Tuesday, June 24, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 112



আমার প্রেয়সী পর্ব-০৩

0

#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_৩
#জান্নাত_সুলতানা

-“চোখ নিচে।
দ্বিতীয় বার তাকাতে দেখলে ভয়ংকর কিছু হবে।”

ছেলের বাড়ির খুব বেশি আত্মীয় স্বজনরা আসে নি।শুধু পরিবারের লোক।কিন্তু সন্ধ্যা হতে হতে বিয়ে পড়ানোর আগে মেয়ের আত্মীয় অনেকে এসে উপস্থিত হয়েছে।মেয়ের আপন কোনো ভাই বোন নেই।কিন্তু আত্মীয় স্বজনদের মাঝে বেশ কিছু ছেলেমেয়ে এসছে। এরমধ্যে একটা ছেলে বারবার আষাঢ় এর দিকে তাকাচ্ছিল।আর এখন খাওয়া শেষ আষাঢ় তায়ুশ এর সাথে বসে ছিলো।তক্ষণি ছেলেটাও সেখানে উপস্থিত হলো।ইনিয়েবিনিয়ে আষাঢ় এর সাথে কথা বললো।আষাঢ় বিরক্ত। কাউ কে যে কিছু বলবে সে টাও পারছে না। শেষমেশ বাধ্য হয়ে মায়ের সাথে থাকছে। বিষয় টা সবটাই অবলোকন করেছে আর্শিয়ান শুধু বাড়ি ভর্তি মানুষ সেইজন্য কিছু করতে পারছে না।
আর্শিয়ান আষাঢ় কে চলে যেতে দেখে ফোঁস করে দম ছাড়ে।তায়ুশ এর পাশে গিয়ে বসে ছেলেটার দিকে গম্ভীর আর দাঁতে দাঁত পিষে উপরোক্ত হুমকি টা দিলো।
ছেলে টা বুঝতে পারছে না কি বলছে আর্শিয়ান।তবে আর্শিয়ান এর ভয়ংকর চাহনি ছেলে টা ভয় পাচ্ছে।বয়স আর কেমন হবে হয়তো আষাঢ়’র থেকে বছরখানেক এর বড়ো।আর্শিয়ান ছেলেটার ভীতু চাহনি আর কথার মানে যে বুঝতে পারে নি তা ঠিক ঠাহর করতে পারে। এবার তায়ুশ কে ছেড়ে ছেলেটার পাশে বসলো।এক হাতে ছেলেটার কাঁধে চাপড় মারলো।
আরেক হাতের আঙ্গুল সামান্য উঁচিয়ে আষাঢ় কে দেখিয়ে বললো,

-“শী ইজ অনলি মাইন, অনলি মাইন।সো keep ইউর আইস ডাউন অর ইউ উইল রিগ্রেট [অনুশোচনা] ইট লেটার।”

ছেলে টা ফ্যালফ্যাল করে আর্শিয়ান এর দিকে তাকিয়ে রইলো।সে কখনো কোনো মেয়ের আশেপাশে যায় নি।ভালো লাগে নি আজ পর্যন্ত কাউ কে।আষাঢ় কে দেখে কেনো জানি ভালো লাগলো।আর কথা বলার জন্য মন টা কেমন করছিলো।তবে সাহস পাচ্ছিল না।শুধু নিজের বোনের থেকে অনুপ্রেরণা মুলুক মন্তব্য পেয়ে অনেক টা সাহস নিয়ে কথা বলতে এসছিল।তাও মেয়ে টা বেশি কিছু বলে নি।শুধু বর ওর কাকা হয় আর কিসে পড়ে এসব বলার পরই তো ওর মায়ের কাছে চলে গেলো।
ছেলেটার ভাবনার মাঝেই আর্শিয়ান ওর গালে আলতো করে চাপড় মেরে বলল,

-“মাইন্ড ইট।”

অতঃপর পাঞ্জাবির হাতা ফোল্ড করতে করতে চলে গেলো। ছেলে টা তখনো দুঃখী দুঃখী মুখ করে বসে আছে।

—–

-“শক্ত করে ধরে বোস।”

আষাঢ় চমকে উঠলো। আর কিভাবে ধরবে?মানুষ টাকে যতোই মনেপ্রাণে ভালোবাসে মনের ঘরে এই মানুষ টা যতোই রাজত্ব করে। কিংবা কল্পনায় মানুষ টা কে জড়িয়ে ধরা সেসব যতোই করে। কিন্তু বাস্তবে?আষাঢ় তো একদমই প্রস্তুত নয়।অতোটা সাহসও হয় নি।আষাঢ় বুঝতে পারছে ওর হাত কাঁপছে হয়তো পুরো বডি কাঁপছে। আর্শিয়ান ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে। নিজে দুই হাতে আষাঢ় এর হাত নিজের পেটের উপর এনে রেখে দিয়ে বললো,

-“এভাবে ধর।
নয়তো ভয় পাবি।”

আষাঢ় আর দ্বিমত পোষণ করার কোনো রাস্তা পেলো না। ব্যাগ কাঁধে নিয়ে জড়িয়ে ধরে রইলো সেভাবে। আর্শিয়ান বাইক স্টার্ট করলো।
বিয়ে পড়ানো শেষ খাওয়াদাওয়ার পর্ব শেষ করে সব গুছিয়ে বেরুতে বেরুতে রাত হয়ে এলো।বউ আর বর একটা গাড়িতে গিয়েছে। সাথে তাসরিফ রয়েছে। আর বাকি দুইটিতে পরিবারের সবাই। নাসির আসার সময় তো বাইকে করে এসেছে।এখন বাইকে করে আর্শিয়ান যাওয়ার কথা ছিলো না। তাসরিফ যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু আষাঢ়ও বায়না ধরলো বাইকে যাবে।এদিকে হঠাৎ আর্শিয়ান তাসরিফ কে কাকার সাথে পাঠিয়ে দিয়ে নিজে বাইক নিয়ে আসছে জানালো।
বাড়ির কাছাকাছি চলে এসছে।আর কিছু টা পথ পর তালুকদার বাড়ি।হঠাৎ আর্শিয়ান বাইক থামালো।পাশে কিছু দোকানপাট আছে। আষাঢ় ভ্রু কুঁচকে কিছু জিগ্যেস করবে তার আগেই আর্শিয়ান বলল,

-“চুপ করে বসে থাকবি।
আমি পাঁচ মিনিট এর ভেতর চলে আসবো।”

আষাঢ় বাইক থেকে নেমে সেটায় ঠেশ দিয়ে দাঁড়ালো। পাশে কিছু ছেলেপেলে দাঁড়িয়ে সিগারেট টেনে ধোঁয়া গুলো আষাঢ় এর দিকে তাকিয়ে লোভাতুর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ছাড়ছে।
আষাঢ় ভয় পেলো।ছেলেগুলো এই পাড়ারই।এরা খুব বাজে। এদের নাম চুরি ডাকাতি থেকে শুরু করে ধর্ষণ কোনো কিছুর কেস বাদ যায় নি।শুধু বড়োলোক পরিবারের ছেলেপুলে বলে বেঁচে যায়।আষাঢ় ভয়ে একদম গুটিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ছেলে গুলো বারকয়েক শীষ বাজালো
আষাঢ় তাকালো না ওইদিকে। এরমধ্যে আর্শিয়ান হাতে একটা পলিথিন ব্যাগ নিয়ে এসে হাজির হলো।আষাঢ় কে এমন ভয়ে চুপসে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। ভ্রু কুঁচকে পাশে তাকালো।ছেলে গুলো আর্শিয়ান কে দেখে ভয়ে দৌড়াদৌড়ি করে চলে গেলো। আর্শিয়ান বিড়বিড় করে বলে উঠলো,

-“সবার চোখে শুধু এটার উপর পড়ে।দেশে কি মেয়ের অভাব?পরে দেখছি তোদের।”

আষাঢ় আর্শিয়ান কে দেখে স্বস্তি পেলো।মাথা ঘুরিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখলো ছেলে গুলো চলে গেছে। আষাঢ় আঁটকে রাখা দম টা ফোঁস করে ছাড়ে।আর্শিয়ান ভাই কে এই পড়ায় কমবেশি সবাই চিনে।অনেকে সম্মান করে। আবার অনেকে ভয় পায়।কারণ আর্শিয়ান ভাই এর আস্ত একটা দল রয়েছে।
আষাঢ় এর ভাবনার মাঝেই আর্শিয়ান ওর হাতের পলিথিন ব্যাগ টা ওর হাতে নেওয়ার জন্য এগিয়ে দিয়ে বলল,

-“ওঠে বোস।”

আষাঢ় সেটা হাতে নিয়ে নেড়েছে দেখলো।ভেতরে ভেলপুরি আর ফুচকাও দেখা যাচ্ছে। অনেক গুলো বাড়ির সবার জন্য নিয়েছে। আষাঢ় একটু আগের সব ভুলে গেলো।ভয়ে কেটে মুখে হাসির ঝলক দেখা গেলো।

—–

বাড়িতে নতুন বউ কে সবার দেখা শেষ রুমে নিয়ে গেলো মেঝো মা।খাবারও রুমে দিলো।সবার খাওয়াদাওয়া শেষ করে নাসির কেও সবাই মিলে ঠেলেঠুলে রুমে পাঠালো।শুধু লিভিং রুমে আর্শিয়ান বসে রইলো।ফোনে গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু করছে সে। ছোট বড় সবাই যে যার রুমে চলে গিয়েছে।আর্শিয়ান প্রায় অনেক সময় পর রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।দোতলায় উঠতেই একদম করিডরে শেষ কর্নারে রুমের সামনে দরজায় দিকে দৃষ্টি পড়তেই ভ্রু কুঁচকে এলো।রাত বাজে সাড়ে বারো টা।আর তায়ুশ তায়েফ থেকে শুরু করে কেউ বাদ যায় নি দরজায় আড়ি পাতা থেকে।আর্শিয়ান ধুপধাপ পা ফেলে এগিয়ে গেলো।

-“তুমি কিছু শুনতে পাচ্ছো ভাই?”

-“আরে চুপ কর।
কিছু শুনতে পাচ্ছি না। কাকাই মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছেছ,,,

তাসফিয়ার কথায় তাসরিফ বলে উঠলো। তবে পুরো টা কথা সম্পূর্ণ করার আগেই ঘাড় ফিরিয়ে আর্শিয়ান কে ওদের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে থমথম খেলো।
আর্শিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে জিগ্যেস করলো,

-“এখানে কি করছিস তোরা?”

এতো সময় নিচু হয়ে বেঁকে থাকা সবাই চুপচাপ সটান হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো।তায়ুশ তায়েফ গিয়ে দাঁড়ালো একদম আষাঢ়’র পেছনে। এই দু’টো সব সময় আষাঢ়’র সাথে চিপকে থাকে।আষাঢ় বিরক্ত হলো।এখন তো সেই লুকানোর আশ্রয় পাচ্ছে না। সেখানে এই বিচ্ছু গুলো ওকে খাম্বা বানিয়েছে।তাসফিয়া একদম পেছনে আয়াত তাসরিফ এর পেছনে।আর আষাঢ় তাসরিফ সামনে। আষাঢ় চারদিকে তাকালো।কেউ যে এই ব্লাক কফির সামনে টুঁশব্দ করতে পারবে না আষাঢ় ভালোই জানে।তাই নিজেই একটু সাহস নিয়ে মেকি হেঁসে বললো,

-“এ হে,, কিছু না। ইয়ে মা,,

-“চোপ বেয়াদব।
পাঁচ সেকেন্ড, এরপর যদি এখানে কাউ কে দেখি খুব খারাপ হবে।”

তায়েফ তায়ুশ আষাঢ় কে ধাক্কা মেরে ফেলে চলে গেলো।আষাঢ় তাল ঠিক রাখতে না পেরে পড়তে পড়তে রেলিং ধরে দাড়ালো।ততক্ষণে সব গুলো এক দৌড়ে যে যার রুমে ঢুকে গিয়েছে। আষাঢ় সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে অসহায় চোখে তাকালো আর্শিয়ান এর দিকে।
নির্ঘাত দুই টা চর ফ্রী এখন। আষাঢ়’র কে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আর্শিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে আবারও বলে উঠলো,

-“আমার জন্য কফি করে নিয়ে আসবি।দশ মিনিট সময়। এটা তোর শাস্তি স্টুপিট কোথাকার।”

#চলবে….

আমার প্রেয়সী পর্ব-০২

0

#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_২
#জান্নাত_সুলতানা

আষাঢ় কলেজ বেশ কয়েকদিন ধরে সৈকত এর দেখা পাচ্ছে না।আজ দেখতে পেয়েছে। কিন্তু আষাঢ় অনেক টা অবাক হলো।সৈকত ছেলে টা সব সময় ওর আশেপাশে ঘুরাঘুরি করে। কিন্তু আজ ছেলে টা ওর দিকে তাকালো পর্যন্ত না।ভারি অদ্ভুত ঠেকালো আষাঢ়’র নিকট ছেলেটার হঠাৎ পরিবর্তনে।দুপুর দুই টা বাজে কলেজ ছুটি হলো।নাদিয়া আজ আসে নি। আষাঢ় একাই ক্লাস করেছে।কলেজ থেকে বেরিয়ে বাড়ির রাস্তায় হাঁটা ধরে।বাড়িতে তিন টা গাড়ি রয়েছে। একটা বাচ্চাদের স্কুল কলেজ আসা নেওয়া করার জন্য।আর একটা দিয়ে তিন ভাই অফিস যায়।আর একটা বাড়িতে থাকে।আর্শিয়ান ভাইয়ের। এটা আর্শিয়ান নিজের টাকায় কিনেছে।আর ছোট কাকার একটা বাইক আছে। আষাঢ় কে মাঝেমধ্যে তিনি কলেজ পৌঁছে দেয়।কিন্তু বাড়ি ফিরার সময় আষাঢ় প্রায় হেঁটে বাড়ি ফিরে। যদিও তাসফিয়া আর আয়াত এর সাথে গেলে গাড়ি দিয়ে যাওয়ার জন্য একটু অপেক্ষা করতে হয়।কিন্তু আষাঢ়’র অতো ধৈর্য নেই।সে পনেরো মিনিট এর রাস্তা প্রায় হেঁটে চলে আসে।হাঁটতে হাঁটতে প্রায় অনেক টা পথ চলে এসছে আষাঢ়। তক্ষুণি পেছন থেকে কেউ ডাকলো।আষাঢ় ভাবলো এই রাস্তায় তাকে কে ডাকবে।মনের ভুল ভেবে পেছন ফিরে না।কিন্তু হঠাৎ কেউ সামনে চলে এলো।আষাঢ় ভরকে গিয়ে চকিতে মাথা তুলে সামনে সৈকত কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখো বিস্ময় কেটে ভ্রু জোড়া কিঞ্চিৎ পরিমাণ কুঁচকে এলো।
সৈকত কিছু সময় নীরব থেকে বললো,

-“আমি ট্রান্সফার হয়ে চলে যাচ্ছি।
তোমাকে আর ডিসটার্ব করবো না।”

আষাঢ় কিছু বলবে তার আগেই সৈকত লম্বা লম্বা কদম ফেলে চলে গেলো উলটো দিকে।আষাঢ় বুঝতে সময় লাগলো।কি বলে গেলো বুঝতে পেরে অবাক হলো।আষাঢ় রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করতে লাগলো।এমন সময় ফুটপাত ধরে একটা গাড়ি ঠিক ওর পাশে ঘেঁষে দাঁড়ালো এসে।আষাঢ় চমকে উঠলো। গাড়ি টার দিকে লক্ষ্য করে মনে মনে ভয় পেলো।আবার এসছে আজ আর্শিয়ান ভাই।কেনো?আষাঢ় এর ছোট মাথায় যখন একঝাঁক প্রশ্ন কিলবিল করছে।আর্শিয়ান তখন গাড়ির জানালার কাচ নামিয়ে গম্ভীর স্বরে ডেকে বলল,

-“গাড়িতে উঠ।”

-“আমি হেঁটে যেতে পারবো।
আপনি যান কোনো কাজ থাকলে,,

আষাঢ়’র কথা সম্পূর্ণ না শুনেই আর্শিয়ান দাঁতে দাঁত পিষে বলে উঠলো,

-“চুপচাপ ওঠে বোস।
আমি বেরুলে খুব বেশি ভালো হবে না আষাঢ়।”

আষাঢ় চুপচাপ গাড়িতে ওঠে বসে। আর্শিয়ান গাড়ি স্টার্ট করে। পেছনের সিটে বেশ কিছু শপিং ব্যাগ নজরে এলো আষাঢ়’র।তবে জিগ্যেস করার মতো সাহস পেলো না। পেছন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই চোখ কপালে ওঠে গেলো।অবাক হলো আষাঢ়। আর্শিয়ান ভাই গাড়ি কেনো ঘুরালো?এদিকে কোথায় যাচ্ছে?
নিজের মনে প্রশ্ন গুলো বিড়বিড় করে মুখে জিগ্যেস করলো,

-“আমরা এদিকে কোথায় যাচ্ছি?”

-“গেলে দেখতে পারবি।
খবরদার এখন বকবক করে আমার মাথা খাবি না।”

আষাঢ় চোখ পিটপিট করলো।গাল ফুলিয়ে চুপচাপ বসে রইলো।আধঘন্টা পর ওরা একটা ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে গাড়ি থেকে নামলো।আর্শিয়ান পেছনের সিট থেকে ব্যাগ গুলো নিয়ে আরেক হাতে আষাঢ়’র হাত ধরে আষাঢ় একটু নড়েচড়ে উঠলো।শরীরে জুড়ে অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেলো।আষাঢ়’র হাত ধরে আর্শিয়ান বাড়ির ভেতর গেলো।আষাঢ় বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে আরো একদফা অবাক হলো।বাড়ির ভেতর সব-কয়টা মুখ ওর পরিচিত।মা বাবা ভাই বোন কেউ বাদ যায় নি।ছোট কাকা সোফায় বসে আছে। চোখমুখ জুড়ে লজ্জার আস্তরণ।
আষাঢ় যখন বিস্ময় নিয়ে সামনে তাকিয়ে ঠিক তক্ষুনি আর্শিয়ান চাপা স্বরে বলল,

-“বেশি লাফালাফি করবি না।
নয়তো,,,

আষাঢ় এর অতো ধৈর্য কোথায়? পুরো টা শুনলে তো।এক দৌড়ে তায়েফ তায়ুশ এর কাছে চলে গেলো। আর্শিয়ান চোখ কটমট করে সেদিকে তাকিয়ে রইলো।
ততক্ষণে ওর মা আর তাসফিয়া, আয়াত এসে হাতের শপিং ব্যাগ গুলো নিয়ে চলে গেলো।
আর্শিয়ান গিয়ে ছোট কাকার পাশে বসলো।আজ হঠাৎ মেয়ে দেখতে এসে পছন্দ হয়েছে সবার। যদিও এর আগে মেয়ে কে সবাই দেখেছে শুধু বাড়ির ছোট সদস্যদের আর নাসির তালুকদার কে ছাড়া।বিয়ে ওনি করবে না এমনটাই মনস্থির করেছেন। কারণ হচ্ছে কলেজ লাইফে এক রমণী কে ভালোবেসেছিল।যেমন তেমন ভালোবাসা না ভয়ংকর রকমের ভালোবাসা। কিন্তু ছাত্র জীবনে ভালোবাসার কোনো পূর্ণতা বা মূল্য কোনো টাই থাকে না।এই কথা টা চিরন্তন সত্য। ওনার ভালোবাসা পূর্ণতা পায় নি।মেয়ে টা ছিল ধনী পরিবারের।যদিও তালুকদার পরিবার যথেষ্ট বিত্তশালী। কিন্তু রমণীর বাবার এক কথা ছেলের পরিবার বড়োলোক। ছেলে নয়।তাছাড়া এই বয়সে একটু-আধটু এমন হয়।এসব সিরিয়াস নিতে নেই।কিন্তু নাসির তো সিরিয়াস ছিলো।কিন্তু মেয়ের বাবা মানলো না।জোর করেই বিয়ে দিয়ে দিলো মেয়ের। মেয়ের অবশ্য অল্পস্বল্প মত ছিল।ছেলে সুদর্শন আর টাকাওয়ালা। সেখানে কলেজ পড়ুয়া নাসির তখন রোগা-সোগা টাইপ লেখাপড়াও খুব বেশি একটা ভালো ছিল না। তবে চলনসই যাকে বলে।সেক্ষেত্রে বাবা-র পছন্দ করা পাত্র কে বিয়া করা উত্তম মনে করে বিয়ে করে নিলো।এদিকে নাসির অনেকটা ভেঙ্গে পড়ে।পরিবারের চাপ আর নিজের জেদে নিজে কে আজ এখানে এনেছে।

-“শোন আমার বিয়ে তো হয়ে যাচ্ছে। তুইও বিয়ে টা এবার করে নে।বয়স তো আর কম হচ্ছে না।”

হঠাৎ নাসির ফিসফিস করে আর্শিয়ান কে বললো।নাসির আর আর্শিয়ান এর মাঝে কাকা ভাতিজা সম্পর্ক কম বন্ধুত্বের সম্পর্ক বেশি। সেজন্যই বেশ ভাব তাদের মধ্যে। আর্শিয়ান সতর্কতার সহিত চারদিকে দৃষ্টি বোলালো। অতঃপর ফোনের স্ক্রিনে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে নিজেও কাকার মতো ফিসফিস করে জানালো,

-“আমার বয়স হয়েছে। কিন্তু আমার বউয়ের হয় নি।অপেক্ষা করতে হবে।”

নাসির তালুকদার চোখ কপালে তুলে চাইলো ভাতিজার দিকে। কি বলে ছেলে?বুঝতে পারলো না।আর্শিয়ান তখন তায়ুশ এর সাথে চকলেট নিয়ে কাড়াকাড়ি করতে থাকা আষাঢ় এর দিকে অপলক তাকিয়ে। নাসির তালুকদার চমকে উঠলো মনে হচ্ছে উনুনের উপর বসে আছে। আন্দাজ করতে পারছে বোধহয়।চোখ বড়ো বড়ো করে সেইজন্য বলল,

-“এই হতচ্ছাড়া দৃষ্টি সংবরণ কর।নিজের বয়সের দিকে একবার তাকা। তোর মতো বুড়োর কাছে আমরা মেয়ে দেবো না।”

আর্শিয়ান বাঁকা চোখে তাকিয়ে বসা হয় ওঠতে ওঠতে বলল,

-“অনুমতি চাইবো না আমি তোমাদের কাছে। শুধু ওকে একটু বড়ো হতে দাও।”

নাসির তালুকদার জোরে কিছু বলতে গিয়েও পারে না। যতই হোক পাত্র বলে কথা তারউপর একটু পর বিয়ে।
আর্শিয়ান হনহন করে আষাঢ় এর মায়ের কাছে চলে গেলো। আষাঢ় তাকিয়ে রইলো সেদিকে মানুষ টাকে দেখার তৃষ্ণা কোনো জন্মে মিটবে না। এই তামাটে বর্ণের পুরুষ টা বেশি সময় কালো পড়ে যাতে করে আরো বেশি সুদর্শন লাগে। আষাঢ় মাঝেমাঝে ভাবে কে বলেছিল কালো মানুষ কে কালোতে মানায় না?এইতো তার আর্শিয়ান ভাই কে ভয়ংকর সুদর্শন লাগে। অবশ্য আর্শিয়ান ভাই তো এক্কেবারে কালো নয়।পরিবারের সবাই ধবধবে সাদা সেইজন্য হয়তো এই আর্শিয়ান নামক সুদর্শন পুরুষটার চাপা গায়ের রঙ টাকে কালো মনে হয়।আসলে তেমন নয়।আর্শিয়ান ভাই তো শ্যাম্য পুরুষ। গল্পের, উপন্যাসের সেই নায়কদের মতো নজরকাঁড়া সৌন্দর্যের অধিকারী।
ইশ মাঝেমধ্যে যখন আর্শিয়ান ভাই ওনার ফ্রেন্ডদের সাথে যখন ফেসবুকে পিকচার আপলোড করে তখন তো কতশত মেয়ের কমেন্ট করে।আর্শিয়ান এর অবশ্য সেসবের কোনো রেসপন্স নেই।আর ওনার দুই টা মেয়ে ফ্রেন্ড আছে।মাঝেমধ্যে আর্শিয়ান ভাই সেই ভার্সিটি লাইফের ফ্রেন্ড’দের সাথে আড্ডা, ঘুরাঘুরি করতে যায়।একটা মেয়ে অবশ্য আর্শিয়ান ভাই কে ভালোবাসে।আষাঢ় যতটুকু জানে মেয়ে গুলো কে আর্শিয়ান তেমন পাত্তা দেয় না।
আর আষাঢ় এর ক্লাসের মেয়ে গুলো?রোজ তো একটা একটা এসে আর্শিয়ান ভাইয়ার নাম্বার চায়।আষাঢ় অবশ্য তখন ভাবসাব নিয়ে জানায় ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড আছে। শুধু নাদিয়া জানে আর্শিয়ান ভাই পিওর সিঙ্গেল আর সেইজন্যই তো সেদিন মেয়ে টা ইচ্ছে করে ওই খামটা আষাঢ় এর হাতে ধরিয়ে দিয়ে পগারপার। আষাঢ় পরে জানতে পেরেছিল খামের ভেতর চিঠি আর্শিয়ান ভাইয়ের জন্য ছিলো।আষাঢ় এটা ভেবে স্বস্তি পায় ভাগ্যিস আর্শিয়ান ভাই সেদিন খাম খুলে দেখে নি।নয়তো কি যে হতো আল্লাহ ভালো জানে।

#চলবে…..

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ]

আমার প্রেয়সী পর্ব-০১

0

#আমার_প্রেয়সী
#সূচনা_পর্ব
#জান্নাত_সুলতানা

গালে পরপর দু’টো থাপ্পড় পড়তেই গাল জ্বলে উঠলো আষাঢ়’র।ব্যাথার চোটে চোখ ভিজে উঠলো।থাপ্পড় কেনো মেরেছে বুঝতে পারলো না।কি দোষ তার?কেনো মারলো?তার সাথে কেনো মানুষ টা সব সময় এমন করে? আষাঢ়’র মাথায় আসে না।যখন তখন ধমক থাপ্পড় দু’চার টা ফ্রি-তে খেতে হয়। আশেপাশে তেমন লোকজন নেই।শুধু বলিষ্ঠ তাগড়া পুরুষ টার পেছনে চার পাঁচ জন ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। তাও বেশ অনেক টা দূরে। আর রাস্তায় যাতায়াতে কিছু মানুষ রয়েছে। তবে যে যার মতো কাজে ব্যস্ত।চারদিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে নিলো আষাঢ়। হাতের খামটা শক্ত করে ধরে ছিলো।কিন্তু সামনে রক্তচক্ষু নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষ টা সেটা টেনে নিলো।
আষাঢ় চোখ তুলে একবার তাকিয়ে আবার মাথা নুইয়ে নিলো।আর্শিয়ান খামটা টুকরো-টুকরো করে ছুঁড়ে ফেলে দিলো দূরে।
দাঁতে দাঁত পিষে বলে উঠলো,

-“এসব করার জন্য তোকে কলেজ পাঠানো হয়?
খবরদার যদি তোকে আরেকবার এসব করতে দেখেছি আমার থেকে বেশি খারাপ কেউ হবে না আষাঢ়।”

আষাঢ় তড়িৎ মাথা তুলে তাকালো।বলিষ্ঠ পুরুষ টার মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকালো।বুঝতে সময় লাগলো না থাপ্পড় মারার কারণ হাতের খামটা। কিন্তু খামটা তো ওর না।এটা ওর বান্ধবী নাদিয়ার।নাদিয়ার কথা মাথায় আসতেই মনে পড়লো নাদিয়া কোথায়?
এইমাত্র তো মেয়ে টা এখানে ছিল।ওই তো খামটা ধরতে বলে কোথায় উধাও হয়ে গেলো?
আষাঢ় আবারও চারপাশে চোখ বোলালো ওই তো দূরে দাঁড়িয়ে আছে নাদিয়া। একটা গাছের আড়ালে। ভীতিকর মুখে এদিকে তাকিয়ে আছে।যার অর্থ আষাঢ় যেন কিছু না বলে। আষাঢ় যেন চট করে মুখ দেখে মনের কথা পড়ে নিলো।কিছু বলার আগেই আর্শিয়ান এর গম্ভীর রাগী কণ্ঠ শোনা গেলো,

-“এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?
থাপ্পড় আরো কয়েকটা খাওয়ার ইচ্ছে আছে?”

আষাঢ় ভয়ে মুখে থমথম খেলো।পেছনে ফিরে বাড়ির উদ্দেশ্যে পা চালাতেই পেছন থেকে আর্শিয়ান জিগ্যেস করলো,

-“ছেলে টার নাম কি?”

আষাঢ় মনে মনে বেশ কিছু কটু বাক্য উচ্চারণ করলো আর্শিয়ান কে ঘিরে।কি মানুষ কিছু না জেনেশুনে শুধু একটা খাম দেখে দুই দুই টা থাপ্পড় মেরো দিলো।এখন আবার জিগ্যেস করছে ছেলে টার নাম কি?আষাঢ়’র রাগ হলো।তবে সেটা এই পুরুষ টার সামনে বহিঃপ্রকাশ করা কোনো দিন সম্ভব হবে না। তাই চট করে মিথ্যা কথা বলে দিলো,

-“সৈকত।”

-“তোদের ক্লাসের!
আরেকবার যে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো?”

আর্শিয়ান ভ্রু কুঁচকে জানতে চাইলো।আষাঢ় জবাবে।বলল,

-“হ্যাঁ।”

অতঃপর দ্রুত পা চালিয়ে চলে এলো।পেছনে হাতের আঙ্গুল মুঠোবন্দী করে দাঁড়িয়ে রইলো আর্শিয়ান।

—–

বাড়ি ফিরলো আষাঢ় সাড়ে তিন টা বাজে।লিভিং রুম তখন পুরো ফাঁকা।বিকেল হলেই পুরো লিভিং রুম জুড়ে মানুষ গিজগিজ করবে।যেন বাড়ি তো নয় চিরিয়াখানা।ওর দাদা ছিলে শব্দ তালুকদার। ওনার আর কোনো ভাইবোন ছিল না। কিন্তু ওনার ছেলেমেয়ে মোট ছয়জন। দুই মেয়ে একজনের নাম নাসিমা,তিনি বর্তমানে ছেলে মেয়ে নিয়ে বিদেশ রয়েছে। আরো একজন এর নাম আনোয়ারা তিনি ওদের বাড়ির পাশে বাড়ি করেছেন।আষাঢ় এর বাবা আলতাফ তালুকদার তিন নম্বর।ওনার ছেলেমেয়ে বলতে দুই মেয়ে। আয়াত আর আষাঢ়। আর বড় চাচা আকরাম তালুকদার।এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে মাহমুদ আর্শিয়ান তালুকদার এবার বিদেশ থেকে লেখাপড়া শেষ করে বছর ঘুরতে চললো দে-শে এসছে।পরিবারের বিজনেস দেখভাল এর সাথে সাথে ছেলেদের নিয়ে রাজনীতির একটা দলও গঠন করেছে।সেটার সহসভাপতি সে।গম্ভীর স্বভাবের মানুষ টাকে বাড়ির প্রতি টা ছোট সদস্য ভয় পায়।সাথে সম্মানও করে।সবার চোখের মনি বলা চলে।সবার সাথে কত সুন্দর করে কথা বলে।শুধু আষাঢ় কে দেখলেই ব্যাটা গিরগিটির ন্যায় রং পালটে নেয়। আর মেয়ে তাসফিয়া এবার অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। আয়াত আর তাসফিয়া একই ক্লাসে পড়ে। মেঝো চাচা তোফায়েল তালুকদার।ওনার তিন ছেলে তায়েফ, তায়ুশ জমজম।এবার তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে।আর বড় ছেলে তাসরিফ তালুকদার এবার অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সেই সাথে জবও করছে। আর ছোট কাকা নাসির তালুকদার।সবার বিয়ে হয়েছে শুধু তিনি এখনো বিয়ে করে নি।লেখাপড়া শেষ বর্তমানে জব করছে।অবশ্য মেয়ে দেখা হচ্ছে ওনার জন্য।আষাঢ় সবার কথা ভাবতে ভাবতে রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে দরজা বন্ধ করে বিছানায় শুইয়ে পড়লো। এই বাড়িটা বিশাল বড়ো।দোতলা বাড়িটার নিচতলায় ছয় টা রুম সহ ডাইনিং, লিভিং, রান্না ঘর।আর উপরে আটটা ঘর।বাড়িটা বড়ো অংকের আয়তনের একটা জমির উপর দাঁড়িয়ে আছে।
সবার জন্য আলাদা আলাদা রুম বরাদ্দ।তবে এই বাড়িতে সবচেয়ে বেশি সুন্দর হচ্ছে আর্শিয়ান নামক পুরুষ টার কক্ষ।এই মানুষ টা বেশ সৌখিন। নিজের রুমে কাউ কে প্রবেশ করতে দেয় না।শুধু মা চাচিদের ব্যতিত। আর কেউ গেলেও ধমকে-ধামকি দিয়ে বের করে দেয়। এই তো আষাঢ় সেদিন তায়ুশ কে খুঁজে পাচ্ছিল না।ভেবেছিল হয়তো আর্শিয়ান ভাইয়ের ঘরে হয়তো আছে। কারণ রাতে খাবার খাওয়ার আগে তায়ুশ তায়েফ মাঝেমধ্যে আর্শিয়ানের সাথে থাকে।কিন্তু সেদিন ছিল না। আর্শিয়ান নিজেও রুমে ছিল না। আষাঢ় যখন ওদের না পেয়ে ফিরে আসার জন্য উদ্যত হয় তক্ষুনি কোথা থেকে আর্শিয়ান চলে এলো।এক রামধমক দিয়ে বের করে দেয় আষাঢ় কে।এরপর আষাঢ় আর আজ অনেক দিন হয় ওই রুমের ছায়া ও মারায় না।
শরীর ক্লান্ত আর গালের ব্যাথা নিয়ে আষাঢ় কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে নিজেও বুঝতে পারে নি।এরমধ্যে বেশ কয়েকবার এসে ওর মা শিউলি বেগম খাবার খাওয়ার জন্য ডেকে গিয়েছে। আষাঢ় ঘুমঘুম কণ্ঠে কোনো রকম একবার জানালো।সে এখন খাবে না। পরে খাবে।সে নিজে হাতে খেয়ে নিবে।কাউ কে অপেক্ষা করতে বারণ করলো।
শিউলি বেগম চিন্তিত হলেন।বেশ কয়েকবার জিগ্যেস করলো শরীর ঠিক আছে কিনা। আষাঢ় বিরক্ত হলো।তবে মায়ের সাথে সে খারাপ ব্যবহার করলো না।কোনো রকম বুঝিয়ে-সুঝিয়ে যেতে বলে আবার ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো।রাত সাড়ে এগারো টা নাগাদ আষাঢ় ঘুম ভাঙ্গে। বাড়ি তখন শুনশান নীরবতা। এই বাড়িতে কিছু নিয়ম রয়েছে সকাল সাতটার আগে সবাই কে ঘুম থেকে উঠতে হবে।সকালে আর রাতের খাবার এক সাথে খেতে হবে। দুপুরে কাজের চাপে অফিস বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থাকে সুতরাং দুপুরে এক সাথে না হলেও রাতে খাবার এক সাথে খেতেই হবে।আর রাত দশটার মধ্যে সবার খাবার খাওয়া শেষ। তারপর আড্ডা দিয়ে রাত এগারোটার মধ্যে যে যার রুমে।আষাঢ় ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলো।রুমে লাইট অন করে নি।ওয়াশরুমের লাইট অন ছিল বিধায়। কিন্তু খাবার খাওয়ার জন্য নিচে যেতে হবে সেইজন্য রুমের লাইট অন করার জন্য উদ্যত হতেই দরজায় শব্দ হলো।আষাঢ় ভয় পেলো।এতো রাতে কে এসছে?ভীতিকর মন নিয়ে লাইট অন করে পা জোরা টেনে নিয়ে দরজার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলো,

-“কে?”

-“আমি।
আর্শিয়ান। দরজা খোল।”

গম্ভীর স্বর কিন্তু চাপা আওয়াজ।
আষাঢ়’র বিকেলের সেই থাপ্পড় এর কথা মনে পড়লো।দানবীয় হাতের দুই দুই টা থাপ্পড় খেয়ে গাল এখনো টনটন করছে।মুখ শক্ত করে নিলো।দরজা সে কিছুতেই খুলবে না।কিন্তু মন শক্ত হলো না।তামাটে বর্ণের এই পুরুষ টাকে একপলক দেখার জন্য মন কেমন সব সময় ছটফট করে।কতশত বার পুরো বাড়ি চক্কর কেটেও মানুষ টার সাক্ষাৎ মিলা বড়োই কষ্টসাধ্য।সেখানে মানুষ টা নিজ থেকে আজ ওর ঘরের দুয়ারে।একপলক না দেখলে কি করে হয়!বেশ ধীরেসুস্থে দরজার কপাটি খুলে আষাঢ়। আর্শিয়ান দাঁড়িয়ে দরজায়।গায়ে কালো একটা টি-শার্ট।কি দারুণ দেখতে মানুষ টা।একপলক দেখলে তৃষ্ণা মিটে না বারবার দেখতে মন চায়।বেহায়া চোখ জোড়া বারবার গিয়ে এই মানুষ টাতে আঁটকে যায়।আষাঢ় নিজে কে শাঁসালো।কিছুতেই আর তাকাবে না এই ব্লাক কফির দিকে।আষাঢ় আর্শিয়ান এর একটা নাম দিয়েছে। ব্লাক কফি।যাকে দেখতে সুন্দর হলেও খেতে একদম বিশ্রী।এই যে সামনে দাঁড়ানো পুরুষ টা কত সুন্দর দেখতে কিন্তু ব্লাক কফি যেমন খেতে তিতা ঠিক তেমন মানুষ টার কথা গুলো তিতা। চোখ ঘুরিয়ে মাথা নুইয়ে নিলো। এলো-মেলো চুল মুখে হাল্কা চিকচিক করতে থাকা পানি ডাগর ডাগর আঁখি জোড়ার উপর পানিতে ভেজা ঘন পাপড়ি।হঠাৎ আর্শিয়ান এর নজর এলো আষাঢ় এর বা গালে। গাল এখন লাল হয়ে আছে।থাপ্পড় গুলো বেশ জোরে দিয়েছে। রাগের মাথায় বুঝতে পারে নি।এখন নিজের বুকের ভেতর কেমন করছে।আর্শিয়ান নিজের দৃষ্টি ঘুরালো।ঠোঁট কামড়ে ধরে কিছু মনে করে বলে উঠলো,

-“খাবার কেনো খাস নি?
চল খাবার খাবি।”

কথা শেষ আর্শিয়ান হাঁটা ধরলো। কিন্তু আষাঢ় ডাগর ডাগর আঁখি জোড়া আরো কিছু টা ভাসিয়ে তাকিয়ে রইলো আর্শিয়ান এর দিকে।

-“আমি খাবার খাই নি, এটা কে বললো আপনাকে?”

আষাঢ় এর প্রশ্নে চকিত নজর ফিরিয়ে তাকালো আর্শিয়ান মেয়ে টার দিকে।গম্ভীর স্বরে জানালো,

-“মেঝো মা।”

#চলবে….

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

গুপ্ত প্রণয় পর্ব-০৮ এবং শেষ পর্ব

0

#গুপ্ত_প্রণয়
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রতা
#পর্বঃ০৮(অন্তিম পর্ব)

আলিফের সঙ্গে পুষ্পের বিয়েটা ঠিক করে ফেলেছেন পুষ্পের বাবা। পুষ্প বেশ অবাক হয়েছিল পাত্র হিসেবে আলিফকে দেখে। আলিফ বেশ খুশি তার ভালোবাসার মানুষটাকে দেখে। সে তার ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পাবে। পূর্ণতা পাবে তাদের ভালোবাসা। আর কি চাই।

—————————-

শুভ্রতাকে রাদ একটা পোড়া বাড়িতে নিয়ে এসেছে। শুভ্রতা ভয়ে কুকরে আছে। রাদ তো বলেছিলো তাকে ঘুরতে নিয়ে যাবে। ঘুরতে নিয়ে যাবে বলে এমন জায়গায় কেন নিয়ে এলো বুজতে পারছেনা সে।

বিকেলে আকাশের আলো থাকা সত্ত্বেও জায়গাটা অন্ধকারাচ্ছন্ন। ভয়ংকর জায়গাটা দেখে শুভ্রতা রাদের হাত খামছে ধরে। রাদ শুভ্রতার হাতে হাত রেখে ওকে শান্ত করলো।

শুভ্রতা আর রাদ ভিতরে যেতেই কিছু ছেলে এসে রাদের সামনে দাঁড়ালো। রাদ গম্ভীর কন্ঠে বলল
“ওদের নিয়ে এসো এখানে।”

ছেলেগুলো চলে গেল। শুভ্রতা চোখ ঘুড়িয়ে দেখছে শুধু। কিছুই বুঝতে পারছেনা না। কি হচ্ছে এখানে।

ছেলেগুলো আফজাল সাহেবকে টেনে নিয়ে এলো। শুভ্রতা অবাক হয়ে বলল
“বাবা, ওনাকে আপনারা এমন করে বেঁধে রেখেছেন কেন! রাদ ওদের ছেড়ে দিতে বলুন না বাবাকে।”

শুভ্রতার দু বাহু ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলল
“ওনাকে আমিই বেঁধে রেখেছি শুভি।”

রাদের কথা শুনে ছিটকে গেল শুভ্রতা। রাদ এগুলো কি বলছে। ওর বাবাকে…কিছু ভাবতে পারছেনা শুভ্রতা।

রাদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
“আমিই কে.এম। আমিই প্রতিরাতে তোমার কাছে যেতাম। আর তোমার বাবার আসল নাম আফজাল চৌধুরী। উনি তোমার মাকে শুধুমাত্র টাকার জন‍্য বিয়ে করেছে। উনি তোমার নানাকে খুন করে তোমার আম্মুকে বিয়ে করে সব সম্পত্তি নিজের দখলে নেয়। শুধু তাই নয় আমার পুরো পরিবারকে উনি খুন করেছেন শুধুমাত্র আমার বাবা ওনার অপরাধ জেনে গিয়েছিল বলে। উনি নারী ব‍্যবসার সঙ্গে জড়িত। আর আমি এমন মানুষকে খুঁজে বের করে তাদের শাস্তি দেই। তুমি কি মনে করো এর পরেও ওনাকে ছেড়ে দিবো।”

শুভ্রতা ফোঁপাচ্ছে। ভাঙা কন্ঠে বলে উঠলো
“আমি কিভাবে বিশ্বাস করবো আপনার কথায়!”

রাদ মুচকি হাসলো। সঙ্গে সঙ্গে একটা ছেলেকে ইশারায় সবকিছু নিয়ে আসতে বলল। ছেলেটি কিছু কাগজ নিয়ে এলো। যা দেখে শুভ্রতা ধপ করে মাটিতে বসে পড়লো।

কান্না করছে শুভ্রতা। তার বাবা এগুলো করেছে! ভাবতেও পারছেনা সে। আফজাল সাহেব মাথা নিচু করে আছেন।

রাদ শুভ্রতাকে মাটি থেকে তুলে বলল
“শক্ত হও শুভ্রতা। ভুলে যেও না তুমি এখন কে.এম এর বউ। তোমার ভেঙে পড়া মানায় না।”

শুভ্রতা লাল চোখ নিয়ে তাকায় রাদ দিকে। রাদ আলতো হাতে শুভ্রতার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে ওর হাতে একটা বন্দুক ধরিয়ে দিয়ে বলল
“তোমার হাতে আমি আজ বন্দুক তুলে দিলাম। তুমি কি করবে অন‍্যায়ের প্রতিবাদ করবে নাকি নিজের বাবা বলে ছেড়ে দিবে।”

শুভ্রতা একপলক তাকালো রাদের মুখের দিকে। রাদ স্বাভাবিকভাবেই তাকিয়ে আছে শুভ্রতার দিকে। শুভ্রতা চোখ বুজে পরপর কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বন্দুকটা শক্ত করে ধরে বলল
“কথায় আছে পাপ বাপকেও ছাড়েনা। আমি কিভাবে ওনাকে ছেড়ে দেই বলুন।”

আফজাল সাহেব করুণ দৃষ্টিতে শুভ্রতার দিকে তাকালো। রাদ আফজাল সাহেবের মুখটা খুলে দিতে বলল। আফজাল সাহেবের মুখ খুলে দিতেই উনি শুভ্রতাকে বললেন
“আমি তোর বাবা হই শুভি।”

শুভ্রতা কাঁদছে, তার চোখ ফেটে পানি আসছে।

“আপনি কীভাবে এমন কাজ করতে পারলেন, বাবা? আমি বিশ্বাস করতে পারছি না…”

শুভ্রতা ভেঙে পড়ছে। তার হাতে বন্দুক থাকা সত্ত্বেও সে দ্বিধান্বিত। নিজের বাবার মুখোমুখি হতে তার খুব কষ্ট হচ্ছে।

রাদ শান্তভাবে বলল
“শুভি, সব সত্য আজ তোমার সামনে। তুমি জানো কী করতে হবে।”

শুভ্রতা বন্দুকটি নিচু করে ফেলল। তার হৃদয়ে দ্বন্দ্ব চলতে থাকল—সে কীভাবে নিজের বাবাকে শাস্তি দেবে, অথচ জানে, বাবা যা করেছে তার জন্য কোনো ক্ষমা নেই। কিন্তু শেষমেশ, সে শক্ত হলো। নিজের সমস্ত সাহস সঞ্চয় করে, ধীরে ধীরে বলল
“পাপের ফল তাকে ভোগ করতেই হবে, বাবা। আর আমি কোনো অন্যায়কে ছাড় দিতে পারি না।”

রাদের দিকে একবার তাকিয়ে, সে বুঝল, তার ভালোবাসার মানুষটি তার পাশে আছে।

শুভ্রতা চোখ বুজে পরপর দুটো গুলি চালিয়ে দিলো। মুহূর্তেই মাটিতে শুয়ে পড়লেন আফজাল সাহেব। শুভ্রতা হাউমাউ করে কেঁদে দিলো। রাদ ওকে বুকে আগলে নিলো। ঠোঁটে তার তৃপ্তির হাসি। সে ভুল মানুষকে নির্বাচন করেনি। রাদ ইশারায় আফজাল সাহেবকে নিয়ে যেতে বলল।

শুভ্রতাকে কিছুটা শান্ত করে রাদ ওর দুই গালে হাত রেখে বলল
“অনেক ভালোবাসি তোমায় জান। শুধু বিশ্বাস রেখ আমার উপর আমি সব করতে পারবো তোমার জন্য।”

শুভ্রতা কান্নাভেজা চোখে রাদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো
“আমিও আপনাকে অনেক ভালোবাসি রাদ।”

রাদ মুচকি হেসে জড়িয়ে ধরলো শুভ্রতাকে।

———————–

আফজাল সাহেবের মৃত্যু সংবাদ পরিবারের কাছে আসে যে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। সংবাদপত্র এবং সংবাদমাধ্যমে এই তথ্য প্রচারিত হয়। পরিবার শোকাহত হলেও, তারা বিশ্বাস করে যে আফজাল সাহেব মানসিক চাপের কারণে আত্মহত্যা করেছেন।

রাদ ওনাদের শান্ত করার চেষ্টা করলেও শুভ্রতা নিশ্চুপ।

—————————

শুভ্রতা আর রাদ বেশ কিছুদিন ধরে একসঙ্গে থাকার পর সম্পর্কটা অনেক গভীর হয়ে গেছে। দুজনেই জীবনের কঠিন বাস্তবতা মোকাবিলা করেছে, এবং এই অভিজ্ঞতাগুলো তাদের আরও কাছাকাছি এনেছে।

একদিন সন্ধ্যায়, রাদ শুভ্রতাকে নিয়ে ছাদের উপরে বসে আছে। আকাশে লাল-সোনালি সূর্যাস্তের আলো ছড়িয়ে পড়েছে। শুভ্রতা হালকা শাড়ি পরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। রাদ ওর দিকে একবার তাকিয়ে হালকা করে মুচকি হেসে বলল
“এই আকাশটাও আমাদের মতো, শুভি। মাঝে মাঝে মেঘে ঢাকা পড়ে যায়, কিন্তু সূর্য সবসময় উঠে আসে।”

শুভ্রতা ওর কাঁধে মাথা রেখে মৃদু স্বরে বলল “হয়তো…কিন্তু কখনো কখনো সেই মেঘের ভারটা অনেক বেশি হয়ে যায়, রাদ।”

রাদ তার হাত ধরে বলল
“তুমি শুধু আমার হাতটা শক্ত করে ধরে রাখো। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।”

শুভ্রতা গভীরভাবে রাদের দিকে তাকালো। সেই মুহূর্তে সে বুঝল, রাদের প্রতি তার বিশ্বাস কতটা দৃঢ়। রাদ তাকে সবকিছুর পরও ভালোবেসে পাশে থেকেছে।

হঠাৎ রাদ একটু মজার ছলে বলল,
“তোমার মতো এত জেদি মেয়ে আগে কখনো দেখিনি!”

শুভ্রতা একটু হেসে বলল
“আর তুমি! তুমি তো ভয় দেখানোর মাস্টার!”

দুজনেই হেসে উঠলো। তাদের এই ছোট ছোট মুহূর্তগুলোতেই যেন জীবনের সবকিছু ধরা আছে।

পরিশেষে ভালো থাকুক ভালোবাসা। আর একটা কথা সবসময় মনে রাখা উচিত পাপ বাপকেও ছাড়ে না।

#সমাপ্ত

গুপ্ত প্রণয় পর্ব-০৭

0

#গুপ্ত_প্রণয়
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রতা
#পর্বঃ৭

শুভ্রতা ঘুমের মাঝেই রাদের একটা হাত শক্ত করে ধরে আছে। রাদ হাটু গেড়ে বিছানার পাশে বসলো। হাত সরালো না এই ভয়ে যে যদি শুভ্রতার ঘুম ভেঙে যায়। সে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো শুভ্রতার ঘুমন্ত মুখটার দিকে।

রাদ শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে থেকে মৃদু হাসলো। তার চোখে মমতা আর ভালোবাসা জমে আছে, যেন পৃথিবীর সবকিছুই এই মুহূর্তে থেমে গেছে। শুভ্রতার মুখের প্রতিটি ভাঁজ, নিঃশ্বাসের ওঠানামা, সবকিছু যেন রাদের জন্য এক অসীম প্রশান্তির উৎস হয়ে উঠেছে। শুভ্রতা তার হাত শক্ত করে ধরেই ঘুমিয়ে আছে, যেন রাদকে সে কোনোভাবেই হারাতে চায় না। রাদ শুভ্রতার কপালে আলতো করে একটা চুমু খেলো, কোনো শব্দ ছাড়াই, যেন সেই ভালোবাসা তার ঘুমে স্বপ্ন হয়ে মিশে যায়।

রাদ আরও কিছুক্ষণ শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে রইলো। তার মনে হলো, এই মুহূর্তগুলোই তাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে, তারা হয়তো সারাজীবন একসঙ্গে এই রকম শান্তি আর ভালোবাসায় কাটাতে পারবে। রাদের হৃদয়ে অনুভূতির ঢেউ আছড়ে পড়লো, সে ভাবলো, শুভ্রতা যেন তার জীবনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছে। তার এই মৃদু ঘুম আর মায়াভরা মুখ যেন রাদের জীবনের সব ঝড় থামিয়ে দিয়েছে।রাদ নিঃশব্দে বলল
“তুমি আমার জীবন, শুভ্রতা।”

রাদ শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে সে টেরই পায়নি।

———————-

হিমেল বসে আসে পুষ্পের বাবা সামনে। হিমেল নিজেকে ধাতস্ত করে বলল
“আঙ্কেল ছেলে হিসেবে আপনার কাছে আরজি জানাবো।”

পু‍ষ্পের বাবা হেসে বললেন
“কেন নয় বাবা দ্বিধা ছাড়া বলো।”

হিমেল সামনে থাকা টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে পুরো পানিটা খেয়ে বলল
“আঙ্কেল আমি আপনার মেয়েকে চিনি অনেক আগে থেকে। আমরা দুই ভাই। আমার বড় ভাই আমার চেয়ে একবছরের চেয়ে বড়। ছোটবেলায় ‍বাবা মারা যাওয়ার পর ভাইয়াই আমাদের পরিবারটাকে দেখেছে। ভাইয়ার কাছে আমি পুষ্পের ছবি দেখেছি। আমার ভাইয়া পুষ্পকে ভালোবাসে। আপনি যদি চান আমরা কি পারিনা এই সম্পর্কটিকে বিয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।”

পুষ্পের বাবা কিছুসময় ভাবলেন। তারপর ‍বললেন
“তোমার ভাইয়াকে আমার অফিসে এসে দেখা করতে বলো হিমেল।”

হিমেল মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। ফোন দিলো আলিফকে।

কিছুসময় পর তাড়াহুড়া করে আলিফ চলে আসে। আলিফকে দেখেই ভ্রুকুচকে আসে পুষ্পের বাবার। পরক্ষণেই তিনি হেসে বললেন
“আরে আলিফ তুমি!”

আলিফও বেশ অবাক হয়। পুষ্পের বাবা হাসি মুখে বললেন
“আমার ভাইয়ের পিএ আলিফ। ভাইয়ের কাছ থেকে আমি তোমার অনেক প্রশংসা শুনেছি। আমি তো আগে থেকেই আলিফকে পছন্দ করে রেখেছি।”

আলিফ শুধু গোল গোল চোখে একবার হিমেলের দিকে তাকাচ্ছে। আর একবার পুষ্পের বাবার দিকে। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছেনা সে।

অন‍্যদিকে হিমেল মিটমিটিয়ে হাসছে।

আলিফ প্রশ্নবিদ্ধ কন্ঠে বলল
“স‍্যার আপনি কি বলছেন এগুলো! আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।”

হিমেল মুচকি হেসে আলিফের দিকে এগিয়ে গিয়ে ধীর কন্ঠে বলল
“উনি পুষ্পের বাবা। আমি তোর আর ভাবি বিয়ের কথা আঙ্কেলকে বলেছি।”

আলিফ থমকালো। পুষ্পের বাবাও বুঝতে পারলেন হিমেল তার ভাইকে কিছু না জানিয়েই কাজটা করেছে।

——————–

সকালের তীব্র আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেল শুভ্রতা। চোখ পিটপিট করে তাকাতেই রাদের ঘুমন্ত মুখ ভেসে উঠলো চোখের সামনে। শুভ্রতা ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো। রাদ নিচে বসে ঘুমাচ্ছে কেন! মাথায় ঢুকলোনা বিষয়টা। শুভ্রতা সরু চোখে তাকিয়ে রইলো রাদের দিকে। রাদের ঘুমন্ত মুখটা বেশ ভালো লাগছে শুভ্রতার কাছে। রাদের অবাধ‍্য চুলগুলো পড়ে আছে তার কপাল জুড়ে এলোমেলো ভাবে। ফর্সা মুখের খোঁচা খোঁচা দাড়িগুলো বেশ আর্কষনীয়। রাদের ঠোঁটের দিকে চোখ পড়তেই ভ্রুকুচকে এলো শুভ্রতার। সে নিজ মনে বিরবিরালো
“বেডায় বিড়ি খায় নাকি!”

মুহুর্তেই নাকমুখ কুচকে এলো শুভ্রতার। রাদের কাধে ধাক্কা দিয়ে ওকে ডাকতে লাগল। রাদ একরাশ বিরক্তি নিয়ে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে উঠলো
“সকাল সকাল কেন বিরক্ত করছো! ঘুমাও তো শান্তিমতো। সারারাত ঠিকমতো ঘুম হয়নি এমনি তোমার জন‍্য।”

শুভ্রতা অবাক হলো। তার জন‍্য মানে। সে আবার কি করলো! শুভ্রতা কপাল কুচকে আবার বলে উঠলো
“ওই মিয়া আমি আবার কি করলাম! উঠুন বলছি।”

রাদ হুট করে চোখ বুজেই বেডে উঠে শুভ্রতাকে হেচকা টান দিয়ে নিজের বুকে মিশিয়ে ঠাস করে শুয়ে পড়লো।

শুভ্রতার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল। যেন এখনি কোটর থেকে বের হয়ে আসবে। শুভ্রতা ব‍্যপারটা বুঝতে পেরে ছাড়া পাওয়ার জন‍্য ছটফট করতে লাগল। রাদ এবার শুভ্রতাকে ছেড়ে উঠে বসে বিরক্তি নিয়ে বলল
“কি হয়েছে এমন করছো কেন!”

শুভ্রতা কোমরে হাত রেখে চোখ ছোট ছোট করে রাদ দিকে তাকিয়ে বলল
“আপনি সিগারেট খান!”

রাদ ভ্রুযুগল কুচকে বলল
“এ‍টা শোনার জন‍্য ডাকছিলে। খাই তো কি হয়েছে!”

“যেতেহু আপনি আমার স্বামী সেহেতু আপনি আর সিগারেট খেতে পারবেন না। বলে দিলাম।”

“তোমার স্বামী হওয়ার সাথে সিগারেট খাওয়ার সম্পর্ক কি?”

শুভ্রতা মুখ বাঁকিয়ে বলল
“আমি পছন্দ করিনা। তাই খাবেন না বুঝলেন।”

রাদ কি যেন ভেবে বাঁকা হেসে শুভ্রতার কাছে খানিকটা এগিয়ে গিয়ে বলল
“যদি তোমার বারণ না শুনি আমি তখন।”

রাদকে এমন কাছে আসতে দেখে শুভ্রতা পিছাতে পিছাতে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল
“এমন করে আগাচ্ছেন কেন!”

রাদ দুষ্টু হেসে আরো এগিয়ে আসতে লাগল। শুভ্রতার গলা শুকিয়ে গেল রাদ এমন এগোতে দেখে।

পিছাতে পিছাতে বেডের সঙ্গে লেগে গেল শুভ্রতা। চোখমুখ খিচে বন্ধ করে ফেলল সে।

শুভ্রতা চোখ বন্ধ করে থাকতেই রাদ ধীরে ধীরে তার মুখের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল
“কেন ভয় পাচ্ছো? তোমার কিছু করবো না।”

শুভ্রতা তবুও চোখ খোলেনি, যেন সে কিছুটা নার্ভাস। রাদ হালকা হাসি দিয়ে আবার বলল
“তুমি যদি আমার ভালোবাসার কাছে হার মানতে চাও, তবে এখনই চোখ খুলে বলো, তোমার যা ইচ্ছে আমি সেটাই করবো।”

শুভ্রতার গলার স্বর ঠান্ডা হয়ে আসলো, সে ধীরে ধীরে চোখ খুললো। রাদকে এত কাছে দেখে তার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল। রাদের চোখে তার জন‍্য অনুভূতিতে ভরপুর। শুভ্রতা ধীর কন্ঠে বলল
“আপনিই প্রতি রাতে আমার কাছে আসতেন তাইনা।”

রাদ নেশালো কন্ঠে বলে উঠলো
“যদি বলি হ‍্যাঁ!”

“আপনার মাঝে এতো রহস্য কেন রাদ!”

রাদ মুচকি হেসে বলল
“তুমি তো এই রহস্যময় মানুষটিকেই ভালোবেসে ফেলেছো জান।”

শুভ্রতা কেঁপে উঠলো রাদের কথায়। সে কি সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছে এই রহস্যময় মানুষটাকে! উত্তর খুঁজে পায় না শুভ্রতা।

রাদ মুচকি হেসে শুভ্রতার কপালে এক দীর্ঘ গভীর চুমু খেয়ে সরে এলো। শুভ্রতা চোখ ‍বুজেই রইলো।

রাদ মাথা বালিশে ঠেকিয়ে চোখ বুজে বলল
“প্লীজ আমাকে ঘুমাতে দেও জান। তুমি নিচে যাও আমেনা আন্টি আছে। উনি নাস্তা দিবেনি তোমায়।”

শুভ্রতা চোখ খুলে রাদের বন্ধ চোখ জোড়ার দিকে তাকালো।

শুভ্রতা কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো রাদের দিকে। তার মনের গভীরে কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলো, কিন্তু রাদ তাকে নিজের মাঝে জড়িয়ে রেখেছে এমনভাবে যে, সে আর কিছু বলার সাহস পাচ্ছিল না। শুভ্রতার মনে হলো, হয়তো এই রহস্যময় মানুষটাকেই সে ভালোবেসে ফেলেছে, এমনকি রাদের সিগারেট খাওয়া কিংবা তার ধীর অথচ দুষ্টু হাসি—সবকিছুই তাকে প্রতিনিয়ত আরও কাছে টানছে।

শুভ্রতা ধীরে ধীরে উঠে নিচে গেলো। আমেনা আন্টি তাকে দেখে হাসিমুখে নাস্তার দিকে ইঙ্গিত করলেন। কিন্তু শুভ্রতার মন যেন অন্য কোথাও ছিল। নাস্তা করতে করতে সে ভাবছিল, রাদের প্রতি তার এই টান কেন এত গভীর হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সে যেন কোনো উত্তর খুঁজে পেল না।

অন‍্যদিকে, রাদ ঘুমিয়ে রইলো। তবে তার মুখে এক মৃদু হাসি লেগে ছিল, যেন শুভ্রতার অজান্তেই সে সবকিছু জানে—তার সব ভয়, অনিশ্চয়তা, এবং ভালোবাসার সবকিছু।

#চলবে

গুপ্ত প্রণয় পর্ব-০৬

0

#গুপ্ত_প্রণয়
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রতা
#পর্বঃ৬

শুভ্রতা নিজের ঘাড়ে উষ্ণ নোনাজলের অনুভব হতেই সে ঘাবড়ে গেল। লোকটা কি তাহলে কান্না করছে। শুভ্রতা কিছু বলতে নিবে তার আগেই রাদ শুভ্রতাকে ছেড়ে চলে যেতে যেতে বলল
“ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।”

শুভ্রতা রাদকে পিছনে ডাকতে গিয়েও থেমে গেল। রাদ হনহনিয়ে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে।

শুভ্রতা হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, চোখের সামনে রাদের দ্রুত সরে যাওয়া দেখে মনটা বিষণ্ণ হয়ে ওঠে। সে বুঝতে পারছিল না রাদ কেন হঠাৎ এমন আচরণ করল। রাদের সেই উষ্ণ নোনাজল এখনও যেন তার ঘাড়ে অনুভূত হচ্ছে, মনে করিয়ে দিচ্ছে যে রাদের ভিতরে কিছু একটা ভেঙে যাচ্ছে।

শুভ্রতা ধীরে ধীরে বিছানায় বসে, কিন্তু মনটা শান্ত হতে চায় না।
“রাদ কি এমন কোনো কষ্ট লুকিয়ে রেখেছে, যা সে আমাকে জানাতে পারছে না?”

এগুলোই ভাবছিলো শুভ্রতা। হুট করেই শুভ্রতা আবারও উঠে দাঁড়ালো। বাসা থেকে যে জামা কাপড় এনেছিলো সেগুলো কোথায় তা শুভ্রতার জানা নেই। কিন্তু যে গরম পড়েছে এমন কাপড় পড়ে তো ঘুমানো সম্ভব না। আর শাড়ি তো সে সামলাতেও পারবেনা। শুভ্রতা কিছুক্ষণ ভেবে কার্বাট খুললো। সেখান থেকে রাদের একটা কালো রঙের টির্শাট আর একটা কালো রঙের টাউজার নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল সে।

শুভ্রতা ওয়াশরুমে ঢুকে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। তার প্রতিচ্ছবির দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ নিজেকে নিরীক্ষণ করলো। রাদের আচরণ তাকে ভাবিয়ে তুলেছে। মনের ভেতর অস্থিরতা তাকে ছেড়ে যেতে চাইছে না। রাদের চোখে সেই গভীর বিষাদ যেন ধরা পড়েছে, যা শুভ্রতার কাছে সম্পূর্ণ অজানা ছিল। কেন রাদ কাঁদছিলো? কেন সে কথা না বলেই চলে গেল?

পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে শান্ত হওয়ার চেষ্টা করলো শুভ্রতা। কিন্তু প্রতিবারই রাদের সেই শেষ কথাগুলো তার মনে ফিরে আসছে— “ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।” এটা কি শুধুই ক্লান্তির কথা, নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে গভীর কোনো বেদনা?

রাদের কালো টিশার্ট আর টাউজার পরে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে শুভ্রতা বিছানায় শুয়ে পড়লো। তবুও মনটা শান্ত হলো না। সে বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করতে লাগল। বাড়ির কথাও খুব মনে পড়ছে তার। রুহিকে মিস করছে সে। প্রতিদিন রাতে তো সে ওর সঙ্গে ঘুমায়। কে জানে কি করছে মেয়েটা!

শুভ্রতা গভীর শ্বাস নিয়ে বিছানায় শুয়ে রুহির কথা ভাবতে লাগল। এই বাড়িতে সবকিছুই এত অচেনা, এত নিঃসঙ্গ লাগছে। রুহির হাসিমাখা মুখ, তার চঞ্চলতা সবকিছুই যেন শুভ্রতার মনে এক ধরনের শূন্যতা তৈরি করছে।

এগুলো ভাবতে ভাবতে শুভ্রতা কখন যে ঘুমিয়ে গেল বুঝতেই পারলো না।

————————-

একটা চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে আফজাল সাহেব। কে.এম সামনেই বসে আছে পায়ের উপর পা তুলে। কে.এম বিরক্তি নিয়ে পাশের ছেলেগুলোরে বলল
“পানি ঢেলে দে ওর উপর জ্ঞান ফিরা।”

কে.এম এর কথামতো একটা ছেলে ঠান্ডা বরফ পানি আফজাল সাহেবের মাথায় ঢেলে দিলো।

ঠান্ডা পানির ঝাপটায় আফজাল সাহেব হঠাৎই জেগে উঠলেন। চোখের পাতা কাঁপছে, শরীরটা ঠান্ডায় কাঁপছে। সামনে কে.এম কে দেখে তার ভয় যেন আরও বেড়ে গেল। হাত-পা বাঁধা অবস্থায় চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায় নিজেকে অসহায় মনে হলো। কে.এম ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়িয়ে তার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো, মুখে এক ধরনের ঠান্ডা, নিষ্ঠুর হাসি। যা তার মাক্সের উপর দিয়ে বোঝা গেলা না।

“আপনার মতো বড় মানুষরা এভাবে পড়ে থাকলে, দেখতেও বেশ কষ্ট লাগে, তাই না?”

কে.এম এক হাত পকেটে ঢুকিয়ে আফজাল সাহেবের মুখের কাছে এসে দাঁড়াল। কে.এম আবারও বলে উঠলো
“আপনার মত লোকেরা নিজেদের ভুল বুঝতে চাইবে না, যতক্ষণ না তাদের ভুলগুলো চোখের সামনে এনে দেয়া হয়।”

আফজাল সাহেব কাঁপা গলায় বললেন, “তুমি যা চাইছ, সেটা তো আমি দিতে পারব না। আমি কিছু জানি না…”

কে.এম মৃদু হেসে বলল
“জানেন, সবই জানেন। শুধু সময়ের অপেক্ষা, আর আমি বিশ্বাস করি আপনি ঠিকই বলে দেবেন।”

তারপর কে.এম হাতের ইশারায় ছেলেটাকে কিছু বলল, যা দেখে আফজাল সাহেবের মনে হলো তার সামনে আরও ভয়ঙ্কর কিছু অপেক্ষা করছে।

“তোমার সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে, আফজাল সাহেব। ভাবো, এই ভুলটা ঠিক কত বড় হতে পারে।”

কে.এম নিঃশব্দে বলল।

সঙ্গে সঙ্গে নীলাকে চোখে কালো কাপড় বাঁধা। হাত বাঁধা অবস্থায় কিছু ছেলে টেনে নিয়ে এলো। আফজাল সাহেব থমকালেন। কে.এম আবারও হেসে বলল
“তা আপনার ব‍্যবসার কি অবস্থা! নারী পাচার কেমন চলছে! নিজের মেয়েকেও তো পাচার করতে যাচ্ছিলেন।”

আফজাল সাহেব চোখ তুলে তাকালো কে.এম এর দিকে। কে.এম একটা ছেলেকে কাছে ডেকে বলল
“ওদের একসঙ্গে আটকে রাখ যে রুমে কোনো দরজা জানালা নেই। আমি আজকে যাই। সময় হলে যোগাযোগ করবো।”

বলেই কে.এম চলে গেল সেখান থেকে।

——————–

রাদ অপেক্ষা করছিলো শুভ্রতা কখন ঘুমিয়ে যাবে। শুভ্রতার সাড়াশব্দ না পেয়ে রাদ রুমে প্রবেশ করলো।

শুভ্রতা ঘুমিয়ে আছে বিছানায়। রাদের টিশার্ট আর টাউজার পড়ে। টাউজার খানিকটা উপরে উঠে গেছে। যার ফলে পায়ের অনেকটা অংশই দৃশ‍্যমান। টিশার্ট উঠে গেছে একটু। যাতে ওর পেটের কিছুটা অংশও দৃশ্যমান। রাদ ঢোক গিললো। নিজেকে একটু স্বাভাবিক করে রাদ এগিয়ে গেল শুভ্রতার দিকে। একটা কম্বল নিয়ে ঢেকে দিলো শুভ্রতাকে। এসির পাওয়ারটা খানিকটা বাড়িয়ে দিলো।

রাদ শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলো। তার ভেতরে এক ধরনের অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করছিল, কিন্তু সেটা কী সেটা বুঝতে পারছিল না। শুভ্রতার ঘুমন্ত মুখটা দেখেই তার মনটা হালকা হলো।

সে আস্তে আস্তে ফিরে গেল দরজার দিকে।রাদ দরজার কাছে গিয়েও থমকে দাঁড়ালো। শুভ্রতার দিকে একবার ফিরে তাকিয়ে দেখলো সে শান্তভাবে ঘুমাচ্ছে। রাদ ভেতরে ভেতরে অনুভব করল, শুভ্রতাকে এইভাবে রেখে সে যেতে পারবে না।

আস্তে করে দরজা বন্ধ করে রুমের কোণে রাখা চেয়ারে বসে পড়লো। সে ভাবতে লাগল, শুভ্রতা তার জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রাদের ভেতরে চলতে থাকা কষ্ট, ভেঙে পড়ার কারণ সবটাই যেন শুভ্রতার উপস্থিতিতে হালকা হয়ে যাচ্ছে।

রাদ চেয়ারে বসে থেকেও শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে রইল। তার মনে হচ্ছিল, যতক্ষণ সে এখানে থাকবে, ততক্ষণই তার মন শান্ত থাকবে।

রাদ চেয়ারে বসে শুভ্রতার নিঃশ্বাসের তাল দেখে বুঝল, সে গভীর ঘুমে রয়েছে। রুমে এসির ঠান্ডা হাওয়া বইছে, কিন্তু রাদের মনে অস্থিরতা। শুভ্রতার প্রতি তার ভালোবাসা এত গভীর যে, তার পাশে না থেকে রাদ কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছে না।

চেয়ারে বসে থাকতে থাকতে রাদের মনে ভেসে উঠতে লাগল তাদের প্রথম দেখা, প্রথম কথোপকথন। শুভ্রতার সরলতা আর মিষ্টি স্বভাব সবসময় তাকে মুগ্ধ করেছে। কিন্তু আজকের রাতে রাদ বুঝতে পারল, শুভ্রতাকে সে শুধু ভালোবাসে না—সে তাকে ছাড়া বাঁচতে পারবে না।

রাত গভীর হচ্ছে, কিন্তু রাদের চোখে ঘুম নেই। সে ধীরে ধীরে চেয়ারের পিঠে হেলান দিয়ে একটু আরাম করার চেষ্টা করল। শুভ্রতার শ্বাস-প্রশ্বাসের মৃদু শব্দ তাকে কিছুটা শান্ত করে তুলল।

হঠাৎ শুভ্রতা ঘুমের মধ্যে একটু নড়ল। রাদ দ্রুত উঠে গিয়ে বিছানার পাশে দাঁড়াল। শুভ্রতা কিছু বললো না, কিন্তু তার মুখের অভিব্যক্তি দেখে মনে হচ্ছিল যেন কোনো দুঃস্বপ্ন দেখছে। রাদ ধীরে ধীরে তার কপালের ওপর হাত রাখল, যেন তাকে আশ্বাস দিতে চাইছে— “আমি আছি, সব ঠিক আছে।”

শুভ্রতা কিছুক্ষণের মধ্যে শান্ত হয়ে গেল। রাদ তখনও তার পাশে দাঁড়িয়ে, ভেতরে ভেতরে এক অদ্ভুত শান্তি অনুভব করছে।

রাদ কিছুক্ষণ শুভ্রতার পাশে দাঁড়িয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। শুভ্রতা ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে, আর রাদ তার পাশে থাকার আশ্বাসে নিজেও কিছুটা স্বস্তি অনুভব করছিল।

কিন্তু রাদের মন এখনো শান্ত নয়। সে ভাবছিল, শুভ্রতার প্রতি তার এই অদ্ভুত টান, ভালোবাসার গভীরতা কেন আজ এত তীব্র হয়ে উঠছে। রাদ ধীরে ধীরে বিছানার পাশে বসে পড়ল, যেন শুভ্রতার কাছাকাছি থাকতে পারে।

সে আস্তে করে শুভ্রতার হাতটা ধরল, তার নিজের অজান্তেই। শুভ্রতার নরম হাতের স্পর্শে রাদের ভেতরটা আরও আবেগে ভরে উঠল। তার মনে হচ্ছিল, এই মুহূর্তে যদি সবকিছু থেমে যায়, শুধু তাদের দুজনের এই ঘনিষ্ঠতা থেকেই যায়, তাহলেই রাদের জীবনের সবকিছু পূর্ণ হবে।

শুভ্রতা হঠাৎ একটু নড়ল, যেন ঘুমের মধ্যে রাদের উপস্থিতি টের পেয়েছে। রাদ হাত সরিয়ে নিতে গিয়েও থেমে গেল। শুভ্রতার হাত ধরা অবস্থাতেই সে তার পাশে থাকলো, কোনো শব্দ না করে। শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে রাদ ধীরে ধীরে ফিসফিস করে বলল
“তোমার জন্যই বাঁচি আমি।”

শুভ্রতা চোখ না খুলেই একটা মৃদু হাসি দিল, যেন ঘুমের মধ্যেই রাদের মনের কথাটা শুনতে পেয়েছে।

#চলবে

গুপ্ত প্রণয় পর্ব-০৫

0

#গুপ্ত_প্রণয়
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রতা
#পর্বঃ৫

মিস নীলা অফিস থেকে ফিরে নিজের রুমে প্রবেশ করে বেশ অবাক হলেন। তার বেডের মাঝে বসে আসে এক যুবক। যার সারা শরীর কালো রঙের আবৃত। শুধু চোখ জোড়া দেখা যাচ্ছে। ধূসর রঙের চোখে এক অদ্ভুত দৃষ্টির অধিকারী ছেলেটাকে দেখে মিস নীলার বুক কেঁপে উঠলো। চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে ছেলেটি হাসছে। মিস নীলা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো
“কে আপনি? আর এখানে কি করছেন!”

যুবকটি একরাশ হেসে বলল
“আরে এতটুকুতেই এতো কাঁপা কাঁপা করলে চলবে মিস নীলা অফ থুক্কু মিসেস আফজাল।”

নীলা আতকে উঠলো। এই বিষয়ে তো কারো জানার কথা না। তাহলে এই ছেলেটা কিভাবে জানলো। নীলার ভয় যেন আরও বেড়ে গেল। বার কয়েক তপ্ত নিশ্বাস ছেড়ে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল
“কি চাই আপনার!”

ছেলেটি হাসলো। গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো
“যদি বলি তোমার প্রিয় স্বামীর জান!”

নীলার বুক কেঁপে উঠলো। অস্থির কন্ঠে বলল
“কি বলছেন এসব আজেবাজে কথা! মাথা ঠিক আছে আপনার!”

ছেলেটি বেড থেকে নেমে নীলার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। নীলার দিকে একটু ঝুঁকে এক অদ্ভুত গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো
“কে.এম আমি। এরপর নিশ্চয়ই আর কিছু বলতে হবেনা আশা করছি।”

ছেলেটির সেই অদ্ভুত গম্ভীর কন্ঠে বলা কথাগুলো নীলার কর্ণকূহরে পৌঁছাতেই নীলা ঘামতে লাগল। সে আবারও ধীর কন্ঠে বলল
“কি চাই আপনার!”

কে.এম মুচকি হাসলো যা তার চোখ দেখেই বোঝা গেল। কে.এম নীলার থেকে খানিকটা দূরে সরে গিয়ে বলল
“আফজালের সকল তথ্য আমার চাই। এই মুহূর্তেই বলবে তুমি।”

নীলা নিজের জামা শক্ত মুঠি করে মাথা নাড়িয়ে বলল
“না আমি তা কখনোই পারবোনা। প্লীজ আপনি চলে যান। আমি অনুরোধ করছি আপনাকে চলে যান এখান থেকে।”

কে.এম এবার রক্ত চক্ষু নিয়ে তাকালো নীলার দিকে। নীলার জানের পানি যেন শুকিয়ে গেল সেই তাকানিতে।

নীলা একে একে সব বলছে আর কে.এম চুপচাপ শুনছে। কিন্তু আফজাল সাহেবের আরেকটা নাম শুনে বেশ থমকালো সে। তবুও চুপ করে রইলো।

নীলার থেকে সব কথা শুনে কে.এম বেড়িয়ে এলো সেখান থেকে।

——————–

শুভ্রতা আর রুহি রুমে বসে ছিলো। তখনই রুমে শুভ্রতার ইসমাইল সাহেব আসলেন। রুহি খানিকটা গুটিয়ে গেল। শুভ্রতা মাথা নিচু করে বলল
“বাবা কিছু বলবে!”

ইসমাইল সাহেব সবসময়ের মতো গম্ভীর কন্ঠে বললেন
“কাল বিকেলে রেডি হয়ে থেকো। আমার বিজনেস পার্টনার আসবে। কালই উনি বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ করতে চান।”

শুভ্রতা অবাক হয়ে বলল
“মানে”

“মানে কিছুই না। আমি কথা দিয়েছি ওনার সঙ্গে আমি তোমার বিয়ে দিবো। আর তুমি তো জানোই আমি কেমন!”

বলেই উনি রুম থেকে চলে গেলেন পিছনে রয়ে গেল শুভ্রতার হতভম্ব হয়ে যাওয়া মুখটা।

এই নিয়ে অভ্র আর ইসমাইল সাহেবের মাঝে বেশ তর্কাতর্কি ও হলো। শুভ্রতা হতভম্ব হয়ে বসে আছে শুধু। সে জানে ইসমাইল সাহেব কেমন। উনি যা বলেছেন তা করবেনই। স‍বাই থম মেরে বসে আছে। অভ্র রাগ করে দরজা লাগিয়ে বসে আছে।

কথামতো পরেরদিন ইসমাইল সাহেবের কথামতো পাত্রপক্ষ দেখতে এলো। শুভ্রতা কাঠপুতুলের মতো বসে আছে। সবাই বাধ‍্য হয়েই বসার রুমে বসেছে।

পাত্র কম বয়সি অভ্রের চেয়ে ছোট। ছেলেটাকে দেখে অভ্রের খারাপ লাগল না। বেশ নম্র ভদ্র ছেলেটা। ছেলেটা বাবা মা বোন রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে অনেক আগেই। শুনে শুভ্রতার একটু মায়া হলো। সে চোখ তুলে তাকাতেই ভড়কে গেল। এতো সেই ধাক্কা দেওয়া ছেলেটা। ছেলেটা মুচকি হাসি দিয়ে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।

ছেলেটা শুভ্রতার সঙ্গে আলাদা কথা বলতে চাইলে শুভ্রতাকে ওর বাবা ছেলেটিকে নিয়ে নিজের রুমে যেতে বলে।

শুভ্রতা গটগট পায়ে নিয়ে রুমে প্রবেশ করে। ছেলেটাও পিছু পিছু যায় ওর। শুভ্রতা বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। ছেলেটা ওর পাশে দাঁড়িয়ে বলল
“আমার নাম রাদ মাহাতাব। আমি তোমার ব‍্যাপারে সবটাই জানি। বুঝতে পারছি তোমার বয়সটা অনেকটাই কম। কিন্তু করার কিছুই নেই। আজকেই আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। তুমি কি বলো!”

শুভ্রতা ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলো
“নিজের ইচ্ছাগুলো চাপিয়ে দিয়ে সিদ্ধান্ত শুনতে চাওয়া বোকামি বলে আমি মনে করি।”

রাদ এক রহস্যময় হাসলো। ধীর কন্ঠে বলল
“কাজি সাহেব আসবেন একটু পর। বিয়ে করে তোমাকে আমার বাড়িতে নিয়ে যাবো। তুমি ভালো থাকবে।”

শুভ্রতা কিছু বলল না। রাদ বারান্দা থেকে বের হতে নিবে তখনই দেখে রুহি মিনিকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কপাল কুচকে তার দিকেই তাকিয়ে আছে সে।

রাদ মুচকি হেসে হাটু গেড়ে রুহির সামনে বসে পকেট থেকে একটা চকলেট বের করে রুহির দিকে এগিয়ে দিলো। রুহির কপাল যেন আরো কুচকে এলো। সে কাঠকাঠ গলায় বলল
“আমি অপরিচিত কারো কাছ থেকে কিছু নেই না।”

রাদ রুহির গাল টেনে বলল
“আমি অপরিচিত কেউ না। আমি তোমার একজন কাছের মানুষের মনের মানুষ হতে এসেছি।”

রাদের জটিল কথা রুহি বুঝতে না পেরে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো রাদের দিকে। রাদ এবার চকলেটটা রুহির হাতে গুজে দিয়ে মুচকি হেসে চলে গেল।

রাদ যেতেই রুহি শুভ্রতার কাছে। শুভ্রতা চুপ করে বাহিরে তাকিয়ে ছিলো। রুহি শুভ্রতা আঁচল ধরে বলল
“ফুপি এই আঙ্কেলটা কে!”

শুভ্রতা নিজের মনেই বলল
“হবু বর”

রুহির কানে যেতেই রুহি মুচকি হেসে বলল
“ফুপি তোমারও কি লালটুকটুকে বর হবে। যার লালটুকটুকে বউ তুমি হবে।”

রাদ রুহির কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলো। সে চলে যেতে নিয়ে শুভ্রতাকে চকলেট দেওয়ার জন‍্য ফিরে এসেছিলো। রুহির কথা শুনে তার হাসি বের হয়ে গেছে।

শুভ্রতা আর রুহি দুইজনই কপাল কুচকে তাকালো ওর দিকে। রাদ হাসি চেপে গিয়ে কোনোমতে চকলেটটা শুভ্রতাকে দিয়ে চলে গেল। শুভ্রতা কপাল কুচকে তাকিয়ে রইলো রাদের যাওয়ার দিকে। চোখ নামিয়ে চকলেটের দিকে চোখ ফেরাতেই অজান্তেই একটা হাসি ফুটে উঠলো শুভ্রতার ঠোঁটে।

—————–

ফুলে সজ্জিত বিছানায় লাল টুকটুকে বউ সেজে বসে আছে শুভ্রতা। তার বিয়ে হয়ে গেছে রাদের সঙ্গে। এই কথাটা যেন এখনো বিশ্বাস হচ্ছেনা তার কাছে। বাড়িতে কেউ নেই রাদ ছাড়া। ভয়ও করছে তার।

খট করে দরজায় শব্দ হতেই কেঁপে উঠলো শুভ্রতা। রাদ এসেছে রুমে। শুভ্রতা গুটিসুটি মেরে বসে রইলো। রাদ ধীর পায়ে এগিয়ে এলো বেডে কাছে। আস্তে করে শুভ্রতার ঘোমটা তুলে বলল
“মাশাল্লাহ”

রাদের ধীর কন্ঠে বলা কথায় শুভ্রতা আরো কুকরে গেল। রাদ মুচকি হাসলো হাসলো। শুভ্রতা ভাঙা ভাঙা গলায় বলল
“আমি আপনাকে একটা কথা বলতে চাই!”

বলেই শুভ্রতা রাদের মুখপানে তাকালো। রাদ চুপ করে আছে। শুভ্রতা আবারও মাথা নামিয়ে বলে উঠলো
“আপনার আগেও আমাকে একজন…,”

শুভ্রতাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে রাদ শুভ্রতাকে হেচকা টান দিয়ে নিজের কাছে টেনে এনে ওর ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে দিলো।

শুভ্রতা থমকে গেল। রাদ যে হুট করে এমন কাজ করবে সে কল্পণাও করেনি সে। কিন্তু পরক্ষণেই তার মনে হলো এই স্পর্শ তার চেনা। খুব চেনা। শুভ্রতা আরেক দফা থমকালো। তাহলে কি রাদই প্রতিরাতে আসা সেই ছেলে। শুভ্রতা সেটা জানার জন‍্য রাদকে ধাক্কাতে লাগল। কিন্তু রাদ তো তার প্রিয়তমা ঠোঁটে মত্ত।

বেশকিছুক্ষণ পর রাদ শুভ্রতাকে ছেড়ে দিলো। দুইজনই হাঁপাচ্ছে। শুভ্রতা কটমট দৃষ্টি রাদের দিকে তাকালো। রাদ বাঁকা হাসলো।

শুভ্রতা ভ্রুকুচকে রাদের দিকে তাকিয়ে সন্দিহান কন্ঠে বলল
“আপনি প্রতিরাতে আমার রুমে আসতে চুপিচুপি তাই না।”

রাদ তাকিয়ে আছে শুভ্রতার দিকে। রাদকে কিছু বলতে না দেখে শুভ্রতা অস্থির হয়ে পড়লো। রাদে একটু কাছে গিয়ে আঙুল উঁচুিয়ে বলল
“ভালো হবে না কিন্তু বলে দিলাম। কিছু বলছেন না কেন?”

রাদ হুট করে শুভ্রতার কোমর পেঁচিয়ে ধরে। শুভ্রতা কেঁপে উঠে রাদের স্পর্শে। রাদ শুভ্রতা ঘাড়ে কপাল ঠেকায়। রাদের তপ্ত শ্বাস শুভ্রতার গায়ে বাড়ি খাচ্ছে। শুভ্রতা যেন একদম পাথর হয়ে গেছে। সে নড়াচড়া করতে ভুলে গেছে। রাদ এমন করছে কেন বুঝে পাচ্ছে না শুভ্রতা। মাথা ভনভন করে ঘুরছে তার।

#চলবে

গুপ্ত প্রণয় পর্ব-০৪

0

#গুপ্ত_প্রণয়
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রতা
#পর্বঃ৪

শুভ্রতা আকাশ দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছে খেয়াল নেই তার। ঘুমের মাঝেই ঠোঁট কারো আলতো স্পর্শে কেঁপে উঠলো সে। কিন্তু গভীর ঘুমের জন‍্য চোখ খুলতে বেগ পেতে হচ্ছে তার। আস্তে আস্তে স্পর্শ যেন গাঢ় হচ্ছে। হুট করে শুভ্রতার চোখ জোড়া খুলে গেল। ঠোঁটে চিনচিন ব‍্যথা করছে। এমন মনে হচ্ছে যে কেউ কামড়ে ধরে রেখেছিলো। কিন্তু এখানে তো কেউ নেই।

মিনিকে তার জায়গামতো রেখে শুভ্রতা আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আতকে উঠলো সে। ঠোঁটের কোণায় কাল শিটে জখম হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কিভাবে। মিনি কি কিছু করলো। কিন্তু না সে তো ঘুমিয়ে আছে। শুভ্রতার মাথায় কিছুই ঢুকছেনা। তবে কি কেউ এসেছিলো। কিন্তু কিভাবে! কেমনে কি !

শুভ্রতা খানিকক্ষণ ভাবলো। কিন্তু কিছু খুঁজে পেল না। শুভ্রতার আর সে রাতে ঘুমাতে পারলো না সেই টেনশনে।

ভোরে তার চোখ লেগে এলো। আজ আর কলেজ গেল না সে। বেশ বেলা করেই ঘুমালো। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলে গেল সকালের নাস্তা খেতে।

শুভ্রতা খাচ্ছিলো। এমন সময় রুমা বেগম ভ্রুকুচকে বলে উঠলেন
“কিরে তোর ঠোঁটে কি হয়েছে! এমন ফুলে আছে কেন? আর আজকে কলেজে গেলিনা কেন!”

শুভ্রতা ভ‍ড়কে গেল খানিকটা। নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল
“আসলে আম্মু খাটের সঙ্গে উষ্টা খেয়ে পড়ে গেছিলাম তখনই ঠোঁটে ব‍্যাথা পেয়েছি। আর শরীরটা ভালো লাগছিলো না তাই আর কলেজ গেলাম না। আবার সামনে পরীক্ষা কিছু পড়া জমে গেছে সেগুলো কভার করতে হবে।”

রুমা বেগম তপ্ত শ্বাস ফেলে বললেন
“ওও তাই বল। তাহলে নাস্তা খেয়ে পড়তে বস। বিকালে রুহিরা আসবে বলল।”

রুহির কথা শুনতেই মুচকি হাসলো শুভ্রতা। মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে খাবার টুকু শেষ করলো সে।

শুভ্রতা রুমে গিয়ে পুনরায় আয়নার সামনে দাঁড়ালো। তখনই তার ফোনের মেসেজ টুনটা বেজে উঠলো। শুভ্রতা ভ্রুকুচকে ফোনটা হাতে নিয়ে মেসেজ দেখে থমকে গেল। মেসেজ ছিলো ঠিক এমন
“ছোট মাথায় এতো চাপ নিও না। পরে সমস্যা হবে কিন্তু। আর সাবধান আমার চোখ তোমার উপর পড়েছে। তুমি এখন শুধু আমার। কোনো ছেলের আশেপাশে যেন তোমাকে না দেখি। তাহলে ওখানেই তোমার খেল খতম করে দিবো বলে দিলাম। আল্লাহ হাফেজ জান।”

মেসেজে লেখার পর দুটো চুমুর ইমুজি দেখে মাথা ঘুরছে শুভ্রতার। এমন হুমকি কে দিলো তাকে। রাতে তাহলে একটা ছেলে তাকে..না না শুভ্রতা আর ভাবতে পারছেনা। ফোনের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টালো সে। কান্না পাচ্ছে তার। কত শখ ছিলো তার জামাই ছাড়া কারো সংস্পর্শে সে যাবে না। শুভ্রতার সব শখে পানি ঢেলে দিলো এই কালা রাতের হুমকি ম‍্যান।

শুভ্রতা ঠোঁট উল্টে পুষ্পকে কল করলো। পুষ্প কল ধরে ভাঙা গলায় বলল
“হুম শুভি বল।”

শুভ্রতার কপাল কুচকে এলো পুষ্পের এমন গলা শুনে। শুভ্রতা তার কথা বাদ দিয়ে খানিকটা চিন্তিত কন্ঠে বলল
“তোর কি হয়েছে রে! গলা‍টা এমন শোনাচ্ছে কেন! সব ঠিক আছে তো!”

পুষ্প একটা তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল
“শুভি আম্মু কাল এক্সিডেন্ট করেছে। কাল কলেজ থেকে আসার পথে এক আন্টি বলে। তখন আব্বুকে কল করি। তারপর খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে যাই। একটা ভাইয়া আম্মুকে হাসপাতালে ঠিক সময় নিয়ে এসেছিলো। তাছাড়া…”

বলেই ফুপিয়ে উঠলো পুষ্প। শুভ্রতার মনটা খারাপ হয়ে গেল। জিঙ্গাসু কন্ঠে বলল
“আন্টি এখন কেমন আছেন? আর তুই এখন কোথায়!”

পুষ্প একটু দম নিয়ে ধীরে ধীরে বলল
“আম্মু এখন আগের থেকে অনেকটাই ভালো আছে। বাবা ওখানে আছে। আমি থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু থাকতে দেইনি বাসায় দিয়ে গেছে।”

“ওও আমি কি যাবো তোর কাছে!”

“না থাক আসতে হবেনা আমি সামলে নিতে পারবো।”

তখনই শুভ্রতার থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে রুমা বেগম ধমকে বলে উঠলেন
“আমাদের আগে জানাবেনা পাগলি মেয়ে। আমি সবটাই শুনেছি। আমি দুপুরের রান্না করে শুভ্রতাকে দিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছি। ভাইকে খাইয়ে দিও। আর ভাবিকে তোমার টেনশন করতে না করো। আমি বিকালে দেখা করতে যাবোনি।”

“না আন্টি এতো কষ্ট করতে হবেনা।”

“কোনো না শুনবোনা আমি। আমি যা বলেছি তাই শুনবে। নেও এখন তোমার বান্ধবীর সঙ্গে কথা বলো।”

বলেই ফোনটা শুভ্রতা হাতে দিয়ে উনি চলে গেলেন। শুভ্রতা কানে নিয়ে বলল
“আচ্ছা তাহলে থাক দেখা হচ্ছে।”

“হুম”

পুষ্প কল কাটতেই আবারও তার ফোন বাজতে লাগল। পুষ্প অপরিচিত নাম্বার দেখে কপাল কুচকে রিসিভ করে কানে ধরে সালাম দিলো। কিন্তু অপরপাশ থেকে কারো কথা না শুনে বিরক্তিতে চোখমুখ কুচকে এলো পুষ্পের।

পুষ্প কয়েকবার “হ্যালো” বলে অপেক্ষা করলো, কিন্তু ফোনের অপরপাশ থেকে কোনো সাড়া শব্দ পেল না। ধীরে ধীরে তার বিরক্তি বাড়তে থাকল। ফোনটি কেটে দেয়ার জন্য বাটনে চাপ দিতে যাচ্ছিল, তখনই হালকা শ্বাসের শব্দ শুনতে পেল। সে কিছুটা চিন্তিত কন্ঠে আবার বলল, “হ্যালো? কে বলছেন?”

কোনো উত্তর না পেয়ে পুষ্প ধীরে ধীরে অস্বস্তি অনুভব করতে লাগল। কে হতে পারে? এমন সময় হঠাৎ করে ফোনের লাইনটি কেটে গেল। পুষ্প ফোনটা হাতে ধরে একটু সময় চুপ করে রইল।

আলিফ কল কেটে পরপর কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সে সবটাই জানতে পেরেছে। কিন্তু পুষ্পকে কি বলবে তা খুঁজে পাচ্ছিলো না সে। আলিফ একটা ঘুষি বসিয়ে দিলো সামনের দেয়ালে। সে পাগলের মতো ভালোবাসে পুষ্পকে। আর মেয়েটা বুঝতেই চায় না। আলিফ কিছু একটা করতেই হবে। পুষ্পকে তার চাই মানে চাই।

———————–

রাদ একটা অন্ধকার রুমে একা বসে আছে একটা ছবি নিয়ে। ছবিতে একটা লোক একটা মহিলা আর সঙ্গে দুটো ছেলেমেয়ে। রাদ রুমের মেঝেতে পা ছড়িয়ে বসে আছে ছবিটা বুকে জড়িয়ে। চোখ গুলো রক্ত লাল হয়ে আছে তার।

ছেলেদের নাকি কাঁদতে নেই। তাই বলে কি তাদের কান্না অপরাধ। ম‍োটেও না ছেলেরাও কান্না করে। যে কান্নায় থাকেনা কোনো ছলনা। অধিক কষ্ট সহ‍্য করতে না পেরে ছেলেরা কাঁদে।

রাদ ছবিটা আরও শক্ত করে নিজের বুকে জড়িয়ে চোখ বুজলো। চোখের কাণিশ বেয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় নোনাজল গাল বেয়ে নামতে লাগল। যা ভিজিয়ে দিতে লাগল রাদের স্নিগ্ধ গাল ও গালে থাকা খোঁচা খোঁচা দাড়িগুলোকে। রাদ বিরবিরিয়ে বলতে লাগল
“এমনটা তো না হলেও পারতো আমার সঙ্গে। কেন একা ছেড়ে চলে গেলে আমাকে। নিঃসঙ্গতা যে আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে প্রতিটাদিন প্রতিটাক্ষণ।”

নিরব পরিবেশে রাদের সেই কথাগুলো প্রতিধ্বনিতে রূপান্তরিত হচ্ছে বারংবার। তার অসহায়ত্ত্বের কথা হয় তো বন্ধ থাকবে এই চার দেয়ালে মাঝে। কেউ জানবেনা সেই অসহায়ত্ত্ব, নিঃসঙ্গতার গল্প।

—————————–

কেটে গেছে বেশকিছুদিন.., শুভ্রতার সঙ্গে প্রায় রাতেই কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে থাকে। তার মনে হয় কেউ রাতে এসে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। আলতো হাতে স্পর্শ করে তার গাল। চুমু দেয় কপালে। ওইদিনের পর ঠোঁটে কিছু করেনি সে। কিন্তু শুভ্রতা যখন চোখ খুলে তখন আর কাউকেই দেখতে পায়না সে। এই চিন্তায় পাগল প্রায় সে। প্রতিদিন কোনো না কোনো হুমকি আসে তার কাছে। পুষ্পের বেশ ধকল গেল কয়েকটা দিন। ওকেই কিছু বলতে পারছেনা। শুভ্রতা যেন ক্রমেই অস্থির হয়ে পড়ছে এসব ভাবনায়।

সে সব ভাবনা এক সাইডে রেখে শুভ্রতা কলেজে যাওয়ার জন‍্য রওনা হলো। রাস্তায় হুট করেই কারো সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল শুভ্রতা। শুভ্রতা বিরক্তিতে চোখমুখ কুচকে ফেলল। চেঁচিয়ে বলে উঠলো
“কেরে খাম্বা মার্কা আমারে ফেলে দিলি। কত জোরে লাগল মাগো।”

বলেই চোখ তুলে উপরে তাকাতেই শুভ্রতার চোখ আটকে যায় ধাক্কা খাওয়া সেই অপরিচিত ছেলেটির দিকে। ছেলেটি কপাল কুচকে তাকিয়ে আছে তার দিকেই। ছেলেটি একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলল
“এতো ঢং তোমরা মেয়েরা কিভাবে করতে পারো বলো তো। উঠে দাঁড়াও ঢং বাদ দিয়ে।”

শুভ্রতা ঝট করে উঁঠে দাঁড়ালো। এক আঙুল উঁচিয়ে বলে উঠলো
“এই যে মিস্টার একে তো আপনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছেন। আর অন‍্যদিকে আপনি নিজে ফুটানি দেখিয়ে আবার মেয়েদের ঢং নিয়ে কথা বলেন। সাহস তো কম না আপনার।”

ছেলেটা এক আঙুল দিয়ে শুভ্রতার আঙুল নামিয়ে দিয়ে বলল
“পিচ্চি মানুষের বেশি ফটরফটর করা ভালো না। তর্ক না করে যেখানে যাচ্ছিলে সেখানে যাও। আর চোখ কান খুলে রাস্তায় চলাফেরা করো কেমন। তাছাড়া আমার মতো ছেলে না হলে এতক্ষণে মারামারি লেগে যেতো।”

শুভ্রতা ভ্রুকুচকে কিছু বলতে নিবে তার আগেই ছেলেটা ওর পাশ কাটিয়ে চলে গেল। শুভ্রতা অবাক চোখে খালি তাকিয়ে রইলো ছেলেটার যাওয়ার দিকে। রাগে সে ফুসতে থাকলো। একে তো তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে তারপর তাকে কথা শুনিয়ে চলে গেল। ছেলেটার গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে শুভ্রতা এগোতে লাগল।

#চলবে

গুপ্ত প্রণয় পর্ব-০৩

0

#গুপ্ত_প্রণয়
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রতা
#পর্বঃ৩

পুষ্প চোখ গোল গোল করে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলল
“শুভি কি বলছিস তুই এগুলো!”

শুভ্রতা পুষ্পকে পাত্তা না দিয়ে একটা রিক্সা ডেকে তাতে উঠে পরলো। শুভ্রতা মুচকি হেসে আলিফকে বলল
“অল দা বেস্ট ভাইয়া।”

আলিফও মুচকি হেসে বিদায় দিলো শুভ্রতাকে।

অন‍্যদিকে পুষ্প শুধু অবাক চোখে ওদের কান্ড দেখলো। শুভ্রতার উপর বেশ অভিমান জমলো তার। সে কিভাবে পারলো তাকে এমন করে ছেড়ে যেতে।

আলিফ পুষ্পের দিকে তাকিয়ে বলল
“আইসক্রিম খাবে?”

পুষ্প রিনরিনে কন্ঠে বলল
“না আমি বাসায় যাবো।”

আলিফ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
“পাশেই বাইক রেখেছি। আসো তোমাকে বাসায় রেখে আসি।”

“না আমি একাই যেতে পারবো।”

“দেখ পুষ্প আমি তোমার কোনো কথা শুনতে চাচ্ছি না। আমি যা বলছি তাই শুনবে তুমি।”

পুষ্প এবার আলিফের দিকে তাকিয়ে বলল
“অধিকার খাটাচ্ছেন!”

“তুমি যদি মনে করো তাহলে তাই।”

“কিসের অধিকার বলতে পারেন! আপনি প্রোপজাল দিয়েছেন। আমি কি রাজি হয়েছি? না আমি রাজি হইনি তাহলে এমন করার মানে কি?”

আলিফ লাল চোখে তাকালো পুষ্পের দিকে। পুষ্পের হাত ধরে নিয়ে যেতে যেতে বলল
“বেশি কথা বলার সাহস আমি তোমাকে দেইনি।”

পুষ্প ঝাড়া দিয়ে নিজের হাত আলিফের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল
“না আপনি আমি স্বামী। না আপনি আমার বয়ফ্রেন্ড। আপনার কথা শোনা প্রশ্নই উঠে না।”

বলেই একটা রিক্সা ডেকে তাতে উঠে পড়লো পুষ্প।

আলিফ শুধু চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে পুষ্পের যাওয়ার দিকে।

———————–

রাদ বসে আছে হাসপাতালের একটি ব্রেঞ্চে। চোখ স্থির তার মেঝেতে। হাসপাতাল তার বেশ অপছন্দের একটা জায়গা। মনে যে ছোটবেলার ভয় এখনো রয়ে গিয়েছে। কখন না জানি খারাপ খবর ভেসে আসে। সে যে সহ‍্য করতে পারেনা খারাপ খবরগুলো। পরিস্থিতি তাকে পাথর করে দিলেও মন তো তারও আছে।

রাদের ভাবনার মাঝেই একটা নার্স ছুটে এলো রাদের সামনে। রাদ চোখ তুলে তাকাতেই নার্সটি বলে উঠলো
“রক্ত লাগবে”

রাদ ফ‍্যালফ‍্যাল দৃষ্টিতে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বলল
“আমি আন্টিটাকে চিনি না। রাস্তায় এক্সিডেন্ট করেছিলেন তাই নিয়ে এসেছি। রক্তের গ্রুপ জানিনা।”

নার্সটি চট করেই বলল
“এ পজেটিভ”

রাদ ধীর কন্ঠে বলল
“আচ্ছা আমি ব‍্যবস্থা করছি রক্তের।”

নার্সটি চলে গেল। রাদ দেড়ি না করে ওর বন্ধু হিমেলকে কল দিয়ে রক্তের কথা বলল। হিমেলও রাজি হয়ে গেল।

রাদ একটু সস্থি পেলো হিমেলের রাজি হওয়াতে। রাদ ফোন রেখে চোখ বুজে সিটে হেলান দিয়ে বসে রইলো।

খানিকবাদেই হিমেল এলো। হিমেল আসতেই রাদ আজকের ঘটনা খুলে বলল।

আজ সকালে যখন রাদ অফিসের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে রওনা হয়েছিলো তখনই রাস্তায় একটা মহিলার এক্সিডেন্ট হয়। মহিলার মাথা ফেঁটে রক্ত ঝড়ছিলো। সেখান থেকেই রাদ মহিলাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে।

হিমেলও রক্ত দেওয়া শেষে রাদের সঙ্গে অপেক্ষা করলো মহিলাটার জ্ঞান ফেরার।

ডাক্তার বের হয়ে বললেন
“ওনার জ্ঞান ফিরতে সময় লাগবে।”

রাদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হিমেলকে বলল
“তোর কি কোনো কাজ আছে হিমেল!”

হিমেল খানিকটা ভেবে বলল
“না রে আমার তেমন কাজ নেই। আর তুই তো জানিসই আমি বেকার।”

রাদ ধীর কন্ঠে বলল
“তাহলে তুই কি পারবি এই দিকটা দেখে রাখতে! আমার অফিস যেতে হবে। কাজ আছে আমার।”

হিমেল মুচকি হেসে বলল
“যা আমি আছি এখানে।”

রাদও মুচকি হেসে প্রস্থান করলো সেখান থেকে।

হিমেল একটা তপ্ত নিশ্বাস ছেড়ে বসে পরলো ব্রেঞ্চে।

তখনই একটা কলেজ ড্রেস পড়া একটা মেয়ে ছুটে এলো হাসপাতালে। পিছু পিছু একটা আধ বয়স্ক লোকও আছেন। ওনাদের এমন অস্থিরতা দেখে কপাল কুচকে এলো হিমেলের। হিমেল এগিয়ে গেল লোকটার দিকে। বিনয়ের সূরে বলল
“আঙ্কেল কি হয়েছে!”

লোকটা অস্থির কন্ঠে বলে উঠলেন
“আমার স্ত্রী এক্সিডেন্ট করেছে বাসার সামনের রাস্তায়। ওকেই খুঁজছি আমি।”

হিমেল কি যেন ভেবে বলল
“আপনার বাসাটা কোথায়!”

লোকটা বাসার ঠিকানা শুনতেই হিমেল বুঝতে পারলো রাদ যেই মহিলাটাকে নিয়ে এসেছে সেই মহিলা এই লোকটারই বউ। হিমেল বলতেই দৌড়ে গেল লোকটা। লোকটার পিছু পিছু মেয়েটাও গেল।

হিমেল তাকিয়ে রইলো সেদিকে। হিমেলের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে মেয়েটা ওই লোকটারই মেয়ে। হিমেলও পিছু পিছু যেতে লাগল।

লোকটির কাছে গিয়ে হিমেল বিনয়ের সঙ্গে বলল
“আঙ্কেল আমি তাহলে যাই। কোনো দরকার হলে বলতে দ্বিধা করবেন না একদম।”

লোকটা হিমেলের দুহাত ধরে বললেন
“ধন‍্যবাদ বাবা তুমি আমার স্ত্রীকে বাঁচিয়েইছো। কিভাবে যে তোমার ঋণ শোধ করবো আমি জানিনা বাবা।”

“না না আঙ্কেল আমি তেমন কিছুই করি জাস্ট রাদের কথায় রক্ত দিতে এসেছি। আমার বন্ধু রাদই আন্টিকে হাসপাতালে এনেছে।”

লোকটা তার অফিসের কার্ড দিয়ে বললেন
“বাবা তুমি তোমার বন্ধুকে নিয়ে একদিন আমার অফিসে এসে দেখা করো। কিছু খেয়েছো!”

“জি আঙ্কেল খেয়েছি। তাহলে আজ আমি যাই। ভালো থাকবেন।”

“তুমিও ভালো থেকো বাবা।”

————————–

আজও রাত দুইটায় কে.এম একই রকম ভাবে নিজের আস্তানায় এলো।

নিজের চেয়ার পায়ের উপর পা তুলে বসে টেবিলের উপরে থাকা পেপারম‍েট ঘুড়াতে ঘুড়াতে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো
“এজি গ্রুপের মিস্টার আফজাল সাহেবের কোনো খবর পেয়েছো!”

সামনে থাকা ছেলেগুলো একজন আরেকজনের দিকে তাকাতাকি করতে লাগল। আবার কে.এম হুংকার দিয়ে বলে উঠলো
“কি হলো একটা প্রশ্ন করেছি তোমাদের! একজন আরেকজনের দিকে তাকাতাকি করতে বলিনি।”

ছেলেগুলোর মধ্যে একটা ছেলে বলে উঠলো
“স‍্যার আফজাল সাহেব অনেক চালাক। আমরা অনেক চেষ্টা করার পরেও তার কোনো খবর বের করতে পারিনি।”

মুহূর্তেই কে.এম এর শান্ত চোখদ্বয় রক্তবর্ণ ধারণ করলো। চেঁচিয়ে বলে উঠলো
“কি করো কি তোমরা! সামান্য একটা লোকের সম্পর্কে খোঁজ লাগাতে তোমাদের এত সময় লাগে। জানো না আমার সময়ের কাজ সময়ে না করলে মাথা গরম হয়ে যায়।”

ছেলেগুলো ভয়ে গুটিসুটি মেরে রইলো। কে.এম পরপর কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
“আফজাল সাহেবের পিএ মিস.নীলাকে হাত করো। সব খবর সহজেই পেয়ে যাবে।”

“কিন্তু স‍্যার সে যদি রাজি না হয়।”

কে.এম ছেলেটার কথা এক বিকট শব্দে হাসলো। যা নিস্তব্ধ পরিবেশে ঝংকার তুলল চরমভাবে। হাসি থামিয়ে সে বলল
“আমি দেখে নিচ্ছি ব‍্যাপারটা। তোমরা আফজাল সাহেবের পরিবারের দিকে নজর রাখো। আর আমি শুনেছি সে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নাম ব‍্যবহার করে। সব নাম আমার চাই।”

“ওকে স‍্যার”
.

বলেই ছেলেগুলো চলে গেল। কে.এম চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বুজলো। কি যেন ভেবে তার ঠোঁট রহস্যময় এক হাসি ফুটে উঠলো। বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো সে। মাথায় ঘুড়ছে বেশ কিছু প্লান। যেগুলো ফুলফিল না করলে তার শান্তি হবে না।

——————–

শুভ্রতা বারান্দার চেয়ারে বসে আছে মিনিকে কোলে নিয়ে। রুহির নানু অসুস্থ হয়ে পড়ায় রুহি দিয়া আর অভ্র রুহির নানু বাসায় গেছে।

শুভ্রতা মিনির গায়ে হাত বোলাতে বোলাতে আকাশ পানে চোখ রাখলো। আকাশে তারাগুলো মিটমিট করছে। ইদানিং বেশ গরম পড়েছে। আকাশে তারার ঝলকানি দেখেই বোঝা যাচ্ছে কালও কড়া রোদ উঠবে।

#চলবে

গুপ্ত প্রণয় পর্ব-০২

0

#গুপ্ত_প্রণয়
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রতা
#পর্বঃ০২

রুহিকে বুকে আকড়ে বারান্দায় ঘুমিয়ে গিয়েছে শুভ্রতা। রুহিও বিড়াল ছানার মতো গুটিসুটি মেরে শুভ্রতার কোলেই ঘুমিয়ে আছে।

অভ্র অফিস থেকে এসে শুভ্রতা আর রুহিকে খুঁজতে খুঁজতে বারান্দায় ওদের এভাবে দেখে মুচকি হাসলো সে। প‍কেট থেকে চকলেট বের করে টেবিলে রেখে শুভ্রতার কাছে এগিয়ে গিয়ে ধীরে ধীরে ওকে ডাকতে লাগল।

শুভ্রতা পিটপিট করে তাকাতেই অভ্র নরম কন্ঠে বলল
“বিছানায় গিয়ে ঘুমা।”

শুভ্রতা হা হু না করে চোখ বুজেই রুহিকে নিয়ে ধপ করে বেডে গিয়ে শুয়ে পড়লো। অভ্র মুচকি হেসে দুইজনের কপালেই আলতো করে চুমু খেয়ে রুমের লাইট অফ করে চলে গেল।

দিয়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আচড়াচ্ছিলো। অভ্রকে ক্লান্তিমাখা হাসতে দেখে দিয়া অভ্রের দিকে এগিয়ে গিয়ে ওড়না দিয়ে ওর গায়ের ঘাম মুছিয়ে দিতে দিতে বলল
“ফ্রেশ হয়ে আসো খাবার গরম করছি আমি।”

বলেই চলে যেতে নিবে তখনই অভ্র দিয়ার কোমর পেচিয়ে ধরে বলল
“আর একটু পর”

দিয়া মুচকি হেসে অভ্রের গলা জড়িয়ে বলল
“এই যে মিস্টার রাত কয়টা বাজে খেয়াল আছে!”

অভ্র দিয়ার কপালে চুলগুলো সরাতে সরাতে বলল
“তুমি শুধু আমার থেকে পালাই পালাই করো। এতক্ষণ বাদে আসলাম কোথায় আমার সঙ্গে থাকবে তা না এখানে ওখানে যাওয়ার জন‍্য ছটফট করো।”

দিয়ার বেশ হাসি পেলো অভ্রের এমন অভিমানী কথা শুনে। অভ্রের গাল টেনে দিয়া বলল
“ফ্রেশ হয়ে আসো। খেয়ে নেও। তারপর সারারাত তো তোমার সঙ্গেই থাকবো।”

অভ্র ভাব নিয়ে বলল
“যেতে পারি কিন্তু একটা সত্ত্বে।”

দিয়া কপাল কুচকে বলল
“কি সত্ত্ব শুনি তো একটু!”

অভ্র দুষ্টু হেসে বলল
“চুমু লাগবে আমার।”

দিয়া একটা তপ্ত শ্বাস ফেলে অভ্রের গালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। অভ্র অন‍্য গাল পেতে দিতেই দিয়া চোখ ছোট ছোট করে বলল
“আগে আমার কথা শুনতে হবে তারপর। এখন তুমি যদি আমার কথা না শুনো তাহলে আমি আজ রাতে কিন্তু শুভ্রতার রুমে গিয়ে ঘুমাবো।”

অভ্র রাগি দৃষ্টিতে দিয়ার দিকে তাকালো। দিয়া পাত্তাই দিলো না। অভ্র কিছু না বলে হনহন পায়ে ওয়াশরুমে গিয়ে শব্দ করে দরজা লাগিয়ে দিলো। দিয়া হেসে দিলো।

অভ্র মুখ ফুলিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখলো দিয়া খাবারের প্লেট নিয়ে বসে আছে। অভ্র বের হতেই দিয়া অভ্রকে টেনে সোফায় বসিয়ে খাইয়ে দিতে লাগল। অভ্র দুই লোকমা খেয়ে বলল
“তুমি খেয়েছো?”

দিয়া কিছু বলার আগেই অভ্র ওর হাত ধরে বসিয়ে দিয়ে প্লেট থেকে ভাত নিয়ে দিয়াকে খাইয়ে দিলো। দুইজন একসঙ্গে খেয়ে নিলো।

খাওয়া দাওয়া শেষে দিয়া প্লেট নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেল। অভ্র বেডে শুয়ে পরলো ধপ করে বেশ ক্লান্ত লাগছে তার। মাথাটাও ধরেছে বেশ।

দিয়া সবকিছু গুছিয়ে রুমে এসে লাইট অফ করে অভ্রের পাশে শুয়ে পড়লো। দিয়া শুতেই অভ্র ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো। দিয়াও মুচকি হেসে জড়িয়ে ধরলো অভ্র। দিয়া এক হাত উঁচিয়ে অভ্রের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। প্রশান্তিতে অভ্রের চোখ বুজে এলো। দিয়াও চোখ বুজলো।

——————-

রাদ বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে রাতের ঘুটঘুটে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে একমনে। রাতের আকাশে অসংখ্য তারা জ্বলছে মিটমিট করে। নিস্তব্ধ রাতে কিছুক্ষণ পরপর কুকুরের ডাক ছাড়া কিছুই শোনা যাচ্ছে না। রাদ পরপর কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের মনেই বলতে লাগল
“মানুষ বড়ই অদ্ভুত। অল্প কষ্টে কান্নাকাটি করে সমুদ্র বানায়। আবার অধিক কষ্টে পাথরের ন‍্যায় হয়ে যায়। যে পাথরকে যতই নরম করার চেষ্টা করা হয় সেই পাথর যেন আরো শক্ত হয়ে যায়। ব‍্যস্ত শহরে কেউ কারো না। সবাই সবাইকে নিয়ে ব‍্যস্ত। তবুও কোনো কিছুতে ব‍্যর্থ হলে কথা শোনানোর মানুষের অভাব হয়।”

রাদ কথাগুলো নিজ মনে বিরবিরিয়ে একটা তপ্ত নিশ্বাস ছেড়ে রুমে চলে এলো। ধপ করে বেডে শুয়ে পরলো। একটু বিশ্রাম প্রয়োজন তার। বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে খাওয়াতে সে ক্লান্ত। চোখ বুজতেই ঘুম এসে ভর করলো রাদের দু চোখ জুড়ে।

——————-

শুভ্রতা কলেজে যাওয়ার জন‍্য রেডি হচ্ছিলো। আর রুহি গাল ফুলিয়ে ড্রেসিংটেবিলের উপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে। শুভ্রতা সেদিকে তাকিয়ে কপাল কুচকে বলল
“কিরে রুহি এমন গাল ফুলিয়ে আছিস কেন!”

রুহি মন খারাপ করে বলল
“ফুপি আমাকে নিয়ে যাও না।”

শুভ্রতা হিজাব বাধা বাদ রেখে রুহির গালে হাত রেখে বলল
“তোর মন খারাপ হচ্ছে!”

রুহি ঠোঁট উল্টে বলল
“ফুপি তুমি কলেজে চলে গেল আমার একদম ভালো লাগে না। তোমাকে আমি অনেক মিস করি ফুপি।”

শুভ্রতা মুচকি হেসে রুহির কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল
“তুই মিনির সঙ্গে এতটা সময় খেল। দেখবি ভালো লাগবে। ততক্ষণে আমি চলে আসবো।”

“ঠিক তো।”

“হুম একদম ঠিক।”

রুহি মুচকি হেসে শুভ্রতার গালে একটা চুমু খেয়ে ড্রেসিংটেবিলের উপর থেকে লাফ দিয়ে নেমে বলল
“ফুপি তুমি কিন্তু সাবধানে কলেজ যাবে। আমি মিনির কাছে গেলাম।”

বলেই দৌড়ে রুম থেকে চলে গেল রুহি। শুভ্রতা রুহির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে রেডি হতে লাগল।

শুভ্রতা নাস্তা করে রওনা হলো কলেজের উদ্দেশ্যে। কলেজে পৌঁছনোর পরেই শুভ্রতা পুষ্পকে দেখে দৌড়ে ওর কাছে গেল। পুষ্পকে মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শুভ্রতা ভ্রুকুচকে বলল
“কিরে পুষ্প তোর মন খারাপ কেন কি হলো আবার!”

পুষ্প মিনমিনিয়ে বলল
“না কিছু হয় নি।”

শুভ্রতা চোখ ছোট ছোট করে পুষ্পকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে বলল
“ভালোই ভালোই বলবি নাকি আমি তোর খবর করবো!”

পুষ্প একটা তপ্ত নিশ্বাস ছেড়ে বলল
“কাল তো তুই কলেজ আসছিলি না।”

“হুম তো”

“কাল যখন আমি কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছিলাম তখন আলিফ ভাইয়া আমাকে…!”

শুভ্রতার চোখ গুলো বড় বড় হয়ে গেল। সে অবাক হয়ে বলল
“আলিফ ভাইয়া সে আবার কি করলো!”

পুষ্প মিনমিনিয়ে বলল
“আই লাভ ইউ বলেছে।”

শুভ্রতা কিছুক্ষণ তব্দা মেরে বসে ছিলো। পরক্ষণেই ফিক করে হেসে দিয়ে বলল
“তুই কি বললি?”

“আমি কিছু বলি নি।”

শুভ্রতা বিরক্তি নিয়ে বলল
“তুইও না। কোথায় তুই সিনেমাটিক ভাবে বলবি আমি ও তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আর তুই নাকি কিছুই বলিস নি।”

পুষ্প কিছু বলতে নিবে তার আগেই শুভ্রতা বলল
“তোর প‍েনপেনানি আর শুনবো না আমি। এখন ক্লাসে চল। পরে তোর ব‍্যবস্থা নিচ্ছি।”

বলেই শুভ্রতা ক্লাসের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। পুষ্প একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুভ্রতার কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর সঙ্গে ক্লাসে গেল।

ক্লাস শেষে পু‍ষ্প আর শুভ্রতা কলেজ থেকে বেড়িয়ে ফুচকার দোকানে বসে পড়লো। শুভ্রতা দোকানদার মামাকে বলল
“মামা একটা ঝাল দিয়ে ফুচকা দিন। আর একটা কম ঝাল দিয়ে।”

কিছুক্ষণ বাদেই ফুচকা চলে এলো ওদের সামনে। শুভ্রতা টপাটপ গিলতে লাগল। একদমে পুরো প্লেট সাবার করে দিলো শুভ্রতা। ঝালে চোখ মুখ জ্বলছে তার। পুষ্প ফুচকা খেয়ে বলল
“এতো ঝাল দিতে যাস কেন সবসময়। প্রতিদিনই এক অবস্থা হয় তোর। ঝালে চোখের জল নাকের জল একসঙ্গে করিস।”

শুভ্রতা টিস্যু দিয়ে ঠোঁট মুছতে মুছতে বলল
“ফুচকা ঝাল দিয়ে না খেলে ফুচকা খাওয়ার মজা আর কোথায়।”

পুষ্প একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কারণ সে জানে শুভ্রতার কথার সঙ্গে সে পারবেনা। শুভ্রতা দু প্লেট পেকিং করতে বলে পুষ্পকে বলল
“রিক্সা ধর আমি আসছি।”

শুভ্রতা ফুচকার পেকেট নিয়ে পিছু ঘুরতেই দেখলো পুষ্প গুটিসুটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে। সামনেই দাঁড়িয়ে আছে আলিফ।

শুভ্রতা মুচকি হেসে ওদের দিকে এগিয়ে গিয়ে আলিফকে উদ্দেশ্য করে বলল
“ভাইয়া কেমন আছেন?”

আলিফ মুচকি হেসে বলল
“এই তো ভালোই তুমি কেমন আছো?”

“আমিও ভালো আছি। তুমি তোমার বউকে নিয়ে থাকো।আমি বাসায় যাই তাহলে।”

#চলবে