হেমন্ত ধারার অশ্রু পর্ব-৬

0
816

#পর্ব-৬
#হেমন্ত ধারার অশ্রু
#মারুফ হাসান সজীব

ধারা নদীকে আটকে বলল কোথায় যাচ্ছো তুমি এভাবে? আমাদের বাড়িতে যেহেতু সাহায্যর জন্য এসেছ সেহেতু ফিরে যাবে কেন?

তোমার যতদিন ইচ্ছা থাকতে পারো এখানে কোনো সমস্যা নেই।আর মাকে আমি বুঝিয়ে বলব। বুঝিয়ে বললে সে নিজেও রাজি হবে।
তাই এখন থেকে তুমি এখানেই থাকবে।আর কোনো কিছু দরকার হলে রাফিকে বলবে।সব কিছু এনে দেবে।

নাদিয়া বেগম তীব্র আগুনে জ্বলে বলল আমার বাড়িতে আমার উপরে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।রাফিকে উদ্দেশ্য করে বলল তোর বাবা একটু গ্ৰামে গেছে কয়েকদিন ধরে দেখে বাড়িতে সবাই যা ইচ্ছে তাই করছে।
আমার সিদ্ধান্তের কোনো দাম নেই তো দেখছি এখানে।

বর্ষা সাথে সাথে তাল মিলিয়ে বলল হ্যা মা একদম ঠিক বলেছেন। এরকম অজানা একজনকে রাখা কি ঠিক হবে?আর তার উপর অবিবাহিত।যদি বাড়ির কোনো পুরুষের সাথে ওই মেয়েটার কোনো সম্পর্ক হয়।

নদী কিছুটা ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল আমি এখানে এতো অপমানিত হতে আসিনি আপনাদের ইচ্ছে হলে রাখবেন আর না হলে রাখবেন না।

‘আপনাদের ইচ্ছে সব’

ধারা সকলকে বলল আপনারা বোঝার চেষ্টা করুন একটা মেয়ে এরকম তার কোনো পরিবার নেই।সে অসহায় তাকে একটু থাকার জায়গা দিলে কি এমন ক্ষতি হবে?
সে তো আর থাকার জায়গা থাকলে এখানে আসতো না। কষ্টের জন্যই তো এজন্য এসেছে।
আর বর্ষা তুমি আবার বোঝার চেষ্টা করছো না কেন? তুমি তো শিক্ষিত মানুষ।

বর্ষা ধারার দিকে এগিয়ে কানের কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো তুমি বোঝার চেষ্টা করছো না কেন?
এই মেয়েটা বিপদ জনক হতে পারে আমাদের জন্য। ধারা শান্তনা দিয়ে বলল কারো ক্ষমতা নেই আমাদের কাজ সফল হতে বাধা দেওয়া। আমি যে কাজ শুরু করছি সেটা পূরন করবোই।

‘যদি ভাবী কোনো কারনে সমস্যা হয়’

‘বললাম তো হবে না’

‘আচ্ছা ভাবী এই মেয়েকে তুমি এখানে রাখার অনুমতি দিলে কেন কোনো কারণ আছে?’

‘কারন তো আছেই বর্ষা’

‘কি কারন এমন’ যার কারণে স্যার আইডোন এর মেয়েকে তুমি রাখতে চাচ্ছো?

‘পরে বলব এখন কেউ শুনতে পারে!’

‘ঠিক আছে ভাবী’

নাদিয়া বেগম বলল ওখানে এতো কিসের কথা হচ্ছে?
সবাই এখানে রয়েছে আর ওখানে কানে কানে কি এমন কথা হচ্ছে?যা আমাদের বলা হবে না।

রাফি উঠে গিয়ে বলল তাহলে নদী কিন্তু এখানেই থাকবে।এটাই সিদ্ধান্ত হয়ে গেল।

নাদিয়া বেগম তীক্ষ্ম চোখ এ নদীর দিকে তাকিয়ে বলল কোনো কিছু অন্যয় হলে ধারা দায়ী থাকবে সে যেহেতু থাকার কথা বলছে।আর একবার শুধু রাফি তোর বাবা আসুক সমস্ত ঘটনা আমি তাকে জানাবো।এই বাড়িতে তো এটাই দেখা যাচ্ছে আমার কোনো দাম নেই?

‘ধারা বলল আমি বাবাকে বুঝিয়ে বললে সেও রাজি হবে’ এটা আমার বিশ্বাস।

নাদিয়া বেগম বলল তোমরাই তো আমার মাথা খাচ্ছো।
আর তোমার শশুর কে যে কি বলে বুঝিয়েছো আমি বুঝতে পারছি না।সে তো এখন তোমার কথা ছাড়া
শোনেই না আর অন্য কারো কথা।

‘মা আমি তেমন কিছুই করিনি শুধু বুঝিয়ে বলি এটাই’

নাদিয়া বেগম ধারাকে বলল এই মেয়ে বাবার বাড়ি থেকে কি এমন এনেছিস ?এতো কথা বলতে পারিস কেন?
এতো কথা বলার অধিকার নেই তোর।

ধারা বুঝতে পারলো নাদিয়া বেগম এর এখন রাগ উঠেছে। কারন যখন অতিরিক্ত রাগ উঠে তখন তুই বলে সম্বোধন করে।আর এই পরিস্থিতিতে কথা বাড়ালে বিপদ হবে।তাই এটাই ভালো হবে কোনো কিছু না বলে চুপ করে থাকা। নাহলে আবার ঝামেলা হবে।

‘নাদিয়া বেগম আরো কিছুক্ষণ এসব বলে চলে গেল’

বর্ষা নদীর ঘর দেখিয়ে দিল।ঘরটা একটু ছোট তবে এমনিতে ভালো ঘরটা বাইরের দিকে সুন্দর একটা জানালা আছে। মৃদু হাওয়া বয়ে বেড়ায় সব সময়।
ধারা নদীকে বলল ঘর পছন্দ হয়েছে তোমার!
নদী সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বলল হ্যা খুব পছন্দ হয়েছে।এটাই চলবে আমার জন্য।

ধারা বলল ঘরটা একটু ছোট!

নদী বলল কোনো ব্যাপার না থাকার জায়গা হলেই হলো।

ধারা কথার ফাঁকে বলল নদী তোমার বিয়ে হয়েছিল বা ঠিক হয়েছে এমন কেউ আছে?

নদী বলল না আমার বিয়ে হয়নি তবে!

ধারা বুঝতে পারলো ব্যাপার।তাই আর কিছু বলল না।

ধারা নদীকে ফ্রেশ হতে বলল আর বলল আমি তোমার জন্য খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি বর্ষার কাছে। তুমি ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিবে।
আমি তোমার জন্য নাস্তার ব্যবস্থা করছি।

নদী মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।

রাতে সবাই একসাথে ডিনার করতে বসলো। সবাই যার যার মতো খাবার খাচ্ছে নদী একটু দেরি করে আসলো।
ধারা নদীর জন্য খাবার বেড়ে রেখেছে।

নদী একটু পর এসে খেতে বসলো।রাফি বলল তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও কাল তোমাকে সকালে আবার
অফিসে নিয়ে যেতে হবে ইন্টারভিউ এর জন্য ‌।

নদী বলল হ্যা ঠিক আছে।

ধারা বলল আচ্ছা নদী তোমাদের গ্ৰামের বাড়ি কোথায়?
নদী প্রশ্ন শুনে বলল কুমিল্লা।
তোমার বাবার নাম কি নদী?

নদী একটু ভেবে বলল সরোয়ার আহম্মেদ।

এই কথা শুনে বর্ষা ফিক করে হেসে দিল। সবাই বর্ষার হাসি দেখে কারন জানতে চাইলো।
বর্ষা কথা এড়িয়ে বলল একটা হাসির কথা মনে পড়লো।

রাফি বলল ও ঠিক আছে।

সবার খাওয়া শেষে সব কিছু গুছিয়ে ধারা ও বর্ষা ঘরের উদ্দেশ্য রওনা হলো।
ইদানিং ধারার সাথে বর্ষা কাজ করতে সাহায্য করে।

বর্ষা বলল একটা কথা বলব কিছু মনে করবে না ‌।
ধারা বলল কি কথা?

বর্ষা বলল ওইদিন যে দুধ পড়েছিল কারন দরজা খোলা ছিল আর সেদিন ভুল করে আমি দরজা খোলা রেখেছিলাম কারন ওইদিন রাকিব এসেছিল।

ধারা অবাক হয়ে বলল রাকিব এখানে কেন এসেছিল মাথা খারাপ হয়েছে নাকি,

__________________

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে