#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৩১|
#শার্লিন_হাসান
সেরিন আজকাল একটু বেশী দুঃসাহস দেখাচ্ছে। শুভ্রর থেকে দূরে তাই এমন। সামনে গেলে একবারে ভদ্র মেয়ে হয়ে যাবে সে। তার মেঝো শাশুড়ী আম্মুর বাসায় থেকে বেড়ানো শেষ হতে চলে এসেছে তার আন্টির বাসায়। পড়াশোনা তার ভালো লাগে না এই কথাটাই শুভ্রর কাছে বলতে পারেনা সে। প্রাইভেট আর মিউজিক একাডেমি নিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় কাটে তার। শশীর বোর্ড এক্সাম শেষ। সেরিন পারছে না এখনি বিয়েটা দিয়ে দেয়। কিন্তু চৌধুরী পরিবারের যা ব্যস্ততা। বিয়ে বলে কথা! অনেক লেট হবে। সেরিনের এতো লেট সহ্য হচ্ছে না। এখন আরকী! আর্থর বিয়ের ডেট ফিক্সড করার সিদ্ধান্ত আসলে চৌধুরী পরিবার সবাই কুমিল্লায় ব্যাক করবে। সেরিনের ও হয়ত তাদের সাথেই যাওয়া হবে। তার বরটা! মনে,মনে কত বকা দেয় সেরিন। তার লাইফ আর তার বরের দেওয়া রুলস। সত্যি এই রুলস তার জীবনের সব সুখ শান্তি শেষ করে দিয়েছে।
সময়টা গৌধূলি লগ্নে প্রায়। ছাঁদে মৃদু বাতাস বইছে। সেরিন দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। তার থেকে অনেকটা দূরত্বে তাতান দাঁড়িয়ে। যদিও সেরিন তাকে পাত্তা দেয়না। তাতান এদিকটায় এসে সেরিনকে দেখে হেঁসে বলে,
“হেই সেরিন! কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?”
সৌজন্যতার খাতিরে কথাটা বলে সেরিন। তখন তাতান বলে,
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আমি কিন্তু আপনার একজন ভক্ত। আপনার সব ভিডিও আমি দেখি। আমি মিউজিক একাডেমিতে আছি। আপনি হয়ত খেয়াল করেননি।”
“ধন্যবাদ! আসলে এদিকওদিক তাকানোর সময় নেই আমার। তাই খেয়াল করিনা।”
“আচ্ছা সমস্যা নেই। আজান হয়ে যাবে বাসায় চলে যান।”
সেরিন মাথা নাড়িয়ে ভেতরে চলে যায়। মাগরিবের নামাজ আদায় করে বই নিয়ে পড়তে বসে সে। কুমিল্লায় কবে ব্যাক করবে সেই চিন্তায় তার রাতের ঘুম হারাম। তারউপর শুভ্র তার কথাকে বেশী পাত্তা দেয়না। এই নিয়ে সেরিনের বেশ রাগ। ওভার থিংকিং সাইডে রেখেস সেরিন পড়ায় মনোযোগ দেয়।
***********
“তুমি ভীষণ বা’জে মেয়ে নিশাত। ভীষণ বেয়াদ’ব! তোমার মতো বা’জে মেয়ের সাথে রিলেশন কেনো পাত্তা দেওয়াটাই আমার ভুল। তবে নিজেকে ওতো কিছু ভাবার দরকার নেই। আমি থাকতে আমার বোনের সংসারে কোন থার্ড ক্লাস মানুষের নজরের প্রভাব ফেলতে দিবো না।”
কিছুটা রাগ দেখিয়ে বলে মাহি। মাহির কথায় নিশাত পাল্টা শুধায়,
“তুমি নিজেই একটা ফাল’তু মাহী। আর আমি না তোমার বাবার বন্ধুর মেয়ে আর না তোমার ছোট বেলার সঙ্গী যে লুতুফুতু করবো তোমার সাথে। আমি তোমাদের শত্রু পরিবারের মেয়ে। আসলেই আমি বা’জে মেয়ে অবশ্য শত্রুদের সাথে শত্রুদের মিষ্টি ভাব চলে না।”
“সেই তো নিজের খোলসা থেকে বের হওয়ার কথাই ছিলো। তাহ এতোদিন এতো হুজুর সাজলি কেনো? আজলেই যারা বেশী ভালো সাজে না তাঁদের মধ্যেই আসল ভেজালটা থাকে।”
“কাম অন মাহিরবাবু! আপাতত এক্স! আমার আসলে তোমাদের পরিবার নিয়ে তেমন মাথা ব্যথা নেই। আমার বাপ ভাইয়ের আগের জমের জমিজামা নিয়ে থাকলে থাকতে পারে। বাট আনার তো শুভ্রর পরিবারের উপর ক্ষো’ভ! হ্যাঁ শুভ্রকে আমার ভালো লাগে। ভীষণ ভালো লাগে বাট তোমার বোন মাঝখান দিয়ে বা হাত ঢুকালো। এই জন্যই অবশ্য আমায় নিজের আসল রুপে আসতেই হলো।”
“তোর যে গাজা খোর ভাই! সে করবে সমাজসেবা আর মানবসেবা। ওটা তো নিজেই চলতে আটজন লাগে। আর তোর বাপ! সে তে আরেক লোভী। আরেকজনের হক নষ্ট করে নিজে ভোগ করতে চায়।”
“খবরদার আমার পরিবারে নিয়ে কিছু বলবি না।”
“এই চুপ থাকবি তুই? লজ্জা করে না তোর। আমার বোন তোকে সত্যিকারের বন্ধু ভেবেছে। এটাই সবচেয়ে বড় ভুল।”
“হেই ইউ! এসব সত্যিকারের সম্পর্ক ধুয়ে ধুয়ে পানি খা যা। কাজে লাগবে! আসলেই তোর সাথে প্রেম করাটাই ভুল ছিলো আমার। যাই হোক তোর বোন আমায় তার ভাইয়ের বউ বানাতে চেয়েছে হইনি। আমি মিস করবো না। তোর বোন তারউপর সুন্দরী আমার ভাইয়ের বউ বানানোই যায়। এক বিয়েতে কিছু যায় আসেনা। এমনিতে শুভ্র স্যার আরো পাঁচটা বিয়ে করে এক বাচ্চার বাপ হলেও তাকে আমি বিয়ে করতে রাজী আছি।”
“বেয়াদ’ব মেয়ে। আমি থাকতে আমার বোনের কোন ক্ষতি হতে দেবো না।”
“তুই ঘুমা কাজে দিবে! সব ব্যবস্থা করা শেষ। এখন শুধু তোর বোন ডিভোর্স পেপারে সাইন করা বাকী। খুব শীঘ্রই সেটাও হবে। আল্লাহ হাফেজ মাহির’বাবু।”
নিশাত কল কেটে দেয়। মাহীর বেশ রাগ হয়। মনে,মনে বি’শ্রী কয়েকটা গা’লি নিশাতের নামে দান করে। তবে তার শুভ্রর উপর বিশ্বাস আছে। শুভ্র তার খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড সেজন্য শুভ্রর সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা ও আছে। সে এক কথার মানুষ! আর শুভ্র যেহেতু কথা দিয়েছে সেরিনকে আগলে রাখার সে তো আগলে রাখবেই। যতই যাই হয়ে যাক না কেন! শুভ্রর এই ব্যপারটা বরাবরই মুগ্ধ করে মাহীকে। দেরী না করে শুভ্রকে কল দিয়ে কিছুক্ষণ কথা বলে মাহী। তবে নিশাত নিয়ে একটা শব্দ ও উচ্চারণ করে না সে।
********
সারাদিনের ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে সেরিনকে কল দেয় শুভ্র। কল রিসিভ হতে সেরিন সালাম দেয়। শুভ্র সালামের জবাব দিয়ে বলে,
“পড়াশোনা কেমন চলছে?”
“সে তার মতো চলছে আমি আমার মতো। আর আমার খেয়েদেয় কাজ নেই কে কীভাবে চলছে সেটার খোঁজ নেওয়ার।”
“ফা’জিল তোমার পড়াশোনার কথা বলছি আমি।”
“কুমিল্লায় নিলে বলবো পড়াশোনার কথা।”
“এইজন্যই তোকে কুমিল্লায় আনতে চাই না আমি। ফা’জিল মেয়ে একটা। এই তোর কুমিল্লায় কী রে হ্যাঁ? এতো কিসের তাড়া আমার কাছে আসার জন্য? চুপচাপ মন দিয়ে পড়াশোনা কর।”
“এই আপনি তুই তোকারী করছেন?”
“তোর থেকে শিখা এটা। খারাপ লাগছে না? আমার ও লাগে যখন তুই আমায় তুই তোকারী বলে কথা বলিস।”
“আর বলবো না।”
“নেক্সট লাইন প্লিজ?”
“ভালোবাসি।”
“তোহ্!”
“ব আকার ল।”
“এই জন্যই তোমার সাথে কথা বলতে চাই না। দিনদিন নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছো তুমি। কথায়,কথায় গা’লি না দিলে হয়না তোমার? আর এতো ভালোবাসা কী হ্যাঁ? দিনদিন ফাজিল হয়ে যাচ্ছো। এখন এই মূহুর্তে গালি দেওয়ার কারণে তোমার ভালোবাসা গ্রহণ করলাম না।”
“এই আপনি আমায় ছোট করলেন?”
“একটা কথাই বলবো লজ্জা নারীর ভূষণ।”
“তোহ? আপনি তো লজ্জা পান। আমার ওতো লজ্জা পেতে হবে না। আর দু’জন লজ্জা পেতে হবে এমন কোন কথা নেই। আমি লজ্জা পেলে আর বাবুর আম্মু হওয়া লাগবে না। দেখবেন আমাদের পরে যারা বিয়ে করবে দু’মাস না যেতে তারাও ট্রিপল হয়ে যাচ্ছে। আমাদের দুই যুগ গেলেও কিছুই হবে না।…….
শুনুন না….”
সেরিন ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে কল অনেক আগে কেটে গেছে। শুধু, শুধু সে বাক্যব্যায় করলো। প্রচুর রাগ হয় শুভ্রর প্রতি। সাত পাঁচ না ভেবে সব জায়গা থেকে ব্লক করে দেয় শুভ্রকে। এমনকি তার আন্টির ফোন থেকেও ব্লক করে দেয়। রাতের ডিনার করে ঘুমানের জন্য রুমে আসে সেরিন। বিছানায় গা এলিয়ে দিতে তার শান্তি,শান্তি ফিল হচ্ছে। শুভ্র রাগ দেখিয়েছে এখন সে ব্লক করে দিয়েছে।
“ওয়াও কী জোশ ব্যপারটা! সেরিন এবার তোর বর তোর জন্য অস্থির হয়ে উঠবে। দেখবি কীভাবে মিউমিউ করে তোর কাছে আসে। এই মানবকে সোজা করার জন্য এর থেকে ভালো ঔষধ আর কিছুই নেই।”
**********
পরের দিন সকালে, সেরিন ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়। আজকে দুটো প্রাইভেট আছে তার। প্রাইভেট শেষ করে বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নেয়। লান্স করে আবার একাডেমিতে চলে যায় । সেখানে আদ্রিতার সাথে ভালো সময় কাটে। তবে তাদের একটা কনসার্ট আছে। যেটায় মেইন লিডার থাকবে সেরিন। সে মাইক হাতে গান করবে। যদিও খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাচ্ছে তবে এটা একটা খুশির খবর সেরিনের জন্য। তার পথচলা মাত্র শুরু হতে চলেছে। খুশি হলেও কিছুটা নার্ভাস সেরিন।
ক্লাস শেষ করে আদ্রিতার থেকে বিদায় বিয়ে বাসায় আসে সেরিন। তার আন্টিকে কিচেনে রান্না করতে দেখে। কিন্তু ডিনার তো আছেই আবার রান্না কেন? সেরিন ভাবে না। নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নেয়। প্রচুর ক্লান্ত লাগছে। ত্রস্ত পায়ে কিচেনে যায়। তার আন্টি তাকে কফিট মগ এগিয়ে দেয়। সেরিন সেটা নিয়ে রুমে প্রবেশ করতে মৃদু চেঁচিয়ে বলে,
“আপনি?”
শুভ্র দ্রুত সেরিনের কাছে আসে। এক হাতে দরজাটা লাগিয়ে দেয়। সেরিনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ধমকে বলে,
“তোমার সাহস অতিরিক্ত বেড়ে গেছে সেরিন। মেয়ে তুমি আমায় ব্লক করার মতো দুঃসাহস দেখিয়েছ। আর কী,কী করতে পারো আমার ধারণা হয়ে গেছে।”
“আরে আপনি ভুল বুঝছেন।”
“ডোন্ট ওয়ান্না টক!”
#চলবে
#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৩২|
#শার্লিন_হাসান
(প্রাপ্তবয়স্ক মনস্কদের জন্য উন্মুক্ত)
শুভ্র দ্রুত সেরিনের কাছে আসে। এক হাতে দরজাটা লাগিয়ে দেয়। সেরিনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ধমকে বলে,
“তোমার সাহস অতিরিক্ত বেড়ে গেছে সেরিন। মেয়ে তুমি আমায় ব্লক করার মতো দুঃসাহস দেখিয়েছ। আর কী,কী করতে পারো আমার ধারণা হয়ে গেছে।”
“আরে আপনি ভুল বুঝছেন।”
“ডোন্ট ওয়ান্না টক!”
“আর করবো না ব্লক।”
“ডোন্ট ওয়ান্না টক সেরিন।”
কথাটা বলে শুভ্র খাটের উপর বসে। আঙুল দিয়ে কপাল স্লাইড করতে থাকে। সেরিন ভয়ে কিছু বলছে না। এমনিতে শুভ্র রেগে আছে। সেরিন কফির মগ নিয়ে সেভাবে দাঁড়িয়ে রয়। রুম জুড়ে নিস্তব্ধতা বিরাজমান। সেরিন চুপচাপ দরজা খুলে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। লিভিং রুমে বসেই কফিটা শেষ করে কিচেনে যায়। তার আন্টির রান্না প্রায় শেষ। সেরিন প্রশ্ন করে,
“শুভ্র কখন আসলো আন্টি?”
“তুমি আসার কিছুক্ষণ আগেই।”
“তোমায় কল দিয়েছে?”
“হ্যাঁ!”
সেরিন কিছু বলেনা। আয়াশ,সিদরাত তারা শুভ্রর সাথে কথা বলছে। এটা,ওটা মজা করছে। শুভ্রও তাঁদের সময় দিচ্ছে। সেরিন সেদিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। তারা দু’জন দু’জনের সাথে রাগ করে আছে। রাতে ডিনার করতে একসাথে বসলেও সেরিন খেতে পারেনি। কয়েক লোকমা খেয়ে উঠে পড়ে। সেরিনের খাবার না খেয়ে উঠে পড়াটা শুভ্রর পছন্দ হয়নি। সে চুপচাপ নিজের খাওয়াটা শেষ করে। সেরিন সোফার উপর বসে ফোন স্ক্রোল করছে। সানজিদা শারমিন শুভ্রর কফি দেন। শুভ্র কফির মগ নিয়ে রুমে চলে যায়। সেরিন সোফায় বসে রয়। ঘড়ির কাটা এগারোটা। তখন সানজিদা শারমিন বলেন,
“এখানে বসে আছো কেন? যাও রুমে যাও। সারাদিন বাইরে দৌড়াদৌড়ি গিয়ে রেস্ট করো।”
“যাবো একটু পর। তুমি গিয়ে শুয়ে পড়ো।”
সানজিদা শারমিন গুড নাইট বলে চলে যান রুমে। সেরিন শুভ্রর ব্লক খোলে দেয়। ফেসবুক স্ক্রোল করছে সে। মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেছে তার। মূলত শুভ্রর ধমকটা পছন্দ হয়নি। সাড়ে এগারোটা বেজে গেছে শুভ্র তাকে ডাক ও দিচ্ছে না। সেরিন উঠে লিভিং রুমের লাইট অফ করে নিজের রুমের দিকে যায়। দরজা লক করে ফোনটা টেবিলের উপর রেখে ফ্রেশ হতে চলে যায়। শুভ্র খাটের উপর আধশোয়া হয়ে ফোন স্ক্রোল করছে। সেরিন ফ্রেশ হয়ে চুলে বেনুনি করে। শুভ্রর সাথে একটা কথাও বলেনি সে আর না আজকে বলবে। লাইট অফ করে ড্রিম লাইট অন করে, চুপচাপ নিজের বরাদ্দকৃত জায়গায় শুয়ে পড়ে সেরিন। সেরিনকে এমন চুপচাপ দেখে শুভ্র কিছু বলেনা। খাটের পাশের টেবিলের উপর থেকে ছোট্ট ফুলের তোড়াটা হাতে নেয়। ছোট্ট করে শুধায়,
“সেরিন! ”
সেরিন কোন সায় দেয়না। শুভ্র তাকে পুনরায় ডাকে। সেরিন উঠে বসে। শুভ্রর দিকে দৃষ্টি স্থির করে বলে,
“কী হয়েছে? এতে ডাকাডাকি করছেন কেন? দেখুন আপনার মতো ওতো ধমকা-ধমকি করার বা ঢং করার মুড আমার নেই। আমি প্রচুর টায়ার্ড! ”
“আমি মনে হয় খুব সুখে আছি। তুমি মেয়ে আমাকে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এনেছো আবার এখন ইগো দেখাচ্ছো?”
“এক্সকিউজ মি!! আমি আপনাকে বলিনি ঢাকায় আসতে। থাকুন না কুমিল্লায়। বউ দিয়ে কী হবে? হুদাই আমি বিয়েটা করে নিজের স্বাধীনতা ন’ষ্ট করলাম।”
“আমি তোমায় স্বাধীনতা দেইনা?”
সেরিন চুপসে যায়। এই লাইনটা অগ্রিম বলে ফেলেছে সে। সেরিনকে চুপ থাকতে দেখে শুভ্র শুধায়,
“এইবারের মতো ক্ষমা করলাম। নেক্সট টাইম এই লাইন মুখে আনলে খবর আছে।”
“আর বলবো না।”
“তুমি সবসময় বলবো না,করবো না বলো। তারপর ঠিকই একই কাজই করো সেরিন।”
“আরে বা’ল একবার বললাম তো।”
“আবার গা’লি দিচ্ছো?”
“আর দিবো না।”
“এর আগে কয়বার এই কথাটা বলেছো?”
“হ্যাঁ বলেছি। বলতেই পারি। আমি এক কথা একশ বার বলবো এটা অন্য হিসাব বাট আপনি এক কথা এক বারের বেশী আমার কানের সামনে বলবেন না।”
“ফাজি’ল হয়ে গেছো তুমি। মাই-র দিবো যেদিন সেদিন বুঝবা।”
“আচ্ছা আসুন আপনায় আমি আদর করি। আপনি যেহেতু মাই-র দিবেন।”
“একটু তো লজ্জা রাখো সেরিন। লজ্জা নারীর ভূষণ।”
“যাহ্ গোলা***পুত! তোর আর বাবা হতে হবে না।”
“আসতাগফিরুল্লাহ! সেরিন তুমি এতো বা’জে গালি দেও?”
“আসলে লোক লজ্জার ভয়ে বলতে পারিনা। এই গালিটা আমার ভীষণ পছন্দের।”
(দ্রঃ ইট’স মি🥲 ইন ফিউচারে নিজের জামাইকে বলবো)
কথাটা বলে সেরিন মুখে হাত দিয়ে ফেলে। এই গালিটা এভাবে দিয়ে ফেলবে ভাবতে পারেনি। এই বুঝি শুভ্র তাকে চ’ড় দিলো।
“আচ্ছা যাও তোমার কথাটা রাখবো। এতেদিন ধরে পাগলামি করছো।”
কথাটা বলে শুভ্র সেরিনের অধরে নিজের অধর ছোঁয়ায়। শুভ্র নিজে থেকে তাকে ছুঁয়ে দিচ্ছে। সেরিন তার প্রেমিক-পুরুষের ছোঁয়া নিজের সর্বাঙ্গে মাখছে। মূহুর্তে দু’জন অন্তর্নিহিত হলো ভালোবাসার উম্মাদনা থামাতে।
************
পরের দিন সকালে সেরিন শাওয়ার নিয়ে আসতে শুভ্র তাকে গতকাল সন্ধ্যায় আনা ফুলের তোড়াটা দেয়। রাতে তো দেওয়া হয়নি। সেরিন নেতিয়ে পড়া ফুলগুলোতে হাত ভোলায়। সাদা এবং কালো গোলাপ। শুধু ফুল না, সেরিনের জন্য এক কার্টুন চকলেট ও এনেছে শুভ্র। সাথে দুটো টেডিবিয়ার। একটা লাভ শেপের তাতে “Love you Bow” লেখা আরেকটায় “SorrY Mrs Chowdhury”
সেরিন গিফ্ট গুলো দেখে হাসে। শুভ্র সহ সকালের নাস্তা করে নেয়। সিরাত,আয়াশ নাস্তা করে স্কুলে চলে যায়। সানজিদা শারমিন রান্নায় ব্যস্ত। সেরিন তাকে হেল্প করে রুমে চলে আসে। শুভ্র খাটে শুয়ে ফোন স্ক্রোল করছে। সেরিন ও চুপচাপ তার বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। শুভ্র ফোন রেখে তার বউয়ের চুলে বিলি কেটে দেয়। সেরিনের কপালে অধর ছুঁইয়ে বলে,
“এখন আমার সাথে কুমিল্লায় যাবা নাকী পরে?”
“এখন তো আমার একটা কনসার্ট আছে সেটার প্রি-পারেশন নিতে হবে। এটা আমার প্রথম কনসার্ট এন্ড স্বপ্নপূরণের পথে মাত্র পা রাখবো।”
“আই হোপ তোমার এই জার্নিটা ভালো কাটবে। দেখো হয়ত এই একটা কনসার্ট দিয়ে তুমি অনেকটা জনপ্রিয় হতে পারো।”
“কী জানি!”
“এই সেরিন তুমি কখনো পরিচিত মুখ হলে বা অনেকটা এগিয়ে গেলে আমায় ভুলে যাবে? বা ধরো তোমার কাছে অনেক টাকা পয়সা হলো, আমার থেকে বেটার কেউ আসলো তাহলে কী আমার হাত ছেড়ে দিবা?”
“এই আপনি পাগ’ল হয়ে গেছেন? আমি একটা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ আছি। আর শুনুন আমি বাবুর পাপাকে ভীষণ ভালোবাসি। আমার জীবনের প্রথম প্রেমটা তার প্রতি এসেছিলো। এবং আমার প্রেমিক পুরুষ থেকে সে আমার অর্ধাঙ্গ। আমি কখনো হাত ছাড়বো না।”
“দেখা যাবে।”
“এ্যাই অ্যাম সিরিয়াস। আচ্ছা আপনি আমায় হারানোর ভয় করেন?”
“তুমি অবুঝ নও সেরিন। আর আমি অনুভূতি প্রকাশ করতে পছন্দ করি না।”
“আচ্ছা সেসব বুঝলাম। এবার বলুন ” বউ ভালোবাসি।” আপনি এখন অব্দি আমায় ভালোবাসি বললেন না।”
“বলবো না।”
“আপনি আমায় ভালোবাসেন না।”
“তুমি ভালোবাসা প্রকাশ করছো আমি শুনছি। একদিন আমি প্রকাশ করবো সেদিন নাহয় তুমি শুনে যেও। আর তৃতীয় দিন দু’জনেই ‘ভালোবাসি’ বলার উত্তরে ‘আমিও ভালোবাসি’ বলবো।”
“ঠিক আছে।”
শুভ্র কিছু বলেনা। সেরিনও চুপচাপ। মনে,মনে ভাবছে,
” সব কিছুতেই কী রুলস দেওয়া লাগে ভাই? না শুভ্র স্যার তো জানেনা তাকে আমি ভয় পাই সেখানে হাত ছাড়ার কথা ভাবা বিলাসিতা। আর উনি এটা আমায় জিজ্ঞেস ও করলো। জানি করলার জুশ আমায় ভালোবাসে কিন্তু প্রকাশ করেনা। আমার মতো মিষ্টি একটা মেয়ের কপালে এমন করলার জুশ জুটলো। অবশ্য জুটেনি নিজেই কান্না রান্না করে জুটিয়েছি। সবই কপাল! যাই হোক মানুষটা সঠিক হলে ভালোবাসা মন্দ না! আমার মানুষটা সবসময় আমার থাকুক এবং আমার শুধুই আমার থাকুক।”
মুচকি হাসে সেরিন। শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে,
“শুনছেন? আপনি আমার থাকবেন এবং আমার শুধুই আমার থাকবেন। আমি আমার ভালোবাসার মানুষটাকে কারোর সাথে কম্পেয়ার করতে পারবো না। আর না কারোর সাথে তার ভালোবাসার কম্পেয়ার করতে চাই।”
#চলবে