#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|১১|
#শার্লিন_হাসান
পিটি শেষ হতে শুভ্র ফাস্ট ইয়ারের ক্লাসে যায়। আকাশ, জুম্মানের খোঁজ করে। জানতে পারে তারা কেউই উপস্থিত নেই। শুভ্র সেসব আর মাথায় নেয়নি। ফিজিক্স ক্লাসটা সেই করায়। সে কিছুটা প্রশ্ন দেয় সেগুলোর উত্তর সবাইকে লিখতে বলে। শুভ্র পুরো ক্লাস ঘুরে,ঘুরে সবার হ্যান্ড রাইটিং চেক করে। সেরিনের কাছে এসে বলে,
‘তোমার হাতে লেখার একটা পৃষ্ঠা আমায় দিও তো।’
‘আমার রাইটিং বা’জে। এটা দিয়ে কী করবেন?’
‘না একটা দরকার ছিলো।’
সেরিন মাথা নাড়িয়ে হ্যান্ড রাইটিংয়ের একটা পেজ শুভ্রকে দেয়। শুভ্র সেটা নিজের প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে নেয়।
তাদের ফাস্ট সেমিস্টার এক্সামের ঘোষণা ও দিয়ে দেয় শুভ্র। ক্লাস টাইম শেষের পথে। হাতে দশমিনিট সময় রেখে শুভ্র গম্ভীর কন্ঠে বলে,
‘সেরিন পাটওয়ারী মিশাত। আমাদেরকে একটা গান গেয়ে শোনাবে।’
শুভ্রর কথায় সেরিন বোকা বনে যায়। অনেকেই অবাক! যেই শুভ্র ক্লাসে পড়া ব্যতীত অন্য কোন বিষয় এলাউ করে না সেখানে গান। তাও নিজে থেকে! ভাবার বিষয়। নিশাতের ধাক্কাধাক্কি তে সেরিন উঠে সামনে যায়। শুভ্রর ঠোঁটের কোণে হাসি। সেরিন আড়চোখে শুভ্রকে দেখছে। অনেকেই এক্সাইটেড সেরিনের কন্ঠে গান শোনার জন্য। তবে কোন গানটা গাইবে সেরিন কনফিউজড।
‘কী গান গাইবো স্যার?’
‘তোমার যেটা মন চায়।’
‘আোতত গান গাইতে মন চাচ্ছে না।’
শুভ্র চোখ গরম করে তাকায়। সেরিন নজর সরিয়ে নিয়ে বলে,
‘ পল্লিগীতি?’
‘না।’
সেরিন গায়,
‘ঠিক এমন এভাবে
তুই থেকে যা স্বভাবে।
আমি বুঝেছি ক্ষতি নেই।
আর তুই ছাড়া গতি নেই।
ছুঁয়ে দে আঙুল,
ফুঁটে যাবে ফুল, ভিজে যাবে গা,
কথা দেয়া থাক
গেলে যাবি চোখের বাইরে না।
ছুঁয়ে দে আঙুল (২)
শুভ্র মনোযোগ সহকারে গান শোনে। সেরিনের ভয়েসটা তার ভীষণ প্রিয় হয়ে উঠেছে অল্প দিনে। সেরিনকে ধন্যবাদ দেয় শুভ্র। অতঃপর বিদায় নিয়ে চলে আসে ক্লাস রুম থেকে। তড়িঘড়ি নিজের রুমে গিয়ে চিঠি আর সেরিনের হ্যান্ড রাইটিং মিলায়। অনেকটা পার্থক্য খুঁজে পায়। কিন্তু কীভাবে সম্ভব? এই বাবুর আম্মুকে খুঁজে বের না করা অব্দি শুভ্রর শান্তি হবে না। শুভ্র ঠিক করে তার রুমের সামনের করিডোরে সিসি ক্যামেরা লাগাবে। যেই ভাবা সেই কল লাগায়। আগামী কালকের মধ্যে তার সিসিক্যামরা চাই করিডোরে।
*******
সন্ধ্যা বেলায় চৌধুরী পরিবারে বৈঠক বসে। সেই শুভ্রর বিয়ে নিয়েই বৈঠক। শুভ্রকে জিজ্ঞেস করা হয় তার পছন্দের কেউ আছে কীনা। শুভ্র লজ্জা শরম ত্যাগ করে বলে দেয়, ‘আছে কেউ একজন।’ আর্থ তার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রয়। আয়মান চৌধুরী নিজেও বাকরুদ্ধ। এই রাগী, বদমেজাজির ও গার্লফ্রেন্ড আছে? অষ্টম আশ্চর্যের বিষয়। যেই মেয়েটা শুভ্রর সাথে প্রেম করে সে নিশ্চয়ই শান্তি শিষ্ট, ভ্দ্র,নম্র হবে। সবাই এটাই ধরে নিয়েছে। তখন আয়মান চৌধুরী বলেন,
‘মেয়েটা ছবি আছে তোমার কাছে?’
শুভ্র শুধায়,
‘ছবি নেই তবে নাম আছে।’
‘নামটাই বলো?’
‘ওর নাম পিচ্চি।’
শুভ্রর কথায় আর্থ বলে,
‘ভাগ্যিস পিচ্চি এঞ্জেল সাদিয়া না।’
শুভ্র রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আর্থর দিকে। হাতে থাকে কুশন দিয়ে পিঠে বারি মেরে বলে,
‘ভাগ্যিস পিচ্চি জমজ বোন না। আমি আবার শালির সাথে প্রেম করি না। আর না শালি আমায় ইমপ্রেস করে তার বোনকে দেয়।’
শুভ্রর কথার আগামাথা কেউই কিছু বুঝতে পারেনি। তবে শুভ্রর বিয়েটা খুব শীঘ্রই দিতে চাচ্ছে সবাই। তখন আর্থ ও লজ্জা শরম ত্যাগ করে বলে ফেলে,
‘আমার অনেক শখ ভাইয়ার সাথে বিয়ে করার। একসাথে বিয়ে করার আরকী।’
তখন আয়মান চৌধুরী বলেন,
‘তোহ এটা আগে বললেই পারতে।’
‘আসলে লজ্জা লাগছিলো।’
‘তোর আবার লজ্জা!’
শুভ্র বলে। আর্থ লজ্জা-লজ্জা ভাব করে মাথা নাড়ায়। শুভ্র তাকে নিয়ে নিজের রুমের দিকে হাঁটা ধরে। কাঁধে হাত রেখে বলে,
‘আচ্ছা শশীর ছোট বোনের এইজ কত হবে?’
‘আমি কীভাবে জানবো? আমি কী ওর জন্মের দিন ওদের বাড়ীতে গিয়ে বসে ছিলাম?’
‘আনুমানিক করে বলনা?’
‘এই পনেরো-ষোলো হবে।’
‘তোর মাথা। ওর বয়স আঠারো।’
‘তো জানলে আমায় জিজ্ঞেস করলি কেন?’
‘তোর তো আবার এসবে ভালো আইডিয়া কারণ সারাদিন মেয়ে মানুষের আশেপাশে থাকা লাগে।’
‘মেয়ে মানুষের আশেপাশে থাকলেও আমি লয়্যাল। তোমার মতো এঞ্জেল সাদিয়া নামের আইডি থেকে মেসেজ আসলে গলে যাই না। একবার কী জেনো? হ্যাঁ এঞ্জেল সাদিয়া ফেইক আইডির প্রেমে পড়ে গেলা।’
‘বা’জে কথা ছাড়বি? আমি এখনো কারোর প্রেমে পড়িনি।’
‘তাহলে তোমার পছন্দ করা মানুষ আসলো কী করে?’
‘না,না সেসব কিছু না।’
আর্থ শুভ্রর মাথা গাট্টি মেরে নিজের রুমে চলে যায়। সাত পাঁচ না ভেবে শশীকে কল দেয়। এখন সে শশীর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলবে।
*********
দেখতে,দেখতে সেরিনের প্রথম সেমিস্টার এক্সাম শুরু হয়ে যায়। সময়টা পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ততায় গেলেও নিজেকে ফ্রেশ রাখার জন্য সেরিন গান গায়। ভিডিও বানায়! শশীর ও ব্যস্ততা বেড়ে গেছে সে আর নিয়মিত নাচের ভিডিও আপলোড দেয় না। সন্ধ্যার দিকে সেরিন টেবিলে বসে পড়ছিলো। তখন শশী আসে হাতে কতগুলো কাগজ। সেরিন তা দেখে ব্রু কুঁচকায়। অতঃপর বলে,
‘এগুলো দিয়ে কী করবি?’
‘এগুলো আমি পেয়েছিলাম সেদিন। কোথায় পেয়েছি মনে পড়ছে না। টেবিলের উপর রাখা ছিলো তাই তোকে দিতে এলাম। তোর কাজে লাগতে পারে।’
‘আমার কাজ নেই এসবে। তুমি নিয়ে মাহিকে দাও। ও নিশাতকে প্রেমপত্র দিতে পারবে।’
‘তুই দে না কাউকে?’
‘এসবে আমার ইন্টারেস্ট নেই। কিসের প্রেম হুম? তুমি নিজে করো দেখে আমাকেও করতে হবে? প্রেম করা ভালো না এতে চরিত্র ন’ষ্ট হয়।’
‘এই শোন যতবড় মাথা নেই ততবড় ভাবনা। প্রেম করলে কিসের চরিত্র ন’ষ্ট হয়? তোর মাথায় আস্ত পঁচা আলু ছাড়া আর কিছু নেই। আর ব্রেইন যেটা? সেটা হাঁটুতে আছে।’
‘সেম ডায়লগ! বাহ কী মিল ভাসুরের সাথে।’
‘ভাসুরটা আবার কে?’
‘শুভ্র স্যার! সেম কথা বলে।’
‘ভুল কিছু বলেনা। সে তো মানুষ চেনে এক দেখায় বলে দিতে পারে কে কেমন।’
‘ওর হয়ে গুনগান গাইছিস যে। সবাই আমার শ’ত্রু কেউ ভালোবাসে না আমায়।’
‘একটা খুশির খবর শুনেছিস?’
‘কী?’
‘ফুফির ছেলে বিডি আসবে প্রায় আট বছর পর। অক্ষর ভাইয়া।’
‘তো নাচ? উনি আসলে আমাদের কী? আর বিয়েশাদির কথা উঠলে তোকেই দেখবে ফুফি। সো এতো লাফালাফির কিছু নেই। নেতাকে বলে বিয়েশাদি সেরে নে।’
‘অক্ষর ভাইয়াকে তুই বিয়ে করবি।’
‘প্লিজ যা বইন এখান থেকে। অক্ষর নিরক্ষর বা’লকে আমি বিয়ে করতে পারবো না।’
শশী আর কথা বাড়ায়নি। সেরিনের কথাটা আসলেই ভাবার বিষয়। সে তো একবছরের জুনিয়র। চাপ আসলে তার উপরই আসবে। কিন্তু আর্থর কথা বললে কেউ কিছু বলবে না। তখন জামেলা যাবে সেরিনের উপর।
শশী যেতে সেরিন রঙিন পেপারের দিকে তাকায়। সেগুলো যত্ন সহকারে ড্রয়ারে রেখে দেয়। এখন অক্ষর নামের ব্যক্তিকে নিয়ে তার চিন্তা। তার ফুফি একটা তো আছেই। সেরিন,শশী। শশী,সেরিন। মনে হয় দুনিয়ায় আর কোন মেয়ে নেই।
শশী তার ফুফির ব্যপার টা আর্থর কাছে শেয়ার করতে আর্থ টু শুভ্রর কনেও পৌঁছে যায় অক্ষর দেশে আসার খবর। শুভ্র শুনেছে অক্ষরের জন্য শশী বা সেরিন একজনকে তার ফুফি ছেলের বউ করেই ছাড়বে। কিন্তু শুভ্র বুঝতে পারছে না কীভাবে কী করবে। একদিকে সেরিনের সামনে কত ভাব নিয়ে চলাফেরা। সেই মেয়ে যদি শোনে শুভ্র তার উপর কাত হয়ে আছে তো এমনিতে চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে তখন শুভ্রর বউ,বাচ্চা সহ টেনেটুনে এনে বকতে থাকবে। আরেকদিকে সেরিন তার স্টুডেন্ট। বিষয়টা তার কাছেও লজ্জা,লজ্জা লাগছে। শুভ্র ভেবে পায়না কীভাবে কী করবে। তাই তো সে তার মাথা মোটা ভাই আর্থর কাছে গেলো। দু’জনের ফিউচারের উপর একজন নজর দিয়ে বসে আছে।
#চলবে
#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|১২|
#শার্লিন_হাসান
আর্থর রুমে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে আছে শুভ্র। আর্থর সেদিকে খেয়াল নেই। আর যাই হোক শশীকে প্রয়োজনে পালিয়ে নিয়ে আসবে। তবুও অক্ষরের হাতে দিবে না। শুভ্রর তো সেই রাইট নেই। সেরিনের হাত ধরায় একবার দিলো চ’ড় এবার পালিয়ে যাওয়ার জন্য কোলে তুলে দৌড় দিতে গেলে গলাটাই চেপে ধরবে। এমনিতে মেয়েটা বেশ ঝগড়ুটে। শুভ্রর আপাতত মাথা কাজ করছে না। তার ভাইয়ের চিন্তা নেই অথচ তার যত চিন্তা। শুভ্র সবসময় মানুষকে চিন্তায় রাখতে পছন্দ করে আর নিজে ফ্রেশ। বাট এই অক্ষরের জন্য পুরো উল্টে গেলো নিয়ম। তারউপর চিঠি দাতাকে ধরতে পারলো না।
আর্থর থেকে আর পরামর্শ নেয়নি শুভ্র। সোজা রুমে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ ভাবে। কী জানি কী হয়? আচ্ছা অক্ষর এখন বিডি না আসলে হয়না? শুভ্র ভাবছে তার চাচ্চুকে দিয়ে পাওয়ারী বাড়ীতে প্রস্তাব পাঠাবে। হিতাহিত এটাই মাথা আসলো। শুভ্র চটজলদি তার চাচ্চুর রুমে চলে যায়। শুভ্রকে দেখে আয়মান চৌধুরী হাসেন। ডেকে তার পাশে বসিয়ে বলেন,
‘আজকাল চিন্তিত লাগছে। কী ব্যপার শুভ্র?’
‘ওই চাচ্চু! তুমি আগামী কালকে একটা কাজ করে দিতে পারবে?’
‘কী কাজ?’
‘পাওয়ারী বাড়িতে যাবে। আমার বাবুর আম্মুকে আমার বাড়ীতে নিয়ে আসার প্রস্তাব দিতে।’
‘মানে?’
‘সেরিন পাটওয়ারীর বিয়ের জন্য। বলবে শুভ্র তাকে বিয়ে করতে চায় ফ্যামিলিগত ভাবে।’
‘ওনাদের মেয়ে ছোট এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিবে না।’
‘ওর এইজ তো আঠারো। আচ্ছা সমস্যা নেই পড়াশোনা সব কন্টিনিউ করবে বিয়ের পর। আমি কোন চাপ দেবো না।….
‘বাবুর আম্মুকে ও প্রেগন্যান্ট বানাবে না এতো তাড়াতাড়ি। এটা বাদ রাখলে কেন? বলে দাও!’
শুভ্রর কথায় পোড়ন কেটে আর্থ বলে। শুভ্র লজ্জায় দৃষ্টি ঘুরিয়ে নেয়। আর্থকে মনে,মনে কয়টা গা’লি দান করে। আর্থ হেলেদুলে হেঁটে এসে তাঁদের দু’জনের মাঝখানে বসে পড়ে। দু’জনের কাঁধে দুই হাত রেখে বলে,
‘শুভ্র বাবু এখন বিয়ে করবে। তার বউ বড় হবে,প্রাইমারি পাশ করলে তখন বউ হওয়ার উপযুক্ত হবে। এখন তেমন কোন চাপ কিছুই দিবে না। এই আরকী….’
‘আমাকে না পচালে হয় না তোর? আচ্ছা তুই যেটা বলেছিস এটাও ঠিক আছে। করবো না বাসর! সমস্যা কী?’
‘আসতাগফিরুল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ লজ্জা শরমের মাথা খেয়েছো তুমি ভাইয়া? চাচ্চুর সামনে এসবে বাসরের কথা বলছো।’
আর্থর কথায় শুভ্র দাঁড়িয়ে মাথায় কয়টা থাপ্পর লাগায়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
‘তোর সবসময় ফান না করলে হয়না? আমি সিরিয়াস! যাহ আমারটা আমি ঠিকই নিয়ে আসবো দেখবি শেষসময়ে তোরটা নিয়ে টানাটানি হবে।’
‘গু’লি মেরে খুলি উড়িয়ে দিলে কী হবে?’
‘চুপ থাক চাপাবাজ।’
শুভ্র প্রস্থান করতে আর্থ আর আয়মান চৌধুরী হেঁসে উঠে। আয়মান চৌধুরী আর্থর দিকে তাকিয়ে বলেন,
‘না আগামী কালকেই প্রস্তাব পাঠাচ্ছি।’
‘তাহলে আমার টাও নিয়ে যাও। দুই ভাই একসাথে বিয়ে করবো।’
*********
কলম আঙুলের ফাঁকে নিয়ে ঘুরাচ্ছে আর ঠোঁট কামড়ে ভাবছে সেরিন। শশী বেঁচে গেলেও সে তো বাঁচতে পারবে না তার ফুফির থেকে। নাহ! এমনিতে অনেক ধরা খেয়েছে আর খেতে চায়না সেরিন। টিসি নিয়ে ঢাকায় চলে যাবে। সেখানে তার আন্টির বাসায় থাকবে অন্য কলেজে এডমিশন নিয়ে নিবে। সেখান থেকে গানের একটা প্রতিষ্ঠানেও ভর্তি হবে। রিহার্সেল হবে গান! বিন্দাস লাইফ কাটবে।
এমনিতেও এখানে থাকতে না সেরিন। শুধু তার ভাই আর চাচ্চুর জন্য। তাঁদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এমপির কলেজ। তারউপর শুভ্র!
সেরিন তার বাবা সিহান পাটওয়ারীর কাছে যায়। তার বাবা তখন বই পড়ছিলো। সেরিনকে দেখে বই রেখে দেন সিহান পাটওয়ারী। মৌনতা বজায় রেখে সেরিন বলে,
‘বাবা আমি টিসি নিয়ে নিতে চাই। আন্টির কাছে চলে যাবো। পড়াশোনার পাশাপাশি গান ও কভার করবো। এখানে আমার কিছুই হচ্ছে না।’
‘তোমার যেটা ভালো মনে হয়। আমি চাই আমার সেরিন একদিন অনেক বড় হবে। হাতে মাইক ধরে গান গাইবে। তার অনেক ভক্ত থাকবে। আমি তোমার গান গাওয়াটা সাপোর্ট করি মা। আল্লাহ তোমায় এই গুনটা দান করেছে যেটা সবাইকে দেন না।’
‘ধন্যবাদ বাবাই! লাভিউ, তুমি আমায় এতো সহজে বুঝো।’
সিহান পাটওয়ারী সেরিনের কপালে চুমু আঁকেন। দু গালে হাত রেখে বলেন,
‘আমার সব একদিকে আর আমার মেয়ে একদিকে। আমার মায়ের আবদার আমি পূরণ করবো না?’
সেরিন কিছুক্ষণ তার বাবার বুকে মাথা রেখে বসে থাকে। তার পরম শান্তির স্থান। তার আম্মু সাইয়ারা আসে। বাবা মেয়ের এমন আহ্লাদ দেখপ তিনি বলেন,
‘থাক আমার ছেলে আছে। আমার ছেলে আমায় ভালোবাসে মেয়েরটা লাগবে না।’
সাইয়ারা ইসলামের কথায় সিহান পাটওয়ারী হেঁসে দেয়। তখন সেরিন বলে,
‘বাবার জন্য মেয়ের একটা আলাদা টান থাকে জানো না? কারণ বাবারা তার মেয়েকে ‘মা’ বলে ডাকে। ডাকটায় অন্যরকম ভালোবাসা প্রকাশ পায়। আমি আমার বাবাকে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসি এটা সবাই জানে। সো তুমি জেলার্স হলেও আমি আমার বাবাকেই বেশী ভালোবাাবো।’
‘হয়েছে আমার বুঝদার মেয়ে। বাপের দলেই থাকিস। আমার ছেলে আছে আমার জন্য।’
‘যাও তেমার আদরের ছেলের কাছে।’
মা মেয়ের এমন দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়া সিহান পাটওয়ারী বেশ উপভোগ করেন।
*******
পরের দিন আরো চার চারটা চিঠি আসে শুভ্রর নামে। চিঠি পেয়ে শুভ্র বেশ খুশি। তার টেবিলের উপরে! সিসি ক্যামেরায় এবার তো আসল চিঠি দাতা ধরা খাবেই খাবে। শুভ্র তড়িঘড়ি চিঠি খোলে। প্রথমটায় লেখা,
‘বাবুর পাপা’ বাবুর মাম্মাম আর বলবে না তাকে বাবুর আম্মু বানাতে। সে অভিমান করেছে বাবুর পাপার উপর। কেন ভাই? আমি কী তোর খারাপ চাই? আচ্ছা আমি কী তোর একটা কিডনি চেয়েছি? চাইনি! শুধু বাবুর আম্মু হওয়ার আবদার করেছি।’
শুভ্র চিঠি পড়ে হাসে। দ্যান দ্বিতীয় চিঠিটা পড়ে,
‘ভালোবাসি বাবুর আব্বু।’
তৃতীয় চিঠিটায় লেখা,
‘বাবুর আব্বু’
‘তুমি জানতে চাওনি বলে কত না বলা কথা আড়ালেই থেকে গেছে। তুমি বুঝতে চাওনি বলে কত অনুভূতিরা মৃ’ত্যুবরণ করেছে। তুমি ‘ভালোবাসোনি’ তাই তো হৃদয় সায়রে একটা আক্ষেপ থেকে গেছে। তাই তো শুধাই, ‘আমি পাইনা ছুঁতে তোমায়……’
লেখা:#শার্লিন_হাসান
চতুর্থ চিঠিটা,
‘এই মিস্টার চিঠিগুলো কী মজা মনে হয় আপনার? অ্যাম সিরিয়াস! ভালোবাসি আপনায়।’
শুভ্র চিঠিগুলো পড়ে চিন্তায় পড়ে যায়। এটা কী হলো? সে ভালোবাসে একজনকে আর এই বাবুর আম্মু তাকে। কিন্তু এটা তে সম্ভব না। বাবুর আম্মু তুমি আড়ালে রয়েছে আড়ালেই থাকো। দর্শন দিয়েও লাভ হবে না শুভ্র তোমায় গ্রহণ করবে না। অলরেডি শুভ্র একজনের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।
শুভ্র সবগুলো চিঠি ভাজ করে রেখে দেয়। যেই চিঠিগুলো লিখেছে তার লেখা সুন্দর ভালো। গুছিয়ে লেখতে পারে। অভিমানী, চঞ্চল, গোছানো লেখা এই তিনটা কথায় তার কমপ্লিমেন্ট দেওয়া যায়।
সেরিন টিসি নিয়ে চলে যাবে কথাটা নিশাত শোনতে অবাক হয়। হুটহাট সেরিনের এমন সিদ্ধান্ত নিশাত মানতে পারছে না। মনমরা হয়ে ক্লাসগুলো করছে নিশাত। সেরিন তাকে এটা ওটা বলছে তাতেও কাজ হচ্ছে না। সেরিনের ভালোই লাগছে এই কলেজ ছেড়ে যাবে। সে আজকের ক্লাস বেশ উপভোগ করছে। আছেই বা আর কয়দিন।
সাংস্কৃতিক পরিচালনা করা ম্যামের কানেও খবর গেছে তাদের কলেজের সেরিন চলে যাবে। মেয়েটাকে তার পার্সোনালি পছন্দ ছিলো। সামনে যেহেতু তাদের জেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠান আছে সেখানে সেরিন চলে যাবে। ব্যপারটা নিয়ে সোজা প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে যান তিনি। শুভ্র তখন কিছু পেপার্স ঘাটাঘাটি করছিলো। সাংস্কৃতিক ম্যাম মিসেস লিয়ানাকে দেখে বলেন,
‘কোন আর্জেন্ট আছে ম্যাম?’
‘স্যার শোনলাম সেরিন পাটওয়ারী টিসি নিয়ে চলে যাবে। হয়ত আপনার কাছে আসবে দু একের ভেতর। আমি আগেই খবর পেলাম।’
#চলবে