#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৩৭|
#শার্লিন_হাসান
সন্ধ্যায় শুভ্র পাটওয়ারী বাড়ীতে যায়। শশীকে দিয়ে সেরিনের রুমে জিনিসগুলো পাঠিয়ে দেয়। সেরিন তাকে দেখেও না দেখার ভান করেছে তাও সবার সামনে। শুভ্র সেসবে কিছু বলেনি। শুধু জানিয়েছে আগামী কালকে সকালে চৌধুরী বাড়ীর বউ চৌধুরী বাড়ীতে চলে যাবে। সেরিন শুনেছে কথাটা তবে কিছুই বলেনি সে। শুভ্র বাকীদের সাথে গল্প করে। একবারে রাতের ডিনার করেই সে রুমে যায়। সেরিন কিচেনে কফি বানাচ্ছে।
শুভ্র রুমে এসে খাটে আধশোয়া হয়ে ফোন স্ক্রোল করছে। কিছুক্ষণের মধ্যে সেরিন আসে কফির মগ হাতে। শুভ্রর কফির মগটা চুপচাপ তাকে দিয়ে দেয়। মগ হাতে সেরিনের দিকে তাকায় শুভ্র। কন্ঠ স্বর খাদে নামিয়ে বলে,
“মুখটা ওমন করে রেখেছ কেনো?”
“এমনিতে!”
“কিছু এনেছিলাম আমি। তুমি সেগুলো দেখোনি।”
“ইচ্ছে করছে না।”
“দেখো সেরিন মানুষ মাত্রই ভুল। কেউই ভুলের উর্ধ্বে না।”
“শুনেছি।”
“আচ্ছা স্যরি।”
“ইট’স ওকে!”
“এরপর তোমার মুখটা ওমন গোমড়া দেখলে খবর আছে।”
সেরিন মাথা নাড়ায়। শুভ্র তখন শুধায়,
“যাও গিফ্ট গুলো খুলে দেখো।”
সেরিন গিফ্ট গুলো খাটের উপর আনে। শুভ্রর সামনেই খুলে দেখে। আর কিছু বলেনি সেরিন। শুভ্র সহ কেক কাটে তারা। ব্রেসলেট টা শুভ্র সেরিনের হাতে পড়িয়ে দেয়। বাকীগুলো রেখে দিয়ে লাইট অফ করে শুয়ে পড়ে সেরিন। শুভ্রর বুকে মাথা লুকিয়ে নেয়। শুভ্র সেরিনের কপালে চুমু একে বলে,
“দেখো রাগ টা একটু কমাও!”
“সবই বুঝলাম। এতো কিছু করলেন তো একবার “ভালোবাসী বউ” বলে দিলেই তো হতো। ওটায় আমি গলে যাই।”
“ওতো গলার দরকার নেই।”
“ঠিক আছে।”
*********
পরের দিন দুপুরের শেষ বিকেলের দিকেই চৌধুরী পরিবারের সবাই কুমিল্লায় যায়। সেরিন শুভ্রর সাথে সেদিন সকালেই চলে আসে চৌধুরী বাড়ীতে। পরিবারের বড়রা মাইক্রো দিয়ে। সেরিন,শুভ্র,আর্থ,আদ্রিতা,অধরা, তারা এক গাড়ীতে করে যাচ্ছে। পুরো বিকেল আর সন্ধ্যায় তারা শপিং করেই কাটিয়ে দেয়। দশটার দিকে রেস্টুরেন্টে ঢুকে ডিনার করে আবার দাউদকান্দির উদ্দেশ্য রওনা দেয়। সেরিন মেঘনা ব্রিজের উপর আসতে বাইরের দিকে মুখ নিয়ে ঠান্ডা হিমশীতল বাতাস উপভোগ করে। এই নদীর ঠান্ডা বাতাসটা সেরিনের অনেক পছন্দের।
বাড়ীতে এসে যে যার মতো ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ে। পরের দিন সকালে বাড়ী ডেকোরেশনের কাজ শুরু হয়ে যায়। সেরিন,আদ্রিতা,অধরা তারা সবাই ঢালা সাজানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সুলতানা খানম সহ তারা ঢালা রেডি করে নেয়। সন্ধ্যারর দিকে পাটওয়ারী বাড়ীতে যাবে ঢালা দিতে। সময়টা ব্যস্ততার মাঝেই কাটছে সবার। বিকেলে পাটওয়ারী বাড়ী থেকে ঢালা আসবে। জোর দমে রান্নাবান্না চলছে। এছাড়া চৌধুরী বাড়ীর অন্যান্য পরিবার ও আসা যাওয়া হচ্ছে এমপির বাড়ীতে। যেহেতু রাস্তা থেকে পুরো বাড়ীটাই ডেকোরেশন করা হয়েছে।
শুভ্র কলেজে এসেছে। লাস্ট পিরিয়ডের সময় ল্যাব ক্লাস ছিলো ফাস্ট ইয়ারের। কয়েকদিন পর ইয়ার চেন্জ ফাইনাল এক্সাম। তখন আবার নিশাত বিনা অনুমতিতে শুভ্রর রুমে প্রবেশ করে। শুভ্র ল্যাপটপে ব্যস্ত থাকায় নজর রাখেনি সেদিকে। নিশাত শুভ্রর সামনের চেয়ার টেনে বসতে শুভ্র সেদিকে দৃষ্টি স্থির করে। মেজাজ দেখিয়ে বলে,
“অনুমতি দিয়েছি আমি? আমার রুমে এসেছো অনুমতি ছাড়া আবার বসেছো। প্রব্লেম কী তোমার?”
“আরে শুভ্র স্যার! আমার বান্ধবী আপনার বউ না হলে আমিই হতাম। সে যাই হোক শালির অধিকার নিয়ে এসেছি। এমনিতে বউ হলেও খারাপ হয়না।”
কথাটা শেষ হতে নিশাত চেয়ার ছেড়ে দাড়াতে শুভ্র ও পুনরায় দাঁড়িয়ে পড়ে। ঠাস করে দু’টো চ’ড় বসিয়ে দেয় নিশাতের গালে। রেগে বলে,
“এরপর আমার রুমের আশেপাশে আসলে তোর পা আমি ভে’ঙে দেবো।”
নিশাত গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই মূহুর্তে তার মাথা ঘুরছে, পুরো দুনিয়া অন্ধকার হয়ে আসছে। শুভ্রর দিকে একনজর তাকিয়ে কোনরকম বেড়িয়ে আসে সে। সামনের সবই ঘুরছে তার সামনে। মনে,মনে স্থির করে নিয়েছে আর আসবে বা শুভ্রর আসেপাশে। এই চড় জীবনে যে একবার না খেয়েছে তাহলে তার সাত কপালের ভাগ্য। আজীবন মনে রাখার মতো চ’ড়।
“না এর বউ সেরিনই ঠিক আছে। আমি শালি হিসাবেই ঠিক আছি। দেখতে যতটা সুন্দর ব্যবহার আর মা-ইর তার চেয়ে জঘন্য। সেরিন এটা তোর জন্যই ফিক্সড করা বইন। আর ভুলেও তাকাবো না।”
নিশাত কোনরকম গাড়ীতে উঠে নিজের বাড়ীর উদ্দেশ্য রওনা হয়।
নিশাত যেতে শুভ্র বেড়িয়ে আসে রুম থেকে। তার কাজ আছে সেজন্য বাড়ী চলে এসেছে।
এসে রুমে প্রবেশ করে হাত ঘড়িটা খোলে সোফায় বসে পড়ে। সেরিন সবে শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়েছে। শুভ্রকে দেখে সোজা নিচে আসে। কোল্ড ড্রিং নিয়ে পুনরায় রুমে যায়। শুভ্র চোখ বন্ধ করে আছে। সেরিন তার সামনে কোল্ড ড্রিং ধরে বলে,
“এটা খেয়ে নিন।”
সেরিনের থেকে কোল্ড ড্রিং নিয়ে শুভ্র মাথা নাড়ায়। সেরিন আজকে শাড়ী পড়েছে। দেখতে অনেকটা বউ,বউ লাগছে। শুভ্র ড্রিং টা শেষ করে শাওয়ারের জন্য ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। সেরিন রেডি হয়ে শুভ্রর জন্য ওয়েট করে। শুভ্র এসে রেডি হতে সেরিন বলে,
“আপনি আমায় জন্য একটা শাড়ী ও আনলেন না। আর্থ ভাইয়ার বিয়ে আপনি তো পারলে আমায় শপিং করিয়ে দিতে পারতেন।”
“সময় নেই। পরে করে দেবো।”
“এই আপনার কিসের এতো ব্যস্ততা? বউয়ের থেকে কী ব্যস্ততা বেশী?”
“দুটোই ইমফরটেন্ট। দেখো কাজ না করলে তোমার শখ পূরণ করবো কীভাবে?”
“ঠিক আছে। আমিও যখন কোন জব পাবো,ইনকাম করবো তখন আমি আপনার মতো কিপ্টামি করবো না। আমি আমার বরের জন্য শপিং করবো আমার টাকা দিয়ে।”
“এই তুমি খোঁটা দিচ্ছো? আচ্ছা আমি কুমিল্লায় গেলে আনবো শাড়ী। বাট আমার এসবে আইডিয়া নেই।”
“আপনার পছন্দে একটা আনলেই হবে। সেখুন আপনি আমায় পছন্দ করেছেন তাহলে পছন্দ খারাপ হবে না আশা করি।”
সেরিনের কথায় শুভ্র হাসে। সেরিন নিজেও হেঁসে দেয়। সেরিন উঠে আয়নার সামনে গিয়ে বলে,
“আজকে আমি শাড়ী পড়েছি। আপনি দেখেছেন?”
“হ্যাঁ দেখলাম তো।”
“বলুন তো কেমন লাগছে?”
“শুভ্রর মেয়েফুল!”
“না! শুভ্রর বউ ফুল সেরিন।”
“আচ্ছা শুভ্রর বউফুল সেরিন।”
*******
বিকেলের দিকে সাফা,রাফা,মেহের,সিদরাত, মাহী সহ তারা আসে। সেরিনের খালামনি ঢাকা থেকে এসেছে। সিদরাতকে দেখে সেরিন, শুভ্র বেশ খুশি হয়। হাল্কা নাস্তা করে ঢালা গুলো দিয়ে তারা বেড়িয়ে পড়ে। সবাই ব্রিক রেড কালারের শাড়ী পড়েছে। সবাইকেই সুন্দর লাগছে। ঢালা দেওয়ার সময় রাস্তায় পিকচার ভিডিও নিয়ে নেয় তারা। সবাই মিলে সুন্দর একটা মূহুর্তে পার করে।
সেরিন ব্লাস পিংক কালারের শাড়ী পড়েছে। অধরা,আদ্রিতা তারা পার্পল কালারের শাড়ী পড়েছে। সন্ধ্যায় নাস্তা করে গাড়ী রেডি হতে তারা তিনজন রওনা হয়। তাঁদের গাড়ীতে কিছু ঢালা বাকী গুলো পেছনের গাড়ীতে করে আসছে। পাটওয়ারী বাড়ীর গেট থেকে শুরু করে গার্ডেনের রাস্তা, পুরো বাড়ী লাইটিং করা হয়েছে। যেহেতু তারা সন্ধ্যা পেড়িয়ে গিয়েছে ভিউটা সুন্দর এসেছে। একে,একে সব গুলো ঢালা ভেতরে নেওয়া হয়। রাস্তার সাইডেই তাঁদের গাড়ী দাঁড় করানো। সেরিন,আদ্রিতা,অধরা তারা ভেতরে যায়। সাফা,রাফা,মেহের আফসোস করছে এবার আর সেরিন সহ মেহেন্দী পড়া হবে না। কত মজা হতো! এখন তো সেরিন তার ননদিনীদের সাথেই মেহেন্দী পড়বে। অনেকটা সময় তারা শশী,সাফা,রাফা,মেহেরের সাথে কথাবার্তা,আড্ডা দেয়। শুভ্র সেরিনকে কল দিয়ে জ্বালাচ্ছে। আজকে কী পাটওয়ারী বাড়ীতেই তারা থেকে যাবে নাকী? সেরিন বলেছে ডিনার করে তারা রওনা হবে। শুভ্র আর কিছু বলেনি। প্রায় সাড়ে এগারোটার দিকে তারা ডিনার করে কফি নেয়। বিদায় জানিয়ে তড়িঘড়ি রওনা হয়ে নেয়। যদিও ওতো দূরে না। ত্রিশ মিনিট সময় এনাফ। যেহেতু ড্রাইভার নিয়ে এসেছে ওতো প্যারা নেই তাঁদের।
#চলবে
#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৩৮|
#শার্লিন_হাসান
(বিয়ে স্পেশাল ২💞)
দেখতে,দেখতে আর্থর হলুদের দিন চলেই আসে। খুবই ঝাঁক ঝমক ভাবেই হলুদের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। দিনটি মঙ্গলবার। আজকে আর্থর বিয়ে। শশী অফিশিয়াল ভাবে তার ওয়াইফ হবে। চৌধুরী বাড়ীতে ভীষণ ব্যস্ততা। সেরিন ও নিজের জামাকাপড় দেখছে কী পরবো বিয়েতে। শুভ্র তার জন্য শাড়ী আনেনি এই নিয়ে একটা অভিমান জমেছে সেরিনের। ভাইয়ের বিয়ের ব্যস্ততার ভীড়ে ভুলেই গিয়েছে সে। যদিও এরপর অনেকবার কুমিল্লায় আসা যাওয়া হয়েছে। মনে করে আর কিছুই চুজ করে আনেনি সেরিনের জন্য।
অধরা,আদ্রিতা তারা এগারেটা বাজে সাজতে বসেছে। সেরিন তখনো সাজতে যায়নি। সে নিচে সবার সাথে কথা বলছে। তখন মিরা ইসলাম সেরিনকে তাড়া দেখিয়ে বলেন,
“আদ্রিতা অধরার সাথেই সাজতে বসে যেতে। আবার যদি লেট হয়ে যায়?”
“মেঝো আম্মু আমার ওতো লেট হয়না।”
সেরিনের কথায় শুভ্র তার দিকে তাকায়। মুখ বাকিয়ে বলে,
“আসলেই লেট হয়না। যাওয়ার সময় আধ সাজে দৌড় মারে উনি। তখন গাড়ীতে বসে আফসোস করে। আম্মু ঠিকই বলেছে যাও তোমাদের তো আবার সময় লাগে বেশী।”
শুভ্রর কথায় আয়মান চৌধুরী সুর মিলিয়ে সুলতানা খানমকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
“তুমিও তো সেরিনের দলের লোক। লেট হয়না,হয়না বলে চারঘন্টা লেট করাও। তারপর দেখা যায় আধ সাজে গাড়ীতে দৌড়।”
সেরিন,সুলতানা খানম তাঁদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। সেরিনের শুভ্রর দিকে চোখ পড়তে শুভ্র যাওয়ার জন্য ইশারা করে। কিন্তু সেরিন তো অভিমান করে আছে। শুভ্রকে বুঝাতে অক্ষম সে। তাই চুপচাপ উপরে চলে যায়।
জান্নাতুল ফেরদৌস আবার অনেক আগেই সাজতে বসে গেছেন। উনি একটু সাজ গোছের পাগল। শুভ্রর মা তেহজিব ও সাজতো তবে সাধারণের মাঝে। এই সাধারণ সাজেই তাকে অসম্ভব সুন্দর লাগতো। যার সৌন্দর্যতা আজো ভুলতে পারেনি আরফিন চৌধুরী শুভ। ওতো প্রসাধনী ব্যবহার না করলেও নব্বই দশকের নায়িকা হিসাবে তাকে অসম্ভব সুন্দর লাগতো। জান্নাতুল ফেরদৌস কৃত্রিম প্রসাধনী ব্যবহার করলেও তেহজিব তটিনীর আশেপাশে ও এখন অব্দি যাননি।
শাওয়ার নিয়ে হেয়ার ড্রয়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে নিয়েছে সেরিন। তখন আবার শুভ্রর আগমন ঘটে। সে শাওয়ারের জন্য ওয়াশরুমে ঢুকে। সেরিন লেহেঙ্গাটা বের করে একনজর দেখে। অফ হোয়াইট কালারের ভেতর হাল্কা পিংক কালার লেহেঙ্গা। সাথে মেচিং গোলাপ ফুল যেগুলো শুভ্র এনে দিয়েছিলো। সেরিন লেহেঙ্গাটা পরিধান করে সাজতে বসে। প্রথমে চুলগুলো বেঁধে নেয়। কোমড় অব্দি গড়ানো চুলগুলো ছেড়ে তাতে গোলাপ গুঁজে দিয়েছে। সিথিতে মেচিং করা একটা টিকলি। ইয়ারে সেম টিকলির ইয়ার রিং। তেমন একটা সাজেনি সে। আজকে একটু তাড়াতাড়ি রেডি হওয়া কমপ্লিট হয়ে গেছে সেরিনের। শুভ্র আজকে অফ হোয়াইটের মাঝে হাল্কা পিংক কালারের পাঞ্জাবি পরিধান করেছে। শুভ্রকে শুভ্র লাগছে বেশ। মনে হয় শুভ্র ফুলের মাঝে হাল্কা পিংক কালার।
সেরিন জোর করে শুভ্রকে দাঁড় করিয়ে মিররে পিক তুলে নেয়। শুভ্রকে বলে দিয়েছে আগে নিচে গিয়ে পিক তুলবে তারপর যা করার করবে।
আর্থ আজকে বর সেজেছে তার প্রিয়তমার জন্য। আজকের দিনটা তার জন্য অনেক আনন্দের। চৌধুরী বাড়ীর প্রিন্সেস রাও অফ হোয়াইট কালারের লেহেঙ্গা পড়েছে। শুধু বউরা শাড়ী পড়েছে। শুভ্র,সেরিন থেকে শুরু করে প্রত্যেক কাপল পিক তুলেছে। তাঁদের বাড়ীর রাস্তাতেই তাঁদের অর্ধেক ফটোশুট করা শেষ হয়ে গেছে।
দেড়টার দিকে পাটওয়ারী বাড়ীতে আসে তারা সবাই। চৌধুরী পরিবারের সবাইকে ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। মেহের সেরিনকে টেনে ভেতরে নিয়ে আসে। মেয়ে পক্ষ বানিয়ে দেয়। সেই সাথে গেটে টাকা নিয়ে কিছুক্ষণ কথা হয়। মূলত মজার ছলেই। জানে আর্থ ফিক্সড করা এমাউন্টই দিবে। তাঁদের মজা-খুনশুটির পর আর্থকে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে স্টেজে নেওয়া হয়। সেরিন ভেতরে গিয়ে প্রথমে শশীর সাথে দেখা করে। মেয়েটাকে অফ হোয়াইট কালারের গাউনে সাজানো হচ্ছে। খাওয়া দাওয়া, ফটোশুট কিছুটা শেষ হতে আর্থকে ভেতরে নেওয়া হয়। একটা নির্দিষ্ট জায়গা ঠিক করা হয় বিয়ে পড়ানোর জন্য। ফ্লোরের উপর বিছানা করে তাতে ফুল দিয়ে পর্দা করা। তার দুই পাশে দু’জনকে বসানো হয়। শশী কান্না করছে দেখে কিরণ পাটওয়ারী টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বলে,
“আমার কলিজা কান্না করতে হবে না। এই তো আমরা আমরাই।”
তখন আর্থ ভরা মজলিসে মুখ ফসকে বলে,
“ওটা আপনার কলিজা না। আমার কলিজা।”
আর্থর কথায় বাকীরা হাসলেও শশী বেশ লজ্জা পায়।
কাজী এবং হুজুর সহ বিয়ে পড়ানো শেষ করে। বর-বউকে একসাথে স্টেজে নেওয়া হয়। তারা আয়না দেয় দু’জনের হাতে। তখন সেরিন আর্থকে বলে,
“ভাইয়া কী দেখো আয়নায়?”
তখন আর্থ শুধায়, ” উপরওয়ালা আকাশের সত্যিকারের শশীটা আমায় দিয়ে দিলো? এক টুকরো চাঁদ।”
তখন সাফা বলে,
“বনু তুমি কী দেখো?”
“সবচেয়ে ভালো মনের মানুষটা।”
এই তো তাঁদের খুনশুটি দুই পরিবারে আরেকটু সুন্দর সময় কাটানো। আর্শিয়া, অক্ষর এসেছে বিয়েতে। আর্শিয়া শুভ্রকে একদমই আশা করেনি। তারউপর শুনেছে অক্ষর ও নাকী সেরিনকে পছন্দ করতো। যদিও আফসোস নেই এসবে। তবে ব্যপার কেমন জেনো! আর্শি শুভ্রকে পছন্দ করলেও শুভ্র বিয়েটা সেরিনকে করেছে। আবার অক্ষর সেরিনকে পছন্দ করলেও বিয়েটা করেছে আর্শিকে। শুভ্র ও আর্শির সাথে হাসিমুখে কথাবার্তা বলে।
সন্ধ্যার দিকে রওনা হয় তারা। প্লান করেছে ফ্রেশ হয়ে তারা কুমিল্লায় যাবে রাতের শহরে। মেঘনা ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে ঠান্ডা হাওয়া উপভোগ করবে। চৌধুরী বাড়ীতে আসে, সাফা,রাফা, মেহের। মাহী ব্যস্ত কুমিল্লায় যাওয়ার কিছুক্ষণ আগেই সে আসবে।
ফ্রেশ হয়ে সবাই চা-কফি খেয়ে নেয়। শশী চেন্জ করে থ্রি-পিস পড়ে নেয়। লিভিং রুমে সবাই বসে কথা বলছে। আদ্রিতা,অধরা,সেরিন,সাফা,রাফা,মেহের তারা আর্থর রুম সাজায়। রাতের ডিনার করেই তারা বের হবে। আর্থ,শশী ছাড়া।
ডিনার করতে,করতে সারেএ গারোটা পেড়িয়ে যায়। বাকীরা তাড়াতাড়ি ডিনার করে আর্থর রুমের দরজা দখল করে নেয়। শশীকে আগেই নিয়ে বসিয়ে দেওয়া হয়। আর্থ আসতে তার শালিকা মহল এবল বোনদের দাবি শুনে। বেশী কথা বাড়ায়নি টাকাগুলো সেরিনের হাতে দিয়ে দেয়। তখন শুভ্র বলে,
“এতে তাড়া কিসের ভাই?”
“অনেক কিছুর।”
ওদের কথা শুনে বাকীরা হাসে। আর্থ ভেতরে প্রবেশ করে দরজাটা লক করে ভেতরে যায়। শশী বসে আছে এক কোণে। আর্থর টায়ার্ড লাগছে বিধায় ধপাস করে খাটের উপর শুয়ে পড়তে সেটা ভে’ঙে যায়। বাকজটায় আর্থ শশী কেউই প্রস্তত ছিলো না। শশী দেরী না করে আর্থর কানে ধরে একটা টান দিয়ে বলে,
“এই তোমায় কে বলেছে এভাবে ধপাস করে শুয়ে পড়তে? আর কী খাট রাখো?”
“আরে খাট তো ভেঙেছি কিন্তু কাজের কাজ তো কিছুই করতে পারলাম না।”
“কী বললে তুমি?”
“ওই আর কী বলেছি।”
আমতা আমতা করে বলে আর্থ। শশী রাগ দেখিয়ে বলে,
“এখন মুখ দেখাবো কীভাবে? ছিঃ! বড়রা কী ভাববে?”
“এহহ্! এতো লজ্জা পাওয়ার কী আছে? আমরা তো জানি আমরা এখনো কিছু করিনি বাকীরা বুঝলে বুঝুক আমরা বাসর করেছি। আর ওতো লজ্জা পাওয়ার কী আছ? বাসর না করলে বুঝি আমরা দুনিয়ায় আসতাম?”
“এই তোমার মুখে কিছু আটকায় না।”
“এই তুমি বেশী লজ্জা পাচ্ছো তাই আরকী।”
“মুখটা বন্ধ রাখবে তুমি?”
“আরে এটা শুভ্র ভাইয়ার বদ দোয়া। ওকে জ্বালানো এবং পচানোর কারণে বলেছিলো আমি নাকী খাট ভাঙবো। খাট ঠিকই ভাঙলো অথচ কোন কিছুই করলাম না।”
“আবারে একই কথা বলছো?”
“তো কী করবো? এখন তুমি বলো? ”
“খাট এটা সরাও। আমার ঘুম পাচ্ছে।”
“খাট এক পাশ নাহয় ভেঙেছে আরেকপাশ তো ঠিক আছে। তুমি আমার উপর ঘুমাবে।”
“যদি ঘুমের মধ্যে কোলবালিশ ভেবে লা’থি মেরে পেলে দিই?”
“সমস্যা নেই তবে দেখেশুনে লা” থি মেরো। আমার এখনো বাসর করা হয়নি। বাবা ডাক শোনা কিন্তু বাকী আছে।”
” ঠোঁট কাটা বেডা একটা।”
“আসে আদর করি!”
আর্থ শশীকে ডায়মন্ড গিফ্ট করে। যদিও বা তারা টায়ার্ড। তাই আর্থ শশীর ঠোঁটে দু’টো চুমু খেয়ে শুয়ে পড়ে তাকে বুকে জড়িয়ে।
**********
বারেটার দিকে রওনা হয় সবাই মেঘনা ব্রিজের কাছে যাওয়ার জন্য। মাহী ও আসে তাঁদের সাথে। শহরের রাস্তায় গাড়ীর যনযাট একটুও কমেনি। ব্রিজের উপর একের পর এক গাড়ী আসছে যাচ্ছে। গাড়ী দু’টো নির্দিষ্ট জায়গায় পার্কিং করে তারা ব্রিজের উপর যায়। একেকজন একেক প্রান্তে। সেরিন শুভ্র একসাথে দাঁড়িয়ে আছে। সেরিন একটু চুপচাপ। শুভ্র আজকে খেয়াল করেছে। তেমন আনন্দ করতে পারেনি মেয়েটা। যদিও বা শুভ্র কিছুই বলেনি।
ঘণ্টা খানিকের মতো সময় কাটিয়ে আবারো দাউদকান্দির উদ্দশ্যে রওনা হয় সবাই। বাড়ীতে আসতে,আসতে ঘড়ির কাটা দুইটা পেড়িয়ে গেছে। শুভ্র,সেরিন কোন রকম ফ্রেশ হয়। আজকে টায়ার্ড থাকলেও শুভ্র সেরিনকে জিজ্ঞেস করে,
“আজকে তোমার মন খারাপ কেনো?”
সেরিন কিছু না বলে শুভ্রর বুকে হামাগুড়ি দিয়ে পড়ে। পা উঁচু করে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
“আই নিড ইউ!”
“আর ইউ ম্যাড? আমি প্রচুর টায়ার্ড।”
“আই নিড ইউ।”
কথাটা বলে সেরিন শুভ্রর অধর জোড়া দখল করে নেয়। পুনরায় শুধায়,
“আই নিড ইউ। তোমার ছোঁয়া পুনরায় সর্বাঙ্গে মাখার আমার ভীষণ ইচ্ছে হলো।”
শুভ্র আর কথা বাড়ায়নি। তার প্রিয় মানুষ তাকে চাচ্ছে, ভীষণ করে চাচ্ছে আর না করেনি। দু’জনেই ভালোবাসার সাগরে তলিয়ে গেলো।
#চলবে