শুভ রুমে ঢুকে নিরুকে কম্বলের নিচে দেখে বলে
__ “ কি ব্যাপার, রাত্রে কি ঘুমাওনি নাকি, নতুন বউয়ের এতো ঘুমালে কি চলে। ”
__ কম্বলের নিচ থেকে মাথা বের করে বলে “ আপনার মাথা টা একটু এগিয়ে দেন প্লিজ। ”
__ “ কেনো, কি করবে? ”
__ “ আপনাদের মনে কি দয়া মায়া নাই নাকি? আমি অসহায় একটা মেয়ে , সেইইই কাল সকালে খেয়েছি, এরপর কলেজের মারামারি, হোস্টেল বন্ধ, বাসায় গিয়েও উপোস, রাত্রেও কিছু দিলেন না, আর কতক্ষণ না খাইয়ে রাখবেন বলেন? ”
__ নিরু শুভর হাতের দিকে এতক্ষণ খেয়াল ই করেনি, ফলের প্যাকেট দেখে লাফ দিয়ে বিছানা ছেড়ে নেমে ফল নিয়ে খেতে শুরু করে। শুভ মনেমনে বলে “ পাগল মেয়ে একটা, ওর বাচ্চামি তে কি আমি ওর প্রেমে পড়ে যাচ্ছি নাকি। ” এরপর নিরুকে বলে
__ “ একাই খাচ্ছো? আমি তো দু’জনের জন্য আনলাম। ”
__ “ কেনো? আপনি খান নি? ”
__ “ কখন খেলাম? কাল দুপুরে খেয়ে বের হয়েছি। এখনো তো খেতে পারলাম না। ”
নিরু লাফিয়ে এসে শুভর হাত ধরে টেনে বসিয়ে দেয়, হাতের ফলের প্যাকেট এগিয়ে বলে
__ “ খেয়ে নিন। ”
__ “ হুম ”
বাসার পরিস্থিতি কাল থেকে ভালো নেই, একের পর এক ঝামেলা তে সবার মন খারাপ হয়ে আছে। এরই মাঝে রিমি এসে বলে
__ “ ভাইয়া, নিচে চলো, সবাই তোমাদের জন্য ওয়েট করছে। ”
__ “ তুই খেয়েছিস? ”
__ “ হুম খেয়েছি, তোমাকে ও খেতে ডাকছে। ”
__ “ আসবো, তুই রেডি হয়ে নে। ”
__ “ ওকে তাড়াতাড়ি আসো। ”
নিরুকে উদ্দেশ্য করে বলে “ ভাবী তুমিও যাবে নাকি? ”
__ “ না ও আজ কোথাও যাবেনা, ঘরেই থাকবে। ” নিরুর কিছু বলার আগেই শুভ বলে।
রিমি রুম থেকে বের হয়ে যায়। শুভ আর নিরু নিচে নামে, নিরু বোন কে নিচে দেখতে পেলো, বোনের পাশে একজন বসা ছিলো তাকে দুলাভাই মনে করে নেয়।
শুভর মা বাবা নাস্তায় বসেছিলো তাই নিরু এবার সালাম দেয়নি, শুভ একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ে, নিরু দাঁড়িয়ে আছে দেখে শুভর মা বলে
__ “ না মানে, গুরুজনের সামনে বসতে নেই , আপনাদের খাবার তুলে দিই।”
__ “ শুনো বউমা, এই বাড়িতে খাবার তুলে দেওয়ার লোকের অভাব নাই। তুমি আমাদের সাথে বসে খেতে পারো। এটা এই বাড়ির নিয়ম সকালে আর রাত্রে সবাই একসাথে বসে খাওয়া। তুমি নতুন মানুষ কিছুই জানো না তাই বলে দিচ্ছি। ”
__ “ জ্বী আচ্ছা ”
শুভর পাশে বসে পড়ে নিরু, কিন্তু নিরুকে দেখে রুবি জ্বলছে, আর মনে মনে বলছে “ এই ছোটলোক কিনা আমার সাথে এক টেবিলে বসে খাচ্ছে। ” সবাই নিশ্চুপ খাওয়া দাওয়া পর্ব শেষ করে যে যার মতো উঠে গেলো। এদিকে রিমি রেডি হয়ে বের হয়ে আসে, শুভ রেডি ছিলো আগে থেকে, রিমি কে নিয়ে বের হয়ে যায় শুভ, আর নিরু ঘরে একেলা বসে বসে বোরিং হচ্ছে। এই সময় ওর বোন এসে ঢুকে।
__ “ কিরে অভদ্র মেয়ে, তোর এতো বড় সাহস যে আমার সংসারে এসে ঢুকেছিস? ”
__ “ তোমার বরের সংসারে তো আর সতীন হয়ে ঢুকিনি আপু। তোমার দেওরের সাথে বিয়ে করেছি। ”
__ “ কি বললি তুই, যত বড় মুখ না তত বড় কথা। ” বলে নিরুকে মারতে গেলে নিরু হাত ধরে নেয় রুবির।
__ “ আপু, এতো দিন তো অনেক অত্যাচার সহ্য করেছি, কারণ আমি অনাথ ছিলাম। কিন্তু আর সহ্য করবোনা কারণ আমার জীবনে সব চেয়ে ভালো মানুষ কে স্বামী হিসেবে পেয়েছি। যাই হোক, তুমি বেশি কষ্ট দিতে এসোনা আমায়, নইলে উনাকে সব বলে দিবো। ”
রুবি প্রচন্ড রাগ করে নিরুর ঘর থেকে বের হয়ে নিজের ঘরে গিয়ে মা কে ফোন দেয়। রিসিভ হতেই
__ “ কি বলিস, কাল তো ওকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছিলাম, কিভাবে তোর সংসারে গেলো। ”
__ “ আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা, কাল নাগিনী শুভকে যাদু করেছে, শুভর বউ হয়ে বাসায় এসেছে, আজ আমি শাসন করতে গেলে আমাকেই চোখ রাঙিয়ে দেয়। আম্মু কিছু তো করো আর তো সহ্য হচ্ছেনা আমার। ”
__ “ আমি তো নিজেই বুঝছিনা কিভাবে কি হলো?”
__ “ আজ সকালে কিভাবে যেন আমার শাশুড়ি মা কেও পটিয়ে নিয়েছে , জানো আমার সাথে আমার শ্বশুর শাশুড়ি কেউ কথা বলেনি অথচ ওকে বউমা বলে ডাকছিলো। আমার তো ডাক শুনেই মনে হচ্ছিলো ওকে পুতে ফেলি। ”
__ “ আরে শুন শুন, ওর ব্যবস্থা আমি পরে করছি, কিছুদিন ওকে সহ্য কর, আর সাগর কে বশে রাখার চেষ্টা কর। সব ঠিক হয়ে যাবে। চিন্তা করিস না তুই একদম। ”
__ মায়ের সাথে কথা বলে রুবি ভরসা পেলো। “ ওকে আম্মু তাহলে আমি রাখছি, তুমি দেখিও কিন্তু ”
বলে ফোন টা রেখে দেয়।
নিরু একা বসে বসে বোরিং হয়ে শুভর মায়ের রুমে চলে যায়। শুভর মা তখন পেপার পড়ছিলো
__ “ আম্মু, ঘরে বসে বসে বোরিং হয়ে যাচ্ছি, আপনার সাথে কি একটু গল্প করতে পারি। ”
__ “আজকাল কার ছেলের বউ রা কি শাশুড়ির সাথে গল্প করতে আসে নাকি। ” শুভর মা বলে।
__ নিরু শাশুড়ির পায়ের কাছে বসে বলে “ জীবনে কারো কাছে প্রথম মা ডাক শুনেছি, আপনি আমায় অনেক স্নেহ করে বউমা ডেকেছেন, আপনার কাছে এই ডাকে অনেক ভালোবাসা পেয়েছি, আপনার কাছে আসবো না তো কার কাছে আসবো বলুন। ”
__ নিরুর গালে হাত রেখে বলে “ ওরে আমার মেয়েটা, কিন্তু এখন তো রান্নার সময় হয়ে এলো, কি রান্না হবে সব দেখিয়ে দিতে হবে, এখন ঘরে যাও, পরে বসে গল্প করবো। ”
__ “ আম্মু, কিছু মনে না করলে আজ আমি রান্না করি। ”
__ “ নতুন মানুষ, ছোট মেয়ে, রান্না পারবেনা। ”
__ “ একবার সুযোগ দিয়েই দেখেন, সব চেয়ে বেষ্ট রান্না করবো কথা দিলাম। ”
__ “ তুমি তো পাকুনি বুড়ি দেখছি, ওকে চলো। ”
রুবি নিচে বসে সবার সাথে গল্প করছিলো তখন দেখে নিরু তার শাশুড়ির সাথে কিচেনে যাচ্ছে। এটা দেখে রুবির মাথা খুব গরম হয়ে গেলো। মনে মনে ভাবছে “ সবাইকে কি যাদু করছে নাকি? আমি এতো ফ্রি হতে পারলাম না আর শাশুমা ওর সাথে বেশি কথা বলছে। ”
তখন রুবির পাশে বসা ফুপু শাশুড়ি বলে
__ “ কিরে হিংসা হচ্ছে তোর বোন কে দেখে? ”
__ নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বলে “ হিংসা হবে কেনো? ও তো আমার ই বোন। ” কিন্তু মনের ভিতর আগুন জ্বলছে।
__ “ আরে বুঝি বুঝি, আমার ভাবী সেইই মুডী মানুষ, ওর সাথে তুই এখনো মিশতে পারলি না আর বোন কে দেখ কি সুন্দর হাসিখুশি ঘুরে বেড়াচ্ছে, এটা দেখেই তো তুই জ্বলছিস। আচ্ছা ও তোর সৎ বোন কিভাবে হলো। ”
__ “ আমি জানিনা, বাবার বউয়ের মেয়ে, কোথেকে জুটলো কিভাবে বলবো? ” একটু রাগী গলায় বলে রুবি।
__ “ ভুলে যাস না আমি তোর ফুপু শাশুড়ি, আমার কথায় একদম রাগ দেখাবিনা, নইলে ভাইকে বলে সাগরের সাথে ডিভোর্স এর ব্যবস্থা করবো। ”
__ রুবির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা , তাড়াতাড়ি ফুপু শাশুড়ির সামনে বসে বলে ” সরি ফুপি, আসলে ওকে চিনিনা তো, তাই মাথা খারাপ হয়ে গেছিলো। ”
__ “আচ্ছা ঠিক আছে, যা সামনে থেকে। ” রুবি আর কিছু না বলে রুমে এসে রাগে গড়গড় করতে থাকে।
শুভ আর রিমি পছন্দ মতো শপিং করে বাসায় ফিরতে প্রায়ই দুপুর হয়ে যায়। বাসায় ফিরে রুমে গিয়ে দেখে নিরু নাই। মেজাজ টা একটু খারাপ হয় শুভর কোথায় গেলো মেয়েটা।
রিমি রান্নাঘরে ঘরে গিয়ে নিরুকে জড়িয়ে ধরে
__ “ আম্মু বললো তুমি কিচেনে, তাই সোজা চলে আসলাম। অনেক করেছো এবার ঘরে যাও তো। ”
__ “ কেনো, ঘরে কি আছে?”
__ “ আরে যাও তো, গেলেই বুঝবে। ”
__ “ ওকে, যাচ্ছি। ”
নিরু হাতের কাজ শেষ করে রুমে গেলো, শুভ বেডে শুয়ে আছে।
__ “ কি ব্যাপার, কোথায় ছিলে? ”
__ “ একা একা বোর হচ্ছিলাম তাই আম্মুর ঘরে গিয়েছিলাম। ” মাথা নিচু করে নিরু বলে।
__ “ ওকে, ওকে, এখন যাও, ফ্রেশ হয়ে শাড়ি পড়বে। ”
__ “ আমি তো শাড়ি পড়তে পারিনা। ”
__ শুভ আগে নিরুকে ইউটিউব এ শাড়ি পড়ার একটা ভিডিও দেখায়, নিরু মন দিয়ে দেখে।
শুভর ঠোঁট এর স্পর্শে নিরু জেগে উঠে, শুভকে ধাক্কা দিয়ে
__ ” আপনি না কাল বর্ডার দিলেন, আমি ক্রশ করলে আমাকে শাস্তি দিবেন বললেন , এখন আপনি ক্রশ করেছেন, আপনার কি শাস্তি হবে। ”
__ শুভ চোখ বড় বড় করে বলে ” বর্ডার তোমার জন্য দিয়েছি, আমার যখন যা ইচ্ছা তাই করবো। আজ থেকে কি তোমার কথা শুনে চলতে হবে নাকি? ” নিরুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
__ ” যাহহ বাবা! এতো রাগের কি হলো? আমার জন্যই শুধু নিয়ম লাগে নাকি? এখানে নিয়ে এসে যেন আমায় উদ্ধার করে দিয়েছে, হুহহহহ এবার কাছে আসুক শুধু মজা দেখাবো, রাগ হুহহ এতো রাগ কাকে দেখাচ্ছে, সারাজীবন রাগ দেখে এসেছি, এবার আমি দেখাবো রাগ কাকে বলে। । ” একা একাই কথা বলছে নিরু।
,
বাইরে কেউ দরজা ধাক্কা দিচ্ছে, কিন্তু নিরু খুলার সাহস পাচ্ছেনা। কম্বলের নিচে চুপচাপ শুয়ে থাকে ঘুমের ভান ধরে।
শুভ কিছুক্ষণ পর ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দরজা খুলে দেয়।
__ ” ভাইয়া তোমার সাথে আড়ি, আমি তো এসেছে নতুন ভাবীকে দেখতে। ” শুভর একমাত্র ছোট বোন রিমি বলে কথা গুলি। ( শুভ সবার উপর রাগ দেখালেও এই পুচকে মেয়েটার উপরে কখনো রাগ দেখাতে পারেনা। )
__ “ভাবী দেখতে হবেনা, আগে তুই তোর এক সেট ড্রেস ওকে এনে দে তারপর দেখিস। কিন্তু কিসের আড়ি দিলি সেটা বল?”
__ ” বা রে! কাল নতুন বউ নিয়ে ঘরে ঢুকে গেলে। একবার ও কি ডেকেছিলে? ”
__ ” কাল দুজনেই ভিজে গিয়ে ছিলাম, প্রচুর ঠান্ডা লাগছিলো তাই আর ডাকিনি। ”
__ ” তাই বুঝি, নাকিইইই? ”
__ ” কি বলতে চাচ্ছিস তুই, কানের নিচে দিবো একটা, যা ভাগ। ”
__” হিহিহি ”
__ ” হাসতে হবেনা, যা বললাম তাই কর আগে। ”
__ ” হুম যাচ্ছি বাবা যাচ্ছি, এতো তাড়া দিওনা বাপু ” বলে রিমি বের হয়ে যায়।
এতক্ষণ নিরু কম্বলের নিচ দিয়ে এক চোখ বের করে দেখছিলো কি হচ্ছে না হচ্ছে। তখন শুভ বলে
__ ” কি হলো ম্যাডাম, লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছেন টা কি? এখানে কি কোন সিরিয়াল চলছিলো? ”
__ ” মোটেও আমি লুকিয়ে লুকিয়ে কিছু দেখিনি। ”
__ “লুকিয়ে না দেখলে বুঝলে কিভাবে তোমার দিকে তাকিয়ে কথা বলছি ”
__ ” আ আ আ মি উনার চলে যাবার শব্দ পেয়েছি। ”
__ ” মিথ্যে বলতে ওস্তাদ, যাই হোক এখন ফ্রেশ হয়ে এসো, রিমির ড্রেস পড়ে বাইরে আসবে। ”
__ ” এই রিমি টা কে? ”
__ ” আমার ছোট বোন। ”
__ ” আপন। ”
__ ” হ্যাঁ আপন ” ভ্রু কুচকে তাকাচ্ছে।
__ ” এএএহ এতো রাগ করার কি আছে? ” আস্তে আস্তে বলছে নিরু
__ ” কিছু কি বললে? ”
__” কই না তো ” মুচকি হেসে
এরই মাঝে রিমি এসে দেখে বিছানায় একটা মেয়ে এলোমেলো চুলে একটা শার্ট পড়ে বসে আছে। কোন সাজসজ্জা ছাড়াই মেয়েটাকে পরীর মতো লাগছিলো।
__ ” ওও এই বুঝি আমার ভাবী। ” বলেই দৌড়ে গিয়ে বিছানায় নিরুকে জড়িয়ে ধরে বলে ” বুঝলে ভাবী, আমার ভাইয়ের কোন মেয়েকেই মনে ধরতো না, আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি তোমার রূপ দেখে পাগল হয়ে বিয়ে করেছে। ” বলেই ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে।
__ ” একদম ন্যাকা কথা বলবিনা, এখন যা এখান থেকে। ”
__ ” ওওও এখন ওকে পেয়ে আর আমাকে ভালো লাগছেনা বুঝি ” অভিমানের সুরে বলে রিমি।
__ ” উফফফফ, আচ্ছা বস ঘরে আমিই যাচ্ছি, ওকে চেঞ্জ করিয়ে বাইরে নিয়ে আন। তোকে নিয়ে একটু শপিং এ যেতে হবে। ”
__ ” কি কিনে দিবে শুনি। ”
__ ” তোর যা খুশি নিস। ”
__ ” লাভ ইউ ভাইয়া। ” বলে ফ্লাইং কিস দেয় রিমি।
,
সাগর বিয়ে বাড়ির ঝামেলার পর নিজের ঘরেই আর ঢুকেনি। নতুন বউ ঘরে বসে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে সাগর রুমে ঢুকে সকালে, ফ্রেশ হয়ে বের হতে চালাক রুবি পিছন থেকে সাগর কে জড়িয়ে ধরে।
__ ” আই এম সরি, আমার যে সৎ বোন আছে আমি নিজেই জানতাম না। ” ( জেনেও মিথ্যে কথা বলে সাগরের রাগ ভাঙাতে)
__ ” তোমার বাবা কি সুপার ম্যান, বাচ্চা জন্ম দিয়ে গুম করে রেখেছিলো এতোদিন। ”
__ ” আমি সত্যিই বলছি ওই মেয়েটা যে কোথা থেকে আসলো আমি জানিই না। ”
__ ” কচি খুকি তুমি, তোমার বাসায় একটা মেয়ে ঢুকে গেলো আর তুমি জানো না? ”
__ সাগরের পিঠে কিস দিয়ে বলে ” কি করে জানবো বলো, কাল তো আমার বিয়ে ছিলো, আমিতো পার্লারে সাজতে গিয়েছিলাম। ”
__ ” কি যে বলোনা তুমি, আমি এতো খারাপ, আমাকে তুমি এই চিনলে?” বলে ন্যাকা কান্না শুরু করে রুবি।
রুবির ন্যাকা কান্নায় সাগর গলে যায়, হাজার হোক আগে প্রেমিকা ছিলো, এখন বউ, একটু তো টান থাকবেই। মাথায় হাত দিয়ে শান্তনা দেয় রুবিকে
__ ” ঠিক আছে, আর কাঁদতে হবেনা। তোমাকে মেনে নিয়েছি এটাই বড়। তোমার ফ্যামিলির কথা ভুলেও মুখে আনবেনা। ”
__ ” আচ্ছা, আমি তো শুনলাম আমার ওই সৎ বোন টা কে নাকি তোমার ছোট ভাই বিয়ে করে এনেছে। ”
__ ” হুম, ঠিকই শুনেছো, আকাশ থেকে আমার ভাইয়ের কোলে পড়লো, আর ভাই ওর রূপ দেখে গলে গেলো। ”
__ ” যাদু জানে বুঝছো, নইলে যে শুভ এতোদিন কোন মেয়ের দিকে তাকাতো না সেই শুভ বিয়ে করেছে, ভাবা যায় বলো। আমি তো এটাই বুঝছি না আমার বাবা এতো ভালো মানুষ কে ওর মা কিভাবে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছিলো, ও হয়তো বা তাই, ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছে তোমার ভাই কে। ”
__ ” তুমি ঠিকই বলেছো, ওই মেয়ে যাদু জানে। শুভ কে পটানো এতো সহজ নয়। ”
নিরু সম্পর্কে বানিয়ে বানিয়ে কথা বলে সাগরের কান পঁচিয়ে ফেলে রুবি।
,
,
রিমির থ্রিপিছ পড়ে রিমির সাথে বাইরে আসে নিরু। নিরুকে দেখে প্রথমে নিরুর চুল ধরে টান দেয় শুভ
__ ” শ্বশুর বাড়ি প্রথম এসে চুল ছেড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছো, অসভ্য মেয়ে, কোন শিক্ষা নাই, মাথায় কাপড় দাও বলছি। ”
__ রিমি বলে শুভকে ” একদম উপযুক্ত বউ এনেছো ভাইয়া , তোমার সাথে পারফেক্ট জুটি, তোমরা শুধু ঝগড়া করবে আর আমি দেখবো। হিহিহি ”
শুভ রেগে ওইখান থেকে চলে যায়।
নিরু প্রথমে মাথায় ওড়না তুলে দেয় পরে
শুভর বাবা, মায়ের ঘরে প্রথমে নিয়ে যায় রিমি।
নিরু রুমে ঢুকে সবাইকে সালাম দেয়। রিমি মা বাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় নিরুর।
__ শুভর মা নিরুর সালামের জবাব দিয়ে রিমির দিয়ে তাকিয়ে বলে ” থাক আর ন্যাকামি করতে হবেনা রিমি, ওকে ওর রুমে দিয়ে আই। ”
__ রিমি কিছু বলার আগে নিরু বলে ” কেনো মা আমি কি আপনার মেয়ে হিসেবে খারাপ ? আমার তো মা নেই, কাউকে মা ডাকিনি কখনো, আপনাকে ও কি কখনো মা ডাকতে পারবোনা। ” চোখে পানি চলে আসে নিরুর।
__ ” ঠিক আছে, ঠিক আছে আর ন্যাকামি করতে হবেনা, মা বলেই ডেকো। ” শুভর মা আবার একটু তেই ইমোশনাল হয়ে পড়ে। এরপর বলে ” আচ্ছা তুমি তোমার বাবার নাকি ছোট মেয়ে, তোমার বাবা দুইটা বিয়ে করলো কেনো ? আর তোমার মা কিভাবে মারা গেছে? ”
__ ” আমি জ্ঞান হওয়া থেকে এতিমখানায় বড় হয়েছি। এরপর আমাকে বাবা এক মেসে রাখেন, সেখান থেকেই এসএসসি দিই। এরপর তিনমাস গ্যাপে বাবা কলেজ আর হোস্টেল ঠিক করে দেন। আমি হোস্টেলে ই থাকতাম, এর বেশি কিছুই জানিনা। কাল কলেজে মারামারি হওয়াতে আমাকে বাবা বাসায় নিয়ে যান। এর আগেও মাঝে মাঝে বাসায় যেতাম কিন্তু সৎ মায়ের সামনে বাবা কখনো আদর করে না। কিন্তু বাবা আমায় খুব ভালোবাসেন। ” বলে কান্না করতে থাকে।
কথা গুলো শুনে শুভর বাবা মা দুই জনের ই নিরুর উপর অভিমান কমে যায়, কিন্তু নিরুর বাবা আর সৎ মাকে সন্দেহ করতে থাকে।
__ ” যাও বৌমা এখন ঘরে যাও, আগে তোমার কিছু কাপড়ের ব্যবস্থা করি, এরপর বের হইও। ”
নিরু রিমির সাথে বের হয়ে আসে। মনে মনে বলতে থাকে
__ ” ইসসস ক্ষুদা তে পেট জ্বলে যাচ্ছে, এরা কি খেতেও দিবেনা নাকি, ধ্যাত ভালোই লাগেনা কিছু। ”
চুপচাপ শুভর রুমে গিয়ে কম্বলের নিচে ঢুকে পড়ে নিরু।
__ একে তো শীত তার উপর বৃষ্টি তে কাক ভেজা হয়ে ভিজে গাড়িতে গুটিশুটি মেরে বসে কাঁপছে নিরু, শুভর কথা শুনে জোরে জোরে কান্না শুরু করে দেয়। শুভ মনে মনে চরম বিরক্ত হয়ে গিয়েছে মেয়েটার উপর। এ কিসের টান এ পড়েছে শুভ, না পারছে রাস্তায় ছাড়তে না পারছে কাছে রাখতে।
__ শুভর বলা যায়গায় ড্রাইভার গাড়ি থামায়। শুভ গাড়ি থেকে নেমে আসে আগে।
__ ” এইযে, এবার নামুন, চলে এসেছি। ”
__ ” না, আমি আপনার সাথে যাবো না। আপনি আমার ক্ষতি করবেন। ”
__ ” কি বললে তুমি যাবে না। ” বলতে বলতে গাড়ি থেকে টেনে বের করে কোলে তুলে নিয়ে একটা বাসায় ঢুকে। নিরু ও একের পর এক কিল মারতে থাকে শুভর পিঠে তাও শুভ থামে না। বাসার গেট এ কলিংবেল দিতে একজন ভদ্রলোক বের হয়ে আসেন।
__ “তোমরা কে বাবা, এতো রাত্রে দুইজন, তাও দুজনে। ”
__ ” এইখানে কাজী সাহেব কে? তাকে ডাকুন। ” শুভ একটু কড়া মেজাজ এ বলে।
__ ” আরে আমিই তো কাজী, কি দরকার বাবা? ”
__ ” আমরা কি কাজীর কাছে লুডু খেলতে এসেছি নাকি? জলদি বিয়ের ব্যবস্থা করুন। ”
__ ” এইভাবে, এতো রাতে বিয়ে, সাক্ষী কোথায়। ”
__ ” আপনার বাড়িতে লোক নাই, ওদের সাক্ষী দিয়েন দিবেন, বাকিটা ব্যবস্থা করেন তাড়াতাড়ি। ”
শুভ নিরুকে এবার নামিয়ে হাত ধরে টেনে নিয়ে ভিতরে গিয়ে বসে পড়ে। নিরু হতবাক হয়ে গেছে বিয়ের কথা শুনে।
__ কাজী সাহেব বলেন ” আচ্ছা আপনারা কি পালিয়ে এসেছেন?? ”
__ ” তা জেনে আপনি কি করবেন। ”
__ ” ওহহ আচ্ছা আচ্ছা! বরের নাম কি?
__ ” আসাদুজ্জামান শুভ ”
__ ” কনের নাম কি? ”
__ ” এই তোমার নাম কি বলো? ” নিরু কে উদ্দেশ্য করে শুভ বলে।
__ ” এ কেমন কথা! বিয়ে করতে এসেছেন বউয়ের নাম জানেন না? ” কাজী সাহেবের তাচ্ছিল্যের হাসি।
__ কাজীর উদ্দেশ্যে বলে ” এই আপনার প্রব্লেম কি? আপনি কথা কম বলুন আর কাজ বেশি করুন। ” এবার নিরুর দিকে তাকিয়ে
” এই মেয়ে তোমার নাম বলো? ”
__ ” জ্বী নিরুফার জাহান, সবাই নিরু বলেই ডাকে। ”
বিয়ের সব কাজ কম্পলিট করে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। নিরু কি বলবে বুঝতে পারছেনা, তাই চুপচাপ থাকে।
বাসায় পৌঁছে শুভর সাথে নিরু কে দেখে সবার চোখ কপালে উঠে। বিয়ে বাড়িতে ঝামেলা হবার পর বাসর ঘরে বউ পাঠিয়ে দিয়ে সবাই ড্রইং রুমে আলোচনা করছিলো। তখনি শুভ বউ নিয়ে বাড়ি ঢুকে।
__ ” এই শুভ, সাথে এটা কে? আর এইভাবে ভিজলি কিভাবে? ঠান্ডা লাগবে তো। ” শুভর মা বলে।
__ ” এই মেয়েকে নিয়ে এসেছিস যে? কি প্রব্লেম তোর “। শুভর ভাই সাগর বলে।
__ ” কিরে কিছু বলছিস না কেনো? ” শুভর বাবা
__ ” তোমাদের ছোট ছেলের বউ নিরু। আর কিছু কারোর জানার আছে? এবার সামনে থেকে সরো। ”
এ কথা বলে নিরুর হাত ধরে টানতে টানতে নিজের ঘরে নিয়ে যায় শুভ। বাসার সবাই আর শুভর সামনে কথা বললো না, কারণ শুভর রাগ আর জেদ সবার জানা আছে। শুভ চোখের আড়াল হতেই
__ ” এই পেত্নী টা শুভ ঘাড়ে টুপ করে পড়লো, আর শুভ ওকে নিয়ে চলে এলো। ” শুভর খালামণি বলে।
__” আহহহ স্নেহা! অনাথ মেয়ে, দেখতেও ভালো, শুভ যদি মানিয়ে নিতে পারে আমাদের আপত্তি কোথায়। ” শুভর বাবা ধমকের শুরে বলে।
__ ” ওহহহ তাহলে আমাদের কোন কথাই বলার থাকেনা, হুহহহ” বলে রুম থেকে বের হয়ে আসে শুভর ছোট খালামনি স্নেহা।
__ ” ওই মেয়েটাকেই ওর বিয়ে করা লাগতো বাবা? এমনিতেই একটা মেয়েকে এনে ফেঁসে গেছি, ওই মেয়েটা কেও কি আনা লাগতো। ” সাগর বলে।
__ ” মেয়েটা দেখতে কিন্তু সুন্দরী, বউমা পছন্দ হয়েছে, শুভর চোখ আছে বলতে হয়। ” শুভর মা
শুভ নিরুকে ঘরে নিয়ে এনে হাত ছেড়ে দেয়। শুভর নিজের একটা শার্ট, আর প্যান্ট এগিয়ে দেয় নিরুর দিকে
__” যাও আজকের মতো এগুলো ই পড়ে আসো। কাল নতুন জামাকাপড় সব পাবে। ভিজা কাপড়ে এতক্ষণ থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে। ” নিরুকে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে নিজেও চেঞ্জ করে নেয়। একদম ঠান্ডায় জমে গেছে। নিরু ওয়াশরুমের দরজা খুলতেই শুভ বলে
__ ” প্রচুর ঠান্ডা বাইরে, আমারও ঠান্ডা লেগেছে খুব। তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসো,
আমিও যাবো ওয়াশরুমে। ”
__ নিরু তাও দাড়িয়ে আছে।
__ শুভ গিয়ে নিরুর হাত দিয়ে টান দিয়ে বের করে ” কি ব্যাপার, কথা শুনতে পাও না? ”
__ নিরু শুধু শার্ট পড়ে, তাই লজ্জা করে বের হচ্ছিলো না। শুভর কাছে আসাতে মাথা নিচু করে ফেলে। উত্তর না পেয়ে নিরুকে সরিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায় শুভ। কিছুক্ষণ পর শুভ বের হয়ে দেখে নিরু দাঁড়িয়ে আছে।
__ ” কি ব্যাপার, দাঁড়িয়ে আছো কেনো? ”
__ ” কোথায় যাবো? ”
__ ” এতো বড় বিছানা দেখতে পাচ্ছোনা, নাকি কানা। ”
__ ” আসলে ”
__ ” কি আসলে ”
__ ” ভয় লাগছে? কখনো ছেলে মানুষের ঘরে থাকিনি তো! ”
__ ” কি বললে তুমি? এসো আমি তোমার ভয় ভাঙায়। ” বলে শুভ এগিয়ে আসে। নিরু পিছনে সরতে থাকে ভয়ে, শুভ এসে নিরুকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে ” সবাই আমাকে ভয় করে আর তুমি আমার মুখে মুখে তর্ক করছো তাইনা। ” বলে হাত ধরে টেনে এনে বিছানায় ফেলে দেয়। বিছানার মাঝে কোলবালিশ দিয়ে বলে ” তোমাকে বিয়ে করেছি বলে স্ত্রীর অধিকার চাইতে এসোনা কখনো। মরতে চাইছিলে বিধায় বাঁচিয়েছি, এই বাসায় রাজরানী হয়ে থাকবে কিন্তু স্ত্রী মর্যাদা আমার কাছে পাবেনা। যাও বিছানা ভাগ করে দিলাম, ভাগ ক্রশ করার চেষ্টা করবেনা। আজ প্রচুর ঠান্ডা, কম্বল একটা সো এখানেই থাকতে তুমি বাধ্য। কাল থেকে সোফায় ঘুমাবে। ” কথাগুলো খুব রাগের সাথে বলে শুভ। নিরু ভয়ে আর কথা না বলে শুয়ে পড়ে। শুভ আর কথা না বাড়িয়ে অপরপাশে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে যায়। নিরু কাঁদতেও পারছেনা ভয়ে কিন্তু প্রচুর ঠান্ডায় জমে গেছে। এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে শুভ। রাত্রে হটাৎ শুভর ঘুম ভেঙে যায় বিছানা কাঁপছে খুব। পাশ ফিরে দেখে নিরু খুব কাঁপছে। বুঝতে পারে জ্বর এসেছে নিরুর। এতক্ষণ ভিজেছে, একটু মায়া জাগে মেয়েটার উপর। বুকের সাথে জড়িয়ে নেয় নিরুকে। নিজের শরীরের গরমে যেন মেয়েটা একটু আরাম পায়। শুভ ও খেয়াল করে কাঁপুনি একটু কমেছে। আরোও চেপে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে শুভ।
_____ নিরু কাউকে না জানিয়ে বাসায় ফিরে আসাতে তার সৎ মা একটা রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা লাগিয়েই বললো ” কিরে অলক্ষ্মী, কাউকে না জানিয়ে বাসায় ফিরলি কিসের জন্য? আজ আমার মেয়েটার বিয়ে , আর তোকে কি আজকেই আসতে হলো, এখন আমি সবার সামনে তোর পরিচয় দিবো কিভাবে? তোর জন্য আমার মেয়ের বিয়ে যদি ভাঙে তাহলে তোকে জ্যান্ত খুন করে পুতে দিয়ে আসবো মনে রাখিস। ” কথাগুলো রাগে গজগজ করতে করতে বলে।
__ ” আসলে আজ কলেজে মারামারি হয়েছে। তাই সবাই কে হোস্টেল ছাড়তে বলেছে? বাসায় না আসলে আমি কোথায় যেতাম আম্মু। আমার তো যাওয়ার আর যায়গা নেই। ” মাথা নিচু করে কথা গুলো বলে নিরু।
__ ” হয়েছে থাক, তোকে আর বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে বলতে হবেনা। তুই তো একটা কুলক্ষ্মী, আমার মেয়ের যদি কিছু হয় তাহলে তোর খবর খারাপ করে দিবো। ” রাগের জন্য ফরসা গাল পুরোই লাল হয়ে গেছে লুতফা বেগমের।
__ ” আমি আব্বু কে জানিয়েই এসেছি আম্মু, আর আমি তোমাদের কারোও ক্ষতি করবোনা। চিন্তা করিওনা তোমরা আমি সন্ধ্যার আগেই ছাদে যাবো। যতক্ষণ আপুর বিদায় না হবে ততক্ষণ আসবোনা নিচে। ” কাঁদতে কাঁদতে বলে কথাগুলো।
__ ” আহহহ ন্যাকা হুহ। ” বলে জোরে দরজা খুলে বের হয়ে যান।
__ আজ নিরুর বোনের বিয়ে, ” ইশ যদি লিজা আপু আপন বোন হতো তাহলে বিয়েতে কত্ত মজা করতাম। আমার যদি একটা মা থাকতো তাহলে যে কতো আদর করতো । আজ আমার আপনজন বলে কেউ নেই। আমার মা নাই বলে কি কখনো সুখ পাবোনা। ” এইসব ভেবে কান্না করতে থাকে নিরু।
” কি নেই আমার বাবার, সব কিছু আছে। বাড়ি গাড়ি সম্পত্তি সব তো আছে তোমার। তাহলে কেনো তোমার এই মেয়েটার দুঃখ বুঝোনা? বাবা কোথায় তুমি? একটু দেখে যাও না আমায়। কখনো তো একটু ও আদর করোনা। আমার মা নেই বলে আমাকে এতো কষ্ট দাও কেনো? ” বুকের ভিতর এক চাঁপা কষ্ট নিরু কে চিরেচিরে খাচ্ছে।
এরই মাঝে মাগরিবের আজান হচ্ছে। নিরু ফ্রেশ হয়ে ওজু করে মাগরিবের নামাজ পড়ে বাড়ির পেছনের সিড়ি বেয়ে ছাদে চলে যায়। দোতলার ফ্লাট টা কি সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। চারিদিকে এতো লাইটিং, আলোয় ঝলমল করছে চারিদিক। ” আহ! সবার জীবন কতো ই রঙিন, শুধু আমার জীবন টাই আঁধার। ” বিরবির করে বলে নিরু। কিছুক্ষণ পর গাড়ির হর্ণ শুনতে পায় নিরু, বুঝতে পারে বর এসেছে। ” সবাই মিলে বর এর সাথে কতো মজা টাই না করছে। ইশ আমি যদি মজা করতে পারতাম । ” এক চাঁপা যন্ত্রণায় ভিতর টা হুহু করে উঠে।
কিছুক্ষণ পর কারো পায়ের শব্দ শুনতে পায় নিরু, চোখ টা মুছে ফেলে, খুব স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করে।
__ ” কিরে নিরু, একা একা ছাদে কি করছিস ” বলতে বলতে ছাদের দরজা টা লাগিয়ে দেয় রাকিব। রাকিব নিরুর ফুপাতো ভাই। স্বভাব চরিত্র নিরুর মোটেও ভালো লাগেনা তাই সাধারণত এড়িয়ে চলে। আর আজ সুযোগ পেয়েই চলে এসেছে।
__ ” আমি এখানে আছি তোমাকে কে বললো ? ” রাগী স্বরে বলে নিরু।
__ ” আরে, এতো রাগ করার কি আছে। সবাই তো বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত, তাই আমি তোমাকে নিয়ে ব্যস্ত হতে চলে আসলাম। ” শয়তানি হাসি দিয়ে কথা গুলো বলতে বলতে এগিয়ে আসছে রাকিব।
__ ” আর এক পা এগুলেই আমি কিন্তু চিৎকার দিবো। ” কিছুটা ভয় পেয়ে যায়, পিছনের দিকে সরে যেতে যেতে ছাদের কিনারে চলে আসে।
__ ” বিয়ে বাড়ি, এতো জোরে গান বাজছে, এতো হৈচৈ চারিদিকে, তোমার চিৎকার টা শুধু আজ আমিই শুনবো আর উপভোগ করবো। হা হা হা ” পৈশাচিক আনন্দ রাকিবের মনে।
__ নিরু পেছনে সরতে সরতে বলে ” একদম ভালো হবেনা কিন্তু আ আ আ আ আ আ ” রেলিং খুবই অল্প ছিলো বলে ছাদ থেকে পড়ে যায় নিরু।
চিৎকারের শব্দে মাথা টা উপরে করতেই কাউকে পড়ে যেতে দেখে শুভ। কিছু বোঝার আগেই হাত বাড়িয়ে দিয়ে ধরে ফেলে মেয়েটিকে। নিরু কিছুক্ষণ গলা জড়িয়ে ধরে থাকে ছেলেটির। কিছুক্ষণ দুজনের নিরবতা। নিরু বুঝতে পারছেনা সে ছাদ থেকে পড়ে মরে গেছে না বেঁচে আছে। আর শুভ বুঝতে পারেনি এটা কি হলো কিন্তু মেয়েটার চোখের দিকে অপলক তাকিয়ে আছে শুভ।
চারিদিকে হৈচৈ এ দুজনে বাস্তবে ফিরে আসে, নিরু বুঝতে পারে সে মরেনি এই যাত্রায় বেঁচে গেছে। কোল থেকে নামে কিন্তু খেয়াল করে গায়ে ওড়না টা নাই। দুই হাত সামনে নিয়ে আনে, জানুয়ার টা পড়ে যাবার সময় ওড়না টা নিয়ে নিয়েছে, দাঁড়িয়ে থাকতেও ইতস্তত বোধ করছে। এতক্ষণ ছেলেটার বুকের সাথে লেপ্টে ছিলো কিন্তু এখন দাঁড়াতে ও পারছেনা। শুভ খেয়াল করে নিজের শেরওয়ানির সাথে থাকা কোর্ট টা খুলে পড়িয়ে দেয় নিরুকে। চারিদিকে বিভিন্ন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে ইতিমধ্যে। একেকজন একেক কথা বলছে।
__ ” কি কুলক্ষ্মী মেয়েরে বাবা, বিয়েতে কোন অশান্তি হবে না তো। ”
__ ” তা কোথেকে উড়ে আসলো এই মেয়ে, আমরা তো চিনি না।”
__ ” হবে হয়তো কোন ভিখারী, বড়লোকদের বিয়েতে চলে আসছে। ছেলে পছন্দ হয়েছে বলে পেত্নীর মতো ঝুলে পড়েছে। ”
এতক্ষণে নিরুর সৎ মা এসে নিরুকে মারতে থাকে।
__ ” অলক্ষ্মী, শেষ পর্যন্ত বিয়েতে অশান্তি করেই ফেললি। মরিস না কেন মুখপুরি। তুই মরলে এই সংসার এ শান্তি ফিরবে, তার আগে না। ”
এতক্ষণে শুভ মুখ খুলে
__ ” স্টপ ইট, হচ্ছেটা কি? মগের মুল্লুক নাকি, যে যা খুশি করতে থাকবেন? ”
__ ” আহ লুতফা! বেশি সিনক্রিয়েট করো না। ওকে ওর ঘরে বন্দী করে রাখো। ” এতক্ষণে নিরুর বাবা আফজাল হোসেন এসে কথা গুলো বলে।
লুতফা নিরুকে টেনে নিয়ে যেতে থাকলে শুভ বলে
__ ” আগে বলুন মেয়েটা কে? কি হয়েছিলো? এরপর ওকে নিয়ে যাবেন। ”
__ ” আসলে ও ওও আমার ছোট মেয়ে। ” মুখ নিচু করে বলে আফজাল হোসেন।
__” বাহ বাহ! আপনাদের নাকি একমাত্র মেয়ে, এখন আরেকটা উদয় হলো কিভাবে? আর কতো কি লুকিয়েছেন? ” খুব গম্ভীর ভাবে রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বলে শুভ।
একেএকে বরপক্ষের সবাই বের হতে থাকে। ঘটনা শুনে দেখে সবাই ছিঃ ছিঃ করছে। কিন্তু ততক্ষণে বিয়ে পড়ানো হয়ে গেছে। কিন্তু বরপক্ষের সবাই মেয়ে নিয়ে যেতে চাইছেনা।
__ ” আসলে নিরু হোস্টেলে থাকে তো , তাই ওর কথা মনেই থাকে না।” হাসতে হাসতে বলে আফজাল হোসেন।
__ কি সুন্দর গুছিয়ে মিথ্যে বলেন আপনি, ছিঃ ছিঃ, নিজের মেয়ের নাম্বার বলতেও ভুল করেন। ” বরের বাবা আব্দুর রহমান সাহেব বলেন।
__ ” নাহ দুলাভাই, এই বাড়ির মেয়ে ঘরে তুলবো না। ” বরের খালা বলে।
__ ” অসম্ভব ব্যাপার, যেই বাড়িতে এতো ঘাপলা সেই বাড়ির সাথে কিসের আত্মীয়তা? ” বরের চাচা বলে এই কথা।
সবার চোখেমুখে রাগ দেখা যাচ্ছে, বর ও বের হয়ে এসেছে, নিরুর বোন ও বের হয়ে এসেছে ।
__ ” এতো বছর প্রেম করে বিয়ে করতে আসলাম, আর এই বাড়িতে এতো গলদ, ছিঃ আগে জানলে রিলেশন ই করতাম না। ” বর বলে বরের বাবার উদ্দেশ্যে।
নিরু বুঝতে পারছে যার উপরে পড়েছে সে বরের বাড়ির লোক। সবার সামনেই দৌড়ে গিয়ে ছেলেটার পা জড়িয়ে ধরে। বলতে থাকে
__ ” প্লিজ, আমার বোনকে একলা রেখে আপনারা যাবেন না। ” কান্না করতে থাকে।
__ ” আরে কি করছেন পা ছাড়ুন। ”
__ ” আমার জন্য আমার বোনের কোন ক্ষতি হোক আমি তা কখনোই চাইনা। দয়া করে আপনারা কেউ আমার বোন কে রেখে যাবেন না। ”
__ ” আরে কি আশ্চর্য, আপনি উঠুন বলছি, আচ্ছা আপনারা সবাই কি ন্যাকা। পর পুরুষ এর পা ধরতে লজ্জা করে না? বাপ মা কিছুই শিখায়নি নাকি?
”
__ এতো খারাপ কথা শুনে পা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে ” আমার মা নেই। জন্মের সময় মরে গেছে, তাই সবাই আমায় অলক্ষ্মী বলে। ক্ষমা করবেন ” কথাগুলো কান্নায় জড়িয়ে যাচ্ছিলো।
__ এভাবে আসলেই বলা উচিৎ হয়নি শুভর। নিজেই নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছে, সরি বলতে যাবে তার আগেই মেয়েটা অনেকটা দূরে চলে গেছে। ওর সৎ মা ওকে জোরে একটা চড় মারে, এতে মেয়েটা পড়ে যায়। শুভর কেনো জানি মনে হলো চড় টা ওর গায়ে লাগলো।
__ ” অলক্ষ্মী মেয়ে, আজ তুই হয় নিজে এই বাড়ি ছেড়ে বের হবি না হয় আমি তোকে জানে মেরে ফেলবো। ” সৎ মায়ের গলা দিয়ে কথা গুলো বের হচ্ছে।
__ শুভ সবটা ই শুনতে পাচ্ছে , ওর বাবা কে গিয়ে বলে ” বাবা, যা হবার হয়ে গেছে, বউ তুলে নাও, এই বাড়ির সাথে সম্পর্ক রেখোনা তাহলেই হবে। ” বর কে গিয়ে বলে ” যা হবার হয়ে গেছে, এবার বউ নিয়ে বাড়ি চল ”
__ ” এই মেয়ের সাথে ঘর করবো কিভাবে বল? ” বর
__ ” দেখতেই তো পাচ্ছো সৎ বোন বলে বলেনি। ”
__ ” হুম তুই যখন বলছিস তখন মেনে নিবো কিন্তু ওর বাবা মা কে কখনো মানছি না। ” রাগী গলায় বলে শুভর ভাই সাগর।
শুভ খেয়াল করে মেয়েটি নাই, আর মায়া না করে সবাইকে বের হতে বলে। বর বউ এক গাড়িতে উঠলো কিন্তু বউ এর মা বাবা কাউকেই কাছে আসতে দেয়নি শুভর পরিবার। সবাইকে গাড়িতে উঠিয়ে নিজে উঠার সময় খেয়াল করে একটা মেয়ে মাথায় কাপড় দিয়ে বাড়ি থেকে দৌড়ে বের হয়ে যাচ্ছে। শুভর কিছুটা সন্দেহ হয়, তাই গাড়িতে না উঠে সবাই কে চলে যেতে বলে পিছু নেয় মেয়েটার। মেয়েটা টা কি করছে দেখার জন্য জোরে জোরে হাটতে থাকে। শীতকাল হবার পরও নিম্নচাপ এর কারণ এ আবহাওয়া খারাপ, বৃষ্টি হতে পারে যেকোনো মুহুর্তে। প্রচুর শীত পড়েছে, এতো ঠান্ডার মাঝে শুধুমাত্র একটা জামা পড়ে কিভাবে মানুষ থাকে। মনে মনে কথা বলছে শুভ। শুভর হটাৎ মনে হলো মেয়েটা আত্মহত্যা করতে চাচ্ছে। দৌড়ে গিয়ে হাত ধরে টেনে আনে। হটাৎ টানে মুখের কাপড় সরে যায়।
__ মেয়েটার দুই হাত ধরে জোরে করে চিল্লিয়ে বলে ” কি ব্যাপার , এতো আত্মহত্যা করার শখ হলো কেনো? মরার এতো শখ তাহলে একদিন আমার মনঃরঞ্জন করেই মরো। ” কয়েকটা চড় মেরে দেয় শুভ রাগের বশে।
__ ” ছাড়ুন আমাকে, আমি খারাপ, যার জীবনে যায় তার ক্ষতি করে দিই। আমি আমার মা কে মেরেছি, বাবাকে দূরে সরিয়েছি, আর কি চাই আমার। সৎ মায়ের খোটা, বাবার অবহেলা আমি আর নিতে পারছিনা। এর চেয়ে আমি মরে গেলেই ভালো হবে। কারোও কষ্ট হবেনা তখন। এই দুনিয়ায় আমার কেউ নাই, ছোট তে বড় হয়েছি অনাথ আশ্রমে, বড় হয়ে হোস্টেলে। আজ হোস্টেল ও বন্ধ তাই বাড়ি এসেছিলাম কিন্তু উপহার পেয়ে গেছি। ” বলতে বলতে কান্না করতে থাকে। এরই মাঝে বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়, কোনটা চোখের জল আর কোনটা বৃষ্টির পানি বুঝা যাচ্ছেনা।
__ ” তাহলে মরবেই তাইনা, তো চলো আমার সাথে “। কোলে তুলে নেয় মেয়েটি কে, বাড়ির দিকে হাটতে থাকে। একটু শুকনো যায়গায় এসে ফোন বের করে ড্রাইভার কে গাড়ি আনতে বলে। নিরুর চিল্লাচিল্লি শুনে এক ধমক দেয় শুভ। একে তো শীত তার উপর বৃষ্টি, হাড় কাপুনি ঠান্ডা তে দুজনেই জমে গেছে। ড্রাইভার আসতেই নিরুকে গাড়িতে জোর করে ঢুকিয়ে এক যায়গায় যেতে বলে শুভ।
__ ” কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে? ”
__ ” জাহান্নামে ”
__ ” প্লিজ আমার ক্ষতি করবেন না। ”
__ এই কথা শুনে শুভর মেজাজ বিগড়ে গেলো ” একশো বার করবো, পারলে ঠেকাও।। ”
ভোরের দিকে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে সাদা বক, পানকৌড়ির দেখা পাওয়া যায়। ফারিয়া মনযোগ দিয়ে এদের উড়াল দেয়া, মাছ স্বীকার করা দেখে। পানকৌড়ি ডুব দিয়ে অনেকক্ষণ পর্যন্ত পানিতে ডুবে থাকতে পারে। এক ডুবে বেশ খানিক নদী পথও অতিক্রম করে।
ফারিয়া অবশ্য কতটা পথ এক ডুবে অতিক্রম করে সেটা মেপে বের করতে পারেনি। প্রায়ই ইচ্ছা হয় মেপে দেখার কিন্তু সে তো সাঁতার জানেনা। পানকৌড়ির মাছ স্বীকার করা, ডুব দিয়ে অনেকক্ষণ পর উঠে আসাকে সে একটা নাম দিয়েছে।খুব সাধারণ একটা নাম – খেলা। পানকৌড়ির খেলা দেখার সময় ফারিয়া তার কষ্ট গুলো বেমালুম ভুলে যায়। তখন নিজেকে তার খুব সুখী মনে হয়। তার মনেই থাকেনা কী ভয়ংকর স্বপ্ন তার চারপাশে ঘিরে আছে!
মনেই থাকেনা এখনো নাকে সেই গন্ধটার তার পেটের ভেতর দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে যায়।
এই একটা সময়, কিছু মুহূর্ত তাকে সুখী করে তোলে! অসহ্য হয়ে ওঠে যখন এই একঘেয়েমি জীবন তখন চোখ বুঝে সকালের এই নদীর পাড়ের দৃশ্য তাকে স্বস্তি দেয়। কেনো এতো ভালো লাগে, তার জানা নেই! কখনো জানতেও চায়নি সে।
ফারিয়া জানে তার মা জানার জন্য অধীর হয়ে থাকে, কেনো ভালো লাগে? তার মায়ের সব বিষয়ে কৌতুহল ! ডাক্তার সাহেবকে নিয়েও! রশীদ আলম কে কেনো ডাক্তার বাসায় ডেকেছেন এর উত্তর অনেক বার শুনেছে তারপরও তার কৌতুহল কমেনি।
ফারিয়া কখনো চায়না তার মা – বাবা, ফাহাদ তাকে নিয়ে চিন্তা করুক। কিন্তু তারা করে। ছোট্ট ফাহাদও বড় আপুকে কানে কানে জিজ্ঞেস করে
– তুমি সুস্থ হবে কবে?
ফারিয়া হেসে বলে
– আমি তো সুস্থ!
– কই? দাদী বলে তুমি সুস্থ হবে না।
– মা বলে হবো।
– সত্যি মা বলেছে?
– হ্যাঁ রে!
এখন প্রায়ই নিজের মাকে দেখার স্বাদ জাগে! তার মা কি দেখতে তার মতোই ছিলো? বাবার সাথে ফারিয়ার তেমন মিল নেই। তাই সে ধরেই নিয়েছে, মায়ের সাথে তার মিল বেশি।
এইযে মাঝেমধ্যে আমি মায়ের কথা মনে করি, আমার মাও কি তাই করে? তারও আমাকে দেখতে ইচ্ছে করে?
যখনই ফারিয়া নিজের মাকে নিয়ে ভাবতে থাকে তখনই লিমা তার ঘরে আসে গল্প করতে।
নিজের মায়ের বদলে তখন এই মাটাকে নিয়ে সে ভাবতে থাকে। এই মা কতো ভালো! কতো না ভালোবাসে তাকে। এই লিমা মায়ের সাথে যদি তার মিল থাকতো!
এই মায়ের ডান গালে বেশ বড় একটা তিল আছে। যখন হাসে সেই তিল টা আরো বেশি সুন্দর লাগে!
ইশ, যদি এরকমই একটা তিল তার বাম গালে থাকতো! মাকে জোর করে আয়নার সামনে নিয়ে বলতাম
– দেখো মা, তোমার মতো আমারও তিল আছে!
মা হেসে বলতেন
– কী যে বলিস! আমার মতো হবে কেনো? তোর মতোই হয়েছে।
ফারিয়া মনে মনে ভাবে তখন সে মন খারাপ করে বসে বসে কাঁদার ভান করবে। মা অস্থির হয়ে পড়বেন, কীভাবে কান্না থামানো যায়। তখন স্বীকার করে নিবেন
– তুই ঠিকই বলেছিস তোর আর আমার তিলটা পুরোপুরি এক। ফটোকপি। আজকাল চোখে একটু কম দেখিতো তাই হুট করে কিছু বুঝে উঠতে পারছিনা।
ফারিয়া শুনে মুচকি হেসে মাকে জড়িয়ে ধরে। তার মা খুব ভালো মিথ্যা বলতে জানেনা। মা জাতটাই অদ্ভুত !
যখন তার শারীরিক কষ্টটা বাড়ে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে তার মাও কষ্ট পাচ্ছেন। আসলে তিনিই আমাকে শুধু পেটেই রাখেননি তাছাড়া সে আমার সবকিছু, সবকিছু।
রশীদ আলম ভরদুপুরে ডাক্তারের ফোন পেয়ে প্রথমে একটু হকচকিয়ে গেলেন। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন
– জি, আমি ফারিয়ার বাবা।
– ভালো আছেন?
– আলহামদুলিল্লাহ, আপনি?
– এইতো আছি। আপনার সাথে আমার একটু দেখা করা দরকার। আর ফারিয়ার সাথেও।
– তাহলে কটায় আসবো আপনার চেম্বারে?
– আমি আপনার বাসায় আসবো আমার স্ত্রীও সাথে থাকবে। সন্ধ্যার দিকে। আপনার বাসার পরিবেশ টাও আমার দেখা দরকার। বুঝতেই পারছেন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা দ্রুত চালাচ্ছি।
– আচ্ছা আসুন।
– বাসার ঠিকানা টা বলুন। আমার স্ত্রীকে সাথে নেয়ার কারণটা আপনাকে বলি। রেহানা আমাকে দীর্ঘ ক্ষণ না দেখে থাকতে পারেনা। আপনার বাসায় আমার অনেক সময় ব্যয় হবার সম্ভাবনা আছে তাই আমার স্ত্রীকে সাথে নিয়ে আসছি।
– আচ্ছা আপনারা আসুন।
রশীদ আলম বিপদে পড়ে গেলেন। তার মা জানেন না যে মেয়েকে ডাক্তার দেখানো হচ্ছে। জানতে পারলে কী হবে তার জানা নেই!
জানুক তো, সত্যি কথা সে বলে দেবে।
রশীদ আলম মায়ের ঘরে গিয়ে বিছানার পাশে চেয়ারে বসলেন। দুপুরে তার মা ঘুমান। কিন্তু আজকে ঘুমান নি। বিছানায় শুয়ে আছেন আর পান চিবাচ্ছেন।
রশীদ আলম সাহস করে বললেন
– মা, আজকে বাসায় সন্ধ্যায় দু’জন মেহমান আসবে।
– কে কে আসবে? তোর বন্ধুরা?
– নাহ, আফতাব হোসেন আর তার স্ত্রী।
– ইনি আবার কে রে রশীদ?
– ফারিয়ার ডাক্তার।
রশীদ আলমের মা কঠিন স্বরে বললেন
– যা ইচ্ছা হয় করো। আমার কাছে জিজ্ঞেস করতে আসবা না। ডাক্তার দেখানোর আগে তো জিজ্ঞেস করতে আসো নাই। আজকে ক্যান আসছো? টাকা লাগবে এই আমার কাছে?
– না। বললাম যাতে তুমি তাদের সাথে ঝামেলা না করো।
– আমিই তো ঝামেলা করি। আর ওই নবাবজাদি তো বসে বসে গুদাম ভরছে।
রশীদ আলম সাহেব মায়ের ঘর ছেড়ে বের হয়ে বাথরুমে গিয়ে দরজা আটকে পানির ট্যাব ছেড়ে দিলেন। তারপর জোরে জোরে কাঁদতে লাগলেন।
জীবন টা তার কাছে খুব অসহ্য হয়ে উঠছে দিন দিন।মরে যেতে ইচ্ছে করে। বড় বড় ট্রাক যখন দ্রুতগতিতে ছুটে যায় তখন তার সামনে দাঁড়িয়ে পড়লেই হয়। মেয়েটা আর ছেলেটার জন্য চিন্তা হয়। লিমার জন্যও হয়। খুব অসহ্য সময় চলছে তার। হয়তোবা খুব দূরেই এই সময়ের সমাপ্তি ঘটবে।
রেহানা বেগম বেঁকে বসেছেন। রশীদ আলমের বাসায় তিনি যাবেন না। ওই বাড়ি তিনি পা রাখতেই নাকি অশুভশক্তি তাকে গ্রাস করবে। রেহানা এরকম কথাবার্তা কখনোই বলেন না। কুসংস্কার কে তিনি তার মনে কখনো স্থান দেননি। রশীদ আলমের কথাবার্তায় তার মনে হুট করে কুসংস্কার বিঁধে গেছে। কিছুতেই তিনি উপরে ফেলতে পারছেন না। আফতাব হোসেন ও বেশ ঝামেলায় পড়েছেন। ওই বাড়ি দীর্ঘক্ষণ থাকতে হতে পারে। এই সময়ের মধ্যে তার স্ত্রী ভয়ংকর ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে পারেন। খুব বেশি ভালোবাসলেও সমস্যা আবার খুব কম ভালোবাসলেও সমস্যা। একটা মধ্য পর্যায়ে থাকলেই ভালো। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় খুব বেশি আর কম ভালোবাসাটাই মানুষের মধ্যে থাকে। স্বাভাবিক মাত্রার ভালোবাসা পাওয়া ভার।
আফতাব হোসেনের মনে হলো, সে নিজেই স্বাভাবিক মাত্রায় ভালোবাসতে পছন্দ করেন। স্ত্রীকে কি আগের মতো ভালোবাসেন? প্রশ্ন টার উত্তর হবে না। ভালোবাসা আগের মতো নেই। বদলে গেছে। বদলে যাওয়ার কারণ সে নিজেই। সেই স্ত্রীকে বিভিন্ন অজুহাতে সময় দেন নি। যেকোনো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হলে, সময় ব্যয় করতে হয়। সময়ের অভাবে কতো সম্পর্ক যে নষ্ট হয় তার পরিসংখ্যান ব্যুরোর লোকেরা দেখলে ভয় পেয়ে যেতেন। এইজন্য এই পরিসংখ্যান করা হয়না। রেহানা যেতে না চাওয়াতেই ভালো হয়েছে। সবসময় স্ত্রী সাথে থাকতে হবে এমন কেনো হবে? নিজেরও তো জীবন আছে। আনন্দ আছে, সুখ আছে। আফতাব হোসেন মন খারাপের ভান করে স্ত্রীকে বললেন
– আচ্ছা, তুমি যেহেতু যেতে চাচ্ছো না সেহেতু বাসায় থাকো। আমিই যাই। যাওয়াটা জরুরি, আমার কিছু তথ্যের খুব প্রয়োজন।
রেহানা বললেন
– অনেক রাত হবে?
– তা তো হতেও পারে।
ফজরের আজান দিচ্ছে লিমা বুঝতে পেরে বিছানা ছেড়ে উঠে বসলেন। পাশে ঘুমিয়ে থাকা স্বামীর দিকে তাকিয়ে দেখলেন নিশ্বাস ঠিকঠাক মতো নিচ্ছেন কিনা? লিমার রাতে ঘুমাতে যাবার আগে মনে হয় পাশে শুয়ে থাকা মানুষ টাকে সকালে মৃত ব্যক্তি হিসেবে দেখবে। উষ্ণ শরীর হঠাৎ করে খুব ঠান্ডা হয়ে যাবে। ভাবতেই কেমন শরীর শিওরে উঠে লিমার। বিছানা ছেড়ে গুটি গুটি পায়ে বাথরুমে গিয়ে ওজু করে নেয়।
ফজরের নামাজ পড়ে তসবিহ হাতে ফারিয়ার ঘরের দিকে পা বাড়ালো। ফাহাদের জন্য তার তেমন চিন্তা হয়না। কারণ সে সুস্থ আর চটপটে ছেলে। চিন্তা হয় তার সতীনের রেখে যাওয়া মেয়েটাকে নিয়ে! যদি ওর নিজের মা থাকতো তাহলে ওর সাথেই ঘুমাতো। ওকে সবসময় আগলে রাখতো। লিমা কি তার নিজের মায়ের মতো করতে পেরেছে?
রশীদ আলম বলেন
– তুমিই ওর মা।
কথাটা শুনতে লিমার খুব ভালো লাগে। তিনি প্রায়ই কথাটা শোনার জন্য রশীদ আলম কে বিভিন্নভাবে প্রশ্ন করেন। এমনভাবে প্রশ্ন করেন যাতে উত্তর ওই একটাই হয়
– তুমিই ওর মা।
ঘুমন্ত অবস্থায় প্রত্যেক মানুষকে হয়তোবা খুব সুন্দর লাগে। যেমন তার স্বামী, মেয়ে আর ছেলেটা কে খুব সুন্দর লাগে।
ফারিয়া গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে। হয়তোবা তার ক্লান্তি খানিকটা বেশি।
ওকে কি ডেকে তুলবে? নাকি ঘুমুতে দিবে? কতো দিন পর গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে মেয়েটি সে খবর লিমা জানে।
প্রথম যেদিন মেয়েটা স্বপ্নের কথা সবাইকে বলল, কেউই বিশ্বাস করেনি। কিন্তু লিমা করেছিলেন। তার বিশ্বাস ফারিয়া কখনো মিথ্যা বলবে না। আজকাল অবশ্য মেয়েটা তার বাবাকে মিথ্যা কথা বলে। বাবাকে সে হাসি মুখে বলবে
– বাবা, ভালো আছি আমি। খুব ভালো বাবা।
লিমা সিদ্ধান্ত নিলেন মেয়েকে ডাকবেন না। আজকে একটু ঘুমাক, একদিন না দেখতে বের হলে তেমন কিছু ঘটবে না।
রান্নাঘরে গিয়ে চায়ের পানি চুলায় দিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভোর হওয়া দেখার জন্য বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে রইলো। আজকের ভোর বেলাটা অন্যদিনের চেয়ে অন্যরকম! কিন্তু অন্যদিনের সাথে কোনো পার্থক্য তো নেই। তাহলে? আজকে মন ভালো তাই সকালটাকেও ভালো লাগছে। এমন কিছু হবে হয়তো। তার ভালো লাগা একটা ভোর ফারিয়া দেখতে চেয়েছিলো!
বেশ তাড়াহুড়ো করে চায়ের পাতিলে পানি একটু বেশি দিয়ে দিলো। মেয়েকে ডেকে উঠানোর জন্য বেশ দ্রুত মেয়ের রুমে ঢুকলেন……
রিয়াদ ও রায়াদ কে রেহানা বেগম বারান্দায় কান ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। রেহানা বেগম প্রায়ই এমন করেন। যখন তার ছেলে দুটো কথা শুনতে চায়না, পড়াশোনায় মন দেয়না তখন তিনি কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখেন। রাতের বেলা বিধায় তারা বারান্দায় স্থান হয়েছে। দিন হলে বাড়ির মেইন গেটের সামনে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকে দুই ভাই।
দুই ভাইয়ের এখন আর লজ্জা লাগেনা। প্রথম প্রথম লাগতো এখন সহ্য হয়ে গেছে। এখন তারা এই শাস্তিকে উৎসব হিসেবে পালন করে।
আফতাব হোসেন স্ত্রীকে ডেকে বললেন
– ছেলেদেরকে অনেক শাস্তি দিয়েছো এখন পড়তে বসাও।
রেহানা বেগম কোনো উত্তর দিলেন না। মাথা নিচু করে রান্নাঘরে চলে গেলেন। ছেলেদের নিয়ে সে চিন্তিত। পড়াশোনা তেমন করতে চায়না।
আফতাব হোসেন তার নতুন খাতাটিতে পেন্সিল চালিয়ে যাচ্ছেন। কলম দিয়ে জটিল সমস্যার সমাধান করা ঠিক না। জটিল সমস্যা গুলো এমনিতেই জটিল হয়। তার উপর যদি খাতা জুড়ে কাটাকাটি থাকে তাহলে বিষয়টা আরো জটিলে রূপ নেয়। পেন্সিল দিয়ে লিখলে রাবার ব্যবহার করে ভুল টাকে মুছে ফেলা যায়। তাই কাটাকাটি হবার সম্ভাবনাও নেই। আফতাব হোসেন এটাই মন প্রাণ দিয়ে বিশ্বাস করেন।
মেয়েটা অল্প বয়সে কি ভয়ংকর একটা স্বপ্ন দেখে। কিন্তু উচিৎ ছিলো সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন দেখার। যে স্বপ্নে খেলার সাথীদের নিয়ে মজা করছে বা দূরে কোথাও ঘুরতে যাচ্ছে এরকম ঘটনা ঘটবে। স্বপ্নে বিভিন্ন রঙের প্রজাপতি, জোনাকী পোকা দেখবে। তা না স্বপ্নে অন্ধকার আর রক্ত মাংস দেখে!
স্বপ্নে ঘ্রাণ পাওয়া সম্ভব না। কিন্তু মেয়েটি পাচ্ছে! মেয়েটি যখন স্বপ্নের বর্ণনা দিচ্ছিলো তখন তার বলার ভঙ্গিতেই বুঝতে পারা যায় সে একবিন্দুও মিথ্যে বলছেনা। মেয়েটি সত্যি কথা বলেছে। এবং স্বপ্নের প্রভাব তার বাস্তব জীবনে ফেলছে। অন্ধকার রাস্তায় হাঁটছে।সূক্ষ্ম আলোর রেখা আস্তে আস্তে আরো বেশি সূক্ষ্ম হতে থাকে তারপর……
– খাবেনা রাতে?
রেহানার প্রশ্নে বিরক্ত হলেও আফতাব হোসেন প্রকাশ না করে মুচকি হেসে বললেন
– আমি আসছি।
মাঝেমধ্যে বিরক্তি প্রকাশ করা যেমন প্রয়োজন তেমনই মাঝেমধ্যে বিরক্তি প্রকাশ না করাও প্রয়োজন। এতে প্রিয় মানুষ গুলো দূরে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
ফারিয়া নামের মেয়েটির সমস্যা দ্রুত সমাধান করা উচিৎ। শারীরিক সমস্যার জন্য ভালো মেডিসিন ডাক্তার দেখাতে হবে। রশীদ আলমকে বলে দেয়া উচিৎ ছিলো।
রশীদ আলম ঘুম থেকে উঠে মায়ের চিল্লাচিল্লি তে বুঝতে পারলেন তার স্ত্রী আর মেয়ে আবারও ঘুরতে বেড়িয়েছে। প্রায়ই দুজন ভোর বেলা ঘুরতে বের হয়। মা ব্যাপারটা একদমই সহ্য করতে পারেন না। আসলে মা তার মেয়ের ভালো হয় এমন বিষয় সহ্য করেন না। মনে মনে বিরক্ত হলেও প্রকাশ করেন না। মা কষ্ট পাবেন।
ফারিয়া আর লিমা এঁকে বেঁকে চলা কুমার নদের পাশের উঁচু ঢিবিতে দাঁড়িয়ে আছে। ভোরের দিকে নদীর পাড়টা দেখতে অপূর্ব সুন্দর লাগে ফারিয়ার কাছে। লিমার কাছে খুব সাধারণ কিন্তু মেয়েটার আনন্দে তার ভালো লাগে। এই দুনিয়াতে কিছু মানুষ থাকে যাদের কাছে অন্যের সুখ টাই বড়, নিজের টা না। অল্প বয়সে মা – বাবা জোর করে বউ চলে যাওয়া এক বাচ্চার বাপের সাথে তাকে বিয়ে দেন। লিমা প্রথনে রাজি ছিলেন না। মা – বাবা তার সিদ্ধান্তে কষ্ট পাচ্ছিলেন তাই বিয়েতে রাজি হলেন।
স্বামীর সাথে আসার আগে তার বাবা ডেকে আদুরে কণ্ঠে বুঝালেন
– তোমার স্বামীর ছোট্ট একটা মেয়ে আছো জানো?
লিমা মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলেছিলেন।
– তাকে নিজের মেয়ের মতো জানবে। আর আল্লাহর কতো রহমত যে তুমি একজন অসহায় মেয়ের মা হতে যাচ্ছো। এই দুনিয়াতে যার মা নেই সেই অসহায়। বুঝতে পারছো কি বলছি।
– হ্যাঁ আব্বা।
সেই ছোট্ট ফারিয়াকে দেখে লিমার বুকটা হু হু করে কেঁদে উঠেছিলো। মেয়েটার যে ভরপুর অযত্ন হয়েছে সেটা তার চোখে আর শরীরে ভেসে উঠেছে। ১০ মাসের বাচ্চা দাঁড়াতে জানে একটু একটু করে হাঁটতে শেখে কিন্তু এই মেয়ে অপুষ্টির কারণে ঠিকঠাক মতো দাঁড়াতে পারেনা।
আফতাব হোসেন বিব্রতবোধ করছেন। ছোট্ট একটা প্রশ্নে মানুষের কতো বড় আর বিষাদের অতীত প্রকাশ পেয়ে যায় আজকে তিনি বুঝতে পারলেন। প্রিয় মানুষের হারিয়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার হিসেবে কেউই মেনে নিতে চায়না। হয়তোবা সময়ের স্রোতে অনাদিকালের নিয়মকে বাঁচিয়ে রাখতে পথ চলতে হয়। আসলে পথ চলতে হয় বেঁচে আছে তাই। সবাই খুব সহজে নিজেকে ধ্বংস করে দিতে পারেনা। নিজেকে ধ্বংস করার ক্ষমতা সবার থাকেনা।
আফতাব হোসেন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলেন ৭ টা বেজে ৪০ মিনিট। কতো দ্রুত সময় বয়ে চলেছে।
রেহানা বেগম নাস্তার ট্রে নিয়ে বসার ঘরে ঢুকলেন। রশীদ আলমের সামনে রাখা ছোট্ট টি টেবিলে নাস্তার ট্রে রেখে চলে গেলেন। ভদ্রলোক কাঁদছেন ব্যাপারটা তার কাছে স্বাভাবিক মনে হলো। মানসিক ডাক্তারের কাছে কেউই সুখে থাকতে আসেনা।মনের বিশাল সমুদ্রের ন্যায় রোগ গুলোকে জমিয়ে আনে।
আফতাব হোসেন বললেন
– নাস্তা খেয়ে নিন। তারপরে না হয় আবার শুরু করা যাবে।
রশীদ আলম নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন
– এতো কিছুর দরকার ছিলোনা। সামান্য চায়ে হতো।
– সামান্য নাস্তা দিয়েছি। পাকোড়া, নুডুলস আর র চা। খান তো আপনি।
আফতাব হোসেন নিজের জন্য আনা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে তার লেখাগুলো পড়ছিলেন। কোথাও কোনো সমস্যা খুঁজে পাওয়ার উদ্দেশ্যে লেখাগুলো বারবার পড়ছিলেন।
– আপনার স্ত্রী চলে যাবার পর তার দেখাশোনা কে করেন?
– আমার মা।
– তিনি মানুষটা কেমন? আপনি তো তার ছেলে আপনি ভালোভাবেই মা সম্পর্কে বলতে পারবেন।
– মা তেমন পছন্দ করতেন না। স্বাভাবিকভাবেই সম্পর্কও তেমন ভালো ছিলোনা।
– আপনার মা কি কুসংস্কার মনা? বা ভূত প্রেতাত্মার গল্প বলতে পটু?
– আগের যুগের মানুষ। কুসংস্কার তাদের রক্তে মিশে গেছে। সেসব গল্প ছাড়া ও যুগের মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়।
– আপনার মেয়েকে সে কেমন জানে? আপনি আর বিয়ে করেননি?
– খুব একটা ভালো জানেনা। ছোটো বেলায় আমার জন্য ফারিয়াকে পালছে। জোর করে মা ভূইতা গ্রামের এক মেয়েকে বিয়ে করান। তারপর থেকে সেই ফারিয়াকে দেখা শোনা করেছে।
– যখন বিয়ে করেন তখন ফারিয়ার বয়স কতো ছিলো?
– ১০ মাস হবে আরকি।
– সৎ মা হিসেবে কেমন?
– ফারিয়া ৯ বছর অব্দি বিশ্বাস করতো এই তার মা।
– তারপর কী হলো?
– আমার মা কথায় কথায় বলে দিলেন, লিমা ওর সৎ মা। তাতে অবশ্য মা মেয়ের সম্পর্কে কোনো পরিবর্তন আসেনি। দুই একদিন লিমা আর ফারিয়া বেশ কান্নাকাটি করছে এই আরকি।
– জন্মের পর ফারিয়ার মধ্যে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখেছেন? যেমন ধরুন কথা বলা শুরু করাটা একটু দেরিতে। হাঁটতে শেখা দেরিতে এসব কিছু?
– না।
– স্বপ্নটা দেখা শুরু করেছে আনুমানিক কবে থেকে?
– ৫ বছর আগে হঠাৎ ভোর বেলা চিৎকার করে উঠে কাঁদতে শুরু করে।
– ফারিয়া তো বললো ৫-৬ বছর?
– কেনো বলেছে জানিনা। হয়তোবা ৬ বছর আগে থেকেও দেখতে পারে।
– ও চঞ্চল চড়ুই স্বভাবের নাকি চুপচাপ?
– আগে ছিলো চঞ্চল স্বভাবের। আর এখন শুধু দিন রাত তার ঘরে লাইট জ্বালিয়ে বসে থাকে। ঘুম যখন আটকে রাখতে না পারে তখন ঘুমায়।
– আচ্ছা আজকে এই পর্যন্ত থাকুক। আপনার মোবাইল নাম্বার টা দিয়ে যান কোনো প্রশ্নের উত্তর জানার প্রয়োজন হলে জানাবো। আর ফী টা?
রশীদ আলম চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে পকেটের আধা ছেঁড়া মানিব্যাগ থেকে ৫০০ টাকার চকচকে নোট টা আফতাব হোসেনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন
– একটু তাড়াতাড়ি করবেন। মেয়েটা বড্ড ক্লান্ত হয়ে গেছে নিজের সাথে যুদ্ধ করতে করতে!
– দেখুন আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করবো।
ফারিয়ার পানির পিপাসায় গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে। বিছানা ছেড়ে উঠে টেবিল অব্দি যাওয়ার শক্তি তার নেই। ১ ঘণ্টা আগে বমি করে তার ঘরের ফ্লোরের কিছু অংশ নষ্ট করেছে। লিমা ফ্লোর পরিষ্কার করে, লিমাকে গোসল করিয়ে রান্নার কাজে মন দিয়েছে।
মা এখন ব্যস্ত, পানি কে দিবে? দাদীকে তার ঘরের আশপাশ দিয়ে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু তার কাছে পানি খেতে চাওয়া মানে ঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া।
আজকে ৩ বার বমি করেছে দিন রাত্র মিলিয়ে। কিন্তু তার মা একটুও বিরক্ত হয়নি। খুব স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছে। দাদী অবশ্য স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেননি।তার বিষয়ে ভালো জিনিসগুলোও তার দাদী স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারেন না। সবকিছুতে দোষ তিনি খুঁজে বের করবেনই। আর কথায় কথায় মাকে খুঁচিয়ে বলবেন
– সতীনের মেয়েকে কেউ এতো প্রশ্রয় দেয় নাকি? বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াচ্ছো আর আলসের কুমড়ো বানাচ্ছো।
তখন ফারিয়ার খুব কষ্ট হয়। সে যদি সুস্থ হতো অন্যদের মতো তাহলে সেও মাকে একা কাজ করতে দিতো না। মা কতো রাতে ঘুমুতে যায়।
লিমা দুকাপ চা নিয়ে ফারিয়ার ঘরে ঢুকলেন।
ফারিয়া উঠে বসলো। লিমা এক কাপ চা ফারিয়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন
– চায়ের সাথে বিস্কুট খাবি? তোর বাবা আজকে দুপুরে ক্রিম বিস্কুট এনেছেন। খাবি?
– হা, মা আনো। ফাহাদ কী করে মা?
– ওকে স্কুলের হোম ওয়ার্ক করতে দিয়েছি। ডেকে আনবো?
– না, আজকে ওর সাড়াশব্দ তেমন পেলাম না তো।
– পড়াশোনার চাপ বেড়েছে তো……
লিমা বিস্কুট আনতে তার শোবার ঘরে গেলেন। মিথ্যা বলতে বেশি পটু না লিমা। শাশুড়ী আম্মা ফাহাদকে ফারিয়ার সাথে মিশতে দিতে চান না। ওর সাথে মিশলে একই রোগ ধরবে। কীসব বাজে কথা!
মনের রোগ আবার ছোঁয়াচে হয় নাকি?
তবে মন খারাপ ছোঁয়াচে। ফারিয়ার বাবার, ফারিয়ার, ফাহাদের মন খারাপ হলে তারও হয়। কিন্তু ফাহাদের দাদীর মন খারাপ হলে মনে মনে তিনি শান্তি পান। খুব জ্বালানী টাইপের মানুষ, খুবই!
রশীদ আলম চলে যাবার পর রেহানা বেগম স্বামীকে জিজ্ঞেস করলেন
– ওনার মেয়ের সমস্যা তাই না?
– হ্যাঁ।
– ওনার প্রথম স্ত্রী মনে হয় ভালো না। তা না হলে বাচ্চা রেখে যায় নাকি।
আফতাব হোসেন ঠান্ডা স্বরে বললেন
– কোনো মানুষকে একজনের বর্ণনায় বা বিচারে বিচার করা উচিৎ না। একজন নারী যখন তার সংসার ছেড়ে পালায় তখন তার পিছনে অনেক কারণ জড়িত থাকে। আর সেখানে সন্তান রেখে পালিয়েছে! বুঝতে পারছো ব্যাপারটা? আর মনে করো আমি, এই আমাকে অনেকেই পাগল বলে। কিন্তু তুমি কি তাই বলো?
রেহানা বেগম বললেন
– মাথা খারাপ!
– অনেকে আমাকে ছ্যাচড়াও বলে। তাই বলে কি আমি তাই? হয়তোবা তার সাথে এমন কিছু করেছি যার কারণে সে আমাকে ছ্যাচড়া বলে। তাই বলে তো আমি সবার সাথে করিনি। এক পক্ষের কথা শুনে কোনো মানুষকে বিচার করবে না। মনে থাকবে?
রেহানা বেগম প্রশ্নের উত্তরটা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বললেন
– ওনাকে রাতে খেয়ে যেতে বলতা?
– নাস্তাই তো দিতে চাওনি। হাজারটা অভাবের কথা বলে কান ঝালাপালা করে দিলা। আবার বলছো রাতে খেয়ে যাওয়ার কথা? তাহলে তো আমার কান বয়ড়া হয়ে যাবে!
আহা! নারী, তুমি জাতটাই বড় অদ্ভুত! তোমায় বোঝার ক্ষমতা কোনো নরের নেই, সত্যি নেই।
আফতাব সাহেব বসার ঘরে পাটিতে আসন পেতে বসে আছেন। বসার ঘরে সোফার সেট থাকা সত্ত্বেও তিনি পাটিতে আসন পেতে বসতেই পছন্দ করেন। ছোটো বেলায় তার বাবা পাটিতে তিন ভাইবোন কে আসন পেতে বসে পড়াতেন।
তার বাবার তিন জনের জন্য পড়ার টেবিল চেয়ার কেনার সামর্থ্য ছিলো না।
আফতাব হোসেন বসার রুমের দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখলেন ৭ টা বেজে ১০ মিনিট। লোকটার ৭ টায় চলে আসার কথা কিন্তু আসছে না। বাড়ির ঠিকানা কি ভুল দিয়েছেন? তার যতটুকু মনে পড়ে বাড়ির ঠিকানা ঠিক লিখেছিলেন। তাহলে? এটা তো ঢাকা শহর না যে কোনো বাড়ি খুঁজে বের করতে ঘাম ছুটে যাবে। ফরিদপুর একটি মফস্বল, এখানে কোনো বাড়ি খুঁজে বের করা কঠিন বিষয় না।
তবে কি লোকটা অসুস্থ নাকি মেয়েটা অসুস্থ?
তার বাসায় আসতে বলাতে হয়তোবা লোকটার কাছে খারাপ লেগেছে। ফী টা নেয়া উচিৎ ছিলো।
আফতাব হোসেন নিজের উপরই বিরক্ত হলেন। আজকে তার দিনটাই বিরক্তিকর। শুধু এর উপর ওর উপর বিরক্ত হচ্ছেন। তার বন্ধু দিনু ঠিকই বলেছিলো।
– শোন আফতাব খবরদার তুই মনোবিজ্ঞান নিস না।
আফতাব অবাক হয়ে বলেছিলেন
– কেনো রে?
– তুই এমনিতেই পাগল আরো পাগল হয়ে যাবি।
কথাটা বলে দিনু উচ্চস্বরে হাসতে শুরু করেছিলেন। দীনু ছেলেটা এমনিতেই হাসে। কারণে অকারণে হাসে তার হাসির কোনো কারণ লাগে না তার হাসতে। আর যদি কারণ পেয়ে যায় তাহলে তো কথাই নেই। দীনু টার সাথে অনেক দিন কথা হয়না। যোগাযোগ কেন যেন বন্ধ হয়ে গেলো।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলেন ৭ টা বেজে ১৫ মিনিট। এতোক্ষণে মাত্র ৫ মিনিট পার হয়েছে? আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সূত্র কাজ করছে। সময় বিষয়ক একটা সূত্র। সূত্রটা যেন কী?
অলস মস্তিষ্ক শয়তানের বাসা – মা কথাটা ঠিকই বলতেন।
কোনো একটা কিছু করা দরকার। আফতাব হোসেন তার স্ত্রীকে ডেকে বললেন
– রেহানা আমার নতুন খাতাটা নিয়ে আসো তো।
রেহানা বেগম কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন
– কীভাবে বুঝবো কোনটা নতুন খাতা?
– আমার বিছানার উপর ইংরেজিতে ইউনিভার্সিটি লিখা একটা চকচকে ২৫০ পৃষ্ঠার নীল রঙের খাতা আছে। সাথে একটা পেন্সিল ও রাবার রাখা আছে। বুঝেছো রেহানা?
রেহানা বেগম কিছু না বলে শোবার ঘরে গিয়ে বিছানার উপর খাতা পেলেন সবই ঠিকঠাক কিন্তু রঙটা মিলেনি। খাতাটার রঙ লাল।
ছেলে দুটো এখনো পড়তে বসেনি। লুডু খেলছে। এই দাইন শেষ করে মা আমরা দুজনেই পড়তে বসবো। কিন্তু তাদের দাইন আর শেষ হচ্ছে না।
– আসলে আমার অভ্যাস এভাবে বসার। চেম্বারে ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে চেয়ারে বসে থাকতে হয়। আপনি কিছু মনে করবেন না।
ফারিয়ার বাবা বললেন
– আপনার সাথে বসলে কি রাগ করবেন?
– তা করবো না কিন্তু আপনি নিচে বসতে পারেন না। আপনি আমার অতিথি। হিন্দুরা অতিথি কে বলে লক্ষী আর নিজেদেরকে বলে প্যাঁচা! আর ইসলাম ধর্মে আল্লাহ তায়া’লা খুব খুশি হলে কোনো লোকের উপর তখন তাদের বাসায় অতিথি পাঠায়! আল্লাহ আমার উপর আজ অনেক খুশি।
– আমার একটু তাড়া আছে। মানে মেয়েটা……
আফতাব হোসেন লাল রঙের খাতার প্রথম পৃষ্ঠায় বড় করে ফারিয়া নাম টা লিখলেন।
– আপনার নাম?
ফারিয়ার বাবা প্রশ্নোত্তর পর্বের জন্য প্রস্তুত ছিলেন।
– রশীদ আলম।
– বয়স ৩৬
– বিয়ে করেছেন কতো বছর আগে?
– প্রায় ১৫ বছর।
– মাত্র ২১ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন? আর ওই সময় বেকার ছিলেন?
– না বাবার মুদির দোকানে বাবার সাথেই থাকতাম।
– এখন কী করেন? পড়াশোনা মনে হয় তেমন করেননি?
– এখন ওই মুদির দোকানেই আছি। পড়াশোনা হয়নি।
– ফারিয়ার বয়স কতো?
– ১১ বছর।
– ওর জন্মের আগে বা সময় বা পরে ওর মায়ের কোনোরকম শারীরিক বা মানসিক সমস্যা হয়েছিল?
– বাচ্চা পেটে আসলে তো সব মেয়েরই শারীরিক সমস্যা হয়।
– না না সেরকম কিছু বুঝায়নি। ধরুন স্বাভাবিক সমস্যা গুলো বাদে অস্বাভাবিক কিছু?
– না।
আফতাব হোসেন খেয়াল করলেন রশীদ আলমের অস্বস্তি বোধ টা বেড়ে গেছে। কোনো প্রশ্নের উত্তরই তিনি সহজ ভাবে দিচ্ছেন না। কিছু প্রশ্নের উত্তরে মিথ্যা বলছেন।
আফতাব হোসেন গম্ভীরস্বরে বললেন
– দেখুন মানসিক রোগ গুলোর সমাধানের ক্ষেত্রে আমাদেরকে রোগীর পরিবার, কাছের লোক, আশেপাশের পরিবেশ, অতীতের ঘটনা সহ অনেক কিছুই জানতে হয়। তাছাড়া আমরা সঠিক সমাধান দিতে ব্যর্থ হই। আর আপনার মেয়ের অবস্থা খুব বেশি খারাপ। সে একটা স্বপ্ন আজ ৬ বছর যাবত দেখে যাচ্ছে। একই নিয়মে, একই স্বপ্ন।স্বপ্নটা তার বাস্তব জীবনেও প্রভাব ফেলেছে। এই বয়সে তার স্কুলে যাবার কথা কিন্তু সে যেতে পারছেনা। বুঝতে পারছেন কি বলেছি?
রশীদ আলম মাথা নিচু করে বললেন
– অল্পবয়সে প্রেম করে ধনীর দুলালীকে বিয়ে করেছিলাম। খুব ভালোবাসতাম সেও বাসতো। বিয়ের ৪ বছরে মেয়েটা জন্ম নেবার পর আমাদের সংসারে বেশ টানাটানি চলে আসে। বাবা অনেক দেনা ছিলেন। দেনা মেটানোর জন্য দোকান টা বিক্রি করে দিলেন। পুরো বেকার কিন্তু মাথার উপর ৫ জনের সংসার। বাচ্চা হওয়ার পর মেয়েদের অনেক যত্ন দরকার হয় কিন্তু আমি কিছুই করতে পারিনি। ফারিয়ার বয়স যখন ১ মাস তখন ওর মা চলে যায়। ফারিয়ার ছোট্ট বালিশের নিচে চিঠি লিখে রেখে চলে গিয়েছিল।
রশীদ আলম আর কিছুই বলতে পারলেন না।
আফতাব হোসেন জিজ্ঞেস করলেন
– কী লিখা ছিলো চিঠিতে?
– রশীদ,
আমি চলে যাচ্ছি। ফারিয়াকে তোমার কাছে রেখে গেলাম। বাবা আমাকে গ্রহণ করলেও ফারিয়াকে করবে না। আমাকে ফেরানোর চেষ্টা করবেনা। তুমি আমাকে পারলে ক্ষমা করো!
– আপনি তাকে আনতে যাননি?
– গিয়েছিলাম। দারোয়ান আমাকে গেটের সামনেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেয়নি। কয়েকবার ফারিয়ার মা বারান্দায় এসে আমাকে দেখে গিয়েছে কিন্তু……
রশীদ আলম নীরবে কাঁদতে লাগলেন মাথা নিচু করে। জীবন টা শুধুই বিষাক্ত স্মৃতি তে পরিপূর্ণ তার।
আফতাব হোসেন রাস্তায় হাঁটছিলেন। ফোন বেজে উঠাতে বিরক্ত হলেন। আজকে তাকে বিরক্তিতে ধরেছে। সবকিছুতেই বিরক্ত হচ্ছেন। তার স্ত্রী রেহানা ফোন করেছেন। রিসিভ করার ইচ্ছা না থাকলেও করতে হবে। সকালে বেশ হালকা ধরনের কথা কাটাকাটি হয়েছে দুজনের মধ্যে। ঠিক ২ টা বেজে ১০ মিনিটে বাসায় পৌঁছে যান আফতাব হোসেন। কিন্তু আজ ২ টা বেজে ৫৫ মিনিট কিন্তু বাসায় আসেননি। রেহানা বেগম সকালের কথা কাটাকাটিকে মনে রেখেই ৪৫ মিনিটে কোনো কল করেননি কিন্তু ৪৫ মিনিটের মাথায় তার ধৈর্য্যচ্যুত হলো এবং স্বামীকে ফোন করলেন।
আফতাব সাহেব ফোন রিসিভ করে বললেন
– কিছু বলবে?
– এখনো বাসায় আসছো না ক্যানো?
– এইতো আসছি।
কথাটা বলেই ফোন কেটে দিয়ে রিক্সায় চড়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। তার মনে পড়তে লাগলো প্রায় ১৫ বছর আগে এই রেহানাকে নিয়েই নিতে বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন। দুই পরিবারের কেউই বিয়েতে রাজি ছিলেন না। অবশ্য পালিয়ে যাওয়ার দুদিন পরেই আফতাব সাহেব বাসায় স্ত্রীসহ ফিরে আসেন।
তার বাবার খুব রাগ করার কথা ছিলো কিন্তু বাসার সবাইকে চমকে দিয়ে সে শান্তস্বরে ছেলেকে বলেছিলেন
– যেহেতু এই মেয়ের জন্য বাড়ি ছেড়েছিলে সেহেতু এই মেয়েকে কখনো কাঁদাবা না। মনে থাকবে কথা?
– হ্যাঁ।
কথাটা সে আজও ভুলেনি কিন্তু কথাটা সে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে পারেননি। সে প্রায়শই বুঝে না বুঝে স্ত্রীকে কাঁদান খুব ভালোভাবেই কাঁদান। কারণ তিনি জানেন তার স্ত্রীর যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।
মেয়েরা বিয়ের আগে থাকে মায়াবতী আর বিয়ের পরে হয় রাষ্ট্রপতি। বিয়ের পরে তারা সংসারের সকল ভাড় কাঁধে তুলে নিবে। রাষ্ট্রপতি শাসিত দেশে যেমন সকল ভাড় রাষ্ট্রপতির ঘাড়ে ঠিক তেমনভাবে স্ত্রীর ঘাড়েও থাকে।
ফারিয়া তার ছোটো ঘরটাতে চুপচাপ বসে আছে। নাকের কাছে সেই গন্ধটা এখনো আছে। বমি আসছে পেট গুলিয়ে কিন্তু বমি হচ্ছেনা। মাথাটা ঝিম ধরে আছে। ব্যথাটা বাড়ছেনা। দুপুরে এখনো খাওয়া হয়নি। বাবা আসবে তাই তার খাওয়া হবে। বাবা হাসি হাসি মুখে বলবে
– মামনী হা করো তো….
সেও হাসার ভান করে লোকমা টা মুখে পুড়ে নিবে।
তবে আজব ব্যাপার হচ্ছে ওই ডাক্তার টাও তাকে মামনী বলে ডেকেছে। এই পৃথিবীতে মোট দুজন মানুষ পেলো ফারিয়া যারা তাকে মামনী বলে ডেকেছে। তার কাছে একটা ডায়েরি আছে। বাবা কিনে দিয়েছিলেন তাকে। সেই ডায়েরিতে তার ভালো লাগা, খারাপ লাগা লিখে রাখে। শরীর যখন একটু ভালো লাগে তখন ডায়েরি লিখতে বসে ফারিয়া। কষ্ট গুলোকে সে এখন আর ডায়েরির পাতায় লিখে রাখেনা। কারণ তার বাবা।
তার বাবা লুকিয়ে লুকিয়ে তার ডায়েরি পড়ে। কষ্টের কথা গুলো পড়ে সে বাচ্চাদের মতো কেঁদে চোখ ভেজায়। অশ্রুপাতের এই বিষয় টা তার ঠিক পছন্দ না।
তার বয়সী ছেলে মেয়েদের সে নকুলের মাঠে খেলতে দেখে। তারও খুব ইচ্ছা জাগে ওদের সাথে খেলতে কিন্তু সে পারেনা। ওর ভয় হয় যদি একই সমস্যা ওদের মাঝেও ঢুকে যায়? তখন কী হবে?
পেটের মধ্যে থেকে গুলিয়ে কী যেন একটা বিশ্রী জিনিস তার বমির সাথে বের হয়ে আসলো! একটা আস্ত মাকড়সা যার পুরো শরীরে অতি সুক্ষ্ম সাদা রঙের রেখা আঁকা বাঁকা হয়ে গেছে।
আফতাব হোসেন বাসায় পৌঁছে গোসল সেরে নিলেন। রেহানা বেগম স্বামীর জন্য খাবার বেড়ে টেবিলের পাশে চেয়ারে বসে ছিলেন।
আফতাব হোসেন খুব গম্ভীর মুখে চেয়ারে বসে খেতে শুরু করলেন। রেহানা বেগম যে সামনে বসে আছেন সেটা সে বুঝতে পারছেন না।
রেহানা বেগম বললেন
– এখনো রেগে আছো? আচ্ছা স্যরি আফতাব।
আফতাব হোসেন বললেন
– তুমি তো খাওনি। আসো একসাথে খেয়ে নেই। আর ওই প্রসঙ্গে আর একটাও কথা বলবেনা। যা যাবার সকালেই চলে গেছে ওটাকে টেনে এনে বিরক্ত করার কিছুই নেই।
আর আজকে আমার সেই স্পেশাল সালাদ কই?
রেহানা বেগম মাথা নিচু করে বললেন
– তোমার উপর রাগ করে আজকে ওটা করিনি।
– পারোই তো ওই এক কাজ। সালাদ করা বন্ধ করে দাও। তোমাকে ৫ মিনিট দিলাম। এর মধ্যেই সালাদ করে নিয়ে আসবা।
– একটা কথা বলি রাগ করবেনা তো?
আফতাব হোসেন বললেন
– বলো
– ডালে অনেক ঝাল দিয়েছি। খেয়ো না তোমার আবার পেট জ্বালা করবে।
– যাও সালাদ করে আনো।
সন্ধ্যার দিকে একজন মানুষ বাসায় আসবে। তার জন্য ভালো কোনো নাস্তা রাখা দরকার। যদিও তার ছেলেদের জন্য খাবার থাকে। তারপরও একজন মেহমান তাকে ভালো কিছু না দিলেই নয়। আর তার কাছ থেকে ফী টা নিতেই হবে। মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ গুলোর আত্মসম্মান বোধ তীব্র থাকে। এদেরকে আর যাইহোক আত্মসম্মানে আঘাত করা ঠিক না। তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ ছিলেন তার বাবা।
আফতাব হোসেন তার চেম্বারে বসে বৃষ্টি দেখছিলেন। বৃষ্টির শব্দ শোনার জন্য তিনি জানালার গ্লাস সরিয়ে দিয়েছিলেন কিন্তু পানির ছিটা এসে দরকারী কাগজপত্র গুলোকে ভিজিয়ে দিচ্ছিলো। তাই তাড়াতাড়ি করে আবার গ্লাস লাগিয়ে দিয়েছেন। কী সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে! ঝুম বৃষ্টি যাকে বলে।
এখন দুপুর ২ টা বেজে ১০ মিনিট। তার রোগী দেখা প্রায় শেষ। লাস্ট একজন রোগী আছে। বাইরে বসে ছিলো তার সিরিয়াল আসার আগেই মেয়েটা বমি করতে শুরু করলো। এখন নাকি ওয়াশরুমে আছে। পিএ ইউনুস তো তাকে এরকমই একটা ঘটনা শোনালো। অল্পবয়সী একটা মেয়ে নাকি। খুব মায়া হলো তার। তাই সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও সে রোগীর অপেক্ষায় আছেন। এমনিতে ২ টা বাজার সাথে সাথেই চেম্বার ছেড়ে বাসার উদ্দেশ্যে বের হন।
ইশ বৃষ্টির শব্দ টা যদি শোনা যেত। এককালে তাদের টিনের দোচালা ঘর ছিলো। বৃষ্টির শব্দ তখন বিরক্ত লাগতো আর এখন তার উল্টো! হিউম্যান ক্যারেক্টার যে কতোটা অদ্ভুত বলে বোঝানো যাবেনা।
দরজায় পরাপর তিনটা টোকা পড়ার পর ইউনুস দরজা খুলে বললেন
– স্যার রোগীকে আসতে বলবো?
– আসতে বলো।
আফতাব হোসেন ভাবছিলেন অল্পবয়সী মেয়েরা আজকাল পাগল টাগল হয়ে যাচ্ছে নাকি যে তার কাছে আসছে? এই মফস্বলে সাইক্রিয়াট্রিস্ট দের বলা হয় পাগলের ডাক্তার। সেখানে পাগল ছাড়া আসার সম্ভাবনা খুব কম।
দরজা দিয়ে যে মেয়েটি প্রবেশ করলো তাকে দেখে অবাক হলেন আফতাব হোসেন। একেবারেই অল্পবয়সী বয়স ১১-১২ বছর হবে। মেয়েটি খুব ফরশা তা না উজ্জ্বল শ্যামলা হবে কিন্তু ফ্যাকাসে গায়ের রঙটা। মেয়েটা হেলেদুলে হাঁটছে, মনে হচ্ছে এখনি পড়ে যাবে। সাথে ৩০-৩৫ বছরের একজন পুরুষ। দুজনের ব্যবহারে মনে হচ্ছে সম্পর্কটা বাবা – মেয়ে।
আফতাব হোসেন ধীর কণ্ঠে বললেন
– বসুন।
মেয়েটা বেশ অস্বস্তি বোধ করছে। স্বাভাবিক পাগলের ডাক্তারের কাছে কেউই আসতে চায়না।
মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বললেন
– তোমার নাম মামনী?
মেয়েটা তার বাবার দিকে তাকিয়ে রইলো।
– তোমার নাম বলো মা। তোমার যতো সমস্যা আছে সব বলো মা।
মেয়েটি ঘাড় নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলো।
ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে মেয়েটা বলতে শুরু করলো। ছাড়া ছাড়া ভাবে।
– আমি একটা স্বপ্ন দেখি। স্বপ্নটাতে আমি নিকশ অন্ধকার এক রাস্তায় হাঁটতে থাকি।
তারপর কিছুটা থামলো।
হোসেন সাহেব খেয়াল করলেন মেয়েটার কপালে মৃদু ঘাম। কিন্তু বেশ ঠান্ডা আবহাওয়া এখন। নিকশ কালো এই ধরনের বিশেষণ এতো অল্পবয়স্ক মেয়ের জানার কথা নেই। যদি সে বড়দের গল্পের বা উপন্যাসের বই না পড়ে থাকে।
মেয়েটি আবার বলতে শুরু করলো
– হাঁটতে হাঁটতে একসময় একটা সূক্ষ্ম আলোর রেখা দেখতে পারি। যতো কাছে এগোই আলোর রেখা ক্রমশ সূক্ষ্মতর হতে থাকে কিন্তু হঠাৎ করে আলোর রেখা বিস্ফারিত হয়ে যায় এবং একটি পাথর বাহি ট্রাক আমার উপর উলটে এসে পড়ে। আমার পুরো শরীর পিষে যায়। কানে ক্রমাগত পাথরের শব্দ বাজতে থাকে। আমার দেহটা রাস্তার পিচের সাথে একদম মিশে যায়।
এমন অবস্থা হয় যে, বেলচা দিয়ে অবশিষ্টাংশ উঠাতে হয়। আর রক্ত মাংসের গন্ধ নাকে ভুরভুর করে ঢোকে।
মেয়েটা চুপ হয়ে গেলো।
আমি জিজ্ঞেস করলাম
– স্বপ্নটা কি একবার দেখেছো?
– নাহ, সপ্তাহে দুদিন দেখি।
– কবে থেকে দেখছো?
– ৫-৬ বছর যাবত।
– স্বপ্নটা দেখো ঠিক কোন সময়ে? মানে রাতে ঘুমানোর সাথে সাথে নাকি ভোরের দিকে? নাকি মাঝরাতে?
– ভোরের দিকে। স্বপ্নটা দেখেই ঘুম ভেঙে যায় আর ঘুম ভাঙার পরপর পুরো শরীরে ব্যথা থাকে। নাকের কাছে সেই রক্ত মাংসের গন্ধটা!
– বমি হয় খুব?
– হ্যাঁ
– আজকে ভোরে সেই একই স্বপ্ন দেখেছো?
– হ্যাঁ, কিন্তু কীভাবে বুঝলেন?
– খুব সোজা মামনী। তুমি ঠিকঠাক মতো হাঁটতে পারছিলে না। তোমার বাবা না কী হন সে তোমাকে ধরে রেখেছিলেন। আর একটু আগেই তুমি বমি করে এসেছো। আমার পিএ ইউনুস বললো।
– আমার বাবা।
– গন্ধটা কতদিন থাকে?
– স্বপ্ন দেখার তিন দিনের মধ্যেই গন্ধটা থাকেনা একদম। আবার স্বপ্ন দেখি আবার গন্ধটা ফিরে আসে।
– তিনদিন গন্ধটা একইরকম থাকে নাকি পরিবর্তন আসে?
– আস্তে আস্তে কমতে থাকে।
– পুরো শরীরে ব্যথা হয় নাকি নির্দিষ্ট কোনো অঙ্গে?
– পুরো শরীরে কিন্তু মাথায় বেশি ব্যথা হয়। প্রথম দিন স্বপ্নের পরে বেশি ব্যথা থাকে।
– আচ্ছা। কোন ক্লাসে পড়ো মামনী?
– পড়াশোনা করিনা।
– তোমার নামটাই জিজ্ঞেস করতে ভুলে গিয়েছি। নাম কী তোমার মামনী?
– ফারিয়া।
ফারিয়ার বাবাকে কিছু প্রশ্ন করা দরকার। কী কী প্রশ্ন করতে হবে তারা জানা কিন্তু করতে ইচ্ছে করছেনা। স্বপ্নটা নিয়েই ভাবতে ইচ্ছে হচ্ছে। স্বপ্নটা দেখার পিছনে কারণ অবশ্যই আছে। আর এই কারণ জানতে হলে তাকে ফারিয়ার বাবার সাথে কথা বলাটা জরুরি। নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে যেতেও তার ইচ্ছে নেই।
ফারিয়ার বাবাকে বললেন
– কিছু মনে করবেন না একটা রিকুয়েষ্ট করি?
ফারিয়ার বাবা অপ্রস্তুত ছিলেন এরকম কথা বলতেও পারে ডাক্তার সাহেব। তিনি সম্মতি সূচক মাথা নাড়ালেন।
– আপনি সন্ধ্যার পরে আমার বাসায় আসুন। আমার এখন খুব বিরক্ত লাগছে।
– আমাকে দরকার?
– জি, আমার বাসার ঠিকানা লিখে দিচ্ছি। আপনি সন্ধ্যা ৭ টায় পৌঁছে যাবেন। আজ আমার ভালো লাগছেনা।
– আমরা যাবো?
– অবশ্যই, আর ফারিয়াকে একটু দেখে রাখবেন।
ফারিয়ার বাবা মানিব্যাগ থেকে ৫০০ টাকার পুরাতন নোট বের করে ডাক্তারের হাতে দিতে গেলেন। আফতাব হোসেন বললেন
– আজকে নিবোনা। নিতে ইচ্ছে করছে না। মানে আজকে আমার কিছুই করতে ইচ্ছে করছেনা। বাসায় গিয়ে আমি টানটান হয়ে বিছানায় শুয়ে থাকবো।
কথা না বাড়িয়ে ফারিয়ার বাবা কালাম সাহেব চুপচাপ মেয়েকে নিয়ে চেম্বার ছেড়ে বের হয়ে এলেন। মধ্যবিত্ত ঘরের মানুষ তিনি। খুব কষ্টে সংসারের খরচ বাড়িয়ে তিনি এখানে এসেছেন। মেয়েটাকে তিনি খুব ভালোবাসেন। হয়তোবা এই পৃথিবীর সব বাবাই তার মেয়েকে ভালোবাসেন।
মৃদু হেসে ধীরধীরে চোখটাও স্থীর করে বন্ধ করে নিলো,শান্তি লাগছে হঠাৎ রাহুলের এই ভেবেই যে স্নেহাকে আর কখনোই কষ্ট দিবে না সে,শান্তি লাগছে এটাও ভাবতেই যে স্নেহার সাথে করা এই অভিমানই তার জীবনের শেষ অভিমান,
____ এইদিকে, খাবার সামনে থেকে সরিয়ে রেখে ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসে আছে দাদী,
গীতালি : পুরা দিনটাই তো বিশ্রাম করেননাই দাদী, তাই মনে অয় খারাপ লাগতাছে,ঔষধ খাইয়া শুইয়া পড়েন ভালাই লাগবো!
দাদী : তাই তো বলছি, ঔষধ গুলো দে,খেয়েনি!
গীতালি : নট পাসি্বল দাদী! ঔষধ এর আগে কিছু খাবার তো খাওন লাগবোই, তারপরই ঔষধ পাইবেন!
দাদী : আরে স্নেহা ওসব ওর রাগ উঠলে তখন করতো আরকি, মানে ঐযে আসিফ আর রিদোয়ান, ওদের কারো বাসায়ই থেকে যেতো,
– তবে এখন আর করবে না আমার বিশ্বাস ও চলেই আসবে!
স্নেহা : দাদী! ও আমাকে কল করেছিলো, আমাকে সরি আর আই লাভ..
গীতালি : হুম, কোওননা ভাবী, ভাইয়া আই লাভ ইউ কইছে তাই না? হিহি!
স্নেহা : [ কাদো কন্ঠে ] ও আমাকে বাই না বলে ফোন কখনোই কাটে না দাদী!
– কিক..কিন্তু আজ কথার মাঝেই হুট করে ফোন কেটে দিলো,
দাদী : হতে পারে মোবাইলের চার্জ চলে গিয়েছিলো স্নেহা!
স্নেহা : নাহ! দাদী! ও..ওর মোবাইল যখন আমি দেখছিলাম তখনও অনেক চার্জ ছিলো!
গীতালি : এইডাও হইতে পারে মোবাইল হঠাৎ নষ্ট হইয়া গেছে!
স্নেহা : তা কিভাবে হবে গীতালি, এমনটা হয় নাকি? আ..আমার কেনো যেনো মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে রাহুলের সাথে,
– দাদী ট্রাষ্ট মি! আমার মন বলছে রাহুল হয়তো কোনো কষ্টে আছে!
দাদী : আচ্ছা আচ্ছা শান্ত হোও স্নেহা! আমি বুঝছি সব!
– এভাবে টেনশন করলে তো তুমি অসুস্থ হয়ে পড়বে!
স্নেহা : দাদী! আমি ফোন বেক করছিলাম, কিন্তু ও..ওর ফোন হঠাৎ করেই সুইচড অফ আসছে,
দাদী টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে স্নেহার দিক এগিয়ে দিয়ে,পানি পান করতে বললো স্নেহাকে, গলা দিয়ে তো পানি গুলোও নামবে না স্নেহার, তাই খাবেনা বলেই মাথা নাড়ালো স্নেহা,
দাদী : এভাবে ভেংগে পড়লে কি চলবে? তুমি তো জানোই ওর কান্ড গুলো বাচ্চাদের মতোই,
– হয়তো কোনো ফ্রেন্ডসদের সাথে আড্ডায় পড়ে গেছে,
স্নেহা : দাদী! ও আমায় বাই না বলে কখনোই..
দাদী : হ্যাঁ! তা করেছে কেনো আজ? বাই না বলে ফোনো কেনো কাটলো ও? এটার জন্য আজ বিচার হবে ওর!
– আসুক শয়তানটা!
– বিয়ের তিনটা দিন যাচ্ছে মাত্র এরই মধ্যে মেয়েটাকে কাদিয়ে ছাড়ছে,কতো বড় সাহস!
গীতালি : ভাবী আপনি টেনশান কইরেন না, ভাইয়া চইলাই আসবো, আপনি পানি খান আর মাথা ঠান্ডা রাখেন,
দাদী : নাও স্নেহা! চিন্তা করোনা ও চলে আসবে, [ কি আর করার স্নেহার ও দাদীর কথায় মনকে বুঝ রেখে গ্লাসটি এগিয়ে নিয়ে কিছু পানি খেয়ে নিলো ]
দাদী : ও তোমায় অনেক চাই স্নেহা! নিজের চেয়ে ও বেশি চাই!
– জীবনটাকে কষ্টের চাপা থেকে সরিয়ে এনেছে শুধুমাত্র তোমার ভালোবাসা পেয়ে! নিজেকে বদলে নিয়েছে তোমার কারণে,
– শুধু রাগটা উঠলে একটু সামলে থাকতে পারেনা আরকি, এতে মন খারাপ করার কিছু নেই, মাথা ঠান্ডা হলে ঠিকই চলে আসবে,
গীতালি : স্যার তো দুনিয়ার সব কাগজপত্র নিয়াই বইছে কাজ করতো, তাই ডিনার রুমেই পাঠাইয়া দিতে কইছে,
দাদী : এই তিনদিনের জমানো কাজ সব আজই নিয়ে বসে গেছে হয়তো, আচ্ছা ঠিকাছে তুই গিয়ে ডিনার পৌছে দিয়ে আয়!
[ বলেই আবার স্নেহার দিক তাকাতে দেখে চেহেরাটা এখনো কাদো কাদো করে রেখেছে স্নেহা, দাদীর ও টেনশন হচ্ছে রাহুলের জন্য, কিন্তু তাও কি করার সাহস তো দিতেই হবে স্নেহাকে ]
দাদী : স্নেহা! তুমি যাও রুমে গিয়ে বিশ্রাম করো, ভালো লাগবে, আর হ্যাঁ ওকে নিয়ে চিন্তা করোনা ও চলেই আসবে,
[ কিন্তু রাহুলের চিন্তার ধ্যান তো ছুটছিলোই না স্নেহার মাথা থেকে, তাও দাদীর কথার সম্মতি দিয়ে উঠে চলে এলো রুমে, বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে মোবাইলের স্ক্রিনের দিক তাকিয়ে তাকিয়ে চোখের জল ফেলছে ]
____ এইদিকে গাড়ীতে বসে স্টেয়ারিং এর উপর এখনো মাথা রেখে ভেবে যাচ্ছে রাহুল,
স্নেহা তো তার ভালোবাসা,বেচে থাকার আস্থা, এই স্নেহাই তো সেইসব ভালোবাসা এনে দিয়েছে তার জীবনে, যেইসব ভালোবাসার বঞ্চিত হকদার ছিলো রাহুল, জীবনটা পেড়িয়ে যাচ্ছিলো ঠিকই, কিন্তু এই জীবন উপভোগ করতে শিখিয়েছেই তো তার স্নেহা,
এতোদিন স্নেহাকেই প্রমিস করেছিলো সে, কিন্তু আজ নিজের কাছেই প্রমিস করছে রাহুল, দূঃখ্যকে কাছে ঘেষতে দিবে না আর তার স্নেহার, লড়াই করে যাবে সে সবকিছুর সাথেই,
স্নেহা যদি তবুও ভুল বুঝে, বলবে ভালোবাসি,
স্নেহা যদি অভিমান করে, তাও বলবে ভালোবাসি,
স্নেহা যদি দূরেও ঠেলে দেই তখন ও বলে যাবে ভালোবাসি, ভালোবাসবো, ভালোবেসেই যাবো!
সস্থির একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথাটা গাড়ীর স্টেয়ারিং থেকে তুলে জানালার গ্লাসের দিক তাকালো, গ্লাসটি সম্পূর্ণ ধূসর হয়ে গেছে, এতো তাড়াতাড়ি কুয়াশা জমে যাওয়ার ওতো কথা না, গাড়ী এখনো স্টার্টে রয়ে গেছে, তা খেয়াল করে গিয়ারটা টেনে পেছনে বেক দিতে চাইলো, কিন্তু গাড়ী পেছনে বেক যাচ্ছিলো না, ক্লান্ত অনুভব করে সিটে হেলান দিয়ে বসে পড়লো আবারো, মনের মধ্যে করে ফেলা ভুলটিই বারবার নাড়া দিয়ে যাচ্ছে, স্নেহার সাথে যা রাগ দেখানোর দেখিয়েছে তবে প্রমিস ভংগ করে ড্রিংক্সটা না করলে হয়তো গাড়ীটাও আজ সেইফলি চালানো যেতো, ঘাড় থেকে কিছু রক্ত হাতে নিয়ে তাকাতেই কষ্টটা যেনো আরো বেড়ে উঠলো রাহুলের, ভাবছে স্নেহার সাথে রাগ দেখিয়ে চলে আসাতে স্নেহা যতোটুকুইনা যন্ত্রণা ভোগ করছে তার চেয়ে বেশি যন্ত্রণা তো তখনি পাবে মেয়েটা, যখন সে রাহুলকে এই রক্ত মাখানো অবস্থায় দেখবে,
হেল্পার : স্যার আপনে এই অবস্থায় গাড়ী কিভাবে চালাইবেন? আইয়েন আমরা পৌছায়া দেই, আর গাড়ীর অবস্থাডাও ভালো মনে হইতেছে না,
রাহুল : মরতে মরতে বেচে গেলাম, দ্যাট মিনস্ ও নিজের জানের বদলে আমার জান ভিক্ষার প্রে করছে,
– কতটা চাই আমাকে, আর আমি স্টিল ইডিয়ট একটা, ওকে হার্ট করেছি, কাদিয়েছি, [ ড্রাইভার আর হেল্পার দুজনেই হতভম্বের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাহুলের দিক, চোখে পানি এসে জমে গেছে রাহুলের ]
রাহুল : হস্পিটাল যেতে হবে না, আ..আমার হস্পিটাল তো ওই, ওর চেহেরার দিক তাকাতেই শান্তির আহবান চলে আসবে, ওর হাতের স্পর্শে সব ক্ষতই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে, ইউ নোও দ্যাট? শি ইজ অ্যা ম্যাজিক্যাল লাভ!
[ বলেই পাশ মুরে তাকালো ড্রাইভার আর হেল্পারটির দিক, তাদের চেহেরার অবস্থা দেখে বুঝতে পারলো রাহুল,এরা তার কথায় কিছুই বুঝে উঠেনি, তাই মৃদু হেসেই রাহুল তাদের জিজ্ঞাসা করলো ]
রাহুল : বাসায় বউ আছে?
হেল্পার : [ একটু লজ্জা পেয়ে ] আমার তো বিয়াই হইলো না স্যার বউ কেমনি থাকবো? কিন্তু উ..উনার আছে, [ বলেই আংগুল দিয়ে ড্রাইভার এর দিক ইশারা করে দেখিয়ে দিলো ]
ড্রাইভার : জ্বি সাহেব! আ..আছে!
রাহুল : ঝগড়া করে?
ড্রাইভার : হো সাহেব! মাঝে মাঝে মাল দিয়া বাসায় যাইতে দেরী অয়, তহন অনেক ঝগড়া করে,
রাহুল : তুমিও করো?
ড্রাইভার : করমু না? আমারে কয় এতো দেরী অয় কেন? বিয়া আরেকটা করছোনি যে ঐ ঘরের বউরে ও টাইম দিয়া আইতে অয়! আরো কতো কি সাহেব প্যানপ্যান করতে তাহে খালি, তাই আমিও কয়ডা হুনায়া দেই!
রাহুল : নো স্টুপিড! ও সারাদিন একা থাকে, তোমায় মিস করে বলেই এমন কথাটা বলে, আর এমন কথাগুলো বলার মানে এই না যে তোমার উপর ওর বিশ্বাস নেই,
– এ..এমন ওতো হতে পারে যে ও চাইনা ওর ভালোবাসার অন্য কেউ ও ভাগ নিক!
– সো্! কখনো হার্ট করে আ..আই মিন কষ্ট দিয়ে কথা বলবা না, ওরা তো ওদের সবকিছু ছেড়ে, আমাদের ভালোবাসার ভরসায় হাত রেখে জীবনসংগী হয়ে আসে,
– [ মুচকি হেসে ] সকালে রিদকে এসবই বুঝাচ্ছিলাম জানো? আর এখন আমি নিজেই একই ভুল করে বসে আছি,
– এক্সুলি আমি না একটা বিগেষ্ট স্টুপিড!
– [ কিছুক্ষণ পর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ] ওকে গাইস্ নাও আই হেভ টু গো! কপালে যদি থাকে, তাহলে নেক্সট টাইম আবারও দেখা হবে!
ড্রাইভার : কিন্তু সাহেব আপনি যাইতে পারবেন এই অবস্থায়?
রাহুল : [ হেসে ] ইয়াহ! এক্সুলি আমার গাড়ী আমার মতোই স্ট্রং! সো্ ডোন্ট ওয়ারি! [ ড্রাইভার আর হেল্পার দুজনই মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো ]
রাহুল : বাই দ্যা ওয়ে! কষ্ট করে আমাকে একটা হেল্প করো!
– আসলে! গাড়ীর ফ্রন্ট টায়ারটা গাছের শেকড়ের সাথে আটকে গেছে, তাই একটু সামনে থেকে যদি ধাক্ষা দাও, আ..আমি পেছনে বেক দিচ্ছি অতোটাও বেশী শক্তি ব্যয় হবে না!
হেল্পার : আরে স্যার! কি কইতাছেন এসব? কিসের কষ্ট, দাড়ান এহনি দিতাছি, [ বলেই ড্রাইভার আর হেল্পার দুজন মিলেই রাহুলের গাড়ীটা সামনে থেকে ধাক্ষা দিলো, এতে রাহুল তার গাড়ী সহজেই পেছনে নিয়ে আসে, দুজনকে,ধন্যবাদ জানিয়ে, বাড়ীর উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লো রাহুল ]
___ এইদিকে, রাহুলের রুমের দরজায় কড়া নেড়ে ভেতরে ঢুকলো দাদী, স্নেহাও শব্দ পেয়ে চোখ মুছে বারান্দা থেকে রুমে এগিয়ে এলো,
দাদী : স্নেহা! আমি আমার রুমে যাচ্ছি, তোমাদের দুজনের ডিনার টেবিলে রাখা আছে, রাহুল আসলে একত্রে খেয়ে নিও, আর হ্যাঁ তোমার যদি কিছু লাগে তাহলে গীতালি থেকে চেয়ে নিও!
স্নেহা : জ্বি! দাদী!
দাদী : টেনশন করোনা কিন্তু! এইভাবে তো অসুস্থ হয়ে পড়বে তাই না? [ মৃদু হেসে মাথা নাড়ালো স্নেহা, দাদী ও স্নেহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে তিনিও চিন্তিত চেহেরায় নিজের রুমে চলে গেলো ]
কান্না ভেংগে আসছে স্নেহার, নিজেকেই শেষ করে দিতে মন চাইছে, এতোটাও কষ্ট না দিলে পারতো রাহুলকে, গিটারটির দিক চোখ যেতেই আটকে রাখতে পারলো না আর চোখের জল গুলো, ফুফিয়েই কেদে উঠলো, রাহুলকে ছাড়া যে বড্ড একা একা লাগছে নিজেকে, খুব কাছে পেতে মন চাইছে রাহুলকে,
তবে রাহুলের ও কি মন চাইছে না? তার স্নেহাই তো, আর কখনোই করবে না এমন প্রমিস ওতো করেছে, তাও কেনো রাহুল ফিরে আসছে না? ও কি জানেনা ওকে ছাড়া স্নেহার কষ্ট হয়?
চোখ মুছে শালটা গায়ে দিয়ে,ধীরেধীরে রুম থেকে বেড়িয়ে নিচে এসে পড়লো স্নেহা, মনটাও ছটফট করছে, এই ভেবে যে এখন তো অন্তত চলে আসার কথা রাহুলের,কিন্তু তাও কেনো আসছে না?
মনকে আর মানিয়ে রাখতে পারলো না স্নেহা, তাই এদিকওদিক তাকিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে, মেইন ডোর খুলেই বেড়িয়ে গেলো, ধীরো পায়ে গার্ডেনের দিক এগিয়ে এলো, রাহুলের গাড়ীটি নেই দেখে চোখটা ভিজে আসলো আবারো, আশেপাশে চোখ বুলাতেই যেনো হাজারো ভালোবাসার সৃতি উকি দিচ্ছিলো তাদের,
একই ভুল সেইদিনও বুঝে ছিলো স্নেহা, সব বাধা পেড়িয়ে এই গার্ডেনের দিকই রাহুলের বুকে ঝাপটে পড়েছিলো সে, গাছের পাতায় হাত বুলিয়ে দিতেই মনে পড়ছে এইদিকটা দাড়িয়েই সবার সামনে প্রপোজ করেছিলো রাহুল,
হঠাৎ গাড়ীর হর্ণের শব্দ ভেসে আসলো কানে, তাড়াতাড়ি পেছন ফিরে তাকাতেই দেখে দারোয়ান গেইট খুলে দিয়েছে, সাথেসাথেই হাই স্পিডে, ঝঞ্জার হয়ে যাওয়া সাদা রঙের একটি গাড়ী প্রবেশ করলো গেইট দিয়ে, গাড়ীটি গভীর চেনাই মনে হচ্ছিলো স্নেহার, তবে গাড়ীর অবস্থা দেখে হৃদস্পন্দনগুলো যেনো অতি দ্রুতই কাপতে শুরু করে দিলো তার,
স্নেহার সামনে বরাবর কিছুটা দূরত্ব রেখেই গাড়ীটি এসে থামলো, গাড়ীর দরজা খুলেই বেড়িয়ে দাড়ালো রাহুল, স্নেহার দিক তাকাতেই দেখে চোখের জলে ভিজিয়ে চুপসে রেখেছে মুখটা,
মূর্তি হয়েগেছে স্নেহাও, রাহুলের হাল দেখে, হাত-পা সবই কেপে চলছে তার, নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অপরাধীটাই মনে হচ্ছে আজ,
দাঁড়িয়ে থাকার সব শক্তি হারিয়ে হঠাৎ মাটিতেই লুটিয়ে বসে পড়লো স্নেহা,
গাড়ীর দরজা লাগিয়ে ধীরো পায়ে এগিয়ে এসে, হাটু গেড়ে স্নেহার বরাবরই বসে পড়লো রাহুল ও, নিস্তব্ধ হয়ে আছে দুজনই, দুজনের চোখে দুজনই অপরাধী আজ! কান্না ভেঙে আসছে রাহুলের ও হঠাৎ, স্নেহা অনেক কষ্ট পেয়েছে আজ, তা স্নেহার চোখের দিক তাকিয়েই বুঝতে পারছে রাহুল, পলক ঝুকিয়ে স্নেহার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে কাদো কন্ঠে বলে উঠলো,
রাহুল : এভাবে চুপ করে থেকোনা স্নেহা! তোমার নিরবতা আমার বুকে আরো ক্ষত করে চলছে, [ চোখ বুজে জল চেপে ফেললো স্নেহা, রক্ত মাখানো রাহুলের চেহেরাটি দেখার সাহস হচ্ছিলো না তার ]
রাহুল : তোমার থেকে দূরে গিয়ে বু..বুঝেছি আজ স্নেহা! তোমাকে কষ্ট দিয়ে বুঝেছি, আ..আমি কতটা খারাপ আসলে, আমি মোটেও ভালো হাজবেন্ড না, বিয়ের দিন তোমায় প্রটেক্ট করতে পারিনি, হাতের যন্ত্রণায় কষ্ট পেয়েছিলে তুমি, গতকাল রাত তোমায় না বলে চলে গিয়েছিলাম,আর সারারাত কেদেছো তুমি, আর আজ আবারো তোমার উপর রাগ দেখিয়ে চলে গিয়েছি, তুমি অনেক কষ্ট পেয়েছো, কেদেছো, এখনো সেই কষ্টেই কেদে চলছো আমি জানি!
– কিক..কিন্তু স্নেহা! ট্রাষ্ট মি, আমার তোমাকে কষ্ট দেওয়ার কোনো ইন্টেনশন থাকেনা, আ..আমি তো তোমাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষটা হিসেবেই দেখতে চেয়েছিলাম, আমি তোমাকে শুধু ভালোবাসতে চেয়েছি! কষ্ট গুলো তোমার আড়ালে সরিয়ে নিতে চেয়েছি,
– কিন্তু সবকিছুতেই আমি ব্যর্থ স্নেহা! তো..তোমার এতোটা ভালোবাসা আমি ডিজার্ব করিনা! শাস্তি দাও তুমি আমায় স্নেহা! নাহলে আমি নিজেকে কখনোই ক্ষমা করতে পারবো না, সত্যি কখনোই পারবো না, [ বলেই কান্নায় ভেংগে পড়লো রাহুল, দু’হাত দিয়ে রাহুলের মুখ তুলে ধরে চোখের জল গুলো মুছে দিলো স্নেহা, চুল সরিয়ে কপালের রক্ত গুলো হাতে ছুতেই, রাহুল খুব কষ্ট পাচ্ছে ভেবেই বুকটা কেপে উঠলো স্নেহার ]
রাহুল : স্নেহা! আ..আমি তোমাকে দেওয়া প্রমিস ভেংগেছি, ড্রিংক্স করে ড্রাইভ করেছি আমি, [ কপাল থেকে কিছু রক্ত হাতে নিয়ে ] এগুলো দেখে মোটেও কেদো না, এসব তো তারই শাস্তি!
রাহুল : এন্ড স্নেহা! তুমি চিন্তা করোনা, নেহাকে আমদের মাঝে আর কখনোই আসতে দেবো না, আ..আমি এক্ষুণিই নেহার নাম্বারটা ব্লক করছি তোমার সামনেই! [ বলেই রাহুল তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়িয়ে গাড়ীর দিক এগিয়ে গিয়ে মোবাইল খুজতে লাগলো, স্নেহা ঐদিকটা বসেই রাহুলের কান্ড দেখছে, কিছু সময় পরই রাহুল গাড়ীর দরজা বেধে কাতর দৃষ্টিতে তাকালো স্নেহার দিক ]
রাহুল : এ..এক্সুলি গাড়ী যখন এক্সিডেন্ট হয়েছিলো তখন নিশ্চয়ই মোবাইলটা কো..কোথাও পড়ে গিয়েছে, [ কোনো জবাব দিলো না স্নেহা, কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ফুফিয়ে কেদে দৌড়ে এসে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো রাহুলকে, রাহুল ও মৃদু হেসে আগলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিলো স্নেহাকে ]
স্নেহা : আই লাভ ইউ রাহুল!
রাহুল : আ..আই লাভ ইউ স্নেহা!
শীতল বাতাসে কুড়িয়ে মুড়িয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেই আছে স্নেহা, সাথে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কেদে ও চলছে, সবই ফিরিয়ে পাওয়া সুখের কান্না স্নেহার, সৃতি ভেসে উঠলো রাহুলের চোখেও, ঐদিনও ঠিক স্নেহা এই জায়গাতেই এভাবে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরেছিলো তাকে, মনে পড়তেই মুচকি হাসলো রাহুল, সাথে চোখটাও ভিজে গেছে, তবে তাও নিজেকে কন্ট্রোল করে দু-হাত দিয়ে স্নেহার চুল গুলো কানে গুজে দিয়ে মুখ-খানি তুলে ধরলো, লালচে স্নেহার চেহারাটা রাহুলের মনটাকে যেনো মাতালই করে দিচ্ছে, দীর্ঘশ্বাস নিয়ে স্নেহার কপালে একটু চুমু দিয়ে মাটিতে পড়ে যাওয়া স্নেহার শালটা কুড়িয়ে নিলো,
আবেগময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে স্নেহা, রাহুল স্নেহার গায়ে পেছিয়ে দিলো শালটা,
স্নেহার চোখের অশ্রুর বাধাহীন অবস্থা দেখে মৃদু হেসে রাহুল আবারো স্নেহার চোখের নিচটা দু-হাতে মুছে দিলো,স্নেহাও তার ঝাপসানো চোখ দুটো দিয়ে মিটমিট করে চেয়ে যাচ্ছে রাহুলের দিক,
আর না ভেবে রাহুল স্নেহার হাত ধরে পাশমুড়িয়ে দিয়ে হুট করেই কোলে তুলে নিলো,
গীতালি : রু..রুমেই আছে, আর আপনি আইয়েননা দেইখায় টেনশন করতাছে, আ..আমি ইনফাম কইরা আসি,
রাহুল : শুনো!
গীতালি : হুম?
রাহুল : এক্সিডেন্ট এর কথাটা বলতে হবে না, [ গীতালি ঠিকাছে বলে মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো ]
রাহুল ও স্নেহাকে নিয়ে রুমের উদ্দেশ্যে শিরি দিয়ে উঠে গেলো, শিরির ফাষ্ট স্টেপ পেড়ুতেই হঠাৎ স্নেহা নেমে যাওয়ার জন্য ছুটাছুটি করতে লাগলো,
রাহুল : হোয়াট?
স্নেহা : রাহুল! আপনার বাবা আসছে, দোহাই লাগে প্লিজ নামান!
রাহুল : তো কি হয়েছে? আমার বাবাই তো!
স্নেহা : বা..বাবাই তো মানে? প্লিইজ রাহুল..
বাবা : আরে রাহুল? কি হয়েছে তোর?
রাহুল : নাথিং বাবা! জাষ্ট অ্যা লিটল-মিষ্টেক!
বাবা : লিটল মিষ্টেক হোয়াট ডু ইউ মিন? রাহুল, ব্লিডিং হচ্ছে তোর হেড থেকে,
রাহুল : এক্সুলি গা..গাড়ী কনফ্রন্ট হয়েছিলো, তাই হেড এ হিট বেশি লেগেছে,
বাবা : কেয়ারফুল থাকবি না?
রাহুল : আই ওয়াজ ড্রাংক বাবা! [ বলতেই রাহুলের বাবা আড়চোখে স্নেহার দিক তাকালো, রাহুল ও তার বাবার চাহনি বুঝে মৃদু হাসলো ]
স্নেহা : [ ফিসফিসিয়ে ] লাজলজ্জা কিছু নেই আপনার, একটু আগে তো অনেক ভদ্র সাজছিলেন!
– প্লিজ নামিয়ে দিন,
রাহুল : আরে স্নেহা! বাবার সময় বাবাও এমন অনেক করেছে মা কে নিয়ে [ স্নেহা তাড়াতাড়ি রাহুলের মুখ চেপে ধরে মাথা নুয়ে গুটিয়ে যায় রাহুলের বুকে, রাহুল স্নেহার হাতে কামড় দিতেই স্নেহা হাত সরিয়ে নেই তাড়াতাড়ি ]
স্নেহা : আরে আরেহ! এতো সিরিয়াস কেনো আপনি! ঠি..ঠিকাছে বন্ধ করছি, [ রাহুল মুচকি হেসে এগিয়ে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করিয়ে নিলো, স্নেহা আড়চোখে তাকিয়ে আছে রাহুলের মুখের ফুটন্ত হাসিটির দিক, রাহুল হেটে গিয়ে খাটের উপর বসিয়ে দিলো স্নেহাকে ]
স্নেহা : আপনার হাসিটা অনেক সুন্দর! [ রাহুল মৃদু হেসে ভোর কুচকে তাকালো স্নেহার দিক ]
স্নেহা : স..সত্যি! [ বলেই রাহুলের চাহনীর লজ্জা পেয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলো তাড়াতাড়ি, কিছু বললো না রাহুল ও, ব্লাশিং হয়ে, নিজের ঠোটটি নিজেই দাত দিয়ে কামড়ে ধরে ঘাড় চুলকাতে চুলকাতে হেসে ড্রেসিং এর দিক চলে গেলো, ডেক্স খুলে কি কি যেনো খুজছিলো, স্নেহাও কনফিউজড হয়ে দূর থেকে তাকিয়ে বলে উঠলো ]
– কি খুজছেন আপনি? এইদিকে বসেন আ..আমি ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছি,
রাহুল : চুপ করে বসে থাকো, আমি আসছি,
বলেই কিছুক্ষণ ঘাটাঘাটি করে ফার্ষ্ট এইড বক্সটা নিয়ে বিছানার দিক এগিয়ে এসে স্নেহার সামনে রাখলো বক্সটা, জ্যাকেটটাও খুলে বিছানায় ছিটকে ফেলে স্নেহার বরাবর বসে পড়লো, কিছু বললো না স্নেহা, গায়ের শালটা খুলে একপাশ রেখে দিলো সেও, তাকিয়ে আছে রাহুল তা দেখে স্নেহাও মৃদু হেসে বক্স থেকে কটন নিয়ে রাহুলের কপালের ব্লাড মুছে মেডিসিন লাগাতে শুরু করলো, আর রাহুল স্নেহার সামনে বারবার চলে আসা চুল গুলো কানে গুজে দিতে ব্যস্ত!
মাথার ব্যান্ডেজ শেষ করে স্নেহা, রাহুলের ঘাড় বেয়ে পড়া রক্ত গুলোও মুছে দিতে গিয়ে হঠাৎ খেয়াল করলো রাহুল তার চোখ দুটো কুচকে বটে নিলো,
স্নেহা : আপনার ঘাড়ে ও হিট লেগেছে তাই না?
রাহুল : অ..অল্প একটু!
স্নেহা : ব্যথা করছে আপনার?
রাহুল : তোমার ছোয়াকে ব্যথাও ভয় পাই স্নেহা!
স্নেহা : [ কাদো কন্ঠে ] ঢং কম করেন, আমি জানি আপনি ব্যথা পাচ্ছেনকি পাচ্ছেন না,
রাহুল : [ স্নেহার চোখের পানি মুছে দিয়ে ] এই পাগলী কাদছো কেনো? বললাম তো আম ফাইন!
স্নেহা : সব আমার কারণেই হয়েছে, তখন যদি আমি..
রাহুল : শিসসস! স্নেহা ডোন্ট ক্রাই!
চুপ করে গেলো স্নেহা, রাহুল স্নেহার কপালে একটি চুমু দিয়েই, শার্টের বাটন গুলো ছুটিয়ে দিলো স্নেহাকে, স্নেহা ও চোখ মুছে কাদো কাদো চেহেরা নিয়ে রাহুলের বুকের ধারে বেয়ে পড়া ব্লাড গুলো মুছে দিলো, হঠাৎ রাহুল স্নেহার হাত থেকে কটোনটা ছুটিয়ে নিয়ে মাটিতে ফেলে দিলো, অবাক হয়ে তাকালো স্নেহা!
রাহুল : [ ফিসফিসিয়ে ] আজকের রাতটা আমাদের জীবনের সৃতিময় রাত করতে চাই স্নেহা!
স্নেহা কিছু বললো না আহ্লাদিত চোখে তাকিয়ে আছে রাহুলের চোখের দিক, পলক ঝুকিয়ে স্নেহার ঠোটে আলতো একটি চুমু খেয়ে বলে উঠলো,
রাহুল : বলো? দিবা তো?
কোনো জবাব না দিয়ে, স্নেহা ও ধীরেধীরে রাহুলের গলার ধারে মুখ এগিয়ে নিয়ে গভীর একটি চুমু বর্ষণ করলো, চোখ বন্ধ করে মৃদু হাসলো রাহুল! স্নেহার আদর গুলো ও যে এতো মধুময় হয়,তখন নিজেকে নিজের কাছ থেকেই হারিয়ে ফেলতে মন চাই রাহুলের!
স্নেহা সরে আসতেই, রাহুল তার শার্টটা এক্কেবারে খুলে ছুড়ে রাখলো বিছানায়, দীর্ঘশ্বাস নিচ্ছে স্নেহা, রাহুল ও মুখ এগিয়ে তার নাকের সাথে স্নেহার নাকটা চেপে রাখলো,
চোখ বন্ধ করে রাহুল স্নেহার ঠোট জোড়া নিজের ঠোটের দখলে নিয়ে নিলো, কিছু মুহুর্ত পরেই রাহুল তার হাত দিয়ে স্নেহার কাধ থেকে শাড়ীর আঁচলটাও সরিয়ে নিলো,
লজ্জায় স্নেহা রাহুলের ঘাড়ে হাত দিয়ে নিজেকে ঢেকে রাখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে, স্নেহার কান্ড দেখে রাহুল ও মুচকি হেসে, নিজের ঘাড় থেকে স্নেহার দু-হাত দু-দিক থেকে টেনে নিয়ে বিছানায় চেপে ধরে বলে উঠলো,
রাহুল : জানো স্নেহা!
– নেপুলিয়ান বলেছে, তোমরা আমায় একটি শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দিবো,
– আর আজ রাহুল কি বলছে জানো?
– স্নেহা! তোমার আজকের রাতটা আমার নামে করে দাও, আমি তোমায় একটা কিউট বেবী উপহার দিবো,
চোখ মেলাচ্ছিলো না স্নেহা, হাসতে লাগলো, দীর্ঘশ্বাস নিয়ে লজ্জায় মাথাটা পাশ ফিরিয়ে নিলো তাড়াতাড়ি, রাহুল ও মুচকি হেসে ধীরেধীরে স্নেহার খালি গলাটি তার ঠোটের গভীর চুমুর স্পর্শে ছুয়ে দিতে লাগলো,
সময় ঘনাতে লাগলো, মান-অভিমান সব ভুলে এই রাতটিতেই রাহুল তার স্নেহাকে নিজের করে নিচ্ছিলো,
রাহুল : এতো কিউট করে তাকিয়ে থেকোনা স্নেহা! আমার কিন্তু তোমার এই কিউট এক্সপ্রেশন গুলোতে আনলিমিটেড কিস্ দিতে মন চাই, [ মৃদু হাসলো স্নেহা রাহুলের কথা শুনে ]
রাহুল : এভাবেই হাসবা অলোয়েজ সুট করে তোমার ফেইসে্!
মাথা নাড়ালো স্নেহা, দূর থেকে বাকিরা তাকিয়ে আছে,কেউ কেউ ছবিও তুলছে, মুখে বিস্ময়কর একটি হাসি ঝুলিয়ে লিনিসা ফুফি এগিয়ে এলো রাহুল আর স্নেহার দিক,
রাহুল : আরে ফুফি ও তো ডান্স টিচার তাই সুন্দর ডান্স পারে, উমম আমার ডান্সের ব্যপারে কিছু বলতে পারো, আম হেয়ারিং?
লিনিসা ফুফি : তোর আর নতুন করে কি বলবো!
রাহুল : আরে! নতুন করে কি বলবে মানে, অন্তত মিথ্যা মিথ্যা তারিফ ওতো করে দিতে পারো! [ লিনিসা ফুফি হেসে রাহুলের মাথায় আলতো করে একটি বারি দিলো, হঠাৎ পেছন থেকে কেউ ডাক দিলো ফুফিকে ]
লিনিসা ফুফি : হ্যাঁ! তুই এখন থেকে বাদ! [ বলেই ফুফি হেসে স্নেহাকে টেনে নিয়ে চলে গেলো, স্নেহা ও মাথা ঘুরিয়ে রাহুলের বেচারা চেহেরার দিক একবার তাকিয়ে মুচকি একটি হাসি দিলো ]
রাহুল : [ দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ] ইয়াহ, রাহুল! তুই তো এখন এমনিতেই বাদ! বিকজ আফটার ম্যারেজ ছেলেদের তো কোনো পাত্তাই থাকে না, ইউ হেভ টু বুঝতে হবে! [ নিজে নিজে কিছুক্ষণ বকবক করতে লাগলো এভাবে, আর না পেরে এদিকওদিক তাকিয়ে আবার ফ্রেন্ডসদের আড্ডায় গিয়ে জয়েন করলো ]
____ আর এইদিকে, প্রোগ্রাম শুরুর সময় ক্যামেরা বন্ধি করা, স্নেহা আর রাহুলের কিছু ভালোবাসার মুহুর্তের ছবি স্লাইড হচ্ছিলো, স্ক্রিন টিভিতে, আর দূর থেকে পপকর্ণ হাতে নিয়ে খেতে খেতে মৃদু হেসে ছবিগুলো তাকিয়ে যাচ্ছে মার্জান, হঠাৎ আসিফ এসে দাড়ালো পাশে,তাতে ও কোনো খবর হলো না মার্জানের, ছবি গুলোর ভেতরেই যেন একদম ঢুকে পড়েছে!
আসিফ : [ গলা ঝেড়ে ] বাহ! কি রোমাঞ্চকর মুহূর্ত! মাঝে মাঝে রাহুল স্নেহাকে দেখে অনেক হিংসে হয়, জানো? [ মার্জান অবাক হয়ে তাকালো ]
আসিফ : [ হেসে ] ওদের বন্ডিংটা অনেক স্ট্রং! খুবই ভাগ্যশালীদের কপালেই এমন ভালোবাসা জুটে! [ কিছু বললো না মার্জান, মৃদু হেসে মুখটা অন্যপাশ ফিরিয়ে নিলো ]
আসিফ : কার কপালে ছিলো এই রাহুল কে জানতো! ঠিকই স্নেহা জিতে নিয়েছে!
মার্জান : এক্সকিউজ মি!
আসিফ : [ মনে মনে ] উমমম! গায়ে লেগেছে! এবার,
মার্জান : আপনি কি বুঝাতে চাচ্ছেন, রাহুলের পেছনে অন্যান্য মেয়েরা যেভাবে ভাগদৌড় করে জেতার ট্রাই করেছে,
– স্নেহাও তেমনটাই করেছে? হুম?
আসিফ : নাহ! তা না বাট..
মার্জান : বাট? বাট কি আবার হ্যাঁ? লিসেন্ট রাহুলই স্নেহার কাছে এসেছিলো ওকে? স্নেহা যায়নি! সো্ আদার গার্লসদের সাথে আমার ফ্রেন্ড এর কমপেয়ার করবেন না! হুহ!
আসিফ : ও হ্যালো! তোমার ফ্রেন্ডস্ ফ্রেন্ড আর আমার ফ্রেন্ডস্ কিছুইনা তাই না?
মার্জান : হোয়াটেভার!
আসিফ : আসলে আমি বুঝাতে চাইছিলাম যে রাহুলের পেছনে কিন্তু অনেক মেয়েরাই পাগল! বাট কেউই এন্ট্রি নিতে পারেনি একমাত্র স্নেহা ছাড়া!
– এ..এতো মেয়ে পাগল মানে বুঝোতো ব্যপারটা, যার তার ভাগ্যের দ্বারা পসিবল হয় না কিন্তু এসব,
মার্জান : হিহি! তাহলে তো স্নেহা ডাবল ভাগ্যবতি তাই না? যে ছেলের পেছনে এতো মেয়ে পাগল! আর ঐ ছেলেই স্নেহার পেছনে পাগল! ওয়াও!
আসিফ : [ হেসে ] মানে হারতে চাইবে না কখনো তাই না?
মার্জান : নেভার!
আসিফ : আর যদি আমার কাছ থেকে হারো?
মার্জান : হোহহো! ইম্পসিবল! [ কথাটি বলে আর থামতে পারলো না মার্জান, হুট করে আসিফ মার্জানের গালে একটি চুমু বসিয়ে দিলো, সাথেসাথেই মার্জানও চারশো চল্লিশ ভল্টের একটি শকিং এক্সপ্রেশন নিয়ে মূর্তি হয়ে গেলো ]
আসিফ : [ মার্জানের কানের দিক ফিসফিসিয়ে ] যদি আমাকে হারাতে চাও! তাহলে তোমার থেকে আমায় দুটো দিতে হবে মিস্ এংড়ি বার্ড! [ বলেই মার্জানের হাতের পপকর্ণের প্যাকেট থেকে একটি পপকর্ণ মুখে ঢুকিয়ে হেসে হেসে চলে গেলো, ধীরেধীরে আড়চোখে চারদিক চোখ বুলাতে লাগলো মার্জান ও,কেউ দেখেছে কিনা ও বুঝতে পারছে না,মুখটা বিরক্তিকর করে পপকর্ণের প্যাকেটটা টেবিলে ছুড়ে রেখে সেও সরে গেলো ওপাশ থেকে ]
বিকেল ৪টা থেকেই গেষ্টরা বিদায় নিতে শুরু করে দিয়েছে,৫ টা বাজতে বাজতে প্রোগ্রাম শেষই হয়ে গেছে, গেষ্টরাও সবাই চলে গেছে, সারভেন্টরা পরিস্কার করার কাজে লেগে পড়েছে, রাহুল তার বাকি ফ্রেন্ডসদের বিদায় দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই দেখে নেহাল চোখ বন্ধ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে, ড্রিংক্স খেয়ে গ্লাসটি কপালের উপর কাত করে লাগিয়ে রেখেছে, তা দেখে রাহুল ও মুচকি হেসে এগিয়ে গেলো,কপালের উপর থেকে গ্লাসটা হাতে নিয়ে নিতেই চোখ খুলে তাকালো নেহাল!
নেহাল : [ কিটকিটিয়ে হেসে ] দেবদাস হয়নি ব্রো! দেখ হাসছি আমি এই দেখ হিহি!
রাহুল : তারমানে পাগল হয়ে গেছিস?
নেহাল : [ নাকফুলিয়ে ] হ্যা পাগল হয়ে গেছি দেখছিস না? [ কাদো কন্ঠে ] ব্রো আর মাত্র দু-ঘন্টা! আর ওর কোনো রেস্পন্সই নেই! গিভ মি সাম আইডিয়া ব্রো! এভাবে চলতে থাকলে আমার তো সুইসাইড করতে হবে!
রাহুল : ওয়াও নেহাল! আমি না সরাসরি কাউকে সুইসাইড করতে দেখিনি! এই উইশটা আমার বাকি আছে ব্রো!
নেহাল : ওও ইয়াহহ! ইডিয়ট! কোথায় আমাকে বাচার আইডিয়া দিবি তা না, তুই তো আমায় মেরে তোর উইশ পূরণ করার ড্রিম দেখছিস! [ হাসতে লাগলো রাহুল নেহালের অবস্থা দেখে ]
নেহাল : [ মুখ গোমড়া করে ] আমার না তোর বিয়েতে আসাই উচিৎ ছিলোনা!
– না আসলে আর ওর সাথেও দেখা হতো না, এন্ড নাও মরার প্লান ও করতে হতো না!
রাহুল : আরে মেয়েদের মতো কথাবার্তা বলছিস কেনো স্টুপিড! ভেতরের জোশটা কোথায়? ফরেন মেয়ে পটাতে তো আমার চেয়ে ওস্তাদ বেশি ছিলি তুই! আর দেশী মেয়ে পটাতে এই অবস্থা?
নেহাল : পটিয়েছিলাম এঞ্জয় করার জন্য! এসব ট্রু লাভ-টাভ হয়নি কখনো!
রাহুল : এটাও কিন্তু ঠিক বলেছিস তুই!
– আরে ফেইসবুক, টুইটার, ইন্সটেগ্রাম, ভার্সেটিতে মেয়েরা পেছনে লাইন লেগে থাকতো আর আমার কোনো রেসপন্সই থাকতো না! বাট যখনিই এই ট্রু লাভের চক্করে পড়েছি বস্ তারপর আমি বুঝলাম,রেসপন্স না পেলে কতোটা পেইন লাগে!
– [ মৃদু হেসে ] কতো ঝামেলা গেছে এই ভালোবাসার উপর! সবশেষে স্নেহা এখন আমার!
___এইদিকে রাহুলের রুমে,শায়লা দাঁড়িয়ে আছে জানালার একপাশে,
মার্জান : ঐ! মন খারাপ? একা দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?
শায়লা : নাহ! এ..এমনিতেই!
মার্জান : আচ্ছা চল রাহুলের কাজিনদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসি, ওরা সবাই আজই চলে যাবে! আর নেহালকে ও সরি বলেদিস ঐদিনের রোং বিহেইভিয়ার এর জন্য! বেচারার কোনো দোষ ছিলো না কিন্তু! আমরা তো ওর উপর শুধু শুধুই রাগ দেখিয়েছিলাম!
শায়লা : হুম!
মার্জান : চল! [ বলেই দুজন গিয়ে রাহুলের কাজিনদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিলো, নিচের হল রুমে আসতেই দেখে রাহুল, আসিফ, রিদোয়ান পায়ের উপর পা তুলে চেয়ারে বসে আছে, আশেপাশে সারভেন্টরা পরিষ্কারের কাজে ব্যস্ত, রাহুল তাদের দেখে হাত নাড়ালো, তাই দুজনই এগিয়ে গেলো ]
রাহুল : শুনো! আমার বউ কোথায়?
মার্জান : উপরেই আছে! আর আপনি বলুন আপনাদের দলের আরেকজন কোথায়?
রাহুল : কে? আসিফ? ঐতো! [ মার্জান আড়চোখে তাকাতেই আসিফ ও হেসে ঠোট উচু করে চুমুর মতো করে দেখালো, ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো মার্জান, তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে রাহুলের দিক তাকিয়ে ফেললো, রাহুল ও মুচকি মুচকি হাসছে মার্জান এর রিয়েক্ট দেখে, মজা নিচ্ছিলো আসিফ ও ]
মার্জান : [ দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ] আ..আমি নেহালের কথা বলছি!
আলিসা : উফফ! ভাইয়া একটা সেকেন্ড এর জন্যও ভাবীকে দূরে রাখতে চাইনা কি যে ভালোবাসাআআআ.. [ হুট করে রাহুল বারি দিলো আলিসার মাথায়, আলিসা ও হেসে চুপ হয়ে গেলো, ব্লাশিং হতে লাগলো রাহুল ও, স্নেহার দিক তাকাতেই দেখে সেও হাসছে মুচকি মুচকি ]
দাদী : তবে রাহুল! এটাই কিন্তু নিয়ম! রিসিপশানের দিন বউ তার বাপের বাড়ী চলে যাবে! বিয়েটা যেহেতু তাড়াহুড়োতে হয়েছে তাই আমিও স্নেহার বাবাকে বলে দিয়েছি!
– যেভাবেই হোক স্নেহাকে কিন্তু আজ নিয়ে যেতে পারবেন না! [ স্নেহার বাবাও হেসে দিলো দাদীর কথা শুনে ]
রাহুল : ওয়াও দাদী! আমার মনের কথা চুরি করে নিলা! এক্সুলি আমার দাদী বলে কথা! [ হাসতে লাগলো দাদী ও ]
স্নেহার মা : আচ্ছা! স্নেহা আমরা এবার আসি তাহলে! [ স্নেহা মাথা নাড়িয়ে,রাহুলের হাত ছেড়ে তার মায়ের দিক এগুতেই যাবে, তখনি ]
রাহুল : একমিনিট! [ বলেই স্নেহার ছেড়ে দেওয়া হাতটা আবারও শক্ত করে ধরে নিয়ে ]
রাহুল : এক্সুলি তোমাকে বিশ্বাস করলেও এই নটি কোম্পানির দলের উপর মোটেও বিশ্বাস নেই! যদি আবার তোমাকে টেনে নিয়ে চলে যায়! [ বাকিদের সাথে সাথে স্নেহার বাবা-মা ও হেসে দিলো রাহুলের কথা শুনে, স্নেহার ও কি আর করার রাহুলের হাত ধরে রেখেই তার মা কে গিয়ে জড়য়িে ধরলো, আর এইদিকে জারিফা স্নেহাকে টেনে নেওয়ার জন্য হাত বাড়িয়ে বাড়িয়ে, বারবার রাহুলকে ভয় লাগাতে লাগলো ]
রাহুল : তোমাকে তো আমি পড়ে দেখে নেবো! [ বলেই মুচকি হেসে আবার স্নেহার দিক তাকালো, কাদছে স্নেহা, তার মাকে জড়িয়ে ]
রাহুল : [ মাথা ঝুকে আংগুল দিয়ে স্নেহার চোখের পানি মুছে নিয়ে ] আরে স্নেহা! ডোন্ট ক্রাই, বেবী! তুমি চাইলে যেতে পারো আমি তো জাষ্ট…মানে…
জারিফা : জাষ্ট! মানে?
রাহুল : তুমি চুপ করো!
হাসলো স্নেহা রাহুলের কথা শুনে, বাকিরাও হেসে চলছে রাহুলের একেক কান্ডে, অবশেষে স্নেহার বাবা-মা ও স্নেহাকে রাহুলের হাতে বুঝিয়ে দিয়ে, স্নেহার ফ্রেন্ডসদের সাথে নিয়ে চলে গেলো!
৬টা বাজতে চলছে, সন্ধ্যাটাও ঘনিয়ে আসছে প্রায়! আর এইদিকে, গেষ্ট হাউজের শিরির চৌকাটে বসে আছে, রাহুল,রিদোয়ান এবং আসিফ! আর নেহাল এদিকওদিক হাটাহাটি করছে অস্থিরতা হয়ে!
রাহুল : আরে ইডিয়ট এতো অস্থির হচ্ছিস কেনো?
নেহাল : যদি প্লানটা কাজে না আসে?
রিদোয়ান : [ হেসে ] না আসলে নেই!
নেহাল : নেই মানে? হোয়াট ডু ইউ মিন?
রাহুল : উফফ! ইডিয়ট, রিলেক্স থাক! প্লান কাজে আসবে! আমি দিচ্ছি গ্যারান্টি!
আসিফ : এবার যাবি?
নেহাল : [ রাহুলের দিক তাকিয়ে ] মম!
রাহুল : আমি করবো হ্যান্ডেল! তুই শুধু যেভাবে করতে বলছি সেভাবেই করে যা!
নেহাল : [ মুখ গোমড়া করে ] ওখে! [ বলেই নেহাল আর আসিফ এক গাড়ীতে উঠে চলে যায়, আর রিদোয়ান রিদোয়ানের গাড়ী করে বেড়িয়ে যায় ]
রাহুল ও তাদের বিদায় দিয়ে এগিয়ে এলো রুমে, দরজা লক করে ড্রেসিং এর দিক তাকাতেই যেনো চোখ ঝলসে গেছে রাহুলের! ডার্ক অলিভ কালারের একটি তাতের শাড়ি পড়ে, টাওয়েল দিয়ে ভেজা চুল গুলো মুছতে লাগলো স্নেহা! তবে রাহুল ও নিজেকে সামলাতে পারলো কই, ধীরেধীরে এগিয়ে গিয়ে স্নেহার পেছনে গিয়ে দাড়িয়ে পড়লো,
গা শিরশির করে উঠলো স্নেহার, কোমোড়ে রাহুলের হাতের স্পর্শ, চুল মুছা থামিয়ে দিয়ে আয়নার দিক তাকালো স্নেহা, আর রাহুল নেশাচ্ছন্ন দৃষ্টিতে তার দিকই তাকিয়ে আছে, চুলে জমে থাকা বিন্দু জলের একটি ফোটা কুড়িয়ে নিয়ে স্নেহার মুখের উপরই ছিটকে মারলো রাহুল, মুচকি হেসে চোখ কুচকে বন্ধ করে ফেলেছে স্নেহা!
রাহুল : ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে কিছু বানাতে পারি আর নাই পারি স্নেহা! তোমার হৃদয়ে পৌছাবার ফ্লাইওভারটা অবশ্যই বানিয়েই ফেলেছি!
স্নেহা : আ..আপনার কাপড় বের করে রেখেছি, ফ্রেশ হয়ে পড়েনিন!
রাহুল : আফসোস ফেব্রুয়ারী ও যদি থার্টি ডেইস্ এর হতো, তাহলে বছরে আরো দু-দিন এক্সট্রা মিলে যেতো তোমার এই নূরানী চেহারাটা দেখার!
স্নেহা : [ রাহুলের গাল টেনে দিয়ে ] এবার রোমান্টিক ডায়লগ ছেড়ে তাড়াতাড়ি গিয়ে ফ্রেশ হয়েনিন! আপনার আবার ওদের সি-অফ করতে এয়ারপোর্ট ওতো যেতে হবে তাই না?
রাহুল : ভেজা চুলে তোমাকে কিনা লাগছে স্নেহা!
– আচ্ছা একটা জিনিষ খেয়াল করেছো কখনো, তুমি যখন কথা বলো না? তখন তোমার ঠোট দুটো.. [ বলেই রাহুল তার মুখ স্নেহার কাছাকাছি আনতেই স্নেহা হেসে রাহুলকে ঠেলে সরিয়ে দেই ]
রাহুল : আরে স্নেহা! আমার কথাটা তো শুনো!
স্নেহা : হ্যাঁ শুনতে হবে না আমি জানি আপনার মতলব কি! [ বলেই রাহুলের হাতে টাওয়েলটা ধরিয়ে দিয়ে বাথরুমের দিক যেতে ইশারা করলো, রাহুলের ও কি আর করার, মুখটা গোমড়া করে চলে গেলো, স্নেহাও হেসে ড্রেসিং এর উপর থেকে চিরুনিটা নিতে যাবে তখনিই হঠাৎ ঘাড়ের উপর কারো গরম নিশ্বাস উপভোগ করলো, পাশফিরে তাকাতেই,
রাহুল : [ ফিসফিসিয়ে ] আর কতোক্ষণ ভাগবা স্নেহা! [ বলেই চোখ টিপ মেরে চলে গেলো ওয়াসরুমে,স্নেহা নিশ্চুপ হয়ে কানে চুল গুজে আয়নায় নিজের চেহেরার দিক তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ, হঠাৎ ব্লাশিং করা একটি হাসি দিয়ে চিরুনীটা এগিয়ে নিয়ে চুল আচড়াতে শুরু করে দিলো ]
খানিক্ষণ পর রাহুল ফ্রেশ হয়ে বেরুলো ওয়াসরুম থেকে, এদিকওদিক তাকিয়ে দেখলো রুমের, স্নেহা নেই কোথাও, তারমানে বুঝতে পারলো ফুফিদের কাছেই গেছে! স্নেহার রেখে যাওয়া খাটের উপর থেকে কাপড় গুলো নিয়ে পড়ে নিলো রাহুল,ড্রেসিং এর ধারে এসে পার্ফিউম লাগাচ্ছে ঐটাইমেই স্নেহা ঢুকলো রুমে!
রাহুল : বারবার কোথায় গায়েব হয়ে যাও বলো তো?
স্নেহা : সবাইকে বাই বলতে গিয়েছিলাম! আর সবাই আমাকেই ঠেলেঠুলে রেষ্ট করতে পাঠিয়ে দিয়েছে!
রাহুল : ঠিকই তো করেছে সব এনার্জি এখন শেষ করে দিলে হবে? আমার জন্য ওতো কিছু রাখো!
স্নেহা : ছিঃ রাহুল! আপনি সব কথাকে অলোয়েজ নিগেটিভ সাইড নিয়ে চলে যান কেনো বলেন তো?
রাহুল : [ স্নেহার হাত ধরে কাছে টেনে নিয়ে ] নিগেটিভ সাইডে ভালো করে এখনো নিয়ে যেতে দেখেছো কোথায় স্নেহা?
রাহুল : রোমান্টিক মুড বিগড়ে দেওয়ার নোবেলটা তুমিই প্রাপ্তি স্নেহা! [ বলেই খাটের উপর থেকে জ্যাকেটটা এগিয়ে নিয়ে হুটহাট করে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে, জিহবায় কামড় খেয়ে মিটিমিটি হাসতে লাগলো স্নেহা ও ]
৮ টা বেজে ৩০ মিনিট, স্নেহা গা হেলিয়ে কিছুক্ষণ শুয়ে রইলো বিছানায়, তবে রাহুলের দুষ্টুমির স্বরণে মনটা ছটফট করেই চলছে, আর না পেরে উঠে বসে ফোন দিলো রাহুলের মোবাইলে, কিন্তু মোবাইলটা ড্রেসিং এর উপর থেকেই বেজে উঠলো, দীর্ঘ একটি বিষন্নতার নিশ্বাস ফেলেই মনে মনে ভাবতে লাগলো স্নেহা!
– আবার ও ফেলে গিয়েছে মোবাইলটা! আমাকে কেয়ারলেস্ বলেন একবার নিজের দিকটাও তো দেখুন মিষ্টার তেডি স্মাইল! হুহ!
কি আর করবে ভেবে পাচ্ছিলো না স্নেহা! তাই উঠে ড্রেসিং এর দিক এগিয়ে গেলো, নিজের চেহেরার দিক কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো আয়নায়! রাহুলের দুষ্টু-মিষ্টি কান্ডগুলো ভেবে ভেবেই মৃদু হাসছে, হঠাৎ কাজলের পেন্সিলটা উঠিয়ে নিয়ে দু-চোখ ভরে লাগিয়ে নিলো, রাহুলের দেওয়া টিপের পাতাটাও সংগে করে নিয়ে এসেছে স্নেহা! তাই ওখান থেকেই সাদা স্টোনের ছোট্ট একটি টিপ লাগালো কপালে, হালকা গোলাপী রঙের লিপস্টিকটাও মেখে নিলো ঠোটে! মাথার চুলগুলোও চিরুনী দিয়ে আঁচড়ে সেট করে নিচ্ছে, হঠাৎ ঐসময় রাহুলের ফোনের মেসেজ টোনটা বেজে উঠলো, স্ক্রিনের বাতিটা একবার জ্বলে আবার নিভে গেছে!
নিজ হাতে এগিয়ে নিলো স্নেহা মোবাইলটা, কোনো এক আননোওন নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে! তাও আবার এক-দুটো নয় ৬৩টা মেসেজ এসেছে একই নাম্বার থেকে একইদিনে, কৌতুহল জাগলো স্নেহার তাই মেসেজে ক্লিক করেই দিলো!
১ম মেসেজ ওপেন করতেই, লিখা ছিলো,
– হোয়াই আর ইউ ডোন্ট রিপ্লায়িং মি রাহুল!
২য় মেসেজ,
– ঐ চাম্বুস আন্টির সাথেই বসে আছো নিশ্চয় তাই তো আমার সাথে কথা বলছো না!
৩য় মেসেজ,
তোর সাথে কাটানো মুহুর্ত গুলো আমায় এখনো কষ্ট দিচ্ছে রাহুল! তোর কি একটিবার ও মনে পড়ে না এসব? মোবাইলের এলভামের ছবি গুলো শুধু সৃতি করেই সাজিয়ে রেখে দিয়েছি, তোকে মনে পড়তেই শুধু সৃতিটুকু দেখে মনকে শান্তনা প্রদান করি! তোর কি একটিবারও মনে পড়ে না আমায়?
৪র্থ মেসেজ,
– আমি জানি স্নেহাকে অনেক হার্ট করেছি বলে তুই আমার উপর খুবই রেগে আছিস! কিন্তু আমারও কি দোষ বল? আমার ভালোবাসার অধিকারটুকু ওতো আমি পেতে পারি তাই না?
স্নেহা আমাদের সম্পর্কের সবকিছু জেনেও তোকে মেনে নিয়েছে তাই ওর ভালোবাসা ভালোবাসা আর আমার যে ভালোবাসা তোকে বিলিয়ে দিয়ে দিয়েছিলাম তা কিছুই না?
মেসেজ পড়ে,হাত,পা, শরীর সবই কাপছিলো স্নেহার! এর আগে আরও কিছু পড়বে সেই সাহসটুকু হচ্ছে না আর! মোবাইলটা আলতো করেই ড্রেসিং এর উপর রেখে দিলো, না চাইতেও কেনো যেনো অজস্র অশ্রু ঝড়ে যাচ্ছিলো স্নেহার চোখ বেয়ে,
সময় পেড়িয়ে রাত ৯টা বেজে চলছে, স্নেহা ড্রেসিং এর চেয়ারে এখনো ঐবসায় বসে রয়েছে, চোখদুটো লাল হয়ে ফুলে টইটুম্বুর হয়ে গেছে, নাকের আগায় চোখের পানিগুলো ও এসে জমে রয়েছে,
হঠাৎ দরজা খোলার টুকটাক শব্দ ভেসে এলো,শিসের আওয়াজে স্নেহারও বুঝতে কষ্ট হলো না রাহুলই এসেছে! চোখের পানি মুছে দাড়িয়ে পেছন ফিরে তাকালো স্নেহা! হাসি ঝুলানো রাহুলের চেহেরাটিও মুহুর্তে গোমড়া হয়ে যায় স্নেহার চেহেরা দেখে! তাড়াতাড়ি স্নেহার কাছাকাছি এগিয়ে গিয়ে দুহাতে স্নেহার মুখটা হাতে তুলে ধরলো! পলক ঝুকিয়ে রেখেছে স্নেহা!
রাহুল : কি হয়েছে স্নেহা! কাদছো কেনো?
স্নেহা : [ কাদো কন্ঠে ] নেহাকে আপনার এখনো অনেক মনে পড়ে মাঝে মাঝে তাই না?
রাহুল : হোয়াট? ও..ওকে মনে পড়তে যাবে কেনো আমার?
স্নেহা : তাহলে গ্যালারীতে নেহার সাথে জুড়ানো সৃতি গুলো এখনো সাজিয়ে রেখে দিলেন যে? [ রাহুল আড়চোখে ড্রেসিং এর উপরে পড়ে থাকা তার মোবাইলটার দিক তাকালো ]
স্নেহা : রাহুল! প্রথম ভালোবাসা নাকি কেউই ভুলতে পারে না! ত..তবে আমি তো আপনাকে জোড় করিনি যে আমাকে ভালোবাসতেই হবে!
রাহুল : কি বলছো কি এসব স্নেহা? প্রথম ভালোবাস মানে?
– লিসেন্ট! ভালোবাসা মানে আমি শুধু তোমাকেই চিনি স্নেহা! আমার জীবনে কাউকে ভালো লেগেছে বললে সেটা তুমিই, আর কাউকে প্রথম ভালোবেসেছি বললে সেটাও তুমি!
– [ স্নেহার দুহাত মুঠি করে ধরে ] এন্ড! স্নেহা! আমি লাষ্ট কবে গ্যালারির ছবি চেক করেছি আমি নিজেও জানিনা! হয়তো নেহার সাথে কিছু পিক রয়েগেছে গ্যালারীতে, তবে এটার জন্য তোমার খারাপ লেগে থাকলে আম সরি! [ ফুফিয়ে কেদে চেয়ারে বসে পড়লো স্নেহা ]
রাহুল : [ হাটু গেড়ে বসে ] আরেহ! এভাবে কাদছো কেনো স্নেহা? আ..আমি এক্ষুণি ডিলিট করে দিচ্ছি সব! [ বলেই মোবাইলটা হাতে এগিয়ে নিতেই বলেই উঠলো ]
স্নেহা : রাহুল আমাদের মাঝে এখনো তেমন কিছুই হয়নি! তাই আমি নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবো!
রাহুল : মা..মানে?
– কি মিন করতে চাচ্ছো?
স্নেহা : রাহুল! নেহার আপনাকে দরকার! আমি জানিনা আপনি আমার কাছ থেকে কি লুকাচ্ছেন! তবে আমি নেহার কথায় সব স্পষ্টই বুঝে নিয়েছি!
[ বিষন্ন চোখে তাকিয়ে রইলো রাহুল স্নেহার দিক, কিছু মুহুর্তের জন্য তো রাহুলের বিশ্বাসই হচ্ছে না এটা কি তারই স্নেহা? নাহ তার স্নেহা তো কখনোই এভাবে বলতে পারবে না তাকে ]
স্নেহা : সরি রাহুল! আমি আপনার পার্মিশন ছাড়াই নেহার মেসেজগুলো সিন করেছি বলে! [ রাহুল তাড়াতাড়ি মোবাইল অন করে মেসেজে ঢুকলো, হ্যাঁ সত্যিই তো নেহার অনেক মেসেজ এসেছে এইখানে, তা দেখে রাহুলের মাথাটাও ঘুরে গেছে, কয়েক সেকেন্ডের জন্য ]
রাহুল : স্নেহা! এই পর্যন্ত নেহার অনেক নাম্বারই আমি ব্লক করেছি, কিন্তু ও আবারও এসব নতুন নতুন নাম্বার নিয়ে আমাকে টেক্সট করতে থাকে!
– ট্রাষ্ট মি!
স্নেহা : ও..ঐরাতে যা কিছুই হয়েছে রাহুল! একটা মেয়ের পক্ষে এসব ভুলে থাকা অনেক কষ্টকরই হবে! তা..তাই হয়তো নেহাও..
রাহুল : [ চেচিয়ে ] স্টপ ইট স্নেহা!
– সিরিয়াসলি? তোমার মনে এখনো এই সন্দেহ রয়েগেছে?
– সরি! আমি সন্দেহ বলছি! তুমিতো নিসন্দেহে সব কথা বলে ফেলছো!
মাথায় হাত দিয়ে নিজের চুল নিজে মুঠি করে ধরে কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো রাহুল, দীর্ঘশ্বাস নিয়ে হাত নামিয়ে আবার দু-হাত কোমোড়ে রাখলো, চোখের পলক নাড়াতে লাগলো এদিকওদিক, পানি এসে জমে যাচ্ছে রাহুলের চোখেও, স্নেহা বুঝতে পেরে রাহুলের হাতটা ধরতেই এক ঝাড়ি দিয়ে রাহুল স্নেহার হাতটা সরিয়ে দরজা খুলে ধাম করে বেধে বেড়িয়ে গেলো, স্নেহা রাহুল বলে চেচিয়ে উঠলো কিন্তু তাও! শুনলো না রাহুল, চলে গেলো,
তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরুলো স্নেহা, রাহুল শিরি দিয়ে নেমে একদম মেইন ডোরের দিকই চলে যাচ্ছে, দৌড়ে আবার রুমে এগিয়ে এসে স্নেহা মোবাইলটা হাতে নিয়ে কল দিতে লাগলো রাহুলকে কিন্তু রিসিভ করছে না রাহুল! কয়েকবার রিং যেতে না যেতে একদমই বন্ধ করে দিলো রাহুলের ফোনটা,কান্না যেনো এবার স্নেহার আরো ভেংগে এলো, জানালা দিয়ে এগিয়ে গেলে দেখে গেইট দিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে রাহুলের গাড়ীটা, মুখে হাত দিয়ে চেপে রেখে ফুফিয়ে কেদে উঠলো স্নেহা ও, মাথায় কিছু আসছিলো না আর, রাহুল এই প্রথমই তার সাথে এভাবে অভিমান করে চলে গিয়েছে, নিশ্চয় আজ অনেক কষ্টই পেয়েছে সে! কলিজাটা যেনো ছিড়ে যাচ্ছে স্নেহার! চিৎকার করে করে কাদতে মন চাইছে, ঘৃণাও আসছে নিজের উপর, মনে মনে ভাবছে,
– রাহুল যা বলছে তাই সত্যি হবে,
– যদি রাহুলের এমন কোনো ইন্টেনশন থাকতো তাহলে তো মোবাইলটা ও ওর সাথেই রাখতো,
– রাহুল আমাকে কতো ট্রাষ্ট করে, আর আমি ওকে ট্রাষ্ট না করে নেহাকেই ট্রাষ্ট করতে চলছি!
– ঐ নেহা তো এমনই আ..আমার রাহুলকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে চাইছে!
দীর্ঘক্ষণ এভাবে ভেবে ভেবেই কেদে চলছে স্নেহা!
__আর এইদিকে, হাইওয়েতে ফুলস্পিডে গাড়ী চলছে রাহুলের! এক হাতে গাড়ীর স্টেয়ারিং ঘুরাচ্ছে আরেকহাতে বেয়ার এর বোতোল ধরে রেখেছে, কোনো সিগন্যাল লাইট ইউজ করা ছাড়াই বড় বড় গাড়ী ওভারটেইক করে যাচ্ছে রাহুল,কানে স্নেহার কথা গুলোই বাজছে বারবার, চোখ গুলো পানিতে ঝাপসা হতে না হতেই আবার হাতের কবজি দিয়ে মুছে ফেলছে, চারদিক থেকে লাইটিং ফোকাসে্ মাথাটাও ঘুরঘুর করে চলছে এবার, মনকে শুধু এসব প্রশ্নই করছে রাহুল,
– স্নেহার কি কোনো বিশ্বাসই নেই আমার উপর? আমি তো নিজের চাহিদার থেকেও বেশি ভালোবাসি স্নেহাকে, চোখ বন্ধে বিশ্বাস করে নিতে পারবো স্নেহার সবকিছু, তবে স্নেহাই কেনো বা পারবে না? এখনো নেহার ব্যপার নিয়ে মনে সন্দেহ রেখে দিয়েছে,
– তবে তো ঐদিন ভার্সেটিতে আমি সব খুলে বলেই দিয়েছিলাম, যদিও বা মনে এসব সন্দেহ থেকেই থাকতো তাহলে তখনিই কেনো বললো না, আজ এতোটা ভালোবাসার পর এসব কিভাবে মেনে নিবো?
হঠাৎ গাড়ীর পেছনের বেক সাইড সজোড়ে বারি খেলো কিছুর সাথে, তাড়াতাড়ি গাড়ী থামালো রাহুল, পাশ থেকে আরেকটি গাড়ীর ড্রাইভার চেচিয়ে চেচিয়ে কি কি যেনো বলে চলে গেলো, আজ আর সেসব কিছুই মাথায় নিলো না রাহুল, কারণ এই মাথাটা শুধু এখন স্নেহাকেই ভাবছে,
মনটাও খুব খারাপ হয়ে গেছে রাহুলের, গাড়ীটা আবারও স্টার্ট দিয়ে চালাতে লাগলো, আসার সময় স্নেহার হাত ঝাড়ি দিয়ে চলে আসার ব্যপারটা মনে পড়ে পড়ে ভেতরটা জ্বালিয়ে কয়লা করে দিচ্ছে রাহুলের, চোখ থেকেও অজস্র অশ্রু ঝড়ে যাচ্ছে, এইবার আর থামছেই না অশ্রু গুলো, স্নেহাকে যে বড্ড মনে পড়ছে রাহুলের, সে তো এতোক্ষণ রেগে থাকতে পারে না স্নেহার সাথে, তবে আজ কেনই বা দরকার ছিলো স্নেহার উপর এভাবে রাগ করার, হয়তো মেয়েটাও একটু ভুল বুঝে নিয়েছে আরকি, তাতে কি? সব বুঝিয়ে দিলে তো সে আবার বুঝেই যাচ্ছে,
নিজের উপরই বেশি রাগ হচ্ছে এবার রাহুলের, স্নেহাও হয়তো তার এই রাগে এতোক্ষণে কেদে মরছে, এতোটাই খারাপ রাহুল, সে তো প্রমিস করেছিলো স্নেহাকে কখনো কষ্ট দিবে না, দীর্ঘশ্বাস নিয়ে মোবাইলটা হাতে এগিয়ে নিয়ে অন করে কল দিলো স্নেহার ফোনে, রিং যাচ্ছে!
হঠাৎ, ফোনের ওপাশ থেকে স্নেহার কান্নার ভয়েসে রাহুল! শব্দটা শুনতেই বাচ্চা ছেলের মতো ফুফিয়ে কেদে উঠলো রাহুল ও,
স্নেহা : আম সরি রাহুল! আ..আমার আপনাকে হার্ট করার কোনো ইন্টেনশন ছিলো না, আমি তো নেহার মেসেজ গুলো পড়ে মাথায় গুলিয়ে ফেলেছি,
– আ..আমার আপনার কথায় পুরো বিশ্বাস আছে, আ..আমি আসলে স্টুপিড একটা,
– আপনি যে শাস্তিটাই দিবেন আমি মেনে নেবো,কিন্তু প্লিজ এভাবে রাগ করে থাকবেন না..
রাহুল : শিসসসস!
– স্নেহা!
স্নেহা : হু!
রাহুল : আম সরি!
স্নেহা : [ কাদো সূরে ] আপনি কেনো সরি বলছেন! দোষ তো আমি করেছি ঐনেহার কথা গুলো মাথায় নিয়ে,
– বাট নাও ইউ ট্রাষ্ট মি আমি আর কক্ষনোই আপনাকে ভুল বুঝবো না রাহুল! প্রমিস!
রাহুল : [ মুচকি হেসে ] আই লাভ ইউ!
স্নেহা : আ..আই লাভ ইউ টু রাহুল! [ বলেই ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাদতে লাগলো আরো ]
রাহুল : স্নেহা! প্লিজ ডোন্ট ক্রাই!
স্নেহা : [ ফুফিয়ে ] আ..আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে রাহুল! প্লিজ তাড়াতাড়ি ফিরে আসুন! আমি প্রমিস করছি আর কক্ষনোই আপনাকে ভুল বুঝবো না!
রাহুল : [ কাদো কন্ঠে ] ওকে রিলেক্স! আম কামিং
বলতেই হঠাৎ সামনে থেকে চোখের উপর গাড়ীর হলুদ ফ্লাশ লাইট এসে পড়লো, কান থেকে ফোনটা সরিয়ে রাহুল গাড়ীর স্টেয়ারিংটা আর ঘুরাতে পারলো না, সামনের ট্রাকের সাথে মুখোমুখি হয়ে ধুমড়েমুচড়ে গাড়ী দুই ডং খেয়ে আবারো সোজা হয়ে এক কোণে গাছের সাথে লেগে পড়লো, নিরিবিলি হাইওয়ে মানুষজন কেউই নেই, শুধু গাড়ীগোড়াই চলাচল করছিলো,
হেল্পার : মইরা গেছে নাকি কোনো বেরুইনা কেন? চলেন দেহি!
ড্রাইভার : মরতে যাছ? দেহছ না গাড়ীর বনাট খুইল্লা ধুয়া বেরুইতাছে, যে কুনো মুহুর্তেই গাড়ী ফুটবো!
__কিন্তু এই গাড়ীর ভেতর তো এখনো ছটফটাচ্ছে রাহুলের মতো জীবন্ত একটি লাশ, স্টেয়ারিং এ মাথা হেলিয়ে রেখেছে রাহুল, মাথা থেকে ঘাড়ে এসে গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে অনবরত রক্ত!
হয়তো আজ এটাই প্রাপ্য ছিলো রাহুলের, স্নেহাকে কষ্ট দিয়ে কাদানোর শাস্তি, নয়তো ঝাড়ি দিয়ে স্নেহার হাত সরিয়ে চলে আসার শাস্তি, আর নয়তো স্নেহার সন্দেহের পেছনে লুকিয়ে থাকা সেই ভালোবাসাটিকে না বুঝার শাস্তি,
স্নেহার ভালোবাসা তো তার জন্য কখনোই মিথ্যে হবে না, এটা শুধু রাহুলের নিজেরই নয় তার ভালোবাসারই বিশ্বাস এবং আস্থা! স্নেহা তাকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসে, এতোটাই ভালোবাসে বলেই তো তাকে সন্দেহ করেছে, যেখানে সন্দেহ নেই সেখানে তো ভালোবাসা ও নেই! হ্যাঁ তবে একটু কষ্ট ও হয়, তবে এসব কষ্টকে আর কষ্ট মনে হচ্ছে না রাহুলের,কারণ স্নেহাই তো বললো,
মুচকি হাসলো রাহুল, স্নেহার সব কথায় যে এতো ভালোবাসা মাখানো আছে এটাও প্রুভ করে দিলো আজ স্নেহা!
মৃদু হেসে ধীরধীরে চোখটাও স্থীর করে বন্ধ করে নিলো,শান্তি লাগছে হঠাৎ রাহুলের এই ভেবেই যে স্নেহাকে আর কখনোই কষ্ট দিবে না সে,শান্তি লাগছে এটাও ভাবতেই যে স্নেহার সাথে করা এই অভিমানই তার জীবনের শেষ অভিমান!
তবে তাও এই রাহুল, ভালোবেসে যাবে স্নেহাকে, মৃত্যুর শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত,
আসিফ : ইয়েস্! হোয়াট অ্যা বিউটিফুল সারপ্রাইজ, [ বলে বলেই হাসতে লাগলো তিনোটা স্নেহার দিক তাকিয়ে, স্নেহা ও কিছু বললো না, অবাক হয়ে তাকিয়েই যাচ্ছে তাদের কান্ড গুলো ]
শায়লা : [ ফিসফিসিয়ে ] স্নেহা! তোদের মাঝে সব হয়ে গেছে তো তাই না?
– আ..আই মিন! হাজবেন্ড-ওয়াইফ..টাইপ্স! একটা ব..বন্ডিং হয় না? ওসব হ..হয়েছে?
স্নেহা : মানে?
শায়লা : এক্সুলি আমার না এদের বিহেইভিয়ার মোটেও ঠিক লাগছে না, মানে অ..অল ওকে লাগছে না, [ বলতেই হঠাৎ মাথার মধ্যে কেউ একজন টোকা মারলো, সাথেসাথে শায়লা ফিরে তাকাতেই দেখে রাহুল! নাক ফুলিয়ে ভোর নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করছে কি বলছে স্নেহার কানে কানে ]
শায়লা : [ মুচকি হেসে ] কিক..কিছুনা তেমন কিছুনা!
রাহুল : বেড এ চলো দেখিয়ে দিচ্ছি! অল ওকে কিনা!
শায়লা : ছিইইইই! [ বলেই মার্জানকে টেনে স্নেহার পাশে এনে দাড়করিয়ে দিয়ে সে অপোজিট সাইড গিয়ে দাঁড়িয়ে যায়, রাহুল ও হেসে হেসে স্নেহাকে তার আরো কাছে টেনে নিয়ে হাতে হাত মুঠি করে ধরে দাঁড়ায়, স্নেহাও মাথাঘুড়িয়ে আড়চোখে তাকালো রাহুলের দিক ]
রাহুল : [ চোখ টিপ মেরে ] তোমার ও কোনো ডাওট আছে নাকি এই ব্যাপারে?
নেহাল : এই যে মনের কথা যাকে বললাম সে তো কিছু বুঝছে না, তাই ভাবছি সারপ্রাইজ আইটেমে রাহুলেরটা না পড়ে যদি আমারটা পড়ে যেতো! তাহলে আমিও দেবদাস হয়ে কিছু চান্স টান্স মারতে পারতাম!
স্নেহা : রাহুলেরটা মানে? আপনারা কি বলছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা!
রাহুল : স্নেহা! এরা পাগল হয়েগেছে আসলে! চলো আমরা অন্য কোথাও গিয়ে দাঁড়ায়!
স্নেহা : [ নাকফুলিয়ে ] যখন কথা বলছি তো কথার মাঝে কথা বলবেন না!
আসিফ : [ হেসে ] হ্যাঁ! স্নেহা রাহুলের এমন ফেভারিট আইটেম ডান্সার ছিলো যে, ও তো ওকে নিয়ে রুমে ও..
স্নেহা : [ শকড হয়ে ] রুমে ও?
রাহুল : [ আসিফের গলা চেপে ধরে ] দেখ আসিফ বেশী হয়ে যাচ্ছে কিন্তু!
স্নেহা : রাহুল! আপনি এমন করছেন কেনো ওনাকে? দেখছেন না কথা বলছি?
রাহুল : [ মুখ গোমড়া করে ] বাট স্নেহা ও আমাকে কথা ক্লিয়ার করে বলতে দিচ্ছেনা তো?
স্নেহা : আমি ভালো করেই দেখছি কে কথা ক্লিয়ার করে বলছে আর কে কথা আনক্লিয়ার করে বলছে!
রাহুল : ওখে!
রিদোয়ান : ধ্যাত! আসিফ এমন করছিস কেনো বলতো বেচারাকে! স্নেহা আমি বলছি!
– আসলে আংকেল এর বিজনেস পার্টি গুলোতে ক্লাইন্টদের ওয়েলকাম করার জন্য এমন কিছু আওট কান্ট্রির ডান্সার আনা হতো! তেমনি ঈশাও একজন তুর্কিস ডান্সার! তাই ওর সাথেও পার্টিতে পরিচয়!
আসিফ : [ হেসে ] হ্যা! তারপর ঈশার ডান্স রাহুলকে ফিদাও করে দেই অনেক! [ চোখ টিপ মেরে ] তাই না দোস্ত?
রাহুল : [ স্নেহার দিক তাকিয়ে ] স্নেহা! ওসব তো আগে..আই মিন তুমি তো জানোই আগে আমি…
– এক্সুলি ঈশার ডান্স আমার ভালো লাগতো সেটার ও একটা রিজ্ন ছিলো কজ্..
আসিফ : বাইইই! [ নেহাল আর রিদোয়ান ও হাত নাড়ালো, ঈশাও বাকিদের হাত নাড়িয়ে চলে গেলো ]
শায়লা : যে যাই বলো না কেনো! আমার কিন্তু মাস্ত লেগেছে এই ঈশাকে!
জারিফা : আমার তো সবই ভালো লেগেছে কিন্তু ওর লেংগুএজ গুলো সব মাথার উপর দিয়েই গেছে! [ বাকিরা হেসে উঠলো, রাহুল ও হেসে তাকালো স্নেহার দিক, স্নেহা বুঝতে পেরে মনে মনে হেসে অন্যপাশ ফিরে রইলো ]
রাহুল : [ স্নেহার কানে ফিসফিসিয়ে ] স্নেহা!
স্নেহা : হু?
রাহুল : এদিক তাকাও!
স্নেহা : উমহুম!
রাহুল : এখনো রেগে আছো? [ কিছু বললো না স্নেহা, সামনের দিক চলে গেলো হেটে ]
রাহুল : [ পেছন থেকে স্নেহার হাত টেনে ধরে ] স্নেহা! রিজন কি রাগ করার?
স্নেহা : এখনো রিজন খুজছেন কেনো রাগ করেছি?
রাহুল : [ মুখ গোমড়া করে ] বাট স্নেহা! শুধু ডান্সই দেখেছিলাম আর কোনো কিছুর ইন্টেনশন ছিলো না ট্রাষ্ট মি!
স্নেহা : ডান্স দেখেছিলেন! তাও আবার পার্সোনাল রুমে!
রাহুল : তুমি যে পানিশমেন্টই দাও না কেনো, আমার কাছে তো সবই তোমার ভালোবাসা মনে হবে স্নেহা!
স্নেহা : কথাটা ফুল্লিশ লাগলো মিষ্টার রাহুল! [ বলেই হাত ছুটিয়ে সামনের দিক পা বাড়াতেই হঠাৎ ]
রাহুল : [ চেচিয়ে ] ওকে স্নেহা! বাট কি করতে হবে সেটা তো বলো! [ বলেই থমকে যায়, স্নেহা ও শকড হয়ে পেছন ফিরে তাকালো, রাহুল আড়চোখে চারদিক চোখবুলিয়ে দেখছে আশেপাশের সবাই ও কৌতুহলিভাবে তাকিয়ে রয়েছে তাদের দুজনের দিক, আওয়াজটা বেশি জোড়েই হয়ে গেলো বুঝি!
দূর থেকে রাহুলের মা ইশারা দিয়ে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে, রাহুল মাথা নাড়িয়ে জানালো কিছু হয়নি, কি আর করার রাহুলেরও পরিস্থিতি এমন বিপদে ফেলে দিয়েছে, সামলাতে ওতো হবে এইবার, বুদ্ধি এলো মাথায়, তাই পকেট থেকে মাউথ স্পিকারটা এগিয়ে নিয়ে কানে লাগিয়ে বলে উঠলো ]
– সবাই যেনো তার পার্টনারদের সাথে নিয়ে ডান্সিং সাইড চলে আসে!
[ বলেই রাহুল স্নেহাকে চোখ টিপ মেরে,তার মায়ের কাছে এগিয়ে গিয়ে হাত ধরে টেনে নিয়ে ডান্স ফ্লোরের দিক চলে আসে, বাকিরাও ধীরেধীরে এসে জড়ো হচ্ছে এক এক করে, সফট টোন বাজছে, জারিফাও রিদোয়ানকে টেনে নিয়ে দাড়ালো ]
আসিফ : ইফ ইউ হেভ নো প্রবলেম মিস্ এংগড়ি বার্ড! [ লজ্জা পেয়ে মৃদু হেসে পাশ ফিরে গেলো মার্জান, তখনি নেহাল এসে মার্জানের দিক হাত বাড়ালো মার্জান ও আসিফকে মুখ ভেংগিয়ে নেহালের হাতে হাত রেখে ডান্স ফ্লোরের দিক চলে গেলো, আসিফের ও কি আর করার মুচকি হাসলো আগেই জানতো এই মিস্ এংড়ি বার্ড এতো সহজে মেনে নেওয়ার পাত্র নয়, তাই সে শায়লাকেই জোড় করে টেনে নিয়ে গেলো ডান্স ফ্লোরে ]
রাহুলের বাবা : [ স্নেহার পাশে এসে দাঁড়িয়ে ] কি সেল্ফিস দেখেছো স্নেহা!
– গতরাত ও আমায় বলেছিলো চান্সটা আমায় দিবে,কিন্তু এখন দেখছো উল্টো ওরা মা ছেলে ডান্স করছে!
রাহুল : দ্যাটস্ মাই গার্ল! [ বলেই হাত এগিয়ে দিলো, স্নেহাও হাতে হাত রেখে রাহুলের দিক তাকালো, তেডি স্মাইল দিয়ে দূর থেকে তাকিয়ে আছে রাহুল, এতোটাই কিউট লাগছিলো স্নেহার,ইচ্ছে তো করছিলো যেনো গালটা রাহুলের টেনে দিয়ে একটি চুমু খাবে,কিন্তু এইসময় তা কিভাবে সম্ভব, তাই উল্টো রাহুলকে মুখটা ভেংগিয়ে দিয়েই ডান্সে জয়েন করলো ]
বাকিরাও করছে, সফটেড টোনের সাথে তাল মিলিয়ে, সবাই তাদের পার্টনার ও এক্সচেঞ্জ করছে,নেহালের তো অপেক্ষায় সইছে না কখন যে শায়লা এক্সচেঞ্জ হয়ে তার কাছে আসবে,তেমনি আসিফ ও অপেক্ষার প্রহর গুনছে,কখন তার মিস্ এংড়ি বার্ডটা এক্সচেঞ্জ হয়ে তার দিক আসবে,
আর এইদিকে, রাহুল তার বাবাকে চোখনাড়িয়ে ইশারা করছে যেনো স্নেহাকে কারো কাছে এক্সচেঞ্জ না করে, বুঝতে পেরে হাসলো রাহুলের বাবা ও, রাহুল ও পার্টনার এক্সচেঞ্জ না করে, তার মা কে নিয়ে প্রত্যেকটা ডান্স স্টেপের রুলস্ ভংগ করে করেই তার বাবার পাশের স্টেপে এসে দাড়ালো,
এমন একটা পর্যায়ে গিয়ে রাহুল চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলো সবাই সবার ক্যারেকট পার্টনার নিয়ে নিয়েই ডান্স করছে ঐ সময়,
দেরী করলো না আর রাহুল ও,চোখ টিপ মারলো তার বাবাকে, সাথেসাথেই রাহুলের বাবা স্নেহার হাত ধরে ঘুরিয়ে রাহুলের দিক পাঠিয়ে দিলো, আর রাহুল ও তার মাকে ঘুরিয়ে তার বাবার দিক পাঠিয়ে দিলো ]
লজ্জায় মাথা নুয়ে রাখলো স্নেহা! ইচ্ছে তো করছিলো যেনো মাটি কুড়ে ঐদিকটাই ঢুকে যাবে,কিন্তু এই রাহুলটাও এসব বলতে কোনোদিক দিয়ে ছাড়ছে না, রাহুলের ও ভালোই লাগছিলো স্নেহার এভাবে করে লজ্জা পাওয়াটা
আর কিছু বললো না সে ও, মাউথ স্পিকারটা সোজা করে নিলো মুখের উপর, তাকিয়ে আছে স্নেহাও অবাক হয়ে, পকেট থেকে স্নেহার মোবাইলটা বের করে কি কি নাম্বার যেনো ডায়াল করলো,সাথেসাথেই সফটেড টোনটা বন্ধ হয়ে, টুট…টুট…টুট করে ফোনের রিং যাওয়ার সাউন্ড বেজে উঠলো, বাকিরাও থেমে গিয়ে এদিকওদিক তাকাতে লাগলো..
মিউজিশিয়ান : হ্যালো!
রাহুল : হ্যালো! মিউজিশিয়ানস্! হ্যালো-হ্যালো-হ্যালো! [ স্নেহা হাসবে নাকি অবাক হবে বুঝতে পারছে না রাহুলের কান্ডে ]
♪ হো চান্দেনী জাবতাক রাত ♪
♪ দেতা হে হার কয়ি সা্থ ♪
♪ তুম মাগার আন্ধেরোমে এ~~
♪ না ছোড়ে না মেরা হাত ♪
♪ হো চান্দেনী জাবতাক রাত ♪
♪ দেতা হে হার কয়ি সা্থ ♪
♪ তুম মাগার আন্ধেরোমে এ~~
♪ না ছোড়ে না মেরা হাত ♪
♪ না কয়ি হে, না কয়ি থা ♪
♪ জিন্দেগী মে, তুমহারে সি্ভা ♪
♪ তুম দেনা সা্থে মেরা ♪
♪ ও হামনাভা আ~
[ গান শেষ করেই, রাহুল একটানে ঘুড়িয়ে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরে ফেললো স্নেহাকে, স্নেহা ও ব্যালেন্স রাখতে না পেরে রাহুলের বুকে মাথা ঢলে দিয়ে, হাত দিয়ে কোর্টটা শক্ত করে মুচড়ে ধরে ফেলেছে, দীর্ঘশ্বাস নিচ্ছে দুজনই, চারদিক থেকে কড়া তালি আর শিস বাজাচ্ছে সকলেই, লজ্জায় স্নেহা পারছে না যেনো রাহুলের পাজরে এক্কেবারের জন্যই ঢুকে পড়বে, মুচকি হাসছে রাহুলও স্নেহার কান্ড দেখে ]
রাহুল : স্নেহা!
স্নেহা ধীরেধীরে মাথা তুলে তাকালো রাহুলের দিক, রাহুল মৃদু হেসে স্নেহার সামনে চলে আসা চুলগুলো সব আলতো করে করেই কানে গুজে দিচ্ছিলো,
ভালো লাগে স্নেহার,ভীষণ ভালো লাগে তখনি, যখন রাহুল এভাবেই তার চুলগুলো কানে গুজেদেই! মন ছুয়ে যায় স্নেহার,ভীষণভাবেই মনটা ছুয়ে যায় ঠিক তখনি, যখন রাহুলের এতোটা কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থেকে তার পার্ফিউম স্মেলটা নিশ্বাসে টেনে নেই!
নিজেকে ভীষণ ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে আজ স্নেহার! খুব প্রাউড ফিলও হচ্ছে, কারণ এই রাহুল যে শুধু তারই, আর কারোই না!
একটি সুখের জীবন বলতে স্নেহা পেয়েই গেছে,আর কিছুই চাইনা তার!
তবে এই সুখ রবে তো স্নেহার কপালে?এই ভেবেই মুখটা গোমড়া করে ফেললো স্নেহা!
রাহুল : এতো কিউট করে তাকিয়ে থেকোনা স্নেহা! আমার কিন্তু তোমার এই কিউট এক্সপ্রেশন গুলোতে আনলিমিটেড কিস্ দিতে মন চাই!
স্নেহা : প্লিজ রাহুল! [ বলেই রাহুলের কাধে ভর করে হাত দিয়ে, টেবিল থেকে পিছলিয়ে নেমে পড়ে ]
রাহুল : দেখো স্নেহা! এতোটাও লেইট হয়নি! আমরা আরো কিছুক্ষণ স্টে করতে পারি!
স্নেহা : হুমম! শুধুই নিজের ফাইদা!
রাহুল : কি বললে? [ হাসি পাচ্ছিলো স্নেহার রাহুলের চেহেরা দেখে ]
রাহুল : ওও! তোমার কোনো ফাইদা হয়না বুঝি? হুমম? [ With tedi smile ]
লজ্জা লেগে উঠলো স্নেহার,তাড়াতাড়ি পলক ঝুকিয়ে নিলো, আর ভাবতে লাগলো,এই মিষ্টার তেডি স্মাইল এর লজ্জার তো লাগাম নেই নেই, সাথে মুখের ও কোনো লাগাম নেই, ধীরেধীরে আড়চোখে তাকিয়ে দেখে, এখনো সেই নটি ইন্টেনশন নিয়ে চেয়ে আছে, চোখাচোখি হতেই ভ্রু দুটো নাচিয়ে উঠলো,
স্নেহা : আ..আমার মনে হয়, এখন আমাদের যাওয়া উচিৎ! চ..চলুন! [ বলেই সামনের চুলগুলো কানে গুজে নিয়ে, পাশফিরে, হাটা ধরলো, দু-তিন কদম এগিয়ে যেতে না যেতেই, হুট করে পেছন থেকে রাহুল হাত ধরে টেনে নিয়ে ঠেলে দেওয়ালের সাথে লাগিয়ে দাড় করায়, বুক কাপতে লাগলো স্নেহার, এভাবে কেউ টেনে আনে নাকি? অদ্ভুত এক মানুষ,কখন যে মনে কি চাই ঠেরই পাইনা সে, রাহুল স্নেহার গালে স্লাইড করে আলতো ছুয়ে দিচ্ছে, স্নেহা বুঝতে পারছে রাহুলের ইন্টেনশন কতটা দূর চলে যাচ্ছে, তাই তার সাথে এখন নরম ভাব দেখালে চলবে না,একটু বিরক্তিকরই দেখাতে হবে, রাহুল তার মুখটা স্নেহার একদম কাছাকাছিই আনছিলো তখনিই ]
স্নেহা : রা..রাহুল!
রাহুল : মুডটা ভালো স্নেহা! অযথা খারাপ করিওনা!
স্নেহা : ট্রাই টু আন্ডার্স্ট্যান্ড রাহুল! সব সময় এমন করেন কেনো বুঝিনা?
রাহুল : বিকজ আই লাভ ইউ!
স্নেহা : [ হেসে দিয়ে ] আই নোও ইউ লাভ মি! বাট.. [ বলেই থমকে গেলো, চোখ কুচকে বন্ধ করে ফেলেছে স্নেহা, রাহুল যে তার ঠোট দুটো মুহুর্তেই দখল করে নিয়েছে আবারো, বিকল্প নেই আর এই ভালোবাসার অনভূতি বুঝানোর, নিস্তব্ধ হয়ে গেছে স্নেহা ও,করেনি আর ছোড়াছোড়ি, হার মানিয়ে দিচ্ছে সব রাহুলের ঠোটের এই স্পর্শানুভূতি, পাগলাটে ভাবে ভালোবেসে যাচ্ছে রাহুল ও,
তবে কথায় আছে না ভুল সময়ে ভালোবাসলে বাধা তো আসবেই, তেমনি কিছুক্ষণ পর ফোনের রিংটোনটা বেজে উঠলো, মেজাজটা ছটকে গেছে রাহুলের,দীর্ঘশ্বাস নিয়ে স্নেহার চোখের দিক তাকালো, স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছিলো স্নেহার চেহেরা দেখে, মারাত্মক হাসি চেপে রেখেছে স্নেহা!
রাহুল : [ কনফিউজড হয়ে ] আমার ফোন তো আমি আনিনি,তাহলে ফোন বাজছে কার? [ বলেই পকেটে হাত দিতেই দেখে তার পকেটেই ফোনটা বাজছে ]
স্নেহা : আ..আমার ফোনটা আপনার কাছে রাখতে দেওয়া হয়েছিলো!
রাহুল : [ ফোন হাতে নিয়ে ] হুমম! মা ফোন দিয়েছে!
– মানে আর কয়েকটা মুহুর্ত কি অপেক্ষা করা যেতো না? [ বলেই রিসিভ করতে যাবে, তখনিই স্নেহা রাহুলের কাছ থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে নিজেই রিসিভ করে কানে দিলো ]
স্নেহা : পা..পাশে আছেন বললে কি না কি ভাববে! আ..আমার লজ্জা লাগেনা?
রাহুল : এতো লজ্জা রাখো কই?
স্নেহা : নাও উই শুড বি গো রাহুল!
রাহুল : সব লজ্জা ভাংগবো কিন্তু আজ স্নেহা!
– কি যেনো বলেছিলো জারিফা? ও ইয়াহ! হিংস্র পশু! [ ঢোগ গিললো স্নেহা ]
রাহুল : মিসেস রাহুল! আপনি কি ভয় পাচ্ছেন?
স্নেহা : স..সরেন লেইট হচ্ছে! [ বলেই রাহুলকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছিলো,হঠাৎ দরজার কাছাকাছি আসতেই থেমে গিয়ে আবার পেছন ফিরে তাকালো রাহুলের দিক, রাহুল তাকিয়ে আছে তেডি স্মাইল দিয়ে, স্নেহা দু-দিকের কাপড় হাতে তুলে ধরে তাড়াহুড়ো করে আবারো রাহুলের দিক এগিয়ে এসে দাড়ালো ]
স্নেহা : [ টিস্যুটা রাহুলের হাতে ধরিয়ে দিয়ে ] এবার আসতে পারেন! [ বলেই চলে যাচ্ছিলো, তখনি রাহুল স্নেহার হাত ধরে টেনে নিলো নিজের কাছে ]
স্নেহা : আজিব! লেইট হচ্ছে তো রাহুল!
রাহুল : শুধু আমার খেয়াল করলে হবে? কখনো কখনো নিজেরটাও তো খেয়াল করতে শিখো! [ অবাক হলো স্নেহা, রাহুল তার হাতের টিস্যুটা দিয়ে স্নেহার ঠোটের আশেপাশে ছড়িয়ে যাওয়া লিপস্টিক গুলো ও ধীরেধীরে মুছে দিলো, হাত থেকে টিস্যুটা কবে যে মাটিতে পড়ে গেছে সেই খবর ও নেই রাহুলের, আংগুল দিয়ে স্নেহার ঠোটে স্লাইড করতে লাগলো, হঠাৎ স্নেহার হাতের ধাক্ষা খেয়ে পিছিয়ে গেলো, আর স্নেহা দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো স্টোর রুম থেকে, কি আর করার রাহুলের ও, এক হাত পকেটে রেখে ব্লাশিং হয়ে হাসছে, আরেক হাতে ঘাড় চুলকাচ্ছে ]
____এইদিকে ছাদে,রিলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে মার্জান,
আসিফ : [ পাশে এসে দাঁড়িয়ে ] কি হলো? কখন থেকেই মুখটা এভাবে বানিয়ে রেখেছো বলো তো? না তুমি কিছু বলছো! না আমায় কিছু বলতে দিচ্ছো?
মার্জান : আপনি একদম বেশী কথা বলবেন না,
– [ কাদো কন্ঠে ] আমার সব শেষ করে দিয়েছেন! আমি এই মুখ দেখাবো কি করে মানুষকে?
-নরমাল তাই না? আসলে আপনারা ছেলেরা না এমনই! এসব জিনিষ আপনাদের জন্য নরমালই মনে হয়, একবারও ভেবে দেখেছেন? এসব জিনিষের কারণে একটা মেয়ের মন কতটা হার্ট হয়ে থাকে?
আসিফ : [ চেচিয়ে ] স্টপ ইট! [ চমকে উঠলো মার্জান, ঢোগ গিলছে, রসগোল্লার মতো চোখ দুটো বড় করে গডগড চোখে তাকিয়ে আছে ]
আসিফ : সবাই জানলে মানে কি? হ্যা? আমি কি তোমার সাথে রেপ করেছি? নাকি তোমাকে এইভাবে দেখে ভিডিও করেছি? হুমম?
– বলো? করেছি? [ মাথা নাড়ালো মার্জান ]
– লিসেন্ট! তোমাকে ঐ অবস্থায় দেখার ও কোনো ইন্টেনশন আমার মাথায় ছিলো না,যদিও বা আমি আগে থেকে জানতাম তুমি ঐ রুমে কাপড় চেঞ্জ করছিলে তাহলে আমি কখনোই নিজ ইচ্ছায় ওয়াসরুম থেকে বেরুতাম না,
– বাই এনি চান্স! আমি তোমায় দেখে ফেলেছিলাম কিন্তু তাও আমি কি তোমার সাথে কিছু করেছি? বলো? [ মাথা নাড়ালো মার্জান ]
– আরে আমি তোমায় না জানালে তো তুমি এসব কিছু জানতেও না! বাট আমার তোমাকে জানানোর একটাই ইন্টেনশন ছিলো এটাই যে তোমাকে সাবধান করা, গেট ইট! [ আবারো মাথা নাড়ালো মার্জান ]
মার্জান : হুমম! [ মৃদু হাসলো আসিফ, মার্জানের হাত ধরে টেনে তার বরাবরই রিলিং এর সাথে হেলান দিয়ে দাড় করালো, অবাক হয়ে তাকালো মার্জান ও, আসিফ হালকা একটু ঝুকে তার দু-হাত রিলিং এ ভর করে রাখলো ]
মার্জান : আ..আপনি..
আসিফ : [ মৃদু হেসে ] এংড়ি থেকে যখন তোমার লুকটা ইন্নোসেন্ট হয় না, তখন তোমায় কতোটা মায়াবী লাগে জানো? [ চুপ করে রইলো মার্জান কিছু বললো না ]
পিছিয়ে গেলো মার্জান,জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে সে ও, কি হচ্ছে? কি হতে চলছে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না, বাধা দিলো না কেনো তাকে? তবে কি প্রেমে পড়ে গেছে সে ও? লজ্জা লেগে উঠলো, তাড়াতাড়ি পাশমুড়ে দৌড়ে চলে যাচ্ছে, আসিফ ও মুচকি হেসে রিলিং এর সাইড গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো, হঠাৎ পাশ থেকে আওয়াজ আসলো,
মার্জান : শুনেন! [ ফিরে তাকালো আসিফ ]
– নিচে যাওয়ার আগে মুখটা মুছে যাবেন! [ বলেই ব্লাশিং হয়ে হেসে চলে গেলো, আসিফ ও কনফিউজড হয়ে হেসে মুখটা ঘষে মুছে, হাতের দিক তাকালে দেখে লিপস্টিক লেগে আছে, হাসলো আবারো, ভালোও লাগছিলো ওর কথা ভেবে হাসতে,পকেট থেকে টিস্যুটা বের করে ভালো করে মুছে নিলো ]
_____এইদিকে,
শায়লা : কোথায় গিয়েছে দুনোটা কে জানে! আসার নামই নেই, [ বলেই দূর থেকে দাঁড়িয়ে, রাহুল স্নেহার আশেপাশে চোখবুলিয়ে খুজতে লাগলো, জারিফা আর মার্জানকে, হঠাৎ পাশ থেকে ]
নেহাল : আমার তোমার সাথে কিছু ইম্পর্টেন্ট কথা ছিলো, [ শায়লা মুচকি হেসে হাতে হাত বটে নিলো ]
নেহাল : প্লিজ! বি সিরিয়াস!
শায়লা : হ্যাঁ আমি তো সিরিয়াসই আছি! বলুন কি ইম্পর্টেন্ট কথা বলবেন? [ নার্ভাস হচ্ছিলো নেহাল, কেমনি বলবে তাকে,আর বলার পর ও কিভাবে নিবে কথা গুলোকে, সবই একত্রে ঘুরঘুর করছে মাথায় ]
শায়লা : নাজেহাল হোওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই মিষ্টার নেহাল! আমি এতোটাও অবুঝ নয়!
– হ্যা! তবে আমিই আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি,কারণ এটা কখনোই সম্ভব না যেটা আপনি ভাবছেন, এক্সুলি ইউ ডোন্ট নোও দ্যাট, আই হেভ অ্যা ব্রোকেন হার্ট! [ অবাক হয়ে তাকালো নেহাল ]
শায়লা : ইয়াহ! কেউ একজন ছিলো, যে আমার হার্ট ব্রোক করেছে, দীর্ঘদিন ডিপ্রেশনে ও ছিলাম আমি,বাট নাও আম অ্যা স্ট্রং গার্ল! সো্ আমি চাই না দুবারে একই ভুল করি!
– দুদিন ধরেই দেখা মেলামেশা, এতে ভালো লাগতেই পারে মিষ্টার নেহাল! এর মানে এই নয় যে এটা ভালোবাসা!
নেহাল : কারো এক যুগের একটা ভালোবাসা যদি দু-সেকেন্ডে ভেংগে যেতে পারে, তাহলে দু-সেকেন্ডে এক যুগের একটা ভালোবাসা ও জন্ম নিতে পারে,
– ভালোবাসা সময় আর দিনক্ষণ দেখে হয় না,
– এটা নয় যে এর আগে অন্য কোনো মেয়েকে ভালো লাগেনি,হ্যা লেগেছিলো, কিন্তু এই প্রথম কারো জন্য রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে, কাউকে বারবার মনে পড়ছে, কারো কথা মনে পড়তেই মুখে হাসি ফুটছে, ভালো লাগে তাকে ভাবতে, আমি চাইনা হারাতে সেই অনুভূতি!
শায়লা : সুন্দর, মডার্ণ, খানদানি মেয়ে পেয়ে যাবেন, এবং তাকে আপনার মায়ের ও খুব পছন্দ হবে, ওনার সাথে অ্যান্ডার্স্ট্যান্ডিংওতা ও ভালো থাকবে,
– আর আমার মতো দু-বেলা শুকনো রুটি দিয়ে পার করিয়ে দেওয়া মেয়েকে নিজের যোগ্য মনে করে আপনার স্ট্যাটাসকে ইন্সাল্ট করবেন না প্লিজ! [ বলেই চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো, তখনিই ]
নেহাল : [ শায়লার হাত ধরে ফেলে ] আমিও এতোটা অবুঝ নয় শায়লা, তুমি হয়তো মায়ের কথা ভেবেই এসব বলছো! আমি জানি ইয়েষ্টারডে মম যা বলেছে সবই রোং ছিলো, ওনার সব রোং সাইডই আমার চোখে পড়ে, কিন্তু কি করবো বলো? মা তো,
নেহাল : আজ সন্ধ্যায় ফ্লাট আমার! [ আহ্লাদি চোখে তাকালো শায়লা,কথাটি শুনতেই যেনো কিছু হারিয়ে যাওয়ার অনুভুতি হচ্ছে,কিন্তু না! এভাবে ভেংগে পড়লে হবে না, এসব কখনোই সম্ভব না, এই ভেবেই নেহালের হাত ছুটিয়ে দরজা খুলতে গেলো, তখনিই হঠাৎ নেহাল পেছন থেকে এগিয়ে এসে হাত দিয়ে দরজা চেপে ধরে রাখলো ]
শায়লা : [ দরজা খোলার চেষ্টা করতে করতে ] প্রবলেম কোথায় আপনার? হাত সরান!
নেহাল : মাই প্রবলেম ইজ লাভ! এন্ড সলিউশন ইজ ইউ!
শায়লা : দেখুন এসব মোটেও ভালো হচ্ছে না,
নেহাল : চলে যাচ্ছি আমি আজ!
শায়লা : চ..চলে যাচ্ছেন? তো আমায় কেনো বলছেন?
নেহাল : বিকজ আই লাভ ইউ! [ থমকে গেলো শায়লা, চোখ কুচকে বটে নিলো,কিছু মুহুর্তের জন্য নিস্থব্দ হয়ে রইলো, দুজনই, বুঝতে পারছে না নেহালও কিভাবে বুঝাবে শায়লাকে, তাকে ছেড়ে যেতে যে বড্ড কষ্ট হবে ]
শায়লা : দে..দেখেন, কেউ দেখলে অযথা কথা ছড়াবে,প্লিজ হাত সরান!
নেহাল : আমার জবাবের অপেক্ষায় থাকবো, তোমার কাছে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত সময় আছে,[ বলেই দরজা থেকে হাতটা সরিয়ে নিলো, শায়লাও দীর্ঘশ্বাস নিয়ে দরজাটা খুলে বেড়িয়ে গেলো ]
____ ২টা বেজে ১০ মিনিট, রাহুল আর স্নেহাকে মধ্যে রেখে ফ্রেম ফটো তুলার জন্য দাঁড়িয়েছে সবাই একত্রে,
আসিফ : [ মার্জানের পাশে এসে দাঁড়িয়ে ] এলোভেরা কখনো খাইনি! তবে এলোভেরা ফ্লেভারের লিপস্টিক খেয়ে বুঝতে পারছি এলোভেরাও অনেক টেস্টি হবে! [ মৃদু হাসলো মার্জান, সামনের চুল গুলো কানেগুজে নার্ভাস হতে লাগলো, হঠাৎ ]
রাহুল : হেই! আসিফ!
আসিফ : হ্যা বল?
রাহুল : রিদ কোথায়?
আসিফ : আরে হ্যা! ওকে দেখছিনা যে! [ জারিফার দিক তাকিয়ে ] ঐ জারিফা! রিদ কোথায়?
জারিফা : [ বিরবির করে ] হবে ওর এক্স গার্লফ্রেন্ড এর সাথে,
রাহুল : [ জারিফাকে কাছে টেনে নিয়ে ] কি হলো মন খারাপ?
জারিফা : কক..কই না তো?
রাহুল : রিদ কোথায়?
জারিফা : জা..জানিনা! [ কিছু বললো না আর রাহুল ও, কিন্তু কেনো যেনো জারিফার চেহেরা দেখে সন্দেহ লাগছিলো কিছু একটা হয়েছে এদের মাঝে, স্নেহার হাত থেকে মোবাইলটা এগিয়ে নিয়ে ফোন দিলো রিদোয়ানকে ]
রিদোয়ান : হ্যা বলো স্নেহা?
রাহুল : স্নেহা না তোর বাপ বলছি! ইডিয়ট কোথায় তুই?
রিদোয়ান : আছি পার্কিং এ!
রাহুল : এটা পার্কিং এ থাকার সময়? [ চুপ করে রইলো রিদোয়ান ]
রাহুল : টু-মিনিটস্ টাইম দিচ্ছি, কামঅন হারিয়াপ! [ ফোন কাটলো রিদোয়ান, দীর্ঘশ্বাস নিয়ে হাত থেকে সিগারেটটা মাটিতে ফেলে পায়ে ঘষে ভেতরে এগিয়ে এলো,জারিফার দিক তাকাতেই চোখ সরিয়ে নিলো সে, দেখে ও যেনো দেখেনি এমনভাব করে আছে, রাহুল হাত নাড়িয়ে কাছে আসতে ইশারা করলো, রিদোয়ান ও কাছে এসে দাড়িয়েছে ]
রাহুল : আরে ওদিক দাড়িয়ে আছিস কেনো? এইদিকে আয়! [ বলেই হাত ধরে টেনে জারিফার পাশাপাশিই দাড় করালো, দীর্ঘ একটি শ্বাস নিয়ে জারিফা গিয়ে নেহালের পাশে দাঁড়িয়ে পড়লো, মাথাটা আবারো চটকে গেছে রিদোয়ানের, ইচ্ছে করছিলো যেন আশেপাশের সবকিছুই ভেংগে চুরমার করে দিবে, তাও কন্ট্রোল করে নিলো নিজেকে, অবাক হলো রাহুল ও, যেটা সন্দেহ করেছিলো সেটাই সত্যি হলো, তাই কথা আর বাড়ালো না আপাতত ছবিটা তুলে নিলো, ছবি তুলার পর যে যার যার মতোই সরে যাচ্ছে, তখনিই ]
রাহুল : স্নেহা!
স্নেহা : হু?
রাহুল : আমি একটু আসছি তুমি এইখানে বসো!
স্নেহা : কিন্তু কোথায় যাচ্ছেন?
রাহুল : এসেই বলি?
স্নেহা : আচ্ছা! কিন্তু তাড়াতাড়ি আসবেন!
রাহুল : ওকে! [ বলেই এগিয়ে গিয়ে জারিফার হাত ধরে টেনে নিয়ে,রিদোয়ানের দিক এগিয়ে যায় ]
রাহুল : উপরে আয় আমার রুমে, কথা আছে [ চুপ করে তাকিয়ে রইলো রিদোয়ান ]
রাহুল : কিছু বলছি আমি এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো? চল! [ বলেই আবারো জারিফার হাত ধরে টেনে নিয়ে উপরে চলে গেলো, অবাক হয়ে আছে জারিফাও, কিছুই বুঝতে পারছে না শুধু তাকিয়েই যাচ্ছে, রিদোয়ান ও এগিয়ে এলো রুমে ]
জারিফা : কে বলেছে খুশি না? অনি অনেক খুশি ওনার এক্স গার্লফ্রেন্ডকে পেয়ে! উপস্ সরি নট এক্স, প্রেজেন্ট গার্লফ্রেন্ড প্রেজেন্ট! [ গোমড়া করে রাখে মুখটা ]
রাহুল : হোয়াট? [ কিছু বললো না রিদোয়ান নাক ফুলিয়ে হনহন করে বারান্দায় চলে যায়, রাহুল ও কনফিউজড হয়ে গেলো কি করবে, জারিফার দিক তাকালে দেখে মেয়েটার চোখে পানি ঝলমল করছে ]
রাহুল : হেইই! হোয়াই আর ইউ ক্রায়িং?[ কিছু বললো না জারিফা খাটের দিক এগিয়ে গিয়ে বসে পড়লো, ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাদছে, এগিয়ে গেলো রাহুল তাড়াতাড়ি বারান্দায়, রিদোয়ানের দিক ]
– তখনি ও আমাকে খুজতে গিয়ে নিধিকে আর আমায় একত্রে দেখে ফেলে,
– ওর কোনো ট্রাষ্টই নেই আমার উপর! কি বলতে চাইছি এটাও শুনতে চাইছে না, অযথা আপনার এক্স-প্রেজেন্ট, আমি আপনার কয় নাম্বার গার্লফ্রেন্ড এসব বলা শুরু করে দিয়েছে!
রাহুল : কাঁদছে!
রিদোয়ান : আই নোও!
রাহুল : কষ্ট হচ্ছে না?
রিদোয়ান : হচ্ছে! কিন্তু কি করবো? ঐও পাচ্ছে কষ্ট, আমায় ও দিচ্ছে কষ্ট?
– ওর কষ্ট দূর করার জন্যই তো কথা ক্লিয়ার করতে চাচ্ছিলাম, কিন্তু ও কোনোভাবে শুনতেই রাজিনা!
রাহুল : আরে দোস্ত মেয়ে তো! বুঝতে হবে তোর! এসব ছোট-খাটো ব্যাপার নিয়ে রাগ অভিমান ওরা না করে কারা করবে?
– [ মুচকি হেসে ] আর যেখানকার তোর প্রবলেমটাতো তোর এক্সকে নিয়ে,তাহলে সাথে আরো দু পার্সেন্ট বাড়িয়ে দে রাগ অভিমান!
রিদোয়ান : তুই হাসছিস?
রাহুল : দেখ ও তোকে সন্দেহ করছে তারমানে এটা নয় যে ওর ট্রাষ্ট নেই তোর উপর! এটাও তো হতে পারে, ও ওর ভালোবাসার ভাগ আর কেউকেই দিতে চাই না,
– এটা নিয়েই ভয় কাজ করে মেয়েদের, এইকারণেই এরা ছেলেদের মনপ্রাণ দিয়ে ট্রাষ্ট করলেও সন্দেহ জিনিষটা থাকবেই! গেট ইট? [ পকেটে হাত রেখে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে মাথা নাড়ালো রিদোয়ান ]
রাহুল : আমি নিচে যাচ্ছি! তুই ঠিক করেনে! [ বলেই রাহুল রুমে এগিয়ে এলো, জারিফা এখনো ঐদিকটা বসে আছে,চোখ দিয়ে ঝড়ে যাচ্ছে অভিমানের অজস্র অশ্রু ]
রাহুল : [ চেচিয়ে ] আরে রিদ তুই কি ভেবেছিস? তুই না থাকলে ওর কেউ নেই?
– [ জারিফাকে চোখটিপ মেরে ] ডোন্ট ওয়ারি জারিফা! আমি আছি! দরকার হলে একটা আধিঘারওয়ালি, আরেকটা পুরোঘারওয়ালি রেখে দিবো, [ বারান্দায় দাঁড়িয়ে হাসছে রিদোয়ান, রাহুলের কথা শুনে ]
রাহুল : আচ্ছা আমি স্নেহা থেকে পার্মিশন নিয়ে আসি কেমন! [ বলেই হেসে হেসে বেড়িয়ে দরজা লাগিয়ে চলেগেলো, রিদোয়ান ও বারান্দা থেকে রুমে এগিয়ে এসে ধীরেধীরে জারিফার পাশে গিয়ে বসলো, হাত দিয়ে চোখের পানিটা মুছে দিতে চাইলো, কিন্তু জারিফা এক ঝাড়ি দিয়ে সরিয়ে দিলো রিদোয়ানের হাতটা, হেসে উঠলো রিদোয়ান, আবারো হাত এগিয়ে মুছে দিতে চাইলো কিন্তু জারিফা আবারো সরিয়ে দিলো রিদোয়ানের হাতটা ]
– এক্সুলি জারিফা, নিধি ইজ প্রেগন্যান্ট! হলের লাইটিং এ, ও স্ট্রেস ফিল করছিলো! তাই আমি ওকে ফ্রেন্ডলিই বললাম গেষ্ট হাউজে গিয়ে কিছুক্ষণ রেষ্ট নিতে, সে বললো গেষ্ট হাউজ কোথায় সে জানেনা,তাই ওকে গেষ্ট হাউজ পৌছে দিলাম, তোমার কথাও জিজ্ঞেস করছিলো সে, তুমি অনেক কিউট, আমার জন্য একদম পার্ফেক্ট, হলুদে আমাদের ডান্সের অনেক তারিফ ও করছিলো সে,
– ওর বেবীর নাম কি ঠিক করেছে ও আর ওর হাজবেন্ড মিলে এসব নিয়েও কিছুক্ষণ হাসাহাসি করলাম আমরা,
– চলে আসবো ঠিক ঐটাইমেই হঠাৎ ওর হাতের পার্সটা নিচে পড়ে যায়, ওটা ফ্লোর থেকে তুলার জন্য আমিও ঝুকি সাথে ঐও ঝুকে যায়, এন্ড মিষ্টেকেনলি আমার হাতের সাথে ওর মুখ ঘষা লেগে, শার্টে লিপস্টিকের দাগ লেগে যায়,জাষ্ট এইটুকুই জারিফা, এর পরপরই তুমি আসো গেষ্ট হাউজে,
– এ-টু-জে্ট সবই বললাম তারপরও যদি তোমার আমায় ট্রাষ্ট না হয়, তাহলে…
– বাট আই লাভ ইউ! [ আহ্লাদিতভাবে তাকিয়ে আছে জারিফা, চোখে একরাশ আফসোস ভেসে উঠছে রিদোয়ানকে ভুল বুঝার কারণে, অনেক মায়াবীও লাগছে চেহেরটা, নিজেকে সামলাতে না পেরে রিদোয়ান, আলতো করেই জারিফার ঠোটে চুমু খেলো, গাল বেয়ে পানি পড়লো জারিফার, রিদোয়ান তার ঠোট দিয়েই মুছে নিলো পানিগুলো ]
জারিফা : কিস্ করলেন কেনো আমায়?
রিদোয়ান : বিকজ আই লাভ ইউ!
জারিফা : সব মিথ্যে! [ বলেই ধাক্ষে সরিয়ে দিয়ে ] আপনি আমাকে ভালোবাসলে তখনই এসব আমায় বুঝিয়ে বলেদিতেন,আমাকে এতো কাদাতেন না,
রিদোয়ান : আচ্ছা তুমি শুনতে চাইছিলে আমার কথা?
জারিফা : শুনেন! আমি না কোনো মেয়েকে আপনার সাথে দেখলে এভাবে সন্দেহ করবো কিন্তু আপনাকে,
পাগলী একটা মেয়ে এইটুকুতেই এই হাল করে ফেলেছে নিজের, মুখটাও সুখিয়ে আছে নিশ্চয়ই ব্রেকফাস্ট করেনি টেনশন করতে করতে,
স্নেহা : আ..আপনি যে বললেন আরেকটা সারপ্রাইজ আছে?
রাহুল : হুমম আছে! এক সেকেন্ড [ বলেই রিদোয়ানের দিক তাকালে সে রাহুলকে একটা তাদের মতোই ব্লাক রাউন্ড কেপ হাতে ধরিয়ে দেই, রাহুল স্নেহার দিক তাকিয়ে মুচকি হেসে কেপটা মাথায় পড়ে নেয়, স্নেহাও মৃদু হাসলো রাহুল, রিদোয়ান, এবং আসিফ তিনজনের দিকই তাকিয়ে, কারণ তাদের তিনজনেরই সেইম ড্রেস, মাথায় সেইম স্টাইলের কেপ, মুখে পিচ্ছি করে একটা একটা মুছ রাখলে না তিনজনকেই চার্লি চাপকিন মনে হতো ]
রাহুল : কাম! [ বলেই স্নেহার হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে মিডলের একসাইড করে দাড় করায় ]
এবং রাহুল গিয়ে দাঁড়িয়ে যায় একদম মিডলে,সবদিকের লাইটগুলো সব আবারো বন্ধ হয়ে যায়, শুধুমাত্র দুটো সাদা লাইট জ্বলে রয়েছে, একটা স্নেহার মাথার উপরের দিক আরেকটি রাহুলের মাথার উপরের দিক, রাহুলের পেছনে একটি সাদা পর্দা এসে ঝড়ে পড়েছে, স্নেহার সাথে সাথে বাকিরাও সকলে অধিক আগ্রহীত চোখে তাকিয়ে আছে রাহুলের দিক,
[ বলেই পর্দার দিক হাত বাড়াতেই এগিয়ে এসে রাহুলের হাতের উপর হাত রাখলো শায়লা, লাইট স্কাই কালার বারবী গাউন পড়েছে সেও, মুচকি হাসলো স্নেহা, শায়লার ও তার মতো একই ড্রেস শুধু কালার ডিফারেন্ট দেখে, আর কার আইডিয়া হতে পারে এসব, রাহুলের আইডিয়া ছাড়া, অজানা কিছু নয় স্নেহার জন্য,
বেকগ্রাউন্ড টোন বাজছে, সিম্পলি ভাবেই নেচে তাল মেলাচ্ছিল শায়লা এবং রাহুল, হঠাৎ রাহুল শায়লার হাতে একটি চিমটি কাটলো, সাথেসাথেই শায়লার মাথায় এলো তার তো এখন গান করার কথা ছিলো, আশেপাশেই একবার তাকিয়ে মৃদু হেসে গলা ঝেড়ে গেয়ে উঠলো ]
[ চারদিকের বাতি সব জ্বলে উঠলো, স্নেহাও দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো, তার আদুরে তিনোটা ফ্রেন্ডসকে,কড়া তালি দিচ্ছে বাকিরাও ]
নাফিসা ফুফি : [ দাদীর দিক তাকিয়ে ] ব্রাইড বলে একটা চিহ্ন আছে মা, ওদের ও এইভাবে সেইম ড্রেস দেওয়ার কি প্রয়োজন ছিলো?
দাদী : সুন্দরই তো লাগছে, সবকটাকেই পরী মনে হচ্ছে আজ!
নাফিসা ফুফি : শুধু কালারগুলোই ডিফারেন্ট! আচ্ছা ওটাও ডিফারেন্ট রাখার কি দরকার ছিলো? সবই সেইম দিয়ে দিতে পারতে?
দাদী : দেখ! রিসিপশান রাহুলের, হয়তো সেই করেছে এসব! আর যাই করেছে এতে আমি খারাপ কিছুই তো দেখছি না, সুতরাং এতে আর মাথা না ঘামিয়ে ওদের খুশির সাথেই খুশি থাকলে তোর আমার সবার জন্যই বেটার হবে! [ বলেই দাদী অন্যদিক গেষ্টদের আপ্যায়ন করতে চলে গেলো ]
এইদিকে, রাহুল দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে স্নেহার দিক, স্নেহাকে কতো খুশি দেখাচ্ছে তার পরিবারকে পেয়ে, এইভাবেই তো হাসিখুশিতে দেখতে চাই রাহুল তার স্নেহাকে, হঠাৎ নেহাল এগিয়ে এসে পাশে দাড়ালো রাহুলের,
নেহাল : [ কাদো কাদো কন্ঠে ] ব্রো! ওর চেহেরাটা দেখ, একদম ফুটোন্ত ফুলের মতো হয়ে আছে, কিন্তু আমায় যদি এখন সামনে দেখে না?এমন বানাবে চেহেরাটাকে যেনো আমি সাত খুন একত্রে করেই ওর সামনে দাড়িয়েছি, [ আবারো হেসে উঠলো রাহুল ]
নেহাল : আচ্ছা! দেখ এসব মোটেও ভালো হচ্ছে না কিন্তু! আমি তোকে আমার সেড ফিলিং এক্সপ্লেইন করছি আর তুই কিনা হাসছিস!
রাহুল : তো কি করবো কাদবো?
– আরে বোকা এসব এক্সপ্লেইন আমাকে না করে ডিরেক্ট ওকে গিয়ে করনা? তারপরই তো কাজে আসবে! ইডিয়ট
নেহাল : ডিরেক্ট করবো? পা..পাগল হয়ে যাসনি তো তুই? সবার সামনে আমাকে ওর থাপ্পড় খাওয়ানোর ইচ্ছে আছে তাই না?
রাহুল : লিসেন্ট! না বলে এভাবে দেবদাস হয়ে বসে থাকার চেয়ে একটা থাপ্পড় না হয় খেয়েই নিবি! সো্ হোয়াট?দেন সুযোগ পেলেই লংগেষ্ট একটা কিস্ করে থাপ্পড়ের রিভেঞ্জ ও নিয়ে নিবি!
নেহাল : [ রাহুলের কাধে হাত রেখে ] ওহোহো ব্রো স্পেশাল টেষ্ট এর তোমার এতো এক্সপেরিয়েন্স!
রাহুল : [ দীর্ঘশ্বাস নিয়ে কাধ থেকে নেহালের হাতটা সরিয়ে দিয়ে ] তুই না আস্ত একটা গাধা আসলেই! বউ আছে আমার ভুলে গিয়েছিস?
নেহাল : হোয়াট হোয়াট হোয়াট? বউকেও জোড় করে কিস্ করতে হয় নাকি? তাহলে বিয়ে করে কি লাভ, যদি নিজের অধিকারটাই জোড় করে নিতে হয়?
রাহুল : স্টুপিড! আওর লাভ ম্যারেজ,ইউ ফরগেট ইট!
নেহাল : [ জিহবায় কামড় খেয়ে ] ওওওহ! শিটটট মেন! আই মিন! ইউ ইটেড স্পেশাল টেষ্ট বিফর ইয়র ওয়েডিং রাইট? [ রাহুল আর কিছু বললো না তেডি স্মাইল দিয়ে একবার তাকিয়ে স্নেহাদের দিক এগিয়ে গেলো, ছবি তুলছিলো সবাই একত্রে ]
জারিফা : কাম কাম জিজু! [ বলেই রাহুলের হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে ] স্নেহা! এই সবকিছু সারপ্রাইজের প্লান কিন্তু আমাদের জিজুরই ছিলো,তাই সব ক্রেডিট ওনাকেই দিতে হবে! কি বলেন জিজাজি?
রাহুল : নো এক্সুলি! মিউজিসিয়ানরা ব্যাকগ্রাউন্ড ইন্সট্রামেন্টালিস্ট করেছে, পুরো হলের ডেকোর ইভেন্টাররা করেছে, ড্রেস-কাস্টম গুলো সব ডিজাইনাররা রেডি করেছে, ফ্রেন্ডস ডাইলগ গুলো তোমাদের মন থেকে রেডি করে দিয়েছো, ডান্সার ডান্স শিখিয়েছে, আর আমি শুধু গানগুলো সিলেক্ট করে শিখালাম, সো্ সব ক্রেডিট আমি কি করে পাই বলো?
শায়লা : বাট জিজু! যে যাই কিছুই করুকনা কেনো এইসবকিছুর প্লান তো আপনারই ছিলো তাই না?
স্নেহা : আ..আপনি এতো রাতে,মিউজিসিয়ান, ডান্সার এদের সবাইকে কোথায় পেয়েছিলেন?
মার্জান : আই থিংক আমাদের যেভাবে রাতে ঘুম থেকে টেনে তুলে তুলে সং আর ডান্স শিখিয়েছে, ওদের ও ঐভাবে ঘর থেকে টেনেটুনে তুলে নিয়ে এসেছিলো! [ হেসে উঠলো সবাই একত্রে, হঠাৎ ]
আসিফ : [ এগিয়ে এসে ] হাসিটা তো দারুণই! বাট অলোয়েজ এভাবে এংড়ি মুডে থাকার কি দরকার! [ সবাই বুঝতে পেরে মার্জানের দিক তাকালো, মার্জান ও একদম নাকফুলিয়ে আড়চোখে তাকালো আসিফের দিক ]
শায়লা : [ এদিকওদিক তাকিয়ে ] চ্যা..চ্যামেলি আন্টি! উফফ কিনা লাগছে আজ আন্টিকে,আরে হ্যা! আমরা এভাবে দাঁড়িয়ে আছি কেনো বলেন তো জিজু! চলেন চলেন ফটো তুলবো [ বলেই শায়লা, রাহুল এবং স্নেহা দুজনেরই হাত ধরে ডেকোর চেয়ারের দিক এগিয়ে নিয়ে চলে গেলো, জারিফা ও মুচকি হেসে তাদের পিছুপিছু চলে গেলো, মার্জান আসিফকে মুখটা ভেংগিয়ে চলে যাচ্ছিলো, ঠিক তখনিই আসিফ মার্জানের হাতটা চেপে ধরে টেনে শিরি দিয়ে উপরের দিক নিয়ে চলে যায়, আশেপাশে তাকিয়ে হাত ছুটিয়ে নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গেলো মার্জান, কিন্তু কোনো লাভ হলো না, রুফ টপে এসেই হাতটা ছাড়লো আসিফ ]
মার্জান : আপনার সাহস তো কম দেখছিনা! সবার সামনে এইভাবে হাত ধরে টেনে আনার মানে কি? কি ভাববে সবাই?
আসিফ : টেনে না এনে যদি নরমালি ডেকে বলতাম আমার সাথে রুফটপে চলো, তাহলে কি তুমি আসতে? বলো? [ কিছু বললো না আর মার্জান চলে যাওয়ার জন্য পাশফিরবে, তখনিই, আসিফ বাহুর দু-দিক ধরে পেছনে ঠেলে দেওয়ালে লাগিয়ে দাড় করাই, অবাক চোখে তাকালো মার্জান, মুড রাখার জন্য চলে যাওয়াটা বেটার হবে ভাবলো, কিন্তু আবার কেনো যেনো কিসের টানে যেতেও মন চাইছিলো না ]
আসিফ : আচ্ছা এমনটা কি আসলেই হয়না? যেটা আমি ফিল করি সেটা কি তুমি একটু ও ফিল করোনা?
আসিফ : দমটা কি সবার সামনে গেলেও এইভাবে আটকে যেতে থাকে?
মার্জান : দে..দেখেন! আমার না আপনার সাথে এইখানে বাকোয়াস্ করার টাইম নেই, আমি [ বলেই থেমে গেলো, পারলো না আর কিছু বলতে, শিউরে উঠলো, আসিফ তার হাতদিয়ে মুখ থেকে গলা পর্যন্ত স্লাইড করে ছুয়ে দিচ্ছে মার্জানের, ঢোগ গিলছে মার্জান ও, এই অদ্ভুত অনুভুতি আর কখনোই হয়নি তার,নিশ্চুপ হয়ে গেলো একদম ]
আসিফ : [ ধীরেধীরে মার্জানের কানের দিক মুখ এগিয়ে ] একটা কথা বলি? [ দীর্ঘশ্বাস নিয়ে মাথা নাড়ালো মার্জান ]
আসিফ : আমি আজ তোমাকে দেখেছিলাম!
মার্জান : [ কনফিউজড হয়ে ] ত..তো?
আসিফ : আমার বাসায় ডান্স প্রেক্টিসে্র পর যখন, তুমি রুমে কাপড় চেঞ্জ করছিলে!
আসিফ : [ হেসে ] ইয়েস্! বাট মিষ্টেক আমার ছিলো না, তোমারই ছিলো!
মার্জান : মানে কি?
আসিফ : মানে হচ্ছে তুমি যে রুমে কাপড় চেঞ্জ করছিলে, ঐরুমের ওয়াসরুমেই ছিলাম আমি,হঠাৎ ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখি তুমি.. [ হা করে চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে তাকিয়ে আছে মার্জান আসিফের দিক ]
আসিফ : [ হেসে মার্জানের থুতনিতে ধরে মুখটা বন্ধ করে দিয়ে ] রিলেক্স! বেশিকিছু দেখিনি, তুমি অলরেডি তখন কাপড় পড়েই ফেলেছিলে,জাষ্ট উপরের টপসটা পড়োনি!
মার্জান : উপরের টপসটা পড়িনি মানে এটা কি বেশিকিছু না?
আসিফ : বে..বেশিকিছু হতে যাবে কেনো? ইটস্ অ্যা সিম্পল!
আসিফ : কি দেখেছি এটা এক্সপ্লেইন করে বলতে হবে নাকি?
মার্জান : [ বিরক্তি হয়ে ] আপনি? আসলেই একটা,
আসিফ : [ মার্জানের মুখে হাত দিয়ে ] আমি আসলেই একটা লাকি পার্সন! আর সাথে তুমি ও!
– শুকোর করো আমিই দেখেছি, আর কেউ না!
মার্জান : [ মুখ থেকে আসিফের হাতটা সরিয়ে ] আপনিই বা ঐরুমে কি করছিলেন বলেন তো?
আসিফ : [ হেসে পকেটে হাত রেখে দাঁড়িয়ে ] রুমটা আমার ছিলো! [ কথাটি শুনতেই অবাক হয়ে দু-হাত দিয়ে নিজের মুখ নিজে চেপে ধরলো মার্জান, মনে মনে ভাবতেও লাগলো এতোগুলো রুম থাকতে কেনো যে ঐ রুমটাতেই গিয়ে কাপড় চেঞ্জ করেছিলো সে! এই মুখ মানুষকে দেখাবে কি করে আজ, ভেবেই চেহেরাটাকে কাদো কাদো করে ফেললো ]
এইদিকে নিচে, জারিফা চারদিক খুজে বেড়াচ্ছিলো রিদোয়ানকে,হঠাৎ রাশুকে নাগাল পেলে তার থেকে জিজ্ঞেস করাই সে বললো গেষ্ট হাউজের দিকই যেতে দেখেছে সে রিদোয়ানকে, মনে মনে ভাবতে লাগলো জারিফাও,
– সবাই এইখানে আর এই মহানব্যক্তি কোনো গেষ্ট হাউজে বসে বসে ঘুমুচ্ছে কিনা কে জানে!
আর দেরী করলো না সে ও মুচকি হেসে রওনা দিলো, গার্ডেন পেড়িয়ে গেষ্ট হাউজের দিকই উঠে, দরজার লক চাপ দিতেই দরজা ওপেন থাকায় খুলে যায়, দরজা খুলে জারিফা ভেতরে এক কদম পা বাড়াতেই হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে যায়,
রিদোয়ান দাড়িয়ে আছে এবং তার বরাবরই, লম্বাচওড়া, সুন্দরই দেখতে এমন একটি মেয়েও দাঁড়িয়ে আছে,
জারিফাকে দেখে মেয়েটি তাড়াতাড়ি ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করে তার ঠোটের আশেপাশে ছড়িয়ে যাওয়া লিপ্সটিক গুলো মুছে নিচ্ছে, হতভম্বের ছাপ রিদোয়ানের চেহেরায় ও! কোনো ভুল সময়ে এন্ট্রি নিয়ে নিলো নাতো জারিফা, সবাই একজায়গায় আর রিদোয়ান আলাদা একজায়গায় তাও বা এই মেয়েটির সাথে,
বলেই চেচিয়ে ডেকে উঠলো, থামতে মন চাইছিলো না জারিফার, মাথায় অজস্র প্রশ্ন ঘুরঘুর করছে, এমন ও কোনো সিচুয়েশান চোখের সামনে এসে পড়বে কল্পনাও করতে পারেনি সে,তাই যত তাড়াতাড়িই পারছে হেটে গার্ডেনটাও ক্রস করলো, কিন্তু বাড়ির শিরির মুখোমুখি আসতেই হঠাৎ পেছন থেকে রিদোয়ান হাত টেনে ধরে ফেললো!
রিদোয়ান : [ হাপিয়ে উঠে ] কি হলো?
জারিফা : আ..আপনাকে খুজছিলাম রা..রাশু বললো এইদিকেই যেতে দেখেছে তাই..গিয়েছিলাম!
রিদোয়ান : [ চেচিয়ে ] কি বলছো কি এসব? [ বলতেই হঠাৎ আশেপাশে তাকিয়ে দেখে লোকজন চেয়ে আছে, আর কিছু বললো না রিদোয়ান জারিফাকে সহ টেনে নিয়ে একপাশে গিয়ে দাঁড়ায় ]
রিদোয়ান : দেখো জারিফা! তুমি যেমনটা ভাবছো তেমন কিছুই না! [ জারিফা আর কোনো জবাব দিলো না, দু-হাত দিয়ে রিদোয়ানের হাত তুলে ধরে আংগুল দিয়ে ইশারা করে দেখিয়ে দিলো সাদা শার্টের উপর লেগে থাকা মেজেন্ডা লিপস্টিক গুলো, রিদোয়ান ও অবাক হয়ে তাকালো লিপস্টিক গুলোর দিক ]
জারিফা : কিছু মানুষ তার পুরোনো ন্যাচার ভুলতে পারে না রিদ!
রিদোয়ান : জারিফা এগুলো..
জারিফা : ব্যাস! আমার এক্সপ্লেইন চাই না!
রিদোয়ান : ইম্পসিবল জারিফা! আমি জানি তুমি কি ভাবছো, বাট যেটাই ভাবছো তেমন কিছুই হয়নি আমাদের মাঝে,
জারিফা : আমি ভাবছি? হ্যা? এসব আমি ভাবছি তাই না?
– আর নিজের চোখে যা দেখে আসলাম আপনার এক্স-গার্লফ্রেন্ড এর সাথে একা একটা ঘরে একত্রে দাঁড়িয়ে ছিলেন সেটা?
– দাঁড়িয়ে ছিলেন নাকি কি করছিলেন সব এই লিপস্টিকের দাগই ক্লিয়ার করে দিচ্ছে মিষ্টার রিদোয়ান!
রিদোয়ান : [ দাতকিলিয়ে ] দেখো! অহেতুক কথা বলে মাথা খারাপ করিও না!
জারিফা : ও ইয়াহ! অহেতুক কথা!
– [ নাকফুলিয়ে ] থেংক ইউ! [ বলেই হনহন করে ভেতরে ঢুকে পড়লো, রাগে ঘামছে রিদোয়ান,মুখটাও লালছে হয়ে গেছে, দীর্ঘশ্বাস নিয়ে পার্কিং এর গাড়ির দিক চলে গেলো সে ও ]
এইদিকে,
রাহুল : [ স্নেহার কানে ] স্নেহা! তোমার গরম লাগছে?
স্নেহা : না তো!
রাহুল : বাট আই ফিল বেরী হট! [ স্নেহা অবাক হয়ে তাকালেই দেখে রাহুল তার দুষ্টুমির ভংগিতে তাকিয়ে আছে তারদিক, স্নেহা চোখ সরিয়ে নিলো তাড়াতাড়ি ]
রাহুল : এক্সুলি এইদিকে মানুষ বেশি তা..তাই হয়তো, চলো না আমরা ঐ দিকটা কোথাও ঘুরে আসি! [ স্নেহা বুঝতে পারলো রাহুলের মাথায় কি ঘুরঘুর করছে,তাই শুনেও না শুনার ভান করে রইলো ]
রাহুল : [ স্নেহার কানের দিক ফিসফিসিয়ে ] স্নেহাআআআ!
স্নেহা : [ চমকে উঠে তাকিয়ে ] আ..আপনার মাথা ঠিকাছে? আমরা এদিকওদিক ঘুরাঘুরি করলে মানুষ কি বলবে বলেন তো?
রাহুল : উফফ! অলোয়েজ মানুষের চিন্তা করো কেনো বলো তো?
স্নেহা : আপনি না আমার সাথে কথাই বলবেন না! [ মুখ গোমড়া করে ] এমনিতেই পুরো রাতভর টেনশনে রেখে গিয়েছিলেন! তারউপর এখন উল্টো-পাল্টা কথা বলে আমার মাথা আরো খারাপ করে দিচ্ছেন!
রাহুল : হুমমম! তোমার মাথা কোনদিন ঠিক ছিলো বলো তো? ম্যাথমেটিকস পড়তে পড়তে তো পুরো মাথার ঘিলু সহ নড়িয়ে ফেলেছো, আবার আসছে বলতে মাথা নাকি আমি খারাপ করে দিচ্ছি!
স্নেহা : আমার সাব্জেক্ট নিয়ে উল্টো-পাল্টা কথা বলা ছাড়া আপনার আর কোনো কাজ নেই?
– আপনি একদম ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে কি করে তড়িয়ে ফেলেছেন? ঘোড়ার ডিম?
রাহুল : [ হেসে ] ভাবছি তোমার একটা নিউটনের মতো হাজবেন্ড হলে কেমন হতো?
– হিহি দুজনে মিলেই সারাদিন সূত্র বের করতে থাকতে, আর রোমান্সের কথা তো তুমি ভুলেই যাও!
স্নেহা : [ রাহুলের হাতে জোড়ে একটি চিমটি দিয়ে ] আই থিংক সেটাই বেটার হতো!
রাহুল : অহ রিয়েলি?
স্নেহা : জ্বি!
রাহুল : অনেক বড় কথা বলে ফেলেছো তুমি স্নেহা! [ বুকে হাত রেখে ] এইদিকে ভীষণ ব্যথা পাচ্ছি কথাটা শুনে! [ স্নেহা মুখ ভেংগিয়ে অন্যপাশ ফিরে গেলো ]
রাহুল : ঐ! কি হয়েগেছে তোমার বলো তো? কাল রাত থেকেই দেখছি মুখ ভেংগাতে আছো!
স্নেহা : সো্!
রাহুল : [ তেডি স্মাইল দিয়ে ] ওয়েএএএট স্নেহা!
– বের করছি তোমার মুখ ভেংগানো! [ বলেই রাহুল স্নেহার হাত ধরে চেয়ার থেকে টেনে তুলে তার মায়ের দিক এগিয়ে যায়, স্নেহা কিছু বলবে তার সময় ও পেলো না আর, তখনিই রাহুলের মা তাকিয়ে ফেললো তাদের দিক ]
রাহুল : মা! আমরা একটু আসছি!
রাহুলের মা : কিন্তু কোথায় যাচ্ছিস রাহুল?
রাহুল : এ..এক্সুলি স্নেহার! ড্রেসে একটু প্রবলেম হয়েছে সেটা ঠিক করতে, [ স্নেহা অবাক হয়ে তাকালো রাহুলেরদিক, মুহুর্তেই কতোবড় মিথ্যে বানিয়ে বলে দিলো মা কে ]
রাহুলের মা : ও! যা তাহলে! ঠিক করে আয়! আর হ্যা, তাড়াতাড়ি আসিস ওকে? কজ গেষ্টরা তোদের না দেখলে আবার কি ভাববে তাই না?
রাহুল : ওহো মা! ডোন্ট ওয়ারি! এই যাবো আর আসবো জাষ্ট! [ মাথা নাড়ালো রাহুলের মা, রাহুল চোখ টিপ মেরে স্নেহার হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, পথে পথে আবার আটকাও পড়ছে বিভিন্ন রিলেটিভসরা সামনে পড়ায়, হ্যান্ডশেক ও করতে হচ্ছে সবার সাথে,
উপরে উঠবে ভাবলো, কিন্তু শিরি দিয়ে আরো একটা টাল রিলেটিভস, সবাইকে আবার জবাব দাও কোথায় যাচ্ছে, এই ভেবেই রাহুল আর উপরে উঠলো না স্নেহাকে নিয়ে,
দূর থেকে গীতালিকে দেখে ইশারা করলো কাছে আসতে, গীতালি কাছে আসতেই রাহুল স্টোর রুমের চাবিটা খুজে নিলো গীতালি থেকে, এর মধ্যেই আরেক মসিবত গীতালি একটা না দুটো না পাচ-দশটা চাবি ওয়ালা একটা গুচ্ছা ধরিয়ে দিলো! কি আর করার ওটা নিয়েই হাটা ধরলো রাহুল, পর্দা সরিয়ে ভেতরের দিক ঢুকে কর্নারের স্টোর রুমের দিক এগিয়ে গেলো,
স্নেহা : করছেনটা কি আপনি?
রাহুল : দেখে থাকো কি করছি!
স্নেহা : মোটেও ভালো হচ্ছে না রাহুল এসব! আমাদের জন্যই এতোবড় আয়োজন করা হলো, আর আমরাই কিনা ওসব ছেড়ে,
রাহুল : শাট-আপ স্নেহা!
স্নেহা : গতরাত দেখেছেনই তো ফুফিও রেগে আছে আমাদের উপর! আর এইসময় ও যদি আমাদের ঐদিক না দেখে হয়তো আরোই রেগে যাবে!
রাহুল : [ দরজায় চাবি ট্রায়াল দিতে দিতে ] চোখ না বাধলে তো চোখে রাস্তা দেখে চলে যাবা!
স্নেহা : আ..আর হাত?
রাহুল : হাত না বাধলে, হাত দিয়ে চোখেরটা খুলে ফেলবা তাই!
স্নেহা : [ নাক ফুলিয়ে ] তাহলে পা,টাও বাকি রাখলেন কেনো ওটাও বেধে দিন? [ হাসলো রাহুল স্নেহার কথা শুনে, আর দু-একবার ট্রাই করতেই দরজা খুলে যায়, স্নেহার বাহুতে ধরে ধীরেধীরে এগিয়ে নিয়ে ভেতরে ঢুকালো রাহুল, ভেতর থেকে দরজাটাও লাগিয়ে দিলো, স্নেহা কিছুই দেখতে পারছে না নিস্থব্দ হয়ে আছে, না কোনো রাহুলের স্পর্শ আছে শরীরে, না কোনো সারাশব্দ আছে তার ]
একা একা ফিল করছে স্নেহা, রাহুলকে ছাড়া কেমন যেনো নিস্বংগ লাগছে নিজেকে, হয়তো রাহুল কিছু মুহুর্ত পর চলেই আসবে কিন্তু যে কয়েক মুহুর্তই তাকে ছাড়া কাটাতে হচ্ছে সেগুলোই তো বড্ড কষ্টকর হয়ে পড়ছে, জল জমে এলো স্নেহার চোখে,অভিমান হচ্ছে রাহুলের উপর, খুব! না খুবই বেশী!
ঠান্ডায় পা টা ও জানালার চৌকাটের উপর কুড়িয়ে নিলো, বারবার ঘড়ির দিক তাকাচ্ছে আর চোখের জল মুছছে, মনে মনে ভেবেও নিয়েছে আসুক আজ রাহুল, এতোটাই না অভিমান করে থাকবে সারাদিন, এরপর আর কখনো তাকে এভাবে একা রেখে যাওয়ার কথা মাথায় আনবে না,
হুট করে চোখ খুলে চমকে উঠে বসলো, হ্যা সত্যিই দরজায় কড়া নাড়ছে, নিজেকে এখনো সেই জানালার চৌকাটের উপর দেখে অবাক হলো স্নেহা, মাথা ঘুড়িয়ে বাহিরের দিক তাকিয়ে দেখলো, নিচে গার্ডেনের সব জায়গায়, সাদা এবং গোলাপী কম্বিনেশনের ফুল, সাদা কাপড়, হরেকরকমের সাদা জিনিসপত্র দিয়ে সাজানো হয়েছে, পাশ ফিরে আবার বিছানার দিক তাকালো, রাতে যেমনটাই ছিলো বিছানা এখনও ঠিক তেমনটাই রয়েগেছে,
– তারমানে কি রাহুল এখনো বাসায় আসেনি? কোথায় গিয়েছে সে?
এসব ভাবতেই দরজায় কড়া নাড়ালো আবারো, তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে শাড়ী ঠিক করে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুললো,
স্নেহা : গুড মর্নিং দাদী! ইটস্ ওকে মাফ করার কি আছে, সকাল তো হয়েই গিয়েছে! আ..আসুন ভিতরে,
দাদী : না.. নাহ আমি আসবো না, তোমাদের জাগিয়ে দিতে এসেছি যেহেতু প্রোগ্রাম আজ সকালেই হচ্ছে তাই সবাইকে তাড়াতাড়ি উঠতে হবে না?
– আর তোমরা দুজন তো ব্রাইড-গ্রুম তোমাদের তৈরী হতে তো আরো বেশীই সময় লাগবে!
স্নেহা : জ্বি!
দাদী : [ হেসে ] আচ্ছা ঐ শয়তানটা কোথায়? ঘুমিয়ে আছে এখনো নিশ্চয়ই, তাই না? ঠান্ডা পানি ঢেলে উঠিয়ে দাও ওকে!
– নাহলে ও তৈরী হতে হতে গেষ্ট সব বিদায় হয়ে যাবে! [ হাসলো স্নেহা দাদীর কথা শুনে ]
দাদী : আচ্ছা আমি যায়,তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও আমি গীতালির দিয়ে তোমাদের দুজনের জন্য উপরেই ব্রেক ফাষ্ট পাঠিয়ে দিচ্ছি, খেয়ে তৈরী হয়ে নিও দুজন! ওকে ?
স্নেহা : জ্বি!
চলে গেলো দাদী, স্নেহা দরজা লাগিয়ে এগিয়ে এলো ভেতরে,সবই যেনো তার মাথার উপর দিয়েই যাচ্ছে, কি হচ্ছে সে কিছুই বুঝতে পারছে না, গেলো কই রাহুল? রাত পেড়িয়ে সকাল হয়ে গেছে আর এখনো রাহুলের কোনো দেখা নেই!
মোবাইলটা এগিয়ে নিয়ে আসিফকে ফোন দিলো কয়েকবার, রিং যাচ্ছে কিন্তু রিসিবই করছে না,রিদোয়ানকে ও ট্রাই করলো কিছুক্ষণ, সে ও রিসিভ করছে না,আশ্চর্যের বিষয় হলো মার্জান, জারিফা, শায়লা তাদের তিনজনের কেউই ও ফোন রিসিভ করছে না,
রেগে মোবাইলটা খাটে ছুড়ে রেখে ওয়াসরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে, ফ্রেশ হয়ে ওয়াসরুম থেকে বেরুলো মনে একটা আশা নিয়ে, রুমে ঢুকতেই যেনো রাহুলকে দেখতে পাই,কিন্তু সেটাও আর হলো না, টেনশন তো হচ্ছেই হচ্ছে সাথে রাগও উঠছে প্রচুর, রাহুলের উপর! কোথায় গেছে অন্তত সেটা বলে যেতে পারতো, এইভাবে না বলে কেউ যায়? ফোনটাও বাসায় রেখে গেছে, কারো কাছ থেকেও ইনফর্ম পাচ্ছে না! মুখ গোমড়া করে খাটে বসে পড়লো স্নেহা! হঠাৎ ঐ সময়,
নেহাল : আচ্ছা রিলেক্স ওকে? আমি যাচ্ছি খুজে দেখছি! [ মাথা নাড়ালো স্নেহা, নেহাল তাড়াহুড়ো করে বেড়িয়ে গেলো ]
ঘড়িতে সময় দেখছে স্নেহা! ১০টা বেজে চলছে, তৈরী হতে মন টানছে না,অস্থিরতা কাজ করছে মনে, কিন্তু দাদী আবার এসে যদি দেখে এখনো তৈরী হয়নি তখন ওনি কি ভাববে? এটা চিন্তা করেই আলমীরা খুলে কাপড়টা এগিয়ে নিলো,দরজা বন্ধ করতে যাবে আলমীরার হঠাৎ তখনি খেয়াল করলো রাহুলের কাপড়ের প্যাকেটটা নেই, পুরো আলমীরা তন্ন তন্ন করে খুজে দেখলো স্নেহা কোথাও নেই রাহুলের কাপড়টা,
– রাহুলের সাথে সাথে কাপড়টাও গাইয়েব হয়ে গেলো, এটা কেমনি সম্ভব, হয়তো রাহুল সাথে করে নিয়ে গেছে!
– না নাহ! তা কেনো হবে!
বুঝতে পারছে না স্নেহা কিছুই! মাথায় গুলিয়ে যাচ্ছে সব, আর সজ্য হচ্ছে না মাথার মধ্যে এসব,করবেনা আর রাহুলকে নিয়ে চিন্তা,
– [ কাদো ভাবে ] ও কি করেছে আমার চিন্তা? বলে যেতে পারতো আমাকে! কিন্তু সেটাও তো করেনি,জানে না আমি টেনশন করবো?
– হুহ! যাক গিয়ে যেখানে যাওয়ার! আমার কি! আমাকে বলে যাওয়া যেহেতু ইম্পর্টেন্ট মনে করলো না, তাহলে আমি ও কেনো এতো ইম্পর্টেন্স দিয়ে ভাববো? ভাববো না আর আমিও!
রাশু : আরে আমার কি দোষ? একটাই ওয়াসরুম মাত্র ,এর মধ্যেই এরা কেউ না কেউ ওটাই ফিট হয়ে থাকে, তাই আমিও কন্ট্রোল করতে পারিনি! এমনিতে ভালোই করেছি, এবার থেকে ওয়াসরুম সবার আগে আমাকেই ফ্রি করে দিবে,
স্নেহা : [ কাদো কন্ঠে ] নেহাল ও গিয়েছে আলিসা ও গিয়েছে রাহুল কোথায় এটার ইনফর্ম আনতে, কিন্তু কেউই কোনো ইনফর্ম নিয়ে এলো না এখনো, দাদী এসে জিজ্ঞেস করলে আমি কি জবাবটাই দিবো?
জাফসিন : বাট ভাবী! আই কান্ট আন্ডার্ষ্ট্যান্ড এনিথিং! একটু ক্লিয়ার করে বলো! [ স্নেহা কাদো কন্ঠে খুলে বললো সব তাদের ]
স্নেহা : যার জন্য সাজলাম সেই তো নেই! তাহলে আর সাজ রেখে কি করবো?
জাফসিন : আরে ভাবী চিন্তা করছো কেনো? চলে আসবে ভাইয়া, হয়তো কোনো কাজে আটকে পড়েছে!
[ স্নেহা ও মন বেধে বুঝ দিচ্ছিলো নিজেকে,এক একটা মুহুর্ত কতো কষ্টের হয়ে কাটছে সে কাউকেই বুঝাতে পারছে না, বুঝবেও না আর কেউ, যার বুঝার সেই ও তো বুঝলো না, আলিসা এলো কিন্তু রাহুলের কোনো ইনফর্ম আনলো না সাথে,কিভাবে আনবে সেও? পেলেই তো আনবে,এরইমধ্যে দাদী তিনবার এলো গেষ্ট সব এসে গেছে বলার জন্যে, রাহুলকে খুজলে রোহানী আর জাফসিন বারবার ওসাশরুমে গিয়েছে রাহুল, এই বলেই ম্যানেজ করে নিলো দাদীকে, কিন্তু আর কতোক্ষণ বানাবে এসব বাহানা? ]
আলিসা : এই নেহাল ভাইয়াটাও না ফোন ধরছে না,এমন করে নাকি কেউ?
রোহানী : সব গেষ্টই চলে এসেছে,আর কতোক্ষণ এভাবে বাহানা বানাতে থাকবো আমরা?
আলিসা : চলেন ভাবী! নিচে! এরমধ্যেই হয়তো চলে আসতে পারে ভাইয়া!
[ কিছু বললো না আর স্নেহা ও,হাটা ধরলো, ধীরেধীরে নামছে শিরি দিয়ে, পুরো ড্রইং রুমটাই হলরুমের মতো সাজিয়ে নিয়েছে গেষ্টদের জন্যে, মুগ্ধকর সাজের মতোই হয়েছে সবকটা, তবে এসব দেখেও মনে আনন্দ ফুটছে না স্নেহার, কারো একজনের শূন্যতায় ভুগছে সে, তাকিয়ে আছে চারদিক থেকে সবাই, অপরুপ লাগছে স্নেহাকে, চোখ সরছিলো না কারোরই, শিরির লাষ্ট স্টেপ আসতেই হঠাৎ উপর থেকে ফিতা দিয়ে ছোট কার্ডের মতো কিছু একটা ঝুলে পড়লো স্নেহার সামনে, চমকে উঠলো হঠাৎ স্নেহা! বাকিরা ও ভয় পেয়ে গেলো হঠাৎ ছিটকে এসে পড়াই!
কি জিনিস দেখার জন্য ধীরেধীরে হাত দিয়ে আলতো করে ছুয়ে দেখলো স্নেহা, হাতের স্পর্শ লাগতেই হঠাৎ চারদিকের বাতি সব বন্ধ হয়ে যায়, শুধু স্নেহার মাথার উপরই একটা সাদা বাতি জ্বলে উঠেছে,অবাক হয়ে উপরের দিক তাকালো স্নেহা, কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না, সামনের দিক থেকে ও আরও দুটো নীল রঙের বড় বড় বাতি জ্বলে উঠলো হঠাৎ, ভালো করে খেয়াল করে তাকালেই দেখে ব্লাক কোর্ট, ব্লাক শু,হোয়াইট শার্ট, মাথায় ব্লাক কেপ পড়ে দুজন একই পোজ দিয়ে মাথা বাকা করে দাঁড়িয়ে আছে, দু-দিক থেকে হাতে দুটো শানাই এগিয়ে নিলো, সাথে সাথে সাদা বাতির ফোকাস্ পড়লো তাদের উপর, এইবার আর তাদের চিনতে কারোই অসুবিধা হলো না, রিদোয়ান আর আসিফই ছিলো,
স্নেহা তাদের দেখে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পা দিয়ে দু-কদম বাড়াতেই,
আসিফ : [ মাউথ স্পিকারটা কানে তাড়াতাড়ি ঠিক করে ] নো, নো নো স্নেহা! স্টেই হেয়ার!
[ থেমে গেলো স্নেহা, বাকিরাও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ]
রিদোয়ান : স্নেহা! দিজ ওয়ান ফর ইউ! ফাষ্ট টাইম স্পিকারে সিংগিং করবো, আওয়াজ বেসূরা হলেও একটু তারিফ টারিফ করে দিও কেমন, [ কাদো কন্ঠে ] পুরো রাতের মেহনত আমাদের! [ হেসে উঠলো সবাই, স্নেহা তো অবাক হয়েই তাকিয়ে আছে, শানাই বাজিয়ে উঠলো রিদোয়ান এবং আসিফ দুজনেই, সাথে তাল মিলিয়ে ডান্স ও করছে, কান বোধহয় ফেটেই যাবে ব্যাকগ্রাউন্ড টোনে ]
হঠাৎ হার্ট বিট করতে লাগলো স্নেহার,কানে খুব চেনা একজনের আওয়াজ ভেসে আসলো,কিন্তু দেখা যাচ্ছিলো না তাকে,
পাগলী একটা মেয়ে এইটুকুতেই এই হাল করে ফেলেছে নিজের, আর একটা দিন দূরে থাকলে কি হতো আল্লাহয় ভালো জানে , মুখটাও সুখিয়ে আছে নিশ্চয়ই ব্রেকফাস্ট করেনি টেনশন করতে করতে,
রাহুল : [ হেসে স্নেহার গালে একটি চুমু খেয়ে ] ইউর প্রমিস! [ স্নেহা মুচকি হেসে খাবার ঠিক করে প্লেট এগিয়ে নিলো, আর রাহুল সেই মুগ্ধকর দৃষ্টিতে অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে তার স্নেহাকে, স্নেহা হাত এগিয়ে খাবার মুখে তুলে দিলো রাহুলের, রাহুল হেসে হেসে স্নেহার দিক তাকিয়েই চিবাচ্ছে ]
রাহুল : ঐ!
স্নেহা : হু!
রাহুল : তুমি খাচ্ছো না যে?
স্নেহা : আপনি খেলেই আমার পেট ভরে যাবে!
রাহুল : ও রিয়েলিই!
স্নেহা : হুমম! কিছুটা এমনই, দুটো হার্টের একই স্পন্দন! [ তেডি স্মাইল দিলো রাহুল,স্নেহা তার ডায়লগ তাকেই ইউজ করছে, ঐদিনের সেই মুহুর্তটির কথাও মনে পড়ে গেছে রাহুলের ]
স্নেহা : [ খাবার এগিয়ে দিয়ে ] কি হলো? নিন!
রাহুল : এসব ডায়লগ দিয়ে আমার কাছ থেকে, রেহাই পাবা না স্নেহা! বুঝেছো! চুপচাপ খাবার মুখে তুলো!
স্নেহা : আচ্ছা আপনি এমন কেনো বলেন তো?
রাহুল : কেমন?
স্নেহা : আপনি আমাকে খাওয়ানোর সময় যখন এসব রোমান্টিক ডায়লগ ইউজ করেন,তখন কি আমি রিপিট অ্যান্সার করি? [ রাহুল মুচকি হেসে স্নেহার মুখের কাছে মুখ এনে তাকালো ]
স্নেহা : কিক..কি হলো?
রাহুল : তুমি! আমাকে রিপিট অ্যান্সার এই কারণে দাওনা, কারণ যখনি আমি তোমার চোখের দিক তাকিয়ে কথা বলি,তখনি তুমি তোমার সেন্স হারিয়ে ফেলো স্নেহা! [ হার্টবিট বাড়ছে স্নেহার রাহুলের এতোটা কাছাকাছির চাহনিতে,চোখ সরিয়ে নিয়ে নিচের দিক ঝুকে খাবার ঠিক করতে লাগলো তাড়াতাড়ি ]
– তবে তুমি চাইলে, শীঘ্রই হয়ে যাবে স্নেহা, ব্যাস একবার তোমার এই মুখে বলো, আমি মা হতে চাই রাহুললল!
স্নেহা : হোয়াটট! ক..কথা কোথায় ছিলো, আর আপনি কোথায় নিয়ে এলেন বলেন তো?
রাহুল : উমমম! এটাও ঠিক!
স্নেহা : পাগল একটা!
রাহুল : হুমম! এটাও ক্যারেক্ট!
স্নেহা : আজিব?
রাহুল : সবই ঠিক বলছো স্নেহা তুমি! আমার সাথে সব আজিবই হচ্ছে!
স্নেহা : রাহুললল!
রাহুল : আচ্ছা আচ্ছা! খাওয়াও না বসে আছো কেনো? খিধে লাগছে দেখছো না? [ পারলো না আর স্নেহা রাহুলের সাথে অভিমান করে থাকতে হেসেই দিলো, দুজন মিলে ডিনার শেষ করলো, স্নেহা রাহুলের গাল টেনে দেওয়ার সময় হাত থেকে লেগে যাওয়া খাবারের দাগ গুলো ও টিস্যু দিয়ে মুছে দিলো, অগোছালো রুমটাকে দুজন মিলেই গোছালো,বাট এরমধ্যে ও রাহুল তো আছেই স্নেহাকে ডিস্টার্ব করার জন্য, কখনো স্নেহার চুল ধরে খুশবো নিচ্ছে,কখনো স্নেহাকে কোমোড়ে হাত বুলিয়ে শিহরিত করছে, কখনো স্নেহাকে পেছন থেকে জড়িয়ে আটকে রাখছে এমনই!
তবে এসবে স্নেহা বিরক্তিবোধ দেখালেও,মনেমনে রাহুলের এসব কান্ডগুলো তার ভীষণ ভালোই লাগছিলো ]
রাহুল : [ দীর্ঘশ্বাস নিয়ে জ্যাকেটটা খুলে রেখে সোফায় বসে ] বাহহ! কতোগুলো কাজই না করলাম আজ!
– এক্সুলি তুমি আরকি স্নেহা! এতো রাতে আবার রুম ক্লিন করার কি দরকার ছিলো বলো তো? সারভেন্টরা মর্নিং এ ক্লিন করতে আসতোই তো তাই না?
স্নেহা : অগোছালো রুম আমার পছন্দ না তাই! [ কোমোড়ে হাত দিয়ে ] আর আপনার ও বা পুরো রুমটা অগোছালো করার কি দরকার ছিলো বলেন তো?
রাহুল : নাইস্! [ With tedi smile ]
স্নেহা : হোয়াট? [ বলতেই হঠাৎ খেয়াল করলো রাহুলের নজরটা তার পেটের দিকেই চুপকে আছে, কুচকে বটে রাখা শাড়ীর আচলটা কোমোড় থেকে খুলে তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে দিলো স্নেহা, সাথেসাথেই রাহুল বিরক্তিবোধ একটা লুক দিয়ে তাকালো স্নেহার দিক ]
স্নেহা : গুড নাইট! [ বলেই তেডি স্মাইল দিয়ে আংগুল দিয়ে ইশারা করে মুখের হাসিটি দেখিয়ে ] হ্যাপি তেডি স্মাইল! মিষ্টার রাহুল! [ রাহুল ও হেসে উঠলো স্নেহার কান্ড দেখে, পাশফিরে আর যেতে দিলো না স্নেহাকে, সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে স্নেহার হাত ধরে কাছে টেনে হুট করেই কোলে তুলে নিলো ]
স্নেহা : এখনিই তো ফুফিয়ে উঠলেন রুম গুছিয়ে, এখন আবার এনার্জি চলে এলো?
রাহুল : এনার্জি না স্নেহা! তোমাকে দেখলেই তো মনের মধ্যে রোমান্টিক একটা জোশ কাজ করে!
রাহুল : [ হেসে ] ইডিয়ট! তুমি আজ শুধু আমার কথায় আমাকে বেক করছো, মাথায় কি ঢুকেছে কে জানে!
স্নেহা : [ ফিসফিসিয়ে ] আপনি!
রাহুল : তাই? [ মাথা নাড়ালো স্নেহা,রাহুল মৃদু হেসে স্নেহার নাকের উপর একটি চুমু খেয়ে, মাথার চুলে আংগুল দিয়ে বিলি কাটতে লাগলো, স্নেহার ও ভালোই লাগছিলো রাহুলের হাতের আলতো আলতো স্পর্শে, জাদু আছে মানতে হবে রাহুলের হাতের ছোয়াই! এতো শীঘ্রই স্নেহার চোখ বটে আসছিলো, এরই মধ্যে কবে যে স্নেহা ঘুমের জগতে পারি দিয়ে দিলো সে নিজেই ঠের পেলো না ]
রাত ২ টা বেজে ১০ মিনিট, ঘুম নেই রাহুলের চোখে, স্পোর্ট লাইটের হলদে আলোটুকুতে, মিটমিট করে স্নেহার চেহেরার দিক তাকিয়ে রয়েছে রাহুল! ভ্রু কুচকে রেখে ঘুমুচ্ছে স্নেহা! তারমানে স্নেহার মনের মধ্যে টেনশন জমে আছে এখনো! কিসের টেনশন করছে স্নেহা এই বিষয়টিও রাহুলের অজানা নয়!
টেনশন কেনো স্নেহার মনের মধ্যে, কোনো আতংকেরই বসবাস হতে দেবে না সে!এখন শুধু এই ইন্টেশনটাই মাথায় ঘুরঘুর করছে রাহুলের!
রাহুল : [ স্নেহার কপালের চুল গুলো কানে গুজে দিয়ে ] তোমাকে এতোটা ভালোবাসি যে, স্নেহা! তুমি চাইলে হয়তো পৃথিবীটাকে এনে দিতে পারবো না,তবে ভালোবাসা দিয়ে পৃথিবীটাকে ভুলিয়ে দিতে পারবো,
– তোমার দুঃখ গুলোকে হয়তো মুছে দিতে পারবো না,তবে দুঃখ্যের কারণ গুলোকে ভুলিয়ে দিতে পারবো,
– পৃথিবীর সব সুখ হয়তো এনে দিতে পারবো না,কিন্তু তোমায় সুখী রাখতে পারবো, তোমার চোখের অশ্রুকে হয়তো আটকে রাখতে পারবো না,তবে আদর করে সেই অশ্রু মুছে দিতে পারবো!
– তোমার ভালোবাসা আজ আমার কাছে এমন এক জিনিষ হয়ে গেছে, সেটা থেকেই আমি ভয় পাই, এই ভয় শুধু তোমাকেই ঘিরে স্নেহা!
[ ঘুমিয়েই আছে স্নেহা নিষ্পাপ হয়ে, আলতো করে ঠোটেও একটি চুমু খেলো রাহুল, কম্বলটা স্নেহার গায়ে ভালো করে টেনে দিয়ে ধীরেধীরে খাট থেকে উঠে দাড়ালো! রুমের এদিক-ওদিক হাটাহাটি করলো কিছুক্ষণ! দীর্ঘশ্বাস নিয়ে স্নেহার দিক একপলক তাকিয়ে, সোফার উপর থেকে জ্যাকেটটা হাতে নিয়ে পায়ে কের্চ লাগিয়ে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে!
আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই! সবাই এতোক্ষণে ঘুমিয়েই পড়েছে নিশ্চয়ই! বেলকনির দিক তাকাতেই দেখে নেহাল রেষ্টিং চেয়ারে বসে আছে একা! এগিয়ে গেলো রাহুল ও! টেবিলের উপর দু-তিনটে বেয়ারের বোতোল সাথে কয়েকটা সিগারেটের প্যাকেট ও ছিটিয়ে রেখেছে, বুঝতে পারলো রাহুল নেহাল ও টেনশন করছে,
রাহুল : [ নেহালের পাশে বসে ] একা একা বসে আছিস যে?
– আরে বেয়ার? আমি তো ভেবেছিলাম ডিরেক্ট এলকোহল খাবি! অওও সাথে স্মোকিং ও চলছে, বাহহহ! তোদের সময় এখন, খেয়ে যা খেয়ে যা!
নেহাল : ফূর্তিতে খাচ্ছি আমি! তাই না?
রাহুল : আরে তাহলে তোর টেনশন কিসের বলতো?
নেহাল : তুই জিজ্ঞেস করছিস?
রাহুল : [ হেসে ] এতো তাড়াতাড়ি দূর্বল হয়ে গেছিস?
নেহাল : মানুষ তখনই দূর্বল হয়,যখন সে নিজের কাছেই হেরে যায় রাহুল!
রাহুল : ভালো!
– ভদ্র!
– চাইল্ডিস!
– মেচর ও আছে!
নেহাল : কে?
রাহুল : কে আবার? শায়লা! [ দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আবারো স্মোক করতে লাগলো নেহাল ]
রাহুল : এখন বলিস না যে তুই ওকে নিয়ে কিছু ভাবছিস না!
নেহাল : হুমম! ভাবছিলাম, ওকে নিয়েই ভাবছিলাম! কিন্তু কি হবে ভেবে বল?
রাহুল : জানিস, পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ কাজ হলো কাউকে প্রথম দেখেই প্রেমে পড়া,আর পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো কাউকে লাভ এট ফার্ষ্ট সাইটে বিশ্বাস করা!
– সো্ টাইম তো লাগবেই?
নেহাল : আচ্ছা! রাহুল তো..তোর কি বিশ্বাস আছে লাভ এট ফাষ্ট সাইডে?
রাহুল : হেইইইই! মাই লাভ ইজ অলরেডি সাক্সেস মেন!
নেহাল : মা..মানে তোর লাভ এট ফার্ষ্ট সাইড ছিলো!
রাহুল : ইয়েস্!
নেহাল : ওয়াও মেন! ইউ আর সো্ লাকি!
রাহুল : ডোন্ট ওয়ারি ইডিয়ট! তোরটাও ঠিক হয়ে যাবে,
নেহাল : হাও মেন! কেমনি হবে, একে তো মমের রোং বিহেইভিয়ার! তারমাঝে ঐও আমায় ভুল বুঝতে লাগলো! কাল ইভিনিং এ ফ্লাইট! তারপর আমাদের মাঝে আর কিছুই থাকবে না, ভেবেছিলাম ভালোবাসার বদলে ভালোবাসা না পেলেও অন্তত ওর হাসিমাখা মুখের মেমোরিটা সাথে করে নিয়ে যাবো!
নেহাল : ইয়েস্ আই উইল লিভ! নয়তো আর কিসের আশায় থাকবো বল? [ হাসি দিলো রাহুল নেহালের কথা শুনে ]
নেহাল : তুই হাসতে থাক! তোরই হাসার সময় এখন! গুড নাইটটট! [ বলেই বেয়ারের একটি বোতোল হাতে নিয়ে চলে গেলো ]
রাহুল পা ছড়িয়ে বসে আছে ঐ দিকটাই, ঠান্ডা শীতল বাতাস আসছে বাহির থেকে, জ্যাকেটটাও গায়ে দেওয়া হলো না আর! আকাশের দিক তাকিয়ে দেখলো, চারদিক কুয়াশায় ঢেকে রেখেছে আকাশকে,
মনে মনে ভাবছে স্নেহাকেও আকাশের মতো কষ্ট থেকে এইভাবে ঢেকে রাখবে সে কুয়াশা হয়ে, মধুর সপ্ন মেখে ঘুমুতে দিবে, একবুক কষ্ট নিয়ে নয়,তখন আর স্নেহার ভোর কুচকে রবে না, ঘুমের মাঝে একটু একটু মিষ্টি হাসি ফুটবে,
বাবা : হুমম! বুঝেছি কেনো আসছে না ঘুম! [ রাহুল অবাক হয়ে তাকালো তার বাবার দিক ]
বাবা : তোর দাদী সব বলেছে আমায়!
রাহুল : সো্ এখন কি তোমার সিস্টারকে সরি বলতে বলার জন্য এসেছো?
বাবা : নেভার! তুই কেনো সরি বলবি? সরি তো ও বলবে স্নেহাকে!
রাহুল : বাবা তোমার এই পজিটিভ থিংকিং গুলো মায়ের সময় ইঁদুরের গর্তে লুকিয়ে রেখেছিলে বুঝি?
– তখন ও না, এই ভালোবাসা গুলো দেখালে হয়তো আজ এতোকিছুই হতো না!
বাবা : [ হেসে ] ভুল! ছিলো আমার! আর ভুল কিন্তু মানুষকে হারায় না রাহুল! ভুল মানুষকে শুধরাতে শেখায়!
– তুই এইভাবেই থাকিস সবসময় স্নেহার পাশে,খুব মিষ্টি একটা মেয়ে,একদম ভোলি! ও শুধু তোর জীবন না আমার জীবনটাও বদলে দিয়েছে! নিজের খুশির আগে মানুষের খুশির চিন্তাটাই আগে করে মেয়েটা!
– তোদের দুজনকেও দারুণ মানিয়েছে একে অপরের সাথে,
রাহুল : হুমম! বাবা, আল্লাহ গিফটেড মি!
– শি ইজ ভেরী ইন্নোসেন্ট গার্ল, এক্সুলি হার আইস্ আর ভেরী ইন্নোসেন্ট!
– হেয়ার! একদম সিল্কি সিল্কি, হাসিটা তো হুশ উড়িয়ে দেওয়ার মতো, আর শাড়ীতে কি না লাগে পুরোই… [ বলেই হঠাৎ থেমে গেলো, আড়চোখে বাবার দিক তাকালে দেখে, হাসছে তার বাবা,লজ্জা পেয়ে গেলো রাহুল ও, কিসব বলে ফেলছিলো এতোক্ষণ বাবাকে ]
– অদ্ভুত এক ভালোবাসা জানো? আমরা দূরে থাকলেও একে অপরকে ফিল করতে পারি! কাছে থাকলে বিনা কথায় মনের শব্দ শুনতে পারি, চোখ দেখে সুখের, কষ্টের সবকিছু পড়ে নিতে পারি!
[ বাবা চুপ করে শুনে আছে রাহুলের কথা সব, ভাবছে মনে মনে এমনই তো চেয়েছিলেন তিনি,যেনো কেউ একজন এসে রাহুলের লাইফটা এইভাবে মধুময় করে সাজিয়ে দিক, যে ভালোবাসা গুলো থেকে সে বঞ্চিত হয়ে ছিলো তার চেয়ে শতগুণ ভালো যেনো তার জীবনে ফিরে আসুক ]
রাহুল : হোয়াট বাবা! কোথায় হারিয়ে গেছো বলো তো? উমমম! মা কে ভাবছিলে নাকি কোনো!
– বাই দ্যা ওয়ে! এই দু-দিন ধরে আমি তোমায় দেখেছি কিন্তু, মায়ের সাথে চান্স নিতে একটা মুহুর্ত ও মিস্ করোনি! [ হাসছে রাহুলের বাবা রাহুলের কথা শুনে ]
রাহুল : বাবা!
বাবা : হ্যা! বল,
রাহুল : এখনো ভালোবাসো মা কে?
বাবা : [ দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ] বাসি বলেই তো এইভাবে রয়েগেছি এখনো! তার জায়গা অন্যকাউকে দিতে পারিনি!
রাহুল : তা..তাহলে! ফিরিয়ে আনছো না যে,
বাবা : ভাবছি ও যেভাবে আছে ঐভাবেই খুশি থাকুক! ফিরিয়ে আনতে ভয় হয়! যদি আবারো কষ্ট দিই!
– [ টেবিলের দিক তাকিয়ে ] অওও! বেয়ার! এতোক্ষণ বললি না যে, [ বলেই দুটো হাতে নিয়ে একটা রাহুলের দিক এগিয়ে দিলো ]
– শক্ত করে ধরলে মরে যাবে আর হালকা করে ধরলে উড়ে যাবে!
– তাই সেটাকে ধীরেধীরে যত্ন করে ধরো, চিরজীবনের জন্যই থেকে যাবে,
– [ চোখ টিপ মেরে ] গুড নাইট! এন্ড চিয়ার্স [ বলেই বেয়ারের একটা বোতোল হাতে ধরিয়ে দিয়ে, হাটা ধরলো রাহুল, রুম ক্রস করতেই হঠাৎ ভাবলো, বেরুনোর আগে স্নেহাকে আরেবার আদর করে দিয়ে যায়, দরজাটা ধীরেধীরে খুলে রুমে ঢুকে খাটের দিক এগিয়ে গেলো, ঘুমিয়ে আছে স্নেহা, মৃদু হেসে রাহুল হাত দিয়ে স্নেহার গালে স্লাইড করলো, নড়ে উঠলো স্নেহা! রাহুলের হাতটা টেনে নিজের কাছে আগলে রাখলো ]
রাহুল : [ ফিসফিসিয়ে ] কামঅন স্নেহা! এসময় এভাবে মায়া বাড়িও না! এমনিতে তোমায় এভাবে একা রেখে যেতে মন মানছে না! [ বলেই কপালে আলতো একটি চুমু খেয়ে, ধীরেধীরে স্নেহার কাছ থেকে হাতটা ছুটিয়ে নিলো, কম্বলটা স্নেহার গায়ে ভালো করে টেনে মাথায় আরেকবার হাত বুলিয়ে দিয়ে,আস্তে আস্তে করে দরজা লাগিয়ে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে ]
ওয়াসরুমে গিয়েছে হয়তো এইভেবে ওয়াসরুমের দরজার দিক তাকালো, দরজা বাহির থেকে লক করা, তা দেখেই স্নেহা উঠে বসলো, রুমের চারদিক তাকাতেই সোফার দিক নজর পড়লো, রাহুল তার জ্যাকেটটা তো সোফায় খুলে রেখেছিলো, জ্যাকেটটা সোফার উপর নেই! কম্বল সরিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে গেলো সোফার দিক, সোফার পাশে খুলে রাখা রাহুলের কের্চ গুলো ও নেই! তারমানে রাহুল কি বেড়িয়েছে?
এই ভেবে রুমের দরজাটা খুলতে যাবে তখনি হঠাৎ বুকটা ধরে উঠলো, তাড়াতাড়ি দৌড়ে বারান্দায় এগিয়ে গেলে দেখে গেইট দিয়ে রাহুলের গাড়ী বেড়িয়ে যাচ্ছে, অবাক হলো স্নেহা! এতোরাতে রাহুল কোথায় যাচ্ছে? তাকে ও তো কিছু বললো না, ভেতরে ঢুকে তাড়াতাড়ি খাটের পাশের ল্যাম্প টেবিলের উপর থেকে মোবাইলটা এগিয়ে নিলো, কল দিলো রাহুলকে, রাহুলের ফোনটা বালিশের পাশ থেকেই বেজে উঠলো, এগিয়ে নিলো স্নেহা রাহুলের মোবাইলটা, মনে মনে ভাবতে লাগলো
– কি অদ্ভুত ব্যাপার রাহুল মোবাইলটা ও ফেলে গিয়েছে! কিন্তু গেলো কোথায়?
রুমের এদিক-ওদিক হাটাহাটি করলো কিছুক্ষণ অস্থিরতা কাজ করছে স্নেহার, আর না পেরে খাটের এক কোণে বসে রইলো, রাহুল তাকে একা রেখে কোথায় গিয়েছে? তাও বা এতোরাতে কোথায় যাওয়া এতো জরুরী ছিলো! একবার তো অন্তত তাকে বলে যেতে পারতো,
অনেক্ষণ ঘনিয়ে গেলো,
স্নেহা ওভাবেই বসে আছে, ঘুম ও আর আসছে না তার চোখ জুড়ে, হঠাৎ চোখ পড়লো রাহুলের মোবাইলটার উপর, এগিয়ে নিয়ে মোবাইলের গ্যালারিতে ঢুকে ফটো দেখতে লাগলো রাহুলের!
এতোক্ষণেই রাহুলের ছবি দেখে দেখে মিটিমিটি হাসছে স্নেহা! রাহুল কতোটা নটি পোজে পিকচার তুলতে পারে আজই দেখলো স্নেহা! একে একে সব ছবি দেখতে দেখতে হঠাৎ নেহার সাথে ও রাহুলের কয়েকটা ফটো সামনে এসে পড়লো, মুহুর্তেই হাসিটা উদাও হয়ে গেছে স্নেহার মুখ থেকে, আর দেখলো না কোনো ছবিই, অতোটুকুতেই বন্ধ করে রেখে দিলো মোবাইলটা!
মনে মনে রাহুলকেও এতোগুলো গালি দিতে মন চাইছিলো স্নেহার!
– কি দরকার এখনো নেহার সাথে লাগিয়ে তোলা ফটো গুলো গ্যালারীতে সাজিয়ে রেখে দেওয়ার!
– ওর সাথেই চুপিচুপি দেখা করতে গিয়েছে নিশ্চয়! আমার সামনে একরুপ, আর চুপিচুপি আরেকরুপ! মার্জান ঠিকই বলে সব ছেলেরাই মুখোশধারী হয়!
স্নেহা : [ রাহুল থেকে হাত ছুটিয়ে ] পাগল হয়েগেছেন আপনি? কি এসব বলছেন?
[ রাহুল অবাক হয়ে ফিরে তাকালো স্নেহার দিক, স্নেহা পলক ঝুকিয়ে নিলো রাহুলের এই চাহনিতে, চোখ মেলাতে পারছিলো না সে,কেনো যেনো রাহুলের চোখের দিক তাকিয়ে মিথ্যে বলাটা তার দমচাপিয়ে রাখার মতোই হয়, এক পা এগিয়ে রাহুলের বরাবরই দাঁড়িয়েছে, জ্যাকেট ধরে ঠিক করে দিতে দিতেই বললো ]
– নাহ, আ..আপনাকে না জেক এর চেয়ে আরেকটু বেশিই হ্যান্ডসাম লাগবে! কা..কারণ জেকের হেয়ার স্টাইলটা না কেমন যেনো, আমার মোটেও পছন্দ না, [ মাথা তুলে তাকিয়ে রাহুলের কপালে বিছিয়ে থাকা চুল গুলোর উপর হাত বুলাতে বুলাতে ] আপনার হেয়ার স্টাইলটা আমার খুব পছন্দ, কিছু উঠানো কিছু বসানো, আর কপালে ছিটিয়ে থাকা এই চুল গুলো ও!
– ও হ্যা! আমার গাউনটাও না একদম প্রিন্সেস স্টাইলের, কালারটা আপনার হোয়াইট শার্টের সাথেই ম্যাচ করা, [ মৃদু হেসে ] অবশ্য আমার স্টাইলিশ মাদার-ইন-লো এর পছন্দ বলে কথা!
– আ..আচ্ছা! আপনার তো কাপড় গুলো দেখাই হলো না, চলেন আমি দেখাচ্ছি! [ বলেই পাশফিরে এগিয়ে গেলো আলমিরার দিক, আলমিরার দরজা খুলতেই, হঠাৎ পেছন থেকে রাহুল হনহনিয়ে এগিয়ে এসে ধুম করেই লাগিয়ে দিলো দরজাটা, চোখ দুটো বড় করে চমকে কেপে উঠলো স্নেহা,দরজার উপর রাহুলের রাগান্বিত ভাবে চেপে রাখা হাতটির দিক তাকিয়ে আছে নিস্থব্দতা নিয়ে ]
রাহুল : [ দাতে দাত ঘেষে ] স্টপ ইট! স্নেহা! টপিক চেঞ্জ করার কোনো দরকার মনে করছি না, গীতালি আমাকে সব বলেছে, [ স্নেহা ধীরেধীরে ফিরে তাকালো রাহুলের দিক, চোখে যেনো আগুন জ্বলছে রাহুলের, কি ভয়ংকর চাহনি ]
রাহুল : রাগ তুলোনা স্নেহা! আমার, [ স্নেহা ঢোগ গিলে অবাক হয়েই তাকিয়ে মনে মনে ভাবতে লাগলো, আরে বাপরে! রাগ নাকি উঠেনি এখনো আর এই অবস্থায় এমন বিহেভ করছে, তাহলে না জানি রাগ উঠলে কেমন করে ]
রাহুল : স্নেহা! তোমার ফ্রেন্ডসরা নিজ ইচ্ছায় এইখানে আসেনি, ওদের আমি এনেছিলাম,দ্যাট মিনস্ ওদের টেক কেয়ার করার রেস্পন্সিবিলিটি আমার ছিলো, আর আমার রেস্পন্সিবিলিটি মানে তোমারই, সো্ তুমি ওদের এইভাবে কেমনি যেতে দিলা?
– [ বিরক্তিবোধ হয়ে ] আর ওদের আমি আনি বা নাই আনি, ওরা নিজ ইচ্ছায় আসলেও ওনার কোনো অধিকার নেই ওদের ইন্সাল্ট করার!
– সো্ লেটস্ কাম উইথ মি! [ বলেই রাহুল স্নেহার হাত ধরে টেনে বেরুতে যাচ্ছিলো তখনিই ]
স্নেহা : রাহুল! কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
রাহুল : এক্ষুণিই তো বললাম! ভুলে গেছো? তুমি মিসেস রাহুল! আর মিসেস রাহুল জবাব শুনবে না জবাব দেবে! [ স্নেহা তাড়াতাড়ি বাধাগ্রস্থ করে রাহুলের সামনে এসে দু’হাত ছড়িয়ে দাঁড়ায় ]
রাহুল : [ চেচিয়ে ] হোয়াট আর ইউ ডুয়িং স্নেহা?
স্নেহা : দেদ..দেখেন রাহুল! কাল রিসিপশানের আয়োজন নিয়ে সবাই কতো খুশি, আর আজ আপনার আর আপনার বাবার এক হোওয়া নিয়ে দাদী যেনো হাজার বছরের সুখ ফিরে পেয়েছে, প্লিজ এমন কিছুই করবেন না, আ..আজ রাত আর কালকের দিনটাই তো! এরপর ওরা চলে যাবে, হাসিমুখে এসেছে ওনিও, এইসময় এমন কিছু বললে মনে কষ্ট নিয়েই যাবে তখন..
রাহুল : জাষ্ট শাট-আপ স্নেহা! কার মনে কি কষ্ট নিবে আই ডোন্ট কেয়ার!
স্নেহা : আমি কষ্ট পাইনি রাহুল! কারণ ওনি সব ঠিকই তো বলেছে, আমি আসলেই লাকি আপনাকে পেয়ে! আর আপনি আনলাকি কাক..কারণ আপনি আরো রিচ ফ্যামিলির মেয়ে ডিজার্ব করেন!
– আ..আসলেই আপনার ফ্যামিলি,আপনি, আপনাদের যা কিছুই আছে এই অনুযায়ী আমি কিছুই না রাহুল! [ বলতেই রাহুল রাগান্বিত ভাবে নাক-ফুলিয়ে স্নেহার হাত ধরে টেনে আলমিরার সাথে লাগিয়ে দাড় করাই ]
স্নেহা : [ অবাক হয়ে ] আরেহ!..
রাহুল : [ চেচিয়ে ] আমাকে এক্সপ্লেইন করার দরকার নেই তোমার স্নেহা! এন্ড নেক্সট টাইম এইধরনের কথা গুলো বলা তো দূরের কথা তোমার এই [ স্নেহার মাথায় ঠোকা মেরে ] ফুলিশ-থিংকিং এ ও আনবা না! গেট ইট?
– আর হ্যাঁ! তোমার যাওয়া লাগবে না, ওনাকে তো জবাব এখন আমিই দিবো!
স্নেহা : [ রাহুলের হাত ধরে ] ডোন্ট গো রাহুল, প্লিজ! [ থামলো না রাহুল স্নেহার হাত সরিয়ে দিয়ে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে, মনটা ছটফট করছে স্নেহার, রাহুল ফুফিকে গিয়ে নাজানি কি না কি বলে, দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে দাড়ালো সে ও, ততোক্ষণে রাহুল শিরি দিয়ে নেমে পড়ছে ]
গীতালি : [ চেচিয়ে ] ও! দাদী রাহুল ভাইয়া আইয়া পড়ছে আর ডাকতে অইবো না! [ দাদী শিরির দিক তাকাতেই দেখে রাহুল নেমে এগিয়ে আসছে, ডাইনিং টেবিলে বসে আছে বাকিরাও, না পারতে দাদীর জোড়ে খেতে বসেছে নেহাল ও ]
রাহুল : করবেনা এইখানে ডিনার, ভালো লাগছে না তাই, বেড রুমেই পাঠিয়ে দিতে বলেছে! ভালো লাগলে খাবে,
নাফিসা ফুফি : [ মুচকি হেসে ] প্রথম দিনেই অর্ডার প্রেস! গ্রেট, বাট রাহুল নতুন বউ হিসেবে ওর উচিৎ আজ আমাদের সাথে এইখানে বসে ডিনার করা, আর না করলেও অন্তত আমাদের সার্ব করতে আসতে পারতো!
রাহুল : সার্ব করবে? কেনো এইখানে সবাই কি প্যারালাইসে এফেক্টেড? যে নিজ হাতে সার্ব করে নিয়ে খেতে পারবে না?
নাফিসা ফুফি : [ দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ] কেউই প্যারালাইসিস এফেক্টেট না রাহুল! এটা একটা অবজারভেন্স!
রাহুল : ও সিরিয়াসলি? এতো বছর অষ্ট্রেলিয়া থেকেও এই অবজারভেন্স নিয়ে পড়ে আছো? ফুফি আই থট তোমার মাইন্ড তোমার মতোই স্মার্টলি থিংকিং হবে!
– হাহ! বাট আই ওয়াজ রোং! আসলে বাংগালীর ব্লাড বলে কথা, তাই যতোই আপডেট হোকনা কেনো এসব অবজারভেন্স গুলো কখনোই ভুলবে না!
লিনিসা ফুফি : রাহুল! লিভ ইট! ওকে? দ্যাটস ওকে নো প্রবলেম! এন্ড লিসেন্ট,এ দু-দিনে অনেক জার্নি গেছে ওর উপর হয়তো তাই খারাপ-টারাপ লাগছে! তুই উপরে গেলে ডিনার করানোর পর মেডিসিন খাইয়ে দিস!
দাদী : হ্যা! তাই হবে! আচ্ছা গীতালি শোন স্নেহার ডিনার গুলো তুই উপরে দিয়ে আয়!
রাহুল : কোনো দরকার নেই দাদী! আমি নিয়ে যেতে যেতে মরে যাবে না!
রাহুল : হয়তো কারো একজনের কানে ভালো করে ঢুকেনি, আরেকটু ভালো করে ঢুকিয়ে দিও!
দাদী : [ হেসে ] পাগল হয়েগেছিস? কি এসব বলছিস, চল ডিনার শুরু কর!
রাহুল : আর হ্যা! দাদী, আমি স্নেহাকে ভালোবাসি, তাই ওকে বিয়ে করেছি, ওর ব্যাকগ্রাউন্ড দেখে নয়! এন্ড এটা নিয়ে যদি কারো প্রবলেম হয় না? তাহলে মেইন ডোর ওদিকে দেখিয়ে দিও! [ দাদী এইবার শকিং এক্সপ্রেশন দিয়েই তাকালো রাহুলের দিক,কারণ বুঝার বাকি ছিলো না রাহুল কাকে ডেডিকেট করেই কথা গুলো বলছে, হাত দিয়ে রাহুলের হাতে গুতাতে গুতাতেই ইশারা করছে দাদী, আর কিছু না বলার জন্যে ]
রাহুল : কি হলো দাদী! গুতাও কেনো? কিছু বলবা? বললে ডিরেক্টলি বলো?এসব সাইলেন্ট গেইম আমি খেলিনা! [ দাদী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো, কিছু বললো না, আড়চোখে রাহুলের দিক তাকিয়ে, গ্লাসে পানি ঢালতে লাগলো ]
রাহুল : ও ইয়াহ! দাদী, তুমি তো আবার কাউকে না খাইয়ে যেতে দাও না, কিন্তু আজ স্নেহার ফ্রেন্ডসদের খালিমুখে বিদায় করে দিলে যে?
দাদী : রাহুল! আমি ওদের অনেক রিকোয়েষ্ট করেছি, ওরা আমায় প্রমিস করলো নেক্সট টাইম খাবে,কিন্তু আজ যেনো ওদের আর কোনোভাবেই রিকোয়েষ্ট না করি, তাই আমি বাধ্য হয়েই যেতে দিই, [ তাকিয়ে রইলো রাহুল কিছু বললো না ]
দাদী : তোত..তোর আমাকে বিশ্বাস না হলে নেহাল থেকেই জিজ্ঞেস কর,ওর সামনেই তো জোড় করেছিলাম ওদের,
নাফিসা ফুফি : তো কি হয়ে গেছে ডিনার করে যায়নি? সারাদিনই তো ছিলো!
রাহুল : ফাইনেন্সিয়াল সিচুয়েশান লোও হতে পারে বাট মাইন্ড অন্তত ওনার চেয়ে বেটার হাই ক্লাসের আছে! জানিয়ে দাও!
– আর এটাও বলে দাও যে ওনার এসব লোও ক্লাস এটিটিউড থিংকিং গুলো যেনো অষ্ট্রেলিয়ায় দেখায় আমার সামনে না, [ দৌড়ে এগিয়ে এসে রাহুলের হাত চেপে ধরে দাড়ালো স্নেহা, রাহুল ও অবাক হয়ে তাকালো স্নেহার দিক ]
স্নেহা : [ ফিসফিসিয়ে ] ব্যাস রাহুল! আর না,
রাহুল : [ চেচিয়ে ] ব্যাস? হোয়াই স্নেহা? তোমার ক্লাস দেখাচ্ছে ওনি আমাকে! যাদের মুখে তোমার নাম নিলে ঐনামের ইন্সাল্ট করা হবে, সেই আবার ঐ মুখে তোমার ক্লাস ভেরিফাই করছে! বাহ!
স্নেহা : [ কাদো কন্ঠে ] প্লিইইজ রাহুল! স্টপ দ্যা ম্যাটার! [ রাহুল কিছু বলতে যাবে তখনিই ]
স্নেহা : আমার কসম আছে রাহুল! ব্যাস! আর না! [ রাহুল রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে রইলো স্নেহার দিক, রাগ যেনো স্নেহার উপরও বেড়ে চলছে, কি দরকার ছিলো কসম দেওয়ার? হাত ছুটিয়ে নিলো স্নেহার কাছ থেকে, দু-কদম পিছিয়ে গিয়ে পড়ে থাকা চেয়ারটাকে আরো জোড়ে একটি লাতি মেরে, শিরি দিয়ে উঠে হনহন করে চলে গেলো রুমে, স্নেহা ঐদিকটাই দাঁড়িয়ে আছে নিস্তব্ধতা নিয়ে, নাফিসা ফুফিও সামনে থাকা প্লেটটা জোড়ে ঠেলে দিয়ে উঠে চলে যায়, লিনিসা ফুফি উঠে এসে দাড়ালো স্নেহার বরাবরই, স্নেহা পলক ঝুকিয়ে আছে ভয়ে ]
লিনিসা ফুফি : চিন্তা করোনা স্নেহা! রাহুলের মতো এমন প্রটেক্টিভ হাজবেন্ড ও বা কজনের মিলে, বলো? আম প্রাউড অফ হিম!
– আর হ্যা! এসব যাই হয়েছে এগুলো নিয়ে মোটেও টেনশন করো না ওকে? সবই মাথা থেকে ফেলে দাও, [ হেসে ] জাষ্ট এখন রুমে গিয়ে ঠান্ডা মাথায় তোমার মাথা থেকেও কিছু ঠান্ডা ওর মাথায় ঢেলে দাও! [ হেসে উঠলো রাহুলের কাজিনরা ]
– তুমি যাও রুমে, আমি গীতালির দিয়েই ডিনার পাঠিয়ে দিচ্ছি, ওকেও করিয়ে নিও আর সাথে তুমিও করে নিবা! ওকে? [ দাদীর দিক তাকালো স্নেহা, দাদী ও মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো ]
স্নেহা : জ্বি! [ বলেই ধীরেধীরে হেটে উপরে উঠে এলো, রুমের দিক এসে দরজা খুলতেই চমকে উঠলো স্নেহা, ফুলের টপ গুলো ভেঙে চুরমার হয়ে আছে, বিছানার চাদর, কম্বল,বালিশ,কশুন, সবই মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে, গিটার গুলো ও ছিটিয়ে রয়েছে, অলরেডি দুটো গিটারের তার সহ ছিড়ে ফেলেছে, আরেকটির ছেড়ার জন্য হাতে নিচ্ছিলো, ঐটাইমেই স্নেহা, রাহুল! বলে চেচিয়ে দৌড়ে গিয়ে রাহুলের হাত থেকে কেড়ে নিলো গিটারটি, ফুফাচ্ছে রাহুল জোড়ে জোড়ে শ্বাস ফেলছে, তাকালো না স্নেহার দিক, হাত মুঠি করে জানালার দিকই এগিয়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো, স্নেহা ও গিটারটা খাটের উপর রেখে ধীরেধীরে এগিয়ে দাড়ালো রাহুলের পাশে, রাহুলের চোখের দিক তাকাতেই শকড হলো স্নেহা, পানি জমে আছে চোখে, কিন্তু কেনো? রাগে? অপমানে? নাকি অভিমানে? কাধে হাত রাখলো স্নেহা রাহুলের, চুপ করে রইলো রাহুল ]
স্নেহা : রাহুল!
রাহুল : [ রাগি চোখে স্নেহার দিক ফিরে ] কি দরকার ছিলো, স্নেহা! তোমার কসম দেওয়ার?
স্নেহা : তাহলে কি করবো রাহুল? থামছিলেনই না আপনি! আর কোনো রাস্তা ছিলো না আমার কাছে,
রাহুল : থামবো মানে? [ বলেই রাগান্বিত ভাবে স্নেহার কাছাকাছি এগিয়ে এসে ] কেনো থামবো? কি বলেছিলো ওনি শুনতে পাওনি?
রাহুল : [ স্নেহার দুহাত নিজের হাতের মুঠোয় ধরে ] আ..আমার তোমার কাছ থেকে,তিনটি প্রমিস চাই! [ স্নেহা মাথা তুলে তাকালো রাহুলের দিক ]
রাহুল : ফাষ্ট অফ অল! তু..তুমি কখনোই নিজেকে আমার চেয়ে ছোট মনে করবেনা! কখনোই না, প্রমিস মি! [ মাথা নাড়ালো স্নেহা ]
রাহুল : আ..আমি তোমার,মানে আমার সবই তোমার, তাই কখনোই পার্মিশন জিনিষটা আনবে না আমাদের মাঝে, তোমার মনে যা চাই তাই করবা! বাট স্নেহা! একা কোথাও বেরুবা না, আমাকে বলবা তোমার যতোবার ইচ্ছা বেরুতে আমি ততোবারই ড্রাইভ করতে রাজি তোমার জন্যে,বাট প্লিজ একা বেরুবা না!
– [ কাদো কন্ঠে ] ভ..ভয় হয়! তোমাকে হারানোর! [ কথাটি শুনতেই বুক ধরে উঠলো স্নেহার, শুনেছিলো অধিক চাওয়া জিনিষটাকেই নাকি সবসময় হারানোর ভয় থাকে, আজ তার প্রমাণও পেয়েছে তারই অধিক চাওয়া ভালোবাসার ব্যাক্তিটির কাছ থেকে ]
রাহুল : [ হেসে স্নেহাকে টেনে জড়িয়ে ধরে ] আই লাভ ইউ টু! [ স্নেহা ও টাইট করে জড়িয়ে ধরে রাখলো রাহুলকে, সুখ! অজানা একসুখ অনুভব করছে স্নেহা, রাহুলকে জড়িয়ে রেখে, শান্তি! অজানা এক শান্তিবোধ হচ্ছে রাহুলের মনে, স্নেহাকে নিজের বুকের সাথে আগলে রাখতে ]
গীতালি : আনজয় ভাবী! [ বলেই হেসে হেসে চলে গেলো, স্নেহা ও ডিনার হাতে নিয়ে এগিয়ে এসে বসলো রাহুলের সামনে, রাহুল তাকিয়ে আছে, স্নেহা ডিনার রেডি করে সামনে এগিয়ে দিলো রাহুলের ]
রাহুল : স্নেহা আমার খিধে নেই! তুমি করে নাও! [ বলেই উঠে যাচ্ছিলো ]
স্নেহা : [ রাহুলের হাত ধরে আটকিয়ে ] রাহুল!
রাহুল : স্নেহা প্লিজ! আমার সত্যিই খিধে নেই! [ বলেই স্নেহার হাত ছুটিয়ে ওয়াসরুমে এগিয়ে চলে যায়, স্নেহা বুঝতে পারলো রাহুলের রাগ এখনো কমেনি, তাই এমন বিহেভ করছে, আর কিছু বললো না সে ও,ডিনার গুলো টেবিলের উপর ঢেকে রেখে দিলো ]
কিছুক্ষণ পর টাওয়েল হাতে ফ্রেশ হয়ে ওয়াসরুম থেকে বেড়িয়ে এলো রাহুল, চোখ পড়লো স্নেহার দিক,টপের ভাংগা কাচের টুকরো গুলো এক এক করে উঠাচ্ছিলো স্নেহা!
রাহুল : [ স্নেহার দিক এগিয়ে গিয়ে ] স্নেহা! আর ইউ মেড? হোয়াট আর ইউ ডুয়িং স্টুপিড? [ স্নেহা শকড হলো হঠাৎ রাহুলের চেচানিতে ]
রাহুল : [ স্নেহার হাত থেকে কাচের টুকরো গুলো ফেলে দিয়ে ] পাগল হয়ে গেছো তুমি? তোমার হাত কেটে গেলে? তোমাকে এসব করতে কে বলেছে? [ বলেই টেনে এনে খাটে বসিয়ে দিলো ]
স্নেহা : বাট রাহুল..
রাহুল : চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ো! তোমার এগুলোর চিন্তা করতে হবে না! [ বলেই পাশ ফিরে সোফায় টাওয়েলটা রাখতে যাবে তখনিই চোখে পড়লো ডিনারগুলোর উপর ]
স্নেহা : [ গোমড়া মুখে বিরবির করে ] আমি করলে হাত কেটে যাবে ,নিজে করলে কাটবে না,এতো ভয় পাওয়ার কি আছে! আমি যেনো কোনো কাজই করতে পারিনা,
রাহুল : [ স্নেহাকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে সে ও পাশে বসে ] এক্সকিউজ মি! জারিফা যে হিংস্র পশুর কথা বলেছিলো না, ঐ রুপ আমি এখনো দেখায়নি ঐ রুপ দেখালে না তুমি এতোক্ষণে..[ বলেই তেডি স্মাইল দিয়ে তাকিয়ে রইলো স্নেহার দিক ]
স্নেহা : থেমে গেছেন কেনো বলেন বলেন আমি এতোক্ষণে?
রাহুল : ফরগেট ইট! ভয় পেয়ে যাবা তুমি!
স্নেহা : [ বিরবির করে ] হ্যাঁ আমি তো ভয় পেয়ে যাবো! আপনিই দুনিয়ার একমাত্র সাহসী ব্যাক্তি!
স্নেহা : [ রাহুলের ঠোটের নিচে আলতোভাবে চুমু দিয়ে ] ডু ইউ নো! ইউ আর মাই পেইন![ আবারো চুমু খেয়ে ] ইউ আর মাই লাভ!
রাহুল : ইয়াহ!
স্নেহা : [ চোখ বন্ধে হেসে ] ইউ আর মাই এভ্রিথিং!
রাহুল : [ মাথা নাড়িয়ে ] ইয়া আই নোও! [ বলেই আপ্রাণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে স্নেহার মায়াবী চেহেরাটির দিক, অদ্ভুত এক ভালোবাসা জেগে উঠে স্নেহার, তা অবশ্য সবসময় নয় মাঝেমাঝেই দেখা দেই, ঠিক তখনিই মুখ দিয়ে তার ভালোবাসার প্রতিশব্দ গুলো বাহারি ফুলের মতোই ঝড়ে পড়ে, যেটা এখন আবারো পড়ছে, তবে এই ভালোবাসার প্রতিশব্দ গুলো স্নেহার মুখ দিয়ে ঝড়ে পড়ার ও কি দরকার সে তো স্নেহার চোখ দেখেই সব পড়ে নিতে পারে, অবিশ্বাস্য কিছুই নয়, ভালোবাসা বিস্তর হলে বোধহয় এমনই হয় ]
স্নেহা : শুনেছি! এতো বেশী ভালোবাসা নাকি ঠিকনা! অধিক চাওয়া অধিক ভালোবাসা জিনিষটাই নাকি সবার আগে হারাতে হয়
রাহুল : [ মৃদু সূরে ] খোদা ছাড়া আর কারো ঐ সর্বশক্তি নেই যে তোমাকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিবে!
– দুনিয়ার সব অশুভ শক্তির সাথে লড়ে যাবো! জান নিয়ে খেলবো, মরতে হলে একসাথেই মরবো,তাও তোমাকে হারাতে দেবো না আমার কাছ থেকে! [ বলেই দীর্ঘশ্বাস নিয়ে স্নেহার নাকে নাক ঘষলো ]
– আসল কথা জানো কি স্নেহা? [ স্নেহা আহ্লাদি চোখে তাকালো রাহুলের চোখের দিক, রাহুল স্নেহার মাথাটা কাছে টেনে নিজের বুকের সাথে লাগিয়ে ধরলো, অজানা কোনো শব্দই নয় সেই চিরচেনা রাহুলের হৃদস্পন্দনের ধুপধুপ আওয়াজটায় স্নেহার কানের কাছে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে, তবে এই ধুপধুপ শব্দটি কি ভালোবাসার কোনো কথা বলে যাচ্ছে? হ্যাঁ তাই তো, এতো তীব্র কেনো হচ্ছে শব্দটি ]
রাহুল : শুনতে পাচ্ছো স্নেহা? এই হৃদয়ের স্পন্দন গুলো বলছে! তুমি আছো বলেই এরা চলছে, তুমি না থাকলে এরা থেমে যাবে! [ স্নেহা রাহুলের বুকে একটি চুমু খেয়ে মাথা উঠিয়ে তাকালো রাহুলের দিক, দু-হাতে রাহুলের কলার ধরে নাকে নাক চেপে দীর্ঘশ্বাস নিচ্ছে, রাহুলের শ্বাসগুলো ও স্নেহার মুখের উপর এসে পড়ছে, এক অদ্ভুত অনুভূতি এসে ভীর জমিয়ে দিচ্ছে দুজনের মনে, তীব্র হতে চলছে ভালোবাসা গুলো, আড়াআড়ি অনুভব করছে স্নেহার মুখে রাহুলের খোঁচা-খোঁচা দাড়ি গুলোর স্পর্শে, আলাদা এক স্মেল আছে রাহুলের এই দাড়ি গুলোর, যে স্মেলটায় স্নেহার মনটাকে পাগল করতে বাধ্য হয়, তবে এই অনুভবটায় স্নেহার সবচেয়ে প্রিয় অনুভব, আলতো করে রাহুলের গালে হাত বুলিয়ে স্নেহা, নিজের ঠোট দিয়েই গভীর চুমু বর্ষন করলো রাহুলের ঠোটে, রাহুল ও বাধা দিচ্ছিলো না স্নেহাকে, যেহেতু স্নেহা নিজ ইচ্ছায় আদর করছিলো, কোমোড়ের শাড়ীর নিচে হাত দিয়ে স্লাইড করে ধরে সেও তালমিলিয়ে নিলো,
হঠাৎ, স্নেহা রাহুলকে ঠেলে দিয়ে আবারো তাড়াতাড়ি ঠোটে হাত দিয়ে চেপে ধরলো,ব্যপারটা কোনোভাবেই অবাক করলো না রাহুলকে, বরং কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো রাহুল, মলিন চোখে তাকিয়ে থেকে জখমি ঠোটটা ঘষতে লাগলো স্নেহা ]
রাহুল : রিলেক্স স্নেহা! ইটস্ নট অ্যা প্রেশার! আমরা পরে ও করতে পারবো! [ কিছু বললো না স্নেহা, নিস্তব্ধই রয়ে গেলো, তবে রাহুল ও স্নেহার মজা উড়াতে ছাড়লো কই! ]
রাহুল : [ স্নেহার ঘাড়ের পাশে দেওয়ালে হাত রেখে ] বিটউইন! স্নেহা,আজ ফিল একটু বেশি এসে গেলো বোধ হয়!
– বাট! বেড লাক! আমার কামড়টা জোড়ে পড়ে সব ডিস্ট্রাকশন করে দিলো!
– বাই দ্যা ওয়ে! চিন্তা করোনা, তুমি চাইলে কিন্তু এটা ছাড়া আমরা অন্যকিছুও করতে পারি! [ With tedi smile ]
স্নেহা : অ..অন্যকিছু মানে? [ রাহুল দীর্ঘশ্বাস নিয়ে পাশফিরে তাকিয়ে একটু হেসে, আবারো স্নেহার দিক তাকিয়ে চোখ দুটো ত্যাড়া করে ধীরেধীরে একবার স্নেহার চেহেরার দিক আরেকবার স্নেহার পুরো বডিতে চোখ বুলাতে লাগলো, স্নেহা ও রাহুলের এভাবে তাকানোর দৃষ্টির নজরদারিতে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো ]
রাহুল : অন্যকিছু মানে হচ্ছে..উমম! [ বলেই আংগুল দিয়ে স্নেহার ঠোট থেকে গলায় স্লাইড করে, বুকের দিক এনে শাড়ীর আচলটা সরাতেই যাবে তখনি ]
রাহুল : এমনিতে তৃষ্ণা তো আমার ও অনেক পেয়েছে বাট পানির না আমার তো তোমার তৃষ্ণা.. [ বলেই স্নেহার পেটে হাত বুলিয়ে নাক দিয়ে ঘাড়ে স্লাইড করতেই, স্নেহা রাহুলের হাতটা ছুটিয়ে ডাইনিং টেবিলের দিক চলে যায়, জাগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে,গ্লাসটা এগিয়ে নিতেই পেছনে রাহুলের উপস্থিত অনুভব করলো, কোমোড়ে রাহুলের হাতের স্পর্শ, জুড়ান এক অনুভুতি কাজ করছে, বুকের সাথে হাতটাও কেপে চলছে, কিছু না বলেই গ্লাসটা শক্ত করে ধরে নিয়ে পানি খেতে লাগলো, রাহুল তার মুখ এগিয়ে স্নেহার ঘাড়ের কাছে এনে গলার দিক তাকালো, ঢোগ গিলছে স্নেহা যেনো তৃষ্ণা মেটাচ্ছে রাহুল, পানি গুলো ও রাহুলের লোভনীয় দৃষ্টির মতো ছুয়ে ছুয়েই নামছে স্নেহার গলা দিয়ে, আলতো করে একটি চুমু দিয়েই দিলো রাহুল সেই গলায়, পানি খাওয়া থামিয়ে দিয়ে স্থীর হয়ে দাড়িয়ে গেলো স্নেহা, গ্লাস হাতে নিয়ে ধীরেধীরে ফিরে তাকালো রাহুলের দিক ]
রাহুল : [ চোখ বন্ধ করে স্নেহার কপালে কপাল লাগিয়ে ] স্নেহা! পানিটাও এতো সুন্দর করে কেমনি খাও?
স্নেহা : [ হেসে ] রার..রাহুল! আপনার মনে আছে ভার্সেটিতে একদিন গার্ডেনের ঐদিক আপনাকে পানি দিয়েছিলাম, আ..আপনি খাচ্ছিলেন না, যতোক্ষণ না পর্যন্ত আমি মুখ লাগিয়ে খায়নি!
রাহুল : এক্সকিউজ মি! এটা পাগলামি না ভালোবাসা স্নেহা ভালোবাসা! [ স্নেহা মুচকি হেসে রাহুলের গালটা টেনে দেই ]
রাহুল : চলো আজ আবার নতুন ভালোবাসা দেখায়!
স্নেহা : মা..মানে? [ রাহুল কিছু বললো না এক হাতে টেবিলে ভর করে হাত রেখে অন্য হাতে স্নেহার থেকে পানির গ্লাসটা নিজ হাতে এগিয়ে নিলো, স্নেহা ও তাকিয়ে আছে অবাক চোখে কি করতে যাচ্ছে রাহুল কিছুই বুঝে উঠছিলো না, হঠাৎ রাহুল নিজের ঠোট স্নেহার কাছাকাছি এনে গ্লাসটা কাত করে কিছু পানি স্নেহার ঠোটে ঢাললো, স্নেহা চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো তাড়াতাড়ি, দু-হাত পেছনে থাকা টেবিলের উপর ভর দিয়ে রেখে শক্ত করে টেবিল চেপে ধরলো, জোড়ে জোড়ে শ্বাস ফেলছে, ঠোটে পানির ঠান্ডা অনুভব সাথে রাহুলের গরম নিশ্বাসটাও অনুভব করছে, রাহুল ও কাতর দৃষ্টিতে স্নেহার কাপা-কাপা জলসানো ঠোটের দিক পলক ঝুকিয়ে তাকিয়ে আছে ]
রাহুল : স্নেহা!
স্নেহা : হু!
রাহুল : [ মৃদু সূরে ] পানি গড়িয়ে যেদিক যেদিকই গিয়েছে ওদিক থেকেই পান করবো! [ নিস্থব্দে ঢোগ গিললো স্নেহা, রাহুল স্নেহার জলসানো ঠোটের জলগুলো জিহবা দিয়ে আলতো করে স্লাইড করে মুখে নিলো, থুতনিতে বিন্দু হয়ে জমে থাকা পানির ফোটাটি ও নিজের ঠোট দিয়ে স্লাইড করে নিলো, মাথা ঝুকিয়ে গলায় গড়িয়ে পড়া পানি গুলো নিজ ঠোটের গভীর চুমুর স্পর্শে পান করে করে চলছে, বুকের ধারে আসতেই স্নেহা যেনো চমকে কেপে উঠলো, রাহুলের জ্যাকেট মুচড়ে ধরে ঠেলে সরিয়ে দিলো, রাহুল মাথা তুলে স্নেহার চোখের দিক তাকালো, স্নেহা ও চোখাচোখি হতেই লজ্জিত এক অনুভবে পাশ ফিরে সরে যাচ্ছিলো, হঠাৎ তখনিই হাতটা রাহুলের হাতে বন্ধি হয়ে আটকা পড়লো ]
[ চুপ করে চোখ নামিয়ে ফেললো স্নেহা, রাহুল স্নেহার সামনে আসা চুল গুলো কানে গুজে দিয়ে, ধীরেধীরে মুখ এগিয়ে স্নেহার কানের ঝুমকাটা কামড়ে ধরলো, স্নেহা জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে কানের পেছনে হাত দিয়ে ঝুমকার পুষটা খুলে নিলো, রাহুল দাত দিয়ে স্নেহার কান থেকে ঝুমকাটা টেনে নিলো, স্নেহা হাত তুলে এগিয়ে দিলে, মুখ থেকে ঝুমকাটা স্নেহার হাতে ছুড়ে ফেললো রাহুল! একইভাবে অপর কানের ঝুমকাটাও রাহুল দাত দিয়ে কামড়ে টেনেখুলে স্নেহার হাতে ফেললো,
লাল হয়ে আছে স্নেহার কান দুটো, মুখ এগিয়ে রাহুল আলতো করে চুমু খেলো কানে, শিউরে উঠলো স্নেহা, রাহুলের জ্যাকেট মুচড়ে ধরতেই হাত থেকে ছুটে কানের ঝুমকো গুলো মাটিতে পড়ে যায়, গালে দাড়ি ঘষে চোখের দিক একনজর তাকিয়ে একটু পিছিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো, স্নেহাও তাকিয়ে আছে, হাতটা এগিয়ে কাছে টেনে হুট করেই কোলে তুলে নিলো রাহুল, নির্বাধায় স্নেহাকে নিয়ে বেড রুমের দিকই এগিয়ে গেলো, খাটের ধারে এসে শুয়ে দিলো স্নেহাকে,
অবিকল এক অনুভুতি, মাথা নুয়ে দাঁড়িয়ে তাই ভাবছে রাহুল, জ্যাকেটটা খুলে বিছানার কোণে রাখতেই স্নেহার পায়ের দিক নজর পড়লো, ধবধবে মলিন হয়ে আছে স্নেহার পা-জোড়া, এতোদিনে এসেই বুঝি রাহুল স্নেহার পা গুলো এতো গভীরভাবে লক্ষ্য করছে, হাটু গেরে বসে, হাত দিয়ে আলতো করে ছুয়ে দিলো পা দুটো, মুখ এগিয়ে চুমু দিতেই যাবে তখনিই স্নেহা পা বটে ফেললো, রাহুল মৃদু হেসে হামাগুড়ি দিয়ে খাটে এগিয়ে উঠলো, স্নেহার পা টেনে সোজা করে নিয়ে, চুমু দিয়েই মাথা তুলে তাকালো,পেটের দিক শাড়ীটা সরে আছে স্নেহার, পানি পড়ে হালকা একটু ভিজে ভিজে ও আছে, যা রাহুলকে তৃষ্ণার্থ করে কাছে টানতে বাধ্য করেই চলছে, ধীরেধীরে মুখ এগিয়ে ঠোট দিয়ে পেটে স্লাইড করে চুমু খেলো রাহুল, তার সাথে স্নেহার জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নেওয়াটা যেনো আরো পাগলই করে দিচ্ছে রাহুলকে, চুল মুঠি বেধে ধরে রাহুলকে সরিয়ে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা স্নেহার, কিন্তু এই তীব্র ভালোবাসায় হার মেনেই চলছে দুজন, পেটের দিক থেকে নাক দিয়ে এক শ্বাসে স্নেহার খুশবো নিয়েই মুখের ধারে আসলো রাহুল, ঠোট জোড়া কাপছে স্নেহার, আলতো করেই সেই ঠোটে চুমু খেলো রাহুল,গলার চুল গুলো সরাতেই স্নেহা চোখ বন্ধে শিউরে উঠে বিছানার চাদর মুচড়ে ধরে ফেললো, রাহুল চাদর থেকে স্নেহার হাত ছুটিয়ে নিজের হাতে মুঠি করে ধরে ধীরেধীরে গলাই চুমু বর্ষন করলো, চোখ বন্ধ করে ফেললো রাহুল ও,
ঠিক সেই মুহূর্তেই, হঠাৎ ফোনের রিংটোনটা বেজে উঠলো রাহুলের,
চমকে উঠে চোখ খুলে ফেললো স্নেহা, রাহুল ও স্নেহার গলার ধারে মাথা ঠেকিয়ে রেখে স্থির হয়ে গেছে, মাথা মুড়িয়ে রাহুলের দিক ফিরে তাকালো স্নেহা, চোখাচোখি হতেই দেখে রাহুলের চোখে যেনো রাগ ভাসছে, হাসি আসছিলো স্নেহার অনেক, রাহুলের বেচারা বেচারা চেহেরার ছাপ দেখে, তাই তাড়াতাড়ি মুখ সোজা করে ফিরিয়ে নিলো স্নেহা,
রাহুল : হাসো, হাসো স্নেহা! চেপে রেখেছো কেনো হাসি?
স্নেহা : ফো..ফোন বাজছে!
রাহুল : কান আছে আমার, শুনেছি! [ হাসি লুকাতে মুখের উপর হাত দিয়ে ঢেকে ফেললো স্নেহা ]
রাহুল : ইডিয়ট! [ বলেই বালিশে স্নেহার মাথার পাশাপাশিই মাথা রেখে শুইলো, পা সোজা করে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে কানে ধরলো ]
রাহুল : হ্যা! দাদীজান বলেন! [ স্নেহা ও হেসে রাহুলের ফোনের সাথে কান লাগিয়ে রাখলো ]
দাদী : বদমাশ! হানিমুনে তো তুই ইটালি যাবি বলেছিলি, আমি কি ভুলে গেছি মনে করেছিস নাকি!
রাহুল : [ কান থেকে ফোন সরিয়ে স্নেহার দিক তাকিয়ে ] লুক স্নেহা! দাদী আমাকে নিজের দেশের হানিমুন এখনো কমপ্লিট করতে দিচ্ছে না আবার বলে ইটালির কথা, কতোবড় সেল্ফিশ দেখেছো!
স্নেহা : [ হেসে ] শিসস! রাহুল! [ বলেই হাত টেনে আবারো ফোনটা কানের দিক ধরিয়ে দিলো ]
রাহুল : আচ্ছা দাদী! কি কারণে খুজছো বলোতো ?
দাদী : আরে তোদের রিসিপশানের ড্রেস এসে গেছে, তাই দেখার জন্যই..
রাহুল : উফফ! দাদী ড্রেসগুলো কি ভেগে যাবে নাকি? যে এক্ষুণি ডাকা ইমর্টেন্ট হয়ে গিয়েছিলো!
স্নেহা : [ মাথা তুলে ] আজিব! রাহুল পাগল নাকি আপনি? বলেন আসছে,
রাহুল : নাহ!
স্নেহা : [ চিমটি দিয়ে ] বলেন!
রাহুল : আহহহ! স্নেহা ব্যথা পাচ্ছি! [ স্নেহা তাড়াতাড়ি রাহুলের মুখ চেপে ধরে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, রাহুল ও কিটকিটিয়ে হেসে উঠে স্নেহার চেহেরার অবস্থা দেখে ]
স্নেহা : আপনি আসলেই..
– উফফ… [ বলেই খাট থেকে নামতেই যাচ্ছিলো, তখনি ]
রাহুল : [ হেসে স্নেহার হাত টেনে ধরে নিজের কাছে শুয়ে রেখে ] দাদী! উই আর কামিং!
দাদী : আচ্ছা ঠিকাছে আয়! [ রাহুল ফোন কেটে খাটে ছুড়ে রেখে, স্নেহাকে চেপে ধরে শুইয়ে সে ও স্নেহার উপর হয়ে শুয়ে পড়লো ]
স্নেহা : রাহুল ছাড়েন! দাদী অপেক্ষা করছে,
রাহুল : আহা! দাদী সামান্য একটু অপেক্ষা করছে এতে কতো মায়া, আর জামাইর দু-ভাংগা হয়ে যাওয়া মনটার জন্য একটুও মায়া হচ্ছে না,
স্নেহা : [ রাহুলকে ঠেলে সরানোর চেষ্টা করতে করতে ] ভালোই হয়েছে একদম! এইবার সরেন!
রাহুল : [ স্নেহার দু-হাত টেনে নিয়ে দু-দিক চেপে ধরে ] কি বললে! আবার বলোতো!
স্নেহা : ছাড়েন রাহুল! প্লিইজ লেইট হচ্ছে তো!
রাহুল : উহু! আমারও ছাড়তে মন চাইছে না তো! [ স্নেহা হাপিয়ে উঠলো রাহুলের সাথে ছুড়াছুঁড়ি করতে করতে ]
রাহুল : [ হেসে ] শেষ শক্তি? এইটুকুতেই? [ স্নেহা কিছু বললো না, কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকেই ধীরেধীরে মাথাটা আলগে তুলে রাহুলের ঠোটে ঠোট মেশালো, রাহুল হালকা একটু অবাক হলেও আবার স্নেহার ঠোটের সাথে তাল মিলিয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো, হঠাৎ কিছুক্ষণ পরই রাহুল স্নেহার হাতের ধাক্ষা অনুভব করলো,
ফুফিয়ে উঠে সোজা হয়ে শুয়ে আছে রাহুল! দীর্ঘ একটি শ্বাস ফেলে মুচকি হাসলো, স্নেহার দিক তাকাতেই দেখে স্নেহা বসে শাড়ী ঠিক করছে উঠে দাড়ানোর জন্য ]
রাহুল : কি রোমান্টিক তারিকায় চিটিং করেছো স্নেহা!
স্নেহা : [ উঠে দাঁড়িয়ে রাহুলের দিক ফিরে ] আপনি যদি রোমান্স কিং হন! তাহলে রোমান্স কিং এর ওয়াইফ রোমান্স কুইন তো হবেই!
রাহুল : [ মুচকি হেসে ] তাই?
স্নেহা : বাই! [ বলেই মুখ ভেংগিয়ে হেসে বেড়িয়ে যায়, রাহুলের ও কি আর করার হাসতে হাসতেই গাঁ হেলিয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়ে খাটে শুয়ে পড়লো ]
আর এইদিকে, স্নেহা গেষ্ট হাউজ থেকে বেড়িয়ে দাদীর কাছেই রওনা দিলো, ড্রইং রুমে ঢুকতেই দেখে, দাদী মাত্রই সোফা থেকে উঠে চলে যাচ্ছিলো! তখনি আবার স্নেহাকে দেখে থেমে দাঁড়িয়ে যায়!
দাদী : [ স্নেহা কাছে আসতেই ] আরে স্নেহা! এসেছো! আমি ভাবলাম রাহুল মিথ্যে বলছে, কারণ ও আমাকে সবসময়ই এমন বোকা বানিয়ে থাকে! [ হাসলো স্নেহা দাদীর কথা শুনে ]
দাদী : আচ্ছা বাদ দাও শুনো! তোমাদের রিসিপশানের কাপড় গুলো আমি উপরে তোমাদের রুমে পাঠিয়ে দিয়েছি! তুমি গিয়ে দেখে নাও! আর শয়তানটা আসলে ওকে ও দেখিয়ে নিও!
স্নেহা : আচ্ছা! [ দাদী হেসে চলে গেলো, স্নেহা ও রুমের দিক যাওয়ার জন্য শিরিতে পা দিবে তখনিই, গীতালি ডাইনিং টেবিলের পাশ থেকে ভাবীইইই বলে ডাক দেই, স্নেহা ফিরে তাকালে গীতালি হাত দিয়ে কাছে আসতে ইশারা করলো, স্নেহা হেসে এগিয়ে গেলো গীতালির দিক ]
গীতালি : ভাবী আমার না আপনের লগে কিছু ইমপর্টেন্ট কথা আছিলো!
[ গীতালি মুখ ভেংগিয়ে তাড়াতাড়ি টেবিল পরিস্কার করতে ব্যস্ত হয়ে যায়, ফুফি কাছে এগিয়ে এসে গীতালি বলে আবার ডাক দিতেই স্নেহাকে দেখে থেমে যায় ]
গীতালি : জি কিছু কইবেন?
নাফিসা ফুফি : টেবিলে ডিনার লাগিয়ে দাও!
গীতালি : জি! [ বলেই কিচেনের দিক এগিয়ে গিয়ে আবার পেছন ফিরে তাকাতেই দেখে ফুফি স্নেহার কাছাকাছি গিয়েই দাড়ালো, তাই গীতালি ও কাজের বাহানা করে তাদের কাছাকাছি এসে টেবিলে প্লেট বিলি করতে লাগলো ]
নাফিসা ফুফি : দেখা যাচ্ছিলো না তোমায় স্নেহা! কোথায় ছিলে? [ ঢোগ গিলছে স্নেহা একেতো গীতালির কথা শুনে হাত-পা অবোশ হয়ে গেছে, তারমধ্যে ফুফির এই প্রশ্নের কি জবাব দিবে সেটাও মাথায় আসছে না ]
– আচ্ছা ওরা কোথায়? চলে গিয়েছে নাকি কোনো? ডিনারটাও করে যাবে না?
– [ হেসে ] যাবেই তো! মেই বি আশেপাশে কোথাও আছে খুজে দেখো! আর হ্যা! যদি চাই রাতটাও এইখানে স্টে করতে পারবে, এমনিতেও কোনদিকটা ছেড়েই বা রেখেছে!
– তবে হ্যা! যদি মনে একটু শেম থাকে না? তাহলে এটা জানিয়ে দিও যে, ক্লাস ছাড়া মেয়েদের আমি আমার ছেলের বউ বানাবো না,
– এই ক্ষেত্রে রাহুল আনলাকি হলেও তুমি আবার অনেক লাকি, [ বিরবির করে অন্যপাশ তাকিয়ে ] নাজানি ছেলেটা তোমার কাছে এমন কি দেখেছে!
– আচ্ছা আমি যায় এখন! [ চেচিয়ে ] গীতালি! কি বলেছি মনে আছে তো?
গীতালি : [ হাতের প্লেটটা টেবিলে জোড়ে ছুড়ে রেখে ] সা্রি সা্রি! হো মনে আছে! [ চলে গেলো ফুফি স্নেহার দিক একবার তাকিয়ে ]
[ হাত-পা কাপছিলো স্নেহার ফুফির এমন কথা শুনে, এখন তো শুধু তার মাথায় একটাই টেনশন ঘুরছে, তার সাথে এইভাবে কথা বলতে পারলে না জানি তার ফ্রেন্ডসদের সাথে কেমন কথা বলেছে ]
– টেনশন কইরেন না! আনজয়! আনজয়! আরে কালকা সন্ধ্যায় ফ্লাইড ওনারার আপনেরার অনুষ্ঠান বিকালে শেষ অইলেই তারপর চইলা যাইবো! [ স্নেহা একবুক কষ্ট চাপা একটি হাসি দিয়ে মাথা নাড়ালো ]
গীতালি : আমি যায় ভাবী ডিনার রেডি করোন লাগবো নাইলে আবার মাথা হড হইয়া যাইবো![ বলেই কিচেনের দিক চলে গেলো, স্নেহা আশেপাশে একবার তাকিয়ে, পা বাড়াতেই যাবে হঠাৎ তখনিই শিরির দিক চোখ পড়লো, জারিফা মার্জান এবং শায়লা নামছে শিরি দিয়ে, জারিফা হাত নাড়ালো স্নেহাকে দেখে ]
শায়লা : [ এগিয়ে এসে ] কোথায় ছিলি স্নেহা! আমরা তোর রুম থেকেই খুজে আসছি, ভেবেছি তোরা রুমেই আছিস!
স্নেহা : গে..গেষ্ট হাউজে ছিলাম!
জারিফা : আচ্ছা! শোন স্নেহা! আমরা যাচ্ছি এইবার! ওকে? আর হ্যা! জিজুকে আমাদের পক্ষ থেকে বাই বলেদিস
স্নেহা : ডি..ডিনার..
জারিফা : আরে বাবা! এতোগুলোই খাবার না খেয়েছি, এরমধ্যে আবার ডিনার?
শায়লা : [ হেসে ] ডিনার করার মতো পেটে একদমই জায়গা নেই আমাদের! [ স্নেহা ও তাদের জোড় করার মতো সাহস পাচ্ছিলো না, মার্জানের দিক তাকালো, মাথায় একচটা রাগ নিয়ে ফুসলে আছে সে, চেহেরা দেখেই বুঝা যাচ্ছে ]
জারিফা : [ মার্জানকে ধাক্ষে ফিসফিসিয়ে ] কি হলো মার্জান! বাই বল স্নেহাকে!
মার্জান : [ নাক ফুলিয়ে ] স্নেহা! এইখানে কেউ যদি তোকে উল্টো-পাল্টা কিছু বলে না? একদমই চুপ করে থাকবি না! মুখের উপর জবাব দিয়ে দিবি, আর না পারলে কল করে আমাকে ডেকে নিস!
শায়লা : আ..আরে কি বলছিস এসব? স্নেহা ওর মাথা আওট হয়ে গেছে, তুই তো জানিসই মাঝে মাঝে ও এমনিই হয়ে যায়! [ স্নেহাকে জড়িয়ে ] আচ্ছা চল বাই ওকে?
জারিফা : [ স্নেহাকে জড়িয়ে ] বাইই স্নেহা! [ স্নেহা মার্জানের দিক তাকিয়ে রইলো, ছটফট করছে মার্জান এদিকওদিক তাকিয়ে, বুঝতে পারছে স্নেহা এই ছটফটের কারণ ]
স্নেহা : বাই! [ জারিফা আর শায়লা ছুটে এসে দাঁড়ায় ]
মার্জান : [ স্নেহার কাছে এসে শক্ত করে জড়িয়ে ] বাই স্নেহা! [ চোখ গড়িয়ে পানি পড়ছে স্নেহার, দূর থেকে গীতালি তাকিয়ে রইলো তাদেরদিক ]
শায়লা : আরে স্নেহা! কাদছিস কেনো আবার! এই সময় আমদের ও ইমোশনাল করে দিবি নাকি? [ স্নেহা চোখ মুছে হেসে উঠে ]
শায়লা : গুড গার্ল! আসি তাহলে
জারিফা : [ হাত নাড়িয়ে চেচিয়ে ] বাইই গীতালি [ গীতালিও হাত নাড়ালো, মার্জান আর শায়লা ও হাত নাড়িয়ে দিয়ে হাটা ধরলো, স্নেহা জলভরা চোখে তাকিয়ে আছে পেছন থেকে তাদের চলে যাওয়া ]
মেইন ডোর পার হতেই,
মার্জান : কি বলে আমাদের ঐ বজ্জাত মহিলা? আমরা গ্রীডি গার্ল? স্নেহার ফুফি শ্বাশুড়ী না হলে তো আজ একে আমার হাত থেকে কেউ বাচাতেই পারতো না
– আমার তো স্নেহার জন্যই টেনশন হচ্ছে! নাজানি ওকেও কি কি বলে আমাদের জন্য! এক্সুলি আমাদের না আজ এইখানে আসায় উচিৎ ছিলো না!
জারিফা : আরে টেনশন করছিস কেনো স্নেহার সাথে রাহুল তো আছেই! রাহুল কিছু হতে দেবে না স্নেহার!
মার্জান : কিছু জানলেই তো হতে দেবে না! তোর কি মনে হয়? স্নেহাকে কিছু বললে সেটা স্নেহা রাহুলকে গিয়ে বলবে?
জারিফা : উমম তাও ঠিক!
হঠাৎ পেছন থেকে,
নেহাল : গাইস্!
শায়লা : [ বিরবির করে ] এসেছে! এর জন্যই এসব হয়েছে, আজ যদি ও আমাদের পেছন পেছন না ঘুরতো, তাহলে ওনার রিচ মমের ও কোনো এলার্জি উঠতো না!
জারিফা : শিসস! শায়লা! আস্তে বল শুনলে কষ্ট পাবে!
শায়লা : [ চেচিয়ে ] তাতে কি হয়েছে শুনুক! শুনলে আর আমাদের সাথে কথা বলবে না এটাই ভালো হবে!
নেহাল : লিসেন্ট! মম যা বলেছে..
শায়লা : হ্যা! তা কম পড়েছে নাকি এইবার আপনিও কিছু বলবেন? [ নেহাল আর কোনো জবাব দিলো না শায়লার কথার, শুধু আবেগী চোখ দুটো দিয়ে তাকিয়ে রইলো ]
শায়লা : এতো দয়া দেখানোর কোনো প্রয়োজন নেই! গাড়ী ভাড়া আছে আমাদের, আর না থাকলে না, হেটেই চলে যাবো!
হঠাৎ পাশ থেকে রিদোয়ান আর আসিফ এগিয়ে আসে,
আসিফ : আরে তোমাদের ছাদ থেকে নামার পর আর দেখা গেলো না যে?
মার্জান : [ নাক ফুলিয়ে অন্যপাশ ফিরে ] জারিফা ওনাকে বল আমার সিগারেটের স্মেল মোটেও পছন্দ না! তাই একটু দূর হয়ে দাড়াতে,
আসিফ : আচ্ছা! তাহলে কি সিগারেট খাওয়াও ছেড়ে দিতে হবে নাকি এখন?
মার্জান : জাহান্নামে যাক তাতে আমার কি! [ আসিফ অবাক হয়ে, মনে মনে ভাবতে লাগলো, এই মেয়ে পুরোদিন তো ঠিকই ছিলো হঠাৎ আবার এখন ঘাড় ত্যাড়া হয়ে গেলো কেনো, পুরোনো রক্তটা বোধহয় মাথায় আবার চেটে গেছে! ]
রিদোয়ান : [ জারিফার কাছে এসে ] আচ্ছা শুনো! আলিসা থেকে শুনলাম চলে যাচ্ছো নাকি?
জারিফা : হ্যাঁ!
রিদোয়ান : আমাকে না বলেই! আর তোমরা তিনজন এইভাবে একা?
জারিফা : ভাবলাম আ..আপনি আরো লেইটে যাবেন হয়তো, তাই আর..
রিদোয়ান : হ্যাঁ! আমিও ভাবলাম একসাথেই বের হবো, তবে তোমরা এক্ষুণিই কেনো যাচ্ছো!
শায়লা : এক্সুলি আমরা খুব টায়ার্ড, গতকালই তো বিয়েটা শেষ হলো, মানে বুঝতে পারছেন কতোটা লেভার গেছে আমাদের উপর! সো্ আই থিংক আমাদের এখন বের হওয়া উচিৎ!
রিদোয়ান : আচ্ছা চলো আমি ড্রপ করে দিচ্ছি!
জারিফা : নাহ আমরা তো..
রিদোয়ান : কথা বেশী বলোনা! [ জারিফা ও আর কিছু বললো না, এগিয়ে গেলো গাড়ীর দিক, মার্জান আসিফের দিক আড়চোখে তাকিয়ে মুখ ভেংগিয়ে দিয়ে চলে গেলো জারিফার পিছু পিছু, শায়লা নেহালের দিক নাক ফুলিয়ে তাকিয়ে গাড়ির দিক হাটা ধরলো ]
___ এইদিকে রাহুল গেষ্ট হাউজ থেকে মেইন ডোরের সামনে আসতেই দেখে,নেহাল পকেটে হাত রেখে একা দাঁড়িয়ে আছে, আর গেইট দিয়ে আসিফ আর রিদোয়ানের গাড়ী দুটোই বেড়িয়ে যাচ্ছে,
রাহুল : [ নেহালের কাধে হাত রেখে ] আরে!স্টুপিড গুলো আমাকে না বলেই চলে গেলো! আর তুই এইখানে একা দাঁড়িয়ে কি করছিস?
রাহুল : [ কনফিউজড হয়ে ] নাথিং মানে? এর আবার কি হলো? [ বলেই সে ও ভেতরে ঢুকে পড়লো, ডাইনিং টেবিলের দিক গীতালিকে দেখতেই ]
রাহুল : হেইই গীতালি! স্নেহাকে দেখেছিস?
গীতালি : অওও! রাহুল ভাইয়া আপনারেই খুজতাছি!
রাহুল : আমাকে? কেনো?
গীতালি : [ রাহুলের কাছে এসে ] ভাইয়া! ভাবীর থেইকাই শুইনেন! আমি এতোসব এহন কইতে গেলে আবার ফুফি আইয়া দেইখা ফেলবো! তহন ভাববো আমি আবার প্যাচাল লাগাইতেছি, ব্যাস আমি তো অনলি এইজন্যই কইতাছি, ভাবীরে আমার খুব ভাল্লাগছে একদম সিধাসাধা, আর ভাইয়া আফনের সাথে তো একদম পার্ফিক্ট মেছ অইছে!
রাহুল : ওয়েট! আই কান্ট আন্ডারষ্ট্যান্ড এনিথিংক!
গীতালি : ইউ নট আন্ডাষ্টান! ওকে, [ বলেই আশেপাশে উকি দিয়ে ] আসলে ভাইয়া! ভাবীর ফেন্সরা আছে না? ওনারারে নাফিসা ফুফি বহুদ ইনশাল্ট করছে, নেহাল ভাইয়া আইবার পরই ফুফি থামছিলো নাইলে তো এক একডা কথা কইয়ায় যাচ্ছিলো কইয়ায় যাচ্ছিলো, তারা ডিনার না কইরাই চইলা গেছে, আমার মনে অয় দেয়ার ফিলিং ইনশাল্ট!
– আর তো কি অয়ছে জানেন! ভাবী আসার ফরে ভাবীরেও অনেক কিছু কইছে, ভাবী একদম চুপ কইরাই হুইনা আছিলো কিছুই জবাব দেইনাই!
– আচ্ছা ভাইয়া! আপনি এহন যান ভাবীরে একটু মিষ্টি মিষ্টি কথা কইয়া মন ভালা কইরা ডিনার করানোর লাইগা লইয়া আয়েন! আমি যায় বাকিদের ও ডিনার করানোর লাইগা ডাহোন লাগবো [ বলেই চলে গেলো গীতালি, রাহুল হাত মুঠি করে ঐদিকটাই থমকে দাঁড়িয়ে আছে, মাথায় যেনো আগুন জ্বলছে রাহুলের, এমন কিছুও হবে সে কখনো কল্পনা করতে পারেনি, মোবাইলটা পকেট থেকে বের করে রিদোয়ানকে কল দিলো ]
রিদোয়ান : [ রিসিভ করে ] সরি! দোস্ত তোকে বলে আসতে পারলাম না!
রাহুল : কোথায় এখন?
রিদোয়ান : ড্রপ করে দিচ্ছি জারিফাদের!
[ রাহুল আর কিছু বললো না ফোন কেটে পকেটে ঢুকিয়ে, তাড়াহুড়ো করে দু-তিন লাফে শিরি বেয়ে উঠে রুমে গিয়ে ঢুকলো, স্নেহা দাঁড়িয়ে আছে জানালার ধারে বাহিরের দিক তাকিয়ে, চোখ থেকে ঝড়ে যাচ্ছিলো বেদনার অশ্রু, রাহুল এসেছে বুঝতে পেরে স্নেহা চোখ মুখ ভালো করে মুছে পেছন ফিরে তাকিয়ে মুচকি হাসলো ]
রাহুল : [ স্নেহার কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়ে ] কাদছিলে?
স্নেহা : [ হেসে ] আরে নাহ! কাদবো কেনো?
– [ রাহুলের জ্যাকেটের কলার ঠিক করে দিয়ে ] আচ্ছা শুনেন! আপনার কাপড় আলমিরা তে রেখেছি! দাদী বলেছে দেখেনিতে!
রাহুল : কি বলেছে ফুফি? [ চমকে উঠলো স্নেহা রাহুলের কথা শুনে ]
রাহুল : [ চেচিয়ে ] হা করে তাকিয়ে আছো কেনো? বলো আমায় কি বলেছে? [ স্নেহা দরজার দিক একবার তাকিয়ে আবার রাহুলের দিক তাকালো তাড়াতাড়ি ]
স্নেহা : [ ফিসফিসিয়ে ] মোটেও ঠিক করেননি রাহুল! নরমাল কোনো কাজ দিলেই পারতেন!
রাহুল : আম নট অ্যা নরমাল পার্সন!
স্নেহা : ঠিকই বলেছেন আপনি নরমাল পার্সন না আপনি না একটা হার্ড পার্সন,আপনার মনটা তো স্টোন দিয়ে তৈরী!
রাহুল : অহ রিয়েলি?
স্নেহা : হুম! অবশ্যই!
রাহুল : যদি এমন হয়! তাহলে এই হার্ড পার্সনের স্টোন দিয়ে তৈরী মনটা গলানোর শক্তি শুধু তোমার কাছেই আছে স্নেহা! [ স্নেহা ব্লাশিং হয়ে মুচকি হেসে অন্যপাশ ফিরে গেলো ]
________ এইদিকে,
নেহাল জ্যাকেটের হাত বটতে বটতে এগিয়ে এসে দেখে, তার জায়গা ফিল-আপ! অবাক হয়ে রিদোয়ানের দিক তাকালে, রিদোয়ান চোখটিপ মেরে বুঝিয়ে দেই যে, শায়লার পাশে সিট খালি করে রেখেছে! নেহাল ও ভোর কুচকে উত্তেজিত একটি হাসি দিয়ে শায়লার পাশে গিয়ে বসলো!
শায়লা : সো্ সেড মিষ্টার অষ্ট্রেলিয়া!
নেহাল : [ মুচকি হেসে ] ইয়াহ! আই নেও দ্যাট! কেউ আমার জন্য সেড ফিল করুক আর নাই করুক! তুমি অন্তত করবা!
শায়লা : বাব্বাহ! এত্তো কনফিডেন্স?
নেহাল : এক্সুলি! কিছু মানুষের ফেইস দেখে বোঝা যায় যে ওর হার্ট অনেক সফট হবে!
শায়লা : অও সবই বোঝেন! তো এটা বোঝেন না, যে মাথায় পানি জমে থাকলে ফেভার হবে?
নেহাল : ইয়াহ! টাওয়েলটা কোনদিক যেনো ছুড়ে মারলাম মনে পড়ছে না! এনিওয়ে লিভ ইট! আজ একটা পার্টনার থাকলে হয়তো তার ওড়না-টোড়না দিয়ে মুছে দিতো আরকি!
রাহুল : সো্ হোয়াট এতো আফসোস করছিস কেনো নেহাল! পাশে যেহেতু শায়লা আছে, ও না হয় মুছে দিবে! [ শায়লা অবাক হয়ে তাকালো রাহুলের দিক ]
জারিফা : মার্জান! [ সবাই হেসে মার্জানের দিক তাকালে সে ও হাসে ]
জারিফা : গাইস্! আমার না ওর মতো একশ্বাসে কথা বলা আসে না তাও ট্রাই করবো ওকে!
আসিফ : ওকে ওকে! স্টার্ট!
জারিফা : হুম! সকালে যখন সবার আগে ওর ঘুম ভাংগবে! তখন..
– [ নাক ফুলিয়ে ] আহাহা! নবাবজাদিরা নাক ডেকে ডেকে ঘুমুচ্ছে! আর এইদিকে আমার ঘুমটা কই গেলো কে জানে? এতো তাড়াতাড়ি ঘুম ভাংগার কি প্রয়োজন ছিলো! উফফ আমি একা একা বসে কি করবো এখন! [ সবার গায়ের থেকে কাথা কম্বল যেটাই থাকুক ওটা টেনে নিয়ে ] এইইই ওঠ সবগুলো সকাল হয়ে গেছে তো ওঠ ওঠ, [ আর যদি না উঠি তাহলে ওয়াসরুম থেকে জাগ ভরে পানি এনে সর্বনাশ ]
– [ রাস্তায় কোনো ছেলে যখন আমাদের দিক তাকায় তখন ] আচ্ছা এর কি মা বোন নেই? এইভাবে তাকিয়ে থাকার মানেটা কি? সুন্দর কি আমাদের গা ঝড়ে ঝড়ে পড়ছে? [ দাতে দাত ঘেষে ] হনুমান কোথাকার দাড়া লাষ্ট বার দেখবো যদি চোখ না সরাস না আজ তোর একদিন কি আমার একদিন!
– [ কোনো ছেলের সাথে ধাক্ষা লাগলে ] আচ্ছা চোখের এন্টেণা কি হাতে নিয়ে হাটেন? নাকি, অমনি মেয়ে দেখলেই গা ঘেষতে মন চাই?
– [ ছেলেটা যদি সরি বলে ] আরেহ! সরি ও বলে আবার! মানে কি? কথা বলার চান্স নাও তাই না? আমি বুঝি না এসব? ক্লাস টু এর বাচ্চা মনে হয় আমাকে দেখে? হ্যা?
– [ যখন আমরা সবাই রোমান্টিক মুডে তখন সে যুক্তিবাদী ] দেখ! এসব ক্রাশ-ব্রাশ খাওয়ার চেয়ে না ভাত খা পেট টা অন্তত ভরবে, আর যে ছেলেগুলোর উপর ক্রাশ খাচ্ছিস না,সবগুলোই এক নাম্বারের লুচ্চা! এক কথায় এদের সাথে প্রেম করা মানে লাইফটা নিজ ইচ্ছায় হেল করে দেওয়া, আর তোরা যা ভাবছিস প্রেম করলে সব ফ্লিমি স্টাইলের হবে হাহাহা এসব ফ্লিমে হয় বাস্তবে নয়, বাস্তবে তো আজ ওকে ভালো লাগলো তো কাল এর চেয়ে সুন্দর আরেকটি দেখলে আবার ওকে ভালো লাগবে মানে সবই টাইম ওয়েষ্ট!
– [ যখন আমরা সবাই সিরিয়াল দেখি আর ঐদিন ওর কুকিং এর পালা থাকে, তখন রান্নাঘর থেকে ] আল্লাহ! তোদের মতো ফ্রেন্ড আমার শত্রুদের ও না দিক, মানে কি? আজ আমার কুকিং এর পালা বলে কি কেউ একটু আমায় হেল্প ও করবি না? আমি কুক করলে কেউ তো অন্তত কাট করে দিতে পারিস! এমনিতেই আমি পেয়াজ কাটতে গেলে অন্ধ হয়ে যায়, তখন দুনিয়ার সব ইমোশনালই যেনো আমার চোখে এসে পড়ে, ঠাডা পড়ুক তার উপর যে এখনো পেয়াজের ঝাজ দূরীকরণ আবিস্কার করতে পারেনি!
– আচ্ছা টিভির ভলিউম এতো হাই করে রাখতে হয় নাকি? এই আকসারা সিরিয়াল দেখতে দেখতে না তোরা এবং তোদের নাতী-নাতনী ও মরে কবরে কংকাল হয়ে যাবে তাও এই সিরিয়ালের ইন্ডিং হবে না!
– [ যখন আমাদের সাথে অন্যকারো ঝগড়া লাগে ] কি কিহ..কি হয়েছে? কি হচ্ছে এসব? হ্যাংলা-পাতলা দেখে কি গায়ে জোড় নেই ভেবেছিস নাকি? এগুলো আমার ফ্রেন্ডস মানে আল্লাহর দেওয়া তিন-তিনটা এক্সট্রা জান আমার! গায়ে টুকা লাগিয়ে দেখ! দেখনা, হাত কেটে কিমা বানিয়ে না কুত্তা-বিলাইকে ইনভাইট করে খাওয়াবো! ইয়াক ছ্যাঁ! কুত্তা বিলাই ও খাবে না তোর মাংস!
– [ এক্সামে যখন ওর সিট সবার পেছনে হয় ] মানে কি আমি সবার থেকে টাকা কমদেই নাকি, যে আমার সিটই সবার লাষ্টে দিতে হলো, এই টাকলা প্রফেসর নিশ্চিত সামনের সিট ওয়ালাদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছে! আরে নে নে কদিনই আর বাচবি? এমনিতেই তুই শিঘ্রীই আমার অভিসাপে মরবি! টাকলু কোথাকার! মনটা চাচ্ছে তোর মাথায় শিল-পাথর মারি! [ জারিফার অভিনয় দেখে বাকিরা কিটকিটিয়ে হাসতে হাসতে পেঠ ধরে কাৎচিত হয়ে গেছে ]
– সো্ গাইস্! আমি ও না তোমাদের জারিফারটা ফ্রিতে দেখিয়ে দিচ্ছি! ও কেমন এটাও তো জেনে নাও তোমরা!
রিদোয়ান : ইয়াহ! আম ইন্ট্রেষ্টেড!
আলিসা : ওয়াও আম অলসো্ এক্সাইটেড! প্লিজ হারিয়াপ!
মার্জান : শিয়র! [ বলেই দাঁড়িয়ে যায় ]
– [ যখন কোনো প্রোগ্রাম থাকে, প্রোগ্রামের এক সপ্তাহ আগে থেকে মিস্ জারিফা ] ইয়ার! আমার কাছে না ভালো কোনো ড্রেসই নেই! যা আছে সব গুলো দিয়েই পিক তুলা হয়ে গেছে! আচ্ছা ঐদিন না অরেঞ্জ একটা ড্রেস কিনলাম? ঐটা পড়বো নাহয়? উমহুম! অরেঞ্জ পড়লে তখন যদি আমায় কালচে লাগে! আচ্ছা গ্রীন কালার গাউনটা পড়বো? উফফ বাট ঐটা তো আবার আয়রন করতে হবে! হোয়াইট গাউনটা পড়ি নাহয়? নানাহ ওটা বেশী গড়জিয়াস হয়ে যাবে, এককাজ করবো মেজেন্ডা থ্রী-পিসটাই পড়ে ফেলবো, আরে ইয়ার এখন তো ডার্ক লিপিস্টিক চলছে আর আমার তো ডার্ক মেজেন্ডা লিপস্টিকটাই কেনা হয়নি! তাহলে কি পড়বোওওওওও?
– [ যখন দূর থেকে কোনো হ্যান্ডসাম ছেলে দেখবে ] ওয়াওওওও গাইস্ লুক এট হিম! হোয়াট অ্যা কুল বয়! লাইফ পার্টনার বানাও তো এমনিই কোনো ছেলেকে বানাও!
– [ যখন ছেলেটিকে কাছ থেকে দেখে ] পুরাই পটোলের মতো দেখতে, দূর থেকে তো পুরো শাহ-রুখ-খান লাগছিলো! দাত গুলো দেখ কি কালো, যতো রকমের হিরোইন আছে বোধহয় সবই খায়,
মার্জান : [ যখন ও মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াবে! এবং আয়নার দিক তাকিয়ে নিজের সাথে নিজে যেভাবে কথা বলে ]
– ওয়াও জারিফা! আচ্ছা এতো সুন্দর কেনো তুমি? আরেকটু কম হতে পারো না? ইশশিরে! লজ্জা লাগছে তো, তোমার এই হাসি, তোমার ঠোট, তোমার চোখ,ওহ কামঅন আমি তো মাশাল্লাহ বলতেই ভুলে গিয়েছি! মাশাল্লাহ মাশাল্লাহ কারো নজর যেনো না লাগে!
– [ আর এসব দেখে যদি আমরা হাসি ] হাসার কি আছে? যা সত্যি তাই তো বললাম? কি স্নেহা আমি সত্যি বলিনি? [ আমি আর শায়লা যদিও বলি তুই দেখতে হনুমান, বিড়ালের মতো কিন্তু মহানদয়াশীল ব্যাক্তি স্নেহা তার তারিফ করেই ছাড়বে ]
মার্জান : [ এক্সামের আগের দিন রাতে বই খুলে ] আস্তাগফিরুল্লা এত্তগুলা পড়া কেমনি শেষ করবো? আমি তো নিশ্চিত ফেইল! ইয়া আল্লাহ! আর জীবনেও কোনো গুনাহ করবো না, কোনো ছেলের দিক তাকাবো ও না ক্রাশ ও খাবো না! শুধু লাষ্ট বারের মতো অন্তত পাশ মার্কসটা পাইয়ে দিও! ইয়ার স্নেহাআআআ কাল না তুই আমার পাশেই বসবি! ওকে? আমি কিন্তু তোর পেপার কপি করবো, আচ্ছা স্নেহা! এতো পড়া পড়িস কিভাবে? আল্লাহ যদি তোর থেকে কিছু ব্রেইন আমায়ও দান করতো! [ কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো বাকিরা ]
মার্জান : হাহা! এইটুকুই জেনে রাখো গাইস্! ওরনা আরো হাজার হাজার আছে, তা সবার সামনে শো করতে চাচ্ছিনা! [ সবাই তালি দিয়ে উঠলো ]
জারিফা : [ হেসে ] যা বললি এসবও কি কম ছিলো নাকি?
মার্জান : তোর অপেক্ষায় এসব অনেক কমই ছিলো! [ হাসতে লাগলো সবাই ]
রিদোয়ান : সিরিয়াসলি এত্তো চোর তুমি পড়াই?
জারিফা : হুমমম! পড়তে আমার মোটেও ভালো লাগেনা! আফসোস! যদি এমন হতো যে প্রত্যেকদিন শুধু ক্লাস হবে কিন্তু কোনো এক্সামই হবে না! ইশশ! কি ভালো হতো তাই না?
রাহুল : ইয়াহ ইউ আর রাইট জারিফা! এই এক্সাম দেওয়াটা যে বের করেছে না ওকে যদি আমি একদিন পাই! তান্দুরী বানিয়ে ছাড়বো!
নেহাল : কথা না ঘুরিয়ে বল ভয় লাগছে ডের নিবো না ট্রুথই নিবো!
রাহুল : ওকে যা! ডের নিলাম! বল কি করতে হবে?
নেহাল : [ হেসে এক্সাইটেড হয়ে লাফিয়ে দাঁড়িয়ে ] ইয়াহহহু এখন হবে আসল মজা! জাষ্ট গিভ মি ফাইভ মিনিটস্ গাইস আম কামিং! [ বলেই দৌড় দিয়ে কই যেনো চলে গেলো, হাসতে লাগলো সবাই, কিছুক্ষণ পরই দেখে নেহাল একটা বড় বাটিতে ফ্রিজ থেকে মাঝারি আকারের দুটি বরফ ভরে এনেছে ]
রোহানী : অহ মাই গড! আইস্ দিয়ে কি করবা?
নেহাল : আইস্ না এগুলো রাহুলের জন্য সো্প হবে! কুল কুল আইস্ যখন বডিতে লাগাবে না তখন বুঝবে আমার ডেরটা কতো ডেঞ্জার ছিলো [ রাহুলের দিক তাকিয়ে ] সো্ রাহুল এটার জন্য না আপনার থেকে জ্যাকেট এন্ড শার্ট ওপেন করে ফেলতে হবে!
রাহুল : ওপেন করে কি হবে?
নেহাল : ওপেন করার পর তোর খালি গায়ে এই আইস্ গুলো আমি সো্প এর মতো রাব করবো যতোক্ষণ না পর্যন্ত আইস মেল্টিং না হয়!
নেহাল : কন্টিনিউ ভাবী কন্টিনিউ! [ স্নেহা হেসে রাহুলের বুক থেকে পেট এবং পেট থেকে বুক পর্যন্ত আইস্ স্লাইডিং করতে লাগলো ]
নেহাল : আহাহা! ইহিহিহিহি! উহুহুহু! [ বাকিরা ও হাসতে লাগলো নেহালের সাথে সাথে ] হাউ ইজ ইয়র ফিলিং রাহুল?
রাহুল : [ চোখ টিপ মেরে ] মাচ বেটার!
নেহাল : ইয়াহ আই নো আই নো! হিহি লুক গাইস্ আইস্ মেল্টিং হয়ে সিক্স প্যাক দিয়ে ঝড়ে ঝড়ে পড়ছে! [ হাসতে লাগলো রাহুল! বাকিরা ও মজা নিতে ব্যস্ত এক একজন একেক রকমের কথা বলে ]
____ আর এইদিকে স্নেহা আত্নহারা হয়ে ধীরেধীরে রাহুলের বুকে আইস্ স্লাইড করতে ব্যস্ত! স্নেহার নজর যেনো সরছেই না রাহুলের বুকের মাঝ থেকে, বরফ গলে পানি হয়ে পড়ার প্রতিটি মুহুর্ত, ঠান্ডায় মাঝেমাঝে রাহুলের কেপে উঠা, নিশ্বাস পরিত্যাগে রাহুলের পেটের দিক আপ-ডাউন করা! এসব দেখে যেনো স্নেহার হাত-পা সবই অবোশ হয়ে যাচ্ছে!
রাহুল : [ ফিসফিসিয়ে ] কি দেখছো স্নেহা?
স্নেহা : [ চমকে উঠে রাহুলের দিক তাকিয়ে ] হ্যাঁ?
রাহুল : বাহ স্নেহা! তুমি তো দেখছি হারিয়েই গেছো!
স্নেহা : [ আড়চোখে সবার দিক একবার তাকিয়ে ] কক..কই নাতো! [ বলেই তাড়াতাড়ি স্লাইড করতে লাগলো ]
রাহুল : [ হেসে অন্যপাশ ফিরে দাতে দাত ঘেষে ] কামঅন স্নেহা! স্লোলি করো আমার এমনিতে কন্ট্রোল হচ্ছে না তোমার হাতের টাচে! [ স্নেহা লজ্জিত একটি হাসি দিয়ে ধীরেধীরে স্লাইড করতে লাগলো হঠাৎ তখনিই রাহুল তার বুকের থেকে আংগুল দিয়ে স্লাইড করে কিছু পানি নিয়ে স্নেহার কোমোড়ে ধরলো, মুহুর্তেই স্নেহা চোখ বড় করে কেপে উঠে, এবং সাথেসাথেই হাত থেকে বরফের বাটিটা ছেড়ে দিলো ]
রোহানী : [ হেসে ] ওহ শিট!
স্নেহা : সরি সরি!
নেহাল : ইটস্ ওকে ভাবী! এমনিতেও এটা রিভেঞ্জ হয়নি! ওতো উল্টো ওর সিক্সপ্যাক দেখিয়ে আপনার সাথে রোমান্স শুরু করে দিয়েছে!
রোহানী : ওকে গাইস্ এইবার না গেইম রুলসটা একটু চেঞ্জ করা যাক আই মিন! গেইমটা শুধু কাপলদের জন্য হবে ওকে? ফর এক্সাম্পল যারদিক গিয়ে বোতোলের হেড থামবে সে এবং তার পার্টনারকে কি করতে অর কি বলতে হবে সেটা আমরা সিংগেলরা বলবো! দেন কম্পিটিশনটা ওদের মধ্যেই হবে লাইক গার্ল বয়কে হারাবে! বয় গার্লকে হারাবে!
রোহানী : ভাবী! ভাইয়া তো করবেই তবে আপনার ও কিন্তু করতে হবে যেহেতু কাপল গেইম!
জাফসিন : কামঅন ভাবী! ভাইয়াকে হারানোর এটাই চান্স!
রোহানী : বাট ডোন্ট ওয়ারী গাইস্ তোমাদের সেইম জিনিষ দেবো না এক এক জনকে এক একটা! ওকে? ভাবী যেহেতু একটু লজ্জাবতী সো্ ওনার থেকে কিছু আস্ক করা যাক এবাউট রাহুল ভাইয়া! [ বলেই চিন্তা করতে লাগলো ] উমম! কি আস্ক করা যায়!
আলিসা : আমি করি?
রোহানী : ওকে! ইন্ট্রেষ্টিং কিছু করবি!
আলিসা : ওকে! [ বলেই স্নেহার দিক তাকিয়ে ] ভাবী আপনি না আমাদের এটা শেয়ার করেন যে আপনি ভাইয়াকে কেনো ভালোবাসেন? এন্ড কতোটুকু আই মিন কতো পার্সেন্ট ভালোবাসেন? আর হ্যা! ভাইয়ার এমন একটা অভ্যাসের কথা বলবেন যেটা আপনার খুবই পছন্দ!
স্নেহা : [ মাথা নুয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ] কে..কেনো ভালোবাসি বব..বলতে গেলে আন্সার হবে নো রিজ্ন! আই লাভ হিম উইদাউট এনি রিজ্ন!
নেহাল : [ তালি দিয়ে ] সুপার্ভ ভাবীই!
স্নেহা : কতোটুকু কক..কতো পার্সেন্ট ভালোবাসি? এক্সুলি আই লাভ হিম অ্যা লট! সো্ আই থিংক ভালোবাসা পার্সেন্ট দিয়ে কাউন্ট করা যায় না! [ রাহুলের দিক তাকিয়ে ] যদিও বলো কতো পার্সেন্ট লাভ করি তা..তাহলে বলবো অতো পার্সেন্ট লাভ করি, যে সংখ্যা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ও কখনো কাউন্ট করে শেষ করা যাবেনা!
আলিসা : ওয়াওও ভাইয়া! লুক ভাবী তোমাকে কত্তো লাভ করে! এন্ড অলসো্ ইউ আর সো্ লাকি বয়! হিহি!
স্নেহা : বিকজ অল আর বেড হ্যাবিটস! থিংক রাহুল! আমার আপনার বেড হ্যাবিটস গুলো পছন্দ বাট আমি আপনাকে এসবে বারণ করি কারণ এসব আপনার জন্য হার্মফুল!
আসিফ : [ হেসে ] ইন্ট্রেষ্টিং! বাট বেড লাক ফর রাহুল! স্নেহার পছন্দ হলেও তোর কোনো লাভ নেই দোস্ত!
আলিসা : বাট ভাবী! কয়েকটা বেড হ্যাবিটস্ এর নাম বলে দাওনা আমরাও একটু শুনি!
স্নেহা : এলকোহল! ইটস্ ইঞ্জুরিস্ টু লিভার! বাট যখন ও এটা খায় তখন ও অনেক কিউট করে কথা বলে! [ হেসে উঠলো রাহুল ]
আলিসা : হাও কিউট!
স্নেহা : ড্রাইভিং উইদ সানগ্লাস, ইটস্ অ্যা ভেরী ডেঞ্জার ফর অল ড্রাইভারস্! যেটা ও সচরাচরই করে থাকে! বাট যখন ও সানগ্লাস পড়ে তখন ওকে অনেক হ্যান্ডসাম লাগে!
– আরেকটা যেটা আছে মানে রাতেও সানগ্লাস পড়ে থাকে মাঝেমাঝে! এটা কোনো হার্মফুল না বাট তাও এটা ওর বেড হ্যাবিটস্ এ পড়ে কজ যেহেতু ও বেশিরভাগই ব্লাক ড্রেস পড়ে, সো্ তাতে অনেকে মবস্টার ও ভেবে নিতে পারে অর ব্লাইন্ড ও! [ কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো সবাই ]
– সো্ তুমি না আমাদের একটিং করে দেখাও যে যখন তোমরা রোমেন্স করো তখন ও কি ভাবীর এক্সপ্রেশন লজ্জাবতী থাকে? নাকি অন্যরকম? আই মিন কেমনটা থাকে ওটাই শো করো প্লিজ!
নেহাল : গাইস্ জাষ্ট লাইক এমনটা হয়, যখন রাহুল রোমান্সের জন্য ঝাপিয়ে পড়ে আর ভাবী বলে কাম বেবী কাম!
রাহুল : নোওওও! শি নেভার টোল্ড মি কাম বেবী কাম! এক্সুলি ও কেমন বিহেভ করে আমি দেখাচ্ছি, [ বলেই স্নেহার কাধে হাত রেখে জড়িয়ে কাছে টেনে নিলো ]