হৃদয় সায়রে প্রণয়ের ছন্দ পর্ব-৪

0
565

#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৪|
#শার্লিন_হাসান

শুভ্র আর্থর দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে আছে। পারছে না এখানে কয়েক গা লাগিয়ে দেয়। আর্থকে বাঁশ দিতে এসে সে নিজেই কীভাবে বাঁশ খেয়ে গেলো? আরজিন চৌধুরী শুভ্রকে সবাই ভয় পায় আর এখানে তার ভাই তার সন্মান নিয়ে ফুটবল খেলে। একটুও ভয় পায়না তাকে। শুভ্রর লাজুক আর রাগী চেহারার দিকে তাকিয়ে প্রথমে তৃপ্তি হাসে আর্থ। পরক্ষণে রাগের কথা ভেবে একটা ঢোক গিলে। শুভ্রর রাগ সম্পর্কে ধারণা আছে তার। এক সপ্তাহের জন্য শুভ্রর থেকে গা ঢাকা দিতে হবে তাকে।

তখন সুলতানা খানম একজন সার্ভেন্ট কে বলে মিষ্টি নিয়ে আসতে। শুভ্র, আর্থ দু’জনেই তাকিয়ে আছে। আর্থ তখন আমতা,আমতা করে বলে,

‘মিষ্টি খাওয়ার কী আছে এখন? ও ওই টা তো বলেছি দেখে হ হয়ে গেলো নাকী?’

তখন আয়মান চৌধুরী শুধায়,
‘কেন এখন আবার কী হলো? তুমি মিনমিন করে কী বলছো? তুমি খুশি হওনি চাচ্চু হবা?’

‘না একদমই হইনি। আসলে শুভ্রর বউ প্রেগন্যান্ট হলে তো খুশি হতাম চাচা হবো। ধুর! শুভ্র ভাই মাফ করে দে। কথাটা বলার সময় আমার আবেগ কাজ করেছে বিবেক কাজ করেনি।’

মনে,মনে কথা গুলো বলে আর্থ। তখন সার্ভেন্ট মিস্টি আনতে সুলতানা খানম শুভ্রকে মিষ্টি খাইয়ে দেয়। আর্থকে খাওয়াতে যাবে তখন আর্থ বলে,

‘এখন আমি মিষ্টি খাবো না। বমি আসবে….’

আর্থর কথার মাঝে শুভ্র পোড়ন কেটে বলে,

‘তুই আবার প্রেগন্যান্ট নাকী আর্থ? বমি আসবে কেন?’

‘বমি আসবে কারণ আমার পেটে দানাপানি কিছুই নেই৷ মিষ্টি খেলে সুগার বেড়ে যাবে। এখনো বিয়েশাদি কিছুই করিনি।’

‘রুমে আসো আমি তোমায় বিয়ের জন্য প্রিপায়ার করছি।’

কথাটা বলে শুভ্র কাটা চামচ রেখে চলে যায় ভেতরে। আর্থ ও নয়ছয় করে কেটে পড়ে সেখান থেকে। মাঝখানে আয়মান চৌধুরী আর সুলতানা খানম তাঁদের যাওয়া দেখছে। পুরো কথাটা ক্লিয়ার করেনি তারা কেউই। তখন সুলতানা খানম বলেন,

‘ শুভ্রর বউকে তো নিয়ে আসতে হবে তাই না?’

‘সেরিন পাটওয়ারী আবার কে? তাকেই তো চিনি না।’

‘আর্থ মনে হয় না আর কিছু বলবে। আমাদেরই খুঁজে বের করতে হবে সেরিন পাটওয়ারীকে।’

‘ওদের আমি বিশ্বাস করি না এই ব্যপারে। যদি মিথ্য হয় তো?’

‘বাচ্চার কথা কেউ মিথ্যে বলে তোমার মনে হয়? ধুর! তুমি আজীবন সবকিছুতেই সন্দেহ করো। দুই চার লাইন সন্দেহ যোগ করো।’

কথাটা বলে সুলতানা খানম চলে যায়। আয়মান চৌধুরী সেখানেই দাঁড়িয়ে রয়।

শুভ্র আর্থর রুমে যায়। হাতে তার কুশন। আর্থ শুভ্রকে দেখে বলে,

‘স্যরি ভাইয়া,স্যরি। ভেরি স্যরি!’

আর্থর কথার প্রতিত্তোরে শুভ্র বলে,

‘প্রেম তো করো দশটা। নিজের দোষ আমার গাড়ে চাপাও কেন? তোমার নামে চিঠি আসে তোমার বাবুর আম্মু দেয়। আর বাবুর আব্বু বানাও আমায়?’

‘আমার বাবুর আম্মু চিঠি দেয়না। তার সাথে তো ডেইলি কথা হয়।

‘সেরিন কে হুম? তুমি ওকে চেনো কী করে?’

‘তুমিও সেরিনকে চেনো ব্রো?’

‘না কোন সেরিনকে আমি চিনি না। তুমি কী করে জানলে চিঠি আমার কাছে আসে?’

‘আন্দাজি ঢিল ছুঁড়েছি। তবে খবর পেয়েছি সেরিন নামের একটা মেয়েকে তুমি বকাঝকা করেছো চিঠির জন্য।’

‘তো করবো না? আস্ত বে’য়াদব মেয়ে। বেয়া’দবের মতো চিঠি দেয় ‘শুভ্র স্যার তোমার বাবুর আম্মু হতে চাই।’ কেন আমি তাকে বাবুর আম্মু বানাবো কেন? আমি আমার বউকে বাবুর আম্মু বানাবো।’

‘মেয়েটাও দেখো! একনাম্বারের ঠোঁট কাটা।’

‘হ্যাঁ আসলেই।’

‘একে তো কলেজ থেকে বের করে দেওয়া উচিত। তুমি ধমক দিয়ল বুঝাওনি তুমি একটা সিংহ। আমি বুঝিনা তোমার মতো এতো এট্টিটিউড, রাগী মানুষের ধারে কাছে এসব প্রস্তাব নিয়ে ঘেঁষার সাহস কী করে পায়?’

আর্থর কথায় শুভ্র জবাব দেয়না। আর্থ শুভ্রর সাথে তাল মিলিয়ে তার বকাঝকা,মা’রামারি র কথা ভুলিয়ে নিচ্ছে শুভ্রর মন থেকে। শুভ্র তখন বলে,

‘তোমার বাবুর আম্মুর নাম কী?’

‘সিরাত পাটওয়ারী শসী।’

শুভ্র প্রস্থান করে। শসী নামটা চেনা,চেনা লাগছে। কোথাও দেখেছে নাকী পড়েছে নামটা। মনে আসছে না তার। রুমে এসে শাওয়ারে ঢুকে যায় শুভ্র। মাথায় একটা নামই ঘুরঘুর করছে সেটা হলো, ‘আর্থর গার্লফ্রেন্ড সিরাত পাটওয়ারী শসী।’

আর্থ শসীর একটা পিকের দিকে তাকায়। এটা আকাশের শসী না জমিনে থাকা শসী। আকাশের শসীকেও জেনো হার মানাবে এই শসী। আসলেই যে যাকে পছন্দ করে, ভালোবাসে তার কাছে সে মানুষটা পৃথিবীর সবথেকে সুন্দরতম মানুষ। ব্যস্ততার জন্য শসীর সাথে মিট করতে পারে না আর্থ।

******

সন্ধ্যায় আর্থর সাথে মেসেজে কথা বলছে সেরিন। তখন শসী আসে তার কাছে। তার মুড অফ। সেরিন জানে নেতার পেচনে লাইন লাগাতে,লাগাতে বেচারির অবস্থা খারাপ। তাও পাত্তা পাচ্ছে না। পাবে কী করে? নেতা তো ব্যস্ত মানুষ। শসীকে দেখে সেরিত বলে,

‘তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে জান।’

‘কী সারপ্রাইজ বনু?’

‘উহুম, সময় হলেই দেবো।’

‘আমার ক্রাশকে তো আর ইমপ্রেস করে দিতে পারলি না। কিসের আবার সারপ্রাইজ?’

‘ভাই আমাকে দেখে তোদের কোন এঙ্গেলে মনে হয় ছেলেদের ইমপ্রেস করার মতো টয়ালেন্ট আমার আছে? প্রেম করবি তুই,বিয়ে করবি তুই, বাবুর আম্মু হবি তুই আর ইমপ্রেস করবো আমি?’

‘এমন করিস না বোন প্লিজ! একটু তো হেল্প কর। কোনো কিছুই কাজে আসছে না। আমার সব প্লানিং বারবার ফ্লপ খাচ্ছে।’

‘এই মেয়ে! কিসের প্রেম হুম? পড়াশোনায় ফোকাস করো।’

‘ধুর পড়াশোনা তো করিই। তাই বলে পছন্দের মানুষকে
নিজের করবো না? আচ্ছা বনু আমি কী অসুন্দর?’

‘কী বলো এসব? আমার বনু একটা চাঁদ। আকাশের চাঁদটা মাটিতে এসেছে।’

‘তাহলে নেতা আমার জন্য ইমপ্রেস হচ্ছে না কেন?’

‘যা তো যা! এই নেতার কথা আর বলিস না। দুই মাস ধরে ঘ্যানঘ্যান শুনছি। বেডায় গিয়ে দেখ কোন মেয়ের পেছনে দৌড়াচ্ছে।’

‘এভাবে বলিস না প্লিজ।’

সেরিন আর কথা বাড়ায়না। শসীকে রেখেই মাহির রুমে চলে যায়। মাহি তখন ল্যাপটপে ব্যস্ত। সেরিনকে দেখে বলে,
‘শসীর কর হয়েছে রে?’

‘কিছু হয়নি।’

‘শুভ্র তোকে কিছু বলেছে?’

‘না কী বলবে? যা অপমান করার তো সেদিনই করে দিয়েছে। রসকষহীন মানুষ একটা।’

******

সন্ধ্যায় চৌধুরী পরিবারের সবাই লিভিং রুমে বসেছে। আর্থ, শুভ্র দুজনেই আছে। আয়মান চৌধুরীকে আর্থ বলে দিয়েছে ‘বাবুর আম্মুর’ ব্যপারটা মজা করে বলা। এখন শুভ্রর বাবা আরফিন চৌধুরী, শুভ্রর বিয়ে নিয়ে প্রসঙ্গ তুলতে চাচ্ছে। কিন্তু সুযোগ পাচ্ছে না। শুভ্র কী না কী বলে বসে।

‘আমাদের ছেলে মেয়েরা তো বড় হয়েছে, হচ্ছে। বয়স তো অনেক হলো এবার বিয়ে-শাদির ব্যপারে কিছু ভাবো?’

শুভ্রর দিকে তাকিয়ে কথাটা বলে আরফিন চৌধুরী। তখন আর্থ বলে,

‘হ্যাঁ অনেকদিন হলো বাড়ীতে বিয়ে-শাদির আমেজ নেই। ভাইয়ার বিয়েটা হলে মন্দ হয়না।’

মূহুর্তে শুভ্রর মুখ কঠিন রুপ ধারন করে। আরফিন চৌধুরী যেনো এই কথাটাই বলতে চাচ্ছেন। কী সুন্দর ভাবে আর্থ বুঝে গেলো তার মনের কথা এমনকি বলেও দিলো। এই জন্যই আরফিন চৌধুরী আর্থকে একটু বেশী আদর স্নেহ করেন। তখন শুভ্র কাঠকাঠ গলায় জবাব দেয়,

‘এখন বিয়ে নিয়ে আমি কিছু ভাবছি না। আমি একটা প্রফেসনে ঢুকেছি কয়েকমাস হলো। এখন কেউ বলবে না টাকা পয়সার অভাব নেই। থাকুক টাকা! আমি এখন বউ পালতে পারবো না।’

তখন আর্থ শুধায়,
‘বউ পালতে হয়না ভাইয়া। আমরা কী ছোট শিশুর সাথে তোমায় বিয়ে দেবো? যে তোমায় বউ পালতে হবে। টাকা পয়সা নিয়ে এতো ভাবছো কেন? প্লিজ ভাইয়া বিয়েটা করো,প্লিজ,প্লিজ।’

‘আর্থর বিয়ে করার শখ বেশী। তাই আমি বলি তোমরা আর্থকে বিয়েটা করিয়ে দাও। শুধু,শুধু আমার বিয়ের আশায় বসে থেকে তো লাভ নেই। আমি এই ব্যপারে আর কোন কথা বলতে চাই না।’

কথাটা বলে শুভ্র আর একমুহূর্ত ও দাঁড়ায়নি নিজের রুমে চলে যায়। এখন কেউ কিছু বললে হট্টগোল বাঁধবে। শুভ্রর যা গলা আর তেজ চিৎকার একটা দিলে হার্টের রোগীদের ডক্টর দেখানো লাগবে। এমনিতে আরফিন চৌধুরীর হার্টে একটু প্রবলেম আছে সেজন্য বেশী জোর দেননি তিনি।

বুয়া রান্না করে টেবিলে খাবার সাজিয়ে রাখে। আর্থ যায় শুভ্রকে আনার জন্য। জান্নাতুল ফেরদৌস আর সুলতানা খানম খাবার বাড়ছে। আরফিন চৌধুরী আর আয়মান চৌধুরী। তারা শুভ্র এবং আর্থর জন্য বসে অপেক্ষা করছে।

আর্থ শুভ্রর রুমে প্রবেশ করতে,করতে বলে,

‘বিয়েটা করে নেও না।তোমার তো আর গার্লফ্রেন্ড নেই। তোমার জন্য আমার বিয়েটাও হচ্ছে না গার্লফ্রেন্ড থাকা সত্ত্বেও।’

‘বলেছি তো তোমায় বিয়ে করিয়ে দিতে। আমার জন্য বসে থেকে লাভ নেই।’

‘ভাইয়া তুমি এমন কেনো? জেঠুর কথা একটু পাত্তা দিলে কী হয়? রাগ করে থেকে লাভ আছে বলো?’

‘দেখো আর্থ এসব নিয়ে আমি কথা বাড়াতে চাই না। উনি আমার বাবা সন্মান করি উনাকে তবে উনার কিছু কাজকর্মের কারণে আমি ওনার প্রতি অসন্তষ্ট।’

#চলবে

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে