#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””
#Writer; Tamanna Islam
#part__ 20
🧡🍂
..
..
..
..
..
আইরাত-আব্রাহাম নিচে নেমে এলো। আবির আহমেদ তাদের দেখে বলল…
আবির আহমেদ;; কিরে তোরা উঠে পরেছিস।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ বাপি।
আবির আহমেদ;; হুমম ভালো করেছিস, এখন তোরা কি খাবি তাড়াতাড়ি বল তো দেখি
আব্রাহাম;; না বাপি,, আজকে আইরাত রান্না করবে
আইরাত চুপ করে ছিলো কিন্তু আব্রাহাম এর কথা শুনে তার ঘাম ছুটতে লাগলো। কেননা আইরাত কখনো রান্না করা তো দূর কোনদিন রান্নাঘরেই পা রাখেনি, তো এখন রান্না করবে কি করে। আইরাত চোখ বড়ো বড়ো আব্রাহামের দিকে তাকালো।
আব্রাহাম;; এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই জান। রান্না তোমাকে করতেই হবে । এই বাড়ির একটা নিয়ম আছে তা হলো বিয়ের পরের দিন নতুন বউ এর হাতে মিষ্টি জাতীয় কিছু একটা রান্না করে সবাইকে খাওয়াতে হবে।
আবির আহমেদ;; কিন্তু আব্রাহাম আইরাত কিভ….
আব্রাহাম;; না বাবা ও পারে কি পারে না তা পরের আলাপ। যে করেই হোক ওকেই আজ রান্না করতে হবে।
আইরাত;; কি কিন্তু আমি তেমন পারি না,, খাওয়ার ও যোগ্য হবে কিনা জানি না
আব্রাহাম;; যেমনই হোক আমরা আমি খাবো আর তুমি রাধবে। Now go fast…
তখনই অয়ন হাটতে হাটতে ড্রোইং রুমে এলো।
অয়ন;; Good morning everyone… কি হয়েছে রে দাভাই,, সবার মুখ এমন হয়ে আছে কেন। Specially আমার কিউট ভাবির।
আব্রাহাম;; আজ তোর ভাবি আমাদের রান্না করে খাওয়াবে
অয়ন;; ওয়াও ভাবি তুমি রান্না করতে জানো,, তাহলে তো ভালোই হবে। ভাবির হাতের রান্না বলে কথা
আইরাত কান্না কান্না মুখ করে অয়নের দিকে তাকালো। বেচারি পারছে না আব্রাহাম এর মাথা নেড়ো করে দিতে।
আইরাত;; কুত্তা,বিলাই,গরু,হারামজাদা,বান্দর, জীবন টা আমার তেজপাতা করে ছারলো। বলছি রান্না পারি না তবুও সবার সামনে আমার মান-সম্মান এর ফালুদা করার জন্য রান্না করতে বলছে আমাকে। দেখে নিবো তোকে গন্ডার (মনে মনে)
আব্রাহাম;; কি হলো দাঁড়িয়ে আছো কেন আরে যাও।
আইরাত;; যা যাযাচ্ছি।
আব্রাহাম;; জেসিয়া(কাজের মেয়ে) তোমার ম্যাম কে রান্নাঘর টা দেখিয়ে দাও তো
জেসিয়া;; জি স্যার
জেসিয়া আইরাতকে রান্না ঘর দেখিয়ে দিলো। আইরাতের তো রান্নাঘরে গিয়ে আক্কেলগুড়ুম। কি করবে কি করবে না কিছুই ভেবে পাচ্ছে না সে। কে কি খেতে ভালোবাসে তাও সে জানে না।
আইরাত;; আব..জেসিয়া
জেসিয়া;; জি ম্যাম
আইরাত;; তোমার স্যার কি খেতে বেশি পছন্দ করেন?
জেসিয়া;; ম্যাম স্যার মিষ্টি জাতীয় এর মধ্যে পায়েস খেতে বেশি ভালোবাসেন।
আইরাত;; ওহহ পায়েস।
আইরাত ভাবতে লাগলো পায়েস তো সে ঠিক ভাবে রান্না করতে পারে না। আগে মা কে দেখতো পায়েস বানাতে তখন একটু আকটু দেখেছিল। কিন্তু কিভাবে বানায় তা তো সম্পূর্ণ সে জানে না। যতটুকু যানে তত টুকুই বানাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। আইরাত লেগে পরলো পায়েশ বানাতে। আর ভাবলো জেসিয়ার কাছ থেকে একটু হেল্প নিবে। আইরাত যেই তার পাশে তাকালো দেখলো আব্রাহাম তার পাশে দুহাত ভাজ করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আইরাত ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো।
আব্রাহাম;; আরে cool baby আমিই তো তোমার জামাই। এতে এতো ভয় পাওয়ার কিছুই নেই।
আইরাত;; এভাবে হুট হাট করে সামনে এসে পরলে তো ভয় পাবোই নাকি।
আব্রাহাম;; Anyway listen,, কারো কাছ থেকে হেল্প নেয়ার ট্রাই ও করবে না তুমি নিজে বানাবে।
আইরাত;; 😒😒
আব্রাহাম রান্না ঘর থেকে সরে এলো। আইরাতের মাথায় কিছুই ধরছে না কি থেকে কি করবে।। তবুও আল্লাহ আল্লাহ করে রান্না করলো। প্রায় ১ ঘন্টা পর আইরাতের পায়েস রেডি হয়ে গেলো। কিন্তু আইরাতের মুখে ১২ টা বেজে রয়েছে। সামনে পায়েস নিয়ে মুখ লটকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সেই সময়ই জেসিয়া দৌড়ে এলো।
জেসিয়া;; ম্যাম, কি হয়েছে
আইরাত;; কি আর হবে
জেসিয়া;; না মানে এমন পুড়ার মতো গন্ধ বের হয়েছে কি
আইরাত অসহায় দৃষ্টিতে জেসিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। জেসিয়া বুঝতে পারলো যে এই গন্ধ আর কারো না বরং আইরাতের সুস্বাদু পায়েসের । জেসিয়া ও কিছু না বলে হাবলাকান্তের মতো দাড়িয়ে রইলো।
আইরাত;; কি যে বানালাম তা একমাত্র আল্লাহ ই ভালো জানেন। আদৌ খাওয়া যাবে কিনা।
আইরাত ভয়ে ভয়ে ট্রে তে করে তিন বাটি পায়েস নিয়ে গেলো ড্রোইং রুমে।
আইরাত;; আল্লাহ প্লিজ প্লিজ যেন খাওয়ার মতো হয়। প্লিজ যেন ভালো হয়।
আইরাত ধীরে ধীরে ড্রোইং রুমে গেলো।
অয়ন;; আরে এইতো ভাবি এসে পরেছে, দাও দাও ভাবি খেতে দাও দেখি
আইরাত সাবধানে পায়েসের ট্রে টা ডাইনিং টেবিলের ওপরে রাখলো। আইরাত প্রথমে আবির আহমেদ মানে তার বাপির এর দিকে একটা পায়েসের বাটি এগিয়ে দিল। তার পর অয়নের দিকে। শেষে আব্রাহাম কে দিল। আইরাত তার মুখে জোড় পূর্বক হাসি টেনে সবার উদ্দেশ্যে বলল…
আইরাত;; নিন খান…
আবির আহমেদ;; আমার মামনি রান্না করেছে বলে কথা খেতে তো হবেই
এই বলে আবির আহমেদ পরম আবেশে পায়েস মুখে দিলেন। আইরাত চোখ মুখ খিচে দাঁড়িয়ে আছে এবং আল্লাহ আল্লাহ করছে। কিন্তু হলো তার উল্টো টা। আবির আহমেদ পায়েস মুখে পুরেই থ মেরে বসে রইলেন। অয়নের ও সেই একই অবস্থা। আবির আহমেদ কোনরকমে মুখের পায়েস টুকু খেয়ে নিলেন এবং আইরাতের উদ্দেশ্যে বললেন…
আবির আহমেদ;; আইরাত মামনি মানে বলছিলাম কি যে আমার না আমার আসলে ইদানীং ডাইবেটিক্স টা একটু বেশি বেড়ে গেছে, আর পায়েস তো মিষ্টান্ন খাবার তো আমি না মা আর পারবো না। আমি এবার উঠি কেমন।
এই বলে আবির আহমেদ এক প্রকার দৌড়েই ওপরে নিজের রুমে চলে গেলেন। আইরাত বোকার মতো তার বাপির দিকে তাকিয়ে রইলো। অয়নের দিকে তাকিয়ে দেখলো অয়ন মুখে পায়েস নিয়ে মূর্তির মতো বসে আছে।
অয়ন;; ভাভাভাবি আমার না অফিসে যেতে হবে বুঝলে আমি যাই হে আমার না পেপেট ভরে গেছে।
এই বলে অয়নও একপ্রকার দৌড়ে চলে গেলো। যাওয়ার আগে ফাটা চোখে একবার আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে গেলো। কেননা আব্রাহাম এমন ভাব করছে যেন কিছুই হয় নি। সে তার মনের সুখে একাধারে খেয়েই যাচ্ছে।
আইরাত;; আচ্ছা কি হলো আমি না কিছুই বুঝতে পারলাম না
আব্রাহাম;; কি হলো
আইরাত;; বাপি আর অয়ন এভাবে চলে গেলো কেন। আমি তো জানি যে পায়েস অনেক বাজে হয়েছে খেতে (মাথা নিচু করে মন খারাপ করে)
আব্রাহাম;; চুপপপপ,, বেশি বুঝ কেন এতো কে বলেছে যে পায়েস খেতে বাজে হয়েছে। In fact আমি আমার পুরো জীবনে এমন পায়েস খাই নি। যদি বাজেই হতো তাহলে আমি খাচ্ছি কি করে বলত
আইরাত;; তাই, তাহলে আমিও একটু খেয়ে দেখি তো
আব্রাহাম;; এই না না, একদম এগুলোতে হাত দিবে না। এইসব টাই আমার। আমি খাবো।
আইরাত;; এখানে এক বোল পায়েস, আপনি এই পুরোটা খেতে পারবেন (অবাক হয়ে)
আব্রাহাম;; অবশ্যই পারবো।
আইরাত;; না আমি খেয়ে দেখবোই কেমন হয়েছে
আব্রাহাম;; না বলেছি
কিন্তু কে শুনে কার কথা। আইরাত জোর করে এক চামোচ পায়েস তার মুখে পুরে নিলো। পায়েস খেয়েই আইরাতের চোখ বেড়িয়ে আসার মতো অবস্থা। আইরাত দৌড়ে বেছিং এ চলে গেলো এবং কাশতে লাগলো। আব্রাহাম তাড়াতাড়ি করে উঠে গিয়ে আইরাতের পিঠে এবং মাথায় হাতিয়ে দিতে লাগলো। আইরাতের কাশতে কাশতে অবস্থা খারাপ। আইরাত পরে উঠে গিয়ে টেবিলে বসল
আব্রাহাম হেসে আইরাতের দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিল। আইরাত পানি খেতে খেতে আব্রাহাম কে বলে উঠলো…
আইরাত;; এইটা খাদ্য না কুখাদ্য। আপনি কি বলেন তো!!
আব্রাহাম;; তোমার জামাই। (চোখ টিপ দিয়ে)
আইরাত;; আরে মানে এই কুখাদ্য আপনি কিভাবে খাচ্ছেন। আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না। প্লিজ আপনি রাখেন তো নইতো পরে শরীর খারাপ হবে।
আব্রাহাম;; এই খবরদার আমার বউ এর রান্না কে কুখাদ্য বলবে না। নয়তো মুখ সেলায় করে দিব বলে দিচ্ছি। আর আমি খেতে পারলে তোমার সমস্যা টা কোথায়। চুপ করো আমাকে খেতে দাও।
আইরাত;; 🤐
আইরাত টেবিলে বসে শুধু অবাক হয়ে আব্রাহাম কে দেখে যাচ্ছে। মানে এই কুখাদ্য উনার হজম হচ্ছে কি করে। আইরাত কে অবাক করে দিয়ে আব্রাহাম পুরো এক বোল পায়েস খেয়ে উঠলো।
আব্রাহাম;; Honestly speaking, আমি আমার পুরো লাইফে এমন ফাটাফাটি পায়েস কখনোই খাইনি। It was just amazing
আইরাতের মাথা ঘুরাচ্ছে আব্রাহামের এইরকম কথা শুনে।
আইরাত আর কিছু না বলে সোজা ওপরে চলে গেলো। আইরাত জানালার কাছে বসে আছে মন মরা হয়ে। এতো টা দিন কেটে গেল কিন্তু পাপা মা আয়ুশের সাথে তার একদম দেখা নেই। চোখের কোণে পানি জোড় হতে লাগলো। আব্রাহাম রুমে এলো। রুমে গিয়ে দেখল আইরাত জানালার কাছে বসে আছে। রুমে কারো উপস্তিতি টের পেয়ে আইরাত পিছন ঘুরে তাকালো। দেখলো আব্রাহাম দাঁড়িয়ে আছে। আইরাত কোন কথা না বলে আইনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো,, আইনার সামনে গিয়ে নিজের চুল আচরাতে লাগলো। আব্রাহাম এক ভ্রু উঁচু করে আইরাতের দিকে তাকালো। মানে আইরাত এমন একটা ভাব করলো যেন সে আব্রাহাম কে দেখেই নি। আব্রাহাম আইরাতের পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। আইরাতের কোমড় ধরে কাছে টেনে নিয়ে আব্রাহাম তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। আইরাতের এই ছোয়া যেন অসহ্যকর লাগছে। আব্রাহাম আইরাতের কাধের চুলগুলো সরিয়ে কাধে তার নাক ঘসতে লাগলো। আইরাত হাতে তার ওরনা খামছে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেললো।
আব্রাহাম;; জানপাখি তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে নাও।
আইরাত;;………………………….
আব্রাহাম;; আমরা বাইরে বের হবো
আইরাত;; ক ক কোথায় যাবো
আব্রাহাম;; দুচোখ যেদিকে যায়
আইরাত;; আমি যাবো না
আব্রাহাম;; কি বললে
আইরাত মুখ তুলে আইনাতে তাকালো। আইনাতে আব্রাহামকে দেখে আইরাতের প্রান পাখি উড়ে গেলো। হিংস্র বাঘের মতো আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে।
আব্রাহাম;; কি বললে জানপাখি আবার বল
আইরাত;; না না না মানে আআমি যাবো তো যাযাবো।
আব্রাহাম;; That’s like a good girl… এখন জলদি তৈরি হয়ে নাও। আর শুনো এইসব জামা কাপড় পরা চলবে না
আইরাত;; তাহলে পরবো টা কি?
আব্রাহাম;; ওয়েট
এই বলে আব্রাহাম তার কাবার্ট থেকে একটা কালো কালারের ওপর সাদা স্টোনের কাজ করা শাড়ি বের করে দিলো।
আব্রাহাম;; তুমি এটা পরবে।
আইরাত;; কিইইইইইই, শাড়ি
আব্রাহাম;; কানের মাথা খেয়েছো নাকি
আইরাত;; না মানে আমি তো কখনো শাড়ি পড়িনি
আব্রাহাম;; Oh i see তাহলে আমার কাজ তো আরো সহজ হয়ে গেলো।
আইরাত;; মামামানে
আব্রাহাম;; মানে, শাড়ি তো তুমি পরতে পারো না। তাই আমি নিজে তোমাকে শাড়ি পরিয়ে দিবো। (আইরাতের কোমড় আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে)
আইরাত;; কিহহহহ হায় আল্লাহ না না থাক আমি নিজেই পরে নিব (আব্রাহামের কাছ থেকে ছুটার চেষ্টা করে)
আব্রাহাম;; R u sure?!
আইরাত;; হুম হুম আমি শিওর
আব্রাহাম;; Ok then get ready within 10 mins
আইরাত;; আরে এতো কম সময়ে আমি শাড়ি পরবো কি করে
আব্রাহাম;; তা তো আমি জানি না কিভাবে কিন্তু তোমাকে ১০মি. এর ভিতরেই রেডি হতে হবে।
আইরাত;; কিন্ত আব…
আইরাত আর কিছু বলার আগেই আব্রাহাম হনহন করে রুম থেকে বের হয়ে পরলো।
আইরাত;; খাটাস কোথাকার, হাহ্
আইরাত আব্রাহাম কে ১০১ টা গালি দিয়ে শাড়ি পরতে শুরু করলো। কিন্তু আইরাতের যে এই যনমে আর শাড়ি পরে উঠা হবে না তা আইরাত বেশ ভালোই বুঝতে পারছে। আইরাত একবার শাড়ি পরছে পরে দেখা
যাচ্ছে যে আঁচল ছোট হয়েছে,, আবার কুচি খুলে যাচ্ছে। মানে একদম নাজেহাল অবস্থা।
আইরাত;; বাপ রে বাপ শাড়ি ও কি মানুষ পরে নাকি। বিরক্তিকর একটা জিনিস। শাড়ি তো কোন ভাবেই সামলাতে পারছি না এখন কি করবো।
অন্যদিকে ১০ মি. এর জায়গায় ২০মি. হয়ে গেছে কিন্তু আইরাতের বের হওয়ার কোন নাম ই নেই। আব্রাহামের রাগে মাথা ফাটার মতো অবস্থা। সে শুধু রাগে ফুসছে আর ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। অবশেষে আর না দাঁড়িয়ে থেকে আব্রাহাম তার রুমে চলে গেলো। রুমের গিয়ে ঠাসস করে দরজা খুলে দিলো। গিয়ে দেখলো আইরাত নিচে কোন রকম শাড়ি পেচিয়ে ওপরের পুরো অংশ হাতে নিয়ে ঠোঁট উল্টিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আইরাত আব্রাহাম কে দেখে মাথা নিচু করে ফেলল। আব্রাহামের আইরাত কে দেখে প্রচুর হাসি পাচ্ছে কিন্তু নিজেকে সামলে নিচ্ছে। আব্রাহাম আইরাতের দিকে এগিয়ে গেলো। আইরাত মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
আব্রাহাম;; আগেই বলেছিলাম যে শাড়ি পরতে পারবে না আমি পরিয়ে দিই কিন্তু না কথা শুনোনি। এখন দেখ তো নিজের কি হাল করে রেখছ।
আইরাত;; 😔😔
আব্রাহাম;; Don’t be sad baby girl… তোমার এই জামাই আছে কি করার জন্য হুমম। এদিকে এসো আমি পড়িয়ে দিচ্ছি।
আইরাত আর কোন কথা না বলে সোজা দাঁড়িয়ে রইলো। আব্রাহাম খুব যত্ন করে আইরাত কে শাড়ি পড়িয়ে দিতে লাগলো। মাঝে মাঝে শয়তানি করে আইরাতের পেটে, পিঠে কোমড়ে ছুয়ে দিচ্ছে। আর আইরাত তা বিরক্ত নিয়ে সহ্য করে যাচ্ছে।
৭-৮ মি. পর আব্রাহাম আইরাত কে শাড়ি পরিয়ে দিল।
আব্রাহাম;; Here you go baby girl..
আইরাত আইনার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে অবাক হয়ে দেখতে লাগলো। সত্যি অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাকে। আব্রাহাম আইরাত থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে দুহাত ভাজ করে দাঁড়ালো।
আইরাত;; আপনি এতো সুন্দর শাড়ি পরানো কোথা থেকে শিখেছেন?
আব্রাহাম;; এই ধরো, girlfriend দের পড়িয়ে দিতে দিতে
আইরাত;; মানে কি
আব্রাহাম;; মানে আমি মাঝে মাঝে আমার girlfriends দের শাড়ি পরিয়ে দিতাম তো ওদের পরিয়ে দিতে দিতেই শিখে গেছি।
আইরাত;; ভালো করেছেন তাহলে ওদের কেই পড়িয়ে দিতেন আমাকে কেন দিলেন।
এই বলে আইরাত আবার আইনার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুল বাধতে লাগলো। কিন্তু আব্রাহাম গিয়ে আইরাতের চুলগুলো খুলে দিলো। এতে আইরাত রেগে গেলো।
আইরাত;; এটা কি হলো
আব্রাহাম;; আমার সামনে কখনোই নিজের চুল বাধবে না ঠিক আছে। সবসময় খুলে রাখবে
আইরাত;; আমার নিজের ওপর তো আপনার অধিকার ফেলেই দিয়েছেন। এখন কি আমার ইচ্ছের ওপর ও আপনার রাজত্ব চলবে। আমার ইচ্ছের কি কোন মূল্য নেই।
আইরাত এই কথা বলেই দ্রুত রুম থেকে বেড়িয়ে পড়লো। আর আব্রাহাম ওকে দেখে হেসে কুটি কুটি হচ্ছে। আইরাত সোজা তার বাপির ঘরে চলে গেলো।
আইরাত;; বাপি আসবো
আবির আহমেদ;; হ্যাঁ রে মা আয় আয়
আইরাত;; এই নাও
আবির আহমেদ;; কি
আইরাত;; তোমার ঔষধ। তুমি তো নিজে মনে করে খাবে না তাই আমাকেই নিয়ে আসতে হলো।
আবির আহমেদ;; হাহাহা,, আমার তোর হাতে না খেলে সবকিছুই কেমন যেন পানসে পানসে লাগে রে
আইরাত;; তাহলে আজ সকালে আমার হাতের পায়েস খেলে না কেন?
আবির আহমেদ এবং আইরাত উভয়ই জোড়ে হেসে দিলো।
আবির আহমেদ;; আচ্ছা মামনি কোথাও যাচ্ছিস তোরা?
আব্রাহাম;; Yeap বাপি (ঘরে প্রবেশ করে)
আবির আহমেদ;; ওহ ভালো করেছিস। যা আইরাত কে নিয়ে কোথাও ঘুরে আয় এতে ভালো লাগবে তোদের দুজনের ই। আইরাত মা তোকে অনেক সুন্দর লাগছে।
আইরাত;; 😊
আব্রাহাম;; হুমম বাপি তাহলে তুমি থাকো। আমরা বের হই কেমন। আর নিজের খেয়াল রেখো।
আব্রাহাম-আইরাত তাদের বাপির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলো। তারা গাড়িতে উঠে পরলো। কিন্তু আইরাত করলো উল্টো কাজ। সে সোজা গাড়ির পিছনের সিটে গিয়ে বসে পড়লো। এতে আব্রাহামের মেজাজ পুরো চটকে গেলো।
আব্রাহাম;; এই মেয়ে তোমাকে কি আমার ড্রাইভার মনে হয় নাকি?
আইরাত;; মানে
আব্রাহাম;; মানে তুমি পিছনে গিয়ে বসেছ কেন। সামনে এসে বসো চুপচাপ।
আইরাত;; না আমি সামনে বসবো না, এখানেই আমি ঠিক আছি
আব্রাহাম আর কোন কথা না বলে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। পিছনের গাড়ির দরজা খুলে আইরাতকে একটানে নিজের কাছে নিয়ে এলো। আইরাতকে কোলে তুলে নিলো। তারপর আইরাত কে সামনে নিয়ে এসে সোজা সিটে বসিয়ে দিল।
আইরাত;; আম..
আব্রাহাম;; হোপ, Not a single word ok.. নইতো এখানেই কিছু একটা করে বসবো।
আইরাত আর কিছুই না বলে ভিজে বেড়ালের মতো করে বসে পড়লো। কারণ সে জানে যে আব্রাহামের বিশ্বাস নেই যখন তখন যা ইচ্ছে করে দিতে পারে।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
আব্রাহাম এক মনে ড্রাইভ করেই যাচ্ছে। মাঝে মাঝে আইরাতের দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে। আইরাত গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে বেস্ত। বাতাসে তার অবাধ্য চুলগুলো উড়ছে। আইরাত তা সামলানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছে। আব্রাহাম আইরাতের দিকে নেশা লাগানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম ড্রাইভ করেই যাচ্ছে। তখন আইরাত খেয়াল করল যে এই রাস্তা টা তার খুবই চেনা। সে আব্রাহামের দিকে তাকালো আব্রাহাম সামনের দিকে তাকিয়ে ড্রাইভ করাতে বেস্ত।
বেশ কিছুক্ষন ড্রাইভ করার পর আব্রাহাম এক বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামালো। আইরাত অবাক চোখে আব্রাহানের দিকে তাকিয়ে আছে। কেননা যে বাড়ির সামনে আব্রাহাম তার গাড়ি থামিয়েছে সে বাড়ি আর কারোর না বরং আইরাতের নিজের বাবার বাড়ি।
আইরাত;; এটা তো পাপার বাড়ি। আব্রাহাম আমাকে এখানে নিয়ে আসলো আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। আর আব্রাহাম আমার পাপার বাড়িই বা কিভাবে চিনলো (মনে মনে)
আইরাত তার ভাবনার জগৎ এ ডুবে ছিলো কিন্তু আব্রাহামের ডাকে তার হুশ ফিসলো।
আব্রাহাম;; Come baby girl (আইরাতের পাশের দরজা খুলে আইরাতের দিকে হাত বারিয়ে দিয়ে)
আইরাত আব্রাহামের হাতে হাত না দিয়ে কোন কথা না বলে সোজা গাড়ি তগেকে নেমে পরলো।
আব্রাহাম;; জানপাখি, তোমার পাপার বাড়ি। আসলে আমি তোমাকে Surprise দিতে চেয়েছিলাম এখানে এনে। আর দেখো দিয়েও দিলাম। আমি আজকে তোমাকে তোমার পাপার বাড়িতে রেখে যেতে এসেছি। কিন্তু কাল সকালেই আমি এসে পরবো তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যেতে।
আব্রাহামের কথা বলতে দেরি কিন্তু আইরাতের দৌড় দিয়ে তার পাপার বাড়িতে যেতে দেরি না। আইরাত শুধু আব্রাহামের দিকে একবার তাকিয়ে দৌড়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো।
আব্রাহাম তার পেন্টের পকেটে দুহাত গুজে দিয়ে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আইরাতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। ঠোঁটের কোণে ঝুলছে তার বাকা হাসি।।।।
..
..
..
..
..
..
🌼💛চলবে~~~~~
.
.
.
.
#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””
#Writer; Tamanna Islam
#part__ 21
💜💐
..
..
..
..
..
আব্রাহাম গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে একাধারে আইরাতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সে তার গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।
আইরাত এক দৌড়ে তার বাড়ির সামনে চলে গেলো। আইরাত অস্থির হয়ে সদর দরজাতে ধাক্কাতে শুরু করলো। দরজাতে ধাক্কানোর শব্দ পেয়ে বাড়ির কাজের মেয়ে লিজা গিয়ে দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলে আইরাত কে দেখে লিজা অবাক হয়ে গেলো।
লিজা;; আরে আইরাত আফা আপনে, এতোদিন পর কেমনে আইলেন এনে
আইরাত লিজার কথার উত্তর না দিলে দৌড়ে ড্রোইং রুমে চলে এলো। চিৎকার করে আইরাত তার পাপা মা এবং ছোট ভাই আয়ুশ কে ডাকতে লাগলো। চিল্লানোর আওয়াজ শুনে আইরাতের পাপা আশরাফুল আহমেদ এবং আতিয়া আহমেদ জলদি নিচে নেমে পরলেন। আশরাফুল আহমেদ মেয়ে কে দেখে হন্তদন্ত হয়ে নিচে নামলেন। আইরাত তার পাপা কে দেখে দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে এবং কান্না করে দেয়। আশরাফুল আহমেদেরও একই অবস্থা। তিনি ও মেয়েকে ধরে কেদে দিলেন। আজ এতোদিন পর মেয়ে কে দেখে যেন তিনি তার হাতে আকাশের চাঁদ পেয়ে গেছেন।
আইরাত;; পাপা (কেদে কেদে)
আশরাফুল আহমেদ;; মা আমার কোথায় ছিলি তুই এতোদিন। কতোই না খুজেছি তোকে, সব জায়গায় খুজেছি কিন্তু কোথাও পাই নি। তুই জানিস তোর জন্য কতটা চিন্তা হচ্ছিলো আমাদের। কলিজাতে পানি ছিলো না। কোথায় আছিস, কি করছিস সারাদিন এসবই মাথায় ঘুরপাক খেত। খুব মনে পরেছে রে মা তোর কথা খুব মনে পরেছে।
আইরাত;; হ্যাঁ পাপা আমিও তোমাদের অনেক মিস করেছি।
সেইসময় আইরাতের মা আতিয়া আহমেদ দৌড়ে এলেন। আইরাত কে দেখে তিনি কাছে টেনে জড়িয়ে নিলেন এবং চোখের পানি ছেড়ে দিলেন।
আতিয়া আহমেদ;; এক একটা দিন যেন বুকে পাথর রেখে কাটিয়েছি আমরা। কোথায় চলে গিয়েছিলি তুই আমাদের ছেড়ে। বাড়ি টা পুরো ফাকা হয়ে গিয়েছিলো তোকে ছাড়া।
আইরাত;; আম্মু, আমিও তোমাদের কাছে আসার অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু আমি পাই নি। আর তোমাদের, তোমাদের কোন ক্ষতি হয় নি তো। তোমরা ঠিক আছো তো। আয়ুশ ঠিক আছে তো
আতিয়া আহমেদ কিছু বলতে যাবেন তার আগেই আশরাফুল আহমেদ তাকে ইশারা করে চুপ থাকতে বললেন, যেন আয়ুশের এবং আতিয়া আহমেদের কিডনেপ হওয়ার কথা আইরাত কে না বলে তাহলে মেয়ে টা আরো ভয় পেয়ে যাবে। এই কাজ কে করেছে তা জানার জন্য আশরাফুল আহমেদ লোক লাগিয়ে দিয়েছেন। আর বড়ো কথা হচ্ছে আতিয়া আহমেদ এবং আয়শের কোন ক্ষতি হয়নি তারা একদম ঠিক আছে।
আতিয়া আহমেদ;; ননা আমরা, আমরা ঠিক আছি রে মা। আমাদের আবার কি হবে।
আইরাত তার মায়ের দিকে তাকালো যেন আইরাতের তার মায়ের কথা কোন ভাবেই বিশ্বাস হচ্ছে না। আইরাত কিছু বলতে যাবে তার আগেই আয়ুশ দৌড়ে আইরাতের কাছে আসে।
আয়ুশ;; আপিইইইইইই
আইরাত;; আয়ুশ
আইরাত দৌড়ে গিয়ে আয়ুশ কে জড়িয়ে ধরে কোলে তোলে নেয়। গালে, কপালে হাজার চুমু দিতে থাকে।
আয়ুশ;; আপি, আপি তুমি আমাদের রেখে বার বার কেন চলে যাও, জানো আমার খুব কষ্ট হয়। তুমি ছাড়া আমার একদম ভালো লাগে না, তুমি চলে গেলে আমার সাথে মারামারি কে করবে বলো, আমার সাথে খেলবে কে। আপি আমি না তোমার জিনিসে আর হাত দিবো না তোমাকে আর জ্বালাবো না তবুও তুমি আর আমাদের রেখে যেও না প্লিজ।
আইরাত;; না সোনা এইতো আমি এখানে এসে পরেছি। আমি আর কোথাও যাবো না কোথাও না (কেদে দিয়ে)
আয়ুশ;; আপি কেদো না, তোমাকে মানায় না (ছোট ছোট হাত দিয়ে আইরাতের চোখের পানি মুছে দিয়ে)
আইরাত মুচকি হেসে আয়ুশের হাতে চুমু একে দিলো। এবার আতিয়া আহমেদ আইরাতের দিকে এগিয়ে গেলো।
আতিয়া আহমেদ;; আইরাত মা
আইরাত;; হুমমম
আতিয়া আহমেদ;; তুই এতোদিন কোথায় ছিলি মা। আর তুই, তুই শাড়ি পরে আছিস কেন।
আশরাফুল আহমেদ;; মামনি ওই ছেলেটা তোকে আবার তুলে নিয়ে গিয়েছিল তাই না। সেদিন, সেদিন যখন তোর রুমের দেয়ালে রক্ত দেখিছিলাম কি পরিমাণ যে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমরা তা তোকে বলে বুঝাতে পারবো না। মা তুই ঠিক আছিস তো
আইরাত;; সবাইকে আগেই কিছু বলা যাবে না। তাহলে পাপা হুলুস্থুল কান্ড বাজিয়ে দিবেন। ধীরে ধীরে সবকিছু সামলাতে হবে (মনে মনে)
আতিয়া আহমেদ;; আইরাত কি হলো মা বল
আইরাত;; না না মামামানে আআম্মু আসলে আমাকে সেদিন আমার রুম থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু আজ আমি সুযোগ বুঝে সেখান থেকে পালিয়ে এসেছি।
আশরাফুল আহমেদ;; মা তুই নিশ্চিন্তে থাক। তোর পাপা যতদিন বেচে রয়েছে ততদিন তোর কিছুই হতে দিবে না। তুই এখন থেকে এখানেই থাকবি আমি বাড়ির বাইরে আরো কড়া নজরদারির ব্যাবস্থা করছি। আতিয়া তুমি মেয়ে কে নিয়ে ভিতরে যাও।
আতিয়া আহমেদ;; আইরাত মা তুই তোর ঘরে চলে যা, ফ্রেশ হয়ে নে।
আইরাত;; আচ্ছা আম্মু।
এই বলে আইরাত সিড়ি বেয়ে ওপরে নিজের ঘরে চলে গেলো। নিজের ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে আইরাত যেন এক সস্থির নিঃশ্বাস ছাড়লো। পুরো রুমে চোখ বুলালো। নাহ, কোন একটা জিনিস এদিক থেকে ওদিক হয়নি আগে যেমন ছিলো এখনও তার ব্যতিক্রম নয়। আইরাত ধীরে ধীরে তার বিছানার কাছে এগিয়ে গিয়ে বসে পড়লো। বিছানার ঠিক সামনেই তার একটা হাস্যজ্জোল ছবি রয়েছে কিন্তু এখন এই হাসিটাই যেন আইরাতের চেহারা থেকে চলে গিয়েছে। আইরাত উঠে তার ঘরের সবগুলো জিনিসই হাত দিয়ে ছুয়ে ছুয়ে দেখলো। বহুদিন পর আজ সে নিজেকে অনুভব করতে পারছে। আইরাত তার কাবার্ট থেকে সাদা কালারের একটা চুড়িদার নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। কিছুক্ষন পর আইরাত ফ্রেশ হয়ে এলো। ভেজা চুলের পানি গড়িয়ে পরছে। আইরাত আইনার সামনে গিয়ে চুল শোকাতে লাগলো। আইরাত এবার আইনার দিকে তাকিয়ে নিজেকে ভালো ভাবে দেখে নিলো। আজকে ঠিক তাকে সেই আগের আইরাতের মতো লাগছে। আগের সেই চঞ্চল আইরাত। কিন্তু ইদানীং সেই আগের আইরাত কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। আইরাত মুচকি হাসলো। তখনই দরজাতে কারো নক করার শব্দ এলো। আইরাত ভিতরে আসতে বললে আতিয়া আহমেদ হাতে খাবার নিয়ে ভিতরে এলেন।
আইরাত;; আম্মু তুমি এতো কষ্ট করে কেন আনতে গেলে বলত আমাকে ডাকতে আমি নিচে চলে এতাম।
আতিয়া আহমেদ;; না আমিই এসে গেলাম। এখন এদিকে আয় দেখি তোকে খাইয়ে দিই। আগে তো আমার হাতে খাওয়ার জন্য কতো জেদ করতি কিন্তু আমিই খাইয়ে দিতাম না তখন তোর পাপা খাইয়ে দিত। আর এখন, এখন আমি চেয়েও পাই না
এই বলেই আতিয়া আহমেদ কেদে উঠেলেন।
আইরাত;; আহা মা। আচ্ছা কান্না করছো কেন। আমি এতোদিন পর এসেছি আর এসেই তোমার এই কান্নাকাটি শুরু। ভালো লাগছে না কিন্তু বলে দিলাম কান্না থামাও। নয়তো আমি খাবোও না বলে দিচ্ছি।
আতিয়া আহমেদ তাও তার কান্না থামাতে পারছেন না।
আইরাত;; আচ্ছা আম্মু এতো কান্না করছো কেন বলতো। পাপা কি তোমাকে আগের মতো ভালোবাসে না নাকি (তার মাকে চেতানোর জন্য)
আতিয়া আহমেদ;; কি বললি, দিবো না একটা। শয়তানি গেলো না তোর
আইরাত;; হাহাহাহাহাহাহাহাহা, রেগো না গো মা জননী একটু মজা করলাম
আতিয়া আহমেদ;; হয়েছে হয়েছে নে এবার এদিকে আয় খাইয়ে দিই।
আতিয়া আহমেদ আইরাতকে খাইয়ে দিতে লাগলেন। খাওয়া শেষে আতিয়া আহমেদ আইরাতকে শুয়ে বিশ্রাম নিতে বলে চলে গেলেন।
কিন্তু আইরাতের যে কোন ভাবেই ভালো লাগছে না। সে শুধু আব্রাহামের চিন্তা করছে। আব্রাহাম তো বলেছে যে আগামীকালই সে আবার আসবে তাকে নেয়ার জন্য। আব্রাহাম যদি কাল এসে আবার কোন কান্ড বাধিয়ে ফেলে তখন কি হবে। আব্রাহাম যে আইরাতকে জোড় করে বিয়ে করে ফেলেছে তাও তো সে তার পাপা আম্মু কে বলে নি। তারা যদি জেনে যায় তাহলে কি হবে। আইরাতের চিন্তাতে কোনভাবেই ভালো ঠেকছে না। চিন্তা যেন তার মাথা চেপে ধরেছে। হঠাৎ করেই আইরাতের মনে পরলো যে অনেক দিন যাবত তাদের বাসার ছাদে যাওয়া হয় না। আইরাত উঠে গিয়ে ছাদের দিকে চলে গেলো এই ভেবে যে যদি কিছুটা ভালো লাগে। যাওয়ার আগে লিজা কে বলে গেলো ছাদে যাতে এক গ্লাস কফি দিয়ে যায়। আইরাত ছাদে চলে গেলো। তার ছাদেও অনেক গাছ রয়েছে, সবগুলোই তার শখের। আইরাত ছুয়ে ছুয়ে গাছের ফুলগুলো দেখতে লাগলো। গাছগুলোতে পানিও দিয়ে দিলো। তারপর লিজা এসে কফির মগটা আইরাতকে দিয়ে গেলো। আইরাত মগটা নিয়ে ছাদের এক কিনারে চলে গেলো। পড়ন্ত বিকেলের গোধূলি লগ্নে আকাশ টা তার আপন সাজে সেজেছে। তাতে আবার ডুবন্ত সূর্য। হালকা হাওয়া বয়ে চলেছে চারিপাশে। সেই হাওয়া গায়ে লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে আইরাত। কিন্তু বেশ খানিক দূরে থেকে আইরাতকে ঘোর লাগা নয়েনে দেখে যাচ্ছে একজন। সে আর কেউ না বরং আব্রাহাম নিজে। মুগ্ধ হয়ে দেখছে সে তার আইরাতকে। আজ তার আইরাতকে সেই প্রথম দিনের মতো লাগছে, মায়াবতী। ছাদে এসে মন-মেজাজ দুটোই যেন ফুরফুরে হয়ে গেলো আইরাতের। সন্ধ্যে নেমে এলে আইরাত আবার চারিপাশে একবার চোখ বুলিয়ে মুচকি হেসে নিচে চলে এলো।
আইরাত নিচে নেমে এলে আশরাফুল আহমেদ তাকে ডাক দেন।
আশরাফুল আহমেদ;; আইরাত মামনি, কোথায় ঘুরে বেড়াচ্ছিস তুই
আইরাত;; না পাপা কোথাও না এইতো একটু ছাদে গিয়েছিলাম আরকি
আশরাফুল আহমেদ; এদিকে আয় মা একটু পাপার কাছে বোস
আইরাত হেসে তার পাপার কাছে চলে গেলো। সোফার ওপর বসে তার পাপাকে জড়িয়ে ধরলো।
আইরাত;; পাপা
আশরাফুল আহমেদ;; বলো মামনি
আইরাত;; অনেক মিস করেছি তোমাকে
আশরাফুল আহমেদ;; আমিও রে মা আমিও
এই বলে বাবা-মেয়ে বেশ কিছুক্ষন বসে আড্ডা দিল।
রাতে সবাই খেয়ে দেয়ে যে যার ঘরে চলে গেল।
আইরাত বিছানাতে বসে বসে বই পরছিলো তখন আতিয়া আহমেদ তার ঘরে এলো।
আতিয়া আহমেদ;; কি করছিস মা
আইরাত;; আরে আম্মু এসো এসো
আতিয়া আহমেদ;; ঘুমাবি না
আইরাত তার পাশে বই রেখে তার মায়ের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো। আতিয়া আহমেদ হেসে আইরাতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। আইরাতের খুব করে কাদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সে তা পারবে না। আজ অনেকদিন পর আইরাত শান্তি খুজে পেয়েছে তার মায়ের কোলে। আসলে মা এমনই হয় যতই কষ্ট থাকুক, চিন্তা-ভাবনা থাকুক না কেন মায়ের কোলে মাথা রাখার সাথে সাথেই যেন সবকিছু গায়েব হয়ে যায়। আইরাত পরম আবেশে তার চোখ বন্ধ করে নিলো।
আইরাত;; আম্মু, আজ যদি আমি তোমার কোলেই ঘুমাই না বলবে আমায় (অশ্রুসিক্ত চোখে)
আতিয়া আহমেদ;; সন্তানদের জন্য মায়ের মুখ থেকে কখনোই “না” শব্দ বের হয় না রে (আইরাতের কপালে চুমু দিয়ে) তুই ঘুমা আমি তোর মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছি।
আইরাত তার মায়ের দিকে তাকিয়ে হেসে আবার চোখ বন্ধ করে নেই। একসময় আইরাত ঘুমের ঘোরে হারিয়ে গেলো। আতিয়া আহমেদ মেয়েকে বালিশে শুয়িয়ে দিয়ে চলে এলেন।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
সকালে🌥️⛅🌤️…………………
সূর্যের কিরণ পর্দা ভেদ করে চোখে আসতেই চোখ-মুখ কুচকে নিল আইরাত। হাত দিয়ে সামনে আলো ঢাকার চেষ্টা করলো আইরাত কিন্তু লাভ নেই। পুরোপুরি চোখ খুলে দেখলো সকাল হয়ে গেছে আইরাত ধীরে ধীরে উঠে পরলো। উঠেই ফ্রেশ হতে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে চুল আচরাতে বেস্ত হয়ে গেলো আইরাত। হুট করেই তার মাথায় এলো আজকে তো আব্রাহামের তাকে নিয়ে যাওয়ার কথা। এটা ভাবতেই আইরাতের আত্মা কেপে উঠলো। সে শুধু আল্লাহ কে ডাকছে যাতে আজ উলটা পালটা কিছু একটা না হয়। তখন দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলেন আতিয়া আহমেদ। ভিতরে এসেই আতিয়া আহমেদ ভূত দেখার মতো চমকে গেলেন।
আতিয়া আহমেদ;; এই আমি কাকে দেখছি,, এই আমাকে কেউ একটু চিমটি কাট তো
আইরাত;; কি হয়েছে আম্মু (হাবলার মতো তার মার দিকে তাকিয়ে)
আতিয়া আহমেদ;; না মানে তুই উঠেছিস ঘুম থেকে এতো সকালে তাও কোন প্রকার কোন যুদ্ধ ছাড়া। আমার না কেন জানি বিশ্বাসই হচ্ছে না
আতিয়া আহমেদের কথা শুনে আইরাত ফিক করে হেসে দিলো।
আইরাত;; ও মা, এটা আমি আমি আমি গো তোমার মেয়ে আইরাত। আর এতে এতো অবাক হওয়ার কি আছে শুনি আমি কি তাড়াতাড়ি উঠতে পারবো না নাকি
আতিয়া আহমেদ;; না ঠিক তা না। আসলে আমি ডেকে না তুললে তো তুই উঠিস ই না। কিন্তু আজ তার উল্টো টা তাই একটু অবাক হলাম আরকি
আইরাত;; হিহিহি আম্মু এটা তোমার মেয়ে বুঝলে। তোমার মেয়ের পক্ষে সব কিছুই সম্ভব ( কিছুটা ভাব নিয়ে)
আতিয়া আহমেদ;; হয়েছে আর বড়ো বড়ো কথা বলতে হবে না। তোর বাপি, আয়ুশ সবাই নিচে বসে অপেক্ষা করছে তোর জন্য এবার তাড়াতাড়ি চল।
আইরাত;; তুমি যাও আমি আসছি।
আতিয়া আহমেদ আইরাতের ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। কিছুক্ষন পর আইরাত নিচে চলে এলো।
আইরাত;; Good morning papa
আশরাফুল আহমেদ;; Very good morning মামনি
আয়ুশ;; Good morning apiii
আইরাত;; morning ভাইটু
আশরাফুল আহমেদ;; আইরাত মামনি দেখ সব তোর পছন্দের খাবার আজকে রান্না করেছে তোর মা
আয়ুশ;; হ্যাঁ হ্যাঁ আপি আসতেই সবাই আমাকে ভুলে গেছে 🙁
সবাই আয়ুশের কথা শুনে হেসে দিল।
আইরাত;; একদম না কে বলেছি শুনি। আমার ভাইটা সবার থেকে বেশি স্পেশাল তাকে কি করে ভুলা যায় (আয়ুশকে কোলে বসিয়ে)
আতিয়া আহমেদ;; নে খাওয়া শুরু কর।
সবাই খাওয়া দাওয়া শেষে ড্রোইং রুমে বসে গল্প করতে লাগলো।
আইরাত;; পাপা তোমারা বসো আমি একটু ওপর থেকে আসছি
আশরাফুল আহমেদ;; আচ্ছা ঠিক আছে।
আইরাত ওপরে চলে গেলো। কিন্তু কিছুক্ষন পর নিচ থেকে চিল্লা চিল্লির আওয়াজ কানে এলো আইরাতের।
আইরাত;; নিচে এতো আওয়াজ কিসের। কি হচ্ছে?!
আইরাত বেশ চিন্তিত হয়ে দ্রুত নিচে নেমে গেলো। নিচে নেমে গিয়েই আইরাতের মরণদশা লেগে গেলো। সে গিয়ে দেখলো আব্রাহাম ড্রোইং রুমে সোফার ওপরে পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে। আতিয়া আহমেদ আয়ুশ কে নিয়ে এক কিণারে দাঁড়িয়ে আছেন এবং আশরাফুল আহমেদ আব্রাহামের পাশে দাঁড়িয়ে চিল্লাচ্ছনে। কিন্তু আব্রাহাম একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে আছে যেন এখানে এখন কিছুই হচ্ছে না। আইরাতের ভয়ে আগেই হাত পা কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু আশরাফুল আহমেদ যে এতো করে আব্রাহামের ওপর চিল্লাচ্ছেন তা যেন আব্রাহামের কানেই ঢুকছে না।
আব্রাহাম;; আহা শশুড় আব্বু এতো চিল্লাচ্ছো কেন। কানের পর্দা তো ফেটে যাবে (বিরক্তি নিয়ে)
আশরাফুল আহমেদ;; তো চিল্লাবো না তো কি করবো হে। কে তুমি এভাবে না বলে কয়ে হনহনিয়ে ভিতরে চলে এলে কেন। আর আমার বডিগার্ডরা কোথায় তারা তোমাকে ভিতরেই বা ঢুকতে দিল কি করে
আব্রাহাম;; Come on শশুড় আব্বু তুমি কি ভাবো টাকা পয়সা শুধু তোমার একারই আছে নাকি।
আশরাফুল আহমেদ;; কে তুমি। কেন এসেছো এখানে কি চাই। আর কি কখন থেকে সেই শশুড় আব্বু শশুড় আব্বু লাগিয়ে রেখেছো শুনি!
আব্রাহাম কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার চোখ গিয়ে ঠেকলো সিড়ি তে দাঁড়িয়ে থাকা আইরাতের ওপর। সাথে সাথে আব্রাহামের মুখের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।
আব্রাহাম;; There she is.. My love (আইরাতের দিকে আংুল তুলে দেখিয়ে)
সবাই আইরাতের দিক তাকালো। আইরাতের আত্মা ধুক করে উঠলো।
আব্রাহাম;; আমি কি চাই,, আমি ওকে চাই। আমার জানপাখিকে চাই আমার। ওকে নিয়ে যেতে এসেছি।
আর জানপাখি কি তোমাদের বলেনি যে ওর আর আমার মাঝে কি সম্পর্ক!!
আশরাফুল আহমেদ;; মানে কি বলতে চাচ্ছো তুমি
আইরাত আর না পেরে দৌড়ে ওপরে যেতে নিলে আব্রাহাম ঝড়ের গতিতে গিয়ে খোপ করে আইরাতের হাত ধরে ফেলে।
আব্রাহাম;; আরে আরে কোথায় যাচ্ছো জানপাখি। আমার থেকে পালিয়ে লাভ নেই। তুমি যেখানেই যেভাবেই থাকো না কেন আমি ঠিক তোমাকে ধরে ফেলবো। আর তুমি কি জানো না যে আজ আমি তোমাকে নিতে আসবো। কাল তো বলেই দিলাম বেবি
আইরাত আব্রাহামের কথা শুনে ঢোক গিলল। এবং তার পাপা আম্মুর দিকে তাকালো কেননা সে বলেছে যে পালিয়ে এসেছে আব্রাহাম তাকে এখানে দিয়ে গেছে তা আইরাত কাউকেই বলেনি।
আইরাত;; দেখুন প্লিজ হাত ছাড়ুন। সবাই দেখছে আর আমি যাবো না আপনার সাথে প্লিজ হাতটা ছাড়ুন আমার। (হাত মুচড়িয়ে)
আব্রাহামের আইরাতের না যাওয়ার কথা শুনে মাথায় আগুন ধরে গেলো। রেগে গেলো মূহুর্তেই। আব্রাহাম আর কোন কথা না বলে একটানে আইরাতকে কোলে তুলে নিল। আইরাত ছাড়া পাওয়ার জন্য অনেক ছুটাছুটি করছে কিন্তু আব্রাহামের সাথে পেরে উঠছে না।
আশরাফুল আহমেদ দ্রুত পায়ে আব্রাহামের কাছে এগিয়ে গেলেন এবং রেগে বলে উঠলেন।
আশরাফুল আহমেদ;; এই এই বদমাইশ ছেলে ছাড়ো আমার মেয়েকে। কোথায় নিয়ে যাচ্ছো ওকে।
আব্রাহাম;; হানিমুনে যাচ্ছি, যাবে তুমি।
আব্রাহাম আইরাতকে নিয়ে আবার সামনে হাটা ধরলো। এবার আশরাফুল আহমেদ বাধা দিতে চাইলে আব্রাহামের গার্ডস্ রা তাকে আটকিয়ে দেন।
আব্রাহাম আইরাতকে কোলে তুলে বাড়ির বাইরে নিয়ে গেলো। আইরাত অনেক লাফাচ্ছে বাচার জন্য। কিন্তু বাইরে এসেই আইরাতের মুখ হা হয়ে গেলো । কারণ আইরাতের পাপার সব গার্ডস্ রা অজ্ঞান হয়ে নিচে পরে আছে আর চারিদিকে শুধু আব্রাহামের বডিগার্ড সবাই হাতে গুলি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম বাকা হেসে আইরাতকে কোলে করে এনে গাড়িতে বসিয়ে দিলো।
আব্রাহাম আইরাতের দিক অনেক টা ঝুকে বলতে লাগলো….
আব্রাহাম;; যদি তুমি সুন্দর করে ভালোভাবে এসে পরতে তাহলে আজ আমাকে আর এতোসব নাটক করতে হতো না, এবার কোন রকম লাফালাফি ছাড়া মুখ বন্ধ করে বসো।
এই বলে আব্রাহাম টুক করে আইরাতের গালে কিস করে দিল। আইরাত রেগেও গেলো সাথে লজ্জাও পেল। আব্রাহাম গাড়িতে উঠে গাড়ি চালিয়ে যেতে লাগলো………
..
..
..
..
..
..
..
..
..
💚☘💚চলবে~~~~~