#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৫|
#শার্লিন_হাসান
‘ভাইয়া তুমি এমন কেনো? জেঠুর কথা একটু পাত্তা দিলে কী হয়? রাগ করে থেকে লাভ আছে বলো?’
‘দেখো আর্থ এসব নিয়ে আমি কথা বাড়াতে চাই না। উনি আমার বাবা সন্মান করি উনাকে তবে উনার কিছু কাজকর্মের কারণে আমি ওনার প্রতি অসন্তষ্ট।’
‘আরে চলো পুরোনো কথা মনে রেখে কী হবে?’
আর্থ শুভ্রকে নিয়ে নিচে যায়৷ শুভ্র আসতে সবাই ডিনার করে নিজেদের রুমে চলে যায়। শুভ্র বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বাইরে দৃষ্টি স্থির করে। ঠিক বাড়ীর বাউন্ডারির পাশে আরেকটা বাউন্ডারি দেওয়া। যেখানে একটা কব’র দেখা যাচ্ছে। শুভ্রর মায়ের কথা বেশ মনে পড়ছে। কতগুলো বছর কেটে গেলো মায়ের মুখ দেখে না। এই কঠোর মানুষটার ও খুব করে মন খারাপ হচ্ছে। কিছুক্ষণ বেলকনিতে থেকে রুমে চলে আসে শুভ্র। ফোন হাতে ফেসবুক স্ক্রোল করতে,করতে সেই মেয়েটার আইডির খোঁজ করে। হ্যাঁ আইডির নাম সিরাত পাটওয়ারী শসী। তখন আর্থর বলা ওর গার্লফ্রেন্ডের নামটাও মনে পড়ে। তাহলে কী দু’ভাই এক মেয়ের প্রেমেই পড়ে গেলো? শুভ্র তো শসীর ভয়েসের প্রেমে পড়েছে। কিন্তু এই শসী তো তার ছোট ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড। শুভ্রর সব তালগোল লাগছে। দেরী না করে শসীর আইডিতে মেনশন করা পেজে চলে যায়। যেটার নাম সেরিন এবং সিরাত দিয়ে খোলা। শুভ্র পেজটা ভালো করে স্ক্রোল করে। বিশেষ করে কমেন্ট আর রিয়েক্ট চোক দিয়ে সেরিন আইডিটা বের করে। এতটুকু শুভ্র ক্যাচ করতে পেরেছে যে, ‘সেরিনের পেজ ওটা। আর শুভ্র সেরিনের চাচাতো বোনে প্রেমে পড়েছে। ওরা দুই বোন গান আর নাচের ভিডিও বানিয়ে আপলোড দেয়।’
শুভ্র সেরিন নামের আইডিটা ভালো করে স্ক্রোল করে। যেটায় সেরিনের পিকচার আছে। সাথে শসীর পিকচার ও আছে। দু’জনকে দেখতে অনেকটা একরকম লাগে। তারউপর ম্যাচিং ড্রেসআপ চেনার উপায় নেই কে সেরিন আর কে শসী।
এখন শুভ্রকে চিঠি দিলো কে? প্রথম চিঠিটা ঠিক হলেও দ্বিতীয়টায় তালগোল পাকানো। আর্থ আর শুভ্র নামে! আচ্ছা চিঠি গুলো সেরিনের বোন শসী দেয়নি তো? না,না! শসী তো শুভ্রকে চেনেই না।
শুভ্র কিছুক্ষণ মাথা খাটায়। সাত পাঁচ না ভেবে শসীর আইডিতে মেসেজ সেন্ড করে। মেসেজটা হলো,
‘মিসেস সেরিন পাটওয়ারী মিশাত। নিজের নাম থাকতে আরেকজনের নাম দিয়ে আইডি চালিয়ে মানুষকে তো ভালোই বোকা বানাতে পারো।’
আর্থর সাথে মেসেজে কথা বলছিলো সেরিন। মেসেজ রিকুয়েষ্ট দেখে সেটা চেক দিয়ে দেখে ‘আরজিন চৌধুরী শুভ্র’ নামটা জ্বলজ্বল করছে। সেরিন দেরী না করে মোেজ সীন করে। সাথে,সাথে তার মাথায় হাত চলে যায়। শুভ্র এত,এত চালাক কেনো? সেরিনের রাগ হয়। শুভ্রর মেসেজের রিপ্লাইয়ে বলে,
‘নতুন ভাষণের প্রিপেয়ার না দিয়ে আমার আইডির পরিচয় বের করতে নেমে পড়েছেন?’
‘আমার ভাইকে তো ঠিকই বোকা বানালে। তা আইডি কয়টা তোমার?’
‘আজ্ঞে এই একটাই আইডি আমার।’
‘এতো বুদ্ধি কোথা থেকে আসে তোমার মাথায়? সিরাত পাটওয়ারী শসী আইডি তুমি চালাও। সেরিন পাটওয়ারী মিশাত আইডি তোমার বোন শসী চালায়। এতো বুদ্ধি নিয়ে ঘুমাও কীভাবে?’
‘ওটা এক্সট্রা নলেজ। আসলে আইডির নাম অদলবদল করার পেছনে কারণ আছে।’
‘কী কারণ?’
‘আমার বোন নেতার উপর উ’ষ্ঠা খেয়েছে। এখন নেতাকে ইমপ্রেস করে দেওয়ার জন্যই আইডির নাম চেন্জ। এনি ওয়ে আপনার ভাই কাত হয়ে গিয়েছে। এখন শুধু আমার বোনকে সারপ্রাইজ দেওয়া বাকী আমার।’
‘নোবেল পাবা তুমি। এসব ফাল’তু ব্যপারে এতো মনোযোগী না হয়ে পড়াশোনায় মনোযোগী হও তাহলে লাইফে কিছু করতে পারবা।’
‘শা’লা সব মিস গেলেি তোর ভাষণ মিস যাবে না। তোরে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম এই ব্যপারটা কেমন সেটার ব্যখ্যা দিতে। যত্তসব!’
মনে,মনে কথাগুলো বলে সেরিন। কী রিপ্লাই করবে বেবে পাচ্ছে না সে। শুভ্রর কাছে তো হাতেনাতে ধরা খেলো। এখন সুন্দর ভাবে শসীকে সবটা বুঝিয়ে আইডি হাতে ধরিয়ে দিতে পারলেই হলো। একবার ধরা খেয়েছে তো দ্বিতীয় বার না খেলেই হলো। নাহলে এই লোক তাকে এক তুড়িতে বৃন্দাবন দেখিয়ে দিবে। সেরিন নেট অফ করে সুন্দর ভাবে অফলাইন হয়ে যায়।
শুভ্র ফোনের দিকে তাকিয়ে মিটমিট হাসছে। ধরা খেয়ে সেরিনের মুখটা কেমন হয়েছিলো দেখার শখ জাগে।
*******
‘কুমিল্লা মুরাদনগর বরুড়া দাউদকান্দি উপজেলার এমপি আরফিন চৌধুরী শুভ। তারই উপজেলায় নতুন একটা বৃদ্ধাশ্রম উদ্বোধনে যাবে। তার সাথে যাবে তার ছোট ভাই আয়মান চৌধুরী এবং তার ছোট ছেলে আর্থ। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তারা সময় মতো বেড়িয়ে পড়ে।
শসীর কলেজের পাশেই বৃদ্ধাশ্রম উদ্বোধন করা হবে আজকে। সেজন্য কিছুটা ডেকোরেশন করা হবে। কলেজের কয়েকজন স্টুডেন্ট সেসব ডেকোরেশনের কাজে অংশগ্রহণ করে। শসীও তার কয়েকজন ব্যাচম্যাটদের সাথে আছে।
যেহেতু এমপি আসবে সেহেতু একটু ভীড় জমেছে সেখানে। আরফিন চৌধুরী, আয়মান চৌধুরী এবং আর্থ তারা গেট দিয়ে প্রবেশ করে। আর্থকে দেখে তো অনেক মেয়েরা বেজায় খুশি। তাঁদের ক্রাশ তাঁদের কলেজে পদার্পণ করেছে। আর্থ এদিক সেদিন চোখ ভোলায়। বৃদ্ধাশ্রমের গেটে দিয়ে প্রবেশ করতে তার চোখ যায় শসীর দিকে। শসী তার মতো ব্যস্ত। আর্থকে খেয়াল করেনি সে। সে জানে আর্থ তার ক্রাশ তাই বলে বাকী মেয়েদের মতো চোখ দিয়ে গিলে কাবে নাকী? আর্থ শসীর দিকে তাকিয়ে রয়। হ্যাঁ আকাশের বুকে শসীর থেকে কোন অংশে কম নয় এই শসী। শসী তার বেস্টফ্রেন্ড সিনহার সাথে কথা বলছে। ভীড়ের থেকে আড়াল হওয়ার জন্য কিছুটা সরে আসে। কিছুক্ষণের মধ্যে উদ্বোধন কাজ সমাপ্ত করে আরফিন চৌধুরী বৃদ্ধাশ্রমের বৃদ্ধদের সাথে দেখা করার জন্য উপরের ফ্লোরে যায়। বৃদ্ধাশ্রমের কাজ সমাপ্ত হতে বৃদ্ধদের নিয়ে আসা হয়। তবে ব্যস্ততার জন্য উদ্বোধন করতে লেট হয়ে যায়। এমপি স্যারকে নিয়ে অনেকে ব্যস্ত। তবে আর্থ তার জেঠু আী চাচ্চুর সাথে উপরে যায়নি। সে এখানে থাকে্ তার সাথে তাদের বিশ্বাস্ত কয়েকজন আছে। শসী আর্থর দিকে নজর পড়তে দেখে আর্থ তার দিকে তাকিয়ে আছে।
‘আহারে এভাবে তাকিয়ে থেকে কী লাভ? ইমপ্রেস হইলি না। ইমপ্রেস হলে ঠিকই এখন হাই হ্যালো দিয়ে আমার ফ্রেন্ডসদের সাথে নতুন করে ইন্ট্রডিউস করুয়ে দিতাম। তাঁদের জিজু হিসাবে।’
আর্থর মাথায় ক্যাচ করছে না শসী তাকে দেখে কোন রিয়েক্ট করলো না কেন? এমন অচেনার মতো থাকছে কেন?
*******
কলেজে এসে নিশাতের থেকে সেরিন জানতে পারে আজকে আর্থরা শসীদের কলেজে যাবে। এটা শোনার পর সেরিনের মনে কালো মেঘে ঢেকে গেছে। তার সব প্লানিং আজকের ঠেলায় শেষ। ক্লাস রুমে বসে চিন্তায় মাথা নুইয়ে পড়েছে ব্যাগের সাথে। না জানি আর্থ তাকে চিট, ফাল’তু বলে অপমান করে। শুভ্র যদি আর্থর কাছে তার নামে এতো বড় লিস্ট দেয়। তাহলে কী হবে?
‘শসী রে তোর ভবিষ্যত আলোকিত করতে গিয়ে মনে হয় আমার ভবিষ্যত অন্ধকার হয়ে যাবে।’
সেরিনের অবস্থা দেখে নিশাত ওকে ঠেলে। সেরিন সেভাবে ল্যাটকা মেরে পড়ে আছে। তখন নিশাত বলে,
-আর্থ স্যার সেই কলেজে গেছে শোনার পর তোর অবস্থা এমন কেন? এই তুই আবার টেম্পু চালাচ্ছিস না তো? আর্থ স্যারকে মেয়েরা দেখবে সেজন্য তোর মুড অফ?
-একদম টিক ধরেছিস মাথা মোটা একটা। আমার বয়ে গেছে ওনাকে মেয়েরা দেখবে আর সেজন্য মুড অফ করে রাখতে।’
-তো কী হয়েছে বলবি তো?
-আরে বা’ল…..
সেরিন তাকিয়ে দেখে শুভ্র তাঁদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। পুরো ক্লাস নিস্তব্ধ। সেরিন চোখ মুখ কচলে পুনরায় তাকায়। না সত্যি এটা জ্বীন না আরজিনই দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু সে আসলো কখন? কীভাবে? নিশাত সেরিনের দিকে চোখ পাকাচ্ছে। তাঁদের আবার কথা বলতে গেলে হুঁশ থাকে না। আশে-পাশে কী হচ্ছে না হচ্ছে।
তখন শুভ্র বলে,
-দু’জনে দাঁড়াও।
#চলবে