#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|১৯|
#শার্লিন_হাসান
দিনটা শুক্রবার। চৌধুরী বাড়ীর সদস্যবৃন্দ নিজেদের সব ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে তৈরী হয়ে নেয়। সময়টা সাড়ে বারোটার মতো। সবার সাথে শুভ্র ও নিজেকে তৈরী করে নেয়। জুমার নামাজ নামাজ আদায় করে তারা গাড়ীতে বসে।
আর্থ, শুভ্র তারা একসাথে যাবে। বড়রা ফ্যামিলির বড় কারে করে পাটওয়ারী বাড়ীর উদ্দেশ্য রওনা হয়। শুভ্র কিছুটা মন মরা হয়ে আছে। আর্থ তাকে খোঁচা মেরে বলে,
‘ভাবী নেই দেখে?’
‘কিসের ভাবী? আমার বিয়ে করা বউ না যে ভাবী বলবি তুই।’
‘আরে ইয়ার এতো চাপ নেওয়ার কিছু হয়নি। অন্য জায়গায় পাত্রি দেখছি। বাবার বন্ধুর মেয়ে! জোশ হবে ব্যপারটা।’
‘হুহ্!’
শুভ্র কিছুটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। পাটওয়ারী বাড়ীতে আসে তারা সবাই। লিভিং রুমে সবার আনাগোনা। কিরণ পাটওয়ারী এবং সিহান পাটওয়ারী, অক্ষর তারা খাবার সার্ভের দায়িত্বে আছে। দুপুরের খাবার খেয়ে তারা সবাই কথাবার্তা বলে। বিশাল লিভিং রুমের একপাশে ছোট্ট করে ডেকোরেশন করা। ডেকোরেশন সোফার সামনে ছোট্ট টেবিলের উপর তিনটা কেক রাখা। সাথে কেক জাতীয় কিছু খাবার রাখা। শশীকে আনা হলে আর্থকে নিয়ে সোফায় বসানো হয়। সেখানেই তারা দু’জন দু’জনের অনমিকা আঙুলে রিং পড়ায়। কিছু পিকচার ক্যাপচার করে নেয় সবাই। শশীর দু’জন মেয়ে কাজিন! রাফা এবং সাফা একটা ছেলে কাজিন রিহাভ আছে তাঁদের সাথে। রাফা সেরিনকে ভিডিও কল দিয়ে দেখাচ্ছে। রাখার পেছনেই শুভ্র দাঁড়ানো। সেরিনে হাসিমুখ টা তার চোখে ভাসছে। এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে মেয়েটা। শুভ্র তাকে দেখছে। কেক টেক কেটে সবার সাথে পিকচার তুলে নেয় সবাই। বিকেলের দিকে তাঁদের জন্য নাস্তার হরেকরকমের আইটেম রাখা হয়। অক্ষরের সাথে শুভ্র,আর্থর পরিচয় হয়। শুভ্রর বিরক্ত লাগছে অক্ষরকে। তারউপর অক্ষর মাহির থেকে তার ফোন নিয়ে সেরিনকে ভিডিও কল দিয়ে শুভ্রর পাশে বসেই কথা বলছে। যেখানে শুভ্রর প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে অন্য প্রতিষ্ঠানের স্টুডেন্ট আসলে তাকে গেট আউট বলে তাড়িয়ে দেয় শুভ্র সেখানে তার পার্সোনাল গায়িকাকে নিয়ে তার সামনেই রংঢং করে কথা বলছে। শুভ্র হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নেয়। কপাল স্লাইড করে। ব্লুটুথ কানে গুঁজে গান শোনে যাতে অক্ষরের কথা কানে না আসে। তবুও মাঝেমধ্যে ফোনের স্ক্রিনে নজর পড়ে যায় তার। সেখানেও সেরিন হাসি মুখে অক্ষরের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত। অক্ষর আর্থ,শশীকে দেখাচ্ছে পেছনের ক্যমরায়। তখন আবার শুভ্র উঠে অক্ষরের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তার হাতের ধাক্কায় ফোন ফ্লোরে পড়ে যায়। ঘটনাটা এক্সিডেন্টলি হলেও শুভ্র প্রচুর খুশি হয়েছে।
অক্ষর ফোন উঠিয়ে দেখে কিছুই হয়নি। সেরিন জিজ্ঞেস করে,
‘কী হয়েছে? হাত থেকে ফোন পড়ে গেলো কীভাবে?’
‘শুভ্র ভাইয়ার হাতের ধাক্কা লেগে।’
‘ওহ্! আচ্ছা রাখি আমি বায়।’
‘বায়।’
সেরিন কল কেটে হাসতে থাকে। তার কেনো জেনো ভীষণ হাসি পাচ্ছে। তবে সে ভীষণ মিস করছে সবাইকে। অক্ষরের সাথেও তার কথা বলা কমাতে হবে। সে চায়না অক্ষর তার প্রতি দুর্বল হয়। সে নাহয় এজ এ সিস্টার হিসাবে কথাবার্তা বলবে। বাট অক্ষর! সে তো সেসব মানবে না।
পাটওয়ারী বাড়ী থেকে সন্ধ্যায় কফি পান করে সবাই বিদায় নেয়। চৌধুরী পরিবার যেতে শশী তার রুমে এসে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে পড়ে। পেছন দিয়ে সাফা রাখা আসে। তারাও শশীর পাশে বসে। রাফা বসততে,বসতে বলে,
‘ওই যে ফর্সা করে লম্বা ছেলেটা কে রে?’
‘শুভ্র স্যার?’
‘কী জানি! দেখে শুভ্র,শুভ্রই লাগে।’
‘বল তাকে দিয়ে তোর কী কাজ?’
‘ভালো লেগেছে তাকে। কথাবার্তায় কঠোরত্বো প্রকাশ পেয়েছে। যাই হোক গম্ভীর লোকটাকে আমি ভালো লেগেছে। একটু সেটিং করিয়ে দে।’
‘সিরিয়াস?’
‘হুম।’
রাফার কথায় শশী বলে,
‘ওনার ফেসবুক আইডিটা নিয়ে নে, আরজিন চৌধুরী শুভ্র। এবার যা করার করতে পারিস। আই হোপ ইমপ্রেস হবে না।’
‘ইমপ্রেস হবে না কেন?’
‘আরে ভদ্র এবং বুদ্ধিমান লোকেরা কখনো প্রেম করে না। তার ডিরেক্ট বিয়ে করে।’
‘তো সমস্যা কী কয়দিন কথা বলে ডিরেক্ট বিয়ে।’
শশী আর জবাব দেয়না। সে ফ্রেশ হয়ে কড়া করে কফি খেয়ে। লাইট অফ করে শুয়ে পড়ে। তাকে যাতে আর কেউ ডাক না দেয়।
এদিকটা সামলে সাফা,রাফা,রিহাভ,অক্ষর,মাহী তারা আড্ডা দিতে বসে। বিশেষ করে বিয়ে নিয়ে প্লানিং তাঁদের। রাখা বার-বার মাহিকে বলছে,
‘শুভ্র স্যারকে ইমপ্রেস করবো। প্লিজ ভাই হেল্প কর।’
রাফার কথায় বাকীরা কথা থামিয়ে তার দিকে তাকায়। রাফা ও বোকা বনে যায়। সে কী এমন বললো যে এভাবে তাকাতে হবে? তখন রাফা বলে,
‘এভাবে তাকানোর কিছুই হয়নি। আমি তো আমার মাইন খুঁজছি।’
তখন মাহি শুধায়,
‘তোমার মাইন অন্য কারোর ইনবক্সে সাইন করছে। সো প্যারা নিও না! অক্ষর ভাইয়াকে কাজে লাগাও।’
তখন অক্ষর বলে,
‘ছেলে দেখলেই কী নিজের সম্পত্তি মনে হয় নাকী? আর সবাই সিঙ্গেল বসে নেই। সবারই একজন করে মাইন আছে।’
‘তাহ আমাদের অক্ষর ভাইয়ার মাইন টা কে?’
রিহাভ শুধায়। তখন অক্ষর বলে,
‘হুম আছে তো একজন!’
‘ভিনদেশী নাকী?’
‘না বাঙালি অষ্টাদশী কন্যা ।’
অক্ষরের কথা সবাই তার দিকে তাকায়। রাফার শরীর আগুনের মতো জ্বলছে। অক্ষর আর মাহী তাকে ঠান্ডা মাথায় অপমান দিলো। করবে না সে প্রেম! ছেলেদের থেকে দূরে থাকবে। ও কী ওদের মতো বারো রাইস নাকী যে প্রেম করবে। আর বললেই কী প্রেম হয়ে যায়? একদম না! অক্ষরকে অ’পমানের জবাব না দেওয়া অব্দি শান্তি নেই রাফার।
সেদিনের মতো তাা তাঁদের আড্ডা পাট চুকিয়ে নেয়। সবাই ক্লান্ত তাই যে যার মতো শুয়ে পড়ে।
*******
সেরিন সকাল,সকাল ঘুম থেকে উঠে কফির মগ নিয়ে আয়াশের সাথে ছাদে যায়। কেউই উঠেনি তেমন তাই তো ছাঁদে আসার দুঃসাহস দেখিয়েছে সে। আয়াশ,সেরিন দুজন রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে সামনের গেটের পরের মেইন রোড দেখছি। মানুষের আনাগোনা দেখা দিয়েছে। তখন আবার ছাঁদে আসে এক যুবক। সেরিন তাকে দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। চোখে কালো ফ্রেমের চশমা। উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের বরণ! সেরিনের মুখটা চেনাচেনা লাগলেও ক্যাচ করতে পারছে না আপাতত। ছেলেটা ছাঁদের এক কোণে গিয়ে কিছুটা ঠান্ডা বাতাস গায়ে নিচ্ছে। সেরিন চুপিসারে সরে আসে আয়াশকে নিয়ে। সেরিনের যাওয়া টের পেয়েও আড়চোখে তাকায় তাতান। হ্যাঁ মেয়েটাকে সে চেনে। সুন্দর গান গাইতে পারে। তাতান ছোটোখাটো একজন ফ্যান। সেরিনের ফেসবুক পেজ ফলো করে সে! মোটামুটি মেয়েটার ভালো অডিয়েন্স আছে। আর সেদিন মিউজিক একাডেমিতে দেখেছে। এডমিশন নিয়েছিলো মেয়েটা।
সেরিন ফ্লাটে ঢুকে কফির মগটা টেবিলের উপর রেখে তার আন্টির কাছে কিচেনে যায়। সে নাস্তা বানানোর কাজে ব্যস্ত। সেরিনকে দেখে সানজিদা শারমিন বলেন,
‘পড়তে যাও দু’দিন পর এক্সাম। আমি নাস্তা দিয়ে আসবো।’
‘আরে খালামনি পড়বো এখন একটু একটা গান দেখি। বিকেলে সেটার ভিডিও বানাবো।’
‘আচ্ছা যাও।’
সেরিন রুমে এসে ফোন হাতে নেয়। একটা গান সে নেয় সেটা হলো, ‘এই অবেলায় তোমারি আকাশে’ সেরিন গানটা শোনে। এর আগে একবার কোন ভিডিওতে শুনেছিলো ভালো লেগেছে। সময়ের অভাবে তেমন ঘেঁটে দেখা হয়নি। তবে আজকে সে ঘেঁটে দেখছে। ফেসবুক ক্রোল করার সময় শার্লিন হাসানের লেখা ধারাবাহিক চলমান গল্প #হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ সামনে আসে। গল্পটায় দুষ্টুমিষ্টি ক্যামিস্ট্রির সেরিন প্রতিদিন গল্পটা পড়ে।🤭
গল্প পড়া শেষ করে সে গানটা শোনে,
এই অবেলায়, তোমারি আকাশে, নিরব আপোষে
ভেসে যায়
সেই ভীষন শীতল ভেজা চোখ
কখনো দেখাইনি তোমায়
কেউ কোথাও ভালো নেই যেন সেই
কতকাল আর হাতে হাত অবেলায়?
কতকাল আর ভুল অবসন্ন বিকেলে
ভেজা চোখ দেখাইনি তোমায়।
অবাক জোছনায় লুকিয়ে রেখেছি
ভেজা চোখ দেখাইনি তোমায়।(ক্রমশ)
সেরিন গানটা শোনে তার প্রিয়দের তালিকায় যুক্ত করল নেয়।
সময়টা ব্যস্ততায় কাটলেও একটু অবসন্নতা! ভেতর জুড়ে মন খারাপ তার। তবুও সেসব উপেক্ষা করে নিজেকে নিজের মতো করে গুছিয়ে নিচ্ছে। কিছু জিনিস না পাওয়াতে সুন্দর। কিছু গল্প অপূর্ণতাতে মানান সই! কিছু চাওয়া বিসর্জন দিয়ে স্থান ত্যাগ করাই উত্তম।
******
রবিবার দিন সকালে শুভ্র কলেজে উপস্থিত হয়। আজকে তার জন্য রঙিন বক্সে মোড়ানো কোন উপহার এসেছে। শুভ্র রঙিন বক্স টা নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। কেচি দিয়ে স্কচটেপ কেটে ভেতরে কী আছে দেখে। তেমন কিছু না শুধু একটা লাভসেপের কুশনের মতো যেটা উপরে লেখা, ‘Babur Papa’ সাথে কয়েকটা চিরকুট। তাতে লেখা,
‘ভেবেছিলাম চিঠি দেওয়া বন্ধ করে দেবো। গত দুইদিন দিতে পারিনি। মাত্র একটা চিঠি দিয়েছি কিন্তু মন টানে না তাই তো গতানুগতিক ধারায় চিঠি দিয়েই যাচ্ছি। কেমন আছো বাবুর আব্বু?’
শুভ্র চিঠি দেখে মেজাজ হারায়। গত চিঠিটা ও আবোলতাবোল লেগেছে তার কাছে। এই চিঠিটা তো একবারে বিরক্তিকর। অপরিচিতার লেখা এমন ডাস্টবিন মার্কা হতে পারে না। শুভ্রর ডাউট ফিল হচ্ছে। অপরিচিতা এমন চিঠি লেখে বিষয়টা হাস্যকর লাগলো। শুভ্র সিদ্ধান্ত নেয় চর চিঠি গ্রহণ করবে না যাই আসবে সে ডাস্টবিনে ছিঁড়ে ফেলে দিবে।
সেরিন এক্সাম দিয়ে বাসায় আসে দেড়টায়। শাওয়ার নিয়ে লান্স করে রেডি হয়ে নেয়। মিউজিক একাডেমিতো যাবে সে। সন্ধ্যার মধ্যে ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরবে। নিজের ব্যাগে পানির বোতল,হাল্কা খাবার সাথে ফোনটাও নিয়ে নেয়। একাডেমিতে বসেই আজকে একটা ভিডিও মেক করবে।
রিকশা ধরে একাডেমির গেটের সামনে আসে সেরিন। তার মতো কয়েকজন ও নতুন এসেছে। কেউ বা অনেকটা এগিয়ে। গিটার বাজানো সেরিন মোটামুটি আয়ত্ত করতে পারলেও হারমনিয়াম আরো অনেক কিছু যেগুলো এখনো পারে না সে। গিটারের অনেক ধাপ আছে সেরিন সেসব আয়ত্ত করেনি এখনো।
গান প্রেকটিস করে তার সাথের কয়েকটা মেয়ের সাথে সে একটা ফাঁকা জায়গায় গিটার নিয়ে বসে। সেরিন তার অনলাইন ফ্লাটফর্মের ছোট্টো পরিচয়ের কথাও তাঁদেরকে বলে। একটা মেয়ে নাম তার আদ্রিতা আয়াত চৌধুরী। সেরিনকে বলে,
‘তোমায় অনেক আগে থেকেই আমি ফলো করি। আমার বড় ভাইয়াও তোমার গান শুনে মেবি। এবং সে তোমার অনেক বড় ফ্যান। তবে প্রকাশ করে না। আমার ভাইটা ইন্ট্রোভার্ট আর রাগী।’
সেরিন হাসে। তবে তার সাথের আরেকটা মেয়ে বলে,
‘ভাইয়া কী স্টাবলিস্ট? তাহলে বলো মিশাতকে তার বউ বানানোর ব্যবস্থা করবো।’
তখন আদ্রিতা বলে,
‘হ্যাঁ আমার ভাইয়া জব করে আমার দাদুর প্রতিষ্ঠানে।মিশাত বললে আমি আমার জন্য হলেও ভাইয়ার বউ বানাবো। কারণ এতো কিউট সুইট মিশুক মেয়েকে হাত ছাড়া করতে রাজী নই আমি।’
আদ্রিতার কথায় বাকীরাও হাসে। সেরিন তার ভিডিও অন করে। তাদের সাথের একজন গিটারে অনেকটা পারদর্শী। সে গিটার বাজায়! সেরিন গান গায় বাকীরাও মাঝেমধ্যে তাল মেলায়।
সন্ধ্যার মধ্যে সেরিন তার কাজ শেষ করে আদ্রিতার সাথেই বেরোয়। আদ্রিতার বাসা সেরিনের বাসার আগের রোডে। তাই একসাথে একই রিকশায় উঠে দু’জন। যদিও শুধু নামটাই তাঁদের জানা। এছাড়া কেউই তারা তাঁদের গ্রামের বাড়ী বা কিছুই জানে না। আদ্রিতা মেয়েটা বেশ মিশুক। সেরিন সন্ধ্যার শহরটা দেখছে। তখন আদ্রিতা বলে,
‘তুমি ভিডুটা আপ দিবা কখন?’
‘এই তো অবসর হয়েই্।’
‘আমি তোমায় নক আর রিকুয়েষ্ট দেবো। একসেপ্ট করে নিও।’
‘আচ্ছা করবো।’
দুজনে কথাবার্তা বলে আদ্রিতা তার বাসার সামনে নেমে সেরিনকে বিদায় দেয়। সেরিন চুপচাপ বসে সামনে দেখছে। গেটের সামনে নেমে ভাড়া মিটিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে তাতানের সাথে তার চোখাচোখি হয়। সেরিন চোখ সরিয়ে নিয়ে দ্রুত ভেতরে চলে যায়।
#চলবে
#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|২০|
#শার্লিন_হাসান
এরই মাঝে বেশ কয়েকদিন কেটে যায়। সেরিনের ও এক্সাম শেষ হয়। আগামী কালকে সে কুমিল্লা যাচ্ছে। যদিও এখন কেউই নেই তাঁদের বাড়ীতে। সবাই সবার জায়গায়। তবুও সেরিন ভীষণ এক্সাইটেড তার পরিবারের কাছে যাবে।
ঢাকা শহরে এসে অল্পদিনে কয়েকজন বন্ধু পেয়েছে সেরিন। তবে আদ্রিতা মেয়েটা একটু বেশী কাছের হয়ে গেছে। সেরিন জেনেছে তার গ্রামের বাড়ী ও কুমিল্লা।
সেরিন নিজের টুকটাক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যাগে গুছিয়ে নেয়। তবে বাড়ীতে তার সবই আছে। মাহী এসেছে সন্ধ্যায়। আগামী কালকে সেরিনকে নিয়ে কুমিল্লায় যাবে।
যদিও তাঁদের ভাই বোনের সন্ধ্যাটা আড্ডা গল্পে শেষ হয়েছে। শশীর এনগেজমেন্ট অনুষ্ঠানের সব ঘটনা এ টু জেড শুনে নিয়েছে সেরিন। যদিও তার আফসোস নেই না থাকায়।
*******
সন্ধ্যায় শুভ্র চিঠি সমূহ ভাজ করে যত্ন সহকারে রাখে। লাস্ট চিঠিটার পরের চিঠিগুলো হযবরল তাই শুভ্র সেগুলো পুড়িয়ে দিয়েছে। এরপরের চিঠিগুলো সে ছুঁয়েও দেখেনি তবে নজরে এসেছে চিঠি নিয়ম করে আসতো। শুভ্রর মনে হয় কেউ এসবে বা হাত ঢুকাতে চেয়েছিলো। কিন্তু সে তো জানে না শুভ্র ঠিক কতটা চালাক।
তখন আবার আর্থ আসে শুভ্রর রুমে। শুভ্রকে চিঠি নিয়ে পড়ে থাকতে দেখে সে বলে,
‘চিঠি, চিঠি আর চিঠি তা বাবহর আম্মুকে পেলে তো?’
‘আগামী কালকে পাবো আশা করি।’
আন্দাজি কথাটা বলেছে শুভ্র। আর্থ ও মজার ছলে নিয়েছে কথাটা। তবে সে শুভ্রকে বিয়ের জন্য রাকী করাতে এসেছে। তাহলে আগামী কালকে তারা তার বাবার বন্ধুর মেয়েকে দেখতে যাবে। শুভ্র আর না করেনি! সেও বলেছে আগামী কালকেই যাবে। আর্থ ও খুশি হয়ে প্রস্থান করলো। শুভ্র বুঝেছে সেরিনকে সে যতই নিজের করতে চাইলে তার থেকে দ্বিগুণ দূরত্ব তৈরী হচ্ছে। সেরিন তার হবে না! কিন্তু সেরিন চলে যাওয়ার পর শুভ্রর খারাপ লেগেছিলো। সেদিন টিসি দিয়েছিলো সেরিন হাসিমুখে শুভ্রর রুম ত্যাগ করলেও শুভ্রর মোটেও ভালো লাগেনি। মেয়েটা এতো খুশি কেন তার থেকে পালানোর জন্য? শুভ্র এখনো সেরিনের পেজ ফলো করে। বেশী ভিডিও না আপ দিলেও যা দেয় সেটাই দেখে। তাতেই জেনো শুভ্রর ভালো লাগা কাজ করে।
কাজের লোক থাকা সত্ত্বেও আজকাল রাতের খাবারের দায়িত্ব জান্নাতুল ফেরদৌস নেন। ব্যপারটা সুলতানা খানমের কাছে কেমন জেনো লাগে। রাতে ল্যাপটপ রেখে তিনি কিচেনে যান। তখন জান্নাত সালাদ কাটছিলো চুরি দিয়ে। সুলতানা খানমকে দেখে বলেন,
“কিছু বলবে?”
“আজকাল তুমি রান্নাবান্না নিয়ে বেশী মাথা ঘামাচ্ছো না?”
“হুম ঘামাচ্ছি কারণ আমি বড় বউ। আমার দায়িত্ব বেশী।”
“উঁহু! তুমি বড় নও। বড় একজন ছিলো তার অনুপস্থিতিতোও তাকেই আমরা বড় মানবো। বলো যে বড় ভাবীর দায়িত্বটা তোমার উপর পড়েছে। তবে যাই বলো তার মতো কিছুই হচ্ছে না।”
“সুলতানা…..”
“যেটা সত্য সেটাই বললাম। আসলেই ভাবী কার এক্সিডেন্টো মা’রা গিয়েছিলো?”
“তোহ কী? তুমি কী বুঝাতে চাইছো তাকে আমি মে”রেছি?”
“না সেটা না। তবে তার অভিনয় কিন্তু দারুণ ছিলো। সে নিত্যান্ত একজন ভালো মানুষ ছিলো সেজন্যই তার পেছনে এতো শত্রু পড়েছিলো।”
“ভালো মানুষের পেছনে শত্রু থাকে এটাই স্বাভাবিক।”
সুলতানা খানম আর কথা না-বাড়িয়ে চলে আসেন। বাকীরাও আস্তে,আস্তে নিচে আসছে ডিনারের জন্য। দশটায় সবাই ডিনারের জন্য বসে পড়ে। আগামী কালকে তারা শুভ্রর জন্য মেয়ে দেখতে যাবে। এটাই ফিক্সড করা হয়েছে।
শুভ্র ও সবার সাথে হাসিখুশি ভাবে কথা বলে রুমে এসেছে। মেয়ে পছন্দ হলেও বিয়েটা করবে না শুভ্র। সবার জ্বালা যন্ত্রণায় মত দিয়েছে। কী জানি! যদি তার বাবার কথা বা সন্মানের কথা ভেবে বিয়েটা করে নিতে হয়।
********
পরের দিন সকালে সেরিন মাহী কুমিল্লার উদ্দেশ্য রওনা হয়। তিন ঘন্টার ট্রেন জার্নি করে তারা দাউদকান্দি আসে। সেখান থেকে সোজা পাটওয়ারী বাড়ীতে। বাড়ীর পথেই চৌধুরী বাড়ী সাথে “মিসবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী হাইস্কুল এন্ড কলেজ” যেটা শুভ্রদের। সেরিন সেদিকটায় চোখ ভোলায়। তবে ইন্টারেস্টিং কিছুই দেখেনি। বারোটার দিকে পাটওয়ারী বাড়ীতে আসে তারা। সেরিনকে দেখে শশী জেনো খুশিতে আটখানা। সে তো প্রায় বিশ মিনিটের মতো সেরিনকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। একে,একে সেরিন সবার সাথে দেখা করে। রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নেয় সেরিন। বড্ড মায়া হয় নিজের সাজানো রুমটার জন্য! তবুও মায়া ত্যাগ করাই উত্তম।
চৌধুরী পরিবারের সবাই এসেছে মিনিস্টার আয়ান মালিথার ‘মালিথা’ ভিলাতে। চৌধুরী পরিবারকে সুন্দর ভাবে আপ্পায়ন করা হয়। আয়ান মালিথার স্ত্রী তিথির সাথে জান্নাতুল ফেরদৌসের ভাব আগে থেকেই। এখন তাঁদের সম্পর্ক আরো প্রগাঢ় হবে ভাবতে ভীষণ খুশি জান্নাতুল ফেরদৌস। বলা যায় তারাও ছোট বেলার বেস্টফ্রেন্ড ছিলেন।
শুভ্র বসে আয়ান মালিথার সাথে কথা বলছে। ভদ্রলোকের সাথে কথা বলে শুভ্রর ভালো লাগলো। কে জানে তার মেয়েটা কেমন হয়?
ভাবনা গুচ্ছ একদিকে তুলে রেখে শুভ্র সটান হয়ে বসে। এই মূহুর্তে কনেকে আনা হবে। মেরুন কালারের থ্রিপিস পড়া সুন্দরী সুশীলা কন্যা। মুখে নেই তেমন কোন প্রসাধনী। আয়ান মালিথার একমাত্র মেয়ে আর্শিয়া মালিথা। সবাইকে সালাম দিতে জান্নাতুল নিজের পাশে তাকে বসালেন। তিনি খুশি আটখনাার বদলে ষোলো খানা হয়ে নিজের হাতপর রিংটা দেরী না করে আর্শিয়ার হাতে পড়িয়ে দিলেন। তার কাজে বাকীরাও কিছুটা হতভম্ব। শুভ্রর তো রাগ উঠে যায়। তবুও নিজেকে কন্ট্রোল রাখে। বাকীরা হাবার মতো তাকিয়ে আছে।
আর্শিয়াকে দেখাদেখি হলে কিছুই বলেনা চৌধুরী পরিবার। আয়মান চৌধুরী আরফিন চৌধুরীকে দমিয়ে রেখে নিজে সবার উদ্দেশ্য বলেন,
“শুভ্র যা বলে তাই হবে। বিয়েটা ওর, অর্ধাঙ্গিনী ওর হবে। আমাদের পছন্দের বা মতের কোন প্রশ্নই উঠে না এখানে।”
সবাই আয়মান চৌধুরীর কথাটা পছন্দ করলেও জান্নাতুল পছন্দ করলেন না। আয়মান চৌধুরী কী ইনডিরেক্টলি বুঝাতে চেয়েছে বিয়েটা হবে না। আর উনি নিজের শখের আংটিটা খোয়ালেন?
সেদিনের মতো মালিথা ভিলা থেকে বিদায় নিয়ে চৌধুরী পরিবার চলে আসেন।
*******
পরেরদিন সকালে শুভ্র রেডি হয়ে বেড়িয়ে যায় কুমিল্লার উদ্দেশ্য। সিহান পাটওয়ারীকে সে একান্ত ডেকেছে। তার ডাকে সায় না দিয়ে থাকতে পারলেন না সিহান পাটওয়ারী। তিনিও কুমিল্লার উদ্দেশ্য রওনা হোন।
নিদ্দিষ্ট সময়ে শুভ্রর দেওয়া ঠিকানায় আসেন তিনি। তার পেছন দিয়ে শুভ্র আসে। শুভ্র কফি অর্ডা দিয়ে চোখের চশমাটা খোলে। সিহান পাটওয়ারীর মুষ্টিবদ্ধ হাতে হাত রেখে শুভ্র বলে,
‘আংকেল আমি পার্সোনাল ভাবে আপনায় ডেকেছি। তবে আমি আমার লাইফ স্টাইল, ব্যাকগ্রাউন্ড, পার্সোনালিটি নিয়ে কিছু বলতে চাইনা। ছেলে হিসাবে একটা রিকুয়েষ্ট করবো। যেটা আমার জায়গায় আমার হয়ে আমার বাবা করলে আপনি ফেলতে পারতেন না।”
“বলো কী রিকুয়েষ্ট? ”
“সেরিনকে আমি বিয়ে করতে চাই। আমি জানি আপনারা সবাই অক্ষরের জন্য অপেক্ষা করছেন। বাট অক্ষরের আগে আমি ওকে চেয়েছি।”
“কিন্তু আমি আমার মেয়েকে বিয়ে দেবো না এখন। অক্ষরের কাছেও না।”
“আমার কাছেও না?”
“দেখো সেরিন অনেক ছোট। মাত্র আঠারো তে পা রেখেছে। এখনি যদি বিয়ে দিয়ে দেই তো ওর স্বপ্ন আশা সবই তো অপূর্ণ?”
“আমি জানি ওর স্বপ্ন একদিন মাইক হাতে গান গাইবে। ওর একটা পরিচয় হবে। তবে সত্যি বলতে যদি টিচার হিসাবে বলেন ওর স্বপ্নটাকে আমি এপ্রিসিয়েট করি। আমিও ওকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি একদিন ও হাতে মাইক ধরে গান গাইবে। হাজারো মানুষের মুখে ওর নাম থাকবে। আংকেল আমি ওকে হেল্প করবো এজ এ হাসবেন্ড হিসাবেও,টিচার হিসাবেও।”
“কিন্তু….”
“কোন কিন্তু না আংকেল। চিন্তা করবেন না আপনার মেয়কে আমি ফুলের মতো সাজিয়ে আনবো ফুলের মতো করেই রাখবো। আমি শুভ্র! হ্যাঁ এই শুভ্র কথা দিচ্ছে আপনার মেয়ের স্বপ্ন পূরণ থেকে শুরু করে সমস্তটার দায়িত্ব সুন্দর ভাবে পালন করবে। একদিন আপনার মেয়ে আপনাকে জড়িয়ে ধরে প্রাউড ফিল করে বলবে, ‘বাবা আমি আমার স্বপ্ন ছুঁতে পেরেছি।’ আর বেশী কিছু বলতে চাইনা আপনায়।”
“ঠিক আছে। রাজী হলাম আমি। তবে ভেবো না আমার মেয়ের দায়িত্ব নিচ্ছো বলে বা লোভ। আমার সামর্থ্য আছে ওকে ওর স্বপ্নে পৌঁছে দেওয়া। তবে তোমাকে বাড়ী থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে আর তুমি সেরিনকে চাচ্ছো। আমি জানি তুমি ভীষণ ভালো একটা ছেলে। সেজন্য ভরসা পেলাম। তোমার কথাটা পেলতে পারলাম না।”
“তাহলে বিয়েটা কবে হচ্ছে?”
“সাহিনূর আমার বোন কখনোই বিয়েটা হতে দিবে না। আর আমি চাই হুট করে একদিন তোমরা আসো আর বিয়েটা হোক। যাতে সবাই সারপ্রাইজড হয়ে যায়।”
“আমি চাই সেরিন নিজেও যাতে বিষয়টা না জানে এখন।”
“জানবে না তোমার আর আমার মাঝেই থাকবে।”
সেদিনের মতো তারা কথাবার্তা বলে বেড়িয়ে পড়ে।
*******
সন্ধ্যায় পাটওয়ারী বাড়ীতে আসে অক্ষর। মূলত সেরিনকে দেখার জন্যই। অনেক অপেক্ষার পর সেরিনের দর্শন পায় অক্ষর। খুশিতে আটখানা সে। সেরিনকে দেখেই বলে,
“কেমন আছো বউ?”
“ভালো।”
সেরিনের ভালো লাগেনি কথাটা। ‘বউ’ শব্দটা শুধু মাত্র একজনের মুখ থেকেই সে শুনতে চেয়েছে। কিন্তু তার তো হেলদোল নেই সেসবে। অক্ষরকে বেশী পাত্তা দেয়নি সেরিন। তবে সে জেনো আঠার মতো লেগেছিলো।
বেলকনিতে বসে ডায়েরি লিখছে সেরিন। ছোট,ছোট পৃষ্ঠায় লিখছে কিছু। একটা বড় অভিমান বার্তা কারোর জন্য। লেখা শেষে রুমে চলে আসে। ফোনে এলার্ম সেট করে শুয়ে পড়ে সে। আদ্রিতার মেসেজ আসে। মেয়েটা নাকী কুমিল্লায় এসেছে। সেরিন আদ্রিতার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে। নেট ওফ করে ঘুমিয়ে পড়ে।
*******
নামাজ আদায় করে কফিটা শেষ করে শুভ্র কলেজের কাছের দীঘির পাড়ে যায়। সেখানে কিছুক্ষণ হাটাহাটি করে এদিকটায় আসতে দেখে দপ্তরি এসেছে। তখন সাতটা বাজে! কলেজ প্রাঙ্গণ পরিষ্কার করছে তারা। শুভ্র তার অফিসকক্ষে যায়। নিজেকে দেওয়ালের একপাশের লুকিয়ে নেয়। আজকেও নিশ্চয়ই অপরিচিতা আসবে চিঠি দিতে। যেহেতু সেরিনের সাথে বিয়েটা হবে সেহেতু একটু চিঠির মালিককে দেখার ইচ্ছে হলো।
অপরিচিতা ওরনাটা ভালো ভাবে মাথায় পেছিয়ে মুখটা ঢেকে গেট দিয়ে প্রবেশ করে। দ্রুত পায়ে অফিসকক্ষের বিল্ডিংয়ে ঢুকে পড়ে। বাকীরা তো বাইরে ভেতরে কেউই নেই। ত্রস্ত পায়ে দোতালায় যেতে দেখলো একজন করিডোর দিয়ে আসছে। নিজেকে কিছুটা আড়াল করে নেয় সে। তবে অন্য একজনের সামনে পড়লে সমস্যা ছিলো না। সেই দপ্তরি জানে সে যে আসে।
সাবধানতার সাথে শুভ্রর রুমের দিকে যায় অপরিচিতা।শুভ্রর রুমের দরজা খোলা। সেদিকটায় যাবে নাকী চিঠি গুলো করিডোরে রাখা বেঞ্চের কোণে রাখবে ভাবছে। পরক্ষণে ভাবলো অন্য কেউ যদি চিঠিগুলো ফেলে দেয়। তাই তো সে সিসি ক্যামেরার দিকে একনজর তাকিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। টেবিলের উপর চিঠিগুলো রেখে পা বাড়াতে তার ওরনায় টান পড়ে যায়। আচমকা এমন হতে ভয় পেয়ে যায় সে। মুখ থেকে মাথা থেকে ওরনা সরে গিয়েছে তার। চুলগুলো এলোমেলো! শুভ্র মুচকি হেসে ওরনাটা বাবুর আম্মুকে বউ সাজানোর মতো করে গোমটা তুলে দেয়।
“হুম! একজনের প্রেমেই ভালো ভাবে পড়লাম। চঞ্চল মেয়েটার এতো গুণ এতো বুদ্ধি কোথা থেকে আসলো? যাই হোক তুমি পাশ করেছো।”
“ইয়ে না মানে বাবুর আব্বু এভাবে কেউ ভয় দেখায়?”
শুভ্র হাসে। তার হাসিটা স্নিগ্ধ লাগছে। মনে হয় সে প্রচুর খুশি। একহাতে আজকের চিঠিগুলো নেয় শুভ্র। দু’টো চিঠি এসেছে। একটর উপর অভিমান বার্তা লেখা শুভ্র সেটাই আগে খুলে দেখলো।
চিঠিটা,
অভিমান বার্তা:
‘বাবু আব্বু’
জানেন? বাবুর আম্মু মানে আমি একটা হার্টলেস মেয়ে মানুষ। সহজে কাউকে মনে বসাই না। যদি বলে ছেলে মানুষদের ইগনোরের কথা আমার মনে হয় আমি প্রথম হবো। না কোন ছেলে ফ্রেন্ড আছে, না ছেলে কাজিনের সাথে তেমন ভাব। বাট একজন ছেলে ছিলো যাকে প্রথম বার দেখে আমি তার এট্টিটিউডে ফিদা হয়ে যাই।………
#চলবে