হৃদয় সায়রে প্রণয়ের ছন্দ পর্ব-২৯+৩০

0
504

#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|২৯|
#শার্লিন_হাসান

এরই মাঝে কেটে যায় একমাস। সেরিনের এক্সাম শেষ! কয়েকদিন পর সে ঢাকায় ব্যাক করবে। শশীর বোর্ড এক্সাম শুরু হওয়ার ও বেশীদিন বাকী নেই। অক্ষরের বিয়েটা আর্শিয়ার সাথেই হয়েছে। তেমন একটা অনুষ্ঠান করে না হলেও ঘরোয়া ভাবেই হয়েছে। অক্ষর ও বেশীদিন বিডিতে নেই। সময়টা বিকেল। সেরিন রেডি হচ্ছে শুভ্রর সাথে ঘুরতে বের হবে। যেহেতু তাঁদের দেখা হতে অনেক লেট আছে।
সেরিন ব্লাক কালার শাড়ী শুভ্র ব্লাক পান্জাবি। শশী,আর্থ ও যাবে তাঁদের সাথে। দুই কাপল একসাথে। সেরিন লেট লতিফা যেটা শুভ্রর অপছন্দের তালিকায় একনাম্বার। বউ বলে কিছু বলেনা। অন্য কেউ হলে ধমকিয়ে ওইভাবে আধসাজেই নিয়ে যেতো। শুভ্র বসে,বসে ওয়েট করছে সেরিনের জন্য। আর্থ অলরেডি শশীকে নিয়ে গাড়ীতে বসে আছে। শুভ্র,সেরিন আসলেই তারা বের হবে।

প্রায় আধঘন্টার মতো শুভ্র ওয়েট করে বসে ছিলো। তার ধৈর্য আর কুলোচ্ছে না। রুমে গিয়ে দেখে সেরিনের মেকআপ কমপ্লিট হয়েছে। তাও হালকা মেকআপ এটাতে তার এতো সময় গেছে এখনো চুলে হাত ও দেয়নি। শুভ্র কিছুটা তাড়া দেখিয়ে বলে,
“আর পাঁচ মিনিট! এরপর লেট হলে আর কখনো তোমায় নিয়ে বাইরে বের হবো না।”

“আমার চুল কীভাবে বাঁধবো? ”

“আমি কী করে বলবো?”

“ধুর!”

সেরিন সামনে একটা সিঁতি করে চুলগুলো ছেড়ে দেয়। তড়িঘড়ি নিজের ফোনটা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। শুভ্র রেগে গেলে আবার সমস্যা। যেই এক বদলোক কপালে জুটেছে। সেরিনের সম্পূর্ণ বিপরীত! পান থেকে চুন খসলে রাগ করে বসে থাকে। কিছু বলা ও যায়না তাতেও রাগ করে। মাঝেমধ্যে সেরিনের নিজেকে ম্যাচিউর লাগে আর শুভ্রকে ইমম্যাচিউর মনে হয়। নাহলে একটা মানুষ এতো তেজ আর রাগ দেখাতে পারে?

সেরিন গোমড়া মুখ করে শুভ্রর পেছন,পেছন যায়। চুপচাপ পেছনে শুভ্রর সাথে বসে পড়ে। সামনে আর্থ,শশী। শুভ্রকে এতো লেটে আসতে দেখে আর্থ বলে,
“দিনদিন মেয়েদের মতো হয়ে যাচ্ছে। ওরা নাহয় মেকআপ করে তুমি ও কী মেকআপ করো? এতো লেট কেন?”

“আমার যে প্রতি’বন্ধী বউ আছে ভুলে গেছিস? এটা কী রে ভাই? সবকিছুতে লেট! আর তাড়াহুড়ো করলে তাড়াহুড়ো।”
তখন সেরিন শুধায়,
“আমি প্রতি’বন্ধী? ”

“দেখতে ভালো মেয়েদের মতো হলেও আচার আচরণ কিছুটা ওইরকম।”

“আসলে আগে আমি ভালোই ছিলাম। এক অটিস্টিকের সাথে বিয়ে হলো তার স্বভাব পুরোটা এখন আমার মাঝে। এটার নতুন নাম প্রতি’বন্ধী।”

“আমি অটিস্টিক?”

“তা নয়ত কী রে ভাই? আমি তো আগেই জানতাম আপনার মাথায় সমস্যা। ওই যে রুলস দিতেন। সেটা ফ্যাক্ট না! আপনি স্বীকার করে নিন এটাই আসল কথা।”

“তেমায় নিয়ে আর কখনো যদি ঘুরতে বের হয়েছি তো আনার নামটাই পাল্টে দিও।”

“আর আমি সেরিন যদি আপনার সাথে কোথাও গিয়েছি তো আনার নামটাও আপনি পাল্টে দিয়েন।”

তাঁদের দুজনের ঝগড়া আর্থ,শশী বসে,বসে দেখছে। আর্থ ঝগড়া লাগিয়ে দিয়ে চুপচাপ গাড়ী চালাচ্ছে। ওইদিকে শুভ্র, সেরিন ঝগড়া করেই যাচ্ছে। তারা দাউদকান্দি তিতাস থানার দিকে যাবে কাশবাগানে। যদিও তিতাস এখন উপজেলা করা হয়েছে।

বেশীক্ষণ সময় লাগেনি তাঁদের। তিতাস কাশবাগানে এসে পিকচার,ভিডিও করে কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করলো তাারা। শরতের বিকেল, সুন্দর আকাশ,মৃদু বাতাস বেশ উপভোগ করার মতো। অনেক্ক্ষণ সময় কাটিয়ে তারা সন্ধ্যার দিকে রওনা হয় একটা রেস্তেরার দিকে। দাউদকান্দির ‘নিরিবিলি রেস্তোরাঁয়’ যায় তারা। সেখান থেকে হালকা খাওয়া-দাওয়া করে বেড়িয়ে পড়ে। বাড়ী ফিরতে,ফিরতে প্রায় নয়টার উপরে বেজে যায়। আর্থ সেরিন,শুভ্রকে গেটের সামনে নামিয়ে দিয়ে শশীকে পাটওয়ারী বাড়ীতে দিয়ে আসে। শুভ্র সামনে,সেরিন কিছুটা পেছনে বাড়ীর ভেতরে প্রবেশ করবে। তখন সেরিনের চোখ যায় কব’রস্থান আর বাড়ীর পেছনের দিকে। সে তো ভুলেই গিয়েছিলো সেদিনের কথা। শুভ্রর প্যারায় আর মনে থাকে নাকী এতো কথা। কয়েকদিন পর তো ঢাকায় চলেই যাবে আর কবে দেখবে বাড়ীর পেছনের রহস্য?

আনমনা হয়ে ভেতরে যায় সেরিন। বাকীরা লিভিং রুমে কেউ আসছে তো কেউ বসে আছে। আরফিন চৌধুরী বিডির বাইরে আছেন। আয়মান চৌধুরী এবং সুলতানা খানম ঢাকা থেকে বাড়ী এসেছেন কয়েকদিন হলো। শুভ্র তাঁদের সাথে বসে কথা বলছে। সেরিন নিঃশব্দে উপরে যায়। ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। আজকাল এতো প্রেশার ভালো লাগছে না তার। পড়াশোনা আবার মিউজিক একাডেমি তারউপর রেজাল্ট খারাপ হলে শুভ্র তার খবর করে দিবে। পড়াশোনা যেই কঠিন সেরিনের ফিউচার বাদ দিয়ে কান্না করতে মন চাচ্ছে। শুভ্রকে বলতে মন চাচ্ছে পড়াশোনা করবো না আমি। এসব ভালো লাগে না। তারউপর ইন্টারের পড়া যেই কঠিন। প্রাইভেট আর ল্যাব ক্লাসে দৌড়াতে,দৌড়াতে জীবন অর্ধেক তেজপাতা। শুভ্র তার জামাই ভালো হলেও টিচার হিসাবে আজো ব’জ্জাত রয়ে গেলো। একটা রুলস ও চেঞ্জ করেনি। অবশ্য এখনো শুভ্রর চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করতে ভুলে না সেরিন।

শুভ্র রুমে এসে দেখে সেরিন চিৎ হয়ে পড়ে আছে। ঘড়ির কাটা সাড়ে নয়টা। আজকে পড়াশোনা হয়নি সেরিনের, সেটা শুভ্রর মনে আছে ভালো করেই। ফ্রেশ হয়ে সেরিনকে ডেকে তুলে শুভ্র। ভীষণ টায়ার্ড সেরিন তাও উঠে বসে। কখন আবার এই লোকের টেম্পারেচার গরম হয়ে যায়।

“কফি আনবো নাকী এখন?”

“পড়ালেখা নেই?”

“আমি বিয়ে করেছি কী পড়ালেখা করার জন্য নাকী? এই দেখুন আমি একটা মানুষ রোবট নই। এই বা’লের পড়াশোনা আমার জন্য না। প্লিজ আমায় মন দিয়ে সংসার করতে দিন। পড়াশোনা করতে চাইনা আমি।”

“কমপক্ষে উচ্চ-মাধ্যমিকটা তো দিতে হবে।”

“তাহলে ঢাকায় পাঠানোর দরকার নেই। এতো প্যারা আমি নিতে পারবো না।”

“একবছরের কোর্স করো না? তারপর নাহয় চলে এসো।”

“ভাল্লাগে না তো।”

“আচ্ছা চলো তোমায় গল্প শোনাই।”

শুভ্রর কথায় সেরিন মাথা নাড়ায়। শুভ্র হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে পড়ে তার হাতের উপর সেরিনের মাথা। শুভ্র তখন বলে,
“জানো তো? আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমার আম্মুর এতো আদরের ছিলাম। আমার আম্মু না তখনকার একজন অভিনেত্রী ছিলেন। আমার বাবা আর মায়ের বিয়েটা লাভ ম্যারেজ ছিলো। তাদের ও সুন্দর একটা গল্প ছিলো। তবে আমার আম্মু তার ক্যারুয়ার বিয়ের পর সব ছেড়ে দেন। নিজের সংসারে মনোযোগ দেন। কী জানি! এতে সুখে কার নজর লাগে। আমি যখন দেশের বাইরে চলে যাই তার দুইমাস না যেতেই আমার আম্মু নাকী রোড এক্সিডে’ন্টে মা-রা যায়। আদৌ এর সত্যতা আমার জানা নেই। তারপর শোনলাম বাবার জীবনে নতুন নারী আসলো। অবশ্য আমার দাদীনের জন্য যদিও সে আব্বুর নতুন বিয়ের ছয় মাসের মাথায় গত হোন। জানো তো আমি না ভীষণ হার্ট হয়েছি। আমার বাবা তো আমার মাকে ভালোবাসতো তাহলে কী করে এতো সহজে নতুন কারোর সাথে জীবন বেঁধে নিলো? আমি গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করে বিডি আসি। অবশ্য আমার দাদার ইচ্ছেতে টিচার পদটা বেছে নেই। আমাদের কলেজের অনেক বেশী নাম-ডাক আছে, ছিলো। মাঝখানে একটু সমস্যা হয় তেমন দায়িত্বশীল ব্যক্তি এটার দায়িত্ব নেয়নি। র‍্যাগিং,রাজনীতি কিছুটা ঢুকে পড়ে। আমি যখন জয়েন করলাম তখন সবটাই চেঞ্জ করার চেষ্টা করি। আমার বাবা,আমার পরিবার রাজনীতির সাথে যুক্ত তবে আমি ছাত্রদের কোন দল বা লীগ করে দেইনা। ওদের ক্যারুয়ার গড়ার বয়স এখন! আমার বাবার পেছনে দৌড়ানোর দরকার নেই। তার জন্য যথেষ্ট মানুষ আছে। আসলে তোমরা বলো আমার মাথায় প্রব্লেম আমি উল্টাপাল্টা রুলস ক্রিয়েট করি। এটা আমি আমার স্টুডেন্টদের ভালো ভেবেই করি। তাঁদের একটা সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য করি। আমি আসলে এতোটা রুড ছিলাম না। তবে সব ঠিক ঠাক করার জন্য একটু তো রুড হতেই হয়। এতোসব কিছুর পরেও আমার সুন্দর একটা মন আছে যেই মনে বসত করে একটা মেয়েফুল। মেয়েফুলটা আমার ভীষণ প্রিয় অর্ধাঙ্গিনী।”

“সবই বুঝলাম। আসেন এবার আদর করি আপনায়।”

#চলবে

#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৩০|
#শার্লিন_হাসান

সেরিনের কথায় শুভ্র তার দিকে তাকিয়ে বলে,
“তুমি আসলেই একটা ঠোঁটকাটা সেরিন। মুখে কিছু আটকায় না।”

“এ্যাই আপনি কী পরপুরুষ? দেখুন আপনি আমার বিয়ে করা জামাই তো আপনায় আদর বা করলে কাকে করবো?”

“পড়াশোনায় মনোযোগ দাও।”

সেরিন মুখ ভেংচি কাটে সেই সাথে পড়ালেখার চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে। কী এক পড়ালেখার ভূত তার বরের মাথায় ঢুকলো! তার জীবনটা তেজপাতা করে দিচ্ছে। শুভ্র সেরিনের দিকে তাকিয়ে রয়। জানে সেরিন তার চৌদ্দ গুষ্টি ধুয়েমুছে দিয়েছে অলরেডি। কিছু বলাও যায়না মেয়েটাকে মনে,মনে এই পর্যন্ত কত হাজার গা’লি যে দিলো হিসেব নেই।

*******
পরের দিন সেরিন কলেজে যায়। নিশাতের সাথে তার দেখা হয়। অবশ্য অনেকদিন হলো পাটওয়ারী বাড়ীতে যাওয়া হয়না। সেরিন মাহীর সাথে নিশাতের সম্পর্কের কথা জিজ্ঞেস করে। যদিও আজকাল এসব খোঁজ নেওয়া হয়না সেরিনের। নিশাত প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য বলে,
“তা সংসার জীবন কেমন কাটছে তোদের?”

“আরে এটা পরেও বলা যাবে। আমি যেটা জিজ্ঞেস করেছি সেটা তো বল?”

“না এমনিতে মাহীকে জাস্ট আমি বড় ভাইয়ের মতো ভাবতাম। আমাদের মাঝে কোন রিলেশন ছিলো না।”

“আর ইউ ম্যাড? তাহলক এতোদিন কী ছিলো? ভাইয়া সিরিয়াস!”

“এই কোন ম্যাচিউর ভালো ছেলেরা প্রেম করতে আসবে না তারা ডিরেক্ট বিয়ে করে। লাইক শুভ্র স্যারের মতো। সবটা হালাল ভাবে! এসব দুইদিনের দুনিয়ায় প্রেম আবার কী?”

“যাহ তোকে আমার ভাইয়ের বউ বানাবো না।”

“হতে চাই ও না।”

নিশাতের কথায় সেরিন বেশী পাত্তা দেয়না। হয়ত রাগ করে বলছে। দু’জনে ক্লাস শেষ করে বাইরে আসে।

“ঢাকায় যাচ্ছিস কবে?”

“এই তো সামনের উইকে।”

“ওহ্! আচ্ছা দোয়া রইলো তোর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য।”

নিশাত বিদায় জানিয়ে চলে আসে। সেরিন চৌধুরী বাড়ীর উদ্দেশ্য হাঁটা ধরে। কলেজ চত্বর পেড়িয়ে রাস্তার সাইডে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে গিয়েও থেমে যায়। একটা গাড়ী তার দিকেই আসছিলো। সেরিন কিছুটা থমকে যায়। গাড়ীটা আর থামেনি সোজা রাস্তায় চলে যায়। খুব সাবধানতার সাথে সেরিন রাস্তা পার হয়। বাড়ীর গেট দিয়ে ঢুকে সোজা পেছের সাইডে চলে যায়। মাথার উপর যে একটা সিসি ক্যামেরা লাগানো মনে নেই সেরিনের। বাড়ীর পেছনে যায় শুধু দেওয়াল আর কিছুই নেই। সেরিন কিছুটা অবাক হয়। হাত ভোলায় দেওয়ালে। সব মিথ্যে মনে হলেও কিছু সত্য আড়ালে আছে সেরিন বিশ্বাস করে। দেওয়ালে টোকা মেরে বুঝার চেষ্টা করে ভেতরে ফাঁকা আছে কীনা।

তখন কারোর পায়ের শব্দে সেরিন ভয় পেয়ে যায়। জান্নাতুল ফেরদৌস তার কাছেই আসছে। সেরিন নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে। তখন জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন,
“এই দুপুর বেলায় এদিকে কেনো? দেখছো না কবরস্থান? ”

“এটা কার ক’বর?”

“তোমার বড় শাশুড়ীর।”

“উনি মা-রা গেলো কীভাবে?”

“হার্ট অ্যাটাক করে।”

“ওহ্!”

সেরিন আর কথা বাড়ায়না। জান্নাতুল ফেরদৌসকে পাশ কাটিয়ে চলে আসে।

বিকেলে শুভ্র বাড়ী আসতে সেরিন ব্যপারটা বলে। শুভ্র সেসবে পাত্তা দেয়না। সে এসব কে সেরিনের ওভার থিংকিং বলে ভেবে নিয়েছে।

সন্ধ্যায় সেরিন কিচেনে যায়। আজকে বুয়াই রান্না করছে। জান্নাতুল ফেরদৌস আজকে আর আসেনি। সেরিন নিজের কাজ সেরে রুমে চলে যায়।
শুভ্র ল্যাপটপে অফিসের কাজ করছিলো। সেরিন তার চিঠি সমূহ বের করে। শুভ্রর সামনে দু’টো চিঠি দিয়ে বলে,
“এগুলো তো আমি দেইনি। এই একে খুঁজে পেয়েছেন?”

“যেই দিয়েছে তোমার খুব ঘনিষ্ঠ কেউই এই কাজটা করেছে।”

“এমাহ! আমি যে আপনায় চিঠি দিতাম এটা কেউই জানতো না। এমনকি নিশাত বা শশীও না।”

“তুমি বড্ড বোকা সেরিন। এখনো মানুষ চেনোনি।”

“হইছে ভালো হইছে আমি বোকা। আপনি একমাত্র চালাক। যান সরুন তো! কথায়,কথায় আমায় ছোট প্রমাণ না করলে হয়না। ক্লিয়ার করে কথা তো জীবনেও বলেননা।”

“এই তুমি এমন ত্যাড়ামী করছো কেন?”

সেরিন চিঠিগুলো হাত দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। উঠে যেতে নিবে শুভ্র হাতে টান দিয়ে বসিয়ে দেয়। চোখ রাঙিয়ে বলে,
“বেশী বেড়ে গেছ তুমি। মাইর চেনো মাইর? মাইর দিবো সত্যি!”

“ক্লিয়ার ভাবে কথা বলুন?”

“চিঠি গুলো সুন্দর ভাবে রেখে দাও। এগুলো আমার জিনিস তুমি ছুড়ে ফেলার কেউ না।”

“এগুলো তো আমিই দিয়েছি।”

“দিয়েছো! এখন তোমার অধিকার নেই এসবের উপর। লাইক তোমার অবস্থা, গিফ্ট দিয়ে আবার ফেরত চাও,অধিকার খাটাতে চাও।”

সেরিন চিঠিগুলো ড্রয়ারে রেখে দেয়। আর বেশীদিন নেই কুমিল্লায়। সে ঢাকায় ব্যাক করবে। অথচ শুভ্রর একটু মন খারাপ ও হচ্ছে না। সেরিন কতগুলো মাস দূরে থাকবে ভাবলেই মন খারাপ তার। অথচ শুভ্রর এসবে মাথা ব্যথা নেই।

********

এরই মাঝে কেটে যায় অনেকগুলো দিন। সেরিন ঢাকায় শুভ্র কুমিল্লায়। শশীর বোর্ড এক্সাম ও শুরু হয়ে এখন শেষের দিকে। সেরিনের ব্যস্ত সময় কাটছে। তার আন্টি আর আন্টির বাচ্চা, সিদরাত আর আয়াশের সাথেও তার বেশ ভালো সময় কাটে। মাঝেমধ্যে ছাদে যায়। আদ্রিতার সাথে মিউজিক একাডেমিতে ডেইলি দেখা হয়। শুভ্র বলেছে আদ্রিতার সাথে গিয়ে কয়েকদিন তার মেঝো আম্মুর বাসায় থেকে আসতে। আয়মান চৌধুরী, সুলতানা খানম তারাও সেখানে আছে। সেরিন আজকে ক্লাস শেষ করে সন্ধ্যার দিকে আদ্রিতা সহ রওনা দেয়। শুভ্রর বউ আসবে জেনে মিরা ইসলাম বেশ এক্সাইটেড। বেশী কাছে থাকতে না পারলেও সেরিনকে সবাই যথেষ্ট আদর যত্ন করে। তাদের বড় ছেলের বউ বলে কথা।

সেরিন যেতে তাকে নিয়ে মিরা ইসলাম ব্যস্ত হয়ে পড়েন।আজকাল অধরা আর আদ্রিতার পাত্তা মেলে না তার কাছে। আরাফ চৌধুরী ও সেরিনকে বেশ স্নেহ করেন। বাসায় প্রবেশ করতে সুলতানা খানম এগিয়ে আসেন। সেরিনকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু একে দেন।

“আমাদের সাথে একবার গিয়ে কুমিল্লায় ঘুরে এসো।”

“তোমার ছেলে শোনলে বকা দিবে। ওনার জন্যই আমি কিছু বলতে পারি না। জানোই তো ধমক একটা দিলে চারদিন অজ্ঞান থাকার মতো অবস্থা।”

“আচ্ছা শুভ্রকে বলে দিবো।”

সেরিন ভেতরে যায়। মিরা ইসলাম এসে তাকি জড়িয়ে ধরে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে। আদ্রিতা ফ্রেশ হয়ে আসতে সেরিন যায়। তাকে এতোক্ষণ বাকীরা সবাই ঘিরে রেখেছে। “শুভ্রর বউ” সম্মোধন টা সেরিনের বেশ ভালোই লাগে। একসময় এই ডাকটা শোনার ইচ্ছে ছিলো। এখন তা পূরণ হয়েছে। সন্ধ্যাটা সবার সাথে বেশ ভালোই কাটে সেরিনের। যদিও শুভ্রর সাথে আজকে কথা হয়নি তার। সবার থেকে একটু আড়াল হয়ে শুভ্রকে কল দেয় সেরিন। তার মনে অভিমান স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। কুমিল্লায় বসে,বসে শুভ্র রুলস বানায় সেরিনের জন্য। বিষয়টা সেরিনের বিরক্ত লাগে। শুভ্রর কাছে যাওয়ার বায়না ও করতে পারেনা। মুখের উপর ধমকে না করে দেয়।

“কথা বলছো না কেন?”

শুভ্রর কড়া কন্ঠে সেরিনের ধ্যাণ ভাঙে। কন্ঠস্বর খাদে নামিয়ে বলে,
“আমি কুমিল্লায় যাবো।”

“আর্থর বিয়ের সময় এসো।”

“বাবু হলে কোলে নিতে দিবো না কিন্তু।”

“আগে নিজে বড় হও তারপর বাবুর চিন্তা। আর আমার বাবুকে আমি কোলে নিবো। এটায় কারোর পারমিশনের দরকার নেই। শুভ্র নিজের রুলসে চলতে পছন্দ করে। আর তুমি, যা বলি তাই সুন্দর ভাবে পালন করবা নাহলে বাবুর আম্মু বানাবো না তোমায়।”

“এই ফাউ আলাপ করার জন্য কল দিয়েছি নাকী আমি? আমার সময় আর টাকা দু’টোই লস। শালা আমার কপাল টাই খারাপ।…

” তুমি গা’লি দিচ্ছো আবার?”

“এমাহ আপনি মিস করেন না আমার গালি গুলো?”

“বেয়া’দব মেয়ে।”

“তোর ন আকার না ন ঈকার নী র…

” চ’ড়িয়ে সোজা করে দেবো ফাজিল মেয়ে কোথাকার। এই তুই তোকারী আর একবার করে দেখো শুধু!”

“কী করবি বল? এই তোকে আমি ভয় পাইনা। একদম ভয় পাইনা। আমি সত্যি কুমিল্লায় যাবো দেখবো তুই কী করতে পারিস। আর তোকে বলছি চোখ এদিকওদিক কোন মেয়ের দিকে গেলে তোর চোখ তুলে এনে স্যুপ বানিয়ে কাটা চামচ দিয়ে খাবো।”

“এই তুমি আমায় থ্রেট দিচ্ছো?”

“ভাগ্য ভালো থ্রেট দিচ্ছি এখন অব্দি তোর মাথায় থা’প্পড় দেইনি। এই তুই এসব আজাইরা রুলস কোথা থেকে আমদানী করিস বলতো? আমার জীবনটা শেষ তোর রুলস মানতে,মানতে।”

“দেখো পাখি তুমি মাথা গরম করো না। আচ্ছা সমস্যা নেই কুমিল্লায় চলে এসো তোমার একটু ব্রেক প্রয়োজন সাথে বাবুর পাপার আদর। আচ্ছা চলে এসো।”

“ঠিক ধরেছেন।”

“আচ্ছা বাবুর আম্মু তুমি চলে এসো তাড়াতাড়ি। তোমায় আদর করবো।”

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে