#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ৪
ভরা অপিসের একগা’দা লোকের সামনে সাফিন সিরাতকে লিফ কিস করাতে সবাই চোখ নিচু করে হাসতে থাকলো আর হাত তালি দিতে থাকলো।
সিরাত চোখ বড়-বড় করে তাকিয়ে দুইহাত দিয়ে সাফিনকে ঢেলে সরিয়ে দিতে সাফিন হাতের উল্টো পিঠে তাঁর ভেজা ও’ষ্ঠদ্বয় মুছে হেসে সিরাতের দিকে তাকালো।
এতগুলো মানুষের সামনে এইভাবে সাফিন তাঁকে এ্যা’টা’ক করবে কল্পনাতেও আনেনি সিরাত।প্রচন্ড রাগ আর ল’জ্জায় মাথা হেট হয়ে যাচ্ছে যেন তাঁর।
— উফ সিরাত,তোমাকে টাচ করার সাথে-সাথে তোমার শরীরে যে কারে’ন্টটা লাগে না ওটা কিন্তু জোস বেব্বি। অবশ্য এটা তো প্রথম নয় আমাদের তাই না?
সিরাত মাথা নিচু করে চারপাশে না তাকিয়ে রাগের কন্ঠে বললো।
—চুপ করবেন আপনি? সবাই দেখছে এখানে! নয়তো আমি এখনই এখান থেকে চলে যাচ্ছি। আপনি থাকুন।
সাফিন হাসলো। বললো।
—দেখুক। দেখানোর জন্যই তো তোমাকে এখানে নিয়ে আশা।বাট ভু’লেও এখান থেকে যাওয়ার চেষ্টা করো না জান। তুমি এখানে এসেছো শাহনেওয়াজ সাফিনের হাত ধরে আর গেলেও তাঁর হাত ধরেই যেতে হবে তোমাকে। নয়তো কি হবে সেটাতো জানোই বেব্বি।
সাফিন হেসে উঠলে সিরাত তাঁর দিকে রাগ নিয়ে তাকিয়ে ফু’স’তে থাকলো।
—একটা বার, জাস্ট একটা বার যদি আমি সুযোগ পেতাম না বেব্বি তো তোমাকেই হাত পা বেঁধে উগান্ডা পাঠাই দিতাম। (মনে-মনে কথাটা বলে রাগে নাক লাল করে ফেলল সিরাত।)
.
চেয়ারের উপর পায়ের উপর পা তুলে সাফিন তাঁর দুই হাতে নিজের ব্রাউন্ড রাঙা চুলে মৃদু টেনে ধরতে ডোরের কাঁচ সরিয়ে সিরাত রুমে প্রবেশ করাতে সাফিন হাসলো। বললো।
— সিরাত,সিরাত,সিরাত, তোমাকে যতবার ডেকেছি তুমি তো আসলে না। কি হলো বেব্বি দরজা আটকানো দেখে সেইতো আমার কাছেই আসতে হলো তোমাকে। তো বলো সিরাত কি খাবে তুমি? চা,কফি, নাকি আমার আদর?
সাফিনের কেবিনে পা রাখার সঙ্গে- সঙ্গে তাঁর এমন ধারা কথা শুনে সিরাত বিরক্তি নিয়ে তাঁর দিকে তাকালো। বললো।
—এখানে আমাকে এনেছেন কেন আগে সেটা বলুন?
সাফিন বসা থেকে উঠে এসে ডোরের কাঁচটা ভিতর থেকে লক করে সিরাতের খুব কাছে এসে তাঁর দিকে ঝুঁ’কে দাঁড়ালো। মৃদু হেসে বললো।
—শাহনেওয়াজ সাফিনের বউ অন্যের অপিসে চাকরি করবে সেটাতো হবে না সোনা। তাই দেখো তোমার জন্য এই পুরো অপিসটা কিনে নিলাম। তবে হ্যা,এখানে তোমার কাজ হবে শুধু আমাকে নিয়ে। আমাকে চুমু খাবে জড়িয়ে ধরবে আর আদর করবে। ব্যাস এটুকু তোমার রেগুলার কাজ। বাকিটা আমি সামলাব।
সিরাত রাগে সাফিনকে সরিয়ে দিতে চাইলে সাফিন সরলো না। বরং সিরাতের দুইহাত দেয়ালের সাথে চে’পে ধরে সিরাতের কপালে ভরাট ভাবে চুমু খেলে গরম উষ্ণ’তায় সিরাত চোখ বন্ধ করে ফেলল।
সাফিনের শরীরের পারফিউমের মিষ্টি স্মেল নাকের কাছে এসে বারি খেয়ে গেলে সিরাতের সমস্ত শরীরে শিহরন বয়ে গেল যেন।
—ছাড়ুন আমাকে?
—নাহ সেটি হচ্ছে না।
—বলছি তো ছাড়ুন।
সাফিন হাসলো। বললো।
—আর যদি না ছাড়ি, তখন কি হবে? চুমু খাবে? টেল মি বেব্বি?
সিরাত বিরক্ত হলো। রাগ নিয়ে বললো।
—বা’জে বকা থামান। আর আমাকে ছাড়ুন। লাগছে আমার।
—লাগুক।
সাফিনের নিমেষহীন উওরে সিরাত চোখ তুলে সাফিনের দিকে তাকালো। দীর্ঘক্ষণ দুটি চোখের মিলন হতে হেসে উঠলো সাফিন। মৃদুস্বরে বললো।
—ওয়াহ বেব্বি! তোমার ওই আর চোখের রেশ যতটানা শীতল এবং কোমল,তাঁর থেকেও বেশি ভয়ংকর। এই চোখের বি’ষে শাহনেওয়াজ সাফিন প্রতিনিয়ত খু’ন হতেও রাজি।
.
—দোস্ত আমাকে একটু গ্রামের বাড়ীতে যেতে হবে জান। বেশিদিন না দুইদিন পর ফিরে আসব৷ তুই চাইলে আমার সাথে যেতে পারিস। আম্মা অনেক অসুস্থ নাকি। জুলিয়া ফোন করে জানাল আমাকে। মাথা কাজ করছে না রে কি করব এখন? (জুলিয়া তোহার বোন)
তোহা জামা-কাপড় গোছাতে-গোছাতে কথাগুলো বলতে থাকলে সিরাত বিছানার উপর আসন দিয়ে বসে তোহার সাথে হাতে হাত লাগিয়ে গোছাতে লাগল। বললো।
—ওকেহ বেব্বি। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে বেশি চিন্তা করিস না তুই। বাট আমি অনেক মিস করব তোকে। সিরাত চোখ মুখের ভঙ্গি কাঁদো-কাঁদো করে তাকাতে তোহা সিরাতকে জড়িয়ে ধরলো। বললো।
—টেনশন করিস না জান৷ আমি খুব তাঁরাতাঁড়ি আসার চেষ্টা করব। তুই গেলে আমার সাথে চল।
সিরাত গালে হাত দিয়ে বললো।
—না থাক তুই যা। আমি এখানে দেখছি। বাড়ী একেবারে ফাঁকা রাখা ঠিক হবে না।
—হুম সেটাও ঠিক বলেছিস৷ সাবধানে থাকবি কিন্তু। সময় করে খাবারটা খাবি। আমি কিন্তু বার-বার ফোন করব বলে রাখলাম। বাই দ্য ওয়ে ওই আনাচকপি তোকে ফোন কিনে দিয়েছে!সামথিং রং সিরাত?
সিরাত ল’জ্জা পেল। নাক লাল হয়ে উঠলে মৃদু হেসে বললো।
—তেমন কিছু না।
তোহা হাসলো। বললো।
—একটা মাই’র দিব বুঝলি। আমিকি ঘাস খেয়ে চলি যে বুঝতে পারব না। যাইহোক টেক কেয়ার বেব্বি। এবার যা করবি ভেবে করিস।
সিরাত তোহাকে জড়িয়ে ধরে বললো।
—ওকে মা আমার। তুইও তোর খেয়াল রাখবি।আর পৌঁছেই আমাকে ফোন লাগাবি।
—হুম জান।
.
বাসটপে এসে দাঁড়াতেই কালো রাঙা গাড়ি এসে তোহার সামনে থামলে তোহা জুবায়েরকে দেখে মৃদু হেসে বললো।
—চা’ম’চা এখানে তাহলে বস নিশ্চয়ই আশে-পাশেই আছে?
জুবায়ের হেসে উঠলো। বললো।
—উপর মহল থেকে করা আদেশ আছে আপনাদের দুজনকে চোখে-চোখে রাখা।
—তাই বুঝি!তো এখানে কি কাজ?
—গাড়িতে উঠে বসুন ম্যাম, স্যার পাঠিয়েছেন আমাকে।ভাবির একমাএ বেস্ট ফ্রেন্ড আপনি। আপনার জন্য স্পেশাল গাড়ি।
তোহা ভ্রু জাগিয়ে ফেলল।বললো।
—আপনার স্যার, মানে শাহনেওয়াজ সাফিন। তাঁকে বলবেন আমার জানকে আবারও ক’ষ্ট না দিতে। ও বড্ড সহজ-সরল। সামনে যেটা দেখায়, ওটা ওর বাচ্চামো।
জুবায়ের মৃদু হেসে গাড়ির দরজা খুলে দিলে তোহা ব্যাগটা পিছনে রেখে বসে পরলো।
.
দক্ষিণা উত্রা হাওয়ায় আকাশের কোলে মেঘে ছেঁয়ে গেলে রিমঝিমে বৃষ্টিতে ভিজে উঠলো শহর। রাত এখন গভীরে গিয়ে। কারেন্ট না থাকায় সিরাত কোনো রকম ক্যান্ডেল জ্বালিয়ে বিছানার উপরে উবু হয়ে শুয়ে একটা উপন্যাসের বই খুলে বসেছে। মাথার মধ্যে তোহার চিন্তা ঘোরপাক খাচ্ছে তাঁর। মনটা ঠিক মানতে চাইছে না। এই নিয়ে পাঁচটা ফোনকল দিয়েছে তোহাকে কিন্তু বন্ধ বলছে ফোন।টেনশন কমাতেই উপন্যাসের বই খুলে বসা।
হুট করে দরজায় ঘন-ঘন কলিং বেল বেজে ওঠাতে দরজার দিকে ভয় নিয়ে ধীর চাহনিতে তাকালো সে।
—সিরাত দরজা খোলো।
অস্পষ্ট স্বরে চীরচেনা কন্ঠ ভেসে আসাতে দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠলো সিরাত।
দরজা খুলে দিতে সাফিনের র’ক্তে ভেজা হাতটা দেখে কেঁপে উঠলো সে। কিছু বলার আগেই সাফিন সিরাতকে জড়িয়ে ধরতে সিরাত রীতিমতো শ’ক খেয়ে গেল তাঁকে এই অবস্থায় দেখে। কাঁদো-কাঁদো কন্ঠে বললো।
—-কি হয়েছে আপনার? এত র’ক্ত এলো কিভাবে? আল্লাহ আপনি কোথায় গিয়েছিলেন এমনটা কিভাবে হলো?
সিরাতের চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরে পরাতে সাফিন মৃদু হাসলো। বললো।
—সামান্য গু’লি হাত ঘেঁষে বেড়িয়ে গেছে। কান্নাকাটি করো না জান।
— আপনাকে কতবার বলেছি রাজনীতি ছেড়ে দিন, এসব আর ভালো লাগে না। হয় আপনি রাজনীতি ছারবেন নয়তো আমাকে ছেড়ে দিন। আল্লাহ কতটা র’ক্ত ঝরেছে। সিরাত কেঁদে উঠলে সাফিন সিরাতের ঘাঁড়ের কাছে ঠোঁট ছুয়িয়ে চুমু খেল। হেসে বললো।
—সামান্য গু’লি লেগেছে। ম’রে তো যাইনি! এত কান্নাকাটি করো না বেব্বি। জাস্ট চিল করো।
সিরাত রাগ নিয়ে সাফিনের দিকে তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।
—চুপ,একদম চুপ এসব কথা আর কখনো বলবেন না। আর একটাবার এসব কথা বললে আমি আজ আপনাকে হাত পা বেঁধে টয়লেটে আঁটকে রাখব। সাফিন হেসে উঠলো। বললো।
—রিয়েলি সিরাত? কুকু’রটা আমাকে পেছন থেকে এ্যা’টা’ক করেছে। সামনা-সামনি আসার সাহস নেই ওর। এসব ছোট খাটো আঘা’তে শাহনেওয়াজ সাফিনের টিকিটিও হয়না বুঝলে।
.
সিরাত ফাস্টএইড বস্কটা নিয়ে আসাতে সাফিন তার পরনে পরিহিত কালো রাঙা শার্টটা খুলে বিছানার পাশে রাখলো। ক্যান্ডেলের হলদেটে আলোয় সাফিনের জিম করা ফর্সা বডির দিকে ধীর চাহনিতে তাকাতে সিরাতের ভেতরটা কেমন মু’চ’রে উঠলো। বুকের ভিতর কেমন জ্ব’লছে তাঁর। যেন আ’ঘা’তটা সাফিন নয় সিরাত নিজে পেয়েছে। কান্নাভেজা চোখদ্বয় নিচে নামিয়ে সাফিনের পাশে বসে হাতে স্যাভলোন লাগিয়ে ড্রেসিং করে দিল জায়গাটা। সাফিন সিরাতের দিকে তাকিয়ে হাসছে শুধু।
—মনে আছে বেব্বি? আমাদের প্রথম দেখা? সেই বাস থেকে। সেদিনও তুমি আমার শরীরে র’ক্ত দেখে কেঁদেছিলে। তোমার এই আবেগী কান্নাটা না আমার প্রচুর ভালো লাগে। ইচ্ছে করে চুমু খেয়ে তোমার চোখের জল মুছে দেই। ট্রাস্ট মি। সিরাত ল’জ্জা পেয়ে গেলে সাফিন হাসলো।
হুট করে সাফিনের ফোনটা বেজে উঠাতে ফোনের স্কিনে ড্যাড লেখা দেখে মৃদু হাসলো সাফিন।
—হাই ড্যাড। কেমন আছো?
ওপাশ থেকে গম্ভীর এবং ভয়ার্ত কন্ঠে মোস্তাফা সাহেব বলে উঠলেন।
—তোমাকে এ্যা’টা’ক করেছে নাকি? কোথায় তুমি? আর জুবায়েরই বা কোথায়? আমি বুঝতে পারছি না সাফিন তুমি এতটা বিচক্ষণ হয়েও এই ভু’ল করলে কিভাবে? তোমার আম্মা কেঁদে-কেঁটে শেষ। ফোনটাও তুলছিলে না তুমি! এতটা কেয়ারলেস হও কিভাবে তুমি?
— এ্যা’টা’কটা ঠিক আমাকে করতে চাইনি সে ড্যাড। কিন্তু ভু’ল জায়গায় হাত দিয়ে ফেলেছে সে। ১ ঘন্টা শুধু ড্যাড। যে আমাকে এ্যা’টা’ক করেছে তাঁকে খুঁজে বের করব দেন তাঁর লা’শ কালকে সকালে নদীতে ভাসবে। তুমি নিশ্চিন্তে তোমার কাজ করো।
মোস্তফা সাহেব হাসলেন।
সাফিনের কথা শুনে কেঁপে উঠলো সিরাত। ভয়ের কন্ঠে বললো।
— কি করবেন আপনি? আমি বলছি আপনি কিচ্ছু করবেন না। প্লিজ রাজনীতি ছেড়ে দিন আপনি। সাফিন হাসলো।বললো।
—আমি কিছুই করবো না বেব্বি। তুমি ভেবো না। তোমার মনে আছে আমাদের প্রথম লিফ কিসের কথা। সেই স্বাদ।
সিরাত কানে হাত চে’পে ধরে বললো।
—আপনার বা’জে বকা থামাবেন। ভালো লাগছে না আমার কিছু।
—তাহলে চুমু দেই আমি ঠিক হয়ে যাবে। স্বামীর চুমু খেলে যেকোনো মেয়ের মুডই আপনা আপনি ভালো হয়ে যায়। লাইক বি ট্রাই। প্লিজ,প্লিজ জান। জাস্ট অনটা কিস করবো।
সিরাত রাগ নিয়ে তাকাতে সাফিন হেসে উঠলো। বললো।
—উফ সিরাত। তোমার এই লাজুক দৃষ্টিতে রাগী-রাগী ভাবটাও জোস। সেই প্রথম দেখায় লাভ লাইন…..
চলবে…….