#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৩৩|
#শার্লিন_হাসান
শুভ্র কুমিল্লায় চলে গেছে দুইদিন আগে। আজকে শুক্রবার। সেরিন ভাবলো শাড়ী পড়া যাক। যেহেতু এই বিল্ডিংয়ে তেমন মানুষজন থাকেনা। দুই তিনজন ভাড়াটিয়া। তারাও তাঁদের মতো ব্যস্ত। ছাদে তেমন কেউই যায় না। সেরিন নামাজ পড়ে লান্স করে নেয়। শুভ্রকে বলেছে সে শাড়ী পড়বে আজকে। শাড়ী পড়ে পিকচার তুলে দিবে। শুভ্র কিছু বলেনি। কল রেখে সেরিন ব্লাক কালার জর্জেট শাড়ী পড়ে নেয়। সিদরাত,আয়াশ সহ তারা ছাদে যায়। সেরিনের কোমড় অব্দি চুল ছাড়া। কানের পিঠে একটা সাদা কাঠগোলপ গুঁজানো। সিদরাতকে দিয়েই পিকচার,কয়েকটা ভিডিও করিয়ে নেয় সেরিন। এরই মাঝে কোথা থেকে তাতান এসে হাজির হয়। সেরিনের মোটেও পছন্দ হয়নি বিষয়টা। তাতান সেরিনকে দেখে হা করে তাকিয়ে রয়। সেরিন চলে যেতে নিবে তাতান এসে পথ আটকায়। সেরিন দাঁড়িয়ে রয়। তখন তাতান বলে,
“আপনি? কেমন আছেন?”
“ভালো। আপনি?”
“ভালো। আপনাকে কালো শাড়ীতে দারুণ মানায়।”
” ধন্যবাদ।”
“আরে,আরে আপনার ফুলটা পড়ে যাচ্ছে তো!!”
সেরিন হা করে তাকিয়ে রয়। তাতান তার অনুমতি না নিয়েই কাঠগোলাপটা তার কানের পিঠ থেকে নিজের হাতে নিয়ে পুনরায় সেরিনকে পড়িয়ে দেয়।
“আপনার সাহস তো কম না আমার অনুমতি না নিয়েই টাচ করেছেন।”
” ভুল হয়ে গেছে আপু। অনুমতি নিলেই ভালো হতো শুধু টাচ না অন্য কিছুও করা যেতো।”
“এক থাপ্পড় দিয়ে গালের দাত সব পেলে দেবো গো***পুত! তুই চিনিস আমায়? আমার নাম সেরিন পাটওয়ারী মিশাত। তোর মতো লুজার কে কীভাবে ঠিক করতে হয় সবই আমার জানা আছে। শা’লা ক্যারেক্টর হলো ভা’ঙা ব্রিজের মতো নড়েচড়ে। শক্ত না! ভাঙা ব্রিজে ইট সিমেন্ট দিয়ে শক্ত করে নিস তাহলে আমার টাইপের মেয়েদের টাচ না তাঁদের থেকে চু’মু ও খেতে পারবি। এনি ওয়ে ধন্যবাদ দিতে হবে না আমি আবার একটু পরোপকারী। নেক্সট টাইম হাই হ্যালো করতে আসলে তোর জায়গা মতো এমন একটা কিক মারবো, ফিউচার সাথে চোখ টাও অন্ধ হয়ে যাবে। এমনিতেই চার চোখ লাগানো লাগে। তখন সুন্দরী রমনী খুঁজতেই কষ্ট হয়ে যাবে ফিউচারে মাঠে/খাটে খেলাধূলা করা তো পরের হিসাব। সো বি কেয়ারফুল!!”
কথাটা বলে সেরিন তেজ দেখিয়ে চলে আসে। দু’চারটা চ-ড় মারতে পারলে ভাল্লাগতো তবে যা বলেছে মনের সাধ মিটেছে। আরো বাজে দুটো গা’লি দিতে পারলে বোধহয় আরো ভালো হতো।
বাসায় ঢুকেই শাড়ী চেন্জ করে নেয়। মেজাজ তার তুঙ্গে উঠে আছে। কিছুই ভালো লাগছে না। তাতানের কত বড় আস্পর্ধা তাকে টাচ করলো।
“আচ্ছা কেউ ইচ্ছে করে এমনটা করছে না তো? এই তাতান কা’নাকে দেখে গাধা টাইপ লাগে। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ নাটকীয়। কে আবার আমার পেছনে পড়লো?
ধূর! কে আবার পড়বে? এই ছেলের ক্যারেক্টারে সমস্যা।”
সেরিন নিজেকে স্বান্তনা দিয়ে এই কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়েছে।
সন্ধ্যায় আবার শুভ্র কল দেয়। সেরিনের মনটা খারাপ তবে শুভ্রকে বুঝতে দেয়না। শুভ্র সুন্দর ভাবেই বলে,
“পিকচার দাওনা?”
“আরে ভালো লাগছে না। পরে দিবো।”
“আগে আমি দেখবো তারপর তোমার অডিয়েন্স!”
“ঠিক আছে।”
“মুড অফ কেনো সেরিন?”
“এই কী সেরিন,সেরিন করছেন? ভালোবেসে একটা সুন্দর ডাকনাম ও তো দিতে পারেন। আসলেই আপনি সবার মতোই!”
“ওতো লুতুফুতু করার সময় নেই।”
“আজব! এখানে লুতুফুতুর কী হলো? আমি আপনার বউ আপনার অর্ধাঙ্গিনী। আর এটা একটা ভালোবাসা প্রকাশ বুঝলেন? কী আর বুঝবেন মাথায় তো সমস্যা আপনার।”
“এই তুমি আমায় আর কত খোঁটা দিবা?”
“যতদিন পর্যন্ত না আপনার রুলস যায়।”
“সেটা আমৃত্যু পর্যন্ত থেকে যাবে।”
“বা’ল! ”
“আবার গা’লি দিচ্ছো?”
“ভাল্লাগেনা!”
“দেখো সেরিন সব বলো,করো ঠিক আছে কিন্তু এই গা’লি? তুমি জানো তোমার কত গুনাহ হয়?”
“আর বলবো না।”
“তোমার গা’লি না দেওয়ার প্রমিসটা লোকাল বাসের মতো হয়ে গেছে আজকাল।”
“চুপ যাবেন?”
“আচ্ছা যাও পড়তে বসো।”
“এমনিতে মুড অফ পড়ার কথা না বললেও পারতেন।”
“তাহলে ঘুমাও যাও! আমার অফিসের কাজ আছে।”
“আচ্ছা যাচ্ছি! আগে বলুন ‘ভালোবাসি বউ’।”
“তুমি বলো।”
“আমি আপনায় আগে বলেছি আপনি আগে বলবেন।”
“ঠিক আছে।”
“বলুন?”
“তুমি ফাজিল হয়ে গেছো সেরিন।”
“সেম টু ইউ। আপনিও ফাজিল হয়ে গেছেন।”
“আসলেই ফাজি তুমি।”
“এবার বলুন তো?”
” আই লাভ ইউ!”
“আই লাভ মি টু! থ্যাংকিউ স্যার।”
“এটা কী হলো?”
“ত্যাড়ামী।”
“আর বলবো না।”
“আচ্ছা থাক।ভালোবাসি!”
“ধন্যবাদ আপু।”
“এই আমি তোর কোন জন্মের আপু?”
“আবার তুই তোকারী করছো?”
“ওহ্! আমি আপনার কোন জন্মের আপু? আর কখনো আপু বললে ব্লক মে’রে দিবো মনে রাখবেন।”
“আচ্ছা বায়!”
“কী এক করলার জুশ কপালে জুটলো রে ভাই। এতো তেজ কেন আপনার?”
” তেজী মানুষের থেকে দূরে থাকুন প্লিজ ম্যাম!”
“বায়!”
সেরিন কল কেটে দেয়। শুভ্র ও আর কল ব্যাক করে না। সেরিন মনে,মনে শুভ্রর চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে।
” মানে মানুষ এতো ত্যাড়া কেমনে হয় ভাই? এতো করলার জুশ কেনো? আমার মতো মিষ্টি মেয়ের জামাই হওয়া চাই আমার থেকেও মধুর। তা না কী কোথাকার তেজী,করলার জুশ কপালে জুটলো।”
**********
দেখতে,দেখতে প্রায় পনেরোদিন কেটে যায়। শুভ্র পুনরায় ঢাকা আসে। সেরিনের কনসার্ট আগামীকাল সন্ধ্যায়। শুভ্র সহ যাবে। ঢাকা থেকে সিলেট যাবে কনসার্টে। সেরিন অনেক বেশী নার্ভাস তবুও নিজেকে স্ট্রং রাখছে। সকালের নাস্তা করে তারা বেড়িয়ে পড়ে। মিউজিক একাডেমির কিছু টিচার সাথে সেরিনের টিম,শুভ্র সহ তারা যাবে। সেরিন শুভ্রর পার্সোনাল কারে করেই রওনা হয়। পুরোটা পথ শুভ্রকে এটা,ওটা খোঁচাখুঁচি, বকাঝকা ইত্যাদি,ইত্যাদির মাধ্যমে কাটিয়েছে সেরিন। শুভ্র ও সব কথা শোনেছে ধৈর্য সহকারে। ধমক দিলেও আবার সমস্যা। মেয়েটা কান্না করতে,করতে যাবে।
জ্যাম ঠেলে প্রায় বিকেলের দিকে তারা সিলেট পৌঁছায়। সেখানেরই বুকিং দেওয়া একটা হোটেলে উঠে তারা। সেরিন শাওয়ার নিয়ে হাল্কা নাস্তা করে নেয়। সন্ধ্যা আটটায় তাঁদের কনসার্ট শুরু। এর ফাঁকে তার টিমের সাথে বসে কিছুক্ষণ রিহার্সেল করে।
সময় মতো নিজেকে রেডি করে নেয় সেরিন। আজকে সে বাঙালি মেয়ে সেজেছে। শালীন পোষাকে। থ্রিপিসের, কপালে একটা কালো টিপ। মুখে নেই তেমন সাজ। এই সিম্পল লুকেই সেরিনকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। আটটা বাজতে বেশী দেরী নেই। নিজেকে ঠান্ডা রাখে সেরিন। শুভ্র যাওয়ার সময় তাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খায়। গালে হাত স্পর্শ করে বলে,
“এই যে আমি আছি তোমার পাশেই। একদম ভয় পাবা না।”
সেরিন মাথা নাড়ায়। একসাথে তারা বেড়িয়ে পড়ে।
ফাইনালী সেই মূহুর্তটা এসেই পড়েছে। সেরিন মাইক হাতে স্টেজে যায়। সাথে তার টিম আছে। একেকজন একেক টিউন বাজাচ্ছে। সেরিন আজকে দু’টো গান গাইবে। “অনিকেত প্রান্তর” এবং “নিঠুর মনোহর”।
শুভ্র ফোন হাতে ভিডিও করছে। সেরিন বরাবরই ভালো গায়। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
অনুষ্ঠান শেষ হতে অনেকেই অটোগ্রাফ নিতে এসেছে।পিক তুলেছে। কেউ,কেউ ফুলও দিয়ে গেছে। সেরিন হাসিমুখে সব গ্রহণ করেছে। পাশে শুভ্র ও দাঁড়ানো আছে। সেরিনকে কেউ,কেউ জিজ্ঞেস ও করেছে, ” আপু কী সিঙ্গেল”? সেরিন শুভ্রর দিকে একনজর তাকায়। তার দৃষ্টি সেরিনের দিকে তাও কঠোর দৃষ্টি। সেরিন মুচকি হেঁসে বলে,
“না আমি ম্যারিড।”
তখন একটা মেয়ে শুভ্রকে দেখিয়ে বলে,
“এই ভাইয়া আপনি কী সিঙ্গেল?”
সেরিন নিজেকে শান্ত রেখে বলে,
“উনি আমার হাজব্যান্ড!”
সেরিন শুভ্রকে দেখে অনেকে, “মাশাল্লাহ” বলেছে। তাঁদের মিটআপ অনুষ্ঠান শেষ হতে সেরিন শুভ্রর সাথে পিকচার তোলে। হোটেলে যেতে যেতে প্রায় বারোটার উপর বেজে যায়। সেরিন আজকের দিনেও অনেক প্রশংসা পেয়েছে। যেটার জন্য সে আলহামদুলিল্লাহ।
রাতের ডিনার আসতে শুভ্রই খাইয়ে দেয় সেরিনকে। দু’জন মিলে কিছক্ষণ গল্প করে শুয়ে পড়ে। সেরিনের পরম শান্তি এবং সুরক্ষিত জায়গা সেই শুভ্রর বক্ষ:স্থল!
পরের দিন সিলেট থেকে সোজা কুমিল্লায় আসে সেরিন। দীর্ঘ পথ জার্নি করে চৌধুরী বাড়ীতে আসে। এদিকে আর্থ শশীর বিয়ের তোরজোর চলছে। সেরিনের কনসার্টের জন্য লেট করা হয়েছে। আগামী কাল থেকে শপিং শুরু হবে। চৌধুরী পরিবারের সবাই কুমিল্লায় এসেছে গতকাল। আজকে শুভ্র এবং সেরিন। সবার সাথে দেখা করে সেরিন রুমে চলে যায়। বাকীরা সেরিনের কনসার্ট ভিডিও দেখছে। আদ্রিতা,অধরা,আর্থ থেকে শুরু করে বাড়ীর সবাই। বেশ প্রশংসাও করে সেরিনের ভয়েসের। আরফিন চৌধুরী বিডি এসেছেন কয়েকদিন।
সন্ধ্যায় সবাই খোশগল্প করতে বসে। তাঁদের সাথে সেরিন ও আছে। বিশেষত বিয়ে নিয়ে প্লানিং।
সবার মাঝ থেকে শুভ্র সেরিনকে রুমে ডাকে। বিষয়টায় সেরিন বেশ লজ্জা পায়। তবে একটু চিন্তা হয়। এর আগে কখনো এভাবে ডাকেনি। হয়ত সিরিয়াস কোন বিষয়। সেরিন ও তড়িঘড়ি রুমে যায়। শুভ্র সোফায় বসে আছে। কপালে তার হাত ঠেকানো। সেরিনের অস্তিত্ব টের পেতে শুভ্র উঠে দাঁড়ায়।
তখন সেরিব শুধায়,
“কী হয়েছে?”
“ঢাকায় তোমায় কেনো পাঠিয়েছিলাম?”
” গানের প্রিপারেশন নেওয়ার জন্য।”
“আর তুমি কী করেছো?”
” আপনার রুলস মেনে চলেছি।”
“ওটা তো জাস্ট শো অফ! ছিঃ সেরিন ছিঃ তুমি এমনটা করতে পারলে? এখনি আমি থাকা সত্ত্বেও তুমি মেয়ে পরপুরুষের ছোঁয়া গায়ে মাখতে পেরেছো সেই তুমি একটু উপরে উঠলে কী করবে আমার জানা আছে। তুমি আমার হাত ছেড়ে দিতে দু’বার ও ভাববে না। লিসেন! তুমি চলে গেলে আমার কিছু যায় আসেনা। আমি তেমাকে হারানোর ভয় করিনা। আমি ভয় করি আমার ভালোবাসা হারানোর। পবিত্র ভালোবাসা যেটা প্রথম এবং একবার একজনের প্রতি তৈরী হয়েছে। দ্বিতীয় কারোর ভাগ হবে বা সেটায়। আমি শুভ্র তোমায় হারানোর ভয় করছি না। আমি শুভ্র আমার চঞ্চলপরীর ভালোবাসা হারানোর ভয় করছি।”
“আমি কী করেছি?”
” তোমার কী কমন সেন্স টুকুও নেই? সব কিছুতে এমন বাচ্চামো পছন্দ না আমার।”
“ক্লিয়ার করে বলবেন তো?”
“এই তুমি নাটক করছো?”
“কিসের নাটক? নাটক করছেন আপনি!”
“সেরিনননননন!”
চিৎকার করে উঠে শুভ্র। সেরিন ভয়ে কেঁপে উঠে। ধমকটা ভীষণ জোরেই ছিলো। শুভ্র তার ডান বাহু চেপে ধরে। সেরিন ব্যাথায় শুভ্রর থেকে নিজের বাহু ছাড়ানোর চেষ্টা করে। কোন লাভ হয়নি! শুভ্র আজকে ভীষণ ক্ষেপেছে। সেরিনের কর্ণিশ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। শুভ্র তাকে ছেড়ে জোরে ধাক্কা দেয়। যার ফলে সেরিন মেঝেতে পড়ে যায়। চিল্লিয়ে বলে,
” আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা ও করবেনা তুমি । লিভ মি! জাস্ট লিভ মি! আমার চোখের সামনে থেকে সরে যাও তুমি। নাহলে গাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো আমি। ”
#চলবে
#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৩৪|
#শার্লিন_হাসান
“আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা ও করবেনা তুমি । লিভ মি! জাস্ট লিভ মি! আমার চোখের সামনে থেকে সরে যাও তুমি। নাহলে গাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো আমি। ”
শুভ্রর কথায় সেরিন বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। উঠে দাঁড়াতে শুভ্র পুনরায় বলে,
“তোমার থেকে এমনটা আশা করিনি আমি।”
“গুড! আপনার সাথে আর আমার সাথে যা হয়েছে বেশ হয়েছে। আপনি আসলে আমায় বিশ্বাস করেন না। যেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে ভালোবাসা থাকা আর সম্পর্ক টিকার প্রশ্নই উঠে না।”
“ডিভোর্স চাই তোর?”
“আপনি দিলে আমার তো কিছু করার নেই।”
“ডোন্ট ওয়ান্না টক! জাস্ট মোভ ওয়ে ফ্রম দ্যা ফ্রান্ট!!”
সেরিন কিছু বলেনা। পুরো ঘটনার কথা জিজ্ঞেস করতে গেলে শুভ্র তাকে শিওর থাপ্রাবে। এমনিতে মাথা গরম হয়ে আছে। সেরিন কথা না বলে বেলকনিতে চলে যায়। শুভ্রর বেশ রাগ হয় সেরিনের মুখের উপর বলা কথায়। সেরিন বেলকনিতে গিয়ে বাইরে এক ধ্যাণে তাকিয়ে থাকে। শুভ্রর এমন আচরণের “আ” টাও সে বুঝেনি। শুধু মুখের উপর বলে দিয়েছে। আর পরপুরুষ কে? কার ছোঁয়া বা গায়ে মেখেছে সেরিন? চোখ বন্ধ করে ভাবার চেষ্টা করে। কনসার্ট,ঢাকায়, একাডেমিতে কোথাও ছেলেদের সাথে কথা বলেনি। শুভ্র তো ছিলোই!! তাহলে কী এমন?
শুভ্র পুনরায় ভিডিওটা দেখে। সেরিন জর্জেট ব্লাক কালার শাড়ী পড়া। শাড়ীটা পাতলা সেরিনের ফর্সা উদর বোঝা যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে! তারউপর ছেলেটাও তার কানের পিঠে ফুল গুঁজে দিচ্ছে। সেরিন একটা টু শব্দ ও উচ্চারণ করছে না। শুভ্র বেশ অবাক হয়। সেরিন এটা কীভাবে পারমিশন দিলো? মাথা কাজ করছে না শুভ্রর। বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ সোফায় বসে থাকে। একজন সার্ভেন্ট এসে ডাক দেয় খাবার খাওয়ার জন্য। শুভ্র না করে দিয়েছে। তারা কেউ ডিনার করবে না। উঠে দরজাটাও লক করে দেয় শুভ্র।
শুভ্র,সেরিন ডিনারে আসেনি সবাই অবাক। অনেক মাস পর চৌধুরী পরিবারের সবাই একসাথে। রাতের ডিনার টা করবে সবাই একসাথে সেখানে শুভ্র সেরিন মিস্টেক। সেরিন তো হাসিমুখে আড্ডা দিচ্ছিলো। শুভ্র তাকে ডেকে নেওয়ার পর কী হয়েছে কারোরই বোধগম্য নয়। তবে শুভ্র যেহেতু একবার বারণ করে দিয়েছে কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না।
ঘড়ির কাটা বারোটা। সেরিন এখবো বেলকনির দোলনায় বসে আছে। এক ধ্যাণে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। রুমে যাবে না শুভ্র রেগে আছে। বাইরে যেতে পারবে না তাঁদের পার্সোনাল ম্যাটার বাকীরা জেনে যাবে।
খাটে শুয়ে আছে শুভ্র। সেরিন রুমে আসেনি তা নিয়ে তার একটুও মাথা ব্যাথা নেই। যা খুশি হোক সেরিনের শুভ্রর কিছু যায় আসেনা। যে মেয়ে কথার খেলাপ করে তার থেকে আর কিছু এক্সেপ্ট করার মতো নেই।
বাড়ীর পূর্ব দিকের কবর স্থানে চোখ যেতে সেরিনের গা হিম শীতল হয়ে যায়। তারউপর দূরে কোথাও কুকুর ডাকছে। গাছের পাতা নড়ছে। চারপাশে লাইট জ্বললেও সেরিনের ভয় কাজ করছে। নিজের রাগ জেদকে আর প্রশ্রয় দিতে পারেনি সেরিন। উঠে রুমে চলে যায়। কাবাড থেকে একটা কম্বল নামায়। খাটের উপর থেকে বালিশটা নিয়ে ডিভানের উপর চলে যায়। শুভ্র সেরিনের কান্ড দেখছে। তারা কেউই কারোর সাথে কথা বলছে না। শুভ্র নিজেকে শান্ত রেখে বলে,
“তুমি যেদিন ব্লাক শাড়ী পড়েছিলে সেদিনের ছেলেটা কে ছিলো? তোমার কানে ফুল গুঁজে দিয়েছিলো।”
“জেনে কী করবেন?”
“বেশী হয়ে যাচ্ছে না? আমি প্রশ্ন করেছি তুই উত্তর দিবি। জেনে কী করবো না করবো সেটা আমার ব্যপার। তোকে সে-সব জানতে হবে না।”
“ওর নাম তাতান….
” বাহ্ নামটাও জানো?”
“কথাটা তো শেষ করতে দিন।”
“আর কিছু বলতে হবে না তোর।”
সেরিনও আর কথা বাড়ায়নি। চুপচাপ লাইট অফ করে শুয়ে পড়ে। শুভ্র সেভাবেই বসে রয়। সেরিন ছেলেটার নাম ও জানে! শুভ্রর রাগে শরীর জ্বলছে। তার বউ কেন অন্য ছেলের নাম মুখে নিবে? কেনো?
********
পরের দিন সকালে সেরিনের ঘুম ভাঙে শুভ্রর এলার্ম ঘড়ির শব্দে। উঠে ফ্রেশ হয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নেয়। মাহীকে কল দিয়ে বলেছে সে কলেজ শেষে যাবে। যাতে এসে তাকে নিয়ে যায় মাহী। শুভ্রকে কিছুই জানায়নি সেরিন। শুভ্র ও ইন্টারেস্ট দেখায়নি। নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে তুলে রাখে সেরিন। পাটওয়ারী বাড়ীতে তার জামাকাপড় সবই আছে। ব্যাগে করে আর কিছুই নিতে হবেনা। সবার সাথে বসেই নাস্তা করে নেয় সেরিন। তবে কেউ কোন প্রশ্ন করেনি। শুভ্র সেরিন কেউ কারোর দিকে ফিরেও তাকায়নি। নাস্তা করে যে যার মতো বেড়িয়ে পড়ে।
অনেকদিন পর সেরিন কলেজ এসেছে। নিশাতের সাথে দেখা হতে কথা বলে সেরিন। সেরিনের মন খারাপ দেখে নিশাত জিজ্ঞেস করে, “তোদের আবার জামেলা হলো নাকী? আজকে মনটা আর মুখটা এতো শুকনো লাগছে কেনো?”
“না এমনিতে কিছু হয়নি!”
“আরে ইয়ার আমি তোর ফ্রেন্ড। আমার কাছে না বললে কার কাছে বলবি?”
“না আসলে একটা বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়েছে। এমনিতে মিটে যাবে। হয়না ছোটোখাটো বিষয় নিয়ে ঝগড়া।”
“ওকে!”
সেরিন পিটির সময় হতে নিশাত সহ পিটিতে দাঁড়িয়ে যায়। শুভ্রও আসে পিটিতে। তবে আজকে কোন ভাষণ দেয়নি সে। ব্যপারটা আজকাল আর শকিং না। শুভ্র অনেকটা চেন্জ হচ্ছে। স্টুডেন্ট রাও একটু শান্তি পাচ্ছে। পিটি শেষ করে ক্লাসে এটেন্ড করে সেরিন। আজকেও আকাশ,জুম্মানের মুখোমুখি হয়। সেরিনকে দেখে তারা ও তাকায়। সবাই জানে সেরিন চলে গেছে। আবার আসলো কেন? আকাশ, জুম্মান সেরিনকে দেখে বলে,
“এবার তো কিছু একটা করা যাবে। এই মেয়েটাকে এতো সুন্দর লাগে একটু আধটু ফ্লার্ট আর র্যাগিং না করলে নাই হয়।”
জুম্মানের কথায় আকাশ শুধায়,
“সেদিন তো শুধু বোতল মারলাম। আজকে দেওয়ালের সাথে দুই চারটা বা’রি ও মারা যাক।”
“আরে না! একে এমন অবস্থা করবো। একবারে সন্মান নিয়ে টানাটানি হওয়ার মতো অবস্থা।”
“ফাঁকা রুমে?”
“দেখা যাক!!”
কথাগুলো বলে তারাও ক্লাসে মনোযোগ দেয়। সেরিন মাঝের সারিতে বসেছে। এক টেবিলে একজন করেই বসে। তার ডান পাশে ছেলেদের সারির টেবিল। বাম পাশে মেয়েদের সারির টেবিল। সেরিনের টেবিলের সোজা আবার জুম্মান আর আকাশ বসেছে। সেরিন বিষয়টা খেয়ালে নেয়নি। সে ক্লাসে মনোযোগ দেয়। তার পেছনে নিশাত বসেছে। ছয় ছয়টা ঘন্টা শেষ করে ছুটি হয়। সেরিন উঠে দাঁড়ায়। তাঁদের আবার ল্যাব ক্লাস আছে একটা। বেশী ভীড় দরজায় তাই একটু লেট করে বের হয় সেরিন। তার বের হতে,হতে শেষের দিকে পড়ে যায়। তার পেছনে আবার জুম্মান,আকাশ। সেরিন তড়িঘড়ি ক্লাস রুম থেকে বের হয়। করিডোরে হালকা ভীড় সেরিন ভীড়ের মধ্যে ঢুকে যেতে নিবে। পেছন থেকে কেউ তার ওরনায় টান দেয়। সেরিন ফিরে তাকতে দেখে আকাশ তার দিকে তাকিয়ে আছে।
সেরিন ঠাস করে চ’ড় বসিয়ে দেয় আকাশের গালে।
তেজী স্বরে বলে,
“ঘরে তো মা বোন নেই! থাকলে নিশ্চয়ই বুঝতি নারীদের কীভাবে সন্মান করতে হয়।”
“এই সুন্দরী আমায় চ’ড় মেরেছে।”
কিছুটা উঁচু স্বরে কথাটা বলে আকাশ। তখন জুম্মান চুলগুলো পেছনে নিয়ে বলে,
“আজকের তোকে দেওয়ালের সাথে ঠুকিয়ে,ঠুকিয়ে মারবো।”
মূহুর্তে কিছুটা ভীড় জমে যায়। মূহুর্তে কথাটাও বাতাসের গতিবেগে শুভ্রর কানে পৌঁছায়। শুভ্র মিটিংয়ে ছিলো। তবে সেরিনের কথা শুনে মিটিং ছেড়েই বেড়িয়ে আসে। দোতালায় দ্রুত উঠে যায়। শুভ্রকে দেখে আকাশ,জুম্মান কিছুটা ভয় পায়। সেরিনকে দেখে শুভ্র জিজ্ঞেস করে,
“কী হয়েছে এখানে?”
“এই ছেলেটা আমার ওরনা ধরে টান দিয়েছে। তারপর আমি চ’ড় দিয়েছি। জুম্মান বলেছে, আমায় নাকী দেওয়ালে সাথে ঠুকিয়ে,ঠুকিয়ে মারবে।”
“কথাগুলো কী সত্যি আকাশ,জুম্মান?”
তখন জুম্মান বলে,
“স্যার সেরিন আমাদের কলেজ থেকে বের করার পরিকল্পনা করছে।”
“তোকে আমি সেটা জিজ্ঞেস করিনি। ও যা বলেছে তা সত্যি কী?”
“না স্যার!”
পাশ থেকে আকাশ বলে। সেরিন তখন শুধায়,
“মিথ্যে বলবি না একদম।”
“তুমি চুপ থাকো।”
শুভ্র ধমকে বলে সেরিনকে। সেরিনের কান্না পাচ্ছে। শুভ্র তাকে এভাবে কেনো অবিশ্বাস করছে?
“প্রথম দোষের পর সব ভালোই কী সন্দেহ জনক হয়?”
#চলবে