথা গুলো শুনছে ঠিকি কিন্তু মাথার ভিতরে কেমন যানি করছে।
ফারহান প্রাপ্তির নিরবতা দেখে,
ফারহান -এই প্রাপ্তি আজ তুমি এতো চুপচাপ কেন? কি হয়েছে তোমার?অন্য দিন তো আমার প্রাপ্তি এতো চুপ থাকে না।আচ্ছা প্রাপ্তি কি আমার উপর কোনো কারনে রাগ হয়ে আছে।

প্রাপ্তি মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে নিজের মুখটা ফারহানে বুকে গুজিয়ে,তুমি কোন সময় থেকে বকবক করেই যাচ্ছো আমায় একটুও আদর করছোনা।প্রাপ্তি কথা গুলো বলছে ফারহানকে শান্তনা দেওয়ার জন্য।

ফারহান -সত্যি তো আমার লক্ষ্মী বউটা কে আদর না করে বকবক করে যাচ্ছি।কথাটা বলে ফারহান প্রাপ্তিকে বুকে নিয়ে এক অজানা ভালোবাসায় ডুব দিলো।

চলবে,,,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ৩১

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ৩১

#Rabeya Sultana Nipa

 

দেখতে দেখতে একটা বছর কেটে গেছে আজ প্রাপ্তি আর ফারহানের প্রথম বিবাহ বার্ষিকী। এইএক বছরে দুজনের ভালোবাসাটা এতোটাই বেড়েছে যে ফারহান ব্যবসার কাজের জন্য বাহিরে গেলেও ৭/৮ দিনের বেশী থাকতে পারেনা।অফিসে গেলেও মন বসে না।প্রাপ্তির সাথে মাঝে মাঝে আয়ানের সাথে কথা হয় এই নিয়ে ফারহান কখনো কিছু বলেনা।সেই প্রাপ্তিকে অনেক ভাবেই যাচাই করে দেখেছে সেই ফারহানকে সত্যি ভালোবাসে কিনা।যতোবারি যাচাই করেছে তোতোবারি প্রাপ্তির প্রতি তার ভালোবাসা বেড়েছে বরং একটুও কমেনি।

প্রাপ্তির বাবা আর মেজো কাকা অফিস থেকে এসে ফ্রেস হয়ে ড্রইংরুমে এসে বসলো।মেজো কাকা সেজো কাকীকে ডেকে কফি দিতে বললো দুজনকে।নীরা আর নাজিফা এসে,
নীরা -আব্বু, বড় আব্বু আমাদের কিছু কথা ছিলো।

প্রাপ্তির বাবা -কি হয়েছে বল।

নাজিফা -তোমাদের কারো মনে নেই আজ কি?

মেজো কাকা -আজকে কি বল?

নীরা -আব্বু আজ প্রাপ্তির প্রথম বিবাহ বার্ষিকী। আমরা অনেক কিছু প্লান করছি। প্রাপ্তিকে সারপ্রাইজ দিবো।এখন তোমরা কি বলো?

প্রাপ্তির মা কফি হাতে নিয়ে আসতে আসতে বললো আমার মনে আছে, কিন্তু প্রাপ্তি এইবার ফারহানদের বাড়ী গেছে ৩ মাস হয়ে গেছে, আসতে বললেও আজ কাল বলে বলে কাটিয়ে দেয়।ফারহানকে বললে ও বলে আম্মু আপনার মেয়ে গেলে আমিও যেতে পারি।

মেজো কাকা -ভাবী জানেন বিয়ের সময় আমার খুব ভয় ছিলো প্রাপ্তিকে নিয়ে।ভেবেছিলাম ফারহানকে ও মেনেই নিবেনা।প্রাপ্তি সবাইকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে বুজিয়েছে ফারহানই সব কিছু।

নীরা -আব্বু এখন এইসব বাদ দাও।আমরা এখন প্রাপ্তি আর ফারহান ভাইয়াকে সারপ্রাইজ দিবো কিভাবে সেটা ভাবতে চাই।

প্রাপ্তির বাবা -মৃদুল, ইমরান, সেজো বউ সবাই কে ডেকেই ভাবা যাক।

নীরা -বড় আব্বু! কাকাই আর মৃদুল বাহিরে গেছে কিছু কিনা কাটা করবে।

এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো দেখে সেজো কাকী বললো আপনারা বসুন আমি দেখছি। সেজো কাকী গিয়ে দরজা খুলেই অবাক হয়ে ফারহান! তুমি?

ফারহান -কেন কাকী? আমি আসতে পারিনা?

সেজো কাকী -না না সেই কথা বলিনি, আচ্ছা ভিতরে আসো।
ফারহান ভিতরে এসে সবাইকে এক সাথে দেখে বললো,কি ব্যাপার আব্বু সবাই একসাথে।

প্রাপ্তির আব্বু -নীরা আর নাজিফা কি প্লান করছে সেই নিয়ে আলোচনা করছি।আচ্ছা তুমি তো এই সময় না বলে আসার কথা না।

ফারহান -আসলে আব্বু আমি নীরার কাছে আসছি।(তারপর নীরার দিকে তাকিয়ে) নীরা আমার তোমার সাথে আলাদাভাবে কিছু কথা আছে।

মেজো কাকা -ঠিক আছে, নীরা! ওকে তোর রুমে নিয়ে যা।ভাবী ফারহান কে নাস্তা দাও।

নীরার রুমে এসে ফারহান নীরাকে বসিয়ে নিজে একটা চেয়ার টেনে বসলো।

নীরা -কি সমস্যা সেটা তো বলবা?

ফারহান -আমি জানি তুমি সবকিছু জানো। আজ রাত ১২.০০ টার পরথেকে আমাদের প্রথম বিবাহ বার্ষকী। আমি চাই প্রাপ্তিকে কিছু একটা সারপ্রাইজ দিই।এখন তুমি আমার সাথে যাবে আমরা শপিং করবো।আমি প্রাপ্তিকে আবার নতুন করে বউয়ের সাজে দেখতে চাই।বিয়ের দিন প্রাপ্তি বউ সেজেছিল ঠিকি কিন্তু আমার জন্য নয়।সবার কথায় বাধ্য হয়ে সেজেছিলো।এখন আমি চাই ও শুধু আমার জন্যই সাজবে। সেইদিন আমি ওর কাছ থেকে ভালোবাসা পাইনি।পেয়েছি শুধু ওর দুচোখে আমার প্রতি ওর ঘৃণা। কিন্তু এখন তো আর সেই সুযোগ নেই ও এখন আমাকে অনেক ভালোবাসে।ওহ্ আরেকটা সমস্যা হয়ে গেছে।ব্যবসায়ীক কাজে আমাকে কাল রাতে মালয়েশিয়ায় যেতে হবে। আমি প্রাপ্তিকে এই কথা ভয়ে বলতে পারিনি। ভাবছিলাম সারপ্রাইজের সাথে সাথে এই কথাটাও বলবো।

নীরা -আচ্ছা ঠিক আছে ছোটো শালী হয়ে এইটুকু করতেই পারি।তুমি ড্রইংরুমে বসো আমি রেডি হয়ে আসছি।ওওওও! ছোটো কাকাই আর মৃদুলও তোমাদের সারপ্রাইজ দিবে বলে কিনাকাটা করতে গেছে। আমরা গিয়ে শপিং শেষ করে ওদেরকে ফোন দিয়ে একসাথে বাসায় চলে আসবো।
এখন শপিং করে আসি বাকী প্লান পরে করবো।

এইদিকে প্রাপ্তি ফারহানে অপেক্ষায় বসে আছে।সন্ধ্যা হয়ে গেলো আজ এখনো আসছে না কেন।আজকের কথা কি ফারহানের একবারো মনে পড়েনি? ঠিক আছে আজ বাসায় আসুক একটুও কথা বলবো না।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে বড় ভাবীর রুমে গিয়ে দেখে সে কোথাও যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।

প্রাপ্তি -ভাবী তুমি কি কোথাও যাচ্ছো?

প্রাপ্তির দিকে ফিরেই বড় ভাবী বললো কিরে তুই এখনো রেডি হলি না?

প্রাপ্তি -কেন ভাবী? কোথায় যাবো?

বড় ভাবী -তুই কিছু জানিস না? বাবা এসেই তো আমাকে বললো সবাইকে বলে দিতে তোদের বাসায় যাওয়ার জন্য। তোর মা নাকি অসুস্থ সবাই এক সাথে দেখতে যাবে।আমি রুমে আসার সময় সুমিকে বলেছি তোকে বলে দেওয়ার জন্য। কেন সে তোমাকে বলেনি?

প্রাপ্তি -আমার আম্মু অসুস্থ? আমিই জানিনা। কথাটা বলেই প্রাপ্তি রুমে দৌঁড়ে গিয়ে ফোনটা খুঁজে নিয়ে দেখে ফোনে নীরা, মেজো মার অনেক গুলো মিসড কল।তাড়াতাড়ি করে নীরাকে ফোন দিলো প্রাপ্তি।

প্রাপ্তি -হ্যালো, হ্যালো,,নীরা আম্মুর কি হয়েছে? তোরা আমাকে একবারো জানালিনা?

নীরা -বিকেল থেকে অনেক বার ফোন দিয়েছি তুই রিসিভ করিসনি।পরে তোর শশুরের ফোনে ফোন দিয়ে বলেছি তোকে বলতে।এখন কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি চলে আয়।
কথাটা বলেই ফোন রেখে দিয়ে ফারহান মৃদুল ইমরান সবাই হাঁসতে থাকলো।

প্রাপ্তির মা তাদেরকে বললো মেয়েটাকে এইভাবে আনাটা কি ঠিক হবে।

ফারহান -আম্মু আপনি টেনশন করবেন না। আমি বড় ভাবীকে সব বলে রেখেছি।

প্রাপ্তির মা -হুম, তোমরা যা ভালো মনে করো।আমি এইদিকে রান্নাটা দেখে আসি।আজ সব প্রাপ্তি আর ফারহানের পছন্দমতো রান্না করা হবে।

ফারহান- আম্মু, আপনি একদম আমাকে নিয়ে টেনশন করবেননা।আর মৃদুল, ইমরান চলো আমরা এইদিকে সব গুলো রেডি করে ফেলি।
মৃদুল আর ইমরান যাওয়ার পরে ফারহান নীরার কানের কাছে এসে বললো তোমার কাজ গুলো কিন্তু মনে রেখো। কথাটা বলেই ফারহান তাদের সাথে চলে গেলো।

বড় ভাবী, মেজো ভাবী সুমি সবাই এসে দেখে কিরে প্রাপ্তি তুই এখনো রেডি না হয়ে বসে আছিস।

প্রাপ্তি-দেখোনা ভাবী ফারহানকে কখন থেকে ফোন দিয়ে যাচ্ছি ফোন সুইচ অফ বলছে।এখন কি করি বলোতো।

বড় ভাবী -তুই আগে রেডি হয়ে চল ওই বাড়ীতে গেলে ফোন দিয়ে বলে দিবো ওইখানেই আসতে।

প্রাপ্তি -তাহলে চলো, আমার রেডি হওয়া লাগবেনা।আমার টেনশনে কিচ্ছু ভালো লাগছেনা।

বড় ভাবী -তোর যেইটা ভালো লাগে কর,তাহলে এইবার চল

চলবে,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: 30

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: 30

#Rabeya Sultana Nipa

 

__সকালে নাস্তা করে বাড়ীর ছেলেরা সবাই অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।সবার আগে মৃদুলকেই যেতে হচ্ছে কারণ বিয়ে পর মৃদুল বেসরকারি একটা অফিসে কাজ করছে।আর সবাই নিজেদের ব্যবসা তাই একটু দেরী হলে সমস্যা নেই।ফারহান রুমে এসে রেডি হয়ে প্রাপ্তিকে ডাকছে।প্রাপ্তি সবার সাথে বসে গল্প করছে। ফারহানের ডাক শুনে উঠে গিয়ে, আমার বরটার কি হয়েছে বলোতো ?

ফারহান -তুমি জানো আমার এখন অফিসে যেতে হবে।এমনিতে সকালে উঠতে দেরী হয়ে গেলো। কোথায় আমার সব কিছু গুছিয়ে দিয়ে অফিসে পাঠাবে তা না উল্টো বসে বসে আড্ডা দিচ্ছো।

প্রাপ্তি- তাই বাবু সোনা? তোহ্ তোমাকে সকালে উঠতে কে মানা করেছে?

দুষ্টমার্কা একটা হাঁসি দিয়ে ফারহান একহাতে দিয়ে গলার টাই ঠিক করছে অন্য হাতে প্রাপ্তিকে কাছে টেনে এনে জড়িয়ে ধরে,
ফারহান – বাবু,এতো সুন্দর একটা চাঁদ পাশে থাকলে রাতে কি ঘুম হয়? তাই রাতে শুধু সেই চাঁদের আলোতে হারাতে ইচ্ছে করে।নিজেকে যতোই বলি ফারহান, সকালে অফিস আছে মিটিং আছে চাঁদের আলোতে নিজেকে এতো হারিয়ে ফেলিস না।তবুও মন কিছুতেই মানতে চায় না।

প্রাপ্তি ফারহানের শার্টের কলার ঠিক করে দিতে দিতে
প্রাপ্তি -হুম,,,এখন অফিসের দেরী হচ্ছে না? এতো কিছু করতে পারো টাই ও বাধতে পারো, শার্টের কলারটা আজ পর্যন্ত ঠিক করতে পারনা।

ফারহান -কি করবো বলো তুমি নিজ হাতে শার্টের কলার ঠিক করে দিলে সারাদিন মনে হয় ভালোই কাঁটে।

প্রাপ্তি -এইবার ছাড়ো তো আর পাম্প দিতে হবেনা।প্রাপ্তি কোনো বেলুন নয় পাম্প পেয়ে সব ভুলে যাবে।

এমন সময় নাজিফা এসে বললো, ভাইয়া আপুকে এইবার ছাড়ো। আমার আজ ক্লাস নেই তবে একটা ফ্রাইবেট আছে। তুমি যদি যাওয়ার সময় আমাকে সেইখানে নামিয়ে দাও একটু ভালো হয়।

ফারহান প্রাপ্তিকে ছেড়ে দিয়ে, এদের জন্য বউটাকে একটু আদরও করতে পারিনা।যাইহোক প্রাপ্তি,তোমার তো কপাল এইবার পুড়লো দেখছি ।তোমার সতিন নিজে এসেই ধরা দিচ্ছে।দেখনা তোমাকে একটু আদর করবো তাও সহ্য হচ্ছে না।

প্রাপ্তি মুখটা গোমড়া করে ফারহানের দিকে তাকিয়ে, ফারহান! সবসময় ইয়ার্কি ভালোলাগে না।ওকে কিছু বললে ও তোমার সাথে যেতে চাইবে না।
নাজিফা, তুই ড্রইংরুমে বস তোর ভাইয়া আসছে।

প্রাপ্তি বলার সাথে সাথেই নাজিফা কিছু না বলে চলে গেলো।

ফারহান -এই প্রাপ্তি! তুমি কি রাগ করছো?
সরি বাবু আর বলবো না।

প্রাপ্তি -আমি একটুও রাগ করিনি।তাড়াতাড়ি যাও নাজিফার আবার দেরী হয়ে যাবে।

ফারহান -যাবো কি করে? যাবার মেডিসিন এখনো পড়েনি পড়লেই চলে যাবো।
প্রাপ্তি বুজেছে ফারহান কিসের কথা বলছে।ফারহানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফারহানের কাছে গিয়ে অনেক গুলো চুমু দিয়ে এইবার যাও।

ফারহান অবাক হয়ে, বাবু এইটা কি ঝড় উঠছে?

প্রাপ্তি -আর একটা কথাও না যাও বলছি।

ফারহান ড্রইংরুমে আসতে প্রাপ্তির হাত ধরে এসে নাজিফাকে বললো ম্যাডাম এইবার আসুন।আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে।

নাজিফা -এতোক্ষণ আপুকে আদর করতে দেরী হয়নি।মনে হচ্ছে তোমার বউটাকে কেউ নিয়ে যাবে তাই এখনো হাত টেনে ধরে রাখছো।

ফারহানের একটুও খেয়াল ছিলো না প্রাপ্তির হাত ধরে রেখেছে সে।নাজিফার কথা শুনেই প্রাপ্তির হাত ছেড়ে দিয়ে ওহ্ সরি এই বার আসো।
ফারহান আর নাজিফা চলে গেলো।
প্রাপ্তি ছোটো একটা নিশ্বাস ছেড়ে নিজের রুমেই আসলো।মনে মনে এইটাই অপেক্ষা করছিলো ফারহান কখন অফিসে যাবে।
ফোনটা হাতে নিয়ে খাটের এককোণায় গুটিসুটি হয়ে বসে আয়ানকে ফোন দিলো।অনেক বার রিং হওয়ার পরে আয়ান ফোন রিসিভ করলো।

আয়ান -শুভ সকাল, মিসেস ফারহান! আপনার রাত গুলো এখন অনেক সুখের কাটতেছে অনেক মধুময় তাইনা?

প্রাপ্তি -আয়ান আমি তোমার কাছে এইসব কিছুই শুনতে ফোন দিই নি।

আয়ান -ব্যাপার কি, ফারহান সাহেব বাসায় নেই মনে হচ্ছে।না হলে আপনি থেকে তুমিতে আসতেনা।তারপর বলো?কি মনে করে ফোন করেছো।

প্রাপ্তি -তুমি আর কখনো আমার ফোনে কল দিওনা।তুমি ফোন দিলে হয়তো ফারহান কিছু বলেনা,কিন্তু আমি বুজি ও ভিতরে ভিতরে ঠিকি কষ্ট পায়।সেইদিন তোমার ভুলের কারণে আজ এই অবস্থা। সেইদিনের জন্য কখনওই আমাকে দায়ী করতে পারবেনা।তুমি আমাকে শুধু সন্দেহ করেছিলে।কিন্তু ভালোবাসাটা একবার দেখনি।

আয়ান -ভুল মানুষেই করে তাইনা?তাই বলে শাস্তিটা অনেক কঠিন হয়ে গেলো না?প্রাপ্তি আমি মেনে নিলাম সব ভুল আমার। সব আমার দোষ। এইবার তুমি ফিরে আসো।আমি কথা দিচ্ছি আমার ফ্যামিলির লোক কিছুই জানবেনা।তোমাকে নিয়ে ওদের কোনো অভিযোগ করতে দিবোনা।প্লিজ ফিরে আসো।

প্রাপ্তি -এইটা সম্ভব না।আমি ফারহানকে ছেড়ে তোমার কাছে যেতে পারবোনা। প্লিজ আমাকে আর ফোন দিওনা।ফারহানকে শুধু ভালোবাসাই যায় ছেড়ে যাওয়া যায় না।

আয়ান -তুমি সত্যিই ফারহান কে ভালোবাসো?বড়লোকের ছেলে ভালোতোবাসবাই।

প্রাপ্তি -হ্যাঁ সত্যি আমি ওকে অনেক ভালোবাসি। তবে বড়লোকের ছেলে হিসেবে নয়।ভালোবেসেছি আমার প্রতি তার ভালোবাসা, বিশ্বাস এইগুলো দেখে।

আয়ান- ঠিক আছে আমি তোমাকে আর জ্বালাবো না।তবে এক শর্তে।

প্রাপ্তি-কিসের শর্ত আয়ান?তুমি এমন কিছু বলোনা যা আমি করতে পারবোনা।

আয়ান -বেশী কিছু না শুধু মাঝে মাঝে তোমার খবর নিতে চাই।তোমাকে বেশী ডিস্টার্ব করবোনা। বিশ্বাস করো।

প্রাপ্তি মনে মনে ভাবলো এইতো আর বেশী কিছুনা।মেনে নি, না হলে প্রাতিদিন ও ফোন দিবে।এতে ফারহানের কষ্টটা আরো বাড়বে।

প্রাপ্তি -ঠিক আছে তোমার শর্তে আমি রাজি।তাহলে এখন রাখছি।

কথাটা বলেই প্রাপ্তি ফোন কান থেকে নামিয়ে খাট থেকে নিছে পা দিতেই দেখে ফারহান দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।
ফারহান!!!তুমি কখন এলে? অফিসে যাওনি?

ফারহান চুপচাপ রুমে ঢুকেই আলমারি থেকে ফাইল টা নিয়ে আবার চলে যাচ্ছে দেখে প্রাপ্তি পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো ফারহানকে।,তোমার কি হয়েছে বলতো?
কথা বলছো না কেন?

ফারহান প্রাপ্তিকে ছাড়িয়ে হাত ধরে টেনে সামনে এনে দাঁড় করিয়ে, কাঁদোকাঁদো গলায় বললো, দেখেছো আমি কতটা হতোভাগা। নাজিফাকে নামিয়ে দিয়ে হঠাৎ ফাইলটার কথা মনে পড়ে গেলো। এসে শুনি আমার বউ শর্ত মেনে নিচ্ছে।কিসের শর্ত মেনে নিলে প্রাপ্তি? আমাকে ছেড়ে যাওয়ার?বেঁচে থাকতে তো তুমি কারো কাছে গেলে আমি সহ্য করতে পারবোনা।আমার মরণে পরে না হয় যেও।কথাটা বলার সাথে সাথে প্রাপ্তি ফারহানকে জড়িয়ে ধরে তার বুকে মাথা রেখে ফারহান বিশ্বাস করো আমি এমন কিছু করবোনা যাতে তোমার কষ্ট হবে।তারপর প্রাপ্তি আয়ানের বলা কথা গুলো সব বললো।ফারহান সব শুনে প্রাপ্তির মাথাটা উঠিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে, বাকী কথা অফিস থেকে এসে বলবো।আমার একটা মিটিং আছে তাড়াতাড়ি যেতে হবে।

প্রাপ্তি -ঠিক আছে যাও।তাড়াতাড়ি ফিরে এসো।

ফারহান- এবার সুন্দর করে একটা হাঁসি দাওতো। এই হাঁসিটা না দেখে গেলে কোনো কাজেই মন বসবে না।
প্রাপ্তি হাঁসতে হাঁসতে আচ্ছা ওকে এইবার যাও।তাড়াতাড়ি এসো কিন্তু।
ফারহান যাওয়ার সময় প্রাপ্তির চুল গুলোকে এলোমেলো করে দিলো।

এইভাবে রাগ, অভিমান, হাঁসি কান্নার মাঝেই চলিতেছিল তাদের সংসার দেখতে দেখতে অনেকটা দিনও কেটে গেলো

চলবে,,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ২৯

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ২৯

#Rabeya Sultana Nipa

 

_ঘড়ীর কাটায় টিকটিক করে রাত দুইটা বেজে গেছে।প্রাপ্তি ফারহানের বুকে মাথা রেখে বেঘোর হয়ে ঘুমাচ্ছে।এইদিকে প্রাপ্তির ফোনের রিং বেজেই যাচ্ছে।ফারহান ফোনের শব্দ পেয়ে ঘুম ঘুম চোখে ফোনটা খুঁজে নিয়ে দেখে প্রাপ্তি ফোন বেজে যাচ্ছে।
ফোনের আলো প্রাপ্তির মুখে পড়তেই ঘুম ঘুম চোখে, ওহ্! ফারহান কি করছো তুমি?

ফারহান -(আস্তে করে) অনেকক্ষণ থেকে তোমার ফোন বাজতেছে।

প্রাপ্তি – ধ্যাত! ফোন অফ করে রাখো তো।

ফারহান -দেখো না হয়তো জরুরী হবে।

তুমি ছাড়া এই মুহূর্তে জরুরী কিছু নেই, কথাটা বলতে বলতে প্রাপ্তি উঠে বসলো। ফারহানের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে ফোনের স্কিনের উপর নাম্বারটা দেখে প্রাপ্তির হাঁসি মুখটা মলিন হয়ে গেলো।

ফারহান নিজেও উঠে বসতে বসতে হ্যাঁ আয়ানই ফোন করেছে তাই তোমাকে উঠাতে হলো।অন্য কেউ হলে তো আমি নিজেই কথা বলতাম।
কথাটা শুনে প্রাপ্তি ফারহানের মুখের দিকে ছেয়ে আছে।একটা মানুষের কিভাবে এতোটা সহ্য করার ক্ষমতা থাকে?

ফারহান -আমার দিকে তাকিয়ে না থেকে ফোন রিসিভ করো। বেচারা একটার পর একটা কল দিয়েই যাচ্ছে।

প্রাপ্তি ফারহানের কথায় ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই, আমি জানতাম তুমি আমার ফোন রিসিভ না করে পারবেনা। কারণ তুমি আমায় ভালোবাসো।

প্রাপ্তি -আপনার ভুল ধারণা। আপনার ফোনই আমি রিসিভ করতাম না।কিন্তু আমার হ্যাজবেন্ডের কারণেই রিসিভ করলাম।যাইহোক এতো রাতে ফোন দিলেন কেন?

আয়ান- প্লিজ এইরকম করোনা। আমি মানছি আমি সেইদিন ভুল করেছি।তোমার কোনো কথা বিশ্বাস না করে।চলোনা আমরা সবকিছু মিটিয়েনি।
কথাটা শুনে প্রাপ্তি ফারহানের দিকে তাকালো।ফারহান বসে বসে ফোন টিপতেছে।মনে হচ্ছে এইদিকে তার কোনো মনই নেই।

প্রাপ্তি -আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে? কি বলছেন এইসব? কি মিটাতে চান? কোনো কিছুই আমি মিটাতে চাই না।প্রাপ্তি কথার স্বর জরে হয়ে যাচ্ছে দেখে ফারহান নিজের ফোন রেখে, প্রাপ্তি আস্তে কথা বলো,সবাই শুনতে পাবে।

আয়ান -তার মানে সত্যি তুমি বিয়ে করেছো। সকাল থেকে ভাবলাম রাগ করেই এসব বলতেছ। কিন্তু এতো রাতে যখন তোমার পাশে ছেলের কন্ঠ শুনছি তারমানে তুমি সত্যিই বিয়ে করেছ।কিন্তু আমার তাতে কোনো সমস্যা নেই। বিয়ে করেছো তাতে কি হয়েছে? তবুও আমি তোমাকেই ভালোবাসি।তুমি ঠিক থাকলে আমার সব ঠিক।কথা গুলো শুনে প্রাপ্তি ভালো করেই বুজে গেলো আয়ানকে এইভাবে সারারাত বুজালেও বুজবেনা।এর ছেয়ে ভালো সকালে ফারহান যখন থাকবেনা তখন সব কিছু বুজিয়ে বলে ঠিক করে নিবো।ফারহান হয়তো মুখে কিছু বলছেনা।কিন্তু ভিতরে ভিতরে ঠিকি কষ্ট পাচ্ছে।ও তো রক্তেমাংস গড়া একটা মানুষ। হয়তো আমায় বেশী ভালোবাসে দেখেই সবকিছু চুপচাপ সহ্য করে নিচ্ছে।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে আয়ানকে আর কিছু না বলে ফোন রেখে অফ করে দিলো।

প্রাপ্তি ফোন রেখে দিয়েছে দেখে ফারহান বললো,কি ব্যাপার কিছু না বলেই রেখে দিলে।
প্রাপ্তি একটা হাঁসি দিয়ে ফারহানকে জড়িয়ে ধরে আমার এখন ইচ্ছে করছে না কথা বলতে।এতো রাতে কেউ ফোনে কথা বলে? আমার ইচ্ছে করছে বরে আদর খেতে।
ফারহান প্রাপ্তিকে নিজে দুই হাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, তাই বুজি?

প্রাপ্তি -হুম।।

ফারহান – তাহলে ফোনটা এসে ভালোই হলো।না হলে তো ঘুমিয়েই থাকতে।

প্রাপ্তি -হুম,,,

ফারহান প্রাপ্তিকে ছেড়ে দিয়ে সামনে বসিয়ে হাত দুটো শক্ত করে ধরে অনেকক্ষণ প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে থেকে,একটা কথা বলি?

প্রাপ্তি -আমি মানা করেছি তোমাকে? যা বলার বলতে পারো কিন্তু এইভাবে নয়।
তুমি শুয়ে পড়ো আমি তোমার বুকে মাথা রেখে যা বলবে শুনবো।
ফারহান কিছু না বলে প্রাপ্তিকে বুকে শুয়ে বললো, এই ফোনটা আর না ব্যাবহার করলে হয়না? আমি তোমাকে এর ছেয়ে ভালো ফোন এনে দিবো।ফারহানের কথাটা শুনে প্রাপ্তি ভালো করেই বুজেছে কেন বলছে এই কথা।তাই প্রাপ্তি মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে,

প্রাপ্তি -তুমি যা বলবে তাই হবে।

(কথাটা শুনে ফারহান বুজে নিলো আয়ানের উপর প্রাপ্তির এখন আর সেই দুর্বলতা কাজ করেনা)
আচ্ছা সারাজীবন আমাকে এইভাবে ভালোবাসবে তো?

ফারহান -যেইদিন তোমাকে ভালোবাসবো না তোমার মনে হচ্ছে, মনে করবে সেইদিনি ফারহান আর পৃথিবীতে নেই।

প্রাপ্তি -ওহ্ কি বলছো এইসব?যেইখানে যাবা আমাকে নিয়ে যাবে না হলে তোমার খবর আছে।

ফারহান -মুখে একটু হাঁসির ঝলক ফুটিয়ে আচ্ছা ঠিক আছে বলেই প্রাপ্তির কপালে আস্তে করে একটা চুমু খেলো।
সারারাত ফারহানের ভালবাসা পেয়েই প্রাপ্তির রাত কেটে গেলো।সকাল বেলা উঠে ফ্রেশ হয়ে ফারহানের জন্য চা আনতে গেলো।ফারহান চায়ের জন্য রুমে অপেক্ষা না করে ড্রইংরুমে সবার সাথে বসে আড্ডা দিতে লাগলো।মেজো মা প্রাপ্তিকে রান্নাঘরে ঢুকতে দেখে, কিরে তুই রান্নাঘরে?

প্রাপ্তি -ফারহানের জন্য চা নিতে আসলাম।

মেজো মা -তুই আসতে গেলি কেন? বললেই তো পাঠিয়ে দিতাম।

প্রাপ্তি- কোনো সমস্যা নেই। আমি নিজেই পারবো।
কথাটা শুনে মেজো মা বললো,তাহলেতো ভালোই।আচ্ছা এই নে,চা টা দিয়ে আয়।
প্রাপ্তি এসে ফারহানের হাতে চা দিতেই ইমরান বললো এইটা কি দেখলাম,

মেজো কাকা নিজের চায়ে চুমুক দিয়ে,কেন কি হয়েছে তোর?

আরে ভাইয়া কি হয়নি সেটা বলেন।(প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে)এই প্রাপ্তি, কখনো তো আমাকে এক কাপ চা এনে খাওয়ালিনা।আর যার সাথে তোর সবসময় ঝগড়া লেগেই থাকতো তাকে এনে ঠিকি খাওয়ালি।
ইমরানে কথাটা শুনে সবাই হাঁসতে লাগলো। ফারহান ইমরানের কানের কাছে গিয়ে, শুন তুই ওর কাকাই আর আমি ওর হ্যাজবেন্ড তাহলে আমাকে এনেতো দিবেই তাই না?তোর হিংসে কেন লাগছে আমি বুজলাম না।তুইও বিয়ে করে ফেল দেখবি বউয়ের হাতের চা কখনোই মিস করতে চাইবিনা।

চলবে,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট ২৮

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট ২৮

#Rabeya Sultana Nipa 

 

__প্রাপ্তি- আম্মু ডাকছে? আচ্ছা শুনো তুমি আবার সবার সামনে কিছু বলোনা প্লিজ।

প্রাপ্তি উঠে তার মায়ের কাছে গিয়ে দেখে ওইখানে সবাই আছে।

প্রাপ্তিকে দেখে তার মা বললো,কিরে তুই ওই খানে একা একা কি করছিস।আমরা সবাই এইখানে তুই আমাদের সাথে কথা বলবি তা না।আচ্ছা শুন ফারহান আর তুই আজ আমাদের বাসায় চলে আয়।নীরার শাশুড়িকে বলেছি নীরাকে নিয়ে যাওয়ার কথা।তিনিও রাজী হলেন।

প্রাপ্তি -আম্মু ফারহান কি বলবে বলো? ওর বাসায় ফোন দিয়ে আব্বুকে জিজ্ঞাস করতে হবে থাকবো কিনা?

মেজো মা -নাজিফা যাতো ফারহান কে ডেকে নিয়ে আয়। ফারহানকেই বলবো তার বাবাকে বলতে।

ফারহান এসে, মেজো মা! আমাকে ডেকেছেন?

মেজো মা- হ্যাঁ, আসলে মেয়েটা তো অনেক দিন হলো তোমাদের বাড়ীতেই আছে।আমরা চাই প্রাপ্তি এইখান থেকে আমাদের বাসায় যাবে।অবশ্য নীরাও যাবে।প্রাপ্তিকে বলছি সে বলতেছে তোমার বাবাকে বলা ছাড়া কিছু বলতে পারবেনা। এখন তুমি কি বলো?
কথাটা শুনেই ফারহান প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে থেকে বললো ঠিক আছে মেজো মা।আমি বাবাকে ফোন করে দেখি কি বলে।
কথাটা শেষ করে প্রাপ্তিকে চোখ দিয়ে ইশারা করলো বাহিরে আসতে।
প্রাপ্তি ফারহানের পিছন পিছন পাশের রুমে আসলো।ফারহান কে দেখে মনে হচ্ছে কথাটা শুনে ওর ভালো লাগেনি। আচ্ছা ও না গেলে নাই তাই বলে রাগটা আমার উপর মিটাবে নাকি।মনে মনে কথা গুলো ভাবতে ভাবতে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।ফারহান প্যান্টের পকেটে দুই হাতে ডুকিয়ে দাঁড়িয়ে প্রাপ্তির দিকে এক দৃষ্টিতে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে ওইখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
ফারহান আর কিছু বলার আগেই প্রাপ্তি কাছে আসতে আসতে, ফারহান বিশ্বাস করো আমি আম্মুদের যাওয়ার ব্যাপারে কিছু বলিনি।ওনারাই ব,,,,,,,,প্রাপ্তিকে আর কোনো কথার সুযোগ না দিয়ে ডান হাত দিয়ে টেনে এনে নিজের সামনে এনে দাঁড় করালো।

ফারহান -ওনারাই বলছে,,,, তোমার একটুও ইচ্ছে করেনি?

প্রাপ্তি -তুমি রাজী হলেই যাবো।যদি তুমি যাও তাহলে।

ফারহান – যেতে পারি এক শর্তে।

প্রাপ্তি -আবার কি শর্ত বলো তো?

ফারহান- তুমি তো ওই বাড়ীতে গেলে সবাইকে পেয়ে আমাকেই ভুলে যাবে।কিন্তু আমি এইটা চাইনা।আমি চাই তুমি শুধু আমাকেই সময় দিবে।এইকথায় যদি তুমি রাজী থাকো তাহলে আমিও যেতে রাজী। আর বাবাকেও বুজিয়ে বলবো।

প্রাপ্তি ভালো করেই জানে ফারহানকে যখনি ওই বাড়ীতে যেতে বলবে তখনি এই শর্তই দিবে।এরচেয়ে ভালো এখনি হ্যাঁ বলেদি।
প্রাপ্তির মুখে হ্যাঁ শুনে ফারহান মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটা বের করে তার বাবাকে ফোন দিলো।

ফারহান- আসসালামু আলাইকুম,

ফারহানের বাবা- ওয়ালাইকুম সালাম।কি ব্যাপার ফারহান,কোনো সমস্যা?

ফারহান -বাবা, আসলে প্রাপ্তির মায়েরা সবাই বলছে নীরাদের বাসা থেকে ওদের বাসায় যেতে।আর প্রাপ্তিও তো আমাদের বাড়ীতে এসেছে অনেক দিন হলো। এখন না হয় কয়েকদিন গিয়ে ওই বাড়ীতে থেকে আসুক।প্রাপ্তি বলছে তুমি না বললে ও যাবেনা।

ফারহানের বাবা -ফারহান, এতে আমার কোনো অসুবিধা নেই।প্রাপ্তিকে বলো কয়দিন গিয়ে থেকে আসতে।আর প্রাপ্তিকে বলে দিও ওর হাতের চা টা আমি খুব মিস করবো এই কয়দিন।

ফারহান একটা হাঁসি দিয়ে ঠিক আছে বলে ফোন রেখে দিলো।
প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে বাবা তোমাকে একটা কথা বলতে বলেছে।

প্রাপ্তি -কি কথা?

ফারহান- তোমার হাতের চা নাকি অনেক মিস করবে।
কথাটা শুনে প্রাপ্তি খুশি হবে নাকি মন খারাপ করবে বুজতে পারছে না।
কারণ সে তার শুশুরের জন্য চা বানিয়ে আনে ঠিকি কিন্তু তিনি কখনো খারাপ ভালো কিছু বলেননি।কিন্তু আজ কেন বললেন এইটা প্রাপ্তির অজানা।

এই প্রাপ্তি কি ভাবছো বলোতো? ফারহানের কথাটা শুনে প্রাপ্তি ভাবনার জগত থেকে ফিরে এলো।
কিছুনা ফারহান আমি আম্মুকে বলে আসি আমরা যাচ্ছি।
সব ঝামেলা শেষ করে সবাই সন্ধ্যায় বাড়ী ফিরে এলো।প্রাপ্তি নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে ফারহান বসে বসে প্রাপ্তির ফোন টিপতেছে।
প্রাপ্তি -ফোন দিয়ে কি করছো?

ফারহান -তোমার আর আয়ানের আগের এসএমএস গুলো দেখছি।চিন্তা করোনা দুই একটাই পড়ছি বেশী পড়িনি।

ফারহানের কথা শুনে প্রাপ্তি মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে আচ্ছা ঠিক আছে সব গুলোই দেখো তবে আগে ফ্রেশ হয়ে আসো এই ফাঁকে আমি নীরার রুম থেকে আসছি।

ফারহান -ঠিক আছে যাও আমি ফ্রেশ হয়ে এসে যেন তোমাকে এইরুমেই দেখি।

প্রাপ্তি আর কথা না বাড়িয়ে নীরার রুমের দিকে গেলো।
মৃদুল শুয়ে শুয়ে ফোনে কথা বলছে।নীরা ফ্রেশ হয়ে মাত্র দাড়িয়েছে।

প্রাপ্তি দরজায় দাঁড়িয়ে আমি কি আসবো?
নীরা হেঁসে উঠে তুই এই কথা বলছিস।তোর আর আমার মাঝে তো কোনো ফর্মালিটি নেই। তাহলে আজ কেন দেখাচ্ছিস।ওওও আমি তো ভুলেই গেছিলাম আপনি বড়লোক বাড়ীর বউ।এখন তো ফর্মালিটি দেখাবেনই।

প্রাপ্তি -(রুমে ঢুকতে ঢুকতে)দেখেছো ভাইয়া নীরা আমায় এই কথা বলছে।তো নীরা! তোরাই তো সবাই মিলে আমাকে বড়লোক বাড়ীতে বিয়ে দিলি।এখন আবার এই কথা কেন বলছিস?

নীরা প্রাপ্তির কাছে এসে হাত ধরে টেনে নিয়ে নিজের পাশে বসিয়ে প্রাপ্তি আমি মজা করছি।তুই কি রাগ করছিস? ঠিক আছে আর কখনো বলবো না।

মৃদুল শোয়া থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তোমাদের মাঝে আমি নেই। আমি বাহিরে যাচ্ছি তোমরা কথা বলো।
প্রাপ্তি এতোক্ষণ মনে মনে এইটাই চেয়েছিলো কখন মৃদুল যাবে আর ও নীরার সাথে কথা বলবে।মৃদুল চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে প্রাপ্তি।

নীরা -তুই ওই দিকে তাকিয়ে না থেকে কিছু বলবি? মনে হচ্ছে কিছু বলতেই এসেছিস।

প্রাপ্তি কথাটা ঘুরিয়ে পেছিয়ে না বলে সোজাই বললো আজ তোদের বাসায় যাবার আগে আয়ান ফোন করেছিলো।

প্রাপ্তির মুখে কথাটা শুনে নীরার নিস্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে প্রাপ্তির দিকে।কি বলবে বুজতে পারছেনা।প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছে এই আবার নতুন কোনো ঝামেলা শুরু করবে নাতো?

নীরার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাঁসি দিয়ে তুই কি ভাবছিস আমি ভালো করেই জানি।তবে তুই যা ভাবছিস ওইটা ভুল।আমি এমন কিছুই করবোনা যেতে ফারহান কষ্ট পায়। কি ভাবে মানুষকে ভালোবাসতে হয় সেটা আমি ফারহানের কাছ থেকেই শিখেছি।আমি এইটাও শিখেছি ভালোবাসাতে কোনো মিথ্যা ছলনা থাকতে নেই।হয়তো তুই এইটাও ভাবছিস আয়ানের কথা আমি ভুলে গেলাম কি করে আমার কি একটুও কষ্ট হচ্ছেনা? এইটার ও আনসার আমি জানি।আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে তোকে বলে বুজাতে পারবোনা। কিন্তু ফারহানের ভালোবাসার কাছে কিছুই না।যে মানুষ সামান্য একটা ফোনে আমায় এতোটা সন্দেহ করতে পারে তাকে ভালোবাসা বলা যায়না। আর যে সব কিছু জেনেও বিশ্বাস রাখে তাকেই ভালোবাসা বলে।
প্রাপ্তির কথা শুনে নীরা নিজেকে সামলাতে না পেরে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে, সত্যি বলছি তোর মধ্যে এতোটাই গভীরতা আছে যা আমাদের কারো কাছেই নেই।

প্রাপ্তি, প্তাপ্তি, সেজো কাকী ডাকতে ডাকতে নীরার রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে, তুই এইখানে, ফারহান তো তোকে ডাকছে।

হঠাৎ প্রাপ্তির মনে পড়ে গেলো ফারহান আসার সময় বলে দিয়েছিলো ও ফ্রেশ হয়ে এসে যেন আমাকে রুমে দেখে।নীরাকে আর কিছু না বলে প্রাপ্তি দৌঁড়ে রুমে গেলো।

প্রাপ্তিকে এইভাবে যেতে দেখে নীরা সেজো কাকীর দিকে তাকিয়ে বললো কি হয়েছে কাকী? কিছুই তো বুজলাম না।

সেজো কাকী আমি ও তো কিছু বুজিনি।ফারহান আমাকে বললো,কাকী প্রাপ্তিকে একটু ডেকে দিন তাই আমি ডাকতে এলাম।

নীরা -ওহ্,,আচ্ছা ঠিক আছে।

প্রাপ্তি রুমে ঢুকে ফারহান রেডি হচ্ছে দেখে।

কোথায় যাচ্ছো?

ফারহান -তোমার সাথে আমার এই কথা ছিলো?তুমি আমাকে রেখে আড্ডা দিবা আর আমি একা একা বসে থাকবো ইম্পসিবল এর থেকে আমার বাড়ীই ভালো।

প্রাপ্তি ফারহান কে আর কোনো কিছু বলতে সুযোগ না দিয়ে ফারহানকে জড়িয়ে ধরে চোখ দুটো বন্ধ করে আছে।কিছুক্ষণ পর ফারহানের মনে হলো তার পরার শার্টটা বুকের পাশে ভিজা লাগছে।তাড়াতাড়ি করে বুকের থেকে প্রাপ্তির মাথা উঠিয়ে দেখে চোখ দুটো দিয়ে অঝোরে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
ফারহান এতোক্ষণ প্রাপ্তিকে খেপানোর জন্যই কথাটা বলেছিলো।প্রাপ্তির চোখে পানি দেখে,এই পাগলি বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবোনা।তোমাকে ছাড়ে গেলে তো আমি নিজেই থাকতে পারবোনা। প্রাপ্তি কিছু বলছেনা দেখে ফারহান নিজের কাছে আরো টেনে এনে প্রাপ্তির কপালের সাথে নিজের কপালটা লাগিয়ে আস্তে করে, কি হয়েছে বলা যাবে?

প্রাপ্তি -ওহ্

ফারহান -বুজেছি কি হয়েছে।

প্রাপ্তি -কি বুজেছ?

ফারহান -আমার বউয়ের তার বরে ভালোবাসা পেতে ইচ্ছে করছে।

প্রাপ্তি -হুমমম

ফারহান আর কিছু না বলে প্রাপ্তির ঠোঁটের কাছে নিজের ঠোঁট গুলো নিয়ে প্রাপ্তির ঠোঁট গুলো নিজের করে নিলো। প্রাপ্তিও কোনো বাধা না দিয়ে ফারহানকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।ফারহানের ভালোবাসার কাছে নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছে।

চলবে,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ২৭

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ২৭

#Rabeya Sultana Nipa

 

_ সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রাপ্তি ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে গেলো।

বড় ভাবী প্রাপ্তিকে দেখে মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে, কিরে,, ফারহান উঠে নাই? আজ তো তোরা নীরাদের বাসায় যাবি।তোরা নাস্তা খেয়ে রেডি হয়েনে।

সুমি এসে বললো কোথায় যাবে ভাবী?

প্রাপ্তি -নীরার শশুর বাড়ীতে।তুমিও চলো না আমাদের সাথে দেখবে ভালো লাগবে।

ফারহান ফোন টিপতে টিপতে রুম থেকে এসে সোফায় বসলো।

সুমি -আজ না ভাবী অন্য কোনো সময়।

প্রাপ্তি -আরে চলো না। সবাই একসাথে গেলে ভালোই লাগবে।

ফারহান তাদের কথাগুলি শুনে সুমিকে ডেকে বললো,
কিরে তোর আজ এতো দাম বেড়ে গেলো কেন? কোনো না শুনতে চাইনা।গিয়ে রেডি হয়েনে।
সুমি আর কিছু বললোনা।প্রাপ্তি টুকিটাকি কাজ সেরে রুমে এসে রেডি হচ্ছে।ফারহান এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে নিজের মুখটা প্রাপ্তির কাঁধে রেখলো

প্রাপ্তি -ওহ্ ফারহান, শাড়ীটা তো পরতে দিবা।এইভাবে জড়িয়ে ধরলে শাড়ী পরা যায়।
ফারহান- তুমি যখন পারবেনা আজকে আমি শাড়ী পরিয়েদি।
প্রাপ্তি -আমি নিজেই পারি।তুমি এইভাবে থাকলে পরবোই বা কি করে।কথাটা শেষ করতেই প্রাপ্তির ফোন টা বেজে উঠলো।
এইবার তো দেখতে দিবে কে ফোন করেছে?

ফারহান -(প্রাপ্তিকে ছেড়ে দিয়ে)তোমার ফোন সকাল থেকে বাজতেছে।নাম্বারটা ছিনি না তাই রিসিভ করিনি।রং নাম্বার হতে পারে।
প্রাপ্তি ফোন হাতে নিয়ে নাম্বার দেখে ফারহানের দিকে তাকিয়ে, ৪২ বার কল করেছে কিন্তু আমিও নাম্বার টা চিনিনা।প্রাপ্তি রিসিভ করার আগেই কল টা কেটে গেলো।ফারহান প্রাপ্তির কাছে এসে নিজের বুকের সাথে টনে এনে , এইজন্যই ফোন ভালো লাগেনা।বউকে একটু আদর করবো তারও সময় দিবেনা।যখন তখন ডিস্টার্ব করে।প্রাপ্তি ফোনটা খাঁটের উপরে রেখে দিয়ে ফারহানের শার্টের কলার ঠিক করতে করতে বললো তুমি কি ওই বাড়ীতে গিয়েও এইরকম করবে?
ফারহান আনসার দিতে যাবে তখনি আবার ফোন টা বেজে উঠলো। প্রাপ্তি এইবার দেরী না করেই রিসিভ করে কানে ধরতেই,,

হ্যালো! হ্যালো,,,, প্রাপ্তি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো আমি আয়ান।

কথাটা শুনার সাথে সাথেই প্রাপ্তি নিজের অজান্তেই মুখ ফুটে বেরিয়ে এলো আয়ান,,,,,!বলেই নিস্তব্ধ হয়ে আছে।
প্রাপ্তি মুখে আয়ান নাম শুনার পরেই ফারহান প্রাপ্তিকে নিজের কাছ থেকে ছেড়ে দিয়ে একটু সরে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মনে হচ্ছে একনিমিষেই তার সব শেষ হয়ে গেছে।প্রাপ্তিকে যখন নিজের করে পেলাম তখনি ওকে আমাদের জীবনে আবার ফিরে আসতে হলো?প্রাপ্তি কি আবার আমার থেকে দূরে সরে যাবে?

আয়ান-প্রাপ্তি তুমি কি কিছু বলবেনা।এইভাবে চুপ করেই থাকবে?

প্রাপ্তি ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে কিছু বলার ভাষা নেই তার কাছে।এই সহ্য মানুষ টাই তার সবকিছু।এই কয়দিনে তাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে সে।

প্রাপ্তি -জ্বি আমি শুনতে পারছি।কিন্তু আপনি কেন ফোন দিয়েছেন এতো দিন পর?

আয়ান- প্রাপ্তি! তোমাকে সরি বলার ভাষা আমার নাই।আসলে এতো দিন তোমার কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিজেকে নিজে পরিক্ষা করে দেখলাম আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো কিনা।কিন্তু এখন বুজলাম আমি তোমাকে ছাড়া কিছুতেই থাকতে পারবোনা।

ফারহান- মিস্টার আয়ান আপনি অনেক দেরী করে ফেলেছেন।আপনি কথা গুলো বুজেছেন ভালো কথা,নিজেকে নিজে পরিক্ষা করেছেন ভালো কথা।তবে অনেক দেরীতে।

আয়ান- আমি তোমার কথা কিছুই বুজতেছিনা।তুমি আমার সাথে এইভাবে কথা বলছো কেন? কি হয়েছে একটু বলবে?

প্রাপ্তি- সেই দিন আমিও আপনার কিছু বুজিনি।যেদিন আপনি আমায় ভুল বুজে ছিলেন।জানেন আপনি সেইদিন ভুল বুজে ভালোই করেছেন।না হলে সত্যিকারের ভালোবাসা আমি ফিরেই ফেতাম না।(কথাটা বলতে বলতে ফারহানের কাছে গিয়ে ওর বুকে মাথা রেখে)আপনার কারণে আমি একজনকে অনেক কষ্ট দিয়েছিলাম।আজ সেই মানুষটাই আমার সব।

আয়ান -প্রাপ্তি আমি কিছু বুজতেছি না।প্রাপ্তি চলো আমরা দেখা করি? প্রাপ্তি আমি তোমার সামনে দাঁড়াতে চাই।তোমার সামনে দাঁড়িয়ে বলতে চাই আমি তোমাকে ভালোবাসি।

প্রাপ্তি -সেইদিন এইকথাটা বললে হয়তো রাখতাম।তবেঁ এখন আর না।
প্রাপ্তি কথাটা শেষ করতেই ফারহান প্রাপ্তির কপালে ছোট্রো একটা চুমু দিয়ে তুমি কথা শেষ করে সুমি কে নিয়ে আসো আমি গাড়ী বের করছি।প্রাপ্তিকে এখন ফারহান নিজের থেকেও বেশী বিশ্বাস করে ফেলেছে।তাই কিছু না বলেই চালে যাচ্ছে।

আয়ান -প্রাপ্তি তোমার সাথে কি কেউ আছে?

প্রাপ্তি -জ্বী মিস্টার আয়ান, আমার হ্যাজবেন্ড।

আয়ান- প্রাপ্তি তুমি এইসব কি বলছো।তুমি এইভাবে আমাকে কষ্ট দিতে পারো না।(একটু হেঁসে) তুমি আমাকে খেপাইতেছো তাইনা?

প্রাপ্তি- আমি আপনাকে খেপাতে যাবো কেন? ও,,,,হে আপনাকে তো বলাই হয়নি।আমি মিস প্রাপ্তি থেকে মিসেস ফারহান হয়ে গেছি।
প্রাপ্তির কথা গুলো বলতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আয়ানের সামনে সে কোনো দুর্বলতা দেখাতে চায় না।সেই এখন চাইলেও ফারহান ছাড়া কাউকে ভাবা সম্ভব নয়।

আয়ান- বাহ্ ভালোই।এই কি সেই ফারহান যার সাথে আমার কথা হয়েছিলো?
প্রাপ্তি কিছু বলার আগেই প্রাপ্তির দেরী দেখে ফারহান এসে দরজায় দাঁড়িয়ে প্রাপ্তি তোমার এখনো হয়নি? নীরা দেরী দেখে ফোন দিয়ে পাগল করে দিচ্ছে।

প্রাপ্তি -আয়ান আপনার কিছু বলার থাকলে পরে ফোন দিবেন।আমার হ্যাজবেন্ড আমার জন্য অপেক্ষা করছে কথাটা বলেই প্রাপ্তি আয়ানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কল কেটে দিলো।

ফারহান প্রাপ্তির কাছে এসে প্রাপ্তিকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেওনা।তোমার কিছু হলে আমি নিজেই মরে যাবো।প্রাপ্তি! আমার ভালোবাসার কথা গুলো হয়তো আমি তোমাকে গুছিয়ে বলতে পারিনা।কিন্তু বিশ্বাস করো তোমাকে আমি অনেক ভালোবাসি।

প্রাপ্তি ফারহানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে আমি জানি তুমি আমায় কতো টুকু ভালোবাসো।এখন সারাক্ষণ যদি এইভাবে জড়িয়ে ধরে রাখো তাহলে যাবেটা কখন?

ফারহান -কেন যে নীরার কথায় আজ যেতে রাজী হলাম? আরো দুইদিন পর গেলেই ভালো হতো।ওইখানে গেলে তো তুমি আমার কাছেই আসতে ছাইবেনা।ওহ্ বউটাকে এতো দিন পর কাছে পেলাম তাও কারো সহ্য হচ্ছে না।

প্রাপ্তি -ফারহান,,,,,, তুমি যেই ভাব করছো মনে হচ্ছে আমি কোথাও হারিয়ে যাচ্ছি।কয়েকটা ঘন্টারই তো ব্যাপার।

সুমি রেডি হয়ে এসে কিরে তোদের হলো?

প্রাপ্তি -হুম,,,আমারও হয়ে গেছে।কিন্তু ফারহান তোমার সাথে কথা বলতে বলতে রেডি হতে গিয়ে মনে হচ্ছে কি যেন মিসিং।

ফারহান- আর কিচ্ছু করতে হবে না।আমার বউকে এমনিতেই অনেক সুন্দর লাগছে।
এইবার চলো!

নীরার শশুর বাড়ীতে সবাই এসেছে।প্রাপ্তির পরিবারের সবার সাথে অনেক দিন পর দেখা হয়েছে।সবাইকে পেয়ে প্রাপ্তির ফারহানের দিকে খেয়ালি নেই।ফারহান সবার সাথে আড্ডা দিচ্ছে ঠিকি চোখ গুলো প্রাপ্তিকে খুঁজছে। নীরা আর মৃদুল সবাইকে নাস্তা দিচ্ছে। ফারহানের কাছে নীরা আসতেই, এই নীরা তোমার বোন তো এইখানে এসে আমাকেই ভুলে গেছে।একটু ডেকে দিবে এইখানে এসে অনেকক্ষণ হলো দেখছিনা।মনে হচ্ছে বছর হয়ে গেলো।

নীরা -ভাইয়া! আমাদের ভালোবেসে বিয়ে হয়েছে ঠিকি, কিন্তু আপনার ভালোবাসার কাছে এইটা কিছুই না।যাইহোক প্রাপ্তি আমার রুমে আছে ওইখানে নাজিফা আর সুমি আছে ইচ্ছে হলে গিয়ে দেখে আসেন।

ফারহান -(উঠে দাঁড়িয়ে) ওরা থাকলে সমস্যা নেই আমি আগে আমার বউকে দেখে আসি।কথাটা বলে ফারহান আর এক মুহূর্তের জন্যও দাড়ালোনা।

ফারহান নীরার রুমে গিয়ে দেখে ওরা বসে আড্ডা দিচ্ছে।

আরে নাজিফা! তুমি আসার পর থেকেতো একবারো দেখা করোনি।দেখেছো প্রাপ্তি? নাজিফা আমার পিছু ছাড়তেইইইইইই চায়না।প্রাপ্তি সাবধানে থাকো ও কখন তোমার সতিন হয়ে যায় বলা যায়না।

নাজিফা -এই শুনো একদম বাজে কথা বলবে না।আমার কি ঠেকা পড়ছে যে তোমাকেই বিয়ে করবো।এইইই,,, আপু দেখছিস ভাইয়া তোকে একটুও ভালোবাসেনা।

প্রাপ্তি -(নাজিফাকে আরো রাগানোর জন্য)ফারহান কিন্তু ঠিকি বলেছে, ভেবে দেখ আমি আর তুই এক বাড়ীতেই থাকবো।

নাজিফা- আপু তুইও ধুত আমি আর এই রুমে থাকবোই না।সুমি, এখান থেকে চলো আমরা অন্য রুমে যাই।
সুমি নাজিফার সাথে উঠে চলে গেলো।

ফারহান প্রাপ্তির পাশে এসে বসে হাঁসতে হাঁসতে দেখেছো তোমার বোনকে কিভাবে সরালাম।

প্রাপ্তি – জ্বী সাহেব, আমিও বুজেছি আপনি ওকে সরানোর জন্যই এইগুলো বলছেন।

ফারহান প্রাপ্তির গাল দুটোকে দুই হাত দিয়ে ধরে কাছে টেনে এনে একটা চুমু দিয়ে এই না হলে আমার বউ।
সেজো কাকী ফোন কানে নিয়ে কথা বলতে বলতে এসে দেখেই লজ্জা পেয়ে এই সত্যি বলছি আমি কিছু দেখিনি।

ফারহান কথাটা শুনে তাকিয়ে দেখে সেজো কাকী। তড়িঘড়ি করে প্রাপ্তির গাল থেকে হাত সরিয়ে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো ওনাকে নিয়ে আর পারা গেলোনা বলে রুম থেকে চলে গেলো।
প্রাপ্তি এতোক্ষণ অনেক কষ্টে হাঁসি ছেপে রেখেছিল ফারহান চলে যাওয়ার পর দুজনেই এক সাথে হাঁসতে শুরু করলো।

সেজো কাকী -বেচারা লজ্জা পাইছে।আসলে আমিও আসতাম না।বড় ভাবী তোকে ডাকছে।

প্রাপ্তি- আম্মু ডাকছে? আচ্ছা শুনো তুমি আবার সবার সামনে কিছু বলোনা প্লিজ।

চলবে,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট:২৬

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট:২৬

#Rabeya Sultana Nipa

 

___ভালোবাসার কাছে পৃথিবীর সব কিছুই অসহায় এইটা প্রাপ্তি আজ ঠিকি বুজেছে।যাকে একদিন সহ্য করতে পারতো না।আজ সেই মানুষটিকেই সে ভালোবেসে ফেলেছে।
ফোনের রিং কখন থেকে বেজে যাচ্ছে দেখে
ফারহান উঠে গিয়ে ফোন রিসিভ করে কথা বলছে।
প্রাপ্তি ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে ফারহান খাঁটের এক কোণায় বসে কথা বলছে,আর নিজের চুল গুলো ঠিক করছে।প্রাপ্তির ফারহানের চোখে চোখ পড়তেই লজ্জা পেয়ে রুম থেকে বের হওয়ার জন্য দরজার দিকে এগুচ্ছে।প্রাপ্তি চলে যাচ্ছে দেখে ফারহান ফোন রেখে,
ফারহান -এই প্রাপ্তি কথায় যাচ্চো? জিজ্ঞাস করলেনা তো কার সাথে কথা বলছি!

ফারহানের ভাব দেখে মনে হচ্ছে একটু আগে যাকিছু হয়েছে সে সব ভুলেই গেছে।খুব সাভাবিক ভাবেই কথা বলছে।ফারহান ইচ্ছা করেই এইভাবে কথা বলছে সেই ভালো করেই জানে প্রাপ্তিকে কিছু বললেই সে আরো লজ্জা পেয়ে যাবে।

প্রাপ্তি- ( অন্য দিকে ফিরে)আমি কি করে জানবো?

ফারহান -ওই দিকে কে আছে যে ওই দিকে ফিরে কথা বলছো?
(কথাটা বলতে বলতে প্রাপ্তির সামনে গিয়ে প্রাপ্তি দুই কাঁধে হাত রেখে নিজের দিকে মুখ ফিরিয়ে ) এতোদিন অনেক অবহেলা সহ্য করছি এখন থেকে আর না।এখন থেকে আমি যা বলবো তাই হবে।

প্রাপ্তি -ছাড়ো তো আবার কি শুরু করছো বলতো?(কথাটা বলতে বলতে সন্ধ্যায় যে ফারহানের জন্য নাস্তা এনেছে তার দিকে চোখ পড়লো তার।)এই ফারহান! তুমি তো নাস্তাই খাওনি।চা তো ঠাণ্ডাই হয়ে গেছে।

ফারহান- (মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে)নাস্তার ছেয়ে বেশী কিছু খেলে নাস্তার কি প্রয়োজন।

প্রাপ্তি- ঠিক আছে আজ থেকে সব কিছু খাওয়া বন্ধ।,,,,,,,,কথা টা শেষ করতেই দরজা ধাক্কানো শব্দ পেয়ে প্রাপ্তি গিয়ে দরজা খুলে দেখে মেজো ভাবী।

মেজো ভাবী রুমে ঢুকে ফারহানের দিকে তাকিয়ে, এই জন্যই তো বলি প্রাপ্তি সেই সন্ধ্যায় রুমে ঢুকলো এখনো আসছে না কেন? যাইহোক এখন আর কিছু বলবো না।ড্রইংরুমে চলো বাবা খেতে ডাকছে। ওনি তোমাদের অপেক্ষায় বসে আছে।

ফারহান -তুমি যাও আমি আসছি।

ফারহানের বাবা, মা, সুমি পরিবারের সবাই বসে আছে। বড় ভাবী আর মেজো ভাবী খাবার গুলো রান্নাঘর থেকে ডাইনিং টেবিলে এনে রাখছে।
ফারহান এসে একটা চেয়ার টেনে তার বাবার পাশে বসলো।প্রাপ্তি রান্নাঘরে গিয়ে বড় ভাবী সাথে সাহায্য করছে।সুমি অনেকক্ষণ ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে।ফারহান ভাতের লোকমা মুখে দিয়েছে মাত্র তখনি সুমি বলে উঠলো, হে,,রে ভাইয়া! তুই তো এই সময় কখনো গোসল করিসনা।আজ এই বৃষ্টির মধ্যে ও গোসল করেছিস তোর ঠাণ্ডা লাগবেনা? কথাটা শুনেই ফারহান গলায় ভাত আটকে ঢেকুর দিতে শুরু করলো।
ফারহানের বাবা ছেলের দিকে একবার আড় চোখে তাকিয়ে খেয়েই যাচ্ছে কোনো কথা বলছেনা।ফারহানের মাও চুপচাপ কিছু না শুনার মতোই ছেলের দিকে পানির গ্লাস টা এগিয়ে দিয়ে, পানি খেয়েনে ঢেকুর কমে যাবে।প্রাপ্তি লজ্জায় ইচ্ছে করছে মাটি ফেঁটে নিছেই চলে যেতে।বড় ভাবী সুমিকে চিমটি কেঁটে,কানের কাছে গিয়ে তুই কি এখনো ছোটো আছিস নাকি।কোথায় কি বলতে হয় মাঝে মাঝে কি সব কথা খেয়ে বসে থাকিস নাকি?
প্রাপ্তি কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেলো।ফারহান চুপচাপ খেয়ে উঠতে যাবে তখন ফারহানের বাবা বললো, একটু বস আমি খাওয়াটা শেষ করি তোর সাথে কথা আছে।
ফারহান মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুজিয়ে হাত ধুয়ে সোফায় গিয়ে বসলো।

প্রাপ্তির কথা ভেবে ফারহানের খারাপ লাগছে।বেচারি না খেয়ে লজ্জা পেয়েই রুমে চলে গেলো।হয়তো আমার উপরে রাগ করে বসে থাকবে।সুমিকেও বা কি বলা যায় সেও হয়তো না বুজেই বলে ফেলেছে।

ফারহানের বাবা খাওয়া শেষ করে এসে তিনি ও সোফায় বসলেন।অনেকক্ষণ পরে বললেন তোমার মেজো শশুর ফোন কেরেছিলেন।কাল নাকি ওনারা সবাই নীরার শশুর বাড়ীতে যাবে। এখন তোমদেরকে যাওয়ার জন্য বলছে।আর তুমিও নাকি তাদের বলেছো কাল যেতে পারবে।এখন কি তোমরা যাচ্ছো?

ফারহান -হ্যাঁ একটু আগে নীরার শাশুড়ি আমার সাথে কথা বলেছিলো, আমি তাদের কথা দিয়েছি কাল যাবো।

ফারহানের বাবা- আচ্ছা তাহলে ভালো কথা।তোমরা ঘুরে আসো।আর তুমি তো এই মাসে তোমার ব্যবসার কি কাজে বাহিরে যাওয়ার কথা ছিলো এখন কি যাবে?

ফারহান -বাবা ওইটা আমি কেন্সেল করে দিয়েছি।

ফারহানের বাবা বুজতে পেরেছে ছেলের না যাওয়ার কারণ। একটা মুচকি হাঁসি দিয়ে বললেন আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যেই ভাবে ভালো মনে করো।কথাটা বলে উঠে চলে গেলেন ফারহানের বাবা।

ফারহান রুমে যাওয়ার সময় বড় ভাবীর দিকে তাকিয়ে, ভাবী প্রাপ্তির খাবার গুলো রেহানা (তাদের কাজের মেয়ে)কে দিয়ে পাঠিয়ে দিও।ফারহান রুমে গিয়ে দেখে প্রাপ্তি ফোনে নীরার সাথে কথা বলছে।
প্রাপ্তিকে দেখে বুজা যাচ্ছে মনটা মোটামুটি ভালোই আছে।ফারহান পাশে গিয়ে বসে প্রাপ্তিকে এক হাত দিয়ে টেনে নিজের আরো কাছে এনে বসিয়েছে।প্রাপ্তি কিছু বলতেও পারছেনা নীরার সাথে কথা বলছে বলে।বার বার ইশারা দিয়ে বুজাচ্ছে এই রকম করছো কেন?
এইদিকে নীরা বলেই যাচ্ছে, প্রাপ্তি জানিস তোকে আজ তো কনগ্রুয়েন্স জানানো উচিত।
প্রাপ্তি -কেন? কি করলাম আমি?

নীরা -তুই কি মনে করেছিস আমি কিছু জানি না? একটু আগে ভাইয়ার সাথে কথা হলো আমাকে বলেছে।
(প্রাপ্তি এই কথা শুনেই চোখ বড় বড় করে ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে।ফারহান বুজতে পেরেছে নীরা বলে দিয়েছে তাকে যে কথা গুলো বলছি।)আচ্ছা যাইহোক কাল সকালে তোদের একসাথে হাঁসি মুখ গুলো দেখার অপেক্ষায় আছি।।

প্রাপ্তি হুম ঠিক আছে বলে ফোন রেখে দিলো।
ফারহানের দিকে তাকিয়ে তুমি এইটা কি করলে সব কিছু ওকে বলে দিলে?

ফারহান -তুমি যখন ফ্রেশ হয়ে আসছিলে তখন ওর সাথেই কথা বলছিলাম।ও বার বার জিজ্ঞাস করছিলো কেন ফোন ধরতে দেরী করছি।তখন না বলে আর উপায় আছে তাও আবার যদি শালী জিজ্ঞাস করে?
এমন সময় রেহানা প্রাপ্তির জন্য খাবার নিয়ে এসে দরজায় দাঁড়িয়ে,ভাইয়া আসবো?
ফারহান -হুম আসো।

প্রাপ্তি- রেহানা কার জন্য খাবার এনেছো তোমার ভাইয়া ওইখানে খায়নি?

রেহানা -ভাবী ভাইয়া তো,,,,,,
রেহানাকে ফারহান থামিয়ে দিয়ে, বাকী গুলো আমি বলে দিবো তুই যা।রেহানাও আর কিছু না বলে চলে গেলো।

ফারহান -তুমি না খেলে আমিও আজ খাবোনা।তাই দুজনের জন্য একসাথেই আনতে বলেছি।(ফারহান প্রাপ্তিকে এই মিথ্যা কথাটা না বললে হয়তো প্রাপ্তি খাবেও না।ফারহান না খেয়ে আছে শুনলে না খেয়েতো উপায় নেই।)

প্রাপ্তি -ওহ্। তুমিও না।আমার এখন খেতে ইচ্ছে করছে না।

ফারহান -আচ্ছা আমি খাইয়ে দিচ্ছি।এইবার তো খাবে।
ফারহানের কথাটা শুনে প্রাপ্তি আর না করতে পারলোনা।
প্রাপ্তিকে খাইয়ে দিচ্ছে আর ফারহান খাচ্ছেনা দেখে প্রাপ্তি বললো, আমাকে খাওয়াচ্ছো তুমি খাচ্ছো না কেন?

ফারহান মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে, সরি প্রাপ্তি! মিথ্যা কথাটা বলার জন্য।কিন্তু মিথ্যেটা না বললেতো খেতেনা।তাই বললছি।
প্রাপ্তি আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খেয়ে নিলো।

ফারহান -আমি হাত ধুয়ে আসি, তুমি শুয়ে পড়ো।
প্রাপ্তির মাথায় একটায় চিন্তা সকাল হবে কখন কতো দিন পর সবার সাথে দেখা হবে।অবশ্য বেশিদিন হয়নি তবুও প্রাপ্তির কাছে অনেক দিন মনে হচ্ছে।
ফারহান এসে দেখে প্রাপ্তি অন্যমনস্ক হয়ে শুয়ে শুয়ে কিছু ভাবছে।

ফারহান- (প্রাপ্তিকে নিজের কাছে টেনে এনে) এতো দূরে শুয়ে আছো কেন?আর তোমার বালিশ টা এই খাটে যেন আর না দেখি।

প্রাপ্তি -ফারহান, বেশী বাড়াবাড়ি করছো।তাহলে আমি ঘুমাবো কি করে?

ফারহান- কোথায় আবার ফারহানের এই বুক থাকতে বালিশের কি প্রয়োজন। হিটলারের জন্য ফারহানের বুকেই যথেষ্ট।

প্রাপ্তি মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে তাইতো এতোক্ষন তো এইকথা ভাবিনী। ফারহান কে শুইয়ে সত্যি সত্যিই প্রাপ্তি ফারহানের বুকে শুয়ে পড়লো।

চলবে,,,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ২৫

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ২৫

#Rabeya Sultana Nipa

 

_প্রাপ্তি কলেজ থেকে এসে দেখে ফারহান ড্রইংরুমে তার আব্বু আর কাকাইদের সাথে কথা বলছে।ফারহানের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাঁসি দিয়ে রুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।ফারহানের ইচ্ছা করছে রুমে যেতে কিন্তু এখন রুমে গেলে সবাই কিভাববে তাই না ছাইলেও সবার কথা বসে বসে শুনতে হচ্ছে। প্রাপ্তি ফ্রেশ হয়ে এসে ফারহানের দিকে তাকিয়ে বললো,ফারহান কখন এলে?

মেজো কাকা -ও কি বলবে? ওকে তো ইমরান ফোন করে নিয়ে আসছে। ও নাকি বিকেলে তোকে নিতে আসবে বলেছিলো তারপর আমি ইমরান কে বলে ফোন দিয়েই নিয়ে এসেছি।

প্রাপ্তিরর মা প্রাপ্তির জন্য খাবার নিয়ে এসে, প্রাপ্তি! তুই আগে খেয়েনে পরে কথা বলিস।

ফারহান -মা ঠিকি বলেছে আগে খেয়ে নাও।খেয়ে একটু পরে রেডি হয়ে নিও।

প্রাপ্তির আব্বু -ফারহান, আজ কি সত্যিই চলে যাবে?

ফারহান-জ্বী, সমস্যা নেই পরে এসে প্রাপ্তি কয়েকদিন থেকে যেতে পারবে।

কেউ আর কিছু বললো।প্রাপ্তিও খেয়ে রুমে চলে গেলো।একটু পর ফারহানও প্রাপ্তির রুমে গিয়ে দেখে প্রাপ্তি সব কিছু গুছিয়ে নিচ্ছে।
ফারহান দরজাটা বন্ধ করে খাঁটের এক কোনায় বসে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে আছে।

প্রাপ্তির ফারহানের দিকে চোখ পড়তেই একটা হাঁসি দিয়ে, ওই ভাবে তাকিয়ে কি দেখছো?

ফারহান -দেখছি আমার হিটলার বউকে। আচ্ছা কাল রাতে তোমার আমার কথা একবারো মনে পড়েনি? আমাকে মিস করোনি?তুমি রাতে আমাকে একবারো ফোন দাওনি।আমি ভাবেছিলাম কি আর হলো কি।

প্রাপ্তি -(ফারহানের কাছে একটু এগিয়ে)তাইইইইইইইইই? কিন্তু আমি তো তোমাকে নিয়ে একটুও ভাবি নাই।(কাথাটা বলে প্রাপ্তি আবার হাঁসা শুরু করলো।)

ফারহান-হাঁসো! হাঁসো! যতো খুশি হেঁসে নাও।

প্রাপ্তি -হুম ঠিক আছে,তোমাদের বাড়ীতে গিয়ে যদি হাঁসতে না পারি তাই এখনি হেঁসে নিচ্ছি।কারণ বউ তো এখন সাবধানেই চলতে হবে।

প্রাপ্তির কথা শুনে যতো বেশী না অবাক হচ্ছে তার ছেয়ে বেশী খুশি হচ্ছে এই ভেবে, প্রাপ্তি সবার সাথে মানিয়ে নিতে চাইছে।

ফারহান! ফারহান! একটু এইদিকে আসোতো।
প্রাপ্তির বাবার ডাক শুনে ফারহান উঠে দাঁড়িয়ে, প্রাপ্তি তুমি রেডি হয়ে ড্রইংরুমে আসো আমি ওইখানেই আছি।

ফারহান ড্রইংরুমে গিয়ে, আব্বু ডেকেছেন?

প্রাপ্তির বাবা -নীরা আর মৃদুল তো সকালেই চলে গেছে জানো। একটু আগে নীরার শাশুড়ি ফোন করলো তাদের বাসায় সবাইকে যাওয়ার জন্য।এখন তোমরা তো চলে যাচ্ছো আমার মনে হয় তুমি আর প্রাপ্তি যে দিন যেতে পারবে সেইদিনের কথাই বলবো তাদের।এখন কি বলো তুমি?

ফারহান -আব্বু আমি আগে বাসায় যাই।তারপর না হয় আপনাকে ফোন করে জানাবো কখন যেতে পারবো।

প্রাপ্তির বাবা -আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যা ভালো মনে করো।

প্রাপ্তিও রেডি হয়ে চলে আসছে দেখে প্রাপ্তির কাকা বললো, কিরে একদম রেডি হয়ে চলে আসছিস? (প্রাপ্তির বাবার দিকে তাকিয়ে)দেখছস ভাইয়া, প্রাপ্তি আমাদের এক নিমিষেই পর করে দিলো। ফারহানের বাড়ী যাবে বলে তাড়াতাড়ি রেডি হয়েই চলে আসছে।
প্রাপ্তিকে যেই যাই বলুক না কেন , কেন জানি ওর একটুও খারাপ লাগছেনা।সবাই তো ভাবে ছিলো প্রাপ্তি আজ যেতে চাইবেনা।সবাইকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে হাঁসি খুশি ভাবেই বাড়ী থেকে বিদায় নিলো। প্রাপ্তির মা ও মেয়েকে আজ আর কিছু বললো না।

ওই বাড়ীতে পৌঁছে প্রাপ্তি হাঁসি মুখে সবার সাথে ভালো ভাবেই মিশে গেছে। আজ প্রাপ্তির কাছে মনে হচ্ছে এইটাই তার পরিবার। ফারহানের পরিবারের সবাইও অনেক ভালোবাসে প্রাপ্তিকে।
এইভাবেই কয়েকটা দিন কেটে গেলো। এখন আর আগের মতো আয়ান নামের কাউকে মনে পড়ে না।ফারহানের সাথে আগের থেকে ভালোই সময় কাটছে।ফারহানও প্রাপ্তি সব কাজেই সাহায্য করে।ফারহানকেও প্রাপ্তি আস্তে আস্তে ভালোবেসে ফেলেছে।কিন্তু ফারহানকে এখনো বুজতে দেয়না।

আজ সন্ধ্যা থেকেই অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে।
বড় ভাবী নাস্তা বানিয়ে প্রাপ্তিকে ডেকে বললো সবাইকে রুমে গিয়ে নাস্তা দিয়ে আসতে।প্রাপ্তিও সবাইকে নাস্তা দিয়ে এসে ফারহানের জন্য নাস্তা নিয়ে রুমে গেলো।ফারহান এতোক্ষণ শুয়েই ছিলো।
প্রাপ্তিকে দেখে ফারহান উঠে দাঁড়ালো

ফারহানকে দাঁড়াতে দেখে প্রাপ্তি নাস্তাটা রাখতে রাখতে বললো।কি হলো দাঁড়িয়ে পড়লে কেন?
প্রাপ্তি নাস্তাটা রেখেই পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখে ফারহান আস্তে আস্তে তার দিকে এগিয়ে আসছে।ফারহান যতো এগিয়ে আসছে প্রাপ্তি ততো পিছাতে থাকলো আর তোতলাতে তোতলাতে বলতে লাগলো ফা ফা ফার হা ন,,,এইইইইইইভা বে, আ আ আ স ছো,,কে কে ন?
আমি প প প ড়ে,,,,, যা যা বো,,,,তো

ফারহান কিছু বলছে না আর প্রাপ্তি পিছনে যেতে যেতে দেওয়ালের সাথে পিঠ লেগে গেলো।ফারহান আস্তে আস্তে এসে প্রাপ্তির দুপাশে দেওয়ালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রাপ্তি ভয়ে ভয়ে ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে। ফারহান নিজে মুখটা প্রাপ্তির মুখে কাছে নিতেই প্রাপ্তি চোখ বন্ধ করে ফেলেছে।ফারহান এতোটাই কাছে এসেছে যে প্রাপ্তির বুকের ভেতরের শব্দটা ফারহান শুনতে পাচ্ছে।প্রাপ্তির চোখ বন্ধ করে রেখেছে দেখে ফারহান মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে কানের কাছে আস্তে করে বললো।বৃষ্টিতে ভিজবে?
কথাটা শুনেই প্রাপ্তি চোখ মেলে দেখে ফারহান তাকিয়ে হাঁসছে।

ফারহানের হাঁসি দেখে প্রাপ্তি নিস্তব্ধ হয়ে তারদিকে তাকিয়ে আছে।

ফারহান -কি ভেবে ছিলে? তোমায় কিস করবো?
ফারহানের কথাটা শুনে প্রাপ্তি লজ্জা পেয়ে
নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

ফারহান -তুমি জানো? যখন তুমি চোখ বন্ধ করে ছিলে তখন তোমায় অনেক সুন্দর লেগেছে যা তোমাকে বলে বুজাতে পারবোনা।তবে তুমি চিন্তা করোনা তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছুই করবোনা।
প্রাপ্তি নিজেকে ছাড়িয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে সে।প্রাপ্তির এমনিতে বৃষ্টি অনেক ভালো লাগে।ফারহানও বারান্দায় গিয়ে প্রাপ্তির পাশে দাড়ালো।

ফারহান -রাগ করছো? আসলে তখন তোমাকে এইভাবে ধরাটা ঠিক হয়নি আমি ও বুজতে পারছি।আচ্ছা সরি আর কখনো এমন করবো না।এইবার আমার দিকে তাকাও। (প্রাপ্তি এখনো বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।ইচ্ছে করছে ফারহানকে জড়িয়ে ধরে বলতে ফারহান আমি একটুও রাগ করিনি তোমার উপর।)

প্রাপ্তি,কানে ধরবো? আমার দিকে তাকাও এই দেখো কানে ধরছি কিন্তু!
প্রাপ্তি আর চুপ থাকতে না পেরে ফারহানকে জড়িয়ে ধরলো।
প্রাপ্তির এইভাবে জড়িয়ে ধরা দেখে ফারহান চমকে উঠলো।
প্রাপ্তি ফারহানের বুকে মাথা রাখে, আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরো না হলে আবার হারিয়ে যাবো।
ফারহান কথাটা শুনে নিজেকে আর আটকাতে পারলোনা।ফারহান প্রাপ্তিকে এমন ভাবেই জড়িয়ে ধরে আছে প্রাপ্তি এখন যেতে চাইলেও যেতে দিতে পারবেনা।

বাহিরে জোরে বাতাস বইছে দেখে ফারহান প্রাপ্তিকে কোলে উঠিয়ে রুমে নিয়ে এসে খাটে শুয়ে দিলো।ফারহানকে উঠে যেতে দেখে প্রাপ্তি বললো কথায় যাচ্ছো?

ফারহান -তুমি আসার সময় দরজাতো দিয়ে আসো নাই।ওটাই দিতে যাচ্ছি।এখন কেউ এসে ডিস্টার্ব করুক এইটা আমি চাইনা।

ফারহানের কথা শুনে প্রাপ্তি লজ্জা পেয়ে অন্য দিকে ফিরে আছে।

মেজো ভাবী -প্রাপ্তিকে কখন নাস্তা দিতে পাঠিয়েছো এখনো তো এলোনা।

বড় ভাবী -ফারহান মনে হয় রুমে আছে।হয়তো বসে কথা বলছে।

মেজো ভাবী -তুমি যাই বলো প্রাপ্তি অন্য রকম।ফারহানের প্রতি মনে হচ্ছে তার কোনো দায় নেই।কেমন জানি ওর থেকে দূরে শরে থাকে।

বড় ভাবী -বাদদে ওইসব ওদের ব্যাপার।যদি কিছু হয়ে থাকে নিজেরাই মিটিয়ে নিবে।

ফারহান দরজাটা আটকে এসে প্রাপ্তিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।প্রাপ্তিকে এতোটাই শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে যে প্রাপ্তির নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু প্রাপ্তিও বাঁধা দেয়নি। প্রাপ্তিও আজ ফারহানের ভালোবাসায় নিজেকে হারাতে চায়।

চলবে,,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ২৪

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ২৪

#Rabeya Sultana Nipa

 

_নীরা -আসলে আব্বু ওরা সবাই প্লান এইটাই ছিলো কিভাবে ভাইয়ার টাকা বেশী খরচ করা যায় এই আর কি।

মেজো কাকা -আচ্ছা ঠিক আছে সবাই রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।

প্রাপ্তি আর ফারহান কিছু না বলে রুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।

ফারহান ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে আর ভাবছে প্রাপ্তি মনে হয় আয়ানের ব্যাপার টা নিয়ে আস্তে আস্তে ভুলতেছে।আগের থেকে এখন ভালোই হাঁসি খুশি থাকে।হয়তো আরো কয়েক দিন গেলে পুরোই ঠিক হয়ে যাবে।
কথা গুলো ভাবতে ভাবতে মনে হচ্ছে কেউ পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।ফারহান পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখে প্রাপ্তি গোসল করে এসে চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ফারহানের
ইচ্ছে করছে ওর এই হাঁসির মাঝেই নিজেকে হারিয়ে ফেলতে।বাহিরে অনেক বাতাস বইছে, সেই বাতাসে অনেক গুলো চুল প্রাপ্তির মুখের সামনে এসে পড়াতেই ফারহান নিজের অজান্তেই নিজের হাতটা চুলো গুলো সরানোর জন্য প্রাপ্তির মুখের সামনে নিয়ে যাওয়ার আগেই ফারহানের হাত ধরে পেললো প্রাপ্তি।
প্রাপ্তি হাত ধরাতেই ফারহানের হুশ ফিরে এলো।
ফারহান -সরি! আসলে তোমার চুল গুলো মুখের সামনে এসে পড়ে আছে তাই সরিয়ে দিচ্ছিলাম।

প্রাপ্তি -(ফারহানের হাত ছেড়ে দিয়ে) হুম বুজতে পারছি।(বলতে বলতে পাশে এসে দাঁড়িয়ে) ফারহান! তোমাকে অনেক অনেক thanks। অবশ্য এইটা বললে তোমাকে কম বলা হবে।

ফারহান-কিসের জন্য? আমি আবার কি করছি?

প্রাপ্তি -আজকের ব্যাপারটা নিয়ে।তুমি আমার সব ফ্রেন্ডের সাথে এমন ভাবে কথা বলেছো,ওদেরকে রেস্টুরেন্টে নিয়ে খাওয়াইছো।তুমি ওদের বুজতেই দাও নাই আমাদের সম্পর্কটা কি।সবাই যা জানে আসলে তো আমাদের মাঝে কিছুই নেই।তাই সব মিলেয়ে তোমাকে অনেক অনেক thanks।
কথাটা শুনেই ফারহানের মনে অনেক কষ্ট লেগেছে। মনে হচ্ছে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।চোখে পানি টলমল করছে।কি বলবে বুজতে পারছেনা।

প্রাপ্তি -ফারহান! কি হয়েছে তুমি কিছু বলছোনা কেন?
ফারহান প্রাপ্তিকে কিছু না বলে রুমে চলে গেলো।
ফারহান চলে গেলো দেখে প্রাপ্তি ভাবছে এর আবার কি হলো একটু আগেও তো ভালো ছিলো।
রুমে এসে দেখে ফারহান রেডি হচ্ছে।

প্রাপ্তি -আরে এখন আবার কোথায় যাচ্ছো?

ফারহান- আমাদের বাসায়।আমি আজ আর আসবো না কাল তুমি রেডি হয়ে ফোন দিও আমি এসে নিয়ে যাবো।

প্রাপ- হঠাৎ কি হয়েছে তোমার? বাসায় যাবে মানে টা কি? তুমি এইভাবে চলে গেলে সবাই কি ভাববে?
ফারহান প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাঁসি দিয়ে ভাবছে তুমি এখনো সবাইকে নিয়েই পড়ে আছো। সবাই কিভাববে সেইটাই ভাবছো।আর আমি তোমার মনে ভাবনাহীন মাত্র।

প্রাপ্তি -ফারহান কি হলো কিছু বলবে না?

ফারহান -এইটুকুই বলবো কাল রেডি হয়ে থেকো আমি এসে নিয়ে যাবো।আর সবার কথা ভাবছোতো, সমস্যা নেই আমি বুজিয়ে নিবো।
কথাটা বলেই ফারহান রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

ড্রইংরুমে এসে সবাইকে বললো তার জরুরী কাজ আছে তাকে যেতে হবে।

মেজো কাকা- হঠাৎ কি এমন জরুরী কাজ পড়েছে যে তোমাকে এখনি যেতে হবে।

ফারহান -জ্বী হঠাৎ করেই ফোন আসলো।কাকাই সমস্যা নেই কাল এসে আমি প্রাপ্তিকে নিয়ে যাবো।

সবার কাছ থেকে বলে ফারহান চলে গেলো। প্রাপ্তি রুমেই বসে আছে। ওর খুব খারাপ লাগছে, ফারহান হয়তো তার কথায় কষ্ট পেয়েছে। ও চলে গেছে তাতে কি হয়েছে আমার কাছে এই রকম লাগছে কেন? ফারহানের প্রতি আমি দুর্বল হয়ে পড়ছি না তো? আচ্ছা আমি কার জন্য ফারহানকে এইভাবে কষ্ট দিচ্ছি? নাহ ওকে আমি আর কষ্ট দিবোনা।কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই ফারহানকে ফোন করলো।

কয়েকবার বেজে যাওয়ার পর ফারহান ফোন রিসিভ করলো।

ফারহান -হুম,বলো?

প্রাপ্তি-বাতাসে বড় হয়েছো? কেউ এই শিক্ষা দেয়নি বউ ফোন করলে সালাম দিতে হয়।(কথাটা বলে প্রাপ্তি নিজে নিজেই হাঁসছে। ফারহানকে বুজতে দিচ্ছেনা।)

প্রাপ্তির কথা শুনে ফারহানের নিমিষেই রাগ উধাও হয়ে গেলো। (প্রাপ্তিকে বুজতে না দিয়ে)
ফারহান- কোথায় পাইছো এই কথা?
আর ফোন করছো কেন?

প্রাপ্তি -আমি আমার হ্যাজবেন্ডের কাছে ফোন দিছি তাতে আপনার কি? আপনার জ্বলতেছে কেন?
যাই হোক আমার হ্যাজবেন্ড কোথায় আছে সেটা বলুন?

ফারহান -কেন ওনার কাছে কি?

প্রাপ্তি -আর কি বলবো বলেন ও তো আমার সাথে রাগ করেছে। কিন্তু আমার যতোটুকো জানা ও আমার সাথে রাগ করতেই পারেনা।

ফারহান -মাঝে মঝে করতে হয়। না হলে বউয়ে ভালোবাসা পাওয়া যায়না।

প্রাপ্তি -(আস্তে করে)প্লি,,,,,,জ তাহলে বাসায় আসো।সত্যি বলছি তোমাকে আর রাগাবো না।

ফারহান ভাবছে হঠাৎ করে কি হলো?এতো ভালোবাসা দেখাচ্ছে কেন?

ফারহান- আচ্ছা হিটলারে মনে এতো ভালোবাসা আসলো কোথায় থেকে?

প্রাপ্তি- আবার হিটলার বললে? আচ্ছা আজ এই নিয়ে কিছু বলবোনা।এখন বাসায় এসো।

ফারহান -না প্রাপ্তি এখন আর যাবোনা। আমি অলরেডি বাসায় চলে আসছি। তুমি রাগ করোনা আমি কাল গিয়েই তোমায় নিয়ে আসবো।

প্রাপ্তি -আচ্ছা তাহলে এখন রাখছি।

ফারহান প্রাপ্তির সাথে কথা শেষ করে বাসায় ঢুকলো।ফারহানকে দেখে সবাই অবাক হয়ে আছে।

বড় ভাবী -কি ব্যাপার ফারহান তোমাদের না কাল আসার কথা।তুমি আসলে প্রাপ্তিকে তো দেখছিনা।

ফারহান -ভাবী, ওকে কাল নিয়ে আসবো। আমার এইখানে একটা কাজ আছে তাই চলে আসলাম।

মেজো ভাবী -তাই ফারহান! বউ ছাড়া থাকতে পারবা?

ফারহান -আসতে না আসতেই শুরু করে দিছো?তোমাকে নিয়ে আর পারলামনা।কথাটা বলতে বলতে ফারহান তার মায়ের রুমে গেলো।

ফারহানের বাবা চায়ের কাপ টা তুলে হাতে নিতেই দেখে ফারহান এসে তার মায়ের পাশে বসেছে।
ফারহানের বাবা -ফারহান তুমি কখন এলে? প্রাপ্তিও কি চলে আসছে নাকি?

ফারহান -না বাবা প্রাপ্তিকে নিয়ে আসিনি।তবে কাল নিয়ে আসবো।

ফারহানের মা- প্রাপ্তিকে রেখে তুই চলে এলি কেন?

ফারহান -মা! কাজ আছে তাই চলে এলাম।
সবাইকে বার বার একি কথা বলতে ফারহানের অসহ্য লেগেগেছে। বউ থাকলেও জ্বালা না থাকলেও জ্বালা।

বাবা,মাকে আর কিছু না বলে রুমে চলে আসলো। রুমে এসে আজ নিজেকে খুব একা লাগছে।এই কয়দিনে প্রাপ্তি যে তার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে এইটা সে ভালো করেই বুজেছে।বার বার প্রাপ্তির ফোনে বলা কথা গুলো মনে পড়ছে।
এইদিকে ফারহান চলে যাওয়াই প্রাপ্তিরও ভালো লাগছেনা।একা একা রুমে শুয়ে আছে।নীরা প্রাপ্তিকে ড্রইংরুমে না দেখে রুমে এসে দেখে শুয়ে আছে।

নীরা- কিরে প্রাপ্তি, ভাইয়ার জন্য মন খারাপ লাগছে?

প্রাপ্তি নীরার কথা শুনে উঠে বসতে বসতে বললো মনে হয় তাই।কেন জানি ওকে খুব মিস করছি।কিছুই ভালো লাগছে না।

নীরা -তার মানে তুই ভাইয়াকে ভালোবেসে ফেলেছিস। আচ্ছা ভাইয়া কি এইকথা জানে?

প্রাপ্তি -তুইও না।

নীরা -যাইহোক শুন,কাল আমি চলে যাচ্ছি।এইবার সহজে আসা হবে না।অবশ্য কলেজে তোর সাথে তো দেখা হবে।কিন্তু তখন তো সব কথা বলা যাবেনা। নীরা প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে প্লিজ ভাইয়াকে কষ্ট দিস না।ভাইয়া তোকে অনেক ভালোবাসে।

প্রাপ্তি -(প্রাপ্তি ভেজা গলায়)হুম। আমি ও কাল চলে যাবো। আমি তোদেরকে অনেক মিস করবো।তবে ওই বাড়ীতে গেলে তোকে ফোন করবো।

প্রাপ্তির মা আর মেজো মা এসে দেখে একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে।

মেজো মা- ভাবী জানেন আমরা মনে হয় বড় ভুল করছি।এঁদের দুজনকে এক ঘরে বিয়ে দেওয়া উচিত ছিলো।

প্রাপ্তি -হ্যাঁ,ঠিক বলছিস। কাল দুজনে চলে যাবে, কিন্তু আমাদের জন্য মন খারাপ না করে ওরা একজন আরেকজনকে নিয়ে পড়ে আছে।
মা দের কথা শুনে নীরা বললো আচ্ছা তোমাদের কি হিংসে হচ্ছে?

মেজো মা -হবেনা!!! তোরা কাল চলে যাবি ভালো কথা।আমাদেরকে সময় না দিয়ে তোরা দুজন একরুমে বসে আছিস।

প্রাপ্তি -মেজো মা, এখনি উঠে তোমাদের কাছে যেতাম।

প্রাপ্তির মা -তাহলে আমরাই ভুল বুজেছি।আচ্ছা তাহলে ড্রইংরুমে চল।ওইখানেই বসে আড্ডা দিই।

সবাই উঠে গিয়ে ড্রইংরুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে।প্রাপ্তিকে সবাই বুজাচ্ছে ফারহানদের সবার সাথে ভালো ভাবে মিশবার জন্য।

প্রাপ্তির মা- প্রাপ্তি তুই যেই ফ্যামিলিতে গেছিস ওই ফ্যামিলি ও আমাদের মতো বড় ফ্যামিলি তাই সবাইকে নিজের করেই ভাববি। যখন একসাথে সবাই থাকে তখন সবাইকে ভালোবাসতে হয়।এইটা কখনো ভাবিস না শুধু ফারহান তোর জীবনে থাকলেই হবে।যদি এইটা ভেবে বসে থাকিস জীবনে বড় ভুল করবি।জীবনে সবাইকেই একি ভাবে ভালোবাসতে হবে।ওদের ফ্যামিলিকে কখনো পর ভাববি না সব সময় তোর নিজের করে ভাববি। তুই যেই ভাবে তোর বাবা,মা, মেজো কাকাই, নীরা সবাইকে ভালোবাসিস সেইভাবে ফারহানের বাবা, মাকেও ভালোবাসবি।সুমিকে সবসময় নিজের বোনের মতোই দেখবি।
অবশ্য ফারহান থাকতে আমাদের এতো চিন্তা নেই ওই তোকে ওর ফ্যামিলির মতো করে তুলতে পারবে।ও আছে বলেই আমরা নিচিন্তায় থাকতে পারি।

চলবে,,,,,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ২৩

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ২৩

#Rabeya Sultana Nipa

 

_রাতে সবাই খাওয়াদাওয়া শেষ করে যেই যার মতো করে ঘুমাতে গেলো। প্রাপ্তি আর নীরা তার মায়ের রুমে বসে গল্প করছে।প্রাপ্তির বাবা ফোনে কথা বলতেছে ওনার এক ফ্রেন্ডএর সাথে।ফারহান, মৃদুল রুমে বসে কথা বলছে।
প্রাপ্তির মা ঘড়ী দিকে তাকিয়ে দেখে অনেক রাত হয়ে গেছে তারপরও নীরা আর প্রাপ্তি বকবক করেই যাচ্ছে।

প্রাপ্তির মা -কিরে দুই বোন মিলে আর কতোক্ষণ গল্প করবি।রাত তো অনেক হয়েছে। এখন যে যার রুমে যা ফারহান মৃদুল একা বসে আছে।

প্রাপ্তি -আম্মু আরেকটু থাকিনা! ওই বাড়ীতে এইবার গেলে আবার কখন আসতে দিবে তার কি ঠিক আছে।হয়তো আমি আসতে পারলে নীরা আসতে পারবে না। আবার নীরা আসলে আমি আসতে পারবোনা।

নীরা -বড় মা, প্রাপ্তি ঠিকি বলেছে।প্রাপ্তি এখন গেলে কি আর ফারহান ভাইয়ার মা এতো তাড়াতাড়ি আসতে দিবে?
এমন সময় ফারহানের ডাকাডাকি তে প্রাপ্তি উঠতে উঠতে বললো, এর আবার কি হলো, আচ্ছা গিয়ে দেখে আসি।নীরা চল!আম্মু তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।

প্রাপ্তি রুমে গিয়ে দেখে ফারহান আর মৃদুল কথা বলছে।
প্রাপ্তি -কি ব্যাপার আমাকে ডেকেছো কেন?

ফারহান- এতো দিন তো পড়া লেখায় ফাঁকি বাজি বহুত করছো।কাল থাকে আবার কলেজে যাবে। মৃদুল কাল নীরা কে নিয়ে যাবে, তুমিও তাদের সাথে যেও।আমিই যেতাম এখন কাল সকালে আমার একটা জরুরি মিটিং আছে।

প্রাপ্তি মৃদুলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাঁসি দিয়ে হ্যাঁ বুজালো।
মৃদুলও একটা হাঁসি দিয়ে নীরার সাথে উঠে চলে গেলো।
মৃদুল চলে যাওয়ার পর প্রাপ্তি বসতে বসতে বললো আমি কলেজে যাবো না।তুমি মৃদুল ভাইয়ার সামনে বললে বলে আমি হ্যাঁ বললাম।

ফারহান-কলেজে যাবা না মানে?প্রাপ্তি দেখো তোমার সবকিছুই আমি মেনে নিই বলে এইটা ভেবো না এই অন্যায় আবদার টা ও মেনে নিবো।

প্রাপ্তি ফারহান কে কিছু না বলে বিড়বিড় করতে করতে শুয়ে পড়লো।

প্রাপ্তির কান্ড দেখে ফারহান বললো,
আমি কোনো মাছিকে বিয়ে করেনি রাতের বেলায় কানের কাছে এসে বিড়বিড় করবে।তবে তুমি যখন বিড়বিড় করে কথা বলো তখন তোমায় খুব সুন্দর দেখায়।

প্রাপ্তি -হাওয়া দিতেছো? ভালো খুব ভালো।
(একটু নরম সুরে) ফারহান কাল কলেজে না গেলে হয়না? নতুন বউ কলেজে যায়? লোকে কি বলবে?

ফারহান -যে যাই বলুক তাতে তোমার কি।আর এইভাবে কথা বলে ফারহানকে পটানো যায়না।যাই হোক কাল কলেজে যাবা এইটাই ফাইনাল। এই বার ঘুমাও।
সকালে তুমি ঘুম থেকে উঠার আগেই হয়তো আমি বের হয়ে যাবো। এসে যেন শুনি তুমি কলেজে গেছো।কাল কোনো অজুহাত দেখাবে না।

প্রাপ্তি -(মুখ গোমরা করে)ঠিক আছে।(মনে মনে ভাবছে তোমার কথা আমি কখনি শুনতাম না।শুধু সবার কাছ থেকে বাঁচার জন্য।যদি একবার মুখ খুলো তাহলে আমি শেষ)কথা গুলো ভাবতে ভাবতে প্রাপ্তি কখন ঘুমিয়ে পড়লো তার মনে নেই।

প্রাপ্তি সকালে উঠে দেখে ফারহান নেই।কখন উঠে গেছে তাও টের পায়নি।
প্রাপ্তি ফ্রেশ হয়ে ড্রইংরুমে গিয়ে দেখে সবাই বসে নাস্তা করছে।
প্রাপ্তিকে আসতে দেখে মেজো কাকা বললো,কিরে তোর ঘুম ভাঙলো? আয় বস নাস্তা করেনে।

মৃদুল -হ্যাঁ,প্রাপ্তি তাড়াতাড়ি নাস্তা করে নীরা আর তুমি রেডি হয়ে নাও।না হলে কলেজের দেরী হয়ে যাবে।

প্রাপ্তির বাবা- মৃদুল ওরা কি কলেজে যাবে নাকি? নীরা যাবে বুজলাম ফারহান প্রাপ্তিকে আজ যেতে বলেছে?

মৃদুল -বড় আব্বু আমি নীরাকে আজ কলেজে নিয়ে যাবো শুনে ফারহান কাল রাতে বললো প্রাপ্তিকেও যেন সাথে নিয়ে যাই। ওই নাকি যেতো ওর জরুরী মিটিং থাকার কারনে যেতে পারবেনা।

মেজো কাকা -তাহলে তো ভালো কথা কি বলিস ভাইয়া? প্রাপ্তি উঠে রান্নাঘরের দিকে গিয়ে সেজো কাকীকে বললো, কাকী ফারহান কি খেয়ে বের হইছে?

সেজো কাকী -না রে অনেক বার বলেছি।ফারহান বললো ওর নাকি এমনিতেই দেরী হয়ে গেছে।সময় পেলে বাহিরে খেয়ে নিবে।

প্রাপ্তি আর কিছু বললো না।রুমে এসে রেডি হয়ে নীরা আর মৃদুলের সাথে বেরিয়ে গেল।

অনেক দিন পর কলেজে গেছে। প্রাপ্তিকে পেয়ে তার ফ্রেন্ডরা খুব খুশি।অনেক দিন পর সবাই আজ এক সাথে হলো।
প্রাপ্তির ফ্রেন্ড রিয়া এর মাঝে বললো কিরে প্রাপ্তি নীরা মৃদুলকে নিয়ে আসতে পারছে তুই কেন ফারহান ভাইয়া কে নিয়ে এলিনা।

বিথী -আরে তুই বুজোস নাই কেন আনে নাই।যদি আমাদেরকে ট্রিট দিতে হয়।প্রাপ্তি , কয়দিন এইভাবে নিজের বর কে বাঁচাবি? একদিন না একদিন ঠিক আদায় করে নিবো। কি বলিস তোরা?

প্রাপ্তি চুপ করে থাকলেও নীরা বলে পেললো,তোরা যা ভাবছিস ভুল।ভাইয়াই আসতো কিন্তু ভাইয়ার আজ একটা মিটিং ছিলো তাই আসে নাই।আমার মনে হয় কাল ঠিকি আসবে।
রিয়া-ঠিক আছে তাহলে আমাদের সবাইকে কালকের জন্য অপেক্ষা করতে সবে।

প্রাপ্তি -অনেক কথা বলেছিস এইবার সবাই চল ক্লাসের দেরী হয়ে যাচ্ছে।

ক্লাস শেষ করেই প্রাপ্তিরা সবাই কথা বলতে বলতে কলেজ থেকে বের হতে যাবে তখনি দেখে ফারহান গাড়ী নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

প্রাপ্তি- যাহঃ আজ সেরেছে।

প্রাপ্তির কথাটা শুনে সবাই সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে ফারহান হাঁসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে।

নীরা প্রাপ্তির কানের কাছে এসে, প্রাপ্তিইইইইই ফারহান ভাইয়া এইখানে আসবে যে তুই জানিস না? এখন এরা আজ কেউই ছাড় দিবে না।
প্রাপ্তি কিছু না বলে শুধু হে হে হে করে হেঁসেই যাচ্ছে।

রিয়া -এই দুই বোন মিলে কি এতো ফুসুরফাসুর করছিস? যতোই বর কে বাঁচানো চেষ্টা করো কোনো লাভ নেই।

ফারহান তাদের কাছে এগিয়ে এসে কি ব্যাপার কখন থেকে আমি দাঁড়িয়ে আছি। যাইহোক আপুরা সবাই কেমন আছো?

সবাই এক সাথে বলে উঠলো, জ্বী ভালো।

রিয়া -ভাইয়া, বিয়ের পর প্রাপ্তি এই ফাস্ট কলেজে আসছে এখন তো আমাদের সবাইকে আপনি ট্রিট দিতে হবে।

ফারহান -আজকেই?

বিথী -হুম, আজকেই।

ফারহান -তাহলে আর কি সবাই রেস্টুরেন্টে চলো।আমি প্রাপ্তিকে নিয়ে আসছি তোমরা সবাই আগে যাও।
কথাটা শুনে প্রাপ্তি মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ফারহান -কি হলো দাঁড়িয়ে আছো কেন? সবাই যাচ্ছে তো।
প্রাপ্তি-(সবাই চলে যাওয়ার পর)তুমি ওদের এক কথাতেই রাজি হয়ে গেলে? আজ তোমাকে ওরা সবাই মিলে ডুবিয়ে ছাড়বে।

ফারহান -তাতে কি হয়েছে।আমার বউকে তো আর ছোটো হতে দিতে পারিনা!
আর একটাও কথা না গাড়ীতে উঠো।
মৃদুলকেও একটা ফোন দিয়ে বলি আসার জন্য।

রেস্টুরেন্টে এসে সবাই খাবার অর্ডার করছে যেই যার পছন্দ মতো।প্রাপ্তির ফ্রেন্ড ৮ টা।সবাই কিভাবে ফারহানের খরচ বাড়ানো যায় সেই চিন্তায় আছে। মৃদুলও এসে বসতে বসতে বললো,ফারহান!ওই দিন আমাকে সবাই মিলে ১২ টা বাজাইছে আর আজ তোমাকে, বলেই হাঁসা শুরু করলো মৃদুল আর নীরা।

ফারহান -মৃদুল! কিছু করার নেই বউ খুশি মানে সব খুশি।এর ছেয়ে ভালো আমরাও একসাথে খাওয়া খেয়ে বাড়ী ফিরি।

সবাই খাওয়াদাওয়া শেষ করে প্রাপ্তির ফ্রেন্ডরা চলে গেলো। প্রাপ্তিরাও তাদেরকে বিদায় দিয়ে বাসায় আসার জন্য গাড়ীতে উঠলো।

প্রাপ্তি আর নীরার আসার দেরী দেখে সবাই দুপুরে খেয়ে প্রাপ্তির বাবা আর মেজো কাকা ড্রইংরুমে বসে কথা বলছে ব্যবসা নিয়ে

কথার ফাঁকে প্রাপ্তির মার এসে বললো, মেয়েদের কে ফোন দিয়েছো এখনো তো এলো না।এইদিকে ফারহান এসেই তো প্রাপ্তির খুঁজ করবে।

প্রাপ্তির বাবা -আচ্ছা আবার ফোন দিয়ে দেখি। কথা টা বলে ফোন হাতে নিতেই কলিংবেল বেজে উঠলো।
ওই যে গিয়ে দেখো হতো তোমার মেয়েরাই হবে।
প্রাপ্তির মা গিয়ে দরজা খুলে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সবাইকে এক সাথে দেখে।

প্রাপ্তি -কি আম্মু এইভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন?

প্রাপ্তির মা -তোদের জন্য সবাই চিন্তা করছে।আর তোরা সবাই এক সাথেই আছোস।

নীরা বাসায় ঢুকতে ঢুকতে সব বললো আজ কি কি হয়েছে।

সবাই শুনে মেজো কাকা বললো ফারহান ১২ টা তো ভালোই বাজাইছে।তো কতো খরচ হয়েছে?

ফারহান -বেশী না কাকাই ২৫ হাজার টাকা।

নীরা -আসলে আব্বু ওরা সবাই প্লান এইটাই ছিলো কিভাবে ভাইয়ার টাকা বেশী খরচ করা যায় এই আর কি।

চলবে,,,,,