#হৃদয়ে_তুমি
লেখনীতে:Waziha Zainab (নিহা)
ষষ্ঠ পর্ব
“ভুল” শব্দটি ছোটো হলেও এর গভীরতা বিশাল।একটা ভুলের মাশুল মানুষকে সারাজীবন দিতে হয়।
“আমরা সব সময় ভুল মানুষের জন্য অনুভুতি পুষে রাখি”
ভুল মানুষকে ভালোবেসে নিজেদের গোছালো জীবন টাকে আগোছালো করে দি। কিন্তু ভুলগুলোই মাঝে মাঝে আমাদের বাস্তবতা শেখায়।মানুষ চেনায়।কিছু চেনা মানুষের অচেনা রূপ দেখায়।
“নিজেকে নিজেই সামলাতে শেখো
যা দেখেছো সবটাই মোহ মায়া
বাকীটা প্রয়োজন আর স্বার্থ
আর মানুষ!সে তো আবহাওয়া”
নিজেকে সামলানো শেখা উচিত।কারণ মানুষ স্বপ্ন দেখাতে জানে কিন্তু সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে কয়জন পারে?মানুষ বড় স্বার্থ পাগল। নিজের স্বার্থ শেষ তো সম্পর্ক শেষ করে দিতে দু বারও ভাবে না।মানুষ আবহাওয়ার চেয়েও ভয়ানক।মুহুর্তে বদলে যায়।
জানালার পর্দা সরাতেই সূর্যের আলো প্রবেশ করলো ঘরে। আকাশের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলাম আমি।আকাশটার মন আজকে ভীষণ ভালো মনে হচ্ছে। চার দিকে প্রখর রোদের তাপ দিচ্ছে সূর্য।আমি জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছি
হঠাৎ আয়ান ভাইয়া আমাকে টেনে তার দিকে ফিরিয়ে জোরে একটা থাপ্পর মারলো আমি চিটকে পড়লাম টেবিলের কোণায়।মানুষটার চোখের দিকে তাকানোর সাহস আমার হচ্ছে না। ঘৃণা লাগছে ভীষণ।কিভাবে এতো সুন্দর করে মানুষকে ঠকানো যায় তা উনাকে না দেখলে হয়তো কখনো বুঝতেই পারতাম নাহ”
আয়ান ভাইয়া আমার মুখের উপর প্রেগ্ন্যাসির রিপোর্ট গুলো ছুড়ে মেরে জোরে চিৎকার করে বললেন
“হোয়াট দ্যা হেল” এসব কি
আমি মাথা নিচু করে রইলাম উনি আবার বললেন
“এসব এর মানে কি? এই বিষয়ে আমাকে কিছু জানাস নি কেনো তুই?নিজেকে কি মনে করিস।
আমি আবারো চুপ করে রইলাম। উনি এবার আমাকে টেনে তুলে সোজা করে দাঁড়িয়ে বললেন
” আরেকটা থাপ্পর না খেতে চাইলে বল। এতো বড় একটা খুশির সংবাদ আমি পাই নি কেন।
আমি আবারো চুপ রইলাম
এবার উনি আমার দুই গালে উনার দুই হাত রেখে শান্ত গলায় বললেন
“লুক এট মি নেহু।লাইক সিরিয়াসলি আমি বাবা হতে যাচ্ছি এতো বড় একটা খুশির সংবাদ টাও তুমি আমায় দিলে না।কেনো এমন খুশির সংবাদ কি আমার শোনার অধিকার নেই।আমি বাবা হচ্ছি এটা শোনার অধিকারও কি আমার নেই।”আজ আট দিন পরও তুমি আমায় বলো নি
উনি এতো টুকু বলেই চোখ থেকে দুইফোটা পানি ফেললেন
এবার আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না উঁচু গলায় বললাম
“না নেই এমন সংবাদ আপনার শোনার অধিকার নেই।বাহিরে অন্য মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করবেন। ঘরে বউকে ঠিক ভাবে সময় দিবেন না তো এমন সংবাদ শুনে কি করবেন?
উনি এবার এক হাতে চোখ মুচে ভ্রু কুচকে বললেন
” মেয়ে নিয়ে ফুর্তি মানে
হোয়াট ডু ইউ মিন
আমি জোরে চেচিয়ে বললাম
“আই মিন আপনি যাকে বিয়ে করেছেন যার সাথে সময় কাটান”
এবার উনি বললেন
“মানে কাকে বিয়ে করেছি
আমি এবার চেচিয়ে বললাম
” থাক আর অভিনয় করার কোনো দরকার নেই।আপনি কি জানেন আপনি খুব ভালো অভিনয় করতে পারেন।আপনি তো পারেন মানুষ কে খুব সুন্দর ভাবে গড়ে নির্মম ভাবে ভেঙে দিতে।আমি আপনার হাতের পুতুল নাকি যে ইচ্ছা হলে খেলবেন আবার মন ভরলে ছুড়ে পেলে দেবেন
এতোটুকু বলেই ওখান থেকে সরে এলাম।আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না আমি।দম টা বন্ধ হয়ে আসছে
ভোরে পাখির কিচিরমিচির ডাকে ঘুম ভেঙে গেলো। জানালার পর্দা সরিয়ে আকাশের দিকে তাকালাম। আকাশটা যেনো নিস্তব্ধ হয়ে আছে।কাঁধ ঘুরিয়ে দেখলাম উনি ঘুমিয়ে আছে।”ঘুমান তবে কারো ঘুম কেড়ে নিয়ে নয়”।
ঘুমন্ত মানুষটাকে অনেক নিষ্পাপ লাগছে। কে জানত এই নিষ্পাপ চেহারার পেছনে বিশ্বাসঘাতক একজন মানুষ লুকিয়ে আছে। উনার প্রতিটা নিশ্বাসের শব্দ যেনো আমার কাবে বাজছে। কিন্তু এই নিশ্বাসে যে বিষ আছে।জীবন আধারে ডুবে যেতে বেশী সময় নেয় না,,,কিন্তু আধার কাটিয়ে উঠতে পুরো জীবনটাই চলে যায়
আজ তিনদিন আমাদের মাঝে কোনো কথা নেই। উনি বলার চেষ্টা করলেও আমি এড়িয়ে যাই। আর রাতে উনি আসার আগেই ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।আজকে ঔষধ খাওয়ার সময় দরজা লক করতে ভুলে গেছি।উনি বাহিরে থেকে আমার ঔষধ খাওয়ার বিষয় টা দেখে দ্রুত গতিতে ঘরের ভেতর প্রবেশ করে আমার হাত থেকে ঔষধের প্যাকেটটা ছিনিয়ে নেয়।ঔষধের প্যাকেটটা উনি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে চিৎকার দিয়ে উঠেন
“মানে কি এইসবের? আমাকে বুঝা তুই এইসবের মানে কি। আমাকে ইগনোর করে তুই কি বুঝাস বল”
আমি চুপটি করে পাশ ফিরে শুয়ে কাথা দিয়ে মুখটা ঢেকে ফেললাম এবার উনি আরো চিৎকার করে বলে ওঠেন
“আমি কিছু জিজ্ঞাস করছি?
আমি আবারো সাড়া না দেওয়ায় উনি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন
ঘুম পাচ্ছে প্রচুর।এর মাঝে উনি একটা গ্লাসে করে তেঁতুলের টক নিয়ে এলেন। এক হাতে গ্লাস আর অন্য হাতে আমাকে টেনে তুলে বললেন “এটা খেয়ে নাও
আমি ঘুম ঘুম চোখে বিরক্তি নিয়ে বললাম
” সরুন ঘুমাবো”আমি
এবার উনি জোর করে আমাকে টক টা খাইয়ে শান্ত গলায় বললেন
“নেহু বমি আসছে তোমার”
আমি মাথা নাড়িয়ে সাড়া দিলাম উনি আমাকে কোলে তুলে ওয়াশরুমের দিকে হাটা ধরলেন
আমি এখন স্বাভাবিক কিন্তু উনি শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছেন যার কারণে নড়তেও পারছি না। মুচরামুচরি করেও কোনো লাভ হলো না উনি ধমকের স্বরে বললেন
“থাপ্পড় না খেতে চাইলে ঘুমাও এমনিতে অনেক জ্বালিয়েছো এই কয়দিনে।
চলবে__