হৃদয় সায়রে প্রণয়ের ছন্দ পর্ব-২১+২২

0
533

#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|২১|
#শার্লিন_হাসান

হুম! একজনের প্রেমেই ভালো ভাবে পড়লাম। চঞ্চল মেয়েটার এতো গুণ এতো বুদ্ধি কোথা থেকে আসলো? যাই হোক তুমি পাশ করেছো।”

“ইয়ে না মানে বাবুর আব্বু এভাবে কেউ ভয় দেখায়?”

শুভ্র হাসে। তার হাসিটা স্নিগ্ধ লাগছে। মনে হয় সে প্রচুর খুশি। একহাতে আজকের চিঠিগুলো নেয় শুভ্র। দু’টো চিঠি এসেছে। একটর উপর অভিমান বার্তা লেখা শুভ্র সেটাই আগে খুলে দেখলো।
চিঠিটা,
অভিমান বার্তা:
‘বাবু আব্বু’
জানেন? বাবুর আম্মু মানে আমি একটা হার্টলেস মেয়ে মানুষ। সহজে কাউকে মনে বসাই না। যদি বলে ছেলে মানুষদের ইগনোরের কথা আমার মনে হয় আমি প্রথম হবো। না কোন ছেলে ফ্রেন্ড আছে, না ছেলে কাজিনের সাথে তেমন ভাব। বাট একজন ছেলে ছিলো যাকে প্রথম বার দেখে আমি তার এট্টিটিউডে ফিদা হয়ে যাই।
তবে অনেকটা এড়িয়ে যেতে চাইতাম। কিন্তু আমি তো তার ব্যক্তিত্বের প্রেমে পড়েছি যেটা থেকে বেড়িয়ে আসা সম্ভব না। চেহারা,কথাবার্তা, সৌন্দর্যের প্রেমে পড়লে হয়ত ভুলে থাকা যেতো কারণ তার থেকেও সুন্দর পুরুষ পৃথিবীতে আছে। কিন্তু আমি তো তার ব্যক্তিত্বে ডুবে যাই আর হুট করেই আমি তার মাঝে মজে যাই। তবে আমি তার সবটাকে ভালোবাসি। ভীষণ ভালোবাসি! তাকে চিঠি দিয়ে চিন্তায় ফেলতে আমার ভালো লাগে। ভীষণ ভালো লাগে!সে ব্যস্ত মানুষ, আমি যে ব্যস্ত নই এমনটাও না। আমার হাজারটা ব্যস্ততা থাকলেও তাকে চিঠি লেখার জন্য সময় আমি বের করি। আচ্ছা সে কেনো বুঝে না আমি তাকে ভীষণ ভালোবাসি? সে আমায় বকা দিক আমি শোনবো তাও ছেড়ে গিয়ে অন্য কারোর কারোর না হোক। কারন, ভালোবাসি তো! সবাইকে ইগনোর করে একমাত্র তাকে নিয়ে বুকে আশা পুষি। চিঠি লিখে তো আর সব বলা যায় না তবুও আমি লিখি। কিন্তু সে বুঝেও না বুঝার মতো করে থাকে। সে আমায় একটুও ভালোবাসে না। আবার ঠিকই কিছু হলে আমায় বকা দিতে আসে। আবার আমার গোপনে আমার ভয়েসের প্রশংসা ও করে! আমি তো সবই জানি! করতে হবে না প্রশংসা। সে আমার কোন কথাই রাখেনা। আমায় একটু প্রায়োরিটি ও দেয়না। ব’দলোক একনাম্বারের। আচ্ছা বলুন তো এতোক্ষণ কাকে এসব বললাম?
হ্যাঁ আপনাকে বলেছি। থাক আর কিছু বলবো না। যাই হোক বাবুর আম্মু অভিমান করেছেএএএএএ……!

শুভ্র চিঠিটা পড়ে হাসে। দ্বিতীয় চিঠিটা বের করে পড়ে সেখানে লেখা,
“আপনায় পাবো না বুঝেছিলাম সেদিন। তাই তো দূরে সরে যাওয়ার জন্য উতালা হয়ে গেলাম। কই আপনি তো ভালোবেসে হাত বাড়িয়ে আমায় আগলে নিলেন না? আপনি আমায় ভালোবাসেন না তাই তো আমায় অনুভব ও করতে পারেন না। যাই হোক আর হয়ত চিঠি আসবে না। ভালোবাসিইইইইইইইই!”

শুভ্র চিঠিগুলো একপাশে রেখে তাকায়। কণ্ঠস্বর খাদে নামিয়ে বলে,
“সেরিন তুমি তো চালাকী করলে। আমি তো প্রথমেই বুঝেছিলাম এটা তুমি। কিন্তু দ্বিতীয় চিঠিটায় তুমি আর্থ আর আমায় তালগোল পাকিয়ে লিখেছো। আর হ্যাঁ বললাম না? তুমি আর তো কারো নও শুধু আমার। যতদূরে সরে যাও রবে আমার।”

সেরিনের কেমন জেনো হাত কাঁপছে। মনে অদ্ভূত ঝড় তুলছে। নিজের ব্যালেন্স রাখতে পারছি না। মনে হয় এক্ষুনি পড়ে যাবে। শুভ্রকে সে ভয় পায়। ভয় পাওয়ারই কথা। ধমকা ধমকি, বদমেজাজি তাকে সব স্টুডেন্ট ভয় পায়। সেখানে সেরিন নগন্য একজন ব্যক্তি। সেরিনের অবস্থা বুঝে শুভ্র বলে,
‘রিলেক্স। এতো ভয় পাওয়ার কী আছে? আমি ধমকা ধমকি করি ঠিক আছে কিন্তু আমার কঠোরত্বের পেছনে সুন্দর একটা মন ও আছে। বুঝলে? এবার বলো ধরা দিলে না কেনো?”

“আর আমি ধরা দিলে বুঝি আপনার মনে আমায় নিয়ো জায়গা হতো? দু’টো থাপ্পড় দিয়ে তো দেওয়ালে পোস্টার বানিয়ে জুলিয়ে দিতেন।”

সেরিনের কথায় শুভ্র হাসে। পরক্ষণে বলে,
“চলো বাড়ীতে যাওয়া যাক। কেউ দেখলে কিছু বলবে না তবে বা’জে ধারণা পোষণ করবে।”

সেরিন মাথা নাড়ায়। তখন শুভ্র বলে,
” আমি আগে যাচ্ছি তুমি একটু পর আসো। হ্যাঁ আমাদের বাড়ীর গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে আমি আসবো পাঁচ মিনিটের মধ্যে।”

সেরিন পুনরায় মাথা নাড়ায়। শুভ্র দ্রুত পায়ে প্রস্থান করে। প্রায় আটটা বেজে যাচ্ছে। শুভ্র চৌধুরী বাড়ীর গ্যারেজে যায়। একজন সার্ভেন্টকে বলে তার কারের চাবি আনিয়ে নেয়। সবার কারের শেষের দিকে শুভ্রর কার রাখা। কারণ সে তেমন একটা কার নিয়ে বাইরে যায় না। তার কর্মস্থল যেহেতু তার বাড়ীর সাথেই।

সেরিন চৌধুরী বাড়ীর গেটের সামনে আসতে তখন শুভ্র আসে কার নিয়ে। ডোর খুলে দিতে সেরিন আশেপাশে তাকায়। তখন শুভ্র বলে,
“কেউ কিছু বলবে না। তুমি বোসো না?”

“বাড়ী যেতে হবে তো।”

“সেসব নিয়ে ভাবতে হবে না। আমি ম্যানেজ করে দিবো। আমার অনেক কথা আছে তোমার সাথে।”

সেরিন বসতে শুভ্র গাড়ী স্টার্ট দেয়। শুভ্র গাড়ী ড্রাইভ করছে আর বলছে,
“শোনো তোমার লেখা ভীষণ সুন্দর। তবে প্লান টাও নোবেল প্রাপ্ত। মানে কতটা গভীর ভাবে পরিকল্পনা করে কাজটা করা হয়েছে। আচ্ছা তোমার মনে একটু ভয় আসেনি? যদি সিসি ক্যামেরায় আমি তোমায় দেখে নিতাম।”

“দেখলেও চিনতে পারবেন না। আমি মুখ ঢেকেই আসতাম।”

“তোহ আর্থ আর আমায় গুলিয়ে ফেললে কেনো?”

“ইচ্ছে করেই। নাহলে সেরিনের গাড়েই দোষটা পড়তো। নামটা গুলিয়েছি যাতে আপনার ধারণা নড়বড়ে হয়ে যায়। যাই হোক সেরিন পাশ করেছে।”

“পাশ করলে লাভ হবে না। আমার বিয়ে ঠিক।”

“কোথায়?”

“গতকাল মেয়ে দেখতে গিয়েছে পরিবার। আম্মু তো রিং টিং পড়িয়েও ফেলেছে।”

“ওহ! তো আমায় গাড়ীতে বসালেন কেনো?”

“তুমি রেগে যাচ্ছো?”

“কিছু না।”

“যাই হোক তোমায় ধন্যবাদ আমায় নিয়ে এভাবে লেখার জন্য। আসলে মুড অফ থাকলে তোমার লেখা গুলো পড়ে হাসতাম আমি। হ্যাঁ তোমার চঞ্চলতা ঠিক আছে। সবসময় এমন হাসিখুশি থাকো দোয়া করি এজ এ টিচার হিসাবে তোমার বাবুর না হওয়া আব্বু হিসাবে বলো। যাই বলো!”

“শা’লা এমনে,এমনেনি তোরে কই মডুলাস। কত নাটক যে তুই দেখাইলি। এখন আবার নাটক করার জন্য আমায় নিয়ে আসছে। বা’লের প্রশংসা লাগবে না আমার। এই বা’ল বলার জন্য পা’গলের মতো কেউ গাড়ী নিয়ে ছুটে? যাহ বা’ল আজকের দিনটাই খারাপ। সেজন্য ধরা পড়ে গেলাম সেই সাথে ওনার বিয়ের কথাও শোনতে হলো।”

মুখটা বাঁকিয়ে মনে,মনে কথাগুলো বললো সেরিন। শুভ্র সেরিনের ফেসের রিয়েকশন দেখে মুখ টিপে হাসছে। শুভ্র পুনরায় বলে,
“আসলে তুমি অনেক বেশী ছোট একটা মেয়ে। বলা যায় খেলনা দিয়ে খেলার বয়স এখনো পার হয়নি তোমার। আবার কিসের বাবুর আম্মু,আম্মু করছো? লজ্জা-শরম কিছুই অবশিষ্ট নেই তোমার মাঝে।”

“আপনি আমায় জ্ঞান আর অপমান করার জন্য নিয়ে এসেছেন? আসলে আপনি একটা করলার জুশ। প্রতিদিন করলা খান সেজন্য মুখ দিয়ে তেতো কথা ছাড়া কিছুই বের হয়না। গাড়ী থামান আমি নেমে যাবো।”

“তোমার কাছে টাকা নেই যে অন্য গাড়ী দিয়ে যাবে।”

“সেটা আপনায় ভাবতে হবে না। বা’লের ভাষণ দেওয়া আর শেষ হলো না আপনার। একটা কথা মনে রাখবেন আমি সেরিন যদি আপনায় আমার বাবু কোলে নিতে দিয়েছি তো আমার নামটাই পাল্টে দিবেন।”

“তোমার বাবু আমি কোলে নিবো কেন? আমি আমার বউয়ের বাচ্চা বাবুকে কোলে নিবো। আর তোমার কার সাথে না কার সাথে বিয়ে হয়। আমি যাবো নাকী তোমার বাবুকে দেখতে?”

“আপনায় আমি কোলে নিতে দিলে তো নিবেন।”

“তোমার বাবু আমি কোলে নিবো না।”

“গাড়ী থামনননননন!”

শুভ্র গাড়ী থামায় না। সেরিনের জেলার্সি মুখটা দেখছে আর মজা নিচ্ছে শুভ্র। সেরিন বাইরের দিকে মন খারাপ করে তাকিয়ে আছে। তখন শুভ্র বলে,

“আল্লাহ আমি স্টুডেন্ট নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছি। আসতাগফিরুল্লাহ! আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। এমন বাচ্চা মেয়েকে কেনো যে গাড়ীতে তুললাম।”

সেরিন কিছু বলেনা। শুভ্র তখন সেরিনদের বাড়ীর দিকে গাড়ী ঘুরায়। সেরিনের কান্না পাচ্ছে। শুভ্র তাকে একটুও প্রায়োরিটি দেয়না। সে যে অভিমান বার্তা দিয়েছে সেটাতেও হেলদোল নেই। শুধু,শুধু সময় আর ঘুম নষ্ট করে এসব লিখলো। তাও গাড়ীতে বসিয়ে কত খোঁটা। সে নাকী বাচ্চা হ্যানত্যান। একটু প্রশংসার জন্য কেউ প্রপোজ করার মতো রিয়েকশন নিয়ে এভাবে গাড়ীতে বসায়? দূর সেরিন করলার জুশ তোর হবে না। তার বিয়ে ঠিক। হুদাই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করলি।

শুভ্র পাটওয়ারী বাড়ীর গেটের সামনে গাড়ী থামাতে সেরিন নেমে পড়ে। শুভ্রর সামনে এসে বলে,

“অন্য কাউকে বাবুর আম্মু বানিয়ে দেখিস শুধু। তোর খবর আছে। এই একদম আমি তোকে ভয় পাইনা। প্রথমদিন থেকেও না। আর তোর বা’লের প্রশংসা আমার লাগবে না। এমন কত হাজার প্রশংসা আমার অডিয়েন্স আনায় ডেইলি দেয়। তোর প্রশংসা তোর পকেটে ঢুকা। আগামী কালকে যদি তোর পরিবারকে না পাঠিয়েছিস তো তোকে তোর বাড়ীতে গিয়ে খু’ন করে আসবো। মনে রাখিস শুধু!”

সেরিন থ্রেট দিয়ে ভেতরে চলে যায়। শুভ্র হা হয়ে বসে আছে। সিরিয়াসলি তাকে এভাবে বলতে পারলো সেরিন? তাও তুই তোকারী করে? শুভ্র কী সেরিনকে বেশী মাথায় তুলে ফেলেছে? মেয়েটার কত বড় সাহস হলে তাকে চিঠি দিয়েছিলো আবার আজকে ধরা পড়েছে তাও একটু ভয় পায়নি। কী সুন্দর ভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো। মেয়েটার আসলেই ভীষণ সাহস! শুভ্র গাড়ী ঘুরিয়ে চৌধুরী বাড়ীতে চলল আসে।

সেরিন নিজের রুমে এসে দরজা অফ করে দেয়। বিরক্ত লাগছে সব কিছু। কেনো যে ধরা পড়ে গেলো। এতোদিন ধরা পড়লো না। ভুল হয়েছে চিঠিটা করিডোরের বেঞ্চের উপর রেখে দিলেই ভালো হতো। অন্তত শুভ্রর মুখে অন্য মেয়ের নামটা শুনতে হতো না।৷ সেরিনের দেখতে ইচ্ছে করছে কে সেই মহীয়সী নারী যে তার বাবুর আব্বুর উপর নজর দিয়ে বসেছে।

#চলবে

#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|২২|
#শার্লিন_হাসান

কান্না কাটি শেষ করে সেরিন ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসে। চুপচাপ নাস্তা করতে দেখে অনেক বাজার এসেছে। তাঁদের পরিচিত একজন সব বাজার লিভিং রুমের এক কোণে রাখে। মাহী ও পেছন দিয়ে বাজার আনছে। তার কাকীমা তুষি রেডি হয়ে নিয়েছে। তারা কুমিল্লা যাবে। সিহান পাটওয়ারী এবং কিরণ পাটওয়ারী সহ।
সেরিন চুপচাপ নাস্তা খাচ্ছে তখন আবার অক্ষর আসে। সেও সেরিনের সাথেই নাস্তা করতে বসে। কেউ কোন কথা বলেনি। তবে অক্ষরের মনে প্রশ্ন এতো বাজার কিসের? কোন গেস্ট আসবে নাকী?

পরক্ষণে ভাবলো হয়ত তাঁদের পরিবারের জন্যই। তারা তো এভাবেই বাজার করে নেয়। অক্ষর আবার বিকেলে চলে যাবে।

******

সবার সাথে বসে নাস্তা করে শুভ্র। তখন আরফিন চৌধুরী জিজ্ঞেস করেন,

“আর্শিয়াকে তোমার কেমন লাগলো?”

“হুম ভালো। তবে দুইদিন পর আমার বিয়ে পাটওয়ারী বাড়ীতে।”

শুভ্রর কথায় আরফিন চৌধুরী আয়মান চৌধুরীর দিকে তাকান। সেও হ্যাঁ বোধকে মাথা নাড়ায়। আর্থ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে খাবার খাচ্ছে। তবে তার বেশ হাসি পাচ্ছে জান্নাতুল ফেরদৌসের জন্য। বেচারির রিংটা খোয়া গেলো মাঝখান দিয়ে। তখন আরফিন চৌধুরী বলেন,
“সবাই রাজী তো?”

“হুম।”

“তাহলে আর কথা নেই। বিয়েটা অনুষ্ঠান করে হবে?”

“না পরিবারের কয়েকজন গিয়েই হবে। খুবই গোপনে। আদ্রিতা তো এসেছে এখন অধরা চাচ্চু,কাকীমাকে বলো চলে আসতে।”

“সে বলা যাবে। এখন সবকিছুর ব্যবস্থা তো করতে হবে।”

“বলছিলাম যে এখানে বিয়েটা না হলে হয়না? আর্শিয়া সেরিনের থেকে কম কোন অংশে?”

মাঝখান দিয়ে কথাটা বলেন জান্নাতুল ফেরদৌস। তখন আরফিন চৌধুরী বলেন,
“কথা মাঝে বা হাত ঢুকানো আমার পছন্দ না। এটা সম্পূর্ণ শুভ্রর ইচ্ছে। বিয়েটা ও করবে তুমি বা আমি না।”

“বাবা তুমি আবার বিয়ে করতে চাইছো?”

মাঝখান দিয়ে আর্থ আবার কথাটা বলে। আরফিন চৌধুরী কটমট চোখে তাকায়। আর্থ হেঁসে দিয়ে বলে,
“না ঠিকই বলেছো। ওনার উচিত হয়নি বা হাত টা ঢুকানো।”

“তোমার ও উচিত হয়নি আমাদের মাঝে নাক গলানোর।”

কঠোর গলায় বলেন আরফিন চৌধুরী। মূহুর্তে থমথমে নিরব পরিবেশ। আদ্রিতা আর্থর দিকে তাকিয়ে হাসছে। তার ভাইটা একটু বেশী বলে সবসময়। তবে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে শুভ্র এবং আরফিন চৌধুরীর কথা শোনার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে আদ্রিতা।
তখন মৌনতা বজায় রেখে শুভ্র বলে,
“আজকে সন্ধ্যায় কুমিল্লা যাবো। যা,যা কেনাকাটা আছে করে নেবো। বাকী গুলো আগামী কালকে।”

“তাহলে ঠিক আছে। পাটওয়ারী পরিবার আসবে না বাড়ীতে?”

“আসার আর কী আছে। আমাদের যা কথা হওয়ার আগেই হয়ে গেছে। আর ওনাদের মেয়েকে জায়গা দেওয়ার জন্য রুমের অভাব নেই সো নতুন করে কিছুই দেখার নেই।”

শুভ্রর কথায় সম্মতি দেন আরফিন চৌধুরী। তাদের দলের কয়েক জনকে বলে সবকিছুর বন্দোবস্ত করতে। আরফিন চৌধুরী এসিস্ট্যান্ট সাথে আয়মান চৌধুরী এবং আর্থর ও কয়েকজন বিশ্বস্ত ছেলে তাঁদের ডাকা হয় চৌধুরী বাড়ীতে। কিছু হেল্প লাগবে সেজন্য।

সেদিনের মতো শুভ্র কলেজে চলে যায়। তার রুমে এসে চিঠিগুলো আবার পড়ে আর হাসে শুভ্র। বেচারী সেরিনের অভিমান বার্তায় সায় দেয়নি সে। বাকী কথা পরে বলবে সেজন্য বেশী গুরুত্ব দেয়নি।

*************

শপিং শেষ করে বাড়ী ফিরতে,ফিরতে রাত হয়ে যায়। তবে চৌধুরী পরিবারের গাড়ীর সাথে তাদের গাড়ী জ্যামে দেখা হয়েছে। তার আসছে আর চৌধুরী পরিবার মাত্র যাচ্ছে। সবকিছু তাড়াতাড়ি হচ্ছে বিধায় তেমন একটা উত্তেজনা নেই। বাড়ীর রাস্তায় আসতে তুষি বলে,
“ভাইয়া সেরিন জানে তো ওর বিয়ে?”

“বলবো একটু পর। গিয়ে আগে ফ্রেশ হই।”

বাড়ীতে এসে ফ্রেশ হতে সাইয়ারা কোল্ড ড্রিং দেয়। সেই সাথে খাবার বেড়ে দেয়। শশী শপিং ব্যাগ গুলো সব তাঁদের গেস্ট রুমে নিয়ে রেখেছে। একটু পর দেখবে।

তবে সেরিনকে কিছুই জানানো হয়নি। সিহান পাটওয়ারী বলেনি তাই কারোরই সাহস হয়নি বলার। যদি বকা শোনতে হয়। এই পরিবারের কর্তা সিহান পাটওয়ারী। তার মত আর কথা ছাড়া কিছুই হয়না। আর একবার মত দিয়েছে মানে এটাই হবে। কেউ কিছু বলার ও সাহস করতে পারে না।

শশী লিভিং রুমে এসে বলে,
“আসো না তাড়াতাড়ি আমার ধৈর্য কুলোচ্ছে না।”

“তাহলে তুমি তোমার ফুফিকে আর জেম্মাকে নিয়ে দেখে নেও। তবে সেরিনকে এখন ডেকো না। আমাদের কাজ আছে।”

সিহান পাটওয়ারী বলেন। তখন শশী তার ফুফিকে আর জেম্মাকে টেনে সেই রুমে নিয়ে দরজা অফ করে দেয়।
বিয়ের ব্যপারটা মোটামুটি সবাই জানে। শুধু সেরিন ছাড়া। সাহিনূর পাটওয়ারী কিছু বলতে পারছেন না। সিহান পাটওয়ারীর মুখের উপর কিছু বলার সাহস ও তার নেই। যথেষ্ট শ্রদ্ধা ভক্তি করেন তিনি তার বড় ভাইকে।

চৌধুরী পরিবারের মেয়ে সদস্যদের জন্য শাড়ী, শারোরা কেনা হয়েছে। পুরুষদের জন্য পাঞ্জাবি। যদিও পরে বড় করে অনুষ্ঠান হবে। সেগুলোতে আর হাত দেয়নি শশী। সে হলুদের জামাকাপড় দেখছে। সেরিনের জন্য কাঁচা হলুদ কালারের জর্জেট লং গাউন সাথে সি গ্রীন কালারের জর্জেট ওরনা। স্টোনের কাজ করা সেরিনের জন্য কেনা হয়েছে। শশীর ভীষণ পছন্দ হয় গাউন টা। সেসব রেখে বাকী জামাকাপড় দেখে।তার জন্য সী গ্রীন কালারের শারোরা কেনা হয়েছে। সাফা,রাফা,সেরিনের কাজিন মেহেরের জন্য ও শারোরা। তবে ভিন্ন কালারের।

সবকিছু প্যাক করার জন্য ঢালা ও আনা হয়েছে। একটু পর নাকী রাফা,সাফা আসবে। মেহেরের টা শিওর নেই।
মাহী গিয়েছে হয়ত মেহেরকে আনার জন্য।

শশী সেসব রেখে সেরিনের রুমে যায়। তখন সেরিন ফোনে ব্যস্ত। সে বাইরের দুনিয়ার খবর জানে কীনা সন্দেহ। লাইট অন করতে দেখে সেরিন মন খারাপ করে শুয়ে আছে। শশী তাকে টেনে বসায়।

“আজকে রুম থেকে বের হওনি কেনো?”

“এমনিতে! ভাল্লাগে না।”

“বফের সাথে ঝগড়া?”

“ইন্টারেস্টিং আমার বফ আছে?”

“নেই তো জানি।”

“হুম।”

তার পেছন দিয়ে মেহের সেরিনের রুমে প্রবেশ করে। সেরিন মেহেরকে দেখে নেমে হাগ করে। এর পেছন দিয়ে রাফা,সাফা আসতে তারা কিছুক্ষণ আলিঙ্গন করে। সেরিনকে নিয়ে লিভিং রুমে যাওয়া হয়। তবে সবই আগের মতো।

সেরিন সেখানে বসেই শুভ্রকে নক দেয়। মেসেজটা কিছুটা এরকম,
“কই আপনি?”

সাথে,সাথে সীন হতে রিপ্লাই আসে,
“কুমিল্লায় এসেছি। কোন দরকার?”

“আমার চকলেট লাগবে। প্লিজ পাঠিয়ে দিন।”

“কাকে দিয়ে পাঠাবো?”

“আপনি আসুন। গেট দিয়ে প্রবেশ করে সোজা বিল্ডিংয়ের উত্তর সাইডে আমার বেলকনির সামনে আসবেন।”

“লেট হবে। এই রাত বারোটা একটা বাজতে পারে।”

“সমস্যা নেই আপনি আসবেন এটাই আসল কথা।”

“ঠিক আছে।”

সেরিন মেসেজ সীন করে বেড়িয়ে পড়ে লাইন থেকে। যদিও দুপুরে একটু কথা হয়েছে তাঁদের। সেটাও সেরিনের আজাইরা বকবক। তাকে একটুও প্রায়োরিটি দেয়না মেইন টপিক এটাই। নাহলে এই প্রায়োরিটির উপর একশ মেসেজ দেওয়া হয়েছে। শুভ্র মেসেজ পড়ে আর হাসে। মেয়েটাকে যা চঞ্চল ভেবেছে তার থেকেও ওভারঅল। সেরিন আড্ডা রেখে খুশি মনে রুমে চলে আসে। ব্যাগ থেকে একটা শোপেজ বের করে। সেটাতে একটা কাপল আর উপরে লেখা “Babur PaPa” সেটা প্যাক করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সেরিন।

সেরিন যেতে তারা চারজন রুমে ঢুকে দরজা লক করে দিয়ে ঢালা সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। চৌধুরী পরিবারে মেয়ে মাত্র দু’জন। তাঁদের জন্য একটা আর মহিলা তিনজন তাদের জন্য আরেকটা। মিষ্টি, ফল সব কিছু ঢালায় প্যাক করে নিতে,নিতে অনেকটা সময় কেটে যায়।

কুমিল্লা থেকে ফিরতে,ফিরতে রাত বারোটা বেজে যায়। তবে শুভ্র আর্থ আর আয়মান চৌধুরীকে বাড়ীর সামনে নামিয়ে দিয়ে পাটওয়ারী বাড়ীর দিকে গাড়ী নেয়। মাহীকে মেসেজ দিয়ে বলে গেট খোলা রাখতে। শুভ্র গেটের সামনে গাড়ী রেখে ভেতরে প্রবেশ করে সেরিনকে নক করে। সোজা সেরিনের বেলকনির সামনে চলে যায়। বেলকনিতে একটা দরজা লাগানো আছে যেটা দিয়ে বাইরে যাওয়া যায় আবার ভেতরে আসা যায়। শুভ্র একটা কার্টুন সেরিনের হাত ধরিয়ে দিতে সেরিন ‘ধন্যবাদ’ জানায়। শুভ্র আর কিছু বলেনা। সেরিন প্যাক করে রাখা শোপেজের বক্সটা শুভ্রকে দেয়। শুভ্র চুপচাপ সেটা হাতে নেয়। তবে সেরিন কথা না বলে থাকতে পারলো না। শুভ্র বায় বলতে সেরিন বলে,
“একদম এক পা ও নড়বেন না। নাহলে খবর আছে।”

“এই তুমি এতো থ্রেট দেও কেনো?”

“দিবো না?”

“আচ্ছা বলো কী বলবে?”

“বলুন যে…”

“বলো?”

“সেরিন।”

“তারপর?”

“সেরিন আমি তোমাকে ভালেবাসি।”

“পারবো না। তোমায় না বলেছি আমার আকদ হয়ে গেছে।”

“তোর আকদের নানীর….

বলার আগে শুভ্র বলে,
” একবারে থাপ্পড় দিয়ে বেলকনির গ্রিলে জুলিয়ে দেবো। এতো গালি কার থেকে শিখেছো তুমি? আমি কে হই ভুলে গেছো? বে’য়াদব মেয়ে! আর কখনো আমার সামনে গা’লি দিয়ে দেখো শুধু তোমার কী হাল করি। এখন আসি সময় নেই এসব ফাল’তু কথা বলার।”

শুভ্র মেজাজ দেখিয়ে চলে যায়। সেরিন সেদিকে তাকিয়ে রয়। হাতের বক্সটা নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে ভেতরে চলে আসে। শুভ্র তাকে কতগুলো বকা দিলো। -“আসলেই কী বেশী গা’লি দেই আমি?”

নাহ আর গা’লি দেওয়া যাবে না। সেরিন কার্টুন খোলতে দেখে পুরো কার্টুন ভর্তি চকলেট সাথে ছোট্টো একটা চকলেট কেক। যেটার উপরে লেখা, ‘Ugly meye vlo hoye jao’

সেরিন কিছু চকলেটস খায়। বাকী গুলো সাফা,রাফা,মেহেরের জন্য রেখে দেয়।

শুভ্র বাড়ী ফিরে সোজা নিজের রুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। তার খাটটা কেমন জেনো নড়বড় করছে। যাই হোক চেন্জ করতে হবে হয়ত। শুভ্র আর মাথা ঘামায় না সেসবে।

রাত তিনটায় কাজ শেষ করে সেরিনের রুমে আসে ওরা চারজন। আজকে তারা পাঁচজন একসাথে ঘুমাবে। ঘুমাবে বললে ভুল হবে গল্প করেই সময় পার করে দিবে। রুমে আসতে সেরিন থমথমে মুখ করে কেকটা ওদের সামনে রাখে। সাথে চকলেট গুলোও। কিছু পিকচার তুলে এই তিনটা বাজেই ডে দেয় সেরিন। কেক টেক কেটে আড্ডা দিতে,দিতে ফজরের আজান দিয়ে দেয়। আড্ডা ছেড়ে তারা এবার শুয়ে পড়ে।

#চলবে

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং🖤)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে