Dangerous_Crazy_Lover Part-05

0
4024

#Dangerous_Crazy_Lover_?.
#Sumaiya_Moni”.
#Part-5.

আরিয়া অনেকটা লজ্জা পায় এবং হাতের কনু কিছুটা ছিলে যায়। হঠাৎ করে পড়ে যাবার কারনটা ঠিক বুঝতে পারছে না। আরিয়া উঠে বসে উপরের দিকে তাকিয়ে দেখে কেয়া ও তানজিলা খিল খিল করে হাসতে । আরিয়া বুঝে যায় ওর পড়ে যাবার কারন। তানজিলা আরিয়া কে লেঙ মেরে ফেলে দিয়েছে।আরিয়া রাগী চোখে তাকিয়ে আছে ওদের দুই জনের দিকে।

লিলি ও রাইমা আরিয়া কে টেনে তুলে।

লিলি: আরিয়া কে লেঙ মারলি কেন?….[ রেগে ]

তানজিলা: বেশ করেছি লেঙ মেরেছি।

কেয়া: আরিয়া তোকে এটা বুঝাতে চাইচ্ছি তোর স্থান ওই মাটিতে। উপরে নয়।

তানজিলা: চল কেয়া।

মুখ ভেংচি দিয়ে চলে যায় কেয়া ও তানজিলা । আরিয়া ওর ছিলে যাওয়া ডান হাতের দিকে তাকিয়ে আছে ।

লিলি: ইশশ…কত খানি ছিলে গিয়েছে। আরিয়া তুই কিছু বললি না কেন ওদের কে?

আরিয়া: এমনি..ক্লাসে চল।…..[ নরম স্বুরে ]

ওরা তিন জন ক্লাস রুমে চলে গেল। ক্লাস শেষ করে বাসায় যেতে লাগলো। আজকে আরিয়া চুপ চাপ হেঁটে যাচ্ছে। আগের দিনের তুলনায় আজ আরিয়া বেশ চুপ চাপ ।

লিলি: আরিয়া তুই কী টেনশনে আসিস?

রাইমা: আজ এত চুপ চাপ ?

আরিয়া: কথা বলতে মন চাচ্ছে না। আমার মনে হচ্ছে আমার সাথে খারাপ কিছু হতে চলেছে? কিন্ত সেটা কি তা আমার অজানা ।……..[ মন খারাপ করে বললো ]

লিলি: এভাবে বলিস না আরিয়া। দেখবি আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।

রাইমা: হ্যাঁ! টেনশন করিস না।

আরিয়া: তাই যেনো হয় ।

হঠাৎ পিছন থেকে আরিয়া ওর জামা টান অনুভব করলো। আরিয়া পিছনে ঘুরে দেখলো একটা ৪-৫ বছরের বাচ্চা ছেলে ওর জামা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। বাচ্চাটা খালি গায়ে । ছোট একটা হাপ প্যান্ট পড়া। গায়ের রং শ্যামলা। চুল গুলো এলোমেলো। বাচ্চাটা এক দৃষ্টিতে আরিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে । বাচ্চাটা কে দেখে আরিয়ার মায়া লাগছে। আরিয়া মুচকি হেসে পা বাজ করে নিচে বসে বাচ্চাটিকে জিজ্ঞেস করলো?

আরিয়া: কী হয়েছে বাবু?

বাচ্চাটি ড্যাবড্যাব করে আরিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে । মুখ দিয়ে কোন কথা বলছে না। আরিয়া লিলি ও রাইমার দিকে একবার তাকাল। তারপর বাচ্চাটার উদ্দেশ্যে আবার বললো ।

আরিয়া: তুমি কথা বলতে পারো না?

বাচ্চাটা মাথা দুলিয়ে না সূচক জবাব দিল। আরিয়ার এবার ভিশন মাথা লাগছে। বাচ্চাটা এতো সুন্দর দেখতে কিন্ত কথা বলতে পারে না।

আরিয়া: খুদা লেগেছে? কিছু খাবে?

বাচ্চাটা এবারও মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিল।

আরিয়া মুচকি হেসে একটা দোকান থেকে রুটি,কলা আরো অনেক কিছু কিনে বাচ্চাটি কে একটা বেঞ্চে বসিয়ে খাওয়াতে লাগলো। লিলি ও রাইমা পাশে বসে আছে। আরিয়া বাচ্চাটির খাওয়া শেষ করে বললো?

আরিয়া: প্রতিদিন তুমি এখানে আমার জন্য অপেক্ষা করবে। আমি তোমার জন্য প্রতিদিন খাবার নিয়ে আসবো ঠিক আছে?….. [ মুচকি হেসে বললো ]

বাচ্চা ছেলেটি মুচকি হেসে আরিয়া কে ইশারায় হাত দিয়ে ওর কাছে ডাকলো। আরিয়া বাচ্চা ছেলেটির ইশারা বুঝতে পেরে ঝুকে বাচ্চা ছেলেটির কাছে যাবার সাথে সাথে বাচ্চাটি আরিয়ার গালে কিস করলো। আরিয়া এটা দেখে মুখ চেপে জোরে জোরে হাসতে লাগলো । রাইমা ,লিলি ও হাসতে বাচ্চাটির এমন কান্ড দেখে।

আরিয়া: নটি বয়….আচ্ছা আজকে থেকে তোমার নাম অয়ন। নাম পছন্দ হয়েছে?

মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিল বাচ্চাটি।

আরিয়া আরো কিছুক্ষন বাচ্চাটার সাথে বসে বক বক করে চলে আসে বাসায়। আরিয়ার মনটা এখন ভালো হয়ে গিয়েছে অয়নের সাথে দেখা হবার পর। আরিয়া বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে ছিলে যাওয়া হাতে হালকা মলম লাগিয়ে পাপ্পির সাথে খেলা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
.
.
.
.
এদিকে বিদ্যুত রাগে ফেটে যাচ্ছে । রাগটা বার বার কন্ট্রোল করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে বিদ্যুত । রাগ বেশি হবার কারনে মাথার রগ ফুলে গেছে। মাথা ঠান্ডা করার জন্য শাওয়ার নিতে ওয়াশরুমে চলে যায়। ঝর্না ছেড়ে দু হাত দেয়ালে রেখে দাঁড়িয়ে থাকে চোখ বন্ধ করে ।
.
.
.
.
আজকে সারা দিন বিদ্যুত আরিয়া কে কল দেয় নি। আরিয়া তার জন্য খুব ভালো ফিল করছে। মনটাও বেশ হালকা লাগছে। রাতে কিছুক্ষন পড়া-লেখা করে ঘুমিয়ে যায়।

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেরে কজেলে যাবার জন্য বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে। আজকে আরিয়ার মনটা বেশ ভালো। লিলি ও রাইমার সাথে রাস্তায় বক বক করতে করতে কলেজে পৌঁছে যায়।
কলেজের গেট দিয়ে ঢুকার সময় একটা মেয়ে দৌড়ে এসে আরিয়া কে বললো।

মেয়েটি: আরিয়া আরিয়া?….. [ হাপাতে হাপাতে ]

আরিয়া: কিরে তুই এমন হাপাচ্ছিস কেন? কী হয়েছে তোর?……[ ভ্রু কুঁচকে ]

মেয়েটি: যানিস কী হয়েছে?

লিলি: না বললে কিভাবে যানবো শুনি?

মেয়েটি: কেয়া,তানজিলা কে কলেজ থেকে বের করে দিয়েছে প্রিন্সিপাল স্যার?

আরিয়া: হোয়াট?…. [ অবাক হয়ে ]

মেয়েটি: হ্যাঁ! আর ওরা কোন কলেজে ভর্তি হতে পারবে না ৫ বছরের জন্য।

আরিয়া: কী বলছিস? কিন্ত এমনটা কেন হল? কী করেছে ওরা?

মেয়েটি: যেটা আমি জানি না। ওদের ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে গেল রে।……[ বলেই চলে যায় ]

আরিয়া,লিলি, রাইমা এখনো অবাক হয়ে একি জাগায় দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ করে ওদের সাথে এমনটা কেন হল? কী করেছে ওরা দু জন সেটাই ভাবছে ওরা?

রাইমা: ভালো হয়েছে বের করে দিয়েছে । চল ক্লাসে যাই।

আরিয়া ও লিলির হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে । ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। আরিয়ার ক্লাসে কোন মন নেই। হঠাৎ কেয়া,তানজিলা কে কলেজ থেকে বের করে কেন দিল সেটাই বেশ ভাবাচ্ছে আরিয়াকে। কোন রকম ক্লাস শেষ করল আরিয়া। কলেজ ছুটি হবার পর ওরা তিন জন রাস্তা দিয়ে হাঁটছে আর কথা বলছে।

আরিয়া : আমি বুঝতে পারছি না ওদের হুট করে কলেজ থেকে বের করে দেবার কারনটা কী?

লিলি: আমিও বুঝতে পারছি না আরিয়া?

রাইমা: আরে ধুর বাদ দে এসব কথা। ভালো হয়েছে বের করে দিয়েছে ।

আরিয়া: এভাবে বলিস কেন।

ওরা চুপ হয়ে যায়। কিছুক্ষন পর আরিয়া,লিলি,রাইমা সেই বেঞ্চের কাছে এসে দাঁড়ালো ।কিন্ত ওরা অয়ন কে দেখতে পেল না কোথাও।

আরিয়া: আরে আমি তো অয়ন কে বলেছিলাম আজকে এখানে আসতে ? কিন্ত আসলো না কেন?

লিলি: কি জানি?

রাইমা: নাকি আমাদের জন্য অপেক্ষা করতে করতে চলে গিয়েছে?

আরিয়া: হতে পারে। আচ্ছা আয় এই সামনের দোকান দার কে জিজ্ঞেস করি?

আরিয়া আগে আগে হেঁটে হেঁটে দোকান দারের কাছে যেতে লাগলো। লিলি,রাইমা পিছনে।

আরিয়া: এই যে ভাইয়া কালকের যে পিচ্চি ছেলেটি কে দেখেছিলেন,সেই পিচ্চি ছেলেটি কি আজকে এখানে এসেছিল?

আরিয়ার কথা শুনে দোকার দারের মুখটা গোমড়া হয়ে যায়। কিছুটা মন খারাপ করে দোকানদার লোকটি বললো।

লোকটি: আফা কালকে আপনে যখন ওই পিচ্চি ছেলেটি কে খাবার দিয়া চইলা গেছেন তখন বাচ্চাটা খুশি হইয়া রাস্তা পার হইতে লাগছিল। হঠাৎ কোথা থেইক্কা একটা কালো রঙের গাড়ি আইসা পিচ্চি টারে চাপা দিয়া চইলা যায়। পিচ্চি টা চেহারা একদমি থেতলে যায় আর রক্তে সারা রাস্তা মেখে যায় । পিচ্চিটা সেটানেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে।…….[ মন খারাপ করে বললো কথাটা ]

আরিয়া কথাটা শুনেই স্তব্ধ হয়ে যায়। অজানতেই চোখ দিয়ে নোনা পানি গড়িয়ে পড়ছে। চোখের সামনে সেই অয়নের হাসি মাথা চেহারাটা ভেসে উঠছে। আরিয়া দু পা পিছিয়ে যায় । লিলি,রাইমা আরিয়া কে ধরে বলতে লাগলো।

লিলি: সান্ত হ আরিয়া।

রাইমা : নিজেকে সান্ত কর। হয়তো অয়নের হায়াত এতটুকুই লিখে ছিল আল্লাহ্ ।

আরিয়া কেঁদেই যাচ্ছে । কাঁদতে কাঁদতে হিচকি উঠে যায়।

লিলি: চল বাসায় চল। কান্না থামা বলছি।

আরিয়াকে ধরে হাঁটতে লাগলো লিলি,রাইমা। আরিয়া মাথা নিচু করে হাঁটছে । কিছুক্ষন পর ওদের বাসার সামনে এসে পড়ে ওরা। আরিয়া কে লিলি ও রাইমা বুঝিয়ে বাসার ভিতরে পাঠিয়ে দেয়। আরিয়া বাসার ভিতরে পা রাখার সাথে সাথে মারিয়া দৌড়ে আরিয়ার কাছে এসে উত্তেজিত কন্ঠে বলতে লাগলো।

মারিয়া: আপু আপু পাপ্পিকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।

আরিয়া: কী বলছিল? পাগল হয়ে গেছিস নাকি তুই? পাপ্পি কোথায় যাবে? সর সামনে থেকে……[ মারিয়া কে সামনে থেকে সরিয়ে ] পাপ্পি…..পাপ্পি…..পাপ্পি…।

উত্তেজিত হয়ে এ রুম ওই রুম খুঁজছে আর নাম ধরে ডাকছে। আরিয়ার মনের মধ্যে ভয় এসে কঁড়া নাড়ছে । চেহারায় চিন্তিত ভাব ফুটে উঠেছে ওর।

আরিয়া: পাপ্পি….কোথায় তুমি…পাপ্পি……..।

আরিয়া,মারিয়া ও আরিয়ার আম্মু পাপ্পি কে সারা ঘরে,ছাদে খুঁজচ্ছে কিন্ত কোথাও পাচ্ছে না পাপ্পি কে।আরিয়া পাপ্পির জন্য খুব টেনশন পড়ে যায়। আজকে ওর সাথে এমন অদ্ভুত অদ্ভুত ঘটনা কেন ঘটছে বুঝতে পারছে না ঠিক।আরিয়া ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে। বুকের মধ্যে ধুকধুক শব্দ হচ্ছে । ওর মনে হচ্ছে পাপ্পির সাথ খারাপ কিছু হয়েছে । হুট করে আরিয়ার ফোন বেজে উঠলো। আরিয়ার কোন ইচ্ছা নেই ফোন রিসিভ করে কথা বলার। তারপরও আনমনে ফোন রিসিভ করে কানের কাছে ধরলো।

–পাপ্পি কে খুঁজছো আরিয়া?

কন্ঠে স্বর শুনে বুঝে যায় এটা বিদ্যুত । এবার আরিয়া নড়ে চড়ে বসে। আরিয়া কাপা কাপা স্বরে বললো ।

আরিয়া: আ…আপনি কী করে বুঝলেন?

আরিয়ার এমন প্রশ্ন শুনে বিদ্যুত উঁচু স্বরে হেসে দেয়। আরিয়া বোকার মত বিদ্যুতের হাসি শুনছে। হাসির কী বলেছে সেটাই বুঝতে পারছে না আরিয়া। বিদ্যুত ওর হাসি থামিয়ে বললো।

বিদ্যুত: পাপ্পি আর কোন দিন ফিরে আসবে না আরিয়া, রাস্তার সেই বাচ্চাটির মত……[ গর্জে বললো ]

আরিয়া এই কথাটা শুনেই নিস্তব্ধ হয়ে যায়। কথা বলার শক্তি টুকু মনে হচ্ছে হারিয়ে ফেলেছে। চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝড়তে লাগলো। কানে ফোন ধরে বসে আছে স্ট্যাচুর মত। বিদ্যুত কর্কশ কন্ঠে বলতে লাগলো?

বিদ্যুত: বলেছিলাম না আমি তোমার #Dangerous_Crazy_Lover_?. আমাকে ছাড়া অন্য কাউ কে তিল পরিমান ভালোবাসলে তাকে অকালেই এই দুনিয়া ছাড়তে হবে । ইউ নো আরিয়া…..কলেজের ওই মেয়ে দুটুকে আমার কথায় কলেজ থেকে বের করে দিয়েছে তোমার প্রিন্সিপাল স্যার। তোমাকে সামান্য ধাক্কা দেবার ফলে আমি ওদের ক্যারিয়ার বরবাদ করে দিয়েছি । আর তুমি রাস্তার একটা ভিখারির বাচ্চা কে আদর করে খাইয়ে দিয়েছ। আবার প্রতিদিন ওকে খাইয়ে দিবে ওর প্রতি তুমি ভালোবাসা দেখাবে সেটা আমি দূর থেকে কিভাবে দেখি বল? তাই বাচ্চাটিকে মেরে দিয়েছি। আর পাপ্পি তোমার প্রিয় এবং তুমি পাপ্পি কে ভিশন ভালোবাসো। সেটা তো আমি সহ্য করতে পারছি না…… তাই পাপ্পি কে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়েছি। তুমি আমার। তুমি শুধু আমাকেই ভালোবাসবে। অন্য কাউ কে নয়………এতে সে যেই হোক না কেন, তোমার মা,বাবা,বোন । এখন থেকে অন্য কাউকে ভালোবাসতে গেলে, আগে আমার কথা ১০ বার ভাবভে। আর নয়তো তাকেও এই দুনিয়া ছাড়তে হবে……. Now say I love you …….[ রাগী কন্ঠে ]

আরিয়া চুপ করে বসে আছে। বিদ্যুত কে আই লাভ ইউ বলতে ওর ঘৃনা হচ্ছে । কী দোষ করেছিল ওই ছোট্ট বাচ্চাটা? কী দোষ করেছিল আমার পাপ্পি? সামান্য ভালোবাসার ফলে ওদের কে এবাবে মারতে হল? আনমনা হয়ে ভেবে যাচ্ছে এই কথা গুলো।আরিয়া কে চুপ থাকতে থেকে বিদ্যুত রেগে জোরে চিৎকার দিয়ে বললো ?

বিদ্যুত: Now Say I Love You……Ariya…।

আরিয়া ভয় পেয়ে যায়। ভয় ভয় কান্না কন্ঠে বললো।

আরিয়া: I….I…I Love You….।

আরিয়ার মুখে আই লাভ ইউ কথাটা শুনে বিদ্যুত খুশি হয়ে যায়। বাকা হেসে বললো।

বিদ্যুত: গুড গার্ল…….বাই আরিয়া খুব তাড়াতারি তোমার সাথে দেখা হবে…..লাভ উই মাই কুইন…..[ বলেই ফোন কেঁটে দেয় ]

আরিয়া স্ট্যাচুর মত বসে বিদ্যুতের লাস্ট কথা শুনছিল। পাশে থাকা পাপ্পির ছবির ফ্রেমটা হাতে নিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কাঁদতে লাগলো। আরিয়া কে এভাবে কাঁদতে দেখে মারিয়া ও মারিয়ার আম্মু ছুটে আরিয়ার রুমে আসে। এসে দেখে আরিয়া কান্না করছে। আরিয়া কে আরিয়ার আম্মু ধরতে আসার আগেই আরিয়া চিল্লিয়ে বলে উঠলো।

আরিয়া: বেরিয়ে যাও আমার রুম থেকে। আমার কাছে আসবে না। বেরিয়ে যাও বলছি…….।

আরিয়ার আম্মু: কী হয়েছে আরিয়া তুই এমন করছিস কেন?

আরিয়া: আমি বলছি আমার রুম থেকে বেরিয়ে যাও তোমরা।……[ চিল্লিয়ে ]

মারিয়া: আপু তোমার কী হয়েছে এভাবে কান্না করছ কেন?

আরিয়া বিছানা থেকে ‌উঠে মারিয়া ও ওর আম্মু কে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে দিয়ে গেট লাগিয়ে গেটের সাথে হেলান দিয়ে কান্না করতে লাগলো। হঠাৎ করেই আরিয়ার হাসি-খুশি জীবনটা নিমিষেই কালো ঘন মেঘ,ঝড়,বিদ্যুৎ এসে তচনচ করে দিয়ে যায়। ওর প্রিয় জীনিসটা আজকে হারিয়ে ফেলেছে ওর লাইফ থেকে। অঝোরে কেঁদেই যাচ্ছে। চোখের পানি যেনো ওর বাধা মানছে না।
আরিয়ার আম্মু ও মারিয়া কিছুটা অবাক হয় আরিয়ার এমন ব্যবহারে। ওরা আরিয়া কে আর ডাক না দিয়ে যে যার রুমে চলে যায়। আরিয়া সেখানে বসে কান্না করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে যায় তা টেরও পায় নি। ঘুম ভাঙ্গে মাগরিবের আজান শুনে। সারা দিনে খাওয়া হয় নি ওর। তাতে ওর যায় আসে না। উঠে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে মাগরিবের নামাজ আদায় করে নেয়। নামাজ পড়ে উঠার সাথে সাথে দরজায় নক পড়লো। আরিয়া দরজা খুলে দেখে লিলি ও রাইমা দাঁড়িয়ে আছে।

লিলি: কিরে তোকে কত বার কল দিয়েছি তুই কল রিসিভ করিস নি কেন?

রাইমা: তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন? তুই আবার কান্না করেছিস অয়নের জন্য তাই না।

আরিয়া ওদের প্রশ্নের উওর না দিয়ে। ওদের বলা কথা এড়িয়ে বলে উঠলো।

আরিয়া: আমি তোদের সাথে বন্ধুত্ব রাখতে চাই না। আমি আমার মত থাকতে চাই। তোরা আমার কাছে‌ আর আসবি না।

লিলি ও রাইমা এই কথা শুনে কিছুক্ষন চুপ থাকে। তারপর লিলি জোরে হেসে বলে উঠলো।

লিলি: রাইমা আরিয়া পাগল হয়ে গেছে। ওকে পাবনায় পাঠাতে হবে।…….[ হেসে ]

রাইমা: তুই কী গাজা টাজা গেয়েছিস নাকি।….[ মজা করে ]

আরিয়া: আমার রুম থেকে বেরিয়ে যা তোরা। আমি তোদের মুখ দেখতে চাই না। তোদের মত নিচু জাতের বান্ধবি আমার দরকার নেই।…..[ বুকের মধ্যে কষ্ট চেপে রেখে কঠর গলায় বললো ]

লিলি: কী আমরা নিচু জাতের?

রাইমা: আমাদের মুখ তুই দেখতে চাস না।

আরিয়া:………….

লিলি: তা দেখবি কেন তুই তো এখন নাম করা লইয়ার বিদ্যুত আরিয়ান চৌধুরীর জি এফ….এখন আমাদের দিয়ে তোর কী হবে।

রাইমা: আসলে আমরা নিচু জাতের বান্ধবি না। বরং তুই আমাদের বান্ধবি হবার যগ্য নস। বিদ্যুত কে পেয়ে এখন তুই আমাদের ভুলে গিয়েছিস, সার্থপর।

লিলি: রাইমা চল এখান থেকে….ওর মুখ দেখতে ইচ্ছে করছে না আমার।

লিলি ও রাইমা রেগে মনের মধ্যে এক রাশ কষ্ট নিয়ে আরিয়া দের বাসা থেকে বেরিয়ে এলো। আরিয়া এতক্ষন ঠোঁট কামড়ে কান্না চেপে রেখেছিল ওরা চলে যাবার পর হু হু করে কেঁদে উঠলো। আরিয়ার প্রিয় মানুষ গুলো আস্তে আস্তে ওর কাছ থেকে দূরে চলে যাচ্ছে । আরিয়া সেটা সহ্য করতে পারছে না। এবাবে কাঁদতে দেখে আরিয়ার আব্বু ওর রুমের ভিতরে এসে বললো।

আরিয়ার আব্বু: কী হয়েছে আমার আম্মুটার? পাপ্পির জন্য মন খারাপ?……[ মাথায় হাত দিয়ে বললো ]

আরিয়া:…………

আরিয়ার আব্বু: কী কথা বলবে না আমার আম্মুটা?

আরিয়া: আব্বু আমি একটু একা থাকতে চাই? …[ চোখ মুছে বললো ]

আরিয়ার আব্বু: আচ্ছা… আমি যাই তুমি নিচে খেতে আসো। সারা দিনও তেমন কিছু খাও নি তোমার আম্মু বললো।

আরিয়া: এমনি।

আরিয়ার মাথায় কিছুক্ষন হাত বুলিয়ে চলে গেল আরিয়ার আব্বু। আরিয়ার আব্বু রুম থেকে বেরিয়ে যাবার পর আরিয়ার ফোন বেজে উঠলো। ফোনের স্ক্রীনে বিদ্যুতের নামটা ভেসে উঠলো। আরিয়া দেরি না করেই চোখ মুছে ফোন রিসিভ করলো ।

আরিয়া: হ্যালো।

বিদ্যুত: হেই মাই কুইন….আর কত কান্না করবে? এবার স্টপ কর তোমার ন্যাকা কান্না। আর না হলে আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না। …….[ কিছুটা রাগী কন্ঠে ]

আরিয়া: আ..আমি কান্না করছি না। এমনেই চোখে ময়লা চলে গিয়ে……. [ বাকি কথা বলার আগেই বিদ্যুত কর্কশ কন্ঠে বলে উঠলো ]

বিদ্যুত: সাট আপ আরিয়া….. আমার সাথে মিথ্যে কথা বলার ট্রাই কর না। ইউ….নিজেকে চালাক মনে কর তাই না। আমার সাথে চালাকি করার চেষ্টা একদমি করবে না। ..

আরিয়া:………….

বিদ্যুত: সারা দিন তুমি কিছুই খাও নি। খেয়ে লক্ষী মেয়ের মত শুয়ে পড় যাও……[ ধমক দিয়ে ]

আরিয়া: জ…জ্বী।

বিদ্যুত: গুড…বাই মাই কুইন….।

টু….টু…টু…

আরিয়া ফোন পাশে রেখে নিচে যাবার জন্য বিছানা থেকে নেমে হাঁটা ধরলো। ইচ্ছে না থাকার সর্তেও জোর করে সামান্য খাবার খেয়ে এসে ঘুমাবার চেষ্টা করে। কিন্ত কিছুতেই ঘুম আসছে না। পাপ্পি,অয়নের কথা খুব মনে পড়ছে। প্রতিদিন পাপ্পি কে ঘুম পাড়িয়ে তারপর ঘুমাত। আর আজ? ডুকরে কেঁদে উঠলো আরিয়া । কাঁদতে কাঁদতে এক পর্যায় ঘুমিয়ে যায়। সকালে ঘুম ভাংঙে ফোনের শব্দে। বিদ্যুতের ধমক খেয়ে তাড়াতারি করে উঠে ফ্রেশ ও নাস্তা সেরে কলেজে যাবার জন্য বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে। আজকে আরিয়া একা একা কলেজে যাচ্ছে । ওর প্রিয় বান্ধবি দু জন আজ ওর পাশে নেই। খুব মনে পড়ছে এদের কথা। রিক্সা নিতে চেয়েও নিল না। আনমনে একটা ফাঁকা রাস্তা দিয়ে মাথা নিচু করে হেঁটে যাচ্ছে । মনের মধ্যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে ওর। আচমকা পিছন থেকে আরিয়ার মুখে কেউ রুমার চেপে ধরলো। আরিয়া ওর মুখের কাছ থেকে রুমার চেপে ধরা হাতটা বার বার সরানোর চেষ্টা করছে কিছু সরাতে পারছে না। আরিয়ার মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো। চোখের সামনে সব ঝাপসা ঝাপসা দেখছে। কিছুক্ষন পর আরিয়া ছটফটানি কমে যায়। সেন্সলেস হয়ে যায় আরিয়া।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
Continue To……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে