হৃদয় সায়রে প্রণয়ের ছন্দ পর্ব-১৩+১৪

0
518

#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|১৩|
#শার্লিন_হাসান

‘কোন আর্জেন্ট আছে ম্যাম?’

‘স্যার শোনলাম সেরিন পাটওয়ারী টিসি নিয়ে চলে যাবে। হয়ত আপনার কাছে আসবে দু একের ভেতর। আমি আগেই খবর পেলাম।’

‘খবর পেয়েছেন। আর ও টিসি নিবে না ওর ফ্যামিলি দিবে না।’

‘সত্যি স্যার। দেখবেন ও আসবে ওর বাবাকে নিয়ে।’

কথাটা বলে লিয়ানা চলে আসে। শুভ্র পাত্তা দিলো না এটাতেই গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে তার। শুভ্র কার কথাটাই বা পাত্তা দেয়? সে নিজেই নিজের মতে সব করে। কারোর মতের দাম নেই তার কাছে। লিয়ানা ম্যাম যেতে শুভ্র সটান হয়ে বসে পড়ে। আঙুল দিয়ে কপাল স্লাইড করছে। সেরিন যাবে না। প্রয়োজনে ব্লাকমেইল করে ওকে রেখে দিবে শুভ্র।

গাছে পাতা নড়ছে। ঠান্ডা শীতল বাতাস বইছে ছাঁদে। শেষ বিকেলের উন্মুক্ত বাতাস চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস নিচ্ছে সেরিন। আগামী কালকে তার বাবা সহ যাবে টিসি আনতে। শুভ্রর কলেজ সালাম দিয়ে যাবে সেরিন। কয়েকটা মাসে পুরো তেজপাত করে দিলো জীবনটা। এতো,এতো রুলস! পিটি করো। তারউপর এক গাদা পড়া। এসাইনমেন্ট, ক্লাসটেস্ট, প্রাইভেট। তারউপর তার ফুফি এসেছে সকালের দিকে। এসে শুনেছে শশীকে আগামী কালকে দেখতে আসবে। এখন নিশ্চয়ই ভেজালটা সেরিনের উপরই আসবে।

শশী তখন হাসি মুখে ছাঁদে আসে। সেরিন তার দিকে তাকিয়ে বুঝে খুশির কোন খবর আছে। অথবা আজা ইরা কোন নিউজ আছে। সেরিন মেলি হাসি টেনে শুধায়,
‘তোর নেতা চলে আসলো নাকী বিয়ে করতে?’

‘আরে না। আগামী কালকে ওর পরিবার থেকে লোক পাঠাবে আসার জন্য। ভেরি সুন ‘আমরা’ হয়ে যাবো।’

‘কংগ্রেস।’

‘কংগ্রাচুলেশনস বানান জানোস না? সংক্ষিপ্ত করে বলোস কেন?’

‘কংগ্রাচুলেশনস ছাতার মাথা।’

‘ধন্যবাদ। কালকে কলেজ যেতে হবে না তোর। তোর শুভ্র স্যার ও আসবে।’

‘কালকে টিসি আনতে যাবো।’

‘আরে যাওয়া লাগবে না। একবারে বিয়ে করে জামাইয়ের বাড়ী চলে যা। তাহলে টিসি লাগবে না এমনিতে আদর সোহাগ পাবি।’

‘তোর বা’ল।’

সেরিন প্রস্থান করতে শশী হেঁসে দেয়। সেরিনকে আজকাল আনমনা আর চিন্তিত লাগে শশীর কাছে। ও এমনই! আজা ইরা কাজকর্ম করে বাঁশ খাওয়ার ভয়ে থাকে। কে জানে আবার কাকে উল্টাপাল্টা গা’লাগা’লি করেছে।

ত্রস্ত পায়ে ছাঁদ ছেড়ে ভেতরে যায় শশী। তার আম্মু আর
বড় আম্মু কাজে ব্যস্ত। তার বাবা আর মাহি বাজারে গেছে। হুটহাট কথা হয়। শশী বুঝেছে তার বিয়ের ফুল ফুটে গেছে। একটু লজ্জালজ্জা ভাব নিয়ে পুনরায় সেরিনের কাছে গেলো। সেরিনকে দেখে বলে,

‘বনু আমার বিয়ের ফুল ফুটে গেছে।’

‘তোহ? আমার মতো সিঙ্গেলকে এসব বলে না ক্ষেপালে হয়না? আমার প্রেমই হয়না আবার বিয়ের ফুল! দেখ কোথায় আনাচে কানাচে ফুলটা ফুটেছে আর কোন গরু খেয়ে ফেলেছে কে জানে?’

সেরিনের কথায় শশী তাকিয়ে রয় তার দিকে। সেরিনের সেসবে ভ্রুক্ষেপ নেই। সে তার মতো পুনরায় ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়। শশীর তো এক্সাইটমেন্টের শেষ নেই। আগামী দিনটা তার জন্য স্পেশাল। ভীষণ স্পেশাল। কখন রাত পেড়িয়ে ভোর হবে সেই অপেক্ষা। পড়াশোনার দিকে মন নেই শশীর। শুধু আর্থ আর আর্থ এবং আর্থ তার চোখে,মনে।

*****

আর্থ লিভিং রুমে সোফায় বসে আছে। শুভ্রর হাতে ধোঁয়া উঠা গরম কফি। সে চুমুক দিচ্ছে আর বাকীদের কথা কর্ণপাত করছে। তার বাবা আর আর্থর বাবা বসে আছে সামনের সোফায়। যেহেতু আর্থর বিয়ে সামনে সেহেতু সবাই এক,এক করে বাড়ী আসছে। আর্থর বোন আর আয়মান চৌধুরীর মেয়ে তারা বিয়ের ডেট ফিক্সড হলে আসবে।

শুভ্রর মা জান্নাতুল ফেরদৌস আর সুলতানা খানম ও আছে তাঁদের সাথে। কথার শুরুতে আরাফ চৌধুরী বলেন,
‘শুভ্র তোমার পছন্দ থাকলে বলো। আর্থ আর তোমার বিয়েটা একসাথেই দেবো আমরা।’

শুভ্র আর্থকে চোখ দিয়ে ইশারা করছে বলার জন্য। আর্থ ইশারা বুঝেও না বুঝার মতো থাকে। বত্রিশ পাটি বের করে বলে,
‘ভাইয়ার নেই কেউ নেই। তোমরা অন্য জায়গায় মেয়ে দেখ…..

কথাটা শেষ করার আগে পিঠে দুটো পড়ে যায়। শুভ্র রাগী চোখে তাকিয়ে আছে আর্থর দিকে। আর্থ শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে,
‘আগে বলো আমাদেরকে হানিমুনে মালদ্বীপ যাওয়ার খরচ তুমি দিবা।’

‘বসে,বসে মুড়ি খাও নেতা। শা’লা মিসকিন বিয়ে করবি তুই হানিমুন করবি আমার টাকায়। সেই স্বপ্ন আর কনফিডেন্স নিয়ে বিয়ে করছিস?’

‘কিপ্টা দেখেছি তোর মতো একটাও দেখিনি ভাইয়া। আসলেই টিচাররা কিপ্টা হয়ে যায়।’

আর্থ শুভ্রর কথোপকথন সবাই এক দৃষ্টিতে দেখে। তখন জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন,
‘প্রেম করছো ভালো কথা বলে দিলেই তো হয়। একে,ওকে চোখ দিয়ে ইশারা করা মারামারি করা বিষয়টা দৃষ্টি কটূক দেখায়।’

জান্নাতুল ফেরদৌসের কথায় আর্থর মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। তখন শুভ্রর বাবা আরফিন চৌধুরী শুভ বলেন,
‘তোমাকে এতো কথা বলতে বলিনি। এখানে আমরা বড়রা আছি। কোন দরকার হলে তোমায় ডেকে নেবো এখন আসতে পারো।’

আরফিন চৌধুরীর কথায় জান্নাতুল ফেরদৌস রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। গটগট করে চলে যান সেখান থেকে। তখন আর্থ বলে,

‘ওনার সব কিছুতেই সমস্যা। আমরা ভাইয়েরা ভাইয়েরা মজা করবো,মারামারি করবো আমাদের ব্যপার ওনার এতো এলার্জি কেন? সবসময় এমন করে! কথা না পেলেও বাম হাত ঢুকিয়ে এটেশন পেতে চায়। আগে বলে রাখি বিয়েতে ওনার কোন ধরনের নাটক আমি দেখতে পারবো না। উনি মনে হয় ভুলে গেছে আমাদের ফ্যামিলি স্ট্যটাস। অবশ্য যার যা পরিচয় সেটাই সবসময় বহন করার চেষ্টা করে।

থেমে,

শুভ্র ভাইয়ার প্রেম নেই তবে পছন্দ আছে। মেয়েটা শশীর ছেট বোন সেরিন ওর কলেজেরই স্টুডেন্ট। বিষয়টা দৃষ্টি কটূক দেখায় বাট ওদের বিয়েটা আমি চাই গোপনে হোক পাবলিক করার দরকার নেই।’

তখন আয়মান চৌধুরী বলেন,
‘পাবলিক করলেই কী? আমাদের বাড়ীর বউ আমাদের বাড়ীতে থাকবে। এখান থেকে কলেজ যাবে সে তো লোকের নজরে আসবেই। আর সেরিন এই কলেজে না আসলেও তো ভাগ্যক্রেমে শুভ্রর বউই হতো তাই না?’

‘ঠিক আছে তাহলে আগামী কালকে পাটওয়ারী পরিবারে তাঁদের দুই মেয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো। আই হোপ তারা রাজী হবে।’

শুভ্রর বাবা কথাটা বলেন। শুভ্র আর এক মূহুর্ত ও দাঁড়ায়নি সেখানে। চুপচাপ নিজের রুমে চলে যায়। আর্থ শুভ্রর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রয়। আর কেউ কিছু বলেনি। কাজের বুয়া রাতের ডিনার রেডি করতে সবাই এক জোটে টেবিলে আসে। তাদের মাঝে শুভ্রও ছিলো। তবে সে একটা কথাও বলেনি। শুভ্র ছোট বেলা থেকেই এমন গম্ভীর হয়ে থাকে। তবে তেজ কোন অংশ কম নেই।

শুভ্র ডিনার শেষ করে রুমে এসে ল্যাপটপে অফিসের কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তখন একটা নাম্বার থেকে মেসেজ আসে। মেসেজটা ঠিক এরকম,

‘হেই বাবুর আব্বু।’

বাবুর আম্মু সত্যি হারিয়ে যাচ্ছে। আপনার মন থেকে এমনকি দৃষ্টি থেকে। এই দূরত্ব দূর থেকে বহুদূরের সৃষ্টি হচ্ছে। আমি চলে যাচ্ছি তো! যত্নে রেখে দিননা আমায় আপনার হৃদয় সায়রে। প্রণয়ের ছন্দ এঁকে অদৃশ্য বন্ধনে আঁকড়ে রাখবো।’

ইতি
বাবুর আম্মু

শুভ্র মেসেজটা পড়ে। নিজের রিপ্লাই দেয়,
‘আড়ালে থাকলে কীভাবে আটকাবো আমি? আপনি আমায় দেখা দিন, ধরা দিন তাহলে নাহয় ভেবে দেখবো বাবুর আম্মু বানানো যায় কীনা।’

শুভ্রর এমন মন্তব্য দেখে অপরপাশের ব্যক্তির চোখ ছলছল করে উঠে। নিজেকে চিমটি কাটে। সত্যি এটা শুভ্রর দেওয়া মেসেজ তো? পুনরায় রিপ্লাই করে,

‘সত্যি আসবো? আমায় কিন্তু আপনি দেখেন বাট চেনেন না।’

‘জ্বী আসুন! এই ভূতটাকে আমিও দেখতে চাই। যে আমায় জ্বালিয়ে যাচ্ছে।’

শুভ্র ফোন রেখে পুনরায় কাজে মনোযোগ দেয়। একদিকে বাবুর আম্মু অন্যদিকে শুভ্রর পার্সোনাল গায়িকা। কী করবে,কী ধরবে,কী ছাড়বে এখন আর মাথায় কুলচ্ছে না। শুভ্র ভেবে পায়না কীভাবে সে সামান্য বিষয় নিয়ে এতোটা নার্ভাস হয়ে যাচ্ছে? এই একমাত্র সেরিন মেয়েটা তাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাচ্ছে। এর কঠোর শাস্তি হওয়া দরকার। কিন্তু কী শাস্তি? সে তো ধরে রাখতে চায় তবুও পালিয়ে যাচ্ছে,হারিয়ে যাচ্ছে,যাচ্ছে টাইপ। আদৌ সেরিনকে বিয়ে দিবে তো তার সাথে? শুভ্রর মনে ‘না’ শব্দটাই বারবার তোলপাড় করছে। মাঝেমধ্যে ঘেমে ও যাচ্ছে শুভ্র।

চোখ বন্ধ করে কয়েকবার শ্বাস নেয়। মাথার মধ্যে হাজারটা প্রশ্ন এসে ভীড় জমায়। তার মধ্যে একটা কথা বারবার মনে হচ্ছে,
‘সেরিনকে পাওয়ার জন্য এতো আগ্রহ কেন? ওর থেকে বেটার কাউকে তো আমি ডিজার্ভ করি। ও হয়ত আমার থেকে বেটার কাউকে ডিজার্ভ করে। আমার অনুযায়ী সে তো অনেক বাচ্চা। এ-ই বাচ্চা বিয়ে করে কী হবে? না হবে বাচ্চার মা! উল্টো এই বাচ্চাকে হয়ত খেলনা দিয়ে বসিয়ে রাখতে হবে।’

কিন্তু সে তো আর্থর মাধ্যমে সবাইকে জানালো। যাই হোক আর্থকে সে বলেছে বিয়ের কথা উঠলে যাতে সেরিনের কথা বলে। আর্থ তার থেকে ঘুষ চেয়েছে। কয়েকটা শর্ত দেয় যার মধ্যে একটা মালদ্বীপে হানিমুনে যাওয়ার খরচ শুভ্রকে দিতে হবে। শুভ্র খুব একটা কিপ্টা না তবে কিপ্টা কম ও না।

#চলবে

#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|১৪|
#শার্লিন_হাসান

কিন্তু সে তো আর্থর মাধ্যমে সবাইকে জানালো। যাই হোক আর্থকে সে বলেছে বিয়ের কথা উঠলে যাতে সেরিনের কথা বলে। আর্থ তার থেকে ঘুষ চেয়েছে। কয়েকটা শর্ত দেয় যার মধ্যে একটা মালদ্বীপে হানিমুনে যাওয়ার খরচ শুভ্রকে দিতে হবে। শুভ্র খুব একটা কিপ্টা না তবে কিপ্টা কম ও না।

কাজ শেষে শুভ্র বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। মনে,মনে নিজেকে কয়েকটা গা’লি দেয়।
শুভ্র কী দেখতে খারাপ? নাকী যোগ্যতা নেই তার? অবশ্যই সব কিছু আছ শুভ্রর তাহলে সেরিন রাজী হবে না কেন? শুধু সেরিন না সেরিনে আম্মুও রাজী হবে। শুভ্রর মনে কনফিডেন্স চলে এসেছে।

রাতটা না ঘুমিয়ে কেটে গেলেও সকালের দিকে একটু চোখ লেগে আসে শুভ্রর। এলার্ম-ঘড়ির শব্দে ঘুম ছটে যায়। ফজরের আজান হতে নামাজ আদায় করে বেলকনিতে কোরআন তেলাওয়াত করতে বসে শুভ্র। সকালের হিমশীতল বাতাস শুভ্রর গায়ে বাড়ি খাচ্ছে। হয়ত একটু পর সূর্যের আলোয় সবকিছু গরম হয়ে উঠবে। তীব্র কাঠখোট্টা গরমে রোদে একমুহূর্ত ও দাঁড়ানোর জো নেই। কিন্তু সে তো তার স্টুডেন্টদের মাঠে রোদের মধ্যে বসিয়ে রেখে আধঘন্টা করে ভাষণ দেয়। কোরআন তেলাওয়াত হতে বুয়া এসে কফি রেখে যায় রুমে। শুভ্র কফির মগ নিয়ে পুনরায় বেলকনিতে যায়। নিচের দিকে চোখ যেতে দেখে তার বাবা আর আর্থর বাবা দু’জন বেড়িয়েছে বাড়ীর গেট দিয়ে। হয়ত কলেজের পেছনের দীঘির পাড়ে হাঁটতে যাবে। যেখানে চৌধুরী পরিবারের সবাই যায় সকাল বেলা হাঁটতে। দীঘির পানির ঠান্ডা হিমশীতল বাতাস গায়ে লাগলে আলাদা শান্তি পাওয়া যায়। শুভ্র কফিটা রেখে নিচে আসতে আর্থর দেখা পায়। বেচারায় মাত্র ঘুম থেকে উঠে এসেছে। শুভ্রকে দেখে আর্থ বলে,

‘সেরোয়ানি কিনেছ তো?’

‘কিসের সেরোয়ানি? আমি পান্জাবি পড়ে বিয়ে করবো সাদা পান্জাবি।’

‘এহহ বিয়েটা মনে হয় ঠিক। আমি তো এমনিতে বলেছি। আজকে পাটওয়ারী বাড়ী যাবো। আমার বিয়েী ডেট ফাইনাল হলেও তোমারটা হবে কীনা সন্দেহজনক। ‘

‘তোকে এতো কথা বলতে বলিনি। সবার আগে আমারটা হবে।’

‘যেই দজ্জাল ফুফি শাশুড়ী বসে আছে যেও। তার ছেলের বউকে তোমায় দিবে কত।’

‘শুভ্রর একটা ধমক শোনলে উনি একমাস অজ্ঞান থাকবে। যেহেতু উনি বুড়ো মানুষ সেহেতু এমন দীর্ঘ সময় অজ্ঞান থাকার আশংকা করা যায়।’

‘ভাইরে ভাই তোমার যা ধমক। ধমক দিয়ে না জানি বউকে হার্ট অ্যাটাক করিয়ে নেও।”

‘দেখা যাবে।’

‘বিয়েটা তো আগে হোক।’

‘এই তুই বারবার আমায় ভয় দেখাচ্ছিস কেনো? বিয়ে হবে না কেন? একশবার বিয়ে হবে।’

শুভ্র আর্থকে কয়েক গা লাগিয়ে দিয়ে চলে আসে। আর্থ শুভ্রর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসছে। তখন আবার আর্থর আম্মু মিরা আসে। আর্থকে নিজে,নিজে হাসতে দেখে বলে,

‘পাগল হয়ে গেলে নাকী?’

আর্থ হাসি থামিয়ে তার আম্মুর দিকে তাকায়। কফির মগ হাতে নিতে,নিতে বলে,
‘হ্যাঁ হলাম তো তোমার বউমার প্রেমে।’

তখন আবার আয়মান চৌধুরী আসেন। আর্থর কথা শোনে তিনি শুধান,
‘এভাবে বলে না। একটু লজ্জা শরম রাখো।’

‘তো কী? তুমি বুঝি প্রেমে পড়োনি কারোর?’

‘পড়েছি তো তোমার ছোট আম্মুর।’

ওদের দু’জনের কথাবার্তা শোনে মিরা ইসলাম সরে আসে। আর্থ একটু এমনই! সবার সাথেই ফ্রেন্ডলি ভাব নিয়ে কথাবার্তা বলে।

*******

পাওয়ারী বাড়ীতে কাজ চলছে এক দফা। সেরিনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে লিভিং রুম আর টেবিল ডেকোরেশন করার। সেই সাথে সবার রুম সাজিয়ে দেওয়ার। সেরিন সকালে নাস্তা করে কাজে নেমে পড়েছে। সে জানে আজকের মতো তার কোমড় আর শরীর দুটোই শহীদ। যেহেতু তাঁদের জয়েন ফ্যামিলি বিল্ডিংটাও সেভাবেই করা। আটটা বেডরুম গোছাতে,গোছাতে বেচারি হাফিয়ে গেছে। লিভিং রুমে এসে শশীকে ডাকে সেরিন। তখন তার আম্মু সাইয়ারা এসে বলে,
‘ও কোন কাজ করবে না।’

‘বিয়েটা তো আর আজকে হচ্ছে না। সবাই শুধু আমাকে দিয়েই সব কাজ করায়। আমার চেহারায় মনে হয় কাজের বুয়া টাইপ ভাব আছে।’

সেরিনকে রাগানোর জন্য তার ভাই মাহি আবার বলে,
‘ফাইনালী বুঝতে পেরেছিস। এইজন্যই তো তোকে দিয়ে আমার শার্ট আয়রন করাই। রুম গুছাতে বলি। তুই হলি আমাদের বাড়ীর কাজের মেয়ে সেরিন। চেহারাটা দেখলেই বুঝা যায় তোর জন্মই বিল্ডিং পরিষ্কার করার জন্য।’

‘আম্মুউউ তোমার ছেলেকে কিছু বলবা নাকী আমি ওর মাথায় দুই চারটা বারি মারবো।’

তখন সাইয়ারা বলেন,
‘মাহি ওকে রাগিয়ো না। ও রাগলে আবার এগুলো কে করবে?’

‘তুমি বললে তোমার বউমা এসে করে দিয়ে যাবে।’

‘অ’জাতের বংশ অ’জাত বলে কী? আয় তোরে কয়টা খুন্তি দিয়ে থেরাপী দেই। দুই অ’জাত আমার হয়েছে। একটাও জাতের হয়নি। কাজকর্মের কথা বললে একটা বামে যায় তো ডানে লাফায় আরেকটা শুধু বউ,বউ করে।’

সেরিন,মাহি দু’জনেই তার আম্মুর দিকে হতাশর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার আম্মু যেতে সেরিন মাহিকে বলে,
‘আমার বংশ অ’জাতের? লাইক সিরিয়াললি আমাকে দেখে অ’জাতের বংশের মেয়ে মনে হয়?’

‘আমাকে দেখে সত্যি অ’জাতের বংশের ছেলে মনে হয়?’

‘তোর জন্য আম্মু আমায় এতো গুলো কথা শোনালো।’

‘আমাকে মনে হয় আদর করলো কত? তোর জন্য আমার বংশকে অপবাদ দিয়েছে।’

‘তোর আর আমার দুজনের বংশ একটাই।’

সেরিনের কথায় শশী বলে,

‘সেটা হলো অ’জাতের বংশ আবার কখনো পাগলের জাত।’

সেরিন হাতের ঝাড়ুটা শশীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
‘চলেই তো যাবি। একটু তো কাজকর্ম করে ছোট বোনের থেকে দোয়া নে?’

‘তোর দোয়া লাগবে না। যেই মুখে সারাক্ষণ গালি থাকে সেই মুখে আবার দোয়া আসবে কোথা থেকে?’

‘সর! আমার মতো ভালো মেয়ে একটাও পাবি না।’

‘হ্যাঁ এমনি ভালো যে একজনের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করতে,করতে রাস্তা দিয়ে যায় আবার রাস্তায় বুড়ো মানুষ দেখলে সালাম দিয়ে ভালো সাজে।’

শশীর কথায় মাহি আর সেরিন দু’জনেই হেঁসে দেয়। শশী লিভিং রুমের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সেরিন টেবিলে গ্লাস,প্লেট সব সাজিয়ে রাখে।

তাদের কাজ শেষ হতে শশী,সেরিন শাওয়ার নিয়ে নেয়। আজকে সেরিন হোয়াইট আর মেরুন কালারের কারুকাজ করা থ্রি পিস পরিধান করেছে। যেহেতু শশীকে দেখতে আসবে সেহেতু তাকে শাড়ী পড়ানো হবে। সেরিন শাড়ী নামিয়ে চলে যায় লিভিং রুমে।

চৌধুরী বাড়ী থেকে শুভ্র, আয়মান চৌধুরী এবং আরাফ চৌধুরী চলে আসে। শুভ্রকে আচমকা দেখে সেরিন কোন দিকে যাবে ভেবে পাচ্ছে না। তারউপর বড়রা আছে। হাতের ফোনটা সোফার উপর রেখে তাঁদের সামনে গিয়ে সালাম দেয় সেরিন। আয়মান চৌধুরী এবং আরাফ চৌধুরী সেরিনের সালামের জবাব দেয়। আরাফ চৌধুরী বলেন,

‘তুমি সিহান পাটওয়ারীর মেয়ে না? নাম কী তোমার মা?’

‘জ্বী! আমার নাম সেরিন পাটওয়ারী মিশাত।’

সেরিন নামটা শোনে আয়মান চৌধুরী শুভ্রর দিকে তাকায়। সবার আগে চোখ যায় শুভ্রর সাদা পান্জাবি আর সেরিনের পরিধান করা সাদা থ্রি পিসের দিকে৷ শুভ্রকে আস্তে করে আয়মান চৌধুরী বলেন,
‘উহুম! আগে থেকে প্লান করে রেখেছো নাকী হোয়াইট পড়বা?’

‘একদম না চাচ্চু। কীভাবে জেনো মিলে গেলো।’

সেরিন তাঁদেরকে ভেতরে নিয়ে আসে। আরাফ চৌধুরী সামনে তারপর সেরিন তার পেছন দিয়ে শুভ্র হাঁটছে। আয়মান চৌধুরী পেছন থেকে লক্ষ্য করছেন তাদের দু’জনকে কেমন লাগছে।

কিরণ পাটওয়ারী কাজে বাইরে গেছে একটু পর চলো আসবে। মাহি তাঁদের তিনজনকে ওয়েলকাম ড্রিং দেয়। সেরিন নাস্তা নিয়ে আসে। সেরিনকে ডেকে নিজের পাশে বসায় আরাফ চৌধুরী। তার পাশে আবার শুভ্র বসা ছিলো। শুভ্র এবং আরাফ চৌধুরীর মাঝে সেরিন বসে। সেরিনের হার্ট বিট উঠা নামা করছে। বিশ্বাস হচ্ছে না শুভ্রর পাশে তাকে বসানো হয়েছে। যাকে দেখলে দশহাত দূর থেকে দৌড় দেয় মানুষ। আয়মান চৌধুরী বসে,বসে তাদেরকে দেখছে। সবার আড়ালে শুভ্র আর সেরিনের কয়েকটা পিকচার ও তুলে নেয়। সেরিনকে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে আরাফ চৌধুরী। শুভ্র নিজের ফোন নিয়ে ব্যস্ত। তবে তার কাছে ভালোই লাগছে ব্যপারটা। কে জানে তাঁদেরকে একসাথে কেমন লাগছে?

সেরিন কোনরকম কথা বলে উঠে নিজের রুমে চলে যায়। তখন আয়মান চৌধুরী শুভ্রকে ডেকে তার পাশের বসায়। ফোন থেকে তোলা ছবি গুলো শুভ্রকে দেখিয়ে বলে,
‘মাশাল্লাহ, মাশাল্লাহ। শুভ্র বিয়েটা হবে তো?’

শুভ্র মাথা চুলকায়। তখন আবার সিহান পাটওয়ারী আসে সাথে তার বোন সাহিনূর পাটওয়ারী। শুভ্র ভদ্র মহিলার দিকে একনজর তাকায়। এনি সেই মহিলা যার জন্য এখন তাদের দুই ভাইকে বিয়ে করার জন্য তাড়াহুড়ো করতে হচ্ছে।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে