Love with vampire পর্ব-১৩

0
1370

#Love_with_vampire [১৩]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

অহনা বেশ ভালোই বুঝতে পারলো যে এটাই তার শেষ চোখ বন্ধ করা,এই বন্ধ চোখ কখনো আর সে খুলতে পারবে না।কারনটা তার কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হলো না।অহনার মরে যাওয়ার কি যথেষ্ট কারন আছে? পাথরের ধাক্কায় কপাল কেটে যাওয়ায় কি কারো মৃত্যু হতে পারে?না! পারে না।তবে নেতিবাচক এই হাইপোথিসিস এর বিরুদ্ধে আরেকটা শর্ত দার করালো অহনা। তার সামনে একটা হিংস্র পশু তারই রক্ত চেটেপুটে খাচ্ছে। হয়তো রক্তের পর তাকেও খেয়ে ফেলবে। এটা কি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে? অনুভব কি আমায় মেরে ফেলবে?।

এরকম আরো কিছু যুক্তি অহনা নিজে নিজেই দ্বার করানোর চেষ্টা করলো ফ্লোরে মাথা রেখে।মাথা দিয়ে এখনো রক্ত বেড় হচ্ছে। এখন সে চোখে কিছু দেখছে না।সব অন্ধকার। চোখের পলক ফেলার চেষ্টা করলো।পলক ফেলতে পারলো কি পারলো না সেটা ঠিক বুঝতে পারলো না অহনা।তার এখন চোখের স্নায়ু তন্ত্র কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।হয়তো কিছুক্ষণ পর তার সব স্নায়ুতন্ত্র এভাবেই অচল হয়ে পড়বে।

প্রকৃতির মতো স্নায়ুর ও কিছু নিয়ম থাকে।যদি শরীরের একটি অংশের স্নায়ু কাজ করা বন্ধ করে দেয় তাহলে বাকিগুলিও শীতল হয়ে পড়ে।তারাও চায় কাজ বন্ধ রাখতে।অহনা আর কিছু ভাবতে পারলো না।চোখ বন্ধ করে পড়ে রইলো ফ্লোরে।

______

মানুষের রক্তের স্বাদ অনেকদিন পর পেলাম।এই মেয়েকেও কি ছিঁড়ে খাওয়া যায়? কেমন হবে যদি মেয়েটার ধর থেকে মাথাটা এক থাবার আলাদা করে দিই? গলা বেয়ে কি রক্ত চির চির করে বের হবে? এর আগে ২টা মেয়ের মাথা গলা থেকে আলাদা করেছি।তাদের তো রক্ত বেড় হয়নি।পরোক্ষনে মনে হলো,মাথা ছিঁড়ে ফেলার আগে তো মেয়ে দুটির শরীর থেকে সব রক্ত চুষে বেড় করে নিয়েছিলাম।সব রক্ত চুষে খেয়ে ফেললে পড়ে তো রক্ত বেড় হওয়ার কথা না।

রক্ত পড়া এক পর্যায়ে বন্ধ হয়ে গেলো।রক্তের লোহিত কনিকাগুলি ক্ষত স্থানে ঘাট মেরে বসে গেছে তাহলে।রক্তদের এই ক্ষমতা কে দিয়েছে? কিভাবে তারা বুঝতে পারে কোন স্থানে কেটে গেছে? রক্ত গুলিরো কি অনুভূতি আছে?

অনুভব এসব ভাবতে ভাবতে উঠে দারালো।দেয়ালে রাখা মস্ত আয়নায় নিজের শরীর দেখলো।নিজেকে দেখে নিজের একটু অহংকার বোধ হচ্ছে। এমন হিংস্র রুপ থাকাটা তেমন মন্দের বিষয় নয়।আয়নায় দেখলো তার মুখ বেয়ে রক্ত পড়ছে।মুখের কাছের লোমগুলি রক্তের জমে যাওয়ার কারনে কতগুলি লোক একসাথে শক্ত হয়ে আছে।

আয়না ছেড়ে অহনার দিকে একবার তাকালো অনুভব।মেয়েটার ক্ষত স্থানের কিছু ব্যবস্থা করা দরকার।জ্বান হারিয়ে ফেলেছে হয়তো।মেয়েটিকে আমি কেনো মারতে পারছি না?ওর প্রতি কিসের এতো আকর্ষন আমার? আমার আকর্ষন থাকবে রক্তে,আমি ভ্যাম্পেয়ার।আমার মনে সহানুভূতি বলতে কিচ্ছু নেই।আমার জন্ম মানব দেহের রক্তপানের জন্য। তবে আমি কেন এই মেয়েকে মেরে ফেলতে পারছি না? কেন? আমি কি তাকে ভালোবেসে ফেলেছি?। অসম্ভব ! আনার ভালোবাসার কোনো অধিকার নেই।আমি ভ্যাম্পেয়ার।লালায় আমার জন্ম।আমার প্রেম,মমতা এসব কেন থাকবে? মেয়েটা কি আমায় প্রভাবিত করছে?।

এসব ভাবতে ভাবতে অনুভবের চোখ পড়লো সেই বিশাল প্রকান্ড দরজার প্রতি।মৃদু হেসে ফিসফিস করে বললো, এই দরজার কাছে এসেই আগের মেয়েগুলি প্রান হারিয়েছে। অহনাও এখন এই দরজা খুলতে ব্যাস্ত।এরা কেনো ভেতরে যেতে চায়? তাদের নজর কেন এই দরজায় পড়ে?।

অনুভবের নিজেরও জানা নেই এই ঘরে কি আছে।সে যঝন এই মায়ার বাড়িটা তৈরী করে তখন না চাইতেই এই ঘরটা তৈরি হয়ে গিয়েছিলো।কেনো এমনটা হয়েছে তার নিজেরও জানা নেই। এবং অবাক করার একটা বিষয় হলো এই দরজার কাছে কোনো প্রাণ গেলের অনুভব কিভাবে যেনো টের পায়।তার সারাশরীরে তেজ এসে যায়।যেখানেই থাকুক না কেন মুহূর্তেই এই দরজার কাছে পৌঁছে যায়। বিষয়টা অনুভবের মনে সারা দিলো।এবং ভালো ভাবেই দিলো। অনুভব সিদ্ধান্ত নিলো সে এই ঘরে ঢুকবে। কিভাবে ঢুকবে সে জানে না।কিন্তু ভেতরে ঢুকতেই হবে।তার জানতেই হবে কি এমন আছে এই ঘরে।

অনুভবের শরীর এখন মানুষে রুপান্তর হয়ে গেছে।তার হিংস্র পশুর রুপ এখন আর নেই।সে এখন পুরোপুরি একটা মানুষ। তালায় হাত দিতেই মনে হলো অহনার চিকিৎসার প্রয়োজন। এই মুহুর্তে তার জন্য চিকিৎসার ব্যাবস্থা না করলে হয়তো তাকে বাঁচানো যাবে না।তাছাড়া যথেষ্ট রক্ত বেড় হয়েছে,রক্তশূন্যতা যখন তখন তার চরম ক্ষতি করে দিতে পারে।

অনুভব অহনার কাছে গেলো।মুখ থেকে চুলগুলি সরিয়ে দিলো।অহনার রক্তমাখা মুখটা নজরে পড়তেই অনুভবের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে উঠলো। অহনাকে কোলে করে বিছানার চিৎ করে শুইয়ে দিলো।ভেজা কাপড় দিয়ে সব রক্ত মুছে দিলো।অহনার এখনো জ্ঞান ফিরলো না।অহনার জ্ঞান ফিরতে কি করতে হবে সেটা অনুভব ঠিক বুঝতে পারলো না।কপালে ক্ষত দিয়ে এখনো চুয়ে চুয়ে রক্ত পড়ছে।এখন প্রধান যে কাজ সেটা হলো রক্ত বন্ধ করা।অনুভব বাইরে থেকে কিছু লতা পাতা আনলো।সেগুলি হাতের তালুতে পিষে ক্ষত স্থানে লাগিয়ে দিলো।ঘুমন্ত অহনাকে দেখে তার অনেক খারাপ লাগছে।অহনার কপালে আলতো চুমু খেয়ে দরজা বন্ধ করে বাইরে বেড় হলো অনুভব।

তার এখন দুটি কাজ করতে হবে,প্রথম কজাটা হলো দরজা ভাঙ্গা এবং দ্বিতীয় কাজটা হলো সেই ঘরে কি আছে সেটা দেখা।অনুভব জোরে জোরে হাঁটছে।

বড় দরজার সামনে অনুভব দারিয়ে আছে।দরজায় ঝুলছে বিশাল তালা।এই তালা যে পাথরের আঘাতে ভাঙ্গবে না সেটা অনুভব ভালোই বুঝতে পারলো।এখন তাকে আবারো ওয়ারওল্ফ রুপ ধারন করতে হবে।

অনুভব একটু দুরে সরে গেলো।চোখ শক্ত করে বন্ধ করলো,বিকট একটা শব্দ করলো।পুরো বাড়ি কেমন যেনো কাঁপতে লাগলো সে গর্জনে।অনুভব এখন হিংস্র পশুর রুপ নিয়েছে। তার চোখ গাঢ় হলুদ।সে চোখে পৃথিবী ধ্বংস করে দেওয়ার মতে তেজ।দূর থেকে এক লাফে দরজার কাছে গেলো।তালাটা হাতে নিয়ে ধারালো দাঁত সেই তালায় বসালো।তালাটা সঙ্গে সঙ্গে চূর্ণবিচুর্ন হয়ে গেলো।সে আবারো একটা গর্জন করলো।সারা বাড়ি এবারো কেঁপে উঠলো।

অনুভব আবারো মানুষে পরিণত হয়েছে। প্রকান্ড দরকার ভেতরে কি এমন জিনিস আছে সেটা দেখার জন্য মনের ভেতর প্রবল কৌতুহল জাগছে।দরজা খুলেই কি দেখতে পারে সেটা মনে মনে একবার ভেবে নিলো।মনে মনে ভাবলো ” দরজাটা আমি খুললাম।খুলেই হয়তো দেখবো কিছু বাদুড় প্রজাতির পাখি শব্দ করে ডাকাডাকি করবে,তারপর তাদের পাখার ঝাপটা আমার শরীরে লাগিয়ে উড়ে যাবে।আমি ভয় ভয় নিয়ে দরজা খুলবো।খুলেই হয়তো বিভৎস কিছু একটা নজরে আসবে।সেটা দেখে আমার সারা শরীর থরথর করে কাঁপা শুরু করবে।এর পর কি হতে পারে? আমি কি সেই বিভৎস কিছু দেখে ভয়ে পালিয়ে যাবো?।

এসব ভাবতে ভাবতে বাস্তবে ফিরলো।এমন কিছু হলে কি করবে সেটা মনে মনে ভেবে সাহস সঞ্চার করে দরজা মেললো।

ঘরটার দরজা আস্তে আস্তে খুলছে।ওপর থেকে কালো বালি ঝড়ে পড়ছে।দরজায় কটকট শব্দ হচ্ছে।মনে হচ্ছে এখনি ভেঙ্গে পড়বে।দরজার যেটুকু অংশ ফাকা হলো সেই অংশুটুকু দিয়ে ভেতরে কি আছে দেখার চেষ্টা করলাম।

ছোট অংশ দিয়ে কিচ্ছু নজরে পড়ছে না।শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার।দরজা খোলার সময় যা যা হবে বলে অনুভব ভেবেছিলো তেমন কিছুই হলো না।বাদুর জাতীয় পাখি উড়ে বেড় হলো না।

পুরো দরজা খুলে ফেললো।খুলতেই সামনে একটা বিশাল আলোকরশ্মি চোখে পড়লো।প্রবল আলোয় অনুভব চোখে পড়তেই দুহাত দিয়ে চোখ ডেকে রাখলো।এরপর হাতের ফাঁক দিয়ে সামনে তাকাতেই অনুভবের শরীর অসম্ভব ভাবে পুরে যেতে লাগলো। দৃষ্টি তীক্ষ্ণ করতেই অনুভব যা দেখলো তা এর আগে সে দেখেনি।সে কেনো কেউ হয়তো দেখেনি।কেউ না।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে