#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৩৫|
#শার্লিন_হাসান
পাশ থেকে আকাশ বলে। সেরিন তখন শুধায়,
“মিথ্যে বলবি না একদম।”
“তুমি চুপ থাকো।”
শুভ্র ধমকে বলে সেরিনকে। সেরিনের কান্না পাচ্ছে। শুভ্র তাকে এভাবে কেনো অবিশ্বাস করছে?
“প্রথম দোষের পর সব ভালোই কী সন্দেহ জনক হয়?”
শুভ্র জুম্মানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“একদম আমার সাথে মিথ্যে বলার চেষ্টা ও করবি না। এখানে একটা কথাও যদি মিথ্যে হয় তো তোর হাত ভে’ঙে আমি হসপিটালে বসিয়ে রাখবো।”
আকাশ,জুম্মান কিছুটা থতমত খেয়ে যায়। সেরিন চুপচাপ। ওদের সবাইকে চুপ থাকতে দেখে শুভ্র আকাশের কলার চেপে ধরে জুম্মানের দিকে তাকায়। রাগী কন্ঠে বলে,
“ওইখান থেকে এক পা ও নড়বি না।”
কথাটা শেষ হতে আকাশকে নন স্টপ থাপড়াতে থাকে। সেরিন কিছটা ভয় পেয়ে যায় শুভ্র মা-র দেখে। কম করে বিশটার বেশী থাপ্পড় দিয়েছে আকাশকে। ছেলেটা কালা হয়ে গেছে বোধহয়। শেষে একটা ধাক্কা দিতে করিডোরের গ্রিলের সাথে বা’রি খায় ছেলেটা। নিজের কান,মাথা চেপে ধরে ব্যথায়। অনেকটা ভীড় জমেছে করিডোরে। তবে কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। অনেকে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে আছে। শুভ্র পুনরায় জুম্মানের কলার চেপে ধরে। চিৎকার করে বলে,
“তোর সাহস বড্ড বেড়ে গেছে জুম্মান। তোকে এর আগে কতবার ওয়ার্নিং দেওয়া হয়েছে? আমি বলেছি কোন মেয়েকে র্যাগিং করা যাবে না। আমার কথার দাম রইলো কোথায়? কত বড় কলিজা তোর মেয়ের ওরনা ধরে টান দিয়েছিস। আজকে তোর সেই বড় কলিজা আমি টেনে এনে ছোট করবো।”
তখন জুম্মান কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে,
“আর করবো না স্যার। ওকে স্যরি বলে দিচ্ছি।”
“ও যা বলেছে তা সত্যি তো?”
“হ্যাঁ!”
ভয়ের চোটে জুম্মান সবটা স্বীকার করে নেয়। সেরিন একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। কেউ কিছু দেখলো না। শুভ্র জুম্মানকে একটা লা’থি মারে। জুম্মান নিচে পড়তে শুভ্র পুনরায় টেনে তুলে। থাপ্পড় দুতে,দিতে নিচের দিকে বেয় জুম্মানকে। সবাই তাকিয়ে আছে। শুভ্রর পেছন দিয়ে বাকীরাও আসছে। দোতালা থেকে থাপ্পড় দিতে,দিতে নিচে নিয়ে যায়। সামনের মাঠে এনে চু’ল গুলো টেনে ধরে বলে,
” চুল এতো বড় কেন? মেয়ে সাজতে মন চায়? দপ্তরি…”
বলার সাথে,সাথে একজন হাজির। শুভ্র তার দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমার রুম থেকে কে’চিটা নিয়ে আসো তো!”
ওইদিকে আকাশ ছেলেটার মাথায় পানি ঢালা হচ্ছে। জুম্মান দাঁড়িয়ে আছে। ব্যাথায় তার শরীর ও অসাড় হয়ে আছে। শুভ্র এখনো তার কলার চেপে ধরে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যে কে’চি আনতে শুভ্র জুম্মানের বড়, বড় চুলগুলো কেটে দেয়। বাকীরা শুধু দেখছে। অনেক দিন পরেই শুভ্র কাউকে ধরেছে। আর ধরলেও ধরার মতো ধরে। কেউ,কেউ সেরিনের দিকে তাকাচ্ছে কেউ আকাশ,জুম্মানকে দেখছে। তখন শুভ্র চেঁচিয়ে বলে,
“আজকের ঘটনার সবার ব্রেইনে গেঁথে রাখবি। এরপর আমার কানে কোন মেয়েকে টিজ করার কথা আসলে এর থেকেও ভয়ংকর পরিনতি হবে।”
কথাটা বলে জুম্মানকে ছেড়ে দেয়। বাকীরা আস্তে,আস্তে চলে যায়। নাহলে আবার তাঁদের উপর কখন ঝড় আসে বলা যায় না। সব বিশ্বাস করা গেলেও শুভ্রর মুডকে বিশ্বাস করা বড্ড দায়। ভীড় কমতে যে যার মতো চলে যায়। সেরিন ও ল্যাব ক্লাসের দিকে যায়। শুভ্র কিছুটা সামনে সেরিন পেছন দিয়ে। দ্বিতীয় ভবনে প্রবেশ করতে শুভ্র সেরিকে তার রুমে আসার জন্য বলে। সেরিন চুপচাপ রুমে যায়। শুভ্র নিজের চেয়ারে বসে। সামনে সেরিন দাঁড়িয়ে আছে। রুমে এসি চলছে তাও সেরিন বরাবর ঘামাচ্ছে। এই বুঝি শুভ্র তাকে ধমক দিলো। কিন্তু শুভ্র সেসবের কিছুই করেনি। বরং নরম স্ব-রে বলে,
“ওরা আর কিছু বলেছে তোমায়?”
“না।”
“সত্যি করে বলো?”
“না কিছু বলেনি।”
“এর আগে বোতল টা জুম্মান ছুঁড়ে-ছিলো তাইনা?”
সেরিন হ্যাঁ বোধকে মাথা নাড়ায়। শুভ্র কিছু বলেনা। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর শুভ্র বলে,
“ভালো হয়ে যাও সেরিন। তোমায় হয়ত তেমন মা-রতে পারবো না তবে আমি ভালো অবহেলা করতে জানি। তুমি আমার মানে একান্ত আমার।”
“ওই ভিডিওটা কেউ ইচ্ছে করে করেছে। ওই তাতান হুট করে এসেই আমার কানের পিঠ থেকে ফুল নিয়ে পুনরায় পড়িয়ে দিয়েছিলো। এই নিয়ে তাকে আমি বকা-ঝকা গালাগালি করেছিলাম। আপনার বিশ্বাস না হলে সিদরাত আর আয়াশকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। আমি নহায় মিথ্যে বলছি ওরা তো ছোট ওরা মিথ্যে বলবে না।”
“ওদের জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন নেই। যাও আজকে আর ক্লাস করতে হবে না। বাড়ী চলে যাও।”
“আচ্ছা পাটওয়ারী বাড়ীতে যাবো। মাহী আসবে নিতে! আপনার সাথে হয়ত আর দেখা হবে না। আল্লাহ হাফেজ।”
সেরিন কথাটা বলে চলে আসে। শুভ্র সেরিনের যাওয়ার দিকে তাকায়। কিছু বলেনা। মেয়েটা অভিমান করেছে তার কথায় বুঝা যায়। শুভ্রর নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে। সেদিন রাতে হয়ত ওইরকম বিহেভ করা উচিত হয়নি তার। যাই হোক সে জানে সেরিন রাগ, অভিমান করলেও তার কাছেই আসবে।
গেটের সামনে এসে মাহীকে মেসেজ দেয় সেরিন। পাঁচ মিনিটের মাথায় মাহী গাড়ী নিয়ে আসে। সেরিন গাড়ীতে বসতে পুনরায় গাড়ী স্টার্ট দেয়। সেরিন বেশ আনমনা ব্যপারটা মাহী খেয়াল করে।
পাওয়ারী বাড়ীতে আসতে সেরিনকে পেয়ে সবাই খুশি। সেরিন শাওয়ার নিয়ে লান্স করে নেয়। সবার সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে ঘুমাতে চলে যায় সে।
সন্ধ্যায় আর্থর সাথে কথা বলছে শশী। একপর্যায়ে আর্থ বলে উঠে,
“ভাইয়ার সাথে কী সেরিনের কোন জামেলা হয়েছে? তুমি কিছু জানো?”
“আরে না! সেরিন বোর ওই বাড়ীতে আমাদের মিস করে তাই চলে এসেছে।”
“তোমার বোন জামাই পাগ’ল। জামাই হলে কিছু লাগেনা। তুনি বলছো সে জামাই ছেড়ে আসতে পারে?”
“সেটা একান্ত তাঁদের ব্যক্তিগত ব্যপার। তোমাকে ওতো মাথা ঘামাতে বলিনি। অন্য কথা বলো।”
“ঠিক আছে!”
“কী ঠিক আছে?”
“কিছু না।”
“অন্য কথা বলো?”
“ওকে।”
“কী ওকে,ওকে করছো?”
“তো কী বলবো?”
“অন্য কথা বলো।”
“আচ্ছা।”
“বলো না?”
“কী বলবো?”
“আমার মাথা বলবি মাথা। কিছু বলতে হবে না। কল রাখ!”
কথাটা বলে শশী কল কেটে দেয়। আর্থ ফোন হাতে নিয়েই হাসে। তার ভাইকে জ্বালানো যায় ভেবে শুভ্রর রুমে যায় আর্থ। শুভ্র সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। আর্থ ধপাস করে খাটে বসতে সেটা একপাশে ভে’ঙে যায়। আর্থ নিজেও বোকা বনে যায়। শুভ্র আর্থর দিকে তাকিয়ে বলে,
“দিলি তো খাটটা ভে’ঙে।”
“তোমরা বাস করে খাট ভাঙতে পারোনি তাই আমি বসেই ভেঙে দিলাম।”
“চুপ থাকবি তুই?”
“আরে ভাই ভাগ্য ভালো তোমাদের ফুলসজ্জার রাতে এটা ভাঙেনি। আজকে ভেঙেছে তাও ভাবী বাড়ীতে নেই।”
“এটা আগে থেকেই কেমন জেনো করছিলো। চেন্জ করতে মনে থাকে না।”
“আচ্ছা সার্ভেন্ট দের বলছি এটা সরিয়ে অন্য রুমেরটা এখানে নিয়ে আসতে।”
“যা! সাথে নিজেও কাজ করবি। খাটটা তুই ভেঙেছিস।”..
আর্থ উঠে বাইরে যায়। তাঁদের পড়ে থাকা রুম গুলো তে যায়। যেগুলোতে কেউই থাকেনা। ফার্নিচার ওইভাবেই পড়ে আছে। কয়েকজন সার্ভেন্টকে দিয়ে শুভ্রর রুমের খাটটা বাইরে বের করে। অন্য রুমের আরেকটা খাট শুভ্রর রুমে ঢুকায়। আদ্রিতা রুমে প্রবেশ করেই জিজ্ঞেস করে,
” খাট ভাঙলো কে?”
তখন আর্থ বলে,
“কে আবার? ভাইয়া আর…..”
শুভ্র চোখ গরম করে তাকাতে আর্থ কথার স্বর চেন্জ করে বলে,
“আমি, আমি ভেঙেছি।”
“তুমি এটা ভাঙলে কীভাবে?”
“ওই খাটটা এখানে এনে দে। তারপর দেখাচ্ছি ভেঙেছি কীভাবে।”
“আরে রেগে যাচ্ছো কেন?”
“তোরা ভাই বোন দু’টো ই রা’জাকার। একজন নিজের পুরোনো জিনিস ভাঙচুরা জিনিস রুমে রাখাে আর ভেঙে গেলে দোষ পড়ে আমার। ভাই আমি দুইদিন পর বিয়ে করবো। শেষ বারের মতো হলুদ মাখবো বিয়ের পর নিজের জীবনকে ভাজার জন্য। একটু সাহস,শক্তি দরকার। এই শুভ্র আমায় কাজ করিয়ে আমার রুপ,গুন সব শেষ করে দিচ্ছে।”
“তাহলে বিয়েটা আরো ছয়মাস পড়ে কর?”
শুভ্র জবাব দেয়। তখন আর্থ বলে,
“না,না! এখনি সঠিক সময় বিয়ের।”
“দেখবি তোর খাটটাই ভেঙেছি৷ এমন দিনে ভাঙবে যে লজ্জায় মুখ ও দেখাতে পারবি না।”
“এই তুমি বুঝাতে চাচ্ছো আমার ফুলসজ্জার দিন খাট ভাঙবে?”
“গুড! বুঝে গিয়েছিস।”
“আমি কিছু করবো নাকী যে খাট ভাঙবে? ওই খাট চেঞ্জ করে নতুন খাট যেদিন আনবো সেদিনই যা করার করবো।”
“আহারে! খাটের জন্য ভাই আমার ফুলসজ্জা করতে পারবে না। বিষয়টা খুবই সিরিয়াস! আচ্ছা যা তোর বিয়েতে আমি নতুন খাট গিফ্ট করবো।”
“না তুমি হানিমুনের টিকেট দিবা। মালদ্বীপ যাবো!”
“টাকা নাই।”
“বিয়ের গিফ্ট এটা।”
“না খাট দিবো। মালদ্বীপ গিয়েও সেই খাটের উপরেই হানিমুন করবি। তারচেয়ে নতুন খাট দিবো বাড়ীতেই হানিমুন করতে পারবি। তোরই লাভ ভেবে দেখ!”
“আজকাল শুভ্র স্যারের মুখে লাঘাম কমে যাচ্ছে।”
“তুই কী মেয়ে মানুষ নাকী যে তোর সাথে লাঘাম টেনে কথা বলতে হবে?”
“না তাও!”
“মজা করছিলাম।”
দু’জনে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে, সবার সাথে ডিনার করে নেয়। শুভ্র রুমে আসতে কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। সেরিনের সাথেও কথা হয়নি। কিন্তু কোন মুখে কল দিবে সে? গতকাল ভীষণ বা’জে বিহেভ করেছে শুভ্র অনুভব করছে। রাগের মাথায় যা-তা বললেও তার ভীষণ খারাপ লেগেছে। ভিডিওটা দেখেই তো সব উলোটপালোট করতে মন চেয়েছে। সেই হিসাবে নিজের রাগ কন্ট্রোল করে সেরিনের সাথে যথেষ্ট ভালো বিহেভ করেছে। তবুও মেয়েটা কষ্ট পেয়েছে। তার সতেজ,সুন্দর মেয়েফুলটার মনে কষ্ট লেগেছে। ভাবতে শুভ্রর খারাপ লাগছে ভীষণ। সাত পাঁচ না ভেবে কল দেয় সেরিনকে। কয়েকবার রিং হতে রিসিভ হয়। সেরিন সালাম দিতে শুভ্র সালামের জবাব দেয়। দু’জনের মাঝে পূর্ণ নিরবতা বিরাজমান। কেউই কথা বলছে না। শুভ্র তখন বলে,
“মেয়ে ফুল শুনেছো? আমি ‘স্যরি’!”
#চলবে
#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৩৬|
#শার্লিন_হাসান
“মেয়ে ফুল শুনেছো? আমি ‘স্যরি’!”
সেরিন কোন কথা বলেনা। শুভ্র পুনরায় শুধায়,
“স্যরি পাখি। ক্ষমা করো আমায়।”
“ইট’স ওকে!”
“না ইট’স ওকে তে হবে না। এই ইট’স ওকে তে আমি অভিমান দেখতে পাচ্ছি।”
“তাহলে?”
“মন থেকে বলো।”
“আচ্ছা।”
“কী আচ্ছা?”
“কিছু না।”
“বলো না?”
তখন সেরিন শুধায়,
“কী বলবো?”
“বলো ক্ষমা করলাম।”
“ইট’স ওকে!”
“প্রব্লেম কী তোমার?”
“আপনার প্রব্লেম কী সেটা আগে বলুন তো? বললাম না ইট’স ওকে! ওতো লুতুফুতু আমার পছন্দ না। আমার ঘুম আসছে প্লিজ কল দিয়ে ডিস্টার্ব করবেন না।”
“এই তোমায় আমি এতো সুন্দর ভাবে স্যরি বলেছি।”
“একটা কথা মনে রাখবেন আঘাত দেওয়ার পর ক্ষমা চাইলে ক্ষমা করা যায়। তবে আঘাতের ক্ষতটা সহজে ভোলা যায় না। আমি আদুরে মেয়ে! কেউ আমায় চোখ রাঙিয়ে কথা বলেনি। অল্পতে আমি হার্ট হই! সেখানে আচ্ছা বাদ দেই।”
কথাটা বলে সেরিন কল কেটে ফোন সুইচড অফ করে নেয়। ভীষণ কান্না পাচ্ছে তার। কখনো তার বাবা তাকে চোখ রাঙায়নি। তার কথার উপর দিয়ে কেউ কিছু বলেনি। এই না যে সেরিন অধঃপতনে গেছে। সে যথেষ্ট ভালো মন্দ বুঝে। শুভ্র যাচাই বাচাই না করেই তাকে ভীষণ হার্ট করেছে। অন্ধকার রুমে উঠে বসে সেরিন। তার মনটা ভীষণ খারাপ। হুট হাট যেটাকে মুড সুয়িং ও বলা যায়। মূহুর্তে নিজেকে পাগ’ল মনে হচ্ছে। উঠে বেলকনিতে যায় সেরিন। রাত প্রায় বারোটার উর্ধ্বে। আকাশে উজ্জ্বল শশী আলো ছড়াচ্ছে। সেরিন সেদিকে তাকিয়ে জোরে কয়েকটা শ্বাস নেয়। কিছুক্ষণ দোলনায় বসে দোল খেয়ে রুমে আসে। কেনো জানি কিছু লেখার ইচ্ছে হলো! ডায়েরিটা বের করে তাতে লিখে,
❝বাবুর পাপা বাবুর আম্মুকে ভীষণ হার্ট করেছে। বাবুর আম্মু ভীষণ অভিমান করেছে। বাবুর পাপা এতো পঁচা কেনো? সে জানে না বাবুর আম্মু একটা ধমক দিলেই চোখে অশ্রু ঝড়ে। নিতে পারেনা বাবুর আম্মু। সে ভীষণ সফট হার্টের। বাবুর পাপার মতো নির্দয় নিষ্ঠুর না। বাবুর পাপা বাবুর আম্মুকে বুঝে না।❞
নিচে তারিখ আর সময়টা লিখে রাখে সেরিন। টেবিলের উপর মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে সেরিন। কিছুক্ষণ চোখ বুজে থেকে উঠে। সূরা আর-রাহমান তেলাওয়াত শুনে সেরিন। আজকে রাতে তার ঘুম হবে না ভালো করেই বুঝে গেছে।
ওইদিকে শুভ্র বেলকনিতে বসে তার আর সেরিনের পিকচার দেখছে। শুভ্র পারছে না এখনি গিয়ে সেরিনের মন টা ভালো করে দেয়। মনে,মনে শপথ নিয়েছে আর যাই হোক সেরিনের সাথে বাজে বিহেভ করবে না। আর না তাকে ধমকাধমকি করবে। সবকিছু ঠান্ডা মাথায় বুঝে শুনে তারপর যা বলার বলবে। তাও নরম স্বরে। মেয়েটা বেশ সফট হার্টের। অল্পতে কষ্ট পায়।
এভাবেই তাঁদের দু’জনের রাতটা কোন রকমের কাটে। শুভ্র তাহাজ্জুদ পড়ে, ফজরের নামাজ আদায় করে নেয়। সকাল,সকাল হাঁটতে বের হয় সে। তাঁদের কলেজের পেছনের বিশাল মাঠের শেষ প্রান্তের দীঘিতে। পাশে একটা হোস্টেল আছে সেটাও যারা অনাথ বা বাড়ী দূরে তাঁদের থাকার জন্য। শুধু ছেলেদের জন্য এই ব্যবস্থা। শুভ্র দীঘির পাড়ে গিয়ে হিমশীতল বাতাস উপভোগ করে। হাটাহাটি শেষে সে বাড়ীতে এসে কফি খায়। আগামী কালকে তারা বিয়ের শপিংয়ে যাবে। সুলতানা খানম শুভ্রকে বলছে সেরিনকে চৌধুরী বাড়ীতে নিয়ে আসতে। সে তো এখন বর পক্ষ যেহেতু বিয়ে হয়ে গেছে। শুভ্র কিছু বলেনা। চুপ চাপ সবার কথা শোনে! বাকীরাও একই কথা বলছে সেরিনকে নিয়ে আসতে। তবে একটা ব্যপার সুন্দর তাঁদের মধ্যে কী হয়েছে সেটা কেউই জিজ্ঞেস করেনি। ব্যপারটা তাঁদের পার্সোনাল।
শুভ্র রেডি হয়ে কলেজে আসে। আজকে তার মেজাজ ভালো না সাথে মুড অফ। কলেজে প্রবেশ করে প্রথমে পিটিতে যায় শুভ্র। স্টুডেন্টদের বসিয়ে সে সামনের এক্সাম নিয়ে কিছু কথা বলে। তবে বেশীরভাগ স্টুডেন্টের চোখে-মুখে বিরক্তির ছাপ। শুভ্র পিটি শেষে
ফাস্ট ইয়ারের ক্যামিস্ট্রি টিচারকে তার রুমে আসার জন্য বলে।
তার কিছুক্ষণের মধ্যে টিচার শুভ্রর রুমে উপস্থিত হয়। শুভ্র কিছুটা মেজাজ দেখিয়ে বলে,
“কয়েকমাস আগে! সেরিন নামের মেয়েটির মাথায় কেউ বোতল ছুঁড়েছিলো। আমি যতটুকু জানি আপনার ক্লাস চলা কালীন। এবং মেয়েটাকে আমার কাছেও পাঠানো হয় বলা হয়েছে দেওয়ালের সাথে ধাক্কা খেয়েছে। রাইট?”
স্যার কিছুটা ইতস্ত বোধ করে বলে,
“আসলে শুভ্র স্যার….
” আমি শুধু ‘হ্যাঁ আর ‘না’ উত্তর জানতে চেয়েছি। কোন আসলে,শুভ্র বা স্যার টাইপের কোন কথা না।”
“হ্যাঁ! ওইদিন জুম্মান তাকে বোতল ছুঁড়ে মারে।”
“তাহলে মিথ্যেটা কেনো বলা হয়েছে?”
“আসলে স্যার!”
“এখন আমার কী করা উচিত বলুন তো? ওই জুম্মানকে টিসি দেওয়া বাকী আপনাকে কলেজ থেকে বিদায় করা? আমার দেওয়া রুলস আপনি ব্রেক করেছেন স্যার। আপনার তখন দায়িত্ব টা কী ছিলো বলুন তো? জুম্মানকে কয়েকটা থা’প্পড় দেওয়া। তা তো করেননি আমায় উল্টো মিথ্যে বলেছেন।”
“স্যরি স্যার!”
“লাস্ট ওয়ার্নিং। আজকের মিটিংয়ে আবারো বলে দেবো সবাইকে। এরপর আমার রুলসের ব্রেক হলে এর পদক্ষেপ আমি গ্রহন করতে বাধ্য। এখন আসতে পারেন।”
স্যার বেড়িয়ে যেতে শুভ্র এসির পয়েন্ট বাড়িয়ে দেয়। দপ্তরিকে বলে কফি আনায় শুভ্র। তার মিটিং শেষে কুমিল্লায় যেতে হবে।
পাটওয়ারী বাড়ীতে শশীর বিয়ের প্রিপারেশন চলছে। সেরিন বিল্ডিংয়ের প্রতিটি রুম সাজাচ্ছে। মাহী সহ ক্লিন ও করছে। শশীকে কোন কালে কোন কাজ করতে হয়না। কাজ দেখলে তার ঘুম পায়,মাথা ব্যথা করে। এক কথায় শশী কাজ চো”র। সেরিনকেই বেশীরভাগ সময় অতিথি বা ফ্যামিলি ইভেন্টে রুম সাজাতে হয়। নতুন চাদর,সোফার কভার ইত্যাদি দিয়ে। মাহী সহ বেচারী চুপচাপ কাজ করছে। এক পর্যায়ে সেরিন বলে,
“তুমি বিয়ে কবে করবা? তাড়াতাড়ি বিয়েটা করে নেও। আমি তোমার বিয়েতে নাচবো।”
“করবো,করবো আর ছয়মাস পড়েই।”
“নিশাতের এক্সামের পরই করো।”
“কিসের নিশাত?”
“কেনো তোমার গফ!”
“না আনাদের ব্রেক আপ হয়ে গেছে।”
“বাহ আমি জানি না তাহলে।”
“তুই তো বিজি! আর আমাদের তেমন কথাও হয়না।”
“তাহলে অন্য মেয়ে খুঁজবো? ”
“এমনিতে খালামনির দুই মেয়ে আছে আবার মেহের আছে। তোর যাকে ভাবী হিসাবে পছন্দ হয় তাকেই আমি বিয়ে করবো।”
“সাফা,রাফা,মেহের। কী জানি! তিনজন সুন্দরীর কাকে তোমার মনে ধরে কে জানে?”
“ধরেছিলো একজনকে। টিকলো না তো।”
“বাদ দাও! মেয়েটা বুঝেনি তোমায়। কী হারিয়েছে পরে বুঝবে।”
“ওর থেকে দূরে থাকবি সেরিন। ও ভীষণ বা’জে। তোর ক্ষতি করতে চায়।”
“মাথা খারাপ তোমায় ভাইয়া? ও তোমায় এক্স আইমিন প্রাক্তন তোমার রাগের থেকে হয়ত এসব বলছো। বাট ট্রাস্ট মি ও ভীষণ ভালো একজন ফ্রেন্ড। মানুষ হিসাবে বলবো না বাট বন্ধু হিসাবে সী ইজ….
” বাঁশ যখন খাবি তখন আমার কথার মানে বুঝবি সেরিন।”
“বাদ দাও তোমার রাগের থেকে এটা বলছো। ওকে আমি চিনি। ও খুব ভালো একটা মেয়ে।”
“ওকে। থাক তোর ভালো ফ্রেন্ড নিয়ে।”
কথাটা বলে মাহী চলে আসে। সেরিন মাহীর যাওয়ার পানে তাকিয়ে হাসে। নিশাতকে কল দেয় তখন। কল রিসিভ হতে হেঁসে বলে,
“কীরে তুই আমার ভাইকে কী বলেছিস হ্যাঁ? ও আমার মুখে তোর নাম সহ্য করতে পারছে না। আমি তো জানি তুই ভীষণ ভালো একটা মেয়ে।”
“হ্যাঁ! মেয়ে হিসাবে ভালো হতে পারি বাট তোর ভাইয়ের প্রাক্তন হিসাবে না।”
“মজা নিচ্ছিস?”
“আরে ইয়ার তোর ভাইটা এক নাম্বারের ত্যাড়া। দেখ তুই কত সুইট একটা মেয়ে তোর ভাই ও হওয়া চাই সুইট তা না এটা দেখি করলা পাতা।”
“তুই ও না!”
“বাদ দে। কী করছিস?”
“কাজ করি রে।”
“এমা শুভ্র স্যারদের এতো সার্ভেন্ট থাকতে তুই কেনো কাজ করছিস? দেখ তোকে কী ওরা কাজের বুয়া পেয়েছে? কী আজব মানুষরে বাবা!”
“আরে ইয়ার আমি পাটওয়ারী বাড়ীতে। আর শশীর বিয়ে তো তাই আরকী রুম গুছিয়ে নিচ্ছি। পরে চাপ পড়বে বেশী।”
“ওহ আগে বলবি তো?”
“বলার সুযোগ দিয়েছিস তুই?”
“আচ্ছা কাজ কর। সময় হলে কল দিস। কথা বলবোনি।”
“ওকে বায়!”
***********
শুভ্র মিটিংয়ে বসেছে। তার কথাবার্তা সব শেষ হতে বলে,
“ক্লাস চলা কালীন কোন ঘটনা আইমিন স্টুডেন্টদের মাঝে ঝগড়া মা’রামারি টাইপের কিছু হলে অবশ্য বিচার করবেন। আর আমার প্রতিষ্ঠানের কোন মেয়েকে যাতে অসন্মান করা না হয়। আর নির্দোষ হলেও যাতে সঠিক বিচার টা সে পায়। আমি জানি আমার প্রতিষ্ঠানের ভালো ছেলের সংখ্যা স্বল্প হলেও আমার সামনে আসলে সবই ভালো। যদি ক্লাসের বিষয়টা ক্লাসে মিটমাট না করতে পারেন সোজা আমার কাছে পাঠিয়ে দিবেন। অবশ্যই এই দায়িত্বটা ভালো ভাবে পালন করবেন। আর বিচার টাও সুষ্ঠু ভাবে। এটা ভাববেন না কেউ যে বিচার হেরফের করবেন। আমার লোক লাগাবো আছে ঠিক আছে? পরে স্টুডেন্টদের সাথে আপনাদের চাকরী নিয়েও টানাটানি হবে।”
শুভ্রর কথায় সবাই “ওকে স্যার” বলে। তাঁদের মিটিংয়ের পার্ট শেষ হতে শুভ্র বেড়িয়ে পরে কুমিল্লার উদ্দেশ্য। আজকে সে গাড়ী নিয়েই বের হয়েছে। লোকাল বাসে যাওয়ার মুড নেই।
কুমিল্লায় এসে প্রথমে সে এক তোড়া ফুল নেয়। শপিং মলে গিয়ে একটা ব্রেসলেট নেয় গোল্ডের। সেই সাথে চকলেট,টেডিবিয়ার। তার মধ্যে একটা টেডিবিয়ার লাভ শেপের মাঝে “Sorry Bow”।
সব কিছু গাড়ীতে রেখে লাস্ট একটা কেক নেয়। সেটার উপরে লেখা ” স্যরি মেয়েফুল”।
তাড়াহুড়োয় যা মাথায় এসেছে তাই নিয়েছে। দুই ঘন্টার মাঝে শপিং শেষ করে বাড়ীর উদ্দেশ্য রওনা দেয় শুভ্র।
#চলবে