Thursday, August 14, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 112



আমার প্রেয়সী পর্ব-১৫

0

#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_১৫
#জান্নাত_সুলতানা

-“আষাঢ় কোথায়?”

আর্শিয়ান এর শান্ত কণ্ঠ।তবে গম্ভীর স্বরে জানতে চাইলো।
কিন্তু কেউ কোনো রকম জবাব দিলো না। আর্শিয়ান এর রাগ এবার তরতর করে বেড়ে গেলো। অনেক কষ্টে সে নিজে কে এতো সময় ধরে কন্ট্রোল করে আসছে।কিন্তু এবার যেনো সহ্যের সীমা অতিক্রম করে গেলো।বাড়ি ফিরেছে সে বিয়ের আগে। এয়ারপোর্ট গিয়েছিল সাঈদ এর বাবা কে রিসিভ করতে। ফিরে এসে আষাঢ় কে চোখের দেখা দেখতে পায় নি সে।অপেক্ষা করেছে বিয়ে বাড়ি কোনো ঝামেলা চায় নি সে।দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো।বিয়ে পড়ানো হলো।মেহমান বিদায় নিলো।কিন্তু তার আষাঢ়’র দেখা পেলো না।
আর্শিয়ান এবার যেন অন্তরে জ্বলে উঠলো।চেচিয়ে উঠলো। উচ্চস্বরে আবার জিগ্যেস করলো,

-“আমার আষাঢ় মাস কোথায়?”

-“আর্শিয়ান?
তুমি ভুলে যাচ্ছো এখানে তোমার গুরুজনেরা উপস্থিত।”

আকরাম তালুকদার বললো।
আর্শিয়ান তোয়াক্কা করে না।বরং রাগ হচ্ছে। তবে নিজে কে যথাসম্ভব স্বাভাবিক করলো।আজ কিছু দিন ধরে মন টা বড্ড অস্থির অস্থির করছিলো।এখন যেন সেটা দিগুণ হলো।
কোনো দিকে না তাকিয়ে উপরে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো আর্শিয়ান।
পেছন পেছন কচ্ছপের গতিতে তায়েফ তায়ুশ তাসফিয়া সাইফ গেলো।তাসরিফ চলে গিয়েছে দুপুরে।ও থাকলে নিশ্চয়ই খবর টা আর্শিয়ান এর কানে পৌঁছে যেতো।তাসফিয়া আয়াত এর সাথে ছিলো আজ সারাক্ষণ। তাই আষাঢ়’র কোনো খোঁজ পায় নি।তায়েফ তায়ুশ ছিলো বাচ্চাদের সাথে। সাইফ ছিলো কাজে।আষাঢ় কে কেউ দেখি নি।কিংবা খেয়াল করে নি।
আর্শিয়ান রুমে বসে।গম্ভীর হয়ে রুমে থাকা সিঙ্গেল সোফায় বসে আছে। একে একে সবাই রুমের সামনে এসে দাঁড়ালো। ভেতরে যাওয়ার সাহস করতে পারলো না কেউ।
তাসফিয়া তাও ভয়ে ভয়ে ডাকলো ভাইকে,

-“ভাইয়া!”

-“রুমে আয়।”

আর্শিয়ান কিঞ্চিৎ সময় পরে আদেশ করল।আর অমনি সব গুলো হুমড়ি খেয়ে রুমে ঢুকে গেলো।
আর্শিয়ান সব ক’টা কে পর্যবেক্ষণ করলো।
চোখ গোলগোল করে দেখলো সময় নিয়ে। রয়েসয়ে গম্ভীর স্বরে জিগ্যেস করলো,

-“লাস্ট বার ওকে কে দেখেছিস?”

-“আমরা।খালামনির সাথে।
মেঝো মা কিছু বলছিলো।আষআপু কে কিছু নিয়ে জোর করছিলো। আপু বারবার না করছিলো।কিন্তু আমরা খেলছিলাম তখন সেইজন্য ভালো করে খেয়াল করি নি।”

তায়েফ এর জবানবন্দি শুনে আর্শিয়ান এর মস্তিষ্ক তৎক্ষনাৎ কিছু মনে করার চেষ্টা করলো।হ্যাঁ আষাঢ় এর খালা কেও আর্শিয়ান ফিরার পর আর দেখতে পায় নি।তবে কি?আর্শিয়ান আর কিছু ভাবে না।সেন্টার টেবিলে রাখা চাবির গোছা হাতে তুলে লম্বা লম্বা কদম ফেলে বেরিয়ে এলো।রাত এখন হয়তো এগারো টার আশেপাশে। আয়াত আর সাঈদ কে কিছুক্ষণ আগে বাসর ঘরে পাঠানো হয়েছে। সাঈদ রুমে এসে আয়াত কে চেঞ্জ করে আসার জন্য বলে।নিজে আগে বরাদ্দকৃত রুম হতে চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে এসছে। আয়াত মাত্র লেহেঙ্গা হাতে ওয়াশ রুম হতে বেরিয়ে এসছে। মন টা বিশেষ ভালো না।বোন কে আজ এমন একটা দিনে সে কাছে পায় নি।তারউপর মা তাকে কোথায় পাঠিয়েছে সেটাও কেউ জানে না। আয়াত ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে আসার পর সাঈদ খাবার প্লেট হাতে যেই না খাবারে হাত দিবে তক্ষুনি দরজায় কেউ কড়া নাড়ে।সাঈদ ভ্রু কুঁচকালো।ভাবলো হয়তো আবার এসছে কেউ বিরক্ত করতে। এমনিতেই মন মেজাজ ভালো নেই।আষাঢ়’র জন্য আয়াত এর মন খারাপ।সাঈদ খাবার প্লেট দড়াম করে টেবিলে রেখে দরজা খুলতে গেলো।যাওয়ার আগে অবশ্য মনে মনে ঠিক করলো দরজা খুলেই কয়েকটা গালি দিবে বিচ্ছুগুলো কে। আয়াতও পেছন পেছন এলো।কিন্তু আর্শিয়ান কে দেখে বিচলিত হলো।আয়াত এগিয়ে এসে জিগ্যেস করলো,

-“ভাইয়া ওর খোঁজ,,,

-“আয়াত খালামনি এখন সিলেট কোথায় থাকে?”

আয়াত এর কথা সম্পূর্ণ না শুনে আগে আগে নিজে গম্ভীর স্বরে জিগ্যেস করলো।
আয়াত অবশ্য অবাক হলো।তবে আর কিছু বলার সাহস জোগাতে পারে না।
তৎক্ষনাৎ সাঈদ এর থেকে ফোন নিয়ে আর্শিয়ান এর হোয়াটসঅ্যাপে লোকেশ পাঠিয়ে দিলো।
আর্শিয়ান ততক্ষণে নেমে গিয়েছে দোতলা থেকে।

——

আলতাফ তালুকদার বিছানায় শুয়ে আছে। সারাদিন বড্ড দখল গিয়েছে।শরীর টা খুব একটা ভালো নয় সাথে মন টা বড্ড খারাপ। মেয়ে দু’টো কে কত টা ভালোবাসে আলতাফ তালুকদার সেটা আর কেউ না জানুক শিউলি বেগম ঠিক জানে।তারপরও কি করে তিনি এমন কিছু করলো ভেবে পাচ্ছে না আলতাফ তালুকদার।
শিউলি বেগম এখনো রুমে আসে নি।হয়তো কিছু সময় এর মধ্যে চলে আসবে।
আলতাফ তালুকদার কোনো ভাবে রাজি ছিলো না আষাঢ় কে ওর খালার সাথে পাঠানো নিয়ে।রাজি ছিলো না বললে ভুল হবে। তিনি রাজি ছিলো তবে এখন পাঠাতে নয়।কিন্তু শিউলি বেগম শুনলো না।বাড়িতে অবশ্য কেউ জানে না। শুধু বড়রা মিলে এমন টা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আর্শিয়ান এ বাড়ির বড়ো ছেলে।বয়স তার অনেক টা হয়েছে।আর্শিয়ান এর বয়সে তফাৎ আষাঢ় অনেক ছোট।
আলতাফ তালুকদার এর ভাবনার মাঝেই রুমে শিউলি বেগম প্রবেশ করলো।
এসেই বিছানায় স্বামীর পাশে বসলেন।রুম অন্ধকার।আলতাফ তালুকদার শুয়ে আছে।শিউলি বেগম মিনিট দুই এক বসে রইলো।আলতাফ তালুকদারও অপেক্ষা করলো স্ত্রীর মুখ থেকে কিছু শোনার জন্য। কিন্তু শিউলি বেগম কিছু না বলেই হঠাৎ করে স্বামীর বুকে মাথা রাখলো।আলতাফ তালুকদার আলতো হাতে জড়িয়ে ধরলো।
শিউলি বেগম ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।অপরাধী কণ্ঠে বলতে লাগলো,

-“আমি একদম ভালো মা হতে পারি নি।খারাপ স্ত্রী খারাপ মা ঠিকই হয়েছি।কিন্তু খারাপ জা হতে পারবো না। বড়ো ভাবির কত শখ আর্শিয়ান কে নিয়ে। আমাদের আষাঢ় কে দিয়ে সে-সব কি করে পূর্ণ করবে ভাবি?”

-“ভাবি তোমায় কিছু বলেছে?”

-“নাহ।
কিন্তু আমার সাথে কতশত গল্প করেছে আর্শিয়ান এর বউ কেমন হবে কিভাবে চলতে হবে। কিন্তু আমাদের আষাঢ়?কিছুই নেই ওর মাঝে।ভাবির কল্পনা করা পুত্রবধূ আর আমাদের আষাঢ়’র আকাশপাতাল পার্থক্য। তাছাড়া বয়সে কত ছোট।এতো বড়ো বাড়ির বড়ো বউ হয়ে সবদিক সামলাতে পারবে না।বয়স কম। কিছু দিন দূরে থাকলে সব ঠিক হয়ে যাবে।”

আলতাফ তালুকদার স্ত্রীর কথা শুনলো মন দিয়ে।মাথায় হাত বুলিয়ে হঠাৎ করে মুচকি হাসলো।তবে শিউলি বেগম সেটা দেখতে পেলো না। আলতাফ তালুকদার হঠাৎ বলে উঠলো,

-“আষাঢ় ছোট। আর্শিয়ান কিন্তু নয়।”

——–

বৃষ্টি মাথায় আর্শিয়ান রাত তিন টা বাজে এসে পৌঁছালো সিলেট।বাড়ির ঠিকানা সে পেয়েছে।গেইটের কাছে গাড়ি থামিয়ে দারোয়ান কে বারকয়েক ডাকলো।কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ পেলো না।
আর্শিয়ান গাড়ি থেকে নামলো।বেশ কিছু সময় ডাকার পর একজন বেরিয়ে এলো ছাতা হাতে গেইট খুলে।আর্শিয়ান তৃতীয় তলার ভাড়াটিয়ার কথা জিগ্যেস করলো।
দারোয়ান জানালো তারা বিয়েতে গিয়েছে পরশু।এরপর আর ফিরে নি।আর্শিয়ান অবাক হলো।লাল চোখ জোড়া মূহুর্তে হতাশাগ্রস্ত হলো।বুঝতে সময় লাগলো না এখানে আষাঢ় কে নিয়ে আসে নি।মস্তিষ্ক সচেতন হলো।বৃষ্টির মধ্যেও চোখ জোড়া জ্বলে উঠলো।গাড়িতে বসে আবার গাড়ি স্টার্ট করলো।অনেকটা পথ যাওয়ার পর একটা ব্রিজের ওপর গাড়ি থামালো।
গাড়ি থেকে নামার আগে একটা সিগারেট ধরালো। সেটা তিন চার বার ঠোঁটের ভাঁজে চেপে ধরে ধোঁয়া ছাড়লো।এটা সচারাচর খাওয়া হয় না।খুব কম মাসে কিংবা তার-ও বেশি সময় এটা কে সে ছুঁয়েও দেখে না।এটা খাওয়া শুরু করেছিলো যখন বিদেশ থেকে ফিরলো।আষাঢ় কে নিয়ে মনে মনে ভাবতো।আষাঢ়’র মতিগতি যখন বুঝতে পারে নি।নিজে কে নিজে মনে মনে শান্তনা দিতো।আষাঢ় তার বোন।কিন্তু মন মানতো না।মাথায় প্রচুর পেইন হতো এসব মন মস্তিষ্কের সাথে যুদ্ধ করে সে তিক্ত বিরক্ত। এরমধ্যে আষাঢ়’র উষ্কানি।প্রায় পাগল প্রায় অবস্থা। তখন টেনশনে একদিন খেয়ে ছিলো।তবে কোনো বিশেষ লাভ হয় নি।সেই ঘুরেফিরে আষাঢ় তার মাথায় ঘুরতে থাকতো।আজ অনেকগুলো খেয়েছে।আর্শিয়ান গাড়ি থেকে নামার পর বৃষ্টির মাঝে সেটা দূরে ছুঁড়ে ফেলে গাড়ি ঘেঁষে নিচে বসে পড়লো।
চোখ জোরা লাল হয় আছে। যে-কেউ দেখলে এই মূহুর্তে ভয় পাবে পুরুষ টাকে।
বৃষ্টির পানিতে কিছু চুল কপাল বেয়ে পানি গুলো ঠোঁট ছুয়ে থুতনিতে জমে টপটপ করে নিচে পরছে।আর্শিয়ান দুই হাতে মুখ ডাকলো।হঠাৎ গাড়িতে রাখা ফোন টা বেজে উঠল। আর্শিয়ান দ্রুত ফোন টা রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে কিছু শোনার পর মুখে অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠলো।কিছু না বলে নিঃশব্দে ফোন কেটে বুকের বা পাশে হাত রেখে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,

-“চব্বিশ ঘন্টা হওয়ার আগে আমি তোকে আমার কাছে নিয়ে আসবো আষাঢ় মাস।অপেক্ষা কর।জানি তো ঘুমাস নি।অপেক্ষার প্রহর তবে এখন থেকে গুনতে শুরু কর কাল রাতে তুই মাহমুদ আর্শিয়ান তালুকদার এর অর্ধাঙ্গিনী হয়ে এই এই বুকে এইখান টায় নিশ্চিন্তে ঘুমবি গড প্রমিস।”

#চলবে…..

আমার প্রেয়সী পর্ব-১৪

0

#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_১৪
#জান্নাত_সুলতানা

-“আষাঢ়?”

আষাঢ় কিছু মেয়ের সাথে দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়িয়ে আছে না হেঁসে কথা বলছে। পাশে কিছু ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। স্টেজে বর বউ কে হলুদ দেওয়া হচ্ছে। এদিকে বড়ো মানুষ এর তেমন ধ্যান নেই। তারউপর বক্সে গান বাজচ্ছে।তাই হঠাৎ এভাবে কে ডাকলো আষাঢ় অনুমান করতে পারে না। তবে কণ্ঠ শোনে খুব চিরপরিচিত মনে হচ্ছে।আবছা আলোয়ে অদূরে আর্শিয়ান ভাই দাঁড়িয়ে।সাদা পাঞ্জাবিতে মানুষ টাকে একটু বেশি সুদর্শন দেখাচ্ছে কি?সুদর্শন দেখাচ্ছে কি আর্শিয়ান ভাই তো সব সময় সুদর্শন।
আষাঢ় মনে মনে কথা গুলো বিড়বিড় করে আর্শিয়ান এর দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই পাশে নজর পরে মেজাজ বিগড়ে গেলো।ওর সাথে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়ে গুলো আর্শিয়ান ভাই এর দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।অবশ্য শুধু তাকিয়ে আছে বললে ভুল হবে রীতিমতে আষাঢ়’র আর্শিয়ান ভাই কে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। আষাঢ়’র ফ্রেন্ড নাদিয়াও আছে এরমধ্যে। মেয়ে টা আর্শিয়ান ভাই পছন্দ করে। শুধু পছন্দ নয়।যাকে বলে একদম মনপ্রাণ উজাড় করে ভালোবাসা।তবে আর্শিয়ান ভাই আষাঢ়’র কে ভালোবাসে জানার পর থেকে একদম বদলে গেছে।আষাঢ় নাদিয়ার দিকে তাকিয়ে কিছু ইশারা করে দ্রুত পা চালিয়ে আর্শিয়ান এর কাছে চলে এলো।মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে বলে উঠলো,

-“ডেকেছেন আমায়?”

-“আমার সাথে আয়।”

ওর হাত ধরে আর্শিয়ান বাড়ির ভেতর এলো।সোজা ডাইনিং টেবিলের কাছে এসে সেখানে প্লেটে খাবার নিলো।তারপর আবার আষাঢ়’র হাত ধরে সিঁড়ি বেয়ে উপরে আষাঢ়’র রুমে চলে এলো।নিচে কিছু প্রতিবেশী বসে আছে। তারা অবশ্য আর্শিয়ান এর এমন কাণ্ডে একটু অবাক হলো।আবার কেউ কেউ ফুসুরফুসুর করতে লাগলো।তবে সে-সব আর্শিয়ান পাত্তা দেওয়ার সময় নেই।এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি হচ্ছে আষাঢ় এখনো খাবার খায় নি।একে একে সবাই খাবার খেয়ে নিয়েছে। মেয়ে টা আজ একটু বেশি লাগামহীন চলাফেরা করছে।শিউলি বেগম ভীষণ ব্যাস্ত।তবে কাজের ফাঁকে আষাঢ় কে বেশ কয়েকবার বলেও খাওয়াতে পারে নি।
আর্শিয়ান রুমে এসে আষাঢ় কে বিছানায় বসিয়ে খাবার প্লেট হাতে দিলো।আষাঢ় ঘোরে আছে। আর্শিয়ান এর কণ্ঠ শোনে ঘোর কাটলো।

-“ফিনিশ ইট আষাঢ়।
আর হ্যাঁ খাবার শেষ আর বেরুবি না রুম থেকে। রাত অনেক হয়েছে ঘুমিয়ে পড়বি।”

আষাঢ় কি বলবে খোঁজে পেলো না। আর্শিয়ান রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েও আবার ফিরে এলো।আষাঢ় কে একপলক পর্যবেক্ষণ করে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।মেয়ে টা লাল পাড়ের হলুদ শাড়ী পড়ে আছে। গায়ে বেলিফুলের অল্পস্বল্প সাজ।দেখতে দারুণ মায়াবী লাগছে।এই প্রথম আষাঢ় শাড়ী পড়েছে।দেখলে একবার ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। সেইজন্যই তো এখন পর্যন্ত তো একবারও ভালো করে মেয়ে টাকে দেখে নি।যদি সেদিন রাতের মতো আবার কোনো ভুল করে ফেলে।তবে মন টা বড্ড অস্থির অস্থির করে আজ কিছু দিন ধরে। মনে হয় কিছু হারিয়ে যাচ্ছে আর্শিয়ান খোঁজে পাচ্ছে না নয়তো সে নিজে হারিয়ে যাচ্ছে।আষাঢ়’র এইচএসসি ফাইনাল এক্সাম আর দু’মাস পর।আর্শিয়ান ভেবে নিয়েছে এক্সাম শেষ হলেই তার আষাঢ় মাস কে সে নিজের করে নিবে।একদম নিজের।আর্শিয়ান কথা গুলো ভেবেই
ঠোঁটের উপর এক হাত রেখে বললো,

-“শাড়ী পড়তে বারণ করে ছিলাম।
আর পড়বি না।”

অতঃপর দ্রুত পা চালিয়ে বেরিয়ে গেলো।আষাঢ় তখনো অবুঝ চোখে তাকিয়ে আর্শিয়ান ভাই এর যাওয়ার পথে।
আষাঢ় বুঝতে পারছে না মানুষ টা আজ কিছু দিন ধরে কেন এতো এলোমেলো থাকছে।বড্ড চিন্তিত দেখায় মানুষ টাকে।

——

হলুদের অনুষ্ঠান শেষ আয়াত রুমে এসে শাওয়ার নিলো।মেহদি লাগিয়েছিলো সেই সন্ধ্যায়। কিন্তু হাত গুলো এখনো কেমন ঝিমঝিম করছে।আয়াত হাতে একটু নারকেল তেল লাগালো।চুল আঁচড়াতে সময় লাগলো কিছু টা।ঝটপট চুল আঁচড়ে মোটা একটা বিনুনি করে নিলো।চুল খুব বেশি বড়ো নয় আয়াত এর।কোমড় সমান।চুল বড়ো আষাঢ়’র।আয়াত এর থেকে দিগুণ লম্বা আষাঢ়’র চুল।আষাঢ় কখনো চুল কাটে না।আর্শিয়ান ভাইয়ের লম্বা চুল পছন্দ। শর্মিলা বেগম এর চুল অনেক বড়ো আর্শিয়ান মায়ের চুল আঁচড়ে দেয়।যত্ন করে তেল লাগিয়ে দিতো আগে।বাড়ির মেয়েরা বড়ো হয়েছে পর থেকে আর্শিয়ান সে-সব আর করে না।শর্মিলা বেগম এর কাছ থেকে শুনেছে আয়াত। যদিও আয়াত এর কিছু কিছু মনে আছে।
তবে পুরোপুরি নয়।সেক্ষেত্রে আষাঢ়’র সে-সব মনে না থাকারই কথা।
আয়াত এর খালা এসেছে। আয়াত এর মামার বাড়ির আত্মীয় বলতে এই খালাই আছে। বর্তমানে তিনি সিলেট থাকে।স্বামী বিদেশ থাকে। আয়াত এর নানা নানি কিংবা মামা আর কেউ নেই। সেই খালার এক মেয়ে আছে। বয়স এগারো। আয়াত এর রুমে ঘুমিয়েছে মেয়ে টা।
আয়াত লাইট অফ করে শোয়ার প্রস্তুতি নিতেই কেউ দরজা খুলে রুমে এলো।আয়াত চমকালো।এতোক্ষণ ঘুমে চোখ খুলে রাখা কষ্টসাধ্য হচ্ছিল। আর এখন ভয়ে আতংকে ঘুম সব পালিয়েছে।
আয়াত মুখ ফুটে কিছু বলবে তার আগেই অন্ধকারে একটা দানবীয় হাত ওর মুখ চেপে ধরলো। টেনে নিয়ে গেলো ব্যালকনির দিকে।সেখানে একটা লাইট জ্বলছে। আয়াত হাতের মালিক কে সেটা আগেই বুঝতে পেরেছে। আর এখন দেখার পর চোখ কপালে।সাঈদ ওর মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিলো।গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,

-“নো ঘুম আয়াত বেবি।
চলো আজ সারারাত আমার সাথে গল্প করবে।কাম কাম।”

নিজে নিচে বসে দুই হাত বাড়িয়ে দিয়ে আয়াত কে কাছে আসতে ইশারা করে।
আয়াত অসহায় চোখে তাকালো।কোনো একদিন প্রেম চলাকালীন এরকম বলেছিলো বিয়ের আগের রাতে সারা রাত জেগে গল্প করবে দু’জন। কে জানতো এই পুরুষ সেই কথা এখনো মনে রেখে দিয়ে আজ সত্যি সত্যি গল্প করার জন্য চলে আসবে!আয়াত চেয়েও কিছু বলতে পারলো না।

—-

-“বিয়েতে তুমি থাকবে না তাসরিফ ভাই?”

তাসফিয়ার প্রশ্নে তাসরিফ মলিন হাসলো।বোনের একটা বড্ড শখ ছিলো তাসরিফ এর।কিন্তু তায়েফ তায়ুশ হলো।এতে অবশ্য কোনো সমস্যা ছিলো না।আয়াত, আষাঢ় কে নিজের বোনের চেয়ে কম ভালোবাসে না।শুধু কেনো জানি তাসফিয়া কে ওর বোন ভাবতে পারে নি কখনো।বোনের বিয়েতে থাকার ইচ্ছে থাকলে উপায় নেই।যদিও আকরাম তালুকদার বিয়ের পর পুরোদমে চাকরির জন্য চেষ্টা করতে বলেছিলো।কিন্তু তাসরিফ? সে পরশু থেকে চাকরির জন্য দরখাস্ত করে যাচ্ছে।এরমধ্যে একটা ভালো কোম্পানিতে শনিবারে ইন্টারভিউ এর জন্য ডেকেছে।কোম্পানি টা একটু দূরে। বাড়ি থেকে গিয়ে সকালে ইন্টারভিউ দেওয়া সম্ভব হবে না। এতো পথ জার্নি করে।সেইজন্য আজ সন্ধ্যায় চলে যাবে। সেখানে গিয়ে এক ফ্রেন্ড এর বাসায় থাকবে।কিন্তু বিয়েতে থাকবে সে।
এটা অবশ্য কাউ কে বলে নি।মাত্র একটা কাঁধ ব্যাগ কে কিছু কাপড় নিচ্ছিল তাসরিফ তখন তাসফিয়া রুমে এসে উপরোক্ত প্রশ্ন টা করলো।তাসরিফ প্রেয়সীর চোখে জল দেখে একদম বরফ থেকে গলে পানি হয়ে গেলো।এগিয়ে এসে তাসফিয়ার মুখ টা দুই হাতের আঁজল নিয়ে আদুরে কণ্ঠে জানালো,

-“আল্লাহ এই মেয়ে চোখে মুখের কি অবস্থা করেছে।
এই আমি একবারে চলে যাচ্ছি না।মাত্র তিন দিন এর জন্য যাচ্ছি।”

-“আর যদি চাকরি টা হয়ে যায় তাহলে তো সব সময় সেখানে থাকতে হবে।”

তাসফিয়া বললো।
তাসরিফ তাসফিয়ার চোখের জল মুছে দিলো।চুল গুলো ঠিকঠাক করে দিতে দিতে বললো,

-“তখন তোকে সাথে নিয়ে যাব।”

-“তুমি আমাদের অফিসে জয়েন করো না।
এতো দূরে যাওয়ার কি দরকার তাসরিফ ভাই?”

-“ওখানে চাকরি করবো না। শুধু তোর হিটলার বাপকে বোঝাতে হবে তাসরিফ তালুকদার এর যোগ্যতা আছে।”

শেষ এর কথা টা মনে মনে বললো।তাসফিয়া আবার প্রশ্ন করলো,

-“তাহলে কেনো যাচ্ছেন?”

-“এমনি।”

তাসরিফ এর এমন গা-ছাড়া ভাব তাসফিয়ার অসহ্য লাগলো।মেয়ে টা কষ্টে কাল রাত থেকে ঘুমুতে পারে নি।হলুদের অনুষ্ঠান খুব বড়ো করে না হলেও যথেষ্ট ঝাঁক ঝমক পূর্ণ ছিলো।সবাই কতো আনন্দ করেছে। কিন্তু ও?মন টা সারাক্ষণ ছটফট করেছে।সুযোগ হয় নি কাল কথা বলার মতো। তাই তো সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে তাসরিফ এর রুমে চলে এসছে।কিন্তু এই পুরুষ টা?তার তো কোনো ভাবান্তর নেই।
তাসফিয়ার অভিমান হলো।কোনো কিছু না বলেই তাসরিফ এর রুম ত্যাগ করলো।
তাসরিফ মেয়ে টার যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইলো।অভিমান করেছে প্রেয়সী।কোনো ব্যাপার না সে মানিয়ে নিবে।তার আগে নিজে কে প্রমাণ করতে হবে।

—–

বিয়ে বাড়ি মানে আনন্দ তেমন কাজের চাপ।আর্শিয়ান দম ফেলার ফুরসৎ নেই।বেচারা কাল থেকে আষাঢ় ছটফট করছে একপলক স্থীর ভাবে মানুষ টাকে মন ভরে দেখার জন্য। তৃষ্ণায় বুক চৌচির হয়ে আসছে।কাল রাতে হলুদের অনুষ্ঠান বেশ রাত করেই শেষ হয়েছে তাই সকালে অনেকে এখন ঘুম থেকে ওঠে নি।আষাঢ় ঘুম চোখে তাও আর্শিয়ান ভাই কে দেখার জন্য ঘুম নিয়ে ওঠে এসছে। নিচে এসে ফ্লাক্স থেকে চা নিয়ে খেলো।ঘুম কিছু টা কাটার পর ছুটলো স্টেজের দিকে।আর্শিয়ান আকরাম তালুকদার এর সাথে কথা বলছে। আষাঢ় কে দেখে ইশারা করে বোঝালো এখন বাহিরে যাবে। ফিরে এসে কথা বলবে।আষাঢ়’র মন টা খারাপ হলো নিমেষেই। তবে চারদিকে এতো মানুষের ভীড়ে সে কিছু করতে বা বলতে পারলো না আর্শিয়ান কে।বাধ্য হয়ে চলে গেলো সেখান থেকে। আর্শিয়ান আষাঢ়’র মুখ দেখে মেয়ে টার মনের কথা কিছু টা হলেও ঠাহর করতে পারে। তাই তো ভাবে ফিরে এসে ওর সাথে কথা বলে সব ঠিক করে নিবে।আদৌও ফিরে এসে সব ঠিক করার জন্য মানুষ টাকে খোঁজে পাবে তো?

#চলবে…..

আমার প্রেয়সী পর্ব-১৩

0

#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_১৩
#জান্নাত_সুলতানা

-“তুই এটা পড়বি আষাঢ় মাস।”

আর্শিয়ান একটা শপিং ব্যাগ আষাঢ়’র হাতে দিয়ে বললো।আষাঢ় ব্যাগ টা হাতে নিলো।তবে অবাক হলো।আজ পাক্কা নয়দিন পর আর্শিয়ান ভাই ওর সামনা-সামনি দাঁড়িকয়ে কথা বললো।মানুষ টা সেই দিন রাতের পর আর আষাঢ়’র সাথে কথা বলে না।আষাঢ় নিজেও আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে পারে নি।তবে আগের ন্যায় ঠিক পুরুষ টাকে লুকিয়ে পর্যবেক্ষণ করে আসছে।
আষাঢ় কথা গুলো মনে মনে ভেবেই ব্যাগ টা হাতে নিয়ে মিনমিন করে বলে উঠলো,

-“কিন্তু বড়ো মা সব,,,

-“জানি আমি।
কিন্তু তুই এটাই পড়বি বিয়েতে।”

আর্শিয়ান আষাঢ়’র কথা সম্পূর্ণ না শুনেই আদেশের স্বরে বললো।পরপরই দ্রুত পা চালিয়ে ছেলেদের সু শো-রুম এর দিকে চলে গেলো। আষাঢ় তাকিয়ে রইলো পেছন থেকে ফর্মাল গেটআপে থাকা আর্শিয়ান ভাইয়ের দিকে।
বিয়ে তারিখ ঠিক করা হয়েছে অনেক আগে।সব দিক গুছিয়ে আজ বিয়ের শপিং করা হচ্ছে।বাড়ির সবাই এসছে। আজ বুধবার আগামী শুক্রবারে বিয়ে।মহিলারা দুপুরে খাবার পর মার্কেট এসছে।আর পুরুষরা সবাই অফিস থেকে এসে সবাই এক সাথে হয়েছে।আচ্ছা আর্শিয়ান ভাই কি দুপুরে খাবার খেয়েছে?
মুখ টা কেমন শুঁকিয়ে আছে।চুল গুলো এলোমেলো। আবার শার্ট এর ইন কোমড় থেকে খোলে আছে। মানুষ টাকে এর আগে আষাঢ় কখনো এমন এলোমেলো দেখেছে বলে মনে হচ্ছে না। আচ্ছা অফিস কি কাজের চাপ বেশি?
আষাঢ় নিজ মনে কথা গুলো আওড়ালো।
কেনাকাটা শেষ করতে করতে রাত আটটার বেশি সময় বেজে গেলো।সবাই এক্কেবারে ডিনার করে তবেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো। তখন ঘড়ির কাঁটায় সাড়ে ন’টা ছুঁই ছুঁই করছে।রোজকার ন্যায় আজো আর্শিয়ান আষাঢ় কে সবার সাথে যেতে দিলো না। আজ একটা বাইক নয় দুই টা বাইক।সাঈদ সাইফ এর বাইক নিয়ে এসছে। সাইফ কে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে গাড়িতে করে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। সাঈদ আর আয়াত এক সাথে যাবে শুনে আষাঢ় কিছু টা অস্বস্তি অনুভব করলো।তবে সাঈদ যেন আরো একধাপ এগিয়ে।আষাঢ় কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,

-“বড়ো আপা।
আমি কিন্তু সব জানি।আয়াত কিছু ব,,,

-“আপনি একটু চুপ থাকতে পারেন না।
আষাঢ় আমি কিছু বলি নি।”

সাঈদ এর পুরো কথা শেষ করার আগেই আয়াত সাঈদ কে থামিয়ে দিলো।চোখ কটমট করে তাকিয়ে বলে।তবে লাস্ট কথা টা আষাঢ় কে বললো।আষাঢ় চারদিকে চোখ বোলালো।না আর্শিয়ান ভাই নেই।থাকলে কি হতো?নিশ্চয়ই চোখ ছোট ছোট করে আষাঢ়’র দিকে তাকিয়ে থাকতো।আর পরে সুযোগ পেলে জিগ্যেস করতো, আষাঢ় মাস তুমি আমায় আগে থেকে ভালোবাসতে? আষাঢ় তখন কি জবাব দিতো?নিশ্চয়ই লজ্জায় নুইয়ে যেতো।আর আর্শিয়ান ভাই নিশ্চয়ই এটা নিয়ে বারবার লজ্জা দিতো।
আর্শিয়ান একটু পর ফিরে এলো হাতে একটা বেলি ফুলের মালা।
এসেই সেটা আষাঢ়’র হাতে পড়িয়ে দিলো।আয়াত তাকিয়ে রইলো সেদিকে।বোন পারফেক্ট একটা মানুষ চুজ করেছে জীবনে। এখন ভাগ্য সহায় হলে হয়।
দুই টা বাইক।মেইন রোড ছেড়ে তালুকদার বাড়ির রাস্তা ধরেছে। আষাঢ় রাতের পরিবেশ না রাস্তায় কৃত্রিম আলোর মাঝে আবছা আবছা দেখতে আর্শিয়ান ভাই কে বাইকের মিররে দেখছে। পুরুষ টা গায়ের রং তামাটে বর্ণের হলেও খুব সহজে যে কারোর চোখ পড়ার মতো একজন পুরুষ।বলিষ্ঠ পেটানো শরীর টা খুব সহজে মানুষের নজর কারে।আষাঢ় মাঝেমাঝে ভাবে আচ্ছা আদৌও কি এই সুপুরুষ, সুদর্শন পুরুষ যেটাই হোক তার পাশে কি আষাঢ়’র মতো পুঁচকে এই মেয়ে কে মানাবে?
আষাঢ়’র ভাবনার মাঝেই আর্শিয়ান বাইক থামালো।সেদিন এর সেই দোকান গুলোর পাশে। আষাঢ় চমকালো।সাঈদও থামিয়েছে।আষাঢ়’র তবুও ভীত চোখে আশেপাশে তাকালো। সেদিন এর ছেলে গুলোর চাহনি মোটেও ভালো ছিলো না।একই পাড়ায় বসবাস হলেও ছেলে গুলো কে কখনো সেভাবে দেখা হয় নি।কিন্তু আজ অনেক দিন হয় ছেলে গুলো কে কলেজ থেকে ফিরার পথেও দেখে না।
তাই বাইক থেকে নেমে কৌতূহলবশে আর্শিয়ান কে জিগ্যেস,

-“আর্শিয়ান ভাই ছেলে গুলো কে অনেক দিন ধরে দেখি না।”

-“ওদের দেখতে না পেয়ে কি তোর কষ্ট হচ্ছে?”

আর্শিয়ান গম্ভীর স্বরে প্রশ্ন করলো।
আষাঢ় থমথম খেলো।কি জবাব দিবে এই প্রশ্নের? মানুষ টা জীবনে একটা কথা সোজা করে বললো না।সব সময় ত্যাড়ামি।আষাঢ় চুপ করে রইলো।পাশ থেকে সাঈদ দুই প্লেট ভেলপুরি নিয়ে এলো।একটা আয়াত এর হাতে দিয়ে আরেকটা আষাঢ়’র হাতে দিয়ে আর্শিয়ান এর দিকে তাকিয়ে দেখলো।কি ভয়ংকর এক চিলতে হাসি পুরুষ টার মুখে। সাঈদ মুচকি হেঁসে আষাঢ় কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,

-“ওদের জায়গায় রাস্তা নয়।ওদের যেখানে থাকার কথা সেখানেই আছে।
তুমি চিন্তা করো না সুইটি।”

সাঈদ লাস্ট কথা টা বলার পর আর্শিয়ান এর দিকে তাকিয়ে আস্তে করে একটা ফাঁকা ঢুক গিলে আমতা আমতা করে বললো,

-“আমার, আমার বোন তো। মিষ্টি একটা বোন এভাবে তাকাস কেন শ্লা!”

পরের কথা টা বিড়বিড় করে বলে বাইকের দিকে চলে গেলো।
আষাঢ় কিছু বুঝতে পারছে না। সাঈদ ভাই কি বলে গেলো?আষাঢ় একটা পুরিও মুখে তুলতে পারলো না। এদিকে আয়াত এর কোনো হেলদোল নেই।সে একমনে খেয়ে যাচ্ছে।

——

আকরাম তালুকদার সবাই কে নিজের কক্ষে ডেকে পাঠিয়েছেন। মানুষ টা চতুর। ছেলেও ঠিক ওনার মতোই হয়েছে। ওনি ধীরেসুস্থে ঠান্ডা মাথায় কাজ কিছু দিন ধরে তিনি একটা বিষয় নোটিশ করছেন।সব বড়ো মানুষ এর ভীড়ে তাসরিফ কেও ডেকেছে। তাসরিফ ভয়ে গুটিশুটি মেরে এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে।আকরাম তালুকদার তোফায়েল তালুকদার এর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বললো,

-“আগে পুরো টা শুনবি।তারপর কথা বলবি।আর বাকিরা তোমাদেরও বলে দিচ্ছি। এই ঘরে আজ এই মূহুর্তে যা কথা হবে। তা যেনো আর কেউ জানতে না পারে।”

তোফায়েল তালুকদার বড়ো ভাইয়ের এমন কথায় অবাক হলো বটে সাথে কিছু টা কৌতূহল। এমন কি বলবে ভাইজান যে আগে আগে তাকে সাবধান করে দিলো?

-“আগামী তিন মাস।
এই তিন মাস।তুমি নিজেকে গড়বে।আমার মেয়ের জন্য।তোমার যা আয় এতে করে নিশ্চয়ই বউ পালার মতো অবস্থায় নেই।যদি বলো সাঈদ তো চাকরি করে না।বিদেশ থেকে হায়ার এডুকেশনের পাঠ চুকিয়েছে। নিজের বাবার বিজনেস দেখভাল করে।তবে আমি বলবো তোমার পরিবারের বিজনেস রয়েছে।কিন্তু তোমার তো এখন সেই সুযোগ নেই।তাই যা করার তুমি নিজ থেকে করতে হবে।”

সবাই কমবেশি অবাক হয়েছে। তবে আকরাম তালুকদার এর কড়া নির্দেশনায় কেউ টুঁশব্দ করার সাহসও পেলো না। তাসরিফ মাথা নিচু করেই এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলো।কিন্তু এবার চোখ তুলে তাকালো বড়ো আব্বুর দিকে।বেশ সাহসিকতা আর আত্মবিশ্বাসের সাথে জানালো,

-“গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট আমার।
ইনশাআল্লাহ খুব দ্রুত আমি আমার প্রতিভা দিয়ে চাকরি পেয়ে যাবো।আমি নিজে কে যোগ্য করে তবেই তোমার সামনে আসবো।আর তুমিও তৈরি থাকো।মেয়ে বিদায় দেওয়ার জন্য।”

—–

-“আর্শিয়ান ভাই?”

আষাঢ় মূদু স্বরে ডাকলো।আর্শিয়ান কফির মগে ঠোঁট ছোঁয়াল। ল্যাপটপের স্ক্রিনে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেই শান্ত কণ্ঠে উত্তর দিলো,

-“বল!”

-“আপনি কিছু করেছেন!”

আষাঢ়’র প্রশ্নে আর্শিয়ান স্বাভাবিক ভাবে জিগ্যেস করলো,

-“কি করেছি?”

-“আমি তাসরিফ ভাইয়ার কাছে শুনেছি সব।”

আর্শিয়ান এবার নড়েচড়ে বসলো। বিড়বিড় করে তাসরিফ কে জঘন্য বিশ্রী কিছু গালি ওর জন্য বরাদ্দ করলো।অতঃপর দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো,

-“পেটে কিছু হজম হয় না শ্লা।”

আষাঢ় শুনতে পেলো না। চারদিকে তাকিয়ে একবার দেখে নিলো লিভিং রুমে কেউ নেই। তাই আরো কিছু টা পাশ ঘেঁষে বসলো আর্শিয়ান এর।আর্শিয়ান আগের ন্যায় কণ্ঠ স্বাভাবিক রেখে জানতে চাইলো,

-“কি শুনেছিস?”

-“আপনি মেরে ওদের জেলে পাঠিয়েছেন আপনার এক পুলিশ ফ্রেন্ড এর সাহায্যে।”

আষাঢ় ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে বললো।আর্শিয়ান এবার মগ হাত থেকে সামনে সেন্টার টেবিলে রাখলো।ল্যাপটপ ঠাশ করে বন্ধ করলো।আষাঢ় চমকে উঠলো। আর্শিয়ান ঘাড় ফিরিয়ে আষাঢ়’র দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কিন্তু চাপা স্বরে বলে উঠলো,

-“বেশ করেছি।
দরকার পড়লে খুন করে ফেলবো।এই আষাঢ় মাস শুধু আমার। আমি ওকে দেখবো। খারাপ ভালো সব এঙ্গেল থেকে।অন্য কেউ নয়।আর দেখলেও খুব খারাপ হবে।”

#চলবে…..

আমার প্রেয়সী পর্ব-১২

0

#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_১২
#জান্নাত_সুলতানা

আষাঢ় শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।শরীর কাঁপছে আর্শিয়ান ঠাহর করতে পারছে সেটা।মেয়ে টা ভয় পেয়েছে কি?
কিছু বলছে না কেনো?
আর্শিয়ান চিন্তিত। চিন্তায় অস্থির আর্শিয়ান। নিজের অধর এক হাতের আঙ্গুল এর সাহায্যে মুছে নিলো।তরল কিছুর স্পর্শ আঙ্গুলে পেলো কি?বৃদ্ধা আঙ্গুল টা সামনে ধরতেই অল্প আলোয়ে দেখা মিললো কিছু টা লাল রক্ত টিপটিপ বৃষ্টির পানির সাথে ধুয়ে যাচ্ছে। আর্শিয়ান চমকালো।অবাক হলো বটে।কখন করলো এতো ক্ষত-বিক্ষত তার আষাঢ় মাস কে?সে তো টেরই পেলো না।মেয়ে টা ব্যাথা পেয়েছে কি?
নিশ্চয়ই পেয়েছে। ঠোঁট কেটেছে দাঁতের সংঘর্ষে।নিশ্চয়ই জ্বলছে। আর্শিয়ান ঝটপট আষাঢ়’র কাঁপতে থাকা দেহটা বুকের মাঝে জড়িয়ে নিলো।অপরাধী কণ্ঠে জানালো,

-“আমি বুঝতে পারি নি।
এটা কখন করলাম!ব্যাথা দিতে চাই নি জান।”

-“ব্যাথা পাই নি আমি।”

আষাঢ় মাথা নিচু রেখেই মিনমিন করে বললো।আর্শিয়ান ওর মুখ টা দুই হাতের আঁজলে নিলো।ডান হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে নিচের ঠোঁটে লেগে থাকা অল্পস্বল্প রক্ত টা মুছে দিয়ে আগের ন্যায় কণ্ঠে বললো,

-“রক্ত এসেছে?”

-“কিচ্ছু হবে না।
ঠিক হয়ে যাবে।”

মেয়ে টা তাকালো না সামনে দাঁড়ানো তামাটে বর্ণের পুরুষ টার দিকে। চোখ বন্ধ করে রেখেই জানালো।
আর্শিয়ান দেখলো ওকে।হঠাৎ বাঁকা হেঁসে বলে উঠলো,

-“এটা ট্রেলার।
পিকচার এরচেয়েও বেশি ভয়ানক হবে আষাঢ় মাস।বি রেডি।”

আর্শিয়ান এর কণ্ঠে কি ছিলো আষাঢ় জানে না। তবে মানুষ টা ভয়ংকর তারচেয়েও ভয়ংকর হবে মানুষ টার ভালোবাসাময় স্পর্শ গুলো আষাঢ় সেটা কিছু টা হলেও আজ আন্দাজ করতে সক্ষম হয়েছে।

——

রাতে আষাঢ় ঠোঁটে মলম লাগিয়েছিলো।সে-ই জন্য কাটা জায়গায় অনেক টা শুঁকিয়ে গিয়েছে।কিছু টা লালচে ভাব রয়েছে এখনো।তবে কেউ দেখলে বুঝতে পারবে না কাল রাতে এই অধর জোড়ার উপর শক্ত পুরুষালী ঠোঁটের হামলার শিকার হয়েছে।আজ শুক্রবার অনেকে এখনো ঘুম থেকে ওঠে নি।শুক্রবার সবার ছুটির দিন।বেশ বেলা করে সবাই ঘুম থেকে ওঠে।
বাড়ির সব মহিলারা রান্না ঘরে।মোহনা কে তেমন বেশি কাজ করতে দেয় না কেউ।বয়স তেমন বেশি নয়।হয়তো তাসফিয়া আয়াত এর চেয়ে বছর তিন বছর এর বড়ো হবে।কিন্তু মোহনা নিজ থেকে এটাসেটা জায়েদের হাতে হাতে এগিয়ে দেয়।বারণ করলেও শোনে না।
এইযে এখনো রান্না ঘরে এ নিয়ে মাতামাতি হচ্ছে।আষাঢ় ডাইনিং থেকে শুনতে পাচ্ছে সে-সব।এখনো নাস্তার টেবিলে তেমন কেউ আসে নি।আষাঢ়, তায়েফ তায়ুশ, নাসির,আর তাসরিফ আয়াত বসে আছে। বিশাল বড়ো এই ডাইনিং টেবিলে ছয় জোড়া চেয়ার রয়েছে।
আষাঢ়’র দাদা দাদি ছিলেন বেশ সৌখিন মানুষ।ছেলেমেয়েদের জন্য বাড়ি যেমন বিশাল বড়ো করে তৈরী করেছেন তেমন সেটার ভেতর আসবাপত্র দিয়েও দিগুণ সুন্দর করে সাজিয়ে তুলেছেন।বাড়ির প্রতিটা জিনিসপত্রে কেমন একটা জমিদার জমিদার ভাব রয়েছে।
আষাঢ় এর ভালো লাগে এসব।যদিও বাড়ি কয়েকবছর পরপরই রং করা হয় সাথে সব ফার্নিচারও পরিবর্তন করা হয়।তবে কিছু জিনিস সেই শব্দ তালুকদারের হাতের রয়ে গিয়েছে।
আষাঢ় খাবার শেষ করে সোফায় বসলো তায়েফ তায়ুশ এর সাথে। ওরা কার্টুন দেখছে আষাঢ়ও ওদের সাথে দেখতে লাগলো।এরমধ্যে খাবার টেবিলে বসে নাস্তা করতে থাকা আর্শিয়ান এর দিকেও আঁড়চোখে তাকাচ্ছে।
আর্শিয়ান অবশ্য একবারও তাকায় নি।এদিকে যাওয়ার সময় একবার তাকিয়ে ছিলো তাও সেকেন্ড সময় এর জন্য। এতেই আষাঢ় এর হুঁশ হারায়। মানুষ টার চাহনি আষাঢ় একদম নিতে পারে না। কেমন নেশা ধরে যায়।
আষাঢ় আনমনা হয়ে বসে ছিলো।হঠাৎ থাপ্পড় এর আওয়াজ কানে আসতে চমকে উঠলো। আশেপাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো আওয়াজ কোথা থেকে এসছে।আর বুঝতে সক্ষম ও হলো।আয়াত গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পাশে শিউলি বেগম চোখ রাঙিয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই হয়তো অবাক হয়েছে। তাই কিছু বলতে পারছে না। আষাঢ় নিজেও অবাক মা কেনো আপা কে মেরেছে বুঝতে পারলো না। তায়েফ তায়ুশ ভয়ে একদম চুপ করে আষাঢ় এর পাশ ঘেঁষে বসে আছে।
হঠাৎ আষাঢ়’র বাবা-র আলতাফ তালুকদার অবাক কণ্ঠে ওনার স্ত্রী কে ডেকে ওঠে বললো,

-“শিউলি।
কি করছো তুমি মাথা ঠিক আছে তোমার?”

-“বেশ করেছি।
এই থাপ্পড় টা আরো আগে দিলে আজ এতোটা বাড় বাড়তে পারতো না।
শুধু আপনার জন্য আজ মেয়ের এই অবস্থা হয়েছে।”

শিউলি বেগম রাগী কণ্ঠে আয়াত এর দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলে উঠলো। সাঈদ অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে।হাত দু’টো মুঠোবন্দি করে।হয়তো সাধ্য থাকলে আজ নিজের প্রেয়সী কে নিজের বাহুডোর আগলে রাখতো।কিন্তু সেই অধিকার এখনো হয় নি যে।আর মা বাবা সন্তান কে শাসন করতেই পারে।এখানে কারোর কিছু বলার অধিকার নেই।

-“শিউলি আমি মরে যা-ই নি।
আমার মনে হয় তোমার মাথা ঠান্ডা করা বেশি প্রয়োজন।”

-“ভাইজান,,,

আকরাম তালুকদার হাতের ইশারায় থামিয়ে দিলো শিউলি বেগম কে।
জিগ্যেস করলো,

-“বড়ো ভাই মানো তো আমায়?তাহলে আশা করছি আমার উপর ভরসা রাখবে।”

-“আমি এখানে কারোর মতামত চাইবো না।
শুধু সাঈদ চাইলে অবশ্যই আমাদের মেয়ে কে আমরা ওর হাতে তুলে দেবো।”

পরপরই আকরাম তালুকদার কথা গুলো বললো।
সাঈদ মায়ের দিকে তাকালো। নাসিমা বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে। তিনি কস্মিনকালেও ভাবতে পারে নি ছেলে কাউ কে ভালোবাসে।তবে কিছু টা অনুমান করেছিল হয়তো তাসফিয়ার সাথে কিছু আছে। সেই অনুমান মোতাবেক তিনি এগিয়ে ছিলো।তবে এখন নিজে কে কেমন হাসির পাত্রী মনে হচ্ছে।ছেলের ভালোর জন্য তিনি সেসব গিলে নিলেন।মাথা নাড়িয়ে সায় জানাতেই সাঈদ সবার অগোচরে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলো।অতঃপর নিজের মতামত জানালো,

-“আমি রাজি মামা।”

সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে।
তাসরিফ তাসফিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।মেয়ে টা খুশি হয়েছে। তাসরিফ নিজেও তাসফিয়ার দিকে তাকিয়ে হাসলো।আষাঢ় বোনের দিকে তাকিয়ে আছে। আয়াত চোখে জল মুখে লজ্জা নিয়ে মাথা নিচু করে ধীরেধীরে হেঁটে উপরে নিজের রুমের উদ্দেশ্যে চলে গেলো।আষাঢ় তখন আর্শিয়ান এর দিকে তাকালো।মানুষ টা কেমন করে এতো বড়ো অসম্ভব একটা বিষয় কে সম্ভব করে নিলো।

——–

আয়াত কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে সাঈদ। আয়াত হয়তো কান্না করছে। শরীর একটু পরপরই কেঁপে উঠতে দেখে আষাঢ়’র তাই মনে হলো।আষাঢ় দরজা থেকে সরে এলো।দু’জন ভালোবাসার মানুষ একে-অপরকে পাওয়ার স্বপ্ন পূর্ণ হতে যাচ্ছে। সেই মানুষ দু’টোর কাছে এরচেয়ে বেশি আনন্দ আর কি হতে পারে!
আষাঢ় আর্শিয়ান এর রুমের সামনে এসে একবার উঁকি দিলো রুমের ভেতর। নাহ কেউ নেই। আষাঢ় মাথা উঁচু করে পেছনে ঘুরে দাঁড়াতেই কারোর শক্তপোক্ত চওড়া বুকের সাথে মাথা ধাক্কা লাগলো। আষাঢ় চোখ বন্ধ করে ভ্রু কুঁচকে নিলো।তবে চিরপরিচিত গন্ধ পেতেই চোখ তুলে তাকিয়ে লজ্জায় চোখ আবার নিচু করে নিলো।আর্শিয়ান তাকিয়ে আছে আষাঢ়’র দিকে।মেয়ে টাকে দেখলে ইদানীং নিজে কে কন্ট্রোল করা দায় হয়ে যাচ্ছে।
নাদুসনুদুস এই সুন্দরী সপ্তদশী কন্যা আষাঢ় কে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে নিজের সম্পূর্ণ ভালোবাসা উজাড় করে ভালোবাসতে মন চায়।
কিন্তু এমন টা তো সম্ভব নয়।আর্শিয়ান ফোঁস করে শ্বাস ফেলে ঘরে চলে গেলো।
আষাঢ় ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রইলো। এভাবে চলে গেলো কেনো মানুষ টা?
বুঝতে পারে না আষাঢ়। আষাঢ় কিছু বলবে তার আগেই আর্শিয়ান দরজা বন্ধ করতে করতে বললো,

-“সামনে আসবি না।
আমার ভয়ংকর কিছু করতে মন চায় তোকে সামনে দেখলে, যা সহ্য করার ক্ষমতা তোর এখনো হয় নি।”

#চলবে….

আমার প্রেয়সী পর্ব-১১

0

#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_১১
#জান্নাত_সুলতানা

-“তুমি কিছু বলবে সাঈদ?”

আকরাম তালুকদার রুমে বসে ছিলো।খাবার শেষ আজ তিনি একটু দ্রুত রুমে চলে এসছে। শর্মিলা বেগম এখন রুমে আসে নি। তিনি শোয়ার প্রস্তুতি নিতেই দরজায় কেউ নক করে। ভেতরে আসার অনুমতি দিলে সাঈদ ভেতরে প্রবেশ করলো।
সাঈদ কিছু টা নার্ভাস। সেটা আকরাম তালুকদার দেখা মাত্র আন্দাজ করতে পেরেছিলো।সেইজন্য তিনি না শুয়ে বিছানা ছেড়ে ওঠে এগিয়ে আসতে আসতে উপরোক্ত প্রশ্ন টা সাঈদ কে করলো।
সাঈদ দৃষ্টি এলোমেলো ঘুরালো। বড় মামা কে সে বেশ সম্মান করে শ্রদ্ধা করে। ওনার সামনে প্রেম ভালোবাসার কথা বলতে ইতস্তত বোধ করাটা স্বাভাবিক। তবুও আজ কিছু করার নেই। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। আজ যদিও আট সেকেন্ড এর তিন টা শব্দ না বলতে পারে তাহলে আগামী আশি বছর আফসোস নিয়ে বয়ে বেড়াতে হবে। তাই সাহস করে বলেই ফেললো,

-“আমি আয়াতকে ভালোবাসি।”

আকরাম তালুকদার অবাক হলো।তবে মুখের আদল গম্ভীর করে রাখলেন।এমন কিছু তিনি আশা করে নি।তবে কিছু একটা গন্ডগোল আছে সেটা বুঝতে পারছিলো।তবে এখন বিষয় টা ভাবার প্রয়োজন।কিন্তু তার আগে আরো একটা কথা জানা জরুরি। তাই তিনি গম্ভীর স্বরে জিগ্যেস করলো,

-“আয়াত?”

-“হ্যাঁ।”

সাঈদ এতো সময় লজ্জায় অস্বস্তিে মাথা নিচু করে ছিলো।তবে বড় মামার প্রশ্নে মাথা তুলে আকরাম তালুকদার এর দিকে তাকিয়ে অকপট জবাব দিয়ে দিলো।
আকরাম তালুকদার এবার কুঁচকানো ভ্রু জোড়া আগের স্থানে ফিরে এলো।শান্ত কণ্ঠে জানতে চাইলো,

-“মাকে বলেছো?”

-“আমি বুঝতে পারি নি মা এমন কিছু করবে। তাই এখন মায়ের কাছে কথা টা বলার আগে আমার মনে হলো তোমাকে জানানো প্রয়োজন।”

আকরাম তালুকদার গভীর চিন্তায় মগ্ন হলেন।সত্যি বিষয় টা একটু ঘেঁটে গেলো।তবে কোনো ব্যাপার না যেহেতু পরিবারে মধ্যে রয়েছে বিষয় টা তাই তেমন কোনো ঝামেলা হবে না তাই ভাবলো ব্যাপার টা দ্রুত মিটিয়ে নিবে।
সাঈদ কে এব্যাপারে কিছু জানালো না।শুধু বললো কাল এসব নিয়ে কথা বলবে।সাঈদ মাথা নাড়ে।সাঈদ রুম থেকে বেরিয়ে যেনো আঁটকে রাখা নিঃশ্বাস টা ছাড়লো।বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিলো নাসির তাসরিফ তাসফিয়া।সাঈদ বেরিয়ে আসতেই নাসির ওর হাত টেনে ধরে দোতলায় করিডরে নিয়ে গেলো।চিন্তিত স্বর কৌতুহল নিয়ে জানতে চাইলো,

-“বড় মামা কি বললো?”

-“তোমার ভাই তো।
তাই কিছু বলে নি।”

সাঈদ বললো।নাসির সাঈদ এর থেকে দূরে দাঁড়ালো। গায়ের গেঞ্জি টেনেটুনে ঠিক করে বলে উঠলো,

-“খবরদার সাঈদ আমি মোটেও বড় ভাইজান এর মতো নয়।আমি কোনো কাজ ঝুলিয়ে রাখি না।”

নাসির এর ভাবসাব দেখে তাসরিফ বিরক্ত হলো।টেনশনে বেচারার মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়। হওয়ার জোগাড় কি অলরেডি সে অর্ধেক পাগল হয়ে গিয়েছে। তাই নাসির এর কথায় পাত্তা না দিয়ে সাঈদ কে অস্থির কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,

-“সত্যি কিচ্ছু না?”

-“বলেছে কাল এসব নিয়ে কথা হবে।”

সাঈদ দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে জানালো।তাসফিয়া হতাশার শ্বাস ছাড়ে। সাঈদ চলে গেলো।নাসির নিজেও গেলো।বউ তার জন্য নিশ্চয়ই অপেক্ষা করছে।বউ কে দেখার জন্য মন টা বড্ড অস্থির অস্থির করছে। তাই দ্রুত রুমের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো।
তাসফিয়া হেলেদুলে রুমের দিকে যাওয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়াতেই তাসরিফ ওকে আগলে দাঁড়ালো।
তাসফিয়া ভ্রু কুঁচকে তাকালো তাসরিফ এর দিকে। তাসরিফ নিজের বা গালে হাতের আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে আবদার স্বরে বলে উঠলো,

-“প্লিজ একটা।
ঘুম আসে নি কাল রাতে।আজ একটা দিয়ে দাও জান।”

তাসফিয়া লজ্জায় কান গরম হয়ে আসে। মাথা নিচু করে নিলো।তাদের প্রেম টা কখন হয়েছিলো তাসফিয়ার জানা নেই। তবে তাসরিফ এর দিকে কখনো সেভাবে তাকায় নি।
সব সময় আর্শিয়ান এর মতো তাসরিফ কেও ভেবে এসছে।কিন্তু কথায় আছে না। মেয়েরা ঠিক বুঝতে পারে কোন ছেলে তার দিয়ে কি নজরে তাকায়।তেমন ধীরে ধীরে তাসফিয়া বুঝতে পারে তাসরিফ ভাই মোটেও ওর দিকে বোনের নজরে তাকায় না।যেমন টা আয়াত আষার এর দিকে তাকায়।

-“একটা প্লিজ।”

তাসফিয়া চমকে উঠলো।গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এসে তাসরিফ এর বা পাশে দাঁড়ালো।কিছু টা উঁচু হয়ে অধর ছুঁয়ে দিলো তাসরিফ এর ফর্সা চাপদাড়ি ভর্তি গালে।তাসরিফ চোখ বন্ধ করে স্পর্শ টা অনুভব করলো।তবে চোখ খুলে আর তাসফিয়ার দেখা পেলো না। এদিকওদিক খুঁজেও দেখা মিলে না।মুচকি হেঁসে এক হাতে মাথার পেছনে চুল খামচে ধরে কিছু টা দূরে তাকাতেই চক্ষু বেরিয়ে আসার মতো অবস্থা হলো।তায়েফ ওর নিজের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বেচারা ড্যাব ড্যাব করে যে চশমার ভেতর দিয়ে তাসরিফ এর দিকে তাকিয়ে আছে বুঝতে একটু অসুবিধা হলো না।তায়েফ কিছু বলবে তার আগেই তাসরিফ ইশারা করে বললো বলে গেলো কাল চকলেট দিবে।কিন্তু তায়েফ তখনো ঘোরে আছে।

—–

-“আর্শিয়ান ভাই?”

আষাঢ় মৃদু স্বরে ডাকলো।আর্শিয়ান আষাঢ় ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে।আর্শিয়ান রেলিঙের উপর বসালো আষাঢ় কে।আষাঢ় ভয় পেলো না। আর্শিয়ান এর গলা জড়িয়ে ধরলো। আর্শিয়ান আষাঢ়’র গালে এক হাত রাখলো।নিজেও মৃদু স্বরে জবাব দিলো,

-“হ্যাঁ বল।”

-“আপনি এতো সুন্দর কেনো?”

আর্শিয়ান ভ্যাবাচেকা খেলো।কি বলে এই পুঁচকে মেয়ে।ওর তুলনায় আর্শিয়ান ভাই তো একদম কালো।কিন্তু তার ব্যক্তিত্ব যেকোনো নারী কে ঘায়েল করতে সক্ষম। বডি ফিটনেস, চুলের স্টাইল, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি,অল্পস্বল্প গোলাপি রঙের অধর।আষাঢ় মাঝেমাঝে ভাবে ও এতো ফর্সা হয়েও বোধহয় ঠোঁট গুলো আর্শিয়ান ভাইয়ের মতো এতো সুন্দর নয়।কালো মানুষ সুন্দর তাদের আলাদা একটা সৌন্দর্য থাকে।আষাঢ় হয়তো আর্শিয়ান ভাই কে না দেখলে বিশ্বাস করতো না।
আর্শিয়ান ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলো,

-“তোকে কে বললো আমি সুন্দর?”

-“হ্যাঁ আপনি সুন্দর।
আমার চোখে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সৌন্দর্যের অধিকারী পুরুষদের মাঝে আপনি একজন আর্শিয়ান ভাই।”

আষাঢ় মুগ্ধতা নিয়ে বললো।
আর্শিয়ান আষাঢ়’র বাতাসে উড়তে থাকা এলোমেলো চুল গুলো ঠিক করে দিতে দিতে মোলায়েম কণ্ঠে জানালো,

-“তোমার ভালোবাসার মানুষ তোমার চোখে বিশ্বের সেরা সুন্দর।এটা বাস্তব।”

রাত প্রায় সাড়ে বারো টা বাজে।বাড়িতে হয়তো সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।আকাশে অল্পস্বল্প বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে সেই সাথে পূর্ব দিক থেকে বাতাস বইছে। আকাশ একদম ঘুটঘুট অন্ধকার। এতোক্ষণ তো ভালোই ছিলো।চাঁদ ছিলো।মেঘ গুলো হয়তো কিছু সময় ব্যবধানে আসমান হতে জমিনের মাটিতে বৃষ্টি হয়ে গড়িয়ে পরবে।আর্শিয়ান অন্ধকার আকাশ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আষাঢ়’র দিকে তাকালো। আষাঢ়’র কোমড়ে দুই হাত রেখে রেলিঙের উপর থেকে নামাতে নামাতে সন্দিহান কণ্ঠে বললো,

-“বৃষ্টি আসবে হয়তো।
চল রুমে যা।”

-“না।”

আর্শিয়ান ঘুরে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়ে আষাঢ়’র কণ্ঠ শোনে অবাক হলো।
ভ্রু উঁচিয়ে পেছন ফিরে আষাঢ়’র হাত ছেড়ে জিগ্যেস করলো,

-“কি?”

-“বৃষ্টিতে ভিজবো আর্শিয়ান ভাই।”

আষাঢ় আহ্লাদী স্বরে বললো।
আর্শিয়ান তড়িৎ আবদার নাকচ করে দিয়ে সাবধানের সহিতে জানালো,

-“নো, নেভার।
আগের বার মনে নেই বৃষ্টিতে ভিজে পনেরো দিন জ্বর ছিলো।”

-“তখন আপনি ছিলেন না।এখন তো আপনি আছেন।”

-“আষাঢ় একদম,,,

আষাঢ় শুনলো না। আর্শিয়ান কে টেনে নিয়ে ছাঁদের ঠিক মাঝে গিয়ে দাঁড়ালো। আর্শিয়ান চেয়েছে বলেই আষাঢ় টেনে নিতে সক্ষম হয়েছে নয়তো আষাঢ়’র মতো মেয়ে আর্শিয়ান কে ধাক্কা মেরেও নড়াতেও পারবে না।
বৃষ্টির ছোট ছোট ফোঁটা পড়তে শুরু করেছে। ছাঁদের দরজায় একটা লাইট আছে সেটার অল্পস্বল্প আলো এসে ছাঁদে পড়ছে।যার ফলস্বরূপ পরিবেশ টা দারুণ এক সুন্দর দেখাচ্ছে। আষাঢ় একটা লেমন কালার থ্রি-পিস পড়ে আছে। ওড়না টা পাতলা জর্জেট কাপড়ের। গলায় দেওয়া। আর্শিয়ান আষাঢ় এর দিকে এক ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।এতো বছর চেপে রাখা অনুভূতি গুলো বেরিয়ে এসে ভয়ংকর কিছু ঘটাতে চাইছে।যেগুলো আর্শিয়ান এর জন্য নিষিদ্ধ। কিন্তু কথায় আছে না নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি ঝোঁক মানুষ জাতির সবসময়ই বেশি। ঠিক সেটাই হলো আর্শিয়ান এর সাথে মন শুনলই না তার বারণ।মস্তিষ্ক বাঁধা দিলেও মন শুনলো না।ধীরগতিতে কদম ফেলে আষাঢ়’র দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।আষাঢ় বৃষ্টি ভিজতে ব্যস্ত। যদিও বৃষ্টি তেমন ভাবে পড়ছে না। তবে এই অল্প বৃষ্টিতেই আষাঢ়’র শরীরে জামাকাপড় পুরোপুরি ভিজে গিয়েছে।আর্শিয়ান জানে তার আষাঢ়’র মাসের দিকে এভাবে তাকানো ঠিক না।তাদের মনের মিলন হলেও এখনো যে একে-অপরের জন্য হালাল নয়।কিন্তু নিজের মন কে আর্শিয়ান কিছুতেই বোঝাতে পারছে না।একটু হলেও এখন তার আষাঢ় কে চাই।একটু বেশি না।
আর্শিয়ান নিজের বা হাত এগিয়ে আষাঢ়’র কোমড়ে রাখলো।আষাঢ় কিছু টা চমকে ওঠে ফিরে তাকাতেই আর্শিয়ান কে নিবুনিবু চোখে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে শরীরের শিরদাঁড়া দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেলো।বুঝতে সময় লাগলো না আর্শিয়ান ভাই ঘোরে আছে। আর এই ঘোরে থেকেই হয়তো ওনি কোনো ভুল করে বসবে।আষাঢ়’র ভাবনা সত্যি হলো।
আর্শিয়ান চট করে নিজের মুখ এগিয়ে আনলো।মাথার পেছনে নিজের দানবীয় হাতের সাহায্যে আষাঢ়’র চুল সহ ঘাড় শক্ত করে ধরে বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে আষাঢ়’র ঠোঁটে স্লাইড করতে করতে এগিয়ে আনলো আষাঢ়’র মুখ।নিজের মুখ টা নিচু করে ফিসফিস করে বলে উঠলো,

-“এটা ভুল, পাপ আমি জানি। কিন্তু এই ভুল আর পাপ টা আমি আজ করতে চাই আষাঢ় মাস।প্লিজ তুই অভিমান করিস না সোনা।”

#চলবে….

আমার প্রেয়সী পর্ব-১০

0

#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_১০
#জান্নাত_সুলতানা

আর্শিয়ান এর কথা মতো আষাঢ় আয়াত এর সাথে রেডি হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো।পড়নে আর্শিয়ান এর দেওয়া সাদা পাকিস্তানি থ্রি-পিস।
এখন বাজে সকাল দশ-টা। বাড়িতে মহিলারা ব্যতিত আর কেউ নেই।সকাল সকাল সাঈদ, তাসরিফ তাসফিয়া বেরিয়ে গিয়েছে। নাসির তালুকদার এখন বাড়ি ফিরে নি।আষাঢ় শুনেছে আজ বিকেলে না-কি চলে আসবে।দুই বোন একটা রিকশা ঠিক করে সেটায় চড়ে বসলো।আয়াত বারকয়েক আষাঢ় জিগ্যেস করলো কোথায় যাচ্ছে তারা।কিন্তু আয়াত বারবার শুধু একই জবাব দেয় গেলই দেখতে পারবি।রাতে আর্শিয়ান ভাইও বললো না। কি অদ্ভুত। সবাই এতো রহস্যময় কেনো আষাঢ়’র এই ছোট মাথায় বুঝে আসে না।

একটা শপিংমল এর সামনে রিকসাওয়ালা রিকসা থামালো।আয়াত নেমে ভাড়া মিটিয়ে আষাঢ় এর হাত ধরে ভেতরে প্রবেশ করলো। সোজা লিফটে করে চারতলায় গিয়ে নামলো।সেখানে একটা রেস্টুরেন্ট রয়েছে।তালুকদার বাড়ির প্রায় সবাই এটাতে আসে। ভেতরে প্রবেশ করে আষাঢ় থমকালো।অবাক হলো।সব-কয়টা পরিচিত মুখ।
সবাই এখানে কেনো এসেছে কিছুই বুঝতে পারছে না।নাসির, মোহনায় সবাই এখানে। কিন্তু কেনো?
ওরা গিয়ে গিয়ে একটা টেবিলে বসলো।
আষাঢ় চারদিকে দৃষ্টি বোলালো।আর্শিয়ান ভাই কোথায়? সবাই কে তো মানুষ টা এক সাথে হতে বলেছে এখন মানুষ টা নিজেই উধাও।
সবাই চিন্তিত। মুখে কারোর কোনো কথা নেই।
তাসরিফ উশখুশ করছে।আয়াত নির্বিকার ভঙ্গিতে বসে আছে। পাশে তাসফিয়া বারবার চোখ ছোট ছোট করে তাকাচ্ছে তাসরিফ এর দিকে।সাঈদ নাসির তালুকদার এর সাথে কথা বলছে।
মোহনা হয়তো কিছু বুঝতে পারছে না সবাই এখানে কেনো এভাবে বসে আছে।তাই আষাঢ় কে নিচু স্বরে জিগ্যেস করলো,

-“আষাঢ় বাড়িতে কিছু হয়েছে?”

-“নাহ ছোট মা।
সাঈদ ভাইয়ার সাথে তাসফিয়া আপুর বিয়ের কথা বলেছে ছোট মনি এটুকুই।”

মোহনা হয়তো আরো কিছু জিগ্যেস করতো।কিন্তু তার সুযোগ আর পেলো না।
তার আগেই আর্শিয়ান এলো।এসেই আষাঢ় এর পাশে বসলো।এক পাশে মোহনা অন্য পাশে আর্শিয়ান। আষাঢ় মাঝে।অপর পাশে সাঈদ নাসির তাসরিফ। আর দুই পাশে আয়াত তাসফিয়া।
আর্শিয়ান এসেই আগে ওয়েটার ডাকলো।সাঈদ ক্ষেপে উঠলো।
দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে উঠলো,

-“শ্লা।তোর মনে হয় আমরা এখানে গিলতে এসছি?আমি টেনশনে কাল সারা রাত ঘুমুতে পারি নি।প্লিজ ভাই কিছু একটা কর।”

আর্শিয়ান সাঈদ এর কথায় পাত্তা দেয় না। ওয়েটারের কাছে অর্ডার দিয়ে তারপর তাকালো সাঈদ এর দিকে।
কালো শার্ট টার হাতা গুটিয়ে কনুইয়ের উপর রেখে বললো,

-“তো বল না সেটা তোর মাকে।”

সাঈদ আয়াত এর দিকে তাকালো। আয়াত চুপচাপ বসে আছে। এই মিটিং টা বাড়িতে করা যেতো।কিন্তু বাড়িতে এতোগুলা মানুষ এক সাথে বসে এসব আলোচনা করতে গেলে এটা নিয়ে নিশ্চয়ই কারোর না কারোর নজরে পড়ে যেতো।সাঈদ তাসরিফ এর দিকে তাকালো চোখ কটমট করে দাঁতে দাঁত পিষে বলে উঠলো,

-“এই তুই কিছু বলছিস না কেনো?
মনে হচ্ছে বিপদ শুধু আমার।বেশি ভাব নিবি তো তোর টা কেই বিয়ে করে নেবো,,,

সাঈদ এর সম্পূর্ণ কথা শেষ হওয়ার আগেই তাসরিফ অসহায় কণ্ঠ অথচ কিছু টা জোরেই বলে উঠলো,

-“সাঈদ ভাই।খুব খারাপ হবে।ভালো হবে না তাসফিয়ার দিকে নজর দিলে।”

তাসফিয়া লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলো।যতোই হোক বড়ো ভাইয়ের সামনে বসে আছে।যদিও আর্শিয়ান বোনের সাথে একদম ফ্রী। বোন কে সে অনেক ভালোবাসে যত্ন করে। কিন্তু তাসফিয়ার আজ তাও কেনো জানি লজ্জা অস্বস্তি সব হচ্ছে। আষাঢ় ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে তাসরিফ এর দিকে। এই মানুষ টা এমন? কখনো হাবভাবে তো এমন মনে হয় নি।কাল রাতের কিছু কথোপকথন শোনে আষাঢ়’র মাথা ঘুরে যাওয়ার জোগাড়।যদিও আষাঢ় ফোনের ওপাশের কথা শুনতে পায় নি।তবে তাসফিয়ার কথার ধরন এমন ছিলো “একদম না তাসরিফ ভাই।আমি এখন ছাঁদে কিছুতেই যেতে পারবো না।” এরপর ওপাশ হতে কি বলেছিলো আষাঢ় সেটাও শোনেনি। তবে তাসফিয়া বিচলিত কণ্ঠে বলছিল “আচ্ছা আচ্ছা দিচ্ছি।” পরপরই ফোন মুখের সামনে নিয়ে শব্দ করে চুমু খেয়েছিলো।আষাঢ় এটা ভবলেই মনে হচ্ছে তাসরিফ ভাই এমন মানুষ? সেটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।
আষাঢ় এর ভাবনার মাঝেই সাঈদ মুখ বেঁকিয়ে বললো,

-“এহ।আসছে।তাহলে বাড়িতে কিছু বলছিস না কেনো?”

তাসরিফ এতোক্ষণ শক্ত হয়ে বসে থাকলেও এবার নড়েচড়ে বসলো।সবার দিকে একপলক করে তাকালো।অতঃপর মিনমিন করে জানালো,

-“আমার বাপ জীবনে মানবে না।
বলবে নিজের চলার মতো সামর্থ্য তো হয় নি আবার এসছো আমার মেয়ে নিতে। তুমি তো জানো বাবা ওদের কত ভালোবাসে।”

-“এই চুপ কর তোরা।
কাজের কথা আসা যাক।”

আর্শিয়ান এর গম্ভীর স্বরে ধমক শুনে সবাই নড়েচড়ে উঠলো।ওয়েটার এসে এর মাঝে খাবার সার্ভ করে গেলো।সবাই কিছু সময় নীরব রইলো। মোহনা কিছু বুঝতে পারছে না। তবে এতটুকু বুঝতে পেরেছে তাসরিফ তাসফিয়া কে ভালোবাসে।কিন্তু সাঈদ কেনো বিয়ে করতে চাইছে না সেটা বুঝতে পারছে না।
আর্শিয়ান চামচ এর সাহায্যে মুখে বোরহানি তুলতে তুলতে সাঈদ কে উদ্দেশ্য করে বললো,

-“সাঈদ বাবা-র সাথে কথা বলবি আজ।
বাকি টা আমি সামলে নেবো।”

সাঈদ মুখ ভোঁতা করে নিলো।সামনের কাচ্চির প্লেট ঠেলে সরিয়ে দিয়ে টেবিলে হাত রেখে গালে হাত ঠেকিয়ে অসহায় মুখ করে বসে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,

-“হয়ে গেলো।
আমার নাওয়াখাওয়া হারাম করার জন্য এই সিচুয়েশনে টা যথেষ্ট।”

পাশ থেকে আয়াত শুনতে পেলো কথা টা।পা দিয়ে সাঈদ এর পায়ে গুঁতা মারতেই সাঈদ চমকে ওঠে সোজা হয়ে বসে গেলো।
আয়াত এর চোখের দিকে তাকিয়ে গড়গড় করে বলতে লাগলো,

-“তোর জন্য আমি সব করতে পারবো।
একদম যদি পরে উল্টো পাল্টা কিছু করেছিস তাহলে শাস্তিস্বরূপ বাসর রাতে আমি যা বলবো তা করতে হবে।”

সাঈদ এর কথায় প্রথমে সবাই মুগ্ধ হলেও লাস্ট কথায় সবাই ফিক করে হেঁসে উঠলো।আষাঢ় নিজেও হাসছে। আর্শিয়ান ওর হাত চেপে ধরতেই আষাঢ় চমকে উঠলো।
পাশে তাকাতেই দেখলো আর্শিয়ান খাবার খাচ্ছে।ভাবসাব এমন মনে হচ্ছে সে কিছু করে নি।
আষাঢ় ভ্রু কুঁচকে কিছু বলবে তার আগেই আর্শিয়ান নিচু স্বরে বলে উঠলো,

-“খাবার শেষ কর।”

আষাঢ় মাথা নিচু করে হাসলো।
মিনমিন করে বললো,

-“আমার হাত।”

আর্শিয়ান তৎক্ষনাৎ হাত ছেড়ে দিলো।
সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ বেরিয়ে এলো।অবশ্য খাওয়া আর কি।সাঈদ তাসরিফ তাসফিয়া তো খাবার মুখেই তুলে নি।টেনশন থাকলে পেটে খাবার যায় না-কি।
পার্কিং এরিয়ায় এসে সবাই গাড়িতে বসলো।আয়াত তাসফিয়া পেছনে বসলো।সাঈদ ড্রাইভিং সিটে তাসরিফ ওর পাশে। নাসির মোহনা শপিং করবে সেইজন্য তৃতীয় ফ্লোরে এসে ওরা দোকানে ঢোকে গিয়েছে।সাঈদ গাড়ি স্টার্ট করতেই আষাঢ় দৌড়ে এলো কিছু টা।আর্শিয়ান তখন ওর পেছনে। আষাঢ় গাড়ি টার দিকে তাকিয়ে আর্শিয়ান কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,

-“আপনার জন্য। কতবার বললাম তাড়াতাড়ি আসার জন্য। কিন্তু আপনি? সবাই চলে গেলো।আমাদের নিলো না।”

আষাঢ় বকবক করেই যাচ্ছে। ওরা সবার পেছনে ছিলো।আর্শিয়ান তখন এক হাত আষাঢ়’র হাতের ভাঁজে নিয়ে ধীরগতিতে হাঁটছিল।সেইজন্য ওদের আসতে লেইট হয়েছে। আর্শিয়ান বারকয়েক ডাকলো আষাঢ় কে।কিন্তু আষাঢ় নিজে কথা বলেই যাচ্ছে সেইজন্য আর্শিয়ান এর ডাক শুনতে পারছে না।আর্শিয়ান এবার জোরে ডাকলো।সেই সাথে দুই হাত আষাঢ়’র কাঁধের উপর রাখলো।

-“আষাঢ়।আষাঢ়।”

আষাঢ় আর্শিয়ান এর দিকে তাকালো।ভীত চোখে তাকিয়ে রইলো। আর্শিয়ান বাইক দেখিয়ে বলে উঠলো,

-“আমরা বাইকে যাব।”

আষাঢ় বাইক এর দিকে তাকিয়ে খুশি হলো।আর্শিয়ান গিয়ে বাইক নিয়ে এলো।আষাঢ় কে পেছনে বসতে ইশারা করলো।
আষাঢ় ওঠে বসলো।সেদিন এর মতো অস্বস্তি নিয়ে নয় একরাশ ভালো লাগা নিয়ে এক হাত কাঁধে রেখে অন্য হাত আর্শিয়ান এর ঠিক বুকের বা পাশে রাখলো।আর্শিয়ান তৃপ্তির হাসি হাসলো।আষাঢ় দেখলো না।একবার দেখলে হয়তো বুঝতে পারতো মানুষ টা ওকে কতা টা ভালোবাসে।ওর একটু ছোঁয়া আশেপাশে থাকা মানুষ টাকে কতটা শান্তি দেয় সেটা হয়তো অনুভব করতে পারতো।

#চলবে….

আমার প্রেয়সী পর্ব-০৯

0

#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_৯
#জান্নাত_সুলতানা

আর্শিয়ান বাড়ি ফিরেছে কিছু সময় আগে।এখন রাত সাড়ে ন’টা।ডাইনিং টেবিলে খাবার দিচ্ছে মহিলারা।জগে পানি আর টুকটাক যা লাগে কাজের লোক দিচ্ছে। তায়েফ তায়ুশ কে শিউলি বেগম খাবার খাইয়ে দিচ্ছে। আষাঢ় কেও ডেকেছিল। কিন্তু আষাঢ় খাবে না জানিয়েছে মা কে।এখন খাবার খেয়ে নিলে আর্শিয়ান ভাই কে যে আর আজ রাতে এক পলক দেখা হবে না। খাবার শেষ হলেই শিউলি বেগম মেয়ে কে ঠেলেঠুলে রুমে পাঠিয়ে দিবেন আষাঢ় সেটা ভালো করে জানে।তাই গাপটি মেরে আয়াত, তাসফিয়া, সাঈদ, সাইফ, তাসরিফ এর সাথে বসে রইলো।আষাঢ় এর বড়ো ফুফি আনোয়ারা বেগম গতকালই চলে গিয়েছে।ছেলে বউয়ের শরীর বিশেষ ভালো নেই।নয় মাসের ভরা পেট।বাড়িতে কেউ নেই। পুত্র বধূ বাবা-র বাড়ি রয়েছে। বাড়িতে কেউ নেই। আষাঢ়’র ফুফা অনেক আগে ভদ্র লোক ইন্তেকাল করেছেন। কোনো এক কঠিন ব্যামো ছিলো ওনার। বাড়িতে কেউ নেই তিনি একা। তাই তাসফিয়া কে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু তাসফিয়ার আজ একটা গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস ছিল সেজন্য যেতে পারে নি।পরে আষাঢ় কে যাওয়ার জন্য বললে আর্শিয়ান বারণ করে দিয়েছে। এতে অবশ্য যথেষ্ট কারণ রয়েছে। আনোয়ারা বেগম এর এক দেবর এর ছেলে রয়েছে বখাটে। যদিও আর্শিয়ান নিজের বোন কেও যেতে দিতো না।
আনোয়ারা বেগম আর বেশি বাড়াবাড়ি করলো না।যদি কোনো খারাপ কিছু হয় সেই ভয়ে ভাইয়ের মেয়েদের আর সাথে নিলো না।আষাঢ় অবশ্য এতে প্রাণ ফিরে পেয়েছিল।ওখানে গেলে আর্শিয়ান ভাই কে যে দেখতে পারবে না সেটা ভেবে।

-“এই বন্যা খেতে আয়।
বড়ো মা ডাকে শুনছিস না?”

হঠাৎ আয়াত এর ডাকে চমকে উঠলো আষাঢ়।কি বলে ডেকেছে টনক নড়তেই রেগে গেলো।
সাবধান করে দিয়ে বলে উঠলো,

-“খবরদার আপু তুমি আমায় ওইসব বলবে না।
আমার নাম আষাঢ়।”

-“তো ঘুরেফিরে একই তো হলো।
আষাঢ় মাস মানে তো বৃষ্টি আর বেশি বৃষ্টি মানে বন্যা।”

আয়াত সোজাসাপটা বলে দিলো।
হাফসা বেগম এবার আয়াত কে ডেকে ওঠে বললো,

-“আহ কি হচ্ছে আয়াত!আমার মেয়ে টা কে কেনো রাগাচ্ছিস শুধু শুধু?
আষাঢ় আয় তো মা এখানে বস।”

দুই টা চেয়ার ফাঁকা আছে।
আষাঢ় গিয়ে একটায় বসলো।সবাই বসে গিয়েছে বাড়ির মহিলারা বাদে।আষাঢ় জানে আর্শিয়ান ভাই এখন এখানে এসে বসবে।লোক টা এখনো আসছে না কেনো?অদ্ভুত! এতো সময় কি করে রুমে?
আষাঢ় সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে প্লেটে মায়ের থেকে ভাত নিলো।শিউলি বেগম মেয়ের গতিবিধি লক্ষ করছে বেশ কিছু দিন ধরে। মায়ের মন তো হয়তো কিছু আন্দাজ করতে পারছে।শিউলি বেগম ভাবছে যদি তিনি যা ভাবছেন তা হলে খুব খারাপ হবে।না হলে তো শুকরিয়া। কিন্তু তাও মেয়ের সাথে এই বিষয়ে কথা বলবেন বলে মনস্থির করলো।
আষাঢ় মুখে খাবার তুলতে চপল পায়ে আর্শিয়ান কিছু টা আওয়াজ করে এসেই আষাঢ় এর পাশে বসলো।গম্ভীর মুখে নিজে হাতে প্লেটে ভাত নিতে নিতে অধর জোড়া খুব সাবধানে নেড়ে আওড়াল,

-“একটা খাবার প্লেটে থাকলে খুব খারাপ হবে আষাঢ়।
আমাকে না দেখলে কিছু হবে না। কিন্তু খাবার না খেলে বিয়ের পর তোর সাথে সাথে আমারও ভীষণ ক্ষতি হবে।”

আষাঢ় মন দিয়ে শুনলো কথা গুলো। তবে আগামাথা কিছু বুঝতে পারে না।তাই চুপ করে রইলো।কিন্তু কথা হচ্ছে মানুষ টা বুঝতে পারলো কি করে আষাঢ় তাকেই দেখছিলো?
খাবার খেলো আষাঢ় একঝাঁক প্রশ্ন মাথায় নিয়ে। খাবার শেষ সবাই বসলো লিভিং রুমে। মহিলারা খেয়ে তারাও এলো।নাসিমা বেগম তখন সাঈদ এর পাশে বসে আছে। কিছু নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন তিনি।শিউলি বেগম ননদ কে এভাবে আনমনা হয়ে বসে থাকতে দেখে জিগ্যেস করলো,

-“আপা শরীর খারাপ লাগছে আপনার?”

-“না ভাবি।”

নাসিমা বেগম অল্প হাসার চেষ্টা করে জানালো।আলতাফ তালুকদার ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলো,

-“তাহলে এমন দেখাচ্ছে কেনো তোমাকে?”

-“আসলে ভাইজান হয়েছে কি।
একটা কথা বলবো বলবো করে বলা হচ্ছে না। তোমাদেরও কাজের প্রেসার বেশি।”

আকরাম তালুকদার এতো সময় চুপ থাকলেও এবার কিছু টা সিরিয়াস হলেন।বোন এতো বণিতা করার মানুষ নয়।নিশ্চয়ই গভীর কিছু হবে।
তাই গম্ভীর স্বরে তিনি বলে উঠলেন,

-“এতো বণিতা করার কি আছে নাসু?
তুই কি এমন বলবি যে আমাদের বলতে দ্বিধা করছিস?”

তোফায়েল তালুকদারও বললেন,

-“হ্যাঁ হ্যাঁ আপা বলো!”

নাসিমা বেগম ছেলের দিকে তাকালো। সাঈদ বুঝতে পারছে না তার মা কি এমন বলবে?কেউই বুঝতে পারছে না কি বলবে নাসিমা বেগম। সবাই ওনার দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নাসিমা বেগম ছেলের দিক হতে দৃষ্টি সরিয়ে বড়ো ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,

-“আসলে ছেলের বয়স হয়েছে।
সব দিক চিন্তা করে মনে হচ্ছে ছেলের বিয়ে দেওয়া প্রয়োজন।”

-“হ্যাঁ, হ্যাঁ। ঠিক কথা বলছিস।
তা মেয়ে কি পছন্দ আছে?থাকলে বল আমরা দেখাদেখি করি।”

আকরাম তালুকদার সায় জানিয়ে বলে উঠলো।
নাসিমা বেগম দ্বিধা নিয়ে জানালো,

-“না ভাইজান ঘরে মেয়ে আছে। শুধু শুধু কেনো দূর থেকে কাউ কে আনবো।আমার আপনই আমার কাছে আসুক।আমি তাসফিয়া কে সাঈদ এর জন্য চাইছি।যেহেতু তাসফিয়া বাড়ির বড় মেয়ে।”

সাঈদ চমকালো।তার মা যে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে ভাবতেই পারছে না।সবার আগে বড়ো বড়ো আঁখি জোড়া দিয়ে আয়াত এর দিকে তাকালো। মেয়ে টা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে অনুভূতি শুন্য।তাসরিফ আর্শিয়ান এক সাথে বসে আছে। আষাঢ় তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। অপেক্ষা করছে কিছু বলবে এই দুই মানব কিন্তু না কিছু বললো না।মুখে কুলু এঁটে বসে আছে। তাসফিয়া তৎক্ষনাৎ নিজের রুমের উদ্দেশ্যে চলে গেলো।বড়রা ভাবলো লজ্জায়।কিন্তু আবার কেউ মনের অবস্থা বুঝতে পারলো।
বাড়ি টা মূহুর্তের মধ্যে কেমন শুনশান নীরবতা এসে হাতছানি দিলো।আকরাম তালুকদার গুরুগম্ভীর। আর্শিয়ান ভাবলেশহীন ভাবে উঠে রুমে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই তিনি ডাকলো ছেলে কে।
আর্শিয়ান পেছন ফিরে বলে উঠলো,

-“কিছু বলবে?”

-“একবার বনুর সাথে কথা বলো।
আপাতত পরে আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করবো।এখন ঘুমুতে যাও সবাই।”

আকরাম তালুকদার নিজের কক্ষের দিকে চলে গেলো।আস্তে আস্তে সবাই যেতে লাগলো সাঈদ মায়ের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে হনহন করে উপরে ওঠে গেলো।
নাসিমা বেগম ছেলের এমন চাহনির মানে বুঝতে পারে না।তবে বেশি কিছু না নিজের রুমে চলে গেলো।
সবাই যাওয়ার পর আর্শিয়ান তখনো সোফার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে আষাঢ় থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে। কেনো জানি রাগ হচ্ছে আর্শিয়ান ভাই এর উপর। সেইজন্য তাকালো না আষাঢ় আর্শিয়ান এর দিকে। আর্শিয়ান কিছু সময় নীরব রইলো।অপেক্ষা করলো প্রেয়সীর মুখ থেকে কিছু শোনার জন্য। কিন্তু আষাঢ় একদম চুপ।
আর্শিয়ান রয়েসয়ে আষাঢ় কে শান্ত কণ্ঠ অথচ গম্ভীর স্বরে ডাকলো,

-“আষাঢ়!”

আষাঢ় তৎক্ষনাৎ তাকালো পুরুষ টার দিকে।এই ডাক উপেক্ষা করার সাধ্যি আষাঢ়’র নেই।তবে মুখে কিছু বললো না। তাকিয়ে রইলো শুধু।
আর্শিয়ান আষাঢ়’র চোখের দিকে তাকিয়ে আদেশ করলো,

-“আমার রুমে আয়।”

আর্শিয়ান ইশারা করে চলে গেলো।
আষাঢ় ভ্রু কুঁচকালো।রুমে যেতে কেনো বললো?বুঝতে পারে না আষাঢ়।
যাবে না যাবে না করেও মন কে মানাতে পারলো না।
আষাঢ় কচ্ছপের গতিতে আগালো আর্শিয়ান ভাই এর রুমের উদ্দেশ্যে।
রুমের সামনে এসে আষাঢ় একবার উঁকি দিয়ে দেখলো ভেতরে আর্শিয়ান ভাই গম্ভীর হয়ে রুমে থাকা সিঙ্গেল সোফা টায় বসে আছে।সামনে সেন্টার টেবিলে একটা শপিং ব্যাগ রাখা।
আষাঢ় কে দেখে আর্শিয়ান দ্রুত পায়ে ব্যাগ হাতে এগিয়ে এলো।আষাঢ় অবাক হলো।রুমে ডেকে এখন দরজায় এমন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে মনে হচ্ছে আষাঢ় বিনা নিমন্ত্রণে চলে এসছে।
আষাঢ় চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে আর্শিয়ান এর দিকে।
আর্শিয়ান সামনে দাঁড়ানো নিজের প্রেয়সী কে দেখলো।মেয়ে টা বড়ো কেনো হচ্ছে না? কবে বড়ো হবে ও?আর্শিয়ান এভাবে ধরে বেঁধে নিজে কে আর কত কন্ট্রোল করবে?ভয় হয় বড্ড ভয় হয় কখন না আবার কোন ভুল হয়ে যায় এই ভেবে।
আর্শিয়ান ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে। আষাঢ় এর হাতে শপিং ব্যাগ টা দিয়ে আদেশ স্বরে বললো,

-“কাল কলেজ যেতে হবে না।
সকালে আয়াত এর সাথে বেরুবি এই ড্রেস টা পড়ে।”

#চলবে…..

আমার প্রেয়সী পর্ব-০৮

0

#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_৮
#জান্নাত_সুলতানা

আর্শিয়ান গাড়িতে বসে অপেক্ষা করছে কলেজ গেইট এর বাহিরে। চেহারায় ফুটে রয়েছে অস্থিরতা। কাউ কে এক পলক দেখার তৃষ্ণা চোখ জোড়া চাতক পাখির ন্যায় তাকিয়ে অপেক্ষা করছে কখন আসবে আর্শিয়ান এর আষাঢ়!খবর পেয়েছে আর্শিয়ান সাইফ মাত্র দু’ঘন্টা ক্লাস করে বিদায় নিয়েছে।ছোট বেলার কোনো এক ফ্রেন্ড এর সাক্ষাৎ পেয়ে তার সাথে চলে গিয়েছে।আয়াত তাসফিয়াও বাড়ি চলে গিয়েছে।সাঈদ ফোন করে এমনটাই জানিয়েছে। যদিও আর্শিয়ান রোজকার ন্যায় নিজের প্রেয়সী কে দেখার জন্য হলেও কলেজ আসতো।আড়াল থেকে দেখে আবার চলে যেতো।কিন্তু আজ আর আড়ালে থাকবে না।
আর সম্ভব নয় ও আড়ালে থাকা।কত চেপে রাখবে নিজের ভেতর অনুভূতি?কেনো লুকিয়ে রাখবে? যেখানে যাকে নিয়ে অনুভূতি সেখানে সে নিজেও তারজন্য পাগল।তাই এসব লুকিয়ে রাখার কোনো মানেই নেই।এবার অন্তত এই লুকোচুরি বাদ দাও যাক।কিন্তু এর পরিণয় দেওয়া খুব একটা সহজ হবে না। আবার খুব কঠিনও হবে না। যদি পরিবার না মানে তাদের মানাতে কাঠখড় পোড়াতে হবে। আর পরিবার এতো সহজে মেনে নিবেও না।

-“আর্শিয়ান ভাই?”

হঠাৎ আষাঢ়’র কণ্ঠে শোনে আর্শিয়ান চমকালো।তবে সেটা আষাঢ় কে বুঝতে না দিয়ে মুখের গম্ভীর ভাব রেখে কিছু টা ঝুঁকে গাড়ির দরজা খুলে আষাঢ় কে বসার জন্য ইশারা করলো।
আষাঢ় লাজুক হাসলো।পুরুষ টা ওর ভালোবাসার।ভাবতেই হৃদয়ে যেমন ভালো লাগার দোলা দিয়ে যায়। তেমন চোখে মুখে ফুটে উঠে অস্থির লজ্জা।
গাড়িতে বসে দরজা লাগালো আষাঢ়। আর্শিয়ান ততক্ষণে আষাঢ়’র কোলের উপর থেকে ব্যাগ নিয়ে পেছনের সিটে রেখে দিলো।আষাঢ় পাশ ফিরে মানুষ টা কে বারকয়েক আঁড়চোখে দেখলো।বড্ড অগোছালো লাগছে। চুলগুলো কিছু টা এলোমেলো।শার্ট এর ইন অনেক টা ঝুলে গিয়েছে।চোখে মুখে লেপ্টে রয়েছে ক্লান্তি।কিন্তু তবুও আষাঢ়’র মনে হলো মানুষ টার মেজাজ বেশ ফুরফুরে রয়েছে।আষাঢ়’র ভাবনার মাঝেই আর্শিয়ান গাড়ি স্টার্ট করার আগে একটা বড়ো চকলেট আর পানির বোতল আষাঢ়’র দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে উঠলো,

-“ফিনিশ ইট।”

আষাঢ় কোনো রূপ বাক্য প্রয়োগ না করে খেতে লাগলো।সকালে এতো বড় একটা কান্ড করার পর নিজে থেকে কেমন অস্বস্তি হচ্ছে। আর্শিয়ান ভাই কে দেখলে যেমন ভালো লাগে, মুগ্ধ হয়।ঠিক তেমন লজ্জায় বারবার মনে হয় একটু বেশি হয়েছি কি সকালে?
একবার মনে হয় বেশি বেশি বেহায়াপনা হয়েছে তো আরেকবার মনে হয় মানুষ টা নিজেই তো ক্লু দিয়ে রেখেছিলো।শুধু আষাঢ়’র নিজের বুঝতে সময় লেগেছে।
আষাঢ় চকলেট খেতে খেতে প্রায় অর্ধেক খাওয়ার পর মনে হলো একবার আর্শিয়ান ভাই কে জিগ্যেস করা উচিৎ চকলেট খাবে কি-না।
আর্শিয়ান এর দিকে হঠাৎ তাকাতে খেয়াল করলো আর্শিয়ান গাড়ি ড্রাইভ করছে সেই সাথে একটু পরপরই আষাঢ় কে আঁড়চোখে দেখছে। আষাঢ় তাকানোর সেকেন্ড সময় ব্যবধানে দু’জনের চোখাচোখি হয়ে গেলো।আর্শিয়ান ইশারায় জিগ্যেস করলো “কি” আষাঢ় মাথা নাড়ে। আর্শিয়ান দৃষ্টি সরিয়ে নিতেই আষাঢ় ধীরে কণ্ঠে ডেকে উঠলো,

-“আর্শিয়ান ভাই!”

-“হুঁ বল।”

আর্শিয়ান শান্ত কণ্ঠে জবাব দিলো।
আষাঢ় নড়েচড়ে বসে হাতের চকলেট টা আর্শিয়ান এর এগিয়ে দিয়ে জিগ্যেস করলো,

-“চকলেট খাবেন?”

আর্শিয়ান তৎক্ষনাৎ গাড়ি থামালো।আকস্মিক গাড়ি থেমে যাওয়ায় আষাঢ় কিছু টা ঝুঁকে গেলো সামনের দিকে। সোজা হয়ে বসে কোনো রকম নিজে কে সামলে পাশে তাকিয়ে দেখলো আর্শিয়ান গম্ভীর হয়ে বসে আছে। আষাঢ় কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে তার আগেই আর্শিয়ান অতি শান্ত কণ্ঠে বলে উঠলো,

-“সত্যি খাবো?”

আষাঢ় বুঝতে পারে না।কি বলছে মানুষ টা?ও তো খাওয়ার জন্যই দিয়েছে তাহলে?এভাবে কেনো জিগ্যেস করছে আর্শিয়ান ভাই?
আষাঢ় ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রইলো আর্শিয়ান এর দিকে। আর্শিয়ান ঝুঁকে এলো।আষাঢ় কে টেনে একদমই নিজের একটা উরুর উপর বসিয়ে দিলো।আষাঢ় চমকালো।থমথম খেয়ে দুই হাতে আর্শিয়ান এর গলা জড়িয়ে ধরে নিলো।জীবন প্রথম কোনো পুরুষের এতোটা সন্নিকটে এসেছে। এতো টা কাছ থেকে তাও আবার ভালোবাসার মানুষের।এই অনুভূতি যেমন ভালো লাগার তেমন অস্থিরতার।শক্ত হয়ে গলা জড়িয়ে ধরে আষাঢ় বরফের অনুরূপ জমে গেলো।আর্শিয়ান অদ্ভুত ভাবে আষাঢ়’র দিকে তাকিয়ে আছে।আষাঢ়’র পুরো শরীর শিরশির করে উঠে।আর্শিয়ান ভাই এভাবে কেনো তাকিয়ে আছে?এমন ভাবে টেনে কেনো নিলো কিছুই বুঝতে পারছে না।
আর্শিয়ান এর খসখসে চামড়া দানবীয় হাতের স্পর্শ নিজের নরম তুলতুলে গালে পেতেই আরো এক দফা নড়েচড়ে উঠলো পুরো শরীর। আর্শিয়ান আষাঢ়’র চোখের দিকে তাকিয়ে শান্তস্বরে বলে উঠলো,

-“আজ না।
বিশেষ কোনো দিন তোর হাত থেকে চকলেট খাব সেদিন খুব করে মনে হবে এই দিন টা বুঝি না এলেই ভালো হতো।কিন্তু আমার ভালোবাসার স্পর্শে আমি তোকে সেই ভাবনা থেকে এক অন্য রকম সুখের সাগরে ভাসিয়ে তোর চিন্তাধারা বদলে দেবো। সেইদিন টার জন্য নিজে কে প্রস্তুত কর আমার আষাঢ় মাস।”

আষাঢ় এবারেও আর্শিয়ান ভাইয়ের এই গভীর কথার গভীরতা ঠিকঠাক বুঝতে পারে না।তবে আর্শিয়ান এর মুখে আষাঢ় মাস ডাক টা এই নিয়ে দু’বার শুনেছে।
আরেকবার আষাঢ়’র বৃষ্টিতে ভিজে প্রচন্ড জ্বর হয়েছিলো তখন।যদিও আষাঢ়’র তখন পুরো পুরি জ্ঞান ছিলো না।কিন্তু ডাক টা আষাঢ় শুনতে পেয়েছিল।
কিন্তু চোখ খুলে মানুষ টাকে একবার দেখার শক্তি কুলিয়ে উঠতে পারে নি সেদিন।
আর্শিয়ান আষাঢ় কে ছেড়ে দিলো।সিটে বসিয়ে গাড়ি ফের স্টার্ট করলো।আষাঢ় ভাবনায় ডুবে গেলো।একটু আগের ঘটে যাওয়া ঘটনা মস্তিষ্কে সৃতিচারণ করতে ব্যস্ত হলো।হাতের চকলেট তখন গলে যাচ্ছে।
আষাঢ় সেটা টের পেতেই চকলেট দ্রুত মুখে পুরে নিলো।আর্শিয়ান আষাঢ়’র এমন কান্ড দেখে আষাঢ়’র অগোচরে ঠোঁট কামড়ে হাসলো।

——

দুপুরে আর্শিয়ান আষাঢ় কে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে নিজেও কোনো রকম ফ্রেশ হয়ে অল্প খাবার খেয়ে আবার কোথাও একটা চলে গেলো।
আষাঢ় গোসল দিয়ে এসে খাবার টেবিলে কাউ কে পেলো না। তাসরিফ এর মা হাফসা বেগম তখন তায়েফ তায়ুশ এর জন্য পাস্তা তৈরী করছিলো।তিনি আষাঢ় কে খাবার দিলো।কাজের লোক কে খাবার শেষ সব গোছাতে বলে তিনি রুমে গেলো।হাফসা বেগম সহজসরল মানুষ।ওনার মেয়ে ভীষণ পছন্দ তো।তাসরিফ জন্ম নেওয়ার সতেরো বছর পর কনসিভ করার পর ভেবেছিল এবার হয়তো একটা মেয়ে হবে। কিন্তু তায়েফ তায়ুশ হলো।এতে অবশ্য হাফসা বেগম বা তোফায়েল তালুকদার বা কেউ অখুশি হয় নি।বরং খুশিই হয়েছিল খুব।
হাফসা বেগম তাসফিয়া, আয়াত,আষাঢ় ওদের খুব যত্ন করে। নিজের সন্তানের মতোই আগলে রাখে।
আষাঢ় খাবার খেয়ে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।ভাবলো সন্ধ্যায় ওঠে পড়বে।কিন্তু রুমে গিয়ে বিছানায় অনেক সময় গড়াগড়ি খাওয়ার পরও ঘুম এলো না।
বাধ্য হয়ে ওঠে তাসফিয়ার রুমে গেলো।প্রথমে ভাবলো আয়াত এর রুমে যাবে। কিন্তু আয়াত এমন সময় তাসফিয়ার সাথে ব্যালকনিতে বসে আড্ডা দেয়।তাই তাসফিয়ার রুমে গেলো।
দরজা খোলাই ছিলো।আষাঢ় নক না করে সোজা ব্যালকনিতে চলে এলো।তবে ব্যালকনির দরজার কাছে এসেই আষাঢ় থমথম খেলো।
আয়াত নেই।তাসফিয়া কারোর সাথে ফোনে কথা বলছে।কথার ধরণ একটা বাচ্চাও বলতে পারবে রমণী তার ভালোবাসার মানুষ টার সাথে কথা বলছে।আষাঢ় কখনো ভাবে নি এমন কিছু থাকতে পারে তাসফিয়া আপুর মাঝে। অবশ্য ভাবার সময় বা এমন কোনো পরিস্থিতি আসে নি।আষাঢ় জানে আড়িপাতা ঠিক নয়।কিন্তু সে তো আড়িপাতে নিয়ে।অনাকাঙ্খিত ভাবে এমন পরিস্থিতিতে পড়ে গিয়েছে।
আষাঢ় চুপ করে আবার তাসফিয়ার রুম হতে বেরিয়ে এলো।আর ভাবলো আর্শিয়ান ভাই এসব জানে?

#চলবে….

আমার প্রেয়সী পর্ব-০৭

0

#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_৭
#জান্নাত_সুলতানা

-“স্বপ্ন না বাস্তব বুঝবি কি করে?
সারাক্ষণ তো মাথায় উদ্ভট চিন্তা নিয়ে ঘুরঘুর করিস।
এক মিনিট এরপর তোকে যদি এখানে দেখেছি তো সারা রাত এভাবে এখানে দাঁড় করিয়ে রাখবো।তখন তোর স্বপ্ন সব জানালা দিয়ে পালাবে।”

আষাঢ় পিটপিট করা নয়ন জোড়া হঠাৎ বড়ো বড়ো হয়ে গেলো।আকৃতি এমন হয়েছে চোখ কোঠরি ছেড়ে যেন এক্ষুণি বেরিয়ে আসবে।
আষাঢ় একবার ভাবলো কাল ওর সাথে আর্শিয়ান ভাই কি করবে তা এক ঝলক কল্পনা করা যাক।কিন্তু পরক্ষণেই সেই ভাবনায় ভাঁটা পড়ে আর্শিয়ান ভাই এর হুমকির কথায়। তাই ভাবাভাবি বাদ দিয়ে এক দৌড়ে কক্ষে চলে এলো।আপাতত ঘুমানো যাক।কাল কি হবে সেট কাল দেখা যাবে।
এদিকে আর্শিয়ান আষাঢ়’র কাণ্ড দেখে কি রিয়াকশন দেবে ভুলে গেলো।কতক্ষণ আষাঢ়’র রুমের দিকে তাকিয়ে দেখে গম্ভীর মুখে নিজেও রুমের ভেতর চলে গেলো।

——-

সকাল সকাল আজ আষাঢ় ঘুম থেকে উঠে নিজের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে রইলো। রোজ বাগান যায় সবার সাথে। কিন্তু আজ গেলো না। উপর থেকে নিচে জিম করতে থাকা আর্শিয়ান এর দিকে তাকিয়ে আছে।নাসির তাসরিফ সবাই কিছু নেই কিছু করছে বডি ফিটনেস ধরে রাখার তাগিদে। এই বাড়ির সব ছেলেরা জিম করে সেইজন্য বোধহয় তাদের বডি ফিটনেস দেখতেও এতোটা আকর্ষণীয়।বাপ চাচা থেকে শুরু করে সবাই বডি ফিটনেস নিয়ে সচেতন। আর আর্শিয়ান ভাই সে-তো সবার থেকে একধাপ এগিয়ে।
আষাঢ় আনমনা হয়ে আর্শিয়ান এর দিকে তাকিয়ে ছিলো।হঠাৎ ধ্যান ফিরে দেখলো আর্শিয়ান উপরে তাকিয়ে আছে।আপাতত সে বাগানে থাকায় দোলনায় বসে আছে। হাতে একটা পানির পট।আষাঢ় আর্শিয়ান এর গম্ভীর মুখের দিকে তাকিয়ে থমথম খেলো।দৃষ্টি বারকয়েক এলোমেলো ঘুরালো। ফের দ্রুত পায়ে রুমে চলে এলো।ওয়াশ রুমে গিয়ে ব্রাশে পেষ্ট লাগিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁত মাজার মাঝেই হঠাৎ আয়নার দিকে তাকিয়ে কিছু মনে পড়লো।রাতের ঘটনা মনে পড়তেই হাত থেকে ব্রাশ পড়ে গেলো।মুখে কোনো রকম পানি দিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে এলো রুম থেকে। সোজা আর্শিয়ান ভাইয়ের রুমে চলে এলো।আর্শিয়ান তখন সবেমাত্র রুমে এসছে।ঘামে শরীর চকচক করছে। গলায় একটা টাওয়াল ঝুলানো।আষাঢ়’র বুক ধুকপুক করছে।অধর জোড়া উত্তেজনায় মূদু কাঁপছে। আর্শিয়ান হঠাৎ আষাঢ়’র এমন আকস্মিক আগমন আর অস্বাভাবিক লাগছে কেনো বুঝতে পারছে না।
চট করে হাতের জিমের জ্যাকেট টা সোফায় রেখে দ্রুত পায়ে এগিয়ে এলো।আষাঢ়’র মাথায় ডান হাত টা আলগোছে রেখে বিচলিত কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,

-“কি হয়েছে?
এমন দেখাচ্ছে কেনো তোকে?
শরীর খারাপ? মেঝো মা কে ,,

আর্শিয়ান পুরো টা কথা শেষ করতে পারলো না। তার আগেই আষাঢ় আর্শিয়ান এর ঘামে ভেজা বুকে আলগোছে মাথা রাখলো।আর্শিয়ান এর শরীর থেকে আসা গন্ধ শুঁকে নিজের ভেতরে নিলো।আর্শিয়ান ভাই পাশ দিয়ে হেঁটে গেলোও আষাঢ় কমপক্ষে এক মিনিট সময় গন্ধ টা পায়।আষাঢ় গন্ধ শুঁকে তিরতির করে কাঁপতে থাকা অধর জোড়া নেড়ে আওড়াল,

-“কালকের মেয়ে টা আমি ছিলাম আর্শিয়ান ভাই।
আমি কত বোকা আপনার কথা গুলো কখন গভীর ভাবে ভেবে দেখি না।কেনো?”

আর্শিয়ান বাকরুদ্ধ।চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো শুধু।
আষাঢ়’র আর্শিয়ান এর থেকে কোনো রূপ মন্তব্য না পেয়ে মাথা তুলে আর্শিয়ান এর মুখের দিকে তাকালো। হঠাৎ আর্শিয়ান আষাঢ়’র দুই গালে হাত রাখলো।কপালে অধর ছুঁয়ে দিয়ে আদেশ করলো,

-“রুমে যা।”

আষাঢ় গেলো না।
যাবে না সে।যদিও নিজের প্রশ্নের উত্তর সে পেয়েছে। কিন্তু আজ যেনো সাহস আরো বেড়ে গেলো।

-“একবার বলুন না ভালোবাসি।”

কত সুন্দর আবদার।আর্শিয়ান অধর দাঁত দ্বারা চেপে ধরে ঘুরে দাঁড়ালো।
নিজে কে ধাতস্থ করে ফের শুধালো,

-“রুমে যা।”

আষাঢ়’র বুঝি অভিমান হলো।চোখ টলমল করে। জল গড়িয়ে পড়ার আগেই দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।আর্শিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে এতো সময় নিজে কে কন্ট্রোল করলো।খুশিতে বোধহয় হৃদপিণ্ডটা লাফালাফি করতে করতে ছিটকে বেরিয়ে আসবে।কিন্তু এতো খুশির মাঝেও আর্শিয়ান হঠাৎ চিন্তিত হলো।গম্ভীর মুখে টাওয়াল হাতে ওয়াশ রুমে চলে গেলো।

—–

নাসিমা বেগম নিজেদের বাড়িতে চলে যেতে চাইছিলো আজ।কিন্তু কেউ যেতে দিলো না। উল্টো ওনার স্বামী দেশে না আসা অব্ধি এখানে থাকার জন্য বললো।নাসিমা বেগম কি ভেবে রাজি হলো।
আষাঢ় কলেজ যাওয়ার জন্য এক্কেবারে রেডি হয়ে নিচে এলো।পড়ালেখা সে বেশ ভালো। কিন্তু মাঝে কিছু দিন অনেক টাই রেজাল্ট খারাপ করেছে আষাঢ়।কলেজ থেকে এই নিয়ে নোটিশ এসছে। প্রিন্সিপাল স্যার আকরাম তালুকদার এর বেশ ভালো বন্ধু। আর বিচার টাও এসছে বড়ো বাবাই এর কাছে। এ নিয়ে অবশ্য তিনি কিছু বলে নি।শুধু বলেছে মন দিয়ে পড়ার জন্য। ইয়ার চেঞ্জে ভালো করতে হবে। তবে শিউলি বেগম আষাঢ় কে ইচ্ছে মতো ঝেড়েছে।আষাঢ় আজ ভীষণ খুশি। মায়ের বকা খেয়ে আজ একটুও মন খারাপ করে নি।বরং এখন থেকে ভালো করে লেখাপড়া করবে ঠিক করেছে।আর্শিয়ান ভাই যেখানে বিদেশ গিয়ে লেখাপড়া করে এসছে সেখানে আষাঢ় যদিও টেনেটুনে উচ্চমাধ্যমিক টা না টপকাতে পারে। ভালো একটা ভার্সিটিতে চান্স না পায় তাহলে ব্যাপার টা কেমন দেখাবে না।সমান সমান না হোক চলনসই তো হতে হবে।
আষাঢ় নাস্তার টেবিলে বসে নাস্তা খাচ্ছিল।বাড়ির অর্ধেক মানুষ আছে এখানে। আষাঢ়’র বাবা আর তাসরিফ এর বাবা ব্যতিত।মহিলারা সবাই নাস্তা দিচ্ছে। তায়েফ তায়ুশ সকাল সাড়ে সাত টায় স্কুল চলে গিয়েছে।
আষাঢ় মন দিয়ে নাস্তা খাচ্ছে। মাঝেমাঝে আবার লিভিং রুম ক্রস করে সিঁড়ির দিকে তাকাচ্ছে।
আজ আয়াত তাসফিয়াও ভার্সিটিতে খুব সকালে গিয়েছে সাড়ে আটটায় ক্লাস আছে আজ।ওদের সাঈদ ভাই ভার্সিটিতে দিতে গিয়েছে। এখন শুধু আষাঢ় আর সাইফ বাকি আছে। সকালে নাস্তার পর নাসির তালুকদার আর মোহনা ওদের বাড়িতে যাবে। আজ আষাঢ় আর বাইকে করে যেতে পারবে না। তারজন্য সামন্য মন খারাপ হলো।ভাবলো আজ বুঝি এই বাঁচাল সাইফ এর সাথে একা কলেজ যেতে হবে।আষাঢ় পানি খেয়ে ব্যাগ নিয়ে উঠে দাঁড়াতেই সিঁড়ির দিকে নজর গেলো।ফর্মাল ড্রেসে আর্শিয়ান ভাই। কালো শার্ট গায়ে। শার্ট ইন করা। পায়ে লোফার। আষাঢ় বুঝি একটুর জন্য ভুলে গেলো এখানে সবাই রয়েছে। ড্যাব ড্যাব করে তাকাতে গিয়েও সবার কথা মনে পড়লো।চোখ বন্ধ করে ঠোঁট গোল করে শ্বাস ছাড়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,

-“আমার আর্শিয়ান ভাই।”

আর্শিয়ান কে এভাবে রেডি হয়ে নিচে আসতে দেখে সবাই কমবেশি অবাক হলো।আবার মনে মনে খুশিও হলো।শর্মিলা বেগম ছেলে কে এমন ড্রেসে থেকে হাসি মুখে এগিয়ে এলো।আর্শিয়ান তখন মাত্র চেয়ারে বসেছে। তিনি খুশি মনে জিগ্যেস করলো,

-“আব্বা দুপুরে খাবার কি দেবো?”

-“খাবার দিতে হবে না মা।
আমি দুপুরে বাড়ি চলে আসবো।হাফডে ডিউটি করবো আমি।”

আর্শিয়ান এর কথায় আকরাম তালুকদার আঁড়চোখে ছেলের দিকে একবার তাকালো।এতে ওনার তেমন কিছু যায় আসে না। ছেলে অফিস যাচ্ছে তিনি এতেই খুশি। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে এমন টাই ওনার ধারণা। কিন্তু আদৌও ঠিক হবে কি-না সেটা আর্শিয়ান ভালো জানে।আষাঢ় একপাশে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। সাইফ তখনো গিলে যাচ্ছে। আষাঢ় বিরক্ত হলো।ছেলে টা বড্ড পেটুক।সারাদিন শুধু খাইখাই করে কিন্তু শরীর দেখলে কেউ বিশ্বাসই করবে না এই ছেলে সারাদিন কিছু না কিছু গিলতে থাকে।ফু দিলে যেন উড়ে যাবে। এদিকে কলেজের লেইট হচ্ছে।
আষাঢ় কিছু বলতেও পারছে না।নাসিমা বেগম তখন কোথা থেকে হন্তদন্ত হয়ে এলো।এসে ছেলে কে তাগাদা দিতে লাগলো।সাইফ হাত ধুয়ে ফিরে এসে ব্যাগ কাঁধে তুলতে তুলতে আষাঢ় কে উদ্দেশ্য করে বললো,

-“চল।
আর মাত্র বিশ মিনিট আছে।”

আষাঢ় ঘড়ি দেখলো একপলক এমন ভাবে বলছে মনে হচ্ছে দেরি টা আষাঢ় করেছে।আষাঢ় চুপ থেকে মাথা দুলিয়ে পা বাড়ালো সামনের দিকে।
হঠাৎ বড়ো মা বলে উঠলো,

-“তোরা একা যাচ্ছি!
আর্শিয়ান নামিয়ে দিবে একটু বসে যা।”

তিনি কথা শেষ করে আবার রান্না ঘরে চলে গেলো।
আর্শিয়ান তখন টিস্যু দিয়ে হাত মুছে ফোন আর চাবি নিয়ে আগে আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো। আষাঢ় সাইফ পেছন পেছন এলো।সাইফ এসেই পেছনের সিটে ধপ করে বসে দরজা লাগিয়ে দিলো।
তারপর আষাঢ় কে উদ্দেশ্য করে বললো,

-“আষাঢ় ওদিক দিয়ে এসে পেছনে বসে যা।”

-“আষাঢ় পেছনে বসবে না।
ওর পেছনে বসার অভ্যাস নেই।”

আর্শিয়ান গম্ভীর স্বরে কথা টা বলেই সামনের দরজা খুলে আষাঢ় কে বসতে ইশারা করলো। আষাঢ় মিষ্টি হেঁসে বসে পড়লো।আর্শিয়ান ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট করল। রাস্তায় সাইফ অনেক বকবক করলো।সব আর্শিয়ান মুখ বুঁজে সহ্য করলো।তবে মনে মনে বেশ রেগেও গেলো।কারণ টা হচ্ছে সাইফ সব কথা শেষ করে আষাঢ় কে উদ্দেশ্য করে জিগ্যেস করে, ঠিক বলেছি না আষাঢ়?আষাঢ় বাধ্য হয়ে মাথা নাড়ে। গাড়ি থামলো একদম গেইটের সামনে এসে। কলেজের অনেক স্টুডেন্ট এই গেইটে।আবার মাঝেমধ্যে ভার্সিটির কিছু স্টুডেন্টও রয়েছে।সাইফ আগে গাড়ি থেকে নেমে আশেপাশে তাকাতে লাগলো।আর্শিয়ান সুযোগ করে আষাঢ়’র ডান হাতের উলটো পিঠে চুমু খেয়ে গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,

-“প্রেমের শুরু আজ থেকে।
আমাকে সহ্য করার জন্য রেডি হউ।”

আষাঢ় লজ্জায় চোখ তুলে তাকাতে পারলো না। প্রথম বারের ন্যায় ভালোবাসার মানুষ টার মুখ থেকে তুমি ডাক শোনে লজ্জায়,অস্বস্তিে দ্রুত দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো।আষাঢ় কোনো দিকে না তাকিয়ে গেইট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো।
আর্শিয়ান জানালার কাচ নামিয়ে সাইফ কে ডাকলো।সাইফ ততক্ষণে আষাঢ় কে কলেজ এর ভেতরে চলে যেতে দেখে এসে আগে আগে বলে উঠলো,

-“আমিও যাই আষাঢ় চলে গেলো।”

সাইফ চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই আর্শিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে ডেকে ওঠে বললো,

-“শোন।
ওর সাথে সাথে থাকবি।কিন্তু লিমিট এর মধ্যে।বেশি বাড়াবাড়ি যদি করেছিস না।খুব খারাপ হয়ে বলে দিলাম।”

#চলবে…..

আমার প্রেয়সী পর্ব-০৬

0

#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_৬
#জান্নাত_সুলতানা

-“ওইখানে দাঁড়া।
মেয়ে দেখতে পাবি।”

আষাঢ় সামনে তাকিয়ে উপরে টানানো ফুল গুলোর সাথে একটা আয়না দেখতে পেলো।ভ্রু কিঞ্চিৎ পরিমাণ কুঁচকে এলো।পুরো দোকানে চোখ বুলিয়ে কোনো মেয়ে দেখতে পেলো না আষাঢ়।আর্শিয়ান ভাই কি মজা করছে?এখানে মেয়ে কোথায়? শুধু তো মাঝবয়েসী দোকানদার আর একটা বয়স্ক লোক।আষাঢ় বিরক্ত হয়ে আর্শিয়ান কে ফের জিগ্যেস করলো,

-“কোথায় মেয়ে?
কোনো মেয়ে নেই এখানে।”

-“সত্যি নেই?”

আর্শিয়ান ফুল বেছে বেছে দোকানদারের হাতে দিতে দিতে জিগ্যেস করলো।
আষাঢ় বিরক্তিতে বিস্ময় নিয়ে বলে উঠলো,

-“আশ্চর্য।
থাকলে আমার নজরে আসতো।”

আর্শিয়ান অধর চেপে হাসলো।আষাঢ়’র নজরে এলো না সেটা।আর্শিয়ান কিছু বলে না।চুপচাপ ফুলওয়ালার কাছ থেকে সব ফুল বুঝে নিয়ে বিল দিয়ে পলিথিন ব্যাগ হাতে আষাঢ়’র কাছে এগিয়ে এলো।আষাঢ় তখন কৌতূহলী হয়ে দাঁড়িয়ে।ভাবছে আর্শিয়ান ভাই বুঝি সত্যি বিয়ের জন্য মেয়ে দেখছে। তাহলে তাসফিয়া আপু ঠিকই বলেছে।আষাঢ় চোখের কোঠায় জল জমে।মানুষ টা বড্ড পাষাণ। একটু কি আষাঢ়’র মনের কথা, চোখের চাহনি বুঝতে পারে না? আষাঢ়’র ভাবনার মাঝেই আর্শিয়ান একটা বেলি ফুলের মালা আষাঢ়’র হাতে দিলো।আষাঢ় অবাক হলো।কিছু না বলে অন্য দিকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিলো।আর্শিয়ান পাত্তা দেয় না সে-সব। বরং স্বাভাবিক ভাবে বললো,

-“আচ্ছা চল।
বাড়ি যাই।”

আষাঢ় একটু নড়লো না।ঠাঁই দাঁড়িয়ে থেকে অসহায় কণ্ঠে আবদার করলো,

-“আমি মেয়ে দেখবো।”

-“কিন্তু মেয়ে তোকে দেখতে চাইছে না।”

আর্শিয়ান ফটাফট জবাব দেয়।পরপরই আষাঢ়’র হাত ধরে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো।ফুলে গুলো পেছনের সিটে রাখলো।আষাঢ় কে সামনে বসিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসলো।
আষাঢ় তখন ঘোরে আছে।কি বললো একটু আগে আর্শিয়ান ভাই? মেয়ে ওকে দেখলো কি করে? আর বললই বা কখন এমন কথা?আর্শিয়ান ভাই নিজেও তো কারোর সাথে কোনো রকম ফোনকল বা সামনা-সামনিও কথা বলে নি।তবে?আষাঢ় কোনো প্রশ্নের জবাব পেলো না। হঠাৎ আর্শিয়ান কে নিজের খুব সন্নিকটে আবিষ্কার করলো।আঁড়চোখে তাকাতেই নজরে এলো আর্শিয়ান ভাই খুব মনোযোগ দিয়ে সিট বেল্ট বেঁধে দিচ্ছে।
আষাঢ় ক্ষেপে উঠলো।আর্শিয়ান এর হাত সরিয়ে নিজে বেল্ট লাগাতে লাগাতে বলে উঠলো,

-“আমার টা আমি লাগাতে পারবো।আপনি অন্য দিকে নজর দিন।”

আর্শিয়ান সরে বসলো।গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে ফের অধর কামড়ে হাসলো।তবে আষাঢ় সেদিকে তাকাতেই মুখ গম্ভীর করে নিলো।থমথমে কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,

-“অন্য কোন দিকে নজর দেবো?”

আষাঢ় থমথম খেলো।ঠিকই তো।কোন দিকে নজর দিতে বলছে আর্শিয়ান ভাই কে?আর আজ হঠাৎ ওর এতো সাহস এলো কোথা থেকে?আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা আষাঢ় এরূপ ব্যবহার করছে আর্শিয়ান ভাই তাও কেনো কোনো রিয়্যাক্ট কেনো করছে না?আষাঢ়’র এই এটুকু জীবনে যতটা অভিজ্ঞতা হয়েছে সেটার হিসেব করলে আর্শিয়ান ভাইয়ের থাপ্পড় তো এতোক্ষণে গালে দুই চার টা পড়ার কথা ছিলো।আর্শিয়ান ভাই বিদেশ পড়তে যাওয়ার আগেও সব ঠিকঠাক ছিলো।মাঝে একবার দেশে এলো যখন তখন আষাঢ় এইটে পড়ে।বয়স টা তখন রঙিন।যা দেখে তাই তখন কিশোর কিশোরীর ভালো লাগে। সব দেখতে সুন্দর লাগে। আষাঢ়’র ও লাগতো।সুন্দরী হওয়ার দরুনে হাইস্কুল ওঠার পর থেকে কম প্রেমপত্র পায় নি।তবে প্রেম করার মতো দুঃসাহসিকতা দেখাতে পারে নি।বাপ চাচা থেকে শুরু করে সবার কমবেশি নজর ছিলো আষাঢ়’র উপর। সবাই বেশ আগলে রাখতো।মূলত সবার এতো আগলে রাখার ভীড়ে আষাঢ় কখনো এসব করার সময় বা সুযোগ কোনো টায় পায় নি।তারমধ্যে স্টুডেন্ট ভালো হওয়ায় টিচারদের নজরেও ছিলো।সেদিন আর্শিয়ান ভাই যখন সন্ধ্যায় বাড়ি এলো তখন আষাঢ় লিভিং রুমে বসে কার্টুন দেখছিলো।মা চাচি সবাই তখন রান্না ঘরে। রান্নাবান্নায় ব্যাস্ত বাড়ির কেয়ারটেকার কেউ হাত খালি ছিল না।সবাই কাজে ব্যাস্ত।আষাঢ় তখন কলিং বেল বাজাতে বেশ বিরক্ত। তায়েফ তায়ুশ তখন তিন বছরের ওরা ও ছিলো লিভিং রুমে কিন্তু সদর দরজা খোলার মতো বয়স বা শক্তি কোনোটাই ওদের হয় নি।তাই আষাঢ় কে বাধ্য হয়ে দরজা খুলতে হয়ে ছিলো।তখন বাইরে বৃষ্টি।গেইট খুলতেই নজরে আসে সাদা শার্ট গায়ে তার উপর কালো জ্যাকেট।বুকের কাছে শার্টে কালো সানগ্লাস ঝুলানো অল্পস্বল্প গোলাপি অধর।মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। বেশি বড়ো নয় বেশ ছোটখাটো একটা ট্রলি হাতে আর্শিয়ান ভাই দাঁড়িয়ে পেছন ছিলো তাসরিফ সাথে ছোট কাকা তাদের হাতেও ব্যাগ। আষাঢ় তখন একপলক দেখে আর্শিয়ান কে।হয়তো সম্ভব হলে আরো কিছু সময় দেখতো।আর এই একপলক দেখায় আর্শিয়ান ভাই ছোট আষাঢ়’র ছোট হৃদয়ে জুড়ে বিশাল বড়ো দাগ কেটে দিয়ে ছিলো।আষাঢ় জানে না সেদিন আর্শিয়ান ভাইয়ের বুকের ভেতর কিছু হয়েছিল কি না।তবে আষাঢ়’র হয়েছিলো।সেটা তখন মোহ মনে হলেও আষাঢ় ধীরে ধীরে উপলব্ধি করতে পারে সেটা পরে ভালোবাসায় রূপ নিয়েছে।আর এখন সেটা তীব্র আঁকড়া ধারণ করেছে।আষাঢ় জানে না আদৌও এর পরিণয় হবে কি না কিন্তু ভালোবাসায় তো আর দোষ নেই। এটা কখন কিভাবে হয়ে যায় কারোর প্রতি সেটা আমরা বুঝতেই পারি না।আষাঢ় দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। তবে এখন থেকে নিজে কে যথেষ্ট সামলে চলার চেষ্টা করবে আষাঢ় নিজে কে।এতোদিন যদিও ভেবেছে আর্শিয়ান ভাই হয়তো কোনো এক সময় ওর ভালোবাসা বুঝতে পারবে নিজেও ভালোবাসবে।কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে আর্শিয়ান ভাই কোনো দিন এসব বুঝতে পারবে না।
আষাঢ় বাইরে তাকিয়ে ছিলো।হঠাৎ গাড়ি থেমে যাওয়ায় নড়েচড়ে উঠলো। বুঝতে সক্ষম হলো ওরা বাড়িতে চলে এসছে।আর্শিয়ান গাড়ি থেকে নামতে নামতে আষাঢ় কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,

-“বাড়ি চলে এসছি আষাঢ়।
নেমে পড়।”

আর্শিয়ান নেমে দারোয়ান চাচার কাছে চাবি দিয়ে গাড়ি গ্যারেজে রাখতে বলে দিলো।আষাঢ় নেমে বাড়ির ভেতর দিকে যেতে লাগলো।আর্শিয়ান ফুলের পলিথিন ব্যাগ টা নিয়ে লম্বা লম্বা কদম ফেলে আষাঢ় কে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময় গম্ভীর কণ্ঠে বলে গেলো,

-“এখন রুমে গিয়ে একবার আয়নার সামনে দাঁড়াবি মাথামোটা।”

আষাঢ় বুঝতে পারে না। আয়নার সামনে কেনো দাঁড়াতে বললো?তবে মনে মনে ঠিক করলো সত্যি একবার আয়নার সামনে দাঁড়াবে রুমে গিয়ে।

——

অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা চললো।তবে মেহমান সব বিদায় নিয়েছে রাত ন’টার মধ্যে।মোহনার বাবা-র বাড়ি থেকে আজ ওদের নিতে চাইলেও আষাঢ় এর আর্শিয়ান এর মা দিলেন না।আজ এতবড় একটা অনুষ্ঠান হলো।গতকাল বিয়ে হলো।মেয়ে টার উপর দিয়ে কম দখল তো আর যায় নি।তাই সবাই বুঝিয়ে-সুঝিয়ে কাল মোহনা আর নাসির কে পাঠাবে বলে আশ্বাস দিলো।মোহনার বাবা মা ভীষণ খুশি হলেন।মেয়ে কে সবাই আদর যত্ন বেশ ভালোই করছেন ঠিক বুঝতে পারে মেয়ের মুখ দেখে।একমাত্র মেয়ে তাদের। মেয়ের সুখই তাদের সুখ।মেয়ের দিক টা বিবেচনা করে ওনারও রাজি হয়ে বাড়ি ফিরে গেলো।
বাসর ঘর সব কাজিন দল মিলে সাজালো।তারজন্য অবশ্য মোটা অংকের একটা টাকা নিয়েছে নাসির’র থেকে।নাসির অবশ্য জোর ধরে নি।টাকা দিয়ে সবাই কে বিদায় করে ঘরে চলে গেলো।নাসির দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করলেও আয়াত বাইরে থকেও দরজা বন্ধ করলো।রাত তখন একটার কোঠা ছুঁই ছুঁই করছে। সবাই ঘুমে ঢুলঢুল করছে।তায়েফ তায়ুশ কোনো রকম রুমে গেলো।বড়রাও যে যার রুমে গেলো।নাসির এর কক্ষ হতে আষাঢ় এর কক্ষ বেশ দূরে।আর্শিয়ান ভাইয়ের রুম সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আষাঢ় চোখ ঢলে ঢলে নিজের রুমের উদ্দেশ্যে চালিত পা জোরা থামালো।চোখে তখন ঘুম সব আবছা আবছা দেখছে।আষাঢ় চোখ পিটপিট করে দরজায় তাকিয়ে আর্শিয়ান কে দেখলো।আষাঢ় ভ্রু কুঁচকালো।এক সেকেন্ড সময় ভেবে নিলো এটা স্বপ্ন। রোজকার ন্যায় আজও আর্শিয়ান ভাই দরজায় দাঁড়িয়ে আষাঢ় কে দেখছে।আষাঢ় রোজ স্বপ্নে এমন টা দেখে।আষাঢ় নিজের রুমে যাচ্ছে আর আর্শিয়ান ভাই নিজের রুম থেকে আষাঢ় কে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে।আসলে তেমন কিছু হয় না।আষাঢ় এসব বাস্তবে ভাবে এমন তাই ঘুমালেও এসব স্বপ্নে দেখে।তাই ভাবলো এখনো হয়তো স্বপ্নে আর্শিয়ান ভাই ওকে দেখছে।
রাগ হলো।এটা বাস্তব হলো কি এমন ক্ষতি হয়?
মুখ ভেংচি কাটলো। রাগ নিয়ে মুখ বেঁকিয়ে বলে উঠলো,

-“রোজ স্বপ্নে না এসে একবার বাস্তবেও তো এভাবে মুগ্ধ হয়ে আমায় দেখতে পারেন না-কি!
আর একবার যদি স্বপ্নে এসেছেন খুব খারাপ হবে মিস্টার আর্শিয়ান তালুকদার।”
লাস্ট ওয়ার্নিং এটা।”

#চলবে….