EX গার্লফ্রেন্ড যখন পুলিশ অফিসার পর্ব-০৯

0
3011

# EX গার্লফ্রেন্ড যখন পুলিশ অফিসার ?
# লেখকঃ Sahid Hasan Sahi
# পর্বঃ ৯ম

সকালে কারো নরম হাতের ছোঁয়ায় আমার ঘুম ভাঙলো।কেউ আমার মাথায় আর কপালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। তবে মনে হচ্ছে হাতের ছোঁয়া টা বেশ পরিচিত। চোখ খুলতেই আমি শোয়া থেকে উঠে বসলাম। কারণ, যে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সে হলো আমার আম্মু। আমি আম্মুকে এখানে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলামঃ আম্মু তুমি এতো সকালে এখানে কখন আসলে?

আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বললোঃ বাবা তোকে অনেক দিন থেকে দেখিনি। আর আমার শরীরটাও বেশ খারাপ করতেছে। তাই তোকে দেখতে চলে আসলাম।

আমিঃ ওহহহ। আব্বু আর সাফিয়া এসেছে?

আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললোঃ হ্যাঁ,, এসেছে তোর মামার সাথে গল্প করতেছে। ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়।( eX গার্লফ্রেন্ড যখন পুলিশ অফিসার,লেখকঃ সাহিদ হাসান সাহি)

আমিঃ ঠিক আছে আম্মু তুমি যাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসতেছি।

আম্মু নিচে গেল আর আমি ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে ঢুকলাম। ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতে সোফায় একজনের প্রতি নজর পড়তেই আমি বড়সড় একটা সক খেলাম। কারণ, সোফায় বসে ছিলো সামিয়া। সোফায় বসে থেকে তিশা আর সাফিয়ার সাথে গল্প করতেছে। সামিয়া কে এখানে দেখে কিছুটা রাগ উঠলো আমার।
কিন্তু তা আর প্রকাশ করতে পারলাম না। কারণ, এখানে আব্বু- আম্মু, মামা- মামি সবাই বসে আছে।

আমি আব্বুকে সালাম দিয়ে কেমন আছে তা জিজ্ঞাসা করলাম।এরপরে সাফিয়া কে জিজ্ঞাসা করে আম্মুর পাশে এসে বসে পড়লাম। সাফিয়ার পাশেই বসতাম কিন্তু সামিয়া আছে তাই আর বসলাম না। আম্মু সামিয়া কে বললঃ সামিয়া তুমি এখানে কি করো মা?

মামা সামিয়া কে আর কিছু বলতে না দিয়ে বললোঃ সামিয়া হলো আমাদের থানার এসআই।

আম্মুঃ আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো। কিন্তু সাহিদ তো আমাকে কিছুই বলেনি।

আম্মুর কথা শুনে আমি তো বোকা বুনে গেলাম। মনে মনে বললাম, আম্মু তুমি তো আর জানো না তোমার ছেলে বাসা ছেড়ে, তোমাকে ছেড়ে এখানে এসে থাকে শুধু এই কালনাগনীর ছলনা থেকে দূরে থাকার জন্য।

আম্মুর কথা শুনে সামিয়া একটু গাল ফুলিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললোঃ আন্টি তোমার ছেলে তো আর আমার সাথে ঠিক মতো কথাই বলে না। আগের মতো আর আমাকে ঘুরতে নিয়ে যায় না।

সামিয়ার কথা শুনে তো মন চাচ্ছে ওকে ঠাসস ঠাসস করে দুইটা চড় লাগিয়ে দেই। তাকে নাকি আমাকে ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে?

আম্মু আমাকে বললোঃ কী ব্যাপার সাহিদ তোরা দুইজন তো আগে সব সময় একসাথে থাকতিস একসাথে ঘোরাঘুরি করতিস। এখন কী হয়েছে তোদের মধ্যে?

আমি আমতা আমতা করে বললামঃ না আম্মু কিছুই হয়নি। এখন একটু ব্যস্ত আছি তো তাই।

আমার কথা শেষ হতেই সামিয়ার ফোনটা বেজে উঠলো। রিসিভ করে কথা বলেই ফোনটা কেটে দিয়ে আম্মুকে বললোঃ আন্টি আমাকে এখনি থানায় যেতে হবে আমি গেলাম পরে কথা হবে।

বলেই হাঁটা ধরলো। মামা সামিয়া কে বললোঃ সামিয়া আবার এসো আমাদের বাসায়।

সামিয়া আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললোঃ ঠিক আছে আংকেল আসবো।

সামিয়া চলে যাওয়ার পরে আমরা সবাই বসে থেকে কিছুক্ষণ গল্প করে নাস্তা করলাম। নাস্তা করার পরে আমি তিশা আর সাফিয়া কে নিয়ে শপিং করতে বের হলাম। তিনজন মিলে অনেকক্ষণ যাবৎ কেনাকাটা করার পর ফুচকার দোকানে গেলাম। ওদের দুজনের জন্য দুই প্লেট ফুচকা অর্ডার করলাম। আমার খেতে মন চাচ্ছিলো না। অবশ্য আমিও ফুচকা খাওয়া শিখেছি আরকি। ফুচকা খাওয়া শেষ করে ওদের কে নিয়ে বাসায় আসলাম।

বাসায় এসে গোসল করে মসজিদে যায়ে জুমার নামাজ পড়তে গেলাম। নামাজ পড়ে বাসায় এসে সবাই একসাথে লাঞ্চ করতে বসলাম। সবাই একসাথে মানে মা- বাবা, মামা- মামি, তিশা-
সাফিয়া আর আমি একসাথে লাঞ্চ করতে বেশ আনন্দ লাগতেছে।
অনেক দিন পর আজকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে লাঞ্চ করতেছি।

লাঞ্চ শেষ করে সবাই বসে থেকে গল্প করতে লাগলাম। অনেক দিন পর আজকে আম্মু আর মামা এক জায়গায় হয়েছে এইজন্য তারা তাদের মনের জমানো কথা গুলো প্রকাশ করতেছে।

বেশ কিছুক্ষণ ধরে আড্ডা দিয়ে আমি আমার রুমে চলে আসলাম। বেডে বসে থেকে ফোন টিপতেছি। একটু পরে তিশা আর সাফিয়াও আমার রুমে আসলো। রুমে আসার পর সাফিয়া আমার পাশে বসতে বসতে বললোঃ ভাইয়া সামিয়া আপু এখানকার পুলিশ
অফিসার তা আমাকে বলো নি কেন?

আমিঃ সামিয়া এখানকার পুলিশ অফিসার হয়েছে তা শুনে তোর লাভ কী?

তিশাঃ আমার আর সাফিয়ার অনেক দিনের আশা আমারদের ভাবি পুলিশ অফিসার হবে। মানে পুলিশ অফিসার কে আমরা ভাবি বানাবো।

আমিঃ এক থাপ্পর মেরে সব দাঁত ফেলে দিবো । রুমে যা। ভাবি মারাচ্ছে? ( রেগে)

সাফিয়াঃ হুঁ দেখা যাবে।( ভেংচি কেটে)

আমি ধমক দিয়ে বললামঃ তোরা তোদের রুমে যাবি ?

আমার ধমক শুনে সাফিয়া আর তিশা ওদের রুমে চলে গেল।

সাফিয়া আর তিশা রুম থেকে যাওয়ার পরে আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে রুম থেকে বের হয়ে নিচে আসলাম। বিকালেই আম্মু আব্বু বাসায় চলে যাবে। কালকে আব্বুর কলেজ আছে। আর সাফিয়া এখানে দুইদিন থাকবে।

আব্বু আম্মুকে বিদায় দিয়ে বাসায় আসতেই তিশা আর সাফিয়া বায়না ধরলো ঘুরতে যাবে। আমি ওদের দুজনকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে বাইকের কাছে আসতেই তিশা বললোঃ আজকে আমরা বাইকে যাবো না রিকশায় যাবো।

আমিও না করলাম না। কারণ, তিনজন মিলে ঘুরতে গেলে রিকশায় যাওয়াটা বেশ ভালো। তবে তিনজনের জন্য দুইটা রিকশা প্রয়োজন। বাইক রেখে ওদেরকে নিয়ে বাসার গেট থেকে বের হতেই আমার মেজাজ টা বিগড়ে গেলো। কারণ, সামিয়া একটা রিকশায় ওঠে বসে আছে আর আরেক টা রিকশা পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। তারমানে এরা দুজন বুদ্ধি করেই সামিয়ার প্রতি আমার অভিমান টাকে দূর করাতে চাচ্ছে। যদিও সাফিয়া আমার আর সামিয়ার ব্যপারে তেমন কিছুই জানে না। হয়তোবা এটুকু জানতে পারে যে, আমি সামিয়া কে লাইক করি।

রিকশার কাছে যাওয়ার পরে সাফিয়া আমাকে বললোঃ ভাইয়া তুমি সামিয়া আপুর রিকশায় উঠো। আমি আর তিশা আপু পিছনের রিকশায় উঠতেছি।

সামিয়ার কথা শুনে ওকে ঠাসস ঠাসস করে দুইটা চড় দিয়ে বললামঃ এমন কিছু করিস না যাতে আমার অন্য রুপ তোদের দেখতে হয়। আজকে ঘুরতে যেতে চেয়েছিলিস আমি রাজি হয়ে গেলাম। বাইকে হবে না রিকশায় যেতে হবে তাতেও রাজি হয়ে গেলাম। এখন এসে বলতেছিস আমাকে ওর সাথে যেতে হবে।কি পেয়েছিস আমাকে?( একটু চিৎকার করে)

আমার কথা শুনে রিকশাওয়ালা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সামিয়া মাথা নিচু করে বসে আছে। সাফিয়া আমার হাত ধরে বললোঃ প্লিজ ভাইয়া আজকেই শুধু চলো।( করুন ভাবে)

কিছু বুঝিনা। একটু আগেই যে কথাটির জন্য সে চড় খেলো এখন আবার সেই একই বলতেছে। আমি আর কিছু না বলে রিকশায় সামিয়ার পাশে বসে পড়লাম। অবশ্য যথেষ্ট পরিমাণ জায়গা ফাঁকা রেখে বসেছিলাম।

বসার পরে সাফিয়া আর তিশার দিকে তাকিয়ে দেখি ওরা দুজন মুচকি মুচকি হাসতেছে। আমি ওদের দিকে চোখ গরম করে তাকাতেই ওরা দুজন হাসতে হাসতে রিকশায় উঠলো।

এরপরে রিকশা তার আপন গতিতে চলতেছে। আমার আর সামিয়ার মাঝে কারো মুখে কথা নেই। একজন কথা বলতেছে না ভয়ে। আর অপরজন কথা বলতেছে না রাগে অভিমানে।

বেশ কিছুদূর যাওয়ার পরে আমার দিকে থাকা রিকশার চাকাটা একটা গর্তে পড়লো। যার ফলে সামিয়া আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার গায়ের সঙ্গে চেপে বসলো। আমি এই রকম অবস্থায় বসে থাকতে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করতেছি। একই মানুষের সঙ্গে কয়েক বছর আগে একসাথে ঘোরাফেরা করতাম,একই রিকশায় বসে থেকে হাতে হাত রেখে গল্প করতে করতে নানান জায়গায় ঘোরাফেরা করেছি। সেদিন কিন্তু এমনটা হতো না। তখন ছিল দু’জনের ভালোবাসা দিয়ে গড়া একটা প্রাচীর। যতই বাঁধা আসুক না কেন দুইজনে একত্রিত হয়ে সেই সমস্যার সমাধান করতাম। বাট এখন ভালোবাসার বদলে একজনের মনে আছে ভালোবাসা পাওয়ার তীব্র আশা আকাঙ্ক্ষা আর অন্য জনের মনে আছে রাগ, অভিমান, ঘৃণা।

আমি সামিয়ার কাছ থেকে একটু সরে রিকশার সাইট ঘেঁষে বসলাম। সামিয়া নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে বললোঃ এতো ঘেঁষে বসার কী আছে পড়ে যাবে তো।

আমি বাইরের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বললামঃ ঘেঁষে না বসে তোর কোলে বসবো শালি।

সামিয়া মুচকি হেসে বললঃ বসো। বসতে না করেছে কে?

সামিয়ার কথা শুনে ওর দিকে বিস্ময়ের চোখে তাকিয়ে আছি। আমার কথা বুঝতে পারলো কী করে? আমাকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আমার দিকে তাকিয়ে বললোঃ এতো ভাবার কিছুই নেই মনের টান থাকলে এমনিতেই সব কিছু বুঝতে পারা যায়।

আমি ওর কথার কোনো উত্তর না দিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। কিছুক্ষণ পরে রিকশা একটা পার্কের সামনে দাঁড়ালো।
আমি রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দেওয়ার জন্য পকেট থেকে ম্যানিব্যাগ বের করতেই সামিয়া বললোঃ আমি ভাড়া দিচ্ছি।

আমি বললামঃ ছোটলোক হতে পারি কিন্তু অতোটা ফকির নই যে ভাড়ার টাকা থাকবে না।আর এসব করে আপনার কোনো লাভ হবে না। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।

সামিয়া আর কোনো কথা বললো না। আমি রিকশার ভাড়া দিয়ে শাফিয়া আর তিশার রিকশার কাছে গেলাম। ওদের রিকশার ভাড়া দিয়ে ওদেরকে নিয়ে পার্কের ভিতরে ঢুকলাম। বেশ কিছুক্ষণ ধরে ঘোরাফেরা করে পার্কের সাইটে একটা ফুচকার দোকানে ওদেরকে নিয়ে গেলাম। কারণ, আমি জানি ওদেরকে কিছু খাওয়ার কথা বললে ওরা ফুচকার কথাই বলবে।

আমাদের সঙ্গে সামিয়াও ছিলো। কিন্তু সে আমার সাথে একটা কথাও বলেনি। হয়তোবা আমার কথায় কিছুটা কষ্ট পেয়েছে। ফুচকার দোকানে যাওয়ার পরে আমি ফুচকাওয়ালাকে বললামঃ মামা চার প্লেট ফুচকা দেন। একটাই ঝাল বেশি আর বাকিগুলোতে অল্প করে দিয়েন।

আমার কথাগুলো শুনে সামিয়া কিছুটা খুশি হলো এটা ভেবে যে আমি এখনো তার পছন্দ অপছন্দ গুলো কে মনে রেখেছি। আর হ্যাঁ সামিয়া ফুচকাতে বেশি ঝাল খেতে পছন্দ করে।

বসে থেকে ফুচকা খাচ্ছি হঠাৎ পিছন থেকে কে যেন জড়িয়ে ধরে বললোঃ কেমন আছিস জানু?

পিছনে তাকিয়ে দেখি জান্নাত। জান্নাত হলো আমাদের বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো। রাফি, সিফাত,মিমি, আমি আর জান্নাত ছিলাম বেস্ট ফ্রেন্ড। জান্নাতের সাথে আমরা অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ পর্যন্ত পড়েছি। দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিয়ে জান্নাত ইউএসএ চলে যায়। সেখানে তার ফ্যামিলি থাকে। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো ইউএসএ তেই জান্নাতের বিয়ে হয়েছে।

আমিও ওকে হালকা হাগ করে বললামঃ এতো দিন তোমাকে না দেখে ভালো ছিলাম না বাট এখন ভালো আছি জানু।

জান্নাত মুচকি হেসে বললঃ তা তো দেখতেই পাচ্ছি। বাই দা ওয়ে, এই মেয়েগুলো কে এদের তো চিনলাম না।

আমি তিশাকে দেখিয়ে দিয়ে বললামঃ এটা হলো আমার মামাতো বোন তিশা। সাফিয়া কে দেখিয়ে দিয়ে বললামঃ এটা হলো আমার একমাত্র আদরের ছোট বোন সাফিয়া। সাফিয়া কে দেখিয়ে দিয়ে বললামঃ আর এটা হলো আমাদের থানার নতুন এসআই। আর তিশা আর সাফিয়া এটা ( জান্নাতকে উদ্দেশ্য করে) হলো আমার কলিজা, আমার প্রাণ, আমার জানু এবং বেস্টু জান্নাত।

তিশা আর সাফিয়া আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমি এমন কথা বলবো তারা তা ধারণাই করতে পারে নি। তিশাও ভাবতে পারতেছে না। কারণ সব কথাই আমি তার কাছে শেয়ার করি। সামিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি চোখের কোণায় পানি ঝলমল করতেছে। সেও হয়তোবা মেনে নিতে পারতেছে না যে, আমার এমন কেউ আছে ।

আমি ওদের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে জান্নাত কে বললামঃ তো দোস্ত তোর লাইফ পার্টনার কেমন আছে?

জান্নাতঃ হ্যাঁ ভালো আছে। এখন শুধু ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। আমাকে বেশি সময়ই দেয় না।

জান্নাতের কথাই ওরা তিনজন কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থায় আসলো।

আমি জান্নাত কে বললামঃ কবে দেশে এসেছিস?

জান্নাতঃ গত কাল এসেছি। বাট তোদের তো খবরই নেই।

আমিঃ আরে না,,, আমি কি করে জানবো তুই এসেছিস। আর রাফি ওদের সঙ্গে দেখা করেছিস?

জান্নাতঃ না রে ওদের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ হয়নি। আমার ফোনটা হারিয়ে যায়ে তোদের সবার নাম্বার হারিয়ে ফেলেছি।

আমিঃ ওওও আর শোন রাফি আর নীলিমার বিয়ে হয়েছে।

জান্নাতঃ তাই বিয়েটা খেতে পারলাম না । সিফাত আর মিমির কি খবর রে?

আমিঃ হুমম চলতেছে মোটামুটি।

জান্নাতঃ সব কথাই তো হলো কিন্তু তোর কথাই তো জানা হলো না। রিলেশনে জড়িয়েছিস নাকি এখনো সেই সামিয়ার আশায় বসে আছিস?

হায় হায় আল্লাহ এই মেয়ে তো আমার মান সম্মান সব শেষ করে দিবে। জান্নাতের কথা শুনে সামিয়ার মুখের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটলো।

আমি জান্নাত কে বললামঃ না না আমি কারো আশায় বসে নেই। এসব বাদ দিয়ে বল ইউএসএ কবে যাবি?

জান্নাতঃ কয়েক দিন তোদের সাথে কাটাবো তারপর যাবো। আচ্ছা সাহিদ এখন উঠি রে বাসায় যেতে হবে।

আমিঃ ঠিক আছে যা। আমি ওদেরকে তোর কথা বলবো নি। কালকে সবাই মিলে আড্ডা দিবো।

জান্নাতঃ ওকে।

জান্নাত চেয়ার থেকে উঠে সাফিয়ার কাছে যায়ে বললোঃ আপু থাকো আচ্ছা।

এই বলে জান্নাত চলে গেল। জান্নাত যাওয়ার পরে আরো কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে সন্ধ্যার সময় বাসায় চলে আসলাম। সামিয়াও আমাদের বাসা অব্দি এসেছিলো। তবে সামিয়া কে দেখে বুঝতে পারলাম খুব আনন্দে আছে।

বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে স্টাডি করতে বসলাম। কয়েক দিন পর পরিক্ষা। এখন পড়ালেখায় মনোনিবেশ করতে হবে। রাতে ডিনার করে আমি, সাফিয়া আর তিশা ছাদে গেলাম। ছাদে বসে থেকে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে কলেজে গেলাম। তিশা সাফিয়া কে নিয়ে তিশার কলেজে গেছে।

কলেজে যাওয়ার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার পর প্রতিদিনের ন্যায় ক্লাসে গেলাম।সব ক্লাস শেষ করে বাইরে আসলাম। বাইরে জান্নাত কে ফোন দিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে আসতে বললাম।

আমরা কয়জন রেস্টুরেন্টে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর জান্নাত আসলো। বন্ধুরা জান্নাত কে পেয়ে খুব খুশি হয়েছে। আর খুশি হওয়ারই কথা, একবছর পর তাকে দেখতে পেয়েছে।

যাইহোক, জান্নাতের সাথে কুশল বিনিময় করে সবাই মিলে একটা টেবিলে বসলাম। টেবিলে বসে জান্নাত বললোঃ সাহিদ তোর বোনদের কে এখানে আসতে বল।

আমিঃ আরে ওদের কে আসতে বলার কী আছে? ওরা কলেজে আছে।

জান্নাতঃ আসতে বল সবাই মিলে আড্ডা দিবো।

আমির ঠিক আছে বলতেছি।

তিশাকে ফোন দিয়ে এই রেস্টুরেন্টের ঠিকানা দিয়ে এখানে আসতে বললাম। প্রায় দশ মিনিট পর তিশা আর সাফিয়া আসলো। সাফিয়া কে আমার সকল বন্ধুরাই চিনে।

এরপরে জান্নাত আমাদেরকে ইচ্ছা মতো অর্ডার করতে বললো। আমরা সবাই ইচ্ছা মতো অর্ডার করলাম। ওয়েটার এসে আমাদের খাবার দিয়ে গেল।

তিশা খাবার মুখে দিতে যাবে এমন সময় ওর ফোন টা বেজে উঠলো। রিসিভ করে কাকে যেন এই রেস্টুরেন্টের ঠিকানা দিয়ে এখানে আসতে বললো।

তিশা ফোন টা রেখে খাওয়া শুরু করলো। একটু পরেই লক্ষ্য করলাম সবাই খাওয়া বাদ দিয়ে রেস্টুরেন্টের গেটের দিকে তাকিয়ে আছে। আমিও সেদিকে তাকিয়ে দেখি সামিয়া আমাদের কাছে আসতেছে। আর সে তার অফিসের ড্রেস পরেই এসেছে। এই জন্য লোকজন তার দিকে তাকিয়ে আছে। তারা মনে করেছে এখানে কিছু হয়েছে নইলে পুলিশ কেন?

সামিয়া আমাদের টেবিলের কাছে এসে দাঁড়ালো। আরে ম্যাম আপনি এখানে?

সামিয়া মুচকি হেসে বললঃ দেখতে আসলাম।

জান্নাতঃ দাঁড়িয়ে আছেন কেন বসেন।

সামিয়া একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ল। ওয়েটার এসে সামিয়ার অর্ডার নিয়ে গেল। একটু পরে সামিয়া কে তার অর্ডার কৃত খাবার দিয়ে গেল।

সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া শুরু করলাম। খাওয়ার সময় আমার দিকে বারবার তাকাচ্ছে। বিষয়টা সিফাত খেয়াল করে সামিয়া কে উদ্দেশ্য করে বললো,,,

( চলবে)

?? কেমন হচ্ছে তা কমেন্ট করে জানাবেন ??

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে