বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1188



নীরবে_ভালোবাসি পার্ট: ৬

0

নীরবে_ভালোবাসি

পার্ট: ৬

লেখিকা: সুলতানা তমা

এক মাস পর….

মধ্যে একটা মাস কেটে গেল কিন্তু মেঘের মধ্যে কোনো পরিবর্তন হলো না। অবশ্য না হওয়াটাই তো স্বাভাবিক মেঘ তো আর ইচ্ছে করে বিয়েটা করেনি যে আমাকে মেনে নিবে। তাছাড়া আমি তো এখন আর মেঘের সামনে ভালোবাসা প্রকাশ করিনা যে মেঘ বুঝবে আমাকে। সেদিনের পর আর কখনো মেঘ’কে বুঝতে দেইনি আমি ওকে কতোটা ভালোবাসি, সেদিনের পর মেঘের সাথে আমার প্রয়োজন ছাড়া কথা হয়নি। মেঘের প্রতি আমার ভালোবাসা দিন দিন বেড়েই চলেছে জানিনা কিসের জন্য এমন হচ্ছে। আর আ…
রুহান: কণা আসবো? (জানালার কাছে দাঁড়িয়ে এসব ভাবছিলাম রুহানের ডাকে ভাবনায় ছ্যাদ পড়লো, পিছন ফিরে দেখি রুহান দরজায় দাঁড়িয়ে আছে)
আমি: হ্যাঁ এসো।
রুহান: কলেজে যাবে না?
আমি: এইতো যাবো।
রুহান: আমি ওদিকে যাবো চলো তোমাকে নামিয়ে দেই।
আমি: উঁহু আমি একা যেতে পারবো।
রুহান: পপিকেও ওর কলেজে ছেড়ে দিবো।
আমি: সত্যি?
রুহান: হ্যাঁ চলো।
আমি: তুমি যাও আমি আসছি।
মেঘের জন্য তো নিজের ভবিষ্যৎ অন্ধকার করতে পারবো না তাই পড়াশোনাটা আবার শুরু করেছি।

রেডি হয়ে বেরুনোর জন্য পা বাড়াতেই দরজায় মেঘের সাথে ধাক্কা খেলাম।
মেঘ: কলেজে যাচ্ছ?
আমি: হুম।
মেঘ: আমিও তো অফিসে যাচ্ছি চলো তোমাকে নামিয়ে দিবো। (এতোদিন একা একা কলেজে গিয়েছি কখনো তো এই কথা বলেনি আজ হঠাৎ কি হলো)
মেঘ: কি হলো এমন হা হয়ে তাকিয়ে আছ কেন চলো।
আমি: তুমি যাও আমি রুহানের সাথে চলে যাবো।
মেঘ: ওহ। (মেঘ মন খারাপ করে আমাকে পাশ কাটিয়ে রুমের ভিতরে চলে গেল। করুক মন খারাপ আমার কি আমি বেরিয়ে আসলাম)

তোহা: নতুন আম্মু আসবে কখন তুমি?
আমি: ক্লাস শেষ হলেই চলে আসবো মা।
তোহা: তোমাকে ছাড়া আমার ভালো লাগে না প্রমিস করো তাড়াতাড়ি চলে আসবে।
আমি: প্রমিস করলাম তাড়াতাড়ি চলে আসবো। তুমি দাদুর কাছে থেকো কোনো দুষ্টুমি করো না।
তোহা: উম্মম্মম্মম্মাহ। (তোহা খুশি হলেই আমার নাকে একটা চুমু দেয় এখনো দিলো, মেয়েটার প্রতি দিন দিন মায়া বেড়েই চলেছে বড্ড ভয় হয় মেঘ যদি কখনো তোহাকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে নেয়, আমি হয়তো তখন মরেই যাবো)
তোহা: যাও তুমি পঁচা মেয়ে তুমি আমাকে চুমু দাওনি। (ভাবনার জগতে ডুবে ছিলাম তোহার অভিমানী কথায় হেসে দিলাম। ওর কপালে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম)

পপি আর আমি পিছনে বসে আছি রুহান ড্রাইভ করছে, রুহান যে বারবার আয়নায় আমাকে দেখছে এইটা পপিও লক্ষ করেছে। মেয়েটা মন খারাপ করে বসে আছে, বুঝিনা সত্যিকারের ভালোবাসা গুলো মানুষ বুঝতে চায় না কেন। সবসময় শুধু সত্যিকারের ভালোবাসা দূরে ঠেলে দিয়ে সবাই মরীচিকার পিছনে ছুটে, কেন হয় এমন?
আমি: চিন্তা করোনা সব ঠিক হয়ে যাবে। (পপির হাতের উপর হাত রেখে বললাম, পপি মৃদু হাসলো। আমি নিজেই তো জানিনা রুহান আদৌ পপির ভালোবাসা বুঝবে কিনা)
আমি: আর একটু সামনেই তো আমি নেমে যাবো অনেকটা পথ দুজন একসাথে যাবে তখন নাহয় ওকে কিছু বলো।
পপি: কি লাভ হবে বলে যে বুঝার সে অল্পতেই বুঝে। তুমি তো ভাইয়াকে ভালোবাস কিন্তু ভাইয়ার সামনে প্রকাশই করো না আমিও নাহয় রুহানকে এভাবেই নীরবে ভালোবেসে যাবো।
আমি: যারা বুঝেও না বুঝার ভাণ করে তাদের নীরবেই ভালোবাসতে হয়।
পপি: হুম।
রুহান: কণা তোমার কলেজে চলে এসেছি।
আমি: হুম।

ক্লাস শেষ করে তাড়াহুড়ো করে কলেজ থেকে বের হলাম অনেক দেরি হয়ে গেছে আজ, ওদিকে মেয়েটাকে প্রমিস করেছিলাম তাড়াতাড়ি ফিরবো। কলেজ থেকে বেরুতেই দেখি মেঘের গাড়ি, আমাকে দেখেই মেঘ নেমে আসলো।
আমি: তুমি?
মেঘ: চলো।
আমি: তুমি আমাকে নিতে এসেছ?
মেঘ: স্যার ফোন করে বললেন তোমাকে নিয়ে যেন এক্ষণি তোমাদের বাসায় চলে যাই তাই অফিস থেকে সোজা এদিকেই চলে আসলাম।
আমি: আব্বু হঠাৎ…
মেঘ: গাড়িতে বসেই ভাবো নাহয়।
আমি: হু।

সত্যিই গাড়িতে বসে ভাবছি আব্বু হঠাৎ এভাবে এতো তাড়াতাড়ি যেতে বললেন কেন কোনো সমস্যা কিনা কে জানে। একটা ফোন করে কি দেখবো ভাবছি হুট করে মেঘের দিকে নজর পড়লো, ও বারবার আমাকে আড়চোখে দেখছে। কি হলো ওর আবার হঠাৎ করে কে জানে।

বাসার সামনে এসে আমি তো অবাক পুরো বাড়ি সাজানো অনেক মেহমান। গাড়ি থেকে নামতেই আব্বু আম্মুকে দেখতে পেলাম, তোহা আম্মুর কোলে ছিল আমাকে দেখেই দৌড়ে চলে আসলো।
তোহা: এতো দেরি করলে যে।
আমি: কান ধরেছি মামুনি আর হবেনা। (তোহাকে কোলে নিয়ে ভিতরে আসলাম)
আমি: আব্বু আজ কি কোনো অনুষ্ঠান?
আম্মু: দেখেছ আমি বলেছিলাম না আমার মেয়ে ও বাড়িতে ভালো নেই। যে মেয়ে নিজের বার্থডে কখনো ভুলেনি সে মেয়ে কিনা আজ ওর বার্থডে ভুলে গেল, খুব কষ্টে আছে তাই ভুলে গেছে।
আমি: আম্মু তুমি অযতা কাঁদছ আমি ওখানে খুব ভালো আছি আর মানুষ মাত্রই তো ভুল হয় তাই হয়তো বার্থডে ভুলে গেছি।
আম্মু: হয়েছে আমাকে আর ভুল বুঝাতে হবে না। (আম্মুকে এসে জড়িয়ে ধরলাম, মেঘের দিকে চোখ পড়লো ও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে)

আগে জানলে আব্বুকে এসব পার্টির কথা না করতাম এখন আর এসব ভালো লাগে না। দিন দিন কষ্ট আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিচ্ছে আর পারছি না, হুট করে সবকিছু কেমন যেন উলটপালট হয়ে যাচ্ছে। শাড়ির কুচি ঠিক করছিলাম হঠাৎ দরজায় চোখ পড়লো, মেঘ দাঁড়িয়ে আছে আর আমার দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। চোখ ফিরিয়ে নিয়ে কুচি ঠিক করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম, আজ যেন কুচিগুলো ঠিক হতেই চাচ্ছে না। আমাকে অবাক করে দিয়ে মেঘ এসে আমার পায়ের কাছে বসে পড়লো, একটা একটা করে খুব যত্ন করে কুচিগুলো ঠিক করে দিলো। আমি হা হয়ে তাকিয়ে আছি ওর দিকে।
মেঘ: সাজুগুজু করবে না? সাজলে কিন্তু তোমাকে দারুণ লাগে।
আমি: না চোখে একটু কাজল দিবো ব্যাস।
মেঘ: কাজলটা আমি দিয়ে দেই? (মেঘের এমন কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালাম ওর দিকে)
মেঘ: ভয় নেই কাজল আমি ভালোভাবে দিয়ে দিতে পারি।
আমি: কখনো কাউকে দিয়ে দিয়েছ? (মেঘ মন খারাপ করে কাজলটা হাতে নিলো। এই প্রশ্ন করা হয়তো আমার ঠিক হয়নি, মেঘ হয়তো শায়লাকে দিয়ে দিতো)
মেঘ: এদিকে তাকাও। (মেঘ আমার একদম কাছে এসে খুব যত্ন করে আমার দুচোখে কাজল দিয়ে দিলো। এই প্রথম মেঘ আমার এতোটা কাছে এসেছে বেশ অবাক হয়েই তাকিয়ে আছি ওর দিকে)
মেঘ: মিষ্টি পরীটা। (মেঘ আমার নাক টেনে দিয়ে হাসতে হাসতে রুম থেকে বেরিয়ে গেল)

কি ব্যাপার বাসার সবাইকে পার্টিতে দেখছি কিন্তু রুহানকে দেখতে পাচ্ছি না।
মেঘ: কাউকে খুঁজছ?
আমি: হ্যঁ রুহানকে।
মেঘ: ওহ!
আমি: আসেনি রুহান?
মেঘ: জানিনা। (মেঘ রাগে হনহন করে চলে গেল, কি ব্যাপার আজ মেঘ আমার মুখে রুহান নাম শুনলেই রেগে যাচ্ছে বা মন খারাপ করে ফেলছে)

সারাদিন পার্টিতেই কেটে গেল রাত হয়ে গেছে এবার বাসায় ফিরে যেতে হবে, তার আগে আব্বুর সাথে আলাদা কথা বলা প্রয়োজন উইল এর কি করেছেন জানতে হবে।
আব্বু: কণা তোকেও চলে যেতে হবে? থাকনা মা আজকে।
আমি: না আব্বু বাসার সবাই যখন এসেছে ওদের সাথে চলে যাবো। তুমি রুমে এসো তো কথা আছে। (আব্বুকে রুমে নিয়ে আসলাম)
আব্বু: কিছু বলবি?
আমি: উইল এর কি করেছ?
আব্বু: হ্যাঁ তোকে এটাই বলতে চেয়েছিলাম, সবকিছু হয়ে গেছে।
আমি: কিভাবে করলে?
আব্বু: সবকিছু তোহার নামে করে দিয়েছি। তোহার আঠারো বছর পূর্ণ হলে সবকিছু ও পাবে আর আপাতত সবকিছু আমিই দেখাশোনা করবো। তোহার আঠারো বছর পূর্ণ হবার আগে যদি আমার কিছু হয়ে যায় তাহলে সবকিছু মেঘ দেখাশোনা করবে। তোকে না জানিয়ে একটা কাজ করেছি, এই বাড়িটা শুধু তোর নামে দিয়েছি।
আমি: ঠিক আছে।
মেঘ: কণা যেতে হবে তো। (মেঘ এখানে? এসব শুনেনি তো)
আমি: আসছি।

বাসায় এসে ঢুকতেই আমার ফোনের মেসেজটোন বেজে উঠলো। “ছাদে এসো” আশ্চর্য রাত দশটা বাজে এতো রাতে রুহান আমাকে ছাদে ডাকছে কেন?

তোহা কোলে ঘুমিয়ে পড়েছে ওকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে ছাদে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম, বারান্দা থেকে মেঘের কন্ঠ ভেসে আসলো।মেঘ: বললাম তো যতো টাকা লাগে আমি দিবো আমার শুধু কাজটা হওয়া চাই আর সেটা খুব তাড়াতাড়ি। (কি কাজের জন্য মেঘ টাকা দিতে চাইছে আর কাকেই বা এতো রাগ দেখাচ্ছে? মেঘের কথায় আর পাত্তা না দিয়ে ছাদের দিকে পা বাড়ালাম)

পুরো ছাদ সাজানো কাঁচা ফুল, মরিচবাতী আর বেলুন দিয়ে, ছাদের মাঝখানে একটা টেবিল আর টেবিলে কেইক রাখা যাতে লিখা “হ্যাপি বার্থডে কণা” তারমানে এসব রুহানের কাজ আর এজন্যই ও আমাকে ছাদে আসতে বলেছে।
রুহান: হ্যাপি বার্থডে কণা। (রুহানের কথায় চমকে উঠে পিছনে তাকালাম, ও হাসছে)
আমি: এসব কি রুহান?
রুহান: আজ তো তোমার বার্থডে।
আমি: হ্যাঁ আর সেটা আব্বু সেলিব্রেট করেছেন।
রুহান: তাতে কি হয়েছে আমি সেলিব্রেট করবো না, আমার কণার বার্থডে বলে কথা।
মেঘ: ওহ তুমি এখানে। (মেঘের কন্ঠ শুনে ছাদের দরজায় তাকালাম ও চারদিকের সাজানো দেখছে)
আমি: হ্যাঁ তুমিও এসো।
মেঘ: না তাড়াতাড়ি রুমে এসো তোমার জন্য খুব বড় একটা সারপ্রাইজ আছে।
আমি: কি সারপ্রাইজ?
মেঘ: রুমে এসো, আসছি। (মেঘ রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেল, কি সারপ্রাইজ দিবে মেঘ?)
আমি: রুহান আর কতো বুঝাব তোমাকে।
রুহান: কণা আমি…
আমি: এই ভালোবাসা টুকু পপিকে দাও দেখবে মেয়েটা তোমার জন্য সব ভালোবাসা উজাড় করে দিবে অনেক সুখী হবে তোমরা দুজন।
রুহান: তোমার বার্থডে আজ আর এসব তোমাকে খুশি করার জন্য করেছি তুমি কিনা পপিকে নিয়ে পরে আছ।
আমি: খুশিতো সেদিন হবো যেদিন ঠিক এভাবে পুরো ছাদ সাজিয়ে হাতে একটা রিং নিয়ে ঠিক এই জায়গায় দাঁড়িয়ে পপিকে প্রপোজ করবে।
রুহান: কণা…
আমি: আসছি।
রুহান: একটা কথা শুনে যাও কণা, ভাইয়ার জন্যই তো আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছ? তুমি আমাকে মেনে না নিলে আমি ভাইয়াকে খুন করে আমার পথের কাটা দূর করবো, তোমার আর আমার মাঝখানে যে আসবে তাকেই আমি খুন করবো। (রুহানের কথার কোনো জবাব না দিয়ে রুমে চলে আসলাম)

রুমে এসে মেঘ’কে কোথাও দেখতে পেলাম না, রাগ করে আবার কোথাও চলে গেল কিনা কে জানে। ঘুমানোর জন্য বিছানায় আসতেই আমার বালিশের উপর এক জোড়া নূপুর দেখতে পেলাম। বেশ অবাক হয়ে নূপুর জোড়া হাতে নিলাম, কে রাখলো নূপুর দুটু এখানে?
মেঘ: ইচ্ছে ছিল নূপুর দুটু নিজ হাতে তোমার পায়ে পরিয়ে দিবো কিন্তু ছাদের দৃশ্য দেখার পর ইচ্ছেটা মরে গেছে। (অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি মেঘের দিকে, সত্যিই এইটা সেই মেঘ তো যে আমাকে কথায় কথায় কষ্ট দিতো)
মেঘ: নূপুর দেখে অবাক হয়েছ তাই না? আজকাল তো সবাই পায়েল দেয় আমি কেন নূপুর দিলাম এটাই ভাবছ তো?
আমি: (নিশ্চুপ)
মেঘ: আমি চেয়েছিলাম তুমি নূপুর দুটু পায়ে দিয়ে.. থাক অন্যদিন বলবো এখন ভালো লাগছে না।
আমি: এটাই সারপ্রাইজ?
মেঘ: উঁহু অনেক বড় সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য যে সারপ্রাইজে তুমি একদম চমকে যাবে।
আমি: কি সারপ্রাইজ?
মেঘ: বোকা মেয়ে তো তুমি, আগে থেকে বলে দিলে সারপ্রাইজ আর সারপ্রাইজ থাকে নাকি? সময় হলে ঠিক জানতে পারবে।
আমি: হুম।
মেঘ: রুহানের সাথে এতো মেলামেশা না করলে হয় না?
আমি: মেলামেশা তাও আমি? কখন করলাম? ওকে তো আমি সমানে বুঝিয়ে যাচ্ছি কিন্তু ওর পাগলামি যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে। একটু আগে কি বলেছে শুনবে? রুহান আর আমার মাঝখানে যে আসবে তাকেই নাকি ও খুন করবে।
মেঘ: প্রয়োজন হলে খুন আমিও করতে পারি।
আমি: কি বললে?
মেঘ: কোথায় কি?
আমি: তুমি কি যেন আস্তে আস্তে বললে।
মেঘ: কই কি বললাম। (মেঘ আস্তে বললেও আমি স্পষ্ট শুনেছি ওর কথাটা, কি বলছে ও এসব। ওদিকে রুহানও এসব বলছে, কি চাইছে ওরা দুভাই)
মেঘ: নূপুর দুটু কি পরে দেখাবে আমাকে?
আমি: হু।

বিছানায় বসে এক নূপুর পায়ে দিলাম, অন্য নূপুরটা হাতে নিতেই মেঘ আমার পায়ের কাছে এসে বসলো। আমার হাত থেকে নূপুরটা নিয়ে ও নিজ হাতে খুব যত্ন করে আমার পায়ে পরিয়ে দিলো। মুগ্ধ হয়ে দেখছি মেঘ’কে এতো পাল্টে গেল কিভাবে? আজ তো দরজার বাইরে কেউ দাঁড়িয়ে নেই ওকে পরীক্ষা করার জন্য তাহলে আজ মেঘ এসব কেন করছে? তাহলে কি মেঘ আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে…
মেঘ: কি হলো হাসছ যে?
আমি: এমনি। (আজকের এই মেঘ’কে দেখে নিজের অজান্তেই হাসছিলাম হঠাৎ ফোনের রিংটোন বেজে উঠাতে হাসি নিমিষেই মিলিয়ে গেল। এতো রাতে কে ফোন দিল? ফোন হাতে নিয়ে দেখি আম্মু, কোনো বিপদ হলো নাতো? তাড়াতাড়ি ফোন রিসিভ করলাম)
আমি: আম্মু…
আম্মু: কণা তোতর আআব্বু…
আমি: কি হয়েছে আব্বুর?
আম্মু: (নিশ্চুপ)
আমি: আম্মু তুমি এভাবে কাঁদছ কেন কি হয়েছে আব্বুর?
আম্মু: তোর আব্বুকে কারা যেন খুন করেছে।
আমি: কি?
আম্মু: একটু আগে কজন সন্ত্রাসী এসে তোর আব্বুকে… (আম্মু হুহু করে কেঁদে দিলো, কি বলছে আম্মু এসব আমি কি সত্যি শুনছি এসব)
আম্মু: এই কাজ কেউ করিয়েছে নাহলে আমাকে খুন করলো না কেন আর তোর আব্বুকে মারার পর একজনের কাছে ফোন আসে, ফোন রিসিভ করে লোকটি বলেছিল “স্যার কাজ শেষ”
হাত কাঁপতে কাঁপতে ফোনটা হাত থেকে পরে গেল, চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছে আমার।
মেঘ: কণা কি হয়েছে তোমার কে ফোন দিয়েছিল।
আমি: মেঘ আব্বু আব্বু…(মাথা ঘুরিয়ে পরে যাচ্ছিলাম মেঘ ওর বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো আমাকে)
মেঘ: কি হয়েছে স্যার এর?
আমি: খুখুখুন।
মেঘ: হোয়াট?

মেঘের বুকে মাথা রেখে নিশ্চুপ হয়ে বসে আছি, কান্না পাচ্ছে না আমার পাথর হয়ে গেছি আমি। কে করলো এই কাজ মাথায় আসছে না, কারো সাথে তো আব্বুর শত্রুতা ছিল না তবে কে কর… “স্যার কাজ শেষ” কথাটা কাকে বলেছে সন্ত্রাসীরা কে এই লোক?
আব্বুর শেষ কথাটা মনে পড়ছে “তোহার আঠারো বছর হবার আগে আব্বু মারা গেলে সবকিছুর দেখাশোনা মেঘ করবে” তখন তো মেঘ আমাকে ডাকতে গিয়েছিল হয়তো কথাটা শুনেছে তবে কি মেঘ আব্বুকে… হতে পারে ও এখনি সবকিছুর মালিক হতে চায় তাই আব্বুকে সরিয়ে দিয়েছে। মেঘের একটু আগের কথাগুলো কানের মধ্যে বাজছে “সারপ্রাইজ আছে যে সারপ্রাইজে তুমি চমকে যাবে” তবে কি এটাই মেঘের সারপ্রাইজ? “প্রয়োজন হলে খুন আমিও করতে পারি” “যতো টাকা লাগে আমি দিবো আমার শুধু কাজটা হওয়া চাই আর সেটা যেন খুব তাড়াতাড়ি হয়” মেঘ এর বলা সব কথা গুলোর মানে তো একটাই দাঁড়াচ্ছে, তবে কি সত্যি মেঘ আব্বুকে খুন করেছে?
মেঘ: কি হলো কণা আমাকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিলে কেন?
আমি: মেঘ তুমি পারলে এই কাজ করতে?
মেঘ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে, ওর থেকে দূরে সরে আসলাম। ইচ্ছে হচ্ছে এই মুহূর্তে ওকে আমি খুন করে ফেলি…

চলবে?

নীরবে_ভালোবাসি পার্ট: ৫

0

নীরবে_ভালোবাসি

পার্ট: ৫

লেখিকা: সুলতানা তমা

মেঘ’কে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিলাম। মেঘ তাড়াতাড়ি দরজার কাছে গেল চারদিকে চোখ বুলিয়ে ফিরে আসলো আমার কাছে।
মেঘ: ওয়াক থুঃ।
আমি: হু!
মেঘ: অবাক হচ্ছ কেন? তোমার কি মনে হয় আমি তোমাকে ভালোবেসে এমন করেছি? আর ঠোঁটে এতো গাড়ো করে লিপস্টিক দিতে হয় নাকি যত্তোসব।
আমি: কি বলছ এসব তুমি?
মেঘ: তুমি না সত্যি একটা বোকা মেয়ে, আরে রুমের বাইরে দাদি দাঁড়ানো ছিল তাই একটু অভিনয় করলাম। (বিছানায় বসে পড়লাম চুপচাপ, চোখ দিয়ে একনাগাড়ে পানি পড়ছে। মেঘ এমন করতে পারলো)
মেঘ: দাদি আমার হাতে শাড়িটা দিয়ে বললো উপরে নাকি আসতে পারবে না সিঁড়ি দিয়ে উঠতে কষ্ট হয় আমি যেন তোমাকে শাড়িটা দিয়ে দেই কিন্তু তখন আমার সন্দেহ হয়। আর আমার সন্দেহটাই সত্যি হয়েছে, দাদি আমাকে পরীক্ষা করার জন্য লুকিয়ে উপরে এসেছিল তাই তো পরীক্ষাটা ভালো করে দিলাম হাহাহা।
আমি: (নিশ্চুপ)
মেঘ: কি কণা চৌধুরী হেরে গেলে তো মেঘ এর অভিনয়ের কাছে।
আমি: ভালোবাসা নিয়ে অভিনয় করেছ তো তাই বুঝতে পারিনি তাছাড়া খান পরিবারের ছেলে যে কোনো মেয়ের বিশ্বাস ভালোবাসা নিয়ে এতো নিখুঁত ভাবে অভিনয় করতে পারে সেটা আমার ভাবনায় আসেনি।
মেঘ: ভুলেও কখনো আমার কাছ থেকে ভালোবাসা আশা করো না।
আমি: তা নাহয় চাইবো না কিন্তু একটা প্রশ্ন করতে পারি?
মেঘ: হুম বলো।
আমি: আমার দোষটা কোথায়? কেন করছ এসব? কেন কষ্ট দিচ্ছ আমাকে? কেন খেলছ আমার ইমোশন নিয়ে?
মেঘ: সেদিন যদি তুমি বিয়েতে রাজি না হতে তাহলে আজ আমি এতো যন্ত্রণায় পড়তাম না। আর এটাই তোমার সবচেয়ে বড় দোষ। শুধুমাত্র তোমার জন্য আমি দাদির কাছে সব…
আমি: বিয়েটা কিন্তু আমি তোমার মেয়ের কথা ভেবেই করেছি।
মেঘ: তুমি রাজি নাহলে আমি তোহাকে ঠিক বুঝিয়ে নিতাম।
আমি: ওহ তাই বুঝি? ঠিক আছে আমি নাহয় তোমার থেকে দূরে সরে যাবো।
মেঘ: মানে?
আমি: চলে যাবো তোমাদের ছেড়ে খুশি?
মেঘ: যদি তোমার যাওয়াটা সম্ভব হতো তাহলে আমিই তোমাকে চলে যেতে বলতাম।
আমি: তুমি যেহেতু আমাকে মেনে নেওনি তাহলে তো একদিন আমাকে চলে যেতেই হবে, এভাবে তো সারাটা জীবন কাটানো সম্ভব না আর তোমার মতো মানুষের সাথে তো একদমই না।
মেঘ: এভাবেই থাকতে হবে এইটা জেনেই তো বিয়েটা করেছ আর আমি ভালো নাকি খারাপ সেটা বিচার করার অধিকার তোমাকে কে দিয়েছে?
আমি: তোমার প্রতি আমার সব ধরণের অধিকার আছে বুঝেছ? আর এই অধিকার আমাকে কবুল শব্দটা দিয়েছে।
মেঘ: অধিকার অধিকার বলে কি বুঝাতে চাইছ? তোমার মর্যাদা চাই? আমাকে চাই আমার সঙ্গ চাই তাহলে চলো বিছানায়।
আমি: ছিঃ মেঘ তুমি এতো নিচ।
মেঘ: তোমাদের মেয়েদের সাথে নিচ হওয়াটাই উত্তম কাজ, তোমাদের ভালোবাসলে তোমরা পিছন থেকে চাকু মারতে দিদ্ধা করো না।
আমি: তুমি কিন্তু আবারো শায়লার সাথে সবাইকে গুলিয়ে ফেলছ।
মেঘ: আমার কাছে সব মেয়েই এক।
আমি: দ্যাত তোমার সাথে কথা বলে অযতা সময় নষ্ট হচ্ছে।
মেঘ: কথা বলতে বলেছে কে?
মা: মেঘ তোদের হলো অনেক দেরি হয়ে গেছে তো।
মেঘ: আসছি আম্মু।
মেঘ তোহাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল পিছু পিছু আমিও বেরিয়ে আসলাম।

আমাদের বিদায় দিতে ড্রয়িংরুমে সবাই বসে আছে।সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরুনোর জন্য পা বাড়াতেই রুহান ডাক দিলো, উফফ পারিনা আর।
আমি: কি কিছু বলবে?
রুহান: আসবে কখন?
আমি: সেটা তো বাড়ির বড়দের জানার কথা তোমাকে কৈফিয়ত দিতে যাবো কেন?
রুহান: এভাবে কথা বলছ কেন?
আমি: তো কিভাবে বলবো? তুমি কি আমার স্বামী নাকি প্রেমিক যে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবো? অবশ্য তুমি আমার দেবর হয়ে যদি থাকতে তাহলে নাহয় একটু মিষ্টি করে কথা বলতাম। (ইচ্ছে করেই এভাবে কথা গুলো বললাম রুহান যেন আমাকে ভুলে গিয়ে পপির ভালোবাসা বুঝতে পারে)
চাঁচি: আমার ছেলে একটা কথা জানতে চেয়েছে মাত্র আর তুমি ওকে এতোগুলো কথা শুনিয়ে দিলে।
দাদি: বৌমা তুমি কেমন মা রুহানকে একটু বুঝাতে পারো না, ওর তো বুঝা উচিত কণা এখন সম্পর্কে ওর ভাবি হয়।
মা: আহ থামবে তোমরা? ছেলে মেয়ে দুটু বের হবে এখন আর তোমরা ঝগড়া শুরু করে দিলে।
দাদি: যা তো দাদুভাই তোরা বের হ আর সাবধানে যাস।
মেঘ: হ্যাঁ আসছি।

গাড়িতে উঠে বসলাম, মেঘ আমার দিকে না তাকিয়ে সিটবেল্ট লাগাতে লাগাতেই বললো…
মেঘ: তুমিও তো কম নাটক করো না দেখছি।
আমি: মানে?
মেঘ: এইযে রুহানের সাথে এতো সুন্দর অভিনয় করছ, খেলছ ওর ভালোবাসা নিয়ে।
আমি: রুহানের ভালোবাসা নিয়ে আমি খেলছি না, ওকে আমি অনেক বুঝিয়েছি তারপরও রুহান পাগলামি করলে আমার কিছু করার নেই।
মেঘ: আমিও তো তোমাকে বুঝাচ্ছি তারপরও শুনছ না কেন? কেন পাগলামি করছ?
আমি: কখন পাগলামি করলাম।
মেঘ: ওইযে…
আমি: হয়েছে আর একটা কথাও শুনতে চাই না।
মেঘ: হুম।

গাড়ি ছুটছে তার গন্তব্যের দিকে, জানালার পাশে বসে বাইরে তাকিয়ে আছি। অপর জানালা দিয়ে বাবা মেয়ে এইটা ওইটা দেখে হাসছে। কিন্তু আমি ওদের সাথে হাসিতে যোগ দিতে পারছি না, এখনো কান্না থামছে না বারবার মনে হচ্ছে মেঘ আমার ইমোশন নিয়ে খেলা করেছে। একটা মানুষ কতোটা নিচে নামতে পারে আর এই কাজ করতে পারে ভাবতেই আমার ঘৃণা হচ্ছে।

বাসায় এসে গাড়ি থেকে নামতেই মেঘ ডাক দিলো।
আমি: কিছু বলবে?
মেঘ: তোমার বাবা মায়ের সামনে এমন কিছু করো না বা বলো না যাতে উনাদের সন্দেহ হয় আর আমার পরিবারে জানিয়ে দেয়।
আমি: পরিবারের সামনে এতো ভালো সাজার কি আছে যত্তোসব।
মেঘ: আমি মানুষ ভালোই তবে ভালো মানুষের সাথে ভালো আর খারাপ মানুষের সাথে খারাপ।
আমি: তারমানে আমি খারাপ?
আব্বু: কিরে তোরা বাইরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
আমি: এইতো আব্বু আসছি।

আব্বু আম্মুর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে রুমে চলে আসলাম, পিছু পিছু মেঘও তোহাকে নিয়ে আসলো।
মেঘ: বাহ্ তোমার রুমটা তো খুব সুন্দর। (মেঘের সাথে কথা বলবো না ভেবে রেখেছি তাই কোনো উত্তর দিলাম না)
মেঘ: ফ্রেশ হব ওয়াশরুম কোনদিকে? (আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলাম, ও চলে যেতেই তোহার কাছে এসে বসলাম। তোহার দুগালে ধরে জিজ্ঞেস করলাম..)
আমি: আম্মু তুমি কার কাছে থাকতে চাও আব্বুর কাছে নাকি আমার কাছে?
তোহা: আমি তো দুজনকেই চাই।
আম্মু: তা আর সম্ভব না মা, আমি আর ফিরে যাবো না। তুমি আমার কাছে থাকো।
তোহা: না আমার আব্বুকেও চাই।
আমি: তাহলে তোমার আব্বুর কাছে চলে যাও।
তোহা: না আমার তোমাকেও চাই। (কান্না আটকাতে পারছি না তোহাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলাম। এই মেয়ের জন্য দূরে সরে আসতে পারছি না আবার মেঘের এমন ব্যবহারের পর ওর কাছে থাকাও সম্ভব হচ্ছে না)
মেঘ: তোহা তুমি কাঁদছ কেন? (মেঘের কথা শুনে তোহাকে ছেড়ে দিলাম, মেয়েটা কাঁদছে তাড়াতাড়ি ওর চোখের পানি মুছে দিলাম)
মেঘ: তোমার সাহস কি করে হয় আমার মেয়েকে কাঁদানোর?
আমি: মেয়ে কিন্তু আমারো আর মা কখনো সন্তানকে কাঁদাতে চায় না। তোহা আমাকে হারানোর ভয়ে কাঁদছে।
মেঘ: হুহ মা! (মেঘের ভেংচি যেন বুকের বাম পাশে এসে লাগলো, এতো ভালোবাসি তোহাকে কিন্তু মেঘ আমাকে তোহার মা ভাবতে পারছে না)
মেঘ: এই তুমি এত কাঁদতে পারো কিভাবে?
আমি: যখন ভালোবাসার মানুষ অবহেলা করবে তখন বুঝবে কান্না কিভাবে আসে। (মৃদু হেসে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম)

আম্মু: কিরে ওখানে কেমন আছিস কিছুই তো বললি না, মেঘ তোকে মেনে নিয়েছে তো। (ভাত খাচ্ছিলাম আম্মুর কথায় ভাতের লোকমা আর মুখে দিতে পারলাম না, ভাগ্যিস মেঘ আগেই খেয়ে রুমে চলে গেছে। কিন্তু আম্মুকে কিভাবে বলি মেঘ যে আমাকে মেনে নেয়নি)
আম্মু: বিয়ের দিন মেঘ যা রাগ দেখিয়েছে আমার মনে হয় না মেঘ তোকে মেনে নিবে।
আমি: কি বলছ আম্মু এসব মেঘ তো আমাকে মেনে নিয়েছে আর ও বাড়ির প্রত্যেকটি মানুষ খুব ভালো আমাকে সবাই খুব ভালোবাসে।
আম্মু: মিথ্যে বলছিস নাতো?
আমি: মিমিমিথ্যে কেকেন বলবো? (মায়ের কাছে বোধহয় এতো সহজে মিথ্যে বলা যায় না তাইতো আমার গলা কাঁপছে)
আম্মু: তুই এখন আমার কাছে মিথ্যে বললেও একদিন তোর এসব কথাই সত্যি হবে এই বিশ্বাস তোর উপর আমার আছে।
আমি: হুম।
আব্বু: কণা খেয়ে একটু আমাদের রুমে আসিস তো।
আমি: ঠিক আছে আব্বু।

আব্বু আম্মুর সামনে বসে আছি আব্বুকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে জানিনা কি বলবে।
আব্বু: কণা আমি বলছিলাম সব সম্পত্তির উইলটা নতুন করে করতে।
আমি: ঠিক আছে করো আমাকে জিজ্ঞেস করার কি আছে।
আব্বু: সবকিছু তোর নামে দিয়ে দিতে চাই তোর নামে থাকলেও দেখাশোনা তো মেঘই করবে তাই আমার কোনো টেনশন থাকবে না, মেঘ কিন্তু খুব ভালো ছেলে। (কতোটা ভালো সেটা তো শুধু আমিই জানি, অপদার্থ একটা)
আব্বু: কিরে কথা বলছিস না কেন, কি ভাবছিস?
আমি: আমাকে যখন জিজ্ঞেস করেছ আমি যা বলি মেনে নিবে?
আব্বু: মানবো না কেন বলে দেখ।
আমি: সব কিছু আমি তোহার নামে দিতে চাই। (আমার কথা শুনে আব্বু আম্মু দুজনই একে অপরের দিকে অবাক হয়ে তাকাচ্ছেন)
আম্মু: কণা তোর মাথা ঠিক আছে তো কি বলছিস এসব?
আমি: আম্মু আমি ভেবে চিন্তেই বলছি আর তোহার নামে থাকলেই তো এখন তোহার হয়ে যাবে না, তোহার আঠারো বছর পূর্ণ হবার পর তোহা পাবে এর আগে সবকিছু মেঘই দেখাশোনা করবে আর আব্বু তো চানই মেঘ সবকিছু দেখাশোনা করুক।
আব্বু: হ্যাঁ চাই তাই বলে তোহা…
আমি: তোহা আমার মেয়ে আর মায়ের সম্পত্তি মেয়েই তো পাবে।
আব্বু: তারপরও আর একবার ভেবে দেখ মা।
আমি: আমার সিদ্ধান্ত আমি তোমাদের জানিয়ে দিয়েছি এখন তোমাদের ইচ্ছা।
আব্বুর রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম। সবকিছু তোহাকে দিয়ে দিবো, মেঘকে বুঝিয়ে দিবো তোহাকে আমি কতোটা ভালোবাসি, তোহার জন্য আমি কতোটা ভাবি।

দুদিন পর….

বাসায় ফিরে আসলাম মেঘের খারাপিও শুরু হয়ে গেল। সবার সামনে ভালো স্বামী আর রুমের মধ্যে বদের হাড্ডি একটা।
রুহান: কণা কথা ছিল। (আরেক পাগল এসে জুটেছে)
আমি: কি বলো।
রুহান: তুমি কি আমার কথা শুনবে নাকি আমি পাগলামি শুরু করবো?
আমি: তুমি ভালো ছিলে কবে সবসময় তো মানসিক রোগী হয়েই আছ।
রুহান: বেশি ভালোবাসি তো তাই আমাকে তোমার কাছে মানসিক রোগী মনে হয়।
আমি: এই শুনো আজকে থেকে তুমি আমাকে ভাবি বলে ডাকবে আর এসব ভালোবাসি ভালোবাসি যেন আর না শুনি।
রুহান: কণা প্লিজ বুঝার চেষ্টা করো।
আমি: হাত ছাড়ো আমার, তোমার সাহস হয় কিভাবে আমার হাত ধরার।
মেঘ: বাহ্ অফিস যাওয়ার সময় রুমে ফষ্টিনষ্টি।
আমি: মেঘ?
মেঘ: চিৎকার করছ কেন? আর রুহান ফষ্টিনষ্টি করার জায়গা কি আমার রুমেই?
রুহান: সরি ভাইয়া। (রুহান বেরিয়ে গেল। গেল তো গেল আমাকে খারাপ সাজিয়ে গেল)
মেঘ: আমার রুমে যেন আর কখনো এসব না দেখি, ফষ্টিনষ্টি করার ইচ্ছা থাকলে বাড়িতে আরো অনেক জায়গা আছে।
আমি: তোমার ভাই তোমার বউয়ের সাথে এমন করে কোথায় তুমি ভাইকে শাসন করবে তা না উল্টো আমাকে কথা শুনাচ্ছ।
মেঘ: কে আমার বউ, তুমি? তোমাকে তো আমি আমার স্ত্রী এর মর্যাদাই দেইনি তাহলে কিভ…
আমি: ব্যাস আর বলতে হবে না, তোমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে যাও।
মেঘ হনহন করে বেরিয়ে গেল। আর পারছি না সারাক্ষণ শুধু খারাপ ভাষায় কথা বলা, একটু ভালোভাবে কথা বললে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায় নাকি?

রাত অনেক হয়েছে কিন্তু মেঘ ফিরে আসার নাম নেই। সবার সাথে ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছি তখনি কলিংবেল বেজে উঠলো। পপি গিয়ে দরজা খুলে দিতেই মেঘ এসে ঢুকলো, আমার দিকে একনজর তাকিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে রুমে চলে গেল।
মা: কি হলো বলতো এভাবে রেগে চলে গেল কারো সাথে কোনো কথা বলল না।
দাদি: কিরে কণা বসে আছিস কেন রুমে যা, গিয়ে দেখ দাদুভাই রেগে আছে কেন।
আমি: হুম।

আমি: আহহ! (দরজায় আসতেই কি যেন একটা উড়ে এসে আমার কপালে পড়লো, অনেকটা জায়গা কেটেও গেছে। কপালে হাত দিয়েই নিচে তাকালাম, মেঘের জুতা)
মেঘ: সব দোষ ওই মেয়ের আজ তো ওকে আমি…(মেঘ আর একটা জুতা খুলে ছুড়ে দিতে দিতে দরজায় তাকালো, আমাকে দেখতে পেয়েই হনহন করে আমার কাছে আসলো)
মেঘ: এসো আমার সাথে।
আমি: আরে দরজা বন্ধ করছ কেন।
মেঘ: একদম চুপ।
আমি: আরে আস্তে চেঁচাও তোহা ঘুমে।
মেঘ: শুধুমাত্র তোমার জন্য আজ আমাকে সবাই এতো অপমান করল।
আমি: কে অপমান করেছে আর কেনই বা করেছে আমি তো তোমার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না।
মেঘ: আজ অফিসে সবাই বলেছে আমি নাকি তোমার বাবার সম্পত্তির লোভে তোমাকে বিয়ে করেছি। তোমার জন্য আমি এসব কথা কেন শুনবো?
আমি: এই কথা কে কে বলেছে?
মেঘ: বললে কি হবে? ওদের চাকরি খেয়ে ফেলবে?
আমি: যারা আমার স্বামীকে অপমান করেছে তাদের তো এমনি ছেড়ে দিবো না।
মেঘ: আসছে স্বামী বলতে কে তোর স্বামী? আমি… (আমার হাত ধরে টান দিয়ে ওর দিকে ফিরাতেই আমার কপালের দিকে ওর নজর পড়লো)
মেঘ: তোমার কপাল কেটেছে কিভাবে রক্ত ঝরছে তো।
আমি: ঝরতে দাও এটাই তো শুধু চোখে দেখতে পারছ ভিতরের রক্ত ঝরা তো কখনো দেখতে পারবে না।
মেঘ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে, ওর হাতটা আমার কপাল থেকে সরিয়ে দিয়ে বারান্দায় চলে আসলাম।

বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি ঘুটঘুটে অন্ধকার রাত কোথাও আলোর রেখা নেই চারপাশ থেকে শুনশান শব্দ ভেসে আসছে শুধু। আমার চোখের পানি তো মেঘ কখনো দেখে না আর এই অন্ধকারে তো একদমই দেখবে না। কথা দিচ্ছি মেঘ
আজকের পর আর কখনো তোমার সামনে আমার ভালোবাসা প্রকাশ করবো না। এখন থেকে নাহয় তোমার চোখের আড়ালে নীরবেই ভালোবেসে যাবো তোমাকে…

চলবে?

নীরবে_ভালোবাসি পার্ট: ৪

0

নীরবে_ভালোবাসি

পার্ট: ৪

লেখিকা: সুলতানা তমা

হুট করে কেউ ভালোবাসার কথা জিজ্ঞেস করলে কি উত্তর দেওয়া যায়? চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি দেখে মেঘ আমার হাত ওর দুহাতের মুঠোয় নিয়ে আমার চোখের দিকে তাকালো।
মেঘ: উত্তরটা দাও। (কি উত্তর দিবো ভেবে পাচ্ছি না, বলে দিবো সত্যিটা)
আমি: আসলে আমি আপনাকে…
মেঘ: জানি ভালোবাসেন না। (মেঘের এমন কথা শুনে চমকে উঠে ওর দিকে তাকালাম, ও দিব্যি হাসছে। কি বলছে ও এসব)
মেঘ: দুদিনে ভালোবাসা হয় না কণা সেটা আমিও জানি।
আমি: তা নয় আমি…
মেঘ: জানি তুমি তোহার জন্য বিয়েটা করেছ। তুমি খুব ভালো মেয়ে কণা, নাহলে নিজের পুরো ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঠেলে দিয়ে তুমি আমার মেয়ের জন্য বিয়েটা করতে না। হ্যাঁ মানছি আমি রুহানের এমন ব্যবহারে তোমাকে খারাপ ভেবেছিলাম কিন্তু এখন বুঝতে পারছি তুমি সত্যি খুব ভালো মেয়ে। আজ সারাদিন আমি নিজেকে সময় দিয়েছি তোমাকে নিয়ে ভেবেছি সবশেষে এটাই বুঝতে পেরেছি আমাদের দুজনের…
আমি: আলাদা হতে বলবেন না প্লিজ। (আমার ভয়ার্ত মুখ দেখে মেঘ হেসে দিলো)
মেঘ: না না আলাদা হতে বলবো না তুমি তোহার আম্মু হয়েই থাকো সাথে আমার বন্ধু।
আমি: বন্ধু?
মেঘ: হ্যাঁ কণা আমি তোমাকে কখনো ভালোবাসতে পারবো না আবার ডিভোর্সও দিতে পারবো না, তবে তুমি যদি কখনো ডিভোর্স চাও তাহলে আমি তোমাকে বাঁধাও দিবো না।
আমি: (নিশ্চুপ)
মেঘ: আমি চাই তুমি তোমার পড়াশুনা চালিয়ে যাও নিজের মতো করে বাঁচো, আমি কখনো তোমার উপর কোনো অধিকার খাটাবো না। আর তুমিও না।
আমি: হুম।
মেঘ: একসাথে যখন থাকতেই হবে ঝগড়াঝাঁটি করে তো লাভ নেই তাই আজ থেকে আমরা দুজন বন্ধু।
আমি: বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু কি কখনওই হতে পারবো না? (আমার এমন প্রশ্ন শুনে মেঘ মৃদু হাসলো)
মেঘ: সম্ভব না কারণ আমার প্রথম ভালোবাসা ছিল শায়লা, আর কখনো কাউকে ভালোবাসতে পারবো না।
আমি: এখনো ভালোবাসেন শায়লাকে?
মেঘ: জানিনা। (মেঘ ছোট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো)
আমি: আপনি যা চাইছেন তাই হবে, কখনো জোড় করবো না আপনাকে।
মেঘ: বন্ধু বলে যখন মেনেই নিয়েছ তাহলে আপনি করে বলছ কেন? (মৃদু হাসলাম)
আমি: এসব ঠিক হয়ে যাবে।
মেঘ: রুমে চলো খাবে।
আমি: হুম।
মেঘ চলে গেল, চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি। আমার জীবনের সবকিছু এভাবে উলটপালট হয়ে যাচ্ছে কেন? আমি কি কখনো মেঘের মনে জায়গা করে নিতে পারবো না?

রুমে এসে দেখি মেঘ শুয়ে পড়েছে পাশে তোহা ঘুমিয়ে আছে। লাইট বন্ধ করে দিয়ে তোহার অন্যপাশে এসে শুয়ে পড়লাম।
মেঘ: কি হলো খাবে না?
আমি: উঁহু খিদে নেই।
মেঘ: (নিশ্চুপ)
আমি: একটা কথা বলবো রাখবে?
মেঘ: হ্যাঁ বলো।
আমি: কাল একবার আমাকে আমাদের বাসায় দিয়ে আসবে?
মেঘ: হাহাহা না হেসে পারলাম না।
আমি: মানে কি? এতে হাসার কি আছে?
মেঘ: স্বামী মেনে নেয়নি তাই কালই পালিয়ে যেতে চাইছ আসলে তোমরা…
আমি: বলে ফেলো সব মেয়েরা এক। আসলে তোমার মনের ভিতর শায়লা যে বীজ রুপন করে দিয়েছে তা কখনো দূর হবে না। আমি তো মানুষ নাকি? আমারো তো নিজের বাবা মাকে দেখতে ইচ্ছে হয়। আর আমার যদি পালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা থাকতো তাহলে একাই চলে যেতাম এই বাড়ির সম্মানের কথা ভেবে তোমাকে নিয়ে যেতে বলতাম না।
মেঘ: চেঁচামেচি করছ কেন?
আমি: তো কি করবো, তুমি এমন কেন একবার ভালো তো পরমুহূর্তেই খারাপ।
মেঘ: সরি আসলে আ…
আমি: চুপ করো আর কিছু শুনতে চাই না।

মেঘ চুপ হয়ে গেলো, নিশ্চুপ হয়ে কাঁদছি। ভাগ্যের চাকা এভাবে ঘুরে যাবে বুঝতেই পারিনি। যাই হয়েছে সব মেনে নিয়ে তো আমি মেঘকে ভালোবাসতে শুরু করেছি কিন্তু মেঘ, ও পারছে না কেন? উল্টো কতো সুন্দর করে বলে দিলো বন্ধু হয়ে থাকবে, বন্ধু হয়েও তো থাকছে না। একবার ভালো ব্যবহার করছে তো দুবার খারাপ ব্যবহার করছে। এতো অদ্ভুত মানুষ ও।
মেঘ: বাইরে গিয়ে কাঁদো আমার ঘুমে ডিস্টার্ব হচ্ছে।
আমি: (নিশ্চুপ)
মেঘ: কণা কান্না থামাও নাহয় বাইরে চলে যাও।
আমি: চলেই যাবো।
বারান্দায় এসে কাউচে শুয়ে পড়লাম, খুব কষ্ট হচ্ছে। এতো বড় হয়েছি আব্বু আম্মু কখনো আমাকে কষ্ট কি সেটা বুঝতে দেননি আর আজ…

কপালে কোমল হাতের স্পর্শ পেয়ে ঘুম ভেঙ্গে গেলো, চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি তোহা আমার পাশে দাঁড়িয়ে আমার মুখে হাত বুলাচ্ছে।
আমি: মামুনি তুমি?
তোহা: পঁচা মেয়ে আমাকে রেখে এখানে ঘুমিয়েছ কেন? জানোনা তোমাকে জড়িয়ে না ধরে আমি ঘুমুতে পারিনা। আর আব্বুটা তো আরো বেশি পঁচা শুধু মিথ্যে বলে।
তোহা: কি মিথ্যে বলেছে?
তোহা: বলেছে তুমি ফুফির কাছে আছ আসলে তো তুমি…
মেঘ: তোহা তুমি এখানে আর আমি তোমাকে পুরো বাসায় খুঁজে বেড়াচ্ছি। (তোহা দৌড়ে গিয়ে মেঘের একটা হাত চেপে ধরলো)
তোহা: এদিকে এসো।
মেঘ: কোথায়? (তোহা মেঘ’কে টেনে আমার কাছে নিয়ে আসলো)
তোহা: দেখো তো তোমার পরীটার অসুখ হয়েছে কিনা।
মেঘ: (নিশ্চুপ)
তোহা: দেখো না। (মেঘ কিছুটা অসস্থি নিয়ে মেয়ের কথা রাখার জন্য একটা হাত আমার কপালে রাখল তারপর এক ঝটকায় হাতটা সরিয়ে নিলো)
মেঘ: জ্বর আসলো কিভাবে? (এতো ঠান্ডার মধ্যে রুম থেকে বের করে দিয়ে এখন আবার জিজ্ঞেস করছে জ্বর আসলো কিভাবে? এমন ঠান্ডা বাতাসে সারারাত পরে থাকলে তো অসুস্থ হবই)
আমি: আমি ঠিক আছি।
মেঘ: না তুমি ঠিক নেই জ্বর অনেক বেশি।
আমি: আমাকে নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না।
মেঘ: আমরা কিন্তু বন্ধু তো…
আমি: আসছে বন্ধুত্ব দেখাতে! একবার ভালো ব্যবহার করলে দুবার খারাপ ব্যবহার করে আবার বন্ধু। চলো মামুনি।
তোহাকে কোলে নিয়ে রুমে চলে আসলাম।

মা মেয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতেই দাদি হাসিমুখে আমাদের দিকে এগিয়ে আসলেন।
দাদি: তোর কোলে তোহাকে দেখলে বুঝার উপায় নেই ও যে শায়লার মেয়ে। (কথাটা শুনে বুকের ভিতর কেমন যেন এক অদ্ভুত ব্যথা শুরু হয়ে গেলো)
দাদি: আরে মুখটা কালো করে ফেললি যে, আমি ওভাবে বলিনি এখন তো তোহা তোরই মেয়ে।
আমি: হ্যাঁ তোহা শুধু আমার মেয়ে আর কখনো কেউ শায়লার মেয়ে বলবেন না প্লিজ।
দাদি: আচ্ছা বাবা ঠিক আছে।
মা: কণা তোমার বাবা ফোন করেছিলেন তোমার মোবাইল নাকি বন্ধ।
আমি: হতে পারে দেখিনি।
মা: বিয়েটা তো হুট করেই হলো মা কোনো অনুষ্ঠান বা কোনো নিয়মই পালন করা হয়নি, তোমার বাবা বলছিলেন নিয়ম অনুসারে আজ যেন তুমি আর মেঘ তোমাদের বাসায় যাও।
আমি: কিন্তু…
দাদি: মেঘের কথা ভাবছিস? চিন্তা করিস না ও যাবে।
আমি: ঠিক আছে।

তোহাকে কোলে বসিয়ে খাইয়ে দিচ্ছি, বাসার সবাই আস্তে আস্তে ডাইনিং এ আসতে শুরু করেছে কিন্তু মেঘ তো এখনো এলো না।
চাঁচি: কি ব্যাপার নতুন বউয়ের হাতে রান্না কি খেতে পারবো না, নাকি বড় লোকের মেয়ে বলে শশুড় বাড়ির লোকজন কে রেঁধেও খাওয়াবে না। (উনার এমন কথা শুনে বেশ অবাক হলাম এমন ভাবে কেউ কথা বলে, নাকি চাঁচিশাশুড়িরা এমনই হয়)
রুহান: মা কণা রান্না করতে পারে না। (রুহান চেয়ার টেনে বসতে বসতে কথাটা বললো)
চাঁচি: তুই কিভাবে জানিস?
রুহান: আমি তো ওকে ভালোবাসি মা তাই আন্দাজ করেছি তাছাড়া ও রান্না জানলেও আমি ওকে রান্না করতে দিবো না।
চাঁচি: কেন দিবি না?
রুহান: ওর হাত পুড়ে যায় যদি।
মেঘ: বাব্বাহ্ ভালোবাসার মানুষের জন্য এতো মায়া। (মেঘের কথাটা যেন বুকে এসে বিঁধল চুপচাপ উঠে দাঁড়ালাম, ওর সাথে বসে খাওয়া সম্ভব না)
দাদি: কণা কোথায় যাচ্ছিস চুপ করে বস।
আমি: আমার খিদে নেই দাদি।
দাদি: রাতেও কিন্তু খাসনি।
রুহান: কি কণা রাতে খায়নি? তোমরা কি করছিলে ওকে খাও…
আমি: রুহান আমার ব্যাপারে নাক গলাতে এসো না।
রুহান: হাজার বার আসবো, আমি তোমাকে ভালোবাসি।
আমি: কিন্তু আমি বাসি না।
রুহান: বাসতে তো তোমাকে হবেই, না বাসলে জোড় করবো।
মা: রুহান এসব কি ধরণের কথা?
রুহান: চাঁচি আমি কিন্তু…
বাবা: রুহান একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না? (বাবা আসছেন দেখে সবাই নীরব হয়ে গেলো। পপি বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছে শুধু, রুহান আমাকে নিয়ে যা শুরু করেছে পপির তো কষ্ট হবেই। সব সহ্য করা যায় কিন্তু ভালোবাসার মানুষের অবহেলা আর নিজের চোখের সামনে অন্য মেয়ের প্রতি ভালোবাসা সহ্য করা যায় না)
দাদি: মেঘ কণা’কে নিয়ে ওদের বাসা থেকে ঘুরে আয়।
মেঘ: আচ্ছা দাদি।

সবার সাথে একটু আড্ডা দিয়ে রুমে আসতেই মেঘ’কে রুমের মধ্যে পায়চারী করতে দেখে একটু ভয় পেয়ে গেলাম। কে জানে আবার কেন রেগে আছে।
আমি: তোহা কোথায়?
মেঘ: ওহ আপনি এসেছেন মহারাণী।
আমি: তোহা তো তোমার সাথে রুমেই এসেছিল কোথায় ও?
মেঘ: পপির কাছে।
আমি: ওহ।
মেঘ: এই তুমি কি জাদু জানো নাকি? (মেঘ হঠাৎ করে আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরলো, ওর চোখ দুটু রাগে লাল হয়ে আছে)
আমি: মানে কি?
মেঘ: রুহানকে নাহয় নিজের রুপের জ্বালে বস করে রেখেছ কিন্তু দাদি আম্মু? ওদের কিভাবে বস করেছ?
আমি: ছিঃ এসব কি ধরনের কথা?
মেঘ: তুমি যা বলছ পরিবারের সবাই তাই শুনছে কি জাদু করেছ ওদের উপর? আমি তোমার বাবার অফিসে চাকরি করি বলে তোমার চাকর নাকি যে তুমি যা বলবে তাই শুনতে হবে আমাকে। শুধু আজকেই নিয়ে যাবো তোমাকে এর পর ভুলেও কখনো আমাকে তোমার চাকর ভাবতে যেও না, পারবো না তোমার জন্য কিছু করতে বা তোমার কথা শুনে চলতে।
আমি: আমার হাত ছাড়ো লাগছে।
মেঘ: লাগার জন্যই এতো শক্ত করে ধরেছি, ভবিষ্যৎ এ আমাকে চাকর ভাবার আগে হাতের দাগটা দেখে নিও। (মেঘ আমার হাত ছেড়ে দিলো হাতে সত্যি দাগ পড়ে গেছে, খুব ব্যথা করছে)
মেঘ: এই একদম ন্যাকা কান্না কাঁদবে না এসব আমি সহ্য করতে পারিনা।
আমি: নিয়ম অনুসারে আজ আমাদের বাসায় যেতে হবে দাদি তো এটাই বলেছেন আমি তো কিছু…
মেঘ: বিয়েটাই মানিনা আমি সাথে তোমাকেও না তাহলে নিয়ম আবার কিসের? শুনো ভুল করেও আমাকে তোমার স্বামী ভাবতে যেও না (নিশ্চুপ হয়ে ওর কথা গুলো শুনছি আর রাগি চেহারা দেখছি। কোনো মানুষ এমন হতে পারে ভাবতেই পারছি না। এখনি ভালো ব্যবহার করছে আবার পরক্ষণেই খারাপ আর এতোটাই খারাপ যে ওকে মানুষ ভাবতেই দ্বিধা হচ্ছে আমার)
মেঘ: এই তুমি এতো বেহায়া কেন? রুহান তো তোমাকে ভালোবাসে যাও না ওর কাছে চলে যাও আমাকে রেহাই দাও।
আমি: রুহানের কাছে যদি আমি ফিরে যাই তাহলে তুমি তোমার খুব আপন একজন কে হারাবে।
মেঘ: মানে? (ওর কথায় পাত্তা না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম)

পপি তোহাকে নিয়ে বাগানে হাটছে দেখে ওদের কাছে আসলাম। কেউ আসছে টের পেয়েই পপি তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিলো।
আমি: পপি তুমি কাঁদছিলে?
পপি: নাতো।
আমি: তোহা ফুফি কি কাঁদছিল মা।
তোহা: হ্যাঁ।
পপি: ভাবি এই ছোট মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করছ কেন?
আমি: ছোট মেয়েটার সামনেই কেঁদেছ তাই। আমার উপর ভরসা রাখো পপি প্লিজ, আর তোমার কি নিজের ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাস নেই?
পপি: পারছি না ভাবি আমি আর পারছি না। এতোদিন তো শুধু ওর অবহেলা সহ্য করেছি কিন্তু এখন তুমি আমি রুহান একি ছাদের নিচে বাস করছি, রুহান সবসময় তোমার প্রতি ভালোবাসা দেখাচ্ছে এসব আমি নিতে পারছি না।
আমি: সেদিন তুমি ফোন করার পর আমি রুহানকে বুঝিয়েছিলাম কিন্তু ও যে বুঝেনি তাতো জানতাম না তাছাড়া তোমাদের বাড়িতেই বউ হয়ে আসবো এইটাও তো জানতাম না, এখন একি ছাদের নিচে বাস করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তবে তুমি চিন্তা করো না রুহান তোমার ভালোবাসার মর্যাদা দিবে আজ হউক বা কাল।
পপি: হুম তাই যেন হয়।
আমি: এখন বাসায় চলো আমাদের রেডি হতে হবে।

তোহার চুল আছড়িয়ে দিচ্ছি হুট করে বিছনায় একটা শাড়ি এসে পড়লো পিছনে তাকিয়ে দেখি মেঘ, তারমানে ও শাড়িটা ছুড়ে দিয়েছে।
মেঘ: শাড়িটা পড়ে আমাকে উদ্ধার করো।
আমি: শাড়িটা বুঝি দাদি তোমার হাতে দিয়ে দিয়েছেন।
মেঘ: হ্যাঁ যত্তোসব আধিক্যেতা। (যাক দাদির ভয়ে অন্তত সবার সামনে তো ভালো ব্যবহার করে নাহলে রুমে যা করে তা যদি সবার সামনে করতো তাহলে তো মান সম্মান সব যেতো)
মেঘ: এই তুমি হাসছ কেন?
আমি: তুমি পুরুষ নাকি অন্য কিছু এইটা ভেবে।
মেঘ: মানে?
আমি: এইযে দাদির ভয়ে সবার সামনে ভালো মানুষ আর খালি রুমে বউয়ের সামনে যতো খারাপি।
মেঘ: এই বউ বলেছ কেন? আর কখনো যেন না শুনি।
শাড়িটা হাতে নিয়ে মেঘ’কে একটা মুখ ভেংচি দিয়ে ওয়াশরুমে চলে আসলাম।

আয়নার সামনে বসে চুল আছড়াচ্ছি আর ভাবছি মেঘ আমার সাথে এতো খারাপ ব্যবহার করে তারপরও আমি ওকে ঘৃণা করতে পারিনা কেন? উল্টো ওকে শুধু ভালোবাসতে ইচ্ছে হয়।
মেঘ: মায়াবতীর চুলগুলো সত্যি খুব সুন্দর। (মেঘের কথায় ভাবনায় ছ্যাদ পড়লো, আয়নাতেই তাকালাম মেঘ আমার পিছনে দাঁড়িয়ে হাসছে)
মেঘ: দাদির পছন্দ আছে বলতে হয় বেগুনী রঙের শাড়িটায় তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। (ওর মুখে কথা গুলো শুনে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লাম, ব্যাপার কি হঠাৎ ভূতের মুখে রাম নাম)
মেঘ: এভাবে চোখ বড় করে তাকিয়ে আছ কেন আমি বুঝি আমার বউকে সুন্দরও বলতে পারিনা? (ওর কাছে গিয়ে তাড়াতাড়ি ওর কপালে হাত দিলাম)
মেঘ: কি দেখছ?
আমি: না জ্বর ট্বর তো নেই।
মেঘ: আমি ঠিক আছি কণা। (মেঘ আমার কোমর জড়িয়ে ধরে আমাকে টান দিয়ে ওর একদম কাছে নিয়ে আসলো, দুজনের নিঃশ্বাস ভারী খাচ্ছে)
মেঘ: তোমাকে সত্যি খুব সুন্দর লাগছে।
আমি: তুতুতুমি ঠিঠিক আছ তো।
মেঘ: হ্যাঁ তোতলাচ্ছ কেন, নাকি আমি এভাবে আদর করাতে লজ্জা পাচ্ছ।
আমি: সত্যি বলছি আমি তোমাকে এখন একদম ছিনতে পারছি না।
মেঘ: একটু পর ঠিক ছিনতে পারবে। (মেঘ ওর ঠোঁট আমার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আনছে দেখে ওর ঠোঁটে আঙ্গুল রাখলাম)
আমি: তোহা কিন্তু সব দেখছে।
মেঘ: উঁহু তোহা পুতুল নিয়ে খেলছে।
আমি: ছাড়ো আমাকে।
মেঘ: ছেড়ে দিবো তো একটু আদর করতে দাও।
আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মেঘ আমার ঠোঁটে ওর ঠোঁট দুটু আলতো করে রাখলো, ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই মেঘ আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। এই মেঘ’কে আমি একদম ছিনতে পারছি না, ও কি সেই মেঘ যে কিনা একটু আগে আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য আমার হাত জোড়ে চেপে ধরেছিল? হাতের দাগটা তো এখনো রয়ে গেছে কিন্তু মেঘ এতো তাড়াতাড়ি পাল্টে গেলো কিভাবে….

চলবে?

নীরবে_ভালোবাসি পার্ট: ৩

0

নীরবে_ভালোবাসি

পার্ট: ৩

লেখিকা: সুলতানা তমা

চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি সামনে রুহান চোখে এক রাশ প্রশ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছে।
রুহান: কণা আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।
দাদি: কি তখন থেকে উত্তর উত্তর করে যাচ্ছিস সর তো। কণা এদিকে আয়। (দাদি আমার হাত ধরে টেনে এনে একজন মধ্যবয়স্ক মহিলার সামনে দাঁড় করালেন)
দাদি: ও আমার ছোট বৌমা, রুহানের মা। আর রুহান কে তো বুঝতেই পারছিস তোর চাচাতো দেবর। আর পপি তুই দূরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন তোর সাথেও পরিচয় করিয়ে দিতে হবে নাকি?
পপি: ভাবি আমার আর পরিচয় তুমি করিয়ে দিবে হুহ। ভাবি আমি তোমার একমাত্র ননদ। (পপি এসে আমার গলা জরিয়ে ধরলো, ওর কন্ঠটা বেশ চেনাচেনা লাগছে তাহলে কি ও সেই মেয়ে যে রুহানকে পাগলের মতো ভালোবাসে। রুহান তো বলেছিল ওর চাচাতো বোন ওকে ভালোবাসে আর পপি তো আমার একমাত্র ননদ তারমানে…)
রুহান: অনেক পরিচয় হয়েছে এবার বলো এসব কি?
আমি: আজব তো আপনি এমনভাবে কথাগুলো বলছেনন যেন আমি আপনার সাথে প্রেমের অভিনয় করে অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলেছি।
রুহান: কণা তুমি কিন্তু ভালো করেই জানো আমি তোমাকে কতোটা ভালোবাসি।
আমি: আপনিও তো ভালো করেই জানেন আমি যে আপনাকে এতটুকুও ভালোবাসি না।
রুহান: ভালোবাসি না বাসি না বাসি না এই কথাটা তিন বছর ধরে শুনতে শুনতে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি। প্লিজ কণা বুঝার চেষ্টা করো।
আমি: ক্লাস টেনের একটি মেয়েকে আপনি স্কুলের সামনে দেখে ভালোবেসে ফেলেছিলেন তারপর অনেক বার ভালোবাসার কথা বলেছেন কিন্তু মেয়েটি রাজি হয়নি আর কেন রাজি হয়নি সেটা আপনার অজানা নয়…
রুহান: হ্যাঁ তুমি বাবা মায়ের পছন্দে বিয়ে করতে চেয়েছিলে, বিয়ের আগে প্রেমে জড়াতে চাওনি।
আমি: হ্যাঁ এখন আমি আমার বাবা মায়ের পছন্দেই বিয়ে করেছি।
রুহান: মিথ্যে কথা বিয়েটা একটা এক্সিডেন্ট ছিল।
আমি: হ্যাঁ ছিল কিন্তু বিয়েটা হয়েছে এইটা তো সত্যি।
রুহান: ভেঙে দাও বিয়েটা, ডিভোর্স দিয়ে দাও ভাইয়াকে।
আমি: রুহান ভদ্র ভাবে কথা বলুন আমি কিন্তু এখন আপনার বড় ভাইয়ের স্ত্রী।
রুহান: কণা বুঝার চেষ্টা করো প্লিজ।
আমি: আর কতোবার বলবো আমি আপনাকে ভালোবাসি না। আজব মানুষ তো আপনি, যে আপনাকে ভালোবাসে না তার পিছনে পরে আছেন আর যে আপনাকে পাগলের মতো ভালোবাসে তাকে দিনের পর দিন অবহেলা করছেন। (আমার কথা শুনে পপি চোখের পানি মুছতে মুছতে রুমে চলে গেলো)
মা: বৌমা এসব কি হচ্ছে?
রুহান: চাঁচি আমি বলছি তোমাদের সবকিছু।
দাদি: আর বুঝাতে হবে না আমরা যা বুঝার বুঝে গেছি। এখন আমি তোকে বলছি কণার জীবন থেকে সরে দাঁড়া। মেয়েটার নতুন বিয়ে হয়েছে ওকে সুখে শান্তিতে সংসার করতে দে।
রুহান: কিন্তু আমি কিভাবে বাঁচবো দাদি?
আমি: দাদি বিশ্বাস করুন আমি রুহানকে ভালোবাসি না, কখনো বাসিওনি। সবসময় ও পাগলামি করেছে আর…
রুহান: ব্যাস কণা আর বলতে হবে না থাকো তুমি তোমার নতুন সংসার নিয়ে। (রুহান হনহন করে বেরিয়ে গেল)
চাঁচি: আমার রুহানের যদি কিছু হয়েছে তোমার জন্য তাহলে কিন্তু আমি তোমাকে ছেড়ে দিবো না। (রুহানের আম্মু এসে আমার চোখের সামনে আঙ্গুল তুলে শাসিয়ে গেলেন)
মা: বৌমা ভেবো না সব ঠিক হয়ে যাবে। যাও রুমে গিয়ে বিশ্রাম নাও।

রুমে এসে দেখি তোহা বিছানায় বসে আঁকিবুঁকি করছে, পাশে মেঘ বসা।
আমি: তোহা মামুনি কি আঁকছ তুমি?
মেঘ: খবরদার আমার মেয়েকে আপনি স্পর্শ করবেন না। (মেঘের এমন আচরণে ভয় পেয়ে একটু দূরে এসে দাঁড়ালাম)
আমি: কেন?
মেঘ: আপনার মতো মেয়ে আমার তোহার কাছে থাকলে আমার তোহা খারাপ হয়ে যাবে। আপনারা সব মেয়ে এক সব…
আমি: ভুলে গেছেন বিয়েটা কেন হয়েছে?
মেঘ: ভুলিনি কিন্তু তাই বলে আমি আমার মেয়েকে অন্য একটা খারাপ মেয়ের কাছে ছেড়ে দিতে পারবো না।
আমি: আমি খারাপ?
মেঘ: তা নয়তো কি? একজনকে ভালোবেসে অন্য একজন কে বিয়ে করেছেন।
আমি: রুহানকে আমি ভালোবাসি না।
মেঘ: তাতো ড্রয়িংরুমে শুনেই এসেছি।
আমি: কচু শুনেছেন, চলে এসেছিলেন তো শুরুতেই পুরোটা তো শুনেননি।
মেঘ: পুরোটা শুনলে রাগ আর নিজের কন্ট্রোলে রাখতে পারতাম না।
আমি: হুহ কি আমার রাগ রে।
মেঘ: বেরিয়ে যান এই রুম থেকে।
আমি: আপনি আমাকে ভালো বাসুন বা না বাসুন আমার তাতে কিচ্ছু যায় আসেনা, আমি এখানেই থাকবো বুঝেছেন।
মেঘ: ঝগড়াটে মেয়ে দেখেছি কিন্তু আপনার মতো এতো ঝগড়াটে মেয়ে দেখিনি। (মেঘ নিজেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল। তোহার আঁকিবুঁকি গুলো দেখছি, পপি এসে রুমে ঢুকলো)
পপি: ভাবি।
আমি: তুমি? বসো।
পপি: ভাইয়া রুম থেকে বেরিয়ে গেল দেখে এসেছি, ভাবি প্লিজ আমার একটা অনুরোধ রাখবে?
আমি: কি বলো।
পপি: আমি জানি তুমি বুঝতে পেরেছ আমিই সেই মেয়ে যে রুহানকে পাগলের মতো ভালোবাসি আর আমি তো তোমার সাথে কয়েক দিন আগে ফোনে কথা বলেছিলাম।
আমি: হ্যাঁ কিন্তু…
পপি: ভাইয়াকে বলো না প্লিজ আমি যে রুহানকে ভালোবাসি।
আমি: কিন্তু কেন? না বললে তোমাদের বিয়েটা হবে কিভাবে?
পপি: ভাইয়া প্রেম ভালোবাসা ঘৃণা করে এসব জানতে পারলে বাসায় সমস্যা হবে আর বিয়ে তো কখনো সম্ভব না কারণ রুহান আজো তোমাকেই ভালোবাসে আমি ওর মনে জায়গা করে নিতে পারিনি।
আমি: রুহান পাগলামি করছে দেখবে একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে, ও ঠিক তোমার ভালোবাসা বুঝতে পারবে।
পপি: সেই দিনটার অপেক্ষায় তো বেঁচে আছি।
আমি: পাগলী কেঁদো না সব ঠিক হয়ে যাবে।
পপি: কই কাঁদছি নাতো। সরি ভাবি তোমাদের বিয়েতে থাকতে পারলাম না হুট করে যে এসব হয়ে যাবে ভাবতেও পারিনি। আগে জানলে কি আর গ্রামে ঘুরতে যেতাম? রুহানের সঙ্গে ঘুরতে যাবো এই লোভ সামলাতে পারিনি তাই চলে গিয়েছিলাম।
আমি: ব্যাপার না এখন থেকে তো সবাই একসাথেই থাকবো।
পপি: তুমি সত্যি খুব ভালো।
তোহা: হ্যাঁ ফুফি আমার নতুন আম্মুটা খুব ভালো।
পপি: খুব পেকে গেছিস বুড়ি তাই না। (পপি তোহার নাক টেনে দিয়ে চলে গেল)

তখন আমি ক্লাস টেনে ছিলাম রুহান বোধহয় অনার্সে ছিল, হুট করে একদিন রুহান আমাকে ভালোবাসার কথা বলে। এসব কখনোই ভালো লাগত না আমার তাছাড়া আমি আব্বু আম্মুর পছন্দে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম তাই রুহানকে না বলে দেই। রুহান পাগলামি করতো বুঝতাম ও একটা মোহে আটকে আছে। এভাবে তিনবছর কেটে যায়, কয়েকমাস আগে রুহান একটু বেশিই পাগলামি করে। ভেবেছিলাম আব্বুকে রুহানের কথা বলবো কিন্তু হঠাৎ একদিন একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসে আমার কাছে, আমি ফোন রিসিভ করি।
–হ্যালো।
–আপনি কণা?
–হ্যাঁ আপনি…
–রুহান তাহলে আপনাকেই ভালোবাসে।
–এসব ভালোবাসা নাকি মোহ আমি সঠিক জানিনা কিন্তু আপনি কে?
–আপনিও কি রুহানকে ভালোবাসেন?
–নাতো।
–আপনি ভালোবাসেন না অথচ রুহান আপনার জন্য পাগল আর আমি ওকে এতো ভালোবাসি কিন্তু ও…
–আপনি কাঁদবেন না প্লিজ আমাকে সব খুলে বলুন।
–আমি রুহানের চাচাতো বোন, ওকে আমি সেই ছোটবেলা থেকে ভালোবাসি কিন্তু…
–বুঝতে পেরেছি তা এখন আমাকে কি করতে হবে, আপনি আমাকে কেন ফোন করেছেন?
–আপনি তো রুহানকে ভালোবাসেন না তাহলে রুহানকে আমার করে দিন না প্লিজ, বিশ্বাস করুন আমি রুহানের ভালো চাই আপনি যদি ওকে ভালোবাসতেন তাহলে আমি সরে যেতাম আপনাদের মাঝখান থেকে কিন্তু আপনার মনে তো রুহানের জন্য কোনো অনুভূতি নেই তাহলে…
–আপনি এভাবে কাঁদবেন না প্লিজ আমি রুহানকে বুঝাব।

তারপর মেয়েটি ফোন রেখে দেয়। তখনো জানতাম না মেয়েটি যে পপি। খুব কেঁদেছিল পপি সেদিন, আমি যদি রুহানকে ভালোও বাসতাম তাহলে পপির কাছে ওকে তুলে দিতাম কারণ পপির ভালোবাসায় কোনো কমতি ছিল না। তারপর রুহানকে আমি বুঝিয়েছিলাম রুহান বুঝেছিল কিনা জানিনা তবে ও গত একমাস আমার সাথে কোনো যোগাযোগ করেনি। ভেবেছিলাম রুহান পপির ভালোবাসা বুঝেছে কিন্তু…
রুহান: কণা.. (ছাদে দাঁড়িয়ে পুরনো কথাগুলো ভাবছিলাম হঠাৎ রুহান এসে পাশে দাঁড়াল)
আমি: কিছু বলবেন?
রুহান: আমি পারছি না কণা এসব মেনে নিতে।
আমি: সত্যিটা মেনে নিতেই হবে তাছাড়া আমি তো আপনাকে কখনো ভালোবাসিনি আপনার জন্য কোনো অনুভূতি ছিল না আমার মনে।
রুহান: তুমি তো ভাইয়াকেও ভালোবাস না আর ভাইয়াও তোমাকে ভালোবাসে না, আমি যতটুক ভাইয়াকে জানি সে কখনো তোমাকে ভালোবাসবে না। ফিরে এসো প্লিজ আমার কাছে।
আমি: মেঘ আমাকে ভালোবাসবে কিনা আমি জানিনা কিন্তু গতকাল কবুল বলার সাথে সাথে মেঘের জন্য আমার মনে ভালো লাগা ভালোবাসার অনুভূতি সৃষ্টি হয়ে গেছে, হয়তো এইটা কবুল শব্দটারই শক্তি। আমি মেঘ’কে কখনো জোর করবো না কিন্তু আমার বিশ্বাস আমার ভালোবাসা মেঘ একদিন ঠিক বুঝতে পারবে। আর আপনাকে বলছি আবেগে আটকে না থেকে সত্যিকারের ভালোবাসা বুঝার চেষ্টা করুন, পপি আপনাকে সত্যি ভালোবাসে।
রুহান: পপি আমাকে সত্যি ভালোবাসে এইটা আমি জানি বুঝি কিন্তু আমার মন যে তোমাকে ভালোবাসে।
আমি: একবার পপিকে মন দিয়ে দেখুন না সবকিছু কেমন ঠিক হয়ে যায়।
রুহান: পারবো না আমি, তোমাকে ভালোবাসি তোমাকেই সবসময় ভালোবাসব।
মেঘ: সরি সরি ভুল সময় এসে পড়েছি। (মেঘের কন্ঠ শুনে পিছনে তাকালাম, মেঘ ছাদের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে)
আমি: কিছু লাগবে?
মেঘ: না তোহা ঘুম থেকে উঠে পড়েছে আপনাকে খুঁজছে তাই আপনাকে ডাকতে এসেছিলাম কিন্তু আপনি তো বিজি আছেন।
আমি: বিজি আছি কে বললো চলুন।
রুহান: কণা আমার কথা কিন্তু শেষ হয়নি।
মেঘ: ভাই এসব মেয়েদের সাথে কথা বলে লাভ নেই। (মেঘ হাসতে হাসতে খুব সহজেই কথাটা বলে ফেললো)
রুহান: ভাইয়া কণাকে নিজের বউ শায়লার সাথে একদম গুলাতে যেও না।
মেঘ: ও তো শায়লার চেয়ে কোনো দিকে কম না, ভালোবাসে একজনকে বিয়ে করেছে অন্য একজনকে। এসব শুধু খারাপ মেয়েদের পক্ষেই সম্ভব।
আমি: অনেক বলেছেন চুপ করুন। আমি এতোটা খারাপ না, আমি তোহার জন্য বিয়েটা করেছি। আমি রুহানকে কখনোই ভালোবাসিনি আমি তো আপনাকে…
মেঘ: আমাকে কি?
আমি: কিছুনা।
রুহান: কণা…
আমি: হয়েছে আর কিছু শুনতে চাই না দুভাই মিলে অনেক কথা বলেছেন আমাকে। এবার আমি বলবো আপনারা শুনবেন। রুহান আপনি যে আবেগ আর মোহে অন্ধ হয়ে আছেন সেটা আমি আপনাকে বুঝাব আপনার সত্যিকারের ভালোবাসার কাছেই আপনাকে যেতে হবে। আর মেঘ আপনি শুনে রাখুন আমি আপনার কাছে কখনো কোনো অধিকার চাইবো না যতদিন না আপনি নিজ থেকে চাইবেন। আর আপনি চাইবেন সেটাও আমি জানি খুব শীঘ্রই চাইবেন। (কাঁদতে কাঁদতে ছাদ থেকে চলে আসলাম। মেঘ আমাকে মেনে নিবে না জানতাম কিন্তু এতোটা খারাপ ভাববে এইটা বুঝিনি। আর এখন তো রুহান মাঝখানে এসে আরো অশান্তি বাড়িয়ে দিল)

বিছানার এক পাশে চুপচাপ বসে আছি পাশে তোহা পুতুল নিয়ে খেলা করছে। সারাদিন কারো সাথে কোনো কথা বলিনি মেঘের সাথেও না। অবশ্য মেঘ সেই দুপুরবেলা বেরিয়েছিল রাত নেমে আসলো কিন্তু ওর আসার নাম নেই।
তোহা: নতুন আম্মু নতুন আম্মু এইটা দেখো তো। (তোহা বিছানায় রাখা পুতুল গুলো দেখাচ্ছে তখনি মেঘ এসে রুম ঢুকলো)
তোহা: এইটা আব্বু, এইটা আমি আর এইটা আমার নতুন আম্মু। (পাশাপাশি রাখা দুটি পুতুলকে ওর আব্বু আম্মু বলছে আর সামনে রাখা ছোট পুতুল নাকি ও নিজে, পিচ্ছি মেয়ের আধোআধো কন্ঠে এমন কথা শুনে মেঘ আমি দুজনই হেসে দিলাম)
মেঘ: আপনার হাসিটা খুব সুন্দর। (মেঘ আস্তে করে কথাটা বললো, ওর দিকে তাকাতেই চোখ ফিরিয়ে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল)

বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাতের আকাশ দেখছি, চাঁদের আলো সাথে মৃদু বাতাস খুব সুন্দর পরিবেশ। মেঘ পাশে এসে দাঁড়িয়েছে দেখে অবাক হলাম, তোহাকে ঘুম পাড়ানোর সময় তো দেখলাম ও ঘুমুচ্ছে।
মেঘ: রেগে আছেন আমার উপর?
আমি: (নিশ্চুপ)
মেঘ: আম্মু বললো সারাদিন কিছু খাননি চলুন খাবেন। (এবার আরো বেশি অবাক হলাম তাকিয়ে আছি মেঘের দিকে এক দৃষ্টিতে)
মেঘ: আমি আপনাকে খারাপ ভেবেছিলাম সেজন্য সরি। (মেঘ আমার এতো কাছে দাঁড়িয়ে আছে যে আমার চুলগুলো বার বার উড়ে গিয়ে ওর চোখেমুখে পড়ছে, আশ্চর্যের কথা হলো মেঘ এতোটুকুও বিরক্ত হচ্ছে না। চুলগুলো হাত দিয়ে কানের পাশে গুঁজে নিলাম)
মেঘ: থাকুক না চুলগুলোকে উড়তে দিন ভালোই তো লাগছে। (ও তো আজ আমায় শুধু অবাক করে দিচ্ছে)
মেঘ: এভাবে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছেন কেন আমি দেখতে এতোটা সুন্দর না কিন্তু। (মেঘের কথায় লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললাম)

দুজন পাশাপাশি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি কেউ কোনো কথা বলছি না। মেঘ কি ভাবছে জানিনা তবে আমার মন অনেক কিছু ভাবছে, মাথায় হাজারটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। মেঘ কি তবে আমাকে….
মেঘ: ভালোবাসেন আমাকে?
রেলিং এ রাখা আমার হাতের উপর মেঘের হাতের ছোঁয়া পেয়ে মেঘের চোখের দিকে তাকালাম, ওর চোখ দুটু প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইছে। কিন্তু আমি কি উত্তর দিবো? বলে দিবো আমার মনে যে ওর জন্য ভালোবাসার অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে…

চলবে?

নীরবে_ভালোবাসি পার্ট: ২

0

নীরবে_ভালোবাসি

পার্ট: ২

লেখিকা: সুলতানা তমা

দূর থেকে ফজরের আযানের সূর ভেসে আসছে শুনে চোখের পানি মুছে নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালাম, মেঘ’কে সামনে দেখে একটু অবাকই হলাম। মেঘ থাপ্পড় দেওয়ার পর কোনো কথা না বলে তোহাকে ঘুম পাড়িয়ে বারান্দায় চলে এসেছিলাম। এতোটা সময় বারান্দায় দাঁড়িয়ে কেঁদে কেঁদেই কাটিয়ে দিয়েছি।
আমি: আপনি ঘুমাননি?
মেঘ: ঘুম আসেনি।
আমি: ওহ!
মেঘ: তখনের এমন ব্যবহারের জন্য সরি, বুঝতেই পারছেন মাথা ঠিক নেই। বিয়েটা করার ইচ্ছে তো আমার ছিল না তা…
আমি: হুম বুঝতে পেরেছি।
মেঘ: একটা অনুরোধ করবো রাখবেন প্লিজ।
আমি: বলুন।
মেঘ: আপনি গোসল করে নিন নাহলে…(মেঘ মাথা নিচু করে থেমে গেলো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওর দিকে, এই কথা ও বলতে পারলো)
মেঘ: ভুল বুঝবেন না প্লিজ! আসলে আমি দাদিকে খুব ভয় পাই আর দাদির জন্যই বিয়েতে রাজি হয়েছি, এখন দাদি যদি জানতে পারে আমি আপনাকে মেনে নেইনি তাহলে…
আমি: সদ্য বিয়ে হওয়া নতুন বউরা যেমন ভোরবেলা গোসল করে আমাকেও তাই করতে বলছেন তো?
মেঘ: প্লিজ আমাকে ভুল বুঝবেন না আমি নিরুপায় হয়েই এমন জঘন্য কথা বলেছি। জানি আপনি এই কথায় অনেক কষ্ট পেয়েছে…
আমি: হুম রাতের থাপ্পড়ের চেয়ে এই কথাটায় বেশি কষ্ট পেয়েছি। আমার স্বামী যে কিনা আমাকে ছুঁয়েও দেখলো না উল্টো বাসর রাতে থাপ্পড় গিফট করলো, আর আমাকে কিনা সেই স্বামীর জন্য লোক দেখানোর জন্য… ছিঃ!
মেঘ: ভুল বুঝবেন না প্লিজ দাদি বুঝতে পারলে রেগে যাবে দাদি অসুস্থ উত্তেজিত হলে সমস্যা… (মেঘের পুরো কথা শেষ হবার আগেই ওকে পাশ কাটিয়ে রুমে চলে আসলাম)

চুপচাপ খাটের এক কোণে বসে আছি, মেঘ আমার দিকে এক নজর তাকিয়ে বাতরুমে চলে গেলো হয়তো লোক দেখানোর জন্য এখন গোসল করবে। ছিঃ ভাবতেই আমার রাগ হচ্ছে মানুষ এমনো হয়?

মেঘ: যান গোসল করে আসুন। (মেঘের কন্ঠ শুনে পাশে তাকালাম, মাত্র গোসল করে আসাতে মেঘ’কে অন্যরকম এক সৌন্দর্য যেন ঘিরে রেখেছে। সব ছেলেদের কি এমন সুন্দর লাগে নাকি মেঘ খুব বেশি ফর্সা বলে এতোটা সুন্দর লাগছে)
মেঘ: কি হলো?
আমি: হু!
মেঘ: গোসল করে আসুন।
আমি: পারবো না আমি লোক দেখানোর জন্য আপনার কথামতো চলতে।
মেঘ: তাহলে সূর্য উঠার আগেই বাবার বাড়ি চলে যান তোহার কাছে থাকতে হবে না। (ঘুমন্ত তোহার দিকে তাকাতেই চোখ দুটু ভিজে উঠলো, বিয়েই তো করেছি নিষ্পাপ এই শিশুর জন্য এখন নাহয় ওর জন্যই সব মেনে নিবো)

গোসল সেরে রুমে এসে মেঘ’কে কোথাও দেখতে পেলাম না, হয়তো বেরিয়ে গেছে। একটু সাজুগুজু করে তোহার পাশে এসে বসলাম, সাথে সাথে মেয়েটির ঘুম ভেঙ্গে গেলো। দুহাত দিয়ে আমার গলা জরিয়ে ধরে আধোআধো কন্ঠে বলে উঠলো…
তোহা: আমার আম্মুটা। (মা হওয়ার সুখ বুঝি এরকমই, তোহার কন্ঠে আম্মু ডাক শুনে আনন্দে চোখে পানি চলে আসলো)
তোহা: ও নতুন আম্মু কাঁদছ কেন তুমি?
আমি: কোথায় নাতো মামুনি, চলো ফ্রেশ হবে তুমি।

তোহাকে নিয়ে নিচে নেমে আসলাম, সবাই ডাইনিং এ বসা। মেঘ’কে বসা দেখে আর ওদিকে গেলাম না সোফায় এসে বসলাম। সাথে সাথে দাদি উঠে এসে আমার পাশে বসলেন।
দাদি: তোহা যাও তো আব্বুর হাতে খেয়ে নাও।
তোহা: কেন? আমার তো এখন আম্মু আছে আমি আম্মুর হাতে খাবো। (তোহা কথাটা বেশ জোরেই বলে ফেলেছে, মেঘ মন খারাপ করে খাবার না খেয়ে বসে আছে। মেঘ হয়তো ভাবছে আমি ওর থেকে ওর মেয়েকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছি)
আমি: মামুনি আমি তোমাকে দুপুরে খাইয়ে দিবো এখন বাবার হাতে খেয়ে নাও। (তোহা আর কোনো কথা বললো না মেঘের কাছে চলে গেলো)
দাদি: কিরে রাতে ঘুম কেমন হলো? (দাদির এমন প্রশ্ন শুনে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো)
দাদি: তুই হয়তো রেগে আছিস হুট করে এমন কিছু হয়ে যাওয়াতে, তোরও হয়তো কোনো স্বপ্ন ছিল যা আমাদের জন্য বিসর্জন দিতে হলো।
আমি: না দাদি আমি রেগে নেই তাছাড়া তোহাকে আমি মেয়ে হিসেবে মেনে নিয়েছি বলেই তো বিয়েটা করেছি।
দাদি: তুই রাজি হবি আমি ভাবতেই পারিনি, রায়হান চৌধুরীর মেয়ে আমাদের মতো গরীব ঘরে বউ হয়ে আসতে রাজি হবে তা…
আমি: আব্বুর হয়তো অনেক কিছু আছে কিন্তু আপনাদেরও তো কম নেই তাছাড়া আপনাদের ঘরে তো সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস আছে, আমার মেয়ে “তোহা”
দাদি: ভাগ্যিস তুই মেঘ এর স্ত্রী হয়ে এসেছিস, শায়লার মতো কেউ হলে তো তোহার জীবনটা নষ্ট হয়ে যেতো।
আমি: শায়লা…
মেঘ: কণা একটু রুমে আসবে! (বাব্বাহ্ রাগি বোম এর মুখ থেকে এতো সুন্দর কথাও বের হয়)
আমি: আসছি।
দাদি: আমার দাদুভাইটা একটু রাগি কিন্তু অনেক রোমান্টিক, যা যা রুমে যা।
আমি: দাদি আপনি না!

রুমে এসে দেখি মেঘ রেডি হচ্ছে অফিস যাবে বোধহয়। বিয়ের পরদিন বোধহয় ওর মতো রাগি বোম গুলার দ্বারাই অফিস যাওয়া সম্ভব।
মেঘ: ওহ আপনি এসেছেন?
আমি: (নিশ্চুপ)
মেঘ: এভাবে তাকিয়ে আছেন যে, আরে আগে তো দাদি ছিল তাই তুমি করে বলেছিলাম। (ভেবেছিলাম ভালোবাসা দিয়ে সব ঠিক করে দিবো কিন্তু মনে হচ্ছে সম্ভব না)
মেঘ: যেহেতু বিয়েটা হয়েই গেছে তাই তোহার দায়িত্ব এখন থেকে আপনার। দেখে রাখবেন ওকে আমি অফিস যাচ্ছি।
আমি: আজ অফিসে না গেলে হয় না? (কথাটা বলে জিহ্বায় কামর দিলাম নিজের অজান্তেই কি বলে ফেললাম)
মেঘ: কেন আপনাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে হবে? হানিমোনে যাবেন? ভুলে গেছেন রাতের থাপ্পড়ের কথা? একদম অধিকার ফলাতে আসবেন না আসলে আবারো থাপ্পড়…
আমি: এই আপনি কি মানুষ নাকি রাগি বোম? (মেঘকে কথা শেষ করতে না দিয়ে এই কথাটা বলেই রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম। রাতে থাপ্পড় দিয়ে সকালে সরি বলেছে এখন আবার থাপ্পড় এর ভয় দেখাচ্ছে, অদ্ভুত মানুষ একটা)

আমি: হ্যালো আব্বু।
আব্বু: হ্যাঁ মা কেমন আছিস?
আমি: এইতো ভালো তোমরা কেমন আছ?
আব্বু: আর বলিস না তোর মা তো কাঁদতে কাঁদতেই শেষ, আমি নাকি তোর জীবন নষ্ট করে ফেলেছি।
আমি: না আব্বু আমি অনেক ভালো আছি এখানে সবাই খুব ভালো আম্মুকে বুঝিয়ে বলো।
আব্বুর সাথে আরো কিছুক্ষণ ফোনে কথা বললাম, ফোন রেখে পিছন ফিরতেই মেঘ’কে দেখতে পেয়ে ভূত দেখার মত চমকে উঠলাম!
মেঘ: কি এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? (মেঘ আস্তে আস্তে আমার দিকে এগুচ্ছে, ওর এমন অদ্ভুত চাহনি আর এগুনো দেখে আমি পিছিয়ে যাচ্ছি। হঠাৎ বারান্দার রেলিং এ এসে আটকে গেলাম। মেঘ একদম আমার গাঁ ঘেসে এসে আমার সামনে দাঁড়ালো তারপর আমার দুদিকে দুহাত দিয়ে রেলিং ধরে আমার দিকে এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো)
আমি: আআআপনি এমমন করছেন কেন?
মেঘ: (নিশ্চুপ)
আমি: কি হলো কথা বলছেন না কেন?
মেঘ: (নিশ্চুপ)
আমি: সরুন আমি রুমে যাবো।
মেঘ: এই মেয়ে পেয়েছটা কি আমাকে যখন যাকে দিয়ে খুশি বকা শুনাচ্ছ। বিয়ে করে কি এমন করেছি যে আমি এখন অফিসেও যেতে পারবো না? একবার তুমি না করছ তো একবার দাদি না করছে পেয়েছ কি আমাকে হ্যাঁ? আমি অফিসে না গেলে কি তোমার বাবা আমাকে চাকরিতে রেখে দিবে নাকি মাস শেষে বেতনটা পাঠিয়ে দিবে? যত্তোসব। (মেঘ কথাগুলো বলে চলে যাচ্ছিল আমি আস্তে করে পিছন থেকে বললাম…)
আমি: মনে হচ্ছে রাগি বোম ফেটে গেছে। (মেঘ আমার কথা শুনে আবার ফিরে আসলো। আমার একটা হাত শক্ত করে চেপে ধরে চেঁচিয়ে উঠলো)
মেঘ: এই তোমরা মেয়ে জাত এমন কেন?
আমি: সব মেয়ে এক না, সবাইকে নিজের বউয়ের সাথে তুলনা করবেন না বলে দিলাম।
মেঘ: হুহ আসছে সব মেয়ে এক না! সব মেয়ে এক সব নষ্ট, সবাইকে আমি ঘৃণা করি।
মেঘ: আপনার ঘৃণা করাতে কোনো মেয়ের কিছু যায় আসে না।
মেঘ: দ্যাত।
মেঘ আমার হাত ছেড়ে দিয়ে হনহন করে হেটে চলে গেলো। এই রাগি বোম এর ভালোবাসা পাওয়া কি আমার পক্ষে আদৌ সম্ভব?

সন্ধ্যায় তোহাকে নিয়ে বসে গল্প করছি হুট করে মেঘ কোথা থেকে তাড়াহুড়ো করে এসে রুমে ঢুকলো।
মেঘ: কণা আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
আমি: বলুন।
মেঘ: যেহেতু বিয়ে হয়ে গেছে এখন তো আর ডিভোর্স সম্ভব না তাই আমাদের মধ্যে কিছু…
আমি: আমাকে মেনে নিতে আপনার সমস্যা কোথায়?
মেঘ: আমার মনে হয় সব মেয়ে এক আমি এখন আর কোনো মেয়েকে বিশ্বাস করতে পারিনা।
আমি: আপনার প্রথম স্ত্রী কি এমন করেছিল যে দুনিয়ার সব মেয়ের উপর আপনার ঘৃণা জন্মে গেছে।
মেঘ: বিয়েটা পারিবারিক ভাবে হলেও আমি শায়লাকে অনেক ভালোবাসতাম কিন্তু শায়লা সবসময় ঝগড়াঝাঁটি অশান্তি করতো। তোহা জন্ম নেওয়ার ছয় মাস পর হঠাৎ একদিন শায়লা আমাকে বললো ওর পক্ষে আর এখানে থাকা সম্ভব না, ও ডিভোর্স চায়। কারণ জিজ্ঞেস করলে বললো ও আগে কাউকে ভালোবাসতো এখন তার কাছে ফিরে যেতে চায়। অনেক বুঝিয়েছিলাম শায়লাকে কিন্তু ওর এক কথা, ও ওর ভালোবাসার মানুষের কাছে ফিরে যেতে চায়। ছোট্ট তোহাকে ফেলে রেখে যেতে ওর এতটুকু কষ্ট হয়নি। আমার তো রাগ একটাই অন্য কাউকে যখন ভালোবাসতো তাহলে আমার সাথে বিয়ে নামক নাটক করার কি প্রয়োজন ছিল।
আমি: শায়লা এমন ছিল বলে যে সব মেয়ে এক তাতো নয়। আমি তো অন্য কাউকে ভালোবাসি না তাহলে আমাকে মেনে নিতে পারবেন না কেন?
মেঘ: এতো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না। আজ থেকে আপনি সোফায় ঘুমাবেন, আমার সামনে বেশি আসবেন না, আমার কোনো কিছুতে অধিকার খাটাবেন না আ…
আমি: সব পারবো কিন্তু সোফায় ঘুমাতে পারবো না, আপনার ইচ্ছা হয় আপনি গিয়ে ঘুমান। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে এখানেই এই বিছানায় ঘুমাবো।
মেঘ: আমি আমার মেয়েকে রেখে ঘুমাবো না।
আমি: আমিও আমার মেয়েকে রেখে ঘুমাবো না।
মেঘ: আল্লাহ্‌ এই ঝগড়াটে মেয়ে কোথা থেকে আমার কপালে জুটিয়ে দিলে।
দাদি: মেঘ কণা নিচে আয় তোরা দেখ কারা এসেছে। (দাদির ডাক শুনে তোহাকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম, পিছু পিছু মেঘও আসছে)

ড্রয়িংরুমে রুহানকে বসে থাকতে দেখে আমার চোখ কপালে উঠে গেলো, ও এখানে কি করছে? আমার কোলে তোহা আর পাশে মেঘ’কে দেখে রুহান বেশ অবাক হয়েই বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।
রুহান: কণা তুমি?
দাদি: তুই ছিনিস ওকে? ও তো মেঘ এর স্ত্রী।
রুহান: অসম্ভব এইটা হতে পারে না।
দাদি: কেন কালই তো ওদের বিয়ে হলো ফোনে তো তোদের বললামই।
রুহান: আরে দাদি তোমরা কেন বুঝতে পারছ না ওকে আমি ভালোবাসি, আমি ছাড়া অন্য কাউকে ও বিয়ে করতে পারেনা। কণা শুধু আমার বউ হবে তিনবছর ধরে আমি এই স্বপ্ন দেখে আসছি।
রুহানের চিৎকারে বাড়ির সবাই অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, মেঘ এর দিকে তাকালাম, ওর চোখে শুধু রাগ আর ঘৃণা।
মেঘ: ছিঃ শেষপর্যন্ত আপনিও…
মেঘ চলে গেলো তোহাকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে বোবার মতো দাঁড়িয়ে রইলাম।

চলবে?

নীরবে_ভালোবাসি পার্ট: ১

0

নীরবে_ভালোবাসি

পার্ট: ১

লেখিকা: সুলতানা তমা

বেশি বড় না আবার বেশি ছোটও না মাঝারি আকারের একটি রুম, পুরো রুম জুড়ে নীল সাদা অর্কিড ফুলের ছড়াছড়ি। সাথে পুরো রুম জুড়ে জ্বলছে অনেক গুলো ক্যান্ডেল লাইট। খাটের চারপাশে চোখ বোলালাম, পুরো খাটটি সাজানো হয়েছে শুধু নীল সাদা অর্কিড দিয়ে। আচ্ছা নীল সাদা অর্কিড তো আমার পছন্দের ফুল তাহলে কি আমার জন্যই আজ এই বাসর ঘর আমার মনের মতো করে সাজানো হয়েছে? কিন্তু কে সাজাবে, মেঘ? নাহ মেঘ আমার মনের কথা জানবে কিভাবে আর মেঘ আমার মনের মতো করে বাসরঘরই বা সাজাবে কেন? এই বাসর ঘরের তো কোনো প্রয়োজন নেই কারণ মেঘ তো বিয়েটাই করেছে নিজের ইচ্ছের বিরুদ্বে। অবশ্য আমারো এই বিয়েতে তেমন মত ছিলনা। নিজের দিকে একবার চোখ বোলালাম সবুজ রঙের বেনারসিতে বউ সাজে আমাকে দারুণ লাগছে। আচ্ছা আমি যে বিয়ের সময় সবুজ রঙের বেনারসি পড়ার স্বপ্ন দেখতাম সেটা তো কেউ জানতো না তাহলে এই রঙের বেনারসি কেন? খাটের একপাশে ঘোমটা দিয়ে বসে বসে এসব ভাবছিলাম হঠাৎ দরজা খুলার শব্দ পেয়ে একটু নড়েচড়ে বসলাম। মেঘ এসেছে, বড্ড ইচ্ছে হচ্ছে ওকে বর সাজে একবার দেখতে। ঘোমটাটা আলতো করে একটু সরিয়ে সামনের দিকে তাকালাম, মেঘ মাথার পাগড়ীটা খুলে সোফায় ছুড়ে মারলো তারপর হনহন করে হেটে বারান্দায় চলে গেলো। মেঘের এমন আচরণে আমি মুটেও অবাক হইনি এমনটাই তো হবার ছিল।

দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালাম রাত দুটু বাজে। এখনো খাটের একপাশে চুপচাপ বসে আছি, মেঘ এখনো বারান্দায় ভাবতেই ভীতরটায় একটু কষ্ট অনুভব হলো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে খাটের মাঝখানে থাকা ঘুমন্ত পরীটার দিকে তাকালাম। নিষ্পাপ এই শিশুটাকে ঘুমন্ত অবস্থায় খুব মায়াবী লাগছে। তোহার মায়াবী মুখটায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলাম, এই নিষ্পাপ মুখ দেখলে সব কষ্ট যেন ভুলে যাই।

চার বছরের ছোট্ট মেয়ে তোহা, মেঘ এর একমাত্র রাজকন্যা তোহা। সেই ছোট্ট বেলায় তোহাকে ফেলে রেখে মেঘ এর প্রথম স্ত্রী চলে গিয়েছিল, মেঘ ওর আদর ভালোবাসা দিয়ে তোহাকে একটু একটু করে বড় করে তুলছে। আজ তোহার বার্থডে, মেঘ আব্বুর বন্ধু আহসানুল আঙ্গেল এর ছেলে তাছাড়া মেঘ এখন আব্বুর অফিসে চাকরি করে সেই সুবাদে আব্বুর সাথে তোহার বার্থডে পার্টিতে এসেছিলাম কিন্তু এখানে এসে আমার জীবনের মুড় এভাবে ঘুরে যাবে ভাবিনি।

এইতো আজ সকালে ঘটে যাওয়া কাহিনী…
বারান্দায় বসে পড়ছিলাম হুট করে আব্বু এসে পিছনে দাঁড়ালেন।
আমি: কি কিছু বলবে?
আব্বু: হ্যাঁ এক জায়গায় যেতে হবে।
আমি: কোথায়?
আব্বু: মেঘ’কে তো তুই চিনিস।
আমি: হ্যাঁ আহসানুল আঙ্গেল এর ছেলে।
আব্বু: হ্যাঁ আর ও তো এখন আমার অফিসেই চাকরি করছে মাঝে মাঝে বাসায়ও আসে, আজ ওর মেয়ের জন্মদিন তা…
আমি: তুমি যাও আমি যেতে পারবো না।
আব্বু: কেন?
আমি: আব্বু তুমি কি ভুলে গিয়েছ তোমার কণা এখন ইন্টার পড়ছে সামনে ওর পরীক্ষা।
আব্বু: ভুলিনি মা কিন্তু আমার সঙ্গে তুই গেলে ওরা সবাই খুব খুশি হতো আর মেঘ এর মেয়েটা একটু সময়ের জন্য হলেও তোর মতো একজন বন্ধু পেতো।
আমি: আব্বু একটি বাচ্চার সবচেয়ে ভালো বন্ধু তার মা, তোহার তো মা নেই আমি কিভাবে…
আব্বু: মা নেই বলছিস কেন? বল রাক্ষসীটা তোহাকে ফেলে চলে গেছে।
আমি: ওই একি হলো।
আব্বু: চল না মা সবাই তোকে দেখে খুব খুশি হবে, আহসানুল যখন গ্রামে থাকতো তখন একবার গিয়েছিলি তখন তো তুই ছোট ছিলি, চলনা মা। জানিস তো তোহা মেয়েটাকে দেখলে বড্ড মায়া হয়। (তোহাকে তো আগে কখনো দেখিনি শুধু ওর গল্পই শুনেছি আব্বুর মুখে, আজ গেলে মন্দ হয় না তোহাকে দেখা হবে)
আমি: ঠিক আছে যাবো।
আব্বু: রেডি হয়ে নিচে চলে আয়।

রেডি হয়ে ড্রয়িংরুমে এসে দেখি আব্বু আম্মু আমার জন্য অপেক্ষা করছেন।
আম্মু: আমার কণা মামুনিকে শাড়িতে কিন্তু বেশ সুন্দর লাগছে।
আমি: সত্যি বলছ নাকি আমাকে খুশি করার জন্য বলছ?
আব্বু: সত্যি মা তোকে খুব সুন্দর লাগছে।
আম্মু: হ্যাঁ মেয়ে কিন্তু বড় হয়ে গেছে…
আব্বু: বিয়ে দিয়ে দিতে হবে হাহাহা।
আমি: আব্বু, আম্মু আমি কিন্তু তোমাদের আগেই বলেছি এই বিয়ে টিয়ে আমি এতো তাড়াতাড়ি করছি না।
আব্বু: ওকে ওকে এখন চল।

একমাত্র রাজকন্যার বার্থডে বলে কথা, পুরো বাড়ি খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখছিলাম হুট করে মেঘ এসে সামনে পড়লো।
মেঘ: কণা আপনি আমার বাসায় আসবেন আমিতো ভাবতেই পারিনি।
আমি: তোহাকে দেখতে এসেছি কোথায় ও?
মেঘ: আপনি একটু ওয়েট করুন আমি নিয়ে আসছি। (মেঘ তোহাকে আনতে চলে গেলো)

পুরো বাসা জুড়ে মেহমানের আনাগোনা, আব্বু আম্মু আহসানুল আঙ্কেল ও সাবিরা আন্টির সাথে কথা বলতে ব্যস্ত। আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি।
মেঘ: কণা এইযে আমার রাজকন্যা তোহা। (মেঘ এর কথা শুনে পিছন ফিরে তাকালাম, মুগ্ধ হয়ে গেলাম তোহার মায়াবী চেহারা দেখে। এমন নিষ্পাপ শিশুকে রেখে মেঘ এর স্ত্রী চলে গেলো কিভাবে)
মেঘ: তোহা মামুনি এইযে এইটা তোমার কণা আন্টি। (তোহা কোনো কথা বলছে না চুপচাপ আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে)
মেঘ: কি হলো মামুনি? আন্টিকে হাই বলো।
তোহা: এইটা তো আমার আন্টি না। (আধোআধো কন্ঠে বলে উঠলো তোহা, বেশ অবাক হয়ে তাকালাম ওর দিকে)
তোহা: এইটা তো আমার নতুন আম্মু। (তোহার এমন কথায় মেঘ আমি দুজনেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম, কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছি না। তোহা এসে আমার শাড়ির আচল ধরে চিৎকার করে উঠলো)
তোহা: সবাই শুনো এইটা আমার নতুন আম্মু।

সবাই বেশ অবাক হয়ে আমাদের তিনজনের দিকে তাকিয়ে আছে দেখে খুব অসস্থি হচ্ছে, ইচ্ছে হচ্ছে মেয়েটাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে চলে যাই এখান থেকে কিন্তু পারছি না তোহার নিষ্পাপ চেহারা আমাকে বাধা দিচ্ছে।
মেঘ: কণা আমি সত্যি দুঃখিত আমার মেয়ে এমন কিছু বল…
আব্বু: কণা মা কি হয়েছে? তোহা এসব কি বলছে?
মেঘ: স্যার, তোহা বাচ্চা মেয়ে তো তাই ভুল করে…
তোহা: আমি মুটেও ভুল করে বলিনি, এটাই আমার নতুন আম্মু। (তোহার এমন আচরণে শুধু অবাকই হইনি খুব অসস্থিও হচ্ছে, খুব কান্না পাচ্ছে সবাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে দেখে)
মেঘ: আম্মু তোহাকে নিয়ে যাও তো এখান থেকে। (সাবিরা আন্টি এসে তোহাকে কোলে তুলে নিলেন, তোহা যাবে না বলে হাত পা ছুড়াছুঁড়ি করছে)
আব্বু: দাঁড়ান তোহার সাথে আমি কথা বলছি।
আমি: আব্বু কোনো কথা বলতে হবে না বাসায় চলো।
তোহা: নতুন আম্মু তুমি আমাকে রেখে চলে গেলে আমি কিন্তু কিছুই খাবো না। (তোহা কাঁদছে দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে আবার ওর মুখে নতুন আম্মু ডাক শুনে রাগও হচ্ছে খুব)
তোহা: আজ থেকে এইটা আমার নতুন আম্মু, তুমি এক কাজ করো তো এই পরীটাকে এক্ষণি বিয়ে করে ফেলো। (তোহার এমন কথা শুনে মেঘ ধমক দিয়ে উঠলো, মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে দাদুর কোল থেকে নেমে এক দৌড়ে রুমে চলে গেলো)

সবাই আমার দিকে এখনো তাকিয়ে আছে দেখে আব্বুর হাত ধরে টান দিলাম।
আমি: চলো আব্বু এখানে আর এক মুহূর্তও নয়।
আব্বু: দাঁড়া মা, কোথায় যাবি বাসায়? মেয়েটাকে কাঁদিয়ে চলে গিয়ে শান্তিতে থাকতে পারবি? (সত্যিই তো এমন একটা নিষ্পাপ বাচ্চাকে কাঁদিয়ে কি আমি ভালো থাকতে পারবো)
আব্বু: কণা মা জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে এই তিনটা জিনিস কিন্তু আল্লাহ্‌…
আমি: কি বলতে চাইছ আব্বু?
“রায়হান যা চাইছে তা কিন্তু আমরাও চাইছি” (কথাটা শুনে পাশে তাকালাম, মেঘ এর আব্বু আম্মু আমার সামনে দু হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে আছেন)
আব্বু: আহসানুল আমি কিন্তু…
আহসানুল আঙ্গেল: তুই আমার বন্ধু তাই বলে তোর মেয়েকে তো আমি জোড় করে আমার বাড়ির বউ করে নিয়ে আসতে পারি না, আজ কণার উপর সব ছেড়ে দিলাম। মা তুমি যা চাইবে তাই হবে।
আমি: কি বলছেন এসব আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না, একটা বাচ্চা মেয়ের কথায় আপ…
সাবিরা আন্টি: হয়তো আল্লাহ্‌ চাইছেন তোমাদের দুজনের চারহাত এক হউক তাইতো এই বাচ্চা মেয়ের দ্বারা…
আমি: এ হয় না আন্টি আমি…
“কেন হয় নারে কণা, তুই বড় হয়ে গেছিস বলে আমাদের কথা শুনবি না? নাকি আমরা তোদের চেয়ে গরীব বলে আমাদের পরিবারে আসতে চাইছিস না” (পিছনে দাদিকে দেখে সালাম করলাম, সেই ছোটবেলায় দেখেছিলাম উনাকে)
আমি: দাদি এসব কিছুই না, আপনারা কেন বুঝতে চাইছেন না…
দাদি: এসব নয়তো কি? আমার মেঘ দাদুভাই দেখতে খারাপ? (দাদির কথা শুনে মেঘের দিকে তাকালাম, ও রাগে ফুঁসছে)
মেঘ: সবাই যারযার মতামত জানিয়ে দিচ্ছ হচ্ছেটা কি এসব? একটা বাচ্চা মেয়ে বললো আর তোমরাও ওর সাথে বাচ্চা হয়ে গেলে? ভালো করে শুনে রাখো আমি বিয়ে করতে পারবো না। (মেঘ রাগে গজগজ করতে করতে রুমে চলে গেলো)
দাদি: কণা তোর কি মতামত?
আম্মু: অনেক্ষণ ধরে চুপচাপ সবার কথা শুনে যাচ্ছি, কি পেয়েছেন আমার মেয়েটাকে? আপনারা বললেই আমরা বিয়ে দিয়ে দিবো নাকি?
আব্বু: শারমিন আমি কিন্তু এই বিয়েতে রাজি।
আম্মু: কিন্তু আমি রাজি না। (আব্বু আম্মুর তর্কাতর্কি দেখে দূরে সরে আসলাম, তোহাকে তো কোথাও দেখতে পাচ্ছি না মেয়েটা কি কাঁদছে নাকি)

তোহা: আজ থেকে তুই আর আমার আম্মু না, আমি তোকে ফেলে দিবো। আম্মুরা খুব দুষ্টু হয়, প্রথম আম্মু আমাকে ছেড়ে চলে গেছে আর আজ নতুন আম্মুও আমাকে রেখে চলে যেতে চাইছে। আর আব্বু তো আরো দুষ্টু, আজ আমাকে বকা দিয়েছে। (তোহাকে খুঁজতে খুঁজতে উপরে চলে এসেছিলাম, জানালার কাছে দাঁড়িয়ে তোহার কন্ঠে এসব শুনে ভিতরে চোখ রাখলাম। তোহা হাতের পুতুলটা ছুড়ে ফেলে দিতে যেতেই মেঘ তোহাকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো)
তোহা: ছাড়ো আমাকে, তুমি আমাকে বকা দিয়েছ কথা বলোনা আমার সাথে। (তোহার কান্নাভেজা কন্ঠে মেঘের কান্না যেন আরো বেড়ে গেলো)
মেঘ: মামুনি আমি আর তোমাকে বকা দিবো না, তুমি এই পুতুলটা ফেলে দিওনা। এই পুতুল তো তোমার মা তাই না?
তোহা: চাই না আমার আম্মু, সব আম্মুরা দুষ্টু হয় সব আম্মুরা পঁচা। (তোহার এই কথাটা যেন আমার কলিজায় এসে লাগলো। ছোট মেয়েটির মা নেই, একটু মায়ের ভালোবাসা চাইছে ওর মন আর আমি কিনা…)
মেঘ: মামুনি তুমি যা চাইছ তা হয়না মা। কণা আন্টিটা অনেক বড় লোক আর বড়লোক মেয়েরা বাচ্চা ফেলে চলে যায় কণা আন্টি খুব পঁচা তোমাকে ফেলে চলে যাবে। তুমি আর জেদ করো না।
তোহা: বললাম তো এই পরীটাই আমার নতুন আম্মু হবে নাহলে আমি না খেয়ে খেয়ে মারা যাবো তখন বুঝ…
মেঘ: চুপ কর মা, এসব কি বলছিস? তুই ছাড়া আমার আর কি আছে তোর কিছু হলে আমি বাঁচবো কি নিয়ে। (মেঘের মেয়েকে এমনভাবে জরিয়ে ধরে কান্না দেখে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না)
আমি: মেয়েকে ছাড়া বাঁচতে পারবেন না যখন মেয়ের কথা মেনে নিচ্ছেন না কেন? (মেঘ আমাকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে)
মেঘ: কি বলছেন এসব? এইটা হয় না।
আমি: কেন হয় না? আমি যদি ছোট্ট তোহার জন্য নিজের সব স্বপ্ন ছুড়ে ফেলে দিয়ে বিয়ে করতে রাজি হতে পারি তাহলে আপনি বাবা হয়ে পারবেন না কেন?
মেঘ: আপনি রাজি মানে?
আমি: হ্যাঁ আমি এই বিয়েতে রাজি। আমি তোহা মামুনির নতুন আম্মু হতে চাই।
তোহা: এ্যা আমার নতুন আম্মু পঁচা না খুব ভালো। (তোহা এতোক্ষণ ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আমার কথা গুলো শুনছিল, বিয়েতে রাজি বলতেই দৌড়ে এসে আমার কোলে উঠলো)
মেঘ: আমি পৃথিবীর কোনো মেয়েকে বিশ্বাস করি না বুঝেছেন? এই বিয়ে হবে না, আমি ঘৃণা করি মেয়ে জাতিকে।
আমি: তোহার নতুন আম্মু হবো বলেছি যখন তখন হবই পারলে আটকান।
তোহা: হিহিহি পরীটা। (তোহা হাসতে হাসতে আমার নাক টেনে দিলো, ওকে নিয়ে বেরিয়ে আসলাম)

আব্বুর সাথে আম্মু এখনো তর্ক করছেন দেখে আমি গিয়ে আব্বুর পাশে দাঁড়ালাম।
আমি: আব্বু আমি বিয়েতে রাজি। (সবাই অবাক হয়ে একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে আবার আমার কোলে থাকা তোহার দিকে তাকাচ্ছে)
আম্মু: কণা কি বলছিস ভেবে চিন্তে বলছিস তো?
আমি: হ্যাঁ আম্মু।
দাদি: আমি জানতাম কণা এই বিয়েতে রাজি হবে।
মেঘ: কিন্তু আমি রাজি না। (মেঘের কথা শুনে ওর পরিবারের সবাই ওর কাছে গিয়ে বুঝাতে শুরু করলো। আম্মু এসে তোহাকে আমার কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে আমার হাত ধরে টেনে একটু দূরে নিয়ে আসলেন)

আম্মু: কণা তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?
কণা: না আমি ঠিক আছি আর আমি তোহার আম্মু হতে চাই।
আম্মু: এই পরিবারে তুই থাকবি কিভাবে? তাছাড়া মেঘ বিবাহিত।
কণা: কেন থাকতে পারবো না এই পরিবারে? কি কম আছে ওদের? আমাদের চেয়ে অনেকটা গরিব এটাই তোঁ? আমি মানিয়ে নিতে পারবো। আর মেঘ এর কথা কি বললে ও বিবাহিত? তাতে কি হয়েছে আম্মু, ওর বিয়েটা টিকেনি এতে কি ওর দোষ?
আম্মু: কিন্তু মেঘ তো বিয়েতে রাজি না, তুই সুখী হবি নারে মা।
আমি: আজ রাজি না কিন্তু বিয়ে হয়ে গেলে পর হয়তো একদিন মেনে নিবে তাছাড়া আমি তোহার জন্য বিয়েটা করছি তাই তোহা আমার কাছে থাকলে আমি আর কিছুই চাই না।
আম্মু: তোর যা মন চায় কর।

আম্মু চলে গেলেন, চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি আর ভাবছি আমি কি ঠিক করছি এসব? পরক্ষণেই তোহার মায়াবী মুখটার দিকে নজর পড়লো, ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। নাহ এই বিয়ে আমাকে করতেই হবে শুধুমাত্র তোহার জন্য, আর মেঘ তো খারাপ ছেলে নয়, শুধু মেয়েদের জন্য ওর মনে একটু ঘৃণা জন্মে গেছে, আমি নাহয় আমার ভালোবাসা দিয়ে সব ঘৃণা ধুয়ে মুছে দিবো।
মেঘ: ওকে আমি রাজি। (মেঘের কথা শুনে তাকালাম ওর দিকে, স্পষ্ট বুঝতে পারছি ও পরিবারের সবার কথায় রাজি হয়েছে)

কয়েক ঘন্টার মধ্যে বিয়ের আয়োজন করা হলো, সন্ধ্যাবেলা মেঘের বাড়িতেই বিয়েটা হয়ে গেলো। আর আট-দশটা মেয়ের মতো আমিও বিয়ে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতাম কিন্তু আজ সবকিছু…

বারান্দার দরজা খুলার শব্দ শুনে ঘোমটাটা পুরোপুরি সরিয়ে মেঘের দিকে তাকালাম। এতোক্ষণ হয়তো একের পর এক সিগারেট টেনেছে, ওর চোখ মুখ তো তাই বলছে। এলোমেলো পায়ে হেটে এসে মেঘ দফ করে সোফায় বসে পড়লো। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না শুধু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেঘ চেঁচিয়ে উঠলো…
মেঘ: এই মেয়ে এভাবে তাকিয়ে আছ কেন আর বউ সেজেই বা বসে আছ কেন? খবরদার একদম অধিকার ফলাতে আসবা না আমি মেয়েদের ঘৃণা করি। (বিয়ে তো জীবনে একটাই হয় তাই মেঘের কথার পাত্তা না দিয়ে খাট থেকে নেমে ওকে সালাম করতে গেলাম)

সালাম করতে যেতেই মেঘ আমার দুহাত ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে সজোরে একটা থাপ্পড় মারলো আমার গালে। থাপ্পড়ের শব্দে তোহা ঘুম থেকে উঠে বসে গেছে আর আমি বোবার মতো গালে হাত দিয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছি। প্রথম রাতেই এমন, জানিনা বাকি জীবনে আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে।

চলবে?

ভালোবাসি

0

গল্প : ভালোবাসি

লেখিকা : নীল পরী

আজ “রাহির” কলেজ এর প্রথম দিন। খুব ভালো লাগলো দিনটা। নতুন প্রকৃতি, নতুন আবহাওয়া, নতুন টিচার্স, আর হারামি নতুন ফ্রেন্ডস।প্রতিদিন খুব ভালোই লাগে ক্লাস করতে টিচার্সদদের বকা শুনতে,, কিন্তুু এমন সব হারামি ফ্রেন্ডস থাকলে টিচার্সদের বকা শুনতে কোনো শএুর দরকার পরে না। তবুও অরা বেষ্ট ফ্রেড। আর নতুন নতুন কলেজ গেলে ছেলেদের থেকে প্রেমের অফার তো আসবেই। তাই বল কি প্রেমে করতে হবে না। তার পর ও ভালো লাগা বলে একটা কথা তো আছেই। অনেকটা দিন পার হয়ে গেলো একটি ছেলেকে দেখতে দেখতে ভালোলেগে গেলো। আসলে এই ছেলেটাকে রাহিরই খুব বিরক্ত লাগতো। কিন্তুু কখন যে কেমন করে ভালোবেসে ফেললো বুঝে উঠতে পারেনা। যাই হোক রাহির ভালোলাগার মানুষটির নাম হলো ” নাহিদ”
নাহিদের সাথে ভালো করে যে দিন কথা হলো তা হলো….
রাহি : হাই,,,,( মুগ্ধতার চোখে)
নাহিদ : ( অবাক চোখে তাকিয়ে আছে)
রাহি: কি হলো,? শুনতে পাচ্ছো না বুঝি.. এমন করে তাকিয়ে আছো কেনো যেনো ভূত দেখছো???
নাহিদ : না মানে…..
রাহি:না মানে কি হুমমমম।
নাহিদ : আসলে আমি ভাবছি যে তুমি আমাকে পছন্দ করো না, আর সে তুমি আমার সাথে কথা বলছ নিজে থেকে তা কোনো কারণ ছাড়াই।
রাহি : হুমমমম তাই তো।
নাহিদ : হুমমম তাই।
রাহি : তাই না আসলে কিছু বলার ছিল আমার তোমার সাথে।
নাহিদ : অহহহহহ, ওকে বলো তাহলে….
রাহি : এখন ভুলে গেছি পরে বলব ( কেনো জানি লজ্জা লাগলো)
নাহিদ : ওকে ঠিক আছে মনে পরলে বলো।
রাহি : ওকে ( নিচে তাকিয়ে একটু হাসি মুখে)।

এমন করে চলে গেলো কিছু দিন। নাহিদের সাথে কথা হয় বাট বলতে পারে না মনের কথা। একদিন কথা বলতে বলতে হঠাৎ নাহিদ রাহিকে বলল…
নাহিদ : “রাহি” আমার না একটি মেয়েকে ভালোলেগে গেছে, সত্যি বলতে কী আমি তার প্রেমে পরে গেছি….
রাহি : (চুপ)
নাহিদ : এই রাহি চুপ কেনো তুমি কিছু বলো কি করে মেয়েটাকে বলবো।
রাহি 🙁 চুপ কান্না চোখে)
নাহিদ: রাহি আমার দিকে তাকাও তো।
রাহি : ( মাথা নিচু করে আছি)
নাহিদ : এই রাহি এই তুমি কাদঁছো কেনো..??
রাহি : কিছু না বলে নাহিদ কে জরিয়ে ধরে কান্না চোখে বলতে লাগলাম নাহিদ…(বলেই চুপ করে আছি)
নাহিদ : বলো কি হয়েছে..???
রাহি : আমি তোমাকে ভালোবাসি।
নাহিদ : (মনে মনে হাসে কিছু বলে না চুপ করে শুন্ছে)।
রাহি: নাহিদ আমি তোমাকে কেমন করে জেনো ভালোবেসে ফেলেছি কিন্তু বলতে পারছি না। এখন তুমি বলো যে,,(কথাটা শেষ না হতেই)
নাহিদ : i love you rahi
রাহি 🙁 চমকে গিয়ে) তুমি না বললে তোমার একটি মেয়েকে ভালো লেগেছে..???
নাহিদ : আরে পাগলি সেই মেয়েটি তো তুমিই,,,আমি আগে দেখতে চেয়েছিলাম যে তুমি আমাকে ভালোবাসো কি না। তাই বলছি,, তুমি বুঝ না হুমমমম।
রাহি : হুমমম অনেক ভালোবাসি আমি তোমাকে নাহিদ।
নাহিদ: আমিও….এখন তো বলো…..
রাহি : কি..???
নাহিদ : ভালোবাসি….
রাহি : হুমমমম,, খুব ভালোবাসি নাহিদ,
নাহিদ : হুমমমম
রাহি: i love you
নাহিদ : i love you too
রাহি : আমাকে ছেড়ে যাবে নাতো কখনো…???
নাহিদ : না যাবো না। যত বাধাই আসুক না কেনো আমরা এক সাথে তার সমাধান করবো।
রাহি : হুমমমম

এমন করে চলতে থাকে দিন। রাহির ফ্রেন্ডস আর নাহিদের ফ্রেন্ডস খুব খুশি তাদের নিয়ে। ভালোই যাচ্ছিলো দিন। কিন্তু কেমন করে জানি বাসায় এক এক করে সবাই জেনে যায়। প্রতিদিন কলেজ ও যেতে পারে না আর নাহিদ কে ছাড়া রাহি থাকতে পারে না। আর নাহিদ ও। কিন্তু ফোনে কথা হয় তাদের। রাহি খুব কান্না কাটি করে,,, এমন করে চলে যায় কিছু দিন,,, না পেরে নাহিদ রাহির বাসায় আসে আর রাহিকে ডাকতে থাকে….
নাহিদ : রাহি রাহি….
রাহি : নাহিদ তুমি এসেছ….আমাকে নিয়ে যাও তুমি।
নাহিদ : হুমমমম নিয়ে যাবো কিন্তুু এভাবে না বিয়ে করে আমার বউ বানিয়ে।

রাহির বাবা তাই নাকি, আমার বাড়ি এসে আমার মেয়েকে বিয়ে করবে বলছ এত বড় সাহষ তোমার।
রাহি : বাবা আমি নাহিদ কে ভালোবাসি
রাহির বাবা : ভালোবাসো,, মানি না আমি
রাহি: তুমি না মানো তাতে আমার কিছু যায় আসে না।
রাহির বাবা রেগে রাহিকে চর মারলো আর নাহিদ কে বাড়ি থেকে বের করে দিলো।রাহি বলে নাহিদকে এই জীবনে না পেলে এই জীবন আমি চাই না। নাহিদ এর ও একই অবস্থা নাহিদ রাহি না খেয়ে খেয়ে নিজেদের শেষ করে দিতে চাচ্ছে। নাহিদ এর মা বাবা ছেলের এই অবস্থা আর দেখতে পাড়ছে না তাই রাহির বাসায় যায় নাহিদ তে সাথে নিয়ে। রাহির বাবা বলে….
রাহির বাবা : আপনারা এখানে কেনো এসেছেন…?
নাহিদের মা : কেনো এসেছি বুঝতে পারছেন না আপনি। দেখুন আমার ছেলেকে কি অবস্থা হয়েছে।
রাহির বাবা : তো আমি কি করবো..???
নাহিদের মা : আপনার কি একটু ও মায়া লাগে না। নিজের মেয়েকে দেখুন তো একবার।আপনার জিৎ এর জন্য এই ছেলে মেয়ে দুজন মরে যাবে।
রাহির বাবা : রাহির দিকে তাকিয়ে তার চোখ দিয়ে পানি চলে আসে, বলে কি অবস্থা বানিয়েছিস তুই মা।
রাহি : বাবা তাতে তোমার কি তোমার তো কিছু যায় আসে না।
নাহিদের মা : মেনে নেন অদের।আর আপত্তি কইরেন না।
রাহির বাবা : রাহি আমি কি তকে ভালোবাসি না মা।
রাহি : বাবা তুমি আমাকে ভালোবাসো,, কিন্তু নাহিদ ও আমাকে ভালোবাসে,, আমার জীবনে তোমাদের দুজনের ভালোবাসাই চাই….
রাহির বাবা : নাহিদ তুমি আমার মেয়ের সাথে প্রেম করো..????
নাহিদ : না
রাহি : নাহিদ কি বলছ তুমি…?
নাহিদ : আমি তো রাহি কে ভালোবাসি ,,, প্রেম আর ভালোবাসা এক না।
রাহি : হুমমম আমি ও ভালোবাসি ( নাহিদ কে জরিয়ে ধরে)

সবাই দুজনকে মেনে নিল মাঝ খানে কষ্ট ও পেতে হলো,,,

সমাপ্ত

হারিয়ে যাওয়া পথ খুজে পাওয়া পর্ব:6

1

হারিয়ে যাওয়া পথ খুজে পাওয়া

পর্ব:6

লেখা –সুলতানা ইতি

আনুশা: ইচ্ছে করে এখন এই কলেজ থেকে চলে যাই,এই ছেলেটা যে ভাবে আমার পিচনে লেগেছে, তাতে বুঝতে পারছি এই কলেজ এ থাকলে শান্তি পাবো না, কিন্তু যাবো কোথায়?
অহ এই সময় আবার কে ফোন দিলো, ওও অন্নি
হ্যালো অন্নি কি খবর তোর

অন্নি: হুম আমি ফোন দিলেই খবর জানতে চাস,নিজে থেকে কখন ও ফোন করেছিস

আনুশা: প্লিজ অন্নি রাগ করিস না সময় পাই না আর আজ থেকে তো মোটে ও পাবো না জানিস প্রিন্সিপাল স্যার আর দুটো টিউশনি খুজে দিয়েছে আমায়

অন্নি: জানি আমি,এখন বল নতুন কলেজ নতুন ফ্রেন্ডস কেমন লাগছে

আনুশা: নতুন ফ্রেন্ডস মাই ফুট

অন্নি : রেগে যাচ্ছিস কেনো কি হইছে বল

আনুশা: কি হয়নি সেটা বল,তার পর অন্নিকে প্রথম থেকে সব কথা বললাম

অন্নি: ???????বলিস কিরে হুহুহুহুহুহুহুহুহু হা হা হা হা

আনুশা: অন্নি???????

অন্নি: ওকে ওকে আর হাসবো না,তবে ছেলেটি মনে হয় তোকে সত্যি লাভ করে রে

আনুশা: অন্নি তুই সব জেনে ও এই কথা বলছিস,ভালোবাসা সম্পর্ক। এই সবের প্রতি আমার বিশ্বাস নেই,ভালো বাসা বলতে পৃথিবীতে কিছু আছে বলে ও আমার মনে হয় না

অন্নি: তুই থাম, পৃথিবীর সবাই কি এক রকম

আনুশা: প্লিজ অন্নি এখন তুই এটা বলিস না,যে আনু তুই ছেলেটার সাথে কথা বল

অন্নি: আমি ওটা বলছি না ছেলেটা তোকে পছন্দ করে এটা ছেলেটার প্রব্লেম তোর না, তুই এই সব নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছিস কেনো

আনুশা: অন্নি তুই কি বলছিস ঐ ছেলের জ্বালায় আমি ঠিক মতো ক্লাস করতে পারছি না, আর তুই বলছিস আমি????,উফফগ অন্নি তুই ফোন রাখ তো আমার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে

অন্নি: ওকে রাখছি মাথা ঠান্ডা হলে ফোন করিস, আল্লাহ হাফেয,

আনুশা : মনে মনে অন্নি কে বকতে লাগলো
বাসায় এসে ও মুড অফ করে বসে আছে

আনুশার আম্মু: ভেবে ছিলাম মেয়েটা পড়া শুনা করলে সবার সাথে মিসবে আবার আগের মতো হয়ে উঠবে,এই তো দেখছি পুরোই উল্টা ও আর ও গম্ভির হয়ে যাচ্ছে কিছু জিজ্ঞাস করলে ও বলবে না

আনুশা: জীবন টা কেনো আমার এমন, যখন ই ভাবলাম এখন থেকে ভালো থাকবো ঠিক তখন ই একটা ঝড়ের পূর্বাশ দেখতে পাই,
না এই সব ভাবলে হবে না আমাকে পড়া শুনা করতে হবে আমাকে অনেক বড় হতে হবে কিছু কিছু মানুষ কে বুঝিয়ে দিতে হবে,তারা না থাকলে ও আমরা ভালো থাকতে পারি

এই ভাবেই কাটছে আনুশার দিন রাত,একটু আশার আলো আর অনেক হতাশা, কলেজ টিউশনি আর পড়া শুনা,আর তানভীর এর জ্বালাতন তো আছে ই★

আনুশা : রাতের শহর টা খুব ভালো লাগে বিশেষ করে যখন জানালা দিয়ে বাইরে দেখি, তখন বড় বড় দালান গুলোর জানালা দিয়ে জোনাকির আলোর মতো লাইটের আলো বের হয়ে আসে, চার দিকে অন্ধকার, আর জোনাকির আলোর মতো এই সামান্য আলোটা মন টা একদম মাতাল করে দেয়

আনুশার আম্মু: কিরে ঘর অন্ধকার করে বসে আছিস যে

আনুশা: মা ভালো লাগছে অন্ধকার, লাইট জালিয়ে ও না তো

আনুশা আম্মু: তা বললে কি আর হয়, আনু পড়তে বসবি না আজকে

আনুশা: আজ ভালো লাগছে না মা

আনুশার আম্মু: শুনো মেয়ের কথা, আর মত্র কয়েকটা দিন আছে পরিক্ষার আর মেয়ে বলে কি,আমি অতো কিছু বুঝি না লাইট জালিয়ে দিলাম পড়তে বস

আনুশা: উফফ মা একদম কিচ্ছু বুঝে না, কি আর করা যাই পড়তে বসি,পড়তে ও তো মন চায় না কি করি

হুম ঐ দিন যে ডায়েরী কিনেছি তাতে তো কিছু ই লিখিনি, আজ লিখবো,যেই ভাবে সেই কাজ ডায়েরী নিয়ে বসে পড়লাম,

?????ডায়েরি পাতা উল্টিয়ে মাথায় বাঁজ পড়লো,আমি তো এই টা কিনার পর থেকে সময়ের অভাবে কিছুই লিখিনি,তা হলে লিখা টা লিখলো কে,পড়ে দেখি তো কি লিখেছে

” আড়ালে যত দূরে হোক ঐ আকাশ
তবুও আমি তার নিচেই হাটি প্রতিদিন
যতো টা গভীরে আছে চোখের জ্বল,

তবুও আমি করি সেখানে নিজেকে ভিলিন
রাত শেষ যখন ট্রেনের শব্দে ভোর
কাটে না তখন হাজার সপ্নের ঘোর

খুজেছি তখন অজনা সুখ ঐ চোখে
কি যেন দেখি আমি ভিশন ও ভিবর “”

বাহ কবিতা টা তো খুব সুন্দর । কিন্তু এটা লিখলো কে,,কবিতা টা একদম সেই রকম,,,
না না না কি ভাবছি এই সব আমি, এই সব সুন্দর জিনিশ গুলো উপভোগ করা আমার জন্য নয়,????? রাগে ডায়েরী টা চুড়ে মারলাম,কোন ভাবে তানভীর এই লিখাটা লিখেনি তো, ও যদি লিখে থাকে, তা হলে ওর সাহস কি করে হয় আমার অনুমতি ছাড়া আমার ডায়েরী তে কিছু লিখার????
আনুশার আম্মু’ কিরে ডায়েরী টা পেলে দিলি কেনো

আনুশা:মা তুমি এখানে,?

আনুশার আম্মু : দেখতে এলাম তুই পড়ছিস কি না

আনুশা: দেখা হয়ে গেছে,এখন যাও তো আমাকে একা থাকতে দাও

আনুশার আম্মু: তোর কি হয়েছে বলবি আমাকে

আনুশা: কিছু হয়নি।আমি ঠিক আছি,এখন পড়বো তুমি যাও তো মা

আনুশার আম্মু: যাচ্ছি তুই রাগ করিস না
চলে এলাম মেয়েটার যে কি হয়েছে বুঝিনা,কতো হাসি খুশি চট পটে মেয়ে ছিলো আমার,আর এখন তো হাসতে ও ভুলে গেছে

আনুশা: খুব কান্না পাচ্ছে যতো এই সব ফালতু জিনিশ থেকে নিজে কে দূরে রাখতে চাই ততই কেনো কাছে চলে আসে এই সব, আর না,আর কয়েকটা দিনই তো, এক্সাম এর পর অন্য কোথায় ও চলে যাবো,তার আগে আমাকে ভালো রেজাল্ট করতে হবে,
কিন্তু আজ কিছুতেই পড়াতে মন দিতে পারছি না,খুব রাগ হচ্ছে ইচ্ছে করে সব ভেঙে পেলে দি

তানভীর : কয়েক দিন পরে এক্সাম,কিন্তু কিছু তে ই পড়তে পারছি না, সারাক্ষন মনে হয় আনুশা আমার আসে পাশে আছে কেনো এমন হচ্ছে,আনুশা কে তো আমার ফিলিংস টা বুঝাতে ই পারছি না।মেয়েটা এমন কেনো বুঝি না,ইসস ও যদি আর ও আট দশটা মেয়ের মতো হতো,তানভীর না না আমাকে ভেংগে পড়লে চলবে না,আর ও কেন অন্য মেয়েদের মতো হবে, ওর এমন ভাব দেখেই তো ওর প্রেমে পড়েছি আমি

তানভীর এর আম্মু: কিরে তানভীর কি ভাবছিস এই পড়ন্ত বিকেল এ

তানভীর : আম্মু কিছু না তো ( শুনেছি আব্বু আম্মুর নাকি লাব ম্যারেজ, আর মা বাবা যেমন হয় ছেলে মেয়ে ও নাকি তাদের মতো হয়)

তানভীর এর আম্মু: তুই যতোই বলিস কিছু হয়নি আমি বুঝি কি লুকাচ্ছিস, বল।

আম্মু তুমি ও না কি লুকাতে যাবো বলো

তানভীরের আম্মু: দেখ বাবা তুই এখন ও এতো টা বড় হয়ে যাসনি যে আমি তোর না বলা কথা গুলো বুঝতে পারবো না

তানভীর : আমি আম্মুর দিকে অভাক চোখে তাকিয়ে আছি,আর ভাবছি মেয়েদের মনটা কতো কমল তা আমার আম্মু কে না দেখলে বুঝতে পারতাম না আব্বুকে তো বুঝার মতো সময় পাইনি,উনি থাকে দেশের বাইরে দুই তিন বছর পরে একবার আসে কয়েক মাস থেকে আবার চলে যায়,এই আম্মু ই আমার সব

তানভীরের আম্মু : কিরে বলবি না মায়ের কাছে

আম্মু আমার কাছে এসে মাথায় বুলিয়ে দিতে দিতস জিজ্ঞেস করলো, আমি আম্মুকে জড়িয়ে ধরে রাখলাম

আম্মু: জানিস তোর আব্বু যেদিন আমাকে প্রথম দেখে অনি নাকি আমাকে প্রথম দেখেই ভালোবেসে পেলে,কিন্তু আম্মু প্রথম প্রথম পাত্তা দিতাম না

তানভীর : কেনো দিতে না আম্মু

আম্মু: তোর বড় আন্টির যখন বিয়ে হয় তখন দেখলাম তোর আংকেল তোর আন্টিকে কারনে, অকারনে বকতো মারতো সেই থেকে ছেলে দের আমার ভয় হতো,কিন্তু তোর আব্বু কে দেখে আর তোর আব্বুর ভালোবাসা দেখে, আমি বিশ্বাস করতে বাধ্য হই যে পৃথিবীতে সব মানুষ এক নয়

তানভীর : তার মানে আনুশার জীবনে কি এমন কিছু আছে? যে জন্য ও আমাকে বিশ্বাস করতে পারছে না

আম্মু: কিরে কি ভাবছিস,মেয়েটার নাম কি,?

তানভীর : অবাক হয়ে কোন মেয়ে আম্মু

আম্মু: এতো অবুঝ সাজছিস কেনো,এখন যে মেয়েটার কথা ভাবছিস আমি তার কথা ই জিজ্ঞেস করছি

তানভীর : তুমি কি করে বুঝলে আম্মু আমি এখন কারো কথা ভাবছি

আম্মু: বুঝবো না,আমি যে মা সন্তানের মনে কি চলছে আমি তো বুঝতে পারছি,

তানভীর : সত্যি আম্মু তুমি পৃথিবীর সেরা মা,আমার লক্ষি আম্মু

হয়েছে হয়েছে আর পাম মারতে হবেনা,আমার বউ মার নামটা তো বল

তানভীর : আম্মু ওর নাম আনুশা,ও সবার থেকে আলাদা আম্মু,সারাক্ষন পড়াশুনা করে,আর চুপ চাপ থাকে,

আম্মু: কোথায় থাকে বল আমাকে আমি ওর আম্মুর সাথে কথা বলবো

তানভীর : কোথায় থাকে জানি না কথা বলতে গেলে,কিছু বলার সান্স এ দেয়না এটা ওটার বাহানা করে চলে যায়

আম্মু: ভাবিস না সব ঠিক হয়ে যাবে,অনেক দেরি হয়ে গেছে আমি নাস্তা দিচ্ছি খেয়ে পড়তে বস,আর এখন এসব ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে পেল

তানভীর : হুম
কি হুম আয় খাবি চল,আম্মু আমাকে টেনে নিয়ে গেলো

to be continue

হারিয়ে যাওয়া পথ খুজে পাওয়া পর্ব:5

0

হারিয়ে যাওয়া পথ খুজে পাওয়া

পর্ব:5

লেখা –সুলতানা ইতি

 

পরদিন সকাল বেলা আনুশা তাড়া তাড়ি রেডি হচ্ছে কলেজ এ যাওয়ার জন্য
আনুশার মা: কিরে কই যাচ্ছিস তুই এতো সকাল সকাল?

আনুশা: কোথায় সকাল মা আটটা বাজে,আর আমি কলেজ এ যাচ্ছি আর একটা দিন ও নস্ট করতে চাই না

মা: তাই বলে এতো তাড়া তাড়ি

আনুশা: মা রাস্তায় জ্যাম থাকে তো অনেক

আনুশার আম্মু: ওকে যা মন দিয়ে পড়া শুনা কর

আমি মায়ের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে কলেজ এর পথে রওনা হলো
এ যেন আমার নতুন জীবনে পা রাখলাম আমি, কখন ও কি ভেবেছি আবার পড়া শুনা করবো আগের মতো, আল্লাহ সব কিছু তোমার রহমতেই সম্ভব হয়েছে,তুমি না চাইলে কিচ্ছু হতো না, শুকরিয়া আল্লাহ তোমার দরবারে, কলেজ এসে পৌঁচলাম দেখলাম ক্যাম্পাসে বসে অনেকই আড্ডা দিচ্ছে,যাই হোক আমি ঐ সব আড্ডা টাড্ডার মধ্যে নাই সোজা চলে গেলাম ক্লাস এ

পুরো ক্লাস টা পাকা কেউ নেই তবে সবার বই গুলো ঠিক আছে যাই হোক গিয়ে বসলাম একটা ব্যান্সে , পাশে একটা বইয়ের ব্যাগ রাখা আছে এটা কার ছেলের না মেয়ের দূর আমার এতো কিছু জানার দরকার নাই,ক্লাস শুরু হতে এখন ও লেট তার ছেয়ে বরং বই খুলে একটু পড়ি
কিছুক্ষন পর

ক্লাস সব স্টুডেন্ট রা আসা শুরু করছে শুধু আমার পাশের টা আসেনি
স্যার চলে আসছে ক্লাস এ

হঠ্যাৎ একটা ছেলে বল্লো আসবো স্যার

(আসো)

স্যার: সবাই শুনো তোমাদের এক্সাম অতি সন্নি নিকটে সো তোমরা মন দিয়ে পড়া শুনা করো এই কয়টা দিন আউট সব প্লেন বাদ দিয়ে পড়া শুনাতে মন দাও
স্টুডেন্ট : ইয়েস স্যার
স্যার আর ও কিছুক্ষন লেকচার দিয়ে চলে গেলো, আমি স্যার পড়াটা নিজে নিজে আবার করে বুঝবার চেস্টা করছি

?????আরেএএএএ miss attitude তুমি এখানে?

কথাটা শুনে তাকালাম,হুম আমার পাশে সেই ছেলেটা, যার সাথে প্রথম দিন ধাক্কা খেয়েছিলাম, সেই ছেলেটা বসেছে আর আমি খেয়াল ই করিনি,ওহ নো এতো বড় blunder আমি কি করে করতে পারি,

ছেলেটি: এই যে mis attitude এতো কি ভাবছো?বাই দা য়ে নাম কি তোমার?

আনুশা: আমার নাম যাই হোক না কেনো আপনাকে বলবো কেনো আর আমি মটেই Attitude দেখাচ্ছিনা সো আমাকে ঐ নামে ডাকবেন্না, আর আপনি আমার পাশে কি করছেন? (ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস কিরলো আনুশা)

ছেলেটি: এই যে হ্যালো, আমি আপনার পাশে না আপনি আমার পাশে এসে বসেছেন,কেনোনা আপনার আগে আমি এসেছি

আনুশা: ওকে ফাইন আপনার জায়গাতে আপনি থাকুন আমি গেলাম এই বলে আমি একদম পিচনে গিয়ে বসলাম,এই ছেলেটার গায় পড়ে কথা বলার ভাবটা আমার একদম ভালো লাগছে না কি যে করি

ছেলেটি: সেই প্রথম ধাক্কা খেয়ে এই মেয়ের চোখের দিকে নজর পড়েছিলো উদ্ভট মায়াবি চোখ, যেন চোখেই তার কথা বলে,আচ্ছা ওর চোখ গুলো কি ওর নাম টা আমায় বলে দিতে পারে না নাকি, দূর কি সব ভাবছি আমি

আনুশা: ক্লাস শেষ তাই চলে যাচ্ছিলাম হঠ্যাৎ

এই যে miss Attitude, একটু শুনবেন,

আনুশা: আসে পাশে তাকালাম দেখলাম ছেলেটা আমাকেattitude বলে ডাকাতে সবাই আমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে, আমার তো রাগ চরমে উঠে যাচ্ছে, অনেক কস্টে নিজেকে কন্ট্রোল করে বললাম

হাই আমি আনুশা আর ভুল করে ও আমাকে ঐ সব নামে ডাকবেন্না, এই বলে চলে যাচ্ছিলাম

ছেলেটি: আনুশা শুধু নিজের নাম টা ই বললে আমার নামটা শুনবে না,

আনুশা: আমি না শুনার মতো করে হাটছি
ছেলেটি চিৎকার করে বলল, হেই মিস আনুশা আমার নাম তানভির, তানভির মাহমুদ

আনুশা,; আমি আমার মতো করে চলে এলাম বাসায় এই সব ফালতু ছেলেদের কথা ভাবার সময় আমার হাতে নেই

আনুশার আম্মু: কিরে নতুন কলেজ নতুন সব কিছু কেমন লাগলো তোর,

আনুশা: ভালো
আনুশার আম্মু: ভালো হলে মুখটা এই রকম পেচার মতো করে রাখছিস কেনো

আনুশা: তুমি ও না মা,মানুষ এর মুখ কখন ও পেচার মতো হয়,আচ্ছা যাও খেতে দাও খিদে পেয়েছে( কথা গুরানোর জন্য)

আনুশার আম্মু: কথা গুরাচ্ছে মেয়ে আমার খুব বড় বড় ভাব নিচ্ছে সত্যি কি বড় হয়েছে

আনুশা: মা যাও তো খাবার দাও,

আনুশার আম্মু: দিচ্ছি আয়
খেয়ে দেয়ে একটু শুতে যাবো অমনি মনে হলো আজ ডায়েরী টা তে কিছু লিখবো অনেক দিন হয় তেমন করে ডায়েরী লিখা হয় না
ডায়েরী খুলে লিখতে বসলাম
ইসস যা সেই কবে যে ডায়েরীর পেজ গুলো শেষ হয়েছে মনে নেই
ঠিক আছে কোন ব্যাপার না,কাল কলেজ এ যাওয়ার সময় একটা কিনে নিবো
আনুশার আম্মু: কিরে কি এতো বিড় বিড় করছিস বল তো,

আনুশা: না আম্মু তেমন কিছু ই না

আনুশার আম্মু: তা হলে যা ঘুমা একটু,বিকেল এ তো আবার টিউশনি করতে বের হবি,

আনুশা: হুম,ইসস কি যে করি, চাকরি টা ও ছেড়ে দিয়েছি নতুন টিউশনি ও তো পাইনি,এই দুই টা দিয়ে তো আর সব খরচ চলবে না, কি করি,?

পরদিন আনুশা কলেজ এ যাওয়ার পথে ডায়েরী কিনবে কি না ভাবছে,যদি ডায়েরি না কিনি তা হলে কিছু টাকা বেছে যাবে, এখন কি করি? দেখি তো ব্যাগের মধ্যে জমিয়ে রাখা কোন টাকা পাই কি না,আরেবাস এই তো পেয়ে গেছি এই দিয়ে হয়ে যাবে যাই কিনে নিয়ে আসি, ডায়েরী কিনে সোজা কলেজ এ চলে গেলাম, গিয়ে ক্লাস বসলাম,

প্রিন্সিপাল স্যার: আনুশা একটু এই দিকে আয় তো
আনুশা: স্যার কেনো ডাকছে শুনে আসি

তানভীর ক্লাস এ এসে আরে এই টা miss attitude na কিন্তু কই গেলো ও তো ক্লাস ছাড়া অন্য কোথায় যায় না

এমন সময় অন্য আরেক টা ছেলে যাওয়ার সময় তার ধাক্কা খেয়ে আনুশার বই পড়ে যায়,তানভীর ছেলেটা কে কিছু বলতে গিয়ে ও বল্লো না,তানভীর এর চোখ আটকে গেলো একটা ডায়েরীর উপর

তানভীর ; আরে mis.attitude আবার ডায়েরী ও লিখে দেখিতো ডায়েরি তে কি আছে,( যদি ও অন্যের ডায়েরী পড়া ঠিক নয়) তবু ও এই ডায়েরী টা খুলে দেখি,সে কি কিছুই তো লিখা নেই,তার মানে এটা miss Attitude আজ কিনেছে, আচ্ছা যদি এই ডায়েরী টার প্রথম লিখা আমার হয়,,তা হলে ত বেশ ভালো হবে, miss attitude, একটু চমকে যাবে যেই ভাবা সেই কাজ, কাজ শেষ করে সব কিছু আগের মতো করেই রেখে দিলো

আনুশা: উফফ স্যারর কে যে কি বলে ধন্যবাদ দিবো বুঝতে পারছি না,আমাকে আর ও দুটো টিউশনি পাইয়ে দিলো, যদি ও যাতায়াত করা টা একটু কঠিন তবু ও ভালো

তানভীর : হেই মিস a,সরি আনুশা, কেমন আছো

আনুশা: এ আবার এখানে হায় আল্লাহ আজ আবার আমার সাথে বসে নি তো

তানভীর; হেই মিস সারা দিন কি এতো ভাবো,

আনুশা: সেটা আপনাকে বলবো কেনো?

তানভীর : না বলতে চাইলে তো আর ঝোড় করে শুনতে পারবো না

আনুশা: তাই তো,এতো যাতে বুঝেন তা হলে আমার সাথে সেধে সেধে কথা বলতে আসেন কেনো

তানভীর : আচ্ছা ও কোথায় থাকে কিছুই তো জানি না, একবার জিজ্ঞাস করবো।
এমন সময় স্যার এন্ট্রি
তানভীর : উফফ এই স্যার টা একটু পরে আসলে কি হতো মনে মনে স্যার এর চৌদ্দ গুস্টি উদ্ধার করলো তানভীর
তার পর গিয়ে নিজের জায়গাতে বসলো

ক্লাস শেষ এ আনুশা চলে যাচ্ছিলো

তানভীর : আরে ও তো চলে যাচ্ছে এই মিস এ,,না না আনুশা প্লিজ দাড়াও

আনুশা: না শুনার মতো করে হাটছে,

তানভীর : দৌড়ে গিয়ে হাফাতে হাফাতে, হেই ললনা কোথায় থাকো বলো না
আনুশা: ( কি পাগল ছেলেরে এই কথা বলার জন্য এতো দূর দৌড়ে আসে কেউ)

তানভীর : বলো না..?

আনুশা: আমার নাম পাকি অই আকাশে থাকি,( আমি কি কম জানি নাকি,দিলাম বলে, এইই বার বুঝো ঠেলা)এই বলে চলে গেলো

তানভীর : যাক বাবা কি জিজ্ঞাস করলাম আর কি বলে গেলো, তবে যাই বলো না কেনো ললনা আমি তোমার পিছু ছারছি না,এই তানভীর যাকে মন থেকে চায় তাকে পেয়ে তার পর শান্ত হয়

to be continue

হারিয়ে যাওয়া পথ খুজে পাওয়া পর্ব:4

0

হারিয়ে যাওয়া পথ খুজে পাওয়া

পর্ব:4

লেখা –সুলতানা ইতি

হঠ্যাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেলাম আমার তো মেজাজ গরম হয়ে গেলো

আনুশা: চোখে দেখতে পাননা চোখ কি হাতে নিয়ে হাটছিলেন???

ছেলেটি:?????

আনুশা: কি হলো এই ভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো,জীবনে কি মেয়ে মানুষ দেখেননি নাকি

ছেলেটি: আমি না হয় চোখ হাতে নিয়ে হাটছিলাম তাই দেখতে পাইনি,তাই বলে আপনি কি নাকের জন্য চোখে দেখান না নাকি,আর দেখবেন কি করে নাক এই ভাবে উচো করে রাখলে চোখে দেখবেন কি করে

আনুশা:??????

ছেলেটি: বাই দ্যা য়ে আপনাকে তো কখন ও এই কলেজ এ দেখিনি,নতুন নাকি
আনুশা: আপনাকে আমার পরিচর দিতে আমি বাধ্য নই, এই বলে আনুশা হন হন করে হাটা শুরু করলো

ছেলেটি: ওয়াও I like attitude

আনুশা: উফ কথায় থেকে যে আসে এরা বুঝি না গায়ে পড়ে ঝগড়া করা এদের স্বভাব
এখন প্রিন্সিপাল এর রুম টা খুজে পেলেই হলো ঐ তো একটা মেয়েকে দেখতে পাচ্ছি গিয়ে জিজ্ঞেস করি প্রিন্সিপাল এর রুম কোন দিকে

এই যে একটু শুনবেন প্লিজ

মেয়েটি: আমাকে ডাকছেন

আনুশা: হুম আপনাকে প্রিন্সিপাল এর রুম টা কোন দিকে বলতে পারবেন

মেয়েটি: আসুন আমার সাথে

আনুশা: হুম চলুন আপনাকে অনেক ধন্যবাদ,

মেয়েটি : ইটস ওকে এই টা ই প্রিন্সিপাল স্যার এর রুম আপনি ভিতরে যান,আমি আসছি
আনুশা: ওকে ধন্যবাদ:
মেয়েটি মুছকি একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো

আনুশা: আসসালামু আলাইকুম,স্যার আসবো

প্রিন্সিপাল স্যার: হুম আসো, তোমাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না,
আনুশা: আমাকে আনিস আংকেল পাঠিয়েছে

প্রিন্সিপাল স্যার : ও ওও তুমি আনুশা,তোমার কথা আনিস আমাকে বলেছিলো,কিন্তু আনিস যত বার না বলেছে তার থেকে বহুবার অন্নি আমাকে বলেছিলো
অন্নির কথা অনুযায়ী তোমার তো আর ও আগে আসার কথা এতো দেরি হলো যে
আনুশা: আসলে স্যারর অনেক জ্যাম ছিলো রাস্তায় তাই

স্যার: ইটস ওকে অন্নি বলেছিলো তুমি পড়া শুনায় খুব ভালো তাই আমি অন্নির কথায় বিশ্বাস করে তোমার কোন পরিক্ষা নিচ্ছি না এমনিতে এখন বছর এর শেষ সময় এখন কোন কলেজই ভর্তি নেয় না, অন্নি আমার মেয়ের মতো তাই ওর রিকুয়েস্ট আমি পেলতে পারিনি,আমি তোমার ভর্তি নিয়ে নিলাম কিন্তু তোমাকে নিয়মিত ক্লাস করতে হবে

আনুশা: কিন্তু স্যার নিয়মিত ক্লাস করা আমার পক্ষে সম্ভব না আমি একটা জব করি পাশা পাশা রাতে টিউশনি করাই

স্যার: তা হলে তো অনেক প্রব্লেম কি করা যায়,আচ্ছা শুনো তোমাকে পড়া শুনা করে ভালো রেজাল্ট পেতে হলে একটু তো কষ্ট করতে হবে তুমি জব টা ছেড়ে দাও আর ও কয়েকটা টিউশানি খুজে নাও

আনুশা: কিন্তু স্যার পাবো কথায় টিউশনি,

স্যার: টেনশন করো না আমি খুঁজে দিবো তুমি শুধু মন দিয়ে পড়া শুনা টা করবে,

আনুশা: ওকে স্যার তা হলে আমি আসি

স্যার: সাবধানে যেও
কলেজ থেকে বের হওয়ার পর শুধু ভাবছি
পৃথিবীতে কতো প্রজাতির মানুষ আছে,তা বুঝতেই পারতাম না যদি লাইফে এই ঝড় টা না আসতো,আমার বাবা যাকে আমার বাবা বলতে ও ঘেন্না লাগে যে মানুষ টার মনে তার শন্তানদের জন্য বিন্দু মাত্র ভালোবাসা ছিলো না আচ্ছা বুঝলাম মায়ের প্রতি ভালোবাসা ছিলো না কিন্তু আমরা তিন বোন কি দোষ করেছি আমরা তো তারই মেয়ে, তবুও আমাদের একা করে অন্য। মহিলার সাথে সংসার করছে ছিঃ ছিঃ ধিক্কার জানাই এই সব পুরুষ দের,
আর নিহাল সামান্য একটা ভুলের জন্য আমার লাইফে মস্ত বড় একটা স্পট পেলে দিলো সত্যি এদের কে পুরুষ ভাবা যায় না এরা আসলে কাপুরুষ,
আর কলেজ এর প্রিন্সিপাল স্যার কয়েক ঘন্টার ই তো আলাপ,অথচ মনে হলো উনি আমার কতো আপন কেউ আর ভাবতে পারছি না একটা রিক্সা ডেকে উঠে পড়ি,
রিক্সাতে উঠতেই অন্নির ফোন এই আরেক টা মেয়ে মনে হয় আমাকে জীবনে ও মনের আড়াল করবে না,আমার মা আর অন্নি আমার বেস্ট দুজন মানুষ আল্লাহ তুমি প্লিজ দেখো এরা যেন আমার লাইফ থেকে হারিয়ে না যায়, ইসস কল টা কেটে গেলো আবার কল আসলো বিলম্ব না করেই রিসিভ করলাম

অন্নি: কিরে কোথায় তুই কল রিসিভ করছিলি না কেনো আর সব কিছু ঠিক ঠাক ভাবে হয়েছে তো

আনুশা: যত দিন আমার বোনের মতো বান্ধবি আমার সাথে আছে তত দিন সব ঠিকই থাকবে

অন্নি: তোর পাশে তো থাকতেই ছেয়েছি তুই তো রাখলি না

আনুশা: রাখলাম না মানে তুই সব সময় আমার মনের মধ্যেই থাকিস

অন্নি: এখন বল প্রিন্সিপাল আংকেল কে কেমন লাগলো

আনুশা: উনার কথা আর বলতে, কেমন বাবা বাবা গন্ধ উনার মধ্যে, মনে হয় না যে উনি স্যার

অন্নি: বলেছিলাম না তোকে আরে আমার বাবার বন্ধু বলে কথা

আনুশা: হুম আংকেল এর মতোই প্রিন্সিপাল স্যার

অন্নি: এখন কোথায় তুই?

আনুশা: রিক্সাতে বাসায় যাচ্ছি

অন্নি: ও যা তাইলে আর কাল থেকে ক্লাস শুরু করবি আর মন দিয়ে পড়া শুনা করবি s,s,c তে যেমন রেজাল্ট করলি তার থেকে ও ভালো কিছু চাই

আনুশা: এতো কিছু ঘটে যাওয়ার পরে ভালো রেজাল্ট করতে পারবো কি না জানি না

অন্নি: তুই পারবি আমি জানি তোর মনের ঝোর কতো টা এখন রাখিরে ভালো থাকিস

লাইন কেটে দিলো অন্নি, ওর গুড ফ্রেন্ড পাওয়া সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার রিক্সা এসে পৌছলো বাড়া মিটিয়ে বাসায় ডুকলাম

মা আমাকে দেখে মনে হলো শস্তি পেলো, মাকে দেখে মনে হলো আমি হারিয়ে গেছি আর এখন আমায় ফিরে পেয়েছে

আনুশা: মা তুমি এমন করে তাকিয়ে আছো যেন কতো যুগ পর আমাকে দেখেছো
মা: তাকাবো না সকালে তো না খেয়ে বেরিয়ে গেলি আমার বুঝি চিন্তা হয় না
আনুশা: উফফ মা আমি এখন আর ছোট নেই দেখো কতো বড় হয়েছি

মা: সে তো দেখতেই পাচ্ছি,বড় হয়েছিস দেখেই তো এখন আর মায়ের কথা শুনিস না
আনুশা: মা তুমি ও না, খিদা পেয়েছে খেতে দাও
হুম আয় দিচ্ছি,মা মেয়ে খেয়ে
দেয়ে, যোহর এর নামাজ পড়ে শুয়ে গল্প করছে প্রিন্সিপাল স্যার এর কথা বল্লাম

মা: প্রিন্সিপাল স্যার ঠিক ই বলেছে তোর এখন জব করা টা ঠিক হবে না, আগে ভালো করে পড়া শুনা করে ভালো রেজাল্ট করে তার পর না হয় জব করবি

চলবে

হারিয়ে যাওয়া পথ খুঁজে পাওয়া,,,, পর্ব-3

0

হারিয়ে যাওয়া পথ খুঁজে পাওয়া,,,,

পর্ব-3
লেখা –সুলতানা ইতি

 

এখন ও s,h,c exam দেয়া হয়নি এই পড়া দিয়ে জব পাওয়া টা খুব কঠিন, পাশের বস্তির এক আন্টি কে গিয়ে বললাম আমাকে কয়েক টা বাচ্ছা খুজে দিতে, আমি পড়াবো তাদের কে,
আন্টি বল্লো উনি যে বাসায় কাজ করে ঐ বাসার বাচ্চার জন্য টিচার লাগবে আমি বললাম আন্টি প্লিজ আপনি ওদের কে আমার কথা বলুন আমি পড়াবো,
আন্টি বল্লো কাল সকালে তুমি আমার সাথে যেও,আমি অনেক টা খুশি হলাম
পরদিন সকালে আন্টির সাথে গেলাম ঠিক হলো প্রতিদিন সন্ধার পরে পড়াতে হবে ২০০০ টাকা করে দিবে আমি ও রাজি হয়ে গেলাম, রোজ টিউশনি করে এসে মায়ের সাথে কাজে হেল্প করি,এর মধ্যে মা ও একটা বাসায় কাজ পেয়ে যায়
আমি আর ও কয়েকটা টিউশনি যোগাড় করে ফেলি,
এর মধ্যে এক স্টুডেন্ট এর বাবা ধরে, একটা প্রাইভেট কম্পানিতে জব নিই,বলতে গেলে আংকেল অনেক জরা জরি করে কাজ টা আমায় পাইয়ে দেয়,
সেদিন যে আমি কতো খুশি হয়েছি বলে বুঝাতে পারবো না মাকে নিষেধ করি উনি যেন অন্যের বাসায় কাজ না করে, আমার ৪ টিউশনি আর জব এর টাকাতে মা মেয়ে দুজনের খুব ভালো কেটে যাবে এর মধ্যে বড় আপু ছোট আপুর সাথে যোগা যোগ করি, আমরা ভালো আছি শুনে আপুরা খুব খুশি হলো,
এই ভাবে কয়েকটা দিন কেটে গেলো বস্তির ঐ ভাংগা বাসা টা ছেড়ে দিয়ে ভালো একটা রুম বাড়া করেছি,পড়ন্ত বিকেল এ বসে আছি একটু পরে টিউশিনিতে যাবো ভাবছি কয়েক দিন আগের কথা কি ছিলাম, আর কি হয়ে গেলাম,
অবশ্য এখন ভালো ই আছি আল্লাহর কাছে শত কুটি শুকরিয়া
হঠাৎ মোবাইল এর রিং টনে আমার ভাবনায় ছেদ পড়লো অছেনা একটা নাম্বার কিছু না ভেবেই কল টা রিসিভ করি,কন্ঠ শুনে বুঝতে বাকি রইলো না ফোনের ঐ পাশে কে আছে, হুম আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড অন্নির কথা বলছি

অন্নি: কিরে কেমন আছিস আমার কথা কি মনে আছে তোর

আমি: তোর কথা কি কখন ও ভুলতে পারি,আসলে তোর নাম্বার টা হারিয়ে পেলেছিলাম তাই আর কি,তুই আমার নাম্বার কই পেলি,

অন্নি: সুমি আপুর কাছে থেকে নিয়েছি,আন্টি কেমন আছে রে

আনুশা: ভালো, সেদিন অনেক কথা হলো অন্নির সাথে,টিউশনির সময় হয়ে গেছে তাই অন্নিকে বলে লাইন কেটে দিই,,
পরদিন একি সময়ে অন্নির ফোন

অন্নি: আনুশা তোকে একটা কথা বলতে ফোন করেছি

বল কি কথা?

অন্নি: তুই তো এখন ভালো একটা পর্যায় আছিস,পড়া শুনা টা আবার শুরু কর,তুই অনেক ভালো স্টুডেন্ট ছিলি
কথা টা শুনে খুশিতে আমার চোখ জল জল করছিলো, অন্নি তুই তো খুব ভালো কথা বলেছিস। দাড়া আমি কালকেই ট্রাই করবো, এই কথা টা কথা আমার মাথায় আসেনি আর কেউ আমায় বলে ও দেয়নি,

অন্নি: আমি তো বলেছি, এতেই হবে,

আনুশা: এখন এই সময়ে কি ভর্তি নিবে

অন্নি: নিতে ও পারে রিকুয়েস্ট করে দেখ

আনুশা: আচ্ছা দেখছি,

অন্নি: এখন রাখিরে পরে কথা হবে

আনুশা; ওকে রাখ

মোবাইল রেখে রেডী হয়ে টিউশনি করাতে গেলাম ওখান থেকে রাত ১০ টায় ফিরলাম।

মা: আনু খাবি চল

আনুশা: মা খেতে ইচ্ছে করছে না আমার তুমি খেয়ে নাও

মা:তুই কি কোন ব্যাপার নিয়ে টেনশন এ আছিস?

আনুশা: মা বিকেলবেলা অন্নি কল দিয়েছিলো বল্লো আবার পড়া লিখা স্ট্রাট করতে এখন এই সময়ে কলেজে কি ভর্তি নিবে তাই ভাবছি

মা: এতো ভাবিস না তো আল্লাহ রাজি থাকলে সব হবে চল খেয়ে নিবি,

মা জোর করে খেতে নিয়ে গেলো খেয়ে এসে শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলাম,আর আল্লাহ কে বললাম আল্লাহ যাতে কলেজ এ ভর্তি হওয়া নিয়ে কোন প্রব্লেম না হয়, রাতে দু চোখের পাতা এক করতে পারিনি

ফজর এর আযান এর সাথে সাথে ওযু করে নামায পড়তে গেলাম নামায শেষ এ আল্লাহর কাছে দুই হাত উঠালাম হে আল্লাহ হে ফারও আরদেগার সবমস্ত সৃস্টির মালিক তুমি, আল্লাহ আমি কোথায় ছিলাম কোথায় এসে দাড়ালাম সব তোমার দয়ায়,হে দয়াময় পরম করুনাময়, দয়া করো গো আমি যেন কলেজ এ ভর্তি হতে পারি কোন জামেলা যেন না হয় আল্লাহ আমার মনের আশা টা তুমি পূর্ন করো আমিন

নামায শেষ এ একটু শুতে গেলাম যদি একটু ঘুমাতে পারি এই আশায়

মা: কিরে উঠ অনেক বেলা হলো

আনুশা: মায়ের কথায় চট করে উঠে বসলাম মা কখন যে চোখ টা লেগে এসেছিলো বুঝতে পারিনি

মা: হুম সেটাই তো কতোইই বা বয়স হলো এই বয়সে কতো পরিশ্রম করিস,আমি মা হয়ে সেটা কি করে সয্য করি বল

আনুশা: উফফ মা তুমি না একটু বেশিই বলছো আমি একদম ঠিক আছি, এর মাঝে মোবাইল বেজে উঠলো,

মা: তুই কথা বল আমি তোর খাবার রেডি করছি

আনুশা: অন্নি বল

অন্নি: কোথায় ভর্তি হবি ভেবেছিস কিছু

আনুশা: নারে ভাবেনি দেখি এখানে কোন কলেজে এডমিশন নিতে পারি কি না

অন্নি: তোকে আর কষ্ট করতে হবে না, আমি তোর কথা বাবা কে বলেছি মতিঝিল একটা কলেজ আছে বুঝলি অই কলেজ এর প্রিন্সিপাল বাবার বন্ধু, তুই সেখানে গিয়ে বলবি আনিস আংকেল পাঠিয়েছে, ব্যাস আর কিছু করতে হবে না তোকে যা করার প্রিন্সিপাল স্যার করবে

আনুশা: কিন্তু অন্নি কলেজ টার নাম।কি,

অন্নি : মোশারফ হোসেন কলেজ

আনুশা : ওকে আমি রেডি হয়ে বের হচ্ছি

অন্নি: তা হলে রাখি টেক কেয়ার,,

ফোন রেখে আনুশা রেডি হয়ে নিলো

মা: কোন কলেজ এ ভর্তি হবি ভেবেছিস কিছু

আনুশা: মা অন্নি ফোন করেছিলো তার পর অন্নি যা যা বলেছিলো সব কথা মাকে বলে
মা: যাক আমি একটু নিশ্চিন্ত হলাম, অন্নি মেয়ে টা খুব ভালো

আনুশা: তা ঠিক বলেছো মা,আমি তো পুরোনো সবার সাথে যোগা যোগ বন্ধ করেই দিয়েছি,তার পরে দেখো অন্নি কেমন আমাকে খুঁজে বের করে পেল্লো

মা: হুম আমাদের এই অসময় ভাবি যে এমন করবে আমি ভাবতে ও পারিনি,আর অই নিহাল কতো বিশ্বাস করে ওর হাতে তোকে উঠিয়ে দিয়েছিলাম

অন্নি: অহ মা তোমাকে না কতো বার বলেছি আমার সামনে ঐ নাম টা উচ্ছারন করবে না,ভুলে থাকতে চাই আমি সব কিছু,তুমি কেনো বার বার ঐখারাপ সময় গুলো আমার মনে করিয়ে দিচ্ছো তুমি কি চাও আমি মরে যাই
মা: এমন করে বলিস না মা,তোর কিছু হয়ে গেলে আমি কি নিয়ে বাঁঁচবো ঠিক আছে আমি আর কোন দিন ঐ সব নাম তোর সামনে বলবো না

আনুশা; ঠিক আছে আমি বের হচ্ছি

মা: কিন্তু তুই তো কিছুই খেলি না

আনুশা: খেতে ইচ্ছে করছে না মা, দোয়া করো আমি আসছি আনুশা বের হয়ে গেলো

মা: আমি জানি মেয়েটার মন আমি খারাফ করে দিয়েছি, কিন্তু টাকা নষ্ট হবে, এই ভয়ে পথে কিচ্ছু খাবে না, এখন কি করি

আনুশা ঠিকানা অনুযায়ী কলেজ এ গিয়ে পৌছলো ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ১১:৩৯ উফফ জ্যাম এ পড়ে দেরি হয়ে গেলো,এখন প্রিন্সিপাল এর রুম কোন দিকে এই সব ভাবছে আর আনমনে হাটতে হাটতে কলেজ এর ভিতরে চলে গেলো

হারিয়ে যাওয়া,পথ খুঁজে পাওয়া পর্ব:2

0

হারিয়ে যাওয়া,পথ খুঁজে পাওয়া পর্ব:2

লেখা –সুলতানা ইতি

 

আমি লাফ দিয়ে উঠে মামি কে জড়িয়ে ধরে বললাম, মামি সব শেষ হয়ে গেছে
মামি আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে বল্লো, কি হয়েছে বল?
মামির চিৎকারে মা,আর মামা উঠে আসে, মা তো আমাকে দেখেই অবাক, দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বল্লো কি হয়েছে রে মা, আমাকে বল,বল আমাকে,আমি মাকে সব কথা খুলে বলি,মামি তো কথা টা শুনেই রেগে আগুন

মামি: মুখ পুড়ি এতো কষ্ট করে টাকা যোগাড় করে বিয়ে দিলাম,ওতো গুলো টাকা খরচ করলাম,আর উনি কি না তার পরদিন এসে বলছে সব শেষ হয়ে গেছে,
অলক্ষুণে মেয়ে বের হো আমার বাড়ি থেকে, তোকে এই বাসায় রাখলে আমার মেয়েকে ভালো জায়গাতে বিয়ে দিতে পারবো না,

মামা: তুমি এমন বলছো কেনো কপালে যা ছিলো তা ই তো হয়েছে

মামি: তুমি চুপ করো সব কাজেই তোমার একটু বেশি বেশি

আমি: মামি এখন আমি কোথায় যাবো

মা: ভাবি আমার মেয়েটা কে একটু ঠায় দাও

মামি: এই মেয়ে তুই তোর মাকে নিয়ে এক্ষুনি এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবি

জানি মামিকে এখন কোন কিছু বুঝিয়ে লাব হবে না তাই নিশ্চুপ মাকে নিয়ে বেরিয়ে যাই বাড়ি থেকে, কোথায় যাবো মা মেয়ে কেউই জানি না দুজনই কাদছি

মা: আনু এখন আমি তোকে নিয়ে কোথায় যাবো

আনুশা: মা তুমি বড় আপু না হয় ছোট আপুদের বাসায় গিয়ে থাকো, আমার জন্য ভেবো না

মা: নারে তা হয় না, আমি মেয়েদের বাসায় গিয়ে থাকলে শশুর বাড়িতে তাদের মুখ ছোট হয়ে যাবে, আর তা ছাড়া শিলার স্বামি টা ও তো তেমন ভালো না, আমার মেয়ে কে খোটা দিবে।আর সুমির জামাই কিছু বলবে না কিন্তু ওর শাশুড়ি এই টা ভালো চোখে দেখবে না
তার ছেয়ে বরং, আমাদের মা মেয়ের অনিশ্চিত জীবনে ওদের সাথে যোগা যোগ না রাখাই ভালো

মাকে নিয়ে একটা গাছের নিচে বলসলাম
ভাবছি জীবন টাকে কি ভাবে সাঝাতে ছেয়ে ছিলাম, আর চোখের পলক এ এই জীবন টা এলো মেলো হয়ে গেলো, এই সব কিছু ভাবতে ভাবতেই চোখের সামনে সব কিছু ঝাপ্সা দেখতে পাচ্ছি হঠ্যাৎ সেন্সলেস হয়ে পড়ে গেলাম
মা: একি আনু তোর কি হলো আনু মা চোখ খোল কেউ একটু সাহায্য। করবেন আমার মেয়েটা কে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে,

কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে এলো না, আল্লাহ আমি এখন কি করবো আমার মেয়েটা কি এই ভাবে শেষ হয়ে যাবে আনুশার মায়ের কান্নাতে প্রকৃতি নিস্তব্ধ হয়ে গেছে মনে হচ্ছে আর একটু পর ই আকাশ এর বুক ছিরে কান্না বেরিয়ে আসবে,ঝুম বৃস্টি শুরু হয়ে গেলো, বৃস্টির পানি চোখে পড়ে আনুশার জ্ঞান ফিরে আসে

আনুশা: মা তুমি কাঁদছ কেনো দেখো আমার কিচ্ছু হয়নি আমি ঠিক আছি,

মা: তুই সত্যি ঠিক আছিস তো?

আনুশা: হুম একদম
আচ্ছা মা এই ভাবে তো পথে বসে দিন কাটানো যাবে না আমরা কোথায় যাবো বলো তো

মা: শুনেছি তোর হোসেন মামা ঢাকাতে থাকে অনেক বড় লোক, উনার কাছে যেয়ে দেখি আমাদের মা মেয়ের কোন থাকার যায়গা হয় কি না(হোসেন মামা মায়ের দূর সমর্পকের চাচাতো ভাই)

আনুশা: যখন আপন মানুষ গুলো মুখ ফিরিয়ে নিলো তখন উনি কি আমাদের থাকতে দিবে ( মনে মনে বললাম) মুখে মাকে বললাম চলো তা হলে গিয়ে দেখি, এইখান থেকে একটু হাটলে তার পর ট্রেন পাওয়া যাবে

মা: কিন্তু আমাদের কাছে তো টাকা নেই টিকেট কাটবো কি করে

আনুশা: মা শুনেছি ট্রেন এর শেষ ডিকিতে করে গেলে টাকা লাগে না,
মা মেয়ে হাটতে শুরু করলাম কতো জনের লোলুপ দৃস্টি দিয়ে আমাকে যে গিলে খাচ্ছে তার কোন ইয়াত্তা নেই

অবশেষ এ ট্রেন এর শেষ ডিকিতে আমাদের যাওয়ার যায়গা হলো লম্বা সময়ের পর কমলা পুর গিয়ে পৌছলাম, সেখান থেকে রাত দিন একা কার করে ডাকার সিটি তে আসলাম, এখন হোসেন মামা কে খুজে পাওয়া বড় দায়, অনেক ঘেটে ঘুটে তার পর মামার ঠিকানা পাওয়া গেলো হোসেন চৌধুরী,

এই দিকে খুব খিদে পেয়েছে,মায়ের ও এক ই অবস্তা মা যে মুখ পুঁটে বলছে না, সেটা আমি ঠিক ই বুঝেছি, কতো বার কতো মানুষ এর মুখে শুনেছি ডাস্টবিন এ নাকি বড় লোকে দের বাশি খাবার পাওয়া যায় তাই মাকে নিয়ে আগে ডাস্টবিন খুজতে লাগলাম,অবশেষ এ কিছু খাবার পেয়ে আমি আর মা খেয়ে নিলাম

তার পর ঠিকানা মতে হোসেন মামার বাসায় গেলাম দারওয়ান ভিতরে ডুকতে দিচ্ছে না অনেক্ষন অপেক্ষা করার পর মামা এলো ইয়া বড় একটা গাড়ি হাকিয়ে মা ভাইজান ভাইজান বলে ডাকতে ডাকতে গাড়ির পিছন পিছন ভিতরে গেলো সব ছেয়ে বেশি অবাক তো আমি তোখন হলাম যখন মামা বল্লো মাকে নাকি উনি চিনেই না,
আমি মাকে বললাম মা চলো এখান থেকে ইট পাথরে গড়া মানুষ এর মাঝে তুমি মনুষ্যত্ব খুজে পাবে না মাকে নিয়ে বেরিয়ে এলাম
কোথায় যাবো ভাবছি,হঠ্যাৎ মনে হলো এখানে কম দামে বস্তির ঘর পাওয়া যাবে লোক জন কে জিজ্ঞেস করে করে মির পুর একটা বস্তিতে গিয়ে উঠলাম,বস্তির মালিক কিছুতেই ঘর বাড়া দিতে ছাইছে না,বাড়া পরিশোধ করতে পারবো না এই ভয়ে,
মা উনার হাতে পায়ে ধরে,উনার দয়া হলো অবশেষ এ একটা ঘর দিলেন উনি আমাদের কে,ঠিক ঘর কি না বুঝতে পারছি না বৃস্টি হলে ঘরটাতে পানি পড়বে সে দিকে আমি একশো ভাগ সিয়ুর,তবুও থাকার মতো একটু জায়গা তো হলো আমি মায়ের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছি,কি করবো ভাবছি,আমাকে ভেংগে পড়লে চলবে না, কারো জন্য জীবন থেমে থাকতে পারে না,আমি তো পারবো না থামিয়ে রাখতে, আমাকে রুখে দাড়াতেই হবে,
মা: কিরে আনু কি ভাবছিস এতো
আনুশা: কিছু না মা
মা: আমি কিন্তু অনেক কিছু ভেবেছি,
আমি: কি ভাবলে মা,
মা: বড় লোকেদের বাসায় গিয়ে কাজ চাইবো
আমি কিছু বললাম না,বলার মতো কোন ভাষা আমার নেই,এই ভাবে ৩-৪ দিন পার হয়ে গেলো কোন কাজ এখন ও পাইনি

to be continue

হারিয়ে যাওয়া,পথ খুঁজে পাওয়া। পর্ব-1

0

হারিয়ে যাওয়া,পথ খুঁজে পাওয়া।

পর্ব-1
লেখা –সুলতানা ইতি

আজ আমার বাসর রাত আর অন্য সব মেয়েদের মতো আমার ও এই রাত টা নিয়ে অনেক সপ্ন হুম একটু পরেই আমার সপ্নটা সত্যি হতে চলছে।, বিয়ে টা আমার পারিবারিক ভাবেই হয়েছে ছেলেকে আমি এখন ও দেখিনি মাকে বলেছি তার পছন্দ ই আমার পছন্দ, উফফ উনি এখন ও আসছে না কেনো আর কতোক্ষন অপেক্ষা করবো,

আচ্ছা যাই হোক উনি আসার আগে আপনাদের কে আমার পরিছয় টা দিয়ে নি,আমি আনুশা রহমান, মায়ের ছোট মেয়ে আমার বড় দুবোন আছে অদের বিয়ে হয়ে গেছে, মা আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসে তাই আমি মায়ের কথার বিরুদ্ধে যাইনি কেউ মনে হয় আসছে, পায়ের শব্দ শুনা যাচ্ছে।
নিহাল আসছে হুম আমার বরের নাম নিহাল, দরজা খুলে ভিতরে আসলো নিহাল
আমার মধ্যে অজানা ভয় কাজ করতে লাগলো আসার আগে মুরুব্বিরা বলেছে বাসর রাতে স্বামিকে পায়ে ধরে সালাম করতে হয়, আমি তাই উঠে গিয়ে নিহাল কে সালাম করে উঠে দাড়ালাম অমনি

ঠাসসসসসসসসস

নিহাল আমাকে থাপ্পড় মারলো বাসর রাতে এই প্রথম কোন মেয়ে তার স্বামির হাতে থাপ্পড় খেয়েছে, এই রকম কোন ইতিহাস আমি আগে শুনিনি
আমি থাপ্পড় খেয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে কান্না করতে ভুলে গেছি

আনুশা: তুমিইইইইইই????

নিহাল: হুম আমি মনে পড়ে তোমার কলেজের সেই দিনের কথা

আনুশা: আমি সত্যি টা জানার পর তোমার কাছে বার বার ক্ষমা ছেয়েছি নিহাল

নিহাল: ক্ষমা, আমার ওতো বড় একটা ক্ষতি করলে তুমি কলেজে সবার সামনে আমাকে বদনাম করেছো প্রিন্সিপাল স্যার আমাকে কলেজ থেকে বের করে দিয়েছে তোমার জন্য আমার পুরো লাইফ বরবাদ হয়েছিলো,আর তোমাকে আমি এতো সহজে ক্ষমা করে দিবো এই টা তুমি ভাবলে কি করে

আনুশা: তাই বলে তুমি এই ভাবে প্রতিশোধ নিবে

নিহাল: তুমি আমাকে কলেজে সবার সামনে অপমান করেছো আর আমি তোমাকে সমাজের সামনে অপমান করবো তুমি জানতে না ইট ছুড়লে পাটকেল খেতে হয়,
কাল যখন সবাই জানবে যে বাসর রাতে স্বামি তার স্ত্রী কে ডির্বস দিয়েছে সবাই তোখন তোমাকেই আঙুল তুলবে।

আনুশা: নিহালের পায়ে পড়ে প্লিজ নিহাল এমন করো না, দেখো স্ত্রী মর্যাদা না দাও কিন্তু তুমি আমাকে ডির্বস দিয়ো না, আমি তোমাদের বাড়ির কাজের মেয়ের মতো থাকবো??????

উফফফ পা ছাড়, এই মেয়ে তুই পা ছাড় বলছি ????
এতো অহংকার এখন কোথায় গেলো তোর,,
আনুশা: আমার এই কষ্ট দেখে আমার মা মরে যাবে উনি সইতে পারবে না প্লিজ নিহাল

নিহাল,উফফ ছাড়

নিহাল আমাকে ধাক্কা মেরে চলে যায়,এক নিমিষে আমার সব সপ্ন ভেঙে গেলো আমি ভাবতে ও পারিনি নিহাল আমার থেকে এই ভাবে প্রতিশোধ নিবে
হুম সে দিন কলেজ এ যেতেই দেখি সবাই আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে আমি কিছু বুঝতে পারিনি
অন্নি আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড সে এসে বল্লো আনুশা চল একবার নোটিশ বোর্ড দেখবি
আমি,কি আছে সেখানে
অন্নি আগে চল, গেলেই বুঝতে পারবি নোটিশ বোর্ড এর দিকে তাকিয়ে আমার চোখ তো চড়ক গাছে
মাথায় আমার রক্ত উঠে গেছিলো নোটিশ বোর্ড এ আমার আর নিহাল এর একটা ছবি ছিল তাতে লিখা ছিলো I love you আনুশা,,, নিহাল তোখন সবার সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো ক্যাম্পাসে বসে আমি সবার সামনে নিহাল কে থাপ্পড় মারি

নিহাল কিছু বুঝতে না পেরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমি আর ওখানে দাড়ালাম না সোজা বাসায় চলে আসি,পরে ৭দিন আর আমি কলেজে যাইনি,
যখন গেলাম কলেজ এ তখন জানতে পারলাম প্রিন্সিপাল নিহাল কে কলেজ থেকে বের করে দিয়েছে

নিহাল এর চিৎকার এ আমি ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে আসি
নিহাল এর হাতে কিছু পেপারস আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না অই গুলা কি
নিহাল প্লিজ আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না

নিহাল: তোকে ক্ষমা করবো নো য়ে, এই নে ডির্বস পেপারস এ সাইন করে দিলাম এই বার তুই বেরিয়ে যা তুই জানিস তোর সেদিন কার ভুলের জন্য আমার কতটা সাফার করতে হয়েছিলো আজ ও আমি সাফার করছি তুই বের হো আমার বাড়ি থেকে

আনুশা; নিহাল আমি এতো রাতে কোথায় যাবো প্লিজ আমাকে আজকে রাত টা থাকতে দাও আমি কাল ভোর না হতেই উঠে চলে যাবো,
নিহাল তুই এখন যাবি, নইলে আমি তোকে বাইরে ফেলে আসবো কথা বলেই নিহাল আমাকে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে গেলো,
যাওয়ার পথে নিহাল এর মাকে সামনে পেয়ে আমি কান্না করে বললাম মা আমি এতো রাতে কই যাবো,নিহাল এর মা কিছু না বলে আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো, নিহাল আমাকে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো,
আমি অন্ধকার রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভাবছি এখন কোথায় যাবো আমি
আমার তো বাবার বাড়ি নেই বাবা ও নেই মা মামার বাড়ি থাকে মামার দয়ায় আমাদের তিন বোনের পড়া লিখা আর বিয়ে হয় এখন যদি আমি মামার বাড়ি যাই তা হলে কি ওরা আমায় মেনে নিবে?
ভাবতেই কান্না পাচ্ছে কি ছেয়েছি আর কি হলো উফফ আমি এখন কোথায় যাবো, কি করবো, কিচ্ছু মাথায় আসছে না, মা তো আমায় এখন এভাবে দেখলে উনাকে আর বাঁচাতে পারবো না আর কাল সকালে সবাই যখন জানতে পারবে তখন কি হবে
উফফ নিজের চুল নিজেই টেনে চিড়তে ইচ্ছে করছে এই সব কথা ভাবছি আর অগোছালো পা পেলে হাটছি
আসলে সেই দিন কলেজে আমার এতো টা রাগ না দেখালে ও হতো আজকে আর এই দিনটা দেখতে হতো না অনেক পরে জানতে পারি আসলে সেদিন নিহাল অই কাজ টা করেনি আমাদের ফ্রেন্ড চারকেল এর একজন মজা করে এমন করেছে পরে অনেক খুঁজে নিহাল কে পেয়ে ক্ষমা ও ছেয়ে নিয়েছি,কিন্তু নিহাল যে আমাকে এতো বড় একটা প্রতিদান দিবে আমি বুঝতেই পারিনি
হাটতে হাটতে অনেক দূর চলে এলাম আর বেশি দূর নেই মামার বাড়ি না আর হাটতে পারছি না বসে পড়লাম রাস্তার পাশে
অনেক্ষন বসে থাকলাম তার পর আবার হাটতে লাগলাম,, অবশেষ এ পৌছে গেলাম মামার বাড়িতে না এতো রাতে আর কাউকে ডাকবো না ভোর হতে চলল প্রায় এখন দরজার পাশে বসেই এই টুকু সময় কাটিয়ে দিতে পারবো ভাবছি সকাল হলে যখন সবাই আমাকে দেখবে তখন কি ভাব্বে তারা কেমন হবে তাদের মনের অবস্থা, ভাবতেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো ভাবতে ভাবতে দরজার পাসে হেলান দিয়ে বসলাম, চোখ টা লেগে এসেছিলো মনে হয়
ভোরে মামির চেঁচা মেছিতে লাফিয়ে উঠলাম
মামি:এইইইই তুই এখানে কি করছিসস

to be continue,

প্রেমেরপরশ  পার্ট_31 ( লাস্ট পার্ট)

3

প্রেমেরপরশ 

পার্ট_31 ( লাস্ট পার্ট)

জামিয়া_পারভীন

__ “ নাহহ!  হটাৎ করে লোকটা হারিয়ে গেলো ই বা কোথায়।  ” রিমি ওর ভাইকে বলে।

শুভ তখন বলে,

__ “ চিন্তা করিস না,  কালপিট কে একদিন না একদিন খুঁজে পাবোই। যারা কিনা আমার নিরুকে এতিম করেছিলো,  যারা নিরুর বোন কে নষ্ট করেছে,  যে কিনা আমার একমাত্র বোনকে নিয়ে গেমস খেলেছে।  তাকে আমি সহজে ছেড়ে দিবো না।  একদিন সময় আসবেই।  আর সেদিন সব শত্রু কে জীবন থেকে সরিয়ে দিবো।  ”

__ “ চলো ভাইয়া,  ভাবী বাসায় একাই আছে।  ”

শুভরা চলে আসে বাসাতে।  দেখতে দেখতে এক মাস কেটে যায়।  শুভর একার পক্ষে এতো বড় বিজনেস সামলানো খুব কঠিন হয়ে গিয়েছে।  সারাক্ষণ অফিসে,  একেক সময় একেক অফিসে যাওয়া,  আর বাসায় বসে ল্যাপটপ এ অফিসের কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে শুভ।  আজকাল নিরুকে বা শায়ান কেও তেমন সময় দিতে পারেনা শুভ।

সেদিন রাতে ঘরে গিয়ে শায়ানের পাশে বসে,

__ “ পাপ্পা টা কেমন আছে,  আই এম সো সরি পাপ্পা,  তোমার আব্বু টা খুব পঁচা।  তোমাকে একদম ই সময় দিতে পারে না। ”

শায়ান বাবার গলা পেয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে হাসে আর শব্দ করে।  নিরু পিছন থেকে শুভ কে জড়িয়ে ধরে,  অনেক দিন পর নিরুর স্পর্শে শুভ কেঁপে ওঠে।  নিরুর দিকে তাকিয়ে দেখে,  নিরু কালো শাড়ির সাথে পিংক কালারের পাড়ের  সিল্কের শাড়ি পড়েছে।  চোখে কাজল দিয়েছে গাড় করে।  চুল গুলো বুকের বাঁ পাশে ছেড়ে রেখেছে।  গলায় কিছুই দেয়নি কিন্তু কানে পিংক কালারের দুল দিয়েছে।  পায়ে নুপুর পড়েছে নিরু এই প্রথম।

নিরুর দিকে তাকিয়ে অপলক দৃষ্টিতে দেখে কিছুক্ষণ।  এরপর নিরু বলে,

__ “ বেবি হবার পর তুমি তো আমায় ভুলেই গেছো।  নাকি আগের মতো ভালোবাসোনা আমায় আর।  ”

__ “ বউটা মনে হচ্ছে অনেক অভিমান করেছে আমার উপর।  ” নিরুর কোমরে হাত দিয়ে নিজের কাছে টেনে নেয় শুভ।  এরপর আবার বলে,

__ “ সামনে তুমি এইচএসসি পরীক্ষা দিবে, রিমিও পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত।  তাই তোমাকে ও সুযোগ দিয়েছি।  এতোদিন তো এতো মানসিক টেনশন এ পড়াশোনা কিছুই করোনি।  তাছাড়া সাগর ভাই নেই।  এতো বড় বিজনেস আমাদের সাথে তোমার পারিবারিক বিজনেস সব একা সামলাতে হচ্ছে।  এতো কিছু মেইনটেইন করে সত্যিই আমি আমার পরিবার কে সময় দিতে পারিনি।  আমি জানি তুমি মনে মনে খুব কষ্ট পাচ্ছো।  মাফ করে দেয়া যায়না তোমার হাজবেন্ড টা কে। ” শুভ নিরুকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে।।

__ “ জানো!  খুব একা লাগে নিজেকে।  তুমি সব সময় ব্যস্ত থাকো। আচ্ছা একটা কাজ করলে কেমন হয়? ”

__ “ কি কাজ বলো? ”

__ “ এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হলে রিমির জন্য একটা পাত্র দেখলে কেমন হয়। ”

__ “ আগে তো শেষ হোক,  এরপর না হয় দেখা যাবে।  ”

নিরুকে জড়িয়ে ধরে আরোও শক্ত করে।  এরপর শুভ বলে,

__ “ এখন না হয় তোমার সাথে একটু রোমান্স করি। ” বলেই নিরুর গলাতে মুখ গুঁজে দেয় শুভ।  ওরা ভাসুক ওদের ভালোবাসার রাজ্যে।

৫ মাস পর,

শুভদের বাসার ভিতর  সাজানো হয়েছে ফুলে ফুলে।  বাইরে দিকে রঙ বেরঙের লাইটিং।   অনেক মেহমান কে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে।  আজ রিমির গায়ে হলুদ।  রিমি কে হলুদ শাড়ি আর ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।  নিরু রিমিকে কানে কানে বলে,

__ “ একেবারে হলুদ পরী লাগছে তোমাকে ননদিনী।  ” বলে নিরুর চোখ থেকে একটু কাজল নিয়ে রিমির গলাতে দিয়ে দেয়।

__ “ ভাবী এই বিয়েটা করতে ইচ্ছে করছে না।  কোন ভাবে কি নিষেধ করা যায় না। ”

__ “ তোমার কি অন্য কোন পছন্দ আছে রিমি! ”

__ “ তুমি তো জানোই যাকে একবার ভালোবেসে ফেলা যায়,  সে যতই খারাপ হোক না কেনো ভুলে থাকা খুব কষ্টের।  আমি কেনো জানি অন্য কাউকেই মেনে নিতে পারছিনা।  ”

__ “ যাই করো,  ভুল বুঝোনা আমায়,  কষ্ট হলেও বিয়েটা করেই নাও।  কারণ জীবনে সুখী হতে হবে রিমি।  একা একা শুধুই কষ্ট ই পাবে।  কাউকে জীবন সাথী হিসেবে পেলে আরোও ভালো লাগবে দেখিও।  অতীত ভুলিয়ে দিবে তোমার বর। ”

__ “ হুমম”

সবার হৈচৈ শুরু হয়ে যায়,  একে একে সবাই রিমির গায়ে হলুদ দেয়,  মিষ্টি খাওয়ায় রিমিকে।  সবার খাওয়ানো হয়ে গেলে সাগর শুভকে ভিডিও কল দেয়।  সেখানে রিমি আর সাগর দুজনেই কান্নাকাটি শুরু করে দেয়।  নিরুর কাঁধে মাথা দিয়ে রিমি বসে আছে।  রাতে রিমির হাতে মেহেদী দিয়ে দেওয়া হয়।  রাত দুটো তে সবাই কফি পান করে।

মজার ছলে রিমি শুভ কে বলে,

__ “ ভাইয়া আমার বিয়ের গিফট চাই এখুনি।  ”

__ “ কি বল! ”

__ “ ভাবীর সাথে ডান্স করবে তুমি আজ।  ”

সবাই হাত তালি দিতে থাকে,  নিরুও রিমির মন রক্ষার্থে রাজি হয়ে যায়,  কিন্তু বলে,

__ “ আমি নাচবো ঠিক আছে,  যদি আমার সাথে এখানে যতো  কাপল আছে সবাই নাচে। এমনকি আব্বু আম্মু কেও নাচতে হবে ।  ”

সবার মাঝে হাসির রোল পড়ে যায়,  মেয়েকে সুখী দেখতে সবাই রাজী হয়ে যায়।

শুভ একটা গান প্লে করে, আর গানের তালে যে যেমন পারে ডান্স দেয়।

এখন তো সময় ভালোবাসার

এ দুটি হৃদয় কাছে আসার

তুমি যে একা আমিও যে একা

লাগে যে ভালো ও প্রিয় ও প্রিয়।।

পেয়েছি তোমাকে এতদিনে

যেও না সরে গো আভিমানে।

আমি তোমারই ও বুকের **।।

কী ছোয়া আমাকে দিলে তুমি

রাত দিন তোমাকে ভাবি আমি।

কেন বোঝ না প্রেমেরও পাগলামি।।

পরদিন বিয়েতে বরযাত্রী আসে, কেউ গেট আটকায় নি।  বর‍যাত্রী বেশ অবাক হয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। অন্যরা আপ্যায়ন করলো বরযাত্রী দের কে।  বরের বোন বলে,

__ “ বর তো এলো,  বউ কোথায়।  একটু দেখি তাকে।  “

রিমির ফুপাতো বোন বলে,

__ “ বউ দেখা মুখের কথা না,  দেখতে হলে শর্ত আছে।  ”

__ “ ওকে ডান,  চলো নিয়ে যাও বউয়ের কাছে।  ”

পাশের রুমে সবাই কে নিয়ে যাওয়া হয়।  সবার চক্ষু চড়কগাছ হবার দশা।  একই পোশাক একই সাজসজ্জার দুইটা মেয়ে বউ সেজে বসে আছে।

__ “আসল বউ কোনটা!” বরের ভাই জিজ্ঞেস করে।

__ “ আসল বউ কোনটা সেটা বলবেন আপনারা!  যদি আসল বউ চিনতে না পারেন তাহলে কিন্তু ১ লক্ষ টাকা আমাদের গচ্চা দিয়ে বিয়ে বসতে হবে। ” রিমির ফুপাতো বোন রোজী বলে।

__ “ আমার বউ আমি খেয়াল করলেই চিনতে পারবো। ” একটু ওভার কনফিডেন্সের সাথে বলে রিমির হবু বর।  ”

চয়ন খেয়াল করে ভালো ভাবে,

দুই টা মেয়েই লাল লেহেঙ্গা পড়ে বসে আছে,  গলা ভর্তি সেম গয়না দুজনের ই।  হাত ভর্তি সেম চুরি,  আংটি।  মেহেদীর ডিজাইন টা একটু আলাদা মনে হচ্ছে চয়নের।  কিন্তু বুঝতে পারছেনা, কারণ দুজনের মাথার উপর শাড়ি দিয়ে ঢেকে দিয়েছে এমন ভাবে শুধু থুতনি দেখা যাচ্ছে।

__ “ আর পর্যবেক্ষণ করার টাইম নেই,  এখুনি বলে দিন কোনটা আপনার বউ! ” রোজী বলে,

ডান পাশের বউ টা একটা আঙুল তুলে,  এতে চয়ন ভাবে যে বউ মনে হয় তাকে চিনিয়ে দেওয়ার জন্য ইশারা করছে।  হুট করেই বলে দেয়,

__ “ ডান পাশের টা আমার বউ।  ”

সবাই হো হো করে হেসে উঠে,  মাথার উপর থেকে ঘোমটা সরিয়ে ফেলা হয়।  চয়ন এবার নিজেই লজ্জা পাচ্ছে।  শুভ পাশ থেকে এসে বলে,

__ “ ভায়া ডান পাশের টা আমার বউ,  বাম দিকের টা তোমার। হাহাহা ”

নিরু আর রিমি দুজনে ই মুচকি হাসে,  অতঃপর চয়নের কাছে এক লক্ষ টাকা আদায় করে ছাড়ে রিমির ভাই বোনেরা।

ভালো ভাবেই বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে,  রিমি কে নিয়ে যাওয়া হয় শ্বশুর বাড়ি।

দুইদিন পর রিমির শ্বশুর বাড়ি তে অনুষ্ঠান এর আয়োজন করা হয়। নিরু শুভ সহ অনেক আত্মীয় আসে রিমি আর চয়ন কে নিয়ে যেতে।

রিমি চেয়ারে বসে আছে,  নীল রঙ এর বেনারসি পড়ে। চয়ন নীল শেরওয়ানি পড়েছে।  দুজন কে বেশ মানিয়েছে।  ফটোগ্রাফার ডাকা হয়েছে,  ছবি তুলার জন্য।  রিমি কিছুক্ষণ পর উঠে গিয়ে একজনের কলার চেপে ধরে।

নতুন বউয়ের এমন কীর্তি দেখে সবাই অবাক হয়ে যায়।  রিমি চিৎকার দিয়ে উঠে,

__ “ ভাইয়ায়ায়ায়ায়ায়া! ”

সবাই দৌড়ে আসে,  নিরুও অবাক হয়ে যায়।  শুভ গিয়ে লোকটা কে এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করে।

চয়ন শুভ কে সরিয়ে ধরলেও রাকিবের অবস্থা মার খেয়ে কাহিল হয়ে যায়।  নাক,  মুখে রক্ত ফুটে উঠেছে।

__ “ ভাইয়া,  আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন নাকি!  ফটোগ্রাফার কে মারছেন কেনো? ”

__ “ এই লোক একটা ক্রিমিনাল,  এতোদিন গা ঢাকা দিয়ে ছিলো।  আজ পেয়েছি ওকে,  আমরা কি ছেড়ে দিবো নাকি?”

বিয়ে বাড়ির সব লোকে জটলা পাকিয়ে ফেলে।

শুভ পুলিশ কে ফোন দেয়,  সবাইকে সব ঘটনা খুলে বলে।  রাকিবের মাধ্যমে ওর মা কেও ধরে ফেলে।

রাকিবের স্বীকারোক্তি  নেওয়ার সময় শুভ উপস্থিত থাকে। প্রচুর টর্চার করার পর রাকিব স্বীকার করে সব।

রাকিব বলে,

__ “ রুবিকে ভালোবেসেছিলাম সত্যিই সম্পত্তির মালিক ভেবে  কিন্তু যখন আম্মা বলে রুবির নামে কোন সম্পত্তি নেই তখন রুবিকে ত্যাগ করি। এরপর জানতে পারি সব কিছু নিরুর নামে।  ওকে ইউজ করার চেষ্টা করেও পারিনি।  কোনভাবে বেঁচে যায়।  পরে বড়লোক মেয়ে দেখে রিমির বান্ধবী কে পটিয়ে ওর নাম্বার নিয়ে ওর সাথে প্রেম করি।  পরে জানতে পারি নিরুর ননদ রিমি।  এক সাথে বড়লোক হবার স্বপ্নে আমি বিভোর হয়ে পাপের পর পাপ করতে থাকি।  ”

রাকিব এর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কোর্ট এ ওর ফাঁসির আদেশ হয়ে যায়,  ওর মা খুনের অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এতো কিছু জানার পর চয়ন একটু রাগ করলেও চয়ন কে নিরু বোঝানোর পর চয়ন ভুল বুঝতে পারে।  রিমি কে মেনে নেয় চয়ন।

সাগর তুরস্কের কোন মেয়েকে যদি পছন্দ হয় তাহলে বিয়ে করবে না ইচ্ছে হলে বিয়ে করবেনা এটা সম্পুর্ণ সাগরের ইচ্ছের উপর নির্ভর করছে।

শুভ কাজের চাপ সামলাতে না পেরে রিমির অংশ টুকু রিমির নামে করিয়ে দেয়,  এতে চয়ন দেখবে বিজনেস।

শুভ এবার একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারলো।

নিরু শায়ান কে খাওয়াচ্ছে,  এমন সময় শুভ পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে নিরুকে,

__ “ আরে করছো টা কি?  বাবুর ক্ষিদে পেয়েছে তো। ”

__ “আমার ও খুদা পেয়েছে!  আমি কখন খাবো।  ”

__ “ হিংসুটে! ”

শায়ান কে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয় নিরু,  উল্টো দিকে ঘুরে শুতেই শুভ হ্যাচকা টানে নিরু কে শুভর উপর নিয়ে নেয়।

__ “ কি মহাশয়,  এতো দিন পর কি রোমান্স উথলে উঠেছে নাকি!”

__ “ হুমম ”

শুভ নিরুর কপালে চুমু দিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়।

( সমাপ্ত)

#বিঃদ্রঃ জানিনা কেমন হলো ,  এটা আমার লিখা তৃতীয় উপন্যাস। আসলে আমি লিখালিখি শুরু করেছি শখের বসে। কেমন করে লিখতে হয় নিজেও জানিনা। এই লিখা শুরুর পর অনেকের কটু কথা শুনেছি।  সেগুলো উহ্য করে আপনাদের ভালোবাসা নিয়ে লিখায় মন দিতাম।  লিখালিখি শুরুর পর আপনাদের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি।  খুব ভালো লাগতো তখন।  কিন্তু কাজের চাপে নিয়মিত ভাবে পর্ব গুলো দিতে পারিনি। তাই খুব খুব দুঃখিত।  তাছাড়া এগুলো প্রথম প্রথম লিখা তাই ভুল ত্রুটি থাকতেই পারে।  সেইজন্য ক্ষমা করে দিবেন।  আর এই উপন্যাস টা কেমন হলো অবশ্যই জানাবেন।

প্রেমেরপরশ  পার্ট_30

0

প্রেমেরপরশ 

পার্ট_30

জামিয়া_পারভীন

ডক্টর এর কথা শুনে শুভর মাথা খারাপ হয়ে যায়,  মাথায় হাত দিয়ে কিছুক্ষণ বসে পড়ে।  এতো কেয়ার করার পরও কিভাবে বেবির ঠান্ডা লাগতে পারে শুভর মাথায় আসে না।  হটাৎ করে শুভর মাথা কাজ করে,  কাছে থাকা ল্যাপটপ অন করে।  যা দেখে শুভর রাগ আরোও বেড়ে যায়।  মানুষ খারাপ হলে যে এতো খারাপ হতে পারে শুভর তা জানা ছিলো না।

বেবির ঠান্ডা লেগে নিউমোনিয়া হয়েছে শুনে নিরু ফুঁপিয়ে কাঁদছে।  শুভ নিরুর  মাথায়  হাত দিয়ে বলে,

__ “ যা হয়েছে হয়েছে,  এখন আল্লাহর কাছে দোয়া করো যেনো আমাদের বাচ্চা সুস্থ হয়ে উঠে।  ”

__ “ এমন পরিস্থিতি তে তুমি কিভাবে এতো শান্ত আছো শুভ।  ”

__ “ কারণ সন্তান আল্লাহ দিয়েছে,  বাবুর যদি কিছু হয় সেটাও হবে উনার ইচ্ছে।  আমাদের ভেঙে পড়লে চলবে না নিরু।  ”

শুভ ভিডিও ফুটেজ সবার সামনে ওপেন করে,  ভিডিও তে দেখা যাচ্ছে,

গভীর রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে আছে,  সামিহা ওয়াশরুমে যায়।  তাও পা টিপে টিপে।  সামিহার বুক ধক করে উঠে।  সামিহা ভাবতেও পারেনি এই ঘরে সিসিটিভি ক্যামেরা আছে।  হার্টবিট বেড়ে গেছে সামিহার।  এরপর দেখা যাচ্ছে,  সামিহা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে কেবিনে এসে বেবির বুকের উপর পানি দিয়ে দেয়।  শুভ ঘুমিয়ে থাকা তে কিছুই বুঝতে পারেনি।  এরপর খুব আস্তে আস্তে সামিহা বেবির উপর বাতাস করতে থাকে।  বাতাস যেনো শুভ বা নিরুর কাছে না যায় সেভাবেই করছে।

আর এই জন্যই সদ্যোজাত শিশুর এক রাতে বুকে ঠান্ডা জমে নিউমোনিয়া হয়ে গেল।  সাগর আর ওর বাবা মা বোন এই দৃশ্য দেখার পর সাগর সাথে সাথেই সামিহা কে মুখে ডিভোর্স দিয়ে দেয়।  হসপিটালে দায়িত্ব রত মহিলা পুলিশের কাছে দিয়ে দেয় সামিহা কে।  সদ্যোজাত বাচ্চা কে মারতে চাওয়ার অপরাধে সামিহার শাস্তি হয়ে যাবে।

এদিকে শায়ান কে ডক্টর রা NICU তে দিয়ে দেয়।  সেখানে হিট দিয়ে রাখা হয়েছে বাচ্চা কে।  আর বাসার সবাই বাচ্চার জন্য পেরেশানি হয়ে হাটাহাটি করছে,  দোয়া করছে।

দুইদিন পর শায়ানের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। সুখবর শুনার পর নিরুর বাবা আসে মেয়ের কাছে,

__ “ আজ আমি খুব খুশি হয়েছি রে মা,  হোক তোর সৎ মা তবুও তার জ্ঞান ফিরেছে।  তোকে দেখতে চেয়েছে,  প্লিজ না করিস না আর।  ”

__ “ হ্যাঁ বাবা,  আমি যাবো,  আপুর মৃত্যুর পর আমিই তো তোমাদের সন্তান।  মা তো মা ই হয়।  আমি অবশ্যই যাবো।  ”

শুভর দিকে তাকিয়ে নিরু বলে,

__ “ আমাকে একটু উনার কাছে নিয়ে যাবে প্লিজ,  উনার কাছে অনেক কিছুই জানার আছে।  ”

__ “ হুম,  আমারও মনে অনেক প্রশ্ন আছে। ”

খুব সাবধানে নিরুকে বেড থেকে উঠিয়ে লুতফা বেগমের কেবিনে নিয়ে গেলো শুভ।  নিরু গিয়ে দেখে লুতফা বেগম ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে নিরুর দিকে।  হয়তো তার চোখ দুটো নিরুকেই খুঁজছিলো এতক্ষণ।  এখন যেনো নিরুকে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছে লুতফা বেগম।

নিরু পাশে গিয়ে বসতেই লুতফা বেগম বলেন,

__ “ তোর বাবা বলেছে,  আমার মেয়েটা আর বেঁচে নেই রে। তখন থেকেই তোর সাথে কথা বলার জন্য খুব ছটফট করেছি। তোকে অনেক কিছু বলার আছে।  মন দিয়ে শুনবি আর কিছুই বলবি না।  ”

__ “ হ্যাঁ আম্মু বলো,  তোমার কাছে এই কথা শুনার জন্যই এসেছি।  ”

লুতফা চোখ বন্ধ করে দুই মিনিট থাকলেন এরপর বলতে লাগলেন,

__ “ জানিস মা,  প্রত্যেক মেয়েই চাই তার হাজবেন্ড তাকে ভালোবাসুক।  স্বভাবতই আমিও চেয়েছিলাম আমার হাজবেন্ড এর কাছে ভালোবাসা।  বুঝতে পারিনি কখনো যে উনি আমার না।  উনি অন্য কাউকে ভালোবাসেন কিন্তু আমাকে ঠকিয়েছেন উনি।  ”

লুতফা বেগম কাঁদছেন,  নিরু তখন বলে

__ “ হ্যাঁ আম্মু আমি জানি,  এরপর কি বলবেন বলেন। ”

লুতফা বেগম আবার বলতে লাগলেন,

__ “ যখন তোর মা কে নিয়ে উনি খুব সুখে থাকতে শুরু করেন,  আমি খুব জ্বলতাম। উনি আমাকে স্ত্রীর মর্যাদা যদি নাই দিতে পারবে কেনো বিয়ে করেছিলো,  কেনোই বা আমার কাছে এসেছিলো।  এসব ভাবতাম আর কান্না করতাম সব সময়।  যখন শুনলাম তুই পৃথিবী তে আসতে চলেছিস,  আমার মনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।  আর ক্ষোভে বাতাস দিতে থাকে আমার ননদ।  সে সব সময় উল্টো পাল্টা বুঝাতো আমাকে।  আমিও ওর কথাতে রাজি হয়ে যায়।  ও আমাকে বুঝায়,  তোকে আর তোর মাকে মেরে ফেলতে পারলে সব সম্পত্তি হবে আমাদের। আর তোর বাবা তো আমাকে ভালোই বাসে না।  তাই উনার জন্য কোন আক্ষেপ হতো না। ”

লুতফা বেগম একটু থামলেন,  তখন নিরু বললো,

__ “ আচ্ছা আম্মু,  বুঝলাম আব্বু তোমায় ভালোবাসে না। কিন্তু এটা কি ভেবে দেখেছিলে,  সে তোমার প্রতি দায়িত্ব বোধ করেই কিন্তু তোমাকে আমাদের বাসায় নিয়ে গিয়েছিলো।  আব্বু চাইলে তোমাকে ডিভোর্স দিতেও পারতো।  তা করেনি,  তোমাকে পরিচয় হয়তো দিতে পারেনি আমার মায়ের সামনে।  কিন্তু তোমার থাকা খাওয়া সব ব্যবস্থা ই কিন্তু করে দিয়েছিলো।  এগুলো তুমি ভাবোই নি,  শুধুমাত্র লোভে পড়ে আজ…. ”

নিরু থেমে যেতেই লুতফা বেগম বলেন,

__ “ ভুল করেছি রে মা, লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু।  এই কথা টা ভুলেই গিয়েছিলাম।  তাই আজ এই অবস্থা।  সেদিন তোর মায়ের কেবিনে আপা ঢুকে বালিশ চাপা দেয় তোর মাকে।  তোকেও হয়তো মেরে ফেলতো।  কিন্তু তোর বাবা চলে আসে,  যখন তোর মায়ের মুখ থেকে বালিশ সরাতে যায় তখন আমি ছবি তুলে নিই। পুরো কাজ দুজন মিলে করেছিলাম।  এর শাস্তি আমি পেয়েছি,  আমার মেয়েটা কে হারিয়ে। আমি জানতাম রাকিব ওর ক্ষতি করেছে,  কিন্তু কিছুই বলতে পারিনি।  নিজ মেয়ের এতো বড় ক্ষতির পরও আমি রাকিব বা ওর মায়ের সাথে মিশেছি।  কারণ লোভ ছিলো নিরু কে যেখান থেকে পারি খুঁজে বের করা।  আর হত্যা করা। এতে সব সম্পত্তি আসবে আমাদের হাতে।  লোভে লোভে এতো নিচে নেমে গিয়েছিলাম।  আমার মেয়েটাকে তোর বিরুদ্ধে নিয়ে গিয়েছিলাম।  দেখ মা আমি যতো অন্যায় করেছি তার শাস্তি পৃথিবী তে পেয়ে গেছি৷   রাকিব আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলো।  জানিনা কতদিন এখানে শুয়ে আছি।  ”

খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছে লুতফা বেগমের।  জ্ঞান ফিরে এই কথা গুলো বলে এক ঘন্টার মধ্যে আবার ও জ্ঞান হারান। নিরু সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছে ।এখন শুধু রাকিব কে পেয়ে গেলেই হয়।  নিরু উঠে যায়,  শুভ ধরে ধরে নিয়ে আসে নিরুর কেবিনে।

কয়েকদিন হসপিটাল এ থেকে শায়ান কে পুরো পুরি সুস্থ করে বাসায় ফিরে আসে নিরু আর শুভ। বাসায় এসেই দেখে সাগর বের হচ্ছে লাগেজ নিয়ে। সাগর কে শুভ জিজ্ঞেস করে,

__ “ আমরা বাসায় আসতেই কোথায় চলে যাচ্ছিস! ”

__ “ তোরা ভালো থাকিস,  আমি তুরস্ক চলে যাচ্ছি।  সেখানে নতুন যে বিজনেস টা ওপেন করেছি সেটা হ্যান্ডেল করতে চাই।  তাছাড়া লাইফ নতুন করে আবারো শুরু করতে চাই। ”

শুভ কে জড়িয়ে ধরে সাগর কাঁদে অনেক্ষণ।  এরপর শায়ান কে কোলে নেয় সাগর।  কপালে চুমু দিয়ে নিরুর থেকে বিদায় নেয়।  রিমি  এসে সাগর কে জড়িয়ে ধরে,

__ “ ভাইয়া,  আবার কবে আসবে!  খুব মিস করবো তোমায়।  ”

__ “ পাগলী বোন আমার,  আমি ওখানে সেটেল হয়ে যাবো।  চিন্তা করিস না,  ভিডিও কলে প্রায়ই কথা বলবো।  ”

বোনের কাছে বিদায় নিয়ে বাবা মা সবাইকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে অনেক্ষণ।  এরপর বাসা থেকে বেরিয়ে যায়।  শুভ আর রিমি এয়ারপোর্টে গিয়ে বিদায় দিতে আসে সাগর কে।

সাগর চলে যাবার পর রিমির মনে হয় রাকিবের মতো কাউকে দেখলো।  রিমি শুভ কে আস্তে করে বলে,  ফলো করতে থাকে দুজনে।

প্রেমের_পরশ পার্ট_29

0

প্রেমের_পরশ
পার্ট_29
জামিয়া_পারভীন

নিরুর প্রেগন্যান্সির ৯ মাস চলছে, সে শারীরিক ভাবে সুস্থ হলেও মানসিক ভাবে খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। নিরুকে নিয়ে শুভ বড়ই দুশ্চিন্তায় আছে। পরিবারের এই রকম অবস্থা, এর উপর নিরুর মানসিক ভেঙে পড়া শুভর মনে প্রচুর আঘাত আনছে। সিড়ি বেয়ে বারবার উঠানামা করা নিরুর জন্য কষ্ট সাধ্য বলে নিচতলায় থাকছে নিরু আর শুভ। সেইদিন সকালে নিরু মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নিলে শুভ ধরে নেয়।
শুভ নিরু কে জিজ্ঞেস করে,

__ “ কি হয়েছে, খারাপ লাগছে নাকি? ”
__ “ নাহহ মাথা টা এমনিতেই কেনো জানি চক্কর দিয়ে উঠলো, বেডে শুইয়ে দাও, ভালো লাগবে হয়তো। ”

নিরুকে শুইয়ে দিয়ে শুভ নিরুর জন্য স্যুপ নিয়ে আসে। মানসিক দুর্বলতা কাটতে শুভ নিরুর সাথে গল্প করে বেশি। রাজা রাণীর রুপকথার গল্প শুনায় নিরুকে। নিরু এগুলো আগে কখনো শুনেছি, এতিমখানা তে কেই বা গল্প শুনাবে। শুভর কাছে গল্প শুনে আর রুপকথার রাজ্যে ভাসে নিরু। একদিন গল্প শেষ করতেই নিরু শুভকে জিজ্ঞেস করে,

__ “ আচ্ছা শুভ আমাদের রাজকুমার এর নাম কি হবে শুনি? ”
__ “ রাজকুমার চাই না রাজকুমারী হবে, চাঁদের মতো সুন্দরী রাজকুমারী। অবশ্য তোমার থেকে অল্প কম সুন্দরী হলেও হবে। ”
__ “ কেনো, আমার রাজকুমারী হবে আমার চেয়েও সুন্দরী। আমার মেয়ে বলে কথা। ”
__ “ তোমার চেয়ে বেশি সুন্দরী হলে আবার তোমার আদর কমে যাবে। হাহা,, ”

নিরু রেগে কয়েকটা আস্তে করে কিল দেয় শুভর হাতে। শুভ নিরুকে জড়িয়ে নেয় আলতো করে।
,,,

বাইরে সাগর বসে ছিলো, ওর সাথে ওর বাবা মা কি নিয়ে যেনো তর্ক করছে। শুভ যেতেই থেমে যায় সবাই। শুভ গিয়ে জিজ্ঞেস করে,

__ “ আমি কি আজকাল বাড়িতে নগন্য নাকি , যে আমায় দেখলে কথা বলা থেমে যায়। ”

শুভর মা আমতা আমতা করে বলে,

__ “ ন মানে! তেমন কিছুই না বাবা, ভুল বুঝিস না দয়া করে। ”
__ “ তো কি এমন কথা যে আমায় দেখে থেমে যাওয়া লাগে। ”
__ “ আসলে, বলছিলাম যে, রুবি মারা যাওয়া একমাস পার হয়ে গেলো। বাসায় আসলেই একা একা বসে থাকে, ও যদি আবার বিয়ে করে সংসার করে। মায়ের মন বলে কথা, তোরা ছেলেরা কেনো যে বুঝিস না। ”

তখন সাগর মায়ের কথার প্রতিউত্তরে বলে,

__ “ আম্মু, বিয়ে যদি করার ই হতো, আগেই করে নিতাম। আমি রুবির স্মৃতি ভুলতে চাইনা। ”
__ “ রুবি তোকে বিয়ের জন্য বলতো, কারণ ও চাইছিলো তুই বাবা হতে পারিস। এখন যদি তুই বিয়ে না করিস রুবির আত্মা শান্তি পাবেনা। ”
__ “ ওকে ফাইন, আমি বিয়ে করবো। কিন্তু রুবির সাথে স্মৃতি ঘেরা শহরে আমি থাকতে পারবোনা। বিয়ের পর বিদেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিও তাহলে। কিন্তু বাইরে যাওয়ার নিউজ যেনো ফাঁস না হয়। ”

শুভ জিজ্ঞেস করে,

__ “ মেয়েটা কে? যার সাথে বিয়ে দিতে চাচ্ছো! ”

শুভর আম্মু চাই সাগর সামিহা কে বিয়ে করুক, কারণ ছোট বোন আবদার করেছে বোনের ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিবে। শুভ এই কথা শুনে রাগ করে চলে যায় নিজের ঘরে।

দুইদিন এর মাঝেই সাগরের সাথে সামিহার বিয়ে দিয়ে দেয় ঘরোয়া ভাবেই, আর বিয়ের দিন রাতেই নিরুর পেইন উঠে। নিরুর চিৎকারে বিয়ে বাড়ির সবাই নিরুকে নিয়ে হসপিটালে পৌঁছে। চার ঘন্টা পর নিরুর নরমাল ডেলিভারী তে ছেলে হয়। শুভ পুরো সময় টা নিরুকে পাহারা দিচ্ছে, যেনো ভুলেও কেউ নিরুর বা বেবির ক্ষতি করতে না পারে। একজন নার্স বেবি কে এনে প্রথমে শুভর কোলে দেয়, শুভ প্রথমে বেবি কে কোলে নিয়ে জোরে করে আযান দেয়। এরপর বাচ্চাকে মায়ের হাতে দিয়ে কেয়ার করতে বলে। নিরু অজ্ঞান ছিলো, তাও শুভ নিরুর পাশে গিয়ে বসে। নিরুর পেটে হাত বুলিয়ে দেয় আলতো করে । কপালে চুমু দিয়ে কেবিনের বাইরে আসে। বেবি কে শুভর আম্মু কোলে নিয়ে বসে ছিলো।

শুভ মায়ের কাঁধে মাথা রেখে বলে,
__ “ আম্মু দোয়া করো, মা আর ছেলে দুজনেই যেনো ভালো থাকে। আমি যেনো আমার সন্তান কে তোমাদের মতো করে যত্ন নিয়ে বড় করতে পারি। ”
__ “ সব সময় দোয়া করি বাবা। ” শুভর মা শুভর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

সাগর সামিহা কে নিয়ে শুভর সামনে আসে। খুব নরমাল ভাবেই সাগর শুভর ছেলে কে কোলে নিয়ে কাঁদতে থাকে। এটা যদিও খুশির কান্না কিন্তু সাগরের খুব মনে পড়ছিলো রুবির কথা। সাগর শুভ কে বলেই ফেলে,

__ “ জানিস শুভ, আজ যদি রুবির এক্সিডেন্ট না হতো, তাহলে আমারও সংসার টা হয়তো ভেঙে যেতো না। ”
__ “ মন খারাপ করিস না ভাই, অতীত ভুলে গিয়ে বর্তমান নিয়ে নতুন ভাবে শুরু কর। দেখ খুব সুখে থাকবি, আর তোর ও আবার সুখের সংসার হবে দেখিস। সামিহা আছে তো, ওকে নিয়ে সুখেই থাকবি তুই। ”

বেবি কে শুভর বাবা কোলে নেয়। সবার মুখেই আনন্দর ছোঁয়া কিন্তু একজন এর মুখে ভার, সেটা সামিহা!। খুব শখ ছিলো শুভর স্ত্রী হবে কিন্তু কিনা ওর মা ওকে সাগরের সাথে বিয়েতে বাধ্য করে। সামিহা ওর মায়ের কথায় বাধ্য মেয়ের মতো বিয়ে করে নেয়। শুভর ছেলেকে দেখে হিংসা হচ্ছে খুব ওর। তারপরও সবার সাথে ভালো বিহেভ করতে হচ্ছে তার।

শুভ নিরুর জ্ঞান ফেরার পর নিরুর পাশে গিয়ে বসে, নিরু বলে,
__ “ দেখেছো আমার ছেলেকে। ”

__ “ হুমম ”

__ “ তোমার মতো হয়েছে তাইনা! ”

__ “ আব্বু তো বলছে আমার মতো আর আম্মু বলছে তোমার মতো। আমি তো ভাবি আমাদের ছেলে দুজনের মতই হয়েছে। ”

নিরু তখন বলে,
__ “ এই! শোনোনা! আমাদের ছেলের নাম কি রাখবে গো? ”

__ “ চাঁদের মত সুন্দর ছেলের নাম ঠিক করবে আমার বউ, কারণ এই অধিকার তার আছে। ”
__ “ তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো তাইনা! আমি জানি! আমরা দুজনে ওর নাম ঠিক করবো। কারণ ও আমাদের দুজনের সন্তান। ”

__ “ শুভর শ আর নিরুর ন দিয়ে আমাদের ছেলের নাম হবে শায়ানুজ্জামান শায়ন। কেমন হবে! ”

__ “ খুব ভালো হবে, আমি শায়ান বলেই ডাকবো আজ থেকে।”

শায়ান, শায়ান আর শায়ান! নাম শুনতে শুনতে সামিহার মনে বিষ উঠে গেছে। সবাইকে শুভ মিষ্টি খাওয়াচ্ছে আর ফোন দিয়ে শায়ান নাম বলছে শুভ। সে মনে মনে ঠিক করেছিলো শুভর সাথে সংসার হবে, ছেলের নাম রাখবে স্নিগ্ধ। সব গুড়েবালি, শুভর ছেলের নাম নাকি শায়ান। এইটা আবার নাম হলো নাকি। একা একাই বিড়বিড় করতে থাকে সামিহা।

রাতে বেবিকে নার্স দের দায়িত্বে নিতে দেয়না শুভ।

বাচ্চা তার মায়ের পাশেই থাকবে, শুভ নিজেই থাকবে নিরুর কাছে। শুভর মায়ের বয়স অনেক হয়ে গিয়েছে বলে সাগর সামিহা কে থাকতে বলে। শুভ সামিহা কে পছন্দ না করলেও আর নিষেধ করতে পারেনা সবার সামনে। আর রিমি তো থাকবেই নিরুর পাশে।

শুভ নিরুর পাশে শায়ান কে শুইয়ে পাশে বসে থাকে। আর সামিহা আর রিমি পাশের বেডে শুয়ে পড়ে। রিমি ঘুমিয়ে গেলেও সামিহা জেগেই থাকে।

গভীর রাতে শুভ ও নিরু পাশে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ে। পরদিন বাচ্চার কান্না তে শুভর ঘুম ভাঙে। বেবি খুব কান্নাকাটি করতে থাকে। শুভ থামানোর অনেক চেষ্টা করেও পারেনা। নার্স দের ডেকে বাচ্চা কে দিয়ে দেয়। নার্স রা বলে,

__ “ বাচ্চার ঠান্ডা লেগেছে, নিউমোনিয়া হয়ে গেছে। ”

চলবে……….

প্রেমের_পরশ পার্ট_28

0

প্রেমের_পরশ
পার্ট_28
জামিয়া_পারভীন

সাগর নিরুর হাতে একটা ডায়েরি দেয়। কালো মলাটে বাধানো একটা ডায়েরি। নিরু কে ডায়েরি টা দিয়ে বলে,
__ “ এতে যা লিখা আছে সেটা শুধু পড়বে, এরপর যা মনে হবে আগে আমার সাথে শেয়ার করবে। তারপর তোমার ডিশিসন নিবে। এখন নিজের ঘরে যাও। ”

নিরু চুপচাপ কথা গুলো শুনে নিজের ঘরে চলে আসে। ডায়েরি টা খোলে নিরু, প্রথম পেজে লিখা আছে,

__ “ আমার কৈশোর শুরু ই হয় অন্ধকার দিয়ে, তাই কালো মলাটেই বেঁধে দিলাম ডায়েরি টা। ”

নিরু হোস্টেলে বা এতিমখানা তে থাকার জন্য কিছুই জানতে পারেনি। লিখাটা পড়ে বেশ হতাশ হয়ে মনে মনে বলে, “ কি এমন হয়েছিলো আপুর! এসব কি চিন্তা করছি! ডায়েরি টা পড়েই জেনে নিই। ”

পরের পেজ উল্টায় নিরু, সেখানে লিখা আছে,
“ ছোট বেলা থেকেই আমার একমাত্র খেলার সাথী ছিলো রাকিব, সব সময় দুজনে মিলে দুষ্টুমি তে মাতিয়ে রাখতাম পুরো বাড়ি। তখন কেবল ১৫ তে পা দিয়েছি, আর রাকিব এর ২০। একদিন রাকিব এসে বলে, সে নাকি আমার ভালোবেসে ফেলেছে। আমি বলি, ভালোবাসা আবার কি জিনিস!। এরপর একেক দিন একেক রকম করে বুঝাতো। একদিন একটা গোলাপ দেয়, আমি নিয়ে নিই। তখন সে বলে, অবশেষে আমার প্রপোজাল গ্রহণ করলে। আমি তখন ও বুঝিনি, এসবের মানে কি? তারপরও বেশ ভালোই কথা বলতাম ওর সাথে। জানিনা এটা প্রেম কিনা ওর সাথে রাগ করে থাকতে পারতাম না। সে যেনো আমার নেশার মতো হয়ে গিয়েছিলো। আম্মু ওকে খুব একটা পছন্দ করতো না, কেনো জানিনা। ”

নিরু খুব অবাক হয়ে যায়, পরের পেজে আবার লিখা আছে,

“ একদিন সন্ধ্যেবেলা টিভি দেখছিলাম পাশাপাশি বসে, মাঝে কিছুটা গ্যাপ ছিলো। আমার সিরিয়াল খুব ভালো লাগতো, সিরিয়ালে একটা সিন এ নায়ক হটাৎ করে নায়িকা কে কিস করে। এই সিন দেখে আমার যেনো একটু লজ্জা লাগে। পরে রাকিব হটাৎ করে আমার ঠোঁট যুগল তার আয়ত্ত্বে হয়ে নেয়। আমি প্রথমে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেও পরে আর করিনি। অসম্ভব ভালোলাগা কাজ করছিলো আমার ভিতর। ”

ডায়েরি তে এমন কিছু লিখা থাকবে নিরু সত্যিই আশা করে নি। নিরুর দুই চোখ দিয়ে পানি পড়ছে । তাও পরে পেজ উল্টায় নিরু,

“ একই বাসায় থাকতাম বিধায় ওর সাথে প্রায়ই দেখা হতো, সে যখনই সুযোগ পেতো আমার শরীর স্পর্শ করতো। ধীরে ধীরে সে আমার কাছে অনেক কিছু চাইতে থাকে ।আমি তাকে দিতে নারাজ হই। আমি বুঝে গিয়েছিলাম সে আমার শরীর টা কেই চায় শুধু। সেদিন থেকে একটু দুরত্ব বজায় রেখে চলতাম। সে হয়তো বুঝে গিয়েছিলো আমি তাকে এভয়েড করছি। একদিন আমি আমার রুমে বসে ছিলাম, এস এস সি সামনে। খুব পড়াশোনা ছিলো। পড়ার মাঝে ব্রেক নিচ্ছিলাম। দরজায় নক করে কেও, বাসায় সবাই আছে তাই খুলে দিই৷ দরজা খুলেই রাকিব কে দেখে বলি, সে যেনো চলে যায়। কিন্তু না সে আমাকে জোর করে ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়। দরজা লাগিয়ে দেয়! এরপর বলে, তোমাকে একটা জিনিস দেখিয়েই আমি চলে যাবো। আমি ওর সাথে আর ঝামেলা না করে ওর কাছে যা দেখাতে চাচ্ছে তা দেখতে চাই। ও ওর ল্যাপটপ অন করে, একটা ভিডিও প্লে করে। সেখানে আমার নগ্ন দেহ দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি। চিৎকার করতে গেলে সে আমার মুখ চেপে ধরে। এরপর বলে, যদি চিল্লাই তাহলে এগুলো ছবি সবাইকে দেখিয়ে দিবে। এরপর বলে, আমি যখন স্কুলে গিয়েছিলাম তখন সে আমার ওয়াশরুমে আর রুমে গোপন ক্যামেরা সেট করে এইসব ভিডিও করেছে। ওর গালে একটা চড় বসিয়ে দিই। ”

নিরুর চোখের পানি তে ডায়েরি অনেকটা ভিজে গেছে, কোনরকম চোখের পানি মুছে ফেলে।
পরের পেজে যায়,

__ “ রাকিব আমায় বলে, যদি চিললাই বা কাউকে বলি তাহলে এই সব ভিডিও ওর ফ্রেন্ড ফাঁস করে দিবে। এরপর আমি কুকড়িয়ে যায় ভয়ে, সে আমার সাথে ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করে। আমার জীবনের সব চেয়ে অন্ধকার ময় রাত ছিলো সেদিন। ওর অত্যাচার এ আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। এরপর থেকে প্রায়ই প্রতিদিন রাতে আমার উপর তার চাহিদা পূরন করতো । ২ মাস এভাবে চলার পর আমি প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমি এই যন্ত্রনা থেকে না পারছিলাম বাঁচতে না পারছিলাম মরতে। আমার অসুস্থতা নিয়ে আম্মু ডক্টর এর কাছে নিয়ে যায় ।অনেক গুলো পরীক্ষায় জানতে পারে আমি প্রেগন্যান্ট। সেদিন আম্মু আমায় অনেক মারে। আমার কাছে জানতেও চায়নি কি হয়েছিলো। ”

নিরু মনে মনে বলে, “এতো অন্যায় হয়েছে তোমার সাথে আপু। এই সব কিছুর বদলা আমি নিবো। ”
ডায়েরির কয়েক পেজ ফাঁকা, এরপর আবার লিখা,

“ আমি মার খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলাম, পরে আম্মু আমায় জড়িয়ে ধরে কাঁদে অনেক। আমি রেপ এর কথা বলতে পারলেও রাকিবের ভয়ে ওর নাম নিতে পারিনি। পরের দিন সুযোগ পেয়ে রাকিবের কাছে ওর সন্তানের স্বীকৃতি চাই, তখন সে বলে, এই সন্তান তার হতেই পারেনা। আমি বাজে মেয়ে তাই এই সন্তান এসেছে। এই দুই মাসে কম পক্ষে ২০ টা ভিডিও সে করেছে, সব গুলো সব আত্মীয় স্বজনের কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার ভয় দেখায়। আমি চুপসে যায়, খুব ইচ্ছে করছিলো আত্মহত্যা করতে। আম্মু এসে বাঁচিয়ে দেয়। একটা হসপিটাল এ নিয়ে যায়, শহরের বাইরের হসপিটাল। কারণ শহরের ভিতর আমাদের পরিচিতি আছে অনেক। এবোরশন করানোর সময় ডক্টর ভুল করে ফেলে। খোঁচা লাগে ইউটেরাস ওয়ালে । প্রচুর ব্লিডিং শুরু হয়, তখন আম্মুর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে ডক্টর আমার ইউটেরাস কেটে ফেলে। পরে ঘটনা আব্বু ও জেনে যায়। আমি পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলি। দীর্ঘ ৬ মাস চিকিৎসার পর আমি সুস্থ হই। এরপর এক বছর ইয়ার লস দিয়ে এস এস সি দিই। আম্মুর অনুপ্রেরণা তে আমি আবারও হয়তো আরো সুস্থ হয়েছিলাম কিন্তু ইউটেরাস কেটে ফেলার ঘটনা জানতে পারিনি। ”

বোনের জীবনে এতো ঘটনা দেখে নিরু হতবাক হয়ে গেছে এক প্রকার, ডায়েরি অফ করে দিয়ে সাগরের ঘরে ছুটে আসে। মেঝেতে বসে পড়ে,

“ ভাইয়া,,,,,,,,” বলে সাউন্ড করে কাঁদতে শুরু করে। সাগর বলে নিরু কে,

__ “ তুমি প্লিজ শান্ত হও, ডায়েরি তে কতো টুকু পড়েছো আমি জানিনা, কিন্তু এখন তুমি বেশি কান্নাকাটি করলে নতুন অতিথি এর ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। ”

নিরু নিজেকে শান্ত করে প্রথমে, এরপর বলে,

__ “ তাহলে আপনি ওই খুনী কে শাস্তি দিবেন কথা দিন, তাহলেই শান্ত হতে পারবো আমি। ”

__ “ হুমম দিবো শাস্তি, ওর ঘটনা আমি কিছুদিন আগেই জেনেছি। কিন্তু কিছু করার আগেই মেয়েটা অভিমান করে আমায় ছেড়ে চলে গেল। আর চুপ করে থাকতে পারিনা আমি। সব কিছুর শাস্তি পাবে তোমার ফুপু আর তার ছেলে। ”

__ “ মানে, ফুপিও এর সাথে জড়িত! ”

__ “ হুমম”

এরপর সাগর বলে,

__ “ রুবি কে আমি কলেজে প্রথম দেখি, আমি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার আর সে ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়। খুব সুন্দরী, মায়াবতী ছিলো। কিন্তু সব সময় বিষন্ন থাকতো। এই বিষন্নতার কারণ জানার আগ্রহ আমার মাঝে চেপে বসেছিলো। সাহস পাইনি কিছু বলার, প্রতিদিন ওকে দেখার জন্যই শুধুমাত্র কলেজে যেতাম। এভাবে একটা বছর পেরিয়ে যায়, আমি এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে অই কলেজে অনার্স ভর্তি হয়ে যায় শুধুমাত্র রুবির টানে। লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম আর বাসায় এসে ওকে কল্পনা করে সুখের রাজ্যে ভাসতাম। একদিন কলেজে রুবি আমার সামনে এসে দাঁড়ায়,

এরপর বলে,

“ আপনি যা করছেন সেটা ভুলেও আর করবেন না, আমি জানি আপনি আমাকে অনেক পছন্দ করেন কিন্তু আমার অতীত খুব ভয়ংকর, তাই প্লিজ আমার পিছু ছেড়ে দিন। ” কথাটা বলেই চলে যায়।

মেয়েদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় তুখোড় হয় সেদিন বুঝেছিলাম, এরপরও রুবির পিছন আমি ছাড়িনি। সে খুব বিরক্ত হয়ে গেছিলো আমার প্রতি। একদিন একটা খাম আমার হাতে ধরিয়ে দেয়, এরপর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে যায় আবারও। বাসায় এসে ওর চিঠি দেখি। ওর জীবনের করুণ কাহিনী বর্ননা করা। শুধুমাত্র ছেলেটার নাম উল্লেখ ছিলো না। আর ওর মা না হতে পারার কথা ও লিখা ছিলো না । সে অবশ্য তখন জানতো না । তার অতীত মেনে নিতে খুব কষ্ট হয়েছিলো, তাও আমার মনে তার জন্য ভালোবাসা কমে যায়নি। সে শতভাবে বুঝাতো আর আমি তার বিপরীতে যুক্তি দিতাম। পরে বুঝতাম আমার উপস্থিতি ওর জন্য বিরক্তিকর নয়। বুঝলাম সেও হয়তো ভালোবেসে ফেলেছে। ”

দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে সাগর, নিরু তখন বলে,

__ “ এরপর কি হয়েছিলো! ”

__ “ সেও ওই কলেজে ই অনার্স ভর্তি হয়ে যায়। দীর্ঘ তিন বছর পর সে আমার প্রেমে পড়ে। এরপর এক বছর চুটিয়ে প্রেম করে ওর বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দিই। প্রথমে ওর মা রাজি না হলেও পরে রাজি হয়ে যায়। এরপর তো সব কিছুই জানো। ওর মা অসুস্থ হবার পর ওর মায়ের ঘরে ওর পুরনো রিপোর্ট গুলো দেখে, ওর সন্তান হবে না। এরপর যখন তোমার সুসংবাদ পায়। ও খুব ভেঙে পড়ে। এরপর রোজ কান্নাকাটি করতে থাকে। ওকে বুঝাতে বুঝাতে আমি ক্লান্ত হয়ে যায়, মাস খানেক আগে আবদার করে আরেকটি বিয়ে করার জন্য। আমি নারাজ হই। এরপর এই নিয়ে প্রতিদিন ঝগড়া করতো আমার সাথে। আর সেদিন ঝগড়া করে কথা বলিনি। পরে দেখি ও আর নেই।

খুব ভালোবাসতাম ওকে আমি, বাচ্চা হবেনা তো কি হয়েছে, তোমার তো আছে নিরু। তোমার সন্তান কেই না হয় আদর করতাম। পারিনি ওকে বুঝাতে আমি। নিজেকে শেষ করে দিলো। আমাকে একা কষ্টের সাগরে ডুবিয়ে দিয়ে চলে গেলো৷ ”

__ “ আসলে মেয়েদের জীবনের সুখ টা ই হয়তো মাতৃত্ব তে, আপু যখন জেনেছে তার অতীত তখন মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু যা করেছে খুব ভুল করে ফেলেছে। আমি অই ভন্ড টাকে শাস্তি দিবোই। নইলে শান্তি পাবোনা কখনো। ”

চলবে……..

প্রেমের_পরশ পার্ট_27

0

প্রেমের_পরশ
পার্ট_27
জামিয়া_পারভীন

নিরু বেডে শুয়ে আছে , তখন শুভ নিরুর পেটে কান পাতে, বেবির হাত পা ছোড়া গুলো অনুভব করে। এরপর নিরুকে বলে,
__ “ দেখিও মেয়ে বেবি হবে! হাত পা বেশি ছুড়ছে না , মেয়েরা খুব শান্ত হয় তো তাই। ”

__ “ দেখিও ছেলে বাবু হবে, আমার বেবি আমার মতোই শান্ত হবে। তাই জ্বালাচ্ছে কম, বুঝলে বুদ্ধু!! ”

__ “ মনে হচ্ছে আমি খুব জ্বালিয়েছি, আমি কি শান্ত নই!!”

__ “ তুমি তো রাগী, বদমেজাজি, দুষ্টু, ” এরপর খিলখিলিয়ে হাসে নিরু।

শুভ শুধু নিরুর মাথায় একটা টোকা দেয়, এরপর বলে,

__ “ পাজি মেয়ে, লক্ষ্মী বউ। ”
দুজনেই হেসে ঘুমিয়ে পড়ে।

সকালে ঘুম থেকে দেরি করে উঠে নিরু, ফ্রেশ হয়ে বাইরে যাবার সময় রুবির ঘর থেকে কান্নার আওয়াজ পায় নিরু। ঘরে উঁকি দিয়ে দেখে রুবি বেডে উল্টো দিকে শুয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে । শুভর ডাকে নিরু নিচে নেমে আসে, কারণ শুভ ব্রেকফাস্ট এর টেবিলে, নিরুকে ছাড়া খাবে না সেই জন্য। নিরু নিচে এসে নাস্তা করে নেয়, ঔষধ ঠিক মতো খাইয়ে শুভ অফিসে যায়। খুব যত্ন করে নিরুকে, যেনো নিরুর বা বেবির কোনরকম ক্ষতি না হয়।

শুভ অফিসে বেরিয়ে গেলে নিরু আবারও রুবির রুমের সামনে যায়, রুবি এখনও আগের মত করে কাঁদছে। নিরুর অবুঝমন রুবির জন্য কেঁদে উঠে। রুমে গিয়ে রুবির মাথায় হাত রাখতে রুবি চমকে উঠে। উঠে বসে বলে,

__ “ তুই কখন এলি হটাৎ!”
__ “ কাঁদছো কেনো? সাগর ভাই কিছু বলেছে নাকি? ”

__ “ তোকে বলতে পারবোনা এর কারণ, আমি কিছুতেই বলতে পারবোনা। তুই দয়া করে এখন যা, আমাকে একা থাকতে দে প্লিজ। ”

নিরু বুঝতে পারেনা কি হয়েছে, রুবি কে দেখতে কেমন যেনো লাগে ইদানিং। আগের মতো নেই, শুকিয়ে যাচ্ছে। ফেস খারাপ হয়ে যাচ্ছে, চোখের নিচে কালি পড়েছে। নিরু ঠিক করে এই ব্যাপারে সাগরের সাথে কথা বলবে।

নিরু সন্ধ্যা থেকেই সাগর কখন আসবে তার অপেক্ষা করছিলো, শুভ কয়েকবার জিজ্ঞেস করার পরও নিরু কিছুই বলেনি শুভ কে। নিরু প্রায়ই কয়েক মাস থেকে খেয়াল করেছে রুবির একা একা ফুঁপিয়ে কাঁদা কিন্তু কখনো কাউকে কিছুই বলেনি। আজ সাগর রাত প্রায়ই ১০ টাই বাসায় আসে। ইদানিং সাগর বেশ দেরি করে বাসায় আসে। কারণ নিরু জানে না, কেউই জানে না। সাগর রুমে আসতেই নিরু বলে,

__ “ ভাইয়া, যদি আপনার একটু সময় হতো! তাহলে কিছু কথা বলতাম। ”

__ “ হ্যাঁ বলো, তাড়াতাড়ি। ”

__ “ আসলে রুবি আপা…”

সাগর নিরুকে থামিয়ে দিয়ে বলে,

__ “ এই ব্যাপারে আমি তোমায় কিছুই বলতে চাচ্ছিনা, এখন তুমি আসতে পারো। ”

বলেই সাগর চলে যায় নিজের ঘরে। সাগর নিজের ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে ডিনার সেরে নেয় প্রথমে। এরপর আবারও ঘরে যায়, গিয়ে দেখে রুবি শুয়ে আছে। বালিশ নিয়ে সোফায় গিয়ে শোয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে রুবির একইভাবে শোয়া দেখে সন্দেহ হয়। গিয়ে ধাক্কা দিতেই রুবি গড়িয়ে পড়ে যায়। হাত শীতল হয়ে গেছে। সাগর কিছুক্ষণ রুবির দিকে তাকিয়ে থাকে, এরপর রুবির পাশে গিয়ে বসে শক্ত করে ধরে। বিকট চিৎকার দেয় সাগর।

সবাই হটাৎ চিৎকারে সাগরের ঘরে গিয়ে দেখে সাগর রুবি কে জড়িয়ে থ হয়ে বসে আছে। রুবির মুখ থেকে ফেনা বেরিয়ে এসেছে। নিরু কিছুক্ষণ রুবির দিকে তাকিয়ে থেকে রুবির পাশে গিয়ে বসে আপু বলে ডুকরে কেঁদে উঠে। বাসার সবাই এমন ঘটনায় হতবাক হয়ে গেছে।

শুভর মা সাগরের মাথায় হাত রেখে বলেন,
__ “ জানিনা বাবা কেনো এমন হলো, এবার উঠে আয়! ওভাবে ধরে রাখলে যে লাশ কষ্ট পাবে। ”

সাগর কোন কথা বলেনা আর, সবাইকে খবর দেয়া হয়। আত্মীয় স্বজনের উপস্থিতি তে বাসা ভরে যায়। আত্মহত্যা পুলিশ কেশ হলেও রুবির বাবা লাশ পুলিশের হাতে দেয় না। কোন কেশ না করেই দাফন করে দেয়া হয় রুবিকে সেদিন সন্ধ্যায়।

সাগর অনেকটা পাথর হয়ে যায়, রুবির সব কিছু জেনেই বিয়ে করেছিলো রুবি কে। তাও কেনো রুবি এমন করলো। রুবির ভয়ানক অতীত জেনেও রুবির সাথে খারাপ বিহেভ করা উচিৎ হয়নি সাগরের। অনুশোচনার দহনে সাগর জ্বলছে অনেক।
হারিয়ে বুঝেছি আমি কতো ভালোবাসি,
বুকের বাঁ পাশে বাজে বিশের বাঁশি।
প্রেমের দাবানলে জ্বলছি দিবারাতি,
কেনো চলে গেলে তুমি ওগো প্রিয় সাথী।

জামিয়া

সাগর ঘরের কোণে বসে বিড়বিড় করছিলো এগুলো বলে, ওর মা স্পষ্ট শুনতে পায়। সাগর হটাৎ মা কে দেখে থতমত খেয়ে পড়ে। মা কে জিজ্ঞেস করে,

__ “ ও কেনো এমন করলো আম্মু, আমাকে কি ক্ষমা করা যেতো না। আমি না হয় ভুল করেই ফেলেছি , তাই বলে এভাবে শাস্তি কেনো দিলো ও আমাকে বলোনা!”

সাগরের মা সাবিহা ছেলের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে ছেলের কাঁধে মাথা রেখে কেঁদেই ফেললেন।

__ “ আর কতো কষ্ট পাবি বাবা, তোর মানষিক অশান্তি যে আর সহ্য হয়না রে। অনেক হয়েছে, তুই আরেকটা বিয়ে কর। নিজের জীবন টা নতুন করে শুরু কর। ”

__ “ এমন মুহুর্তে এসব কথা কেমন করে বলছো আম্মু, প্লিজ এসব বলবে না। যদি বিয়ে করতে রাজি হতাম তাহলে রুবি সুইসাইড করতোনা। তাহলে তো বিয়েটা আগে করে নিলেই পারতাম, রুবিও বেঁচে থাকতো, আর আমিও। ”

__ “ কি বলতে চাস তুই? রুবি বেঁচে থাকতে তুই বিয়ে করতিস কেমন করে। ”

__ “ এসব থাক আম্মু, এখন প্লিজ একা ছেড়ে দাও। ”

ওর মা ঘরে থেকে বেরিয়ে যায়।

নিরু ঘরে বসে আছে, ওর বাবার কাঁধে মাথা রেখে। শুভও পাশে আছে, শুভ একটু বাইরে যেতেই নিরু ওর বাবা কে জিজ্ঞেস করে,

__ “ আব্বু, আপু কেনো এমন করলো, বলোনা প্লিজ। ”

__ “ আ আ আ মি কিছু জানি ই ই না আ আ। ” খানিকট তোতলিয়ে বলে নিরুর বাবা।

__ “ তুমি সব জানো, শুধু আমাকে লুকাতে চাচ্ছো এটাই। জানো, আপু আমাকে মেনে নেওয়ার পর থেকে আমরা তিনজন কতো আনন্দ করেছি। রিমি আমি আপু তিনজন এ এই বাসা টা কে মাতিয়ে রাখতাম সব সময়। অনাথ হয়ে বড় হলেও, আমি সবাই কে পেয়ে খুব আনন্দিত ছিলাম। কিন্তু আপুর এভাবে সুইসাইড করাটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিনা। ”

__ “ ভুলে যা মা, অতীত মনে করে কষ্ট পেতে হয়না। ভবিষ্যৎ যেনো তোর সুন্দর হয় এই কামনা করি সব সময়। ” নিরুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে নিরুর বাবা।

হটাৎ নিরুর মাথায় প্লান আসে, বলতে গেলে কোন রকম দৌড়ে সাগরের ঘরে যায় নিরু। এরপর সাগর তাকালেই নিরু বলে ওঠে,

__ “ ভাইয়া, আপনি না আপুকে ভালোবাসেন। কেমন ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন যে আপু মরে গেলো। মরেই যদি গেলো তার মৃত্যুর জন্য যে দায়ী তাকে শাস্তি দিবেন না। ”

সাগর একটু রেগে গেলো, রাগের বশে বললো

__ “ রুবির মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী, যাও গিয়ে থানায় ডায়েরি করে আসো। আমি শাস্তি পেতে চাই। ”

__ “ কি বলছেন এসব, বিশ্বাস করিনা আমি। আমি চাই আপনি আসল খুনী কে শাস্তি দিবেন। আপু কষ্ট পেয়ে মরে গেলো, আপনি কষ্ট পাচ্ছেন আর আসল খুনী মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াবে। তার কি বিচার হবে না। ”

চলবে……..

প্রেমের_পরশ পার্ট_26

0

প্রেমের_পরশ
পার্ট_26
#জামিয়া_পারভীন

নিরু শুভ কে ছেড়ে দিয়ে পুলিশ অফিসার এর সামনে গিয়ে বলে,
• “ এক্সকিউজ মি অফিসার।”
অফিসার অবাক হয়ে তাকাতেই নিরু বলে,
• “ আমার হাজবেন্ড সম্পূর্ণ নির্দোষ, ওকে কেনো ধরে এনেছেন। ”
• “ আপনি আপনার হাজবেন্ড এর পক্ষ নিবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু উনি খুন করেছেন, আর মেয়েটা উনার অনাগত সন্তানের মা হতে চলেছিলো। ”
• “ কি প্রমাণ আছে যে ওই মেয়েটার গর্ভের সন্তান আমার হাজবেন্ড এর। ”
• “ একটা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে,,, ”

নিরু অফিসার কে থামিয়ে দিয়ে বলে,

• “ সামান্য ধস্তাধস্তি, এতেই কি প্রমাণ হয়ে যায় শুভ খারাপ কাজ করেছে। ”
• “ দেখুন ম্যাডাম, আপনি যাই বলুন না কেনো! উনাকে লাশের সাথে পাওয়া গিয়েছে। আমরা কি করতে পারি বলুন। ”
• “ আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে, মানবিকতা এখনো বেঁচে আছে। দয়া করে বিষয় টার সঠিক তদন্ত করুন। নইলে একজন নির্দোষ ব্যক্তির ফাঁসির আদেশ হয়ে যাবে। আমার অনাগত সন্তানের জন্য বলছি, প্লিজ আমার সন্তান কে এতিম করবেন না। ”
নিরুর খুব কষ্ট হচ্ছে, চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছে। তখন পুলিশ অফিসার বলেন,

• “ আপনি শান্ত হন প্লিজ, আমরা সব কিছু তদন্ত করে দেখছি। ”

নিরু বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছে, রুবি নিরুকে ধরে বেঞ্চে বসিয়ে দেয় । নিরু রুবির কাঁধে মাথা রেখে বলে,

• “ আমি জন্ম থেকে কি এমন পাপ করেছিলাম আপু, সারাজীবন কি আমাকে কাঁদতেই হবে। আমি কি কখনো সুখ পাবোনা!
• “ শুভ এমন ছেলেই না! বিয়ের আগে থেকে চিনতাম। দেখিস সব ঠিক হয়ে যাবে, কাঁদিস না বোন আমার। ”

নিরুর পাশে সবাই এসে বসে। থানায় বেশিক্ষণ থাকার নিয়ম নেই, তাই শুভর বাবা মা কে পাঠিয়ে দেয় । রুবি সাগর আর নিরু থাকে শুধু।

নিরু আবারো শুভর কাছে গিয়ে প্রশ্ন করে,

• “ শুভ সত্যি করে বলো, তুবা কে কেমন করে চিনতে?”
• “ তুমি কি আমায় আবারোও সন্দেহ করছো!”
• “ নাহহহহ! জানলে তোমাকে মুক্ত করা সুবিধা হতো। ”

শুভ সবার উদ্দেশ্যে বলে,

• “ তুবা একজন অনাথ মেয়ে, জন্ম কোথায় জানেনা সে নিজেও। তিন মাস আগে, তুবার সাথে পরিচয় হয়। ”
কিছুটা দম নিয়ে আবার বলতে শুরু করে,
• “ তুবা আমাকে জানায়, সে একজন পতিতা! কোনভাবে খারাপ কাজ করতে চায় না সেইজন্যেই পালিয়ে আসে সুযোগ পেয়েই। নিরাশ্রয় মেয়ে আশ্রয় চাচ্ছিলো, তখন আমিও একজন মেয়ে খুঁজছিলাম জবের জন্য। অফিসে নিয়োগ দিই, কাজ টা খুব সাধারণ ছিলো। আমার নিরুকে বারবার হত্যা প্লান করা হতো, তাই ঘরে সিসি টিভি ফুটেজ দেখার জন্য কাউকে খুব প্রয়োজন ছিলো। তুবা এতো খারাপ মেয়ে ছিলো না। আর নিরু কে বলাই ছিলো, ঘরে ক্যামেরা আছে। সাবধানে চলতে। তারপরও আমি চাইনি আমার স্ত্রী কে পরপুরুষ দেখুক। তাই মেয়ে কেই কাজে লাগিয়েছিলাম। তার সুবাধার জন্য তাকে এক রুমের বাসা ভাড়া করে দিই। আর একটা ল্যাপটপ দিই। যেনো ঘরে বসেও দেখতে পারে। ”

অফিসার তখন জিজ্ঞেস করেন ,
• “ সবিই তো বুঝলাম, কিন্তু তুবা মারা গেলো কিভাবে? ”

নিরুর বাবা তখন আসেন, আর অফিসারের উদ্দেশ্যে বলেন,

• “ কিছু মনে করবেন না অফিসার, কথার মাঝে কথা বলছি! আসলে তুবা মেয়েটাকে আমিও চিনতাম। আমার মেয়ের নিরাপত্তার জন্যই আমি আর আমার জামাই সব কিছু করতে রাজি ছিলাম। কিন্তু বুঝতে পারিনি তুবা আমার জামাই কে ফাঁসিয়ে দিবে। ”

অফিসার তখন জিজ্ঞেস করেন,
• “ যা বলার স্পষ্ট করে বলুন! ”

নিরুর বাবা বলেন,

• “ আমার সন্দেহ হয় একজন কে, তাকে দয়া করে আটক করুন। ৷ সব কিছুই সে বলে দিতে পারবে। ”
• কাকে?
• “ আমার একমাত্র বোন আর তার ছেলে এই সব কিছুর পিছনে দায়ী। ”

এরপর নিরু বাবা, তার স্ত্রীর উপর হামলা সহ সব ঘটনা খুলে বলে।

সন্ধ্যার পর রিপোর্ট আসে মর্গ থেকে, তুবার হত্যার আগে তাকে রেপ করা হয়। আর স্যাম্পল এ অনেকজনের স্পার্ম পাওয়া গেছে। আর গর্ভের সন্তানের সাথে শুভর DNA টেস্ট নেগেটিভ। পুলিশ অফিসার শুভ কে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। সঠিক তদন্ত করবেন বলে আশা দেখান।

নিরুর বাবার কথা অনুযায়ী রাকিব কে খুঁজতে গিয়ে পেরেশান হয়ে যাচ্ছে পুলিশ। রাকিব গাঁ ঢাকা দিয়েছে।

রাত্রে শুভ বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে ডিনার করে নেয়। খুব ক্লান্ত থাকায় খুব সহজেই ঘুমিয়ে পড়ে, নিরু শুভর বুকে মাথা দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছে। হটাৎ শুভ স্বপ্ন দেখে চিৎকার করে। নিরু দেখে শুভর চোখে পানি, তখন জিজ্ঞেস করে,

• “ কিসে এতো ভয় পেলে, আমি আছি তো। ভয় পেয়ো না! ”

শুভ নিরুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে। পুরুষ মানুষ সহজে কাঁদে না, যখন সহ্য ক্ষমতা পার হয়ে যায়। তখন নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা। নিরুর শান্তনা দেয়ার ভাষা যেনো হারিয়ে গেছে। শুভর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় নিরু, আর বলে,
• “ প্লিজ শান্তু হও! আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, আমি খুব বড় অন্যায় করে ফেলেছি। ”

শুভ তখন বলে,
• “ তুবার সাথে গত পরশুদিন আমার ঝামেলা হয়েছিলো, কেনো জানি মনে হচ্ছিলো তুবা আমার সাথে শত্রুতা করতে চাচ্ছে। সন্দেহ লাগাতে ওকে ফলো করি, সে সামিহার সাথে মিট করে। পরে সেখানে রাকিব ও আসে। আমি ওদের কাছে গিয়ে ওদের ধরতে চেয়েছিলাম কিন্তু তার আগেই তিনজন তিন দিকে আড়াল হয়ে পড়ে। চোখের পলকে আড়াল হয়ে যায়, সন্দেহ আরোও বেড়ে যায়। পরে তুবাকে দেয়া রুমের সামনে গিয়ে ওয়েট করছিলাম। তুবা এসেই যেনো ঘাবড়ে যায়। তুবা কে স্বাভাবিক করি, আমি তাকে বিশ্বাস করায় যেনো আমি কিছুই জানিনা। ”

শুভ থেমে যাওয়া তে নিরু বলে,

• “ এরপর…… ”
• “ তুবা রুমের দরজা খুলে ভিতরে যায়, আর তখন আমি ওর মুখ থেকে স্বীকারক্তি নেওয়ার জন্য ওর সাথে ধস্তাধস্তি হয়। তখনই হয়তো কেউ ভিডিও করে রাখে আমার অজান্তে। তুবা কিছুই স্বীকার করেনি, তাই বাধ্য হয়ে বাসায় ফিরে আসি। এসেই রিমি জানায় তোমার জন্মদিন এর সারপ্রাইজ প্লানের কথা। তুবার কথা বেমালুম ভুলে যাই। পরের দিন ব্যস্ততার মাঝে কিছুই মনে ছিলো না। আর ভিডিও টা তখনই দিলো কিন্তু তোমরা কিছুই শুনলে না, আমায় অবিশ্বাস করলে নিরু। জানো আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম তোমার ব্যবহার এ। কিন্তু পরোক্ষণে মনে হয় তুমি ঠিক ই করেছো। আমি প্রমাণ এর জন্য তুবার বাসায় যায়, আর গিয়েই ফেঁসে যায় তুবা হত্যার দায়ে। ”

নিরু শুভকে জড়িয়ে বলে,
• “ অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে আমার শুভ, মাফ করে দিও। ”

দু’জন দুজনকে শান্তনা দেয়, একে অপরের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।

নিরুর প্রেগন্যান্সির আট মাস চলছে, কেটে গেছে অনেক গুলি মাস। না সুস্থ হয়েছে রুবির মা, না খুঁজে পাওয়া গেছে রাকিব কে। নিরু আর রিমির ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষাও হয়েছে এরমাঝে। শুভ দুজন কে নিজে সব সময় গাইড করে। সব অফিসের দেখাশোনা করার পাশাপাশি বউ আর বোনের নিরাপত্তার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে শুভ।

নিরুর পেট বেশ মোটা হয়েছে, নিরুর মাজা বাঁকা করে হাটা দেখে রিমি বলে,
• “ ভাবী তুমি এতো মটু হয়ে গেছো যে হাটতেই পারছো না ঠিক মতো। ”

নিরু খিলখিলিয়ে হাসে, তখন শুভ বলে,

• “ তোর যখন আসবে তখন নিরু ও তোকে নিয়ে মজা করবে। ”

রিমি লজ্জা পেয়ে পালিয়ে যায়, নিরু তখন আরোও জোরে হেসে উঠে। রাতে নিরু রেষ্ট নিচ্ছিলো তখন শুভ অফিস শেষে ফিরে ফ্রেশ হয়েই নিরু পেটে কান লাগিয়ে বলে,
• “ কি করছে আমার পিচ্চি বাবুটা? ”

নিরুর পেটের ভিতর থেকে জোরে করে পা নড়াচ্ছে, শুভ তখন নিরুকে বলছে,

• “ দেখেছো নিরু, জন্মের আগেই বাবা কে লাথি দিচ্ছে। ”

নিরু হাসছে, এরপর বললো,
• “ সহ্য করতে পারছো না এখুনি! ”
• “ আমার আদরে ভাগ নিয়ে নিচ্ছে যে। ”

নিরু আবারোও হেসে উঠে।
• “ শুভ! তুমি নিজ সন্তান কে হিংসা করছো দেখেছো। ”

চলবে…….

প্রেমের_পরশ পার্ট_25

0

প্রেমের_পরশ
পার্ট_25
জামিয়া_পারভীন

শুভ নিরুর মুখ তুলে কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে বলে,

“ আজ জন্মদিন তোমার, আর কখনো কাঁদবে না। আজ থেকে শুধু তোমার সুখের দিন। ”

শুভর ঠোঁট এ হাত দিয়ে নিরু বলে,
“ মজা করছো! এখনো আমাদের পরিবারের উপর শনির নজর আছে। আমি কিছুতেই খুশি থাকতে পারিনা সেই জন্য। ”

শুভ একটু হতাশ হয়, আসলেই ঝড় বয়ে যাচ্ছে পরিবারের উপর দিয়ে। শুভ রুম থেকে বেরিয়ে বেলকনি তে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যা হয়ে আসে, নিরু নিচে নামে। কিচেন এ গিয়ে কড়া করে কফি বানিয়ে নিয়ে আসে রুমে । শুভর ঘাড়ে হাত দিয়ে বলে,

“ তোমার কফি খেয়ে নাও। ”

নিরুর হাত থেকে কফি নেয় শুভ , সোফায় এসে বলে,

“ প্রেগন্যান্ট অবস্থায় কফি খাওয়া নিষেধ, কিন্তু অল্প করে চা পান তো করতে পারো। ”

“ হুমম, আজ ভালো লাগছেনা তাই করিনি, একটু রেষ্ট নিতে চাই । ”

নিরু বেডে গিয়ে শুয়ে আছে, শুভ কফি শেষ করে ড্রইংরুমে সবার সাথে গিয়ে বসে। শুভর ফোনে টোন বেজে ওঠে। আঁধশোয়া হয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখছে নিরু, একটা মেসেজ আসে শুভর ফোনে। নিরু মেসেজ ওপেন করে চোখ দিয়ে পানি ঝরতে থাকে। সাথে একটা ভিডিও ও এসেছে, সেটা ওপেন করে দেখে। এরপর ফোন টা আছাড় দিয়ে খুব কাঁদতে থাকে।

শুভ কিছুক্ষণ পর রুমে এসে নিরু কে কাঁদতে দেখে মনে করে সকালের ঘটনায় মন খারাপ নিরুর। নিরুর কাঁধে হাত রেখে শুভ কিছু বলার আগেই নিরু শুভর হাত এক ঝটকায় সরিয়ে দেয়। এরপর বলে,
“ আর কক্ষনো ছোবে না আমাকে, যেইই হাত দিয়ে তুবা কে স্পর্শ করেছো, সেই হাত দিয়ে আর কখনো আমার শরীর স্পর্শ করবেনা। ”

শুভ অবাক হয়ে যায়,
“ কি বলছো এসব, তুবা কে তুমি চিনলে কিভাবে? ”

নিরু প্রচন্ড রাগে বলে,
“ পাপ কখনো চাপা থাকে না, একদিন প্রকাশ পেয়ে যায়। তোমার পাপ ও আজ আমার সামনে চলে এসেছে। ছিঃ লজ্জা করেনা ঘরে বউ রেখে অন্য মেয়ের সাথে। ”

শুভ কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে, এরপর বলে,
“ আমার উপর মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছো নিরু, আমি এমন কিছুই করিনি। ”

নিরু অনেক জোরে করে বলে,
“ তাহলে বলতে চাচ্ছো তুবা কে তুমি রেপ করোনি। তাহলে তুবার গর্ভের সন্তান কেও তুমি অস্বীকার করছো তাইনা। ”

ততক্ষণে বাসার সবাই চলে এসেছে, লাস্ট এর কথায় সবার মাথায় বাজ পড়ে। শুভ কিছু বলার আগেই শুভর মা বলে,

“ শুভ! এসব কি শুনছি? তুই এতো নিচে নেমে গিয়েছিস। ”

শুভ কিছু বলার আগেই নিরু শাশুড়ি মায়ের কোলে মাথা রেখে বলে,

“ আম্মা, উনি তুবা নামের এক মেয়ের সাথে বাজে কাজে লিপ্ত হয়েছে। ওই মেয়েটা এখন প্রেগন্যান্ট। ওনার ফোনে ওই মেয়েটা ভিডিও পাঠিয়েছে। আপনি দেখলে বুঝতেন, এগুলো ফেইক না। ”

শুভ নিজের ফোন হাতে নিয়ে ভিডিও ওপেন করে যা দেখে নিজেই লজ্জা পেয়ে যায়। ফোন টা এক আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলে। এরপর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

“ আম্মু! বিশ্বাস করো আমি এমন নই। ”
শুভর মা বলেন,
“ তাহলে ফোন ভাঙ্গলি কেনো? ”

“ ওগুলো দেখে সহ্য করতে পারিনি। তাই …….”

“ ওগুলো রিয়েল তাইনা! ”

“ ভিডিও সত্যিই, কিন্তু…… ”

“ আর কৈফিয়ত দিতে হবে না। নিরু চলে এসো আমার ঘরে, আর শুভ! তুই পারলে তোর মুখ আমাকে দেখাস না। ”

“ আম্মু শোন, ,,,, ”

কিছু শোনার আগেই নিরুর হাত ধরে শুভর মা বেরিয়ে যায়, শুভর বাবা ছিঃ বলে বের হবার সময় শুভ জিজ্ঞেস করে,

“ আব্বু তুমিও অবিশ্বাস করলে, আমাকে কিছুই বলার সুযোগ দিলে না তাহলে। ঠিক আছে, নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ না করে ফিরছি না। পারলে নিরুর খেয়াল রেখো তোমরা। ”

শুভ বাইরে চলে আসে, উদ্দেশ্য তুবা কে খুঁজে বের করা।

পরেরদিন সকালে টিভি ওপেন করলে শুভর বাবা ব্রেকিং নিউজ দেখে ঘাবড়ে যায়।
অনেক জোরে করে বলে,

“ হায় আল্লাহ! একি সর্বনাশ হয়ে গেলো আমার। ”

সবাই ছুটে আসে, নিরু প্রথমে নিউজ দেখে মাথা ঘুরে পড়ে যেতে লাগে। শুভর মা ধরে সোফায় বসিয়ে দেয়। রুবি তখন নিরুর পাশে বসে বলে,

“ শুভর প্রতি আমার বিশ্বাস আছে, সে এমন করতে পারেনা। এটা সত্যিই অনেক বড় চক্রান্তে আমরা ফেঁসে গেছি। তুই ধৈর্য ধর , আর এখন পারলে শুভর সাথে দেখা কর। ”

নিরুর চোখ দিয়ে পানি ঝরছে, নিরুর মন বলছে শুভ এমন করতে পারে না। সে রুবি কে বলে,

“ আপু, আমাকে নিয়ে যাবে ওর কাছে। আমার ভুল হয়ে গেছে ওকে অবিশ্বাস করা। নইলে ওর এতো বড় ক্ষতি হতো না। আমার মন বলছে আমি ওকে অবিশ্বাস করে ভুল করেছি।”

টিভির ব্রেকিং নিউজে একবার তাকালো নিরু,

“ বিশিষ্ট বিজনেসম্যান আসাদুজ্জামান শুভ তুবা হত্যা মামলায় গ্রেফতার। ”

শুভর ফ্যামিলি থানায় যায়, শুভর বাবা ও সি র সাথে কথা বলে। প্রথমে তারা শুভর সাথে দেখা করতে দিতে নারাজ হয়। কিন্তু পরে কথা বলতে দেয় প্রায়ই এক ঘন্টা পর।

শুভকে কয়েজন পুলিশের সামনে হাতকড়া পরিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে, সবাই গিয়ে শুভর আসেপাশে ভিড় জমায়। শুভ তখন বলে,

“ তোমরা কেনো এসেছো? বিশ্বাস যখন করতে পারোনি, তার শাস্তি তো আমায় পেতেই! হবে। ”

“ আমাকে মাফ করে দাও, আমি জানি! তুমি অন্যায় করো নি। আমরা সবাই তোমাকে নির্দোষ প্রমাণ করবো। ” নিরু কেঁদে উঠে কথা গুলো বলার পরে।

“ কাল যদি অবিশ্বাস না করতে তাহলে আজ এই দশা হতো না আমার। আর কারোও উপকার চাইনা। সবাই চলে যাও। ”

শুভর মা বলে,

“ ভুল হয়ে গেছে বাবা, মাফ করে দে। কি ঘটনা ঘটেছে খুলে বল, তাহলে আমাদের সুবিধা হবে কেশ সলভ করতে। ”

“ কি দরকার আম্মু, আমার ছাড়া পেয়ে লাভ নেই, আমি তো খারাপ। ”

শুভর বাবা বলেন,
“ আহহ শুভ! এতো রেগে যেও না। বিপদের সময় মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়। ”

নিরু সবার সামনেই শুভ কে জড়িয়ে ধরে,

“ প্লিজ মাফ করে দাও, আমার জন্য না হলেও অনাগত সন্তানের জন্য। ”

শুভর মাথা কিছুটা ঠান্ডা হয় সন্তানের কথা শুনে। এরপর বলে,

“ আমি বড্ডো ফেঁসে গেছি নিরু, বুঝতে পারছিনা কিভাবে এই জাল ছিঁড়ে বের হবো।”

চলবে………