#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৯|
#শার্লিন_হাসান
পরের দিন সেরিন কলেজে আসতে ডাক পড়ে শুভ্রর রুমে। সাথে নিশাত ও আছে। আজকে কেনো জানি সেরিনে ভয় জড়তা কিছুই কাজ করছে না। সে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে শুভ্র বেশী সিনক্রিয়েট করলে আর্থর কথা বলে দিবে। শুভ্রর রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে থমথমে গলায় সেরিন বলে,
‘মে উই কাম ইন স্যার?’
শুভ্র জবাব দেয়,
‘কাম ইন।’
সেরিন নিশাতের হাত ধরে ভেতরে প্রবেশ করে। ভয় জড়তা সরিয়ে নিজেই বলে ফেলে,
‘কিছু বলবেন স্যার?’
‘ইয়েস! গতকালকে কলেজ ইউনিফর্ম পড়ে কুমিল্লায় ঘুরতে গেলে। শোনলাম বাড়ীতে মিথ্যে বলেছো। তা ডেটে যাওয়ার এতো শখ তো ইউনিফর্ম পড়ে কেনো? আমার কলেজে নিয়ম কানুন ভুলে গেছো?’
‘আসলে স্যার ডেটে যাইনি আমরা। মেয়ে,মেয়ে বুঝি ডেট হয়? আর এতো বকা দেওয়ার শখ তো আপনার ছোট ভাইকে জিজ্ঞেস করুন। আমাদের দোষ কী? ওনার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়েই তো গেলাম দেখা করাতে। আপনাদের চৌধুরী বাড়ী ছোট চৌধুরানী।’
‘লজ্জা হওয়া উচিত তোমার। তোমার এতো আস্পর্ধা আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বলছো? আমি তোমার টিচার হই কোন সমবয়সী ভাই, বেয়াই না।’
‘আসলেই শা’লা তোর মাথায় সমস্যা। সবাই তোকে ভয় পাবে বলে কী আমিও ভয় পাবো? যতই সিংহ সাজো না কেনো তোমার তো দুর্বল দিক কিছু না,কিছু আছে। আর তোমাকে দেখলেই বুঝা যায় উপরটা পাথর হলেও ভেতরটা পুরো সফট।’
‘নেক্সট টাইম এমন বেয়াদবি দেখলে তোমায় আমি টিসি দিয়ে বের করে দিতে দু’বার ও ভাববো না।’
শুভ্রর কথায় সেরিন ভাবনা থেকে বের হয়। ঠোঁট উল্টে বলে,
‘প্লিজ স্যার এক্ষুনি আমায় টিসি দিয়ে বের করে দিন। আপনার কলেজে আমি পড়তে চাই না।’
‘তাহলে ঠিক আছে। একটু ওয়েট করো টিসি দিচ্ছি আমি।’
সেরিন মাথা নাড়িয়ে নিশাতকে নিয়ে বাইরে আসে। মিশাত সেরিনকে ধাক্কা দিয়ে বলে,
‘আমি আম্মুকে কী বলবো? বলবো আমি কলেজ মিস দিয়ে কুমিল্লা গিয়েছি আর ধরা খেয়েছি। দেখ ভাই আমার আম্মু আমায় মে’রেই ফেলবে। এই কলেজের অনেক নাম ডাক সাথে রেজাল্ট ও ভালো।’
‘আমাকে টিসি দিতে বলেছি তোকে না। আর ওই অপদার্থ স্যার টিসি দিবে না আমায় আমি একশ পার্সেন্ট শিওর।’
‘তুমি কে যে টিসি দিবে না? আমাদের মতো স্টুডেন্ট না থাকলেও কিছু হবে না কলেজে। আমাদের থেকেও ভালো স্টুডেন্ট আছে। ওনাদের কলেজের রেজাল্ট এমনিতে ভালো হয়। আমাদের মতো দু’একটা আগাছা না থাকলেও কিছু যায় আসবে না।’
‘আমরা আগাছা?’
রেগে বলে সেরিন। তখন নিশাত আমতা আমতা করে বলে,
‘আমার কাছে তাই মনে হয়। দেখ আমাদের যতবার প্রিন্সিপাল তার রুমে ডেকেছে এখন অব্দি একটা স্টুডেন্টকেও ডাকেনি। এতো,এতো কমপ্লেন আমাদের নামে।’
‘তোহ ডেকেছে দেখে কী হয়েছে? মেরে ফেলেনি ওকে?’
‘তোর সাথে কথা বলা টাই বেকার।’
‘চলতো।’
সেরিন নিশাতকে নিয়ে চলে যায়।
শুভ্র রেগে টেবিলে থাপ্পড় মারে। সেরিনের এতো বড় আস্পর্ধা! তাকে ভয় পায় না। যেখানে সে একটা কথা বললে সবাই চুপ সেখানে মেয়েটা কীভাবে জবাব দেয়। শুভ্র ঘেটে ঘুঁটে সেরিনের কিছু ডকুমেন্টস বের করে। তাঁদের স্কুল থেকেই এসএসসি দিয়েছে। এখন তাঁদের কলেজেই এডমিশন নিয়েছে। শুভ্রদের স্কুল কলোজ একসাথেই। দু’টো পরিচালনার জন্য যথেষ্ট টিচার আছে। তবে শুভ্র দু’টোরই প্রিন্সিপাল। অনেক খোঁজ খবর চালানোর পর শুভ্র জানতে পারে সেরিন ভালো স্টুডেন্ট ছিলো। ওর রেজাল্ট ও ভালো। কিন্তু তাতে কী? এতো বড় বেয়া’দবি র জন্য সেরিনকে বের করে দেওয়াই উত্তম।
ছুটে সাংস্কৃতিক পরিচালনা করা ম্যামের কাছে যায় শুভ্র। টান টান গলায় বলে,
‘সেরিন মেয়েটা কী গান ভালো গায়?’
‘জ্বী স্যার। এখনো যদি বলি কলেজ বা স্কুলের স্টুডেন্টদের মধ্যে কমপিটিশন দেব আমার বিশ্বাস সেরিন ফাস্ট হবে। আর আমাদের স্কুল,কলেজে আগে তেমন ভালো কেউ গাইতে পারতো না। যার কারণে জেলার বড়,বড় ইভেন্টে কেউ পার্টিসিপ্যান্ট করতে পারতো না। প্রাইস যা ছিলো সব অন্যান্য কলেজের স্টুডেন্টরা নিয়ে যেতো। তবে এবার আমাদের কলেজের স্টুডেন্টরা পার্টিসিপ্যান্ট করবে। প্রয়োজনে আমি ওদের কয়েকদিন রিহার্সেলের ব্যবস্থা করে দেবো।’
ম্যামের কথা শুভ্র আর কিছু বলেনা। সোজা নিজপর রুমে এসে মেরুদণ্ড সটান করে দাঁড়ায় জানালার পাশে। এই মূহুর্তে সেরিনকে প্রয়োজন তাঁদের কলেজের জন্য। সে যাই হোক দু’একটা স্টুডেন্ট থাকেই এমন গাড়ের রগ বাঁকা। সেরিন ও তাঁদের একজন। শুভ্র এখন সব ভুলে গেছে৷ সপরিন ভালো গায়! তার গান শোনার জন্য জেনো শুভ্র সবার থেকে বেশী আগ্রহী। আর যাই হোক আজকের ছোট্ট অনুষ্ঠান টা সে মিস দিতে চায় না।
কয়েকটা ক্লাস শেষ হতে পড়ার পাট চুকিয়ে নেওয়া হয়। স্কুল,কলেজের সব স্টুডেন্টদের বিশাল হল রুমে আসার নির্দেশনা দেয়। সেরিন নিশাত ও যায়। যেহেতু সেরিনের আজকে গাইতে হবে।
সব টিচার স্টুডেন্টরা মিলে হল রুমে বসে। দেশাত্মবোধক, পল্লিগীতি গান গাওয়া হবে। সেরিন পল্লিগীতিতে নাম দিয়েছে।
বাকী স্টুডেন্ট রা ও গেয়েছে। সেরিনের নাম আসতে সে সামনে যায়। শুভ্রর জেনো অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে না। ভয়েস টা তো মিলাতে হবে। শুভ্রর অনেক অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ফাইনালী সেরিন গায়,
‘সোনারও পালঙ্কের ঘরে
লিখে রেখে ছিলেম দ্বারে
যাও পাখি বলো তারে
সে যেন ভোলে না মোরে
সুখে থেকো, ভালো থেকো
মনে রেখ এ আমারে
বুকের ভেতর নোনা ব্যাথা
চোখে আমার ঝরে কথা
এপার ওপার তোলপার একা
বুকের ভেতর নোনা ব্যাথা
চোখে আমার ঝরে কথা
এপার ওপার তোলপার একা
যাও পাখি বলো তারে
সে যেন ভোলে না মোরে
সুখে থেক, ভালো থেক
মনে রেখ এ আমারে
মেঘের ওপর আকাশ ওড়ে
নদীর ওপার পাখির বাসা
মনে বন্ধু বড়ো আশা
মেঘের ওপর আকাশ ওড়ে
নদীর ওপার পাখির বাসা
মনে বন্ধু বড়ো আশা
যাও পাখি যারে উড়ে
তারে কইয়ো আমার হয়ে
চোখ জ্বলে যায় দেখব তারে
মন চলে যায় অদূর দূরে
যাও পাখি বলো তারে
সে যেন ভোলে না মোরে
সুখে থেক, ভালো থেক
মনে রেখ এ আমারে
সোনারও পালঙ্কের ঘরে
লিখে রেখে ছিলেম দ্বারে
যাও পাখি বলো তারে
সে যেন ভোলে না মোরে
সুখে থেক, ভালো থেক
মনে রেখ এ আমারে’
(দ্রঃ পল্লিগীতি নামে যে কোন গান আছে সেটা আমি জানতাম না। এমনকি এই গানটাও আমি আমার ক্লাস ইভেন্টে শুনেছিলাম। কয়েকদিন হলো জেনেছি পল্লিগীতি নামে গান আছে😶🐸)
মাইক্রোফোন রেখে সেরিন নিজের জায়গায় চলে আসে। শুভ্র সেরিনের উপস্থিতি খেয়াল রাখছে। তবে আর কিছু বলেনি।
*****
‘শুনেছেন আর্থ স্যার? আপনাদের নাম করে কারা জানি বাজারে চাদা তুলেছে।’
ইমতিয়াজের থেকে কথাটা শুনে আর্থ চোয়াল শক্ত করে নেয়। সে বাইরে এসেছিলো কিছু কাজে। আর্থ তার চাচ্চু আয়মান চৌধুরীকে কল লাগায়। রিসিভ হতে তেজী স্বরে বলে,
‘চাচ্চু কিছু শুনেছো? আমাদের নাম করে চাঁদাবাজি করছে সাধারণ মানুষের থেকে।’
‘আমি বাড়ী আসছি তুমিও আসো। জিজ্ঞাসাবাদ করে বের করবো। যারা এসব কাজ করছে সোজা জেল।’
‘আগে ওদের হাত পা বেঁ’ধে জু’তা পে’টা করবো তারপর তোমার আইন আদালত।’
আর্থ কল রেখে রওনা হয় বাড়ীর উদ্দেশ্য। ইমতিয়াজ সাথে তাঁদের দলের কয়েকজন ও আর্থর সাথে চৌধুরী বাড়ীতে আসে। শুভ্রর বাবা আরফিন চৌধুরী শুভ সে কিছু কাজে ঢাকা গেছে। আয়মান চৌধুরীর ও যাওয়ার কথা ছিলো। আজকে সন্ধ্যায় যাবে সে। আর্থ এদিকটা সামলাবে। সোফায় বসে আছে আর্থ। তার সামনে আয়মান চৌধুরী বসে আছে। তখন আবার শুভ্র আসে। যদিও শুভ্র রাজনীতিতে পুরোপুরি ঢুকেনি তবে কিছু,কিছু জায়গায় জড়িত আছে সে। তার চাকরী,বাবার প্রফেশনের সূত্রে। আর্থকে দেখে শুভ্র জিজ্ঞেস করে,
‘কী হয়েছে?’
‘আরে তেমন কিছু না। আমাদের বিরোধী দলের কয়েকজন লোক দিয়ে আমাদের নাম করে চাঁদা তুলেছে।’
#চলবে