Sunday, October 5, 2025







হ্যাকারের_লুকোচুরি পর্ব-১২

হ্যাকারের_লুকোচুরি পর্ব-১২

লেখা- sharix dhrubo

নিজের বৌয়ের চেহারা দেখে নিজেই বিস্মৃত হয়ে গেছে রাফি। রুপ তার মাশাআল্লাহ তবে এ তো!!!!!!
রাফি – (চোখ ছোট বড় করে চেনার চেষ্টা করে) (মৃদূ উচ্চস্বরে) এই এই এই! আপনাকে তো আমি চিনি মানে চেনা চেনা লাগছে খুব।
– (দাঁতে দাঁত কামড়ে) আস্তে। ভুলে যাচ্ছেন কেন আজ আমাদের বাসররাত। বাড়ি ভর্তি মানুষজন। যদি কেউ দরজায় কান দেয় ( বলেই মুখ চেপে মুচকি হাসি দেয়)
রাফি – কিন্তু তুমি মানে আপনি এখানে কি করছেন?
– ইশশশিরে, আমি আপনার বিবাহিত স্ত্রী। আপনি আপনি করে আমাকে পাপের ভাগিদার করছেন কেন? আর এটা আমার স্বামীর ঘর। আমিই তো থাকবো এখানে, আর কাউকে আশা করেছিলেন নাকি?
রাফি মনে মনে বলে, মেয়ে, আমি ত কাউকে আশা করার সুযোগটা পর্যন্ত পাই নি।
– কি ভাবছেন অমন করে? (কৌতুহলী দৃষ্টিতে) আমি কি দেখতে এতটাই খারাপ?
রাফি অবাক আর বিস্ময়ের দুনিয়া থেকে বের হয়ে নিজের বৌয়ের দিকে দৃষ্টিপাত করলো। মেয়েটার চেহারা রাফির অনেক পরিচিত, কন্ঠটাও। কিন্তু কিছুতেই মনে পড়ছে না। কখনো কোন মেয়েকে এত কাছ থেকে দেখেনি রাফি। দুধে আলতা গায়ের বরন বলা যায় কিন্তু পার্লারের বৌ সাজে সবাইকেই পরী লাগে। চোখদুটো হরিনটানা তবে রাফির কাছে মেয়েটার চোখদুটো গরুর চোখের মত ড্যাবডেবে মায়াবী লাগছে। পৃথিবীতে রাফিই মনে হয় প্রথম পুরুষ যে তার স্ত্রীর টানা টানা চোখদুটোকে গরুর চোখের সাথেও তুলনা করেছে। উন্নত চিবুক, হাসলে টোল পড়ে ছোট্ট করে। বাসররাতে প্রথমবারের মত নিজের বৌ কে দেখে লাভ এট ফার্ষ্ট সাইট হয়ে গেছে রাফির, কিন্তু রাফি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারে এই মেয়েকে রাফি চেনে মানে চিনতো। কন্ঠটাও খুবই পরিচিত।
– কি জনাব, নিজের বৌয়ের দিকে নজর দিচ্ছেন কেন? সারাজীবনের জন্য এসেছি আপনার ঘরে। একরাতের জন্য নয়।
রাফি কিছুটা বিব্রত বোধ করে চোখ সরিয়ে নিয়ে একটু পিছিয়ে বসলো।
– আরে আরে। বৌ হই আমি আপনার, সরে গেলেন কেন। আল্লাহ পাপ দিবে তো আমাকে।
মেয়েটার বাচ্চামিতে রাফি কিছুটা বিব্রত বোধ করলেও মনে মনে ভালই লাগতে শুরু করছে রাফির।
– আচ্ছা আমার গিফট কই? (বলেই রাফির দুই হাত আর পকেটের দিকে তাকালো)
রাফি পড়লো আর এক বিপদে। কেউ তাকে গিফটের কথা মনে করায় দেয় নি। আর বাসররাতে বৌকে কিছু গিফট করতে হয় এটা রাফি জানতো কিন্তু বিয়ের ঝুক্কি ঝামেলায় গুলায় ফেলেছিলো সবকিছু।
– আমার জন্য কোন গিফট নেই ? (ঠোঁট উল্টিয়ে কান্না কান্না কন্ঠে)
রাফি – আরেহ কাঁদে না কাঁদে না। (কানের কাছে ফিসফিস করে) বাসর রাতে বৌ কাঁদলে দরজার বাইরে কান পাতা মানুষগুলো কি ভাববে বলেন ত।
মেয়েটা হঠাৎ চোখ তুলে মুখ চেপে ফিক করে হেসে দিলো। অমায়িক সে হাসি দেখে রাফির চোখ জুড়িয়ে গেলো।
– (জিদ্দি গলায়) কিন্তু আমার বাসররাতের গিফট চাই। চাই চাই চাই।
রাফি হাত ইশারা করে চুপ করতে বলে মেয়েটাকে। একে তো চেনা চেনা লাগছে কিন্তু নাম মনে না করতে পারায় রাফি চরম বিব্রত অন্য দিকে একটা কমন ট্রাডিশন ভূলে গিফট না আনায় মোটামুটি মনমেজাজ কিলবিল করতেছিলো রাফির। ভাবতে থাকলো কি করা যায়। কিন্তু কোন উপায়ন্ত খুজে পায় না রাফি। শেষমেষ উঠে গিয়ে আলমারিটা খোলে রাফি। ড্রয়ারের লক খুলে খুঁজতে থাকে এমন কিছু যা দিয়ে মানসম্মানটা বাঁচানো যায়। পেছন ফিরে দেখলো মেয়েটা দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে গলা উচু করে দেখার চেষ্টা করছে আলমারির ভেতরটা।
ঘাটতে ঘাটতে একটা চেইন পেলো রাফি। দেখলেই বোঝা যাচ্ছে চেইনটা সোনার। মনে মনে ভাবতে থাকলো এটা দেয়া ঠিক হবে কি না। যা হয় হবে আগে মানসম্মান বাঁচায় নেয়া জরুরী। চেনটা হাতের মুঠোয় এনে বৌয়ের সামনে বসে পড়লো রাফি। যে করেই হোক বৌয়ের নামটা জানতেই হবে রাফিকে। ফন্দিও এটে ফেললো।
রাফি – দেখুন আপনার জন্য গিফট ……
– (থামিয়ে দিয়ে) আমাকে কি টেনে নিয়ে জাহান্নামে ফেলবেন আপনি! (রাফির দিকে এগিয়ে এসে ঝুকে পড়ে মুখের কাছে এসে ফিসফিস করে) বৌ লাগি আপনার, বৌ। আর যদি একবার শুনি আমাকে আপনি বলেছেন তো ফলাফল ভয়াবহ হবে।
বলেই যেখানে বসে ছিলো সেখানে বসে পড়লো। মেয়েটা হঠাৎ সামনে ঝুকে পড়ায় রাফি ঘাড়টা একটু পেছনে নিয়ে গিয়েছিলো। ঘোর কেটে আবার ঠিক হয়ে বসতেই,
– কই? কি যেন বলছিলেন আমার গিফট, কি?
রাফি – (কিছুক্ষণ আগের ঘটনার মোহ কাটিয়ে) দেখুন ইয়ে দেখো, আমি তোমাকে গিফট দিবো কিন্তু তার বিনিময়ে আমি কিছু চাই?
মেয়েটা মায়াবী চোখে রাফির দিকে তাকালো, কৌতুহলী দৃষ্টি দিয়ে জানতে চাইলো,
– ওয়াহ, ক্যায়া বাত হ্যায় জামাইরাজা। (আবারো একটু এগিয়ে এসে) তো কি চাই আপনার?
রাফির হাত পা সব অসাড় হয়ে আসে, এই মেয়েটার চাহনী আর বাচনভঙ্গিতে ভয়ংকর মায়া রয়েছে, চোখের দিকে তাকালে সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে আর কানে তার আওয়াজ শুনলে সবকিছু ভুলে যাচ্ছে।
রাফি – ইয়ে, মানে । আপনি (বৌয়ের চোখ রাঙ্গানী) মানে তুমি, ইয়ে মানে আমাকে চেনো কিভাবে? তোমাকে খুব চেনা লাগছে কিন্তু মেলাতেই পারছি না। আমি তোমাকে চিনি, চিনি ত?
– (আশাহত হয়ে) এই বুঝি আমার গিফট? একগাদা প্রশ্ন!
রাফি কিছু বলতে যাবে তখনই মেয়েটা বললো
– ওযু আছে ত আপনার?
হঠাৎ এই প্রশ্ন শুনে হকচকিয়ে গেলেও হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায় রাফি।
– আচ্ছা তাহলে নামাজের জন্য প্রিপারেশন নিন, আমি চট করে ফ্রেশ হয়ে ওযু করে আসছি।
বলে তার সারাবিছানাজুড়ে ছড়ানো শাড়ী আর ওড়না দুই হাতে টেনে নিয়ে বিছানা ছাড়ে রাফির বৌ। ল্যাগেজ থেকে কিছু কাপড় বের করে নিয়ে গুটি গুটি পায়ে চলে গেল ওয়াশরুমে। রাফি খাট ছেড়ে সোফায় গিয়ে বসে। আলতো করে চোখ বন্ধ করে অতীত হাতড়াতে থাকে। স্কুল কলেজ ভার্সিটি সবখানে হাতড়ায় রাফি। কিন্তু সবখানেই রাফি এতটাই বেশী আত্বকেন্দ্রীক ছিলো যে কখনো কাউকে দরকার পড়ে নি রাফির, বরং সবাই এসে লাইইন দিত রাফির পেছনে। মাথায় খুব জোড় খাটাচ্ছিলো রাফি কিন্তু হঠাৎ চুরির আওয়াজে চোখ খোলে রাফি। ঘরের বিছানার দুইপাশে দুইটা হলুদ টেবিল ল্যাম্প জ্বলছে, বিভিন্ন ফুলে সাজানো রাফির বাসর, তার ভেতর টাওয়াল দিয়ে আলতো করে গাল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছিলো রাফির বৌ। ঘরের হালকা আলোয় অনেক মায়াবী লাগছে বৌটাকে। রাফি ছোট্ট করে হাতে চিমটি কাটলো, সত্যিই কি এই মেয়েটা আমার বৌ! ভালই ব্যথা পেল রাফি। নাহ ঘটনা সিরিয়াস, আমার বৌ এখন আমার বেডরুমে।
নিজেকে নামাজের জন্য তৈরী করে ল্যাগেজ থেকে জায়নামাজ বের করে বিছিয়ে দিয়ে রাফিকে ডাক দিলো।
– আসুন। আজকের রাতে আল্লাহকে স্বরন করি।
রাফি উঠে গিয়ে নামাজে দাড়ালো। দুইজনে মিলে ২ রাকাত নামাজ পড়ে নিলো।
রাফির বৌ জায়নামাজ গুছিয়ে রেখে বিছানার উপর উঠে বসলো। রাফি সোফার উপর বসে দেখছিলো সবব। মেয়েটা রাফিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে দেখে রাফিকে চোখ দিয়ে ইশারা করে “কি?” বাচক ইংগিতে।
রাফি কিছুটা ইতস্তত বোধ করে সোফা ছেড়ে উঠে দাড়ায়। বিছানার কাছে এসে পকেটে হাত দিয়ে চেনটা বের করলো। না জানি কার চেইন কিন্তু এযাত্রায় সম্মান বাঁচানোর জন্য এটাই একমাত্র ভরসা।
রাফির বৌ লাফ দিয়ে উঠে এসে,
– এটা আমার জন্য (উৎসাহিত গলায়)
রাফি ছোট্ট একটা হাসি দিয়ে পজেটিভ সিগন্যাল দিতে চাইলো। মিথ্যা এড়ানোই বুদ্ধিমানের কাজ।
– তাহলে পরিয়ে দাও
বলে রাফির কাছে চলে এলো। রাফির দিকে পিঠ ফিরিয়ে দিয়ে খোলা চুলগুলো পিঠ থেকে সরিয়ে বামপাশে দিয়ে সামনে নিয়ে নিলো আর চেইনটা পরিয়ে দেয়ার জন্য ইশারা করতে লাগলো।
এত কাছ থেকে একটা মেয়ের চুল সরানো খোলা পিঠ আর সাথে চুলের সুরভী, রাফির সিস্টেম হ্যাং হয়ে গেলো একপ্রকার, হার্টরেট ঘোড়ার রেসের মত বাড়তে থাকলো। কি বলা উচিৎ বা কি করা উচিৎ তা মাথা থেকে উধাও হয়ে গেলো রাফির।
– কই? দাও?
বৌয়ের কথায় ঘোর থেকে বের হলো রাফি, কোনপ্রকার চোখ নাক কান বন্ধ করে তাড়াতাড়ি চেইনটা পড়িয়ে দিলো।
গলায় হাত দিয়ে চেইনটা দেখতে থাকলো রাফির বৌ, বিয়েতে অনেক মোটা মোটা স্বর্নের হার ও হয়তো মেয়েটা এত যত্নে দেখে নি। কিন্তু রাফি এখনো তার জবাব পায় নি। জবাব পাবে কি, রাফি ত মুখ ফুটে প্রশ্নটাই করতে পারলো না।
রাফি – আচ্ছা একটা প্রশ্ন ছিলো?
হালকা হাসি হাসি ভাব নিয়ে ঘুরে তাকালো রাফির দিকে। মায়াবী চোখ দিয়ে আবারো ঘায়েল করলো রাফিকে।
– বলো না। আজ সারারাত তোমার প্রশ্ন শুনে কাটাবো। কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।
রাফি – (খটকা লাগি লাগি করছে) শর্ত? কি শর্ত?
– তুমি তো কাবিননামায় আমার পুরো নাম শুনেই থাকবে। যদি তুমি আমার ডাকনাম বলতে পারো তাহলে তোমার সব প্রশ্নের জবাব আমি দিব।
রাফির মন চাইলো চোখ বুজে দেয়াল বরাবর দৌড় দিতে , যা হবার হবে। যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত্রি হয় ফ্যাক্ট। এটা কেমন বিচার আল্লাহর, আমি যে প্রশ্নের উত্তর পেলে হয়তো সারা রাতে আর প্রশ্নই করার প্রয়োজন পড়তো না সেখানে সেই প্রশ্নকেই শর্ত বানিয়ে ঝুলিয়ে দিলো রাফির গলায়! তাই রাফি বিচলিত না হওয়ার চেষ্টা করে বললো
রাফি – দেখুন বিয়ের আসরে ডাকনাম তো শোনা যায় না। আর বিয়ের আগে আমাদের কোন কথাও হয় নি।
– কিইইইইই। তারমানে তুমি এখনো আমার নাম মনে করতে পারো নি! এখনো আমাকে মনে করতে পারো নি!!! আজ তুমি সোফায় শোবে। শাস্তি তোমার। যতক্ষণ মনে না পড়বে বিছানার ধারেকাছেও ঘেসার চেষ্টা করবা না।
রাফির মুখটা কাঁচুমাচু হয়ে যায়। সে বিছানা ছাড়া একদমই ঘুমাতে পারে না। সোফায় ঘুম তো দূর, গা এলিয়ে দিলেই ব্যথা শুরু হবে সর্বাংঙ্গে। গত ৪ দিনের খাটুনিতে একবিন্দু ঘুম হয়নি রাতে।
রাফি – ( করুন কন্ঠে) দেখুন ইস দেখো, আমার প্রচন্ড খারাপ লাগছে, আমি সোফায় শুতে পারি না।
– না না না, নাম না বলা পর্যন্ত ……….
রাফির মেজাজটা বিগড়ে যায়। কিছুটা হলেও অতিরিক্ত লাগা শুরু হলো বৌয়ের ব্যবহার।
রাফি – ( গম্ভীর ও শান্তভাবে) ভুলে গিয়েছি হয়তো, মনে নেই, অতীতকে জড়িয়ে থাকি না আমি যে বলা বা দেখার সাথে সাথে চিনে যাবো কে আপনি। আমি এখন ভাবতে পারবো না। ঘুমাবো আমি।
বলে বিছানার একপাসে বৌয়ের দিকে পিঠ ফিরিয়ে কুচিমুচি দিয়ে শুয়ে পড়লো রাফি। ভয়ংকর ক্লান্তি আর দূর্বলতার কারনে ঘুম গ্রাশ করে নিলো রাফিকে। তোহা কিছুটা ভয় আর সংকোচ নিয়ে উকি দিয়ে দেখে রাফির চেহারাটা। এখনো সেই আগের মতনই মায়াবী।
বেশ ভোরে ঘুম ভেঙ্গে গেলো রাফির। নিজেকে কেমন যেন আষ্টেপৃষ্ঠে বন্দি মনে হতে লাগলো। দম আটকে আসছিলো দেখে ঘুম ভেঙ্গে গেছে। পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করলো রাফি। বুকের উপর একটা এলোমেলো চুলে ঢাকা মুখ , রাফি ভয়ে চিৎকার করতে যাবে ভুত ভুত বলে ঠিক তখনই রাফির মনে পড়লো যে সে এখন বিবাহিত আর চেহারাটা তার বৌয়ের হবার চান্স শতভাগ।
একটা আংগুল দিয়ে চুলগুলো সরিয়ে দিতে চাইলো রাফি। কিন্তু অজানা ভয়ে আর করা হলো না। তবে এলোমেলো চুলে ঘুমন্ত মুখখানায় অনেক বেশী অনন্যা লাগছে মেয়েটিকে। রাতের ঘটনা মনে পড়লো রাফির। নাহ, রাতে কড়া কথা না শোনালেও পারতো রাফি। তখনই চেহারাটি নড়ে উঠলো আর রাফিও ঘুমের ভান করে পড়ে থাকলো এটা দেখতে বৌ তার কেমন লজ্জা পায় নিজের স্বামীকে নিজের অজান্তেই জড়িয়ে থাকতে দেখে। নতুন বৌয়ের ঘুম ভাংগে, রাফির বুকে নিজেকে আবিষ্কার করে এক লাফে উঠে বসে। আংগুলের নখে দাঁত বসিয়ে রাফির চেহারা দেখছে রাফির বৌ। কিছুক্ষণ পর ডানগালে একটা উষ্ণ পরশ পায় রাফি। একটা ছোট্ট ভালোবাসার পরশ ছুইয়ে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো রাফির বৌ। ঘটনার আকষ্মিকতায় রাফি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে মরার মত পড়ে থাকে বিছানায়।
কিছুক্ষন পর ভেজা চুলে নতুন একটা শাড়ি পরে বাইরে এলো সেই হুরপরী মানে রাফির বৌ। রাফির মাথার কাছে এসে ডাকতে গিয়েও পারে না। ছুঁয়ে দিতেও যেন লজ্জা পাচ্ছে এমন একটা চেহারা নিয়ে অনেকক্ষন দেখলো রাফির মুখখানা। এরপর সেখান থেকে সরে গিয়ে আয়নার সামনে নিজেকে কিছুটা গুছিয়ে নিলো সে। তারপর কিছু একটা লিখে রাফির চিরুনিতে গেঁথে রেখে বের হয়ে যায় রুম থেকে। রাফি উঠে বসে বিছানা থেকে। উঠে গিয়ে চিরকুটটা হাতে নেয় চিরুনি থেকে। দুই অক্ষরে একটা নাম, “তোহা”।
নোটের উল্টো পাশে লেখা “বিনুনি তোহা”। হ্যাঁ, বিনুনি তোহা তো অনেক পরিচিত নাম লাগছে ।
কলেজের সেকেন্ড ইয়ারে কোথা থেকে উড়ে এসে রাফিদের কলেজে এডমিট হয় একটা মেয়ে, নর্মালী কলেজপড়ুয়া মেয়েরা চুলে বেনী করে না কিন্তু মেয়েটা খুবই স্মার্টলী চুল বেনী করে কলেজে আসতো। রাফি ছাড়া কলেজের প্রায় সব ছেলেরই হৃদয় একাধিকবার গুঁড়িয়ে যাওয়ার কারন ছিলো সেই মেয়ে। তারপর দেশের প্রসিদ্ধ ইন্জিনিয়ারিং ভার্সিটিতে একই ডিপার্টমেন্টে চান্স, ফার্স্ট ইয়ার শেষ হতে না হতে উধাও। স্কলারশিপ নিয়ে দেশের বাইরে। আর কোনদিন দেখা হয় নি সেই বিলুনীর সাথে। কিন্তু যতদিন ছিলো, বেশ করে খোচাতো রাফিকে। কলেজে থাকতে রাফির পেছনে বসে কবিতা পড়তো মেয়েটা, দারুণ মিষ্টি গলা। ভার্সিটিতে গিয়েও একই কাজ করতো। বাইরে যাওয়ার আগে এসেছিলো একবার রাফির পিছু পিছু রাফি দের বাড়ি পর্যন্ত। কিন্তু রাফি কোনদিন চোখ তুলে মেয়েটাকে ভালোভাবে দেখেই নি। নিজেকে নিয়ে বাস করা মানুষ কিভাবে তার আসেপাসের মানুষগুলোকে দেখবে, সে সময় কই।
তাহলে এই কি সেই বিলুনী তোহা!!!! আজ এতবছর পর পুর্ন অধিকার নিয়ে রাফির জীবনে ফিরে এসেছে? কিন্তু নামটা মুখে না বলে চিরকুটে লিখে চিরুনিতে আটকে দেয়াটা কেমন কথা হলো। রাফিরও একটু অভিমান হয়। চিরকুটটা জাগায় রেখে দিয়ে উঠে ফ্রেস হতে যায় রাফি। বেশ কিছুক্ষণ পর সকালের নাস্তা তৈরী শেষে তোহা রুমে আসে রাফিকে ডাকতে। আগেই উঠে পড়ায় তোহা টুপ করে দেখে নিতে যায় চিরকুটটি আর তখনই রাফি পুরাতন অভ্যাসে শুধু একটা টাওয়াল জড়িয়ে বের হয়ে আসে ওয়াশরুম থেকে। তোহাকে দেখে আবারো দৌড়ে ঢোকে ওয়াশরুমে, খালি ভূলে যায় রাফি যে সে বিবাহিত।
রাফি – (লজ্জা লজ্জায়) আমার গেঞ্জিটা একটু এগিয়ে দিন না?
তোহা – জ্বী না। দিবো না। (নির্লিপ্ত জবাব)
রাফি – কারনটা জানতে পারি?
তোহা – প্রতিমিনিট যদি আপনাকে মনে করিয়ে দিতে হয় যে আমি আপনার বিয়ে করা বৌ তাহলে ঘরের অন্যান্য কাজ কখন করবো?
রাফি – আচ্ছা আচ্ছা, আমার গেঞ্জিটা দাওনা।
তোহা – আর একটু ভালো ভাবে বলোওওওনা।
রাফি – তোমাকে দেখলে কে বলবে যে তোমার গতকাল বিয়ে হয়েছে! আহ্লাদী বুড়ি একটা। যাও গেঞ্জিটা দাও, তাড়াতাড়ি।
তোহা খেয়াল করে না যে চিরকুটটা চিরুনী থেকে নীচে পড়ে গেছে। রাফির হাতে গেঞ্জি তুলে দেয়ার পর খেয়াল হয় চিরুনিতে চিরকুট নেই! চোখ বড় হয়ে গেলো তোহার। মেঝেতে চিরকুট নজরে এলো কিন্তু ততক্ষণে রাফি বের হয়ে গেছে। তোহা কি করবে ভেবে পায় না। তোহা মনে মনে ভাবে হয়তো চিরকুটটা আর দেখলো না রাফি তাই কিছুটা বিমর্ষ মনে রাফিকে খেতে ডেকে চলে যাচ্ছিলো রুম থেকে। পেছন থেকে রাফির কথায় থমকে দাড়ালো সে।
রাফি – আজকাল বোধ হয় ঐ চুলে আর বেনী করো না। মন্দ লাগে না কিন্তু তোমায় বেনীতে।
তোহা – আপনার মনে আছে। বাব্বাহ আমি তো ভেবেছিলাম……….
রাফি – কি ভেবেছিলেন? (বলতে বলতে রাফি আয়না থেকে ঘুরে তোহার কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ালো)
তোহা আলতো করে রাফির বুকে ধাক্কা দিয়ে ছুটে দরজার কাছে চলে যায়, রাফি পেছন থেকে তাকিয়ে দেখতেই থাকে। তোহা আর একবার ফিরে তাকিয়ে খেতে ডেকে মিটিমিটি হাসতে হাসতে চলে গেলো।
এমন সময় রাফির ফোনটা বেজে ওঠে। ডাইরেক্টর স্যারের ফোন।
ডাইরেক্টর – ( বিমর্ষ কন্ঠে) কি খবর? কেমন আছো?
রাফি – আলহামদুলিল্লাহ। (কৌতূহল নিয়ে) স্যার, আপনার কি কিছু হয়েছে? আপনার কন্ঠ এমন শোনাচ্ছে কেন?
ডাইরেক্টর – তুমি এখন অফ ডিউটিতে। তোমাকে হয়তো এসব বলা ঠিক হচ্ছে না কিন্তু রাফি তোমার জীবন ঝুকির ভেতরে। গতকাল রাতে কারা যেন আমাকে হুমকি দিয়েছে আর আমার বাড়ির অন্যন্য সদস্যদেরও। সাধারনত এসব হুমকিতে আমার কিছু হওয়ার কথা ছিলো না কিন্তু আজ আমার ছেলের উপর হামলা হয়েছে। মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে গিয়ে ছেড়ে গেছে এই বলে যে “তোর বাপকে বলিস টাকার কেস নিয়ে নাড়াচাড়া না করতে, নাহলে ফল এর থেকে খারাপ হবে।”
রাফি – বলেন কি স্যার! কোথায় আছেন এখন আপনার ছেলে?
ডাইরেক্টর – হাসপাতালে আছে, ঠিক আছে! তোমাকে ওরা হয়তো এখনো ট্রেস করে পারে নি। হাতে সময় থাকতে পরিবারের সবাইকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাও।
রাফি – কিন্তু স্যার ………
ডাইরেক্টর – কোন কিন্তু নয় রাফি। That’s an Order Rafi. If they finds you, they will kill you for sure.
রাফি – I won’t let that happen, sir. Lets hope for the best.
ডাইরেক্টর – Plan for the worse. Good luck.
রাফি বুঝতে পারে আইন হয়তো অপরাধীদের শাস্তি দিতে পারে ঠিকই কিন্তু আইন পর্যন্ত পৌছানোর রাস্তাটা অনেক দীর্ঘ, তাই হাজার হাজার আর্তনাদ পথেই মারা যায়। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের রিজার্ভ কারেন্সি চুরির ঘটনা এভাবে মোড় নেবে ভাবে নি রাফি।
খেতে গেল রাফি, তোহা রাফির চেহারায় কালো মেঘ দেখতে পায়। বাবা মায়ের চোখও এড়ায় না।
বাবা – রাফি! কি হয়েছে তোর! ওমন মুখ কালো করে রেখেছিস কেন!
রাফি- কই তেমন কিছু না ত।
বাবা – তাহলে চেহারা হুতোমপেচা বানায় রেখেছিস কেন!
রাফি- আমার খেতে ইচ্ছা করছে না। বাবা তোমাদের ন্যাশনাল আইডি চাকরীর আইডি যা আছে সব বের করে দাও তো। তোহা ওগুলো নিয়ে রুমে আসো, আর হ্যাঁ তোমার কার্ডগুলোও।
মা – কেন কি হয়েছে!
রাফি – যা বলছি তাই করো। তোহা, দাড়িয়ে থেকো না।
তোহা গিয়ে মায়ের পাশে দাড়ালো।
শুধুমাত্র একগ্লাস পানি খেয়ে রাফি নিজের রুমে চলে আসে রাফি ঠিক এমন সময় একটা মেসেজ এলো ডাইরেক্টর স্যারের,
Trust no one.
Go to this address fast.
House x, Road y, 123 .
মেসেজটা পেয়ে স্যারকে ফোন দিতে যাবে তখনই অফিস থেকে ফোন চলে আসে।
– হ্যালো, রাফি স্যার।
রাফি – বলছি।
– একটা দুঃসংবাদ আছে, কিছুক্ষণ আগে ডাইরেক্টর স্যার এক্সিডেন্ট করেছেন। হাসপাতালে নেয়ার পথেই তিনি মারা যান।
রাফি – (মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে) what!
নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না রাফি।
তারপরও শিওর হতে খবরের চ্যানেলে যায় রাফি। পেছন থেকে তোহা এসে দাঁড়ায় রাফির পাশে। বিশাল বিশাল করে ব্রেকিং নিউজ দিয়ে খবরটি প্রচার করছে মোটামুটি সব নিউজ চ্যানেল।
স্যারের মেসেজের দিকে চোখ যায় রাফির, খুব দ্রুতই কিছু একটা করতে হবে। হাতে সময় খুবই কম।

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ