#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ৬
সিরাতের মাথার পেছনে হাত রেখে বাসের সাথে চে’পে ধরে সাফিন সিরাতের লালরাঙা ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিতে সিরাতের বন্ধ চোখদ্বয় নিমিষেই কেঁপে উঠলো। রাগে চোখ বড়-বড় করে তাকিয়ে সাফিনকে ধা’ক্কা মেরে সরিয়ে দিতে হেসে উঠলো সাফিন। হুট করে সাফিনের এ রকম আচারনে জুবায়ের হা হয়ে গিয়ে মাথা নিচু করে নিজের সিটে গিয়ে বসে কানে ইয়ার ফোন লাগিয়ে জানালার কাঁচ সরিয়ে দিয়ে বৃষ্টিভেজা অন্ধকার রাতের দিকে তাকিয়ে গান শুনতে লাগল।
সিরাত সাফিনের দিকে তাকিয়ে রাগে ফুঁ’স’তে-ফঁসতে বললো।
— কোনো ম্যানার্স নেই আপনার! অচেনা অজানা নিরী’হ একটা মেয়ের সাথে এ রকম ব্যাবহার করতে? আপনি আমাকে কতটুকু চিনেন হ্যা? আপনার মতো বা’জে আর অ’স’ভ্য লোক আমি দুটো দেখেনি।
সাফিন ভ্রুদ্বয় কি’ঞ্চিৎ ভাজ করে সিরাতের দিকে ধীর চাহনিতে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো।
— তুমি নিরী’হ! হাসালে, শাহনেওয়াজ সাফিনের গালে চর মেরে এখন নিজেকে নিরীহ বলে দাবি করছো বেব্বি।
সিরাত রাগ নিয়ে সাফিনের দিকে তেরে আসতে নিতে সাফিন ভয় পাওয়ার মতো করে সিট থেকে মাথাটা সরিয়ে খানিকটা পিছিয়ে যেতে সিরাত দাঁতে দাঁত চে’পে বললো।
—আপনাকে তো আমি দেখেই নেব মিস্টার।
— শাহনেওয়াজ সাফিন।
নিজের নামটা বলে সাফিন সিরাতের দিকে ঝুঁ’কে যেতে সিরাত এবার পিছিয়ে গেল।
বললো।
— আপনার নাম জানতে চাইনি ওকে।
সিরাতের কথা শুনে একহাতে বাসের সাথে ঠেকিয়ে দিতে সিরাত বাসের সাথে লে’প্টে গেলে বাঁকা হাসি হেসে সাফিন সিরাতের দিকে চোখ মেরে বললো।
— আমিও তোমাকে দেখেই নেব মিস সিরাত। কয়েকটা ঢোক গি’লে সাফিনের দিকে ভয়ের সহিত তাকিয়েও কন্ঠ দৃঢ় করলো সিরাত। বললো।
—কিহ!কি দেখে নিবেন আপনি হ্যা? আবারও অস’ভ্যতামি করবেন তাইতো? আপনাদের মতো ছেলেদের কাজটাই তো এমনটা। আপনার সাথে কথা বলতেও এখন ঘৃ’না করছে আমার। আপনি একটা চরিএহী’ন লোক।
সিরাতের নিমেষহীন কথাগুলো শুনে সাফিনের মাথায় র’ক্ত উঠে গেল যেন। রাগে পকেট থেকে বন্দুকটা বের করে সিরাতের বুক বরাবর তাক করে রাগান্বিত কন্ঠে বললো।
—আর একটা বা’জে কথা বললে আমার এই হাতের বন্দুক আর তোমার জীবন, এখানেই শেষ। জানোইতো একজনকে গু’লি করে বস্তায় বেঁধে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছি।
সাফিনের রক্তি’ম চোখদ্বয় দেখে ভয়ে গু’টিয়ে গেল সিরাত। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে তাঁর। চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরতে সাফিন বিরক্ত হলো। গাঢ় শ্বাস টেনে বন্দুকটা সরিয়ে মাথা হেট করে মৃদুস্বরে বললো।
—এই ন্যা’কা কান্না থামাও তোমার। এসব ন্যা’কামো আমাকে দেখাতে আসবে না। নয়তো আবারও হাত পা বেঁধে যেখান থেকে নিয়ে আসছি সেখানেই রেখে চলে আসব বুঝলে।
সিরাতের সমস্ত শরীর কেঁপে উঠলো। যেন প্রানটা একটুর জন্য বেঁচে গেল তাঁর। আর কোনো কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ বসে থাকলো সে।
.
ভোর হওয়ার মৃদু আলো জানালার কাঁচ ঘেঁ’ষে এসে সাফিনের চোখেমুখে এসে বারি খেয়ে গেলে হাই তুলে উঠতে নিতে বুকের উপর ভারি কিছু অনুভব করে শীতল চাহনিতে তাকাল সেদিকে। তাঁর বুকের উপর ঘুমিয়ে আছে সিরাত। সিরাতের গোলাপিরাঙা মুখশ্রীর উপর ভোরের স্নিগ্ধমাখা আলো এসে ছেঁয়ে পরাতে তাঁর চেহারার মাধুর্য যেন সদ্যফোঁটা ফুলের মতো লাগল সাফিনের কাছে। আপনা-আপনিই ঠোঁটের কোনে হাসি এসে ভর করলো সাফিনের। বুকের ভিতর চিনচিন ব্যা’থা অনুভব করতে পারলো সে।
সিরাতের লালরাঙা ওষ্ঠের উপর তাঁর হিমশীতল হাত ছুঁয়িয়ে দিতে নড়েচড়ে উঠলো সিরাত। হাসলো সাফিন। পিছনে তাকিয়ে সবগুলো মেয়ে ঠিকঠাক আছে কিনা দেখে সামনের সিটে বসা জুবায়েরের উদ্দেশ্যে ধীর কন্ঠে বললো।
—জুবায়ের ঘুমে তুমি?
— না স্যার বলুন? জেগে আছি আমি।
—সামনে সিনএজির ওখানে বাস থামাতে বলো ড্রাইভারকে।
হুট করে মাঝ রাস্তায় সাফিন বাস থামাতে বললে জুবায়ের সাফিনের দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকালো। বললো।
—স্যার শহরের ভিতরে পৌঁছে গেছি আমরা প্রায়। এখন বাস থামাতে বলব!
সাফিন বাঁকা হাসি হাসলো।বললো।
—সময় হোক সব বলব। আপাদত যেটা বলছি সেটা করো।
জুবায়ের মাথা চুলকে বললো।
—ওকে স্যার।
বাস থামিয়ে দিতে সাফিন সিরাতের দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাসলো। বললো।
—কিউট বেব্বি। চলো তোমাকে নিয়ে এখন একটা গেম খেলা যাক। যে গেমের মাস্টার মাইন্ড হব আমি আর গুটি হবে তুমি। শাহনেওয়াজ সাফিনের গালে চর মারার এটাই হবে তোমার শা’স্তি।
সাফিন সিরাতকে ঘুমন্ত অবস্থায় পাঁ’জাকোলা করে নিতে জুবায়ের তাঁর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল।
সাফিন বাঁকা হাসি হেসে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
—৫০০ মেয়ের ভিতরে একজনের অস্তি’ত্ব সরিয়ে ফেলো জুবায়ের। লিস্ট থেকে সিরাতের নাম সম্পর্ন রুপে মুছে ফেলো। আর হ্যা,হেডলাইনটা যেন আর কিছুক্ষণ পরই কানে এসে পৌঁছায়। এটার মাধ্যমে নির্বাচনে আমাদেরকে কেউ আঁচও করতে পারবে না।
জুবায়ের হেসে মাথা ঝাঁকল। বললো।
—জ্বী স্যার।
.
রুমাল দিয়ে মুখটা ভালোভাবে ঢেকে নিয়ে সিরাতকে নিয়ে সিএনজিতে উঠে বসলো সাফিন। সিএনজি চলতে শুরু করলে তাঁর ঝাঁ’কুনিতে সিরাতের ঘুম ভে’ঙে গেলে পিটপিট করে তাকালো সে। সাফিন মৃদু হেসে চোখ মেরে বললো।
—গুড মর্নিং বেব্বি। ইউ আর লুকিং জাস্ট ওয়াও৷ কি কিউট তুমি। উম্মাহ।
চোখ-মুখে বিরক্তিতে ছেঁয়ে গেলে নিজেকে সাফিনের বুকের উপর অনুভব করে দ্রুত উঠে বসলো সিরাত। চারপাশে এক নজর চোখ বো’লাতে চমকে উঠলো সে। দ্রুত বলে উঠলো।
—আমার ব্যাগ, আমার ব্যাগ কোথায়? আমার ব্যাগের ভিতরে ফোন জামা-কাপড় আমার মায়ের গহনা সবকিছু রয়েছে। আমার ব্যাগ কোথায়?
সিরাত সাফিনের দিকে তাকিয়ে তাঁর শার্টের কলার ধরে বললো।
—এই আপনি,আপনি সরিয়েছেন তাইনা? ভালোয়-ভালোয় বলছি আমার ব্যাগ আমাকে ফেরত দিন।
সাফিন সিরাতের হাতের উপর হাত রেখে তার শার্টের কলার ছাড়িয়ে দাঁতে দাঁত চে’পে বললো।
—তোমার ওই দু পয়সার ব্যাগ নিয়ে আমি কি করব? আজব! আমি কোনো ব্যাগ নেইনি।
কেঁদে উঠলো সিরাত। দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কাঁদতে থাকলে সাফিন পুরো থতমত খেয়ে গেল। সামান্য একটা ব্যাগের জন্য মেয়েটা এত কাঁদাছে কেন? কথাটা ভেবে শীতল কন্ঠে বললো।
— সামান্য ব্যাগের জন্য এত কান্না! মনে হচ্ছে তোমার জীবন চলে গেছে এমন করছো তুমি। হেসে উঠলো সাফিন।
সিরাত রাগ নিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
—ওটা হয়তো সামান্য কিছু,কিন্তু ওতে আমার মায়ের শেষ সৃতি মায়ের রেখে যাওয়া গহনা ছিল। আর আমি সেটাও হাঁড়িয়ে ফেললাম আজ। সিরাত কাঁদতে থাকলে সাফিন চুপ হয়ে গেল। যদিও কোনো ব্যাগ সে দেখেনি তবুও সিরাতকে শান্ত করার জন্য সিরাতকে নিজের দিকে ফিরিয়ে তাঁর লাল হয়ে ওঠা গালে হাত রেখে ধীর কন্ঠে বললো।
—ট্রাস্ট মি সিরাত আমি কোনো ব্যাগ নেইনি। তবে হ্যা, ব্যাগটা আমি খুঁজে দেব তোমাকে। এবার তোমার ন্যা’কা কান্না থামাও প্লিজ বেব্বি।
সাফিনের প্রথমের কথাগুলোতে সিরাত গ’লে যেতে চাইলেও শেষের কথাগুলো শুনে রাগে নাক লাল হয়ে উঠলো তাঁর। সাফিনের হাতদুটো সরিয়ে দিয়ে কান্নাভেজা চোখে সকালের মৃদুমধুর শহর দেখতে লাগল। যদিও সে জানে না কখনো তাঁর ব্যাগ ফিরে পাবে কিনা? কিন্তু এখন তাঁর নিজেকে নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। তোহাকেও খুঁজে বের করতে হবে তাকে। তোহার দেওয়া ঠিকানাটা তো ফোনেই সেভ করে রেখেছিল সে৷ সেটাও হাঁড়িয়ে ফেলেছে এখন।
.
সিএনজি এসে বাসটপে দাঁড়াতে সিরাত মুখ থেকে হাত সরাতে নিতে বাসটপের সামনেই কয়েকজন পুলিশের সঙ্গে তোহাকে কথা বলতে দেখে খুশিতে চোখ দিয়ে পানি ঝরে পরলো সিরাতের৷ সাফিন সিরাতের দিকে তাকিয়ে তাঁর চোখেমুখে খুশি দেখে দৃষ্টি অনুসরণ করে তোহাকে দেখে ধীর কন্ঠে বললো।
— মনে হচ্ছে তোমার ঠিকানায় পৌঁছে গেছো তুমি?
সিরাত হেসে সিএনজি থেকে নেমে পরতে চটজলদি সাফিন সিরাতের হাতটা শক্তহাতে ধরে নিতে সিরাত সাফিনের দিকে তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল।
—হাত ছাড়ুন আমার।
হাসলো সাফিন। গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
—যাচ্ছো যাও। কিন্তু কালকে রাতে তোমার সাথে যা-যা হয়েছে সবকিছু নিজের মেমোরি থেকে মুছে ফেলো। কোনো কিছু ব্লা’স্ট হলে বুঝে নিবে সেদিনই তোমাকে হাত-পা বেঁধে অন্ধকার রুমে নিয়ে আঁটকে রাখব। তুমি নিশ্চয়ই কালকের খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পেরে গেছো শাহনেওয়াজ সাফিন কি পারে আর কি না পারে।
সাফিনের গম্ভীর কণ্ঠের রেশে ঢোক গি’লল সিরাত৷ ভয়ে সমস্ত শরীর কেঁপে উঠলো তাঁর।
চোখের সামনে থেকে সো-সো শব্দে সিএনজিটা চলে যেতে সিরাত ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো সেখানে।
.
শাহনেওয়াজ ভিলার সামনে গাড়ি এসে থামাতে ভিতর থেকে সিকিউরিটিরা দৌঁড়ে এসে দরজা খুলে দাঁড়াল। গ্যারেজ থেকে ঠিক টাইমে গাড়িটা নিয়ে চলে এসেছে সাফিন।
বাড়ির ভিতরে গাড়ি প্রবেশ করার সঙ্গে- সঙ্গে ভীতর থেকে আমেনা বেগম দৌঁড়ে আসলেন।
সাফিন গাড়ি থেকে নামতে তাঁর র’ক্তে জ’মা’ট বাঁ’ধা শার্ট আর হাতে ব্যান্ডেজ করা দেখে কেঁদে উঠলেন তিনি৷ সাফিনকে আঁকরে ধরে আঁচল দিয়ে সাফিনের নাকমুখ মুছে দিয়ে কান্নারত কন্ঠে বললেন।
— তুই কি আমাকে শান্তি দিবি না সাফিন? এক তুই আরেক তোর বাপ। সারাটাজীবন আমাকে টেনশনের উপর রাখিস। আমিকি মানুষ না? আমার কথার কি কোনো দাম নাই তোর? তোর বাপ নাহয় তাঁর মর্জিমতো চলাফেরা করে। তোকে তো আমি এই রাজনীতির পথে দেখতে চাইনি। তুই কেন তোর বাপের পথে গেলি?
সাফিন মৃদু হেসে নিজের মাকে জড়িয়ে ধরলো। বললো।
—আম্মা, কাঁদছো কেন তুমি! দেখো তোমার ছেলের এইসব হালকা গু’লিতে কিচ্ছু হয় না। হাত ঘেঁষে বেড়িয়ে গেছে গু’লি৷ তোমার ছেলে একদম ফিট আছে দেখো।
আমেনা বেগম কেঁদে উঠলেন। বললেন।
— মায়ের মন আব্বা। মা তো আমি৷ সারাক্ষণ আ’তঙ্কের ভিতর থাকি তোর কিছু হয়ে গেল নাতো? তোর কাছে যেটা সামান্য মনে হয় ওটাই আমার কাছে বড়কিছু।
—আমার ছেলে সাফিন। বাপ কা বেটা। কিচ্ছু হবে না ওর। আমার একমাএ ভরসার আলো আমার ছেলে।
মোস্তফা সাহেবের কন্ঠ শুনে পিছু ঘুরে তাকালেন আমেনা বেগম৷ সাফিন হাসলো। চোখ মেরে বললো।
—ইয়াহ ড্যাড৷ সবটাই তোমার উপর গিয়েছি৷
— স্টাচু। এক পা নড়বি না সাফিন। আমার নাতিবউ আনতে পারলি না আবার বলিস বাপের মতো গেছিস! তোর বাপতো তোর আম্মাকে ৯/১০ এ পড়ে যখন তখন তুলে এনে বিয়ে করেছে৷ আর তুই ২৩ বছরের দা’ম’রা হয়েও পারলি না নাতি বউর মুখ দেখাতে।
নিজের নানু আজাদ সাহেব লাঠি হাতে এগিয়ে আসতে-আসতে কথাগুলো বললে হেসে উঠলো সাফিন। ভ্রু জাগিয়ে বললো।
— বিয়ে তো আমি করব না ইয়াংম্যান। আগে নির্বাচনটা শেষ হোক।
আজাদ সাহেব নিজের ছেলে মোস্তফার দিকে তাকিয়ে বললো।
— এ তোর ছেলে মোস্তফা? তোর নাক ডোবাবে এ। মেয়ে খোঁজা শুরু কর। আমি কিছু জানিনা আমি এক সপ্তাহের মধ্যে আমার নাতি বউ দেখতে চাই৷
মোস্তফা সাহেব হাসলেন। সাফিনের কাছে এসে সাফিনের কাঁধে হাত রেখে বললেন।
— সাফিনের বিয়ে হবে খুব ধূমধাম করে। তুমি চিন্তা করো না আব্বা। এবার ভিতরে চল সাফিন। ফ্রেশ হ গিয়ে৷ অনেক ধকল গেছে তোর উপর দিয়ে।
সাফিন হেসে বাড়ির ভিতরে ঢুকতে-ঢুকতে শার্টটা খুলে দিতে মোহন শার্টটা নিয়ে নিল। আমেনা বেগম রান্না ঘরে চলে গেলেন। বাড়িতে কাজের লোকের অভাব না থাকা সর্তেও নিজের হাতের রান্না করায় একটা আলাদা ভালোলাগা থাকে। আর সাফিনও তাঁর হাতের রান্না ছাড়া খেতে চায় না।
সাফিন উপরে উঠতে নিতে কালো রাঙা কোর্ট পরিহিত একটা লোক খোরাতে-খোরাতে নিচে নামলে সাফিন তাঁর দিকে ভ্রু জাগিয়ে তাকালো।বললো।
—ওয়েট, তুমি কে? আগে দেখিনি তো বাড়িতে। আম্মা নতুন ওয়াসম্যান রেখেছো নাকি বাড়িতে?
লোকটা কিছু বলার আগেই আমেনা বেগম টেবিলে খাবার সাজাতে-সাজাতে বলে উঠলেন।
— আরে না তোর চাচ্চু আসছে বিদেশ থেকে কালকে। বাহিরে গেছে তাই দেখতে পাসনি এখন। বিদেশে ওনার বাড়ির রান্না-বান্না করতেন ইনি। এ বাড়িতেই থাকবে তোর চাচ্চু যে কয়দিন আছে।
সাফিন লোকটার দিকে ধীর চাহনিতে পরখ করে উপরে চলে গেল।
.
—জান তোকে কত খুঁজেছি জানিস তুই? আমি পা’গল হয়ে গেছিলাম পুরো। শেষমেশ পুলিশের কাছে গেছি।
সিরাত মৃদু হাসলো। মাথা ভার হয়ে আছে তাঁর। তোহা চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে লাইট অন করে দিল। পরিপাটি গোছালো রুমটা দেখে হাসলো সিরাত। বললো।
—বাহ দোস্ত, তোর রুমটাতো জোস।
তোহা চোখ মেরে বললো।
— আরে আমার কলিজাটা তুই আসবি তাইতো এত গোঁজগাছ করলাম আমি। আচ্ছা তুই এখনও বললি না তুই কই গেছিলি।
চুপ করে গেল সিরাত। সাফিনের লাস্ট কথাগুলো কানের কাছে বেজে ওঠাতে ভয়ে ঢোক গি’লল সে৷ তোহা মৃদু হেসে বললো।
— আচ্ছা যাইহোক, পরে বলিসক্ষন। এখন যা ফ্রেশ হয়ে আস।
তেহা দরজা লক করে দিয়ে আলমারি থেকে সুতি সেলোয়ার-কামিজ বের করে সিরাতের হাতে দিয়ে হেসে বললো।
— উফ সিরাত। যা ফ্রেশ হয়ে আস জান। বিকালে শপিং করবনে তোর জন্য। এখন এটা পরে আস আমি খাবার বারছি একসাথে খাওয়া যাবে দুজনে।
তোহা রান্না ঘরে চলে গেলে সিরাত ধীর পায়ে ওয়াশরুমে চলে গিয়ে ঝর্নাটা ছেড়ে দিয়ে তাঁর নিচে হাঁটু ভা’জ করে বসে পরলো। চোখ বেয়ে পরতে লাগল একরাশ জমে থাকা কান্নার রেশ।
.
— মেয়েটাকে নজরে-নজরে রাখো জুবায়ের৷ একনজরও যেন হেরফের না হয়।
সাফিনের গম্ভীর কণ্ঠস্বর শুনে জুবায়ের বললো।
—কোন মেয়েটাকে স্যার৷ ওই বাসের মেয়েটাকে?
হাসলো সাফিন। ধীর চাহনিতে জুবায়েরের দিকে তাকিয়ে বললো।
—সিরাত।
জুবায়ের হাসলো বললো।
—সামথিং রং মনে হচ্ছে স্যার।
বাঁকা হাসি হাসলো সাফিন । বললো।
— সবকিছু রং।
জুবায়ের হাসলে দরজার আড়ালে থাকা অবয়েবটা সরে গেলে হেসে উঠলো সাফিন।
— খেলাটা নাহয় তোমরা শুরু করেছো৷ আর তাঁর ইতি ঘটাবে এই শাহনেওয়াজ সাফিন….
চলবে…….