বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1201



অজানা_অনুভূতি পার্ট:২২

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট:২২

#Rabeya Sultana Nipa

 

__প্রাপ্তি ফারহানের কথায় কিছু বলছে না।মনে মনে ভাবছে সত্যিই কি আমি ফারহান কে ভালোবাসে ফেলেছি। আচ্ছা যার কারনে আমি ফারহান কে দূরে সরিয়ে রাখতেছি সে তো একবারো আমার খবর নিলো না।

ফারহান -প্রাপ্তি, তুমি কি ভাবছো? এইভাবে চুপ করে আছো কেন?আমার আনসার কিন্তু তুমি দিলেনা।

প্রাপ্তি -আচ্ছা তুমি যে মেয়েকে ভালোবাসো ওই মেয়েটার সাথে কথা বলো কখন? সারাক্ষণ তো আমার সাথেই থাকো।মেয়েটা কি জানে তুমি বিয়ে করেছো? ও তোমাকে ভুল বুজেনি?

প্রাপ্তির কথা শুনে ফারহান হাঁসতে শুরু করলো।
ফারহানে হাঁসি দেখেই প্রাপ্তির প্রচুর রাগ হচ্ছে।
প্রাপ্তি-আমাকে কি জোকার মনে হয় তোমার কাছে? এই কথাটা বললেই তুমি হাঁসতে থাকো,ব্যাপার টা কি একটু বলবে?
(ফারহান হাঁসি থামিয়ে)
ফারহান-আসলে কি বলোতো আমি সারাক্ষণ কিন্তু ওকেই সময়দি। কিন্তু সেটা তুমি বুজতেই পারোনা নাকি বুজতে চাও না সেটা আমার জানা নেই।(অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে)
প্রাপ্তি! তুমি কি সত্যি কোনো দিন বুঝবেনা? আমাদের সম্পর্কটা কি সারাজীবন এইভাবেই থেকে যাবে?

প্রাপ্তি -ফারহান,,,,

ফারহান-(প্রাপ্তির মুখে আঙুল দিয়ে)চুপ আজ আমাকে বলতে দাও।আমার বলা শেষ হলেই তুমি বলবে।(প্রাপ্তি তখন মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুজালো,ফারহান আবার শুরু করেছে।)আমি জানি তুমি একজনকে ভালোবাসতে।আচ্ছা কোনো ছেলেকি কোনো মেয়ের এইসব কিছু জেনেও ওই মেয়েকে বিয়ে করে? কেউই করেনা।তাহলে তোমার মাথায় এইটা আসেনা আমি তোমার সব কিছু জেনেও তোমায় বিয়ে করলাম কেন?কারণ আনসারটা তুমি আমার থেকেও ভালো জানো। কিন্তু বুজতে চাও না।মানলাম তুমি আয়ান নামের ছেলেটাকে এতোটাই ভালোবাসো যে কিছু এখন মেনে নিতে পারছোনা।কিন্তু এইটা ভেবে দেখেছো তুমি তাকে না দেখে তার সম্পর্কে ভালো করে না জেনে তাকে তুমি এতো ভালোবেসেছো।তা হলে আমার দিকটা একবার ভাবো তুমি আমার সামনে সারাক্ষণ ঘুরো,কথা বলো,হাঁসো,আমি কি করে ঠিক থাকতে পারি।আমি কিন্তু তোমার শর্ত গুলো মেনে বিয়ে করার পর শর্ত গুলো নাও মানতে পারতাম।কেন মিনেছি জানো? তোমার শরীরের প্রতি আমার কোনো লোভ নেই আছে শুধু তোমার জন্য ভালোবাসা।আমি চাইনা জোর করে কিছু পেতে যেই দিন তুমি মন থেকে আমার কাছে আসবে সেইদিনও আনাকে একিভাবে পাবে।আমি তোমার ছিলাম, আছি,থাকবো।(ফারহান কথা গুলো বলে যাচ্ছে আর প্রাপ্তির চোখের পানি গুলো টপটপ করে নিছে পড়ছে।প্রাপ্তি কান্না দেখে) প্রাপ্তি,জানো আমি চাইনা তোমার চোখের কাজল মুছে যাক।আর কখনো চাইবোও না। আমি যতো দিন বেঁচে থাকবো কখনো যেন না দেখি তোমার চোখে পানি।হয়তো আমার কথা গুলো তোমার কাছে কোনো দামই নেই। তবুও বলছি ওই মেয়ে আর কেউ নয় শুধু তুমি।যেইদিন আমি ফাস্ট তোমাদের বাসায় এসেছি সেই দিন তোমাকে একটা বার দেখেই ভালোবেসে ফেলেছি।আর তোমার ফ্যামিলির সাথে ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হলো।আমার বাবা,মাকে বলে তোমার ফ্যামিলিতে প্রস্তাব পাঠালাম।কিন্তু তারা বললো তারা রাজি কিন্তু তোমার পড়া লেখা শেষ করেই বিয়েটা হবে।তখন আমিই বললাম বিয়েটা যখন পরেই হবে তোমাকেও পরে বলা হোক।সবাই ও আমার কথা মেনে নিলো সেইদিন। এখন আমি বুজি সেইদিন তোমাকে না জানিয়ে কতো বড় ভুল হয়েছে।প্রাপ্তি, আমি অন্য ছেলেদের মতো না, তোমাকে বলিনি,বলেছি তোমার ফ্যামিলি কে কারণ তোমার একা ভালোবাসা পেলে তো হবে না।আমাকে সবার ভালোবাসাই পেতে হবে।

কথা গুলো বলেই ফারহান একটা সুস্থির নিশ্বাস পেললো। মনে হচ্ছে এতো দিন যে কষ্টগুলো তার বুকে চেপে রেখে ছিলো আজ প্রাপ্তিকে এইগুলো বলে কিছুটা হলেও হালকা লাগছে নিজেকে।
প্রাপ্তি কিছুই বলতে পারছেনা চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরতেছে।ফারহানের কথা গুলো শুনে নিজের কাছেই নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।ফারহান প্রাপ্তির চোখ গুলো মুছতে মুছতে কান্নাকাটি করার কোনো দরকার নেই।কথা গুলো তোমাকে বলতে চাইনি।তবু নিজের অজান্তেই বলে পেললাম।প্রাপ্তি কাঁদতে কাঁদতে ফারহানকে জড়িয়ে ধরলো।হঠাৎ করে প্রাপ্তির এইভাবে জড়িয়ে ধরা দেখে ফারহান অবাক হয়েই আছে।বিশ্বাসই করতে পারছেনা প্রাপ্তি তাকে জড়িয়ে ধরেছে।অবশ্য এর আগেও নীরার বিয়ের পরে একবার জড়িয়ে ধরেছিলো। আচ্ছা আমি নিজেও কি তাকে জড়িয়ে ধরবো? না থাক!প্রাপ্তি যেইদিন মন থেকে এসে বলবে আমি তোমাকে ভালবাসি সেইদিন তাকে জড়িয়ে ধরবো।এর আগ পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করে যাবো।

ফারহান -প্রাপ্তি আমি তোমাকে কান্না করার জন্য এইগুলো বলিনি।বলেছি ভেবে দেখতে।(প্রাপ্তিকে হাঁসানো জন্য)প্রাপ্তি তুমি যাদি সারাক্ষণ এইভাবে রুমেই থাকো তাহলে সবাই ভাববে প্রাপ্তি তার বর কে কতো ভালোবাসে তাই চোখের আড়াল করতে চায়না বলেই সারাক্ষণ রুমে থাকে।
প্রাপ্তি ফারহানকে ছেড়ে দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে ফারহান,ভালো হবেনা বলে দিলাম।

ফারহান- খারাপই বা কি হবে।আমি এইটুকু বুজেছি প্রাপ্তি এখন ফারহানকে চোখে হারায়।ঠিক বলছি?

প্রাপ্তি -মোটেও ঠিক বলোনি।তোমাকে চোখে হারাতে যাবো কেন?

প্রাপ্তির কথা শুনতে শুনতে ফারহান ঘড়ীর দিকে তাকিয়ে দেখে ৫.৩০ বেজে গেছে।
ফারহান -ওহ কখন সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে টেরি পেলামনা। বউয়ের কান্নাকাটি দেখলেকি আর কোনোদিকে মন থাকে।একটু পরতো মাগরিবের আজান দিবে।তুমি নামাজ পড়ে নিও আমি আর ইমরান একটু বাহিরে যাবো।কথাটা বলতে বলতে ফারহান দরজা খুলে দেখে সেজো কাকী আর নীরা দাঁড়িয়ে আছে।
ফারহান -আপনারা?

সেজো কাকী -তোমরা তো ঘুমাচ্ছিলে তাই বড় ভাবী বলেছে তোমাদের ডেকে দিতে।এখন এসে দরজা নক করতে যাবো তার আগেই তুমি দরজা খুললে।

নীরা -কাকী , ভাইয়াকে দেখেতো মনে হয়না ঘুমিয়েছে।তুমি কি বলো।

নীরা কথাটা বলতে বলতে তারা রুমে ঢুকে দেখে প্রাপ্তি অন্য দিকে ফিরে শুয়ে আছে।
ফারহান তাদের সাথে কথা না বাড়িয়ে মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে ইমরানের রুমে চলে গেলো।প্রাপ্তিও তাদেরকে দেখে উঠে বসলো।
সেজো কাকী -কিরে ঘুমাস নাই? আর বড় ভাবী পাঠিয়েছে তোদেরকে জেগে তুলতে।এখন এসে দেখি ঘুমাসই নাই।আচ্ছা নীরা তোরা কথা বল আমি আসছি।ওই দিকে অনেক কাজ পড়ে আছে।
কাকী চলে যাওয়ার পরে নীরা প্রাপ্তির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে, মনে হচ্ছে তুই কান্না করেছিস।

প্রাপ্তি -(একটু চুপ করে থাকে)কান্না করিনি নিজের ভুল গুলোকে শুধরানোর চেষ্টা করছি।আচ্ছা তুইও তো জানতি ফারহান কাকে ভালোবাসতো।কিন্তু তুই ও আমাকে বলিসনি। যদি তখন বলতি আজ তাহলে এতো গুলো মানুষকে কষ্ট পেতে হতো না।

নীরা- প্রাপ্তি তুই আমাকে ভুল বুজছিস সত্যিই আমি আগে কিছু জানতাম না।যখন জানতে পারলাম তখন অনেক দেরী হয়ে গেছিলো। তবে কি জানিস হয়তো তোর কাছে এখন খারাপ লাগছে কোনো একদিক তুই নিজেই বলবি ফারহান ভাইয়াকে বিয়ে করে তুই ঠিকে করেছিস।

প্রাপ্তি -হয়তো তাই।
(কথাটা বলতে বলতে প্রাপ্তি উঠে দাঁড়ালো
আচ্ছা চল দেখি ওরা সবাই কি করছে।

সন্ধ্যা থেকে সবাই ড্রইংরুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে। ইমরান আর ফারহান বাহিয়ে গেছে।প্রাপ্তিকে সবাই নানানরকম কথা জিজ্ঞাস করছে।
মেজো মা – হে রে প্রাপ্তি, ওই বাড়ীর সবাই তোকে অনেক আদর করে তাই না?

নাজিফা -মা তুমিও না। আমি একদিন থেকে যা বুজলাম সবার থেকে ভাইয়া আপুকে চোখে হারায়,কতো কেয়ার করে।অবশ্য সবাইও আপুকে অনেক আদর করে।

প্রাপ্তি- ওই তুই কিন্তু বেশী কথা বলছিস।তোকে মেজো মা জিজ্ঞাস করেছে?

নাজিফা -তুই তো কিছু বলছিস না তাই আমি তোর হয়ে বলে দিলাম।ভাইয়াই তো বললো তোর সাথে আমি ফ্রি তাই বলে দিলাম।

নীরা-তোর মুখেতো ভালোই খই ফুটতেছে।এই সবাই কিন্তু শুনে রাখো, প্রাপ্তি আজ বড় মায়ের সাথে ঘুমাবে আর নাজিফা ফারহান ভাইয়ার সাথে।ও যখন নিজের মুখে শিকার করেছে ও প্রাপ্তির সাথে ফ্রি তাহলে ফারহান ভাইয়া দুটো বউ পেয়ে গেলো।

নাজিফা- ধুত্তুরি আর থাকবোই না এখানে।তোরা সবসময় আমার পিছনে লেগে থাকিস।কথাটা বলেই নাজিফা রাগ দেখিয়ে চলে গেলো।

প্রাপ্তির মা- নীরা বেশী বাড়াবাড়ি করে পেলেছিস।আচ্ছা প্রাপ্তি,ফারহান আর ইমরান আবার কোথায় গেলো,জানিস কিছু?

প্রাপ্তি -না কিছু বলে যায়নি, ওরা দুজন এক সাথে থাকলে কখন কি করে সেটার কি ঠিক আছে।

সেজো কাকী নাস্তা আর কফি নিয়ে এসে, এই আমি কিন্তু এসে গেছি এতোক্ষণ অনেক কিছু মিস করে ফেলেছি।
আবার নতুন করে শুরু করো।

নীরা -হায় হায় কাকী তুমি সব কিছু মিস করে ফেলেছো।(খেপানোর জন্য)প্রাপ্তি তুই যে এতোক্ষণ আমাদের গল্পগুলো শুনাইছোস কাকী তো সব মিস করে ফেলেছে। এখন কি করা যায়?

নীরার কথা শুনে সবাই হাঁসছে।

সেজো কাকী -নীরা, আমাকে খেপানো হচ্ছে তাই না।আমি সব বুজি।কফি ঠাণ্ডা হয়ে যাছে আগে খেয়েনে।প্রাপ্তি,তুই ফারহান কে ফোন দে আসার জন্য। ওর জন্য বড় ভাবী, আর মেজো ভাবী স্পেশাল পিঠা বানিয়েছে।

প্রাপ্তি -কাকী, তুমি তো ভালো করেই জানো ও এই সময় কফি খায়না, চা বানাও নি।

সেজো কাকী -বড় ভাবী দেখেছো আমাদের মেয়ে এখন আর আমাদের নেই। পুরোপুরিভাবেই ফারহানের হয়ে গেছে।

(সেজো কাকীর কথা শুনে প্রাপ্তির মা ভাবছে আমি তো এটাই ছেয়েছিলাম।ও ফারহানের হয়েই থাকুক।)
প্রাপ্তি -কাকী তুমিও না।একটা কথা পেলেই হলো আর কিছু লাগেনা।এইটা আবার আম্মুকে শুনানো লাগে।কথাটা বাড়ীর সবাই জানে ফারহান সন্ধ্যায় কফি খায়না।তার পরেও বলতে হলো তোমার।

প্রাপ্তি কথাটা বলেই চুপচাপ বসে ফারহানকে ফোন দিচ্ছে। ফারহান বার বার ফোন কেটে দিচ্ছে।আবার ফোন দিতে যাবে দেখে ফারহান আর ইমরান দরজা দিয়ে ঢুকতেছে।
ফারহান প্রাপ্তির কাছে এসে
ফারহান -তুমি এমন সময় ফোন দিচ্ছো তখন বাসার সামনে তাই ফোন কেটে দিছি।

মেজো মা-ফারহান, ইমরান নাস্তা করতে বসো।যা বলার পরে বলবে।

চলবে,,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ২১

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ২১

#Rabeya Sultana Nipa

 

সকাল বেলা নিশ্বাসের গরম হাওয়া মুখে পড়তেই প্রাপ্তির ঘুম ভেঙে চোখ মেলে তাকালো।এই প্রথম সেই ফারহানের এতো কাছাকাছি। ঘুমালে ওকে এতো মায়া লাগে এইটা আগে দেখেনি।ইচ্ছে করছে তাকে একবার ছুঁয়ে দেখতে।আমি তো ওকে ভালোবাসিনা।তারপরও ওর সবকিছুই ভালোলাগে।হয়তো বিয়ে নামে এই সম্পর্কে জড়ানোর কারনেই কি তার প্রতি আমার মায়া কাজ করছে।ধুত আমি এইসব কি ভাবছি কথাটা বলে প্রাপ্তি উঠে যাবে এমন সময় ফারহান হাত ধরে ফেললো।

প্রাপ্তি-কি ব্যাপার ফারহান হাত ধরলে কেন? তোমার শর্ত ভুলে গেলে চলবে না।

ফারহান -আমি কিছু ভুলিনি।যাচ্ছো কোথায় সেটা বলো।?

প্রাপ্তি -ফ্রেশ হয়ে ভাবীদের কাছে যাবো।

ফারহান -ওরা এখন রান্না ঘরে আছে এখন ওদের কাছে গেলে ওরা তোমাকে ইচ্ছে করেই নাস্তা বানাতে দিবে আর আমিতো জানি আমার বউ কিছুই পারে না।

প্রাপ্তি -ছাড়োতো! বেশী ভালোবাসা দেখাইতে আইসো না।যাকে দেখানোর কথা তাকে গিয়ে দেখাও।

কথাটা বলেই প্রাপ্তি উঠে চলে গেলো।
এমন একটা হিটলার নিজের কপালে নিজেই টেনে আনছি বুজালে ও বুজেনা।কথাটা বলতে বলতে ফারহানও উঠে গেলো।
প্রাপ্তি ফ্রেশ হয়ে ভাবীদের কাছে যেতেই

বড় ভাবী -কি ব্যাপার প্রাপ্তি এতো তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে গেলো?

মেজো ভাবী -উঠেছো ভালোই হয়েছে আজ নতুন বউয়ের হাতে নাস্তা খাবো।কি বলিস সুমি?

প্রাপ্তি কথাটা শুনেই গলাটা শুখিয়ে আসছে।মনে মনে ভাবছে আমি তো কোনো নাস্তাই বানাতে পারিনা।এখন কি করি? ফারহান ঠিকি বলেছিলো তার কথাটা শুনাই ভালো ছিলো।প্রাপ্তি নিজের বিপদ নিজেই টেনে আনলি।

বড় ভাবী -লামিয়া তুই কি যে বলিস না প্রাপ্তি নাস্তা বানাবে কি করে? আজকে থাক ওদের বাড়ী থেকে ঘুরে আসুক তারপর না হয় আমিই শিখিয়ে দিবো।

মেজো ভাবী -আমি তো কোনো কথা শুনবো না।প্রাপ্তি তুমি আসো তো।

ফারহান তাড়াহুড়ো করে ফ্রেশ হয়ে ড্রইংরুমে এসে দেখে তার বাবা বসে পেপার পড়ছে আর বার বার রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে হাঁসছে।কারণ তিনিও জানেন প্রাপ্তি কোনো রান্নাই পারেনা।কিন্তু কিছু বলছে না কারণ তিনি ভালো করেই জানে প্রাপ্তিকে মেজো বউ দুষ্টামি করেই এই গুলো বলছে।

সুমি -ভাবী যাও যাও তোমার হাতের নাস্তা আজ তো মিস করা যাবেনা।

প্রাপ্তি এগিয়ে গিয়ে আচ্ছা কি করতে হবে বলো।

মেজো ভাবী -হুম,মামনি সকাল বেলা রুটি ছাড়া অন্য কিছু খায়না তুই রুটি বানিয়ে পেল।
কথাটা শুনেই প্রাপ্তির মাথা ঘুরতেছে।কি করবে বুজতে পারছে না সবার জোরাজোরিতে আসলাম।কিন্তু রুটি বানাবে কি করে?

ফারহান তাকিয়ে আছে কি করে দেখার জন্য।
মেজো ভাবী- ফারহান তুমি এইখানে কি করছো? যাও এইখান থেকে।নাকি বউয়ের জন্য কষ্ট লাগছে।

ফারহান -ভাবী তুমি কিন্তু ভালো করেই জানো ও এইগুলো পারেনা।আর একটা মানুষ কে সময় দেওয়া উচিত।হঠাৎ করে কেউই কোনো কাজ পারেনা।

মেজো ভাবী -এতোক্ষন এইটাই জানতে চাইছি তোমার বউয়ের প্রতি ভালোবাসা কতোটুকু।যাইহোক প্রাপ্তি এইবার দেখছো ফারহান তোমায় কতোটা ভালোবাসে।তোমাকে কোনো কাজ করতে দিতে চায়না।আজকে কিন্তু ছেড়ে দিলাম।ওই বাড়ীথেকে আসো তারপর ফারহান বললেও শুনবো না।

প্রাপ্তি-ফারহান তুমি এইখান থেকে যাও।ভাবী, আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন আমি পারবো।

ফারহান আর কিছু না বলে তার বাবার সাথে বসে কথা বলছে।

ফারহানের বাবা-ফারহান! প্রাপ্তির বাবা আর মেজো কাকা ফোন করেছে তোরা কখন যাবি?
ওরা যখন এতো বার ফোন দিচ্ছে তোরা রেডি হয়েনে।

ফারহান -ঠিক আছে, প্রাপ্তি ও মনে হয়না আজ থাকবে।
নাজিফা ও এসে ফারহানের সাথে বসেছে।
ফারহানের বাবার দিকে তাকিয়ে আংকেল আপুকি আজকেও যাবেনা?

ফারহানের বাবা- তোমার কি আমাদের বাড়ী ভালো লাগেনা?

নাজিফা- সেই জন্য বলছিনা। কিন্তু আজ তো যাওয়ার কথা।

ফারহানের বাবা-হ্যাঁ,তোমরা নাস্তা করে রেডি হয়ে নাও।

সবাই নাস্তা করে বসে আড্ডা দিচ্ছে। প্রাপ্তি গিয়ে রেডি হচ্ছে।মনে হচ্ছে কতো বছর সে ওই বাড়ীতে যায়নি। ফারহান রুমে ঢুকতে যাবে দেখে প্রাপ্তি শাড়ী পরছে।
ফারহান -সরি আমি ইচ্ছে করে আসিনি।

প্রাপ্তি -তোমাকে এইটা ভাবতে হবে এই রুমে তুমি একা নয়। আরো একজন থাকে। রুমে আসার আগে দরজায় নক করে আসতো পারোনা?

ফারহান -সরি বললাম তো(মনে মনে কি হিটলারি নিজের বউকে দেখবো এইটাও পারমিশন নিতে হবে?আমি ও দেখতে চাই কয়দিন এই হিটলারি দেখাও)

নাজিফা -কিরে আপু আসার সময় দেখলাম ফারহান ভাইয়া মন খারাপ করে চলে যাচ্ছে কি হয়েছে?

প্রাপ্তি -কিছুনা,এমনি।
প্রাপ্তি শাড়ী পরা শেষ করে নাজিফাকে বললো ফারহান কে ডাকতে।
নাজিফা গিয়ে ফারহান কে ডেকে আনলো।

ফারহান-সমস্যা কি একবার তাড়িয়ে দিলে এখন আবার ডাকতেছো।

প্রাপ্তি- তোমাকে রেডি হওয়ার জন্য ডেকেছি। অন্য কিছুর জন্য না।

ফারহান- (হাঁসি দিয়ে)অন্য কিছু কি প্রাপ্তি?

প্রাপ্তি- ধুত যাও তো। কথা বাড়িও না।

প্রাপ্তির ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে সাজতেছে। ফোন বাজতেছে শুনে উঠে এসে দেখে নীরা ফোন করেছে।ফোন রিসিভ করেই।

নীরা -কিরে আর কতোক্ষন।দুপুর হয়ে যাচ্ছে এখনো তোদের খবর নেই।আসবি টা কখন?
প্রাপ্তি- এইতো একটু পরে বাসা থেকে বের হবো।তোরা কি করছিস?

নীরা- কি আর করবো সবাই তোদের জন্য অপেক্ষা করছে।আচ্ছা তাহলে রাখি তাড়াতাড়ি আয়।

প্রাপ্তি ফোন রেখে দেখে ফারহান ও রেডি হয়ে আসছে।

ফারহান -তোমার হইছে নাকি আরো দুইদিন লাগাবা?

প্রাপ্তি -আমার হয়ে গেছে।

প্রাপ্তি ড্রইংরুমে এসে দেখে সবাই বসে আছে।প্রাপ্তি তার শাশুড়ি আর শশুরকে সালাম করে ভাবীদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বের হলো।

এইদিকে প্রাপ্তিদের বাসার সবাই অপেক্ষা করছে।
মেজো কাকা -ইমরান একটু ফোন দিয়ে দেখতো প্রাপ্তি কতো দূর এলো?সেই কোন সময় বললো বাসা থেকে বের হয়েছে এখনো এসে পৌঁছালো না তারা।
কথা টা বলতে না বলতেই কলিংবেলের শব্দ পেয়ে প্রাপ্তির মা বললো মনে হয় প্রাপ্তিরা এসে গেছে আমি গিয়ে দেখছি।
প্রাপ্তির মা দরজা খুলেতেই প্রাপ্তি জড়িয়ে ধরলো তার মাকে।
মেজো মা -সবাই দেখোছো প্রাপ্তি আমাদের কথা কিন্তু ভুলেই গেছে।

প্রাপ্তি -(তার মাকে ছেড়ে দিয়ে) মেজো মা আমি কিন্তু সবাইকেই মনে রেখেছি।কাউকেই ভুলিনি।

মেজো কাকা -সেইটা ভালোকরেই জানি।কিন্তু তোদের এতো দেরী হলো কেন? ফারহান, আগে তোমরা রুমে যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।এমনিতে তো দুপুর করে এসেছো। এতো দেরী করলে কেন?

ফারহান -কাকাই প্রাপ্তি সেই সকাল থেকেই সাজতে সাজতে দেরী করেছে।

প্রাপ্তি -কি মিথ্যাবাদীরে,এই আমি সাজতে সাজতে দেরী করেছি?

মেজো মা- আসতে না আসতেই ঝগড়া? আচ্ছা এই দুইদিনও কি এইভাবে ঝগড়া করেছিস?
প্রাপ্তি আর কিছু না বলে রুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।ফারহান ও পিছুপিছু গেলো।

রুমে গিয়ে প্রাপ্তি ফারহানের দিকে রাগি মুখ নিয়ে তাকিয়ে আছে।
ফারহান -(আস্তে করে) এইভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আমি আবার কি করলাম?

প্রাপ্তি -তখন বললে কেন, আমি সাজতে সাজতে দেরী করেছি?

ফারহান -আচ্ছা সরি আর বলবো না।

নীরা রুমে দরজায় দাঁড়িয়ে ভাইয়া আসবো।

ফারহান -আরে নীরা যে! এতোক্ষণ কই ছিলে?

নীরা -আমার রুমেই ছিলাম।মৃদুল কাল রাত থেকে একটু অসুস্থ তাই ওর পাশেই বসে ছিলাম।

ফারহান -(প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে)নিজের ছোটো বোনের কাছ থেকেই তো একটু শিখতে পারো কিভাবে বর কে ভালোবাসতে হয়।তা না করে সারাক্ষণ মাথায় উল্টাপাল্টা চিন্তা নিয়ে ঘুরো।

প্রাপ্তি -নীরা, তুই আর মানুষ খুঁজে পেলিনা।কার কাছে কি বলছিস।

প্রাপ্তি! প্রাপ্তি! কই তোরা তাড়াতাড়ি আয়।
সবাই না খেয়ে তোদের জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে।
নীরা -ওই যে বড় মায়ের ডাক পড়েছে।তাড়াতাড়ি চলো।

ফারহান -হুম,চলো।
সবাই এক সাথে খেতে বসেছে।
প্রাপ্তির বাবা-আজ অনেক দিন পর মনে হলো এই বাড়ীতে আনন্দ ফিরে এসেছে।মেয়ে গুলো না থাকলে কেমন জানি লাগে।তখন কিছু ভালো লাগে না।

মেজো কাকা -ভাইয়া ঠিকি বলছিস।যাই হোক ফারহান তোমার ব্যবসার অবস্থা কি?
সব ঠিকঠাক চলছেতো?

ফারহান -হ্যাঁ কাকাই, সব ঠিকঠাক।সামনের মাসে ব্যবসার কিছু কাজে দেশের বাহিরে যেতে হতে পারে।
কথাটা শুনেই প্রাপ্তি অবাক হয়ে ফারহানের দিকে তাকালো। কারণ ফারহান যতোবারই ব্যবসার কাজে বাহিরে যেতো ততোবার প্রাপ্তির সাথে দেখা করে যেতো।কিন্তু এইবার তো আমি ওর সাথেই ছিলাম কই আমাকে একটা বারও বললো না?
ফারহান কথাটা বলেছে ঠিকি কিন্তু প্রাপ্তির দিকে বার বার তাকাচ্ছে। প্রাপ্তি কিছু বলছে নিছের দিকে তাকিয়ে খেয়েই চলেছে।

ফারহান নীরাকে চোখ দিয়ে ইশারা করে প্রাপ্তির দিকে তাকাতে বললো।

নীরা -আরে প্রাপ্তি আস্তে খাঁ গলায় আটকে যাবে তো।কি হয়েছে তোর আবার?

প্রাপ্তি -কিছু হয়নি। আমার খাওয়া শেষ আমি উঠছি।কথাটা বলেই প্রাপ্তি চলে গেলো

মেজো কাকা -প্রাপ্তির কি হলো আবার এর মাঝে।একটু আগেই তো ভালো ছিলো।
এইভাবে চলে গেলো কেন?

প্রাপ্তির বাবা -সেইটাই তো ভাবছি কি হলো এর।
খাওয়াদাওয়া শেষ করে সবাই ড্রইংরুমে আড্ডা দিচ্ছে।ফারহান আড্ডা থেকে উঠে গিয়ে দেখে প্রাপ্তি শুয়ে আছে।

ফারহান -কি হলো তখন এইভাবে মন খারাপ করে উঠে এলে কেন?

প্রাপ্তি- তুমি বাহিরে যাচ্ছো আমাকে বললে না তো?

ফারহান -যাবো না তো কি করবো? বিয়ে করেছি কোথায় বউকে ভালোবাসবো।বউকে আদর করবো,বউকে নিয়ে ঘুরবো কিন্তু তানা বিয়ের পর থেকে বউয়ের ঝাড়ি খেয়েই যাচ্ছি।তাই ভাবলাম বাহিরে গিয়ে থাকবো।

প্রাপ্তি- যাও যাও এখন আমার কাছে কি?

ফারহান-প্রাপ্তি তুমি কি আমাকে ভালোবেসে ফেলেছো? যদি হ্যাঁ বলো তাহলে ভেবে দেখবো।

চলবে,,,,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ২০

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ২০

#Rabeya Sultana Nipa

 

_ফারহানের বাবা আর মা বসে কথা বলছে।বিয়ের এই কয়টা দিন সব ঝামেলা ফারহানের বাবাই সবকিছু সামলিয়েছে।ফারহানের বাবা সবার থেকে একটু বেশী ভালোবাসে ফারহান আর সুমিকে।

ফারহান এসে দরজা দাঁড়িয়ে বাবা আসবো?

ফারহানের বাবা তাকিয়ে দেকে ফারহান দাঁড়িয়ে আছে।
ফারহানের বাবা- দরজায় দাঁড়িয়ে আছিস কেন? এখানে এসে বস।

ফারহান এসে বসতে বসতে মা তোমার শরীর এখন কেমন আছে?

ফারহানের মা-এখন ঠিক আছি।ঘুম থেকে উঠলি কখন?

ফারহান মায়ের কথা শুনে একটু লজ্জা পেয়ে, একটু আগে।

ফারহানের বাবা-ছোটো বউ কি করছে?সকালের নাস্তা তো এখনো মনে হয় খাসনি?

ফারহান-বাবা পরে খেয়ে নিবো।এইদিকের সব কিছু ঠিক আছে তো?

ফারহানের বাবা -সব কিছু ঠিক আছে।(ফারহানের মায়ের দিকে তাকিয়ে)দেখেছো ছেলে বিয়ে না হতেই শশুর বাড়ীর লোকেদের চিন্তা মাথায় ঢুকে গেছে।
কথাটা বলেই হাঁসতে শুরু করলেন ফারহানের বাবা।

ফারহান বাবার কথায় কিছু মনে করলো না।সেই ভালো করেই জানে তার বাবা তাকে খেপানোর জন্যই বলেছে।

মেজো ভাবী নাস্তা নিয়ে ফারহানের রুমে এসে দেখে প্রাপ্তিকে সুমি সাজাচ্ছে।প্রাপ্তি! সকাল থেকে তো কিছুই খাওনি।আগে খেয়ে নাও।সুমি তুই পরে সাজিয়ে দিছ।
প্রাপ্তি! ফারহান কই?

প্রাপ্তি -ওর মায়ের রুমে গেছে।

মেজো ভাবী -ওর মা মানে তোমারও মা।আজকের পরে আর কখনো ওর মা বলে ডাকবেনা।
ফারহান রুমে ঢুকে কথাটা শুনতে পেয়ে ভাবী! হঠাৎ করে এসেই তো আরেক জনকে মা বলা যায়না। একটু সময়ের দরকার হয়।ওর যখন মনে হবে মাকে মা বলে ডাকবে সেইদিনই ডাকুক সমস্যা তো নেই।

মেজো ভাবী -হুম তাও ঠিক।আচ্ছা দুজনে নাস্তা খেয়েনে।আমি আসছি।

ফারহান -প্রাপ্তি সকাল থেকে না খেয়ে আছো আগে খেয়ে নাও।একটু পর তোমার বাসার সবাই এসে যাবে।

প্রাপ্তি -আম্মুকে ফোন করেছো?

ফারহান-ফোনে কথা বলেই রুমে আসলাম।
একটা কথা বলবো?

প্রাপ্তি বুজেছে সেই হয়তো বলবে আমি ফোন আনতে কেন বলেছি? এখন কিছু বললে সুমি খারাপ ভাবতে পারে।
প্রাপ্তি-তোমার যা বলার পরে শুনবো।

ফারহান আর কথা না বাড়িয়ে নাস্তা খেয়ে রুম থেকে চলে গেলো।

সুমিও প্রাপ্তিকে সাজিয়ে মায়ের রুমে নিয়ে গেলো।কাল রাতের পর থেকে তার শাশুড়ি সাথে দেখা হয়নি।
ছেলের বউকে রুমে আসতে দেখে ফারহানের মা এগিয়ে গিয়ে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে বললেন আমিই যাচ্ছিলাম তোকে দেখে আসতে।কাল রাতে অসুস্থ হওয়ার পর থেকে তোর কাছে যেতে পারিনি।অবশ্য বড় বউ বলছে তোকে নিয়ে আসতে আমি মানা করেছি।শুধু শুধু ঝামেলা বাড়াতে ভালো লাগেনা।
সুমি বড় বউকে একটু ডাকতো!

বড় বউ এসেই মামনি আমাকে ডেকেছেন?
ফারহানের মা-ছোটো বউকে দিবো বলে তোমার কাছে যে চুড়ি গুলো রাখতে দিয়েছি ওই গুলো দাও ওকে পরিয়েদি।

প্রাপ্তি-আমার এইগুলো লাগবেনা ওই গুলো আপনার কাছেই রেখেদিন।

বড় ভাবী -লাগবেনা এইটা আবার কোন কথা? মামনি যখন দেয়েছে রেখেদে।না রাখালে মামনি কষ্ট পাবে।
প্রাপ্তি আর কথা বাড়ালোনা। ফারহান বার বার উকি মেরে দেখে যাচ্ছে।লিজা চুপ থাকতে না পেরে এই ফারহান শুন তোর বউ এই রুমে আসার পর থেকে কয়বার উকি মারলি।এমন ভাব করছি মনে হচ্ছে আমরা সবাই মিলে তোর বউকে খেয়ে ফেলবো।
ফারহান সবার সামনে লজ্জা পেয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে আমি ওকে দেখতে মোটেও আসিনি।মায়ের সাথে কিছু কথা ছিলো তাই আসছিলাম।

ফারহানে কথা শুনে সবাই হাঁসতে শুরু করলো।ড্রইংরুমে ফারহানের বাবার ডাকাডাকিতে সবাই গিয়ে দেখে প্রাপ্তিদের বাড়ির সবাই এসে গেছে।প্রাপ্তির মা, মেজো মা সবাইকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি শুরু করে দিলো।এইসব দেখে ফারহানের বাবা বললো পাগলি মেয়ে তুই এইভাবে কাঁদছিস কেন? আমরা কি এতো খারাপ যে তোর কাউকেই ভালো লাগছেনা।ফারহানও প্রাপ্তির কান্না দেখে তার চোখও পানিতে টলমল করছে?
মেজো ভাবী ফারহানকে দেখে কাছে গিয়ে ফারহান! বউয়ে কান্না সহ্য হচ্ছে না তাইনা?

ফারহান- তোমার আমার পিছনে লাগা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই? আর সহ্য হবে কি করে? অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে বিয়ে করে আনলাম চোখের পানি দেখার জন্য?
মেজো ভাবী আর কিছু না বাড়িয়ে নিজের কাজে গেলো।
এই বাড়ীতে এসে সবাই সবার সাথে পরিচিত হচ্ছে।

নীরা- একটা দিন তুই বাড়ীতে ছিলিনা মনে হচ্ছে একবছর কেটে গেছে।

সেজো কাকী -নীরা ঠিকি বলেছে।কাল রাতে আমি ফারহান কে কয়েক বার ফোন দিয়েছিলাম।দেখি ফোন অফ ছিলো।

নীরা -ফারহান ভাইয়া ভালো করেই জানে তুমি রাতে ডিস্টার্ব করবে তাই ফোন অফ করে রাখছে। তাই না ভাইয়া?

ফারহান -কাকী বিশ্বাস করুন ফোনে চার্জ ছিলোনা। নীরা! তুমি আমাকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় আছো তাই না?

সেজো কাকী -ওকে এখন সব বাদ।প্রাপ্তি চল তোর রুমেই বসে আড্ডা দেওয়া যাক। এইখানে বড়রা সবাই কথা বলুক।

ফারহান -প্রাপ্তি এদেকে নিয়ে রুমে যাও।
কথা বলেই নাজিফার দিকে তাকিয়ে নীরা! বউয়ের সাথে নাকি শালী ফ্রি কিন্তু তোমার তো বিয়ে হয়ে গেছে তাই আজ থেকে নাজিফা প্রাপ্তির সাথে থাকবে এই বাড়ীতে।
কি বলো প্রাপ্তি?

নাজিফা -হ্যাঁ! আসার পর থেকে তো আমাকে কারো চোখেই পড়েনা।এতোক্ষন তো দেখলাম এক মিনিট যদি অন্য দিকে তাকাও দুই মিনিট আপুর দিকে তাকিয়ে থাকো। আমাকে রাখলে আমার দিকে তাকাবা কখন?

ফারহান- তখন সময় এমনি হয়ে যাবে।

নাজিফা -এখন চলোতো আপুরা চলে যাচ্ছে।
সবাই ফারাহানের রুমে ঢুকেই
নীরা -ওয়াও ভাইয়া রুমতো সুন্দর করে সাজিয়েছে।

ফারহান -হুম,আমার ফ্রেন্ডরাই সাজিয়েছে।কিন্তু না সাজানোই ভালো ছিলো।

নীরা ফারহানের দিকে ইশারা করে বুজালো তোমাদের মধ্যে কিছুই হয়নি।
ফারহান ও মুচকি হেঁসে মাথে নাড়িয়ে না বুজালো।প্রাপ্তি ফারহান আর নীরার সব কিছু আড় চোখে বার বার তাকিয়ে দেখছে আর সেজো কাকীর সাথে কথা বলছে।

নাজিফা -ভাইয়া আজ আপু আমাদের বাসায় যাবেনা?

ফারহান -নাজিফা! এই ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারছিনা,মা ভালো বলতে পারে।

সবাই খাওয়াদাওয়া শেষ করে আড্ডা দিচ্ছে।প্রাপ্তির মা নিজের মেয়ের সব কিছু দেখে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আমি তোকে বলেছিলাম না! ফারহানের কাছে এসে তুই সব ভুলে যাবি।আজ আমি তোর চলা ফেরা দেখে অনেক খুশি হয়েছি।এই বাড়ীর সবাই তোকে কতো ভালোবাসে।আসার পর থেকেই দেখছি ছেলেটা তোকে কতো খেয়াল রাখে।এমন কিছু ওর সাথে করিসনা যাতে ওর ফ্যামিলির কাছে ওকে ছোটো হতে হয়।প্রাপ্তিকে ড্রইংরুমে না দেখে
ফারহান রুমে গিয়ে ঢুকতে যাবে দেখে প্রাপ্তির মা প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে কথা গুলো বুজাচ্ছে।
সরি ভুল সময়ে আসার জন্য। আপনারা কথা বলুন আমি পরে আসছি।

প্রাপ্তির মা- ফারহান! যাওয়ার দরকার নেই তুমিও এইখানে বসো।আসলে সবার সামনে তো সব কিছু বলা যায়না তাই রুমেই বসলাম।তবে তোমার কাছে আমার একটাই কথা, তুমি তো জানো ও একটু রাগী কখন কি বলে ঠিক থাকেনা।তুমি একটু বুজিয়ে নিও।আমি জানি তোমাকে এইসব কিছু বলতে হবে না তারপরও মায়ের মনতো।

ফারহান-মা!আপনি কোনো চিন্তা করবেন না।আমি আছিতো।
ফারহানের মুখে মা ডাক শুনে প্রাপ্তি অবাক হয়ে ভাবছে আমি ওর মাকে মা বলে ডাকতে পারিনি আর ও কতো সহজে কথাটা বলে পেললো।
প্রাপ্তির মা ও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ফারহানের দিকে।

ফারহান- মা! প্রাপ্তি কথাটা শুনে অবাক হয়েছে মানা যায়।কিন্তু আপনি অবাক হবেন আমি আশা করিনি।আন্টি বললে তো আর ছেলের মতো ভালোবাসবেন না।তাই সেই সুযোগ আমি হাত ছাড়া করতে রাজিনা।

ফারহানের কথা শেষ হতেই মেজো মা এসে কি ব্যাপার ফারহান শাশুড়ি মায়ের সাথে ভাব করা হচ্ছে? আর আমরা কেউনা?

ফারহান -মেজো মা আপনি ভুল বুজচ্ছেন।আপনার সাবাই আমার চোখে সমান।

মেজো মা- হুম বুজলাম।কিন্তু আমাদের তো এখন যেতে হবে।তোমার মায়ের সাথে কথা হয়েছে প্রাপ্তিকে নাকি আজ দিবেনা।

ফারহান-মা যখন বলছে এখানে আমার কোনো কথা নেই।(প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে)আজ না গেলে হয়না। তুমি যদি বলো আমি না হয় মাকে বলে রাজী করাবো।
প্রাপ্তি -(ভাবছে সবাই এমনিতেই আমার জন্য ওকে অনেক কথাই বলে। একটা রাতের তো ব্যাপার।)বলা লাগবেনা। কথাটা বলেই নিচের দিকে তাকিয়ে আছে প্রাপ্তি।

মেজো মা-তাহলে সব সমস্যা মিটে গেছে।ভাবী এইবার তাহলে উঠো আমাদের আবার দেরী হয়ে যাবে।

প্রাপ্তি -মেজো মা নাজিফা আজ থাকুক কাল আমাদের সাথে যেতে পারবে।

মেজো মা-আচ্ছা থাকুক।ওর দিকে খেয়াল রাখিস।

প্রাপ্তিদের সবাই চলে গেছে তাই প্রাপ্তির মন খারাপ হয়ে আছে। নাজিফা সুমির সাথে আড্ডা দিচ্ছে।বড় ভাবী,মেজো ভাবী সবাই কাজে ব্যস্ত।
প্রাপ্তি সবাইকে বিদায় দিয়ে রুমে এসে দেখে সব কিছু আগোছালো ভাবে পড়ে আছে।প্রাপ্তি ফ্রেশ হয়ে এসে সব কিছু গুছিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
ফারহান রুমে এসে দেখে সব কিছু গোছানো। প্রাপ্তিকে রুমে না দেখতে পেয়ে বারান্দায় গিয়ে দেখে চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রাপ্তি কিছু ভাবছে।
ইচ্ছে করছে পিছনদিক থেকে জড়িয়ে ধরে বলতে প্রাপ্তি আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আর যেই মেয়েটার কথা তুমি ভাবছো সেই মেয়েটা তুমিই।নিজের ভাবনার জগত থেকে ফিরে এসে ফারহান বললো এই সন্ধ্যাবেলা এইখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
প্রাপ্তি কথাটা শুনে চমকে গিয়ে তুমি কখন এলে?
ফারহান- একটু আগেই।

প্রাপ্তি – ওও,,আচ্ছা কাল কি আমরা যাচ্ছি,আমাদের বাসায়?

ফারহান -দেখি মা কি বলে।আর না হলে আমি বুজিয়ে বলে তোমাকে নিয়ে যাবো।একটা কথা বলি?ওই বাড়ীতে গেলে সবার মাঝে আমাকে ভুলেই যাবে না তো?

প্রাপ্তি-তোমাকে কি আমার মনের রাখার কথা আছে নাকি?
কথাটা শুনেই ফারহানের মনে খারাপ হয়ে গেলো।
এই নাও তোমার ফোন তোমার আম্মু যাবার সময় দিয়ে গেছে।
প্রাপ্তি ফোন হাতে নিয়েই এসএমএস,কল লিস্ট চেক করতে লাগলো। ফারহান চুপচাপ অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে কারো এসএমএস খুঁজতেছো?

প্রাপ্তি- হুম,আয়ানের! প্রাপ্তি নিজের মুখ ফসকে কথাটা বলে ফারহানের দিকে তাকিয়ে দেখে ফারহান চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।
এই ভাবে তাকিয়ে আছো কেন?

ফারহান-তোমার শর্তগুলো মেনে নিয়েছি ঠিকি শর্তের কথাও এইটা ছিলো না আয়ান নাম টা আমার সামনে উচ্চারণ করবে।কথাটা বলেই ফারহান বারান্দা থেকে রুমে এসে খাটের এক কোণায় হেলান দিয়ে শুয়ে আছে।
প্রাপ্তি ফারহানের পিছন পিছন এসে ফারহান আমি তোমায় হট করার জন্য কথাটা বলতে চাইনি।এইটা নিয়ে কিন্তু রাগ করতে পারোনা।তুমি তো সব কিছু,,,,,কথাটা বলতে বলতে ফারহানের কাছে এগিয়ে আসতেই হোচট খেয়ে ফারহানের গায়ের উপর পড়ে গেলো।

এমন সময় লিজা আর মেজো ভাবী দরজা দিয়ে ঢুকেই প্রাপ্তি আর ফারহানকে দেখেই সরি সরি ভুল সময় আসার জন্য।

ফারহান মনে মনে ভাবছে এরা আসার আর সময় পেলো না? এখনি আসতে হলো?

প্রাপ্তি তাড়াতাড়ি উঠে, না না ভুল সময় আসবেন কেন?আসলে আমি কথা বলতে বলতে খেয়াল করিনি পড়ে গেছিলাম।

ফারহান কিছু বলছেনা নিছের দিকে তাকিয়ে ফোন টিপতেছে আর মুচকি মুচকি হাঁসছে।মনে মনে বলছে এইবার বুজো ঠেলা কাকে বলে।

লিজা- আমাদেরকে বুজাচ্ছো? কোনো লাভ নেই।আমরা এইসব বুজি।ভাবলাম তোমার সাথে তো তেমন ভালো করে কথা হয়নি তাই আড্ডা দিতে চলে আসলাম। কিন্তু এসে তো তোমাদেরকে ডিস্টার্ব করলাম।

প্রাপ্তি বুজে গেছে এদেরকে বুজিয়ে লাভ হবেনা।আর ফারহান আমাকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে এখন মজা নিতেছে।তোমাকে পরে দেখাচ্ছি আগে এদেরকে সামলাই।

প্রাপ্তি- ভাবী আপনারা বসেন। আপনারা বসেই কথা বলেননা।
সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছে।কিন্তু ফারহান কোনোই কথা বলছেনা।

মেজো ভাবী- কি হলো ফারহান আমরা অসময় আসলাম বলে তুমি রাগ করেছো?কোনো কথাই বলছোনা।

ফারহান -আরে না তোমরা কথা বল আমি বাহিরে থেকে আসছি।

লিজা -(অট্র হাঁসি দিয়ে)আমরা না আসলে ঠিকি বাহিরে যেতে না।

ফারহান কারো কথায় কান না দিয়ে বাহিরে চলে গেলো।

ফারহান বাহিরে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।কিন্তু মন পড়ে আছে প্রাপ্তির কাছে।ফারহান ভাবতেছে আজ প্রাপ্তি ফোন না দিয়ে বলা পর্যন্ত বাসায় যাবোনা।

সবাই রাতে খেতে বসেছে।ফারহানকে না দেখতে পেয়ে ফারহানের বাবা বললো প্রাপ্তি! ফারহান কোথায়? ও খাবেনা?

প্রাপ্তি -আব্বু ও তো বাহিরে গেছে।

ফারহানের বাবা – ওকে ফোন দাও তাড়াতাড়ি বাসায় আসার জন্য।ও এখনো কি আগের দিনে পড়ে আছে নাকি।এখন ঘরে বউ এসেছে এতো রাতে বাহিরে কি করে?

প্রাপ্তি কোনো উপায় না পেয়ে ফারহানকে ফোন দিলো।
ফারহান প্রাপ্তির নাম্বার দেখেই তাড়াহুড়া করে ফোন রিসিভ করলো।

প্রাপ্তি -ফোন হাতে নিয়ে বসে আছো নাকি?

ফারহান- মনে করো তাই।বউয়ের ফোনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।

প্রাপ্তি- পালতু কথা বাদ দিয়ে বাসায় আসো।
ফারহান -এই কথা তুমি বলছো? আমি এখনি আসছি।
প্রাপ্তি আর কিছু না বলে ফোন রেখে দিলো।
একটু পরে ফারহান ও বাসায় এসে সবার সাথে বসে খেয়ে নিলো।

বাবার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ফারহান রুমে এসে দেখে প্রাপ্তি শুয়ে আছে।
প্রাপ্তি ঘুমিয়ে গেলে?

প্রাপ্তি- (উঠে বসতে বসতে)না। কিছু বলবে?

ফারহান- না।ভাবলাম ঘুমিয়ে পড়ছো।আচ্ছা সরো আমি ঘুমাবো?

প্রাপ্তি কিছু না বলে সরে গিয়ে ফারহান কে শুতে দিলো। প্রাপ্তি উঠে গিয়ে লাইট অফ করে এসে শুয়ে পড়লো।
সারাদিনের ক্লান্তিতে কখন ঘুমি পড়লো টেরি পায়নি।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ১৯

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ১৯

#Rabeya Sultana Nipa

 

__সকাল বেলা প্রাপ্তির ঘুম ভাঙতেই দেখে ফারহানের একটা হাত তার শরীরের উপর।
ফারহানের দিকে তাকিয়ে দেখে সে ঘুমাচ্ছে।
প্রাপ্তি আস্তে করে হাতটা সরিয়ে উঠে বসলো।ফারহান কে বুজতে দেওয়া যাবেনা, না হলে আমি নিজেই লজ্জা পেয়ে যাবো।হয়তো ও ইচ্ছে করে রাখেনি।ঘড়ীর দিকে তাকিয়ে দেখে ৮.০০ বেজে গেছে।কেউ আমাকে একবারো ডাকলোনা।সবাই কি মনে করবে আল্লাই ভালো জানে।কথাটা ভাবতে ভাবতে প্রাপ্তি তাড়াতাড়ি করে ওয়াসরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।

__সকাল বেলা উঠে নাস্তা করার জন্য ডাইনিং টেবিলে এসে বসেছে প্রাপ্তির বাবা আর মেজো কাকা।আজ টেবিলে প্রাপ্তির আর নীরার সেই বকবকানি আর নেই।বাড়ীটা যেন আজ ঠাণ্ডা হয়ে আছে।বাড়ীর চারদিকে শূন্যতায় খাঁ খাঁ করছে।

প্রাপ্তির মেজো কাকী নাস্তা দিয়ে গেছে। প্রাপ্তির মা চা নিয়ে এসেছে সবার জন্য।

মেজো কাকা- ভাবী! ইমরান এখনো ঘুম থেকে উঠেনি?

প্রাপ্তির মা-ওকে এতো সকাল কখনো উঠতে দেখেছেন? যতোক্ষণ পর্যন্ত ডাকাডাকি না করি।

প্রাপ্তির বাবা-ওকে ডেকে তুলো।একটু পর ফারহানদের বাসায় যেতে হবে। সবাই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিবে।তোমরা মেয়েরা তো সাজতে সাজতে দুই দিন লাগিয়ে পেলো।

প্রাপ্তির মা- আচ্ছা ঠিক আছে,

মেজো কাকা-ভাইয়া প্রাপ্তিকে আজ আসার সময় আমাদের সাথে নিয়ে আসবো।কি বলিস?

প্রাপ্তির মা -না! আজ আনার দরকার নেই।
প্রাপ্তির মায়ের কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়েছে।

প্রাপ্তির বাবা-তুমি মা হয়ে এই কথা বলছো?

প্রাপ্তির মা কিছু বলছেনা মনে মনে ভাবছে,আমারও কষ্ট হয় কিন্তু কি করবো বলো।তোমার মেয়ে এই বাড়ীতে আসলে তোমাদের সবাইকে নিয়েই থাকবে।আর ফারহানকে আরো দূরে ঠেলে দিবে।এর ছেয়ে ভালো ওই বাড়ীতে আরো ২ দিন থাকলে ফারহানও আরো কাছে আসার সুযোগ পাবে।

প্রাপ্তির বাবা-কি হলো কিছু বলছোনা কেন?

প্রাপ্তির মা-(কথা ঘুরিয়ে নিয়ে)আসলে ওই বাড়ীতে সবার সাথে মিশতে হবে না?একদিনে তো আর সবার সাথে মিশা যায়না।তাই বললাম আরকি।ওর শাশুড়ি কেও ফোন দিয়ে জানলাম তার আজ প্রাপ্তিকে দিবেনা।

মেজো কাকা-তাই বলো।আমি তো কথাটা শুনে অবাক হয়ে গেলাম।আচ্ছা ওনারা যা ভালো মনে করেন।

এইদিকে ফারহান এখনো ঘুম থেকে উঠিনি।প্রাপ্তি গোসল করে এসে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঝাড়তেই চুলের পানি এসে ফারহানের মুখে ছিটকে পড়লো।
ফারহান চোখ খুলে তাকাতেই দেখে প্রাপ্তি চুলের পানি মুছতেছে।
ফারহান কিছু না বলে তাকিয়ে আছে প্রাপ্তির দিকে।
প্রাপ্তি ফারহানের দিকে চোখ পড়তেই দেখে ফারহান তাকিয়ে আছে ওর দিকে।

প্রাপ্তি-কি ব্যাপার ওই ভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
ফারহান -দেখছি! আমার বউটাকে।আর ভাবছি।
বউ শব্দটা শুনে প্রাপ্তি অট্র হাঁসি দিয়ে বললো
প্রাপ্তি- হুম বউ! তবে তোমার বউ এইটা কখনো ভাবিনি। যাইহোক ভাবছোটা কি?

ফারহান- ভাবছি তুমি আমার এমন বউ যাকে ছোঁয়া যায়না। শুধু দূর থেকেই দেখা যায় আর,,,,,,

প্রাপ্তি-থেমে গেলে কেন?আর এর পর কি?

ফারহান -কিছু না।,,,

এমন সময় দরজা ধাক্কানো শব্দ শুনে
ফারহান এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দেখে বড় ভাবী, মেজো ভাবী, আর তার কাজিনদের ওয়াইফ।

ফারহান- ব্যাপার কি সব একি বারে এক সাথে দল বেধে এসেছো?

মেজো ভাবী -আমরা না আসলে তো আজ দরজাই খুলতেনা।ভাই! এক রাতেই যদি সব ভালোবাসা দিয়ে ফেলো বাকী দিন এখনো পড়ে আছে।এখন দরজার সামনে থেকে সরো রুমের ভিতরে ঢুকতে দাও।

প্রাপ্তি তাদের দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো
বড় ভাবী -তোকে দাঁড়াতে হবেনা বস।সুমিটা কই গেছে।প্রাপ্তিকে সাজিয়ে দিলেই তো হয়।দুপুরের আগে সব গেস্ট এসে যাবে।তখন আবার সাজাতে সাজাতে দেরি হয়ে যাবে।

ফারহানের কাজিনের ওয়াইফ লিজা বললো ভাবী থামোতো পরে সাজাতে পারবে।আগে প্রাপ্তির সাথে গল্প করবো।

কথাটা শুনেই প্রাপ্তি ফারহানের দিকে তাকালো।এরা কি গল্প করতে এসেছে প্রাপ্তির ভালো করেই জানা আছে।

ফারহান প্রাপ্তির তাকানো দেখে নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাঁসছে।

মেজো ভাবী -প্রাপ্তি তুই কাল রাতে ফারহানকে ভালোভাবে দেখিস নাই? ওই ভাবে ওর দিকে বার বার না তাকিয়ে আমাদের দিকে তাকা।

(কথাটা শুনেই প্রাপ্তি লজ্জা পেয়ে নিছের দিকে তাকিয়ে আছে।)
আগে এইটা বল কাল রাতে ফারহান তোকে কি gift করেছে?

প্রাপ্তি কথাটা শুনেই মেজো ভাবীর দিকে তাকিয়ে ভাবছে,ফারহান তো আমায় কিছুই gift করেনি।আর করবেই বা কেন? ফারহান তো সেই অধিকার আমি নিজেই দিইনি।

লিজা- কি হলো প্রাপ্তি চুপ করে আছো কেন?

ফারহান প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে ভাবছে কাল রাতে আমি ঠিকি তোমার জন্য gift এনেছি।
সকাল বেলা এই মুখটা দেখার জন্যই কাল রাতে দিইনি। আমি জানতাম এরা তোমায় আগে এই কথাই জিজ্ঞাস করবে।আগে দেখি কি আনসার দাও।তারপর না হয় আমি আনসার দিবো।

মেজো ভাবী -প্রাপ্তি মনে হয় আমাদের বলতে চায় না।তাই চুপ করে আছে।
কথাটা শুনে প্রাপ্তির আরো মন খারাপ হয়ে গেলো।

প্রাপ্তির মন খারাপ দেখে ফারহানের খারাপ লেগে উঠলো।আমি এখন কিছু না বললে প্রাপ্তি সবার কাছে ছোটো হয়ে যাবে। আর সহ্য করতে না পেরে ফারহান বললো।
প্রাপ্তি! কাল রাতে যে তোমাকে গহনার সেট টা দিয়েছিলাম তুমি তো ওইটা ড্রয়ারেই রেখে দিয়েছো।ওইটা তোমার মনে নেই?কাল রাতে গহনা পরে ঘুমাবে না বলেই ওইটা রেখে দিয়েছো আর সকালেই ভুলে গেলে।ওইটা নিয়ে এসো ভাবীদের দেখাও। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

কথাটা শুনেই প্রাপ্তি অবাক হয়ে ফারহানের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।এইটা মানুষ নাকি অন্য কিছু? কাল রাতে আমাকে বলে মেয়েদের মন বুজা বড় মুশকিল। এইতো দেখছি মেয়েদের থেকেও খারপ।কখন কি করে কিছু বুজতেছি না।

মেজো ভাবী -প্রাপ্তি এতো ভুলা মন হলে চলবে।সব কিছু নিজেকেই সামলাতে হবে।আচ্ছা gift পরে দেখবো। এখন হাতে এতো সময় নেই।এইবার বাকী গুলা বলো।

প্রাপ্তি -কি বলবো?

লিজা-মেজো ভাবী আমার একটা কথা মাথায় ঢুকছেনা যেই ফারহান মেয়েদের সাথে তেমন কথা বলতো না সেই ফারহান শুনলাম প্রাপ্তিকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছে।

কথাটা শুনে প্রাপ্তি মনে মনে বলছে মেয়েদের সাথে কথা না বললে অন্য মেয়েকে ভালোবাসে কিভাবে? সবার সামনে এমন ভাবে চলে মনে হয় ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে জানেনা।

মেজো ভাবী -লিজা এইগুলো রাতে শুনবো এখন প্রাপ্তির গল্প শুনবো।মামনি একটু পরে আবার ডাকাডাকি শুরু করলে শুনা হবে না।প্রাপ্তি শুরু কর।

প্রাপ্তি -ভাবী আমি কিছু বলতে পারবোনা আপনি ফারহান আসুক তার মুখ থেকে আমার থেকে ভালো শুনতে পাবেন।

বড় ভাবী -লামিয়া! ও ঠিকি বলেছে।পরে ফারহানের কাছ থেকে শুনিস।এখন চল প্রাপ্তির বাবার বাড়ীর লোক এসে যাবে।নাস্তা রেডি করতে হবেতো।তোরা আয় আমি সুমিকে পাঠিয়ে দিচ্ছি ওকে সাজাতে।

সবাই চলে যাওয়ার পর প্রাপ্তি সুস্থির নিশ্বাস পেলে বসলো। কিছুক্ষনের জন্য মনে হলো তার উপর বড়সড় একটা ঝড় বয়ে গেছে।
ফারহান ওয়াসরুম থেকে গোসল করে তোয়ালে দিয়ে চুল গুলো মুছতে মুছতে বললো সবাই চলে গেছে দেখছি? কি বলে এদেরকে তাড়িয়েছো?
প্রাপ্তি ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে।প্রাপ্তি ফারহান কে কখনোই আগে এই ভাবে দেখিনি।সারাজীবন শুনেছি মেয়েরা গোসল করে আসলে অনেক সুন্দর দেখায়। ও তো মেয়েনা ওকে কেন এতো ভালোলাগছে।ধুত আমি এইসব কি উল্টাপাল্টা ভাবছি।ওকে যেমন ইচ্ছা তেমন লাগুক আমার কি যায় আসে।
ফারহান-ওই ভাবে তাকিয়ে আছো কেন? প্রেমে পড়লে নাকি?

প্রাপ্তি-আমার খেয়েদেয়ে আর কাজ নাই।ওদেরকে বলেছি কাল রাতে তুমি আমায় এতো এতো ভালোবাসা দিয়েছো আমার মুখ দিয়ে এই গুলো আসবে না।
কথাটা বলেই প্রাপ্তি অন্যদিকে নিজেই লজ্জা পেয়ে জ্বিবহা কামড় দিয়ে, প্রাপ্তি! মাঝে মাঝে কেন এতো আগ বাড়িয়ে কথা বলিস।

ফারহান-( বুজতে পেরে)এইযে ওই দিকে ফিরে কি বিড়বিড় করছো বলোতো?

প্রাপ্তি -কিছুনা ওদের কে বলেছি আমার থেকে তুমি ভালো বলতে পারবে।ওরা বলেছে তাহলে পরে তোমার কাছে থেকে সব শুনবে।

ফারহান- এএএএএ

প্রাপ্তি -এএএএ না হ্যাঁ।

ফারহান -এইটা কি করলে তুমি?ঠিক আছে আমি সামলিয়ে নিবো।আচ্ছা শুনো(গলার স্বর নামিয়ে) প্রাপ্তি! sorry! I am really sorry.

প্রাপ্তি -কেন?

ফারহান- রাতে তোমায় gift টা দিইনি বলে।আমি ছেয়েছিলাম ভাবীদের কাছে তুমি কি বলো আমি শুনতে ছেয়েছিলাম ।
ফারহান গিয়ে গহনার সেটটা নিয়ে এসে প্রাপ্তির হাতে দিলো। খুলে দেখো তোমার পছন্দ হয় কিনা।

প্রাপ্তি- আমি কিছু বুজলামনা।তুমি আমায় এতো কিছু কেন দিচ্ছো?এই গুলো আমার মন কখনোই খুশি হবেনা।আমার যা চাই তা তুমি কখনোই দিতে পারবেনা।।আমি এইগুলোর কিছুই চাইনি।
কথা গুলো বলতে বলতে প্রাপ্তির চোখ দিয়ে অঝরে পানি ঝরছে।

ফারহান কিছু বলতে যাবে সুমি এসে দরজা দাঁড়িয়ে ভাইয়া আসবো?

প্রাপ্তি অন্য দিকে ফিয়ে চোখ মুছচ্ছে। ফারহান একটু এগিয়ে এসে

ফারহান -কোনদিন থেকে এতো ফর্মালিটি মানছিস।

সুমি-আজ থেকেই।এখন তো আর যখনতখন তোমার রুমে আসা যাবে না তাই বললাম আরকি।

ফারহান- এতো কথা না বলে যে কাজে আসছিলি সে কাজ কর।আমি একটু আসছি।

প্রাপ্তি-ফারহান তুমিকি কোথাও যাচ্ছো?

ফারহান-না! মায়ের রুমে যাচ্ছি।কেন কিছু বলবে?

প্রাপ্তি-তেমন কিছুনা।আম্মুকে ফোন দিয়ে বইলো আসার সময় আমার ফোনটা নিয়ে আসতে।
ফারহান মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুজিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।মনে মনে ভাবছে প্রাপ্তি ফোন দিয়ে কি করবে? আবার আয়ানের সাথে কথা বলবে নাতো? এখন কিছু বললে মন খারাপ করতে পারে।সব কিছু মিটে যাক।পরে না হয় বুজিয়ে বলা যাবে।

চলবে,,,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ১৮

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ১৮

#Rabeya Sultana Nipa

 

সারাদিনের ক্লান্তিতে এখন আর কিছু ভালো লাগছেনা।কাকাই,নীরা সবাই চলে গেলো।কাল যখন সবাই আসবে তাদের খবর আছে।মনে করেছেটা কি আমাকে?

—কিরে কি ভাবছিস? কথাটা শুনেই চমকে উঠলো প্রাপ্তি।তাকিয়ে দেখে বড় ভাবী খাবার নিয়ে এসেছে।

বড় ভাবী -বললি নাতো কি ভাবছি? ফারহানের কথা ভাবছিস? তবে আর বেশীক্ষন ভাবতে হবে না।তোকে একটু পরেই রুমে দিয়ে আসবো।সকাল থেকেই তুই নাকি কিছু খাসনি।তোর মেজো মা ফোন দিয়ে বলেছে।এখন হা কর আমি খাইয়ে দিচ্ছি।

প্রাপ্তি রুমের কথা শুনেই ঘামতে শুরু করলো।বুকের ভেতর কেমন জানি মোচড় দিয়ে উঠলো।মনে হচ্ছে কেউ পিটিয়ে সব শেষ করে পেলছে।

বড় ভাবী-কিরে খাবিনা?এইভাবে চুপ হয়ে আছিস কেন?

প্রাপ্তি-আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।

বড় ভাবী -এই কথা ফারহান শুনলে ওই এসে তোকে খাওয়াবে। ঠিক আছে আমি তাহলে ফারহানকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

প্রাপ্তি-না না ওকে পাঠানোর দরকার নেই।আমি তোমার হাতেই খাবো।
কথাটা শুনে বড় ভাবী হেঁসে দিলেন।
প্রাপ্তির খেতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু কোনো উপায় নেই খেতে হবেই।

বড় ভাবী -(প্রাপ্তিকে খাওয়াতে খাওয়েতে)জানিস প্রাপ্তি এই বাড়ীতে আমি যখন এসেছি ফারহান সুমি ওরা তখন ছোটো ছিলো।মামনির (ফারহানের মা)ছেয়ে এরা বেশী আমার কাছেই থাকতো।ওরা আমায় খুব ভালোবাসে। এখন তুমিও এমন ভাবে চলবে যাতে সবাই তোমাকে ভালোবাসে।

(প্রাপ্তি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললেন।)তোমার সাথে তো লামিয়ার (ফারহানের মেজো ভাবী) তেমন কথা হয়নি।আসলে ও সবার সাথেই কথা কম বলে।যদি একবার শুরু করে তাহলে আর সহজে থামেনা।এই বাড়ীতে থাকতে থাকতে সব কিছু শিখে যাবে।
সুমি এসে বড় ভাবীকে বললো
আম্মু বলেছে অনেক রাত হয়েছে ছোটো ভাবীকে তার রুমে দিয়ে আসতে।কিন্তু ছোটো ভাইয়া কোথায় গেলো ওকে তো দেখছিনা।

বড় ভাবী -আচ্ছা এখনি দিয়ে আসছি
দেরি হলে মামনি রাগ করবে।
সুমি! মামনি কি করছে? বিকেলে একবার বলছে শরীর ভালো লাগছে না।আচ্ছা চল,প্রাপ্তিকে আগে ফারহানের রুমে দিয়ে আসি।তারপর মামনির রুমে যাবো।সুমি লামিয়াকেও ডাক।

সুমি-তোমরা আসো যাবার সময় ডেকে নিবো।

প্রাপ্তিকে নিয়ে সবাই ফারহানের রুমে গেলো।প্রাপ্তি রুমের অবস্থা দেখে চোখ কপালে উঠে গেলো।এতো সুন্দর করে তাদের বাসরঘরটা সাজানো হয়েছে।অবশ্য সব কিছু ফারহানের বন্ধুরাই সাজিয়েছে।

বড় ভাবী -কিরে তোর পছন্দ হয়েছে?

প্রাপ্তি কিছু না বলে চুপ করে আছে।প্রাপ্তি মনে মনে ভাবছে কেউ না জানুক ফারহান তো জানে ওর সাথে আমার শর্ত দিয়েই বিয়ে হয়েছিলো তাহলে কেন আবার এসব করতে গেলো?

সুমি-বুজেছি লজ্জা পাইছে।আচ্ছা আমি এখান থেকে যাই, আমার এইখানে কোনো কাজ নেই।
মেজো ভাবী- বড় ভাবী আমিও যাই।আমাদের দেখে ফারহান লজ্জা পেয়ে রুমেও আসবে না।

বড় ভাবী -প্রাপ্তি তাহলে তুমি থাকো।ফারহানও চলে আসবে।আমরা তাহলে যাই।

মেজো ভাবী -রাতের গল্পটা কাল ভালো ভাবে যেন শুনতে পাই এই বলে দিলাম।

কথাটা শুনে প্রাপ্তি লামিয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে(মনে মনে ভাবছে, কথা বলতে পারেনা এইগুলা ঠিকি শুনতে ইচ্ছা করে,আর এমন কিছু হবেও না যা তোমাদের বলবো।)নিশ্চয় গল্পটা বলবো।
বড় ভাবী -এইবার তাহলে চল।

সবাই প্রাপ্তিকে রুমে রেখে চলে আসলো।
সবাই যাওয়ার পর প্রাপ্তি দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ছেড়ে পা দুটো ঝুলিয়ে খাটের উপর বসলো।রুমের চারদিকে তাকিয়ে ভাবছে রুমটা সত্যি অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে।তবে ভুল জাগায় ভুল মানুষের জন্য সাজিয়েছে।এইরুম টা আজ ফারহানের সেই ভালোবাসার মানুষের জন্য সাজানোর কথা ছিলো।কিন্তু আমি ভুল মানুষ হয়েই তার জীবনে ঢুকে পড়লাম।আচ্ছা আমি তো ইচ্ছে করে তার জীবনে আসিনি।ও তো পারতো বিয়েটা না করতে।হয়তো ছেলেরা এই রকমই।যেমন আয়ান,একটা বার ফোন করে বললো না প্রাপ্তি তুমি আমার কাছে চলে আসো। আমরা দুজনে একসাথেই থাকবো।বরং ফোনটাই অফ করে রেখেছে।ওহঃ মাথায় কেন যে এইসব চিন্তা আসে বুজিনা।প্রাপ্তি ঘড়ীর দিকে তাকিয়ে দেখে ১.০০ টা বাজে।ফারহানতো এখনো আসে নাই।যাইহোক তাড়াতাড়ি সকাল হলেই বাঁচি।

ফারহান ছাদ থেকে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে নিজের রুমে যেতেই মেজো ভাবী সাথে ফারহানের ধাক্কা লেগে যায়।

মেজো ভাবী -কি ব্যাপার ফাহান তুমি এখনো রুমে যাওনি।কোথায় ছিলে এতোক্ষন?প্রাপ্তি রুমে সে কখন থেকে একা একা বসে আছে।

ফারহান-ছাদে ছিলাম।তুমি এতো রাতে কোথায় যাচ্ছো?

মেজো ভাবী -পানি নিতে আসছিলাম।আচ্ছা তাড়াতাড়ি রুমে যাও প্রাপ্তি একা বসে আছে।আর কাল আমি রাতের গল্পটা ভালোভাবে শুনবো বলে দিলাম।

ফারহান আর কাথা না বাড়িয়ে হাঁসি দিয়ে রুমে দিকে গেলো।
লাইট এখনো অন তার মানে প্রাপ্তি এখনো ঘুমায়নি।

ফারহান কে রুমে ঢুকে দরজা আটকাতে দেখ প্রাপ্তি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।

ফারহান- কি ব্যাপার? এতো তাড়াহুড়ো করে দাঁড়ানোর কি আছে?

প্রাপ্তি -তুমি দরজা আটকালে কেন?
তোমার শর্তের কথা ভুলে গেলে চলবে না।

ফারহান -আমি এই কারনেই রুমে আসতে চাইনি ।দরজা না আটকালে সবাই কি ভাববে বলো?

প্রাপ্তি-আচ্ছা রুমটা এতো সুন্দর করে সাজালে কেন? সাজিয়েছো ঠিকি তবে ভুল মানুষের জন্য।

ফারহান- আমি ঠিক মানুষের জন্যই সাজিয়েছি।এই ভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে বসতে পারো।

প্রাপ্তি-এখন তো আমাদের বিয়েটা হয়ে গেছে এখন আমার কাছে তুমি সব সত্যি বলতে পারো।

ফারহান-কিসের সত্যি?

প্রাপ্তি-তুমি যাকে ভালোবাসো তাকে বিয়ে না করে আমাকে কেন করলে?

প্রাপ্তির কথাটা শুনে ফারহান না হেঁসে থাকতে পারলোনা।

প্রাপ্তি-আমার কথা শুনে তোমার হাঁসি পাচ্ছে?
ফারহান-এইসব কথা বাদ দাও।তুমি ঘুমাবেনা?শাড়ী আর ভারী গহনা পরে তো ঘুমাতে পারবে না।আমার আলমারিতে কিছু ড্রেস আর শাড়ী আছে।যেইটা পছন্দ হয় পরতে পারো।

প্রাপ্তি-তোমার আলমারিতে মেয়েদের জামাকাপড় কেন? ও বুজেছি যাকে ভালোবাসো তার জন্য নিয়েছো।কিন্তু আমি তো অন্য কারো ড্রেস পরবোনা।

ফারহান- অন্য মেয়ের জন্য কিনতে যাবো কেন? এই গুলো সব তোমার জন্যই।বিয়ের শপিং করতে গিয়ে এইগুলো পছন্দ হলো তাই নিয়ে আসলাম।

প্রাপ্তি আলমারি খুলে ড্রেস গুলো দেখে সব ওর মাপের এবং পছন্দের। তাই ফারহানের কথা বিশ্বাস করে একটা শাড়ী নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো।
ফারহান তাকে ওয়াসরুমে যেতে দেখে কিছু না বলেই ফোনটা হাতে নিয়ে খাঁটের উপর হেলান দিয়ে বসে পড়লো।এইটা বাসরঘর নাকি হিটলারের ঘর আল্লাহ ভালো।সবার বাসরঘরে মধুর কিছু স্মৃতি জড়িয়ে থাকে।আর আমার কপালে হিটলারের জাড়ি খাওয়া ছাড়া আর কিছুই নাই।সব দোষ আমার কপালের।জেনে বুজেই তো বিয়ে করলাম।ফারহান তোর কপালে বাসরঘরে প্রাপ্তির ভালোবাসা নেই।আছে শুধু রাগ আর অভিমান। ফারহান নিজে নিজেই কথা গুলো বিড়বিড় করে বলছে আর ফোনে গেমস খেলতেছে।

প্রাপ্তি ফ্রেশ হয়ে এসে

প্রাপ্তি- আমি কোথায় ঘুমাবো?

প্রাপ্তির কথা শুনে ফারহান তাকিয়ে আছে।যতো দেখছি ততো ভালোবেসে ফেলছি।ওর দিকে তাকালে আর চোখ ফিরাতে ইচ্ছে করে না।শাড়ীটা ওকে মানিয়েছে ভালো।

প্রাপ্তি-তুমি এইভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আমি কোথায় ঘুমাবো সেটা তো বলবে।

ফারহান-কেন খাঁটে।

প্রাপ্তি-তোমার সাথে? মাথা খারাপ।তুমি শর্ত ভুলে গেলে চলবে না।

ফারহান-তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে পারো।আচ্ছা ঠিক আছে আমি নিছে ঘুমাচ্ছি তুমি খাঁটেই ঘুমাও।

কথাটা বলে ফারহান উঠে গেলো নিছে ঘুমাবে বলে।প্রাপ্তি ও কোনো বাধা দেয়নি।

ফারহান একটা বালিশ নিয়ে শুয়েছে দেখে
প্রাপ্তি ভাবছে তুমি নিজের বিপদ নিজেই টেনে এনেছো।এখন বুজো ঠেলা।কিন্তু এই ঠান্ডায় ঘুমাবে কি করে।যতোই হক আমি কাজটা ঠিক করিনি।কথাটা ভাবতেই প্রাপ্তি শোয়া থেকে উঠে বসলো। আচ্ছা ওকে কি ডাকে বলবো খাঁটে শুতে।আচ্ছা একবার বলে দেখি।ও তো বলেছে ওকে বিশ্বাস করতে।

প্রাপ্ত-ফারহান! ফারহান! তুমি কি ঘুমিয়ে গেছো?

ফারহান-(ঘুম চোখে নিয়ে)হুম বলো।তুমি এখনো ঘুমাওনি?

প্রাপ্তি-আমার ঘুম আসছে না।তুমি খাঁটে এসে ঘুমাও।

ফারহান- সমস্যা নেই তুমি ঘুমাও।সকালে অনেক কাজ আছে।(মনে মনে ভাবছে ব্যাপার টা বুজলাম না।কি আবার হলো এর মাঝে)

প্রাপ্তি -তুমি উপরে আসবে নাকি আমিও নিছে নামবো?

ফারহান- আচ্ছা ঠিক আছে নামতে হবে না।তোমাদের মেয়েদের মন বুজায় বড় মুশকিল। কখন কি করো তার ঠিক নেই।

প্রাপ্তি-হুম ওই পাশে ঘুমাও।আমার কাছে আসার একদম চেষ্টা করবানা বলে দিলাম।

ফারহান-ঠিক আছে।এইবার তো ঘুমাতে পারি তাইনা।তোমাকে তো একটা কথা বলতে ভুলেই গেছি।

প্রাপ্তি -কি?

ফারহান-সকাল বেলা মেজো ভাবী এসে জিজ্ঞাস করবে রাতের গল্পটা।প্লিজ এমন কিছু বলোনা যাতে আমাদের কেউ সন্দেহ করে।

প্রাপ্তি- তোমার কি আশা আমি ভাবীদের কাছে বলবো তুমি আমায় কিভাবে ভালোবাসছো কিভাবে জড়িয়ে ধরছো এইসব।

ফারহান- প্রয়োজনে বানিয়ে বানিয়ে তাই বলবা।সত্যি বলার পথ তুমি নিজেই বন্ধ করে দিয়েছো।এখন মিথ্যা বলা ছাড়া তোমার কাছে কোনো উপায় নেই।

কথাটা বলেই ফারহান অন্য দিকে ফিরে শুয়ে পড়লো।
প্রাপ্তি বসেই আছে।আমাকে মিথ্যা বলতেই হবে। ফারহান আমার জন্য অনেক কিছুই করছে না হয় আমি এইটুকুই করলাম।

চলবে,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ১৭

0

#অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ১৭

#Rabeya Sultana Nipa

 

__আপু! আপু! নাজিফা ডাকে প্রাপ্তির ঘুম ভাঙলো।প্রাপ্তি আড়মোড় ভাঙতে ভাঙতে এতো সকাল সকাল ডাকছিস কেন?

নাজিফা -সকাল সকাল মানে?৭.০০ টা বাজে।আর আজ না তোর বিয়ে।

প্রাপ্তি -বিয়ে হলে কি হইছে।কোন হাদিসে লিখা আছে বিয়ে হলে ঘুমাতে পারেনা।কোথায় লিখা আছে তুই ওইটা খুঁজে নিয়ে আয় এর ফাঁকে আমি আরেকটু ঘুমিয়েনি।

নাজিফা -আপ ধুরঃ ফাজলামি করিসনা। উঠ! বড় মা আর আব্বু তোকে ডাকতে বললো।

প্রাপ্তি -আর শান্তিতেও একটু ঘুমাতে দিবিনা!

নাজিফা -এখন আর ঘুমাতে হবেনা।এক সাথে রাতে ফারহান ভাইয়াদের বাড়ীতে গিয়ে ঘুমাইছ।

মিলি প্রাপ্তির রুমে আসতে আসতে বললো
নাজিফা তুইযে বললি ফারহানদের বাড়ীতে গিয়ে ঘুমাতে। ওর কি আজ রাতে আর ঘুম হবে?

প্রাপ্তি- আসলেই কি দরকার ওই বাড়ীতে গিয়ে ঘুমানোর । ওদের বাড়ীর যতো বিড়াল কুকুর আছে সব গুলোকে রাতে বসে বসে আমি পাহারা দিবো।
বুজচ্ছি আর ঘুম হবে না।তোরা বস আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

প্রাপ্তির কথা শুনে মিলি আর নাজিফা দুজনেই অট্ট হাঁসিতে গড়িয়ে পড়ছে।

প্রাপ্তি ফ্রেশ হয়ে ড্রইংরুমে গিয়ে দেখে তাদের সব আত্মীয়স্বজন বসে আড্ডা দিচ্ছে।প্রাপ্তিকে দেখে সবাই ফারহান আর প্রাপ্তিকে নিয়ে নানা রকম হাঁসিঠাট্টা করছে।এইসব শুনতে প্রাপ্তির মোটেই ভালো লাগছেনা।এই প্যারা যে আর কতো দিন থাকবে একমাত্র আল্লাহই ভালো জানে।তুবুও মনের সাথে যুদ্ধ করে মুচকি হাঁসিটা দিতে হচ্ছে।
মেজো মা -প্রাপ্তি তুই এইখানে দাঁড়িয়ে আছিস।নাস্তাটাও তো করিসনি।এইদিকে আয় আমি খাইয়ে দিচ্ছি।

নীরা রান্নাঘর থেকে মৃদুলের জন্য কফি আনতে যাচ্ছে কিন্তু মায়ের কথাটা শুনে দাঁড়িয়ে বললো।আম্মু আমার বিয়ের দিন আমাকে খাওয়ানো তো দূরে কথা আমার সামনেই তুমি বেশী আসোনি।আর এখন বড় মেয়েকে খাইয়ে দেওয়া হচ্ছে।

মেজো মা-দেখেছিস এতো আজে বাজে চিন্তা মাথা নিয়ে ঘুরিস কিভাবে। যেই কাজে যাচ্ছিলি সেই কাজে যা।

নীরা -দাঁড়াও আমিও আসছি। আগে কফিটা দিয়ে আসি।সবাই কাল থেকে যেই ভাব করতেছো মনে হচ্ছে তোমাদের সবার একটাই মেয়ে।আর আমরা কেউ না।
নীরা কথা গুলো হিংসা করে নয় সবাইকে খেপানোর জন্যই বলতেছে।
প্রাপ্তির মা মেয়ের সামনে বেশী আসছেনা।মেয়ের দিকে তাকালেই তার অনেক কষ্ট হয়।এতো তাড়াতাড়ি বিয়েটা দেওয়া উচিত হয়নি।মেয়েটা কে আরো কিছু সময় দেওয়ার দরকার ছিলো।

বড় ফুফু-কি ব্যাপার ভাবী। কি নিয়ে এতো চিন্তা করছেন?
প্রাপ্তির মা -কিছু না আপা।মেয়েটা চলে যাবে তাই খারাপ লাগছে। এতো দিন প্রাপ্তি এই বাড়ী ছেড়ে কোথাও বেশী যেতোনা ও মামার বাড়ীতেও বেশী গিয়ে থাকতোনা।

প্রাপ্তিকে সাজাতে পার্লারে লোক এসে বসে আছে।কাকীরা সবাই মিলে প্রাপ্তিকে গোসল করিয়ে একটা শাড়ী পরিয়ে ড্রইংরুমে এনেছে। এইবাড়ী একটা নিয়ম, মেয়েকে সাজানোর আগে বড়দের সবাইকে সালাম দিয়ে তারপর সাজানো শুরু হয়।সবাইকে সালাম দেওয়া শেষ কিন্তু প্রাপ্তির বাবা আর মেজো কাকাই আসছেনা।বাবা বাহিরে চলে গেছে। আর মেজো কাকা নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে বসে আছে।
সবাইকে সালাম দিয়ে প্রাপ্তি মেজো কাকার দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সবাই অনেক বার বলার পরে দরজা খুলেছে।কিন্তু তাকে দেখেই বুজা যাচ্ছে অনেক কান্না করেছে।হয়তো পুরুষ বলে সবার সামনে কান্না করতে লজ্জা পাচ্ছে।কিন্তু মনকে তো আর মানা যায়না।তাই হয়তো দরজা বন্ধ করেই কান্না করছে।
প্রাপ্তি সালাম দিতে যাবে তখনি প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে আবারও চোখের পানি গুলো ঝরতেছে।প্রাপ্তি এতোক্ষন অনেক কষ্টে নিজের কান্না চাপিয়ে রেখেছে।কিন্তু আর না পেরে নিজেই কান্না করছে।
কেউ কিছু বলছেনা সবাই শুধু তাকিয়ে দেখছে।এই মুহূর্তে হয়তো কারো কিছু বলার ভাষা নেই।
প্রাপ্তির সেজো কাকা এতোক্ষন সবকিছু চুপ করে দেখ ছিলো।কিন্তু এইভাবে চলতে থাকলে আজ সারাদিন এরা কান্নাকাটি করতে করতে কাটিয়ে দিবে।
প্রাপ্তিকে মেজো কাকার কাছ থেকে হাত ধরে টেনে নিয়ে এসে নীরা ওকে নিয়ে যা।একটু পর বরযাত্রী চলে আসবে।আর এখনো তোরা কান্নাকাটি নিয়ে পড়ে আছিস।তাড়াতাড়ি ওকে তোরা সাজিয়ে রেডি কর।

নীরা প্রাপ্তিকে নিয়ে সাজাতে চলে গেলো।
সবাই আবার কাজে ব্যাস্তো হয়ে পড়লো।বরযাত্রী এসে গেছে। গেটের সব ঝামেলা শেষ করে ফারহানকে নিয়ে এসে ইমরান স্টেজে বসালো।ফারহান কোনো ঝামেলা চায়না।তাই সে সবার আবদার গুলো খুব সহজে মেনে নিচ্ছে।যেই যা বলছে শুধু হ্যাঁ করেই যাচ্ছে।তার মন পড়ে আছে প্রাপ্তির কাছে।।কখন প্রাপ্তিকে তার সামনে আনা হবে।কখন সে বউয়ের সাজে প্রাপ্তিকে দেখবে।এই দিনটা দেখার জন্য অনেক অপেক্ষা করতে হয়েছে।কিন্তু প্রাপ্তিকে আজও বুজাতে পারলামনা কতোটুকু ভালোবাসি তাকে।যাইহোক এখন তো আর হারানোর ভয় নেই।যেইভাবে হোক তার ভালোবাসা আমাকে পেতেই হবে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে মেজো কাকা এসে বললো কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করুন।

কাজী সাহেব-আগে মেয়ে কাছ থেকে সম্মতি নিয়ে আসতে হবে।আপনার ৫/৬ জন আগে গিয়ে কনের সম্মতি নিয়ে আসুন।

মেজো কাকা -ঠিক আছে।

প্রাপ্তিকে সাজিয়ে ড্রইরুমে বসিয়ে রেখে তার সাথে কথা বলছে সবাই,বিয়ে পড়ানো শেষ হলেই বাহিরে নেওয়া হবে স্টেজে।।মেজো কাকা,ফারহানের বাবা,আরো মুরুব্বী কয়েক জন এসে প্রাপ্তির পাশে বসলো।

এক জন মুরুব্বী বিয়ে পড়াতে যা যা বলা লাগে সব কিছু বলে তারপর প্রাপ্তিকে বললো)তুমি কি এই বিয়েতে রাজি?
প্রাপ্তি কোনো কথা বলছে না চুপ করে আছে।

প্রাপ্তির পাশে থাকা বড় ফুফু,মাজো মা,সেজো কাকী, নীরা,সবাই একি কথা বলছে, প্রাপ্তি বল!
প্রাপ্তির খুব কষ্ট হচ্ছে।কিন্তু এখন না বলারও কোনো উপায় নাই।
৩০ মিনিট পর প্রাপ্তি হ্যাঁ বললো। সবাই আলহামদুলিল্লাহ্‌ পড়ে মুরুব্বীরা বাহিরে চলে গেলো।
বিয়ে পড়ানো শেষ হতেই মনে হচ্ছে ফারহানের চিন্তার বোঝোটা কমলো।এই হিটালের বিশ্বাস ছিলো না বিয়ের দিনও বিয়ে করবোনা বলে পেলতো।যাক এখন আর কোনো চিন্তা নেই।
ফারহানের বড় ভাবী প্রাপ্তিকে এনে ফারহানের পাশে বসালো। ফারহান প্রাপ্তির দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।

নীরা -ভাইয়া হা বন্ধ করো না হলে মশা ঢুকে যাবে।মনে হচ্ছে প্রাপ্তিকে তুমি জীবনেও দেখো নাই।

ফারহান-নীরা! কিযে বলো? এই সাজে তো আর দেখিনি।কতো দিন অপেক্ষা করেছি।

নীরা -ঠিক আছে ভালো করে দেখো।

ফারহান প্রাপ্তির কানের কাছে গিয়ে বললো।বুড়ি এতো সুন্দর করে সেজেছো চোখ ফিরাতে তো পারছিনা।কি করি বলোতো?
প্রাপ্তি কিছু বলছেনা চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

বড় ভাবী -ফারহান! কথা যদি এখানেই শেষ করে পেলো রাতে কি বলবা?

ফারহান -ভাবী কথার শেষ আছে?
দেখেন না চুপ করে আছে।হয়তো প্রাপ্তি রাতে সব বলবে।তাই এখন আমি কিছু বলে রাখছি।যদি রাতে সুযোগ না পাই।
কথাটা শুনে প্রাপ্তি মনের অজান্তেই হেঁসে দিলো।

সব কিছু নিয়ম মেনে সব অনুষ্ঠান শেষ করে প্রাপ্তিকে বিদায় এর সময় হয়ে গেছে।
সবাই চুপচাপ হয়ে প্রাপ্তিকে বিদায় দিলো। মেজো কাকা আগেই সবাইকে মানা করেছে প্রাপ্তি যাওয়ার সময় কেউ যেন মন খারাপ বা কান্নাকাটি না করে।প্রাপ্তিও কোনো ঝামেলা করলো না।করেই লাভ কি যেতে তো হবেই।প্রাপ্তির মা আর মেজো মা নিয়ে প্রাপ্তিকে গাড়ীতে বসালো।প্রাপ্তি কাউকেই কিছু বলছেনা।শুধু চোখে দিয়ে পানি ঝরছে।ফারহানও সবার কাছথেকে বিদায় নিয়ে গাড়ীতে এসে বসলো।
রাস্তা আজ কেমন জানি ফাঁকা।মনে হচ্ছে গাড়ী গুলো তাড়াতাড়ি চলছে।
প্রাপ্তি বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।

প্রাপ্তি! প্রাপ্তি! অনেক বার ডাকার পরে ফারহানের দিকে ফিরে তাকালো।

ফারহান- আমিতো ভেবে ছিলাম তোমাকে নিয়ে আজ হয়তো আসতেই পারবোনা।মানে তুমি আসতে চাইবেনা।
প্রাপ্তি কিছু না বলে আবারো বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।

ফারহান -(টিস্যু বের করে দিয়ে)প্রাপ্তি আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞাস করছি।কিছু বলবে না।
টিস্যু টা হাতে নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে

প্রাপ্তি -আমি যদি না আসতে চাইতাম আমাকে রেখে আসতে? আসতে না! দেখো নাই, সবাইকে কিছু না বলেই চলে আসলাম।শুধু শুধু সবাইকে কষ্ট দিয়ে কি লাভ।আসতে তো হবেই।

ফারহান -তা ঠিক।এইটা তো নিয়ম তাই না।না হলে আজ তুমি থেকে যেতে আমি একটুও জোর করতাম না।(কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে)একটা কথা রাখবে?

প্রাপ্তি-কি?

ফারহান- তোমার সব শর্ত আমি মেনে নিয়েছি।কিন্তু এইটা আমাদের দুজনের ভিতরেই থাকবে।আর আমাদের বাড়ী গিয়ে তুমি সবার সাথে স্বাভাবিক ভাবে আচরণ করবে।এবং এমন কিছু করবে না যাতে আমার বাবা আর মা দুজনেই কষ্ট পায়।

প্রাপ্তি কিছু না বলে চুপ করে আছে।

ফারহান -কি হলো চুপ করে আছো কেন?
প্রাপ্তি চুপ করে আছে দেখে ফারহানও কিছু বলছেনা। এইভাবে চুপ করে সারাটা রাস্তা পার করে এলো।
গাড়ী এসে ফারহানদের বাড়ীর সামনে এসে থামলো।সবাই আগে এসে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে তাদের কে বরণ করার জন্য।
বড় ভাবী প্রাপ্তিকে গাড়ী থেকে নামিয়ে তার শাশুড়ি সহ সবাই বরণ করেই ঘরে ঢুকালো প্রাপ্তিকে।প্রাপ্তিকে নিয়ে গিয়ে তাদের ড্রইরুমে বসালো।

ফারহানের মা -প্রাপ্তি! আমি তোমাকে আসা মাএই বলে দিচ্ছি তোমার যা কিছু লাগবে আমাকে বলবে কোনো লজ্জা করবেনা।

এই বাড়ীতে প্রাপ্তি শুধু ফারহানকেই ভালোভাবে চিনে।যদিও আগে থেকে তাদের ফ্যামিলি গত ভালো একটা সম্পর্ক।কিন্তু প্রাপ্তি সাথে কারো এতো ভালো পরিচয় নেই সুমি আর বড় ভাবী ছাড়া।

—পাঠক এইবার ফারহানের সম্পর্কে একটু জেনে নেওয়া যাক।
ফারহান ৩ ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোটো। তার ২ বোন।সুমি হচ্ছে সবার ছোটো।আর বড় বোন দেশের বাহিরে থাকে।কিন্তু ছোটো ভাইয়ের বিয়েতে না এসে থাকতে পারিনি।ফারহান নিজের একটা বিজনেস করে।বিজনেসের করনে মাঝে মাঝে দেশের বাহিরে থাকতে হয়।এইবার আসল কথায় আসি

প্রাপ্তির চোখ শুধু ফারহানকেই খুঁজছে। ওই বাড়ী থেকে আসার পর থেকে তাকে আর দেখিনি।মনে হচ্ছে বউ নিয়ে এসেছি এইবার সব দায়িত্ব শেষ।নীরা তো পারতো আজ আমার সাথে আসতে।ফোন টাও নিয়ে আসতে দিলোনা।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে যেন তার মাথা ব্যাথা করছে।প্রাপ্তি নিছের দিকে তাকিয়ে মাথায় হাত দিয়ে ড্রইংরুমে বসে আছে।সবাই নতুন বউকে এসে দেখে যাচ্ছে।একটু পর ফারহান এসে ফোনটা প্রাপ্তির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো তোমার আম্মু ফোন করেছে কথা বলো।

প্রাপ্তি ফারহানকে দেখে তার খুব রাগ হচ্ছে।
সবচেয়ে বেশী রাগ হচ্ছে তার আম্মুর উপর।
কিভাবে পারলো আমাকে একা এইখানে পাঠাতে।

ফারহান- এইভাবে আমার দিকে তাকিয়ে না থেকে কথা বলো।

প্রাপ্তি মায়ের সাথে কথা বলে ফোন রেখে দিলো।
বড় ভাবী এসে প্রাপ্তি উঠো আমার রুমে আসো।
ফারহান -তোমার রুমে কেন?

বড় ভাবী -(ফান করে)ও আমার সাথেই থাকবে।তোমার আর কিছু বলার আছে?

ফারহান -ভাবী তুমিও না। সবসময় ফান না করলে হয়না?

বড় ভাবী- আমি কি বলবো বলো।তুমি এমন ভাবে জিজ্ঞাস করলে।তাই এটাই বললাম।
প্রাপ্তি একটু হেঁটে যেতেই দেখে নীরা, মেজো কাকা,ইমরান, মৃদুল,দরজা দিয়ে ঢুকতেছে।
প্রাপ্তি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।
নীরা -কিরে তোকে কেমন সারপ্রাইজ দিলাম?
মেজো কাকা -তুই কি ভেবেছিস তোকে আমরা আজ কেউ দেখতে আসবো না।
নীরা তোর সাথেই আসতে ছেয়েছিলো ইমরান তখন আসতে দেয়নি তোকে সারপ্রাইজ দিবে বলে।
প্রাপ্তিদের সবাইকে দেখে ফারহানের বাবা অনেক খুশি। তারা বসে আড্ডা দিচ্ছে।
নীরা আর প্রাপ্তিকে নিয়ে বড় ভাবী তার রুমে চলে গেলো।

নীরা -প্রাপ্তি জানিস? আজ আব্বুর আসার কথা ছিলো না।কাল সবাই একসাথে আসতো।কিন্তু ফারহান ভাইয়া তোকে এইখানে দিয়ে আমাদের বাসায় আবার গেছে আব্বুকে নিয়ে আসতে।তোর মন ভালো করার জন্য।
কথাটা শুনেই প্রাপ্তি ভাবলো এই জন্যই এইখানে আসার পর থেকে দেখিনি।আর আমি উল্টাপাল্টা ভেবে বসে আছি।

নীরা -কিরে কি ভাবছিস?

প্রাপ্তি-কিছুনা।আচ্চা কাকাই তো চলে যাবে তুইও কি চলে যাবি?

নীরা-হুম, আমি থাকতে পারবোনা। সমস্যা নেই সবার সাথে কাল তো আসবোই। তুই একদম চিন্তা করবিনা। আর ফারহান ভাইয়া থাকতে তোর চিন্তা কিসের।

চলবে,,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট:১৬

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট:১৬

#Rabeya Sultana Nipa

 

_ সকাল থেকে গাঁয়ে হলুদের আয়োজন শুরু হয়ে গেছে দুই বাড়ীতেই।প্রাপ্তির ২ ফুফু মামার বাড়ীর সবাই চলে এসেছে প্রাপ্তিদের বাড়ীতে।অনেক গেস্ট চলে এসেছে যারা বাকী আছে সন্ধ্যার আগেই চলে আসবে।
মিলি, নীরা, প্রাপ্তি সবাই বসে প্রাপ্তির রুমে আড্ডা দিচ্ছে।বাড়ীর ছেলেরাও যে যার কাজে ব্যস্ত।নাজিফাও ব্যস্ত তার বান্ধবীদের নিয়ে।
প্রাপ্তির মা কাকীরা গেস্টদের আপ্যায়ন নিয়ে ব্যস্ত

বড় ফুফু- (প্রাপ্তির মাকে)বড় ভাবী একটু প্রাপ্তির রুমে চলো।কাল রাতে এসে মেয়েটার সাথে তেমন কথা বলতে পারিনি। আজ আবার একটু পর ওকে পার্লারে নিয়ে যাবে,কথা বলার সময়ও পাবোনা।

প্রাপ্তির মা-আপা আপনি এইভাবে বলছেন কেন? আচ্ছা চলুন!

মিলি -কিরে প্রাপ্তি কাল রাতে এসে দেখলাম ফারহান আর তুই বসে বসে কথা বলছিস।এতো ভালোবাসা তোদের একদিন কথা না বলে থাকতে পারিস না?

প্রাপ্তি কিছু বলতে যাবে এমন সময় তার মা আর বড় ফুফু রুমে ঢুকলো।

বড় ফুফু-তোরা একটু উঠ আমি মেয়েটা পাশে একটু বসে কথা বলি।
কাল তো চলেই যাবে। তারপর কি আর এইভাবে কথা বলতে পারবো?

নীরা-ফুফু তুমি এমন ভাব করছোনা যেন প্রাপ্তি সারাজীবনের জন্য চলে যাচ্ছে।

বড় ফুফু- চুপ করতো। শশুড় বাড়ীতে কতো ঝামেলা থাকে সব কিছু সামলাতে সামলাতে দিন যায়।তখন হয়তো এইভাবে আর কথাও হবেনা।

প্রাপ্তির মা-আপা তাহলে আপনি বসেন আমি ওই দিকটা সামলাই।
কথাটা বলেই প্রাপ্তির মা চলে গেলো।

প্রাপ্তি তার ফুফুর কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে আর তার ফুফুতো বকবক করেই যাচ্ছে।কিন্তু প্রাপ্তির এই দিকে মন নেই।তার মন পড়ে আছে আয়ান নামের ছেলেটার কাছে।
আচ্ছা আমি কেন ওর কথা ভাবছি।ও হয়তো আমার কথা একবারো ভাবেনা।যদি ভাবতো আমায় একবার হলেও ফোন দিয়ে বলতো।প্রাপ্তি তুমি আমার কাছে চলে এসো।এই কথা বলা তো দূরের কথা উল্টো ফোন অফ করে রেখে দিয়েছে।

নীরা -কিরে ফুফু এতো কথা বলতেছে তুই ওইদিকে মন না দিয়ে কি ভাছিস?

প্রাপ্তি -কিছু না।

নীরা- না ভাবলে উঠে গোসল করেনে।
নীরার ফোনে ফারহান ফোন করেছে দেখে নীরা উঠে গিয়ে ফোন রিসিভ করলো

নীরা-কি ব্যাপার? কিছু বলবে?

ফারহান-প্রাপ্তি কি করে?

নীরা- গোসল করতে পাঠিয়েছি।কথা বলবে?

ফারহান- না থাক।পার্লার থেকে সাজিয়ে এনে ফোন দিয়েও।

নীরা- তাহলে আমায় গিফট করতে হবে।আর শালি দের কিছু দাবি আছে সেগুলো মানলেই হবে।

ফারহান- এখনো ওই বাড়ীতে যাইও নাই।এর আগেই দাবি? বোন আমার তুমি যদি আমার সাথে হিটলারি করো তাহলে এইটাকি ঠিক হবে?

নীরা-কালকের জন্য না হয় একটু হিটলারিই করলাম এতে তেমন কোনো ক্ষতি হবেনা তোমার।

ফারহান- আমার বউটা তো একটা হিটলার।এখন দেখি শালিও হিটলার।অবশ্য লোকে যে বলে বউরে সাথে শালি ফ্রি।এখন দেখি হিটলার বউয়ে সাথে হিটলার শালি ফ্রি।

নীরা- আচ্ছা ঠিক আছে।এখন রাখছি।

এইদিকে ফারহান প্রাপ্তির মনের মতোন করে তার রুম সাজিয়েছে। আগোছালো রুমটা আজ নিজের হাতে গোছাচ্ছে। প্রাপ্তির আগোছালো জিনিশ একদম অপছন্দ।

ফারহানের ছোটো বোন সুমি ফারহান কে ডাকতে এসে দেখে ফারহান সবকিছু গুছিয়ে রাখছে।

সুমি -কি ব্যাপার ভাইয়া? সপ্ন দেখছি না তো?

ফারহান- জেগে জেগে তোর মতো পাগলি ছাড়া কেউ সপ্ন দেখতে পারেনা।

সুমি- ভালো হবে না কিন্তু।আমি কিন্তু এখন সবাইকে ডেকে বলবো ভাইয়া প্রাপ্তির ভয়ে,,,,,

ফারহান- চুপ করবি।কি শুরু করেছিস? কেন আসলি সেটা বল।

সুমি- সবাই তোমাকে ডাকছে। তোমার ফ্রেন্ডরা সবাই আসছে।তোমাকে রেডি হয়ে যেতে বলেছে।

ফারহান -(ঘড়ির দিকে তাকিয়ে)কখন যে সন্ধ্যা হয়ে গেলো টেরি পেলাম না।তুই যা আমি আসছি।

এইদিকে প্রাপ্তিকে পার্লার থেকে সাজিয়ে এনেছে।প্রাপ্তির মা মেয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।মেয়েটা কে এতো সুন্দর করে সাজিয়ে এনেছে তুবুও কেমন গম্ভীর হয়ে আছে।সবকিছু মাঝে থেকেও যেন কি যেন নেই।প্রাপ্তির মা মেয়ের পাশে গিয়ে বসলেন।

প্রাপ্তির মা-(প্রাপ্তি মাথা তার বুকের সাথে লাগিয়ে)কারো জন্য কিছু বসে থাকেনা।যা চলে গেছে তাকে যেতে দিতে হয়।আর যা জীবনে আসছে তাকে হাঁসি মুখে মেনে নিতে হয়।দেখিস ফারহানের কাছে তুই সুখেই থাকবি।তুই যদি এইভাবে গম্ভীর হয়ে থাকিস তাহলে সবার ভালো লাগবে বল?

প্রাপ্তি-আম্মু! আমি সব কিছু হাঁসি মুখেই মেনে নিয়েছি।তুমি ভেবেনো আমি কষ্ট পাচ্ছি।আসলে তোমাদের অনেক মিস করবো ওই বাড়ীতে।তাই খারাপ লাগছে।
(প্রাপ্তি তার মাকে শান্তনা দেওয়ার জন্য কথা গুলো বলছে ঠিকি এই দিকে ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদছে।)

মেয়ের কান্না দেখে প্রাপ্তির মা নিজেও কাঁদছে।
প্রাপ্তির মেজো মা এসে দেখে মা মেয়ে দুজনেই কাঁদছে।

মেজো কাকী – ভাবী তুমি এইভাবে কাঁদলে মেয়েকি আর ঠিক থাকতে পারে?
মেজো কাকী কথাটা বলতে বলতে নিজেও কেঁদে পেললেন।

প্রাপ্তির মা- এতো তাড়াতাড়ি মেয়েটাকে বিদায় দিবো ভাবিনি।

মেজো কাকী -এখনি সব কিছু ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।আচ্ছা চলো ভাইয়া ডেকে পাঠিয়েছে।
ফারহান দের বাড়ী থেকে অনেক লোকজন এসেছে গাঁয়ে হলুদে।সুমি দৌড়ে এসে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরলো।কি ব্যাপার কেমন আছো?

প্রাপ্তি-ভালো।

নীরা-প্রাপ্তি! রোবটের মতো না দাঁড়িয়ে থেকে একটু হেঁসে কথা বল।

সুমি- নীরা আপু সমস্যা নেই। ভাবীর মন খারাপ তাই হয়তো এইভাবে আছে।তবে ভাবী আজ তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।

সুমির মুখে ভাবী ডাকটা প্রাপ্তির খুব অসস্থি লাগছিলো। হয়তো ফাস্ট শুনছে তাই এই রকম লাগছে।শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে যাবে।
—হলুদের অনুষ্ঠান শেষ করে যে যার মতো ঘুমিয়ে পড়লো।শুধু নীরা আর প্রাপ্তি ছাদে এখনো বসে আছে।রাত ৩ টা বেজে গেছে সেই দিকে কোনো খেয়াল নেই দুজনের।

নীরা -দেখেছিস! মৃদুল টা কেমন ঘুম পাগল।আমরা দুজন ছাদে বসে আছি ওইতো এসে আমাদের সাথে একটু আড্ডা দিতে পারতো।ফারহান ভাইয়াকে একটা ফোন দিয়ে দেখি কি করে।

প্রাপ্তি- ও হয়তো ঘুমাচ্ছে।

নীরা -আরে কি বলিস আজ ওর ঘুম হবে?(ফারহান কে ফোন দিতেই রিসিভ করে পেললো।)
নীরা -কি ব্যাপার ঘুম নাই? ফোন যাইতে না যাইতে রিসিভ করে ফেলছো?

ফারহান -ঘুম কি আর আসে? কখন সকাল হবে আর আমার প্রাপ্তির মুখটা দেখতে পারবো সেই অপেক্ষা করছি।আচ্ছা আমার হিটলার বউ কি করছে?

নীরা-ছাদে বসে আছি।তাই ভাবলাম তোমাকে একটা ফোন দিয়ে একটু জ্বালাই।
আচ্ছা “তাহলে সকাল হওয়ার অপেক্ষা করো আমি রাখছি।

কারো উপরে উঠার শব্দ পেয়ে দুজনে পিছনে তাকিয়ে দেখে প্রাপ্তির মা।

নীরা -বড় মা! তুমি এখনো ঘুমাওনি?

প্রাপ্তির মা- ঘুম আসছেনা।প্রাপ্তির রুমে গিয়ে দেখি প্রাপ্তি নেই।ভাবলাম ছাদে আছিস তাই উপরে উঠে আসলাম।
তোরা দুজন কখন ঘুমাবি।সকাল হলে তো ঘুমাতেও পারবিনা।এখন চল আমার সাথে।আর এইখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না।
মায়ের কথা মতো প্রাপ্তি আর নীরা নিচে এসে যে যার রুমে ঘুমাতে গেলো।

চলবে,,,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ১৫

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ১৫

#Rabeya Sultana Nipa

 

——-ফারহনদের সবাই engaged করেই চলে গেছে।ফারহান আর ফারহানের দুটো ফ্রেন্ড এখনো যাই নাই।তারা প্রাপ্তির ছোটো কাকার সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে।আর প্রাপ্তি বিকেল থেকেই শুধু কান্না করছে।ফারহান আংটিটা পরানো পর থেকেই মনে হলো তার সব কিছু হারিয়ে গেছে।হারিয়ে গেছে তার জীবন থেকে আয়ান নামের মানুষটা।কথাটা যতোই ভাবছে মনে হয় তার কষ্ট দ্বিগুণ হয়েছে। সবাই বুজানো চেষ্টা করছে।কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না।সে আরও বেশী করে কান্না করছে।তার কান্না দেখে মাজো কাকী আর চুপ থাকতে না পেরে,

মেজো কাকী -প্রাপ্তি! ফারহান এখনো এই বাসায়।তুই যদি এইভাবে কান্নাকাটি করিস তাহলে সে কি ভাববে বলতো।ও বলবে আমরা তোকে জোর করেই তার সাথে বিয়ে দিচ্ছি।হয়তো সবার জন্য তোর মন খারাপ লাগছে।সারাজীবন তো এইভাবে থাকা যায় না।আর সব মেদেরকে একদিন বাপের বাড়ী থেকে যেতে হয়।

প্রাপ্তির মা- এইভাবে কান্নাকাটি করিস না।এখন তোর আব্বু এসে দেখলে তার ও মন খারাপ হয়ে যাবে।তোর কাকাই আসলে তো সেও তোর কান্নাকাটি দেখে কান্না শুরু করবে।তখন তোর ভালো লাগবে?

প্রাপ্তি কিছু বলছেনা দেখে নাজিফা ফারহানের কে গিয়ে বললো ভাইয়া তুমি কি আপুকে কিছু বলেছো?

ফারহান- কই না তো, কেন কি হয়েছে?

নাজিফা – আপু সেই বিকেল থেকেই কান্নাকাটি করছে।কাউকে কিছু বলছেও না।কেন তুমি খেয়াল করনি?

ইমারান-কান্নার কি আছে?

ফারহান -চলো তো দেখি, কাঁদছে কেন?(তার ফ্রেন্ডেদের দিকে তাকিয়ে)তোরা বস আমি আসছি।

ফারহানকে দেখে সবাই কি বলবে বুজতে পারছেনা। প্রাপ্তিও নীরাকে জড়িয়ে অন্য দিকে ফিরে চোখের পানি গুলো টপটপ করে নিছে পড়ছে।

মেজো কাকী -ফারহান তুমি বসো এইখানে।দেখনা প্রাপ্তি এমন ভাব করছে মনে হচ্ছে ওকে তোমাদের বাড়ীতে একসাথেই পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

ফারহান- প্রাপ্তি! আমি জানি মেয়েদের এই সময় মন খারাপ হয় তাই বলে তুমি এইভাবে কান্নাকাটি করবে।

প্রাপ্তির মা -ফারহান তুমি বুজাও আমরা যাই।এমনিতে অনেক কাজ পড়ে আছে।কথাটা বলতে বলতে সবাই বাহিরে চলে গেলো।নীরাকে প্রাপ্তি যেতে দিচ্ছেনা।

ফারহান-নীরা তুমি বসো।তুমি যাওয়ার দরকার নাই।(প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে) আমি জানি সবাইকে ছেড়ে থাকতে তোমার কষ্ট হবে।তুমি যখন ইচ্ছা এই বাড়ীতে আসবে আমি কখনোই বাধা দিবোনা।আর না হলে এখনো সময় আছে।তুমি বললে বিয়েটা এখনি ভেঙে দিবো।

নীরা -ভাইয়া এইসব কথা এখন থাক।বিয়েটা হয়ে গেলো তখন দেখবেন এই বাড়ীতেই আসতে চাইবে না।কারণ ফারহান ভাইয়ার ভালোবাসার কাছে প্রাপ্তি তখন এমনিতেই হার মেনে যাবে।

প্রাপ্তি কিছু না বলে বারান্দায় চলে গেলো।সেই বিয়ে ভাঙতে বলতে পারবেনা।এই বিয়ে ভাঙলে সবাই কষ্ট পাবে।এর ছেয়ে ভালো বিয়েটা হোক।ফারহান তো বলেইছে আমি না চাইলে ও কোনো অধিকার ছাইবেনা।

প্রাপ্তি বারান্দায় চলে গেছে দেখে ফারহান আর নীরা বসে কথা বলছে।বিয়ের শপিং নিয়ে।

ফারহান-নীরা! বিয়ের বেশী দিন তো নেই।শপিং কাল থেকে শুরু করাই ভালো হবে।তোমরা কাল যখন যাবে আমাকে ফোন দিও আমি চলে আসবো।

নীরা- প্রাপ্তি হয়তো যাবেনা।আমি সেজো কাকী, বড় মা,আর কাকাই যাবো।তোমার আর আসার দরকার নেই।

ফারহান -আচ্ছা ঠিক আছে।আমি তাহলে আসি।প্রাপ্তির মন ভালো হলে আমাকে জানিও।নীরা মৃদুল কোথায় ও কেমন জানি সব কিছু থেকে দূরে সরে থাকে।

নীরা- ও বাসায় গেছে।ওর আম্মু ফোন করেছে।একটু পরেই চলে আসবে।

ফারহান চলে যাওয়ার পর থেকেই প্রাপ্তির এখন মন আগের চেয়ে অনেক ভালো।
সবাই বিভিন্ন কথা জিজ্ঞাস করছে।
এর মাঝেসেজো কাকী বললো আমার দুইটা প্রশ্ন আছে প্রাপ্তি। তুই যদি না বলিস আমার কিন্তু রাতে ঘুম আসবেনা।এখন বল বলবি কিনা?

প্রাপ্তি -কি প্রশ্ন কাকী ?

সেজো কাকী -প্রথম প্রশ্ন হলো দুপুরবেলা দরজা আটকিয়ে কি বলেছিস দুজনে মিলে?
আর দ্বিতীয়টা হলো ফারহান যখন আংটি পরাচ্ছিলো তোর কানে কাছে গিয়ে ফিসফিস করে কি বললো।যা শুনে তুই চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে ছিলি?
তোরা কি ভেবেছিস কেউ খেয়াল করেনি।সবাই খেয়াল করেছে,কিন্তু কেউ কিছু বলেনি।

প্রাপ্তি- বিশ্বাস করো এমন কিছু বলেনি।বললে তো আমি তোমাকে বলতাম।আর ওর সাহস আছে আমাকে কিছু বলবে।

নীরা-কাকী সত্যিতো সময় পেলো কই।তোমরা গিয়েই তো ডিস্টার্ব করলে।
প্রাপ্তি সবার দিকে তাকিয়ে ভাবছে আজ আয়ানের সাথে গেলে হয়তো এতো গুলো হাঁসি মুখ দেখতে পেতাম না।নিজের ভালোবাসার জন্য তো আর সবাইকে কষ্ট দিতে পারিনা।

দিন যতো যায় প্রাপ্তির চিন্তা বাড়ছে আর সবার আনন্দ বাড়ছে।ফারহান মাঝে মাঝে ফোন দেয় কিন্তু প্রাপ্তি কথা বলেনা।ওইদিনের পর থেকে ফারহানে সাথে প্রাপ্তির দেখা হয়নি।প্রাপ্তিদের সবাই ফারহান কে মানা করেছে।বিয়ের এই কয়দিন যেন না দেখা করে।

এইদিকে প্রাপ্তির বাবা, কাকারা সব কিছু রেডি করছে বিয়ের জন্য। বাড়ীটা সুন্দর করে সাজিয়েছে।বড় মেয়ের বিয়ে বলে কথা কোনো কিছুর কমতি যেন না হয়।তাই সব দিকে খেয়াল রাখছে তারা।

প্রাপ্তি! প্রাপ্তি! ডাকতে ডাকতে প্রাপ্তির মা তার রুমে এলো।কিরে কি করছিস?

প্রাপ্তি-কিছুনা আম্মু।কিছু বলবে?

প্রাপ্তির মা- ড্রইংরুমে চল।তোর আব্বুরা সবাই বসে আছে।তোকে ডাকছে।

প্রাপ্তি- আচ্ছা চলো!

প্রাপ্তি এসেছে দেখে তার মেজো কাকা তার পাশে বসালেন।

মেজো কাকা -প্রাপ্তি সত্যি একটা কথা বল।ওই বাড়ীতে গেলে কাকে তুই বেশী মিস করবি।কথাটা অনেক কষ্টের তার পরেও আমি শুনতে চাই।

প্রাপ্তি- (অনেকক্ষন চুপ করে থেকে) তোমাকে আর আম্মুকে।
আব্বুকেও মিস করবো তোমাদের থেকে কম।

প্রাপ্তির আব্বু- (হাঁসি দিয়ে) আমি কিন্তু কিছু বলবোনা।পরে দেখা যাবে।

মেজো কাকা -দেখেছিস আমাদের হিংসে করা হচ্ছে।তবে ভাইয়া যাই বলিসনা কেন। সময় কতো তাড়াতাড়ি পুরিয়ে যায়।মনে হচ্ছে এই কিছুদিন আগেও সেই ছোট্র প্রাপ্তি নীরা এইটা সেটার জন্য বায়না করতো।এখন কতো বড় হয়ে গেছে। তাদের বিয়েও দিয়ে দিচ্ছি।কিন্তু স্মৃতি গুলো থেকে গেছে।
কথা গুলো বলতে বলতে চোখ মুছচ্ছেন প্রাপ্তির কাকা।

প্রাপ্তি তার চোখের পানি দেখে নিজেকে আর সমলাতে না পেরে নিজেও কান্না করছে।

মেজো কাকা-(প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে)তুই কাঁদছিস কেন? তুই মন খারাপ করলে আমরা কি ঠিক থাকতে পারি।

সবার আড্ডার আসরটা আজ কেমন জানি থমথমে হয়ে আছে।শতো আনন্দের মাঝে সবার মন খারাপ।এই বাড়ীতে হৈচৈ আর আগের মতো হবেনা ।এখনি সবকিছু কেমন জানি ঠান্ডা হয়ে আছে।সবার চুপচাপ দেখে মেজো কাকা
নীরা! আর সেজো বউ কে ডাকলেন।কই তোমরা এইদিকে আসো।

নীরা -আব্বু কি হয়েছে?আমায় ডেকেছো?

মেজো কাকা-তোমাদের সবার শপিং শেষ হয়েছে নাকি আরো বাকি আছে? থাকলে একটু পর যেতে পারো ইমরান কে নিয়ে।কাল কিন্তু প্রাপ্তির গাঁয়ে হলুদ,কাল কেউ বাসা থেকে বের হতে পারবেনা।

নীরা- আব্বু সবার শপিং শেষ।

সবার কথার মাঝে কলিংবেল বেজে উঠলো।

প্রাপ্তির আব্বু- ইমরান দেখ তো কে এসেছে! আজ তো মিলিদের আসার কথা ।কিন্তু সন্ধ্যা হয়ে গেছে এখনো এলোনা।বড় আপাটা ও না কি।যেখানে যায় দেরী করবেই।

ইমারান গিয়ে দরজা খুলে দেখে ফারহান আর তার ফ্রেন্ড।

ইমরান -ফারহান তুই?বিয়ে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে তো পারিস। বাড়ীর মেয়ের জামাই হয়ে বেঁচে গেলি। আয় ভিতরে আয়।

ফারহান-তুই চুপ কর আমরা আগের মতো থাকবো।

সবাই ফারহান কে দেখে অবাক।

প্রাপ্তির আম্মু -ফারহান! তুমি এই সময়।

ফারহান- আন্টি আমার বিয়ের কার্ড সবাইকে দেওয়া হইছে। কিন্তু একজন কে দেওয়া হয়নি। না দিলে সে আবার আমার সাথে রাগ করবে তাই চলে এলাম।

মেজো কাকা -কাকে তুমি কার্ড দিবে এই বাড়ীতে? তুমি কার্ড না দিলেও এই বাড়ীর সবাই তোমার বিয়েতে থাকবে।

ফারহান -কাকাই যে আগে সব সময় বলতো আমার বিয়েতে গিয়ে নাকি অনেক আনন্দ করবে।আমার বউকে গিয়ে অনেক জ্বালাবে তাকে।

কথাটা শুনে প্রাপ্তি উঠে রুমে চলে গেলো।
প্রাপ্তিকে উঠে যেতে দেখে মেজো কাকা বললো এইবার বুজলাম।আচ্ছা কার্ডটা দিয়ে আসো। সত্যিতো যদি আবার বিয়েতে না গেলো তাহলে তোমার বউকে জ্বালাবে কে? কথাটা বলেই সবাই হাঁসতে শুরু করলো।

ফারহান রুমে এসে দেখে প্রাপ্তি খাঁটের এক কোণায় বসে আছে।ফারহান এসে তার সামনে বসলো।

ফারহান -এইভাবে চলে এলে কেন?

প্রাপ্তি- তোমার এইটা না করলে হতোনা?
কি মজা পাও তুমি এসব করে?

ফারহান -আসলে কয়েকদিন থেকে তোমাকে দেখছিনা। এইদিকে তুমি আমার ফোনও রিসিভ করছোনা। তাই ভাবলাম তোমায় দেখে আসি আর কার্ডটা ও দিয়ে যাই।

প্রাপ্তি -যাইহোক শর্তটা যেন মনে থাকে।

ফারহান- কোন শর্ত?

প্রাপ্তি -এখনো বিয়ে হলোনা এরমাঝেই ভুলে গেলে? আমি যতো দিন না চাইবো তুমি কোনো অধিকার চাইবে না।

ফারহান -(প্রাপ্তির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে)হুম মনে আছে।
আচ্ছা একটা কথা বলি সত্যি বলেবে?

প্রাপ্তি -কি কথা?

ফারহান -আয়ানের সাথে তোমার কথা হয়?

প্রাপ্তি -না।কথা বলে আর লাভ কি? শুধু কষ্টই বাড়বে।

এর মাঝেই সেজো কাকী নাস্তা নিয়ে প্রাপ্তির রুমে চলে আসলো।

ফারহান -কাকী এইগুলো কেন এনেছেন?

সেজো কাকী -বড় মেয়ের জামাই এসেছে খালি মুখে বাসা থেকে যাবে নাকি? তুমি এখানে বসে খাও। তোমার ফ্রেন্ডকে দিয়ে এসেছি।আর শুনো যা বলার আজ বলে নাও কাল থেকে বিয়ের দিন পর্যন্ত কথা বলা বন্ধ।

ফারহান- ও এমনিতেই কথা বলেনা।তার উপর এই জারিটা কি ঠিক করলেন?

আমিও এসে গেছি কথাটা বলতে বলতে নাজিফা ফারহানের পাশে এসে বসলো।

নাজিফা -ভাইয়া আমি তোমার পক্ষে আছি কোনো চিন্তা করোনা।

প্রাপ্তি -তোর আর কোনো কাজ নাই।তুই ওর পক্ষ নিবি কেনো?

নাজিফা -এই তুই এখন চুপ করে থাক।বিয়ের কনেকে বেশী কথা বলতে নেই।যেই যা বলবে শুধু চুপচাপ শুনবি।আর যা করতে বলবো করবি।

চলবে,,,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট:১৪

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট:১৪

#Rabeya Sultana Nipa

 

ফারহানদের সবাই এসে গেছে।প্রাপ্তিদের মতোই ফারহানদের ফ্যামিলি ও বড়।প্রাপ্তিদের সবাই অনেক খুশি নিজেদের মতো মেয়েক বড় ফ্যামিলিতে বিয়ে দিচ্ছে।আর ফারহান ছেলেটাও ভালো। প্রাপ্তির সেজো কাকী তো বলেই পেললেন নীরাকে, তুই যদি ওই রকম কাজটা না করতি প্রাপ্তির মতো আজ তোর ও বড় ঘরে বিয়ে দিতো।
কাকীর কথাটা শুনেই নীরার মন খারাপ হয়ে গেলো।

সেজো কাকী -নীরা আমি কিন্তু কথাটা সে ভাবে বলতে চাইনি।প্লিজ তুই রাগ করিস না।

নীরা -কাকী রাগ করার কি আছে।মৃদুল হয়তো বড়লোকের ছেলে না। আর সব দিক তো ঠিক আছে।

প্রাপ্তি মা এসে দেখে নীরার মন খারাপ হয়ে আছে।
প্রাপ্তির মা-তোরা এইখানে? ফারহানদের সবাই এসেছে। নীরা প্রাপ্তিকে রেডি করেছিস তো?

নীরা-বড় মা প্রাপ্তিকে অনেক বার বলেছি রেডি হতে।কিন্তু ওই কোনো কথায় শুনছে না।তাই আমি এইদিকে চলে আসছি।দেখেছি ফারহান ভাইয়ার ছোটো বোন আরো কয়েকটা মেয়ে ওর রুমে ঢুকে ওর সাথে কথা বলছে।

প্রাপ্তির মা-তুই যা ওর রুমে।ও এমনি এমনি রেডি হবে না।তুই গিয়ে রেডি করিয়েদে।ও রেডি না হলে তোর আব্বু আর বড় আব্বু সবার উপর রাগ দেখাবে।
ঠিক আছে বলে নীরা উঠে প্রাপ্তির রুমে গেলো।ফারহানের বড় ভাবী প্রাপ্তির সাথে বসে কথা বলছে।

নীরা -ভাবী পরে কথা বলেন।আমি আগে ওরে রেডি করে দিয়ে যাই।

বড় ভাবী -কি আর রেডি করাবে প্রাপ্তিকে এতেই অনেক ভালোলাগছে।

নীরা -না বড় মা বলছে শাড়ী পরাতে।

বড় ভাবী -আচ্ছা ঠিক আছে।
তুমি রেডি করাও আমি আসতেছি।

নীরা -ভাবী ফারহান ভাইয়া এখনো আসে নাই?

বড় ভাবী -আসতেছে।আমাকে বলেছে ওর একটা কাজ আছে, কাজ শেষ করেই চলে আসবে।
কথাটা শেষ করেই ফারহানের বড় ভাবী রুম থেকে চলে গেলো।

নীরা -বসে থাকিস না উঠ।

প্রাপ্তি-সকাল থেকে আয়ান কে অনেক বার ফোন করেছি।ফোন অফ করে রেখেছে।

নীরা- এখনো তুই আয়ানের কথা মাথায় নিয়ে বসে আছিস।আয়ান কে ভুলার চেষ্টা কর।শুধু শুধু এতে অনেক গুলো মানুষ কষ্ট পাবে।
কথা গুলো বলছে আর প্রাপ্তিকে শাড়ী পরাচ্ছে।

প্রাপ্তি কিছু বলছে না।চুপচাপ পুতুলে মতো দাঁড়িয়ে আছে আর ভাবছে কয়েদিন আগেও শুনলাম ফারহান একটা মেয়েকে ভালোবাসে তাহলে ওকে বিয়ে না করে আমাকে কেন করছে?নীরাকে আবার জিজ্ঞাস করবো? না থাক।

নীরা -কিরে চুপ হয়ে আছিস কেন?

প্রাপ্তি -কিছুনা ভাবছি আমি যদি চলে যাই তোর মন খারাপ হবে না?

নীরা -হলে কি তুই কখনো বিয়ে করবি না?

প্রাপ্তি -তুইও না!

প্রাপ্তিকে সুন্দর করে সাজিয়ে নীরা অনেকক্ষণ তাকিয়ে আজ তো ফারহান ভাইয়া চোখ ফিরাতেই পারবেনা।

নীরা কথাটা শেষ করতেই ফারহান এসে বললো কাকে দেখে আমি চোখ ফেরাতে পারবোনা নীরা?

প্রাপ্তি কই নীরা?ওইদিকে ফিরে কে তাকিয়ে আছে?

নীরা চোখে ইশারা দিয়ে ফারহানকে রেখে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

ফারহান নীরা যাওয়ার সাথে সাথে দরজাটা বন্ধ করে দিলো।
দরজা বন্ধের আওয়াজ শুনে প্রাপ্তি সামনের দিকে ফিরে তুমি দরজা আটকাচ্ছো কেন?
ফারহান প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে নীরাতো সত্যি বলেছে বুড়িটাকে যে এতো সুন্দর লাগছে চোখ ফিরাইতে পারছিনা।

প্রাপ্তি-তোমার এইসব ফাজলামি ভালো লাগেনা। দরজা বন্ধ করলা কেন?

ফারহান- তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো। কথা গুলো শেষ করে চলে যাবো।

প্রাপ্তি- এখন কিসের কথা তোমার?

ফারহান- তুমি সত্যি কি এই বিয়ে মন থেকে করতে চাইছো।নাকি সবার কথা রাখতেছো? আমি চাই তুমি পুরোপুরি সব ভুলে আমার কাছে আসো। যদি তোমার সময় লাগে নিতে পারো।

প্রাপ্তি কিছু বলছেনা দেখে ফারহান বললো
ভয় পেয়েও না যদিও এখন বিয়েটা হয় যতদিন তুমি না চাইবে আমি কখনো তোমার কাছ থেকে স্বামীর অধিকার চাইবোনা।

প্রাপ্তি- চাইবে কেন? তোমার তো ভালোবাসার মানুষ আছেই।আমি একা আয়ান কে ভালোবেসে দোষ করিনি।তুমিও অন্য কাউকে ভালোবাসো।তুমি তারপর ও কেন এই বিয়েটা করছো আমি বুজতেছিনা।

প্রাপ্তির কথা শুনে ফারহান হাঁসি দিয়ে বললো এক সাথে বিয়ের পরে বুজিয়ে বলবো।

দরজা ধাক্কানো শব্দ শুনে ফারহান মুখে বিরক্তির চাপ নিয়ে দরজা খুলতে খুলতে বললো মন খুলে যে ২ মিনিট কথা বলবো তারও সময় দিবেনা এরা।

সেজো কাকী আর ফারহানের বড় ভাবী ফারহান কে দেখে অবাক হয়ে তুমি এতোক্ষণ এই রুমে ছিলে?

ফারহান-না আসলে ওর সাথে আমার কিছু কথা ছিলো সবার সামনে বলতে পারছিলাম না তাই রুমে চলে আসলাম।
তারা রুমে ঢুকে দেখে প্রাপ্তি বসে আছে।

বড় ভাবী-কি ব্যাপার প্রাপ্তি! কি এতো কথা যা এতো দিনে বলেও শেষ করতে পারচ্ছোনা।?

প্রাপ্তি-(রাগী চোখ নিয়ে ফারহানের দিকে তাকিয়ে)আমি কিছু বলিনি।যা বলেছে ওই বলেছে।

সেজো কাকী -নীরা এইজন্যই আমাদের এইদিকে আসতে দিচ্ছিলোনা।
যাই হোক প্রাপ্তিকে সবাই ড্রইংরুমে ডাকছে।

বড় ভাবী ফারানের পাশে দাঁড়িয়ে আস্তে করে আর বেশী দিন নেই সামনের সাপ্তাহে
বিয়ের দিন ঠিক করেছে বাবা।

ফারহান-বেশী দিন না মানে।তারপরেও তো অনেক দেরি।একটা দিন মানে একটা বছর।

বড় ভাবী -ঠিক আছে বাবাকে গিয়ে তাহলে বলি।ফারহান বলেছে এক সাপ্তাহ নাকি অনেক দেরি।

ফারহান -ধুতঃ তুমিও না।

সেজো কাকী -আচ্ছা অনেক হয়েছে দেবর আর ভাবী বাসায় গিয়ে কথা বলবেন।এখন চলেন।
সবাই খাওয়াদাওয়া শেষ করে ড্রইংরুমে বসে আছে।
প্রাপ্তিকে নিয়ে ড্রইংরুমে বসানো হলো।ফারহানের বাবা বললো
বড় বউ ফারহানকে ডাকো তো আংটি টা পরিয়ে দিক।আমার কাজ আছে যেতে হবে।
ফারহান লজ্জা লজ্জা একটা ভাব নিয়ে তার বাবার পাশে দাঁড়ালো।

ফারহান-বাবা ডেকেছো?

ফারহানের বাবা-বাবা এতো লজ্জা পেতে হবে না।বিয়েটা আজি দিয়ে দিচ্ছিনা।এখন প্রাপ্তির পাশে বসো আর আংটি টা পরিয়ে দাও।

ফারহানের বাবার কথা শুনে সবাই হাঁসছে।
সবার হাঁসি মধ্যে দিয়ে ফারহান আংটি পরাচ্ছে আর প্রাপ্তির কানে কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলছে
কি! মহারাণী বিয়েটা তাহলে শেষমেশ আমাকেই করছেন।আর আমাকে দেখেছো একটা বুড়ী কপালে জুটেছে।

প্রাপ্তি ফারহানের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।
ফারহান- ওই ভাবে তাকালে সবাই বলবে এখনি আমাকে না দেখে থাকতে পাচ্ছোনা।বিয়ের পরে কি হবে আল্লাহ ভালো জানে।
কথা গুলো বলছে আর মনে মনে হাঁসছে।এখন যতো কিছু বলিনা কেন কিছু করতে পারবেনা সবার সামনে।এই সুযোগ তো আর ছাড়া করতে পারিনা।

ফারহানের বাবা বললো আমি এখন তাহলে আসি। আমার কিছু কাজ আছে। ফারহান! সবাইকে নিয়ে বাসায় চলে আশিস।

প্রাপ্তির মেজো কাকী প্রাপ্তির পাশে গিয়ে বললো ফারহানের বাবা চলে যাচ্ছে ওনাকে সালাম করো।

প্রাপ্তি ভাবছে কিভাবে সালাম করবো? মুখে বলবো নাকি পা ছুঁয়ে।
ফারহান কে পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে

প্রাপ্তি -ফারহান একটা কথা বলি হাঁসবা না তো?

ফারহান-না বলো কি?

প্রাপ্তি -মেজো মা বলেছে তোমার বাবাকে সালাম করতে।বলেই ওনি চলে গেছে।কিন্তু কিভাবে সালাম করবো মুখে না পা ছুঁয়ে।

ফারহান -(ফারহান হাঁসিটা চেপে রেখে)তোমার যেই ভাবে ইচ্ছা করতে পারো।এতে বাবা কিছু মনে করবে না।

ফারহান মনে মনে ভাবছে সব মেয়েরাই মনে হয় এই সময় সব গুলিয়ে পেলে ভয়ে।তখন নিজের জানা কথা গুলোও অজানা হয়ে যায়।

চলবে,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ১৩

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ১৩

#Rabeya Sultana Nipa

 

আয়ানের কথা গুলো শুনে প্রাপ্তির অনেক কষ্ট লাগছে। যেই সম্পর্কের মাঝে কোনো বিশ্বাস নেই সেই সম্পর্ক রেখেই বা লাভ কি।সারাজীবন কষ্ট ছাড়া কিছু থাকবেনা।

কথা গুলো ভাবতে ভাবতে প্রাপ্তি ফারহানের রুমে গেলো।

ফারহান ঘুমাচ্ছে। মনে হচ্ছে কতো দিন সেই ঘুমায়নি।সত্যিই তো সেই দুইদিন থেকে ঘুমায়নি।আমিও বোকার মতো কি ভাবছি।
ফারহান কে ঘুমে দেখে প্রাপ্তি চলে আসার সময় প্রাপ্তির মেজো কাকা দেখে প্রাপ্তি ফারহানের রুম থেকেই আসতেছে।

মেজো কাকা-কি ব্যাপার প্রাপ্তি! তুমি ফারহানের রুমে কেন গিয়েছিলে? তুমি জানোনা ও ঘুমাচ্ছে?

প্রাপ্তি-কাকাই ওর সাথে আমার কিছু কথা ছিলো তাই এসেছি।

মেজো কাকা-আচ্ছা!তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে। আমার রুমে আয়।

কথাটা বলার সাথে সাথেই প্রাপ্তির গলাটা শুকিয়ে গেলো।কাকাই কি বলবে আমাকে।কাকাই কি কিছু জানে নাকি? আল্লাহ ভালো জানে।

মেজো কাকা-কি হলো আসো।

প্রাপ্তি-জ্বী!
প্রাপ্তি তার কাকার পিছন পিছন রুমে গেলো।
মেজো কাকা-বসো এইখানে।এমন ভাব করছো মনে হয় কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করছো।

প্রাপ্তি-না কাকাই।আমি কিছু নিয়ে চিন্তা করছিনা আপনি কি বলবেন বলেন।

নিচের দিকে তাকিয়ে প্রাপ্তি কথা গুলো বললো।

মেজো কাকা-আমি চাই না ভাইয়ার কানে কোনো কিছু যাক।তুমি মানুষকে যতোটা বোকা ভাবো কেউ এতোটা বোকা নয়।সেইদিন তোমার মা তোমার বিষয় এমন কিছু জেনেছে যা শুনে অজ্ঞান হয়ে গেছে।এইটা আমি নিশ্চিত। তবে আমি তোমাকে এই নিয়ে কিছু বলতে চাইনা।তোমার ফারহানের সাথে যে বিয়েটা হচ্ছে এইটা তো নিশ্চয় শুনেছো? ফারহান কিছু দিনের সময় নিয়েছে।তোমার কি এই ব্যাপারে কিছু বলার আছে?

প্রাপ্তি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে, অনেকক্ষণ পরে মাথা নাড়িয়ে না বললো।

মেজো কাকা-প্রাপ্তি! এই কথাটা ভাবতে তোমার তো এতো সময় নেওয়ার কথা না।
কোনো সমস্যা থাকলে বলতে পারো।

প্রাপ্তি-না কাকাই আমার কোনো সমস্যা নেই।তোমরা যা ভালো মনে করো তাই করো।তোমরা তো আর আমার খারাপ চাইবে না।
প্রাপ্তি তার কাকাইয়ের সামনে কথাটা বলেছে ঠিকে কিন্তু তার খুব কষ্ট হচ্ছে।

মেজো কাকা-তুই তো আমাদের মেয়ে। আরমাদের মেয়ের কখনোই খারাপ চাই না।আচ্ছা আবারও আমি ফারহানের সাথে কথা বলি।দেখি ও কি বলে।

প্রাপ্তি আর কিছু না বলে নিজের রুমে চলে এলো।অনেক কষ্ট হচ্ছে তার। অনেক কান্ন করছে সে।আয়ানকেও অনেক বার ফোন দিয়েছে।সে রিসিভ করছেনা।হয়তো সে আর কখনোই করবে না।না দেখার ভালোবাসা টা যে এতো কষ্টদায়ক এইটা আমি কাউকে বুজাতে পারবোনা।
কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই কখন প্রাপ্তি ঘুমিয়ে পড়লো তার মনে নেই।

সকাল বেলা বাচ্চাদের চেঁচামিচিতে প্রাপ্তির ঘুম ভেঙে গেলো।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ১১ টা বেজে গেছে।তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ড্রইংরুমে গিয়ে দেখে সবাই আড্ডা দিচ্ছে।প্রাপ্তিকে দেখে নীরা বললো
তোকে অনেক বার ডাকতে গিয়েছি তোর রুমের দরজা বন্ধ দেখে বড় মা বললো না ডাকতে তাই আর ডাকিনি।

প্রাপ্তি-ওওও! কখন সকলা হলো বলতে পারিনি।
আচ্ছা এইখানে কিসের আড্ডা হচ্ছে?

নীরা -কেন! তুই জানিস না?সব কিছুতো তুই কাল রাত ঘটিয়ে দিলি এখন বলছিস কিছুই জানিস না।

সেজো কাকী -নীরা তুইও না! ও এখন জেনেও না জানার ভান করবে।দেখিস না নিজে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে আর আমাদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে।

প্রাপ্তি-কাকী বিশ্বাস করো আমি কিছু বুজতেছিনা।

প্রাপ্তির মা রান্নাঘর থেকে এসে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে তোকে আমি বুজিয়ে বলছি।তুই আম্মুর কথা রেখেছিস আম্মু এইটাতে অনেক খুশি। সকালে ঘুম থেকে উঠে যখন তোর কাকাই বললো তুই এই বিয়েতে রাজি সাথে সাথেই মনে হলো আমি একদম সুস্থ হয়ে গেছি।
প্রাপ্তি আর কিছু না বলে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে একটা হাঁসি দিলো।এই হাঁসির মাঝে অনেক কষ্ট লুকিয়ে আছে তা কখনো কাউকে দেখনো সম্ভব না।
নীরাও কাছে এসে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে সত্যি বলছি প্রাপ্তি আমিও চেয়েছিলাম তুই ফারহান কে বিয়ে কর।তোকে কখনো বলিনি তুই হয়তো আমার উপর রাগ করবি তাই।

মেজো কাকী -আচ্ছা তোমরা ৩ জনে মিলে কি ফিসফিস করছো আমাদেরকে রেখে।

নীরা-মা! ফিসফিস তো সবে মাএ শুরু।
আচ্ছা সবাইকি একটা বিষয় খেয়াল করেছো। প্রাপ্তি বিয়েতে হ্যাঁ বলার সাথে সাথেই এই বাড়ীর আনন্দ গুলো আবার ফিরে এসেছে।
ফারহান ভাইয়া যে ৩/৪ মাসের সময় নিয়েছিলো সেটাও আর হচ্ছেনা।তার ফ্যামিলিকে নিয়ে কালকেই নাকি আসবে।
নীরার কথা শুনে প্রাপ্তি অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। এতো কিছু হয়ে গেছে শুধু কি একটা হ্যাঁ জন্য সব আটকে ছিলো।

সেজো কাকী -প্রাপ্তি ওই ভাবে নীরার দিকে তাকিও না।আরো ও আছে। বড় ভাইয়া, মেজো ভাইয়া তোমার কাকাই এক সাথে বাজারে গেছে কেনাকাটা করতে।
প্রাপ্তির মা -আচ্ছা তোরা কি বলতো? ঘুম থেকে উঠে এসে মেয়েটা কিছু খায়নি।আর তোরা কি শুরু করেছিস এইগুলো।এইসব নিয়ে পরে আলোচনা করা যাবে।আগে নাস্তাটা খেয়েনে।
প্রাপ্তি নাস্তা মুখে নিবে,নাজিফা হাতে ফোন নিয়ে এসে বললো
নাজিফা-অনেকক্ষন থেকে তোমার ফোন বাজতেছে তাই আসার সময় নিয়ে এলাম।
প্রাপ্তি ফোন হাতে নিয়ে দেখে ফারহান।
সেজো কাকী প্রাপ্তির মুখের দিকে তাকিয়ে ফারহান ফোন করেছে তাইনা।আজ দুইজনে কি বলবে আমরা শুনবো এখানেই কথা বলো উঠতে পারবেনা।কি বলিস নীরা এইটা কি মিস করা যাই।প্রাপ্তি আর ফারহান এই ফাস্ট সব ঠিক হওয়ার পর কথা বলছে।
কি হলো রিসিভ করো!

প্রাপ্তি -পরে কথা বলবো। এখন কি বলবো?

সেজো কাকী -আচ্ছা বুজেছি,লাউড স্পিকার দিতে হবেনা,দেখি তুমি কি বলো সেটাই শুনবো।

এইদিকে সবাই হাঁসাহাঁসি করছে।
কোনো উপায় না পেয়ে প্রাপ্তি ফোন রিসিভ করলো।

প্রাপ্তি- হ্যাঁ বলো?

ফারহান-ঘুম থেকে কখন উঠছো? সকালে ঘুমে ছিলা তাই বলে আসতে পারিনি।

প্রাপ্তি-হুম।

ফারহান-তুমি নাকি এই বিয়েতে রাজি হইছো?

প্রাপ্তি-হুম

ফারহান- তখন কিন্তু ৩/৪ মাসের সময় আমি আমার জন্য নি নাই।নিয়েছি তোমার জন্য। আয়ান কে ভুলার জন্য তোমার একটা সময়ের দরকার ছিলো।কিন্তু দেখছি তুমি অনেক ফাস্ট। সময়ের দরকার নেই।তাই কাকাই যখন আমাকে বলেছে তুমি এই বিয়েতে রাজি তাই আমিও আর সময় দিলাম না।

কথা গুলো শুনে প্রাপ্তির অনেক রাগ হচ্ছে কিছু বলতে পারছে না হুম ছাড়া।

প্রাপ্তি-হুম।

ফারহান -তোমার কি কোনো কথা নেই।হুম হুম ছাড়া।হুম করো আর যাই করো প্লিজ কাল এই ভাবে আমার ফ্যামিলির সামনে এমন কিছু করো না যাতে সবার খারাপ লাগবে।
সব কিছু মিটে গেলে আমার উপর সব রাগ দেখাইও। শুধু সবার সামনে নিজের রাগটা একটু কন্ট্রোল করো।

প্রাপ্তি এইবার আর চুপ থাকতে না পেরে, ওই! আমাকে তোর কি মনে হয় আমি কি রিমোট যে নিজের রাগ কন্ট্রোল করবো।যখন খুশি বাড়াবো যখন খুশি কমাবো।তোর এই সব ফালতু জ্ঞান নিয়ে তুই থাক আমি তোর এইসব ফালতু জ্ঞান শুনতে পারবো না।
প্রাপ্তির খেয়ালি নেই সবাই তার কথা গুলো শুনছে।ফারহানের কথা গুলো শুনে নিজের রাগটা আর ধরে রাখতে পারেনি।

মেজো কাকী -ওই থাম।এখুনি এই অবস্থা বিয়ের পর কি করবি।

ফারহান -সবাই কি তোমার সাথে?

প্রাপ্তি-(একটু শান্ত হয়ে)হুম।

ফারহান- এতোক্ষন বলোনি কেন? তুমি ওদের সামনে আমাকে তুইতোকারি করছিলে?

প্রাপ্তি-আমি এখন রাখছি।

প্রাপ্তি মনে মনে ভাবছে ওরা থাকাতে আজ বেচে গেলি।না হলে আজ তোর খবর ছিলো।

নীরা-রাগ থামিয়ে খেয়েনে।

নাজিফা- মেজো আপু! একটা জিনিস খেয়াল করেছিস?

নীরা-কী?

নাজিফা-বড় আপু কেমন জানি চুপচাপ থাকে।সবকিছুতে রাগ দেখায়।

নীরা -(নাজিফাকে বুজানোর জন্য)এই বাড়ী ছেড়ে চলে যাবেতো তাই।তোরও যখন বিয়ে ঠিক হবে দেখবি তুইও এই রকম করবি।

নাজিফা- আমি কখনো এইরকম করবো না। উল্টো নাচতে নাচতে এই বাড়ী থেকে যাবো।

নীরা -(হাঁসি দিয়ে)ঠিকি বলেছিস তোকে বিশ্বাস নেই।

চলবে,,,,,

অজান_অনুভূতি পার্ট: ১২

0

অজান_অনুভূতি

পার্ট: ১২

#Rabeya Sultana Nipa

 

আজ দুই দিন প্রাপ্তির মা হাসপাতালে ভর্তি আছে।ডাক্তার বলেছে তিনি এমন কোনোshock পেয়েছেন যার কারনে স্ট্রোক করেছে।ডাক্তার কথাটা বলে যাওয়ার পরথেকে সবার মনে একটাই ভাবনা সেইদিন কি এমন হয়েছিলো প্রাপ্তির রুমে যার কারণে তার মা স্ট্রোক করেছে।
বড় মার কথা শুনে নীরা, মৃদুল,ফারহান সবাই এই বাড়ীতে। প্রাপ্তির মাকে হাসপাতাল থেকে আজ সন্ধ্যায় বাসায় আনা হবে।সবার মনে প্রশ্ন থাকলেই প্রাপ্তিকে কেউ কিছু জিজ্ঞাস করলোনা।
প্রাপ্তি নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়।কিভাবে যাবে তার মায়ের সামনে।তার কারনেই তো তার মার আজ এই অবস্থা। একদিকে আয়ান আর অন্য দিকে মা।সে বুজে গেছে যে কোনো একটা তাকে বেঁচে নিতে হবে।প্রাপ্তি বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথা গুলো ভাবছে।নীরা সারা বাড়ী খুঁজে প্রাপ্তিকে না পেয়ে বারান্দায় এসে দেখে প্রাপ্তি আকাশের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে।

নীরা -তুই এইখানে আর আমি সারা বাড়ী তোকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। আকাশের দিকে তাকিয়ে কি ভাবচ্ছিস।সব দোষ তোর?

নীরার কথা শুনে প্রাপ্তি নীরার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।আজ কিছু বলার সাহস নেই তার।নিজেকে সত্যি অনেক দোষী মনে হয়।

নীরা-নিজেকে দোষ দিয়ে কি লাভ বল? সবার মনে হয়তো একটাই প্রশ্ন সেই দিন তোর রুমে কি এমন ঘটে ছিলো যার কারনে বড় মা ইষ্টক করেছে। আমি কিছুটা বুজতে পারছি,যে কি হয়েছিলো।আয়ানের কথা বলেছিলি বড় মাকে তাই না?

নীরার কথা শুনে প্রাপ্তি বড় একটা দীর্ঘ নিশ্বাস পেলে আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো ঠিক বলেছিস তুই।তবে বিশ্বাস কর আমি ইচ্ছা করে কিছুই বলতে চাইনি।তারপর সেই দিন কি হয়েছিলো প্রাপ্তি সব নীরাকে বললো।
নীরা সব শুনে কি বলবে বুজতে পারছেনা।
মৃদুল নীরাকে ডাকতে এসে দেখে দুজনে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।

মৃদুল -তোমরা এইখানে? বড় মাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে এসেছে। চলো দেখতে যাবেনা।

নীরা -তুমি যাও আমরা আসছি।প্রাপ্তি! চল বড় মাকে দেখবি না?

প্রাপ্তি -তুই যা। কিভাবে আমি আম্মুর সামনে গিয়ে দাঁড়াবো?আমি পারবোনা। কতো বিশ্বাস করেছিলো আমাকে। আর আমি!!!

নীরা-তুই এখন না গেলে সবার সন্দেহ আরো বেড়ে যাবে।আর সবচেয়ে বড় কথা বড় মা কষ্ট পাবে।প্লিজ চল।

প্রাপ্তি ভাবলো নীরা ঠিকি বলেছে।আচ্ছা চল!

নীরা আর প্রাপ্তি রুমে গিয়ে দেখে সবাই প্রাপ্তির আম্মুর সেবা করছে।

মেজো কাকী -কিরে প্রাপ্তি তুই এতোক্ষন কই ছিলি।তোর মা এসেছে সবার আগে তুই আসার কথা তা না তুই শেষে আসলি।আসলি যখন মায়ের পাশে না গিয়ে দরজা দাঁড়িয়ে আছিস?
ফারহান মেজো কাকীর কথা শুনে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে দেখে প্রাপ্তি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
ফারহান কথা ঘুরানোর জন্য বললো
ফারহান -কাকী ও আসার দরকার নেই।আন্টির পাশে এসে কান্নাকাটি করবে পরে আন্টির শরীর আরো খারাপ করবে।ওর চোখমুখের অবস্থা দেখছেন? হয়তো আন্টির জন্য কান্নাকাটি করে চেহারার কি অবস্থা করেছে দেখছেন?

ফারহানের কথা শুনে প্রাপ্তির বাবা বললো।ফারহান ঠিকি বলেছে।মেজো বউ এই দুইদিন ফারহান হাসপাতালে কিভাবে সবকিছু সামলিয়েছে তুমিতো নিজের চোখেই দেখেলে।ছেলেটা এই দুইদিন একটুও ঘুমায়নি।ওর রুমটা ঠিক করে দিয়ে আসো।ফারহান তুমিও যাও এখন একটু ঘুমাও।নাহলে তোমার নিজের শরীরই খারাপ করবে। প্রাপ্তি বাবার কথা শুনে ফারহানের দিকে তাকালো।ফারহান এতো কিছু করেছে আম্মুর জন্য।এখন আবার মেজো মায়ের কথা শুনানোর হাত থেকেও আমাকে বাঁচালো।ও এতো কিছু কেন করছে আমাদের জন্য।প্রাপ্তির এইভাবে তাকানো দেখে ফারহান কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।প্রাপ্তি এগিয়ে এসে তার মায়ের কাছে এসে বসলো।প্রাপ্তির মেজো কাকা চোখ দিয়ে সবাইকে ইশারা করলো রুম থেকে বেরিয়ে যেতে।তাই সবাই আস্তে আস্তে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
প্রাপ্তি চুপ করে তার মায়ের পাশে বসে আছে।অনেকক্ষন পর তার মাকে জড়িয়ে ধরে
প্রাপ্তি -আম্মু আমি জানি তুমি আমার উপর এখনো রেগে আছো।প্লিজ আম্মু আমাকে মাপ করে দাও। আমি সেই দিন তোমাকে এই ভাবে কষ্ট দিতে চাইনি।

প্রাপ্তির মা-রাগ করবো কেন? কয়েক দিন পর আমার মেয়ের বিয়ে।এখন কি রাগ করার সময়।মানুষ তো ভুল করতেই পারে হয়তো তুইও একটা ভুল করেছিস। আর আমি তোকে ক্ষমা করেও দিয়েছি।সেই দিনের কথা গুলো আমি চাইনা আর কেউ জানোক।

প্রাপ্তি -আম্মু আমি বেশী কিছু বলবোনা শুধু এইটুকু জানতে চাই ছেলেটা কে?

প্রাপ্তির মা-ফারহান! আমি চাই ফারহান কেই তুই বিয়ে করবি।আমি বুজেছি ফারহান তোর ভালো ফ্রেন্ড মনে করিস।কিন্তু প্রাপ্তি একজন ভালো ফ্রেন্ডই পারে একজন ভালো স্বামী হতে।আর যাকে তুই কখনোই দেখেসনি শুধু তার কথা মাথায় রেখে লাভ কি বল?আমাদের এতো দিনের ভালোবাসার ছেয়ে দুইদিনের ভালোবাসা তোর কাছে বেশী হতে পারেনা।

প্রাপ্তি কথা গুলো চুপ করেই শুনতে হচ্ছে কিছু বলতে পারছে না।কারণ এখন কিছু বললে হয়তো তার মা আবার অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।

প্রাপ্তির মা-বিয়েটা হয়ে যাক দেখবে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।আমি অসুস্থ হওয়ার পর থেকে মনে হয় ঘুমাওনি খাওয়াও খাচ্ছো না।এখন যাও আমি সুস্থ আছি চিন্তা করার কোনো কারণ নাই।
মীনু! মীনু! (সেজো কাকী) কই তুমি?এইদিকে আসো।

সেজো কাকী -ভাবী আমাকে ডেকেছেন?

প্রাপ্তির মা -হ্যাঁ!আমি যাওয়ার পর থেকে প্রাপ্তি কিছু খায়নি তাই না? ওকে নিয়ে গিয়ে নিজের হাতে খাইয়ে দাও না হলে এখনো খাবেনা।

সেজো কাকী -আমি অনেক বার বলেছি আমার কথাতো শুনেই না।এখন চলো আমার সাথে।

প্রাপ্তিও কিছু না বলে উঠে গেলো তার কাকীর সাথে।
প্রাপ্তি খাওয়া শেষ করে রুমে গিয়ে আয়ানকে ফোন দিলো।

আয়ান -কে বলেছে আপনাকে ফোন দিতে।এই কয়েক দিন আমি আপনাকে ফোন দিয়ে যাচ্ছি আপনি রিসিভ করছেন না।এখন কেন ফোন করেছেন? বড় লোকের মেয়েরা এই রকম মন চাইলে প্রেম করবে আবার যখন মন চাইবে তখন দূরে ছুড়ে পেলে দিবে।তুমিও এখন তাদের মতো হয়ে গেছো।ভেবেছিলাম তুমি সবার থেকে আলাদা কিন্তু না তুমিও একি রকম।

চুপ করে কথা গুলো শুনছে প্রাপ্তি,কিছুই বলছে না।
প্রাপ্তি -আয়ান আমি একটু বলি?

আয়ান -কি বলবে তুমি? এখন অনেক অজুহাত দেখাবে।এই হয়েছে সেই হয়েছে।কিন্তু আমি তো জানি তুমি কি নিয়ে ব্যাস্ত ছিলে।

প্রাপ্তি -কি নিয়ে ছিলাম?

আয়ান-তোমার ফারহান কে নিয়ে।যার সাথে তোমার বিয়ে হবে। যে তোমায় অনেক ভালোবাসে।আরো কতো কি।

প্রাপ্তি-(অবাক হয়ে)কে বলেছে তোমাকে এইসব?

আয়ান -ফারহানই আমাকে ফোন দেয়েছিলো, তখন আমি বিশ্বাস করেনি।কিন্তু এখন বিশ্বাস করছি।

প্রাপ্তি-আয়ান আমি এর কিছুই জানতামনা।বিশ্বাস করো।আমি তো তোমাকেই ভালোবাসি। তুমি বলেছিলে না আমি এই কয়দিন তোমার সাথে কেন কথা বলিনি?

তারপর প্রাপ্তি আয়ান কে সব বললো তার মায়ের কথা।

আয়ান-প্রাপ্তি আমার কাছ থেকে সরার জন্য এই ভাবে মিথ্যা বলছো।আসলে কি বলোতো তুমি আমাকে ভালোবাসোনি।এতো দিন অভিনয় করেছো।

প্রাপ্তি -তুমি আমায় অবিশ্বাস করছো? আমি তোমাকে মিথ্যা বলেছি? আমি এতো দিন অভিনয় করেছি? আয়ান তুমি এইভাবে আমাকে বলবে আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা।

আয়ান -যা সত্যি তাই বলেছি।তুমি আমাকে আর ফোন দিবেনা।
কথাটা বলেই আয়ান ফোন কেটে দিলো।কথাটা বলতে আয়ানের অনেক কষ্ট হচ্ছিলো তবুও কেন যানি প্রাপ্তির মুখের কথা গুলো ভালো লাগছেনা। প্রাপ্তিকে এইভাবে আটকিয়ে রাখার কোনো মানে হয়না।হতো আমার থেকে ফারহান ওকে ভালো রাখতে পারবে।

চলবে,,,,,

অজনা_অনুভূতি পার্ট: ১১

0

অজনা_অনুভূতি

পার্ট: ১১

#Rabeya Sultana Nipa

 

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে প্রাপ্তি ড্রইংরুমে এসে চমকে গেলো। নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছে না।ফারহান তার আব্বুর সাথে বসে চা খাচ্ছে।এই দৃশ্য দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।প্রাপ্তির বাবা প্রাপ্তিকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে

প্রাপ্তির বাবা -কিরে ওইখানে এইভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? এইদিকে আয়, দেখেছিস ফারহান সব কাজ পেলে আমার কথা শুনে চলে এসেছে।

প্রাপ্তি কিছু না বলে চুপ করে আছে।প্রাপ্তিকে এইভাবে চুপ থাকতে দেখে ফারহান প্রাপ্তির বাবার দিকে তাকিয়ে।

ফারহান -আংকেল! প্রাপ্তি আমার উপর রাগ করে আছে তাই ওইভাবে চুপ করে আছে।

প্রাপ্তির বাবা-তাই নাকি? প্রাপ্তি রাগ করতে যানে আমি জানতাম না তো।(প্রাপ্তিকে আরো রাগানোর জন্য)তো রাগ করেছে কেন?

প্রাপ্তি -আব্বু তুমি কিন্তু ফারহানের সাথে তাল মিলিয়ে ভালো করছোনা।(ফারহানের দিকে তাকিয়ে)আচ্ছা তোমার সব কাজ ফেলে তোমাকে আসতে কে বলেছে? সবসময় সবার কাছে নিজেকে ভালো রাখার চেষ্টা।

প্রাপ্তির মা এসে প্রাপ্তিকে চুপ থাকতে বলছে। প্রাপ্তি তার মায়ের কথায় কান না দিয়ে ফারহানের উপর রাগ গুলো ঝাড়ছে।
ফারহান কিছু না বলে শুধু প্রাপ্তিকেই দেখছে।ফারহান জানে প্রাপ্তি কেন এই রকম রাগ দেখাচ্ছে।যাকে ফারহান ভালোবাসে তার নাম না বলা, সকালে তাকে কিছু না বলে চলে যাওয়া।ফারহান ভাবছে প্রাপ্তিকে কিভাবে বুজাই মেয়েটা আর কেউ না, সে নিজেই।সকালে তাকে না বলে চলে গেলাম কারণ আমি তোমাকে কিভাবে বলবো মেয়েটা তুমিই আর কেউ আমার জীবনে নেই আর আসবেও না।

প্রাপ্তির বাবা -ফারহান তুমি কিছু মনে করোনা।

ফারহান -আংকেল আমি কিছু মনে করিনি।আমি জানি ও এইরকমই।আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।

প্রাপ্তির মেজো কাকা এসে বললো কি ব্যাপার প্রাপ্তি এইভাবে রেগে রুমে চলে গেলো কেন? ফারহান তুমি আবার রাগানোর জন্য কিছু বলছো নাকি?

প্রাপ্তির বাবা -না তেমন কিছু বলে নাই। ও ফারহানের ওপর নাকি আগে থেকেই রেগে আছে।

মেজো কাকা-ওওও,,, ফারহান! ভাইয়া তো আসছে ভাবছি তোমার মা, বাবাকে বলবো সময় করে একদিন আসতে।নীরার বিয়েটা যখন হয়ে গেছে প্রাপ্তিকে ধরে রাখা ঠিক হবে না।আশেপাশের লোকে তো নানানরকম কথা বলে বড় মেয়েকে বিয়ে না দিয়ে মেজো মেয়েকে বিয়ে।তাই ভাবলাম তোমাদের বিয়েটা যখন হবেই দেরী করে লাভ কি।(প্রাপ্তির বাবার দিকে তাকিয়ে)কি বলো ভাইয়া,আমি কি ঠিক বলছি?

প্রাপ্তির বাবা -আমাদের দিক থেকে তো কোনো সমস্যা নাই।ওর বাবা,মা কি বলে সেটা আগে দেখো।

ফারহান-আংকেল! আমার বাবা, মা হ্যা বলবেন।তবে আমার কিছু সময়ের দরকার, বেশী না ৩/৪ মাস। এরপর আমি নিজেই বাবা,মা কে নিয়ে আসবো।আপনার যদি এখন আমার ফ্যামিলিকে ফোন করে জানান তারা আমার কথা না শুনেই বিয়ে ঠিক করে যাবে।তাই আমি আপনাদেরকেই বলছি আমকে কিছু সময় দিন।

মেজো কাকা-আচ্ছা ঠিক আছে। যদি তোমার বেশী সমস্যা হয় আমাদেরকে জানিও আমরা সবাই তোমার পাশে আছি।

ফারহান মনে মনে ভাবছে আমি নিজের জন্য সময় চাইনি।চেয়েছি আপনাদের মেয়ের জন্য।কারণ আমি ওকে বিয়ে করলে ও কখনোই আমাকে মেনে নিবে না।

দুপুরে সবাই এক সাথে খেয়েদেয়ে বিকালের দিকে ফারহান আবার ঢাকায় চলে গেলো।যতোক্ষন ছিলো প্রাপ্তির সাথে একটা কথাও বলিনি।নীরাও আজ চলে গেলো।নীরাকে কাছে পেয়ে এইকয়দিন ভালোই কেটেছিলো। এখন আবার সবার মাঝেও নিজেকে একা লাগে প্রাপ্তির।তবে মাঝে মাঝে আয়ানের সাথে কথা হয়।প্রাপ্তির বাবা আসাতে তেমন কথা হয় না আয়নের সাথে।বাবা আসার আগে সারারাত জেগে আয়ানের সাথে কথা বলতো।এখন রাতে বাবা বার বার দেখে যায় ঘুম আসছে কিনা,রাত জেগে বসে আছে কিনা।তাই আর বেশী কথা হয় না।

আয়ানের ফোন টা বেজেই যাচ্ছে।অচেনা নাম্বার দেখে ফোন রিসিভ করছে না।কিন্তু না করেও উপায় নেই।বার বার ফোন দিয়ে যাচ্ছে।আয়ান ফোনটা রিসিভ করতেই
আপনি কি আয়ান বলছে?

আয়ান -(একটু চুপ করে থেকে)হ্যা আমি আয়ান বলছি।কিন্তু আপনি কে?

ফারহান -আমি ফারহান! আপনি নিশ্চয় আমার কথা এর আগেও শুনেছেন।

আয়ান -কোথায় শুনবো আপনার নাম।আমি তো আপনাকে ছিনিনা।

ফারহান -আমাকে না ছিনলেও আমার হবু বউয়ের সাথে প্রেম করতে তো ভালোই পারেন।আর বলছেন আমাকেই ছিনেন না।

আয়ান -আমি সত্যি আপনার কিছুই বুজতেছি না।আপনি মনে হয় আমার সাথে ফান করছেন।

ফারহান -আমি আপনার সাথে ফান করতে যাবো কেন? আমি শুধু এইটুকুই বলবো প্রাপ্তির সাথে আর যোগাযোগ করবেন না।ওর সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে অনেক আগে থেকেই।

আয়ান -আমি আপনার কথা বিশ্বাস করবো কেন? প্রাপ্তি তো আমায় বিয়ের ব্যাপারে কিছু বিলেনি।আমি যতোটুকু শুনেছি আপনি প্রাপ্তির ফ্রেন্ড, এইছাড়া আর বেশী কিছু না।আর আপনার কথা তো আমি প্রাপ্তিকে ভুলে যেতে পারবোনা। প্রাপ্তিকে আমি অনেক ভালোবাসি।

ফারহান-দেখেন আমি আপনার ভালোর জন্যই বলছি।আপনি ভাবে দেখেন আপনি কি করবেন।আর এইটাই আপনার সাথে আমার শেষ কথা।ফারহান ফোন রেখে দিলো।
আয়ান কি করবে বুজতে পারছেনা।প্রাপ্তি কি তাকে ঠাকালো।না প্রাপ্তি আমাকে এইভাবে কখনো মিথ্যা বলতে পারেনা।
আয়ান প্রাপ্তিকে ফোন দিবে নাকি দিবে না।পরে মনে হলো প্রাপ্তিকে এখন কিছু বলবে না।দেখি প্রাপ্তি কিছু বলে কিনা।

প্রাপ্তি! প্রাপ্তি! মেয়েকে ডাকতে ডাকতে প্রাপ্তির মা রুমে এসে দেখে মেয়ে ঘুমাচ্ছে।প্রাপ্তি তুই এখনো কি ঘুমাচ্ছিস বলতো এই সন্ধ্যায় কেউ ঘুমায়।
মায়ের কথা শুনে আড়মোড়ো ভেঙে প্রাপ্তি উঠে বসলো।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে, আমায় ডাকোনি কেন?
মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে তোর কি শরীর খারাপ?
প্রাপ্তি-কই না তো।তোমার এমন মনে হলো কেন?

প্রাপ্তির মা-তুই তো এই সময় কখনো ঘুমাস না তাই বললাম।

প্রাপ্তি-সবসময় কি দিন এক যায়? মাঝে মাঝে পরিবর্তন হতে হয়।

প্রাপ্তির মা-(প্রাপ্তির কাছে গিয়ে বসে)এইভাবে কথা বলছিস কেন মন খারাপ?তোর কি হয়েছে একটু বলতো কয়েদিন থেকেই তুই উল্টাপাল্টা কথা বলছিস।
প্রাপ্তির তার মায়ের কথা শুনেই টপটপ করে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
প্রাপ্তির চোখের পানি দেখে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে কি হয়েছে তোর কান্না করছিস কেন?
প্রাপ্তি কিছু বলছে না কান্নার শব্দ আরো বেড়ে গেলো।
প্রাপ্তির -কি হয়েছে তোর? কেউ কিছু বলছে? বলনা কি হয়েছে তোর? আমি তোর মা, আমাকে না বললে তুই কাকে বলবি।

প্রাপ্তি-(কান্না করতে করতে)আম্মু আমি যদি কোনো ভুল করে পেলি আমাকে ক্ষমা করে দিবেনা?

প্রাপ্তির মা -আমি জানি আমার মেয়ে কোনো ভুল করতে পারেনা।যেটা করবে সবার কথা ভাবেও কোনো ভুল করবে না।এখন তুই কান্না থামিয়ে বল কি হয়েছে? যদি ভুল কিছু হয়েও থাকে কেউ জানার আগে আমি তোর ভুল গুলো শুধরে দিবো।

প্রাপ্তি -আম্মু আমি ভুল করেছি নীরার মতো একজনকে ভালোবেসে।আম্মু জানো? ছেলেটা অনেক ভালো।
মেয়ের কথা একটুও অবাক না হয়ে
প্রাপ্তির মা -আমি জানি তুই কাকে ভালোবাসিস সেই জন্যই তো তোর আব্বু আর মেজো কাকা সব ব্যাবস্থা করতেছে।

প্রাপ্তি-(অবাক হয়ে) তোমরা কার কথা বলছো? আর তোমরা কি করে জানলে যে আমি কাকে ভালোবাসি।

প্রাপ্তির মা -ফারহান কে তুই ভালোবাসিস এইটা তো সবাই জানে।

প্রাপ্তি -আম্মু তুমি এইসব কি বলছো? আমি ফারহানকে ভালোবাসি না।ওকে আমি ফ্রেন্ড ছাড়া কখনো কিছু ভাবিনি।আমি অন্য এক জনকে ভালোবাসি।

মেয়ের কথা শুনে হাসি মুখটা নিমিষেই অন্ধকার হয়ে গেলো।
প্রাপ্তি কি বলছে এইসব?
প্রাপ্তি ফোনটা এনে আয়ানের একটা ছবি দেখিয়ে
আম্মু! আমি এই ছেলেটাকে ভালোবাসি।
মেয়ের কথা শুনে কি বলবে বুজতে পারছে না।মনে হচ্ছে এই রুমটা তার মাথার উপর ঘুরতেছে চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসছে।
প্রাপ্তি কি বলছে তার কানে কিছুই আসছে না।পুরো শরীর ঘেমে যাচ্ছে।কিছুক্ষন পরেই প্রাপ্তির মা অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো।
প্রাপ্তি মায়ের এই অবস্থা দেখে সবাইকে চিৎকার দিয়ে ডাকতে শুরু করলো।
প্রাপ্তির চিৎকার শুনে সবাই দৌঁড়ে এসে দেখে প্রাপ্তির মা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।

চলবে,,,,,,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ১০

0

অজানা_অনুভূতি
পার্ট: ১০

#Rabeya Sultana Nipa

 

নীরার ঘটনার পর থেকে প্রাপ্তিকে প্রতিদিন কলেজে যেতে দেয় না।শুধু পরীক্ষা গুলো দিতে দেওয়া হয়।প্রাপ্তি বাসায় নিজেকে খুব একা একাই লাগে।নিজাফাও পড়া লেখা নিয়ে ব্যাস্ত থাকতে হয়।প্রাপ্তি বই পড়তে খুব ভালোবাসে বেশীর ভাগ সময় বই পড়েই কেটে যায় তার।
প্রাপ্তি! প্রাপ্তি! মেজো কাকার ডাকে ভাবনার জগত থেকে ফিরে এলো প্রাপ্তি।শব্দ টা মনে হলো ড্রইং রুম থেকেই আসছে।কাকার কাছে ড্রইং রুমে যেতেই বসো এই খানে।
প্রাপ্তিও কিছু না বলে বসে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

মেজো কাকা -কি হলো নিচের দিকে না তাকিয়ে আমার দিকে তাকাও।

প্রাপ্তি বাধ্য মেয়ের মতো কাকাইয়ের দিকে তাকালো।

মেজো কাকা -তোমার কি মন খারাপ?

প্রাপ্তি -না।কেন ডেকেছো?

মেজো কাকা-ভাইয়া তো আজ আসতেছে।তুমি আনতে যাবেনা?

প্রাপ্তি -কাকাই আব্বু নতুন করে দেশে আসছে না।আব্বু যখনি আসে তুমি নয়তো ছোটো কাকাই যাও। আজ কেন আমি যাবো?

মেজো কাকা-তুই সাথে গেলে ভাইয়ার হয়তো ভালো লাগতো।

(প্রাপ্তি মনে মনে বলতে লাগলো, কেন নিতে চাইছো আমি কি বুজি না।আমাকে চোখে চোখে রাখার জন্য কতো যে কি বলবা আল্লাই ভালো জানে।)
প্রাপ্তির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে কিরে কি ভাবছিস?

প্রাপ্তি -কিছুই ভাবছি না।আমার ভালো লাগছে না।আমি যাবোনা তোমরাই যাও।।

মেজো কাকা-ঠিক আছে।বাসা থেকে বের হওয়ার দরকার নাই।সাবধানে থাকিস।নীরার মতো এমন কিছু করিস না যাতে সাবার মনে কষ্ট হয়।তবে তোর প্রতি সবার সেই বিশ্বাস আছে তুই এমন কিছু করবি না যাতে এই পরিবারের সবার কষ্ট হয়।আচ্ছ এখন তাহলে আসি।

প্রাপ্তির মা,নীরার মা দাঁড়িয়ে এতোক্ষন কথা গুলো শুনছিলো।নীরাও পাশের রুম থেকে শুনছিলো।কথা গুলো শুনে নীরার একটু ও কষ্ট লাগেনাই।কষ্ট লেগেছে কথায় কথায় নীরার কথা বলে প্রাপ্তিকে বুজানো।
প্রাপ্তি এখনো সেই জাগায় বসে আছে আর ভাবছে সবাই তার প্রতি এতো বিশ্বাস এতো ভরসা। সেই এক নিমেষে ভাঙবে কি করে?
আয়ানের কথা সবাইকে বলবেই বা কি করে? একবার কাকাই মরতে মরতে বেঁচে গেলো।এখন আবার একটা ধাক্কা সামলাতে পারবেনা।কি করবো আমি?

প্রাপ্তির মা মেয়েকে চুপ থাকতে দেখে,
কিরে কিভাবছিস?
প্রাপ্তি,,,,
(এইবার জোরে ডাক দিয়ে)এই প্রাপ্তি কি চিন্তা করছিস তুই এতো মন দিয়ে?

প্রাপ্তি -(চমকে উঠে) এতো চেঁচাচ্ছ কেনো?কি বলবে আস্তে বলতে পারো না?

প্রাপ্তির মা -(অবাক হয়ে)কি হয়েছে তোর এইভাবে কথা বলছিস কেন?

প্রাপ্তি -কিছু হয়নি বলে উঠে রুমে চলে গেলো।

কি করবে সে, এই লোক গুলোকে আবার ঠকানো হচ্ছে।আর সে লোকটাই আমি। কিন্তু আমি তো আয়ানকেও ছাড়তে পারবো না।আমি ছেলেটাকে এতোটাই ভালোবাসি ওকে ছেড়ে যাবো কি করে।কাকে বলবো আয়ানের কথা গুলো।যাকেই বলিনা কেন কেউই আমার কথা শুনবে না।আর আমি বলবোই বা কি করে।কতো বিশ্বাস করে এই মানুষ গুলো আমাকে।প্রাপ্তি কথা গুলো ভাবছে আর কান্না করছে।একটু পর নীরা এসে প্রাপ্তির সামনে বসে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে
নীরা -কান্না করছিস? কষ্ট লাগছে তাইনা?এইবার ভাবে দেখ আমার কতোটা কষ্ট সেই দিন হয়ে ছিলো যেই দিন আব্বু আমায় ৭ দিনের সময় দিয়ে ছিলো।প্রাপ্তি কান্না করে কোনো লাভ নাই। এরা কেউ বুজবেনা।এরা কেউ বুজবেনা তোর এই কান্নার মাঝে কতোটা কষ্ট লুকিয়ে আছে।

প্রাপ্তি -বাধ দে। কষ্ট হবে কেন আমার। আমি ঠিকি আছি।

নীরা -কার কাছথেকে আড়াল করছিস, আমার কাছথেকে?তুই ভালো করেই জানিস তুই কিছু আমাকে বলা লাগেনা আমি বুজি আমার এই বোনটার কি হয় না হয়।আচ্ছা তোকে কিছু বলতে হবে না।এখন চল বাহিরে থেকে ঘুরে আসি।

প্রাপ্তি-আমি যেতে পারবোনা। কাকাই যাওয়ার সময় বলে গেছে আমি যেন কোথাও না যাই।এখন এসে যদি শুনে আমি বাহিরে গেছি তাহলে রেগে যাবে তোর উপর।বলবে তুই আমাকে নিয়ে গেছিস।

নীরা -হুম ঠিক বলেছিস। আচ্ছা প্রাপ্তি! ফারহান কে তোর কেমন লাগে?

প্রাপ্তি -হঠাৎ এইকথা?

নীরা -আমি বলতে চাইছি ফারহান বর হিসেবে কেমন হবে?

প্রাপ্তি -নীরা কি থেকে কি বলছিস নিজে জানিস।ও বিয়ে করার পর ওর বউকে গিয়ে জিজ্ঞাস করিস আপনার বরটা কেমন?আমাকে কেন জিজ্ঞাস করছিস?

নীরা -ঠিক আছে বিয়ের পর না হয় জিজ্ঞাস করবো।একটা কথা বলবো?

প্রাপ্তি -কি বল?

নীরা-কয়েক টা ছবি ছাড়া তুই তো আয়ানকে দেখিস নি তাই না?

প্রাপ্তি -তাতে কি হয়েছে? ভালোবাসা তাতে কমে যায়না।বরং দূরথেকে ভালোবাসা গাঢ় হয়,পবিত্র থাকে।এখন এইগুলো বাধ দিয়ে কি বলতে চাইছিস সেটা বল?

নীরা -না কিছু না এমনি বললাম আরকি।

নীরা কিছু বলতে গিয়েও বললোনা।প্রাপ্তি মন খারাপ হবে ভেবে।
সন্ধ্যায় প্রাপ্তি বাবা বাসায় এসে পৌঁছে গেছে। সবাই অনেক খুশী।

প্রাপ্তির বাবা-এইবার অনেক দিন পরে সবাইকে দেখলান।সবাই অনেক বড় হয়ে গেছে।

মেজো কাকী -ভাইয়া! ১ বছরে কেউ অনেক বড় হয়ে যায় না।

প্রাপ্তির বাবা -কি বলছো হয়নি।এক মেয়ের বিয়ে দেওয়া হয়েছে আরেক মেয়ের বিয়ে দিবো। কিন্তু নীরা কোথায় সবাই এইখানে আছে নীরা নেই কেন?

প্রাপ্তি-আব্বু নীরা মনে হয় লজ্জা পাচ্ছে তাই আসছেনা।

নীরা আসতে আসতে প্রাপ্তি আমি একটু লজ্জা পাচ্ছিনা।আমি বড় আব্বু সামনে আসবো লজ্জা পাওয়ার কি আছে।মৃদুল এসেও সালাম করলো।

প্রাপ্তির বাবা -আজ আমার সত্যি অনেক ভালোলাগছে।সবাইকে একসাথে দেখে।তবে একজন নাই এইখানে।

সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে কথাটা শুনে।প্রাপ্তির মেজো কাকা বললো আমি বুজতে পেরেছি কি বলতে চাইছে।
ইমারান! ফারহান কে ফোন দাও কাল সকালে যেন চলে আসে।

প্রাপ্তি -কাকাই ও আমাদের ফ্যামিলির একজন হলো কিভাবে? আমরা সবাইতো এইখানেই আছি।

মেজো কাকা-এখনো পুরোপুরি ভাবে হয়নি।তবে কিছু দিনের মধ্য হবে।ভাইয়া তুই ফ্রেশ হয়ে আয় আজ অনেক দিন পর সবাই এক সাথে আড্ডা দিবো।
সেজো বউ! নাস্তা রেডি করো ভাইয়াও ফ্রেশ হয়ে আসুক।

প্রাপ্তি নীরা কাছে গিয়ে, কিছুই বুজলাম না আমি ফারহান আমাদের ফ্যামিলির একজন হলো কিভাবে বলতো?

চলবে,,,,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ৯

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ৯

#Rabeya Sultana Nipa

 

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই প্রাপ্তি ফারহানের রুমে গিয়ে দেখে ফারহান নাই।
ফারহান কে না দেখে প্রাপ্তি ভাবতে লাগলো ও কি আমায় না বলেই চলে গেলো।

ফারহানের রুম থেকে বের হয়ে
সেজো কাকী! সেজো কাকী! কোথায় তুমি?

সেজো কাকী -(রান্না ঘর থেকে দৌঁড়ে এসে)
কি হয়েছে তোর এইভাবে ডাকছিস কেন?

প্রাপ্তি -ফারহান কোথায় কাকী? ও কি চলে গেছে?

সেজো কাকী -হ্যা ভোরে চলে গেছে।তুই ঘুমাচ্ছিলি তাই তোকে ডাকেনি।ব্যাপার কি প্রাপ্তি? মিস করছিস নাকি?

প্রাপ্তি -কাকী তুমিও না। আমি ওকে মিস করতে যাবো কেন?জানো ফারহান নাকি একটা মেয়েকে ভালোবাসে তাই জানতে আসলাম মেয়েটা কে? তুমি জানো কিছু?

সেজো কাকী -জানিতো এইটা তো সবাই জানে মেয়েটা কে।

প্রাপ্তি -কিহ,,,সবাই জানে আর আমি জানিনা।ঠিক আছে আমি আর জানতে চাইনা।ও আমার সাথে সব শেয়ার করে আর তার জিবনের important জিনিসটাই আমার কাছে শেয়ার করলো না।আজ থেকে ওর সাথে আমার কোনো কথা নাই।থাকুক সে তার মতো করে।এতো দিন আমি ভাবেছিলাম ফারহান যা কিছু হক আমার কাছে আগে বলে। এখন দেখি তার উল্টো।

বাসায় এতো বড় একটা মাছি আছে এতো দিন জানতাম নাতো।প্রাপ্তি তার মেজো কাকার কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

সেজো কাকী -ভাইয়া! মাছি কোথায় দেখলেন?

মেজো কাকা -সেজো বউ! তুমিও না যাও চা নিয়ে আসো।আর শুনো প্রাপ্তি যেই ভাবে ঘন ঘন করছিলো তাই বলছিলাম।

সেজো কাকী হাসতে হাসতে চলে গেলো।

প্রাপ্তি -কাকাই আমি মাছির মতো ঘন ঘন করি?তুমি আমাকে মাছি বলতে পারলে?

মেজো কাকা -এই যাহ্‌ তোকে মাছি বললাম কখন?আমি মাছি বলছি যে ঘন ঘন করে তাকে।আমাদের প্রাপ্তি কখনোই ঘন ঘন করেনা।

একে একে সবাই এসে নাস্তা খেতে বসেছে।
প্রাপ্তিকে তার মা সকাল সকাল দেখে

প্রাপ্তির মা -ব্যাপার কি?সূর্য আজ কোণ দিকে উঠলো?

নীরা -বড় মা কি হয়েছে? এই কথা কেন বলছো?

প্রাপ্তির মা-প্রাপ্তিকে আজ না ডাকতেই ডাইনিং টেবিলে তাই।

সেজো কাকী -ভাবী! ফারহানকে খুঁজতে এসেছিলো।তাই সকাল সকাল না ডাকতেই এইখানে।

মেজো কাকা -আচ্ছা সবাই শুনো।কাল বড় ভাইয়া আসছে।আমাকে রাতে ফোন দিয়ে বলেছে। তাই আমি তোমাদের জানাতে পারিনি।নীরাদের তো আজকে যাওয়ার কথা।কিন্তু আজ আর যাওয়া হবে না।

প্রাপ্তি -আব্বু আসছে। কই আমাকে তো কিছু বলে নাই।

মেজো কাকা -কাল রাতে ঠিক করেছে তাই হয়তো তোদের জানাতে পারেনি।

প্রাপ্তি -মা! তুমিও জানো না?ও এখন তো সবাই অনেক কিছু জানে শুধু আমি ছাড়া।

প্রাপ্তির মা-আমি সত্যিই জানিনা।জানলে আমি সবাই আগেই বলতাম।হতো তোর আব্বু তোদের সারপ্রাইজ দিতে চাইছে তাই বলেনি।

মৃদুল -(নীরার বাবার দিকে তাকিয়ে)কিন্তু বাবা আমাদের তো আজকে যেতে হবে।মা সকাল বেলাও ফোন করেছে আজকে যেন চলে যাই।

মেজো কাকা-চিন্তা করোনা আমি তোমার মাকে ফোন দিয়ে বলে দিবো।

প্রাপ্তি মন খারাপ করে উঠে চলে গেলো।
রুমে গিয়ে আয়ান কে ফোন দিলো। আয়ানের ফোনে রিং হচ্ছে। কিন্তু আয়ান্নম? রিসিভ করছেনা।কাল রাতে সকালে ফোন দিবে বলে আর কথা বলেনি।তাই হয়তো রাগ করেছে ভেবে প্রাপ্তি আবার ফোন দিলো।এইবার আয়ান ফোন ধরেই

আয়ান -নিজেকে কি মনে করো তুমি?ফোন দিচ্ছো কেন আমাকে? তোমার ফারহান আছে না তার সাথে কথা বলো।

প্রাপ্তি -আয়ান তুমি কি বলছো এইসব? ফারহান সাথে কথা বলবো মানে?

আয়ান -কাল রাতে আমার সাথে তুমি কথা না বলে ফারহান কে সময় দিচ্ছো। তাহলে আমি কি বলবো বলো?

প্রাপ্তি-তুমি আর ফারহান কি এক।ও আমার ফ্রেন্ড। আর তোমাকে আমি ভালোবাসি। তুমিতো আমার সব বলো।
আর ওর সামনে তো তোমার সাথে কথা বলতে পারতামও না।তাই কাল রাতে ফোন রেখে দিয়েছি।

আয়ান -আচ্ছা ঠিক আছে।তুমি ভালো করে জানো তোমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারিনা।তুমি আমায় ছেড়ে কখনো যেও না প্লিজ। তোমাকে অনেক ভালোবাসি অনেক।যা আমি তোমাকে বলে বুজাতে পারবোনা।প্রাপ্তি আমায় ছেড়ে কখনো যাবে না তো?

প্রাপ্তি-,,,,,

আয়ান-আমি জানি তুমি আমার কথা গুলো শুনছো।প্রাপ্তি বিশ্বাস করো আমি সারাটা দিন শুধু তোমার কথা ভাবি। তুমি আমার প্রতিটা নিশ্বাসের সাথে মিশে আছো।কি হলো প্রাপ্তি কথা বলছো না কেন?ওওও,,, আমার প্রেত্নি কথা বলতে পারে না।এইটা তো আমার মনে নেই।

প্রাপ্তি -কিহ,,, আমি প্রেত্নি? ঠিক আছে তাহলে তুমি জীন।

আয়ান -এতোক্ষন তো কিছুই বলছিলেনা তাই কথা বলানোর জন্য বলেছিলাম।তুমি তো আমার পরী,প্রেত্নি হতে যাবে কেন?

প্রাপ্তি-আমি তো তোমার কথা গুলো শুনছিলাম।কিন্তু তুমি প্রেত্নি যখন বলেছো এখন আর প্রেত্নির সাথে কথা বলতে হবে না।

আয়ান -তাহলে তো আমি মরেই যাবো। তুমি তো আমার পরী। এই পরীটার সাথে কথা না বললে আয়ানের কোনো অস্তিত্ব নেই।কারণ আয়ান পরীটার কয়েকটা ছবি।হাসির শব্দ,কথা গুলো শুনেই পরীকে ভালোবেসে পেলেছে।

প্রাপ্তি -জানিতো,জানো আয়ান কাল নাকি আব্বু দেশে আসছে।

আয়ান -তাহলে তো ভালোই।

প্রাপ্তি -ভালো মানে? তুমি জানো আব্বু আসলে আমি তোমার সাথে কথা বলতে পারবো নাকি?নীরার বিয়ের আগে মেজো কাকাইকে বলতে শুনেছি আব্বু আসলে নাকি আমার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলবে।

আয়ান -ধুর পাগলী, বিয়ের কথা বললে কি বিয়ে হয়ে যায় নাকি।এর মধ্য কিছু একটা হয়ে যাবে।

প্রাপ্তি -তুমি যা ভালো মনে করো।

চলবে,,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ৮

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ৮

#Rabeya Sultana Nipa

 

সবাই নীরার শশুর বাড়ী থেকে চলে এসেছে।সাথে নীরাও এসেছে।সন্ধ্যায় সবাই চা খাচ্ছে আর আড্ডা দিচ্ছে।কিন্তু নীরার মন ফারহানের দিকে।কিভাবে সম্ভব ফারহানের সাথে প্রাপ্তির বিয়ে।প্রাপ্তি শুনলে কখনোই মেনে নিবেনা।প্রাপ্তি আয়ান নামের ওই ছেলেটাকেই ভালোবাসে। আর ফারহান! সে প্রাপ্তিকে নিয়েই আছে।
এইদিকে প্রাপ্তি নীরার বিয়ের এই কয়টা দিন আয়ানের সাথে তেমন কথা বলতে পারিনি।তাই প্রাপ্তি আড্ডায় মন না দিয়ে উঠে গিয়ে আয়ানকে ফোন করলো।

আয়ান -কেমন আছো? নীরার বিয়ে ঠিকঠাক মতো সব কিছু শেষ হয়েছে?

প্রাপ্তি – আমি তো ভেবেছিলাম তোমার সাথে কথা বলতে পারিনি বলে তুমি রাগ করেছো।

আয়ান -রাগ করবো কেন? তবে তোমায় অনেক মিস করছি।যাইহোক নীরা কেমন আছে?

প্রাপ্তি -হ্যা ভালোই আছে।ও এখন আমাদের বাসায়।
কথাটা বলা শেষ করতেই ফারহান এসে বললো কার সাথে কথা বলছো প্রাপ্তি?

প্রাপ্তি -আয়ানের সাথে।

ফারহান -আয়ানের সাথে মানে? কে এই আয়ান?

প্রাপ্তি -কথা শেষ করি তারপর তোমাকে বলবো।

ফারহান -আমি সকালেই চলে যাবো আর তুমি এখন অন্য কারো সাথে কথা বলবে?

ফারহান মনে মনে ভাবছে আমি চাই না তুমি অন্য কারো সাথে কথা বলো।কারণ প্রাপ্তিকে শুধু ফারহানই ভালোবাসবে।

প্রাপ্তি -আয়ান” তোমার সাথে সকালে কথা বলবো।
আয়ান কিছু বলার আগেই প্রাপ্তি ফোন কেটে দিলো।

প্রাপ্তি ফোন কেটে দিলো দেখে আয়ান ভাবছে আমার থেকে ফারহান বড় হয়ে গেলো।না আমি এইসব কি ভাবছি।

ফারহান -প্রাপ্তি! তুমি কি কিছু বুজতে চাও না নাকি বুজেও না বুজার ভাণ করো।

প্রাপ্তি -কি বলছো? আমি সত্যিই কিছু বুজতেছিনা।

ফারহান প্রাপ্তির দিকে অনেকক্ষন তাকিয়ে কথা কাটানোর জন্য বললো।
এক কাফ কফি দিবে?

প্রাপ্তি -এই কথা! ঠিক আছে তুমি বসো আমি নিয়ে আসছি।

প্রাপ্তি ফোন টা রেখে কফি আনতে চলে গেলো।ফারহান প্রাপ্তি যাওয়ার পরেই প্রাপ্তির ফোন থেকে আয়ানের নাম্বার টা নিয়ে বসে আছে।

কিছুক্ষণ পর প্রাপ্তি এসে,

প্রাপ্তি- এই নাও কফি।

ফারহান -তুমি আমার জন্য কফি বানিয়েছো?ভাবতেই অবাক লাগছে তোমার হাতের কফি খাবো।

প্রাপ্তি -এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই আমি বানাইনি।সেজো কাকী বানিয়ে দিয়েছে।

ফারহান -তুমি ও কাকীর থেকে শিখে নাও কাজে লাগতে পারে।যেন সারাজীবন তোমার হাতের বানানো কফি খেতে পারি।

প্রাপ্তি -আমি কেন সারাজীবন তোমার জন্য কফি বানাতে যাবো? তুমি কখন কি বলো আমি কিছুই বুজিনা।

তুই কিছুই বুজবিনা কারণ তোকে কেউ কখনো বুজতে দেয়নি। আস্তে আস্তে সব বুজে যাবি চিন্তা করিছ না। কথা গুলো শুনেই প্রাপ্তি পিছনে তাকিয়ে দেখে নীরা।

প্রাপ্তি -তুই! এখনো ঘুমাস নাই।আমি ভেবে ছিলাম তুই আর মৃদুল ঘুমে তাই আর তোকে ডাকিনি।আয় বস এইখানে,

নীরা এসে বসতেই ফারহান নীরার কানের কাছে গিয়ে
ফারহান -আরেকটু পরে আসলে কি এমন ক্ষতি হতো তোমার?আর কেউ নতুন বর কে একা রেখে বোন কে ডিস্টার্ব করতে আসে।উল্টো আমরা তোমায় গিয়ে ডিস্টার্ব করবো তা না। তুমি নিজেই চলে আসছো আমাদের ডিস্টার্ব করতে।

নীরা -আপনি কি মনে করেছে আমি কিছু জানিনা।সকালে আমি সব শুনেছি।বড় মা আমায় সব বলেছে।এখন যদি আমি প্রাপ্তিকে সব বলেদি এখন তো কফি এনে দিয়েছে।এইটা শুনলে বিষ এনে দিবে।

প্রাপ্তি ফারহান আর নীরার কথা দেখে

প্রাপ্তি -তোরা কি এতো ফিসফিস করছিস।

নীরা -প্রাপ্তি জানিস ফারহান ভাইয়া একটা মেয়েকে ভালোবাসে কিন্তু ভয়ে বলতে পারছেনা।এইগুলোই বলছিলাম আরকি।

ফারহান -এইভাবে বাঁশটা না দিলে হতো না?
এখন ও যদি সত্যি ভাবে আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি তখন? আমার এতোদিনের সব কিছুতে তুমি এক মিনিটে পানি ঢেলে দিলে।এইটা কিন্তু ঠিক করোনি

নীরা -আরে আমি তো ফান করছি।আপনি এতো সিরিয়াস ভাবে নিচ্ছেন কেন?

প্রাপ্তি-ওই তোদের ফিসফিস বন্ধ কর।(ফারহানের দিকে তাকিয়ে)তুমি কাউ কে ভালোবাসো আর আমাকেই বলো নাই।

ফারহান -প্রাপ্তি! সত্যি আমি অন্য কোনো মেয়েকেই ভালোবাসি না।তবে হ্যা আমি একজনকে ভালোবাসি। ও সবার থেকে আলাদা।কিন্তু আমি যতোই ওর কাছে যেতে চাই মনে হয় ও আমার থেকে ততো দূরে চলে যায়।তাই ভাবছি এই বছরি তাকে আমার কাছে নিয়ে আসবো।না হলে পাখী উড়ে যাবে।কথা গুলো একদমে বলে ফারহান চলে গেলো।

প্রাপ্তি -এইটা কি হলো।একটু আগেতো ভালোই ছিলো।নীরা! তুই কি কিছু বলেছিস? না হলে এইভাবে চলে গেলো কেন?

নীরা -মৃদুল একা আছে আমি যাই।অনেক রাত হয়েছে তুই ঘুমিয়ে পড়।আর হ্যা আয়ানের সাথে কথা হয়েছে?কেমন আছে ও?

প্রাপ্তি -ভালোই আছে।

নীরা -আচ্ছা ঠিক আছে ঘুমা।

নীরার চলে গেলো।কিন্তু প্রাপ্তি ফারহানের কথা গুলো ভাবছে।নীরা নিশ্চয় কিছু বলেছে।না হলে ফারহান কখনো এইরকম রাগ দেখিয়ে চলে যেতো না।আচ্ছা ফারহান কোন মেয়েকে এতো ভালোবাসে যে সবার থেকে আলাদা।

চলবে,,,,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট:৭

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট:৭

#Rabeya Sultana Nipa

 

আজ নীরার বিয়ে। সেই মৃদুলের সাথেই। অনেক ঝড়ঝাপটা ফিরিয়ে আজ তাদের বিয়ে।মেয়ের জেদের কাছে তার বাবাকে হারতেই হলো।কারণ নীরা সবাইকে বলেছে এই বিয়ে না হলে পালিয়ে যাবে নয়তো মরে যাবে।৭ দিন সময় দেওয়ার পর ও যখন মেয়ের মুখে মৃদুলকে ভুলতে না পারার কথা তখন বিয়ে ছাড়াতো আর কোনো উপায় নেই।
এইদিকে প্রাপ্তি ২ দিন ধরে কারো সাথে তেমন কথা বলছে না।ভালো করে খাচ্ছেও না।মনে হচ্ছে নীরাকে সে সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলছে।নীরা আর সে বসে বসে কান্না করছে। সবাই বুজানোর চেষ্টা করছে তাদেরকে। নীরাকে বিদায় দিয়ে সবার মন খারাপ।প্রাপ্তি দরজা আটকিয়ে বসে আছে।নিজেকে নিজেই বুজানোর চেষ্টা করছে।তাকেও একদিন এই বাড়ী ছেড়ে যেতে হবে।কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই কখন প্রাপ্তি ঘুমিয়ে পড়লো তার মনে নাই।

নীরার বাবা চুপ করে বসে আছে ড্রইংরুমে। এমন ভাবে বসে আছে মনে হচ্ছে দুনিয়ার সব চিন্তা তার মাথার উপর।প্রাপ্তি মা এসে বললো

প্রাপ্তির মা -কি এতো চিন্তা করছেন? ভাইয়া!

নীরার বাবা -নীরা বিয়েটা শেষমেশ হয়েই গেলো।ভেবে ছিলাম আগে প্রাপ্তি বিয়ে দিবো তারপর নীরাকে।কিন্তু নীরা এমন কাজ করবে আমি ভাবতেই পারি নাই।

প্রাপ্তির মা -এইসব নিয়ে একদম চিন্তা করার দরকার নাই।প্রাপ্তির বিয়ে তো ঠিক করাই আছে শুধু ওর বাবা আসুক বিয়েটা সবাই মিলে তারিখ টা ঠিক করলেই হবে।

নীরার বাবা -তা ঠিক বলছেন।আচ্ছা নীরার বিয়েতে ফারহানের ফ্যামিলি আসেনাই কেন?এতো করে বলেছি ফারহানকে,বললো কি যেন কাজ পড়ে গেছে তাই আসতে পারবেনা।

প্রাপ্তির মা -হ্যা আমিও বলেছিলাম ওর মাকে, বলেছে প্রাপ্তির বাবা এলে নাকি একসাথে আসবে।এখন ফারহানের কাজ আছে তাই আসতে পারবেনা।

নীরার বাবা -প্রাপ্তির কি অবস্থা? এইভাবে থাকলে তো শরীর খারাপ করবে।

প্রাপ্তির মা -ঘুমিয়েছে মনে হয়।একটু আগে ডেকেছি উঠে নাই।২ দিন থেকে তো ঘুমায়নি তাই হয়তো তাড়াতাড়ি ঘুমিয়েছে।

পরেরদিন নীরার শশুর বাড়ীতে সবাই যাবার জন্য রেডি হচ্ছে।প্রাপ্তিও রেডি হয়ে নিচে নেমে এসে দেখে ফারহান দাঁড়িয়ে তার
সেজো কাকার সাথে কথা বলছে।প্রাপ্তি ফারহান কে দেখেই দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো।ফারহান অবাক হয়ে সেজো কাকার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কি করবে সে বুজতে পারছেনা।সবাই ও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।অনেকক্ষণ পর ফারহান নিজেকে ছাড়িয়ে

ফারহান -কি হয়েছে প্রাপ্তি তোমার?এইভাবে জড়িয়ে ধরলে কেন?

প্রাপ্তি কি বলবে বুজতে পারছেনা।সত্যি তো সেই ফারহানকে এইভাবে জড়িয়ে ধরাটা ঠিক হয়নি।

প্রাপ্তি চুপ করে আছে দেখে প্রাপ্তির ছোটা কাকা ইমরান বললো আসলে ফারহান নীরা কাল চলে যাওয়ার পর থেকে আমার মনে হচ্ছে প্রাপ্তি কেমন যেন হয়ে গেছে।তুই আর নীরাই তো ওর ভালো ফ্রেন্ড। কাল আবার তুই নীরার বিয়েতেও আসলিনা।হয়তো ও ভেবেছে তুই ওকে ভালোবুজিস।

প্রাপ্তি -কাকা তুমি চুপ করো।আসলে ফারহান তুমি কিছু মনে করো না।নীরার কথা ভাবতে ভাবতে হয়তো আমি নিজেই পাগল হয়েগেছি।তোহ,,, তুমি কখন এলে?

ফারহান -(মনে মনে,,, আমি তো চাই সারাজীবন তুমি আমায় এইভাবেই জড়িয়ে ধরবে)একটু আগেই।সবাই এতো করে বলছে তাই না এসে পারলামনা।নীরাতো বলেছে আজ আমাকে ওই বাড়ীতে না দেখলে নাকি আমার খবর আছে।তাই চলে আসলাম।তবে আমাকে কাল আবার চলে যেতে হবে।

এমন সময় প্রাপ্তির মেজো কাকা বাহিরে থেকে এসে বললো গাড়ী এসে গেছে সবাই চলো।

ফারহান -প্রাপ্তি! আমি গাড়ী নিয়ে আসছি তুমি আমার সাথে চলো।

সেজো কাকী -(ফারহানের কানে কানে এসে বললো)ফারহান! তুমি কি ভেবেছো আমরা কিছুই বুজিনা।

ফারহান -কাকী আমি জানি আপনারা সবাই বুজেন।কিন্তু যাকে বুজাতে চাচ্ছি সেই তো বুজেনা।কাকী জানেন আমার জীবনে প্রাপ্তির মতো মেয়ে কমে দেখেছি।অন্য সবার থেকে কেন যেন তাকে আলাদা লাগে।তার দিকে তাকালেই মনে হচ্ছে এক অদ্ভুত মায়া কাজ করে।মনে হয়ে সারাজীবন ওকেই ভালোবেসে কাটিয়ে দিতে পারবো।

প্রাপ্তি -ফারহান! চলো দেরি হয়ে যাচ্ছেতো।আর কাকীর সাথে এতো ফিসফিস করার কি আছে।এখন চলো বাসায় এসে না হয় ফিসফিস করবা।

ফারহান প্রাপ্তির কথা শুনে হাসি দিয়ে বললো আমি ফিসফিস করছিনা।জাস্ট কাকীকে বুজাচ্ছি আমি কি রকম মেয়েকে ভালোবাসি।
প্রাপ্তি আর কিছু না বলে গাড়ীতে গিয়ে বসে আছে।ফারহানও ফাঁসে গিয়ে বসেছে।

ফারহান -রাগ করেছো?

প্রাপ্তি -রাগ করবো কেন?আর তোমার সাথে তো রাগ করার প্রশ্নই আসে না।রাগ আমি তার সাথেই করি যাকে আমি ভালোবাসি।

প্রাপ্তির কথা শুনে ফারহান মন খারাপ করে বসে আছে।

প্রাপ্তি -তোমার আবার কি হলো? কথা বলছোনা কেন?

ফারহান প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে তুমি সত্যি অদ্ভুত একটা মেয়ে।কখন কি করো নিজেও জানো না।
দুজনেই কথা বলতে বলতে নীরার বাড়ীতে চলে এসেছে।

প্রাপ্তিতো গাড়ী থেকে নেমেই নীরাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো।তাদেরকে দেখে মনে হচ্ছে কতো বছর পর দেখা।সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। সবার এইভাবে তাকানো দেখে ফারহান তাদের কাছে এসে বললো এইভার তো ছাড়ো। নীরা! এখানে শুধু প্রাপ্তি আসে নাই সবাই এসেছে।কিন্তু তোমাদের দেখে মনে হচ্ছে এই পৃথিবীতে তোমরাই আছো।আর আমরা সবাই এলিয়েন।
ফারহানের কথা শুনে

প্রাপ্তি -আবার শুরু করছো?

নীরা -তোরা এখানে ঝগড়া করার কনো দরকার নাই।ভাইয়া চলেন আপনাকে মৃদুলের সাথে পরিচয় করিয়েদি।
এইদিকে সবাই সবার সাথে পরিচয় করানো হচ্ছে।নীরার শাশুড়ি ফারহান কে দেখে প্রাপ্তির মাকে বললো

নীরার শাশুড়ি -বেয়ান! এই ছেলেটা আপনাদের কি হয়? এতোদিন আপনাদের আর আমাদের মধ্য এতো কিছু হলো ওকে তো দেখলাম না।

প্রাপ্তির মা-ওর সাথে আমার মেয়ের প্রাপ্তির বিয়ে ঠিক করেছি।আমাদের বড় জামাই।প্রাপ্তির বাবা আসলেই বিয়েটা হবে।

পাশে থেকে নীরা কথাটা শুনে অবেক হয়ে তার বড় মাকে দেখছে।নীরা বড় মায়ের কাছে এসে বললো
নীরা -বড় মা এইদিকে আসো তোমার সাথে আমার কথা আছে।

প্রাপ্তির মা -আচ্ছা চল।

একটু ধুরে গিয়ে

নীরা -প্রাপ্তির বিয়ে কথা বলছিলে তখন।আমি যা শুনেছি তা কি সত্যি?

প্রাপ্তির মা -হ্যা।এইটা তো সবাই জানে শুধু তোরা ছোটোরা ছাড়া।

নীরা -বড় মা! প্রাপ্তি কি এই বিয়ে মেনে নিবে?সে তো,,,,,,,,,

প্রাপ্তির মা -সে তো কি নীরা?

নীরা কিছু বলার আগেই নীরাকে তার শাশুড়ি ডেকে নিয়ে গেলো নতুন গেস্ট আসছে তার সাথে দেখা করানোর জন্য।

চলবে,,,,,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ৬

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ৬

#Rabeya Sultana Nipa

 

নীরার বাবা বাড়ীতে এসে চুপচাপ শুয়ে আছে।নীরার মা এসে শুয়ে থাকতে দেখে

নীরার মা -হঠাৎ অসময় শুয়ে আছো?কিছু হয়েছে?

নীরার বাবা -কিছু হয়নি।নীরা কোথায়?

নীরার মা -ও তো বাহিরে গেছে।একটু আগে বাসায় চলে এসেছে।ডাকবো?

নীরার বাবা -না এইখানে ডাকার দরকার নাই।সবাইকে ড্রইং রুমে আসতে বলো সাবার সাথে কথা আছে।
নীরার মা উঠে গিয়ে সবাইকে ডেকে আনলো।

সবাই ড্রইং রুমে চুপচাপ বসে আছে।সবার মুখে চিন্তার ছাপ কি এমন হলো সবাইকে এইভাবে ডেকে আনলো।

প্রাপ্তির মা -ভাইয়া কিছু কি হয়েছে।সবাইকে ডাকলেন।

প্রাপ্তি নীরাকে চোখে ইশারা দিয়ে জিজ্ঞাস করলো কি হয়েছে।নীরা মাথা নাড়িয়ে বললো সেও কিছু জানেনা।

নীরার বাবা -(নীরার দিকে তাকিয়ে)নীরা তুমি আজ কোথায় গিয়েছিলে?

নীরা -আব্বু আমি তো,,,,, শপিং এ গিয়েছিলাম।প্রাপ্তিকে বলেছি আমার সাথে যেতে ও যায়নি তাই আমি একা গিয়েছি।

নীরার বাবা -প্রাপ্তি তুমি যাও নাই কেন?আর ও কেনো গেছে তুমি জানো?

প্রাপ্তি -(প্রাপ্তি কি বলবে বুজতে পারছে না)আমি জানিনা। কাকাই আমার মাথা ব্যাথা ছিলো তাই যায়নি।

নীরার বাবা -(সবার দিকে তাকিয়ে)এই দুজনের মধ্যে কেউ একজন মিথ্যা বলছে তোমরা কি জানো?

সাবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে প্রাপ্তি আর নীরার দিকে।নীরাও কথাটা শুনে ভয় পেয়ে গেলো। বাবা কি কিছু জেনে গেছে।নীরার মাথা কাজ করছেনা। বাবা হয়তো সব জেনে গেছে। না হলে এইভাবে সবার সামনে ডেকে আনতো না।

প্রাপ্তির মা -কি হয়েছে আমি কিছুই বুজতে পারছি না।আপনি সব খুলে বলুনতো।

নীরার বাবা -আমি কিছু বলবো না। আজ শুধু নীরা কথা বলবে।নীরা বলো? কে ওই ছেলে?
নীরা চুপ করে নিছের দিকে তাকিয়ে আছে।কি থেকে কি বলবে বুজতে পারছেনা।

নীরার বাবা -নীরা চুপ করে থেকোনা বলো?
নাকি তুমি বলতে চাও না?

নীরা -আ,,,ব্বু আ,,,,,মি ওকে চি,,,,,,নি।

নীরার বাবা -তোতলাচ্ছো কেনো? শুধুই চিনো?নাকি কোনো সম্পর্ক আছে ওই ছেলের সাথে?

নীরা -,,,,,,,,,

নীরার বাবা -তার মানে নীরবতা সম্মতির লক্ষণ।

প্রাপ্তির মা -নীরা তোমার বাবা যা বলছে তা কি সত্যি? তুমি বড় মাকে বলো আমি কিছু বলবো না।তুমি আমার কাছে সব খুলে বলো।

নীরা -,,,,,,,,

নীরার বাবা -ভাবী ও কিছুই বলবে না।কারণ তারা এখন আমাদের থেকে বড় হয়ে গেছে।
আমরা বুজতে পারি নাই।
(নীরার দিকে তাকিয়ে) ৭ দিন তোমাকে সময় দিলাম।তুমি ভেবে বলবে তুমি কি করতে চাও।তুমি কি সত্যি ওই ছেলে কে বিয়ে করবে নাকি অন্য ছেলে দেখবো?যাও রুমে যাও। ভেবে দেখো।

নীরা আর কিছু না বলে তার রুমে চলে গেলো।
নীরার বাবা-আমি সবাইকে বলছি নীরাকে বুজাও।প্রাপ্তি! আমার মনে হয় তুমি অনেক কিছুই জানো।তবুও তোমাকে বলছি ওকে ভালো করে বুজাও।

প্রাপ্তির মা -ভাইয়া ছেলে ভালো হলে না হয় বিয়ের ব্যাপারটা ভেবে দেখো।মেয়ে তো বড় হয়েছে, আজ না হয় কাল তো বিয়ে দিতেই হবে।

নীরার বাবা -ভাবী আমি ছেলেটাকে চিনি।ছেলেটা মোটামুটি ভালো।তবে এখনো বেকার। এখন তুমি বলো বেকার ছেলের কাছে মেয়ে বিয়েদি কি করে?আরেক টা কথা বাড়ির বড় মেয়ে রেখে মেজো মেয়ে বিয়ে দিলে মানুষে কি বলবে?

প্রাপ্তির মা -তা ঠিক বলছো। আচ্ছা ৭ দিন তো সময় দিয়েছো এর ভিতরে যদি ঠিক হয় আরকি।

নীরার বাবা -ঠিক না হলে বিয়ে এইছাড়া আর কিছু ভাবা যাবে না।

নীরার মা -ভাবা যাবে না কেন? আমার মেয়ে ওতোটা খারাপ কাজ করেনি।

নীরার বাবা -তোমাকে এইখানে কে কথা বলতে বলেছে? একটা মেয়ে সামলাতে পারো না।আর কি পারো তুমি আমাকে একটু বলবে?
নীরার মা কিছু না বলে উঠেই চলে গেলো।
সত্যিই কিছুই বলার নাই। যে মেয়েকে এতো বিশ্বাস করতো সেই মেয়ে এমন কাজ করবে এইটা তো ভাবাই যায় না।

নীরা একা একা বসে কান্নাকাটি করছে।প্রাপ্তি এসে বুজানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না।

প্রাপ্তি -তুই কি এইভাবে কান্না করে যাবি?কিছু বলবি না?

নীরা -নীরা কান্না থামিয়ে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে বললো আচ্ছা আয়ানের সাথে তো তোর ২ মাসের সম্পর্ক। পারবি ওই ছেলেটাকে ভুলে যেতে?

প্রাপ্তি কিছু না বলে নীরার দিকে তাকিয়ে আছে কি বলবে সে? কিছুই বলতে পারবে না সে। চুপ করে থাকা ছাড়া।

নীরা -জানি এখন চুপ করেই থাকবি।আর আমার ১ বছরের রিলেশন আমি কিভাবে ভুলি বল?

প্রাপ্তি -আমি তো তোকে ভুলতে বলি নাই।
একটা কাজ কর মৃদুলকে একটা ফোন দিয়ে বল ওর বাসা থেকে লোক পাঠাতে। বিয়ের ব্যাপারে কথা বলার জন্য।

নীরা -মৃদুল এখনো কিছুই করে না।আব্বু কখনোই রাজি হবে না।আর তুই বাড়ির বড় মেয়ে সবাই কি বলবে।তোকে রেখে আমাকে বিয়ে দিলে।

প্রাপ্তি -হা হা হা নীরার কথা শুনে প্রাপ্তি হাসতেই থাকলো।তুই এই জন্য বিয়ে করবি না?

নীরা -এইখানে হাসার কি হলো বুজলাম না।আচ্ছা ঠিক আছে আমি মৃদুলকে সব বলছি।

আচ্ছা কথা বল আমি ওই দিকে দেখে আসছি কি হচ্ছে।

সবাই যে যার মতো চুপচাপ কাজ করছে।
প্রাপ্তি সেজো কাকীর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো।

প্রাপ্তি -সেজো কাকী! আজ রাতে কি রান্না করছো?

সেজো কাকী -তুই রান্না ঘরে কি করছিস সেটা বল? মেজো ভাইয়া এসে দেখলে আমাকেই বকা দিবে।তুই তাড়াতাড়ি তোর রুমে যা।তোর কিছু লাগলে আমি দিপাকে (কাজের মেয়ে) পাঠিয়ে দিচ্ছি।এইবার তো যা।

প্রাপ্তি -ওহহহ আমার কিচ্ছু লাগবে না।শুনোনা! কাকা আর কিছু বলছে পরে?

এমন সময় প্রাপ্তির মায়ের ডাক শুনে দৌড়ে প্রাপ্তি রান্নাঘর থেকে চলে গেলো তার মায়ের রুমে।
প্রাপ্তি -আম্মু আমায় ডেকেছো?

প্রাপ্তির মা-বস এইখানে।(অনেকক্ষণ প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে)তুই সত্যি কিছুই জানিস না।আমি জানি আমার মেয়ে আমার কাছে কখনো মিথ্যা কথা বলেনা।আর আমি চাই আজও সেটা প্রমান হক।

প্রাপ্তি -আ,,,,, ম্মু আমি বেশি কিছু জানি না।
শুধু এইটাই জানি ওই ছেলেটা কে নীরা ভালোবাসে।তবে আম্মু জানো ছেলেটা অনেক ভালো।তুমি কাকাই কে বলে ওদের বিয়ে দিয়ে দাও না।কাকাই তোমার কথা শুনবে।

প্রাপ্তির মা-আমি এইটা বলতে পারবো না।কারণ মেয়েটা ওর। ওর মেয়ের ভালো খারাপ ওই ভালো জানে।এইখানে আমি কিছু বলতে পারবো না।আর তুমিও প্রাপ্তির মতো এমন কিছু করোনা সবার মনে কষ্ট যায়।

প্রাপ্তি কথা না বাড়িয়ে তার মায়ের সামনে থেকে উঠে গেলো।প্রাপ্তি মনে মনে ভাবছে সেও তো একি কাজ করছে আয়ান কে ভালোবেসে।কি হয়েছে সে আয়ান কে দেখে নাই।তাতে তো ভালোবাসা কমে যায়নি।শুধু কিছু সময়ের জন্য দেখা ভালোবাসা হয়না। ধুর থেকেও ভালোবাসা যায়।কই তাতে তো কিছু কম পড়ে যায়নি।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে রুমে এসে দেখে আয়ান ফোন করেছে।ফোনটা রিসিভ করতেই ওই পাশ থেকে
কই ছিলে তুমি?তোমার সাথে কথা বলে আমি থাকতে পারি না তুমি জানো না?

প্রাপ্তি -আয়ান দুপুরেও তো কথা বললাম।তুমি এমন ভাব করছো মনে হয় ১ বছর পর কথা বলছি।

আয়ান -তার চেয়ে বেশি হয়ে গেছে।তুমি আমার সাথে প্রতি ঘন্টায় কথা বলবে।তুমি জানো? তোমার সাথে কথা না বললে আমি যেন কি হারিয়ে ফেলেছি।but তোমাকে তো বুজাইতে পারবোনা।

প্রাপ্তি-জানি আমি।আর শুনানো লাগবে না।আজ কি হয়েছে জানো?

আয়ান -না বললে জানবো কি করে?

প্রাপ্তি -সেই দিন তোমায় বলেছিলাম না।নীরা আর মৃদুলের কথা।আজ বাসায় সবাই জেনে গেছে।

আয়ান -তারপর? সবাই কি বলছে এখন?

প্রাপ্তি – কাকাই নীরাকে ৭ দিনের সময় দিয়েছে।নীরা কি করতে চায় ভাবে নিতে।

চলবে,,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ৫

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ৫

#Rabeya Sultana Nipa

 

নীরার কথা শুনে প্রাপ্তি অবাক হয়ে বললো
তুই প্রেম কিরছিস আর আমি জানি না
দেখছিস তুই কখনোই আমায় আপন ভাবতে পারিস না।আমি যাই হোক না কেন সবকিছু তোকেই বলি।আর তুই আমাকে কিছুই বললি না?

নীরা -আমি তোকে সত্যিই বলতে চেয়েছিলাম।কিন্তু মৃদুল আমায় বলতে নিষেধ করেছে।ও বলেছে ওই তোকে বলবে।

প্রাপ্তি -মৃদুল ছেলেটা কে? কিভাবে যোগাযোগ হয়েছে তোদের?

নীরা -১ বছর হয়ে গেছে।ওর সাথে তেমন কথা হয়না।কলেজে গেলে শুধু দেখা করি।আমাদের ক্লাসের আরশি আছে না ওর ভাই।

প্রাপ্তি -(অবাক হয়ে)১ বছর হয়ে গেলো আর আমি কিছুই জানিনা।ভালোই তো।আরশির ভাইকে দেখলি কেমনে?

নীরা -ওর বোনের সাথে দেখা করতে এসেছিল সেইদিন ও আমাকে আরশির সাথে দেখেছে।তার পর একটু একটু করে এগিয়েছে সব কিছু।

প্রাপ্তি -ঠিক আছে চিন্তা করসিনা আমি আছি তোর সাথে।এখন কাউকে কিছু বলার দরকার নাই।পড়াটা শেষ কর।তারপর সবাইকে সবকিছু বলা যাবে।

প্রাপ্তি, নীরা কই তোরা বড় মায়ের ডাকে দুজনেই দৌঁড়ে ড্রইং রুমে আসলো।

মেজো কাকী -কিরে নাস্তা করবিনা।তাড়াতাড়ি নাস্তা করে কলেজে যাও।

আজ দুজনেই কোনো কথা না বলে নাস্তা করতে বসেছে।

সেজো কাকা-ভাইয়া তুমি কি আজ কোনো কিছু মিস করছো?
(প্রাপ্তি আর নীরাকে চোখ দিয়ে ইশারায় দেখিয়ে)

মেজো কাকা -হ্যা ঠিকি বলছিস।কিন্তু দুইটা বকবক মানুষ হঠাৎ এই ভাবে চুপ হয়ে গেলো কেন?

তারপরেও প্রাপ্তি আর নীরাকে কিছু না বলেতে দেখে

সেজো কাকা -কি হয়েছে তোদের? এইভাবে চুপচাপ হয়ে গেলি কেনো?কেউ কিছু বলেছে? না কিছু লাগবে?

প্রাপ্তি -কেউ কিছু বলেনি আর কিছু লাগবেও না।

সেজো কাকা -তাহলে ঠিক আছে।আর কিছু হলে বলতে পারিস।

প্রাপ্তি আর নীরা কিছু না বলে কলেজে চলে গেলো।

নীরা -প্রাপ্তি চল আজকে তোকে মৃদুলের সাথে দেখা করিয়েদি।

প্রাপ্তি -না আজ না,, অন্য একদিন।এখন এমন কিছু করিস না কেউ দেখে বাসায় গিয়ে বলে।একটু সাবধানে চলার চেষ্টা কর।আচ্ছা তোর ওই মৃদুল কি করে?

নীরা -ও এখনো কিছু করে না। তবে চাকরী জন্য চেষ্টা করতেছে।বলেছে চাকরী ফেলে বাসায় আমাদের কথা জানাবে।

প্রাপ্তি -ওও ভালো।

কলেজ শেষ করেই দুজনে বাসায় এসে দেখে ফারহান। সাথে তার ছোটো কাকাও এসেছে।

প্রাপ্তি -কাকাই তুমি আসলে কখন? তুমি তো মিলির বিয়েতেও আসলেনা।

ছোটো কাকা- একটু আগেই এসেছি।আচ্ছা তোরা আগে ফ্রেশ হয়েনে তারপর আজ সবাই মিলে আড্ডা দিবো।

প্রাপ্তি -(ছোটো কাকার কানের কাছে গিয়ে)এই ছাগলের ৩ নাম্বার বাচ্চাটাকে কেনো নিয়ে এসেছো?

ফারহান -আমি ছাগলের ৩ নাম্বার বাচ্চা!প্রাপ্তি! তুমি কিন্তু এই ভাবে বলতে পারো না।আমি আসতেই চাইনি ইমরান (ছোটো কাকা)আমায় জোর করে নিয়ে এসেছে।

প্রাপ্তি -কই আমি তো কিছু বলিনি। তুমি এইগুলো শুনলে কি করে?

ফারহান -তোমার চুপেচুপে বলতে হবেনা যে মাইক তোমার গলায় মানুষ এমনিতেই শুনবে।

প্রাপ্তি -মা দেখেছো? বলেছিনা এই শুধু এইখানে আসে আমার পিছু লাগার জন্য।ধুরঃ বলেই প্রাপ্তি তার রুমে চলে গেলো।

সবাই প্রাপ্তির কান্ড দেখে সবাই হাসলেও ফারহানের মুখে কোনো হাসি নাই।

প্রাপ্তির মা -(হাসতে হাসতে)বাবা ফারহান কিছু মনে করোনা। আমার মেয়েটা একটু পাগল ধরনের।এমনিতে অনেক ভালো।

ফারহান -না আন্টি আমি কিছু মনে করেনি।বরং আমার ওর সবকিছুই ভালোলাগে।আমি ঢাকায় গেলে ওর এইসব পাগলামি খুব মিস করি।

ফারহানের কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে।

সেজো কাকী -ফারহা,,,,,ন!ব্যাপার কি?

ফারহান -কোনো ব্যাপার নাই।
কথাটা বলেই চলে গেলো।

১ মাস পর

প্রাপ্তি আর আয়ান এখন একজন আরেকজন কে ছাড়া থাকতেই পারে না।প্রাপ্তি এই ১ মাস একটা রাতেও ঠিক করে ঘুমায়নি।প্রতিটি রাত আয়ানের সাথে কথা বলে কাটিয়েছ। আয়ান আর প্রাপ্তির সম্পর্ক এখন শুধু বিশ্বাসের উপরেই টিকে আছে।কারন তারা একজন আরেকজনের ছবি ছাড়া সরাসরি এখনো কেউ কাউকে দেখিনি।তারা একে উপরকে না দেখেও নিজেদের সুখ দুঃখ গুলোকে ভাগ করে নেয়।ঘন্টার পর ঘন্টা শুধু দুজন দুজনের কথাই ভাবে।যতো দিন যায় তাদের ভালোভাসাও তোতো গাঢ় হয়।এই ভাবে চলতে থাকে তাদের দিন গুলো।প্রাপ্তি মাঝে মাঝে দেখা করতে চাইলেও আয়ান বলে আমি এখনো কিছু করি না।তোমার ফ্যামিলির সামনে আমি এইভাবে কখনোই দাঁড়াতে পারবোনা।আগে কিছু করি তারপর।আমি তোমাকে তোমার ফ্যামেলির কাছে ছোটো হতে দিতে পারি না।আরানে কথা শুনে প্রাপ্তি আয়ানের উপর ভালোবাসা আরো দিগুণ বেড়ে গেলো।

প্রাপ্তি -জানো আয়ান আমি কখনো ভাবিনি তোমার মতো কাউকে আমার জীবনে পাবো।

আয়ান -প্রাপ্তি আমি চাই না আমার ভালোবাসার কোনো অমর্যদা হক।জানো আমি তোমাকেই প্রথম ভালোবেসেছি।তাও আবার না দেখে।আমার আশেপাশে অনেক মেয়ে আছে কিন্তু তাদের প্রতি আমার কোনো ভালোলাগায় কাজ করে না।

প্রাপ্তি আয়ানের বলা কথা গুলো চুপ করে শুনছে।প্রাপ্তি ভাবছে তুমিও আমার প্রথম ভালোবাসা।তোমাকে আমার মনে হয় তুমি আমার সারাজীবনের আপন কেউ।

প্রাপ্তি! প্রাপ্তি! নীরা ডাকে প্রাপ্তি ফোন রেখে নীরার রুমে এলো।

প্রাপ্তি -কিরে ডাকছিস কেন?

নীরা -আমি বাহিরে যাচ্ছি যাবি?

প্রাপ্তি -এই বিকেলে তুই এখন কোথায় যাবি? আর তোকে একা যেতে দিবে?

নীরা -তোর ওই সব নিয়ে ভাবেতে হবে। মাকে বলেছি আমার কিছু কিনাকাটা আছে। যাবো আর আসবো।তুই গেলো আরো ভালো হতো চলনা।

প্রাপ্তি -একটা কথা বলি।আমার মনে হয় তুই মৃদুলের সাথে দেখা করতে যাচ্ছিস।

নীরা -হুম, তুই কি করে বুজলি?

প্রাপ্তি -তোর সাজ দেখেই বুজেছি। নীরা আজ তুই না গেলে হয় না। আমার মন জানি কেমন করছে।

নীরা -তুই এই কথা বলছিস(হাসি দিয়ে)কিচ্ছু হবেনা দেখা করেই চলে আসবো।আমি তাহলে যাই তুই আয়ান ভাইয়ার সাথে কথা বল।তোর তো এইছাড়া কোনো কাজ নেই।

নীরা কথা গুলো বাহিরে চলে গেলো।

নীরা আর মৃদুল রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলছে।এমন সময় তার বাবা ওই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় নীরা কে দেখে ফেলে। কপাল খারাপ থাকলে যা হয় আরকি।নীরার বাবা সেখানে নীরাকে কিছু না বলে বাড়ী চলে আসে।।

চলবে,,,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ৪

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ৪

#Rabeya Sultana Nipa

 

মিলির শ্বশুর বাড়ি থেকে সবাই চলে এসেছে। মিলিকে সাজিয়ে বসে রেখেছে।বিয়ে পড়ানো শেষ করে সবাই বরের কাছে গেলো নীরা,প্রাপ্তি,নাজিফা, মিলির আরো অনেক কাজিনরা সহ মিলির বরকে খেপানোর চেষ্টা করছে।ফারহান সবার এইগুলো দেখে প্রাপ্তিকে হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।

প্রাপ্তি -ফারহান, কি করছো এইসব।সবাই দেখছেতো।

ফারহান -,,,,,,

প্রাপ্তি -প্লিজ ফারহান কি হয়েছে বলবে তো।এই রকম ভাবে হাত টেনে আনতেছো কেনো?
ফারহান কিছু না বলে তার মায়ের কাছে নিয়ে বসালো।

ফারহান -আন্টি প্রাপ্তিকে আপনার সাথে রাখেন।যখন তখন যা ইচ্ছা তাই করে।

প্রাপ্তির মা – কি হয়েছে?আমাকে বলো।

ফারহান -ও সবার সাথে গিয়ে মিলির বরকে জ্বালানোর চেষ্টা করছে।আর ওদের এইসব ফাজলামো ছেলেরা বসে বসে দেখছে।

প্রাপ্তি -আমি তো ইচ্ছা করে যাইনি ওরা সবাই আমাকে জোর করে নিয়ে গেছিলো।
এই জন্য তুমি আমাকে গরু মতো টানতে টানতে নিয়ে এলে?

ফারহান -হুম ঠিকি বুজেছো।

প্রাপ্তি ফারহানকে কিছু না বলে চুপ করে নিছের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।ফারহান ও আর কিছু না বলে চলে গেছে।

সন্ধ্যায় মিলিকে বিদায় দিয়ে প্রাপ্তিরাও বাসায় চলে এসেছে। ওর ফুফি আসতে দিচ্ছিলোনা কিন্তু কিছু করার নাই।সবারই কাজ আছে।ওই বাড়ি থেকে এসে সবাই ফ্রেশ হয়ে যেই যার মতো করে কাজ করছে।
ওইখান থেকে আসার পর প্রাপ্তি ফারহানের সাথে একটা কথাও বলিনি।ফারহান বার বার সরি বলেছে তবুও প্রাপ্তি কথা বলেনি।

নীর, নীর তুমি কি ঘুমাচ্ছো।ফারহান নীরকে ডাকতে ডাকতেই নীরের রুমে এসে বসলো।

নীর -ভাইয়া কিছু বলবে?

ফারহান -তোমার বোন তো আমার উপর এখনো রেগে আছে কি করবো বলতো। কাল আমি ঢাকা চলে যাবো। আম্মু ফোন করেছে তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্য। কিন্তু প্রাপ্তি এইভাবে থাকলে আমি কিছুতেই যেতে পারবোনা।

নীর -কিছু হবে না।সব ঠিক হয়ে যাবে।প্রাপ্তির মন ভালো হলে ও নিজেই কথা বলবে।আপনার চিন্তা করতে হবে না।

এই দিকে প্রাপ্তি ফোন নিয়ে বসে আছে আয়ানের অপেক্ষায়।কখন সে তার সাথে কথা বলবে।প্রাপ্তি মনে মনে ভাবছে আমি এই ছেটার জন্য কেন অপেক্ষা করছি।আমি কি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি। না আমি ওকে কেন ভালোবাসবো যাকে আমি চিনি না জানি না।কিন্তু আমার মন কেন জানি তার কথায় ভাবে।
এইভাবে প্রতি রাতে প্রাপ্তি আর আয়ানের কথা চলতে থাকে। তারা একে উপরকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে।কিন্তু এখনো কেউ কাউকে বলতে পারেনাই।
আয়ান ভাবছে আজকে প্রাপ্তিকে বলবে তার মনের কথা।
আয়ানের ভাবার মাঝেই প্রাপ্তির এসএমএস।
প্রাপ্তি -কি করো তুমি? আজ সারাদিন কই ছিলা?

আয়ান -তোমার কথায় ভাবছিলাম।কি করো তুমি?

প্রাপ্তি -কিছু না।কি ভাবছো তুমি আমার কথা?

আয়ান -বললে যদি তুমি রাগ করো? তাই সাহস হচ্ছে না।

প্রাপ্তি -কেন রাগ করবো? যা বলবে বলে ফেলো।

আয়ান -না মানে,,,,, তোমার নাম্বারটা দিতে পারবে?ফোনেই বলবো সব। যদি না দিতে চাও আমি কিছু মনে করবো না।

প্রাপ্তি -ঠিক আছে,, তবে সবসময় ফোন দিও না। যখন ফোন করবে আগে আমাকে এসএমএস এ জানাবে।০১৭………….।তবে আজ কথা বলতে পারবো না।।কাল কথা বলবো।

আয়ান -thanks প্রাপ্তি।আমি ভাবতেই পারি নাই তুমি আমাকে নাম্বার দিবে।ঠিক আছে তুমি বললেই আমি ফোন দিবো এর আগে না।

এইভাবে দুজনে পুরো রাত কথা বলতে থাকে।

পরেরদিন আয়ান ভাবছে প্রাপ্তির সাথে কখন কথা বলবে।মাঝে মাঝে প্রাপ্তির কথায় বুজা যায় প্রাপ্তি বড় ঘরের মেয়ে।বড়লোকের মেয়েরা দুইদিন কথা বলে ছেলেদের মন নিয়ে খেলা করে আবার সব কিছু ভুলেও যায়।কিন্তু প্রাপ্তি সাথে কথা বলে যতোটুকো বুজেছি প্রাপ্তি ওই মেয়েদের মতো না।
কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই প্রাপ্তির এসএমএস।

তুমি কই ফোন দিবেনা?

আয়ান সাথে সাথেই ফোন দিয়েছে।

প্রাপ্তি -আসসালামু আলাইকুম!

আয়ান -ওয়ালাইকুম সালাম।
এখনকার মেয়েরাও তাহলে সালাম দেয়।

প্রাপ্তি -তোমার কথাটা ভুল। মুসলমান হিসেবে সবারই সালাম দেওয়া উচিত। যাই হোক কেমন আছো?

আয়ান -ভালো।তুমি?

প্রাপ্তি -ভালো।এতোক্ষন কি করছিলে?

আয়ান -একটা অজানা মানুষের কথা ভাবছিলাম।যার কথায় সারাক্ষণ মাথায় ঘুরতে থাকে।আচ্ছা তারও কি আমার মতো হয়?

প্রাপ্তি -একটু চুপ থেকে,হতেও তো পারে।কিন্তু সব কথা তো আর মুখ ফুটে বলা যায় না।

আয়ান -এতো দিন তোমার সাথে কথা বলে বুজেছি তুমি অনেক বড় লোকের মেয়ে।তাই ভাবলাম তুমি কি আর আমার কথা ভাববে।

প্রাপ্তি-আমি কখনো তোমায় বলছি? আমি বড়লোকের মেয়ে?

আয়ান -বলা লাগবে কেন বুজেনিতে হয়।এইভাবে পুরো রাত তাদের কথা চলতে থাকে।
কথা বলতে বলতে কখন ভোর হয়ে গেলো দুজনে টেরি পেলো না।

আয়ান -প্রাপ্তি তুমি এখন একটু ঘুমাও না হলে আজ আর কলেজে যেতে পারবে না।

প্রাপ্তি -ঠিক আছে।তুমিও ভালো থেকো।

ফোন রেখে ঘুম মাএ চোখে এসেছে এমন সময় প্রাপ্তির মা এসে ডাকাডাকি শুরু করলো।

প্রাপ্তির মা-প্রাপ্তি! প্রাপ্তি! নামাজ পড়বিনা।উঠে গিয়ে নামাজ পড়েনে।
আমি যেন দ্বিতীয় বার ডাকতে না হয়।

মায়ের কথা শুনে প্রাপ্তি উঠে নামাজ পড়তে গেলো।
নামাজ পড়া শেষ করে বারান্দায় গিয়ে বসলো।মনে মনে ভাবলো এখন ঘুমালে আজকেও আর কলেজে যাওয়া হবে না।

একটু পর নীরা এসে বললো কিরে কাল সারারাত ঘুমাসনি তাই না?

প্রাপ্তি -তুই কি করে জানলি?

নীরা -আমি তো জানতাম না। কিন্তু একটু আগে জানলাম।

প্রাপ্তি -মানে? কে বললো তোকে?

নীরা -ফারহান ভাইয়া একটু আগে বড় মার ফোনে ফোন করেছিলো আমি কথা বলছি তার সাথে তোর ফোন নাকি সারারাত busy ছিলো।ও তোকে অনেক বার ফোন করে ছিলো। সেও ঘুমায়নি কাল রাতে।

প্রাপ্তি -ও কি পাগল নাকি? আমি যার সাথেই কথা বলি ওর সমস্যা টা কি?

নীরা -আমি কি করে জানবো।যাই হোক সারারাত কার সাথে কথা বলেছিস?

প্রাপ্তি -আয়ানের সাথে। জানিস পুরো রাত আমি ওর সাথেই কথা বলেছি।কিযে ভালোলেগেছে তোকে বুজাতে পারবো না।

নীরা -যার সাথে এসএমএস করিস ওই ছেলেটা না?

প্রাপ্তি -হ্যা।আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি। কিন্তু বলতে পারছি না।কি করি বলতো?

নীরা -কি করবি!,,,,,,সবাইকে বলে পারমিশন নিয়ে আয়।না হলে এই প্রেমে তুই একদিন ডুবেই মরবি।

প্রাপ্তি -তুই এইসব কি বলছিস? আমি তো কিছুই বুজতেছি না।

নীরা -তুই ভালো করেই জানিস এই ফ্যামিলির লোক গুলো কি রকম।তুই কি ভাবছিস এরা সব মেনে নিবে? কখনোই মেনে নিবে না বলে নীরার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে শুরু করলো।

প্রাপ্তি -কি আজিব ব্যাপার! তুই কাঁদছিস কেনো? নাকি তুইও কি কাউকে ভালোবাসিস?সত্যি করে বলতো কি ব্যাপার।
নীরা মুখ দিয়ে কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়িয়ে হ্যা বুজালো।

চলবে,,,,,,

(ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা করে দিবেন।কারন মানুষ মাএই ভুল করে।)

অজানা_অনুভূতি। পার্ট: ৩

0

অজানা_অনুভূতি।

পার্ট: ৩

#Rabeya Sultana Nipa

 

মিলি কে নিয়ে নীরা আর মিলির কাজিন পার্লারে নিয়ে গেছে সাজাতে।মিলি প্রাপ্তিকে জোর করেছে যাওয়ার জন্য সে যাইনি। প্রাপ্তির পার্লারে সাজতে ভালোলাগে না। তাই সে নিজেই সাজবে বলে ঠিক করেছে।
প্রাপ্তিকে একা বসে থাকতে দেখে প্রাপ্তির মা এসে বললো

প্রাপ্তির মা-কিরে তুই ওদের সাথে যাসনি কেন? সবাই মিলে গিয়ে এক সাথে সেজে আসতি।এখন তুই একা একা বসে আছিস।

প্রাপ্তি -মা তুমি তো জানোই আমার এইসব ভালোলাগে না।
কথা না বলতেই ফারহান এসে বললো
তোমার তো এইসব তো ভালোলাগবে না কারণ তুমি ৬০ দশকের বুড়ি।বুড়িরা কখনো পার্লারে যায়না।

প্রাপ্তি -আচ্ছা তোমার কি আর খেয়েদেয়ে কাজ নাই? শুধু আমার পিছনে পড়ে থাকো কেনো?

প্রাপ্তির মা -তুই ওর সাথে এইভাবে কথা বলছিস কেন? ফারহান কতো ভালো ছেলে।ও সবসময় তোর ভালোটাই চায়।

ফারহান -আন্টি এক কাজ করেন আপনি ওকে আপনার হাতে সাজিয়ে দিন।বুড়ি মানুষতো সাজতে পারবে না।

প্রাপ্তি -মা দেখেছো? বেশী ভালো হবে না কিন্তু।

প্রাপ্তির মা -তোদের যা ইচ্ছা কর আমি যাই আমার অনেক কাজ আছে।একটু পর আবার মিলিও চলে আসবে।তুই যা রেডি হয়ে নে।
কথা গুলো বলতে বলতে প্রাপ্তির মা চলে গেলো।

ফারহান -কিরে বুড়ি এবার যা গিয়ে ভালো করে সাজ।না হলে বুড়ির দিকে কেউ তাকাবে না।

প্রাপ্তি -দাঁড়া আজকে তোমাকে দেখচ্ছি বলে ফারহানের পিছন পিছন দৌঁড়াতে শুরু করলো।সবাই তাদের কান্ড দেখে হাসছে।প্রাপ্তির মেজো কাকা এসে দেখে প্রাপ্তি ফারহানকে মারার জন্য চেষ্টা করছে।

মেজো কাকা -প্রাপ্তি! তোদের আবার কি হলো?

পাপ্তি -কাকাই ফারহান আমাকে বুড়ি বলে ডাকে।আমি বুড়ি নাকি,ও আমায় বুড়ি বলে ডাকবে।

মেজো কাকা -ফারহান! আর কখনো প্রাপ্তিকে বুড়ি বলে ডাকবে না।বলেই হেঁসে দিলেন তিনি।

প্রাপ্তি আর কিছু না বলে সেখান থেকে চলে আসলো।

নীরা, মিলি সবাই এসে গেছে। নীরা ও মিলির সাথে অনেক সুন্দর করে সেজেছে।
কিন্তু প্রাপ্তি রুম থেকে এখনো বের হয়নি।নীরা এসে তার বড় মাকে জিজ্ঞাস করলো প্রাপ্তি কোথায়?

বড় মা -একটু আগেও তো ফারহানের সাথে ঝগড়া করছলো।দেখ কোথায় আছে।

নীরা প্রাপ্তির রুমে গিয়ে দরজা খোলার আগেই প্রাপ্তি বেরিয়ে আসলো।

প্রাপ্তি -নীরা আমাকে কেমন লাগছে?

নীরা কিছু বলার আগেই পিছন থেকে ফারহান এসে বললো

ফারহান -প্রাপ্তি তোমাকে সত্যি আজ অনেক সুন্দর লাগছে।আমি তো চোখ ফেরাতে পারছি না।

প্রাপ্তি -আমি তোমাকে জিজ্ঞাস করছি?

নীরা -আবার শুরু করে দিলি?ফারহান ভাইয়া আজকের দিনও এই রকম করবেন?
প্রাপ্তি! চল সবাই বসে অপেক্ষা করছে।

নীরা আর প্রাপ্তি চলে গেলো। ফারহান প্রাপ্তির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছে।সত্যি আজ তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে। সবার থেকে আমার কাছে আজ তুমি আলাদা একটা মানুষ। আমি তোমায় এতো ভালোবাসি কিন্তু তুমি একবারের জন্য বুজার চেষ্টা করোনা।

হলুদের অনুষ্ঠান শেষ করে সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছে।সারা দিনের ক্লান্তিতে প্রাপ্তি সবার সাথে আড্ডা না দিয়ে শুয়ে পড়লো।
হঠাৎ আয়ানের কথা মাথায় আসতেই
ফোনের কথা মনে হলো। ফোন হাতে নিয়ে দেখে অনেক গুলো এসএমএস আয়ানের
আয়ান -আপনি কোথায় হারিয়ে গেলেন?
কি করেন?
সকালে আমি কিন্তু আগে এসএমএস দিছি।
আপনি কি রাগ করছেন?
আরো অনেক কিছু।
প্রাপ্তি এসএমএস গুলো দেখে কি বলবে বুজতে পারছে।আসলেই তো সারা দিন একটা এসএমএস ও দেওয়া হয়নি।
তারপর প্রাপ্তি সরি লিখে পাঠালো।
এসএমএস যাওয়ার সাথে সাথে আয়ান বললো

আয়ান – সরি কেন?

প্রাপ্তি -আপনি ঘুমান নাই?

আয়ান -কোনো এক মানুষের অপেক্ষায় বসে আছি।কিন্তু তার আমার কথা হয়তো মনেই নাই কেউ এক জন্য তার অপেক্ষায় বসে আছে।

প্রাপ্তি -তাই? কে এই মানুষ? যার জন্য আপনি এতো রাতেও অপেক্ষা করে বসে আছেন?

আয়ান -যদি বলি আপনি?

প্রাপ্তি -আপনি কাউকে না দেখেই তার জন্য অপেক্ষা করছেন? এইটা তো ঠিক না।

আয়ান -কে বললো আমি আপনাকে দেখিনি। আমার মনে হয় আপনি আমার অনেক চিনা।

প্রাপ্তি -তাই নাকি? আচ্ছা পরে কথা বলবো।অনেক রাত হয়েছে আপনি ঘুমান।আর সকালের এসএমএস এর জন্য thanks আমার মনে হয় কাল সারারাত জেগে ছিলেন।যাই কাল কথা হয়তো বেশী হবে না।তাই আগেই বলে দিলাম।

আয়ান -আচ্ছা ঠিক আছে।আপনি যখনি আসবেন আমাকে সরণ করবেন।

দুজনেই কথা শেষ করে ঘুমিয়ে পড়লো।

সকাল বেলা ফারহানের ডাকে প্রাপ্তির ঘুম ভাঙলো।

ফারহান -শুভ সকাল প্রাপ্তি!

ফারহান কে কফি হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে

প্রাপ্তি -তুমি! শুভ সকাল।হঠাৎ কফি ” কার জন্য নিয়ে আসছো?

ফারহান -আমার ভালোবাসার জন্য।

প্রাপ্তি -সারাক্ষণ আমাকে জ্বালাতে তোমার ভালো লাগে।

ফারহান-তোমাকে জ্বালাবো না তো কাকে জালাবো? অভ্যাস করো হয়তো সারাজীবন সইতে হতে পারে।

প্রাপ্তি -আমি কেন তোমার জ্বালা সইতে যাবো।

ফারহান -কিছু না,গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিছে আসো।সবাই বসে আছে।

নীরা এসে ফারহান কে দেখে ভাইয়া আপনি এইখানে? আব্বু আপনাকে খুঁজছে। তাড়াতাড়ি গিয়ে দেখা করেন।প্রাপ্তির পিছনে পড়ে থাকলে হবে না।

চলবে,,,,,