#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|২৭|
#শার্লিন_হাসান
পরেরদিন প্রায় বারোটার দিকে শুভ্র রেডি হয়ে বসে আছে। কুমিল্লায় যাবে তার কাজ আছে। আজকে কলেজ যায়নি সে! তখন সেরিন ওয়াশরুম থেকে শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে। হাতে তার ভেজা তোয়ালে। শুভ্রকে এমন সেজে বসে থাকতে দেখে সেরিন জিজ্ঞেস করে,
“কোথায় যাবেন?”
“কুমিল্লায়।”
“এতো সেজেগুজে যাওয়ার কী আছে?”
“তোহ যাবো না? তুমি কী বলো আমি পাগলের মতো যাবো?”
“আপনার বড় কিডনিটা কই জানি?”
হাতের তোয়ালটা সোফার উপর রেখে খাটে বসে থাকা শুভ্রর কাছে যায় সেরিন। আশেপাশে হাতড়ে কিছুই ফেলো না সে। শুভ্র তাকিয়ে আছে তার দিকে। তখন সেরিন হাত নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে,
“আপনার আইফোনটা দিন তো?”
শুভ্র পকেট থেকে ফোন বের করে সেরিনের হাতে দেয়। সেরিন কী করলো কে জানে! পাঁচ মিনিটের মাথায় ফোনটা আবার ফেরত দেয় শুভ্রকে। শুভ্র হোয়াইট এবং ব্লাক কালারে নিজেকে সাজিয়েছে। সেরিন তার শার্টের কলারে হাত ভোলায়, মুখ এদিকে-ওদিক করে দেখে। শুভ্র বিরক্তি নিয়ে সেরিনের হাত সরিয়ে দেয়।
“তোমার হাত থেকে ময়লা আমার সাদা শার্টে লেগে যাবে।”
“আমি মাত্র শাওয়ার নিয়ে এসেছি ময়লা আসবে কোথা থেকে?”
“তাহলে এমন হাতাহাতি করছো কেন?”
“শার্ট চেন্জ করুন।”
“জানি আমায় বেশী সুন্দর লাগছে তাই হিংসে হচ্ছে তোমার। অন্য মেয়েরা না তাকিয়ে থাকে। আমি জানি তো তুমি একটা হিংসুটে মেয়ে।”
সেরিন কাবাড থেকে একটা শার্ট বের করে শুভ্রর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
“হোয়াইট আর ব্লাক শার্ট পড়ে বাইরে বের হওয়া নিষেধ।”
“তুমি যে নিজের পিক ফেসবুকে আপ দাও। তখন তো কত ছেলেরা তোমায় দেখে আমি কিছু বলি?”
“আপনাকে আমি বারণ করেছি নাকী কিছু বলতে?”
কথাটা বলে সেরিন শুভ্রর ফেসে দৃষ্টি পাত করে। সেরিনকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে শুভ্র বলে,
“যেভাবে তাকাচ্ছো নজর তো তুমি লাগিয়ে দিবে। মানুষ আর কী তাকাবে। আমি জানি আমি সুন্দর এভাবে তাকিয়ে আর বুঝাতে হবেনা।”
“আরে আপনার ঠোঁট গুলো সুন্দর লাগছে। চুমু খাওয়াই যায়!”
“আমি এখন বাইরে বের হবো।”
“চুমু খেলে প্রেগন্যান্ট হবেন না যে বাইরে বের হলে মুখ দেখাতে পারবেন না।”
“তোমার মুখে কিছু আটকায় না।”
সেরিন শুভ্রকে আর কিছুই বলার সুযোগ দেয়নি। শুভ্রর পাশে বসে নিজের অধর জোড়া শুভ্রর অধরে ছুঁয়ে দেয়। শুভ্র সেরিনকে কিছুটা ছাড়িয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। শুভ্রর হাব-ভাব সেরিনের পছন্দ হলো না। হাতের কাছে থাকা শার্টটা শুভ্রকে দিয়ে বলে,
“চেন্জ করে আসুন তো।”
“আরে আমার লেট হয়ে যাচ্ছে।”
“আজকে রুমে জায়গা হবে না।”
“সমস্যা নেই। আমাদের বাড়ীতে কী জেনো একটা আছে। রুমে,রুমে ঘুরে বেড়ায়। অবশ্য বেশী মানুষ থাকলে দেখা যায়না সেটাকে। একা থাকলে আসে আর চোখের সামনে ঘুরঘুর করে সাদা শাড়ী পড়ে। তুমি দেখবা বাট একটা শব্দ মুখ দিয়ে বের করলে তোমার গলা চেপে ধরবে।”
“তাড়াতাড়ি চলে আসবেন প্লিজ। আমি ছোট কাকীমার কাছে গেলাম। আপনি আসলে তারপর রুমে আসবো।”
“ঠিক আছে। আমি গেলাম।”
শুভ্র কয়েক কদম ফেলতে সেরিন তাকে থামিয়ে দেয়। শুভ্রর সামনে দাঁড়িয়ে কপালে আঙুল রেখে বলে,
“বাইরে যাওয়ার সময় কপালে চুমু দিয়ে যেতে হয়।”
শুভ্র চুপচাপ সেরিনের কপালে চুমু দিয়ে বেড়িয়ে যায়। শুভ্র যেতে সেরিন কোনরকম তৈরী হয়ে ওরনাটা নিয়ে সুলতানা খানমের রুমের দিকে ছুটে। তখন সুলতানা খানম সোফায় ল্যাপটপ নিয়ে ব্যস্ত। এই পরিবারে সবারই ব্যস্ততার শেষ নেই।চ তার শাশুড়ী,ছোট শাশুড়ী তারা বেশীরভাগই ল্যাপটপের সাননে বসে থাকে। আর্থ তার বড় বাবার রাজনীতি নিয়ে সময় কাটায়। আয়মান চৌধুরী আর্থকে হেল্প করে আবার তিনি ঢাকা চলে যান। আর্থর বাবা মা,বোন তারা সব ঢাকায়। আদ্রিতাও ঢাকায়। নিজেদের স্টাডি,ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত। বাকীরা অফিস, বিজন্যাস আর রাজনীতি নিয়ে।
সুলতানা খানমের সাথে কিছু সময় কাটিয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসের রুমের দিকে যায় সেরিন। তিনি কলে কারোর সাথে কথা বলছেন। সেরিনকে দেখে কল কেটে দেয়। অনুমতি পেতে সেরিন ভেতরে প্রবেশ করে। জান্নাতুল ফেরদৌস সেরিনকে এটা,ওটা জিজ্ঞেস করে। এক পর্যায়ে তিনি মালিথা পরিবারের কথা তোলেন। সেই সাথে আর্শিয়া এবং আর্শিয়ার আম্মুর কথা। সে কী প্রশংসা করলেন আর্শিয়ার। সেরিনের পছন্দ হয়নি বিষয়টা। তবে কিছু বলছেও না। তখন জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন,
“চেয়েছিলাম আর্শিয়াকে শুভ্রর সাথে বিয়েটা দিয়ে আমাদের সম্পর্কটা আরো মজবুত করবো। কী জানি শুভ্রর কী হলো। সেখানে তো সব ঠিকই হয়েছিলো। তোমার তো বয়স অল্প! সেই সাথে শুভ্রর সাথেও তেমন যায় না।”
“আসলে ঠিক বলেছেন শুভ্রর সাথে আমার যায় না কারণ আমি শুভ্রর থেকেও বেটার কাউকে ডিজার্ভ করি।”
সেরিনের কথায় রাগ হয় জান্নাতুল ফেরদৌসের। কিন্তু তিনি প্রকাশ করেননা। হাসি মুখে বলেন,
“যাই হোক! ছেলে দু’টো একই পরিবারে গেলো। তাঁদের লাইফ তাদের চয়েজ।”
“ঠিক বলেছেন। যার, যার জীবন তার, তার পছন্দ। এসব নিয়ে বেশী খোঁচাখুঁচি ও ভালো না। এমনিতে আমি মেয়েটা খুব ভালো তবে কেউ অপমান করলে আপস করি না। দুই লাইন শোনালে চার লাইন শুনিয়ে দিতে পারি।”
জান্নাতুল ফেরদৌস আর কিছু বলেননা। সেরিন তার রুম থেকে প্রস্থান করে। আজকে শুভ্র আসুক শুধু। এই আর্শিয়ার জন্য তাকে ছোট করলো। কে বলেছে আর্শিয়াকে দেখতে যেতে?
ভূতের ভয় ত্যাগ করে সেরিন রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দেয়। বেলকনিতে যায়! সেখানে একটা দোলনা জুলানো আছে। বেলকনির সামনে বাগান বিলাসের ফুল ফুটে আছে। গেটের দিকে নজর দেয় সেরিন। রোড দিয়ে কত গাড়ী আসা যাওয়া করছে।
শুভ্র বাড়ী ফিরতে,ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। সেরিন মাগরিবের নামাজ পড়ে সবে বসেছে। তখন শুভ্র তার হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দেয়। সেরিন জিজ্ঞেস করে,
“কী আছে এটায়?”
“তোমার জন্য চকলেট।”
“ওহ্!”
সেরিন প্যাকেটটা রেখে বসে পড়ে। শুভ্র ফ্রেশ হয়ে এসেও দেখে সেরিন আনমনা হয়ে বসে আছে। চকলেটে হাত দেয়নি।
“যাও আমার কফিটা নিয়ে আসো।”
সেরিন সোজা নিচে যায়। কিচেনে যেতে একজন বুয়া একটা ট্রেতে দুটো কফির মগ এগিয়ে দেয়। তখন আবার জান্নাতুল ফেরদৌস কিচেন আসেন। সেরিন তাকে দেখে বলে,
“আপনি কিচেনে?”
“না আসলে রান্না করবো।”
“কেনো? সারাদিন অফিসের কাজ করে রান্না করার মুড থাকে?”
“না আমার ভালো লাগে।”
“আমি আসছি আপনায় হেল্প করবো।”
“ঠিক আছে এসো।”
সেরিন ট্রে নিয়ে উপরে যায়। টেবিলের উপর ট্রে রেখে চলে আসে। সেরিনের এমন ইগমোর শুভ্র বুঝতে পারছে না। নিজের কফির মগ নিয়ে সোফায় বসে শুভ্র।
সেরিন জান্নাতুল ফেরদৌসকে রান্নায় হেল্প করে। শাশুড়ী বউমা মিলে রাতের ডিনার তৈরী করে। তখন জান্নাতুল ফেরদৌস আলাদা প্লেটে খাবার তুলে রাখেন। সেরিন কৌতুহল দমাতে না পেরে বলে,
“ওই পুরোনো প্লেটের খাবার কার জন্য?”
“এমনিতে! আমি সবসময় রাখি।”
“ওহ্!”
সেরিনের সন্দেহ হয়। তবে কিছু বলেনা। তখন আবার একজন সার্ভেন্ট এসে তাকে বলে, শুভ্র ডাকছে। সেরিন উপরে যায়। রুমে প্রবেশ করতে শুভ্র রাগী স্বরে বলে,
“পড়ালেখা নেই তোমার? নিচে এতো সময় কী?”
“রান্নায় হেল্প করছিলাম।”
“বাড়ীতে যথেষ্ট কাজের লোক আছে। তোমার এখন এসব করার সময় না।”
সেরিন কিছু বলেনা। বই নিয়ে বসে পড়ে। শুভ্রও আর কিছু বলেনি।
“আগামী কাল থেকে ক্লাসে রেগুলার হইবা। আর ঢাকায় ব্যাক করতে হবে না।”
সেরিন কিছু বলেনা। শুভ্র ধমকে বলে,
“কী বলেছি শুনেছো তো? তোমার তো আবার মনে থাকে না।”
“শুনেছি।”
“তো প্রতিবন্ধীর মতো চুপ করে বসে আছো কেন? কিছু তো বলবা।”
“বেশী কথা বললে আপনি বিরক্ত হবেন।”
“তোমার আজকে আবার কী হয়েছে? মুড এমন কেনো?”
“তো হবে না? আর্শিয়াদের বাড়ী গিয়েছিলেন কেনো? আর্শিয়া সুন্দরী তো সেই সুন্দরীকেই নিজের বউ করতেন। কে বলেছে সেরিনকে বিয়ে করতে? আসলে আপনি আর্শিয়াকেই ডিজার্ভ করেন আর আমি আপনার থেকেও বেটার কাউকে।”
“তোমায় এসব কে বললো?”
“যে বলেছে,বলেছে।”
“না বললে কী আর করার।”
#চলবে
#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|২৮|
#শার্লিন_হাসান
“তো হবে না? আর্শিয়াদের বাড়ী গিয়েছিলেন কেনো? আর্শিয়া সুন্দরী তো সেই সুন্দরীকেই নিজের বউ করতেন। কে বলেছে সেরিনকে বিয়ে করতে? আসলে আপনি আর্শিয়াকেই ডিজার্ভ করেন আর আমি আপনার থেকেও বেটার কাউকে।”
“তোমায় এসব কে বললো?”
“যে বলেছে,বলেছে।”
“না বললে কী আর করার।”
“আপনি এমন ত্যাড়া কেনো? একনাম্বারের তেঁতো লোক! আচ্ছা শুনুন আজকে শাশুড়ী আম্মা আমায় ছোট করে কথা বলেছে। আমায় নাকী আপনার সামনে মানায় না! আর্শিয়া হলে ঠিক হতো।”
“আরে ওনার কথায় কান দিও না তো। উনি এমনই!”
কথাটা বলে শুভ্র সেরিনকে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরলো। সেরিন শুভ্রর দিকে তাকিয়ে হেঁসে দেয়। সেরিনকে হাসতে দেখে শুভ্র তার কপালে অধর ছোঁয়ায়।
“যাও ড্রেসিং টেবিলের উপর কিছু ফুল রাখা আছে। দেখো তোমার পছন্দ হয় কীনা!”
সেরিন শপিং ব্যাগ আনে। তাতে বেলিফুল,গোলাপ ফুলের মালা আবার ফুলের হাতের চুড়ি, ফুলের ক্রাউন আছে। সেরিন শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে,
“আজকে তো শাড়ী পড়িনি।”
“এখন পড়বা?”
“শিওর?”
“যাও আমি ওয়েট করছি।”
সেরিন কাবাড থেকে একটা শাড়ী বের করে মেরুন কালারে। পাশের চেন্জিং রুমে গিয়ে চেন্জ করে আসে। সাজগোছ নিয়ে সে পাক্কা। বিশমিনিটের মধ্যে শাড়ী পড়ে আসে সেরিন। কোমড় অব্দি সরু চুলগুলো এলোমেলো। সেরিন আসতে শুভ্র তাকে হাতের চুড়ি আর মাথার ক্রাউন পড়িয়ে দেয়। মুচকি হেঁসে বলে,
‘এতোগুলা ফুল তাঁদের সৌন্দর্যে তোমায় মুড়িয়ে নিয়ে তোমার সৌন্দর্যকে শোভা দিচ্ছে। কিন্তু তুমি কী জানো? সবগুলো ফুলের মধ্যে এই ‘মেয়েফুলটি’ আমার ভীষণ পছন্দের।’
“আপনি জানেন? আমায় নিয়ে এতো সুন্দর কমপ্লিমেন্ট দেওয়া মানুষটা আমার ভীষণ প্রিয়!”
শাড়ী পড়ার উসিলায় সেরিন আজকের মতো পড়ার হাত থেকে বেঁচে যায়। রাতে সবার সাথে ডিনার করে রুমে আসে। তার ব্যক্তিগত পুরুষের বুকে নিজেকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নেয়। এই জায়গাটা সেরিনের সবচেয়ে শান্তির।
********
অনেকদিন পর শুভ্রদের কলেজে পা রাখে সেরিন। নিশাতের সাথে তার অনেকদিন পরেই দেখা হয়। দুই বান্ধবীর সে কী আনন্দ! অনেকে সেরিনকে প্রশ্ন করছে ঢাকা থেকে চলে আসলো কেন। সেরিনের একটাই উত্তর, ‘পরিবার ছাড়া থাকতে ভালো লাগে না। আর পড়াশোনার প্রেশার বেশী মিউজিক একাডেমিতে যাওয়ার সময় নেই।’
আর কেউই কিছু বলেনা। সেরিন পড়াশোনা নিয়ে আজকাল একটু বেশী সিরিয়াস। নাহলে তার যেই বর!গলার উপর মাথা তার একটাই আছে। তবক মাঝেমধ্যে শুনতে পায় শুভ্রর বিয়ে নিয়ে গসিপ হচ্ছে। সেরিন সেসব শুনে আর হাসে।
এভাবেই সেরিন শুভ্রর ব্যস্ত জীবন কাটছে। সেরিন তার গান, পড়াশোনা, শুভ্র এসব নিয়ে সুন্দর একটা সময় কাটাচ্ছে।
সেদিন রাতে ডিনার করে সেরিন কিচেনের দিকে যায়। ভেতরে জান্নাতুল ফেরদৌস আছেন। বাকীরা সবাই অনেক্ষণ আগেই উপরে চলে গেছে। মূলত শুভ্রর কফির জন্যই কিচেনে যায় সেরিন। পুরো লিভিং রুম ফাঁকা। জান্নাতুল ফেরদৌসকে দেখে কিছুটা সরে আসে সেরিন। সেদিকটায় আর যায় না।
খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে বেড়িয়ে আসে জান্নাত। এক হাতে তার টর্চ লাইট! সেরিন খেয়াল করে তিনি লিভিং রুম এবং বাইরের লাইট অফ করে দিয়ে মেইন ডোর খুলে বেড়িয়ে যান। সেরিন অন্ধকারে হাতড়ে লাইট অন করে। পাশে একটা টেবিল রাখা সেখান থেকে একটা ক্যান্ডেল নেয়। সেটা জ্বালিয়ে সেরিন ও বাইরে যায়। চারদিকে অন্ধকার তারউপর এই সাইডে কবরস্থান। হালকা মৃদু বাতাস বইছে। মোমবাতির আলো বাতাসে নিভু নিভু হয়ে জ্বলছে। সেরিনের গা কাটা দিয়ে উঠে। সে জানে না কোনদিকটায় যাবে। কবরস্থানের সোজা বাড়ীর পেছনের দিকে যায় সেরিন। কিছুই দেখতে পেলো না সে। শুধু সাদা দেওয়াল! সেরিন কখনো বাড়ীর পেছনে আসেনি। এই প্রথম তাও মধ্যরাতে। মোমবাতির আলোয় সাদা দেওয়ালে সেরিনের অবয়ব ভয়ংকর রকমের দেখা যাচ্ছে। সেরিন মনে,মনে দোয়া দুরুদ পড়ে বাড়ীর ভেতরে চলে যায়। শুভ্রর কফি বানবে কী মোমবাতি হাতে নিয়েই কোনরকম রুমে যায়। সে ভীষণ নার্ভাস। ভেতরে এসেই মোমবাতি হাত থেকে ফেলে দেয়। হাত-পা ভীষণ রকমের কাঁপছে তার। সেরিনের অবস্থা দেখে শুভ্র কিছুটা ঘাবড়ে যায়। তড়িঘড়ি সেরিনকে ধরে এনে বিছানায় বসায়।
“সেরিন তুমি ভয় পেয়েছো?”
“বাড়ীর পেছনে কিছু আছে।”
“তুমি কী দেখেছো?”
“কেউ আছে বাড়ীর পেছনে যার জন্য প্রতিদিন আম্মু খাবার নিয়ে যায়।”
কথাটা নার্ভাসের ঠেলায় আন্দাজি ঢিল মারে সেরিন। তবে সে শিওর না। শুভ্র ও কিছুটা চিন্তায় পড়ে যায়। সেও এই ব্যপারটা দেখতে গিয়েছিলো তখন মাথায় আঘাত পায়। সেরিনকে রেখে বেলকনিতে যায় শুভ্র। বাইরে অন্ধকার। তাঁদের বাড়ীর সামনে আর পশ্চিম সাইডে সিসি ক্যামেরা লাগানো তবে পূর্ব সাইডে লাগানো নেই। ওইদিকে কেউ যায় ও না। বিল্ডিংয়ের দেওয়ালে পাশেই তাদের বাড়ীর দেওয়াল তেমন জায়গাও নেই। শুভ্র আর কিছু বলেনা। সামনে সেরিনের ইয়ার ফাইনাল এক্সাম। তার কয়েকদিন পর ঢাকায় পাঠিয়ে দিবে শুভ্র। আর এক্সাম দিবে না একবারে উচ্চমাধ্যমিক এসে দিবে। আপাতত মিউজিক একাডেমিতে ক্লাস করবে।
শশীর ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার বেশী দেরী নেই। সেজন্য আর্থর সাথে যোগাযোগ তেমন নেই। সে পড়াশোনা নিয়ে বিজি। এক্সামের পরপরই তাদের বিয়ে।
সাহিনূর পাটওয়ারী অক্ষরের জন্য মেয়ে দেখছেন। কোন ভাবে মালিথা পরিবারের একমাত্র মেয়ে আর্শিয়ার খোঁজ পান। তিনি এখন আর্শিয়াকে ছেলের বউ করার জন্য পড়েছেন। অক্ষর দেশে এসেছে অনেক দিন হলো। যাওয়ার সময় ও ঘনিয়ে এসেছে। এবার আর দেরী করবেন না তিনি। মালিথা পরিবারের একমাত্র মেয়েকে খান বাড়ীর পূত্র বঁধু করে নিয়ে আসবেন।
*******
কলেজে শুভ্র নিজের রুমে বসে আছে। ফাস্ট ইয়ারের পরীক্ষা চলছে তার কলেজে। তখন একটা মেয়ে আসে তার রুমে। মেয়েটাকে চিনতে ভুল হয়নি শুভ্রর। এটা আর কেউ না নিশাত। শুভ্রর থেকে অনুমতি ও নেয়নি নিশাত সোজা রুমে ঢুকে যায়। নিশাতের কাজে শুভ্র কিছুটা অবাক হয় তবে তেমন পাত্তা দেয়না। ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর বর।
“শুভ্র আজকাল চিঠি আসে না বুঝি?”
“ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট। এখন আমি তোমার বান্ধবীর জামাই নই টিচার। ওকে? আর শুভ্র বলার আগে সাথে স্যার বা চৌধুরী পদবিটা ইউস করো।”
“আমি আমার লিমিট একটুও ক্রস করিনি মিস্টার শুভ্র চৌধুরী ওরফে আমার সতীনের একমাত্র বর।”
“বাহ্! তা বলবো তোমার বান্ধবীকে তার কাছের বান্ধবী তারই বরের দিকে নজর দিয়েছে। চালাকী করতে চেয়েছো তুমি তাইনা? তোমার দেওয়া ভুলভাল চিঠি আমি পুড়িয়ে দিয়েছি।”
“চিঠি পুড়েছে কোন মহাভারত অশুদ্ধ হয়নি। এক উপায় না থাকলে অন্য উপায় তো আছে। কী জেনো নাম? আচ্ছা আমার ভাইকে চেনেন?”
“এসব চিনে আমার কোন কাজ নেই।”
“গুড! যখন কাজে লাগবে চিনে নিবেন প্লিজ।”
নিশাত হেঁসে বেড়িয়ে আসে। শুভ্র চিন্তিত হয়ে বসে পড়ে। এই নিশাত মেয়েটার পরিচয় আসলে কী? আর সেরিনের সাথে সম্পর্ক কবে থেকে? মেয়েটা তো আস্ত কালসাপ। শুভ্র বুঝতে পারছে ঘরে বাইরে তার সবই শত্রু। অথচ কেউই বুঝতে পারছে না। কোন একটা স্ক্যান্ডাল রটে গেলে সমস্যা। চিন্তা জেনো পিছু ছাড়ছে না তার।
সেদিনের মতো কলেজের কাজ শেষ করে বাড়ীতে আসে শুভ্র। বাড়ীতে তেমন কেউই নেই। আয়মান চৌধুরী, সুলতানা খানম, আর্থ সবাই ঢাকা। তার বাবা আরফিন চৌধুরী বিডির বাইরে আছে ইউকে-তে। বাড়ীতে শুধু সেরিন, শুভ্র আর শুভ্রর মা। কাজের বুয়া তেমন কেউই নেই একজন আছে।
সেরিনের ভালো লাগছে না চৌধুরী বাড়ীতে। পাটওয়ারী বাড়ীতে যাওয়ার জন্য মনে উতলা হয়ে আছে। শুভ্রকে বলতেও পারছে না। কারণ তার এক্সাম চলে আর শুভ্র সেরিনকে একমুহূর্তের জন্যও দূরে রাখতে রাজী না।
#চলবে